২৩/১১/১৯৮৬-ঢাকায় গমন

০৬ অগ্রায়ন, ১৩৯৩

গত কয়েকটি বৃহস্পতিবার পরপর ঢাকায় গেলাম। কারনটা মানসিক ছাড়া আর কিছুই না। সেই সুদূর চিটাগাং থেকে ঢাকায় আসা আবার ঢাকা থেকে  চিটাগাং একই দিনে ফিরে যাওয়া খুব সহজ কাজ না। তারপরেও কাজটা আমার কাছে বোরিং মনে হয় নাই। এই আসা যাওয়ার মধ্যে একটা অন্তর্নিহিত আরেকটা আশা জেগে থাকে। আর সেটা নিছক একজন মানুষকে দেখার নিমিত্তে। সবাই মনে করতে পারে যে আমি শুধু ভাবি আর ভাইয়াকে দেখতে এসেছি, আসলেই কি তাই? এর আগেও তো অনেক  বৃহস্পতিবার এসেছে, তখন এতো ঘন ঘন আসিনি, কেন? ব্যাপারটা আসলে মিতুল। যেদিন থেকে ও আমাকে চিঠি দিয়েছিল তারপর থেকে আমি বোধহয় একদিনও মিস করিনি যে আমি ওকে চিঠি লিখিনি। ব্যাপারটা একটা  নেশার মত হয়ে দাড়িয়েছে। ঢাকায় আসা যদি ভাইয়া আর ভাবীই কারন হত তবে আমার সবসময় বাসায়ই থাকা হত কিন্ত আমি বেশীর ভাগ সময় কাটাচ্ছি বাইরে বাইরে। সন্তান যখন বড় হয়, তার সাথে অভিভাবকদেরকে বন্ধুর মতো বসতে হয়, তার গতিবিধি বুঝতে হয়। আমার বেলায় এই দিকটা একেবারেই অনুপস্থিত। এই যে গত বৃহস্পতিবার ২২ নভেম্বর, অনেকক্ষণ বাইরে ছিলাম, যার ফলে বাসায় দুপুরের খাবার খাওয়া হয় নাই, রাতেও ফিরলাম অনেক রাতে। কোথায় যাচ্ছি, কেনো যাচ্ছি, এতো দূর থেকে কোনো কারন ছাড়াই ঢাকায় আসছি, আবার তড়িঘড়ি করে সেদিনই ব্যাক করছি, এইসব অভিভাবকদের খেয়াল করতে হয়। বাইরে থেকে খেয়ে আসছি, ঘরের খাবারে মন টিকছে না। পেটে খুধা নেই, তারপরেও খেতে হবে বাসায়। এটাই হচ্ছে। আজ রাতেই ১০ টায় আবার চিটাগাং যেতে হবে। খেতে বসলাম, ভাবী অভিমানের সুরে বললেন, তোমাকে খেতে হবে না। বুঝলাম, রাগ করেছেন। রাগ করারই কথা। ভাইয়া সকালে উঠে সেই ঘাঁট থেকে ছোট মাছ কিনে এনেছেন, ভাবী কষ্ট করে রান্না  করেছেন অথচ আমার খাওয়া হয় নাই। এটা কেমন কথা?

কারো উপরেই আমার রাগ নাই। কার উপর রাগ করবো? আমি তো বড়ই হচ্ছি একেবারে কোনো মালী ছাড়া। মালী ছাড়া বাগানে যতো সুন্দর আর দামী গাছই থাকুক না কেনো, তার বিকাশ তার মতো করেই হবে। যাই হোক।

গত শুক্রবারে মিরপুরে মিতুলের সংগে দেখা হল। আর দেখাটাও হল আকস্মিক। আমি আর লেঃ ভাওয়ালি আমাদের বাসা থেকে হেটে হেটে গাবতলি যাচ্ছিলাম সাভার যাব বলে। ঠিক মোড়েই মিতুলের সংগে দেখা। ও রিক্সায় হয়ত কোঁথাও যাচ্ছে। সম্ভবত ওদের বাসায় ফিরছে। আমাদের দেখে মিতুল খুব লজ্জায় পরেছে বুঝতে পারলাম। আমি হেসে দিলাম, মিতুলও। ভাওয়ালি বলছিল মিতুলকে নিয়ে সশস্র বাহিনি দিবসের অনুষ্ঠানে যেতে, কিন্তু মিতুলকে বললে কি আসলেই ও যেত? আমাদের সমাজ এখনো ঐ স্তরে পৌছায় নাই যেখানে পরের বাড়ির একটি মেয়ে ভালো লাগে বলেই আমার সাথে কোনো এক মেলায় যেতে দিবে। আমিও সেটা আশা করি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *