একটা সময় ছিলো যখন ‘সময়’ টাকে রাজত্ব করেছে বাইজেন্টাইন, রোম, প্যারিস, জার্মানী, তারপর ব্রিটিশ। এখন তারা আর সেই একচ্ছত্র ক্ষমতার শীর্ষেও নেই, রাজত্বও করার সুযোগ নাই। নব্বই দশক থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতার শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিটি শীর্ষ ক্ষমতাধর সম্রাজ্য কোনো না কোনো যুদ্ধের মাধ্যমেই তাদের পতন হয়েছে।
যারা আগের দিনে রাজত্ব করেছে, তারা যদিও একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি কিন্তু তাদের মধ্যে সেই মোড়লগিড়ি করার প্রবনতাটা বিদ্যমান আছে আর সেই প্রবনতা থেকেই বর্তমান বড় মোড়লের তালে তাল মিলিয়ে ক্ষমতার একটা মজার ভাগ তারাও শেয়ার করে যাচ্ছে।
এবার এই ইউক্রেন যুদ্ধকে আমার কাছে মনে হয়েছে সেই রকম একটা যুদ্ধ যেখানে একচ্ছত্র ক্ষমতার পালাবদল হয়। টার্নিং পয়েন্ট। আমি প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি- দ্রুত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে নিজেদের সার্থের দন্ধে বিভাজিত হয়ে যাচ্ছে, ভুল কিছু নিষেধাজ্ঞার কারনে সারা দুনিয়া থেকে পেট্রো ডলারের একচ্ছত্র প্রভাব শেষ হয়ে যাচ্ছে, সুইফট সিস্টেমের এর বিপক্ষে অনেকগুলি সমগোত্রীয় অন্য সিস্টেম কাজ করা শুরু হয়ে গেছে। ফলে একচ্ছত্র অর্থ নিয়ন্ত্রনের মুল কারবারীর বিশ্ব অর্থিনীতি থেকে ডলার বা ইউরো হারিয়ে যাবে ধীরে ধীরে। এর বিপক্ষে অন্য কারেন্সী প্রাধান্য পাবে।
যারা একটা সিস্টেমকে বিশ্বাস করে ব্যক্তি পর্যায়ে বা দেশীয় পর্যায়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান অর্থ যুক্ত্রষ্ট্রের মতো দেশের রিজার্ভ ব্যাংকে এতো পরিমান নিজেদের অর্থ রাখে, সেই অর্থ একটা মুখের কথায় যখন বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ার কালচার আমেরিকা শুরু করেছে, ফলে কোনো দেশ বা কোনো ব্যক্তি অন্তত আর ওই পথে পা ফেলবে বলে মনে হয় না। তাতে আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাংক ধীরে ধীরে খালী হয়ে যাবে। অন্যদিকে আমেরিকা যে পরিমান অর্থ চায়না বা অন্যান্য ধ্বনি দেশগুলি থেকে ঋণ নিয়েছে, তাঁর পরিমানও নেহায়েত কম নয়। অর্থাৎ ইকোনোমিক্যাল ব্যালেন্সও কিন্তু ইকুইলিব্রিয়ামের মধ্যে নাই।
এমন একটা অবস্থায় পুর্বের মোড়ল গুলি যেমন জার্মানী, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, তুরুষ্ক এবং তাদের সাথে ইউরোপিয়ান গোষ্ঠীরা খুব দ্রুত অন্যান্য দেশ যেমন চায়না, রাশিয়া, মিডল ইষ্ট, এবং আমেরিকাকে পছন্দ করে না এমন দেশ সমুহ একজোট হয়ে যাচ্ছে। এতে যেটা হবে, খুব বেশীদিন হয়তো আমেরিকা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে। আজকাল মিডিয়ার যুগ, মিস-ইনফর্মেশন-ওয়ার খুব একটা সুফল আনে না। তথ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইনফর্মেশন সুপার হাই ওয়েতে সব তথ্য এক সাথে চলে আসে। ফলে আমেরিকাকে তাঁর হেজিমুনি ধরে রাখতে এখন সুপার ইন্টেলেকচুয়াল এবং অনেক বেশী বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন নেতার প্রয়োজন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলেই যে সে ভালো নেতা, সব বুদ্ধির অধিকারী, কিংবা চালাক কিংবা দুরদর্শী লিডার বা ইন্টেলেকচুয়াল এমনটা ভাবার দিন হয়তো শেষ।