৮/৮/২০১৯-হিজড়া

Categories

আমার ফ্যাক্টরীতে প্রতি বছরই ১০/১২ জন করে হিজড়া আসে কিছু চাদা নেওয়ার জন্য। এই হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকগুলিকে সবাই এক রকম এড়িয়ে চলে। এড়িয়ে চলার অনেক কারন ও আছে। ওরা চাদার জন্য এলেও সবার সাথে বেশ খারাপ ব্যবহার করে, বিশেষ করে চাদা না পেলে।

প্রথম বছর যখন ওরা আমার ফ্যাক্টরীতে চাদার জন্য আসে, সেদিন আমি গেটে নামার পর দেখলাম, আমার এইচ আর ডিপার্ট্মেন্ট হেড, আমার চীফ সিকিউরিটি, এবং ম্যানেজার হিমশিম খাচ্ছে ওদেরকে সামাল দিতে। আমাকে দেখেই আমার স্টাফরা যেনো আরো হচকচিয়ে গেলো। তড়িঘড়ি করে হিজড়াদেরকে বল্লো, যে, বড় সাহেব এসেছেন, তোমরা এখন যাও। পরে এসো। হিজরারা তো আরো মওকা পেয়ে গেলো। এবার বড় সাহেবকেই তারা তাদের সমস্যার কথা বলবে বলে একজোট হয়ে গেলো।

আমার ফ্যাক্টরিতে প্রতি বছর ১০/১৫ জন করে হিজড়া আসে। প্রথ (২০০৭) সালে যখন প্রথম ওরা সাহায্যের জন্য আসে, আমার HR Dept Head, Security Dept Head এবং অন্যান্যরা অন্য সব পাবলিকের মতোই একটু তাচ্ছিল্যভাবে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল। ঠিক ঐ সময়ে আমি মাত্র অফিস ঢোকবো। ওরাও ওদের স্বভাব গত ভাবে রি এক্ট করে যাচ্ছিল। আমি ওদের বললাম, কি হয়েছে? ওরা সাহায্য চায়। আমি বুঝতে পারলাম দুই পক্ষই এগ্রেসিভ। কিচ্ছু না বলে আমি এডমিন কে বললাম, ওদেরকে আন্তরীকতার সাথে ভিজিটিং রুমে বসাও, চা পানি দাও, আমি কথা বলবো। সেভাবেই এডমিন কাজটা করলো। আমি ওদের সাথে বসলাম, একসাথে চা খেলাম, ওদের লাইফ স্টাইল শুনলাম। খুব কষ্ট লাগলো। ওদের ও অনেক কষ্ট আছে, বেদনা আছে। ওরা কারো কাছ থেকেই ভালো ব্যবহার পায় না। তাই ওরাও এগ্রেসিভ থাকে। অনেক কথা হলো। আমি ওদেরকে ওরা যা চেয়েছিল তার থেকেও বেশী সাহায্য করেছিলাম। আজ অবধি ওরা প্রতি বছর আসে, যত্ন করে সালাম দেয়, আমাদের ষ্টাফ রাও ওদেরকে ভালোভাবে সম্মানের সহিত আপ্যায়ন করে, সাহায্য করে কিন্তু আমার সাথে দেখা না করে কখনো যায় না। যদি অফিসে না থাকি, সেদিন কোনো সাহায্যও নিতে চায় না, ওরা বলে এমডি স্যার যেদিন আসবে সেদিন নেবো আর দোয়া নিয়ে যাবো। ওদের সাথে সম্মানের সাথে ব্যবহার করা উচিত। ওরা হিজড়া, সেটা ওদের অপরাধ নয়। ওরা একদম স্বাভাবিক সমাজের একজন মানুষ। ওরা যখন না আসে, আমিই বরং খবর নেই এডমিনকে দিয়ে, ওরা আসে নাই কেনো। একটা জিনিষ ওরা জানে যে, আমার ফ্যাক্টরিতে এলে ওরা ভাল ব্যবহার পায় এবং ওরাও খুব ভালো ব্যবহার করে। ওরা দল বেধে চলে নিরাপত্তার খাতিরে। ওরাও আমাদের মতো কারো না কারো বাবা মার সন্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *