রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমন করার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন যখন ন্যাটোতে যোগদানের একটা সুর তুল্লো, তখন ইংল্যান্ডের ইয়াং জেনারেশনের ব্রেক্সিট ভোটের মতো ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ইয়াং জেনারেশনও একই রকমভাবে ন্যাটোতে যোগ দিলে তাদের প্রোটেকশন বাড়বে এই ধারনায় একটা জোয়ারের মতো তাল দেয়া শুরু করেছিলো। ফলে আগের বছরগুলিতে ন্যাটোতে যোগদানের মতামতের ৪২% এর বিপরীতে হটাত করে স্যামপ্লিং এ ৭০% পজিটিভ মতামত চলে আসে। প্রাথমিকভাবে ন্যাটো এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যেভাবে ইউক্রেনের পাশে দারানোত অংগীকার ব্যক্ত করেছিলো, তাতে যে কোনো আপাতত একটা দূর্বল জাতী সেটা গ্রহন করবেই। এই মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন রেফারেন্ডাম লাগবে না এই ভিত্তিতে পার্লামেন্টে প্রায় এক তরফা ভোট পাশ হয়ে যায় ন্যাটোতে যোগদানের জন্য।
পরবর্তীতে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর হাবভাব, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কিংবা বিশ্ব মন্ডলে ইউক্রেন নাগরিকদের দেয়া সুযোগ সুবিধার উপর চুলচেড়া বিশ্লেষনের উপর দেশের স্ট্র্যাটেজিক বুদ্ধিদাতাদের লেখালেখি, মতামত এবং তারসাথে রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সারা দুনিয়ায় যেভাবে নেতিবাচক প্রভাব ঘটছে, তার রেশ অনুভুতিতে এনে ধীরে ধীরে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের সাধারন নাগরিকদের ভাবনায় ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারটায় টনক নড়া শুরু করে। এর বাইরে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার এক তরফা আগ্রাসনের কারনে এবং ইউক্রেনের পাশে কাউকে না পাওয়ার কারনে এই দুই দেশের জনগনের মতামত হটাত করে ভাটা পড়তে শুরু করে। এখন সেই সার্ভে এসে দাড়িয়েছে প্রাতমিক ৪২% এরও নীচে। এর মধ্যে তুরুষ্ক এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রবল আপত্তিতে ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে একটা অনিশ্চিত আশংকার স্রিষ্টি হয়। এছাড়া ন্যাটোতে যোগ দেয়ার সফল মেম্বার হওয়ার মাঝখানে প্রায় এক বছর সময়ে ‘না ন্যাটো’ না ‘নিরপেক্ষ’ এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার হুমকী একটা ভয়ংকর আতংকের মধ্যে পড়েছে দেশের নাগরিকগন। প্রায় ১৩০০ কিমি কমন বর্ডারের দেশ ফিনল্যান্ড সর্বদা রাশিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশের কাছে একটা যুদ্ধাংদেহী অবস্থায় থাকতে হবে, এইসব কারনে সবাই এখন ন্যাটোতে যোগ দেওয়াকে রিস্কী মনে করছেন। এমন অবস্থায় ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে এখন অধিকাংশ জনগন ন্যাটোতে যোগদানে আগ্রহী নয়। তবে তারা সারাদেশের জনগনের একটা চুড়ান্ত মতামতের জন্য রেফারেন্ডাম চাইছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন রেফারেন্ডাম দিতে নারাজ। এই টানাপোড়েনে দেশের ভিতরে একটা চলমান ক্ষোভের লক্ষন দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় ফিনল্যান্ডে বলা হচ্ছে- যারা ন্যাটোতে যোগদানের বিপক্ষে তারা রাশিয়ান পন্থী। আর এই অপবাদে প্রচুর সংখক নাগরিক পুলিশের হয়রানী, এমন কি জেল জুলুমের খপ্পরে পড়ছেন বলে ফিনিশ এক জার্নালিষ্ট সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, Opinion is denied
তবে একটা জিনিষ তো নিশ্চিত, শেষ পর্যন্ত সাধারন জনগনের চুড়ান্ত মতামতের জন্য রেফারেন্ডাম না নিলে শেষ অবধি প্রেসিডেন্ট সিউলি নিনিতসুকে এক সময় বিচারের কাঠগরায় দারাতে হতে পারে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, যদিও ফ্রান্স ইউক্রেনের ন্যাটো মেম্বারশীপ বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগদানের ব্যাপারে নেতিবাচক নয়, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন এবং ফ্রান্সের পররাষ্টমন্ত্রী ইউক্রেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ পাইতেই বলেছে এক যুগ পার হবে। এর মানে, ইউক্রেনকে সহজেই ইউরোপিয়ান ব্লকে বা ন্যাটোতে নেয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তাহলে কেনো আর কিসের কারনে এই যুদ্ধ?
সেই একই কাতারে কি এতো চমৎকার দুটি দেশ সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড পড়তে যাচ্ছে?