ফ্রান্স, জার্মান এবং ব্রিটিশ এই তিন দেশের অফিসারদেরকে আপনি কখনো পাশাপাশি দাড়াতে দেখবেন না। যদি কখনো দাড়াতে দেখেনও তারপরেও দেখবেন এরা একে আরেকজনের সাথে ফ্রেন্ডলী কথা বলে না। জাতী সংঘ মিশনে দেখেছি- বাসার সল্পতা থাকা সত্তেও এরা আরেকজনের সাথে রুম শেয়ার করে না। হয়তো বিল্ডিং শেয়ার করে কিন্তু একই রুমে ওরা থাকে না। এর একটা কারন আছে। আর সেটা হল-এরা সবাই ২য় মহাযুদ্ধে একে অপরের শত্রু ছিলো। ফ্রান্সের সাথে ব্রিটিশদের চিরাচরিত শত্রুতা মনোভাব। অন্যদিকে জার্মান তো ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধেই ছিলো ২য় মহাযুদ্ধে।
আমার এক খুব প্রিয় গুরুজন বলতেন-যখন শত্রুরা নিজেরা নিজেরা বন্ধু হয়ে যায়, এদের বন্ধুত্তের মধ্যে থাকে ধুর্ততা আর সার্থপরতা। সবার নিজ নিজ এজেন্ডা নিয়ে বন্ধুত্ত করে। তারা কখনো একজনকে আরেকজন বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে না। যা দেখায় সেটা হচ্ছে আবরন।
"ন্যাটো"- এই দলের মধ্যে এরা সবাই আছে। আছে ব্রিটিশ, আছে জার্মান, আছে ফ্রান্স, আছে আমেরিকান। আবার আছে তুরুষ্ক। বিশ্বাসের ভিত্তিটা এখন কত শক্ত অনুমান করা কঠিন না। এখানে আরেকটা সমস্যা আছে। এই সম্মিলিত বাহিনীকে কে কাকে কমান্ড করবে? ব্রিটিশ জার্মানী দ্বারা কমান্ডেড হতে চায় না, জার্মান ব্রিটিশ দ্বারা, না ফ্রান্সের মিলিটারী অন্য বাহিনী দ্বারা অথচ এদের একটা কমান্ড স্ট্রাকচার আছে। সেই কমান্ড স্ট্রাকচার আজ পর্যন্ত টেষ্টেড হয় নাই কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। মিশন এরিয়ায় আমি দেখেছি-কোনো আমেরিকান ইউনিট অন্য কোনো দেশের কমান্ড স্ট্রাকচারের অধীনে কখনোই কাজ করে না। কোনো ব্রিটিশ ইউনিট একমাত্র আমেরিকান কমান্ডার ছাড়া অন্য কোনো দেশের কমান্ডারদের অধিনে কাজ করতে চায় না। হ্যা, ফোর্স কমান্ডার, বা সিএমও (চীফ মিলিটারী অবজারভার) এগুলি আলাদা বিষয়। সেখানেও তাদের একটা জয়েন্ট কমান্ড রাখে।
মজার ব্যাপার হলো, ন্যাটোর কোনো আলাদা মিলিটারী নাই। প্রতিটি দেশের মিলিটারীই ন্যাটোর মিলিটারী। এটা একটা বিএনসিসির মতো মিক্সড। কেউ খুবই প্রোফেশনাল, আবার কেউ অনেক কিছুই জানে না। বিশেষ করে মিলিটারি অস্ত্র হ্যান্ডলিং বা ট্যাক্টিক্সের দিক দিয়া।
তুরষ্ক ন্যাটোর মিলিটারীর মধ্যে একটা বিশাল অংশ। তুরষ্ক তাঁর নিজের মনোভাব ইতিমধ্যে প্রকাশ করে ফেলেছে সুইডেন আর ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে বাধা দিয়ে। তুরষ্ককে ইচ্ছে করলেই ন্যাটো থেকে বা ইউরোপিয়ান ব্লক থেকে আউট করা যাচ্ছে না। তুরষ্ককে আউট করলেই ন্যাট কিংবা আমেরিকা, বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জিও পলিটিক্সে ধরা। আবার অন্য দিকে তুরষ্ককে আউট করলে সে যে রাশিয়া বা চায়নার সাথে এক হয়ে যাবে না কে জানে? মহা বিপদ। ফলে তুরষ্কের বাধার কারনে এতো ইচ্ছা থাকা সত্তেও ন্যাটো সুইডেন বা ফিন ল্যান্ডকে ঢোকাতে পারছে না।
হাংগেরী, ক্রোয়েশিয়া কে দেখুন। ছোট দেশ, খুব ক্ষমতাশীল না। তারপরেও ন্যাটর বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাইছে না। কারন তাদের নিজের দেশের ইন্টারেষ্ট আগে। আবার এদেরকে ছেড়ে দিলেও টুষ করে রাশিয়া খেয়ে ফেলবে, দলে নিয়ে যাবে। এখন যে যাকেই ছেড়ে দিবে, সেইই অন্য দলে ঢোকে যাবে। দেশীয় রাজনীতির মতো। একটা ছোট উদাহরণ দেই, সলোমন আইল্যান্ডকে আজ অবধি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফ খুব বেশী একটা সাহাজ্য করে নাই। কিন্তু যেই না চায়না সলোমনের সাথে ঝুকে গেছে, কথা নাই বার্তা নাই, ১৩০ মিলিয়ন ডলার সাহাজ্য এম্নিতেই গ্রান্ট করে দিলো ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক গতকাল। সলোমান আইল্যান্ড কিন্তু রিফিউজ করে নাই। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকই তো। এটা তো আর ওপেনলী আমেরিকা বা ব্রিটিশ না। নিতেই পারে, আবার চায়নাও এখন হিউজ টাকা ঢালছে সলোমনে। এখন সবাই সবার দল ভারী করার চেষ্টা করছে, হোক সেটা ছোট বা বড়।
জার্মানকে দেখুন। তারা কোনো অস্ত্র কিন্তু সরাসরি ইউক্রেনকে দিচ্ছে না। কখনোই না। তারা হয় দিচ্ছে পোল্যান্ডকে, অথবা অন্য ন্যাটোভুক্ত দেশকে। যাতে জার্মান ইউক্রেনে সামরিক অস্ত্র দিচ্ছে এই ব্লেইম তাঁকে না নিতে হয়।
পোল্যান্ডকে দেখুন, ইউক্রেনের পশ্চিমা অংশ এক সময় পোল্যান্ডের ছিলো যা ২য় মহাযুদ্ধে তাঁকে ছাড়তে হয়। একটু হলেও তো মনের ভিতরে একটু খস খস আছেই। পোল্যান্ড সেই পশ্চিমা অঞ্চলে ইউক্রেনের সাথে বর্ডার একত্রিত করতে চায়। জেলেনেস্কি একটু রাজী রাজী ভাব। উদ্দেশ্যটা একটু খটকার মতো। রাশিয়া ক্রিমিয়া খেয়েছে, মারিউপোল খাইলো, ডনবাস শেষ, এখন ইষ্টার্ন ব্লকে এগুচ্ছে, পশ্চিমা অংশ পোল্যান্ডের নজর।
এটা তো রুটির মতো ভাগ হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
বিড়াল তো দেখতে পাচ্ছি কিন্তু শিয়ালটা কে আসলে?