সরকার ইতিমধ্যে অনেক গুলি ভুল করে ফেলেছে। কেনো জানি বারবার আমার কাছে মনে হচ্ছে, সরকারের আর পিছু হটার কোনো জায়গায়ই নাই। তার এখন শুধু সামনের দিকে এগুবার পথ খোলা আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে-সরকারের সামনে এখন সারাটা দেশ খড়গ হাতে নিয়ে তাকে কুপিয়ে মারার যন্ত্র। পতন তো অনিবার্য কিন্তু পতনের সাথে জিবনটাও শেষের পথে।
ডিবি হারুনকে দিয়ে সমন্নয়কদের তুলে নিয়ে জর করে নরাপত্তার দোহাই দিয়ে একতা ভিদিও বার্তায় সব কিছু মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে এই সংবাদে সরকার খুশী হলেও বাংলাদেশের মানুষ নাটকটা বুঝতে এক সেকেন্ড সময় লাগেনি। সাধারন জনগন যতটা তারাতাড়ি বুঝতে পেরেছে তার থেকে অনেক বেশী এই যুগের জেন জেনারেশন ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে ক্ষনিকের মধ্যে। ফলে ওই ৬ সমন্নয়ক ছাড়াই ছাত্ররা পুনরায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনির নাকের ডকায় কার্ফিউ লংঘন করে রাস্তায় নেমে পড়েছে। ডিবি হারুনের কোয়ালিফিকেশন কতটুকু যে এই যুগের ছাত্রদের মাইন্ড বুঝতে পারে? রাষ্ট্রীয় এই দূর্যোগের সময় যেটা এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলে গেছে, এমন একটা স্পর্শকাতত ঘটনা ডিবি হারুনের উপর দিয়ে যে সমাধান করা যায় না এটাই তো সরকার বুঝতে পারে নাই।
সরকার সব কোটা আন্দোলন কয়েকদিনের মধ্যে ছাড় দিয়ে ছাত্রদেরকে সামাল দিয়ে ফেলেছেন বা ফেলবেন, এটা ভাবাও তো সরকারের সঠিক হয় নাই। এ যুগের ছাত্ররা জেড জেনারেশন। তারা খবরের কাগজ পড়ে না কিন্তু সমগ্র বিসশের খবর রাখে, এরা বাপ দাদার সম্পত্তিকে থোরাই কেয়ার করে, তারা নিজেরা সাবলম্বি হয়ে উঠছে। কারো উপর নির্ভরশিল নয় আর হতেও চায় না। অফিসের বস ভাল লাগে নাই তো পরেরদিন আই ডোন্ট কেয়ার বলে ছেড়ে চলে আসে। ১০ বছরের বন্ধুত্তকে তারা আই ফাক দি রিলেশনশিপ বলে চিরতরে একে অপরের থেকে ব্রেক আপ হয়ে যায়। এরা ৫ মিনিট একসাথে কোনো কাজ করে না। মুভি দেখে ফাষ্ট ফরোয়ার্দ করে, তাদের ২ ঘন্টা সময় নষ্ট করার সময় নাই। এই জেনারেশনের মাইন্ড বুঝা সরকারের কোন মন্ত্রী বা আমলার নাই। এরা আবেগী কিন্তু দাইরেক্ট। ফলে প্রহসমুলক একটা প্রজ্ঞাপন করেই ছাত্রদেরকে বুঝানো যাবে না। সরকার আবারো ভুল করেছে।
সরকার তার লেজুরবিত্তিক অংজ্ঞ সংঘটনকে লেলিয়ে দিয়ে যদি মনে করে তারা সব কিছু কন্ট্রোল করে ফেলবে সেটা মারাত্তক ভুল। আর সে ভুলটা ইতিমধ্যে সরকার অনুধাবন করেছে। যদি সরকার আবারো সেই সব অংগ সংঘটনকে দিয়ে কোনো প্রকার বাধার সৃষ্টি করতে চায়, তখন শুধু ছাত্র নয়, তাদের সাথে তাদের পরিবার, অভিভাবক সবাই একসাথে রাস্তায় নেমে পড়বে এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নাই।
সরকার নিহত ছাত্রদের জন্য শোকের কথা বলে সারাদেশে শোকদিবস পালনের ঘোষনা দিয়েছে। আবারো ভুল। কারন নিহত ছাত্র গুলিকে সরকার বা সরকারের বাহিনীরাই করেছে। সেইতার বিচারের নির্দেশনা না দিয়ে শোকের বার্তা দেয়া কোনো মানুষ, ছাত্র কিংবা জনতা মানবে না। মানেও নাই। কাল ব্যাজের পরিবর্তে এখন সবাই লাল ব্যাজ ধারন করছে।
হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট এর সিনিয়ার ল ইয়ারগন, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচারগন, আপামর জন সাধারন যেভাবে একের পর এক ফুলে উঠছে, এই সরকার এর কোন কিছুই সমাধান দিতে পারবে বলে মনে হয় না। নিহত ছাত্রদের অভিভাবকগনকে ডেকে পোলাও খাওয়াবেন, ক্ষতিপুরন দেবেন, এতেই কি তারা খুশি হয়ে আপনাকে মাফ করে দিবে বলে মনে করেন?
দেশে এখনো এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিলো না যে, সেনাবাহিনী নামাতে হবে। এই অল্প তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই যদি সর্বশেষ ট্রাম কার্ড ব্যবহার করে ফেলা হয়, যখন এর থেকে আরো তীব্র আন্দোলন রাস্তায় হবে, তখন কোন শক্তি প্রয়োগ করবেন? সেনাবাহিনীর চীফ সরকারের আজ্ঞাবহ মানেই কিন্তু এতা না যে, সেনাবাহিনির সবাই সেনাপ্রধানের কথায় চলবে। মাত্র গুটি কতক সেনা বা একটা ব্রিগেড যদি জনতার কাতারে নেমে যায়, সেনাবাহিনি তার বন্দুকের নল ঘুরিয়ে দিতে এক সেকেন্ড সময় লাগবে না কারন এই সেনাবাহিনী পিলখানার যন্ত্রনা ভুলে নাই, এই আর্মড ফোর্সেস একই কোর্ষ থেকে তিনজন চীফ নিয়োগে কখনোই খুশী হয় নাই। আরো অনেক কারন আছে এই সেনাবাহিনীর ক্ষোভ ঢালার। সুতরাং সেনাভিনীই একমাত্র সমাধানের উৎস হতে পারেনা। আজকের দিনের সেনাবাহিনীর ছেলেমেয়েরাও এই জেড জেনারেশনের বাচ্চা, এদের স্ত্রীরাও আগেরদিনের সেনা অফিসারদের গিন্নী থেকে অনেক তফাত। আজকের দিনের সেনা কর্মকর্তাদের মানসিক বিবেচনাও অনেক তফাত। তারা কি এটা অনুধাবন করবে না যে, তাদের বাচ্চা কাচ্চারা যখন স্কুল কলেজে যাবে, তাদের স্ত্রীরা যখন সমাজের অন্যান্য মহিলাদের সাথে মিশবে, তারা কি সেম এর আওতায় আসতে পারেনা? যদি সেটা হয়, তাহলে আরেক যুদ্ধ।
এই সরকারের সময়টা খুব ছোট হয়ে আসছে ক্রমাগত। বিরোধী দলের রাজনীতির প্রলেপ দিয়ে কোনোভাবেই জনরোষ ঠেকানো যাবে না। জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করা যেতে পারে কিন্তু বর্তমান আন্দোলন তো জামাত-শিবির বা বি এন পি কে ঘিরে নয়!! হয়তো তারা এই আন্দোলনের ছায়ায় সরকারের কিছু নাশকতা করে সরকারকে আরো দূর্বল করার চেষ্টা করছে। ফলে জামাত-শিবির বা বি এন পিকে কাভার দিয়ে কোনো অবস্থাতেই বর্তমান আন্দোলনকে থামানো যাবে না।
আগামীকালকে জামাত-শিবিরকে নির্বাহি আদেশে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হবে বলে জানিয়েছে আইনমন্ত্রী। এটাও একটা ভুল সিদ্ধান্ত এই মুহুর্তে। একটা এতো বড় দলকে নিষিদ্ধ করলেই কি মানুষ গুলি আর আন্দলন করবে না? জামাতের কর্মীরা এতো বেশী ট্রেইন্ড যে, তারা দলের পরিচয় ছাড়াই তাদের সররাত্তক আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়। বরং তখন তারা আরো বেশী ডেস্পারেট হবে। তাছাড়া তাদের নেটওয়ার্ক আরো বেশী স্ট্রং। এইটাও একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিলো সরকার।
তাহলে সমাধানটা কি? সমাধান একটাই। জনগন যদি ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে, সেই জনগনের কাছে আবার ফিরে যাওয়া। অর্থাৎ নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর যদি সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়, তাহলে আওয়ামিলীগ এই যে এবার রাজনীতি থেকে বহিষ্কার হবে, আগামি শত বছরেও আর রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারে কিনা সন্দেহ আছে।