১৮/৮/২০২৪ – ইলেকশন ক্রাইটেরিয়া

ইন্টেরিম সরকারের প্রধান ডঃ ইউনুস স্যার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি এবং গনমাধ্যম এই কয়েকটি সেক্টরে আমুল সংস্কার করবেন। এটাই আপাতত প্রধান লক্ষ্য। উনি ঠিক সেক্টরের কথাই বলেছেন।

 

নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আমার কিছু মতামত ছিলো যেমনঃ

 

(১)        পার্লামেন্টে যারা প্রতিনিধি হয়ে আসবেন, তাদের কমপক্ষে মাস্টার্স লেবেলের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা উচিত। মাস্টার্স লেবেল না হলেও কমপক্ষে গ্রাজুয়েশন লেবেল অবশ্যই থাকা উচিত। কারন এই এমপিদের থেকেই কেউ না কেউ মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ইত্যাদি হবেন। এরা যেমন দেশের পলিসি মেকার তেমনি দেশ বিদেশের তাদের কাউন্টার পার্টদের সাথেও তাদেরকে ডিপ্লোমেটিক আলাপ-আলোচনায় বসতে হয়। প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং ডিপ্লোমেটিক জ্ঞান ছাড়া দেশের জন্য খুব ভালো পজিটিভ ফলাফল আনা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।

 

(২)       নির্বাচনের সময় ক্যান্ডিডেটদের নির্বাচনের পাশাপাশি যদি সাধারন জনগন সঠিক ক্যান্ডিডেট দেয়া হয় নাই বলে মনে করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে শতভাগ জনগনের রায় প্রতিফলিত হবার নিমিত্তে একটা অপশন থাকা উচিত যাকে আমরা “না ভোট” বলি। না ভোটের মাধ্যমে জনগন তাদের রায় দেয়ার একটা অপশন থাকলে অযোগ্য ব্যক্তিকে প্রত্যাখান করার জন্য রায় দিতে পারে। যদি “না ভোট্র” পরিমান বেশী হয় তাহলে দলগুলি বুঝতে পারবেন যে, তাদের ক্যান্ডিডেটকে জনসাধারন পছন্দ করেন নাই।

 

(৩)      প্রতিটি ক্যান্ডিডেটের এবং তাদের পরিবারের বিশেষ করে স্ত্রী, সন্তানের দৃশ্যমান আয়ব্যায়ের সঠিক তথ্য জনসম্মুখে (মিডিয়ার মাধ্যমে খোলাখুলি প্রচার) প্রকাশ করা।

 

(৩)       নির্বাচনে কমপক্ষে ৬০% থেকে ৬৫% ভোট কাস্টিং না হলে সেখানে পুনরায় ভোটের ব্যবস্থা করা উচিত।

(৪)       এক নাগাড়ে কেউ দুইবারের বেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধান হতে পারবেন না। সংখাগরিষ্ট দলের মধ্য থেকেই রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান করতে হবে এমন নয়। সব দল তাদের দল সংখাগরিষ্ঠ হতে পারেন ভেবে তারা রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য দলগুলি থেকে সাধারন নির্বাচনের সময়ের আগেই তারা প্রোবাব্যাল ক্যান্ডিডেটের নাম নির্বাচন করে দেবেন এবং তিনিও জনসাধারনের গনভোটে সরকার প্রধান নির্বাচিত হতে পারেন।

 

(৪)       আরেকটা অপশন এমন হতে পারে যেঁ, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হলে দল নির্বিশেশে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতির জন্য আলাদা নির্বাচন এর আয়োজন করা যেখানে সাধারন জনগন অংশ নিতে পারেন।

০২/০৭/২০২৪-নিজের বল বাহুবল (নিখিল এম পি)

আমার স্ত্রী মিটুল চৌধুরী সরমারি বাঙলা কলেজে বহুবছর যাবত কর্মরত আছে। এখানে সে বিভাগীয় প্রধান, পর পর দুইবার শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক, পরবর্তীতে ভাইস প্রিন্সিপ্যাল হিসাবে কাজ করছে। গত ১২ জুন ২০২৪ তারিখে প্রিন্সিপ্যালের পোষ্ট খালি হওয়ায় আমরা স্বাভাবিক কারনেই মিটুল যেনো এখানকার প্রিন্সিপ্যালই হোক চেয়েছিলাম। এর জন্য ঢাকার মেয়র আতিক ভাইয়ের একটা ডিও লেটার নেয়া হয়েছে, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের পিএসও লেঃ জেনারেল শামিম শিক্ষা সচীব (যিনি ওর ক্লাসমেট) কে ফোন করেছে, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী চাপা আপাও মিটুলের পক্ষে সায় দিয়েছে। আমাদের লোকাল এমপি মাইনুল হোসেন খান নিখিল ডিও লেটার দিতে চায়নি। অনেকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাকে শেষ মুহুর্তে এসে ডিও লেটারটা দেয় নাই। অথচ আমরা তার ভোটার, স্থায়ী বাসিন্দা এই এলাকার। এর মধ্যে সে অনেকগুলি শর্ত দিয়েছিলো যেমন (১) মিটুল মাইনিকগঞ্জের মেয়ে হওয়াতে দুর্জয়কে দিয়ে ফোন করাইতে বলেছিলো, দূর্জয় ফোন করেছিলো (২) ঈদুল ফাতেহার সময় যাকাতের জন্য প্রায় ৭০ হাজার টাকার একটা ডোনেশন চেয়েছিলো, তাও দিয়েছি, শীতকাল থাকায় আমি আমার ফ্যাক্টরি থেকে তাকে প্রায় ২০০ সুয়েটার্স দিয়েছি।

এই এমপির সাথে আমাদের আগেও কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলো না। যখন সে এমপি হলো, তখন তার কাছে আমি শুধুমাত্র একটা ডিও লেটার চেয়েছিলাম যা সে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলো। কিন্তু কি এমন হলো জানি না, হটাত করে সে যেনো আর আমাদেরকে চিনেই না। জানি সে ঘুষ খায়, দূর্নীতি করে সেটা আমার দেখার ব্যাপার না। সে আওয়ামী যুব লীগের নাকি সভাপতি। ইন্টার পাশ একটা মানুষ। এদেশে সেই সব ইন্টার পাশ মানুষ গুলিই ডক্টরেট ওয়ালা মানুষদেরকে নিয়ন্ত্রন করে কারন খারাপ রাজনিতি। কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নাই।

যাই হোক যেটা বলছিলাম, নিখিলের সাথে আমাদের কোনো প্রকার পূর্ব পরিচয় কিংবা ঘনিষ্ঠতাও ছিলো না। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নিজেও আমার স্ত্রীকে নিখিলের কাছ থেকে একটা ডিও লেতার আনার কথা বলেছিলো এই বলে যে, ঢাকার মেয়র (আতিক সাহেবের ডিও অবশ্যই অনেক শক্ত একটা রিকম্নডেশন কিন্তু সেটা ঢাকার মধ্যে, কিন্তু নিখল এম পি সারা বাংলাদেশের যুব লীগের সভাপতি হওয়ায় তার প্রভাব রাজনীতিতে অনেক বেশী। এর মানে হলো আমার কাছে মনে হয়েছে যে, নিখিলকে শিক্ষামন্ত্রী ভয় পায়, কিংবা নিজের মন্ত্রনালয়ে একটা স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে সে পারেনা। এটা লিডার বলে না।

যাইহোক, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার আপা, শিক্ষা সচীব, ডিজি সবাই মিটুলকে সাপোর্ট করলেও এবং তার একক নামে প্রিন্সিপ্যালের পোষ্টিং ফাইল সর্ব উচুতে উঠলেও এক রাতের মধ্যে আমিরুল ইসলাম পলাশকে সরাসরি শিক্ষামন্ত্রী নিখিলের আদেশে বাঙলা কলেজের প্রিন্সিপ্যাল করা হয়।

পলাশ সম্পর্কে আমার যা ধারনা ছিল, সে প্রিন্সিপ্যাল হবার পর, তার কথাবার্তা, আচরন এহং ব্যভার দেখে আমি কিছুতেই আগের পলাশ আর প্রিন্সিপ্যাল পলাশকে চিনতে পারছিলাম না। তার একটা ছত উদাহরন দেই-শিক্ষক্মন্ডলির একতা মিটিং এ পলাশ প্রকাশ্যে একটা মন্তব্য করেছিল- এই মীরপুর এলাকায় দুইজন সন্ত্রাসি আছে, এক নিখিল আর ২য়টা আমি পলাশ। ফলে কেউ যদি কোনো কিছু করতে চায় যা আমি চাই না, তাহলে তাকে ফায়ার করে দেবো।

এগুলি প্রিন্সিপ্যালসুলভ কোনো কথাবার্তা নয়।একজন সরকারি কর্মকর্তাকে আরেকজন কর্মকর্তা এভাবে ফায়ার করার হুমকি কিংবা নিজে ডিক্লেয়ারড সন্ত্রাসি এগুলি কোন সভ্য মানুষের কথা নয়। 

২৩/৫/২০২৪-স্ত্রী রম্যরচনা

শুক্রবার। সাধারনত আমি বাসায় থাকি। আমার বউ মাঝে মাঝে বাসায় থাকে কারন বেশিরভাগ সময়েই তার অফিশিয়াল কাজে কলেজে থাকতে হয়। বউকে বললাম, আমার জন্য শুক্রবারটা একটা কঠিন দিন। বড় মেয়ে তার নিজের বাসায় থাকে, ছোট মেয়ে বিদেশ, বউ কলেজে আর আমি বাসায়। বাসায় একা থাকায় দুপুরে খেতেও ইচ্ছে করেনা। খালার পাক করা খাবার খেতে খেতে এখন আমি মুটামুটি জানি এর সাধ কি আর কি আইটেম। কিন্তু আমি আমার অফিসে থাকলে অন্তত সময়টা কেটে যায়, কাজে ব্যস্ত থাকি, খাওয়া দাওয়াও সমস্যা না।

তো আজ শুক্রবার। সম্ভবত আমাকে খুশী করার জন্য তার একটা পরিকল্পনা আছে। সকালে উঠেই বলল, আজ দুপুরে সে বাসায় আছে। নিজের হাতে রান্না করবে। বেশ কিছু আইটেমও করবে। আমি আবার খাবারের বেলায় একেবারেই নাদান। বউ মাঝে মাঝেই বলে, আমি নাকি “আখাওড়া”। কিছুই খাইতে জানি না। আমিও বউকে বলি-তুমি হইলা গিয়া “চৌধুরী বাড়ির মাইয়া” খাইয়াই বড় হইছো, আমি তো মাদবর বাড়ির পোলা, মাইনষেরে খালী খাওয়াইছি। আমার কি দোষ।

যাক, সকালে এসেই বউ বলল-শোনো, ছোট মাছের চচ্চরী পাকাবো? খাইবা?

বললাম- করো। অসুবিধা নাই। খাওয়ার সময় খাইতে মন চাইলে খাইতেও পারি।

বউ বল্লো-জানি তো খাইবা না। টেবিলেই পড়ে থাকবে। থাক তাহলে ছোট মাছের চচ্চরি বাদ। তাহলে রুই মাছ পাক করি? রুই এর মাথাটা খাইও।

বল্লাম-এত বড় রুই এর মাথা খাইতে গেলেও জ্বালা। তারপরেও করো। খাওয়ার সময় দেখা যাবে।

বউ বলে উঠল- জানি তো, খাইবা না, শেষে আমারেই খাইতে হবে। থাক তাহলে রুই পাক না করে তাহলে মুরগী বা গরুর মাংশ পাক করি। গরম গরম খাইতে ভালো লাগবে। কি বলো?

আমি বললাম-করো। তবে আজকাল তো আর মাংশ টাংশ খেতেই চাই না। বয়স হয়ে গেছে। তারপরেও করো, দেখা যাক, ঝোলটোল দিয়ে খাওয়া হয়তো খারাপ লাগবে না।

বউ বলেই ফেলল- আমি জানতাম, তুমি এটাই বল্বা। সাধে কি আর তোমারে “আখাওড়া” বলি? ঠিক আছে, তাহলে খালাকে বলি কাঠালের বিচি দিয়া চিংড়ি মাছের একটা তরকারী করতে। কাঠালের বিচি দিয়া চিংড়ি মাছ খুব মজা।

বললাম, এটা আবার কি? ঠিক আছে করো। কখনো খাই নাই, খাওয়ার সময় টেষ্ট করে দেখবোনে কেমন লাগে। আজকাল কাঠাল মিয়াও সব্জীর কাতারে আইয়া পড়ছে। অথচ রাষ্ট্রীয় ফল কাঠাল। কতো অধোপতন, না?

এবার বউ বল্লো- খাইবা না তো জানি। শেষে সব আমারই খাওয়া লাগবে, না হয় খালাকে দিয়া রক্ষা পাইতে হবে। থাক তাহলে।

এরপর বউ বল্লো- ছাদে কলমীশাক আছে আর পুইও আছে। ওগুলি করি?

কিছু বললাম না।

এখন আমি একা কলমী শাক দিয়া পুই খাচ্ছি।

১৭/৫/২০২৪-চীন-রাশিয়ার একত্রিভুত পদক্ষেপ

এক নাগাড়ে ৭৫ বছর যাবত চীন এবং রাশিয়ার বৈরিতার পরে যখন রাজনীতির ভুল চালে এই দুই ভেটো পাওয়ারধারী নিউক্লিয়ার শক্তধর পরাশক্তি চরম শত্রু থেকে চরম বন্ধু বনে যায় এবং কাছাকাছি চলে আসে, তখন আর কোনো বিশ্লেষনের প্রয়োজন পড়ে না যে, বাকি সব পরাশক্তির দূর্দশা একেবারেই দরজার পাশে।

প্রাচীনকাল থেকেই আমেরিকার প্রথম কুটনৈতিক ফর্মুলাই ছিলো যাতে চীন এবং রাশিয়া কখনোই কাছাকাছি না আসতে পারে এবং তারা বন্ধু হতে না পারে। এটা আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্টই তাদের মাথা থেকে ঝেড়ে মুছে ফেলে দেয় নাই। এমন কি রগচটা ডোন্যাল্ড ট্রাম্পও না। ট্রাম্প নিজেও চীনকে ট্যারিফ, বানিজ্য সীমাবদ্ধতা কিংবা এমন এমন চাপে রেখেছিলো যাতে চীন আর যাইই করুক, আমেরিকাকে একহাত দেখে নিতে না পারে। ট্রাম্পের বিশেষ চোখ ছিলো চীনের বানিজ্যতে। কারন চীনের দরকার পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ান মার্কেট। আর সে কারনেই চীনকে সহজে বশ মানানো যাচ্ছিলো। আর চীন নিজেও জানতো ডলার হেজিমনি, ইউনিপোলারিটি ইত্যাদি ছিলো চীনের জন্য মারাত্তক বাধা। সে একা এই বাধাগুলি অতিক্রম করতে পারছিলো না। পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়াকে মনে করে একতা “গ্যাস স্টেশন”, চীনকে মনে করে একটা “ক্মুনিস্ট সুইট শপ” যাদের উভয়ের সেনাবাহিনি কোনো ব্যাটল টেষ্টেড না।

পশ্চিমাদের বর্তমান প্রশাসন তাদের এই মিথ্যা বিশ্বাসকে নিজেরাই বিশ্বাস করে ইউক্রেন-রাশিয়া কনফ্লিকটকে কেন্দ্র করে জো বাইডেন প্রশাসন আমেরিকাকে তো অবশ্যই সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে সাথে নিয়ে জোট বেধে রাশিয়াকে বধ করতে গিয়ে এখন দুই রাঘব বোয়াল, চীন এবং রাশিয়া, এমনভাবে এক করে ফেলেছে। সব রোগের এক ঔষধ নয়। আর “নিষেধাজ্ঞা” তো অবশ্যই কোন মেডিসিন নয়। কিছু কিছু দেশের বিপক্ষে এই মেডিসিন সাময়িক কার্যকর হলেও চীন, ভারত, রাশিয়া এদের বিপক্ষে এগুলি কোন এন্টি বায়টিক হিসাবে কখনোই কার্যকর যে হবে না এটা বর্তমান প্রশাসন ভাবেনি। এটাও ভাবেনি যে, এই “নিষেধাজ্ঞা” কার্যকরী না হলে এর পরিনতি কি হতে পারে। ফলে যা হবার তাই ঘটছে এখন। ডলার হেজিমনি, কোনো আইনের বই ব্যতিরেকে রুলস বেজড ইন্তারন্যাশলার অর্ডারের সমাপ্তি,  ইউনিপোলারিটি থেকে মাল্টিপোলারিটি এবং আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে এখন। একটা কথা মনে রাখা দরকার-শ্ত্রুর শত্রু হল মিত্র।

পশ্চিমা বিশ্ব নেতাদের মাথা থেকে সম্ভবত একটা কন্সেপ্ট উধাও হয়ে গিয়েছিলো যে, চীন এবং তদানিন্তত সোভিয়েট রি পাব লিকের মধ্যে এই ৭৫ বছরের দন্ধ বেসিক্যালি ছিলো কট্টর কমুনিজমের কারনে। কিন্তু সেই সোভিয়েট ইউনিয়ন এখন আর নাই, এটা এখন রাশিয়ান ফেডারেশন, আধুনিক কন্সেপ্টে বর্তমান প্রজন্ম বেড়ে উঠছে। একই অবস্থা চীনেরও। সেই পুরানো জের ধরে থাকা বর্তমান প্রজন্ম নয় এরা। সেখানে ওয়াল্মার্ট, জেসি পেনি, ম্যাডোনাল্ডস, সিয়ারস, ম্যাকির মতো পশ্চিমাদের দোকানে যেতে এই প্রজন্মের কোনো বাধা নাই।  

রাশিয়া ইউরোপের একটা অংশ হওয়ায় ইউরোপ এখন যতোই অন্যের তালে পড়ে নাচানাচি করুক না কেনো, খুব অচীরেই ইউরোপ তার নিজের প্রয়োজনে আবার রাশিয়ার সাথে একত্রিভুত হতে বাধ্য। রাশিয়ার যতোটা না ইউরোপকে প্রয়োজন, ইউরোপের তার থেকে বেশী প্রয়োজন রাশিয়াকে। কারন পুরু ইউরোপ রাশিয়ার অনেক কমোডিটি, অনেক রিসোর্সের উপর প্রায় শতভাগ নির্ভরশীল। অন্যদিকে চীনের রিসোর্স, সস্তা টেকনোলোজি এবং বিশাল সাপ্লাই সারা দুনিয়ায় এমনভাবে জড়িত যে, যা রাশিয়ার নাই তা চীনের আছে, আবার যা চীনের নাই তা রাশিয়ার আছে।  তাছাড়া বর্তমান চীনের বাজার এতো সম্প্রসারিত যে, পশ্ছিমা বা ইউরোপিয়ান মার্কেটের যতো না চীনের দরকার তার থেকে অনেক গুন বেশী দরকার চীনকে তাদের। একটা মুল্যবোধ সর্বদা মনে রাখা দরকার যে, বাজারে গিয়ে কোনো কাষ্টোমার তার দেশ প্রেম দেখায় না। তার কাছে কমোডিটির মুল্যটাই প্রধান, হোক সেটা চীনের, বা রাশিয়ার বা অন্য কোনো দেশের।

এই দুই রাঘব পরাশক্তি নিউক্লিয়ার এবং ভেটো শক্তির অধিকারি দেশকে কখনোই আমেরিকার ভুল রাজনৈতিক চালের কারনে এক হতে দেয়া ঠিক হয় নাই। ফলে পরবর্তী যে কনো বিশ্ব ইস্যুতে আর কখনোই কারো ভেটো পাওয়ারের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। এই ভেটো পাওয়ার এখন শুধু ব্যবহৃত হবে যে কোনো সিদ্ধান্তকে নাকচ করার জন্য। ইউনিলেটারাল সিদ্ধান্তের দিন সমাপ্ত।

একটা সময় খুব কাছাকাছি যে, ইউরোপ আবার রাশিয়ার সাথে একত্রিভুত হবেই, ন্যাটো সয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর অবস্থায় অথবা বিলুপ্ত হবে। রাশিয়া, চীন, ইরান, মিডল ইষ্ট, ভেনিজুয়েলা, নর্থ কোরিয়া এশিয়া, আফ্রিকা মিলে একটা গ্র্যান্ড মেরুকরন হবে যেখানে সেকেন্ডারি কিংবা আরো নীচের ধাপে চলে যাবে পশ্চিমা বিশ্ব।

এই বিশাল পরিবর্তিত অধ্যায়ের জন্য একমাত্র দায়ি করা হবে শুধুমাত্র বাইডেন প্রশাসনকে যেমন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাংগার একমাত্র কারন বলা হয় গর্ভাচেভকে।

৩০/০৪/২০২৪-এই পৃথিবীতে সুস্থ্য, স্বাধীন, আরাম

এই পৃথিবীতে সুস্থ্য, স্বাধীন, আরাম এবং সম্মানের সাথে বেচে থাকার চেয়ে বড় কোনো নিয়ামক নাই। একজন শারীরিকভাবে অসুস্থ্য বিলিয়নার কোটিপতিকে হাসপাতালের বেডে জিজ্ঞেস করে দেখুন, তার কোনটা প্রয়োজন, টাকা নাকি সুসাস্থ্য? একজন মৃত্যু পথযাত্রী মানুষকে জিজ্ঞেস করুন তার একদিন বেশি বাচার জন্য সে তার অর্জিত সমস্ত সম্পত্তি কাউকে বিলিয়ে দিতে চায় কিনা, একজন অন্ধ, কিংবা পংগু মানুষকে জিজ্ঞেস করুন, তার চোখের জ্যোতি কিংবা পঙ্গুত্ব স্বাভাবিক হবার জন্য সে তার কি কি জিনিষ বা সুখ বিসর্জন দিতে প্রস্তুত?

উত্তর একেবারেই সহজ।

সবাই স্বাধীনভাবে, অল্পতেও আরামের সাথে বেশিদিন বাচতে চায়। পৃথিবী আসলেই খুব সুন্দর। এর গাছপালা সুন্দর, পথের ধারে নেড়ি কুকুরের ঘেউ ঘেউ সুন্দর, বাগানে অবহেলায় বেড়ে উঠা একটা সবুজ পাতার দোলাও সুন্দর। এই পৃথিবীতে কেউ আসলেই কারো নয়, যতো ভালোবাসার কথাই বলুক, যতো আবেগেই আপনাকে কেউ জড়িয়ে ধরুক, দিন শেষে সবাই যার যার তার তার। আপনি দিনের পর দিন বিছানায় পড়ে থাকুন, দেখবেন, একদিন আপনার চারিপাশের লোকগুলিও আর সেই আগের মতো আপনার কাছে আর ঘেষবে না, আপনি আজকে দারিদ্রসীমার নীচে বাস করুন, আপনার যত রুপই থাকুক না কেনো, আপনাকে মানুষ ব্যবহার করতে চাইবে শুধু আপনার শরীরটা। সেটা যদি ঘামে দুর্গন্ধও হয়, তাতেও কিছু আসে যায় না।  সেই শরীর যখন একদিন আর তার দেহের সাধ দিতে পারবে না, দেখবেন, আপনি ব্যবহৃত টিস্যুর মতো ডাষ্টবিনেই পতিত হচ্ছেন। অথচ যখন আপনার শরিরের চামড়া ভাজ পড়ে যাবে অথচ আপনি সুস্থ্য, আপনি সাবলম্বী, আপনি স্বাধীন, দেখবেন তারপরেও আপনার ধারে কাছে মানুষের কোন অভাব নাই।

আপনি দুনিয়া ত্যাগ করার পর কেউ আপনার জন্য এক বিন্দু সময়ও নষ্ট করবে না এই ভেবে, আহা, আমি তাকে যদি আবার পাইতাম। কেউ কাউকে বারবার পাইতে চায় না। যে চলে যায়, সেই হারিয়ে যায়। আজ যারা আপনার কাছে আছে, তারা তাদের সার্থের কারনে আছে। যারা আপনার কাছে আগে ছিলো না অথচ এখন কাছে এসছে মনে রাখবেন তারা শুধু আপ্নার কাছ থেকে এমন কিছু চায় যা তাদের কাছে নাই। হোক সেটা শরির, হোক সেটা অর্থ কিংবা দেহভোগ। সময় পাস করার জন্যেও অনেকে আসে যা একেবারেই ক্ষনিকের। অথচ আবেগের যেন শেশ নাই। এই পৃথিবীর কোটি কোটি সুন্দুরী আছে, কোতী কোটি সুদর্শন আছে, একবার একজনকে ব্যবহার করার পর যেনো অন্য আরেকটি সুদর্শন পুরুষ বা নারির প্রতি মোহ চলে আছে। তাহলে আপনার ভুমিকা কতদিনের? শুধু ততোদিনের, যতদিন আপনার মানুষটির চাহিদা বিদ্যমান। অতঃপর? আপনি অকেজো। আপনাকে কোন দরকার নাই। না সন্তানের দরকার, না স্বামীর, না সমাজের কারো।

যদি বিশ্বাস না হয়, ঘুরে আসুন সেই পতিতালয়ে যেখানে আপনার থেকেও সুন্দুরী কোন মানবী তার সমস্ত দেহ অনাবৃত করে কাউকে না কাউকে খুশি করার চেষ্টা করছে অথচ ক্ষনিকের আনন্দের পর সেই পতিতা না জানে তার পুরুষের নাম বা ঠিকানা, না সেই পুরুষ জানে সেই পতিতাতার পরের দিনের কোন খবর। আজকালকের পর্ন সাইট গুলির কথা ভাবুন, একেকটা নারী একজনের চেয়েও আরেকজন সুন্দুরী, তাদের জন্য কোনো সংসার নাই, অথচ সারা দুনিয়ার মানুষ এদেরকে দেখতে থাকে, আনন্দ নিতে থাকে অথচ কেউ তাদেরকে নিয়ে সংসার করতে আগ্রহি নয়। কেনো? আপনি কোনো সুদর্শন পুরুষের নজরে পড়েছেন, সেটা ভাবুন কিসের কারনে? আপনার গুনের, আপনার রুপের নাকি আপনার সম্পদের? যদি দেখেন, আপনার পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া আরেক সুদর্শনা নারী আপনার পুরুষের চোখ কেড়ে নিয়েছে, তাহলে ভেবে নিবেন, আপ্নিই শুধু তার কাছে সবচেয়ে সুন্দুরী নন। যদি দেখেন, আপ্নার সুদর্শন প্রেমিক আপনার থেকেও বিত্তশালি নারির প্রতি আশক্ত, ঘুরে দাড়ান, সে আপনার জন্য নয়। আর আপনার গুন? সেতো যখন আপনি তার সংসারে প্রবেশ করবেন, তারপরে প্রমান করবেন আপনি কতটা গুনি। সেটা অনেক পরের চাপ্টার।

তাই আমি সর্বদা নিজের জন্য বাচতে চাই। এই পৃথিবীর মানুষ উদপাদনের কারখানা আমি নই, না আমি সেই ফ্যাক্টরী যেখানে আমি পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাবার জন্য দায়িত্ত নিয়েছি। আমি শুধু আজকের জন্য বাচতে চাই। আর যারা আমার সাথে বাচতে চায়, হয়তো তারা বেচে যাবে কিন্তু সেটাও তাদের নিজের সার্থে। পথের ধারে কতই না মানুষ ছাদবিহীন, খাবারবিহীন বা কাপরবিহিন অবস্থায় বেচে আছে, তারাও তো কারো না কারো সন্তান, তাদেরঅ তো বাবা মা ছিলো বা আছে, তারা তো হটাত করে আকাশ থেকে লাফ দিয়ে এই পৃথিবীতে আসে নাই। তাদের জন্য কতজন মানুষ ভাবে? কেউ ভাবে না। কারন মানুষ কারো জন্য কখনোই ভাবে না। আর যারা ভাবে- হয়তো তারা অন্য কোনো চরিত্রের। সংখ্যাটা এতোই ছোট যে, হাতের নলায় ধরা যায়।

এই পৃথিবী কারো জন্য কখনো পক্ষপাতিত্ব করে নাই, কারন সে এতোটাই উদাসিন, কোনো মানুষের চোখের জলের বা সুখের উচ্ছলতা তাকে স্পর্শ করে না।

২৭/৪/২০২৪-ওমরা শেষে আবার ঘরে ফেরা (আলহামদুলিল্লাহ)

প্রায় ১৫ দিনের একটা সফর ছিল। আমি, আমার স্ত্রী, আমার বড় মেয়ে এবং বড় মেয়ের জামাই ডাঃ আবীর। খুব সুন্দরভাবেই আমরা সবাই একসাথে এবারের ওমরাটা করতে পেরেছি। আল্লাহ সুস্থ্য রেখেছিলেন। এর আগেও হজ্জ এবং ওমরা করেছিলাম, এবারের ওমরাটা যেনো আমার কাছে ছিলো ভিন্ন একটা অনুভুতি। হেরেম শরিফে নামাজে দাড়িয়ে তাবত মুসলিম মানুষের জন্য আমার দোয়া ছিল, আমার সকল জানা অজানা বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য দোয়া করেছি, এমন কি যারা আমাকে কোনো না কন কারনে পছন্দ করেন না বা আমাকে ফাকি দেন, আমি তাদের জন্যেও দোয়া করেছি। আমার বাবা মা, ভাই বোন, শশুড় শাশুড়ি, খালা খালু, দাদা দাদি, মামা মামি, চাচা চাচী, জেঠা জেঠি, আমার স্ত্রীর পরিবারের সবার জন্য, যারা বিগত হয়েছেন তাদের জন্য, যারা আগামিতে আসবেন তাদের জন্য, আর যাদের জন্য দোয়া করার কেউ নাই তাদের জন্যেও আমি প্রান ভরে দোয়া করেছি। আমার সুস্থ্যতার জন্য দোয়া করেছি, আমার অজান্তে কনো অপরাধ ক্ষমার জন্য দোয়া করেছি, হালাল রিজিকের জন্য দোয়া করেছি, প্রানভরে সব কিছুর জন্য দোয়া করেছি। আর দোয়া করেছি যে কন অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেন আমি সটিক থেকে তার প্রতিবাদ করতে পারি সেই দোয়াও করেছি। মানুষের উপকার করার মানসিকতা যেন আমার আরো উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি হয় সে দোয়াও করেছি। দোয়া করেছি- আমার দ্বারা যেন কখনো কন মানুষের ক্ষতি না হয় এবং যারা আমার ক্ষতি করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে দাবি রেখেছি। 

এই ওমরায় আমি খুব বেশী করে নিজের মনে এই অনুভুতিটা আনার চেষতা করেছি যে, আমি যে সব জায়গা দিয়ে হেটে গিয়েছি, সেইসব জায়গা দিয়ে আমাদের নবী, অন্যান্য খলিফারা কিংবা অনেক বুজুর্গ মানুশ যারা আল্লাহর আশির্বাদ পেয়ে ক্ষমা পেয়েছেন তারা হেটেছেন, এই অনুভুতিটা আমার প্রতিটা কদমে কদমে অনুভুত হয়েছে। আমি যেন তাদের কাফেলার সাথেই হেটেছি।

নবীর রওজায়র পাশে আমি অহেতুক অনেক ঘুরা ফেরা করেছি, সেই এলাকার চত্তর দিয়েও আমি বহুবার হেটে গিয়েছি আর ভেবেছি, এই জায়গার কোথাও না কোথাও আমার নবির পদধুলী ছিলো যেখানে কখন আমি সেজদায় পড়েছি, কখনো একা বসে ভেবেছি সেই দিন গুলির কথা যখন নবিজি জীবিত ছিলেন এবং তিনি তার সাহাবীদের নিয়ে এদিক সেদিক হয়ত পদধুলি দিয়েছেন। আমি প্রতিদিন নামাজের আজানের সময় যখন ‘আশহাদু আন্না মোহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” বলে আজানের আওয়াজ শুনেছি, আমি ততোবার নবির রওজায় মবারকের দিকে তাকিয়ে শুধু এতাই বলেছি, আমি সাক্ষি দিচ্ছি ঠিক এই রওজার পাশে বসে, আমার নবী হজরত মোহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহিস সালাম আল্লাহর রাসুল এবং আমি তার উম্মত। বারবার তার র ওজা মোবারকের দিকে তাকিয়ে যেন এই উপলব্ধিতা হচ্ছিল-হ্যা তিনি আমাকে দেখছেন, আমি হয়তো তাকে দেখছি না, কিন্তু তিনি আমার মনের এই সাক্ষীটা তিনি সাদরে গ্রহন করছেন। আমার মন ভরে উঠছিলো বারবার।

আমি হেরেম শরীফের সামনে গিয়েও যখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজে মাথা নত করছিলাম, বারবার যেন এতাই মনে হয়েছে-আমি আল্লাহর বিশাল পায়ের নীচে আমার মাথা ঠেকিয়ে কিছু একটা যেনো অনুভব করছিলাম। যেনো তার চরনটা আমার কপালে ঠেকে আছে। প্রতিটি নামাজের শেষে জানাজা নামাজ হচ্ছে। একজন নয় অনেকের জানাজা একসাথে। কে জানে আমার তো জানাজা এখানেই হতে পারতো। এই মৃত্যু নিয়ে কুয়েতি এক বরেন্য লেখকের লেখাটা আমার মনে পড়তো প্রতিদিন। সে লিখেছিলো;

"মৃত্যু নিয়ে আমি কোনো দুশ্চিন্তা করবো না, আমার মৃতদেহের কি হবে সেটা নিয়ে কোন অযথা আগ্রহ দেখাবো না। আমি জানি আমার মুসলিম ভাইয়েরা করণীয় সবকিছুই যথাযথভাবে করবে।"

তারা প্রথমে আমার পরনের পোশাক খুলে আমাকে বিবস্ত্র করবে, আমাকে গোসল করাবে, তারপর আমাকে কাফন পড়াবে, আমাকে আমার বাসগৃহ থেকে বের করবে, আমাকে নিয়ে তারা আমার নতুন বাসগৃহের (কবর) দিকে রওনা হবে, আমাকে বিদায় জানাতে বহু মানুষের সমাগম হবে, অনেক মানুষ আমাকে দাফন দেবার জন্য তাদের প্রাত্যহিক কাজকর্ম কিংবা সভার সময়সূচী বাতিল করবে, কিন্তু দুঃখজনকভাবে অধিকাংশ মানুষ এর পরের দিনগুলোতে আমার এই উপদেশগুলো নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করবে না, আমার (ব্যক্তিগত) জিনিষের উপর আমি অধিকার হারাবো, আমার চাবির গোছাগূলো, আমার বইপত্র, আমার ব্যাগ, আমার ‍জুতোগুলো, হয়তো আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে উপকৃত করার জন্য আমার ব্যবহারের জিনিসপত্র দান করে দেবার বিষয়ে একমত হবে, এ বিষয়ে তোমরা নিশ্চিত থেকো যে, এই দুনিয়া তোমার জন্য দু:খিত হবে না অপেক্ষাও করবে না, এই দুনিয়ার ছুটে চলা এক মুহূর্তের জন্যও থেমে যাবে না, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা ব্যবসাবাণিজ্য সবকিছু চলতে থাকবে, আমার দায়িত্ব (কাজ) অন্য কেউ সম্পাদন করা শুরু করবে, আমার ধনসম্পদ বিধিসম্মত ভাবে আমার ওয়ারিসদের হাতে চলে যাবে, অথচ এর মাঝে এই সম্পদের জন্য আমার হিসাব-নিকাশ আরম্ভ হয়ে যাবে, ছোট এবং বড়….অনুপরিমাণ এবং কিয়দংশ পরিমান, (সবকিছুর হিসাব)।

আমার মৃত্যুর পর সর্বপ্রথম যা (হারাতে) হবে, তা আমার নাম!!! কেননা, যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো, তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলবে, কোথায় “লাশ”? কেউ আমাকে আমার নাম ধরে সম্বোধন করবে না, যখন তারা আমার জন্য (জানাযার) নামাজ আদায় করবে, বলবে, “জানাযাহ” নিয়ে আসো, তারা আমাকে নাম ধরে সম্বোধন করবে না….!

আর, যখন তারা দাফন শুরু করবে বলবে, মৃতদেহকে কাছে আনো, তারা আমার নাম ধরে ডাকবে না…! এজন্যই দুনিয়ায় আমার বংশপরিচয়, আমার গোত্র পরিচয়, আমার পদমযার্দা, এবং আমার খ্যাতি কোনকিছুই আমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে, এই দুনিয়ার জীবন কতই না তুচ্ছ, আর, যা কিছু সামনে আসছে তা কতই না গুরুতর বিষয়… অতএব, (শোন) তোমরা যারা এখনো জীবিত আছো,….জেনে রাখো, তোমার (মৃত্যুর পর) তোমার জন্য তিনভাবে দু:খ করা হবে,

১. যারা তোমাকে বাহ্যিক ভাবে চিনতো, তারা তোমাকে বলবে হতভাগা,

২. তোমার বন্ধুরা বড়জোর তোমার জন্য কয়েক ঘন্টা বা কয়েক দিন দু:খ করবে, তারপর, তারা আবার গল্পগুজব বা হাসিঠাট্টাতে মত্ত হয়ে যাবে,

৩. যারা খুব গভীর ভাবে দু:খিত হবে, তারা তোমার পরিবারের মানুষ, তারা এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ, একমাস, দুইমাস কিংবা বড় জোর একবছর দু:খ করবে। এরপর, তারা তোমাকে স্মৃতির মণিকোঠায় যত্ন করে রেখে দেবে!!!

মানুষদের মাঝে তোমাকে নিয়ে গল্প শেষ হয়ে যাবে, অত:পর, তোমার জীবনের নতুন গল্প শুরু হবে, আর, তা হবে পরকালের জীবনের বাস্তবতা, তোমার নিকট থেকে নি:শেষ হবে (তোমার):

১. সৌন্দর্য্য

২. ধনসম্পদ

৩. সুস্বাস্থ্য

৪. সন্তান-সন্তদি

৫. বসতবাড়ি

৬. প্রাসাদসমূহ

৭. জীবনসঙ্গী

তোমার নিকট তোমার ভালো অথবা মন্দ আমল ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, শুরু হবে তোমার নতুন জীবনের বাস্তবতা, আর, সে জীবনের প্রশ্ন হবে: তুমি কবর আর পরকালের জীবনের জন্য এখন কি প্রস্তুত করে এনেছো? ব্স্তুত: এই জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে তোমাকে গভীর ভাবে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন, এজন্য ‍তুমি যত্নবান হও,

১. ফরজ ইবাদতগুলোর প্রতি

২. নফল ইবাদতগুলোর প্রতি

৩. গোপন সাদাকাহ’র প্রতি

৪. ভালো কাজের প্রতি

৫. রাতের নামাজের প্রতি

যেন তুমি নিজেকে রক্ষা করতে পারো….

তুমি কি জানো কেন মৃতব্যক্তিরা সাদাকাহ প্রদানের আকাঙ্খা করবে, যদি আর একবার দুনিয়ার জীবনে ফিরতে পারতো? আল্লাহ বলেন: ((হে আমার রব! যদি তুমি আমাকে আর একটু সুযোগ দিতে দুনিয়ার জীবনে ফিরে যাবার, তাহলে আমি অবশ্যই সাদাকাহ প্রদান করতাম….)) তারা বলবে না,

উমরাহ পালন করতাম,

অথবা, সালাত আদায় করতাম,

অথবা, রোজা রাখতাম,

আলেমগণ বলেন: মৃতব্যক্তিরা সাদাকাহ’র কথা বলবে, কারণ তারা সাদাকাহ প্রদানের ফলাফল তাদের মৃত্যুর পর দেখতে পাবে,আর, কারণ, উত্তম কথাও এক ধরণের সাদাকাহ।।।

৬/৩/২০২৪-পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছু সুন্দর।

পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছু সুন্দর। ছোট কুকুরের বাচ্চা সুন্দর, একটা মাতাল লোক যখন আবেগে কথা বলে তা শুনতে সুন্দর, রাগের বশে যখন কোনো বৃদ্ধ মানুষ অস্থির আচরন করে তাও সুন্দর। কিংবা কেউ যখন মনের কষ্টে অশ্রু বিসর্জন দেয় সেটাও সুন্দর। সুন্দর শুধু চাঁদ, নীল আকাশ, পাহাড় পর্বত কিংবা সমুদ্রই না। প্রতিটি জিনিষ যা দেখতে পাই যদি খুব মনোযোগ সহকারে দেখি, তখন মনে হয় এতো অল্প সময় নিয়ে কেনো যে এই পৃথিবীতে আসলাম।

এতো সুন্দরের মাঝে অধিক সুন্দর লাগে যখন আমি তোমাকে একেবারে চোখের সাথে তোমার চোখ মেখে তোমাকে দেখি। দেখি যখন তোমার অভ্রু, তোমার শায়িত নাক কিংবা তোমার মুখবদনটা। খুব মায়া লাগে। খুব আদর করতে ইচ্ছে করে। তোমাকে আমি চুমুতে চুমুতে সব জায়গায় এমনভাবে আদর করি, আমি শান্ত হয়ে যাই, অশান্ত হয়ে যাই। তখন আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, প্রশ্ন জাগে কেনো তুমি এতো অবহেলিত হয়ে এতোদিন এতো অনাদরে বেড়ে উঠেছো? কেউ কি তোমাকে আদর করে কাছে নিয়ে বলতে পারতো না কি চাই তোমার? কিসে তোমার হাসি ফুটে? অথবা কেনো তুমি এতোটাই অগোছালো ছিলে? কেউ কি ছিলো না তোমাকে বলার তুমি কে, তুমি কি, তোমার কি ক্ষমতা ছিলো? যেখানেই গেছো, সেখানেই মানুষ তোমাকে ব্যবহার করেছে। ব্যবহার করেছে তোমার বাবা, তোমার মা, তোমার স্বামী, তোমার গ্রাম। কেউ তোমার খারাপ হয়তো চায়নি, কিন্তু কেউ তোমাকে দয়া করেনি। কিন্তু করতে পারতো। তোমার বাবা তোমাকে দয়া করতে পারতো, তোমার গ্রাম তমাকে দয়া করতে পারতো, তোমার সামী তোমাকে আদরে আদরে সব কষ্ট মুছে দিতে পারত। কিন্তু কেউ করেনি।

এটা যখন ভাবি, তখন তোমাকে আর কোথাও যেতে যেতে ইচ্ছে করে না। আবার কে তোমাকে কিভাবে রাখবে, কতটুকু অবহেলা দিবে, আদৌ কেউ তোমাকে আদর করবে কিনা কে জানে?

আমি তোমার সব সময় ভালো চাই। এই পৃথিবীতে আমার থেকে তোমাকে কেউ বেশি ভালোবাসে কিংবা কেউ তোমার জন্য ত্যাগ কিছু করবে, এটা যদি সে আমাকে তার মাথা কেটেও এসে প্রমান করতে চায়, আমি সেটা কখনো বিশ্বাস করবো না।

২/৩/২০২৪-ঈশ্বর কি পারতো না?

ঈশ্বর কি তোমার আমার মিলন লিখতে পারতো না?

আমি ঈশ্বরকে আমাদের এই সম্পর্কে কোনরূপ দোষারুপ করতে নারাজ। ঈশ্বর ঠিক তোমার আমার মিলন লিখেছেন এবং এক করেছেন। কিন্তু আমাদের এই সমাজ সেটা মানতে অনীহা প্রকাশ করেছে। সেটাও সম্ভবত শতভাগ সঠিক নয় যে, সমাজ আমাদের এই সম্পর্ককে বাধা প্রদান করেছে। কারন এই সমাজে এখনো অনেকেই আমার তোমার মত সম্পর্ককে মেনে নিয়েছে। তাহলে আমি কেনো ঈশ্বর বা সমাজকে এক তরফা দোষারুপ করছি?

দোষ আসলে আমার নিজের। আমি সাহসি নই, আমি ভীরু, আমি কিছু মানুষের কাছে জিম্মি। আমি পারিনি তোমাকে আমার নিজের করে প্রকাশ্যে পরিচয় করাতে। তোমার কন দোশ নেই, তুমি তো তোমার সর্বোচ্চটা দিয়েই আমাকে কাছে নিয়েছো। যতটুকু ব্যার্থতা তা সবটুকু আমার নিজের।

অথচ তুমি আছো আমার বুকে, আমার মনে, আমার মস্তিষ্কে, আমার সমস্ত চিন্তায়। তারপরেও আমি তোমাকে আমার সর্বোচ্চটা দিতে পারিনি। আমাদের সমাজ, আমাদের কিছু পরিস্থিতি, আমাদের কিছু ভাবনা, কিছু ভালোবাসা আর আমাদের কিছু মায়া এই সব নিয়ে আমরা মানুষ অনেক জটিল একটা সমাজে বাস করি। তোমার আমার মাঝের এই সম্পর্কটা ঠিক সে রকমের একটা জটিল পরিস্থিতি নিয়ে লেগে আছে। মন যা চায় সেটা কতটুকু গ্রহন যোগ্য, আর কতটুকু গ্রহন যোগ্য সেটা যখন মন মানতে চায় না, তখনই আমরা আরো অনেক জটিল সমস্যায় ভোগতে থাকি।

কতটুকু আর জীবন? অথচ এই জীবনে তুমি আমার অপ্রাকশ্যই থেকে যাবে। যেদিন আমি আর থাকব না, সেদিন তোমার কাছে মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির জায়গাটা তুমি হারিয়ে ফেলেছো। গলা ফাটিয়ে কাদলেও তার অন্তর্নিহিত কারন তুমি কাউকে বলতে পারবে না, না তুমি আমাকে কাছে এসে একটু ছুয়ে ধরে বলতে পারবে-তুমি ভালো থেকো পরপারে।

আমার চলে যাওয়ার পরের দিনগুলি তোমার কেমন যাবে আমি জানি না। কিন্তু আমি তোমার অন্তর থেকে কখনোই যে মুছে যাবো না সেটা আমি নিশ্চিত। সকাল দশটা বাজলে তোমাকে কেউ আর ফোন করবে না, মিছিমিছি টাকা পাও এই বায়না আর কখনো তুমি কারো কাছে করতে পারবে না, অহেতুক কোনো কারন ছাড়া আজ যেমন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করো, তখন পুরু স্বাধীনতা থাকা সত্তেও আর বের হতে ইচ্ছে করবে না।  কেমন যেনো সকাল, দুপুর বিকাল কিংবা রাত একই রকম মনে হবে। নতুন শাড়ি কিনে আর বারবার আয়নায় নিজেকে কেমন দেখা যায়, সেতা আর আগের মত মনে হবে না। তুমি আর আমার আসার অপেক্ষায়ও থাকার কোনো কারন পাবে না।

মানুষ বেচে থাকে, কখনো ইতিহাসে, কখনো খবরে, কখনো বিশ্বাস ভংগের কারনে, কখনো অন্য কারনে। কিন্তু আমি তোমার অন্তরে বেচে থাকব একেবারেই গোপনে চোখের জলে। কাউকে এটা বলেও নিজেকে শান্তনা পাবার কোনো সুযোগ নাই।

তোমার জন্যই আমাকে আরো অনেকদিন বাচতে ইচ্ছে করে। মনে হয় তুমি আমার সাথে আরো অনেকদিন বাচো। অতদিন বাচো যতদিন না তুমি বুড়ি হও, যতদিন না তুমি সাহসী হও, যতদিন পর্যন্ত না তুমি একা একা চল্লেও আর কখনো ভয় না পাও। আমি প্রতিদিন তোমার জন্য দোয়া করি, আমি প্রতিদিন চাই তুমি যেন ভালো থাকো, সুখে থাকো।

০১/০৩/২০২৪-ইন্ডিভিজুয়াল পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন

মানুষ সৃষ্টিগতভাবে কিছু গুনাবলী নিয়েই এই পৃথিবীতে আসে। কেউ খুবই অস্থির প্রকৃতির, কেউ দোদুল্যমান, কেউ অতীব চঞ্চল, কেউ আবার সেই ছোটবেলা থেকেই চুপচাপ আবার কেউ তার বয়সী মানুষের থেকে চালাক। বয়স বাড়ে আর মানুষের অভিজ্ঞতার কারনে এসব জন্মগত গুনাবলীর এক্সপাংশনের সাথে সাথে আরো কিছু গুনাবলির সংযোজন ঘটে। তারমধ্যে হিংসা, পরোপোকারী, লোভ অথবা অবিশ্বাসী অথবা উদার মনের গুনাবলীগুলি অন্যতম। পরিস্থিতি অবশ্য এসব বাহ্যিক গুনাবলীর বড় একটা কারন।

কিন্তু সব কিছুর পরেও সবার একটা ইন্ডিভিজুয়াল পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন থাকে যেখান থেকে যতো কিছুই হোক, যতো খারাপ বা ভালো পরিস্থিতিই হোক সে আর ব্যাক করতে পারেনা। কোনো ব্যক্তি তার এই ইন্ডিভিজুয়াল পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন সম্পর্কে সে নিজেও বেশিরভাগ সময়ে জানে না। এটা হটাত করেই তার ব্যক্তি মনে এমনভাবে উদয় হয় যখন সে তার আশেপাশের কোনো পরিস্থিতিই আর আমলে নেয় না এবং হতাত করেই তার মধ্যে এই কঠিন মনোভাবটায় সে একেবারে এমনভাবে পতিত হয় যে, সে নিজেও সেই পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন থেকে বেরিয়ে আসতে চায় না। সেটা সে এক্সিকিউট করেই ফেলে।

বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এ কারনেই মানুষ আত্মহত্যা, ডিভোর্স, ব্যবসায় থেকে বিচ্ছিন্ন, সম্পর্ক থেকে আলাদা ইত্যাদিতে নিপতিত হয়। ক্ষেত্র বিশেষে কারো কারো এই পয়েন্ট অফ নো রিটার্নে বিশাল জনবহুল গোষ্টি, কর্পোরেট সংস্থা, পারিবারিক জীবন এতোটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয় যে, তার নিজের সাথে অন্যান্য সবাই আরো বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

কাউকে সেই পরিস্থিতিতে কখনোই ঠেলে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমারো সম্ভবত ব্যবসায়িক লাইনে এমন একটা পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন চলে এসছে।

২৯/২/২০২৪-রাশিয়া ইউরোপের

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে আমেরিকা এবং ইউকে কখনোই ইউরোপ অঞ্চলের মধ্যে জিওগ্রাফিক্যালী পড়ে না, তারপরেও তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশ হিসাবে পরিগনিত। অন্যদিকে রাশিয়া খোদ ইউরোপ অঞ্চলের মধ্যে থেকেও সে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অংশ নয়। একইভাবে যদি দেখি, ন্যাটো যাকে নর্থ আন্টালন্টিক ট্রিটি হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় সেখানেও আমেরিকা, ইউকে এরা প্রধান দল। ন্যাটোর বিপরীতে রাশিয়া ওয়ার্শ গড়ে তুলেছিলো বটে কিন্তু যখন রাশিয়া ভেংগে গেলো, তখন তার সাথে ওয়ার্শও ভেংগে দিলো তদানিন্তন সোভিয়েট রাশিয়া। পক্ষান্তরে ন্যাটো কিন্ত রয়ে গেলো আর সেটা বর্তমান রাশিয়ার বিপরীতে। অনেকবার রাশিয়া এই খোদ ন্যাটোতে জয়েন করার কথা জানালেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা ন্যাটো তথা পশ্চিমারা তাতে সাড়া দেয়নি।

এবার যে কয়টা প্রশ্ন মনে জাগে সেটা হল-

(১)       ন্যাটো যদি ওয়ার্শ এর বিপরীতেই তৈরী হয়ে থাকে, সেই ওয়ার্শই যখন নাই, তাহলে এখনো ন্যাটো আছে কেনো?

(১) রাশিয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য না হয়েও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাদের ব্যবসা বানিজ্য, এনার্জি সেক্টর থেকে শুরু করে লোহা, ইউরেনিয়াম, খাদ্য, গ্যাস, তেল, মাছ, এমন কি সামরিক সরঞ্জামাদিসহ সবকিছু রাশিয়ার উপর নির্ভরশিল। রাশিয়া তার দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে সমস্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দেশসমুহকে সস্তায় তেল, গ্যাস রপ্তানী করে। আর এই সস্তায় তেল গ্যাস, ইউরেনিয়াম, লোহা, খাদ্যশস্যের উপর ভিত্তি করে জার্মান ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনইতিক দেশ হিসাবে কমপেটিটিভ মার্কেটে দাঁড়িয়ে আছে।

আমেরিকাতে পৃথিবীর ৫০% রিজার্ভ তেল মজুতে আছে কিন্তু সে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোনো দেশের জন্যই আজ পর্যন্ত একটা পাইপ লাইন তৈরী করে নাই। কেনো করে নাই?

সারা দুনিয়ায় যে সব সফেস্টিকেটেড যুদ্ধ সরঞ্জামাদি আছে তার মধ্যে আমেরিকার তৈরী যুদ্ধ সরঞ্জাম অত্যাধুনিক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, গত কয়েক বছর আগ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভান্ডারে যা যুদ্ধ সরঞ্জামাদি রয়েছে সব রাশিয়ান প্যাটার্নের। এখন এই পুরু যুদ্ধ সরঞ্জামের রাশিয়ার বিকল্প হিসাবে যদি পশ্চিমা যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে রুপান্তরীত করতে হয় তাহলে কত বিশাল একটা মার্কেট আমেরিকার জন্য? আমেরিকা তাদের সবকিছুতে আর্থিক লাভ খোজে। আর এটাও একটা লাভ যে, এবার রাশিয়ার সব যুদ্ধ সরঞ্জামাদি বাদ দিয়ে পশ্চিমা যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সরে আসা।

প্রায় ১৫ হাজার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে রাশিয়ার উপর। রাশিয়া সবচেয়ে বড় পজিটিভ দিক হচ্ছে যে, সে শুধু ইউরোপের সাথেই কানেক্টেড না, সে এশিয়ার সাথেও কানেক্টেড। আর আমেরিকা বা পশ্চিমারা আফ্রিকায় এতোটাই কলোনিয়ালিজম করেছিলো যে, বর্তমানে আফ্রিকা কিছুতেই আর পশ্চিমা প্রোপাগান্ডায় নির্ভর করতে চায় না। বরং তারা সাইড নিয়েছে রাশিয়ার দিকে।

বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে মিডিয়া যেভাবে প্রোপাগান্ডা সারা দুনিয়ায় ছড়াচ্ছে, তাতে সারা বিশ্ব এখন এটাই ভাবছে যে, যেখানেই পশ্চিমারা পদার্পন করেছে সেখানে ওদের ওরাল ন্যারেটিভের বিপরীতেই ফলাফল হয়েছে। এতে ইরাক, আফগানিস্থান, লিবিয়া, ইয়েমেন, ইত্যাদি দেশগুলি আরো বিপর্জ্যের মধ্যে পড়তে হয়েছে।

বর্তমান ইউক্রেনও তার পরিনতি ভোগছে।

একটা সময় আসবেই যখন এই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আবার রাশিয়ার সাথে ঝুকে পড়বে, এই ইউক্রেন যুদ্ধ আলোচনার মধ্যেই শেষ হবে, নতুন যারা ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে, তারা একসময় আফসোস করবে, এবং ডলার হেজিমনি শেষ হয়ে গেলে পশ্চিমারা পুনরায় সেই ইউকে এর মতোই আচরন করবে যে ইউকে কোনো এক সময় সারাটা দুনিয়া দাপটের সাথে শাসন করেছে বটে কিন্তু সে এখন একটা দ্বীপ ছাড়া আর কিছুই না।

এখানে একটা কথা বলে রাখি যে, অন্যান্য দেশের কারেন্সি প্রিন্ট করার আগে যেমন সেটা গোল্ডব্যাকড হতে হয়, কিন্তু আমেরিকার ডলার প্রিন্ট করার জন্য কোনো গোল্ডব্যাক লাগে না। তাই তারা যতো খুশি, যখন খুশি ডলার ছাপাতে পারে যা আসলে একটা কাগজের নোট ছাড়া তাদের কাছে আর কিছুই না কিন্তু অন্য দেশের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার। যখন একদিন এই ডলার তার নিজভুমে ফেরত আসবে বিকল্প কারেন্সির চাপের কারনে, তখন সেখানে এতো বেশি মুল্যস্ফিতি হবে যা কল্পনার অতীত।

২৯/২/২০২৪-নতুন ইউরোপ  

ইউরোপে আভ্যন্তরীন একটা অসচ্ছ এবং খুব জোরালো যুদ্ধ চলছে নিজেদের মধ্যে যেখানে পশ্চিমারা একটা নতুন ইউরোপের স্বপ্ন দেখছে এবং কাউকে সেই স্বপ্নটা দেখাচ্ছেও। ইউরোপের এই নতুন উত্থাপনে মুলত লিড দিচ্ছে প্রকাশ্যে পোল্যান্ড এবং তার সাথে আরো তিনটা বাল্টিক দেশ যারা প্রকাশ্যে রাশিয়ার বিপক্ষে নিজেদেরকে দাড় করিয়ে এটাই মুলত প্রমান করতে চাইছে যে, তারা বেশ শক্তিশালী ইউনিয়ন। পশ্চিমারাও সেই বাল্টিক দেশগুলিকে দিয়ে এটাই প্রমান করাতে চাইছে যে, তাদের মাধ্যমে রাশিয়াকে দূর্বল করা সম্ভব যা জার্মানি বা ফ্রান্স পারে না। তাতে জার্মানির কিংবা ফ্রান্সের ইনফ্লুয়েন্স বর্তমান ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে তাদের মোগলগিড়ির ভাটা পরবে। এই নতুন ইউরোপের চেহাড়া যাকে হয়তো বলা যায় ‘বাল্টিক ন্যাশনস ইউনিয়ন’  ধীরে ধীরে কিন্তু ফুটে উঠছে ইউরোপের ভিতরেই। কিন্তু এটা কি আসলেই সম্ভব? পোল্যান্ড কিংবা বাকী বাল্টিক দেশগুলি কখনোই ইউরপিয়ান ইউনিয়নকে নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না যেমন গাধা কখনো ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। রাশিয়াকে যেমন পশ্চিমারা আজিবন শত্রু মনে করে, তেমনি, পশ্চিমারা জার্মানি এবং ফ্রান্সকেও তাদেরকে শত্রুই মনে করে। উপরে উপরে হয়তো ইউরোপিয়ান ইউরপিয়ান ভাব ধরে সবাই একই নৌকায় বসে আছে কিন্তু এই আরহিদের মধ্যে সবাই সবার ভালো চায় না।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে-না জার্মানী না ফ্রান্স এই নতুন ইউরপীয়ান চেহারায় কাউকে নতুন মোড়ল ভাবার অবকাশ দেবেনা। যখন নিজেদের সার্থের মধ্যে কঠিন আঘাত আসে, তখন ইউনিটি বলতে কিছু থাকে না। তখন সেই ইউনিটি ভাঙ্গতে বাধ্য। কেউ যখন একবার প্রতারিত হয়, সেটা হয়তো ‘শিক্ষা’ কিন্তু যখন কেউ দুইবার প্রতারিত হয় সেটা স্টুপিডিটি, কিন্তু কেউ যখন তিনবার প্রতারিত হয়, সেটা ‘স্টাবর্ন’ হিসাবে দেখা হয়। পুরানো ইউরোপ কখনোই ‘বাল্টিক ন্যাশন’ হিসাবে নতুন ইউরোপকে দেখতে চাইবে না কখনো। কেননা গাছ কোনদিন কুড়াল মার্কায় ভোত দিবে না, যে কূড়াল ব্যবহার হবে সেই গাছ কাটার জন্যই।

চোরদের মধ্যে কোনো “অনার” কাজ করে না।

২৪/২/২০২৪-১৯৯০ থেকে ৯৮ সাল অবধি আমেরিকা

১৯৯০ থেকে শুরু করে ১৯৯৮ সাল অবধি আমেরিকা মোট ২০ থেকে ২৫টি দেশকে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছে। এর মধ্যে আছে আফগানিস্থান, বলকান্স, বেলারুশ, বার্মা, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কংগো, ইথিওপিয়া, হংকং, ইরান, ইরাক, সুদান, লেবানন, লিবিয়া, মালি, নিকারাগুয়া, নর্থ কোরিয়া, রাশিয়া, সোমালিয়া, সাউথ সুদান, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলা, ইয়েমেন, জাম্বিয়া এবং ইউক্রেন/রাশিয়ান, বুরুন্ডি, কিউবা, চীনের বহুজাতীক কিছু আন্তর্জাতীক কোম্পানী, আংশিক তুরুষ্ক এবং আরো অনেকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে-ক্রমাগত এভাবে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলি যেহেতু পশ্চিমা দেশগুলির সাথে সামগ্রিক ব্যবসা বানিজ্য করতে পারে না, এর মানে হলো তারা আরো মাল্টিপ্যাল অপসনের সুযোগ পায় হয় নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত দেশগুলি এক হয়ে কাজ করার তাগিদে অথবা তার সাথে পৃথিবীর অন্যান্য অবশিষ্ঠ দেশগুলির সাথে কাজ করার মাধ্যমে। অন্যঅর্থে এই নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত দেশগুলিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া মানে যারা দিচ্ছে তারাও প্রকারান্তে নিজেরাই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে যাচ্ছে। এভাবে ক্রমাগত সবাইকে একঘরে করে দেয়ার ফলে কোনো এক সময় পশ্চিমারা নিজেরাই সারা দুনিয়া থেকে একঘরে হয়ে যেতে পারে বলে অনেকে মনে করেন অর্থাৎ তাদের সাথে অন্যরা আর কেউ কোন প্রকার দিপাক্ষীয় কার্যক্রম করবে না। এতে কি পশ্চিমাদের লাভ হবে নাকি ক্ষতি?

রাশিয়া যদিও ইউরোপের একটা অংশ কিন্তু সে আবার এশিয়া বা সাউথ ইষ্ট এশিয়ার সাথে তার ভৌগোলিক সম্পৃক্ততা, কালচারাল সম্পৃক্ততা, ব্যবসায়িক লেনদেন (বিশেষ করে ভারত, চীন মায়ানমার ইত্যাদি দেশের সাথে) ইউরোপের থেকেও অনেক বেশী। যার ফলে রাশিয়া এই ইউরোপ ছাড়াও চলতে পারবে যা ইউরোপ কখনো রাশিয়াকে ছাড়া চলা সম্ভব না। রাশিয়ার রিসোর্স সব দিক দিয়ে এতো বেশী যে,সব কমোডিটিতেই রাশিয়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশের জন্য গড়ে প্রায় ২৫% জোগানদাতা। হোক সেটা ইউরেনিয়াম, হোক সেটা তেল-গ্যাস, হোক সেটা লৌহ, কিংবা ফুড কমোডিটিজ। রাশিয়ার কমোডিটিজ যদি ইউরোপ না পায়, তাহলে রাশিয়ার সেই একই কমোডিটিজ ভায়া হয়ে অন্য রাষ্ট্র থেকে কিনতে ইউরোপকে প্রায় ৩ গুন দাম দিতে হয় যার ফলে বর্তমানে ইউরোপের অর্থনীতি প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে প্রায় ভঙ্গুর পর্যায়ে  পৌঁছে গেছে।

ইউরোপের এবং পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় যদি এখনো না হয়, তাহলে ইউরোপিয়ান লিডার জোসেফ বোরেলের মন্তব্য করা “ইউরোপ হচ্ছে গার্ডেন আর ইউরোপ ছাড়া অন্যান্য সবাই হচ্ছে জংলী” এই ধারনা অচিরেই উলটো হয়ে যাবে।

২৩/২/২০২৪-সপরিবারে ওমরা করার পরিকল্পনা

উম্মিকার বিয়ে হয়েছে সবেমাত্র এক মাস ২২ দিন। সবাই থাইল্যান্ডে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা করেছিলাম। তো, গত পরশুদিন উম্মিকা আর আবির বাসায় আসার পর রাতে খেতে খেতে বললাম, থাইল্যান্ডে গেলেও মুটামুটি প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা খরচ হবে। আর থাইল্যান্ডে গিয়ে হয়তো কিছু দর্শনীয় স্থান দেখা ছাড়া আর কিছুই নাই। তার থেকে যদি এমনটা হয় যে, আরো কিছু খরচ যোগ করে আমরা সপরিবারে ওমরা করতে যাই, সেটা ভালো না?

ওরা দুজনেই শীঘ্রই বেবি নেয়ার চিন্তা করছে, তাই বললাম, চল, আল্লাহর ঘরে যাই, ওখান থেকে একটা নিয়ত করে আসি এবং তোমরাও আল্লাহর ঘরটা দেখে আসো। তা ছাড়া রোজার মাস। এম্নিতেই এক রাকাত নামাজ মক্কায় পড়লে ১ লাখ গুন বেশি সওয়াব, যেহেতু রোজার শেষ ১০ দিন পরিকল্পনা করছি, ইনশাল্লাহ শবে কদর পাবই। আর সেই শবে কদরের রাত হাজার রজনীর সমান। এমন একটা বরকত্ময় প্রোফিট কেনো নিবো না?

সবাই রাজী হয়ে গেলো। আলহামদুলিল্লাহ। কনিকাকে আমেরিকা থেকে আসতে বলেছিলাম, কিন্তু ওর ক্লাস চলছে, মিস করতে পারবে না। তাই কনিকার যাওয়া হলো না। আগামীকাল শনিবার ইনশাল্লাহ ওমরার প্যাকেজটা ফাইনাল করে ফেলতে চাচ্ছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।

২০/২/২০২৪-আজ আমার মৃত্যু বার্ষিকী

আজ আমার মৃত্যু বার্ষিকী। কথাটা কেমন অদ্ভুত না? আমি এখনো জীবিত কিন্তু আমি আমার মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে কথা বলছি। কথাটা বলার একটা বিশাল কারন রয়েছে।

দাদার অথবা দাদার বাবার কিংবা তাদেরও দাদাদের মৃত্যু বার্ষিকী এখন আর আমরা কেউ ঘটা করে পালন করিনা। বাবার অথবা খুব বেশী হলে দাদার মৃত্যু বার্ষিকী হয়তো এখনো এই জেনারেশন কিছুটা হলেও পালন করে কিন্তু তাদের পূর্বসূরীদের বেলায় এটা প্রায় ঘটেই না। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একটা জেনারেশন কিছুটা অতীতের হারানো প্রিয় মানুষগুলির জন্য কিছুটা মনে করার তাগিদেই হয়তো সমাগম হয় কিন্তু সেটাও একদিন ফেকাশে হয়ে যায়। আমিও একদিন আমার উত্তরসুরীদের কাছে জেনারেশন থেকে জেনারেশনের পর পুরুই ফেকাসে হয়ে যাবো, এটাই চিরন্তত সত্য। এটা কাউকে দোষারুপ করার মতো কোন কারন নাই। সেদিন হয়তো আর কেউ এটাও বলবে না যে, আজ আমার দাদার দাদার বাবার অর্থাৎ আমার মৃত্যু বার্ষিকী। হয়তো তখনো কারো না কারো দোয়ার মাধ্যমে কোনো না কোনো সাহাজ্য আমার দরকার। কিন্তু তখন কেউ আমাকে মনেই রাখে নাই, দোয়া করবেই বা কে? যেমন মনে রাখি নাই আমিও আমার সেই দাদার দাদার বাবাকে।

আমার মৃত্যুর আগে আমি কত ব্যস্ত ছিলাম, আমাকে ছাড়া হয়তো অনেকের চলতোই না। হয়তোবা এমন হয়েছে, আমি না থাকলে কার কি হবে এই চিন্তাতেই অনেকে অসুস্থ্য হয়ে যেতো, কেউ হতাশ হয়ে যেতো, কেউবা ‘কি যে হবে ভাবতেই পারছিনা’ এমন বাক্যও উচ্চারন করত। অথচ দেখুন, আজ আমি সত্যিই নাই, কিন্তু কারো অফিসে যাওয়া বন্ধ হয় নাই, কারো হাত-বাজার করা বন্ধ হয় নাই, কার ঘুম নষত হয় নাই, সুর্য ঠিকই পুর্ব দিকে যথাসময়ে উদিত হয় ঠিক আগের সময়েই পশ্চিমে অস্ত চলে যাচ্ছে। আকাশের রঙ পালটায় নাই, পাহাড়ের কোনো একতা গাছঅ তার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে ক্ষান্ত হয় নাই, কন ঋতুর পরিবর্তন হয় নাই। শুধু পরিবর্তনটা হয়েছে আমার। আমি শুধু সেখানে নাই।

অনেক বছর বাচতে ইচ্ছে করে।

মৃত্যুকে আমি ভয় পাই।

মৃত্যু থেকে একা থাকা ভাল।

১/২/২০২৪- রিভার সাইডের বার্ষিক বনভোজন

প্রতি বছরই আমাদের রিভার সাইডের বনভোজন হয়, এবারো হলো। এবার প্রথমে আমাদের ভ্যানু নির্ধারিত ছিলো গাজীপুর অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীর গলফ ক্লাবে। কিন্তু অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরীতে কোনো এক হোমরা চোমরা অফিসার পরিদর্শনে আসবে বলে আমাদের ভ্যান্যু বাতিল করা হয়েছে। কি আর করা। আমাদের বনভোজনের ভ্যান্যু অগত্যা পরিবর্তন করতে হলো। চলে গেলো ডঃ ইউনুসের “নিসর্গ গ্রামীন টেলিকম ট্রাষ্ট” রিজোর্টে।

এবারই প্রথম উম্মিকা এবং তাঁর হাজবেন্ড একসাথে আমাদের সাথে রিভার সাইডের পিকনিকে যোগ দিলো। আজই উম্মিকার এবং আবিরের বিয়ের এক মাস পুর্ন হলো। ভ্যানুতে যেতে যেতে আমার প্রায় দুটূ বেজে গিয়েছিলো। প্রায় ১৭০০ লোকের আয়োজন।

র‍্যাফেল ড্র টা হলো না কারন এর মধ্যে আকাশের অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, বৃষ্টিও শুরু হয়েছিলো। বিকাল ৪ তাঁর দিকে বনভোজন সমাপ্তি ঘোষনা করতে বাধ্য হয়েছিলাম।

২/২/২০২৪- মৃত্যুর সাথে জীবনের কন্ট্রাক্ট

সরগমের সাতটা সুরের মধ্যে যদি একটি সুরও ভুল হয় কিংবা নাচের পদক্ষেপেও যদি একটি পদক্ষেপ ভুল হয়, তাহলে গানের তাল, লয় যেমন বিগড়ে যায় আর গান বেসুরু হয়ে পড়ে, তখন গান তো দূরের কথা শোনাও দুরুহ হয়ে উঠে। আর নাচের পদক্ষেপে যখন ভুল হয় তখন মানুষ হোচট খেয়ে মুখ থুবরে মাটিতে পড়ে যায়। তখন অনেকেই নিজের মানুষদের কাছ থেকে নিজেই হারিয়ে যায়, এবং অনেক সময় চিরতরেই হারিয়ে যায়।

আমি অনেক ভেবেচিন্তে এখন সুর তুলি, অনেক চর্চায় পদক্ষেপ ফেলি। কোথাও কোনো ছোট ভুল আমার পরিবারকে হয়তো সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করবে, কেউ না কেউ আমার জীবন থেকে হারিয়েও যেতে পারে এই আশংকায় আমি সব সময় সীমার মধ্যে পা আর লয়ের মধ্যে সুর তুলি।

বয়স হয়ে যাচ্ছে, বয়স কমে যাচ্ছে আমাদের সবার। অর্থাৎ বেচে থাকার বয়স কমে যাচ্ছে। আমি জানি মৃত্যুর সাথে জীবনের একটা সম্পর্ক আছে, একটা কন্ট্রাক্ত আছে। প্রত্যেক কন্ট্রাক্টেরই একতা মেয়াদোত্তির্ন তারিখ থাকে। মৃত্যুর সাথে জীবনেরও সে রকমের একটা কন্ট্রাক্ট। ম্রিত্যু জীবনকে নিয়ে যাবেই। আর সেটা কন্ত্রাক্টের মধ্যেই হতে হয়। কিন্তু মাআনুষ মাঝে মাঝে এতোটাই হিংস্র আর দাপুটে হয়ে উঠে যে, তারা সেই ন্যাচারাল কন্ট্রাক্তকে উপড়ে ফেলে সব কিছু তছনছ করে ফেলে। মৃত্যু তখন নিজ থেকে আসে না, তাকে ডেকে আনা হয়। আআমি সেই অঘটনকে সব সময় ভয় পাই। মৃত্যুকে নয়, ভয় পাই সেই সব মানুষকে। তাই আমি সর্বদা এটা ভাবি, কোনটা স্বাভাবিক নয় আর কোনটা অস্বাভাবিক।

একটা কথা সব সময়ই ঠিক যে, জীবন দাবার বোর্ড হোক বা না হোক, এটা একতা জটিল রহস্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই জটিল জীবনের সব রহস্য আমাদের সবার চোখের সামনেই থাকে, সব তথ্য সবার সামনেই পরিপূর্ন থাকে। কেউ আমরা সেটা দেখতে পাই, কেউ পাই না। কেউ মিথ্যাকে আশ্রয় করে ঘুরপাক খায় আবার কেউ সত্যের সন্ধ্যানে ঘুরপাক খায়। কিন্তু সচেতন মন সব সময় সতর্ক করে বটে কিন্তু সত্য আর মিথ্যা এমনভাবে সমান্তরাল্ভাবে চলে যে, তাদের রঙ, তাদের গতি কখনো কখনো আমাদেরকে উলটা পথে ধাবিত করে। আমাদের সচেতন মন থেকে যা সাড়া পাওয়া যায় তাকে প্রাধান্য দিলে হয়তো কিছুটা সহজ হতে পারে কিন্তু সেটা আমরা সব সময় পারিনা। কথায় বলে দেয়ালেরও কান আছে আর আকাশ সব দেখতে পায়। তাই আমি দেয়াল কি বলে আর আকাশ কি দেখে সেখানে আশ্রয় নেই। কারন জীবন আলো এবং অন্ধকারের মধ্য দিয়ে চলা একটা রাস্তা। এখানে সত্যও আছে, মিথ্যেও আছে, সুন্দর আছে আবার কুৎসিতও আছে।

তাই এই জটিল রহস্য থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে বড় সহজ পন্থা, সব কিছুকে আমলে নেয়া কিন্তু সব কিছুতেই সায় না দেয়া।

জীবনের থেকে সুন্দর আর কিছুই নাই।

২৯/০১/২০২৪-করিডোরস অফ পাওয়ার

অন্দরমহলের রাজনীতিতে সরকার এবং বিরোধী পক্ষ হিসাবে দেশের ভারসাম্য রক্ষায় যেমন আমরা একটা ছক কষি, তেমনি পুরু পৃথিবীতেও সম্ভাব্য শক্তিধর দেশগুলিকে আমরা একত্রিভুত করে এক্সিস এবং এলাইড ফোর্স হিসাবে ছক কষে পুরু প্রিথিবীকে আমরা দুটু ভাগে শাসনে লিপ্ত হই। এই এক্সিস এবং এলাইড ফোর্ষ গুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদান হচ্ছে ইন্ডিভিজুয়াল দেশ সমুহ। এই ইন্ডিভিজুয়াল দেশ গুলি নিতান্তই তাদের ব্যক্তিগত সার্থের জন্য কখনো এক্সিস, কখনো এলাইড ফোর্সে জায়গা পরিবর্তন করে। আর ঠিক এ কারনে অতীত বিস্লেষন করলে দেখা যায়, পৃথিবী কখনো শাসন করেছে মোঘলরা, কখনো জার্মানী, কখনো ফ্রান্স, কখনো পশ্চিমারা। এই ক্ষমতাগুলির নাম যদি দেই, তাহলে এর নাম হতে পারে ‘করিডোরস অফ পাওয়ার”।

কিন্তু এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশগুলির ব্যক্তিগত ক্ষমতা যদিও খুবই নগন্য কিন্তু করিডোর্স অফ পাওয়ারে তাদের সামষ্টিক ক্ষমতার যোগফল একটা বড় ধরনের ফ্যাক্টর। কোনো কোনো ক্ষুদ্র দেশ তাদের ভুল পদক্ষেপের জন্য করিডোরস অফ পাওয়াএর থাকতে চেয়ে বা তার থেকে বিচ্যুত হতে চেয়েও চিরতরে বিলীন হয়ে গেছে। কেউ আবার নতুন করে আরো কিছু অংশ নিয়ে পুনরোজ্জিবীত হয়ে উঠেছে। মাঝখানে কিছু অসহায় মানুষ এর ফল ভোগ করতে করতে তাদের নিজের বর্তমান আর অতীত সবই জলাঞ্জিত দিতে হছে। নিরপেক্ষতা যদিও একটা বিপদ্মুক্ত অবস্থান কিন্তু যুগে যুগে কিছু ভুল নেতার কারনে নিরপেক্ষ থাকতে চেয়েও ক্ষুদ্র দেশ গুলি কোনো না কোন আবেগে তাদের পক্ষ পরিবর্তন করে হয় এক্সিস না হয় এলাইড ফোর্সের করিডরসস অফ পাওয়ারে যোগ দিয়ে সর্বিশান্ত হয়ে গেছে।

ইউক্রেন, তেমন একটি রাষ্ট্র।

আমি এর আগেও বহু লেখায় শুধু এটাই বলতে চেয়েছিলাম যে, চাদের থেকে সূর্যের আকর্ষন ক্ষমতা অনেক বেশী হলেও এই পৃথিবীতে জোয়ার ভাটা হয় চাদের আকর্ষন ক্ষমতার কারনে। রাশিয়া ঠিক সেই রকম একটা চাদের মতো। ইউরোপ, পশ্চিমা কিংবা অন্যান্য শক্তিধর দেশ গুলির আকর্ষনের থেকে একেবারে উঠোনে বসে থাকা রাশিয়ার আকর্ষন ক্ষমতা অন্যান্যদের থেকে এতোটাই বেশী যে, ইউক্রেনের উচিত ছিলো না এলাইড ফোর্সের কোনো নতুন ফর্মুলায় পা দেয়া।

এই মুহুর্তের বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, হাংগেরী পোল্যান্ড, রুমানিয়া যেনো ইউক্রেনের সীমানাকে পরিবর্তনের জন্য একেবারে উতপেতে বসে আছে। অন্যদিকে ক্রমাগত সাপ্লাই দিতে দিতে এলাইড ফোর্সের সক্তিগুলিও নিতান্ত ক্লান্ত হয়ে এবার ক্ষান্ত দিতে চাইছে। ইউরোপিয়ান প্রেসিডেন্ট বা উপদেষ্টারা এখন একে অপরের উপর না হলেও এক্সিস শক্তিগুলিকে দোষারুপ করছেন কেনো তারা রুলস বেজড অর্ডারের সাথে এক না হয়ে অন্য দিকে সাপোর্ট করছে।  কিন্তুএটাই তো হবার কথা। যখন কেউ প্রতিবাদ করার শক্তি থাকে না কিন্তু মেনেও নিতে পারে না, তখন তারা চুপ থাকে বটে কিন্তু সুযোগের সন্ধানীতে যদি একবার প্রতিবাদ করার মতো পরিস্থিতি আসে, তখন তারা প্রয়োজনে বলয় পরিবর্তন করে কখনো এলাইড থেকে এক্সিসে, কখনো এক্সিস থেকে এলাইডে স্থান পরিবর্তন করেই ফেলে। আর এটাই হলো বিশ্বরাজনীতি। সুইডেন, ফিন ল্যান্ড ঠিক সেভাবেই নিরপেক্ষতা উপেক্ষা করে শেষ অবধি একটা বলয়ে ঢোকতে বাধ্য হয়েছে। ভাল কততা হবে বা খারাপ কততা সেটা বলবে ভবিষ্যত। তবে আমি এর আগেও বলেছি, এখনো বলছি- বহু দূরে বসবাস করা কোটিপতি দুসসম্পর্কের আত্মীয়ের চেয়ে পাশের বাসার লক্ষপতি প্রতিবেশির প্রয়োজন বেশি মানুষের। রাশিয়া তেমনি একটা লক্ষপতি প্রতিবেশি ইউরোপের জন্য।

সবকিছু পালটে যাচ্ছে-ইউরোপ কখনো নিজের উঠোনে যুদ্ধ দেখেনি, এবার তাদের উঠোনেই যুদ্ধের বিভীষিকা। মধ্যপ্রাচ্যে সব সময়ই যুদ্ধ চলছিলো এবার সেই যুদ্ধ অগ্রসর হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত সরে যাচ্ছে। দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলি ক্রমাগত একে অপরের আরো কাছে চলে আসার পায়তারা করছে এবং কোথাও কোথাও আভ্যন্তরী মেলবন্ধনেও বেধে যাচ্ছে, আফ্রিকা এখন তার নতুন রুপে এমনভাবে সবার নজর কাড়ছে যে, পরবর্তীতে আফ্রিকা এই গ্লোবাল পলিটিক্সে একটা নতুন ক্ষমতা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। চীন কখনো যুদ্ধে সাড়া দেয় নাই, এবার চীন নিজেও তার সেই পুরানো চেহাড়া থেকে একটু হলেও সরে এসছে।

করডোর্স অফ পাওয়ারের পরিবর্তনটা একেবারে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আর এই পাওয়ার পলিটিক্সে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে ইউরোপ। আর সেই ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপ কোনো এক সময়ে হয়তো ব্রেক্সিটের মতো অনেক দেশ লাইন ধরবে গ্রেক্সিট (জার্মানীর বহির্গমন), ফ্রেক্সিট (ফ্রান্সের বহির্গমন) কিংবা এমন আরো।

পৃথিবী আবার শান্ত হবে।

১৯/১/২০২৪-প্রিথিবীটা অদ্ভুত সুন্দর

মাঝে মাঝেই আমার খুব আফসোস হয় কেনো এতো ছোট একটা আয়ুষ্কাল দিয়ে ঈশ্বর আমাদেরকে এমন সুন্দর একটা পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। জানি উদ্দেশ্য আছে ঈশ্বরের কিন্তু সেটাতে কি হাজার বছরের আয়ুষ্কাল আমার হতে পারতো না? কতই না অদেখা সুন্দর জিনিষ না দেখে আমাদেরকে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। পাহাড়ের সেই গহীন জংগলে কি অদ্ভুত সউন্দর্য্য লুকিয়ে রেখেছে, গভীর সমুদ্রের ভিতরে কারা কিভাবে বাস করে, তাদের সেই সাম্রাজ্য, আইন কানুন, ভালোবাসা কি কিংবা আকাশের মহাশুন্যে কতই না সৃষ্টি আমাদের নজরের বাইরে রয়ে গেলো, এর কিছুই দেখা হলো না। শুধু তাইই নয়, যতটুকু জেনেছি, আমরা যে সৌরজগতটায় বসবাস করি, সেই মিল্কীওয়ে ছায়াপথে আমাদের গ্যালাক্সির কতো আরো দুই কোটি লক্ষ নাকি গ্যালাক্সী আছে। আর সেই প্রতিটি মিল্কীওয়ে গ্যালাক্সিতে নাকি প্রায় চারশত বিলিয়ন নক্ষত্র বিদ্যমান। লক্ষ লক্ষ কোটি গ্যালাক্সির ভেতর একটি গ্যালাক্সির লক্ষ লক্ষ কোটির নক্ষত্রের ভেতর মিডিয়াম সাইজের একটা নক্ষত্র সূর্যের একটা সাধারণ গ্রহে ঘটনা চক্রে আমার জন্ম। তাহলে সেসব লুকানো সউন্দর্য কার জন্য ঈশ্বর সাজিয়ে রেখেছেন? কেইবা দেখছে সেসব অনাবিষ্কৃত রহস্য? সেসব না দেখেই আমাকে একদিন এই প্রিথিভ=বী ছেড়ে চলে যেতে হবে। ছোট এই পৃথিবীর সব ভালো আর সব খারাপের বস্তুগুলিও একে একে দেখা হলো না। আর সেই মহাসমুদ্রের গ্যালাক্সিই বা কি আর সমুদ্রের তলদেশের সাম্রাজ্যই বা কি, কিছুই আমার জন্যে হয়তো ঈশ্বর দেখার অনুমতি দেন নাই। তাহলে কার জন্যে সেসব সৃষ্টি?

ছোট একটা ডলফিন যখন তার থেকেও অনেক ছোট একটা মানুষের সাথে জলের ভিতর খেলা করে, বন্য কুকুরেরা যখন মানুষের বশ মেনে সব কথা শুনে, বাঘেরা যখন মানুষের পিছে পিছে হেটে হেটে তার সব হিংস্রতা একপাশে রেখে মানুষের সাথে খেলা করে, তখন কেনো জানি মনে হয়, কোথাও একটা কমন সম্পর্ক আছে আমাদের সব প্রানিদের মধ্যে। মানুষ যখন মানুষের শত্রু হয়ে যায়, সেখানে তাদের ভাষা এক, জাতী এক, দেশ এক অথচ একে অপরের উপর কতই না হিংস্রতা, অথচ বাঘের সাথে, ডলফিনের সাথে, হাংগরের সাথে এই মানুষেরই আবার নিসশর্ত বন্ধুত্ব হয়ে উঠে অথচ তাদের না ভাষা এক, না জাতী এক কিংবা না অভ্যাস এক। ব্যাপারটা অদ্ভুত না?

ব্যাপারটা আসলে অদ্ভুত না।

এই ব্যাপারটা ঘটে শুধুমাত্র একটা ন্যাচারাল কারনে। সেটা ভালোবাসা আর আনুগত্য। ভালোবাসার থেকে মারাত্মক কোনো অস্ত্র এই পৃথিবীতে আর কিছু নাই। সব প্রানী এই ভালোবাসা বুঝে, সব প্রানী ঘৃণা বুঝে, সব প্রানীর মধ্যে মমত্ববোধ এবং সার্থপরতা সমানভাবে বিদ্যমান। এই একটি কারনেই সব প্রানীরা একে অপরের কাছে বা দূরে সরে যায় অথবা একে অপরের উপর ভরষা হারায়।  আরআনুগত্য? আনুগত্য পাহাড়ের চেয়ে ভারী এবং সর্ববৃহৎ দড়ির চেয়ে দীর্ঘ একটি শব্দ.. এর অর্থ নানাবিধ :  ত্যাগ, আন্তরিকতা, দান,  ভালবাসা........আরো অনেক কিছু।

আবার ঠিক এর উল্টোপিঠে সমানভাবে রয়েছে এতোটাই হিংস্রতা যা আমাদের ছোট এ জীবনের অন্তরে সব হিন্স্রতা সহ্য করার মতোও নয়। আমরা জীবন্ত মানুষকে চোখের সামনে হাতপা বেধে পুড়িয়ে ফেলি, ছোট ছোট ভুলের জন্য আমরা মানুষকে পাথর দিয়ে জীবন্ত আঘাত করে করে ক্ষত বিক্ষত করে একেবারে মেরেই ফেলি। কারো মনে কোনো দয়ার উদ্রেক হয় না। স্মার্ট বোম্ব, কন্টিনেন্টাল মিজাইল, এয়ার ক্র্যাস, পেট্রোল বোম্ব সব কিছু দিয়ে একে অপরের উপর এমনভাবে আঘাত করি, তাদের আয়ু থাকা সত্তেও আর বেচে যাওয়ার কোনো পথ থাকে না। কেনো এত রাগ, কেনো এতো দন্দ বা কিসের কারনে আমরা এতো কিছু করি?

ম্রিত্যুর পর সবার আকার এক, না সেখানে প্রান থাকে না থাকে কোনো শক্তি বা বাহাদুরী। সবচেয়ে শক্তিধর যিনি দাপটে ছড়ি ঘুরিয়ে বেরিয়েছন এই মেঠোপথে, অভনব কায়দায় বসেছেন সিঙ্ঘাসনে, তিনিও যা আর যাকে তিনি অত্যাচারে ছিন্নভিন্ন করে প্রান নাশ করেছে তার অবস্থাও তা। যদি কোনো কিছুই স্থায়ী করে নিজের করে রাখা না যায় তাহলে এতোসবের কি দরকার?

তারপরেও আমাদের মতো মানুষদের হোশ হয় না, জীবনের পরে মৃত্যুর কথা মনে পড়ে না, ক্ষমতা আর প্রতাপ দিয়েই চলি সবার চোখের সামনে।

১৮/১/২০২৪-আমি গুছিয়ে নিচ্ছি সব

আমি গুছিয়ে নিচ্ছি সব। আমি আমার চাহিদার সীমানা এতোটাই ছোট করে ফেলার চেষ্টা করছি যে, সেই সীমানায় থেকে যেনো আমি আমার বাকী সময়টা নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারি। এই মাষ্টার প্ল্যানের অংশ হিসাবে আমি আমার যাবতীয় সব জমি জমা বিক্রি করে দেয়া শুরু করেছি। আমি জানি এক সময় এই জমিগুলির মুল্য এতোটাই বেশি হবে, তখন যে কেউ শুনলে আমাকে বোকাই মনে করবে এই কারনে যে, কেনো আমি জমিগুলি বিক্রি করেছিলাম।

আমি আমার বাবার অগিজ্ঞতা থেকে শিখেছি যে, ভালো যোগ্য উত্তরসূরী না থাকলে কোন সম্পদ বা সম্পত্তিই নিজেদের নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব না। পেশি শক্তি লাগে, তার সাথে লাগে অর্থ, লাগে কানেকশন, লাগে সমাজে প্রতিষ্ঠা। আমার যেহেতু দুই মেয়ে, ফলে ওরা যতোই পেশি শক্তি ওয়ালা থাকুক, যতোই অর্থ থাকুক, যতোই সামাজিক যোগ্যতা থাকুক, একজন মেয়ের পক্ষে তার বাবার সম্পত্তি রক্ষা করা কনোভাবেই সম্ভব না। বিশেষ করে যখন সম্পদ চারিদিকে ছড়িয়ে ছীটিয়ে থাকে। আমার বাবাও পারেন নাই। আমিও পারব না। তাই পরিকল্পনা এমনভাবে সাজিয়ে দিচ্ছি যাতে আমার মেয়েদের পক্ষে সেগুলি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়। আমার নায় নাতকুরেরা হয়তো পারবে কিন্তু থার্ড জেনারেশনের উপর ভর করে নিজের কোন সম্পত্তিই রক্ষাকবচ হিসাবে রেখে যাওয়া সথিক নয়।

আর এই পরিকল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আমার ছড়িয়ে থাকা জমিগুলি বিক্রি করে সেই অর্থ লিকুইড হিসাবে আমার জন্য সঞ্চয় করছি। যাতে বুড়ো বয়সে কারো কাছেই আমার হাত পাততে না হয়।

সাভারে ২টা ফ্ল্যাট কিনেছি দুই মেয়ের নামে। ওরা সেতেল হতে পারবে নিজেদের ফ্লাটে। মিরপুরের বাড়ি টা তো আছেই। আমার জীবদ্দশায় আমি এখান থেকে বিদায় হতে চাই। আমার বিদায়ের পর এটা ওদেরই থাকবে।

ব্যবসার ব্যাপারে এখন আর আমি হতাত লাফ দিয়ে উঠি না। নতুন কোনো ইনভেষ্টমেন্টে যেতে চাই না যতোক্ষন সেই ইনভেষ্টমেন্ট রক্ষার জন্য সুযোগ্য উত্তরসুরী না পাই। তাই আমি নতুন করে যেটা ভাবছি সেতা হলো-আবিরকে মাছের ব্যবসায় নিয়ে আসা। আবিরের বাবা মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত, মনে হচ্ছে আবিরের বাবা মানুষ হিসাবে অতটা খারাপ না যতোটা আমি তাকে দেখার আগে ভেবেছিলাম। আবিরকে তার প্রফেশনের পাশাপাশি যদি মাছের ব্যবসার সাথে রাখতে পারি, আমার ধারনা, তার ২য় আরেকটা সোর্স অফ ইনকাম থাকবে। যদি আবির নষত না হয়ে যায়, ছেলেমেয়ে নিয়ে উম্মিকা আর আবির ভালোই থাকবে।

কনিকার জন্য আগামি আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত সব খরচ দেয়া আছে। ওকে নিয়ে আমার এই মুহুর্তে পড়াশুনা চালানোর ব্যাপারে কোন টেনশন নাই। বাকীটা কনিকা নিজে যদি আমেরিকায় সেটেল হতে পারে, তাহলে এই দেশে যা আছে, এক সময় কনিকাও তাকা নিতে পারবে এবং আমেরিকাতেই সেটেল হতে পারবে। বাকীটা ওরা জানে কিভাবে সেটেল হবে।

অরুর ব্যাপারে আমার পরিকল্পনা প্রায় শেষের পথে। ক্যাশ, জমি সব দেয়া হলো। এখন শুধু একটা স্থায়ী স্থাপনা করা যাতে যে কোন অবস্থায় সে নীরবে এবং শান্তিতে থাকতে পারে।

১৭/১/২০২৪-কনিকা আবার আমেরিকায় ব্যাক করে

গত বছরের (২০২৩) ২৫ ডিসেম্বর কনিকা আমেরিকা থেকে দেশে এসেছিলো উম্মিকার বিয়ে উপলক্ষে। আজ ওর আবার আমেরিকায় যাওয়ার দিন। সন্ধ্যা পৌনে আটটায় এমির‍্যাটসে ফ্লাইট। সময়টা ভালই কেটেছিলো এই কয়দিন। উম্মিকা এতোদিন বাসায় থাকতো, বিয়ের পর স্বামীর বাসায় থাকছে। পাশেঈ ওদের ভাড়া বাসা। মাত্র কয়েক মিনিটের রাস্তা। এতোদিন কনিকা ছিল, আজ চলে যাচ্ছে। থাকছি শুধু আমি আর আমার স্ত্রী মিটুল চৌধুরী।

জীবনের স্থায়িত্ব খুব কম এবং এর ধইর্ঘ আমাদের চাহিদার তুলনায় এতোটাই ছোট যে, আমরা ইচ্ছে করলেই আমাদের সব সপ্ন পুরন করতে পারিনা। সামর্থ থাকাটা বড় ব্যাপার না, সময়টা বড় ব্যাপার। এই সময়টা যেহেতু

৮/১/২০২৪-উম্মিকার বিয়ে এবং আমার বিশ্লেষণ

অনেকদিন আগেই লিখেছিলাম যে, আমি ধীরে ধীরে আমার জীবন নিয়ে গুছাচ্ছি। উম্মিকার বিয়েটাও আমার এই চলমান প্রক্রিয়ার একটা অংশ। কারন আমি ধীরে ধীরে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চাচ্ছি, সব কিছুর হিসাব কিতাব একেবারে নখের আগায় রাখতে চাচ্ছি যেনো মৃত্যু যেদিন আসবে সেদিন যেনো আমাকে এটা বলতে না হয়, অনেক কিছু করার বাকী ছিলো।

উম্মিকার আগেরবার বিয়েতে যদিও উম্মিকার পছন্দ মতোই ছেলেকে উম্মিকা আমাদের সামনে হাজির করেছিলো কিন্তু বিয়ের ঠিক আগে উম্মিকা সেই ছেলেটার সাথে বিবাহে রাজী ছিলো না। কিন্তু যেহেতু আমরা কথা দিয়ে ফেলেছিলাম, ফলে অনেকটা জোর করেই আমরা উম্মিকাকে অই ছেলের সাথে উম্মিকার বিয়ে দিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি ছেলেটা যে এতো লোভী। শেষ পর্যন্ত আমরাই ছেলেতাকে তাড়িয়ে দিতে বাধ্য করেছিলাম।

এবারের বিয়েতে আমি উম্মিকাকে কোনো জোর করিনি। কিন্তু ছেলেটার বয় বিদ্যমান থাকায় কোনোভাবেই রাজী ছিলাম না। অবশেষে ছেলেতা তাঁর ১ম স্ত্রীকে ডিভোর্স করার পর এবং আমি বিস্তারীত আলোচনার পর অবশেষ ডাল আবিরের সাথে উম্মিকার বিয়েতে রাজী হইলাম। এই রাজী হবার পিছনেও আমার একটা উদ্দেশ্য ছিলো- আর সেটা হচ্ছে, আমিও চেয়েছি উম্মিকা দ্রুত বিয়ে করে তাঁর নিজের পছন্দমত স্বামীর কাছে থাকুক।

এবারে জামাই এর ব্যাপারে আমার অনেক রিজার্ভেশন আছে। প্রথমবার ভেবেছিলাম, জামাই মানে ছেলে পাওয়া। কিন্তু সেটা ভুল প্রমানিত করেছিলো উম্মিকার প্রথম হাসবেন্ড। জামাই কোনোদিন ছেলে হয় না আর ছেলের বউ কোনোদিন নিজের মেয়ে হয় না। আমি এবার সেইটাই মনে মনে স্থির করেছি যে, কোন কিছুতেই আমি আর আগের মতো ভাবাবেগে থাকবো না। জামাইয়ের রোজগারে সে তাঁর ভালো মন্দ সংসার চালাবে, ওদের কোনো ব্যাপারেই আমি অন্তত নাক গলিয়ে উপযাজক হয়ে অতিরিক্ত কিছুই করতে যাবো না। জামাই শশুড়ের যতটুকু ব্যব্ধান থাকা দরকার, এবার ঠিক সেই মাপকাঠিতেই সম্পর্কটা আমি চলমান রাখতে চাই। না মাথায় তোলা, না নীচে রাখা। এটা ওদের জীবন, ওদের সংসার। সংসার শুরু করার আগে যা যা দরকার (ফ্রিজ, টিভি, এসি, ফার্নিচার, ওভেন, পিউরিট, আলমারী, শোকেস, দাইনিং চেয়ার টেবিল, খাট) সব দিয়ে দিলাম। সাথে গহনা প্রচুর। আমি ঠিক এর পরে আর কিছুই আগ বাড়াইয়া দিতে নারাজ। আমার দেয়ার ক্ষমতা আছে কিন্তু যাদের নেওয়ার ক্ষমতা নাই, তাদেরকে অন্তত সেধে কিছুই দিতে যাব না।

উম্মিকার মা প্রথমবারের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিখছে বলে মনে হয় না। সে আবিরকে নিজের ছেলেই মনে করে, বেশ ভাবাবিত, আবেগিত, যেনো ঠিক আগের রানার মত। আমি তাতে কিছুই বলছি না কারন সে শুনবে না। উলটা মিনিং বের করবে। কিন্তু আমি জানি ঠিক কখন আমি ছাড় দেবো।

উম্মিকা প্রচন্দ রকমের সার্থপর। উম্মিকা যখন বুঝতে পারে যে, সে সেরে গেছে, উম্মিকা খারাপ ব্যবহার করতে পিছপা হয় না। আমি ওর এই গুনটা সম্পর্কে একেবারে ক্লিয়ার। ফলে আমিও উম্মিকার কাছ থেকে কিছুই আশা করি না। উম্মিকা আমাদের ফ্যামিলি গার্ল হিসাবে কাজ করে না। উম্মিকা মনে করে, যতটুকু নেয়া যায়, অতটুকুই ভালো। উম্মিকার এই গুনটা আমার একেবারেই অপছন্দের। উম্মিকার ধারনা নাই, আমার হাত কত খোলা যদি কেউ আমার সাথে একেবারে বন্ধুর মতো থাকে। যাক সে কথা, আমি জানি কখন আমি কাকে কতটুকু ছার দেব। এবার আর আগের মত এতো উলফুল্ল হবার কন কারন দেখি না। উম্মিকা বা আবির যদি চালাক হয়, তাহলে ভাল, তা না হলে আবির স্রেফ আমার কাছে উম্মিকার হাজবেন্ড এবং অন্য বাড়ির ছেলে।

হতে পারে আজ থেকে ৫/৬ বছর পর আমি বুঝতে পারবো, ওরা কতটুকু আমার বা কতটুকু ওরা আমার জন্য। এতা না বুঝা অবধি আজ যা দিলাম, আপাতত এখানেই ক্ষান্ত আমি। উম্মিকার মা হয়তো আমাকে অনেক কিছুর জন্য চাপ দিতে পারে কিন্তু সেতা আমার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আমি কিছুই করতে চাই না। আমাকে অনেক কিছু বুঝতে হবে আগে। তারপর সব কিছু তো ওদেরই। সহজে সব কিছু যেমন আমি পাইনি, আমিও চাই না কেউ সহজে আমার কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিক, হোক সেটা উম্মিকার মায়ের চাপ বা উম্মিকার। আমি কখনো আর উম্মিকা বা আবিরকে বিদেশে যেতে বল্বো না। যদি ওরা যেতে চায় সেটা ওদের নিজের যোগ্যতায় এবং খরচে যেতে হবে। যদি কিছুটা সাহাজ্য লাগে সেটা হয়ত আমি করবো কিন্তু শতভাগ কখনোই না। আমার নিজের জন্যেও আমাকে সঞ্চয় বাচিয়ে রাখতে হবে কারন আমি জানি, এক সময় আমার জীবন আমাকেই টানতে হবে। সেই সময় শুধু আমার সঞ্চয় আমাকে বাচিয়ে রাখতে পারবে। লোকজনের খরচায় আমার জীবন অনেক সহজ হতে পারে। আমি এই ব্যাক আপ কখনোই নিঃশেষ করে ওদের জন্য উজার করে দিবো না।

আমার এখন দায়িত্তের মধ্যে রয়ে গেলো ছোট মেয়ে কনিকা। আমি ওকে আগামী ২০২৫ সালের আগষ্ট পর্যন্ত পরার সমস্ত খরচের তালিকা করেছি। আর ওকে এটাও বলেছি, ২০২৫ সালের আগষতের পর আমিও ওকে দেশ থেকে কোনো সাপোর্ট দিতে চাই না। বিদেশে পরাশুনা করিয়েছি। ওর পিছনে আমার প্রায় ৩ বা সাড়ে ৩ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। মেয়েদের মধ্যে ওর পিছনেই আমার সবচেয়ে বেশী খরচ করা হল। এরপরেও যদি সে নিজের পায়ে দাড়াতে না পারে সেটা ওর ব্যর্থতা।

আরো একজন আছে যে আমার রিস্পন্সিবিলিটি। তাঁর ব্যাপারেও আমি অনেক সচেতন কারন সে মনে করে আমি ছাড়া ওর আর কেউ নাই। আমি সার্থপর নই আর আমি দায়িত্তশিল মানুশের মতোই আচরন করে থাকি যারা আমার নিজের এবং কাছে লোক।

সবাই ভালো থাকুক।

১/১/২০২৪-উম্মিকার বিয়ে

৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে গায়ে হলুদের পর আজ পহেলা জানুয়ারী ২০২৪ তারিখে মিরপুর জনাব আলমগীর সাহেবের অধীনে উম্মিকার এবং আবিরের বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো। কাবিন করা হলো ২০ লক্ষ টাকার যার মধ্যে উশুল দেখান হয়েছে ৩ লাখ এবং বাকিটা উশুল দেখানো হয় নাই। উকিল বাবা হিসাবে আমাআদের পক্ষে নাম লিখা হলো মুবীন আহমদকে এবং আবিরদের পক্ষে হলো এমদাদুল (আবিরের মামা)।

বিবাহোত্তর একতা ছোট খাটো অনুষ্ঠান করা হলো মিরপুর ২ নাম্বার বুফে কিংস রেষতুরেন্টে। গোটা ৫৬ জন লোকের সমাগম হয়। অত্যান্ত সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

৩০/১২/২০২৩-উম্মিকার গায়ে হলুদ

কোনো এক সময় এটাই চাওয়া ছিলো যেনো পরিবার থাকে সুখে এবং শান্তিতে। সবার মনের ইচ্ছাগুলি যেনো পুর্ন হয় ঠিক যে যেভাবে চেয়েছিল। জীবন বড় ছোট, এর মধ্যেই অনেক কঠিন দিন আসে, দুঃখের সময় মানুষ সেই সময়টাও পার করে কিন্তু সব কিছুর পরেও হয়তো আজ বা কাল মানুষের সব ইচ্ছা পুরন না হলেও মনের শান্তির জন্য যে ইচ্ছাগুলি পূর্ন হওয়া খুব দরকার সেগুলির কিছুটা হলেও পুর্নতা পায়। তারপর, একদিন মানুষ কিছু অপূর্নতা, কিছু পূর্নতা নিয়ে এই মায়াবী পৃথিবী ত্যাগ করে। যখন মানুষ এই মায়াবি পৃথিবী ত্যাগ করে, তখন তাঁর সাথে এই পৃথিবর আর কোন হিসাব কিতাব থাকে না। তাঁর উপর আর কারো কোনো দায়িত্ব থাকে না। হয়তো অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু তাতে তাঁর কিছুই যায় আসে না।

আমার বড় মেয়ের গায়ে হলুদ আমার মনের ইচ্ছার মধ্যে একটি ছিলো এবং অতঃপর একজন দায়িত্তশীল মেয়ের বর হিসাবে ডাঃ আবিরের সাথে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হলো আজ ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে। অনুষ্ঠানটি করেছিলাম আর্মি অফিসার্স ক্লাবে। প্রায় চার শতাধিক অতিথির আগমন, নাচ গান, সব কিছুই ছিলো।  সবাই খাওয়া দাওয়া করে অনুষ্ঠনটি বেশ উপভোগ করেছে।

১২/০৬/২০২১-রোস্তমের টাকা চুরি-২

আমরা যখন জীবিত অর্থাৎ যখন জীবন আছে আমাদের, তখন আমাদের কাছে জীবন এমনভাবে চলতে থাকে যেনো আমাদের জীবনের সাথে মৃত্যুর কোন সম্পর্কই নাই। কিন্তু যখন মৃত্যু একেবারেই কাছে চলে আসে, তখন এ রকম মনে হয় যেন জীবনের কোনো গুরুত্বই নাই। এক নিমিষে, চোখের পলকে সব শেষ হয়ে যায়। এই মৃত্যু না সময় দেখে আসে, না জায়গা দেখে। যে কোনো সময়ে যে কোনো স্থানে সে চলেই আসে। তখন আশেপাশের সবাইকেই চমকে তো দেয়ই উপরন্ত আশেপাশের সবাইকে নাড়িয়েও দেয়। আর এর রহস্যও কেউ জানতে পারেনা। কিন্তু যখন মৃত্যু নিজে আসে না, তাকে ডেকে আনা হয়, তখন তার সময়, জায়গা এবং কারন এই তিনটাই মানুষ ঠিক করে দেয়। আজ আমি এমনি একটা ট্র্যাজেডির কথা বলবো যা ঘটেছিল রস্তম নামে এক লোকের সাথে।
রুস্তম আমার ড্রাইভার ছিলো। প্রায় বছর পাচ বা তারও বেশী একনাগাড়ে রুস্তম আমার ব্যক্তিগত গাড়ী ড্রাইভিং করতো। তাহলে এখানে রোস্তমের একটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরি।
রুস্তম ড্রাইভার হিসাবে ততোটা অশিক্ষিত ছিলো না যা সচরাচর ড্রাইভারেরা হয়ে থাকে। পুরানো দিনের সাহিত্যিকদের উপন্যাস পড়ার অভ্যাস ছিলো তার। একটু আধটু ডায়েরীও নাকি লিখতো। ভাল পল্লীগীতি গাইতে পারতো রোস্তম। গলার সুরও ভালই ছিলো। মাঝে মাঝেই আমি ওকে গারি চালানর সময় রেডিও না শুনে ওর নিজের গলায় গান শুনতাম। বিবাহিত ছিলো বটে কিন্তু মাঝে মাঝে নেশা করার কারনে রোস্তমের প্রথম স্ত্রী তাকে একটা সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা রেখে লন্ডনে চলে যায়। রোস্তম কখনোই তার স্ত্রীর ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করতো না। সে খুব মিস করতো তার স্ত্রীকে। গাড়ী চালাতে চালাতে রোস্তম প্রায়ই সে তার স্ত্রীর কথা বলতো। বলতে বলতে কখনো সে খিলখিল করে হেসে উঠত, কখনো কখনো খুব উদাসিন হয়ে যেতো আবার কখনো কখনো চুপ থেকে চোখের জলও ফেলতো। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে একবার আমি রোস্তমকে দ্বিতীয় বিয়ের তাগিদ দিলে সে আমার কথা মেনে বিয়েও করেছিল। কিন্তু এবার স্ত্রীটাই খারাপ ছিল। বিয়েটা টিকে নাই। রুস্তম খুব বিশ্বস্ত ছিলো। চুরি চামারীর কোন অভ্যাস ছিলো না। তবে মাঝে মাঝেই রোস্তম দরকারে আমার কাছে এমনভাবে টাকা চাইতো যে, আমি কখনো ওকে না করতে পারিনি। দিতাম। রোস্তম ছিলো খুবই বিশ্বস্ত ছিলো। এমনি বিশ্বস্ত ছিলো যে, মাঝে মাঝে এমনো হতো, শুধু ওকে একা গাড়ি পাঠিয়েই আমাদের ফ্যাক্টরী থেকে অন্য ফ্যাক্টরীতে কোটি টাকাও পাঠিয়েছি। আর রুস্তম সেটা জানতো। কখনোই সে এদিক সেদিক করে নাই।
কিন্তু একদিন………
একদিন রুস্তম আমার অন্য আরেকটি ফ্যাক্টরির মাত্র তিন লাখ টাকার শ্রমিকদের সেলারি নিয়ে গাড়ী রেখে কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেলো। বিকেল থেকে রাত অবধি কোথাও খুজে না পেয়ে বুঝতে পেরেছিলাম, রুস্তম তিন লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। ওর মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিলো। টাকাটা চুরি করে রুস্তম পালিয়েছে এই কষ্টে যতোটা না কষ্ট পেয়েছি, তার থেকে বেশী কষ্ট লেগেছে রুস্তমের কাছ থেকে এটা আমি কখনোই আশা করিনি। রুস্তমকে আমি সেলারীর বাইরেও যে কতটাকা দিতাম সেটা আমি কখনো হিসাব করিনি। ওকে আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করার সব খরচপাতিও দিয়েছি;লাম। রুস্তম গাড়ি চালালে আমি নিশ্চিন্তে মনে গাড়িতে ঘুমাতে পারতাম। কারন জানি, রুস্তম যেমন ভালো ড্রাইভার ছিলো তেমনি আমি ঘুমিয়ে পড়েছি দেখে আমার শরির যেনো ঝাকুনি না খায় এবং ঘুম ভেংগে না যায় সেটাও সে নজরে রাখতো।
রুস্তম আমাদের এলাকায় প্রায় ৩০ বছর যাবত বাস করতো। চুরির পরে রুস্তম সেই পুরাতন জায়গায় আর কখনো ফিরে আসেনি। আমি অনেক খুজতাম ওকে, আশেপাশের লোকজন এমনিতেই জেনে গিয়েছিল যে, রস্তম আমার কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। ফলে আমি জানতাম, কেউ ওকে কোথাও দেখলে খবরটা আমার কাছে আসবেই। কিন্তু সে রকমের কোন খবর আমি আর কখনো পাইনি।
অনেকদিন পর, প্রায় মাস চারেক হবে। হটাত করে পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে আমার কাছে একটা চিঠি আসে। বেশ বড় একটা চিঠি। প্রায় ২২ পাতার। চিঠিটি খুলেই আমি কে লিখেছে সেটা পরীক্ষা করার জন্য চিঠির শেষে কার নাম লেখা পড়তে গিয়েই আমি থমকে গিয়েছিলাম। রুস্তমের চিঠি। হটাত করে বুকটা আতকে উঠেছিলো। রুস্তমের চেহারাটা আমার চোখের সামনে পরিষ্কার ভেসে উঠলো। মুখ ভর্তি পান, কালো ঠোট, বেটে মানুষ, মাথায় হালকা চুল, মুখে হাসি। এটাই রুস্তম ছিলো। ওর পুরু চিঠিটা এখানে লিখলাম না কিন্তু ওর কিছু চুম্বকঅংশ এই রকম ছিলোঃ (বিশেষ দ্রষ্টব্য যে, রুস্তম বেশ গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলতে পারতো, আর যুক্তির কথাও বলতো)।
আমার প্রিয় স্যার,
........................ জীবনে সে সব মানুষের সাথে কখনো লুকুচুরী, মিথ্যা, ছলচাতুড়ি, কিংবা কল্পকাহিনী বলে সাময়িকভাবে ভুল বুঝানো উচিত না যারা আমাদের সুখের জীবনের জন্য নিঃস্বার্থভাবে তাদের অনেক মুল্যবান সময়, পরিশ্রম আর অর্থ দিয়া সাহাজ্যের হাত বাড়ায়। যদি পথ চলতে গিয়ে কিংবা তাদের নির্দেশনা মানতে গিয়ে কিংবা কোনো লোভে পড়ে নিজের অজান্তে ভুল করে ফেলে, হয়তো সেটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব কিন্তু যদি সেই ভুল হয় ইচ্ছাকৃত, তাহলে সেটা হবে পাপ, অপরাধ এবং ক্ষমার অযোগ্য। যারা আমাকে ভালোবেসে, স্নেহ করে অথবা আমাদের দরিদ্র মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের পাশে এমনভাবে দাঁড়ান যা হয়তো তাদের দাড়ানোর কোনোই প্রয়োজন ছিলো না, তবুও দাড়ান। তাদের সাথে আমাদের করা এরূপ কোন ইচ্ছাকৃত অপরাধ আমাদের সারা জীবনের জন্য এমন মারাত্তক হুমকী হয়ে দাড়ায় যা কোনো কিছুর বিনিময়েও আর আগের অবস্থায় ফিরে পাওয়া সম্ভব না। এই মারাত্তক ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি কেউ ক্ষমাও করে দেন, তারপরেও বিশ্বাসের যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা আজীবন দগদগে ঘায়ের থেকেও বেশী। তখন তাদের প্রতিনিয়ত মনে হবে, এই মানুষ উপকারের কথা বুঝে না অথবা সে নির্বোধ অথবা সে উপকারীর জন্য অনেক হুমকীস্বরূপ। এই বিবেচনায় কোনো হিতৈষী যদি আমাদের পাশ থেকে নিঃশব্দে সরে যায়, তাকে আর কোনো কিছুর শপথের মাধ্যমেও আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা যায় না। তখন যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, নিজের উপর নিজের রাগ, অভিমান আর কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধ। এই সময় হতাশা ক্রমশ বাড়তে থাকে, আর এই হতাশা যখন বাড়ে, তার সাথে বাড়ে দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তা থেকে জন্ম নেয় নিজের উপর ঘৃণা। আর একবার যখন নিজেকে কেউ ঘৃণা করতে শুরু করে, তখন তার আর বেচে থাকার কোনো লোভ থাকে না। চারিপাশের কোনো মানুষকেই আর ভালো লাগে না, নীল আকাশ ভালো লাগে না, রংগীন আলো ঝলমলের শহরকে তখন বড় অচেনা মনে হয়। মানুষ তখন আত্মহননের দিকে ঝুকে যায়। অথবা সে এমন পথ বেছে নেয়, যা সমাজের চোখে বড়ই অসুন্দর আর কুৎসিত। সব কুৎসিত জীবনের কাহিনী প্রায় একই। কোনো না কোনো সময়ে তাদের সুযোগ এসেছিলো কিন্তু তারা না বুঝবার কারনে সে সুন্দর জীবন হাতছাড়া করেছে। পাপ কাজ করে কেউ কখনো বড় হতে পারে নাই, আর হয়ও না। তাদের হয়তো টাকার পাহাড় থাকতে পারে কিন্তু তাদের তিরোধানে সমাজ দুঃখবোধও করে না। তারা সারাজীবন সমাজের একটা কালো মানুষ হিসাবেই বেচে থাকে।
আমার প্রিয় মেজর স্যার,
আমি এই মুহুর্তে ঠিক সে রকম একটা সময় পার করছি। আমি আপনার কাছ থেকে যে তিন লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছিলাম, টাকাগুলি আমার কোনো কাজেই লাগে নাই। মদ খেতে খেতে কখন বেহুস ছিলাম বুঝি নাই, যখন হুস হয়েছে, দেখলাম সবগুলি টাকা আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে। কে নিয়েছে, কখন নিয়েছে সেই জ্ঞানটুকুও আমার ছিলো না।
(রোস্তমের চিঠির ১৩ তম পাতার কিছু অংশ)............
জীবনকে ভালোবাসবার অনেক নাম আছে। কখনো এর নাম চেলেঞ্জ, কখনো এর নাম সততা আবার কখনো এর নাম বিশ্বাস। স্যার, সব হাসিই হাসি নয়। যেদিন আমি টাকাটা নিয়ে পালিয়েছিলাম, সেদিন আমি হেসেছিলাম আনন্দে। অথচ আজ আমি কাদতেছি কেনো আমি টাকাটা নিয়ে পালালাম। আসলে আমার এই কান্না কান্না নয়। এই কান্নার নাম হয়তো ভয়। আর সব ভয়ের চেহারা এক। যার নাম- আতঙ্ক। এই আতংকে মানুষ অসুস্থ হয়, মানুষের রুচী কমে যায়, একসময় দেহ মন দুটুই ভেংগে যায়। দেহ ভাঙ্গার সাথে সাথে মানুষ মানসিকভাবে দূর্বল হয়, এক সময় পানির অভাবে যেমন কচি গাছের মরন হয়, তেমনি এই আতংকগ্রস্থ মানুষগুলিও মৃত্যু বরন করে। তাদের জন্য কেউ আর পিছনে তাকায় না। খুব কষ্ট আর ব্যথা নিয়ে স্যার আমি চলে যাচ্ছি। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। এর গাছ পালা, আকাশ, নদী, পাহাড় সব সুন্দর। সবচেয়ে সুন্দর ছিলেন স্যার আপনি। আমি আপনাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসবো। খুব বাচতে ইচ্ছে করছিলো স্যার কিন্তু যারা সাহসী নয়, তাদের বেচে থাকবার কোনো প্রয়োজন নাই এই পৃথিবীতে। আমি আসতে চেয়েছিলাম আবার আপনার কাছে কিন্তু সম্ভব হলো না। যদি কখনো পারেন- আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। যেদিন আপনি চিঠিটা পাবেন, সেদিন হয়তো আমি আর বেচে নেই স্যার। কিন্তু একটা কথা বলে যাই, আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সাহস কম, তাই আর বাচতে পারলাম না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। যে তিন লাখ টাকায় আমার এতো হিসাব ছিলো, জীবন সুখের হবে, নিজের গাড়ি হবে, অনেক টাকা হবে, সেই তিন লাখ টাকাই আসলে আমার জীবন একেবারে পালটে দিলো। আপনার সাথে আমার জীবনটা তো ভালোই ছিলো। বিশ্বাস করেন স্যার, আজ ঠিক মৃত্যুর আগ মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আমি একটা জিনিষ শিখে গেলাম, জীবনে সব মানুষের সাথে ছল চাতুড়ি করতে হয় না, এই দুনিয়ায় টাকাই সব নয়। আপনার মতো এমন একটা মানুষের পাশে শুধু থাকলেই হতো। বট বৃক্ষের মতো ছিলেন।
৯১৬ তম পাতার কিছু অংশ...............)
আমি আপনার থেকে এখন অনেক দূরে। পরিচিতজন মানুষের আশেপাশেও আমি নাই। ড্রাইভিং চাকুরী করতে পারতাম, কিন্তু করতে সাহস করি নাই। কখন আবার আমি আপনার সামনে পড়ে যাই, তাই। প্রতিটা ক্ষন আমি পালিয়ে পালিয়ে থেকেছি। কখনো ক্ষুধা পেটে কোনো এক পরিত্যাক্ত বিল্ডিং এর মশাদের সাথে, কখনো কোনো গাজার আসরে, কখনো একেবারে একা কোনো এক নদীর ধারে সময় কাটিয়েছি। এমন কোনো একটা মুহুর্ত আমার যায়নি, যখন আপনার কথা আমার মনে পড়ে নাই। বারবার ভেবেছি- কি দরকার ছিলো এমনটা করার? যখন যা চেয়েছি, আপনার কাছ থেকে আমি পাইনি এমন ছিলো না। তারপরেও আমার এমনটা করার কোনো দরকার ছিলো না। খুব বেকুফ মনে হয়েছে আমাকে।
চিঠিটা পড়তে পড়তে আমারো খুব খারাপ লাগছিলো। রোস্তমের জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছিলো। আমি আসলে রোস্তমকে খুব স্নেহই করতাম। যাই হোক, অনেক বড় চিঠি। সব কিছু এখানে হয়তো লিখা সম্ভব নয়। ১৯ পাতার কিছু অংশে এসে আমি একদম নিসচুপ হয়ে গেলাম। রুস্তম লিখেছে-
আমার স্যার, এ কয়দিন বারবার শুধু একটা কথাই আমার মনে হয়েছে। যখন আপনি গাড়িতে উঠতেন, প্রথমেই জিজ্ঞেস করতেন, আমি খেয়েছি কিনা। আজ অবধি কেউ আমাকে এ কথাটা কেউ কখনো জিজ্ঞেস করে নাই। আজ প্রায় ৩ দিনের উপরে পার হয়ে গেছে, আমি একটি দানাও খাই নাই। মুখ ভর্তি দাড়ি, গোসলের কোনো জায়গা নাই, এলোমেলো মাথার চুল, নোংরা আমার জামা। আমার সাথে রাস্তার পাগলের মধ্যে কোনো তফাত নাই। যখন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিতাম, বলতেন-বাসায় গিয়ে রেষ্ট করো, সকালে নাস্তা খেয়ে চলে এসো। আজ আমাকে কেউ বলে না-সকালে চলে এসো। অথচ মনের ভিতরে অদম্য ইচ্ছা, যদি আবার আপনার কাছে চলে আসতে পারতাম? কোথাও আমার কেউ নাই। সম্ভবত আপ্নিই ছিলেন আমার সবচেয়ে কাছের একজন মানুষ যাকে আমি ভালোবাসতাম, আবদার করতাম, জিদ করতাম কিন্তু খুব পছন্দও করতাম। আপনার মেয়েরাও আমাকে খুব সম্মান করতো। কখনো ওরা আমাকে ড্রাইভার হিসাবে দেখে নাই। কি লক্ষী মেয়েগুলি। আংকেল ছাড়া কখনো ডাকতো না। আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে- ইশ, যদি আবার ফিরে আসতে পারতাম!! কিন্তু আমার মনের সাহস নাই, শরীরে বল নাই, আর আপনার সামনে দাড়াবার আমার কোনো জায়গাও নাই। এ কয়দিন মাথায় শুধু একটা জিনিষ ঘুরপাক খাচ্ছে-কি লাভ এ জীবন রেখে? কিন্তু মরার জন্যেও কিছু উপকরন লাগে। ফাসি দিতে হলে দড়ি লাগে, বিষপান করে মরতে হলে বিষ কিনতে হয়, কিন্তু আমার কাছে বিষ কেনারও পয়সা নাই। আর সাতার জানা মানুষ নদীতে ঝাপ দিলেও মরে না। কিন্তু আমি জানি, আপনার সাথে আমার আর কখনো দেখা হবে না। আমার জিবনে সত্যি বলতে আপনি ছাড়া আর কেউ ছিলো না। আপনি গাড়িতে ঘুমালে আমি আয়নায় দেখতাম, কি অসম্ভব একটা রাগী মানুষ কত নিষ্পাপ বাচ্চার মতো ঘুমুচ্ছেন, খুব মায়া হতো আমার। আমার উপরে ভরষা করে আপনি ঘুমুচ্ছেন ভেবে আপনার ঘুম ভেংগে যাবে এই ভয়ে আমি গাড়ির স্পীডকে রিক্সার পিছনেও চালিয়ে নিতাম। আমি আপনাকে অনেক মায়া করি, ভালবাসি। আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিয়েন।
ইতি- আপনার স্নেহের অপরাধি রোস্তম।
চিঠিটা পাওয়ার পর আমি রোস্তমের ব্যাপারে তারই এক আত্তীয়ের কাছে (যিনি ভাড়া থাকেন আমার মহল্লায়) জানতে পেরেছি যে, রোস্তম পথের ধারে কাটা তারের বেড়া থেকে তার কেটে গলায় পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃত্যুর তারিখটা জেনে আরো খারাপ লেগেছিলো। রস্তম তার মৃত্যুর চারদিন আগে সে আমাকে এই চিঠিটা পোষ্ট করেছিল।
খবরটা শুনে মনের ভিতরে অসম্ভব ব্যথা অনুভুত হয়েছিলো। খুব করে ভাবলাম, ইশ যদি রোস্তম একবার সাহস করে আবার আমার সামনে আসতো, ইশ যদি রোস্তমকে আমি আবারো খুজে পেতাম, আমি আবার ওকে আমার ড্রাইভার হিসাবেই রাখতাম। রোস্তম আমার বাসা চিনতো, আমার অফিস চিনতো, সে আমাকেও চিনতো। অথচ মনের ভিতরের সাহসটাকে সে একত্রিত করে আমার সামনে আসার মনোবলটা ছিলো না। আমি আজো মাঝে মাঝে রোস্তমের কথা ভাবি। আর ভাবি, কতটা যন্ত্রনা নিয়ে রোস্তম কাটাতার পেছিয়ে আত্মহত্যা করেছে, আর কতোটা যন্ত্রনায় সে মারা গেছে। খুব ভাবি যে, কাটাতারে যখন রোস্তম মারা যাচ্ছিল, তখন কি সে আবারো বাচতে চেয়েছিল?
সম্ভবত, বাচতে চেয়েছিল কিন্তু তখন মৃত্যু তার এতোটাই কাছে ডেকে আনা হয়েছে যে, তার আর ফিরে যাবে কোন অবকাশ ছিলো না। রস্তমকে নিয়েই যমদূত এই দুনিয়া থেকে চলে গেছে।

২৩/১১/২০২৩-বদলে গিয়েছি কি?

আমার বয়স ইতিমধ্যে ৫৯ পার হয়ে গেলো। প্রায় ৫ যুগ। নেহায়েত কম নয়। অন্য কারো জীবনে কি ঘটছে, কি ঘটতে পারতো কিংবা কি কারনে কি ঘটেছে বা ঘটে নাই সে ব্যাপারে না জানলেও আমি আমার জীবনের পুরু ইতিহাসটাই জানি। কোথায় কি কারনে কিভাবে কেনো আমার জীবনে ক্ষনেক্ষনে কিংবা পরিকল্পিতভাবে কি বদল হয়েছে, সব আমি জানি। আমি আমার বাল্যকাল দেখেছি, কৈশোর দেখেছি, যুবককাল দেখেছি, আমি আমার হতাশা দেখেছি, আমার পিছলে পড়ার দৃশ্য দেখেছি, আবার সেই পিচ্ছল পথ থেকে ভাসতে ভাসতে আমার সাফল্যকেও দেখেছি। এই বিস্তর সময়ে আমি আমার আশেপাশে থাকা অনেক মানুষজনও দেখেছি। কেউ হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, কেউ হাত উঠিয়ে নিয়েছে, কেউ পাশ কাটিয়ে চলে গেছে, কেউ বা আবার বিনা কারনেই পাশে দাড়িয়েছে। কখনো কারো উপরে খুব রাগ করেছি, কখনো কারো উপরে অনেক অভিমান করেছি, কাউকে কোন কারন ছাড়াই ভালোবেসেছি, কাউকে ভালোবাসতে গিয়েও ভালোবাসতে পারিনি, আবার কারো সাথে অযথাই রাগারাগি করেছি। কেউ আবার আমার সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হলেও আমি তাকে অবহেলা করেছি, আবার কারো সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য আমি নিজেই হয়তো অনেক ব্যাকুল হয়েছি কিন্তু তার নাগাল হয়তো আমি পাইই নাই। অনেক বন্ধু পর হয়ে গেছে, অনেক অপরিচিত আবার বন্ধুও হয়েছে। কখনো আমার অজান্তে শত্রু তৈরী করে ফেলেছি, আবার কাউকে কিছু না করেও আমি তাদের কাছের বন্ধু হয়ে গেছি। এককালের সবচেয়ে ভালো কলিগ পরবর্তীতে সবচেয়ে অপ্রিয় হয়ে গেছে সেটাও দেখেছি, আবার যাকে কখনোই প্রিয় মনে করিনি, সেও এক সময় এতো কাছে চলে এসছে যা কখনো ভাবিও নাই।

জীবনের এমনসব অনেক কিছুই ঘটে গেছে আমার এই প্রায় ৫৯ বছরের সময়ে। আমি এখন সেই শৈশবের দুরন্তপনা বালকের মতো ক্ষিপ্র গতিতে দৌড়াই না, এডভেঞ্চারে এখন আর সাহস পাই না, বন্ধু আসরে এখন আর সেই আগের মতো উচ্চস্বরে চেচাই না। এখন কেনো যেনো শুধু নিজেকেই নিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কি ঘটে গেলো আমার আশেপাশে, কি করতে পারতাম কারো জন্য, এগুলি আর আমাকে টানে না।

পথে হাটতে হাটতে পথে দাঁড়িয়ে থাকা অনাথ কোনো ভিক্ষুককে এখন আর কটু মন্তব্য করিনা। শুধু ভাবি, আহা রে জীবন। হয়তো তারও কোনো ইতিহাস আছে। হয়তো তারও কোনো পরিবার ছিলো, আজ তার পাশে কেউ নাই। হয়তো বা সেইই সব ছেড়ে ছুড়ে একা বেরিয়ে গেছে। কিন্তু কোথাও তার কোনো জায়গা নাই এই পথ ছাড়া। এখন তাকেও আর প্রশ্ন করিনা-কেনো সে ভিক্ষা করে, কেনো সে কোনো কাজ বেছে নেয় না।

বাজারে গিয়ে এখন আর কারো সাথে দাম নিয়ে তর্ক করিনা। দাম বেশী মনে হলে ভাবি-থাক না, আমার পোষায় না, আমি বেরিয়ে আসি। হয়তো দোকানদার একটা দাম বলার জন্য অনুরোধ করে, আমি মুচকী হেসে হয়তো বলি-নাহ, পছন্দ হয়নি। বলে বেরিয়ে যাই। ভাবি-কি দরকার তার সাথে আবার দাম নিয়ে ঘাটাঘাটি করা। আবার এমনো হয় যে,-সে হয়তো একটু বেশী দামই বলেছে, তাতে কি? যদি আমার কাছ থেকে পাওয়া একটু বেশী দামে তার নিজের পরিবার আরো একটু সুন্দর হয়, কিংবা তার উঠতি কোনো প্রয়োজন মিটেই যায়, ক্ষতি কি? হয়তো ইচ্ছে করেই মেনে নেই।

একটা সময় ছিলো, ১০ টাকার রিক্সা ভাড়া ১০ টাকা না পাওয়া অবধি হয়তো ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেছি, তাও ১০ টাকার বেশী দেবো না বলে পন করেছি। এক রিক্সা থেকে আরেক রিক্সার দামদর করেছি। এখন আমি আর কোনো দামদরও করি না। কি যায় আসে যদি ১০ টাকার ভাড়া সে আমার কাছ থেকে ২০ টাকাই নিলো? সেতো আর কটি টাকা চায় নাই। হতেও তো পারে তার এই অতিরিক্ত টাকাটা আসলেই দরকার। তার মেয়ের জন্য হয়তো একটা স্কুলব্যাগ কিনবে বা অন্য কিছু। আমি আন্দাজ করে একটু বেশিই দেই। যদি দেখি তার মুখে হাসি ফুটেছে, ভাবি-ঠকাইনি, কিন্তু যদি তার মুখে এমনভাব ফুটে উঠে যে, হয়তো আর একটু বেশী দিলে ভালো হতো, আমি দেরী করি না, আরো একটু বাড়িয়েই দেই। তার মুচকী হাসিটা আমার কাছে দরকার। হয়তো এই রিক্সাওয়ালার সাথে আমার দ্বিতীয়বার আর দেখা হবেওনা। না আমি ওর নাম জানি, না সে আমাকে চিনে। কিন্তু ক্ষনিকের এই ছোট মুচকী হাসিটা নেহায়েত কম নয়।

কারো সাথে এখন আমি আর তর্কও করি না।  কারো তর্কে আমি জিততেও চাই না। বুঝতে পারি ভুল তর্ক কিন্তু আমি আর আগের মতো সেই তর্কে সরব নই। কারন, কাউকে আমি শোধরিয়ে দিয়ে তার ইথিক্সকে আমি বদলাতে পারবো না। কেউ কারো জন্যই বদলায় না। সবাই নিজের জন্যই একসময় বদলায়। যেমন আমিও বদলে গেছি। তবে আমি আগে যেমন শুধু বক্তা ছিলাম, এখন আমি ভালো শ্রোতা হয়ে গেছি। বলুক না মানুষ তাদের কথা, আমি শুনি, হাসি, কখনো কখনো চুপ থাকি, কখনো কখনো আবার উসাদ মনে এটাও ভাবি- বলুক সে তার নিজের কথা, অন্তত আমার মতো একজন শ্রোতা তো আছে যে তার কথা শুনছে। তাদের গল্পগুলিতে হয়তো অনেক স্মৃতি আছে যা আমার কোনো কাজেই লাগবে না, তারপরেও তাদের একাকীত্ব জীবনের সেই পুরানো কিছু কথা না হয় আমিই শুনলাম। তার বুকটা তো কিছুটা হলেও হালকা হলো, কিছুক্ষন সময়ের জন্য হয়তো সে আবার ফিরে যায় তার সেই পুরানো কোন দিনে, পুরানো কোনো হাসি দুঃখ মাখা জীবনে।

কেউ আমাকে মুল্যায়ন করুক বা না করুক, এখন এগুলি নিয়ে আর বেশী মাথা ঘামাই না। অবজ্ঞা করলেও আমি সেখানে তাকে অবজ্ঞা করি না। আস্তে করে হয়তো চুপিসারে সরে যাই। কোনো কিছুই বা কারো কোন মুল্যায়নে বা অবমুল্যায়নে আমার কোনো কিছুই পরিবর্তন হবে না। ইগো থেকে বেড়িয়ে যাই। প্রানভরে সবার প্রসংসা করি। কাউকে প্রসংসা করলে আমার তো কোন ক্ষতি নাই। অন্তত তাকে আমি কষ্ট দেইনি এটা ভেবেই সেটা করি। হয়তো তাকে কেউ প্রসংসাও করেনি, আমি না হয় করলাম। কি ক্ষতি?

কাউকে আমি টাকা ধার দিয়েছি, আমি কাউকে সেটার জন্য প্রতিনিয়ত চাপে রাখি না। এটা তার দায়িত্ব আমাকে সেটা বুঝিয়ে দেয়া। যদি ভালো মানুষ হয়, যদি দায়িত্তশীল হয়, যদি উপকারের কথা মনে রাখে, সে ফিরে আসবে অতি বিনয়ের সাথে। কিন্তু আমি ধরে নেই-যা দিলাম, তা দিয়েই দিলাম। যদি কখনো তা ফিরে আসে, সেটা আমারই ছিলো। যদি ফিরে না আসে, অন্তত আমি বুঝলাম, উপকার করার লিমিট হয়তো সেখানেই শেষ। কিন্তু অপদস্ত করি না।

এই দুনিয়ায় কতো মানুষ যে আছে যারা একা থাকে, যারা ভালোবাসা দিতে গিয়েও দিতে পারেনি, তাদেরকে ভালোবাসা দিতে চেয়েও অনেকে তা দিতেও পারেনি। তার কাছে হয়তো অন্য কোনো কিছু আরো প্রিয়, আর বেশী দামী। কেউ কারো ভিতরের কথা জানে না। আজিবন বলে গেলেও তাদের ভিতরের কষ্ট, সুখ, আহলাদ কোন কিছুই অন্য কাউকে বুঝানো যায় না। হাসিটা ঠটে থাকলেও সুখের অনুভুতিটা থাকে অন্তর, দুঃখের, কষ্টের বেদনার পানিটা চোখের জলে দেখা গেলেও কষ্টের অনুভুতিটা থাকে মনের ভিতরে। সেগুলি দেখানো যায় না, সেগুলি কাউকে বুঝানোও যায় না। ভাষাই যদি হতো একমাত্র প্রকাশের মাধ্যম তাহলে বোবার কথা, প্রানিদের কথা কোনো মানুষ কখনোই বুঝতে পারতো না।  পরিবর্তনও একটা ভাষা।  

আমি আমার জন্যই বাচি, এক সময় আমি বাচতে চেয়েছি আমার পরিবারের জন্য, আমার সন্তানের জন্য, আমার সমাজের জন্য, আমার দেশের জন্য। কিন্তু এখন আমি আমুল পরিবর্তীত এক মানুষ। আমি আমার জন্যই বাচি। প্রতিটি দিনকে জীবনের শেষ দিন মনে করে বাঁচি।

হয়তো একদিন সেই দিনটা খুব কাছে যখন আমার জন্যেও আর বাচার দরকার হবে না। পৃথিবী বড্ড সুন্দর, এর গাছপালা সুন্দর, মেঘলা আকাশ সুন্দর, ঝড়ো হাওয়া সুন্দর, চাঁদ সুন্দর, শীত সুন্দর, পাখীদের কিচির মিচির শব্দ সুন্দর, এমন কি কাল বৈশাখী ঝড় ও সুন্দর। কিন্তু একদিন এই সব ছেড়ে আমাকে চলেই যেতে হবে। তাহলে কার সাথে আমি কি নিয়ে তর্ক, কি নিয়ে ইগো, কি নিয়ে এতো বাহাদুরী কিংবা অবজ্ঞা করবো?

আমি অনেক বদলে গেছি।

২১/১১/২০২৩-ক্যাবিনেট সচীব মাহবুব ভাইয়ের সাথে

২০১৯ সালের দিকে যখন মাহবুব ভাই শিক্ষা সচীব ছিলেন, তখন একবার মাহবুব ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা হয়েছিল বটে কিন্তু শশরীরে দেখা করার সুযোগ এবং সময় কোনোটাই হয়ে উঠেনি। অদেখা কোন মানুশের সাথে টেলিফোনে কথা বলে তার গলার স্বর শুনে শ্রোতা নিশ্চয়ই কাল্পনিক একটা চেহারা সাজিয়ে নেন, যেমন তিনি কি মোটা হবেন নাকি চিকন, নাকি একটু বয়ষ্ক নাকি অনেক ইয়াং টাইপের।  টেলিফোনে মাহবুব ভাইয়ের গলার স্বর শুনে মাহবুব ভাইকে আমার যতোতা ইয়াং মনে হয়েছিলো, বাস্তবে তিনি আরো বেশী ইয়াং। আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর সেনাকুঞ্জের দাওয়াতে হটাত করেই মাহবুব ভাইয়ের সাথে দেখা। মাহবুব ভাই এখন আর শিক্ষা সচীব নন, তিনি গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কেবিনেট সচীব হিসাবে অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। অনেক ধন্যবাদ মাহবুব ভাই।

২২/১১/২০২৩-মানুষের জীবন মৃত্যু

মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত। যতোক্ষন জীবিত আছে, তাকে নিয়ে কেউ না কেউ সব সময়ই ব্যস্ত থাকে। হোক সে স্বনামধন্য কোনো ব্যক্তি বা সবার অগোচরে পালিয়ে বেড়ানো কোনো মানুষ। যারা এই সমাজের উঁচু স্তরে থাকেন, তাদের বেলায় সবার ব্যস্ততা একটু বড় পরিসরে আর যারা কোনো স্তরেই নাই, তারা হয়তো সীমাবদ্ধ শুধুমাত্র তার ঘরে বা পরিবারের মধ্যে। যখন কেউ আর এই দুনিয়ায় থাকেন না, সবার পরিনতি প্রায় একই রকমের, অর্থাৎ মুছে যাওয়া। তদুপরি সবার সব মুছে না গেলেও তাদের কিছু কিছু কৃতকর্মের জন্য মাঝে মাঝে আলোচনার বিষয়বস্তুতে চলেই আসেন।

এই কথাগুলি বলার কারন হচ্ছে-গতকাল ২১ নভেম্বর উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াতে সেনাকুঞ্জে গিয়েছিলাম। প্রতিবছরই যাই। সেখানে এবার দেখেছি, গত বছরে যারা অনেক হোমরা চোমড়া ব্যক্তিদের তালিকায় সচল ছিলেন, তারা আজ কারো না কারো দ্বারা রিপ্লেসড এবং তারাও প্রায় মৃত কোনো মানুষের মতোই। সেই আগের হাল হকিকত নাই, সেই দাপট নাই, সেই আচরনও নাই। অথচ সেই আগের মানুষটাই আছেন, আগের নামটাতেই আছেন শুধু নাই স্তরের পজিশনটা। এখন সেখানে প্রতিস্থাপিত হয়েছেন নতুন কোনো মুখ, নতুন কোনো চরিত্র, নতুন কোনো নাম।

কথা হচ্ছিলো এককালের মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সাথে। উনি মন্ত্রী ছিলেন, কথা হচ্ছিলো সাবেক তিন সেনাপ্রধানের সাথে-জেনারেল বেলাল, জেনারেল মুবীন এবং জেনারেল আজিজ। কথা হচ্ছিলো নেভীর সাবেক প্রধান শাহীন সাহেবের সাথে। এ ছাড়াও কথা হচ্ছিলো আরো কিছু জ্বলন্ত সাবেক ব্যুরুক্রেটদের সাথে। তারমধ্যে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী পরিষদের ক্যাবিনেট সচীব ইত্যাদি। ওনারা এর আগেও এই প্রোগ্রামে এসেছিলেন, আজকেও এসেছেন কিন্তু স্তয়াটাস এক নয়। এরই মধ্যে অনেকে আবার গত হয়েছেন যারা গত বছরে এসেছিলেন কিন্তু এবার আর আসার কোনো সুযোগই নাই। কারন তারা এ বছরের সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপনের হায়াত পান নাই। আবার অনেকেই ছিলো যারা ইচ্ছে করেই আজকের দিনের এমন একটা মহাগ্যাদারিং অনুষ্ঠানে ইচ্ছে করেই আসেন নাই কারন তারা আর এই অনুষ্ঠানে আসার মত পরিস্থিতিতে নাই। কারো নামে বদনাম, কারো নামে নিষেধাজ্ঞা, কারো নামে দূর্নিতির অভিযোগে তারা প্রায় সমাজে মুখ দেখাতেও ভয় পান।

এই যে একটা পরিস্থিতি, একটা পরিবর্তন এটা শুধু করতে পারে “সময়” নামক ফ্যাক্টর। “সময়” সবকিছু পালটে দেয়। পালটে দেয় নামের আগে পরের স্ট্যাটাস। আমার স্পষ্ট মনে পড়ে গত বছরের ২১ নভেম্বরের ঘটনা। মনে পড়ে তার আগের অনেক ঘটনা যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা আজ জীবন্ত থেকেও অনেকের কাছে খুবই অ-জীবন্ত। তখন সময়টা ছিলো তাদের ঘিরে, আজ তারা একই স্থানে একই ব্যক্তি একই অনুষ্ঠান হওয়া সত্তেও আজ তারা ততটাই অবহেলিত হচ্ছেন যতোটা তারা অবহেলা করেছিলেন অন্যদেরকে সেই সময়ে যখন তাদের কাধ ভারী ছিলো ব্যাজে। যখন তাদের হাতে ছিলো চেয়ারের ক্ষমতা।

দেখলাম, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ এককোনে একটা চেয়ারে বসে আছেন। কেউ তার সাথে কথাও বলার সুযোগ নিচ্ছে না। দেখলাম রাশেদ খান মেননকে, এতিমের মতো একটা জায়গায় দাড়িয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছেন। বুঝা যাচ্ছিলো যে, তিনি কথার ছলে সময়টা পার করছেন। দেখেছি আরো বড় বড় ব্যুরুক্রেটদেরকে। তাদের এই সাবেক হিসাবে আর আগের মতো কদর যেমন নাই, তেমনি কারো কারো ঘেন্নায় দাড়িয়ে আছেন সবার মাঝে। নিশ্চয় তাদের এখন খারাপ লাগে, নিশ্চয় ভাবেন তারা যে, কেনো আর আগের মতো মানুষ তাদেরকে সেই মুল্যায়নটা করছেন না? তিনি তো আর মরে যান নাই? মাত্র সাবেক হয়েছেন শুধু। আসলে, ক্ষমতা আর অবসর বড় অদ্ভুত জিনিষ। যখন কেউ ক্ষমতায় থাকেন, তারা যদি সেই সময়টায় সেই ক্ষমতাটা ইনভেষ্টমেন্ট করতেন মানুষের কাছে, আজ যখন আর ক্ষমতায় থাকেন না, এখন তিনিরা এই সময়টায় এসে দেখতে পেতেন, প্রচুর মানুষ এখনো তাদের পিছু ছাড়ছেন না।

আমার ঘুরে ঘুরে এসব দেখতে খুব ভাল লাগে। দেখি আর ভাবি, কত অদ্ভুত সব মানুষজন। মানুষ সবদিক থেকেই চরম সার্থপর। কেউ আজকে ক্ষমতার অপব্যবহার করলে, কেউ কাউকে ঠকালে এর প্রতিদান আজ না হোক, আগামিকাল এর প্রভাব হারে হারে পাবেনই। আজকে যাদের নামে রাস্তায় রাস্তায় অলিতে গলিতে ব্যানারের মাধ্যমে বন্দনা দেখি, ঠিক তার প্রস্থানে আগামিকাল তার সব ব্যানার খুলে আরেকজনের নামে বন্দনা শুরু হয়। আগেরজন এই পৃথিবীতে ছিলো কিনা এটাই মাঝে মাঝে সন্দেহ হয়। আমার এলাকায় গত ৪০ বছরে একের পর এক রাজনৈতিক এমপি, মিনিষ্টার দেখেছি যাদের নামে আর ছবিতে ব্যানারে ব্যানারে রাস্তার গাছপালাও ঢেকে গিয়েছিলো। কিন্তু তাদের মৃত্যুতে কিংবা ক্ষমতা থেকে চলে যাবার পর সেইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আর কোথাও দেখা যায় নাই। আমজনতা ইন্সট্যান্টলি ভুলে যায় তাদের। তারা কোটি কোটি টাকা রেখে যায় তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বটে কিন্তু সেই অবৈধ আয় তার নিজের কোনো কাজে লাগে না বরং এই অবৈধ টাকার জন্য ইহকালের শাস্তির একটা বড় বোঝা কিয়ামত পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয়।   

২১/১১/২০২৩-সশস্ত্র বাহিনী দিবস

কিছু কিছু গেট টুগেদার আসলেই নতুন পুরান মুখগুলির সাথে অনেকদিন পর হলেও দেখা করিয়ে দেয়। অনেক অতীত তখন সামনে চলে আসে, অনেক সুখ-দুঃখের, কষ্টের কিংবা সফলতার কাহিনী সামনে আসে। নষ্টালজিক করে দেয় মন এবং অন্তর। আমরা যারা ডিফেন্স ফোর্সে ছিলাম, তাদের জন্য ২১ নভেম্বর শুধু একটা সশস্ত্র দিবসই না, এটা একটা মহামিলনের মতো যোগসুত্র। প্রায় ১৮/১৯ বছর আগে সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহন করলেও এই সময়টায় মনে হয় আবার ফিরে গেছি সেই সময়টায় যখন সময় চলমান ছিলো আমাদের। আজ তেমনি একটা দিন ছিলো। মাননীয়া প্রধান মন্ত্রীর দাওয়াতে আমরা সেনাকুঞ্জে সবাই মিলিত হয়েছিলাম। খুব ভালো লেগেছে পুরান সেই সিনিয়ার জুনিয়ার অফিসারগুলির সাথে মিলিত হতে পেরে। তাদের সাথে বেসামরিক অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি বর্গের সাথেও দেখা হলো যারা আমার খুব প্রিয় মানুষগুলির মধ্যে অন্যতম। এইদিনের কিছু ছবি রেখে দিলাম টাইম লাইনে। হয়তো আবারো বেচে থাকলে বছর ঘুরে তাদের দেখা পাবো ইনশাল্লাহ।

 

০৫/১১/২০২৩-আমার প্রিম্যাচিউরড রিটায়ারমেন্ট

অনেকদিন পর আবারো আমার সেই পুরানো আর্মির কথা মনে পড়লো। যেনো ব্যাপারটা মাত্র সেদিনের ঘটনা। কিন্তু ঘটয়ান মাত্র সেদিনের নয়। ২০ বছর আগের সেই কথা।

প্রায় ২০ বছর সেনাবাহিনীতে চাকুরী করার পর যেদিন সেনাবাহিনী থেকে প্রিম্যাচিউড় বা অকালীন অবসর নিয়ে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে আসি, সেদিন কেউ আমাকে দেখুক বা না দেখুক, কেউ আমার ভিতরের কষ্টটা বুঝুক বা না বুঝুক, আমি বুঝেছিলাম কতটা বেদনা ভর্তি ছিলো আমার মনের ভিতরে। একনাগাড়ে যে ইউনিফর্মটা আমি সকালে উঠেই পড়তে খুব গর্ববোধ করতাম, যে অফিসটায় আমি বসে কত ধরনের মিলিটারী প্ল্যান, কাজকর্ম, কুশল বিনিময় করতাম, সেই ইউনিফর্মটা আমি নিজের ইচ্ছায় খুলে ফেলছি আজ। আমার আর কখনোই সেই অফিসে গিয়ে আমার চেয়ারটায় বসা হবে না। সেই কর্মস্থলটা আর আমার না। আমি এখন শুধু একজন রিটায়ার্ড সামরীক অফিসার। অথচ আমার আরো গোটা ১০/১২ বছর কাজ করার মতো সময় হাতে ছিলো।

নিজেকে অনেক প্রশ্ন করেছিলাম, আমার কি কোনো অন্যায় ছিলো? বা আমার কোনো গাফলতি? কিংবা আমি কি এমন কেউ যাকে আর এই সামরীক বাহিনির কোনো কাজে লাগবে না? আমি যতোগুলি মিলিটারি কোর্ষ একটা তুখুর আর্মি অফিসারের করা দরকার সবগুলি খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছিলাম। যেসব কোর্ষগুলি কমপিটিটিভ অর্থাৎ পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ন হয়ে করার যোগ্যতা লাগে, যেমন আর্মি ষ্টাফ কলেজ, আর্মি গানারি ষ্টাফ কোর্ষ ইত্যাদি সেসব কোর্ষগুলিও আমার করা ছিলো। এসব কোর্ষের জন্য অফিসাররা আপ্রান চেষ্টা করে যেখানে সফল হয় না, আমি সেসব কোর্ষগুলিও করেছিলাম। যদি বলি নিয়োগের বেলায়? তাতেও তো আমার কোনো কমতি ছিলো না। আর্টিলারি অফিসার হয়েও আমি পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল স্টাফ অফিসার (অপারেশন) যাকে জিএসও-২ (অপ্স) বলা হয়, সেটার দায়িত্বও আমি খুব সফল্ভাবে পালন করেছি। শুধু তাইই নয়, আমি খোদ আর্মি হেডকোয়ার্টারেও জেনারেল ষ্টাফ অফিসার-২ (ট্রেনিং) হিসাবে কাজ করে অনেকগুলি আন্তর্জাতীকমানের ইভেন্ট সফল্ভাবে সম্পন্ন করেছিলাম। মাইনর ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেছি, মেজর ইউনিটের উপঅধিনায়কের কাজ করেছি। কিন্তু সেগুলির কোন মুল্যায়ন আমার হয়নি। জাতীসংঘ মিশন করেছিলাম পরপর দুটু। একটি হাইতিতে এবং অন্যটি জর্জিয়া মিশনে। এসব মিশনে কাজ করার সময় লেটার অফ এপ্রিশিয়েশনেও ভুষিত হয়েছি স্বয়ং ফোর্স কমান্ডারদের কিংবা এসআরএসজি (স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অফ সেক্রেটারী জেনারেল) কাছ থেকে।

কোনো কিছুতেই আমার কোনো কমতি ছিল না। আর্মিতে থাকতেই আমি মাস্টার্স অফ সায়েন্স (এমএসসি), মাষ্টার্স অফ বিজনেজ এডমিনিষ্ট্রেশন (এমবিএ), এবং মাষ্টার্স অফ ডিফেন্স স্টাডিস (এমডিএস) করেছি। অর্থাৎ সেনাবাহিনীতে থাকতেই আমি তিনটা মাষ্টার্স সম্পন্ন করেছি। জেনারেল অফিসার কমান্ডিং অর্থাৎ জিওসি এর কাছ থেকে আমি আউটস্ট্যন্ডিং এনুয়াল কনফেডেন্সিয়াল রিপোর্টও (এসিআর) পেয়েছি। এতো সব উপাধী, এতো সব শিক্ষা, এতো সব আউট স্ট্যান্ডিং পারফর্মেন্স ২০০৩/২০০৪ সালে আমার প্রোমোশনের সময় কোনো কাজেই লাগলো না? অবাক হয়েছিলাম। আমার কাছের যে সব সিনিয়ার অফিসারগন আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন, যারা আমাকে চিনেন, তারাও আমার উপর এমন আচরনে হতাশ হয়েছিলেন। আমার জুনিয়ার অফিসাররা যারা আমাকে মডেল মনে করে আমার মত হতে চাইতো, তারাও এক প্রকার হতাশই হয়েছিলো। ইউনিটের সৈনিকগনের মধ্যে কেমন যেনো একটা বিষন্নভাব আমি দেখতে পেয়েছিলাম। তারাও আমার প্রোমোশন না হওয়াতে অনেক হতাশ ছিলো। কিন্তু এসবের কোনো মুল্যায়ন কিংবা যোগ্যতার জন্য আমার এসব কোন কিছুই যথেষ্ঠ ছিল না। পরবর্তীতে যেটা বুঝেছিলাম সেটা হলো, আমার দরকার ছিল একটা পলিটিক্যাল লিংকআপ যা আমি কখনোই তৈরী করার চেষ্টা করিনি। সেনাবাহিনির চাকুরিটা হচ্ছে একটা ভিন্ন প্রকৃতির জব। আমি সব সময় মনে প্রানে বিশ্বাস করেছি, এখানে শুধু আনুগত্য থাকবে আমার দেশের প্রতি, জনগনের প্রতি, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি থাকার কথা নয়। অথচ সেটাই কাল হয়ে দাড়িয়েছিল আমার জন্য।

এখানে আরো একটি অলিখিত ফ্যাক্টর আমাদের ১৩ বিএমএ লং কোর্ষের জন্য সামষ্টিক সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছিল। আর সে হচ্ছে আমার কোর্ষমেট মেজর (বর্তমানে লেঃ জেনারেল) ওয়াকার। শেখ ওয়াকারুজ্জামান। ওয়াকার বংশগতভাবেই শেখ বংশের মানুষ, তার উপরে সে বিয়ে করেছিল তদানিন্তন আর্মির চীফ জেনারেল মুস্তাফিজের মেয়েকে। জেনারেল মুস্তাফিজ ছিলেন আওয়ামিলিগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার আপন ফুফা। ওয়াকার একদিকে শেখ বংশের লোক, অন্যদিকে শেখ হাসিনার আপন ফুফাতো বোনের স্বামী। একটা কোর্ষের মধ্যে আওয়ামিলিগের বংশোদ্ভত এমন একজন অফিসার থাকা মানে বিরোধী দলের রাজনীতিকরা তো পুরু কোর্ষকে আওয়ামিলিগ ব্রান্ড করতেই পারে। যদিও ঢালাওভাবে এমন ধারনা পোষন করা কোনো পলিটিক্যাল পার্টিররই থাকা উচিত না। কিন্তু তারপরেও সেটাই হয়ে উঠেছিল আমাদের জন্য একটা অভিশাপ। আমরা কেউ রাজনিতি করি বা না করি, যেহেতু ওয়াকার আওয়ামিলীগের ঘরানার, ফলে আমাদের পুরুকোর্ষ যেনো হয়ে উঠেছিল আওয়ামিলীগের কোর্ষ। এ সময়ে দেশের সরকার হচ্ছে বিএনপি। ফলে ১৩ বিএমএ লং কোর্ষের বেশিরভাগ পোটেনশিয়াল অফিসারগনই পরবর্তী পদে উন্নীত হলেন না। আমিও না।

আমার বেলায় ব্যাপারটা আওয়ামি ঘরানার বাইরেও আরেকটা ব্যাপার ছিলো। তাহলে ব্যাপারটা বলি।

আর্মি স্টাফ কোর্ষের ফলাফলের নিয়ম হলো-যিনি প্রথম হন, তাকে আমেরিকায়, যিনি দ্বিতীয় হন তাকে মালয়েশিয়া আর যিনি তৃতীয় হন তাকে লন্ডনে সেকেন্ড স্টাফ কোর্ষে পাঠানো হয়। সবগুলিই গ্রাটিস কোর্ষ অর্থাৎ এক্সচেঞ্জেবল কোর্ষ। আমাদের অফিসার যাবে সে দেশে, সেই দেশের অফিসাররাও আমাদের দেশে আসবেন। খরচ আদান প্রদান। ওয়াকার আর্মি ষ্টাফ কোর্ষে হয়েছিলো তৃতীয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, সম্ভবত ঠিক এই সময়ে লন্ডনের সাথে আমাদের গ্রাটিস কোর্ষের আইনটা আর বহাল ছিল না। ফলে ওয়াকার লন্ডনে দ্বিতীয় ষ্টাফ কোর্ষ করতে যায় সম্পুর্ন বাংলাদেশ সরকারের ফান্ডে। এ সময় আর্মির চীফ ছিলেন জেনারেল মুস্তাফিজুর রহমান যিনি ওয়াকারের শশুর আর ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামিলিগ। রাজনীতির পট পরিবর্তনের কারনে যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে এবং আর্মির চীফ হিসাবে মুস্তাফিজ সাহেবের পরিবর্তে জেনারেল হাসান মাসউদ স্থলাভিষিক্ত হন, তখন বাংলাদেশ আর্মি থেকে ওয়াকারের জন্য আর ফান্ড পাঠাচ্ছিল না। এটা বেসিক্যালী পলিটিক্যাল রিভেঞ্জের মতো। আমি তখন আর্মি হেডকোয়ার্টারে ট্রেনিং ডাইরেক্টরীতে কাজ করি। ব্যাপারটা আমি হ্যান্ডেল করছিলাম না। ওটা ফরেন কোর্ষের অধীনে মেজর শাহরিয়ার এবং মেজর তামিম দেখভাল করেন। আমাদের ডিএমটি (ডাইরেক্টর অফ মিলিটারী ট্রেনিং) ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুবীন (পরবর্তিতে তিনি আর্মির চীফ হন)। আমি মুবীন স্যারকে বললাম, ওয়াকারের এহেনো দূর্যগপুর্ন সময়ে লন্ডনে টাকা না পাঠালে ওয়াকার কোর্ষ শেষ করবে কিভাবে? এদিকে জিএসও-২ গনও চীফের নেগেটিভ মনোভাবের জন্য ওয়াকারের ফেভারে কোনো মিনিটস শিট লিখতে ভয় পাচ্ছেন। আমি মুবীন স্যারকে রিকুয়েস্ট করলাম, যেনো আমাকে ফরেন ট্রেনিং উইং এ পোস্টিং করেন। আমি সেখানে পোষ্টিং পেয়েই ওয়াকারকে টাকা পাঠানোর নিমিত্তে একটা মিনিটস শীট রেডি করি। অনেকবার চীফের অফিসে এ ব্যাপারে আমাকে তলব করা হয়েছিল যাতে আমি এ ব্যাপারে পজিটিভ কোনো সাযেশন না দেই। কিন্তু আমি সেটা করিনি। কোন রকমভাবে শেষপর্যন্ত ওয়াকার লন্ডনে কোর্ষ শেষ করে এসেছিল। কিন্তু ঢাকায় এসে ওয়াকার এতোটাই সমস্যায় পড়লো যে, ওর আর্মিতে টীকে থাকাই ওর জন্য দায়। আর্মি হেড কোয়ার্টারেও ওর প্রবেশ যেনো প্রায় নিষিদ্ধ ঘোষনার মত। ওয়াকারের পোস্টিং তখন কুমিল্লায়। যে কোনো কারনেই হোক, ওয়াকার ঢাকায় আর্মি হেডকোয়ার্টারে আসতে চেয়েছে বা এসেছে। আর্মি হেডকোয়ার্টারে ঢোকতে “পাশ” দিতে হয়। ওয়াকার আমাকে ওর জন্য একতা “পাশ” চাইলো। আমি ওয়াকারকে “পাশ” পাঠিয়ে দিলাম। ওয়াকার আমার রুমে এলো। তার ঠিক কিছুক্ষন পর ডাইরেক্টর অফ মিলিটারী ইন্টিলিজেন্স (ডিএমআই) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদ স্যার ইন্টারকমে আমাকে জানালেন, আমি কেনো ওয়াকারকে “পাশ” পাঠিয়ে আর্মি হেডকোয়ারর্টারে আসার অনুমতি দিলাম? ওয়াকার তখনো আমার রুমেই বসা। ওয়াকারকে আমি আমার রুমে বসিয়েই রেখে চলে গেলাম ডিএমআই এর অফিসে। গিয়ে আমি বললাম, স্যার, ওয়াকার কি পিএনজি? অর্থাৎ পার্সন্স নন গ্রাটা? বা নিষিদ্ধ? যদি ওকে পিএনজি ঘোষনা না করা হয়, তাহলে আমার “পাশ” দিতে আপত্তি কি? আর সেতো এখনো সার্ভিং আর্মিতে? আর সবচেয়ে বড় কথা, ওয়াকার আমার ব্যাচমেট, আমার কোর্ষমেট, সেতো অন্তত আমার অফিসে আমার সাথে দেখা করতে আসতেই পারে!! ব্রিগেডিয়ার মাহমুদ স্যার খুব ভাল মানুষ ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, দেখো আখতার, আমার তো কোনো সমস্যা নাই কিন্তু চীফের কানে গিয়েছে যে, ওয়াকার আর্মি হেডকোয়ার্টারে এসছে। তাকে আসতে দেয়া যাবে না আর। কোন কারন নাই, বারন নাই, অথচ এমন একটা অলিখিত আইনের মধ্যে ওয়াকারকে ফেলে দিলো গেরাকলে। আমি মাহমুদ স্যারের অফিস থেকে ফিরে এলাম। তখন প্রায় ছুটি (বেলা আড়াইটা) হয় হয় ভাব। আমি ওয়াকারকে নিয়ে আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে গেলাম। রাস্তায় যেতে যেতে শুধু আমি ওয়াকারকে একটা কথাই বলেছিলাম, “ওয়াকার, যত চাপই আসুক, চাকুরি থেকে নিজের ইচ্ছায় চলে যাবি না। ওরা চায় তুই চলে যা। এটা যেনো না হয়।“ ওয়াকার সবকিছুই বুঝতেছিল। আমাদের কোর্ষে ওয়াকারের মত এতো ভাল, ধার্মিক, সৎ এবং নীতিবান অফিসার খুব কম আছে। ওয়াকার সত্যিই একজন ভাল মানুষ এবং ভাল ছেলে। আমি ওয়াকারকে আর্মিতে আসার আগেই চিনতাম। সেটা আরেক ইতিহাস।

ভাগ্য যখন খারাপ থাকে, তখন অনেক কিছুই আর কাজে লাগে না। একদিকে আমাদের ১৩ বিএমএ লং কোর্ষ আওয়ামিলিগ ঘরানার হিসাবে গন্য, অন্যদিকে আমার ব্যাপারটা তখনো চীফ মাসউদ হাসানের মাথায় জ্যান্ত, সব মিলিয়ে খুব ভাল পজিটিভ সাইডে আমার ফাইল ফাইট করতে পারেনি। প্রথমবার সুপারসিডেড হয়ে গেলাম।

আমাকে পোষ্টিং করা হলো খোলাহাটি ৪ ফিল্ড রেজিমেন্টে। লেঃ কর্নেল ফেরদৌস আমার অধিনায়ক, আমি উপঅধিনায়ক। মিশন থেকে ফিরেছি বটে, কিন্তু খোলাহাটি আমার কাছে খুব বিরক্ত লাগছিল। তবে সুখের খরর ছিল যে, আমাদের ইউনিট খুব শীঘ্রই মীরপুর ট্রান্সফার হবে। আমার কেনো প্রোমোশন হলো না এটা আমি আমার তদানিন্তত রংপুরের জিওসি জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দারকে প্রশ্ন করেছিলাম। উনি খুব ডেশিং টাইপের মানুষ। আমার ইন্টারভিউতে জেনারেল শুধু একটা কথা জানালেন যে, আমার পক্ষে আমারই জাতি ভাইয়েরা বিশেষ করে আর্টিলারি জেনারেলরা খুব একটা সোচ্চার হয়নি। তার মধ্যে ছিলেন জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার (যিনি এখন অস্ত্র মামলায় ফাসির আসামি), জেনারেল মোহাম্মাদ আলি, জেনারেল সিকদার, জেনারেল আমিনুল করিম ইত্যাদি।

প্রথমবার প্রোমোশন না হওয়াতে আমি একটা জিনিষ বুঝে গিয়েছিলাম যে, খুব শিঘ্রই আমাকে এই আর্মির ট্র্যাক থেকে অন্য আরেকটা ট্র্যাকে পরিবর্তন করতে হতে পারে। আমার প্রিপারেশন নেয়া অতীব জরুরী।

মীরপুরে চলে এলাম। সুপারসিডেদ হলেও এখানকার ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোশাররফ আমাকে উপ অধিনায়কের মতো দেখেন না। সব সি অ দের জন্য যেখানে চেয়ার পাতা হয়, কমান্ডার আমার জন্যেও সেখানে চেয়ার রাখেন। আমি ব্রিগেডের প্রুচুর ডিভিশনাল লেবেল যেমন, ষ্টাডি পিরিয়ড, আম্পায়ারগিরি, ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টের সহযোগি ইত্যাদি রাখেন। লেঃ কর্নেল ফেরদৌসও আমাকে খুব একটা ঝামেলা করেন না। ভদ্র মানুষ।

সময় ঘুরে গেলো, আবারো প্রোমোশন বোর্ড। এবারেও আমার প্রোমোশনটা হলো না। উপরন্ত লেঃ কর্নেল ফেরদৌসকে অধিনায়ক থেকে পোষ্টিং দিয়ে আমার জুনিয়ার ১৪ লং কোর্ষের মেজর মজিদকে প্রোমোশন দিয়ে আমার অধিনায়ক বানিয়ে দিলেন। একদিকে আমি সুপারসিডেড অন্যদিকে জুনিয়ারের অধীনে উপঅধিনায়ক। বুঝতেই পারছেন, মনের ভিতরের অবস্থাটা কি। কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না। কিন্তু একটা কারনে সহ্য করতে হচ্ছিলো। আর সেটা হলো, আমার চাকুরীর বয়স যদি ন্যুনতম ১৮ না হয়, তাহলে সরকারী প্লট পাবো না। এতো কাছে এসে আমি আমার অন্তত এই সুযোগটা হারাতে চাই না।

মজিদ আমাকে অসম্মান করেনা কিন্তু যা হবার তো হয়েই গেছে। (চলবে……)

০৪/১১/২০২৩-অবসেসন বা অন্য অর্থে কোনো কিছুর

অবসেসন বা অন্যঅর্থে কোনো কিছুর উপর কারো একাগ্রচিত্তের মতো একটা এক তরফা ভাবনা বা বাতিক। এই অবশেসন একটা শাখের করাতের মতো। যদি অবসেসন কোনো ভালো জিনিষের উপর হয় তাহলে সেটা মানুষকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়ার রাস্তা তৈরী করে দেয় কিন্তু নেগেটিভ অবসেসন ভীষন বিপদ। বিপদ যেমন তার আশেপাশের মানুষদের জন্যে, তেমনি বিপদ সমাজের জন্য। আর এই অবশেসন সবচেয়ে বেশী বিপদ সেই মানুষটির জন্য যে ভুল জিনিষ নিয়ে অবসেসিস হচ্ছেন।

অনেক কারনে মানুষ এই অবশেসনে ভোগে। কখনো প্রেমের কারনে, কখনো অর্থের কারনে, কখনো নিজের অপারগতায় অন্যের উপর হিংসার কারনে, কখনো আবার এমনি এমনি। শেষেরটা হতে পারে নিছক কোনো পারিবারিক বা পরিবেশগত কারনে। যারা অবশেসিসড, তারা কিন্তু অবুঝ নন, তারা অশিক্ষিতও নন, তারা যুক্তি মানেন, তারাও আশেপাশের সবার ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন। কিন্তু তারা অবসেসিসড হয়ে গেছেন, এটা তার আশেপাশের অনেকেই জানেন না। ফলে, এসব মানুষগুলি থেকে অন্যরা যে বিপদের আশংকা আছে, সেটা হয়তো বুঝেই উঠতে পারেন না। এই নেগেটিভ অবসেসিসড মানুষ গুলিই ক্রমাগত মস্তিষ্ক বিকাসের কারনে এক সময় হয়ে উঠে সিরিয়াল কিলার, কিংবা জাগ্রত অদৃশ্য ধ্বংসাত্মক কোনো শ্রেনীর প্রতিনিধি। ফলে যখন আপনি কাউকে এমন দেখবেন যে, কোনো একটা কাজে তার নাছোরবান্দার মতো এটিচিউড, বা যুক্তির বাইরে গিয়েও কন কিছু না মেনে এক তরফা তার পিছনে লেগেই রয়েছে, সাবধান হোন। হতে পারে, আপনিই তার প্রথম টার্গেট। আর যদি পজিটিভ মনোভাব ওয়ালা কোন অবসেসিড এর সাথে আপনার সাক্কাহত হয়, তাকে ধরে রাখতে পারেন, কিন্তু এটা সব সময় মনে রাখা দরকার, সে জেনো তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে ব্যবহার না করে। তাহলে বুঝবেন, সেখানেও আপনি বলীর পাঠা।

তাই এরুপ কোন অবসেসিডের কাছ থেকে হোক সে নেগেতিভ বা পজিটিভ, একটু আলাদা থাকুন। হয়তো ফলাফল খারাপ হবে না।

০৪/১১/২০২৩-সময় সব সময় সবার কাছেই দামী।

সময় সব সময় সবার কাছেই দামী। কেউ সময়টাকে পয়সার সাথে তুলনা করে আর কেউ তুলনা করে সুখ দিয়ে। একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে-সবার কাছে কম বেশী পয়সা থাকেই। যে কোন কাজ করে না, যার কোনো সোর্স অফ ইনকাম নাই, তার কাছেও কিছু না কিছু পয়সা থাকে। পয়সা আসার এই ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত। কিভাবে আসে, কার কাছ থেকে কখন আসে, যার কাছে আসে, সেও মাঝে মাঝে বুঝতে পারে না, কিভাবে এলো। কিন্তু আসে। দিন চলে যায়, আবার আরেকটা নতুন দিন আসে। এক সময় জীবনটাই চলে যায়, তখন আর পয়সার কোন প্রয়োজন পড়ে না। তখন মনে হয়, সময়টা থাকলেই হতো, আরো কিছুদিন এই পৃথিবীর আরো কিছু সুন্দর জিনিষ উপভোগ করা যেত।

মানুষের সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য হচ্ছে-সে জানে না তার সময়ের লিমিটটা কথায়। এই লিমিটটা না জানার কারনে জীবনের শেষ দিনতক মানুষ শুধু এটার পিছনেই ঘুরে। একে একে পাহাড় সমান পয়সা জমা করে ফেলে, ভাবে এইতো আর কিছুদিন পর থেকে শুধু ভোগ করবো। অন্যদিকে, পয়সা উপার্জনের জন্য সে তার লিমিটেড সময়টাকে এমন প্রান্তে নিয়ে যায় যে, সঞ্চিত পয়সা ভোগ করার জন্য যে সময়টা দরকার, সেটা তার কাছে থাকেই না। জীবনের লিমিটেড সময়টাকে সে ভাবতেই চায় না যে, কখন কতটুকু পয়সার প্রয়োজন তার সেই লিমিটেড পয়সাটাকে ব্যবহারের জন্য। ফলে যে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে সেটা হচ্ছে, হাতে জমা অনেক পয়সা রেখেই মানুষ ছেড়ে যায় তার সব সাম্রাজ্য আর সঞ্চয় করা পয়সাগুলি। তখন এগুলি অন্য কেউ ভোগ করে যা করার সপ্ন ছিলো যিনি পয়সা উপার্জনের জন্য এতোটা সময় নষ্ট করেছেন। এই যে চক্রটা, এটা সবাই জানেন, সবাই মানেন, কিন্তু কেউ এটাকে ফলো করেন না, করতেও চান না।

অদ্ভুত না ব্যাপারটা?

কিন্তু এটা অন্য কোনো পশু পাখীদের বেলায় হয় না। অথচ তাদের জীবনের মধ্যেও ভালোবাসা আছে, কষ্ট আছে, দুঃখ আছে, আছে আরো অনেক কিছু।

০১/১১/২০২৩-প্যালেস্টাইনের মুক্তিকামী সংগ্রামের ইতিহাস

প্যালেস্টাইনের মুক্তিকামী সংগ্রামের ইতিহাস গত কয়েক সপ্তাহের নয়। কিভাবে প্যালেস্টাইন এই বর্তমান পরিস্থিতিতে পড়েছে সেটার ইতিহাস বলতে গেলে অনেক অনেক লম্বা ইতিহাস বলতে হবে। সেখানে আর গেলাম না। কারো কারো সেই ইতিহাসের সত্যতা বা তথ্য নিয়ে বিভাজন হয়তো আছে, কিন্তু প্যালেষ্টাইন হটাত করে তাদের এই জন্মভুমি রক্ষার অধিকারের লক্ষ্যে গত ৭৫ বছর যাবত যুদ্ধ করছে না। এটা তো ঠিক।

বিগত আট দশক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধাবস্থানের মধ্যে গত ৭ অক্টোবরের হামাস কর্তৃক ইসরাইলের ভূখন্ডে অতর্কিত হামলার জের ধরে হামাস নিধনের উছিলায় প্যালেষ্টাইনের আপামর জনসাধারনের উপর নির্বিচারে ইসরায়েল টেক্টস বুক ইথিনিক ক্লিজিং অপারেশনে নেমেছে। জাতীসংঘ, হিউম্যান রাইটস, কিংবা অন্যান্য বিশ্ব নেত্রিত্তের কোনো দোহাইতেই ইস্রায়েলকে উক্ত গনহত্যা থেকে কেউ সরিয়ে আনতে পারেনি এবং পারবে বলেও মনে হয় না।

এখন আমার চারটে প্রশ্ন জাগছে-(১) হামাস জানে তাদের লিমিটেড সামরিক শক্তি দিয়ে এক তরফা ইসরায়েলের উপর হামলা করে একই দিনে প্রায় হাজার খানেক ইহুদীকে হত্যা করে তাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল তো সফল হওয়া দুরের কথা, তারা নিজেরাই টিকবে কিনা সন্দেহ আছে। তাহলে কেনো হামাস এরুপ একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিলো? (২) দ্বিতীয় প্রশ্নটা হচ্ছে-হামাস এই আক্রমনের ফলাফল জেনেও যদি ইসরায়েলের উপর এই আক্রমনটা করেই থাকে, তাহলে হামাসের মুল উদ্দেশ্য কি? তারা কি প্যালেস্টাইনকে নির্মুল করতে চায়? বা তারা কি ইসরায়েলের পক্ষে বি-টীম হিসাবে কাজ করছে? (৩) তৃতীয় প্রশ্নটা হচ্ছে-হামাসের সাথে ইরানে অবস্থিত হিজবুল্লাহ্র একটা আন্তরীক সম্পর্ক রয়েছে। হিজবুল্লাহ্র সাথে সম্পর্ক রয়েছে ইরানের, লেবাননের। আর তাদের এই মুসলিম দেশসমুহের মাধ্যমে কোন না কোনোভাবে সংযোগ রয়েছে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলির সাথে। যদি হামাস ইসরায়েলের পক্ষে বি-টীম হিসাবেই কাজ করে থাকে, বা করে তাহলে এই সম্পর্কযুক্ত মুসলিক দেশগুলি কি এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুই জানে না? (৪) চতুর্থ প্রশ্নটা হচ্ছে- ইসরায়েলের এ রকমের একক টেক্সট বুক ইথনিক ক্লিঞ্জিং এর বিপক্ষে পাশ্চাত্য দেশসমুহ  সোচ্চার না হয়ে বরং তাকে অর্থ এবং সামরীক অস্ত্র দিয়ে সাপোর্ট করছে কেনো?

এবার আমি প্রথম প্রশ্নটার ব্যাপারে বলি। হামাসের আক্রমনের দিন ইসরায়েলের একেবারে বর্ডার সংলগ্ন এলাকায় একটা অনুষ্ঠান চলছিলো। ইসরায়েল তাদের কোন ভুখন্ডেই নিরাপত্তা ছাড়া কখনোই অরক্ষিত অবস্থায় রাখে না। কিন্তু সেদিন সেখানে কোন প্রকারের নিরাপত্তার ব্যবস্থায় ছিলো না কেনো? আর অনুষ্ঠানটা হচ্ছিলো একেবারেই হামাসের নাকের ডকায় যেনো ইসরায়েল চাচ্ছিলোই যেনো হামাস আক্রমনটা করুক, মানুষ হত্যা করুক, বিশ্ববাসি দেখুক হামাস কি করলো। অন্যদিকে, আক্রমনের পরপরই ইসরায়েল একটা কথা চাওড় করেছিলো যে, হামাসকে ঘুষ দেওয়ার পরেও তারা বিট্রে করেছে। এর মানে কি? এর মানে কি এটা হতে পারে যে, কিছু কথিত হামাস দিয়ে এই আক্রমনটা ইসরায়েল নিজেই করিয়েছে? হয়তো পরিকল্পনাটা আরো বিস্তর এবং সেটা ইরান পর্যন্ত? একটা ব্যাপার লক্ষনীয় যে, গত কয়েকমাস যাবত ইসরায়েল ক্রমাগত গাজা উপত্যকায় প্যালেস্টাইন অধিবাসিদের উচ্ছেদ করে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনা করছিলো। তাতে অনেক প্যালেষ্টিনিয়ানরা গাজা থেকে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। এই ক্রমাগত অধিগ্রহনের মধ্যে আমজনতার মধ্যে একটা ধারনা আসতেই পারে যে, প্যালেষ্টিনিয়ানদের পিঠ দেয়ালে থেকে যাওয়ায় হামাস এর বদলা নিচ্ছে। অতঃপর ইসরায়েলের সমস্ত আক্রমন এখন বৈধ। হামাস মরুক বা না মরুক, গাজা মুক্ত হচ্ছে এটাই হয়তো ইসরায়েল চেয়েছে যাতে গাজা ইসরায়েলের অংশ হিসাবে একদিকে লেবানন, সিরিয়া এবং ইরানের স্থল অংশের কাছাকাছি নিরাপত্তা বাহিনি মোতায়েনের একটা বৈধ সুযোগ পায়।   

এবার আসি, হামাস কি ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করেছে কিনা। হামাসের মধ্যেও দ্বিধাবিভক্তি আছে। যারা সত্যিকারের মুক্তিকামী হামাস, তারা কখনই ইসরায়েলের পক্ষে তাদের বি-টীম হিসাবে কাজ করার কথা নয়। যদি হামাসের কোনো অংশ বি-টীম হিসাবে কাজ করে, তাহলে এটা প্রকাশিত হলো না কেনো? হয়তো ইসরায়েলই চায়নি এটা প্রকাশিত হোক। আর প্রকাশ করবে কে? কোন মিডিয়া? আপনি যদি শুধুমাত্র বিবিসি, সিএনএন, এবিসি নিউজ, ইএসপিএন, ফক্স নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমস, নিউইয়র্ক পোষ্ট, ওয়াশিংস্টন পোষ্ট, ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল, এমন কি ফেসবুক থেকে সংবাদ আহরন করেন, এরা কেহই আপনাকে সত্য সংবাদটি প্রকাশ করবে না। কারন এই সবকটি মেইন স্ট্রীম মিডিয়া ইহুদিদের দ্বারা পরিচালিত এবং মালিকানাধিন। এসব মেইন স্ট্রীম মিডিয়ার সব খবর আগে তাদের দ্বারা ভেটিং হয়, অতঃপর ব্রডকাষ্ট। তাহলে আমি বা আপনি কিভাবে নিরপেক্ষ নিউজের আশা করতে পারি? হামাসের কিছু অংশ ইসরায়েলের বি-টিম হলেও এতা জানার কনো উপায় নাই।

তৃতীয় প্রশ্নটায় অনেক ফ্যাক্টর জড়িত। মুসলিম দেশগুলি কখনোই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি, আর পারবেও না। কারন তারা টোটালেরিয়ানিজমের শাসক। ওরাও কোন না কোনো পাশ্চাত্য শক্তি এবং সাপোর্টের উপর দাড়িয়ে। ফলে যার যা খুশি হোক না কেন, তারা বহাল তবিয়তে আছে কিনা সেটাই ওদের বিবেচ্য বিষয়। ওরা অনেক কিছু জানলেও মুখ খুলবে না, কোন একশনে যাবে না। এটাই ওআইসি দেশসমুহের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।

চতুর্থ প্রশ্নটার ব্যাপারে যা জানা দরকার সেটা হল, ইসরায়েলের পক্ষে আমেরিকা, কানাডা, ইউকে কিংবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোনো দেশই ইসরায়েলের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নাই। কারন যদি এরা ইসরায়েলের যে কোনো কর্মকান্ডকে (হোক সেটা গনহত্যা, বা জোর করে বসতিস্থাপন ইত্যাদি)  সাফাই না গায় বা তাদের পক্ষে না থাকে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ একেবারেই অন্ধকার। ব্যাপারটা একটু খোলাসা করে বলি-যদিও ইসরায়েলের লোক সংখ্যা মাত্র দেড় কোটি (সারা পৃথিবীর মাত্র ০.২%, ইস্রায়েলে বসবাস ৫০ লাখ, আমেরিকাতে ৭০ লাখ, কানাডায় প্রায় ৪ লাখ আর ইউকে তে প্রায় ৩ লাখ) কিন্তু তারা সারা বিশ্ব কন্ট্রোল করে। আমেরিকার কোনো প্রেসিডেন্ট জয়ী হতে পারবে না যদি ইহুদী কর্তৃক সাপোর্ট না পায়।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচনী ফাণ্ড বা তহবিল সংগ্রহ হয়–AIPAC (America Israel Public Affairs Committee) থেকে। আমেরিকান রাজনীতিতে তাদের প্রভাব একচেটিয়া। আমেরিকার ১০০ জন সিনেটরের ১৩ জন ইসরায়েলী ইহুদী। আমেরিকার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসররা ইহুদী এবং তারা থিংক ট্যাংক হিসাবে আমেরিকার পলিসি মেকার। আমেরিকার এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলো ইহুদীদের দখলে। ফলে আমেরিকার কেউ চাইলেও এদের কিছু করতে পারবে না। বরং জুইশ কমিউনিটি বা ইহুদি সম্প্রদাকে হাতে না-রাখলে ক্ষমতায় টেকা যাবে না। এসব কারনেই যখন জাতিসংঘের মহাসচিব প্যালেস্টাইনের পক্ষে সবেমাত্র মুখ খুলেছেন, অমনি ইসরায়েল তার পদত্যাগ চেয়ে ইউএন এর সকল কর্মকর্তার ভিসা স্থগিত করে দিয়েছে। মহাসচীব তারপরের দিনই তার গলার সুর পালটে ফেলেছে।

ইউক্রেন যুদ্ধকে ইউরোপের নিরাপত্তার সিম্বল হিসাবে দেখা হয় এবং পুটিনকে দেখা হয় ইউরোপের জন্য একটি ভয়ংকর ব্যক্তিত্ব। এরপরেও পাশ্চাত্য দেশসহ গোটা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এখন ইউক্রেনকে প্রায় ছেড়েই দিয়েছে শুধুমাত্র ইসরায়েলকে সাপোর্ট করার জন্য।

যারা এ যাবতকাল পুটিন ইউক্রেনকে খেয়ে ফেললো, মেরে ফেললো, পুতিন আগ্রাসি হিসাবে ইউক্রেনের ধংশযজ্ঞ চালালো বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললো, তারা কিন্তু এখন ইসরায়েলের এমন গনহত্যায় কোন রা পর্যন্ত করছেন না। রাশিয়া গত দেড় বছরে যে পরিমান বাড়ীঘর, লোকবল ক্ষতি করেছে তার থেকে কয়েকগুন বেশি ক্ষতি করেছে ইসরায়েল মাত্র দুই সপ্তাহে। খাবার, মেডিকেশন, শিশু হত্যা, নিরিহ জনগন নির্বিঘ্নে হত্যার প্রতিবাদে হিউম্যান রাইটস এর ডাইরেক্টর পর্যন্ত নিজে ইস্তফা দিলেন, তারপরেও কিন্তু কেউ মুখ খুললেন না।   

26/10/2023-Tbilisi and Daduna’s family

  About 20 years ago, I was serving in Georgia as part of a United Nations mission from the Bangladesh Army. I spent a lot of time with many domestic and foreign military, civilian officials, many senior officials of the United Nations. I have seen their culture and traditions. It was all a new experience. But I will never forget one of these families in Georgia. I still remember them and wished to see them again. Today I am going to tell you about one such family.

I have taken a long leave of 21 days from the mission. As usual, everyone else comes to the country on vacation, I also wanted to come to the country, but I once thought that as sooner I would go to the country a few days later, so how about I take a little trip to Georgia this holiday !! Who knows when I would be back again or would even never come next !!!. I visited Tbilisi, the capital of Georgia, very less and I did not visit the capital or the surrounding cities. So I thought, let's go for Tbilisi.

The quality of hotels in Tbilisi is not so good, while those that are high-quality, the cost is skyrocketing. Meanwhile, there is an interpreter in my sector, Sorena Gamchakhurdia, with whom I have to go on duty every day. She informed me that one of her aunts lives in Tbilisi, and I could stay with them for a few days if I wished to. They may not be rich, but they're good-hearted people. If I agree, she can tell them about it.

 

 

 

 

If it were our country, we would not normally give such an offer to anyone. I am a foreigner, and I do not know anyone in whose house I am going to live, nor do they know me at all. But since I've lived in Georgia for about 8/9 months, I already understood their ethos very well. They offer their best to their guests at all circumstances. I agreed, thinking that it would be better for me to stay with a family than to stay in an isolated hotel.

 

 

 

On the appointed day I reached the airport of Tbilisi. According to Shorena, someone will come to pick me up from the airport. So I was waiting at the lobby of the airport. Then, waiting a little bit, I walked out of the airport and thought, it would be better if I buy a few packs of cigarettes. Just then, someone called me from behind in excellent English - and said, are you Major Akhtar? Looking back, a young girl of 23/24 years, absolutely blue eyed, bob cutting blonde hair, and is standing behind me. I replied: yes, I am. No further introduction right then. I took my bags and boarded in the car. While on the car, we talked a while. She said, 'My name is Deduna Bukia.' I am a journalist and sister of Shorena.

It took about 40/50 minutes to get from the airport to their home. It’s a big Condominium and located on a high ground. Nice place. From the apartment complex you can see the thick city, the blue sky, far away the Caucasus Mountains. Really good looking scenarios all around.

We got out of the car and went to the elevator. Apartment is next to the elevator. It was a family house with three or four rooms. Adjacent to the living room is a large kitchen and dining area. The other rooms are side by side. The room they have for me is the best room in the house. A new mattress, a new bed cover, new sandals and new towel ets. They did everything they could do for me. Felt very nice. They live with three sisters (Deduna Bukia, Tamara, and Salomi) and an aunt (mother). They are Shoren's cousins. Aunty is probably involved in the work of an X-ray machine in a government hospital (I don't remember the name of the department at the moment).   

Deduna is engaged in journalism. On arrival at home, I met with everyone at house and talked to everyone. Believe me, I felt like I knew them long before. I became part of their family. It's an incredible family. They didn't do anything that can hurt me, rather they did everything to make me feel better. Later in the evening, some of their other relatives came to meet me as well. Daduna’s other cousin, Russo, was a doctor. She came the next day. They were all unmarried. 

Every day we used to visit new places like park, restaurant, historical place, the market, sometimes to the beach, surrounding villages, Museums, archaeological sites, gardens, zoos, and many other places. There is no sea beach in Georgia but there is a very big bay where many tourists and locals go there and enjoys like Beach. We all as well visited such places, swims, cuddled, and walked a long way, basking sun on the beach, and played. It's been an amazing time. I forgot totally that I was a guest here. There is a famous restaurant named 'Eagle', where we had candle light dinner for two consecutive nights. The Restaurant is named after a famous Singer Group EAGLE.

While staying at house, sometimes they would dance together at home with the rhythm of the karaoke broadcasted on TV. I've had an amazing time every day. Shorena joined us in Tbilisi four days later. After that, we all had a great time together. I will never forget their love, affection and respect shown to me. It cannot be forgotten.  

Deduna is now the mother of four children, Shorena is also the mother of two, and her other two sisters (Tamara and Salome) are also living very healthy life with their husband and children. I still keep in touch with them because of Facebook and it's great when I see them living happily and peacefully. I always remember them. Auntie may no longer be alive. And I miss her.   

When I returned home from the mission, I had no heart-throbs leaving the mission, but it hurt to think that I might never see this wonderful family again. The day I left Deduna's house, I was very upset, Auntie hugged me and said - if I have time, should I go to see her again. My eyes were wet, they had become like my family. It wasn't just my eyes wet in tears but it was their eyes too.  

Today, when I look at those old pictures, I can see the memories of those past days in front of my eyes. When my children sit next to me and my grandchildren look at the pictures, they ask -who all are these people?  

With tears in my eyes, I might say with a smile -these are some of the people I've had some wonderful times with. Many of them may no longer exist. Ironically, we call these as “Pictures of the life”. My heart skipped a beat when I thought of some people from the past.

Sorena, Tamara, Deduna, Russo, all the best for all of you and let the God bless you all and keep you safe, healthy and protected always. Love you guys.

১৪/১০/২০২৩-কেনো আবির-উম্মিকার বিয়েতে রাজী হইলাম

আমি যেদিন জানলাম যে, উম্মিকা একটা ছেলের সাথে এফেয়ার্সে জড়িয়েছে, আমি একেবারেই ব্যাপারটা নেগেটিভলী নেই নাই। কারন উম্মিকার বয়স হয়ে যাচ্ছে (প্রায় ৩০) আর যেখান থেকেই যতো ভালো ছেলে বা পরিবার থেকে উম্মিকার জন্য বিয়ের প্রোপোজাল আসুক না কেনো, উম্মিকা কোনোটাতেই সায় দিচ্ছিলো না। প্রথমবার আমি উম্মিকাকে মুটামুটি জোর করেই রানার সাথে বিয়েটা দিয়েছিলাম, যদিও সেই জোরের মধ্যে উম্মিকারও অনেক ভুল ছিলো। কিন্তু আলটিম্যাটলি যেটা হয়েছে, উম্মিকার তো জীবনে একটা দাগ লেগেই গিয়েছিলো। ভুল যারই হোক, সেটার আচ আমাদের পরিবার, উম্মিকার জীবনেও লেগেছে। তাই এবার আমি নিজ থেকে উম্মিকাকে বিয়ের জন্য কোনো জোর করতে চাইনি। পক্ষান্তরে আমি এটাও চেয়েছিলাম যেনো উম্মিকা ভালো থাকে, যার সাথেই তাঁর বিয়ে হোক। সেটা আমাদের চয়েজেই হোক বা উম্মিকার নিজের। তাতে আমার কোনো অসম্মতি ছিলো না।

উম্মিকা আবিরকে ভালোবাসে, আবিরও উম্মিকাকে ভালোবাসেই বলে উম্মিকা জানিয়েছে। ছেলেটি ডাক্তার। আমার খারাপ লাগার কথা ছিলো না। উম্মিকার জীবনে যেমন একটা স্কার আছে, ছেলেটার জীবনেও তেমনি একই প্রকার একটা স্কার আছে। অর্থাৎ ওদের প্রথম বিবাহ টিকে নাই। স্কার নিয়ে ভাবিনি, এগুলি আমার কাছে খুব বেশী নাড়া দেয়নি। তাই আমি ঘটনাটা জেনে তেমন নেগেটিভলি নেই নাই।

কিন্তু বাধ অথবা খটকা লেগেছে এক জায়গায়। আবিরের কিছু তথ্যে মারাত্মক ভুল ধরা পড়ায়। যেমন, প্রথম যেদিন উম্মিকার আম্মু অর্থাৎ আমার স্ত্রী আবিরকে রাতে ফোন করলো সেদিন। আমি পাশেই ডিনার করছিলাম, আমি শুধু ওদের কথাবার্তা শুনছিলাম, কোনো উত্তর বা প্রতিউত্তর আমি দেই নাই। আমি আসলে একজন ভালো লিসেনার। আগে শুনি, তারপর ভাবি, তারপর উত্তর দেই। আবিরের সাথে উম্মিকার আম্মুর কথোপথোনে যেটা বের হয়ে এসছিলো আর আবিরের দৃষ্টিতে উম্মিকার রিভিউ হলো-

  • উম্মিকা খুব অলস।
  • ওর ডিউটির জ্ঞান কম। আবিরই মাঝে মাঝে ওর বিভিন্ন হসপিটালে ডিউটি শেয়ার করে দিতে সাহাজ্য করে। মাঝে মাঝে যদি আলসেমীর কারনে ডিউটিতে যেতে না চায়, সেটাও আবির কোনো না কোনো ভাবে ম্যানেজ করে নেয় বা দেয়।
  • বড় লোকের মেয়ে বলে টেনশন কম, খায় দায়, ঘুমায় আর মোটা হচ্ছে।
  • উম্মিকা কোনো কিছুই দ্রুত বোল্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারে না এবং কনফিউজড। ইত্যাদি ইত্যাদি

আবির মিথ্যা কথা বলে নাই। উম্মিকা প্রায় ওই রকমই। কিন্তু মায়ের কাছে মেয়ের এসব দোষ ত্রুটি বলাতে উম্মিকার মা ব্যাপারটাকে খুব একটা পজিটিভলী নেয় নাই, নেবার কথাও না। অতঃপর উম্মিকার মার পরবর্তী কথোপথোনে বেশ বিপরীত ভাষা লক্ষ্য করলাম। উম্মিকার আম্মু সরাসরি আবিরকে জিজ্ঞেস করলোঃ

  • “তুমি কি উম্মিকাকে ভালোবাসো? উত্তরে আবির পজিটিভলীই বল্লো যে, হ্যা আবির উম্মিকাকে ভালোবাসে।
  • উম্মিকার মা আবিরকে আবার জিজ্ঞেস করলো, তোমার আগের বউ (ওর আগের বউ এর নাম ছিলো ইতি) এর সাথে কবে ডিভোর্স হয়েছে? উত্তরে আবির জানালো যে, প্রায় বছর তিনেক আগে ওদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
  • এবার উম্মিকার আম্মু সরাসরি আবিরকে প্রশ্ন রাখলো-তুমি কি উম্মিকাকে বিয়ে করতে চাও? আবির এখানে পুরুই অকৃতকার্য হলো। ভয়েই হোক, পরিস্থিতির কারনেই হোক, আবির উম্মিকার মাকে বল্লো-সে এই ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই। অর্থাৎ উম্মিকাকে আবির ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু এটা বিয়ের লগন পর্যন্ত যাবে কিনা সেটা সে জানে না।

ফলাফল-আবিরের সাথে কথা বলার পর পুরু ব্যাপারটা উম্মিকার আম্মুর কাছে প্রায় নেগেটিভ হয়ে গেলো। আবিরকে সরাসরি উম্মিকার আম্মু জানিয়ে দিলো-সে যেনো আর কোনো অবস্থাতেই উম্মিকার সাথে যোগাযোগ না করে। উম্মিকাকেও বলা হলো উম্মিকা যেনো আবিরের সাথে আর কোনো যোগাযোগ না করে। ব্যাপারটা এখানেই উম্মিকার আম্মুর কাছে একটা সম্পর্কের নিহত হবার পরিনতি পেলো।

আমি তখনো ব্যাপারটা নিয়ে নেগেটিভ পর্যায়ে যাইনি। তবে আমিও উম্মিকার আম্মুর কথায় অনেকটা নেগেটিভ না হলেও খুব একটা পজিটিভ রইলাম না। একটু ভাটা পড়লো। কিন্তু পুরুপুরি নেগেটিভ হলাম না। তবে একটা খটকা থেকে গেলো একটা কারনে, আর সেটা হলো, আবিরের বাবার প্রোফেশন, আবিরদের পারিবারিক অবস্থান কিংবা ছেলের সামাজিক অবস্থানটা কোথায় সেটা সরাসরি জানা হলো না।

পরবর্তীতে জানা গেলো যে, আবিরের বাবা মুলত মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত। একটা লোক মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, তাদের পরিবার হচ্ছে জেলে পরিবার, আর তাদের সাথে আমাদের খাপ খায় না।

মিটুল যেহেতু পুরুপুরী নেগেটিভ হয়ে গিয়েছিলো, ফলে, মিটুল আমাকে বল্লো, তুমি আবিরের বাবাকে একবার ফোন দিয়ে তাদের সাথে আমাদের খাপ খাবে না এবং আবির যেনো আর উম্মিকার ব্যাপারে কোনো ইন্টারেস্ট না দেখায় সেটা বলে দাও। আমি মুলত আবিরের বাবাকে কোনো ফোন করতে চাইছিলাম না। কিন্তু মিটুলের অবিরত চাপে একদিন সত্যিই আমি আবিরের বাবাকে ফোন করলাম। ফোনে কি আলাপ হলো সেটা রেকর্ড করা আছে, তাই রেকর্ডটা থেকে লিখছিঃ

আমিঃ হ্যালো, আপনি কি রাকিবের বাবা বলছেন?

আনিছঃ হ্যালো, জী,

আমিঃ আমি মেজর আখতার বলতেছিলাম। ডাক্তার আনিকার আব্বু।

আনিছঃ কোথা থেকে?

আমিঃ ঢাকা থেকে। আমার মেয়ে হচ্ছে ডাক্তার আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা। সম্ভবত আপনি নামটা জানেন। রাইট?

আনিছঃ হ্যা, বলেন, বলেন।

আমিঃ আপনি কি করেন এমনি?

আনিছঃ আমি (গলা খেকারী দিয়ে), আমি ব্যবসা করি মাছের। ১-/১২ টা পুকুর আছে, হ্যাচারী আছে। ওগুলা করি আর মাছের যে রেনু আছে সেগুলি উতপন্ন করি। এগুলি সিজনাল ব্যবসা।

আমিঃ আচ্ছা। রাকিব কি আপনাকে আমাদের সম্পর্কে বা আমার সম্পর্কে কিছু বলছে আপ্নাদেরকে?

আনিছঃ বলছে অবশ্য আমাকে। হালকা পাতলা বলছে। বলছে, একদিন আপনার পরিবারের সাথে রাকিবের কথা হইয়েছিলো। এখন ঘটনা হলো কি ...

আমিঃ আমি যেটা প্রশ্ন করি সেটা বলেন। রাকিব আমার বা আমাদের সম্পর্কে কি বলছে?

আনিছঃ আসলে আপনাদের সম্পর্কে রাকিব কিছু বলে নাই, তবে ওই যে আপনার ওয়াইফের সম্পর্কে বল্লো যে, আনিকার মায়ের সাথে কথা হয়েছে আমার। বললাম, কি ধরনের কথা হইছে?

আমিঃ আচ্ছা, আমি আমার সম্পর্কে বলি।

আনিছঃ বলেন।

আমিঃ আমি কুমা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। আমার একটা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি আছে, একটা হাউজিং আছে, যদিও প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিটা এই মুহুর্তে সচল না আর হাউজিং টা চলমান, কয়েকটা গার্মেন্টস আছে। আমার মেয়েটা একটা স্টুপিড। মানে আমাএ মেয়েটা বলদ। ও নিজের পজিশন এবং স্ট্যাটাস বুঝে না। ওর জন্ম থেকে গাড়ি ছাড়া পায়ে হাটে নাই। মানুষ আমরা তিনজন, গাড়ি আছে চারটা। আমার কথা হচ্ছে, এগুলি বলে আমি কাউকে আন্ডারমাইন্ড করি না বা করতে চাই না। যার যার সামর্থ অনুযায়ী সে তাঁর তাঁর সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। আমি আপনার ছেলেকেও দোষ দেবো না কারন আমার মেয়েরই দোষ। কেনো তাঁর সাথে এফেয়ার্স করতে গেলো এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক করতে গেলো। কারন সব কিছুরই কিন্তু একটা লেবেল আছে।

আনিছঃ অবশ্যই, অবশ্তই।

আমিঃ হ্যা সব কিছুর। যখন সে এই লেবেল ক্রস করে, তখন সে আর সাধারন মানুষ থাকে না। সে হয় বোকা, না হয় পাগল না হয় এবনরম্যাল। আর কেউ যদি এই সবের জন্য সপ্নও দেখে সেও মুর্খ। আমি অত্যান্ত ধইর্যিশীল মানুষ।

আনিছঃ কথাগুলি আপনি খুব গুরুত্ব পুর্ন বলছে। মানে অনেক দামী কথা বলছেন, তা বলার মতন না কিন্তু আমি তো ...যদি মনে করেন ...

আমিঃ আপনার ছেলেকে বলবেন, সে যেনো সরে যায়। আমি ওর ক্ষতি করতে পারবো কিন্তু আমি ওটা করবো না। আমি ওকে দেখিও নাই, চিনিও না। সেও আমারই সন্তানের মতো। তবে বাংলাদেশে, এই পৃথিবীতে যাদের শক্তি আছে, যাদের ক্ষমতা আছে, টাকা পয়সা আছে, তারা অনেক কিছু করে। কিন্তু বিচার হয় না। তারা অনেক সময়েই ধীর গতির বিচারের ফাক দিয়ে বড় বড় অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। এগুলি খারাপ। এগুলিতে আমি বিশ্বাস করিনা। আমি এগুলি করতে ইচ্ছুক না। কিন্তু যখন কারো গায়ে হাত লেগে যায়, আচড় লেগে যায়, যখন কারো অস্তিত্তের মধ্যে টোকা পরে, যখন সম্মানের উপর কেউ আঘাত করে, ইজ্জতের উপর হামলা করে, তখন তাকে কিকব্যাক করতে হয়। এটা আমি হয়তো করে ফেলবো। রাকিবকে বলবেন, ও যেনো কোনো অবস্থাতেই ভুলে হোক কিংবা আমার মেয়ের প্ররোচনায় হোক সে যেনো আর আমার মেয়ের সাথে যোগাযোগ না করে। আমার মেয়েও যদি যোগাযোগ করে, তাহলে রাকিব যেনো আমার মেয়েকে স্টুপিডভাবে জবাব দেয় যে, তোমার বাপ আমাদের মেলামেশা চায় না। তোমার বাপ না করছে এবং তোমরা আমাদের সমকক্ষ না।  তুমি আমাকে আর বিরক্ত করো না। আমি এখনো বলি, সবার একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে, আমরা এই স্ট্যান্ডার্ডের নীচে নামতে পারবো না। আমি যদি এখন...আচ্ছা আপনার নামটা কি ভাইয়া?

আনিছঃ আমার নাম, আনিছুর রহমান।

আমিঃ আনিছুর রহমান ভাই, আপনি একবার চিন্তা করেন তো আমি যদি আপনার বাসার আজকে কিংবা কালকে বেড়াতে আসি, আপনাকে কিন্তু আমি আন্ডার মাইন্ড করছি না, আপনি অনেক কিছু করছেন, অনেক কিছু। একটা মানুষ তাঁর জীবনের সমস্ত চেষ্টা দিয়ে যতটুকু পারে ততটুকুই আগায়। আপ্নিও তাই করেছেন। কিন্তু সেই চেষতার মধ্যে যদি এমন একটা বস্তু মিক্সড করে ফেলেন যেখানে আপনার পক্ষে সামাল দেয়াই সম্ভব না এটা বোকামী। আজকে যদি আমার কিছু বন্ধু বান্ধব নিয়ে আসি, সেই স্ট্যাটাস কি আপনি দিতে পারবেন? আমি আপনাকে আন্ডার মাইন্ড করছি না আনিছ ভাই, কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি এই সপ্নটা এবং ধারনাটা ভুল আপনার ছেলের।

আনিছঃ আসলে আমাদের আগের ছেলের বউ......

আমিঃ আপনাদের ছেলের বউ কি করেছে, কি করা উচিত ছিলো, কি না করলে কি হতো সেগুলি এন্টায়ারলি আপনাদের নিজেদের ব্যাপার। সেগুলি আমার জানার কোনো আগ্রহ নাই। আমি আপনাকে ফোন দিতে চাইনি, এটা সত্যি কথা। আমি আপনাকে চিনি না, প্রয়োজন ও ছিলো না। আমি কেনো আপনাকে ফোন দেবো? কোনো প্রয়োজন নাই তো। আপনার সাথে আমার জমি নিয়ে কোনো বিরোধ নাই, আপনার সাথে আমার কন ব্যবসা নিয়ে বিরোধ নাই, তাহলে কেনো আপনাকে আমার ফোন দেয়ার দরকার?

প্রতি বছরে আমার পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। সেখানে এই স্টাটাসের মধ্যে কেউ যখন আঘাত করবে, সেই আঘাতের প্রতিঘাত কিন্তু অনেক বেশী কড়া। সহ্য করার মতো কিন্তু হবে না। আমি আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করি, আমি দেখিনি আপনাকে, আমার বয়স ৫৮, আমি জানি না আপনার বয়স কত

আনিছঃ আমার বয়স ৫২

আমিঃ এ জন্যই বলি, আপ্নিও এডাল্ট। আপনি বুঝেন। আপ্নিও কারো বাবা

আনিছঃ শোনেন, আপনি যেহেতু কথা গুলি বললেন......সবারই ... সবারই একটা মান...।

আমিঃ না, আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না। আমি আপনার স্ট্যাটাস নিয়ে কোনো কোয়েশ্চেন করবো না। আমার স্ট্যাটাস নিয়ে অবশ্যই কোয়েসচেন করবো।

আনিছঃ অবশ্যই, অবশ্যই, আমিও আপনার কথাই বলতেছি...যার যার স্টাটাসে তাঁর তাঁর থাকতে হবে...।।

আমিঃ এক্সাটলী আমিও সেটাই বলার চেষ্টা করছি আপনাকে। এর বাইরে না।

আনিছঃ আমার কথা কি, ছেলেমেয়ে তো ভুলবনা করে। এই ভুলবনা করার পরেই তো বাবা মার কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। এমন কষ্ট হয় যা মাইনা নেয়া যায় না। আমার ছেলে ভুল করতেছে, আপনার মেয়েও ভুল করতেছে, এমন ভুলবনা তো মাইন্যা নেয়া যায় না।

আমিঃ না, সম্ভব না।

আনিছঃ কারন আমিও তো অনেক কষ্ট করে আমার একটাই ছেলে প্রাইভেট মেডিক্যালে অনেক টাকা দিয়াই পড়াইছি। কষ্ট তো আমারো লাগে। আমারো তো একটা আশা ছিলো। আমার ছেলেটা তো আমারেও কষ্ট দিচ্ছে।

আমিঃ আপনার ছেলের উচিত ছিলো যে, যেই বাবা, যেই মা নিজেরা না খাইয়া, না আনন্দ কইরা ছেলেকে মানুষ করছে, তাদের জন্য কিছু করা। কিন্তু সে সেটা করে নাই। সে তো নিমকহারাম। আমি আমার স্ট্যাটাসের জন্য, সামর্থের জন্য গর্ব ও করি না, অহংকার ও করি না। আমি মানুষের উপকার করার মানসিকতা আছে, পারলে করি, না পারলে তাঁর কোনো ক্ষতি করি না। আপনি আপনার জায়গায় ভালো আছেন, আমি আমার জায়গায় ভালো আছি। আর কিছু না। তাই আমি আপনাকে ষ্পষ্ট ভাবে বলে দিলাম যে, আপনি রাকিবকে বলে দেবেন যে, রাকিব, উম্মিকার আব্বু ফোন দিয়েছিলো এবং বলেছে যে, তাদের পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ না করতে। আমি রাকিবকে ফোন দেবো না। আমার দরকার ও নাই। এর পরে যোগাযোগ ওর জন্য মংগল বয়ে আনবে না। রাকিব আমার বাচ্চার মতোই। ওর ক্ষতি আমি চাই না। ধন্যবাদ আনিছ ভাই। ভালো থাকবেন।

ব্যাপারটা এখানেই আমি আসলে শেষ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়েছে, উম্মিকা ছেলের সাথে যোগাযোগ নিজের থেকেই রাখছে এবং রাখবে। কিন্তু আমার আরেকটা ধারনা ছিলো যে, সম্ভবত এবার ছেলেটাই সরে যাবে। অথবা আমার মতো সাহসী হলে সরাসরি আমার সাথে দেখা করে কথা বলবে।

বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। এরপর উম্মিকার আম্মু আমাকে জানালো যে, রাকিবের বাবা ওকে ফোন করছে বারবার এবং তাঁর ছেলের বউ এর ব্যাপারে অনেক কথা বলতে চায় বা বলছে। এর মধ্যে জানা গেলো, রাকিবের সাথে রাকিরের স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি আসলে ৩ বছর আগে হয়নি, হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। তো, এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম, উম্মিকার সাথে রাকিব এফেয়ার্সে জড়িয়েছে যখন রাকিবের বউ বর্তমান ছিলো। তাহলে তো বলাই যায় যে, এটা একটা এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার্স। এমনিতেই আমরা রাজী হচ্ছি না, এরমধ্যে আবার এসব গোলমালে ইনফর্মেশন। পরিবারটাকে খুব একটা ভালো মনে হচ্ছিলো না।

আমাদের পরিবার সচ্ছল, ব্যবসা বানিজ্য যা আছে, বিষয় সম্পত্তি যা আছে, এগুলি আসলে তো আমাদের মেয়েরাই পাওয়ার কথা। যেহেতু ছেলে নাই, ফলে মেয়ের মাধ্যমে মেয়েদের জামাইরাই ভোগ করবে। এটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি কখনোই ছিলো না। কিন্তু আজকালের ছেলেরা নিজেরা কিছু করতে চায় না, তারা আরাম চায়, ভোগ বিলাস চায় কিন্তু সেটা হতে হবে শশুড়ের টাকায়। এই লোভ থেকেই রানা এসেছিলো, রানার পরিবার এসেছিলো। আরেকবার আমি আরেকটা রানা চাই না। আমি চেয়েছি এমন একটা ছেলে যে কিনা আমার মেয়েকে চায়, যে কিনা নিজের চেষতায় বড় হবে, কর্মশীল হবে, দায়িত্ববান হবে। যার উপরে আমিও ভরষা করতে পারি। এ ব্যাপারটা আমি রাকিবের মধ্যেও দেখতে পাচ্ছিলাম না, না ওদের পরিবারের মধ্যে। আমার বারবারই মনে হয়েছে-এখানে একটা লোভের কারন কাজ করছে। আর যদি এটা হয়, সেক্ষেত্রে আমি কখনোই কারো সাথে কোনো সম্পর্ক করবো না। আমার কাছে কেউ কিছু যৌতুক চাইলে বা লোভ করলে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আমি এগুলি ঘোর বিরুধী। যদি আমি নিজেই দেখি যে, আমার মেয়ের কিছু প্রয়োজন, সেটা তো আমি নিজেই দেবো, চাইতে হবে কেনো? রাকিবদেরকেও আমার সেরকম মনে হয়েছে।

কিন্তু আমরা যতোই নেগেটিভ হচ্ছি, উম্মিকা ততোই জিদ ধরছে যে, সে আবিরকেই বিয়ে করবে। আমি যখন কোনো উপায় দেখছিলাম না, তখন আমি উম্মিকাকেই বললাম যে, উম্মিকা আবিরকে বিয়ে করুক, তাতে আমার কোনো অসুবিধা নাই কিন্তু সেটা হতে হবে আমাদেরকে ছাড়া। অর্থাৎ আমরা উম্মিকার স্বামী বা তাঁর পরবর্তী বংশধরদের ব্যাপারে কোনো দায়ী তো নাইই, আমি আমার যতো ব্যবসা কিংবা এসেট আছে সব কিছু থেকে আমার জীবদ্দশায় ক্যাশ করে শুধুমাত্র কনিকা আর আমার জন্য ব্যবহার করবো। এটা এক ধরনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তই নেয়া হচ্ছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। উম্মিকাকে ঠেকানো যাচ্ছে না যেহেতু, ফলে তাঁর ইচ্ছায় সে যা কিছু করতে চায় করতে পারে। আমি উম্মিকার সাথে প্রায় কথা বলাই বন্ধ করে দিলাম।

উম্মিকা বাসায় খায় দায়, বাসায় থাকে, আমার সাথে ওর কোনো কথাবার্তাই হয় না। উম্মিকা নিজেও বাসায় খুব একটা যে কম্ফোরট্যাবল তা কিন্তু না। মাঝে মাঝে উম্মিকা নিজের থেকেই উপজাজক হয়ে কথা বলতে এলেও আমি হু হা করে উত্তর দেই। ধরা যায়, উম্মিকার সাথে আমার বিস্তর একটা গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে।

আমার এতোসব কঠিন ব্যবহারেও উম্মিকা তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে নারাজ। উম্মিকা আবিরের (রাকিব) সাথে যোগাযোগ রেখেই চলছে এবং চলমান। উম্মিকা অনেকবার আমার সাথে সহজেই মিশতে চেয়েছে কিন্তু আমার পক্ষ থেকে কোনো প্রকার রিস্পন্স না পাওয়ায় উম্মিকা প্রায় একঘরেই হয়ে যাচ্ছে নিজের বাসায়। উম্মিকার আম্মু অনেকবার উম্মিকাকে বুঝানো চেষ্টা করলে খুব একটা লাভ হচ্ছিলো না। এভাবেই বেশ কয়েক মাস কেটে গেলো। আমি ধরেই নিয়েছি-উম্মিকা আর আমাদের মাঝে নেই। সে হয়তো আবিরকে (রাকিবকে) বিয়ে করবে, আর আমরা ওকে হারাচ্ছি, অর্থাৎ উম্মিকাও আমাদেরকে হারাচ্ছে।

আমি আরেকটা জিনিষ খুব ভালো করে বুঝে গেলাম যে, আমার অবর্তমানে আসলে আমার সম্পত্তি বিশেষ করে জায়গা জমিরাত, কিংবা অন্যান্য ব্যবসা কেউ চালাতে পারবে না। আমার মেয়ের জামাইরা এগুলি খুব অল্প সময়েই হয় বিক্রি করে দেবে, নতুবা ধংশ করবে। ফলে আমি এবার আরেকটা সিদ্ধান্তে অটল হয়ে গেলাম জে, আমার জীবদ্দশায় আমি আমার সব জমি জেরাত বিক্রি করে টাকায় ক্যাশ করে ফেলবো। শুধু রিভার সাইড গার্মেন্টস টা রাখবো। আমি হিসাব করে দেখলাম, আমার বৃদ্ধ বয়সে আসলে আমার দরকার টাকা যেখানে আমি প্রয়োজনে ৫/৬ টা কাজের লোক রেখে জীবনের সব শারীরিক কাজ গুলি সেরে নিতে পারবো। জমি জিরাত রেখে কোনো লাভ নাই। এর ফলে আমি ইতিমধ্যে চান্দের চরের জমিগুলি (যেখানে হাউজিং করার পরিকল্পনা করেছিলাম) বিক্রির খদ্দেরের সাথে পাকা করে ফেললাম। পলাশপুরের জমিগুলিও বিক্রি করা শুরু করলাম। আমি ধরে নিলাম, এই মুহুর্তে আমার শুধুমাত্র রিস্পন্সিবিলিটি হচ্ছে কনিকা আর আমার স্ত্রী। উম্মিকা আমার লিষ্ট থেকে বাদ হয়ে গেলো। আমি রাকিবের সাথে সম্পর্ক রাখার কারনে আমি উম্মিকার উপরে খুবই অসন্তুষ্ট এবং রাগ।

আমার আচরনে এবং ব্যবহারে আমার স্ত্রী মিটুল ও অনেকটা মন খারাপ করে থাকে। বুঝা যায়, সে প্রতিদিনই উম্মিকাকে মুটভেট করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমার সাথে কোনো প্রকার তথ্য শেয়ার করে না। এর মধ্যে আবিরের (রাকিবের) বাবা সম্ভবত আবারো মিটুলকে ফোন দিয়েছে যাতে অন্তত মিটুল তাঁর কথাগুলি শোনে। মিটুল কিছুতেই তাদের ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে নারাজ, আবার অন্যদিকে উম্মিকাও তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে নারাজ।

তো এর মধ্যে রাকিবের বাবা আবার আমাকে ফোন দিলো। কিন্তু আমি প্রথমে ফোনটা ধরতে পারিনি, নামাজে ছিলাম। তাই নামাজ শেষে আমিই তাকে ফোন করলাম। ফোনের বিবরনটাও এখানে লিখিঃ

আমিঃ ভাই, আপনি কি আমাকে ফোন করেছিলেন?

আনিছঃ জী ভাই, আমি আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম। ভাই, সেদিন তো আপনি ফোন দিছিলেন কিন্তু আমি তো কোনো কথাই বলতে পারলাম না। যে কথা বললেন সেদিন, অন্যের কথা শুনে তো আর সব কিছু বিচার করা যায় না। আমার জায়গাতে তো আমি কষ্টেতে আছি, আমার ছেলে নিয়া, আমার ছেলের বউ নিয়া।

আমিঃ আপনার পয়েন্ট টা কি?

আনিছঃ আমার ছেলের বউ কি বল্লো আর কি না বল্লো......

আমিঃ না আমি তো আপনাকে সেদিন খারাপ কিছু বলিনি। আজকে আপনার পয়েন্ট টা কি? কি নিয়ে আপনি আমার সাথে আলাপ করতে চাচ্ছেন?

আনিছঃ না, এই যে আমার ছেলের প্রতি আপ্নারা যে বলতেছেন যে, আমার ছেলের দোষ, আমার...

আমিঃ আমি তো আপনার ছেলের কোনো দোষ দেই নাই। আমি তো বলছি যে, এটা আমার মেয়েরই দোষ। সে ভুল করেছে। এ জন্য আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, আপনার ছেলেকে আমার মেয়ের থেকে বিরত থাকতে বলেন। কাহিনী শেষ। আবার কি বলতে চাচ্ছেন এখন আমাকে?

আনিছঃ আমি বলতে চাচ্ছি জে, ওই মেয়েটা যা যা বলছে...

আমিঃ কোন মেয়েটা?

আনিছঃ ওই যে আমার ছেলের বউ।

আমিঃ শোনের আনিস সাহেব, আপনার ছেলের বউ এর সাথে আমার কোনো কথা হয় নাই।

আনিছঃ আপনার সাথে হয় নাই, কিন্তু আপনার ওয়াইফের সাথে কথা হইছে, অনেক কিছু বলছে। তারপর আপনার ওয়াইফ আমাকে ফোন দিয়ে অনেক কথাই বল্লো। অনেক কথাই। বল্লো, আপনার ছেলের বউ থাকতে আপনার ছেলে আমার মেয়ের সাথে আবার সম্পর্ক গড়ছে......এতো বড় সাহস কোথায় পায়?

আমিঃ কি মনে হয় আপনার? আমার বউ কি কোনো কিছু ভুল বলছে? আপনার ছেলের একটা বউ থাকতে সে আবার আমার মেয়ের সাথে পরকীয়া করতেছে, এটা কি ঠিক হইছে?

আনিছঃ তা ঠিক আছে......

আমিঃ মানে? কি ঠিক আছে? কি ঠিক আছে? এটার মানে কি এটা যে, একটা বউ থাকবে, আরেকটা মেয়ের সাথে সে পরকীয়া করবে, এটা ঠিক আছে?

আনিছঃ না না সেটা ঠিক নাই। আমি তো বলতে চাচ্ছি যে, আমার ছেলেও ভুল করছে, আপনার মেয়েও ভুল করছে। আপনার মেয়েও জানে আমার ছেলের বউ বিদ্যমান।

আমিঃ না, উম্মিকা সেটা জানে না। আমাকে উম্মিকা সেটাই বলেছে যেটা সে জানে।

আনিছঃ না, জানে আপনার মেয়ে অবশ্যই জানে।

আমিঃ তাহলে এখন আপনি আমাকে কি বলতে চাচ্ছেন? আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে, এখন আপনার ছেলেকে দিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করাইয়া দেই?

আনিছঃ না, সে রকম না।

আমিঃ তাহলে কেনো ফোন করেছেন আমাকে? বলেন না? কি চান আমার কাছ থেকে? আমি রাগ হচ্ছি এখন। কি চান আমার কাছ থেকে?

আনিছঃ আমি চাচ্ছি, আমার ছেলেকে যে হুমকি ধামকী দিচ্ছে আপনার ওয়াইফ। আমাকে বলে যে, আপনার ছেলে এই করেছে, সেই করেছে ......

আমিঃ শোনেন আনিছ সাহেব, আমি এবং আমার ওয়াইফ শুধু একটা কথা আপনার এবং আপনার ছেলেকে পরিষ্কার করে জানিয়েছি জে, আপনার ছেলে যেনো উম্মিকার সাথে কোনো যোগাযোগ না করে এবং আমার মেয়েও যদি আপনার ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে চায়, সে যেনো আর না করে। তা না হলে...

আনিছঃ আমি আমার ছেলেকে আপনাদের কথাগুলি বলে দিয়েছি।

আমিঃ জী, সেটাই বলবেন। আমি কারো কোনো ক্ষতি করতে চাই না। কিন্তু যখন এটা আমার গায়ে আসবে, ডেফিনিটলী আমি একশান নেবো, কোনো সন্দেহ নাই। আপনার ছেলের এটা একটা অবাস্তব চিন্তাভাবনা।

আনিছঃ আমিও এটাই বলেছি আমার ছেলেকে।

আমিঃ আনিছ ভাই, আমাকে শুধু একটা কথা বলেন, হাউ মাচ ইউ হেভ ব্যাংক ব্যালেন্স? টেল মি? কতটুকু ব্যাংক ব্যালেন্স আছে আপনার?

আনিছঃ কার আমার?

আমিঃ আপনাদের।

আনিছঃ আমাদের আর কত আর ব্যাংক ব্যালেন্স আছে?

আমিঃ শোনেন। নাম্বার টু, একটা ছেলে কিভাবে সব জেনেশুনে আমাদের মতো একটা অসম পরিবারের সাথে একটা সম্পর্কে জড়াইতে চায় যেটা একটা অবাস্তব? কেউ যদি তাকে প্রলোভন ও দেয়, তাঁর খুব কেয়ারফুল হ ওয়া উচিত ছিলো। এটা শুধু এবসার্ড না, এটা ইম্পসিবল পার্ট। কি করে সম্ভব হয়? আপনি কি আপনার বর্তমান স্ট্যাটাস নিয়ে আমার সামনে চেয়ারে বসতে পারবেন? আপনি আমার বাড়িতে এসে আমার সামনে বসতে পারবেন? ঠিক আছে আনিছ ভাই, আমি আপনার সাথে এ ব্যাপারে অনেক কথা বলতে চাই না। ঠিক আছে, আই ডোন্ট মিক্স আপ উইথ পিপল হু ইস নট ইকুয়াল টু মি!! আই এম গুড টু গুড পিপল বুত আই এম অলসো ব্যাড ফর ব্যাড পিপল। জাষ্ট রিমেম্বার ইট। থ্যাংক ইউ।

এরপরে আমি আর তাঁর সাথে কোনো কথা বলি নাই। বলার দরকারও মনে করি নাই। অতঃপর ঠিক পরেরদিন রাকিব (আবির) আমাকে একটা হোয়াটস আপ ম্যাসেজ করে। এই ম্যাসেজটা আমাকে আরো ক্ষিপ্ত এবং রাকিবের ব্যাপারে আরো নেগেটিভ করে তোলে। ম্যাসেজটা ছিলো এ রকমঃ

১১/৬/২০২৩

Sorry apnake WhatsApp e  txt korar jonno. Amar Baba ke call diye onek kotha bolechen. Apni to educated person tahole kono Kichur judge korte hoile dui pokkher kotha sune proper information jene then right or wrong judge korte hoy aita to janen. Apni Jodi kichu bolte chan tahole age proper information gula right place theke niye then judge korben asha kori.  Power status esob er gorom  na dekhiye sob kichur sothik information niye then kotha bolle valo hoy. Ak hate tali baje na. Amake Amar Baba ke na jene bhuje mon gora dosh diye kotha bolben aita kono educated person er porichoy na. Age Amar name akta bad report ber kore then amake wrong judge korben.jodi kono akta single bad report ber Korte paren amar name jekono sasti diben Ami Mene nibo .

আমি বাসায় এসে উম্মিকাকে এবং উম্মিকার মাকেও ব্যাপারটা পড়ে শোনাই। আর বলি- আমার সাথে ওর বাপের কি কথা হইছে সেটা আমাকে সে চার্জ করেছে। আমাকে দেখলো না, কথা হইলো না, কত স্টুপিড যে, সে আমাকে এমন একটা ম্যাসেজ লিখে যেখানে আমার শিক্ষা, আমার পজিশন, আমার স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন করে? এ তো রানার থেকেও খারাপ। রানা তো বিয়ে করার পর কিছুটা হলেও অধিকার পেয়ে আমাদেরকে উলটা পালটা ম্যাসেজ দিয়ে খুবই নোংরা কথা লিখতো। আর এই বেটা তো কোনো সম্পর্কই হয় নাই, তাতেই এখন এই অবস্থা। আর যদি সম্পর্ক হয়, তাহলে কোন লেবেলে যাবে? আমিও উম্মিকাকে আরো কঠিন করে শাসালাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো বলে মনে হলো না। আমি বারবার উম্মিকাকে এই ছেলে থেকে সরে আসতে বললাম। কিন্তু উম্মিকার আচরনে এই ছেলে থেকে সরে আসার কোনো লক্ষন দেখা গেলো না।

যাই হোক, রাকিবের ম্যাসেজের উত্তর আসলে আমি দিতে চাইনি। কিন্তু আমার মনে হলো, আমি তো ওর সাহে কোনো কথা বলি নি, অন্তত আমার মাইন্ড টা সে বুঝুক তাই একটা ম্যাসেজ দিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ১৬/৬/২০২৩ তারিখে ওকে ম্যাসেজের উত্তর করেছিলামঃ

I wonder receiving such kinds of message again from your side where I clearly and explicitly told you that we are not interested about you even you are having 100% honesty, 100% best quality or even the BEST reputation at your end. I along with my family am not at all interested to know or search any kinds of information about you and your family on what was right and what was not. That belongs to yours and no way affects us anyway. What my daughter did was a childish move.  I wish, you would not dare enough again to communicate me with any kinds of such message in future as we have no connections in any way. Even, I would not expect you to reply me on this message. Hope you respect yourself and that's very important for a person's character. I don't block people as it entails bad gradings.  An advise to you as an elder, be attentive with your carrier, build it on your own, you will be better rest of your life. Thanks. (Major (Retd) Akhtar Hossain, PhD, MSc, MBA, MDS, psc, G+,

উম্মিকা কিছুতেই রাকিবের কাছ থেকে সরে আসছিলো না। তারপর মনে হয় উম্মিকাই রাকিবকে আবার সরি আকারে একটা ম্যাসেজ দিতে বলেছে আমাকে। এটা আমার ধারনা। সেই ম্যাসেজটা ছিলোঃ

Assalamu  Owalaikum Baba.

Kmn achen apni ?Kalke apnar office theke asar por khub druto duty te chole jaoay  apnake r call dite pareni .Kalke night duty theke onek patient er pressure chilo .ajkeo saradin onek pressure giyeche. Tobe nana kajer besto tar majhe onek bar apnar kotha mone hoyeche . Call diye hoyto onek kichuei bolte parbo na tay sms kore bolte iccha korlo . Apnar sathe dekha hoar purbe moner moddhe hajar ta voy r dridha donde last koekdin onek beshi mental stress e chilam . Thik vabe ghum khaoa daoa kono kichuei korte pare ni ato ta beshi stress e chilam. Tobe apnar sathe  kalke jetuku time kotha hoyeche . Apnar proti ta kotha apnar protita motivation family nijer jibon niye notun vabe amake bachte sikhate asha jagiyeche. Amar jibone er sotti porom souvaggo ami apnar moto akjon manusher mentorship e notun vabe nijeke niye beche thakar sopno khuje peyechi . Amar kache mone hoyeche Anika jemon amar jibone thik joto ta blessing hoye eseche ,thik Apnar moto akjon baba jar proper guideline pele sotti Jibone onek dur egiye jaoa somvob. Amar kache mone hoyeche apnar moto akjon baba paoa sotti amar moto akta cheler jonno onek vagger bepar . Allah r kache shudu aituku chay samner din gulote apnader doa niye jeno agami te valo kichu kore dekhate pari. apnader kache nijeke akjon Apnader joggo sontan hisebe proman korte pari . Apnar sathe kotha bolar por amar onek beshi valo legeche . Hoyto apnake samna samni bolar sahos ta hoyni  Tay sms kore apnake janalam Baba.

ম্যাসেজ পড়ে তো আমি আরো হতাশ। সে আমাকে সরাসরি “বাবা” বলে সম্বোধন করে লম্বা একটা আকুতির ম্যাসেজ পাঠালো। আমি আর এই ম্যাসেজের উত্তর দেইনি। কারন, উত্তরে আরো উত্তর, তাঁর উত্তরে আবারো উত্তর। তাই আমিই উত্তর দেয়া বন্ধ করলাম।

উম্মিকা বুঝে গিয়েছিলো, আমি ওর একক সিদ্ধান্তেও রাজী নই। যদি সে বিয়ে করতেই চায় রাকিবকে, সেটা ওর ব্যাপার। তবে আমি উম্মিকাকে এই মর্মে একটা সতর্ক বানী শোনালাম যে, যদি আমার সিদ্ধান্তের বাইরে উম্মিকা রাকিবকে বিয়ে করে তাহলে সে আমার কোনো সম্পত্তি পাবে না, তাঁর ছেলেমেয়ে কিংবা পরবর্তী বংশ ধরেরাও আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবে না। তবে আমার মেয়ে হিসাবে শুধুমাত্র উম্মিকার আসা যাওয়ার অনুমতি থাকবে, অন্য কারো নয়। আমি এর মধ্যে একটা ড্রাফট ও করে ফেলেছিলামঃ

আমি নিম্নবর্নীত স্থাবর-অস্থাবর জমিজমা, সম্পত্তি এবং অন্যান্য বিষয় সম্পত্তি সত্তবান ও মালিকানা বিদ্যমান দখলদার আছি। আমার দুই মেয়ে এক স্ত্রী বিদ্যমান। আমার এখন শারিরীক অবস্থা খুব ভালো না বিধায় আমি আমার নিম্নবর্নীত বিষয়াদি আমার ছোট মেয়েকে (সানজিদা তাবাসসুম কনিকা) একচ্ছত্র মালিকানা করিয়া এই উইল করিলাম। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ থাকে যে, আমার বড় মেয়ে আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা তার নিজের ব্যক্তিগত সার্থের কারনে, তার পছন্দমত একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে পরকীয়া করার কারনে, আমাদের কোনো সৎ পরামর্শ না শোনার কারনে এবং উপর্যপরী তার একক সিদ্ধান্তে অটল থাকার কারনে আমি এইমর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর বিষয়-সম্পত্তি তার কিংবা তার পছন্দ করা পুরুষের কিংবা তার পরবর্তী বংশধর, আওলাদ (উভয় ছেলে এবং মেয়ে আওলাদ) এর হাতে নিরাপদ নয়। আমার বড় মেয়ে এমন কিছু খারাপ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে, এবং প্রায়ই সেই বন্ধুত্ব পরকীয়ায় রুপ নেয় যা আমাদের পরিবারের সাথে খাপ খায় না। তার মধ্যে পরিবারের ইজ্জত, মান সম্মান, কিংবা ঐতিহ্যের প্রতি কোনো প্রকার সম্মান নাই। ফলে দেখা যায় যে, আমার বড় মেয়ের এহেনো নীচ কাজের জন্য অনেক আজেবাজে লোভী পুরুষেরা তার সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে আমাদের এই সাজানো সংসার, আমাদের কষ্টার্জিত সম্পদের উপর লুলোপ দৃষ্টি দিয়ে আমার বড় মেয়েকে যে কোনোভাবে পটিয়ে তারা তাদের সার্থ হাসিল করতে চায়। অনেকবার আমার বড় মেয়েকে এ ব্যাপারে সাবধান করার পরেও সে বারবার একইরুপ ব্যবহার, আচরন প্রদর্শন করছে। সে নিজে একজন ডাক্তার কিন্তু তার মধ্যে এখনো পরিবার, পরিবারের মান সম্মান কিংবা আমাদের মান সম্মানের প্রতি কোনোরুপ তোয়াক্কা করেনা। আমার এই সম্পত্তি অনেক কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত বিধায় শুধুমাত্র আমার বড় মেয়ের খামখেয়ালীপনা, পরকীয়া এবং খারাপ মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করিয়া আমার ওয়ারিশ হওয়ার কারনে সে কিংবা তার পরকীয়া পুরুষ কিংবা তাদের ঔরসজাত সন্তানেরা, বংশধরেরা কিংবা তার ভবিষ্যৎ আওলাদ্গন আমার কোনো সম্পত্তির মালিক হইতে পারিবে না। আমি আমার এই উইলের মাধ্যমে এইমর্মে বিধান দিতেছি যে,

(ক)      আমি সজ্ঞানে, নিজের ইচ্ছায় এবং অন্যের কোনো প্রোরোচনা ব্যতিত আমি আমার বড় মেয়ে, তার স্বামী, তার বংশধর, তার আওলাদ (ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়) এবং তার পরবর্তী যে কোনো বংশধর আমার সরবপ্রকার বিষয়াদি, স্থাবর-অস্থাবর, ব্যবসায়িক, ক্যাশ, জমিজমা, বাড়িঘর, কিংবা যে কোনো সামাজিক পজিশন থেকে বাতিল বলিয়া বিধান করিতেছি। অর্থাৎ আমার বড় মেয়ে আমার কোনো কিছুই প্রাপ্য হইবে না।

(খ)       আমার সাথে আমার বড় মেয়ের পিতৃত্ব, ওয়ারিশান কিংবা দেশের বা ধর্মের প্রচলিত যে কোনো আইনের ধারার বিনিময়ে সুযোগ নিয়ে আমার নিম্নবর্নীত জমি জমা, ঘর বাড়ি, বিষয়াদি, ব্যবসা বানিজ্যের কিংবা আমার পেনশনের অথবা যে কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কোনো প্রকার ভাগ বা অংশীদার হবার কোনো সুযোগ নাই এবং রাখিলাম না। 

(গ)       এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে, আমার ছোট মেয়ে আমার সমস্ত জমিজমা, ঘরবাড়ী, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রাপ্য সম্পদের একচ্ছত্র মালিকানা হইবে।

(ঘ)       কোনো কারনে যদি আমার ছোট মেয়ে তার বড় বোনের উপর সদয় হইয়া আমার অনুপস্থিতিতে আমার বিষয়াদি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, কিংবা ব্যবসায়িক অংশ থেকে কোনো কিছু প্রদান করিতে চায়, সেটা আমার ছোট মেয়ে করতে পারবে না বলে আমি বিধান করিতেছি। এমনকি, আমার ছোট মেয়ে আমার কোনো সম্পত্তি কিংবা বাড়িঘর যে কোনো বিষয়াদি বিক্রি করিয়া সেই অর্থ তাহার (ছোট মেয়ের নামে) গচ্ছিত রাখিয়া উক্ত টাকা হইতে কোনো প্রকার অর্থ আমার ছোট মেয়ে আমার বড় মেয়েকে প্রদান করিতে পারিবে না। অর্থাৎ আমার যে কোনো সম্পত্তি হইতে পরোক্ষা বা প্রত্যক্ষভাবে আমার বড় মেয়ে কোনো কিছুই পাইবে না বলিয়া আমি বিধান করিতেছি। কোনো কারনে যদি আমার ছোট মেয়ে দয়া পরবশ হইয়া আমার সম্পত্তি, বাড়িঘর, জমি জমা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার বড় মেয়েকে হস্তান্তর, দান, কিংবা সাহাজ্য করতে চায়, তাহলে আইনগতভাবে আমার ছোট মেয়েকে দোষী সাব্যস্থ্য করিয়া আমার এই বিধানের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে তাকেও শাস্তি প্রদান করিতে আমি ফার্স্ট ক্লাস মেজিষ্ট্রেট, এবং প্রশাশনকে ক্ষমতা প্রদান করিলাম।

(ঙ)      এই দলিলে উল্লেখা করা আমার জমাজমি, বাড়িঘর এবং স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি আমার ছোট মেয়ে, তার বংশধর, এবং পরবর্তী আওলাদেরা (উভয় ছেলে এবং মেয়ে) আজীবন ভোগ, বিক্রি কিংবা হেবা (আমার বড় মেয়েকে ব্যতিত), কট, মর্টগেজ করতে পারবে। তবে এখানে উল্লেখ থাকে যে, যে কোনো বিক্রি অবশ্যই ফার্স্ট ক্লাস মেজিষ্ট্রেটের অধীনে করতে হবে এবং কোন কারনে উক্ত জমিজমা, স্থাবর অস্থাবর বিক্রি কিংবা কট, মর্টগেজ করা হলো তার প্রকৃততথ্য এবং হিসাব দেয়ার পরেই শুধুমাত্র তা আমার ছোট মেয়ে, তার বংশধরেরা, আওলাদেরা তা করতে পারবে। কোনো অবস্থাতেই কোনো অংশ বা টাকা বা হেবা, দান কিংবা এই জাতীয় কোনো কর্ম আমার বড় মেয়ের জন্য বরাদ্ধ হইবে না এইমর্মে প্রশাসনকে হিসাব দিয়ে তারপর করতে পারবে বলে আমি বিধান করছি।

(চ)       এখানে উল্লেখ থাকে যে, আমি নিম্নবর্নীত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আমার জীবদ্দশায় যতটুকু সম্ভব বিক্রি করে অর্জিত টাকা আমি ক্যাশ ওয়াকফ করে যাওয়ার নিয়ত করিয়াছি। কোনো কারনে যদি আমার এই সপ্ন সফল হইবার আগেই আমার মৃত্যু হয়, সে কারনে আমার এই উইল করা। এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে, আমার জীবদ্দশায় যতটুকু আমি বিক্রি করে শেষ করতে পারি, সেই টুকু আমার উইল থেকে বাদ যাবে এবং বাকী সম্পত্তিতে আমার পূর্বের সব শর্তাবলী নিবন্ধিত থাকবে।

(ছ)       এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে, আমার বড় মেয়ে যদি তার ভুল বুঝে তা সংশোধন করে তার এসব খারাপ রুচীসম্মত কর্ম কান্ড থেকে বিরত থাকিয়া পুনরায় আমাদের পরিবারের মান সম্মান বজায় থাকে এমন কাজের বহির্প্রকাশ এবং তার চর্চা আমাকে দেখাইতে পারে, তাহলে আমি আমার জিবদ্ধশায় হয়তো পুনরায় এই উইল পরিবর্তন করতে পারি। কিন্তু আমার বড় মেয়ের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্টের কোনো কিছুই পরিবর্তন না হয় এবং আমি তার উপর সন্তুষ্ট না হইয়া মৃত্যু বরন করি, তাহলে আমার এই উইলে যা যা শর্ত আমার বড় মেয়ে, তার ঔরসজাত সন্তান সন্তানাদি, আওলাদ (ছেলে বা মেয়ে) এর উপরে বয়ান করা হয়েছে, তা বলবত থাকবে।

এমন একটা পরিস্থিতিতে উম্মিকা আর রাকিব নিজেরাই এগিয়ে যাচ্ছিলো নিজেরা নিজেরা বিয়ে করে সংসার করার জন্য।

একদিন রাতে উম্মিকার মা, আমাকে খুব শান্ত গলায় কিছু কথা বলার চেষ্টা করলো। তাঁর কথার সারমর্ম এরুপ যে,

উম্মিকা আর রাকিব ডেল্টা মেডিক্যালের পাশেই বাসা ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছে। কিছু ফার্নিচার কিনেছে, আরো কিছু কিনবে। ওরা এই বছরের শেষের দিকে সম্ভবত নিজেরা নিজেরাই বিয়ে করবে। তাই বলছিলাম কি যে, একটা কাজ করো না, মেয়ে তো আমাদেরই, শেষ অবধি যদি ওরা বিয়েই করে ফেলে, তাহলে তো আমাদের কিছু করার থাকবে না। রাগারাগি হবে, মেয়ে বাসায় আসবে না্‌ আমরাও ওদেরকে মিস করবো। কেমন হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা। তুমি একটু ভেবে দেখো না, হতেও তো পারে যে, ওরা আসলেই খারাপ না, ছেলেটা আসলেই লোভী না, বা আমরা যেমন ভাবছি হয়তো ওরা তেমন না।

কিছু বললাম না। কিন্তু কয়েকদিন সময় নিয়ে নিজে নিজেই ভাবলাম। কি করা যায়। আসলেই তো, উম্মিকা আর রাকিব যদি শেষ পর্যন্ত একা একাই বিয়ে করে, তাহলে আমাদের কি করার আছে? মেয়ে বড় হয়েছে, সিদ্ধান্ত নেবার যোগ্যতা হয়েছে। ভালো হোক আর খারাপ, শেষ পর্যন্ত যদি ওরা একা একাই বিয়ে করে, তাহলে আমাদের তো আসলেই কিছু করা যাবে না।

অতঃপর আমি উম্মিকার মাকে বললাম, উম্মিকাকে বলো, আমি রাকিবের বাবা মায়ের সাথে আমার অফিসে কথা বল্বো। সাথে আরো একটা সিডিউল দিয়ে দিলাম যে, ২৭ সেপ্টেম্বর আমি রাকিবের বাবা মায়ের সাথে একা অফিসে কথা বল্বো, ২৮ সেপ্টেম্বর উম্মিকা আর রাকিবের সাথে আমার অফিসে আমি একা কথা বল্বো, আর ২৯ সেপ্টেম্বর আমি মিটুল, উম্মিকা, রাকিব আর রাকিবের বাবা মাকে নিয়ে অফিসে কথা বল্বো। আমি এটাও বললাম যে, আমি রাকিবের মেডিক্যাল কলেজে ওর প্রাক্তন বন্ধুদের সাথে, ইতির পরিবারের সাথে, রাকিবের বর্তমান কর্মস্থলের কিছু বন্ধুদের সাথে কথা বল্বো।

এটা অবশ্যই একটা ব্রেকিং নিউজ সবার জন্য যে, আমি কথা বলতে রাজী হয়েছি। রাকিবের বাবা মা কিছুটা খুশী হলেও তারা খুব টেনশনে পড়ে গেলেন একটা অজানা ভয়ে, আমারকে ফেস করার ভয়ে। রাকিবও। কিন্তু রাকিবের বাবা মা বা রাকিব এটা ধরে নিলো যে, অন্তত তাদের কথাগুলি তো আমাকে ফেস টু ফেস বলতে পারবে। আমি সে মোতাবেক একটা হোমওয়ার্ক করি। কিছু পয়েন্ট নোট করি কি নিয়ে কোন পক্ষের সাথে আমি আলাপ করবো। পয়েন্টগুলি ছিলো এমনঃ

রাকিবের বাবা মা এর সাথে মিটিং  (২৭/০৯/২০২৩)

(১)        রাকিবের আগের বিয়ের ইতিহাস শোনা। কিভাবে বিয়েটা হয়েছিলো?

(ক)       কার কার সাথে রাকিব আর ইতিকে নিয়ে দেন দরবার করা হয়েছিলো?

(খ)        ইতির সাথে বিয়েটা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো কিনা?

(গ)       ইতির বাবার ঠিকানা কি? ইতি কোথায় কাজ করে বা করতো?

(২)        উম্মিকার বিয়ের ঘটনা বলা

(ক)       কমিটমেন্ট উম্মিকাই করেছিলো, আমাকে কমিটমেন্ট করাইতে বাধ্য করেছিলো। আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে আসা আমার চরিত্র নয়।

(৩)       উম্মিকার আগের শশুড়বাড়ির চেহাড়া এবং বিয়ের পরের চেহাড়ার একটা তুলনামুলক চিত্র দেয়া

(ক)       উম্মিকাকে ছোটখাটো গিফট করা, খাবার পাঠিয়ে দেয়া, মাঝে মাঝে ফোন করে তাকে ওদের কাছে টেনে নেয়া। এ সবই ছিলো বড় লোভের একটা ছোট অংশ।

(খ)        বিয়ের পরে এগুলির কোনো কিছুই আমি দেখিনি। 

(গ)       আমাদের বাড়িতে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকা কিংবা ওদের বাসার সামনেই আমাদের কর্তৃক একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে ওদের রাখা। এটা আমি মানতে পারিনি।

(৪)        রানার চরিত্র নিয়ে কথা বলাঃ 

(ক)       ভয়ানক লোভী ছিলোঃ শেয়ার চাওয়া, একাউন্ট হ্যান্ডিলিং এ সুযোগ দেয়া, গাড়ী চাওয়া, তাঁর টিউশন ফি চাও, বিজ্ঞাপনে টাকা চাওয়া, এসি, ল্যাপটপ, মোবাইল, ড্রেস, জুতা কিংবা ঘড়ি, ওদের বাড়িঘর রিনোভেশনে আমার খরচ দেয়া।

(খ)        উম্মিকার প্রতি দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা, কখনোই বগুড়ার না যাওয়া, বা ঢাকায় এলেও উম্মিকার সাথে যোগাযোগ না করা।

(গ)       কনিকার প্রতি হিংসা করা

(ঘ)        ফ্যাক্টরিতে সময় মতো না আসা। আসতে বললেই তাঁর মেজাজ চড়ে যাওয়া কিন্তু বেতনের বেলায় শতভাগ চেয়ে নেয়া।

(চ)        ওর মার কথামতো চলা এবং মা সব সময় ছেলেকে কুবুদ্ধি দিতো।

(ছ)        আমের ঘটনা।

(জ)       ষ্টাফদের সাথেই এমনভাবে মেলামেশা করা যে, ষ্টাফরাই চুরি করে আর সে সেটা সায় দেয়।

(ঝ)       উম্মিকাকে আমি যে টাকা দিতাম, সেটা দিয়েও রানা অনেক সময় ওর দাবীগুলি মেটাতো।

(ট)        কংকাল বিক্রি এবং টিভি কেনা।

(ঠ)        রানার ব্যবহার ছিলো পাশবিক। মেজাজ, আচরন কিংবা ভদ্রতা অস্বাভাবিক ছিলো। একেবারেই ম্যাচিউরড ছিলো না।

(৫)       আমার নিজের ভূমিকাঃ

(ক)       আমি নিজে ওদের ব্যাপারে কোনো খোজ খবর নেইনি। আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে, তারা আমাকে এই খোজখবর নেয়া থেকে খুব টেকনিক্যালি বিরত রেখেছিলোঃ যেমন, তারা কাউকে জানাতেই দিতে ইচ্ছুক ছিলো না যে, রানা বিয়ে করেছে।

তারা আমাকে ওদের অন্যান্য আত্মীয়সজনের সাথে দেখা করার জন্য কোনো প্রকার সাহাজ্যই করেনি। এক তরফা আমাকে ব্রেইনওয়াস করেছিলো।            

(খ)        আমি চেয়েছিলাম, একটা পরিবার। সেটা গরীব হোক আর অসচ্ছল তাতে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু আমি লোভী পরিবার চাইনি। তারা লোভী ছিলো। তারা চেয়েছিলো শুধু আমাকে আর আমার স্ত্রীকে। আমার সম্পদ, আমার স্ট্যাটাস, আমার ক্ষমতা ইত্যাদির ব্যবহার। কিন্তু ওরা না চেয়েছিলো আমার মেয়েকে, না ছোট মেয়েকে, না দায়িত্ব নিতে।

(গ)       জাহিদের পোষ্টিং (করাপশনের কারনে, ট্রাষ্ট ব্যংকের ঘটনা, জেনারেল মতির সাহাজ্য)

(ঘ)        ওদের জমি জমা নিয়ে বিরোধ মিটানো, অন্যান্য সহযোগীতা করা ইত্যাদি করেছি।

(৫)       বিয়ের পরে আমার মেয়েকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কি?

(ক)       কোথায় থাকবে, কিভাবে থাকবে?

(খ)        আমাকে কি করতে হবে? কি চাওয়া আমার কাছে?        

(৬)       আমার চাওয়াঃ

(ক)       নিরাপদ সংসার

(খ)        নিরাপদ প্রোফেশন।

(গ)       কাবিনের মাধ্যমে একটা বাইন্ডিংস।

(ঘ)        যদিও সঠিক না, তবুও একটা চুক্তি।

২৭ সেপ্টেম্বর আমি আমার গাড়ি (জীপ) ওর বাবা মার জন্য রেখে এলাম, আমি আমার নুয়া গাড়ি নিয়ে অফিসে এলাম। এর একটা প্রধান কারন হলো- ওরা আমার নিমন্ত্রনে আমার অফিসে আসতেছে। আমার উচিত তাদেরকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে যেদিন রাকিবের বাবা মা আমার অফিসে আসলেন, সেদিন আমার পরিকল্পনা ছিলো যেনো আমি কোনো অবস্থাতেই তাদেরকে অসম্মান না করি, রাগারাগি না করি। তারা আমার গেষ্ট। আমি বিয়েতে রাজী কিনা বা অরাজী সেটা পরের ব্যাপার, কিন্তু কাউকে ডেকে এনে তাও আমার অফিসে, তাকে অসম্মান করার অভ্যাস আমার কখনো ছিলো না, এখনো নাই। কিন্তু যেদিন রাকিবের বাবা মা আমার অফিসে ঢোকেন, তারা এতোটাই ভয়ে জড়োসড়ো ছিলেন যে, এটা আমার জন্যই খারাপ লাগছিলো। আমি খুব হাসিমুখে তাদেরকে আমার অফিসে বসালাম। বারবার গ্রাম এবং রাকিবের কাছ থেকে ওর বাবার মোবাইলে ফোন আসতেছিলো। সবাই একটা আতংকের মধ্যেই ছিলো।  কিন্তু আমার অফিসে বসার ২ মিনিটের মধ্যে তারা এতোই শান্ত হয়ে গেলেন যে, যা ভেবেছেন আমাকে নিয়ে আমি সেটা না। রাকিবের মা ই প্রথম কথা বল্লো

ভাই, আমি গত চারদিন যাবত একেবারেই ঘুমাতে পারিনি কোনো একটা অজানা ভয়ে, চাপে। কখনো ঢাকায় আসিনি, গ্রামের মানুষ আমরা, আপনি ডেকেছেন, তাও আবার আপনার অফিসে, আমরা সবাই খুব ভয়ে ছিলাম। গ্রামে আর ফিরতে পারি কিনা সেটাও একটা ভয় ছিলো। কিন্তু এখন তো দেখছি- আপনি খারাপ মানুষ না। ভয়ংকর না। আমি তাদেরকে আরো সহজ করার জন্য খুব হাসি তামাশা করলাম। জুস খেলেন, চা খেলেন। ফলটল দেয়া ছিলো সবই খেলেন। অতঃপর আমি বলা শুরু করলাম আমার এজেন্ডা মোতাবেক আলোচনা।

আমি প্রথমে তাদের কথাগুলি শোনার চেষ্টা করলাম। তাদের ছেলের বউ এর সাথে কিভাবে বিয়ে হয়েছিলো, কেনো বিয়েটা ভেংগে গেলো, বিয়েটা রাখা যেত কিনা, সব। এখানে একটা নতুন বিষয় জানলাম যে, রাকিবের মা দুইজন। এটা নিয়েও কিছু হাসি তামাশা হলো। কিন্তু ব্যাপারটা আমি নেগেটিভলী নেই নাই। গ্রামে বড় ভাই বিয়ের অল্প সময়ের পর মারা গেলে অনেক সময় শশুড় বাড়ির লোকেরা মানবিক কারনেই তাঁর ছোট ছেলেকে দিয়ে বিধবা বড় ভাইয়ের বউকে আবার বিয়ে করিয়ে সেই বাড়িতেই রাখে। কিন্তু এখানে রাকিবের বাবার বউ থাকা সত্তেও রাকিবের দাদা রাকিবের বাবাকে তাঁর বড় ভাইয়ের বউকে বিয়ে করেছে। এটা হতেই পারে। রাকিবের মা নিতান্তই একজন সহজ সরল গ্রামের গৃহিণী, কোনো নালিশ নাই, কোনো অভিযোগ নাই। ভালোই আছে। শুধু মা হিসাবে ছেলের প্রতি সারাক্ষনই একটা টেনশন নিয়ে ঘুমায়। সব আলোচনা মিলে আমার কাছে ওদের খারাপ লাগেনি। আর খারাপ লাগলেও যেহেতু উম্মিকা রাকিবের সাথে ঘর সংসার করবেই, ফলে আমি এক প্রকার মেনেই নিয়েছিলাম ব্যাপারটা।

পরেরদিন আমি রাকিব আর উম্মিকাকে আমার অফিসে ডাকলাম। বাবার সামনে মেয়ের ইন্টারভিউ অনেক কঠিন। উম্মিকা নিজেও জানে তাঁর বাবা কতটা স্ট্রিট ফরোয়ার্ড এবং কঠিন। উম্মিকার সাথে রাকিব ও জানে এর মধ্যে যে, আমি একটু কঠিন মানুষ। দুজনেই ভয়ে ছিলো।

রাকিব এবং উম্মিকা সাথে আলোচনা করার আগে, আমি সেই একই টেকনিক রাকিবের বেলায় ব্যবহার করেছিলাম। যতোই হোক, কম বয়সী ছেলে। অন্তত আমাদের মতো মানুষদেরকে ফেস করা সহজ না। কিন্তু আমি রাকিবকে সহজ করে নিলাম। ওর ভয় বা টেনশন ভাংগার জন্য জা করতে হয় করলাম। রাকিব প্রায় আধা ঘন্টার পরে অনেকটা স্বাভাবিক হলো বলে মনে হলো।

এবার আমি ওদের সাথে প্রোফেশনাল ভাবে আলাপ করা শুরু করলাম। রাকিবকেই কথা বলতে দিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম কিভাবে রাকিবের সাথে ইতির পরিচয়, প্রেম, বিয়ে এবং বিয়ে পরবর্তী সমস্যা। প্রায় একই রকমের তথ্য পেলাম জা গতকাল রাকিবের বাবা মা আমাকে বলেছিলো। খুব একটা হেরফের হয়নি।

অতঃপর আমি রাকিবকে বললাম, কখনো যদি কারো গায়ে দাগ লাগে সেটা যেমন কোনো মেডিক্যাল সার্জারী দিয়ে মুছা যায় না, তেমনি যখন কেউ সামাজিকভাবে অসম্মানীত হয়, এই লজ্জাও কোনো কাপড় দিয়ে ঢাকা যায় না। আমাদের দুই পরিবারেই এই দাগ এবং লজ্জার ঘটনা ঘটেছে। তাহলে আমি কি গ্যারান্টি পাবো যে, এই একই দাগ এবং লজ্জা আবারো দ্বিতীয়বার ঘটবে না? আমি শুধু সেই গ্যারান্টি চাই। আর এই গ্যারান্টি দিতে পারবা শুধু তোমরা দুইজন। দুইজনেই জানালো যে, তারা তো এই মুহুর্তে সে রকম গ্যারান্টি দেয়ার স্কোপ নাই কিন্তু আগামীতে তারা এটা প্রমান করবে যে, ওরা আমাদেরকে আর দাগ এবং লজ্জায় ফেলবে না।

আমি বললাম, আমি ওদের এই কথা আপাতত বিশ্বাস করলেও আগামী পাঁচ বছর অব্জার্ভ করবো। যদি আগামী ৫ বছরে কোনো সমস্যা না পাই, ধরে নেবো, ওরা ওদের কথা রেখেছে। আর এর জন্য যদি আমার কোনো সাহাজ্য লাগে, আমি দিতে তৈরী। কিন্তু লোভী মানুষদেরকে আমি ঘেন্না করি।

আমি রানার ব্যাপারে সব কিছু খোলা মেলা আলাপ করলাম, রাকিবকে উম্মিকা শুধু ওর সাথে ঘটা ঘটনার কিছু অংশ হয়তো বলেছে কিন্তু আমি রাকিবকে আদোপান্ত বলার পর রাকিব নিজেও বুঝেছে, আমাদের কি ভূমিকা ছিলো আর রানাদের কি অপরাধ ছিলো।

রাকিব তাঁর ১ম ম্যাসেজ নিয়ে অনেকবার দুঃখ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। আমি আসলে ওগুলি আর মনে রাখিনি।

পরবর্তী ২৯ সেপ্টেম্বরে আমরা আবার ৬ জন একত্রে বসেছিলাম। এখানে আমরা ৪ জন ছিলাম যেনো একটা গ্রুপ আর রাকিব উম্মিকা ছিলো আরেকটা গ্রুপ। অনেক বাধ্য বাদকতা ছিলো আমাদের কিছু শর্তের মধ্যে। যেমনঃ

আমি রাকিবকে এবং উম্মিকাকে বললাম, যেহেতু দুজনেই ক্লিনিক্যাল সাইডে উন্নতি করতে চায় এবং ধরে রাখতে চায়, তাতে উম্মিকার সাথে রাকিবের একটা দন্ধ তৈরী হবে। একটা মেয়েকে প্রোফেশনের বাইরে তাঁর সংসার, বাচ্চা কাচ্চা, স্বামী সব কিছু মেইন্টেইন করতে হয়। সেক্ষেত্রে উম্মিকার জন্য ক্লিনিক্যাল সাইডে থাকা বোকামী। অন্যদিকে রাকিব যদি ক্লিনিক্যাল সাইডেই থাকতে চায়, তাহলে উম্মিকাই বলবে, উম্মিকা দোষ করলো কি? এমন এক পরিস্থিতিতে প্রোফেশনাল ক্লেশ হওয়া কোনো ব্যাপার না। আবারো অশান্তি।

রাকিবই এর সমাধান দিলো যে, ক্লিনিক্যাল সাইডে থাকলে ভালো কিন্তু নাম করতে অনেক কাঠ খড় পোহাতে হয়। সময় অনেক বেশী লাগে। তাঁর থেকে যদি টাকা পয়সা কামাই আর পরিশ্রমের অনুপাত ধরা যায় দেখা যাবে ক্লিনিক্যালের থেকে অন্যান্য মেডিক্যালের সাইডে যাওয়া খারাপ না। ফলে, রাকিব এবং উম্মিকা দুজনেই নীতিগতভাবে আমাদেরকে জানালো, তারা ক্লিনিক্যাল সাইডে থাকবে না। তারা মেডিক্যালেরই অন্যান্য সেক্টরে তাদের ক্যারিয়ার পার্সু করবে। প্রয়োজনে তারা কানাডায় মাইগ্রেট করতেও অসুবিধা নাই।

বিস্তারীত আলাপ আলোচনায় সব পক্ষই এই বিয়েতে আমরা রাজী এটাই বেরিয়ে এলো। সন্ধ্যায় সবাই আমরা হাসিমুখে একসাথে ফ্যাক্টরী থেকে বেরিয়ে গেলাম।

এবার আসি, আমার কিছু ব্যক্তিগত মন্তব্যেঃ

(১)       আমার এজেন্ডায় আরো যেখানে যেখানে গিয়ে রাকিবদের পরিবার সম্পর্কে খোজ খবর নেয়ার কথা ছিলো, সেই সিডিউল বাদ দিলাম। কারন, আমি যদি খোজ খবর নিতে গিয়ে ওদের পরিবার সম্পর্কে ৯৯% নেগেটিভ কথাবার্তাও শুনি, তাতেও আমি রাকিব আর উম্মিকাকে এই বিয়ে থেকে বিরত রাখতে পারবো না। তাই, খোজ নেয়া আর না নেয়ার মধ্যে আমি কোনো তফাত দেখতে পেলাম না।

(২)       উম্মিকার ১ম বিয়েটা আমরা অনেকটা জোর করেই উম্মিকাকে রাজী করিয়েছিলাম রানার সাথে। উম্মিকা সে কারনে মাঝে মাঝেই আমাদের দোষারুপ করে। কিন্তু এইবার উম্মিকার নিজের চয়েজে রাকিবকে বিয়ের সিধান্ত নিয়েছে। ভালো মন্দ, সব উম্মিকার দায় দায়িত্তো। লাইফ উম্মিকার, ভালো থাকার ব্যাপারটা উম্মিকার। তাই, আমি উম্মিকাকে এবার জোর করে বিয়েতে না রাজী করার কোনো কারন দেখি না।

(৩)      আমরা প্রথম থেকে রাকিবদের উপরে জে মানসিক চাপের সৃষ্টি করেছি, বা যেভাবে জে কথাগুলি ওপেনলী বলেছি, তাতে অন্তত রাকিব এবং তাঁর পরিবার একটা জিনিষ খুব ভালো করে উপলব্ধি করেছে যে, আমাদের দ্বারা ওদের উপকার হবে যদি লোভ না করে, কিন্তু যদি লোভী হয়ে উলটা পালটা কিছু আশা করে সেটা আমি বা আমরা কিছুতেই পছন্দ করবো না। তাছাড়া, আমাদের এমন টাইট ব্যবহারে ওরাও অনেকটা সোজা হয়ে চলার কথা। রানার মায়ের মতো বা রানার বোনের বা ভাইয়ের মতো সার্থপরতার কোনো কাজ না করার কথা।

(৪)       উম্মিকার আগের স্বামী রানা ছিলো একটা স্টুডেন্ট বা বেকার। তাছাড়া ম্যাচিউরিটি ছিলো না। কিন্তু রাকিবের বেলায় তাঁর একটা আইডেন্টিটি আছে, ডাক্তার। যা বুঝেছি, দায়িত্তের সাথে কাজ করে এবং পরিবারকে সাপোর্ট করার জন্য আরো বেশী পরিশ্রম করে। রানাকে কোথাও পরিচয় করিয়ে দেবার মতো রানা কোনো যোগ্যতা অর্জনেও সক্ষম হয়নি।

(৫)      রাকিবের দুটূ বোন, যাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রাকিবের আর কোনো ভাইও নাই। ফলে পরিবারটাকে আমার জটিল মনে হয় নাই। এ ছাড়া রাকিবের বাবার একটা ব্যবসা আছে যেটা রানার বাবার ছিলো না।

(৬)      রাকিবঅদের ঢাকায় কোনো থাকার জায়গা নাই, ফলে রাকিবের বাবা মা অনেকটাই আমাদের উপর নির্ভর করছে রাকিবের নিরাপত্তা, রাকিবের গার্জিয়ানশীপ ইত্যাদি। কিন্তু রানার ব্যাপারে রানার মা চেয়েছিলো ওরা আমাদেরকে কন্ট্রোল করুক। আর সেইটার টুলস হলো উম্মিকা। এখানে এই ব্যাপারটা আমি দেখি নাই।

(৭)       সবচেয়ে বড় পয়েন্ট হচ্ছে- যদি উম্মিকা আর রাকিব শেষ পর্যন্ত তারা একা একাই বিয়ে করে ফেলে, তাহলে আমি তো আমার মেয়েকেই হারিয়ে ফেলছি। হতে পারে ইনশাল্লাহ ওরা ভালই থাকবে বা থাকছে, তখন কিন্তু আমিই আবার ওদেরকে কাছে টেনে নিতে বাধ্য হবো। কারন আমি ওটাই চেয়েছিলাম যে, উম্মিকারা ভালো থাকুক। যদি পরে গিয়ে ওদের সুখী দাম্পত্যর ফলাফলে আমি কাছেই টেনে নেই, সেটা বিয়ের আগে নয় কেনো? তাতে লাভ অনেক গুলিঃ

(ক)      আমার সিদ্ধান্তেই বিয়েটা হলো।

(খ)       উম্মিকার আম্মুর খুব শখ ছিলো উম্মিকার বিয়েতে সে অনেক ধুমধাম করবে, সেটাও হলো।

(গ)       আমার একটু সাহাজ্যে যদি রাকিবদের পরিবারেও একটু উপকার হয়, তাতে আমিও খুশী রইলাম।

(ঘ)       যদি দেখি, রাকিবের বাবার ব্যবসাটা একটা লাভ জনক ব্যবসা, আর আমার সাহাজ্যে যদি তাঁর ব্যবসাটা আরো ভালো করে, প্রয়োজনে আমিও তাঁর সাথে ব্যবসায় শরীক হতে পারবো। রাকিবের বাবাই চালাবে কিন্তু আমার কিছু ফাইন্যান্সের কারনে আমারো একটা নতুন সেক্টর ওপেন হলো।

তাই, আগামী ৩ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে সেনাকুঞ্জে উম্মিকার অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ এ ওর গায়ে হলুদ। এর মাঝে আমার ছোট মেয়ে কনিকা ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ইনশাল্লাহ ঢাকায় ল্যান্ডিং।

১২/১০/২০২৩-লেঃ কর্নেল মজিদের ইন্তেকাল

সকালে ফেসবুক ব্রাউজ করতেই হটাত একটা পোষ্ট নজরে এলো। পোষ্টটা নিম্নরূপঃ

প্রশ্ন হচ্ছে এ রকম আরো অনেক অফিসারেরই তো মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি, কিন্তু এবার শুধু মজিদের মৃত্যু সংবাদে আমাকে কেনো আমার ব্যক্তিগত ডায়েরীতে লিখতে হলো? এর একটা অতীত ইতিহাস আছে। সেটাই বলছি।

এটাই সে আর্মি অফিসার যার কারনে আমাকে সেনাবাহিনী থেকে অকালীন অবসর নিতে হয়েছিলো। আমি ১৩ লং কোর্ষের কিন্তু মজিদ ১৪ লং কোর্ষের। মেজর থেকে লেঃ কর্নেল প্রোমোশন বোর্ডে শুধুমাত্র মজিদকে আনুকল্য দেয়ার জন্য আমাকে প্রোমোশন থেকে বাদ দিয়ে এই অফিসারকে প্রোমোশন দেয়া হয়। পাশাপাশি যদি আমাদের দুইজনের কোয়ালিফিকেশনকে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখবোঃ

  আখতার (আমি) মজিদ
কোর্ষ সমুহের গ্রেডিং আমার সব আর্মির কোর্ষ গ্রেডিং কমপক্ষে বি প্লাস আবার কখনো কখনো আ ছিলো। শুধু কয়েকটি বেসিক কোর্ষে বি ছিলো। মজিদের সব গুলিই বি ছিলো। তাঁর ক্যারিয়ারে এ বা বি প্লাস গ্রেডিং প্রায় ছিলোই না।
ষ্টাফ কলেজ ষ্টাফ কলেজে সম্পন্ন করেছি মজিদ ষ্টাফ কলেজ করেনি
পদাতিক ডিভিশন এবং আর্মি হেড কোয়ার্টারে নিয়োগ আমি পদাতিক ডিভিশন এবং সেনাসদরে জি এস ও-২ (অপারেশন) , জি এস ও-(ট্রেনিং) উভয়েই কাজ করেছি। মজিদ এরুপ কোনো পদে কখনো কাজ করেনি।
স্বাস্থ্যগত বিবরন আমি ক্যাটেগরি এ ভুক্ত ছিলাম মজিদ ক্যাটেগরি সি ভুক্ত ছিলো। এবং ডায়াবেটিসের রোগী।
অভিজ্ঞতা আমি মাইনর ইউনিটে উপ অধিনায়ক/ অধিনায়ক এবং ্মেজর ইউনিটে উপ অধিনায়কের দায়িত্ত পালন করেছি। মজিদের এরুপ কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না।
মিশন আমি পর পর দুইটা ইউ এন মিশন সম্পন্ন করেছিলাম। মজিদ সম্ভবত একটা ইউ এন মিশন করেছে। ক্যাটেগরি সি হ ওয়াতে নাও করতে পারে। এ ব্যাপারটা আমি নিশ্চিত নই।
শিক্ষাগত যোগ্যতা আমি শিক্ষাগত যোগ্যতায় মাষতার্স, এম বি এ, এম এস সি, এবং ততকালীন ডক্টরেট করতে নিয়োজিত ছিলাম। মজিদ এম বি এ করেছিলো।

মজিদের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট ছিলো ওর বাবা। ওর বাবা ছিলো আমাদের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাসার মালি অতবা কর্মচারী। আর এই সুবাদেই খালেদা জিয়া মজিদের বাবার অনুরোধে তিনি মজিদকে তাঁর এ ডি সি করেন। সমস্ত আইন ভেংগে, আর্মির রুলস ভেংগে তিনি এ কাজটি করেন। যা সবার কাছে গ্রহনযোগ্য ছিলো না।

সেই মজিদের এখন প্রোমোশন দরকার। তাই প্রোমোশন বোর্ডের তিন দিনের ফলাফলে আমার নাম চুড়ান্ত হবার পরেও শেষ দিনে এসে হটাত করে মজিদ উড়ে এসে জুড়ে বসলো, আর আমি ঝড়ে পড়ে গেলাম। মজিদের প্রোমোশন হলো আর আমার হলো না। আমি কখনো কারো কাছে আমার ব্যাপারে তদবির করতে পছন্দ করিনি। এবারো করলাম না। আমি সিনিয়ার হ ওয়া সত্তেও মজিদ আমার ৭ ফিল্ডের সি ও (অধিনায়ক) হয়ে গেলো। জুনিয়ারের অধীনে সিনিয়ারের কাজ করা জে কত দূর্বিসহ, এটা যারা করেছে তারা জানে। যদিও মজিদ কখনো আমার ফ্রিডম নষ্ট করেনি, আমার কোনো কাজে বাধা দেয়নি, অথবা আমার প্রতি তাঁর কোনো খারাপ আচরন করেনি, তারপরেও আমার প্রতিটি দিন কেটেছে মনের কষ্টে। কেনো আমাকেই বলি হতে হলো?

আমি শেষ পর্যন্ত আর্মি থেকে অকালীন অবসর গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেই। আর ঠিক তারই ধারাবাহিকতায় আমি ২০০৪ সালের নভেম্বরে আমি আর্মি থেকে ভলান্টিয়ারিলি অবসরে চলে আসি।

আর্মিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি তুলনা করি, দেখা যাবে, ৫০ টি অফিসারের মধ্যে হয়তো আমি ১০ এর মধ্যে আছি। আমার কাজের প্রশংসা সব জেনারেকরাই করতো কিন্তু শেষ অবধি খালেদা জিয়ার ইচ্ছায় মজিদেরই জয় হয়েছিলো। প্রধান মন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়ার এটা করা উচিত হয় নাই।

সেই মজিদ খালেদা জিয়ার পলিটিক্যাল দল খমতাচ্যুত হবার পর নিজেও আর্মি থেকে অবসরে যায়, বলতে পাতেন তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। পুনরায় মজিদ সেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধান্মন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথেই সে ছিলো। কেউ বলে বডি গার্ড, কেউ বলে এমনিতেই।

আজ মজিদের ম্রিত্যুর সংবাদ পেলাম। রাগ ছিলো, গোস্যা ছিলো, অপছন্দ করতাম, কিন্তু আজ আর মজিদের উপর আমার কোনো ক্ষোভ নাই, রাগ নাই। সে কি করে গেছে, কি করা উচিত ছিলো, এর ফলাফল এখন নির্ধারিত।

আমি ভালো আছি। আর্মি থেকে বের হয়ে আর কোনো চাকুরীর সন্ধান করিনি। সরাসরি একটা গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছিলাম। প্রথমে সেই গার্মেন্টস ছিলো একটা মৃত প্রতিষ্ঠান, আজ সে গার্মেন্টস বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরে একটা মডেল নাম। রিভার সাইড সুয়েটার্স। প্রায় ২ হাজার লোক কাজ করে, বছরে টার্ন অভার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। আল্লাহ যা করেন সব ভালোর জন্যই করেন।

মজিদের জন্য, খালেদা জিয়ার জন্য এবং সেই সব দূর্নীতি পরায়ন চাটুকার জেনারেলদের জন্য ও আমি দোয়া করি কিন্তু তারা আজ কেহই ভালো নেই। কেউ কারাগারে, কেউ ফাসির রায়ে দন্ডিত, কেউ পালিয়ে আছে আবার কেউ কেউ এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলেও গেছে।

০৮/১০/২০২৩-কোন দিকে যাচ্ছে অর্থনীতি

আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করে, আমাদের ব্যবসায়িক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা কি হতে যাচ্ছে। আমি কোনো অর্থনীতিবিদ নই। ফলে যেসব ফ্যাক্টর হিসাবের মধ্যে নিয়ে সার্বিক অর্থনীতির উপর মতামত দেয়া যেতে পারে তাঁর অনেক ফ্যাক্টরই আমার জানা নাই বা সেগুলি নিয়ে আমি কাজ করি না। কিন্তু দৃশ্যমান কিছু সিম্পটম বিবেচনা নিয়ে যে কোনো আমজনতাও অনেক কিছুর সঠিক একটা প্রেডিকশন দিতে পারে যা হয়তো খুব একটা অমুলিক নয়। সেই প্রেক্ষাপট থেকেই বলছি।

আমাদের অর্থনীতি মুলত কিছুটা কৃষিজ এবং অনেকাংশেই বৈদেশিক মুদ্রা (যেমন রেমিট্যান্স, রপ্তানী আয়, এফডিআই) ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। এই কয়েকটা ফ্যাক্টর যদি মামুলীভাবে আমরা চিন্তা করি, তাহলে দেখবো যে, খুব বেশী একটা ভালো প্রত্যাশা করার কিছু নাই।

রেমিট্যান্স বহুলাংশে কমে গেছে কারন যারা এই বৈদেশিক মুদ্রা দেশে রেমিট করবেন, তারাই বিদেশে প্রায় হয় বেকার অথবা আগের তুলনায় অনেক কম বেতনে চাকুরী করছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে ইউরোপের শিল্পবানিজ্যে প্রায় ধ্বস নেমে যাচ্ছে। প্রচুর ইন্ডাস্ট্রি শুধুমাত্র এনার্জি সংকটের কারনে বন্ধ এবং অনেকগুলি বন্ধের পথে। ফলে সেখানে কর্মী ছাটাই বা বিদেশীদের প্রাধান্য প্রায় নীচের দিকে। আমাদের দেশের শ্রমিকেরা খুব একটা স্কীল নয় বিধায় তাদের ডিমান্ডও বেশ কমে যাচ্ছে। মাইগ্রেশন এখন ইউরোপের একটা চরম সংকট। তারা যে কোনো মাইগ্রেশনের বিপক্ষে এখন। ইউরোপের অবস্থা দিনের পর দিন এখন খারাপের দিকে যাওয়ায় সেখানকার নাগরিকগনও কৃচ্ছতা অবলম্বন করছেন। তাদের পারচেজ পাওয়ার কমে যাচ্ছে। লাক্সারী লাইফের কথা এখন তারা মাথা থেকেই বের করে দিচ্ছে। জীবনধারনের জন্য যতটুকু দরকার সেটাতেই এখন তারা অভ্যস্থ হবার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় রেমিট্যান্স ধীরে ধীরে কমবে।

অন্যদিকে ইউরোপ কিংবা পশ্চিমা দেশগুলিতে যেহেতু এখন নাগরিকদের পারচেজ পাওয়ার কমে যাচ্ছে, ফলে আগে যেখানে একজন একের অধিক পন্য কিনতেন, সেখানে তারা পন্য কেনার পরিমান কমিয়ে দিয়ে বাজেটের মধ্যে চলার চেষ্টা করছেন। তাতে যেটা হচ্ছে-আমাদের দেশ কিংবা অন্যান্য রপ্তানীকারকের রপ্তানী আদেশের পরিমানও কমে যাবে। যখনই রপ্তানী আদেশের পরিমান কমে যাবে, আমাদের দেশেও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে তাঁর প্রভাব পড়বে। অনেক মেশিনারিজ বন্ধ থাকবে, এতে কর্মী ছাটাইয়ের আশংকা হবে। শুধু তাইই নয়, এনার্জি সংকটের কারনে কিংবা জালানী সংকটের কারনে পরিবহন খাতে ব্যয় বাড়বে, বিদ্যুৎ খাতেও ব্যয় বাড়বে। প্রডাকশন খরচ বাড়ার কারনে এবং রপ্তানী আদেশের পরিমান কমার কারনে আমাদের দেশের ছোট ছোট ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান গুলি অস্তিত্ত টিকিয়ে রাখার হুমকিতে পড়বে।

এখানে আরো একটা বিপদ ঘটার সম্ভাবনা আছে। সেটা হচ্ছে-ইউনিপোলারিটি থেকে মাল্টিপোলার ওয়ার্ডে আমাদের দেশ একটা সংকটের মধ্যে আছে। এই মুহুর্তে ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশগুলির সাথে আমাদেরও কিছুটা টানপোড়েনের চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিধায় কোনো কারনে যদি পশ্চিমারা নাখোশ হয়, তাহলে একইসুত্রে গাথা ইউরোপের বাজার আমাদের জন্য ছোট হয়ে আসবে। সেক্ষেত্রেও আমাদের রপ্তানী আদেশে তুমুল একটা নেগেটিভ প্রভাব ফেলবে।

এখানে সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে-যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের উপর লোনের বোঝা আছে, তারা সময়মতো লোন পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাংকগুলিও যেমন তারল্য সংকটে পড়বে, তেমনি ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাদের ঋণ পরিশোধে চাপের কারনে মালিকপক্ষ হিমসিম খাবে। যখন মালিকপক্ষ এই লোনের কারনে চাপের মধ্যে থাকবে, তখন তারাও ধীরে ধীরে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা করবেন। দেখা যাবে যে, ফ্যাক্টরী আছে, মেশিনারিজ আছে, কিন্তু কর্মি নাই, রপ্তানীর আদেশ নাই, এবং মেশিনারিজ অচল অবস্থায় পড়ে আছে।

এবার যদি কৃষিজ প্রেক্ষাপটে আসি, সেখানেও একই চিত্র ফুটে উঠবে। সার সংকটের কারনে, কিংবা পানি সেচের জন্য প্রয়োজনীয় এনার্জি সাপ্লাইয়ের সংকটের কারনে এবং এমন কি বীজের সংকটেও কৃষিজ সেক্টরে এর নেগেটিভ প্রভাব পড়বে। বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ, বিভিন্ন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞার কারনে সময়মতো এসব সার, বীজ কিংবা আনুষঙ্গিক আইটেম পাওয়া যাবে না। শুধু তাইই নয়, এই যুদ্ধ আগামী কয়েক বছরের খাদ্য সংকটও তীব্র হতে পারে বলে আমার ধারনা।

আবার, সরকারকে রাষ্ট্রীয় খরচ যোগানের লক্ষ্যে তাঁর ঋণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হোক সেটা লোকাল ব্যংকা থেকে কিংবা বাইরের কোনো অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে। ফলে, এমনো হতে পারে জে, ব্যাংকে জন সাধারনের গচ্ছিত টাকাও সময় মতো সাধারন জনগন উঠিয়ে অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থায় লগ্নি করতে পারে কিনা সেটারও একটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়।

আজ ঠিক এই মুহুর্তের পরিস্থিতি দেখে অনেকটাই বুঝার উপায় নাই, আগামি এক বছর পরের পরিস্থিতি কত ভয়ানক হতে পারে। আমেরিকাকে প্রতিদিন ২৭৫ বিলিয়ন ডলার লোন করতে হচ্ছে, ইউরোপের প্রায় সব কটি দেশে আগের তুলনায় ব্যাংক সুদ বেড়েছে প্রায় ১০ গুন। কমোডিটির ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩ গুন। কিন্তু সে তুলনায় সাধারন জনগনের আয় বাড়েনি।

এ অবস্থায় কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, আগামি কি হতে যাচ্ছে- কি করে বলা সম্ভব? এ অবস্থায় আমাদের মতো আমজনতার কিংবা ব্যবসায়ীর জন্য কি করনীয় হতে পারে?

আমিও জানি না আসলে কি হতে যাচ্ছে আগামীতে। তবে, আমার একটা কথা আছে, আমি ছোট মানুষ, বুঝি কম, তাও যেটা বুঝি সেটা হলো-যাদের ব্যাংক লোন বিদ্যমান, তাদের উচিত সেটা যতোটুকু সম্ভব কমিয়ে ফেলা, কারন মুল ক্যাপিটাল পরিশোধ না করা পর্যন্ত এর যে সুদ সেটা পরিশোধ করতেই যখন হিমশিম খেতে হবে, মুল ক্যাপিটাল দেয়াই হবে তখন চরম অসুবিধা। যাদের হাতে এখনো কিছু অর্থ আছে সেটাকে যতটুকু সম্ভব যৌক্তিক সেক্টরে ব্যবহার করা যাতে অন্তত মুল ক্যাপিটাল নষ্ট না হয়, এবং যতটুকু না হলেই নয় তাঁর মধ্যে বসবাস করা।

বাকীটা শুধু বলতে পারবে “সময়”।

৩০/০৯/২০২৩- বন্ধুর বাহুবলে শত্রুকে আক্রমণ

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কিভাবে কোথায় শেষ হবে এর আসলে কোনো দিক নির্দেশনা দেয়া বা বুঝা কঠিন। কারন যুদ্ধটা একপক্ষ (রাশিয়া) করছে তাঁর নিজ শক্তিতে আর অন্যপক্ষ (ইউক্রেন) করছে অন্যের বাহুবলে। ফলে খুব ধীরে ধীরে এর অন্তর্নীহিত একটা মুখোশ বেরিয়ে আসছে কথায় এবং কাজে। এরই ধারাবাহিকতায় ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এন্ড ডিফেন্স কাউন্সিলর আলেক্সি ডেনিলভ প্রকাশ্যে কিছু মন্তব্য করেছেন, আমি তাঁর কথাগুলি হুবহু তুলে ধরিঃ  

তিনি বলেছেন, “কালেক্টিভ ওয়েষ্ট এবং ইউরোপিয়ান প্রতিনিধিগন বারবার একটা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন যে, যতোদিন ইউক্রেনের সাহাজ্যের প্রয়োজন, ততোদিনই তারা সেটা দিয়ে যাবেন কিন্তু কেউ এটা বলছে না যে, ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ী না হওয়া অবধি আমরা সাহাজ্য দিয়ে যাবো। তারা বলছেন, আমরা ইউক্রেনবাসীরা জয়-পরাজয়ের কিংবা যে কোনো সিদ্ধান্ত নেবো। তাই আমি জানতে চাচ্ছি আমাদের ওয়েষ্টার্ন সাপোর্টারদের কাছ থেকে যে, আপ্নারা কি আমরা বিজয়ী হওয়া অবধি সাপোর্ট দিয়ে যাবেন নাকি এটা কিছুদিন পর নিঃশেষ হয়ে যাবে? আমার এই কথা বলার পিছনে যুক্তি হচ্ছে যে, আমাদের অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে জানিয়েছেন কালেক্টিভ ওয়েষ্ট এবং ইউরোপিয়ান দেশসমুহ ইতিমধ্যে তাদের ট্যাক্স-পেয়ারের টাকা আমাদের আর দিতে চান না। শুধু তাইই নয়, যেখানে প্রতিমাসে আমাদের প্রয়োজন ৫ বিলিয়ন ডলার সেখানে প্রবাহ হচ্ছে মাত্র ৩০০ মিলিয়ন ডলার। জেলেনেস্কীও মনে করছেন যে, প্রতিদিন তাদের এই সাহাজ্য কমছে এবং দেশে দেশে ইউক্রেনকে সাপোর্ট করার ব্যাপারটা নেতিয়ে পড়ছে বড় একটা জনগনের মধ্যে। শুধু তাইই নয়, আমেরিকার নির্বাচনে যদি বর্তমান সরকার না আসে, সেক্ষেত্রে ইউক্রেনের জন্য আর কোনো সাপোর্ট অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয় না। যদি সেটাই হয়, তাহলে মনে রাখবেন, আমাদের যেসব রিফুজি আপনাদের দেশে দেশে অবস্থান করছে, তারা অবশ্যই আপনাদের উপর অখুশী হবে এবং এই অখুশীর একটা প্রভাব তো আছেই”।

মোরালঃ

নিজের শক্তির উপর ভিত্তি করে শত্রুকে আক্রমন করবেন। পাশে থাকা বন্ধুর বাহুবলকে পুজি করে যদি আপনি আপনার শত্রুকে আঘাত করেন তাহলে সময়মতো পাশে থাকা বন্ধুর বাহুবলকে আপনি নাও পেতে পারেন। ফলে আপনি অসুবিধায় পড়বেন।

২৬/০৯/২০২৩-দলকানা আর দেশপ্রেম 

হলুদ আরো আরো আরো বেশি হলুদ হইলে যেই রকম কঠিন হলুদ হয়, ফেসবুককে মাঝে মাঝে আমার সেইরাম হলুদিয়া মিডিয়া মনে হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে কারো কারো পোষ্টে এমন ধারনা হয় যে, এই বুঝি সেইটা যেইটা আমি চাইতাছি। ২য় আলো ৩য় আলোর সংবাদের মত। দেখবেন এই ২য় বা ৩য় আলোর খবর পড়লে মনে হবে ইউক্রেন রাশিয়ারে এমন নাচন নাচাইতাছে যে, পুতিন জেলেনেস্কির কাছে খালি করজোরে মাফ চাওয়া বাকি।

অথবা

ফেসবুকের কিছু কিছু লোকের পোষ্ট পড়লে মনে হবে দেশের ভিতরের সব খবর তাদের পেটে। যেমন, হেলিকপ্টার রেডি, উড়াল দিচ্ছে উগান্ডার শাশক, কিংবা অমুক তারিখ থেকে উগান্ডা চলবে বুগান্ডার আদেশে, কিংবা নিষেধাজ্ঞা এমন জায়গায় ভিড়ছে যে, ঘরে ঘরে "হায় হোসেন হায় হোসেন" এর মত মাতম। অথবা উগান্ডা এমন অর্থনীতির গ্যারাকলে পড়ছে যে, পাবলিক না খাইয়া না খাইয়া সব কংকাল হইয়া যাইতেছে। কিন্তু বাস্তবে কোনোটাই ঠিক তাদের প্রচারের মত না যতটা লিখেন। হেলিকপ্টার উড়েনা,বুগান্ডার আদেশ কার্যকরী হয় না, বাজারে ভীর কমে না, রাস্তায় গাড়ির জন্য জ্যাম কমে না, মলের ফুডকোর্ট গুলিতে বসার জায়গা মেলে না।

আবার কিছু লোক আছে,উগান্ডারে এমুন ভালোবাসে যা বলার না কিন্তু খায় দায় হাগে মুতে আরেমিকা বা কাডানায় বা ইলাতি অথবা ইউপোর। তারা আসলে লাইম লাইটে আসতে চায়। যোগ্যতার প্রশ্ন না, এটা একটু ভাইরাল হবার চেষ্টা।

আরে ভাইজানেরা, দেশপ্রেম আর দলকানা এক জিনিষ না। দেশপ্রেম দেখতে চান? নীরবে চলে যান সেইসব মানুষদের কবরে যেখানে শুয়ে আছে দেশের জন্য যুদ্ধ করা আপনার থেকেও কম বয়িসি যুবক যাদের বাবা মা ভাই বোন স্ত্রী পরিজন থাকা সত্তেও শুধু দেশকে ভালবেসে শহীদ হয়েছেন। বুকে হাত দিয়ে বলুন- আপনার পরিবারের কয়জন সেই শহিদদের মধ্যে আছে? আবার এইটা কইয়েন না যে, আপনার চাচার শালার বউয়ের বান্ধবীর খালাতো ভাই শহীদ, তাই সেও আপনার পরিবারের অংশ।

আর দলকানা দেখতে চান? তাহলে একটা আয়না নিন, ভিতরে যাকে দেখতে পাবেন, তারা।

১১/০৯/২০২৩-২৫ জন সামরীক কর্মকর্তা বিএনপিতে যোগ

রাজনীতি আগের মতো আর কেউ আদর্শের কারনে করে না। দেশপ্রেম, জনগনের দুঃখলাঘব, বৈদেশিক সম্পর্ক আরো দৃঢ়করনে দেশকে উচ্চতর আসিনে বসানো ইত্যাদি এখন আর রাজনীতিবিদদের স্লোগান নয়। প্রতিটা দেশেই এই চিত্র। হোক সেটা আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা বা এশিয়া অঞ্চল। এটা হয়ে গেছে এখন মুলত ব্যবসায়ীক প্লাটফর্ম, কারো কারো জন্য ঝড়ের রাতে একপ্রকার একটা ঘাটের আশ্রয়ের মতো, আবার কারো কারোর জন্য এটা নিছক একটা আইডেন্টি থাকা দরকার তারজন্য। যারা ব্যবসায়ীক মুটিভেশন নিয়ে রাজনীতি করেন, তাদের অর্থবৈভব থাকায় তাদের অবস্থান এক, যারা ঝড়ের মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে শুধুমাত্র বেচে থাকার তাগিদে একটা ঘাট হইলেই হয় ভেবে ঢোকেন, তাদের অবস্থা অন্য। আর যারা শুধুমাত্র একটা আইডেন্টি থাকার জন্য রাজনীতিতে আসেন তাদের অবস্থান তো আরো ব্যতিক্রম। তবে যেভাবেই বলি না কেনো, এটা অনেকটা দাবা খেলার গুটির মতো। যার অর্থ আছে, সে বসে রানীর পাশে, রাজার পাশে, মন্ত্রীর পাশে, অথবা থাকে মন্ত্রীর পাশে ঘোড়া, কিংবা হাতী ইত্যাদি হয়ে। তারা অনেক দূরের কোনো গুটিকে আক্রমন যেমন করতে পারে তেমনি তাদের সুরক্ষার জন্যেও ঢাল তলোয়ার থাকে। কারন তাদের ভ্যালু আলাদা।

আর যারা ঝড়ের মধ্যে হাবুডুবু খেয়ে শুধুমাত্র বেচে থাকার তাগিদে একটা ঘাট হইলেই হয় ভেবে ঢোকেন, এদের অবস্থাটা এ রকম যে, গরম কড়াই থেকে উনুনে পড়ার মতো। রাজনীতিতে ঢোকলেও অরক্ষিত আবার না ঢোকলেও অরক্ষিত। ফলে দলে তাদের অবস্থানটা সেই রানী, রাজা মহারাজারা কিংবা মন্ত্রী, হাতীরা সেভাবেই দেখেন যেভাবে তারা দেখেন একটা এতিমকে। কখনো তারা তাদের মাথায় হাত বুলান, আবার কখনো তারা তাকে সামনের সুনামীতে পাহাড়াদার করেন, আবার এমনো হয় তারা কখনো কখনো তাদের পরিচয়টাও ভুলে যান।

আর তৃতীয় সম্ভাব্য স্তরের কথা তো আরো ভয়াবহ। তারা শুধু একটা আইডেন্টিই পান, তার না থাকে রাজা-রানীর কাছে যাওয়ার ক্ষমতা, না পান তাদের কাছে কোনো আর্জি রাখার সরাসরি দরবার, না পারেন নিজের জন্য কিছু করতে। এই পক্ষটার সামনেই ঝুলে থাকে আরো দুটু শক্ত স্তরের দেয়াল। তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হয়না সেই প্রথম স্তরের মতো বিচরন করা বা সেই দেয়াল টপকিয়ে সামনে আসা। কারন এদের আবির্ভাবই হয়েছে শুধুমাত্র “আছি”র মতো একটা আইডেন্টি পাওয়ার জন্য। সেটা তো সে পেয়েছেই।

এই দুই পক্ষের যাদের অর্থবৈভব নাই, তারা হবেন প্রথম সারির সৈনিক। এই সৈনিকদেরকে হাতী খাবে, ঘোড়া খাবে, কিস্তিতে মাত করবে, আবার অপর পক্ষের সৈনিকেরাও এই আমজনতা সৈনিকদেরকে খাবে। এরা মরার জন্যই গুটির প্লেটে জন্ম নেয়। এদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা একপা এগুনোর, দুইপা হয়তো কখনো কখনো যেতে পারে কিন্তু সেটা খুবই কদাচিত। তবে কখনোই অনেক ঘর পেরিয়ে রানী-রাজার কাছে যেতে পারেন না।

রাজনীতির দোলাচলে যখন ক্ষমতার দন্দ বা পালাবদল হয়, তখন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় পরবর্তী দুই স্তরের বাহিনীর। তারা এবং তাদের সাথে তাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন অনেক কিছু হারায়, বন্ধু হারায়, নাগরীক সুবিধা হারায়, সমাজও হারায়, বঞ্চিত হয় অনেক মৌলিক অধিকার থেকে। তারসাথে যেটা যোগ হয় সেটা আরো করুনতর। কারন কোনো কিছু না করেই দাড়াতে হয় কাঠগড়ায়। আর সেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বুঝা যায় পৃথিবীতে কোনো আদালত আজ পর্যন্ত স্বাধীন হয় নাই। কন্ঠের সর্বোচ্চ চিৎকারেও কেউ শুনতে চায় না, দুঃখের করুন কাহিনী কিংবা অবিচারের কষ্ট। তখন অনেক সহৃদয় বন্ধু, কাছের কিছু মানুষেরাও তাঁর সাহাজ্যে আসতে চাইলেও আসতে পারেন না। কারন তখন আক্রান্ত মানুষটি একটি ব্রান্ড। ব্রান্ডের যেমন আলাদা মুল্যায়ন, তেমনি অবমুল্যায়নও হয়। ব্রান্ড হওয়া খুব বিপদজনক। 

মানুষের জীবনটা খুব ছোট। এই ছোট জীবনে প্রতিদিন আকাশ দেখলেও আকাশের মিষ্টি দৃশ্য দেখে শেষ করা সম্ভব না, বৃষ্টির দিনে ভিজলেও যে মজা সেই মজাটা এই ছোট জীবনেও উপলব্ধি করে শেষ করা যায় না। রাস্তার ধারে অবহেলিতভাবে যে লাল ফুলটা প্রস্ফুটিত হয়ে আছে, তাঁর রুপটাও কোনো এক শিশির ভেজা সকালে দেখলে মন ভালো হয়ে যায়। এই ব্রান্ডেড রাজনীতির কারনে আমাদের ছোট এই জীবনের অনেকটা সময় ক্ষমতার দন্দে বা দোলাচলে এসব হয়তো অনেকের ভাগ্যেই আর জোটে না। তাদের পা দৌড়াতে দৌড়াতে যখন ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন দিনের শেষ আলোটা প্রায় নিভু নিভু।

৯/৯/২০২৩-সাদাচুল কালোকরন

আমার বউকে বললাম, কি এক অবস্থা আমার চুলের! সব সাদা হইয়া যাইতেছে। একমাস পরপর কালো কলপ দিয়া কালী কইরা আর কত? ভাবছি, এবার কালো কলপ না দিয়া সাদা স্নোসেম মাইরা পুরাই সাদা কইরা ফালাই। কি বলো?

বউ আয়নায় কি জানি রূপচর্চা করিতেছিল। আয়নার দিকে তাকাইয়াই আমার উদ্দেশ্যে বলিলো-করো, অসুবিধা নাই, ভুতের মতন দেহা যাইবো তোমারে। যেই না চিকার মতো চেহাড়া, আবার সাদা চুল। ভুতের মতোন লাগবো।“

মনে মনে ভাবলাম, হায়রে আজ থেকে ৩৬ বছর আগের সেই চেহাড়া কোথায় গেলিরে বাপ? তখন তো এই মহিলাই আমারে নায়ক শাহরুখ খান ভাবতো। তাই আমারে ছাড়া আর কাউরে বিয়া করবো না কইয়া তিনদিন না খাইয়া আছিলো। আমি নাকি সেই রাজপুত্তুর।  বিশ্বে আমার থেকে নাকি এতো সুন্দর যুবক আর তাঁর চোখে পড়ে নাই। আর আজ? কষ্টে কইলজার সাথে মাথার চুল পর্যন্ত পইড়া যায়যায় ভাব।

ঢেকুর তুলিয়া বলিলাম,

যাক, তাওতো ভালোই। সবাই তো ভুতেরেই ভয় পায়। রাস্তায় গাড়ির জ্যামে আমাকে দেখলেই সবাই ভয়ে রাস্তা ফাকা কইরা দিবো, জ্যাম শেষ। উগানাডার পুলিশও মনে হয় ভুতেরে ভয় পায়, পাওয়ার তো কথা। তারাও আর অযথা আমার গাড়ি চেকের ঝামেলা করবো না, যারা সুদটুদ খায়, তারাও নিশ্চয় আল্লাহরে ভয় না পাইলেও ভুতেরে তো অবশ্যই ভয় পায়। তারাও আর কেঊ টাকা পয়সা চাইবো না। ভুতের সাথে আর যাই হোক, লেনদেন করা বিপদজনক। অনেক বাটপার টাটপার আছে, টাকা ধার চায়, তারাও ভুতের চেহাড়ার কারনে কাছেটাছে আইবো না, আর ধারও চাইবো না, সবাই আমারে ডরাইবো। অস্ত্র ছাড়া, হুমকী ছাড়া, ঘুষ বানিজ্য দেয়া ছাড়া সবাই আমারে ভুত মনে কইরা ডরাইবো। মন্দ কি? এমন মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করা কি আমার ঠিক হইবে?

জাতী জানতে চায়।

৯/৯/২০২৩-আমার জন্মদিন

গত ৮ সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিন ছিলো। আমি আসলে ইদানিং আর জন্মদিন পালন করি না। ফলে মনেও ছিলো না।

প্রথম মনে করিয়ে দিলো আমার বউ। অবশ্য তিনিও মাঝে মাঝে আমার জন্মদিন মনে রাখতে পারেন না, কিন্তু যেভাবেই হোক, কষ্ট করে হলেও তিনি মনে রাখার চেষ্টা করেন, এবারো মনে রেখেছেন। তাঁর এই প্রথম সংবাদে বুঝলাম, ৮ সেপ্টেম্বর চলে এসছে। আমি অবশ্য আমার বউ এর জন্মদিন ভুলার সাহস করি না, কারন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, চুলা বন্ধ হয়ে বিছানাও আলাদা হয়ে যেতে পারে, তাই রিস্ক নেই না। মোবাইলে, কমপিউটারে, ফেসবুকে, সবখানে আগাম এলার্ম দিয়া রাখি যাতে আমি ভুলে না যাই। যেই মাত্র ওনারে “শুভ জন্মদিন কইয়া লাইছি, আবার এক বছর শান্তি”। মাঝে মাঝে ভুইল্যা যামু এই চিন্তায় সাতদিন আগেও কইয়া রাখি যে, শোনো আগামী অমুকদিন কিন্তু তোমার জন্মদিন, আবার ভুইল্যা যাইও না। আসলে আমি কিন্তু খুব গোপনে দায় সেরে ফেললাম। মহিলা মানুষ, পুরুষের চালাকী ধরতে পারেননা।

যাই হোক, এবারে যখন ফেসবুকের টাইমলাইন, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসআপ, মোবাইলের ম্যাসেজে শতশত “হ্যাপি বার্থ ডে” পাইলাম, তখন আরেকটা কথা আমার বুঝতে সুবিধা হইলো যে, আমার ফেসবুকে যারা মরার মতো কোনো কমেন্ট না কইরা আজিমপুর গোরস্থান মনে কইরা পইড়া থাকেন, আসলে তারা ওই রকম না। তারা পার্কে বসা একাকী দর্শকের মতো থাকেন, দেখেন, পড়েন, হাসেন, কাদেন কিন্তু কিছুই কন না। কিন্তু টাইম মতো আবার ঠিক সরব হন। যেমন আমার জন্মদিনে আমি এতো এতো হ্যাপি বার্থ ডে পাইছি, দোয়া পাইছি তাদের কাছ থেকেও যারা কোনোদিন আমার লেখায় কমেন্ট করে না, লাইক দেন না কিংবা সরব হন না। ভালোবাসাটা মনে হয় এ রকমই। দেখা যায় না, শুধু উপলব্ধি করা যায়। আমি এবার তাদের ভালোবাসাটা খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছি। ধন্যবাদ আপ্নাদেরকে।

কিছু খুব আদরের ছেলেরা আমার অনেক বিরল ছবি দিয়েও আমার টাইম লাইনে আমার “হ্যাপি বার্থ ডে” পোষ্ট করেছে। তাদের এই ভালোবাসা আমাকে নষ্টালজিক করে তুলে ফেলেছিলো। সেই সব বিরল ছবি দেখে আমার সময় যেনো  পিছিয়ে গেছে সেই দিনে যখন ছবিটা তোলা হয়েছিলো। আবেগিত হয়েছি অনেক। এসব ভালোবাসার মুল্য দেবার আমার ক্ষমতা নাই।

আসলে ওই যে একটা লেখা লিখেছিলাম, ভালোবাসা কোনো দোকানে, কোনো শপিং মলে কিংবা কোনো পাহাড় পর্বতের চূড়ায় অথবা কোনো এক রাজপ্রাসাদেও কেজি দরে কিনতে পাওয়া যায় না। এসব ভালোবাসা থাকে মানুষের অন্তরে, হৃদয়ে আর মনের ভিতরে। আপনাদের এসব ভালোবাসার মুল্য আমাকে চোখের জলেও হয়তো পরিশোধ হবে না।

আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ আপনাদের এই প্রান ঢালা ভালোবাসায়। বয়স হয়ে যাচ্ছে, প্রতিটি জন্মদিন আমাকে আমার শেষ গন্তব্যের দিকে একটি একটি বছর করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হয়তো একদিন আর জন্মদিনের শুভেচ্ছার কোনো প্রয়োজন হবে না, তখন শুরু হবে আরেকটি পর্ব-মৃত্যু দিবসের দোয়া।

সবার কাছে দোয়া চাই, সবার কাছে ক্ষমা চাই যদি ভুল করে থাকি। আমিও সবার জন্য দোয়া করি। আর ক্ষমা? আমি কখনোই মনে করি না কেউ আমার কাছে কখনো ভুল করেছে।

সবাইকে ধন্যবাদ।

Bangla College Mitul Farewell

০৭/০৯/২০২৩-নিষেধাজ্ঞা-পূর্নিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি

আগের যে কোনো বছর থেকে ২০২২ সালের পরে ন্যাটো উল্লেখযোগ্যভাবে সবার নজরে এসছে এবং ন্যাটো নিয়ে অনেক আলোচনাও হচ্ছে। এই ন্যাটোটা আসলে কি?

ন্যাটো (NATO) মানে হচ্ছে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অরগ্যানাইজেশন।

এটি বর্তমানে ৩১টি দেশ (২৯ টি ইউরোপের এবং ২টি উত্তর আমেরিকান) নিয়ে গঠিত একটা আন্তঃসরকার  সামরীক জোট। বস্তুত স্নায়ুযুদ্ধের আগে তদানীন্তন সোভিয়েট ইউনিয়নের (USSR) ওয়ার্শো প্যাক্ট (Warsaw Pact) এর বিপরীতে USSR থেকে আগত যে কোনো আক্রমনাত্তক হুমকীকে মোকাবেলা করার জন্য এই ন্যাটো জোটের উদ্ভব। প্রথম মোট ১২টি দেশ (বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, ইতালী, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, ব্রিটেন, এবং আমেরিকা) নিয়ে ন্যাটোর জন্ম। যদিও ন্যাটোর সম্প্রসারনের নিমিত্তে তদানিন্তত আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানীর রাষ্ট্র প্রধানদের মাধ্যমে এটাই কথা ছিলো যে, ভবিষ্যতে ন্যাটোর কোনো সম্প্রসারন হবে না এবং কাউকে আর সদস্য করাও হবে না।  কিন্তু পরবর্তীতে আরো ৯ বার এর সম্প্রসারন হয়েছে যা রাশিয়ার জন্য বিপদ সংকেত বলে রাশিয়া মনে করে। USSR এর অধীনে করা ওয়ারশো প্যাক্ট বাতিল হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু ন্যাটো রয়ে গেছে যা পরবর্তীতে USSR Bloc এর বাইরে বলকান, মধ্যপ্রাচ্যে, দক্ষিন এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে যেমন কুয়েত, আফগানিস্থান, লিবিয়া, ইরাক, বসনিয়া-হার্জেগোবিনা, সিরিয়া, ইউগোস্লাব, কসোবো ইত্যাদি দেশে ন্যাটো মিলিটারী অপারেশন করেছে। ন্যাটোর প্রধান হেডকোয়ার্টার বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে এবং এর সামরিক সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩৫ লক্ষ (বস্তুত এই ৩১ দেশের সামরিক সদস্য যা, সেটাই ন্যাটোর সংখ্যা)। 

এ যাবতকাল রাশিয়া ন্যাটোর সম্প্রসারনের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার আপত্তি তোলেনি। কিন্তু রাশিয়া সবসময় এটাই বলেছে যে, রাশিয়ার দোড়াগোড়ায় ন্যাটো তাঁর সামরিক জোট স্থাপনে সে কোনোভাবেই মেনে নেবে না মানে “রেড লাইন”। সর্বশেষ যখন ইউক্রেন ন্যাটোর সামরিক জোটে যোগদানের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করে, রাশিয়া তাঁর বিপক্ষে অবস্থান গ্রহন করে। এ ব্যাপারে ন্যাটো এবং তাঁর নেতৃবৃন্দকে রাশিয়া একটা পিসপ্ল্যান দিয়েছিলো। যার মধ্যে রাশিয়াকেও ন্যাটোতে নেয়া হোক এটা ছিলো। কিন্তু ২০২১ সালে সেটা অগ্রহনযোগ্য বলে আমেরিকা তা প্রত্যাখ্যান করে। দেখি পুটিন কি বলেছিলো আর এর উত্তরে ন্যাটোর প্রধান কি বলেছিলোঃ

Putin asked U.S. president Joe Biden for legal guarantees that NATO would not expand eastward or put "weapons systems that threaten us in close vicinity to Russian territory."[134] NATO Secretary-General Jens Stoltenberg replied that "It's only Ukraine and 30 NATO allies that decide when Ukraine is ready to join NATO. Russia has no veto, Russia has no say, and Russia has no right to establish a sphere of influence to try to control their neighbors."[135][136]

গন্ডোগোলটা ঠিক এখানেই। ইউক্রেনকে ইউরোপিয়ান ব্লকে যোগদানে রাশিয়ার কোনো আপত্তি নাই, তাঁর আপত্তি শুধু সামরিক জোটের বিরুদ্ধে। ন্যাটোতে ইউক্রেন যোগ দিতে পারবে না এই অজুহাতেই রাশিয়া ইউক্রেনে স্পেশাল অপারেশন চালায়। সে ইতিহাসে আর গেলাম না।

এখন বড় প্রশ্নটা হচ্ছে-ইউক্রেনকে ন্যাটোর এই ৩১ টা দেশ একযোগে সামরিক, অর্থনইতিক এবং যাবতীয় মিলিটারী ইন্টিলিজেন্স দিয়ে সাহাজ্য করলেও সরাসরি তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অংশ গ্রহন করছে না কেনো? ব্যাপারটা জানা দরকার।

ন্যাটোর গঠনতন্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে-আর্টিক্যাল-৫। এর মাধ্যমে বলা হয় যে, ন্যাটোর যে কোনো একটি সদস্য দেশ যদি কারো দ্বারা মিলিটারিলি আক্রান্ত হয়, তাহলে ন্যাটোর অন্যান্য সমস্ত দেশ একযোগে তাঁর সাপোর্টে যুদ্ধ করবে। এই পরিচ্ছেদটা কাজে লাগিয়েই ৯/১১ এর পর আমেরিকা আফগানিস্থান আক্রমন করেছিলো। আর তাঁর ধারাবাহিকতায় লিবিয়া, সিরিয়াতে তাদের অপারেশন সম্প্রসারন করে। কিন্তু এবার ন্যাটো সেটা করতে পারছে না। কারন দুটু। (১) ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়, তাকে কেউ আক্রমন করলেও ন্যাটোর সদস্যদেশ গুলি একযোগে ইউক্রেনের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধ করতে পারবে না (২) রাশিয়া সর্বোচ্চ নিউকধারী একটি দেশ। রাশিয়ার এক্সিস্ট্যান্ট যদি রাশিয়া থ্রেট মনে করে, তারা যে কোনো সময়ে তাদের নিউক ব্যবহার করার সাংবিধানিক আদেশ রয়েছে। এতে ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ একেবারেই হাতের ট্রিগারের মধ্যে। এটা কেউ শুরু করতে চায় না।

ইউক্রেনের একক সামরিক শক্তিতে ইউক্রেনে যুদ্ধটা এতোদিন চলমান থাকার কথা নয়। এটা এতো সময় দীর্ঘায়ু পাচ্ছে কারন ন্যাটো এবং কালেক্টিভ ওয়েষ্টের ছায়া যুদ্ধের কারনে যেখানে তারা সরাসরি অংশ গ্রহন না করেও যাবতীয় সামরিক, অর্থনইতিক, ইন্টিলিজেন্সের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তারপরেও ইউক্রেন তেমন সাফল্য পাচ্ছে না। তাহলে ন্যাটোর কিংবা পশ্চিমাদের এই প্রক্সিওয়ার কি ইঙ্গিত দেয়?

ইঙ্গিত দেয় যে, ন্যাটো সদস্য দেশগুলি তাদের সর্বাত্তক সাহাজ্য সহযোগীতা করেও যখন তেমন কোনো সফলতা পাচ্ছে না, তাহলে আর্টিক্যাল-৫ এর বিনিময়েও ন্যাটো তাঁর সদস্য দেশ সমুহকে সুরক্ষা দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা। এটা একটা পেপার টাইগার। ন্যাটোর জন্য আলাদা কোনো পার্লামেন্ট নাই, ন্যাটোর জন্য আলাদা কোনো আইন নাই, কোনো এনফোর্সমেন্ট নাই, এবং সদস্যদেশ সমুহের নাগরীক বা সইনিকদেরকে পুরুষ্কার বা শাস্তির কোনো বিধানও নাই। এগুলি কন্ট্রোলড হয় প্রতিটি ন্যাটোভুক্ত দেশের তাদের নিজস্ব আইনের দ্বারা। পুরুটাই যার যার তাঁর তাঁর। রিসোর্স যার যার দেশের তাঁর তাঁর অধীনে থাকে, হোক সেটা মিলিটারী, জনবল কিংবা সামরিক সরঞ্জাম। অস্থায়ীভাবে কোনো একটা অপারেশনের আগে সেগুলি সদস্যভুক্ত দেশ সমুহের রিসোর্স ন্যাটোর অধীনে শুধুমাত্র অপারেশন অর্ডারের জন্য স্থাপিত হয় বটে আবার যে কোনো সময় সেই সদস্যদেশ যখন খুশী তুলেও নিতে পারে। এমন একটা খাপ ছাড়া স্ট্রাকচারের মধ্যে ন্যাটো কমান্ডারগনও সাফল্যের মুখ দেখা খুবই কঠিন।

এই ইউক্রেন যুদ্ধে সব ন্যাটোর সদস্যরা যেভাবে তাদের মিলিটারী স্টকপাইল নিঃশেষ করেছে, এরফলে সদস্য দেশসমুহের বর্তমান অবস্থা এমন যে, তারা নিজেরাই নিজেদের ডিফেন্স মেকানিজমকে দূর্বল করে ফেলেছে। ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশই এখন নিজ শক্তিতে তাদের নিজস্ব হুমকী মোকাবেলায় সমর্থবান নয়। কারো এমুনেশন স্টকপাইল শেষ, কারো মিসাইল সিস্টেম অর্ধেক হয়ে গেছে, কারো এয়ার ফোর্সের যুদ্ধ বিমান শেষ, কারো ট্যাংক শেষ, কারো আবার রিজার্ভও শেষ।

অন্যদিকে হুজুকের বশে পড়ে, কিংবা কাউকে খুশী করার নিমিত্তে রাশিয়ার উপর তেল, গ্যাস, খাদ্যশস্য, ইউরেনিয়াম, ফার্টিলাইজার, লোহা, ডায়মন্ড, এবং আরো কমোডিটি নিষেধাজ্ঞায় দেয়ায় এখন প্রতিটি ইউরোপিয়ান এবং ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশসমুহের আর্থিক মন্দায় এতোটাই জর্জরীত যে, তারা না নিজেরা তাদের ঘাটতি পুরনে সক্ষম, না ঘাটতি ডিফেন্সিভ মেটারিয়েলস পুনরায় রিপ্লেস করতে সক্ষম। রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল এনার্জি সেক্টরের ঘাটতির কারনে ইউরোপের ইন্ডাস্ট্রিজগুলি প্রায় বন্ধের পথে (৪৫% ইন্ডাস্ট্রিজ এখন বন্দ শুধুমাত্র এনার্জি ঘাটতির কারনে)। আর যেগুলি চলমান তারাও বিশ্ব বাজারের কমপিটিশনে টিকতে পারছে না প্রোডাক্ট খরচ বাড়িতির কারনে। রাশিয়ার ফার্টিলাইজারের অভাবে কৃষিজ উৎপাদন প্রায় ঘাটতির দিকে ইত্যাদি। তাদের মুদ্রাস্ফিতি আকাশ চুম্বি, বেকারত্তের হার যে কোনো সময়ের থেকে প্রায় ২৫% বেশী।

এমন অবস্থায় প্রতিটি ইউরোপিয়ান কান্ট্রি (তথা ন্যাটোভুক্ত দেশসমুহ) এবার নিজেদের দেশের উপর ইন্ডিভিজুয়ালী নজর দিচ্ছে। তারা এই উপলব্দিতে আসা শুরু করেছে যে, রাশিয়ার সস্তা কমোডিটি ছাড়া, রাশিয়ার গ্যাস, তেল, ফার্টিলাইজার, লোহা, খাদ্যশস্য ছাড়া ইউরোপ অচল। তাদের রাশিয়াকে দরকার। ন্যাটোর চেয়ে আরো বেশী প্রয়োজন তাদের রাশিয়াকে। তাছাড়া রাশিয়া তো ইউরোপেরই একটা অংশ এবং প্রতিবেশী। তারা এবং তাদের জনগনেরা এটা বুঝা শুরু করেছে যে, রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিতে গিয়ে তারা নিজেরাই এখন শীতে কাবু, খাদ্যে ঘাটতি, বেকারত্তে জর্জরীত, এবং তারা অসহায় হয়ে পড়ছে।

ঠিক এই পরিস্থিতিতে সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তেও সেই ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলিই  যারা রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারাই স্পেশাল অপারেশন শুরু আগে যে পরিমান আমদানী করতো, এখন সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ২৫০ থেকে ৩৫০%।

এই কন্সেপ্ট থেকে আমার কাছে মনে হচ্ছে-ন্যাটো জোটের উপর ন্যাটোর দেশসমুহই দিনকে দিন কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলছে, ধীরে ধীরে সাধারন জনগন ন্যাটোর বিরুদ্ধে এবং রাশিয়ার পক্ষে সোচ্চার হচ্ছে। তাহলে কি এটা ভাবা খুব একটা অসমীচিন হবে যে, খুব দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই ন্যাটো কিংবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সংঘবদ্ধ ক্লাব? অথবা থাকলেও রাশিয়ার সাথে এমন কোনো শর্তাবলীতে আসতে হবে যা ন্যাটোর প্রধান উদ্দেশ্য (রাশিয়াকে দমন) ব্যহত হবে।  

৬/৯/২০২৩-মনুষত্য যেখানে অমানবিক (ফারুক কাহিনী)

আজকের দিনটাকে ভেবে আগামীকালের দিনগুলি কেমন যাবে, ভালো না আরো ভালো নাকি খারাপ থেকে আরো খারাপ, সেটা বিচার করার বা উপলব্ধি করার কোনো বৈজ্ঞানিক ফর্মুলা মানুষের কাছে নাই।  আজকের রবিবারে হয়তো আপনি খিল খিল করে হাসছেন, আগামী রবিবার হয়তো এমন হতে পারে আপনার চোখের পানি সংবরন করার ক্ষমতাও আপনার নাই। কিংবা আজকে শনিবার যতোটা আপনি পেরেসান হয়তো দেখা যাবে আগামী শনিবারটা আপান্র জন্য এতোই মধুর যা তাঁর আগের দিনেও ভাবেন নি। আর এ জন্য আমি একটা কথা সব সময় বিশ্বাস করি জে, ভগবান সব দিনেই আপনাকে হাসিতে যেমন রাখেন না, তেমনি সব দিনেই আপনি কষ্টেও রাখেন না। এটাই নিয়তির সাথে ভগবানের একটা অদৃশ্য খেলা।

মানুষের মাথার উপর যখন কেউ হাত রাখে, তখন সেই হাতটাকে অনেক বড় অবলম্বন মনে হয়। পাতুক বা না পারুক সমস্ত কিছুর সমাধান দিতে, তারপরেও মনে হবে কেউ তো আছে যার কাছে গিয়ে অন্তত চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষনের জন্যে হলেও কষ্টে কান্না করা যায়, অথবা মুচকী হাসা যায়। আর এই সেই ‘কেউ’ এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘কেউ’ হচ্ছে সন্তানের জন্য তাঁর পিতামাতা, স্ত্রীর জন্য দায়িত্বশীল তাঁর স্বামী কিংবা দায়িত্বশীল স্বামীর জন্য কোনো দায়িত্বশীল স্ত্রী কিংবা সন্তান সন্ততিরা।

আজকে এমনই একটা ঘটনার অবতারণা হলো আমার সামনে। ওর নাম ‘ফারুক’। আমারই আপন বোনের ছেলে।

ফারুকের মা আমার আপন বোন শায়েস্তা। বোনদের মধ্যে সে ছিলো দ্বিতীয়। ছোট বেলা থেকেই সে ছিলো খুব মেধাবী। গায়ের রঙ কালো আর খুব জিদ্ধি ছিলো এই শায়েস্তা। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের সংসারে বেশ টানাপোড়েন শুরু হয়। পাঁচ জন বোন, সাথে মা আর আমি এই সদস্যদের নিয়ে আমার বড় ভাই হাবীবুল্লাহ মুটামুটি হিমশিম খাচ্ছে লালন পালনে। তাঁর অবদানের কথা আমরা কেহই অস্বীকার করতে পারবো না।

যাই হোক সেই অবস্থান টা এক সময় আমাদের পরিবর্তন হয়ে আবার কিছুটা থিতু হইলেও আমার বোন শায়েস্তার জীবনে নেমে আসে এক কালো অধ্যায়।

২৪/০৮/২০২৩-প্রিগোজিন সংবাদ-১

 

রাশিয়ার টিভিয়ার রিজিয়নে ভাগনার গ্রুপ প্রধান প্রিগোজিনের  প্রাইভেট জেট ১৩৫ বিজে লিগেসি ৬০০ মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার প্রাক্কালে ক্রাশ করে এবং অনবোর্ড সাতজন আরোহী এবং তিনজন ক্রু মোট ১০ জনই নিহত হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে। এই সাতজন আরোহীর মধ্যে ভাগনার গ্রুপ প্রধানের নাম লিষ্টেড ছিলো। খুব স্বাভাবিক চিন্তায় এটাই ভাবার কথা যে, ভাগনার গ্রুপ চীফ আর বেচে নেই। কিন্তু কোনো রাশিয়ান টিভি নিউজ, কিংবা গোয়েন্দা তথ্যে তাঁর মৃত্যুখবরের সত্যতা নিশ্চিত করছেনা। খবরে আরো প্রকাশ করেছে যে, প্রিগোজিনের দুটু জেট পরপর উড্ডয়ন করেছিলো যার একটির টেইল লেজ আরএ-০২৭৯৫ এবং অন্যটি আরএ-০২৮৭৮। প্রথমটিতেই ভাগনার চীফের নাম প্যাসেঞ্জার লিষ্টে ছিলো যেটা ক্রাশ করেছে কিন্তু ২য়টি সেফ ল্যান্ডিং করেছে। ইতিমধ্যে ১০ জন নিহতের মধ্যে ৮ জনের বডি পাওয়া গেছে আর দুইজনের পাওয়া যায়নি। এই আটজনের মধ্যে প্রিগোজিনের বডি নাই।

উপরের খবরগুলিই এ পর্যন্তই সবসুত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার কিছু এনালাইসিস আছে। যা নিম্নরূপঃ

(ক)       এমন একটা জেট ক্রাশিং এর জলন্ত অগ্নীর বিভিষিকায় কারোরই বডি কিছুটা হলেও অক্ষত থাকতে পারেনা। অন্তত মুখ দেখে তাদেরকে সনাক্ত করার উপায় থাকার কথা না। ডি এন এ টেষ্ট করার মতোও কোনো উপযোগী তথ্য পাওয়া যাওয়ার কথা না অথচ আটজনকে খুব সহজেই শনাক্ত করা গেলো। ব্যাপারটা খুব একটা কনভিন্সিং না আমার কাছে।

(খ)        আজকাল বডি ডাবল করা খুব কঠিন কাজ নয়। বডি ডাবল করে আজকাল বিখ্যাত লোকেরা যে কোনো নামীদামী হোটেলেও তাদের নামে হোটেল বুকিং করে দেখা যায় অন্যত্র অরিজিনাল ব্যক্তি অন্য কাজ করছে। আর এটা তো মাত্র একটা প্রাইভেট জেট, আর প্যাসেঞ্জার লিষ্টে নাম তোলাও খুব একটা আহামরি কিছু না। তাহলে কি এটা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় যে, প্রিগোজিন নিহত হবার ব্যাপারটা একটা নাটক বা ভিন্ন কৌশল? হয়তো বডি ডাবল? হতে পারে প্রিগোজিনের এই নাটক দিয়ে প্রিগোজিন আবার নিরাপদ জীবন যাপনে স্বাভাবিক লাইফ লিড করবেন কিনা।  

(গ)       প্রিগোজিনের জেট ক্রাশ করার সময় সিংগেল হ্যান্ডে ইউক্রেনের একটা আর্মারড ব্রিগেডকে ধংশকারী রাশিয়ার ট্যাংক সদস্যকে মেডাল পুরুষ্কার দিচ্ছিলেন প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং এ যাবত সময় পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনের নিহত হবার ব্যাপারে বা অন্যান্য সদস্যদের নিহত হবার ব্যাপারে কোনো প্রকার মন্তব্য করেন নাই। তিনি পুরুই নীরব। ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত লাগছে।

(ঘ)        প্রিগোজিনের মৃত্যুর সংবাদ এর আগেও অনেকবার খবরের মধ্যে ব্রেকিং নিউজ হিসাবে এসেছিলো। ১ম বার এসেছিলো তাও আবার অফিশিয়ালভাবে ২০১৯ সালে আফ্রিকায়। অতঃপর সে জীবিত অবস্থায় ডনবাসের ফ্রন্টলাইনে আবার যুদ্ধ করেছে।

(ঙ)       যদি প্রিগোজিন আসলেই নিহত হয়ে থাকে যা এখনো কেউ নিশ্চিত করছেনা, তাহলে হতে পারে কি যে, প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রিগোজিনের তথাকথিত অভ্যুথানের কারনে পূর্বের সাধারন ক্ষমা ঘোষনায় লোক দেখানো একটা নাটক করেছিলো কিন্তু এই ক্রাশের মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দেয়াই ছিলো মুল পরিকল্পনার একটা গোপন পর্ব যাতে প্রেসিডেন্টের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন না হয়? কিন্তু এখানে আরো একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায় তখন, আর সেটা হলো নিষ্পত্তিমূলক একটা বিতর্কিত ভুল বুঝাবুঝির অবসানের পর প্রিগোজিনকে সরিয়ে দিয়ে পুতিনের লাভ কতটুকু। অথবা পুতিনের থেকেও কি অন্য কারো আরো বেশী লাভ হয়েছে প্রিগোজিনকে সরিয়ে দিয়ে? এখানে বলে রাখা ভালো যে, প্রিগোজিন সেই অভ্যুথানের পরে রাশিয়াকে গ্রেট এগেইন করার একটা প্রতিশ্রুতি এবং আফ্রিকাকে আরো মুক্ত করার ঘোষনা দিয়েছিলো।   পুতিনের থেকে তাহলে আর কাদের বেশী লাভ হতে পারে প্রিগীজিন নিহত হলে? প্রিগোজিন আফ্রিকার নিজারে কোনো প্রকার হস্থক্ষেপ করুক এটা পশ্চিমা বিশ্ব, ফ্রান্স, ব্রিটিশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কেউ চায়নি বরং তারা প্রিগোজিনের ব্যাপারে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলেন। অন্যদিকে পোল্যান্ড বেলারুশে ভাগনার গ্রুপ এবং তাঁর চীফ প্রিগোজিন অবস্থান করবে এটা জেনে যথেষ্ঠ দুসচিন্তায় ছিলো এবং ইতিমধ্যে পোল্যান্ড সেখানে প্রায় ৩০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে। এটাও হতে পারে যে, রাশিয়া নয়, অন্য কেউ এই স্যাবোটাজ করেছে?

অনেক প্রশ্নের উত্তর আমরা এখুনি হয়তো জানতে পারবো না, হয়তো কখনোই জানতে পারবো না। “সময়” সব সময় এর সঠিক উত্তর জানে।

 

বিশ্ব শান্তিতে থাকুক, যুদ্ধ বন্ধ হোক, সাধারন মানুষের জীবনযাত্রা আরো নিরাপদ হোক, আসলে আমাদের মতো আম জনতা এটাই চায়।

২১/০৮/২০২৩-মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ উধাও

Metaverse Foreign Exchange Group – MTFE

মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ নাকি ১০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে উধাও। আর এর ৯০% গ্রাহক নাকি বাংলাদেশের। সিংগাপুর বা কানাডাভিত্তিক পরিচালিত।

খবরটা শুনে দেশের জন্য খারাপ লাগলেও গ্রাহকদের বেলায় আমার ন্যুনতম খারাপ লাগেনি। কেনো গ্রাহকদের জন্য খারাপ লাগেনি সেটা বলছি।

৬৫০০০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিমাসে ২৪০০০ টাকা মুনাফা দেবে এই মেটাভার্স। এরমানে ৪৫০% হারে। আবারো বলছি- চার শত পঞ্চাস পারসেন্ট হারে। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কোনো ফর্মুলা? আমরা যারা ব্যবসা করি, তার ১০% প্রফিট পেলেই বলি, আলহামদুলিল্লাহ, অনেক প্রফিট। আর মেটাভার্স দিচ্ছে ৪৫০%? কোথায় কোন ব্যাংক, ফাইনান্সিয়াল ইন্সটিটিউট কিংবা শেয়ার মার্কেট কিংবা দাদন ব্যবসায়ী এত হারে প্রফিট দিয়েছে?

এদেশের মানুষকে কেউ বোকা ভাবার কোনো কারন নাই। মানুষ বোকা নয়। মানুষ আসলে লোভী, অলস এবং ভয়ানক চতুর। শর্টখাটে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশ্রমবিহীন অনেক বড়লোক হতে চায়। তারা একবারও ভাবেনা যে, শর্টখাটে পরিশ্রমবিহীন কেউ বড়লোক হতে পারে না।

বড়, মাঝারী কিংবা ছোট ছোট সাকসেস পাওয়া কোম্পানি গুলির দিকে যদি তাকান, দেখবেন, তারা কি পরিমান পরিশ্রম করে এই পর্যায়ে এসছেন। অনেকটা যুদ্ধ করতে হয়েছে।

অথচ, এই যে মেটাভার্সের গ্রাহকরা তারা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে পরিশ্রম ছাড়া মাসে মাসে অনেক অনেক টাকা রোজগার করে ফেলবেন বলে। এই মেটাভার্সের কোনো অফিস এদেশে নাই, কোনো লিয়াজো অফিস নাই, নাই কোনো কর্মচারী। কিছু হায়ার করা খন্ডকালীন কিছু এজেন্ট আছে যাদের কোনো নিয়োগপত্রও নাই।

কাউকে পাচ হাজার টাকা ধার দিলেও তো মানুষ সেই টাকাটা ফেরত পাবে কিনা, আর পেলেও কতদিনে ফেরত পাবে এগুলি নিয়েও ভাবে। আর এই মেটাভার্সে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করলো কেউ এর নিরাপত্তা নিয়ে একবারও ভাবলো না? গরু বেচবে,বাইক বেচবে, জমি বেঁচবে কারন মেটাভার্স ৬৫০০০ টাকায় মাসে ২৪০০০ টাকা লাভ দেবে। যখন মেটাভার্স উধাও, এই গ্রাহকেরা এবার জানেনও না, কার কাছে গিয়ে এই বিনিয়োগ ফেরতের কথা জানাবে।

"যুবক", ইউনিপেটু, ডেস্টিনি, ইভ্যালি এ রকম অনেক অনেকবার প্রতারিত হয়েও এসব মানুষের শিক্ষা হয়নি।

আমি অবাক হচ্ছি না যে, আগামিতেও এমন খবর যে পাবো না।

লোভী গ্রাহক, তুমি ঠকবাই, কারন তুমি কাজ করতে চাও না, তুমি অলস, তুমি সহজে বড়লোক হতে চাও, তুমি অনেক অনেক টাকার মালিক হতে চাও। আর তোমার ইচ্ছা ঠিক থাকলেও তোমার কর্মপন্থা একেবারেই ভুল। তুমি আজীবন ঠকতেই থাকবা।

খারাপ লাগে দেশের জন্য যে, তোমাদের মত লোভী কিছু মানুষের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যায়। সেদিক থেকে যদি বলি, তোমরা লোভীর সাথে সাথে রাষ্ট্রের জন্যেও ক্ষতিকারক।

(কোনো নির্দিষ্ট গ্রাহককে উদ্দেশ্য করে এই লেখা নয়। তবে যারা এমন কাজ ভেবেচিন্তে করেন না, তাদের এই খারাপ পরিনতির জন্য তারাই দায়ী, এটা বিশ্বাস করে ভবিষ্যতে আর পা দেয়ার কথা ভাববেন)

২০/০৮/২০২৩-প্রেডিকশন-২

গতবছর এপ্রিল মাসে আমার একটা লিখায় আমি মন্তব্য করেছিলাম যে, “একটা সময় আসবে যখন ইউক্রেনবাসী প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীকে ইউক্রেনকে ধ্বংসের কারনে কাঠগড়ায় দাড় করাবে। যদি তাকে আর নাও পাওয়া যায়, চলমান সময়ের ইতিহাসের জন্য ইউক্রেন আজীবন আফসোস করবে যে, এতো সুন্দর সাজানো গোছানো একটা রিচ কান্ট্রি এভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিলো শুধুমাত্র একটি মানুষের কারনে। আর সেটা জেলেনেস্কী”। আমরা ইতিহাসকে যেভাবেই লিখি না কেনো, কেউ তো থাকবে যারা আজকের দিনের প্রতিটি প্রেক্ষাপট, ইভেন্ট, ঘটনা মুখেমুখে হলেও এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে স্থানান্তর করবে যেমন সর্বদাই দেখা যায়। সময়ের বিবর্তনে হয়তো কিছুটা ইতিহাস উলটা পাল্টাভবে প্রচারিত হয় বটে কিন্তু অলিখিত ইতিহাসের পাতাই বেশী থাকে লিখিত পাতার চেয়ে। ইতিহাসের অমোঘ নিয়ম হচ্ছে-কলোনিয়ালিজম কোনো না কোনো সময়ে শেষ হয়ই। আফগানিস্থান, ভিয়েতনাম, আফ্রিকার প্রায় সবদেশ, ভারতবর্ষ, আরো শতশত দেশের ইতিহাস এমনই। চুড়ান্ত ফলাফলে আধিপত্যবাহীরা শেষ পর্যন্ত অধিকৃত দেশ ছাড়তে সবসময়ই বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এই আধিপত্য নেয়া এবং ছেড়ে দেয়ার মধ্যে পার হয়ে যায় হয়তো কয়েক প্রজন্ম। ধ্বংস হয়ে যায় কালচার, কৃষ্টি, সমাজব্যবস্থা এবং সাথে দেশের অর্থনীতি।

ইউক্রেনের কোনো প্রয়োজন ছিলো না তাদের নিজের দেশের রাশিয়ান ভাষাভাষি মানুষগুলিকে এতো অত্যাচার করার, প্রয়োজন ছিলো না অযথা ইউরোপিয়ান হবার, প্রয়োজন ছিলো না ন্যাটোর মতো একটা জোটে যুক্ত হয়ে রাশিয়ার মতো একটা ভেটো অধিকারী, নিউক্লিয়ার সমৃদ্ধ দেশের বিরুদ্ধে পা ফেলার। যাদের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে যুদ্ধের দামদা করা হলো সেই তারা কিন্তু বহুদূরের এক শক্তি। আর তারা নিজেরা কিছুতেই আক্রান্ত নয়। নিজের শশ্যক্ষেত জ্বালিয়ে কেউ হিরো হতে চায় না। আর যারা সেটা করে তারা বোকা। কেনো বললাম কথাগুলি জানেন?

কারন, ইউক্রেনের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টের এইডস অলেগ সসকিন তাঁর ইউটিউবে একটা বার্তা রেখেছেন ইউক্রেনবাসী এবং ইউক্রেনের এমপিদের উদ্দেশ্যে। আর সেটা হলো এমন, “প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী একজন অতিশয় অপরিপক্ক (Inadequate) লিডার যে কিনা ইউক্রেনকে সম্পুর্ন ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই যুদ্ধে ইউক্রেনের কোনো খবরই সত্য নয় এবং রিটায়ার্ড কর্নেলদের কোনো এনালাইসিস বা তথ্য সঠিক তো নয়ই বরং পুরুই মিথ্যা। ইউক্রেনের জন্য রাশিয়া যতোটা না বিপদজনক, তাঁর থেকে অনেক বেশী বিপদজনক প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী। ইউক্রেনের মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নাই, দেশের অর্থনীতি শুধু তলানীতেই না বরং ঋণে জর্জরিত হয়ে আরো কয়েক শত বছর পিছিয়ে দিয়ে গেলো এই যুদ্ধ। ফলে এখনই সময় আপ্নারা যারা এমপি আছেন, তারা এবং ইউক্রেনের ভিতর বাহিরে যারা সচেতন জনগন আছেন, তাদের কিছু একটা করা দরকার যাতে অন্তত ইউক্রেন নামক দেশটি পৃথিবীর বুক থেকে একেবারে শেষ না হয়ে যায়”।

আজকে সসকিন এটা বলেছে, হয়তো আগামীকাল সাধারন জনগন নিজেরাই মাঠে নেমে পড়বেন, হয়তো পরশু নিজের দেশের ভিতরেই নিজেদের অপশক্তিকে রুখে দাড়াবার জন্য যুদ্ধে নেমে যেতে পারেন। ডনবাস, খেরশন, জাপোরিজজিয়া, খারকিভ, ওডেসায় তো ইউক্রেনের অধিবাসিই বাস করতো, হয়তো তারা রাশিয়ান ভাষাভাষি বলে ইউক্রেনের প্রশাসন তাদেরকে রিফুজির মতো ব্যবহার করতো। তাদেরকে খতম করে কি ইউক্রেন সে সব এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা সম্ভব যাদের বসবাদ সেখানে শত শত বছর ধরে? এখনো তো তাদের উপরেই আক্রমন হচ্ছে। তাহলে তারা যে ভাষাভাষিই হোক না কেনো, যারা তাদেরকে রক্ষা করতে আসবে তাদেরকেই তো তারা সাপোর্ট করবে। ইউক্রেনকে তো নয়। আর ঠিক এ কারনেই এসব শহরগুলি খুব দ্রুত চলে গেছে ইউক্রেনের হাতের বাইরে এবং রাশিয়ার পক্ষে।

প্রয়োজন ছিলো না এসব মানুষগুলিকে এক সাইড করে অতঃপর নিজেরাই ইউক্রেনবাসী হবার। তারাও জন্মগত কিংবা বাপ দাদার উত্তরসুরী হিসাবে ইউক্রেনেরই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো। কোনো এক সময় ইতিহাসবিদগন এটাই বলবে যে, প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী সঠিকপথে ছিলো না। আজকে যে ইউরোপ তাঁর প্রতিবেশী রাশিয়াকে শত্রু মনে করছে, হয়তো খুব শীঘ্রই সেই একই ইউরোপ হয়তো রাশিয়ার দ্বারপ্রান্তে বসবাস করে তাদের ছাড়া চলবেই না। ফলে একটা সময় খুব বেশী দূরে নয় যে, এই ইউরোপ আবার রাশিয়ার সাথেই একাত্ত হবে, একাত্ত হতে বাধ্য হবে। প্রতিবেশীকে বেশিদিন একঘরে করে রাখা যায় না। তারমধ্যে যে প্রতিবেশী এতো ক্ষমতাবান। 

১৯/০৮/২০২৩-আগের কিছু প্রেডিকশনের বাস্তবতা

রাজনীতিতে যার যার সার্থ তাঁরতাঁর। এখানে সার্থ ভাগাভাগির কোনো গল্প থাকে না। শেষ অবধি প্রেডিকশনটাই ঠিক হলো। প্রেডিকশন করেছিলাম যে, একোয়াসের সামরীক বাহিনী যদি নিজারে ইন্টারভেনশন করে, তাহলে শুধুমাত্র নাইজেরিয়াই থাকবে সেই ফোর্সের মধ্যে, অন্য কেউ থাকার কথা না আর থাকলেও খুবই কম সদস্য দিয়ে একটা টোকেন পার্টিসিপেশন হবে। ২য় প্রেডিকশন ছিলো, আমেরিকা এবং ফ্রান্সের মধ্যে সম্পর্ক ফাটল দেখা যাবে। ৩য় প্রেডিকশন ছিলো-নিজারে একোয়াসের মিলিটারী ইন্টারভেনশন এর পরিবর্তে ডিপ্লোম্যাটিক সমাধান হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট বাজোমের ক্ষমতায় ফিরে আসা আর কখনোই হবে না।

এবার সর্বশেষ খবরগুলি দেখিঃ

(১) একোয়াসের স্ট্যান্ড বাই ফোর্সের মধ্যে ২৫ হাজার সামরিক সদস্যের মধ্যে নাইজেরিয়ার সাড়ে ২৪ হাজার প্লাস, আর সেনেগালের মাত্র কয়েকজন টোকেন পার্টিসিপেশন। অর্থাৎ নাইজেরিয়া একাই একোয়াস সম্মিলিত বাহিনীর হিসাবে রিপ্রেজেন্ট করে প্রয়োজনে নিজারে ইন্টারভেনশনের জন্য প্রস্তুত। যা নাইজেরিয়ার সাধারন জনগন এর বিপক্ষে। ফলে একোয়াস এখনই ইন্টারভেনশন নয়, আগে ডিপ্লোম্যাটিক সমাধান, তারপর ইন্টারভেনশন (যদি লাগে)

(২) আফ্রিকান ইউনিয়নের দেশগুলিতে খাদ্য, সার এবং অন্যান্য কমোডিটি সবচেয়ে বেশী সাহাজ্য হিসাবে দেয় রাশিয়া। রাশিয়া নিজারে কোনো সামরীক ইন্টারভেনশনের বিপক্ষে। ফলে আফ্রিকান ইউনিয়ন নিজারে যে কোনো সামরীক ইন্টারভেনশনের বিপক্ষে। আফ্রিকান ইউনিয়ন একোয়াস থেকে ডিসোসিয়েট করেছে।

(৩) আমেরিকার মিলিটারী বেজগুলি নিজারে বহাল রাখার নিমিত্তে নিজারের সামরীক ক্যু কে আমেরিকা এখনো ক্যু হিসাবে আখ্যায়িত করে নাই। প্রয়োজনে তারা মিলিটারী সরকারের সাথে কাজ করতে এবং বেজগুলি রি-লোকেশন করতে ইচ্ছুক।

(৪) ফ্রান্সের মিলিটারী বেজগুলি গুটিয়ে নেয়ার নির্দেশ নিজারের সামরিক সরকার আগেই দিয়েছে। তাই ফ্রান্স চায় একোয়াস নিজারে ইন্টারভেনশন করুক। কিন্তু আমেরিকার এহেনো এক তরফা নিজারের সামরিক সরকরকে সাপোর্ট করার মাধ্যমে ফ্রান্সের সাথে পশ্চিমাদের মধ্যে সম্পর্কের ফাটল বা নাখোস। তাতে ইউক্রেন যুদ্ধে একটা বিরোপ প্রভাব ফেলবে যেহেতু ফ্রান্স ন্যাটো/ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যুক্ত থেকে আমেরিকার প্রক্সি ওয়ারে ফ্রান্স যথেষ্ট সাপোর্ট দিচ্ছিলো।

১৬/৮/২০২৩-বিশ্ব রাজনীতিতে একটা অসম সমঝোতা

নিজারের (Niger) অভ্যুথান বিশ্ব রাজনীতিতে একটা অসম সমঝোতার সৃষ্টি করছে বলে আমার ধারনা। ব্যাপারটা এমন যেনো কোনো এক সুতার বান্ডেলের মতো অগোছালোভাবে পেচিয়ে জট পাকিয়েছে। অনেক হিসাব কিতাব এখন আর সহজ সরলীকরনের মধ্যে থাকছে না। তাহলে একটু দেখিঃ

(ক)      নিজারে (Niger) ফ্রান্স এবং আমেরিকার সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিসহ তাদের বেশ কিছু মিলিটারী বেজ রয়েছে। আমেরিকার রয়েছে দুটূ (বেজ ১০১, এবং এয়ারবেজ ২০১)। বর্তমানে নিজার (Niger) ফ্রান্সের সমস্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ তাদের যাবতীয় মিলিটারী বেজকে অপসারনের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আমেরিকার সামরিক উপস্থিতি অথবা তাদের সামরিক বেজগুলির ব্যাপারে নিজার (Niger) আপাতত কিছুই বলেনি। এখানে উল্লেখ্য যে, সামরিক উপস্থিতি বা সামরিক এই বেজগুলি প্রধানত ওয়েষ্ট আফ্রিকান দেশসমুহের সাথে মিলে ইউএস, ফ্রান্স, ইউএন এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশসমুহ সাহেল রিজিয়নে ইসলামিক এক্সট্রিমিষ্টদেরকে দমনের লক্ষ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম, সার্ভিলেন্স এবং রেকি মিশনসহ যাবতীয় মিলিটারী ট্রেনিং, সামরিক এয়ারক্রাফট লিফটিং এবং সামরিক অভিযান পরিচালনা করে।

(খ)       পার্শবর্তী দেশ চাঁদ, মালি, গিনিয়া, বারকিনো ফাসুতে মিলিটারী সরকার গঠনের পর সেখানে ফ্রান্স, আমেরিকা, ইউএন এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশসমুহের সামরিক উপস্থিতি বাদ হয়ে যাওয়ায় এবার নিজারেও (Niger) সেই একই ধাচের সরকার আরম্ভ হওয়ায় ধরে নেয়া যাচ্ছে যে, সর্বশেষ দেশ, অর্থাৎ নিজার (Niger) থেকেও যদি তাদের এই সামরিক উপস্থিতি বা বেজগুলি গুটিয়ে আনতে হয়, তাহলে অত্র অঞ্চলে তাদের আর কোনো প্রভাব খাটানোর মত কোনো ফোর্স অবশিষ্ট রইলো না। এই অবস্থায় যদি আমেরিকা নিজারের (Niger) মিলিটারী অভ্যুথানকে অভ্যুথান হিসাবে স্বীকৃতি দেয় তাহলে পশ্চিমাদেরকেও উক্ত অঞ্চল থেকে সমস্ত বেজসহ সামরিক বাহিনীকে গুটিয়ে নিতে হবে। এতে ওয়েষ্ট আফ্রিকায় বা সাহেল রিজিয়নকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাদের পরিচালিত অপারেশন গুলি আর করা সম্ভব হবে না। 

(গ)       ঠিক এই অবস্থায় আমেরিকা একটি কঠিন পরিস্থির সুম্মুক্ষিন হয়েছে বলে আমার ধারনা। যদি অভ্যুথানকে সমর্থন দেয়, তাহলে তাদের সাথে মিলিটারী টু মিলিটারী চুক্তিসমুহ বাতিল করতেই হবে এবং সর্বপ্রকার এইডস বা সাহাজ্য সহযোগিতা দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। আর এই এইডস বা সাহাজ্য সহযোগীতা দেয়া থেকে বিরত থাকলেই নিজার (Niger) আর আমেরিকাকে আলাদা করে দেখার কোনো অবকাশ নাই, ফ্রান্সের মতোই তাদেরকেও নিজার (Niger) ছাড়তে নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। আবার যদি অভ্যুথান কে অভ্যুথান হিসাবে স্বীকৃতি না দেয় তাহলে আমেরিকাকে এইডস বা সাহজ্য সহযোগীতা প্রবাহ চালিয়ে যেতে হবে যা কিনা আমেরিকার আইনের পরিপন্থি। অন্যদিকে আবার এই এইডস বা সাহাজ্য সহযোগীতা প্রবাহ বন্ধ না করলে আমেরিকার সাথে ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্ক খারাপের দিকে যাবে। তাতে ইউক্রেন যুদ্ধ একটা বেমালুম প্রহসনে পরিনত হবে। কারন রাশিয়াকে আটকাতে সবচেয়ে বেশী প্রক্সি ওয়ার পশ্চিমা দেশগুলিই চালাচ্ছে এবং সে মোতাবেক আমেরিকাই সবাইকে চাপের মধ্যে রেখেছে যেনো ইউক্রেনে সবাই পর্যাপ্ত পরিমানে সাপোর্ট দেয়। যদিও আমি কোনো যুদ্ধের পক্ষেই না। হোক সেটা নিজারে (Niger) বা ইউক্রেনে।

এখানে আরো একটা দুশ্চিন্তার কারন রয়েছে আমেরিকার। আর সেটা হলো, নিজার (Niger) আসলে ইসলামিক এক্সট্রিমিষ্টদের কোনো আখড়া নয় কিন্তু রাশিয়ার সমর্থনে ভাগনার গ্রুপ অবশ্যই একটা বড় ধরনের হুমকী যারা রাশিয়ার এজেন্ডা নিয়ে অপারেশন পরিচালনা করে। ভাগনার গ্রুপ অনেক আগে থেকেই মালি, বারকিনো ফুসু, চাঁদ, কিংবা সাধারনভাবে যদি বলি তারা ওয়েষ্ট আফ্রিকায় অপারেশন করে। ফলে রাশিয়ার প্রভাব এই এলাকায় দমনের জন্যে হলেও তাদের মিলিটারী বেজ, সামরিক উপস্থিতি এবং অন্যান্য মিলিটারী কার্যাবলীসহ অপারেশন চালিয়ে নেয়া দরকার।  

ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষকে (একদিকে ফ্রান্স, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে হাতে রাখা, আবার অন্য দিকে নিজারের (Niger) মিলিটারী অভ্যুথানকেও সমর্থন করা) সামাল দেয়ার থেকে আগে এটা নিশ্চিত করতে চায় নিজা (Niger) আসলে কি চায় সেটা জানা। আর এই কারনেই সবার ইন্টারেস্টকে একদিকে সরিয়ে আমেরিকার নিজস্ব ইন্টারেষ্টকে প্রাধান্য দিয়ে আমেরিকা ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ডকে নিজারে (Niger) আলাপের জন্য পাঠিয়েছেন। সে নিজারের (Niger) জান্তাদের সাথে আলাপ করতে গেলেও কতটা সফল হয়েছে এ ব্যাপারে না ন্যুল্যান্ড না তাঁর প্রধান এন্টনী ব্লিংকেন কোনো মন্তব্য করেছেন। তবে তথাকথিত রীতি অনুযায়ী আপাতত নিজারে (Niger) আমেরিকার এইডসকে স্থগিত (বাতিল নয় কিন্তু) করেছে এবং ‘এটা একটা খন্ডকালীন সামরিক অপারেশন হিসাবে চালিয়ে দিয়েছেন কিন্তু অভ্যুথান হয়েছে বলেন নাই।

ফ্রান্স এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাই খুবই ক্ষুদ্ধ। 

১৬/০৮/২০২৩-কিছু প্রেডিকশন (নিজার)

সবখানেই আমার মতো কিছু বোকা লোক আছে-আমি একা না। নিজার (Niger) অভ্যুথানের বিরুদ্ধে হয় বেশী আবেগে অথবা বোকার মতো অথবা কাউকে খুশী করার জন্য নিজারে (Niger) অভ্যথানের ৩য় দিনে একোয়াস (ECOWAS) এমন একটা হুমকী দিলো যে, হয় নিজারকে (Niger) পূর্ববর্তী সরকার প্রধান মোহাম্মাদ বাজোমকে স্থলাভিষিক্ত করতে হবে, আর তা না হলে একোয়াস (ECOWAS) তাঁর মিলিটারী শক্তি প্রয়োগ করে হলেও বাজোমকে আবার গদিতে বসাবে। এই আবেগীয় হুমকী আমার কাছে কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য মনে হয়নি। কেনো হয়নি সেটাই বলছি।

একোয়াসের (ECOWAS) মধ্যে মোট দেশ ১৫টি। এরা হচ্ছে বেনিন, বারকিনো ফুসু, কাবোভার্ডে, আইভরি কোষ্ট, গাম্বিয়া, ঘানা, গিনিয়া, গিনিয়া বাস্যু, লাইবেরিয়া, মালি, নিজার , সেনেগাল, সিয়েরা লিয়ন এবং টোগো।

একোয়াসের (ECOWAS) এই ১৫ টি দেশের মোট সামরিক জনবল (প্যারা মিলিটারীসহ) হলো ৩৭৭২০০ জন। এর মধ্যে নাইজেরিয়া একাই হলো ২৩০০০০ জন। আর বাকী ১৪৭২০০ হচ্ছে বাকী ১৪ টি দেশের।

একোয়াসের (ECOWAS) ১৫টি দেশের মধ্যে মোট ৬টি দেশ নিজারের (Niger) অভ্যুথানকে সমর্থন করে। ফলে নিশ্চয় তারা একোয়াসের (ECOWAS) হয়ে নিজারে (Niger) মিলিটারী ইন্টারভেনশনে যাবে না। এই ৬টি দেশের সামরিক বাহিনীর জনবল হলো ৮৫০০০জন। এরমানে একোয়াসের (ECOWAS) মেম্বার নাইজেরিয়া ছাড়া মাত্র ৬২২০০ জন অংশগ্রহন করতে পারবে। আর নাইজেরিয়াসহ পারবে ২৯২০০০ জন। এই সংখাটা হচ্ছে যদি ১০০% লোক অংশ নেয়। কিন্তু কোনো মিলিটারী ইন্টারভেনশনে কোনো দেশের সমস্ত সামরিক বাহিনীকে জড়ায় না, মাত্র ৩০% থেকে ৩৫% হয়তো অংশ গ্রহন করবে। সেক্ষেত্রে নাইজেরিয়ার থেকে অংশ নিতে হবে প্রায় ৮৫০০০ আর বাকি ২০-২৫ হাজার অংশ নিবে বাকী দেশগুলি থেকে।

এখানে আরেকটা মজার কাহিনী হয়েছে যে, আফ্রিকান ইউনিয়ন কোনোভাবেই একোয়াসের (ECOWAS) এই মিলিটারী ইন্টারভেনশনে সম্মতি দিচ্ছে না। আফ্রিকা ইউনিয়নের মধ্যে আগের ৬টি দেশ (যারা অভ্যুথানকে সমর্থন করেছে) ছাড়া আছে আরো ৫টি দেশ যারা একোয়াসের (ECOWAS) মিলিটারী ইন্টারভেনশনে যোগ না দেয়ার কথা। তারা হচ্ছে-বেনিন, আইভরি কোষ্ট, সেনেগাল, সিয়েরা লিয়ন, এবং টোগো। অর্থাৎ ৬টি দেশ অভ্যুথানকে সমর্থন করেছে, এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের মেম্বার হিসাবে আরো ৫টি দেশ অংশ গ্রহনে সম্মতি দিচ্ছে না। সুতরাং একোয়াসের (ECOWAS) মধ্যে থাকছে মাত্র ৪টি দেশ, তাঁর মধ্যে নাইজেরিয়া অন্যতম। এরমানে শুধুমাত্র নাইজেরিয়াই একমাত্র দেশ যা নিজারের (Niger) বিরুদ্ধে ইন্টারভেনশন করতে হবে একোয়াসের (ECOWAS) পক্ষ থেকে। অন্য দেশগুলি হচ্ছে টোকেন পার্টিসিপেশনের মতো। War between Nigeria VS Niger+

এদিকে নাইজেরিয়ার সাধারন জনগন ইন্টারভেনশনের বিপক্ষে। তারা কিছুতেই নিজারের (Niger) বিরুদ্ধে নাইজেরিয়াকে ইন্টারভেনশনে যেতে দিতে চায় না। তাহলে একোয়াস (ECOWAS) চেয়ারম্যানের এমন একটা নন-ক্যালকুলেটিভ হুমকী দেয়া কি ঠিক হয়েছে? এখন একোয়াস (ECOWAS) চেয়ারম্যান কি করবে সেটাই বুঝতেছে না। খালি এববার এইটা কয়, আবার ওইটা কয়। গালে হাত দিয়া বসে থাকে আর ভাবে-কি করলাম? একোয়াস (ECOWAS) চেয়ারম্যানের বউও মনে ক্ষেপা এখন।

তাঁর উচিত ছিলো ডিপ্লোমেটিক সলিউশনের কথা আগে বলা।

সব জায়গাতেই কিছু আমার মতো বোকা পাবলিক থাকে, না বুইজ্জাই লাফায়। যেমন অনেকে কয়, ইউক্রেন নিয়া নাকি আমিও লাফাই। আপ্নারাও কন দেখি-ইউক্রেন কি আমার দাদার দেশ না আমি ওখানে জমি কিনে বাড়ী বানাইছি?

১৬/০৮/২০২৩-আমার গিন্নির সংক্ষিপ্ত কথা  

আমার গিন্নী শিক্ষক, তাও আবার যেনো তেনো শিক্ষক নন, পুরা অর্থনীতির ডিপার্ট্মেন্টাল হেড। এখন তিনি ভাইস প্রিন্সিপ্যাল।

কোথায় যেনো কোন এক মনিষী বলিয়াছিলেন, কর্মক্ষেত্র অনুপাতে নাকি মানুষের অনেক কিছু জীনগত বেশ পরিবর্তন আসে। যেমন সব ডাক্তাররাই ভাবেন তাদের আশেপাশের সবাই রোগী, সব উকিলরা কাউকে পেলেই কিছু উকালতি বুদ্ধি দিয়া দেন, আবার কেউ পুলিশে চাকুরী করিলে নাকি সবাইকে সন্দেহই করিতে থাকেন, হোক সেটা তাহাদের বউ কিংবা স্বামী অথবা পাড়াপ্রতিবেশী। তো শিক্ষক যাহারা তাহারাও ব্যতিক্রম নন। সবাইকে ছাত্রই মনে করেন। আমার বউ টিচার হিসাবে আমি ছাত্র হিসাবেই নিজেকে মনে করি। উপদেশ তিনি যাহাই আমাকে দেন, আমি শিরধার্য মনে কইরা শান্তশিষ্ট সুবোধ বালকের মতো তা পালনে চেষ্টা করি। এতে লাভ দুইটা। সংসারে অশান্তি হয় না আবার আমার মাথাও ঠান্ডা থাকে।

কিন্তু টিচারদের বড় সমস্যা হচ্ছে-উনারা সংক্ষিপ্ত কথা সংক্ষিপ্ত আকারে কইতে পারেন না। কথার মধ্যে ভূমিকা থাকিবে, যাহা বলিবেন তাহার ব্যাকগ্রাউন্ড ইতিহাস থাকিবে, তারপর মুলকথায় আসিলেও পথিমধ্যে আবার কোনো ইতিহাসের কথা আসিয়া পড়িলে সেইটাতেও ছাড় দিতে নারাজ। উদাহরণ দেই-

আমার গিন্নি কয়েকদিন আগে আমাকে বিমানের একটা টিকেট হোয়াটস আপে পাঠাইয়াছিলেন। পরে বিস্তারীত দেখিবো দেখিবো করিয়া আর সেইটা ভালোমত দেখা হয় নাই। তো গতকাল রাতে খাওয়ার সময় হটাত বলিয়া উঠিল-আমি তো পরশু যাচ্ছি, জানোতো?

আকাশ হইতে পড়িলাম, মুখে পড়োটা ছিলো, চিবাইতেছিলাম, তাহাও বন্ধ হইয়া গেলো, তাহার দিকে অসহায়ের মতো তাকাইয়া বলিলাম, কোথায় যাইতেছো?

তাহার মুখের অভিব্যক্তি দেখিয়া বুঝিলাম, কোথাও আমার এমন কোনো স্মৃতিশক্তি হারাইয়াছে যাহাতে এখুনি বুঝি ১৪ স্কেলের একটা ভূমিকম্প অথবা রুমকম্প হইবার সম্ভাবনা। বুঝিয়াই বলিলাম, উহ হ্যা, তো কিভাবে যাচ্ছো?

বুঝিলাম, তাহাতেও আমার ডজ করিবার উপায় ঠিক ছিলো না। বাহানা করিলেই আমি ধরা খাই, এটা আবারো প্রমানিত। যাক, ভূমিকম্প বা রুম কম্প কিছুই হইলো না।

তিনি বলিতে থাকিলেন, তোমাকে না আমি টিকেটের কপি পাঠাইছিলাম!!

বলিলাম, ওরে, ভুলেই তো গেছিলাম। পড়েছিলাম তো......

তারপর তিনি বলিতে লাগিলেন, তাহার এক কলিগের মেয়ে কিংবা ছেলের বিয়া, তাহাকে নেমন্তন্ন করিয়াছে, যেতে হইবে সেই সুদুর বগুড়া। বিমানে যাইবেন তিনি। তো আমি আবার জিজ্ঞেস করিলাম, কবে আসিবা?

গিন্নীর সোজা উত্তর-তোমাকে না টিকেট পাঠাইছিলাম, টিকেটে লেখা ছিলো না?

বললাম, হ্যা তাই তো। টিকেটে তো লেখাই ছিলো। কি যে অবস্থা, আজকাল সব ভুলে যাই।

তারপর আবার আমার গিন্নীর কথা শুরু হইলো। তিনি কিন্তু কবে আসিবেন, সেইটার উত্তর দিচ্ছেন।

এই ধরো আগামীকাল বিকালে আমাদের ফ্লাইট। তাই কলেজ থেকে একটু আগেই ফিরিবো। এরআগে কলেজের সবকাজ সমাপ্ত করিবো। অনেক কাপড় চোপড় নেবো না, বাসায় এসে গোটা কিছু কাপড় নেবো। ড্রাইভারকে আসতে বলেছি একটু আগেভাগে যেনো এয়ারপোর্টে যেতে আবার বিলম্ব না হয়। যেই জ্যাম আজকাল। কেনো যে এতো জ্যাম বুঝতে পারি না। মানুষগুলি নিজেরা নিজেরাই জ্যাম বাধায়। কোনো আক্কেল নাই। হটাত করিয়া এদিক থেকে রিক্সা, ওদিক থেকে “পাঠাও”, আবার কেউ কেউ সিরিয়াল ভেংগে ওভারটেক করতে গিয়া রাস্তার মুখেই জ্যাম বাধাইয়া দেয়। বাজে সব ড্রাইভারের দল। যাক গে, বাসা থেকে রওয়ানা হবো, আপাকেও বলে রেখেছি যেনো উনিও আগেভাগে রওয়ানা দেয়। তা না হলে ওনার জন্য আবার আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।

বললাম, আরে ফিরবা কবে?

গিন্নী বল্লো- এতো অধইর্য কেন? আগে তো যাইই। গেলামই তো না।

বললাম, তাই তো তুমি তো এখনো এয়ারপোর্টেই গেলা না। তারপর?

তারপর গিন্নী বল্লো-বিমানজার্নী প্রায় ১ ঘন্টা। সন্ধ্যার আগেই নেমে যাবো। নেমেই ওখানে আপার হাজবেন্ড গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবেন। তোমাকে তো বলাই হয় নাই, আপার হাজবেন্ড অমুক জায়গায় চাকুরী করতেন। ওরে বাবা, অনেক ভালো চাকুরী। তাঁর চাকুরীর সময় উনি অনেক মানুষের উপকার করেছেন। খুব অমায়িক মানুষ, আপার সাথে খুবই ভালো সম্পর্ক। খুব সংসারী মানুষ। তাঁকে তাদের গ্রামের মানুষ অনেক শ্রধ্যা করে। এখোনো উনি এই সেই করেন (সংক্ষেপে বললাম আর কি)

বললাম, আরে ভাই, তুমি ফিরবা কবে সেটা তো বললে না।

উফ তোমার সাথে কথা বলতে গেলে এতো অধইর্য হইয়া যাও যে, আসল কথাই বলা হয় না।

বললাম- আরে আসল কথা তো জানতেই চাচ্ছি- ফিরবা কবে?

এদিকে হটাত করে তাঁর মোবাইলে কার যেনো কল বাজিয়া উঠিলো। তিনি কল ধরিলেন, সেই আপা যাহাদের বাসায় তাহার নেমন্তন্ন। এখন আপার সাথেই তিনি কথা বলছেন। আমি বসেই রইলাম কবে তিনি ফিরবেন সেটা জানার জন্য।

আমি টেলিভিশনে রাতের খবর দেখি, ফলে খবরের টাইম প্রায় ছুইছুই। আমি খবর দেখিলাম, রাতে ঘুমাইলাম, পরের দিন অফিস করিলাম, এইমাত্র বাসায় ফিরিলাম। আমার গিন্নী আগামীকাল বগুড়ায় যাইবেন। একদিন পার হয়ে গেলো, আমি এখনো অপেক্ষায় আছি তিনি কবে ফিরবেন সেটা এখনো জানিতে পারি নাই।

 

১৫/০৮/২০২৩-ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ফাটল

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে একটা প্রচ্ছন্ন ক্ষোভের বহির্প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। তাঁর কিছু নমুনা যদি বলি-

(১)       রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয়ার মুল কারন ছিলো যেনো রাশিয়ার তেল, গ্যাস, খাদ্য সামগ্রীসহ অন্যান্য মৌলিক উপাদান রপ্তানী থেকে আয় ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয়ের একটা সোর্স না হয়ে উঠে এবং আরেকটা কারন ছিলো যাতে রাশিয়ার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেংগে যায়। ব্যাপারটা অনেকটা বুমেরাং হয়েছে বলে এখন বিশ্বনেতাদের ধারনা। কারন কি? কারনটা দৃশ্যমান, রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল, গ্যাস, খাদ্য সামগ্রী আমদানী না করায় ইউরোপ নিজেই এখন ডি-ইন্ডাস্ট্রিলাইজেশন, ডি-ডলারাইজেশনের এর শিকার। প্রতিটি ইউরোপিয়ান দেশে এখন জীবনমাত্রা এতোটাই শোচনীয় যে, তারা আর আগের মতো লাইফ লিড করতে পারছে না। জনগন বিরক্ত তাদের শাসকদের উপর। প্রাথমিকভাবে যে আকারে এবং যে গতিতে ইউক্রেন উদ্ভাস্থদেরকে ইউরোপিয়ানরা গ্রহন করেছিলো থাকার জায়গা দিয়ে খাবারের খরচ, হাত খরচ, স্কুলিং ইত্যাদি দিয়ে, এখন তারা এটাকে একটা বোঝা মনে করছে। সেই আগের আবেগ কিংবা সহায়তার মনমানসিকতা তারা আর ধরে রাখতে পারছে না। তারা নিজেরাই এখন বিরক্ত ইউক্রেনের উদ্ভাস্তদের নিয়ে, শাসকদের কমিটমেন্ট নিয়ে।

(২)       ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিধর অর্থনৈতিক দেশ জার্মানীর প্রায় ৪৫% এর উপরে ইন্ডাস্ট্রিজসমুহ বন্ধ শুধুমাত্র গ্যাস এবং তেলের সংকটে। শুধু তাইই নয়, হিটিং ব্যবস্থার আমুল সংকটে দেশটি। দেশের এনার্জি মিনিষ্টার এবং বিরোধী দল এই মুহুর্তে যে বিষয়টির উপর সবচেয়ে বেশী জনমত তুলে ধরছেন তা হলো-পশ্চিমাদের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে জার্মানি এখন তেল গ্যাসের অভাবে তাদের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি ইন্ডাস্ট্রিজসমুহ যেমন ক্ষতিগ্রস্থ তেমনি সাধারন জনগনের অবস্থা চরম খারাপ। ঠিক এই মুহুর্তে অচীরেই রাশিয়ার উপর সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে আবারো তাদের কাছ থেকে আগের মতো সব পন্য যেনো আমদানী করা হয় সেই দাবী উঠছে। এখানে বলে রাখা উত্তম যে, জার্মানী ৪০% নির্ভরশীল রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের উপর। জার্মানীর উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়েই উঠেছে রাশিয়ার সস্তা কমোডিটির উপরে। তারমধ্যে নর্ডস্ট্রিম-১, ২ উভয়ই এখন অকেজো হবার কারনে অদূর ভবিষ্যতেই রাশিয়া থেকে এতো সহজে আর আগের মতো তেল বা গ্যাস আমদানী করা সম্ভব না। জার্মানীর এহেনো খারাপ পরিনতির কারন হিসাবে সাধারন জনগন, বিরোধী দল, সরকারী আমলা এবং বেশ কিছু প্রতাপশালী মন্ত্রী মিনিষ্টার খোদ পশ্চিমাদের দায়ী করছেন যে, পশ্চিমারা এক ঢিলে দুই পাখী (জার্মানীর অর্থনীতিকে ধংশ এবং রাশিয়াকে পিউনিটিভ শাস্তি) মেরেছে। নর্ড স্ট্রীম নষ্টে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে জার্মানীর আর সবচেয়ে লাভ হয়েছে পশ্চিমাদের। জার্মানীর উলফ শলাজ নিজেও এখন চাচ্ছেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধ যেভাবে হোক বন্ধ হোক। দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা এখন জার্মানীর।

(৩)      এবার আসি ফ্রান্সের ব্যাপারে। নিজারে (Niger) ফ্রান্স এবং আমেরিকার উভয়ের প্রায় দুই হাজারের বেশী করে সামরিক বাহিনীর সদস্য আছে এবং বেশ অনেকগুলি সামরিক ঘাটিও আছে তাদের। মজার ব্যাপার হলো নিজার (Niger) শুধুমাত্র ফ্রান্সের বাহিনীকে সেখান থেকে তাড়ানোর বিক্ষোভ করছে, সাথে অভ্যুথান। আমেরিকানদের বিরুদ্ধে নয়। ফ্রান্স নিজার (Niger) থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলন করে তাঁর দেশের পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি সচল রাখতো। সবার সাথে তাল মিলিয়ে ফ্রান্স রাশিয়ার গ্যাস, তেল ইত্যাদি বয়কট করলেও তাদের বিকল্প ব্যবস্থা চালূ ছিলো এই ইউরেনিয়াম চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলি দিয়ে। এবার নিজার (Niger) সেই ইউরেনিয়াম এবং গোল্ড উত্তোলন এবং রপ্তানী পুরুপুরি বন্ধ করায় ফ্রান্সের বিদ্যুতায়ন এখন প্রশ্নের সম্মুক্ষে। ঠিক এই মুহুর্তে হয়তো যথেষ্ঠ পরিমান ইউরেনিয়াম মজুত আছে বলে ইম্প্যাক্টটা বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু এটার প্রভাব হয়তো বছরখানেক পর অনুভুত হবে। ফ্রান্স তাঁর বেজগুলি এবং সামরিক উপস্থিতি ছাড়তে নারাজ। তাই তারা একোয়াসের (ECOWAS) সাথে সুর মিলিয়ে ক্যু সরকারকে মিলিটারিলি উৎখাত করার সিদ্ধান্তে অটল। একোয়াসও (ECOWAS) চেয়েছিলো নিজারে (NIGER) কাউন্টার অফেন্সিভের মাধ্যমে পূর্বর্তী প্রেসিডেন্ট বাজোমকে আবার স্থলাভিষিক্ত করে। কিন্তু একয়াসের (ECOWAS) সামনে দুটো বড় প্রশ্ন এসে হাজির হয়েছে

(ক) রাশিয়া নিজারে (Niger) কোনো প্রকার মিলিটারী অভিযানের পক্ষে না। আর রাশিয়ার এই অবস্থানে একোয়াস (ECOWAS) নিজেরাও ক্রান্তিলগ্নে। কারন আফ্রিকার দেশসমুহে রাশিয়া যে পরিমান অস্ত্র, খাদ্যশস্য এবং ইকোনোমিক্যাল সাপোর্ট দেয়, যদি রাশিয়ার কথার বাইরে কেউ যায়, সেটা রাশিয়া হয়তো বন্ধ করে দিতে পারে। আফ্রিকার দেশ গুলি এম্নিতেই গরীব, তারমধ্যে রাশিয়ার এই সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে তাদেরকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। রাশিয়াই একমাত্র দেশ যে আফ্রিকায় বিনামুল্যে এই যুদ্ধের মধ্যেও আফ্রিকার খাদ্য ঘাটতির কারনে ৯০ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য সরবরাহ করেছে, ২৪ বিলিয়ন ডলার সমপরিমান ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে এবং বিনামুল্যে আরো ৫০ মিলিয়ন টন সার দেয়ার কথা বলেছে। অন্যদিকে পশ্চিমারা বা ইউরোপ বা ফ্রান্স কিংবা তাদের মিত্র দেশগুলি সাহাজ্য তো দূরের কথা তারা মালি, গিনি, বারকুনো ফুসু, নিজার, চাঁদ, এবং আরো কিছু আফ্রিকান দেশসমুহে নিষেধাজ্ঞা আরোপন করেছে। ফলে আফ্রিকান দেশগুলি স্বাভাবিক কারনেই রাশিয়ার কথার বাইরে যেতে পারার কথা না। একোয়াসে আফ্রিকার মোট ১৫টি দেশ। এরমধ্যে কয়েকটিতে চলছে মিলিটারী শাসন। তারা হচ্ছে গিনি, নিজার, মালি, বারকিনো ফুসু, গিনিয়া বিসাও, লাইবেরিয়া সবেমাত্র বেরিয়ে গেছে। একোয়াসের মধ্যে বাকী যে কয়টা দেশ আছে, তাদের সামরিক ক্ষমতাও খুবই নগন্য। সক্ষমতার দিক দিয়ে একোয়াস মিলিটারী কোনো দেশের জন্যই কোনো হুমকী না।

(খ)       ফ্রান্স যেহেতু মনে প্রানে চাচ্ছে যে, একোয়াস (ECOWAS) মিলিটারী অপারেশন করুক নিজারে (Niger) কারন সেক্ষেত্রে ফ্রান্স একোয়াসের বাহানায় সেইই মিলিটারী অপারেশনটা করবে যাতে ফ্রান্সের দোষ না হয়, দোষ হয় একোয়াসের। কিন্তু একোয়াস অনেক ভেবেচিন্তে দেখছে এটা করা ওদের সমুচীন হবেনা। অন্যদিকে ফ্রান্স এটাও ভেবেছিলো যে, তাদের ইউরোপিয়ান মিত্র হিসাবে আমেরিকা অবশ্যই নিজারের ( Niger)ব্যাপারে জোরালো কিছু করবে। কিন্তু আমেরিকা সেটা না করে তারা যেটা করেছে সেটা হলোঃ আমেরিকা থেকে প্রতিনিধি হিসাবে ন্যুল্যান্ডকে নিজারে (Niger) পাঠিয়েছে অভ্যুথানের কমান্ডারদের সাথে এক মিটিং করার জন্য। তাঁর বক্তব্য ছিলো নিজার (Niger) যাতে ভাগনার নামক ভাড়াটে বাহিনীর কোনো সহায়তা না নেয় এবং প্রয়োজনে আমেরিকা অভ্যুথানকারীদের সাথে সমঝোতা করতেও ইচ্ছুক। অভ্যুথানের কমান্ডারদের সাথে ন্যুল্যান্ডের এমন বৈঠকে ফ্রান্স খুব ক্ষুদ্ধ এবং কিছুতেই খুশী না তারা। তারা মনে করছে-আমেরিকা ঠিক সেই কাজটাই করেছে যেটা ফ্রান্সের সার্থের বিপরীত। তারা অবশ্য এটাও বলেছে যে, আমেরিকার সামরিক বেজগুলি নিজারে (Niger) রাখার সার্থেই ন্যুল্যান্ডের এই ভিজিট।

তাহলে কি দাড়ালো? একদিকে জার্মানী নাখোশ, অন্যদিকে ফ্রান্স নাখোস। ইতালী তো আগে থেকেই নাখোস, তুরষ্কের ব্যাপারটা আমরা সবাই জানি। সে না ন্যাটোর ঘরে, না ন্যাটোর বাইরে, না সে ইউরোপে না সে এশিয়ায়। হাংগেরী তো বহু আগে থেকেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের গলার কাটা। পোল্যান্ড গত কয়েকমাস যাবত ইউক্রেনের উপর ভীষন ক্ষিপ্ত। কারন পোল্যান্ড তাঁর নিজের দেশের কৃষকদের বাচানোর জন্য ইউক্রেনের শস্য আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় পোল্যান্ডের সাথে ইউক্রেনের সম্পর্ক এখন চরম খারাপ। একদিকে পোল্যান্ড বেলারুশকে নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, অন্যদিকে ভাগনার গ্রুপ যে কোনো মুহুর্তে পোল্যান্ডে প্রবেশ করার পায়তারা করছে। ফলে চরমপন্থি পোল্যান্ড এখন নিজের ঘর সামলাবে নাকি ইউরোপিয়ান জোটের সার্থে সে ইউক্রেনকে সাপোর্ট করবে নাকি পশ্চিমাদেরকে খুশি করবে, সেটা নিয়েই সন্দিহান। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আরেক শক্তিধর যুক্তরাজ্য তো আরো ক্ষেপা এই ইউক্রেনের উপরে যার প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের এক কথায় যে, ইউরোপ বা ন্যাটো কোনো আমাজন নয় যে ইউক্রেন যখন যা চাইবে তাকে তখনি সেটা দিতে হবে।

উপরের কয়েকটা বিশ্লেষণে যেটা খালী চোখেই ধরা পড়ে সেটা হচ্ছে যে, ন্যাটো বা ইউরোপিয়ান জোট ধীরে ধীরে নেতিয়ে যাচ্ছে এবং এদের সদস্যদের মধ্যে বিশ্বাসের একটা ফাটলের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই ফাকে পুরু দুনিয়ায় একটা বিশাল পরিবর্তনের হাওয়া বয়ে বেড়াচ্ছে- মাল্টিপোলারিটি, ডি-ডলারাইজেশন, ব্রিক্সের উত্থান এবং চীন-ভারত-রাশিয়ার সাথে ইরান-সৌদি-সিরিয়া- ব্রাজিল- সাউথ আফ্রিকা ইত্যাদি মিলে একটা ভিন্ন জোট।

আমার কাছে যেটা মনে হয়, একসময় এই পুরু ইউরোপিয়ান জোট তাদের নিজেদের সার্থেই আবার রাশিয়ার সাথে মিলতে বাধ্য হবে। আর যদি সেটাই হয়, তাহলে ন্যাটোর পরিবর্তে এমন আরেক জোট তৈরী হবে যেটা শুধুমাত্র নতুন ইউরোপের যেখানে আধিপত্য করবে চীন, রাশিয়া এবং আফ্রিকা যদিও চীন বা আফ্রিকা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কেউ না।
সময় হয়তো বলে দেবে।

১২/০৮/২০২৩-মিটুলের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পোষ্টিং

আমার গিন্নী সরকারি বাঙলা কলেজ, মীরপুরে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে কর্মরত। গিন্নীরা চাকুরী করলে স্বামীদের কি হাল হয় সেটা যারা আমার মতো চাকুরীজীবি গিন্নীর স্বামী তারা বুঝতে পারবেন। মাঝে মাঝেই ব্যাচলর মনে হয় কারন ছুটির দিনের দুপুরের খাবারের সময়েও গিন্নীর কর্মস্থলের জরুরী কাজ নিয়ে তিনি মহাব্যস্ত থাকেন। একাই তখন খেতে হয়। আলসেমী করে সকালে একটু ঘুম থেকে দেরী করে উঠলে দেখবেন, গিন্নী নাই, অফিসে চলে গেছেন। আবার আমি অফিস থেকে একটু আগে এলেও দেখি গিন্নী তখনো কলেজের কাজেই ব্যস্ত। উপায় নাই। দেশের কল্যান বলে কথা। স্বামীর কল্যানের জন্য তো আর দেশের অমঙ্গল করা যাবেনা।

এরমধ্যে গিন্নী আবার বিভাগীয় প্রধানের কাজের বাইরে পর পর দুইবার বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক। কলিগরাও বে রশিক। স্বামীর কথা একবারো ভাবেন না। এতো ভোট দিয়ে তাকে জয়ী করাবেন তো স্বামীর কি হাল হয় সেটা কি একবারো ভাববে না? যাই হোক, পর পর দুইবারই তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদন্ধি থেকে ৪০% ভোটে এগিয়ে জয়ী হন। তো বুঝতেই পারেন, বেচারা স্বামীর কি অবস্থা। আমিও ভেবে নেই যে, জগত সংসারে স্বামীদের ছাড়াও এসব কালজয়ী গিন্নীদের আরো অনেক জরুরী কাজ আছে। সুতরাং হে স্বামীগণ, হয় নীরবে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখো, অথবা কৃষকের মতো বাগানে কাজ করো না হয় যদি জার্মান শেফার্ড থাকে তাকে নিয়ে একটু ব্যস্ত থাকো। অভিযোগ কইরা কোনো ফায়দা নাই। নারীরা এখন অনেক প্রতাপ্সহালী। বহু দেশের রাষ্ট্র প্রধান এখন মহিলা।

আমার গিন্নী এবার আবার কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এতো চাপা কষতের মধ্যে মনটা ভরে গেলো। সুখের খবর তো অবশ্যই। তবে এতে যে আমার আরো কিছু সময় ছাড় দিতে হবে সেটা তাই আর ধর্তব্যের মধ্যে নিচ্ছি না। আগে রাতের পরোটা খাইতাম ধরেন ৯ টায়, এখন না হয় খাবো ১০ টায়, এই তো। জীবনে ১ ঘন্টা আর কি আসে যায়। বিয়ের আগে তো এ রকম ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু তাহার চেহাড়া মোবারক দেখার জন্য রাস্তায়, ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে অযথাই সময় নষ্ট করেছি। তাঁর তুলনায় এই প্রতিদিন এক ঘন্টা লস তো কোন ব্যালেন্স শীটেই পড়ে না। অবশ্য সম্পর্কটা এখন মাঝে মাঝে ভাই বোনের মতই হইয়া গেছে। স্বামী হিসাবে রাগ না কইরা ভাই হিসাবেই না হয় ক্ষমা কইরা দিলাম। কি বলেন?

যাক গে, যা বলছিলাম, গিন্নী বাঙলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল হিসাবে নিয়োগ পেয়েছে। খবরটা অনেক গর্বের যেমন, তেমনি আনন্দেরও। তাই সেই সুবাদে বাঙলা কলেজের বেশ কিছু গুনীজন, শিক্ষক এবং কলিগদের নিয়ে গত শুক্রবার একটা ট্রিট দিলেন আমার গিন্নী। (কানে কানে বলে রাখি-বিলটা আবার আমার কার্ডেই গেছে)। আমরাও তাঁর এই সাফল্যের জন্য অতি আনন্দের সাথে তাঁকে একটা সংবর্ধনা দেই। তারই কিছু বিশেষ মুহুর্তের ছবি।

ভালো থেকো আমার গিন্নী, তোমার সাফল্যে আমি সব সময় গর্বিত। তুমি নিশ্চয় আরো উন্নতি করবে এটাই আমার দোয়া।

১০/০৮/২০২৩-লোকাল এম পি মহোদয়ের বাসায়

আমি রাজনীতিবিমুখ একজন মানুষ। ফলে রাজনীতিবিদদের সাথে খুব একটা মেলামেশা হয়না বা করা হয়না। আমার অনেক রাজনীতিক বন্ধুদের বা কাছের মানুষকে আমি শুধুমাত্র বন্ধু, আত্তীয় কিংবা অভিভাবক ইত্যাদি হিসাবেই গন্য করি। আমার পাশেই আমাদের লোকাল এমপি মহোদয় জনাব বীর মুক্তিযীদ্ধা আগা খান মিন্টুও এমন একজন ব্যক্তিত্ব। থাকেন আমার বাসার অদূরেই। অত্যান্ত সজ্জন, মিশুক এবং সিম্পল একজন অভিভাবকসুলভ মানুষ। তিনি যতোটা না রাজনীতিক, তার থেকে অনেক বেশী ফাদারলি। তার আরেকটি পরিচয়- তিনি ছিলেন Active Freedom Fighter. ফলে অনেক না জানা ইতিহাসের তিনি এখনো চলমান বইয়ের মত।

কিছুদিন আগে মহোদয়ের সাথে চা খাওয়ার জন্য মহোদয়ের বাসায় দেখা করতে গেলে তার ফাদারলি এটিচুডের কারনেই তিনি অতিশয় আদর এবং সম্মানের সাথে আমাদের আপ্যায়ন করলেন। আমি মহোদয়ের এমন আথিথেয়িতায় যারপর নাই কৃতজ্ঞ। দীর্ঘায়ু কামনা করি মহোদয়ের।

আমার সাথে ছিল আমারই বাল্যবন্ধু লোকাল কমিশনার মুজিব সারোয়ার মাসুম। আমার এই বাল্য বন্ধুটিও একজন ভাল মানুষ। সবার প্রতি আমার ভালোবাসা।

২৪/০৭/২০২৩-পৃথিবীটা শুধু মানুষের না

মানুষ সম্ভবত তার বিলুপ্তির সীমায় পদার্পন করেছে ইতিমধ্যে। ভয়ংকর কথা বলে মনে হলেও এটা প্রাকৃতিক নিয়মের একটা চলমান অংশ। এর আগেও এই বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে, আর সেটা একাবার নয়, পরপর পাচবার।

বিজ্ঞানীরা বলেন আমাদের এই পৃথিবীর বয়স প্রায় সাড়ে চার বিলিয়নের মতো। এই সাড়ে চার বিলিয়ন বছরে পৃথিবীর প্রায় ৭৫% প্রানী সমুহের বিলুপ্ত হয়েছে বেশ কয়েকবার যাকে বলা হয় “মাস এক্সিঙ্কশন”। মাস এক্সিঙ্কশন তাকেই বলে যখন কোনো স্থান থেকে ৭৫% প্রজাতী (গাছপালা, জীবজন্তু, কিংবা অদৃশ্য কোনো প্রানীসকলসহ অনেক অনুজীব) মাস এক্সিঙ্কশন হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে। যার মধ্যে রয়েছে ডাইনোসর এবং আরো অনেক প্রানী।

এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে, ন্যাচারাল প্রক্রিয়ায় সমস্ত জীবজন্তু, গাছপালা, জীবানু, অনুজীব সবাই একটা জীবন মরনের মধ্যে থাকে। কিছু বিলুপ্ত হয়, আবার কিছু নতুন জন্ম হয়। এভাবেই ন্যাচারাল ব্যালেন্স হয়। কিন্তু গত ৪০/৫০ বছর যাবত এই বিলুপ্তির ঘাটতি যেমন ম্যামাল, ব্যাক্টেরিয়া, প্ল্যান্টস, অনুজীব ইত্যাদি ন্যাচারাল প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না, হচ্ছে আর্টিফিশিয়ালভাবে, আর সেটা হচ্ছে প্রায় দশ হাজার গুন গতিতে।

তাহলে এর কারন কি?

এর একটাই কারন। মানুষ।

মানুষ মনে করে এই পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য, অন্য কারো জন্যে নয়। কিন্তু এটা শতভাগ ভুল। পৃথিবীর মাটির গভীরে যে ব্যাক্টেরিয়া আছে তার থেকে শুরু করে আকাশে যারা ভেসে বেড়ায়, সমুদ্রের তলদেশে যেসব নাম না জানা প্রানীকুল অনুজীব ইত্যাদি আছে, সবার জন্য এই পৃথিবী। কিন্তু মানুষ সেটা ভাবে না। ফলে এই মুহুর্তে মানুষ একা পৃথিবীর ৭০% ল্যান্ড এবং ব্যবহারযোগ্য পানী ব্যবহার করছে। বাকী ৩০% ল্যান্ড আর ৩০% ফ্রেস পানি বাকী যতো গাছপালা, উদ্ভিদ, অন্যান্য প্রানীসকলসহ ব্যাক্টেরিয়া, জীবানু, নাম না জানা প্রানীদের জন্য রয়েছে যা নিতান্ততই অপ্রতুল।

আর এই ঘটনাটা ঘটতে শুরু করেছে ১৯৭০ সালের পর থেকে। ১৯৭০ সাল কেনো বলছি? কারন

১৯৭০ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে যে, আমাদের পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিলো প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন। ফলে এই সাড়ে তিন বিলিয়ন মানুষের জন্য যে বসবাস যোগ্য ল্যান্ড এবং ফ্রেস পানি দরকার ছিলো তা ১৯৭০ সালেই তার কোটা পরিপুর্ন হয়ে যায়। ফলে ১৯৭০ সালের পর যে হারে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তাতে ইউজেবল ল্যান্ড এবং ফ্রেস পানির দখলও মানুষের বেড়েছে, বেড়েছে আর্বানাইজেশন, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেন ইত্যাদি। অর্থাৎ অন্যান্য প্রানী, জীববজন্তু, গাছপালা এদের জন্য পর্যাপ্ত ল্যান্ড বা ফ্রেস পানির ভাগ কমে যাচ্ছে এবং গেছে। এই পপুলেশন বোম্ব এখন ধীরে ধীরে আরো বেড়েই চলছে বিধায় মানুষ ছাড়া অন্যান্য জীবকুলের একটা বিলুপ্তি চোখে ধরা পড়ছে। উদাহরন দেই- 

আগে মানুষ ন্যাচারাল পরিবেশ ভোগ করতো, তাদের বাড়ির পাশে গাছপালা থাকতো, সেই গাছপালায় অনেক পাখীর বাসা থাকতো, বাড়ির পাশে ঝোপ জংগলে হয়তো পিপড়া, সাপ, কিংবা মাটির নীচে অনেক কেচো, শামুক, জীবানু ব্যাক্টেরিয়া, আরো ইত্যাদির থাকার ব্যাপারটা চোখে পড়ত যা এখন কংক্রিটের কারনে, মানুষের আর্বানাইজেশনের কারনে, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারনে ধীরে ধীরে এসব জীবজন্তুর আর থাকার কোনো জায়গা রইলো না। বাড়ির পাশে হয়তো ১০০ গজ দূরে যে সাপটা বাস করতো তার আর কোথাও থাকার জায়গা নাই, বংশবৃদ্ধির কোনো উপায় নাই, পাখীরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে যেতে এক সময় তারাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, অনেক প্রজাতীকে এখন আর চোখেও দেখা যায় না। অনেক জলজ মাছের এখন শুধু নাম পাওয়া যায়, বাস্তবে তারা প্রায় উধাও হয়ে গেছে।

১৯৭০ সালে যেখানে মানুষ ছিলো সাড়ে তিন বিলিয়ন, এখন সেটা দাড়িয়েছে আট বিলিয়নে। অর্থাৎ প্রায় তিনগুন। হাজার হাজার বছরে যতোটা না এই বৃদ্ধির হার বেড়েছিলো, সেটা এই ১৯৭০ এর পর থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক গুন বেশী, প্রায় দশ হাজার গুনের থেকেও বেশী। এর ফলে যেমন বনের অনেক প্রকারের ভাল্লুক, সমুদ্রের স্যালমন ফিস, কিংবা ছোট ছোট প্রজাতী, বনের বহু প্রজাতীর গাছপালা এখন আর চোখে পড়ে না। তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র একটা অঞ্চলের কথা বলি-ল্যাটিন আমেরিকার এমাজন ফরেষ্ট যাকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়, সেখানে এখন ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারনে হাজার হাজার বনাঞ্চল, নদীপথ সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাহলে এই অঞ্চলের প্রজাতিগুলি গেলো কই? জলজ প্রানীগুলি গেলো কই? সেটা এখন আর ফুসফুস হিসাবে কাজ করছে না।

সমদ্রের কথা যদি বলি-দেখবেন পৃথিবীর ডাম্পিং এরিয়া এখন সমুদ্র। এই ডাম্পিং এর কারনে সেখানকার জলজ প্রানীদেরকে আমরা প্রায় গলা টীপে মেরে ফেলছি, তাদের বাসস্থানকে এতোটাই অসহনীয় করে ফেলছি যে, তাদের নিজেরা যেমন বেচে থাকতে পারছে না, নতুন প্রজন্মও আর জন্ম নিচ্ছে না। আগে যেখানে এক লক্ষ জলজ প্রানী নতুন প্রজন্ম এর জন্ম দিতো সেখানে হয়তো এখন দশ হাজার জলজ প্রানীর বসবাস এবং তাদের দ্বারা জন্মদানের প্রজন্মও কমে যাচ্ছে সেই একই হারে। আর এই নতুন প্রজন্মও আবার খুব দ্রুত পরিবেশ বিপর্য্যের কারনে আরেক প্রজন্ম দেয়ার আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এবং এক সময় সবাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

অথচ পৃথিবীটা ওদেরও। শুধু মানুষের জন্য এই পৃথিবীটা না। এই পৃথিবী অনুজীব থেকে শুরু করে সমস্ত জীব জন্তু, গাছ পালা, সবার। খুব বেশী সময় দূরে নয় যেখানে আমরা সবাই আমাদের কারনেই বিলুপ্ত হবো যাকে আমরা মাস এক্সিঙ্কশন বলছি।

২৬/০৭/২০২৩-ফেসবুক একটা বিনোদনের জায়গা

ফেসবুক একটা শুধু বিনোদনের জায়গায়ই নয়, এখানে অনেক মানুষকে ব্যবসা না করেও ব্যবসায়িক নিটিগিটি না বুঝেও অনেক দারুন দারুন ব্যবসায়িক তত্ত্ব দিতে দেখি, অনেক ইন্টেলেকচুয়াল রাজনীতির মারপ্যাচ না বুঝেও বেশ ধারালো বক্তব্য দিতে দেখি, ফরেন পলিসির সাথে দেশীয় পলিসির যোগ সুত্র না বুঝেও বেশ এমন এমন যুক্তি দেন যেনো ওনাদেরকে যদি বলি একটা পলিসি দেন, তখন আবার দিতে নারাজ। যদি ব্যবসা করতে বলি, সেটাও করতে নারাজ, যদি রাজনীতিতে এসে হাল ধরতে বলি, সেখানেও নারাজ।

রিজার্ভ কি, এলসি কি, ব্যাক টু ব্যাক কি, অফসোর ব্যাংকিং কি, ইউপাস এলসি, এপিআর, এপিওয়াই, ক্রেডিট রেটিং কেনো কিভাবে করা হয়, জিএসপি কি ইত্যাদি যদি জিজ্ঞেস করি, কেমন জানি এড়িয়ে যান। খুব সহজ কিছু যদি জিজ্ঞেস করি যে, প্রাইম রেট, ফিক্সড রেট, পিরিয়ডিক রেট, ইন্টারেষ্ট রেট, ইন্ডেক্সড রেট এদের মধ্যে তফাত কি কিংবা  মুলস্ফিতি কি, কেনো হয়, ইম্পোর্টে ফরেন কারেন্সীর ভূমিকা কি, এক্সপোর্টে ব্যবসায়ীদের কি করনীয় কিংবা ইম্পোর্টারের সাথে এক্সপোর্টারের এলসির মধ্যে কি ধরনের ইফেক্ট করে ফরেন কারেন্সী, যখন এগুলি নিয়ে একটু আলাপ করতে চাই, তখন জানি কেমন কেমন করে।

কাউকে অসম্মান করছি না, যে কোনো বিশয়ে একটু জ্ঞান আহরন করে যদি কেউ এতোটুকু পার্টিসিপেট করতে পারেন, তাহলে অনেক মন্তব্য পড়েও আমরা কিছু শিখতে পারতাম। অবশ্য এগুলিও বিনোদন। আমি সেভাবেই নেই। ওনারা না থাকলে ফেসবুক এতো আনন্দময় হতো না।

২৫/০৭/২০২৩-২য় বিশ্বযুদ্ধ আসলে শুরু হয়েছিলো ১ম

২য় বিশ্বযুদ্ধ আসলে শুরু হয়েছিলো ১ম বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে করা ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে। কেউ যদি নিউট্রালি নিজেকে প্রশ্ন করে যে, একটা বিশ্বযুদ্ধ জার্মানী করলো, সে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হলো, আবার সে জেনেবুঝে আরেকটা বিশ্বযুদ্ধে কেনো লিপ্ত হলো? এর উত্তর খুব সোজা-১ম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান তো প্রায় মৃতই হয়ে পড়েছিল এবং সে জীবিত থেকেও মরা। খাবার নাই, সামরিক বাহিনী নাই, তাদের অরিজিনাল ভুখন্ড নাই, সবার থেকে একঘরে, অন্যদিকে এতো পরিমান যুদ্ধ-ক্ষতির কিস্তি পরিশোধ, মিত্রবাহিনীর দ্বারা নিগৃহীত ইত্যাদির ফলে তারা আসলে বেচে ছিলো না। তাই হয় আরেকটা বিশ্বযুদ্ধ করে বাচি, আর তানা হলে মরেই তো আছি। এটাই ছিলো সেই মনের ভিতরের ক্ষোভ যে কারনে জার্মানী আরেকটা যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য হয়েছিলো। তাহলে এখন আসি, কিসের কারনে জার্মানীর ভিতরে এতো ক্ষোভ ছিলো। তাহলে কি ছিলো সেই ভার্সাই? চুক্তিতে কি ছিলো? চলুন একটু দেখি আসিঃ

(ক)      জার্মানীকে ১৩% ভুখন্ড ছাড় দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আর সেগুলি হচ্ছেঃ

  • Alsace Lorraine (France)
  • Eupen and Malmedy (Belgium)
  • North Schleswig (Denmark)
  • Hulschin (Czechoslovakia)
  • West Prussia, Posen and Upper Silesia (Poland)
  • Saar, Danzig and Memel (League of Nations)
  • All gains from the Treaty of Brest Litovsk (Russia)
  • All colonies (League of Nations – given to France and Britain as ‘mandates’)

(খ)       যুদ্ধের ক্ষতি হিসাবে জার্মানীকে ৩২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপুরন দিতে বাধ্য করা হয়, যা ২০২১ সালের হিসাবে হবে ২৮৪ বিলিয়ন পাউন্ড। জার্মানীকে এই ক্ষতিপুরন দিতে মোট সময় লেগেছে ৯২ বছর।

(গ)       ৭টি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন, তিনটি ক্যাভালরি ডিভিশন নিয়ে মাত্র অনুর্ধ ১ লক্ষের বেশি জনবল রাখার সীমিতকরন করা হয়। কোনো প্রকারের কনস্ক্রিপশন করা নিষিদ্ধ করা হয়। জার্মানীর সামরিক বাহিনিতে কোনো জেনারেল পদবীতে উন্নিত করা যাবে না। কোনো প্রকারের মিলিটারী ড্রিল, এক্সারসাইজ হোক সেটা প্রাক্টিক্যাল বা থিউরিটিক্যাল করা যাবে না।

 (ঘ)    নেভীর লোক সংখ্যা ১৫০০০ এর অধিক হতে পারবে না। ৬টি মাত্র ব্যাটলশীপ রেখে বাকী সব ব্যাটলশিপ হয় অন্য দেশের অধীনে রিজার্ভে রাখতে হবে অথবা সেগুলি শুধুমাত্র কমার্শিয়াল ব্যবহারের জন্য জার্মানী রাখতে পারবে।

(চ)      জার্মানীর বিমান বাহিনীকে পুরু নিষিদ্ধ ঘোষনা করে দেয়া হয় এবং জার্মানী কোনো প্রকার বিমান বাহিনী থাকবে না। কোনো প্রকার এয়ার ক্রাফট বা যুদ্ধ ম্যাটেরিয়াল নিজেরা তৈরী করতে পারবে না।

(ছ)       জার্মানীর কয়লারখনি সমৃদ্ধ এলাকা The Saar সেটা ফ্রান্সকে ১৫ বছরের জন্য হস্তান্তর করা হয়।

(জ)       রেইনল্যান্ড এবং এর আশেপাশে ৩১ মেইল পুর্বের দিকে নদী পর্যন্ত ডি-মিলিটারাইজড জোন হিসাবে ঘোষনা করা হয় এবং এই ডি-মিলিটারাইজড এলাকায় জার্মানীর কোনো প্রকার কনস্ট্রাক্সন নিষিদ্ধ করা হয়। শুধু তাইই নয়, উক্ত অঞ্চলে এর পরের ১৫ বছর অবধি মিত্র বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।

(ঝ)       অষ্ট্রিয়ার সাথে একত্রিত হওয়া জার্মানীর নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছিলো।

(ট)       নবগঠিত লীগ অফ ন্যাশন্সের মধ্যে জার্মানীকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়।

 (ঠ)     জার্মানীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যুদ্ধের সব ব্লেইম নিতে বাধ্য করা হয় এবং জার্মানী এই যুদ্ধাপরাধির ব্লেইম একা নিতে নারাজ ছিলো।

১৯২৩ সালের অক্টোবরে এসে জার্মানীর অর্থনীতি এমন একটা স্তরে পৌঁছেছিলো যে, সারা জার্মানিতে দুর্ভিক্ষ এবং ইনফ্লেশনে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলো। নভেম্বর ১৯২৩ তে দেখা যায় যে, জার্মানীর ৪২ বিলিয়ন মার্কের দাম হয় মাত্র আমেরিকান ১ সেন্টের সমান। অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারনে গনমানুষের জন্য লঙ্গরখানা স্থাপন করে শুধুমাত্র গনখিচুরির মতো খাবার সার্ভ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিলো না। ভার্সাই চুক্তির এরুপ শর্তের কারনে পুরু জার্মান জাতী রাগান্নিত ছিলো এবং সেই কমন রাগ আর ক্ষোভ থেকে মানুষের মধ্যে একটা ইউনিটি তৈরী হয়েছিলো। আর ঠিক এই সময়ে হিটলার জার্মানীর চ্যান্সেলর হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করে।

হিটলার দায়িত্ব গ্রহন করার পরেই সে ভার্সাই চুক্তির এসব যুদ্ধের ক্ষতিপুরনের অর্থ দিতে অসম্মতি জানায় এবং বন্ধ করে দেয়। হিটলারের এমন আচরনে জার্মানবাসী যেনো সর্গের কোনো দেবতা হাজির হয়েছে এমন জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার এই জনপ্রিয়তায় এমন একটা পর্যায়ে হিটলারকে নিয়ে গিয়েছিলো যে, হিটলার যা চেয়েছে সেটাই তার জনগন সতস্ফুর্ত ভাবে আমল করেছে। হিটলার তার দেশবাশীকে এটা বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলো যে, ভার্সাই চুক্তির কোনো কিছুই তারা মানে না এবং তার কোনো কিছুই তারা পে করবে না। এবং তার সাথে জার্মানী যেসব জায়গা, সম্পত্তি, হারিয়েছিলো, তা আবার পুনরোদ্ধার করা হবে। হিটলার জার্মানীকে রি-মিলিটারাইজড করা শুরু করে।

জার্মানীর প্রতিটি সর্বস্তরের মানুষ তাদের দুর্ভিক্ষ অর্থনৈতিক সংকট, মানবেতর জীবন এবং বিশ্ব দরবারে এরুপ মান হানীকর লজ্জার কারনে হিটলারের পিছনে সারিবদ্ধ হয়েছিলো পরবর্তী যুদ্ধের জন্য। আর সেটা ২য় বিশ্বযুদ্ধ। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের প্রাক্বালে জার্মানীর ভুমিতে দাঁড়িয়ে জার্মানীর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটা যুদ্ধকে সমর্থন না করা সম্ভব ছিলো নয়।

১৯/০৭/২০২৩-রাশিয়া কেনো ন্যাটোতে জয়েন করছে না?

অনেকেই প্রশ্ন করে আসলেই কি রাশিয়া বা সোভিয়েট ইউনিয়ন কখনো ন্যাটোতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলো? আর যদি তাইই হয়, তাহলে রাশিয়াকে ন্যাটোর সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হলো না কেনো? রাশিয়া যদি ন্যাটোর সদস্য হতো, তাহলে কিন্তু এরুপ কোল্ডওয়ার, ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা পশ্চিমাদের সাথে রাশিয়ার এমন বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করতো না। রাশিয়া ন্যাটোতে যোগ দিলে সারা  বিশ্বের কাছে ব্যাপারটা কিভাবে দেখা হতো, আমার আজকের লেখাটি এসব প্রশ্ন নিয়েই।

হ্যা, রাশিয়া একবার নয়, পরপর কয়েকবার ন্যাটোতে যোগ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলো।

প্রথমবার রাশিয়া এপ্লাই করেছিলো ১৯৫৩ সালে স্ট্যালিন মারা যাওয়ার এক বছর পর এবং ১৯৫৫ সালে ওয়ার্শো প্যাক্ট তৈরী হবার পূর্বে। সেই প্রোপোজালের নাম ছিলো “Molotov’s Proposal and Memorundum-1954”। উক্ত প্রোপোজাল ন্যাটোতে পাঠানো হয় মার্চ ১৯৫৪ সালে। কিন্তু তখন আমেরিকা ক্রেমলিনের এই ইচ্ছাকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়ে এই ব্যাপারে কোনো আলাপ আলোচনাই করা চলে না বলে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছিলো। মলোটোভ ম্যামোরান্ডামের ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো যে, ইউরোপের কালেক্টিভ নিরাপত্তা কিভাবে রক্ষা করা যায় সেটা। আর এই প্রস্তাবে রাশিয়া যেটা প্রস্তাব করেছিলো তা হলোঃ

(ক)      ওয়েষ্টার্নদের বিকল্প হিসাবে শুধুমাত্র ইউরোপের সবদেশ মিলে কিভাবে ইউরোপের নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করা যায় সেটা। আর সেটা মলোটোভা প্রস্তাবে নামকরন করা হয় “ইউরোপিয়ান ডিফেন্স কমিউনিটি”। ন্যাটো হয় বিলুপ্ত হবে অথবা তাদের কাজ হবে শুধুমাত্র ডিফেন্সীভ মানে টেররিজমের বিরুদ্ধে, কিংবা লোকাল পুলিশের ভূমিকায়।

(খ)       পশ্চিম জার্মানকে পুনরায় পুর্ব জার্মানীর সাথে কিভাবে একত্রিত করা যায় এবং জার্মানীকে আবারো রি-আর্মড করে তাকে ইউরোপের মধ্যে একটা শক্তিশালী দেশ হিসাবে গন্য করা যায়। 

(গ)       কোল্ড ওয়ার কিভাবে নিউট্রেলাইজ করা যায়।

(ঘ)       এই মলোটভা প্রোপোজালে রাশিয়া আমেরিকাকে ইউরোপের অংশ নয় বিধায় তাকে বাদ দিয়েছিলো এবং শুধুমাত্র ইউরোপের দেশ সমুহ মিলে “ইউরোপিয়ান ডিফেন্স কমিউনিটি” করার প্রস্তাব ছিলো এবং অন্যদিকে চীনকে রাখা হয়েছিলো অবজার্ভার স্ট্যাটাসে।

এই প্রস্তাবে আমেরিকা মনে করেছিলো যে, তারা ইউরোপ থেকে বহিষ্কার হয়ে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে ন্যাটোকে খর্ব করা হচ্ছে যেখানে ন্যাটোর সমস্ত ক্ষমতার চাবিকাঠি আমেরিকার কাছে। ফলে আমেরিকা চায় নাই, মলোটভা প্রোপজাল কিংবা ইউরোপিয়ান ডিফেন্স কমিউনিটি বাস্তব হোক এবং ন্যাটোর খবরদারী খর্ব হোক।

পরবর্তীতে মলোটোভা ম্যামোরান্ডামে সংশোধন আনা হয় এবং বলা হয় যে, ন্যাটোরর বিলুপ্তির দরকার নাই তবে ন্যাটো থাকবে ডিফেন্সীভ কাজের জন্য। কোনো মিলিটারী বা এগ্রেসিভ ভূমিকায় ন্যাটোকে ব্যবহার করা যাবে না। উপরন্ত, আগে আমেরিকাকে বাদ দেয়া হয়েছিলো, সংশোধিত ডকুমেন্টে এবার আমেরিকাকে রাখা হলো। সাথে রাশিয়াও পুর্নাজ্ঞ সদস্য পদে যোগ দেয়ার কথা বলা হলো।

On 10 March Gromyko presented Molotov a draft note for the Presidium proposing that the Soviet position on European collective security should be amended (a) to allow full US participation in the system and (b) the possibility of the USSR joining NATO.[1] 

এই নতুন ড্রাফট পুনরায় ২০ এবং ২৪ মার্চ ১০৫৪ সালে উত্থাপন করা হয়। অতঃপর উক্ত ড্রাফট অবিকল সেভাবেই ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং আমেরিকার কাছে পাঠানো হয় ৩১ মার্চ ১৯৫৪ তে। কিন্তু এবারো মে ১৯৫৪ তে পশ্চিমারা উক্ত প্রস্তাবকে রাশিয়াকে অগনতান্ত্রিক একটা দেশ হিসাবে চিহ্নিত করে ন্যাটোতে গ্রহন করা যাবে না এবং পশ্চিমাদের ডিফেন্সিভ মতবাদের সাথে রাশিয়ার ডিফেন্সিভ মতবাদ এক হবেনা বিধায় তারা মলোটোভা মেমোরান্ডাম রিজেক্ট করে এবং রাশিয়াকেও ন্যাটোতে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকে। এর বিরুদ্ধে ভেটো দেয় আমেরিকা, ইংল্যান্ড এবং কিছু পশ্চিম ইউরোপের দেশসমুহ। এর আসল ব্যাখ্যাটা অন্যরকমের।

আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের ধারনা ছিলো যে, রাশিয়াকে ন্যাটোতে নিলে রাশিয়া তাদেরকে কোনঠাসা করে ফেলতে পারে বিধায় তারা পশ্চিম ইউরোপের দেশসমুহগুলিকে ক্রমাগত আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড চাপ তথা প্রভাব খাটিয়ে রাশিয়ার সব প্রস্তাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করায়। শুধু তাইই নয়, যেহেতু রাশিয়া ইউরোপের মধ্যেই অবস্থান এবং রাশিয়া মানে ইউরোপ, এবং আমেরিকা বা ইংল্যান্ড ইউরোপের কোনো অবস্থানেই পড়ে না, ফলে একট সময় আসবে যখন আমেরিকা এবং ইংল্যান্ড ইউরোপ থেকে রাশিয়ার কারনেই বিচ্যুত হয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া মলোটভা মেমোরান্ডাম বা ইউরোপিয়ান ডিফেন্সিভ কমিউনিটির সৃষ্টি হলে যৌথ জার্মানীর পুনসংযোগে জার্মানিতে আমেরিকার মিলিটারী বেসগুলি ভবিষ্যতে আর না থাকার সম্ভাবনাও বেশী যা আমেরিকা কখনোই এই অঞ্চল ছাড়তে নারাজ।

আরেকটি কারন হলো-ন্যাটোকে ডিফেন্সীভ মুডে রাখা বা কোনো এক সময় ন্যাটোকে বিলুপ্ত করে ফেলা হতে পারে এই চিন্তায় পশ্চিমারা ইউডিসি (ইউরোপিয়ান ডিফেন্সীভ কমিউনিটি) কে ফর্ম করতে দিতে চায়নি। উপরন্ত চীনকে সরাসরি অব্জার্ভার হিসাবে চুক্তিতে রাখাও পশ্চিমারা পছন্দ করে নাই।

দ্বিতীয়বার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়েলতসিনের আমলে ন্যাটোকে যোগ দেবার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল কিন্তু সেবারেও ন্যাটোতে রাশিয়াকে নেয়া যাবে না বলে রিজেক্ট করা হয়।

তৃতীয়বার পুতিন ২০০০ সালে ক্লিটনের আমলে পুনরায় ন্যাটোতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব করে। ব্লুম্বার্গের এ ব্যাপারে ক্লিন্টনের একটা বক্তব্য তুলে ধরা যায়- "Berger suddenly found a fly on the window to be extremely intriguing. Albright looked straight ahead. Clinton glanced at his advisers and finally responded with a diplomatically phrased brush-off. It was something on the order of, If it were up to me, I would welcome that."

চতুর্থবার পুতিন আবারো ২০০৩ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে রিজেক্ট করা হয়।

পঞ্চমবার ২০০৮ সালে পুনরায় মেদ্ভেদেভ (যিনি ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল অবধি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ছিলেন), তিনিও ন্যাটোতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব করেন। সেখানে মেদভেদেভ এটা উল্লেখ করেন যে, ন্যাটোতে রাশিয়াকে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিলে ন্যাটোর ইষ্টার্ন এক্সপানশনের আর কোনো প্রয়োজন নাই, এবং ইউরোপের নিরাপত্তা বলয়কে সুরক্ষা দিতে নতুন ইউরোপিয়ান  সিউকিউরীটি আর্কিটেকচার’ নামে একটি চুক্তিও হতে পারে, পাশাপাশি ন্যাটো তো ডিফেন্সীভ মুডে থাকলোই। কিন্তু এতেও কোনোভাবেই রাশিয়াকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্তিতে পশ্চিমারা রাজী হলো না।

প্রকৃত সত্যটা হলো- ন্যাটোর জন্মই হয়েছে রাশিয়াকে কন্টেইন করার জন্য, রাশিয়াকে মার্জিনালাইজড এবং আইসোলেট করার জন্য। ন্যাটো হচ্ছে আমেরিকার জিও পলিটিক্যাল একটা প্রোজেক্ট। রাশিয়া যদি ন্যাটোতেই যোগ দেয়, সেক্ষেত্রে ন্যাটোর থাকার তো অর্থ নাই। ন্যাটোর জন্মই হচ্ছে রাশিয়াকে থামিয়ে দেয়া। যদি শত্রুই না থাকে তাহলে ন্যাটোর আর থাকার দরকার কি? টেরোরিজমের বিরুদ্ধে ফাইট করা ন্যাটোর মতো অরগেনাইজেশনের কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। তাছাড়া রাশিয়ার মতো এতো বড় একটা শক্তিশালী জায়ান্টকে ন্যাটোতে নেয়া মানে একক ক্ষমতা খর্ব হবার সম্ভাবনা। যদি সেটাই হতো, তাহলে ওয়ার্শো প্যাক্ট বিলুপ্ত হবার পরেই তো ন্যাটোর পরিসমাপ্তি ঘটতে পারতো। কিন্তু সেটা হয় নাই। আর ঠিক এ কারনেই রাশিয়া যতোবারই ন্যাটোতে যোগ দেবার ইচ্ছা প্রকাশ করুক না কেনো, তাতে কখনোই রাশিয়া সফল হবে না। এটাই বাস্তবতা।

রাশিয়া কেনো ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়?

রাশিয়ার উদ্দেশ্য-ন্যাটোতে জয়েন করতে পারলে রাশিয়ার সাথে পশ্চিমাদের মধ্যে একটা যোগবন্ধন তৈরী হবে, ইউরোপের সাথে আরো সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হবে, তাতে তার অর্থনীতিসহ অন্যান্য সেক্টরে আরো লাভবান হবে। এছাড়া ন্যাটোর সদস্য হলে রাশিয়া সদস্য হিসাবে ন্যাটোর অনেক রিফর্ম করা তার পক্ষে সম্ভব হবে। তাতে কোল্ড ওয়ার সিচুয়েশনটাও বন্ধ হবে ইত্যাদি। 

কি হতে পারে যদি রাশিয়া ন্যাটোতে জয়েন করে?

  • কোনো কারনে যদি রাশিয়া ন্যাটোতে জয়েন করে, এর সবচেয়ে বেশী ইফেক্ট করবে চীনকে। কারন বর্তমানে পশ্চিমারা যাকে প্রধান শত্রু মনে করে সেটা চীন, রাশিয়া নয়। রাশিয়ার সাথে শত্রুতা করে পশ্চিমারা ইউরোপে টিকে থাকা সম্ভব না। কারন রাশিয়া নিজেও ইউরোপের একটা বিশাল অংশ। কোনো না কোনো সময় ইউরোপ রাশিয়াকেই চাইবে, রাশিয়া ইউরোপকে না চাইলেও ইউরোপের বেশী প্রয়োজন রাশিয়াকে।
  • সেন্ট্রাল এশিয়ার পুরানো সোভিয়েট দেশগুলি তখন হয়ত তারাও ন্যাটোতে জয়েন করবে, অথবা চীনের সাথে মার্জ করবে।
  • দক্ষিন আমেরিকার দেশগুলি খুব সম্ভবত রাশিয়া ন্যাটোতে জয়েন করলে খুব একটা খুশী হবে না। কারন তারা আমেরিকার বিপক্ষে রাশিয়াকে একটা শক্তি মনে করে। যদি রাশিয়াই ন্যাটোতে জয়েন করে তাহলে তো আর কিছু থাকলো না।
  • নর্থ কোরিয়া একেবারেই এটা পছন্দ করবে না। কারন তাতে নর্থ কোরীয়া একটা পার্টনার হারালো বলে মনে করবে।
  • মধ্যপ্রাচ্য মিক্সড একটা রিসপন্স করবে। সৌদি, জর্দান, ইরাক এরা হয়তো নিরপেক্ষ ভুমিকায় থাকবে, অথবা তারা রাশিয়ার ন্যাটোতে জয়েন করাকে স্বাগত জানাতে পারে। অন্যদিকে ইজরায়েলকে প্রেডিক্ট করা মুষ্কিল, কিন্তু সিরিয়ায়, ইরান, ইয়েমেন অবশ্যই অখুশী হবে।
  • এশিয়া প্যাসিফিকের দেশসমুহ যেমন ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়া, কিংবা নিউজিল্যান্ড এরা হয়তো খুশী মনে রাশিয়াকে বরন করবে। তারা চীনের শক্তি কমে যাবে ভেবেই খুশী হবে। জাপান, তাইওয়ান কিংবা দক্ষিন কোরিয়াও খুশী হবে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েত্নাম ভ্র্য কুচকাবে এই ভেবে- এটা রাশিয়া কি করলো?
  • ইন্ডিয়ার সাথে রাশিয়ার এবং পশ্চিমাদের উভয়ের সাথেই সম্পর্ক বেশ গ্রহনযোগ্যতায় আছে। তারা হয়তো খুশী হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।
  • আফ্রিকান এবং নর্থ আফ্রিকান দেশসমুহের মধ্যে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। লিবিয়া, আলজেরিয়া, মিশর, রাশিয়ার এহেনো ন্যাটোতে যোগ দিলে সন্দেহের চোখে দেখারই কথা যদিও তিউনেশিয়া অবশ্যই এটাকে সাধুবাদ জানাবে কোনো সন্দেহ নাই।

তবে এটা ঠিক যে, রাশিয়া ন্যাটোতে জয়েন করলে পৃথিবীতে ন্যাটোর আগ্রাসন ভুমিকা, পশ্চিমাদের রুল বেজড অর্ডার, একক হেজিমনি, যুদ্ধ, হানাহানি, কাটাকাটি অনেক কমে যাবে। রিসোর্সের সদব্যবহার হবে, ওয়ার্ল্ড অরগেনাইজেশনগুলির অনেক রিফর্ম হবার সম্ভাবনা থাকবে, ইচ্ছে করলেই কেউ যা খুশী করতে পারবে না।

তাহলে কি রাশিয়া কখনোই ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না?

এই প্রশ্নটা একটা আপেক্ষিকতা আছে। এই মুহুর্তে রাশিয়ার পক্ষে শতবার চেষ্টা করলেও রাশিয়া ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। কিন্তু একটা সময় আসবে যখন ইউরোপ বা পশ্চিমারা রাশিয়াকে নিজের থেকেই ন্যাটোতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব পেশ করবে। আর সেটা তাহলে কিভাবে?

চীন এখনো ন্যাটোর বিরুদ্ধে কোনো হুমকীসরুপ বলে মনে হচ্ছে না ঠিকই কিন্তু এক বা দুই দশকের মধ্যে চীন ঠিক ন্যাটো বা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে একটা কঠিন হুমকী হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে রাশিয়ার জন্য পক্ষ দুটু (ক) ন্যাটো ভার্সাস পশ্চিমা (খ) চীন। ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ঠিক এই মুহুর্তে রাশিয়া চীনের সাথে অনেক বেশী কাছে চলে এসছে। আর ন্যাটো বা পশ্চিমারাও চাইছে রাশিয়া যেনো কোনো অবস্থাতেই চীনের সাথে এতো ঘনিষ্ঠ না হয়। অন্যদিকে পশ্চিমারা চীনের সাথে এমন একটা সম্পর্ক তৈরী করে ফেলেছে যে, আগামীতে চীনের সাথে পশ্চিমাদের আর কোনো সদ্ভাব থাকবে কিনা সন্দেহ আছে। তারমধ্যে তাঈওয়ান উত্তেজনা তাদের এই সম্পর্ককে আরো তলানীতে নিয়ে গেছে। কিন্তু সময়টা খুব বেশী দূরে না যখন চীনকে মোকাবেলা করতেই ন্যাটো তথা পশ্চিমাদেরকে করতে রাশিয়াকে টানতে হবে।

১২/০৭/২০২৩-লিথুনিয়ার ন্যাটোর সম্মেলনে ইউক্রেন একা হয়ে গেলো

লিথুনিয়ার ভেলনিয়াসে ন্যাটোর সর্ববৃহৎ সম্মেলন শেষ হয়ে গেলো। এই সম্মেলনে ইউক্রেন চেয়েছিলো তাদেরকে যেনো একটা টাইমফ্রেম দেয়া হয় কবে নাগাদ তারা ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে। কিন্তু সম্মেলনের প্রথম দিনে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারটার অফিশিয়াল ডকুমেন্ট যখন প্রকাশিত হয় তখন রাগে ক্ষোভে জেলেনেস্কী তার যাত্রার প্রাক্বালে টুইট করেছিলেন- “We value our allies, Ukraine also deserves respect. It’s unprecedented and absurd when time frame is not set, neither for the invitation nor for Ukraine’s membership. Uncertainty is weakness. And I will openly discuss this at the summit.”

আমার কাছে এটা মনে হয়েছে জেলেনেস্কীর রাগ এবং ক্ষোভ দুটুই ঠিক। কিন্তু তার এই রাগ কার উপরে? ক্ষোভটা কার উপরে? প্রশ্নটা সেখানে। আর এর উত্তরগুলি এসেছে স্বয়ং ন্যাটোতে যোগদানরত আমেরিকান ডেলিগেশনের রান্ড পল থেকে এভাবে-

“Audacious. There’s an old English adage he might need to become aware of: Never look a gift horse in the mouth, we’ve given them $100 billion and he has the audacity to be so brazen as to tell us we’d better speed it up? I’d say that’s audacious. I’d say it’s brazen, and that's not very grateful for the $100 billion that we’ve given him so far. As long as we continue to supply unlimited arms to Zelensky, I think he sees no reason to have any negotiations. So I think we’re putting off negotiations, but ultimately, the losers are the Ukrainian people.”

ঠিকই তো। যুদ্ধটা তো ইউক্রেনের। এটা না ন্যাটোর, না ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের, না আমেরিকার। যুদ্ধটা তো রাশিয়া বনাম ইউক্রেনের। অন্যের প্রোরোচনায় আর শক্তিতে কেনো একটা দেশ যুদ্ধের মতো সংঘাতে জড়াবে যেখানে পুরুটাই অন্যের বাহুর শক্তির উপর নির্ভরশীল? নেতা কেনো এই সিম্পল ইকুয়েশনটা মাথায় নিলো না?

কি প্রয়োজন ছিলো প্রতিবেশীর সাথে তাও আবার এমন প্রতিবেশী যাকে তারা সকাল হলেই দেখা হয়, একে অপরের ভাষা বুঝে, কালচার এক, ব্লাডও এক, এমন প্রতিবেশীর সাথে শত্রুতা করে এবং প্রতিবেশীর শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব বজায় রেখে কি কখনো সুখে থাকা যায়? কোনোভাবেই উচিত হয়নি।

যাক সে কথা, অবশেষে ভিলনিয়াস সম্মেলনে ইউক্রেনকে কোনঠাসা করে বিবৃতি দেয়া হলো-ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে হলে এলায়েন্সের সবার গ্রহণযোগ্যতা লাগবে, ইউক্রেনকে ন্যাটোর স্টান্ডার্ডে আসতে হবে এবং রাশিয়ার সাথে প্রয়োজনে নেগোশিয়েশন করতে হবে, নতুবা নয়। তবে ইউক্রেনকে অস্ত্র এবং সরঞ্জাম দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সহায়তা দেয়া হবে। কিন্তু সেটা কতটুকু?

কি দরকার ছিলো এসবের? তারা কি এতোই রাশিয়ার দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছিলো? নাকি ওরাই রাশিয়ান ভাষাভাষী মানুষগুলিকে ইথিনিক ক্লিঞ্জিং এর মাধ্যমে নিঃশেষ করার পায়তারা করছিলো? সেই ক্রিমিয়া, ডনবাস, খেরসন, এরা তো ইউক্রেনের মধ্যেই বসবাস করতো। তারা তো ইউক্রেনের নাগরিকই ছিলো। তাদেরকে নিয়ে কি একসাথে থাকা যেতো না? এখন তাহলে কি দাড়ালো? সেই ডনবাস, সেই জেপোরিজিয়া, সেই মারিউপোল, সেই খেরশন ইউক্রেন থেকে আলাদা হয়ে গেলো। ইউক্রেনের নিজের ঘরের ভিতরেই অথবা চৌকাঠের সীমানায় বিভীষণদের বসবাস। ন্যাটোতে গেলেও তো ইউক্রেনের ঠিক পাশেই এসব অঞ্চলের মানুষগুলির বসবাস চলমান থাকবে। প্রতিবেশী হিসাবে, ঘ্রিনা আর ক্ষোভ নিয়ে।

ভিলনিয়াসের ডিক্লেয়ারেশনের মাধ্যমে আমার কেবলই মনে হচ্ছে-ইউক্রেন এখন প্রায় একা হয়ে গেলো। যুদ্ধ চলবে যুদ্ধের মতো, অস্ত্র আসবে ব্যবসায়িক লাভের জন্য, মাঝখান দিয়ে নীরিহ জনগনগুলির দূর্ভোগের আর সীমা রইলো না। একটা ভুল সাইডে দাঁড়িয়ে জেলেনেস্কী তার দেশের মানুষের কাছে আজীবন ঘৃণার পাত্র হয়ে রইবে, রাশিয়া কখনোই আর ইউক্রেনকে বিশ্বাস করবে না, পশ্চিমারা যখন কাউকে আর দরকার নাই মনে করে তাকে একাই ছেড়ে দেয়। এই শিক্ষাটা কেউ নেয় না। ইরাক, আফগানিস্থান, লিবিয়া, কাতার, ইউগোস্লাভ, সিরিয়া কিংবা অন্য দেশের লেসন থেকেও কেউ শিক্ষা নিলো না।

ইতিহাস কখনোই কারো ইতিহাস মুছে ফেলে না। রাশিয়ার এই আগ্রাসন, জেলেনেস্কীর এই ভুল সাইডঃ নির্ধারন, পশ্চিমাদের এই রকম আচরন বংশ পরম্পরায় মানুষ ইতিহাস থেকে জানতেই থাকবে যেমন মানুষ এখনো ২য় মহাযুদ্ধের কথা, আনা ফ্রাংকের ডায়েরীর কথা, নরম্যান্ডি ল্যান্ডের কথা, হিটলারের নির্বুদ্ধিতার কথা, কিংবা মুসুলিনি এদের সবার কথা আজো আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গবেষনা করি এবং জানি কত হিংস্র সময় কাটিয়েছে সেই দিনের মানুষগুলি।

শান্তির কোনো বিকল্প নাই। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। স্রষ্টা কোনো দেশকেই নিজ থেকে বাউন্ডারী ভাগ করে দেয় নি। না রিসোর্স কাউকে তিনি একাই সব দিয়েছেন কাউকে।

১১/০৭/২০২৩-যুদ্ধটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এটা শুধু বলতে পারবে “সময়”।

প্রথমদিকে যেভাবে পুরু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ন্যাটো এবং পশ্চিমারা ইউক্রেনকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, রিফুজি একোমোডেশন এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে সাহাজ্য করেছিলো, সেটা অনেকাংশেই এখন ভাটা পড়েছে। যে কোনো টেনশন কিংবা এখানে যুদ্ধ নামক উত্তেজনাটা যদি ধরি, দেখা যাবে যে, প্রতিটি দেশ এখন তাদের নিজস্ব সার্থ নিয়ে ভাবছে। এটা কোনো দোষের না। লম্বা সময় ধরে কেউ নিজের দেশের সার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে অন্যকে এমনভাবে সহায়তা করে না যেখানে নিজেরাই নিঃস্ব হবার মতো অবস্থা। ফলে ইউরোপিয়ান দেশসমুহের একে অপরের মধ্যে সহায়তা না দেয়ার মনোভাবে একটা টক্কর লাগছে। উদাহরন-বুলগেরিয়া। সেতো সরাসরি বলেছে যে, তার রিজার্ভ নষ্ট হয়, ঝুকির মধ্যে পড়ে এমন সহায়তা সে কখনোই করবে না কারন যুদ্ধটা তার নয়, যুদ্ধটা ইউক্রেনের। ব্রাজিল বলেছে-১২০০ মেইল দূরের কোনো যুদ্ধ তাদেরকে কেনো প্রভাবিত করবে? প্রয়োজন নাই।

ঠিক এভাবেই যত সময় পার হচ্ছে- বিভিন্ন ইউরোপিয়ান এবং পশ্চিমা দেশের জনগনের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধটা এখন যেনো গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। যেই ন্যাটোর স্বপ্ন ইউক্রেন দেখে আসছে ২০০৮ সাল থেকে, সেই ন্যাটোই এখন খোলাখুলি বলছে যে, যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না হয়, আর যদি ইউক্রেন সভ্রেন কান্ট্রি হিসাবে এক্সিষ্ট করে, তাহলেই প্রয়োজনীয় রিফর্মের পরে ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্য করবে। এর আগে নয়।

প্রশ্ন এখানে ৩ টা (ক) যুদ্ধ শেষ হতে হবে (খ) যুদ্ধ শেষে যদি ইউক্রেন দেশ হিসাবে আদৌ টিকে থাকে (৩) অতঃপর ন্যাটো স্ট্যান্ডার্ড মোতাবেক ইউক্রেনকে কোয়ালিফাই করতে হবে। তিনটা অপশনই ইউক্রেনের জন্য যথেষ্ট কঠিন।

আমি রাশিয়া বা পুতিন প্রেমিক নই। কিন্তু একক দেশ হিসাবে সবচেয়ে বেশী (আমেরিকার থেকেও বেশী) নিউক্লিয়ার ধারী রাশিয়া যার রিসোর্সের কোনো কমতি নাই, (গ্যাস তেল, খাদ্য সামগ্রী, লোহা, গোল্ড, সার ইত্যাদি), সেই রাশিয়া এই যুদ্ধকে রীতিমত টেনে লম্বা করা কোনো ব্যাপারই না। তারমানে হচ্ছে- যুদ্ধটা এখনি শেষ হচ্ছে না। যুদ্ধটা যদি লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে ইউক্রেনকে সহায়তাকারী দেশ সমুহের মধ্যে একটা ফেটিগ চলে আসবে। আর এই ফেটিগ থেকে ধীরে ধীরে যুদ্ধটাকে জনগন একটা বোঝা মনে করবে তেমনি সাহাজ্যের পরিমানও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, কমছেও। আর তাদের সাহাজ্যে ভাটা পড়া মানেই ইউক্রেন আরো বিপদে পড়ার সম্ভাবনা। যুদ্ধটা না চালিয়ে নিতে পারবে, না হারানো টেরিটরী পুনরুদ্ধার করতে পারেবে, না নেগোশিয়েশনে বসতে পারবে।

২য় প্রশ্নে আসি। এই মুহুর্তে ন্যাটোতে ইউক্রেনকে সদস্য পদ দিবেই না। কারন সদস্য পদ দেয়া মানেই ন্যাটোর আর্টিক্যাল-৫ অনুযায়ী রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। এটা কোনো পাগলেও এলাউ করবে না। ফলে ন্যাটর এই প্রক্সী ওয়ারে ন্যাটোর তথা ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দেশ সমুহের সব যুদ্ধাস্ত্র ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে তারাও সার্বিক ঝুকির মধ্যে পড়ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ এখন একটা ফাদ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুরু ইউরোপ বনাম ন্যাটো বনাম পশ্চিমাদের কাছে। না সরাসরি যুক্ত হতে পারছে, না ছেড়েও দিতে পারছে। যদি এমনই পরিস্থিতি চলতে থাকে যেখানে ন্যাট কিংবা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশ সমুহ অথবা পশ্চিমারা পর্যাপ্ত মিলিটারী, আর্থিক সহায়তা দিতে না পারে, তখন রাশিয়া ধীরে ধীরে ইউক্রেনকে এমন একটা রাষ্ট্রে পরিনত করতে সুযোগ পাবে যে, ইউক্রেনের স্বাধীন সার্বোভউম মর্যাদা রাষ্ট্র হিসাবে থাকবে কিনা সেটাই সন্দেহ। আর এটাই ন্যাটোর মহাসচীব তার শেষ বক্তব্যে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। ন্যাটোর মহাসচীব স্টলটেন্ট গলা ফাটিয়ে সবাইকে এখন যে যা পারে, সাহাজ্য করতে বলেই যাচ্ছে কিন্তু সেই উচ্চস্বরের চিতকারের সমানুপাতিক সাহাজ্য এখন কোনো দেশই করছে না। শুধু আশ্বাস, শুধু কথা, শুধু স্বপ্ন দেখিয়ে দেখিয়ে কতদিন? তারপর?

তার আর পর নাই।

কিন্তু ইউক্রেনের দোষ কোথায়? ইউক্রেন যদি আসলেই ইউরোপের নিরাপত্তার দরজা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে কেনো ২০০৮ সালেই ন্যাটোতে নেয়া হলো না? যদি তাকে ২০০৮ সালে ন্যাটোতে সদস্যপদ করা হতো, রাশিয়া কোনোদিনই ইউক্রেনকে আক্রমন করার সাহস পেতো না। অথচ এখন তারা তাকে ফুসললিয়ে ফুসলিয়ে এমন একটা মরনপন যুদ্ধে জড়িয়ে ফেল্লো যে, ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ পুরুই অন্ধকারের মতো। ইউক্রেনের সাধারন মানুষগুলির কি অপরাধ ছিলো? তারা তো ভালোই ছিলো। এখন তারা বিভিন্ন দেশে রিফুজি, কেউ কেউ ধর্ষিতা, অনেকেই এতিম, আবার অনেকেই জানে না তাদের প্রিয়জন কোথায়।

যুগে যুগে কিছু নেতা আসে, যারা নেতার ভূমিকায় জনগনের কল্যানে না এসে জনগনকে আরো কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে নিজেরা পালিয়ে যায়। সাফার করে আমজনতা।

এসব জেলেনেস্কী, হিটলার, নীরু, মুসুলিনিরা এক সময় চলেই যায়, কিন্তু সাফার করে বংশ পরম্পরায় সেই সব নীরিহ মানুষ গুলি যারা রক্ত দেয়, যারা পরিবার হারায়, কিংবা যাদের সুন্দর ভবিষ্যত দেখার আর কোনো সুযোগ থাকে না।

একটা সবচেয়ে খারাপ শান্তি চুক্তিও একটা যুদ্ধের চেয়ে ভালো। যেদিন জেলেনেস্কী বুঝবে, সব শেষ হয়ে যাচ্ছে- হয় সেদিন সে গায়েব হয়ে যাবে, নতুবা কোনো এক নিরাপদ আশ্রয়ে জীবন জাপন করবে, অথবা এই দুনিয়াই তাকে ছাড়তে হবে। কিন্তু এমন তো হবার কথা ছিলো না।

তাই যুদ্ধটা বন্ধ হোক, আর এখুনী।

১০/০৭/২০২৩- রুপীতে বানিজ্য

বর্তমানে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ব্যবসা করে ডলার কারেন্সীর উপর। প্রথমে ডলার থেকে রুপীতে কনভার্ট করে অতঃপর এক্সপোর্টের ব্যয় বহন করা হয়। এতে বাংলাদেশকে দুটু কনভার্সনের মাধ্যমে যেতে হয় ৯ক) একটা টাকা থেকে ডলারে (খ) আবার ডলার থেকে রুপীতে। এই কনভার্সনে বাংলাদেশের বেশ কিছু সিস্টেম লসের মতো লস গুনতে হয়।

কিন্তু যদি সরাসরী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া রুপীতে ব্যবসা করে, তাহলে বাংলাদেশকে শুধুমাত্র একটা কনভার্সনে যেতে হবে, আর সেটা হলো টাকা থেকে রুপীতে।

দুইদেশ এভাবে ডলারের বাইরে রুপীতে ব্যবসা করতেই পারে। আর পারলে ভালো। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে- বাংলাদেশ থেকে ইন্ডিয়া ২ বিলিয়ন সমপরিমান মালামাল আমদানী করে আর বাংলাদেশ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের মালামাল আমদানী করে ইন্ডিয়া থেকে। ২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমান রুপিতে ব্যবসায় বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নাই কিন্তু বাকী ১২ বিলিয়ন ডলার কিভাবে ম্যানেজ করা হবে, সেটা।

যদি ইন্ডিয়া এই বাকী ১২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমান রুপী বাংলাদেশের কারেন্সী টাকাকে একটা ফিক্সড বা ন্যনুতম একচেঞ্জ রেটের মাধ্যমে রাজী হয়, তাহলে ব্যাপারটা আপাতত সহজ হবে। নতুবা বাংলাদেশ সেই ২ বিলিয়ন ডলারের বাইরে ইন্ডিয়ান রুপীতে বাকী ১২ বিলিয়ন ডলারের বিল সমন্নয় করতে পারবে না।

তবে একটা সার্ভের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে যে, সরকারী ডিক্লেয়ারেশনের মাধ্যমে শুধুমাত্র ২ বিলিয়ন ডলার সমপরিমান রপ্তানী হয় আমাদের দেশ থেকে কিন্তু আনডিক্লেয়ারড বা আনঅফিশিয়ালী রপ্তানীর পরিমান প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার সমপরিমান। যদি এই আনডিক্লেয়ারড বা আনঅফিশিয়াল রপ্তানীগুলি অফিশিয়াল্ভাবে করার সিস্টেম তৈরী করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া এই দুই দেশের মধ্যে রুপিতে ব্যবসা কোনো জটিল বিষয় নয়। কিন্তু আমাদের দেশের আইন করে এসব আনঅফিশিয়াল ডিক্লেয়ারেশন ব্যবসা থামানো সম্ভব কিনা সেটা কার্যকর করা খুবই জটিল এবং অসাধ্য ব্যাপার। 

এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার যে, সবসময় ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং এ  “নস্ট্রো” একাউন্ট নামে একটা একাউন্ট খুলতে হয় যেখানে ট্রানজেক্টরী দেশের কারেন্সী সেখানে জমা হয় বা থাকে। যতোটুকু রিজার্ভ বা কারেন্সী সেখানে থাকবে, ততটুকুই দেশসমুহ ইন্টারচেঞ্জ করে ব্যবসা করতে পারে। ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝাতে পারলাম কিনা জানি না, The nostro account is an account that a bank holds with a foreign bank in the currency of the country where the funds are held. It is used to facilitate foreign exchange and international trade transactions involving foreign currencies.

ট্রেড ডেফিসিয়েট যদি অফিশিয়ালী এতো বিশাল ব্যবধান না হতো, তাহলে ব্যাপারটা কোনো জটিল ছিলো না। যে সব দেশে আমদানী এবং রপ্তানী প্রায় দুপক্ষের মধ্যে সমানে সমান, সেসব দেশে তাদের নিজস্ব কারেন্সীতে ব্যবসা করা একেবারেই সহজ।

তাই এখানে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার ট্রেড ডেফিসিয়েন্ট অনেক বেশী বিধায় বিকল্প চুক্তি করা আবশ্যক যেখানে রুপি এবং টাকার মধ্যে একটা আন্তর্জাতিক সমঝোতা পত্র লাগতে পারে। তাতে বাংলাদেশ একটা ঝুকির মধ্যে পড়তে পারে।

০৬/০৭/২০২৩-সাকাশভিলি এবং জেলেনেস্কী

আমি UNOMIG (United Nations Observer Missions in Georgia) তে কাজ করার সময় জর্জিয়ায় কেনো শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন হইলো সেটা খুব কাছ থেকে অনুধাবন করার চেষ্টা করেছিলাম।

জর্জিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট শাকাসভিলি বর্তমানে জেলে আছেন। এর প্রধান কারন, তিনি তার প্রেসিডেন্সির মেয়াদে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং সেই অপব্যবহারের কারনে জর্জিয়াকে পর পর দুটু রিজিয়ন তার ভুখন্ড থেকে হারাতে হয়েছে-(ক) আবখাজিয়া (খ) সাউথ ওসেটিয়া। দুটুই জর্জিয়ার অংশ ছিল যা বর্তমানে স্বাধীন কিন্তু রাশিয়া অনুরাগী। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-জর্জিয়ার অভ্যন্তরের এই দুটু রাজ্য কিভাবে হাতছাড়া হয়ে গেলো যেখানে ভুখন্ড এক, কন্সটিটিউশন এক এবং একই শাসকের অধীনে?

শাকাসভিলি পশ্চিমাদের অনুগত হয়ে সাউথ ওসেটিয়ায় স্নিক এটাক করে তার শাসনামলে সাউথ ওসেটিয়ার অটোনোমাস স্ট্যাটাস থেকে জর্জিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলো যদিও ওসেটিয়া জর্জিয়ারই একটা অংশ মনে করা হতো। তাইওয়ানের মতো। জর্জিয়া যখন সাউথ ওসেটিয়াতে আক্রমন করে, ঠিক তখন রাশিয়া ওসেটিয়ার পক্ষ নেয় এবং ৫ দিনের মধ্যে জর্জিয়া হেরে যায় এবং সাউথ ওসেটিয়া স্বায়ত্তশাসন থেকে পুরুপুরি সার্বোভোম রাজ্যে পরিনত হয়, ফলে জর্জিয়া সাউথ ওসেটিয়াকে হারায়। একইভাবে আবখাজিয়াও তাই। আবখাজিয়াও জর্জিয়ার সায়ত্তশাশন থেকে পুরুপুরি স্বাধীন রাজ্যে পরিনত হয়।   

পরবর্তীতে জর্জিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট স্থলাভিষিক্ত হয় এবং শাকাসভিলি দেশ থেকে পালিয়ে ইউক্রেনে চলে যায়। ইউক্রেনে যাওয়ার পর, ইউক্রেন (পাশ্চাত্য আদেশে) ওডেশার গভর্নর নিয়োগ করে। ইউক্রেন যুদ্ধের ঠিক আগে শাকাসভিলি ওডেসা থেকে আবার জর্জিয়া ফেরত যায়। তার অথবা পাশ্চাত্যের উদ্দেশ্য ছিলো ইউক্রেনের পাশাপাশি জর্জিয়াকেও অশান্ত করা। কিন্তু জর্জিয়ার শাসকগন কিছুতেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ভূমিকা পালন করতে নারাজ ছিলো। ফলে শাকাসভিলির মিশন ফেল করে এবং তাকে এরেষ্ট করে বিচারের সম্মুখীন করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট। এখনো সে জেলে আছে।

এবার আসি ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে।

বিশ্ব মহল মনে করছে যে, ইউক্রেনের যুদ্ধটা ঠিক একই ফরমেটে চলছে। আর সেটা কিভাবে? জেলেনেস্কী ক্ষমতায় আসার পর তার পেট্রোনদের অনুগত হয়ে ২০১৪ সাল থেকে একাধারে ডনবাসে স্নিক এটাক করেই যাচ্ছিলো। ডনবাস কিন্তু সাউথ ওসেটিয়ার মতো কোনো স্বায়ত্তশাসিত রিজিয়ন ছিলো না। এটা ছিলো ইউক্রেনের ভুখন্ডের অবিবেচ্ছদ্য অংশ কিন্তু বেশীর ভাগ রাশিয়ান ভাষাভাষী নাগরিক। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীও যত দ্রুত ডনবাসকে পুরুপুরি ইউক্রেনীয় কালচারে, আইনে আনা যায় সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু রাশিয়ার স্পেসাল অপারেশন এখানে সেই সাউথ ওসেটিয়া কিংবা আবখাজিয়ার মতো রুপ নিলো। ডনবাস সহ আরো চারটি রিজিয়ন যারা ইউক্রেনের সাথে কোনো সংঘাতেই ছিলো না, ইতিমধ্যে সেগুলিও রাশিয়ার কাছে হাতছাড়া হয়েছে ইউক্রেনের, এবং শুধু তাইই নয় তারা রাশিয়ান ফেডারেশনের সাথে যুক্তও হয়েছে।  গত ১৬ মাস যাবত ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে এবং এটার কোনো সাফল্য ইউক্রেন এখনো হাতে পায়নি। আর পাবে কিনা সেটা এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। এই স্পেশাল অপারেশনে ইউক্রেন জর্জিয়ার ওসেটিয়ার লক্ষন থেকেও খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। যদি কোনো কারনে পশ্চিমারা এবং ন্যাটো তাদের সাপোর্ট ইউক্রেনে হ্রাস কিংবা বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইউক্রেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে তার কোনো অস্তিত্ব থাকবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। সাউথ ওসেটিয়ার যুদ্ধটাও পাশ্চাত্যের এবং ন্যাটো ফোর্সের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা প্রক্সি ওয়ার ছিলো।

বর্তমানে বলা হচ্ছে যে, ইউক্রেনের কাউন্টার অফেন্সিভে সাফল্য না পেলে ইউক্রেন, তাকে পরবর্তী সাপোর্ট পাশ্চাত্যরা দিবে কিনা আর দিলে কতটুকু সেই বিষয়ে এখন আলোকপাত হচ্ছে। এর মানে প্রক্সি ওয়ারটা প্রায় ধইর্যের শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে ইউক্রেন তার সিংহ ভাগ মিলিটারী জনবল, ইয়াং জেনারেশন, এবং অন্যান্য ফেসিলিটিজ হারিয়ে ফেলেছে। দেশটি এখন ধংস্তসুপের আখড়া। জেলেনেস্কী এবং তার মিলিটারী কমান্ড ইতিমধ্যে এটা বুঝে গেছে যে, অফেন্সিভ, বা কাউন্টার অফেন্সিভ যেটাই বলা হোক না কেনো, এর ফলাফল অনিশ্চিত। যার কারনে জেলেনেস্কী, কুলেভা, কিংবা তার পরিষদবর্গ সাথে Chair of the House Foreign Affairs Committee Michael McCaul এর মধ্যে এই যুদ্ধে হারার পিছনে ন্যাটো কিংবা পশ্চিমাদের দায়ী করছেন সরাসরি। জেলেনেস্কী নিজেও এটা বুঝতে পারছেন যে, সে ইউক্রেনকে নিয়ে না ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে, না সে এই স্পেশাল অপারেশনে কোনো সাফল্য দেখাতে পারবে। 

সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটা হচ্ছে যে, ইউক্রেনের যে চারটি রিজিয়ন রাশিয়া দলখল করে নিয়েছে, সেগুলিতে ইউক্রেনের সাথে কোনো সমস্যাই ছিলো না। এখন সেই রিজিয়নগুলিই উদ্ধার করা ইউক্রেনের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। আর এই নিরপেক্ষ রিজিয়নগুলি পুনরায় উদ্ধার করতে গিয়ে ইউক্রেন তার সবকিছু হারাচ্ছে। ইউক্রেন যদি মার্চ ২০২২ এ দিপাক্ষীয় চুক্তিটা করে ফেলতো তাতে অন্তত জ্যাপড়িজ্জিয়া এবং খেরসন রিজিয়ন দুটি ইউক্রেনের অধীনেই থাকতো। কিন্তু Anglo-American Axis sabotage spring 2022’s peace process এর কারনে ইউক্রেন সেই চুক্তি থেকে সরে আসে যা একেবারেই ওসেটিয়া এবং আবখাজিয়ার ফরমেট।

এই অবস্থায় ইউক্রেনে পাশ্চাত্যরা যদি এই প্রক্সি ওয়ারে হেরেই যায়, এর থেকে অপমানজনক আর কিছু হতে পারেনা, এটাই পাশ্চাত্যের বদ্ধমুল ধারনা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাটো কিংবা পাশ্চাত্যরা তাদের মানসম্মান একটু হলেও বাচানোর জন্য যেটা ওরা করে, সেটা হচ্ছে-পপুলার সাপোর্ট বিবেচনা করে রিজিম পরিবর্তন করে দেয়, যেমন করেছে জর্জিয়ায়, আফগানিস্থান, কিংবা ইরাক  বা অন্য দেশগুলিতে। এর অর্থ-জেলেনেস্কী আর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নাই। মান রক্ষার্থে হয় ইউক্রেনে একটা ইন্টারনাল রায়ট হবে এবং সেই রায়টে পরে একটা সাধারন নির্বাচন হবে এবং এই ইন্টারনাল আন্দোলন ঠেকাতে সামনে আসবে আর্মির কমান্ডার ইন চীফ ঝালুজনি অথবা গোয়েন্দা চীফ বুদানভ। এটাও সে জর্জিয়ার সেই শাকাসভিলি পরিনতির মতো।

শাকাসভিলির মতো জেলেনেস্কীকেও তার ক্ষমতা হারানোর পর ক্ষমতার অপব্যবহার করার কারনে, দেশে সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি করে যুদ্ধ ঠেকানো যেতো এই মনে করে কিংবা তার বিরোধী দলকে সম্পুর্ন দমন করে শাসনভার চালানোর কারনে অপরাধী করা হবে। জেলেনেস্কী যদি ইউক্রেনেই থাকে তাহলে তাকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে, অথবা তাকে দেশ ত্যাগ করে অন্যত্র নির্বাসনে চলে যেতে হবে।

পশ্চিমাদের কোনো এলি নাই, আছে শুধু ভেসেল যা তারা হয় শাকাসভিলি কিংবা জেলেনেস্কীর মতো শাসকদের দ্বারা বাস্তবায়িত করার কাজে লিপ্ত থাকে। কেনো বললাম যে, পাশ্চাত্যদের কোনো এলি নাই, কারন এলি রাজ্যগুলিকে পাশ্চাত্যরা তাদের লয়ালটির কারনে যে কোনো পর্যায়েই যাবতীয় সমস্ত কিছু দিয়ে, এমন কি তাদের নিজের দেশের মানুষের সার্থকে জলাঞ্জলী দিয়ে হলেও সাহাজ্য করে। এই ক্ষেত্রে বিশেষ করে জর্জিয়া, আফগানিস্থান কিংবা ইউক্রেনের ব্যাপারে তারা এদেরকে ভ্যাসেল মনে করে, এলি না। ইউক্রেন হচ্ছে সেই আরেকটা ভেসেল যেখানে ইউরোপ, ইউএস-ব্যাকড ন্যাটো কিংবা পাশ্চাত্য তাদের ইউনিপোলারিটি যাতে ম্রিয়মাণ না হয় সেটা রক্ষার্থে যতদিন সাপোর্ট করা যায় সেটা করবে। যেদিন ইউক্রেন যুদ্ধটা ফ্রোজেন হয়ে যাবে, কিংবা ইউক্রেন হেরে যাবে কিংবা যখন ইউনিপোলারিটি ধীরে ধীরে ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে, কিংবা ধীরে ধীরে ডি-ডলারাইজেন আরো গভীর হবে, তখন জেলেনেস্কীর আর কোনো প্রয়োজনই হবে না তার পেট্রোনদের।

তখন একটা প্রশ্ন বাকী থাকবে-জেলেনেস্কী কি শাকাসভিলির মতো জেলে থাকবে নাকি ফ্রিম্যান হিসাবে রাজকীয় জীবন পরিচালনা করবে নাকি সে তার জীবন দিয়ে প্রমান করবে যে, ইচ্ছে করলেই পরিস্থিতি পালটে দিতে পারতো যেখানে সাধারন নাগরিকেরা অন্তত মারা যেতো না, দেশটার অখন্ডতা রক্ষা পেতো।

সময় বলে দিবে।  

০৩/০৭/২০২৩-মাধুরীর চিঠি-২

অনেক অনেক দিন পার হয়ে গেলো। না আমি আর তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেছি, না তুমি। জীবনের ব্যস্ততা মানুষকে এমনভাবে কোনো এক চক্রএর মধ্যে ঘুরপাক খাওয়ায় সেটা বুঝা খুব সহজ না। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবন মানেই কি পিছলে পড়া পথে হাটু গেড়ে বসে পড়া? নাকি সেই পিচ্ছিল পথ থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে কোনো এক পাহাড়ের পাদদেশে এসে পতিত হয়ে আবার সেখান থেকে নতুন করে বেড়ে উঠা? হয়তো দুটুই ঠিক। কেউ পাহাড়ের চূড়ায় উথে নামার ভয়ে হাহাকার করে, আবার কেউ পাহাড়ে উঠতে না পেড়ে হাহাকার করে। কেউ কারো অবস্থানে সুখী নয়।

যাই হোক, এসব কথা আর না বলি। তবে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, তুমি কি এখনো খুব সহজে সব কিছু ভুলে যাও? কিংবা হাতের কাছে তোমার দরকারী কাগজটি না থাকলে কোথায় রেখেছো সেটার জন্য আমার নাম ধরে চেচামেচি করো? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। তখন হয়তো এরকমের চেচামেচি ভালো লাগতো না, কিন্তু আজকে মনে হয় তোমার সেই চেচামেচিকে আমি খুব মিস করি। মনে হয় খুজে খুজে তোমার ঠিকানাটা বের করে আরো একবার যদি তোমার সেই কন্ঠসরটা শুনতে পেতাম!! কিছু একটা খোজার বাহানা করে আমি সারাক্ষন মাঝে মাঝে আসলে হয়তো এখনো তোমাকেই এই আজব পৃথিবীর মানুষগুলির মধ্যে খুজি। আমি জানি না হটাত কখনো যদি তোমার সাথে আমার আবার দেখা হয়ে যায়, তখন আমি কি করবো। জড়িয়ে ধরবো? নাকি এড়িয়ে যাবো? নাকি দূর থেকে তোমার চলে যাওয়া দেখবো। আমি জানি, তুমি আমাকে ভুলে যেতে চেয়েছিলে, কিন্তু আমার জগতে তুমিই ছিলে একমাত্র মানুষ যাকে আমি কখনো ভুলতে চাই নি। আমি তোমাকে পাইনি বটে কিংবা তুমি আমাকে ছেড়েছো বটে কিন্তু পেরেছো কি? আমি পারিনি।

বৃষ্টি ভেজা রাতে নীরবে যখন আমি আমার বারান্দায় বসে অতীতের ভালো লাগা কোনো একটা গানের কলি শুনি, আমাকে নিয়ে যায় সেই রাতে যখন আমি তোমার হাতে হাত রেখে উচ্ছল ধরনীর শীতল মাটিতে নেচে বেড়াতাম। আমার ভেজা চুল বেয়ে বেয়ে জোনাকীর মতো পানির ফোটা ঝরে পড়তো, আর তুমি সেটা চিপে চিপে ধরে বলতে –আহা, কি সুন্দর, যেনো মুক্তার মত।  তোমার ছাদের কোনায় কি এখনো অই ছোট জবা ফুলের গাছটা আছে? আমি লাগিয়েছিলাম। তুমি কাটাজাতীয় ফুল পছন্দ করো না জেনেও আমি গাছটা লাগিয়েছিলাম। কতদিন জবা ফুল তুলতে গিয়ে হাতে কাটা বিধেছিলো আর তুমি বারবার আমার হাতে মলম লাগিয়ে বলতে কেনো কাটা গাছটাই রাখতে হবে ছাদে? অথচ তুমি গাছটা নিজেও কখনো কেটে ফেলোনি, বরং প্রতিদিন এর গোড়ায় পানি দিতে। কি আজব না? তোমার অপছন্দের একটা গাছ, তুমি কেটে দিলে না, পানি দাও, এটাকে বড় করো, যত্ন করো, অথচ তাকে তুমি পছন্দ করো না। আমাকে তুমি পছন্দ করতে, আদর করতে, আমার কষ্টে তোমার কষ্ট হতো, আমার আনন্দে তুমি আনন্দিত হতে, অথচ তুমি আমাকে চিরতরে কেটে দিলে। কাটতে পেরেছো? ওই জবা ফুলের গাছটার কাছে গেলে তোমার মন উদাসীন হয়ে উঠে না? হয়তো গাছটা আর নাই, অথবা আছেও। আমি তো আর জবা গাছ নই। আমার ভাষা ছিলো, অনুভুতি ছিলো, সব ছিলো, তাতেও তো আমি তোমাকে আমার ভিতরের অনুভুতি দিয়ে বুঝাতে পারিনি, কি ছিলে তুমি আমার। আর সেটা তো একটা ভাষাহীন জবা গাছ। সে তো তোমার কিছুই ছিলো না। আছে গাছটা? তাড়িয়ে দাও নি তো?

মাঝে মাঝে আমার খুব তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে। কেনো দেখতে ইচ্ছে করে, সেই সঠিক উত্তর আমার জানা নাই। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, চিৎকার করে হাউমাউ করে কাদি। যদিও জানি, আজকালকের মানুষগুলির আবেগ, অনুভুতি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। এখন মানুষেরা আর হাউমাউ করে কাদে না, মানুষ কি ভাববে বলে। প্রান খুলে হাসে না, লোকে বোকা ভাববে বলে। এই চাপা হাসি আর বোবা কান্না মানুষ গুলি এতো অসহায়। তাই মানুষগুলি একা একাই বেচে থাকার মধ্যে প্রান খুজে বেড়ায়। আসলে আমরা সবাই একাই। এই একা জীবনে আড্ডা দেয়া যায়, গল্প করা যায়, কিন্তু সে পর্যন্তই। এর মানে যে, নিঃসঙ্গতা যে কাজ করে না এমন নয়। এই নিঃসঙ্গ জীবনের ও একটা মাধুর্যতা আছে। সেখানে আমিই সব। এর মানে এই নয় যে, আমি রক্তমাংশে গড়া কোনো আপনজনের অভাব অনুভব করিনা।

আমি এখনো মাঝে মাঝে ভাবি- আমি কি অন্য দশজন মেয়ের মতো জীবন সংগী বেছে নিঃসঙ্গতা কাটাতে পারতাম না? হয়তো পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করতে পারিনি। কারন আমরা আমাদের জীবনসংগী বাছাই করি কথা শোনার জন্য, কথা বলার জন্য, যার সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগে, যার কথা শুনলে বছরের পর বছর সুখে দিন পার করা যায়। কিন্তু এটাও ঠিক যে, মাঝে মাঝে আমরা জীবনসাথী বাছাই করি তার রুপ, তার সউন্দর্য, তার অর্থবৈভব, তার সামাজিক মর্যাদা ইত্যাদি বিবেচনা করে। কিন্তু আমরা মাঝে মাঝে এটা ভুলেই যাই, সেই জীবনসাথী যাকে আমরা বাছাই করলাম, তার সাথে কারনে অকারনে, সময়ে অসময়ে আমার মনের কথাগুলি তাকে বলতে পারবো কিনা কিংবা সে আমার সেই সব ছোট ছোট অনুভুতি গুলির মুল্যায়ন করবে কিনা। যদি এর কোনো পরিবর্তন হয়, আর ঠিক তখন দেখা যায় যে, আমার বাছাই করা সাথী আমার কথাগুলি শুনতেই তার বিরক্ত লাগছে, কথায় কথায় ঝগড়া লেগে যাচ্ছে, আর তখন সম্পর্কগুলিতে মরচে ধরা শুরু করে। এটা একটা অনিশ্চিত পরীক্ষা। যাকে চিনিনা, যাকে কখনো অন্তরে রাখিনি, যে আমাকে জীবনের ৩০ বছর কোথাও জায়গা দেয় নি, হটাত করে তার সেই অন্দর মহলে আমি ঢোকে কতটা স্থান দখল করতে পারবো? সেখানে তো আরো হাজার হাজার ভাবনা, হাজার হাজার বিক্ষিপ্ত অনুভুতি, কিংবা অনেকের বসবাস রয়েছে। আমি কি হটাত করে এসেই তার সেই সব ভাবনা, অনুভুতি, আর অন্য মানুষদের পদরেখা ধুয়ে মুছে আমার নিজের করে দখল নিতে পারবো? হয়তো এটা কখনোই সম্ভব না। তাই আর আমার কোথাও যাওয়াওই হলো না। 

একটা জিনিষ জানো? লেখকের কোনো লেখা পড়ে যতোটা পাঠক মুগ্ধ হয়, তার থেকে বেশী মুগ্ধ হয় পাঠক যখন তার সাথে সামনে বসে কথা বলে।

০১/০৭/২০২৩-হাতে খুব সেকেন্ড জমা নাই

এই তো গত ২৯ জুন ২০২৩ তারিখে কুরবানীর ঈদ চলে গেলো। ছুটির দিনে আমি বাসাতেই থাকি, কোথাও ঘুরতে যাওয়া ভালোও লাগে না। বাসায় আমার স্ত্রী তার নিজের পছন্দের মতো কাজ করে, শপিং করে, বাইরে যায়, আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে, বেশ ভালোই তার সময় কাটে। আমারও সময় কাটে আমার মতো করে। ছোট মেয়ে আমেরিকায় থাকে, সেও ভালো আছে, বড় মেয়ে ডাক্তারী করে, সে ভালো নাই।

আমি আমার জীবনের অনেক হিসাব কিতাব করছি প্রতিদিন। প্রায় ৬০ বছর বয়স তো হয়েই যাচ্ছে। এর বয়সের অনেক চেনা পরিজন না ফেরার দেশে চলে গেছে, কেউ যাচ্ছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় আছে কবে তার শেষদিন চলে আসবে। কেউ উদাসীন ভাবে এখনো মনে করছে, অনেক বছর হয়তো বাকী আছে জীবনের, কেউ কেউ আবার এগুলি ভাবার প্রয়োজন ও মনে করে না কারন এর উপরে কারো হাত নাই। আবার কেউ কেউ এমনো ভাবছে, কিছুই তো করা হলো না নিজের জন্য, পরিবারের জন্য কিংবা বাচ্চা কাচ্চাদের জন্য, তাহলে এখন কি করা?

এসবই নিয়ে সমাজে মানুষের জীবন। কেউ পেয়ে হতাশ, কেউ না পেয়ে হতাশ, কেউ আবার পেতে পেতে আরো না পাওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টায় আরো বেশী হতাশ। কেউ যেনো সুখী নয়। কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত শতভাগ সুখী কিংবা খুশী নিয়ে মৃত্যু বরন করে নাই। কেউ তাদের চাহিদা পুরন হয়েছে এটা মনে করে আর কোনো কিছুই প্রয়োজন নাই এটা ভেবে তাদের প্রতিদিনের আফসোস থেকে বিরত হয় নাই। আর এই ট্রেন্ড আদিকাল থেকে শুরু হয়েছে, কিয়ামতের শেষদিন অবধি এই আফসোস মানুষের থেকেই যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, দেখা যাবে সেও তার সম্পদের উপর খুশী নয়, সে আরো চায়। হিসাব করে যদি দেখা যায় যে, তার জীবদ্ধসায় সে যা কামিয়েছে, সেই সব প্রতিদিন খরচ করলেও তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সম্পদে বা টাকা পয়সার কমতি হবে না, তারপরেও তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুসচিন্তাগ্রস্থ। সম্ভবত এটাই মানুষের বেসিক ইন্সটিংক্ট। কেউ সুখী না।

কতদিন বাচবো আমরা?

খুব বেশী হলে ৮০ কিংবা ১০০ বছর? কারো কারো ৬০ (যা আমার প্রায় সমাগত), কারো কারো ৭০, কিংবা ৭৫ অথবা বেশীজোর ৮০। যদি মিনিট সেকেন্ডের হিসাব করি, প্রতিটা সেকেন্ড পার হ ওয়া মানে প্রতিটি সেকেন্ড জীবন থেকে শেষ হয়ে যাওয়া। নতুন করে এও সেকেন্ড যোগ করার কোনো যন্ত্র, বা সিস্টেম তৈরী হয় নাই। এটা ফিক্সড। আর প্রতিটি সেকেন্ড পার হয়ে যাওয়া মানে আমরা সবাই জীবনের ফিনিশিং লাইনের কাছালাছি অগ্রসর হ ওয়া অথবা মৃত্যুর স্তার্টিং লাইনে পদার্পন করা। একটা সময় আসবে যখন সব সেকেন্ড শেষ হয়ে যাবে এবং আমরা আমাদের এই জীবনের যাত্রাপথ শেষ করে দেবো। কতটুকু আহরন করেছিলাম, কতটুকু রেখে গেলাম, কে আমার সেই আহরীত সম্পদ কিভাবে ভোগ করবে, কতজন প্রিয় মানুষ আমাদের জীবনে ছিলো কিংবা কতজনকে আমরা ঘেন্না করেছি, কে আমার শত্রু ছিলো, কে আমার মিত্র ছিলো, বা কাকে আমি প্রাধান্য দিয়েছি আর কাকে ঠকিয়েছি, এর সব কিছুর হিসাব সেদিন জমে থাকা সেকেন্ডের মান শুন্য হলে আর কোনো কিছুই আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।  

হাজার বছর বাচতে পারলে না হয় হাতে থাকা সেকেন্ডকে অপচয় করার বদান্যতা থাকতো। সেটা তো আর নাই। তাহলে এতো অল্প সংখ্যক সেকেন্ডের ঝুড়ি নিয়ে মন খারাপ, মনে কষ্ট, কিংবা পচা ব্যাপার স্যাপের গুলিতে সময় নষ্ট করার কোনো সময় কি আসলেই আমাদের আছে? আর ঠিক ে কারনে আমি মাঝে মাঝে যেটা ভাবি-

সময় দিন সেসব ব্যাপারগুলিতে যেখানে আপনি সুখী থাকেন। সময় ব্যয় করুন সেসব কাজে যেখানে আপনার মন প্রফুল্ল থাকে। জানি একা চলতে পারা যায় না, তাই পরিবার, বন্ধু বান্ধবের জন্ম। যদি মনে হয় এগুলি আপনাকে উতফুল্ল রাখে, সেখানে সময় দিন। সবাই আপনাকে হয়তো বরন করে নেবে না, তাহলে সেগুলি ভুলে যান। প্রয়োজন নাই সেসব যেসব আপনাকে হতাশ করে। জীবন একটাই। অন্যের সুখী হাস্যমুখ দেখে আপনি এটা ভাববেন না যে, সে হয়তো অনেক খুসিতে আছে। তাদের মতো করে চল্বার আপনার কোনো প্রয়োজন নাই।

কেউ যদি আপনার পাশে না থাকে কিংবা যারা পাশে থাকার কথা তারা যদি আপনার কষ্টের কারন হয়ে থাকে, ভুলে যান তাদের। যেহেতু আপনার খাওয়া, থাকার কিংবা চিকিৎসার অর্থের অভাব নাই, ফলে দিনভরে আকাশ দেখুন, বৈ পড়ুন, টিভি দেখুন, ভোর বেলা সকালে শিশির ভেজা রাস্তায় ফসলের ক্ষেত দেখুন, বিকালে আকাশ দেখুন, মেঘলা বৃষ্টির বাতাস উপভোগ করুন, নদীর ঘাটে বসে নোউকার পাল তোলা মাঝির ভাটিয়ালী গান শুনুন, রাখালের কন্ঠ শুনুন, ভরা পুর্নিমাতে কিংবা পুর্ন অমাবশ্যায় তীব্র জোয়ারে ফুলে উঠা সাগরকে দেখুন, বেরিয়ে যান কোথাও একা কিংবা কাজের কোনো মানুষকে নিয়ে। যদি সাথী সেটা যেইই হোক, হোক স্ত্রী বা পরিবারের কেউ, তাকে নিয়ে বেরিয়ে যান। অবুঝ পশু, কুকুর, বিড়ালের সাথে সময় কাটান, যদি পারেন, অবুঝ শিশুর সাথে অনেক অনেক সময় কাটান। তাদের নিষ্পাপ মুখের হাসি আপনাকে উতফুল্ল করবে।

আর এসবের মাঝে কখনোই আপনার স্রষ্টাকে ভুলে যাবেন না। কারন সব শেষে আপনাকে তার কাছেই যেতে হবে। আপনি আস্তিক বা নাস্তিক যাইই হন না কেনো, সব শেষে কেউ না কেউ তো আপনার সমস্ত কাজের জবাব্দিহিতা করতেই হবে। যদি কোনো স্রষ্টা না থেকে থাকে, তাহলে তো বেচেই গেলেন, জীবন শেষ তো কোনো কৈফিয়ত নাই, কিন্তু যদি থেকে থাকে? আর সেই “যদি” ই আপনাকে আপনার ে জীবনের সন কৃত কর্মের জবাব্দিহিতায় আকড়ে ধরবে। তাই অপশন খোলা রাখুন, স্রষ্টাকে আপনার প্রাত্যাহিক সময়ে রাখুন। মন ভালো থাকবে, প্রশান্তিতে থাকবে।

আজ থেকে ১০০ বছর আগের যেমন কাউকে আপনি চিনেন না, নাম ও জানেন না, তাদের ব্যাপারে যেমন আপনার কোনো জানার আগ্রহ ও নাই, তেমনি আজ থেকে শতবছর পরে আপনার ব্যাপারেও কেউ জানার আগ্রহ প্রকাশ করবে না, আপনার নাম ও জানবে না। তাই সেই শত কিংবা সহস্র বছর পরে যদি সত্যিই কিছু আবার এই পৃথিবী থেকে পেতে চান, তাহলে দুহাতে দান করুন।

পৃথিবী সত্যিই সুন্দর যদি আপনি মনে করেন এটা সুন্দর। সমাজের কে কি ভাবলো, সন্তানদের মধ্যে কে আপনাকে কতটুকু মুল্যায়ন করলো, সেটা নিয়ে ভাবার কোনো সুযোগ নাই। পৃথিবীর শুরু থেকেই সমস্ত বাবা মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য আপ্রান সব কিছু করে গেলেও সেইসব সন্তানেরা খুব অল্প সংখ্যক সন্তানেরাই তাদের বাবা মায়ের প্রতি ন্যায় বিচার করেছে।

তাই, নিজে আনন্দ করুন, নিজে পৃথিবীর সব কিছু আপনার সাধ্যের মধ্যে ভোগ করুন। হাতে খুব একটা সেকেন্ড জমা নাই।

২৭/০৬/২০২৩-প্রিগোজিন ক্যু নাকি ছদ্ধবেশ

বেশ কদিন যাবত আমি প্রিগোজিনের ক্যু এর চেষ্টা নিয়ে বিস্তর খবরাখবর পড়ছিলাম। অনেকগুলি প্রশ্নের উদয় হয়েছে। উত্তরগুলি জানা নাই তবে প্রশ্নগুলির মধ্যেই যেনো উত্তরগুলি লুকিয়ে আছে এটাই বারবার মনে হয়েছে। প্রশ্নটা হচ্ছে- প্রিগোজিন যা করেছে এটা কি ক্যু নাকি একটা গভীর ক্যামোফ্লাজের অংশ? এর কিছুটা উত্তর প্রিগোজিন নিজেই দিয়েছেন যে, সে রাশিয়ার সরকারকে উতখাত করতে এটা করেনি, মানে এটা ক্যু নয়। সে ন্যায় বিচারের আশায় মস্কোতে যেতে চেয়েছিলো যেখানে সেনাপ্রধান এবং ডিপুটি সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ।

যদি ক্যু না হয়ে থাকে, তাহলে এটা ছিলো একটা পরিকল্পিত নাটক যার পক্ষে বেশ কিছু জোরালো পয়েন্ট আছেঃ

(ক) ওয়েগনার গ্রুপ কিন্তু প্রিগোজিনের দ্বারা স্রিষ্টি নয়, না সে এর মালিক। ওয়েগনার গ্রুপ রাশিয়ান সরকারের অর্থে পরিচালিত হয়। প্রিগোজিন এর ম্যানেজারের মতো।

(খ) একটা জিনিষ খেয়াল করার মতো। প্রিগোজিন কয়েক মাস যাবত রাশিয়ান মিলিটারীর উর্ধতন কমান্ডারদের বিপক্ষে অনেক আজে বাজে মন্তব্য করার পরেও পুতিন প্রিগোজিনকে কোনো প্রকার ভতর্সনা করেন নাই, না তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এমন কি কোনো উর্ধতন কমান্ডারগনও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার মুখ খুলেনি। এর কারন কি? সম্ভবত পরিকল্পনাটা অনেক আগে থেকেই সাজানো হচ্ছিলো। আর প্রিগোজিনের এসব উলটা পালটা মন্তব্য অনেকটা সাজানো কোনো মহাপরিকল্পনারই অংশ বলে মনে হয়। তারমানে প্রিগোজিনকে এই কাজ করতে কেউ উদ্বুদ্ধ করেছে। সেটা কে? এক কথায় যদি উত্তর দেই-এটা পুতিন।

(গ) প্রিগোজিন রোস্তভ-অন-ডন মিলিটারী হেড কোয়ার্টার, এয়ারবেস, এবং বেশ কিছু মিলিটারী স্থাপনা জাষ্ট এলো আর দখল করে নিলো। এটা কি বিশ্বাস করার মতো যে, এতোগুলি মিলিটারী স্থাপনা এতোই অরক্ষিত যে, কোনো বাধা ছাড়া কেউ দখল করে নিতে পারে? তারমানে যে, তাকে দখল করতে দেয়া হয়েছে। কোনো গুলাগুলি নাই, কোনো ক্যাজুয়ালিটি নাই, কোনো বাধাও নাই। রোস্তভ-অন-ডন এর মেইন গেটে বিশাল ট্যাংক ঢোকে গেলো। ছাদের উপরে ওয়েগনারের সৈনিক, অফিসের সামনে সৈনিকেরা এমনভাবে গোল চত্তরে অস্ত্র নিয়ে বসে আছে যেনো, কোনো লম্বা সফরের মধ্যে মাঝে একটা বিরতি। কেউ ভয়ে নাই। শুধু তাইই নয়-রাশিয়া সরকার প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে প্রায় ১২ ঘন্টা কোনো প্রকার একশানেই যায়নি। আরো মজার ব্যাপার হলো, জনসাধারনের মাঝে কোনো প্রকার ভয়ের ছাপও দেখা যাচ্ছিলো না। সবাই যেনো স্বাভাবিক কাজকর্ম করছে, ওয়েগনার সদস্যদের সাথে ছবি তোলছে, হ্যান্ডসেক করছে, চা কফি পান করছে। একেবারেই সহজ ব্যাপার মনে হচ্ছিলো। অন্যদিকে প্রিগোজিন এবং তার দুই উর্ধতন কমান্ডার রোস্তভ-অন_ডন এর সামনে গাছের নীচে রিল্যাক্স ভংগিতে যেনো কোনো একটা পুরানো রম্য ঘটনা নিয়ে গল্পে মশগুল এমনভাবে একটা ভিডিও দেখা যাচ্ছে। তারমধ্যে কোনো প্রকার দুসচিন্তার ছাপ ছিলো না যে, সে এমন একটা রাষ্ট্রোদ্রোহী কাজে লিপ্ত হয়েছে। খুব সুক্ষভাবে চিন্তা করলে আরেকটা ব্যাপার চোখে পড়বে। ঘটনাটা ঘটেছে শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির জাষ্ট আগে। শনিবার, রবিবার বন্ধ। জনসাধারন হলিডে মুডে ছিলেন। অফিশিয়াল কোনো প্যারা নাই। আবার চকলেট দেয়ার মতো সরকার সোমবারকেও ছুটি ঘোষনা করেছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার।

(ঘ) প্রিগোজিন বক্তব্য দিয়েছে যে, সে তার বাহিনীকে নিয়ে মস্কোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে যা প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দূরে। ওয়েগনারের মোট সদস্য প্রায় ২৫০০০। এর মধ্যে মাত্র হাজারখানেক সদস্য অংশ নিয়েছে। ওয়েগনারের আর বাকী সদস্যরা কোথায় ছিলো? এই এক হাজার সৈন্যের কিছু অংশ রোস্তভ-অন-ডনে, কিছু ভোরোনেজ এলাকায়, কিছু লিপিটস্কে মোতায়েন করে বাকী হাতে গোনা কিছুসংখ্যক সৈন্য আর গুটিকতক ট্যাংক তাও আবার পুরু খোলা ময়দানের মতো রাস্তা দিয়ে ১৩০০ কিলোমিটার দূরে ২০ ঘন্টা আল্টিমেটামে মস্কো দখল করার অভিপ্রায়। মস্কোতে প্রায় ১৫ মিলিয়ন লোক বাস করে, শত শত গ্যারিশন, মিলিটারী স্থাপনা, এইসবের কোনো ক্যালকুলেশন না করেই প্রিগোজিন রওয়ানা হয়ে যাবে মস্কোতে একটা ক্যু করার জন্য? অবিশ্বাস্য মনে হয় না এটা? তারমধ্যে ট্যাংক রিফুয়েলিং দরকার, কোনো এয়ার সাপোর্ট নাই, না আছে কোনো আর্টিলারী সাপোর্ট। প্রিগোজিন কি জানে না যে, রাশিয়ার একটা এয়ার সর্টিই যথেষ্ঠ প্রিগোজিনের ট্যাংক বহরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য। প্রিগোজিন একজন সমর অভিজ্ঞ মানুষ। তার দ্বারা এমন একটা পরিকল্পনা কি বাস্তবে যায়?

(ঙ) পুটিন তার ভাষনে বললেন-তিনি মাত্র একদিন আগে সমস্ত ডিভিশনাল কমান্ডারস, ইন্টিলিজেন্স হেড কোয়ার্টারস, ফিল্ড কমান্ডার্সদের সাথে একযোগে কথা বলেছেন (কারো কারোর সাথে সরাসরি ফেস টু ফেস, কারো সাথে ভিডিও লিংককে)। এই সময় কোনো সাংবাদিক হাজির ছিলেন না। তিনি আসলে কি কথা বলেছেন? রাশিয়ার ইন্টিলিজেন্স কি এতোটাই ঘুমন্ত যে, প্রিগোজিনের এমন একটা ক্যু তাদের কারোরই নজরে আসবে না, কোনো আগাম তথ্য থাকবে না? এটা কি হতে পারে? এখন যদি প্রশ্নটা অন্যভাবে করি যে, প্রিগোজিন নাটকটা করার জন্যই পুতিনের এই সিক্রেট দরবার করেছিলো যেখানে সব কমান্ডার্স, ওয়েগনার গ্রুপ, ইন্টিলিজেন্স ডিপার্ট্মেন্ট সবাইকে অনবোর্ড করা এবং প্রিগোজিন নিজেও একটা ভূমিকার অংশ!! এখানে মনে রাখা দরকার যে, প্রিগোজিন এবং পুতিন তারা বাল্যকালের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারমানে ধরে নেয়া যায়, এখানে পুতিন থেকে শুরু করে সবাই যার যার অংশে একটা রিয়েল অভিনয় করেছে। স্টেজ মেনেজমেন্ট এন্ড গুড রিহার্সড। প্রিগোজিন সেটাই করেছে যেটা পুতিন তাকে করতে বলেছে। নাটকের স্ক্রিপ্ট অনুসারে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে ইমিডিয়েট ট্রিজনের মামলা দেয়া হলো। কিন্তু তাকে কিছুতেই এরেষ্ট করা হলো না। অতঃপর, দিনভর লোক দেখানো পর্দার আড়ালে বসে বেলারুশ প্রেসিডেন্টের একটা অনুরোধে প্রিগোজিন এমন একটা রাষ্ট্রোদ্রোহী কাজ থেকে হুট করে ব্যাক করলো, ওয়েগনার সদস্যদের ইমিডিয়েট সব জায়গা থেকে সরিয়ে নেয়া হলো। একবার কি মনে আসে না যে, বেলারুশ যেটা কিনা রাশিয়ার ট্রাষ্টেড বন্ধু, সেখানে এসাইলাম নেয়া কি প্রিগোজিনির জন্য বোকামী নয় যদি আসলেই এটা স্টেজ মেনেজড না হয়? বেলারুশ প্রেসিডেন্ট হচ্ছে একটা মাস্ক কাম অপারেশনের বৃহৎ পরিকল্পনার আরেক চাপ্টার। একটা পয়েন্ট মনে রাখা দরকার যে, ওয়েগনার এবং প্রিগোজিন খাস রাশিয়ান এবং তাদের দেশপ্রেমিক মনোভাবে কারো কোনো মতৈক্য নাই। যাক সে কথা। একটা ক্যু হবে অথচ কোনো কিছুই ধংশ হবে না, এতে তো মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, সন্দেহ আসতে পারে। তাই এই নাটকে কয়েকটা হেলিকপ্টার এবং ট্যাংকও বিনাশ দেখানো হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিন্তু কেউ কারা এই ক্রাসড হেলিকপ্টারে ছিলো সেটার নাম জানা যায় নাই। এরমানে এসব টার্গেটেড ট্যাংক এবং হেলিকপ্টার ছিলো রেডিও কন্ট্রোল্ড। এর ভিতরে কোনো পাইলট কিংবা ট্যাংকের লোকই ছিলো না। সোস্যাল মিডিয়া, কিংবা ফেক নিউজ সার্ভ করার মাধ্যমে এই নাটকটা আরো বাস্তব রুপ দেয়া হয়েছে।

(চ) এখানে আরো একটা পয়েন্ট না বললেই নয় যে, প্রিগোজিন যে কমান্ডারদের নামে অভিযোগ করতে এবং ন্যায় বিচার পেতে মস্কোতে যাচ্ছিলেন, তাদের ব্যাপারে আজো কোনো তদন্ত হচ্ছে না কেনো? অথবা তাদেরকে ইমিডিয়েট দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার তো করা উচিত। প্রিগোজিনের এমন একটা ক্যু প্লেনের কিছুই না জানার কারনে রাশিয়ার খোদ ইন্টিলিজেন্স বাহিনী প্রধানকে কোনো কৈফিয়ত চাওয়া হলো না?

(ছ) যখন প্রিগোজিন তার ভূমিকা পালন করছিলেন রোস্তভ-অন ডনে, ঠিক তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন মিনিষ্ট্রি অফ ডিফেন্সের ডিপুটি। কেনো? ধোয়াশা মনে হচ্ছে না? ক্যু হচ্ছে, অথচ মিনিষ্ট্রি অফ ডিফেন্সের ডেপুটি সেইখানে ক্যু লিডারের সাথে কফি পান করছেন। একেবারেই যায় না।

(জ) প্রিগোজিন এখন বেলারুশ যাবেন, তার মামলা তুলে নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হলো, কিন্তু মামলা এখনো তুলে নেয়া হয় নাই। প্রিগোজিন কেনো এতো বিশ্বাস করছেন পুতিনকে যে, প্রিগোজিনের সব পরিকল্পনা বাতিল করলে মামলা না তোলা পর্যন্ত সে স্থান ত্যাগ করবে? কারন প্রিগোজিন জানেন, এগুলি কিছুই না।

প্রিগোজিনের এবারের এসাইন্মেন্ট বেলারুশিয়ান পিএমসিকে প্রশিক্ষন দেয়া। এটা প্রিগোজিনের জন্য কোনো নির্বাসনও নয়, ভেকেশনও নয়। একটা বিশাল দায়িত্ব। আর হয়তো পুতিন এটাই প্রিগোজিনের কাছ থেকে চাচ্ছেন। তার পরবর্তী টার্গেট হয়তো পোল্যান্ড এবং সার্বিয়া। প্রিগোজিন তো আগেই একবার ওয়াদা করেছিলো যে, সে পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটা ভাঙ্গনের রুপরেখা দিবেই। এবার হয়তো সেইটার পরিকল্পনা করা হলো তাকে বেলারুশ পাঠিয়ে। ওয়েগনার গ্রুপ পোল্যান্ডকে এমনভাবে এজিটেটেড করবে যাতে পোল্যান্ড বেলারুশকে অথবা ইউক্রেনকে আক্রমন করে। যদি বেলারুশকেই পোল্যান্ড আক্রমন করে, ইতিমধ্যে পুতিন বেলারুশে নিউক্লিয়ার ঘাটি স্থাপনা সম্পন্ন করে ফেলেছেন। পোল্যান্ডের জন্য কাজটা সহজ নয়। অংকটা মিলে যাচ্ছে প্রায়।

(ঝ) এখানে কয়েক মাস আগের রাশিয়ার একটা ক্যামোফ্লাজ মুভের উদাহরন টানা যেতে পারে। দক্ষিন ইউক্রেনে যখন ইউক্রেন অফেন্সিভ অপারেশনের পরিকল্পনা করছিলো, তখন রাশিয়া একটা ‘দাবার গুটি’ চেলেছিলো যে, রাশিয়া হটাত করে তার উত্তর সেক্টর থেকে তাদের ইউনিটসমুহ উইথড্র করে ইউক্রেনের আক্রমন ঠেকাবার জন্য রাশিয়ার দক্ষিন সেক্টরে মোতায়েনের জন্য সরে আনার ভান করে। যা কিনা ন্যাটো কিংবা ইউক্রেন ভাবতেই পারে নাই রাশিয়া এটা করবে। কিন্তু আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছিল ন্যাটো এবং ইউক্রেনের জন্য যে, রাশিয়া তার সেই উত্তর সেক্টরের ইউনিট সমুহকে দক্ষিনে যাচ্ছে বলে একটা ফেক মুভ দেখিয়ে পুনরায় উত্তরেই গতিপথ পালটে পুরু ইউক্রেন বাহিনীকে এন্সার্কেল করে ফেল্লো। কিন্তু ততক্ষনে ইউক্রেনের হাতে আর কোনো সময় ছিলো না। ইউক্রেন চরমভাবে পরাস্ত হয়ে ভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

(ঞ) ক্যু বা ট্রিজনের আবরনের প্রতিরক্ষা হিসাবে রাশিয়া তার বিশাল সামরিক বাহিনীকে ন্যাটোর অগোচরে উত্তরে, ভোরোনেজের পশ্চিমে এবং বেলগোরোদের উত্তরে মোতায়েন করে সব বাহিনীকেকে ডিস্পার্স করে বর্ডারে নিয়ে এলো। নতুন অক্ষে ফোর্স মোতায়েন করা হলো এবং ন্যাটোকে রাশিয়া এই পরিকল্পনা বুঝতেই দিলো না। এমনিতেই এই অঞ্চলে রাশিয়ার বিশাল সামরিক মুভমেন্ট ন্যাটো কিংবা পশ্চিমারা কোনোভাবেই সহজ করে নেবার কথা না। তারমানে কি এটা বলা যায় যে, এটা Cover a redeployment of Russian Troops?

(ট) এই নাটকে আরো একটা রেফারেন্স টানা হয়েছে-১৯১৭ সালের বলসেভিক মুভমেন্টের। প্রায় হাজার বছর আগের ইতিহাস এবং সেই জিওগ্রাফির রুপরেখা টানা। কেনো? আসলে এই মেসেজটা প্রিগোজিনির ট্রিজনের বা ক্যু এর মধ্যে পড়ে কি? এটা আসলে সেই বার্তা- যা ওডেসা রিজিয়ন, সাউথ অফ আর্ক, কিয়েভ, সুমি, এবং খারকিভকে উদ্দেশ্য করেই বলা। আপাতত খারকিভ তার টার্গেট। কে জানে বেলারুশে যাওয়ার প্রাক্কালে সেই আগের ‘দাবার গুটির’ চালের মতো বেলারুশ না গিয়ে হটাত ইউ-টার্ন নিয়ে ওয়েগনারের দল খারকিভ অপারেশনে নিমগ্ন থাকবে?

(ঠ) আরেকটি কথা শোনা যাচ্ছে যে, প্রিগোজোনি এই নাটকটা এমনভাবে অভিনয় করেছে যে, সম্ভবত সে এখান থেকে পশ্চিমাদের কাছ থেকে বড় অংকের একটা লাভ বা উৎকোচ গ্রহন করেছে। এটা প্রিগোজিনের পক্ষে করা সম্ভব। হয়তো এটা পুতিন নিজেও এলাউ করেছেন। এর পিছনের ব্যাখ্যা হচ্ছে-পশ্চিমারা দাবী করছে যে, তারা প্রিগোজিনির এই ক্যু সম্পর্কে অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে জানতো। এর অর্থ, প্রিগোজিন পশ্চিমাদেরকেও ধোকা দিয়েছে হয়তো।

২১/০৬/২০২৩- কোকোকে ছেড়ে দিতে হবে

অনেক শখ করে একটা জার্মান শেফার্ড এনেছিলাম। ওর বয়স যখন ৩ মাস, তখন থেকে কোকো আমার বাসায়। বাচ্চা বয়সে যা খেতে দিয়েছি, সেটাই খেয়েছে, বিশেষ করে নরম ভাত আর মুরগীর মাংশ। সাথে পেট ফুডস থাকতো, একটু দই দিলে মনে হতো অমৃত খাচ্ছে। নাক ডুবিয়ে খেতো।

মিটুলের কারনে বাসায় কোকোর প্রবেশ নিষেধ, তাই ওকে আমার মতো করে কোনো ট্রেনিংই  দিতে পারিনি। কেয়ারটেকার শাহনুরের কাছেই সারাক্ষন থাকে, ফলে আমার থেকে শাহনুরের প্রতিই ওর আনুগত্য বেশী। কিন্তু যখনই অফিসে যাই কিংবা অফিস থেকে আসি, উচ্ছল ঢেউয়ের মতো আমার গাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করতে করতে অপেক্ষা করে কখন আমি গাড়ি থেকে বের হবো। যেই না গাড়ি থেকে বের হয়েছি, মনে হয় ছোট বাচ্চার মতো আমার কোলে, পিঠে আছড়ে পড়ে। কি শার্ট পড়েছি, কি জামা পড়েছি সেটা তো ওর কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়, ওরা কাপড় নোংরা করে বটে কিন্তু আনুগত্যের চরম শিখরে ওদের ভালোবাসা। যারা কুকুর পালে না, তারা হয়তো বুঝবেই না কুকুরের আনুগত্য কি জিনিষ। কোকোকে খাওয়ানোর জন্য আমার কোনো বাজেট নাই। তারপরেও ওর পিছনে মাসে প্রায় হাজার দশেক খরচ তো পরেই।

তাহলে কোকোকে কেনো ছাড়তে হচ্ছে?

মাঝে মাঝে কোকো এখন সব খাবার খেতে চায় না, মাংশ দিলেও খেতে চায় না, মুরগী কিংবা গরুর গোস্ত যেনো তার এখন আর ভালো লাগে না। নরম ভাত, কিংবা পেট ফুডস। একেবারেই খেতে চায় না। আবার সব খাবার খায়ও না। ফলে আমার চিন্তা হয় প্রানীটাকে কোনো কষ্ট দিছি কিনা। ওরা কথা বলতে পারেনা, কিন্তু ক্ষুধার সময় অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে যেনো কি বলতে চায়। প্রচুর দৌড়াতে পারে, কিন্তু আমার সময় হয় না কোকোকে নিয়ে বের হবার। হয়তো এটাও একটা ব্যাপার ওর না খাওয়ার পিছনে।

ওর এই না খাওয়ার কারনে ইদানিং কোকো একটু কাহিল হয়ে গেছে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। কোনো অসুবিধা পান নাই। তারপরেও কয়েকটা ভিটামিন দিয়েছে। খাইয়েছি। কিন্তু খুব একটা লাভ হয় নাই। খাবারের প্রতি ওর অরুচিটা রয়েই গেছে মনে হয়। তাই ওর অসুবিধার কথা চিন্তা করে আমার বন্ধু মহলে, ফেসবুকে একটা সংবাদ দিয়েছি যে, কোকোকে যারা নিজের হাতে আদর করে সময় দিয়ে ভালোভাবে রাখতে পারবে, আমি তাদেরকে দত্তক দিয়ে দেবো। অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে, অনেকেই পারেনা আজই নিয়ে যায় এমন। কিন্তু আমি জানি জার্মান শেফার্ড পালা খুব সহজ কাজ না। তারপরেও হয়তো অনেকে পালতেও পারেন। যাকেই দেবো, তার বাড়িঘর, আর্থিক সামর্থ দেখেই আমি কোকোকে দত্তক দেবো এটা সিউর। আর যদি দেখি, ওর আরো কষ্ট হবে, তাহলে হয়তো দেবোই না। অন্তত আমি তো ওকে কিছুটা হলেও সময় দিতে পারবো।

আমি কিংবা মিটুল যখন আমাদের ঘরে ক্যাচিগেট খুলি আর যদি কোকো গ্যারেজে ছাড়া থাকে, দুই লাফে গ্যারেজ থেকে আমাদের ঘরের দরজার সামনে এসে হাজির। কিংবা কাউকে আমি বা মিটুল নাম ধরে জোরে ডাকতে গেলে কোকো আমাদের কণ্ঠস্বর চিনে, যদি ছাড়া থাকে এসে যাবে, আর যদি ওর ঘরে বন্দি থাকে, উচ্চস্বরে ডাকাডাকি শুরু করবে।

আমি জানি যদি কোকোকে দিয়েই দিতে হয়, কোকো হয়তো অন্য মালিকের অধীনে গিয়ে আমাদের মিস করবে। হয়তো খুজবে আমাকে সেই হাচির মতো যে কিনা তার মনিবের জন্য গোটা ১০ বছর জাপানের সেই রেলওয়ের প্লাটফর্মে অপেক্ষা করেছে কখন তার মনিব আবার ফিরে আসবে। অবশেষে হাচি ১০ বছর পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। জাপান সরকার সেই হাচির স্মরণে তাকে সম্মান জানিয়ে সেই প্লাটফর্মেই একটা মনুমেন্ট তৈরী করেছে। হাচি নাই, কিন্তু আছে সবার মাঝে। এটাই কুকুর ভক্তি।

আমি নিশ্চিত দিয়ে বলতে পারি, একদিন কোকো নিজেও আমাকে মিস করবে। আমি তো মিস করবোই। এখন যে স্ত্রী কোকোকে রাখতে দিলো না, এক সময় হয়তো সেইই কোকোর মতো একটা জারমান শেফার্ড থাকলে হয়তো ভালো হতো এর অভাব সে বুঝবে।

পরিবারে আমি অশান্তি চাই না, তাই কোকোকে ছেড়ে দিলাম। বা দিচ্ছি।

কোকো ভালো থাকুক আমি চাই, কিন্তু সে কতটা ভালো থাকবে সেটা আমি জানি না। কোকো আমার বাগান মিস করবে, কোকো তার ঘর মিস করবে, কোকো তার পরিচিত পরিবেশ মিস করবে। কোকো শাহ্নুরকে মিস করবে।

কোকো হয়তো জানেই না যে, তাকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি। একটা সন্তান ছেড়ে দেয়ার মতো একটা কষ্ট।   

 

২১/০৫/২০২৩-পরিবার থেকে নিজে বড়

কোনো মতবাদ কিংবা প্রচলিত প্রবাদের বাইরে গিয়েই বলছি- দেশের থেকে সম্ভবত সমাজ বড়, সমাজের থেকে পরিবার আর পরিবারের থেকে বড় নিজে। এটাই সত্য। যখন একাই এসেছি এই দুনিয়ায় তখন আমি দেশ নিয়ে আসিনি, আমি সমাজ নিয়ে আসিনি, না আমি পরিবার সাথে করে নিয়ে এসেছি। আমি সম্পুর্ন একা এবং কোনো কিছু ছাড়াই এই দুনিয়ায় এসেছি। এই দুনিয়ায় এসে আমি যা পেয়েছি- তা হলো, দেশ, সমাজ আর পরিবার। এটা সম্ভবত শুধু মানুষের বেলায়ই প্রযোজ্য।

তাকিয়ে দেখুন একটা বন্য প্রানীর দিকে। তার সমাজ থাকলেও সে সেই সমাজের কোনো আইনের মধ্যে নিবন্দিত নয়। যখন তার যা খুশী সেদিকেই তার বিচরন। ক্ষুধায় তাকে অন্য কোনো প্রানী খাদ্য জোগায় না, শীতে অন্য কোনো প্রানী তাকে গরমে আচ্ছাদিত করে না। সে মরে গেলেও কেউ আফসোস করে না। কিছু কিছু প্রানী হয়তো দল বেধে চলে বটে কিন্তু সেই দলের জন্য কেউ কোনো দায়িত্ত নিয়ে এটা করে না যে, সবাইকে বাচিয়ে নিজে বাচবো। তারা সবাই যার যার জীবন নিয়ে দলবদ্ধভাবে একাই চলে। তারা এটা করতে পারে কারন, তাদের চাহিদা শুধু খেয়ে বেচে থাকার। ওদের পেট ভরে গেলে অতিরিক্ত আর কিছুই সঞ্চয়ের চিন্তা থাকে না, তারা অট্টালিকা, গাড়ি বাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছুই রেখে যায় না। এ জন্যই ওরা সর্বদা সুখী। ওরা কারো আক্রমন মনে রাখে না, কাউকে আক্রমন করলেও সেটা নিয়ে আর ভাবে না। ব্যাপারটা সেখানেই মিটে যায় যেখানে শুরু এবং শেষ হয়েছিলো।

আমরা প্রত্যেকেই একা, আর এই একাকীত্ব আমরা বুঝতে পারি বয়সের ভাড়ে যখন আমরা নেতিয়ে যাই। সারাজীবন পরিবারের জন্য আমরন কষ্ট করেও আমরা সেই মানুষ গুলির নাগাল পাই না যাদের জন্য আমরা আমাদের সব সুখ জলাঞ্জলী দিয়ে ভেবেছিলাম-“একদিন আমি সুখী হবো”/ একদিন আমি সুখী হবো-এই মিথ মানুষের জীবনে কখনোই আসে না। আসবেও না। তাহলে কেনো এই মিথ? এটা একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না।

আমি আজকের দিনের সমাজের কাছে কিংবা পরিবারের কাছে আমার এই মিথ প্রকাশ করা মানে আমি সবার কাছেই একটা নেগেটিভ মাইন্ডেড মানুষের পরিচয় বহন করবো, এটাই এই সমাজের মিথ। কিন্তু একবার ভাবুন তো? আমি সারাজীবন কষ্ট করে আমি একটা সাম্রাজ্য তৈরী করবো, আর সেই সাম্রাজ্যে আমার কিছু পরিবারের সদস্য আমার সমস্ত মিথ ধুলোয় নষ্ট করে দিতে একটু সময় ও কার্পন্য করবে না, তাহলে কেনো আমাকে এই মিথ বিশ্বাস করতে হবে? তাই আমি সব সময় আমার পরিবারের সদস্যদের বলি- আমার মতো করে চলতে না পারলে আমাকে নিয়ে টানাহেচড়া করো না। তোমরা তোমাদের ভাগ্যকে বদলে দাও। আমার ভাগ্যের কোনো কিছুই তোমাদেরকে পাল্টাতে হবে না। না তোমরা আমার ইজ্জতকে বিনা কারনে এতোটুকু নীচে নামিয়ে আনো যেখানে আমি কখনো যেতে চাই না। তোমাদের এই সমাজে আমি যতটুকু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি, আমাকে সেই ততটুকুতেই থাকতে দাও। তোমাদেরকে সাথে নিতে গিয়ে আমাকে যেনো সেই অর্জিত ইজ্জতটুকু আমাকে ক্ষয় করতে না হয় শুধু এটুকু রহম করো। আর যদি সেটাও করতে না পারো- তাহলে তুমি বা তোমরা যেইই হও, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি একা এসেছি, একাই থাকতে অভ্যস্থ হয়েছি।একাই থাকতে পারবো।

২৮/০৪/২০২৩-Dollar Decline vs. Dollar Collapse

আগের পর্বে বলেছিলাম যে, Why a dollar decline is inevitable, and a collapse is unimaginable.

যখন অন্য দেশের লোকাল কারেন্সীর তুলনায় ডলারের মান বা ভ্যালু কমে যাবে তখন ডলার ডিক্লায়েন করছে বলা হবে। এর মানে হলো, অন্য কারেন্সী দিয়ে আগের তুলনায় বেশী ডলার কেনা যাবে অথবা আগের যেই ডলার দিয়ে কোনো একটি পন্য যে দামে কেনা যেত, এখন সেই পন্য তার থেকে কম দামে কিনতে পারবে মানুষ অথবা একই পন্যের দামের বেলায় ডলার বেশী পে করতে হবে আমেরিকান সরকারকে। এটা সব দেশের কারেন্সীর বেলাতেই প্রজোজ্য। আমরা এখানে শুধু ডলার নিয়ে আলাপ করছি বলে ডলারের ভ্যালুর কথা বললাম।

ডলারের মান কমে যাওয়া মানেই ইউএস ট্রেজারীর ভ্যালুও কমে যাওয়া। আগে যদি ইউএস ট্রেজারীতে ২ মিলিয়ন ডলার থাকতো, ডলার এর মান কমে যাওয়াতে সেই ২ মিলিয়ন ডলারের ভ্যালু হয়তো দারাবে পুর্বের দেড় মিলিয়নের মতো। আর এতে সুদের হার বাড়বে, মর্টগেজের পরিমান বাড়বে ইত্যাদি। অন্যভাবে বললে-যে পরিমান ডলার ইউএস ট্রেজারীতে আছে, তার ভ্যালু আর আগের মতো থাকবে না।

দূর্বল ডলারের মাধ্যমে কম বিদেশী গুডস পাওয়া যাবে। এতে আমদানীর দাম বেড়ে যাবে, আর আমদানীর দাম বেড়ে গেলেই মুদ্রাস্ফিতি হবে। বিপদ হলো-ডলারের মান কমতে থাকলেই ইনভেষ্টররা তাদের হাতে থাকা দীর্ঘ মেয়াদী ট্রেজারী বন্ডগুলি হাত থেকে ছেড়ে দিতে থাকে। স্টক মার্কেটের মতো। কোনো শেয়ারের দাম কমতে থাকলে যেমন প্লেয়াররা শেয়ার ছেড়ে দিতে থাকে যদি অনেক অলস মানি হাতে না থাকে। এটা প্রায় এ রকমের।

এ যাবতকাল তেল এবং অন্যান্য কমোডিটিজ শুধুমাত্র ডলারের মাধ্যমে হবে এটাই ছিলো কন্ট্রাক্ট। ফলে ডলার ভ্যালুর সাথে কমোডিটির প্রাইস ইনভার্স রিলেশনে আবর্তিত হয়। ডলারের দাম বাড়লে কমোডিটির দাম কমে, আর ডলারের দাম কমলে কমোডিটির দাম বেড়ে যায়।

আমদানী-রপ্তানীতে ডলারের এই ফ্লাকচুয়েশনে যারা রপ্তানী মুখী ব্যবসায়ী তাদের লাভ হয়। আর যারা আমদানী নির্ভর ব্যবসায়ী তাদের অনেক ক্ষতি হয়।

এবার আসি, কি কি কারনে ডলার ডিক্লায়েন করতে পারে বা করে

কোনো দেশের কারেন্সী পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে দুটি কারনে ডিক্লায়েন করেঃ

(১)        ধনী ব্যবসায়ীরা সরকারকে ট্যাক্স ফাকি দিয়ে

(২)       অনেক ব্যাংক ডলারে ট্রেডিং করেও ডলার নমিনেটেড এসেটসকে লুকিয়ে ট্যাক্স মওকুফ করে ক্লায়েন্টকে সুবিধা দেয় এবং নিজেরা লাভ করে। শুধু লস করে সরকার। তাতে ব্যাংক বা ক্লায়েন্ট কারো ক্ষতি হয় না।

আর এ কারনে ইউএস সরকার ২০১০ সালে ফরেন একাউন্ট ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স আইন জারী করে যাতে এই দুষ্টু কাজগুলি কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যাংক না করতে পারে। আর এর কারনে আমেরিকান অনেক ব্যবসায়ীদেরকে ফরেন ব্যাংকগুলি ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে চায়। যদি এই রকমভাবে ফরেন ব্যাংকগুলি ইউএস কাষ্টোমারকে ছেড়ে দেয় তাহলে ডলার ডিক্লায়েন করবেই। কারন তখন ডলার রোলিং করবে না।

(৩)      ৩য় পয়েন্ট হচ্ছে-যখন ডলারের বিপরীতে অন্য আরেকটি কারেন্সী সমান্তরালভাবে ট্রেডিং কারেন্সী হিসাবে বাজারে চলমান হয়ে যায়, তখন একচ্ছত্র ডলারের আধিপত্য থাকবে না। এরমানে যখন ডলার ১০০% কারেন্সী ট্রেডিং হতো সেটা এখন ১০০% না হয়ে কম পার্সেন্টজী নেমে আসবে। মানে ডলার ডিক্লায়েন করছে। এই বিকল্প কারেন্সী যতো দ্রুত বিকাস ঘটবে ডলার ততো দ্রুত মার্কেট থেকে তার আধিপত্য হারাবে। এরমানে কিন্তু ডি-ডলারাইজেশন না, বা ডলার কলাপ্সড না। শুধু গ্লোবাল মার্কেটে এর আধিপত্য থাকবে না। এতাই এখন হতে যাচ্ছে।

এবার আসি বর্তমানে এই ডলারের অবস্থা কি

প্রায় ৭৯ বছর যাবত চলা গ্লোবাল কারেন্সী ডলার। অন্য কোনো বিকল্প কেউ তৈরী করতে পারে নাই, চেষ্টা করলেও সম্ভব হয় নাই। কিন্তু গত ২০ বছর যাবত আমেরিকা এই ডলারকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে প্রায় ২০টি দেশের রিজার্ভ ব্লক করে দিয়েছে। তাতে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত দেশসমুহ এবং যারা নিষেধাজ্ঞায় পড়ে নাই, তারাও তাদের রিজার্ভ মুদ্রা নিয়ে সংকিত। রিজার্ভ নিয়ে বিভিন্ন দেশসমুহ আমেরিকার একচ্ছত্র ডলারের রিজার্ভ নিয়ে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।

চীন বহু আগে থেকেই ডলার রিজার্ভের বিকল্প নিয়ে ভাবছিলো। যেমন চীন ২০১৩ সালে ব্রিটিশ ইনভেষ্টদেরকে ১৪ বিলিয়ব ডলার সমপরিমান তাদের মার্কেটে চীনা কারেন্সীতে ইনভেষ্ট করিয়েছে। চীন ক্রমাগত তার এই প্রকারের ইনভেষ্টমেন্ট বাড়িয়েই চলছে। এর পরিমান এখন প্রায় ট্রিলিয়ন ডলারের সমান। মজার ব্যাপার হলো-এই ইনভেষ্টমেন্ট সে আরো বাড়াতে পারবে যখন সে ক্রমাগত ইউএস ডলার এর রিজার্ভ বাড়াতে থাকবে। কারন তার বিপরীতে তাদের লোকাল মুদ্রাকে অন্য দেশের ইনভেষ্টদেরকে আকৃষ্ট এবং নিশ্চয়তা বিধান করে করে চীনা মুদ্রায় আটকে ফেলবে। এটা এক দিনে বা ২ বছরে হয়তো হবে না কিন্তু একসময় চীনা মুদ্রা বিকল্প হিসাবে আংশিক হলেও দাঁড়িয়ে যাবে। আরেকটা মজার ব্যাপার হল, চীনাদের কাছেই আমেরিকার ফরেন লোন আছে প্রায় ৩১ ট্রিলিয়ন। আর ফরেন লোন কখনোই কোনো দেশ এমনকি আমেরিকাও গায়ের জোরে ডিফল্ট করতে পারবে না।  এটা পেমেন্ট করতেই হবে।

অনেক দেশই আমেরিকার এই রিজার্ভ আটকে দেয়াকে পছন্দ করছিলো না। এবার ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে রাশিয়া, ইন্ডিয়া, আফ্রিকা, চীন, মিডল ইষ্ট, ইরান, ভেনিজুয়েলা, ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা ইত্যাদি দেশসমুহ একটা জোট করেছে যে, তারা ডলারের বিপরীতে হয় তাদের লোকাল কারেন্সী অথবা কোন একটা পার্টিকুলার মুদ্রায় ট্রেডিং করতে পারে কিনা। আর সেটা এখন খুব জোড়েসোরে চলছে, যার নাম “ব্রিক্স কারেন্সী” আর সেটা চীনা মুদ্রায়।

একটা সময় আসবে যখন ডলার ছাড়া ৯৭% কোনো ট্রেডিং সম্ভব হতো না, সেখানে ডলারে ট্রেডিং হয়তো নেমে ৫০% এ। এভাবে এই ট্রেডিং এর পার্সেন্টেজ কমতে থাকলে একদিকে ডলার গ্লোবাল কারেন্সী হিসাবে যেমন ডিক্লায়েন করতে থাকবে অন্যদিকে ডলার যে একটা অস্ত্র এটা আর আমেরিকা ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু তাতে যেটা হবে, ডলার হেজিমোনি হারানোর কারনে আমেরিকার অর্থনিতির উপর একটা বড় প্রভাব পড়বে। ইচ্ছে করলেই আমেরিকা আর ফিয়াট কারেন্সীর দোহাই দিয়ে যতো খুশী ডলার প্রিন্ট করতে পারবে না। আর করলেই ডলার আরো ইনফ্লেশনে পড়তে বাধ্য। প্রকৃত সত্য হচ্ছে- বিভিন্ন দেশের রিজার্ভ কারেন্সীকে আমেরিকার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি।  

তাহলে এর প্রভাব ছোট দেশ গুলির উপর কি প্রভাব পড়বে?

ছোট ছোট দেশগুলি যেমন বাংলাদেশ, এদের বিপদ অনেক। তারা তাদের রিজার্ভ যেহেতু খুব স্টং না, ফলে যতোদিন একটা ভায়াবল বিকল্প কারেন্সীর তৈরী না হবে, তারা এই ডলারেই ট্রেডিং করতে হবে। কিন্তু যদি আমাদের মতো দেশগুলি আমেরিকার দ্বারা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো দেশের সাথে ট্রেডিং করতে হয় যেখানে ওইসব দেশ ডলার থেকে বিকল্প কারেন্সীতে ঢোকে যাচ্ছে, তাদের সাথে ট্রেডিং একটা মহাঝামেলার সৃষ্টি হবে। ভায়া হয়ে হয় লোকাল কারেন্সীর মাধ্যমে করতে হবে না হয় সংরক্ষিত ডলারকে হাত ছাড়া করতে হবে। এর জন্য ছোট দেশ গুলির যা করা প্রয়োজনঃ

-উভয় কারেন্সীতেই (ডলার এবং ব্রিক্স) রিজার্ভ রাখা। পারলে ইউরো বা ইয়েন।

-বেশী গোল্ড কিনে রিজার্ভ করা।

-ডলার কারেন্সী ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলা

-দেশীয় পন্য বেশী ব্যবহার করে আমদানী কমিয়ে রপ্তানী বাড়ানো, আর রপ্তানী হতে হবে সেসব দেশে যেখানে বিকল্প কারেন্সী চলে।

-বড় বড় মেগা প্রোজেক্ট হাতে না নেয়া।

-দ্রুততার সাথে ফরেন লোন থেকে আউট হয়ে যাওয়া।

- আইএমএফ থেকে এ অবস্থায় কোনো লোন না নেয়া। কারন আই এম এফ ইউ ডলারড। যদি লোন নিয়েই হয়, সেক্ষেত্রে ইয়েন, রুবল, বা চীনা মুদ্রা যা বিকল্প ব্রিক্স কারেন্সীতে কনভার্টেবল।

এটা সব দেশের জন্য খুব সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের জন্য। কারন আমাদের বেশীরভাগ মার্কেট হয় ইউরোপ, না হয় পশ্চিমা দেশের সাথে। তাই আমাদের দেশকে এখন এদের বাইরেও দ্রুত নতুন মার্কেট খুজতে হবে। নতুন মার্কেট বলতে ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা, চীন, রাশিয়া, বা এইসব দেশ যেখানে বিকল্প কারেন্সীর প্রচলন হতে যাচ্ছে।

ব্যক্তি পর্যায়ে ডলার ডিক্লায়েনের প্রভাব কিভাবে সামাল দেয়া যায়?

-নিজেদের হার্ড এসেটের পরিমান কমিয়ে লিকুইড এসেটে নিয়ে আসা যাতে দ্রুত এডজাষ্ট করা সম্ভব। কারন হার্ড এসেটকে লিকুইড এসেটে রুপান্তরীত করা অনেক সময়ের ব্যাপার।

-গোল্ড বা অন্য সিকিউরিটিজ যা গ্যারান্টেড সেগুলি কিনে রাখা।

নোটঃ

কেউ যদি এতা বিশ্বাস করে যে, ডলার ডিক্লায়েনের মাধ্যমে আমেরিকার অর্থনীতি কলাপ্সড করবে সে ভুল ভাবছে। -কারন the dollar would only collapse under extreme economic circumstances. The U.S. economy would essentially have to collapse for the dollar to collapse. While the U.S. economy experiences crashes and recessions, it hasn't had a brush with a complete collapse in modern times. If the U.S. economy were to completely collapse, and the global economy were to restructure itself around a new reserve currency, then the dollar would collapse.

আর বিকল্প কারেন্সী তৈরী হলেও আমেরিকা সেই বিকল্প কারেন্সীতে কখনোই ট্রেডিং করবে না কারন-The United States is the world's best customer. It's the largest export market for many countries. Most of those countries have adopted the dollar as their own currency. Others peg their own currency to the dollar. As a result, they have zero incentive to switch to another currency.

২৭/০৪/২০২৩-ফরেন রিজার্ভ এবং ডি-ডলারাইজেনের মানে কি?

কোনো একটা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজের দেশের কারেন্সী বাদে অন্য ফরেন কারেন্সীকে সঞ্চয়ী হিসাবে গচ্ছিত রাখাকেই ফরেন রিজার্ভ বা ফরেন কারেন্সী রিজার্ভ বলে। যেসব মুল কারনে এই ফরেন মুদ্রা তহবিলে রাখতে হয় তার মুল কারন হচ্ছে-দেশের লোকাল মুদ্রার ভ্যালুকে ফিক্সড রেটে রাখা, ক্রাইসিস সময়ে লিকুইডিটি হিসাবে ইনফ্লেশনকে কমানো, বিদেশী ইনভেষ্টরদের নিশ্চিত দান, বৈদেশিক লোন পরিশোধ, আমদানী পেমেন্ট, অপ্রত্যাশিত কোনো বড় বাজেট অন্য কোথাও কাজে লাগানো ইত্যাদি।

এই রিজার্ভ সাধারনত ব্যাংক নোট, ডিপোজিট, বন্ড, ট্রেজারী বিল এবং সরকারী অন্যান্য সিকিউরিটিজের মাধ্যমে রাখা হয়। বেশীর ভাগ রিজার্ভ সাধারনত ইউএস ডলারের মাধ্যমেই গচ্ছিত থাকে কারন বর্তমানে ইউএস ডলারই হচ্ছে সবচেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য গ্লোবাল কারেন্সী। চীনের সবচেয়ে বেশী রিজার্ভ আছে ইউএস ডলারে।

প্রধানত দেশের রপ্তানিকারকেরা এবং ২য়ত শ্রমিকদের পাঠানো বৈদেশিক রেমিট্যান্স ইত্যাদি  সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা হয়, এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক উক্ত ফরেন কারেন্সী রপ্তানীকারক, শ্রমিক কিংবা যারাই ডলার দেশে আনেন তাদেরকে লোকাল কারেন্সীতে প্রদান করে, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা কিনে নেয়।  এভাবেই রিজার্ভ বেড়ে উঠে।

ন্যনুতম সাধারনত তিন থেকে ছয় মাসের আমদানী বিলের গড় এবং প্রায় এক বছরের বৈদেশিক লোন পরিশোধের পরিমান রিজার্ভ থাকলেই মুটামুটি একটা দেশে চলে। তবে যার যতো বেশী রিজার্ভ তাদের দেশের কারেন্সী ততো স্থির। (বর্তমানে চীনের এই রিজার্ভ পরিমান প্রায় ৩২০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যেখানে রাশিয়ার আছে প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন) ।

যদি কোনো দেশের রিজার্ভ এতোটাই কমে যায়, বা না থাকে তাহলে সে দেশের অর্থনীতিতে একটা বড় ধরনের ধ্বস নামে। সে দেশে যদি অনেক গোল্ড কিংবা ন্যাচারাল রিসোর্সও থাকে কিন্তু লিকুইড রিজার্ভ সঞ্চয় হিসাবে না থাকে, তাহলেও সেই গোল্ড বা ন্যাচারাল রিসোর্স দিয়ে রিজার্ভের উদ্দেশ্য পুরন করা সম্ভব হয় না।

এবার আসি, ডলার কেনো রিজার্ভ কারেন্সী- নীতিগতভাবে যে কোনো দেশের লোকাল কারেন্সীই হতে পারে এই রিজার্ভের কারেন্সী। কিন্তু তা সম্ভব হয় না এই কারনে যে, সেই লোকাল কারেন্সীতে বিশ্ব ব্যাপি ট্রেড হয় না। গ্লোবাল কারেন্সি হতে হয় সেটা যেটায় সবচেয়ে বেশী ট্রেডিং হয়। বর্তমানে ডলার সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত একটা কারেন্সী বিধায় এটা গ্লোবাল কারেন্সী হিসাবে গন্য হয়, তারপর গন্য হয় ইউরো, এবং ৩য় স্থানে আছে জাপানের ইয়েন।

২০১৯ ৪র্থ কোয়াটারের আইএমএফ এর এক সুত্র অনুযায়ী ৬০% ইউ এস ডলার রিজার্ভ হিসাবে ছিলো।  এর পরেই ছিলো ইউরোর স্থান যা প্রায় ২০%। প্রায় ৯০% ফরেক্স ট্রেডিং ইউ এস ডলারের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। আন্তর্জাতিক ১৮৫ টি মুদ্রার মধ্যে ডলার হচ্ছে একটি। 

১৯৪৪ সালের আগে বেশীরভাগ দেশ গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডের মাধ্যমে ট্রেডিং করতো। পরবর্তীতে ১৯৪৪ সালে (তখনো যুদ্ধ চলছিলো), ৪৪ দেশের ৭৩০ জন ডেলিগেটস আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ারর নিউ উডস এর হোটেল বিটনে আন্তর্জাতিক মুদ্রাকে মনিটরিং সিস্টেমে আনার জন্য মিটিং করে। সেখানে The Breton Woods system required countries to guarantee convertibility of their currencies into U.S. dollars to within 1% of fixed parity rates, with the dollar convertible to gold bullion for foreign governments and central banks at US$35 per troy ounce of fine gold (or 0.88867 gram fine gold per dollar). অর্থাৎ সব দেশের কারেন্সীর এক্সচেঞ্জ রেট গোল্ডে না হয়ে ডলারের উপর করা হবে। সে সময়ে সবচেয়ে বেশী গোল্ড রিজার্ভ ছিলো আমেরিকার। ১৯৭১ সালে এসে বিভিন্ন দেশ তখন গোল্ডের বিপরীতে রাখা ডলার আবার গোল্ড দাবী করলে প্রেসিডেন্ট নিক্সন গোল্ড এবং ডলারকে আলাদা করে ডলারকে Fiat Currency হিসাবে ডিক্লেয়ার করেন যাতে ডলারকে আর গোল্ডের বিপরীতে ব্যাকিং করতে হবে না। কিন্তু ইতিমধ্যে এই ২৭ বছরে ডলার রিজার্ভ কারেন্সী হিসাবে প্রচলন হয়েই গেছে। (আমি Fiat কারেন্সীর ব্যাপারে এর আগে একবার লিখেছিলাম (Fiat Currency হচ্ছে সেই কারেন্সী যা কোনো কমোডিটি বা গোল্ড দ্বারা ব্যাকড নয়, বরং ইস্যুইং সরকার এটাকে লিগ্যাল টেন্ডারিং হিসাবে গ্যারান্টি দেয়)

যাই হোক যে কারনে এই লেখাটা।

আমরা ইদানিং প্রায়ই একটা কথা শুনে থাকি এবং বলেও থাকি। সেটা হলোঃ ডি-ডলারাইজেশন। এর মানে কি ডলারকে বের করে দেয়া? বা ডলারের দিন শেষ?

ব্যাপারটা এ রকম নয়। এটা যা বুঝায় তা হচ্ছে- ডলার ডিক্লায়েন। মানে ডলার কলাপ্স নয়। ডলারের ডিক্লাইনেশন ইতিমধ্যে শুরু অবশ্যই হয়েছে কিন্তু ডলার কখনোই কলাপ্সড করবে এটা ভাবাও উচিত না। আর সেটা কিভাবে?

২৭/০৪/২০২৩-অসুস্থ্য সমাজ

বয়স হয়ে গেছে প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি। অনেক লম্বা সময়।

সেই শিশুকাল, কিশোর কিংবা যৌবনের সময়টা এখনো যেনো খুব পরিষ্কার মনে পড়ে। গ্রামের মেঠোপথ ধরে স্কুল মাঠ থেকে ঘর্মাক্ত শরীরে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা, কাধের উপর থরে থরে সাজানো বই নিয়ে স্কুলে যাওয়া, বৈশাখী মেলায় হরেক রকমের বাশি বাজিয়ে বাজিয়ে হই হুল্লুর করা, বৃষ্টির দিনে দুরন্ত কিছু বাল্যবন্ধুকে নিয়ে মাঠে ফুটবল খেলা, স্কুলে শিক্ষকদের পড়া না পাড়ার কারনে শাসিত হওয়া, আরো কত কি!! সবকিছু পরিষ্কার মনে আছে।

এই লম্বা সময়ে পরিবারের অনেকের সাথে, পাড়া পড়শী কিংবা জানা অজানা কত বন্ধুবান্ধবদের সাথে অনেকগুলি সময় কাটিয়েছি, কেউ কেউ এর মধ্যে জীবনের সব লেনদেন শেষ করে একে একে ওপারে চলে গেছে, আর সাথে নতুন জীবন নিয়ে আরো অনেক নতুন মুখ আমাদের সাথে যোগ হয়েছে। আমরা যারা আজো বেচে আছি, তারা সেই চলে যাওয়া মানুষগুলির সাথে আর নতুন মানুষদের যোগ হবার মধ্যে একটা সেতু বন্ধন করে আছি। আমরা সেই চলে যাওয়া মানুষগুলির কথা নতুনদের মাঝে আদান প্রদান করলেও তাদের সময়ের চিত্র আজকের দিনের মানুষগুলিকে শতভাগ বুঝানো হয়তো যায় না। কিন্তু আমাদের স্মৃতির পাতায় সেগুলি এখনো উজ্জ্বল হয়ে রয়ে গেছে। আমরাও একদিন তাদের মতো চলে যাবো, আর আজকের নতুন যোগ দেয়া মানুষগুলিও সেই একই সেতু বন্ধনের মতো কাজ করে আগত নতুন মুখগুলির সাথে একটা ব্রীজ তৈরী করবে। এভাবে ক্রমাগত একটা সাইকেল চলবে।

এরমধ্যে যুগ পালটে যাচ্ছে, এই যুগের মানুষগুলির সাথে সেই যুগের মানুষগুলির মধ্যে অনেক ফারাক হয়ে গেছে। সন্ধায় এখন আর আড্ডা বসে না, মাঠে আর বড়রা গোল হয়ে বসে তাস খেলে না, ছোট ছোট পোলাপানেরা এখন আর ডাংগুলি খেলে না, মেয়েরা এখন আর দলবেধে কলশী কাখে নিয়ে নদী থেকে ভিজা কাপড়ে জল তুলে আনে না, রাখালেরা এখন আর সেই ভাটিয়ালী গান গেয়ে গেয়ে বাড়ি ফেরে না। এখন সবাই সবাইকে নিয়ে একা একাই সময় কাটাতে পছন্দ করে। ফোনের ভিতরে চলে গেছে আজকের দিনের মানুষগুলির জীবন। যে জরুরী খবরটা মাসীকে দেয়ার জন্য, কিংবা জরুরী কাজের নিমিত্তে কাউকে হাট বাজার থেকে ডেকে আনার জন্য রোদ পেড়িয়ে মাইলের পর মেইল হেটে গিয়ে কাজটা করতে হতো, সেটা আর এখন দরকার পড়ে না। শুধু একটা মিসকল দিলেই কিংবা মেসেজ ঠুকে দিলেই সব যেনো হয়ে যাচ্ছে। এতো কিছু থাকতেও আমরা আজকে জেনারেশন থেকে জেনারসনে ডিসকানেক্টেড হয়ে যাচ্ছি। অথচ আরো বেশী কানেক্টেড থাকার কথা ছিলো।

সবাই ক্লান্ত এখন। সবাই অসুস্থ্য বোধ করে এখন। বড়রা ক্লান্ত, ছোটরা ক্লান্ত, মালিকেরা ক্লান্ত, শ্রমিকেরা ক্লান্ত, রোগীরা ক্লান্ত, ডাক্তাররা ক্লান্ত, ছাত্ররা ক্লান্ত, শিক্ষকরাও ক্লান্ত। ঘরে স্ত্রী ক্লান্ত, স্বামীও ক্লান্ত, কাজের বুয়া শুধু আজো ক্লান্ত নয়। হয়তো সেও কয়েকদিন পর ক্লান্ত হয়ে যাবে। পোষ্টম্যান বেকার, পোষ্টমাষ্টার বেকার, অথচ তাদের কারোরই সময় নাই হাতে। সবাই ব্যস্ত।  ছেলেমেয়েরা ব্যস্ত, বাবা মায়েরাও ব্যস্ত, আত্তীয় স্বজনেরা ব্যস্ত, বন্ধুবান্ধবেরাও ব্যস্ত অথচ সারাদিন কিংবা বেশীরভাগ সময় তারা একই জায়গায় থাকে। ছাত্ররা প্রচুর পড়াশুনা করে কিন্তু বই পড়ে না। প্রচুর লেখালেখি করে কিন্তু বই আকারে প্রকাশ হয় না। সমাজ নিয়ে অনেক গবেষনা করে কিন্তু কোনো আবিষ্কার হাতে আসে না।  

একটা অসুস্থ্য সমাজ গড়ে উঠছে প্রতিদিন। মায়া মহব্বতবিহীন, দায়িত্ববিহীন এবং একাকীত্ব জীবন সমৃদ্ধ একটা সমাজ গড়ে উঠছে দ্রুত। আর এই অসুস্থ্য সমাজের মধ্যে আমরাও নেতিয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত কম্প্রোমাইজ আর এডজাষ্টমেন্ট করতে করতে।

২৬/০৪/২০২৩-ইউরোপ অথবা রাশিয়া কি আবার একত্রে মিলিত হতে পারে?

প্রকৃত সত্যটা হলো যে, রাশিয়া সব সময়ই ইউরোপেরই একটি অংশ এবং সে একটি ইউরোপিয়ান কান্ট্রিই বটে। বিগত কয়েক বছর আগে ক্রিমিয়া আর ডোনবাসকে নিজের পরিসীমায় নিয়ে আসায় রাশিয়া ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বটে কিন্তু রাশিয়া কখনো নন-ইউরোপিয়ান কান্ট্রি ছিলো না। আমেরিকা সর্বদাই চেয়েছে যেনো রাশিয়াকে একঘরে করা যায় কিভাবে। ক্রিমিয়া বা ডোনবাসকে নিয়ে আমেরিকা ২০১৪ সালের রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যেনো একটা ভালো প্রতিশোধ নিতে পেরেছে।

যেভাবেই যে কেউ ভাবুক না কেনো, রাশিয়া এবং ইউরোপ এক সময় না এক সময় আবার রি-ইউনাইটেড হবেই। এটাই চিরসত্য কথা। কারন তারা একে অপরের প্রতিবেশী। ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং জীবন মাত্রার স্টাইল ঘাটলে দেখা যাবে যে, রাশিয়ানরা আসলে (বিশেষ করে অর্থোডোক্স এবং ইথনিক রাশিয়ান এমন কি মুসলিম সুন্নী টাটারস) তারা সবাই ইউরোপিয়ান। রাশিয়ান স্টুডেন্ট, সংস্ক্রিতিক ফিগার, আর্টিস্টস, বৈজ্ঞানিক, স্কলার্স, এমন কি অফিশিয়ালস সবার কাছেই ইউরোপের মডেল একটা পছন্দনীয় ব্যাপার। রাশিয়ান ভাষা ব্যবহার করে এমন অনেক রাশিয়ানরা ইউরোপে সেটেল্ড, মিক্সড ম্যারেজ, এমন কি বাই-কালচার সবচেয়ে বেশী দেখা যায় এদের ইউরোপে। সেন্ট্রাল এবং পূর্ব ইউরোপের মানুষদের সাথে রাশিয়ানদের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য দেখা যায় না। সবকিছু মিলিয়ে দেখা যায় যে, রাশিয়া আসলে ইউরোপের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা কোনো চয়েজ না, এটা ডেস্টিনি। ডেস্টিনিকে কেউ চয়েজ করে নিতে পারে না, এটা ঘটেই। অন্যদিকে যদি দেখি-রাশিয়ার অর্থনীতি আসলে ইউরোপিয়ান বেজড। ইউক্রেন যুদ্ধ এই প্যারামিটার পশ্চিমারা বর্তমানে বিধ্বস্ত করেছে বটে এবং এর ফলে রাশিয়া বিকল্প হিসাবে সে ইউরোপকে কিছুটা ছেড়ে দিলেও ইউরোপ রাশিয়াকে কোনোভাবেই ছাড়তে পারবে না। রাশিয়া ইউরোপের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং পাওয়ারফুল দেশ এটা দ্রুব সত্য। এটাকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার পথ নাই। এমন একটা প্রতিবেশীকে বেশীদিন এড়িয়ে চলা সম্ভব না।পক্ষান্তরে, রাশিয়াকে ইউরোপের বেশী প্রয়োজন, যতোটা না ইউরোপকে রাশিয়ার প্রয়োজন। বর্তমানে রাশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে যে বৈরিতা, সেটার সিংহভাগ দায়ী আসলে ইউরোপ নিজে। এজন্য ইউরোপকে আরো বেশী সতর্ক থাকার দরকার ছিলো। কেউ এই ইউরোপকে তাদের ভেসেল হিসাবে ব্যবহার করার চেষতা করছে, এটা ইউরোপের অনেক লিডারগন এখনো বুঝতে অক্ষম। আজ থেকে ২০/৩০ বছর আগে তো ইউক্রেন যুদ্ধ ছিলো না, তাহলে তখনই রাশিয়াকে ইউরোপিয়ান ব্লকে আনা হয় নাই কেনো? রাশিয়া তো নিজেই ইউরোপের সাথে কিংবা ন্যাটোতে যোগ দিতে চেয়েছিলো। তাকে তখন নেয়া হয় নাই কেনো? তখন কোনো ব্রেক্সিট ছিলো না, ইউরোজোনেও কোনো মন্দা ছিলো না, ইউরোপে তখন রাইট উইং রাজনীতিও ছিলো না।  তাহলে রাশিয়াকে ন্যাটোতে কিংবা ইউরোপ ব্লকে নিতে এতো অসুবিধা ছিলো কোথায়? ইউরোপের সাথে মিলিতি হয়ে রাশিয়া গ্লোবাল পলিটিক্সে একটা পাওয়ারফুল একটর হতে পারতো। এর একটাই উত্তর- আমেরিকা চায় নি রাশিয়ার মতো একটা দেশ এই ব্লকে আসুক যেখানে আমেরিকা তখন একচ্ছত্র মোড়লগিড়ি করতে পারবে না। ইউরোপে থেকে ইউরোপকে ছাড়া রাশিয়া যেমন ওই অঞ্চলে একটা পাওয়ারফুল জায়ান্ট হতে পারবে না, তেমনি, রাশিয়াকে ছাড়াও ইউরোপ কখনোই ওই অঞ্চলে আর্থিক দিক দিয়ে উন্নতি তথা শক্তিশালী হতে পারবে না। ইউরোপের যে কয়টি দেশ নিউক্লিয়ার শক্তিধর, তাদের মধ্যে শুধু নয়, গোটা দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশী পারমানবিক শক্তিধর দেশ রাশিয়া। রাশিয়া একটি ভেটো পাওয়ারের অধিকারী, ইউএন এর স্থায়ী মেম্বার, তার অজস্র রিসোর্স, গ্যাস, কয়লা, তেল, লোহা, ফার্টিলাইজার, খাদিশস্য সবকিছুতেই রাশিয়া সবার থেকে উপরে। এমন একটা দেশকে এড়িয়ে চলা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়, অন্তত প্রতিবেশীদের। আমেরিকা এড়িয়ে চলতে পারবে, ইউকে পারবে, কানাডা পারবে কারন তারা অনেক দূরের দেশ এবং তাদের নিজ নিজ প্রাকৃতিক রিসোর্সও কম নাই। কিন্তু ইউরোপ সবসময় রাশিয়ার সস্তা রিসোর্সের উপর দাড়িয়েই তাদের অর্থনীতিকে চাংগা করেছে এবং করছে।

রাশিয়া বর্তমানে যতোই এশিয়া ঘেষা হোক, তারা কখনোই এশিয়ার সাথে এতোটা ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে নাই। সোভিয়েট আমলে কিছুটা কালচারাল দিক থেকে এশিয়ার সাথে কাছাকাছি এলেও অন্য সব কিছুতেই তারা এশিয়া থেকে অনেক দূরের প্রতিবেশীই ছিলো। আর বর্তমান জেনারেশন তো আরো বহুদূরে। এশিয়ান মানসিকতা একেবারেই নাই।

তাহলে এখন যে প্রশ্নটা আসে, সেটা হলো, ইউরোপ নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছে কেনো? উত্তরটা একেবারেই কঠিন নয়। দুই তিন দশক আগের ইউরোপ আর আজকের সেই ইউরোপ, একেবারেই এক না। আর সেই ইউরোপকে আর ফিরিয়েও আনা যাবে না। ইউরোপের লিডারশীপে একটা বিশাল অপরিপক্কতার ছোয়া লেগে গেছে। বেশীরভাগ লিদাররা হয় ইয়াং মেয়ে এবং এদের পরিপক্কতাই এখনো আসে নাই। এরা এই বিংশ শতাব্দীতে বসে একবিংশ শতাব্দীর সমস্যা বুঝতে অক্ষম। তারা ইউরোপিয়ান স্টাইল থেকে বেরিয়ে গিয়ে পাশ্চাত্যের ধারায় ডুবে যেতে চাচ্ছে যা কোনোভাবেই ইউরোপিয়ান ভ্যালুতে যায় না। এদের অনেকেই ১ম কিংবা ২য় মহাযুদ্ধ দেখে নাই। যুদ্ধের পর ভংগুর অর্থনিতির পরিস্থিতিতে পড়ে নাই। ইউরোপের যে একটা স্তাইল আছে নিজস্ব, সেটা বর্তমান ইউরোপের নেতারাই তা জানেন না। তারা নিজেরাই ইউরোপকে বিশ্বাস করে না, তাহলে অন্য কেউ কেনো ইউরোপকে ব্যবহার করবে না?

এখন যে প্রশ্নটা মনে জাগে সেটা হলো, তাহলে রাশিয়া কিভাবে পুনরায় ইউরোপে কিংবা ইউরোপ কিভাবে রাশিয়ার কাছে ফিরে যাবে? এটাও কোনো কঠিন উত্তর নয়।

রাশিয়া এখন এশিয়ার নৌকায় উঠে যাচ্ছে যাকে বলা যেতে পারে স্প্রিংবোট। চীন, ইন্ডিয়া এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশ মিলে যখন রাশিয়া একটা গ্রেটার ইউরেশিয়ান জোট তৈরী করে ফেলতে পারবে, তখন রাশিয়া খুব সহজেই ব্রাসেলসের সাথে একটা নতুন বারগেনিং পজিশনে বসতে পারবে। ঐ সময়ে রাশিয়া নয়, ইউরোপ চাইবে যেনো সে আবার রাশিয়ার সাথে একত্রিত হতে পারে।

২৪/০৪/২০২৩-ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের সর্বশেষ ইমপ্যাক্ট কি কি হতে পারে

ডি-ডলারাইজেসন, ডি-ইন্ডাস্ট্রিলাইজেশন, এলায়েন্স, জোট, পোলারিটি, রুলস বেজড অর্ডার ইত্যাদির বাইরে আর কি কি ইমপ্যাক্ট হতে পারে?

(ক)       ওয়েষ্টার্ন ইউরোপ, বাল্টিক ন্যাশন এবং ইষ্ট ইউরোপিয়ান দেশ সমুহ ক্লিয়ার বুঝে গেছে যে, তারা তাদের নিজেদেরকে নিরাপত্তা দিতে অক্ষম। ফলে তারা ন্যাটো এবং আমেরিকার শরনাপন্ন ছাড়া কোনো গতি নাই। তাছাড়া ফ্রান্সের ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিলিটারী ক্যাপাবিলিটি এটাই প্রমান করে দিয়েছে যে তারা অসফল এবং ভবিষ্যতে সফলতা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই। প্রতিটি দেশের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য তাদেরকেই ব্যবস্থা করতে হবে। ন্যাটো একটা জোট বটে কিন্তু তাদের ক্ষমতা এবং সমন্নয় যে খুব একটা শক্তিশালী মেকানিজম নয় সেটা এবার পরীক্ষিত।

(খ) জার্মানীর ডিফেন্স সিস্টেমও দূর্বল এবং তাদেরকেও তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বলয় তৈরী করা খুবই দরকার। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাদের ডিফেন্স বাজেট যেভাবে এলোকেট করা হচ্ছে তাতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগবে ভায়াবল ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে তুলতে।

(ঘ)        রাশিয়ার মিলিটারী ক্ষমতারও একটা পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। কালেক্টিভ ওয়েষ্ট বা ন্যাটোর সম্মিলিত জোটের বিরুদ্ধে রাশিয়া একা অপারগ। ফলে তাকে অন্য এলি যেমন ইরান, চীন এর কাছে সাহাজ্য নিতেই হবে। এতে রাশিয়ার সাথে ইরান এবং চীন দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্দধুত্তের গন্ডিতে থাকতেই হবে।

(চ)        মধ্যপ্রাচ্যে যে বদলটা হচ্ছে তা ভাবার বিষয়। যেমন ইউক্রেনের যুদ্ধের কারনে রাশিয়ার সাথে ইরানের খুব সখ্যতা তৈরী হয়েছে বিশেষ করে ড্রোন সাপ্লাই নিয়ে। এক সময় রাশিয়া, চীন, আমেরিকা, ব্রিটেইন সবাই ইরানের পারমানবিক শক্তিধর দেশ হোক এটা কেউ চায় নাই। কিন্তু এই ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে ইরান সেই সুযোগ হাতছাড়া করবে না বরং সে রাশিয়ার কাছ থেকে পারমানবিক ক্ষমতা প্রাপ্তির জন্য যা সাহাজ্য লাগে তা গ্রহন করবে। মিশরের অবস্থাও তাই। সে পাশ্চাত্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার একটা ছুতা পাবে এবং রাশিয়ার দিকে কিছুটা ঝুকে যাবে।

(ছ)        এশিয়া যদিও ইউক্রেন থেকে অনেক দূরে অবস্থিত কিন্তু এই যুদ্ধ রাশিয়াকে এশিয়ার কাছাকাছি নিয়ে এসছে যেখানে চীন অনেকটা দৃঢ় ভাবে স্বীকার করছে যে, রাশিয়া থাকুক এশিয়ান পাওয়ার পলিটিক্সে। কারন চীন যে এশিয়ার একটা জায়ান্ট সেখানে রাশিয়া তার সহযোগী। অন্যদিকে জাপান, সাউথ কোরিয়া, ফিলিপাইন এবং অষ্ট্রলিয়াকে আমেরিকার আরো কাছাকাছি নিয়ে এসছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে-ইন্ডিয়া প্রায় ডুয়েল রোল প্লে করছে এই জন্য যে, সে কোয়াডেও আছে, ব্রিক্স এও আছে আবার রাশিয়ার সাথেও আছে।

(জ)       এবার আসি আমেরিকার ব্যাপারে। ইউক্রেন যুদ্ধটা আমেরিকার পলিটিক্সে বিশাল একটা বিভেদ তৈরী করেছে। রিপাব্লিকান এবং ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে একটা বাই-পার্টিজান তৈরী হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ আমেরিকার ফরেন পলিসিকে একটা অনিরপেক্ষ সেকশনে পরিনত করেছে এভাবে যে, ফরেন পলিসি এখন প্রায় বাইডেন-ব্লিংকেন-সুলিভান পলিসি মনে করা হয়। এটা দেশের জন্য কতটা প্রয়োজন সেটা আর বিবেচ্য মনে হয়না।  এই অবস্থায় আমেরিকা যদি শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য আর সাহাজ্যকারী না হয় তাহলে রাশিয়া ভেবেই নিবে যে, সে পারে। আর এই পারা থেকে রাশিয়া যদি জর্জিয়া, মলদোবা, ইস্তোনিয়া, অথবা লাটভিয়ায় মিলিটারী অপারেশন চালায় তাতে আসচশ্চর্য হবার কিছু নাই। রাশিয়া কারন একই দেখাবে যে, সে রাশিয়ার নিরাপত্তা নিসচিত করছে।

(ট)        সবেচেয়ে বড় ইমপ্যাক্ট-ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকার উদ্দেশ্য রাশিয়াকে দূর্বল করা বটে কিন্তু ইউরোপকে আমেরিকার উপর নির্ভরশীল করে তোলা। এতে এই ম্যাসেজ দেয়া যে, আগামী ভবিষ্যত রাজনীতি শুধু দুটু দেশকে নিয়েই আবর্তিত হবে- (১) আমেরিকা (২) চীন। কারন এই যুদ্ধ এটাই প্রমান করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, রাশিয়া এবং ইউরোপ কোনোভাবেই সামরিক দিক থেকে দক্ষ এবং ক্যাপাবল নয়। ফলে ৩০ বছর পর এই বিশ্ব আবার মাল্টিপোলারিটিতে নয়, বাই-পোলারিটিতে ফিরে যেতে পারে। আর সেটা চীন এবং আমেরিকা।

(ঠ)        এর বিপরীতে আরেকটি সম্ভাবনা আছে যে, যখন ইউরোপ, রাশিয়া তাদের মাথায় এটা আসবে যে, তারাও উপেক্ষিত এবং কন্ট্রোল্ড, তখন ইউরোপ এবং রাশিয়া একত্রিত হয়ে যেতে পারে। তখন ন্যাটোর বিলুপ্তি ঠেকানো কঠিন। হয়তো তখনই ঘটবে মাল্টিপোলারিটি।

২৩/০৪/২০২৩-ইউক্রেন এক্সিট প্ল্যান

অনেকগুলি অপারেশন দেখলাম আমার এই ছোট্ট জীবনে। সামরিক বাহিনীতে চাকুরী করার সুবাদে কিছুটা মিলিটারী ট্যাক্টিক্স বুঝতে সুবিধা হয় বলে আমি প্রতিনিয়ত আশেপাশের যুদ্ধাবস্থার খবরাখবর রাখতে পছন্দ করি। কাউকেই আমি যুদ্ধের ব্যাপারে সাপোর্ট করিনা। যুদ্ধ একটা ধ্বংসাত্মক ব্যাপার, জানমালের বিনাসের ব্যাপার। তারপরেও সময়ে সময়ে অহরহ কেউ কেউ যুদ্ধ করেই যাচ্ছে। আর সমকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে আমেরিকা নিজে।

আমেরিকার যুদ্ধের মারাত্মক নেগেটিভ সাইড হচ্ছে-তারা যুদ্ধ শুরু করতে খুবই পারদর্শী কিন্তু এক্সিট প্ল্যানে নয়। অথবা তাদের এক্সিট প্ল্যান থাকে না। সেটাই আমরা দেখেছি, ভিয়েতনাম, আফগানিস্থান, ইরাক ইত্যাদির বেলায়। সেক্ষেত্রে আমার এখন আরেকটা প্রশ্ন জাগছে- ইউক্রেনের বেলায় কি আমেরিকার কোনো এক্সিট প্ল্যান আছে যদি করতেই হয়?

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় ১ বছরের বেশী পার হয়ে গেছে আর এটা এখনো সেমি-স্ট্যালমেটেড অবস্থায়। দুপক্ষই তাদের দাবীতে অনড়। ইউক্রেন এই যুদ্ধে পশ্চিমাদের থেকে প্রায় শত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের সাহাজ্যে তাদের দেশকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ানদের সরাসরি সাহাজ্য ছাড়া ইউক্রেনের পক্ষে এই যুদ্ধ চালানো কিছুতেই সম্ভব না। এই অবস্থায় একটা বিরাট প্রশ্ন জাগছে- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি Forever War Territory তে পদার্পন করছে? ৯/১১ পরবর্তী সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে বা আফগানিস্থানে যুগের পর যুগ আমেরিকা যুদ্ধ চালিয়ে গেছে, আর সেটার কারন অনেক। কখনো রিসোর্স, কখনো জিওপলিটিক্যাল, কখনো ওয়ার্ল্ড ডমিন্যান্স ইত্যাদি। কিন্তু ইউক্রেনের সাথে সেসব দেশের যুদ্ধের একটা পার্থক্য আছে-আর সেটা হলো-ইউক্রেনে আমেরিকার কোনো সৈন্য গ্রাউন্ডে নাই যা ইরাক বা আফগানিস্থানে ছিলো। 

প্রকৃত সত্য হচ্ছে- রাশিয়ার সাথে আমেরিকার জন্ম জন্মান্তরে শত্রুতা। এই শত্রুতার মাঝে ইউক্রেন হচ্ছে একটা ক্যাটালিস্ট। ফলে আমেরিকা যতো এগুবে, রাশিয়াও ততো এগুবে। এর শেষ হবার কথা নয়। ফলে ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির ঐতিহাসিক মিকাইল কিমাগের মতে- “This is going to be the mother of all forever wars, because of the nature of the adversary.”

৯/১১ পরবর্তীতে আল কায়েদার বিপরীতে যুদ্ধ ঘোষনা করে শেষ অবধি এটাকে ওয়ার অন টেরোরিজমে নিয়ে গিয়েছিলো আমেরিকা যা অদ্যাবধি চলছে। ইরাকেও তাই। প্রথমে ওইপন অফ মাস ডিস্ট্রাকশন, রিজিম চেঞ্জ, ন্যাশন বিল্ডিং, ইরানিয়ান ইনফ্লুয়েন্সকে কাউন্টার করা, অতঃপর আইএসআইএস এর বিপরীতে সৈন্য রাখা। এইম সব সময় বদলে গেছে শুধুমাত্র সামরিক উপস্থিতিকে জারী রাখার জন্য।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য কোথায় আমেরিকার? আমেরিকা না ইউরোপের কোনো দেশ, না সে এই অঞ্চলের কেউ। ফলে এখানে যেটা বলা হচ্ছে তা হচ্ছে- যুদ্ধটা গুড ভার্সাস ইভিল, ডেমোক্রেসি ভার্সাস অটোক্রেসি এই আইডলোজিতে।  টপ লেবেলের অফিশিয়ালগন একেকজন একেকবার একেক রকমের কারন দেখাচ্ছেন। বাইডেন প্রশাসন বলছেন-এটা এমন একটা কারন যাতে কেউ আর আগ্রাসি মনোভাবে অন্য কোনো দেশে মিলিটারী অপারেশন চালাতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা। ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড বলেছেন- এটা করা হচ্ছে যাতে আমাদের সন্তানেরা এবং গ্রান্ড সন্তানেরা ইনহেরেন্ট করে এবং শিখে আমাদের কাছ থেকে। আর এভাবেই পাসচাত্যের এজেন্ডা একেকবার একেকদিকে শিফট হচ্ছে। এই রকম আইডলজিক্যাল শিফটের মধ্যে কোনো যুদ্ধ জয় করা সহজ নয়। ফলে যুদ্ধটা শেষ না হয়ে লম্বা সময়ের জন্য চলতেই থাকবে। প্রতিমাসে ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ লাগছে ইউক্রেন যুদ্ধে। আর এসব সরবরাহ করতে হচ্ছে ইউরোপিয়ান, আইএমএফ এবং আমেরিকাকে। রি-কন্সট্রাক্সন তো আরো অনেক খরচের ব্যাপার যদি যুদ্ধ থেমেও যায়। রাশিয়া এই যুদ্ধকে ইউক্রেন ভার্সেস রাশিয়া মনে করে না। সে মনে করে কালেক্টিভ ওয়েষ্ট, ন্যাটো ভার্সেস রাশিয়া। ফলে সে পিছুবে না। অন্যদিকে আমেরিকাও পিছু হটতে চাইবে না।

কিন্তু এর মধ্যে দুনিয়ার অনেক কিছু পালটে যাচ্ছে, পালটে যাচ্ছে জোট, পালটে যাচ্ছে ইকোনমি, পালটে যাচ্ছে কারেন্সী, পালটে যাচ্ছে শত্রু থেকে মিত্র আর মিত্র থেকে শত্রুতা। ইউরোপ ধীরে ধীরে ডি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনে পড়ে যাচ্ছে, ইকোনোমি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। যখন আর পেরে উঠবে না, তখন হয়তো একসময় ইউরোপ নিজেই সস্তা গ্যাস আর তেলের জন্য পুনরায় প্রতিবেশী রাশিয়ার দারস্থ হতে হবে মনে হচ্ছে। আমেরিকার সাথে জোট ধীরে ধীরে লুজ হয়ে গেলে শেষ অবধি হয়তো কালেক্টিভ ওয়েষ্ট বাধ্যই হবে যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে যাবার।

সেক্ষেত্রে আমেরিকা কোন পদ্ধতিতে এই ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে এক্সিট করবে? সেটাই এখন দেখার ব্যাপার।

২৩/০৪/২০২৩-দুই ফ্রন্টে আমেরিকার যুদ্ধ কি সঠিক?

বর্তমানে ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সাথে এবং তাইওয়ান ঘিরে চীনের সাথে আমেরিকা ভালো রকমের একটা কোন্দলে জড়িয়ে গেছে। চীন, রাশিয়া এবং আমেরিকা তিনটেই সুপার পাওয়ার এবং তিনটেই ভেটো ক্ষমতার অধিকারি, তিনটেই নিউক্লিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ। রাশিয়া ইউরোপের জোনে, চীন এশিয়া প্যাসিফিক জোনে। আলাদা আলাদা জোন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-একই সময়ে, একই সাথে দুইটি ভিন্ন জোনে দুইটি সুপার পাওয়ারের সাথে আমেরিকার কি দুইটা ফ্রন্ট খোলা উচিত?
আমার মতে, দুই ফ্রন্টে আমেরিকা হয়তো একই সাথে রাশিয়া এবং চীনকে কন্টেইন করবে না, কিন্তু পরিস্থিতির কারনে এটা আবার ফেলেও দেয়া যায় না। স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে একচ্ছত্র ইউনিপোলারিটির কারনে আমেরিকা তার সাথে ইউকে এবং কানাডা সহযোগী হিসাবে মনে করে বিশ্বের তাবত দেশের গনতন্ত্র, সাইবার ক্যাপাবিলিটি, আন্তর্জাতিক সমুদ্র, আকাশ কিংবা মহাকাশ এমন কি প্রতিটি দেশের সার্বোভৌমত্ব রক্ষা তাদের দায়িত্ব। আর এ জন্য সে “রুলস বেজড অর্ডার” এর প্রচলন করেছে অর্থাৎ আমেরিকা পরিস্থিতি বিবেচনা করে রুলস দিয়ে দেবে আর অন্য সবাই সেই রুলস অনুসরন করে তাদের দেশের পলিসিসমুহ এডজাষ্ট করে ইন্টারনাল ফরেন পলিসি করে দেশের শাসনভার পরিচালনা করবে। সেই রুলস বেজড অর্ডারের কেউ বাইরে গেলে হয় সে আমেরিকার শত্রু অথবা সেখানে গনতন্ত্র অনুসরন করছে না এই কারনে আমেরিকা তাকে যা খুশি যেমন নিষেধাজ্ঞা, অবরোধ, এমন কি আক্রমন পর্যন্ত করতে পারে। এটাই ছিলো এ যাবত কালের কৃষ্টি। আমেরিকার নিজস্ব রুলসের মাধ্যমে অন্য দেশসমুহকে এভাবেই তারা নিয়ন্ত্রন করেছে এবং করছে বলে বর্তমান বিভিন্ন দেশসমুহ বিবেচনা করছে।
যাই হোক যেটা বলছিলাম, দুই ফ্রন্টে দুই পরাশক্তিকে কন্টেইন করা। আমার মতে এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এখানে আসলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে দুটু ফ্রন্ট দেখা গেলেও এটা শুধু দুইটা ফ্রন্ট না, এখানে রাশিয়া এবং চীন সরাসরি দুইটা ফ্রন্ট দেখা যায়, আরো অনেক অদৃশ্য ফ্রন্ট রয়েছে, যেমন আফ্রিকান ফ্রন্ট, মিডল ইষ্ট ফ্রন্ট, নর্থ কোরিয়া, ইরান কিংবা ইন্ডিয়ান ফ্রন্ট। এই অদৃশ্য ফ্রন্টগুলি হয়তো সামরিক নয়, কিন্তু সেগুলি অবশ্যই ইকোনোমিক, বাই-লেটারেল এবং ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে মারাত্মক ভূমিকা রাখে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা সামষ্টিকভাবে আমেরিকার জন্য বিপদজনক হতে পারে।
সামরিক শক্তির বিন্যাস যদি আমরা একটু দেখি, তাহলে দেখবো যে,
আমেরিকার সামরিক শক্তি যেভাবে তারা বিন্যাস করেছে তাতে বিশ্বমোড়ল গিড়ির জন্য একচ্ছত্র সামরিক পেশী সে নয়। ন্যাটো দিয়ে হয়তো কিছুটা আম্ব্রেলা করা গেছে বটে কিন্তু গত ২০ বছরে আমেরিকা যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে, ইউরোপের অন্যান্য দেশ কিংবা আফ্রিকান দেশসমুহে তাদের ফোর্সকে ব্যবহার করেছে, তাতে আমেরিকার সামরিক শক্তি অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যেখানে রাশিয়া এবং চীন বিগত কয়েক দশকে তাদের বাজেটের একটা বেশ বড় অংশ ডিফেন্স বাজেটে ক্রমাগত যুক্ত তো করেছেই উপরন্ত তারা কোথাও নতুন কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তারা তাদের সামরিক সক্ষমতাকে লস করে নাই। আর এসব তারা প্রিজার্ভ করেছে শুধুমাত্র আমেরিকাকে মোকাবেলা করার জন্যই। এটা আমেরিকার জন্য বিরাট ভয়ের ব্যাপার।
চীন শীপ বিল্ডিং প্রোগ্রাম এমনভাবে চলমান রেখেছে যে, আমেরিকার নেভী শীপ থেকে চীনের সংখ্যা অনেক অনেক বেশী। চীনের হার্ডপাওয়ারের পরিসংখ্যানে আগামী দিনগুলিতে চীন মিলিটারী গ্লোবাল ব্যালেন্স শিফটিং এ লিড করতে পারে এমন ভাবেই সে তার ডিফেন্স ক্যাপাবিলিটিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
যদি রাশিয়ার কথা বলি, আমেরিকার অনেক অস্ত্র রাশিয়ার অস্ত্রের থেকে বেশী কার্যকর বলে ধারনা করা হয়। কিন্তু রাশিয়ার অনেক কিছুতেই সিলেক্টিভ এডভান্টেজ রয়েছে আমেরিকার উপর। যেমন, আমেরিকার ৬০০০ ট্যাংক আছে কিন্তু রাশিয়ার আছে ১২০০০। রাশিয়ার ট্যাক্টিক্যাল নিউক্লিয়ার ক্যাপাবিলিটি আমেরিকার থেকে প্রায় কয়েকগুন বেশী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমেরিকার অস্ত্রশস্ত্রের কার্যকর ক্ষমতার এডভান্টেজ থাকলেও এদের সংখ্যাতাত্তিক ইনভেন্টরি এতোই কম যে, আমেরিকার পক্ষে কোনোভাবেই মাল্টিফ্রন্টে নিজেদেরকে এনগেজ করা সম্ভব না।
একটা উদাহরন দেই-আমেরিকাকে যদি রাশিয়াকে কন্টেইন করতে হয়, তাহলে ইষ্টার্ন ইউরোপিয়ান ফ্রন্টে তার মিলিটারী ইউকুইপমেন্ট এবং জনবল মোতায়েন করতে হবে। আর এটা করতে হলে আমেরিকাকে অন্য রিজিয়ন থেকে (যেমন ওয়েষ্ট প্যাসিফিক) এসব ফোর্সকে তুলে আনতে হবে। আর যদি ওয়েষ্ট প্যাসিফিক থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং জনবল অন্যত্র শিফট করতে হয় তাহলে চীনকে আর কন্টেইন করা সম্ভব না। যদি আমেরিকাকে আসলেই ২টা ফ্রন্টে একসাথে ২টা পরাশক্তিকে কন্টেইন করতে হয়, তাহলে বিমান বাহিনীর পাশাপাশি-
(ক) কমপক্ষে ৫০টি ব্রিগেড কম্বেট টিম লাগবে যা বর্তমানে ওদের আছে ৩১টি ব্রিগেড কম্বেট টিম।
(খ) অন্তত ৪০০ টি নেভী ব্যাটল শীপ দরকার যা বর্তমানে আছে ২৯৭ টি
(গ) এ ছাড়া অন্যান্য সুবিধাবাদী শত্রুদেরকেও আমেরিকাকে কন্টেইন করতে হবে-যেমন ইরান, নর্থ কোরিয়া ইত্যাদি। এর জন্যেও আলাদা করে আরো সামরিক শক্তি রিজার্ভ এবং মোতায়েন রাখতে হবে।
উপরের সবকিছু বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, খুব দ্রুতই আমেরিকার পক্ষে একের অধিক দুইটা ফ্রন্টে একই সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া সম্ভব না বা উচিত না। মাল্টিফ্রন্টে যেতে হলে প্রতি বছর আমেরিকাকে তার বাজেটের ৪০% বাজেট আলাদা করে ডিফেন্স ফোর্সকে বন্টন আবশ্যিক। কিন্তু ৪০% বাজেট ডিফেন্স ফোর্সকে দিতে হলে যে পরিমান ট্যাক্স রেভিনিউ সংগ্রহের প্রয়োজন, তাতে সাধারন নাগরকদের উপর বাড়তি চাপ পড়বে, নিত্য নৈমিত্তিক পন্যের দাম বেড়ে যাবে, লিভিং কষ্ট বাড়বে। তাতে জনসাধারনের ক্ষোপ বাড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। একদিকে যুদ্ধের খরচ, অন্যদিকে যুদ্ধের জন্য উপযোগী হতে বাড়তি খরচ, সাথে জনসাধারনের বিরুপ প্রতিক্রিয়ায় দেশে নইরাজ্যকর একটা পরিস্থিতি বিরাজ করার সম্ভাবনা। এদিকে আরেকটা খারাপ সংবাদ হচ্ছে- ডি-ডলারাইজেশন। তাতে আমেরিকা মূল চালিকা শক্তিতে একটা ভাটা পড়বেই।
সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে- ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না হতেই যদি চীন তাইওয়ানকে কোনো প্রকার আক্রমন করে বসে (সম্ভাবনা যদিও খুব কম, কিন্তু চীনকে বিশ্বাস করা কঠিন), তাহলে আমেরিকাকে সম্ভবত একাই দুটু ফ্রন্টে লিপ্ত হতে পারে। যদি চীন তাইওয়ানকে আক্রমন করেই বসে, তাহলে বুঝতে হবে যে, রাশিয়ার সাথে চীনের একটা বিশাল বোঝাপড়া হয়ে গেছে। এই ফ্রন্টে লিপ্ত হলে সম্ভবত ইউরোপ, জাপান কিংবা ইন্ডিয়া আমেরিকার পাশে থাকার কথা নয়। জাপান এবং ইন্ডিয়ারও নিজেদের এজেন্ডা রয়েছে এই জোনে। আর ইউরোপ মনে করে তাইওয়ান তাদের কোনো মাথা ব্যথার কারন হতে পারেনা। সেক্ষেত্রে চীনকে সমানে সমান কন্টেইন করতে গেলেই ইউক্রেনের উপর আমেরিকার নজর অনেকটাই থিতে হয়ে আসবে। আর এই থিতে হয়ে আসা মানেই রাশিয়া এগিয়ে যাবে।
সময়টা খুব খারাপ আসছে মনে হচ্ছে আগামীতে। কোনো কিছুই সঠিক প্রেডিক্ট করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।

০৫/০৪/২০২৩-পেট্রো ডলার- A Game Changer

যে কোনো দেশের কারেন্সী সাধারনত সোনা বা হার্ড এসেটের মাধ্যমে ব্যাকিং করে সেই অনুপাতে তারা তাদের কারেন্সী প্রিন্ট করতে পারে। যদি হার্ড এসেট এর বাইরে কেউ তাদের কারেন্সী প্রিন্ট করেন, তাহলে সেই কারেন্সী অবমুল্যায়িত হয়ে মুদ্রাস্ফিতিতে পড়ে যায়। এক সময় ডলারও তার বিপরীতে হার্ড এসেটের মাধ্যমে কতটুকু ডলার প্রিন্ট করতে পারবে সেটা নির্ধারিত ছিলো।

কিন্তু ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন এবং সৌদি আরবের প্রিন্স ফাহাদ আবুদুল আজিজ ৬ পাতার যে একটা এগ্রিমেন্ট করেন সেখানে এই দুই দেশ এইমর্মে রাজী হয় যে, তেল আমদানী রপ্তানিতে শুধুমাত্র ডলার ব্যবহার হবে, অর্থাৎ ডলার পেট্রো ডলারের স্বীকৃতি পেলো। এই ডলার যখনই পেট্রো ডলার হিসাবে স্বীকৃতি পেলো, তখন থেকে ডলার আর সোনা বা অন্য কোনো হার্ড এসেট এর বিনিময়ে ব্যাকিং করার দরকার পড়লো না বরং আমেরিকার অর্থনইতিক শক্তির উপরেই এটা হার্ড এসেট হিসাবে গন্য হবে বলে ধরে নেয়া হলো। ফলে আমেরিকার জন্য যেটা হলো যে, সে যতো খুশী ডলার ছাপালেও কিছু যায় আসে না, যেহেতু কোনো হার্ড এসেট লাগে না। এটা একটা আনলিমিটেড শক্তি। প্রায় ৪২% ট্রেড হচ্ছিলো এই ডলারে। এরমানে এই যে, শুধু কাগুজে ডলার দিয়েই আমেরিকা তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, মিডল ইষ্ট, ভেনিজুয়েলা ইত্যাদি দেশ থেকে তেল ক্রয় করতে পারে। এটার সর্বপ্রথম বিরোধিতা করেছিলো সাদ্দাম এবং পরে বিরোধিতা করেছিলো হূগু সাভেজ। এর ফলে তাদের পরিনতি কি হয়েছিলো সেটা আমরা সবাই জানি।

যাই হোক, ৪২% এর বাকী ট্রেডিং হচ্ছিলো নিজ নিজ দেশের কারেন্সীতে অন্যান্য পন্যে। কিন্তু আরেকটা মজার ব্যাপার ছিলো যে, ডলারকে একমাত্র রিজার্ভ কারেন্সী হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া। ফলে অন্য দেশের কারেন্সীতে ট্রেড করলেও প্রতিটি দেশ তাদের নিজের কারেন্সীকে রুপান্তরীত করতে হতো ডলার। এরমানে প্রায় ১০০% ট্রেড এই ডলার কারেন্সীতেই। সব দেশ তাদের রিজার্ভ রাখতে হয় ডলারে আর সেটা আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে। এটাকে অন্যভাবে FIAT Currency ও বলা যায়। এই ফিয়াট কারেন্সি নিয়ে আরেকদিন বল্বো।

যেহেতু পলিসি মোতাবেক সব ট্রাঞ্জেক্সন হয় পেট্রো ডলার বা রিজার্ভ কারেন্সী (ডলার) এ করতে হয়, ফলে প্রায় সব দেশ আমেরিকার কাছে মুটামুটি জিম্মি। ফলে এই ডলার হচ্ছে আমেরিকার লাষ্ট সার্ভাইভিং সুপার পাওয়ার টুলস। এটার মাধ্যমে আমেরিকা যে কোনো দেশকে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারতো, রিজার্ভ আটকে দিতে পারতো। কোনো দেশ আমেরিকার পলিসির বাইরে গেলে বা তাদের সুবিধা মতো কাজ না করলেই আমেরিকা এই রিজার্ভ কারেন্সী আটকে দিয়ে সেটা তাদের নিজের কাজে ব্যবহার করতে পারতো। এই জিম্মি দশা অনেক দেশ মনে প্রানে মেনে নিতে যেমন পারছিলো না, তেমনি এ থেকে সরে যাবার পথও খোলা ছিলো না। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সুইফট থেকে যখন বাদ দেয়া হলো, তখন রাশিয়া এটাকে ব্লেসিংস হিসাবে ধরে নিলো। বহু দেশ যেনো এই জিম্মি হওয়া ডলার থেকে বেরিয়ে অন্য কোনো কারেন্সীতে পা রাখা যায় কিনা তার দিকে তাকিয়েই ছিলো। এর সুযোগ গ্রহন করছে চায়না। অর্থনীতির এই জায়ান্ট তার নিজস্ব কারেন্সী ইউয়ানকে ডলারের প্রতিস্থাপক হিসাবে দাড় করানোর চেষ্টায় রাশিয়ার সাথে এবং আমাদের পার্শবর্তী ইন্ডিয়াকে তাদের পাশে নেয়ার চেষ্টায় ব্রিক্স কারেন্সীর উদবোধনে সচেষ্ট হয়ে গেলো। এখন এই ডলার আউট হয়ে যাচ্ছে। রিজার্ভ কারেন্সী হিসাবে ইউয়ান এবং এর সাথে নিজস্ব কারেন্সীতে ট্রেড। নিজস্ব কারেন্সীতে ট্রেড করলে কোনো দেশেয় আর তাদের রিজার্ভ এর ঘাটতি হবে না। এটাই ধ্রুব সত্য।

তাহলে ডলার কিভাবে আউট হয়ে যাচ্ছে? সেটা একটা সংক্ষিপ্ত ভাবে না বললেই নয়।

রিচার্ড নিক্সন এবং হেনরী কিসিঞ্জার এক সময় ভবিষ্যত বানী করেছিলো যে, যদি আমেরিকাকে তার ইউনিপোলার হেজিমনি ধরে রাখতে হয়, তাহলে সে যেনো সর্বদা রাশিয়া এবং চীনকে কখনোই একত্রে আসতে না দেয়। অন্য কথায় তারা এটা বুঝাতে চেয়েছে যে, রাশিয়া আমেরিকার শত্রু নয়, শত্রু হচ্ছে চীন। চীন এটা জানে এবং সবসময় সেটা মাথায় রাখে। চীন পৃথিবীর সবদেশ গুলির মধ্যে ইকোনোমিক জায়ান্ট। কিন্তু আমেরিকার গত কয়েক রিজিমে এই পলিসি থেকে আমেরিকা অনেক দূর সরে আসায় এখন চীন এবং রাশিয়া এতোটাই কাছাকাছি চলে এসছে যে, তারা বলছে তাদের বন্ধুত্ত সিমেন্টের থেকে শক্ত। তিনটাই সুপার পাওয়ার। দুইটা একদিকে আর আমেরিকা আরেকদিকে।

আমেরিকা গত কয়েক দশকে বিভিন্ন দেশসমুহকে এমনভাবে যাতাকলে রেখেছে যে, ধীরে ধীরে সউদী আরব, ইরান, ইরাক, ভেনিজুয়েলা, এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা সবাই এর উপর ত্যাক্ত বিরক্ত। আর সবচেয়ে বিরক্তের ব্যাপার হলো এই যে, ”হয় তুমি আমার দলে, না হয় তুমি শ্ত্রুর দলে” এই কন্সেপ্টে কেউই নিরপেক্ষ থাকতে চাইলেও থাকতে পারছিলো না।

এখন যেহেতু ওপেক, বা ওপেক প্লাস তেল আমদানী-রপ্তানীতে হয় নিজস্ব কারেন্সী অথবা ইউয়ান ব্যবহার চালু করছে বা করতে যাচ্ছে, তাতে সবচেয়ে বেশী লাভ হবে চীনের এবং তার সাথে অন্যান্য দেশেরও। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হবে আমেরিকার যারা এতোদিন বিশ্ব কারেন্সীর মোড়ল ছিলো। ডলারই ছিলো একটা মারাত্তক অস্ত্র। এই অস্ত্র এখন হাতছারা হয়ে চলে যাচ্ছে চীনের হাতে।

কিন্ত আমেরিকা এতা হতে দিতে চাইবে কেনো? আর ঠিক এ কারনে গত মার্চ মাসে আমেরিকা ডিক্লেয়ার করেছে যে, তারা ৪০% ডিফেন্স বাজেট বাড়াবে যাতে তারা সরাসরি চায়নাকে এটাক করতে পারে। তারা চায় চায়না যুদ্ধে আসুক। আর ইউয়ান কারেন্সি যেনো ট্রেড কারেন্সি না হতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, চীন কখনো কোনো যুদ্ধে জড়ায় না।

বর্তমানে সৌদি আরব, ইরান, রাশিয়া, মিডল ইষ্ট, রাশিয়া, চীন, ইন্ডিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং অন্য বেশীর ভাগ দেশ সবাই এখন ডলারের পরিবর্তে চায়নার ইউয়ানে ট্রেড করতে আবদ্ধ হচ্ছে। এর অর্থ কি?

এটা হচ্ছে গেম চেঞ্জার।

২৪/০২/২০০৩-স্ট্যালিন ঢাছা

আবখাজিয়ার রিটসা লেকের ধারের সেই “স্ট্যালিন ঢাছা”- একটি মর্মান্তিক ইতিহাস

  আবখাজিয়ায় আমার নতুন পোষ্টিং বেশ মাস খানেক হলো। আসার পর অনেকবার যেতে চেয়েছিলাম “গোরি”তে যেখানে স্ট্যালিন জন্ম গ্রহন করেছে। এখন জায়গাটা আর আগের মতো নাই। এটা এখন মিউজিয়াম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে। কিন্তু আরেকটা জায়গা দেখার খুব শখ হচ্ছিলো- স্ট্যালিন ঢাছা।

স্ট্যালিনের শিশু জীবন কেটেছে খুবই অনিরাপদ এবং গরীব এক পরিবারে। এই অনিরাপদ পরিবেশে তিন ভাই বোনের মধ্যে স্ট্যালিনই একমাত্র বেচেছিলো। তার পিতা ছিলো একজন জুতা মেরামতকারী কিন্তু প্রচন্ড মদ্যপানকারী বদরাগী মানুষ যে প্রতিদিন সে তার সন্তান স্ট্যালিনিকে কারনে অকারনে মারধোর করতেন। স্ট্যালিনের বয়স যখন ১০, তখন তার পিতা মারা যায়। তার মা ছিলো হাউজ ওয়াইফ। তার মা স্ট্যালিনের বুদ্ধিমত্তা দেখে তিনি তাকে এক সেমিনারীতে ভর্তি করে দেন এবং তিনি চেয়েছিলেন স্ট্যালিন প্রিস্ট হিসাবে বড় হোক।

স্ট্যালিন খুব মেধাবী ছাত্র ছিলো এবং প্রায় ৮ বছর পড়াশুনা করে স্ট্যালিন তার ভিন্ন মার্ক্সিজমের মতাদর্শের কারনে স্কুল তাকে বহিষ্কার করে দেয়। এরপর স্ট্যালিন একটি রেভুলুসনারী গ্রুপে তদানীন্তন জারের বিরুদ্ধে জয়েন করেন এবং রেভুলিউশনারী গ্রুপের হয়ে স্ট্যালিন নিজ হাতে তার মতের বাইরের লোকদেরকে একের পর এক হত্যা করতে শুরু করেন। এরপর বলসেভিক গ্রুপ। স্ট্যালিনের একচেটিয়া মনোভাব আর হত্যার মতো দুধর্ষ কাজের মাধ্যমে তিনি বলসেভিক গ্যাং এর খুব প্রতাপশালী নেতা হয়ে উঠেন। শুরু হয় ব্যাংক ডাকাতি, গ্রামে আগুন লাগানো, লোকদেরকে হত্যা করা ইত্যাদি।

যখন বলসেভিক ক্ষমতায় এলো, তখন  বলসেভিক পার্টির নেতা লিউনার্দো তাকে বলসেভিক পার্টির অন্যতম একজন নেতার পদ দেন। কিন্তু লিউনার্দো পরবর্তিতে তার মৃত্যুর আগে এটা বুঝে গিয়েছিলেন যে, স্ট্যালিনকে আর বেশী ক্ষমতা দেয়া যাবে না কারন সে ডেস্ট্রাকটিভ এবং অত্যান্ত উগ্রপন্থির মানুষ এবং এতোটাই যে, তাকে সর্বনয় ক্ষমতায় তিনি তাকে দেখতে চাননি। কিন্তু তারপরেও সেটা হয়েছিলো।

রাশিয়ান রেভুলিউশনের সময় “স্ট্যালিন” এই নামটি নিজেই গ্রহন করেন যার অর্থ স্টিলম্যান বা ম্যান অফ স্টিল। তার আসল নাম ছিলো ভিসারিউনভিচ। স্ট্যালিন চেয়েছিলো আল্টিম্যাট টোটালেরিয়ান ডিকটেটর হিসাবে পরিচিত হতে এবং সেটা কমিউনিজমের মাধ্যমে। তার ধারনা ছিলো কমিউনিজমের মাধ্যে সে তার দেশের সমস্ত মানুষকে ডিসিপ্লিন্ড, শক্তিশালী , ওবিডিয়েন্ট এবং সভ্য মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা আর তার আদেশ অন্ধভাবে পালন করা। এই প্রোজেক্ট সফল করার জন্য স্ট্যালিনকে যা যা করা দরকার সেটাই সে একচ্ছত্রভাবে এগিয়ে গিয়েছিলো যেখানে পুরানো সব ভিন্ন মতাদর্শকে সমুলে খতম এবং তার মতাদর্শকে আরোপ করা। সে মনে করতো তার এই প্রোজেক্ট সফল করার জন্য যদি দেশের অর্ধেক মানুষকেও হত্যা করতে হয়, তাতেও তার করতে হবে এটাই ছিলো তার একমাত্র সপ্ন। স্ট্যালিন এই প্রোসেসকে সফল করার জন্য প্রায় দেড় বছর এক নাগাড়ে নীরবে এবং গোপনে একটা ‘গ্রেট পার্জ’ নামে সায়েন্টিফিক এবং মেটিকুলাস মেথড ব্যবহার করেছেন। ‘গ্রেট পার্জ” এর জন্য তার প্রয়োজন ছিলো এমন একজন লোক যিনি স্ট্যালিনের সমস্ত আদেশ অন্ধভাবে বিসশাস করবে, পালন করবে এবং তা পালন হয়েছে কিনা নিশ্চিত করবে। আর এর জন্য তিনি বেছে নেন নিকোলাই ইয়েজভ নামে একজন তিন ক্লাশ পর্যন্ত পড়ুয়া মানুষকে। যাকে পরবর্তিতে মানুষ চিনতো “ব্লাডি ডয়ার্ফ” নামে। এই নিকোলাই ইয়েজভ ছিলো স্ট্যালিনের সিক্রেট পুলিশের চীফ। সে নিজে সাত লক্ষ সত্তুর হাজার নীরীহ এবং ভিন্ন মতালম্বী মানুষকে স্ট্যালিনের “গ্রেট পার্জ” এর আওতায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

জুলাই ১৯৩৭ থেকে নভেম্বর ১৯৩৮ এর মাঝখানে স্ট্যালিন প্রায় ৮ লক্ষ মানুষকে এভাবে হত্যা করেন। অর্থাৎ প্রতিদিন ১৫০০ মানুষ অথবা প্রতি ৫৭ সেকেন্ডে একজন। আর এভাবেই স্ট্যালিন নভেম্বর ১৯৩৮ এর শেষের দিকে মনে করেন তার আর কোনো কাল্পনিক বা দৃশ্যমান কোনো প্রতিদন্ধি থাকলো না এবং “এবসিউলুট পাওয়ার” এর অধিকারী হন স্ট্যালিন। আগেই বলেছিলাম, স্ট্যালিন ছিলো অত্যান্ত মেধাবী এবং হিসাবী। তিনি তার এই হত্যার কৃত কর্মের ভার কখনোই নিজের ঘাড়ে নিতে চান নাই। তার সেটাও পরিকল্পনায় ছিলো। এ ব্যাপারে একটু পরেই আমরা আলোচনা করবো।

স্ট্যালিনের ১ম স্ত্রী ছিলেন একাতেরিনা যিনি অসুস্থতার কারনেই যুবতী অবস্থায় মারা যান। তার ২য় স্ত্রী ছিলো নাদিয়া। ১৩ বছর স্ট্যালিনের সাথে সংসার করার পর ১৯৩২ সালে নাদিয়া নিজে আত্তহত্যা করেন। স্ট্যালিনের সাথে ১৩ বছর সংসার করার পর নাদিয়া একটা জিনিষ বুঝতে পেরেছিলেন যে, স্ট্যালিন একজন স্বাভাবিক মানুষ নন যা তিনি বিয়ের সময় ভেবেছিলেন। কারন নাদিয়া দেখতে পাচ্ছিলো যে, স্ট্যালিন নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য নিজের আপন মানুষদেরকেও তার হত্যা করতে কোনো দিধাবোধ নাই। এরই ধারাবাহিকতায় নাদিয়া দেখছিলেন, তার সমস্ত আত্তীয়স্বজন, তার স্বামীর বাড়ির আত্তীয় স্বজনেরা একে একে কোথায় যেনো গুম হয়ে যাচ্ছে আর কেউ ফিরে আসছে না। নাদিয়ার বোন এভগেনিয়ার স্বামীকে স্ট্যালিন বিষপানে, এভগেনিয়াকে এবং তার আরেক বোন মারিয়াকে স্ট্যালিন সাইবেরিয়ার “গুলা” তে ডিপোর্টেশনে পাঠান। “গুলা”র তাপমাত্রা শীতকালে যা থাকে মাইনাস ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো। শুধু তাইই নয়, স্ট্যালিন নাদিয়ার ছোট ভাই পাভেলকে ২ নভেম্বর ১৯৩৮ সালে বিষপানে হত্যা করেন। এভগেনিয়ার মেয়ে “কিরা”, তার বড় বোন আনাকেও স্ট্যালিন “গুলা”তে নির্বাসনে পাঠান। এভাবেই ‘আনা’র স্বামী স্ট্যানিস্লাভ, ১ম স্ত্রীর ভাই আলেক্সজান্ডারকেও স্ট্যালিন গুলি করে হত্যা করেন। নাদিয়া এসবের চাপ আর নিতে পারছিলেন না। ফলে সে স্বামীর আনুগত্য হারিয়ে ফেলে। নাদিয়া তার গর্ভের তিন বাচ্চা, ছেলে ইয়াকভ, মেয়ে ভ্যাসিলি আর এসভেটলানাক পিছনে রেখে আত্তহত্যা করেন। আত্তহত্যার পুর্বে নাদিয়া তার এক ভাইকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলো যে, সে কেনো আত্তহত্যা করতে যাচ্ছে। কারন নাদিয়ার পালানোর কোনো জায়গা ছিলো না। নাদিয়া পালিয়ে অন্য কোথাও গেলেও স্ট্যালিন তাকে যেভাবেই হোক খুজে বের করে আনতে সক্ষম। আত্তহত্যাই ছিলো তার মুক্তির একমাত্র পথ। স্ট্যালিনকে বাইরে থেকে মানুষ যা দেখে চোখের অন্তরালে স্ট্যালিন আরেক মানুষ যা মানুষ দেখে না। তাই, নাদিয়া নিজে নিজে তার পথ বেছে নেয়।

নাদিয়ার মৃত্যুর পর স্ট্যালিন আরো নিষ্ঠুর হয়ে উঠে কিন্তু স্ট্যালিন সবার থেকে একেবারে আলাদা হয়ে যান। সবসময় সবার থেকে আলাদা হয়ে একা বসবাস করার পরিকল্পনা করেন। স্ট্যালিন দক্ষন মস্কোর কয়েক কিলোমিটার দূরে এক বিশাল গহীন জংগলের ভিতর রাজ প্রাসাদ বানান যার নাম দেন “স্ট্যালিন ডাচা”। এই স্ট্যালিন ডাচা সুরক্ষার জন্য এক কোম্পানী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং ৩০০ এর অধীক সৈনিক মোতায়েন থাকতো। ‘শট্যালিন ডাচা’য় স্ট্যালিনের নিজের অনুমতি ছাড়া অন্য কারো প্রবেশের অনুমতি ছিলো না। তিনি শুধু একাই সেখানে থাকতেন। আর থাকতো তার গভর্নেস “ভ্যেলেন্টিনা”। ভেলেন্টিনাই স্ট্যালিনের সমস্ত কাজ করতো, খাওয়া দাওয়া, দেখভাল, কুরিয়ারের কাজ এমন কি তার সাথে রাতের সংগী হিসাবে। ভেলেন্টিনাকে স্ট্যালিন সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করতেন। ভ্যালেন্টিনাই শুধু ক্রেমলিন থেকে আসা কাগজপত্রগুলি গ্রহন করতেন এবং ভোর বেলায় তা স্ট্যালিনকে হস্তান্তর করতেন। স্ট্যালিন সারা রাত কাজ করতেন এবং তার ঘুমের সময় হতো সকাল ৭ টা থেকে সকাল ১০ পর্যন্ত।

সারারাত স্ট্যালিন একটা কাজ একেবারে নিজের হাতে করতেন কারো কোনো পরামর্শ ছাড়া। আর সেটা হচ্ছে তার কাল্পনিক এবং দৃশ্যমান শত্রুদেরকে ডেথ সেন্টেন্স দেয়ার অনুমতি। তিনি সারারাত বাছাই করতেন কাকে কখন মারা হবে অথবা সাইবেরিয়ায় বা গুলাতে ডিপোর্টেশনে পাঠানো হবে। কাজটা খুব সহজ ছিলো না। কিন্তু স্ট্যালিন এই কাজটা খুব মনোযোগের সাথে করতেন এবং নামের পাশে একের পর এক টিক দিতেন কার ভাগ্যে মৃত্যু আর কার ভাগ্যে ডিপোর্টেশন। স্ট্যালিন যখন কোনো মানুষকে মেরে ফেলার জন্য আদেশ দিতেন, তখন তার সাথে তার গোটা পরিবারকেও তিনি খতম করে দিতেন।  ৬০ বছর বয়সে স্ট্যালিন সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হন যেখানে তার আর কোনো বিপক্ষের লোক ছিলো না। স্ট্যালিন মাঝে মাঝে ‘স্ট্যালিন ডাচা” থেকে বেরিয়ে এসে ক্রেমলিনেও অফিস করতেন যেখানে তার চার জন মহিলা সেক্রেটারী ছিলো। কিন্তু এই সেক্রেটারীদেরকেও স্ট্যালিন কখনো বিশ্বাস করতো না। শুধুমাত্র একজন সেক্রেটারী (একাতেরিনাও তার নাম) ছাড়া সবাই স্ট্যালিনের রোষানলে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু স্ট্যালিন তার এই মহা হত্যার জজ্ঞ নিজের ঘাড়ে যেহেতু নিতে চান নাই আর তার কাজ প্রায় শেষের পথে। তাই তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৮ তারিখে তার সর্বশেষ নিধন লিষ্ট অনুমোদন দেন।

আজ সেই ঐতিহাসিক ২৪ ফেব্রুয়ারী আবারো ফিরে এসছে ১৯৩৮ থেকে ২০০৩ এ। এদিন অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৮ তারিখে স্ট্যালিন  তার “গ্রেট পার্জ” এ নিধন হত্যার সর্বশেষ লিষ্ট অনুমোদনে তার অন্যায় এমন এক লোকের উপর অর্পিত করেন, যার নাম “ব্লাডি ডয়ার্ফ” বা সিক্রেট পুলিশ চীফ নিকোলাই ইয়েজভ। এই নিকোলাই লুবিয়াংকা জেল খানায় সে নিজেই প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে গন হত্যা করেছেন।

স্ট্যালিন সকাল সাড়ে সাতটায় নিকোলাইকে তার ‘স্ট্যালিন ডাচ’য় ডেকে পাঠান। আজকের দিনে স্ট্যালিন সেই তাকেই সবার কাছে কালার করে প্রচার করে দিলেন যে, সব গন হত্যার পিছনে ছিলো এই চীফ এবংতিনি জাপানিজ, ব্রিটিস এবং আমেরিকান স্পাই হিসাবেও কাজ করছেন। তাকে মরতেই হবে। আর নিকোলাই জানতেন এর থেকে কোনো পরিত্রান নাই। তার ভাগ্য ইতিমধ্যে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। সে শুধু তার একমাত্র ১০ বছরের মেয়ের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলেন যার নাম নাতালিয়া। নাতালিয়াকে স্ট্যালিন শেষ পর্যন্ত মারেননি একশর্তে যে নাতালিয়া আর কখনো তার বাবার নামের “ইয়েজভ” উপাধিটি ব্যবহার করতে পারবেন না। নিকোলাই ইতিহাসের পাতায় একজন ক্রিমিনাল হয়েই বেচে রইলেন।

নোটঃ ১লা মার্চ ১৯৫৩ তারিখে স্ট্যালিন সারাদিন কারো সাথেই কোনো কথা বলেন নাই, কোথাও বেরও হন নাই। আর তাকে কেঊ ডাকবে, কিংবা তিনি কি করছেন এটা দেখার মতো কারো সাহসও নাই। অবশেষে যখন ক্রেমলিন কুরিয়ার তার অফিসে ঢোকলেন, তখন দেখা গেলো স্ট্যালিন হার্ট স্ট্রোক করে মেঝেতে পড়ে আছেন। তখন তার বয়স ৭৫।

স্ট্যালিন যেভাবে রাজ্য পরিচালনা করতেন তিনি ঠিক সেভাবেই মারা গেলেন। ২০ মিলিয়ন মানুষকে তিনি তার শাসনামলে হত্যা করেছিলেন।  প্রায় ৩০ বছর এককভাবে রাজত্ত করেছেন স্ট্যালিন। স্ট্যালিন ৩০ বছর ইউএসএসআর পরিচালনা করেছেন যেখানে ১৫ টি ছিলো রিপাব্লিক। পৃথিবীর ৬ ভাগের এক ভাগ ছিলো এই ইউএসএস আর। সে সময়ে মোট ১১টি টাইম জোন ছিলো। Biggest Empire of all times.

০২/০৩/২০২৩-স্বাধীনতার নতুন ব্যাকরন

এত বছর পর অনেক শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা সেই স্বাধীনতার গুরুত্ব কি বুঝতে পারছি? আমাদের দেশের ভবিষ্যতের প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার লড়াইয়ের সেই বীরত্ব গাথা অধ্যায় হয়তো শুধু ইতিহাসের পাতায়ই থাকবে। কিন্তু এখন সম্ভবত আরেকটি সময় এসে গেছে নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন ইতিহাস লেখার। স্বাধীনতার নতুন ব্যকরন বুঝার। আর সেটা হচ্ছে- এটা বুঝা যে, আমাদের যতোটা বিপদ বাইরের শত্রুর ক্ষমতার থেকে তার থেকে অনেক বেশী বিপদ আমাদের ভিতরের ক্ষমতায়। আজকের স্বাধীনতা ইংরেজ বা পাকবাহিনীর শিকল থেকে মুক্তির জন্য হয়তো নয়, বরং সেই শিকল থেকে মুক্তি যা আমদের বাড়িতে, আমাদের ঘরে, সমাজে বেড়ে উঠছে আইডোলজিহীনভাবে অথবা আতঙ্ক ড্রপিং পয়েন্ট হিসাবে।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হচ্ছে-এই শিকল তাদের হাতে যাদের না আছে কোনো আইডিয়োলজি না আছে আতংক ছড়ানোর কারন। ওরা আমাদের বাড়ীর দিকে নজর দেয়, পর্যবেক্ষন করে আর বিশ্লেষন করে যাতে এমন কি কেউ আছে যাকে উষ্কানো যায়? আর তারপর কোনো এক সুযোগে আমাদের এই যুবসমাজকে তাদের কোনো দূর্বল ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমে এমন এক দুধর্ষ অভিযানে চালান দেয়া হয় যেখানে সাধীন নাগরকেরা এই যুব সমাজের মেধা, শক্তির শুভ কাজের বিনিময়ে সুফল তো দূরের কথা এর পরিবর্তে সামাজিক এবং দৈনন্দিন জীবনে জিম্মি হয়ে আতংকিত থাকে।

তাই নতুন প্রজন্মের জন্য সুশাসন, সুকর্ম ব্যবস্থা আর সুবিচার যতোক্ষন নিশ্চিত না করা হবে, এই প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ব্যকরন অন্য রকমের অর্থই হয়ে থাকবে যেখানে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ই একমাত্র অস্ত্র। এখানে আর কোনো আইডোলোজি কাজ করেনা। এই যুদ্ধটা বাইরের শক্তিকে দমনের চেয়েও অধিক কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়।

২৩/০২/২০২৩-আমেরিকার ভিসা প্রাপ্তি

অনেকবার আমেরিকা যাওয়ার জন্য ভিসা পেয়েছিলাম কিন্তু যাওয়া হয়েছে মাত্র একবার। বাকী সম্ভবত আরো দুবার ভিসা ছিলো (দূটু মিলিয়ে প্রায় ৮ বছর মেয়াদিতে) কিন্তু যাওয়া হয় নাই। আমেরিকা আমাকে আসলেই টানে না। অনেকের কাছে এটাকে সর্গপুরী মনে করেন বটে কিন্তু আমার কাছে কোনো বিদেশই টানে না। আর সেটেল হবার তো কোনো প্রশ্নই জাগে না।

এবার আমেরিকার ভিসা পাওয়ার ব্যাপারে আমার বেশ সন্দিহান ছিলো। তারা আবার নাক উচা। ভিসা দিয়েছে কিন্তু যাইনি, তাতে ওরা ইন্সাল্ট ফিল করে। এমতাবস্থায় আমাকে ৪র্থ বার ভিসা দেয় কিনা সেটা নিয়ে আমার পুরুই সন্দেহ ছিলো। তারপরেও ছোট মেয়ে আমেরিকা থাকে, মেয়ের মায়ের ভিসা হয়ে গেছে, আমার হয় নাই, আমার যাওয়া হবে না ইত্যাদির চাপে শেষ পর্যন্ত ভিসার আবেদন করেছিলাম। কিন্তু মনে একটা কঠিন প্রত্যয় ছিলো যে, ভিসা দিলেই যেতে হবে কিংবা সুযোগ না থাকায় যেতে পারি নি এটা পরবর্তী ভিসা না পাওয়ার জন্য একটা ডিস ক্রেডিট হতে পারে না। যদি আমাকে ভিদা রিজেক্ট করে, আমি অবশ্যই এর কৈফিয়ত চাইবো তাদের কাছ থেকে কেনো এবং কোন কারনে আমার ভিসা রিজেক্ট করছে। আর যেহেতু আমার খুব একটা টান নাই, ফলে আমার ভিসা পাইলেই কি আর না পাইলেই কি। মিটুলের তো অন্তত ভিসা আছে, তাতেই চলবে। কোনো কারনে যদি কনিকার কাছে যেতে হয়, মিটুল একাই সামলে নিতে পারবে।

যথারীতি আমি ইন্টারভিউ এর জন্য দাড়ালাম। অবাক করার ব্যাপার হলো, আমার কোনো কাগজ পত্র তারা চেক করার প্রয়োজন মনে করলো না। আমি আর্মিতে ছিলাম এটা নিয়েই তাদের অনেক প্রশ্ন ছিলো। প্রশ্নগুলি আমাকে ধরার জন্য নয় বরং যা দেখলাম তারা আর্মির যে কোনো লোককে খুবই মুল্যায়ন করে। আর্মিতে আমি কোথায় কোথায় চাকুরী করেছি, সেটা তাদের জানার খুব শখ হচ্ছিলো। বলেছি জাতীসংঘের সাথে প্রায় আড়াই বছরের উপর হাইতি আর জর্জিয়ায় মিশনে ছিলাম, তখনই একবার আমেরিকায় বেড়াতে গিয়েছিলাম।

আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো আমার মেয়ে তার পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরে আসবে কিনা। আমি বলেছি- সেটা আমি জানি না তবে আমার যে ব্যবসা আছে সেটায় সে হাল ধরলে আমি খুব খুশী হবো। কি ব্যবসা আমার যখন জিজ্ঞেস করলো, আমি বললাম রপ্তানীমুলক গার্মেন্টস। প্রায় ২ হাজার কর্মচারী আছে শুনে আরো খুশী হলো। বাৎসরিক টার্ন ওভার জিজ্ঞেসের পর অফিসার একটু যেনো হচকচিয়ে গেলেন কারন টার্ন ওভার টা ঝুব কম নয়- ২২৫ থেকে  আড়াইশো কোটির মতো।

খুব খুশী হয়েছে তারা পুরু ব্যাপারটা জেনে। অবশ্য আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল কেনো আমি আগের ভিসা গুলিতে আমেরিকায় যাইনি। আমি খুব সাবলিল ভাবেই বলেছিলাম যে, আসলে সেটা ইচ্ছে করে না যাওয়ার কোনো কারন নাই। আমি আমার নতুন ব্যবসাটা গুছিয়ে উঠতে সময় দিতে পারছিলাম না। তাই আর যাওয়া হয় নাই। কিন্তু এবার তো যাওয়া হবেই কারন মাঝে মাঝে আমার মেয়ের জন্য তো আমার মন ছুটেই যায় তাকে দেখার জন্য।

কোনো দ্বিমত করলেন না অফিসার। শুধু একতা কথাই বল্ল০ ইউ আর এ গুড ফাদার। অফ কোর্ষ, ইউ নিড টু গো।

বলে ভিসা দিয়ে ধন্যবাদ জানালো। ভালো লাগলো অফিসারের ব্যবহার। ফেরার পথে একটা স্যালুট দিলাম, আর একটু হাসলাম। 

২৪/০২/২০২৩-রুলস বেজড অর্ডার

গত কিছুদিন যাবত আমি রুলস বেজড অর্ডার নিয়ে পড়াশুনা করতে গিয়ে একটা ব্যাপার মুটামুটি পরিষ্কার হলো যে, এই "রুলস বেজড অর্ডার" আসলে কোথাও আইনের বই বা লিখিত কোনো দলিল নাই এবং এটা কারা অনুমোদন করেছে সেটাও কেউ জানে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে-বর্তমানে বড় বড় পলিটিশিয়ানরা কথায় কথায় ‘রুলস বেজড অর্ডার’ কথাটা উচ্চারন করেন। কিন্তু তাদেরও এই রুলস বেজড অর্ডার সম্পর্কে খুব একটা ভালো ধারনা আছে বলে আমার মনে হয় না। আর যদি পরিষ্কার ধারনা থেকে থাকে তাহলে আরেকটা জিনিষ খুব পরিষ্কার যে, সবাই যার যার সুবিধার জন্য এবং ফায়দা লুটার জন্য এই "রুলস বেজড অর্ডার" সমর্থন করেন। যেমন, চায়নার এবং আমেরিকা উভয়েরই তাইওয়ানের ব্যাপারে, আমেরিকার ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্থান, প্যালেস্টাইন কিংবা ইসরায়েলের ব্যাপারে, রাশিয়ার জর্জিয়া কিংবা মালদোভার ব্যাপারে, ফ্রান্স এর আফ্রিকান দেশগুলির ব্যাপারে এই "রুলস বেজড অর্ডার" মানতে খুব পছন্দ করে। আসলে এই "রুলস বেজড অর্ডার" আর কিছুই না, এটা যার যার সার্থে তারা নিজেদের মতো করে কিছু আইন বানিয়ে সেটা অন্যকে মানতে বাধ্য করে। সেটা যদি তাদের নিজের দেশের আইনের বিপক্ষেও যায়, তাতেও মানানোর চেষ্টা চলতে থাকে। যেসব দেশ নিজেরা সাবলম্বি নয়, যারা বিগ পাওয়ারের উপর, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের উপর, আইএমএফ এর উপর কিংবা বৈদেশিক লোন বা ডোনেশনের উপর নির্ভরশীল, তাদের জন্য ব্যাপারটা খুবই অসহনীয়। তারা না মানতে পারে, কারন না মানলে সাহাজ্য বন্ধ হয়ে যাবে আবার মানলে দেখা যায় যে, এটা নীতিবহির্ভুত হয়ে যায়। ফলে নিজেদের সার্থেই ছোট ছোট দেশগুলি চুপ থাকে। আর এই চুপ থাকার মানে এই নয় যে, তারা সাপোর্ট করছে, আবার এই চুপ থাকার কারনে যারা এগুলি প্রয়োগ করে তারা ভাবে, কেউ তো আমাকে বাধা দিচ্ছে না।

কিন্তু যখন এই "রুলস বেজড অর্ডার" বড় বড় বিগ পাওয়ারের মধ্যে সংঘাত ঘটে তখন হয় সমস্যা। যেমন এখন হচ্ছে, রাশিয়া-চীন-আমেরিকা-ইউরোপ ঘিরে। তাইওয়ানকে ঘিরে চীন মনে করছে ‘রুলস বেজড অর্ডার’ এর মাধ্যমে তাইওয়ানের উপর সে যা খুশী করতে পারে, আবার আমেরিকাও ভাবে সেই বা নিয়ন্ত্রন ছাড়বে কেনো। ইউএস এর লিবিয়া, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্থানে নিজেদের ইচ্ছায় রিজিম পরিবর্তনে কিংবা প্যালেষ্টাইনকে ইসরাইলের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া অথবা ইউক্রেনে এক নাগাড়ে ৮ বছর এক তরফা গোলাগুলিতে প্রতিষ্টিত সরকারকে উতখাত করে নিজের পছন্দমত সরকার গড়ে তোলার মত যে কোনো অজুহাতে তাদেরকে কব্জা করার নিমিত্তে অথবা তথাকথিত ডেমোক্রেটিক ইস্যু বা নিরাপত্তার অজুহাতে তাদেরকে বশে আনা, জর্জিয়া, মালদোভা, কিংবা ইউক্রেনকে ধরে রাখার নামে তাদেরকে রাশিয়ার ডি-মেলিটারাইজড করা, আফ্রিকায় বিভিন্ন দেশ যেমন বারকিনু ফাসো, বা মালি কিংবা নাইজেরিয়ায় সামরিক উপস্থিতির মাধ্যমে ফ্রান্সের আধিপত্য বিস্তার করার সবচেয়ে ভালো আইনটা হচ্ছে এই অলিখিত এবং অন-অনুমোদিত এই “রুলস বেজড অর্ডার”।

এটা একটা “মিথ”।

সবাই কোনো না কোনো এরেনায় আল্টিমেট কন্ট্রোল চায়। যখনই একই এলাকায় একের অধিক কারো নিয়ন্ত্রন রাখার দাবী না চলে আসে, ততোক্ষন এই “রুলস বেজড অর্ডারে” অন্যজন হস্তক্ষেপ করে না। কিন্তু একের অধিক হলেই টক্কর। এটা সবচেয়ে বেশী কার্যকরী হয়েছে যখন মাল্টিপোলার সিস্টেম ভেংগে ১৯৯০ সালে ইউনিপোলার সিস্টেমে দুনিয়াটা জড়িয়ে গেছে। তখন ইউনিপোলার নেতাদেরকে বাধা দেয়ার মতো কোনো শক্তিই অবশিষ্ট ছিলো না। তারা মনে করে যে, সব আইনের উর্ধে তারা। তারা যা বলবে, যা ভাববে, যা করবে সেটাই “রুলস বেজড অর্ডার”। এই রুলস বেজড অর্ডারের মাধ্যমে ইউনিপোলার নেতারা আন্তর্জাতিক সব সিস্টেম (ওয়ার্ড ব্যাংক, আইএমএফ, ইউএন, রিজার্ভ ব্যাংক, ওএসসিই, কিংবা মানবাধিকার সংস্থা ইত্যাদি) যেনো সব তাদের। যাকে খুশী আক্রমন, যাকে খুশী নিষেধাজ্ঞা, যাকে খুশী একঘরে করে রাখা ইত্যাদি এই রুলস বেজড অর্ডারের মাধ্যমে করা যায়।

মজার ব্যাপার হলো, এই রুলস বেজড অর্ডার কোথাও বই আকারে লিপিবদ্ধ নাই। না এর অনুমোদন নেয়া লাগে। সিচুয়েশন বুঝে কংগ্রেস কিংবা প্রেসিডেনশিয়াল আদেশেই নতুন ‘রুলস বেজড অর্ডার’ জানিয়ে দিলেই কাজ শেষ। রুলস বেজড অর্ডারের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল সিস্টেমকে বুড়ো আংগুল দেখানো খুব সোজা। এ পরিপ্রেক্ষিতে কিম পিটারসন (ইন্ডিপেন্ডেন্ট জার্নালিষ্ট) নিউ এজ পত্রিকায় গত ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ এ তার লেখায় তিনি লিখেছেন-

...” ইউএস আইসিসি (ইন্টার ন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) কে রিকগনাইজ করে না। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ভেটো ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় ইসরায়েল করত্রিক সংঘটিত রেসিষ্ট কার্যকলাপ সমর্থন, নিকারাগোয়ায় ওয়াটার মাইনিং এর ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড কোর্ট রুলিং এর আওতায় দোষি সাবস্থ্য হবার পরেও তা ইগনোর করা, এংলো ইউরোপিয়ান জাপানিজ সাউথ কোরিয়ান জোট বিভিন্ন ভায়োলেশনে জড়িত থাকার পরে আন্তর্জাতিক বিচারে দোষি হওয়া সত্তেও তাদেরকে এই রুলস বেজড অর্ডারের আওতায় পরিশুদ্ধ করা, সিরিয়া দখল, আন প্রভোকড ইরাক আক্রমন, ৭০ বছর যাবত কিউবাকে এক ঘরে করে রাখা ইত্যাদি সব এই রুলস বেজড অর্ডারের দ্বারা জায়েজ। “

অন্যদিকে ফ্রান্স, জার্মানী, ইউকে কিংবা ইউরোপিয়ান দেশগুলির এমন ভগ্ন দশা যে, তারা এককালের মোড়ল অথচ তাদের আর সেই শক্তি নাই যাতে নিজেরা না মানলেও অন্যকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাখতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য, আরব দেশগুলি কিংবা দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলিতে তো আজীবন সংঘাত লেগেই আছে, হয় বাইলেটারেল, না হয় জিওপলিটিক্যাল অথবা টোটালেটেরিয়ান সরকারের চর্চা। ফলে ক্ষমতা হারাতে পারে, কিংবা কোনো প্রয়োজনে এসব বিগ পাওয়ারের সাহাজ্য লাগতে পারে ভেবে এরাও এসব বিগ পাওয়ারের বিরুদ্ধে বা রুলস বেজড অর্ডারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলে না। ফলে বাধা না দিয়ে “জি হুজুর” থাকলেই যেনো “কুলও রক্ষা পায় আবার মোড়ল গিড়িও থাকে” এমন একটা পরিস্থিতিতে তাদের বসবাস।

৩য় বিশ্বযুদ্ধ না লাগলে সম্ভবত এবার এই "রুলস বেজড অর্ডার", ইউনিপোলারিটি, নিউ কলোনিয়ালিজম কন্সেপ্ট ইত্যাদির ইতি হবার সম্ভাবনা।

পৃথিবী আবার শান্ত হবে। এটাই প্রত্যাশা।

২১/০২/২০২৩-পচা সামুকে পা কাটে

গ্লোবাল অর্ডার চোখের সামনে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অথবা অন্য অর্থে যদি বলি- এটা পরিবর্তন হবারই কথা ছিলো। কিন্তু সে সময়টা কখন এবং কবে সংঘটিত হবার কথা ছিলো সেটা নির্ধারিত ছিলো না। বড় বড় ঘটনা হটাত করেই সংঘটিত হয়, আর হটাত করেই বিষ্ফোরন ঘটে।

যে কোনো বড় পরিবর্তনে সকল পক্ষেই কিছু হট, কোল্ড, চালাক এবং নির্বুদ্ধিওয়ালা নেতা থাকে। অথবা এসব গুনাবলীওয়ালা নেতাদের আবির্ভাব হয়। আর এটা হতে হয় একই সময়ে। সবাই চালাক হলে কিংবা সবাই নির্বুদ্ধিওয়ালা হলে বড় বড় ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। ১ম মহাযুদ্ধের কথা বাদই দিলাম, ২য় মহাযুদ্ধ যদি আমরা বিশ্বনেতাদের পরিচয় দেখি, তাতে দেখবো, মুসুলিনি (ইতালী), হিটলার (জার্মান), চার্চিল (ইউকে), স্ট্যালিন (সোভিয়েত ইউনিয়ন), রুজভেল্ট (আমেরিকা), তোজো (জাপান), চার্লস ডি গুয়ালে (ফ্রান্স) এদের জন্ম হয়েছিলো। এদের একপক্ষ ছিলো সামরিক খাতে শক্তিশালী কিন্তু হট হেডেড। অন্য দিকে আরেক পক্ষ তাদেরও সামরিক খাত যৌথভাবে শক্তিশালী ছিলো কিন্তু সেসব নেতারা অন্য পক্ষের মতো এতো হট হেডেড ছিলো না। এক্সিস পাওয়রে ছিলো হিটলার, মুসুলিনি এবং তোজো। অন্যদিকে এলাইড পাওয়ারে ছিলো বাকী সব।

অসম্ভব ক্ষমতাধারী হট হেডেড হিটলারকে নিঃশর্ত সাপোর্ট করেছে মুসুলিনি এবং তোজো, কখনো বুঝে, কখনো না বুঝে। তারা এটাই মনে করেছে যে, হিটলার যা বলবে সেটাই ঠিক। তাই হিটলারের পরিকল্পনায় কেউ কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় নাই বরং নিসশর্তভাবে সাপোর্ট দিয়ে হিটলারকে আরো বেপরোয়া করে তুলেছিলো। আর এর কারনও ছিলো- তারা প্রাথমিকভাবে সব সমরক্ষেত্রে সাফল্যও পাচ্ছিলো। কিন্তু এই সাফল্য কতটুকু টেকসই ছিলো সেটা তারা ভাবতে ভুল করেছিলো। অন্যদিকে এলাইড পাওয়ারের মধ্যে ছিলো বেশ কিছু বুদ্ধিমান নেতা যারা কখন কোথায় কতটুকু ফোর্স নিয়ে কিভাবে কাকে আক্রমন করতে হবে এবং কার কতটুকু দায়িত্ব সেটা খাতা কলমে বেশ পরিকল্পনা মাফিক ছকে আকা ছিলো। ফলে, কিছুটা সময় পরে যুদ্ধের মোড় পুরুই ঘুরে গিয়েছিলো।

তখন যুদ্ধটা ছিলো শুধুই সামরিক অস্ত্র আর দক্ষ সৈন্যবলের কেরামতি। কিন্তু এবারে প্রক্সিওয়ার সে রকমের নয়। এখানে সবাই জড়িত, কেউ সরাসরি, কেউ পরোক্ষভাবে আবার কেউ নীতিগতভাবে। এখানে শুধু সামরিক অস্ত্র আর দক্ষ সৈন্যবলই শেষ কথা নয়। এখানে জড়িয়ে আছে প্রতিটি দেশের অর্থনইতিক কর্মকান্ড, জিওপলিটিক্যাল ইনফ্লোয়েন্স, ইউনিপোলারিটি ভার্সেস মাল্টিপোলারিটির মতো হিসাব কিতাব আর আছে কলোনিয়ালিজমের বা দখলদারিত্তের মতো কিছু মোগলগিড়ির বিপক্ষে একটা ক্ষোভ। স্পেশাল অপারেশনটা যদি এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যেত, তাহলে এতো কিছুর হিসাব কিতাব হয়তো আসতো না। কোনো না কোনো কারনে এই স্পেশাল অপারেশনটা ইচ্ছে করেই যেনো কেউ দীর্ঘায়িত করছে। আর এর ফলে অনেক হিসাব সবার কাছে বেরিয়ে আসছে, কার কি ইন্টারেষ্ট। থলে যে এতো বিড়াল ছিলো আমরা সেটা এই যুদ্ধ শুরুর আগে বুঝতেও পারিনি। কোনোটা বুনু বিড়াল, কোনোটা বাঘা বিড়াল, কোনোটা মিচকে বিড়াল, কোনোটা আবার চাপাহুয়া বিড়াল।  

২য় মহাযুদ্ধের বিভীষিকা যুদ্ধের সময় সাধারন জনগন যতোটা না উপলব্ধি করেছে, তার থেকে বেশী উপলব্ধি করেছে যখন নুরেনবার্গ ট্রায়াল শুরু হয়। মানুষ এর গভীর ক্ষতের কথা, মানুষের সাফারিংস এর কথা, যুদ্ধের আসল মোটিভের কথা ইত্যাদি সাধারন মানুষ জানতে পেরেছিলো সেই নুরেনবার্গ ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে। আর এখন ইউক্রেনের এই স্পেশাল অপারেশনের সময়কাল দীর্ঘায়িত হবার কারনে আমরা আমজনতা ধীরে ধীরে এটা বুঝতে পারছি কে কার বিপক্ষে কি নিয়ে কথা বলছে আর সেভাবে কে কার সাথে জোট পাকাচ্ছে।

আফ্রিকা (যার কাছে আছে ৫৪টি ভোট ইউএন পরিষদে) এখন সবার মাথা ব্যথা হয়ে দাড়িয়েছে। কে আফ্রিকাকে কন্ট্রোল করবে, কতটুকু কন্ট্রোল করবে, আর কিভাবে কন্ট্রোল করবে। অথচ এই আফ্রিকাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, যুগের পর যুগ না খেয়ে মরতে হয়েছে, তাদের রিসোর্স চুরি হয়েছে, তাদেরকে অগ্রসর হবার কোনো পথই কেউ দেখায় নাই। সব কলোনিয়াল মোড়লেরা সব সময় একে ব্যবহার করেছে তাদের রিসোর্স লুন্ঠন করে করে। একসময় এই সেন্টার অফ ফোকাস ছিলো মধ্যপ্রাচ্য। সেই মধ্যপ্রাচ্য এখন সবার হাতের বাইরে। তারাও কলোনিয়ালিজমের গন্ডি থেকে বেরিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। ভারতবর্ষ একসময় ইতিহাসের নির্মম শিকার হয়েছে, তার বুকচিড়ে পাশ্চাত্যরা যা পেরেছে লুন্ঠন করেছে, প্রায় ২০০ বছর নাগাদ নিজের দেশেই তারা ক্রীতদাসের মতো জীবন যাপন করেছে। সেই ভারতবর্ষ এবার যেনো তাদের ইতিহাসের প্রতিশোধ নিতে চায়। রুখে দাড়িয়েছে। সোভিয়েট সবসময়ই পাশ্চাত্যের দুষমন ছিলো, সেটা এখনো আছে। সোভিয়েট ভেংগে ১৫টি দেশে রুপান্তরীত হয়েছে কোনো যুদ্ধ ছাড়াই। কষ্ট নাই এমন হতে পারেনা। চীন সবসময়ই চালাক ছিলো। তারা পারতপক্ষে কারো সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় না। তারা মনে করে, যুদ্ধে যে পরিমান অর্থ আর মানুষের ক্ষতি হয় সেটার বদলে সেই অর্থ আর জনবল দিয়ে অন্য দেশকে কন্ট্রোল করা সহজ। আর সেটা স্থায়ী। ফলে চীন একাধারে আফ্রিকা, দক্ষিন এশিয়া, ভারতবর্ষ, এবং রাশিয়ার সাথে কোলাবরেটর হিসাবে অন্যত্র সহযোগী হয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে লিপ্ত। এখন চীন সবার জন্যই একটা মাথাব্যথার কারন।

যাক যেটা বলছিলাম, একই সময়ে কিছু কিছু নেতাদের আবির্ভাব ঘটে যেখানে একপক্ষ আরেক পক্ষ থেকে কম বুদ্ধিমান অথবা একদল হট হেডেড আর আরেক দল কোল্ড হেডেড। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাপারটা একেবারেই দৃশ্যমান। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অধিকাংশ নেতারা কোথায় যেনো কোনো এক পরাশক্তির কাছে সারেন্ডার করে আছে নিসশর্তভাবে যেমন করেছিলো তোজো, কিংবা মুসুলিনি হিটলারের কাছে। ফলে ক্রমাগত বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারনে যে শক্তির উপর আজকে এই ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন দাঁড়িয়ে সেটা যেনো ধীরে ধীরে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। পেট্রোডলার মার খেয়ে যাচ্ছে, এনার্জি রিসোরসের ঘাটতির কারনে ইউরোপ প্রায় ডি-ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের মধ্যে পড়ে গেছে। অন্যদিকে ইউরোপের বাইরে প্রতিটি দেশের ভিন্ন ভিন্ন ক্ষোভের কারনে তারা এবার একসাথে এমন করে জোট পাকিয়ে যাচ্ছে যে, যারা এতোদিন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এদের সবাইকে ভয়ের মধ্যে রেখেছিলো তারাই সেই সব দেশের একীভুত হবার কারনে নিজেরা যেনো একা হয়ে যাচ্ছে, আর নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলিই এখন বড় সংঘটনে রুপ নিচ্ছে। এককালের ক্ষমতাধর দেশ ব্রিটেন নিজেই যেনো এখন ছোট একটা দ্বীপে রুপান্তরীত হচ্ছে, ইউরোপ শরনার্থির চাপে এবং উচ্চ ইনফ্লেশনের মুখে তথা এনার্জি ক্রাইসিসে ডি-ইন্ডাস্ট্রিলাইজেশনের মুখে বড় বড় বিলিওনারেরা দেউলিয়ার দিকে এগুচ্ছে। একচেটিয়া রিজার্ভ ধারনকারী দেশসমুহ তাদের ক্রেডিবিলিটি হারিয়ে এখন মাল্টি কারেন্সির স্রোতে ধরাশায়ী হয়ে পড়ছে। আর এর মধ্যে একটার পর একটা ভুল সিদ্ধান্তে যেনো আরো গভীর সমস্যায় পতিত হবার লক্ষন দেখা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়- যারা নিজের সম্পদকে রক্ষার জন্য এসব দেশে জমা করতো তাদের সেই সব সম্পদ এখন পুরুটাই অনিশ্চয়তার পথে। ফলে ভবিষ্যতে আর কেউ অধীক নিশ্চয়তার লক্ষে কখনো তাদের সম্পত্তি এসব দেশে রাখবে কিনা সে ব্যাপারে শতভাগ সন্দেহ আছে।

আজকে ছোট ছোট দেশ যারা অন্য বিগ পাওয়ারের উপর নির্ভরশীল, তারা হয়তো মুখ সেটে বসে আছে, কিছু বলছে না কিন্তু ক্ষোভ তো ভিতরেই জমা হয়ে আছে। নিজের দুক্ষের কথা কাউকে বলতে পারছে না মানে এই নয় যে, তাদের কষ্ট নাই। তাদের এই কষ্টের কথা যারাই শুনবে, তাদের দলেই একদিন এরা ভিড়ে যাবে খুব গোপনে। তখন এদেরকেও আর পাশে পাওয়া যাবে না। কেউ তো আছে এদের কথা শুনবে।

আজকের দিনের এই ইতিহাস যেদিন মানুষেরা উপলব্ধি করবে, সেদিন হয়তো প্রিথিবী শান্ত হয়ে যাবে আর আমরা গবেষনাগারে বসে বসে এটাই বিশ্লেষন করবো কখন কে কোথায় কি ভুল করেছিলো। আর এভাবেই “সময়” নামক অপরিবর্তনশীল ফ্যাক্টরটি তার রাজত্ব চালিয়ে যায় যেখানে এক সময় রোম, এক সময় জার্মান, এক সময় ফ্রান্স, এক সময় ব্রিটিশ, কিংবা আমেরিকাকে লিডার হিসাবে বসিয়েছিলো।  আর সবাইকে সেই লিডারকে মানতে বাধ্য করেছিলো। কিন্তু সেই “সময়” নামক ফ্যাক্টরটি যে সব সময় সবার সাথে থাকে না, এটাই আমরা হট এবং কোল্ড হেডেড মানুষেরা বুঝতে অক্ষম। পচা সামুকে পা কাটে এটা আমরা অনেক পরে বুঝি যখন পা কেটে যায়।

সম্ভবত এখন “সময়” তার নিজের অভিযান চালিয়ে আবার পুনরায় বিশ্বকে ঢেলে সাজাচ্ছে। কে এখন পরবর্তী পথ প্রদর্ষক সেটা দেখার বিষয়।

০৩/১২/২০২২-কোকো, আমাদের প্রথম জার্মান শেফার্ড

কুকুর পালার শখ আমার কখনোই ছিলো না। বরং মানুষ কেনো কুকুর পালে, সে ব্যাপারে আমার অনেক নেগেটিভ মতবাদ ছিলো। অথচ এখন আমি নিজেই কুকুর পালা শুরু করেছি। কেনো এমনটা হলো, সে ব্যাপারটাই এখন বলছি।

সম্ভবত গত বছরের প্রথম দিকে হটাত করে কোথা থেকে একটা কুকুর আমাদের বাসায় এসে হাজির। কথা নাই বার্তা নাই, সে আর কোথাও যেতেও চায় না। সারাদিন আমাদের বাসার সামনেই বসে থাকে, গেটে বসে থাকে, কোথাও যায় না। মাঝে মাঝে আমি বা আমার পরিবার ওকে কিছু খাবার দেয়া শুরু করে। খুব যে খায় তাও না। যতটুকু লাগে ততটুকুই খায়, আর কিছু খাবার রেখেও দেয়, পরবর্তী সময়ে আবার সেটা ক্ষুধা লাগলে খায়। ব্যাপারটা খুব অবাক লাগছিলো।

সারারাত বিশেষ করে রাত ১১ টার পর আমরা যখন মেইন গেট লাগিয়ে দেই, তাকে আমরা জোর করেই গ্যারেজের ভিতর থেকে বের করে দেই, কিন্তু খুব সকালে আবার এসে হাজির হয়। এভাবে প্রায় ৬/৭ মাস পার হবার পর একদিন শুনি ওর নাম রাখা হয়েছে ‘রকি”। সম্ভবত এই নামটা দেয়া হয়েছে আমার বড় মেয়ের দ্বারা। এখন সবাই ওকে ‘রকি’ নামেই ডাকে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, কুকুরটাও মনে করে আমরা ওর মালিক, আমাদের কথা শুনে, ডাকটাও সে রেস্পন্স করে। এখন ওকে আমরা সবাই একটা মায়ার মধ্যে বেধে ফেলেছি। অফিস থেকে বাসায় আসার পরই দেখি, আমার গাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ায়, সকালে গেট খুললেই মাথা দিয়ে গেট ধাক্কা দিতে শুরু করে কখন সে গ্যারেজে ঢোকবে।

এর মধ্যে আমার ফ্যাক্টরীর ছাদে হটাত দেখি জার্মান শেফার্ডের পাচটি বাচ্চা। পিচ্চি পিচ্ছি, চোখ ফুটে নাই। জরীফ নামে এক লোক যে আমাএ ফ্যাক্টরী বিল্ডিং এর ভাড়া নেয়। দেখে ভালো লেগেছে। মনে হলো, একটা বাচ্চা পালা যায়। সেই থেকে জার্মান শেফার্ড পালার শখ হয়েছে।

গত ১২ অক্টোবর ২০২২ থেকে আমি এই জার্মান শেফার্ডের বাচ্চাটা আমি নিয়ে এসেছি। ওর সেদিন বয়স হয়েছে একেবারে তিন মাস। আমি যখন ওকে গাড়িতে করে নিয়ে আসি, দেখেছিলাম, ওর শরীরের হাড্ডিগুলি পর্যন্ত দেখা যায়। আমি জানি না কিভাবে কুকুর পালতে হয়। কিন্তু অন লাইনে গিয়ে বা ইউটিউবে গিয়ে এ ব্যাপারে বেশ কিছু ধারনা পাওয়া গেলো।

পরেরদিন ওর একটা নাম দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। আমার ছোট মেয়ে (যে আমেরিকায় থাকে) সে তো কুকুর পালবো এটা শুনেই আনন্দে আত্তহারা। বড় মেয়েও তাই। কিন্তু বউ একেবারে নারাজ। কিছুই যায় আসে না। কুকুরের জন্য ঘর বানিয়েছি ২টা। একটা গ্যারেজে আরেকটা ছাদে।

ওর নামটা দিলো আমার ছোট মেয়ে।

নাম কোকো।

এখন আমরা ওকে কোকো নামেই ডাকি। এই এক মাস হয় নাই, এর মধ্যে কোকোর ওজন বেড়েছে প্রায় ২ কেজি। প্রচুর খায়, মাশ আল্লাহ, খেলে, আমাদের ঘরে আসে। আমার কেয়ার টেকারের সাথে ওর বেশী শখ্যতা মনে হয়। কারন সারাদিন তো কোকো ওর সাথেই থাকে, খেলে, বেড়ায়।

আমাকে একটু ভয় পায় কারন মাঝখানে আমি ওকে কিছু কথা না শোনার কারনে লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, কোকো কাউকে ভয় পাক এটাও দরকার আছে।

কোকোকে সব গুলি ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে। ডি-ওয়ার্মিং করার জন্য একটা কৃমির ট্যাবলেট ও খাওয়ানো হয়েছে। আরেকটা খাওয়াতে হবে। আমি ওকে প্রতি শুক্রবারে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে খুব ভালো করে গোসল করাই।

কুকুর পালা থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। একটা বোবা প্রানীকে বশ মানানো, কথা শোনানো সহজ ব্যাপার না। তবে কুকুর অত্যান্ত প্রভুভক্ত প্রানী। দেখা যাক কোকোর বেলায় কি হয়। এটাই কোকো।

২০/০২/২০২৩-পতেঙ্গা ভ্রমন

কথায় আছে, Defense Life is a man’s life and a soldier once is always a soldier. অন্য কারো বেলায় এটা কতটুকু সত্য সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু এই অকাট্য বাক্যটা আমার বেলায় শতভাগ প্রযোজ্য। ২০৪৪ সালে ভলান্টারিলি আর্মি থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে আমি আজো মনে মনে শতভাগ যে ফৌজ সেটা আমি মনেপ্রানে উপলব্ধি করি। কোথাও কাউকে ইনুফর্ম পড়া দেখলে আজো আমি যেচে কথা বলি, ভালো লাগে। কেউ আমার এই আর্মি বা ডিফেন্স বাহিনীর ব্যাপারে কথা বললে এখনো আমার গায়ে লাগে। কেউ ভালো বললে আমি আজো এর কৃতিত্তের অংশটুকু যেনো নিজের সেটা উপলব্ধি করি।

প্রায় ৩০ বছর পর আমি আবারো আমাদের সেই ডিফেন্স ফোর্সের অধীন নৌ বাহিনীর বিভিন্ন স্থান সমুহে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর এর পিছনে যার সবচেয়ে বেশী অবদান- সেটা হলো আমারই ছোট ভাই সমতুল্য রিয়ার এডমিরাল মামুন যে বর্তমানে ComChit (অর্থাৎ কমান্ডার চিটাগাং) হিসাবে দায়িত্বরত। মামুন সদ্য চট্টগ্রামে পোষ্টিং গিয়েছে, সম্ভবত মামুন ওখানে না থাকলে এবারো আমার যাওয়া হতো না। মামুনের আথিথেয়তার কোনো বর্ননা চলে না। ওর নিজের বাসায় আমার থাকার জায়গা করে দেয়া, অফিসার মেসে ভি আই পি রুমে আমাদের সবার জন্য ব্যবস্থা করা, সারাক্ষন গাড়ির ব্যবস্থা, বিভিন্ন নৌ জাহাজে আমাদেরকে অভিনন্দন দেয়া সব কিছু ছিল অত্যান্ত সাবলিল এবং চমৎকার।

খুবই অল্প একটা সময়ের জন্য ছিলাম, মাত্র এক রাত দুই দিন কিন্তু তারপরেও মনে হয়েছে অনেকদিন বেড়ালাম। একটা পরিপূর্ন ভ্রমন বলা যায়।

কাপ্তাইয়ে লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম ঘাটিতে চমৎকার একটা সময় কাটিয়েছি। লেঃ কমান্ডার ইফতেকার এবং তার টিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বিএনএস বংগবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এর লেঃ কমান্ডার রাসেল, লেঃ কমান্ডার সাহেদ, মামুনের এডিসি লেঃ ফকরুল সহ সবাইকে আমার আন্তরিক ভালোবাসা দেয়া ছাড়া আসলে আমার হাতে কিছু ছিলো না। আমার পরিবার এবং আমি খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম গত ৩০ বছর পর আবারো এমন একটা পরিবেশে কিছুক্ষন সময় কাটানোর জন্য।

আমরা যারা ডেফিন্সে কাজ করি, করতাম, এবং করেছেন, তাদের অবদান অসামান্য যদিও এর মুল্যায়ন সব সময় আমাদের সাধারন জনগন হয়তো অতোটা জানেন ও না। আমাদের পরিবার বর্গ যে কি পরিমান তাদের পারিবারিক জীবনকে উতসর্গ করেন আমাদের এই জীবনকে সার্থক আর দেশের জন্য তা শুধু তারাই জানেন যারা এই সব অফিসার, জোয়ান আর কর্মের সাথে জড়িত। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তাদেরকে পরিবারের বাইরেই দেশের জন্য সময় ব্যয় করতে গিয়ে নিজের জন্য বা পরিবারকে দেয়ার জন্য অবশিষ্ঠ কোনো সময়ই হাতে থাকে না। তারপরেও এই সব অফিসাররা হাসিমুখে সব সময় অন্যের সাথে সময় দেন।

পরিশেষে, আবারো আমি রিয়ার এডমিরাল মামুন এবং তার সকল টিমকে আমার প্রানঢালা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাই। 

১০/০১/২০২৩-আজ থেকে শত বছর পর আমার এই লেখা

আজ থেকে শত বছর পরে আমার এই লেখাটা যারা পড়বেন তাদের মধ্যে আজকের দিনের আর কেউ বেচে নেই। অথচ আজকের দিনের জীবিত মানুষগুলি কিংবা আমার আগের শতবছরের মানুষগুলি যে বিষয়গুলি নিয়ে একে অপরের সাথে পরস্পরে বিবাদ, মনোমালিন্য, যুদ্ধ, অভিমান, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি করেছি, সেগুলি আর আমরা কেহই মনে রাখতে পারবো না, আমরা একেবারেই ভুলে যাবো। পুরুটাই ভুলে যাবো। এসবের আর কোনো মাহাত্য আমাদের কাছে কোনো কিছুই আর অবশিষ্ঠ থাকবে না। 

আমরা যদি আরো শতবছর আগে ফিরে যাই, ধরি সেটা ১৯২২ সাল। সেই দিনের পৃথিবী কেমন ছিলো আর সেই পৃথিবীর মানুষের মধ্যে কি নিয়ে ভয়, শংকা, মারামারি, হানাহানি নিয়ে তাদের মস্তিষ্কে কি ভাবনার খেলা চলছিলো, তাদের মুখের চাহনীতে কি চিত্র ফুটে উঠেছিলো সেই চিত্র কিন্তু আজকের দিনের কোনো মানুষের মাথায় বা মস্তিষ্কেও নাই। আর ইতিহাসের কল্পনায় থাকলেও সেই বাস্তবতার নিরিখে তার আসল চিত্রের ধারে কাছে আমরা তা আচ করতে পারি না।   

জাষ্ট একবার ভাবুন তো! সেই অতীত দিনের কোনো এক পরিবারের সদস্যগন হয়তো তাদের পারিবারিক জমাজমি, কিংবা সম্পদের রেষারেষিতে যখন এক ভাই আরেক ভাইকে, কিংবা এক বোন আরেক ভাই বা বোনের বিরুদ্ধে চরম রেষারেষিতে একে অপরকে খুন, জখম বা আঘাত করেছে, কিংবা নিজের লোভের কারনে অন্যের কোনো সম্পত্তি দখল করার জন্য চরম আঘাত করেছে কিংবা এক অংশীদার আরেক অংশীদারকে সমুলে বিনাশ করতে মরিয়া ছিলেন, সেই সম্পদ কিংবা সেই অর্থ এখন কার কাছে? আর সেই বা কোথায়? পাহাড় পরিমান সম্পদ গড়া হয়েছিলো, ব্যাংক ভর্তি টাকা, সোনাদানা হয়তো জমা করা হয়েছিলো, সেই হিসাবের খাতা এখন আর কোনো গোপন নাই, না আছে তাকে যক্ষের মতো ধরে রাখার কোনো আকুতি বা পেরেসানি। কারন আমি সেই জগতেই নাই। আমাদের গড়ে যাওয়া সম্পদ যেখানে, তার থেকে আমরা এত দূর যে, তাকে কোনো অবস্থাতেই আর স্পর্শ পর্যন্ত করার কোনো অলৌকিক শক্তিও নাই। এটাই মানুষের জীবন। সে যাইই কিছু আকড়ে ধরুক না কেনো, সময়ের কোনো এক স্তরে গিয়ে সে আর কোনো কিছুই নিজের জন্য আজীবন আগলে রাখতে পারে না। যদি বলি-সেগুলি পরিবার পাবে, পরিবারের পরিবার বংশ পরম্পরায় পাবে, সেটাও সঠিক নয় কারন পরিবার গঠন হয় অন্য পরিবারের মানুষ নিয়েই যারা পিউর পরিবার বলতে কিছুই থাকে না। এটা অনেকের কাছে শুনতে অবাক বা যুক্তিহীন মনে হলেও এটাই ঠিক যে, আত্মকেন্দ্রিক এই পৃথিবীতে নিজের সন্তানও নিজের মতো না, নিজের পরিবারও নিজের মতো না। আমাদের নিজের চিন্তাভাবনা নিজের সন্তানের চিন্তাভাবনা, বা নিজের পরিবারের চিন্তাভাবনা কখনোই একই সমান্তরালে বহমান নয়। আর ঠিক তাই, এক পরিবার আরেক পরিবারের সাথে মিশ্রন হতে হতে প্রাচীন পরিবারটিও একদিন তার নিজের সত্ত্বা হারিয়ে খান বংশের মানুষেরা, সৈয়দ বংশ, সৈয়দ বংশ বঙ্গানুক্রমে মাদবর কিংবা চৌধুরী বংশে রুপান্তরীত হয়ে যায়। আমাদের আমিত্ব পর্যন্ত আর কেউ রাখতে পারেনা।   

যাক যেটা বলছিলাম শত বছরের বিবর্তনের কথা।

ছোট একটা উদাহরন দেই। আজ থেকে সবেমাত্র ৩০/৪০ বছর আগের কথা যখন আমরা বা আমি ছোট ছিলাম, স্কুলে লেখাপড়া করতাম। তখনো স্কুলের ক্লাস ক্যাপ্টেন হবার জন্য কিংবা কলেজের ফুটবল টীমে নাম লিখার জন্য এক সহপাঠির সাথে আরেক সহপাঠির মধ্যে কতই না কোন্দল কিংবা বিরুপ সম্পর্কে পতিত হতাম, আজ প্রায় সেই ৩০/৪০ বছর পর সেই স্কুলের কেইবা মনে রেখেছে কে স্কুলের ক্যাপ্টেন ছিলো বা সেই দিনের সেই ফুটবল টীমের আমি একজন সদস্য ছিলাম? আজব ব্যাপার হচ্ছে-আমি যে সেই স্কুলের একজন দাপুটে এবং অতীব জনপ্রিয় ছাত্র ছিলাম, সেটাই বা কয়জন এখন আবিষ্কার করতে গিয়ে তাদের সময় অপচয় করছে কিংবা মনে রাখার চেষ্টা করছে? যদি সেটাই হয়, ভাবুন তো আজ থেকে শতবছর পর তাহলে আমার বা আমাদের অস্তিত্বটা কোথায়? কোথাও নাই। আর এই শতবছর পেরিয়ে যখন আরো শতবছর পেরিয়ে যাবে, তখন যেটা হবে সেটা হলো-আমি যে এই পৃথিবীতে ছিলাম, সেটাই বিলীন হয়ে যাবে। এখন আমরা যারা যাদেরকে এই পৃথিবীতে গর্ব করে মনে রাখি তারা হয়তো অতীব ব্যতিক্রম। তারা তাদের সময়ে সম্পদের কারনে নয়, কর্মের কারনে ‘সময়’টাকে আলাদা করে যুগে যুগে সেই কর্মের ফল ভোগ করতে পারে এমন কিছু কর্ম হয়তো পিছনে ফেলে গিয়েছেন বিধায় হয়তো শতবছর পরেও আমরা তাদের সেই কর্মফল ভোগকারীরা কিছুটা মনে রাখি। এটার হার অতীব এবং নিছক খুব বেশী না। আমরা সেই তাদের দলে পড়ি না। 

হয়তো অনেকেই বলবেন, আজকের দিনের ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের আজকের দিনের সমস্ত মেমোরী সংরক্ষন করে রাখতে পারি যা যুগে যুগে আমাদের বংশ পরম্পরায় এর সংরক্ষন করে আমাদেরকে জীবিত রাখবেন। এটা কোনোভাবেই সত্য না। এ ব্যাপারে একটা আরো ছোট উদাহরন দেই- জগত বিখ্যাত সঙ্গীতরাজ মাইকেল জ্যাকসন যিনি ২০০৯ সালে মারা যান। খুব বেশীদিন নয়, এটা মাত্র ১৩ বছর আগের কথা। এই মাইকেল জ্যাকসন সারা দুনিয়ায় এমন কোনো জায়গা ছিলো না যে যুবসমাজ, কিংবা শিক্ষিত সমাজ তাকে না চিনতো। তার বিচরন ছিলো সর্বত্র। তার চলাফেরা, পোষাকাদি, তার অঙ্গভঙ্গিও তখনকার দিনের প্রতিটি যুবক যেনো মডেল হিসাবে নিয়ে নিজেরাও সে রকমের পোষাক, আচরন ভঙ্গীতে অনুসরন করতো। একবার ভাবুনতো, এ যুগের কতজন যুবক আজ সেই মাইকেল জ্যাকসনের নামটা পর্যন্ত জানে? তাহলে আজ থেকে শতবছর পরের চিত্রটা কি হবে? হতে পারে, এই মাইকেল জ্যাকসনের নামটা সারা সঙ্গীত শুধু নয়, আর কোথাও হয়তো প্রতিধ্বনিতে বেজে উঠবে না। অথচ এক সময় সেইই ছিলো ঐ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটা ইমেজ। আরো খুব কাছের একটা উদাহরন দেই।

প্রতিদিন আমরা অসংখ্য ছবি তুলছি, আমরা তা আমাদের ফেসবুক, সোস্যাল মীডিয়ায় তা প্রতিদিন পোষ্ট করছি। আমরাই গত পাচ বছরের আমাদের ছবিগুলিই পুনরায় রিভিউ করে দেখার সময় পাই না নতুন নতুন ইভেন্টের ছবির কারন। যা একবার তোলা হয়েছে, যা একবাএ দেখা হয়েছে, তার আর খুব একটা সংরক্ষন করে বারবার দেখার স্পৃহাই আমাদের নাই, তাহলে আমার এসব স্মৃতিময় ইভেন্টের সেই স্মৃতি অন্য আরেকজন রাখবে এটা ভাবা বোকামি। হতে পারে আমার বা আমাদের অন্তর্ধানে সাময়িকভাবে সেগুলি খুব কাছের কিছু লোক একবার দুইবার দেখে কিছু স্মৃতি রোমন্থন করবেন। আর ব্যাপারটা এখানেই শেষ।

আর এটাই জীবন। আমাদের এই ছোট আধুনিক জীবনে আমরা আসলে একে অপরের সাথে হয়তো কন্টাক্টে আছি, কিছু সেই কন্ট্যাক্ট মানে কিন্তু এটা নয় যে, আমরা একে অপরের সাথে কানেক্টেড। একই ঘরে বসবাস করে, কিংবা একই প্লাটফর্মে একসাথে থাকার নাম হয়তো কন্ট্যাক্ট, কিন্তু এর মানে কানেকশন নয়।  আমরা ধীরে ধীরে একে অপরের থেকে কানেকশনবিহীন হয়ে পড়ছি। আর এমন একটা কানেকশনবিহীন সম্পর্কে কেনো আমরা একে অপরের সাথে বিদ্বেষ নিয়ে বেচে থাকছি?

এটাই যদি হয় আমাদের জীবনের চিত্র, তাহলে পরিশেষে চলুন আমরা আমাদের জীবনটাকে একটু অন্যরকম করে ভাবী। জীবনটাকে একেবারে সহজ করে ফেলি। কেউ এই পৃথিবী থেকে জীবন্ত ফিরে যেতে পারবো না। কেউ জীবন্ত ফিরে যেতে পারেও নাই, না আজীবনকাল এই প্রিথীবিতে থাকতে পেরেছে। আজকের দিনের যে গাড়িটা কিংবা অত্যাধুনিক ফোনটা আমরা ব্যবহার করছি সেটাও একদিন জাংক হিসাবেই শেষ হবে। কোনো কিছুই আর রিলেভেন্ট মনে হবে না। তাই যে সম্পদের জন্য আমরা আজ এতো হাহাকার করছি, একে অপরের উপর ক্ষিপ্ত হচ্ছি, এইসব কিছুই আসলে নিরর্থক, অকেজো। হ্যা, জীবনের চাহিদার অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমাদের দরকার নাই। আমাদের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রন করা আবশ্যিক, একে অপরের ভালোবাসার মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলি, কারো উপর কারো বিদ্বেষ না রাখি, কারো সম্পত্তির উপর কিংবা কারো হকের উপর আমরা কেউ লোভ না করি। না কারো উপর কোনো জুলুম করি, না কাউকে নিজের সার্থের কারনে কোনো ক্ষতি করি। যতক্ষন আমরা অন্যের সাথে নিজের সাথে তুলনা না করি, ততোক্ষন পর্যন্ত সম্ভবত আমরা নিজের লোভের কাছে পরাভূত হবো না।

আমাদের সবার গন্তব্য স্থান পরিশেষে একটাই-কবর। কেউ হয়তো আগে কেউ হয়তো পরে। হোক সে মসলমান, হোক সে অন্য কোনো ধর্মের। কোনো কিছুই সাথে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। শতবছর পরে এমনিতেও আমরা হারিয়েই যাবো। যখন নিজেরাই হারিয়ে যাবো, তাহলে আমাদের অসাধু উপায়ে হানাহানি, মারামারি কিংবা জোর করে ছিনিয়ে নেয়া গড়ে তোলা সাম্রাজ্যই বা রাখবো কার জন্যে আর কেনো? কিছুই থাকবে না, রাখতেও পারবো না।

শতবছর পরেও এই আকাশ নীলই থাকবে, পাহাড় সবুজই থাকবে, সাগর সেই শতবছর আগের মতোই কখনো কখনো উত্তালই হবে। শুধু আমাদের নামের সম্পদগুলি অন্য আরেক নতুন নামে লিপিবদ্ধ হবে, আমার শখের সব কিছু অন্য আরেকজন তার নিজের মতো করে ব্যবহার করবে। আমার বলতে কিছুই নাই। আজ যে ক্ষমতার মসনদে বসে আমি হাতের ইশারায় জুলুম উপভোগ করছি, সেই ক্ষমতার মসন্দে বসেই হয়তো অন্য কোনো এক সময়ে আমারই বংশধর কারো দ্বারা শাসিত হচ্ছে, কে জানে। এর পার্থিব অনেক নমুনা আমরা দেখেছি মীর জাফরের বংশে, হিটলারের পতনে, কিংবা মুসুলিনি বা অনেক রাজার জীবনে। আজ তারা সবাই এক কাতারে।

এটা যেনো সেই বাল্ব গুলির মতো-কেউ শত ওয়াটের বাল্ব, কেউ হাজার পাওয়ারের বাল্ব, কেউবা কয়েক হাজার ওয়াটের বাল্ব কিন্তু ফিউজ হয়ে যাওয়ার পরে সবাই সেই ডাষ্টবিনে একসাথে। সেখানে কে শত ওয়াটের আর কে হাজার পাওয়ারের তাতে কিছুই যায় আসে না। না তাদেরকে আর কেউ খুজে দেখে।  

২৭ আগষ্ট ২০২২-নতুন আর পুরাতন প্রজন্ম

অনেকদিন পর আজ ডায়েরী লিখতে বসলাম।

প্রতিদিন আমাদের সবার জীবন খুব দ্রুত পালটে যাচ্ছে। কতটা দ্রুত সেটা আজ যারা ঠিক এই সময়ে বাস করছি, হয়তো তারা বলতে পারবেন। আমাদের সময়টাই মনে হচ্ছে সেই শেষ সময় যেখানে এখনো আমরা পুরানো বন্ধু বা চেনা লোকের সাথে দেখা হলে তিনি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করি, একটু সময় ব্যয় করি, সুখ দুঃখের আলাপ করি। সমস্যার কথা বলে কিছু উপদেশ বিনিময়ও করি। আমরাই সম্ভবত সেই শেষ যুগের কিছু মানুষ যারা এখনো পরানো খবরের কাগজটা অন্তত কিছুদিন ঘরে রাখি, একই খবর হয়তো বারবার পড়ি। আমরা এখনো সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভয় পাই, পাশের বাড়ির সাথে সুসম্পর্ক রাখি। আমাদের প্রাভেসী বলতে কিছু ছিলো না। যা ছিলো সবই খোলামেলা। আমরা সেই শরৎচন্দ্রের লেখা উপন্যাস পড়ে কখনো কেদেছি, কখনো হেসে গড়াগড়ি করেছি, রবী ঠাকুরের ‘বলাই’ আমাদের মনে দাগ কেটে যায়, কিংবা ‘পোষ্টমাষ্টার’ গল্পের ছোট বালিকার কথায় বড্ড কষ্ট লেগেছে। ‘দেবদাস’ এখনো আমাদের অনেক প্রিয় একটা গল্প বারবার পড়েছি, বারবার। এখনো এই দলটি কোনো ইনভাইটেশন ছাড়া একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যায়, বেড়াতে গেলে হয়তো কম দামী হলেও হাতে কিছু নিয়ে যায়। এখনো তারা বড়দের পা ছুয়ে সালাম করে। রাতের বা সকালের নাস্তা এখনো এরা একসাথে করার অভ্যাস রাখে। ছেলেমেয়ে, বউ পরিজন একসাথে নাস্তা করুক বা রাতের খাবার খাক, এটাই চায় তারা। ঈদের ছুটিতে তারা এখনো গ্রামের ভালোবাসার টানে সেই কাদাচে গ্রাম, সোদামাখা পরিবেশে ছুটে যেতে সব প্রকার কষ্ট করতেও আনন্দ পায়। আমাদের এই দলটি সম্ভবত খুব বেশীদিন আর নাই এই পৃথিবীতে। হয়তো আগামী ২০ বছরের পর আর কেউ থাকে কিনা কে জানে। এই দলটির মানুষগুলি সকালে উঠে নামাজের জন্য মসজিদে যায়, ঘরে এসে উচ্চস্বরে কোরআন তেলওয়াত করে, হাতে একটা প্লাষ্টিক ব্যাগ নিয়ে নিজে নিজে বাজার করে, হেটে হেটে সেই বাজার বহন করে আনে। বিকালে হয়তো কিছু মানুষ একত্রে বসে মাঠে বা কোনো দোকানের সামনে বসে গালগল্প করে। কোথাও একসাথে খেতে গেলে কে কার আগে রেষ্টুরেন্টের বিল পরিশোধ করবে তার প্রতিযোগিতা চলে। একজন বলে সে দিবে, আরেকজন বিল না দিতে পেরে আবারো হয়তো আরেকটা আড্ডার অগ্রীম দাওয়াত দিয়ে রাখে। এদেরকে আর খুব বেশী দেখা যাবে না একযুগ পরে।

তখন যাদের আনাগোনা হবে তারা সবাই আত্তকেন্দ্রিক একদল। যারা একে অপরের পাশে বসেও হাতের মোবাইলে কুশলাদি বিনিময় করবে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও বেশীর ভাগ গ্রিটিংস হবে শুধুমাত্র মোবাইলের মেসেজে মেসেজে। কেউ কারো বাড়িতে যেতেও আনন্দ পাবে না, না কেউ তাদের বাড়িতে এলেও খুশী হবে। সন্তানদের সাথে তাদের দুরুত্ত বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে চলে আসবে যে, কে কখন কি করছে, কেউ তার জবাব্দিহি নেওয়ার মতো অবস্থায় থাকবে না, না থাকতে চাইবে। বাজার হবে মোবাইলে, আনন্দ হবে মোবাইলে মোবাইলে, বন্ধুত্ত গুলির মধ্যে বেশীর ভাগ বন্ধুই কারো চেনা জানা হবে না অতচ বন্ধু বলে ধরা হবে। বড়রা যেমন ছোটদেরকে স্নেহ করার কায়দা জানবে না, ছোটরাও বড়দেরকে সম্মান করার আদব জানবে না। ঘরে ঘরে সবাই একাই থাকবে একজন থেকে আরেকজন। ধর্মের চর্চা ধীরে ধীরে কমে আসবে, কমে আসবে পারিবারিক, আর সামাজিক বন্ধুত্তের গন্ডি। প্রতিবেশীদের মধ্যে কারো সাথেই আজকের দিনের সখ্যতা আর হয়তো থাকবেই না। মুখ চেনা হয়তো থাকবে কিন্তু হয়তো নামটাও জানা হবে না একে অপরের। সন্তানরা বড় হবে মায়ের আদরে নয়, কাজের বুয়াদের নিয়ন্ত্রনে। বৈবাহিক সম্পর্কে চলে আসবে শুধুমাত্র একটা কাগুজে বন্ধনের মধ্যে। স্বামী স্ত্রীর আজীবন কালের ভালোবাসার সম্বন্ধ বা দায়িত্ববোধ হবে শুধুমাত্র দেয়া নেয়ার মধ্যে। ফলে না স্ত্রী স্বামীকে বা স্বামী স্ত্রীকে তার নিজের জীবনের একটা অবিবেচ্ছদ্য অংশ হিসাবে গন্য করবে। সন্তানদের মধ্যে মা বাবার ডিভিশনে তারাও একেবারেই একা হয়ে যাবে। কেউ আসলে কারোরই না। অথচ তারা একই ঘরের ছাদের নীচে বসবাস করবে। ওদের কাছে গ্রাম বলতে একটা অপরিষ্কার পরিবেশ, গ্রামের মানুষগুলিকে মনে হবে অন্য কোনো জাতের মানুষ বলে। এই নতুন প্রজন্মের কাছে মানুষের চেয়ে কুকুর বিড়াল হবে তাদের নিত্য দিনের বন্ধু। সংসার ভেংগে যাওয়ার যে কষ্ট, বা লজ্জা, কিংবা দুঃখের এই প্রজন্মের কাছে এটা খুব মামুলী একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আজ যে তাদের বন্ধু, কাল হয়তো সে তাকে চিনেই না। আজ যে কারো পাতানো বোন, কাল হয়তো সে হয়ে যাবে তার প্রিয় গার্ল ফ্রেন্ড। এদের অনেক টাকা পয়সা লাগবে, হয়তো থাকবেও। কিন্তু একসাথে কোথাও আড্ডায় খেতে গেলে যার যার বিল সে সেই দিতে থাকবে। এতে কারো কোনো কষ্ট নাই। এটাই যেনো এই প্রজন্মের আড্ডার নিয়ম। জিজ্ঞেসও করবে না হয়তো বিল কে দিবে বা কেউ দিবে কিনা।

এখানে সবচেয়ে বিপদজনক পরিস্থিতি হচ্ছে যে, এই আমাদের প্রজন্ম যখন প্রায় শেষের পথে আর নতুন প্রজন্ম যখন উদিয়মানের পথে, এই ট্রানজিট সময়ে সবচেয়ে বেশী সাফার করবে আমাদের প্রজন্ম। কারন তারা তাদের সব কিছু শেষ করে যখন নতুন প্রজন্মকে তৈরী করছে, তখন আমাদের প্রজন্মের মানুষেরা আসলে আর্থিকভাবে নিঃস্ব। নতুন প্রজন্ম আমাদের প্রজন্মকে আর আমাদের সময়ের মতো করে দায় দায়িত্ব নিতে চায় না। অথচ এখনই পুরানো প্রজন্মের সবচেয়ে খারাপ সময় প্রবাহিত হচ্ছে। বড়রা মনে করছেন, আমাকে তো আমাদের সন্তানেরাই দেখভাল করবে, কিন্তু সন্তানেরা মনে করছেন এটা তাদের দায়িত্তের মধ্যেই পড়ে না। তাহলে শেষ ট্রানজিট সময়টা বড্ড বিপদজনক মনে হচ্ছে। এহেনো অবস্থায় আমাদের প্রজন্মের খুব সতর্ক থাকা দরকার। হতে পারে আমার এই কথায় অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করবেন, হয়তো বলবেন, সন্তানদেরকে ধার্মীক জীবনজাপন না করায় কিংবা সঠিক পদ্ধতিতে মানুষ না করার কারনে আমরা এহেনো অবস্থায় পড়ছি। আমি এরসাথে একমত নই। আমরা আজকাল সন্তানদেরকে শুধুমাত্র পরিবার থেকে যথেষ্ঠ শিক্ষা দিলেই সব শিক্ষা তারা পায় না। স্কুলের নিয়ম পালটে গেছে, শিক্ষকের আচরন পালটে গেছে, ধার্মিক লোকদের অভ্যাসও পালটে গেছে, সমাজের নীতিনির্ধারন লোকের মানও কমে গেছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও আর সেই আগের আইনের মধ্যে নাই, বিচারের ন্যায্যতা কমে গেছে, রাজনীতির কারনে মানুষে মানুষে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লা মহল্লায় সম্পর্কের মধ্যে চীর ধরেছে। এখন শুধু পরিবারের শাসনের উপর কিংবা আইনের উপরেই সন্তানরা বড় হয়ে উঠছে না। নতুন প্রজন্ম আমাদের হাতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুরানো প্রজন্মের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেই অনেকটা সার্থপরের মতো হতে হবে। নিজের জন্য যথেষ্ঠ সঞ্চয় মজুত রাখুন যাতে কেউ আপনাকে দেখভাল করুক বা না করুক, কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, যাতে আপনি আপনার দেখভাল করতে পারেন। নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা (বেশিরভাগ) পুরাতন প্রজন্মকে বোঝাই মনে করে। মা ভাগ হয়ে যায় সন্তানদের মধ্যে ভরন পোষনের জন্য। বাবা ভাগ হয়ে যায় একই ভাবে। ফলে মা–বাবা একে অপরের থেকেও ভাগ হয়ে যান শুধুমাত্র বেচে থাকার কারনে।

বৃদ্ধ বয়সে এসে কারো উপরে নির্ভরশিল না হতে চাইলে, নিজের জন্য যথেষ্ঠ পরিমান অর্থ সঞ্চয় করুন। প্রয়োজনে নিজের এসেট বিক্রি করে হলেও তা করুন। কারন, একটা সময়ে এসে আপনি সেটাও বিক্রি করতে পারবেন না। হয়তো সন্তানেরাই বাধা দেবে অথবা তাদের অংশ দাবী করবে। আর আপনি সারাজীবন কষ্ট করেও শেষ জীবনে এসে সেই অবহেলিতই থাকবেন। হয়তো কারো কারো জায়গা হবে বৃদ্ধাশ্রমে। আর সেই বৃদ্ধাশ্রমে বসে আরেক পরাজিত বুড়ো মানুষের সাথে সারা জীবনের কষতের কথা ভাগাভাগি করবেন, কিন্তু আপনি আসলেই আর ভালো নাই।

৫/৮/২০২২-ডলার তার পজিশন হারাবে

বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলারের মান অনেক শক্ত। অর্থাৎ Strong US Dollar. এটার আসলে মানে কি?

আমরা যে কোনো কিছু Strong কেই পজিটিভভাবে নেই কারন সেটার একটা ক্ষমতা আছে। কিন্তু মনে রাখা উচিত যে, ফাইন্যান্স এবং অর্থনৈতিক ভাষায় এই শক্ত কারেন্সীর মুল্যায়ন কিন্তু অন্য রকম। এটা খুব সহজ নয়। কারন ডলারের স্ট্রং পজিশন মুলত ডাবল এজড একটা ছুড়ির মতো। আর এটার কোন পাশের ধার দিয়ে কাকে কিভাবে যে কাটবে সেটা প্রেডিক্ট করা খুব কঠিন।

যেমন ধরুন, এক ডলারের দাম বাংলাদেশে বর্তমানে আগের থেকে প্রায় ২৩/২৪ টাকা বেশী, ইয়েনের মুল্য কমেছে প্রায় ১০% এর উপর, ইন্ডিয়ার কারেন্সীর মুল্য কমেছে প্রায় ১৫%, পাকিস্থানের রুপীর দাম এমন কি ইউরোর দামও কমে গেছে ডলারের কাছে। এটার মুল কারন কি? (এখানে একটা ছোট কথা বলে রাখি- ডলার আন্তর্জাতিক মুদ্রা হওয়ায় ডলার একটা তাজা ইস্যু। যদি ডলারের সাথে সাথে আরো অনেকগুলি আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে চলমান থাকতো তাহলে বিশ্ব বাজারে ডলার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কোনো দেশকেই কাবু করতে পারতো না।)

যেটা বলছিলাম, ডলার এতো স্ট্রং হবার কারন কি?

খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখবেন-মার্কিন অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের কারণে ডলার কিন্তু এতটা শক্তি অর্জন করছে না। ডলার স্ট্রং হচ্ছে উলটা দিকে থেকে মানে বিশ্বের বাকি অংশে হতাশাজনক অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার কারণে।

যারা ডলারের দেশ সেসব নাগরিকদের জন্য স্ট্রং ডলার একটা মারাত্তক সুখবর। কারন একই পরিমান ডলার খরচ করে এসব কাষ্টোমার বেশী লাভ পায়, বেশী পন্য কিনতে পারে। কিন্তু যারা আমদানির উপর নির্ভরশীল বা যে সব ব্যবসায়ীরা আমদানী করে কাচামাল কিংবা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আনতে চায়, তাদের জন্য স্ট্রং ডলার মারাত্তক খারাপ খবর। তারা একই পরিমান পন্য আগের তুলনায় বেশী নিজস্ব কারেন্সী দিতে হয় অর্থাৎ বেশী কারেন্সী দিয়ে ডলার কিনতে হয়। অথবা একই পরিমান পন্য কিনতে গেলে বেশী পরিমান ডলার কিনতে হয়। এটা গেলো যারা ডলারের দেশ না তাদের জন্য খারাপ খবর।

স্ট্রং ডলার থাকার পরেও আমেরিকার জন্য বা ডলারের দেশের জন্য এটা খারাপ খবর কিভাবে যেখানে তাদের অনেক খুশী হবার কথা?

আমেরিকার জন্য স্ট্রং ডলার অন্যদের চেয়ে বহুলাংশে বেশী বিপদ, এই কারনে যে, এটি মার্কিন রপ্তানিকে বিদেশী তৈরি পণ্যের সাথে আরও ব্যয়বহুল করে তোলবে, যার ফলে অন্য দেশের চাহিদা কমিয়ে দেবে বা জোর করে কমিয়ে দিতে দেশ বাধ্য হবে। এটা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি যে, বহু দেশ অনেক ভোগবিলাস পন্য আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যাতে নিজেদের কারেন্সীর অনুপাতে ডলারের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ না করতে হয়। ফলে যারা রপ্তানী করে সে সব দেশের রপ্তানী আয় কমে যায়। অর্থাৎ আমদানীকারকেরা ডলারের দাম বাড়ায় তারা আমদানীতে নিরুসাহিত করে। এর ফলে বিদেশী রাজস্ব স্ট্রীমসহ মার্কিন কোম্পানিগুলি সেই লাভের মূল্য হ্রাস দেখতে পায়। আমেরিকার জিডিপি কমে যায় বা যাচ্ছেও।

তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে-এটা কিভাবে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে?

সাধারণভাবে, এর অর্থ হল একটি শক্তিশালী ডলারের অধীনে মার্কিন ইক্যুইটিগুলির উচ্চ এক্সপোজারসহ একটি পোর্টফোলিও আন্তর্জাতিক ইক্যুইটিগুলির উচ্চ এক্সপোজারের চেয়ে ভাল করতে পারে বটে, তবে সেই মার্কিন ইকুইটিগুলি যেগুলি বিদেশে প্রচুর ব্যবসা করে সেগুলি হ্রাস পেতে পারে। উদাহরণ যদি দেই-প্রক্টর এবং গ্যাম্বল, একটি মার্কিন কর্পোরেশন, বিশ্বের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য কোম্পানি যার বার্ষিক বিদেশী বিক্রয় বিলিয়ন ডলারের সাথে এই মঙ্গলবার রিপোর্ট করেছে যে তাদের ত্রৈমাসিক আয় ৩১% শতাংশ কমেছে । এর একটাই কারন, স্ট্রং ডলার।

এটাকে বলে ট্রেডওয়ার। এই ট্রেডওয়ারে কারেন্সী ডিভালুয়েশনের কারনে অন্যান্য দেশের পন্যের মুল্য কমে যায়। যেমন জাপান, তাদের বর্তমান গাড়ির মুল্য আগের থেকে অনেকাংশে কমে গেছে শুধুমাত্র ডলারের স্ট্র হবার কারনে। এর ফলে জাপান এখন তাদের উতপাদিত গাড়ি সেসব দেশে পাঠাতে দ্বিধা করছে। তারা আপাতত পন্য রপ্তানীতে নিরুৎসাহিত করছে। ফলে যারা আমদানী নির্ভর দেশ, যেমন আমেরিকা, তাদের জনগন পন্য পাওয়া থেকে বিরত হয়। অথচ আমেরিকার কাছে স্ট্রং ডলার থাকার পরেও পন্য নাই।

এই ট্রেডওয়ারের কারনে বিভিন্ন দেশে স্টক এক্সচেঞ্জগুলিও উঠানামা করছে, ফলে ডলারের দেশের পন্যের স্টক এক্সচেঞ্জের ক্রয় বিক্রয়ও অনেকাংশে কমে গেছে। এর ফলে খোদ আমেরিকাতেও রিসেসন নামক একটা ধাক্কা লাগছে। কিন্তু ডলার স্ট্রং।

এই বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামীতে যা দেখা যাবে সেটা হচ্ছে- ডলারের বিপরীতে অন্য কোনো কারেন্সী বা কারেন্সীসমুহ দাড় করানো। ডলারকে আর একক আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে গন্য না করা। হতে পারে সেটা ‘ব্রিক্স কারেন্সি’, হতে পারে নতুন কোনো কারেন্সী যা ইউরোর মতো সব দেশ ব্যবহার করবে। ইউরো যেমন এখন ২৯টি দেশের কমন মুদ্রা।

ডলারের জন্য এটাই সবচেয়ে মারাত্তক খারাপ খবর।

০৩/০৮/২০২২-তাইওয়ানে  পেলোসির ভিজিটে

তাইওয়ানে  পেলোসির ভিজিটে চীনের এতো হুমকী ধামকীর কোনো প্রকার বহির্প্রকাশ আদতে দেখা যায় নাই। অবাক শুধু সারা বিশ্বই হয়নি, পেলোসি এবং আমেরিকাও অবাক হয়েছে। এটা কি হলো?

তবে আমার কাছে দুটু জিনিষ একেবারেই ক্লিয়ার ছিলো-(ক) পেলোসি তাইওয়ানে যাবেই (২) চীন কিছুই করবে না যা তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া হয়। বিশেষ করে তাইওয়ানে আক্রমন বা পেলোসির বিমানে হামলা কিংবা পেলোসির উপরেই হামলা। এই প্রসঙ্গে আমি ফেসবুকেও ব্যাপারটা শেয়ার করেছিলাম। সেটাই আসলে হয়েছে। তাহলে ব্যাপারটার রহস্য কি হতে পারে?

তাইওয়ানিজরাও চায়নিজ। ভাষা এক, কালচার এক, হেরিডিটিও এক। ঠিক রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের জনগনের যে অবস্থা। মেইন স্ট্রিম মিডিয়া বা যারা সত্যটাকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেন, তাদের কাছেই বেশীরভাগ শোনা যাবে যে, ইউক্রেনের অধিকাংশ জনগন রাশিয়াকে ঘৃণা করে, রাশিয়াকে তারা চায় না ইত্যাদি। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক ঐ রকমের না। সবদেশেই ভিন্ন মতালম্বীর লোক থাকে, তাদেরকে ইনিয়ে বিনিয়ে ইন্টারভিউ নিয়ে একটা কঠিন সত্যকে মিডিয়াগুলি লুকিয়ে ফেলে তাদের জন্য যারা এসব ব্যাপারে খুব একটা বেশী জানেন না। ফলে বিশ্বব্যাপি একটা আলাদা মনোভাব সৃষ্টি হয়। সোস্যাল মিডিয়ায় না জেনেই বিজ্ঞের মতো মতামত পড়তে থাকে। রাশিয়া প্রথম থেকেই ইউক্রেনের সাধারন জনগনের উপর কোনো আক্রমন করে নাই বা যদিও রাশিয়ার বেশ কিছু অপারেশনের কারনে ইউক্রেনের লোক আহত নিহত হয়েছে সেটা কোলেটারেল ড্যামেজ। ঠিক তেমনি, তাইওয়ানের মধ্যেও ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ আছে। কিন্তু বেশীরভাগ তাইওয়ানিজরা কিন্তু নিজেরদের সায়ত্তশাসিততা এবং গ্রেট চীনের অধীনেই ভালো আছে বলে মনে করে। এ কারনে চীন যদি তাইওয়ানের উপর আক্রমন করে বা করতো, তাতে চীনের রেপুটেশন অবশ্যই নষ্ট হতো এবং তাইওয়ানের জনগনের মধ্যে একটা ঘৃণার সৃষ্টি হতো। চীন তাইওয়ানিজদেরকে ব্রাদার মানুষ হিসাবে নিজেদের গোত্রীয়ই গন্য করে। চীন তাই সম্ভবত তাৎক্ষনিক আক্রমনে যেতে চায়নি।

তাছাড়া পেলোসিকে আক্রমন করা বা তার বিমানে হামলা করা মানেই হলো, সরাসরি আমেরিকাকে যুদ্ধে ডেকে আনা, হোক সেটা যারই ভুল বা এরোগ্যান্সি। যুদ্ধটা গতকালই লেগে যেতো। তখন না আমেরিকা, না চীনের কারো হাতে আর কোনো কন্ট্রোল থাকতো। আমেরিকা পেলোসির এই ভিজিটটাকে ইজ্জতের ছাওয়াল হিসাবে ভেবে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার, ৮টি US Air Force warplanes, including F-15s, Four US warships, including an aircraft carrier এগুলি দিয়ে পেলোসিকে তাইওয়ানে মাত্র ১৪ ঘন্টার জন্য ভিজিট করিয়েছে। মানে তারা চীন আক্রমন করুক চেয়েছে।  ফলে চীন আমেরিকার ফাদে পা দেয়নি। চীন এদিক দিয়ে অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ করেছে।

তাহলে পেলোসির ভিজিট তাইওয়ান কিংবা পশ্চিমাদের উপর কিংবা চীনের উপরেই কি প্রভাব হতে পারে? এটা একটা লং টার্ম, (হতে পারে অনেক মাস, হতে পারে অনেক বছর) ইফেক্টে যাচ্ছে। আমার ধারনা, চায়নীজদের রিস্পন্সটা পর্যায়ক্রমে আসতে থাকবে। আর সেটা কোনোভাবেই যুদ্ধের রুপ নেবে না। প্রথম ইফেক্টটা হবে-আমেরিকার সাথে চায়নার সম্পর্ক আজীবনের জন্য খারাপ থাকবে এবং প্রতিনিয়ত চায়না তাইওয়ানকে বিভিন্নভাবে চাপের মধ্যে রাখবে যেটা করছে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর।

এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার যে, জাতিসংঘের দ্বারা নির্ধারিত তাইওয়ানের এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন চীনের কন্ট্রোলে। চায়না যে কোনো সময়ে তাইওয়ানের সমস্ত বহির্গত এবং আভ্যন্তরীন বানিজ্যিক কার্যক্রম  বন্ধ করার ইখতিয়ার রাখে। শুধু তাইই না, তাইওয়ানের সমস্ত নদীপথের একচ্ছত্র কন্ট্রোল্ধারী চীন। যে কোনো সময়ে চীন তাইওয়ানের সমুদ্রপথ ব্লক করার ইখতিয়ার রাখে আর এটা জাতিসংঘের দ্বারাই নির্ধারিত। এর ফল স্বরূপ এই মুহুর্তে চীন বলেছে যে, তাইওয়ানের কোনো পন্য আমদানী করবে না, না সমুদ্রপথে অর্থাৎ এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন দিয়ে তাইওয়ান নির্দিষ্ট কিছু পন্য পরিবহন ছাড়া অন্যান্য পন্য পরিবহন করতেও পারবে না বলে নিষিদ্ধ করেছে। চীন তাইওয়ানের আকাশপথ এবং সম্যদ্র পথে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে।

পেলোসির ভিজিটকে উপলক্ষ করে চায়না এই প্যাসিফিক অঞ্চলে তার পুরু আগের চেহাড়া পালটে ফেলবে। আর সেটা সামরিক উপস্থিতির সাথে সল্প মেয়াদীতে চীন তাইওয়ানের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটকে দূর্বল করতে থাকবে। যেটা রাশিয়া করছে ইউক্রেনকে। চীন তাইওয়ানের সরকারের প্রতিটি ভুল পদক্ষেপকে মারাত্তক এগ্রেসিভভাবে কাজে লাগাবে। চীন তাইওয়ানের জনগনের উপর কিন্তু ক্ষিপ্ত নয়, ক্ষিপ্ত তাইওয়ানের প্রশাসকদের উপর যারা চীনের না বলা সত্তেও পেলোসির ভিজিটকে সমর্থন করেছে যেখানে হাজার হাজার তাইওয়ানিজরা এই ভিজিটের বিপক্ষে আন্দোলন করেছে। এর সাথে চীন তাইওয়ানের উপর সাইবার এটাকের মাধ্যমে তাদের প্রচুর পরিমানে ক্ষতি করার সম্ভাবনা আছে।

পেলোসির এই ভিজিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসনের রুপরেখা “গার্ডরেইল” আর বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনাই নাই।

৮০র দশকে পশ্চিমারা এই সোভিয়েট ইউনিয়নকে ভেংগেই ইউনিপোলার ক্ষমতাধারী হয়েছিলো। এবার রাশিয়া আর চীন একত্রিত হয়ে পশ্চিমাদেরকে একঘরে করার পায়তারা করে তার ইউনিপোলার ক্ষমতার অবসান যেমন ঘটাতে পারে, তেমনি ক্রমাগত অর্থনৈতিক রিসেসনের কারনে পশ্চিমার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যগুলিও নিজস্ব সাধীনতার জন্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ ভাঙ্গনের সুর। এটা হতে হয়তো কয়েক যুগ লেগে যেতে পারে কিন্তু সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।  যেমন এখন শুরু হয়েছে গ্রেট ব্রিটেনে আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে। গ্রেট ব্রিটেনে ক্রমাগত জনগনের দূর্ভোগের কারনে আয়ারল্যান্ড , স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের ভিতর এই আন্দোলনের সুরে গতকাল ইউকে রাশিয়ার উপর এককভাবে বেশ অনেকগুলি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে, তার মধ্যে একটা শিপিংলাইন এলাউড এবং ইন্সুরেন্স বৈধতা, যাতে রাশিয়া তেল এবং অন্যান্য কমোডিটি ইউকে তে পাঠাতে পারে। খবরটার হেডিং এ রকমের- “London has re-allowed the provision of insurance for aircraft, sea vessels and their components to Russia-linked entities”

আমেরিকার Veteran Intelligence Professionals (এটা সিআইএ এর অবসর প্রাপ্তদের একটা সংঘটন) গত ৩০ জুলাই ২০২২ এ ওপেন একটা চিঠি লিখেছেন (লিংক চাইলে দিতে পারি) বাইডেন প্রশাসনকে যে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা বেজড পলিসিতে যতো না অন্য দেশকে ক্ষতি করছে তার থেকে বেশী ক্ষতি করছে পশ্চিমা এবং তাদের মিত্রদেরকে। ফলে ইতমধ্যে যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে চীন, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার সাথে যুদ্ধ মনোভাব দেখানো মানেই হচ্ছে বর্তমান নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে ফেলা। চীন-রাশিয়া এই সুযোগ অবশ্যই নিবে এবং পেলোসির এই ভিজিট অবশ্যই পশ্চিমাদের এবং তাদের মিত্রদেরকে ক্রমাগত ইউনিপোলার ক্ষমতা থেকে ছিটকে দেবে। তারা আরো বলেছেন যে, আমেরিকার USS Ronald Reagan carrier battle group যা বর্তমানে সাউথ চায়না সমুদের অবস্থান করছে, সেই অঞ্চল পশ্চিমাদের আওতায়ও নয়। বহুদূর। ফলে এই শিপগুলিতে যদি চীন আক্রমন করে এবং একটা শীপ বা ক্রু নিহত হয়, তখন নিউক্লিয়ার যুদ্ধ ছাড়া বিকল্প কোনো অপশনও নাই। আর সাউথ চায়না সমুদ্র চীনেরই আওতায় বেশী।

এর মানে হলো দুইপক্ষই নিউক্লিয়ার যুদ্ধ এড়াবে ঠিকই কিন্তু চায়নার রেঞ্জের কাছে ক্ষুদ্র ওয়েপনারী দিয়েও তারা ডিটারেন্ট ইফেক্ট করার সক্ষমতা রয়েছে যা পশ্চিমাদের নাই। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন কিনা জানি না, চীন লাইভ এমুনিশন দিয়ে উক্ত সাউথ চায়না সমুদ্রে অনুশীলন করার নামে আমেরিকার শীপসমুহকে উক্ত রেঞ্জের বাইরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। আর সেটা লিখিত ভাবেই।

এবার আরেকটা কথা বলি। ইউক্রেনকে পশ্চিমারা এখন অফিশিয়াল্ভাবেই ডি-প্রাইরাটাইজ ঘোষনা করেছে। তারমানে এবার ইউক্রেন প্রচন্ড সংকটের মুখে। আর ঠিক এই মুহুর্তে রাশিয়া ইউক্রেনকে সংবাদ দিয়েছে- রাশিয়ার টার্মে যদি ইউক্রেন যুদ্ধবন্ধে রাজী হয় তো ভালো, তা না হলে রাশিয়া তার মুল উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক সমাপ্ত করবেই।

এখানে আরেকটা মজার ব্যাপার হলো- ইইউ কিংবা ন্যাটো পেলোসির ভিজিটে কোনো প্রকার মুখ খুলেনি, তারা কিন্তু একেবারে নীরব। অন্যদিকে ন্যাটো এই চায়না-আমেরিকার তাইওয়ান ইস্যুতে জড়ানোর কোনো প্রকার ইখতিয়ারই নাই।

হতে পারে এবার ন্যাটো তাইওয়ানকে ন্যাটোতে ফাষ্ট মুভিং প্রোসেসে ন্যাটো মেম্বার করতে চাইবে। কিন্তু সেটা হলে হবে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ।  

১৫/০৭/২০২২-যখন বয়স ছিলো ১২ কি ১৩

যখন বয়স ছিলো ১২ কি ১৩, তখন স্কুলে কিংবা বড়দের আড্ডায় প্রায়ই একটা ব্যাপারে আমাদের মতো ছোটরা ফেস করতাম-“ জীবনে কি হতে চাও? বা জীবনের লক্ষ্য কি অথবা what is your aim in life?” হয়তো তখন জানতামই না আসলে কি হলে ভালো হয়, কি হলে কি হয়। ফলে বড়দের শিখিয়ে দেয়া বা ইম্পোজ করে দেয়া বক্তব্যই হয়তো হয়ে যেতো আমাদের বক্তব্য। যেমন-ডাক্তার হবো মানুষের সেবা করবো, ইঞ্জিনিয়ার হবো দেশ গড়বো, কিংবা শিক্ষক হবো মহৎ কাজে ব্রত হবো বা সেনাকর্মকর্তা হবো দেশপ্রেমের জন্য ইত্যাদি। কেনো হতে চাই, কি কারনে হতে চাই, এসবের কোনো অন্তর্নিহিত তথ্য বা ভাবসম্প্রসারনের কোনো বালাই কিংবা মাহাত্য জানাও ছিলো না। যদি এই প্রশ্ন কোনো সমবয়সী বালিকাকে করা হতো, হয়তো তাঁর উত্তর একটু ব্যতিক্রম তো হতোই। পড়াশুনা করবে, বিয়ে হবে, ভালো স্বামী পাবে, তারপর সন্তান সন্ততী হবে, একসময় বুড়ো হবে, নায়নাতকোর হবে। জীবন আনন্দে কেটে যাবে। এই তো।

আজ ৪০ বছর পর আমি যখন পঞ্চাশোর্ধ এক মানুষ, এখন আর আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে না, আমার জীবনের লক্ষ্য কি। অথবা এটাও কেউ জিজ্ঞেস করে না, কি লক্ষ্য ছিলো, কি হতে পেরেছি আর এখন কোন দিকে যাচ্ছি। এখন সবাই যেটা দেখে, আমাদের গত ৫০ বছরের সাফল্যের ঝুড়ির ভিতরে বর্তমানে কি নিয়ে আমরা বেচে আছি। হোক সেটা বিত্ত, হোক সেটা পজিশন কিংবা হোক সেটা দারিদ্রতা। এই সর্বশেষ ম্যাট্রিক্সটাই হচ্ছে আমাদের জীবনের পাওয়া সাফল্য বা বিফলতা যদিও সেই ছোট বেলার “এইম ইন লাইফের” সাথে এর কোনো মিল নাই বা কিঞ্চিত থাকতেও পারে। স্কুল জীবনে কে কতটা ট্যালেন্ট ছিলো, কে কতটা স্মার্ট ছিলো, কিংবা কে কতটা ভালো রেজাল্ট নিয়ে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির গন্ডি পেরিয়েছে, সেটাই কারো জীবনের আসল সাফল্য না। সবচেয়ে পিছনের বেঞ্চে বসা কোনো এক অমনোযোগী ছাত্র হয়তো এখন এমন এক জায়গায় আছে যেখানে প্রথম সারির মনোযোগী কোনো এক ছাত্র তাঁর ধারে কাছেও না। এই ব্যাপারটা না হয় আরেকদিন লিখবো। এখন যে কারনে আমার লেখাটা, সেটা হচ্ছে-

যে যাইই কিছু করুক, সবার জীবনের একটাই সপ্ন। সবকিছু গুছিয়ে শেষ বয়সে এসে একটু শান্তিতে থাকা। এই যে শান্তি, এটা আসলে কোথায় বা এটা আসলে কি? (ধর্মীয় ব্যাপার এখানে টানতে চাই না, সেটা আরেক প্রকার শান্তি)। এই শান্তি হচ্ছে, আমার খাদ্য, বাসস্থান, সাস্থ্য, নীরাপত্তা আর সাধীনতা যেনো বজায় থাকে, একটু আরামে থাকতে পারি, কোনো টেনশন ছাড়া। কিন্তু আদৌতে কি সেই লক্ষ্যে আমরা পৌছাতে পারি সবাই? বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি- সেতার থেকে অনেক দূরে আমরা। প্রতিটি মানুষ আলাদা আলাদা সত্তা। কেউ কারোর জন্যই বেশীরভাগ সময়ে অপেক্ষা করে না, হোক সেটা নিজের সন্তান, নিজের আত্তীয় বা নিজের সংগী। অথচ, আজীবন সবার জন্য সবকিছু করতে করতে একটা মানুষ আসলেই নিঃস্ব হয়ে যায়, নিজের জন্য সে আসলেই আর কিছুই রাখে না। এটা সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে রাঘব বোয়ালদের বেলাতেও প্রযোজ্য। ফলে দেখা গেছে যে, শেষ বয়সে এসে যে সপ্নের জীবনের কথা ভেবে এ যাবতকাল শরীর, যৌবন, মেধা, সঞ্চয়, অকাতরে বিলিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটাই কাল হয়ে যায় নিজের জন্য। অবহেলিত, নির্যাতিত এবং অনিরাপদ জীবন তখন তাঁর সংগী হয়ে যায়। পাশে যাদের থাকার কথা ছিলো, তারা বেশীরভাগ সময়েই আর পাশে থাকে না, আর নিজেরা তখন একেবারেই “একা” হয়ে যান। এই একা জীবনে নিজের নোংরা কাপড়টা ধোয়ার মানুষ থাকে না, খাবারটাও সঠিক সময়ে পরিবেশনের লোক থাকে না, পথ্য খাওয়ানোর কোনো মানুষ আর পাশে থাকে না, এমন কি নিজের যত্ন নিতে যে খরচ দরকার সেটাও আর হাতে থাকে না ইত্যাদি।

কে কিভাবে নিবে জানিনা, আমার মতে, সবার জীবনের সুরক্ষার জন্য সবসময় নিজের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা করে রাখা দরকার যখন সব প্রকারের পেইড সার্ভিসে নিজেকে মানুষ সুরক্ষা দিতে পারে। আর সেই পেইড সার্ভিসের জন্য প্রয়োজন একটা ব্যালেন্স সঞ্চয়। এই পেইড সার্ভিসে সঠিক সময়ে পথ্য, কাপড় চোপড় ধোয়ার মানুষ, রান্না বান্নার দক্ষ লোক, যত্নাদি করা লোক সবই থাকতে পারে। যদিও তারা আপন কেউ না।

তাহলে যা দাড়ায়, তা হলো-জীবনের লক্ষ্য সেটাই হওয়া উচিত, “ব্যালেন্স সঞ্চয়” করা যাতে নিজের সব লোক আশেপাশে না থাকলেও সর্বপ্রকার পেইড সার্ভিস নিজেই ব্যবস্থা করতে পারেন এবং জীবন থাকে নিরাপদ। যারা এটা করতে পেরেছেন, তাদেরকে অনেকেই সার্থপর ভাবতে পারেন কিন্তু তারাই সঠিক কাজটি করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। বৃদ্ধাশ্রম বলে আর কোনো অপশন আপনার জন্য প্রয়োজন পড়ে না।

নিজের জন্য করুন, নিজে বাচুন, তারপর অন্যের জন্য করুন। জীবন একটাই।

আজকে যাদের হাতে অনেক টাকাকড়ি নাই, কিন্তু হয়তো এসেট আছে। তাদের উচিত, আগে নিজের জন্য যথেষ্ঠ পরিমান ব্যালেন্স সঞ্চয় রেখে বাকীটা তাদের নিজের লোকদের জন্য রাখা। তাতে যেটা হবে, নিজে ভালোভাবে বাচতে পারবেন, কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না। একটা কথা তো ঠিক যে, নিজের অন্তর্ধানের পর এইসব এসেট, এইসব সম্পত্তির কোনো মুল্য আপনার জীবনে নেই। ঐসব তো করাই হয়েছে যাতে নিজে ভালো থাকা যায়, তাহলে দ্বিধা কেনো? কাজটা অনেক অনেক অনেক কঠিন।

একটা জিনিষ আমি সবসময়ই মনে করি যে, আমরা কোনো কিছুই আমাদের উত্তরসুড়িদের জন্য না রেখে গেলেও তারাই তাদের জীবন আলাদা করে গড়িয়ে নেবে, যেমন আমি আপনি গড়িয়ে নিয়েছি। তাদের ভবিষ্যতের চিন্তায় আজকে নিজেদের বর্তমানকে অবহেলা করে নিজেকে করুন জীবনে বসবাস বুদ্ধিমানের কাজ হয়তো নয়। তাতে সাহস কমে যায়, টেনশন বেড়ে যায়, আর এর কারনেই শরীর খারাপ হতে থাকে, আর শরীর খারাপ হতে থাকলেই আপনার সম্পত্তি বা এসেটের ভাগাভাগিতে উত্তরসুরীরা যতো দ্রুত সেটা নিজেদের করে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। আপনি আবারো আরেক দফায় একা হবেন। একমাত্র বয়ষ্ক ব্যক্তিরাই আরেক বয়ষ্ক ব্যক্তির ভালো বন্ধু হয়। জেনারেশন গ্যাপে নতুন পুরানো জেনারেশনের সাথে মিশে থাকা যায় বটে কিন্তু সেখানে প্রান থাকে না।

(বয়োবৃদ্ধ একজন অসহায় মানুষের গল্প শুনে এই লেখাটা, এটা কাউকে জ্ঞান কিংবা উপদেশ দেয়ার জন্য নয়। এই ফোরামে সম্ভবত এটাই আমার প্রথম লেখা, ভুল মার্জনীয় )

১২/০৭/২০২২-ওয়াকফ সম্পত্তি কি এবং কার

বেশ কয়েকদিন যাবত একটা বিষয় নিয়ে লিখবো বলে ভাবছিলাম। কারন এই বিষয়টার ব্যাপারে আমরা হয়তো অনেকেই জানি কিন্তু না জানার মতো। আমি এই বিষয়টা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসকের সাথে বিস্তারীত কথা বলার পরে, এবং এ বিষয়ে বিস্তারীত আইন কানুন সম্পর্কে জানতে পেরে আমি নিজেও এই ওয়াকফ ব্যাপারটা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ঠ।

ওয়াকফ হচ্ছে নিজের মালিকানাধীন সম্পদকে আল্লাহর মালিকানায় নিবেদিত করা। এর মাধ্যমে সম্পদের মালিকানা ব্যক্তির কাছ থেকে বিলুপ্ত হয়। অর্থাৎ ওয়াকফকৃত বস্তু কারো মালিকানায় প্রবেশ করা থেকে বেরিয়ে যাবে, শুধু বস্তুর উপকার যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তাদের জন্য নির্ধারিত হবে।

ওয়াকফ দুই ধরনের হয়ঃ
(ক) ওয়াকফ ই লিল্লাহ
(খ) ওয়াকফ আল আওলাদ

ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত সম্পত্তি। এই সম্পদ থেকে তিনি বা তার বংশধর কোনো মুনাফা ফিরে পেতে পারে না। অন্যদিকে কোনো সম্পত্তির মালিক তার সম্পত্তি নির্দিষ্ট অংশ ধর্মীয়, সৎকাজ বা জনহিতকর কাজের জন্য ব্যয় করার উদ্দেশে দলিলের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি দান করলে তাকে ওয়াকফ-আলাল-আওলাদ বলে।

যেভাবেই ওয়াকফ করা হোক, ওয়াকফ সম্পত্তির মালিক ওয়াকফ প্রশাসক।

যিনি ওয়াকফ করলেন (যাকে বলা হয় ওয়াকিফ) তাঁর জীবদ্দশাতেও তিনি আর সেই ওয়াকফ করা সম্পত্তির মালিকানা থাকেন না। তিনিও আর ইচ্ছে করলে সেই ওয়াকফ করা সম্পত্তি কখনোই ফেরত নিতে পারেন না। একবার যদি কার্যকরীভাবে ওয়াকফ সম্পাদিত হয় তাহলে তা প্রত্যাহার কিংবা বাতিল করা যায় না, যাবেও না। উক্ত সম্পত্তির মালিক তখন ওয়াকফ প্রশাসক।

ওয়াকফ আল আওলাদের ব্যাপারে শুধুমাত্র যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে, তারা ওয়াকিফের জীবদ্ধশায় এবং ওয়াকিফের মৃত্যুর পরেও ওয়াকফ দলিল মোতাবেক সম্পত্তিতে উপকার পেতে পারেন। আর সেটাও নিশ্চিত করেন এই ওয়াকফ প্রশাসক।

ওয়াকফ প্রশাসকের তত্তাবধানে এবং ওয়াকফ দলিলে উল্লেখিত ওয়াকিফের শর্ত অনুযায়ী ওয়াকফ প্রশাসন ‘মুতোয়াল্লী” নিয়োগ করেন যিনি ওয়াকফ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনার জন্য নিযুক্ত। মুতাওয়ালি্ল কেবল সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওলাদ হলেও সম্পত্তির মালিক নন। তিনি শুধু ওয়াকফ দলিলে উল্লেখিত তার জন্য নির্ধারিত অংশের ভোগকারী।

ওয়াকফকৃত সম্পত্তি কারো নিকট বিক্রয়, কিংবা একে হেবা বা মিরাসের (ওয়ারিশি) বিষয়বস্তু করা যায় না। তবে ওয়াকফ প্রশাসন যদি ক্ষেত্র বিশেষে এরুপ কোনো পদক্ষেপ নিতে চান, তা শুধুমাত্র ওয়াকফ প্রশাসক আইনের মধ্যে তা করতে পারেন।

ওয়াকফ আল আওলাদের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি ব্যাপার জানা অবশ্যই প্রয়োজনঃ

১. ওয়াকফ দলিলে যে নিয়ম পদ্ধতি লেখা হয় তার কোনো প্রকার ব্যতিক্রম করা যাবে না।

২. দলিলে সৎ কাজের জন্য যে অংশ নির্দিষ্ট আছে সে অংশ ঐসব কাজে ব্যায় বা ব্যবহার করতে হবে।

৩. শরীকদের বা আওলাদদের জন্য "ওয়াকফ আল আওলাদ" দলিলে যেভাবে ভোগ দখলের নিয়ম উল্লেখ থাকবে শরীকগন/ আওলাদগন ঠিক সেভাবেই ভোগ দখলের অধিকারী হবে। কোনো আওলাদ কিংবা শরীক অন্য কোনো আওলাদ বা শরীকের ভোগ দখলে কোনো প্রকার বাধা দিতে পারবে না। তবে যদি কোনো আওলাদ তাঁর প্রাপ্য অংশের সুবিধা ভোগ করা থেকে অন্য কোনো আওলাদ বা শরীক দ্বারা প্রবঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন, তাহলে ভুক্তভোগী আওলাদ শুধুমাত্র ওয়াকফ প্রশাসনের কাছে তিনি তাঁর নালিশ পেশ করতে পারেন। এখানে উল্লেখ থাকে যে, যেহেতু ওয়াকফ করা সম্পত্তির মালিক ওয়াকফ প্রশাসন নিজে এর মালিক কোনো আওলাদ নহেন, ফলে ওয়াকফ প্রশাসনের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে ধরে নেয়া যায়।

৪. ওয়াকফ আল আওলাদের ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে ওয়াকিফের আওলাদ কিংবা আওলাদের আওলাদগন শুধুমাত্র তাদের জন্য নির্ধারিত অংশেই ভোগ করার ক্ষমতা রাখেন। অন্য আওলাদ কিংবা আওলাদের আওলাদগন কোনো অংশেই অন্য কোনো আওলাদ বা তাদের আওলাদগনের ভোগ দখলের কোনো সুযোগ নাই, কিংবা বাধা দেয়ারও কোনো সুযোগ নাই। যদি কোনো আওলাদ এরুপ কোনো কাজ করতে চান, তাহলে তিনি অন্যের সম্পত্তি দখলের পায়তারার মামলায় অপরাধী সাব্যস্থ্য হবেন। আর এখানে মামলা হবে দেশ (ওয়াকফ প্রশাসন) বনাম উক্ত অপরাধী।

৫. ওয়াকফ আল আওলাদ সম্পত্তিতে ওয়াকিফ কর্তৃক যদি কোনো জেনারেশন উল্লেখ করে সীমাবদ্ধ না করেন (যেমন ৩য় জেনারেশন অবধি কিংবা ৪র্থ জেনারেশন অবধি ওয়াকফ আল আওলাদ করা হলো ইত্যাদি), তাহলে আওলাদের বংশধরগন বংশ পরম্পায় ভোগ দখলের জন্য উপযুক্ত থাকবেন।

৬. সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য যেভাবে মোতাওয়াল্লী নিয়োগের বিধান রাখা হয় সেভাবে মোতায়াল্লী নিয়োগ হবে। কোনো কারনে যদি দলিলে উল্লেখিত শর্ত মোতাবেক মোতোয়াল্লী না পাওয়া যায়, তাহলে ওয়াকফ প্রশাসন তাঁর ইখতিয়ারে মোতোয়াল্লী নিয়োগ করতে পারবেন।

৭. ওয়াক্ফ কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে মোতাওয়ালী ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নতির জন্য আংশিক হস্তান্তর করতে পারবেন। অনুমতি ছাড়া হস্তান্তর হলে গ্রহীতার অনুকূলে স্বত্ত সৃষ্টি হবে না।

৮ মোতোয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তির সচীবের ন্যায় বা অনেক সময় মেজিষ্ট্রেটের ন্যায় দায়িত্ব পালন করেন। ওয়াকফ প্রশাসনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হচ্ছেন মোতোয়াল্লী। যে কোনো প্রকারের অভিযোগ, সমস্যা, পরামর্শ সরাসরি মোতোয়াল্লীর মাধ্যমে ওয়াকফ প্রশাসনের কাছে প্রেরন করতে হয়।

এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হচ্ছে-ওয়াকফ করা সম্পত্তিতে যে যাই কিছু করুক না কেনো, সেটা অবশ্যই ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতিতে করতে হবে, কারন ওয়াকফ করা সম্পত্তির মাটির উপরে এবং নীচে অবস্থিত প্রতিটি বস্তু, মাটি, গাছপালা, কিংবা অন্যান্য পদার্থ সব কিছু ওয়াকফ সম্পত্তির মালিক হিসাবে ওয়াকফ প্রশাসনের । উদাহরন দেই-

ধরুন, ওয়াকফ আল আওলাদ হিসাবে কেউ তাদের অংশে বসবাসের জন্য যদিও অনুমোদিত কিন্তু তারাও ঐ সম্পদের উপর যে কোনো কিছু করার আগে ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। যদি ওয়াকফ দলিলে আওলাদদের দ্বারা বিল্ডিং কিংবা ইমারত তৈরির অনুমতিও থাকে সেটাও ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতিসমেত করা আবশ্যক। অনুমতি ছাড়া যদি তারা ওখানে গাছ পালা বা বৃক্ষরাজীও লাগান, কিংবা অস্থায়ী কোনো দেয়ালও দেন, সেটা তারা দিতেই পারেন, কিন্তু সেটাও তখন ওয়াকফ প্রশাসনের সম্পত্তি বলে গন্য হবে। ফলে কেউ যদি সেই আরোপিত গাছ/বৃক্ষ কিংবা দেয়াল নিজেদের ইচ্ছায় কেটে ফেলতে বা ভাংতে চান, তাহলে ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামুলক। কারন ওয়াকফ করা সম্পত্তি ওয়াকফ প্রশাসনের। মালিক তারা। আওলাদগন কোনো অবস্থাতেই মালিক নন, তারা শুধু ভোগকারী। এখানে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার করা বাঞ্চনীয় যে, ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি ব্যাতিত ওয়াকফ সম্পত্তিতে কোনো কিছু করা অন্যের জমিতে বিনা অনুমতিতে করার শামিল।

ব্যাপারটা এমন যে, কেউ রাস্তার ধারে কয়েক শত গাছ লাগালো , গাছগুলি বড় হলো, কিন্তু সেই ব্যক্তি সেই গাছগুলি আর নিজের ইচ্ছায় কাটতে পারে না, তখন রাস্তার ধারে লাগানো গাছগুলি সরকারের মালিকানায় চলে আসে। এটা যেইই লাগাক।

 

০৯/০৭/২০২২-আপডেট (সাইফুল)

সাইফুলের বাসায় আমার যাওয়ার কথা ছিলো জুম্মা নামাজ পড়ে বাসা থেকে খাওয়া দাওয়া করে বিকেল ৪ টার মধ্যে। কিন্তু আমার স্ত্রীকে আমি নিয়ে যাবো (আমিই বলেছিলাম সে গেলে হয়তো ভাবীর পার্টটা জানার জন্য আমার সহায়ক হবে) বলে সেইই বল্লো যে, আমরা বিকেল ৫ টার পর রওয়ানা দিয়ে ওখানে গিয়ে মাগরেবের নামাজ পড়ে গল্প করতে পারবো। আর যেহেতু সাইফুলের বাসায় ডিনার করবো তাই সে মোতাবেক একটু দেরী করেই রওয়ানা হয়েছিলাম। মাগরেবের পর পরই আমরা সাইফুলের বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছিলাম।

সাইফুল খুবই ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ। অনেক বছর পর ওর সাথে আমার আবার দেখা। সেই ক্যাডেট কলেজের পুরানো গল্প, আমি কিভাবে এক্ট্রোজেন হয়ে গেলাম সেই মজার মজার গল্প হলো। আমি আমার গল্প, আর সাইফুল সাইফুলের গল্পে সাথে ভাবীরা একেবারে দারুন একটা সন্ধ্যা কেটে গেলো আমাদের। কথার ফাক দিয়ে আমি আর সাইফুল আলাদা ওর নিজের রুমে বসে আরো কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। সেখানে আসলে ওর চিকিতসা সংক্রান্ত বিশয়েই আলাপ হলো। যেহেতু সাইফুল এখনো সিগারেট খায় (যদিও খুব অল্প নিকোটিনযুক্ত) ফলে আমার কোনো অসুবিধা হয় নাই। আমাদের ব্যাচের প্রায় সবার খোজ খবর নিলো আমার কাছ থেকে। যতটুকু আমার কাছে ছিলো, সেটা ওর সাথে শেয়ার করেছি। মিজানের কথা, বাবলার কথা, কব্বর আলীর কথা, ফরিদ, ডন, বারী, লিংকন, সাগর, মাকসুদ, জুলু, ফিরোজ, সালু, জাহেদ, জাহিদ, এভাবে একে একে মুটামুটি ক্যাডেট নাম্বার ধরে ধরে সাইফুল সবার কথা জিজ্ঞেস করলো। মাহমুদের সাথে সাইফুলের প্রায়ই কথা হয় সেটাও জানালো। খুব ভালো একটা সময় কেটেছে। সাইফুল নিজেও সবাইকে মিস করছে বুঝতে পারলাম।

অনেক কথার মধ্যে আমার টার্গেট ছিলো সবসময় সাইফুলের সাস্থ্যগত ব্যাপারে গভীরভাবে জানা এবং সেটার ব্যাপারে ওর পরবর্তী পদক্ষেপগুলিকে পজিটিভভাবে উৎসাহ দেয়া। খুব ভালো লেগেছে যে, সাইফুল আগামী ঈদের পরে সে ইন্ডিয়া যেতে ইচ্ছুক (ইনশাল্লাহ)। আয়মানের স্কুলের সিডিউলটা জেনে হয়তো ঈদের পরে ইন্ডিয়ান এম্বেসী খুল্লেই সে ভিসার জন্য এপ্লাই করবে। আয়মানকে সাথে নিয়ে যাবে। আর যাবেন ভাবী। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া আয়মান দারুন দায়িত্তশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। দেবী শেঠির কাছে সাইফুল ইনশাল্লাহ অপারেশন করাবে। আর এরজন্য সে মানসিকভাবে রাজী হয়েছে এবং প্রস্তুত হচ্ছে (আলহামদুলিল্লাহ)।

সংগত কারনেই সাইফুল মাঝে একটু বেশ মানসিকভাবে আপ্সেট ছিলো। এটা আমি হলেও হয়তো আপ্সেট থাকতাম। তাই ওকে বললাম, বন্ধুদের মাঝে থাকলে মন ভালো থাকে, সময়টা ভালো কাটে, আর এই বয়সে এসে বন্ধুরাই আসলে পরিবার। একটু ফান, একটু সিরিয়াস টক, সব কিছুই ভালো। ওকে যত দ্রুত সম্ভব এমসিসি ১৫ তে এড হতে বলেছি, সে রাজী হয়েছে। আমাদের এমসিসি ১৫ এর এডমিন কে বা কারা আমি জানি না। প্লিজ এড সাইফুল। আমিও ট্রাই করবো ওকে এড করতে। আমি সাইফুলকে সোস্যাল মিডিয়াতেও থাকতে বলেছি, কারন ফেসবুকে ওর একটা বিশাল ফেনগ্রুপ ছিলো, তারাও আমাকে অনেকবার নক করেছে সাইফুলের ব্যাপারে। তাই ওকে ফেসবুকেও আবার সাভাবিক থাকতে বলেছি। সাইফুল আবার আগের ফর্মে ব্যাক করবে ইনশাল্লাহ। সাইফুল অনেক ঝরঝরা আছে এখন মাশআল্লাহ। সাইফুল খুবই ভালো আছে এখন।

ওর সাথে সময়টা কাটাতে আমার যেমন ভালো লেগেছে, সাইফুলেরও অনেক ভালো একটা সময় কেটেছে। সাইফুল নিজের থেকেই ওর বাসায় দাওয়াত দিয়েছে সবাইকে। যে যখন পারো, সময় করে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারো, অথবা ওকে ফোনও দিতে পারো। ওর কাছে অনেকের ফোন নাম্বার এখন নাই। তাই হোয়াটসআপে এড করলে সাইফুল আবার সবার নাম্বারগুলি পেয়ে যাবে। তবে করোনা ওর জন্য বিপদজনক।  ফোনে ফোনে টাচে থাকাই এই মুহুর্তে নিরাপদ বলে আমি মনে করি।

ভাবী আমাদের জন্য চমৎকার চমৎকার রান্না করেছিলেন। আমরা সবাই একসাথে খেয়ে অনেক গল্প করেছি। ভাবীও খুব খুশী হয়েছেন। আমাদের এমসিসি বন্ধুরা ওর জন্য যে সবসময় দোয়া করছে এবং ওর ব্যাপারে জানার জন্য খোজ খবর নিচ্ছে, সে ব্যাপারে জানিয়েছি। বেশ অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছিলাম। তাই আর আপডেট দিতে পারিনি।

সাইফুল, ভাবীর আর আয়মানের সাথে কয়েকটি ছবি দিলাম।

(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমার যাওয়া উপলক্ষ্যে নাকি সাইফুল একেবারে ক্লীন সেভ করেছিলো, তাই ওর খোচা খোচা দাড়ি নাই ছবিতে। চুলও নাকি কালো করতে চেয়েছিলো, আমি বললাম সাইফুলকে, চুল কালো না করলেও কিংবা ক্লীন সেভ না করলেও এমসিসির বন্ধুরা আজীবন ১২ আর ১৮ এর মধ্যেই আমাদের বয়স থাকবে, দারুন হাসাহাসি হয়েছিল ভাবীদের মধ্যে এটা নিয়ে, এটা একটা ফান নোট)

বন্ধুরা, তোমাদের সবার জন্য ঈদ মোবারক রইলো, সবাই ভালো থাকো ইনশাল্লাহ। Love you always.

০৭/০৭/২০২২-ইউরোপবসন্ত

আরব বসন্তের কথা মনে আছে? শুরু হয়েছিলো ২০১০ সালে।

আরব বিশ্বে সর্বপ্রথম গণবিক্ষোভের শুরু হয়েছিল মিশরে। গণবিক্ষোভ ছিল মিশরীয় জনগণের দীর্ঘকালের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। ১৭ দিন গণআন্দোলনের পর ১১ই ফেব্রুয়ারি হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের শাসনের পতন হয়। এরপর তা লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ইরান, জর্ডান, মরক্কো, তিউনিসিয়ায় সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইরাক, কুয়েত, মৌরিতানিয়া, ওমান, সৌদি-আরব, সুদান, সিরিয়াতেও ছোট বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিদ্রোহে হরতাল, বিক্ষোভ প্রদর্শন, জনসভা প্রভৃতি কর্মসুচী নেয়া হয়।

আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়ে যাওয়া গণবিপ্লবের ঝড়কে পশ্চিমা সাংবাদিকরা আরব বসন্ত হিসাবে আখ্যায়িত করে। মিশরের আগেও আরব বসন্তের সূচনা হয় আসলে তিউনেশিয়ায়। স্বৈরাচারী শাসক বেন আলীর দুঃশাসনের ফলে সেই দেশে বেকারত্বের হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। এর প্রতিবাদে এক যুবক প্রকাশ্য রাস্তায় নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহুতি দেয়। ফলাফলস্বরুপ, লোকজন বেন আলীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমে পড়ে। ফলে সূচনা হয় আরব বসন্ত। যদিও তিউনিসিয়ায় এটিকে জেসমিন বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করা হয়।

চরম রাজতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দুর্বল অর্থনীতি, বেকারত্ব, চরম দারিদ্র্য ও শিক্ষিত হতাশাগ্রস্থ যুবসমাজ, খরা ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়ছিল।

আরব বিশ্বের এই গনঅভ্যূত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সরাসরি আঘাত হেনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়কের পতন ঘটাতে সাহয়ক ভূমিকা রেখেছিল। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, আরব বসন্তের ফলে মাত্র দুই বছরে লিবিয়া, সিরিয়া, মিশর, তিউনিসিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেনের গণ-আন্দোলনের ফলে মোট দেশজ উৎপাদনের ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার ৫৬ কোটি ডলার।

এতো বছর পর, কেনো জানি আমার কাছে মনে হচ্ছে-এবার বসন্তটা হবে “ইউরোপশ্চিমা বসন্ত”। কেনো বলছি?

এই ইউরোপের দেশগুলিতে এখন পুরুদমে একনায়কতন্ত্রের চর্চা, মানবাধীকার লঙ্ঘন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দুর্বল অর্থনীতি, বেকারত্ব, চরম দারিদ্র্য ও শিক্ষিত হতাশাগ্রস্থ যুবসমাজ, খরা, খাদ্য, তেল গ্যাস এমন কি শিশুদের খাবারের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে সারাটা ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশগুলিতে সরকার প্রধানদের অবস্থা মুটামুটি টালমাটাল।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অপসারন এই ইফেক্টের প্রথম কারন বলা যায়। বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অবস্থাও প্রায় বরিস জনসনের মতো হতে যাচ্ছে। একে একে তাঁর কোয়ালিশন পার্টি এবং কিছু সতন্ত্র এমপি ইতিমধ্যে সরকার থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী পেটকভকে একঘরে করে ফেলছেন। বাকীটা হয়তো অচীরেই নজরে আসবে।

জার্মানীর অভ্যন্তরে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়াকে বিভিন্ন কমোডিটির উপর স্যাংকশন দেয়ার কারনে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধিসহ অনেক শিল্প কারখানা প্রায় বন্ধের উপক্রম। তাতে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে, আয় কমে যাচ্ছে, কিন্তু সরকার নাগরিকদের জন্য বিকল্প কিছু তৈরী করতে না পারায় জার্মানীর ভিতরে নাগরিকগন এতোটাই হতাশ যে তারা এখন রাস্তায় নেমে পড়েছেন।

স্পেনের মাদ্রিদে এখন প্রকাশ্যে আন্দোলন চলছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তথা ন্যাটোর একচ্ছত্র সিদ্ধান্তকে স্পেন সরকার মানার কারনে। তারা ব্লক থেকে বের হয়ে যাবার জন্য আন্দোলনসহ ন্যাটোর বিলুপ্ত চান। ফ্রান্সের অবস্থাও প্রায় একই। যে নির্বাচনে ম্যাক্রো অনেক ভোটে এগিয়েছিলো, কিন্তু পার্লামেন্টারী পর্বে গিয়ে তাঁর ভরাডুবি হয়েছে। ইতালী, পোল্যান্ড, লাটভিয়া, ইত্যাদি দেশগুলিতে এখন নাগরিকেরা প্রায়ই আন্দোলনে শরীক হচ্ছেন অর্থনইতিক বিপর্য্যের কারনে।

আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচন করার মত কোনো পরিবেশ আর অবশিষ্ঠ নাই বলেই মনে হচ্ছে। তাঁর পাবলিক রেটিং নীচে নামতে নামতে এখন দাড়িইয়েছে মাত্র ২৭% তে যা আমেরিকায় এ যাবতকালের যে কোনো প্রেসিডেন্টের জন্য সর্বনিম্ন। আমেরিকার নিজস্ব কোনো প্রোডাক্ট তেমন দেশের মধ্যে নাই। আর যা আছে, তা খুবই সামান্য। আমেরিকা গাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই তারা কোনো না কোনো দেশের উপরে নির্ভরশীল। ফলে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাসহ আরো প্রায় ৩০টি দেশের উপর এ যাবতকাল নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আমেরিকা নিজেই এখন প্রায় একঘরে হয়ে যাচ্ছে। আরব দেশগুলির কারো সাথেই আমেরিকার ভালো সম্পর্ক নাই, আফ্রিকার দেশগুলির সাথেও না। এবার শুরু হয়েছে এশিয়া দেশগুলির সাথে দন্ধ। ফলে আমেরিকা সারা প্রিথিবীকে একঘরে করতে করতে এখন সে প্রায় নিজেই একপেশে হয়ে গেছে। প্রতিটি দেশে তাদের কারেন্সী বিশেষ করে ইউরো এবং ডলারের ইনফ্লেশন হচ্ছে। বলা হচ্ছে ইউরোপিয়ান দেশগুলি অচিরেই ১০% জিডিপি শ্লথ হবে। এসব কিছু মিলিয়ে উপসংহারটা যে খুব ভালোর দিকে এগুচ্ছে না, সেটা এখন প্রায় পরিষ্কার।

আগামী বছর এর পুরু দৃশ্যটা একেবারে চোখের সামনে ভেসে উঠবে যদি না এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নেয়া হয়।

'চাঁদ উঠুক বা না উঠুক, আজ বসন্ত"।

০১/০৭/২০২২-স্ন্যাক আইল্যান্ড

এই ইউক্রেন যুদ্ধের আগে জীবনেও আমি এই দ্বীপের নাম শুনিনি। গত কয়েকদিন যাবত এই স্ন্যাক আইল্যান্ডের নাম খুব ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে। এই স্ন্যাক আইল্যান্ড আসলে কি? ঐ যে বলে না যে, চাপে পইরা কিছু জানা। আর আমার বেলাতেও এই জানাটা হইছে এই ইউক্রেন যুদ্ধে স্ন্যাক আইল্যান্ড নামক জায়গাটার ব্যাপারে জানা হলো।

ইউরোপের ডানুবি ডেল্টা নদীর নিকটে কৃষ্ণ সাগরের পাশে ইউক্রেনের অধীনে একটি দ্বীপ যাকে ইউক্রেনিয়ানরা “জিনি আইল্যান্ড” আর ইংরেজীতে একে “সার্পেন্ট বা স্ন্যাক আইল্যান্ড” নামে ডাকে। ১৮৪২ সালে রাশিয়া সেখানে একটি লাইট হাউজ তৈরী করেছিলো এবং সেটা রাশিয়ার অংশ হিসাবেই পরিগনিত হতো কিন্তু ১ম বা ২য় বিশ্ব যুদ্ধে এই লাইট হাউজ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেখানে পতনের বছর পর রোমানিয়া একটি কেরোসিন দ্বারা পরিচালিত লাইট হাউজ তৈরী করে সামুদ্রিক পরিবহনের দিক নির্দেশনার কারন হিসাবে।

 
২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় যে, মাত্র ৩০ থেকে ১০০ জনেরও কম জনবসতি এই আইল্যান্ডের একটি গ্রাম যার নাম বিলি, সেখানে বসবাস করত। এদের বেশীরভাগ মানুষ হচ্ছে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস, কিংবা ট্যাকনিক্যাল হ্যান্ডস যারা তাদের পরিবার নিয়ে ওখানে বাস করে। সুপেয় পানির কোনো সম্ভাবনা সেখানে নাই। এরা কিভাবে কি খায়, কোথা থেকে কিভাবে কি আনে এটা আমি জানি না। তবে জানা যায় যে, সব কিছুই হেলি সাপোর্টেড হয়।

এই আইল্যান্ডের আয়তন মাত্র ৬৯০ বাই ৬৮২ মিটার। অর্থাৎ 0.205 km2 খুবই ছোটো একটা ল্যান্ড।। যদিও এটা এখন ইউক্রেন ওদের টেরিটরি হিসাবে ভাবে কিন্তু এর ৮০% রোমানিয়ার অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত। মাত্র ২০% হচ্ছে ইউক্রেনের।

১৯৯৭ সালে ইউক্রেন তার পুরু অংশ রোমানিয়ার কাছে ছেড়ে দিয়েছিলো কিন্তু পরবর্তীতে রোমানিয়া সার্ভে করে দেখেছিলো যে, এই আইল্যান্ডে শুধুমাত্র সাগরের রক ছাড়া আর কিছুই নাই বিধায় সে এটাকে রক্ষনাবেক্ষনের অংশ থেকে পরিত্যাগ করে।

২০০৭ রোমানিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইউক্রেন সেখানে হেলিকপ্টার প্লাটফর্ম, নেভিগেশনাল সিস্টেম, সোলার এবং ডিজেল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করে কিছু বেসামরিক স্থাপনা যেমন রিসার্চ সেন্টার, পোষ্ট অফিস, ব্যাংক (ওখানে ইউক্রেনের ‘আভাল ব্যাংকের’ একটি শাখা আছে), সেটেলাইট টেলিভিশন, প্রাথমিক চিকিতসার একটি কেন্দ্র, মোবাইল ফোনের টাওয়ার স্থাপন করে। যদিও রোমানিয়া তার সত্ত্ব ছাড়েনি বলে আখ্যা দেয়। তারমানে এটা এখনো ইউক্রেন আর রোমানিয়ার জন্য একটা ডিসপুটেড আইল্যান্ড।

ইউক্রেনের কোষ্টাল এরিয়া থেকে এই আইল্যান্ড ২২ মাইল এবং রোমানিয়ার কোষ্টাল এরিয়া থেকে এই আইল্যান্ড মাত্র ২৮ মাইল দূরে অবস্থিত। যদি শহরের দুরত্ত ধরি, তাহলে ইউক্রেনের ভিল্কোবি শহর থেকে এটা ৩১ মাইল আর রোমানিয়ার সিলুনা শহর থেকে এর দুরুত্ত মাত্র ২৯ মাইল।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে রাশিয়া এই আইল্যান্ড নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। যদিও রাশিয়ার এই আইল্যান্ডের কোনো প্রয়োজনই ছিলো না এবং এখনো প্রয়োজন নাই।

দখল নেয়ার সময় ইউক্রেনিয়ানরাও জানতো না কতজন আসলে ওখানে ছিলো। ফলে ইউক্রেন জানায় যে, মোট ১৩ জন এই স্ন্যাক আইল্যান্ডে ছিল যারা সবাই মারা গেছে রাশিয়ার দখলের সময়। তাই প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকী ওই ১৩ জনকেই দেশের সর্বাধিক মরনোত্তর পুরুষ্কারে ভূষিত করেন। পরবর্তীতে রাশিয়া এই স্ন্যাক আইল্যান্ড থেকে আরো ১৯ জন নাগরিককে আটক করে, সেই আটককৃত নাগরিকদেরকে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনের কাছে ছেড়ে দেয়।

এই স্ন্যাক আইল্যান্ড স্ট্রাটেজিক লোকেশন হিসাবে যতোটা না ইম্পর্ট্যান্ট, তার থেকে বেশী ইম্পর্ট্যান্ট হচ্ছে যে, ল্যান্ড লকড কান্ট্রি হিসাবে যদি ইউক্রেন লকড হয়ে যায়, তাহলে ওডেসা থেকে এই স্ন্যাক আইল্যান্ডের মাধ্যমেই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে ব্ল্যাক সি এরিয়া দিয়ে রোমানিয়া হয়ে ইউক্রেন তার পন্য পরিবহনে সক্ষম। এটা ইউক্রেনের ম্যারিটাইম টেরিটরিয়াল হিসাবে ইউক্রেনের কাছে বেশী জরুরী। রাশিয়ার কাছে নয়।

রাশিয়া গত ৩০ জুন ২০২২ তারিখে ‘গূড গেশ্চার’ হিসাবে স্ন্যাক আইল্যান্ড থেকে তার মিলিটারী প্রত্যাহার করেছে। রাশিয়া বলতে চাচ্ছে যে, ইউক্রেনের খাদ্য সামগ্রী দেশের বাইরে রপ্তানীর সুযোগ করে দেয়ার জন্যই তারা এই আইল্যান্ড পরিত্যাগ করেছে যাতে কেউ রাশিয়াকে এটা বলতে না পারে যে, ম্যারিউপোল কিংবা ইউক্রেনের অন্যান্য সমুদ্র বন্দর রাশিয়া দখল করার কারনে ইউক্রেন তাদের খাদ্য সামগ্রী বাইরে রপ্তানী করতে পারছে না। এবার তারা সেই সুযোগ করে দিয়ে প্রমান করাতে চায় যে, ইউক্রেন আসলেই তাদের খাদ্য সামগ্রী বাইরের দেশে রপ্তানী করতে ইচ্ছুক কিনা।

যদিও ইউক্রেন জানিয়েছে যে, ইউক্রেনের ক্রমাগত অবিরাম বোমার কারনে তারা স্ন্যাক আইল্যান্ড পরিত্যাগ করেছে।

০১/০৭/২০২২-রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী না

কেউ যদি বলে থাকেন যে, রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের দেয়া প্রায় দশ হাজার নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র একটি ফ্যাক্টর অর্থাৎ রাশিয়ার তেল এবং গ্যাসের কারনে ইফেক্টিভ হয় নাই, তাহলে সেটা হবে একটা ভুল ধারনা। হ্যা, এটা অনেকগুলি ফেক্টরের মধ্যে একটা ফ্যাক্টর তো অবশ্যই। তার আগে একটা কথা জেনে রাখা ভালো যে, নিষেধাজ্ঞার কারনে একটা দেশে কি কি ইফেক্ট হয় সেটা।

(ক) সাধারন মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমশই সংকুচিত হয়ে আসে। মানুষজন সাফার করতে থাকে।
(খ) দ্রবুমল্য অস্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। মানুষের সেভিংস কমতে থাকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোনে জর্জরিত হয়ে যায়। দৈনিন্দিন আয় রোজগার কমে মানুষকে হতাশ করে ফেলে।
(গ) বিভিন্ন খাতে নেগেটিভ প্রভাব পড়তে থাকে। জীবন প্রায় থেমে যেতে থাকে। নতুন প্রজন্মের লেখাপড়া, ভবিষ্যত, পরিবারের জন্য হাউজিং খাত, ব্যবসা বানিজ্যে সাস্থখাতে বীমা সব জায়গায় প্রভাব পড়তে থাকে।
(ঘ) এহেনো অবস্থায় কর্মক্ষেত্রে ছাটাই শুরু হয়, বেতন কমে যায় মানুষ বেকার হয় ইত্যাদি।
(ঘ) এই রকম একটা দূর্বিসহ পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকগন তাদের নেতাদের উপর ত্যাক্ত বিরক্ত হয়, নেতাদের ক্রেডিট রেটিং কমে যায়, এবং এক সময় দেশের নাগরিকগন অসহিনষু হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে। নেতাদের পতন হয়।

তাহলে দেখি, এবার এই প্রভাবগুলি কিভাবে রাশিয়ার নাগরিকদের জীবনে কি ইফেক্ট হলো। আসলে এদের একটাও কঠিনভাবে ইফেক্ট করে নাই। বরং সেটা উলটোপথে বেগবান হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-কেনো?

রাশিয়ার উপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আসে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ছিলো লিমিটেড ভার্ষন। এই লিমিটেড ভার্ষন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার নাগরিকেরা তাদের কোনটা প্রাইওরিটি আর কোনটা লাক্সারি, কোনটা জরুরী আর কোনটা না হলেই নয় এই পার্থক্যটা বুঝে গিয়েছিলো। মানুষজন উক্ত নিষেধাজ্ঞায় জীবনপ্রনালী কিভাবে এডজাষ্ট করতে হবে সেটার একটা হোমওয়ার্ক করে ফেলেছিলো, অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলো। আসলে রাশিয়ার মানুষজন ১৯৯০ সাল থেকেই এই এডজাষ্টমেন্টটা শুরু করেছিলো যখন রাশিয়া ভেংগে গিয়ে ১৫ টা রাজ্যে পরিনত হয়। ফলে ২০১৪ তে এসে তারা পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় খুব একটা ভোগে নাই। ২০১৪ সালের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ানরা বুঝেই নাই।

এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার।

রাশিয়ানদের চরিত্রের একটা ভালো দিক হলো, তারা খুব তাড়াতাড়ি লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে কিভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো থাকা যায় সেটায় বেশ পারদর্শী। আর এই ক্যারেক্টার বৈশিষ্ট পেয়েছে তারা সোস্যালিজম সরকারের কারনে। বেশীরভাগ নাগরিকগন পুরানো সমাজতান্ত্রিক নিয়মে বেড়ে উঠায় নেতাদের উপর তাদের একটা অলিখিত আনুগত্যের মানসিকতায় বাস করতো। তারা এটাকে সাভাবিক নিয়ম হিসাবেই ধরে নিয়ে বড় হইয়েছে। তারা সবসময় সোস্যালিজমের কারনে আধুনিক ক্যাপিটালিজমের মতো বৈষয়িক ব্যাপারে ধার ধারে না। সারাদিনের খাবার নিশ্চিত থাকলে, দেশে খামাখা হাংগামা না থাকলে, ছেলেমেয়েরা ঠিকমত স্কুল কলেজে যেতে পারলে, অতঃপর রাতে সবাই মিলে নিজেদের তৈরী ভোদকায় মত্ত থাকতে পারলেই ওরা খুশী। ফলে ২০১৪ সালে নতুন নিষেধাজ্ঞায় তারা এটাই ভেবেছে যে, নেতারা আছে, তারাই ব্যাপারটা দেখবেন বরং তারা ন্যুনতম যা দরকার সেটা পাচ্ছে কিনা তাতেই তারা খুশী। যেহেতু রাশিয়া এখন পুরুপুরি সমাজতান্ত্রিক না আবার ক্যাপিটালিমেও না, এটা একটা মিক্সড ব্যবস্থা, ফলে আগে সরকার যেমন খাদ্য, বাসস্থান, চিকিতসা ইত্যাদি আনকন্ডিশনালী নিশ্চিত করতো, এখন যেহেতু সেটা নাই, ফলে সরকারী সহযোগিতায় আর পরিবারের প্রতিটি সদস্য দ্বারা তাদের নিজের মুল কাজের বাইরে কোনো না কোনো প্রোডাক্টিভ কাজের মাধ্যমে অর্থনইতিক প্রয়োজনটা নাগরিকেরা মিটিয়ে নেয়। সরকারও প্রায় সেই পুরানো ধাচে সমাজতান্ত্রিক নিয়মে সবাইকে সরকারী চাকুরী, ছোট খাটো ব্যাংক লোন, কমদামে দৈনিন্দিন জীবনের কমোডিটির সহজলভ্যতায় একটা ইকুলিব্র্যামে রাখে। কোনো অসস্থিকর পরিবেশে সরকার কাউকেই সরকারী জব থেকে ছাটাই করে না, বেতনও কমায় না, বরং খুব কম সুদে ব্যাংক থেকে লোনের মাধ্যমে সরকার তার নাগরিকদেরকে কোনো না কোনো খাতে আরো কিছু এক্সট্রা আয় করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। তাতে যেটা হয় যে,

(ক) কেউ সরকারকে দোষী করে না।

(খ) সরকারের উপর তাদের একচেটিয়া বিরক্ত ভাবটা আসে না।

(গ) সরকারকে পতনের মাধ্যমে নতুন রিজিম পরিবর্তনে আন্দোলন করে না।

এটাই হচ্ছে সেই ট্রাম কার্ডটা যে, ভিনদেশের নেতারা যা ভাবেন যে, নিষেধাজ্ঞায় ইন্টার্নালী দেশের নাগরিকগন তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন গড়ে উঠবে। নেতাদের পতন হবে, আর তাদের নিষেধাজ্ঞা ছুরির মতো কাজে দিবে। এটা রাশিয়ায় কখনোই সম্ভব না। রাশিয়ায় প্রায় ১ বছরের বেশী আমার থাকার কারনে আমি তাদের চরিত্রে এটা খুব ভালো করে দেখেছি। সাধারন নাগরিকেরা রাজনীতি নিয়ে আলাপই করে না। অনেক পরিবার তাদের বাসায় রান্নাও করে না। যাইই আছে, সবাই মিলে সন্ধ্যা ৬টার পর প্রায় প্রতিটি রেষ্টুরেন্টে, কফি শপে, বারে, রাস্তায় ছেলে মেয়ে ব্রিদ্ধরা মিলে এক মহাকোলাহলে নেচে গেয়ে সেই দিনটা পার করে। আগামীকাল কি হবে, সেটা দেখা যাবে আগামীকাল। এটাই রাশিয়া। তবে এটা ধীরে ধীরে চেঞ্জ হচ্ছে। কিন্তু এটা এখনো সেই সমাজতান্ত্রিকভাবেই ক্যাপিটালিজম মিক্সড হয়ে আছে।

যাক যেটা বলছিলাম।

এবারের পশ্চিমাদের প্রায় দশ হাজারের বেশী নিষেধাজ্ঞায় পশ্চিমারা প্রথমেই যেটা বলেছিলো যে, এইসব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ান নাগরিকদের উপরে নয়। কিছু কিছু রাশিয়ানরা বিশ্বাসও করেছিলো, আবার ভয়ও পেয়েছিলো। আশ্বাস পেয়েছিলো এই কারনে যে, পশ্চিমারা রাশিয়ান নাগরিকদের ভালো চায় এবং তারা তাদের পক্ষে। কিন্তু রাশিয়ানরা তাদের ভুলটা কিছুদিনের মধ্যেই ভেংগে গিয়েছিলো যে, পশ্চিমারা মিথ্যা কথা বলেছে। কারন, পশ্চিমারা ক্রমাগত দেশের বনিক শ্রেনীর উপরে, তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে, দেশের বিভিন্ন অলিগার্দের উপরে, স্পোর্টসম্যানদের উপরে, ছাত্রদের উপরে, এমনকি বিদেশে অবস্থানরত রাশিয়ানদেরকে কিংবা রাশিয়ান কালচারকে পুরুপুরি বয়কটের মাধ্যমে যেভাবে কোণঠাসা করে অপমানিত করছিলো তাতে রাশিয়ান নাগরিকেরা পশ্চিমা এবং ইউরোপের কথায় এবং কাজে মিল খুজে পাচ্ছিলো না। একদিকে তারা রাশিয়ানদের যেটা ভালো সেটাই করার চেষ্টা করছে বলে গলা ফাটাচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়ানদের সমস্ত মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এই কর্মটি রাশিয়ান নেতারা খুব ভালো করে তাদের জনগনের কাছে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, পশ্চিমারা বা ইউরোপিয়ানরা রাশিয়ানদের অতীত ধংশ করতে চায়, বর্তমানকে কঠিনতর করতে চায় এবং ভবিষ্যতকে অন্ধকারময় করতে চায় যার আরেক নাম ধংশ। যেহেতু রাশিয়ানরা সেটাই বাস্তবে দেখছিলো যেটা তাদের রাশিয়ান নেতারা বলছে, ফলে রাশিয়ানরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় জাতধর্ম, শ্রেনী বিভেদ ভুলে নিজেরা নিজেরা এক হয়ে যায়। তারা এটা পরিষ্কার বুঝে যায় যে, পশ্চিমারা তাদেরকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে, এবং তারা এখন পশ্চিমাদের প্রতিটি কথা কুটকথা হিসাবে ভাবছে। তারা উপলব্ধি করতে পারছিলো যে, কিভাবে পশ্চিমারা তাদের কারেন্সীকে দূর্বল করার চেষ্টা করছে, কিভাবে সাধারন মানুষের জীবন যাত্রায় কঠিন করে দিচ্ছে, এবং তারা এটা বুঝতে একটুও বাকী ছিলো না যে, তাদেরকে জিম্মি করে এশিয়ান দেশ লিবিয়া, আফগানিস্থান, ইয়েমেন, ইরান কিংবা আফ্রিকান দেশগুলির ন্যায় তারাও শেষ হয়ে যাবে যদি তারা পশ্চিমাদের কথায় সায় দেয়। তাই এই অবস্থায় তারা একটা কথাই ভেবেছে, যে, সমুলে ধংশ থেকে বাচার জন্য তাদেরকে আরো সুসংঘটিত হয়ে, নেতাদের উপর আরো গভীর বিশ্বাসে অবিচল থাকতে হবে। ফলে রাশিয়ার ভিতরে যে কোনো প্রকার আন্দোলন সংঘটিত হবে না এটা রাশিয়ান নেতারা খুব ভালো করে নিশ্চিত হয়ে যায়। যে কোনো একনায়কত্ত ডিকটেররের সবচেয়ে বেশী ভয় থাকে নিজের দেশের জনগনকে মোকাবেলা করার। রাশিয়ায় এই আন্দোলন হবে না আর সেটা সম্ভব নয় এটা তারা বুঝে গিয়েছিলো। আর ঠিক এ কারনেই রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের লিডারশীপের ক্রেডিট রেটিং ৫২% থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে এখন সেটা দাড়িয়েছে প্রায় ৮৩%। অন্যদিকে জোটের নেতাদের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সহ সবার বর্তমান ক্রেডিট রেটিং অনেক নীচে চলে এসছে। এর কারন তাদের দেশের জনগনও এবার বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, নেতারা সুসংঘটিত নন, এবং সুচিন্তিত নন। যার ফলে রাশিয়ার উপরে প্রদেয় নিষেধাজ্ঞায় এবার এই সব নেতারাই ফাদে পড়ে গেছেন, তাদের জীবনযাত্রা এখন অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে, নিজের দেশের ভিতরে তিনি নিজেই সমালোচিত হচ্ছেন। যেটা হবার কথা ছিলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের। এই অবস্থা থেকে তারাও বেরিয়ে যেতে পারছেন না।

যেহেতু আভ্যন্তরীন আন্দোলনের ভয় থেকে রাশিয়া মুক্ত, ফলে, রাশিয়ার নেতাদের এবারের মনোযোগ ছিলো, সাধারন নাগরিকেরা যেনো নিজ দেশে সাভাবিক জীবন যাপনে কোনো প্রকার অসুবিধায় না পড়ে সেটা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ধ্বস থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া। আর এই হোমওয়ার্ক গুলি রাশিয়ার নেতাদের আগেই করা ছিলো, কখন কোন পলিসি তারা এপ্লাই করবে ইত্যাদি। রাশিয়া যেহেতু নিজে অনেকগুলি সেকটরে নিজেই সয়ংসম্পুর্ন, অন্যদিকে চীন, ইন্ডিয়া, আফ্রিকান দেশ, এবং মধ্যপ্রাচ্য সবাই কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ অপ্রকাশ্যে রাশিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে, ফলে যে কোনো নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করা সহজ হয়ে গেছে তার জন্যে।
দাবা খেলায় প্রতিপক্ষ একটা ভুল চাল দিলে অন্য প্রতিপক্ষ দুটূ লাভ পায়। একটা লাভ হচ্ছে, ভুলের কারনে নিজের ক্ষতি যা প্রতিপক্ষের লাভ, আরেকটা হচ্ছে ভুলের মাশুলের ফল হিসাবে আরেকটা কঠিন পরিস্থিতি যা তার প্রতিপক্ষ চালতে যাচ্ছে। অর্থাৎ যে কোনো একটা ভুলে প্রতিপক্ষ দুইটা লাভ পায়। এখানেও তাইই হয়েছে।

সেটা কিভাবে?

রাশিয়াকে জি-৮ থেকে বাদ দেয়া, ইউএন হিউম্যান রাইটস থেকে বাদ দেয়া, আন্তর্জাতীক মহলে (যেমন স্পোর্টস, ভ্রমন, ব্যাংকিং) ব্যক্তি শ্রেনীকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া, সুইফট থেকে বাদ দেয়া, রিজার্ভ আটকে দেয়া, যুদ্ধটাকে প্রক্সিওয়ার হিসাবে আখ্যায়িত করা, এই যুদ্ধের মধ্যেও যে কারনে যুদ্ধ (ন্যাটোর এক্সপানসন) সেটা সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে যোগ করার পায়তারায় রাশিয়ার নেতাদের কথাকেই অন্যদের কাছে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলায়,, কালিনগ্রাদকে ব্লকে ফেলানো, এবং অবুঝের মতো নিজের প্রয়োজনীয় কমোডিটি যেমন তেল, গ্যাস, খাদ্য, ফার্টিলাইজার, লোহা, ইউরনিয়াম, ইত্যাদির উপরে নিষেধাজ্ঞা দেয়া ইত্যাদি সব কিছু ভুল ছিলো। অন্যান্য দেশের উপরে অতীতে হয়তো এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এটা কতটুকু কার্যকিরী হবে এটার কোনো হোমওয়ার্ক করা হয়নি। রাশিয়া একটা সাভাবিক দেশ নয়। এটা নিজেই একটা ক্ষমতাশীল দেশ। একই প্রেস্ক্রিপসন যা অন্য দেশের উপর শতভাগ কাররযকরী হয়েছে বলে ফলাফল পাওয়া গেছে, এখানে সেটা কাজে লাগবে কিনা সেটা ভাবা দরকার ছিলো। ল্যান্ডলিজ, প্রক্সিওয়ার, নিষেধাজ্ঞা এসবই সেই পুরানো কৌশল। সেই একই কৌশল এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে নিউকসমৃদ্ধ একটা গ্রেট পাওয়ারের বিরুদ্ধে কাজ করবে কিনা এটা ভাবার দরকার ছিলো। এসব নিষেধাজ্ঞা কাজে লাগে নাই বরং নিজেরাই ফাদে পড়ে যাওয়ায় আবার সেটা আবার অবমুক্ত করতে দ্বিধায় পড়ে গেছে পশ্চিমা সহ ইউরোপিয়ানরা।

লাভ হয়েছে শুধু রাশিয়ার। জি-৭ এর বিকল্প হবে ব্রিক্স, চায়নার গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি, আফ্রিকার সাথে রাশিয়া-চায়না-ইন্ডিয়ার মার্জিং, মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমা থেকে সরে আসার প্রবনতা, ব্যাংকিং সেক্টরে নতুন কারেন্সীর আবির্ভাব, ট্রেড ফরমালিটিজে আমুল পরিবর্তন ইত্যাদি পৃথিবীকে এখন মনোপলি থেকে বের করে মাল্টি পোলার ওয়ার্ল্ডে নিয়ে যেতে বাধ্য।

অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে, ন্যাটো তো রাশিয়ার দোড়গোড়ায় এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ইত্যাদির মাধ্যমে ছিলোই, সেখানে ইউক্রেনকে টেনে পশ্চিমাদের প্রক্সীওয়ারের কোনো দরকারই ছিলো না। বরং রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ত করে পশ্চিমাদের আসল শত্রু যারা, চীন, তাদের বিরুদ্ধে একটা জোট করার দরকার ছিলো। এখন আবার ন্যাটোতে সুইডেন, ফিনল্যান্ডকে আমন্ত্রন জানিয়ে আসলে কোনো লাভ হলো কিনা জানিনা, অন্যদিকে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়ায় তাদের কতটা লাভ হলো সেটাও এখন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত মনে হচ্ছে। ন্যাটোর জোটে থাকা মানেই হলো, যে যাইই কিছু করুক, সেখানে একটা বড় বাধা আছে। কিছু হইলেই সারা ইউরোপ দায়ী, ন্যাটো দায়ী। আবার ইউরোপের সবাই তো ইইউতে নাই। সেখানেও আরো ১৪ টা দেশ এই ব্লক থেকে মুক্ত। একটা সময় আসবে হয়তো যে, সেইসব মুক্ত ইউরোপিয়ান দেশসমুহ ইউরোপের বিরুদ্ধেই সংঘটিত করবে এই রাশিয়া, চীন, ইন্ডিয়া আফ্রিকানরা বা মধ্য প্রাচ্যরা একটা জোট হয়ে।
একটা কথা উজ্জ্বল দিবালোকের মতো সত্য যে, ন্যাটো কখনোই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না কারন যখনই অস্ত্র ধরবে, তখন রাশিয়া তার সেই কথাটা রাশিয়া প্রমান করেই ছাড়বে যে,

যদি রাশিয়াই এই পৃথিবীতে না থাকে, তাহলে এই পৃথিবী থাকার দরকারটা কি?

-------------------------------------------------------

(এখানে একটা কথা জানার জন্য লিখছি যে, আমিও রাশিয়ার এই আগ্রাসন ইউক্রেনের বিপক্ষে সাপোর্ট করি না, আবার ইউক্রেনেরও বড় গার্জিয়ান মাথার উপর আছে এইভেবে রাশিয়াকে হুমকীর মধ্যে ফেলানোর দরকার ছিলো না। সেটা আরেক চাপ্টার)

২৯/০৬/২০২২-ত্রিপক্ষীয় চুক্তিঃ

অবশেষে ফিন ল্যান্ড এবং সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগদানে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তির শর্তে আগামী জুন শেষে তুরুষ্ক ভেটো প্রদান থেকে বিরত থাকবে বলে চুক্তি স্বাক্ষরিত।

(ক) সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের YPG/PYD কে টেরোরিষ্ট অর্গ্যানাইজেশন হিসাবে আখ্যায়িত করা হলো। ফলে এদের দ্বারা কিংবা এদের সিস্টার অর্গ্যানাইজেশন বা এদের দ্বারা প্রতিপালিত যে কোন সংস্থা, ব্যক্তি কিংবা এই জাতীয় যে কোনো ভার্চুয়াল কিংবা রিয়েল কার্যকলাপ অথবা এই সন্কেসথাকে যারা বা যে কোনো অর্গ্যানাইজেশন সাপোর্ট করবে কিংবা সহযোগীতা করবে তাদের সমস্ত কার্যিকলাপকে টেরোরিষ্ট এক্টিভিটি হিসাবে গন্য করে উভয় দেশ তা প্রতিহত, এবং নিসচিত করবে। এর জন্য উভয় দেশের ক্রিমিনাল কোডে যে সব এমেন্ডমেন্ট উভয় দেশ অতীতে এনেছিলো সেগুলি সংশোধন পূর্বক নতুন ক্রিমিনাল কোড অন্তর্ভুক্ত করে সাংবিধানিকভাবে ১ম জানুয়ারী ২০২২ থেকে কার্যকরী করে তা বাস্তবায়ন করবে।

(খ) এই গ্রুপের যে সব নেতা এবং ব্যক্তিবর্গকে তুরুষ্ক টেরোরিষ্ট হিসাবে পূর্বেই চিহ্নিত করেছিলো, তাদেরকে তুরুষ্কের হাতে তুলে দিতে হবে, সে ব্যাপারে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন রাজী হয়েছে।

(গ) তুরুষ্কের উপর সমস্ত আর্মস নিষেধাজ্ঞা অবমুক্ত। উপরন্ত তুরুষ্ক সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড থেকে সাভাবিক পদ্ধতিতে যে কোন ধরনের মিলিটারী অস্ত্র আমদানী করতে পারবে বলে নিসচিত প্রদান করা হইলো।

(ঘ) তুরুষ্কের বিরুদ্ধে কোনো প্রকারের হুমকী, মিলিটারী এক্টিভিটিজ কিংবা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন যে কোনো কার্যকলাপ থেকে উভয় দেশ সর্বদা বিরত থাকবে বলে অংগীকার।

যারা পুরু ট্রাইলেটারাল চুক্তিটা পড়তে চান, দেয়া হলো।

 

২৯/০৬/২০২২-হিটলারের শেষ আদেশের কপি

১৯৯৭-৯৮ সালে আমি যখন ষ্টাফ কলেজ করছিলাম, তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের উপর আমার ইন্টারেষ্ট  আসে। ফলে আমি পুরু ২য় মহাযুদ্ধের সময় জার্মানদের পরিকল্পনা বা কিভাবে যুদ্ধটা পরিচালিত হয়েছে সেটা জানার জন্য প্রচুর বইপত্র এবং তার সাথে অনেক দালিলিক দস্তাবেজ জোগাড় করে পড়তে থাকি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী জরুরী বইটি ছিলো H R Trover Roper সংকলিত Hitler’s war Directives -1939-1945

হিটলার মোট ৫২টি ডাইরেক্টিভস ইস্যু করেছিলেন, আর কিছু ছিলো Führer Orders। হিটলারের সমস্ত ইন্সট্রাক শন এবং আদেশ অন্য সব কিছুর উর্ধে ছিলো, এর মানে  These instructions superseded laws of the German government as Hitler was considered to be above the law. ২য় মহাযুদ্ধের ১ম ডাইরেক্টভ ইস্যু হয়েছিলো ৩১ আগষ্ট ১৯৩৯ সালে। হিটলারের সর্বশেষ Führer Orders ছিলো Fuhrer Order-74, ১৫ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে যার হেডলাইন ছিলো ‘Order of the Day ‘। এখানে বলে রাখা ভালো যে, Führer Orders were issued later in the war. They tended to be less strategic and more specific in nature. হিটলার তার সেই ৭৪ নাম্বার ফুয়েরার আদেশে কি লিখেছিলেন সেটা এখানে পোষ্ট করলাম।

Fuhrer Order-74

Order of the Day 15 April 1945

Soldiers of the German Eastern front!

For the last time our deadly enemies the Jewish Bolsheviks have launched their massive forces to the attack. Their aim is to reduce Germany to ruins and to exterminate our people. Many of you soldiers in the East already know the fate which threatens, above all, German women, girls, and children. While the old men and children will be murdered, the women and girls will be reduced to barrack-room whores. The remainder will be marched off to Siberia.

We have foreseen this thrust, and since last January have done everything possible to construct a strong front. The enemy will be greeted by massive artillery fire. Gaps in our infantry have been made good by countless new units. Our front is being strengthened by emergency units, newly raised units, and by the Volkssturm. This time the Bolshevik will meet the ancient fate of Asia-he must and shall bleed to death before the capital of the German Reich. Whoever fails in his duty at this moment behaves as a traitor to our people. The regiment or division which abandons its position acts so disgracefully that it must be ashamed before the women and children who are withstanding the terror of bombing in our cities. Above all, be on your guard against the few treacherous officers and soldiers who, in order to preserve their pitiful lives, fight against us in Russian pay, perhaps even wearing German uniform. Anyone ordering you to retreat will, unless you know him well personally, be immediately arrested and, if necessary, killed on the spot, no matter what rank he may hold. If every soldier on the Eastern front does his duty in the days and weeks which lie ahead, the last assault of Asia will crumple, just as the invasion by our enemies in the West will finally fail, in spite of everything.

Berlin remains German, Vienna will be German again, and Europe will never be Russian.

Form yourselves into a sworn brotherhood, to defend, not the empty conception of a Fatherland, but your homes, your wives, your children, and, with them, our future. In these hours, the whole German people looks to you, my fighters in the East, and only hopes that, thanks to your resolution and fanaticism, thanks to your weapons, and under your leadership, the Bolshevik assault will be choked in a bath of blood. At this moment, when Fate has removed from the earth the greatest war criminal of all time [Editor's note: Hitler was referring to the recently deceased Franklin Roosevelt], the turning-point of this war will be decided.

[signed]
Adolf Hitler

বাংলায়

হে আমার জার্মানীর পশ্চিম ফ্রন্টের সৈনিকগন।

আমাদের মরনব্যাধি জুয়িস বলশেভিক শত্রুবাহিনী তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আমাদেরকে আক্রমন করেছে। জার্মানীকে চিরতরে শেষ এবং জার্মানীর সমুদয় জনগোষ্ঠিকে সমুলে নিশ্চিহ্ন করে দেয়াই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। আমাদের পূর্ব জার্মান উপকূলে নিয়োজিত সামরিক বাহিনীর সৈনিকগন ইতিমধ্যে মন্দ ভাগ্যের ব্যাপারে অবগত হয়েই গেছেন। সবচেয়ে দুর্দশায় আছে এখন আমাদের মেয়েরা, নারীরা এবং বাচ্চারা। সত্যি বলতে কি, আমাদের বৃদ্ধ পুরুষ মানুষদেরকে এবং বাচ্চাদেরকে তারা নির্বিঘ্নে হত্যা করছে, মেরে ফেলা হচ্ছে বা হবে, আর যুবতী মহিলারা তাদের ব্যারাক হাউজে পতিতা হিসাবে নিগৃহীত হচ্ছে। আর বাকী যারা থাকবে, তারা সরাসরি সাইবেরিয়ায় বন্দি হিসাবে চালান দেয়া হবে।

আমরা এটা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম এবং সে মোতাবেক  গত জানুয়ারী থেকে যত প্রকারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার দরকার তার কোনোটাই বাদ রাখিনি। কিন্তু শত্রুবাহিনী তাদের আর্টিলারী দিয়ে আমাদের সব শক্ত অবস্থান গুলিকে গুড়িয়ে দিয়ে হয়তো উল্লাস করছে বা করবে। আমরা সর্বাত্তক চেষ্টা করেছি আমাদের পদাতিক বাহিনীর মাঝে যে সব গ্যাপগুলি আছে, সেগুলিকে অগনিত নতুন ইউনিট দিয়ে সুরক্ষা করার চেষ্টা করার। আমাদের সম্মুখভাগের যুদ্ধ লাইনকে ইমারজেন্সী ইউনিট দিয়েও সুরক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ধারনা যদি সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক চলে, তাহলে এবারো আমাদের শত্রু বলসেভিক বাহিনী আমাদের রাজধানী জার্মান রিখে আসার আগে এশিয়ার ভাগ্যের মতো রক্তাক্ত ভাগ্যবরন করতে হবে। তবে, এই অবস্থায় যারাই তাদের দায়িত্ত পালনে অপারগ হবে বা পালনে অস্বীকার করবে তারা রাষ্ট্রোদ্রোহী হিসাবেই পরিচিত হবে। যেসব রেজিমেন্ট বা ডিভিশন লজ্জাজনকভাবে শত্রুকে প্রতিহত না করে তাদের স্থান ত্যাগ করবে, তারা যেনো একবার আমাদের জার্মান নারী, যুবতী এবং শিশুদের কথা মাথায় রাখে যারা ক্রমাগত বোম্ব এবং শত্রুর দ্বারা দূর্বিসহ আক্রমণে মারা যাচ্ছে। তারা যেনো এতা সব সময় মাথায় রাখে যে, তাদের এই লজ্জাজনক স্থান ত্যাগে তাদেরকে সেই সব নারী, যুবতী, আর বাচ্চাদের সামনে লজ্জিত করবে। আরেকটি কথা যে, আমাদের মধ্যেই অনেক বিশ্বাসঘাতক অফিসার এবং সৈনিক আছে যারা জার্মান ইউনিফর্ম পড়া অথচ আমাদের টাকায় শত্রুর সাথে হাত মিলিয়ে আমাদেরকেই আঘাত করছে তাদের থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষায় থাকতে হবে। যদি কোনো অফিসার বা যে কেউ তোমাদের যুদ্ধের স্থান ত্যাগ করতে বলে, তাহলে সে যেই পদবিরই হোক তাকে ইমিডিয়েটলী এরেষ্ট করতে হবে এবং প্রয়োজনে মেরে ফেলতে হবে। সে যে পদবীরই হোক না কেনো। যদি প্রতিটি সৈনিক পুর্বফ্রন্টে আমার এই আদেশ মোতাবেক দায়িত্ত পালন করে, তাহলে শত্রুর সর্বাত্তক অভিযান পরাজয় বরন করতে বাধ্য যেভাবে আমাদের পশ্চিমাফ্রন্টে তারা পরাজয় বরন করেছে।

বার্লিন জার্মানীর আছে আর সেটা জার্মানীরই থাকবে। ভিয়েনা আবারো জার্মানীর হবে এবং ইউরোপ কখনোই রাশিয়ার হবে না, না ইউরোপ রাশিয়ার কখনো বন্ধু হবে।

তোমাদের নিজ পিতৃভূমিকে রক্ষাই শুধু নয়, তোমাদের নিজ গৃহকে, নিজের পরিবারকে, নিজেদের সন্তানদেরকে এবং তাদের সাথে আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষা করার জন্য তোমরা নিজেরা নিজেরা ভাতৃত্ববোধ তৈরী করো। এই কঠিন সময়ে সমস্ত জার্মানবাসী তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

হে আমার যোদ্ধারা, তোমরা আমার আশা, ভরষা, তোমাদের অস্ত্রকে, তোমাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্তকে আমি শ্রদ্ধা জানাই যে, তোমাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মরনব্যাধি জুয়িস বলসেভিক শত্রুরা তাদের নিজের রক্তে ভেসে যাবে। ঠিক এ সময়ে যখন পৃথিবী থেকে ভাগ্য নামক চিন্তাধারা উঠে গেছে, তখন পৃথিবীর সেরা ওয়ার ক্রিমিনালদেরকে পরাজিত করেই আমরা ডিসাইসিভ ফলাফল নিয়ে আসবো।

হিটলার

নোটঃ এ সময়ে রুজভেল্ট এর মৃত্যুতে হিটলার কিছুটা উল্লসিত হলেও এই ১৫ এপ্রিলে আসলে হিটলার তার পরাজয় এক রকম বরন করেই নিয়েছিলো। হিটলারের এই শেষ ন্যারেটিভস আসলে তার এরোগ্যান্সির একটা বহির্প্রকাশ ছিলো। কারন ২ এপ্ল্রিলে হিটলার নিজেই স্বীকার করেছিলো যে, ন্যাশনাল সোস্যালিজমের পতন হয়েছে, এখন শুধু তার ফলোয়ারদের দায়িত্ত কিভাবে তারা এগুবে। সেদিন অর্থাৎ ২ এপ্রলি হিটলার নিজেই এক সমাবেশে বলেছিলো ‘ to go on fighting, even without hope, to the very end’ although ‘I personally would not endure to live in the Germany of transition which would succeed our conquered Third Reich’ অর্থাৎ শেষ অবধি যুদ্ধ চালিয়ে যাও যদি জিতার কোনো সম্ভাবনা নাও থাকে। আমি হয়তো জার্মানীর ৩য় রিখের এই জয়ের ঘটনার সময়ে জীবিত থাকবো না ।

বস্তুত হিটলারের এই আদেশের পর পরই রাশিয়া জার্মানীর চারিদিক ঘিরে ফেলে এবং হিটলার ২২ এপ্রিল তার অবস্থান থেকে রিজাইন দেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে হিটলার আত্মহত্যা করেন। অতঃপর, ২ মে ১০৪৫ তারিখে ইতালীর জার্মান আর্মি ইতালীর জেনারেল আলেক্সান্ডারের কাছে, উত্তর-পশ্চিমের ৪র্থ আর্মি জেনারেল মন্ট গোমারীর কাছে, এবং ৭ মে ১৯৪৫ সালে জেনারেল আইসেন হাওয়ারের অধীনে জার্মানির আত্তসমর্পনের দলিল স্বাক্ষরিত হয়।

২৭/০৬/২০২২-আমার কিছুতেই বুঝে আসে না

আমার একটা জিনিষ কিছুতেই বুঝে আসে না যে, নিষেধাজ্ঞা কি আসলেই  কোনো কাজ করে? হ্যা, করতো যদি সারা দুনিয়ার দেশগুলি একসাথে সেই সিদ্ধান্তে এক থাকে। সেটা যে কোনো ক্ষমতাশীল দেশের জন্যে অবশ্যই বিপদজনক। কিন্তু সারা দুনিয়া কি এক সাথে এই নিষেধাজ্ঞায় কাজ করছে? করছে না। তাহলে দেখি-কতগুলি দেশ এবং কত জনসংখ্যার মানুষ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে?

সারা দুনিয়ায় দেশ আছে ১৯৫টি। ইউরোপেই আছে ৪৪ দেশ। ইউরোপের ৪৪টি দেশের মধ্যে ইইউ এর অধীনে আছে ২৭টি দেশ। বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাধ্যমেই শুধু রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে, পুরু ইউরোপের মাধ্যমে কিন্তু নয়। এরমানে ইইউ, আমেরিকা, ইউকে আর কানাডা মিলে মাত্র ২৯টি দেশ নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। ২৭টি ইইউ দেশের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন। আর পুরু ইউরোপ জুড়ে জনসংখা ৭৫০ মিলিয়ন। অর্থাৎ ইউরোপেই প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেয় নাই। ইউরোপের বাকী ১৭টি দেশ এবং ৩০০ মিলিয়ন লোক রাশিয়ার বিরুদ্ধে নয় ধরে নেয়া যায়। অন্যদিকে অর্থাৎ সারা দুনিয়ার আরো ১৯৫ টি দেশের মধ্যে ১৬৫টি দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয় নাই।

সারা দুনিয়ায় মানুষের সংখ্যা ৮ বিলিয়ন বা ৮০০০ মিলিয়ন। এই ৮ হাজার মিলিয়ন থেকে মাত্র ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্লাস আমেরিকা কানাডা আর ইউকে মিলে ৪৫০ মিলিয়ন মানুষের দেশসমুহ রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বাকি ৭৫৫০ মিলিয়ন মানুষের দ্বারা রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা পায় নাই। অর্থাৎ মাত্র ৫%+ এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাকী ৯৫% রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞায় রাখে নাই। এতো বিশাল জনগোষ্ঠীর মার্কেটিং, অপুরচুনিটি তো অবাধ!! তারমধ্যে রাশিয়া নিজেই কিছু কিছু জায়গায় খুব শক্ত অবস্থানে যেমন খাদ্য সামগ্রী, ইউরেনিয়াম, গোল্ড, ডায়মন্ড, তেল, গ্যাস, আয়রন, কয়লা, প্লাটিনাম, নাট্রোজেন ফার্টিলাইজার, কপার, কাঠ, ক্যামিকেল ফার্টিলাইজার (ফসফরাস, পটাশিয়াম) এ তারা সয়ং সম্পুর্ন এবং এক্সপর্ট করে।  রাশিয়ার এইসব পন্যের উপর সারা দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশ সমুহ কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল। সেই সব দেশ সমুহের মানুষেরা অযথা ইউক্রেনের উপর এতো আবেগিত হয়ে তাদের নিজের ক্ষতি করার মতো পাগল এখনো হয় নাই।  তারমানে, রাশিয়ার বাজার ৯৫% লোকের জন্য উম্মুক্ত।

এবার আসি, এই ইউরোপিয়ান দেশগুলির মধ্যে শক্তিধর দেশ হিসাবে কারা কারা। বলা হয় ফ্রান্স, জার্মানী এবং ইতালী হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মেরুদন্ড। এবার দেখি এদের মেরুদন্ডের শক্তিটা কত। ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ এর হ্যান্স এন্ড ম্যাট কোর্ডার হিসাব মতে মোট ৯টি দেশে নিউক্লিয়ার অস্ত্র আছে-পাকিস্তান (১৬৫), ভারত (১৬০), ইসরায়েল (৯০), ফ্রান্স (২৯০), আমেরিকা (৫৪২৮), ব্রিটেন (২২৫), রাশিয়া (৫৯৭৭), চায়না (৩৫০) এবং নর্থ কোরিয়া (২০)। ইরানের ব্যাপারটা এখনো পরিষ্কার নয়। রাশিয়া এবং আমেরিকা একত্রে মোট ৯০% নিউক্লিয়ার অস্ত্র আছে আর বাকী ১০% আছে বাকি ৭টি দেশে। এরমানে ফ্রান্সের আছে ২৯০টি নিউক, জার্মানীর নাই, ইতালীর নাই। এটা হচ্ছে প্রধান ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মেরুদন্ড।

একটা কথা সবার জানা থাকা দরকার যে, আমেরিকা, ব্রিটেন, এবং কানাডা কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অংশ নয় এবং তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যও না। কানাডা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে স্ট্রাটেজিক পার্টনার, ইউকে ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে, আমেরিকা ইউরোপের অংশই না। হ্যা, তারা ন্যাটোর সদস্য। ন্যাটো আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এক কথা নয়। ফলে ইউরোপিয়ানের শক্তি শুধু জার্মান, ফ্রান্স আর ইতালী যাদের শুধুমাত্র ফ্রান্সের ২৯০ টি নিউক আছে। সম্বল এটাই।

অন্যদিকে যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের না হয়েও ন্যাটোর সদস্য আমেরিকা আর ইউকে, তাই ন্যাটোর সদস্য হিসাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের থেকে ন্যাটোর নিউক বেশী। তারমানে এটা ইউরোপের সম্পদ না। একটা ডায়ালগ প্রায়ই শুনে থাকবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বা ইউকে প্রেসিডেন্টের মুখে যে, আমরা ন্যাটোভুক্ত দেশের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করবো, এটা বলে না যে, আমরা ইউরোপের প্রতিটা দেশের  প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করবো।

আমেরিকার নিউক্লিয়ার অস্ত্র বেলজিয়াম, জার্মানী, ইতালি, তুরুষ্কের সাথে ন্যাটোর অংশ হিসাবে শেয়ার্ড করা। এরমানে হচ্ছে আমেরিকার বেশ কিছু নিউক্লিয়ার অস্ত্র এসব দেশে মোতায়েন করা আছে যেগুলির কন্ট্রোল আমেরিকার কাছে তবে ন্যাটো দেশ যাদের নিউক নাই তারা এগুলিতে ট্রেনিং নেয়। ব্যাপারটা বিকন্দ্রিকরনের মতো। রাশিয়া, চায়না, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান আর নর্থ কোরিয়া মিলে মোট নিউক আছে  ৬৬৭২। তারা সেগুলি পূর্ন কন্ট্রোলে রেখেছে, বিকন্দ্রীকরন করে নাই। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইউকে, ইসরায়েল মিলে নিউক আছে ৬০৩৩ টি। ইসরায়েল এই যুদ্ধে নিউক ইউজ করবে না কারন তার ভয় ইরান। ফলে ইসরায়েল বাদ গেলে ন্যাটোর কাছে মোট নিউক আছে ৫৯৪৩। যদি অনুপাত করি তাহলে দাঁড়ায়, (1) : (0.88)

শুধুমাত্র এই শীতকাল যদি রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে পারে, তাহলে মনোপলিজম এর মতো ইউনিপোলারিটির একচ্ছত্র রাজত্তের অবসান হবে, পেট্রো ডলারের রাজত্ব হারিয়ে যাবে, সারা দুনিয়ার হিসাব কিতাব অনেক বদলে যাবে।

এবার যেহেতু গোল্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা এসছে, এর প্রভাব সবচেয়ে ভাল পাবে অন্যান্য দেশ, আর নেগেটিভিটিতে থাকবে হেজিমুনিয়াল কারেন্সী ডলার এবং ইউরো। এটা নিয়ে আরেকদিন লিখবো।

১৭/০৬/২০২২-সেন্ট পিটসবার্গে পুটিনের ভাষন

সেন্ট পিটসবার্গে পুটিন তাঁর বিখ্যাত ভাষনটি দিয়েছেন। মোট ৭টি এরিয়া সে কাভার করেছে। আমি সেটাইই অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি। আসলে হুবহু অনুবাদ করা অনেক কঠিন। বিশেষ করে থিম ঠিক রাখা। আমার বন্ধু আসাদ এ ব্যাপারে অনেক পারদর্শী। যাই হোক, ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।  

The old world order is gone with the wind

নতুন ‘সেন্টার অফ পাওয়ার’ ইতিমধ্যে দুনিয়ায় প্রসব করেছে। ইউনিপোলার ওয়ার্ল্ড আর কখনোই ব্যাক করবে না। না ‘কলোনিয়াল’ ধারনার আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে। যেদিন নিজে নিজে “কোল্ড ওয়ার” এ আমেরিকা জিতে গেছে বলে নিজেকে ডিক্লেয়ার করলো, সেদিন থেকেই তারা তাদেরকে মনে করেছে, “ম্যাসেঞ্জার অফ গড”। তাদের সব চিন্তা চেতনা, তাদের সুবিধাভোগী ভাবনাই শুধু সঠিক এবং পবিত্র। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নাই অন্য কারো। পাশ্চাত্যের এই ধ্যান ধারনা সবাই না মানতে পারলেও ঠিক সেদিন থেকেই অন্যান্যের মধ্যে নিজেদের রাষ্ট্রীয় সিস্টেম, আর্থিক মডেল এবং সার্বোভোমত্তকে প্রোটেক্ট করার জন্য সুপ্ত নতুন সেন্টার অফ পাওয়ারের জন্ম হোক সেটা ভাবছিলেন। সেই ভাবনায় লুকিয়ে ছিলো সত্যিকারের একটা রেভুলেশন, জিওপলিটিক্সে টেক্টোনিক পরিবর্তন এবং বর্তমান টেকনোলজিক্যাল বিষয়ে সার্বিক গ্লোবাল অর্থনীতির পরিবর্তন ও তাঁর বিকাশ। অন্যান্য সবাই জানে যে, এটা একটা মৌলিক পরিবর্তন যাকে এতোদিন পশ্চিমারা অস্বীকার করেছে। আজকের যে নতুন সেন্টার অফ পাওয়ার তৈরী হতে যাচ্ছে, এটা আজ না হয় হয়, কাল হতোই। কেউ এতো লম্বা সময় ধরে এই টার্বুলেন্ট পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে চায় নাই। সবকিছু আবার নরম্যাল হোক এটাই সবাই চেয়েছে। আর সেটাই এখন হতে যাচ্ছে।

Anti-Russian sanctions backfired on the West

যখন আমেরিকা এবং তাঁর মিত্ররা ইউক্রেনের অপারেশনকে সামনে রেখে একসাথে রাশিয়াকে বাতিল বলে ঘোষনা দিলো, তাতে তারা মনে করেছিলো রাশিয়া দ্রুতগতিতে এর ঐতিহ্য হারাবে এবং নতজানু অর্থনীতিতে ভেংগে পড়বে। কিন্তু সেটা না হয়ে যেটা হয়েছে- বুমেরাং, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মিত্রদের মধ্যে পারষ্পরিক হতাশা আর বিভেদ। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান মিত্রদের মধ্যে যারা একটা অদৃশ্য জালের মধ্যে আটকে গেছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং পশ্চিমারা তাদের পলিটিক্যাল সভরেন্টি সম্পুর্নভাবে আস্থা হারিয়েছে। ইউরোপিয়ান বুরুক্রেটিক্সগন অন্যের বাজনার সুরে, সেটা যে সুরই হোক, নৃত্য করতে গিয়ে তারা তাদের নিজেদের মানুষগুলির উপর এবং চালিকাশক্তি অর্থনীতির  চরম ক্ষতি এবং ভারসাম্য নষ্ট করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এহেনো অবাস্তব অবিবেচক সিদ্ধান্তে প্রতিবছর তাদের কম করে হলেও ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সম্মুখিন হতে হবে। এটা একটা ক্লিন হিসাব।

‘Elite change’ awaits the West

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আমেরিকা নেতাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মধ্যে যথেষ্ট পরিমান ফারাক রয়েছে। কারো কারো আর্থিক বা সামরিক দুর্বলতার কারনে কিংবা সামাজিক মানদন্ডের পার্থক্য থাকায় কেউ কেউ সিদ্ধান্ত পার্টিসিপেশনে কোন প্রকারের প্রাধান্যই পায় না। প্রাধান্য না পাওয়ার সেইসব দেশের নাগরিকেরাও নিজেদেরকে অন্য মিত্রদের কাছে হেয় অনুভুতিতে ভোগছেন। তারা তাদের ভ্যালু, অরিয়েন্টেশন, ঐতিহ্য যেনো এই ইউরোপিয়ান কোয়ালিশনে এসে হারাতে বসেছেন। এই যে অলিখিত কিন্তু প্রকাশ্য বাস্তবিক দুরুত্ত যা প্রতিটা মিত্রের মধ্যে বিদ্যমান, সেটা তলে তলে আগ্নেয়গিরির মতো ফুলে ফেপে উঠছিলো। এটা আরো প্রকট হয়েছে এই ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে আরো বেশী। তারা নিজেরাই এখন বুঝতে পারছিলো কে কার কোথায় অবস্থান কিংবা কে কাকে কতটুকু সুরক্ষিত দেখতে চায় এবং সেটা কিভাবে। এই প্রেক্ষাপট তারা নিজেরা নিজেদের অনুভুতি দিয়ে এবার বুঝার চেষ্টা করছে বলে সেখানে একটা রেডিক্যাল মুভমেন্ট, সোস্যাল এবং অর্থনীতির পরিবর্তন, এবং মোদ্দাকথা একটা ‘এলিট পরিবর্তনের আন্দোলনের আভাষ সামনে হাজির হচ্ছে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।  

Economic development is an expression of sovereignty

২১ শতকে দাঁড়িয়ে সার্বোভোমত্তকে একটা আংশিকখাত হিসাবে দেখার কোনো সুযোগ নাই। সার্ভোবোমত্তের যতগুলি উপাদান আছে, তার প্রতিটি উপাদানকে সমানভাবে জরুরী এবং প্রয়োজনীয় মনে করতে হবে। কারন প্রতিটি উপাদান একে অন্যের সাথে জড়িত। রাশিয়া আর্থিক উন্নতির উপাদানে পাচটি মৌলিক নীতি অনুসরন করবে-(ক) ওপেননেস (খ) ফ্রিডম (গ) সোস্যাল জাষ্টিস (ঘ) ইনফ্রাষ্ট্রাকচার (চ) টেকনোলোজিক্যাল সভরেন্টি। রাশিয়া কখনোই সেলফ আইসোলেশন এবং অটার্কীতে বিশ্বাস করে না এবং করবেও না। তাই রাশিয়া যে কোনো কারো সাথে যখন খুশী, বন্ধুত্বপুর্ন মর্যাদা রেখে একে অপরের সাথে বোঝাপড়ায় আন্তরিকতার সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যা যা আছে তা আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, প্রাইভেট ব্যবসা বানিজ্যে রাশিয়া আপ্নাদেরকে সাহাজ্য করবে, সামাজিক বৈষম্য দূরিকরনে রাশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে টেকনোলোজি পর্যন্ত আমরা একে অপরের সাথে শেয়ার করবো। একটা কথা আমি নিশ্চিত দিয়ে বলতে চাই যে, স্বাধীন দেশসমুহ ইকুয়াল পার্টনারশীপে কাজ করার কথা। সেখানে কে কোন দিকে দূর্বল আর কে কোন দিকে সবল সেটা কোনো বিবেচ্য বিষয় হওয়া কখনোই উচিত না। পুতিনের কথাটা ঠিক এ রকমের-

“Truly sovereign states are always committed to equal partnerships,” while “those who are weak and dependent, as a rule, are busy looking for enemies, planting xenophobia, or finally losing their originality, independence, blindly following the overlord,” he said.

 Reasons for the Ukraine conflict

গত ফেব্রুয়ারীতে ইউক্রেনে বিশেষ অপারেশনের একটাই কারন যে, পশ্চিমারা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিই মানতে অস্বীকার করছিলো বারবার এবং তাদের সাথে আর কোনোভাবেই কোনো প্রকারের সমঝোতা করার কোনো স্কোপই ছিলো না, আবার নতুন করে কোনো সন্ধি করার ব্যবস্থাও ছিলো না। কারন তারা এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কথাই শুনতে নারাজ ছিলো।

ইউক্রেনে বিশেষ অপারেশন চালানোর ব্যাপারে আমার উপরে বলতে পারেন বাধ্য করেছিলো এবং এটার খুবই দরকার ছিলো। কারন, রাশিয়ার নিরাপত্তা এমনভাবে বিঘ্নিত হচ্ছিলো যে, আমরা শংকিত হয়ে পড়েছিলাম। আর এটার বাহ্যিক উদাহরন ছিলো দনবাসে রাশিয়ানপন্থি মানুষগুলিকে কিংবা রাশিয়ান ভাষাভাষি নাগরিকদেরকে গনহত্যা করা হচ্ছিলো। আর এর পিছনে মদদ ছিলো পশ্চিমাদের। যারা নব্যনাৎসি বাহিনী তৈরী করে সেই ২য় বিশ্ব যুদ্ধের তরিকায় নির্বিঘ্নে এবং খুবই অমানবিক কৌশলে গনহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিলো। পশ্চিমারা বছরের পর বছর অস্ত্র দিয়ে, ট্রেনিং দিয়ে, এবং সামরিক যতো প্রকারের উপদেষ্টাগত পরামর্শ দিয়ে এই ইউক্রেনকে বেছে নিয়েছিলো এই নিধনে। এই অবস্থায় ইউক্রেনের মানুষগুলির কি হবে, ইউক্রেনের অর্থনীতির কি ক্ষতি হবে, বা ইউক্রেনের সার্বিক কি হতে পারে সেটায় পশ্চিমারা একটুও মাথা ঘামায় নাই। তাদের শুধু লক্ষ্য ছিলো রাশিয়াকে কিভাবে বাতিল করা যায়। ফলে ইউক্রেনকে এক তরফা ভরষা দিয়ে রাশিয়ার দারপ্রান্তে পশ্চিমাদের  সামরীক শক্তি ন্যাটোকে রাশিয়ার নাকে ডগায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলো। আর এই কাজটা একদিনে ওরা করে নাই। ইউক্রেনিয়ানদের মনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা ঘ্রিনা এবং রাগের মতো মনোভাব তৈরীতে সক্ষম হয়েছিলো, বিশেষ করে শাসক গোষ্টির মধ্যে।  স্কুল কলেজ, গির্জা, কালচার, ধর্ম কিংবা আচার আচরনে সর্বক্ষেত্রে ইউক্রেনের নাগরিকদের মনে, মাথায় ধ্যানে কার্যকলাপে এতাই শিক্ষা দেয়া হচ্ছিলো যে, রাশিয়ানরা খারাপ যাকে রাশিফোবি বলা চলে। আমাদের কোনো উপায় ছিলো না। এবার রাশিয়া তাঁর এজেন্ডা মোতাবেক সবগুলি নির্মুল না করা পর্যন্ত আমাদের আনকন্ডিশনাল এই অভিযান চলতেই থাকবে, এটা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

Energy prices and inflation are self-inflicted

এনার্জি প্রাইস এবং ইনফ্লেশন যদি বলেন, পশ্চিমারা এর জন্য দায়ী করছে রাশিয়াকে।  তারা যেটা বলেছে- “Putin’s price hike is a “stupidity” and “designed for people who can’t read or write,”  পশ্চিমাদের এই অপবাদ কোনোভাবেই সত্য নয় এবং গ্রহনযোগ্য নয়। দাম বাড়া এবং ইনফ্লেশনের জন্য আমাদেরকে দায়ী করতে পারেন না, দায়ী আপ্নারা। দায়ী আপনাদের অবিচকের মতো অবাস্তব সিদ্ধান্তসমুহ।  কভিডের কারনে ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকা অগনিত ইউরো আর ডলার ছাপানোর কারনে যেমন এখন ইনফ্লেশন তৈরী হয়েছে, তেমনি অন্ধভাবে রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের বিকল্প তৈরীতে আরো এতো লম্বা সময় লাগবে যে, ইউরোপ এবং পশ্চিমাদের অর্থিনীতিতে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। সেই ইনফ্লেশন তারা কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

If there’s a famine, it won’t be Russia’s fault

পশ্চিমা দেশ এবং ইউরোপের নিষ্রধাজ্ঞার কারনে খাদ্যশস্য এবং সার এর সল্পতার কারনে যদি দূর্ভিক্ষ হয়, তাঁর জন্য তো দায়ী তারা। দুনিয়ার অনেক দরিদ্র দেশসমুহ কোনো অপরাধ না করেও তারা দূর্ভোগ বহন করবে। তারা এই জরুরী খাদ্যপন্য এবং পরবর্তী বছরের জন্য সার পন্য না পেলে তাদেরও অনেকদেশ ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এর জন্য দায়ী শুধুমাত্র ইউরোপিয়ান বুরুক্রেটস এবং পশ্চিমা নেতাদের অবাস্তব সিদ্ধান্ত এবং নিষেধাজ্ঞা।

আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য, এশিয়ার সর্বত্র রাশিয়া এই জরুরী পন্যসমুহ সরবরাহ করতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু পশ্চিমাদের দেয়া ট্রান্সপর্ট ব্যবস্থায় নিষেধাজ্ঞার কারনে এই সরবরাহ অনেক অংশে বিঘ্নিত হচ্ছে। সেটা তো রাশিয়ার দোষ নয়। আমরা সবাইকে সব কিছু দিতে প্রস্তুত আছি।

পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ান নেতাদের অদুরদর্শীতার কারনে তারা নিজের সমস্যা যেমন সমাধান করতে অপারগ, তেমনি তাদেরকে যারা অন্ধ্যের মতো অনুসরন করে, তারাও এখন সমস্যায় নিমজ্জিত। আর এই পুরু অকৃতকার্যতার দোষ শুধুমাত্র রাশিয়ার উপরে বর্তায়ে তারা পার পেতে চাচ্ছেন। কিন্তু সময় বলে দিচ্ছে- বাস্তবটা কি। শুধু তাইই নয়, অপরিকল্পিত predatory colonial policy,”  র মাধ্যমে অগনিত

15/06/2022-দিলে দেন, না দিলে কইয়া দেন

ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য প্রানপন দিয়ে গত ১০ বছর যাবত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাঁর এই চেষ্টার সাথে একাত্ম ঘোষনা করে প্রতিবার আমেরিকা, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য সর্বদা একটা মুলা ঝুলিয়েই রাখছে। সবশেষে যখন রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমন করেই বসলো-তখন যেনো সবাই উঠে পড়ে লেগে গেলো কত তাড়াতাড়ি ইউরোপ এবং ন্যাটোভুক্ত দেশগুলি ইউক্রেনকে তাদের সদস্য করা যায়। এই যুদ্ধেও সেরকমের আশা দিয়েই চলেছে আমেরিকা, ইউরোপ এবং অন্যান্য বাল্টিক কিছু দেশ। শক্তিশালী মোড়ল দেশদেরকে বিশ্বাস না করেও উপায় থাকে না। কিন্তু তাদের রাজনীতির ধারা এতো জটিল যে, কোন ‘হ্যা” আসলে “না’, আর কোন “না” আসলে যে “হ্যা” সেটা বুঝাই দায়।

এবার ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা গত শনিবার (১১ জুন ২২) সারপ্রাইজ ভিজিটে কিয়েভে গিয়ে দারুন আশার বানী শুনালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীকে। তিনি খুবই হাস্যজ্জোল মুখে এবং খুব অবাক হবার মতো একটা দারুন আনন্দের খবর নিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীকে জানালেন-

-ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের ব্যাপারে সদস্যরা দিন-রাত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামী ২৩/২৪ জুনে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত একটা ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। ইউক্রেনের ব্যাপারে ২৭ টি সদস্য দেশের কারো কোনো দ্বিমত না থাকলে ক্যান্ডিডেচার স্ট্যাটাস অনুমোদিত হবার কথা।  তবে রাশিয়ার যুদ্ধের সাথে কিংবা কেউ ইউক্রেনকে ভালোবাসে এই কারনে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার মতো কোনো কারন নাই। এখানে সদস্যদেশ হবার জন্য যা যা ক্রাইটেরিয়া লাগবে তার সবগুলিই পালন করতে হবে যা ইউক্রেনের বেশীর ভাগ যেমন “solid” political system, “robust and well-anchored institutions,” and “functioning administration on all level  ইত্যাদি আছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় ইউক্রেনের অসুবিধা আছে যা ইউক্রেনকে পুর্ন করতে হবে, যেমন- address the crackdown on opposition parties and media launched by Zelensky even before Moscow began the military operation, but which was intensified afterwards, addressing the minority group in a democratic way, reforming stronger military etc.

আমার প্রশ্নটা হচ্ছে- উরসুলা বলছে ইউক্রেনের “solid” political system  আছে আবার এটাও বলছেন যে, ফান্ডামেন্টাল ইস্যু যেমন বিরোধী রাজনীতি দলকে রাজনীতি করার স্বাধীনতা নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। মিডিয়ার ব্যাপারে তিনি বলছেন এটাও প্রায় সং গতিতেই আছে কিন্তু media launched by Zelensky even before Moscow began the military operation, but which was intensified afterwards ! উরসুলা বলছেন, ইউক্রেনে “robust and well-anchored institutions,” and “functioning administration on all level আছে তবে  মাইনোরিটি গ্রুপকে স্বাধীন এবং গনতন্ত্র মাফিক জীবন যাপনে সমর্থন দিয়ে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি প্রায় সর্বশান্ত। এটাকে রিফর্মেশন না করে ন্যাটোতে যোগ দেয়া কষ্ট হবে।

উরসুলা জানেন যে, ইউক্রেন আসলে ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। তাহলে একটি দেশকে কেনো বারবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা তাঁকে ন্যাটোতে সদস্য করবেন বলে আশা দিচ্ছেন, যখন তারা জানে যে, এই সপ্ন বাস্তবায়িত হতে গেলে আরো এক যুগ পার হয়ে যাবে? ফ্রান্স বলেছে প্রায় এক যুগের বেশী লাগবে, অষ্ট্রিয়া বলেছে কম পক্ষে ৫ থেকে ৭ বছরের আগে এটা ভাবাই যায় না, এবং অন্যান্য দেশ সমুহ এখনো নিশ্চুপ আছে যারা তাদের মতামত এখনো ব্যক্তই করে নাই। এটা আসলে অন্যায়।

আরে ভাই, দিলে দেন, না দিলে আগেই কইয়া দেন। খামাখা মাইর খাওয়াইতাছেন কেন?

14/06/2020-এ যাবতকাল যতো যুদ্ধ হয়েছে,

এ যাবতকাল যতো যুদ্ধ হয়েছে, সম্ভবত অতি অল্প সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশী এইড পেয়েছে ইউক্রেন। বিভিন্ন সময়ে বরাদ্ধ কৃত এইড মিলিয়ে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্যাকেজ ছিলো আমেরিকার দেয়া এক কালীন ৪০ বিলিয়ন।

কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে- এই এইড কিভাবে ইউক্রেন কোথায় খরচ করছে তাঁর হিসাব নিতে পারছে না আমেরিকা। না তাদের কোনো একাউন্টিবিলিটি আছে। আমেরিকায় ক্রমবর্ধমান ইনফ্লেশন, বেবী ফর্মুলা, তেলের দাম, খাবারে দাম, অন্যান্য সব আইটেমের দাম এতোটাই স্কাই রকেটিং এ যাচ্ছে যে, এর মধ্যে আমেরিকান নাগরিকেরাই তাদের প্রশাসনকে কোথায় এতো টাকা দেয়া হয়েছে তাঁর হিসাব দিতে বলেছেন। নাগরিকেরা এখন অধইর্য হয়ে গেছেন এই ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য। দেশের ভিতরে বাইডেন প্রশাসন চাপের মুখে থাকায় বাইডেন প্রশাসন এবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীকে আপাতত এই ৪০ বিলিয়ন ডলারের খরচের খাতের হিসাব দিতে বলেছেন। কিন্তু জেলেনেস্কী এই তথ্য আমেরিকার কাছে দিতে অস্বীকার করেছেন।

এখন এই পর্যায়ে তিনটা প্রশ্নের অবতারনা হয়ঃ

(ক)  হটাত করে কেনো বাইডেন প্রশাসন এখন এই টাকার খরচের খাত চেয়েছেন।

(খ)  জেলেনেস্কীই বা কেনো এই খরচের খাতের হিসাব দিতে চাচ্ছেন না।

(গ)  আসলেই এই টাকাগুলি গেলো কই?

নিউইয়র্ক টাইমসের সাবেক এক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছে যে, জেলেনেস্কী কেনো ইউক্রেন মিলিটারী অপারেশনাল পরিকল্পনা আমেরিকার সাথে শেয়ার করছে না? যদি ইউক্রেন তাদের এই মিলিটারী পরিকল্পনা আমেরিকার সাথে শেয়ার নাইবা করে, তাহলে কিভাবে কোথায় আমেরিকা ইউক্রেনকে কি দিয়ে টার্গেট বাতলে দিবে সেটাই তো সম্ভব না। 

এ ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেছেন যে, প্রাথমিকভাবে মিডিয়ার কারনেই হোক অথবা প্রশাসনের অত্যাধিক ততপরতার কারনেই হোক, ইউক্রেন যুদ্ধে প্রায় বেশীর ভাগ নাগরিকেরা এটাই চেয়েছিলো যে, আমেরিকা সবকিছু দিয়েও যেনো ইউক্রেনকে সাহাজ্য করে। রিপাবলিকানরাও সেটাই চেয়েছিলো।  কিন্তু বর্তমানে এই ভাবনায় তাদের ছেদ পড়েছে। ৪০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার সময় মাত্র একজন এমপি ভেটো দিয়েছিলো কিন্তু বর্তমানে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অস্ত্র এবং আরো এইড পাঠানোর ব্যাপারে এবার প্রায় ৫৭ জন এমপি ভেটো দিয়েছে। তারা বিব্রিতি দিয়েছেন যে, আগে যে এইড পাঠানো হয়েছে তাঁর একটা খাতওয়ারী হিসাব ইউক্রেনকে দিতে হবে।

ইক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই এইডের খাতওয়ারী হিসাব দিতে অস্বীকার করেছেন। আসলে যুদ্ধের প্রথমদিন থেকে বাইডেন প্রশাসন যে ভাবটা দেখিয়েছিলো সেটা হচ্ছে-ইউক্রেন যুদ্ধটা যেনো আমেরিকার নিজের যুদ্ধ। ফলে জেলেনেস্কী মনে করছে, সে বাইডেন প্রশাসনের হয়েই ইউক্রেন যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁর আবার হিসাব দেয়ার কি আছে? সে তো আমেরিকার হয়েই কাজ করছে!! জেলেনেস্কীর মধ্যে আরো একটা চিন্তা কাজ করছে বলে ধারনা করা হচ্ছে যে, বাইডেন প্রশাসন খুব একটা শক্ত না। তারা তো ইউক্রেনকে শক্ত করে হিসাব দেয়ার কথাও বলছে না। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেলেও যেনো এটা আমেরিকারই হার। আর আমেরিকাক্র হার না মানতে চাইলে তাদের জেলেনেস্কীকে দরকার।  তাই তাঁকে সাহাজ্য করতেই হবে।

তারপরেও অন্ধকারে ঢিল মেরেছেন রিপাব লিকান এমপি মারজুরী টেলর গ্রীনি যে, সম্ভবত এই এইড প্যাকেজ মানি লন্ডারিং এর একটা অংশ। তাঁর ভাষায় যদি বলি সেটা এ রকম- The Georgia Republican said that federal lawmakers “fund non­profits, they fund NGOs, they fund grants, grants that go to people, and if you really look into it, a lot of times it’s their friends and families that operate these non­profits and NGOs, and it’s basically like money laundering schemes.” Greene, along with 56 House Republicans, has incessantly strived to block Biden’s efforts to lavish hard-earned American money on Ukraine. We do know that Ukraine has become a black hole of sorts. Ukraine is home to neo-Nazi groups, informal militias and non-State actors.

কয়দিন আগে several US intelligence experts বিবৃতি দিয়েছেন যে, “American military aid falling into the hands of non-state actors. Various US officials, policy, and defence analysts have raised concerns about the fact that some of these weapons may end up in the hands of militias that the US does not want to arm in the long run. So, American Dollars being exported to Ukraine could end up in hands of militias or get laundered for vested interests.

ইউক্রেন যুদ্ধটা যতো দীর্ঘায়িত হবে, তাতে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে যা এতোদিন হয়তো বড় বড় হোমড়া চোমড়ারা অতি গোপনে সুরক্ষিত রেখেছিলেন।

-https://tfiglobalnews.com/2022/06/11/ukraine-denies-to-furnish-any-information-about-the-usage-of-the-40-billion-sent-by-the-us/

13/06/2022-বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর গদি

বুলগেরিয়া ক্রমাগত আর্থিক ইনফ্লেশনের কারনে এবং এ অবস্থাতেও দেশের সার্থ সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিন্তা না করে ইউক্রেন যুদ্ধকে সাপোর্ট করতে গিয়ে বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সবচেয়ে গরীব দেশ বুলগেরিয়া এখন বিপদে। বুলগেরিয়ার প্রচুর বৈদেশিক ঋণ রয়েছে এবং অর্থনীতি এখন প্রায় বিপর্দস্থ অবস্থায় আছে। এরপরেও বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী পেটকভ ইউক্রেন যুদ্ধে মিলিটারী এইড দিতে রাজী হওয়ায় আর তারই সরকারের কোয়ালিশন পার্টের (Inspectia tehnica periodica (ITP) নেতা টিফানভ তাতে রাজী না হওয়ায় শেষমেস ITP র ডিপ্লোমেটিক চীফ টিউদোরা সহ মোট ১৩ জন এমপি সরকারী দল থেকে রিজাইন দিয়েছেন। এতে কার্যত পেটকভ তাঁর মেজরিটি হারিয়ে ফেলেছেন।

বুলগেরিয়ার আরেকটি কোয়ালিশন দল সুফিয়া অঞ্চলের ‘বুলগেরিয়ান সোস্যালিষ্ট পার্টি (BSP)ও একই হুমকী দিয়েছে যে, তারাও কোয়ালিশন সরকার থেকে তাদের সাপোর্ট উঠিয়ে নেবে।

This has increased the chances of Bulgaria being pushed into a state of ‘political instability’ again. এখানে উল্লেখ থাকে যে, গত ২০২১ সালে পরপর তিনবার নির্বাচন হয়েও কোনো দল নিরঙ্কুশ মেজরিটি পায় নাই বিধায় ৪টি দলই একত্রে মিলে বুলগেরিয়ার সরকার গঠিত হয়। তাঁর মধ্যে ITP এবং BSP দুইটি দল। অনেকদিন যাবত বুলগেরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দৈন্যদশা চলছিলো এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক ব্যর্থ হচ্ছিলো ফরেন ঋণ পরিশোধের। আর অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারনেই বুলগেরিয়া রাশিয়া থেকে গ্যাস/তেল রুবলে কিনতে পারছিলো না। ফলে ইউক্রেনকে সাপোর্টকারী দেশ হিসাবে বুলগেরিয়াকে রাশিয়া ‘আনফ্রেন্ডলী দেশ” হিসাবে রাশিয়া বুলগেরিয়ায় তেল সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতে বুলগেরিয়ার নাগরিকদের অবস্থা আরো শোচনীয় পর্যায়ে পড়ে।

বেচারা ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হইয়েছিলেন। মাত্র ৬ মাস।

দেশের মানুষের সার্থ রক্ষা না করে অদৃশ্য বিগ বসদের হুকুম তামিল করলে পরিনতি এমনই হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আরো কতজনের কপালে যে কি আছে, সময় শুধু বলতে পারে।

(সুত্রঃ ইউরো নিউজ)

12/06/2022-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন “ফান পর্যায়ে”

ইউক্রেন যুদ্ধটা এখন "ফান পর্যায়ে" চলে গেছে বলে মনে হয়। উরসুলা জানে না সে কি বলছে এবং যা বলছে ২/৩ মাস পরেই সেটা আবার পালটে যাচ্ছে। বাইডেন কথা বলতে বলতে অন্য মনষ্ক হয়ে এক কথার মধ্যে আরেক কথা বলে ফেলে, আসল বিষয়বস্তু মাঝে মাঝে ভুলেই যায়।

এবার বাইডেন বলছে, US could buy cheap Russian Oil and supply to EU. অথচ তারাই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুদ্ধটা ইউক্রেনের, আমেরিকা বা ন্যটো কোনোভাবেই এই যুদ্ধে জড়াইতে চায় না, আবার অন্যদিকে এটাও বলছে যে, এই যুদ্ধে রাশিয়াকে হারানোর জন্য দুনিয়া এদিক সেদিক করতেও আমেরিকা প্রস্তুত।

লং রেঞ্জ HIMARS যার রেঞ্জ ৩০০ কিমি যা আঘাত হানতে পারে রাশিয়ার টেরিটোরিতে, আবার এটাও বলছে যে, রাশিয়ার টেরিটোরিতে যেনো কোনো আঘাত না আনা হয় এই ভরষায় HIMARS দিচ্ছে ইউক্রেনে।

অন্যদিকে এত অস্ত্র যাচ্ছে কই এই প্রশ্নও আমেরিকা করছে। কারন তারা কোনো প্রকারের হদিস পাচ্ছে না পাঠানো অস্ত্রের। অনলাইনে ব্ল্যাক মার্কেটে জেভেলিন, স্টিংকার কেনার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। ইউরোপে ইল্লিগেল আর্মস ভরে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের লিগ্যাল আর্মস দিয়ে। ইউক্রেনের প্রায় ২০ থেকে ২৫% অঞ্চল রাশিয়ার দখলে চলে৷ গেছে, এখনো জেলেনেস্কি ভাবছে - জিত তাদেরই হবে। হ্যা হবে হয়ত, কিন্তু অনেক অনেক যুগ কেটে যাবে তাতে। ইউরোপে ইউক্রেন রিফুজি যতটা আনন্দের সাথে আশ্রয় পেয়েছিল, এখন প্রতিটি পরিবার এবং দেশ এই ওভার বার্ডেন্ড রিফুজিকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করছে, খারাপ ব্যবহার করছে।

দেশে দেশে তেল গ্যাস খাবারের সল্পতা দেখা দিচ্ছে, তারপরেও নিজেদের ক্ষতি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আরো ক্ষতির মুখে পড়ছে। অথচ শুধুমাত্র রাশিয়াকে ধরাস্ত করার মনোভাবে ইউক্রেনসহ নিজেদের মানুষগুলিকে বিপদে ফেলছে।

আমেরিকা ইউরোপের কোনো দেশই না, রাশিয়া হচ্ছে ইউরোপের একটা পার্ট, অথচ সেই ইউরোপ রাশিয়াকে বাদ দিয়া আমেরিকার সাথে টাই আপ করে প্রকারান্তে ইউরোপ নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সব কিছু রাশিয়ার উপর নির্ভরশিল ( গম, সিরিয়াল, তেল গ্যাস, ইউরেনিয়াম, লোহা, ডায়মন্ড সব) হয়েও রাশিয়াকে চেপে ধরেছে। ইউক্রেনকে ন্যাটোতে মেম্বার তো করবেই না, ইউরোপিয়ান ব্লকেও আনতে চায় না ই ইউ। অথচ বিনা প্রয়োজনে ইউক্রেন সেই ন্যাটো বা ই ইউতে যাওয়ার জন্য এমন মনোভাবে থেকে রাশিয়াকে ক্ষেপিয়ে তুল্লো। এটার হয়তো প্রয়োজনো ছিল না।

জার্মানি আধুনিক আইরিশ-টি দিবে ইউক্রেনকে অথচ ওদের ইনভেন্টরিতে আইরিশ-ট ই নাই। পোল্যান্ড ইউক্রেনকে তার সব ট্যাংক দিয়ে দিলো জার্মানি পোল্যান্ডকে আধুনিক ট্যাংক দিবে এই আশায়। জার্মানি তার বদলে আরো পুরানো ট্যাংক দিতে চাইছে পোল্যান্ডকে।

এটা একটা ফান ছাড়া আর কিছুই না। ফানটা অনেক খারাপ একটা ফান।

12/06/2022-কাউন্টারিং নেগোশিয়েশন

যে কোনো যুদ্ধের সমাপ্তি হয় নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে। ১ম বা ২য় বিশ্ব যুদ্ধও কিন্তু শেষমেশ নেগোশিয়েশনের মাধ্যমেই শেষ হতে হয়েছিলো। কিন্তু সেই নেগোশিয়েশনে বসা পার্টিগুলি কে কিভাবে প্রভাবিত করবে তার নির্ধারন হয় পার্টিগুলির হাতে কি কি তুরুকের তাস আছে তার উপর। যার হাতে যতো বেশী বার্গেনিং কার্ড থাকবে, তাঁর ততো দাবী নেগোশিয়েশন টেবিলকে প্রভাবিত করবে, এটাই নিয়ম। যেমন-২য় মহাযুদ্ধে যখন হিটলার হেরে গেলেন, তখন তাঁর দেশ জার্মানীর হাতে আর কিছুই ছিলো না। কিন্তু মিত্রবাহিনীর কাছে ছিলো পুরু তুরুকের তাস। বিধায় মিত্রবাহিনী যা যা ডিমান্ড করেছে, তার শতভাগ ওই নেগোশিয়েসন টেবিলে জার্মানীকে মানতে এবং ছাড় দিতে হয়েছে। সেই চুক্তিকে বলা হয়, প্যারিস চুক্তি-১৯৪৭। একটু সারসংক্ষেপ যদি দেখি কি কি ছাড় দিতে হয়েছিলো জার্মানিকে?

-জার্মানীকে ১০% টেরিটোরিয়াল ল্যান্ড ছাড়তে হয়েছে।

-জার্মানীর বাইরে জার্মানীর যতো ওভারসিজ কলোনী ছিলো (যেমন Alsace and Lorraine to France, cede all of its overseas colonies in China, Pacific and Africa to the Allied nations) তার সবগুলি কলোনী ছেড়ে দিতে হয়েছে।

-১৬% কয়লার খনি, ৪৮% লোহার খনি এবং ১৩% জনবসতি ছাড়তে হয়েছে।

-বার্লিন যেটা সোভিয়েত টেরিটোরিতে ছিলো, সেটাকে ৪টি ভাগে ভাগ করতে হয়েছিলো। সোভিয়েট নিয়েছিলো পূর্ব পাশ, আর পশ্চিম পাশ ছাড়তে হয়েছে অন্যান্য মিত্র বাহিনীকে। একটা পার্ট আছে জার্মানীর কাছে এখন।

-ওডার এবং নিশি নদীর পূর্ব পাশের সমস্ত টেরিটোরি ছাড়তে হয়েছে পোল্যান্ডের কাছে।

-এই চুক্তি অনুসারে বেলজিয়ামকে, চেকোস্লাভাকিয়াকেও কিছু ল্যান্ড ছাড়তে হয়েছে।

-শর্ত অনুসারে জার্মানী আক্রমণাত্মক কোনো আর্মি গঠন করতে পারবে না, শুধুমাত্র ডিফেন্সিভ বাহিনী হিসাবে সীমিত আকারে নৌ, বিমান এবং সেনা বাহিনীর করতে পারবে। ফলে জার্মানী বিশ্বে বর্তমানে ৩০তম বৃহত্তর মিলিটারী ফোর্স হিসাবে পরিগনিত। তবে ন্যাটো ফোর্সে তাঁর অবস্থান ২য়।

-শর্ত অনুযায়ী জার্মানী কোনো প্রকার বায়োলজিক্যাল, ক্যামিক্যাল এবং নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরী করতে পারবে না। ফলে জার্মানীর কাছে কোনো প্রকার নিউক্লিয়ার অস্ত্র নাই, তবে ন্যাটোর বাহিনীর সদস্য হিসাবে যুক্তরাজ্যের নিউক্লিয়ার অস্ত্রের উপর তাদের ট্রেনিং করানো হয়।

-৪ লক্ষ হলোকাষ্ট সার্ভাইবারদেরকে জার্মানী প্রতি বছর ক্ষতিপুরন দেয়। তাতে দেখা যায় যে, জার্মানী প্রতিবছর প্রায় ৫৬৪ মিলিয়ন ডলার পে করে।

-চুক্তি করার সময়ে মিত্রবাহিনীকে জার্মান এককালীন ২৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি পুরন দিতে হয়েছিলো।

এবার বুঝেন, ২য় মহাযুদ্ধে জার্মানির মেরুদন্ড শুধু ভাংগাই হয় নাই, সোজা করে দাড়ানোর মত শক্তিও রাখে নাই। হিটলারের যদি তখন নিউক্লিয়ার শক্তি থাকতো, তাহলে নেগোশিয়েশন টেবিলেই জার্মানী বসতো না। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় (অথবা সুখের বিষয়) যে, হিটলারের কাছে তখন নিউক্লিয়ার অস্ত্র ছিলো না।

এবার আসি, রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের কিছু অপশন।

সবচেয়ে বড় দূর্বলতা ইউক্রেনের যে, তারা না পরাশক্তি, না নিউক্লিয়ার ক্ষমতাধর, না ন্যাটোর মেম্বার, না ইউরোপিয়ান ব্লকের কেউ। এদেরকে কেউ পিছন থেকে উষ্কানী দিচ্ছে, আর সেই উষ্কানী ইউক্রেন ১০০% বিশ্বাস করে ভাবছে, তাঁকে কেউ না কেউ উদ্ধার করবেই। কিন্তু আজকে প্রায় ১১০ দিন পার হয়ে গেছে যেখানে কোনো পরাশক্তি, কোনো সাহাজ্যকারী আর্মি, কিংবা কোনো নিউকধারী দেশ কার্যত ইউক্রেনকে সরাসরি সাহাজ্য করতে আসে নাই, আর আসবেও না। একটা 'নো ফ্লাই যোন" পর্যন্ত করলো না। এদিকে আগ্রাসী রাশিয়া সেই সুযোগে ইউক্রেনের বেশ কিছু কিছু শহর নিজের করে শুধু নিচ্ছে না, সেখানে রাশিয়ার সমস্ত চরিত্র ইঞ্জেক্ট করে দিচ্ছে। পাসপোর্ট, কারেন্সী, ন্যাশনাল আইডি, সবকিছু পালটে দিয়ে রাশিয়ান কালচার প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছে। দিন যতো যাচ্ছে, পিপড়ার গতিতেই হোক, বা কচ্ছপের গতি, রাশিয়া ধীরে ধীরে ইউক্রেনের বেশ কিছু টেরিটোরি গিলেই ফেলছে। কেউ সেটাকে প্রতিহত করছে না বা ডাইরেক্ট কিছুই করছে না। অন্যদিকে, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি ধীরে ধীরে এতোটাই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে যে, একটা সময় সম্ভবত রাশিয়াকে আর কোনো বোম্ব বা মিজাইল মারতে হবে না, এম্নিতেই দখলে চলে যাবে। যে রাশিয়া নিজেই অন্য পরাশক্তিকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত, সে রাশিয়াকে কোন পরাশক্তি আক্রমন করবে? এটা কিন্তু ভাবতে হবে। তারমধ্যে চীন, ইন্ডিয়া, মধ্য প্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা রাশিয়ার পাশে। এমন কি ইজরায়েল নিজেও। ইউক্রেনের সপ্ন ভঙ্গ হতে হয়তো একটু বেশী সময় লাগছে।

বিভিন্ন দেশ যারা ইউক্রেনকে সাহাজ্য করতে আপাতত আভাষ দিয়েছিলো, তারা তাদের দেশেই এখন খাদ্য সংকট, তেল সংকট, গ্যাস, এবং অন্যান্য কমোডিটির ঘাটতিতে নিজের দেশের নাগরিকদের কাছে অপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা এখন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে, সেইসব রাষ্ট্রনায়কেরা তাদের গদি টিকিয়ে রাখার জন্যই আর ইউক্রেনকে নিয়ে ভাবার সময় হয়তো হবে না। উপরন্ত, যেসব রিফুজি অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদেরকে নিয়েও সেইসব দেশগুলি এখন ক্রমাগত বিব্রতবোধ করছে তাদের দেশের নাগরিকদের কাছে। সেইসব রিফুজির জন্যেও তো দেশগুলির অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে। কার বোঝা কে নেয়?

রাশিয়া বারবার ইউক্রেনকে নেগোশিয়েশন টেবিলে বসাতে চাইলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী সেটায় কর্নপাত করছে না। রাশিয়ার তিনটা শর্ত বারবার উচ্চারিত করছে যে, ক্রিমিয়া, দনবাস, এবং ডোনেটস্ক কে (যা আগেই রাশিয়ার কন্ট্রোলে বা তাঁর নিয়ন্ত্রীত বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রীত ছিলো) এর স্বীকৃতি, ইউক্রেন যেনো কোনো অবস্থাতেই ইউরোপিয়ান ব্লকের অধীনে মিলিটারী জোট ন্যাটোতে যোগ না দেয় আর তাঁর আর্মি এমন একটা সীমিত পর্যায়ে থাকবে যাতে অফেন্সিভ বাহিনীতে পরিনত না হয়। রাশিয়া কোনোভাবেই রিজিম চেঞ্জ চায় না, তাঁর দরকারও নাই। এটা জেলেনেস্কীর মাথায় যেনো ঢোকছেই না। গো ধরে বসে আছে কোনো এক আলাদিনের চেরাগের আশায়। গত ১৫ বছরেও ইউক্রেন ন্যাটোর মেম্বার হতে পারে নাই, না ইউরোপিয়ান ব্লকের কোনো সদস্য। এই ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় তাদের কি এটা বুঝা উচিত না যে, ইউরোপ ইউক্রেনকে কিভাবে দেখে? ইউক্রেনকে ভালোবেসে অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলি বা পশ্চিমারা তাঁকে সাহাজ্য করছে বলে জেলেনেস্কীর যে ধারনা, সেটা আসলে ভুল। আসলে তারা চেয়েছিলো রাশিয়াকে সাইজ করতে। ইউক্রেন তো শুধু একটা ক্যাটালিষ্ট। আজকে রাশিয়া আগ্রাসীর ভুমিকায় না হয়ে যদি এটা হতো জার্মানী কিংবা ইউকে বা আমেরিকা, তাহলে সারা দুনিয়ার মানুষ হয়তো জানতোই না যে, ইউক্রেনে জার্মানি, বা ইউকে বা আমেরিকা এটাক করেছে। এই যুদ্ধে রাশিয়া নিজেও তাঁর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়ছে, আবার ইউক্রেনও। অন্য যারা উষ্কানী দিচ্ছে, তারা স্রেফ মেলায় অংশ নিয়েছের মতো।

যুদ্ধ যতো লম্বা হবে, ধীরে ধীরে ইউক্রেন আরো অনেক টেরিটোরি হারাবে বলে আমার ধারনা। যেমন সে এখনই মারিউপোল, খেরশন, খারখিভ, সেভেরিদোনেটক্স, আজভ সাগরের পোর্ট অর্থাৎ প্রায় ২৫% টেরিটোরি ইতিমধ্যে রাশিয়া দখল করেছে বলে জানা যায়। এমতাবস্থায়, ইউক্রেনের উচিত ছিলো নিজের ভালোটা বুঝা এবং ইউক্রেনের উচিত হাতে কিছু থাকতে থাকতে রাশিয়ার সাথে নেগোশিয়েশন টেবিলে বসা। পশ্চিমাদের উষ্কানী বা আশ্বাসে বিলম্ব না করে একটা সমঝোতা চুক্তিতে যাওয়া এবং নিজের দেশের মানুষগুলিকে তথা যারা বাস্তহারা হয়ে গেছে, তাদেরকে ফিরিয়ে এনে আবারো নতুন ইউক্রেন হিসাবে তৈরী করা। রাশিয়ার সাথে তাঁর একটা বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক তৈরী করলে এবং সে পশ্চিমা ধ্যান ধারনা থেকে সরে এসে রাশিয়ার সাথে আতাত করলে হয়তো রাশিয়াই তাঁকে আবার পুনর্গঠনে সাহাজ্য করতেও পারে।

এখানে একটা কথা ক্লিয়ার করা উচিত যে, জার্মানীর কাছে কোনো প্রকার নিউক্লিয়ার উইপন নাই। আর সে এটা করতেও পারবে না। করলে ২য় মহাযুদ্ধের সময় এলাইড ফোর্সের সাথে ওদের চুক্তি ভঙ্গের জন্য অপরাধ হবে। তবে Under NATO nuclear weapons sharing, the United States has provided nuclear weapons for Belgium, Germany, Italy, the Netherlands, and Turkey to deploy and store. তারা শক্তিশালী মিলিটারী ফোর্সও বানাতে পারবে না। জার্মানী সামরিক শক্তির দিক দিয়ে বিশ্বে ৩০তম দেশ। এখানে NATO nuclear weapons sharing বলতে আসলে কি বুঝায়? এটা হলো-ন্যাটো দেশভুক্ত রাষ্ট্রগুলির ভুখন্ডে আমেরিকা ইয়াদের কিছু কিছু নিউক্লিয়ার উইপন স্টোর বা মজুত করে ডিপ্লয় করে রাখে। সেগুলিতে একচ্ছত্র কমান্ড থাকে পেরেন্ট দেশের অধীনে। যেসব দেশে এগুলি ডিপ্লয় করা থাকে, তারা শুধু এগুলির উপর ট্রেনিং করে থাকে যাতে পেরেন্ট দেশ আদেশ করলেই তারা সেগুলি মারতে পারবে। ফলে আমেরিকার নিউক্লিয়ার উইপন আসলে ভাগ হয়ে আছে Belgium, Germany, Italy, the Netherlands and Turkey তে।

11/-6/2022-ইকুইলিব্রিয়াম অফ পাওয়ার

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধটা নিয়ে কোনো আলাপ করতে চাইছিলাম না। কিন্তু যে কার্যকরনটা নিয়ে পুরু বিশ্ব এখন তালমাতাল, সেটা আর এই যুদ্ধের মধ্যে কোনো অবস্থাতেই সীমাবদ্ধ নাই। যেমন, ফুড সংকট, তেল সংকট এবং আরো অন্যান্য সংকট। এটা এমন নয় যে, শুধুমাত্র রাশিয়া আর ইউক্রেন একাই সারা দুনিয়ার খাবার সরবরাহ করে, অথবা শুধু রাশিয়াই সারা দুনিয়ায় তেল বা গ্যাস সরবরাহ করে। সবদেশই কিছু না কিছু ফুড গ্রেইন উৎপন্ন করে, এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র উৎপন্ন করে। তারা রপ্তানীও করে। উদাহরন দেইঃ

গম উৎপাদনে রাশিয়া ১৩%, আমেরিকা-১৩%, অস্ট্রেলিয়া ১৩%, কানাডা-১২%, ইউক্রেন-৮%, ফ্রান্স-৮%, আর্জেন্টিনা-৬%, জার্মানি, রুমানিয়া, ইন্ডিয়া, বুলগেরিয়া প্রত্যেকেই-৪% করে গম রপ্তানী করে। এ ছাড়া কাজাখিস্থান, পোল্যান্ড, লিথুনিয়া, হাংগেরীও গম উৎপাদন করে। এরা সবাই মিলে ৯৫% গম রপ্তানী করে থাকে সারা দুনিয়ায়। যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেন একত্রে ধরি তাহলে তারা উভয়ে মিলে ২১% রপ্তানি করে। এর মানে ৭৪% গমের রপ্তানী কিন্তু করে অন্যান্য দেশ। অথচ ইতিমধ্যে গম, ভুট্টা, যব ইত্যাদির একটা বিশাল শুন্যতা দেখা গিয়েছে। আর এই মুল উপাদান শস্যের কারনে অন্যান্য সব খাবারের উপর প্রভাব পড়েছে। এর কারন কি? এর একটাই কারন-এই যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে, এটা কেউ বলতে পারছে না। ফলে সবাই একটা এমন আতংকের মধ্যে আছে যে, কেউ এখন তাদের গোডাউন খালী করতে চায় না। সবাই যার যার খাদ্য সামগ্রী অন্যত্র রপ্তানী থেকে বিরত রয়েছে। আর একারনেই সংকট। অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের বেলাতেও তাই হয়েছে। এটা যুদ্ধ আতংকের বাই প্রোডাক্ট। আমেরিকা সম্ভবত এই ক্যালকুলেশনেই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রনয়ন করেছিলো যে, মাত্র ১৩% শর্টফল কাভার করা সম্ভব, কিন্তু এর সাইড ইফেক্টটা কি হবে সেটা সম্ভবত হিসাবের মধ্যে ধরেনি।  

একইভাবে তেল উৎপাদনকারী দেশসমুহের মধ্যে যদি দেখি, তাহলে দেখবেন

আমেরিকা, রাশিয়া, সৌদি আরব, কানাডা, ইরাক, চায়না, আরব আমিরাত, ব্রাজিল, কুয়েত এবং ইরান মিলে মোট ৯৫% তেল উৎপাদন করে কিন্তু আমেরিকা ছাড়া অন্যান্য সবাই রপ্তানী করে। শুধু রাশিয়ার উৎপাদন বাদ দিলে মোট উতপাদনের পরিমান থেকে মাত্র ২৫% রপ্তানী হয়তো বাদ পড়বে এবং বাকী ৭০% অন্যান্য দেশ থেকে পুরন করা যেতো যদি তারা সবাই একটু একটু করে উৎপাদন বাড়িয়ে দিতো।, তাহলে রাশিয়ার তেল ছারাও চলতো। তারমানে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হতো। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হচ্ছে না কেনো?  

এর কারন কিন্তু ফুড গ্রেইনের মতো আতংকের কারনে নয়। এটা হচ্ছে আমেরিকা বা ন্যাটো, বা ইউরোপের উপর অন্যান্য দেশের একটা প্রতিশোধমুলক ব্যবস্থার কারনে। আমেরিকা একচ্ছত্রভাবে যেটাই করুক, সেটাই ন্যায়, তাঁর কোনো অন্যায় নাই, এটা হয়তো আমেরিকা মনে করলেও, অন্যান্য দেশ সেটা মনে করে না। আবার সেটা অন্যান্য দেশ মেনে না নিলেও এতোদিন তাঁরা যে কোনো কারনেই হোক (হোক সেটা পলিটিক্যাল, হোক সেটা একাকীত্ব, হোক সেটা নিজেরা আইসোলেট হবার ভয়ে) সেটার ব্যাপারে সোচ্চার হওয়াও সম্ভব ছিলো না। ফলে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, চীন, সবাই ভিতরে ভিতরে একটা রাগ সুপ্ত অবস্থাতে লালন করছিলো। এই যুদ্ধে রাশিয়া বেকে বসায় এবার সেই অন্তর্দাহ কিংবা সুপ্তরাগ একসাথে সবাই আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হতে দেখা গেছে। একটা কথা আছে- শত্রুর শত্রুরা একে অপরের কিন্তু বন্ধু। আর ঠিক এটাই হয়েছে এবার। রাশিয়ার সাথে চীন, ইন্ডিয়া, সাথে মধ্যপ্রাচ্য, লাগোয়া আফ্রিকা সবাই একযোগে বন্ধু হয়ে গেছে আর তাদের কমন শত্রু যেনো ইউরোপ, আমেরিকা, অথবা ন্যাটো।

এই তথ্যগুলির প্রচুর অভাব ছিলো সম্ভবত আমেরিকার গোয়েন্দা বাহিনীর তথ্য ভান্ডারে। পুতিনকে তারা পড়তে পারেনি, পড়তে পারেনি চীনের মনোভাবকেও, কিংবা ইন্ডিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদেরকেও। আবার অন্যদিকে তলে তলে যে এই সব বিচ্চু বাহিনীগুলি এতোটা জোটে আবদ্ধ হয়ে যেতে পারে, এই প্রেডিকশনটা আমেরিকা-লিড জোট ভাবেই নাই। আর যখন তাদের বোধোদয় হয়েছে, তখন গরম গরম সাক্ষাতেও তাদেরকে আর দলে টানা যাচ্ছিলো না, যায়ও নাই। ফলে প্রতিটি নিষেধাজ্ঞা বুমেরাং হয়ে নিজেদের উপরেই ফিরে আসা শুরু করেছে।

আমার ব্যক্তিগত ধারনা যে, ন্যাটোকে নিয়ে তো শুধুমাত্র রাশিয়ার ভয়। চীন, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা তাদের তো ন্যাটোকে নিয়ে কখনো কোনো মাথা ব্যথাও ছিলো না, এখনো নাই। ন্যাটোর যতো এক্সপানশন, যতো প্রস্তুতি সবইতো এই রাশিয়াকে ঘিরেই। ন্যাটোকে জীবিত রাখাই হয়েছে রাশিয়াকে সাইজ করার জন্য। আর ন্যাটো তো একটা সুযোগই খুজছিলো কবে কিভাবে এই ন্যাটোকে দিয়ে রাশিয়াকে সাইজ করবে। এবার তো সেই সুযোগটা এসেছিলো যেটার জন্য তারা এতো যুগ ধরে অপেক্ষা করেছে। তাহলে ন্যাটো কি আসলেই তৈরী ছিলো রাশিয়াকে সাইজ করার এই মুক্ষোম সুযোগটা পেয়ে? ন্যাটোর নিজেরও কোনো প্রস্তুতি ছিলো না। অতি সন্নাসীতে যে গাজন নষ্ট হয়, এই প্রবাদটা ইংরেজীতে মনে কেউ পড়ে নাই। জানা থাকলে আগে তারা ন্যাটো কতটা ঐক্যবদ্ধ্য সেটা যাচাই করা দরকার ছিলো। অনেক হোমওয়ার্ক করার দরকার ছিলো। আমরা দেখেছি-প্রতিটি মেজর মেজর সিদ্ধান্ত পশ্চিমারা নিতে সময় নেয় নাই। প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত হয়েছে এক রাতের মধ্যে কিংবা এক দুপুরের মধ্যে, কখনো কখনো একই দিনেও অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কিন্তু একটিবারও ভাবেন নাই, এসব মারাত্তক মারাত্তক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরে কি কি ইফেক্ট হতে পারে। পুরু ব্যাপারটা ঘটেছে গুটিকতক মানুষের ব্রেইন চাইল্ড হিসাবে। ফলে একজন ‘ইয়েস’ বলেছে আর সবাই এর পুরুপুরি বিশ্লেষণ না করেই হুজুগের বশে ‘ইয়েস’ বলেছে আর যারা বলতে পারেনি, তারা হয়তো মৌন থেকেছে। বাধা দেয় নাই। এর ফলে নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞায় কোনো কাজ হচ্ছিলো না। দেখা গেছে ৭ম নিষেধাজ্ঞা দিয়েও কাজ হয় নাই।

সুইফট বন্ধ করলে কি হতে পারে, বিকল্প তৈরী হয়ে গেলে কি করা যাবে, পেট্রো ডলার আউট হয়ে গেলে কি হতে পারে, অন্য কারেন্সী ইন্টারন্যাশিনাল কারেন্সী হিসাবে গন্য হয়ে গেলে অতিরিক্ত ডলারগুলির কি হবে, বড় বড় কোম্পানীগুলি তাদের ব্যবসা বানিজ্য গুটিয়ে নিলে কি হতে পারে, যারা পুতিনকে কিংবা চীনকে বুঝিয়ে একটা দফারফা করতে পারে সেই লোকগুলিকে নিষেধাজ্ঞায় ফেলে দেয়ায় কি হতে পারে এগুলির কোনো হোমওয়ার্ক একেবারেই করা হয় নাই। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিজেই নিজেরা কতটা কে কাকে ভরষা করে, এটাও যাচাই করার দরকার ছিলো এসব করার আগে। সেটাও করা হয় নাই। প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান তাদের নিজেদের নাগরিকের কাছে দায়বদ্ধ, আমেরিকা বা ইউরোপের কাছে নয়। তারা ইচ্ছে করলেই তাদের নাগরিকদেরকে পথে নামিয়ে দিয়ে পশ্চিমাদের খুশী করার জন্য কিংবা তাদের তাবেদারী করে ক্ষমতায় থাকতে পারেনা। এটা বুঝা দরকার ছিলো। একদিকে ডেমোক্রেসির কথা বল্বো আবার অন্যদিকে দেশের নাগরিকের কথা মাথায় রাখবো না, এটা হতে পারে না।

আমি শুধু পশ্চিমাদেরকেও দোষ দেবো না। কারন তারা গত কয়েক যুগ এভাবেই ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা পেয়েছে। সফলতা পেয়েছে ইরানে, ইরাকে, আফগানিস্থানে, সিরিয়ায়, প্যালেষ্টাইনে, ইয়েমেনে, লিবিয়ায়, মেক্সিকো, সোমালিয়া, নিকারাগোয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম, কংগো, কম্বোডিয়া, হাইতি, মিশর, এবং অন্যান্য আরো দেশ সহ আফ্রিকান দেশগুলিতে। ফলে যখন এভাবে তারা সফলতা পেয়েই গেছে, তাহলে একই ইন্সট্রুমেন্ট তারা ব্যবহার তো করবেই। কিন্তু এবারের দেশটা ছিলো রাশিয়া। ২য় বৃহত্তর মিলিটারী ফোর্স, নিউকের অধিকারী, ভেটো ক্ষমতার অধিকারী, নিজেরাই প্রায় সবদিক দিয়ে সাবলম্বী, আর তারমধ্যে এতো বেশী সময় ধরে অভিজ্ঞ একজন রাষ্ট্রপ্রধান পুতিন যার মেয়াদ আরো বাকী ১৪ বছর, যার ব্রেইনকে পড়ার জন্য ইন্টেলকে একটা আলাদা সেল খুলতে হয়েছে, তাঁকে অন্যান্য সবার কাতারে ফেলে এমন হুইমজিক্যাল গেম খেলা ঠিক হয় নাই।

এর মানে আমি এটা বলছি না যে, ইউক্রেনকে রাশিয়া আক্রমন করে ঠিক কাজটাই করেছে। সেও অন্যায় করেছে। কিন্তু পশ্চিমারা তো এই অন্যায়গুলিই করে এসছে এতোকাল। পুতিনের তো হোম ওয়ার্ক করা ছিলো। পুতিন তো এটাই বলেছে- হয় এখন, না হয় আর কখনোই না। ফলে এক কালা জাহাংগীর (কেউ খারাপ ভাবে নিয়েন না) আরেক কালা জাহাংগীরকে শায়েস্তা করার আগে কালা জাহাংগীরদের তো আরো অনেক বেশী হোমওয়ার্ক করার দরকার থাকে। যদু মধুওকে থাপ্পর দিয়ে পার পেলেও এক কালা জাহাংগীর আরেক কালা জাহাংগীরকে শায়েস্তা করার আগে কি শুধু থাপ্পর দিলেই কাজ হয়ে যাবে?

ফলে এই অকালিন এবং কিছু গুটিকতক মাথামোটা মানুষের বুদ্ধির কারনে যেটা আমি দেখতে পাচ্ছি, সেটা হচ্ছে-

(ক) ইউরোপের ইউরোর মতো এশিয়ায় আরেকটা কমন কারেন্সীর প্রবর্তন হবে।

(খ) পেট্রো ডলারের আধিপত্য শেষ হয়ে যাবে।

(গ) ট্রেড প্রবাহে ইউরোপ বা পশ্চিমারা পিছিয়ে যাবে।

(ঘ) ইউরোপ একটা নড়বড়ে জোটের সৃষ্টি হবে।

(চ) ন্যাটোর উপর সর্বজনীন আস্থা কমে যাবে।

(ছ) রাশিয়া, চীন, ইন্ডিয়া, তুরষ্ক, এবং অন্যান্য দেশ মিলে প্যাসিফিক নিয়ন্ত্রন করবে।

(জ) সুইফট সিস্টেমের আধিপত্য শেষ হবে।

(ঝ) রিজার্ভ শিফট হয়ে যাবে অন্যত্র এবং অন্য কারেন্সীতে।

(ট) ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশ গুলিতে ইনভেষ্টমেন্টে ভাতা পড়বে।

(ঠ) জাতিসংঘের পাশাপাশি আরেকটা লিগ অফ ন্যাশনের সৃষ্টি হবে।  

ইন্টারন্যাশনাল ইকুইলিব্রিয়াম অফ পাওয়ার বলতে যা বুঝায় তাঁর জন্ম হতে যাচ্ছে। ২০১১ জুন প্রকাশনায় ডিফেন্স জার্নালে ঠিক এ রকম একটা লেখা ছিলো আমার। Is Super Power Shifting? Why and Who is Next?

10/6/2022-শিয়ালটা কে?

ফ্রান্স, জার্মান এবং ব্রিটিশ এই তিন দেশের অফিসারদেরকে আপনি কখনো পাশাপাশি দাড়াতে দেখবেন না। যদি কখনো দাড়াতে দেখেনও তারপরেও দেখবেন এরা একে আরেকজনের সাথে ফ্রেন্ডলী কথা বলে না। জাতী সংঘ মিশনে দেখেছি- বাসার সল্পতা থাকা সত্তেও এরা আরেকজনের সাথে রুম শেয়ার করে না। হয়তো বিল্ডিং শেয়ার করে কিন্তু একই রুমে ওরা থাকে না। এর একটা কারন আছে। আর সেটা হল-এরা সবাই ২য় মহাযুদ্ধে একে অপরের শত্রু ছিলো। ফ্রান্সের সাথে ব্রিটিশদের চিরাচরিত শত্রুতা মনোভাব। অন্যদিকে জার্মান তো ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধেই ছিলো ২য় মহাযুদ্ধে।

আমার এক খুব প্রিয় গুরুজন বলতেন-যখন শত্রুরা নিজেরা নিজেরা বন্ধু হয়ে যায়, এদের বন্ধুত্তের মধ্যে থাকে ধুর্ততা আর সার্থপরতা। সবার নিজ নিজ এজেন্ডা নিয়ে বন্ধুত্ত করে। তারা কখনো একজনকে আরেকজন বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে না। যা দেখায় সেটা হচ্ছে আবরন।

"ন্যাটো"- এই দলের মধ্যে এরা সবাই আছে। আছে ব্রিটিশ, আছে জার্মান, আছে ফ্রান্স, আছে আমেরিকান। আবার আছে তুরুষ্ক। বিশ্বাসের ভিত্তিটা এখন কত শক্ত অনুমান করা কঠিন না। এখানে আরেকটা সমস্যা আছে। এই সম্মিলিত বাহিনীকে কে কাকে কমান্ড করবে? ব্রিটিশ জার্মানী দ্বারা কমান্ডেড হতে চায় না, জার্মান ব্রিটিশ দ্বারা, না ফ্রান্সের মিলিটারী অন্য বাহিনী দ্বারা অথচ এদের একটা কমান্ড স্ট্রাকচার আছে। সেই কমান্ড স্ট্রাকচার আজ পর্যন্ত টেষ্টেড হয় নাই কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। মিশন এরিয়ায় আমি দেখেছি-কোনো আমেরিকান ইউনিট অন্য কোনো দেশের কমান্ড স্ট্রাকচারের অধীনে কখনোই কাজ করে না। কোনো ব্রিটিশ ইউনিট একমাত্র আমেরিকান কমান্ডার ছাড়া অন্য কোনো দেশের কমান্ডারদের অধিনে কাজ করতে চায় না। হ্যা, ফোর্স কমান্ডার, বা সিএমও (চীফ মিলিটারী অবজারভার) এগুলি আলাদা বিষয়। সেখানেও তাদের একটা জয়েন্ট কমান্ড রাখে।

মজার ব্যাপার হলো, ন্যাটোর কোনো আলাদা মিলিটারী নাই। প্রতিটি দেশের মিলিটারীই ন্যাটোর মিলিটারী। এটা একটা বিএনসিসির মতো মিক্সড। কেউ খুবই প্রোফেশনাল, আবার কেউ অনেক কিছুই জানে না। বিশেষ করে মিলিটারি অস্ত্র হ্যান্ডলিং বা ট্যাক্টিক্সের দিক দিয়া।

তুরষ্ক ন্যাটোর মিলিটারীর মধ্যে একটা বিশাল অংশ। তুরষ্ক তাঁর নিজের মনোভাব ইতিমধ্যে প্রকাশ করে ফেলেছে সুইডেন আর ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে বাধা দিয়ে। তুরষ্ককে ইচ্ছে করলেই ন্যাটো থেকে বা ইউরোপিয়ান ব্লক থেকে আউট করা যাচ্ছে না। তুরষ্ককে আউট করলেই ন্যাট কিংবা আমেরিকা, বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জিও পলিটিক্সে ধরা। আবার অন্য দিকে তুরষ্ককে আউট করলে সে যে রাশিয়া বা চায়নার সাথে এক হয়ে যাবে না কে জানে? মহা বিপদ। ফলে তুরষ্কের বাধার কারনে এতো ইচ্ছা থাকা সত্তেও ন্যাটো সুইডেন বা ফিন ল্যান্ডকে ঢোকাতে পারছে না।

হাংগেরী, ক্রোয়েশিয়া কে দেখুন। ছোট দেশ, খুব ক্ষমতাশীল না। তারপরেও ন্যাটর বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাইছে না। কারন তাদের নিজের দেশের ইন্টারেষ্ট আগে। আবার এদেরকে ছেড়ে দিলেও টুষ করে রাশিয়া খেয়ে ফেলবে, দলে নিয়ে যাবে। এখন যে যাকেই ছেড়ে দিবে, সেইই অন্য দলে ঢোকে যাবে। দেশীয় রাজনীতির মতো। একটা ছোট উদাহরণ দেই, সলোমন আইল্যান্ডকে আজ অবধি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফ খুব বেশী একটা সাহাজ্য করে নাই। কিন্তু যেই না চায়না সলোমনের সাথে ঝুকে গেছে, কথা নাই বার্তা নাই, ১৩০ মিলিয়ন ডলার সাহাজ্য এম্নিতেই গ্রান্ট করে দিলো ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক গতকাল। সলোমান আইল্যান্ড কিন্তু রিফিউজ করে নাই। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকই তো। এটা তো আর ওপেনলী আমেরিকা বা ব্রিটিশ না। নিতেই পারে, আবার চায়নাও এখন হিউজ টাকা ঢালছে সলোমনে। এখন সবাই সবার দল ভারী করার চেষ্টা করছে, হোক সেটা ছোট বা বড়।

জার্মানকে দেখুন। তারা কোনো অস্ত্র কিন্তু সরাসরি ইউক্রেনকে দিচ্ছে না। কখনোই না। তারা হয় দিচ্ছে পোল্যান্ডকে, অথবা অন্য ন্যাটোভুক্ত দেশকে। যাতে জার্মান ইউক্রেনে সামরিক অস্ত্র দিচ্ছে এই ব্লেইম তাঁকে না নিতে হয়।

পোল্যান্ডকে দেখুন, ইউক্রেনের পশ্চিমা অংশ এক সময় পোল্যান্ডের ছিলো যা ২য় মহাযুদ্ধে তাঁকে ছাড়তে হয়। একটু হলেও তো মনের ভিতরে একটু খস খস আছেই। পোল্যান্ড সেই পশ্চিমা অঞ্চলে ইউক্রেনের সাথে বর্ডার একত্রিত করতে চায়। জেলেনেস্কি একটু রাজী রাজী ভাব। উদ্দেশ্যটা একটু খটকার মতো। রাশিয়া ক্রিমিয়া খেয়েছে, মারিউপোল খাইলো, ডনবাস শেষ, এখন ইষ্টার্ন ব্লকে এগুচ্ছে, পশ্চিমা অংশ পোল্যান্ডের নজর।

এটা তো রুটির মতো ভাগ হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।

বিড়াল তো দেখতে পাচ্ছি কিন্তু শিয়ালটা কে আসলে?

9/6/2022-ক্ষমতার ভারসাম্য

একটা সময় ছিলো যখন ‘সময়’ টাকে রাজত্ব করেছে বাইজেন্টাইন, রোম, প্যারিস, জার্মানী, তারপর ব্রিটিশ। এখন তারা আর সেই একচ্ছত্র ক্ষমতার শীর্ষেও নেই, রাজত্বও করার সুযোগ নাই। নব্বই দশক থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতার শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিটি শীর্ষ ক্ষমতাধর সম্রাজ্য কোনো না কোনো যুদ্ধের মাধ্যমেই তাদের পতন হয়েছে।

যারা আগের দিনে রাজত্ব করেছে, তারা যদিও একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি কিন্তু তাদের মধ্যে সেই মোড়লগিড়ি করার প্রবনতাটা বিদ্যমান আছে আর সেই প্রবনতা থেকেই বর্তমান বড় মোড়লের তালে তাল মিলিয়ে ক্ষমতার একটা মজার ভাগ তারাও শেয়ার করে যাচ্ছে। 

এবার এই ইউক্রেন যুদ্ধকে আমার কাছে মনে হয়েছে সেই রকম একটা যুদ্ধ যেখানে একচ্ছত্র ক্ষমতার পালাবদল হয়।  টার্নিং পয়েন্ট। আমি প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি- দ্রুত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে নিজেদের সার্থের দন্ধে বিভাজিত হয়ে যাচ্ছে, ভুল কিছু নিষেধাজ্ঞার কারনে সারা দুনিয়া থেকে পেট্রো ডলারের একচ্ছত্র প্রভাব শেষ হয়ে যাচ্ছে, সুইফট সিস্টেমের এর বিপক্ষে অনেকগুলি সমগোত্রীয় অন্য সিস্টেম কাজ করা শুরু হয়ে গেছে। ফলে একচ্ছত্র অর্থ নিয়ন্ত্রনের মুল কারবারীর বিশ্ব অর্থিনীতি থেকে ডলার বা ইউরো হারিয়ে যাবে ধীরে ধীরে। এর বিপক্ষে অন্য কারেন্সী প্রাধান্য পাবে।

যারা একটা সিস্টেমকে বিশ্বাস করে ব্যক্তি পর্যায়ে বা দেশীয় পর্যায়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান অর্থ যুক্ত্রষ্ট্রের মতো দেশের রিজার্ভ ব্যাংকে এতো পরিমান নিজেদের অর্থ রাখে, সেই অর্থ একটা মুখের কথায় যখন বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ার কালচার আমেরিকা শুরু করেছে, ফলে কোনো দেশ বা কোনো ব্যক্তি অন্তত আর ওই পথে পা ফেলবে বলে মনে হয় না। তাতে আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাংক ধীরে ধীরে খালী হয়ে যাবে। অন্যদিকে আমেরিকা যে পরিমান অর্থ চায়না বা অন্যান্য ধ্বনি দেশগুলি থেকে ঋণ নিয়েছে, তাঁর পরিমানও নেহায়েত কম নয়। অর্থাৎ ইকোনোমিক্যাল ব্যালেন্সও কিন্তু ইকুইলিব্রিয়ামের মধ্যে নাই।

এমন একটা অবস্থায় পুর্বের মোড়ল গুলি যেমন জার্মানী, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, তুরুষ্ক এবং তাদের সাথে ইউরোপিয়ান গোষ্ঠীরা খুব দ্রুত অন্যান্য দেশ যেমন  চায়না, রাশিয়া, মিডল ইষ্ট, এবং আমেরিকাকে পছন্দ করে না এমন দেশ সমুহ একজোট হয়ে যাচ্ছে। এতে যেটা হবে, খুব বেশীদিন হয়তো আমেরিকা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে। আজকাল মিডিয়ার যুগ, মিস-ইনফর্মেশন-ওয়ার খুব একটা সুফল আনে না। তথ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইনফর্মেশন সুপার হাই ওয়েতে সব তথ্য এক সাথে চলে আসে। ফলে আমেরিকাকে তাঁর হেজিমুনি ধরে রাখতে  এখন সুপার ইন্টেলেকচুয়াল এবং অনেক বেশী বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন নেতার প্রয়োজন।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলেই যে সে ভালো নেতা, সব বুদ্ধির অধিকারী, কিংবা চালাক কিংবা দুরদর্শী লিডার বা ইন্টেলেকচুয়াল এমনটা ভাবার দিন হয়তো শেষ।

9/6/2022-আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার দেশসমুহ

এ যাবত কাল আমেরিকা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারি করা দেশসমুহঃ

কিউবা, নর্থ কোরিয়া, ইরান, ভেনিজুয়েলা, সিরিয়া, আফগানিস্থান, বেলারুশ, বলিভিয়া, কম্বোডিয়া, ক্রিমিয়া, ইরিত্রিয়া, লাওস, নিকারাগুয়া, প্যালেস্টাইন, ইয়ামেন, জিম্বাবুই, রাশিয়া

আর ব্যক্তি পর্যায়ে আমেরিকা যে দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে তাদের লিষ্টঃ

বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চায়না, কংগো, হংকং, ইরাক, লেবানন, লাইবেরিয়া, মালি, মায়ানমার, সোমালিয়া, সুদান, তুরুষ্ক

এভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে করতে একটা সময় আসবে, সবাই যার যার জায়গায় অন্যের সাথে ঠিকই ব্যবসা বানিজ্য, যাতায়ত, কালচারাল এক্সচেঞ্জ, স্পোর্টস এক্টিভিটিজ ইত্যাদি করা শুরু করেছে আর সেখানে নাই শুধু আমেরিকা। নিজের জালে আমেরিকা ফেসে যাচ্ছে। তার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। আমেরিকাকে বুঝতে হবে, পুরু পৃথিবী তার নিয়ন্ত্রনে নয়। আর সেটা সে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেও না। তাই এই “নিষেধাজ্ঞা” নামক অস্ত্র আমেরিকাকে পরিত্যাগ করে ভিন্ন পথে আগাইতে হবে। না আগাইলে তার নিজেরই ক্ষতি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।

উদাহরনঃ আমেরিকার নতুন আফ্রিকান ট্রেড মিটিং সবাই বয়কট করলো আজ। এরমানে কেউ তাদের সাথে কোনো টাই-আপ করতে নারাজ।

নর্থ কোরিয়াকে আবারো নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাব আমেরিকা পেশ করার পর জাতিসংঘের স্থায়ী কমিটিতে চায়না এবং রাশিয়া শতভাগ ভেটো প্রদান করেছে। ফলে একচ্ছত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়া সম্ভব হয় নাই। তাই শুধুমাত্র আমেরিকার ট্রেজারী ব্রাঞ্চ উক্ত নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। নর্থ কোরিয়া তো গত ১৫ বছর যাবত নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আছে, তার আবার নতুন কি নিষেধাজ্ঞা?

এগুলি আমেরিকার লিডারদেরকে ভালো করে মাথায় নেয়া উচিত। এ গুলি ভালো লক্ষন নয় আমেরিকার জন্য।

7/6/2022-NATO Conditions-Fin and Sweden

জেনস স্টল্টেনবার্গ বলেছেন যে, আগামী ২৮-৩০ জুন ২০২২ তারিখে ন্যাটোর সম্মিলিত মিটিং এ ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন যতোক্ষন না তুরুষ্কের দাবী না পুরন করবে, ততোক্ষন তারা ন্যাটোর সদস্য পদের জন্য মনোনীত হবেন না। তিনি আরো বলেছেন “No country has suffered as much from terrorist attacks as Turkey," Stoltenberg said, adding that "Turkey is an important ally and when an ally has concerns it should be discussed and the problem resolved.” এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নর্থ মেসিডোনিয়ার উদাহরন টেনে বলেন, গ্রীসের বিরোধিতার কারনে মেসিডোনিয়াকে ১০ বছর লেগেছিলো ন্যাটোর মেম্বার হতে।  তবে মাদ্রিদে এই দুইটি দেশ অতিথি হিসাবে থাকতে পারেন কিন্তু কোনো কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারন তুরষ্ক ন্যাটোর একটি অতীব ইম্পর্ট্যান্ট মেম্বার যাকে ন্যাটোর খুবই দরকার।

যদি এটাই হয়, তাহলে এই দুটি দেশের অবস্থা এখন কি হবে? একদিকে রাশিয়াকে ক্ষেপাইয়া দিলো, আগের অবস্থানে তো আর যেতেই পারবে না যদিও বারবার রাশিয়া একটা কথাই বলেছিলো যে, তাদের কোনো ভয় নাই যেমন ছিলো না বিগত বছরগুলিতেও। আবার না ন্যাটোর কোনো সিমপ্যাথি পাইলো।

ন্যাটো ষ্টুপিড নাকি দেশ দুটির নেতারা?

7/6/2022-আবার আলোচনায় নর্দান আয়ারল্যান্ড

পুরানো ঘা আবার নতুন ঘায়ে পরিনত হতে যাচ্ছে। আর সেই ঘায়ের রেসে এবার ইউরোপ না নিজেই আহত হয় কে জানে। প্রসংগ- নর্দান আয়ারল্যান্ড। 

নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রটোকলের অনেক প্রশ্নই অমীমাংসিত থেকে গেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্রেক্সিট চুক্তি সাক্ষরীত হলেও আয়ার ল্যান্ড কে নিয়ে ইউরোপ আর ব্রিটেনের মধ্যে অনেক দর কষাকষি চলছিলো। শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট চুক্তির ১৬ নম্বর ধারা সংযোজন করে অবশেষে ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের চিরতরে বিচ্ছেদ হয়। এর মানে ব্রিটেন কোনোভাবেই আর ইউরোপিয় ইউনিয়নের সদস্য নয়।

আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে এতো কি সমস্যা ছিলো? নভেম্বর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালে আমার একটা পূর্নাজ্ঞ লেখা ছিলো যা পর পর ২টা প্রকাশনায় কাভার পেজ হিসাবে ডিফেন্স জার্নাল প্রকাশ করেছিলো। সেখানে এই আয়ার ল্যান্ড এর স্ট্যাটাস নিয়ে বিস্তারীত বলা হয়েছিলো। তারপরেও সবার কিছু মেমোরী ফ্রেস করার জন্য বলছি যে,

আইরিশ প্রজাতন্ত্র দুটুভাগে বিভক্ত, একটা শুধু আয়ারল্যান্ড নামে পরিচিত, আরেকটা নর্দান আয়ারল্যান্ড নামে। এই আয়ারল্যান্ড দ্বীপের আয়ারল্যান্ড অংশটি ইইউর সদস্য আর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ। ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারনে নর্দান আয়ারল্যান্ডও যুক্তরাজ্যের সাথে ইউরোপিয়ান ব্লক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আইরিশ প্রজাতন্ত্র বা আয়ারল্যান্ডের দুটু অংশই ইউরোপিয়ান ব্লকের সাথে থাকতে চেয়েছিলো এবং তারা সেভাবেই গনভোটে রায় হয়েছিলো। ইউরোপের যে কোনো দেশ কোনো প্রকার শুল্ক ছাড়া, কাস্টম চেক ছাড়া, কোনো ভিসা ছাড়া এক ইউরোপিয়ান দেশ আরেক ইউরোপিয়ান দেশে যাতায়ত, মালামাল পরিবহন, প্রোটেকশন, মালের স্ট্যান্ডার্ড সব কিছু অবাদে চলে। কিন্তু যখনই নর্দান আয়ার ল্যান্ডে কিছু আসবে সেখানে আর সেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোনো কিছু বহাল থাকার কথা নয়। এখানে সব কিছু ভিন্ন একটা দেশের মতো আচরন করার কথা কিন্তু এই আয়ারল্যান্ড তো মুল আয়ারল্যান্ডের সাথেই থাকতে চায়!! ফলে একটা দেশকে কেচি দিয়ে দুই ভাগ করে ফেলার মতো অবস্থা দারায়। ইউরোপিয়ান ব্লকে থাকলে এটা আর সমস্যা হতো না। কিন্তু ইউরোপ আর ব্রিটেনের ডিভাইডিং লাইনে চলে এসছিলো নর্দান আয়ারল্যান্ড জাষ্ট একটা ব্রেক্সিটের কারনে। অনেকদিন এর স্ট্যাটাস নিয়ে ঝুলে ছিলো। অনেক প্রপোজাল, অনেক অপশন অনেক সমাধানের পথ খুজেও যখন সমঝোতা হয় নাই।  ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ব্রিটেনের একমাত্র স্থলসীমান্তে পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নামের বিশেষ ধারা রাখা হয়েছিল৷ ১৯৯৮ সালের আইরিশ শান্তি চুক্তির স্বার্থে ব্রিটেনের এই প্রদেশকে ইউরোপীয় অভিন্ন বাজারের মধ্যে রাখার চাপ মেনে নিতে কার্যত বাধ্য হয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। ব্রিটেনের সংসদও ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত সেই প্রোটোকল অনুমোদন করে। যাকে ১৬ নাম্বার ধারা বলা হয়। এই ১৬ নম্বর ধারাটি এখানে বলছি না। প্রায় ৮টি বিশেষ প্রটোকল আছে এর মধ্যে। এই প্রটোকলে ইইউ থেকে ব্রিটেন চলে যাওয়ার পর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বাণিজ্যনীতি কী হবে, তা বলা আছে।

তাহলে এখন আবার কি সমস্যা জাগরন হলো একে নিয়ে?

বাস্তবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে এক অদৃশ্য সীমানা স্পষ্ট হয়ে ওঠায় একতরফাভাবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে ব্রিটেন। অন্যদিকে ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে কোনোরকম মৌলিক রদবদল করতে প্রস্তুত নয়

সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশ৷ ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ব্রিটেনের একমাত্র স্থলসীমান্তে পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নামের বিশেষ ধারা রাখা হয়েছিল৷ ১৯৯৮ সালের আইরিশ শান্তি চুক্তির স্বার্থে ব্রিটেনের এই প্রদেশকে ইউরোপীয় অভিন্ন বাজারের মধ্যে রাখার চাপ মেনে নিতে কার্যত বাধ্য হয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার৷ ব্রিটেনের সংসদও ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত সেই প্রোটোকল অনুমোদন করে৷ কিন্তু বাস্তবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে এক অদৃশ্য সীমানা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠায় একতরফাভাবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে ব্রিটেন। অন্যদিকে ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে কোনোরকম মৌলিক রদবদল করতে প্রস্তুত নয়৷

DW এর প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ ……….[ব্রিটেন ব্রেক্সিট চুক্তির ১৬ নম্বর ধারা কাজে লাগিয়ে এমন একতরফা পদক্ষেপ নিলে তার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে ইইউ ব্রিটেন থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পণ্যের সরবরাহ আরও সহজ করতে ইইউ একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখবে বলে জানিয়েছে ইইউ কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারস সেফকোভিচ জানিয়েছেন, তিনি আগামী সপ্তাহেই সেই প্রস্তাবের খসড়া পেশ করবেন কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য সম্ভব না হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইইউ ব্রিটেনের পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক চাপাতে পারেব্রিটেনের শিল্প-বাণিজ্য জগত এমন চরম পদক্ষেপ এড়াতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেবার আহ্বান জানিয়েছে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে বিঘ্ন নয়, ইইউৃর সঙ্গে সংঘাতের কারণে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভঙ্গুর শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে সে ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে মোটেই ব্রিটেনের পাশে দাঁড়াবেন না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই ইউরোপের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ব্রিটেনের স্বার্থের কতটা ক্ষতি করবে, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে]

গত নির্বাচনে ৯০ টি আসনের মধ্যে শিন ফেইন পেয়েছে ২৫টি আর ডিইউপি পেয়েছে ২৫। ৩য় পার্টি পেয়েছে ৯টি।  কেহই সরকার গঠনে সমর্থ নয়। ডি ইউ পি চুক্তি বাতিলের পক্ষে। ৩য় পার্টি  চুক্তি বাতিলের পক্ষে অর্থাৎ ইউনাটেড আয়ারল্যান্ড। এর মানে নর্দান আয়ার ল্যান্ডের বিচ্ছেদ হতে পারে মুল ব্রিটেন থেকে। দেশটা আরো ছোত হয়ে যাবে এটা সিউর। আর তা না হলে যুদ্ধ। আর যুদ্ধ হলে ইউরোপ তো আর ব্রিটেনকে ছেড়ে দিবে না। আয়ার ল্যান্ড যে ইউরোপের একটা দেশ, তাই।

দেখা যাক, বরিস ভাই কি করেন। আর উরসুলা কি করেন।

01/06/2022-Kissinger-peace in Ukraine

সাবেক ইউএস সেক্রেটারী অফ স্টেট হেনরী কিসিঞ্জারের দূরদর্শীতার প্রশংসা না করেই পারলাম না। ৯৮ বছরের এই ঝানু পলিটিশিয়ান বলেছেন-“আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়ার সাথে বসা না হয়, তাহলে রাশিয়া স্থায়ীভাবে ইউরোপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে চায়নার সাথে স্থায়ীভাবে মিত্রতা করার সম্ভাবনা। রাশিয়া গত ৪০০ বছর যাবত যেখানে সে ইউরোপের সাথে আছে, তাকে কোনোভাবেই অবমুল্যায়ন করা যাবে না। নীতিগত এবং আদর্শগতভাবে ইউক্রেনের আগের অবস্থার সাথে যদি  ডিভাইডিং লাইনে না থাকা হয়, এরজন্য অনেক বড় মাশুল অপেক্ষা করছে। আমার মতে [কিসিঞ্জারের মতে], যদি ওই লাইনের বাইরে যুদ্ধকে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেটা শুধু ইউক্রেনের সাধীনতাকেই খর্ব করবে না, সেটা ন্যাটোর সাথে রাশিয়ার সরাসরি যুদ্ধকেই প্রলুব্ধ করবে যা হবে আত্তঘাতী। মিন্সক চুক্তি অনুযায়ী যা করার দরকার ছিলো তাঁকে কোনোভাবেই ইউক্রেনের বা ন্যাটোর ভাংগার প্রয়োজন ছিলো না। যখন রাশিয়া ৮ বছর আগে ইউক্রেনে আর্মড কনফ্লিক্ট করে, তখনি আমি ]কিসিঞ্জার] বলেছিলাম, ইউক্রেন নিরপেক্ষ থাকুক, এবং ইউরোপ আর রাশিয়ার মাঝে একটা সেতুবন্ধন তৈরী করুক। কিন্তু তারা সেটা না করে ইউরোপের দিকে ঝুকে গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে।“  

কিসিঞ্জার আরো বলেন, “ইউরোপিয়ানদের এটা মনে রাখা উচিত যে, গত ৪০০ বছর যাবত রাশিয়া ইউরোপের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং রাশিয়ার যতো না ইউরোপকে দরকার তার থেকে অনেক বেশী দরকার রাশিয়াকে ইউরোপের। ইউরোপের তাই এটা সর্বদা মাথায় রাখতে হবে যেনো রাশিয়া কোনোভাবেই ইউরোপ থেকে স্থায়ীভাবে বিদায় না নেয়। রাশিয়া যদি স্থায়ীভাবে চায়নার সাথে মিত্রতা করে ইউরোপকে বিদায় জানায়, সেক্ষেত্রে ইউরোপের অবস্থা গুরুতর ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কারন চায়না এবং রাশিয়া মিলিত শক্তি আমেরিকা এবং ইউরোপের চেয়ে অনেক বেশী এবং এটা সারা বিসশে একটা দূর্জয় নেমে আসবে। “

তিনি আরো বলেন, “ইউক্রেনের রাজনীতিদের এটা বুঝতে হবে যে, অস্ত্র চাওয়ার থেকে তাদের শান্তির প্রয়োজন তাদেরই বেশী। তাই যুদ্ধ বিরতির জন্য বা শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকেই এগিয়ে আসতে হবে।“  

 

30/5/2022-রাশিয়া ৯০ সাল থেকেই প্যাসিভ

রাশিয়া ১৯৯০ সাল থেকেই একটা প্যাসিভ মোডে ছিলো কারন তার সক্ষমতা ভেংগে গিয়েছিলো সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর। অন্যান্য সুপার পাওয়ারের মতো রাশিয়া তেমন কোনো ভুমিকা রাখতে না পারার কারনে তার ফরেন পলিশি ছিলো খুবই নমনীয়। আর এই সুযোগ গ্রহন করেছিলো আমেরিকা একচ্ছত্রভাবে। ইরাক, ইরান, নর্থ কোরিয়া, আফগানিস্থান, লিবিয়া, প্যালেষ্টাইন, ভেনিজুয়েলা, ফিলিপাইন, ইত্যাদি দেশসমুহে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা যায়। এ সময়ে দেশে দেশে রিজিম চেঞ্জের একটা থিউরী তৈরী হয়। যখনই কোনো দেশ এই পশ্চিমাদের বাইরে দাড়াতে চেয়েছে তখনই তাদের উপর নেমে এসছে খড়গ-আর সেটা প্রথমে নিষেধাজ্ঞা। মজার ব্যাপার হলো, প্রতিবারই এই নিষেধাজ্ঞা একটা মারাত্তক অস্ত্রের মতো কাজ করেছিলো এবং সফল হয়েছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ন্যাটো, জাতীসংঘ, সেন্ট্রাল রিজার্ভ ব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক, এমেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল, আইসিজে, সমস্ত মিডিয়া ইত্যাদি যাইই কিছু বলি না কেনো, সব কিছুর নির্দেশদাতা যেনো একটি দেশ। আর তা হচ্ছে আমেরিকা। কোথাও কোন ট্রু জার্নালিজম নাই। ফলে যা কিছু ইচ্ছা করা যায় এমন একটা ধারনা আমেরিকার হয়েই গিয়েছিলো। সবাই তার কথা শুনতে বাধ্য, সবাই তার কথা মতো চলতে বাধ্য এবং যারাই তাদের কথামতো চলবে না, তাদেরকে একই অস্ত্রে বিদ্ধ করার ক্ষমতা তার আছে বলে আমেরিকার মনে ভয় একটু কমই ছিলো। কিন্তু রাশিয়ার বেলায়? সে তো আহত বাঘ। আহত বাঘ হয়তো প্রতিঘাত করার চেষ্টা করেনা ঠিকই কিন্তু ভিতরে তার প্রতিশোধের নেশায় থেকেই যায়। শুধু তার দরকার হয় কিছুটা সময়ের। রাশিয়া এখন ঠিক সেই জায়গাটায়।

সে হয়তো আরো পরে তার প্রতিক্রিয়া জানাতো, হয়তো সে আরো বড় প্রিপারেশনের পথে সে ছিলো। কিন্তু তাঁকে যখন কোনঠাসা করে তার ঘরের দরজায় ন্যাটো নোংগড় করতে চাইল, সে আর কাল বিলম্ব করে নাই। প্রিপারেশন তার চলমান ছিলোই। চীন, ভারত, পুর্ব এশিয়া, আফ্রিকান আর আরব দেশ মিলে তার একটা চলমান প্রিপারেশন প্রক্রিয়া ছিলোই। যা আমেরিকা বা ইউরোপিয়ানদের ছিলো না। ট্রাম যখন রাশিয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলো, সেটা এমনি এমনি করে নাই। ট্রাম্পের সাথে রাশিয়ার একটা গোপন বন্দধুত্ত ছিলো। সেই সুবাদে সে হয়তো কিছু গোপন ব্যাপার জেনেই গিয়েছিলো যা ট্রাম্প পরবর্তীতে আর গোপন রাখতে পারে নাই। আর সেটার খেসারত সে দিয়েছে নির্বাচনে পুনরায় না জিতে। সেখানেও রাশিয়ার হাত থাকতেই পারে যেমন হাত ছিলো প্রথবার ট্রাম্পের বিজয়ের উপর।

রাশিয়ার বিশেষ অভিযান (সে কিন্তু এটাকে যুদ্ধ বলে অভিহিত করে নাই, যেনো এটা একটা এক্সারসাইজ, একটা জাষ্ট অপারেশন) যখন ইউক্রেনে নেমে এলো, রাশিয়ার হোম ওয়ার্ক করা ছিলো, সব জায়গায় একতার পর একটা অপারেশনাল প্লেনের মতো সিরিয়াল করা অর্ডার এবং বিকল্প, বিকল্পের বিকল্প সাজানোই ছিলো। ২২ বছরের রাষ্ট্রপ্রধানের অভিজ্ঞতা সহ মোট ৪০ বছরের কেজিবি একজন মানুষ কে ছোট করে ভাবার কোনো কারন নাই। বর্তমান ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের লিডারস গন, ন্যাটোর কমান্দার গন কেজিবির এই প্রধানের কাছে অভিজ্ঞতায় অনেক পিছিয়ে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গুলির আইন প্রনেতাদের মধ্যে মত ৫৫% হচ্ছেন শুধুমাত্র মহিলা যাদের পলিটিক্যাল অভিজ্ঞতা খুবই কম। কারো কারো বয়স ৪০ এর ও নীচে।  ফলে আমেরিকার জন্য এসব ইউরোপিয়ান দেশ সমুহে প্রভাব খাটানো খুব সহজ ছিলো। রাশিয়াকে ইউক্রেনের উপর আক্রমনের কারনে সেই একই আস্ত্র (নিষেধাজ্ঞা) দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হলো যা ছিলো মারাত্তক আত্তঘাতী। রাশিয়া গত ৩০ বছরের পশ্চিমাদের এই স্টাইল নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষন করে দেখেছে, কোথায় কোথায় রাশিয়াকে হিট করা হবে। রাশিয়া সেই প্রোবাবল হিটিং এরিয়া ভেবে তার বিকল্প তৈরী সে করেছিলো একমাত্র রিজার্ভ ব্যাংকের কাউন্তার মেজার ছাড়া।

ইউক্রেন অপারেশনে রাশিয়া অনেক গুলি নতুন মিলিটারী ট্যাকটিক্সের জন্ম দিয়েছে। প্রথমে কিয়েভের মাত্র ১৫ কিমি দূরে থেকেও সে কিয়েভ ধংশ করে নাই এবং দুখল করে নাই। এটাকে বলা যায় ‘সুনামী ট্যাক্টিক্স”। মানে প্রথমে বীচ শুকিয়ে দেয়া, সবাই আনন্দে বীচে নামবে, পরে বড় ঢেউ দিয়ে সব তলিয়ে দেয়া হবে। রাশিয়া কিয়েভে গিয়ে সবাইকে এটাই বুঝিয়েছিলো, আর এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের এয়ার ফিল্ডস, আর্মামেন্টস স্টোর, পিস কিপিং অপারেশন আস্থানা, যেখানে যেখানে ইউক্রেনের সামরীক সনজাম ছিলো বা তৈরী হতো সব কিছু ধংশ করছিলো। একটা দেশকে পংগু করে দেয়ার মতো।

খেয়াল করলে দেখবেন প্রাথমিক দিন গুলিতে যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতা ব্রিন্দ, পশ্চিমা নেতা রা কি করবেন, কি করা উচিত, কি করলে কি হবে সেগুলি নিয়ে রাত ভর ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো, আর ওদিকে রাশিয়ার পুতিন নির্বিকার কাজ করে যাচ্ছিলো। অদ্ভুদ পার্থক্য। এক স্টন্টেনবার্গ, আরেক উরসুলা, এবং জো বাইডেন সহ বরিস ছাড়া কোন নেতার উচ্চসর শুনা যাচ্ছে না। সবাই জি স্যার জি স্যার ভুমিকায়। ফলে বারবার ভুল সিদ্ধান্ত ভুল সিগন্যাল যাচ্ছিলো ইউক্রেনের কাছে। ইউক্রেন মরিয়া কিন্তু পাশে সবাই অথচ কেউ নাই যেনো মাঠের কিনারে সবাই চিৎকার চেচামেচি কিন্তু বল শট দেয়ার মতো ক্ষমতা নাই।

২৮/৫/২০২২-৩০ বছর পিছিয়ে আমেরিকা

প্রায় ৩০ বছর পিছিয়ে গেছে আমেরিকা এই অঞ্চলে এই ধরনের একটা ট্রেড ইনিশিয়াটিভ গ্রুপ তৈরিতে। যেখানে চায়না, ইন্ডিয়া, রাশিয়া আরো ৩০ বছর আগে শুরু করেছিলো। এই অঞ্চলে যে কয়টা সবচেয়ে পুরানো এবং বড় ট্রেড ইনিশিয়াটিভ আছে সেগুলি (১) RCEP (২) CPTPP (৩) Belt and Road । আর এর প্রতিটিতেই চায়না, রাশিয়া আর ইন্ডিয়া জড়িত। এদের প্রত্যেকের ইনিশিয়াটিভের উদ্দেশ্য একই।

অন্যদিকে এই ১৩ টা দেশের বর্তমান যারা নতুন করে জয়েন করছে, তারা হলোঃ আমেরিকা, অষ্ট্রলিয়া, ব্রুনেই, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, এবং ভিয়েতনাম।

এখানে রাশিয়া আর চায়না নাই বটে কিন্তু তাদের গ্রেট এলায়েন্স ইন্ডিয়া আছে, ফিলিপাইন আছে, ইন্দোনেশিয়া আছে, আর আছে ভিয়েতনাম।

হিসাবটা খুব সহজ বলে মনে হবে না।

আমেরিকা বারবার এতো তাড়াহুড়া করছে এর অন্তর্নিহিত মানে বুঝার জন্য একটা কথাই যথেষ্ট। আর সেটা হলো রাশিয়ার উপর 'নিষেধাজ্ঞা' দিয়ে রাশিয়া এই অঞ্চলগুলিতে একচেটিয়া বাজার ধরে ফেলতেছে আর ডলার মুদ্রা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে সুইফট ব্যবস্থা সহকারে। তাছাড়া, অল্প দামে রাশিয়া থেকে কমোডিটি পাওয়ায় অন্যান্য দেশের কমোডিটির দাম আমেরিকার কমোডিটির দামের চেয়ে কম থাকবে। ফলে আমেরিকার সব কমোডিটি খুব অচীরেই বাজারে দামের কারনে পিছিয়ে যাবে। বাজার হারানোর সম্ভাবনা খুব বেশী।

নিষেধাজ্ঞাটা খুবই খারাপ ফলাফল এনে দিয়েছে সমস্ত ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশে। একদিকে রিফুজি ক্রাইসিস নিয়ে ভোগা শুরু হবে ইউরোপের দেশ গুলি, অন্যদিকে এনার্জি সংকটে পড়ছে ইতিমধ্যে, ইউরোপিয়ান দেশগুলির মধ্যে ঐক্যের ফাটল শুরু হয়ে গেছে। সাধারন নাগরিকগন এখন আর এসব চাইছে না।

ফলে আমেরিকার সেফ এক্সিট পেতে হলে, ন্যাটো নিয়ে এতো কিছু থেকে সরে আসতে হবে, রাশিয়ার সাথে (ইন্ডিয়া, চায়নাসহ) এদের সাথে একটা সৌহার্দ্যপূর্ন কম্প্রোমাইজে আসতেই হবে।

এই যুদ্ধটার আনবিক বোমাটা হচ্ছে আসলে ইকোনোমি। রাশিয়া তাই যুদ্ধটা অনেক বিলম্ব করবেই। যত বিলম্ব হবে, ততো ইউরোপ আতঙ্কিত এবং সাফার করতে থাকবে। নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে রাশিয়া। যদি সারা বিশ্ব রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিতো, তাহলে রাশিয়ার শক্তি কমাতে পারতো। শুধুমাত্র পশ্চিমা দেশ আর ইউরোপ নিয়েই তো সারা বিশ্ব নয়। এখানেই ভুলটা হয়েছে বড় বড় নেতাদের।

25/5/2022-অপিনিয়ন ইস ডিনায়েড

রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমন করার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন যখন ন্যাটোতে যোগদানের একটা সুর তুল্লো, তখন ইংল্যান্ডের ইয়াং জেনারেশনের ব্রেক্সিট ভোটের মতো ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ইয়াং জেনারেশনও একই রকমভাবে ন্যাটোতে যোগ দিলে তাদের প্রোটেকশন বাড়বে এই ধারনায় একটা জোয়ারের মতো তাল দেয়া শুরু করেছিলো। ফলে আগের বছরগুলিতে ন্যাটোতে যোগদানের মতামতের ৪২% এর বিপরীতে হটাত করে স্যামপ্লিং এ ৭০% পজিটিভ মতামত চলে আসে। প্রাথমিকভাবে ন্যাটো এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যেভাবে ইউক্রেনের পাশে দারানোত অংগীকার ব্যক্ত করেছিলো, তাতে যে কোনো আপাতত একটা দূর্বল জাতী সেটা গ্রহন করবেই। এই মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন রেফারেন্ডাম লাগবে না এই ভিত্তিতে পার্লামেন্টে প্রায় এক তরফা ভোট পাশ হয়ে যায় ন্যাটোতে যোগদানের জন্য।

পরবর্তীতে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর হাবভাব, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কিংবা বিশ্ব মন্ডলে ইউক্রেন নাগরিকদের দেয়া সুযোগ সুবিধার উপর চুলচেড়া বিশ্লেষনের উপর দেশের স্ট্র্যাটেজিক বুদ্ধিদাতাদের লেখালেখি, মতামত এবং তারসাথে রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সারা দুনিয়ায় যেভাবে নেতিবাচক প্রভাব ঘটছে, তার রেশ অনুভুতিতে এনে ধীরে ধীরে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের সাধারন নাগরিকদের ভাবনায় ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারটায় টনক নড়া শুরু করে। এর বাইরে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার এক তরফা আগ্রাসনের কারনে এবং ইউক্রেনের পাশে কাউকে না পাওয়ার কারনে এই দুই দেশের জনগনের মতামত হটাত করে ভাটা পড়তে শুরু করে। এখন সেই সার্ভে এসে দাড়িয়েছে প্রাতমিক ৪২% এরও নীচে। এর মধ্যে তুরুষ্ক এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রবল আপত্তিতে ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে একটা অনিশ্চিত আশংকার স্রিষ্টি হয়। এছাড়া ন্যাটোতে যোগ দেয়ার সফল মেম্বার হওয়ার মাঝখানে প্রায় এক বছর সময়ে ‘না ন্যাটো’ না ‘নিরপেক্ষ’ এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার হুমকী একটা ভয়ংকর আতংকের মধ্যে পড়েছে দেশের নাগরিকগন। প্রায় ১৩০০ কিমি কমন বর্ডারের দেশ ফিনল্যান্ড সর্বদা রাশিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশের কাছে একটা যুদ্ধাংদেহী অবস্থায় থাকতে হবে, এইসব কারনে সবাই এখন ন্যাটোতে যোগ দেওয়াকে রিস্কী মনে করছেন। এমন অবস্থায় ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে এখন অধিকাংশ জনগন ন্যাটোতে যোগদানে আগ্রহী নয়। তবে তারা সারাদেশের জনগনের একটা চুড়ান্ত মতামতের জন্য রেফারেন্ডাম চাইছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন রেফারেন্ডাম দিতে নারাজ। এই টানাপোড়েনে দেশের ভিতরে একটা চলমান ক্ষোভের লক্ষন দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় ফিনল্যান্ডে বলা হচ্ছে- যারা ন্যাটোতে যোগদানের বিপক্ষে তারা রাশিয়ান পন্থী। আর এই অপবাদে প্রচুর সংখক নাগরিক পুলিশের হয়রানী, এমন কি জেল জুলুমের খপ্পরে পড়ছেন বলে ফিনিশ এক জার্নালিষ্ট সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, Opinion is denied

তবে একটা জিনিষ তো নিশ্চিত, শেষ পর্যন্ত সাধারন জনগনের চুড়ান্ত মতামতের জন্য রেফারেন্ডাম না নিলে শেষ অবধি প্রেসিডেন্ট সিউলি নিনিতসুকে এক সময় বিচারের কাঠগরায় দারাতে হতে পারে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, যদিও ফ্রান্স ইউক্রেনের ন্যাটো মেম্বারশীপ বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগদানের ব্যাপারে নেতিবাচক নয়, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন এবং ফ্রান্সের পররাষ্টমন্ত্রী ইউক্রেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ পাইতেই বলেছে এক যুগ পার হবে। এর মানে, ইউক্রেনকে সহজেই ইউরোপিয়ান ব্লকে বা ন্যাটোতে নেয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তাহলে কেনো আর কিসের কারনে এই যুদ্ধ?

সেই একই কাতারে কি এতো চমৎকার দুটি দেশ সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড পড়তে যাচ্ছে?

19/5/2022-ফিলিপিনের নির্বাচিত বং

ফিলিপিনের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বং মার্কোস এবং তার আগের প্রেসিডেন্ট দূতেরের মধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাপান+ দক্ষিন কোরিয়ার ভিজিট উপলক্ষে ব্রিটিশ স্কলার এবং জিও পলিটিক্যাল এনালাইসিস্ট মার্টিন জ্যাক্স এর কিছু টুইটার মেসেজ শেয়ার করেছে। টুইটারে মার্টিন তার এনালাইসিসে বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ তথ্য শেয়ার করেছে।

(ক) আমেরিকা এখনো অগোছালো। এশিয়ার ব্যাপারে বাইডেনের কোনো অর্থনইতিক পরিকল্পনা নাই।

আমেরিকা চায়না “বেল্ট এবং রোডের” চুক্তির ব্যাপারে কিছু উচ্চাকাখাংকা দেখালেও সেটা চায়নার কারনে আমেরিকা কোনোভাবেই সফল হবে না। কারন চায়না ইতিমধ্যে আমেরিকার চেয়ে শুধু অর্থনীতির ব্যাপারেই না, কোয়ালিশনের দিক দিয়ে এগিয়েই আছে।

(খ) পূর্ব এশিয়াতে আমেরিকা মিলিটারীর দিক দিয়ে খুবই একটা নাজুক অবস্থায় আছে। এখানে চায়না পুর্ব এশিয়াতে আমেরিকা থেকে অনেক গুন এগিয়ে আছে। প্রকৃতপক্ষে চায়না এসব স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনাগুলি গত ১৯৯০ সাল থেকেই হাতে নিয়েছিলো যা আমেরিকা বুঝতেই পারে নাই। ফলে আমেরিকা এই পূর্ব এশিয়াতে তার কোনো মার্কেট বেজড সম্পর্ক গড়েই উঠে নাই। বলতে গেলে প্রায় বিচ্ছিন্ন।

(গ)  পুর্ব এশিয়াতে খুবই শক্ত সামর্থ তিনটা ট্রেডিং এগ্রিমেন্ট আছে। এরা হচ্ছে- (১) RCEP (২)  CPTPP (৩) Belt and Road এই তিনটার মধ্যে একটাতেও আমেরিকা নাই। কিন্তু চায়না তিনটার মধ্যেই আছে। আর এগুলি গত ২০ বছর আগে থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন তো আমেরিকার পক্ষে আর এসবে ঢোকার কোনো সম্ভাবনাই নাই।

(ঘ) পুর্ব এশিয়ার সাথে চায়নার সম্পর্কটা দুতেরের গত ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময়ই খুব জটিল ছিলো। দুতেরে নির্বাচিত হবার পর সে চায়নার সাথে আরো ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখবে বলে অংগীকার করেছিলো। নির্বাচিত হয়েওছিলো। এবারের নির্বাচনে মার্কোস পরিবারের সদস্য যাদেরকে প্রায় ২০ বছর আগে উতখাত করা হয়েছিলো, সেই মার্কোস পরিবারের সদস্যই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবার আরেকটি কারন যে, সেও দুতেরের থেকেও বেশী কাছে থাকবে চায়নার এটাই ছিলো তার নির্বাচনী মেনিফেস্টুর একটা অংশ। ফলে ফিলিপাইনকে আমেরিকা কাছে পাবার সম্ভাবনা কম। তার মানে পুর্ব এশিয়াতে আমেরিকার পদধুলী প্রায় স্তিমিত।

এই সব কিছবু মিলিয়ে এশিয়া এবং পুর্ব এশিয়াতে আমেরিকার বর্তমান কৌশল খুব একটা কাজে আসবে না হোক সেটা জাপানের মাধ্যমে বা দক্ষিন কোরিয়া। ফলে জো বাইডেনের ভিজিট কতটা আশা পুরুন করবে সেটা এখন বলা মুষ্কিল।

অনেক দেরী হয়ে গেছে ব্যাপারটা।

১৭/০৫/২০২২- কিছু তথ্য বেশ মজার।

ঠিক এই সময়ে কংগ্রেসে মোট ৩৭ জন ইহুদী আছেন। তারমধ্যে ৩৫ জন হচ্ছে রুলিং ডেমোক্রেটিক পার্টির এবং ২ জন বিরোধী রিপাবলিকান দলের। কট্টর ইহুদীরা সবসময় ডেমোক্রাটদেরকেই ভোট দেন আর এই ভোট ব্যাংকের অনুপাত সারা আমেরিকার জনগনের মধ্যে প্রায় ৩৫%। অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ ভোট ডেমোক্রাটদের জন্য প্রায় নিশ্চিত। আর এ কারনে অনেকেই বলে থাকেন যে, যখনই ডেমোক্রাটরা ক্ষমতায় আসবে, ধরে নিতে হবে দেশ ইহুদীদের দ্বারা চালিত হচ্ছে। ডেমোক্রাট দলের জন্য বেজ কন্সটিটিউয়েন্সীর নির্নায়ক হচ্ছে ইহুদীরা। আমেরিকার নির্বাচনের সময় ইহুদীদের প্রধান বৈশিষ্ঠ হচ্ছে, একদল ইহুদী ডেমোক্রাটদের পক্ষে প্রচন্ড পরিমানে জনমত তৈরী করেন, আর আরেকদল ইহুদী একই সময়ে বিরোধী দল রিপাবলিকানদের বিপক্ষে জনমত তৈরী করতে থাকেন। ফলে রিপাবলিকানরা কোন ঠাসা হয় বারবার। কোনো কারনে যদি ডেমোক্রাটরা জিততেও না পারে, তারপরেও কোনো না কোনোভাবে ইহুদী আওন প্রনেতারা যেনো জয়ী হয় সে চেষ্টায় থাকে এই ইহুদীরা। সুপ্রিম কোর্টের অবস্থা সার্ভে করলে দেখা যাবে যে, প্রায় ৭৫% আইনজীবি ইহুদী বা ইহুদীপন্থী। যারা সর্বদা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে পরামর্শ দেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইহুদীরা খুবই অপছন্দ করে। প্রায় ৭৩% নেগেটিভ প্রচারনা করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।

গত নির্বাচনে ভোটারদের ভোট গননায় দেখা গেছে যে, বাইডের প্রাপ্ত ভোটের প্রায় ৬০% এর উপরে ইহুদীদের ভোট পড়েছিলো প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, জো বাইডেনের পূর্ব পুরুষেরা ছিলেন আইরিশ নাগরিক এবং ফ্রান্স নাগরিক।

বর্তমান স্পীকার ন্যান্সী পেলোসির অরিজিনালিটি হচ্ছে ইতালিয়ান। তার বাবা থমাস ডি আলেসান্দ্রো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রুজভেন্টের সময় এমপি ছিলেন এবং ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে থমাস ডি আলেসান্দ্রো প্রেসিডেন্ট রুজভেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তুমুল জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ছিলেন কট্টর ইহুদীপন্থী এবং ইহুদী রাষ্ট্র সৃষ্টির একজন প্রধান কর্নধার। ( লিংক পড়তে পারেন-

(https://www.speaker.gov/newsroom/jerusalem-post-pelosis-father-bucked-fdr-truman-aid-jews-israel)

 এবার আসি এন্টনি ব্লিংকেন এর ব্যাপারে। এন্টনী ব্লিংকেন আপাদমস্তক ইহুদী পরিবারের সদস্য। Blinken was born on April 16, 1962, in Yonkers, New York, to Jewish parents, Judith (Frehm) and Donald M. Blinken, who later served as U.S. Ambassador to Hungary.  His maternal grandparents were Hungarian Jews. Blinken's uncle, Alan Blinken, served as the U.S. ambassador to Belgium. His paternal grandfather, Maurice Henry Blinken, was an early backer of Israel who studied its economic viability, and his great-grandfather was Meir Blinken, a Yiddish writer.

(লিংক পড়তে পারেন- https://en.wikipedia.org/wiki/Antony_Blinken)

অংকটা বেশ মজার। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে এর কি কোনো ইফেক্ট আছে বলে মনে হয়?

18/5/2022-সুই-ফিনল্যান্ডের হেরীটেজ

গতকাল একটা খবরে খুবই আশ্চর্য হয়েছি যে, ফুন ল্যান্ড এবং সুইডেনদের একটা কমন রোগ আছে যা হেরিডিটি হিসাবে বংশগতভাবে ওরা পায়। আর সেটা হলো জেনেটিক ডিস অর্ডার। এর মাত্রা কমানোর উদ্দেশ্যে ওরা যেটা করে সেটা হলো- ওরা সুইডেন-সুইডেন, বা সুইডেন ফিনল্যান্ড, বা ফিনল্যান্ড-ফিনল্যান্ড কাপ্লিং থেকে বিরত থাকে। কারন উভয় বাবা মা যাদের জেনেটিক ডিস অর্ডার আছে, তাদের বাচ্চাদের ও সেই একই জেনেটিক ডিস অর্ডার  হ ওয়ার সম্ভাওবনা প্রায় শতভাগ। তাই ওরা সব সময়ই চায়, ফিন ল্যান্ড-রাশিয়ান, সুইডেন-রাশিয়ান কাপ্লিং করতে। এর ফলে যেটা হয়েছে, সেটা হলো, প্রায় প্রতিটি সুইডিস বা ফিনিশ পরিবারেই রাশিয়ান বংশভুত নাতি পুতি বিদ্যমান।

ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার এত বড় সিদ্ধান্তটা কোনো দেশই রেফারেন্ডামে আনতে ভয় পাচ্ছে, কারন মিডিয়া হয়তো অতি রঞ্জিত করে ন্যাটোতে যোগ দেবার জনগনের রায় দেখাচ্ছে ৮০% এর উপরে, অথচ বাস্তবে ৪০% এর ও নীচে সাধারন জনগনের সায় আছে বলে এক সুইডিস সাংবাদিক গতকাল TFI Global এর বরাত দিয়েছে।

ওরা ন্যাটোতে যোগ দিক বা না দিক সেটা তাদের ব্যাপার, কিন্তু যদি পরি সংখ্যান টা এমনই হয়, তাহলে তো দেখা যাচ্ছে নাতি পুতিদের মধ্যে এবার যুদ্ধ বা ঝগড়ার সূচনা শুরু হয়ে গেলো।

১৫/৫/২০১৯-২০ বছর আগের কিছু স্মৃতি…পর্ব-৩

আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের কিছু দূর্লভ মূহুর্ত যা এখন অনেক অংশে ইতিহাস। এই ছবিগুলির মধ্যে অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন (আল্লাহ তাদের বেহেস্তবাসী করুন), কেউ কেউ বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, যারা সেই সময় ছোট পুতুলের মতো পুতুল নিয়ে খেলা করেছে, তারা অনেকেই আজ সমাজে কেউ ডাক্তার, কেউ বড় বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীতে কর্মরত, মেয়েদের মধ্যে অনেকেই মা হয়ে গেছে। ছেলেরাও আজ মাশ আল্লাহ খুব ভালো আছে। এইসব বাচ্চা গুলি, কিংবা বড়রা আমার অনেক কাছে মানুষ, এদের আগমন সব সময়ই আমাকে আনন্দিত করেছে। কিছুটা অবসর সময় ছিলো, তাই আগের দিনের কিছু ভিডিও আর স্থীর চিত্র নিয়ে বসেছিলাম। অতীত সামনে চলে আসে, নস্টালজিক হয়ে যাই। হয়ত কোনো একদিন, আমিও এই ভাবে ইতিহাস হয়ে যাবো, কিছুটা সময় কাছের মানুষেরা মনে রাখবে, এক সময় আমার জন্য এই পৃথিবী শেষ। গুটিকতক মনিষী ছাড়া বেশীর ভাগ মানুষেরাই অজানা ইতিহাসে মিশে গিয়ে বিলীন হয়ে যায়।

এটাই পৃথিবীর বাস্তব নিয়ম।

                         

১৪/০৫/২০২২-প্যারাডিম শিফট-ডমিনো ইফেক্ট

আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আমি লিখতে চাচ্ছি- সেটার নাম প্যারাডাইম শিফট। এই প্যারাডাইম শিফটের সাথে ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের একটা সম্পর্ক আমি দেখতে পাই। তাহলে সংক্ষিপ্তভাবে জানা দরকার, এই প্যারাডাইম শিফটটা কি।

যখন সাভাবিক কোনো চিন্তাচেতনা কিংবা কার্যক্রম অন্য কোনো নতুন নিয়ম বা চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে দেখা যায়, তখন এই প্রতিস্থাপিত নতুন পরিবর্তিত চিন্তা চেতনাকেই প্যারাডাইম শিফট বলা হয়। অন্যঅর্থে যদি বলি-এটা হচ্ছে একটা মডেল, তত্ত্ব, বা দ্রিষ্টিভঙ্গি, ধারনা, কিংবা দৃষ্টান্ত যা প্রকৃত তত্ত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি, কিংবা মডেল থেকে ১৮০ ডিগ্রী উলটা। প্যারাডাইমটা আসলেই আসল জিনিষ না, এটা একটা মানষিক ভাবনার সাথে প্রকৃত সত্যের একটা শুধু কাল্পনিক ছবি। কোনো একটা জিনিষের ব্যাপারে আমরা যা ভাবছি, বা দেখছি এর সাথে সেই জিনিষটার যে রকম প্রকৃত বৈশিষ্ট , এই দুয়ের মাঝেই থাকে প্যারাডাইম তত্তটি। এই প্যারাডাইম দিয়ে মানুষ কোনো একটা ধারনা, চিন্তা চেতনা, কিংবা কোনো একটি জিনিষের ব্যাপারে একটা ধারনা পায়। যার প্যারাডাইম শিফট যত কম, সে ততো অরিজিনাল জিনিষের কাল্পনিক রুপ দেখতে পায়।

একটা উদাহরণ দেই- ধরুন আপনি একটা লোকের চেহাড়া দেখে ভাবলেন যে, সে একটা নিশ্চয় ভয়ংকর সন্ত্রাসী। আপনার মন তাকে সেভাবেই ট্রিট করছে, সেভাবেই আপনি তাকে ওই খারাপ মানুষদের মধ্যে লিষ্ট করে ফেলেছেন। অনেকপরে যখন জানলেন যে, লোকটা ছিলো খুবই ভদ্র, ভালো ও খুবই অমায়িক এবং পরোপকারী। তখন আপনি অনেক মনোকষ্টে ভোগবেন। আফসোস হবে এই কারনে যে, আহ, সব কিছু না জেনে, না বুঝে কেনো আমি এমন একটা ভালো মানুষকে খুবই খারাপ ভেবেছি? এই যে নতুন ভাবনা আপনাকে আগের চিন্তাচেতনা থেকে হটাত করে ১৮০ ডিগ্রী উলটে গিয়ে আরেক নতুন ভাবনায় নিয়ে এলো, সেটাই প্যারাডাইম শিফট। থমাস কুন তার বিখ্যাত-“দি স্রাইাকচার অফ সায়েন্টিক রেভ্যুলেশন” বই এ প্রথম প্যারাডাইম শিফট শব্দটি চালু করেন। প্যারাডাইম যার যতো বেশি নিখুত, তার প্যারাডাইম শিফট ততো কম। আর যাদের এই প্যারাডাইম কোনো কিছুর ব্যাপারে প্রায় কাছাকাছি থাকে, তারা আসলেই জ্ঞানী এবং বাস্তববাদী। বর্তমান জগতে মানুষের প্যারাডাইম অনেক অনেক সত্যের থেকে বেশী দূরে বিধায়, আমাদের সমাজে ভুল সিদ্ধান্তে গন্ডোগোল বাড়ছে।

তাহলে এর সাথে ফিনল্যান্ড অথবা সুইডেনের বা ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগের সম্পর্ক কি?

কিছু খন্ড খন্ড ঘটনাকে খাতায় কষে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবেঃ

(১)  ইউক্রেন CIS এর এসোসিয়েট মেম্বার। তারা প্রথম ইউরোপিয়ান দেশের সদস্য হবার জন্য অনুরোধ করে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বির মাসে। কিন্তু তাদের সেই অনুরোধ রক্ষা করা হয় নাই বিভিন্ন রাজনৈতিক বিবেচনায়, বিশেষ করে রাশিয়ার নাবোধক জবাবের কারনে।  শুধু তাইই নয়, এই আমেরিকাই ইউক্রেনে অবস্থিত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডসহ পুরু নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করতে সাহাজ্য করেছিলো। তখন কিন্তু আমেরিকা বা পশ্চিমারা ইউক্রেনের প্রতি ততোটা ভালোবাসা প্রকাশ করে নাই। কারন তখন ইউক্রেনকে তাদের প্রয়োজন ছিলো না, প্রয়োজন ছিলো ওয়ার্শ জোট ভাংগার নিমিত্তে রাশিয়াকে খুশী করা। তাতে ইউক্রেনের পারমানিক ক্ষমতা বিলুপ্ত হলেও পশ্চিমাদের লোকসান নাই।

(২)        ইউক্রেন একটি সমৃদ্ধ শালী দেশ বিশেষ করে ভোজ্য তেল, খাদ্য কমোডিটি, স্টীল, সিরিয়াল, গম ভুট্টা, নিকেল, আয়রন ইত্যাদি। দিনে দিনে রাশিয়া তার ৯০ শতকের ধ্বস থেকে কাটিয়ে উঠে আবার আগের শক্তিতে ফিরে আসছে যা পশ্চিমাদের জন্য সুখকর নয়। তাই তাঁকে চেপে ধরার একটা এজেন্দা দরকার। ইউক্রেন একটা ভালো অপ্সন। কারন এটা রাশিয়ার একেবারেই গোড় দোরায়।

(৩)       আমি, আপনি হয়তো এতো গভীর স্তরে ভাবি না কিন্তু যারা আন্তর্জাতিক খেলোয়ার তারা ঠিকই খবর রাখে কোথায় কি হচ্ছে আর কেনো হচ্ছে। খেয়াল করে দেখলে দেখা যায়, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করলো,  প্রো-ওয়েশটার্ন প্রেসিডেন্ট প্রোসেংকুকে আউট করে দিলো, জর্জয়ায় রাশিয়ার আগ্রাসন কে ঠেকালো না, ওসেটিয়ায়র অবস্থাও একই। চেচনিয়াও তাই। আমেরিকা কিছুই বল্লো না, না ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। একটা অতি জনপ্রিয় কমেডিয়ান এর আবির্ভাব হলো। প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলো যার কনো প্রকার পলিটিক্যাল অভিজ্ঞতাও নাই। কিন্তু সাহস ছিল। হটাত করেই জেলেনেস্কীর আগমন ঘটে নাই সিন গুলিতে। প্রোসেংকুকে আউট করার সময়ই এই আঘাতটা আসার কথা ছিলো কিন্তু তখন ব্যাপারটা ঘটে নাই কারন গ্লোবাল রিসেশনে পসচিমারাও কোন্ঠাসা। ইউরোপ তো আরো কোন্ঠাসা। They take time.

(৪) ইউক্রেনকে ভালোবেসে পশ্চিমারা গদগদ হয়ে এতো সাপোর্ট করছে এটা ভাওব্লে ভুল হবে। নিজদের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন লোন মাথায় রেখে কোনো দেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অন্য কোথাও ইনভেষ্ট করতে যায় না। এর পিছনে লাভ অবশ্যই থাকা দরকার। আর সেটার নাম জিরো-সাম গেম। Zero-sum games occur whenever the aggregate gain between winners and losers totals zero. আরেকটু পরিষ্কার করে বলি- জিরো-সাম গেমের সংগা হচ্ছে-নেট জিরো। আমি ধনী কারন আপনি গরীব, আমি গরীব কারন আপনি ধনী। আমি জিতেছি কারন আপনি হেরেছেন, আমি হেরেছি কারন আপনি জিতেছেন, ব্যাপারটা ঠিক এই রকমের। এরমানে এই যে, কোনো একটা ১০০% ভান্ডার থেকে আমি যখন ৫০% নিয়ে নেবো, আপনি আর কখনোই ওই ভান্ডার থেকে ইচ্ছে করলেও ১০০% নিতে পারবেন না। আমি যদি ওই ভান্ডার থেকে পুরু ১০০% নিয়ে নিতে পারি, আপনি পুরু ১০০% ই লস করবেন। আর এই কন্সেপ্টের কারনে পশ্চিমারা কখনো গনতন্ত্রের নামে, কখনো মানবাধীরকার নামে, কখনো বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসাবে, কখনো কাউকে আগ্রাসীর বদনামে নিজেরা পাশে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু মুল লক্ষ্য থাকে সেই সাহাজ্যার্থীর টোটাল ধন সম্পদের উপর অথবা তাঁকে সাহাজ্য করার নামে নিজেদের চিহ্নিত শত্রুকে নিঃশেষ করে দেয়া। ফলে যদি দেখেন ইরাক, আফগানিস্থান, বা লিবিয়া, প্যালেষ্টাইন, ইত্যাদির ঘটনাগুলি, সেখানে নিরাপত্তার নামে, সুষ্ঠ গন্তন্ত্রের নামে কিংবা সাধীন জীবনের প্রতিশ্রুতির নামে তাদের জীবনমান, সোস্যাল ফেব্রিক্স, লিভিং স্ট্যান্ডার্ড সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। তাদের ধন সম্পদ লুট করা হয়েছে, এসেট বলতে সব কিছুই লুট করা হয়েছে। লাভ হয়েছে একজনের, সম পরিমান লস হয়েছে ওই দেশ গুলির। ওদের মেরুদন্ড ভেংগে দেয়া হয়েছে, কমান্ড ভেংগে দেয়া হয়েছে। ওখানে এখন কোনো কিছুই আর আগের মতো নাই। এটাই লাভ। আর ততটাই লসে হয়েছে সে সব দেশের যারা জিরো সাম গেমটা বুঝে নাই।

(৫) একবার খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে যে, যে পরিমান হাই লেবেলের রাষ্ট্র প্রধান, সিনেটর, ফার্ষ্ট লেডি, স্পিকার, মিনিষ্টার, সেক্রেটারি এত ঘন ঘন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাথে বিপদজনক এক্টিভ যুদ্ধক্ষেত্রে শশরীরে দেখা করেছেন, এর কারন কি? এর কারন একটাই, তাঁকে বারবার মনে করিয়ে দেয়া বা তাঁকে বলা যুদ্ধের জন্য শান্তিচুক্তি করা যাবে না। আমরা আছি তোমার পাশে। কোনো সমঝোতা করা যাবে না। তাই না কনো জাতিসংঘের কেউ, না কোনো ডিপ্লোমেট, না কোন পশ্চিমা নায়ক যুদ্ধ বন্ধের কোনো উদ্যোগ নিলেন। তারা যুদ্ধে কোনো সমঝোতা না করার পরামর্শ দিতেই এতো রিস্ক নিয়ে শশরীরে সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রে এসেছেন।

(৬) বোকা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই ফাদেই পা দিয়ে নিজের দেশের বেশ ক্ষতি করা শুরু করলেন। যত নিষেধাজ্ঞাই দিক, যত মিষ্টি কথাই বলুক, যত মহড়াই আশেপাশের দেশে কসরত করুক, কেউ কিন্তু ইউক্রেনের মাঠে নামলেন না। ৩০ টা দেশ, ৩০ টা আর্মি, ৩০ টা দেশের প্রধান সব মিলিয়ে তো একটা শক্তি অবশ্যই। যেখানে ন্যাটো তার আন্তর্জাতিক নিয়ম ভেংগে তার সদস্য সংগ্রহ করতে পারে, যেখানে কোনো আইন মানার ব্যাপারে তাদের কোনো পরোয়া নাই, এতো এতো মিউনিস্ক চুক্তি, এতো এতো শান্তি চুক্তি থাকা সত্তেও ন্যাটো বা ইউরোপিয়ানরা তাদের নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে,  অথচ ইউক্রেনের যুদ্ধকে কেউ সহজ করে দিলো না। কেউ মাঠে নামলো না। দুনিয়া এদিক সেদিক করে ফেলবে এমন কথাও বললেন তারা,  অস্ত্র দিলেন, টাকার পর টাকা দিলেন, আশ্বাস আর শান্তনার বানীর কোনো কমতি নাই। যে কোনো পরিস্থিতিতেই তারা ইউক্রেনের পাশে থাকবেই। কিন্তু একটা ‘নো ফ্লাই জোন করতে পারলেন না, না যুদ্ধ বিমান দিয়ে ইউক্রেনকে সাহাজ্য করা হলো। দিন তারিখ ফিক্সড করে দুনিয়ার সব রিকুয়েষ্ট অগ্রাহ্য করে আফগানিস্থান এটাক করা যায়, ইরাকে বোমার পর বোমা ফেলা যায় অথচ আধুনিক কিছু মিজাইল আর ভাড়াটিয়া এক্সপার্ট দিয়া ইউক্রেনকে সাপোর্ট দিয়ে রাশিয়ার ভিতরে কিংবা রাশিয়ার ইন্টারেষ্টেড স্থানে এটাক করা গেল না। যুদ্ধ যুদ্ধই। করতে পারতো। কিন্তু করা হয় নাই। জেলেনেস্কী বারবার আশাহত হয়েছে। তার ভাবনার সাথে সত্যিটা মিলছিলো না, এখনো মিলছে না। জেলেনেস্কীর জন্য- কি ভেবেছি আর কি হইলো?  এটাই প্যারাডাইম শিফট।

(৭)        আমি একটা লেখায় লিখেছিলাম যে, তেল গ্যাসের উপর ইউরোপিয়ানরা নিষেধাজ্ঞা দিলো বটে অথচ সেই নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইউক্রেন তো ইচ্ছে করলে ১ম দিন থেকে তাদের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গ্যাস বা তেলের পাইপ নিজেরাই বন্ধ করে দিতে পারতো। কিন্তু সেটা কিন্তু করে নাই। না ইউক্রেন করেছে, না ইউরোপিয়ানরা ইউক্রেনকে করতে বলেছে। ইউরোপিয়ানরা সেটা বন্ধ করতে বলে নাই কারন সেটা তাদের দরকার। নিষেধাজ্ঞা থাকবে কিন্তু তারা সেটা নিবেন। তাহলে নিষেধাজ্ঞা কিসের? প্রেসিডেন্ট কি এতো বোকা যে সে তার দেশের উপর দিয়ে যাওয়া পাইপ লাইন বন্ধ করতে পারতো না? তাঁকে আসলে সেটা করতে দেয়া হয় নাই। যুদ্ধের প্রায় ৫৬ দিন পর ইউক্রেন নিজের থেকে তাদের ডোনেস্ক এর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পাইপ লাইন বন্ধ করেছে। তাও আবার কাউকে না বলেই। অনেকটা জিদ্দে। কেউ কি মনে করেন তাতে ইউরোপিয়ানরা জেলেনেস্কীর উপরে খুব খুশী হয়েছে? একেবারেই নয়।

(৮) তাহলে জেলেনেস্কী এটা করলো কেনো? সে না প্রকাশ্যে বলতে পারছে অনেক গোপন কথা, না সে স্বাধীনভাবে নিতে পারছে নিজের সিদ্ধান্ত। ফলে সে একটা জিনিষ খুব ভালো করে বুঝে গেছে যে, যুদ্ধ যতোদিন বেশী চলবে, এই যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিজের দেশের জন্য তার কি করার ছিলো এটা যুদ্ধ শেষে তর্জমা হবেই। আর তখন বেরিয়ে আসবে কেনো সে বা তার কেবিনেট একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই, অন্তত সেই সব সাধারন নাগরিকদের জীবনের কথা চিন্তা করে যে, অনেক আগেই একটা আপোষের মাধ্যমে দেশটাকে পুরুপুরী ধংশের হাত থেকে বাচানো যেতো। তাই মাঝে মাঝে দেখা যায়, জেলেনেস্কী ইচ্ছামত জাতী সংঘকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে তাদের অপারগতার কথা বর্ননা করে গালাগালীও করছে। এটাই আসলে প্যারাডাইম শিফট। কিন্তু তার এই প্যারাডিম শিফট আসতে সময় লেগেছে প্রায় দুই মাসের বেশী যে, সে যা ভেবেছিলো, আসলে সেটা সত্যি ছিলো না।  

এখন যেটা সুইডেন আর ফিনল্যান্ড ভাবছে, যে, তারা ন্যাটোতে জয়েন করলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাদেরকে কেউ আঘাত করলে ন্যাটো ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সব অস্ত্রপাতী নিয়া সুইডেন আর ফিন ল্যান্ডের জন্য ঝাপাইয়া পড়বে ইত্যাদি কিন্তু যেদিন ওরা দেখবে যে, আইনের মার প্যাচে, আর্টিকেল ৫, আর আর্টিক্যাল ১০ এর দোহাই দিয়ে ন্যাটো বলবে, এই আর্টিক্যাল গুলির বাধ্যবাধকতায় তো তারা বাধা, কিভাবে এটম বোম্ব দিয়ে রাশিয়াকে ঘায়েল করবে? তার থেকে নাও ১০০ বিলিয়ন ডলার লোন, কিংবা এই নাও সফিশটিকেটেড রাশিয়ার এন্টি ট্যাংক মিজাইল, মারো রাশিয়াকে, আমরা পাশের দেশে আমাদের আধুনিক যত্রপাতি লইয়া কসরত করিতেছি যেনো রাশিয়া ভয় পায়, কিন্তু রাশিয়া যেহেতু অস্তিত্ব সংকটে আছে, ফলে Do or Die ফর্মুলায় এই দুইদেশকে ক্রমাগত অনেকভাবে বিরক্ত করতেই থাকবে। তখন এই দুইটা দেশের মনে হবে, নাহ নিউট্রাল থাকাই সবচেয়ে ভালো ছিলো। ন্যাটোতে যোগ দেয়া ঠিক হয় নাই। মাঝখান দিয়ে একটা ডেস্পারেট রাশিয়ার রোষানলে নিজের সাজানো দেশটার শুধু ক্ষতিই করলাম।  সময় মতো ঐ সব প্রতিশ্রুতদেওয়া দলগুলি একই কাজ করবে যেটা তারা করেছে ইউক্রেনের জন্য। এটাই হবে সুইডেন আর ফিন ল্যান্দের জন্য প্যারাডাইম শিফট।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বা ন্যাটোর এই আন্তরীক আহবানে অভিভুত হয়ে তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা থেকে এতোটাই দূরে সরে গিয়েছে যে, মনে হয়েছে ওরাই ঠিক। আর এই ডমিনো ইফেক্টই সুইডেন আর ফিনল্যান্ড এখন ন্যাটোতে যোগদানের করে একটা বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।

রাশিয়া হয়তো এই মুহুর্তে সরাসরি তাদেরকে আক্রমন নাও করতে পারে কিন্তু পারষ্পরিক বাই লেটারাল সহযোগীতা, তেক গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই, কমোডিটি, পোর্ট ফ্যাসিলিটি, ইত্যাদি তো নষ্ট হবেই, ২৬০০ কিলোমিটার কমন বর্ডার কখনোই শান্ত থাকবে না। 

১৪/০৫/২০২২-ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে আগ্রহী

গতকাল ১২ মে তে প্রেসিডেন্ট সুওলি নিনিতসু ন্যাটোতে যোগ দেয়ার কথা অফিশিয়ালী জানিয়েছেন। তাতে রাশিয়া ফিনল্যান্ডের উপর খুবই নাখোস।  এই দুটু বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার নিজস্ব কিছু বিশ্লেষনঃ

যে কোনো সাধীন দেশ তার নিজের দেশের সার্থের কারনে যে কোনো আন্তর্জাতিক জোট করতেই পারেন। এটা সে দেশের ইখতিয়ার। সেই দিক দিয়ে আমি বল্বো, ফিনল্যান্ডের সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক। সুইডেনের ব্যাপারেও তাই।

অন্যদিকে আসি, ন্যাটোতে কেনো যেতে হবে তাহলে? কারন ন্যাটো ইউরোপকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতবদ্ধ। এটাই সবার জানা। কিন্তু ন্যাটো যখন গঠিত হয় সেটা আসলে শুধু ইউরোপকে সুরক্ষিত দেয়ার জন্য হয়েছে এটা বললে একটু ভুল হবে, এটা আসলে চিরাচরিত সর্বদা রাশিয়াকে যেভাবেই হোক সাইজ করার জন্য। আর এই সত্যটা রাশিয়া জানে। তারমানে এই দাঁড়ায় যে, ন্যাটো এবং রাশিয়া আজীবন একটা বৈরী সম্পর্কের নাম।

রাশিয়া ১৯৯০ সালের পর থেকে ধরা যায় একটা আত্তগোপনেই নিজের মধ্যে নিজেরা আছে। আশেপাশের কাউকে খুব একটা ডিস্টার্বড করছিলো না। তারপরেও বিভিন্ন পলিটিক্যাল কর্মকান্ডে যে নাই সেটা নয়, যেমন সিরিয়ার আসাদের সাথে তার একচ্ছত্র ফ্রেন্ডশীপে সিরিয়া বিধ্বস্ত, মায়ানমারের সইরাশাসকদের সাথে আতাত করে রোহিংগাদের বিতাড়ন এসব। ক্রিমিয়ার ব্যাপারটা আলাদা। এসব বিগপাওয়ারগুলি সবসময় একটা এজেন্ডা নিয়েই থাকে, আর তাতে বেশ অনেক জাতী, অনেক দেশ আজীবন ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই নিপিড়িত হতে থাকে। যেমন আমেরিকা করেছে ইরাক, প্যালেস্টাইন, ইরান, কিউবা, আফগানিস্তান, লিবিয়া এমন আরো অসংখ্য দেশে। এটাই ওদের কাজ। কেউ দুধে ধোয়া তুলসীপাতা নয়।

এখন ঝগড়াটা লেগেছে ইউক্রেনকে ঘিরে কিন্তু মারামারিটা করছে সেই রাশিয়া আর পশ্চিমা তথা ন্যাটোজোটই। মাঝখান দিয়ে অতি সাধারন মানুষগুলি বাস্তহারা হচ্ছে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখছে, বয়ষ্ক মানুষগুলির আয়ু সংক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একটা দেশ লন্ডভন্ড হয়ে চিরতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারোরই লাভ হচ্ছে না, লস হচ্ছে শুধু সেখানটায় যেখানে বোমা আর মিজাইল পড়ে ক্ষত হচ্ছে পুরু দেশ তাদের।

ফিনল্যান্ড এবার যেনো টার্গেট হতে যাচ্ছে রাশিয়ার। কিন্তু রাশিয়ার জন্য ব্যাপারটা অতো সহজ হবে না যতোটা সে ইউক্রেনে করতে পারছে। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আর্টিলারী ইকুইপমেন্ট (রাশিয়া ব্যতিত) আছে ফিনল্যান্ডের। খুবই শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আছে ফিনল্যান্ডের, ট্যাংকের দিক দিয়েও ফিনল্যান্ড অত্যান্ত শক্তিশালী এবং তাদের আছে অত্যাধুনিক Leo 2´s plus এন্টি ট্যাংক মিজাইলস যাদের মধ্যে আছে Swedish-U.K. NLAW, the U.S. made TOW, Israeli made SPIKE-missile  ইত্যাদি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অতি পরিকল্পনা মাফিক এবং মনোযোগের সহিত ফিনল্যান্ড তাদের ডিফেন্স সিস্টমকে এমনভাবে গড়ে তুলেছেন যে, প্রায় ৮ লক্ষ নাগরীক রিজার্ভ ফোর্সে আছে, দেশের প্রায় ৮০% স্থলভাগ ফরেস্ট অধ্যুষিত এলাকা এবং রাস্তাগুলি এমনভাবে বানানো যা সব ডিফেন্স ফোর্সের পরিকল্পনা মাফিক। ইউক্রেন যুদ্ধে ফিনল্যান্ড সুইডেনের মতো এ রকম প্রকাশ্যে কোনো কিছুই করে নাই অথচ করেছে। তুরষ্কের পরে ফিনল্যান্ডের আছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ল্যান্ডফোর্স। প্রকৃত কথা হচ্ছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিনল্যান্ড তাদের ডিফেন্স সিস্টমকে একেবারে পরিকল্পনা মাফিক সাজিয়ে গেছে। এ কথাটা প্রকৃত আভাষ পাওয়া যায়, তাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট  সুওলি নিনিতসু গত ১২ মার্চ ২০২২ তারিখে রাশিয়ার আগ্রসন এবং ফিনল্যান্ডের অবস্থানের উপর রিপোর্টার আমানপোরের এক প্রশ্নের উত্তরে-আমানপোর প্রশ্ন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট সিওলি নিনিতসুকে, Are you scared? উত্তরে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, We are not scare but we are awake.

এখানে একটা কথা বলা দরকার যে, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আর রাশিয়ার পুতিনের সম্পর্কটা কি রকম। দুটুই খুব ডিপ্লোমেটিক চরিত্রের। খুব কম কথা বলে। ওদের একটা বাক্যে অনেক কিছু প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা থাকে।

Finland’s President Sauli Niinistö has known Putin for a decade and often acts as a de facto interpreter, explaining the Russian president's thinking to Western allies – and vice versa. Niinistö is among a handful of world leaders who continue to contact the Russian president, trying to put a stop to the war.

ফিনল্যান্ড এ যাবতকাল রাশিয়ার প্রতিবেশী হিসাবে ভালোই ছিলো এবং রাশিয়াও ফিনল্যান্ডকে নিয়ে কোনো দুসচিন্তায় ছিলো না। ইউক্রেন যুদ্ধ ফিনল্যান্ডকে ভাবিয়ে তুলেছে, অন্যদিকে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার মতো একটা পরিস্থিকে কাজে লাগিয়ে ন্যাটো এবার ফি ল্যান্ডের কান ভারী করে তাদেরকেও ন্যাটোর সদস্য করতে উঠে পড়ে লেগেছে কারন ফিনল্যান্ড ও রাশিয়ার সাথে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার কমন বর্ডার নিয়ে আছে। আর ন্যাটোত চাচ্ছেই রাশিয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাক যাতে রাশিয়া নড়াচড়া করতে না পারে।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সিওলি নিনিতসুর সাথে একবার পুতিনের আন্তরীকভাবে কথা হয়েছিলো (ওরা আসলে একসাথে অনেক বছর ধরে ঘোড়া দৌড় খেলতো, ওরা দুজনেই ভালো স্পোর্টসম্যান) এই ন্যাটো সংক্রান্ত ব্যাপারে। প্রেসিডেন্ট সিউলি নিনিতসু জিজ্ঞেস করেছিলো, যদি তারা ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে পুতিনের জবাব কি? পুতিন বলেছিলো যে, এখন আমরা ফিনল্যান্ডের প্রতিটি বর্ডার গার্ডকে বন্ধু মনে করি, কিন্তু তোমরা যদি ন্যাটোতে যোগ দাও, তাহলে তাদেরকে আর আমরা বন্ধুর চোখে দেখবো না।

এই বক্তব্যগুলি মারাত্তক। কারন, পুতিন খুব ডেস্পারেট চরিত্রের মানুষ। সে মনে করে ইউরোপ, পশ্চিমারা রাশিয়াকে অনেক অনেক ক্ষতি করেছে এবং এখনো তারা তার ক্ষতিই চায়। সে এটাও মনে করে যে, রাশিয়া যদি ক্ষতিগ্রস্থ হতে হতে নিঃশেষই হয়ে যায়, তাহলে অন্যদের আর বাচিয়ে রেখে লাভ কি? এটা একটা ভয়ংকর ধারনা। সুইসাইডাল মানুষের কাছে প্রিথিবীর কোনো কিছুই দামী নয়।

ফিনল্যান্ড হয়তো ভীতু নয়, কিন্তু রাশিয়া যেহেতু তার অস্তিত্ব সংকটে ভোগছে ফলে মরন কামড় দিতে তার কোনো ভয় নাই। আর এই কারনে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের আরো সময় নেয়া উচিত ন্যাটোর আতিশয়তায় কিংবা উচ্ছসিত অভিনন্দনে এই মুহুর্তে পা না দেয়া বা ন্যাটোতে যোগ না দেয়া। তাতে রাশিয়ার কি হবে সেটা তো সে আগেই ভেবে নিয়েছে, অস্তিত্ব সংকট, ফলে যা হবে সেটা হলো রাশিয়া ফিনল্যান্ডকে আঘাত করবেই। ফলাফল কি হবে সেটা যাই হোক। এতে ন্যাটোর হয়তো কিছুই হবে না, মাঝখান দিয়ে সাজানো একটা দেশ যুদ্ধের কবলে পড়ে শান্তি নষ্ট হবে আর সাধারন মানুষ বিপাকে পড়বে। ন্যাটোর সদস্যপদ পাইতেও ফিনল্যান্ডের হয়তো আরো বছরের উপর লেগে যাবে যদি সবদেশ তাদের পার্লামেন্টে এটা পাশ করে। তানা হলে হয়তো আরো অধিক সময় পার হবে। সেই অবধি ন্যাটোর পক্ষে ফিনল্যান্ড এর জন্য কিছুই করার ইখতিয়ার নাই। ফিনল্যান্ডকে একাই ফেস করতে হবে রাশিয়াকে। ইউক্রেনও ভীতু ছিলো না, তারাও Awaken ছিলো, কিন্তু পরিশেষে কি দেখা গেলো? সারাটা দেশ এখন ধুলিস্যাত।

FINLAND IS ONE OF THE BEST COUNTRIES IN THE WORLD, WANTING ONLY PEACE, AND HAS AND NEVER WILL START ANY WAR.

১৩/৫/২০২২- রকি কাহিনী

আমাদের বাসায় কুকুর পালন কেউ পছন্দ করে না। কিন্তু গত কয়েকমাস আগে হটাত করে কোথা থেকে এক লোকাল কুকুর আমাদের বাসার সামনে এসে হাজির। সারাদিন বাসার সামনেই থাকে, পারলে গ্যারেজের মধ্যে নিজে থেকেই যেনো সেলফ ডিক্লেয়ারড পাহারায় থাকছে। তাঁকে নরম্যাল খাবার দিলে ছুয়েও দেখে না। কয়েকদিন চেষ্টা করেছি, ভাত, রুটি, কিংবা এই জাতীয় জিনিষ খেতে দিতে কিন্তু তার এমন একটা ভাব যেনো, ধুর!! কি দিছো এগুলি?

তারপর মাংস দিয়ে লবন দিয়ে মেখে একটা পরিষ্কার পাত্রে সাথে এক বাটি পানি দিলে উনি ধীরে ধীরে খেতে আসেন। তাও আবার পুরুটা তিনি খান না। একটু পেট ভরে গেলেই বাকী খাবারটা তিনি রেখে অন্যখানে গিয়ে পেট টানটান করে শুয়ে পড়েন। অনেক গবেষনা করছি এটা কোথা থেকে এলো, আর উদ্দেশ্যটা কি? আগেই বা কই ছিলো? শুনলাম পাশেই নাকি কোনো এক বাসায় থাকতো, ওখান থেকে তিনি রাগ করে এই যে এসেছে, ওদিকে সে আর ভুলেও যায় না।

এই কুকুরের আচরনে ইদানিং দেখি আমার বউ ওনার জন্যই শুধু মাংশ পাক করে। নাম রেখেছে আবার 'রকি'। রকি বলে ডাক দিলেও আবার ফিরে তাকায়। আমার ডাক্তার মেয়ে আবার ওর জন্য মাঝে মাঝে খাবারও কিনে নিয়ে আসে। আর আমিও বাদ যাই নি। কয়েকদিন নিউ মার্কেটের "৬৫ টাকায় বিরিয়ানীর দোকান" থেকে বিরিয়ানিও কিনে এনেছিলাম। ফলে আমি যখন বাসায় গিয়া হাজির হই, ব্যাপারটা এখন এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে, গাড়ি থেকে নামলেই একেবারে পায়ের কাছে ঘুর ঘুর করে আর যেনো বলতে থাকে- 'আমার বিরিয়ানির প্যাকেট কই?'

তো গতকাল অনেক বৃষ্টি ছিলো। রকি সারাদিন গ্যারেজেই চার পা চার দিকে ছড়াইয়া নাক ডেকে মনে হয় ঘুমাচ্ছিলো। আমি বাসায় যাওয়ার পর, সে কোনো চোখ না খুলেই খালি লেজ নাড়ছিলো। ধমক দিলাম বটে কিন্তু তিনি এক চোখ খুলে দেখলো আমাকে আর লেজটা আরো একটু বেশী করে নাড়াইলো। ভাবখানা এই রকম, আরে বস, ডিস্টার্ব করো না।

গার্ডকে দিয়ে ওনার জন্য মুরগীর তরকারী আর এক প্লেট ভাত এনে খাওয়ানোর পর দেখি হটাত তার এই শারীরিক কসরত।

13/5/2022-সম্ভাবনা

প্রতিনিয়ত কারেন্সীর মান কমে গেলে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকিং সেক্টরে সুদের হার বাড়ানো ছাড়া অনেক দেশের আর কোনো ইমিডিয়েট বিকল্প থাকে না। সেই প্রেক্ষাপট থেকে বলছি- হয়তো আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরেও এটা ঘটতে পারে।

অন্যদিকে গত কয়েকদিন আগে দেখলাম আমাদের দেশে গোল্ডের দাম কমেছে। গোল্ড যেহেতু কারেন্সীর ভ্যালু নির্নায়ক, ফলে ডলারের দাম বাড়ার সাথে গোল্ডের দাম কমার কোনো যুক্তি খুজে পাইনি। হতে পারে এটা ইনফ্লেশন থামানোর একটা সাময়িক কৌশল।

৩য় মহাযুদ্ধটা আসলে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। সেটা ইকোনোমিক্যাল ওয়ার। কোনো অস্ত্র ছাড়া দেশে দেশে এই গন্ডোগোল পাকাবে, আর এর সুযোগে একটা বিশাল পোলারাইজেশনের সৃষ্টি হবে।

ইউক্রেনের যুদ্ধটা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। একটা সুপার পাওয়ার গত ২২ বছর হোম ওয়ার্ক করে প্রস্তুতি নিয়েছে, সংগী বাছাই করে বলয় তৈরী করেছে, আরেক পক্ষ হুট করে কোনো হোম ওয়ার্ক না করে যখন যা ইচ্ছে সেটাই প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। একটা অসম পরিকল্পনা মনে হচ্ছে।

একজন খুব ক্যালকুলেশন করে হম্বি তম্বি না করে কাজ করেই যাছে যেনো একটা সিনেমার দৃশ্য থেকে আরেকটা দৃশ্য সাজানো। অন্যজন এক গাদা সভা পরিষদ নিয়ে তাল মাতাল অবস্থা। বেশি ধরতে গিয়ে সব যেনো হাত থেকে সরে যাচ্ছে।

একটা প্রবাদ পড়েছিলাম A bird in hand is more worthy than that of two in the bush.

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দিন।

12/05/2022-আমার এখন কেবলই মনে হচ্ছে যে,

(১) খুব দ্রুত রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের স্পেশাল অভিযান আপাতত স্থগিত করবে কারন রাশিয়ার উদ্দেশ্য যা ছিল তার প্রায় বেশিরভাগ সম্পন্ন। স্পেশাল অপারেশন বন্ধ করলে রাশিয়ার লাভ দুটু। এক. আমেরিকা বা অন্য দেশ ইউক্রেনে আর যুদ্ধাস্ত্র পাঠানোর ব্যবসাটা করতে পারবে না। দুই. ওদিকে সে ইউক্রেন ছেড়েও দেবে না। জাষ্ট পাহাড়াদারের মত অবস্থান। তার শক্তিও ক্ষয় হবে না।

(২) অন্যদিকে চীন তৈরী হচ্ছে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তাইওয়ানের স্ট্যাটাস এবং ইন্দোপ্যাসিফিক কন্ট্রোল নিয়ে। কথাবার্তা ঠিক মনে হচ্ছেনা।

(৩) দুইটা সুপার পাওয়ারের সাথে একই সংগে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় আমেরিকার।

(৪) আরব বসন্তের মতো এবার আবার পশ্চিমা বা ইউরোপিয়ান বসন্তের বাতাস বইতে শুরু না করে। কারন জার্মানি, ইউকে, আমেরিকায় ইনফ্লেশনে সাধারন জনগন ধীরে ধীরে ক্ষিপ হচ্ছে।

(৪) কাতারের সাথে জার্মানের তেল বিষয়ক কথাবার্তা বিফল হচ্ছে। বিকল্প তেল না পেয়ে জার্মানি বোকার মত রাশিয়ার তেল গ্যাস পুরুপুরি বর্জনের কথা আগাম বলে দিয়েছে যা আপাতত মনে হচ্ছে ভুল হয়েছে।

(৫) ইউক্রেন নিজের থেকে ইউক্রেনের ট্রাঞ্জিট দিয়ে তেল গ্যাস বন্ধ করায় জার্মানি, ইউক্রেন, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ডে এখন ওয়ান থার্ড সরবরাহ বন্ধ। ফলে ইউরোপের ইউনিটিতে একটা ফাটল দেখা যাচ্ছে।

(৫) গতকাল দেখলাম চীন খুব স্পষ্ট ভাষায় আমেরিকাকে হুশিয়ারী দিয়েছে এভাবেঃ আমেরিকা উইল বি হার্ট ইফ দে ইন্টারফেয়ার এবাউট তাইওয়ান স্ট্যাটাস এন্ড ইন্দোপ্যাসিফিক ইস্যু। কথাটা ছিলোঃ হার্ট। বিপদজনক ঠান্ডা কিন্তু কঠিন শব্দ।

(৬) চীন তার ডলার রিজার্ভের ব্যাপারে নিরাপদ রাখার সিস্টেম উদ্ভাবন করছে in case sanctioned. কথা হচ্ছে- চীন নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় নিচ্ছে কেনো? সামথিং রঙ।

(7) চীনের সরকারী সব অফিস আদালতে চাইনিজ মেইড কম্পিউটার রিপ্লেস করছে। চীনের ব্যাংকিং সেক্টর সুইফটকে বাইপাশ করে কিভাবে ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন চালু রাখা যায় সেটা ইতিমধ্যে চালু করেছে।

এই রকম অনেক হোমওয়ার্ক চীন করে যাচ্ছে, যার আলামত আসলেই বিপদজনক।

পচা শামুকে কার কার যে পা কাটে বা কাটবে, একমাত্র সময় বলতে পারে।

7/5/2022-ফেসবুকে মিটুলের লেখা ৭ ই মে

আজ ৭মে আমার ও আখতারের জীবনের একটি বিশেষ দিন।বিবাহ বার্ষিকী নয়। তার চেয়েও অনেক মূল্যবান একটি দিন। আমাদের লাভ ডে আজ।লিখতে চেয়েছিলাম না। কিন্তু না লিখে পারলাম না। কেননা আমি আজ সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি বন্ধুদের সাথে। মনে কিন্তু ঠিকই আছে!! এ কি ভোলার মত বিষয় আপনারাই বলেন!!

আমি অনেক ভালো আছি তাঁর সাথে, বর্ণনা করে বোঝাতে পারবো না।আমিও চেষ্টা করি আমার মানুষটিকে ভালো রাখবার। আসলে আমরা একে অপরকে রেসপেক্ট করি ও বোঝার চেষ্টা করি, যা মনের সুখের খোরাক জোগায় এবং খুবই দরকার। তবে আমার চেয়ে আখতারই বেশি মূল্যায়ন করে আমাকে। আমার আনন্দ গুলো যেমন অন্তর দিয়ে উপভোগ করে, তেমনি আমার মন খারাপ বা কষ্ট কোনটাই তাঁর যেন ভালো লাগে না।অনেক স্বাধীনভাবে জীবন যাপণ করছি। তাই বলে আমি কখনও অবিশ্বাসের কোন কিছু করেছি বলে মনে পড়ছে না।আমাকে সব রকম পরামর্শ দেয় সব সময়, সেটা আর্থিক বা বৈষয়িক যে কোন বিষয়ে। আমার সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গাটি আখতার।আলহামদুলিল্লাহ। আজ এই দূরে বসে সিলেটের লালা খালে তোলা বেশ কিছু ছবি আখতারের জন্য পোস্ট দিলাম।আজকের এই আনন্দগুলোও তাঁর জন্য পেয়েছি।বান্ধবীরা সিলেট যাচ্ছে বলতেই তিনি বলে বসলো-তুমিও যাও!!! অনেক বড় মনের মানুষ আখতার।মহান আল্লাহ ওকে সুস্থ শরীরে মান সম্মানের সাথে দীর্ঘজীবি করুন এবং জানমালের নিরাপত্তা দিন সে দোয়া করি। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন প্লিজ প্লিজ।

04/05/2022-লয়েড অষ্টিন এর বক্তব্য

মার্কিন ডিফেন্স মিনিষ্টার লয়েড অষ্টিন  এর বক্তব্যের বিপরীতে ছোট একটা বিস্লেষন

গত সপ্তাহে মার্কিন ডিফেন্স মিনিষ্টার লয়েড অষ্টিন কিয়েভে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীর সাথে দেখা করতে। বিশালদেহী মানুষ। তিনি সেখানে একটা কথা মনের অজান্তেই প্রেস ব্রিফিং এ হুট করে বলে ফেলেন। আর সেটা হলো- “Our focus in the meeting was to talk about those things that would enable us to win the current fight and also build for tomorrow.” Furthermore, Austin admitted for the first time that the US is a fighter in the war by using the first-person plural to describe both the US and Ukraine engaged in a “battle” against Russia. “We want to see Russia degraded to the point where it can’t do the types of things it did in invading Ukraine,” Austin continued.

এই বক্তব্যের মাধ্যমে অষ্টিন সরাসরি স্বীকার করে নিলেন যে, আমেরিকা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি অংশ। কিন্তু লয়েড অষ্টিনের কথার সাথে জো বাইডেন প্রশাসনের উম্মুক্ত ডিক্লেরেশনের মিল নাই। জো বাইডেন প্রশাসন সবসময় যেটা বলে আসছে যে, ন্যাটো দেশের সাথে যে কোনো কনফ্রন্টেশন মানে ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ। সেটা কিছুতেই আমেরিকা চায় না। কিন্তু লয়েডের বক্তব্যে সেটা নাই, লয়েড যেটা বলেছে সেটা আসলেই পর্দার ভিতরের কথা, আর তার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। এই মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বক্তব্যে আমেরিকার কি কি ক্ষতি হতে সেটা ভাবার ব্যাপার।

(১)        জো বাইডেন প্রশাসনে অনেকেই আছেন যারা চায় যে, আমেরিকা যুদ্ধে নামুক। কিন্তু ফেডারিয়ালিষ্ট সিনিয়ার এডিটর জন ডেনিয়েল ডেভিশসন বলেন যে, যদিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে ব্যাটল ফিল্ড হিসাবে ব্যবহার করে আমেরিকা যুদ্ধে যেতেই পারে কিন্তু আমেরিকার সাধারন জনগনের এই যুদ্ধে কোনো ম্যান্ডেট নাই বিধায় আমেরিকার যুদ্ধে যাওয়া ঠিক হবে না এবং এই যুদ্ধে আমেরিকা প্রক্সি ওয়ার হিসাবে অংশ গ্রহন করছে এটাও প্রকাশ করা যাবে না।

(২) যদি রাশিয়াকে প্রকাশ্যে আমেরিকা এইমর্মে ইংগিত দেয় যে, আসলেই তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আছে (যদিও রাশিয়া এটা জানে কিন্তু অফিশিয়লি নয়) তাহলে রাশিয়া আমেরিকার যে কোনো সৈনিক তথা জনগনকে রাশিয়ার শত্রু মনে করে টার্গেট করবেই।

(৩)       A second possibility is that if Putin sees his conventional military forces being suffocated, he will resort to further cyber attacks on Western infrastructure, chemical weapons, or his tactical, “battlefield” nuclear weapons arsenal. It’s a prospect that was unthinkable eight weeks ago but is now routinely discussed and this will put more Americans in danger.

লয়েড অষ্টিনের এই মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বক্তব্য ইতিমধ্যে রাশিয়ার মাথায় ঢোকে যাওয়া আমেরিকার প্রক্সী ওয়ারকে আরো বেশী বেগবান করে তুলতে পারে। To date, there has been no American bloodshed in the thick of the war in Ukraine. However, Russia may not hesitate to do so now.

তাই এই লেবেলের মানুষদের কথা বলার সময় শব্দচয়ন, ডিপ্লোমেসি, এবং কি বলা দরকার সেটা সর্বদা মাথায় রেখে বলা উচিত। তা না হলে যে কোনো সময়ে বড় ধরনের কিছু আশংকাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

06/05/2022-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভুমি

১৮ শতাব্দীর শেষের দিকে জন্ম আজকের ইউক্রেনের। ইতিহাসের শেষের অধ্যায়ে এসে ইউক্রেন পোল্যান্ড এর গন্ডি থেকে বেরিয়ে যায় এবং তখন ইউক্রেন অষ্ট্রিয়া-রাশিয়ার মাঝামাঝিতে বর্দার করে অবস্থান নেয়। রাশিয়ার কাছাকাছি অংশটি প্রধানত রাশিয়ান ভাষাতেই বেশী অভ্যস্থ যদিও তারা ইউক্রেনেরই নাগরীক।

(ছোট নোটঃ After the Union of Lublin in 1569 and the formation of the Polish–Lithuanian Commonwealth, Ukraine fell under the Polish administration, becoming part of the Crown of the Kingdom of Poland)

ইউক্রেনের প্রাগৈতিহাসিক কাহিনীতে না যেয়ে আমি ১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেনের বিষয়টি যদি বিশ্লেষন করি দেখা যাবে- বার্লিন পতনের ২ বছর পর ১৯৯১ সালে যখন ইউক্রেন স্বাধীনতা পেলো, ঠিক তখন থেকেই ইউক্রেনের ভিতরে রাজনৈতিক এবং কূটনইতিক ঝামেলার শুরু। প্রাথমিকভাবে এটা ছিলো ইউরোপ এবং রাশিয়ার জিওকালচার এর বিভক্তির কারনে। কিন্তু  ২০০৪ সালের অরেঞ্জ রেভুলিউশন দিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। অরেঞ্জ রেভুলিউশন হলো- a series of protests and political events that took place in Ukraine from late November 2004 to January 2005, in the immediate aftermath of the run-off vote of the 2004 Ukrainian presidential election, which was claimed to be marred by massive corruption, voter intimidation and electoral fraud.

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী Viktor Yushchenko এবং Viktor Yanukovych এর মধ্যে ভোট কারচুপির ঘটনায় এই অরেঞ্জ রেভুলিউশন। যদিও Viktor Yushchenko  জয়ী হন কিন্তু এটা দেশের জনগন মেনে না নেওয়ায় দেশের ভিতরেই উত্তপ্ত অবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় এবং নিরপেক্ষ ভোট গননায় শেষমেষ ৫২% ভোটে জয় দেখিয়ে Viktor Yushchenko কেই প্রেসিডেন্ট হিসাবে আদেশ দেয়া হয় এবং অরেঞ্জ রেভুলিউশনের নিষ্পত্তি হয়।

এর মধ্যে অন্য অঞ্চলে একটা অঘটন ঘটে যায়। জর্জিয়া আগে থেকেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যোগ দেয়ার জন্যে উম্মুখ হয়েছিলো। এই সময়ে জর্জিয়ার মতাদর্শে যুক্ত হয় ক্রোয়েশিয়া এবং ইউক্রেন।  রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জর্জিয়া এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিতে না করেন ন্যাটোকে। ফলে ন্যাটো শুধুমাত্র ক্রোয়েশিয়াকে সদস্যপদ দিয়ে জর্জিয়া এবং ইউক্রেনকে বাদ দেয় ঠিকই কিন্তু ইউক্রেনের বেলায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন একটা “association agreement” করে যার লক্ষ্য বলা হয় Implementation of the association agreement could mean major changes in Ukraine that would bring it closer to EU standards. রাশিয়া ইউরোপিয়ানের এবং ন্যাটোর এই উদারতাও পছন্দ করে নাই। আবার অন্যদিকে রাশিয়ার কারনে জর্জিয়া ন্যাটোতে যুক্ত হতে না পারায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে জর্জিয়া আন্দোলন শুরু করলে ২০০৮ সালে রাশিয়া জর্জিয়া আক্রমন করে এবং Abkhazia and South Ossetia কে জর্জিয়া থেকে আলাদা সার্ভোমত্ত স্ট্যাটাস প্রদান করে।

 

যাই হোক যেটা বলছিলাম, প্রেসিডেন্ট Viktor Yushchenko  এর আমলটা তার ভালো কাটে নাই এবং তিনি জর্জিয়ার বিরুদ্ধে রাশিয়ার এই আক্রমনে জর্জিয়ার পক্ষ নেয় যার ফলে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার একটা শত্রুতামুলক সম্পর্ক তৈরী হয়। অবশেষে ২০১০ সালে তিনি ভোটে হেরে যান

এবং Viktor Yanukovych (যিনি ২০০৪ সালে হেরে গিয়েছিলেন, তিনি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু তার ক্ষমতায়নের সময়ে তিনিও বিরোধি দলের দাপটে দেশ পরিচালনায় ভালো করতে পারেন নাই ফলে সারা দেশ জুড়ে ‘মাইডান স্বাধীনতা চত্তরে” বিশাল গনঅভ্যুথানে ২০১০ সালে (ক্ষমতার ৪ বছর পর) ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হন। একেই মাইডান বেভুলিউশন নামে পরিচিত। মাইডান রেভুলিউশনের মাধ্যমে ইউক্রেনিয়ানরা চেয়েছিলো যে, “association agreement”  যা কিনা এক অর্থে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে একাত্ততা বা সদস্যপদ লাভে একটা দরজা খোলা রাখা সেটা ঘোষনা করা আর সাক্ষরিত হওয়া। Viktor Yanukovych  ছিল প্রো-রাশিয়ান। তিনি সেটা করতে অস্বীকার করেন। এই সময়ের বিরোধী পার্টির নেত্রী মহিলা Tymoshenko ছিলেন রাশিয়া বিরোধি কিন্তু ইউরোপিয়ান পক্ষীয় মতাদর্শের।  ক্রমাগত তার দাবী এবং আন্ডলন চলতে থাকলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইউনোকোভিচ ২০১১ সালে তাঁকে এরেষ্ট করেন এবং ৭ বছরের জেল দেন। এসব জটিল রাজনৈতিক টালমাতাল অবস্থায় শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট Viktor Yanukovych  রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং প্রোসেংকু নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহন করেন।

প্রেসিডেন্ট প্রোসেংকো ছিলেন প্রো-ওয়েষ্টার্ন। তিনি প্রেসিডেন্ট হবার পরে সর্বাত্তক চেষ্টা করেন যাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যোগ দেয়া যায়। এখানে বলা বাহুল্য যে, প্রেসিডেন্ট প্রোসেংকোকে ব্যবহার করে আমেরিকা এবং ইউরোপ বেশ কিছু কাজ করে ফেলেন। তদানিতন ওবামা প্রশাসন ২০১৪ সালে ওয়েষ্টার্ন লিড ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কার্যাদি দেখভালের জন্য তদানিন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রধান করে ওবামা প্রশাসন ইউক্রেনের দায়িত্ত দেন। এই কার্যাদির মধ্যে যেতা ছিলো তা হচ্ছে- ডনবাস, ডনেস্ককে এই দুই অঞ্চলকে রাশিয়ার মতাদর্শ থেকে উতখাত করা। কারন ইউক্রেন সর্বদা এদেরকে প্রো-রাশিয়ান ভাবতো, এখনো ভাবে। ফলে এদের উপর চলে সর্বাত্তক হামলা, আক্রমন, এবং সামরীক অভিযান। ওদেরকে এক প্রকার রাজাকারের মতো ট্রিট করা হতো এবং এই দুই অঞ্চলের মানুষ তথা রাশিয়ান স্পিকিং ইউক্রেনিয়ানদেরকে নির্দিধায় খুন, বাস্তুহারা এবং শারীরিক টর্চারে নিমজ্জিত করতে শুরু করে। শুরু হয় জটিল সমীকরন। উপায়ন্তর না দেখে রাশিয়া এই দুই অঞ্চলকে সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ২০১৪ সালে মালিয়েশিয়ান যাত্রীবাহী প্লেন ২৯৮ জন যাত্রীসহ ইউক্রেনে মিজাইল ফায়ারে নিপতিত হলে উক্ত দোষ রাশিয়ার উপর চাপিয়ে দেয় যদিও রাশিয়া সেটা প্রত্যাখ্যান করে। একদিকে রাশিয়ার সাপোর্টে ডনবাস, ডোনেস্ক অস্ত্র তুলে নেয় অন্যদিকে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট প্রোসেঙ্কোর নেত্রিত্তে ডনবাস এবং ডোনেস্ক এবং ক্রিমিয়ার মানুষগুলিকে সরকারী সামরীক বাহিনী, অস্ত্র এবং সৈনিক দিয়ে উতখাত করার সর্বাত্তক চেষ্টা করে। অবশেষে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়।

 

রাশিয়ার এহেনো তীব্র সামরিক অভিযানে প্রেসিডেন্ট প্রোসেঙ্কো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে মিনস্কে এক বৈঠকে মিলিত হন যেখানে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট President Francois Hollande এবং German Chancellor Angela Merkel এর উপস্থিতি ছিলো। উক্ত বৈঠকে ১৩টি শর্ত সাপেক্ষে যুদ্ধ বিরতি কিংবা অবসানের ঘোষনা দেন উভয় পক্ষ। আর সেটাই হলো মিনস্ক চুক্তি। লক্ষ্য ছিলো- end the war, an immediate cease-fire and the withdrawal of all heavy weaponry in order to create a “security zone.”

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, উক্ত মিনস্ক চুক্তি ইউক্রেন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নিয়ে উলটা আমেরিকার দ্বারস্থ হয়। তখন তদানিতন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনে লিথ্যাল অস্ত্র সরবরাহ বিক্রির অনুমোদন দেয় যা ওবামা প্রশাসন করতে না করেছিলো। আর একাজে ট্রাম তার ডিফেন্স এডভাইজার কার্ট ভলগারকে দায়িত্ত দেন। ব্যাপারটা এখানেই শেষ ছিলো না। বরং আমেরিকা Ukraine Security Assistance Initiative এর নামে প্রচুর পরিমান সামরীক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষে আর্থিক সাহাজ্য দেয়ার জন্য কংগ্রেসে অনুমোদন পাশ করিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে রাশিয়া আমেরিকাকে এই অঞ্চলে একটা প্রক্সি ওয়ারের সামিল হওয়া হিসাবে গন্য করছিলো। Russia accuses the United States of encouraging the break in order to weaken Moscow, and a Kremlin spokesperson reissues a promise to defend “the interests of Russians and Russian-speakers.”

২০১৯ সালে ভ্লডিমির জেলেনেস্কী প্রায় ৭০% শতাংশ ভোটে প্রেসিডেন্ট প্রোসেংকোকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়। জেনেস্কীর পার্টি পার্লামেন্টেও মেজরিটি পায়। তার ইলেকশন মেনিফেষ্টু ছিলো-(ক) দূর্নীতি এবং দারিদ্রতা দূরীকরন (খ) পুর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধকে দমন করা।

জেনেস্কী প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন এবং এক টেলিফোন বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেলেনেস্কীকে এক প্রকার উষ্কানীই দিয়েছেন বলে জানা যায় যাতে ইউক্রেন অতি সত্তর রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং আমেরিকার নেত্রিত্তে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে তথা ন্যাটোতে যোগদানের পথ তরান্নিত করে।

(https://edition.cnn.com/2019/09/25/politics/donald-trump-ukraine-transcript-call/index.html)

যাই হোক, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিংবা অন্য কারো ফেক ভরসায় প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী গত ২০২০ এর জুনে ইউক্রেন NATO Enhanced Opportunities Partner তে নাম লিখায়। যেখানে অষ্ট্রেলিয়া, জর্জিয়া, ফিনল্যান্ড, জর্দান, এবং সুইডেনও ন্যাটোর যুগ্ম মিশন এবং সামরীক মহড়ায় অংশ নিতে অংগীকার বদ্ধ হয়। একই বছর সেপ্টেম্বরে জেলেনেস্কী তার পার্লামেন্টে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার দৃঢ় অংগীকার হয়ে National Security Strategy অনুমোদন করে যার অর্থ ছিলো সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ইউক্রেন ন্যাটোতে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ। উক্ত আইন পাশ করার পরে জেলেনেস্কী ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালে অনেকগুলি কাজ করে ফেলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-(ক) ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থী অলিগার্দের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন বিশেষ করে অইলিগার্গ ভিক্টোর মেদ্ভেদচুক যিনি ইউক্রেনের বৃহৎ প্রো-রাশিয়ান পলিটিক্যাল পার্টির চেয়ারম্যান (খ)  ইউক্রেনের সরকার মেদ্ভেদচুকের সমস্ত আর্থিক এসেট কব্জা করেন (খ) রাশিয়ার সমস্ত টিভি চ্যানেল ইউক্রেনে সম্প্রচার বন্ধ করেন (গ) জাতীয় স্লোগান- ইউক্রেন শুধু ইউক্রেনিয়ানদের জন্য, আর বাকী সব অবৈধ।

রাশিয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলো যে, এখানে শুধু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীই জড়িত নয়, তারসাথে আমেরিকা এবং ইউরোপ সামিল। তাই ভ্লাদিমির পুতিন ডিসেম্বর ২০২১ থেকে জানুয়ারী ২০২২ পর্যন্ত তার দখলে থাকা ক্রেমিয়ায় অজস্র সামরীক যন্ত্রাদি এবং সৈন্য মোতায়েন শুরু করে। তবে একই সাথে পুতিন আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে এইমর্মে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নিতে বলেন। সেখানে পুতিন Set of Security Gurantees নামে একটা কন্সেপ্ট পেপারও দাখিল করেন-This includes a draft treaty calling for tight restrictions on U.S. and NATO political and military activities, notably a ban on NATO expansion. The Biden administration delivers written responses in January; few details are made public, but it rejects Russia’s insistence that Ukraine never be accepted into NATO and proposes new parameters for security in the region.

রাশিয়ার এজেন্ডাকে ন্যাটো বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কোনো প্রকার গুরুত্ত না দিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ  Germany announces the suspension of the Nord Stream 2 pipeline, while the United States, EU, and UK pledge additional financial sanctions against Russian entities. রাশিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালায়।

05/05/2022-কে জিতছে এই যুদ্ধে?

একটা যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যেনো এটা একটা ঘরোয়া ব্যাপারের মতো যদিও রাশিয়া তার পার্শবর্তী সাধীন দেশ ইউক্রেনকে আক্রমন কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা। তারপরেও এটা বাস্তবে ঘটেছে। এখন এই যুদ্ধের বা অপারেশনের বিশ্লেষনে যদি যাই আমরা কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর এখনো জানি না বলেই মনে হচ্ছে।

এই যুদ্ধে কার কি ইন্টারেষ্ট, যদি সেটা জানা যায়, তাহলে হয়তো ব্যাপারটা আচ করা সম্ভব। একটা জিনিষ খেয়াল করেছেন সবাই যে, আমরা যারা আমজনতা, যাদের পোট্রেইট মিডিয়া ছাড়া অন্য কোনো মিডিয়ায় এক্সেস নাই বা যেতে চাই না। আর সোস্যাল মিডিয়া হচ্ছে সবচেয়ে অনির্ভরশীল একটা প্রোপাগান্ডার মাধ্যম। পোট্রেইট মিডিয়াগুলিতে প্রতিনিয়ত এটা দেখছি যে, পশ্চিমা মিডিয়াগুলি

(ক) অনবরত ইউক্রেন জিতে যাচ্ছে, ইউক্রেন জিতবেই এ ধরনের খবর দিচ্ছে। এই খবরগুলির পিছনে কতটা গ্রাউন্ড তথ্য নিয়ে বিশ্লেষন করা তা কিছু কেউ জানাচ্ছে না।

(খ) কোনো পশ্চিমা দেশ বা ইইউ কিন্তু এই যুদ্ধটাকে থামানোর জন্য এগিয়ে আসছে না।

(গ) বরং যে যেখান থেকে পারে, সব ইইউ দেশগুলি একযোগে টাকা পয়সা, অস্ত্র, ট্রেনিং এমনকি বিশেষ টেকনোলজি এবং প্রোপাগান্ডা দিয়ে ইউক্রেনকে সাহাজ্য করছে এবং পিস টকে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেই না।

(ঘ) সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- পশ্চিমা পক্ষসহ ইইউ আগ্রাসী রাশিয়ার কোনো কথাই শুনতে নারাজ বিধায় তাদের মিডিয়া পুরু দুনিয়া থেকে ব্লক, তাদের সাথে কোনো সেমিনারে বসলে ওয়াকআউট ইত্যাদিও করছে। অর্থাৎ আমাদেরকে যা শুনতে হবে তা শুধু একপক্ষ থেকে। তাহলে দুই পক্ষ না শুনে আমরা যারা আমজনতা তারা কিভাবে বিচার করবো কে কতটুকু দোষী বা দায়ী?

কার কি ইন্টারেষ্ট

এবার একটু এদিকে নজর দেই। যুদ্ধটা হচ্ছে ইউক্রেনে যে কিনা ইইউর সদস্যও নয়, আবার ন্যাটোরও না। অথচ ইইউ এবং ন্যাটো পুরু ইউক্রেন যুদ্ধটাকে যেনো নিজের যুদ্ধ মনে করে এগিয়ে নিচ্ছে। অথচ ইউক্রেনকে গত ১৪ বছর যাবত ইইউ এর সদস্যপদ বা ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার আশা দিয়েও ইইউ বা ন্যাটো তাঁকে কোনো সদস্যপদ দিতে নারাজ ছিলো। তাহলে হটাত করে সবাই ইউক্রেনের জন্য এতো উঠে পড়ে লাগলো কেনো? কার কি ইন্টারেষ্ট এখানে? যে পরিমান ডলার, আর অস্ত্র ইউক্রেনে এ যাবত দেয়া হয়েছে, কার কাছে যাচ্ছে, কে ইউজ করছে, কিভাবে সেগুলির কন্ট্রাক্ট কিছুই কিন্তু ফলোআপ হচ্ছে না। অথচ এই পরিমান অর্থ যদি যুদ্ধের আগে এই ইউক্রেনকে দেয়া হতো, তাহলে ইউক্রেন ধনী দেশসমুহের মধ্যে একটা হয়ে যেতো।

ইউকে

ইউকে খুব অল্প কিছুদিন আগেই ইইউ এর সদস্যপদ থেকে নিজের ইচ্ছায় বেরিয়ে গেছে কারন তার পোষাচ্ছিলো না। যে বাজেট দিয়ে তাঁকে ইইউ তে থাকতে হয় আর কমন এজেন্ডায় থাকার কারনে অন্য ২৭টি দেশ থেকে যেভাবে ফ্রি মাইগ্রেশন হয় ইউকে তে, তাতে তাদের লাভের থেকে ক্ষতি অনেক বেশী হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সবচেয়ে বেশী লাভ হয় আসলে অন্যান্য দরিদ্র ইইউ এর দেশগুলির যাদের মেম্বারশীপ ফিও কম, আবার সদস্য থাকায় তাদের জন্য বরাদ্ধ বোনাস অনেক বেশী। তাই ইউকে এর নাগরিকগন ব্রেক্সিট এর মাধ্যমে এই ইইউ থেকে চিরতরে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু ন্যাটো যেহেতু একটা কোঅর্ডিনেটেড ডিফেন্স সিস্টেম, তাই ইউরোপ তার নিজস্ব ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে না তোলা পর্যন্ত ইউকে কে থাকতে হবে এমন শর্তেই ইইউ ইউকেকে সদস্যপদ খারিজ করার অনুমতি দিয়েছিলো। ফলে, ইউকে এর আধিপত্যতা ইইউ দেশসমুহে প্রায় নাই বললেই চলে একমাত্র ন্যাটো কান্ট্রির ডিফেন্স নিরাপত্তার একজন সদস্য ছাড়া। কয়েকশত বছর সারা দুনিয়া চষে বেড়ানো ইউকে, তার মোড়লগিড়ি কখনোই ছাড়তে চায় না, কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, তার হাত ক্রমশই ইন্টারন্যাশনাল এরিয়াতে দূর্বল হওয়াতে সে আগের হাবভাব ধরে রাখা সম্ভবও হচ্ছিলো না। আর এজন্যই অন্তত ন্যাটোর ডিফেন্স বলয়ে থেকে এবং একটা গ্রেট পাওয়ারের মাহাত্যে এই যুদ্ধে আসলে সরগরম থাকতে চাচ্ছে ইউকে। তাছাড়া আমেরিকার বলয় থেকে ইউকে যেতে পারবে না বা যেতেও চায় না। কারন ইউরোপিয়ান ফেডারেল সেন্ট্রাল ব্যাংক এই ইউকের জন্য একটা মারাত্তক আর্থিক অস্ত্র যেটা না থাকলে ইউকে এর অনেক ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এটাকে ধরে রাখাও ননমেম্বার ইউকে এর বিশেষ চাল। ফলে, একটা এটা তার আর্থিক নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করে তেমনি তার আধিপত্যতা বজায়ের একটা মই ছাড়া আর কিছুই না। অন্যদিকে ইউকে এই রাশিয়া বা ইউক্রেনের বেশীর ভাগ পন্যের উপর যেমন তেল, গ্যাস, অন্যান্য কমোডিটির উপর সে নির্ভরশীলও নয়। তাই, ইউক্রেন ধংশ হলেই কি আর বেচে গেলেই কি। অন্যদিকে পুরানো শত্রু রাশিয়া যদি এই যুদ্ধে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাতে ইউকে এর লাভ ছাড়া তো ক্ষতি নাই।

ইউএসএ

আমেরিকা কিন্তু ইইউ দেশের সদস্য নয়। কিন্তু সে ন্যাটোর সদস্য। দুটু দুই জিনিষ। আপনি যদি লয়েড অষ্টিনের সর্বশেষ বক্তব্যটা শুনেন, দেখবেন তিনি সেখানে বলেছেন, আমরা রাশিয়াকে অতোটাই দূর্বল দেখতে চাই যতোটা হলে রাশিয়া আর মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না। আর ঠিক এই বক্তব্যটাই হচ্ছে ইউএসএ এর ইন্টারেষ্ট ইউক্রেনে। ইউক্রেনকে ভালোবেসে আমেরিকা এতো টাকা পয়সা এতো অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছে ভাবলে সেটা হবে ভুল। তারাও একটা প্রচন্ড ব্যবসায়ীক লাভের মুখ দেখছে অস্ত্র বিক্রি করে। আর যতোদিন এই যুদ্ধটা থাকবে, আর্মস বিক্রির ততোটাই বাজার থাকবে আমেরিকার। কারন রাশিয়ার সাথে বর্ডারিং দেশগুলি তাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে খাবারের থেকে বেশী অস্ত্র কিনতে আগ্রহী হবে রাশিয়ার সাথে বর্ডারিং দেশগুলি, হোক সেটা ন্যাটোর অধীনে বা ইইউর অধীনে বা নন-ইইউভুক্ত দেশ। এখানে আরেকটা ব্যাপার খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করার বিষয় আছে-সেটা হলো, রাশিয়ার সাথে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে আমেরিকা তো রাশিয়ার সাথেই যুদ্ধ করছে, কিন্তু যুদ্ধটা নিজের দেশের মধ্যে নয় আবার রাশিয়াকে সরাসরি এটাক করতেও হলো না। পেন্টাগন স্বীকার করেছে যে, তারা জার্মানীতে ইউক্রেনের অনেক নাগরীককে মিলিটারী প্রশিক্ষন দিচ্ছে যাতে তারা ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে পারে। তারমানে যুদ্ধটা আরো বিলম্বা হোক। আর আমেরিকা রাশিয়ার তেল, গ্যাস কিংবা অন্যান্য কমোডিটির উপরেও ততোটা নির্ভরশীলও নয়। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট একচ্ছত্র ২২ বছর ক্ষমতায় থাকাতে রিজিম পরিবর্তনেরও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, যা পশ্চিমাদের জন্য একটা অবশ্যই মাথাব্যথার কারন। আর এই যুদ্ধের মাধ্যমে যদি সেটা অর্জিত হয়, খারাপ কি? তাহলে এমন একটা যুদ্ধ আমেরিকা থামাতে যাবে কেনো? ইউক্রেন ঠিক সেই ট্রাপটাতে পা দিয়েছে আমেরিকার হয়ে যেই ট্র্যাপটা রাশিয়া দিয়েছিলো আফগানিস্থান যুদ্ধে। কিন্তু রাশিয়াও সেই যুদ্ধে টিকে নাই।

ইউক্রেন

এখানে একটা কথা না বললেই নয়। আমরা কি কেউ জানি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি ডনবাস, ম্যারিউপোল, ক্রিমিয়ায় কি হয়েছিলো? আমি ২য় মহাযুদ্ধের এ যাবতকাল যতো ওয়ারফুটেজ আছে, সম্ভবত তার ৬০% নিজে দেখার চেষ্টা করেছি এবং সেই ফুটেজগুলিতে আমি একটা জিনিষ ক্লিয়ারলি বুঝেছি যে, হিটলার কিভাবে ইহুদীজজ্ঞ শুরু করেছিলো এবং শেষ করতে চেয়েছিলো। সেই সব ইহুদীরা নিরাপদ ছিলো না আবার অন্যায়কারীও ছিলো না। হিটলারের মতাদর্শে তারা চলতে চায় নাই বিধায় তাদের ওই পরিনতি ভোগ করতে হয়েছিলো। সেই ফুটেজগুলি দেখার পরে যদি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি ডনবাস, ম্যারিউপোল, কিংবা অন্যান্য সিটিতে স্পেশাল ফোর্স আজব ব্যাটালিয়ান কি করেছে পাশাপাশি দেখি, একই ছক, একই প্ল্যান, একই সিস্টেম। এমন কি এই আজব ব্যাটালিয়ান হিটলারের সময়ে ব্যবহৃত ইন্সিগ্নিয়াও ইউজ করতো। একদম ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে স্কুল কলেজগুলিতেই শিক্ষা দেয়া শুরু হয়েছিলো যাতে ছোট ছোট ইউক্রেনিয়ান বাচ্চারা মনেপ্রানে বিশ্বাস করে যে, রাশিয়া ইউক্রেনের শত্রু। Battle in Donbass, Donbass war at Airport, Fast Forwar to Fasicim, War in Europe-Drama in Ukrain, Trapped ইত্যাদি গ্রাউন্ড যিরো থেকে নেয়া ফুটেজগুলি দেখি, তাহলে হিটলারের ইহুদীনিধন আর ইউক্রেনের মধ্যে রাশিয়ান নাগরিকদের নিধনের মধ্যে কোনো তফাত পাবেন না। এই বিগত ৮ বছরের নিধনে কোনো ইউরোপিয়ান দেশ, বা পশ্চিমারা কোনো প্রকারের ভয়েস রেইজ করেন নাই। এমন কি আমরা যারা আমজনতা তারাও মিডিয়ায় এর একচুয়াল প্রতিফলন না হওয়াতে কিছুই জানি না। কিন্তু এরমধ্যে মিন্সক চুক্তি করে আপাতত একটা যুদ্ধবিরতি ঘোষনা করেছিলো ইউক্রেন। আমাদের অনেকের মনে এই প্রশ্নটা কেনো আসে না যে, মিন্সক চুক্তিটা কি এবং কেনো হয়েছিলো? ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি ওই যুদ্ধে প্রতিটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট (ভিক্টোর ইউনিকোভিচ, ওলেক্সান্দার টুরচিউনোভ, পেট্রো প্রোসেঙ্কো, এবং বর্তমান জেলেনেস্কী) সবার স্ট্রাটেজি ছিলো এক-"রাশিয়ান স্পিকিং নাগরীক বা রাশিয়ার প্রতি ইনক্লাইনেশন আছে এমন ইউক্রেনিয়ান নাগরিক কিংবা দাম্পত্য জীবনে মিক্সড রাশিয়ান নাগরিকদেরকে নিধন করে ফেলা"। ইউক্রেনের জাতীয় টেলিভিশনে দেয়া সেই সব প্রেসিডেন্ট গনের ভাষন শুনলে দেখবেন, কি ম্যাসেজ ছিলো। সেই ২০১০ থেকে ইউকে এবং ইউএসএ এবং তাদের মিত্ররা ক্রমাগত ইউক্রেনকে আর্থিক সাহাজ্য করে যাচ্ছিলো। আর এই কথাটা কিন্তু ডিফেন্স মিনিষ্টার লয়ে অষ্ওটিন স্বীকার করেছেন, তার সাথে স্বীকার করেছেন ডিফেন্স সেক্রেটারী লিজ ট্রুসও।

২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি ইউক্রেনে একটা সিভিলওয়ার এমনিতে চলছিলো। আর সেটা ইউক্রেনের মধ্যে রাশিয়া স্পিকিং এবং ইউক্রেনিয়ান নাগরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো শুধুমাত্র ডনবাস, লুটেন্সক, ক্রিমিয়া, মারাইউপোল, এবং আরো কিছু শহর যাকে বলা যায় ইথনিক ক্লিঞ্জিং অপারেশন হিসাবে। আর এবার শুরু হয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। খুবই দূর্নীতি পরায়ন দেশ হচ্ছে এই ইউক্রেন।

 

 

চীন

চীন, ইন্ডিয়া, এশিয়ান দেশ, আফ্রিকান এইসব দেশগুলি কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে যায় নাই, আবার খুব ট্যাক্টফুলি ভোটদান থেকে বিরত থেকে এটাই প্রমান করেছে যে, অন্তত তারা পশ্চিমাদের সিদ্ধান্তের সাথে একমত নয়। এই চীন, ইন্ডিয়া, আফ্রিকা কিংবা অন্যান্য এশিয়ান দেশের কি ইন্টারেষ্ট সেটা বিস্তারীত না বল্লেও বুঝা যায় যে, রাশিয়াকে এদের প্রয়োজন বেশী ইউক্রেন থেকে।

ইইউ

যদি একটা জিনিষ লক্ষ্য করা যায় কারা কারা এই ইইউ তে আছেন। ইইউ এর সদস্যদেশুলি হচ্ছে- Austria, Belgium, Bulgaria, Croatia, Republic of Cyprus, Czech Republic, Denmark, Estonia, Finland, France, Germany, Greece, Hungary, Ireland, Italy, Latvia, Lithuania, Luxembourg, Malta, Netherlands, Poland, Portugal, Romania, Slovakia, Slovenia, Spain and Sweden. এই দেশগুলির বর্তমান আর্থিক বা সামরিক ক্ষমতা কি? যদি এই দেশগুলিকে তিনটা গ্রুপে ভাগ করি, তাহলে দেখা যাবে যে, খুবই দূর্বল আর্থিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা দেশগুলি হচ্ছে-অষ্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, এস্টোনিয়া, হাংগেরী, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমাবার্গ, মালটা, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া। মানে প্রায় ৩০ টি দেশের মধ্যে ১৪টি দেশ। ৫০%। একটু শক্ত কিন্তু দূর্বলের থেকে একটু উপরে আছে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ইতালী, পোল্যান্ড। ২৫%। আর যারা প্রথম সারিতে আছেন, তারা হচ্ছেন-ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রীস, স্পেন। অর্থাৎ ২৫%। তার মানে সিদ্ধান্ত মেকিং এ সবসময়ই দেখবেন, ফ্রান্স, জার্মানী, আর কেউ নয়। অর্থাৎ ১০%। এমন একটা কাঠামোর মধ্যে ইইউ জড়িয়ে আছে যে, বিগ বস যেভাবে চাবেন, সেভাবেই ছোটরা থাকলে ভালো হবে মনে করে যে কোনো সিদ্ধান্তেই তারা ‘ইয়েস’ বলে চালিয়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। ইউক্রেন না ইইউর সদস্য, না ন্যাটোর সদস্য, অথচ ইইউর সদস্যরা এই ইউক্রেনের পাশে বিগ বসের কারনে দাঁড়িয়ে থাকায় যেটা হয়েছে, ইইউর নিজের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা। ক্ষতি ইউকের হয় নাই, ইউএসএ এর হয় নাই, হয়েছে ইইউ এর। যারা রাশিয়ার উপর সর্বোতভাবে নির্ভরশীল।

জার্মান

একটা জিনিষ খেয়াল করলে দেখা যায় যে, গ্রাউন্ড যিরোতে জার্মান সাংবাদিক প্রায় নাই বললেই চলে। কারন বর্তমান ভাইস চেন্সেলর ওলফ সুলজ তাদের সাংবাদিকদেরকে এভাবেই ব্রিফ করেছেন যেনো ইউক্রেন যুদ্ধের গ্রাউন্ড জিরো প্রতিবেদন মিডিয়াতে সম্প্রচার না হয়। একমাত্র ডিডব্লিউ কিছু নিউজ করে যেগুলিও প্রায় ৫০-৫০ বায়াসড যা না করলেই হলুদ সাংবাদিকতায় পড়ার সম্ভাবনা। Frank-Walter Steinmeier জার্মান প্রেসিডেন্ট, তাঁকে গত সপ্তাহে ইউক্রেন ভিজিট করতে বললে তিনি সেই ইনভাইটেশনকে পরিত্যাগ করেছেন। তিনি কিয়েভে আসবেন না। কারন ইতিমধ্যে জার্মানীতেও তাদের দল, নাগরীক এবং অন্যান্য সুধীজনের মধ্যে প্রচন্ড একটা দ্বিভাজন শুরু হয়েছে পক্ষে বিপক্ষে। কারন, সাধারন নাগরিকগন ইতিমধ্যে রাশিয়ার গ্যাস, তেল, কমোডিটির অভাবে একটা অশনি পরিস্থিতির আন্দাজ করতে পারছেন। একটা পলিটিক্যাল চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সবাই তো যুদ্ধংদেহী নয়।

কিছু কথাঃ

অজস্র অস্ত্র প্রবাহ একটা সময়ে বুমেরাং হতে পারে। আফগানিস্থানে যেসব অস্ত্র আমেরিকা ফেলে এসেছিলো বা সরবরাহ করেছিলো, ওইসব অস্ত্র শেষ পর্যন্ত আফগানিস্থানের মিলিশিয়ারা আমেরিকার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করতে শুরু করেছিলো। যার কারনে কোনো বিকল্প ছাড়াই আমেরিকাকে তড়িঘড়ি করে আফগানিস্থান ছেড়ে আসতে হয়েছিলো।

নিষেধাজ্ঞা পুরু ওয়েষ্ট এবং ইইউসহ সারা দুনিয়ায় একটা অস্থিরতা আনবে। যেমন ইইউ শেষ পর্যন্ত একটা ব্যাপার স্বীকার করেছে যে, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কোনো কাজে আসে নাই।

রাশিয়ার রুবলকে দূর্বল করার জন্য যখন সুইফট থেকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কেটে দেয়া হলো, তখন রাশিয়ার নিজের কারেন্সী ছাড়া কোনো প্রকারের ব্যবসা করা সম্ভব ছিলো না। ফলে রুবল যখন একমাত্র অপসন, আর রাশিয়ার কমোডিটি যখন অন্যের খুবই দরকার, তখন বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত অন্যানরা সুইফটের বাইরে গিয়ে রাশিয়ার শর্ত মেনে নিয়েই এখন রুবলে তাদের লেনদেন করতে বাধ্য হচ্ছ্যে। যেই রুবল যুদ্ধের আগে ছিলো ১ ডলার= ৭২ এখন সেই রুবল চলে এসছে ১ ডলার= ৬৭। অথচ নিষেধাজ্ঞার ঠিক পরপরই ১ ডলারের সমান ছিলো ১৩৯ রুবল। একই রুবল যুদ্ধের আগের থেকেও শক্ত অবস্থানে চলে এসছে। পুরু ইউরোপ জুড়ে এখন ডলারের চেয়ে বেশী প্রবাহ হচ্ছে রুবলের। এতে যেটা হবে, সেটা হচ্ছে পেট্রো ডলারের নির্ভরতা অনেক অনেক কমে যাবে। ফলে ডলার তার শক্তিশালী অবস্থা হারাবে, ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাদের আধিপত্যতা হারাবে, চীন, দুবাই, আরব দেশগুলি তাদের তেল হয় রাশিয়ান রুবল, বা চীনের আরএমবি, অথবা নিজস্ব কারেন্সীতে লেনদেন করা শুরু করবে।

 

তাহলে কারা জিতছে এই যুদ্ধে?

01/05/2022- Russia’s 3B strategy in Ukraine

যুদ্ধ জয়ের সবচেয়ে বড় ট্যাক্টিক্স হচ্ছে সেই কউশলটা যা আগে কোথাও ব্যবহার করা হয় নাই। সব দেশ সব সময় তাদের সামরিক সদস্যদেরকে একটা ধাচের মধ্যে সমর বিদ্যা চর্চা করান। কিন্তু কেউ যদি ততাহকথিত সমর জ্ঞান পালটে এমন কিছু অভিনব কায়দা গোপনে পরিচালনা করেন যার সম্পর্কে কারো কোনো ধারনা নাই, তখন অনেক অস্ত্র খরচ করেও শত্রুকে মোকাবেলা করা সম্ভব হয় না। পুতিনের সমর কৌশলের মধ্যে এমন কিছু নতুনত্ত আছে যা সচরাচর বই পুস্তকে লিখা নাই। একটু খোলাসা করে বলি;

কিয়েভের একদম কাছে গিয়ে সে আর কিয়েভ দখল করলো না। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে দখল করতে পারলো না। কিভের কাছাকাছি (মানে মাত্র ১০ কিমি দূরে) অবস্থান করলো প্রায় ৮ দিন। কিছুই করলো না। অবাক লাগার কথা। প্রায় ৬৬ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো, বুঝা যাচ্ছে না আসলে কে জিতে যাচ্ছে। রাশিয়ার আগ্রাসনকে আমি কিন্তু সাপোর্ট করছি না। এটা আগ্রাসনই বল্বো। অন্যায় তো অবশ্যই। কিন্তু যেহেতু সুপার পাওয়ারগুলি এখন নিজেরাই নিজেদের জন্য খেলছে, দেখি রাশিয়া কোন রহস্যময় সমর কৌশল অবলম্বন করছে।  

Cdr Benjamin “BJ” Armstrong, a US naval officer যাকে বলা হয় সমর চিন্তায় একজন পারদর্শী। তিনি মন্তব্য করেছেন, রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের সময় যে ট্যাক্টিক্স অবলম্বন করেছিলো যাকে Russia’s 3B strategy বলা হয়, সেই একই ট্যাক্টিক্স পুতিন ইউক্রেনেও অবলম্বন করেছে বলে মনে হয়। তাহলে এই Russia’s 3B strategyটা কি?

In Russia’s 3B strategy, the first B stands for ‘Blockade’,

the second for ‘Bombardment’ and

the third for ‘Boots’ on the ground.

US military experts suggest that Russia so far has successfully executed this strategy that has seriously hampered Ukraine’s fighting ability in the eastern part of the country.

এই স্ট্রাটেজি পালনে ক্রিমিয়া দখলের সময় রাশিয়া প্রথমে ইউক্রেনের Sevastopol port কে ব্লকেড এবং চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল। তারপর রাশিয়া ইউক্রেনের ডিফেন্স ফোর্সকে বোম্বার্ডমেন্টে ধংশ করে ফেল্লো। then it landed its boots in Crimea.

ঠিক একই কাজ ফেব্রুয়ারীর ২৪ তারিখ থেকে রাশিয়া শুরু করেছে।  রাশিয়া  ইউক্রেনের Sevastopol port কে লঞ্চিং প্যাড হিসাবে ব্যবহার করেছে, ক্রিমিয়া দখলের সময়ও সে এটা করেছিলো। অতঃপর সেখান থেকে ডেডলী মিসাইলস, মেরে ইউক্রেনের ডিফেন্স ফোর্সকে এটাক করেছে। অতঃপর রাশিয়া Kerch Strait প্রনালীকে ব্লক করে দিয়েছে। Kerch Strait হচ্ছে আজম সাগর এবং ব্ল্যাক সাগরকে সংযোগ করে। ফলে আজব সাগরের পুরু কন্ট্রোল রাশিয়া নিয়ে নেয়। And lastly, it landed its boots in Ukraine to usurp the vast swathes of the country. এর মাধ্যমে রাশিয়া ঠিক আগের মতোই তার 3B strategy পরিচালনা করলো।

Now, Russia is applying this strategy to the whole of Ukraine, by creating a blockade of the Ukrainian territories by hijacking the port cities of Mariupol, Berdyansk, Mykolayiv and Odesa.

এখন যেটা রাশিয়া করছে তা হলো-এই ব্লকেডের মাধ্যমে ইউক্রেনের ফোর্স এবং অর্থনীতি পুরুটাই বিপর্য্যের মুখে। রাশিয়ার এই ব্লকেডের জন্য ইউক্রেন তাদের অঢেল খাদ্য সামগ্রী এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায় রপ্তানী করতে পারছে না। অথচ ইউক্রেনকে বলা হতো ইউরোপ/আমেরিকার খাদ্য ভান্ডারের একটি গুদাম।

একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০১৯-২০২০ সালে ইউক্রেন ছিলো প্রিথিবীর ২য় বৃহৎ রপ্তানীকারক দেশ। ২০২০-২১ সালে আগের বছরের থেকেও প্রায় ২৫% বেশী উতপাদন করেছিলো ইউক্রেন যেখানে প্রধান খাবারগুলি ছিলো বার্লি, কর্ন, সিরিয়াল, ভেজিটেবল ওয়েল। এখন সে সব খাদ্য সামগ্রির বহির্বিসশে ইউক্রেন রপ্তানী করতে পারছে না। অচিরেই সারা বিসশে খাদ্যের একটা সংকট তৈরী হতে পারে বলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম জানিয়েছে।

Now, you may ask, what exactly are America and Ukraine doing to prevent Russia’s 3B strategy to come to fruition? Well, frankly speaking, the two nations seem to be falling prey to Russia’s carefully fabricated military warfare. Ukraine still has not devised any strategy to break Russia’s 3B trap, and that’s what has now unnerved US military experts in epic proportions.

০২/০৫/২০২২-আজ রোজার শেষ দিন, কাল ঈদ

আজ এ বছরের রমজান মোবারক শেষ হয়ে যাবে। বয়স বাড়ছে, আর জীবনের উপর ভয়ও বাড়ছে, বাড়ছে দুসচিন্তা, কমছে শরীরের শক্তি, তার সাথে কমে যাচ্ছে নিজের উপর কনফিডেন্স। যেভাবেই হোক আর যখনই হোক, একটা সময় তো আসবেই যেদিন আমি আর থাকবো না। খুব মন খারাপ হয় যখন এটা ভাবি, অন্যের জন্য কতটা মন খারাপ হয় সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু নিজের উপরেই বেশী মন খারাপ হয় যে, ইশ, এতো সুন্দর একটা দুনিয়া ছেড়ে শেষ অবধি আমাকে চলেই যেতে হবে এমন একটা গন্তব্যে যার আমি কিছুই জানি না, দেখি নাই, এবং পুরুই খালী হাতে!! আর সবচেয়ে মন খারাপের দিকটা হচ্ছে- কোনো কিছুর বিনিময়েই আমি আর আমার এই পুরানো স্থানে একটি মুহুর্তের জন্য ও ফিরে আসতে পারবো না, কোনো কিছুই আর আমি কারো কাছে দাবীও করতে পারবো না, এমন কি আমার তৈরী করা অট্টালিকা, আমার রেখে যাওয়া ব্যাংক ব্যালেন্স, আমার নিজের সব কিছুর কিছুই না। যখন জীবিত ছিলাম, তখন এগুলির সত্তাধীকারী আমি ছিলাম, কিন্তু যে মুহুর্তে আমি চলে যাবো, এর কোন কিছুই আর আমারটাই আমার না। এমন একটা জীবন ঈশ্বর আমাকে কেন দিলেন? শুধু কি পরীক্ষার জন্যই? আমি তো তার এই পরীক্ষায় কোনোদিনই পাশ করতে পারবো না যদি তিনি সঠিক নিয়য়ে আমার দলিল পত্র দেখতে থাকে। যদি পুরুই হয় আমার পাশের নাম্বার তার অনুগ্রহের উপর, তাহলে তিনি আমাকে আরো লম্বা, আরো লম্বা, তার থেকেও লম্বা একটা জীবন দিলেন না কেনো?

কি জানি? হয়তো এই জীবনের পরে আরেক যে জীবন আমার ঈশ্বর বরাদ্ধ রেখেছেন, সেটা হয়তো আরেক অধ্যায় যা আমাদের কারোই জানা নাই। পরীক্ষার তো অনেক গুলি ধাপ থাকে। হয়তো এই জীবনের শেষ যেই মৃত্যু দিয়ে, হতে পারে সেখান থেকে আরো একটা ধাপ শুরু। কেউ তো আর এ যাবত সেই ধাপ থেকে ফিরে এসে বলে নাই, তার কার্যপ্রনালী কি, কি সেই ধাপের নমুনা।

যাই হোক, যেটা বলছিলাম, খুব সুস্থ্য ভাবে ৩০ টি রোজা করার শক্তি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। আমি প্রতিবছর নিজের বাসায় দুইটা হাফেজ কে দিয়ে কোরান খতম তারাবি করি। কিন্তু গত দুই বছর করোনার কারনে সেটা পালন করা যায় নাই। আমি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার স্ত্রী মিটুল তাতে বাধ সেধেছিলো ভয়ে। এবার আর কোনো কথা শুনতে চাইনি। হাফেজ ইসমাইল এবং হাফেজ মেহেদী নামে দুইটি বাচ্চা ছেলে আমাদের তারাবী লীড করেছিলো। ২০ রোজায় আমরা পুরু কোরান খতম করেছি (আলহামদুলিল্লাহ)

দোয়া কবুলের নমুনাঃ

আমার মাথায় আছে, আল্লাহ বলেছিলেন, আমি প্রতিদিন আমার রোজদার বান্দার ইফতারীর সমত যে কোনো ২ টি পজিটিভ ইচ্ছা বা দোয়া কবুল করতে প্রতিশ্রুত বদ্ধ। আমি এটা সব সময় মনে প্রানে বিশ্বাস করি এবং রোজার প্রথম দিন থেকেই আমি মোট ৬০ টি চাওয়া লিখে নেই। আমি জানি আমার জীবনে এই রকম ৬০ টি চাওয়া আসলে নাই। দেখা যায়, হয়তো ঘুরে ফিরে গোটা ১০ টি চাওয়াই থাকে। এ যাবত আমি আমার রবের কাছে কি কি চেয়েছিলাম, সেটা আর এখন বলছি না। তবে আমি স্পষ্ট দেখেছি, আমার প্রায় সব গুলি ইচ্ছা আল্লাহ পুরুন করেছেন। তিনি আমাকে চাকুরীর পর ব্যবসা করতে দিয়েছেন, কারো কাছেই আমার হাত পাততে হয় নাই, আমার সন্তানদেরকে তিনি সুস্থ্য রেখেছেন, মানুষের কাছে তিনি আমাকে সম্মানের সহিত রেখেছেন। অনেক কিছু করেছে আমার রব।  

গত বছর আমি খুব মনে প্রানে প্রায় প্রতিটি রোজায় আল্লাহর কাছে এই দোয়াটি করেছিলাম যেনো আমাকে তিনি ঋণ গ্রস্থ জীবন থেকে উদ্ধার করেন। কারন আমি আমার মা ইন্ডাস্ট্রিজে জন্য বেশ কিছু লোনে জর্জ্রীত হয়ে গিয়েছিলাম। এই বছরে রোজার আগেই আল্লাহ আমাকে সম্পুর্ন লোন থেকে মুক্ত করেছে। এবারই প্রথম আমি লোন মুক্ত জীবনে পা দিয়ে একটা বড় সঞ্চয়ের পথে আছি। আমার ছোট মেয়েকে আমি আগামী ২ বছরের অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছি আমেরিকায় পরার জন্য। বড় মেয়ের জন্যেও একটা সঞ্চয় আমি করতে পেরেছি। আমার নিজের জন্যেও করতে পেরেছি। এর থেকে আর কত সুখী রাখবেন আমার রব আমাকে? আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।

এবার রোজায় আমি শুধু আমার মৃত আত্তীয় স্বজনের জন্য, আমার মেয়েদের জন্য, আমার স্ত্রীদের জন্য, আর আমার ব্যবসার জন্য প্রতিদিন দোয়া করেছি। আর আমি মনে প্রানে চেয়েছি যে, আমি যেনো সম্পুর্ন হোম ওয়ার্ক করে তারপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারি। আমি আমার সেই হোম ওয়ার্কের মধ্যেই এখন আছি। আমি সেই হোম ওয়ার্কের সময়কাল ধরেছি আরো ৬ বছর। ৬৩ বছর আয়ুষ্কাল পর্যন্ত যেহেতু আমাদের নবী ৬৩ বছরের বেশী বেচে ছিলেন না, তাই আমিও ধরে নিয়েছি আমারো ৬৩ বছরের বেশী বেচে থাকার ইচ্ছা করা উচিত না।

গত ঈদে আমার ছোট মেয়ে আমাদের সাথে ছিলো, এবার সে আমাদের সাথে নাই। সে এখন আমেরিকায়। আগামিতে আবার কে কার সাথে থাকবে না, কে জানে? উম্মিকার একটা বিয়ে হওয়া দরকার। উম্মিকাকে নিয়ে একবার একটা মারাত্তক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বিয়েটা টিকে নাই। তাই এবার আর আমি ওর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্তই দিবো না। এতে যখন ওর বিয়ে হয় হোক। এবার আমি প্রদিন উম্মিকার জন্য ওর বিয়ের জন্য, একটা ভালো পাত্রের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।

৩০/৪/২০২২ -রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার খেলা

রাশিয়ার তেল/গ্যাস এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা

আমি এর আগেও অনেকবার লিখেছিলাম যে, নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে দুইমুখু সাপের মতো, শাখের কারাতের মতো, যেতেও কাটে, আসতে কাটে। ফলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে যিনি নিষেধাজ্ঞা দিবেন, তাঁকে অনেক হিসাব কষে দেখতে হবে, তিনি আবার সেই নিষেধাজ্ঞার কারনেই প্রতিঘাতে না পড়েন। যেদিন ইউরোপ রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকলো, তখনি বুঝেছিলাম, মারাত্তক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। ইংরেজীর সেই প্রোভার্ভ কাজে লাগে নাই এই ইমোশনাল নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সময় যে- Never bite the hand who feeds you.

নিষেধাজ্ঞার প্রভাবঃ

রাশিয়ার উপর প্রায় ৭ হাজারেরও বেশী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপ এবং পশ্চিমারা। অথচ এই রাশিয়ার উৎপাদিত ন্যাচারাল গ্যাস, ফসিল ওয়েল, নিকেল, এলুমিনিয়াম, গম, লোহা, ইস্পাত, ইউরেনিয়ামের উপর ইউরোপের সবগুলি দেশ প্রায় ৪০ থেকে ৭০% পর্যন্ত নির্ভরশীল। এমন একটা অবস্থায় বহুদূরের যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রর নেত্রিত্তে বা পরামর্শে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞায় তারা যতোটা না কাবু হবে তার থেকে  এই নিষেধাজ্ঞায়  ইউরোপ কাবু হবে ৪০-৭০% বেশী। কারন ইউরোপ ৪০-৭০% কমোডিটির উপর রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। এটাই হবার কথা ছিলো আর সেটাই হয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় পশ্চিমাদের বুদ্ধিতে ইউরোপের মারাত্তক ভুলটা হয়েছে যখন রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংককে সুইফট সিস্টেম থেকে বের করে দিয়ে পুরু বিশ্ব ব্যাংকিং থেকে আউট করায়। ফলে কি ঘটেছিলো? ঘটছিলো যে, আগে রাশিয়ার পন্য কিনে তারা পেমেন্ট করেছে ইউরো বা ডলারে। রাশিয়া সুফট সিস্টেমে থাকায় রাশিয়া সহজেই সেই ইউরো বা ডলার কনভার্ট করে তাদের নিজস্ব কারেন্সীতে পরিবর্তন করতে পারতো অথবা ইউরো বা ডলারকে রিজার্ভ হিসাবে রাখতে পারতো। কিন্তু এখন সুফট সিস্টেম থেকে আউট হওয়ায় রাশিয়া এখন আর ইউরো বা ডলারের পেমেন্ট ক্যাশ করতে পারেনা। এরমানে, রাশিয়া তার পন্য ঠিকই দেবে কিন্তু মুল্য ঘরে পাবেনা যেহেতু সেটা সুইফট সিস্টেমের আওতায় ইউরো বা ডলারের কারনে আটকে যাচ্ছে। পশ্চিমারা চেয়েছিলো যাতে অর্থনীতির দিক দিয়ে রাশিয়াকে পঙ্গু করে দেয়া যায়। কিন্তু রাশিয়া তো আর লিবিয়া, ইরাক বা আফগানিস্থান নয়। এবার রাশিয়া ডিক্রি জারী করেছে-রাশিয়া তার নিজস্ব কারেন্সী ছাড়া কোনো প্রকারের কারেন্সীতে রাশিয়া তার পন্য বিনিময় করবে না। আর সেটা শুরু হবে গ্যাস পন্য দিয়ে। মজার ব্যাপার হলো, ইউরোপের সবকটি দেশ রাশিয়ার এই গ্যাসের উপরে কম বেশী কেউ কেউ ৪০% থেকে শুরু করে ৭০% পর্যন্ত নির্ভরশীল।

রুবলে ব্যবসাঃ

শুধুমাত্র হাঙ্গেরী ছাড়া প্রাথমিকভাবে কেহই রাশিয়ার এই নতুন নির্দেশ মেনে নিতে রাজী হয়নি। তারা ইউরো বা ডলারেই পেমেন্ট করবে বলে রাশিয়াকে ফের জানিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে-দোকানীর জিনিষ যদি দোকানীর আইনে কেউ না নিতে পারে, তাতে খদ্দেরেরই ক্ষতি। হয় দোকানীর নিয়মে পন্য নাও, না হয় যাও। আর ঠিক এটাই হয়েছে। প্রথমে রাশিয়া পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ার গ্যাসলাইন বন্ধ করে দিয়েছে। পোল্যান্ড খুব হিম্মতের সাথে জানিয়ে দিয়েছে-রাশিয়ার গ্যাস ছাড়াও তারা চলতে পারবে কারন তাদের রিজার্ভ আছে প্রায় ৭৫%। আমার মাথায় আসে না, এই রিজার্ভ কিন্তু ন্যাচারাল সোর্স থেকে রিজার্ভ নয়, এটা রাশিয়া থেকেই কেনা অতিরিক্ত গ্যাস। এটাতো একসময় শেষ হবেই? তখন পোল্যান্ড কি করবে? পোল্যান্ড বলছে-সে জার্মানীর থেকে গ্যাস নিবে। তাহলে জার্মানীর গ্যাস থাকতে হবে নিশ্চয়ই! অথচ জার্মানী নিজেই রাশিয়া এবং স্পেন থেকে গ্যাস কিনে। এদিকে জার্মানীও রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং ইউরো/ডলার ছাড়া তারাও রাশিয়াকে রুবলে পেমেন্ট করবে না বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে অনেকদিন ঘুমিয়ে থাকার পর স্পেন হটাত ঘুম থেকে জেগে বলে বসলো যে, জার্মানী যদি পোল্যান্ডকে গ্যাস সরবরাহ করে, তাহলে স্পেন জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। কেমন চক্কর!!

যাই হোক যেটা বলছিলাম-

রাশিয়ার কঠিন হুশিয়ারীতে পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ার গ্যাসলাইন বন্ধ করার কারনে বাকী ইউরোপিয়ানদের একটু টনক নড়েছে যে, গ্যাস তো লাগবেই, গ্যাস ছাড়া তো আর রুম হিটিং হবে না, কলকারখানা চলবে না, সব অচল হয়ে যাবে, ইন্ডাস্ট্রিজ বন্ধ হয়ে যাবে ইত্যাদি। কিন্তু উলটা মন্তব্য করতেও দ্বিধা করেনি ইউরোপ। তারা বলেছে-রাশিয়া গ্যাসের মাধ্যমে ইউরোপকে ব্ল্যাকমেইল করছে। আজব ব্যাপার হচ্ছে-একদিকে ইউরোপ রাশিয়ার সবকিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যে, কেউ যেনো রাশিয়া থেকে কিছুই না নেয়। একেবারে এক ঘরে করতে চেয়েছে। এখন আবার যখন রাশিয়া নিজেই সেই  সাপ্লাই ইউরোপে বন্ধ করে দিলো এবং ইউরোপের কথাতেই রাশিয়া একঘরে হয়ে থাকতে চাইলো যে, যেহেতু কেউ আমার পন্য নিবে না, তাই আমিও বন্ধই করে দিলাম, তখন আবার ইউরোপ বলছে, এটা কেমন কথা? আমরা নিষেধাজ্ঞা দিবো ঠিকই, কিন্তু তুমি আমাদেরকে তেল গ্যাস সব দিবা কিন্তু ফ্রিতে। কারন আমরা ইউরো/ডলারে দাম দেবো আর সেটা পশ্চিমারা তাদের ব্যাংক সিস্টেমে আটকে দিবে। আমাদের টাকা আমাদের কাছেই রয়ে গেলো, আবার পন্যও ফ্রিতে পাইলাম!!

আহাম্মকের মতো মনে হয়েছে আমার কাছে এই সিন্ডিকেটিজমটা। সত্তোর্ধ বয়সী প্রায় ২৪ বছর যাবত একাধারে রাষ্ট্রনায়কের কাছে এসব একেবারে হাস্যকর মনে হবার কথা না? তাই পুতিন স্যাম্পল হিসাবে আপাতত পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ার গ্যাসলাইন বন্ধ করে দিলেন। ঠেলার নাম বাবাজি এটা সবাই জানে, ফলে এবার দেশের অবস্থা বেগতিক দেখে প্রথমে ইউরোপের ৪টি দেশ ইতিমধ্যে রাশিয়ার সাথে রুবলে পেমেন্টের জন্য একাউন্ট খুলতে রাজি হয়ে গেলো এবং তারা পেমেন্টও করে দিলো।  তাহলে বাকী দেশগুলি এখন কি করবে?

ইউরোপের জন্য কি অপশন খোলাঃ

ইউরোপের জন্য এখন দুটু অপশন খোলা-(ক) হয় রাশিয়ার শর্ত মেনে নিয়ে রুবলের মাধ্যমে গ্যাস নেওয়া অথবা (খ) রাশিয়ার গ্যাসের উপর বিকল্প তৈরী করে রাশিয়ার গ্যাস না নেয়া এবং নিষেধাজ্ঞা জারী রাখা।

জার্মানীর চ্যান্সেলর উলফ সোলজ রাশিয়ার এই নতুন নির্দেশনায় খুবই ক্ষিপ্ততার সাথে রাশিয়ার শর্ত নাকচ করে দিয়ে ২৯ মার্চ বলেছিলো যে, কোনো অবস্থাতেই তারা গ্যাস কন্ট্রাক্টের বাইরে অর্থাৎ হয় ইউরো না হয় ডলারে পেমেন্ট, অন্য কোনো কারেন্সিতে জার্মানী যাবে না। আজ প্রায় ৩০ দিন পর জার্মানীর একমাত্র গ্যাস ক্রেতাকোম্পানি UNIPER পুতিনের শর্ত মেনে নিয়ে রুবলের মাধ্যমেই এখন গ্যাস ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অষ্টিন কোম্পানি O&V, ইতালীর ANI এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের গ্যাস সরবরাহ কোম্পানীগুলিও একইভাবে গ্যাজপ্রোম ব্যাংকে তাদের রুবলের একাউন্ট খুলছে।

নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা কিঃ

এখন প্রশ্ন হচ্ছে-রাশিয়ার উপর পশ্চিমা এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকা সত্তেও, সুইফট থেকে রাশিয়াকে আউট করে দিয়েও আবার সেই রাশিয়া থেকেই রাশিয়ার শর্তে গ্যাস কেনায় পশ্চিমাদের কিংবা ইউরোপের কি সম্মান বজায় থাকলো? নিষেধাজ্ঞা কি তাহলে কার্যকরী হলো?। এর ব্যাখ্যা তাহলে কি?

রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা আর রাশিয়া থেকে পুতিনের শর্তে গ্যাস কেনা এক নয়। যদি এসব কোম্পানীগুলি পশ্চিমা এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়া থেকে গ্যাস ক্রয় করে, তাহলে এসব কোম্পানীকে শাস্তির মুখে পড়ার কথা না?  কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে-ব্রাসেলস এখন পুরুই নিশ্চুপ। তাহলে ব্রাসেলসের এই চুপ থাকার কারন কি? এরও একটা ব্যাখ্যা আছে যা আমাদের মতো আমজনতা জানেই না। আর সেটা হচ্ছে-নিষেধাজ্ঞার শর্তের মধ্যে একটা ছোট ফাক রাখা হয়েছিলো। আর সেটা কি?

কিছুদিন আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সব সরবরাহকারীদের জন্য একটা গাইডবুক দিয়েছে। সেখানে তিনটা গাইডলাইন দেয়া হয়েছেঃ

(1)        Uphold EU sanction

(2)        Abide by Putin’s Decree

(3)        Secure Natural gas for Europe.

আসলে এই গাইডলাইনে উভয়পক্ষের জন্য Win-Win Situation রাখা হয়েছে। আর ঠিক এই গাইডলাইনের ২ নং শর্তের কারনেই ইউরোপের গ্যাস কোম্পানীগুলির বিরুদ্ধে ইউরোপ বা পশ্চিমারা কোনো শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না বা পারতে চায় না। তারা সবাই সানন্দে এখন দুটু করে একাউন্ট খুলছে গাজপ্রোম ব্যাংকে। প্রথম একাউন্ট ইউরো বা ডলারে, অন্যটি রুবলে। একই ব্যাংকে, গাজপ্রোম ব্যাংক।

লেনদেনটা কিভাবে হবেঃ

তাহলে এই লেনদেনটা কিভাবে হবে? সেটাও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলে দিয়েছে। প্রথমে ক্রেতা তার পেমেন্ট ইউরো বা ডলারে জমা করবে গাজপ্রোম ডলার/ইউরো ব্যাংক একাউন্টে। গাজপ্রোম ব্যাংক অতঃপর সেই ইউরো বা ডলার রুবলে কনভার্ট করে তাদের পেমেন্ট নিয়ে নিবে। কিন্তু এখানে আরেকটা জটিল সমস্যা আছে যে, যেহেতু ইউরোপ এবং পশ্চিমারা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংককে সুইফট থেকে বের করে দিয়েছে, ফলে গাজপ্রোম ব্যংক কিছুতেই গ্যাসের পেমেন্ট ইউরো বা ডলার থেকে রুবলে কনভার্ট করতে পারবে না। তাহলে উপায়?

ঠিক এখানেও ইউরোপিয়ানরা তাদের সরবরাহকারীদেরকে গাইডলাইন দিয়ে দিয়েছে এভাবে-

(এখানে একটা কথা না বললেই নয়। আমরা যারা ব্যবসা করি তারা এটা খুব ভাল করে জানি কিন্তু অন্যান্য ব্যক্তিরা যারা ব্যংকিং সেক্টরে এলসির (LC: Letter of Credit)  সাথে জড়িত নন, তাদের বুঝার জন্য বলছি যে, সাধারনত ইম্পোর্ট এক্সপোর্টে যখনই কোনো পেমেন্ট বেনিফিশিয়ারী ব্যাংক রিসিভড হয়, তখনই পেমেন্টের কাজ শেষ হয়ে যায় বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে যতোক্ষন না পর্যন্ত ইউরো বা ডলার রাশিয়ার রুবলে কনভার্ট না হচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত পেমেন্ট রিসিভড হয়ে বলে ধরে নেয়া যাবে না। আর এটার জন্য শুধুমাত্র ইন্টারকারেন্সী চেঞ্জ পালিত হবে। তার মানে কি? তারমানে গ্যাজপ্রোম ব্যংক তাদেরই গ্যাজ প্রোম ডলার/ইউরো একাউন্টে রুবল বিক্রি করবে এবং রুবলের দামের উপর ইউরো বা ডলার উঠানামা করবে। ইউরো বা ডলারের মানের উপর রুবলের মান উঠা নামা করবে না। খুবই বিপদজনক অবস্থায় আছে এখন ইউরো এবং ডলার। আগে ইউরো বা ডলারের মাপে রুবল উঠানামা করতো, এবার ডলার/ইউরো রুবলের মাপে উঠা নামা করবে।

তাহলে রুবল কি দূর্বল হতে যাচ্ছে নাকি সবলঃ

তাহলে আরেক প্রশ্ন জেগে উঠে- রুবলকে শক্তিশালী করা নাকি রুবলকে দূর্বল করলে ডলার বা ইউরোর লাভ? যদি পশ্চিমারা ১ ডলার সমান ২০০ রুবল করতে চায়, করুক, তাহলে যখন ইউরোপিয়ানরা রুবলে গ্যাসপেমেন্ট করবে তখন ডলার বা ইউরোর সমান পরিমান রুবল দিতে হলে ওদেরকে অনেক ডলার বা ইউরো খরচ করতে হবে। আর যদি ডলার/ইউরোর মান সমান সমানে থাকে তাহলে ইউরো/ডলার কম খরচ করতে হবে। আর ঠিক একারনেই এবার পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ানরা রুবলের মান শক্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু বিজ্ঞ পুটিন বলছে, তোমরা আমার রুবলের দাম আরো কমাইয়া দাও, আমার কোনো সমস্যা নাই।

ইউরোপ এর বন্ডেজের ভীত তাহলে কই যাবেঃ

ইউরোপের আসলে এখন কিছুই করার নাই। In fact, for Europe, its a choice between Air Conditiong and Peace. জার্মানী পরিষ্কারভাবে Air Conditioning বেছে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো ইতালীর মতো। ইতালী তার জনগনকে এসি চালানোর ক্ষেত্রে একটা তাপমাত্রা নির্ধারন করে দিয়েছে। কিন্তু সেটা কয়দিন?

 মূল কথায় আসি। ইউরোপ এবং পশ্চিমাদের দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মুল লক্ষ্য ছিলো রাশিয়াকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পংগু করে ফেলা। কিন্তু সেটা কি হয়েছে? সেটা কিন্তু হয় নাই। ইউরোপ নিজেই রাশিয়াকে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ মিলিয়ন ইউরো পে করে থাকে এই গ্যাসের জন্য। এরমানে ইউরোপ নিজেই পুতিনের ওয়ারমেশিনকে ফান্ডিং করছে। জার্মান কিংবা ইউরোপিয়ান কোম্পানী রাশিয়াকে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো/ডলার দিচ্ছে, রাশিয়া সেই ইউরো/ডলার দিয়ে তার যুদ্ধের খরচ মিটিয়ে ইউক্রেনকে ধংশ করছে। আর ইউক্রেন আবার জার্মানী কিংবা ইউরোপীয়া ইউনিয়নের দেশগুলি থেকেই অস্ত্র সরবরাহ পাচ্ছে। তার মানে কি দাড়ালো?

Moral of the Story is: All the lectures and principles are farse and what matters in the end is only own interest.

  

২৯/৪/২০২২-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাচার 

অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানগন (বিশেষ করে ইইউ, ইউকে, ফ্রান্স, জার্মানী অথবা ইউএস ইত্যাদি) তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা হয়তো একটা টেনিউর অথবা সর্বোচ্চ দুইটা টেনিউর। অনেকের আবার ২য় টেনিউরে রাষ্ট্রপ্রধান হবেন কিনা সে চিন্তায় সারাক্ষন কি কি করা যায়, কিভাবে কি পলিশি করলে ভোট বেশী পাওয়া যাবে তার মহাচিন্তায় মহাপরিকল্পনা করতে থাকেন। গ্লোবাল রাজনীতির থেকে নিজের জন্য রাজনীতিই বেশী করেন। অথচ রাশিয়ার পুতিন গত ২২ বছর যাবত প্রেসিডেন্ট হিসাবে তো বহাল আছেনই, তার উপর আগামী আরো ১৪ বছর তার প্রেসিডেন্সীর নিশ্চয়তাও রয়েছে। তারমানে ৩৬ বছরের একনাগাড়ের প্রেসিডেন্ট মিঃ পুতিন সাহেব। এমন একটা ঝানু রাজনীতিবিদ কি একেবারে কোনো হোমওয়ার্ক ছাড়া একা সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নামবে, এটা কি বিশ্বাস করা যায়? যত যাইই হোক, পুতিন এই ইউক্রেন যুদ্ধে হারার জন্য নামে নি, আর যুসশটা কতদিন চালাবে এটার সম্পুর্ন কন্ট্রোল আসলে পুতিনের হাতেই। আরো কিছু মাহাত্য তো আছেই।

ইউক্রেন আক্রমনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করিনা। কিন্তু জুলুমের রাজত্তে যখন কেউ না কেউ অধিক শক্তিশালী রাজ্য দারা প্রতিনিয়ত শোষিত হয়, তখন শোষকদের উপর কেউ জুলুম করলে সেটা অনেকটা মনের অজান্তেই সমর্থন পাওয়া শুরু করে যদিও আক্ষরিক অর্থে তা সমর্থনযোগ্য নয়। রাশিয়াকে সাপোর্ট করার পিছনে বেশীরভাগ মানুষের মনের ভাবটা ঠিক এইরকম। যাই হোক, ইউক্রেন যুদ্ধের কিছু আভাষ আমি পূর্বেই লিখেছিলাম, এবার মনে হচ্ছে সেগুলির বেশ কিছু নিদর্শন বাস্তবে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। সেই পরিবর্তনগুলি কিঃ

ক।       ইউনিপোলার ওয়ার্ড অর্ডার পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন হয়তো ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড চলছে বলে বলা যায়।  

খ।        ডলার কারেন্সীর একচ্ছত্র রাজত্ব খুব অচীরেই শেষ হতে যাচ্ছে। পেট্রোডলারের যে রাজনীতি সারা দুনিয়ায় একচ্ছত্র দাদাগিরি চালিয়ে একটা ভারসাম্যহীন      অর্থনীতির বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো, সেটার প্রায় বিলুপ্তির সূচনা শুরু হয়ে গেছে।

গ।        মানি সিস্টেমের যে “সুইফট ব্যবস্থাপনা” সারাটা দুনিয়ায় প্রতিটি দেশকে জালের মতো একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সবাইকে আটকে ফেলেছিলো, সেটা থেকেও দেশগুলি বিকল্প পথ পেয়ে যাচ্ছে।

ঘ।        পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনৈতিক বলয়ে যতটা আঘাত হানার কথা ভাবা হয়েছিলো, ততোটা কিন্তু আঘাত হানতে পারেনি। রুবল সেই ধাক্কাটা প্রায় কাটিয়ে উঠে যাচ্ছে। ফলে রুবল একটা শক্তিশালী কারেন্সী হিসাবে আবির্ভুত হতে যাচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল কি ?

ক।       আমেরিকার প্রাথমিক ইনিশিয়াটিভে ন্যাটো যতোটা তাদের মধ্যে হুজুগে পড়ে বন্ডেড হয়েছিলো, এখন সেই ন্যাটো সদস্যদের মধ্যেই বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। কারন প্রতিটি দেশের চাহিদা আলাদা আলাদা। একটি দেশের মুলনীতি, মুল চাহিদা, মুল কাঠামোর সাথে অন্য যে কোনো দেশের মুলনীতি, মুল চাহিদা বা মুল কাঠামোর মধ্যে তফাত থাকেই। আর সেই তফাতের কারনেই একেক দেশের ভূমিকা একেক পরিস্থিতিতে একেক রকম হবে। প্রাথমিক হুজুগের বলয় থেকে বেরিয়ে যখন বাস্তবতায় দেশগুলি চোখ খুল্লো, তখন দেখা গেলো, নিজের দেশের জনগনের জন্য প্রয়োজনীয় তেল, গ্যাস, খাবার, কিংবা মৌলিক চাহিদার যোগানের জন্য যা দরকার আর যেখানে এটা আছে সেটার উপরেই তারা পুর্বান্নে নিষধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। আর সেই নিষ্রধাজ্ঞা যেনো এখন বুমেরাং হয়ে নিজেদেরকে আঘাত করছে। এর ফলে যা হচ্ছে- ন্যাটোর মধ্যেই একে অপরের উপর আস্থা কমে যাচ্ছে। এরা এখন আর আগের মতো দল বেধে মিটিং, সেমিনার, কিংবা দ্বি পাক্ষীয়, তৃপাক্ষীয় ক্লোজডোর বৈঠক করছে না। ভাটা পড়েছে সব কিছুতেই। এই অনাস্থার অনুপাতটা আরো বাড়বে দিনে দিনে।

খ।        জেলেনেস্কী বারবার সারা দুনিয়াকে রাশিয়ার তেল, গ্যাস ইত্যাদি না নিতে অনুরোধ করছে, নিষেধাজ্ঞায় রাখতে বলছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, জেলেনেস্কির এতো আকুতি মিনতি করে এই নিষেধাজ্ঞা পালনে কাউকে এতো অনুরোধ করার দরকার ছিলো না যদি সে নিজেই ইউক্রেনের উপর দিয়ে রাশিয়ার পাইপলাইন গুলিকে অকেজো করে দিতো। পাইপলাইনই যদি সচল না থাকে, নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কেউ রাশিয়া থেকে তেল/গ্যাস নিতে পারতো না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-জেলেনেস্কী তাহলে ইউক্রেনের উপর দিয়ে প্রবাহিত তেল/গ্যাস লাইন/পাইপ লাইন ধংশ করে দিলো না কেনো? এর কারন একটাই-যদি জেলেনেস্কী এই কাজটা করতো, তাহলে ইইউ নিজেই ইউক্রেনকে ধংশ করে দিতো। আর ২য় কারনটা হচ্ছে, জেলেনেস্কী নিজেও ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লোকসানে পড়ত। তাই জেলেনেস্কী কোনোটাই করে নাই, এবং ইইউ নিজেও ইউক্রেনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রাশিয়ান পাইপ লাইনকে সবসময় সুরক্ষা দিয়ে সাপ্লাই সচল রেখেছে।

গ।         রাশিয়া কিন্তু তার অস্ত্র ভান্ডারের কিছুই আপাতত ব্যবহার করে নাই। বিশেষ করে আধুনিক যন্ত্রপাতী। যা করেছে সেটা নেহায়েতই একটা অবসলিট এবং পুরানো দিনের জাঙ্ক মেশিনারিজ দিয়ে। রাশিয়া এই ইউক্রেন যুদ্ধটা এখনই শেষ করতে চাইবে না। কারনঃ

(১)        রাশিয়া পেট্রোডলার কারেন্সী শেষ করে নিজেদের কারেন্সী বা চায়নিজ-রুবল-রুপি ইত্যাদির সমন্নয়ে একটা কারেন্সী প্রতিস্থাপিত না করা অবধি পুতিন ইউক্রেনের যুদ্ধটা চালিয়ে যাবে। আর এর মধ্যে দেয়া তার সেই সব পয়েন্ট তো আছেই যা সে উল্লেখ করেছে- নিউ নাৎসি, মিলিটারাইজেশন ইত্যাদি।

(২)        আগামী শীত হবে ইইউর জন্য একটা বিপর্যয়। কারন উক্ত শীতে রাশিয়ার তেল এবং গ্যাস, গম, যব, সিরিয়াল ইত্যাদির অভাবে ইইউর উপর একটা বিপর্যয় নেমে আসবে। তখন হয় ইইউ রুবলেই ট্রেড করবে, অথবা জনগন সাফার করবে। তাতে প্রতিটি দেশে বিক্ষোভ হবার সম্ভাবনা এবং তখন নেতারা নিজেদের গদি নিয়ে হুমকীর মধ্যে থাকবেন।

(৩)       এমতাবস্থায় সবাই ইউক্রেনকেই তাদের জীবন বিপর্য্যের কারন হিসাবে দায়ী করবে। ভুলে যাবে মানবতা, রিফুজিরাও সেই দেশ থেকে বিতাড়িত হবার সম্ভাবনা থাকবে। জেলেনেস্কী আত্তগোপনে চলে যাবেন, রাশিয়া তার নিজের পছন্দমত সরকার প্রতিস্থাপন করবেন। সেই সরকার এসে হয়তো রাশিয়াকে আবার আগের মতো সব কিছু করতে বলবেন যাতে ইইউর সাথে আবার সাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।   

কে কি ভুল করছে বলে মনে হয়ঃ

ক।       ওয়ার্শো ভেংগে যাবার পরে আসলে রাশিয়া কখনোই ইইউ অথবা আমেরিকার শত্রু ছিলো না। রাশিয়া অনেকটা ইউরোপের ধাচেই এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমেরিকা সর্বদা রাশিয়াকে তার চিরশত্রুই মনে করে। আসলে আমেরিকার শত্রু চিনতেও ভুল হয়েছে। তার শত্রু চীন, রাশিয়া নয়। তাই রাশিয়াকে ওর দলে নিয়ে চীনকে মোকাবেলা করা উচিত ছিলো আমেরিকার। ইউক্রেনকে দিয়ে অযথা রাশিয়ার গলায় পারা দেয়া আমেরিকার ঠিক হয় নাই। এতে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে চীন। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমেরিকা এবং ইইউ ।

খ।        রাশিয়া যখন ন্যাটোর সদস্যপদ চেয়েছিলো, ন্যাটোর উচিত ছিলো রাশিয়াকে সদস্যপদ দেয়া। যদি সেই সদস্যপদ দিতো, তাহলে আজকে ইউরোপ থাকতো সবচেয়ে নিরাপদে, চীন থাকতো সবচেয়ে চাপে। এশিয়াও থাকতো চাপের মধ্যে। রাশিয়াকে ইচ্ছে করেই আমেরিকা সদস্যপদ দিতে চায় নাই। এটা একটা মারাত্তক ভুল ছিলো।

গ।        ইউক্রেন যুদ্ধে জেলেনেস্কী আসলে ইউক্রেনের মংগল কামনা করে নাই। যখন যুদ্ধশেষে ইউক্রেনের চিন্তাবিদেরা এই যুদ্ধের আগাগোরা নিয়ে বিশ্লেষন করবেন, তখন দেখা আযবে যে, জেলেনেস্কী আসলে ছিলো রাজাকার প্রেসিডেন্ট। আজকে তাকে ;হিরো’ আখ্যায়িত করলেও সব বিবেচনা করে একটা সময় আসবে যখন ইউক্রেনের মানুষেরা ‘জেলেনেস্কী’ নামটা ‘মীর জাফর’ নামের মতো হয়তো ব্যবহার করবে।

ACR

You are required to login to view this post or page.

18/03/2022-রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব  

যুদ্ধ কোনো কালেই কারো জন্য ভালো সংবাদ বয়ে আনে নাই। দুটু মোরগের মধ্যে ফাইটিং এ ও দুটু মোরগই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর যখন দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন দেশের মানুষের সাথে অন্যান্য প্রতিবেশী যারা যুদ্ধেই নেই, তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই তথ্যটা জানে না এমন নয়, তারপরেও যুদ্ধ হয়। এর একটাই কারন যে, সব প্রতিকুল আবহাওয়ায় ক্ষতির সাথে কিছু মানুষের ব্যবসা, আর সেই ব্যবসায় লাভ ও হয়। হতে পারে এই লাভটা অন্য এমন মানুষের যারা মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধটা চালিয়ে যাক এটাই দোয়া করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার সাথে একটা অসম যুদ্ধ। এটা হবারই কথা না। কিন্তু তারপরেও হয়েছে এবং হচ্ছে। তাহলে এখানে কে ফাদে পড়লো, কাকে কে ফাদে ফেল্লো, এটা জানা আরো বেশী দরকার যাতে যুগে যুগে এই ফাদ পাতা ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে-ইতিহাস থেকে কেউ কখনো শিক্ষা নেয় না।

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে অনেক গুলি বিশ্লেষন বেরিয়ে আসছে ক্রমাগত। আজ আমি একটা নিয়ে আলাপ করার চেষ্টা করছি। যার নাম ‘নিষেধাজ্ঞা’।

রাশিয়ার উপর পুরু বিশ্ব প্রায় হাজার খানেকের বেশী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা নিয়েই আজকের আলাপ।

২৪ শে ফেব্রুয়ারী তে যখন ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমন করে, পুতিন কি এসবের ব্যাপারে হোম ওয়ার্ক করে নাই? রনক্ষেত্র এক জিনিষ আর সারা দেশের অর্থনইতিক বিষয়টা আরেক জিনিষ। যদি পুতিন সেই রনক্ষেত্রের বাইরে দেশের অর্থনইতিক ব্যাপারটা নিয়ে হোম ওয়ার্ক না করে থাকেন, তাহলে আমি বল্বো এটা হয় আমাদের ভুল ধারনা, না হয় পুতিন বিচক্ষন নয়। কিন্তু ২২ বছর যাবত একটা রাষ্ট্রপ্রধান তাও আবার সুপার পাওয়ারের মতো দেশ রাশিয়ার, কেজিবির প্রধান, বয়ষ্ক ব্যক্তির পক্ষে এগুলি নিশ্চয় সে ভেবেছে। তাহলে এবার আসি, পুতিন এই অর্থনইতিক নিষেধাজ্ঞা কিভাবে মোকাবেলা করছে।

দেশের অর্থনীতিকে স্টাবল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

(ক)       রাশিয়াকে পশ্চিমারা সুইফট নামক  গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল সিস্টেম থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মার্কেটে লেন দেনে বিশাল অসুবিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ফলে রাশিয়া তাঁর নিজস্ব মীর নামক সিস্টেমের মাধ্যমে ইলেল্ট্রনিক ট্রান্সফার, বিদেশী ব্যংকের সাথে লেন দেন, মাষ্টার কার্দের বিকল্প মিরের মাধ্যমে লেন দেনের বিকল্প ব্যবস্থা করেছে। এটা হয়তো সারা বিশ্ব জুড়ে এখনই কাজ করতে সক্ষম হবে না কিন্তু প্রয়োজনীয় লেন দেনে কোনো অসুবিধা নাই। একটা সময় আসবে যখন এই পশ্চিমাদের একচ্ছত্র সুইফট এর বিকল্প হিসাবে একদিন মীর দাঁড়িয়ে গেলে, রাশিয়ার অর্থনইতিক নিষেধাজ্ঞা অচিরেই বেশ আবার পুনর্জীবন পেয়ে যাবে।

(খ)        পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা হচ্ছে রাশিয়ার রিজার্ভে যে ইউ এস ডলার এবং ইউরো ছিলো, সেতার উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা। তাঁর মানে ডলার এবং ইউরো রাশিয়ার জন্য একেবারেই এখন নিরাপদ না। এর জন্যে রাশিয়া যা করেছে সেতা হলো- রাশিয়া এখন চায়নার মতো নিজস্ব কারেন্সীর মাধ্যমে বিদেশীদের সাথে ট্রেড করা শুরু করেছে। রাশিয়ার সাথে চায়নার মধ্যে রুবল-ইয়েন প্রথা চালু হয়েছে ইতিমধ্যে। ন্তুরষ্ক রুবলের মাধ্যমে রাশিয়ার সাথে ট্রেড লেন দেনে সম্মত হয়েছে। ভারতের সাথেও রুবল-রুপীর একটা সমঝোতা  হয়েছে তেল বিষয়ক লেন দেনে। এসব করার কারনে পুরু দুনিয়ায় যেখানে ডলার- ইউরোওই ছিলো একমাত্র ব্যবসায়ীক লেন দেনের কারেন্সী, সেটা ধীরে ধীরে কমে আসবে।

(গ)       আমদানী কারকদেরকে ডলারের বিপরীতে রুবলে পেমেন্ট প্রদানের নীতিমালায় রাশিয়া একটা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে যে, বিদেশী সবার সাথে রাশিয়া ৮০% ডলার রেটে রুবলের পরিবর্তনে তাঁদের আমদানী দ্রব্যের দাম পরিশোধ করা। এতে যা হবে সেটা হলো- রুবল ধীরে ধীরে আন্ত্রজাতিক মুদায় পরিনত হবে এবং আমদানীকারকেরাও অনেক কিছু ২০% ছাড়ে মালামাল আমদানী করতে গেলে লাভবান হবে। তাঁর মানে এই যে, ডলারের বাজার একটা বিশাল এরিয়ায় অকেজো হয়ে যাবে।

(ঘ)        রাশিয়া ২০২২ সাল অবধি ইউরেসিয়া ইকোনোমিক ইউনিয়ন ভুক্ত দেশে সমস্ত পন্য রপানীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাকিস্থান, কিরগিস্তান ইত্যাদি। এর মাধ্যমে রাশিয়া তাঁর নিজের দেশের লোকদের নিত্যদিনের পন্যকে নিরাপদ করে ফেললেন। বাইরের লোকদের জন্য এসব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এখন অসুবিধায় পড়বে। তাঁদের জন্য পন্যের দাম হবে আকাশ্চুম্বি। তাতে রাশিয়ার কিছুই যায় আসে না। কারন রাশিয়া আগে নিজের দেশের মানুষকে ভোগান্তি থেকে বাচাবে।

(চ)        রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে ২০% করেছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার রুবলের দরপতন হ ওয়াতেও সাধারন জনগন রুবলের দরপতনে কিছুটা হলেও ইনফ্লেশন থেকে মুক্তি পাবে। প্রাইস স্ট্যাবিলিটি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ এই পদিক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এখানে একটা ব্যাপার জানা দরকার যে, সুদের হার বাড়ালে কিভাবে প্রাইস স্ট্যাবিলিটি ঠিক থাকে। সেটা একটা বিশাল অংকের হিসাব, তাই বিস্তারীত আলাপ করা হলো না। তবে জেনে রাখা ভালো যে, সুদের হার বাড়িয়ে প্রাইস স্ট্যাবিলিটি একটা সাময়িক পদক্ষেপ মাত্র। রাশিয়া এখানেই থেমে থাকেনি। ক্রেডিট ইন্সটিটুশন গুলিকে রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক নতুন লোনে কোনো ইন্টারেস্ট নেবে না কিংবা কেউ যদি ডিফল্টার হয় রুবলের দরপতনে, তাদেরকে ডিফল্টার হিসাবে ধরা হবে না যতোক্ষন রুবল স্ট্যাবল না হয়। এর ফলে দেখা যাচ্ছে ২৪ ফেব্রুয়ারিতে যখন ১ ডলারের দাম ছিলো ১২০ রুবল, এখন সেটা ১০০ রুবলের নীচে চলে এসছে।

(ছ)        আন্তর্জাতিক লোনের ব্যাপারে রাশিয়ার দুটু পেমেন্ট সিডিউল ছিলো গত ১৫ মার্চে। কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক রাশিয়ার ডলার রিজার্ভ ব্লক করাতে সে ১১৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করতে পারছিলো না। যদি রাশিয়া এই পেমেন্ট দুটু রিপেমেন্ট করতে না পারতো, তাহলে রাশিয়া আন্তর্জাতিকভাবে ব্যনাগকিং সেক্টরে একটা ডিফল্ট করে ফেলতে পারতো। একবার কোনো কোম্পানী বা দেশ যখন কোনো একটা জায়গায় ফল্ট করে, তখন তাঁর সি আই বি ও লাল হয়ে যায়। আর সি আই বি লাল হলে অন্য কোনো ব্যাংক বা দেশ তাঁর সাথে আর লেন দেন করতে পারে না। কিন্তু রাশিয়া তাঁর রিজার্ভ ফান্ড যেটা ডলার বা ইউরোতে ছিলো, ইতিমধ্যে বাজার রেটে ১১৭ মিলিয়ন ডলারের সমান রুবলে পেমেন্ট রিলিজ করার জন্য অফিশিয়ালী আদেশ দিয়ে দিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে। এখন যদি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সেটা রুবল কারেন্সীতে পেমেন্ট না করে, তাহলে এটার দায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের, রাশিয়ার না।

(জ)       রাশিয়া বিনা মুল্যে তাঁর নাগরিকদেরকে অনেক সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার করেছে এবং দেয়া শুরু করেছে। তাঁর মধ্যে জরুরী বিষয়গুলি হচ্ছে- ছাত্রদের টিউশন ফি, পারিবারিক ভরন পোষনের খরচ, সিনিয়ার সিটিজেন্দেরকে অতিরিক্ত রুবল প্রদান, চাকুরীজীবিদের বেতন বৃদ্ধি, পেন শনের টাকা বৃদ্ধি, পাবলিক সেক্টরে আরো অনেক কিছুর ছাড়।

(ট)        স্মল এবং মিডিয়াম এন্টারপ্রিনিউরদেরকে রাশিয়া সরকার প্রনোদোনা প্যাকেজ দেয়া হচ্ছে যাতে তারা এই রুবল দরপতনে তাঁদের ব্যবসা আগের মতো করতে পারে। সাবসিডিয়ারী, ক্রেডিট ফেসিলিটি সহ সব ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়া ইতিমধ্যে ব্যবস্থা করেছে।

(ঠ)       নিষেধাজ্ঞার কারনে কোনো ব্যবসায়ী যেনো তাঁদের উতপাদিত দ্রব্য উতপন্নে কম না করে তাঁর জন্যে রাশিয়া সরকার যা যা লাগে তাঁর সব ব্যবস্থা করবে বলে আশহাশ দিয়েছে। আর সেসব পন্য আপাতত ডমেষ্টিক বাজারেই ব্যবহারের ঘোষনা দিয়ে কিন্তু বাইরে রপ্তানী করতে নিষেধ আরোপন করেছে। তাতে দেশের ভিতরে দ্রব্যমুল্য একটা নিয়ন্ত্রনে থাকবে এবং বহির্বিশহে অন্যরা সাফার করবে। এটাই রাশিয়ার পরিকল্পনা। এর মধ্যে রয়েছে চিনি, গ্যাসোলিন, মেটাল, গম, ডিজেল, এবং অন্যান্য রপ্তানীমুলক দ্রব্য।

(ডঃ)     বিদেশী কোম্পানীগুলি যারা রাশিয়াতে ব্যবসা বন্ধ করার জন্য বলেছে, রাশিয়া তাঁর ব্যবসায়ীদেরকে বলেছেন যে, তাঁর নিজের দেশের নাগরিকগন যেনো সেসব ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নিজেরা চালায়। বিদেশীদের এই ব্যবসাগুলি চালাইতে যা অর্থের জোগান লাগবে, সেটা রাশিয়ান সরকার বহন করবে। এর সাথে রাশিয়ার সরকার এটাও বলেছে, যদি কোনো বিদেশী কোম্পানী রাশিয়ায় এখনো ব্যবসা করতে চায়, তাহলে তারাও একটা ছাড়ে করতে পারে কিন্তু যদি রাজী না হয়, তাহলে এসব কোম্পানীগুলি রাশিয়ার তরফ থেকে রাষ্ট্রীয়করন করে রাশিয়ানরাই চালাতে পারে। এদের মধ্যে রয়েছে- ম্যাডোন্যাল্ডস, ভক্স ওয়াগন, শেল, এপেল, মাইক্রোসফট, এইচ এন্ড এম, ইত্যাদি।

(ব)        চায়নার ইউনিপে রাশিয়ার সর্বত্র চালু করা যার মাধ্যমে মাষ্টার কার্ড, ভিসা কার্ডের ইফেক্ট কমে যায়। মীরের পাশাপাশি ইউনিপে দুটুই চালু থাকবে।

যে কোনো একটা নতুন সিস্টেম পুরুপুরী চালু হতে কিছুটা সময় লাগে। রাশিয়ার এসব বিকল্প যখন ধীরে ধীরে সফল হতে থাকবে, তখন বিশ্ব বাজারে যেটা হবে সেটা হলো- মাষ্টারকার্দের মতো কিংবা ভিসা কার্দের মতো সিস্টেম গুলি আর সার্বোজনীন থাকবে না। তারা বেশ বড় একটা বাজার হারাবে। এর সাথে রাশিয়ার মীর কিংবা চায়নার ইউনিপে নতুন করে একতা বিপ্লব দিবে।

বড় বড় কোম্পানীগুলি বিসশ বাজার থেকে অনেক গুটিয়ে আসবে, বাজার হারাবে। আমাদের দেশে এক সময় কে এফ সি, পিজা হাট একচ্ছত্র বাজার পেলেও এখন প্রচুর লোকাল পিজার বাজার ভর্তি যা অইসব বিদেশী দোকান গুলি থেকে অনেক সস্থা। হতে পারে মানের দিক দিয়ে হয়তো ততোটা নয়, কিন্তু তারপরেও অনেক সাধারন ক্লায়েন্ট লোকাল পিজা বাজারেরো ভীর কম না। এর মানে বেশ কিছু ক্লায়েন্ট হারানোর মতো।

রাশিয়ার র মেটারিয়াল অন্যান্য দেশে রপ্তানী না যাওয়াতে অইসব দেশের অনেক শিল্প মুখ থুবরে পড়ে যাবে। তেল, গ্যাসোলিন, গ্যাস, স্টীল, গম, বার্লি, চিনি, ইত্যাদির সল্পতার কারনে বিসশে একটা উর্ধগামী মুল্যের প্রভাব পড়বে। যা অন্যান্য দেশকেও বিপদেই ফেলবে। কিন্তু এর মধ্যে রাশিয়া ধীরে ধীরে সাবলম্বি হয়ে উঠবে।

এর অর্থ একটাই- অর্থনইতিক অবরোধে সবাই একইভাবে সাফার করবে, শুধু রাশিয়া একা নয়।

23/02/2022-২০০৩ সালের কিয়েভে

আমি ২০০৩ সালে ইউক্রেনের কিয়েভে বেড়াতে গিয়েছিলাম একবার। তখন আমি জর্জিয়ায় জাতিসঙ্ঘ মিশনে কর্মরত ছিলাম। ইউক্রেনের এক মেজরের বাসায় উরুগুয়ের এক পাইলটকে সাথে নিয়ে তাঁর বাসায় বেড়াতে গিয়ে কিয়েভ সম্পর্কে আমার ধারনা একেবারে পালটে গিয়েছিলো। মানুষগুলি খুবই শান্তপ্রিয় আর শহরটাও মানুষগুলির মতো একেবারে শান্ত। কোনো কোলাহল নাই, সবাই ব্যস্ত আর খুবই মিশুক। মাত্র সপ্তাহখানেক ছিলাম।

উরুগুয়ের ওই পাইলটের সাথে এখনো আমার যোগাযোগ থাকলেও ইউক্রেনের সেই মেজরের সাথে আমার যোগাযোগ নাই। গতকাল সেই ইউক্রেনের উপর রাশিয়া আক্রমন করেছে শুনে খুব কষ্ট লাগলো মনে। ক্রেমলিন দেখার খুব শখ ছিলো। আমি ক্রেমলিনেও ভিজিট করতে গিয়েছিলাম। যেহেতু মিলিটারী অবজারভার হিসাবে কর্মরত ছিলাম, ফলে আমার সাথে কর্মরত একজন রাশিয়ান আর্মি অফিসারের সহায়তায় আমরা ক্রেমলিনের কিছুটা অংশ আমি সেখানে ভিজিট করতে পেরেছিলাম। মনে মনে ভেবেছিলাম, কতই না শক্তিশালী এসব ক্রেমলিন। আজ যেনো এটাই মনে আসলো দ্বিতীয়বার।

বিশ্ব রাজনীতির অভ্যন্তরে অনেক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এজেন্ডা লুকিয়ে থাকে বিধায় আমরা যা নগ্ন চোখে দেখি সেটা আসলে সেটা না যেটা দেখি। তাঁর ভিতরে হয়তো লুকিয়ে থাকে আরো ‘গভীর কিছু’। কিন্তু এই ‘গভীর কিছুর’ দ্বারা সংঘটিত কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা পুরু বিশ্বকে অগোছালো করে ফেলে যদিও এই ‘গভীর কিছু সংঘটিত’ বিষয়ে অনেকেই জড়িত থাকেন না। ছোট বা বড় কোনো দেশই এর থেকে পরিত্রান পায় না। ছোয়া লাগেই। ইউক্রেনকে আক্রমন করে রাশিয়া কতটুকু উপকৃত হবে বা ইউক্রেন কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু আমাদের মতো দেশ যারা এর আশেপাশেও নাই তাঁদের কি কি হতে পারে?

আমাদের দেশ অনেকটাই আমদানী-রপ্তানী নির্ভর একটি দেশ। আর এই আমদানী-রপ্তানী বেশীরভাগ হয় ইউরোপের অনেকগুলি দেশের মধ্যে। ইউরোপে মোট ২৮ টি দেশ আলাদা আলাদা হলেও বাস্তবিক হচ্ছে এরা একটা গুচ্ছগ্রামের মতো। ফলে ইউরোপের একটি দেশের ভিসা পেলেই আমরা অনায়াসে অন্য দেশগুলি ভ্রমনের সুবিধা পাই। কারেন্সীও একটা ‘ইউরো’ যদিও সবার আলাদা আলাদা কারেন্সী আছে। ইউরোপের এই দেশ গুলি কোনো কোনো ন্যাচারাল সম্পদে বেশ উন্নত। ফলে একটা দেশে যদি এ রকম গোলমাল চলতে থাকে, সাভাবিকভাবেই অন্য এলাকায় এর প্রভাব পড়েই। প্রভাব পড়বে জ্বালানীর দামে, গ্যাসের দামে, বেড়ে যাবে আমদানী রপ্তানী খরচ যা প্রকারান্তে সাধারন মানুষের উপরেই বর্তাবে। প্রভাব পড়বে উগ্র পন্থীদের যারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে আশেপাশের দেশ সমুহে। প্রভাব পড়বে ‘মুক্ত ও গনতান্ত্রিক বিশ্ব কন্সেপ্টে’ যদিও ‘মুক্ত ও গনতান্ত্রিক বিশ্ব কন্সেপ্ট’ এখন আছে বলে মনে হয় না। প্রভাব পড়বে সাইবার সিস্টেমে, শেয়ার মার্কেটে, ভোগ্য পন্যে, ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রভাব পড়বে বন্দরগুলিতে। 

বাংলাদেশ যদিও এর অনেক দূরের একটি দেশ কিন্তু ইউরোপে রপ্তানী করা পোষাক শিল্প একটা ঝুকির মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আর যারা সরাসরি ইউক্রেনের সাথে আমদানী-রপ্তানীতে যুক্ত তাঁদের অবস্থা এখন খুবই আতংকের। আমাদের দেশ ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে অনেক ভোগ্যপন্য আমদানী করে যেমন মটর, সোয়াবিন, গম,  ইত্যাদি, সেটা আরো উর্ধ গতি হতে পারে দামে। এ ছাড়াও আমাদের রপ্তানীকারক মালামাল যেমন প্লাষ্টিক, চামড়া, চামড়া জুতা, হিমায়িত খাবার, পাট বা পাটের দ্রব্য এসব রপ্তানীতে ঘটবে প্রচুর ব্যাঘাত। এমন একটা পরিস্থিতিতে আসলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবো তাতে কোনো সন্দেহ নাই।

অন্যদিকে বড় বড় পরাশক্তি যতোই পিউনেটিভ একশন নিবে বলে যত প্রতিশ্রুতিই দেন না কেনো, যা ক্ষতি হবার তাঁর বেশীরভাগ ক্ষতি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। জাতিসঙ্ঘ, ন্যাটো, কিংবা অন্যান্য অক্সিলারী ফোর্স গ্রাউন্ডে যেতে যেতে রাশিয়ার উদ্দেশ্য হাসিল হয়েই যাবে। তারমধ্যে ইউক্রেন ন্যাটোর কোনো সদসই না।

ভবিষ্যৎ কি হবে এই মুহুর্তে বলা খুব দূরুহ।

13/03/2022-যুদ্ধের ১৭ দিন পর ইউক্রেন

যুদ্ধের ১৭ দিন পর ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে গোপনে একটা কম্প্রোমাইজের কথা শুনা যাচ্ছে যে, জেলেনেস্কি রাশিয়ার তিনটা শর্তই মেনে যুদ্ধ বন্ধ হোক, সাভাবিক জীবন আবার ফিরে আসুক, তাতে সায় দিয়েছে। কিন্তু এই যুদ্ধ আমাদেরকে কি কি শিক্ষা রেখে গেলো?

যুদ্ধের প্রথম দিনে জেলেনেস্কি দৃঢ়কন্ঠে ঘোষনা দিয়েছিলো যে, ইউক্রেনের প্রতিটি ইঞ্চি তারা ডিফেন্ড করবে। কারন সে সেটাই বলেছিলো যেটা পশ্চিমারা ওকে বলতে বলেছিলো যে, We will defend every inch of land of our friendly allainaces. কিন্তু সেটা কেনো হলো না? যদি কিছুটা বিশ্লেষন করি দেখবো যে, জেলেনেস্কী চারটা ভুল করেছেঃ

(১) সে পশ্চিমা, ইউরোপ এবং ন্যাটোর সাপোর্টের উপর অতিরিক্ত ভরষা করেছিলো। জেলেনেস্কী জানতো যে, ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে সবদিক দিয়েই দূর্বল। কিন্তু জেনেস্কী পশ্চিমাদের, ইইউ এবং এলায়েন্সেরের ভরষাকে একটা ট্রাম কার্ড হিসাবে ভেবেছিলো। আর এটা তাঁর কোনো দোষ না। কারন ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে জেলেনেস্কী এক ভাষনে বলেছিলো যে, স্বয়ং বাইডেন জেলেনেস্কিকে বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোর মেম্বারশীপ পাবেই আর সেটা যেভাবেই হোক। শুধু তাই না, জেলেনেস্কি এটাও বলেছেন যে, এপ্রিল ২০২১ এ বাইডেন তাকে এই কথাও বলেছেন যে, ইউক্রেনকে কখনোই আমেরিকা একা ছেড়ে যাবে না যদি রাশিয়া বা অন্যকোন কেউ তাকে আঘাত করেও। জেলেনেস্কী ভেবেছিলো, রাশিয়ার এতো বড় আর্মি আনবিক বোমা ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রথমে ন্যাটো তথা অন্যান্য দেশের পারমানবিক হুমকীর মাধ্যমে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইইউ, তাকে তৎক্ষণাৎ সাহাজ্য করবে, তারপরের ঘটনা তো আছেই, আর্থিক সাহাজ্য, ইত্যাদি।

কিন্তু ঘটনাটা ঘটেছে উলটা। আমেরিকা সামনে আসলো না, ন্যাটোকেও ব্যবহার করলো না, নো ফ্লাই জোনও তৈরী করলো না, আবার বিমানও দিলো না। তারা তাকে এটাও বলেছিলো যে, আমেরিকা, ন্যাটো, ইইউ সবাই রাশিয়াকে এমনভাবে বয়কট করবে যাতে তাঁর তেল, গ্যাস, ফুড কমোডিটি ইত্যাদি আর কেউ না নেয়। রাশিয়াকে পংগু করে দেয়া হবে। কিন্তু সেটাও হলো না। আর হলেও সেতার ইফেক্ট অনেক অনেক পরে হয়তো। কথায় কথায় আমেরিকা রাশিয়ার তেল/গ্যাস বয়কট করলো ঠিকই, কারন না রাশিয়ার রপ্তানী আমেরিকাকে ইফেক্ট করে , না আমেরিকার আমদানী আমেরিকাকে সাফার করায়। তারা দুটুই তেল, গ্যাসের দেশ। অন্যদিকে বিট্রেন কিন্তু বয়কট করার পরেও তেল গ্যাস রীতিমত নিতেই থাকলো কারন সেটা তাঁদের নিত্যদিনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। আবার অন্যদিকে ইইউ বাইডেনের এই অবরোধে রাজী হলো না। তারা আরো ৫ বছর সময় চাইলো। কারন প্রায় ৪০% তেল/গ্যাসের উপর পুরু ইউরোপ রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। তাঁদের জনগনের অসুবিধা তারা করতে পারবে না।

(২) জেলেনেস্কীর ২য় ভুল ছিলো-পশ্চিমাদের কাছে ইউক্রেনের গুরুত্তকে অনেক বেশী, এটাই সে মুল্যায়ন করেছিলো । জেলেনেস্কি ভেবেছিলো যে, ইউক্রেন হচ্ছে ইউরোপের একটা শিল্ড। জেলেনেস্কী ২২/০১/২০২২ তারিখে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে তাঁর এক ভাষনে বলেছিলো-গত ৮ বছর যাবত ইউক্রেন ইউরোপের শিল্ড হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ইউক্রেন গত ৮ বছর যাবত রাশিয়ার মতো এমন একটা বৃহৎ আর্মিকে ঠেক দিতে পারছে। শুধু তাইনা, গত ২১/০২/২০২২ তারিখে অনুরুপ ভাষনে জেলেনেস্কী এটাও বলেছিলো যে, ইউক্রেন ছাড়া ইউরোপের ডিফেন্স বলয় কোনদিন সুরক্ষিত নয় এবং ইউরোপ ইউক্রেনকে ছাড়া স্বয়ংসম্পুর্নও নয়। ফলে ইউক্রেনের টেরিটোরিয়াল সভরেন্টি যদি ইউরোপ না রক্ষা করে, তাহলে ইউরোপ নিজেই রাশিয়ার কাছে হুমকী। কিন্তু জেলেনেস্কি বুঝতেই পারে নাই যে, ইউক্রেন হচ্ছে এই ইউরোপের কাছে একটা এক্সপেন্ডেবল আইটেমের মতো। তারা তাকে ন্যাটোর সদস্যপদ আগেই দেয় নাই, এখন তো আরো অনেক বাধা। দিচ্ছে, দিবে, এই এপ্লিকেশন গ্রহন করা হয়েছে ইত্যাদি বলে ইউক্রেনকে আবার ছেড়েও দিচ্ছিলো না। আসলে ব্যাপারটা হলো যে, তারা তাকে শুধু পুতিনের বিরুদ্ধে একটা টুলস হিসাবে ব্যবহার করছিলো যেটা জেলেনেস্কি বুঝতেই পারে নাই। মজার ব্যাপার হলো, এই ইউজফুল টুলস এর একটা এক্সপায়ারী ডেট ছিলো। আর সেটা এই ২৪ ফেব্রুয়ারী যখন রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমন করে।

এই একই ঘটনা ঘটেছিলো ১৯৮০ এ আফগানিস্তানে যখন পশ্চিমারা মুজাহিদিনদেরকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফাইট করার জন্য অর্থ সাপোর্ট দিয়েছিলো। অথচ আফগানিস্তান কিন্তু পশ্চিমাদের কাছে স্ট্র্যাটেজিক্যালী ইম্পোর্ট্যান্ট ছিলো না। আসলে সেটা ছিলো জাষ্ট সোভিয়েটকে পশ্চিমাদের একটা ব্লাডি নোজ দেয়ার পরিকল্পনা। সেখানেও আফগানিস্থান রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের একটা টুলস ছিলো।

সেই একই কাজ কিন্তু আমেরিকা করেছে জর্জিয়ার সাথেও। জর্জিয়াকে পশ্চিমারা ন্যাটো মেম্বারশিপ দেয়ার কথা বলেছিলো ২০০১ সালে। পশ্চিমারা জর্জিয়াকে প্রচুর আর্মস দিয়েছিলো, অতঃপর জর্জিয়া যুদ্ধ করে জর্জিয়া রাশিয়ার সাথে। যখন যুদ্ধ শুরু হলো, পশ্চিমারা পুলআউট করলো। আবখাজিয়া নামে আরেকটা দেশের সৃষ্টি হয়েছিল ২০০৩ সালে। আবখাজিয়া রাশিয়ার খুবই অনুগত একটা দেশ যা জর্জিয়ার জন্য হুমকী।

এই ভুলটাই জেলেনেস্কি করলো যে, তাকে ন্যাটোর মেম্বারশিপ দেয়া হবে, ইইউর সদস্য করা হবে, আর ইউক্রেন ইইউর সবচেয়ে বড় ঢাল হিসাবে রাশিয়ার ফোরফ্রন্টে স্ট্র্যাটেজিক ইম্পোর্ট্যান্ট হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, ভেবেছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে-ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো একটা জাষ্ট কথার ঝুলি ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।

(৩) জেলেনেস্কীর ৩য় ভুলটা ছিল-সে পুতিনের রিয়েল ইনটেনশনকে পড়তে পারে নাই। আর পড়লেও ভুল পড়েছে। এটা অবশ্য জেলেনেস্কীর দোষ না। যুদ্ধ লাগার আগেও কেউ বুঝতে পারে নাই যে, পুতিন আসলেই ইউক্রেন এটাক করবে। জেলেনেস্কী ভেবেছিলো, থ্রেট আগেও ৮ বছর যাবতই ছিলো, রাশিয়া বারংবার থ্রেট দিতেই থাকবে, কিন্তু গত ৮ বছরের মতো পশ্চিমাদের ভয়ে রাশিয়া সাভাবিকভাবেই অন্তত যুদ্ধনামক ভয়াবহতায় জড়াবে না। এমন কি ২৮ জানুয়ারী ২০২২ তারিখে জেলেনেস্কির এক ভাষনে বলেছিলো যে, মিডিয়ার ভাষ্যে যেনো মনে হয় আমরা অতি শীঘ্র রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রাশিয়া কখনোই যুদ্ধে জড়াবে না এটা নিশ্চিত। যুদ্ধ হবে এটা জেলেনেস্কীর মাথাতেও ছিলো না।

(৪) জেলেনেস্কির ৪র্থ ভুল টা ছিলো-জেলেনেস্কী সবসময় বিশ্বাস করতো যে, তাকে ন্যাটো, ইইউ, ইউকে, আমেরিকা, ফ্রান্স, কিংবা জার্মান সবাই সবকিছু দিয়ে একত্রে সাহাজ্য করবেই। সে বিশ্বাস হারায় নাই। ফলে সে পুতিনের কোনো কথায় রাজী না হয়ে শেষমেষ যুদ্ধেই থেকে গেলো। সে বুঝতেই পারে নাই যে, সবাই ‘অনলাইন’ যুদ্ধ করবে। আর সে মাঠে একা হয়ে যাবে।

যুদ্ধে একাই থেকে যাওয়ার কারনে হয়তো জেলেনেস্কী আপাতত হিরো হয়ে গেলো কিন্তু যখন যুদ্ধ থেমে যাবে, সবশর্ত মেনে ইউক্রেন আবার ফিরে আসবে, তখন ব্যাখ্যায় দেখা যাবে অনেকেই, জেলেনেস্কী কতটা ভুল করেছিলো। আর এই ভুল একদিন জেলেনেস্কীকে নামিয়ে আনবে ওদের দেশের ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। আজকের দিনের ইউটিউব, ফেসবুক কমেন্টস একদিন ফেড হয়ে গিয়ে সেটাই সামনে আসবে যে, পুতিন প্রথমে যেটার দাবী করেছিলো সেটাই তো হলো, সারাবিশ্ব শুধু তাকিয়েই ছিলো, তাহলে ইউক্রেনের লিডারের এটা বুঝতে এতো দেরী করেছিলো কেনো? ইতিহাস তাঁর উত্তর দিবে। জনগন এতো কিছু বুঝে না, তারা বুঝে প্রতিদিনের আনন্দ, তাঁদের পরিবার আর সম্পর্ক। রাজ্য, রাজা, দেশ নিয়ে এতো কিছু তারা ভাবে না।

ইতিহাস এটাও বিচার করবে কিভাবে সারাবিশ্ব এই মানুষগুলিকে ধোকা দিয়েছে, যুদ্ধনামক এমন একটা ভয়াবহতায় ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে কথার ঝুলি ছেরেছে। বড্ড মায়া লাগে যখন দেখি, ছোট একটা বাচ্চা আহত মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে, সে হয়তো জানেই না চারিদিকে যুদ্ধ। কিন্তু একদিন সে এই ইতিহাস পড়বে আর নিজের বিবেচনায় বুঝতে শিখবে, কোথায় সিনিয়াররা ভুল করেছিলো, আর কি করা উচিত ছিলো। তখন তাঁর কাছে আজকের দিনের এইসব হিরোইক ইউটিউবের কোনো মুল্য থাকবে না।

যুদ্ধ কারো জন্যই ভাল নয়। রাশিয়ার পুতিন ও একদিন তাঁর দেশে একটা খারাপ মানুষের মধ্যে মুল্যায়িত হবে। কারন সারা বিশ্ব কর্তৃক অবরোধের কারনে ওরাও প্রতিদিন কষ্টে থাকবে।

কিয়েভ খুব কঠিন রাস্তায় এটা শিক্ষা পেলো যে, পশ্চিমাদের, ইউরোপের কিংবা অন্যান্য এলায়েন্সের মিথ্যা নির্ভরশীলতায় এবং মিথ্যা সাপোর্টের আশ্বস্ততায় অসম দেশের সাথে যুদ্ধ করতে যাওয়া একটা খারাপ আইডিয়া।

12/03/2022-রাশিয়ান-ইউক্রেন যুদ্ধ

এই কয়দিনের রাশিয়ান-ইউক্রেন যুদ্ধের উপর মানুষের বিভিন্ন কমেন্টস পরে যেটা আমার ধারনা সেটা হলো-

আসলে কেহই কিন্তু ইউক্রেনের মতো একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের উপর রাশিয়ার এটাক সাপোর্ট করে না। তারপরেও কেউ রাশিয়াকে আবার কেউ ইউক্রেনের পক্ষে মনতব্য লিখছেন। তাহলে ব্যাপারটা কোথায় তাঁদের এই কন্ট্রাডিকশন?

ব্যাপারটা কি এই যে, আমেরিকা, ইইউ, কিংবা ন্যাটো, বা জায়ান্ট সংবাদ মিডিয়াগুলির বিভিন্ন সময়ে পক্ষপাতিত্বমূলক ব্যবহারের কারনে মানুষেরা এখন ওই সব এলায়েন্সের উপর বিরক্ত এবং রাগ। অনেক দেশে ওরা অন্যায় করে, কিন্তু সেটা ওরা অন্যায় বলে স্বীকার করে না, সেটাকে একটা ভিন্ন নামে টেরোরিষ্ট এক্টিভিটি নামে ধংশজজ্ঞ চালায়, নির্বিঘ্নে মানুষ মারে, বাচ্চাদের মারে, সাথে দেশটাও ধংশ করে প্রায় দখলই করে থাকে। ওদেরকে অন্যায়টা বুঝানো যায়না, কারন ওরা শক্তিশালী, মোড়ল। আমরা আমজনতা, গরীব, শক্তিহীন এবং ওদের বিপক্ষে কথা বলার কোনো সাহস কিংবা সুযোগ নাই। এই আমজনতা কষ্ট পায়, দুঃখ পায়, ভাষাহীনভাবে নিজের ঠোট নিজেরাই কামড় দিয়ে চুপ করে থাকে। অসহায় এই আমজনতা। কিন্তু স্বৈরশাসক মোড়লেরা এবং জায়ান্ট সংবাদ মিডিয়াগুলি এসব আমজনতার পালস বুঝলেও স্বীকার করে না যে যেটা ওরা করছে সেটা অন্যায়। আফগানিস্থানে প্রথবার আমেরিকার এটাক যেমন আম জনতা না মানলেও কিছু বলতে পারে নাই, আবার সেই আফ গানিস্তানেই যখন আবার তারা সেই আগের তালেবানদেরকে ক্ষগমতায় বসিয়ে আরেকবার আম জনতাকে উদ্দেগের মধ্যে ফেলে কোনো প্রতিকার করে না, তখনো আম জনতা দুটু ঘটনাকেই আগ্রাসন এবং অন্যায় বলে জেনেছে। আম জনতা দেখেছে যে, ওরা নিজের সার্থেই সব কিছু করে। ওদেরকে কেউ কিছু বলতে পারেনা। এরফলে অন্য আরেক জুলুমবাজ যখন সেই একই জুলুম করতে থাকে, আর সেই জুলুমের প্রতিকারের জন্য সইসব মোড়লেরা, সংবাদ মিডিয়া তাঁদের রক্ষার জন্য একাধারে সাপোর্ট করতে থাকে, তখন রাশিয়ার মতো জুলুমবাজ মোড়লেরা কোনো না কোনো আবেগ থেকে একটা প্রচ্ছন্ন সাপোর্ট পায় এই আম জনতার কাছ থেকে। আর এই সাপোর্ট টা আর কিছুই না, আম জনতার রাগ আর বিরক্তের কারনে। আম জনতা তখন ভাবে- মরুক এরা এবার যারা আগেও মানুষের উপর জুলুম করেছে কিন্তু কিছু করার ছিলো না। এবার ওরা সাফার করুক। আর এই সাফার করুক কন্সেপ্টের মধ্যে ইউক্রেনের মতো, সিরিয়ার মতো, আফগানের মতো, রোহিংগারদের মতো আম জনতারা মরে, আর করুনার পাত্র হয়।

তাহলে যুদ্ধটা আম জনতার মধ্যে আসলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, বা রাশিয়ার পক্ষেও নয়, এটা একটা সেই সব মোড়ল আর সংবাদ মিড়িয়ার বিপক্ষে যারা সাদাকে সাদা বলে না, কালোকে কালো বলে না। তাঁদের এসব চিন্তাধারা যতোদিন পরিবর্তন না হবে, জুলুমবাজদের পক্ষে সবসময় কেউ না কেউ সাপোর্ট করতেই থাকবে। এর ফলে সাধারন আমজনতার কষ্ট হতেই থাকবে, হোক সেটা ইউক্রেন কিংবা অন্য কেউ।

আজকে যদি জুলুমবাজ পুতিন মরেও যায়, তারপরে কি পশ্চিমারা রাশিয়ার আমজনতার কথা ভেবে তাঁদের উপর দেয়া সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিবে বলে ভাবছেন? নিবে না। 

আমাদের দেশে একটা কথা আছে- পাটা পুতায় ঘষাঘশিতে মরিচের জান শেষ। আমরা, হোক সেটা ইউক্রেন, সিরিয়া, আফগানিস্থান, ইরাক, ইয়েমেন, কিংবা কাশ্মীর, সবাই হচ্ছি সে মরিচ। আর এক জুলুম্বাজ রাশিয়া আরেক জুলুমবাজ পশ্চিমা বা এলায়েন্স হচ্ছে পাটা পুতা।

6/3/2022- ইউক্রেন যুদ্ধ

যে যাইই বলুক, যুদ্ধ কারো জন্যই ভালো নয়। হোক সেটা ইউরোপে, আর হোক সেটা মধ্যপ্রাচ্যে। সবার, বিশেষ করে ওয়েষ্টার্ন এবং ইইউ, তাঁদেরও উচিত সাদাকে সাদা বলা, কালোকে কালো বলা যখন কোন আগ্রাসন হয় হিউম্যানের উপর। যদি সেটা না হয়, তাহলে এই দুনিয়ার মানুষের মধ্যে বিভেদ হতেই থাকবে। তারা সাদাকে সাদা না বলায়, কালোকে কালো না বলায়, এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হলো, এই অসহায় ইউক্রেনবাসীদের উপরে অনেকেই মায়া দেখাচ্ছে না অথচ তারা কোনো দোষও করে নাই। তারাও আমাদের মতো অতি সাধারন মানুষ। একবার ভাবুন তো, যখন আমার আপনার পরিবার এ রকমভাবে সাফার করে, তখন কি পরিমান রক্তক্ষরন হয়? হোক সে যে কোনো ধর্মের বা দেশের। এই কঠিন উপলব্ধিটা যতোদিন ক্ষমতা লোভি নেতারা না বুঝবে, ততোদিন সর্বত্র সর্বসাধারন মানুষ, হোক সে প্যালেষ্টাইন, সিরিয়া, ইরাকী, বা ইউক্রেন, কিংবা হোক সে ইহুদি কিংবা মুসলিম, তাঁদের জীবন কোনোভাবেই সুরক্ষিত না।

আজকে যারা রাশিয়ার আক্রমনকে একটা প্রতিশোধমূলক হিসাবে দেখে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন, তারাও কিন্তু যুদ্ধকে সায় দেননা কিন্তু তারপরেও তাঁদের মন্তব্য অনেক সময় এমন হয় যে, মরুক ওরা আর ওদের নেতারা যারা দূর্বলকে এতোদিন মেরেছে। এবার ওদের পালা যারা অসহায় মানুষকে এতোদিন নির্মমভাবে মেরেও কোনো আফসোস করতো না। এখন সেইসব নেতাসহ সাধারন জনগন যারা কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলে নাই,  তাঁদেরকে মরতে দেখে বা কষ্ট দেখে বাকীরা যেনো মনে একটা শান্তি অনুভব করেন। কিন্তু এটাই আসল সত্য নয়। কারন এই মানুষগুলিও জানে যে, সেই সব শিশুরা, অসহায় ব্যক্তিরা তো তাঁদের নেতাদেরকে সাদাকে সাদা আর কালকে কালো না বলার জন্য অনুপ্রানিত করে নাই। তাহলে এখন নেতাদের সাথে ওরা কেনো অন্যদের সিম্প্যাথি পাবে না? কিন্তু তারপরেও কিছু রাগ কিংবা গোস্যা থাকে যে, তারাও তো সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলে নেতাদের বিপক্ষে আন্দোলন করে নাই!! তারাও তখন চুপ ছিলো, নীরব ছিলো।

আমি ইউক্রেন, ইরাকী, সিরিয়া, প্যালেষ্টাইন, ইয়েমেন, সব সাধারন মানুষের জন্য কষ্ট অনুভব করি। হুশ হোক বিশ্ব নেতাদের, জ্ঞান ফিরে আসুক সব নেতাদের যারা অন্যায়কে অন্যায় আর আগ্রাসনকে আগ্রাসন, সাদাকে সাদা আর কালোকে লো বলে সবার জন্য একটা সমান প্লাটফর্ম তৈরী করবেন। তাহলেই এই যুদ্ধ, এই আগ্রাসন এবং এই ঘৃণা কিংবা বিদ্বেষ কমে শান্তির একটা বিশ্ব তৈরী হবে।

এই বিশ্বভ্রমান্ডে কাউকে ছাড়া কেউ বাচতে পারবে না। সমস্ত সম্পদ আল্লাহ সব জায়গায় এক তরফা দেন নাই। সবাই সবার উপর নির্ভরশিল। সবাইকেই সবার সরকার।

20/02/2022- গেট টুগেদার এমসিসি

গত ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে আমার আরেক বন্ধু প্রোফেসর শাহরিয়ার বহুদিন পরে ঢাকায় এসেছিলো কানাডা থেকে। কানাডাতেই সেটেল্ড সে। অনেকদিন দেখা হয় নাই ওর সাথে। তাই আমি আমার সব বন্ধুদেরকে শাহরিয়ারের আগমনে ওয়েষ্টিনে একটা দাওয়াত করেছিলাম। আমাদের মির্জাপুর ক্যাডেট ১৫ তম ব্যাচের ৫৩ জন ক্লাশমেটের মধ্যে ঢাকায় থাকে এমন ১৪ জন মিলিত হয়েছিলাম। জম্পেশ আড্ডা হয়েছিলো। উক্ত গেদারিং এ উপস্থিত ছিলাম- ফিরোজ মাহমুদ (মাইক্রোসফটের কান্ট্রি ডাইরেক্টর) , মেজর আখতারুজ্জামান (বিটিভির ইংরেজী খবর পাঠক), ব্রিগেডিয়ার জাহেদ (ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং), মেজর আসাদ (বিখ্যাত লেখক), ডাঃ মনজুর মাহমুদ (প্রোফেসর পিজি), আব্দুল্লাহ হেল কাফি (মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এন্ড মেরিন ক্যাপ্টেন), আরেক মনজুরুল আলম (স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যংক), রিজওয়ানুল আলম (বিখ্যাত সাংবাদিক এবং প্রোফেসর অন জার্নালিজম), মোর্শেদ এনাম (ইঞ্জিনিয়ার এবং বিখ্যাত লেখক, দাবারু আবুল মনসুরে সাহেবের বড় নাতী) এবং আমার আরেক বন্ধু ফয়সাল। দারুন উপভোগ করেছি সবার সান্নিধ্য।

এদিন আরেকটা ভীষন ভালো একটা ব্যাপার ঘটে গেলো। সেটা একটা অনুবাদ।

তাঁর আগে একটা কথা বলে নেই যে, কোনো বিখ্যাত লেখকের বই অনুবাদ করতে গেলে প্রথমে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো, অরিজিনাল লেখক কখন কোন শব্দ বা লাইন বা উক্তি দিয়ে কি বলতে চাইছেন সেটা লেখকের মতো করে বুঝতে শেখা এবং সে মোতাবেক হুবহু ভাষান্তর পাঠকের জন্য তা অনুবাদ করা। যদি এর মধ্যে কোনো ব্যত্যয় ঘটে তাহলে হয় অনুবাদকের নিজস্ব মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা অরিজিনাল লেখকের মুল বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। শুধুমাত্র আক্ষরীক শব্দকে অন্য ভাষায় রুপান্তরীত করলেই অনুবাদক হওয়া যায় না। জনাব মাহমুদ (আমার মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের বন্ধু এবং খুব প্রিয় আমার একজন মানুষ) একটা কঠিন কাজ হাতে নিয়েছেন। ডঃ ইয়াসির কাদিরের ভিডিও বক্তব্য এবং তাঁর কিছু লিখিত সংস্করণের উপর ভিত্তি করে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) উপর তিন খন্ডের মধ্যে ১ম খন্ডটি সমাপ্ত করেছেন। বইটির নাম "মহানবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর জীবন ও সময়" আমি অনেক অনুবাদ পড়েছি, অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত বই এর বাঙলা কিংবা ইংরেজী অনুবাদ পড়েছি, মাহমুদের এই বইটি একটি অসাধারন অনুবাদ হয়েছে। আমি অন লাইনে ডঃ ইয়াসির কাদির বক্তব্য শুনেছি এবং শুনি। আমার বন্ধু মাহমুদের এই উক্ত অনুবাদটি একদম ডঃ ইয়াসির যা যেভাবে বলতে চেয়েছেন, মাহমুদ সেটা পুনহখানুপুঙ্খ ভাবেই তুলে ধরেছেন।

আমি প্রচূর বই পড়ি, বই পড়া আমার একটা নেশার মতো। আমি মাহমুদের এই বইটার প্রায় ৩০% পড়ে ফেলেছি। নেশার মতো পড়ে যাচ্ছি। অতীব সাবলীলভাবে মাহমুদ অনুবাদটি করেছে। পড়তে খুব ভালো লাগছে।

অনেক ধন্যবাদ তোদের সবাইকে।

আপ্নারা যারা আমাদের মহানবী হজ রত মুহাম্মাদ (সঃ) এর জীবনী এবং তাঁর সময়কালটা আক্ষরীক অর্থে বোধ গম্য ভাষায় জানতে চান, কিনতে পারেন। এটা Worth Buying Good Book.

ধন্যবাদ মাহমুদ তোকে আর ধন্যবাদ শাহরিয়ারকে যার কারনে একটা চমৎকার গুড গেদারিং হয়েছে। আর ধন্যবাদ আমার সব বন্ধুদের যারা সময়টাকে নিয়ে গিয়েছিলো প্রায় ৪৪ বছর আগে। আর মাহমুদের বইটা আমাদের নিয়ে গিয়েছিলো প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

আমি তোদের সবাইকে খুব ভালোবাসি।

১৯/০২/২০২২-স্বাস্থ্যসচীব একদিন অফিসে

হটাত করে ফোন করলেন আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্যসচীব লোকমান ভাই (Senior Secretary, at Ministry of Health & Family Welfare-MOHFW, Bangladesh)। অনেকবার দাওয়াত করার পরেও ভীষন ব্যস্ততার কারনে গত দুই বছরের মধ্যে আসতে পারেন নাই। সম্ভবত একবার এসেছিলেন ২০১৪ কিংবা ২০১৫ সালের মাঝামাঝি। আজ এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন কোনো এক কাজে। সুযোগটা মিস করেন নাই। ভীশন খুশী হয়েছি লোকমান ভাইকে অফিসে পেয়ে। তখন একটা মিটিং করছিলাম, কিন্তু লোকমান ভাইকে সময় দেয়াটা আমার কাছে প্রাইয়োরিটি মনে হচ্ছিলো। একসাথে লাঞ্চ করলাম, প্রায় দুই ঘন্টার মতো বেশ ভালো একটা সময় কাটিয়েছি।

২০১৯ সালে করোনার আগে উনি যখন খুলনার ডিভিশনাল কমিশানার ছিলেন, তখন ওই এলাকার প্রায় সবগুলি ডিষ্ট্রিক্ট আমি ভিজিট করেছিলাম উনার এডমিন সাপোর্টে। ময়মনসিংহ এ যখন ডিসি ছিলেন, তখনো বেড়াতে গিয়েছিলাম পরিবারসহ। অসম্ভব একজন মিশুক মানুষ।

লোকমান ভাইয়ের সবচেয়ে চমৎকার গুনের মধ্যে একটি হচ্ছে- He is the son of his soil of Gournodi. একজন মানুষ যখন আল্লাহর রহমতে উত্তোরোত্তর ভালো পজিশনে উঠে, তখন অনেকেই (সবাই না) আর সেই নাড়ির টান অনুভব করেন না কিন্তু লোকমান ভাই একজন সম্পুর্ন আলাদা মানুষ। তিনি তাঁর গ্রামকে ভুলে যান নাই, তাঁর সেই চেনা-অচেনা গ্রামের মানুষগুলিকে ভুলে থাকেন না, বিপদে আপদের সার্বোক্ষনিক পাশে থাকেন, সরকার সেই এলাকার উন্নতি তাঁর গতিতে করলেও লোকমান ভাই, তাঁর নিজের চেষ্টায় সবাইকে অকাতরে ন্যায়ের মধ্যে থেকে সাহাজ্য করেন। শীতে শীতার্ত কাপড়, বেকার ছেলেদের কর্মসংস্থান, গরীব পরিবারের সন্তানদের পড়াশুনার সাহাজ্য, কোনটায় তাঁর হাত পড়ে নাই? অত্যান্ত সৎ এবং সজ্জন ব্যক্তি এই লোকমান ভাই। তাঁর প্রোফেশনাল এফিসিয়েন্সীর কথা না হয় নাইই বললাম, বর্তমান সময়ে দেশের এতো টীকার প্রোকিউরমেন্ট কিংবা অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, তাঁর চমৎকার প্রোফেশনালিজম।

লোকমান ভাইয়ের সাথে উনার আরেক বন্ধু এসেছিলেন, তাঁর নাম জিন্নাত ভাই। খুব ভালো একটা সময় কাটালাম আমার অফিসে বহুদিন পর। ধন্যবাদ লোকমান ভাই।

১৮/০২/২০২২- আমার বাগানের আলু

বাগান করিতে গিয়া একবার মিষ্টি আলুর কয়েকটা ডগা লাগাইয়াছিলাম। যত্ন করি নাই, পরিচর্যাও তেমন করা হয় নাই। ধীরে ধীরে কবে কখন চোখের আড়ালে মাটির নীচে তিনি এত বড় হইয়া উঠিয়াছে জানিতেও পারি নাই। বাগান আলু পাতায় ভরিয়া উঠিতেছে ভাবিয়া উহা সমুলে নির্মুল করিতে গিয়া এই আলুখানা চোখে পড়িলো। কখন কিভাবে যে এত অনাদরেও সবার অলক্ষ্যে সে এত বড় হইয়া উঠিয়াছে কেহই জানিতে পারে নাই। এখন তাহাদের বংশ সহ জীবন ধংসের মুখে। কেমন যেনো মনে হইতেছিলো। তখন মনে বড্ড কষ্ট হইতে লাগিলো এই ভাবিয়া যে, আহা এই ক্ষুদ্র বোবা উদ্ভিদ তৃনলতার মতো মেরুদন্ডহীন লতাটাকে বাগানে রাখিয়া দিলেও পারিতাম। কারন এরাও ফল দেয়, আর এই ফল মুল্যহীন নয়। বাগানে কেহই অনর্থক বা মুল্যহীন নয়।

চোখ বুজিয়া আমি যেনো আমাদের সমাজের বৃহত বাগানের চিত্রটি দেখিতে পাইলাম। অনেক কিছুই ফুটিয়া উঠিলো। এখানে সবাই কোনো না কোনো সময়ে নিজের আপন চেষ্টায়, গোপনে সবার অলক্ষ্যে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। সে যত অবহেলিতই হোক, কিংবা অনাদর। মালি কিংবা মালিক কারো কোনো পরিচর্যা ছাড়াও কোনো কোনো প্রজাতি এই ধরায় অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখার আপ্রান যুদ্ধ করেই পতবর্তী প্রজন্মের জন্য ফল দেয়। কেউ ফেলনা নয়। এটা হয়তো ফিলোসোফির একটা দিক বা মুদ্রার।

কেউ কেউ আবার এই বড় মিষ্টি আলুটির চেহাড়া সুরুত আর সাইজ দেখিয়া ইহাও বলিতে পারেন, এই বেটা একটা আলুই শুধু এতো মোটা আর বড় হইলো কেনো? অন্যগুলি না কেনো? সেই ফিলোসোফি যদি বলি- হতে পারে যে, এই একটা আলুই বাগানের যাবতিয় সুখ আর খাদ্য একাই খাইয়া এতো বড় হইয়াছে যাহার ফলে অন্য আলুগুলির ভাগ্য রোহিংগাদের মতো। এই বড় আলুটি শুধু নিজের কথাই ভাবিয়াছে আর ভাবিয়াছে, এই পৃথিবীতে কে কাহার? আগে নিজে বড় হই, তারপর দেখা যাবে। কিন্তু যখন কোনো গোত্রের মধ্যে বিপদ আসিয়া হাজির হয়, তখন কে কত বড় আর কে কত ছোট তাহা ভাবিয়া বিপদ আসে না। তখন ছোটবড় সবাই একত্রে মরিতে হয়। অথবা যিনি সবচেয়ে বড় তাহাকেই আগে কতল করা হয়।

তাই গোত্রের সবাইকে নিয়া একত্রে বড় হওয়া একটা নিরাপত্তার ব্যাপার থাকে। নতুবা এই ছোট আলুগুলির থেকে বেশী নজর থাকে সবার বড় আলুর দিকে। ইহাকেই আমরা আজ প্রথম সিদ্ধ করিবো। বাকিগুলি হয়তো আবার কোনো না কোনো বন-জংগলে ফেলিয়া দেবো, কারন তাহাদের প্রতি আমাদের মতো মালি বা মালিকের খুব বেশী ইন্টারেস্ট নাই। ফলে, এই কারনে কোনো একদিন তাহারাই আবার বংশ বিস্তার করিয়া তাহাদের অস্থিত্ত বজায় রাখিবে।

আরেক দল আবার ভিন্ন একখানা মতবাদ লইয়া এই আলুর উপর কিছু দোষ চাপাইয়া নিজেরা পার পাইতে চেষ্টা করেন। কারো কারো ব্যক্তিগত দোষের কারন কেনো বা কি মনে করিয়া এই নীরিহ বোবা একটা আলুকে দোষারুপ করেন তাহা আমি আজো বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। কিছু হইলেই মানুষ ‘আলুর দোষ’ বলিয়া চালাইয়া দেন। অথচ এই বোবা আলুটি সারাজীবন সবার অলক্ষ্যেই বসবাস করে। হইতে পারে, গোপনভাবে থাকার এই বইশিষ্ঠই মানুষের আলুর সাথে মিল থাকার সব দোষ এই নন্দ ঘোষের উপর পড়ে।

মোরাল অফ আলুঃ

একাই শুধু খাইয়া বড় হইয়েন না, বিপদ আছে তাহলে।

আলুর প্রতি এতো ঝুকে যাইয়েন না, তাহলেও বিপদ হইতে পারে।

আলুর যত্ন নিন। আলুকে ভালোবাসুন।

১৩/০১/২০২২-Meeting Fourth Generation

গল্পটা কাল্পনিক নয়। গল্পটা সত্যি। আর এখানে যাদের নামগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তারা তাদের নিজের নামেই রয়েছেন। অনেক অজানা কষ্ট আর বেদনা দিয়ে এই পৃথিবী এতোই ভরপুর যে, সবাই এক নাগাড়ে সবার কষ্টের কথা, বেদনার কথা, সাফল্য আর ব্যর্থতার কথা বলতে গেলে সারা পৃথিবীতে শুধু কান্নার রোলই পড়ে যাবে। তারপরেও মানুষ বেচে থাকে আশা নিয়ে, হতাশাকে দূর করে কিছু আনন্দ আর হাসি নিয়ে। এরই নাম জীবন। কেউ হেরে যায়, কেউ পড়ে যায়, কেউবা আবার পরতে পরতে দাঁড়িয়ে যায়। আজ থেকে অনেক জেনারেশন পর সেসব মানুষগুলি হয়তো জানবেই না, কি ছিলো তাদের সেই কষ্টে ভরা তাদের অতীতের পূর্বসুরীদের জীবন, কিংবা কিভাবে আজ তার এই পর্বে আসা। আজকে এই ঘটনার মানুষগুলিকে সেই চরাই উতরাই পার করে সেই সব পূর্বসুরীরা নতুন প্রজন্মের জন্য নব পরিস্থিতি তৈরী করে গেছে। আজকের গল্পের মানুষ গুলিকে এই পর্বে আসতে অন্তত চারটি জেনারেশন পার করতে হয়েছে। এর মধ্যে ১ম জেনারেশনের কেহই জীবিত নেই, ২য় জেনারেশনের অনেকেই গত হয়েছেন, কেউ কেউ এখনো জীবিত আছেন বটে কিন্তু বয়স অনেক হয়ে গেছে তাদের। ৩য় জেনারেশনের এখন পড়ন্ত বিকেলের মতোই। আর ৪র্থ জেনারেশন তারা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, আর সবেমাত্র তাদের মধ্যে একটা সমন্নয় হলো। এবার দেখার বিষয় পরের প্রজন্মের কাহিনী। হয়তো অন্য কেউ লিখবে তার পরের প্রজন্মের ইতিহাস, এমনো হতে পারে, থাক...। 

হামিদা খাতুন আমার মা, বিল্লাল ভাই (বেলায়েত ভাই ) আমার সেই ভাই। বহুদিন একই গ্রামের কাছাকাছি ছিলাম, মাঝে মাঝে এক সাথে দুজনে সিগারেট টানতাম। অতীতের অনেক গল্প শুনতাম। কখনো সেই গল্পে ছিলো হাসি, কখনো ভেজা চোখ আবার কখনো নিগুড় কালো রাতের মতো অন্ধকারের ভীতি সঞ্চারী অনুভুতি। বিল্লাল ভাই মারা গিয়েছেন অনেক বছর আগে। তার সন্তানদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো, এখনো আছে তবে খুব ঘন ঘন নয়। কারন তাদের অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছে। বিল্লাল ভাইয়ের স্ত্রী এখনো জীবিত আছেন। তিনিই বা কতটুকু গল্পগুলি জানেন তা আমার জানা নাই। তবে তিনিএখন সার্থক স্ত্রীর মতো সার্থক মাও। তার সন্তান সেলিম বর্তমানে নেভাদায় থাকে। আমার ছোট মেয়ে কনিকা আমেরিকায় যাওয়ার সুবাদে এই প্রথম সেলিমদের এবং তার সনাত্নদের সাথে প্রথম দেখা হলো। এরা ৪র্থ জেনারেশন। আমার ফার্ষ্ট নাতি ওরা। আমার মা আজ বেচে থাকলে আর আমার ভাই বিল্লাল ভাই বেচে থাকলে বড্ড খুশী হতেন। জীবন কত বিচিত্র। কোথাও না কোথাও গিয়ে এর রুট মিলিত হয়ই। 

“কিছু কথা আছে যা বলতে চাই নাই কিন্তু বলা হয়ে যায়, কিছু কথা ছিলো, বলতে চেয়েছি, অথচ বলা যায় নাই, কিছু সপ্ন ছিলো যা দেখতেই চাই নাই কিন্তু দেখতে হয়েছে আবার কিছু এমন সপ্ন ছিলো সব সময় দেখতে চেয়েছি কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় নাই এমন কিছু শখ ছিলো সারাজীবন লালন করেছি কিন্তু জীবনের শেষ তীরে এসেও সেটা ধরা দেয় নাই আবার এমন কিছু ভয় ছিলো যা একেবারেই কাম্য নয় অথচ তা আমি এড়িয়েই যেতে পারিনি কী কারনে আবার এই কিছু কথা না বলতে চেয়েও বলতে হয়েছে, কিছু সপ্ন আমাকে দেখতেই হয়েছিলো অথচ সেটা আমার কাম্য ছিলো না, আবার কিছু স্বপনের ধারে কাছেও আমি যেতে পারিনিএটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস আমি এই আফসোসের ব্যাপারটা নিয়ে বহুবার গবেষনা করেছি কিন্তু জীবনের কাছে রাখা সব উত্তর সবসময় তার প্রশ্নের ন্যায় বিচার করে না। বিশেষ করে প্রশ্নটা যখন এমন হয় যেটা মনকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খায়, আর হৃদয়কে ছুড়ি দিয়ে ফালা ফালা করে দেয়। ফলে কোনোই আমি সেইসব প্রশ্নের উত্তর পাই নি, না আমার কাছে, না যাদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়া দরকার ছিলো তাদের কাছ থেকে। আর উত্তর না পেতে পেতে একসময় আমি কোনো উত্তরের আর আশাও করিনি। কিন্তু একটা ব্যাপার আমার কাছে শতভাগ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো যে, আমার এই অপারগতার কারন না আমি নিজে, না আমার সাথে যারা জড়িত ছিলো তারা না এটা আমার দোষ, না ছিলো তাদের আমি যদি আরো গভীরে গিয়ে এর আনুবীক্ষনিক পর্যালোচনা করি, তাহলে হয়তো আমার আরেকটা আফসোসের কথা প্রকাশ না করলেই নয় যে, আমার সেই অপারগতা কিংবা ঘাটতির কিছুটা হলেও কেউ না কেউ সহজেই হয়তো পুরন করতে পারতো, যা ‘সেই কেউ’রা হয়তো চেষ্টাই করে নাই

উপরের এই কথাগুলি আমার নয়, কথাগুলি একজন এমন মানুষের যাকে আমি আমার মতো করে চিনতে শুরু করেছিলাম আজ থেকে প্রায় ২৪ বছর আগে যখন আমার বয়স প্রায় ২২। কতটুকু আমি তাকে বুঝতে পেরেছিলাম, সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু কেনো জানি আমার খুব মায়া হতো, আর এই মায়ায় মাঝে মাঝে আমি নিজেকে তার ভূমিকায় প্রতিস্থাপিত করে দেখতাম কি হয় ভাবাবেগে অথবা মানসপটে। এই সময়টায় আমি খুব ভাবাগেবিত হয়ে যেতাম। ভাবাবেগিত হতাম এটা ভেবে যে, কি পরিমান চাপ কিংবা কষ্ট নিজের বুকের ভিতরে লুকিয়ে রাখা সম্ভব? তখন আরো বেশী মায়া হতো একজনের জন্য নয়, দুজন নিসংগ মানুষের জন্য যাদের উভয়ের বুকেই ছিলো সমান যন্ত্রনা আর ভাগ্যের আক্ষেপ। একজন যেনো পরাজিত, আর অন্যজন সেই পরাজয়ের কারন। এদের একজন আমার “মা” আর আরেকজন ‘বিল্লাল ভাই’ যাকে সবাই ডাঃ বেলায়েত নামেই চিনতো। আমি আজ সেই তাদের কথাই হয়তো বলবো।

আমার ‘মা’র সম্পর্কে আমি অনেকগুলি লেখা ইতিমধ্যে লিখলেও তার সবচেয়ে বড় দূর্বল বিষয়টি আমি কখনো আমার লেখায় আনিনি। আমি জানতাম এবং অনুভব করতাম আমার মায়ের সেই দূর্বলতা। আমার মায়ের এই দূর্বলতা তার নিজের সৃষ্টি যেমন নয়, আবার তিনি ইচ্ছে করলেও তার সেই অপারগতাকে তিনি অনায়াসেই দুহাত দিয়ে এক পাশে সরিয়ে দিতে পারতেন না। এই দূর্বলতা সমাজ সৃষ্টি করেছে, আর সেই সমাজ আজকের দিনের দুটি মানুষকে বিজন বিজন দূরে ঠেলে দিয়ে দুজনকেই অসুখী একটা বলয়ে জীবিত কবর দিয়েছিলো। আমার মায়ের সেই বড় দূর্বলতা ছিলো এই ‘বিল্লাল’ ভাই। পরবর্তিতে প্রায় তিন যুগ পরে যেদিন আমি আমার মায়ের সর্বশেষ ভিডিওটি করি, তখন অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু সে প্রশ্নগুলির উত্তর আমাকে আরো ব্যথিত করে দিয়েছিলো। সেই প্রশ্নের উত্তর আমাকে প্রতিটিবার চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিলো, আমার অন্তরের কোথায় যেনো ছট ফট করছিলো কোনো এক অয়াশান্ত অনুভুতিতে। আর যিনি উত্তর দিচ্ছিলেন, আমার মা, তার দ্রিষ্টি কখনো সেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে নির্লিপ্ত হয়ে ভাষাহীন কিছু শব্দ তেই শেষ হচ্ছিলো যার সাহিত্যিক নাম- আহা, কিংবা উহু। এসব বেদনার রাজত্তে যিনি ছিলেন, সে আর কেউ নয়, বিল্লাল ভাই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কে এই বিল্লাল ভাই? যদি এর উত্তর খুজতে চাই, তাহলে ফিরে যেতে হবে আজ থেকে বহু বছর আগে যখন আমারও জন্ম হয় নাই। ফলে আমি যা জেনেছি, শুনেছি, তা পুরুই হয় আমার মার কাছ থেকে, কিংবা আমার অগ্রজ ডঃ হাবীবুল্লাহর কাছে বা স্বয়ং বিল্লাল ভাইয়ের কাছ থেকে জানা কিছু তথ্য। কিন্তু আমার কাছে সব ব্যাপারটাই যেনো মনে হয়েছে,  এটা ছিলো একটা ভাগ্য আর সময়ের খেলা।

কেনো ‘ভাগ্য’ আর ‘সময়’ বললাম তারও একটা ব্যাখ্যা আছে। অনেক সময় এমন দেখা যায় যে, “ভাগ্য” আর “সময়” দুটুই কারো জীবনে একসাথে আসে, কিন্তু “ভাগ্য” আর “সময়” ওরা কখনোই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ না। সঠিক ব্যবহারে ভাগ্য পালটাতে পারে বটে কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে ভাগ্যও পালটে যায়। কিন্তু এই ‘সঠিক’ ব্যবহার আবার সবাই সবসময় হয়তো পায়ই না যাতে সেই সঠিক ব্যবহারে তার ভাগ্য পাল্টাতে পারে। কেউ কেউ পারে, আবার কেউ কেউ পারে না। আবার কারো কার ব্যাপারে সুযোগটাই আসেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ভাগ্যের হাতে মার খাওয়া কোনো ব্যক্তিত্ত সময়ের স্রোতে আবার বেশীদিন অসহায়ও থাকে না। একসময় না একসময় সে ঘুরে দাড়ায়ই যদি তার দৈবক্রম ভাগ্য আবার সেই ঈশ্বর কোনো এক যাদুর কাঠিতে হাল ঘুরিয়ে দেন। শুধু হাল ঘুরিয়ে দিলেই হয়তো তার সেই নির্যাতিত ভাগ্য দৈবক্রম ভাগ্য সঠিক নিশানায় পৌছায় না যদি তার চোখে না থাকে সপ্ন আর প্রবল একটা ইচ্ছাশক্তি। আজকের লেখার প্রধান চরিত্র এই ‘বিল্লাল’ ভাইয়ের ব্যাপারেও সেই দুটু শব্দ প্রায় একই সুরে খেটে যায়। ভাগ্য তাকে সুপ্রস্নন করে নাই, আবার করেছেও। ‘সময়’ তাকে একটা বলয় থেকে ছিটকে ফেলেছিলো বটে কিন্তু আবার সেই ‘সময়’টাই বদলে দিয়েছে তার সব জন্মগত বৈশিষ্ট।

বিল্লাল ভাইয়ের এই ইতিহাস নাতিদীর্ঘ নয়। এই ইতিহাস একটা পূর্ন জীবনের। আর সেই জীবনের বয়স কাল নেহায়েত কমও নয়, প্রায় ৫৫ বছর। এই ৫৫ বছরে পৃথিবী তার অক্ষে ৫৫ বার প্রদক্ষিন করে কত যে ঋতু আর কাল প্রশব করেছে তার কোনো হিসাব নাই। তাই বিল্লাল ভাইয়ের এই ইতিহাস বলার আগে সেই মানুষটির ইতিহাস বলা প্রয়োজন যার জন্য আরেক অধ্যা তৈরী হয়েছিলো বিল্লাল ভাইয়ের। আর তিনিই হচ্ছেন- আমার মা, আর জন্মধাত্রী বিল্লাল ভাইয়ের।

আমার মায়ের পুরু নাম ‘মোসাম্মাত হামিদা খাতুন’। নামটা আমি এভাবেই সবসময় লিখে এসেছি আমার ব্যক্তিগত তথ্যাবলীর মধ্যে। আমার মায়েরা ছিলেন দুই বোন এবং তার কোনো ভাই ছিলো না। আমার মায়ের আরেক বোনের নাম ছিলো ‘মোসাম্মাদ সামিদা খাতুন’। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, গ্রাম্য ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ারিশান সার্টিফিকেটে তাদের দুজনের নামই লিখা হয় যথাক্রমে ‘হামিরন নেছা’ এবং ‘ছামিরন নেছা’। যাই হোক, নাম বিভ্রাটের কারনে আজকাল হয়তো ব্যংকে একাউন্ট করতে জটিলতা থাকতে পারে, কিংবা ক্রেডিট কার্ডে ঝামেলা হতে পারে, কিন্তু এই নামের বিভ্রাটের কারনে আমাদের মুল চরিত্রের মানুষ গুলির জীবনের ইতিহাসে কোনো প্রকার ব্যত্যয় হয় নাই। আর আমার এই লেখাতেও এটা অনেক বড় সমস্যা নয়। আমার নানা অর্থাৎ আমার মায়ের বাবার নাম ছিলো ‘কেরামত আলি’। আজকাল এই নাম গুলি আর কেউ রাখে না। হয়তো ভাবে যে, নাম গুলি আধুনিক নয়। কিন্তু এই নামের মানুষ গুলি ছিলে ভালোবাসার আর ভরষার ভান্ডার। যাই হোক, যদি আরেকটু আগের জেনারেশনে যাই, তাহলে আমরা সেই ‘কেরামত আলি’র বাবার নাম পাবো ‘উম্মেদ আলী মুন্সী’। এই উম্মেদ আলীর বাবা জনাব হাজী আসাদুল্লাহ (পিতা-আহাদুল) এর শাখা প্রশাখা বিশ্লেষন করলে এমন এমন কিছু বর্তমান আত্মীয় সজনের নাম চলে আসবে যা না আমরা অনেকেই মানতে চাইবো, না আমরা তা গ্রহন করবো। তার কারন একটাই-সমাজের স্তরভিত্তিক কেউ এমন জায়গায় আর কেউ এমন স্তরে যা না মিশে বংশে, না মিশ খায় পরিবারে। কিন্তু বাস্তবতাটাই যে অনেক কঠিন এটা মানা আর না মানাতে কিছুই যায় আসে না। না মানার মধ্যে হয়তো থাকতে পারে একটা বড় অহংকার বা সম্পর্ক ছিন্নকারীদের মধ্যে সামিল, কিন্তু বাস্তবতা পালটায় না তাতে। যাই হোক, সেই ৫/৬ জেনারেশন আগে না হয় নাইবা গেলাম।

আমার মায়ের বয়স যখন সবেমাত্র বারো কি তেরো, তখন সমাজের রীতি অনুযায়ী আমার নানা কেরামত আলি বিবাহযোগ্য মেয়ের বোঝায় চাপ অনুভব করে তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। আজ থেকে সেই প্রায় সত্তর বছর আগে যেটা হয়তো ছিলো সমাজের একটা রীতি, আজ তা বাল্যবিবাহের নামে সমাজ তাকে অপরাধের কারন বলে উল্লেখ করে। যেটাই হোক, সমাজের রীতি অনুযায়ী আমার মা, খালাদের বিয়ে ওই বারো তেরো বছর বয়সেই হয়েছিলো। আমার মায়ের সেই স্বামীর নাম ছিলো আব্দুল জলিল (সম্ভবত)। সম্ভবত বলছি এই কারনে যে, নামটা এই মুহূর্তে সঠিক লিখলাম কিনা সিউর হতে পারছি না। তবে সঠিক হবার সম্ভাবনা ৭৫%। ১২ বছরের একজন প্রায় নাবালিকা বিয়ের পর এখন অন্য বাড়ির বউ হয়ে গেলো। এই নববধূর পড়নের কাপড়টাই হয়তো তার থেকে প্রায় তিন গুন লম্বা, সবে মাত্র হায় প্যান্ট ত্যাগ করা বালিকাটি এখন নাকে নোলক, হাতে মেহেদী সমেত চূড়ি, কানে দূল, আর মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই পরিচিত সব মানুষ গুলি থেকে আলাদা হয়ে অন্য এক সংসারে একটা আলাদা পরিচয় নিয়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে গেলো। তার শখের পুতুল, ছেড়া বই কিংবা সখীদের অনেক গোপন কিছু মজার স্মৃতি সব ছেড়ে কেদে কেদে নিজের সেই খেলার আংগিনা, কাথা বালিশ আর বাড়ির উঠোনের মায়া ত্যাগ করে অন্য কোথাও যেতেই হলো। এ যেনো পালের একটা পোষাপ্রানী যে কিনা এখনো তার মায়ের দুগ্ধপানও ছাড়ে নাই। এই বয়সের একজন অপরিপক্ক নাবালিকা কি সংসার করছে বা করেছে সেটা আমি আজো বুঝে উঠতে পারিনা কিন্তু বিধাতার সিস্টেমে আমার মা গর্ভবতী হলেন। আর সেই গর্ভধারনের পরে সঠিক সময়ে তিনি সুস্থ্য একটি পুত্র সন্তানও দান করেন তার শ্বশুরালয়ে। এই পুত্রটির নামই হচ্ছে- বিল্লাল হোসেন বা বেলায়েত হোসেন। সবকিছুই ঠিকঠাক মতোই চলছিলো। স্বামী, সংসার, পুত্রযত্ন সবকিছু। নবাগত পুত্র সন্তানের আদরের কোনো কমতি নাই, নব নাম ধারী হামিদা এখন শুধু হামিদাই নয়, সে এখন ‘মা’ও বটে। তার নতুন নাম ’মা’। চারিদিকেই একটা নন্দ যেনো বাতাসের প্রবাহের মতো সারাটা বাড়ি দোলায়িত হচ্ছে, কেউ পুতুল নিয়ে দেখতে আসে, কেউ দোয়া দিতে আসে, কেউবা আবার আসে এম্নিতেই। সব কিছুই ঠিক যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলছিলো। কেরামত আলী তার মেয়ের জন্য গর্বিত, পাড়ার লোকেরাও। কিন্তু বিধাতার পরিকল্পনা মানুষের পরিকল্পনার থেকে অনেক বেশী যেমন রহস্যময়ী, তেমনি অনেক কঠিনও। তিনি কাকে কি দিয়ে সুখবর দিবেন আর কাকে কি দিয়ে দুঃখের অতল গভীরে নিয়ে যাবেন, তার হিসাব কিংবা ছক আমাদের কারোরই বুঝার কথা নয়। আর সে অধিকার ঈশ্বর কাউকে দেন ও নাই। তিনি একাই খেলেন, একাই গড়েন, আবার একাই ভাঙ্গেন। কেনো গড়েন, কেনো ভাজ্ঞেন এর ব্যাখ্যা চাওয়ারও আমাদের কোনো উপায় নাই। ফলে দেখা যায়, একই খবর কারো কাছে যেমন শুভ হয় আবার কারো কাছে তেমনি অশুভও হয়। একই জায়গায় মিলিত হওয়া মানুষের রাস্তা যেমন তিনি আলাদা আলাদা করে দেন, তেমনি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় চলাচলকারী অনেক মানুষের রাস্তাও তিনি এক জায়গায় এনে মিলন ঘটান। একই পরিস্থিতিতে যেমন একজন জীবনকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যান, আবার সেই একই পরিস্থিতিতে তিনি আরেকজন জীবনকে অসহায় অবস্থার সাথে বোঝাপড়া করতে ব্যস্ত করে তোলেন। আমার মায়ের বেলাতেও ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি হাজির করলেন বিধাতা। আমার মায়ের স্বামী আব্দুল জলিলকে তিনি এই নশ্বর পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। যে নাটাইটায় একটা গুড়ি নিজের আনন্দে নীল আকাশের হাওয়ায় ভেসে একবার এদিক, আরেকবার ওদিক দোল খাচ্ছিলো, হটাত নাটাইটা বিচ্ছিন্ন করে দিলো ফানুশের মতো উরে থাকা রংগিন ঘুড়িটা। ছন্দে ভরা কতগুলি জীবন এক সাথে যেনো ছন্দ পতনের ধাক্কায় চারিদিক বেশামাল হয়ে গেলো। আমার মা হামিদা ভয়ে আতংগকে আর বিষন্নতায় বোবা হয়ে গেলেন, হামিদার বাবা কেরামত আলী মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনায় মুর্ছা যেতে লাগলেন। আর হামিদার সদ্য জন্মানো পুত্র বিল্লাল কিছুই না বুঝে মায়ের দুধের জন্য বিকট চিতকারে বাড়ি, ঘরময় যেনো আলোড়িত করে দিলো। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমার মা হামিদা খাতুন বিধবার তকমা গলায় পড়ে হাহাকার ঘরে যেনো নির্বাক হয়ে গেলেন।

কোনো নারীর অধিকার তার স্বামীর বাড়িতে স্বামীর বর্তমানে যেমন থাকে, সেই নারীর সেই অধিকার স্বামীর অবর্তমানে আর তেমন থাকে না। হামিদার স্বামীর ইন্তেকালের কয়েকদিন পর বাড়ির অন্যান্য সবাই যখন হামিদার স্বামীর শোকের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে থাকে, ততোই যেনো হামিদার উপর অন্যান্যদের খোটার ভার বাড়তে থাকে। এই বয়সে স্বামীকে বুঝার আগেই যখন কেউ স্বামী হারা হয়, তার নিজের মনের অবস্থার কথা কেউ তো ভাবেই না, বরং সব দোষ যেনো সেই অপয়া হামিদারই। পৃথিবীর কেউ এই নাবালিকা বিধবার মনের ভিতরের কষ্ট কিংবা বেদনার অনুভুতি না বুঝলেও হামিদার বাবা কেরামত আলী ঠিক বুঝতে পারছিলেন কি চলছিলো হামিদার ভিতরে। তিনি কোনো কিছুই চিন্তা না করে দুই অবুঝ, এক হামিদা এবং তার পুত্রকে নিয়ে চলে এলেন নিজের বাড়িতে। হামিদা এখন আবার তার পিত্রালয়ে সেই চেনা পরিবেশে ফিরে এলো। আজকের এই চেনা পরিবেশ যেনো আর আগের সেই পরিবেশ নাই, তার খেলার অনেক সাথীরাই অন্যের বধু। এখন আর দলবেধে কাউকে নিয়ে সেই চেনা পরিচিত নদীতে হৈ হুল্লুর করে জল্কেলীর কোনো সুযোগ নাই। কোথায় যেনো বীনার তার গুলি ছিড়ে গেছে। আর সাথে তো আছেই পুত্র বিল্লাল, যার কাছে দাদা বাড়িই কি, আর নানা বাড়িই কি কোনো কিছুরই কোনো পার্থক্য নাই। শুধু মনের অজান্তে চোখের পানি ঝরছে হামিদার আর তার সাথে অসহায় বিধবা কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা কেরামত আলির। জখম যেনো কিছুতেই ক্ষরন বন্ধের নয়।   

শরীরের কোনো কাটাছেড়া, কোনো বাহ্যিক জখম হয়তো চোখে দেখা যায়, ক্ষুধা হলে খাবারের অভাবে ক্ষুধায় হয়তো পেট গুরগুর করে, কিংবা জ্বর সর্দি, কাশি কিংবা মাথা ব্যথা হলে তার সিম্পটম অনায়াসেই বুঝা যায় কিন্তু অন্তরের জখম কি কখনো চোখে পড়ে? অন্তরে কি কখনো জখম হয় আদৌ? আর এই অন্তরটাই বা শরীরের কোন অংগ? এটা কি এমন কোনো জিনিষ যা মাংশ বা হাড় কিংবা এমন কিছু দিয়ে এর গঠন কাঠামো? অথচ এই জখম অনুভুত হয়, এই কষ্ট নিজেকে প্রতিটি ক্ষনে মনকে বিষন্ন করে দেয়। সেই অদেখা অন্তরে রক্তক্ষরন হয়। এই অন্তর্জালা, রক্তক্ষরন আর কষ্টে মাত্র ১৪/১৫ বছর বয়সের এই অবুঝ বালিকা আরেকটি সদ্যজাত নবাগতকে নিয়ে পৃথিবীর সব মানুষের চোখে যেনো একজন অপরাধি সেজে জীবিত অবস্থায় মৃত হয়ে রইলেন। স্বামীর ম্রিত্যু যেনো তারই অপরাধ। তার এই ঘটনার জন্য যেনো তিনিই দায়ী। একদিকে অবুঝ মন, অন্যদিকে সাথে আরেকটি অবুঝ সন্তান, সব মিলিয়ে চারিদিকে এক মহাশুন্যতা। মেয়ের এমন একটি দুঃসহ শুন্যতা নিজে পিতা হয়ে কেরামত আলী কি করবেন? দিন গড়ায়, রাত যায়, শুন্যতা আরো চেপে বসে হামিদার। তার যে বয়স, সে বয়সে তিনি হয়তো বিয়ের মাহাত্তটাই বুঝে উঠতে পারেন নাই, কিন্তু তাকে এখন বিধমার তকমাটাও বুঝতে হচ্ছে, বুঝতে হচ্ছে একজন অবুঝ সন্তানের মা হিসাবে তার অকাল পরিপক্ক দায়িত্ব।

যখন কোনো মানুষের দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে, তাহলে সে সবসময়ই চাইবে যে, সে অন্য কারো সাথে তার এই দুঃখটা, কষ্টটা শেয়ার করতে। কেউ তো থাকবে যে, ওর কথা শুনবে। বুঝুক না বুঝুক সেটা আলাদা ব্যাপার, কষ্ট লাগব করুক বা না করুক সেটাও আলাদা ব্যাপার। কিন্তু কারো সাথে তো তার এই কষ্টের ব্যাপারগুলি শেয়ার করা দরকার। আর হামিদার এই কষ্টের ভাগীদার কিংবা শ্রোতা হয়ে রইলো শুধু একজন-সেই নাবালক পুত্র ‘বিল্লাল’। চোখ ভিজে আসে তার, মন ভেংগে আসে যন্ত্রনায়, আর মনে হয়-কেনো? কেনো বিধাতা তাকেই এর অংশ করলেন? অন্য কেউ নয় কেনো? সেই অবুঝ পুত্র বিল্লালের কাছে ‘হামিদা’র হয়তো শুধুই একটা জিজ্ঞাসা। নাবালক বিল্লাল হয়তো এর কিছুই বুঝে না, কোনো এক ভিনদেশী ভাষায় হয়তো কিছুক্ষন অদ্ভুত শব্দ করলেও মায়ের সেই কান্নায় ভীত হয়ে নিজের অজান্তেই কেদে দেয় বিকট এক শব্দে যা হয়তো বিধাতার কাছেই তার মায়ের কষ্টের ফরিয়াদ। হয়তো মা ছেলের এই অসহায় কান্নায় বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের জলে কাপা কাপা গলায় বলতে থাকেন- আমি তো আছি তোর পাশে। ভয় নাই। মা আছে। পৃথিবীর কেউ তোর পাশে থাকুক বা না থাকুক, আমি তো আছি। এভাবেই কাটতে থাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এবং এক সময় কয়েক বছর।

জীবন যেখানে যেমন। যে শিশুটি আজ জন্ম নিলো কেউ জানে না তার জন্য এই পৃথিবী কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিংবা এই প্রিথিবীকে সে কি দিয়ে যাবে। বিধাতা চাইলে যে কোনো কিছুই হতে পারে। হতে পারে আজকে এই শিশুটি হয়তো এই পৃথিবীকে কোনো একসময় কাপিয়েও যেমন দিতে পারে আবার এই পৃথিবী তাকেও নাড়িয়ে দিতে পারে। এই বিশ্বভ্রমান্ডে এমন অনেক শিশুই জন্ম নেয় যারা অনেকেই অনেক ভুমিকা রাখে আবার কেউ কেউ কিছুই রাখে না, না পৃথিবীও তাদেরকে মনে রাখে। এমন মানুষের সংখ্যাই হয়তো নেহায়েত যেমন কম না, তেমনি ভুমিকা রাখে এমন শিশুও কম না। যুগে যুগে তারপরেও অনেক শিশু গোপনে পৃথিবীতে আসে, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর একদিন সবকিছু ফেলে সবার থেকে আলাদা হয়ে আবার কোথাও অদৃশ্য হয়ে যায়। মাঝখানের এই সময়টায় খুব গুটিকতক মানুষ হয়তো নিজের মতো করে কাউকে কাউকে মনে রাখে কিন্তু তাও একসময় মনের স্মৃতি থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। কিন্তু ‘বিল্লালের বেলাতে এটা ঘটে নাই। তিনি প্রকাশ্যে দিবালোকে এই সমাজে বৈধভাবে পদার্পন করেছিলেন, তার যোগ্য অভিভাবক ছিলো, তার পরিচয় ছিলো, আর ছিলো পাশে থাকা অনেক মানুষ যারা তাকে নিয়ে ভেবেছে, তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করেছে। কিন্তু বিধাতা তো আর মানুষের মত নন। তার পরিকল্পনা, তার ইচ্ছা, তার কার্যকারিতা সবকিছুই তার মত। বিল্লালের যখন মাত্র দুই থেকে হয়তো একটু বেশী, তখন হামিদাকে ছাড়তে হলো তারই ঔরসে জন্ম নেয়া তার পুত্র বিল্লালকে। সমাজ বড্ড বেরসিক, সমাজের আইনকানুনগুলিও একপেশে। এই আইন মানতে গিয়ে কে কাকে ছেড়ে যাবে, আর কার জীবন কোন আইনের পদাঘাতে পিষ্ঠ হবে সেটা যেনো সমাজের কোনো দায়বদ্ধতা নাই। আর এর সবচেয়ে বেশী আহত হয় সমাজের নারীরা। নারী বা মহিলাদেরকে এই সমাজে সেই প্রাচীনকালের মতো আজো দেবীর সমান তুলনা করে থাকে কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে আজো লাগাতার অন্যায়, নীপিড়ন, শোষন, অধিকারহীনতা আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এখনো অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। আর এই দানবের প্রথম নাম ‘সমাজ’ আর তার আইন কিংবা ‘মনোভাব’। যে সমাজ ১৩/১৪ বছরের বালিকাকে বিধাতার ইচ্ছায় তারই সংগীকে বিচ্ছেদের কারনে একজন অপয়া কিংবা এই দোষে দোষারুপ করা হয়, সেই সমাজ প্রকৃত কোনো ভরষার স্থান হতে পারে না। সে সমাজে প্রকাশ্যে কোনো মহিলাকে পুড়িয়ে মারা, নির্যাতন করা কিংবা ধর্ষন করা হলেও আজো কেউ হয়তো এগিয়েই আসে না। হামিদা হয়তো সে রকমের একটা অদৃশ্য আগুনে প্রতিদিন পুড়ে অংগার হচ্ছিলেন।

সমাজের এই মনোবৃত্তি আর যাতনায় এবং কন্যাদায়গ্রস্থ কেরামত আলি শেষ পর্যন্ত ১৫ বছরের বিধবা হামিদাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার আয়োজন শুরু করেন। হামিদার রুপের কোনো কমতি ছিলো না, আর সবে মাত্র সে কিশোরী। এক সন্তানের মা হলেও বুঝার কোনো উপায় নাই যে, তার অন্য কোথাও একবার বিয়ে হয়েছিলো। ফলে, খুব বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয় নাই কেরামত আলিকে। পুরুষ শাসিত সমাজে সব আইন পুরুষেরাই তাদের নিজের সুবিধার কারনে বানায়। এখানে ১৫ বছরের কিশোরীর সাথে ৪০ বছরের বৃদ্ধার বিয়েও কোনো দৃষ্টিকটু নয়। কিংবা কোনো এক প্রতাপশালি ধনী ব্যক্তির পক্ষেও একের অধিক কুমারী কিংবা বিধবা কিশোরীকে বিয়ে করাও কোনো দৃষ্টিকটু নয়। আর সেই প্রতাপ শালী কোন ধনী ব্যক্তি যদি সধবা হন, তাহলে তো তার যেনো বিয়ে করা একটা বৈধ লাইসেন্সের মতোই। হামিদার জীবনে এমনই এক সুপুরুষ-হোসেন আলী মাদবর প্রবেশ করলেন। এই হোসেন আলী মাদবর কোনো কাল বিলম্ব না করে অনেক ঘটা করে বিধবা হামিদাকে বধু হিসাবে নিয়ে আসে তারই সংসারে যেখানে রয়েছে হামিদার থেকেও বয়সে বড় আরো তিনটি পুত্র সন্তান আর চারটি কন্যা সন্তান। কেউ কেউ হামিদার থেকে বয়সে এতো বড় যে, কারো কারো আবার বিয়ে হয়ে তাদের ও সন্তান জন্ম নিয়েছে। তবে একটা ভালো সংবাদ হামিদার জন্য ছিলো যে, তাকে সতীনের ঘর করতে হয় নাই। কারন হোসেন আলি মাদবর ছিলেন সধবা। হোসেন আলী মাদবরের আগের স্ত্রী গত হয়েছেন প্রায় বছর খানেক আগে।

হামিদার যখন প্রথম বার বিয়ে হয়েছিলো, তখন সে পিছনে ফেলে গিয়েছিলো তার খেলার সাথী, খেলার পুতুল আর শৈশবের স্মৃতি। কিন্তু এবার হামিদা ফেলে গেলো একজন অবুঝ পুত্র যে জীবনের কোনো কিছুই বুঝে না। হয়তো সে মা কি জিনিষ তাইই বুঝে না আর বিচ্ছেদ কি জিনিষ সেটা তো তার বুঝবারই কথা নয়। বিল্লাল রয়ে গেলো কেরামত আলীর তত্তাবধানে। বিল্লালের বয়স সবেমাত্র তিনও পূর্ন হয় নাই।  এখন বিল্লাল পুরুই অনাথ, শুধু তার চারিপাশে রইলো কেরামত আলী, আর তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এই অনাথ ‘বিল্লাল’ নামক পুত্রের এখন কি হবে? সে তো আগেই তার পিতাকে হারিয়েছে, আর আজ হারালো তার মাকে, যদিও তার মা জীবিত। মায়ের নতুন সংসারে তার জায়গা নেই।

ওই যে বললাম, স্রিষ্টিকর্তা বড়ই রহস্যময়। হামিদার বাড়ির আলুকান্দার কাছেই ছিলো আরেক গ্রাম, তার নাম ঘোষকান্দা। সেখানেই স্রিষ্টিকর্তা আরেক ধনাঢ্য এক পরিবারকে রেখেছেন অতীব মানসিক কষ্টে। তাকে ঈশ্বর সম্পদের পাহাড় দিয়েছেন, তাকে সুসাস্থ্য দিয়েছেন, আর দিয়েছেন সমাজে প্রতিপত্তিদের মধ্যে সম্মান আর যোগ্যস্থান। কিন্তু তাকে ঈশ্বর যা দেন নাই সেটা হলো কোনো উত্তরাধীকারী। সন্তানহীনা অবস্থায় মানসিকভাবে এই দম্পতি এতোটাই কষ্টে ছিলেন যে, তাদের না আছে কোনো সন্তানসন্ততী, না আছে কোনো উত্তরসুরী। এই ধনাঢ্য পরিবারের হর্তাকর্তার নাম ‘ইদ্রিস আলী’। তিনি কিংবা তার স্ত্রী সন্তান জন্মদানে অক্ষম ছিলেন কিনা কেউ জানে না, কিন্তু ঈশ্বর হয়তো অন্য কোনো নেশায় তাদের এই ঘর পরিপূর্ন খালী রেখেছিলেন এমন একজন অসহায় মানবের জন্য যার বিপক্ষে দোষারুপ করার কোনো ওজরের কমতি ছিলো না। তাদের অন্তরে ঈশ্বর সব ভালোবাসা রচিত করেছিলেন ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য, লালিত করেছিলেন এক অদম্য স্পৃহা কিন্তু সেই ভালোবাসা আর স্পৃহা বারংবার শুন্য ঘরেই বাতাসের মধ্যে হারিয়ে যেত সকাল সন্ধ্যায় কিংবা অলস দুপুর কিংবা বর্ষার কোনো ঋতুতে। কষ্ট ছিলো, আখাংকা ছিলো কিন্তু সন্তান লাভ এমন নয় যে, বাজারে গেলেন, দোকান খুজলেন আর পছন্দমত একজন সন্তান কিনে এনে তাকে বড় করতে শুরু করলেন। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে এটা দেখা যায় যে, কারো কাছে কোনো মানুষ হয়তো খুবই অপাংতেয়, বোঝা, উপদ্রব, কেউ হয়তো তার দিকে এক নজর নাও তাকাতে পারে। হতে পারে সেই মানুষটা এক পরিবারের জন্য বোঝা, কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোথাও কেউ হয়তো ওই অপাংতেয় মানুষটির জন্যই অধীর চিত্তে অপেক্ষা করছে কখন তার আগমন ঘটবে। তাকে পাওয়াই যেনো সমস্ত সুখ আর শান্তির উৎস খুজে পাওয়া। ঈশ্বর এই দুটো ঘটনাই পাশাপাশি ঘটাচ্ছিলেন বিল্লালকে কেন্দ্র করে।

হামিদা চলে যাওয়ার পর হামিদা যেমন মনের ভিতরে সন্তান বিচ্ছেদে কাতর ছিলেন, তেমনি হামিদার বাবা কেরামত আলীও এই অবুঝ বালককে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি করা যায় সেই চিন্তায় কাতর ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কেরামত আলী তার ভায়রা গনি মাদবরের সাথে পরামর্শ করে বিল্লালকে পালক দেয়ার কথা চিন্তা করলেন। আর এতেই যেনো ইদ্রিস আলীর পরিবারে নেমে আসে সেই কাংখিত শুভ সংবাদ যিনি তাকে দত্তক নিতে আগ্রহী। কালক্ষেপন না করে ইদ্রিস আলীর পরিবার যেনো সর্গ থেকে নেমে আসা এক ফুটফুটে পুত্রসন্তান লাভ করে ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করলেন আর নিয়ে গেলেন হামিদার বুকের সবচেয়ে আদরের ধন ‘বিল্লাল’কে। হামিদার দ্বিতীয় বিয়ের কারনে হামিদার পুত্র বিল্লালকে ইদ্রিস পরিবার যেনো অযাচিত এক ধনের সন্ধান পেলেন। নিজেদের বংশমর্যাদা আর পিতৃপরিচয়ে বিল্লালকে আগাগোড়া মুড়ে দিলেন ইদ্রিস আলী পরিবার। কোনো কিছুর কমতি রাখলেন না তারা তাদের এই হাতে পাওয়া সন্তানের জন্য। কিন্তু মা তো মা-ই। সমস্ত কাজের ফাকে, নিজের অবসর সময়ে বারবারই তো মনে পড়ে হামিদার সেই নাড়িছেড়া সন্তানের জন্য। কিন্তু কি ক্ষমতা আছে তার? না সে সমাজের বিপক্ষে কিছু করতে পারে, না সে সমাজের আইনকে থোরাই কেয়ার করতে পারে। হতাশাগ্রস্থ নেশাখোরের মত ক্ষনেক্ষনেই মা হামিদা নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়তেন বিল্লালের জন্য। কখনো একাই কাদেন, কখনো একাই ভাবেন, আবার কখনবো এইকথা মনে করে শান্তি পান যে, অন্তত তার নাড়িছেড়া ধন কারো জিম্মায় ভালো আছে যারা তার এখন পিতামাতা।

হামিদার নতুন সংসারে সময়ের রেষ ধরে আমাদের জন্ম হতে থাকে একের পর এক সন্তান। আগের স্ত্রীর ঔরসে জন্ম নেয়া পুত্র-কন্যাদের পাশাপাশি হামিদার ঔরসে ক্রমেক্রমে আরো পাচ কন্যা আর দুই পুত্রের আগমন হয়। কেরামত আলী হামিদার নতুন সংসারের যেমন খোজ রাখেন, তেমনি খোজ রাখেন ইদ্রিস আলির পরিবারে দত্তক নেয়া বিল্লালেরও। হামিদা যখন বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে, তখন হামিদার সৌভাগ্য হয় তার ছেলে বিল্লালকে চোখে দেখার। মা ছেলের এই মিলন বড় সুখের বটে কিন্তু বেদনারও। ফিরে যাওয়ার দিন হামিদার চুমু খাওয়া বিল্লাল হয়তো কিছুই বুঝতে পারে না কি কারনে এই মহিলার চোখে জল আসে। বুঝতে পারে না কেনো বিল্লালের মা কিংবা তার বাবা ইদ্রিস আলী এই মহিলার কাছে এতো ঋণী। শুধু এটুকু বুঝতে পারে মহিলাটা এমন কেউ যাকে পেলে বিল্লালও খুশী হয়। হামিদা বিল্লালকে নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দেয়, গোসল করিয়ে সুন্দর জামা পড়িয়ে দেয়, আর খুব মিষ্টি করে মাথার চুল আচড়ে দিয়ে কখনো কখনো তার বুকে মাথা রাখতে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। হয়তো এই আদরগুলি বিল্লালকে বারবার মহিলার প্রতি বিল্লালের আকর্ষন বাড়িয়ে দেয়। যেদিন হামিদা আবার তার সংসারে চলে যায়, বিল্লালেরও খুব মন খারাপ হয়। (চলবে) 

৮/০১/২২- জাহাঙ্গীরের পেপার কাটিং

আমার কোর্ষমেট মেজর অবঃ প্রাপ্ত জাহাঙ্গীর এক সময় ইউএন এ জব করতো। হটাত করে সে কেমন যেনো রেডিক্যাল মুসলিমে পরিনত হয়ে গিয়েছিলো। ব্যাপারটা আমরা ওকে অনেক সময় ধরে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, আসলে সে যেটা ভাবছে সেটা একটা মেন্টাল ডিস অর্ডার। এই কনভিন্স করার পিছিনে সবচেয়ে কাছে ব্যক্তি ছিলো আমার আরেক কোর্ষমেট মেজর ইকবাল (নিপু)। শেষ পর্যন্ত জাহাংগীর ওর ভুলট বুঝতে পেরেছে এবং এখন নেপালে থাকে, খুব সাদাসিদা জীবন। 

জাহাঙ্গীর সেই সময়ে যে পাগলামিটা করেছিলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা নিউজ পেপার কাভারেজ হয়। সেটা এটাঃ 

১৩/১২/২০২১-ইতিহাস থেকে যারা (ফেসবুক)

ইতিহাস থেকে যারা শিক্ষা নেয় না, তাদের পতন বারবার ইতিহাসের সেই একই ধারায় হয়। ঘসেটি বেগমের কারনে, কিংবা মীর জাফরের কারনে, অথবা সেই মায়মুনা কুটনীর কারনেই এই পৃথিবীর অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর জীবনমান অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গিয়েছিলো। তাদের লোভ, তাদের লালসার জিব্বা এতো বড় ছিলো যে, তারা সারাটা দুনিয়া হা করে গিলে ফেলতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের পেট এতো বড় ছিলো না যে, গোটা বিশ্ব সেই পেটে ধারন করে। ফলে অধিক ভূজনের রসাতলে ন্যয্যভাবে হাতে আসা সব সম্পদ, ক্ষমতা আয়েস করার আগেই তাদের এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে অকালেই প্রান দিতে হয়েছে, অথবা মানুষের হৃদয় থেকে। আর যারা বেচে থাকে তারা ওইসব হায়েনাদের কারো কারো নামের আগে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য যোগ করে দেয়, "নিমকহারামের দেউড়ি", কিংবা "কুটনা বুড়ী আস্তনা" অথবা "হারামখোরের আস্তানা"। আজো তারা এইসব নামেই পরিচিত। কখনো দেখবেন না যে, মীর বংশের কোন বাচ্চার নাম জাফর রাখা হয়েছে। যদিও জাফর বড্ড সুন্দর একটা নাম। কিন্তু মীরজাফর একটা কুলাংগারের নাম। ওর বংশধরেরা আজো তার নামে কলংকিত বোধ করে।

অথচ যুগে যুগে ভিন্ন রুপে এখনো মীরজাফরের থেকেও খারাপ মানুষ এই সমাজে আছে, ঘসেটি বেগমের থেকেও ষড়যন্ত্রকারিনী এখনো অনেক ঘরেই আছে, মায়মুনা কুটনীর মতো মোনাফেক এখনো আমাদের চারিধারে বিধ্যমান। ওদের চেনা কঠিন কারন এইসব মানুষেরা বর্নচোরার মতো আমাদের চারিদিকে একটা আবরন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ভাল মানুষের মতো। সুযোগ পেলেই ছোবল দেবে এবং দেয়, আর এদের এক ছোবলে ধংশ হয়ে যেতে পারে আমার আপনার বহুদিনের বন্ধন, বহুদিনের সম্পর্ক।

১৩/১২/২০২১-একই খবর কারো কাছে শুভ

একই খবর কারো কাছে শুভ আবার কারো কাছে অশুভ হতে পারে। একই জায়গায় মিলিত হওয়া মানুষের রাস্তা আলাদা আলাদা হতে পারে। একই পরিস্থিতিতে একজন জীবনে এগিয়ে চলে, আবার আরেকজন জীবনের অসহায় অবস্থার সাথে বোঝাপড়া করে। কেউ কেউ বিন্দু বিন্দু অর্থ সঞ্চয় করে নিজের সপ্ন পুরন করে, অন্যজন তার গড়া সপ্ন বিন্দু বিন্দু ভুলের কারনে নিরুপায় অবস্থায় জন্য তার সপ্ন ভাংতে শুরু করে।  

কোনো অপরাধই রাতারাতি জন্ম নেয় না। যখন কোনো অপরাধ হয়, তখন আমরা শুধু তার উপরের রুপটাই দেখতে পাই। কিন্তু তার শিকড় অন্য কোথাও অনেক গভীরে হয়। আর শিকড়ের সন্ধ্যান হয় পুলিশ করে অথবা কোনো সচেতন মানুষ। পুলিশ যখন তদন্ত করে তখন প্রতিটি মানুষকে সে যেভাবে দেখে তা হল, সবাই মুখোশ পড়া ক্রিমিনাল। আর তাই সে যখন আসল জিনিষ বের করতে চায়, সে কাউকেই কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ। আর এ কারনেই হয়তো অনেকেই বলে- বাঘে ছুলে ১৮ ঘা আর পুলিশ ছুলে ৭০ ঘা!!

বিদ্বেষ হিংসা ভালোবাসা আর ঘৃণা এগুলি এমন কিছু আবেগ যা প্রতিটি মানুষের মাঝে পাওয়া যায়। সুযোগ সন্ধানী হওয়াও একটা আবেগ। সুযোগ সন্ধানী হওয়া কোনো খারাপ বিষয় নয়, কিন্তু তার জন্য কিছু সীমা থাকে, কিছু নীতি থাকে। কারো ক্ষতি করে, কারো অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে মানুষ কখনো সামনের দিকে এগুতে পারে না। বাবলা গাছ লাগিয়ে যদি কেউ ভাবে তাতে ফুল ফুটবে, সেটা কোনো পাগলামোর থেকে কম নয়। অবৈধ কোনো শুরু থেকে কোনো সম্পর্ক কখনো বৈধ হতে পারে না, না পারে সেখানে কোনো বৈধ কোনো ফলাফলের আশা। খারাপ পরিস্থিতি, খারাপ মানুষ আর খারাপ ফল এগুলি থেকে পার্থক্য করা শিখতে হবে যে কোনটা আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় আর কোন বিশয়টা ব্যক্তিগত বিষয় থেকে আইনের দরজায় নিয়ে যেতে পারে। যখন কোনো মানুষের পরিস্থিতি ঠিক এটাই হয়, তখন অন্যান্য দিনের মতো সকালটা আর তেমন থাকে না যেমন ছিলো আগের কোনো সকালের মতো, না তার সন্ধ্যাটাও আগের মত পরিচিত মনে হয়। পুলিশের প্রথম কাজ হয় ‘এক শান রিপ্লে তৈরী করা’। যেখানে তারা একে একে ক্রিমিনালের সম্ভাব্য সব ক্রিমিনাল পলিসি বিরুদ্ধে পুলিশের করনীয়। ফলে পুলিশ খুব সহজেই ক্রিমিনাল প্লানের একটু এগিয়েই থাকে।

নিজেদের মধ্যে যখন কেউ হিংসা হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন আসলে সেটাই হয় যা রক্তের সাথে রক্তের পাল্লা। ক্ষতি হয় শুধু নিজেদের রক্তের। তাহলে এই খেলায় কে জিতে? কেউ না।

মহিলাদেরকে আমরা দেবীর সমান তুলনা করে থাকি কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে লাগাতার অন্যায় আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এমন অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। প্রকাশ্যে কোনো মিহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয়, নির্যাতন করা হয়, ধর্ষন করা হয় অথচ কেউ এগিয়ে আসে না।

আমাদের এ গ্রামে কতজন পুরুষ আর কতজন মহিলা আছে কিংবা কতজন ছেলে আর কতজন মেয়ে আছে এটা কি কোনো প্রশাসন বলতে পারবে? যদি ছেলে আর মেয়ের এই অনুপাত জানা যায়, তাহলে আমাদেরকে নজর দেয়া উচিত সেই জায়গায় যেখানে কতটুকু উন্নতি করা দরকার।

২/১২/২০২১-পায়ের নীচে পাথরহীন

জীবনের কাছে রাখা সব উত্তর সবসময় তার প্রশ্নের ন্যায় বিচার করে না। বিশেষ করে প্রশ্নটা যখন এমন হয় যেটা মনকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খায়, আর হৃদয়কে ছুড়ি দিয়ে ফালা ফালা করে দেয়। কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর যখন কারো জীবনের নাশ হয়ে দাঁড়ায় তখন সেই উত্তরের শেষ পরিনতি সম্পর্কে উত্তারদাতার অনেক ভেবেচিন্তে দেয়া উচিত। আমার জীবনেও এমন একটা সময় এসেছিলো। আমার সব প্রশ্নের উত্তর হয়তোবা কারো জীবনের নাশ হবার সম্ভাবনাই ছিলো, ফলে উত্তরদাতা হিসাবে আমি কোনো উত্তরই দেওয়ার চেষ্টা করিনি। চুপ হয়ে থাকাই যেনো মনে হয়েছিলো-সর্বোত্তম উত্তর। আমি সেই “চুপ থাকা” উত্তরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে এমন পরিবেশটাই তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলাম যেনো “কিছুই না ব্যাপারটা”। কিন্তু “ব্যাপারটা” যতো না সত্য ছিলো তার থেকেও বেশী ছিলো “চাপ” আর এই “চাপ” তৈরী করার পিছনে যারা কাজ করেছিলো তারা আর কেহই নয়, আমার দ্বারা পালিত সেই সব মানুষগুলি যাদেরকে আমি ভেবেছিলাম, তারা আমার সব “ওয়েল উইশার্স”। কিন্তু আমার আরো কিছু মানুষ ছিলো যারা আমার জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে এমন করে জড়িয়েছিলো যারা আমার হাড় আর মাংশের মতো। আলাদা করা দুরুহ। সেই হাড় আর মাংশের মতো একত্রে মিলিত মানুষগুলি একটা সময়ে সেইসব তথাকথিত “ওয়েল উইশার্স”দের চক্রান্তে তাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে বিগড়ে গিয়েছিলো যে, তাদের “সন্দেহ” টাই যেনো এক সময় তাদের অবচেতন মনে “বিশ্বাসে” পরিনত হয়। আর এই মিথ্যা “বিশ্বাসে” তাদের চারিপাশের শান্ত বাতাসগুলিও যেনো প্রচন্ড ঝড়ের চেহাড়া নিয়ে একটা কাল বৈশাখীতে রুপ নিয়েছিলো। কেউ বুঝতেই চাইতেছিলো না যে, এর শেষ পরিনতি বড়ই ভয়ংকর।

তবে আমি জানতাম সত্যিটা কি। কিন্তু ওইসব পরিস্থিতিতে আমার সব সত্য জানাটাই সঠিক এটা কাউকে যেমন বিসশাস করানো যায় নাই, তেমনি আমিও তাদেরকে বিশ্বাস করাতে চাইওনি। শুধু অপেক্ষা করেছিলাম-কখন ঝড় থামবে, কখন আকাশ পরিষ্কার হবে, আর দিবালোকের মতো সত্যটা বেরিয়ে আসবে। “সময়” পার হয়েছে, ধীরে ধীরে মেঘ কেটে গেছে, আমি আমার সাধ্যমতো সবকিছু আবার গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। গুছিয়েও ফেলেছি সেইসব ক্ষত বিক্ষত আচড়গুলি। কিন্তু আমি এই অযাচিত ঘটনায় একটা জিনিষ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলাম যে, মনুষ্য জীবনে আসলে কেউ কারোই নয়। আমরা বাস করি শুধু আমাদের জন্য। একা থাকা যায় না, তাই সমাজ, একা থাকা যায় না, তাই পরিবার। একা অনেক অনিরাপদ, তাই সংসার। কিন্তু এই সমাজ, এই সংসার কিংবা এই পরিবার কোনো না কোন সময় ছাড়তেই হয়, আর সেটা একাই। এই মিথ্যে সমাজ, পরিবার আর সংসারের নামে আমরা যা করি তা নিছক একটা নাটক। জংগলে বাস করলে একদিন সেই জংগল ছাড়তেও কষ্ট হয়। এরমানে এই নয়, আমি জংগলকেই ভালোবাসি। কথায় বলে-ভালোবাসা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর অনুভুতি, আর এটা যদি বেচে থাকে তাহলে হিংসা, বিদ্বেষ থেকে মানুষ হয়তো মুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু আমরা যারা এই সমাজ নামে, পরিবার নামে, কিংবা সংসার নামে চিহ্নিত করে ভালোবাসার জাল বুনে থাকি সেটা আসলে কোনো ভালোবাসাই নয়। সেখানে থাকে প্রতিনিয়ত নিজের সার্থের সাথে অন্যের লড়াই। অন্যঅর্থে সেটা একটা পাগলামী, লালসা কিংবা একা বাচতে চাওয়ার অনিরাপদের একটা অধ্যায় মাত্র। অথচ আমরা প্রত্যেক মুহুর্তে আমাদের এই নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখার জন্য অনেক অপবাদ, অনেক ভয়ংকর বাধা আর মৃত্যুর মতো রিস্ককে বরন করে থাকি। এ সবই আসলে নিজের সার্থে।

যাই হোক যেটা বলছিলাম, আমার সেই ফেলে আসা অভিজ্ঞতার আলোকে আমি ধীরে ধীরে সে সব “ওয়েল উইশার্স” দেরকে নিজের বেষ্টনী থেকে দূরে রাখার প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছি। আমি একটা মুহুর্তেও সেই সব দিনের ক্ষত বিক্ষত হবার বেদনার কথা ভুলি নাই। যখনই সেই ব্যথার কথা মনে হয়েছে- আমি বারবার আরো শক্ত হয়েছি। আমি জানি কন এক সময় আবারো তাদের আমার প্রয়োজন হবে, আবারো তারা আমাকে আকড়ে ধরার চেষতা করবে, আবারো তারা তাদের মিথ্যা চোখের পানি ফেলে আমাকে আবেশিত করার চেষ্টা করবে। আমি ততোবার নিজেকে বারন করেছি-আর যেনো সেই একই ফাদে পা না বাড়াই। তাহলে সেটা হবে আমার জীবনের জন্য কালো আধ্যায়।

ওরাও হয়তো ভেবেছিলো- কোনো প্রয়োজন নাই আর আমাকে। আমি কোন দুঃখ পাইনি। শুধু ভেবেছি, খুব ভালো যে, তারাই গুটিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এই প্রিথিবীর সবচেয়ে বড় বিপত্তি এই যে, বড় বট বৃক্ষের প্রয়োজন কখনো কোনোদিন কোনো কালেই ফুরিয়ে যায় না। হোক সেটা হাজার বছরের পুরানো কোনো বৃক্ষ।

আজ সেই দিনটা এসেছে। অথচ আজ আমার সব দরজা এমন করে খিল দিয়ে আটকানো যে, না আমি খুলতে চাই, না খোলার প্রয়োজন মনে করি। পৃথিবীতে নিমক হারামের চেয়ে বড় পাপ অথবা বড় বিশ্বাসঘাতকরা আর নাই। যে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কেউ আকাশ দেখে, সেই পাথকে যত্ন করে রাখতে হয়। যদি অযত্নে সেই পাথর কোথাও হারিয়ে যায় বা ব্যবহারের আর উপযোগি না হয়, তাহলে আকাশ যতো সুন্দরই হোক না কেনো, তাকে দেখার ভাগ্য আর হয় না। যদি কেউ আজিবন আকাসের জ্যোৎস্না, আকাসের তারা আর নীল আকাশের মধ্যে তারার মেলা দেখার ভাবনা থাকে, তাহলে সেই পাথকে অতোতাই যত্ন করা দরকার যতোটা মনে হবে তার মনের শখের দরকার। তা না হলে চোখের জলে বুক ভাসবে ঠিক কিন্তু কেউ তার নিজের পাথর দিয়ে তার আকাশ দেখা বন্ধ করে অন্যকে পাথর দিয়ে সাহাজ্য করে না। এতাই নিয়ম।

আজ তারা সেই পাথরটাকে হারিয়ে ফেলেছে বন্ধ দরজার অন্ধকার ঘরে। যেখানে না যায় দরজা খোলা, না যায় পাথরে পা রাখা। তোমাদের জন্য নতুন আরেক অধ্যায় শুরু। এবার এই দুনিয়াটাকে বড্ড অসহায় মনে হবে তোমাদের। তোমাদের প্রতিন মনে হবে- তোমরা কোথায় কি পরিমান ক্ষতি নিজেদের করেছো যার সমাধান কখনোই তোমাদের হাতে ছিলো না। তোমরা ভেবেছিলে- তোমাদের জন্য মায়ের চেয়ে মাসির দরদ সম্ভবত অনেক বেশী। কিন্তু এই দুনিয়ায় আজ পর্যন্ত মায়ের চেয়ে মাসির দরদ কখনোই বেশী ছিল বলে এটা কেউ যেমন প্রমান করতে পারে নাই, আর এতা সত্যও নয়। যদি সেটাই তোমরা মনে করে থাকো- তাহলে আজ তোমাদের সেই মাসির কাছেই তোমাদের সমস্ত কিছু আবদার, চাহিদা, কিংবা সাহাজ্য চাওয়া উচিত যাকে তোমরা বিনাবাক্যে মনে করেছো, লিডার অফ দি রিং। দেখো, সেই লিডার অফ দি রিং তোমাদের জন্য কোনো সাহাজ্য পাঠায় কিনা। আমার দরজা তোমাদের জন্য আর কখনোই খোলা হবে না। আমি শুধু দেখতে চাই, আসলেই তোমরা কাকে চেয়েছিলে? কার উপরে তোমাদের এতো নির্ভরশীলতা ছিলো আর কার গলায় পা রেখে শ্বাস রোধ করেছিলে। আমি তো সেদিনই মরে গেছি যেদিন তোমরা আমাকে আমার অজান্তে পিছন

২২/১১/২০২১-এসআইবিএল-২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

আমার ব্যবসার জন্মলগ্ন থেকেই একটি মাত্র ব্যাংকেই আমি সমস্ত ব্যবসায়ীক লেনদেন করে এসছি। আর সেটা হলো এসআইবিএল ব্যাংক। আমি অবশ্য এসআইবিএল এর প্রধান কার্যালয়ের সাথে ব্যবসায়ীক লেনদেন করলেও হাসনাবাদ সুপার মার্কেটের এসআইবিএল শাখার সাথে আমাদের ফ্যাক্টরীর সম্পর্ক হচ্ছে আত্মার সাথে আত্মার মতো। ডোর টু ডোর প্রতিষ্ঠান। আমার প্রায় প্রতিটি ষ্টাফ এই ব্যাংকের গ্রাহক। আজ এই ব্যাংকের ২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ছিলো। গতকালই আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ  ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম ভাই নিজে এসে আমাকে দাওয়াত করে গিয়েছিলেন যেনো আজকের দিনটায় অন্যান্য দিনের চেয়ে অফিসে একটু আগে এসে তাদের এই মহান দিনটির সাথে আমি শরীক হই। অনেক চমৎকার একটা বিশাল কেক কেটে এই মহান দিনটাকে এসআইবিএল ব্যাংক স্মরণ করেছে। আমি নিজেও গর্বিত এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করায়।

ধন্যবাদ নিজাম ভাই, ধন্যবাদ সব কলিগ ভাইদের।

৫/১১/২০২১-প্যারাডাইম শিফট

যখন সাভাবিক কোনো চিন্তাচেতনা কিংবা কার্যক্রম অন্য কোনো নতুন নিয়ম বা চিন্তা চেতনা দ্বারা সম্পন্ন হতে দেখা যায়, তখন এই প্রতিস্থাপিত নতুন পরিবর্তিত চিন্তা চেতনাকেই প্যারাডাইম শিফট বলা যেতে পারে। অন্যঅর্থে যদি বলি- এটা হচ্ছে একটা মডেল, তত্ত্ব, বা দ্রিষ্টিভঙ্গি, ধারনা, কিংবা দৃষ্টান্ত যা প্রকৃত তত্ত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি, কিংবা মডেল থেকে আলাদা। প্যারাডাইমটা আসলেই আসল জিনিষ না, এটা একটা মানষিক ভাবনার সাথে প্রকৃত সত্যের একটা শুধু ছবি। কোনো একটা জিনিষের ব্যাপারে আমরা যা ভাবছি, বা দেখছি এর সাথে সেই জিনিষটার যে রকম প্রকৃত বৈশিষ্ট , এই দুয়ের মাঝেই থাকে প্যারাডাইম তত্তটি। এই প্যারাডাইম দিয়ে মানুষ কোনো একটা ধারনা, চিন্তা চেতনা, কিংবা কোনো একটি জিনিষের ব্যাপারে একটা ধারনা পায়।

কিন্তু প্যারাডাইম শিফট অনেক বড় জটিল। প্যারাডাইম শিফটের মাধ্যমে কোনো একটা তত্ত্ব, চিন্তাচেতনা বা দ্রিষ্টিভঙ্গি পুরুটাই পালটে যায়। একটা উদাহরণ দেই- ধরুন আপনি একটা লোকের চেহাড়া দেখে ভাবলেন যে, সে একটা নিশ্চয় ভয়ংকর সন্ত্রাসী। আপনার মন তাকে সেভাবেই ট্রিট করছে, সেভাবেই আপনি তাকে ওই খারাপ মানুষদের মধ্যে লিষ্ট করে ফেলেছেন। অনেকপরে যখন জানলেন যে, লোকটা ছিলো খুবই ভদ্র, ভালো ও খুবই অমায়িক এবং পরোপকারী। তখন আপনি অনেক মনোকষ্টে ভোগবেন। আফসোস হবে। এই যে নতুন ভাবনা আপনাকে আগের চিন্তাচেতনা থেকে হটাত করে ১৮০ ডিগ্রী উলটে গিয়ে আরেক নতুন প্যারাডাইমে নিয়ে আসছে, এটাই হলো প্যারাডাইম শিফট।

থমাস কুন তার বিখ্যাত-“দি স্রাইাকচার অফ সায়েন্টিক রেভ্যুলেশন” বই এ প্রথম প্যারাডাইম শিফট শব্দটি চালু করেন। প্যারাডাইম যার যতো বেশি নিখুত, তার প্যারাডাইম শিফট ততো কম। আর যাদের এই প্যারাডাইম কোনো কিছুর ব্যাপারে প্রায় কাছাকাছি থাকে, তারা আসলেই জ্ঞানী এবং বাস্তববাদী। বর্তমান জগতে মানুষের প্যারাডাইম অনেক অনেক সত্যের থেকে বেশী দূরে বিধায়, আমাদের সমাজে গন্ডোগোল বাড়ছে।

১৯/১০/২০২১-হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া

আমি মর্মাহত, আমি আহত, আমি অসুস্থ্য। আমার কোনো ভাষা নাই কোনো মন্তব্য করার। শুধু মন খারাপ হচ্ছে, আর কষ্টে ভোগছি।  

গতকাল পেপারে দেখলাম, রংপুর পীরগঞ্জে হিন্দুদের একটি গ্রাম রাতের অন্ধকারে কে বা কারা পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাই না যে, কে বা কারা এটা করেছে। সাম্প্রদায়িক হামলা কখনোই হটাত করে সংঘটিত হয়না। এরও একটা মাষ্টারমাইন্ড থাকে, একটা মাষ্টার প্ল্যান থাকে যা দিনের পর দিন কারো না কারো ছত্রছায়ায় সঠিক দিন তারিখ ধার্য করেই তার বাস্তবায়ন করা হয়। আমরা কি এতোটাই পিশাচ হয়ে গেছি যে, একই গ্রামে, একই এলাকায় পাশাপাশি হিন্দু মুসলিম যুগের পর যুগ একত্রে বসবাস করার পরেও শুধুমাত্র ভিন্ন মতালম্বি ধর্মের কারনে আমার সেই চেনা বন্ধু, আমার সন্তানের সেই চেনা খেলার সাথী, কিংবা যে ঠাকুরমা আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে তার ঈশ্বরের কাছে আমার মংগলের জন্য দোয়া করেছেন, তাকে অতর্কিত হামলায় এক নিঃশ্বাসে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে পারি? একবারও অন্তরে দাগ কাটে না যে, এটা ধর্মের উপর নয়, এটা মানবতার উপর চরম আঘাত? এটা কিছু নীরিহ এবং অসহায় মানুষের উপর অত্যাচার?  

একবার ভাবুন তো, যে বাড়িগুলিতে আগুন দেয়া হয়েছে, সেখানেও আমার ছেলে-মেয়েদের মতো ছেলে-মেয়েরা রয়েছে, তাদের শখের অনেক কিছু সাজানো ছিলো, দিনের পর দিন সে তার জীবনকে সুন্দর করার জন্য কতই না সময় ব্যয় করেছে, তার স্বপ্ন বিছানো আছে সেখানে পড়তে পড়তে। ঐ বাড়িতে আমার বৃদ্ধ মায়ের মতো কিংবা আমার দাদার নানার মতো একজন মা কিংবা বাবা অথবা ঠাকুরমা রয়েছেন। কি দোষ করেছেন তারা? তারা শুধুমাত্র ভিন্ন ধর্মালম্বি বলেই কি অপরাধী? তাহলে প্যালেষ্টাইন পুড়ছে, সেটা দেখে আমাদের খারাপ লাগে কেনো? নিউজিল্যান্ডে বোমার আঘাতে মুসল্মান মরছে, সেটা দেখলে আমাদের খারাপ লাগে কেনো? তারাও তো একই অপরাধ করে যাচ্ছে। নীরিহ এবং অসহায় মুসলমানদের উপর অত্যাচার করছে। একবার ভাবুন তো, যদি ঐ বাড়িটা যারা আগুন দিয়েছে তাদের হতো, তাদের কেমন লাগতো? তার প্রিয় আদরের মেয়ে, বা ছেলে ভয়ে ধান ক্ষেতে সারারাত পালিয়ে দেখছে তাদের ঘর পুড়ছে, তাদের বই খাতা পুড়ছে, তাদের সবকিছু পুড়ে যাচ্ছে, আর তার সাথে সেও দেখছে যে বাড়িতে আগুন লাগার ধংসাত্তক পরিস্থিতি? একবারও কি তারা এসব ভেবেছে? কি নির্মম।

আমার ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এদেশের হিন্দুরা রোজার দিনেও প্রকাশ্যে আমাদের রোজাকে সম্মান দেখিয়ে দিনের বেলায় কোনো খাবার খেতে চায় না। এদেশের হিন্দুরা অন্য দেশের হিন্দুদের মতো নয়। আমার অনেক অনেক হিন্দু বন্ধু আছে, খ্রিষ্টান বন্ধু আছে, আমার তো কখনো এটা মনে হয়নি যে, ওদের প্লেটে আমার খেতে খারাপ লাগে, না ওরা কখনো এটা ভেবেছে। আমার বাসার কোনো পারিবারিক দাওয়াতে তো কিছু মানুষ হলেও হিন্দুরা থাকেন যেমন আমি থাকি তাদের অনুষ্ঠানে। কখনো তো আমি এর কোনো ডিসক্রিমিনেশনে ভোগি নাই? আমার দূর যাত্রায় যখন কোনো হিন্দু বন্ধু বা ভাই সাথে থাকেন, আমি তো তাকেই দাড় করিয়ে কোথাও নামাজে রত হই কিংবা সেও কোনো এক মন্দিরে আমাকে পাশে দাড় করিয়ে একটু প্রনাম করে আসে। কখনো এটা আমার কাছে কোনো প্রশ্নের উদয় হয় নাই। সব ধর্মের মধ্যেই কেউ না কেউ উগ্র থাকে কিন্তু সেটা তো সামগ্রিক জনগোষ্ঠি দায়ী নয়।

আমার প্রানপ্রিয় সন্তান যখন কোথাও অসহায় অবস্থানে পড়ে যায়, আর সেই অপরিচিত স্থানে যখন সে তার পরিচিত কোনো হিন্দু মানুষের দেখা পায়, সে তো তার কাছেই ছুটে যাবে কোনো না কোনো সাহাজ্যের জন্য। সেখানে তো কোনো ধর্ম কাজ করে না? তাহলে আজ আমরা কি দেখছি? কারা তারা যারা আমারই সন্তানতুল্য বাচ্চাদের, ঠাকুরমার বয়সি মুরুব্বিদেরকে এবং তাদের আবাসস্থলে এভাবে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দিলো। আর কি অপরাধে তাদের এই শাস্তি? কেউ যদি আমাকে আমার কোরআন ধরে শপথ করিয়েও এটা বিশ্বাস করাইতে চায় যে, শারদিয় পুজায় হিন্দুরা আমাদের পবিত্রগ্রন্থ কোরআনকে কোনো এক দেবীর পায়ের নীচে পদদলিল করেছে, আমি কস্মিঙ্কালেও এটা বিশ্বাস করতে চাই না। তারা এমন নয়। তারাও আমার পবিত্রগ্রন্থকে সম্মান করে। এসব একটা উগ্র মানুষের কাজ, আর সে কাজে অবশ্যই কেউ না কেউ মদদ দিয়েছিলো।

আমরা সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু নিয়ে কথা বলি। এটাও একটা ভেদাভেদের মতো। এদেশ যেমন আমার, এদেশ তাদেরও। তারা সংখ্যায় কম এটা কোনো অপরাধ নয়। এই অপবাদ মারাত্তক অন্যায়ের যোগান দেয়। আমি অসুস্থ্য হলে তাহলে কেনো হিন্দু- মুসলমান ভেদাভেদে ডাক্তার বিবেচনা করি না? আমি স্কুল কলেজে শিক্ষা নেয়ার সময় তো হিন্দূ শিক্ষক আর মুসলমান শিক্ষকের কোনো ভেদাভেদ করি না? আমি আকাশ পথে ভ্রমনের সময় কেনো হিন্দু মুসলিম পাইলটের বিবেচনা করি না? আমি ব্যবসা করার সময় হিন্দু মুসলিম কেনো বিবেচনা করি না? আমি যখন যুদ্ধে যাই, তখন আমার পাশের হিন্দু সৈনিকের ব্যাপারে কেনো অপবাদ দেই না? আমি যখন একই নদীতে গোসলে যাই, তখন সেই নদীতে হিন্দু মুসলিমের গোসলে কেনো কোনো প্রকার অসস্থি বোধ করি না? অথচ যেই না ধর্মের কথা উঠলো, তারা সনাতন কিংবা আমার ধর্মের না, তাই তারা আমার বিপক্ষের মানুষ। এটা কোনো সুস্থ্য মানুষের চিন্তাধারা?

আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আর সমবেদনা জানাই আমার সেসব ভাইদেরকে যাদের আমরা অনেক ক্ষতি করে ফেলেছি। তাদের এই অপুরনীয় ক্ষতি এবং ক্ষত আমরা কিছুতেই পুরন করতে পারবো না জানি, তবে আমার অনুরোধ যে, কেউ তাদের জন্য একটা তহবিল একাউন্ট খুলুন। সরকার যা পারবেন তাদেরকে সহায়তা করবেন জানি, এর সাথে আমরা যারা তাদের জন্য ক্ষত বিক্ষত হচ্ছি, আমরাও কিছুটা শরীক হতে চাই। কেউ এই উদ্যোগটা নিন আর সোস্যাল মিডিয়ায় জানান। আমরা অনেকেই আপনাদের পাশে আছি। উক্ত তহবিল দিয়ে আমরা আবার আপনাদের জীবনকে কিছুটা হলেও ক্ষত্মুক্ত করতে চাই। জানি পারবো না, তারপরেও একটা উদ্যোগ নিন কেউ।

পরিশেষে আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর একটি হাদিস উল্লেখ করতে চাই- “সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকায় সংখ্যালঘু অমুসলিমরা আমানতের মত। যারা তাদের কষ্ট দিবে, কেয়ামতের দিন আমি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে নালিশ করবো (আবু দাউদঃ ৩০৫২)।“  

রুস্তমের চিঠি

আমার ড্রাইভার ছিলো রুস্তম। একবার রুস্তম আমারে বল্লো যে, ওর কাছে যদি ৩ লাখ টাকা থাকে তাহলে ওর জীবন নাকি সে বদলিয়ে ফেলবে। খুব ভালো কথা। বললাম, ৩ লাখ টাকা যদি পাস, তাহলে কি করবি? রুস্তম বল্লো যে, সে ২টা পুরানো সিএনজি কিনবে। একটা নিজে চালাবে আরেকটা ভাড়ায় চালাবে। তাতে প্রতিদিন সে পাবে ১২০০ টাকা। তারমানে মাসে ৩৬ হাজার টাকা। ওর খরচ লাগে মাসে ১৬ হাজার টাকা। তারমানে মাসে সে ২০ হাজার সেভ হবে। বছরে সেভ হবে আড়াই লাখ টাকা। সেই আড়াই লাখ টাকা দিয়া সে আরেকটা পুরানো সিএনজি কিনবে। এভাবে ২/৩ বছর পর সে গাড়ি কিনবে। যদি গাড়ি কিনে, তাহলে ওর প্রতিদিন লাভ হবে ২ হাজার টাকা। এভাবে সে হিসাব করে দেখলো যে, ৫ বছর পর তার হাতে আসবে প্রায় ২০ লাখ টাকা, ৩ টা সিএনজি আর একটা গাড়ি। হিসাবটা একদম ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু শুধু একটা জায়গায় হিসাবটা শুরু করা যাচ্ছিলো না। প্রাথমিক ৩ লাখ টাকা সে পাবে কোথায়?

রুস্তম আমার অনেক দিনের ড্রাইভার। প্রায় ৭ বছর। এই বছর গুলিতে আমি এমনো হয়েছে যে, ব্যবসার জন্য কোটি কোটি টাকাও ওকে দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠিয়েছি। ফ্যাক্টরীর সেলারী আনার সময় কিংবা সাব কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরীতে ইমারজেন্সী ভাবে টাকা অয়াঠানোর জন্য। কোনোদিন রুস্তমের মধ্যে কোনো গড়বড় দেখি নাই। কিন্তু একদিন-সে আমার ব্যাগ থেকে ৩ লাখ টাকা চুরি করে পালালো।

চুরি করার পর এক মাস পালিয়ে পালিয়ে থাকলো। অনেক খুজাখুজি করেছি, ওর গ্রামের বাড়ি, ওর বর্তমান শশুর বাড়ি, কিংবা ওর প্রাক্তন শশুড় বাড়িতেও। কিন্তু রুস্তমের কোনো হদিস পাওয়া যায় নাই। অগত্যা মনের রাগ মিটানোর জন্য ওর নামে একটা চুরির মামলাও করেছিলাম। কোথাও না পেয়ে আমি ওকে খোজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম এই কারনে যে, রুস্তম যদি ঐ ৩ লাখ টাকা কাজে লাগিয়ে কিছু করতে পারে, তাহলে করুক। ব্যাপারটা নিয়ে আমি আর কোনো আক্ষেপ বা রাগ রাখতে চাই নাই। 

 অতঃপর প্রায় ৫ মাস পরে একদিন আমি একটা বিশাল চিঠি পেলাম। ২২ পাতার চিঠি। চিঠিটা আমি পড়তে চাইনি কিন্তু চিঠিটার প্রথম লাইনেই যে কথাটা লিখা ছিলো, তার জন্যই আমি পুরু চিঠিটা পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। আর সে লাইনটা ছিলো- “যেদিন আপনি চিঠিটা পাবেন, সেদিন হয়তো আমি আর বেচে নেই স্যার। কিন্তু একটা কথা বলে যাই, আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সাহস কম, তাই আর বাচতে পারলাম না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন”।

 যেদিন আমি চিঠিটা পাই, তার প্রায় ৪ দিন আগে রুস্তম তারের কাটা গলায় ফাসি দিয়ে আত্তহত্যা করেছিলো। আমার প্রায়ই ওর কথা মনে পড়ে। আমি ভাবি যে, যদি রুস্তম সাহস করে আবার আমার কাছে আসতো, আমি ওকে আবার রাখতাম আমার ড্রাইভার হিসাবে। আমি ওরে ক্ষমা করে দিছি। আমিও ওকে ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার ভালোবাসা ওকে ঠেকাতে পারে নাই। এটা আমার ব্যর্থ তা নাকি ওর ভীরুতা আজো আমি বুঝতে পারি নাই। কিন্তু এটা ওরও ব্যর্থতা।

 রুস্তম মাঝে মাঝে খুব ভালো কবিতা লিখতো। আর ড্রাইভিং করার সময় আমাকে মুখস্ত ওর লেখা কবিতা শুনাতো। আমি অবাক হতাম, রুস্তম খুব ভালো কবিতা লিখে। প্রথম প্রথম ভাবতাম, সম্ভবত রুস্তম কারো কবিতা চুরি করে, কিন্তু পরে বুঝেছি- রুস্তম আসলেই লিখে।

 রুস্তমের লেখা ২২ পাতার চিঠির কিছু চুম্বক অংশ আমি তুলে ধরি।

 জীবনে সেসব মানুষের সাথে কখনো লুকুচুরী, মিথ্যা, ছলচাতুড়ি, কিংবা কল্পকাহিনী বলে সাময়িকভাবে ভুল বুঝানো উচিত না যারা আমাদের সুখের জীবনের জন্য নিসসার্থভাবে তাদের অনেক মুল্যবান সময়, পরিশ্রম আর অর্থ দিয়া সাহাজ্যের হাত বাড়ায়। যদি পথ চলতে গিয়ে কিংবা তাহাদের নির্দেশনা মানতে গিয়ে কিংবা কোনো লোভে পড়ে নিজের অজান্তে ভুল করে ফেলে, হয়তো সেটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব কিন্তু যদি সেই ভুল হয় ইচ্ছাকৃত, তাহলে সেটা হবে পাপ, অপরাধ এবং ক্ষমার অযোগ্য। যারা আমাকে ভালোবেসে, স্নেহ করে অথবা আমাদের দরিদ্র মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের পাশে এমনভাবে দাঁড়ান যা হয়তো তাদের দাড়ানোর কোনোই প্রয়োজন ছিলো না, তবুও দাড়ান। তাহাদের সাথে এরূপ কোন ইচ্ছাকৃত অপরাধ আমাদের সারা জীবনের জন্য এমন মারাত্তক হুমকী হয়ে দারায় যা কোনো কিছুর বিনিময়েও আর আগের অবস্থায় ফিরে পাওয়া সম্ভব না। এই মারাত্তক ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি কেউ ক্ষমাও করে দেন, তারপরেও বিশ্বাসের যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা দগদগে ঘায়ের থেকেও বেশী। তখন তাদের প্রতিনিয়ত মনে হবে, এই মানুষ উপকারের কথা বুঝে না অথবা সে নির্বোধ অথবা সে উপকারীর জন্য অনেক হুমকীস্বরূপ। এই বিবেচনায় কোনো হিতৈষী যদি আমাদের পাশ থেকে নিঃশব্দে সরে যায়, তাকে আর কোনো কিছুর শপথের মাধ্যমেও আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা যায় না। তখন যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, নিজের উপর নিজের রাগ, অভিমান আর কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধ। এই সময় যা হয়, তা হচ্ছে, হতাশা ক্রমশ বাড়তে থাকে, আর এই হতাশা যখন বাড়ে, তাহার সাথে বাড়ে দুশ্চিন্তা। দুসচিন্তা থেকে জন্ম নেয় নিজের উপর নিজেকে ঘৃণা। আর একবার যখন নিজেকে নিজে ঘৃণা করতে কেউ শুরু করে, তখন তার আর বেচে থাকার কোনো লোভ থাকে না। চারিপাশের কোনো মানুষকেই আর ভালো লাগে না, নীল আকাশ ভালো লাগে না, রংগীন আলো ঝলমলের শহরকে তখন বড় অচেনা মনে হয়। মানুষ তখন আত্মহননের দিকে ঝুকে যায়। অথবা সে এমন পথ বেছে নেয়, যা সমাজের চোখে বড়ই অসুন্দর আর কুৎসিত। সব কুতসিত জীবনের কাহিনী প্রায় একই। কোনো না কোন সময়ে তাদের সুযোগ এসেছিলো কিন্তু তারা না বুঝবার কারনে সে সুন্দর জীবন হাতছাড়া করেছে। পাপ কাজ করে কেউ কখনো বড় হতে পারে নাই, আর হয়ও না। তাদের হয়তো টাকার পাহাড় থাকতে পারে কিন্তু তাদের জন্য সমাজ দুঃখবোধও করে না। তারা সারাজীবন সমাজের একটা কালো মানুষ হিসাবেই বেচে থাকে।

স্যার, আমি এই মুহুর্তে ঠিক সে রকম একটা কাল পার করছি। টাকাগুলি আমার কোনো কাজে লাগে নাই। মদ খেতে খেতে কখন বেহুস ছিলাম বুঝি নাই, যখন হুস হয়েছে, দেখলাম সবগুলি টাকা আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে। কে নিয়েছে, কখন নিয়েছে সেই জ্ঞানটুকুও আমার ছিলো না। আমি আপনার থেকে এখন অনেক দূরে। পরিচিতজন মানুষের আশেপাশেও আমি নাই। ড্রাইভিং চাকুরী করতে পারতাম, কিন্তু করতে সাহস করি নাই। কখন আবার আমি আপনার সামনে পড়ে যাই, তাই। প্রতিটা ক্ষন আমি পালিয়ে পালিয়ে থেকেছি। কখনো ক্ষুধা পেটে কোনো এক পরিত্যাক্ত বিল্ডিং এর মশাদের সাথে, কখনো কোনো গাজার আসরে, কখনো একেবারে একা কোনো এক নদীর ধারে সময় কাটিয়েছি। এমন কোনো একটা মুহুর্ত আমার যায়নি, যখন আপনার কথা আমার মনে পড়ে নাই। বারবার ভেবেছি- কি দরকার ছিলো এমনটা করার? যখন যা চেয়েছি, আপনার কাছ থেকে আমি পাইনি এমন ছিলো না। তারপরেও আমার এমনটা করার কোনো দরকার ছিলো না।

চিঠিটা পড়তে পড়তে আমারো খুব খারাপ লাগছিলো। অনেক বড় চিঠি। সব কিছু এখানে হয়তো লিখা সম্ভব নয়। ১৯ পাতার কিছু অংশে এসে আমি একদম নিসচুপ হয়ে গেলাম। রুস্তম লিখেছে-

স্যার, এ কয়দিন বারবার শুধু একটা কথাই আমার মনে হয়েছে। যখন আপনি গাড়িতে উঠতেন, প্রথমেই জিজ্ঞেস করতেন, আমি খেয়েছি কিনা। আজ অবধি কেউ আমাকে এ কথাটা কেউ কখনো জিজ্ঞেস করে নাই। আজ প্রায় ৩ দিনের উপরে পার হয়ে গেছে, আমি একটি দানাও খাই নাই। মুখ ভর্তি দাড়ি, গোসলের কনো জায়গা নাই, এলোমেলো মাথার চুল, নোংরা আমার জামা। আমার সাথে রাস্তার পাগলের মধ্যে কোনো তফাত নাই। যখন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিতাম, বলতেন- বাসায় গিয়ে রেষ্ট করো, সকালে নাস্তা খেয়ে চলে এসো। আজ আমাকে কেউ বলে না- সকালে চলে এসো। অথচ মনের ভিতরে অদম্য ইচ্ছা, যদি আবার আপনার কাছে চলে আসতে পারতাম? কোথাও আমার কেউ নাই। সম্ভবত আপ্নিই ছিলেন আমার সবচেয়ে কাছের একজন মানুষ যাকে আমি ভালোবাসতাম, আবদার করতাম, জিদ করতাম কিন্তু খুব পছন্দও করতাম। আপনার মেয়েরাও আমাকে খুব সম্মান করতো। কখনো ওরা আমাকে ড্রাইভার হিসাবে দেখে নাই। কি লক্ষী মেয়েগুলি। আংগকেল ছাড়া কখনো ডাকতো না। আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে- ইশ, যদি আবার ফিরে আসতে পারতাম!! কিন্তু আমার মনের সাহস নাই, শরীরে বল নাই, আর আপনার সামনে দাড়াবার আমার কোনো জায়গাও নাই। এ কয়দিন মাথায় শুধু একটা জিনিষ ঘুরপাক খাচ্ছে- কি লাভ এ জীবন রেখে? কিন্তু মরার জন্যেও কিছু উপকরন লাগে। ফাসি দিতে হলে দড়ি লাগে, বিষ পান করে মরতে হলে বিষ কিনতে হয়, কিন্তু আমার কাছে বিষ কেনার ও পয়সা নাই। আর সাতার জানা মানুষ নদীতে ঝাপ দিলেও মরে না।

আমি রুস্তমের চিঠিটা পড়ছি, আর খুব ভয় পাচ্ছিলাম। রুস্তম তার চিঠির ২১ পাতায় লিখেছে-

জীবনকে ভালোবাসবার অনেক নাম আছে। কখনো এর নাম চেলেঞ্জ, কখনো এর নাম সততা আবার কখনো এর নাম বিশ্বাস। স্যার,  সব হাসিই হাসি নয়। যেদিন আমি টাকাটা নিয়ে পালিয়েছিলাম, সেদিন আমি হেসেছিলাম আনন্দে। অথচ আজ আমি কাদতেছি কেনো আমি টাকাটা নিয়ে পালালাম। আসলে আমার এই কান্না কান্না নয়। এই কান্নার নাম হয়তো ভয়। আর সব ভয়ের চেহারা এক। যার নাম- আতঙ্ক। এই আতংকে মানুষ অসুস্থ হয়, মানুষের রুচী কমে যায়, এক সময় দেহ দেহ মন দুটুই ভেংগে যায়। দেহ ভাঙ্গার সাথে সাথে মানুষ মানসিকভাবে দূর্বল হয়, এক সময় পানির অভাবে যেমন কচি গাছের মরন হয়, তেমনি এই আতংকগ্রস্থ মানুষগুলিও মৃত্যু বরন করে। তাদের জন্য কেউ আর পিছনে তাকায় না। খুব কষ্ট আর ব্যথা নিয়ে স্যার আমি চলে যাচ্ছি। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। এর গাছ পালা, আকাশ, নদী, পাহাড় সব সুন্দর। সবচেয়ে সুন্দর ছিলেন স্যার আপনি। আমি আপনাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসবো। খুব বাচতে ইচ্ছে করছিলো স্যার কিন্তু যারা সাহসী নয়, তাদের বেচে থাকবার কোনো প্রয়োজন নাই এই পৃথিবীতে। আমি আসতে চেয়েছিলাম আবার আপনার কাছে কিন্তু সম্ভব হলো না। যদি কখনো পারেন- আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। যেদিন আপনি চিঠিটা পাবেন, সেদিন হয়তো আমি আর বেচে নেই স্যার। কিন্তু একটা কথা বলে যাই, আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সাহস কম, তাই আর বাচতে পারলাম না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। যে তিন লাখ টাকায় আমার এতো হিসাব ছিলো, জীবন সুখের হবে, নিজের গাড়ি হবে, অনেক টাকা হবে, সেই তিন লাখ টাকাই আসলে আমার জীবন একেবারে পালটে দিলো। আপনার সাথে আমার জীবনটা তো ভালোই ছিলো। বিশ্বাস করেন স্যার, আজ ঠিক মৃত্যুর আগ মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আমি একটা জিনিষ শিখে গেলাম, জীবনে সব মানুষের সাথে ছল চাতুড়ি করতে হয় না, এই দুনিয়ায় টাকাই সব নয়। আপনার মতো এমন একটা মানুষের পাশে শুধু থাকলেই হতো। বট বৃক্ষের মতো ছিলেন।

------------------------------------------------------------------------------------

চোখ দিয়ে কখন যে পানি পড়ছিলো, বুঝি নাই। আমিও রুস্তমকে স্নেহ করতাম, ভালোবাসতাম। কিন্তু ওকি একবার সাহস করে আবার ফিরে আসতে পারতো না? আমি ওর শেষ ঠিকানাটা জানলে হয়তো নিজেই ডেকে নিতাম। ভুল তো মানুষ করেই। কিন্তু সেটা জীবন দিয়ে মাশুল দেয়ার মতো শাস্তিতে নয়।

 

(আমি রুস্তমের চিঠিটা ছিড়ে ফেলিনি। আজ আমার সব পরিত্যাক্ত কাগজপত্র ড্রয়ার থেকে পরিষ্কার করতে গিয়ে রুস্তমের সেই ২২ পাতার চিঠিটাও পেলাম। সেটা আজ আমি ছিড়ে ফেললাম।)

 

০৯/০৯/২০২১-১০০ বছর পর আগামীকাল

আজ থেকে ১০০ বছর পর ঠিক এই সময়ে যারা বেচে আছি আমরা, তাদের প্রায় শতভাগ মানুষ আর এই পৃথিবীতেই থাকবো না। হয়তো খুবই নগন্য কিছু সৌভাগ্যবান অথবা অন্য অর্থে দূর্ভাগ্যবানও বলা যেতে পারে, তারা বার্ধক্যের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্ষীনদৃষ্টি আর দূর্বল শরীর নিয়ে হয়তো এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন যা তিনি কখনো চান নাই। যার নাম ‘মৃত্যু’।

ক্যালেন্ডারের পাতা প্রতিদিন পালটে যাবে, তাঁর সাথে সাথে পালটে যাবে তারিখ, মাস, বছর এবং অতঃপর যুগ। কেউ এটাকে আমরা থামাতে পারি না, পারবোও না। আর কেউ পারেও নাই। হোক সে কোনো প্রতাপশালী সেনাপতি, হোক সে চৌকস কোনো রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক। শুধু তাই নয়, কোনো বিজ্ঞান কিংবা কোনো বিজ্ঞানিক, কোনো সর্বোচ্চ পদধারী ধার্মিক নেতা কিংবা দূধর্ষ সাহসী সন্ত্রাসী কেউ এই অমোঘ প্রাকৃতিক নিয়মটাকে উপেক্ষা করে অগোচরেও পরিবর্তন করার কোনো ক্ষমতা রাখে না।

আজ যারা পথে ঘাটে আমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে, তাদের কেউ হয়তো কোট টাই, কেউ হয়তো আধুনিক পোষাক আষাকে, কেউ আবার ফুটপাতে নোংরা চুলে আছেন, আমি তাদের অনেককেই হয়তো চিনিও না আবার হয়তো কাউকে কাউকে আমরা সর্বদাই দেখি, চিনি, এদের কেউও এই নিয়ম থেকে পরিত্রান পাবে না। মহাশ্মশানের সারিসারি পাথরে নাম লেখা কোনো এক নাম ফলকের মধ্যেই আমরা লুকিয়ে যাবো ঠিক সেইস্থানে যার কথা আমরা আজ ভাবতেও পারি না। সেখানে যেমন কোনো আধুনিক পোষাক বলতে কিছু থাকে না, আর না থাকে কোনো ধার্মিক ব্যক্তির আলখেল্লাটাও। অনেকের বেলায় হয়তো সেই নামফলকটাও থাকবে না। কোথায় আছেন তারা, কার জায়গায় আছেন তাঁরও কোনো হদিস হয়তো পাওয়া যাবে না। আজ যে শরীরটাকে প্রতিদিন নোংরা মনে করে দেশী বিদেশী সাবান শ্যাম্পু দিয়ে সুগন্ধী মাখছি, তখন এই শরীরের মধ্যে হাজারো পোকা মাকড়, কর্দমাক্ত মাটি, নোনা জল, অপরিষ্কার জলের সাথে ভেসে আসা দূর্গন্ধময় আবর্জনায় সারাটা শরীর ভেসে গেলেও তাকে আর সুগন্ধী কেনো, সরানোর মতোও আমাদের কোনো শক্তি থাকবে না। শরীরে মাংশ পচে গলে মিশে যাবে মাটির সাথে, হয়তো কোনো এক কুকুর কিংবা শিয়াল আমাদের শরীরের হাড্ডিটি নিয়ে দূরে কোথাও অবশিষ্ঠ মাংশটুকু খাওয়ার জন্য দৌড়ে চলে যাবে অন্যত্র। কার সেই কংকাল, কার সেই হাড্ডি, এই পৃথিবীর কোনো জীবন্ত মানুষের কাছে এর কোনো মুল্য নাই।

যে ঘরটায় আমি সারাদিনের ক্লান্তি শেষে অবসাদ শরীর নিয়ে মুলায়েম বিছানায় গা হেলিয়ে দিতাম, সেই ঘরটা হয়তো থাকবে অন্য কার দখলে। যে বাগানটায় আমি প্রায়ই পায়চারী করে করে আকাশ দেখতাম, গাছ গাছালীর মধ্যে উড়ে আসা ভ্রমর কিংবা পোকামাকড় দেখতাম, সেই বাগানের দখল হয়তো এখন কার দখলে কে জানে। বাগানের গাছ গাছালীর পরিচর্যার নামে যে পোকামাকড়গুলিকে আমি বিষ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করতাম, আমি আজ তাদের দখলে।

যে বাচ্চাদের মুখরীত কোলাহলে আমার ঘর ভরে থাকতো, যাদের আগমনে আমার মন পুলকিত হতো, আজ সেখানে অন্য কেউ মুখরীত হচ্ছে। কতই না সাবধানতায় আগলে রেখেছি সেই ঘর, সেই লন, কিংবা আমার যতো আয়েশী জিনিষ, আজ সেগুলি আমার কিছুই নয়। আমার সুন্দুরী স্ত্রী যখন তাঁর লাল শাড়িটা পরার পর কিংবা আমিই যখন নতুন কোনো একটা ড্রেস পড়ে বারবার আয়নার সামনে গিয়ে কতবার না দেখতে চেয়েছি-কেমন লাগে আমাকে, অথচ আজ সেই আমি বা আমার সেই সুন্দুরী স্ত্রী তাঁর চেহাড়া কেমন দেখায় কাফনের সেই ধবল পোষাকে সেটা দেখার কোনো পায়তারা নাই। সেই বৃহৎ আয়নাটার আর কোনো মুল্য নাই আমার কাছে। হয়তো সেখানে অন্য কেউ এখন তাঁর চেহাড়া দেখছে, হয়তো লাল শাড়ির পরিবর্তে নীল বা টাই কোট পড়া পোষাকের বদলে একটা ভেষ্ট পড়া ব্যাকব্রাস চুলের মহড়া দিচ্ছে। যে গাড়িটা প্রতিদিন আমাকে মাইলকে মাইল ঠান্ডা কিংবা শীততাপ হাওয়ায় বসিয়ে, মিষ্টি মিষ্টি গান শুনিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে গেছে, সেটা আর আমার কোনো প্রয়োজন নাই। না সে আমাকে আর খোজে।

কখন কোথায় কাকে কাকে নিয়ে অথবা আমার নায়নাতকুর আত্তীয় স্বজন স্ত্রী পোলাপান নিয়ে কবে কোথায় কি আনন্দে মেতেছিলাম, সেই ইতিহাস আর কেউ কখনো মনে রাখবে না। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কতটা পথ হেটেছিলাম, আর সেই হাটা পথে আমি কতটুকু ঘাম ঝরিয়ে চূড়ায় উঠে কি তৃপ্তি পেয়ে কি আনন্দে কতটুকু আত্তহারা হয়েছিলাম, সেই তথ্য না কেউ জানবে, না কেউ জানার কোনো আগ্রহ দেখাবে। কার সাথে কি নিয়ে আমার মনোমালিন্য হয়েছিলো, বা কে আমাকে কতটুকু ভালোবেসে কি অবদান দিয়েছিলো অথবা কার কোন আগ্রহে আমি কোথায় কি করেছিলাম, কার কারনে আমার অন্তরে জালা উঠেছিলো আর কার কারনে আমার দিন আর রাত একহয়ে গিয়েছিলো, সেই ইতিহাসের কোনো মুল্য আজ বেচে থাকা মানুষগুলির কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। না তাদের যাদের জন্য এসব ঘটনা ঘটেছে। নতুন প্রজন্ম নতুন পরিবেশ, নতুন সব কাহিনীতে ভরে থাকবে বর্তমান আর আমাদের সেই পুরাতন প্রজন্ম, কিংবা সেই তাদের পুরাতন পরিবেশের কোনো স্থান থাকবে না আজকের এই পরিবর্তীত বন্ধুমহল পরিবেশে। হয়তো কোনো এক ছোট বালিকা আমাদের কথা শুনে, অথবা ভালোবেসে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে আমার সেই সমাধিতে দাঁড়িয়ে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে দাঁড়িয়ে পুষ্প স্তবক দিয়ে চলে যাবে। হয়তো সবার বেলায় এটা নাও হতে পারে। কিংবা জন্ম জন্মান্তরের শেষে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শেষে আমি এমন করে বিলীন হয়ে যাবো যে, সেই অবুজ বালিকার পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো আর একটা বাশী ফুলও নিয়ে আমার সেই সমাধিতে দাঁড়াবে না। কারন আমি তাদের কোনো ইতিহাসের মধ্যেই নাই। চিরতরেই বিলীন।

আজ যে সেলফীটা কত যত্ন করে তোলা হয়েছে, হাসি মাখা মুখ, চুলের বাহার, পোষাকের পরিপাটিতা সব কিছু ধীরে ধীরে সেই শতবর্ষ পরে এমন করে মলিন হয়ে যাবে, হয়তো দেখা যাবে, সেই ছবি পরে আছে এমন এক কোনায় যেখানে থাকে পরিত্যাক্ত কোনো কাগজ বা ময়লার বাক্স। কোনো একদিন সেটা হয়তো অপ্রয়োজনীয় হয়েই বেরিয়ে যাবে আমার সেই শখের ঘরের দরজা পেরিয়ে।

যে অর্থের জন্য আমি প্রতিদিন সারাটা সময় শুধু পরিশ্রমই করে গেছি, সেই অর্থ আজ আমার কোনো কাজেই আসবে না। শতবছর পরে তো আমার অর্থে গড়া কোনো এক ইমারতের কোনো একটা ইটের মধ্যেও আমার কোনো নাম বা অস্তিত্ব থাকবে না। হোক সেটা আমার পরিশ্রমে গড়া কিংবা আমার নিজের। সেখানে হাত বদলে বদলে আমার অস্তিত্তের শেষ পেরেগটুকু মেরে সেখানে হয়তো কোনো এক লোকের নাম লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। যেটা আজ আমার নামে পরিচিত, শত বছর পর সেটা আমার আর নাই, না সেটা আমার নামেও অহংকার করে।

কি অদ্ভুত না?

শত বছরের হিসাবে যেমন আমি আর নাই, হাজার বছরের হিসাবে তো আমি কখনো ছিলামই না। তারপরেও আজ আমি অনেক ব্যস্ততায় দিন কাটাই আগামিকালের জন্য। অথচ আগামিকালটাই আমার না। এই পৃথিবী আমাকে কখনোই মনে রাখবে না। কারন সে আমাকে ভালোই বাসে নাই। অথচ আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম আমার জীবনের থেকেও বেশী। আর এটাই এই পৃথিবী। এই পৃথিবীর কোনো বর্ষাই আমার না, কোনো শরতই আমার না। এর গাছ পালা, এর নীলাকাশ, এর সুগভীর সমুদ্র কিংবা ঘনসবুজ পাহাড় কোনো কিছুই আমার না। আমার ঘরটাও।

শতবছর পরে, আমি এক অচেনা, নামহীন, অস্তিত্বহীন মানুষ যে আজকের দিনে বহু ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটিয়ে কিছুটা সময় এই নীল আকাশ, ঘন সবুজ পাহাড় অথবা পাখীদের কিচির মিচির শুনেছিলাম।

১৭/০৮/২০২১-রেহালাদের গল্প

রেহালার গল্প

সাহস ছাড়া মানুষ স্বাধীন হতে পারে না, আর স্বাধীনতা ছাড়া মানুষ জীবিত নয়।

একদমই ভাবী নাই যে আজকে আমার অফিসে এমন কেউ আসবে যাকে আমি একসময় চিনতাম কিন্তু গত ৪০ বছরের মধ্যে আর কখনোই দেখা হয় নাই। ওর নাম ‘রেহালা (এটা একটা ছদ্দনাম, আসল নামটা উল্লেখ করলাম না’)। আমি আর রেহালা একই ক্লাশে পড়তাম সেই প্রাইমারী স্কুলসহ হাইস্কুলে। এরপর আমি হাইস্কুল ছেড়ে অন্য কলেজে চলে আসলাম, আর ওরা গ্রামেই রয়ে গেলো। এতো সুকন্ঠী ছিলো এই রেহালা যে, আমরা ওর গান শুনতাম যেখানে সেখানে, দলবেধে। স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানে কখনো কখনো রেহালার একক সঙ্গীত পর্যন্ত হতো। খালী কন্ঠেও যে গানের একটা মূর্ছনা আছে, সেটা রেহালার গান শুনলে বুঝা যেত। আর যদি রেহালার রূপের কথা বলি, সেটা আরেক বর্ননা। ওর গায়ের রঙ শ্যামলা, একদম ডায়মন্ডের মতো, চোখগুলি বড় বড়, ঠোটে সবসময় একটা হাসি লেগেই থাকতো। রেহালা হাসলে গালে একটা টোল পড়তো। সম্ভবত এই টোল পড়া গালের জন্যই রেহালার হাসিতে একটা আলাদা মাধুর্য ছিলো। বড্ড মিষ্টি ছিলো রেহালার হাসি। ছিমছাম শরীর, আমাদের সাথে গোল্লাছূট, দাড়িয়াবান্দা, মাঝে মাঝে কাবাডিও খেলতো রেহালা। রেহালাকে কাবাডি খেলায় কুকুপাত করলে ইচ্ছামতো মাথায় চুল ধরে ঝাকুনো মারতো। এক সাথে আমরা গ্রামে বড় হয়েছি, পাশাপাশি বাড়ি ছিলো আমাদের। নদীতে ঝাপ দিতাম এক সাথে, আর অন্যের গাছে উঠে পেয়ারা চুরির সময় রেহালা থাকতো লুক আউটম্যানের মতো। যেই না গাছের মালিকের আসার সময় হতো, রেহালা নিরুদ্দেশ, আর আমরা গাছের মধ্যে নিশ্চুপ। বড্ড মজার দিন ছিলো সে ছোটবেলাটা। সেই রেহালা আজ হটাত করেই আমার অফিসে এসে হাজির।

প্রথমে তো আমি রেহালাকে চিনতেই পারিনি। ওর শরীর অনেক মোটা হয়ে গেছে, রেহালা আগেই শ্যামলা ছিলো, আর এখন ওর চেহারা এতো কালো হয়ে গেছে যে, আগের আর সেই ডায়মন্ডের মতো চেহারাটা নাই। মাথায় চুলে পাক ধরেছে। কতই বা বয়স, তারপরেও মনে হচ্ছে বুড়ি হয়ে গেছে রেহালা। কিন্তু হাসলে ওর গালে এখনো টোল পড়ে। চোখ গুলি এখনো ডাগর ডাগর। কন্ঠে আর সেই সুর এখন নাই রেহালার। রেহালা আমার অফিসে একা আসে নাই। ওর সাথে ওর ছোট বোন এসেছে। ওর ছোট বোন কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বল্লো যে, বুজি (মানে আপা) কানে শুনে না। অনেক জোরে জোরে কথা বললে কিছুটা শুনতে পায়। যেহেতু কানে শুনে না, তাই, অন্যের কথাও বুজি ভালোমতো শুনতে না পাওয়ায় কি কথা বলছে কেউ বুঝতে পারে না। তাই সাহাজ্যকারী হিসাবে বুজি কোথাও গেলে আমিই সাথে যাই।

রেহালা আমার অফিসে বসেই কিছুক্ষন যেনো হাপিয়ে উঠেছিলো। রেহালার প্রথম কয়েক মিনিটের কথার অর্থ এমন ছিলো যে, এতোদিন পর রেহালা আমার সাথে দেখা হওয়ায় যেনো সেই ছোট বেলার রাজ্যের গল্পের পশরা নিয়ে হাজির হয়েছে। ওর বলার উচ্ছাস, মুখের অভিব্যক্তি আর অনর্গল কথার মধ্যেই আমি বুঝতে পারছিলাম রেহালা আজ অনেক অনেক খুসি যে, সে আমার সাথে দেখা হয়েছে। কখনো দুই হাত তুলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে, কখনো নিজের অজান্তেই কি যেনো দোয়া দরুদ পাঠ করছে আবার কোনো কারন ছাড়াই হেসে দিচ্ছে। ঝির ঝির বাতাসে তরু পল্লব কিংবা ক্ষেতের দন্ডায়মান ফসলরাজী যেমন হেলিয়া দুলিয়া এদের মনের সুখ প্রকাশ করে, নির্মল নীলাকাশ যেমন তার একখন্ড মেঘের ভেলাকে এদিক থেকে সেদিকে উড়াইয়া লইয়া যায়, রেহেলা তেমনি আমাকে এতো বছর পর পেয়ে যেনো তার সেই দশাই হলো।  রেহালা মাথার বোরখাটা খুলে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিলো। রেহালার আগমনে আমার অফিসে কোনরূপ সমারোহ ছিলো না, কিন্তু আজিকার এই মুহুর্তে সমস্ত বিশ্ব ব্যাপারের সর্বাধিনায়িকা যেনো এই রেহালাই হয়ে দাড়াল। রেহালার এমন উচ্ছাসিত আচরনে আমার যেনো বিস্ময়ের কোনো শেষ ছিলো না।

এখানে আরো একটা ব্যাপার আমাকে রেহালা বিস্মিত করলো। রেহালা ছোটবেলায় আমাকে ‘তুই’ বলেই ডাকতো, কিন্তু আজকে খেয়াল করলাম, রেহালা আমাকে আর তুই; বলছে না, কাকা বলে ‘আপনি’ সম্মোধন করছে। গ্রামের সম্পর্কের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে রেহালার সাথে আমার কাকা ভাতিজারই সম্পর্ক। কিন্তু এই সম্পর্ক কিসের ভিত্তিতে সেটা আমার ছোট বেলায়ও জানা ছিলো না, আজ তো সেটা জানার কোনো ইচ্ছাও নাই। আমি রেহালার বাবাকে ‘ভাই’ বলেই ডাকতাম সেটা আমার মনে আছে। আমি রেহালাকে বললাম যে, সে যেনো আমাকে “তুই বা তুমি” করেই বলে।

আমি জানি রেহালার বাবা এবং অন্যান্য ভাই বোনেরা এখনো জীবিত আছে। আর তারা মাঝে মাঝেই আমার অফিসে কিছু না কিছু সাহাজ্য বা পরামর্শের জন্য আসে। কখনো তাদের সাথে আমার দেখা হয়, আবার কখনো কখনো দেখা হয়ও না। ফলে আমি রেহালাকে ওদের ব্যাপারে কোনো প্রশ্নও করতে চাইনি। একমাত্র রেহালার ব্যাপারেই আমার অনেক কিছু জানা ছিলো না। তাই প্রথমেই রেহালাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, রেহালা কেমন আছে। রেহালা কি শুনলো আর কি বুঝলো আমি জানি না কিন্তু রেহালা বলতে থাকে-

কাকা, তোমারে কতবার যে আমি দেখতে চাইছি মনে মনে, আর আফসোস করছি, ইশ যদি মরার আগে তোমার সাথে আমার একবার দেখা হতো। অনেকের কাছেই আমি তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছি, তুমি কই থাকো, কিংবা কোথায় গেলে তোমাকে পাওয়া যাবে ইত্যাদি কিন্তু কেউ আমাকে তোমার আসল ঠিকানাটা দিতে পারে নাই। শুধু এটুকু জানতাম যে, তুমি এই এলাকাতেই বড় ব্যবসা নাকি করো। একবার শুনেছিলাম, তুমি নাকি গ্রামে গেছো। আমি তখন গ্রামেই ছিলাম। কিন্তু আমি লজ্জায় তোমার সাথে দেখা করার সাহস করি নাই। সেটাও আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগের কথা। তখন সবেমাত্র আমি আমার জামাইয়েরে নিজের ইচ্ছায় তালাক দিছি। গ্রামে একজন মহিলার সংসার ভেংগেছে, তালাক হয়েছে এটা যে কত বড় কেলেংকারী, সেটা মেয়ে না হলে আসলে কেউ বুঝতে পারে না। 

আমি রেহালাকে জিজ্ঞেস করলাম, স্বামীকে তালাক দিলি কেনো?

রেহালা সহজেই আমার প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছিলো। রেহেলা অনেকক্ষন মাথা নীচু করে কি যেনো ভাবলো। দেখলাম, রেহেলা কাদছে। তাঁর ফুপিয়ে কান্নার একটা শব্দ পেলাম। আমি রেহেলাকে কিছুই বললাম না। রেহেলাকে আমি সময় দিলাম, রেহেলা কাদছে। তারপর টেবিলে রাখা একটি গ্লাস থেকে কয়েক ঢোক পানি গিলে বলতে লাগলো-

কাকা, একটা কথা কি জানেন? বিয়ের সময় খুসি আর ভালোবাসায় এটা প্রমানিত হয় না যে, ভবিষ্যতে এই সুম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা বা ঘৃণা আসবে না। মধুর ভালবাসা যেমন একদিন ঘৃণার বিষে রুপান্তরীত হতে পারে, আবার গভীর ঘৃণাও হয়তো সমস্ত বাধা কাটিয়ে পুনরায় চরম ভালোবাসায় পরিনত হতে পারে। কিন্তু কখনো যদি ভালোবাসার মধ্যে ঘৃণা ঢুকে পড়ে, তিক্ততার সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন যে এখন এই সম্পর্ককে শেষ করা উচিত। বুঝে শুনে বেরিয়ে আসা উচিত। যাতে তার আগে কোনো মারাত্তক অঘটন না ঘটে। কিন্তু আফসোস, প্রায়ই তিক্ত সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনা। হোক সেটা সমাজের তথাকথিত লোক লজ্জার ভয়ে অথবা অভিভাবকের অতিরিক্ত চাপের কারনে। তখন এমন হয় যে, সেই দম্পতির যে একদিন ভালোবেসে যারা খুব কাছে এসেছিলো, তারা আজ সম্পর্কের তিক্ততায় একজন আরেকজনকে চাকু, বন্ধুক চালাতে পিছপা হয়না। তখন একজন আরেকজনের প্রান নিতেও দ্বিধাবোধ করেনা অথচ কোনো একদিন তারা তাদেরকে নিজেদের মানুষই ভাবতো। বিয়েটা হয়তো সত্যিই একটা কন্ট্রাক্ট। আর সেই কন্ট্রাক্টের মধ্যে নিহীত থাকে অনেক দায়িত্ব, অনেক কর্ম পরিধি। 

রাহেলার এমন জীবনভিত্তিক কথায় আমিও খুব অবাক হলাম। রাহেলা কি সুন্দর করে তাঁর জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা এক নিমিষে বলে গেলো। অনেক পড়াশুনা হয়তো রাহেল করে নাই কিন্তু ওর কথাবার্তা যেনো আমার অন্তরে তীরের মতো বিধে গেলো। আমি রাহেলার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম।

 রাহেলা বলতে থাকলো-

সেদিন সম্ভবত গুড়িগুড়ি বৃষ্টির দিন ছিলো। আমার স্বামী আমারে বল্লো, চলো, নারায়নগঞ্জ আমার এক বন্ধুর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি। আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসে কিনা তা আমি কখনো বুঝি নাই। বিয়ের পর থেকে যে শ্বশুর বাড়িতে ঢূকেছি, সারাক্ষন স্বামী, সংসার, ছেলে মেয়ে ননদ ননদীনির দায়িত্ব পালন করতে করতেই আমার দিন পার হতো। আর এসব দায়িত্ব পালনে কোথাও কোনো ত্রুটি হলেই আমার উপরে চলতো খড়গের মতো আচরন। আমার স্বামী নেশা করতো। বিয়ের আগে নেশা করতো কিনা জানি না, কিন্তু বিয়ের কদিন পরেই বুঝলাম, সে প্রায় রাতেই নেশা করে ঘরে ফিরে। কি তাঁর দুঃখ, কি তাঁর কষ্ট কখনো সেটা আমি বুঝতে পারি নাই। ফলে, সুযোগ আর কোনো ব্যত্যয় কিংবা তাঁর নেশার জগতে একটু ভাটা পড়লেই কারনে অকারনে আমাকে মারধোর করতো। সেই মারধোরের কারনেই আমি আমার কান হারাই। মার খেতে খেতে কানটা একদিন অকেজোই হয়ে গেলো। গরীব বাবা মা, পয়সাকড়ি নাই, যৌতুক যা দেয়ার সেটা দেয়ার পরেও জামাইয়ের মন ভরে নাই। দিনের পর দিন এই অতিরিক্ত যৌতুক আর টাকার জন্য আমাকে মার খেতে হয়েছে। ঘরে ভালোমতো বাজার হয় না, অথচ কেনো ভালোমতো রান্না হয় না সেটা যেনো আমার অপরাধ। সহ্য করে থেকেছি। মুখ বন্ধ করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না। গরীব পিতামাতার সন্তানেরা নাকি “আগুনে পানি দিয়ে” সংসার করে। আমিও তাই করার চেষ্টা করেছি। যাই হোক, যখন আমার জামাই আমাকে বল্লো, চলো এক বন্ধুর বাসায় বেড়াইয়া আসি, ভাবলাম, হয়তো মনটা তাঁর পরিবর্তন হয়েছে। আমারো মনটা ভালো হয়ে গেলো। আনন্দিতই হয়েছিলাম। কারন যে কখনো আমাকে পাশের দোকানে নিয়ে একটা চকলেটও কিনে খাওয়ায় নাই। আজ তার এহেনো অনুরোধে বেশ পুলকিত বোধ করছিলাম। বললাম, চলেন যাই।

আমি আর আমার স্বামী বিকাল ৫টার পরে কাপড় চোপড় পড়ে নারায়নগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেলাম। আমাদের বাড়ি থেকে নারায়নগঞ্জ খুব বেশী দূরে না। ফলে সন্ধ্যার আগেই আমরা ওর বন্ধুর বাসায় চলে এলাম। রাতের খাবার খেয়ে হয়তো আমরা আবার আমাদের বাড়িতে ফিরে আসবো এটাই ছিলো আমার জানা। আমি আমার ছোট ছেলেকে সাথে নিতে চাইলাম। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে নিতে বারন করলেন। ভাবলাম, ভালোই হবে, আমরা নীরিবিলি দুজনে একসাথে রিক্সায় ঘুরতে পারবো। পাশাপাশি বসে গল্প করতে পারবো। সময়টা ভালোই কাটবে। আমরা যখন তাঁর বন্ধুর বাড়িতে পৌঁছলাম, তখন সন্ধ্যার একটু আগে। তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখি, বন্ধুর স্ত্রী বাসায় নাই। শুনলাম ছোট বাচ্চাকে নিয়ে নাকি সন্ধ্যার পর আসবে, হয়তো কোথাও কাজে গেছে। চা খেলাম, সাথে কিছু ফলমুলাদি। খারাপ লাগছিলো না। সন্ধার পর হটাত করে আমার স্বামী বাজার থেকে কি জানি আনতে বাইরে যাওয়ার কথা বলে আমাকে একা রেখে চলে গেলেন। একটু ভয় ভয় করছিলো কিন্তু খারাপ কিছু মাথায় আসে নাই। সময় যাচ্ছে, আবারো সময় যাচ্ছে, ঘন্টা, তারপর আরো এক ঘন্টা, কিন্তু আমার স্বামীর ফিরে আসার কোনো লক্ষন দেখলাম না। এদিকে রাত বেশী হয়ে যাচ্ছে, আমি বারবার ওর বন্ধুকে আমার স্বামীর কথা বল্লেও দেখলাম সে খুব একটা কথা আমলে নিচ্ছে না। আমি আমার স্বামীর এই বন্ধুকে আগে থেকে চিনতামও না। রাত প্রায় ১১টার উপরে বেজে গেলো, আমার স্বামীর ফিরে আসার কোনো নামগন্ধও নাই। এবার আমার খুব ভয় করছিলো। জীবনে কোনোদিন শহরেও আসি নাই। আর এখন পুরু একটা অপরিচিত লোকের বাসায় আমি একা। বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চা রেখে এসছি। ওদের জন্য ভীষন দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো।

আমি চারিদিকে কান খারা করে সবকিছু খেয়াল করছিলাম। আমার খুব ভয় লাগছিলো। একটু পরে আমি খেয়াল করলাম, এই বাড়িতে কিছু অপরিচিত লোকের আনাগোনা যেনো বেড়ে গেছে। কেউ কেউ বাইরে ফিসফিস করে যেনো কি কি কথাও বলছে। কেউ কেউ আবার আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেও। বুঝতে পারলাম, তারা হয়তো আমাকে নিয়ে কোনো আলাপ করছে কিন্তু কি আলাপ করছে বুঝতে পারছিলাম না। তখন রাত প্রায় বারোটা বেজে যাচ্ছিলো।

এক সময় ৩০/৩৫ বছর বয়সের একজন পুরুষ আমার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো- কি নাম তোমার? আসো ওই ঘরে যাই। এই বলে পাশে একটা ঘরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম- কে আপনি ভাই? আর আমি ওই ঘরেই বা কেনো যাবো? আমার স্বামী কই? সে এখনো আসছে না কেনো? আমার বাড়ি যাওয়া দরকার। আমার বাচ্চারা একা বাসায়। ওরা হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

আমার কথা শুনে লোকটি পিছনে ফিরে এসে আমাকে সে যা বল্লো, সেটা শুনে তো আমার মাথা খারাপ। আমাকে নাকি আমার স্বামী এখানে দেহ ব্যবসার জন্য বিক্রি করে টাকা নিয়ে চলে গেছে। সে আর ফিরবে না। রাতটা এমনিতেই অন্ধকার ছিলো, লোকটার কথা শুনে এবার যেনো মহাঅন্ধকারের মধ্যে আমাকে আমি মৃত লাশের মতো শ্মশানের মধ্যে দেখতে পেলাম যেখানে আমাকে কিছু জীবন্ত শিয়াল কুকুর তাড়া করছে, অথচ আমার কোনো শক্তি নাই।

আমি চিৎকার করতে লাগলাম, আর বলতে লাগলাম, এটা কি করে সম্ভব? তোমরা আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনো। আমি ওরকম মেয়ে নই যে, তোমরা আমার সাথে এমন আচরন করতে পারো। আমি ভয়ে আরো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে গেলে আমাকে কয়েকজন এসে এমনভাবে জাপটে ধরলো যে, না আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিলো, না আমি কোনোদিকে নড়াচড়া করতে পারছিলাম। কিন্তু আমার চোখ তো আর কোনো কিছুতে বাধা পড়েছিলো না। আমার বাচ্চাদের কথা মনে পড়লো, আমার ছোট ছেলেটা খুব মগা (বোকা), তার কথাই বেশী মনে পড়লো। তার মাত্র ৮ বছর বয়স। সে আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে চায় না। ওকে একা ফেলে এসেছি। ছেলেটা মগা হলেও কখনো আমার হাতছাড়া করতো না। ওর মুখটা ভেসে উঠতেই আমার দুচোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছিলো। আহা রে বাপ, দেখে যা তোর মা কত অসহায় একটা পরিস্থিতিতে ছটফট করছে। তোর অমানুষ বাবা আমাকে কোথায় ফেলে গেলোরে বাবা।

রেহালা কিছুক্ষন চোখ বুজে থাকল, তার দুচোখের পাশ দিয়ে জলের একটা রেখা যেনো অবিরত জল পড়তেই থাকলো। একটু পর আবার রেহালা বলতে থাকল-

জানো কাকা, কোনো কোনো সময় কিছু কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই সব সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। শুধু ভরসার স্থান তৈরির জন্যই নাটক তৈরী করা হয়। আমার স্বামীও আমার সাথে ঠিক এমনই একটা ভরষার স্থান তৈরী করেছিলো। আর সেটা ছিলো নিছক একটা নাটক যা আমি কিছুতেই বুঝতে পারিনি। আমি কি এটাই চেয়েছিলাম? আজ দুপুরে যখন সে আমাকে বেড়াতে নিয়ে আসবে বলে জানালো, আমি তো আমার সমস্ত বিশ্বাস নিয়েই তাঁর সাথে অজানা এক বন্ধুর বাড়িতে রওয়ানা হয়েছিলাম। বিকালটা কত সুন্দর ছিলো। চারিদিকের গাছপালা, আশ পাশের দোকানী, মানুষগুলিকে দেখে তো আমার মন অনেক পুলকিতই ছিলো। তাহলে এই হটাত কি গজব আমার উপর আছড়ে পড়লো? আমি কি কখনো আমার স্বামীকে একটিবারের জন্যেও ভালোবাসিনি? কখনো কি আমি ওর বেদনায় কাতর হই নাই? কখনোই কি ও আমাকে স্নেহ কিংবা ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে নাই? আমি তো আমার জীবনের সবকিছু দিয়ে ওকে ভরষা করেই বাপ মায়ের বাড়ি ছেড়েছিলাম। তাহলে সে এমন নিষ্ঠুর কাজটি কেন আর কিভাবে করতে পারলো? আমি কি ওর বাচ্চার মা নই? আমাকে সে না ভালোবাসুক, ওর বাচ্চাগুলির জন্যেও কি সে আমাকে ছেড়ে দিতে পারতো না? মুখবাধা ঠোট দিয়ে সমস্ত বেদনাগুলি যেনো শুধু গোংগানীর মতোই মনে হচ্ছিলো আমার কাছে। অথচ এই গোংগানির মধ্যে কত যে অস্থিরতা, কত যে আক্ষেপ, কত যে ভালোবাসা আর কষ্ট লুকিয়ে ছিলো তা যেনো আমাকে ঝাপ্টে ধরে রাখা মানুষগুলির কানেই গেলো না।

আমার আল্লাহর কাছে আমি চোখ বন্ধ করে শুধু একটা কথাই প্রার্থনা করলাম, যদি আমি সতীনারী হয়ে থাকি, যদি আমি আমার এক ঈশ্বরকে কখনো কায়মনে ডেকে থাকি, যদি তিনিই হয়ে থাকেন আমার একমাত্র ত্রানকর্তা, যদি আমার প্রভুই হয়ে থাকে সমস্ত বিপদের উদ্ধারকারী, তাহলে আমি আমার সেই একচ্ছত্র প্রভুর কাছে দয়া ভিক্ষা করছি তিনি যেনো আমাকে তাঁর গায়েবী ক্ষমতা দিয়ে এই নরক থেকে বাচিয়ে দেন। হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে কখনো দেখিনি, কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছি, তোমার দরবারে আমি প্রতিদিন মাথা নুইয়েছি, তুমি আমাকে বাচিয়ে দাও ঈশ্বর। লোকগুলি ইতিমধ্যে আমার চিৎকার চেচামেচিতে গন্ডোগোল হতে পারে ভেবে, কিংবা আশেপাশের লোকজন কিছু আচ করতে পারে জেনে আমাকে তাদের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলো। আমার চোখ বন্ধ ছিলো, আর আমি গোল হয়ে মাটিতে নিথর দেহে বসেছিলাম। আর আমার চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছিলো।

তারপর কি হয়েছিলো আমি জানি না। কিন্তু ঐ ৩০/৩৫ বছর বয়সের যুবকটি আমাকে ডেকে বল্লো- এদিকে আসো আমার সাথে। কিন্তু কোনো কথা বলবে না। আমি যা বল্বো, সেটাই করবে। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি একটা পিশাচের পাল্লায় পড়েছো। সে জানতে চাইলো, আমার সাথে কোনো টাকা পয়সা আছে কিনা। আমি লোকটির চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম, এটাও ভাবছিলাম, সে আমার সাথে এবার অন্য কোনো চাল চালছিলো কিনা। কাউকে বিশ্বাস করা কিন্তু ভুল নয়। তবে চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করা একেবারেই ভুল। তাই আমাদের এটা জানা খুব দরকার যে, সামনের মানুষটাকে বিশ্বাস করবো নাকি করবো না।

তাঁর আচার ব্যবহারে আমার কাছে সে রকম মনে হলো না। মনে হলো আসলেই বুঝি তাঁর মাধ্যমে আমার ঈশ্বর আমাকে সাহাজ্য পাঠিয়েছেন। বললাম, আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই। সে আমার কানে কানে চুপিসারে শুধু একটা কথাই বল্লো- আসো, আমি তোমাকে এখান থেকে দ্রুত বের করে দেবো। আমি জানি তুমি খারাপ মেয়ে নও। আমিও তোমার কাছে কোনো শরীরের চাহিদায় আসি নাই। আমি এখানকার একজন এজেন্ট মাত্র। আমাকে আর এর বেশী কিছু জিজ্ঞেস করোনা। আর জিজ্ঞেস করলেও আমি সব কিছুই মিথ্যে বল্বো।

রাহেলা এবার একটু থামলো। সামনে রাখা গ্লাস থেকে সে আরো একবার এক ঢোক পানি পান করলো। রাহেলার চোখে মুখে যেনো এখনো সেই অতীতের ভয়টা স্পষ্ট ফুটে উঠছিলো। মাঝে মাঝে সে শিহরিত হয়ে উঠছিলো। বুঝতে পারছিলাম, রাহেলার সেই ভয়টা এখন আবার যেনো নতুন করে তাঁর সামনে জেগে উঠেছে। রাহেলা তাঁর বোরখার একটা আচল দিয়ে মুখটা মুছে নিলো। দেখলাম, রাহেলা একটু একটু ঘেমে গিয়েছে। আমি আমার রুমের এসিটা অন করে দিয়ে বললাম, তারপর?

কাকা, কিভাবে কি হয়ে গেলো আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। লোকটি আমাকে একশত টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বল্লো, শীঘ্রই এখান থেকে এই দরজা দিয়ে বের হয়ে যাও। আমি পাহারায় আছি। এই গোপন দরজাটা দিয়ে আমরা বিপদের সময় পালিয়ে যাই। এটাকে আমরা কোডে বলি- (রেহালা নামটা মনে করতে পারলো না।)

এতো অন্ধকার রাত, তারপর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, অনিশ্চিত একটা পলায়নে আমি কোথায় যাচ্ছি সেটাও আমি জানি না। এটা কি গরম তেল থেকে লাফিয়ে উনুনে নাকি হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে বাচার তাগিদে নীচে পতন আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তারপরেও আমি সেই দরজা দিয়ে বের হয়েই পাগলের মতো ছুটছিলাম। কোথায় ছুটছিলাম, কোনদিকে ছুটছিলাম আমি নিজেও জানি না। অনেক রাত, রাস্তায় বেশী লোক ছিলো না। আধো আলয় ভরা শহরের রাস্তার কিছু লাইট পোষ্ট এমন করে রাস্তাকে আলকিত করেছিলো যেনো সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে কন এক ভুতুরে পল্লির মতো দেখাচ্ছে। এম্নিতেই মনে আকুন্ঠ ভয়, তারমধ্যে অজানা এক দুসচিন্তা, তার উপরে রাতের এতো ভয়ংকর রুপ। কিছু লোকজন এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা যাচ্ছিলো বটে কিন্তু যারাই ছিলো তারা আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিলো, হয়তো ওরা ভাবছিলো, এতো রাতে আমি দৌড়াচ্ছি কেনো, বা আমি কি পাগল কিনা, অথবা রাতের কোনো চোর কিনা ইত্যাদি। কে কি ভাবলো, আর কে কিভাবে আমার দিকে তাকালো সে ব্যাপারে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। আমি শুধু দৌড়াচ্ছিলাম আর দৌড়াচ্ছিলাম।  অবশেষে আমি একটা পানবিড়ির দোকানে এসে থামলাম। কয়েকটা উঠতি বয়সের ছেলে ওখানে চা খাচ্ছিলো।

আমি হাপাতে হাপাতে বললাম-

বাবারে আমি খুব বিপদে আছি। আমার স্বামী আমাকে বেড়ানোর নাম করে নিয়ে এসে আমাকে খারাপ জায়গায় বিক্রি করে দিতে এসছিলো। আমি পালিয়ে এসছি। আমার বাড়ি, নগরঘাট (নামটা ছদ্দনাম)। আমি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, এই জায়গাটা আমি চিনিও না, আর এখান থেকে আমি আমার গ্রামের বাড়ি কিভাবে যাবো, তাও আমার জানা নাই। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা হয়তো এখন আমার জন্য কান্নাকাটি করছে। তোমরা আমাকে একটু সাহাজ্য করো বাবারা। আমি ওদের এটাও বললাম, আমার কাছে একশত টাকা আছে। আমাকে সাহাজ্য করো তোমরা।

জানো কাকা, আসলে এই দুনিয়ায় নরপিশাচ যেমন আছে, তেমনি ভালো মানুষও আছে। সেদিন আমি বুঝেছিলাম, মানুষ কি আর নরপিশাচ কি। ছেলেগুলি আমার কথা শুনে খুব উত্তেজিত হয়ে গিয়ে বল্লো- কে সে, কই সে। চলেন আমরা ওকে এখন ধরবো। আমি বললাম, কিছুই দরকার নাই বাবারা। তোমরা শুধু আমাকে আমার বাচ্চাদের কাছে দিয়ে চলো। আমি তোমাদের মায়ের মতো, আমি আজিবন তোমাদের জন্য আমার সেই পরম ঈশ্বরের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে দোয়া করবো। আমাকে তোমরা আমার সন্তানের কাছে নিয়ে চলো বাবারা। বলেই আমি দোকানের সামনে ভেজা মাতিতে বসে পড়েছিলাম। আমার পায়ে কন শক্তি ছিলো না, আমার সারা গা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিল, আমার দম প্রায় বন্দ হয়ে এসছিলো। তারপরেও আমার হৃৎপিণ্ড সচল ছিলো, আমার প্রানটা জীবিত ছিলো।  

ছেলেগুলি আমাকে টেনে তুলে দোকানের ঝাপের ভিতর নিয়ে গেলো। সব সন্তানের চেহাড়া মনে হয় একই। বিশেষ করে মায়েরদের জন্য। ওরা আমাকে এক কাপ গরম চা দিল, মাথা মুছার জন্য কয়েকটা পুরান পেপার দিলো। আমি যেনো একটু স্থির হচ্ছিলাম। ছেলেগুলির মধ্যে দুইজনের দুইটা হুন্ডা (বাইক) ছিলো। চা খাওয়ার পর, ওরা একটা হুন্ডায় আমাকে আর আরেকটা হুন্ডায় ওরা তিনজন উঠে আমার বাসার অতি নিকটে ছেড়ে গেলো। যেখানে ওরা আমাকে ছেড়ে গেলো, সেই জায়গাটা আমি চিনতাম। সেখান থেকে আমি অনায়াসেই আমার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি যখন আমার বাড়িতে আসি, তখন রাত বাজে প্রায় আড়াইটা। সব বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেছে শুধু আমার মগা ছেলেটা বারান্দায় বসে আছে। মশার কামড়ে সে জর্জরীত কিন্তু আমাকে না পেয়ে কখন আমি ফিরবো তারজন্যে একাই বাইরের বারান্দায় বসে আছে। বৃষ্টি হচ্ছিলো, ফোটা ফোটা বৃষ্টিতে ছেলেটার সারা শরীরই প্রায় ভেজা। আমি ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাদলাম। আমার ছেলেটা আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো যে, আশেপাশের মানুষগুলি যারা ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো তারাও সজাগ পেয়ে ছুটে এলো। আমি শুধু কাদছি, কিন্তু কেনো কাদছি, কিসের কষ্টে কাদছি, সেটা আর কাউকেই বলতে পারি নাই। কান্নার আহাজারীতে সুর থাকে না, থাকে বেদনা আর কষ্ট যে কষ্টের কোনো নাম নাই, যে কষ্টের রুপ কাউকে দেখানো যায় না। আমি শুধু কেদেই যাচ্ছিলাম। কষ্টটা ছিলো আমার মনের অনেক গভীরে।

অনেকেই অনেক প্রশ্ন করছিলো, এতো রাতে আমি কোথা থেকে এলাম, কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তরও আমার দিতে ইচ্ছে করছিলো না। আমার স্বামী কই, কিংবা সেতো আমার সাথেই সন্ধ্যার দিকে বেরিয়েছিলো, তার হদিস অনেকেই জানতে চাইলেও আমার কোনো কিছুই বলার মতো অবকাশ তো ছিলোই না বলতেও ইচ্ছে করছিলো না। শুধু আমি আমার সেই এক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহকে আকাশের দিকে হাত তুলে বললাম- মহান তুমি, তুমি আছো সর্বদা সবার সাথে, দূর্বলের সাথে, অসহায়ের সাথে। আর তুমি সত্যিই সব পারো মাবুদ। কে বলে ঈশ্বর নাই? যে বলে ঈশ্বর নাই, সে বোকা, আর যিনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন সে জানে ঈশ্বর কোথায় কিভাবে তার হাত প্রসারিত করে। ঈশ্বর বসবাস করেন সর্বত্র। শ্মশানে, আকাশে, পাহাড়ে, জলে অন্তরীক্ষে, আর থাকেন মনের একেবারে অন্তস্থলে। কান্নায় আমার শুধু বুক ভেসে যাচ্ছিলো।

রাহেলার এমন একটা অতীত জীবনের ইতিহাস শুনে আমি হচকচিয়ে উঠেছিলাম। মহিলাদেরকে আমরা দেবীর সমান তুলনা করে থাকি। কখনো কখনো আমরা তাদেরকে মায়ের আসনে বসিয়ে পুজার বেদী রচনা করে থাকি। কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে লাগাতার অন্যায় আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এমন অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। প্রকাশ্যে কোনো মহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয়, নির্যাতন করা হয়, ধর্ষন করা হয় অথচ কেউ এগিয়ে আসে না। এই সমাজে কেনো মানুষের রক্ত ততক্ষন পর্যন্ত গরম হয় না যতক্ষন না অবধি কোনো সমস্যা তাদের ঘরের ভিতরে চলে না আসে।  হিন্দু শাস্ত্রে নাকি একটা কথা আছে-ইয়ত্রা নারায়স্ত পুজায়ান্তে রামাতে তাপ্তা দেবতা অর্থাৎ  যেখানে নারির পুজো হয়, সেখানে দেবতা বসবাস করে। এটা আসলে শুধু কথার কথা সত্যিটা অন্যকিছু। কোথাও কখনো কোনো নারীর পুজা হয়নি। না হিন্দু শাস্ত্রে, না আমাদের ধর্মে, না অন্য কোথাও।

রেহালা আবারো বলা শুরু করল-

কাকা-সেই সারারাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারি নাই ভয়ে। আমার শরীর ভেংগে গিয়েছিলো, অনেক জ্বর এসছিলো, মাথা ব্যথায় আমার মনে হচ্ছিলো মাথাটাই যেনো আমার সাথে নাই। আমার সেই মগা ছেলেটা সারারাত আমার মাথায় পানি ঢেলে আমার মাথা বুলিয়ে দিচ্ছিলো আর খালী একটা কথাই বলে যাচ্ছিলো-মা আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না। তোমাকে ছাড়া আমি ভয় পাই। যতোবার সে আমাকে এই কথাগুলি বলছে, ততোবারই যেনো আমার ভিতরে কে যেনো এক কঠিন হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে আর বলছে- এই স্বাধীনতার মুল্য কি যেখানে খাচায় বন্দি আমি? এই জীবনের কি অর্থ আছে যেখানে আমি কলা, মুলা আর পন্যের মতো অন্যের ইচ্ছায় বিক্রি হয়ে যাই? এই দাম্পত্য জীবনের কি মাহাত্য যেখানে প্রতিদিন আমাকে শুধু অন্যের মন জোগানর জন্য নিজেকে সপে দিতে হয় পিশাচের কাছে? আমার ভিতরে তখন যেনো রাগ, ঘেন্না আর প্রতিশোধের ইচ্ছাতা বেরিয়ে আসছিলো। আমি হিংস্র হয়ে উঠছিলাম।  

রাহেলার এই কথাগুলির সাথে আমি একমত ছিলাম। সত্যি তো। গরীব হওয়া পাপ নয়, উচু সপ্ন দেখাও পাপ নয়, বড় হবার চেষ্টা করাও অপরাধ নয়, কিন্তু অন্য কারো জীবনকে এরুপ নষ্টের দিকে ঠেলে দিয়ে কিংবা অন্যের কোনো আত্মসম্ভরনকে বিকিয়ে দিয়ে কিংবা অন্যের জিনিষকে অন্যায়ভাবে নিজের সার্থের জন্য টাকা রোজগার করা চেষ্টা করা একটা অপরাধ। এই অপরাধের একটা খেসারত আছে। কেউ সাথে সাথে পায়, আর কেউ একটু দেরীতে। কিন্তু প্রাপ্যটা আসেই। লাইফটা কোনো ষ্টক মার্কেটের কোনো শেয়ার নয় যে প্রতিদিন এটার দাম উঠানামা করবে। এটা আসলে সেটা যা একবার উঠে গেলে আর পড়ে না, আবার পড়ে গেলে আর উঠে না।

রাহেলা বলতে থাকে তাঁর সেই রাতের বাকী কথাগুলি।

সকালে আমি উঠানে গেলাম, বসে রইলাম কখন আমার সেই নরপিশাচ স্বামী বাড়িতে আসে। সে হয়তো ইতিমধ্যে জেনে গেছে-আমি আর ঐ নারায়নগঞ্জে নাই। পালিয়েছি। কিছুই খেতে পারলাম না সারাদিন। আর খাওয়ার কিছু ছিলোও না। বমি বমি আসছিলো। দুপুরের দিকে একটু শুয়ে ছিলাম। কিন্তু ঘুমিয়ে ছিলাম না। সেই দুপুরের দিকে আমি ওর পায়ের আওয়াজের সাথে মুখের আওয়াজও শুনলাম। সে ঘরে ঢোকেই চোখ লাল লাল করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করলো আর আমাকে মেরেই ফেলবে এমন হুংকার দিতে থাকলো। বড় বড় বিস্ফোরণের আগে ছোট ছোট ফুলকীর দিকে নজর দিতে নেই। তাতে বড় বিস্ফোরণের জন্য ব্যাঘাত হয়। আমি একটা শব্দও করলাম না, কোনো উত্তরও করলাম না। কোনো এক শক্তিশালী ঝড়ের আগে যেমন আকাশ থম্থমে হয়ে যায়, গাছপালারা স্থির ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, একটা পাতাও নড়ে না, খালী মাঝে মাঝে গুরুম গুরুম কিছু শুষ্ক ঠাটা পরার মতো আওয়াজ ভেসে আসে কোনো এক দূরবর্তী আকাশ থেকে, ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো আমার ঘরে সাথে মনের ভিতরেও। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম এমন একটা সুযোগের জন্য যাতে আমি আমার বাড়ির পুতাটা দিয়ে ওর মাথায় একটা আঘাত করতে পারি। ওর উপর আমার কোনো প্রকার ভালোবাসা নাই, শ্রদ্ধাবোধ নাই। আমি ওকে যেনো আর চিনি না। কোনো এক সময় যে আমি অর বুকে শুয়েছিলাম সেটাও আমার মনে পড়ল না। সে যে আমার সন্তানের বাবা সেটাও আমার কাছে কোনো অর্থ বহন করে নাই। বারবার মনে হয়েছিলো, এদের বেচে থাকার কোনো মানে হয়না। এরা সর্বদা মানুষের শান্তির জন্য হুমকী, সমাজের জন্য হুমকী। পুতাটা আমি রেডিই করেই রেখেছিলাম আগে।

আমার সেই সুযোগটা এক সময় এলো। আমি একটু সময়ও নষ্ট করিনি। একটা আঘাতই আমি ওর মাথায় করেছিলাম। ও অজ্ঞান হয়ে গেলো। একবার ভাবলাম, ওর গলাটা কেটে দেই, আবার ভাবলাম, না, ওকে এমনভাবে মারবো যাতে সারাজীবন আর সোজা হয়ে দাড়াতে না পারে। আমি ইচ্ছে মতো ওর হাটু আর কোমড়ে পুতা দিয়ে আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ওকে থেতলা করে দিয়েছিলাম। আমার কোনো দুঃখ হয় নাই।

আমি রাহেলাকে জিজ্ঞেস করলাম, ও কি মরে গিয়েছিলো?

না কাকা- এই পিচাশটাকে আমি প্রানে একেবারে মেরে ফেলতে চাইনি, আর ও মরেও নাই। কিন্তু ও বেচে গিয়েও আর বেচে থাকবে না এটা আমার বিশ্বাস। তার কয়েকদিন পর আমি ওকে তালাক দিয়ে ওখানেই ছেলেদের সাথে রয়ে গেলাম। কিন্তু বাপের বাড়ি ফিরি নাই। সে এখন পংগু। এটাই ওর বিচার। কিসের সমাজ, কিসের আদালত, কিসের হিউমেনিটি? আমার কোনো আফসোস নাই। একা জীবন অনেক ভালো এসব নরপিশাচের সাথে থাকার চেয়ে। ওকে এভাবে মারার কারনে কেউ আমাকে বাধা দেয় নাই। কারন সবাই জানতো ওর ব্যবহার, আর ওর চরিত্র। তার উপরে যখন সবাই জেনেই গিয়েছিলো গতকাল রাতে সে আমার সাথে কি করেছিলো, ফলে কেউ আমাকে একটু বাধাও দেয় নাই, কোনো থানা পুলিশও করে নাই। ওর নিজের ভাইবোনেরাও এগিয়ে আসে নাই। নরপিশাচেরাও অনেক সময় নরপিশাচের জন্য অনুভুতি প্রকাশ করে না। সে একটা নর পিশাচের থেকেও অধম। একটা কথা বলি কাকা- যে যেমন কর্ম করবে, সে তেমন ফল পাবে এটাই আসল কথা। যে বীজ তুমি আজ বুনবে, সেই বীজের ফল তোমাকেই খেতে হবে। আর সেটা যদি কোনো অপরাধের বীজ হয়, তাহলে তা ধীরে ধীরে যে গাছে রুপান্তরীত হয়, তার নাম “প্রতিশোধ”। আর প্রতিশোধের গাছের কোনো না হয় আকার, না হয় ছায়া। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে যায় তখন তার পরিনতি তো এটাই হয়। আর ওর সেটাই হয়েছে।

আমি স্বাধীন হয়ে গেলাম। আমার আর কোনো পিছুটান রইলো না। আমার পরিবার ভেংগে গেলো। যখন কোনো পরিবার ভাংগে, তার সাথে ভাংগে সবকিছু যা পরিবারকে বেধে রাখে, আর সেগুলি হচ্ছে বিশ্বাস, আদর, আবেগ, মায়া, ভালোবাসা এবং সবকিছু। একটা পরিবার তৈরী করতে অনেক বছর লেগে যায়, পরিবার আমাদের বেচে থাকার কারন হয়ে দাঁড়ায়, যখন ভাংতে শুরু করে পরিবার তখন সেই পরিবারকে আমরা সবচেয়ে বড় শত্রু বলে মনে করতে থাকি। যে পরিবারের আনন্দ আমাদের বাচার রশদ হয়ে উঠে, রাগ এবং প্রতারনার যন্ত্রনা সেই পরিবারকে আঘাত দিতেই বাধ্য করে তোলে। মানুষ যখন আপনজনকেই ঘৃণা করতে থাকে। আমার সেই স্বামীর বাড়ির প্রতিটি মানুষকে আর কখনো আপন মনে করতে পারিনি। শুধু আমার সন্তানদের ছাড়া।

অপমান আর অবসাদে অবনত হয়ে একদিন আমি আমার স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করে বাপের বাড়িতে এসে পড়ি। আমার বাবা মা বিয়ের আগে যে পরিমান কাছের ছিলো, স্বামীর বাড়ি থেকে চলে আসার পর তাদেরকে আর আমি ততোটা কাছে পেয়েছি বলে মনে হলো না। আমি তাদেরকেও এ ব্যাপারে খুব একটা দোষারুপ করি না। তারাও দরিদ্র, আমিও। আমরা হয়তো একই বৃন্তে ঝুলে ছিলাম। সময়ের স্রোত ধরে এক সময় বুঝতে পারলাম, আমাকে একাই চলতে হবে। এখন একাই থাকি, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি, তসবিহ গুনি আর ভাবি, জীবন বড় রহস্যময়। হয়তো আমি আজ থাকতাম এমন এক জীবনে বন্ধী যেখানে মানুষ আর মানুষ থাকে না।

ঠিক ওই সময়ে কাকা আপনি গ্রামে গিয়েছিলেন শুনেছিলাম। একবার ভেবেছিলাম, আপনার সাথে একবার দেখা করি, আবার ভাবলাম, আপনি কি না কি ভাবেন কে জানে। লজ্জা এমন এক জিনিষ, যাকে না লুকানো যায়, না কাউকে বুঝানো যায়। ভিতরটা কেউ দেখে না যদিও সত্যিটা ভিতরেই থাকে। একটা কথা আছে না কাকা- আয়নায় চেহারা দেখা যায় কিন্তু কষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু আমি আমার ভিতরের এই কষ্টটা কাউকেই বুঝাতে পারিনি। না আমার বাবাকে, না আমার মাকে, না আমার আশেপাশের কাউকে। কিন্তু ভাগ্যের হাতে মার খাওয়া কোনো ব্যক্তিত্ত বেশীদিন অসহায় থাকে না। আমি যতটুকুই লেখাপড়া করেছিলাম, সেটা দিয়েই কিছু করার চেষ্টা করছিলাম, বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ানো। কিন্তু খুব একটা এগুতে পারিনি। পরে একটা সেলাই মেশিন নিয়ে মাঝে মাঝে বাচ্চাদের কিছু কাপড় বানিয়ে নিজের সন্তানের ভরন পোষনের চেষ্টা করেছি। প্রায় এক যুগ পার হয়ে গেছে। আমার মগা ছেলেটা এখনো বিয়ে করে নাই। ভারায় গাড়ী চালায়, যা রোজগার করে তা দিয়াই আমাদের সংসার কোন রকমে চলে যায়।

এতোক্ষন ধরে আমি রেহালার সবগুলি কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। ওর কথার রেশ ধরে আমার সারা শরীর কখনো শিহরিত হয়ে উঠিছিলো, কখনো ভয়ে আবার কখনো রেহালার স্বামীর এহেনো পৈচাশিক কাজের উপর রাগে। সমুদ্রে ভাসমান কোনো নাবিকের কাছে দূরের কোনো তটভুমি যেমন একটা আকর্ষনের বিষয় হয়ে দাড়ায়, রেহালার জীবনে তেমন কোনো কিছুর উপর আকর্ষন আর বাকী আছে বলে আমার মনে হলো না। রেহালা আমার সম্মুক্ষে বসে আমার বিস্তর প্রকান্ড কাচের জানালা দিয়া দূরের নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে বটে কিন্তু ওই নীল শান্ত আকাশের মতো রেহালার অন্তরে তেমন হয়তো শান্তির নীরবতা বিরাজ করছে না। হয়তো ওর মাথা, বুক আর অন্তর একসাথে এমন এক ঘূর্নীঝড়ের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছিল যার আভাষ ওর চোখের নোনাজলেই বুঝা যাচ্ছে। আমি রেহালাকে আর কোন প্রশ্ন করলাম না। কিছুক্ষন পর রেহালা একটু শান্ত হলে আবার বলতে শুরু করলো-

কাকা-এখন অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমার সারা শরীর যেনো রোগের একটা আবাসভুমিতে তৈরী হয়েছে। ডায়াবেটিস, প্রেসার, কানের, চোখের, হার্টে কোনো রোগের যেনো কমতি নাই। মগা ছেলেটা যা কামায়, তাতে হয়তো আমাদের দুজনের খাবার জুটে যায় কিন্তু আমার এই বাড়তি রোগের খরচ, কিংবা পর্বনের কোনো ব্যয়ভার চলে না। রোগটাকে এখন আমার নিত্যসংগী মনে করে কখনো সেই ঈশ্বরের কাছে রোগ মুক্তির দোয়া করি, আর যদি অতিরিক্ত খারাপের দিকে যাই, তখন এই আমার বোনেরা, কিংবা পাড়াপ্রতিবেশীরা হয়তো কিছু দান করে, তাঁর থেকেই কিছু পথ্য কিনে খাই। আগুনের ফুলকী যেমন কীট পতঙ্গকে দূরের আকাশের নক্ষত্র রাজীর লোভ দেখিয়ে আকর্ষন করে, অতঃপর তারা মৃত্যুবরন করে, আমি এখন অদৃশ্য ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করি যেনো মরনের লোভ দেখিয়ে ঈশ্বর আমাকে দ্রুত এই জীবনের যবনীপাত করান। সেই ছোটবেলায় কত স্বপ্ন দেখেছি সংসার হবে, স্বপ্ন দেখেছি স্বামীর বুকে মাথা রেখে কত গান শুনাবো, বাচ্চাদের কলকাকলীতে আমার উঠোন ভরে উঠবে আরো কতকি? অথচ আজ শুধু এইটুকুই মনে হয়, জীবন বড্ড জটিল।  এখন শুধু মৃত্যুর ক্ষন ছাড়া আমার যেনো কোনো কিছুর জন্যই আর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নাই। গভীর রাতে একা ঘুমহীন বিছানায় বসে মাঝে মাঝে জীবনের হিসাব মিলাতে চেষ্টা করি, আখাংকা আর কল্পনার রাজ্যে কত মায়াজাল তৈরী করিয়া কত মায়াপুরীর হিসাব করেছিলাম, কিন্তু আজ প্রায়ই মনে হয় যে, আমার জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত, জীবন যৌবন, সুখ দুঃখ, একাল সেকাল সবকিছুই মোমবাতির মতো পুড়িয়া শেষ প্রান্তে এসে হাজির হয়েছে। আমার এই ক্লান্তি, কষ্ট, গ্লানি কিংবা প্রানক্ষয়কর দাহ হয়তো আর বেশিদিন থাকবে না।

আমি রেহালার সাথে আর অনেক কথা বাড়াই না। আমি যাহা বুঝবার সব বুঝে গিয়েছিলাম। শুধু বারবার একটা কথাই ভাবতেছিলাম, আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমি আর রেহালা একসাথে একই স্কুলে পড়াশুনা করেছি। তখন রেহালা যে স্বপ্ন দেখেছিলো, তার ভবিষ্যৎ জীবনের, তার সংসার জীবনের, আজ এতো বছর পর এসে রেহালা দেখতে পেলো তার সেই সপ্নগুলি আসলে সব সপ্নই থেকে গেছে। খুব কষ্ট লাগতেছিলো আমার। আমাদের এই সমাজ, আমাদের নীতি নির্ধারকেরা আজো প্রতিটা মেয়েকে বোঝাই মনে করে। সবাই মনে করে-তাদের লেখাপড়ার দরকার নাই, তাদের প্রেমের কোনো মুল্য নাই, তাদের বাকস্বাধীনতা নাই, তাদের নিজস্ব কোনো পছন্দ অপছন্দও নাই। ওরা জন্মায় শুধু কাউকে নিজের অনিচ্ছায়ই হোক আর সেচ্ছাতেই হোক বিয়ে করা। আর সেই বিয়ে টিকার দায়িত্ব শুধু তাদের। ওরা জামাইয়ের মার খাবে, স্বামীরা ওদেরকে নিজের থালা-কলসীর মতো কিছুদিন ব্যবহার করে আবার অন্য কোথাও বিক্রি করে দিবে। অথবা কোনো দায়িত্ব না নিয়াই অন্য আরেকজনের সাথে ফষ্টিনষ্টি কিংবা ঘর করবে। আর মাঝখানের সময়টায় ওরা বছর বছর বাচ্চার জন্ম দিবে। এটাই যেনো ওদের একমাত্র কাজ। রেহালা আমার সামনে বসে আছে বটে কিন্তু ওর দৃষ্টি আমার জানালার বাইরে অনেক দূরের আকাশে। তার মনে কি চলতেছে আমি জানি না, তবে সেই দূরের আকাশে কোনো নতুন স্বপ্ন যে নাই, সেটা স্পষ্ট বুঝা যায়। সে তার এই জীবনের সুখ কিংবা আদর আর প্রত্যাশা করে না। শুধু সময় গুনছে কবে মৃত্যু তাকে লইয়া যাবে। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই, আমরা আজীবন বাচতে চাই, কেউ এই দুনিয়া ছেড়ে মৃত্যুর মতো একটা অজানা জীবনে যেতে চায় না। অথচ রেহালার ভাষায়, সে প্রতিদিন নামাজ পড়ে সেই স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে যেনো মৃত্যু এসে রেহালাকে নিয়ে যায়।

অনেকক্ষন আমার অফিসে একটা নীরবতা চলছিলো। রেহালার জীবনের কাহিনী বলবার পর যেন সে নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল প্রমান করে রেহালা আবারো বলিতে থাকে-

-কাকা, আজ অনেক কষ্টের কথা আপনাকে বলতে পেরে নিজেকে অনেক অনেক হালকা মনে হচ্ছে। আমি জানি না, কেনো আমাদের মতো মানুষের এই পৃথিবীতে জন্ম হয়। মা হিসাবে আমরা যেমন অসফল, স্ত্রী হিসাবেও তেমনি অসফল। এই সমাজ আমাদেরকে না কখনো মুল্যায়ন করে, না নিজের ঘরের পিতা মাতা আমাদেরকে বুকে আগলে ধরে রাখে। আমরা যেনো সমাজের সেই প্রানিগুলির মতো, যারা একবার জন্ম নিয়াছে বলে শুধু মৃত্যু না আসা অবধি দেহত্যাগ করে না আবার নিজেরাও নিজেকে শেষ করতে পারে না কারন আত্তহত্যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। অথচ দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অবহেলায় কচূরীপানার মতো আমরা এককুল হতে আরেককূলে শুধু ভেসেই যাই, না কেউ আমাদেরকে তুতুলে নেয়, না কেউ আশ্রয় দেয়। তারপরেও আমরা বেচে থাকি। এখন সত্যিই আর বাচতে ইচ্ছা করে না। আজ আপনার সাথে দেখা হলো-মনটা বড় ভালো লাগলো। মনেই হয় না এর মধ্যে ৪০ বছর পার করে দিয়েছি। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিনের কথা। সেই শীতের দিনে জড়োসড়ো হয়ে গায়ের পথ ধরে হেটে বেড়াইতাম, স্কুলে গিয়া একসাথে কত মজা করতাম, বৃষ্টির দিনে ভিজতাম, আজ মনে হয়-আহা যদি আরো একবার আবার সেই পুরান দিনে ফিরে যেতে পারতাম। আহা যদি এই পিশাচের মতো কেউ আমার জীবনে না আসতো, আহা-যদি এমন কেউ আসতো যে আমার সেই গানগুলি শুনে শুনে পাশে বসে হাততালি দিতো। আসলে জীবন মনে হয় এমনই, আবার কেনো জানি মনে হয়, সব জীবন এমন নয়। তাহলে আমাদের জীবন এমন কেনো?

আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। শুধু রেহালাকে বললাম, পৃথিবীটা এমন নয় যা দেখছিস। এই পৃথিবী অনেক অনেক সুন্দর। হয়তো ভুল সময় ভুল মানুষের পাশে গিয়ে ভুলভাবে দাঁড়িয়ে পড়েছিলি। আর সেই ভুল মানুষটাই তোকে ভুল পথের দিকে তোর নিজের অজান্তে নিয়ে গিয়েছিলো। ভুলে যা সব। বললাম, আজ থেকে বহু বছর আগের আমার গ্রামের একমাত্র মেয়ে খেলার সাথী তুই। তোকে দেখেও আমি অনেক খুশি হয়েছি রেহালা। আসিস যখন মন খারাপ হয়, যখন কোনো রাস্তা না দেখা যায়। আমি তোর কাকাই বলিস আর বন্ধুই বলিস, আসিস। রেহালা তার শাড়ির আচলটা টেনে চোখ দুটি মুছে বের হবার উপক্রম হলো। যাওয়ার সময় হটাতই রেহালা আমার পায়ে সালাম করার জন্য উদ্যত হলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, তুই আমার শুধু বন্ধু না রেহালা, তুই আমার বোনও। আমার কি হলো জানি না, আমার চোখটাও কেনো জানি ঝাপ্সা হয়ে গেলো।

রেহালা তার চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে গেলো। আমি শুধু ওর যাওয়াটা দেখলাম। আর ভাবিলাম,

প্রতিটা মেয়ে মানুষের উচিত নিজের পায়ের উপর দাঁড়ানো। যতোদিন তারা নিজেরা সাবলম্বি না হবে, তারা আজীবন ভুল সময়ে ভুল মানুষের কাছেই হস্তান্তর হতে থাকবে। হয়তো কতিপয় কিছু অধীক ভাগ্যবান মেয়েরা ছাড়া যাদের সংখ্যা অতীব নগন্য। দোয়া করি-রেহালারা ভালো থাকুক। আর দুঃখ হয় সেইসব বাবা মায়ের জন্য যারা নিজের মেয়ে সন্তানকে তাদের ছেলে সন্তানের মতো একই সাড়িতে ভাবেননা। অথচ দুটাই তাদের সন্তান। কে জানে, সেই বাবা মায়েরও কোনো একদিন এমন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হয় যখন এইসব মেয়েদের ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার পথ খোলা হয়তো থাকবে না।

আমি রাহেলার জন্য একটা টাকা প্রতিমাসের জন্য বরাদ্ধ করলাম যাতে অন্তত রাহেলা তার ঔষধগুলি কিনে খেতে পারে। রাহেলার জন্য হয়তো এটা একটা অনেক বড় সাহাজ্য হবে। রাহেলা এখন প্রায় প্রতিমাসেই আমার একাউন্ট অফিসারের কাছ হতে সেই টাকাটা নিতে আসে। কখনো ওর সাথে আমার দেখা হয়, কখনো দেখা হয় না। তারপরেও আমি শান্তি পাই যে, রেহালারা এখনো বেচে আছে।

রেহালার স্বামী এখন পুরুই পংগু। কোনো রকমে ভিক্ষা করে জীবন চালায়। তার পাশে এখন আর কোনো রেহালারা নাই, না আছে তার কোনো মগা সন্তান।

১২/০৮/২০২১-মেধাপাচার নাকি মেধাবিদায়?

উচ্ছিষ্ট সময়ের রাজত্ব 

আগষ্ট 

১২ 

গতকাল আমার ছোট মেয়েকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম এয়ারপোর্টে। কভিডের কারনে এয়ারপোর্টে ঢোকা প্রায় নিষিদ্ধের মতো কিন্তু মেয়ে একা যাচ্ছে, অনেক দূর, ভয় পাচ্ছিলাম, ফলে যেভাবেই হোক পুরু পরিবারের জন্য প্রায় বেশ অনেকগুলি"পাস" জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি ওইসব বন্ধু আর সহযোগীদেরকে আন্তরীক ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে আর আমার পরিবারকে এয়ারপোর্টে প্রবেশের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন।

এয়ারপোর্টে যাওয়ার পর আমি যে জিনিষটা খুবই খেয়াল করলাম হলো, প্রায় ৮০% পেসেঞ্জারদের বয়স ১৬ থেকে ২২ এর মধ্যে। খুব কম লোক দেখেছি যারা একটু বয়স্ক। আমি কয়েকজন ইয়াং পেসেঞ্জারের সাথে খুব নিরিবিলি কথা বলেছি- তাদের প্রত্যেকেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, কেউ চাকুরী নিয়ে, কেউ স্কলারশীপ নিয়ে কোনো ইউনিভার্সিটিতে, কেউ আবার ১০০% স্কলারশীপে, কেউ আবার নিজেদের খরচে। তাদের সবার ভাষ্যই যেনো একটা- ভয়ংকর দিন সামনে আমাদের জন্য। এ দেশে কোনো ভবিষ্যৎ নাই। এর থেকে যে কোনো ভিন্ন দেশে অন্তত কিছু একটা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। তাই আগেই চলে যাচ্ছি। 

ব্যাপারটা আতংকের। দেশ কি তাহলে মেধাশুন্য হয়ে যাচ্ছে? কারা আমাদের ভবিষ্যৎ তাহলে? যারা এদেরকে পাবে, তারা কি লোড নিচ্ছে নাকি আমরা এদেরকে ছেড়ে দিয়ে লোডমুক্ত হচ্ছি? যারা ওদেরকে সুযোগ দিয়ে এই করোনাকালেও নিয়ে যাচ্ছে, তাদের কি মনে হয় এরা তাদের দেশের জন্য বাড়িতি লোড নিচ্ছে আর আমরা মনে করছি, যাক হাফ ছেড়ে বাচা গেলো!!

আজ টিভির একটা  টক শোতে দেখলাম, ৯৬% ছেলেমেয়েরা দেশের ভিতর অনিশ্চয়তার কারনে দেশ ছাড়ছে। আসলেই একটা ভয়ানক ভাববার বিষয়।

১১/০৮/২০২১-রক্তক্ষরন

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

আগষ্ট 

১১ 

 

শরীরের কোনো কাটাছেড়া, কোনো বাহ্যিক জখম চোখে দেখা যায়, ক্ষুধা হলে খাবারের অভাবে পেট গুর গুর করে, কিংবা জ্বর সর্দি, কাশি কিংবা মাথা ব্যথা হলে তার সিম্পটম অনায়াসেই বুঝা যায় কিন্তু অন্তরের জখম কি কখনো চোখে পড়ে? অন্তরে কি কখনো জখম হয় আদৌ? আর এই অন্তরটাই বা শরীরের কোন অংগ? এটা কি এমন কোনো জিনিষ যা মাংশ বা হাড় কিংবা এমন কিছু দিয়ে এর গঠন কাঠামো?

সমস্তটা হৃদপিণ্ড তার স্টকে থাকা রক্ত যখন শরীরের সর্বত্র তার নিয়মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় সেটাকে বলে সুস্থ্যতা। কিন্তু সেই একই রক্ত যখন তার নিয়মের বাইরে গিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে সেটাকে হয়তো বলে দূর্ঘটনা। কিন্তু একই ধমনী, একই শিরায় যখন সেই একই রক্ত একই নিয়মে প্রবাহ হয়, তারপরেও মনে হয় কোথায় যেনো একটা ক্ষরন হচ্ছে, তাহলে এটাকে কি বলে? হয়তো সাহিত্যিকরা বলবেন- এটাকে বলে কষ্ট, এটা হয়তো বেদনা কিংবা হয়তো কেউ বলবেন এটা একটা খারাপ অনুভুতি। তাহলে এই রক্তক্ষরন হয় কোথায়? শিরায়? ধমনীতে? শরীরের কোনো অংগে? আর এই ক্ষরণ হলে কি হয়? আসলে রক্তক্ষরনটা হয় অনুভুতির ভিতরে, ওই সেই অন্তরে যার উপস্থিতি আজো কেউ খুজে পায়নি, বা হাত দিয়ে ধরে দেখেনি। একেবারে ভিতরে, অদৃশ্য। অথচ অনুভুতির এই ভিতরটা কেউ দেখে না। বাইরের চোখে যা দেখা যায়, সেটা ভিতরের অবস্থা না। সত্যটা সবসময় থাকে ভিতরে। আর এই সত্যকে মানুষের কোনো অংগ, না তার হাত, না তার পা, না তার শরীর প্রকাশ করে। এই অদেখা রক্তক্ষরনে হাত অবশ হয়ে যায় না, পা নিস্তব্ধ হয়ে উঠেনা বা কান বধির হয় না। শুধু চোখ সেটাকে লুকাতে পারে না বলে অনবরত সেই নোনা জল দিয়েই হয়তো বলতে থাকে, কোথাও কিছু জ্বলছে, কোথাও কিছু পুড়ছে, কোথাও কিছু ক্ষরন হচ্ছে। না ঠান্দা জল, না কোনো বেদনানাশক ঔষধ না কোনো থেরাপি এই ক্ষরনকে থামাতে পারে। কিন্তু যার চোখ নাই, তারও কি এই ক্ষরন হয়? হ্যা, হয়। তারও এই রক্তক্ষরন হয়। হয়তো তার ভাষা একটু ভিন্ন, স্থিরচিত্তে ক্রয়াগত নীরবতা। তাহলে এই রক্তক্ষরনের সময়কালটা কত? বা কখন এর জন্ম আর কখন তার ইতি? বলা বড্ড মুষ্কিল।

যখন কোনো মানুষ কিছুই না বলে সে তার পরিবার থেকে হটাত করে উধাও হয়ে যায়, তখন ব্যাপারটা অনেক দুসচিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়। এটা আরো বেশী করে দুশ্চিন্তায় ভোগায় যখন এটা জানা যায় যে, যে মানুষটি চলে গেছে সে সবদিক থেকে অশান্তিতেই ছিলো। এমন অবস্থায় এমনটাই বারবার মনে প্রশ্ন আসে, যে, জীবনের কাছে হেরে যাওয়া মানুষটি আবার মনের কষ্টে কোনো ভুল পদক্ষেপ না নিয়ে বসে। শুরু হয় রক্ত ক্ষরনের প্রক্রিয়া। এই ক্ষরণ অজানা আতংকের।

আবার যখন কোনো মানুষ সবার সামনে থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে চিরতরে ভিন্ন জগতে চলে যায়, তখন দুসচিন্তার প্রকারটা হয়তো অন্য রকমের কিন্তু তারপরেও রক্তক্ষরন হয়। আর সেই ক্ষরণ কখনো ভরষার অভাবের অনুভুতি কিংবা মাথার উপরে থাকা কোনো বট বৃক্ষের অথবা কখনো এটা হয় নিঃসঙ্গতার।

কিন্তু জেনে শুনে, প্রকাশ্যে সবার সামনে দিয়ে যখন বড় কোনো সাফল্যের উদ্দেশ্যে নিজের অতীব প্রিয়জন জীবন্ত চলে যায়, হাসিখুশির অন্তরালে তখন যেনো চলতে থাকে মেঘ-বৃষ্টির খেলা। চলতে থাকে দোদুল্যমান এক অনুভুতি। হাসিখুশি চোখের পাতায়ও তখন দেখা যায় সেই রক্তক্ষরনের এক বেদনাময় কষ্টের অনুভুতি। এই রক্তক্ষরনের প্রধান কারন হয়তো শুন্যতা। তখন যেদিকে তাকাবেন, দেখবেন, সব কিছু ঠিক আগের মতোই আছে, শুধু নাই সেখানে যে বিচরন করতো সেই মানুষটা। তার ঘরের দিকে তাকালে মনে হয়, ওই তো মানুষতা গতকাল ও ওখানে বসেছিল, ওই যে কাপড় টা বাতাসে ঝুলছে, সেটা এখনো সেখানেই ঝুলছে, অথচ সেই মানুষতা আজ ঠিক ওইখানে নাই। আছে অন্য কোথাও, চোখের দৃষ্টির অনেক বাইরে। আর এই দোদুল্যমান অনুভুতি নিয়েই আমি বিদায় জানাতে এসেছি আমার অতীব আদরের ছোট মেয়েকে আজ। বুঝতে পারছি, কোথায় যেনো পূরছে আমার অন্তর, কোথায় যেনো জ্বলছে আমার অনুভুতির সমস্ত স্নায়ুগুলি।

আমি যুদ্ধ দেখেছি, যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছি, আগুনে পূড়ে যাওয়া নগরী দেখেছি, ঘনকালো নির্জন রাতে কোনো পাহাড়ি রাস্তা ধরে একা একা হেটে পার হয়েছি। ভয় আমাকে কাবু করেনি। অথচ আজকে আমি এই শান্ত সুষ্ঠ পরিবেশে নির্মল আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে যখন আমার ছোট মেয়েকে সুদুর আমেরিকায় যাওয়ার প্রাক্কালে বিদায় জানাচ্ছি, তখন সারাক্ষন রক্তক্ষরনের পাশাপাশি একটা ভয়, একটা আতংক, একটা শুন্যতার অনুভুতিতে ভোগছি। কেনো জানি মনে হয়, আমার ভয় লাগছে। অথচ আমার শরীর সুস্থ্য, আমার ক্ষুধা নাই, তারপরেও কেনো জানি মনে হচ্ছে- কি যেনো আমি ভালো নাই।

আমার মেয়েটা চলে গেলো আজ। বায়না ধরেছিলো-আমেরিকা ছাড়া সে আর কোথাও পড়াশুনা করবে না। সন্তানরা যখন বায়না করে, জেদ ধরে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মা বাবা সেটাকে পুর্ন করার জন্য দায়িত্ত পালন করেন। আমিও সেই বায়নাটা হয়তো পুরন করছি আজ। কিন্তু সেই জিদ বা বায়না আদৌ ঠিক কিনা বা বায়নাটা আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা অনেক ক্ষেত্রে আমরা মা বাবা সেটা বিচার করি না। সন্তান কষ্টে থাকুক বা দুঃখ নিয়ে বড় হোক অথবা তার নির্দিষ্ট পথ থেকে হারিয়ে যাক, তাতে মা বাবা এক মুহুর্ত পর্যন্তও শান্তিতে থাকে না। মা বাবা সবসময় তার সন্তানদেরকে সবচেয়ে ভালোটাই দেয়ার স্বপ্ন দেখে। আসলে সন্তান যতো বড়ই হোক আর বৃদ্ধ, মা বাবার ভুমিকা থেকে আজ অবধি কোনো মা বাবা অবসর গ্রহন করেন নাই। কিন্তু তাদেরও কিছু আশা থাকে, স্বপ্ন থাকে এই সন্তানদের কাছে। আমরা বাবা মায়েরা সন্তানদের কাধে শুধু স্কুল ব্যাগ নয়, বরং মা বাবার অনেক আশা ইচ্ছাও ঝুলিয়ে দেই। হয়তো এটাও সেই রকমের একটা বায়না থেকে আমার দায়িত্ব পালনের পর্ব যেখানে একটা সফল, উজ্জ্বল আর সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য আমি অন্তরের রক্তক্ষরনের মতো বেদনাটাও ধারন করছি। আমি জানি, সব সাফল্যের একটা মুল্য থাকে যেটা কাছের মানুষকেই জোগাতে হয়। আর হয়তো এটা সেটাই।

তবে একটা কথা ঠিক যে, আজকের এই অদেখা কষ্টের রক্তক্ষরনের ইতি বা যবনিকা হয় তখন যখন যে মানুষটির জন্য রক্তক্ষরনের জন্ম, সে যখন জীবনের পাহাড় বেয়ে জয় করে সামনে দাঁড়ায়। তখন আজকের দিনের রক্তক্ষরনের সাথে মিশ্রিত হাসিটায় শুধু ভেসে থাকে হাসিটাই। যেমন পানি আর তেলের মিশ্রনে শুধু ভেসে থাকে পানির চেয়ে দামী সেই তেল। তখনো এই চোখ জলে ভিজে উঠে হয়তো কিন্তু তখন চোখ এটা জানান দেয় না, কোথায় যেনো কি পূরছে, কি যেনো জ্বলছে বরং প্রতিটি উচ্ছল হাসিতে ভরে উঠে আনন্দ ধারা।

আমি সেই প্রত্যাশা নিয়েই আজকের এই রক্তক্ষরনের অধ্যায় যাকে আমি যেই নামেই ডাকি না কেনো, বেদনা, শুন্যতা কিংবা আতংক তা শুধু নীরবে মেনে নিয়েই রক্ত ক্ষরনের সেই পোড়া যন্ত্রনাকে বরন করছি। তোমরা সব সময় ঈশ্বরকে মনে রেখো, নীতির পথে থেকে আর মানবতার থেকে বড় কোনো সম্পদ নাই এটা জেনে সর্বদা সেই মানবিক গুনেই যেনো থাকো, এই দোয়া রইলো।

শরতচন্দ্রের সেই বিখ্যাত উক্তিটাই আজ তোমাদেরকে বলি- ভালোবাসা শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলে দেয়। ‘যেতে নাহি দিবো’ মন বল্লেও বাধা দেয়ার কোনো শক্তি তখন থাকে না, না বাধা দিতে কোনো পথ আগলে রাখি, বরং মনের ভিতরের ‘যেতে নাহি দেবো জেনেও যাওয়ার সব পথ খুলে দেই সেই সাফল্যের জন্য, যা আমার চোখের মনির ভিতরে খেলা করে সারাক্ষন।

০৮/০৮/২০২১-সন্ধ্যা ৮ টা ৩২ মিনিট

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

আগষ্ট 

খুব ভালো একটা খবর পেলাম আজ। আমার বন্ধু উইং কমান্ডার মাসুদকে বলেছিলাম, যেভাবেই হোক এয়ারপোর্টের জন্য আমাকে যেনো কয়েকটা ‘পাশ’ এর বন্দোবস্ত করে দেয়। কভিডের কারনে প্যাসেঞ্জার ছাড়া অন্য কোনো দর্শ্নার্থীকে এয়ারপোর্টের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেয় না। কনিকার সাথে যাওয়ার জন্যে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ইউএস এম্বেসী সব ধরনের ভিসা (শুধু মাত্র স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া) বন্ধ রেখেছে, ফলে আমরা কনিকার সাথে যেতে পারছি না। এদিকে আবার কভিডের কারনে এয়ারপোর্টের ভিতরেও প্রবেশের সুযোগ নাই। যাক, শেষ পর্যন্ত আজকে আমার দোস্ত মাসুদ আমাকে ফোন করে জানালো যে, এভিয়েশনের সিকিউরিটি ডাইরেক্টর আরেক উইং কমান্ডার আজমকে বলা আছে সে আমাদের জন্য ‘পাশ’ এর ব্যবস্থা করবে। আজমের সাথে কথা বললাম, আজম খুব সমীহ করেই জানালো যে, আগামী ১০ তারিখের রাত ৯ টায় যেনো আমি ওকে ফোন দিয়ে একটা কন্ট্যাক্ট নাম্বার সংগ্রহ করি যে কিনা আমাদেরকে এয়ারপোর্টে প্রবেশের সুযোগ করে দেবে। এই মুহুর্তে এর থেকে আর ভালো খবর আমার কাছে কিছুই নাই। খুব ভালো লাগলো যে, কনিকাকে আমি আর আমার স্ত্রী (উম্মিকাসহ) এয়ারপোর্টে সি-অফ করতে পারবো, ওর লাগেজ পত্রগুলি ঠিকমতো বুকিং করে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারবো। মেয়েটা আমেরিকায় চলে যাচ্ছে ৫ বছরের জন্য, পড়াশুনার খাতিরে। ইউএমবিসি (ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টি) তে যাচ্ছে।

আমার মনে পড়ছে যে, আজ থেকে প্রায় ৩৮ বছর আগেও আমার ভর্তি হয়েছিলো কার্স্কভাইল ইউনিভার্সিটিতে যেখানে আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহ চেয়েছিলেন আমি আমেরিকায় গিয়ে পড়াশুনা করি। কিন্তু যে কোনো কারনে হোক, আমার আর যাওয়া হয় নাই, আমি চলে গিয়েছিলাম আর্মিতে। আমার যে আমেরিকায় যাওয়া হয় নাই এটা বল্বো না, আমি তারপরে ১৯৯৫/৯৬ সালে হাইতির জাতিসঙ্ঘ মিশন থেকে একমাসের জন্য আমেরিকায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপরে পর পর দুবার ভিসা পেয়েছিলাম মোট ৬ বছরের জন্য কিন্তু আমাকে আমেরিকা টানে নাই। আগামী ১১ তারিখে আমার ছোট মেয়ে চলে যাচ্ছে সেই সুদুর আমেরিকায়। একটু খারাপ লাগছে কিন্তু সন্তানদের সাফল্যের জন্য তাদেরকে ঘর থেকে ছেড়েই দিতে হয়, এটাই নিয়ম।

কনিকা যাতে কোনো প্রকারের আর্থিক সমস্যায় না থাকে সেজন্য আমি অগ্রিম ওর এক বছরে সমস্ত খরচ (বাড়ি ভাড়া, খাওয়া দাওয়ার খরচ, ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি, হাত খরচ, যাতায়ত খরচ, ইন্স্যুরেন্স খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে ৩৫ হাজার ডলার দিয়ে দিলাম যাতে আমিও আর এই এক বছর ওকে নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। সাথে সিটি ব্যাংকের একটা এমেক্স কার্ড ও দিয়ে দিচ্ছি ২ হাজার ডলারের মতো যাতে খুবই জরুরী সময়ে সে এটা খরচ করতে পারে। আগামীকাল কনিকার কভিড-১৯ টেষ্ট করাতে হবে। ফ্লাইটে উঠার ৪৮ ঘন্টা আগে কভিড টেষ্ট করে ফ্লাইটে উঠতে হয়। পজিটিভ এলে ফ্লাই করতে পারবে না। দোয়া করছি, আল্লাহ যেনো সব কিছু সহী সালামতে এটাও ইনশাল্লাহ নেগেটিভ করে দেন।

বড় মেয়েকেও ইন্সিস্ট করছি সে যেনো কনিকার মতো দেশের বাইরে (পারলে একই ইউনিভার্সিটি, ইউএমবিসি) আমেরিকায় চলে যায়। কিন্তু কোথায় যেনো উম্মিকার একটা পিছুটান অনুভব করছি। তার শখ লন্ডনে যাওয়া। যদি তাও হয়, তাতেও আমি রাজী। ওরা ভালো থাকুক, সেটাই আমি চাই।

আমি জানি একটা সময় আসবে, আমি আসলেই একা হয়ে যাবো। এমন কি আমি মিটুলকেও ধরে রাখতে পারবো কিনা জানি না। কারন যখন দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকবে, আমার ধারনা, মিতুলও প্রায়ই দেশের বাইরে থাকবে তার মেয়েদের সাথে। যদি দুইটা আলাদা আলাদা দেশ হয়, তাতে ওর বাইরে থাকার সময়টা বেড়ে যাবে, আর যদি একই দেশে হয়, তাহলে এক ছুটিতেই দুই মেয়ের সাথে হয়তো সময়টা কাটাবে। আমি ব্যবসা করি, আমাকে দেশেই থাকতে হবে, আর আমি দেশে থাকতেই বেশী পছন্দ করি।

বাকীটা আল্লাহ জানেন।  

স্পেসাল নোটঃ 

যে মানুষগুলি ১১ আগষ্ট ২০২১ তারিখে এয়ারপোর্টের ভিতরে আমাদেরকে এন্টারটেইনমেন্ট করেছে তারা হচ্ছেন- সার্জেন্ট জুলহাস এবং সার্জেন্ট রাসেল। আমরা সবাই ঢুকতে পেরেছিলাম আর ওরাই আমার মেয়ের জন্য সব ব্যবস্থা করে দিলো একেবারে প্লেন পর্যন্ত। রাসেল আর জুলহাসকে ধন্যবাদ দেয়ার মতো আমার ভাষা নাই। তাদের জন্য আমার এই পেজে ওদেরকে মনে রাখার জন্য ওদের কয়েকটা ছবি রেখে দিলাম। বড্ড ভালো লাগলো ওদের আথিথেয়তা। 

ওরা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অনেক সহায়তা করেছে। এয়ারপোর্টের গেট থেকে শুরু করে আমার মেয়ে কনিকাকে ইমিগ্রেশন করা এবং ওর সাথে প্লেন পর্যন্ত এগিয়ে দেয়ার পুরু কাজটাই করেছে। আমি আমার পরিবার এবং অন্যান্য সবাই অনেক কৃতজ্ঞ। দোয়া করি ওদের জন্যেও। 

০৮/০৮/২০২১-What If I were not Born

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

আগষ্ট 

০৮

মানুষ হয়ে জন্ম গ্রহন করার থেকে এতো সম্মান নাকি ঈশ্বর তার পাপমুক্ত ফেরেস্তাদেরকেও দেন নাই। সৃষ্টির সেরা জীবদের মধ্যে এই মানুষই নাকি সেরা। এই মানুষের জন্যই ঈশ্বর আকাশ তৈরী করেছেন, সেই আকাশ থেকে তিনি জল-বৃষ্টি বর্ষন করেন, জমির নির্মল গাছ গাছালীকে তিনি সবুজ সতেজ করে রাখেন। তিনি এই মানুষের জন্যই পাহাড় সৃষ্টি করেছেন, দিন আর রাতের তফাত করেছেন, ভালোবাসার মতো সংগী তৈরী করেছেন, অতঃপর তিনি জীবিনের বিভিন্ন স্তরে স্তরে নানাবিধ উপলব্দির জন্য সন্তান, নাতি নাতকোরের মতো মিষ্টি মিষ্টি ফুলের সংসারও তৈরী করেছেন। কি অদ্ভুত ঈশ্বরের সব সাজানো এই পরিকল্পনা। নীল আকাসের দিকে তাকিয়ে কখনো সাদা ফেনার মতো ভেসে যাওয়া মেঘ, কখনো উত্তাল মেঘের অবিরাম বৃষ্টিবরন, হেমন্তে বা শরতের দিনে বাহারী ফুলের সমাহার, পাখীদের কিচির মিচির, শিল্পির গানের মূর্ছনা, সবকিছু যেনো বিমোহিত করার মতো একটা সময়। অথচ এসব কিছু কোনো না কোনো একদিন ছেড়ে আমাদের সবাইকে চলেই যেতে হয়।

আবার অন্যদিকে যদি দেখি, দেখা যায়, এই বাহারী জীবনের সব সুখ আর আস্বাদন ছাড়াও আমাদের এই জীবনে ছেকে বসে দুঃখ বেদনা, হতাশা আর কষ্ট। জীবনের গাড়ি আমাদের জীবন-যানবহনের চাকার উপর টানতে টানতে এক সময় অনেকেই আমরা হাপিয়ে উঠি। বেদনায় ভরে উঠে কষ্টে, দুঃখে ভেসে যায় চোখের জল অথবা রাগে, অভিমানে একে অপরের হয়ে উঠি চরম থেকে চরম শত্রুতায় যেনো ভালোবাসা কোনোকালেই ছিলো না, হোক সেটা বিবাহ বন্ধনের মতো কোনো রোমান্টিক সম্পর্কে, অথবা ব্যবসায়ীক কোনো অংশীদারিত্তে অথবা ক্ষমতার লড়াইয়ের কোনো যুদ্ধমাঠে।

অনেক সময় আমাদের মুখ দেখে এটা বুঝা যায় না কে সুখের বা কষ্টের কোন স্তরে আছি। ভিতরের সুখ কিংবা যন্ত্রনার উপলব্ধিকে আমরা একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করলেও সঠিক স্তরটা কখনোই প্রকাশ করা যায় না। পাখীদের বেলায় কিংবা অন্য কোনো প্রানীদের বেলায় এটা কতটুকু, সেটা আমরা না কখনো ভেবে দেখেছি, না কখনো উপলব্ধি করেছি। ওরা দিনের শুরুতে আহারের খোজে বেরিয়ে যায়, পেট ভরে গেলে কোনো এক গাছের ডালে বা পাহাড়ের কোনো এক ছোট সুড়ঙ্গে রাত কাটিয়ে দেয়। তাদের অট্টালিকার দরকার পড়ে না, ওরা ওরা কেউ কারো শত্রুতা করে না, কোন পর্বনে বিশেষ কোনো কিছুর আয়োজনেরও দরকার মনে করেনা। কবে ছুটির দিন, কবে ঈদের দিন কিংবা করে কোন মহাযুদ্ধ লেগেছিলো সে খবরেও ওদের কিছুই যায় আসে না। ওদেরও সন্তান হয়, ওরাও দলবেধে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়, ওদের কোনো ভিসা বা ইমিগ্রেশনেরও দরকার পড়ে না। টেরিটোরিয়াল বাউন্ডারী ওদের জন্য কোনোদিন দরকার পড়ে নাই, আগামীতেও দরকার পড়বে না। ওরাও কষ্টে কিছুক্ষন হয়তো ঘেউ ঘেউ করে, কিংবা চিন্তিত হয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়ে চলে যায়, কিন্তু তাকে আকড়ে ধরে বসে থাকে না। ওদের সারাদিনের কর্মকান্ডের জন্য না কারো কাছে জবাব্দিহি করতে হয়, না কারো কাছে ধর্না দিতে হয়, এমনকি ওরা ঈশ্বরের কাছেও তাদের অপকর্মের কিংবা ভালোকর্মের কোনো জবাব্দিহিতা করতে হয় না। কোনো ট্যাক্স ফাইল নাই, কোনো ভ্যাট ফাইল নাই, না আছে কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স, না দরকার তাদের গাড়িঘোড়ার। তাহলে তো ওরাই আসলে শান্তিতে থাকে, মানুষের থেকে অধিক।

মানুষ ছাড়া অন্য সব প্রানীকুল প্রত্যেকেই নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখে কিন্তু মানুষ তার নিজের একক ক্ষমতার উপর কখনোই সে বিশ্বাস রাখে না বা থাকে না। তার দল লাগে, তার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড লাগে, তার আরো বিস্তর আয়োজন লাগে। এতো কিছুর উপরে তার আস্থা রাখতে গিয়ে মাঝে মাঝে সে নিজের উপরেও আস্থা হারিয়ে ফেলে। অথচ সে একা বাস করতে পারে না, না আবার সবাইকে নিয়েও বাস করতে চায়। অদ্ভুত এই মনুষ্যকূলের মধ্যে আমি জন্মে দেখেছি- এতো কিছুর বিনিময়ে অথচ কোনো কিছুই আমার না, এই শর্তে জন্ম নেয়াই যেনো একটা কষ্টের ব্যাপার। যদি কেউ এই পৃথিবীতেই না আসতো, তাহলে হয়তো বিধাতার কাছে এই ক্ষনিক সময়ে এতো কিছুর মাঝে পরিবেষ্ঠিত থেকে আবার চলে যাওয়া, কইফিয়ত দেয়া, ইত্যাদির দরকার হতো না, ক্ষমতার লড়াইয়ে হানাহানি, কারো বিয়োগে মন এতো উতালাও হতো না।

আজ থেকে বহু শতাব্দি আগে কিংবা অদুর অতীতে যারা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে, তারা আসলে আমাদেরই লোক ছিলো। তারা চলে গিয়েছে চিরতরে। কোথায় গেছেন, আর কি অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে আজো কেউ কোনো সম্যখ ধারনা কারো কাছেই নাই। অথচ যখন বেচে ছিলেন, প্রতিটি মুহুর্তে তারা ছিলেন সময়ের থেকেও অধিক ব্যস্ততায়। যখন তারা চলে যান, তারা আমাদের কাছে এমন কোনো ওয়াদাও করে যায়নি যে, তাদের ফেলে যাওয়া সব সম্পত্তির জন্য আবার ফিরে আসবেন, কিংবা এমনো নয় যে, তারা তা আর কখনো দাবী করবেন। এটা না হয় চিরতরে চলে যাওয়ার ব্যাপার হলো। কিন্তু এই জীবনে তো এমনো বিচ্ছেদ হয় যেখানে তারা আছেন কিন্তু আবার নাইও। জীবনের প্রয়োজনে ভউগুলিক বাউন্ডারীর অন্য প্রান্তে যখন কেউ অনেক দিনের জন্য চলে যান, আর তার ফিরে আসার ওয়াদা ভেংগে যায়, তখন আর তার উপরেও আস্থা রাখা যায়না। এমনি কষ্টে মানুষ ভোগের সমস্ত আয়োজনের উপরে থেকেও সেই আপনজনদের জন্য প্রতিনিয়ত হাহুতাশ করতে থাকেন। মনের কোথায় যেনো কি একটা সারাক্ষন খসখস করতেই থাকে। সেই যন্ত্রনায় তখন এমন মনে হয় যেনো- একটা দিনও ঠিকঠাক মতো কাটে না, এমন কি একটা রাতও না। তখন জেগে থাকে শুধু কিছু সদ্য জন্মানো কান্না। আর কান্নার আহাজারীতে সুর থাকে না, থাকে বেদনা আর কষ্ট। আর সেই কষ্টের কোনো নাম থাকে না, না থাকে তার কোনো বর্ননা বা রুপ। আর এই ভিতরের যন্ত্রনাটা কাউকেই দেখানো যায় না অথচ সত্যিটা থাকে এই ভিতরেই। আসলে পৃথিবীতে সম্পর্কের চেয়ে বড় কোনো সম্পত্তি নাই। এতো সুখের জীবনেও যখন এমন অনেক কষ্টের আর বেদনার নীল ছড়িয়েই থাকে, তাহলে কি দরকার জন্মের?

তারপরেও আমরা মানুষ হয়ে সৃষ্টির সেরা জীব হয়েই জন্ম নেই, নিয়েছি যেখানে অবারিত সবুজ ধানক্ষেতের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওয়ার দোলা আমাদের মুখে পরশ জোগায় আবার তেমনি কখনো বিচ্ছেদের মতো যন্ত্রনা, মৃত্যুর মতো বেদনা, আবার কখনো অনিশ্চিত যাত্রার মতো দুশ্চিন্তা নিয়েই আমাদেরকে বাচতে হয়। কেউ যখন চিরতরে জীবনের নিঃশ্বাসকে স্তব্ধ করে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেন, তারজন্য যতোটা না দুশ্চিন্তা আমাদেরকে গ্রাস করে, তার থেকে যখন কোনো প্রিয়জন হটাত করে সেই চেনা পরিচিত আবাসস্থল থেকে কাউকে কিছু না বলে হারিয়ে যান আর ফিরে না আসেন, তারজন্য আরো বেশী দুশ্চিন্তা আর অমঙ্গল চিন্তা মাথা ভনভন করতে থাকে। কিন্তু এরই মতো যখন কোনো প্রিয়জন জেনেশুনে জীবনের প্রয়োজনে অথবা বড় সাফল্যের আশায় একে অপরের থেকে এমন একটা বিচ্ছেদে আপোষ করেন যেখানে টেরিটোরিয়াল বাউন্ডারী আমাদেরকে প্রায় স্থায়ী বিচ্ছেদের স্তরে নিয়ে যায়, তখন আমাদের হাসির অন্তরালে যে বেদনা লুকিয়ে থাকে, তা তুষের অনলের মতো সারাক্ষন তাপদাহে অন্তরে প্রজ্জলিত হতেই থাকে। আশা আর সাফল্যের মতো জল হয়তো সাময়ীকভাবে তা নিবারন করে কিন্তু এই ছোট ক্ষনস্থায়ী জীবনে বারবার এটাই মনে হয়- কি দরকার ছিলো এসবের? তাকে কি আটকানো যেতো না? নাকি আটকানো হয় নাই? আসলে কোনো কিছুই দরকার ছিলো না যদি না আমার জন্মই না হতো এই মানুষ হিসাবে। তখন না দরকার হতো এই বিচ্ছেদের, না প্রয়োজন হতো এই দিনরাতের কষ্টের অথবা না দরকার পড়তো অন্তর জালার তাপদাহের অনুভবতার। তখন কেনো জানি বারেবারেই মনে হয়- What If I were not born?  

করোনার প্রাদূর্ভাবে চেনা পরিচিত সব মানুষ যেনো ধীরে ধীরে চোখের সামনে থেকে একে একে যেনো বিনা নোটিশে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। এই সেদিন যার সাথে এক টেবিলে বসে হাসাহাসি, আড্ডা, কথা কাটাকাটি, অথবা দল বেধে গায়ের কোনো মেঠো পথে বাচ্চাদের মতো হাটাহাটি করেছি, তার কিছু মুহুর্তের পরই সংবাদ আসে, আর নেই। চলে গেছে। ব্যাংকের টাকা, বিশাল ব্যবসা, কিংবা গাড়ি বহরের সব যাত্রা কোনো কিছুই যেনো তার সামনে দাড়াতে পারছে না। অথচ তাকে না দেখা যায়, না ছোয়া যায়। কখন সে কার সাথে একান্তে বাস করা শুরু করে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আতংকে আছে মন, অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে শরীর, ভাবনায় ভরে যাচ্ছে সারাটা মাথা। অথচ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর, মনের আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে পাখীরা, শুধু বন্দি হয়ে আছি আমি “মানুষ”। বারবার মনে হচ্ছে- কোথায় যেনো কি ঠিক নেই, কি যেনো কোথায় একটা গড়মিল হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না। কেনো এমনটা হচ্ছে বারবার?

আসলে কোন কবি যেনো একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন- মানুষ হয়ে জন্মই যেনো আমার আজীবনের পাপ। তাই আমারো মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে- What If I were not even born!!

০৭/০৮/২০২১-কনিকার মাত্র ৩দিন বাকী

উচ্ছিষ্ট সময়ের রাজত্ব 

আগষ্ট 

৭ 

প্রায় সবগুলি কাজ শেষ। ভিসা আগেই হয়ে গিয়েছিলো, টিকেটও কেনা আছে, টিউশন ফি গতকাল পাঠিয়ে দেয়া হয়ে গেছে। ভ্যাক্সিনেশন যা যা নেয়া দরকার ছিলো, সবই সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্যাগপত্র, মালামাল সব কিছুই প্যাকড হয়ে গেছে, আগামী এক বছরের আর্থিক জোগানও শেষ, এখন বাকী শুধু করোনা টেষ্ট আর ফ্লাইটে উঠা। আগামী ১০ তারিখের দিবাগত রাত অর্থাৎ ১১ আগষ্ট এর ভোর বেলায় কনিকার ফ্লাইট। মাত্র তিনদিন বাকী। কনিকার চলে যাওয়ার শুন্যতাটা এখন মাঝে মাঝে অনুভব করছি, উম্মিকা রীতিমত প্রায় প্রতিদিনই কান্নাকাটি করছে কনিকা চলে যাবে বলে। কনিকা এখনো খুব একটা মন খারাপ করছেনা তবে বুঝা যায় সে একটা দুদোল্যমান অনুভুতিতে ভোগছে। কারন একদিকে কনিকা আমেরিকা যাওয়ার ব্যাপারে বেশ খুসী, অন্যদিকে বাড়ি ছাড়ার কষ্ট। মিটুলের অবস্থাটাও প্রায় ওই একই রকমের। আর আমার? আমার শুধু একটাই ভয়, ওরা যেনো ভালো থাকে যেখানেই থাকুক। মন তো খারাপ হচ্ছেই। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমি মেনে নিয়েছি বাস্তবতা।

 বাড়িটায় সারাক্ষন কনিকাই মাতিয়ে রাখতো, বাসায় যতো কথাবার্তা, যতো হইচই কনিকাই করতো। এই পরিবেশটা মিস করবো আমরা। অফিস থেকে আমি বাসায় আসার পর প্রথমেই আমি ঢোকি সাধারনত কনিকার রুমে আর তার সাথে উম্মিকার রুমে। ইদানিং উম্মিকা ডেল্টা মেডিক্যালে জব করে বলে, প্রায়ই আমি খবর নেই মেয়েটা লাঞ্চে খাবার খেয়েছে কিনা বা রাত সাড়ে আটটা বাজলেই মনে করিয়ে দেই, উম্মিকাকে আনতে গাড়ি গেছে কিনা।

আমি জানি, কনিকা যেদিন আমেরিকার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হবে ইনশাল্লাহ, সেদিন আমার ভিতরে কি কি ঘটবে কিন্তু মনকে শক্ত করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। যতোক্ষন না কনিকা তার ডেস্টিনেশনে গিয়ে পৌছায় ততোক্ষন আমি জানি ওর ফ্লাইট মনিটর করতে থাকবো। যখন আল্লাহর রহমতে কনিকা আমেরিকায় ওর ডেস্টিনেশনে পৌঁছাবে, হয়তো তখন একটু ভালো লাগবে যে, ওখানেও অনেক আত্তীয় স্বজনেরা আছেন যারা কনিকাকেও অনেক ভালোবাসে, তারা দেখভাল করবে।

কনিকা অনেক খুতখুতে। কিন্তু গোছালো। ওর কোনো কিছুই অগোছালো থাকে না। কোন একটা জিনিষ এদিক সেদিক হলেই ওর সেটা ভালো লাগে না। মেজাজ খারাপ করে। ফলে ভয় পাচ্ছি, নতুন পরিবেশে কতটা দ্রুত কনিকা এডজাষ্ট করতে পারে। ওখানে কনিকাকে সব কিছুই নিজের হাতে করতে হবে। পারবে কিনা জানি না। তবে প্রথম প্রথম কনিকা হোমসিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। এটা কাটিয়ে উঠতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

আমি কনিকা যেনো আমেরিকায় অন্তত টাকা পয়সা নিয়ে কোনোরুপ সমস্যায় না পরে, সেইটা শতভাগ নিশ্চিত করেছি (আলহামদুলিল্লাহ)। আসলে আমি ইদানিং আমার জীবনের মুল পলিসিটাই বদল করে ফেলেছি। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। যাতে আমি না থাকলেও আমার সন্তানেরা কোথাও কোন সমস্যায় না পড়ে, বাকীটা আল্লাহ ভালো জানেন। আমার জমি জমা, টাকা পয়সার এসেটের থেকে বড় এসেট আমার মেয়েরা। এদের জন্য পয়সা খরচে আমার কোনো কার্পন্য নাই। যতোটুকু আমার সক্ষমতা আছে, আমি ওদেরকে ততোটাই দিতে চাই।

গতকাল রাতে প্রথম দেখলাম, উম্মিকা কনিকা দুজনেই বেশ ইমোশনাল ছিলো। ব্যাপারটা ঘটছে কারন সময়টা খুব কাছাকাছি কনিকার চলে যাওয়ার। ফলে উম্মিকাও অনেকটা খুব বেশী মন খারাপ করে আছে। চৈতী এসছে কনিকার যাওয়ার কারনে। ওরা সবাই খুব কাছাকাছি ছিলো সব সময়। ওদের বয়সের তারতম্য থাকলেও কনিকাই ছিলো যেনো ওদের সবার মধ্যে নেতা। ওর আবদার কেউই ফেলতো না।

বিমানবন্দর ঢোকার জন্য পাশ এর অবস্থা এখন খুব কড়াকড়ি। কোথাও থেকে কোনো পাশ পাচ্ছি না। ব্যাপারটা একটু হতাশার। অনেককেই বলেছি কিন্তু সব জায়গা থেকেই নেগেটিভ ফলাফল আসায় একটু আরো ভয়ে আছি। আমার দোস্ত উইং কমান্ডার মাসুদকে বলেছি যে, সিভিল এভিয়েশন আসোশিয়েসন অফ বাংলাদেশ থেকে অন্তত কয়েকটা পাশ জোগাড় করতে। ওই সংস্থার চেয়ারম্যান হচ্ছে এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। সে আমাদের থেকে এক কোর্ষ সিনিয়ার কিন্তু আমার সাথে কখনো পরিচয় হয় নাই। যেহেতু মাসুদ এয়ার ফোর্সের, তাই একটা ভরষা মাসুদ দিয়েছে যে, সে পাশ জোগাড় করতে পারবে। কিন্তু ব্যাপারটা আমি এখনো সিউর হতে পারছি না আসলেই মাসুদ পাশ জোগাড় করতে পারবে কিনা।

কনিকা হয়তো ওর বাড়ি ছাড়ার অনুভুতিটা ঠিক এই মুহুর্তে ততোটা উপলব্ধি করতে পারছে না। কিন্তু যেদিন কনিকা স্টেপ আউট করবে, আমি জানি, ওর সবচেয়ে বেশী মন খারাপ থাকবে। যদি এমন হয় যে, পাশ একটাও পাওয়া গেলো না, তাহলে কনিকাকে একাই সব সামাল দিতে হবে। লাগেজ বুকিং, বোর্ডিং পাশ সংগ্রহ, চেক ইন, ইত্যাদি।  আর যদি একটা পাশও পাই তাহলে শুধুমাত্র আমি ভাবছি মিটুলকে দিয়ে দেবো যাতে মিটুল সবকিছু ম্যানেজ করে মেয়েকে যতোদূর পারে উঠিয়ে দিতে। তা না হলে প্রশ্নের আর ইঙ্কোয়ারীর প্রশ্নে জর্জরীত হতেই থাকবো। আর যদি দুটু পাই, তাহলে সাথে উম্মিকাকে দিয়ে দেবো। আর যদি বেশী ভাগ্যবান হই, আমিও পাই, তাহলে তো আল্লাহর রহমত, আমরা অকে সবাই এক সাথে বিমানে তুলে দিতে পারবো। কনিকা কাতার এয়ার ওয়েজে যাচ্ছে ইনশাল্লাহ।

আজ শুক্রবার। ভেবেছিলাম, বাইরে কোথাও যাবো। কিন্তু কনিকাকে এই মুহুর্তে বাইরে বের করতে চাই না। চারিদিকে করোনার প্রভাব খুব বেশী। কনিকার করোনা টেষ্ট করাতে হবে ফ্লাইটে উঠার ৪৮ ঘন্টা আগে। তাই খুব একটা বের করতে চাই না কনিকাকে। তাই সবাই চিন্তা করছি- আমাদের ছাদের উপরে ঘরোয়া একটা পার্টি করবো যেখানে শুধুমাত্র আমরাই থাকবো। জাষ্ট একটা আউটিং এর মতো আর কি।

একটা সময় আসবে যেদিন আজকের এই অনুভুতিটা হয়তো আমি আগামী ৪ বছর পর যখন পড়বো, তখন আমার অনুভুতি হয়তো হবে পুরুই ভিন্ন। সফলতার গল্পে আমি হয়তো অনেক গল্প করবো এই কনিকাকে নিয়ে। আমি সব সময় উম্মিকাকেও বলে যাচ্ছি, সেও চলে যাক আমেরিকায়। তাহলে দুইবোন এক সাথে থাকলে আমিও কিছুটা ভরষা পাই। কিন্তু উম্মিকার যাওয়ার ব্যাপারটা খুব ধীর। সে মনে হয় বাইরে মাইগ্রেশন করতে চায় না।

দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় আমাদেরকে নিয়ে যায়। নিশ্চয় আল্লাহ আমাদেরকে ভালোবাসেন।

২১/০৭/২০২১-ঈদুল আজহা

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

২১ জুলাই 

 

 

আজ পালিত হলো ঈদুল আজহা।

এই দিনটা এলে সবচেয়ে আগে যার কথা আমার বেশী মনে পড়ে তিনি হচ্ছেন-আমার মা। মা বেচে থাকাকালীন আমি কখনো শহরে ঈদ করিনি কারন মাও ঈদের সময় গ্রাম ছাড়া ঈদ করতেন না। মা যেহেতু ঈদে গ্রামে থাকতেন, আমিও গ্রামেই ঈদ করতাম। আমি সব সময় ভাবতাম-একটা সময় আসবে, মাকে ছাড়াই আমার ঈদ করতে হবে জীবনে, তাই যে কতগুলি সুযোগ পাওয়া যায়, মায়ের সাথে ঈদ করাটা ছিলো আমার সুযোগের মতো। বাড়িতেই কুরবানী করতাম। ঈদের আগে আমি ইসমাইল ভাই অথবা রশীদ ভাইকে টাকা পাঠিয়ে দিতাম যাতে আগেই গরু কিনে রাখেন। ফাতেমার স্বামী সলিমুল্লাহ ওরফে দুদু ভাইকে আমি কখনোই কুরবানীর গরু কেনার দায়িত্তটা আমি দিতাম না কারন তার উপরে আমার টাকা পয়সা নিয়ে আস্থা ছিলো না। কেনো তার উপরে আস্থা ছিলো না, সে কাহিনী বিস্তর, আজ না হয় এখানে নাইবা বললাম। গরু কেনার ব্যাপারে আমার একটা পলিসি ছিলো যে, মেহেরুন্নেসা (অর্থাৎ আমার ইমিডিয়েট বড় বোন সব সময় গরু পালতো। আমি ইচ্ছে করেই রশীদ ভাইকে বলতাম যাতে ওর গরুটাই আমার জন্যে রেখে দেয়। আমি কখনোই সেটার দাম করতাম না। এই কারনে করতাম না, মেহের যে কয় টাকায় বিক্রি করলে খুশী হয় সেটাই হোক আমার আরেকটা সাহাজ্য। মেহের খুব ভালো একটা মেয়ে।

আজ সেই কুরবানীর দিনটা চলে গেলো। শুনেছিলাম, একটা গরু মোট সাত জনের নামে কুরবানী দেয়া যায়। ফলে আমি সব সময় এই সু্যোগে যে কাজটা করি, তা হলো- এক ভাগ দেই আমি আমার প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর নামে, আর বাকী ৬ ভাগ দেই-আমার, মিটুল, আমার ২ মেয়ে, আমার বাবা আর আমার মায়ের নামে। এটাই আমার কুরবানী দেয়ার পলিসি। আজো তাইই করলাম। গরু জবাই, মাংশ কাটাকাটি আর বিলানোর কাজটা আমি নিজ হাতে করি। ৩ টা ভাগ করি, একটা ভাগ নীচেই বিলিয়ে দেই, বাকী ২ ভাগের এক ভাগ আমি রাখি আলাদা করে সমস্ত আত্তীয় সজন আর পাড়া পড়শীর জন্য, আর এক ভাগ থাকে আমার পরিবারের জন্য।

এই কুরবানী এলে আমার আরো একটা কথা প্রায়ই মনে পড়ে। সেই ১৯৭৬-৭৭ সালের কথা। আমাদের তখন কুরবানী দেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। আমি মাত্র ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়ি, আমাদের বাড়িতে ৫ বোন আর মা আর আমি। আমার বড় ভাই তখন সবেমাত্র আমেরিকা গেছেন। আমাদের সব ভরন পোষনের দায়িত্ত আমার বড় ভাইই করেন। কিন্তু শেয়ারে কুরবানী দেয়া কিংবা আলাদা কুরবানী দেয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের ছিলো না। ফলে এই কুরবানীর দিন আমার খুব অসস্থি হতো। অসস্থি হতো এই কারনে যে, আমরা না কারো কাছ থেকে মাংশ চেয়ে আনতে পারতাম, না আমাদের সামর্থ ছিলো কুরবানী দেয়ার। ফলে দিনের শেষে যখন সবাই যার যার বাড়িতে গরুর মাংশ পাকে ব্যস্ত, খাওয়ায় ব্যস্ত, আনন্দে ব্যস্ত, তখন হয়তো আমাদের বাড়িতে ঠিক তেমনটা নাও হতে পারে। আমি এই ঈদের দিনের দুপুরের পর আর কোথাও যেতাম না, কারন আমার কেম্ন জানি নিজের কাছে খুব ছোট মনে হতো। কুরবানী দেয়াটা ধর্মের দিক দিয়ে কি, আর কি না, সেটা আমার কাছে হয়তো অনেক বড় মাহাত্য ছিলো না, কিন্তু আমি যখন দেখতাম, আমার বন্ধুদের বাড়িতে সবাই কুরবানীর গরু নিয়ে কাটাকাটিতে ব্যস্ত, বিকালে মাংশ বিলানোতে ব্যস্ত, আমার তখন মনে হতো, আমিই ব্যস্ত না। গরীব হয়ে জন্ম নেয়াটা একটা অসস্থিকর ব্যাপার। তারপরেও অনেকেই আমাদের বাড়িতে কুরবানীর পর মাংশ পাঠাইতো। বিকালে বা সন্ধ্যায় দুদু ভাই, ইসমাইল ভাই, আমাদের খালাদের বাড়ি থেকে, কিংবা জলিল মামাদের বাড়ি থেকে অথবা পাশের কোনো বারি থেকে অনেকেই মাংশ পাঠাইতো যেটা আমার কাছে একটু খারাপ লাগলেও মা নিতেন। কুরবানী বলে কথা। সবাই মাংশ খাবে, আমাদের বাড়ির মানুষেরা একেবারেই কিছু খাবে না, মা হয়তো এটা ভেবেই মাংশ গুলি রাখতেন। দিনটা চলে যেতো, আমার অসস্থির ভাবটাও ধীরে ধীরে কেটে যেতো। আবার এক বছর পর হয়তো এই অসস্থিটা আসবে।

যেদিন আমার ক্ষমতা হলো কুরবানী দেয়ার, আমি সব সময় গ্রামেই কুরবানী দিয়েছি। আর সব সময়ই আমার সেই দিনগুলির কথা মনে করেছি। আমাদের দিন পাল্টেছে, আমাদের পজিসন পাল্টেছে। মা যখন জীবিত ছিলেন, এমনো হয়েছে মাঝে মাঝে আমি দুটু কুরবানীও করেছি একা।

আজ মা নাই, আমার গ্রামে যাওয়া হয় না। কুরবানী নিয়ে এখন আমার তেমন কোনো আগ্রহও নাই। তবে সবসময় ঢাকাতেই আমি কুরবানী দেই, একা। যদি আমি কখনো কুরবানী নাও দেই, কেউ আমাকে আন্ডার এস্টিমেট করবে না কারন সবাই জানে আমার একটা না, অনেকগুলি কুরবানী দেয়ার সক্ষমতাও আছে। হয়তো কোনো কারনে আমি ইচ্ছে করেই কুরবানী হয়তো দেই নাই। কেউ এটা ভাববে না যে, আমার টাকা নাই তাই কুরবানী দেই নাই। “সময়” এমন জিনিষ। সব কিছু পালটে দেয়।

৮/৭/২০২১-জীবনে হতাশ হওয়ার

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

৮ জুলাই 

জীবনে হতাশ হওয়ার কোনো কারন নাই। একদিন নিজেকে নিজেই বলেছিলাম যে, ভগবান মানুষের জন্য প্রতিটি দিন একই রকম করে কাটাতে দেন না। আজ যে রবিবার আপনি হাসছেন, আগামী রবিবার আপনি নাও হাসতে পারেন, হয়তো সেদিন আপনি হাসিতে আপনার প্রতিটি মুহুর্ত ভরে থাকবে। এই সপ্তাহটা হয়তো আপনার জন্য ভয়ানক অস্থির যাচ্ছে, কে জানে আগামী সপ্তাহটা হয়তো হবে একেবারেই সুন্দর। তাই হতাশ হবার কোনো কারন নাই। প্রতিটি ঝড় কিংবা বিপদের মাঝেও কিছু না কিছু সুসংবাদ থাকে, কিছু না কিছু ভালো জিনিষ আসে। একটা মৃত ঘড়ির দিকে তাকান, দেখবেন নষ্ট ঘড়িটাও দিনে দুবার একদম সঠিক সময় প্রকাশ করে। অপরিষ্কার জল খাবারের অনুপোযোগী হলেও সেটা আগুন নেভানোর কাজে লাগে। বোবা কিংবা বোকা বন্ধুও আপনার অন্ধ জীবনে রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারে।

তারপরেও একটা সময় আসে যখন শুধু নিজের জন্যেই নিজেকে বাচতে হয়। অন্য কারো জন্যে নয়। আমরা সামাজিক কিংবা পারিবারিক জীবনের কথা বলি। ওটা একটা শুধু কন্সেপ্ট যেখানে মানুষ একা থাকতে পারে না বলে সে এই দলবদ্ধ জীবন বা পারিবারিক জীবনটাতে থাকতে চায়। কিন্তু একটা সময়ে সবাই এই জীবনেও হাপিয়ে উঠে। সন্তান, স্ত্রী কিংবা আশেপাশের সবাই যেনো তখন এক ঘেয়েমীতে ভরে যায়। তখন কেউ কারো আদর্শ কিংবা অভিজ্ঞতাকে আর কাজে লাগাতেও চায় না, বরং যেটা নিজেরা ভাবে সেতাই যেনো পরিশুদ্ধ, আর সেটাই করতে চায় সবাই। সন্তানেরা যখন বড় হয়ে যায়, তখন তাদেরকে তাদের মতো করেই ছেড়ে দেয়া উচিত। তাদের চিন্তা ধারা, তাদের পছন্দ কিংবা আশা নিরাশা সবন কিছু তাদের মতো। তাই, আমরা যারা বড়রা তাদের জন্যে দুশ্চিন্তা করি, এটা হয়তো আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে ভাবি যে, ওরা ভুল করছে বা যা করছে সেটা ঠিক নয়। আর এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আমাদের কিছু কন্সেপ্ট বা ধারনা বা উপদেশ ওদের উপর চালাতে চাই যা অহরহই ওরা মানতে চায় না। যখন এমন একটা কনফ্লিক্ট সামনে আসে, তখন আমাদের উচিত আর না এগোনো। সবাইকে যার যার পথে চলতে দিয়ে ঠিক ঐ জায়গাটায় দাড় করানো উচিত যাতে ওরা বুঝতে পারে, আমাদের উপদেশ ঠিক ছিলো কিংবা আমরাই ঠিক ছিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো ঐ সময় কোনো কিছুই আর পিছনে গিয়ে সঠিকটা করা যায় না বলে মনে কষ্ট লাগে বা খারাপ লাগে। কিন্তু ওটা ছাড়া তো আর কিছুই করার নাই। চেয়ে চেয়ে ধ্বংস দেখা ছাড়া যদিও কোনো উপায় নাই, তারপরেও সেটাই করতে দেয়া উচিত যাতে ওরা এটা বুঝতে পারে যে, বড়দের অভিজ্ঞতার দাম ছিলো, উপদেশ গ্রহন করা উচিত ছিলো। তাহলে হয়তো আজকের দিনের এই অধোপতন কিংবা ছেড়াবেড়া জীবনে পড়তে হতো না।

লাইফটায় অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছি আমি নিজেও। নিজের ঘরে যখন কেউ একাকিত্ত বোধ করে সেখানে সময় একেবারেই স্থবির। সেখানে যেটা চলে সেটা হচ্ছে- সময় মত খাওয়া, আর নিজেকে অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখা। এটা একটা সময়ে সবার জীবনেই আসে। আমি যদি বলি, এটা ইতিমধ্যে আমার জীবনেও শুরু হয়ে গেছে, ভুল বলা হবে না।

কেনো বললাম কথাটা। এর নিশ্চয় কোনো কারন তো আছে। আজকের যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আমার কাছে কাম্য নয়। না আমি আশা করেছি। আমার সন্তানদের জন্য আমার থেকে বেশী কেউ ভাবে এটা আমি কখনোই বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু সেই সন্তানেরা যদি কখনো বলে, যে, আমরা তাদের জন্য অভিশাপ,আমরা পশুর চেয়েও খারাপ ব্এযবহার করি, কিংবা আমরা প্ৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা মা ইত্যাদি, এর থেকে বড় পরাজয় আর কিছু হতে পারে না। তবে আমি জানি, জীবনে এ রকমের অনুভুতি সবারই আসে। যখন এই অনুভুতি ভুল প্রমানিত হয়, তখন বেলা এতোটাই বেড়ে যায় যে, কারো কারো জীবনের রাত শেষ হয়ে আরো গভীর রাতে অন্য কোনো জগতে সে চলে যায়।

১৯/০৭/২০২১-ঈদুল আজহার ২দিন আগে

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

১৯ জুলাই 

এই কয়েকমাসে এতো বেশী অভিজ্ঞতা হলো যা আমার জীবনের অনেক প্রাক্টিস আর বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যাদেরকে আমি মনে করি সবাই আমার মতো। অথবা আর যার সাথে আমরা যাইই করি না কেনো, অন্তত আমরা আমাদের সাথে সেই একই প্রাক্টিস গুলি কখনো করতে পারি না। কিন্তু আমার এই ধারনা সমুলে আঘাত খেয়েছে অনেক গুলি কারনে। তাহলে একা একা বলিঃ

(১) মান্নানের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়েঃ মান্নান যে আমার সাথে লুকুচুড়ি করে সেটা আমি জানি। অনেক সময় ভাবি যে, হয়তো সে একটু ভালো থাকতে চায়, তাই একটু আধটু লুকুচুরি করে। আমার অনেক ক্ষতি না হলেও অর্থের দিক দিয়ে একটু তো লাগেই। কিন্তু যেহেতু আমি সামলে নিতে পারি, তাই অনেক সময় কিছু বলি না বা বলতে চাইও না।

আমি যখনই কোনো জমি কিনেছি, মান্নান সেখানে জমির দামটা এমন করে বাড়িয়ে বলতো যাতে আমার টাকা দিয়েই মান্নান ও কিছু জমি সেখান থেকে কিনতে পারে। আমি সেটা বুঝি কিন্তু কিছু হয়তো বলি না। এভাবে মান্নান অনেক জমি শুধু হয়তো আমার টাকা দিয়েই কিনেছে আর সেটা আমার ক্রয় করা জমির সাথেই। কিন্তু এবার যেটা করেছে সেটা মারাত্তক।

মুজিবুর রহমান খান নামে এক ভদ্রলোক আমাদের পলাসপুরের জমিটা কিনতে আগ্রহী হলে আমিও বিক্রি করতে তৈরী ছিলাম। আমার জমির সাথে আমার পার্টনার মুর্তুজা ভাইয়ের জমি আছে। ফলে আমার জমি আর মুর্তুজা ভাইয়ের জমি সহ একটা রফাদফা হয়েছিলো। এর মধ্যে মান্নান আমাকে জানালো যে, মুজিবুর রহমান খান সাহেবের আরো জমি দরকার যা সেলিম নামে এক জন লোকের জমি আমাদের জমির পাশেই আছে কিন্তু ওর জমিতে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় যদি আমাদের জমির সাথে টাই আপ করে খান সাহেবের কাছে বিক্রি করি তাতে আমাদের লাভ হবে। কারন সেলিকমে জমির মুল্য দিতে হবে খান সাহেবের দেয়া জমির দামের অর্ধেক প্রায়। সেলিমদের মোট জমি ছিলো ৩২০ শতাংশ।

এর মধ্যে মান্নান আমাকে জানালো যে, আমরা সেলিমদের জমি থেকে পানি ব্যতিত মোট ১৫১ শতাংশ জমি খান সাহেবকে দিতে পারবো। বাকী ১৬৯ শতাংশ জমি আসলে নদীর পানির মধ্যে যদিও জমিটা রেকর্ডের অন্তর্ভুক্ত। আমি যখন সেলিমদের জমিটা বিনা পরীক্ষায়, বিনা নীরিক্ষায় খান সাহেবকে রেজিষ্ট্রি করে দিলাম, পরে জমি মাপ্তে গিয়ে দেখি যে, মাত্র ৯৮ শতাংশ জমি আছে যা নদীর মধ্যে না। অনেক রাগারাগি আর চাপাচাপির মধ্যে আমি যখন সেলিমদের ধরলাম, শুনলাম আরেক বিরাট ইতিহাস। মান্নান, সেলিম এবং সেলিমের এক চাচাতো ভাই মিলে মোট ৩২০ শতাংশ জমিই কিনে নিয়েছে সেলিমদের আত্তীয় স্বজনের কাছ থেকে অই টাকায় যে টাকা হয় ১৫১ শতাংশের দাম। খান সাহেবকে ১৫১ শতাংশ জমি দেয়ার পর বাকী ১৬৯ শতাংশ জমি ধান্দা করে মান্নানের নামে আর সেলিমের নামে একা পাওয়া অফ এটর্নী নিয়েছে। এর মানে হলো, আমি কোনো লাভ করি নি , লাভ করছিলো মান্নান। যদি অদুর ভবিষ্যতে পানি শুকিয়ে চর জাগে, তাহলে মান্নান এই জমি গুলি চড়া দামে বিক্রি করতে পারবে। অথচ টাকাগুলি খান সাহেবের এবং আমার। খান সাহেব যখন নদীর মধ্যে কোনো জমি নিতে নারাজ হলেন, তখন আমার চর গল্গলিয়া মৌজা থেকে এই বাকী ৫৩ শতাংশ জমি পুরা করে দিতে হবে যার দাম প্রায় তিন কোটি টাকা। এটা কোনোভাবেই আমার সম্ভব হচ্ছিলো না। আমি কেনো এতো গুলি জমি খান সাহেবকে লিখে দেবো যার দাম তিন কোটি টাকার উপরে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিখেই দিতে হবে জেনে আমি পলাশপুরের আক্কাসকে ধরে মান্নান আর সেলিমের কাছ থেকে পরবর্তীতে ওই ১৬৯ শতাংশ জমি ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার নিজের নামে নিয়ে নিলাম। জানি আমার ক্ষতি পুরন হবে না যতোক্ষন পর্যন্ত ওই নদীর জমি শুকিয়ে আসল চেহারায় জমি ভেসে না উঠে। আমি মান্নানকে বারবার এই অ বিশ্বাসের কাজটা কেনো করেছে জিজ্ঞেস করলে তার একটাই উত্তর- ভুল হয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই ভুল হতে পারে না। আমি কখনো ভচাবি নাই যে, মান্নান ও আমাকে এভাবে এতো ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।

পলাশপুরে আমার আরো একতা জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া ছিলো। আর যেহেতু ওই লিজটা আনতে হয় কোনো দুস্ত মানুষের নামে, তাই আমি মান্নানের ভাই নাসিরের নামেই ১০০ শতাংশ জমি আমার টাকায় লিজ নিয়ে এসেছিলাম। মান্নান আমাকে না জানিয়ে হালিম নামে এক লোকের কাছে ২০ লাখ টাকায় জমিটা গোপনে টাকা নিয়ে নিলো। এটা একটা অসম্ভব ঘটনা বলে আমার কাছে মনে হয়েছিলো। কিন্তু মান্নান কাজটা করেছে আমাকে একটু ও জানতে দেয় নাই। যখ ওরে আমি প্রশ্ন করেছি- মান্নানের একটাই উত্তর যে, আমার নাতির অসুখ ছিলো, টাকার দরকার ছিলো, তাই আমি বিক্রি করে দিয়েছি। আমাকে জানানোর কোনো বাধ্য বাধকতা মনে করলো না।

খান ভাই আমাদের পলাশ পুরের জমিটা কিনার সময়ে মোট ৬৩১ শতাংশ জমির বায়না করেছিলো যার মধ্যে মান্নানের ছিলো ৫১ শতাংশ। আমি খান ভাইকে বারবার বলেছিলাম, কখনো আমাকে ছাড়া টাকা পয়সার লেন দেন করবেন না। কিন্তু ওই যে বললাম, সবাই লাভ চায়!! খান সাহেব মান্নানকে মাঝে মাঝে আমাকে না জানিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা হ্যান্ড ওভার করে। একদিন খান সাহেব আমাকে জানালো যে, মান্নান জমিটা কাগজে কলমে কোনো বায়নাও করছে না আবার টাকাও চায়। আমি যখন ব্যাপারটার ভিতরে প্রবেশ করলাম, দেখলাম, ওই খানে মান্নানের জমি আছে মাত্র ৪ শতাঙ্ঘস, আর ওর বোন আর ভাই মিলে আছে আরো ৫ শতাংশ, মোট ৯ শতাংশ। বাকী জায়গাটা আক্কাস নামে ওর এক আত্তিয়ের। কিন্তু আক্কাসকে মান্নান উক্ত ৩৫ লাখ টাকা থেকে কখনো ১ টাকাও দেয় নাই, না মান্নান ওনার কাছ থেকে কোনো পাওয়ার অফ এটর্নী কিংবা অগ্রিম কোনো বায়নাপত্র করেছে। আক্কাস সাহেব যখন জানলো যে, মান্নান ইতিমধ্যে ৩৫ লক্ষ টাকা নিয়ে ফেলেছে, সে তখন (৫১ মানাস ৯) ৪২ শতান্সগ জমির বায়না করে ফেল্লো উক্ত খান সাহেবের সাথে। অর্থাৎ মান্নান জানেই না যে, উক্ত জমি মান্নান আর কখনোই খান সাহেবের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। আমি যখন আজকে মান্নানকে বললাম, খান সাহেবকে ৫১ শতাংশ জমি লিখে দিচ্ছিস না কেনো? তার অনেক উচা গলায় বল্লো, সে আগামীকালই জমিটা লিখে দিতে পারে। যখন বললাম যে, আক্কাস জমিটা অন্য খানে বিক্রি করে দিয়েছে- তখন দেখলাম ওর মুখের ভাব অনেক রক্তিম। কিন্তু লজ্জায় পড়লো কিনা জানি না। ওর আসলে এগুলিতে কোনো খারাপ লাগে না মনে হয়। টাকাটাই ওর কাছে সবচেয়ে বড় মনে হয়। ভাগ্যিস আমি এই ৫১ শতাংশের ব্যাপারে কাহ্নের সাথে কোনো প্রকার কথা বলি নাই। তাহলে এই ৫১ শতাংশ নিয়েও খান আমাকে চাপ দিতো।

মান্নানের এখন টাকা প্রাপ্তির প্রায় সব গুলি রাস্তাই বন্ধ। কোটি কোটি টাকা আমি ওর হাত দিয়ে খরচ করিয়েছি। বারবার বলেছি, অন্য কোনো একটা সোর্স কর যাতে বিপদের সময় একটা ইন কাম আসে। কখনো ব্যাপারটা আমলে নেয় নাই। এবার মনে হয় খুব হারে হারে টের পাচ্ছে যে, ওর টাকার সব গুলি সোর্স প্রায় একেবারেই বন্ধ। দেখা যাক কি করে। আমার কাছে অনেক গুলি কারন দেখিয়ে কিছু টাকা খসানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু এবার আমি অনেক টাইট হয়ে গেছি। কোনো কিছুতেই কোনোভাবেই আর টাকা দেয়া যাবে না। মান্নানের পিঠ প্রায় দেয়ালের মধ্যে ঠেকে যাচ্ছে। তবে এখান থেকে কিছুটা উত্তোরন হয়তো হবে যদি ধলেশ্বরী গ্রীন ভিলেজ প্রোজেক্ট শুরু হয়। কারন ওখানে আমি ওকে ইন করিয়েছি। কিন্তু ওটার ইন কাম বড্ড স্লো।

এবার আসি আমার পার্টনার মুর্তুজা ভাইয়ের কাছ থেকে আম্নার তিক্ত অভিজ্ঞতার ব্যাপারটাঃ

(To be cont...)

২০/০৭/২০২১***-ভরষা

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

২০ জুলাই 

ভরষা করা দোষের নয়। মানুষ যদি মানুষের উপর ভরষা না করে, তাহলে ধ্বংস বেশী দূরে নেই। কিন্তু কারো উপর ভরষা করার আগে সতর্ক থাকা খুবই জরুরী। ইচ্ছাকে ভালোবাসায়, আর ভালোবাসা থেকে সম্পর্ক তৈরী করার সময় এই সতর্ক থাকা ভীষনই প্রয়োজন। কিন্তু তুমি এসবের কোনো কিছুই না জেনে শুধু ইচ্ছাটাকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় তুমি সম্পরকটা করেছো যেখানে তুমি কোনো কিছুই ভাবো নাই। তুমি পরিশ্রমী, তুমি সাহসী যদি কেউ পাশে থাকে, তুমি সৎ সেটা নিজের কাছে এবং আর তোমার জীবনের হিসাব তুমি জানো। আর তোমার মনে যে সপ্ন ছিলো সেটা পুরন করার জন্যই তুমি একটা সমঝোতা করেছো নিজের সাথে নিজের। আর সেটা তুমি সততার সাথে পালনও করছো। তোমার জীবনে এই গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসলে তোমার সামনে কেউ ছিলো না। আর থাকলেও কোনো লাভ হতো না সেটা তুমি হারে হারে জানো। কারন যারা থেকেও ছিলো, তারা আসলে কখনোই তোমাকে মুল্যায়ন করেনি, করতোও না। তুমি অথবা যার সাথে তুমি এমন একটা সম্পর্ক করেছো, তোমরা কখনোই এটাও ভুলে যেতে চাও নাই যে, এই সম্পর্কের সামাজিকভাবে আসলে কোনো স্বীকৃতিও নাই। কিন্তু তোমার চোখ বন্ধ করে ভরষা করার ফল আমি কখনোই সেটা বৃথা যেতে দিতে চাই না। কারন তুমি অন্তত তোমার সব কিছু দিয়েই আমাকে মেনে নিয়েছো। এখানে গাদ্দারী করার কোনো প্রকারের অবকাশ বা সাহস আমার ছিলোনা, নাই আর ভবিষ্যতে থাকবেও না। ভদ্রতার পিছনে আমার কোনো প্রকার মুখোস কিংবা শয়তানীও নাই। কারন আমি জানি, এই জগতে আমাকে ছাড়া তোমার আর কেউ নাই, হোক সেটা তোমার জন্মদাতা বাবা বা মা অথবা তোমার রক্তের কেউ। এই অবস্থায় আমি তোমাকে ফেলে গেলেও আমার চোখ বারবার ফিরে তাকাবে পিছনে যেখানে তুমি পড়ে আছো। আমি সেটা কখনোই করতে পারবো না। ভাবো তো একবার- আমি চলে যাচ্ছি, তুমি চেয়ে চেয়ে দেখছো আমার নিষ্ঠুরতা, আর তুমি ভাবছো, তোমার সারাটা দুনিয়া এখন অন্ধকার। তোমার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে, তুমি ভাষাহীন হয়ে যাবে, তখন তোমার চোখ শুধু কথা বলবে। আর চোখের ভাষা তো একটাই। জল। এই জল দেখার জন্যে আমি কখনো প্রস্তুত নই।

এই প্রিথিবীতে কে আছে তোমার, আর কে নাই তাদের সবার শক্তি, ভালোবাসা আর ভরষা যোগ করলেও সেই ভরষার সাথে একদিকে শুধু আমি, এটাই তোমার কাছে পৃথিবীর সর্বোত্তম শক্তি। আর তুমি এতাই প্রমান করেছো এই পারুর কেসে। সারাটা গ্রাম, আইন, থানা, টাকা পয়সা, নেতা, মাদবরী, সন্ত্রাসী, চোখ রাংগানি একদিকে আর তুমি একাই একদিকে ছিলে। আর সেই শক্তিটাই তুমি প্রতিনিয়ত পেয়েছো এই ভরষার মানুষটার কাছে। কারন তুমি জানো, আর সবাই পালিয়ে গেলেও আমি অন্তত পালাবো না।

কেনো তুমি অন্য কারো চোখে চোখ রাখতে পারো না, কেনো তোমার মনে অন্য কারো স্থান হয় না, কখনো কি এটা খুব মনোযোগ সহকারে নিজেকে প্রশ্ন করেছো? ধর্মের কথা আলাদা, আল্লাহর দোহাই আলাদা ব্যাপার। কিন্তু এর বাইরেও তো অনেক লজিক আছে। সেই লজিক দিয়েও কি কখনো ভেবেছো কেনো হয় না সেগুলি? এর উত্তর একটাই- টোটাল সারেন্ডার। মানে সম্পুর্ন আত্তসমর্পন। যখন কোনো মানুষ তার নিজের মন তৃপ্তিতে থাকে, যখন চোখ ভালো ঘুম পায়, যখন শরীরের চাহিদা পূর্ন হয়, তখন শরীর, দেহ, মন, কিংবা আত্তা কারো দিকে ছুটে যেতে চায় না। যেমন ছুটে যায় না চাঁদ পৃথিবীর বলয় থেকে, কিংবা প্রিথিবী সূর্যের বলয় থেকে। তাদের যতোটুকু শক্ত্র প্রয়োজন তাদের নিজ নিজ অক্ষে চলার, ঠিক ততোটাই তারা পায়। তাহলে আর অন্য কোনো গ্রহের কিংবা নক্ষত্রের দারস্থ হবার কি প্রয়োজন?

মানুষ তখনি ছুটে যায় এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে যখন সে তার সঠিক তরী খুজে না পায়। আর সঠিক ঘাটের সন্ধান যখন একবার কেউ পায়, তার আর অন্য ঘাটে যাওয়ার অর্থ ভুল ঘাটে চলে যাওয়া। ভুল ঘাট মানুষকে ভুল পথেই নিয়া যায়। আর কেউ যখন একবার ভুল পথে যাত্রা শুরু করে, সেখান থেকে ফিরে আসার অন্য কোনো বিকল্প রাস্তা হয়তো তার জানাই নাই। যদি সেই অচেনা রাস্তায় একবার কেউ পড়ে যায়, সেখানে প্রতিটি মানুষ তার অচেনা। অচেনা মানুষের কাছে চোখের জলের কোনো মুল্য থাকে না।

আর মুল্যহীন জীবনে সপ্ন তো দূরের কথা, বেচে থাকাই কষ্টের। কষ্টে ভরা জীবন যখন সামনে চলতে থাকে, তখন মানুষের এই জীবনের প্রতি মায়া হারিয়ে ফেলে, ভগবানের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। ঈশর আছে এটাই তখন আর বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। তারপরেও দূর্বল চিত্তের মানুষেরা যাদের কোনো কুল কিনারা আর থাকে না, যেমন লামিয়া বা শারমিন, তারা ওই অচেনা, অসুন্দর জীবনকেই মানিয়ে নিতে শুরু করে। সেখানে তখন আর ভগবানের কোনো অস্তিত্ত থাকে না বা তারা ভগবানকে মানেই না। ধর্ম পালন তো দুরের কথা।

তোমার দুষ্টুমি যেমন পাগলামী, আমার কাছে তোমার পাগলামীও তেমন মিষ্টি, তোমার কান্নাও আমার কাছে ঠিক ওই রকমের। তোমাকে ভালো রাখাই আমার কাজ। আর সেই ভালো থাকাটা নির্ভর করে তোমার আত্তার উপর তুমি কতোটা তৃপ্ত। এই প্রিথিবী থেকে চাঁদ যতো সুন্দর মনে হয়, নীল আকাসের সাথে চাদকে যেমন কোনো এক যুবতীর কপালের টীপ মনে হয়, অথবা অনেক দূরের কাশবন যখন সাদা মেঘের মতো হাওয়ায় দুলে দুলে মনকে দোলায়িত করে, যখন ওই চাদে গিয়ে পা রাখা যায়, কিংবা কাশবনের মাঝে হাজির হওয়া যায়, তখন তার আসল রুপ দেখে দম বন্ধ হয়ে আসে। সেই চাঁদ আর কাশবন কেনো জানি মনে হয় এটা একটা খারাপ সপ্ন ছিলো। আমরা সেখানে বসবাস করতে পারি না। আবার ছুটে আসতে চাই এই গাছ গাছালী ভর্তি নোনা সেঁতসেঁতে সোদা গন্ধের মাটিতে যেখানে বর্ষায় গাছের পাতা বেয়ে বেয়ে টিপ টিপ করে ফোটা ফোটা পানি আমাদের নাকের ডগা দিয়ে বুকের ভিতরে এসে অন্তর শীতল করে দেয়।

একটা মানুষের শান্তিতে আর সুখে বসবাসের জন্য এই পৃথিবীর অনেক কিছু লাগে না। প্রিন্সেস ডায়ানার একেকটা নেকলেসের দাম ছিলো কোটি কোটি টাকার। তার একেকটা ড্রেসের দাম ছিলো হাজার হাজার ডলার। সাথে ছিলো রাজ প্রাসাদ। কি ছিলো না তার। ছিলো সবুজ চোখের মনি, ঈশ্বর যেনো তাকে একাই রুপবতী করে পাঠিয়েছিলো। অথচ মনে তার কোনো শান্তিই ছিলো না। সেই শান্তির খোজে শেষতক রাজ প্রাসাদ ছাড়তে হয়েছে। অন্যের হাত ধরতে হয়েছে। আর মাত্র ৩২ বছর বয়সেই তাকে এই প্রিথিবী ছাড়তে হয়েছে। যদি বাড়ি, গাড়ি, জুয়েলারী, আর টাকা পয়সাই হতো সব সুখের মুল চাবিকাঠি, তাহলে ডায়নার থেকে সুখী মানুষ আর এই প্রিথিবীতে কেউ ছিলো না। কিন্তু সেটা কি আসলেই সুখী ছিলো?

একটা তরকারীতে নুন কম হতে পারে, একটা পরোটা পুড়ে যেতে পারে, তার স্বাদ কিংবা মজা হয়তো একটু হেরফের হতেই পারে কিন্তু সেটা হয়তো একদিন বা দুইদিন। কিন্তু ভালোবাসা আর মহব্বতে যখন নুনের কমতি হয়, পুড়ে যায়, তখন জীবনের মজাটাই শেষ হয়ে যায়। আর জীবনের মজা যখন শেষ হয়ে যায়, তখন এসি রুমেও ভালো ঘুম হয় না। নীল আকাশ দেখেও কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে না। তখন যেটা মনে হয় তা হচ্ছে বিষাদময় রুচী। সেই রুচীতে আর যাই হোক পেট ভরে না। আর পেটে ক্ষুধা রেখে কোনোদিন কারো ভালো ঘুম হয়েছে তার কোনো প্রমান নাই।

আমি তোমার জীবনে সেই রকমের একটা অলিখিত ভরষা। এই ভরষার কোনো ডেফিনিশন নাই। এই ভরষার কোনো আইন গত দিক নাই বটে কিন্তু আমার নিজের অনেক দায়িত্তশীলতা আছে যেখানে আমিই আইনপ্রনেতা, আর আমিই সবচেয়ে বড় বিচারক। হয়তো সমাজকে আমি তুরি দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারবো না, কিন্তু আমি সেটাই করততে পারি যাতে তুমি তুড়ি দিয়ে সবাইকে এটাই করতে পারো যে, তুমি নিজেও একটা শক্তি।

আজ তুমি সেই বিগত বছরগুলির দিকে তাকিয়ে দেখো? তুমি দেখতে পাবে যে, সেইসব বছরগুলিতে অনেক ঝং ধরা ছিলো। আগাছায় ভরা একটা কঠিন পথ ছিলো। কিন্তু আজ থেকে ৫ বছর পরেরদিন গুলি দেখো, সেখানে প্রতিদিন তোমার জীবন মোড় নিয়েছে। বাকেবাকে সমস্যা ছিলো কারন সমস্যা গুলি হয়তো আমার নজরে ছিলো না। কিন্তু আজ তোমার সেই বছরগুলির সাথে তুলনা করলে স্পষ্ট দেখতে পাবে, আকাশের মেঘ তোমার ঘরেই রংধনু হয়ে একটা বাগান তৈরী করেছে। সেই বাগানে তুমি যখন খুসী যেভাবে খুসী বিচরন করতে পারো। এই বাগানের একচ্ছত্র মালিকানা তোমার নিজের। এখানে একটা আম খেলেও শরীর চাংগা হয়ে উঠে, এখানে একটা ডিম খেলেও শতভাগ কাজ করে। অথচ আজ থেকে ৫ বছর আগে সেই একটি আম কিংবা একটি ডিম এমন করে খেলেও শতভাগ কাজ করতো না। কারন তখন ভরষার জায়গাটা ছিলো একেবারেই অনিশ্চিত। যা এখন পুরুটাই উলটা। আর এটাই খাটি ভরষা।

এখানে শুধু একটা ব্যাপারই চিন্তার বিষয় যে, যে মানুষটার কারনে কখনো নিজেদেরকে অসহায় মনে হয় নাই, কোনো দুশ্চিন্তা গ্রাস করে নাই, যখন সেই মানুষটা চলে যায়, তখন সেইই দিয়ে যায় যতো অসহায়ত্ব আর দুশ্চিন্তা। আর এটা আমার মাথায় সব সময় কাজ করে। এর জন্যে সমাধান একটাই- যা আমি অন্যদের বেলায় করেছি। সাবলম্বিতা। এবং দ্রুত। তোমাদের কাজ ভরষা করা আর আমার কাজ সেই ভরষার স্থানটা স্থায়ী করা।

যেদিন মনে হবে তুমি সাবলম্বি, তুমি নিজে নিজে একাই চলার ক্ষমতা রাখো, তোমার সমাজ তোমাকে স্পর্শ পর্যন্ত করতে দিধা বোধ করবে, সেদিন আসলে আমার দায়িত্ত প্রায় শেষ হয়েছে বলে আমি মনে করবো যেটা এখন প্রায়ই ভাবি আমার এই পক্ষের মানুষগুলির জন্য। তখন যেটা হবে- তুমি স্বাধীন পাখীর মতো এক ঢাল থেকে একাই উড়ে গিয়ে আরেক ঢালে বসতে পারবে। কিন্তু পাখীরা যখন একবার নিরাপদ গাছে বাসা বেধে ফেলে, যতোদিন ওই গাছটা থাকে, কেউ আর কেটে ফেলে না, কিংবা আচমকা কোনো ঝড়ে যখন গাছটা আর ভেংগে পড়ে না, ততোক্ষন অবধি সেই ভাষাহীন অবুঝ পাখীরাও তাদের নীড় পরিবর্তনে মনোযোগ দেয় না না। তারা সেখানে অভয়ারন্য তৈরী করে সেই জংগল সাম্রাজ্যের অধিকর্তা হিসাবেই জীবন পাড় করে দেয়।

ওই গাছটাই তখন তার ভরষা। ওই গাছ জায়গা দেয় বাসা করার, ওই গাছ ঢাল পেতে দেয় নিবিড় করে বসার। ওই পাখী চলে গেলেও গাছের না হয় কোনো ক্ষতি, না হয় তার ফলনে কোনো বিঘ্নতা। ঠিক সময়ে সেই গাছ ফুল দেয়, ফল দেয়, আর দেয় ছায়া। ঝড়ের দিনেও সে হয়তো অন্য আরো অনেক পাখীর জন্যে অভয়ারন্য স্রিষ্টি করে বটে কিন্তু সেই গাছ কোনোদিন অভিযোগ করে নাই, কেনো অন্য আর কিছু পাখী তার ঢাল ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলো। তবে যদি আবারো সে ফিরে আসে, গাছের কোনো অভিযোগ থাকে না। কিন্তু যদি কোনো ঢালই আর খালী না থাকে, সেটা তো আর গাছের দোষ নয়।

ভরষার স্থান কেউ ত্যাগ করলে গাছের কি দোষ!!

৯/৭/২০২১-কনিকার আগাম জন্মদিন এবং পার্টি

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

৯ জুলাই 

পড়াশুনার জন্য কনিকার বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি ধীরে ধীরে প্রায় সমাপ্তির দিকে। ভিসা হয়ে গেছে, টিকেট হয়ে গেছে, ইউএমবিসি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ব্যাপারে সব ফরমালিটিজ শেষ হয়ে ভর্তিও হয়ে গেছে, ওর জন্য এক বছরের আগাম টিউশন এর নিমিত্তে ১৪ হাজার ডলারের মধ্যে ১৩ হাজার ডলার ফিও আমি ছোট ভাই (মোস্তাক আহমেদ) এর কাছে রেখে দিয়েছি, ভ্যাকসিনেশনের সবকটা টীকাও প্রায় নেয়া শেষ। যাওয়ার সময় যে কতগুলি ডলার ওর হাতে দিয়ে দেবো সেটারও প্রায় ব্যবস্থা করে রেখেছি। এখন শুধু আগামী ১০ তারিখের দিবাগত রাত মানে ১১ অগাষ্ট ২০২১ তারিখে ভোর ৪টায় ওর কাতার এয়ার ওয়েজে উঠা বাকী ইনশাল্লাহ। একাই যাবে কারন এই করোনাকালীন সময়ে আমরা কেহই ভিসা পাচ্ছি না বিশেষ করে ভিজিটিং ভিসা। আবার ব্যবসায়ীক ভিসার জন্য যিনি আমাকে আমেরিকা থেকে ইনভাইটেশন পাঠাবেন, তাদের পক্ষেও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বিধায় আমি ব্যবসায়ীক ভিসার জন্যেও এপ্লাই করতে পারছি না। ফলে কনিকাকে একাই যেতে হবে আমেরিকায়। একটু অসস্থিতে আছি বটে কিন্তু কনিকার উপর আমার ভরষা আছে যে, কনিকা একাই যেতে পারবে ইনশাল্লাহ। 

কনিকার জন্মদিন আসলে এই সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে হবার কথা। কিন্তু কনিকা তখন দেশেই থাকবে না। গতবার ওর জন্মদিনটা ভালোমতো কভিডের কারনে পালন করতে পারিনি। এটা নিয়ে ওর কোনো কষ্ট ও ছিলো না। কিন্তু এবার যেনো ওর মন খারাপ হচ্ছিলো যে, ইচ্ছে করলেও সে তার জন্মদিনটা ঢাকায় পালন ক্রতে পারবে না বলে। কনিকার আফসোস থাকবে যে, ওর এ বছরের জন্মদিনটা সে আমেরিকায় থাকায় সবার সাথে পালন করা সম্ভব না। মন খারাপ করবে, তাই আমরা ওর আগাম জন্মদিন এবং ওর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে সবাইকে একবার দাওয়াত করে খাওয়ানোর জন্য যে অনুষ্ঠানটা করার প্ল্যান করেছিলাম, সেটা এক সাথেই করলাম আজ। প্রায় ৫০/৫৫ জন্য গেষ্ট এসেছিলো, আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার মুর্তজা ভাই এবং তার স্ত্রীও এসেছিলেন। সময়টা ভালোই কেটেছে।

চৈতীর কয়েকদিন আগে বিয়ে হয়েছিলো। তার জামাই সজীব, ননদ (সুচী), দেবর (সানিদ)ও এসেছিলো। মান্নাদেরকে আমি সব সময়ই আমাদের যে কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেই। এবারো তার ব্যতিক্রম হয় নাই। মান্নার জামাই বাবু খুব ভালো একটা ছেলে। আগে সিটি ব্যাংক এনএ তে চাকুরী করতো, কাল শুনলাম, হাবীব ব্যাংকে নতুন চাকুরী নিয়েছে। অত্যান্ত ম্যাচিউরড একটা ছেলে। ওর বিয়েটা আমিই দিয়েছিলাম মান্নার সাথে। ওর বিয়ে নিয়ে চমৎকার একটা উপাখ্যান তৈরী হয়েছিলো, সেটা আরেকদিন লিখবো।

সাজ্জাদ সোমা ওর বাচ্চারা আর সনি এবং তার জামাই সহ বাচ্চারা সব সময়ই আমাদের বাসায় আসতে পছন্দ করে, ওরাও বাদ যায় নাই। কনিকার জন্য ভালো একটা সময় কেটেছে আমাদের সবার। এমন ঘটা করে হয়তো আগামী ৫ বছর আর ওর জন্মদিন পালন করা হয়তো সম্ভব হবে কিনা জানি না।

কভিড-১৯ এর প্রভাব হটাত করে দেশে মহামারীর লক্ষন দেখা দিচ্ছে বলে সরকার কঠিন লক ডাউন দিয়েছে। যদিও আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য এটা বাধ্যতামূলক নয়, তারপরেও আমি ইচ্ছে করেই এই কয়দিন ফ্যাক্টরীতে যাচ্ছি না। বাসায় বসে ডায়েরী লিখি আর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ব্যাপারে অনেক পড়াশুনা করছি। সাথে ইউটিউব থেকে সেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ভিডিও ফুটেজগুলিও দেখার চেষ্টা করে ঐ সময়টাকে বুঝবার চেষ্টা করছি। আনা ফ্রাংক এর ডায়েরীর উপর একটা মুভি হয়েছে, সেটাও দেখলাম। আইখম্যানের উপর প্রায় শতাধিক ট্রায়াল হয়েছে, সেগুলিও দেখলাম। খুব কঠিন সময় ছিলো দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়টা।

যাই হোক যেটা বলছিলাম, কনিকার পর্ব। কনিকা তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রায় লাখখানেক টাকার ক্যাশ গিফট পেয়েছে। আমি চাই নাই কেউ ওকে গিফট করুক কারন এসব গিফট আসলে কনিকার জন্য এখন আর খুব একটা প্রযোজ্য নয়, সে এগুলি বিদেশ নিতেও পারবে না আর আমরাও এগুলি আগামী সময়ে সংরক্ষন করতে পারবো না। তাই গেষ্ট যারা এসেছিলো, তারা সবাই কনিকাকে ক্যাশ টাকাই গিফট করেছে। আর এ কারনেই ওর গিফট এর টাকা এতো বেশী উঠেছিলো।

কনিকা খুব ফুরফুরা মেজাজে আছে। কারন ও যা যা চেয়েছে যেমন দেশের বাইরে ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার, সেটা সে একাই ম্যানেজ করেছে, কোনো কিছুতেই কোনো বাধার সৃষ্টি হয়নি, ওর জন্মদিনটাও ঘটা করে পালন করা হলো, আর আফসোস থাকবে না,  আবার বিদেশ যাওয়া উপলক্টাষে সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হলো, ওর নিজের ও ভালো লেগেছে,  সব কিছু আল্লাহর রহমত, বাকীটা ভালোয় ভালোয় সব হলেই আলহামদুলিল্লাহ।

২৯/০৬/২০২১-আমার গ্রাম (১৯৭৭ সাল)

অফিসেই ছিলাম। কেনো জানি হটাত করে খুব গ্রামে যেতে ইচ্ছে করলো লায়লা আর সফুরা খালাকে দেখার জন্য। বহুদিন গ্রামে যাই না। প্রায় এক যুগ অথচ মাত্র ১৫ মিনিট লাগে গ্রামে যেতে। মা যখন বেচে ছিলেন, তখন গ্রাম আমাকে চুম্বকের মতো টানতো। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার হলেই আমি গ্রামে ছুটতাম মাকে দেখার জন্য যখন মা গ্রামে থাকতেন। কোনো ঈদই আমি শহরে করতাম না। মাকে দেখার সুবাদে আমার গ্রামের সেই পরিচিত মানুষগুলির সাথে আমার দেখা হতো। মানুষগুলি আমাকে বুক ভরা শ্রদ্ধ্যা আর মোহনীয় একটা ভালোবাসার বহির্প্রকাশ করতো। আমি যখন গ্রামে যেতাম, মায়ের সাথে বসে গল্প করতাম, বাড়িটার অবস্থা কি সেটা ভালো করে পরীক্ষা করতাম যাতে ঝড় কিংবা বৃষ্টিতে মায়ের কোনো ভয় না থাকে। মা ঝড়কে খুব ভয় পেতেন। আকাশে ঝড়ের আভাষ দেখলে প্রথমেই আমার মনে পড়তো মায়ের কথা। মা বোধ হয় এখন ভয় পাচ্ছে। সেই ২০০২ সালের কথা। এখন ২০২১ সাল। এর মাঝে দু একবার গ্রামে গিয়েছি নিতান্তই একটা অতিথির মতো। এখন গ্রামে গেলে লায়লার বাসা পর্যন্ত গিয়ে ওর সাথে কথাবার্তা বলেই মনে হয় আমার গ্রামের ভ্রমন শেষ। অনেকবারই একেবারে বাড়ির আস্তানা থেকে ফিরে এসেছি, হয়তো বাড়িতে ঢোকার ইচ্ছেও হয় নাই। এখন বাড়িটাতে থাকে আমার এক অবিবাহিত ভাগ্নে যে সারাদিন শুধু গাজা খায়। গাজায় কি সুখ সেটা আমি জানি, তবে বেশীদিন গাজা খেলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। সে তখন নিজেই গাজায় পরিনত হয়। যেতে ভালো লাগে না। চুরি ওর অভ্যাস, গাজা ওর খাবার আর মথ্যা কথা বলা ওর স্বভাব। ফলে ওখানে গেলে মনটা খারাপ হয়ে যায়, যেতে ইচ্ছে করে না।

আজ হটাত করেই আবার ইচ্ছে করে গ্রামে আসলাম। গ্রামটাকে আমি চিনতেই পারছিলাম না। অসংখ্য বাড়িঘর যত্রতত্র এখানে সেখানে উঠে গেছে। পায়ে চলার রাস্তাটাও আর আগের মতো নাই। আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই ১৯৭৮/৭৮ সালের আমার গ্রামের বিন্যাশ। গ্রামের একেবারে পুর্ব পাশে ছিলো দৌলত মেম্বারদের বাড়ি যেখানে একটা গুচ্ছ পরিবার থাকতো। তাদের বাড়ির ঠিক পশ্চিম পাশেই ছিলো ইয়াকুবদের বাড়ি। পরে শুনেছি এই ইয়াকুব নাকি মেম্বার হয়েছিলো তাই ওদের বাড়ির নাম এখন ইয়াকুব মেম্বারদের বাড়ি বললেই সবাই চিনে।  ইয়াকুবদের বাড়ি পার হয়ে আরো পশ্চিমে এলে পড়ে খালেক এবং সেকান্দরদের বাড়ি। সেকান্দরকে আমি মামু বলে ডাকতাম। এই সেকান্দর মামু এমন একজন মানুষ ছিলেন যে, সবার সাথেই তিনি মিশতে পারতেন। বেশ গরীব হলেও উচ্ছৃঙ্খল ছিলেন না। প্রতিদিন আমরা স্কুলের মাঠে খেলতে গেলে, তাঁকে সেখানে পাওয়া যেতো। স্কুলের মাঠ ছিলো বড়দের তাশ খেলার আড্ডা আর ছোটদের বল খেলার প্রতিযোগিতা। সরগরম হয়ে উঠতো স্কুলের মাঠ। যারা খেলতেন না, তারাও কেউ কেউ হুক্কা বিড়ি নিয়ে মাঠের চারিদিকে খেলা দেখতো যেনো প্রতিদিনই ম্যারাডোনার আর মেসির খেলা হচ্ছে। এই ফুটবল খেলায় আমি আর মুসা একটা ট্রিক্স সবসময় করতাম যাতে আমি আর মুসা সব সময় একই টিমে থাকি। সেটা পরে বলি। যেই না মাগরেবের আজান পড়লো, সবাই যার যার বাড়িতে যাওয়া। অদ্ভুত একটা সময় পার হয়েছে তখন।

সেকান্দর মামুদের বাড়ির পশ্চিমেই ছিলো আরজুদের বাড়ি। আরজুদের পেশা ছিলো মাছ বিক্রি করা। আরজুরা আমাদের থেকে অনেক বয়সে বড় ছিলো। আমাদের গ্রামের বেশীরভাগ মানুষেরই পেশা ছিলো মাছ ধরা আর মাছ বিক্রি করা। কিন্তু কোনোভাবেই এটা জেলেপাড়ার মতো না। আরজুদের বাড়ির উঠোন ছিলো অনেক বড় আর এই উঠোনের চারিদিকে ছিলো ওদের অন্যান্য পারিবারিক বাড়িঘর। আরজু মাঝে মাঝে এমন করে মদ খেতো যে, বাড়ির বড়রা ওকে অনেক মারলেও আরজু বেহুশ অবস্থায় উঠোনে বৃষ্টিতে ভিজতো। সবাই ভাবতো মদ খেয়ে বেহুস হলে উঠোনে বৃষ্টিতে ভিজিয়ে রাখতে হয় মনে হয়। আরজু তখনো বিয়ে করে নাই। আরজুদের বাড়িকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিন দিকে একটু এগুলেই নতুন একটা বাড়ি উঠেছিলো। ওরা আমাদের গ্রামের বাইরে থেকে মাইগ্রেট করে সবেমাত্র এই গ্রামে এসেছে। সে পেশায় ছিলো গ্রাম্য ডাক্তার, নাম নুরু ডাক্তার। বর্তমানে সেই নুরু ডাক্তারের বাসা রাজেন্দ্রপুর এবং তার এক ছেলে শাহীন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে রাজনীতি করে। যাই হোক, আরজুদের বাড়ির পশ্চিমেই ছিলো ফুল্মতি আপারদের বাড়ি। ফুল্মতি আপা আমার খালাতো বোন। তাদের বাড়িটা ফজলুদের বাড়ি নামে পরিচিত ছিলো। ফজলুরা তিন ভাই ছিলো। এখন তারা আর কেউ বেচে নাই। তাদেরও পেশা ছিলো মাছ বিক্রি তবে কৃষি কাজও করতো ওরা। ফুলমতি আপার জামাই এর একটা নেশা ছিলো। মাঝে মাঝেই অন্য মাইয়া লোক নিয়া মসকরা করতো। খারাপ জায়গায়ও মনে হয় যেতো। সবাই ওকে একটু অন্য নজরেই দেখতো বলে আমার ধারনা। ফজলু ভাইদের বাড়ির পশ্চিমে বেশ কিছুটা জায়গা খালি ছিলো। হেটে হেটে এলে প্রথমেই পড়তো জামাল, শাখাওয়াতদের বাড়ি। জামালকে আমি খুব বেশী দেখি নাই। জামাল ১৯৭২ সালের পরে আমাদের গ্রামে আর দেখা যায় নাই। জামাল ছিলো আসল মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে জামাল যুদ্ধে গিয়েছিলো। সম্মুখ সমরে সে অংশ নিয়েছিলো। দেখতে খুব সুন্দর ছিলো জামাল। আর স্বাস্থ্য ছিলো একদম সঠিক যুবকের মতো। অনেকে বলে যে, জামালকে কেউ মেরে ফেলেছে অথবা জামাল ইচ্ছে করেই আর এই গ্রামে ফিরতে চায় নাই। আমার ধারনা, জামালকে কেউ মেরে ফেলেছিলো কারন ১৯৭২ সালে তাঁকে এক পরদেশী মেয়ের সাথে একবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গিয়েছিলো। জামালের ভাই শাখাওয়াত, করিম (ডাক নাম বাছন), রুপচান এরা গ্রামেই থাকতো। বর্তমানে রুপচান বিদেশ থাকে, শাখাওয়াত মারা গেছে। করিম (বাছন)ও মারা গেছে। করিমকে সবাই বাছন বলেই ডাকতো। তিনি আমাদের থেকে অনেক বয়সে বড় ছিলো। বাছনকে আমি কাকা বলে ডাকতাম। আমি যখন আর্মিতে চাকুরী করি কমিশনড অফিসার হিসাবে, হটাত একদিন দেখলাম বাছন কাকা সোনালি ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট কর্পোরেট ব্রাঞ্চে সিকিউরিটির কাজ করেন। আমাকে দেখে উনি খুব খুশী হয়েছিলো যে, তারই এক পরিচিত মানুষ আর্মিতে অফিসার এবং সেই সেনানীবাসেই তার চাকুরী। খুবই সমীহ করতেন আমাকে। আমিও কাকা বলতাম, উনিও আমাকে কাকা বলতেন।

এই জামালদের বাড়ির উত্তর দিকে জরাজীর্ন একটা বাড়ি ছিলো জামালদেরই এক আত্তীয়ের, নামটা ঠিক মনে করতে পারছি না এই মুহুর্তে। সম্ভবত শাখাওয়াতদের বাড়ি ছিলো ওটা। খুব গরীব ছিলো শাখাওয়াতরা। জামালদের বাড়ি আর ঐ শাখাওয়াতদের বাড়ির মাঝখান দিয়েই গ্রামের হেটে চলা রাস্তাটা পশ্চিম দিকে চলে গেছে। জামালদের বাড়ির পশ্চিমেই ছিলো রফিক মাষ্টারদের বাড়ি। রফিক মাষ্টারকে আমি ভাইও বলতাম আবার স্যারও বলতাম। কারন তিনি আমার বড় ভাইয়ের সমসাময়ীক আবার আমার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। একটু তোতলা ছিলেন কিন্তু খুব ভালো মানূশ ছিলেন। তার একটা ছেলে ছিলো নাম, কাজল, আর একটা মেয়ে ছিলো। রিফিক ভাইয়ের স্ত্রী খুব মিষ্টি চেহাড়ার ছিলেন। বর্তমানে কাজল একটা দূর্ঘটনায় পড়ে প্রায় প্যারালাইসিস। হামদর্দে চাকুরী করতো। রফিক ভাই চাকুরী থেকে অবসর নিয়েছেন। অনেক বয়ষ্ক মানুষ, আমার অফিসে প্রায়ই আসেন এবং গল্প হয়, ভালো লাগে। রফিক ভাইদের বাড়ির ঠিক পশ্চিমে ছিলো আরদশ আলীদের বাড়ি। ওরা চার ভাই এবং কোনো বোন নাই ওদের। রফিক ভাইদের বাড়ি থেকে শুরু হয় “বড় বাড়ি”। এই আরদশ আলীর অন্যান্য ভাইয়েরা হলো সার্থক আলী, মোনজর আলী, সুন্দর আলী আর একজন, নামটা মনে পড়ছে না। এই বাড়ির সব বউরা প্রায় আসর নামাজের পর ধান বারা বানতো। ওরা বেশ সচ্ছল ছিলো। এদের বাড়ির দুই ধার দিয়া উত্তর দিকে যাওয়া যেতো। রফিক ভাইদের বাড়ি আর আরদশ আলীদের বাড়ির মাঝে দিয়েও উত্তর দিকে নামা যেত আবার আরদশ আলীদের বাড়ির পশ্চিম ধার দিয়েও উত্তর দিকে নামা যেতো। এই দুই ধারের যে কোনো রাস্তা দিয়েই উত্তর দিকে প্রায় ২০০ গজ হেটে গেলে দুটু বাড়ি পড়তো। একটা আমাদের বাড়ি আর তার সাথে আম্বর আলী কাকাদের বাড়ি। এই দুটু বাড়ি আসলে গ্রাম থেকে একটু আলাদা থাকায় সবাই “টেক্কা বাড়ি” বলে জানতো। আমাদের বাড়ি থেকে গ্রামের দিকে তাকাইলে গ্রামের পুব পাশ থেকে শুরু করে পশ্চিম পাশের বাড়ি পর্যন্ত সব দেখা যেতো। যাই হোক, এই আরদশ আলিদের বাড়ির উঠোন ছিলো বেশ বড়। আমরা ওখানে “কুতকুত” খেলতাম। আর উঠোনের ঠিক দক্ষিনে একটা দোকান ছিলো। এই দোকানে কেউ চা খেতে বসতো, ক্রেউ বিড়ি খাইতো, আর আমি মাঝে মাঝে শুধু মানুষদেরকে লক্ষ্য করার জন্য বসে থাকতাম কারন কোন মানুষ কি কারনে বসে থাকে, বসে বসে কি কথা বলে, কেনো বলে, কার বাড়িতে কি সমস্যা, কার সাথে কার ঝগড়া, কার সাথে কে কি মজা মারতাছে, কোথায় কার কি পরিকল্পনা সব জানা যেত। আমি বেশ ছোট ছিলাম বলে আমাকে একটা বোকা বা আহাম্মক মনে করে আমার সামনেই সবাই সব কথা বলতে পারতো। আমি মনে মনে এসব ভাবতাম আর মানুষ গুলিকে বুঝবার চেষ্টা করতাম। এটা আমার এক প্রকারের নেশাই ছিলো বলা যায়।  দোকানটার লাগোয়াই হলো পায়ে চলা গ্রামের বাড়ির ভিতর দিয়ে চলা পথ। রফিক ভাইদের বাড়ির দক্ষিনে গেলে পড়তো বাহারউদ্দিনদের বাড়ি। বাহার উদ্দিন আমার ক্লাসে পড়তো। ওর বাবারা তিন ভাই ছিলো। আক্কেল আলী, বাহারের বাবা আর আলমাস। আক্কেল আলীর পেশা ছিলো “চুরি” করা, আলমাসের পেশা ছিলো “চুরি”র সাথে মাছ ধরাও। শুধু বাহারের বাবাই ছিলো ভালো মানুষ। শুনেছি আক্কেল আলীর সব ছেলেরাই নাকি এখন চুরিই করে। তার মধ্যে হাতিম আলি একজন। আলমাস, আক্কেল আলী এবং বাহারের বাবা কেউ এখন আর বেচে নাই। ওরা রফিক ভাইয়ের চাচাতো ভাই।

আরদস আলীদের বাড়ির পশ্চিম লাগোয়া যে রাস্তাটা গেছে আমাদের বাড়ির দিকে সেই রাস্তার সাথে লাগোয়া ছিলো অরিজিনাল “বড় বাড়ি”। অর্থাৎ গনি মাদবরের বাড়ি। বেশ বড় পরিবার। গনি মাদবরেরাই আসলে গ্রামকে নিয়ন্ত্রন করতো। জমিদার স্টাইলে। গনি মাদবরেরা মোট চার ভাই ছিলো। গনি মাদবর, সিদ্দিকের বাবা (নামটা মনে নাই) হাকিমের বাবা (নামটা মনে নাই), সাত্তারের বাবা (নামটা মনে নাই), ল্যাংরা রফিকের বাবা আর কাদেরের বাবা আজিজ খালু। আজিজ খালু মসজিদে মাঝে মাঝে ইমামতি করতেন। কিন্তু তার ঘরেই সব ছিলো জালিমের মতো সন্তান। কাদের, ইনসান, কুতুব, আরো একজন (নাম মনে নাই) এরা ছিলো আজিজ খালুর পোলা। এই বড় বাড়িটা ছিলো জোয়ান ছেলে দিয়ে ভর্তি। এদের মধ্যে যিনি কাদের নামে পরিচিত ছিলো, সে ছিলো বেশ শ্যামলা কিন্তু ভীষন সুইট চেহারার লোক। সরাসরি ১৯৭১ সালে যুদ্ধে ছিলো। আমি সাধীনতার পরেও দেখেছি তাঁকে হাতে অস্র নিয়ে ঘুরতে। খুবই সাহসী ছেলে ছিলো। এই কাদের ভাই, সামসু ভাই, রফিক (ল্যাংরা রফিক), মাষ্টার রফিক, এরা সবাই সমসাময়িক ছিলো। সাধীনতার ঠিক পর পরই কাদের ভাই একটা ডাকাতী দল গঠন করে ফেলেছিলো। ওরা প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় অস্র দিয়ে ডাকাতি করা শুরু করেছিলো। ওদের ভয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারতো না। আমার ভাই হাবীবুল্লাহ সব সময়ই ওদেরকে এসব খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য উপদেশ দিতো এবং তিনি কখনো এসব কাজকে সাপোর্ট করতেন না। তখন দেশে একটা দূর্ভিক্ষ চলছিলো কিন্তু বড় বাড়ির কখনো দূর্ভিক্ষে সাফার করতে হয় নাই বরং ওদের কাছে সব কিছুই থাকতো সারপ্লাস। এই আজিজ খালু আবার বিয়ে করেছিলো গ্রামের পুর্ব প্রান্তে বসবাসকারী দৌলত মেম্বারের বোন। দৌলত মেম্বারের সাথে এই “বড় বাড়ির” সম্পর্ক সব সময়ই ছিলো সাপে নেউলের মতো। একটা শক্তি আরেকটা শক্তিকে কখনোই মূল্যায়ন করতো না বরং যখনই সুযোগ পায় তখনই এক পরিবার অন্য পরিবারকে আঘাত করার চেষ্টা করতো। এই রেষারেষির ফলে দৌলত মেম্বারের ইমিডিয়েট আপন ছোট ভাই অর্থাৎ মুসার বাবা আর মুসার ছোট ভাই মাসুদকে প্রান দিতে হয়েছিলো। মানে হত্যা। মুসার ভাই মাসুদ ছিলো আমার থেকে ২/৩ বছরের ছোট। একদিন কোনো এক বর্ষাকালে মাসুদকে কুকুরে কামড়ে দিয়েছিলো। ঐ সময় খুব নামকরা ডাক্তার ছিলো একজন হিন্দু লোক, যাকে সবাই “বগা” ডাক্তার নামে চিনতো। আমার স্পষ্ট মনে আছে এই বগা ডাক্তারকে। প্রায়ই তিনি আমাদের বাড়িতে আসতেন। কিন্তু উনি বাস করতেন বিবির বাজার এলাকায়। আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় ৩/৪ কিলমিটার দূরে। তখন বিবির বাজার ছিলো এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাজার। রবিবার আর বৃহস্পতিবার বসতো বাজার। মাসুদকে কুকুরে কামড়ানোর কারনে মাসুদের বাবা মাসুদকে নিয়ে বিবির বাজারের দিকে একটা ছোট কোষা নিয়ে যাচ্ছিলেন। ভরা বর্ষা। পথের মধ্যে হটাত করে বড় বাড়ির সামসু, কাদের আর ল্যাংরা রফিকের সাথে দেখা। ওরাও অন্য নৌকায় ছিলো। তখন সকাল প্রায় ১০ টা। প্রকাশ্য দিবালোক। এই প্রকাশ্য দিবালোকে হটাত করে নদীর মধ্যে সামুসু ভাই এর লিডারশীপে মাসুদের বাবাকে জবাই করা হয় আর মাসুদকে পানিতে আছাড় মারতে মারতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। গ্রামের মানুষ দ্রুত অন্য নৌকা দিয়ে ওদেরকে রক্ষা করতে গিয়েও আর পারে নাই। এর মধ্যেই এরা পালিয়ে যায়। এবার “বড় বাড়ি”র সাথে দৌলত মেম্বারদের বাড়িত শত্রুতাটা একেবারে প্রকাশ্য হয়ে তীব্র আকার ধারন করে। এর ফলশ্রুতিতে মামলা হয়, কেস হয়, বড়রা গ্রাম থেকে পালিয়ে দূরে বাস করতে শুরু করে, আরো অনেক প্রানহানী হয়, সেই সাথে কাদেরও খুন হয়। কাদেরের খুন এখনো একটা রহস্যজনক অবস্থায় আছে। কিভাবে কাদের খুন হলো সেটা পরে বল্বো। এই “বড় বাড়ী’তে তাদের নিজস্ব মসজিদ এবং নিজস্ব করবস্থান ছিলো যা এখন মসজিদটা আরো বড় হয়েছে বটে কিন্তু কবরস্থানটা ধীরে ধীরে ছোট হতে হতে প্রায় বিলীন। ঐ কবরস্থানেই শুয়ে আছেন আমার মা আর আমার খালা। এটা সিদ্দিকদের বাড়ির একেবারেই লাগোয়া আর আমাদের বাড়ি থেকে মাত্র ৫০/৬০ গজ দূরে।

সিদ্দিক ভাইদের বাড়ির ঠিক পশ্চিম পাশেই লাগোয়া ছিলো পিয়ার আলী নামে ওদের বাড়ি। লম্বা মানুষ, কোনোদিন শার্ট পরেছে কিনা আমার চোখে পড়ে না। মাছ বিক্রি করতো। গ্রামের মধ্যে যে কয়জন গরীব হালের মানুষ ছিলো, পিয়ার আলিরা তার মধ্যে অন্যতম। কোনো রকমে বেচে ছিলো। ঘরটাও খুব জরাজীর্ন ছিলো। কিন্তু মানুষ হিসাবে ছিলো অত্যান্ত ভালো। খুব সকালে দেখতাম পিয়ার আলী, মাথায় মাছের খাড়ি নিয়ে খালী গায়ে মাছ নিয়ে সদরঘাট বা শ্যামবাজারে যেতো। আমাদের গ্রামে আসলে যে কয়জন খুব সকালে দল বেধে মাছের খাড়ি নিয়ে হু হু করে খালী গায়ে ছুটতো শ্যমবাজারের দিকে তারা সবাই আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই যেতো। আম্বর আলী কাকা, পিয়ার আলী, আরজু, আরদস আলীর বড় ভাই, আরো অনেকে। ওরা ফিরে আসতো প্রায় দুপুরের দিকে। তারপর আর ওদের কোনো কাজ থাকতো না। ফলে এই দলটা মাঝে মাঝেই বাঙলা মদ খেতো।

এই পিয়ার আলীদের বাড়ির ঠিক পশ্চিমে ছিলো মংগল মাদবরের বাড়ি। খুব সুশ্রী একজন সুন্দর মানুষ। তার কোনো সন্তান ছিলো না। বড় বউ ছিলেন বাঞ্জা, তাই তিনি সন্তানের আশায় মংগল মাদবর আরেকবার বিয়ে করেন। দুটু বউই ছিলো অসধারান সুন্দুরী। দুই বউ ই পান খেতো। সুন্দুরী মেয়েরা পান খেলে আরো সুন্দর লাগে। গ্রামে যে কয়টা টিউব ওয়েল ছিলো গ্রামের মানুষের পানি নেয়ার জন্য, এই মংগল মাদবরের বাড়িতে ছিলো একটা। আমরা সবসময় এই বাড়ি থেকেই মাটির কলসীতে করে পানি আনতাম। বড় বউ তার সন্তান হবে না জানার পর একটি পালক ছেলে নিয়েছিলেন, যার নাম ছিলো শহীদ। শহীদ আমার ক্লাসেই পড়তো। মংগল মাদবর একবার মেম্বার পদে নির্বাচনে দাড়িয়েছিলেন কিন্তু তিনি পাশ করেন নাই। মংগল মাদবরের নির্বাচনী ক্যাম্পাসে আমরা শহিদ সহ স্লোগান দিতাম টিনের চোঙ্গায় করে। তখন শহীদ নিজেও বলতো- আমার ভাই তোমার ভাই, মংগল ভাই মংগল ভাই। আমরা শহীদকে বলতাম, ঐ মংগল মাদবর না তোর বাপ? ও বলতো, হ আমার বাপই তো। এতো বোকা একতা ছেলে ছিলো যে অনেক মায়া হয় এখন ওর জন্য। কার যে ছেলে ছিলো শহীদ আমরা জানতেই পারতাম না। যাইই হোক, মেম্বার পদে মংগল মাদবর পাশ করে নাই কিন্তু পাশ করেছিলো খুনের চরের লালচান ভাই যিনি পরে লালচান মেম্বার নামে পরিচিত ছিলেন। খুব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। মংগল মাদবর নিজেও একজন সচেতন এবং ভালো মানুষ ছিলেন। অনেক ধনী ছিলেন তিনি। ছোট বউ এর ঘরে পর পর চার জন মেয়ে হয়েছিলো, পরীর মতো সুন্দুরি মেয়েগুলি। তারমধ্যে নাজমা, সালমা অন্যতম। আজ ওরা কোথায় আমি জানি না। নাজমা আমার থেকে প্রায় ৩/৪ বছরের ছোট ছিলো। মংগল মাদবর আর বাহারের বাবা, রফিক মাষ্টার, আক্কেল আলী, আলমাস, বাছন, জামাল, এরা এক বংশের লোক। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো মংগল মাদবর ঐ সব লোকদের থেকে একটু দূরে বাড়ি বানিয়েছিলেন (প্রায় ২০/২৫টা বাড়ির পরে পশ্চিম দিকে)। ফলে বেশীরভাগ সময়ে তাদের বংশের সাথে মংগল মাদবরের অনেক কিছুই বনিবনা ছিলো না। শুনেছি, শহীদ মারা গিয়েছিলো হার্টের কারনে। সে বিয়ে করেছিলো কিনা আমার আজ মনে নাই। কারন আমি গ্রাম ছেড়েছিলাম সেই ১৯৭৭ সালে যখন আমি ক্যাডেটে ভর্তি হই। এর পরে অনেকের সাথেই আমার আর যোগাযোগ ছিলো না।

(চলবে)

০২/০৭/২০২১-বজলু আমার বাল্যবন্ধু

কম্পিউটার সার্ফ করছিলাম। হার্ড ডিস্ক ক্লিন করার সময় হটাত করে একটা অনেক পুরানো ছবির সন্ধান পেলাম। অনেকক্ষন তাকিয়ে ছিলাম ছবিটার দিকে। মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। একটা ছবি অনেক কথা বলে। একটা ছবি একটা সময়ের ইতিহাস বলে। একটা ছবি না বলা অনেক স্মৃতি মানষ্পটে জাগিয়ে তোলে। আজকের এই ছবিটাও তেমনি একটি ছবি।

আজ থেকে প্রায় ৪০/৪১ বছর আগের কথা আমি যখন গ্রামে ছিলাম সেদিনের কথাগুলি যেনো একে একে স্পষ্ট জেগে উঠতে থাকলো আমার স্মৃতির পাতায়। আমরা কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক ক্লিন করি, তারমধ্যে আবার নতুন কোনো তথ্য লোড করি, পুরানো তথ্যগুলি অনেক সময় আর খুজে পাওয়া যায় না। হয়তো বিশেষ কায়দায় কোনো ছায়া-মেমোরি থাকলেও থাকতে পারে যা থেকে হয়তো আবার সেই ডিলিটেড কোনো তথ্য বিশেষ কায়দায় ডিস্টর্টেড অবস্থায় কিছু পাওয়া গেলে যেতেও পারে কিন্তু আমাদের ব্রেনের মধ্যে সেই শিশুকাল থেকে যতো স্মৃতি এই মেঘা হার্ডডিস্কে লোড হয়েছে, সেটা কোনো না কোনো পরিস্থিতিতে আবার জেগে উঠে অবিকল ঠিক সেই বিন্যাসে যা ক্রমান্নয়ে ঘটেছে বা ঘটেছিলো। এমনি একটা স্মৃতির পাতা আজ আমার মন আর ব্রেনের কোনে ঠিক জাগ্রত হয়ে জীবন্ত আমার দৃষ্টির মধ্যে চলে এলো- বজলু, আমার সেই ছোট বেলার অনেক প্রিয় একজন বন্ধু।

বজলু আমার খুব ভালো একজন বন্ধু ছিলো। আমাদের গ্রামের প্রায় শেষ পশ্চিম প্রান্তে ওদের বাড়ি। একই ক্লাসে পড়তাম, এক সাথে মাঠে খেলাধুলা করতাম। ওরা তিন ভাই ছিলো, বজলুই ছিলো সবার বড়। ওর বাবা ছিলো ধনী কৃষক। ওদের সামাজিক অবস্থা গ্রামের অন্যান্যদের থেকে বেশ ভালো। বজলুর সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিলো যে, ও খুবই তোতলা ছিলো কিন্তু আমার কাছে এটা কোনো ব্যাপার ছিলো না। মজার ব্যাপার হলো, বজলু আমার সাথে যখন থাকতো, আর কথা বলতো, সে প্রায় তোতলামী করতোই না। কিন্তু যেই না অন্য কারো সাথে কথা বলতো, তার তোতলামীটা বেড়ে যেত। আমার সাথে বজলু স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতো। ও খুব ভালো গান গাইতো। লেখাপড়ার প্রতি টান থাকলেও কেনো জানি বেশী দূর এগুতে পারে নাই। এমন না যে টাকা পয়সা টানাটানির কারনে বা অভাবের সংসারে ওকে হাল ধরতে হয়েছিলো যার কারনে লেখাপড়া করতে পারে নাই। আমাদের গ্রামের মানুষগুলির বড় সমস্যা হচ্ছে-তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠায়, কিন্তু খবর নেয় না তারা স্কুলে কি পড়ছে, কেমন করছে, কিংবা সন্তানদের কোনো গাইড লাইন দেয়ার দরকার আছে কিনা।

আমার মনে আছে যে, আমি আর বজলু ওদের বাসায় একসাথে পড়াশুনা করতাম। ওর মা আমাকে খুব স্নেহ করতেন। অনেক সময় দুপুরে খাওয়া দাওয়াও করাতেন। আসলে পৃথিবীর সব মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য সব কিছু করতে পারে। তারা সব সন্তানদেরকে একই রকম করে ভাবেন। আমি বজলুকে অংক শিখাতাম কারন বজলু অংকে আর ইংরেজীতে কাচা ছিলো। ১৯৭৭ সালে আমি ক্লাস সেভেন থেকেই গ্রাম ছাড়ি। তার কারন আমি ক্যাডেট কলেজে চান্স পেয়ে গিয়েছিলাম। সেই থেকে বজলুর সাথে আর আমার স্কুলে পড়া হয় নাই। ক্যাডেট কলেজে বাধাধরা নিয়ম, মাঝে মাঝে ছুটি পাই, তখন বেশীরভাগ সময় আমি গ্রামেই কাটাতাম। বজলু তখনো স্কুলেই পড়ে। ছুটিতে আমার কোনো কাজ থাকতো না, কিন্তু বজলুর থাকতো। ক্ষেতে কাজ করতো, গরুগুলিকে নদীতে নিয়ে গোসল করাতে হতো। ওর বাবাকে সাহাজ্য করতে হতো, ক্ষেতে আলু কিংবা অন্যান্য শশ্য লাগাতে হতো। আমিও ওদের সাথে ওইখানে বসেই আড্ডা দিতাম। কারন গ্রামে আমার বন্ধুর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিলো।

রাতেও আমি ওদের বাসায় অনেকদিন আড্ডা দিতাম। তোতলা হলেও গান গাওয়ার সময় বজলু কখনো তোতলামী করতো না। প্রচন্ড মায়া ছিলো ওর অন্তরে সবার জন্য। কারো সাথে ঝগড়া করেছে এমনটা দেখি নাই। পড়াশুনার চাপে আর ক্যাডেটে থাকার কারনে ধীরে ধীরে আমার এসব বন্ধুদের থেকে যোগাযোগটা আমার কমে গিয়েছিলো। প্রায় বছর তিনেক পরে আমি যখন একবার ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জ যাবো বলে গুলিস্তান থেকে একটা বাসে উঠেছি, হটাত কে যেনো আমার নাম ধরে ডাক দিলো। ড্রাইভার সিটে বসা একজন লোক। তাকিয়ে দেখি-বজলু। আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম বজলুকে দেখে। বল্লাম-কিরে তুই ড্রাইভারি করিস নাকি?  বজলু আমার হাত টেনে ধরে বল্লো, আমার পাশে বস। নারায়নগঞ্জ যাবি? বল্লাম-হ্যা। খুব ভালোই হলো। তোর সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে। আমার জীবনে এইই প্রথম আমার কোনো খুব কাছের মানুষ ড্রাইভার। খুব আপন মনে হচ্ছিলো। বজলু বলতে থাকলো-

তোরা সব চলে যাবার পর আমার আর পড়াশুনা হয় নাই। গ্রামে আসলে পড়াশুনার পরিবেশও নাই। বাড়ি থেকে বারবার চাপ আসছিলো কিছু একটা করার। গ্রামের বেশীরভাগ ছেলেরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছিলো। আমিও সেই লাইনেই ছিলাম। বিদেশ চলে যাবো। তাই ড্রাইভারি শিখতে হলো। লাইসেন্স পেয়েছি। ঘরে বসে না থেকে হাত পাকা করছি আবার কিছু পয়সাও কামাচ্ছি। পড়াশুনা তো আর হলোই না।

সম্ভবত সেটাই ছিলো বজলুর সাথে আমার সর্বশেষ একান্তে কথা বলা। পরে শুনেছি বজলু জাপান চলে গেছে। সেখানে অনেক বছর চাকুরী করে আবার গ্রামে এসেছিলো। আমাদের গ্রামে আমাদের সাথে পড়তো সুফিয়া নামে একটি মেয়ে ছিলো। ওর বোন সাহিদাকেই বজলু বিয়ে করেছে। তিনটা মেয়ে আছে ওর। আমার সাথে ওদের কারো কোনো যোগাযোগ ছিলো না। মাঝে মাঝে গ্রামে যেতাম ঠিকই কিন্তু ওরা দেশে না থাকায় কারো সাথেই আমার যোগাযোগ হতো না। মা যতোদিন বেচে ছিলেন, গ্রামে যাওয়া হতো কিন্তু মা ইন্তেকাল করার পর গ্রামে যাওয়াটা আমার প্রায় শুন্যের কোটায় পরিনত হয়।

২০১৮ সালে হটাত একদিন আমার ফোনে একটা ফোন এলো। আমি অপরিচিত নাম্বার সাধারনত ধরি না। কিন্তু কি কারনে হটাত করে আমি সেই ফোনটা ধরেছিলাম। অন্য প্রান্ত থেকে দেখি বজলুর কন্ঠ।

কিরে দোস্ত, কেমন আছিস? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-বজলু?

খুব ভালো লাগলো ওর কন্ঠ শুনে এতো বছর পর। বজলু বল্লো, সে দেশে এসেছে। বেশ কয়েকদিন থাকবে। তারপরেও বছর খানেক তো থাকবেই। বজলু ওর পরিবারের অনেক খবর দিলো। ওর স্ত্রী সাহিদা আমাদের প্রাইমারী স্কুলে মাষ্টারী করে। তিনটা মেয়ে, সম্ভবত মেয়েদের বিয়ের আয়োজন করছে। ওর শরীরটা নাকি ইদানিং খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। অনেক কথা মনে পড়লো-

সেই প্রায় ৪০/৪১ বছর আগে এক সাথে মাঠে খেলা করতাম, এক সাথে নদীতে গোসল করতাম, বাজারে যেতাম, মাছ ধরতাম। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে চলে যেতাম, রাত হলে কখনো স্কুলের মাঠেই জ্যোৎস্না রাতে আমরা অনেকে মিলে গান গাইতাম, বজলুই ছিলো প্রধান ভোকালিষ্ট। ওর একটা জাপানিজ গিটার ছিলো, একটা সিন্থেসাইজার ছিলো, জাপান থেকে এনেছিলো। কখনো কখনো এমন হয়েছে যে, আমিই ওদের বাড়িতে থেকে যেতাম ঘুমানোর জন্য। একটা ভীষন মিষ্টি সময় কেটেছে।

বজলু বল্লো- আমি আগামি কয়েকদিন পর তোর অফিসে আসবো। চুটিয়ে গল্প করবো। তোর সাথে খাবো। সারাদিন থাকবো আমি তোর অফিসে। এনামুল, ওয়ালী, মুসা সবাইকে নিয়ে আসবো। সেদিন আমরা সবাই তোর অফিসেই খাবো। খুব ভালো লাগলো ওর কথায়। আমি এখন বড় একটা ব্যবসায়ী, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, আমার কোনো তাড়া নাই, কোনো চাপ নাই। ভালই হবে ওরা এলে। কিন্তু বজলু কোনো তারিখ দেয় নাই কবে আসবে।

বজলুর সাথে কথা বলার পর আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে, বজলু আমার অফিসে আসবে কিন্তু কবে কিংবা কখন সেটা আমার মাথাতেই ছিলো না। মনে হয়েছিলো, আসবেই তো। আমি তো অফিসে প্রতিদিনই আসি। আর আমার গ্রাম কিংবা ওরা যেখানে থাকে সেখান থেকে আমার অফিসে আসতে লাগে মাত্র ১৫ মিনিট। ওরা যে কোনো সময় নিজের সময়ে এলেই আমাকে পাবে।

এমনি এক অবস্থায় আমার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় আমাকে কথায় কথায় ফোনে জানালো যে, বজলু নাকি অসুস্থ্য। হাসপাতালে ভর্তি। ছোট খাটো ব্যাপার মনে করতে আমিও আর ওকে দেখতে যাইনি। ভেবেছিলাম, কয়দিন পর তো দেখাই হবে। তখন জেনে নেবো ওর কি হয়েছিলো। কিন্তু তার ৩/৪ দিন পর আমার কাছে এমন একটা ব্রেকিং এবং হার্ট টাচিং নিউজ এলো যা আমি কল্পনাও করতে পারি নাই। বজলু নাকি মারা গেছে।

এই সংবাদটা আমাকে এতোটাই মর্মাহত করেছিলো যে, কেউ যেনো আমার দরজার একদম কাছে এসেও আমার সাথে দেখা করতে পারলো না। অথবা এমন একটা পীড়া যা আমাকে এমনভাবে নাড়া দিলো যা কিনা আমার নজরেই ছিলো না। বজলুকে আমি যেমন ভালোবাসতাম, তেমনি বজলু সর্বদা আমাকে মনে রাখতো। বন্ধুরা কেনো জানি ধিরে ধীরে সব হারিয়ে যাচ্ছে।

২৮/৬/২০২১-সফুরা খালা

 

এই মানুষগুলি একসময় আর কারো সামনেই থাকবে না। এদের জীবনেও প্রেম এসেছিলো, এরাও কারো না কারো চোখে রানীর মতো ছিলো। বাল্যকালে সাথী সংগীদের নিয়ে এরাও নদীর ঘাটে গিয়ে জিলকেলী করতে করতে সারাটা পরিবেশ মুখরীত করে রাখতো। নীল আকাশের মধ্যে জ্যোৎস্না রাতের তারার মতো তারাও রাত জেগে হয়তো কোনো এক প্রেমিক বরের অপেক্ষায় মনের ভিতর সুখের আস্বাদন করেছেন। এরা বড় বড় সংসারের হাল ধরেছেন, সমাজে এরাও অনেক অবদান রেখেছে। এদের গর্ভে জন্ম নেয়া অনেক সুপুত্র কিংবা সুন্দুরী কন্যারা হয়তো আজো দেশে বিদেশে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আজ তারা এতো চুপচাপ জীবন যাপন করছেন যেখানে তিনি নিজে ছাড়া আর কেউ পাশে নাই। না তার রাজা আছে, না তিনি এখন রানী আছেন। সময় মানুষকে কত পরিবর্তন করে দেয়। এই সময়ের কাছে আজো কেউ স্বাধীনতা পায় নাই, না পেয়েছে কোনো ক্ষমতা সময়কে পরিবর্তন করার। আদি যুগ থেকে যতো মানুষ এই দুনিয়ায় এসেছে, সবাই কোনো না কোনো সময় নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এই পৃথিবীকে ত্যাগ করতে হয়েছে। আমরা যারা পিছনে পড়ে থাকি, তারা শুধু একটা মোহ, একটা স্মৃতি আর একটা কি যেনো নিয়ে শুধু অলীক ভাবনার জগতে অপেক্ষায় থাকি। একদিন আমিও এর থেকে পরিত্রান পাবো না। শুধু সময়টা পালটে যাবে এই রানীদের মতো। 

কিন্তু আমার মনের ভিতরে এই সব রানীরা আজীবন রানীদের কিংবা রাজাদের মাতাই হয়ে থাকবেন। আমি এদেরই বংশের একটি ধারা। আরো বেচে থাকো তোমরা অনেক কাল খালা। 

 

জীবন যেখানে যেমন। যে শিশুটি আজ জন্ম নিলো কেউ জানে না তার জন্য এই পৃথিবী কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিংবা এই পৃথিবীকে সে কি দিয়ে যাবে। হতে পারে আজকে এই শিশুটি হয়তো এই পৃথিবীকে কোনো এক সময় নাড়িয়েও দিতে পারে বা এই পৃথিবী তাকেও নাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু এমন অনেক শিশুই এই পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয়,  না তারা কোনো ভূমিকা রাখে, না পৃথিবী তাদেরকে মনে রাখে। এমন মানুষের সংখ্যাই বেশী। যুগে যুগে তারপরেও অনেক শিশু প্রকাশ্যে বা গোপনে পৃথিবীতে আসে যারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর একদিন সব কিছু ফেলে সবার থেকে আলাদা হয়ে আবার কোথাও অদৃশ্য হয়ে যায়। মাঝখানের এই সময়টায় খুব গুটিকতক মানুষ হয়তো নিজের মতো করে কাউকে কাউকে মনে রাখে কিন্তু তাও একসময় মনের স্মৃতি থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। আমার সফুরা খালা, সামিদা খালা কিংবা আমার শায়েস্তা বুজি, বা সাফিয়া বুজিরা সম্ভবত এই রকমের কিছু মানুষ যারা সেই বহু বছর আগে শিশু হয়ে জন্ম নিলেও কোনো লাভ হয় নি কারো। তারা আজীবন যেনো এই দুনিয়ার বুকে একটা বোঝা হয়েই ছিলো। অথচ তারা হাজারো মানুষের থেকে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।

প্রায় দু বছর আগে আমি আমার পরিবার নিয়ে আমাদের গ্রাম থেকে বেশ দূরে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বেশীক্ষন দেরী করি নাই কারন পরিবেশটা ঐ রকমের ছিলো না। কোনো রকমে আনুষ্টানিকতা শেষ করে ভাবলাম, যেহেতু গ্রামের পথেই আছি, যাই আমাদের গ্রামের বাড়িটা ঘুরেই যাই। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো, আলো বেশ কমে গিয়েছিলো। অনেকেই আমাকে চিনে না যদিও আমি এই গ্রামেরই একজন পুরানো বাসিন্দা। কিন্তু সময়ের সাথে আমার অনুপস্থিতি আমাকে আজ এই গ্রামে একজন নবাগত অতিথির মতোই মনে হচ্ছিলো। যারা আমার সমবয়সী ছিলো, তারাও অনেক বুড়ো হয়ে গেছে, অনেকেই চিনতেও ভুল করছিলো, আমি তো ওদের কাউকেই এখন চিনি না। ওদের চেহারা সুরুতে এমন বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে যে, জোয়ানকালে আমি যাদেরকে দেখেছি, তারা এখন দাদা নানার পর্যায়ে। না চেনারই কথা। তারপরেও কাউকে কাউকে আমি চিনতে পারছিলাম। গ্রামের বাড়িটা খা খা করছে, কেউ থাকে না এখানে। আগে মা থাকতেন, এখন থাকে আমার এক ভাগ্নে যে সারাদিন গাজা খায়।

ভাবলাম, আমার এক খালা ছিলো। নাম সফুরা বেগম। উনি কি জীবিত আছেন নাকি আর জীবিত নাই সেই খবরটাও আমার জানা নাই। তাঁকে খুব দেখতে মন চাইলো। মিটুলকে বললাম, চলো একটা বাড়িতে যাই। যদি উনি বেচে থাকেন, তাহলে মায়ের অভাবটা কিছুটা হয়তো পুরন হবে। আর যদি জীবিত না থাকেন, অন্তত জানতে পারবো, কবে থেকে আর তিনি এই পৃথিবীতে নাই। আলুকান্দা তার বাড়ি। অনেক খোজাখুজির পর শেষ অবধি সফুরা খালার বাসায় যেতে পারলাম। তিনি অসুস্থ্য। জর। একটা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন। চার পাঁচ দিন নাকি তিনি কিছুই খাচ্ছেন না। অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমার মা যখন বেচে ছিলেন, তখন আমার এই খালা প্রায়ই আমার মায়ের সাথে দেখা করতেন, গল্প করতেন। আমাকে খুব আদরও করতেন। আসলে আমার মা, আমার সামিদা খালা আর এই সফুরা খালা এতোটাই ভালো আর নীরিহ মানুষ ছিলেন যে, তাদের ব্যাপারে আজ অবধি কেউ কোনো অভিযোগ করেছে সে ঘটনা ঘটে নাই। খালাকে ডাকা হলো। উনি ভালো মতো চোখে দেখেন না। এম্নিতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো, তারমধ্যে আবার আকাশ ছিলো খুব মেঘাচ্ছন্ন। বিদ্যুৎ ছিলো না। কোন রকমে খালাদের বাসায় যাওয়ার পর, আমি খালার বিছানায় গিয়ে বসলাম। খালাকে তার পুত্রবধুরা ডেকে তোলার চেষ্টা করলেন। আমাই যাওয়াতে সবাই অনেক খুশী হয়েছে। কি থেকে কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।

খালাকে যখন আমি বললাম, আমি মেজর আখতার এসছি। খালা এম্নিতেই কানে কম শুনে মনে হয়, তার মধ্যে আমার নাম শুনে যেনো একটা অদ্ভুত মিথ্যা কথা শুনলেন এমন হলো। বল্লো-

কে? হামিদার ছেলে?

বললাম, হ্যা খালা।

উনার জর ছিলো প্রায় ১০৩ ডিগ্রী। আমার কথা শুনে তিনি বিছানা থেকে উঠে বসলেন। খালা প্রায় গত চার পাঁচ দিন বিছানায় উঠে বসতে পারেন না। কিন্তু আজ যেনো কোন অলৌকিক শক্তিতে তিনি একাই বিছানায় উঠে বসে পড়লেন। আমি খালাকে জড়িয়ে ধরলাম, খালাও আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলেন যেনো এইমাত্র বাইরের মেঘাচ্ছন্ন আকাশটা ঘনকালো ঝপ ঝপ বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিলো সারাটা উঠান।

কতটা আদর? কিভাবে আদর করলে ভালোবাসা হয় মায়েদের? আমার সেটা জানা ছিলো। আমার মাও ঠিক এভাবেই আমাকে আদর করতেন।  আমার মুখে দুই হাত দিয়ে একদম চোখের কাছে আমার মুখটা নিয়ে পানভর্তি মুখে ভিজা ভিজা চোখে ফিক করে হেসে দিয়ে বলতেন, অনেক বড় হ বাবা। আমার দোয়া আর দোয়া রইলো। সফুরা খালার ভাষাও এক। কি অদ্ভুদ। আমি তাঁকে কতোক্ষন জড়িয়ে ধরেছিলাম, আমার জানা নাই। সারাটা শরীর হাড্ডি, মাংশ বলতে কিছুই নাই। গরীব ছেলেপেলেরা যতোটা পারে তাদের মায়ের যত্ন নেয় বটে কিন্তু অন্তরের ভালোবাসায় হয়তো অনেক ঘাটতি আছে। তারপরেও তিনি বেচে আছেন যেটুক পান সেটা নিয়েই।

আমার মায়ের বাবার নাম ছিলো কেরামত আলী। আমার মায়ের কোনো ভাই ছিলো না। মাত্র দুইবোন- হামিদা খাতুন আমার মা আর সামিদা খাতুন আমার আপন খালা। কিন্তু সফুরা খালার বাবার নাম ছিলো চেরাগ আলি। তারও কোনো ভাই অথবা কোনো বোন ছিলো না। তিনি একাই একমাত্র কন্যা সন্তান ছিলেন চেরাগ আলীর। এই চেরাগ আলি এবং কেরামত আলি (মানে আমার নানারা) ছিলেন চার ভাই। অন্যান্য আর দুই ভাই ছিলেন সাবেদ আলি এবং লষ্কর আলী। উম্মেদ আলী ছিলেন এই চার ভাইয়ের বাবা। অর্থাৎ আমার মা খালাদের নানা।

আজ তারা কেহই বেচে নাই। শুধুমাত্র আমার সফুরা খালাই বেচে আছেন কালের সাক্ষী হয়ে। খুব ভালোবাসি আমি তোমাদের।

২১/০৬/২০২১- মৃত্যু

মৃত্যুকে মানুষ আধারের সাথে তুলনা করে থাকে। কিন্তু এই আধার কোনো কালো রাত কিংবা অমাবশ্যার নিশি বা দিনের আলোর অভাবে নয়। যা চোখে দেখা যায় না, যার ব্যাপারে আমাদের মন এবং মস্তিষ্ক কোনো ধারনা করতে পারে না, আমাদের কাছে সেটাই একটা আধারের মতো। এই আধার কিন্তু অন্ধকার নয়, এটা এমন একটা আধার যার কোনো রং নাই, যার কোনো বর্ননা আজো কেউ দিতে পারে নাই। মানুষের হাজারো শখ থাকে। বেচে থাকার শখ, সম্পদশালী হবার শখ, অনেক ক্ষমতাধর হবার শখ, কিন্তু আজো পর্যন্ত কেউ এটা শখ করে নাই যে, সে মরতে চায়। যারা আত্তহত্যা করে, তারা ইমোশনাল, তারা শখের বশে মরনকে বরন করে না। মৃত্যু কোনো ইচ্ছে নয় যে, পুরন হবে কি হবে না, মৃত্যু তো একটা সত্য, একটা লক্ষ্য যেখানে সবাইকে যে কোনো মুল্যেই পৌছাতে হবে। আর ওখানকার সমন, গাড়ি অথবা বাহক কখন আসবে, সেটা তো কেহই বলতে পারে না। এই মৃত্যু অনেক সম্পর্ক ছেদ করে আবার এই মৃত্যুই অনেক নতুন সম্পর্ক তৈরী করে। কখনো কখনো মৃত্যুটাই যেনো অনেক সমস্যার সমাধান নিয়ে আসে। যদিও যার বেলায় ঘটে সে সমস্যা ছিলো না।

মৃত্যুর কারনে এমনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যেখানে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় অথবা মেনে নিতে শিখতে হয়। হোক সেটা ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। যখন কোনো মানুষ কিছুই না বলে সে তার পরিবার থেকে হটাত করে উধাও হয়ে যায়, তখন ব্যাপারটা অনেক দুসচিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়। এটা আরো বেশী করে দুশ্চিন্তায় ভোগায় যখন এটা জানা যায় যে, যে মানুষটি চলে গেছে সে সব দিক থেকে অশান্তিতেই ছিলো।

কিন্তু কোনো মানুষ যখন কাউকে না বলে চিরতরে আমাদের জীবন থেকে চোখের সামনে মৃত্যুর থাবায় হারিয়ে যায়, আর আমরা তাকে চোখের জলে ভিজিয়ে বিদায় জ্ঞাপন করি, তখন হয়তো তার দ্বারা কোনো ভুল পদক্ষেপের দুশ্চিন্তা আমাদের গ্রাস করে না, কিন্তু তার চলে যাওয়ায় যারা বেচে থাকেন তাদের জীবনে আমুল পরিবর্তন নেমে আসে বলে মাঝে মাঝে মনে হয় রাস্তাটা অন্ধকার, জীবনটা ভয়ংকর এবং আমরা সর্বত্রই একা। তখন একটা দিনও যেনো আমাদের ঠিকঠাক কাটতে চায় না। এমন কি একটা রাতও না। এই সময়ে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। মেনে নিতে শিখতে হয়। অন্যদিকে দিনের আলোতে এই পার্থিব জগতে বসে মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে কোনো ধারনাই করা সম্ভব হয় না আমাদের অথচ মৃত ব্যক্তির যাত্রার শুরু থেকে শেষ অবধি রাস্তাটা তার কাছে হয়তো আমাদের থেকেও ভয়ংকর আর বিভীষিকাময়আরো অন্ধকার। এটা যেনো তার কাছে ঠিক একটা অন্ধকার টানেল, যেখানে মাঝে মাঝে আলো আসে হয়তো কিন্তু সে আলোয় কোনো কাজ হয় কিনা জানা যায় নাই।

এমন অনেক মিথ্যে মৃত্যু আসে কারো কারো জীবনে যেখানে তারা এই পার্থিব জীবনের সাথে সাময়িক সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আরেক কোনো এক অচেনা জগতে বিচরন করতে থাকে। তখন তার আশেপাশে কি হচ্ছে, কারা কি করছে, কিছুই আর তার কাছে পৌছায় না অথচ তার দেহ, তার শরীর পুরুটাই রয়েছে এই পার্থিব জগতে। এই প্রকারের মৃত্যু থেকে ফিরে আসাকে হয়তো বলা যায় কোনো মতে বাচা, হয়তো বা বলা যেতে পারে জীবনের কাছে নিশ্চিত মৃত্যুর পরাজয়, অথবা বলা যেতে পারে যে, জীবনের বেচে থাকার সময়টা এখনো শেষ হয় নাই। যখন এমনটা হয় তখন আমরা কি বলতে পারি যে, সাক্ষাত ম্রতুকে আমরা দেখতে পেয়েছি? এমন অনেক প্রশ্ন থাকতেই পারে কিন্তু আসল মৃত্যু আর মিথ্যা মৃত্যুর মধ্যে নিশ্চয় এমন কোনো ব্যতিক্রম আছে যা প্রকারান্তে একটা মায়াজালের কিংবা মেঘলা আকাশের পিছনে আবছা নীল আকাসের মতো। কেউ কেউ হয়তো বলতে পারে, যদি অন্তরের দৃষ্টি খুলে যায় তখন জীবিত অবস্থায় মৃত্যুকে দেখা যায়। এটা অনেক বড় স্তরের একটা ধ্যান কিংবা আরাধনা। যারা এটাকে লালন করতে পারেন, তারা স্বাভাবিক মানুষ নন। জীবনটা কিভাবে বাচবে সেটা আমাদের হাতে, আমরা জীবনটাকে দেখতে পাই, কিন্তু এটা কিভাবে দেখবো যে, মৃত্যু কখন আর কিভাবে আসবে? সেটা আজ অবধি কেউ বলতে পারে নাই।

অফিসে যাওয়ার সময় যে মানুষটার উপর নির্ভর করে আমার সকাল হতো, রাতে ঘুমানোর আগে যে মানুষগুলির উপর ভরষা করে আমার ভালো ঘুম হতো। কারনে অকারনে যখন তখন আমাদের মেজাজ কখনো ক্ষিপ্ত কিংবা বিক্ষিপ্ত অথবা উদবেলিত হতো, যখন সে আর কাছে থাকে না, তখন অতীতের অনেক কথাই মনে পড়ে। অনেক মায়া লাগে। মনে হয়, সব কিছু থাকা সত্তেও যেনো কোনো কিছুই নাই। এই মায়া, এই ভরষা কিংবা এই বিক্ষিপ্ত চঞ্চলতার আর কোনো মুক্যই থাকে না সেই ব্যক্তির কাছে যে এই মাত্র সবার গোচরেই উধাও হয়ে গেলো চিরতরে। এই পরিবর্তনশীল সময়ে, অনেকেই হয়তো কথায় কথা বলে তারা ভালো আছেন, আমরা ভালো আছি কিন্তু তারা কিংবা আমরা জানিই না যে, আমাদের সময়টাই যে খারাপ যাচ্ছে। খুব মায়া হয় তখন। কিন্তু কেনো মায়া হয়, তার উত্তর আজো জানি না। যা হাতের মুঠোয় নাই, যা চিরতরে হারিয়ে যায়, অথচ একদিন হাতের কাছেই ছিলো, সেটার জন্য কেনো মায়া হয়, কেনো কষ্ট হয়, কেনো আবার ফিরে পেতে ইচ্ছে হয়, তার ব্যাখ্যা নাই আমাদের কাছে। এর কিছু ব্যাখ্যা হয়তো দাড় করানো যায় যে, হয়তো পুরানো অভ্যাসে বন্দি মন বারবার আবার সেই পুরানো খাচায়ই ফিরে আসতে চায়।  অথবা এমনো হতে পারে যে, কেউ যখন আর কাছে থাকে না, তখন হয়তো এটা পরিষ্কার বুঝা যায় নিজের কতগুলি স্বকীয়তা, অভ্যাস আর পছন্দ কতো নিঃশব্দে সেই চলে যাওয়া মানুষটি নিয়ে অন্তর্ধান হয়ে গেলো, সাথে নিয়ে গেলো তার থেকে ধারে নিয়ে বেচে থাকার আমাদের অনেক পরনির্ভরশীলতার অভ্যাসগুলিও। আর সেটা যখন পরিষ্কার হয় তখন অভাবগুলির সংকট দেখা দেয়। আমরা বিচলিত হই, ভয় পাই, কষ্টে থাকি আর তখনই তার অভাবে আমরা তার উপর মায়ায় চোখ ভিজিয়ে দেই।

তবে আজীবন একটা সত্য বচন এই যে, জীবন মানেই যাত্রা, আর এই যাত্রার শেষ প্রান্তেই থাকে মৃত্যু। অর্থাৎ জীবনের অবসানেই মৃত্যুর যাত্রা শুরু। এই নতুন পর্বের যাত্রা কখন কার কোন সময় শুরু হবে, এটা কোনো বিজ্ঞান, কোনো ডাক্তার, কোনো ধর্ম পুস্তক কিংবা কোনো ধ্যান কখনোই বলতে পারে না।

১২/০৬/২০২১-রোস্তমের টাকা চুরি-১

Categories

আমার ড্রাইভার ছিলো রুস্তম। খুবই ভালো একজন ড্রাইভার। বিয়ে করেছিলো কিন্তু রোস্তমের অভ্যাসের কারনে ওর বউ ওকে ছেড়ে দেয় কিন্তু ইতিমধ্যে ওদের একটা পুত্র সন্তান হয়ে যায়। ছেলেকে রেখেই রোস্তমের বউ রোস্তমকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে বিদেশে সেটেল্ড হয় যায়। রোস্তমের দোষ ছিলো রোস্তম প্রায়ই ডিউটি শেষে ওর বন্ধু বান্ধব্দের নিয়ে মদের আড্ডায় বসতো যা ওর বউ পছন্দ করতো না। বউ চলে যাবার পর ছেলেকে নানীর বাড়িতেই রেখে রোস্তম ছেলেকে পালতে শুরু করলেও মদের নেশাটা ছাড়তে পারলো না। বরং মদটা যেনো ওকে আরো পাইয়ে বসলো। আমি জানতাম না যে, রোস্তম মদ খায়। কারন আমার ডিউটি শেষ করার পর রোস্তম কোথায় গেলো আর কি করলো সেটা নিয়ে আমি মোটেই খবর রাখতাম না। 

এভাবেই রোস্তম আমার কাছে প্রায় ৫ বছর ড্রাইভার হিসাবে কাজ করছিলো। বিস্তস্থতা আর কোয়ালিটি ড্রাইভার হিসাবে রোস্তমের উপর আমার কোনো সন্দেহ ছিলো না। মাঝে মাঝে বেতনের বাইরেও আমি ওকে টাকা দেই, যেটা রোস্তম ও জানে যে ফেরত দিতে হবে না। আমিও চাইতাম না। রোস্তমের উপর আমার বিশ্বাস এমন হয়ে গিয়েছিলো যে, মাঝে মাঝে ফ্যাক্টরীর কোটি কোটি টাকাও একা ব্যাংক থেকে আনা নেয়া করাতাম। ভালোই চলছিলো। একদিন রোস্তম বল্লো যে, রোস্তম আসলে একা থাকে বলে ওর খাওয়া দাওয়ায় বেশ সমস্যা হয়, কাপড় চোপড় ধোয়াতেও সমস্যা হয়। ও বিয়ে করতে চায়। আমি ব্যাপারটাইয় সায়ই দিলাম। ওর বিয়ের একটা বাজেট হলো, প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। আমি বললাম, যে, আমিই ওর বিয়ের পুরু খরচটা দেবো। দিয়েও দিলাম। রোস্তম বিয়ে করে ফেল্লো। আমাদের বাসার পাশেই থাকে রোস্তম, সাথে ওর নতুন বউ। এবার একটা নতুন ঝামেলার সৃষ্টি হলো। নতুন বউ ও নাকি রোস্তমের সাথে এডজাষ্ট করতে পারছে না। জিজ্ঞেস করলাম আশেপাশের মানুষ গুলিকে। যে জিনিষটা আমার কখনোই ভালো করে জানা হয় নাই সেটা আমার নজরে এলো। রোস্তম ডিউটি করে এসেই সারারাত মদের আড্ডায় থাকে। ফলে ৫/৬ মাস যেতে না যেতেই রোস্তমের সাথে এই দ্বিতীয় বউ ও তাঁকে ছেড়ে দিতে মনস্থ করলো। কিন্তু রোস্তম যে বাসায় থাকে সেটা রোস্তমের নতুন বউ এর ভাড়া করা বাসা।ফলে ওর বউ রোস্তমকে বাসা থেকে বের করেই ছাড়লো। 

আমার দয়ার শরীর, তার উপরে রোস্তমকে ছাড়া আমি অচল। ভাবলাম যে, আমার বাসায় একটা গার্ডের রুম আছে, যেটায় কেউ থাকে না। এটাচড বাথ রুম। রোস্তমকে আমার বাসার ঐ গার্ড রুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিলাম। একদিন যায় দুইদিন যায়, হটাত এক রাতে আমি দেখলাম যে, রোস্তম আমার বাসায় বসেই মদ খাচ্ছে। অনেক রাগারাগি করলাম, নিষেধ করলাম এবং সতর্ক করে দিলাম যে, আর যদি কখনো আমি ওকে মদ খেতে দেখি তাহলে আমি ওকে বাসা থেকে শুধু নয়, আমার ড্রাইভার হিসাবেও ওকে বাদ দিয়ে দেবো। রোস্তম আমার কাছে এক প্রকার প্রতিজ্ঞাই করলো যে, সে আর কখনো মদ খাবে না। কিন্তু মদের যার নেশা, সে মদ ছাড়ে কিভাবে? রাত যখন গহীন হয়, রোস্তম তার মদের বোতলের মুখ খুলে মদ পান করতে থাকে। একদিন আমিও বেশ গহীন রাতে ওর রুমে হটাত করে এসে দেখি, রোস্তম মদ খাচ্ছে। মাথা আমার ঠিক ছিলো না। আমি রোস্তমকে ঐ রাতেই আমার বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলাম। কিন্তু চাকুরীটা বাদ করিনি। রোস্তম নরম্যালি আমার ড্রাইভার হিসাবে আবারো কাজ করতে থাকে। কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হলো না। এভাবেই প্রায় মাস খানেক চলে গেলো। 

গাড়িতে থাকাকালীন আমি প্রায়ই রোস্তমের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এম্নিতেই কথা বলতাম।  একবার রুস্তম আমারে বল্লো যে, ওর কাছে যদি ৩ লাখ টাকা থাকে তাহলে ওর জীবন নাকি সে বদলাইয়া ফেলবে। খুব ভালো কথা। বললাম, ৩ লাখ টাকা যদি পাস, তাহলে কি করবি? রুস্তম বল্লো যে, সে ২টা পুরান সিএনজি কিনবে। একটা নিজে চালাবে আরেকটা ভাড়ায় চালাবে। তাতে প্রতিদিন সে পাবে ১২০০ টাকা। তারমানে মাসে ৩৬ হাজার টাকা। ওর খরচ লাগে মাসে ১৬ হাজার টাকা। তার মানে মাসে সে ২০ হাজার সেভ হবে। বছরে সেভ হবে আড়াই লাখ টাকা। সেই আড়াই লাখ টাকা দিয়া সে আরেকটা সিএনজি কিনবে। এভাবে ২/৩ বছর পর সে গাড়ি কিনবে। তাতে ওর প্রতি দিন লাভ হবে ২ হাজার টাকা। এভাবে সে হিসাব করে দেখলো যে, ৫ বছর পর তার হাতে আসবে প্রায় ২০ লাখ টাকা, ৩টা সিএনজি আর একটা গাড়ি।

আমি ব্যাপারটা খুব সাভাবিকভাবেই নিয়েছিলাম। আগে পিছে কিছুই ভাবি নাই। একদিন আমি রোস্তমকে নিয়ে আমার প্লাষ্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের বেতনভাতা নিয়ে গেলাম ফ্যাক্টরীতে। আমার ব্যাগে তখন দুই জায়গায় মোট ৫ লাখ টাকা ছিলো। আমি গাড়ি থেকে নেমে অফিসে বসার পর আমার অন্যান্য ডাইরেক্টরদেরকে বললাম, আমার ব্যাগে ৫ লাখ টাকা আছে, সেটা নিয়ে আসো। বেতন দিয়ে দাও শ্রমিকদেরকে। সবাই বেতনের জন্য অপেক্ষা করছে। আমার গাড়িটা আমার অফিসের একেবারেই দরজার সামনেই পার্ক করা থাকে। আমার ডাইরেক্টররা গাড়ির কাছে এসে রোস্তমকে খুজে না পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, রোস্তম সম্ভবত গেটের দোকানে চা খেতে গিয়েছে। ওকে ফোন দিলাম, বল্লো, চা খেয়ে এখুনি আসবে। আসলে ব্যাপারটা ছিলো অন্য রকমের। রোস্তম আমার ব্যাগ থেকে এক পকেটে ৩ লাখ টাকা ছিলো, সেটা সে নিয়ে গেট দিয়ে বেরিয়ে গেছে কিন্তু আমাকে জানিয়েছিলো যে সে চা খেতে গেছে যেটা সে প্রায়ই চা খাওয়ার জন্য গেটের দোকানে যায়। ওর আসতে দেরী হ ওয়াতে আমি বারবার ফোন করতে থাকি। কিন্তু এক সময় দেখলাম রোস্তমের ফোন বন্ধ। আমার সন্দেহ হলো। দোকানে লোক পাঠালাম, রোস্তম সেখানে চায়ের জন্য বসেই নাই। বুঝতে বেশী দেরী হলো না যে, সে আমার ব্যাগ থেকে ৩ লাখ টাকা চুরি করে পালিয়েছে। ফ্যাক্টরীর আশেপাশে সব খানে খোজাখুজি করার পরেও যখন আর পেলাম না, তখন মীরপুর বাসা থেকে ডুপ্লিকেট চাবী এনে আমার গাড়ি খুলতে হলো, ব্যাগ চেক করলাম, এক জায়গায় রাখা তিন লাখ টাকা নাই, অন্য পকেটে রাখা ৩ লাখ টাকা আছে। 

 

 

চুরি করার পর এক মাস পালাইয়া পালাইয়া থাকলো। কোনো সিএনজি, কিংবা কিছুই কিনলো না। প্রতিদিন মদ খাইতো রাতে। একদিন মদ খাওয়ার পর কিছু বন্ধু বান্ধব জেনে গেলো ওর কাছে বেশ কিছু টাকা আছে। এক রাতে মদ খাইয়া বেহুস। ওর সব বন্ধুরা টাকা গুলি নিয়া পালাইলো। রুস্তমের আর কিছুই নাই। খাওয়ার পয়সাও নাই। তারপর একদিন সে ভাবছে, আমার কাছে আবার ফিরে আসবে কিনা। কিন্তু আর সাহস পায় নাই। তারপর না খেয়ে খেয়ে পাগলের মতো অবস্থা। আবার এদিকে পুলিশের ভয়, আমার ভয়।

অতঃপর একদিন

একদিন একতা বিশাল চিঠি লিখলো আমাকে। পোষ্ট অফিসে গেলো চিঠি পোষ্ট করতে। চিঠি পোষ্ট করলো। ২২ পাতার একটা চিঠি।  চিঠির শেষ লাইনে লেখা ছিলো- যেদিন আপনি চিঠিটা পাবেন, সেদিন হয়তো আমি আর বেচে নেই স্যার। কিন্তু একটা কথা বলে যাই, আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সাহস কম, তাই আর বাচতে পারলাম না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা কইরা দিয়েন।  যেদিন আমি চিঠিটা পাই, তার প্রায় ৪ দিন আগে রুস্তম তারের কাটা গলায় দিয়ে ফাসি দিয়ে আত্তহত্যা করেছিলো। আমার প্রায়ই ওর কথা মনে পড়ে। আমি ভাবি যে, যদি রুস্তম সাহস করে আবার আমার কাছে আসতো, আমি ওকে আবার রাখতাম আমার ড্রাইভার হিসাবে। আমি ওরে ক্ষমা করে দিছি। আমিও ওকে ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার ভালোবাসা ওকে ঠেকাতে পারে নাই। এটা আমার ব্যর্থতা। কিন্তু এটা ওরও ব্যর্থতা।

 এটা কেনো বললাম জানো?

কারন, যে যেই জীবন চায়, সে সেটাই পায়। কেউ জেনে শুনে পায়, কেউ না জেনেই পায়। তোমার লাইফ আমার কাছে যতোটা মুল্যবান, সেই জীবনটা তোমার কাছে কতটা মুল্যবান, তার উপর নির্ভর করবে তোমার পরবর্তী পদক্ষেপ। আর এই পদক্ষেপ কেউ ঠেকাতে পারে না। যার জীবন, মাঝে মাঝে সেও ঠেকাতে পারে না। 

১১/০৬/২০২১-কালো

Categories

কালোর মতো কোনো রং নেই। কিন্তু এমন কিছু কি আছে যা কালোকে সাদা করতে পারে? আসলে কোনো জিনিষ সাদা বা কালো হয় না। সবটাই আলোর খেলা। কিন্তু এই কালোই যখন কোনো মানুষের গায়ের রং হয় তখন এটা সবচেয়ে বিড়ম্বনার একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। কোনো কালো মানুষের গল্পের কাহিনী যদি কেউ শোনেন, দেখা যাবে গায়ের রং এর কালো মানুষের গল্পটা সবার থেকে আলাদা বিশেষ করে সেই ব্যক্তিটি হয় কোনো মেয়ে মানুষের গল্প। কালো মেয়েদের অনেক কথা তাদের মনেই রয়ে যায়। কাউকে তারা বলতেও পারে না। কে শুনবে তাদের কথা? মেয়েরা কালো হলে সেই ছোট বেলা থেকেই সমাজের সবার আকার- ইংগিতের ভাষায় তারা এটাই মনে করতে থাকে যে, কালো মুখ একটা অপয়ার ছায়া যেনো। আর এই অপবাদ থেকেই তাদের মনে এবং মস্তিষ্কে হীন মন্যতা বাসা বাধে। তাদের নিজের উপর নিজেদের কনফিডেন্স কমতে থাকে। অথচ এই কালো হয়ে জন্মানোর পিছনে তাদের না আছে কোনো হাত, না আছে তাঁকে পরিবর্তন করার কোনো ক্ষমতা। কালো রং, বা শ্যামলা রং যদি অভিশাপই হতো তাহলে “কৃষ্ণের” কালো রং কোনো অভিশাপ নয় কেনো? এই কালো ক্রিষনকে তো তার সমস্ত কালো রং নিয়েও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ তাঁকে সম্মান করে, ভালোবাসে, পুজা করে। কিন্তু দূর্ভাগ্যের ব্যাপার এটাই যে, কৃষ্ণ ছাড়া পৃথিবীর তাবদ মেয়ে মানুষকে এই কালো রং কে মানুষ তাদের ঘাটতি হিসাবেই দেখা হয়। ফলে নিজের কালো রং এর কারনে অনেক মানুষ ধীরে ধীরে সমাজের সবার কাছেই তাচ্ছিল্যের একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমনো ধারনা করা হয় যে, ফর্সা মানে সুন্দর আর কালো মানে কুৎসিত। ছেলে সে যতোই কুৎসিত হোক না কেনো তার ও ফর্সা মেয়ে চাই, আর যদি কোনো মেয়ের গায়ের রং হয় কালো, তার তো এম্নিতেই হাজার সমস্যা, তার আবার কালো আর ধলা ছেলে পাওয়ার কোনো স্প্রিহাই তো নাই।

কালো পোষাক পড়লে আমরা নিজেকে সুন্দর মনে করি, কালো টিপকে আমরা শুভ বলে মানি। কথায় আছে কালো টিপ কুনজর থেকে বাচায়। মুখের উপর কালো তিলে আমাদেরকে সুন্দর দেখায়। কিন্তু কোনো মানুষের গায়ের রং যদি কালো হয় তাহলে তাঁকে আমরা কুৎসিত বলতে দ্বিতীয়বার ভাবি না। খুবই আসচর্জ চিন্তাধারা।

সউন্দর্জ আসলে কোনো রং নয়। অথচ এই সউন্দর্জ যেনো সব নির্ভর করে কালো ছাড়া অন্য আর সব রং এর উপরে। কেনো? এর উত্তর একটাই- আমরা কালো আর সুন্দর্জের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি না। যখন চোখ শরীর থেকে মনের ভিতরে যায়, তখন মানুষের মনের ভিতরের সউন্দর্য দেখা যায়। আমাদের এই ক্ষমতা সবার থাকে না কিভাবে আমাদের চোখ শরীর থেকে মনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। আমাদের নিজের এই গুনের অভাবেই আমরা কোনো কালো মেয়ের ভিতরের রুপ দেখতে পাই না আবার এটাও পাই না যে, কোনো ফর্সা মেয়ের মনের ভিতরে কতটা কুৎসিত চরিত্র রয়েছে। আর দেখতে পাই না বলেই কোনো কালো মেয়ে কারো জীবনে অন্ধকার মনে হয় আর কারো কাছে সে আলোর দুনিয়ার মতো একেবারে পরিষ্কার। আসলে গায়ের রং নয়, যার কর্মকান্ড কালো, সেইই কালো। কালো গায়ের রং কোনোভাবেই দুনিয়ায় অশুভ হতে পারে না।

এটা খুবই জরুরী যে, আমরা এই রং বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসি, নিজের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসি যাতে প্রকৃতির তৈরী সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি মানুষ তাঁকে দেখতে যেমনি হোক না কেনো তাঁকে সম্মান করি।

১১/০৮/২০২১-কনিকার যাওয়ার সময় উপদেশ

নতুন জায়গায় নতুন দেশের নতুন নিয়মে তুমি সম্পুর্ন আলাদা পরিবেশে একটা নতুন জীবন ধারায় নতুন ক্যারিয়ার তৈরী করার জন্য দেশ ছেড়ে সুদূর আমেরিকায় যাচ্ছো। তুমি এদেশের কোন চাপ, কোনো বিরহ নিয়ে ওখানে বাস করবে না, না কোনো কারনে মন খারাপ করবে। একদম ফ্রেস মাইন্ডে যাবে আর ফ্রেস করে শুরু করবে সব। মন দিয়ে নিজের সপ্ন পুরু করার চেষ্টা করবে কিন্তু সব সময় শরীরের দিকে যত্ন নিতে হবে। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে পারি কিন্তু লড়াইটা তোমার, তোমাকেই লড়তে হবে। এটা বিজনেস নয়, এটা তোমার লাইফ। গল্পটা তোমার, সপ্নটা তোমার। এই আজ থেকে তুমি একটা জার্নি শুরু করলে যার একমাত্র যাত্রী তুমি নিজে। জীবনের মজাটা হচ্ছে- কিছু কিছু জিনিষ এমন হয় যেটা অবিশ্বাস্য লাগে কিন্তু তুমি বুঝতে পার- হ্যা এটা হয়েছে। তখন নিজের থেকেই বিশ্বাস হয়ে যায়। 

নতুন কাজ, নতুন পরিবেশ, কিন্তু নিজেকে বদলে ফেলো না। কেউ চলে যাবার পর হয়তো কিছু পরিবর্তন নজরে আসে। তুমি চলে যাবার পর হয়তো আমাদের এখানে অনেক কিছুই পালটে যাবে। পালটে যাবে কোনো এক সন্ধ্যায় পিজা খাওয়ার কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত, পালটে যাবে কোনো এক ছুটির দিনে দল্বেধে বাইরে গিয়ে খেতে যাওয়ার আসর কিংবা পালটে যেতে পারে আমাদের অনেক দইনিন্দিন কিছু কর্ম কান্ড ও। আমাদের এই পরিবর্তন কোনো নতুন কিছু হয়তো নয়, এটা একটা এডজাষ্টমেন্ট, যা তোমার অনুপস্থিতিতে আমাদের আনন্দের সাথে বেচে থাকার নিমিত্তে। কিন্তু তোমার বদলে যাওয়া অন্য রকম। তুমি বদলাবে সেটা যাতে তোমার ভালোটা হয়।

 আমি তোমাকে কোনো কিছুতেই কখনো আটকাই নাই, না কখনো আটকাবো। কিন্তু তুমি আমার নিজের মেয়ে, আমার বহু আদরের সন্তান। যদি এমন কখনো হয় যে, আমি তোমাদের কারনে দুশ্চিন্তায় থাকি, তখন হয়তো সমস্ত আবেগ, মায়া আর ভালোবাসা উপেক্ষা করেই হয়তো আমি তোমাকে আটকাবো। সেটা যেনো আমাকে করতে না হয়। প্রাইওরিটি ঠিক করতে হবে জীবনে। সব সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবে। জীবনে ব্যস্ততা থাকবে কিন্তু এতোটা না যাতে ফ্যামিলি ডিপ্রাইভড হয়। তুমি যদি ভালো ফলাফল করতে না পারো, এর মানে এই নয় যে, আমার ভালোবাসা তোমার উপর কমে যাবে। তুমি যদি তোমার ডিজায়ার্ড রেজাল্ট না করতে পারো শত চেষ্টা করার পরেও, আমি তোমাকে কখনোই দোষারুপ করবো না। বরং আমি তোমাকে সারাক্ষন সাহস দেবো, সহযোগীতা করবো কিভাবে তুমি সবার থেকে ভালো ফলাফল করতে পারো। আর ওটাই তোমার বাবা।

একটা জিনিষ সারাজীবন মনে রাখবা যে, সোস্যাল মিডিয়া একটা মেনিপুলেটেড মিডিয়া। এর বেজ মোটেই সত্য নয়। বরং এটা সাজানো সত্যি। কোনো জিনিষ সাদা বা কালো হয় না। সবটাই আলোর খেলা। এই সোস্যাল মিডিয়ায় সেটাই তারা জানাতে চায় যেটা তারা তোমাকে জানাতে চায় কিন্তু তোমার উচিত সেটা জানা যেটা আসল সত্যি। কারন অনেক বড় অপরাধের শিকর অনেক গভীরে থাকে। এই সোস্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিত্তরা সবাই মেনিপুলেটেড চরিত্র। এরা ডিটেইল্ড মিথ্যা কাহিনী খুব নিখুতভবে বানায়। তাই কোনো কিছুর ফেস ভ্যালুতে না গিয়ে ডাবল ভেরিফিকেশন জরুরী। জীবনের নিরাপত্তার জন্য নিজের চারিদিকে সবসময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে। এই কথাটা খুব জরুরী মনে রাখা যে, প্রকৃতির ইশারার প্রতি সর্বদা সেনসিটিভ থাকা। যেদিন সুনামী হয়, তার আগের দিন জংগলের সমস্ত প্রানিকুল সবাই জাত নির্বিশেসে উচু জায়গায় স্থান নিয়েছিলো, কারন তারা প্রকৃতির সেন্সটা বুঝতে পেরেছিলো। যা মানুষ বুঝতে পারে নাই। ফলে সুনামীতে বন্য প্রানীদের মধ্যে যতো না ক্ষতি হয়েছিলো তার থেকে শতগুন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো মানুষ। ঠিক এই কারনেই  সব সময় মনে রাখা দরকার যে, অপরাধের সুনামী একটা নয়, অনেক সংকেত দেয়, হওয়ার আগে এবং অপরাধ হওয়ার সময়। শুধু সেটা ধরতে হয়।

মানুষের শরীরে একটা জিনিষ থাকে যা পোষ্টমর্টেম করেও পাওয়া যায় না। কিন্তু কোনো সাফল্যে সব থেকে জরুরী হয় সেই জিনিষটার। সেটা “কনফিডেন্স”। এই কনফিডেন্স মানুষকে তৈরী যেমন করতে পারে, তেমনি ভেংগেও দিতে পারে। যখন এটা ভেংগে যায় বা হারিয়ে যায়, তারপরে আর কিছু কাজ করে না। তখন যেটা হয়, তুমি ঠিক করছো নাকি ভুল করছো কিছুই বুঝতে পারবে না। আর যখন কনফিডেন্স চলে যায় বা হারিয়ে যায়, সেই জায়গাটা দখল করে নেয় “কমপ্লেক্স”। এই কমপ্লেক্স যখন গেথে বসে যায় কারো জীবনে, তখন সিম্পল একটা ছবি তুলতেও খারাপ লাগে। কারন কে আপনাকে নিয়ে মজা করবে, কে লেগ পুলিং করবে এই সব ভেবে।

জিবনে এমন কোনো অধ্যায় তোমার থাকা উচিত নয় যা তুমি আর অন্য কেউ শুধু জানো অথচ আমরা জানি না। আমাদের মান, সম্মান, পজিশন, সমাজে মাথা উচু করে বেচে থাকার জন্য শুধু আমাদের গুনাবলীইই যথেষ্ঠ নয়, সেখানে তোমরাও আমাদের সেই জীবনের সাথে জড়িত। ফলে, যেটাই হোক সবকিছুতেই আমাদের কথা মাথায় রাখবে। বাবা মায়ের থেকে বড় ভরষা আর কিছু নাই। আমরা যদি আগে থেকেই জানতে পারতাম আমাদের কর্মফলে কি ফলাফল হয়, তবে কতই না ভালো হতো। কিন্তু সেটা আমাদের স্রিষ্টিকর্তা সুযোগ দেন নাই। তাই সতর্ক থাকাটা খুব দরকার। সতর্ক হওয়া মানে এই নয় যে আমরা শুধু মাত্র পরিনতির বিষয় ভাববো, সতর্ক থাকার অর্থ হলো সঠিক সময়ে নেয়া সেই পদক্ষেপ যা আগামী সমস্যাগুলিকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। বিশেষত এটা জানা সত্তেও যে আমাদের আগামী কর্মফল খারাপ।

মনে রাখবা এক বন্ধুই আরেক বন্ধুর ক্ষতি করে। তাতে তোমাকে সাহাজ্য করতে আমাদের অনেক অসুবিধা হবে। তুমি শুধু ফোকাস করবে তোমার ক্যারিয়ারে আর সপ্ন পুরনে। তোমাদেরকে নিয়ে আমার সারাটা জীবন অন্য রকমের একটা সপ্ন আছে। আরেকটা কথা মনে রাখবে- ভালোবাসায় অনেক শক্তি থাকে। যদি হতাতই মনের অনিয়ন্ত্রনের কারনে কাউকে ভালোই লেগে যায়, সেখানে নিজের সাথে নিজের বুঝাপড়া করো। সব ভালোবাসার রুপ এক নয়। কেউ ভালোবাসে তোমার শরীরকে, কেউ ভালোবাসে তোমার দূর্বলতাকে, কেউ ভালোবাসে তোমার মেধাকে, আবার কেউ ভালোবাসে তোমার তথা তোমার পরিবারের সম্পদ কিংবা তোমার অস্তিত্বকে। কে তোমাকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসলো, এই দৃষ্টিকোণ টা খুব ভালো করে বুঝা তোমার দায়িত্ব। কেউ যদি তোমাকে আসল রুপে ভালোবাসে, কখনো সে তোমাকে জোর করবে না কারন সে জানে যদি তুমি তার হও, তুমি যেভাবেই হোক সেটা বুজতে পারবে আর তুমি তার কাছে বিলম্ব হলেও ফিরে যাবে অথবা সে দেরী করে হলেও তোমার কাছেই ফিরে আসবে। যদি সে ফিরে আসে বা তুমি ফিরে যাও, তাহলে বুঝবে এটা সত্যি ছিলো। নতুবা কিছুই সত্য ছিলো না। যা ছিলো সেটা হলো একটা মোহ। মোহ আর ভালোবাসা এক নয়। একটা বাস্তব আর আরেকটা মিথ্যা। এই মিথ্যা ভালোবাসায় পতিত হয় হয়তো মনে অনেক কষ্ট জমা হতে পারে। কিছু জিনিষ যা প্রতিনিয়ত মনকে কষ্ট দেয়, মানসিক শান্তি নষ্ট করে, সে সব কাহিনী চিরতরে ভুলে যাওয়াই ভালো। তাতে অন্তর মানসিক কষ্টটা আর থাকে না। এটা অনেক জরুরী একটা ব্যাপার। সব কিছুরই প্রথমবার আছে। এটা যেমন ভালোবাসার ক্ষেত্রে তেমনি অপরাধের ক্ষেত্রেও। যৌবন হলো অসহায় এবং শক্তির দ্বিতীয় নাম। অপরাধের ক্ষেত্রে বিচার হয় কিন্তু যৌবনের ভালোবাসার প্রতারনায় নিজের অসহায়ত্তের বিচার নিজেকে করতে হয়। তখন নিজের বিরুদ্ধে রায় দেয়া সহজ হয় না। তাই আমি সব সময় একটা কথা বলি- টাইম হচ্ছে মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ভিলেন। তার কাছে পরাজিত হওয়া যাবে না। আবার এই টাইমই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বন্ধু। তুমি এই টাইমকে কিভাবে ব্যবহার করবে সেটা তোমার বিবেচনা। একবার মনে কালো দাগ পড়ে গেলে তা আজীবন নিজেকে কষ্ট দেয়। ব্ল্যাক কফি, ব্ল্যাক ফরেষ্ট কেক, ডার্ক চকোলেট, ঘন জংগল অন্ধকার রাত, সবই কালো কিন্তু সে কালো কোনো কষ্টের নয়। কিছু কালো জীবনের অভিশাপ। কালোর মতো কোনো রং নেই। কিন্তু কিছু কি আছে যা কালোকে সাদা করতে পারে? বিশেষ করে সেই কালো যা জীবনের ধারাবাহিকতায় অভিশাপের মতো রুপ নিয়েছে? তাই, আমি প্রতি নিয়ত তোমাকে নিজের হাতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছেড়ে দিতে ভয় করলেও তোমার উপর আমার আলাদা একটা ভরষা আছে- তুমি পারবে ঠিক সে রকম করে চলতে যা আমি তোমার জন্য করতে চেয়েছিলাম। এই ভরষায় আমি তোমাকে অনেক দূরে পাঠাতেও দ্বিধা করছি না।

আমার আশা, তোমার মায়ের সপ্ন আর আমাদের পরিবারের সব সম্মান তোমার হাতে দিয়ে এটাই বলতে চাই- আমরা তোমাদের পরিচয়ে সমাজে আরেকবার সম্মানীত হতে চাই। বাকীটা আল্লাহ মালিক জানেন।

২২/৬/২০২১-তোমাকে

যে যেই জীবন চায়, সে সেটাই পায়। কেউ জেনে শুনে পায়, কেউ না জেনেই পায়। তোমার লাইফ আমার কাছে যতোটা মুল্যবান, সেই জিবনটা তোমার কাছে কততা মুল্যবান, তার উপর নির্ভর করবে তুমি তোমার জীবনকে তুমি কতোটা ভালোবাসো। জীবনকে বুঝতে বুঝতে মানুষের প্রায় বেশীরভাগ সময়ই পার হয়ে যায়। ফলে যখন সে সত্যিকার অর্থে জীবনকে বুঝতে শিখে তখন সে তার রিসোর্সের প্রায় শতভাগ ব্যবহার করে ফেলে। যদি পরিকল্পিত পরিকল্পনায় জীবন গড়ে উঠে সে আনন্দের সাথে নিসচিন্তে বাকীটা সময় কাটিয়ে দেয়। কিন্তু যদি অপরিকল্পিতভাবে জীবনকে একতরফা এগিয়ে নিয়ে যায়, সে শেষ জীবনে এসে বুঝতে পারে-ফিরে যাবার আর উপায় নাই। তখন সে নিজের উপরেই নিজে রাগ করে, সবার উপরে অভিমান করে আর ভাবে-কোনো কিছুরই প্রয়োজন ছিলো না।  

 

আমি আমার এই ছোট জীবনে একটা বিষয় খুব ভালভাবে বুঝতে শিখেছিলাম যে, আমার আশেপাশে আমি ছাড়া আর কেউ ছিলো না, থাকবেও না এবং এখনো নাই। স্বাধীন আছি কিন্তু আমি পরাধীন আমার নিজের কাছে। নিজ পরাধীনতা আমাকে এটাই শিখিয়েছে যে, মাথা উচু করে, কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে বাচার নামই আসলে পূর্ন স্বাধীনতা। আর এই পূর্ন স্বাধীনতা যখন পূর্নতায় ভরে উঠে তখন নিজের কাছেও আর কেউ পরাধীন থাকে না। আমি আমার সেই স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেই আমি আজীবন ঠিক সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি যাতে আমি একা, আমি স্বাধীন এবং কারো উপরে আমার নির্ভরশীলতা না থাকে তা নিশ্চিত করা।

 

আমার সাথে যারা থাকে বা আমার বলয়ে আমাকে ঘিরেই তাদের পরিকল্পনা করে বেচে থাকতে চায়, আমি আমার পুরো পরিকল্পনায় তাদেরকেও প্যাকেজে বেধে ফেলি। ভাবি, সেটাও আমার দায়িত্ব। তাই আমি আমার থেকে তাদেরকে শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করি। কেউ আমাকে এই অপবাদটা দিতে পারার কথা নয় যে, আমি স সব মানুষকে কোনো না কোনো কারনে ব্যবহার করেছি বা কাউকে আমি নিজের সার্থে ঠকিয়েছি। আমি ঠকেছি কিন্তু তাদেরকে আমি ঠকাইনি।

 

তোমার বয়স যখন মাত্র ১৮ কিংবা ১৯, তখন তুমি আমার দরজায় এসেছিলে। ঠিক এই সময়ে তোমার যা ছিলো তা অবাক করার মতো এক বিষয়। অপরিপক্ক এক জীবন্ত মানুষ। নিজের সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নাই, নিজের জেন্ডার সম্পর্কে তোমার কোনো ধারনা নাই। তোমার ক্ষমতা সম্পর্কেও তোমার কোনো আইডিয়া নাই। চারপাশ তোমার চলে যায় একেবারে অর্থহীনভাবে। কে তোমার আপন, কে তোমার আপন নয়, কে তোমার ভালো চায়, কে তোমার ভালো চায় না, কে তোমাকে ভালোবাসে, আর কে তোমাকে ভালোই বাসে না, কি তোমার অধিকার বা কথায় তোমার অধিকার কিংবা কি তোমার আছে বা কি তোমার নাই এসব নিয়ে তুমি কখনো ভাবোও নাই, না তুমি এসবের মধ্যে কখনো ছিলা। সপ্তাহের কোন দিনই তোমার জন্য কোনো চমক নিয়ে আসে নাই, অথবা কোনো ঋতুই তোমাকে এমন এক ভাবনায় নিয়ে যায় নাই যা একজন স্বাভাবিক মানুষের জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে। সকাল হয়, সন্ধ্যা হয়, ঝড় হয়, বৃষ্টি হয়, বন্যা বা শীত যাইই হোক না কেনো, সব কাল তোমার জন্য একই। অথচ এটা কোনো প্রানির বেলাতেও হয় না কিন্তু তোমার বেলায় এটাই হচ্ছিলো। তোমার কাছে কে ছেলে, কে মেয়ে, কে বালিকা বা কে বালক এর কোনো জেন্ডার পার্থক্য ছিলো না। পাখীদের মতো সকাল হয়েছে, আবার পাখীদের মতোই দিনের শেষে রাত নেমেছে তোমার জীবনে। একটা শুধু জায়গা হলেই হয় ঘুমানোর, সেটা মাটি নাকি খাট, নাকি ঘর না বারান্দা কিংবা রান্নাঘর এর মধ্যে কোনো বালাই ছিলো না। যখন ঘুমিয়েছো, ঘুমিয়েছ যেন ঠিক সেভাবে যে, পৃথিবীটা একেবারে নিরাপদ। অথচ তোমার জানা ছিলো না, এই পৃথিবীতে বাস করে হায়েনারা, বাস করে চোরেরা, বাস করে খুনীরা। এটা কোনো মনুষ্য জীবন নয়।

 

প্রথম যখন আমি তোমাকে দেখেছিলাম, আমি ঠিক এটাআই দেখেছিলাম তোমার জীবনে। কিন্তু অবাক করার বিষয় ছিল যে, আমার এই ধারনা পুরুই ভুল ছিলো। কেনো বললাম, ভুল ছিলো? সেটা বলছি।

 

সামাজিক প্রেক্ষাপটে আজো আমাদের সমাজে সব প্রানিরা তাদের সন্তানদের উপর একটা নজরদারি করে। হোক সেটা মানুষ কিংবা কুকুর, অথবা মুরগী। সব প্রানীরাই তাদের সন্তানদেরকে তারা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অতোতাই সময় ব্যয় করে যতোদিন না সেই সন্তান সাবলম্বি হয়। এই সময় পর্যন্ত সব প্রানিরা তাদের সন্তানদেরকে চোখে চোখে রাআখে যেন হটাত করে অন্য কারো শিকারে পরিনত না হয়। তারা তাদের সন্তানদেরকে খাবারের যোগান দেয়, কাছাকাছি রাখে, বিপদ কি জিনিষ সেতার শিক্ষা দেয়। মুরগীর বাচ্চা যেমন কাক দেখলে পালিয়ে যায়, মুরগী যেমন শিয়াল দেখলে লুকিয়ে যায়, সাপ যেমন গর্তে লুকিয়ে থাকে ইত্যাদি। কিন্তু আমি তোমার বেলায় পরবর্তীতে যা দেখেছি সেটা লোমহর্ষক। তোমাকে তোমার পিতামাতা এ ব্যাপারে এতোটাই উদাসীন ছিলো যে, তুমি বেড়ে উঠেছো ঠিকই কিন্তু তোমাকে এই পৃথিবীর বিপদ, আপদ কিংবা ভালো খারাপের কন কিছুই শিক্ষা দেয় নাই। যতোটুকু তুমি শিখেছো তা শুধুমাত্র নিজে নিজে। তোমার এই শিক্ষাতা ছিলো তোমার নিজের। এটা আসলেই আমাকে অবাক করেছে। তুমি নষ্ট হয়ে যেতে পারতে নিজের অজান্তে, তুমি পচে যেতে পারতে পরিস্থিতির কারনে, তুমি হারিয়ে যেতে পারতে পথ না চেনার কারনে। কিন্তু আমার এখন মনে হচ্ছে- কেউ তোমাকে অনেক আগলে রেখেছে খুব সজতনে। আর সেটা ঈশ্বর। তোমাকে ঈশ্বর পথ পিছলে পাহাড়ের নীচে পড়তে দেয়নি, তোমাকে ঈশ্বর অচেনা পথে চালিত করেনি। তোমাকে ঈশ্বর নিজে গাইড করেছে সারাক্ষন।

 

ঈশ্বরের সেই গাইড থেকেই হয়তো তুমি ছিটকে বেরিয়ে এসেছো আমার দরজার সামনে। হয়তো সেইই তোমাকে আমার দরজার সামনে নিয়ে এসেছে।

তোমাকে আমার কোনোই প্রয়োজন ছিলো না। না তোমার মেয়েলী কিছু, না তোমার রুপ, না তোমার ভালোবাসা। আমার এসবের কোনো কিছুই প্রয়োজন ছিলো না। কারন আমার আশেপাশে তোমার যা আছে এ সবেরই ছিলো অঢেল বা ছরাছরি। তুমি আমাকে যা দিতে পারো তা আমি অনায়াশেই পাই হাত বাড়ালে। তাও আবার নিত্য নতুন পন্যের মতো আমার ইচ্ছায় সব কিছুওই এসে হাজির হতে পারে আমার দরজায়। তোমার কাছে নতুন এমন কিছু ছিলো না যা আমার আশেপাশে নাই।

কিন্তু একটা জিনিষ আমি তোমার জীবনে দেখেছি যা আমার কাছে একেবারেই নতুন মনে হয়েছে। আর সেটা হচ্ছে-আমাদের সমাজে এখনো সেই সব মানুষ বিদ্যমান যারা তাদের সন্তানদেরকে সন্তান হিসাবে দেখে না, দেখে একটা জীবন্ত নরাচড়া প্রানী হিসাবে। এদের জন্য কোনো করনীয় নাই, এদের জন্য কোনো পরিকল্পনা নাই, এদের জন্য আলাদা করে কোনো ভালোবাসাও নাই। জগত সংসারে এসব সন্তান হুট করে চলে এসছে তাই ফেলে দেয়া যায় না, তাই মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দিয়ে শুধুমাত্র জিইয়ে রাখা। তুমি ছিলে ঠিক সেই পরিস্থিতিতে। কিন্তু এটা কি সম্ভব? তোমাকে কেউ জোর করে হরন করে মনের সুখে আনন্দ করে নিয়ে গেলেও যতোটা কষ্ট একটা পিতামাতার হওয়া উচিত, সেটাও হয়তো হবে না। তোমার শারিরীক অসুস্থ্য কাউকে বিড়ম্বনায় ফেলে না। যেন অসুখ কোন চিন্তার ব্যাপার নয়। আবদার, আহলাদ, নিজের ইচ্ছা, পছন্দ এগুলির তো কোনো জায়গায়ই নাই। তোমার চোখের জলের কোনো মুল্য নাই।

তোমার এমন একটা পরিস্থিতি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিলো। তোমার এ রকমের একটা পরিস্থিতি তোমার আশেপাশে বিরাজমান, সেটা তুমি নিজেও জানো না ভেবে আমার আরো অবাক হতে হয়েছে। তুমি কতটুকু অসহায়, তুমি কতটুকু বিপদের মধ্যে আছো। তুমি কতটা অবহেলায় আছো, সেটা তুমি নিজেও জানো না। আর যদি জেনেও থাক, তার কোনো প্রতিকার তোমার কাছে নাই। তুমি তোমার পরিস্থিতি সঠিকভাবে জানলেও তোমার এর বিরুদ্ধে কি করা উচিত বা কিভাবে করা উচিত সেই ক্ষমতাও তোমার নাই। ফলে আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে-তুমি তোমার নিয়তির কাছে শতভাগ আত্তসমর্পন করেই বেচে আচজো যা যে কোনো সময়ে আরো অনেক খারাপের দিকে যেতে বাধ্য।

প্রচন্ড মায়া লেগেছে আমার। যদি তুমি কখনোই আমার সামনে না আসতে, আমি তোমাকে নিয়ে এই মায়ায় কখনোই জাড়াতাম না। তোমাকে মায়া করার জন্য আমি নিজেও প্রস্তুত ছিলাম না। না আমার কোন দরকার ছিলো। দরকারটা ছিলো তোমার। আর সেই দরকারটা তোমার ঈশ্বর আমার দরজায় নিক্ষেপ করে আমার অন্তরে একটা আবেগের ঢেঊ তোলে দিয়েছিলো। তুমি হয়তো সেটা জানোই না।

এখানে আরো একটা আবেগের কথা না বললেই নয় যে, একই ছাদের তলায় বসবাস করে, একই হাড়ির খাবার খেয়ে, কিংবা একই পরিবারে বাস করেও তোমার অধিকারটা ছিলো সর্বনিম্ন। ঈদের চাকচিক্য দিনে কিংবা হাড়কাপুনি শিতে যখন অন্যদের গায়ে নতুন কিছু জুড়ে যায়, তখনো তোমার জন্য কিছুই জোটতো বলে মনে হয় না। তুমি হয়তো এতা কখন উপলব্ধিও করো নাই যে, তুমি আসলে সবার মাঝে বসবাআস করেও একটা আলাদা মানুষ। সবার জন্য ঘুমানর নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও তোমার জায়গার কোনো নির্ধারিত স্থান নাই। সবার প্লেট আলাদা হলেও তোমার প্লেট যেনো সার্বোজনিন, একটা হলেই হলো। তোমার কোনো আইডেন্টিটি নাই। অবাক না?

হ্যা, অবাক করারই বিষয়। আর ঠিক যেদিন আমি এই ঘটনাগুলি বুঝতে পারলাম, সেদিন মনে হয়েছে, তুমি মানুষের চেহারায় আসলে একটা অন্য কিছু হয়ে বড় হচ্ছো। ঈশ্বরের কোনো না কোন পরিকল্পনা তো আছেই তোমাকে নিয়ে। আর সেই পরিকল্পনাটা সম্ভবত তিনি বরাদ্ধ করে রেখেছেন-আমার কাছে তোমার রিজিক।

যখন তুমি আমার কাছে একেবারে চলে এলে, আমি আমার সব পরিকল্পনা আমি পালটে দিলাম তোমার জন্যে। এটা ভালবাস বা কোনো লোভে না। এটা-মায়া। এটা ভালবাসা নয়। এই পৃথিবীতে ভালবাসার থেকে অনেক বেশি ক্ষমতাশীল আবেগ হচ্ছে-মায়া। ভালোবাসা একসময় ঘৃণায় পরিবর্তন হতে পারে, একজনের ভালোবাসা অন্য কারো আরো বেশি ভালবাসায় একসময় একজন থেকে আরেকজনের কাছে সরে যেতে পারে। কিন্তু মায়া এমন এক জিনিষ, যা কখনোই পরিবর্তন হয় না। সময় পেরিয়ে গেলেও মানুষ মায়ার কারনে আবার সব ভুলে বুকের কাছে টেনে নেয়। যার কাছে মায়া আছে, তার ভালবাসার দরকার পড়ে না। তার শরীর দরকার পড়ে না, তার কোনো কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না। আর এই মায়ার কারনেই মানুষ চিরস্থায়িভাবে একই জায়গায় পড়ে থাকে।  

তোমার আগেও কেউ ছিলো না, আমার পরে তোমার আর কেউ নাইও। এটাই সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। কেউ কেউ বলে-যাদের জীবনে এমন একটা অনিশ্চয়তা আছে তারা সংসার করলেই সব দুঃখ, সব অনিশ্চয়তা কেটে যাবে। আজ আমার এই ৫৮ বছর বয়সে এসে আমি যেতা বুঝেছি সেতা হল-সংসার একটা পুরুদস্তর মরিচিকা। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ সংসার করে অনেক গুলি কারনে যা পশ্চিমা দেশগুলিতে নাই।  

পশ্চিমা দেশ গুলিতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে অবাধ মেলামেশার কারনে তারা যেমন অবাধে শারিরীক চাহিদা মিটাতে পারে, সেখানে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলে না। অবিবাহিত দুটু ছেলেমেয়ের মেলামেশায় কেউ খারাপ মন্তব্য করে না। তারা যুগের পর যুগ লিভ টুগেদার করেই সংসার না করে একাই স্বাধীন থাকে। ওরা কখনোই একা থাকে না। আজ যাকে নিয়ে লিভ টুগেদার করছে, তাকে আর ভাল না লাগলে কাল আবার আরেক সংগী নিয়ে দিন কাতায়। তাই ওদের একাকীত্ব বলে কিছু থাকে না। ওরা নিজেরা নিজেরা সাবলম্বি হয়, কেউ কারো উপরে নির্ভর করে না। ফলে কোনো সংগী যদি মাত্রার অতিরিক্ত মানসিক চাপে রাখতে চায় কিংবা মোড়ল্পনা করতে চায়, ওরা একে অপরের থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এগুলি সম্ভব না। লুকিয়ে সেক্স করা হলে এটা কোন না কোন সময়ে প্রকাশ পেলে হাজার বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বিয়ে না করলে আজীবন একাকীত্বকে বরন করতে হয়। মেয়েরা খুব কমই নিজেরা সাবলম্বি হয়, ভাবে তার স্বামীই তাকে সব ভরন পোষন করাবে ইত্যাদি। ফলে এদেশে বিবাহ ব্যবস্থাতাই একমাত্র সেই চাহিদার খোরাক। আমাদের সমাজেও যদি পশ্চিমা দেশের মতো এই সিস্টেম চালু হতো, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়তেও বিবাহ নামক এই প্রথা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেতো। আমাদের সমাজে এই সংসার করার মুল কারন-(১) সেক্সের প্রয়োজনিতা (২) একাকীত্বকে দূর করা। (৩) কারো না কারো উপরে নির্ভর করা।

আমি এসব নবিবেচনা করেই শেষ অবধি তোমার জন্য আমার পুরু পরিকল্পনা পালটে দিয়েছি। এই পাল্টানোর পিছনে আমার কোন দুর্বলতা কাজ করে নাই। এটা কখনোই আমার মনে আসে নাই যে, এতো কিছু করার পরে যদি তুমি তোমার পরিকল্পনা পালতাও, তাহলে? আমি সেখানেও অনড়। অসুবিধা কোথায়? অন্তত কেউ তো ছিলো তোমার জীবনকে একটা নিশ্চিত গন্তব্যে পরিচালিত করা। সেটা না হয় আমিই হলাম। আমি সুখী এবং খুশি।

 

আমি তোমাকে ১০০% স্বাধীনতায় বাচিয়ে রাখতে চেয়েছি এবং চাই। তুমি জানো তুমি এই মুহুর্তে তুমি কতটা স্বাধীনতায় আছো। আর কতটা মনের জোরে আছো। তুমি এটাও জানো আমাদের সমাজ ব্যবস্থার নিরিখে তুমি কতটা কষ্টেও আছো। এটা শুধু জানো তুমি। কিন্তু আমি জানি, আমি তোমার কতটা নিরাপত্তা দিতে চাই আর কতোটা কি করলে তোমার বেচে থাকতে ভালো লাগবে। বাকীটা তোমার মন আর অন্তর জানে। আমি তোমাকে মাঝে মাঝে ফান করে বলি যদিও যে, ভাইগা যাইবা কিনা। সেটা আসলেই ফান। কিন্তু কখনো যদি এই ফানটাই বাস্তব হয়, আমি কিন্তু তারপরেও খুসি থাকবো এই কারনে যে, অন্তত তুমি ভালো আছো। আর কিছু না।

 

আর এই ফানটা বাস্তবে সম্ভব হলেও, যেদিন সম্ভব হবে, তার ঠিক একমাস পরে তোমার মন, তোমার প্রান, তোমার সারাটা অন্তর ঠিক আমার মৃত ড্রাইভার রুস্তমের মতো হয়ে যাবে। রুস্তম মরার ঠিক আগে আবার আমার কাছে ফিরতে চেয়েছিলো। আমার কাছে রুস্তমের ফেরার পথ জানা থাকলেও আর ফেরা হয় নাই। কারন তার তখন পা আমার দিকে এগুতে পারে নাই। মন তাকে বারবার আমার দিকে পুশ করলেও মনের জোরের বিপরীতে কা করে নাই। ভয় করেছে ওর। ফলে একদিন-একদিন রুস্তম সমস্ত আশা হারিয়ে হতাশার উজ্জ্বল দিবালোকে নিজেকে শেষ করে দেয়া ছাড়া আর কোনো পথ সে খুজে পায় নাই।

 

রুস্তম আমার বাসা চিনতো, আমার অফিস চিনতো, আমার সব কিছু চিনতো। কিন্তু এই চেনা পথেও রুস্তম আর ফিরে আসতে পারে নাই। যেমন তুমিও চিনতা আজকের এই বাসাটা। ইচ্ছে করলেই আমাকে বলে ১ দিন পর আবার চলে আসতে পারতা যখন তুমি পালিয়েছিলে। কিন্তু পারো নাই।

 

আর এটাকেই বলে জীবনের কাছে মানুষের পরাজয়।

 

বড় বড় ঝড়ে মানুষ হয় দালান খোজে, আর যদি দালান না পায়, বড় বড় গাছ খোজে। বড় গাছের নীচে ঝড় কম। হ্যাপির ঘটনাটা তার একটা বড় উদাহরন। তোমাদের সমস্ত পরিবারের উপর একটা ঝড় ছিলো। তছনছের আভাস কিন্তু পেয়েছ হ্যাপির যাওয়ার ২ দিন পর থেকেই। যেভাবে সবাই তোমাদেরকে আস্টে পিষ্টে ধরতেছিলো, কোনো অবস্থাতেই তোমরা আর ঐ গ্রামে থাকতে পারতা না। কিন্তু হয়তো আমি ছিলাম বলে রক্ষা পেয়ে গেছো। কিন্তু যদি না থাকতাম? আজ যতোটা শান্তিতে আর বুকের বল নিইয়ে ঘুরতে পারো, যদি না থাকতাম, তাহলে অতোটা নীচু হয়েই বাস করতে হতো বংশ পরম্পরায়। আর এই কষ্ট দেখতে নিজের চোখে। মাঝে মাঝে মনে হইতো, জীবনের পরাজয় মনে হয় এভাবেই হয়।

 

আমি এগুলি দেখেছি আমার এই ৫৮ বছর বয়সেই। তাই, আমি কাউকে ঠকাই না, কিন্তু আমি ঠকার জন্য রেডি থাকি। কারন আমার ঠকার মতো ক্ষমতা আছে। এটা টাকার জন্য না। এটা একটা মনের বল। নিজের মনের শক্তি।

 

আজমীও সোহেলের কাছ থেকে পালাইতে চায়। মাত্র ১০ লাখ তাকা হলেই নাকি আজমী সোহেলকে লাথি মেরে চলে যেত। কিন্তু আজমির সেটা নাই আর পালাইতেও পারে না। ও নিজেও এখন আর পালাইতে চায় না। তাই আমি সব সময় মানুষকে বলি, পারলে পালিয়ে যাও। আমি ধরে রাখি না। আমি কাউকেই ধরে রাখি না। মানুষ আমাকে ধরে রাখে। কিন্তু তোমার বেলায়, আমি তোমাকে ধরে রাখতে চাই কারন তোমার পালানোর কোন জায়গাও নাই।

 

খেয়াল করে দেখো- যেদিন তুমি পালিয়েছিলে, ঐ সময় ২ লাখ টাকা তোমার কাছে শত কোটির মতো মনে হয়েছে। সেই টাকাটা তোমার কাছে ছিলো একটা শক্তি। কিন্তু আজকে তোমার কাছে প্রায় ৬০ লাখ টাকাও মনে হয় না যে, এটা শক্তি। কারন তোমার লাইফ স্টাইল বদলে গেছে। তুমি এখন ইচ্ছে করলেই বন্যার ছেলের জন্য কিংবা বন্যা বা সুমী বা আরবি টিচার  টাকা চাইলে না দিয়ে পারবা না। আর যদি না দাও, তুমিও বন্যার, সুমির কাছে কিংবা তোমার পরিবারের কাছেও একটা অসামর্থবান অকাজের অনর্থক এক পাবলিক। একটা সময় আসবে তোমার, মাসে ১ লাখ টাকা কামাই করলেও মনে হবে এটা এনাফ না।

 

তখন দরকার লাখ লাখ টাকা। কে দেবে তোমাকে সেই ভরসা? সব সময় টাকাই ভরসা না। একজন মানুষই কোটি টাকার ভরসা। চোখ বন্ধ করো, মনে মনে পালিয়ে যাও, দেখো কার হাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশী নিরাপদ। কার কাছে গেলে ভালো ঘুম হয়। দুসচিন্তা না থাকে। সেই লোক পাওয়া বড় কঠিন। বন্যাকে তুমি হাজার হাজার টাকা দাও না। কিন্তু তুমি বন্যাদের কাছে লাখ টাকার ভরসা। অন্যদিকে সুমীর সেই ভরসাটাও আর নাই। অথচ তুমি একদম কাছেই আছো।

 

কথাগুলি কঠিন। কিন্তু এই কথাগুলি এতোটাই বাস্তব যে, আজমী এখন বুঝে এটা। সেফালী বুঝে, লিয়াকত বুঝে, খালেদা বুঝে, সুমী বুঝে, লামিয়া বুঝে, চইতী এখনো বুঝে নাই কারন চৈতী এখনো বাপের বিল্ডিং এ ভালো আছে। কিন্তু একটা সময় ছিলো, তখন বুঝে নাই। ঐ যে বললাম- “যদি আর একবার” এটা একটা অনুশোচনার নাম। হয়তো “যদি আর একবার” এই সুযোগটা কখনোই কারো জীবনে আসে না।

২৬/০৪/২০২১-কভিড-১৯, ২য় ডোজ

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

২৬ এপ্রিল 

       

কভিড-১৯ মহামারী যদিও এই বিসশে প্রথম পদার্পন করে ডিসেম্বর ২০১৯ এ কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রথম সনাক্ত হয় ৮ মার্চ ২০২০। পৃথিবীর তাবদ মানুষ যেখানে এই কভিড-১৯ কে নিয়ে জল্পনা, কল্পনা আর হিমশিম খেতে খেতে শ্মশানে চলে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশের পলিসি মেকাররা যেনো বড়ই উদাসীন। মুজিববর্ষ পালনে কোনো দিধা নেই, হাসপাতালের যতটুকু বেশী প্রয়োজনীয়তা তার থেকে সবার যেনো এর উছিলায় টাকা কামানোর ধান্দাই বেশী। এটা আগেও যেমন লক্ষ্য করা গেছে, এই মহামারিতে যেনো আরো কাড়াকাড়ি আর লুটের ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। সারাটা দুনিয়া যেখানে মৃত্যুর সাথে কিভাবে জয় হওয়া যায় সেই ভাবনায় মগ্ন আর সেখানে আমার দেশ কিভাবে রাজনীতিতে আরো শক্ত গিট বাধা যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত।

রাস্তায় পুলিশের দৌরাত্ব, অফিসে কর্মচারীদের থাবা, বাজারে ব্যবসায়ীদের মরন কামড়, কোথাও এই কভিডের জন্য কারো কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আমরাও সেই তালের সাথে ড্রাম পিটিয়ে একাত্ততা ঘোষনা করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। আমি হয়তো জুলুম করছি না কিন্তু জুলুমের শিকার তো হচ্ছিই। এই এতো শত কষ্টের মাঝেও আজ আমি আর আমার স্ত্রী মিটুল চৌধুরী কভিডের জন্য ২য় ডোজের টিকাটা গ্রহন করতে সক্ষম হয়েছি। অফিসে চলে গিয়েছিলাম। মাত্র অফিসের কাজে মনোযোগ দিয়েছি, এমন সময় মিটুল আমাকে ফোন দিয়ে জানালো যে, তার মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা এসছে আজ সকালে যে, আজই আমাদেরকে টিকার ২য় ডোজ নিতে বলা হয়েছে। বাচতে কে না চায়?তাই অফিসের সব কাজ ফেলে আমি আবার রওয়ানা হয়ে গেলাম বাসার উদ্দেশ্যে। টীকা নিতে হবে। আমি সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার, তাই সিএমএইচ আমার জন্য ফ্রি এবং নির্ধারিত। সকাল ১২ টার দিকে আমাদের টীকা নেয়া শেষ হলো। আমার কোনো পার্শ প্রতিক্রিয়া আগেরবারও হয় নাই, এবারো হলো না। কিন্তু মিটুলের উভয়বারেই পার্শ প্রতিক্রিয়ায় ভুগছে।

কভিড মহামারী সব কিছুকে পালটে দিয়েছে। পালটে দিয়েছে পরিবারের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা, আর পরিবর্তন করে দিয়েছে পুরু দুনিয়াকে যেখানে মানুষ শুধু একটা জিনিষ নিয়েই ভাবে- ধর্ম নিয়ে বারাবারি, কিংবা জাত অথবা ঈশ্বর, কোনোটাই স্থায়ী নয়। তাই যার যার চিন্তায় সে সে মশগুল।কভিড আমাদের দেশে এখনো অনেক হারে ছড়ায়নি বলে মানুষ ব্যাপারটা নিয়ে এখনো অনেক উদাসিন। কিন্তু কভিডের সংক্রমন গানিতিক হারে না হয়ে এটা জ্যামিতিক হারে বাড়বে কোনো একদিন। এক থেকে দুই, দুই থেকে চার, চার থেকে আট, আর আট থেকে ষোল এভাবেই বাড়তে বাড়তে কভিড সবার ঘরে ঘরে গিয়ে হাজির হবে একদিন। এর মধ্যে যখন সারা দুনিয়া উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে, আমরা তখন আষ্টেপিষ্টে ধরা খাবো। ব্যবসা বন্ধ হবে, আন্তর্জাতিক মহলে ব্ল্যাক লিষ্টেড হবে, পন্য কেউ কিনতে চাবে না। আমরা একঘরে হয়ে যাবো। আর এর জন্য দায়ী সব সময় সাধারন নাগরিককেই দেয়া যাবে না। একবার ভাবুন তো-যে দেশের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চুরী হয়, যেখানে দূর্নীতি চরম আকারে ধারন করেছে, যেখানে উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যক্তি পর্যায়ের মানুষের পকেটে চলে যাচ্ছে সেখানে সরকার যদি আমাদের এই ষোল কোটি মানুষকে এক মাসের জন্য শুধু খাবার আর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সমুহ নিশ্চিত করতে পারতো, ভিয়েত্নাম বা ভুটানের মতো দেহের অবস্থা আমরাও ভোগ করতে পারতাম অর্থাৎ কভিড ফ্রি দেশ। এই ষোল কোটি মানুষের এক মাসের জন্য শুধু ২০০ কোটি টাকার বাজেটই যথেষ্ট ছিলো। সরকার যে চেষ্টা করে নাই তা নয় কিন্তু তার অধিনে যতো কাউন্সেলর, কমিশনার কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গরা রয়েছেন, সাধারন জনগনের নামে দেয়া এসব প্রনোদনা গেছে সব তাদের পকেটে। ফলে মানুষ করোনায় বেচে থাকার চেয়ে অথবা করোনায় মরে যাওয়ার চেয়ে না খেয়ে মরতে চায় নি, তাই তাদের গন্তব্য সব সময় ছিলো ঘরের বাইরের মুখী। আর এই বাহির মুখী মানুষের ঢল যতোদিন ঠেকানো না যায়, এদেশের করোনা পরিস্থিতি কোনোদিনই উন্নতি হবে না। একটা সময় আসবে যখন প্রতিটি ঘরে ঘরে, গ্রামে গঞ্জে, শহরে, বাড়িতে বাড়িতে করোনার উপস্থিতি থাকবে। পরিচিত মানুষের মৃত্যুয় সংবাদে ফেসবুক ভরে উঠবে, কান্নার আহাজারি শোনা যাবে চারিদিক থেকে।

এর থেকে আপাতত বাচার প্রথম শর্ত হচ্ছে সাস্থ্য সচেতনতা আর টীকা। সেই টীকার কর্মসূচীর আওতায় আজ আমরা দুজনেই টীকার প্রোগ্রাম শেষ করলাম। এখন বাকী শুধু সচেতনতা। যেটা শুধুই আমাদের হাতে।

টাইটানিক ট্র্যাজেডির শতবর্ষ

এম এ মোমেন

ঢাকা, শনিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১২, ১ বৈশাখ ১৪১৯, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩

“শতবর্ষ আগে মহাসমুদ্রের বিস্ময় টাইটানিক উদ্বোধনী যাত্রায় সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের পথে চতুর্থ দিন ১৪ এপ্রিল ১৯১২ রাত ১১টা ৪০ মিনিটে আটলান্টিকের ঘাতক আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষে বিপন্ন হয়ে পড়ে। অবিরাম এসওএস বার্তা যেতে থাকে টাইটানিক থেকে। দুই ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর রাত দুইটা ২০ মিনিটে (তখন ১৫ এপ্রিল) প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং অহংকার নিয়ে টাইটানিক আটলান্টিকে তলিয়ে যায়। টাইটানিকের এক হাজার ৫১৭ জন শীতার্ত যাত্রী ও ক্রু ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতার সমুদ্রজলে অসহায় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

হোয়াইট স্টার লাইনারের সঙ্গে বেলফাস্টের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হারল্যান্ড এন্ড ওলফের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ১৮৬৭ সাল থেকে। এই প্রতিষ্ঠানেরই তৈরি তিনটি অলিম্পিক ক্লাস জাহাজ; হোয়াইট স্টারের চেয়ারম্যান ব্রুস ইজমে এবং মার্কিনি তহবিলদাতা জে পি মর্গানের ইচ্ছায় এবং উদার ব্যয়ে টাইটানিক হয়ে ওঠে সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বিলাসবহুল জাহাজ। কেবল সমুদ্রের বিস্ময় নয়, এটাকে মনে করা হয় মর্ত্যের সুন্দরতম ভাসমান প্রাসাদ।
স্পেশাল লাক্সারি স্যুটসহ ‘এম্পায়ার স্টাইল’ প্রথম শ্রেণীর ধারণক্ষমতা ৭৩৯ জন যাত্রী, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৬৭৪ জন এবং তৃতীয় শ্রেণীর এক হাজার ২০ জন; জাহাজের ক্রু সদস্য ৯০০; সব মিলিয়ে ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে ধাবমান টাইটানিক তিন হাজার ৩৩৯ জনকে তাঁদের মালামালসহ পরিবহন করতে সক্ষম এবং ঘোষণা করা হয় আরএমএস টাইটানিক আনসিংকেবল—কখনো ডুববে না। ২ এপ্রিল ১৯১২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ৩১ মে ১৯১১ সাল। দুপুর সোয়া ১২টায় যখন টাইটানিককে সমুদ্রে ভাসানো হয়, তা দেখতে জড়ো হয়েছিল এক লাখ দর্শক। নিউইয়র্কের পথে প্রথম যাত্রায় ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথের নেতৃত্বে ৮৮৫ জন ক্রু জাহাজে আরোহণ করেন। যাত্রী ছিলেন এক হাজার ৩১৭ জন (প্রথম শ্রেণী ৩২৪, দ্বিতীয় শ্রেণী ২৮৪ এবং তৃতীয় শ্রেণী ৭০৯); ধারণক্ষমতার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে টাইটানিকের যাত্রা। ১০ এপ্রিল ১৯১২, দুপুরে সাউদাম্পটন থেকে শুরু হয় পশ্চিমমুখী শুভযাত্রা। শুরুতেই মাত্র চার ফুটের জন্য ‘এসএসসিটি অব নিউইয়র্ক’ জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সমর্থ হয়। ৭৭ নটিক্যাল মাইল এগিয়ে শেরবুর্গ থেকে ২৭৪ জন যাত্রী তুলে নেয়। ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায় আয়ারল্যান্ডের কর্ক পোতাশ্রয় থেকে জাহাজে ওঠেন ১১৩ জন তৃতীয় শ্রেণীর এবং সাতজন দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী। তারপর তিন দিন কেবল অবিরাম সাগরে চলা। ১৪ এপ্রিল রাতেই আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে এবং বিশ শতকের অন্যতম প্রধান সামুদ্রিক ট্র্যাজেডি।

তারপর আটলান্টিকের অতলে টাইটানিকের অবস্থান জানার চেষ্টা চলতে থাকে বছরের পর বছর। ১৯৮৫ সালে এর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আনসিংকেবল টাইটানিক এখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ৬০০ ফুট নিচে আটলান্টিকের তলদেশে স্থির হয়ে আছে। দ্বিখণ্ডিত জাহাজটির দুটো টুকরো ১৯৭০ ফুট দূরে অবস্থান করছে। টাইটানিকের সম্মুখভাগ সমুদ্রতলে ৬০ ফুট মাটির গভীরে প্রোথিত। ১৪ জুলাই ১৯৮৬, ঘটনার ৭৪ বছর পর টাইটানিক পুনরাবিষ্কৃত হয়। টাইটানিক থেকে উদ্ধার পাওয়া বয়োকনিষ্ঠ যাত্রী মিলভিনা ডিনের বয়স তখন মাত্র নয় সপ্তাহ। ৩১ মে ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর টাইটানিক থেকে বেঁচে যাওয়া আর কেউ জীবিত রইলেন না।

টাইটান না টাইটানিকঃ  মর্গান রবার্টসনের উপন্যাস ফিউটিলিটি—দ্য রেক অব দ্য টাইটান প্রকাশিত হয় ১৮৯৮ সালে। টাইটান মানুষের তৈরি সর্বশ্রেষ্ঠ ভাসমান জলযান; এটি সর্ববৃহৎ জাহাজও। বিলাসিতার মাপকাঠিতে প্রথম শ্রেণীর হোটেলের যত আয়োজন, তার কোনোটির কমতি নেই টাইটানের কেবিনে।টাইটানের নির্মাণে ব্যবহূত হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এই জাহাজে ১৯টি ওয়াটার-টাইট কম্পার্টমেন্ট। এ বিস্ময়কর জাহাজ কখনো ডোবার নয়। টাইটানের যাত্রী ও ক্রু ধারণক্ষমতা তিন হাজার; পুরোটাই যাত্রীবোঝাই ছিল।যেহেতু এ জাহাজ ডোবার নয়—লাইফবোটের প্রয়োজন নেই। তবু বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ২৪টি বোট টাইটানে রাখা ছিল।উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষে টাইটান ডুবে যায়। মৃত্যু হয় দুই হাজার ৯৮৭ জন যাত্রী ও ক্রুর।মর্গান রবার্টসনের কল্পলোকের টাইটান এবং বাস্তবের টাইটানিক ট্র্যাজেডির কিছু সাদৃশ্য বিস্মিত না করে পারে না।

আলফ্রেড রোর অমঙ্গল আশঙ্কা!

সাউদাম্পটন বন্দর ছেড়ে ফ্রান্সের শেরবুর্গ হয়ে টাইটানিক পৌঁছায় দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের কুইন্সটাউন বন্দরে। কিন্তু অতিকায় টাইটানিকের জন্য জাহাজঘাটটি ছোট এবং বন্দরের জলসীমার গভীরতাও কম। সুতরাং, সমুদ্রেই নোঙর ফেলল টাইটানিক। ছোট জাহাজে করে যাত্রীদের বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়, যাত্রীরা কিছুটা সময় ঘুরেফিরে কেনাকাটা করে, চা খেয়ে আবার ফিরে আসে টাইটানিকে। এদের একজন আলফ্রেড রো, অন্যদের সঙ্গে তিনি নেমেছিলেন। জাহাজে বসে স্ত্রীকে একটি চিঠি লিখে বন্দরের পোস্ট অফিসে দিয়ে জাহাজে ফিরে আসেন।
চিঠিতে টাইটানিকের বিস্ময় নিয়ে কোনো জাঁকালো বর্ণনা দেননি, বরং লিখেছেন, জাহাজটি বাড়াবাড়ি রকমের বড় এবং এতে বিপদের ঝুঁকি আছে। জাহাজ ছাড়ার পর পরই টাইটানিকের উত্তাল ঢেউয়ে অপেক্ষমাণ জাহাজ এসএস নিউইয়র্ক নোঙর ছিঁড়ে টাইটানিকের ওপর এসে পড়েছিল প্রায়, সংঘর্ষ হলে টাইটানিকের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত, সে কথা লিখলেন রোর। টাইটানিক তাঁর পছন্দ হয়নি। তবে টাইটানিকের টার্কিশ বাথ তিনি বেশ উপভোগ করেছেন।

‘অন বোরড্ আরএনএস টাইটানিক’ শিরোনামের প্যাডে আলফ্রেড রো তাঁর স্ত্রী কনস্ট্যান্সকে চিঠিটি লিখেছিলেন ১১ এপ্রিল ১৯১২; টাইটানিকের প্রথম শ্রেণীর যাত্রী ছিলেন তিনি, বয়স ৫৯, ব্রিটিশ ব্যবসায়ী, বাড়ি ইংল্যান্ডের লিভারপুলে।

ধারণা করা হয়: টাইটানিক যখন ডুবে যাচ্ছিল, আলফ্রেড সাঁতরে আইসবার্গের এক খণ্ড বরফের ওপর উঠতে পেরেছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ তাঁর বরফশীতল জমাট দেহ উদ্ধার করে।২০০৭ সালে টাইটানিক ট্র্যাজেডির ৯৫তম বছরে আলফ্রেড রোর চিঠি এবং কনস্ট্যান্স রোর ডায়েরি নিলামে ওঠে।

অসংখ্য ‘যদি’ কান্নায় ভেসে আসে

যদি যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে শুরুতেই যাত্রা কয়েক ঘণ্টা পিছিয়ে যেত? যদি আকাশে নতুন চাঁদ না হয়ে পূর্ণিমা রাত হতো—আইসবার্গ তো খালি চোখেই দূর থেকে দেখা যেত।

যদি ৫০টা লাইফবোট থাকত?

টাইটানিক ইজ ইন ডেঞ্জার

বিপদ আঁচ করার পর রেডিও অপারেটর বিলম্ব করেননি। ‘এসওএস টাইটানিক ইজ ইন ডেঞ্জার হেল্প হেল্প এসওএস’—বারবার এই বার্তা পাঠাতে থাকেন। ততক্ষণে ওয়াল্টার লর্ডের বর্ণনা অনুযায়ী, টাইটানিকের বেতারকক্ষে বরফশীতল পানি ঢুকতে শুরু করে। যখন অপারেটরের কোমর পর্যন্ত পানির নিচে তখনো তিনি এসওএস পাঠিয়েই যাচ্ছেন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২০ মিনিট দূরত্বে বিশাল জাহাজ কালিফোর্নিয়ান অবস্থান করছিল, কিন্তু রেডিও সিস্টেম বন্ধ করে ঘুমিয়ে ছিলেন ওই জাহাজের অপারেটর। বার্তা পেয়েছিল অনেক দূরের একটি জাহাজ, কার্পাথিয়া। কার্পাথিয়া সর্বোচ্চ গতিতে এগোতে থাকে টাইটানিকের দিকে। কিন্তু টাইটানিক যে অনেক দূরে!

টাইটানিকের শিশু

উদ্ধারকারী জাহাজ ম্যাকে বেনেটের সাহসী নাবিকেরা আটলান্টিকে তলিয়ে যাওয়া অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করেন। অনেককেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়। যাদের শনাক্ত করা যায়নি, তাদের একজন পশমি জ্যাকেট পরা একটি শিশু। কেউ এই শিশুর স্বজন এ দাবি নিয়ে এগিয়ে আসেনি। ফলে এই অশনাক্ত টাইটানিক শিশু হ্যালিফ্যাক্সে সমাহিত হয় ‘অচেনা শিশু’ হিসেবে। লেকহেড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওন্টারিও, নৃতাত্ত্বিক রায়ান পার এবং লেখক অ্যালান রাফম্যানের সম্মিলিত চেষ্টা জনগণের বাধার মুখে কবর খনন করে ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের একাংশ নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। শিশুটির তিনটি দাঁত ছিল। কবরে একটি লকেটও পাওয়া যায়—লকেটে লেখা ‘আওয়ার বেবি—আমাদের শিশু’। অনুমান করা হয়, এই লকেটটি মৃতদেহ সমাহিত করার সময় শিশুটির সঙ্গে দেওয়া হয়। সম্ভাব্য অনেকের সঙ্গে মিলিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর বের হয় এই শিশুটির নাম ইনো। তার বাবা, মা ও চার ভাইও একই সঙ্গে আটলান্টিকে সমাহিত। ১৩ মাস বয়সী এই মেয়েটি ছিল ফিনল্যান্ডের।

একটি বিস্ময়কর টাইটানিক গল্প

নারী ও শিশুদের জন্য লাইফবোট। এই আইন মেনে নিয়েছে সবাই। কিন্তু মানেনি এর মধ্যেও শ্রেণীবৈষম্য। টাইটানিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রায় সব শিশুকেই বাঁচানো হয়েছে, কিন্তু তৃতীয় শ্রেণীর ৭৬ জন শিশুর মধ্যে বেঁচেছে মাত্র ২৩ জন, ৬০ শতাংশ তলিয়ে গেছে আটলান্টিকের গভীরে। জেরোম বার্ক নামের বালকটির জন্ম কর্ক সিটির কাছাকাছি গ্লেনমায়ারে। তার দুই বোন আমেরিকায় চলে গেছে। জেরোমও যেতে চায়। ঠিক করেছে ১৯১২-এর বসন্তকালে যাবে। এদিকে আরেক বোন নোরার বন্ধুত্ব টাইটানিকের টিকিট অফিসের একজন চেকারের সঙ্গে। ছোট ভাইটির জন্য নিজেই বিস্ময়কর জাহাজ টাইটানিকের উদ্বোধনী যাত্রার টিকিট কিনে দেয়। জেরোম কুইন্সটাউন থেকে জাহাজে উঠবে। তার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।বাড়ি থেকে কুইন্সটাউনের পথে বের হওয়ার আগে প্রতিবেশী মিসেস ম্যাক ও কোনেল এক বোতল পবিত্র জল নিয়ে এলেন। এর খানিকটা একটা ছোট বোতলে ভরে ছেলেকে দিলেন, ছেলে সঙ্গে নেবে। এক বছর আগে নোরা যখন লাউস সফরে যায়, তখন এই বোতলটি কিনেছিল। জাহাজ কর্ক উপকূলে কুইন্সটাউন বন্দর থেকে ছেড়ে দিল। তার পরের অংশ তো জানাই। ১৪ এপ্রিল রাতে আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে টাইটানিক ডুবে যেতে থাকে। আড়াই ঘণ্টা পর জাহাজটি দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যায় আটলান্টিকের তলদেশে। তখন ১৫ এপ্রিল। আরও অনেকের মতো জেরোমের পরিবারের সদস্যরা আটলান্টিকের এপারে ওপারে দিন গুনতে থাকে—জেরোম নিশ্চয়ই বেঁচে আছে। তারপর ভিন্ন প্রত্যাশা—নিশ্চয়ই জেরোমের মৃতদেহটা পাওয়া যাবে। তারপর সব আশা ফুরিয়ে আসে—জেরোম চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে মহাসাগরের অজানা গহিনে। ১৯১৫-এর গ্রীষ্মে ডানকেটল সৈকতের কাছে কুকুর নিয়ে হাঁটার সময় একটি ভিন্ন ধরনের বোতল পান। বোতলের ছিপি খোলার পর ভেতরে একটি প্যাঁচানো কাগজে পেনসিলে লেখা:

১৩/৪/১৯১২,টাইটানিক থেকে সকলকে বিদায় গ্লেনমেয়ারের বার্কদের

কর্ক

ঔৎসুক্য ও গবেষণায় বেরিয়ে এল, বোতলটি সেই পবিত্র জলের, হাতের লেখা জেরোমের। তবে তারিখ লিখতে সম্ভবত সে ভুল করেছে, ১৪ এপ্রিলের বদলে লিখেছে ১৩ এপ্রিল। হয়তো ভালো করে ছিপি এঁটে নিজেই নিক্ষেপ করেছে আটলান্টিকে। তিন হাজার মাইল পরিভ্রমণ করে বোতল ফিরে এসেছে কর্ক বন্দর হয়ে জেরোমের জন্মস্থানে। ১৪ মাস পর বোতলটি মানুষের হাতে পড়েছে। জেরোমের কোনো সমাধি নেই। জেরোমের মা সন্তুষ্ট, অন্তত তার একটা কিছু তো পাওয়া গেছে।

ঘাতক আইসবার্গ

যে আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষে টাইটানিকের এই ভয়াবহ পরিণতি, তা কিন্তু অতিকায় নয়। জাহাজটির চেয়ে আকারে অনেক ছোট।যাত্রাপথে যে আইসবার্গ রয়েছে টাইটানিক এ ধরনের ছয়টি সতর্কবার্তা পায়। কিন্তু বেতার অপারেটর যাত্রীদের ব্যক্তিগত বার্তা পাঠানো নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে সতর্কবার্তা আমলে নেননি। যে আইসবার্গের সঙ্গে টাইটানিকের সংঘর্ষ হয় তা আর সব আইসবার্গের মতো সাদা বর্ণের ছিল না। রাতের আকাশে আইসবার্গের প্রতিবিম্বজনিত কালো ছায়ার কারণে এ ধরনের আইসবার্গকে ব্ল্যাকবার্গ বলা হয় এবং খুব কাছাকাছি স্থান থেকেও দেখা যায় না। টাইটানিকের বেলায় আইসবার্গ দেখা ও সংঘর্ষের মাঝখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো সময় ছিল মাত্র ৩৭ সেকেন্ড।

টাইটানিক যেন ভাসমান রাজপ্রাসাদ

এমন বিশাল ও জৌলুশপূর্ণ জাহাজ পৃথিবীতে একটিই। টাইটানিককে যাঁরা মহাসাগরের বুকে একটি রাজপ্রাসাদ আখ্যা দিয়েছেন, তাঁরা সে সময়ের প্রেক্ষাপটে খুব বাড়িয়ে বলেননি।

৮৮২ ফুট ছয় ইঞ্চি দীর্ঘ জাহাজটি তিনটি ফুটবল মাঠেরl সমান। তলা থেকে চূড়া পর্যন্ত টাইটানিক ১৭৫ ফুট উঁচু। মোট নয়টি ডেক, কিংবা বলা যায় নয়তলা।

টাইটানিকের ইঞ্জিন প্রতিদিন ৮০০ টন কয়লা পোড়ায়। জাহাজটি সর্বোচ্চ ২৪ নটিক্যাল মাইল কিংবা ঘণ্টায় ২৭ মাইল বেগে ছুটতে পারে।

জাহাজের প্রতিটি কক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে, ১০ হাজার আবশ্যকীয় বাল্ব সংযোজন করা হয়েছে।

জাহাজে উষ্ণজলের একটি সুইমিংপুল, একটি জিমনেশিয়াম, দুটো পাঠাগার, এবং দুটো চুল কাটার সেলুন রয়েছে।যাত্রী ও ক্রুদের খাওয়াতে টাইটানিকের দরকার হতো ৭৫ হাজার পাউন্ড ওজনের মাংস, ১১ হাজার পাউন্ড মাছ এবং ৪০ হাজার ডিম।

জাহাজ পরিবহন করছে ৪০ মেট্রিক টন আলু, তিন হাজার ৫০০ পাউন্ড পেঁয়াজ, ৩৬ হাজার আপেল এবং এক হাজার পাউরুটি।  যাত্রী ও ক্রুদের প্রতিদিনের খাওয়ার পানির পরিমাণ ১৪ হাজার গ্যালন।

তিন হাজার শ্রমিকের দুই বছরের শ্রমে নির্মিত হয়েছে টাইটানিক। নির্মাণকালে পাঁচজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

 টাইটানিকের নির্মাণব্যয় হয়েছে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার।টাইটানিকের চার ফানেলের তিনটি ছিল ধোঁয়া নির্গমনের জন্য, আরেকটি ছিল অপ্রয়োজনীয়, যা কেবল ফ্যাশন হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে।

টাইটানিক-কাহিনি নিয়ে জেমস ক্যামেরন নির্মাণ করেছেন বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যসফল ছবি টাইটানিক।

সাত খ্যাতিমান, যাঁদের টাইটানিকে চড়া হয়নি

থিওডোর ড্রেইসার

ঔপন্যাসিক থিওডোর ড্রেইসার ইউরোপে ছুটি কাটিয়ে টাইটানিকে আমেরিকা ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু একজন ইংরেজ প্রকাশক সস্তায় অন্য আরেকটি জাহাজে যাওয়ার পরামর্শ দেন।থিওডোর ড্রেইসার ক্রুনল্যান্ড জাহাজে টাইটানিক দুর্ঘটনার খবর শোনেন।

বেতার আবিষ্কারক মার্কনি

রেডিও আবিষ্কারক এবং ১৯০৯ সালে নোবেল বিজয়ী মার্কনিকে টাইটানিকের ফ্রি টিকিট অফার করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি টাইটানিকের তিন দিন আগে লুসিতানিয়া নামের আরেকটি জাহাজে রওনা হন। কারণ, জাহাজে তাঁর লেখালেখির ব্যাপার ছিল এবং সে জন্য একজন পেশাদার স্টেনোগ্রাফারেরও প্রয়োজন হয়। আর এ জন্য লুসিতানিয়াতে ভ্রমণই তিনি বেছে নেন।

ধনকুবের মিলটন হার্শে

হার্শের মিল্ক চকলেট, সিরাপ ইত্যাদি প্রস্তুতকারক মিলটন হার্শে শীতকালটা ফ্রান্সে কাটিয়ে আমেরিকা ফেরার জন্য টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে তিনি ও তাঁর স্ত্রী জার্মান জাহাজ আমেরিকায় চড়ে আগেই রওনা হয়ে যান। এই আমেরিকাই টাইটানিকে বার্তা পাঠিয়েছিল যে পথে আইসবার্গ রয়েছে।

ধনকুবের জে পি মর্গান

ওয়াল স্ট্রিটের নেপোলিয়ন’ নামে খ্যাত, জেনারেল ইলেকট্রিক ও ইউএস স্টিলের প্রতিষ্ঠাতা জেপি মর্গান টাইটানিক জাহাজের সমুদ্রে ভাসানোর উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। জাহাজে তাঁর জন্য একটি ব্যক্তিগত স্যুটের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ফ্রান্সে সকালে শরীর ম্যাসাজ করা বাকি রেখে টাইটানিকের যাত্রী হতে আগ্রহী হননি।

আলফ্রেড ভ্যানডারবিল্ট। ৩৪ বছর বয়স্ক মাল্টিমিলিয়নিয়ার, খেলোয়াড় এবং ভ্যানডারবিল্ট শিপিং ও রেল বাণিজ্যে উত্তরাধিকারী বিশেষ কারণে শেষ মুহূর্তে বুকিং বাতিল করেন। কিন্তু ব্যাপারটা এত দেরিতে করেন যে যাত্রীতালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে মৃতের তালিকায় কোনো কোনো পত্রিকা তাঁর নামও ছেপে দেয়। তিন বছর পর লুসিতানিয়া জাহাজ ডুবে গেলে আলফ্রেড ভ্যানডারবিল্ট মৃত্যুবরণ করেন।

নোবেল বিজয়ী জন মট

টাইটানিক ডোবার অনেক বছর পর ১৯৪৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী জন মট উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন হোয়াইট স্টার লাইনের ফ্রি টিকিট, কিন্তু তিনি তা না নিয়ে ল্যাপল্যান্ড নামের অন্য একটি জাহাজে চেপেছিলেন।

হেনরি ক্লার্ক। পিটসবার্গের ইস্পাত ব্যবসায়ী। স্ত্রীর পায়ের গোড়ালি মচকে যাওয়ার কারণে টাইটানিকের যাত্রা বাতিল করেন।

আমেন-রার অভিশাপ ও টাইটানিক

ঢাকা, শনিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১২,

১ বৈশাখ ১৪১৯, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩

১০ এপ্রিল ১৯১২ সাউদাম্পটন বন্দরে পৃথিবীর বিস্ময়কর জাহাজ টাইটানিক ছেড়ে দেওয়ার সিটি বাজাল। বিদায় জানাতে আসা আত্মীয়, শুভানুধ্যায়ী এবং উৎসুক দর্শনার্থীর আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে বন্দর গমগম করছে।

এই জাহাজটি ‘আনসিঙ্কেবল’—কখনো ডোবার নয়। দুদিন পেরিয়ে যাচ্ছে। টাইটানিক তখন আটলান্টিকে। সবই ঠিকঠাক। আনন্দ ও হুল্লোড়ের কমতি নেই। আটজনের একটি দল ঢুকল প্রথম শ্রেণীর ধূমপানকক্ষে। সিগারেট ফুঁকছেন আর জীবনের কী মানে, তা নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা জুড়ে দিয়েছেন। তাঁদেরই একজন উইলিয়াম টি স্টেড ইংরেজ সাংবাদিক ও সুপরিচিত অধ্যাত্মবাদী। ভৌতিক গল্পটা তিনিই বললেন। তাঁর এই গল্পের মিথের সঙ্গে টাইটানিকের ডুবে যাওয়া কেমন করে যেন এক হয়ে গেল।

স্টেড গল্পটা শুরু করেন ১২ এপ্রিল রাত ১২টার একটু আগে, গল্পটা শেষ হয় রাত ১২টার পরে। টাইটানিকডুবির সূত্রপাত হয় ১৪ এপ্রিল রাত ১২টার একটু আগে, জাহাজটি আটলান্টিকের গর্ভে তলিয়ে যায় রাত দুইটার দিকে। তখন ১৫ এপ্রিল ১৯১২। এই আটজনের দলের সাতজনই আটলান্টিকে তলিয়ে যান, উইলিয়াম স্টেডও। কেবল একজন ফ্রেড সিওয়ার্ড বেঁচে যান। সাক্ষ্য তাঁরই।

মমির অভিশাপ

যিশুর জন্মের ১৫০০ বছর আগে গ্রিক প্রিন্সেস আমেন-রা কথা জানা যায়। মৃত্যুর পর প্রিন্সেসকে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা চমৎকার একটি কাঠের কফিনে ভরে নীল নদের তীরে একটি সুরক্ষিত প্রকোষ্ঠে রেখে দেওয়া হয়। ১৮৯০ দশকের শেষ দিকে খননকাজের সময় মমির এই চমৎকার কফিন কিংবা আধারটি পাওয়া গেলে চারজন ধনী ইংরেজকে তা কিনে নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কফিনে রয়েছেন প্রিন্সেস আমেন-রা।বহু মূল্য দিয়ে তাঁদের একজন কিনে নিলেন। তিনি কয়েক হাজার পাউন্ড স্টার্লিং দিয়ে কেনা কফিনটি হোটেলে নিজ কক্ষে নিয়ে এলেন।কয়েক ঘণ্টা পর দেখা গেল তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে মরুভূমির দিকে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি আর কখনো ফিরে আসেননি।অবশিষ্ট তিনজনের একজন তাঁর মিসরীয় ভৃত্যের বন্দুক থেকে দুর্ঘটনাক্রমে আকস্মিকভাবে বেরিয়ে আসা গুলিতে জখম হলেন। জখমটা এতই গুরুতর ছিল তার গুলিবিদ্ধ হাতটি কেটে ফেলতে হলো।তৃতীয়জন দেশে ফেরার পর দেখলেন তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় যে ব্যাংকে রেখেছিলেন, সেই ব্যাংকটি সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে।চতুর্থজনও টাকাপয়সা খোয়ালেন, অসুস্থ হয়ে পড়লেন, চাকরি হারালেন এবং বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁকে দেশলাই বিক্রি শুরু করতে হয়।এত কিছুর পরও পথের অনেক দৈব-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রিন্সেস আমেন-রার কফিন লন্ডনে পৌঁছে এবং একজন ধনী ব্যবসায়ী তা কিনে নেন।এর পরপরই ব্যবসায়ীর পরিবারের তিনজন সদস্য সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়, আগুন লেগে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অগত্যা ব্যবসায়ী কফিনটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে দান করে দেন।ট্রাক থেকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আঙিনায় যখন কফিন নামানো হচ্ছিল, ট্রাকটি উল্টোদিকে চলতে শুরু করে। একজন পথচারীকে বিপদাপন্ন করে তোলে। যে দুজন শ্রমিক এই কাসকেটটি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিল, হঠাৎ পড়ে গিয়ে পা ভেঙে ফেলে। অন্যজন বাহ্যত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলেও দুদিন পর অজ্ঞাত কারণে মারা যায়।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ‘ইজিপশিয়ান রুম’-এ এটি স্থাপন করার পর একটার পর একটা বিপত্তি ঘটতে শুরু করল।

জাদুঘরের নৈশপ্রহরী কফিনের ভেতর হাতুড়ি পেটানোর এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনতে লাগল। অন্যান্য প্রদর্শিত দ্রব্য রাতের বেলা কেউ ছুড়তে শুরু করল। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একজনের মৃত্যু হলো। অন্য প্রহরীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইল। ক্লিনাররা প্রিন্সেসের কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানাল।

শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এটাকে বেজমেন্টে রেখে আসে এই চিন্তা করে যে এখন থেকে আর কারও ক্ষতি করতে পারবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেল। বেজমেন্টে পাঠানোর কাজটা যিনি তত্ত্বাবধান করছিলেন তাঁকে তাঁর ডেস্কেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল আর বহনে সহায়তাকারীদের একজন ভয়ংকর অসুস্থ হয়ে পড়ল।

এত দিনে মমির এই ভয়াবহ আচরণের খবর সংবাদপত্রগুলো পেয়ে গেল। একজন ফটোগ্রাফার ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এসে কাসকেটের ছবি তুললেন। ছবিটা যখন হয়ে এল তিনি অবাক হয়ে দেখলেন কফিনের ওপর আঁকা ছবিটা আসলে মানুষের বীভৎস মুখাবয়ব। তিনি বাড়ি ফিরে গেলেন। বেডরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং নিজের ওপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করলেন।কিছুদিন পর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই মমি একজন ব্যক্তিগত সংগ্রহকারীর কাছে বেচে দেয়। সেখানেও একের পর এক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ঘটতে থাকলে মমির ক্রেতা এটাকে চিলেকোঠায় আটকে রাখেন।পরে তিনি এটা বিক্রির চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্রিটেনের কোনো মিউজিয়াম এই মমি নিতে আগ্রহী নয়। মমি নাড়াচাড়ায় নিয়োজিত কুড়িজন মানুষের দুর্ভাগ্যের কথা—বিপন্নতা, দুর্যোগ এবং এমনকি মৃত্যুর খবর এখন সবারই জানা। শেষ পর্যন্ত গোঁয়াড় প্রকৃতির একজন আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ এসব দুর্ভাগ্যের কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন এবং বেশ দাম দিয়ে এটাকে কিনে নিউইয়র্ক নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করলেন।

১৯১২-এর এপ্রিলে কফিনটা জাহাজে তোলা হলো, আমেরিকান মালিকও সঙ্গে আছেন। তিনি জানেন আমেরিকানরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন নয়। হোয়াইট স্টার লাইনের নতুন জাহাজ, এটাই জাহাজের উদ্বোধনী যাত্রা—সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক। বিলাসবহুল এই জাহাজের নাম টাইটানিক। আমেরিকান মালিক এবং জাহাজের দেড় হাজার যাত্রী ও টাইটানিক জাহাজটিসহ আমেন-রা সমাহিত হলেন আটলান্টিকের গভীর তলদেশে। কেউ কেউ বলেন উদ্ধারকারী জাহাজ কার্পাথিয়া যখন মানুষ উদ্ধার করছিল, তখনই জাহাজের ক্রুরা কফিনটা জাহাজে তুলে নেয়। আমেন-রা যথারীতি নিউইয়র্ক পৌঁছে। আমেরিকায় এই কফিন একটার পর একটা ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটিয়ে চলে। একসময় সিদ্ধান্ত হয় কফিন আবার ইউরোপে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেড় মাস তখনো পুরো হয়নি। ইউরোপের পথে এমপ্রেস অব আয়ারল্যান্ড জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। ১৯১২ সালের ২৯ মে ৮৪০ জন যাত্রী নিয়ে জাহাজটি ডুবে যায়।

মমিটি সে যাত্রায়ও রক্ষা পায়। এর মালিক ঠিক করলেন, তৃতীয় কোনো জাহাজে মমিটি মিসরে পাঠিয়ে দেবেন। সেই তৃতীয় জাহাজের নাম লুসিতানিয়া। জার্মান সাবমেরিনের আক্রমণে জাহাজটি ডুবে যায়। এরপর কী হলো আর জানা নেই। প্রিন্সেস আমেন-রা টাইটানিকে ছিলেন?

না, ছিলেন না। পুরোটাই কল্পকাহিনি। আর এ কাহিনি তৈরির কৃতিত্ব দুজনের—উইলিয়াম স্টেড এবং ডগলাস মারে।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রুম নম্বর ৬২-তে সংরক্ষিত এই মমি ১৮৮৯ সালে মিসেস ওয়ারউইক হান্ট তাঁর ভাই আর্থার এফ হুইলারের পক্ষে ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে উপহার দেন। ১৮৯০ সালের দিকে এই কাসকেট মিউজিয়ামের প্রথম ইজিপশিয়ান রুমে প্রদর্শিত হতো। স্টেড ও মারের অতিপ্রাকৃতিক কাহিনি সম্পূর্ণ বানোয়াট। ১৯৮৫ সালে টাইটানিক হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট চার্লস হ্যাম টাইটানিকে পরিবহন করা মালামালের তালিকা দেখার সুযোগ পান। তাতে মমি কিংবা কফিনের কোনো উল্লেখও দেখতে পাননি।

ISIS অথবা ISIL

আইএসআইএস অথবা আইএসআইএল (যাদের পুরু মিনিংটা হচ্ছে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া, অথবা ইসলামিক ষ্টেট অফ ইরাক এন্ড দি লিভান্ট। এখানে জানা দরকার লিভান্টটা কি। লিভান্ট হচ্ছে তুরুস্কের দক্ষিন অঞ্চল থেকে শুরু করে মিশরসহ সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইন, ইসরায়েল  এবং জর্ডান সম্বলিত যে রিজিওনটা হয় সেটা।

 এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ

যেই নামেই এটাকে ডাকা হোক না কেন, এটা ব্যাসিকেলি আল কায়েদার অবশিষ্ট কিছু গ্রুপের একটা সমন্বিত বাহিনীর মিশ্রণ যারা সুন্নি জিহাদিস্ট দল নামে পরিচিত। আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমন করে, তখন আল কায়েদার বাহিনি ছিল এই পুরু দল। কিন্তু লিডারশীপ নিয়ে মারামারিতে সর্ব প্রথম আল কায়েদা পাকিস্তানে এর ভাঙ্গন শুরু হয় ২০০৩ সালে। যদি নাম ধরে ধরে বলা হয় কারা কারা এর অংশ হিসাবে কাজ করছে তাহলে প্রথম যাদের নাম আসবে তারা হলঃ আল কায়েদা (ইরাক), মুজাহিদিন সুরা কাউন্সিল, ইসলামিক ষ্টেট অফ ইরাক, জেইস আল তাইফা আল মান্সুরা, জায়েস আল ফাতিহিন, আল সাহাবা কাটবিয়ান আনসার আল তৌহিদ অয়াল সুন্নাহ, এবং ইরাকের কিছু সুন্নি উপজাতি। ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর 'আইএসআই'-এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করা হয় এবং আবু ওমর আল বাগদাদি গ্রুপটির নেতা বলে জানানো হয়। ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল আবু ওমর নিহত হলে আবুবকর আল বাগদাদি এই জঙ্গি গ্রুপটির নতুন প্রধান হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে গ্রুপটির বিস্তার শুরু হয়। 'নয়া বিন লাদেন' নামে খ্যাত বাগদাদিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য মার্কিন সরকার দশ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। বাগদাদি ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইরাকের উম্মে কাসর শহরে একটি মার্কিন কারাগারে বন্দি ছিল। ২০০৩ সালের আগেও সে আলয়দার সদস্য ছিল বলে মনে করা হয়। বাগদাদির আরেক নাম ছিল আবু দায়া। ২০০৫ সালে তাকে হত্যা ও অপহরণসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

২০১১ সালে যখন সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয় তখন অনেক ইরাকি ফাইটারগন সিরিয়ায় গমন করে এবং তারা সিরিয়ান ও অন্যান্য বিদেশী ফাইটারগনের সাথে এক হয়ে কাজ করে। তাঁদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হিসাবে অবজেক্টিভ প্রচারনা করে যে শেষ খিলাফত রক্ষার জন্য শরিয়া বেজড ষ্টেট তৈরি করার জন্য তারা এই যুদ্ধ করছে এবং এটা শুরু হচ্ছে সিরিয়া এবং ইরাকে।  

এটার জন্য কে বা কারা টাকা দিচ্ছে এটা বুঝার খুব দরকার। মজার বিষয় হচ্ছে এরা আমেরিকার বিরুদ্ধে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে, আবার টাকা দিচ্ছে সউদি আরব, ইরান, কুয়েত, কাতার এবং সিরিয়া। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যদিও বলা হয় যে, সিরিয়া সরকার মানে আসাদ সরকার পরোক্ষভাবে এদের সাহাজ্য করছে কিন্তু ওরা সিরিয়ার বিরুদ্ধেও কাজ করছে বলে মনে করা হয়। এর প্রমান হিসাবে আপাতত ধরা যায় যে, কয়েকদিন আগে মুসুল এবং ফালুজার কিছু শহর দখলের পর তারা সিরিয়ার কিছু ইসলামিক গ্রুপকে চ্যালেঞ্জ করেছে। মুসুল দখল করার সময় তারা ৪০০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমান টাকা লুট করে ওদের অর্থনৈতিক অবস্থান আরও শক্ত করে ফেলেছে।  জানা যায় যে, এদের প্রতি মাসে প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার আয় হয় বিভিন্ন সোর্স থেকে।

সিরিয়ায় কট্টর ইসরাইল-বিরোধী আসাদ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে পাশ্চাত্য, ইসরাইল এবং তাদের আঞ্চলিক সেবাদাস সরকারগুলোর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হলে 'আইএসআই'ও বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগ দিয়ে এ যুদ্ধে অংশ নেয়। সিরিয়ায় ২০১১ সালে গঠিত আন নুসরা ফ্রন্টও 'আইএসআইএল'-এর একটি শাখা হিসেবে দেশটির সরকারি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকে। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আবু বকর আল বাগদাদি এক অডিও বার্তায় জানিয়ে দেয় যে 'জিবহাতুন নুসরা' বা 'আন নুসরা ফ্রন্ট' 'আইএসআই'-এর অর্থ ও সহায়তা নিয়েই গঠিত হয়েছে এবং এই দুই গ্রুপ একত্রিত হয়ে 'আইএসআইএল' নাম ধারণ করেছে।

'আইএসআইএল'-এর যোদ্ধারা গত দশই জুন ইরাকের নেইনাভা প্রদেশের প্রধান শহর মসুলের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়। শহরটি জনসংখ্যার দিক থেকে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এ ছাড়াও তারা দখল করে ফাল্লুজা ও সাদ্দামের জন্মভূমির শহর তিকরিত। তিকরিত সালাহউদ্দিন প্রদেশের প্রধান শহর। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিসহ অনেক কর্মকর্তা বলেছেন, ইরাকের একদল সেনা কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ায় এক ষড়যন্ত্রমূলক সমঝোতার আওতায় এই প্রদেশের ৫০ হাজারেরও বেশি সরকারি সেনা কোনো ধরনের বাধা না দিয়েই সন্ত্রাসীদের কাছে শহরটির প্রধান সরকারি ভবন, অস্ত্রাগার, ব্যাংক ও কারাগারগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়।

এতক্ষন যা বললাম তা হচ্ছে দৃশ্যমান কিছু তথ্য। এর মাঝে অনেক অদৃশ্যমান স্ট্রেটেজি রয়েছে যা সাধারন চোখ দিয়ে দেখলে পুরু ব্যাপারটা বোধগম্য হবে না। এটা নিতান্তই আমার মতামত। 

 আমার মতামতঃ

(১) কেউ কেউ বলে যে আসলে এমআই ৬, মোসাদ অথবা  সিআইএ দ্বারা এই আইএসআইএস/এল প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত। এই সংস্থা গুলো উক্ত আইএসআইএস কে তাঁদের ফ্রন্ট অরগ্যেনাইজেসন হিসাবে ব্যবহার করে। এখানে একটু জেনে রাখা ভাল যে, "ফ্রন্ট অরগ্যানাইজেসন" একটা মিলিটারি টার্ম যার অর্থ হচ্ছে এই রকম,

" Front groups are intended to deceive the casual observer by carrying out actions without disclosing who instigated them. They include astroturf (fake 'grassroots' organisations) operated by legitimate companies as well as fronts operated by groups with more questionable legitimacy to provide plausible deniability to as criminal groups, governments or intelligence agencies."

(২) গালফ ওয়ার যারা শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করে তারা হয়ত আমার চেয়ে আরও অনেক বেশি ভবিষ্যৎ দেখতে পায় কিন্তু আমি সাধারন সেন্সে বলতে পারি যে, মিডল ইস্টকে যে কোনভাবেই আমেরিকা, ইউ কে বা অন্যান্য যারা এই এলাকার তেলসমৃদ্ধ দেশকে নিজেদের কন্ট্রোলে রাখতে চায় তারা কোন না কোনভাবে গালফওয়ার, বা প্যালেস্টাইন ওয়ার কিংবা সিরিয়া বা ইরান ক্রাইসিস লাগিয়েই রাখবে। এরা যে কোনভাবেই হোক একটা না একটা ছুতা বাহির করবেই। আর এই ছুতার আরেক নাম হচ্ছে আইএসআইএস বা আইএসআইএল। ইরাক থেকে আমেরিকা বা যুক্তরাজ্য বের হয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে তারা আরেকটি প্যারাসাইট তৈরি করেই বের হয়েছিল আর সেটাআই হচ্ছে এটা। ইরাককে এখন শিয়া এবং সুন্নি দুই অংশে ভাগ করে যে কোন একটার দিকে হেলে গিয়ে পুনরায় তাঁদের আধিপত্য বজায় রাখা হচ্ছে এর আসল লক্ষ।

ইরাকে নিউক্লিয়ার অস্র আছে এই প্রোপাগান্ডা ছরিয়ে যেমন গালফ ওয়ারটা হয়েছিল, এখন আইএসআইএস এর চাদরে ইরাককে আবার খন্ড বিখন্ড করা হবে। আর এ কারনেই আমরা দেখলাম যে, rapid march of the ISIS towards Baghdad and its swift takeover of Mosul and Tikrit, and Baiji oil refinery, Fallujah and Ramadi in the Anbar Province,

শুধু তাই নয়, seizure of border crossings into Syria and Jordan are presented by political analysts as a “civil war” fought along sectarian lines, Sunni Arabs versus Shiia Arabs.

এর সঙ্গে দৃশ্যমান ফলাফল অনুমান করা যায় যে, the ethnically different Iraqi Kurds who have enjoyed semi-independence under the US patronage and are now on the verge of declaring complete independence from Baghdad.

এর ফলে ভবিষ্যতে কি হবে তার একটা সরল রেখা টানা খুব সহজ। ইরাক ভেঙ্গে তিন টুকরা হবে। সুন্নি ইরাক, শিয়া ইরাক এবং সাধিন কুরদিস্থান। আর এর ফলে যেটা হবে তা হচ্ছে এই অঞ্চলে ইসরায়েল হবে একমাত্র শক্তিশালি দেশ যার কাছে আছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার। আর মিডল ইস্ট এ আছে তেল যা ইসরায়েলের সাহাজ্যে আমেরিকা বা ইউ কে এরা এই চমৎকার ভাগাভাগিতে আনন্দ উল্লাস করবে।

তবে প্রশ্ন আসতে পারে কেন আমেরিকা এই পলিসিটা গ্রহন করল। এটা বুঝবার জন্য তোমাকে একটু দূরে ইতিহাসটা চোখ খুলে তাকাতে হবে।

ওয়ার অন টেরর যখন শুরু হয়, তখন সারা পৃথিবীতে মানুষ কোন না কোনভাবে আমেরিকা বা ইউকে কে এক তরফা ব্লেম করছিল এবং তাঁদের দেশের নাগরিকগন বিশ্ববাসির কাছে অনেকটা ঘৃণা এবং অপদস্ত হচ্ছিল। এতে তাঁদের দেশের নাগরিকরাও তাঁদের দেশের হর্তাকর্তাদের সমালচনা শুরু করে দেয়। ওয়ার অন টেররের মুল উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু শুধুমাত্র মুসলিমদেরকে দমানো বা ওদের শক্তি কমানো। তাই একই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য এবার তারা ভিন্ন পথ ধরেছে বলে আমার ধারনা। তারা এবার মুসলিম বনাম মুসলিম যুদ্ধটা শুরু করেছে যেখানে শিয়া ভার্সেস সুন্নি। এক্ষেত্রে ওয়ার অন টেরর কৌশলটা আর প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না। এতে শাপও মরল লাঠিও ভাঙল না। এটাকে আমরা "ওয়ার উইথইন ইসলাম"ও বলতে পারি। অংকের ফলাফলটা একই কিন্তু ফর্মুলাটা ভিন্ন। মাঝখান দিয়ে সারা বিশ্ব আমেরিকা বা ইউকে কে বা তার মিত্রদেরকে কোন প্রকার ব্লেম করার আর সুযুগ পাবে না।

 (২) একটা জিনিস খেয়াল করে দেখ যে, ইরাকের আইএসআইএসের বিরুদ্ধে আমেরিকা এয়ার স্ট্রাইক করছে কিন্তু ঐ একই আমেরিকা সিরিয়াতে আইএসআইএস কে সাপোর্ট করছে টাকা দিয়ে, পয়সা দিয়ে তথ্য দিয়ে এবং অস্র দিয়ে। এটা কিন্তু একটা ডাবল গেম। জাস্ট একদম এক ফর্মুলা যখন আমেরিকা আল কায়েদাকে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লাগিয়ে পরে আবার আল কায়দাকেই ধ্বংস করার আরেক নমুনা। আমি প্যালেস্টাইনের ইন্তিফাদা পত্রিকার কিছু মন্তব্য তুলে ধরছি যা আমার কাছে মনে হয়েছে একদম ঠিক। "...  How do we really know what the US is doing in Iraq at the moment? How do we know that they really are carrying out strikes against ISIS? How do US forces know who is ISIS and who isn’t? Do ISIS members wear bright pink uniforms so that they stand out in a crowd and can thus be precision targeted by American fighter jets? For all we know, these air strikes could be targeting Iraqi army and police forces that are fighting against ISIS militants. Maybe the plan is to covertly help ISIS fragment and destabilize Iraq and exacerbate the country’s misery. Perhaps ISIS is being used as leverage against the unreliable puppets in Baghdad; one can picture Obama threatening al-Maliki that if he doesn’t follow Washington’s demands like a blind mule more ISIS fighters will be flooded into the country. This whole thing could also be an Orwellian bluff designed to deflect attention from Israel’s biennial ritual slaughter in Gaza. ISIS’s presence in Iraq is being used as an excuse to continue to bomb that beleaguered and thoroughly victimized nation. Obviously Washington doesn’t give a damn if the people of Iraq fall victim to ISIS; in fact Washington would love nothing more than a few more Iraqi corpses. Only a fool would believe that Washington cares about the well-being of Iraqis after extinguishing the lives of close to two million of them since the genocidal 2003 invasion and relegating millions more to lives of misery and despair. America wants to keep Iraq in a state of perpetual decay, unable to assert its own interests or do much of anything without Washington’s assistance.

(৩) এখানে আমার আরও একটি ব্যক্তিগত মতামত দিতে চাই এই আইএসআইএসের যে নেতা তার সম্পর্কে। যদি তিনি এম আই ৬, কিংবা সিআইএ অথবা মসাদ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েই থাকেন, কেন এই ব্যাক্তিকে তারা প্রশিক্ষন দিলেন? এই প্রসঙ্গে আমার আরও একটি পুরান উদাহরন দেওয়ার আছে। আর তা হল, আল কায়েদার বিখ্যাত সেই নেতা যার নাম ছিল আদম গাদান যিনি আল কায়েদার একমাত্র মুখ্যপাত্র ছিলেন। তোমরা কি জান সে কে?

সে ছিল একজন আমেরিকান ইহুদী যার আসল নাম ছিল এডাম পার্লম্যান। ৯/১১ এর সময় তিনি রাতারাতি নাম বদল করে দাড়ি টুপি পড়ে একেবারে ইসলাম দরদি হয়ে যে কোন উপায়ে আল কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতা বনে গেলেন। এটা আমেরিকার একটা চাল ছিল। এই সেই ব্যাক্তি যিনি "ওয়ার এগেইন্সট আমেরিকা" উচ্চারন করেছিলেন। পরবর্তীতে "অরেঞ্জ" পত্রিকা (একটা আমেরিকার পত্রিকা) এর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে যে তিনি ছিলেন ইহুদিদের সবচেয়ে সমর্থক গোষ্ঠীর কোন এক নেতার নাতি। ঐ দাদা ছিলেন ইহুদীদের সমর্থিত সংস্থার বোর্ড অফ ডাইরেক্টর। এই তথ্য বের হওয়ার পর আদম সাহেবের আর কোন হদিস পাওয়া যায় নাই। একইভাবে আমরা কি করে জানব যে বর্তমান আইএসআইএস এর যে নেতা ডঃ আবু বকর আল বাগদাদিও ঐ রকম একজন নন? ডঃ আবু বকর আল বাগদাদির নাম কিন্তু আসলে সাইমন এলিওট। তার পিতা একজন ইহুদী। তোমাদের আরও কিছু তথ্য আমি দেই যা তোমরা আমাকে বিশ্বাস নাও করতে পার। আর তা হচ্ছে আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন, বা জাওয়াহারি, এরা সবাই মসাদের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত গুরু। বর্তমানে হামাস, সেটাও এই মসাদের তৈরি। এগুলো আলাপ করতে গেলে ইতিহাস লিখতে হবে। ইন্দোনেশিয়ার টপ মুসলিম ক্লারিক আবু বকর বশির যদিও মুসলিম পোশাকে সজ্জিত, কিন্তু তিনি মসাদ কর্তৃক পালিত এবং তাঁদের এজেন্ট হিসাবেই কাজ করে। তিনি একজন ক্রিপ্টো ইহুদী এবং ইয়ামেনি বংসধর যিনি বালি বম্বিং এ জরিত ছিলেন । তিনি Abu Bakar Bashir is the leader of the Indonesian Mujahedeen Council, and he is linked to Jemaah Islamiyah and the Mossad-run al Qaeda.। 

এই একই প্রসঙ্গে ইন্তিফাদা লিখেছে যে, "...... ISIS’s true intention, many claim, is to incite sectarian divide in Israel’s neighbouring states, thereby advancing Tel Aviv’s Oded Yinon plan for the balkanizing and fracturing of its regional foes. Is it any coincidence that ISIS and its affiliates have targeted Libya, Iraq, Syria and Lebanon with the most furor, while leaving the corrupt, US-backed dictatorships in Egypt, Bahrain, Jordan, Qatar, Kuwait, Saudi Arabia, etc., alone. Not to mention ISIS’s complete lack of action against Israel or the US    

(৪) তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেউ কেউ মসাদের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে কিংবা ওদের ল্যাজ ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার পর নিজেরা আবার মতবাদ পরিবর্তন করে ফেলায় ওরাই আবার আমেরিকা বা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। তার মধ্যে লাদেন একজন, ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনিজাদ একজন। যেমন বিট্রে করেছিল শ্রীলঙ্কার এলটিটিই র বেলুপেল্লাই প্রভাকরন ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে। ইন্ডিয়াই তাকে তৈরি করেছিল খোদ শ্রীলংকার বিরুদ্ধে কাজ করবার জন্য। কিন্তু পড়ে বেলুপেল্লাই প্রভাকরন আর নিজেকে ইন্ডিয়ার ছা পোষা হয়ে থাকতে চান নি এবং নিজে নিজে তার এক শক্ত বাহিনি গড়ে তোলায় ইন্ডিয়া নিজেও বেলুপেল্লাই প্রভাকরণকে মেরে ফেলার যত ষড়যন্ত্র আছে করেছিল এমনকি শ্রীলংকাকেও সাহায্য করেছিল। 

(৫) আই এস আই এস কি ইসরায়েল কে থ্রেড করে?

পৃথিবীর বিখ্যাত এই টেররিস্ট দলকে ইসরায়েল এখনো নিষিদ্ধ ঘোষণাও করে নি এবং এর বিরুদ্ধে কোন কমেন্টও করে নি। শধু নরম ভয়েসে একবার মিডিয়াতে  বলেছে যে, এরা যা করছে তা ন্যায়সঙ্গত নয়। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে আইএসাইএস ও কিন্তু ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে কিছুই বলছে না।

আমি যদি এখন অন্যান্য ভেটো পাওয়ার ধারি দেশ গুলোর দিকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখি, তাহলে দেখা যাবে যে, রাশিয়া বা চায়না এরা একটা দারুন কনফিউসনাল স্ট্যাট দেখিয়ে কি করা উচিৎ তা সরাসরি কিছু বলছে না আর বল্লেও সে বলার মধ্যে যেন কেমন একটা নির্লিপ্ত ভাব আছে। সিরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি খাতির। আসাদ সরকারকে রাশিয়া সরাসরি সমর্থন করে। আবার আইএসাইএস সিরিয়াতে যুদ্ধ করছে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে। তাহলে তো রাশিয়ার উচিৎ আইএসাইএস কে রাশিয়া কন্ডেম করা। অন্য দিকে সিরিয়ায় যুদ্ধ কিংবা গণ্ডগোল লেগে থাকলে রাশিয়া ক্রমাগত সিরিয়াতে অস্ত্র বিক্রির একটা খনি থাকে। তো এমন একটা খনি রাশিয়াই বা কেন বর্জন করবে যেখানে রাশিয়াকে ইদানিং এক ঘরে করে দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা আমেরিকা? এটা তো রাশিয়ার জন্য একটা অর্থকরী বাজার!! আবার এখনো ব্যাপারটা একদম ক্লিয়ার না আসলে আইএসাইএস কি আসলেই সিরিয়ার বিরুদ্ধে কিনা।

অন্য দিকে চায়নার ভিতরেও অনেক মুসলমান রয়েছে। তার নিজের শাসন ক্ষমতার মধ্যেও পুরুপুরি তারা গণতন্ত্র চর্চা করতে দেয় না ফলে চায়না কখনই চায় না আরেকটা অযাচিত সমস্যা নিয়ে নিজের দেশে একটা সমস্যা তৈরি হোক। তার মধ্যে ইদানিং আবার হং কোং নিয়ে তারা আরও বেশ নাজুক অবস্থায় পরে আছে। এ ছারাও চায়নাও চায় না যে, এই অঞ্চলে আইএসাইএস দ্বারা আরেকটি পাওয়ার গ্রুপ তৈরি হোক। এর মানে হচ্ছে চুপ থাক বাবা। চায়না ও কিন্তু রাশিয়ার মত সিরিয়ার সমর্থক। চায়না কিন্তু একটা কথা ইতিমধ্যে সরাসরি বলে দিয়েছে যে, তারা আইএস আই এস এর এন্টি কোয়ালিশন যুদ্ধে আমেরিকার সঙ্গে নাই তবে সর্বাত্মক মোড়াল সাপোর্ট দিতে প্রস্তুত। যেন ধরি মাছ না ছুই পানি। বিশ্ব রাজনিতি ভাই। 

 (৬) এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার যে, আইএসাইএস বাহিনিতে প্রুচুর পরিমানে আমেরিকান এবং বিদেশী যোদ্ধা আছে। এদেরকে আসলে প্ল্যান্ট করা হয়েছে বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে। যদি কোন কারনে এই সব লোক গুলোকে এক সময় নিজের দেশে ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে এরা হয়ত বা নিজেরাই নিজের দেশে একদিন টেররিস্ট হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে অনেক বুদ্ধিজীবী রা আমেরিকা এবং ইউ কে কে সতর্ক করে দিয়ে ও লাভ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

 (৭) এখানে একটা বিশেষ ধর্মীয় সত্ত্বার রক্ষার একটা দিক কাজ করছে আর তা হল, আইএসাইএস হল সুন্নি সম্প্রদায়ের একটা দল যারা শেষ খেলাফতকে রক্ষার নামে জিহাদ করছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আবার ও দিকে ইরান হচ্ছে শিয়া প্রধান দেশ। ইরান কিন্তু তার ধর্মীয় দিক থেকেই আইএসাইএস কে সমর্থন দেবার কোথা নয়। আর এ কারনে ইরান আইএসাইএস এর বিরুদ্ধে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে আমেরিকা যেহেতু ইরাক আইএসাইএস কে টার্গেট করে ওদের মারার চেষ্টা করছে বলে ভাব দেখাচ্ছে, এর মানে ওরা এটাও দেখাতে চাবে যে অতি শিগ্রই সিরিয়ার আইএসাইএস কেও টারগেত করবে। এতে চির শত্রু ইরানের সঙ্গেও আমেরিকার একটা অলিখিত বন্ধুত্ব হবে বলে একটা আভাস দেওয়ার সিগন্যাল মনে করা হচ্ছে। কিন্তু আসলেই কি তাই? খুব কমপ্লিকেটেড সিচুয়েসন এই আইএসাইএস। 

ডলারের নোটের ব্যাখ্যা

আমিও আমেরিকার ডলারের এত ব্যাখ্যা জানতাম না, তুমি বলার পর আমি ইন্টারনেটে গিয়ে কিছু পরাশুনা করে দেখলাম ব্যাপারটা বেশ মজার। আমি যেটুকুন জেনেছি সেটা আমি বলছি। তবে আমি বাংলাদেশের টাকার ব্যাপারটাও জানার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু খুব একটা কিছু পাওয়া যায় নাই। তাই ডলার নোটের সম্পর্কেই বলছি যা একটা রিসার্চ করার মত ব্যাপার। ধৈর্য সহকারে পরতে হবে ভাই।

 আমেরিকার ১ ডলার নোটের বিবরনটা এই রকমঃ

(১) ১৯৫৭ সালে প্রথম বের করা হয়।

(২) কটন এবং সিল্ক (এটা লাল এবং নিল সিল্কের ব্লেডেড)।

(৩) একটা স্পেশাল কালি ব্যবহার করা হয়েছে যা পানি বা কোন ক্যামিকেল দিয়ে ধুলে উঠে যায় না। প্রথমে যত ছবি বা ইমেজ আছে তার উপরে এই লেখাগুলো প্রিন্ট করা আছে এবং তারপর এগুলো পানি প্রুফ করে স্টার্চ করা।

(৪) ১ ডলারের সামনের অংশে ইউনাইটেড স্টেটস এর ট্রেজারি সিল দেয়া। এবং একটা পাল্লা আছে যা সুবিচার নির্দেশ করে। অনেকে এই পাল্লার ব্যাখ্যা করে যে এটা ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ব্যালেন্স অব কারেন্সি বুঝায় তা ঠিক না।

(৫) মাঝখানে কারপেন্টারস টি-স্কয়ার বুঝায় যে, এখানে ১৩ টি স্টার আছে এবং এই ১৩ টি স্টার দিয়ে আমেরিকার প্রথম ১৩টি কলোনিকে বুঝানো হয়েছে।

(৬) ডলারের পিছনের অংশগুলো জানার ব্যাপারঃ

(ক) দুইটা বৃত্ত আছে যা একত্রে করলে আমেরিকার সিল হবে।

(খ) একটা জিনিস এখানে মনে রাখা দরকার যে, আমেরিকা ১৭৭৬ সালে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস হিসাবে আধিপত্যতা ছিল বলে তার শাসন প্রনালি ছিল কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস হিসাবে। ৪র্থ জুলাই ১৭৭৬ সালে এই কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস লুপ্ত হয়ার সময় আমেরিকার জাতীয় একটা সিল তৈরি করার প্লান করা হয়। তখন ফ্রাঙ্কলিন এর নেতৃতে আরও পাচজন ( তারা হচ্ছেন এডাম, থমসন জেফারসন, এবং আরও দুই জন) যারা এই সিল তৈরির কাজের কমিটি হিসাবে নির্বাচিত হন। আর এই সালটাই লেখা আছে ঠিক পিরামিডের নিচে রোমান অক্ষরে।

(গ) বাম দিকের বৃত্ত খেয়াল করলে দেখতে পাবা যে, একদিকে পিরামিড যেটার ফেস আলোকিত কিন্তু এর পশ্চিম পাশটা আলোকিত নয়। এর মানে হচ্ছে আমেরিকা Western Side নিয়ে অন্ধকারে আছে। পিরামিড দিয়ে ওরা বুঝাতে চেয়েছে যে, ঐ অঞ্চল এখনো ওদের আয়ত্তে আসে নাই। এদের কাজ এখনো ঐ অঞ্চলে শেষ হয় নাই। এই ব্যাখ্যাটা অফিসিয়াল ভাবে গ্রহনযোগ্য নয়। তবে কেউ কেউ মনে করে এটা হতে পারে। আরেকটা ব্যাখ্যা অনেকে করেন যে, পিরামিড হচ্ছে শক্তির প্রতিক এবং বহুদিন টিকে থাকার প্রতিক।

(ঘ) ক্যাপসটোনের ভিতরে যে চোখ দেখা যায় একে বলা হয় "অল সিইং আই"। এর ব্যাখ্যা আসলে অফিসিয়ায়ালি কেউ জানে না। তবে ধারনা করা হয় যে, ফ্রাঙ্কলিন সম্ভবত এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, ইসরায়েলের দামাল ছেলেমেয়েদের সব হিংস্রাত্তক কর্মকাণ্ডসহ দেবতা তার সমস্ত পৃথিবীর কর্মকান্ড দেখতে পান সর্বদা। ফ্রাংলিন ইহুদি ছিলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, এই পিরামিড এবং চোখ যীশুর প্রতিক।  

  (ঙ) পিরামিডের ঠিক নিচে লেখা আছে  NOUVAS ORDO SECLURUM, এর মানে হচ্ছে নতুন যুগ শুরু হয়েছে।

 (চ) সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ইগলের ছবি এবং তার ব্যাখ্যা। ডান দিকের বৃত্তে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, একটা ইগলের ছবি আছে যাতে ইগলটি তার বাম দিকে ফেস করে আছে। একটু ভাল করে লক্ষ করে দেখ যে, ইগলের দুই পায়ে দুই ধরনের সিম্বল আছে। একটায় সবুজ অলিভ শাখার আটি আর একটায় ১৩ টি এরো। ডলার নোটের এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সিলের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই ইগলের ফেসের উপর। প্রেসিডেন্টের সিলে ইগলের ফেস এরো র দিকে আর সম্ভবত ডলারের ইগলের ফেস ওই অলিভ আটির উপর। এর মানে হচ্ছে এই যে, আমেরিকা একটি শান্তির দেশ এবং আমেরিকা তার প্রতিরক্ষার জন্য সে এরো অর্থাৎ শক্তি ব্যবহার করতে পারে। আগে ডলারের এবং প্রেসিডেন্টের সিল একই ছিল কিন্তু ১৯৪৫ সালে ট্রুম্যান (সে ১৯৪৫ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিল) এই ইগলের ফেস বদলিয়ে দেন। The official meaning is that the olive branch and the arrows "denote the power of peace & war." 

 এখানে আরও একটা জিনিস লক্ষণীয় যে, এই সিলটা কারো উপরে দাড় করান হয় নাই। মানে আনসাপোর্টেড। এর অর্থ এই যে, আমেরিকা এখন নিজে নিজে সয়ং সম্পূর্ণ।

 (ছ) সিল্ডের পিছনে দেখা যায় যে, এটা রেড এবং সাদা স্ট্রিপ আছে যার উপরে একটা নিল বার আছে। এই সবগুলো কালার নেয়া হয়েছে আমেরিকার পতাকার রঙ থেকে। the red represents hardiness and valor, the white represents purity and innocence, and the blue, vigilance, perseverance, and justice.

 (জ) ইগলের ঠিক উপরে ১৩ টি তারকা আছে যা ওই সময় আমেরিকার অধিনে মোট ১৩ টি কলোনি ছিল এবং এই স্টারগুলোর উপরে মেঘের একটা আভা আছে যাকে বলা হয় আরও কলোনি হয়ত ভবিষ্যতে যোগ হতে পারে। এটাও ঠিক ব্যাখ্যা নয় অফিসিয়ালি (মেঘের ব্যাপারটা)।

 (ঝ) সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ডলার নোটে ১৩ এর সংখ্যার ব্যবহার। অনেকে ১৩কে আনলাকি বলে থাকে বটে কিন্তু এই ডলার নোটে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ১৩ সংখ্যার একটা জাল। যেমন, ১৩টি স্টার (কলোনি বুঝাতে), ১৩ জন সিগ্নেটরি (আমেরিকার স্বাধীনতার দলিলে ১৩ জন সাইন করেছিল), ১৩ টি কালারের ব্যবহার, ১৩ টি এরো, ফ্লাগের ১৩ টি স্ট্রিপ্স, পিরামিডের ১৩ টি সিঁড়ি অর্থাৎ 13 original colonies, 13 signers of the Declaration of Independence, 13 stripes on flag, 13 steps on the Pyramid, 13 letters in the Latin above, 13 letters in "E Pluribus Unum", 13 stars above the Eagle, 13 plumes of feathers on each span of the Eagle's wing, 13 bars on that shield, 13 leaves on the olive branch, 13 fruits, and if you look closely, 13 arrows. And for minorities: the 13th Amendment. 

আফিম যুদ্ধ

১৮৩৯ থেকে ১৯৪২ সালে এই যুদ্ধটা হয়েছিল। যুক্তরাজ্য আর চিনের মধ্যে এই যুদ্ধটা হয়। প্রধান কারন ছিল আসলে ট্রেড ডেফিসিট। চাউনিজরা ব্যাঙ খেলে কি হবে, এদের মাথায় বুদ্ধি ছিল সব সময়। কি একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখতে পাবা যে, কোন এক বয়স্ক চায়নিজকে দেখলে মনে হবে না যে এরা বুড়া হয়ে গেছে। এর কারণটা কি কেউ জান? Its like anti-aging

যাক যেটা বলছিলাম। চায়নারা তখনকার দিনে অনেক সিল্ক, মসল্লা, চা, ইতায়দি পয়দা করত। আর এগুলোর প্রুচুর মার্কেট ছিল ইউরোপিয়ান মার্কেটে। কিন্তু অন্য দিকে ইউরপিয়ান্দের প্রডাক্ট চায়নায় চায়নিজরা একেবারেই ইম্পরট করত না। এর কারন চায়নিজরা নিজেরাই সব কিছুতে সেলফ সাফিসিয়েন্ট ছিল। আর চায়নিজ সরকার তাদের ট্রেড আইন দ্বারা বাইরে থেকে বিদেশী ইম্পরট বন্ধ করে রেখেছিল। শুধুমাত্র সিল্ভার আর সোনা চায়নিজরা আমদাই করতে পারত যা ইউরপিয়ান্দের কাছে ছিল অনেক। আর শুধুমাত্র এই সোনা আর সিল্ভারের মাধ্যমে ব্যবসা আদান প্রদান করতে গিয়ে ইউরোপে সোনা আর সিল্ভারের দ্রুত স্টক ফুরিয়ে আসছিল।

 কিন্তু ইউরোপিয়ানরা বসে থাকে না। যেটা আজকে ওরা বুঝে, ইন্ডিয়ানরা বুঝে কাল আর বাঙালি বুঝে ৬ মাস পর। ইয়রপিয়ানরা দেখল, যে, চায়নিজরা প্রচুর আফিম খায়। আর আফিম ছিল ইউরোপে নিষিদ্ধ। ইউরোপিয়ানরা করল কি সিল্ভার আর সোনার পাশাপাশি এই আফিমকে আরেকটা ট্রেড আইটেম বানিয়ে প্রচুর পরিমান আফিম চায়নায় রপ্তানি করা শুরু করল। দিনে দিনে চায়নায় আফিমের বিস্তার এতটাই হয়ে উঠছিল যে, কোন সরকার ই এই আফিম খাওয়ানো বন্ধ করতে পারছিল না।

চায়নিজ সরকার প্রতিটি স্থানে চেক পয়েন্ট বসিয়ে দিল কোথা থেকে কিভাবে এই আফিম চায়নায় ঢুকছে তা বন্ধ করার জন্য। একবার কোন এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ির কাছ থেকে কাস্টম প্রায় ৩০ লক্ষ পাউন্ড আফিম জব্দ করল। ব্রিটিশ হচ্ছে হারামির জাতের গুরু। যদিও চায়নাকে আফিম প্রতিরোধ করার আইনকে চ্যালেঞ্জ করেনি কিন্তু এই জব্দ হওয়া আফিম তারা অবজেকসন দিল এবং পরবর্তীতে এইসুত্র ধরেই সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছিল। এর ফলে ১৮৪২ সালে ট্রিটি অফ নাঙ্কিং হয় যা ছিল এক তরফা একটা বিচার। এর মাধ্যমে চায়নাকে চায়নার পাচটি পোর্ট খুলে দিতে হয়, এবং হংকং হাত ছাড়া করতে হয়। আর এটাকে বলে অয়ার অব আফিম (১ম আফিম যুদ্ধ)। ২য় আরেক্তা আফিম যুদ্ধ হয়েছিল ১৮৫৬-১৮৬০ সালে।

আর ওটা ও ছিল আরেক ধাপ বড় যেখানে হারামি ব্রিটিশ চায়নাকে বাদ্ধ করেছিল উক্ত ৫ টা পোর্টের বদলে চায়নার সব পোর্ট খুলে দিতে এবং আফিমকে অফিসিয়াল আইটেম হিসাবে ডিক্লেয়ার দিতে। তখন রাজা ছিল কিং ডাইনেস্টি। জাঁদরেল রাজা। ঐ যে বললাম চায়নারা ব্যাঙ খাইলেও ওদের মাথায় একদম খারাপ ব্রেইন নাই। তারা করল কি যারা যারা ব্রিটিশ দের সঙ্গে এই আফিমের ব্যবসাটা করে তাদের সবাইকে টার্গেট করে। আগের চুক্তির (ট্রিটি অফ নাংকিং) খুব একটা আদলে নিচ্ছে না দেখে ব্রিটিশরা "মোস্ট ফেবারড নেশন" নামে একটা বানিজ্যক টার্ম ব্যবহার করে যার মানে হচ্ছে বানিজ্যক সুবিধা দেয়া। এতে চায়নিজ আফিম আমদানিকারকগন ব্রিটিশদের কাছ থেকে আফিম টেক্স ছাড়া কিনতে পারে। আর তখন কিং ডাইনেস্টি চায়নিজ ব্যবসায়িদেরকেও ধরা শুরু করল যে যারা যারা ব্রিটিশ জাহাজে করে এই আফিম আনবে তারা আনঅফিসিয়ালি ধরা খাবে। ব্রিটিশরা আরও হারামি। তারা করল কি ঐ সব চায়নিজদেরকে এই সুবিধাও দিল যে অনেক চায়নিজ ব্যবসাই ব্রিটিশ জাহাজের মালিকান রেজিস্ট্রি পেয়ে যায়। যাতে চায়নিজ কিন্তু ব্রিটিশ জাহাজ আবার আফিম আনতে পারবে। রাজনিতি কি খারাপ, স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না

তখন একটা ব্রিটিশ জাহাজ যার নাম ছিল "এরো"। এটা বেসিক্যালি ব্রিটিশ জাহাজ কিন্তু চায়নিজ ব্যবসায়ির নামে রেজিস্ট্রেসন করা। কিন্তু ১৮৫৬ সালে ঐ ব্রিটিশ জাহাজটি যদিও চায়নিজ এক ব্যবসায়ির নামে নতুন করে রেজিস্ট্রেসন করে দিয়েছিল আফিম ব্যবসাটা চালিয়ে নেবার জন্য কিন্তু ঐ বছর তখনো ব্রিটিশ ফ্ল্যাগটা ব্যবহার করছিল। আর যায় কই। কিং ডাইনেস্টি সুযোগটা হাতছারা করে নি। সিজ করে ফেলল ঐ "এরো" নামক জাহাজটি। অনেক তদবির তদবির করে জাহাজের ক্রুগুলোকে চায়নাদের কাছ থেকে ছারিয়ে নিয়ে গেলে ও চায়না কোনভাবেই ব্রিটিশদেরকে ক্ষমাও করেনি, ক্ষমাও চাননি। তখন যেহেতু হংকং ছিল ব্রিটিশদের আধিনে এবং হংকং এর শাসক ছিলেন ব্রিটিশ। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রির আদেশ ছারাই হংকং শাসক চায়নার ক্যন্টন আক্রমন করে বসে। বললাম না ব্রিটিশরা হচ্ছে হারামির জাত। এই অবৈধ আক্রমণকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রি পালমাস্টোন তার অফিসিয়াল সায় দিয়ে যুদ্ধটা বাধিয়েই দিলেন যা ২য় আফিম যুদ্ধ বা এরো যুদ্ধ ও বলা হয়।    ।   

হ্যালি ধুমকেতু

১৭০৫ সালে এডমন্ড হেলি নিউটনের "ল অব মোশন" এর ভিত্তিতে এই ধূমকেতুর আবির্ভাব নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছিলেন যাতে বলা হয়েছিল যে, এতা ১৫৩১, ১৬০৭, ১৬৮২ এবং ১৭৫৮ সালে এতা দেখা যাবে। তার বক্তব্যের সত্যতা তার জীবদ্দশায় ১৫৩১ এবং ১৬৮২ ঠিক ছিল কিন্তু ১৬৮২ সাল ঠিক থাকবে কিনা এটা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, সত্যি যে ঐ ধুমকেতুটি তার মৃত্যুর পর ১৭৫৮ সালে দেখা গিয়েছিল এবং তার পর থেকেই তার সম্মানে এই ধুকেতুর নাম রাখা হত হ্যালি।

প্রতি ৭৬ বছর পর পর এই ধুকেতুটি আসে কিন্তু সময়ের হের ফেরে বা ধুমকেতুটির নিঃসরণের কারনে তার গতির কিছু হেরফের হয় বলে বলা হয় যে এটা ৭৬ থেকে ৮০ বছর এই দুই অংকের মদ্ধে থাকে। এটার দাইমেন সন হচ্ছে প্রায় ১৬ বায় ৮ বায় ৮ মাইল।

যদি কোন কারনে এই ধুমকেতুটি কখন পৃথিবীর সাথে হটাত আকর্ষিক ধাক্কা লেগে যায়, তাহলে এর বিপর্যয় হবে এক মারাত্মক। এতে পুরু পৃথিবী ধ্বংস অ হয়ে যেতে পারে কারন এর স্পীড এবং সাইজের জন্য। তাই মাঝে মাঝে বৈজ্ঞানিক গন একে "এটম বম্ব ফর নাগাসাকি" না বলে বলে থাকেন "এটম বম্ব ফর ওয়ার্ল্ড"। তাই হ্যালির ধূমকেতুর আবির্ভাবে খুব বেশি খুশি হবার কোন কারন নাই বরং এতা পৃথিবীর জন্য অত্যান্ত বিপদজনক। কিন্তু যেহেতু স্রষ্টা আছেন, তিনি এর গতিপথ নির্ধারণ করে দেন কখন এটা কার সুবিধা অ সুবিধা হবে সেটা। যেমন ধরুন, বলা হয় যে, হ্যালির ধূমকেতুর আগমনের কারনে ব্যাটল অফ হেস্টিংস হয়েছিল যেখানে ১০৬৬ সালে কিং হ্যারল্ড কে উতখাত করে উইলিয়াম হয়েছিলেন রাজা। ১৪৫৬ সালে তুরুস্কের সেনাবাহিনি বেল্গ্রেডে পরাজিত হয়েছিল ইত্যাদি।

হ্যালির ধুমকেতুটি আবার দেখা যাবে আবার ২০৬২ সালে। তখন শুধু বেচে থাকবে জুনিয়র

রিপ ভ্যান উইঙ্কেল

রিপ ভ্যান উইঙ্কেল নিউ ইয়র্ক শহরের কোন এক গ্রামে বাস করতেন। সে শহরের মানুষদের কাছে খুব প্রিয় একজন মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। বিসেস করে বাচ্চাদের কাছে। কারন সে বাচ্চাদেরকে গল্প বলতেন। কিন্তু তার স্ত্রি ছিল খুব জাঁদরেল। সারাক্ষন খালি কানাঘুষা করতেন আর কানের কাছে ভন ভন করত। একদিন তার স্ত্রীর এই ভন ভনানি থেকে রেহাই পাবার জন্য শিতের এক সকালে পাশের এক পাহারের কাছে পালিয়ে গেল আর সেখানে গিয়ে একদল অপরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল যারা ঐ এলাকার বাসিন্দা নন কিন্তু অদ্ভুত অলংকারে ভূষিত ছিলেন এবং তারা ৯-পিন নামক একটা খেলা খেলতেছিল।

মজার ব্যাপার ছিল যে, রিপ ওদের নাম জানতেন না কিন্তু ওরা রিপের নাম জানত। রিপ ওদের সঙ্গে মদ্য পান করেছিল এবং ঘুমিয়ে গিয়েছিল। যখন তার ঘুম ভাঙল, সে দেখল যে, তিনি তার চারিপাশে কিছুই চিনেন না। তার দাড়ি গোঁফ এতই বড় হয়ে গেছে যে পা সমান লম্বা প্রায়। ঘুমের আগের যে রাজা ছিলেন কিং জরজ-৩য়, সে আর নাই, বরন ওয়াশিংটন হয়ে গেছেন তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।

গ্রামে ফিরে আসার পর রিপ কে কেউ আর চিনতে ছিল না, এবং আরও মজার ব্যাপার হল যে, ঐ খানে আরও একজন রিপ ভ্যান ওয়িঙ্কেল হয়ে গেছে যে তার ছেলে। সে এখন অনেক বড় একজন পোলা। অবশেষে গ্রামের একজন অতি বৃদ্ধা রিপকে চিনলেন এবং তার মেয়েকে বললেন যে, এতা তার বাবা। রিপ একনাগারে ২০ বছর ঘুমিয়ে ছিল বলে জানা জায়।  রিপ তার পরেও অনেক দিন বেচে ছিল এবং আগের মত ই বেচে ছিল।

এই গল্পটা বেসিক্যালি একটা রুপক। এর মানে অনেকঃ

(১) রিপ একজন রুপক মানুষ সমাজের যারা সমাজের অনেক কিছু থেকে পালিয়ে গিয়ে কোথাও চুপ করে বাচতে চায়,

(২) রিপ একজন মানুষ যে সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে না থেকেও সমাজে বেচে আছে।

(৩) রিপ সেই এক জন রুপক মানুষ যে, সরকারের প্রাথমিক শাসনে কিছুই বুঝে না এবং প্রায় অনেক বছর পর বুঝতে পারে যে, তাদের মদ্ধে সএকার অনেক কিছু পরিবর্তন করে ফেলেছে আর এই সব পরিবর্তন সব বড় বড়।

মার্ক পোলো

দুইজন ভিয়েতনামি ধনী ব্যবসায়ী ভাই (একজন নিকোলো আরেক জন মেটিও) পূর্ব থেকে ইউরোপে ১২৬০ সালে ভ্রমনে বের হয়েছিল। তখন তো আর এখনকার মত প্ল্যেন ছিল না অহরহ যে ইচ্ছে করল আর অনলাইনে আরব এমিরাটস এ বুকিং দিয়ে দিল আর অমনি তারিখ মত উরে চলে গেল এক দেশ থেকে আরেক দেশে। তারা জাহাজে করেই ভ্রমনে বের হত এবং তারা সবাই তাই করতে হয়েছিল। ১২৬৫ এর দিকে তারা কেইফেং (চায়নার এক অঙ্গরাজ্য) পৌঁছাল। কেইফেংটা হচ্ছে বর্তমান হেনান প্রভিন্স এর পাশে) আগে এটা নর্থ সং ডাইনেস্টি নামে পরিচিত ছিল। তারও আগে এটাকে বলা হত ক্যাপিটাল অব কুবলাই খান (গ্রেট খান নামেও ডাকা হয় এটাকে)।  আর গ্রেট খান ছিল তখনকার দিনে মঙ্গল সম্রাট। ১২৬৯ সালে এই দুই ভাই মঙ্গল সম্রাট খানের বেশ ব্যক্তিগত সম্পর্কের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। সম্রাট খান তাদেরকে এতটাই বিশ্বাস করতেন যে, একবার এই দুই ভাইয়ের  মাধ্যমে ইউরোপের পোপের কাছে মঙ্গলদেরকে মঙ্গলিয়ান থেকে কনভার্ট করার লক্ষে ১০০ মিশনারিজ পাঠাতে বলেছিলেন যদিও শেষমেশ পোপ ঐ অনুরোধ রাখেন নাই।

পরবর্তীতে নিকোলো যখন একা ইতালির ভেনিসে আসেন তখন সে জানতে পারে যে, তাঁর ১৫ বছরের একমাত্র পুত্র মার্ক পলোকে রেখে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। বেচারা ধনী হলে কি হবে? তখন তো আর সাকিরের স্মার্ট ফনের মত সম্রাটের কোন ফোন ছিল না যে, বাটন টিপলেই রানি পাওয়া যাবে। সুতরাং তিনি ওখানে না আশা পর্যন্ত জানতেন না যে তাঁর স্ত্রী আর জীবিত নেই। কি আর করা, মরা বউয়ের জন্য তো আর নিজের সব কাজ ফেলে সারাদিন কান্নাকাটি করা যাবে না, আর সব কাজ ফেলে তাজমহল ও গড়া যাবে না। আর করেও লাভ নেই এই কারনে প্রেমের নিদর্শন বল আর নামের কারনেই বল তাজমহল বানানর জন্য যে পরিমান অর্থ আর লোকবলের দরকার আমাদের এই পোলো পরিবারের তা ছিল না যদিও তারা অনেক ধনী ছিলেন।

অতঃপর এই দুই ভাই আবারও মার্ক পোলোকে সঙ্গে করে পূর্বের সেই খানের কাছে ফিরে আসেন। এটা সম্ভবত ১২৭৫ সালে।  সম্রাট খান মার্ক পোলোকে খুব পছন্দ করেছিল। আর এই ভাল লাগা থেকেই সম্রাট খান মার্ক পোলোকে রাজকীয় কাজকর্মে নিয়োজিত করেন। পরিবারতন্ত্র আর পছন্দতন্ত্র সবখানেই সবসময়ই ছিল। খামাখা আমরা আজকে বিএনপি অথবা আওয়ামি লিগকে দোষ দেই। আরে বাবা ওরা তো আগের রাজা মহারাজদের পথই অনুসরণ করেন!! যাক, খুব অল্প বয়সেই মার্ক পলো অনেক বড় বড় সরকারি পজিশনে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান, এবং কখন কখন রাষ্ট্রদূত হিসাবেও নিয়োগ পান। শুধু তাই নয়, মার্ক পলো ইয়াঞ্জু শহরের গভর্নর হিসাবেও নিয়োগ পান।

গ্রেট খানের মেয়ে অর্থাৎ প্রিন্সেস তিনি এই পোলো পরিবারের কাছে খুব সেইফ মনে করছিলেন বলে তিনি আস্তে আস্তে তাঁর কন্যাসহ মার্ক পোলো এবং তাঁর বাবা চাচাদের সঙ্গে দক্ষিন চায়না দিয়ে তাদেরকে ইউরোপ পার হয়ে যাবার জন্য একটা বড় জাহাজ দেন (যার নাম ছিল আরমাদা, আরমাদা হচ্ছে একটা যুদ্দ জাহাজ যা আর্মড এবং জাহাজ এর নামের মিশ্রন, আর তাই এর নাম হয় আরমাদা)। এই পার করে দেয়ার কারন হল পার্সিয়ান গালফে গ্রেট খানের আরেক আত্মীয় যার সঙ্গে তিনি তাঁর মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। আর ঐ মেয়ে অর্থাৎ প্রিসেসও ঐ রাজকুমারকে বিয়ে করার জন্য রাজী ছিলেন। ঐ জাহাজে প্রায় ৬০০ সৈন্য ছিল, প্রায় ১৪ থেকে ১৫ তা আরও ক্ষুদ্র নৌকা ছিল। এই আরমাদা ইন্দোনেশিয়া হয়ে শ্রীলংকা দিয়ে ভারত বর্ষ পার হয়ে হরমুজ প্রনালি দিয়ে পার্সিয়ান গালফে আসে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাজ কন্যার সঙ্গে আর ঐ রাজ পুত্রের বিয়ে হয় নাই কারন ইতিমধ্যে রাজপুত্র মারা যান। পরিশেষে ঐ রাজকন্যা তাঁরই আরেক ভাইকে বিয়ে করেন।

মার্ক পোলো পরবর্তীতে ভেনিসে এসে আর্মিতে যোগদান করেন জেনোয়া রিপাবলিককে রক্ষা করার জন্য। তখন ওখানে একটা যুদ্ধ হচ্ছিল। ইতালির এই শহরটা তখন তাদের নিজস্ব স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছিল। কিন্তু জেনোয়া স্বাধীনতা পায় এবং মার্ক পোলো বন্দি হন। তাঁর দুই বছরের জেল হয়। আর এই জেলখানায় বসেই তিনি তাঁর বিখাত বই The Travels of Marco Polo বইটি লিখেন। প্রকৃতপক্ষে অনেক বিখ্যাত বই জেলখানায় বসে লেখা হয়েছে। যেমন গ্লিমসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্টোরি (নেহেরু), দি ট্রাভেলস অব মার্ক পোলো (মার্ক পোলো), মেইন কেম্ফ (হিটলার), লি মর দি আরথার (Le Morte d'Arthur ) স্যার টমাস মেলরির লেখা, মিগুয়েল দি সারভেন্টেজ এর লেখা "ডন কুইকজট" (Don Quixote), দনেটিন আলফসের লেখা "জাস্টিন, ফিলসফি ইন দি বেডরুম" ইত্যাদি।

বকসি ভাই, তোমার জেল খাটার শখ আছে? না থাকলে তুমি বইও লিখতে পারবা না, মার্ক পোলোও হতে পারবা না। যাক, জেলে মেলে যাবার দরকার নাই।

তিনি তাঁর এই লেখাটা আরেক বন্দি রাস্টিচেলোর কাছে দিয়ে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে এই রাস্টেচেলোই ফ্রান্স ভাসায় এই বইটি প্রকাশ করে।  বইটির অনেক চ্যাপ্টারের মধ্যে মানুষ খেকো লেজওয়ালা মানুষের অনেক বর্ণনা আছে, এশিয়ার অনেক ভৌগলিক বর্ণনা আছে। এশিয়ার মানুষেরা কিভাবে বিয়ে করে, সেক্স করে এবং কিভাবে মানুষ মানুষকে কবর দেয় তাঁর বিস্তারিত বর্ণনা আছে। তাঁর সঙ্গে আছে বিস্তারিত ধর্মীয় আচার ব্যবহারের বিশদ বর্ণনা। সে সেকেন্ড হ্যান্ড রেফারেন্স হিসাবে তাঁর সঙ্গে থাকা অনেক জাপানিজ এবং মাদাগাস্কার বন্দিদের তথ্য নিয়ে তিনি ঐ দেশ সমুহের কিছু তথ্য ও সংযজন করেছিলেন।

সক্রেটিসের এ্যাপোলজি

যে কয়েকটি সংলাপ ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে তার মধ্যে একটি হলো এ্যপোলজি (Apology)। আধুনিক ইংরেজীতে Apology অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। কিন্তু গ্রীক ভাষায় Apology-অর্থ ভিন্ন। সেখানে Apology-অর্থ defense। আদালতে বিচারের সময় আত্মপক্ষ সমর্থন করে সক্রেটিস যে ভাষণ দেন এ সংলাপ তারই বর্ণনা। Apology-কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে সক্রেটিস আত্মপক্ষ সমর্থন করছিলেন এবং এই পর্যায়ে মিলেটাসকে জেরা করেন ও ডেলফির মন্দিরে নিজের দৈববাণী পাওয়ার বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করেন। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে রায়, এবং তৃতীয় অংশে শাস্তি। বিচারকদের মধ্যে ছিলেন গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ এনিটাস, কবি মেলিটাস, বাগ্মী লাইকন। 

 সক্রেটিসের সংলাপ (উল্লেখযোগ্য অংশ)

 “বলতে পারেন সক্রেটিস, যে কাজ করার জন্য অতঃপর আপনার অকাল মৃত্যু হতে যাচ্ছে, সেইসব কাজ করার জন্য আপনি কি লজ্জ্বিত নন? তাকে আমি ন্যায্যভাবে উত্তর দিবোঃ এখানেই আপনি ভুল করছেন, যে ব্যক্তি মানুষের মঙ্গল সাধনের জন্য মাঠে নেমেছে, তাকে নিহত হবার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতেই হয়, এই নিয়ে তিনি তেমন চিন্তিত নন, তিনি ভাবেন কেবল একটি বিষয় - যা করছেন তা ঠিক করছেন না ভুল করছেন, ভালো মানুষের কর্ম সম্পাদন করছেন না খারাপ মানুষের কর্ম সম্পাদন করছেন।“ 

“হে এথেন্সবাসীগণ, আমি আপনাদের শ্রদ্ধা করি, আমি আপনাদের ভালোওবাসি, কিন্তু আমি আপনাদের কথা শুনবো না, আমি শুনবো আমার ইশ্বরের কথা। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমার জীবন ও শক্তি রয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি দর্শন চর্চা ও শিক্ষাদান থেকে বিরত হবো না।“

 “আপনাদের জানাতে চাই যে, যদি আপনারা আমার মত একজন মানুষকে হত্যা করেন, তাহলে আমার যে পরিমান ক্ষতি হবে, তার চেয়ে আপনাদের অধিক ক্ষতি হবে। কোন কিছুই আমার ক্ষতি করতে পারবে না, মিলেটাস নয়, এনিটাসও নয়। কারণ একজন ভালো মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতা ঈশ্বর দুষ্টলোককে দেননি। দুষ্টলোক শুধু নিজেদেরই ক্ষতি করতে পারে। আমি অস্বীকার করিনা যে, এনিটাস তার চেয়ে একজন ভালো মানুষকে হত্যা করতে পারে বা তাকে নির্বাসনে পাঠাতে পারে, বা রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে; এবং সে কল্পনা করতে পারে যে, এরূপ করে সে তার যথেষ্ট ক্ষতি করেছে, অন্যেরাও সেরূপ মনে করতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করিনা। অন্যায়ভাবে একজনকে হত্যা করে সে নিজের যে পরিমান অকল্যাণ করবে তা নিহত ব্যক্তির অকল্যান থেকে অনেক বেশি।“

 রায় এবং শাস্তি

 বিচারের জুরি সক্রেটিসকে দোষী সাব্যস্ত করলো  খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। ৫০০ জন বিচারকদের মধ্যে সক্রেটিসের বিরুদ্ধে জুরি ছিলেন ২৮০ জন, পক্ষে ছিলেন ২২০ জন। তারপর সেই সময়কার রীতি অনুযায়ী তাঁকে দ্বিতীয়বার বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দেয়া হলো। এথেনীয় জুরিসপ্রুডেন্স (jurisprudence) রীতি অনুযায়ী অভিযোক্তারা একটি দন্ড প্রদান করে, এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি তার চাইতে কম শাস্তি প্রার্থনা করে বিতর্কে অবতীর্ন হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, অভিযুক্তকে যদি মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো, তাহলে এটাই প্রচলিত ছিলো যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডের স্থলে নির্বাসন প্রার্থনা করতো। অর্থাৎ প্রতিটি মামলায়ই দেয় দন্ডাজ্ঞার চাইতে কম শাস্তি প্রার্থনা করা হতো। মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকে দ্বিতীয় বক্তৃতাটি দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো যেন তিনি তাঁকে প্রদত্ত মৃত্যুদন্ডের চাইতে কম শাস্তি প্রার্থনা করতে পারেন। কিন্তু মহাজ্ঞানী সক্রেটিস এই মর্মে বিতর্ক করেছিলেন যে, তিনি একটি মহান দায়িত্ব পালন করে এথেন্স রাষ্ট্রের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, যা হলো এথেন্সের স্বতন্ত্র নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা করা, সুতরাং যথাযথ শাস্তি হবে এই যে, তিনি যেন বাকী জীবন এই মহান দায়িত্ব পালন নির্বিঘ্নে করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাঁর জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা। এতে সিনেটররা ক্ষুদ্ধ হয়, ও তারা সক্রেটিসের মৃত্যুদন্ডাদেশই বহাল রাখে।

ব্যাটল অফ এমাগেদ্দন

পৃথিবীতে চূড়ান্ত একটা যুদ্ধ হবে যার নাম ব্যাটল অফ এমাগেদ্দন। তো প্রশ্ন হতে পারে যে এই যুদ্ধে কে কে খেলবে বা কারা কারা লড়বে? বলা হয় যে, রাশিয়া, ইরান এবং সিরিয়া একত্রে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে। একটা জিনিস খুব ভাল করে লক্ষ করে দেখবা যে, যেহেতু মধ্য প্রাচ্য এখন সাংঘাতিক হট বেড এর মত হয়ে আছে, এবং ইরান নিউক্লিয়ার পাওয়ারের অধিকারি হতে যাচ্ছে বলে আমেরিকা এবং ব্রিটিশ মনে করে, ফলে ইসরায়েল এই সুবাদে ব্যাটল অফ এমাগেদ্দন প্রায় সমাগত বলে প্রচার করে অনেক তুল কালাম কাণ্ডই ঘটাতে পারে বলে ইসরায়েল ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করে। এটা আমেরিকা, এবং ব্রিটিশদের পক্ষে ইসরায়েল কাজ করছে বলে তারা সর্বদাই মনে করে।

বাইবেলে এই এমাগেদ্দন শব্দটা হয়েছে আরমাগেদ্দন। আর এটা একবার ই বাইবেলে অনুসৃত হয়েছে। আর এইটা পাওয়া যায় শুধুমাত্র Revelation 16:12 to 20 এ

তো দেখা যাক ১৬/১২ থেকে ২০ পর্যন্ত তে কি লিখা আছে

(১২) ৬স্ট এঞ্জেল তার থেকে এমন একটি নিঃশ্বাস ফেলবে ইউফ্রেটিস নদিতে যাতে ইউফ্রেটিস নদীর সব পানি শুকিয়ে যাবে।

(১৩) তারপর তিনটি অশুভ ইঙ্গিত পাওয়া যাবে যার একটা হচ্ছে ড্রাগনের মুখ থেকে, পশুদের মুখ থেকে এবং মিথ্যা প্রফেটের মুখ থেকে ব্যাঙ বেরিয়ে আসবে।

(১৪)  এই তিনটি অশুভ স্পিরিট ব্যাসিকেলি শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করবে যারা অনেক যাদুর মত মিরাক্যাল দেখাবে এবং পূর্বের রাজার আবাসন পর্যন্ত পৌঁছাবে। এক সময় এই অশুভ স্পিরিট গুলো সারা বিশ্বকে ঘিরে ফেলবে। আর এতেই ঈশ্বরের সহিত একটা যুদ্ধ হবে ঈশ্বর বনাম শয়তান।

(১৫) এমন সময় তিনি আসবেন, চোরের মত আসবেন যেন কেউ দেখতে না পায়। (বাইবেলে ঠিক এই কথাটা ই বলা আছে (Behold, I come as a thief), তার সমস্ত কাপর চোপড় খুলে তিনি আসবেন, একদম উলঙ্গ, সবাই তার লজ্জার স্থান দেখতে পাবে, এটাই তার আগমনের পরিচয়।

(১৬)  তিনি এসে সবাইকে ডেকে একত্রে করবেন হিব্রু ভাষায় ওই স্থানে যার নাম আরমাগেদ্দন।

(১৭) অতঃপর, ৭ম এঞ্জেল একটি নিঃশ্বাস ফেলবেন বাতাসে যার মাধ্যমে বেহেশত এবং রাজার দরবার থেকে প্রচারিত হবে যে, যা করবার তা করা হয়ে গেছে।

(১৮) ঠিক তার পরেই শুরু হবে বিজলীপাত, ভুমিধ্বস এবং ভুমিকম্প।

(১৯) অতঃপর শহরটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে খন্ডখন্ড হয়ে। তখন বেবিলন শহর থেকে ঈশ্বরকে এক কাপ মদ দেয়া হবে যেন তিনি শান্ত হন।

(২০)    ওই সময় সমস্ত দ্বীপ গুলো হারিয়ে যাবে, পাহার গুলো কোথাও উধাও হয়ে যাবে, এরপর বেহেশত থেকে পাথর নিক্ষিপ্ত হবে ক্রমাগত মানুষদের উপর। জাজমেন্ট ডে শুরু।

মজার ব্যাপার হল যে, পৃথিবীতে আরমাগেদ্দন নামে কোন জায়গা নেই। গ্রিকরা এই শব্দটাকে একটা সিলেবি করেছে এই ভাবে, হিব্রুতে har megiddo  মানে মাউন্টেইন অব মেজিদ্দু। আর এই মেজিদ্দু হচ্ছে প্যালেস্টাইনে। The Mount of Megiddo is located in the plain of Esdraelon or Jezreel, a valley fourteen by twenty miles in size located to the southwest of Nazareth. Here, it is thought by many, that the great final battle of Armageddon will be fought at the end of time.

বলা হয় যে, বুক অব রেভেলিসন এ যা যা লেখা আছে কেউ যদি এতার এক টি শব্দ ও বদলায় তাহলে সে হবে জাহান্নামী এবং সে তার সমস্ত পরিবার বর্গ নিয়ে এক সঙ্গে জাহান্নান্মে যাবে। সাংঘাতিক কথা।

ওয়ার এগেইন্সট টেরর হচ্ছে এই ব্যাটল অব আরমাগেদ্দনের আরেক রূপক। এটা মিডল ইস্ট কে ঘিরেই করতে হবে এবং এটা বাইবেলের নির্দেশ। এটাই মনে করে ইসরায়েল এবং খ্রিস্টিয়ানরা

কেন আমেরিকা ইসরায়েলকে

কেন আমেরিকা ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন করে, এই প্রশ্নটা আমি অনেককেই করতে দেখেছি। অনেকের অনেক রকম ধারনা আছে যার মধ্যে একটা হচ্ছে যে, সবাই মনে করে আমেরিকাতে ইহুদীদের প্রভাব বেশি এবং তারা যদি আমেরিকার ভোটের সময় বেকে বসে তাহলে কোন ব্যাক্তিই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট হতে পারবে না। অথবা ইহুদীরা ভোটের সময় হয়ত প্রচুর টাকাপয়সা দান করে যার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ক্যান্ডিডেটরা ইহুদীদেরকে হাতে রাখতে চায়। হয়ত এই কারনে আমেরিকা ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন করে, আসলে ব্যাপারটা একদমই এইরকম নয়।

 ইহুদীরা টাকা পয়সা দানের ব্যাপারে অত্যন্ত কঞ্জুষ। এরা পারতপক্ষে কাউকে কোন দান করে না। এমনকি তাদের গরিব আত্মীয়সজনকেও না। আর আমেরিকার ভোটের সময় কোন ক্যান্ডিডেটকে অনেক টাকা পয়সা দিয়ে সাপোর্ট করার মত মানসিকতাও ওদের নেই। আর যদি বলি যে, ইহুদীরা আমেরিকায় অনেক সংখ্যাগরিস্ট তাও নয়। ইহুদীরা আসলে নিউইয়র্কভিত্তিক বেশি। আর শুধু নিউইয়র্ক দিয়ে পুরু আমেরিকায়, আর যাই হোক, প্রেসিডেন্ট হিসাবে জয়ি হওয়া সম্ভব নয়। আবার যদি বলি যে, ইসরায়েলকে সমর্থন করে অন্ধভাবে অনেক আমেরিকান তাও নয়, বরং ইসরায়েলকে সমর্থন করে না এমন লোকের সংখ্যাই বেশি। তাহলে প্রশ্নটা হচ্ছে, কেন আমেরিকা ইসরায়েলকে এত অন্ধভাবে সমর্থন করে? বা কারা করে?

 উত্তরটা খুব সহজ নয় তবে বুঝবার বিষয় আছে। এটা অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়।  

 আমেরিকায় দুই ধরনের খ্রিস্টিয়ান বাস করে, এক হচ্ছে ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ান এবং দুই হচ্ছে ক্যাথলিক।  ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানগন তাদের ধর্ম বিশ্বাসে অটুট থাকতে হলে ধর্মের জন্য তাদের ইনকামের ১০% টাকা দান করতেই হবে। এটা নিয়ম। আর এটা যদি না করা হয় তাহলে বাইবেলের তথ্য মতে ঐ ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানদেরকে ঈশ্বর দোজখের আগুনে পুরিয়ে মারবেন। ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানগন এই নিয়মটা ১০০% মেনে চলেন যদিও অনেকে চার্চে যান না। আর এখানেই হচ্ছে সেই ভোটের ট্রাম কার্ড।

 আমেরিকায় ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ান এত বেশি যে, কোন ক্যান্ডিডেটই ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানদের ভোট ছাড়া জয় পাবার কোনই সম্ভাবনা নাই। ক্যাথলিক খ্রিস্টিয়ানরা সংখ্যায় অনেক কম এবং এরা খুব একটা বাইবেল পড়ে না যেমনটা পড়ে ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানরা। ছোট একটা উদাহরন দিয়ে আমি যদি বলি যে, ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানরা হচ্ছে আমাদের সুন্নিদের মত আর ক্যাথলিক খ্রিস্টিয়ান রা হচ্ছে আমাদের শিয়া মুসলমানদের মত। সুন্নি মুসলমানরা কোরআন বেশি পড়ে এবং কোর আনে যা লিখা আছে তা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করে কিন্তু শিয়ারা কোর আনের পাশাপাশি তাদের ধর্ম গুরুর কোথাও কোরআনের মত মেনে চলে যেমন হয্রত আলির অনুসারিরা।  Fundamentalist Christians are all Protestants. The largest group is the Baptists. Whereas the Jews are divided in their support of Israel, the Fundamentalist Christians are united in their support of Israel. This explains why no political candidate can be elected in America who is opposed to Israel. Now, the key question is: Why do the Fundamentalist Christians support Israel?

ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানরা বিশ্বাস করে যে, বাইবেলে যা যা বলেছে তা সব সত্য এবং এটা মানা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। Their support for Israel comes directly from the Bible. Most importantly, it comes from the Book of Revelation, the last book of the Bible, chapters 16 to 21

 বাইবেলের মতে জিশুর ২য় বার আগমনের জন্য কতগুলো ঘটনা ঘটবে। ১ম ঘটনা হতে হবে যে, ইহুদীরা জেরুজালেমে ফিরে আসতে হবে যা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। তারপর প পড় আরও অনেক অঘটন ঘটবে, যেমন চাদের রং লাল হয়ে যাবে, তারপর "ব্যাটল অব আমাজেদ্দন" হবে, তারপর শয়তান রা জেরুজালেমে যুদ্ধ ঘোষণা করবে (প্যালেস্টাইনকে ওরা শয়তান মনে করে)। বাইবেল বলে যে, এই যুদ্ধে জেরুজালেমের অনেক ক্ষতি সাধিত হবে এবং জেরুজালেমের উপাশনালয়ের কিছুটা ধ্বংস হবে। বাইবেল আরও বলে যে, এই ব্যাট ল অব আমাজেদ্দনে ইহুদীরা অনেক দুর্বল হয়ে পরবে এবং ঠিক ঐ সময়ে যীশু আসবেন। এই ব্যাটল অব আমাজেদ্দনে যীশু আসার পড় ইহুদীরা পুনরায় জয়ি হবে এবং সব ক্যাথলিক ক্রিস্টিয়ানরা ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ান হয়ে যাবে। এই সব কিছু সম্ভব হবে তখন ই যখন জেরুজালেম তাদের হাতে থাকবে। জেরুজালেম হাতে না থাকলে যীশু আসতে পারবেন না এবং ইহুদীরা সমুলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আর এই জেরুজালেম এক মাত্র উদ্ধার এবং রক্ষা করতে পারে শুধু মাত্র ইসরায়েল। আর ঠিক এই কারনে ইসরায়েলের সব চেষ্টা এবং একটিভিটিজ হোক সেটা শয়তান (প্যালেস্টাইন) মারা, হোক সেটা অন্য কোন এক্ট ইত্যাদি করাকে সব ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানরা সমর্থন করবেই। এটা ওদের জন্য ফরজ কাজ ধর্মের নামে। আরও একটা মজার কাহিনি হল যে,  ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানদের ধর্ম উপদেস্ঠা জেরি ফলওয়েল এর চিন্তা ধারা বাইবেলের এই সব ব্যাখ্যা কে আর ও জোরালো এবং সমর্থন যোগ্য করে দিয়েছে এই সব ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ান দের কে। কে সে এই জেরি? সেটা আরেক মজার গল্প। আমার কাছে এটা গল্পই বটে। পড়ে বলব যদি সময় এবং মুড থাকে।

ম্যাগনা কার্টা

ম্যাগনা কার্টা বেসিক্যালি একটা চুক্তিপত্র যার মাধ্যমে দেশের সমস্ত লোকজনের বেসিক রাইটসকে সমুন্নত রাখবে এবং অক্ষুন্ন রাখবে। আর এটা করা হয়েছিল রাজা জনের আমলে রুন্নিমেড এলাকায় জুনের ১২১৫ সালে।  এই চুক্তিটা আসলে যুক্তরাজ্যের অধিবাসিদের জন্য এক ধরনের ব্যাক্তি স্বাধীনতার দলিল। যার প্রধান উদ্দেশ্য হল, King is not above the Law and its like a Bill of Rights for Mediaval England. প্রকৃত দৃশ্য ছিল যে, The King often lived above the law, violating both feudal and common law, and was heavily criticized for his foreign policy and actions within England. আর এই কারনেই যুক্ত রাজ্যের মানুষ গুলো ছিল রাজাদের উপর খুব বিরক্ত। বিশেষ করে ব্যারনরা। এটার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের অধিনে যে সব কলোনিগুলো ছিল প্রায় সব দেশেই অবশেষে এই দলিলটি একটি মহামান্নিত দলিল হিসাবে গৃহীত হয় এবং অনেক দেশের লিগ্যাল সিস্টেম এর উপরই বেজ করে তৈরি করা হয়।

  গল্পটা এই রকমঃ

 ১২০৯ থেকে ১২১২ সাল পর্যন্ত তখনকার রাজা জন এর আমলে যুক্তরাজ্যের কিছু অধিবাসীগণ যাদেরকে ব্যারন (member of a specific rank of nobility, esp the lowest rank in the British Isles) নামে ডাকা হত সেই সব সিটিজেনের জন্য এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য এই দলিলটি রাজা জন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১২১৫ সালে অনেক ব্যারনরা এবং চার্চের লোকেরা রাজার এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কন্সপিরেসি শুরু করে।  তারা রাজা জনকে সিংহাসন থেকে বিতারিত করতে চাইছিলেন না কারন রাজা জনের পরে অন্য কেউ যে রাজা হবেন সেই লোকটি ছিল না। কেন ছিল না, বা কে হতে পারত এটা আরেক গল্প। ঐ গল্পে গুম আছে, ডিপ্লোম্যাটিক রাজনীতি আছে, ধর্ম আছে, সে গল্পে এখন যাচ্ছি না। এই ম্যাগনা কার্টার প্রথম নাম ছিল  'The Unknown Charter of Liberties',  later appeared as 'Articles of the Barons' and the Runnymede Charter.

 মীরজাফর এর মত লোক সবসময় সবখানেই ছিল এবং এই রাজা জনও এমন একজন লোক ছিলেন। যেই না 'The Unknown Charter of Liberties', অথবা 'Articles of the Barons' ব্যারনরা পেল এবং ব্যারনরা সানন্দে আবার রাজা জনকে অভিসিক্ত করলেন, অভিষিক্ত হয়েই এই রাজা মশাই ঐ দলিল খানা বাতিল করে দেন। আবারো শুরু হল যুদ্ধ। শেষ অবধি এই রাজা মারা গেলেন ১২১৬ সালে এবং তাঁর পুত্রধন হেনরি-৩য় রাজার স্থলে অভিষিক্ত হলেন। কিন্তু পুত্রটি ছিল বাপের থেকে একটু চালাক। তিনি বাপের বাতিল করা আর্টিকেলটি পুনরায় বহাল করেন এবং তখনই এর সংস্কারকৃৎ নতুন নামটি হয় ম্যাগনা কার্টা ।

 এখন তাহলে এই মুল্যবান দলিল দিয়ে কি হয় আসলে তা বুঝার ব্যাপার। যেহেতু এই দলিলটি অনেক দেশেই চলমান, ফলে অনেক দেশ একচুয়ালি একই কন্সটিটিউসন ব্যবহার করে বলে লিগ্যাল সিস্টেমগুলো প্রায় এক।

 দ্বিতীয়তঃ এই দলিলের বলে "ব্যালেন্স অব পাওয়ার" যদি বলি অনেকটা "ব্যালেন্স" করে। কার কার মধ্যে ব্যালেন্স করে? দেশ থেকে দেশে এবং পাবলিক ও জনগনের মধ্যে।

 তৃতীয়তঃ কোন রাজাই এখন আর প্রশ্নের উর্ধে নয়, সবার জন্য আইন সমান সে রাজাই হোক আর প্রজাই হোক। সে ক্ষমতায় থাকুক আর ক্ষমতায় নাই বা থাকুক। আসলে এটা হওয়া দরকার ছিল বাংলাদেশে। এটা থাকলে আর কেয়ার টেকার সরকারের দরকার পরত না।

 ৪র্থ হল যে, এই ম্যাগনা কার্টার মাধ্যমে চার্চকে একেবারে স্বাধীন করে দেয়া হয়েছে। চার্চ তাঁর নিজস্ব পলিসি বানাতে পারবে রাজার কোন ভুমিকা নেই। মোদ্দা কথা হচ্ছে এই উপরের আইন বা স্বাধীনতাগুলো ছাড়া বা সহকারে আমি যদি নিম্নআকারে লিখি তাহলেও ম্যাগনা কার্টা ভালভাবে বুঝা যাবে।

       ক। Shifted the power from the monarchs to the people in Britain

       খ। Required British royalty to obey the same laws as other English people.

       গ। Limited the power of the people in the British government.

       ঘ. Gave the power in the British government to members of Parlia

 এখন অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের রুলস অব বিজনেজকেও অনেক সময় ম্যাগনা কার্টা বলে অভিহিত করে। অর্থাৎ মালিক এবং কর্মচারী একই আইনের অধিনে। সবার অধিকার সমান তাদের যোগ্যতার বলে। এবং সেই সংস্থায় ধর্ম বলে কোন কিছুই ফিক্সড করে দেয়া নাই। যে যার ধর্মকে পালন করতে পারবে। কোন বৈষম্য নাই। আর এটাই হচ্ছে ম্যাগনা কার্টা।

বাইবেলে রঙ

বাইবেলে সাদা, কালো, হলুদ এবং সম্ভবত মিক্সড এই কয়েকটি কালারের কথা বোলা আছে। অনেকদিন আগে আমি বাইবেলের প্রায় ৭টা ভার্সন পরেছিলাম। লুকের, মেথিউজ, আর্কের এবং অল্ড টেস্টামেন সহ নিউ টেস্টামেন্ট।

অল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্ট টা অনেকে হয়ত বুঝবে কিনা আমি জানি না তবে এটা জানা ভাল। তো আমি পড়ে এটা সম্পর্কে একটু ধারনা দেব যদি কেউ জানতে চায়।  

 তো বলি এবার, কালারের কথাগুলো।

বাইবেলের কোন এক জায়গায় লিখা আছে যে, "ইয়াহি অনেক দূর থেকে তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিয়ে আসবে যে দেশের লোক হবে খুবই তড়িৎগতি সম্পুন্ন ইগলের মত, যাদের ভাষা তোমরা বুঝতে পারবে না এবং যারা হবে যুদ্ধ প্রিয় মানুষ। তারা বড়দের সম্মান করবে না, এবং ছোটদেরকেও এরা কোন ফেবার করবে না। তারা প্রুচুর মাংশভুজি হবে, তারা তোমাদের জন্য কোন শস্যক্ষেত খালি রাখবে না মদ তৈরির করার জন্য। এদেরকে বোলা হয়েছে হলুদ মানুষ। এখানে আরও একটা কথা বোলা দরকার যে, বাইবেল বলে যে, ঐ সময় জেসাস এসে তোমাদের সাহায্য করবেন এবং নতুন রাজ্য সৃষ্টি করবেন যার নাম হবে মিলেনিয়াম রাজ্য।  

 বাইবেলের আরেক ভার্সনে বোলা আছে যে, "তোমার যত পূর্বে যাবে তত হলুদ বিপদের মানুষের সঙ্গে তোমাদের দেখা হবে"। ইন ফ্যাক্ট এই মিথ তাঁর অর্থ অনেক রকমের। কেউ মনে করে এই মিথ টা এসেছে " দি কিংস ফ্রম দি ইস্ট" কনসেপ্ট থেকে। এর মানে এই যে, ইউফ্রেটিস নদির পূর্ব তীরের মানুষ গুলোর কথা বোলা হয়েছে। এর মানে চীন। কিন্তু অনেকে আরও দূর ব্যাখ্যা দিয়ে বলে যে চীনের পর এবং পূর্বেও হচ্ছে আমেরিকা।আবার অনেকে মনে করে যে, ইউফ্রেটিসের পূর্বে বাগদাদ বা তেহরানও আছে যারা ইসলামিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে দিনে দিনে।

 এখানে বাইবেলের অন্যান কালারের ব্যাপারে আরও কিছু মজার মিথ প্রচলন আছে। যেমন, ঈশ্বর যখন প্রথম মানুষ তৈরি করেন, তখন তাঁর কালার খুবই কাল হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি আবার আরও একজন মানুষ তৈরি করেন, তখন সেটা হয়ে ছিল অনেক সাদা। তখন তিনি তৃতীয় বার চেস্টার পর যে মানুষটি তৈরি হল, সেতা না কাল  না সাদা। ওটা প্রায় এসিয়ান টাইপের। এটা অনেকে জোক মনে করেন কারন এই কনসেপ্টটা সব ভার্সনে পাওয়া যায় না।

 তবে অরিজিনাল বাইবেলে মাত্র ৪ বার হলুদ কালারটা ব্যবহার করা হয়েছে। ৩ বার ই ব্যবহার হয়েছে ধর্ম জাজকের দ্বারা রোগ নির্ণয় করার কারনে বা ব্যাপারে। আর ৪র্থ বার ব্যবহার করা হয়েছে ইয়েলো গোল্ড বুঝানোর জন্য।

কোন একটা ভার্সনে (আমার ঠিক মনে নাই এখন) বলা হয়েছে যে, Gold or Yellow: Symbolizes the Glory of God ; divine nature; holiness; eternal deity; the Godhead; Purification; majesty; righteousness; divine light; kingliness; trial by fire; mercy; power; His Deity; Glory. Yellow or Gold is also primary. It always speaks of trial and purging. "That trial of your faith, being much more precious than of gold that perishes, though it be tried with fire, might be found unto praise and honour and glory at the appearing of Jesus Christ"

 বাইবেলের বিশেষ করে লেভিক্টাসে কালারের কিছু মিনিগ সরাসরি বোলা হয়েছিল। যেমন ধরঃ কাল মানে পাপ, মৃত্যু, খোঁড়া, দুঃখ কিন্তু এখানে চুল কে ওর মধ্যে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে।

নিল কালারকে বোলা হয়েছে যে, পবিত্র জায়গায় যা যা রাখা হবে তাঁর কালার হতে হবে নীল। এটা ধনী ব্যাক্তির জন্য ও ব্যবহার করার রিতি আছে। এটা হচ্ছে হেভেনলি কালার।

সবুজ কালারকে জীবনের কালার বোলা হয় অর্থাৎ যা সবুজ তাতেই প্রান আছে বোলা হয়।

The color red in the Bible means love, forgiveness, or even blood sacrifice. Red in the Bible meant the chosen people whose doors were paintef red were to be kept alive and the doors that were not painted were killed

 এবার আসি অল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্ট কি

 একদম সবচেয়ে বিশাল পার্থক্য হচ্ছে অল্ড টেস্টামেন্টে জিশুর আবির্ভাব আর নিউ টেস্টামেন্টে এটার অভাব। The Old Testament provides the history of a people; the New Testament focus is on a Person. The Old Testament shows the wrath of God against sin (with glimpses of His grace); the New Testament shows the grace of God toward sinners (with glimpses of His wrath). The Old Testament predicts a Messiah (see Isaiah 53), and the New Testament reveals who the Messiah is (John 4:25–26). The Old Testament records the giving of God’s Law, and the New Testament shows how Jesus the Messiah fulfilled that Law (Matthew 5:17; Hebrews 10:9). In the Old Testament, God’s dealings are mainly with His chosen people, the Jews; in the New Testament, God’s dealings are mainly with His church (Matthew 16:18). Physical blessings promised under the Old Covenant (Deuteronomy 29:9) give way to spiritual blessings under the New Covenant (Ephesians 1:3). The Old Testament saw paradise lost for Adam; the New Testament shows how paradise is regained through the second Adam (Christ). The Old Testament declares that man was separated from God through sin (Genesis 3), and the New Testament declares that man can be restored in his relationship to God (Romans 3—6). The Old Testament predicted the Messiah’s life. The Gospels record Jesus’ life, and the Epistles interpret His life and how we are to respond to all He has done. In summary, the Old Testament lays the foundation for the coming of the Messiah who would sacrifice Himself for the sins of the world (1 John 2:2). The New Testament records the ministry of Jesus Christ and then looks back on what He did and how we are to respond. Both testaments reveal the same holy, merciful, and righteous God who condemns sin but desires to save sinners through an atoning sacrifice.

হিটলার

১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল সকাল ৬:৩০ মিনিটে অস্ট্রিয়ার কোনো এক নাম না জানা ব্রাউনুন গ্রামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক এডলফ হিটলারের জন্ম হয়। তার বাবার নাম ছিলো এলুইস এবং মায়ের নাম ছিলো ক্লারা। বাবা মায়ের ৪র্থ সন্তান ছিলেন হিটলার। কিন্তু তার আগের তিনজনই তার জন্মের আগে মারা গিয়েছিলেন। হিটলারের পরে তার আরো দুইজন ভাইবোন ছিলো। তাদের নাম ছিলো এডমাউন্ড এবং পউলা। হিটলারের দাদামহ কে ছিলেন সেটা আজো ইতিহাস সঠিক তথ্য দিতে পারে নাই। তবে বলা হয় যে, হিটলারের বাবা এলুইস ছিলেন মারিয়া আন্না নামের কোনো এক মহিলার সন্তান এবং তারপাশের বাড়ির দুধ বিক্রেতা জোহান জর্জ হেইডলার ছিলেন এলুইসের বাবা। এলুইস যে একজন অবৈধ সন্তান এটা তখনকার দিনে ওই সমাজে খুব একটা অপ্রীতিকর ব্যাপার ছিলো না বলে এলুইস কখনোই তার পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেন নাই। কিন্তু তিনি তার মায়ের শেষ নামটাই সবসময় ব্যবহার করতেন। আর সেটা ছিলো সিক্লগ্রুবার। পরবর্তীতে অস্ট্রিয়ায় ১৮৭৬ সালে অফিশিয়াল জন্ম নিবন্ধনের সময় তিনি তার এক চাচার "হেইডলার" নামের সাথে ম্যাচ করে এলুইস হেইডলার নামকরনে অভিষিক্ত হন। তখন তার বয়স ছিলো ৩৯। কিন্তু সরকারী খাতায় "হেইডলার" নামটি ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয় "হিটলার" হিসাবে। আর পারিবারিক নামের জের ধরেই পরবর্তীতে এই মহানায়কের নামেও এডলফ হেইডলারের পরিবর্তে এডলফ হিটলার হিসাবেই আজ বিশ্ববাসি জানে। 

১৮৯৫ সালে হিটলার তার ছয় বছর বয়সে ক্লাশ ওয়ানে ভর্তি হন গ্রামের কোনো এক স্কুলে। হিটলার সপ্ন দেখতেন তিনি একজন আর্টিস্ট হবেন। ফলে হিটলার ক্লাসিক্যাল কোনো এক স্কুলে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার বাবা এলুইস চাইতেন যে, হিটলার সরকারী কোনো কর্মচারী হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলক। ফলে তার বাবা হিটলারকে ক্লাসিক্যাল স্কুলের পরিবর্তে টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। হিটলার তার বাবাকে খুব ভয় পেতেন। ১৯০৩ সালে হতাত করে হিটলারের বাবা ফুস্ফুসের ক্যান্সারে মারা যান। তার বাবার মৃত্যুর পর হিটলার পুরুপুরি স্বাধীনতা পেয়ে যান। কোনো দায়িত্ববোধ বলে কিছু ছিলো না তার। এমনকি নিজের জন্যেও না। ফলে বাউন্ডেলে জীবনের মত হিটলার অস্ট্রিয়ার আনাচে কানাচে বিভিন্ন মিউজিয়ামে, অপেরা পার্টির সঙ্গে এখানে সেখানে ঘুরে বাড়াতে লাগলেন। আর এভাবে হিটলার তার লেখাপড়ায় মোটামোটি একটা ইতিই টেনে ফেলছিলেন। এইভাবে করতে করতে, ১৯০৭ সালে হিটলার সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি ভিয়েনা একাডেমিতে ফাইন আর্টসে ভর্তি হবেন। কিন্তু তিনি খুব খারাপভাবে ভর্তি পরিক্ষায় ফেল করলেন এবং ভিয়েনা একাডেমিতে আর ভর্তি হতে পারলেন না। মনের দুঃখে তিনি পুনরায় ভিয়েনা থেকে তার নিজের বাড়ীতে মায়ের কাছে ফিরে এলেন। কিন্তু তখন তার মা আন্না ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ১৯০৭ সালের ডিসেম্বরে তার মা আন্না ক্যান্সারে মারা যান। 

  

১৯০৮ সালে হিটলার পুনরায় ভিয়েনা একাডেমিতে আবারো ফাইন আর্টসে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেন, কিন্তু আগেরবারের চেয়ে ফলাফল এবার আরো খারাপ হওয়ায় ভিয়েনা একাডেমি তাঁকে পরবর্তী সব ভর্তি পরীক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেন। হতাশ হিটলারের আর কোনো কিছুই করার ছিলো না। মায়ের সঞ্চিত যা ছিল, তাই দিয়ে হিটলার রাস্তায় রাস্তায় এদিক সেদিক ঘুরে বাড়াতে লাগলেন। কখনো পার্কে, কখনো ষ্টেশনে, কখনো বা গাছের তলায়। আস্তে আস্তে মায়ের রাখা সঞ্চয়ও শেষ হতে থাকে। এইরকম একটা পরিস্থিতিতেও হিটলার রেগুলার কোনো একটা কাজের সন্ধান করেন নাই। শেষতক, হিটলার কাজ না খুজে মানুষের কাছে হাত পাতা শুরু করলেন, আক্ষরিক অর্থে যাকে বলে ভিক্ষা। এইভাবে আর যখন চলছিলো না, তখন হিটলার ১৯০৯ সালের ডিসেম্বরে "হোমলেস শেল্টার" এ আশ্রয় নেন।  

১৯১৩ সালে অস্ট্রিয়ায় যখন বাধ্যতামুলক সেনাবাহিনীতে ভর্তির আদেশ করা হয়, তখন সেনাবাহিনীতে ভর্তি না হবার জন্য চালাকী করে হিটলার তার পিতৃভুমি জার্মানির মিউনিখে চলে আসেন। কিন্তু অস্ট্রিয়ান সরকার ১৯১৪ সালে তার এই চাতুরী ধরে ফেলেন। চতুর হিটলার তার চাতুরীর জন্য এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলভোগের সাজা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হিটলার অস্ট্রিয়ান কনসুলেটকে তার দারিদ্র্যের বর্ণনা দিয়ে অতি আবেগময় একখানা পত্র লিখেন।  অস্ট্রিয়ান কনস্যুলেট হিটলারের পত্রের আবেগময় ভাষা এবং তার নিবেদন খুব পছন্দ করেন এবং তাঁকে শাস্তি না দিয়ে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেন সেনাবাহিনীতে ভর্তির জন্য। কিন্তু হিটলার ইচ্ছে করে সেনাবাহিনীর লিখিত পরিক্ষায় খুব খারাপভাবে ফেল করেন এবং তাঁকে আর অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনীতে কখনোই যোগ দিতে হয় নাই। 

২৮ জুন ১৯১৪ সালে যখন এক সারবিয়ান আততায়ীর হাতে অস্ট্রিয়ার রাজা ফারদিন্যান্ড মারা যান, তখন জার্মানির চ্যান্সেলর কায়জার অইলহ্যাম অস্ট্রিয়াকে সারবিয়ান্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য চাপ দেন এবং অস্ট্রিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করে। পহেলা আগস্ট ১৯১৪ সালে যখন জার্মান যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন মিউনিখে সবার সাথে হিটলার নিজেও ওই আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন।  

এই সময় রাশিয়া অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যসামন্ত মোতায়েন করেন, অন্যদিকে জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যসামন্ত মোতায়েন করেন। আবার আরেক দিকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড জার্মানির বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যসামন্ত মোতায়েন করে বসেন। তার মানে এই দাড়ালো যে, অস্ট্রিয়া ও জার্মানি একদিকে, অন্যদিকে সার্বিয়া, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড।    

অস্ট্রিয়ার রাজা যখন সার্বিয়ার আততায়ীর হাতে খুন হন, তখন হিটলার এতোটাই দেশপ্রেমিক বনে যান যে, তিনি এইবার জার্মানির ভ্যাবারিয়ান রেজিমেন্টে স্ব ইচ্ছায় যোগ দেন। হিটলার সার্বিয়ানদেরকে এবং অন্যান্য বিদেশীদেরকেও জার্মানিতে সহ্য করতে পারছিলেন না। হিটলার সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে মোটেও একজন খাপ খাওয়ানোর মতো লোক ছিলেন না। ঢিলাঢালা, অলস এবং খুবই অপরিচ্ছন্ন সদস্য হিসাবে গন্য ছিলেন। কিন্তু তার একটা ভালো গুন ছিলো। সে বহুবার অল্পের জন্য মৃত্যু থেকে বেচে গেলেও তার সাহসী কাজে খুব উৎসাহ ছিলো এবং তিনি ওইসব কাজে নিজে থেকেই এগিয়ে আসতে চাইতেন। হিটলার কখনো খাবারের জন্য অভিযোগ করেন নাই, কিংবা ব্যারাকে থাকার অবস্থা ভালো নয় এইজন্য তার কোন অভিযোগ ছিলো না, কিংবা তিনি কখনো মেয়েঘটিত ব্যাপার নিয়ে নাক গলান নাই। আর হিটলার কখনো ছুটির জন্যও আবেদন করতেন না।  

১৯১৬ সালের ৭ অক্টোবরে কোনো এক যুদ্ধে ( ব্যাটল অফ সুম্মি) তে হিটলার গুরুতর পায়ে আঘাত পান এবং জার্মানির এক হাসপাতালে ভর্তি হন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এটাই হিটলারের প্রথম অনুপস্থিতি। আরোগ্য লাভের পর হিটলারকে তখন হাল্কা কাজ দেওয়া হয় আর তিনি তখনো মিউনিখেই থাকেন। এদিক সেদিক ঘুরে বাড়ান, বার্লিনে এই প্রথম হিটলার ঘুরতে যান। ১৯১৮ সালের ১০ নভেম্বরে হিটলার খবর পান যে, জার্মানির পরাজয় হয়েছে। হিটলারের বয়স তখন ২৭। এই টকবগে তরুন হিটলার জার্মানির এই পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তার বারবার মনে হচ্ছিলো যে, জার্মানির পরাজয় সামরিক বাহিনীর অক্ষমতার জন্য হয় নাই, বরং পরাজয়টা হয়েছে অযোগ্য রাজনীতিবিদদের কারনে, বিশেষ করে ইহুদীদের কারনে। হিটলারের মনে ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ জন্ম নিতে থাকলো।  

১৯১৯ সালের ২৮ জুন জার্মানির পরাজয়ের কারনে মিত্রপক্ষ "ভারসাই চুক্তি" নামে একটি চুক্তি করে যেখানে সম্পূর্ণ দায়ভার জার্মানির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং যুদ্ধে যার যা ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপুরন হিসাবে জার্মানিকে কি কি করতে হবে তা ওই চুক্তির মধ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়। এই চুক্তির বলে জার্মানিকে তাদের নিজস্ব কিছু ভূখণ্ডও পোল্যান্ড এবং ফ্রান্সকে দিয়ে দিতে হয়।  শুধু তাই নয়, চুক্তি মোতাবেক বলা হয় যে, জার্মানি তার সেনাবাহিনী কোনো অবস্থাতেই একলাখের বেশী সৈন্য সামন্ত বাড়াতে পারবে না, তাদের কোনো মিলিটারী বিমান থাকতে পারবে না, এমনকি সাবমেরিন জাতীয় কোন নৌজানও রাখতে পারবে না। এটা ছিলো বিশ্ববাসীর সামনে জার্মানির একটা অপমানসুচক চুক্তি।  

হিটলার তখনো জার্মানির গোয়েন্দা বাহিনীতে একজন "ইনফরমার" হিসাবে কাজ করছিলেন এবং তিনি মিউনিখেই থাকতেন। কিছুদিন পর হিটলারকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে "পলিটিক্যাল ইনডক্ট্রিনেসন" কোর্সে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। আর ওখানেই হিটলার তার জীবনের একটা মোড় ঘুড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হন। সেখানে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজর কাড়েন। হিটলার তার নিজের লেখা "মেইন ক্যাম্প" এ লিখেছিলেন, "একদিন আমি ওই কোর্স করার সময় অনেক ছাত্রদের মিলিত সভায় ইহুদীদের ব্যাপারে আমার কিছু কথা বলার সুযোগ হয়েছিল যেখানে অধিকাংশ ছাত্ররা আমার মতের পক্ষেই সমর্থন দেয়। আর এর ফলশ্রুতিতেই আমাকে সেনাবাহিনি থেকে মিউনিখ রেজিমেন্টে .এডুকেসনাল অফিসার" হিসাবে প্রেসনে পাঠায়।"  

১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে মিউনিখের "জার্মান ওয়ার্কার পার্টি"র কোনো এক ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে হিটলারকে তদন্ত করতে পাঠানো হয়। ওই সময় এই "জার্মান ওয়ার্কার পার্টি"টি ছিলো মুলত একটি ছোট নাম না জানা "আলাপচারিতা দলের" মত। খুব কমসংখ্যক লোক এরসঙ্গে জড়িত এবং এদের কোনো এজেন্ডা ছিলো না। হিটলার সূক্ষ্মভাবে ভাবলেন যে, এই ছোট দলটি দিয়েই একটা কিছু করা সম্ভব এবং একে সাংঘটনিকভাবে সাজাতে হবে। এদের প্রতিটি সদস্যই ইহুদীদের বিপক্ষে। হিটলার নিয়মিত এই "আপালচারিতা দল"টিকে একটা রাজনৈতিক দলের আদলে তৈরী করা শুরু করলেন। এই দলটির পক্ষে মাঝে মাঝে হিটলার বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করলেন যেনো এর পরিচিতি বাড়ে। এমনই এক সময়, ১৬ অক্টোবর ১৯১৯ সালে, হিটলার তার এই ক্ষুদ্র দলের সদস্যদের উদ্দ্যেশে এমন এক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিলেন যে, তার এই বক্তব্য, তার এই ইহুদী বিরোধী মনোভাব অনেক জার্মান নাগরিককে উক্ত দলে এসে হিটলারের ভাষণ শুনার জন্য প্রলুব্ধ করে। আর এই সুযোগ নিয়ে ১৯২০ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারীতে প্রায় ২০০০ হাজার জার্মান নাগরিকের সম্মুখে হিটলার ২৫টি দাবী সম্বলিত এক আশাবাদী এবং জ্বালাময়ী বক্তৃতা রাখেন। এই বক্তব্যে প্রধানত হিটলার ইহুদী বিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে "ভারসাই চুক্তি" বাতিল, ফ্রান্স এবং পোল্যান্ডকে দেওয়া ভুখন্ড ফেরত, প্রতি বছর মিলিওন মিলিওন ডলারের ক্ষতিপুরন বন্ধ, ইহুদীদের অনধিকার অধিকার, জার্মানিদের দুরাবস্থা ইত্যাদি তুলে ধরেন। হিটলার আরো বলেন যে, যুদ্ধের পরে যে সব ইহুদীগন জার্মানিতে বসবাস শুরু করেছে, তাদেরকে যতো দ্রুত সম্ভব বিতাড়িত করতে হবে।  

হিটলারের এই অভিপ্রায়ে জার্মানির অধিকাংশ নাগরিক এমনভাবে সমর্থন দিলেন যে, হিটলার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান নাই। তিনি অতিদ্রুত আগের "ওয়ার্কার পার্টি" নাম বদল করে একে "ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি" হিসাবে নাম পরিবর্তন করেন। যাকে আমরা পরবর্তীতে "নাজি" পার্টি হিসাবে জানি। এই পার্টির তিনি একটি লাল পতাকার মধ্যে সোয়াস্টিকাও লেপ্টে দেন পার্টির সিম্বল হিসাবে।  অবশেষে হিটলার উক্ত পার্টির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন ১৯২১ সালে, যদিও তিনি এক্সিকিউটিভ কমিটির মধ্যে ছিলেন ৭ম।  

হিটলার ভ্যাবারিয়ান সরকারের কিছু রাজনীতিবিদদের সমন্নয়ে ১৯২৩ সালে ৮ নভেম্বরে মিউনিখে একটি আন্দোলনের সুচনা করেন যেখানে পরিকল্পনা ছিলো যে, তৎকালীন বার্লিন সরকারকে উতখাত করবেন হিটলার এবং তার মিত্র লুদেনদ্রফ। কারন বার্লিন সরকারে অধিকাংশই ছিলো ইহুদী এবং কমিউনিস্ট। কিন্তু তাদের ওই আন্দোলন সার্থক না হয়ে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বার্লিন সরকার হিটলার এবং লুদেনদ্রফকে পাচ বছর করে জেল দেন। কিন্তু জার্মানির বিচারক উভয় হিটলার এবং লুদেনদ্রফকে যুদ্ধের সময় জার্মানির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য ৫ বছরের স্থলে মাত্র ৮ মাস জেল খাটার ব্যবস্থা করেন। জেল থেকে বের হবার পর, হিটলার এইবার আন্দোলনের মাধ্যমে নয়, রাজনীতিকভাবে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করলেন এবং তিনি তার নব্যদলকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

    

তার "নাজি" পার্টি ধীরে ধীরে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করলেন এবং ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে হিটলার তার পার্টি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেন। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ ১ম বিশ্বযুদ্ধের নামকরা পল ভন হিন্ডেনবার্গকে হিটলার হারাতে পারলেন না। কিন্তু পল ভন হিন্ডেনবার্গও এককভাবে সরকার গঠন করার মতো জয়ী হলেন না। ফলে কোয়ালিসন সরকারের মতবাদে হিটলার পল ভনের সহিত সরকারের সাথে আতাত করলেন যেখানে পল ভন হিন্ডেনবার্গ হলেন জার্মানির চ্যান্সেলর।  

কিন্তু হিটলার বসে থাকার লোক নন। তিনি সময় অসময়, ন্যায়-অন্যায় ভাবে, যেভাবেই খুশী অধিস্টিন চ্যান্সেলরকে ভয় ভিতী, অসহযোগ অনেকভাবেই বিব্রত করতে লাগলেন যাতে তিনি বাধ্য হন হিটলারকে চ্যান্সেলর হিসাবে ডিক্লেয়ার করতে।  

পরিশেষে ১৯৩৩ সালের ৩০ শে জানুয়ারিতে পল ভন হিন্ডেনবার্গ বাধ্য হয়ে হিটলারকে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসাবে মেনে নেন।  

তার পরের কাহিনি তো মাত্র শুরু। হিটলার চ্যান্সেল হওয়ার দিন থেকেই তিনি তার "নাজি" দলের বিশাল প্রচার, তাদের দলের আখাংকা, তাদের করনীয় কাজসমুহ, জনসম্মুখে জাহির করতে থাকলেন। জেনারেল গোয়েব্যালস ছিলেন হিটলারের এইসব প্রচারনার মুল হোতা। আর পুরানো যারা পল ভনের সময়ে ক্ষমতায় ছিলেন তারা কিছুটা ভয়ে, কিছুটা আতংকে আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকেন। এইবার হিটলার তার বহুল আখাংকিত কাজ, "ইহুদী নিধন" শুরু করেন। আর তিনি এই কাজটি শুরু করেন ১৯৩৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে যেদিন তিনি ইহুদীদের কে জার্মানিতে "বয়কট" এর নির্দেশ দিলেন।  

তারপরের কাহিনী আমরা অনেকেই জানি।     

ফান্ডামেন্টালিজম

ফান্ডামেন্টালিজম শব্দটি একটি প্রোটেস্টেন টার্ম। এটি "দি ফান্ডামেন্টালসঃ এ টেস্টিমনি টু দি ট্রুথ" নামক ১৯০৯ সালের একটা পাব্লিকেসন থেকে নেওয়া। আর এই টাইটেলটি বিশেষভাবে ইভানজেলিক্যাল প্রোটেস্টাইন ক্রিশ্চিয়ানদের জন্যই প্রযোজ্য। ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালের দিকে যখন বিভিন্ন স্পিরিচুয়াল ধর্মজাযকগন তাদের যোগপোযোগী মনগড়া আধ্যাত্মিক বিশ্বাসসমুহকে বাইবেলের মধ্যে একে একে অন্তর্গত করছিলেন, শুধু তাই নয়, ওই সময়ে ডারউইনের থিউরি, এবং তখনকার আধুনিক বিব্লিক্যাল মতবাদ এবং তারসঙ্গে স্পিরিচুয়াল ধর্মযাজকদের আরোপিত এবং রচিত মতবাদে বাইবেলের নিজস্ব স্বকীয়তা অনেকটাই ম্লান হতে বসেছিলো। তখন ক্রিশ্চিয়ানদের এই অংশটি ওইসব বাইবেলের উপর থেকে সরে এসে একটি গোত্র কিংবা অন্য কথায় সাব-কালচার তৈরি করেন আর এদেরকেই তখন "ফান্ডামেন্টাল" নামে মুল্যায়ন করা হয়। তাদের মতে, বাইবেল একটি পবিত্র গ্রন্থ, ঈশ্বরের বানী, তারমধ্যে কোনো কিছুই যোজন বা বিয়োজন করার অবকাশ নাই এবং এটা ভুল থেকে মুক্ত। 

খোদ আমেরিকার দুইভাই কার্টিস লি এবং মিল্টন স্টুয়ার্ড উভয়ে যৌথভাবে উক্ত ফান্ডামেন্টালিস্ট দলটিকে একত্রিভুত করেন। তাদের প্রথম এবং প্রাইমারী দায়িত্ব ছিলো পবিত্র বাইবেলের স্বকীয়তাকে বিকৃত হওয়া থেকে রক্ষা করা। অতঃপর ১৯৬০ সালে ভেটিকান-২ সম্মেলনে এই ক্রিশ্চিয়ানদেরকে স্থায়ীভাবে "ফান্ডামেন্টালিস্ট" হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই মূল শব্দটি অথবা অন্য কথায় যারা ফান্ডামেন্টালিস্ট, তাঁরা পাঁচটি ব্যসিক বিশ্বাসের উপর দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলো। সেগুলু হচ্ছেঃ (১) The Virgin Birth (2) The Physical Resurrection of Jesus (3) The Infallibility of the Scruptures (4) The Substitutional Atonement (5) The Physical Second Coming of Christ. ফান্ন্ডমেন্টালিস্টরা মনে করেন যে, ধর্মচ্যুত করা বা ধর্মচ্যুত হওয়া অন্যায় এবং তাদের ধর্মের বাইরে অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদ বিশ্বাস করাও অন্যায়। অন্য কথায় এরা গোঁড়া। 

এখন ক্রিশ্চিয়ান ধর্মাবলম্বীদের না হয় আমরা ফান্ডামেন্টালিস্ট নামে অভিহিত করলাম, অন্যধর্মে তাহলে কি এই জাতীয় রক্ষণশীল ধার্মিক গোত্র নাই? তাহলে তাদেরকে কি বলা হয়? তারাও কি "ফান্ডামেন্ডালিস্ট"? যেমন, হিন্দুদের বেলায় বলা হয় "হিন্দুৎভা" বা "হিন্দুইজম"। কিন্তু "হিন্দুৎভা" মতবাদে Hindutva is understood as a way of life or a state of mind and is not to be equated with or understood as religious Hindu fundamentalism তাদের "হিন্দুৎভা"র নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষার জন্য পৃথক কোনো রক্ষণশীল গোত্র সৃষ্টি হয় নাই। তাদের বেলায় যা হচ্ছে তা নিতান্তই ধর্মপালনকে একটা রীতিনীতির মধ্যে সিমাবদ্ধ। যেমন, কেউ যদি হিন্দুত্ব ছেড়ে অন্য কোনো ধর্মকে আলিঙ্গন করতেও চান, তাতে তাদের ধর্মের মধ্যে কোনো বড় ধরনের আইনগত বাধা নাই। কিংবা হিন্দুধর্মের একক কোনো ঈশ্বরও নাই। একেক বিষয়ে তাঁরা একেক জনকে প্রধান ঈশ্বর মেনে থাকেন। অন্যদিকে The importance of Hindu fundamentalism lies in its very contemporary and nationalistic scope, compared to other, more regional expressions 

ইহুদিদের বেলায় ধর্মের নামে এই রক্ষণশীল ফান্ডামেন্টালিজম এর সংজ্ঞা আবার ভিন্ন। ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে, তাদের ধর্মবচন "টানাক" বা ট্রেডিসনালি যাকে আমরা "ওল্ড টেস্টামেন্ট" বলি তার অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা বা শিক্ষাই হচ্ছে মুখ্যবিষয়। অল্প কিছু ইহুদি (যেমন কেরাইটেস গোত্র) যারা তাওরাদ ধর্মগ্রন্থের বানীসমুহ সরাসরি "টানাক" ধর্মবচনের মত অবিকল ব্যাখ্যায় বিশ্বাসী নয়। কেউ কেউ হয়ত ভাবেন যে, অর্থোডক্স বা হাছিডিক ইহুদিরা এক ধরনের ফান্ডামেন্টালিস্ট। তারপরেও তাঁরা ক্রিশ্চিয়ান ফান্ডামেন্টালিস্টদের মতো অতোটা গোঁড়া নয়। তাঁরা মনে করে, তাওরাতে মোট ৬১৩টি ভিন্ন পথের মাধ্যমে ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব বলে পথ বাৎলে দিয়েছে। আবার যারা ইহুদি ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাসী নয় তাঁরাও অন্যপথে ঈশ্বরকে খুজে পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। ওদিকে বৌদ্ধধর্মের মধ্যে ধর্মের চেয়ে জাতিভিত্তিক বা গোত্র বা এলাকাভিত্তিক দলবদ্ধটাই বেশি চোখে পড়ে। তার অর্থ দাড়ায় তাদেরকে ধর্মের পরিপ্রেক্ষিতে ফান্ডামেন্টালিস্ট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা সঠিক কাজ হবে না। এইটুকু আলোচনা থেকে কিন্তু আমরা এই ধারনা পাই যে, শুধুমাত্র ধর্মের পবিত্র গ্রন্থের স্বকীয়তাকে বজায় রাখার জন্যই শুধু ক্রিশ্চিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি পৃথক রক্ষণশীল গোত্র তৈরি হয়েছিলো যারা ফান্ডামেন্টালিস্ট নামে পরিচিত এবং অন্য কোনো ধর্মে এই প্রবনতাটা ছিলো না।  

এবার যদি ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজম সম্পর্কে বলি, তাহলে Fundamentalist Islam is simply the conservative wing of Islam, just as fundamentalist Christianity is the conservative wing of Christianity. এই দুইটি দলই কিছুটা ধার্মিক প্রকৃতির গোঁড়া। ক্রিশ্চিয়ানদের বেলায় যেমন উপরে উল্লেখিত পাঁচটি মূলস্তম্ভ অনুসরন করে, ইসলামের বেলায়ও এই রক্ষণশীল মুসলমানেরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) কে নবী মানেন, তাঁকে অনুসরন করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য প্রতিনিয়ত মসজিদে যাতায়ত করেন, রোজা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি মূলস্তম্ভ হিসাবে অপরিহার্য হিসাবে পালন করেন। কোরআন এবং নবী যা যা করতে বলছেন, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলার রীতিই হচ্ছে মুসলমানদের জন্য সঠিক ধর্মপালন। এই মুসলমান সম্প্রদায়টি তাদের পবিত্রগ্রন্থ আল কোরআন বিকৃতি হওয়ার বা একে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, কিংবা যোজন- বিয়োজন, পরিবর্ধন করার কোনো প্রকার চেষ্টা যেমন কখনো কেউ করার চেষ্টা করেন নাই বা করার প্রয়োজনও মনে করেন না। ব্যসিক মূলমন্ত্র গুলি পালনই হচ্ছে মুসলমানদের জন্য সত্য ধর্মপালনকারী। কেউ স্ট্রিক্টলি পালন করেন আবার কেউ ঢিলেঢালাভাবে। কিন্তু মূলমন্ত্র এক। তাহলে কেউ শুদ্ধভাবে এবং স্ট্রিক্টলি প্রতিনিয়ত মূলস্তম্ভ সমুহের পালনকারী ধার্মিক হলেই কি তাদেরকে ফান্ডামেন্টালিস্ট নামে অভিহিত করা হবে? ব্যাপারটা আসলে কখনোই এই রকম নয়। সঠিকভাবে ইসলামের সব আদব কায়দা পালনকারী মুসলমান কখনো ফান্ডামেন্টালিস্ট নন এবং তিনি গোঁড়াও নন। তাঁরা অন্য কারো ধর্ম নিয়েও বাধা নিষেধ দেন না। কারন খোদ ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতিনিধিকে যথারীতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রকৃত মুসলমান পূর্ববর্তী সব প্রধান ধর্মগ্রন্থসমুহকে না মানলে বরং তিনি সহিহ মুসলমান হিসাবে গন্য হবেন না এটাই ইসলাম শিক্ষা দেয়। তারমানে তাওরাদ, জবুর, ইঞ্জিল, এবং কোরআন সব আল্লাহর পবিত্রগ্রন্থ যা পূর্ববর্তী নবীসমুহের উপর অবতীর্ণ হয়েছে এটা সয়ং কোরআন নিজে সাক্ষী দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওইসব পবিত্র গ্রন্থ গুলি এখন আর অরিজিনাল ভাবে নাই। অনেকাংশেই পরিবর্ধন, পরিবর্তন হয়ে গেছে।  

এখানে একটি সুক্ষ বিষয় মাথায় রাখা দরকার। বিশেষ করে মুসলমানদের বেলায়। প্রতিটি মুসলমান তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন এবং তৎসংলগ্ন পাঁচটি মূলমন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মুলস্তম্ভের মধ্যে কোনো প্রকারের দ্বিধা নাই। তাহলে মুসলমানদের মধ্যেই এতো গোত্রের আবির্ভাব হল কেনো? আর এই গোত্রগুলিই বা কারা? যেহেতু পবিত্র কোরআন একটি বৈজ্ঞানিক এবং আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের জন্য পুরনাংগো জীবন ব্যবস্থা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। (তাহলে প্রশ্ন আস তে পারে যে, পূর্ববর্তী আল্লাহ প্রদত্ত গ্রন্থ গুলি কি কোর আনের মতো মানুষের জন্য পুরনাংগ জীবন ব্যবস্থা ছিলো না? হয়ত ছিলো কিন্তু তা আর আমাদের কাছে অরিজিনাল হিসাবে না থাকায় তার সত্যতা নিরুপন সম্ভব নয়)। ফলে ব্যক্তি জীবনে, সমাজ ব্যবস্থায় তথা রাষ্ট্রীয় বিধি ব্যবস্থায় সর্বত্র এই রিলিজিয়াস আইনসমুহকেই (যাকে আমরা শারিয়াহ আইন বলি) মেনে চলার বিধান বলা হয়েছে, সেকুল্যার আইনকে নয়। আর এই শারিয়াহ আইন সমুহগুলি হচ্ছে ওই সময়ের যা আমাদের নবীজির আমলে বা তাঁর আমলে পালিত হওয়া বিধিমালা অর্থাৎ সালাফি নামে আমরা যা বুঝি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁর মৃত্যুর পর এই সালাফি আইনসমুহই কিছু কিছু রি-ফরম হয়েছে যার কারনে বিভিন্ন গোত্রের বা দলের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাদের সবারই কিন্তু মূলমন্ত্র বা স্তম্ভসমুহ এক। অর্থাৎ এখানে সঠিক কিছু সালাফি আইনের ব্যাখ্যার কারনে বা পার্থক্যের কারনে ব্যক্তি, সমাজ ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রীয় আইন কানুনের বিধি নিষেধের মধ্যে বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি হয়। যেমন, শিয়া, সুন্নি, কাদিয়ানী, ইত্যাদি। কিন্তু তাদের মূলস্তম্ভ ঠিক থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই পরিবর্তনগুলি আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী শুধুমাত্র ইসলামপন্থীদের মধ্যেই সিমাবদ্ধ না, এই ট্রেন্ডস সব ধর্মের মধ্যেই ধীরে ধীরে অন্তরভুক্তি হতে শুরু করে এবং এখানে আরো মজার ব্যাপার হলো, এটা আবার আর শুধুমাত্র ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নাই। প্রতিনিয়তই বিবর্তনের মতো সর্বত্র একটা পরিবর্তন আসতে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্মের স্বকীয়তা রক্ষার নামেই নয়, ধর্মের বাইরে গিয়েও এই পরিবর্তনটা কেনো আসে, সেটা নিয়েও গবেষণা হয়।  

অবশেষে, The American Academy of Arts and Sciences সাড়া পৃথিবী থেকে অধিকস্তর বিশিষ্ট স্কলারদের সমন্নয়ে একটা গবেষণামুলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সেই গবেষণামুলক পরিক্ষায় তাঁরা তথাকথিত ফান্ডামেন্টালিজম এবং ফান্ডামেন্টালিজমের বাইরে পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে যেসব তথ্য পেয়েছেন তাঁর সারমর্মে দেখা যায় যে, উক্ত ফান্ডামেন্টালিজম চিন্তাধারাটি শুধুমাত্র আর ধর্মের গোঁড়ামির উপর স্থায়ী হয়ে রয় নাই। তাদের মতে,  

(১) তাঁরা আধুনিক কালচারকে পছন্দ করেন না। কারন তারা মনে করেন ধর্ম দ্বারা যা পালিত হওয়ার কথা, অথবা যে রীতিনীতিগুলি ধর্মগ্রন্থ থেকে চালিত হওয়ার কথা তা না হয়ে স্যাকুলার কিছু মনগড়া বৈষম্যমুলক আইনের মাধ্যমে চালিত হচ্ছে বিধায় ধর্মের সঠিক কাজটি পালিত হচ্ছে না এবং এইভাবে একদিন ধর্মটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই আশংকা করেন। তার উপর আধুনিক কালচারের সমাজ ব্যবস্থায় তাঁরা মনে করেন যে, একটা বৈষম্যমুলক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন হচ্ছে যেখানে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত, কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নবিত্ত সমাজের মানুষেরা তাদের ন্যায্য মুল্যায়ন, অধিকার, সুযোগ, সুবিধা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

(২) এই মধ্যবিত্ত, কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজের মানুষদের ন্যায্য মুল্যায়ন, অধিকার, সুযোগ, সুবিধা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হওয়ার চিন্তাধারায় রিলিজিয়াস আইডোলোজির পাশাপাশি তখন ব্যক্তিগত এবং কম্যুউনাল আইডেন্টিটিও কাজ করে। এই ব্যক্তিগত এবং কম্যুউনাল সত্ত্বা কাজ করার কারনে পলিটিক্যাল উচ্চাকাখাংকাও জড়িয়ে যায়। আর যখন এই পলিটিক্যাল উচ্চাকাখাংকা বেড়ে যায়, তখন দলভিত্তিক রাজনীতিকিকরনের কাজটি আরম্ভ হয়ে যায়, তখন শুরু হয় বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের অনুপ্রবেশ যেখানে কমন কিছুর মিল থাকতে হয়, যেমন প্রথমে ধর্ম, পরে একই ধর্ম পালনকারী জাতী বা দেশ ইত্যাদি। এইগুলি তখন হয়ে উঠে একটা পারস্পরিক যোগাসুত্রের মাধ্যম কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা বা প্রভাব খাটানোর একটা অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া। আর যখন ক্ষমতা বা প্রভাব খাটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, তখন বিশ্বরাজনীতিতে একটা সক্রিয় ভুমিকা তৈরি হয় যেখানে প্রধান নিয়ামকের দায়িত্ব পালনে অনেক প্রভাবশালী দেশ, দল যুক্ত হয়ে যায়। তখন আর এটা রিলিজিয়াস ফান্ডামেন্টালিস্ট বা ফান্ডামেন্টালিজমের মধ্যে থাকে না। তখন এটা হয়ে যায় আন্তর্জাতিক একটা বহুমাত্রিক পরিকল্পনা। তখন ক্ষেত্রটা ভিন্ন। কিন্তু তাঁর এজেন্ডায় তখনো রিলিজিয়াস লেভাসটা থেকেই যায়। আর এই লেভাসের পিছনে যা থাকে তা হচ্ছে They are ‘reactive’, ‘they are dualist’, ‘they believe in Holy Book’, ‘they are selective’, and ‘they are millennialist’  

বর্তমানে এই ফান্ডামেন্টালিস্ট শব্দটি বহুলঅংশে ব্যবহৃত হয় ধর্মের নামে আধিপত্য বিস্তারের নিমিত্তে গোঁড়া কিছু স্প্লিনটার গ্রুপকে বুঝানোর জন্যই। কখনো এটা ইসলামিক টেরোরিস্ট, কখনো রিলিজিয়াস টেরোরিস্ট, কখনো রিভাইভালিস্ট (যখন বৌদ্ধ, মুসলিম, কিংবা হিন্দু সম্প্রদায়ের বেলায়) ইত্যাদি। কিন্তু পিছনের উদ্দেশ্য একেবারেই আলাদা, আর সেটা নিতান্তই প্রভাব বিস্তার।  

প্রাথমিকভাবে প্রভাবশালী গোষ্ঠীসমুহ যারা উক্ত লেভাসের নাম দিয়ে কিছু ফায়দা লুটে নিতে চেয়েছিলেন, হয়ত তা পেয়েছেনও কিন্তু ইতিমধ্যে এই লেভাসে মোড়া শক্তিশালী টুলসটি অর্থাৎ গোষ্ঠীটি ইতিমধ্যে প্রাপ্ত শিক্ষা আর প্রশিক্ষনের দ্বারা তারাই এখন নিজের নিয়ন্তা হিসাবে এমনভাবে আবির্ভূত হয়েছেন যে, অন্যের জন্য নয় শুধু নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্তা হিসাবে কাজ করছে। এখানে ধর্মটাই এখন আর মুখ্যবিষয় নয়, মুখ্যবিষয় হয়ে দাড়িয়েছে প্রভাব খাটানো এবং আধিপত্য বিস্তারের। এদেরকে আর নিয়ন্ত্রন করবার জন্য অন্য কোনো অপসন পূর্ববর্তী চালকদের হাতে নাই। তাঁরা এখন টেরর। যে নামেই আমরা একে এখন ডাকি না কেনো। ফলে এখন যেটা দাড়িয়েছে তা হচ্ছে, ওয়্যার এগেইনস্ট টেরর।

একটাই পথ এখন ......

ইংরেজদের ব্রেক্সিটের 

আজ ইংরেজদের ব্রেক্সিটের গনভোটের রায়ের উপর ইত্তেফাকে দারুন একটা নিউজ পরে নিজের কাছে খুব পুলকিত মনে হলো যদিও আমার এই পুলকিত হওয়া মানে আনন্দিত নয়। ইত্তেফাকের নিউজটা ছিলো এই রকম, " ব্রিটিশ ভোটারদের আক্ষেপ!" খবরটার কিছু কথা এই রকম, ..."যেঁ সব ব্রিটিশ এই গনভোটে হ্যা ভোট দিয়েছেন, তারা কি মনে করছেন? তারা কি জেনে শুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন? ব্রিটিশরা যারা অনেকেই ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, তারা অনেকেই জানে না কেনো তারা ভোট দিয়েছেন। বরং গনভোটের হ্যা রায়ের বিপরিতে ভবিষ্যতের অর্থনীতিতে যেঁ ঝুকি সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে এখন সব ব্রিটিশ নাগরিকেরা শঙ্কিত"। এদিকে অন্য আরেকটি পত্রিকা এই একই খবর ভিন্ন ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছে। করেছে এইভাবে, " ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার আশা এখনো জিইয়ে রেখেছে ব্রিটেনের জনগন। ঐতিহাসিক এই বিচ্ছেদ আটকাতে এখন দ্বিতীয়বার গন ভোট চাইছে।" ওদিকে পাশাপাশি আরেকটি খবর ছাপা হয়েছে, যেঁ, "ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার ব্যাপারে তুরস্কে গন ভোট হতে পারে।"  

কি আশ্চর্য, একজন ছাড়ার জন্য ভোট দিচ্ছে, আরেকজন যোগ দেওয়ার জন্য ভোট দিচ্ছে। একজন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বুঝেছে যেঁ, তারা ভীষণ ভুল করেছে, এখন আবার ইইউতে থাকার জন্য অনুরধ করছে, আক্ষেপ করছে। এই পরিস্থিতে আমার তর্জমা হচ্ছে, কেউ না কেউ ঐ সব ব্রিটিশদেরকে কোনো না কোনো যুক্তি দেখিয়ে ইইউ ছেড়ে দেওয়াই হবে বেশি লাভ, এই যুক্তি দেখিয়েছিল বা এমন কিছু লোকের পাল্লায় তারা পরেছিল যেঁ, কেউই বুঝে নাই কি করা উচিত আর কি করা উচিত না। দুই পক্ষই ছিল নাদান এবং অপরিপক্ক। এখন যখন বিচ্ছেদের রায় হয়ে গেছে, তখন জিবিনের সব স্বপ্ন, সব আরাম, সব চাহিদার মধ্যে অনেক বেশি গরমিল মনে হচ্ছে বলে নিজেকে নিজেদের অনেক বেশি অপরাধী মনে করছেন। এবং আসলেই তারা অপরাধী। আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনেও আমি এমন কিছু লোকের সম্মুখীন হয়েছি, যারা এক ইঞ্চি দুরের লাভটাই দেখেন, কিন্তু দুরের লসের অংশটা চোখে দেখেন না, বুঝেও না। ফলে এক ইঞ্চি পরিশর লাভ নিয়ে যখন রায় দিয়ে উল্লসিত হয় বা জিতে গেছি বলে পুলকিত হয় আর নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমিয়ে যায়। পরদিন ঘুম থেকে উঠে যখন দেখে তাদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে, সব আরাম ধুলিস্যাত হয়ে গেছে, ঐ দুরের অনেক ক্ষতির আভাস গুলু যখন একে একে উম্মচিত হতে থাকে এবং লসের পরিমান গুলু যখন একের পর এক জমা হতে থাকে, তখন তাদের আত্তা কাপে, ভয় লাগে, সব হিসাব নিকাশ ভুল হয়েছে বলে সারাক্ষন আক্ষেপ করে, তখন যারা এই ধরনের ভুল করতে চায় নাই, তাদের এক প্রকার পুলকিতই হয়। কারন এই ভাবনাটা তারা অনেক আগেই করেছিল কিন্তু বোকার দলেরা বুঝে নাই।     তাই, আগে নিজের ভালোটা বুঝুন। তারপর অন্যের ঘেউ ঘেউ শুনুন। গন্তব্যপথে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি ঘেউ ঘেউ করা প্রানিদের প্রতি ঢিল মারতে থাকা মানে খুব দ্রুত গন্তব্যদিক হারিয়ে ফেলা। ঘেউ ঘেউ প্রানি থাকবে, তাদের ঘেউ ঘেউও থাকবে, মাঝে মাঝে বিরক্ত হবেন, মনে হবে উচিত শিক্ষা দেই। কিন্তু না, গন্তব্য স্থানে না পৌঁছানো অবধি ধৈর্য ধরা অত্যান্ত প্রয়োজন। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার মত লোকের অভাব নাই, কিন্তু ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে টেনে তোলার লোকের অনেক অভাব আছে। বিচ্যুতিতে সবচেয়ে ক্ষতি নিজের। তৈরি করা সাম্রাজ্যে রাজাগিরি করা যতোটা সহজ, নিজে সাম্রাজ্য তৈরি করা ততোটা সহজ নয়। আজ ব্রিটিশরা বুঝে, তাদের দিন এবং রাত দুটুই খারাপ। কোনো এক ব্রিটিশ পূর্ব পুরুষেরা ব্রিটিশকে উচ্চ শিখরে তুলে দিয়ে গিয়েছিল। ঐ সব ব্রিটিশ রা মুসলমানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে তাদের নিজের ফায়দা লুতার জন্য, অপেক্ষা করেছে বেশ কিছুটা সময় যেনো সব কিছু হাতের মধ্যে এসে যায়। এই অপেক্ষার সময়ে ব্রিটিশদের কে জারজ সন্তানের গালিও খেতে হয়েছে। তো কি হয়েছে? তার উদ্দেশ্য তো ছিল এই বিশ্বকে রোল করা। তারা তাই করেছিল। কিন্তু আজ এই যুগের বলদ কিছু আহাম্মক ব্রিটিশরা সেইদিনের পূর্ব পুরুসদের রচিত সাম্রাজ্য বোকার মত সিদ্ধান্ত দিয়ে তার সমাধি করলো। কারন এই যুগের ব্রিটিশরা সাম্রাজ্য গরে তোলে নাই। তাই ধ্বংস ও তাদের মনে আঘাত হানে না। এখন আঘাত হানে এই কস্টে যেঁ, তারা আর আগের মতো আরাম করতে পারবে না, আগের মতো চাকচিক্য পাবে না। এটা হচ্ছে পাপের ফল। 

উত্তরসূরি নির্বাচন

জীবনের সব অধ্যায় এক রকম নয়। এটা আমার হয়ত বুঝতে দেরী হয়েছে কিন্তু এই সব তত্ত্বকথা মনিষীরা যুগে যুগে বলে গেছেন। মনিষীরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক তত্ত্বকথাই বলে গেছেন বটে কিন্তু কেউ সে সব তত্ত্বকথা মানে না। হ্যা, মানে তখন যখন কারো জন্য সেসব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং নিজেদের জন্য প্রযোজ্য হয়। সেই সুবাদেই বলছি যে, আমি আপনি ততোক্ষন সবার কাছে যত্নশীল যতোক্ষন আপনি নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারবেন কিন্তু পাওয়ার আশা না করবেন। আশা করলে আপনি হেরে যাবেন। এটা নিজের স্ত্রী থেকে শুরু করে সন্তান, পাড়াপ্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার বেলায় প্রযোজ্য। কেউ মানুক বা না মানুক, এটাই সত্য।

এর থেকে যে শিক্ষাগুলি নেওয়া দরকার তা হচ্ছে, যা কিছু করবেন জীবনে, নিজের জন্য করুন, নিজে সুখী সময় কাটানোর জন্য আয় করুন এবং তা দুইহাত ভরে খরচ করুন। আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার সন্তানগন কিভাবে চলবে কিংবা তারা কোথায় কিভাবে বাস করবে তা আপনার চিন্তা থাকতে পারে বটে কিন্তু তারজন্য অনেক কিছু আয় করে সঞ্চয় করে তাকে পঙ্গু করে রেখে যাওয়ার কোনো দরকার আমি মনে করি না। বরং তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিন, তাতেই সে এই পৃথিবীর কোনো না কোনো স্থানে ঠাই করে নেবে। এই পৃথিবী পরিশ্রমী মানুষের জন্য সুখের আবাস্থল। অলসদের জন্য এখানে সব কিছুই নাগালের বাইরে। পূর্ববর্তি জেনারেশনের আহরিত সম্পত্তি উত্তরসূরিদের জন্য কিছুটা আরামদায়ক হলেও একটা সময় আসে, কোনো না কোনো উত্তরসুরীর মাধ্যমেই তা বিনাশ হয়। এই বিনাশটা হয়ত এক জেনারেশনের মধ্যে ঘটে না। কারো কারো বেলায় এক জেনারেশনেই শেষ হয়ে যায় আবার কারো কারো বেলায় এটা ক্ষয় হতে কয়েক জেনারেশন পার হয়। কিন্তু ক্ষয় হবেই। এর প্রধান কারন, যিনি সম্পদ করলেন, তার যে দরদ, আর যারা বিনা পরিশ্রমে পেলো তাদের যে দরদ তা কখনোই এক নয়।

আরেকটা কারনে নস্ট হয়। তারা হলেন যাদের বংশ ধরের মধ্যে ছেলে রি-প্রেজেন্টেটিভ নাই। ওইসব লোকের বেলায় তাদের কস্ট করা সম্পত্তি নিজের ছেলে সন্তানের পরিবর্তে চলে যায় অন্য বাড়ির আরেক ছেলের হাতে যিনি সম্পদের মালিকের নিছক মেয়ের স্বামী হবার কারনে। এরা দ্রুত সম্পদ হাত ছাড়া করে কারন তারা একদিকে এটাকে ফাও মনে করে, অন্যদিকে যতো দ্রুত সম্ভব সব সম্পত্তিকে নিজের নামে রুপান্তরিত করতে চান। এই মন্তব্য টা ঢালাও ভাবে করলে অনেক মেয়ের স্বামীরা হয়ত মনে আঘাত পেতে পারেন, কারন সবাই হয়ত এক নয়। তবে অভিজ্ঞতা আর পরীক্ষায় দেখা গেছে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এই রকমটা হয়েছে। তারা স্ত্রী কপালে ধন পাওয়া মনে করেন। তাদের বেলায় বিনাশ হতে সময় লাগে অতি অল্প সময়। এই সব ছেলেদের কাছে কোনো সম্পদ এমন কি স্ত্রীও তাদের কাছে নিরাপদ নয়। 

ফলে যেহেতু আপনি পরিশ্রম করছেন, সুখটা আপনিই করুন। যদি ভাবেন যে, আগে সঞ্চয় করে স্তূপ করি, বাড়ী গাড়ি করি, ব্যাংকে একটা মোটা টাকা সঞ্চয় হোক তাহলে আপনার হাতে একটু সময়ও নেই সকালের সূর্য দেখার অথবা রাতের জ্যোৎস্না দেখার। আপনার ভাগ্যে আছে শুধু বাদরের মতো এইস্থান থেকে অন্যস্থানে লাফিয়ে লাফিয়ে কোথায় ফল পাওয়া যায় তার সন্ধান করা, অথবা পালের বলদের মতো সারাজীবন হাল চাষের মতো চাষির হাল বেয়ে যাওয়া যাতে চাষিই শুধু লাভবান হয়, আর নিজে শুধু জাবর কাটবেন।

এ কথাগুলি কেনো বলছি?

আমার চোখে দেখা এই ছোট্ট জীবনে অনেক ঘটনা। কস্ট করে সম্পত্তি বা এসেট রেখে গেছেন, কিংবা ব্যবসা রেখে গেছেন, জাস্ট তার মরনের পর ওই সব সম্পত্তি কত তাড়াতাড়ি ভাগাভাগি করে নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেয়া যায়, তার জন্য তর সয় না। অথচ ওই সব উত্তরসুরীরা একটিবারও আপনার রুহের মাগফিরাত বা ধর্মীয় কোনো উৎসবের মাধ্যমে একটুও পয়সা খরচ করবে না। তারা ঐ খরচ টাকেও অপচয় মনে করে নিজের জন্ময অ্রআনন্দ করবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারাও সেই একই ফাদে পা দিয়ে তাদের উত্তরসুরীদের জন্যই সঞ্চয় করে জমা করে যান এবং নিজেরা ভোগ করেন না।   

অপ্রিয় সত্যের মুখুমুখি দাঁড়ানো সাহসের প্রয়োজন

কখনো যদি তোমরা দেখো যে, তোমার অপ্রিয় সত্য কথায় কেউ কোনো উত্তর করছে না, কিন্তু তোমার অগোচরে মুখ ভেটকাচ্ছে, তাহলে বুঝবে যে, তোমার আশপাশ চাটুকারে ভরে গেছে। তুমি বিপদের মধ্যে আছো।  এ অবস্থায় তোমার যা করনীয়, তা হচ্ছে, তুমি একা চলার অভ্যাস করো। এই একা চলার মধ্যে যদি কাউকে রাখতে চাও সাথে, তাহলে এমন কিছু মানুষকে রাখো যারা প্রাইমারী স্কুলের দরিদ্র শিক্ষক। তারা নীতি থেকে বিচ্যুত হয় না আর হবেও না। তবে তাও নির্বাচন করার জন্য সময় নিও।

আর কোনো কিছুই যদি মনে হয় ঠিক নাই, তাহলে, নিজেই নিজের জন্য এমন কিছু করে যাও, যাতে তোমার অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ধাতব্য প্রতিষ্ঠান তোমার কাজগুলি তোমার ই আহরিত সম্পদের লভ্যাংশে করতে পারে। পরিচিত মানুষ গুলিই তোমার বিপদের কারন। সব সময় মনে রাখতে চেষ্টা করো যে, বেঈমান অপ্রিচিত লোক থেকে তৈরী হয় না, তারা সব পরিচিত মানুষের দল। 

আমরা ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না, আমরা মানুষের ভিতরের চরিত্রকে সরাসরি আয়নার মতো করে দেখতে পাই না। এমন কি আমরা নিজেরাও নিজেদের অনেক সময় চিনতে পারি না। আর এই কারনেই প্রতিবার আমরা প্রেডিকসন অর্থাৎ একটা স্যামপ্লিং এর উপর ভিত্তি করে বারবার সিদ্ধান্ত নেই। শতভাগ সাফল্য আসবে এর কোনো গ্যারান্টি নেই। আজকে যে বস্তুটি আপনার হাতে আসায় আপনি মনে করছেন, এটাই ঠিক যেটা আপনি চেয়েছেন, বা এটাই আপনি খুজছেন, সেটা সঠিক নাও হতে পারে।  আর যদি সঠিক না হয় তখন সংস্কার বা এজাস্টমেন্ট দরকার হয়ে পড়ে।  কখনো কখনো এই এডজাস্টমেন্ট এতো বড় যে, পুরু পরিকল্পনাটাই বদলাতে হয়। আর যারা এই পরিকল্পনাটা পাল্টানোর হিম্মত রাখেন, বাস্তবতা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার হিম্মত রাখেন, তাদের জন্যই সুন্দর ভবিস্যত। সমাজ তারাই তৈরী করে, সমাজ তাদেরকেই কন্ডারী বলে। এডাপ্টেসন এর মুল থিউরী আসলে তাই। ডাইনোসোর এডাপ্টেসন করতে পারে নাই বলেই সে আজ পৃথিবীতে ইতিহাস কিন্তু তেলাপোকা সর্বত্র সব কিছুতেই এডজাস্ট করতে পারে বলেই এরা বেচে থাকে ৪৬ কোটি বছর। সম্ভবত এই তেলাপোকাই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আয়ুধারী কোনো প্রানী। এরা ওদের বাল-বাচ্চা নিয়ে ওদের মতো করে বেচে থাকে। ভালোই থাকে।

আজকে আমি বা আপনাকে কেউ ভুল বুঝতেছি বলে যে অভিযোগ করে, এটা হয়ত ঠিক এই রকম নয়। হতে পারে এই রকম যে, এখন আমি বা আপনি ভুল বুঝতেছি না, সময়ের ব্যবধানে, স্যামপ্লিং ভুলের কারনে আগেরবার ভুল হয়েছিলো, কিন্তু অন্যান্য স্যামপ্লিং, চারিপাশের অবস্থা, বেশী ফ্যাক্টর সমন্নয়ে আমি বা আপনি বর্তমানটাই ঠিক বুঝতেছেন। ফলে যারা অভিযোগ করছে, তারা ব্যাপারটা মেনে নিচ্ছেন না। আবার এমনো হতে পারে যিনি আমাকে বা আপনাকে "ভুল বুঝতেছি" বলে অভিযোগ করছেন, তার এক্সপেকটেশন অনুযায়ী সেও আমাকে বা আপনাকে আগেরবার ঠিক বুঝেছেন কিন্তু এখন তার এক্সপেক্টেসনের সাথে ক্যাল্কুলেসনে তারতম্যের কারনে আমরা বা আপ্নারা বদলে গেছি বা বদলে গেছেন এই চিন্তায় আমরা ভুল বুঝতেছি বলেই তাদের ডিডাক্সন তৈরী হচ্ছে।

কিন্তু যেটাই হোক, কে ভুল আর কে ঠিক, এই তর্ক, এই যুক্তি, এই ব্যাখ্যা করার সময় মানুষের হাতে খুব বেশি থাকে না। একটা সাব জেক্ট নিয়ে এতো গবেষণা করতে থাকলে, বাকী সাবজেক্ট এর জন্য তো সময় ই দেওয়া যাবে না। জীবনে সময় বড় সীমিত। হয় এডজাস্টমেন্ট করে বেচে যাবেন, নয় খপ্পর থেকে বেড়িয়ে যাবেন। দ্বিধার কোনো কারন থাকলে সবার প্রতিভা যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি ক্ষতি হবে বিকাশের।

ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তে ভুল হলে যখনই মনে হবে এখনই সময় সিদ্ধান্ত পাল্টে জীবন সুন্দর করার, তাহলে "এখনি" সেটা। শুধু একটা জিনিষ মনে রাখা দরকার, ঈশ্বর সব ভুলের মধ্যে বড় সাফল্যের ফলাফল নির্ধারণ করেন। তিনি কারো সাথে মস্করা করেন না। তাঁর উপর ভরসা রাখুন। জয় আপনার। এটা দু পক্ষের জন্যই উপদেশ কারন, যার যার গন্ডি থেকে তাঁর তাঁর জন্য ঈশ্বর তাদের সীমানা নির্ধারণ করেন। কেউ কারো সীমানা অতিক্রম করলেই এই বিপত্তি হবে। নদীর জলের মধ্যেও ঈশ্বর তাদের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মিঠা পানি এবং নোনা পানিও তাদের সীমা অতিক্রম করে একে অপরের সাথে মিশার অনুমতি ঈশ্বর দেন নাই।

শেষ বিদায়

আজকে সেই দিন যেদিন সবাই আমার কারনেই সবাই একত্রে মিলিত হয়েছে। মিলিত হয়েছে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে। কিন্তু এখন আমি সম্পূর্ণ স্থবির আর শান্ত। বাড়িঘর সব ভড়ে গেছে একের পর এক চেনা জানা এবং অচেনা অনেক লোকের ভীড়ে। উজ্জ্বল দিবালয়ে, অথবা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে অশান্ত হৃদয়ে কেহ কেহ লাল নীল জামা পড়ে মাথায় টুপি পড়ে, কেহ আবার হাতে তসবিহ নিয়ে মুখে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে হাহুতাশ করছে, কেউ চোখের জলে বুক ভাসিয়ে জ্ঞান হারাচ্ছে, কেউ আবার মনে মনে যার যার মিশ্র অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। কেহ কেহ আমাকে কোথায় দাফন করবে, কে বা কারা সে দাফনের নিমিত্তে কোথায় আমার কবরখানা রচিত হবে এই ব্যস্ততায় এদিক সেদিক ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। কেউ আমাকে পেয়ে হারালো, আবার কেউ আমাকে না পেয়েই হারালো। কেউ কেউ আবার অধিকার নিয়ে মনে মনে ছক কষে অশান্ত রুপ ধরিয়া বিলাপ করবে, কেউ আবার অধিকার পুনরুদ্ধার হবে এই আশঙ্কায় প্রহর গুনবে। কারো জন্য আমার এই প্রস্থান হবে মর্মান্তিক আবার কারো জন্য হবে অতীব সুখের।

এদিনে সমস্ত সিডিউল মোতাবেক সব ঠিক থাকলেও আমার জন্য আর কেউ অপেক্ষা করবে না। প্রতিদিনের ব্যস্ততার ক্যালেন্ডারটি আর আগের মতো সরব হয়ে উঠবে না। ঘরির কাটায় কমবেশি হলেও তাতে কিছুই যাবে আসবে না আজ আমার, আজ আমার কোনো কিছুতেই তাড়াহুড়াও থাকবে না। সারাবিশ্ব যেইভাবে চলতেছিলো ঠিক আগের মতোই এ জগতের সব কিছুই চলবে। এক মুহূর্তের জন্যও দিনের সময়কাল পরিবর্তিত হবে না, না চাঁদ তার উদিত হবার বা ডুবে যাবার কোনো ব্যতিক্রমী নিদর্শন প্রকাশ করবে। না নদীর জোয়ার ভাটার কোনো দিক বা গতি পরিবর্তন হবে। না সুর্য এক সেকেন্ড পরে বা আগে উত্থিত হবে। পাখিরা সময় মতোই নিজের নীড় হতে খাদ্যানেসে বের হয়ে যাবে, রাখালগন তাদের গরূ বাছুর নিয়ে ভাটিয়ালী গান গাইতে গাইতে কোনো এক মেঠো পথে হারিয়ে যাবে। এমনটিই তো হয়ে এসছে বরাবর প্রতিটি মানুষের জীবন সায়াহ্নে।

যে সম্পদ আমি আমার সারাজীবন ধরে আহরন করেছি, যা প্রতিনিয়ত রক্ষা করবার জন্য চারিপাশে সতর্ক দ্রিস্টি দিয়া পাহাড়া দিয়াছি, তা ওইদিন অন্য কারো হাতে চলে যাবে। সেটা নিয়ে বা কে নিলো, কেনো নিলো এই নিয়ে আমার কোনো কিছুই করবার থাকবে না। আমাকে যারা কখনোই ভালোবাসে নাই, যারা আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্টে দেখার পায়তারা করত, তাদের উদ্ধত চাহনী কিংবা দ্রিস্টিভঙ্গি আমাকে আর কোনোভাবেই আজ আহত করবে না। না আমি তাদের প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপ করবো। যে তর্কে জিতবার জন্য আমি খন্ড খন্ড যুক্তি প্রকাশ করে আত্মতৃপ্ত হয়ে হাসিমুখে চারিদিকে বীরের মতো চলমান থাকতাম, সেই তর্ক এখন আর আমার কোনো কিছুই আনন্দ দান করবে না। আমার প্রতিদিনের জরুরি মেইল কিংবা টেক্সট ম্যাসেজের প্রতি আমার আর কোনো তাড়াহুড়া থাকবে না। যাদের বিরুদ্ধে আমার কতইনা রিগ্রেটে ছিলো, জিদ ছিলো, প্রতিশোধের আগুনে যা আমি বহুকাল নিদ্রাবিহিন রাত কাটিয়ে দিয়েছি, সেটার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে না, না আমার মনের মধ্যে এইসবের কোন প্রভাব ফেলবে।

আমার শরীর খারাপ হয়ে যাবে, আমার ওজন বেড়ে যাবে এই ভেবে আমার রোজকার দিনের খাদ্যাভ্যাসে কোন পরিবর্তন কিংবা আমার সাদা চুলে কালো করবার বাসনা এসব কিছুর আর কোনো প্রয়োজন হবে না, না এসব আমাকে আর বিচলিত করবে। আমার ব্যবসা, আমার সম্মান, আমার প্রতিপত্তি যার জন্য আমি প্রতিনিয়ত ভাবিয়া ভাবিয়া, নিদ্রাবিহিন কষ্ট করেছি, কিংবা কিভাবে কি করলে আমার সব কলেবর বৃদ্ধি হবে ইত্যাদির জন্য প্রানপন চেষ্টায় লিপ্ত ছিলাম, সেই ব্যবসা, সম্মান কিংবা প্রতিপত্তি আজ হতে রহিত হয়ে তা অন্যের হাত ধরেই চলতে থাকবে। ছোট কিংবা বড় যতো বড়ই অনুশোচনা হোক না কেনো, ক্লান্তি কিংবা কষ্ট যাই হোক না কেন, তাহা আজ আর কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করবে না। না আমাকে আর রাত জাগাইয়া তা নিয়া ভাববার কোন অবকাশ দিবে। জীবনের রহস্যময়তা, কিংবা মৃত্যুর উদাসিনতা যা আমার মন বহুবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে, তা আজ এক নিমিষের মধ্যেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে। জীবন কি, মৃত্যু কি, জিবনের পরে মৃত্যুর কি গন্তব্য যা নিয়া আমি বহুবার তর্কে লিপ্ত হয়েছিলাম, যুক্তি খুজেছিলাম, আজ সব কিছুর সঠিক তথ্য আমার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে। ঈশ্বর কি, ঈশ্বর আদৌ আছেন কিনা, ধর্ম কি, এ জগত কি, কিসের উপর এই বিশ্ব ভ্রমান্ড দাঁড়িয়ে আছে, কি তার রহস্য, কি তার পরিচালক, আমার জীবনের মুল কি উদ্দেশ্য ছিলো যার জন্য এই প্রিথিবীতে আসা, আজ সব কিছু আমার কাছে দিনের আলোর মতো ফকফকা হয়ে যাবে।

আমার অনেক অসমাপ্ত কাজ যা করবার জন্য আমি জল্পনাকল্পনা পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, তা আজ সব কিছুর ইতি টানিয়া আমাকে নিয়ে যাবে কোনো এক সুদুর অজানা একস্থানে যা আমি এর আগে একবারের জন্যও বিচরন করি নাই।

আজ এই শান্ত শরীরে আমার চারিপাশের সবাইকে যেনো অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করতেছে কিন্তু আমার শ্বাস রুদ্ধ হয়েছে, আমার কণ্ঠনালি রুদ্ধ হয়ে গেছে, আমার বাহু, আমার পা, আমার চোখ, আমার যাবতীয় ক্ষমতা আজ রহিত হয়ে একটি ছোট খাটিয়ায় আমি এমন করে পংগু বোবা হয়ে শুয়ে আছি যা অবশ্যই হবে বলে আমি একদা জানতাম কিন্তু ইহা যে আজই তা আমি কখনো মনে মনে কিংবা শারীরিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। অথচ আমার এই দিনের জন্য একবারের মতোও কি প্রস্তুতু নেয়া দরকার ছিল না? বা আমার কি কি করনীয় ছিলো সেই ব্যাপারে আমি কখনোই নিজেকে তৈরী করি নাই কেনো? যে সব সম্পত্তি, যশ, সম্পদ অথবা লোভ যাই বলি না কেনো, সেইসব  কারনে আজকের দিনের কোনো প্রুস্তুতি  আমার নেয়া হয় নাই, অথচ এইসব সম্পত্তি কিংবা সম্পদের বিনিময়েও আজ আমি এই পরিস্থিতি হইতে মুক্ত হতে পারছি না, পারবোও না।

যে ঘরটিতে একচ্ছত্র আমার অধিকার ছিলো, যার প্রতিটি কোনায় কোনায় আমার হাতের স্পর্শ, আমার পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছিলো, তার থেকে আজ আমাকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। যে স্থানটিতে দাঁড়িয়ে আমি জুতা মাড়িয়ে, সিগারেট ফুকে পায়ে দলিয়া পিছনে ফেলে ফেলকনি খাটে বসে আরাম করে বসতাম, আজ সেই ফেলকনি খাট আমার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে ওই জুতা মাড়ানো স্থানটিই আমার জন্য বরাদ্ধ হয়ে রয়েছে। আমি আমার নামটিও আজ হারিয়ে ফেলেছি। আমাকে আর কেহই আমার সেই প্রিয় নামটি ধরে, কিংবা আমার ছোট মেয়ের অতি আদরের ডাকটি ধরে আমাকে গলা জড়িয়ে সম্বোধন করবে না। আমি নিতান্তই একটি লাশের নামে পরিচিত হয়ে এই উজ্জ্বল নীলাকাশ সমৃদ্ধ প্রিথিবী হতে সবার আড়ালে চলে যাবো।

অফিসে যাবার প্রাক্কালে যে সুন্দরী বউটি বারবার জিজ্ঞাসা করত কখন আবার বাসায় ফিরবো, কিংবা আজ অফিস হতে ফিরতে দেরী হবে কিনা, অথবা বিদেশে যাত্রাকালে মেয়েদের এই আবদার, ওই আব্দারের লিস্ট সম্বলিত দাবীনামার মতো আজ আর কেহই আমাকে কিছুই জিজ্ঞেসা করবে না, কখন আবার বাসায় ফিরে আসবো, কিংবা কেহ আমার সাথে যাবার জন্যও বায়না ধরবে না। ইহা এমন এক যাত্রা যেথায় কেহই কাহারো সাথী হতে ইচ্ছুক নহে।

যারা আমাকে অনেক ভালোবেসেছে, আর যারা আমাকে ঘৃণা করেছে, তাদের উভয় পক্ষই আজ আমার এই শেষ যাত্রায় হয়ত শামিল হয়ে যার যার ভাবনায় লিপ্ত থাকবেন। পাড়া প্রতিবেশিরা অনেকেই বিলাপ করে, কেউ আবার ফিস ফিস করে কত অজানা তথ্য নিজ থেকে মনগড়া কাহিনী বলে আত্মতৃপ্তি পাবেন, যার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আমার আর থাকবে না। অনেক মনগড়া কাহিনী সুর আর তাল হয়ে বাতাসের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে আবার অনেক বীর বাহাদুরের মতো অনেক কল্পকাহিনীও তার সাথে মুখে মুখে প্রচারিত হবে, হয়ত তার কোনোটাই আমার প্রাপ্য নয়। মজার ব্যাপার হলো যে, দিনের আলো অন্যান্য দিনের মতোই সঠিক নিয়মে তার সিডিউল চলতে থাকবে, পাখিরা সন্ধ্যায় যার যার নীড়ে ফিরে আসবে, পথিক তার নিজ গন্তব্যে সঠিক সময়েই ঘরে ফিরে যাবে, শুধু আমার বেলায় আর কোনো কিছুই আগের মতো চলবে না। এক সময় সবাই আমাকে কাধে করে, ঈশ্বরের নাম জপতে জপতে কোনো একস্থানে মাটির তলে পুতে এসে চা চক্রে লিপ্ত হবেন। এক সময় রাত ঘনিয়ে আসবে, চাঁদ উঠবে, হয়ত বৃষ্টিও হতে পারে। আমি বৃষ্টির পানিতে গলিয়া যাওয়া মাটির সাথে মিশিয়া একাকার হয়ে যাবো। তখন হয়ত কেউ টিভির সামনে বসে কোনো এক আনন্দঘন সিরিয়াল দেখতে দেখতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়বেন। আর আমি একা অন্ধকার একটি মাটির গর্তে সারা জীবিনের জন্য ঘুমিয়ে থাকবো। সময়ের আবর্তে এক সময় আমি যে ছিলাম এই পৃথিবীতে সেটা সবার মন এবং মস্তিস্ক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। এটাই যদি হয় জীবন, তাহলে কিসের নেশায় আমি এতো মসগুল? সব কিছুই ভুল এই পৃথিবীর। একাই এসেছি, একা যাওয়ার জন্যই এসেছি। মাঝে যাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে, তারাও একাই এবং তারা আমার মতোই একদিন ভুলের ইতিহাসে বিলীন হয়ে যাবেন।  

আমি জানি আমি তোমাদেরকে আর কিছুই বলতে পারব না। যদি ইহাই হয়ে থাকে, তাহলে আজ আমার জীবনের শেষ বার্তাটুকু তোমাদের বলে যাই, আর ক্ষমা প্রার্থনা করি যে, যদি কারো মনে, অন্তরে, শরীরে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, স্বার্থের কারনে বা বিনা স্বার্থে আমার অগোচরে কোনদিন আঘাত করে থাকি, যদি আমার দ্বারা এমন কোনো কাজ হয়ে থাকে যা উচিত ছিলো না, যা অধিকার খর্ব হয়েছে বলে মনে হয়, কিংবা আমার দ্বারা জুলুম হয়েছে বলে মনে মনে অনেক অভিশাপ দিয়াছেন, আমাকে সবাই খাস হৃদয়ে অনুশোচনাপূর্বক ক্ষমা করে দিবেন। আমিও আপনাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। আমি আমার দায়িত্ত কতটুকু পালন করতে পেরেছি,, সেই বিশ্লেষণ আমার উত্তরসুরী, আমার পরিবার, আমার সমাজের উপর। আমার পরিবার, আমার সমাজ আমাকে কতটুকু দিয়াছিলো সেই বিশ্লেষণ আমার কাছে আর নাই তবে আমি আপনাদের সহিত ভালো একটা সময় কাটিয়ে গেলাম এটাই আমার জন্য অনেক ছিলো। 

যুগে যুগে এই প্রিথিবীতে আমার মতো সব উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, রাজা বাদশা, হুজুর কামেল কিংবা দস্যু সবাই খালি হাতেই কেউ ভালবাসায় সিক্ত হয়ে কেউ আবার করুনার জল নিয়েই এই অসীম নীলাকাশ, গভীর সমুদ্র কিংবা পাহারের ঘন শ্যামল সুন্দর ছবি বুকেই নিয়া একাই সব ছেড়ে চলে গেছেন। এই শ্যামল ভালোবাসা, সম্পদ, সম্মান, কিংবা যশের জন্য কোনো রাজা, সম্রাট কিংবা শাসক কখনোই আর ফিরে আসে নাই। আমিও আর তোমাদের এই সমাজে ফিরবো না। তবে জায়গাটা ছেড়ে যেতে আজ আমার বড্ড মায়া আর কষ্ট হচ্ছে। ভালো থেকো তোমরা।

এটা কি শুধুই কলম বন্ধু?

WAS IT ONLY A PEN FRIENDSHIP?

Mandy and Ali had been sitting face to face without any talk for a quite long time as if both of them are thinking something very deeply about themselves connecting together. They might be calculating something. What they are thinking? They may think so many things, days, or many moments, or so many stories...

Mindy broke the silence.

-How is your conjugal life passing Ali! It might be very enjoyable, romantic and very emotional! It has to be. Carla also used to tell me like that and she was very much greedy for it.

-What Carla used to tell more? Ali wanted to know very reluctantly, as if he knows everything what Carla used to think but it will be very interesting to know from someone other than Carla. Ali had been looking to Mindy with a far eye. He has gone back to somewhere beyond Mandy's visual distance.

-Whose picture is this, Habib?

-My younger brother. Very nice a boy.

-What does he do now?

-Just going to school like you go.

-Can I write to him?

- You may try, Habib replied back.

And I am writing you now Ali.

This was her first introduction in her first letter. Ali was recollecting his memories. He took a big breath. He was only class nine then. An unbounded life, listening none and doing whatever wishes. Whenever getting time, trying to play in the field. Replying to Carla's letter was not a big issue, Ali thought. He dropped it aside. But next day when Ali was standing in the House line, enjoying the beauty of the nature, got second letter. This time it seemed to be a very weightfull one. Might have been full of photographs. And it was.

Ali, after his lunch, opened the letter and found variety types of photographs. Carla wrote, she was counting the days when she would be getting his reply. Ali looked at the pictures for quite long time one after another. Ali was very considerated. But to tell you frankly no pictures could wave him. Ali was not impressed. She was not looking that pretty. May be his choice was more higher than what she was. Ali kept all the pictures under his mattress and tried to sleep. But Carla was some kind of special character who did not lay herself in the mass believed concept of society. Rather had been waiting to choose someone as a personal choice. She kept on writing to Ali till reply reached to her. She was not sure about anything. So why to be puzzled unnecessarily.  Ali got the third letter. It was a very interesting one!

-Don't you get my letters Ali? She wrote. If you get, please write me even informing you won't write.

Ali, this time, became a little bit serious. Ali decided to write that he would be very busy and would not be able to write her.

When he was preparing to write like this. He got the next letter. Ali now could not track the number of the letters. She wrote a very interesting story.

She had a cousin named John. He was disturbing her a lot, telling that he loved her. But she did not like the proposal. Everyday she was been criticized by her schoolmates except Mindy. Carla did not hide anything from Mindy. Mindy used to know all about Carla and her stories. Others used to criticize because everybody used to go out with their girlfriends and boyfriends. But Carla did not go. She used to wait for the reply of her letters. Yesterday John had stolen her fifty-dollar from her bag. She felt bad but again got pleasure thinking it happened because she loved Ali.

Ali deeply was thinking about the matter. Should it be told through his bother, Habib that he was not thinking about Carla? Nothing he could decide nor could stand on his decision. He could not write that he would be busy and could not write to her.

Ali mailed a new letter expressing, he was very happy receiving her letter.

Ali thought let he continued for some time and one-day when opportunity would come he would just write it. It is not the right time to say No, then she would get very big hurt.

Carla's next letter surprised Ali more. Everyday and everyday Ali was getting letters. Some day he was getting more than one letter. America became local place for Ali. At least in the case of mail. She wrote -

She read his reply more than sixty times. She could tell the contents of the letter as it was without opening. She expressed her feelings very boldly that she knew reply would come. Her belief could not be wrong. She was created for only Ali and so on...

 Ali felt more sympathy for Carla. What would he reply to her! Would he tell that he would not continue or he should respond? Both of the options were dangerous. Ali, thinking about Carla's determination, could not say No.

Ali replied,

He was also waiting for her letter. In addition to give her feelings, Ali wrote he was interested to know about her habits, liking disliking, boyfriends, etc.

It continued for long time. Ali was then in class twelve. Going out from the college very soon. Ali's all higher secondary examinations were over and their batch was given farewell from the college. Ali came back from the college campus to their village house directly. Everyone he met enroute gave him the message about his elder brother, Habib, who recently came back from America after six years. He was surprised that only Ali did not know anything about his elder brother's return from America. Habib was Ali's elder brother who was doing Ph.D. in USA. Carla's father was in the same university where Habib was doing this research works. With this connection Habib and Carla's family had easy go in each other's house. One day Carla came to Habib's apartment and

saw Ali's picture. That very day Carla asked Habib the first question-Whose picture was this?

Ali reached to his house in the afternoon. The day was about to set to the west. All his sisters and other relatives were giving a shining look and smiling face. Every body was happy on Habib's arrival. Today they have filled up their joy after Ali's arrival. It became then hundred percent presence of all family members. But Ali noticed some abnormalities amongst his relatives. It seemed everyone was hiding some interesting news from Ali. What was the story? Ali questioned himself. Ali could not find out the hidden story.

Ali met his brother at night when he returned home from outside. It was a very happy moment. Very less they could talk. They were extremely happy. There was no language between them. After a long time they could meet together. When Ali was in grade seven, Habib left the country. Ali now passed higher secondary examination. It was time for him to go for the university now. Quite a long time. Both of them had long talk. Habib narrated lot of story about America, its beauty and the cultures of the society. Sometimes Ali had been asking few questions. Sometimes he had been laughing like a small boy hearing his brother's experiences.  They woke upto midnight. Before finally going back to sleep, Habib told Ali that he had left something very expensive at Dhaka Teachers' Students Center (TSC). Next day early in the morning Ali should see once how it was without anybody's supervision. Ali should take the key and check it before the sun rose.

Ali got up from the bed early in the morning and started for Dhaka, TSC. When Ali reached at Dhaka, there were none in the street. A very few birds and crows were found around. There was hardly anyone walking in the main street. It seemed everyone was still sleeping. A few old guys having heart problem and needed short walk, only these kinds of people were found mostly. And its numbers were also very few. There were some young boys found passing by who wanted to be a professional foot baller going for practice in the far field. One-day his dream might come true. Ali found some smart girls too walking with very ugly looking guys. May be she needed some money for herself. She gave a company to the man at night. The earth does not give always a good look at all the morning.

Ali entered inside TSC and turned left. He had something to check in room number six. Ali brought out the key handed over by his elder brother, Habib. He tried to open the door of number sixth room.

But what is this! The key could open the room but it seemed someone was inside it. How it was possible? The room was locked from outside and someone was inside! He might

be doing mistake. He again locked the door and checked for the next door, seven then five. But that key could open none of the doors. Ali this time opened the sixth number room and started pushing inside. Very politely but anxiously asked whether anyone was inside the room or not. A lady voice replied back.

-Please hold for a minute dear, I am coming.

Ali was waiting with quick heartbeats. He was hearing the sound of her footsteps inside and opening sound of the first door.  The lady opened the last door too.

Ali was not only surprised but it deemed that he was falling on the ground. What was he seeing in front of him? Why Habib did not tell him anything about her! Was it preplanned to surprise him? He was guessing things quickly and story became very clear what everybody was hiding from him!

Carla was shouting with top of her voice.

-Oh Jesus! At last you have come! I was just waiting for you whole night!

Ali could not say anything. First reason Ali was not at all prepared to see Carla. And second reason, Ali was not fluent in English, as Carla was being American. Carla did not know Bengali. Ali kept standing for few moments. Carla again shouted and held Ali's hand. Pulling him inside the room.

Carla was putting on sleeping gown. Very transparent. Did Carla decided  that deliberately? Ali set down in the chair. He was feeling very shy. With very poor English Ali informed Carla that he was not good at English. He only could catch slow speedy conversation. Carla understood him very closely. Carla smiled very nicely and looked at Ali.

- I am very sorry dear. I was extremely happy when I have seen you. Carla replied.

She pulled another chair and set in front of Ali. Keeping her two hands in her chicks, she just keep on looking at Ali.

-What a beautiful morning today, is not it Ali?

How are you, Carla? Ali inquired. Giving no reply to Carla's question.

Carla leaned against Ali thighs. Her beautiful white body was emanating beautiful light, her breasts were visible partially but it was not looking ugly.

-I don't know how I am now, but there is none who is more happier than me at this moment. Carla whispered.

Ali touched Carla. Carla was whipping and her eyes were full of tears.

Carla was not looking like those pictures he saw in the photographs. She was much better looking and beautiful. Carla was exactly like what Ali was thinking for. Ali kissed her head and hairs. Both of them became normal.  The language of love is not either

Bengali or English. It is something beyond the sound. There was very little tension, anxiety and unknowingness  amongst them.

-What you ate last night Carla? Asked Ali..

-Just nothing but mango. Habib stored some dry food for me and some seasonal fruits.

-What you like to have in breakfast? Ali asked.

-You would be coming early in the morning and Habib told you would be deciding what we should take in lunch and dinner. I think you have also not eaten anything in the morning! Carla inquired him and got up to bring some grapes.

Ali was looking at Carla. Ali seemed to be very happy to get Carla. He really loved Carla Dorain Wilson.   They had lots of talk. They talked about love, exchanged lots of feeling for each other. Carla stayed here for next twenty-two days.

During this long stay, both of them had been visiting many places. People also became very surprised and inquisitive to see both of us together. One Bengali boy was roaming around with one white girl holding the hands together. Naturally it was a rare scenario.

There was a study excursion arranged from her school. It was scheduled for Australia. But Carla gave the option for Bangladesh. Habib was coming back to Bangladesh to meet his family and in the same time he would be looking for getting married. Carla wanted to join Habib to visit Bangladesh to meet Ali during her study excursion. Habib did not inform this message to Ali at all to make a big surprise for him, his younger brother. Ali was really surprised.

The first night's story was very romantic.

 Whole day Ali was waiting for his brother, if he comes. But he did not turn up. It was evening. Ali was thinking time and again  that there was only one bed in the room. All the items given in the room were for single man. If he goes back at night, how she will be staying here alone? Will she allow Ali to go back leaving her? If she does not allow, than where he will be sleeping? Moreover, Ali was not interested to leave the company of Carla.

Even though Ali informed Carla that he would be right back in the next morning.

Carla looked at him astonishingly and said-

-What are you talking? You will be going back tonight? No baby, we will stay here together. Don't you know that I had been waiting since long!

-But there is no bed for two men. Ali said.

-Nothing worries! We will be sharing it together. Otherwise we will be sharing our lives together for whole life! Carla was very determined. She hugged Ali warmly.

None could sleep that night. Carla could not sleep because the day-night system in Bangladesh was absolutely reverse than that of America. Night in Bangladesh is the day

for America. It was a problem for Carla. But Ali could not sleep because Carla was awaking. Whole night passed without sleep. But Ali was not feeling any tiredness at all too. They shared one pillow together, shared one bed cover together, and what else they shared? They shared their life, they made a basement of the building, two men dream. A single dream which was dreamt together.

-It was very nice night I had ever in my life. Ali thought.

Was it called wedding night? They did not had any sex, did not had any violation anytime. But every time Ali thinks now, seemed to him that it was a wedding night for him.

-Several times we hugged together, I felt her warm hearts, beautiful breasts. But never ever I felt it to be touched. It was very pious relation, sacred love. Ali was thinking.

Next early in the morning, they both entered into the wet room, washed their hands and mouths though it was not necessary. Carla was laughing and telling Ali,

-How beautiful people you are!

-Why? Ali asked.

-It can not be thought that an American adult boy stayed night with an adult American girl and there was no sex between them. I can feel very much safe in the hands of man

like you people. I did not do the mistake Ali! I always wanted someone who will love me and care me. Only physical sex should not be the basis of love. Love should be such so that even when I will be an old lady having hundred years' ages, still my husband will love me as he used to do from the beginning. Carla stated.

- Can I kiss you on your forehead Ali? Carla asked Ali through the mirror.

Ali extended his hand towards Carla and hugged her. Both of them were looking through the mirror. A beautiful pair submerging together.

Carla was very depressed for last few days. Everyday it passed everyday she used to tell- she does not want to go back to America. She would not feel comfortable in USA. Ali used to give her consolation only that one-day they would meet together forever. But Ali knew there could nothing be more attractive consolation than that of saying, please do not go and stay with me.  Ali was also not feeling comfortable as the days had been passing very fast.

Night before her departure, both could not sleep for a single moment. All Ali's relatives intentionally did not disturbed them. Most probably they also had wanted Ali to make permanent friendship with Carla. Besides they had tremendous trust on him about his dealings with Carla. But Ali could not keep his trust to them.

-Why should I deprive my lady from her rights? Is religion the main bondage between two human being? I did not believe. Ali was questioning himself.

-We were lying together. Carla kept her head on my chest and kept mum. I hold her head and brought more close to my eyes. She was crying. Her eyes were shining with tears. The lights helped her tears to be more pathetic. I kissed Carla, my beloved lady. I don't want to leave you, I want you to stay here, I want to share my everything with you. No secret no religion no law is bigger than the love. He held her tightly.

Ali peeled off her gown. God created woman with special attention. Ali imagined. The creation was not simple. The art of the body of the woman is not geometric rather it is artistic. The eyes tells about love, the nose, the lips, the breast all that a woman has tell the music of immortal love. Ali touched her breast with his wild lips. Carla holds Ali's head with her two beautiful hands tempting his hairs.

Ali lied over Carla.

Carla was just breaking with my kisses, with my movements and my every touch. Her tip of the nipple was very hard. Her eyes were closed, mouth was shut but making the noise of the image of love. Her legs were moving apart from each other.

Did we talk anything then? I can not remember what was the subject we discussed. Was it love? Was it anything like science or literature? We had been crossing the ocean of love, may be interchanging the waves of new generation. I opened my two eyes. I saw my Carla's full nude body. How beautiful breast a lady can possess? Is it more beautiful than that of Carla? How beautiful a design of figure God can create? Was it more flawless? I do not have any idea. I have seen only Carla. Carla was the best.

After a long time, Carla got up and sat down nude. Ali marked himself, was he greedy for her sex anytime?  Ali thought.

After that visit, Carla used to be more aggressive on expressing love. Ali understood it by her last letters. Ali also became more aggressive. In every moment they remember each other.

Carla was mentally preparing to leave America and settle down with Ali. She was doing some small job. She added all the salary and one day bought an air ticket for Bangladesh. She wrote one letter too to mail Ali informing about her plan. She kept all these in her table and forgot to hide from other members of the family. Her father saw these two things. He was terribly shocked and equally sad. He took away her passport including the air ticket. Father charged her for doing so. She was warned by her father not to think like that anymore. If she does so she will be sent to the hostel at her own cost.

Carla agreed to the last proposal. She left the house. Her mother was also not favoring her. She was driving the car. It was a very foggy and snowing day. Carla thought she

should immediately inform Ali what she did. She requested her brother, Roy, to mail the letter that she wrote before.

Roy went to the post box and Carla was waiting in the car on. All on a sudden, a big lorry hit the car from the back. Carla with her car went out of the road. Both of them had a fall of fifty feet with number of summersaults. Carla lost her senses, got number of injuries, she was almost dead. Roy and others took her in the hospital.

-Is Carla dying, doctor? Daisy, Carla's mother, asked doctor.

-We are not yet sure about her condition but it is critical no doubt. Doctor replied.

After few hours, Carla could say something but not readable.  Out of all talks, she could only tell twice "Ali". The doctors were not also very much confident what was to be done.  Neither they could find out the meaning of this word "Ali".

Carla's mother thinking nothing but ultimately made a phone call to Ali in Bangladesh.

- Ali, can you come to USA right now? Carla got accident and she is in comma. She wants to see you. She is only uttering your name. Please arrange to come as quickly as possible. I promise you, I will honor Carla, if she survive this time.

Ali could not say anything. Because Ali knows that he can not afford to go to USA right now because of lots of factors. Money was the acute problem for Ali now. Moreover his office will not permit him to go to USA for this reason. What a nation.  One man is taking farewell forever but the law does not permit other to see her. Ali took breath deeply.

Carla died after nine days. In between this she did not wake for a single time. How can she talk? She was busy with me here. No body knew. I gave her my last minutes. She uttered number of times-

-I wanted an Indian husband. I got it but I could not enjoy it. If I could enjoy it I could tell you how beautiful these Indian husband! You will have full freedom of power in the family. You may have different views but husband will not deprive you from love. They will never say, go out of my house.

Ali, after eighteen days, received the letter written by Carla, mailed by Roy. In that she wrote,

She will be coming to me in the next summer. I should be prepared myself for receiving her in the airport. She will be putting on red skirt matching with blue magenta color headgear. She will have a very beautiful rose in her hand.  She will mind if I do not kiss her in open mass. So what this is not in our Bengali tradition but I have to do it for her.  I had visited numbers of time the airport. But I never found this combination with anyone. Ali loved Carla so much. Ali promised if anytime he meets Carla, he would hug Carla in mass and had a kiss in public. No matter who thinks what. There is lot of time the earth has rotated the full rotations. Every time summer came but Carla did not come.

Today Ali has come to USA for a visit. Since the year Carla died in 1981 and today, there is seventeen years gap. Everything might have changed. Ali could not differentiate. If Carla would remain beside him, he could ask Carla about it. Ali does not get any attraction in USA because Ali knows without Carla in USA it will have no meaning.

Ali made a phone call to Mindy. His brother Habib gave Ali the phone number of Mindy's house.  Mindy was very happy.

Today, the X-MAS day we all family members always want to meet together. I considered Carla was my family member. You are that man to whom my one of the best friend used to love so much, should I not invite you in my house! Mindy stated to Ali.

Ali taking a long breath replied Mindy.

-Mindy.

-Continue. Mindy replied.

-How many days a man can wait? Ali questioned Mindy.

- As long as someone can pull on alone? Mindy replied, you did not do wrong by getting married someone. If I would be in your position I would do the similar action too.

-I might get marry someone but I did not forget Carla at all .My lady Arundhuty is just like Carla. What I wanted from Carla, I am now getting it from Arundhuty too. Everyday I remember Carla by loving Arundhuty. Ali answered back very nicely to Mindy.

Mindy was also sitting the same way Carla used to sit in the table.

Mindy stated, Carla and Arundhuty both of them are lucky. I had also same mentality like Carla. I also wanted an Indian husband. Look if I would had an Indian husband, he would not leave me like this! We might have temporary emotions but not permanent separation.

Ali felt Mindy very deeply. Mindy is alone. She wants love. But what he can do for her? Mindy does not know that everybody may be Indian but everybody is not Ali. There is a big difference between these two.

After one-month stay, when Ali was leaving USA, Mindy requested Ali to stay at her residence. Mindy directly ensured Ali, she knows the customs of Bangladesh. Ali kept her request and went to her house. Mindy dressed her with Shari and blouse, sat in front of the mirror.

She said,

-Can I give you a kiss on your forehead, Ali?

Ali told nothing.

Logan airport. A big gathering of people. Everybody was busy either for clearing his or her goods or saying good-byes to his or her beloved man. Ali was boarding the plane. It was early in very morning. Mindy came upto the last place from where we can see together. I took my seat and looking at Mindy. Mindy kept on looking till the plane took off in the sky. Ali left USA forever. Mindy was kept on looking in the sky till the plane became very blurred. Her eyes might be full of tears. Johan, her only son five years old, pulled her hand and might inquire,

-Mom, will uncle come back soon!

Mindy could not reply back to Johan. She just holds him in her lap and hugged very tightly. Mindy did not wan to cry but her eyes could not control the wave of the tears.

 What Ali could do? Ali could do three things. What Ali did, he did the right thing. Or he could take her in Bangladesh along with him. Or Ali could stay back in USA with Mindy. But what would be for Carla and Arundhuty?

The plane was above fifty thousand feet in the sky. The sky was full of white cloud, there are many passengers trying to sleep and Ali was kept on looking towards white clouds outside. So many things Ali was passing by but many of them were not visible to him. Some were not correctly identified. Ali might be thinking about Carla, Arundhuty and Mindy together.

There are so many things happened in this earth. Many of them remain untold, hidden and unseen. Very few lucky or unlucky people might meet them en-route but hardly anyone cares them. Those who cares they don’t get it’s head or tail nor the start or end. Even some one runs agter the blind zone but God is always mysterious and keeps some mystery always hidden to open. Only God knows what is the mystery lied here. Ali saw the old passenger, a man of seventy years old, sitting beside him sleeping like a small baby.

বোদার গল্প

আলমাসের উপর দায়িত্ব পড়েছে বোদার

১৯৯১-৯২ সাল।

আলমাসের উপর দায়িত্ব পড়েছে বোদার। আলমাস সহজ সরল ছেলে। এখনো মুছ-দারি ভালমত গজায় নাই, তাঁর উপর ব্যাচলর। কোন কিছুই করার নাই, বোদার কাজ আলমাসের। আলমাস প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফৌজ সামন্ত, গাড়ি সব কিছু নিয়া আলমাস রেডি হচ্ছে বোদার কাজে।

গরম মৌসুম, চারিদিকে গরম হাওয়া। বোদায় নাকি বাতাস কম, যাও আছে তাও আবার যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন নাই, একবার যদি কেউ বোদার বাতাস নাকে নেয়, তাঁর নাক নাকি বাতাসের আর অন্য কোন গন্ধ বুঝে না।

আলমাস বোদাটা দেখল, এর একটা ম্যাপও একে ফেলল। জায়গায় জায়গায় গর্ত, কোন জায়গা দিয়ে কি করা যায়, সারারাত আলমাস ঐ বোদাকে নিয়াই থাকল। সব জায়গা দিয়ে সব কিছু নিয়া ঢোকা যাবে না বলে আলমাস বোদার কোথাও কোথাও টিপে টিপে, কখন বা পায়ে চাপ দিয়ে দিয়ে পরিক্ষা করে দেখে নিল বোদার কোন জায়গাটা শক্ত আর কোন জায়গাটা নরম। নরম জায়গায় সৈনিকদেরকে যেতে নিষেধ করে দিলেন আলমাস সাহেব। নরম জায়গায় কাজ করার আগে আলমাস সাহেবকে আগে থেকেই জানাতে হবে বলে আলমাস তাঁর সুবেদারকে বলে দিলেন।

আলমাসের ওসি হচ্ছেন মেজর ইকবাল সাহেব। নিতান্তই ভদ্রলোক। তিনি বিবাহিত। তাঁর একজন মেয়ে আছে। ওনি সব সময় মুচকি মুচকি হাসেন। কথা কম বলেন, কিন্তু আলমাসের সঙ্গে খুব খাতির। আলমাস ওসি সাহেবকে নতুন বোদা দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। ওসি সাহেব এর আগেও বোদা দেখেছেন কিন্তু বোদা দেখা আর বোদা সার্ভে করা এক জিনিষ নয়। তাই ওসি সাহেব নতুন উদ্যমে বোদা সার্ভের কাজ আলমাস কেমন করে করবে তাঁর পরিকল্পনা দেখার জন্য তিনিও বোদায় এলেন।

ওনি যখন বোদায় পা রাখলেন, তখন ভরদুপুর। বোদার বাতাস খুব গরম, খরখরা বোদার আশপাশ। জঙ্গল খুব একটা নাই, মনে হয় কে বা কারা যেন বোদাকে একেবারে ক্লিন শেভের মত পরিস্কার করে রেখেছে। মাঝে মাঝে দু একটা খালের মত আঁকাবাঁকা শুকনা কিছু দেখা যায় কিন্তু বহুদিন কেউ ওখানে পানি দেয় নাই বলে মরা জঙ্গলগুলু হলদে বা তামাটে রঙ ধারন করে আছে। ঐ হলদে বা তামাটে জায়গায় বসলে পাছার চামড়ায় চুলকানি লাগে।

ওসি সাহেব আলমাসকে নিয়ে বোদার চারিদিক দেখলেন। আলমাসের আকা বোদার ম্যাপে ওসি সাহেব তাঁর নিজের মত করে লাল ওএইচপি মার্কার দিয়ে আরও কিছু একেঝুকে দিলেন। বোদা নিমিষেই লাল হয়ে গেল। আর অনেক কাটাকুটিতে বোদার ওরিজিনাল চেহারা পালটে কি যেন হয়ে গেল।

যাক, সন্ধ্যে হয়ে গেল। আলমাস আর ওসি সাহেব বাংলোয় ফিরে এলেন। বোদার বাইরের বাতাস আর বোদার বাংলোর বাতাসে অনেক তফাত। বাংলোর ভিতরে বোদা অনেক ঠাণ্ডা, বেশ গোছালো, আবার বেশ পরিস্কার। অনেক নামি দামি লোকেরা এই বোদা দেখতে আসে। আলমাস আর তাঁর ওসি নামিদামি মানুসের মধ্যেও একজন, তাই বোদার এডিসি সাহেব এই দুইজনকে বোদার সবচেয়ে সুন্দর স্থানে জায়গা দিয়ে বললেন, “স্যার, বোদা দেখতে হলে এই জায়াগায় থাকেন। এখানে বোদার আসল মজা পাবেন। বোদার এখানকার পানি মিস্টি কারন পাশে চিনির কল আছে, বোদার বাতাস এখানে খুব সুইট কারন ডিসি সাহেব এইখানে বোদার এস্পেসাল সুগন্ধি গাছ লাগিয়েছেন। নাক পরিস্কার হয়ে যাবে বোদার গন্ধে। এখানে একটা ফল আছে যার নাম একেবারে ভিন্ন। নামটা হচ্ছে “কন্যাকুমারি”। আসলে বোদার পুরান নাম কিন্তু এই “কন্যা কুমারি”। তাঁর মানে হচ্ছে “কন্যাকুমারী” বোদার ফল। একবার বোদার ফল খেলে আপনার জিহবা বার বার বোদার ফল খেতে মন চাইবে। ইচ্ছে করলে আপনি কিছু বোদার ফল সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন, বন্ধুবান্ধব্দের দেবেন। তারাও বোদাকে মনে রাখবে। বোদা আমার বড় প্রিয় স্যার।” এই বলে এডিসি সাহেব আলমাস আর ওর ওসিকে বোদার খাস জায়গায় রাত কাটানোর জন্য রেখে গেলেন।

ওসি সাহেব আলমাসকে জিজ্ঞেস করলেন, আলমাস , বোদা তোমার কেমন লাগে? আলমাস সহজ সরল ভাবে উত্তর দেয়, স্যার বোদা আমার কাছে ভাল লাগে। ওসি সাহেব, মুচকি মুচকি হাসেন। ওসি সাহেব খুব মজার লোক। আবারও আলমাস কে জিজ্ঞেস করেন, বোদার কোন জায়গাটা তোমার খুব পছন্দ? আলমাস নিতান্তই সহজ সরল ছেলে, উত্তর আসে, স্যার বোদার সব জায়গায় পানি পাওয়া যায় না, যেখানে একটু ভিজা ভিজা থাকে ঐ জায়গায় আমার থাকতে ভাল লাগে, শরির ঠাণ্ডা হয়, মনভরে যায়। ওসি সাহেব, আবার মুচকি মুচকি হাসেন।

ওসি সাহেব কয়েকদিন বোদার আনন্দ শেষ করে তিনি ফিরে যান তাঁর নিজের কর্মস্থলে। আর এদিকে আলমাস প্রতিদিন বোদার প্রতিটি স্থানে পায়ে পায়ে চলে, কখন স্পিড বেশী থাকে আবার কখন একেবারে থিতিয়ে যায়। যেদিন আলমাস বোদার ফলটা বেশী খায়, সেদিন আলমাসের স্পিড ভাল থাকে। আলমাস দিনের পর দিন বোদায় থাকে। আলমাস বড় ভাল লোক। ও কখন বোদার ক্ষতি করে নাই। বোদা আলমাসকে আজিবন মনে রাখবে।

আলমাসের ঐতিহাসিক ভাষণ

যে কয়টি ভাষণ পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে আছে, যেমন, আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিসবারগের স্পিচ, কিংবা মুজিবের ৭ই মার্চ এর ভাষণ কিংবা ঐ কালো লোকটির “আই হেভ এ ড্রিম” ইত্যাদি। আলমাসের এই ভাষণটাও বিখ্যাত হয়ে থাকতে পারত কিন্তু এটা মিডিয়ার পাল্লায় পড়ে নাই বিধায় জগতজুরে আলমাসের এই বিখ্যাত ভাষণটি আর বিখ্যাত হয়ে উঠে নাই। তবে আমার ধারনা, অন্তত টাচ ১৩ ফোরামে এই ভাষণটি বিখ্যাত হয়ে থাকবে। অনেকেই আলমাসের সেই বিখ্যাত ভাষণটি শুনে নাই কিন্তু আমি সরাসরি ঐ ভাষণ যখন ইতিহাস সৃষ্টি করছিল আমি সেখানে ছিলাম। আমি তোমাদের জন্য আলমাসের সে ভাষণটির অনুলিপি তোমাদের জ্ঞ্যাতারথে জানাব।

তারিখঃ
লিঙ্গপুর স্কুল

উপস্থিত সুধিজন, ভাই, বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীগন, আসসালামুয়ালাইকুম।

আপনারা জানেন যে, আমি প্রায় গত ছয় মাস যাবত আপনাদের বোদা নিয়া একাগ্র চিত্তে কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি কিভাবে আপনাদের বোদার উন্নতি করা যায়। আমার বলতে দ্বিধা নাই আজ যে, আমি যেদিন প্রথম আপনাদের বোদাকে দেখি, তা ছিল সত্যি এক নোংরা, অপরিস্কার এবং দুরগন্ধময় এক বোদা। আপনাদের এই বোদার কোন ডিসিপ্লিন ছিল না, না এর রুপে, না এর গুনে। তারপরেও আমি দমে যাইনি। আমি আমার এই টিমকে নিয়ে রাত দিন আপনাদের বোদাকে নিয়া কাজ করার চেষ্টা করেছি।

আজ আপনারা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন, কি সুন্দর হয়েছে আপানাদের এই বোদার চেহারা। বোদার সব কিছু এখন পরিস্কার, কোথাও পানি জমে নাই, আর যেখানে পানি থাকার কথা সেখানেই পানি আছে, অহেতুক এর চারিধারে স্যাঁতস্যাঁত হয়ে থাকে না। বোদার এবড়ো থেবড়ো স্থানগুলো আমার সোনার ছেলেরা নিজের হাতে সেগুলো ঠিক করে দিয়েছে। বোদার যত ময়লা আবর্জনা ছিল, তা আমরা নিজ হাতে পরিস্কার করে দিয়েছি।
আমরা আজ চলে যাচ্ছি। এখন দাতিত্ত আপনাদের। আপনাদের বোদা আপনারা পরিস্কার রাখবেন। বোদার যে কোন জায়গায় থুথু ফেলবেন না। বোদার যত্ন নিবেন। ভবিষ্যতে এই বোদা থেকে অনেক সোনার ছেলেরা বের হবে, এদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার জন্যই বোদার যত্ন নেওয়া একান্ত কর্তব্য। বোদার যাকে তাকে বোদার ব্যাপারে মাথা ঘামাতে দেবেন না। বোদার ক্ষতি হয় এমন অনেক লোক আছে। যাকে তাকে বোদায় ঢোকাবেন না। বিশেষ করে রাতে বোদার ব্যাপারে আরও অধিক সতর্ক থাকবেন। প্রয়োজন হলে বোদার প্রবেশ পথে লাঠি রাখবেন যেন প্রয়োজনে লাঠি ব্যবহার করতে পারেন।

ভাইসব, আপনাদের বোদার কথা আমার মনে থাকবে। আজ আমি যে বোদা রেখে যাচ্ছি, আশা করি, আমার পরবর্তী বংশধররা যদি কখন এই বোদা দেখতে আসে, আমি যেন বলতে পারি, বোদা বড় সুন্দর।

মায়ের কাছে মেয়ের চিঠি

Dear Mom

Mama, in this strange world, I met multifarious categories and different types of people with different characteristics altogether. Many of the people seem to be similar and behave similarly. Their starts and endings look alike. Someone begins with charismatic start and ends with volatile situation; someone starts with confused situation and ends with futile consequences. That’s my experiences Mama in so far with such a little age to leave away in the past.

With my little experience, I don’t clearly understand a person instantly what he wants and what he runs ultimately for. But at times what my sixth sense tells me that many of the eyes speak distinct to its hunger ness and covetousness with lustful desire, many of those hearts don’t even speak anything but express many things in one look, and many souls are really so strong enough to be judged all over the time passed along with. Many factors get visible at times, the social amenities, social customs, human bondages, and others. Out of these what I understood one very distinct feature is the social amenities, which is only the clad of the these so called society but their dialects, customs and practices look alike to unholy ness, dirty, vile and despicable.  But Mama, there happens so many things in our area that cannot be even defined with the existing definitions also. I will tell you such an unveiling situation today and I need your guidance in literal voice.

Mama, I met a person, still unidentified, recently here in my world. She came all on a sudden from an unknown world and disarrayed my gardens, my thinking, and my pattern of behaviors that I settled it down with all my concentrations. Now it seems, I am influenced, I am affected seriously, and confused too in the order of the day.  She comes to me when I am alone, she appears to me when I am distressed, and she speaks to me with the same language the way I understand the ideas to be discussed. She exactly speaks the way you nourished me when I was a child, she looks very known person to me and it seems to me that I saw her somewhere sometimes. But Mama it frightens me also and it moved me from the point of impact. It always hunts me like a professional gun-man. Can you tell me Mama, what she wants from me, or who is she and what she looks from me? I don’t know it what is her demand and how to tackle her. This is the first instance that I am encountering a person like her. I am confused to look at her eyes, I am confused to look at her mortifications, and I am undone to her envious weal. She seems sometimes looking like a usual people around me, sometimes I find her some how different, a different person who has no agitations, has no demand but maximum time I feel I am judging her wrong. Her eyes do not speak vile, her eyes don’t show aggressiveness, and her eyes seem to be very cold indeed Mama. Can you tell me Mama, is there any place where people do not have any cohabitations, has no enamours? Is there anywhere humankind who do not exchange for his efforts? If there was none, then what this person wants to get from me? She might be the most venereal one whom people should worship her and have confident with devotion or she might be one of the most evil creatures that I never encountered before. But I don’t want to be surprised another time. If I would know things certainly what is in her, she could be one of the most ecstatically joyful event in your son’s life or I could make a decision to reject with violent forces and finish her forever. Your prayer for your son’s longevity would be successful but I am in a state of wearied, tired and exhausted stage Mama. I cannot take a chance at this time of my full moon night. The judgment I made against her in one moment proves to be a mistake in the next time and I again start afresh. But every time I am lost in the state of confusion.

Mama: she shows me the way of going alone in a serious turning points, she insists me to take an adventure along the road of the Caucasus mountain that I never travel, she wants me to experience a life with deity and humanity together. But how it can be possible Mama? How a person can be a God and a human in the same time? I cannot pull things alone anymore. My silence punishes me, my ignorance beats me up there, my affection takes me somewhere I can’t return it back again. What I should do Mama? It seems to me an ordeal test and I cannot be free from angularity anytime because it creates a dilemma between true and false, right and wrong all the time.  Someone must not be hurt without any reason, someone should not be rejected without any good cause and someone should not be punished for another person’s prediction too.

Mama, she tells the story that you told me once, he delineates the path that I wanted to follow, she exactly tells me to do things what nobody told me before that I cherished in my life, she creates an environment that I wanted to preserve in my memory but every time I am afraid because I don’t know how she came to know all these ? I don’t know how to honor her nether I know how to leave her. My past haunts me to take revenge for all those souls that went without any reason, I want to go alone and take the adventure of taking the risk of either victory or defeat alone, none and none to share it. I know that none will be able to agree with such a condition of leaving this beautiful world so early in a n encounter. Mama, you know those entire stories and you apprised me such feelings of those events mama.

Mama, This strange lady dements me in the moment of my leisure time, she intoxicates me when I am alone and she enrages me when I am with your heart totally. She seems to be a wild wind that excited me when I had calm and quite nights, she overwhelmed me in a critical position to decide either to leave or to be with her as one of the member of a family. But is it too easy to get a family member like you and me? A family has a different definition and identity Mama! It is not that I agree and it goes. Hi my mama, I know vilification and animadversion is a sin in my religion but don’t you think we all do so many vilifications all the time against a person who in fact doesn’t deserve such? How a person like this, should be treated Mom? Mama, you never told me a subject, called decision at confusion, which people suffer from indecision and confusion in the same time and in the same area. This lady is confusion in my life. I don’t understand her, I don’t understand the consequences of the events and I don’t know the conclusion of this relationship Mama. He is not navigable and seems a new appearance and revelation in my life. No body showed me the path of the light, no body told me about the consequences of the life and no body told me about my strength and weaknesses that I posses. She told me once. I want to discover her Mama. But how? In what way? In which capacity?

I know, this particular person might disappear when I would come to know that she was the right woman to whom I needed, I know the time will not wait for me and the deity will go away from me when I will be needing her much. She seems to be  an angle or a devil in both cases. Sometimes you need devil also in your life in different situation to be more experience and be stronger at the moment of the break-even-point. It seems, she loves me like a small boy at times with all apology, she loves me like an unbounded wild man whom she wants to sacrifice things on behalf of me and he respects me the way you taught me to respect a person. But I don’t know the result of such confidence on this unknown lady came from a different planet. Is she a human, a devil, a ghost, or a goddess!  She is a total confusion at the moment Mama.

Right at this moment, the logical fallacy seems to be un-ruled in my mind, a holy bed of logic seems to be undetermined in my life, a holy thread slung over the shoulder may be unnoticed within me but I am not atheistical Mama, thus the heavenly dome seems to be under a throb greatly, the sudden bustle of the heart looks like stopping in the middle of it‘s palpitation and trepidations.  I have no instruments to devise a plan to dismiss her unnecessarily, to in-contrive her illogically and finish her in stray.  Mama, will you tell me the ways that saves me from this ignorance?  You know your Babu and his mind in terms of spick and span. I need someone to guide me in the right directions and ways to follow, Mama. It has become a twisting, revered, and twirled circumstance in my world. I need your suggestions and advices. I am utterly harried into a motionless life. Let me not be a subject to the prey of the legacy of unsoundness, let me not be a subject to be referred as a culprit to be known by the people around me, and, Mama, let me not be the only person to be blamed who refused the deity that came alone the line of a humankind from the God as usual to your Babu’s life.

I tried to explain the strange lady within the religion also. The strange person seems to have no similar religion that I believe, but Mama, can you tell me what is called religion? A religion to her is a scuffle fight and has no effect on human bondage at all. But to me my religion is having a great influence over the total human life. The answers that I was looking for and rom a long time in my previous religion, I was unable to delve out, but here what I received is something untold and authentic. What your religion says about Beautification of woman body, Laws regarding menstruation, false menstruation, the laws But to me my religion is having a great influence over the total human life. The answers that I was looking for and from a long time in my previous religion, I was unable to delve out, but here what I received is something untold and authentic. What your religion says about Beautification of woman body, Laws regarding menstruation, false menstruation, the laws pertaining to woman’s dress and hejab, laws pertaining to marriage and divorce, and many laws pertaining to protect nobility and chastity of woman etc and many other questions I was looking for. Even the incident of birth of Jesus, what not!!!!  Now the most important things came into the barrier of my decision: RELIGION. Sometimes I want to feel, a dead man has no religion. But we are not dead. Don’t you believe that one? Mama, the insolence of Glory and the divinity is alone defined by people but not the God. God is for every body. No matter how he practices it. If some one has profound love and conjurors to God, HE understands the mind of his creatures. He or she does not need to explain the modalities of her actions to Him. He is not a fool and HE commands the whole universe without any difficulties.  HE commands my strange lady also. But at the end of all logics, still certain rituality has to be graved and performed in person. Those are not similar to us. My religion strictly prohibits me to go forward but allows with a condition to convert her too. It is not an impossibility but unwise unless it happens within own self. Then what would be the mixing factor into next generation Mama? So confusing at this moment mama. I am getting sick of the reality everyday…..

The strange lady calls me sometimes her family, sometimes as a glaring minion; sometimes she breaks to me like a small girl as if to her mother. Sometimes she hits me and hits very harder. I can return the hit but I can’t. Why I can’t? I have no relationship with her yet. Even though I keep silent. Because she cares me always. I noticed, my silence again makes her desperate. She seems to be a crazy person altogether. Mama, I always wanted to avoid such person but I am unable to avoid her. I am breaking every moment and everywhere. I am breaking faster than she breaks to me. But I am not putting them in public. When I find her in pensive, it pails me out, it strikes my heart. I cannot say to her. Neither I can accept her too. In which category I will carry her Mama. She is not my sister, she is not my mother, she is not my wife, nor she is my girl friend in truest sense of a girl friend. She is just a stranger, and I know I will miss her soon.  I have nothing to present her except my memory, except my loneliness and sadness………….The stranger will remain as stranger to me whole life I think, Mama. Because we have so much of barrier in religion, culture, environments, social and attitudes. A candle-blaze is needed when we require them but a blaze into a hut is not accepted by any one. One blaze facilitates our life and another takes our life. I am the second category may be mama. I will burn it always but alone…..

প্রিয় মা,

যতোক্ষন এই পৃথিবীতে মানুষ সবার মাঝে থাকে, ততোক্ষন তারা মনে করে সবাই হয়তো তাদের পাশেই আছে।  কিন্তু যখন কেউ কোনো সমস্যায় পড়ে, তখন যাদেরকে মানুষ কাছের মানুষ হিসাবে এতোদিন ভেবেছিলো, তাদের যখন কেউ পাশে থাকে না, তখন আসলেই প্রিথিকে বড় একাই মনে করে। এই ভাবনাটা যখন সত্যি প্রমানিত হয়, তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়, চেনা মানুষগুলির মুখ তখন এতোটাই অচেনা মনে হয়, নিজের কাছে তখন অসহায় ভাবা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তখন সবচেয়ে যাদের কথা বেশী মনে পড়ে তারা হচ্ছেন বাবা আর মা। কিন্তু তোমার সেই দুইজনের মধ্যেও তোমার একজন নাই, আর সেতা হচ্ছে বাবা। যার জীবনের একটি হাত সারা জীবনের জন্য ভাংগা, সে দুই হাতের কাজ এক হাত দিয়ে কখনোই সম্পন্ন করতে পারবে না, এতাই বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতার সাথে তাল মিলাতে গেলে এক হাতের শক্তি নিয়ে যেভাবে জীবনের পরিকল্পনা করা উচিত তার পলিসি একেবারেই ভিন্ন। কারো একটা হাত নাই, এই অযুহাতে এই সমাজ কাউকে আলাদা সুযোগ দেয় না। ফলে যতো মায়া আর যতো পরিচিত মুখই তাদের আশেপাশে থাকুক না কেনো, তারা সব সময় অসহায়ই ছিলো এবং থাকে।

এই অদ্ভুদ বিশ্বে আমি অনেক মানুষের সাক্ষাত পেয়েছি, কখনো অদ্ভুদ সুন্দরের কিন্তু নোংরা মনের, কখনো নোংরা চেহারার কিন্তু অদ্ভুদ সুন্দর মনের, আবার কখনো এমন কিছু লোকের যাদের আমি চিনবার আগেই অচেনা হয়ে গেছে। সব মানুষের চেহারা এক না হলেও তারা দেখতে কেমন যেনো একই রকমের। ঈশ্বর তাদের এমন করে বানিয়েছেন, যাদের প্রত্যেকেরই আছে দুটু করে কান, দুটু করে চোখ আর অন্য সব যা দৃশমান। কিন্তু একটা জায়গায় ঈশ্বর কোনো কিছুই দৃশ্যমান করে দেন নাই যা থাকে বুকের পাজরের ভিতর, সত্তার আড়ালে যার নাম অন্তর। আর এই অন্তরের এক অসাধারন ক্ষমতায় কেউ কেউ এমন কিছু চাকচিক্য আর বর্নচোরার মতো রুপক কিছু সুর নিয়ে খেলা করে যা কিনা শুনতে ভালো লাগে বটে, নেশাও ধরায় তবে ধীরে ধীরে প্রাননাশের কারনও হয়ে দাড়ায় যার নাম হয়তো ভালোলাগা বা ভালোবাসা। কেউ এই ভালোলাগা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার কথা বলে, আবার কেউ ভালোবাসার কথা বলে দূরে দাঁড়িয়ে ভালোলাগার কথা বলে। আমি মাঝে মাঝেই বিভ্রান্ত হয়ে এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে ছুটে যাই, কোনটার নাম ভালোলাগা আর কোনটার নাম ভালবাসা মা? আমি ভাসতে থাকি কখনো মেঘের ভেলায়, কখনো ঝরের তান্ডবে। আমার এই ছোট্ট জীবনের ছোট্ট বয়সে আমি মাঝে মাঝে বুঝতে পারিনা, কে কি চায়? কার কি অভাব? কোথায় তাদের দুঃখ আর কোথায় তাদের সুখ? তবে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঠিকই ইংগিত দেয়, কোথায় ঝোপ ঝাড়ের মতো হায়েনারা বসে আছে, আর কোথায় কোন কাপুরূশ তার নিজের বীরত্তকে প্রকাশ করার নব নব রুপে সজ্জিত হচ্ছে। সব কিছুই মাঝে মাঝে ভ্রম মনে হয়।

মা, আমার একজন অচেনা মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। আমি তার কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না, আমি তার চাহনীর ভাষা বুঝি না। আমি তার পৃথিবীকে চিনি না। কিন্তু হটাত করে আমার সাজানো বাগান যেনো সে অগোছালো করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি নিঃশ্বাসে, মাঝে মাঝে আমার প্রতিটি বিশ্বাসেও । আমি বুঝে উঠতে পারছি না, আমি কি হেটে এগিয়ে যাব, নাকি দৌড়ে পালিয়ে যাবো, কিন্তু আমার শরীর আর মন একই দিকে ছুটছে না এটাই শুধু আমি বুঝতে পারি। মন যদি এগোয়, শরীর পিছোয়, আবার শরিড় যখন এগোয়, মন পিছিয়ে যায়। 

মা, সে আমার কাছে চুপি চুপি আসে, যখন আমি একা থাকি, চোখ বুঝলেই যেনো আমি তাকে দেখতে পাই কিন্তু যখনই চোখ খুলে তাকে স্পর্শ করতে যাই, সেই নীলিমার নীল আকাশের মতো হটাত আমার আকাশ মেঘলা হয়ে যায়। আমি তার ভাষা বুঝতে পারি না। কখনো কখনো মনে হয় আমার বুকে ব্যথা, আবার কখনো কখন মনে হয় সেই অচেনা মানুষটাই আমার বুকের ব্যথার কারন।

মাঝে মাঝে সে ঠিক আমার কথাগুলিই যেনো বলে যায়, আবার কখন কখন মনে হয় আমার সাথে তার যেনো কোথাও কোন মিল নাই। আমার কষ্টের সময়ে সে মাঝে মাঝে ঠিক আমার সামনে এসে হাজির হয়, মনে হয় যেনো সে আমার কথা শোনার জন্যই যেন বসে আছে। আমার দু চোখ বেয়ে যখন জল পড়ে, সে যেন আমার এই চোখের জল মুছতেই হাজির হয়। আবার কখনো কখনো এমন হয়, সে যেন আমাকে কিছুই বুঝে না। আমি যেনো তার কাছে এতই দূর্ভেদ্য যে, কোনো ভাষাই যেন বোধ গম্য নয়। মা, কে সে?

আমি জানি এখন আর আমি কিশোরী নই। আমি এটাও জানি যে, কিশোর বয়সে বা টিন এজের প্রেম হলো একটা মোহ অথবা একটা ইনফেচুয়েশন। অগ্নিকে সাক্ষী রেখে সাত পাকের মুল্য অনেক সময় এইসব টিন এজারদের কাছে কোনো মুল্য থাকে না যখন তারা বাল্য প্রেমের মোহ থেকে মুক্তি না পায়। তারা মনে করে শুধু সাত পাকেই বিয়া হয় না, আসল বিয়ে হয় মনে মনে। এই মোহের শেষ পরিনতি হয় চিতা। কিন্তু আগুনে পূরে যাওয়া লাশের সাথে সেই চিতায় প্রেম পুড়ে ছারখার হয় না। কোনো না কোনোভাবে সেই প্রেমের আগুনের রেশ তার ফেলে যাওয়া পরিবারকে প্রতিদিন দংশন করতেই থাকে। “লাভার বেঞ্চ” বা “লাভার পার্ক” বলতে আসলে কিছু নাই। যেটা বাস্তব সেটা হচ্ছে বেচে থাকা। মা, আমি সেই প্রেমের মতো কথা বলছি না। আমি এটাও জানি, সত্যিকারের ভালোবাসার অনেকগুলি রুপ হয়। আমি সেই রুপ গুলির সাথে পরিচিত নই কিন্তু মন যা বলে সেটা তো আমার অন্তরও বলে। আমি আমার হৃদয়ের কথা শোনার আগে আমার বিবেকের কথাও শোনার চেষ্টা করছি কিন্তু আমি আজ একা এতোটাই কনফিউজড যে, কোনটা রেখে কোনটা ফেলবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। কখনো এফেয়ার্সকে মনে হয় ভালোবাসা। কিন্তু এফেয়ার্সের একটা বীভৎস রুপও থাকে যা শেষ হয় শারীরিক মিলনে। ভালোবাসায় কি তাইই হয়? আমি জীবনকে একই রেলের উপর রাখতে চাই না যা জীবন আর মরনের উপর একই সাথে চলে। আমি মরনকে খুব ভয় পাই। আমি এমন কারো হাত ধরতে চাই মা, যার হাতের প্রতিটি ইশারা ভরষার। কারো হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া মানেই কিন্তু উন্নতির দিকে যাওয়া সেটা কিন্তু নয়। আগে আমি জানতে চাই, হাত ধরা মানুষটি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। সাফল্যের সপ্ন, জীবনের আশা আর পরিশ্রমের পথ যদি যাত্রার পথ একদিকে না হয়, তাহলে আর যাই হোক, সাফল্যকে হাতে পাওয়া যায় না। আমি আমার জীবনের সাফল্য চাই। যেখানে ভালোবাসায় পরিপূর্ন একটা বাগানের মতো আলোকিত হয়ে চারিদিকে সুবাসিত করবে। 

আমি সেই ভালোবাসাটা চাই, যেখানে আই লাভ ইউ বললেই শুধু ভালোবাসা হয় না। জেনেছি আমি, ভালোবাসার বহির্প্রকাশ তার কাজে আর বাস্তবে। অনেকে হয়তো আই লাভ ইউ বললেই ভাবে ভালোবাসা হয়ে গেলো, কিন্তু সেটা কি অন্তরের না শরীরে তা যাচাই করার কোনো দরকার মনে করে না। ভালোবাসা হচ্ছে সেটা যা কাছে থাকলে এর প্রয়োজন অনুভব করা যায় না, মনে হয় আছেই তো। কিন্তু যখনই চোখের আড়ালে যায়, মন শুধু আনচান করে আর প্রতীক্ষায় থাকে, কখন কাছে আসবে। কেনো আমি বুঝতে পারছি না, এটাই কি সেটা মা? 

মা, অনেক সময় ঠিকানা ভুল হয় কিন্তু ওই ঠিকানায় যারা থাকে তারা হয়তো ঠিক লোক। এই অতিথি কি আমার সেই সঠিক লোক মা? 

যদি তুমি মনে করো

যদি তুমি কখনো মনে করো যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাই, তুমি ঠিক। আবার যদি কখনো মনে করো যে, আমি তোমাকে খুব ভালোবেসেছি, আমি বলবো আবার যে, তুমি এবারো ঠিক। যদি তুমি মনে করো যে, আমি স্বার্থপরের মতো তোমার কাছ থেকে এমন কিছু চেয়েছি যা তোমার কাছে অত্যান্ত মূল্যবান, কিংবা সেটা দেওয়া তোমার জন্য অনেক ভয়ংকর, আমি বলবো  যে, তুমি ঠিক। যদি তুমি মনে করো, আমি তোমাকে ইগনোর করেছি, হ্যা আবারো তুমি ঠিক। তুমি যদি কখনো কনফিউজড হয়ে থাকো যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি কি বাসি না, সেটা তুমি বুঝতেই পারছো না, হ্যা, এবারো তুমি ঠিক। 

তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সব গুলিই ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে আসল সত্য কি? বা আসলে ঠিক কোনটা? আমি বলবো যে, উপরের সবগুলি ই ঠিক। কারন, সত্য ভালোবাসা এমনই যে, কখনো মনে হয় খুব ভালোবাসি,কখনো মনে হয় পুরু সম্পর্ক টাই ঘৃণার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। আবার কখনো কখনো খুব সন্দেহের মধ্যেই দিন কেটে যেতে থাকে। 

ঈশ্বর প্রত্যেক কেই স্পেশাল করেই বানিয়েছেন। কারো কারো মধ্যে অথবা প্রতি জনের মধ্যেই ঈশ্বর আলাদা আলাদা গুনাবলী দিয়েই পাঠিয়েছেন। এই ঈশ্বর এমন এক শক্তি যাকেয়াপ্নি, আমি সবাই সব কিছুতেই দায়ী করতেপারি। আবার তার কাছেইখুব গোপনে কাদতেও পারি। আর আমি এই জন্যই ঈসশরকে খুব ভালোবাসি যে, সেয়ামাকে তাকে সব কিছুর জন্য দায়ী করলেও সে কিছুই বলে না। আমি তাকে ঘ্রিনা করলেও সে আমাকে শেষ করে দেয় না। আমি যেমন্তার সাথে যুদ্ধ করতেপারি, তেমনি আমি তার কাছে পুরুপুরি সারেন্ডার ও করতে পারি।

আমাদের জীবনে সবচেয়ে যে জিনিষটা ভালো বা খারাপ হয়ে আসতে পারে তা হচ্ছে, ঈশ্বরের করুনা। আমি ব্যাপারটা যদি এইভাবে বলি যে, তিনি জানেন আমাদের জন্য সবচেয়ে কোনটি সবচেয়ে মঙ্গল। ফলে আজকে কোন কাজটি আমার জন্য দৃশ্যমান খারাপ মনে হলেও হতে  পারে কিন্তু বলা যায় না যে, হয়ত এই দৃশ্যমান খারাপটাই হয়ত ভবিষ্যতের কোন এক ভালোর জন্য। অথবা আজকের দিনের কোনো এক দৃশ্যমান মঙ্গল হতে পারে আগামিকালের কোনো এক ভয়ংকর বিপদের কারন। ফলে ঈশ্বরের করুনাটাই সবচেয়ে বড়। হতে পারে আজকে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি, এটাই ভালো আমাদের জন্য। আমি তোমাকে আর তুমি আমাকে মুক্ত মনে মুক্তি দিয়ে রাখো, দেখো ঈশ্বর কোথায় আমাদের নিয়ে যায়। যদি মন ফিরে আসে, যদি প্রান কাদে, তাহলে আবারো আমরা এই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তই থাকি না কেনো, আবারো আমরা এক সাথে হবো। হয়ত তখন আর এইভুল বুঝাবুঝি গুলি হবেনা।  

বদি ভাই-এখন তিনি ছবি

১৯৬৮ থেকে ২০১৮, মোট ৫০ বছর।

এই পঞ্চাশ বছরের আমাদের পারিবারিক ইতিহাসের মধ্যে যে ব্যক্তিটি আমাদের পরিবারের কেউ না হয়েও পরিবারে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা পালন করতে এক্যটু ও দ্নিবিধা করেন নাই, তিনি হচ্ছেন বদ্রুদ্দিন তালুকদার ওরফে বদি ভাই। আমার বয়স তখন মাত্র ১০ কি বারো যখন আমি প্রকৃত পক্ষে এই বদি ভাইকে জ্ঞ্যানের মাধ্যমে চিনি। কিন্তু তার আগে থেকেই এই বদি ভাই আমাদের পরিবারের সাথে যুক্ত ছিলেন।

আমার বাবা কবে কিভাবে কি কারনে মারা গেলেন তা আমার কোনো ধারনা নাই। আমার বয়স তখনহয়ত ২ কি আড়াই হয়ত হবে। আমার বাবা ছিলেন অনেক ধনি মানুস, মাদবর মানুস। সমাজে তার গ্রহনযোগ্যতা ছিল অনেক অনেক বেশি। কিন্তু তার শত্রুও ছিল অনেক। বিশেষ করে আমাদের পরিবারের ভিতরেই অনেক শত্রু ছিল। আর তারা হচ্যাছেন আমার সতালু ভাই বোনেরা। বিশেষ করে তাজির আলি নামে যে ভাইটি ছিলেন, সে ছিলো চারিত্রিকভাবে একজন খারাপ মানুষ।  যাই হোক। বাবা মারা যাবার পর আমাদের যাবতিয় জমিজমার আধিপত্যতা এক সপ্তাহের মধ্যেই হাতছাড়া হয়ে যায়। ফলে ক্যাশ টাকা না থাকায় আমাদের পরিবার অনেক সমস্যার মধ্যে পরে। আমার বড় ভাই সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ইউনিভারসিটিতে ভরতি হয়েছেন। ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নাই, মাথার উপর কোনো অভিভাবক নাই এবং তার মধ্যে পাচ বোন এক ভাই এর বোঝা তার উপর। কিভাবে সংসার চালাবেন, কোথা থেকে টাকা আসবে কিংবা নিজেই কিভাবে চলবেন এই চিন্তাই আমার ভাইকে অতিস্ট করে তুল্লো। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর ভাবছেন কি করা যায়, কিভাবে করা যায়।

এই সময় কোনো এক কাকতালিয় ভাবে দেখা হলো এই বদি ভাইয়ের সাথে। তার জীবনটাও এই একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কেটেছে অথবা কাটছে। ওনাকে আর পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করে বেশি বুঝাতে হয় নাই। বদি ভাই চাকুরি করেন ওয়াব্দা অফিসে মাত্র সেক্সন অফিসার হিসাবে। অল্প আয়, বিয়ে করেন নাই। তিনিও একইভাবে তার ভাই বোন মাকে সাপোর্ট করছেন। থাকেন তিনি ১২৪ নং আগাসাদেক রোড। ছোট্ট একটা রুম, তাতে ইতিমধ্যে তিনজন গাদাগদি করে কোনো রকমে থাকেন আর এক বুয়া প্রতিদিন দুপুর আর রাতের জন্য যত সামান্য বেতনে তাদের ভাত তরকারি পাক করে দেন। বদি ভাই হাবিব ভাইকে ওই ১২৪ নং আগাসাদেক রোডে নিয়ে এলেন। সবাই বদি ভাইকে ভাই বলেন না, সম্মানের সহিত তাকে সবাই স্যার বলেন।

যারা এই রুমে থাকেন, তারাসবাই গ্রাজুয়েট এবং জীবন যুদ্ধে লিপ্ত। একে অপরের জন্য যত টুকু দরকার সাপোর্ট করেন। সবার রোজগার যেনো কম্বাইন্ড রোজগার। একসাথে থাকে সব টাকা, যার যখন যত টুকু দরকার সে ততো টুকুই নেন। কিন্তু হিসাব থাকে। আমার মনে আছে ওই একটা ছোট রুম থেকে বদি ভাইয়ের তত্তাবধানে প্রায় ১০/১২ জন গ্রাজুয়েট বের হয়েছেন যারা পরবর্তী সময়ে দেশের শিরশ স্থানে বসেছিলেন। কেউ ইউনিভারসিটির অধ্যাপক, ডিন, কেউ আরো বড়। দেশে এবং বিদেশে।

এভাবেই বদি ভাই হয়ে উঠেন এক কিংবদন্তি স্যার। সব প্রোটেনশিয়াল মেধাবি হেল্পলেস মানুসগুলিকে বুদ্ধি, যতসামান্য চাকুরির পয়সা দিয়েই এইসব মানুসগুলিকে সাহাজ্য করেছেন। বদি ভাই তার চাকুরি জিবনে ডেপুটি ডাইরেক্টর পর্যন্ত উঠেছিলেন। ওয়াব্দায় চাকুরি করলে দুই নম্বরি করলে ছোট কেরানিও কোটিপতি হয়ে যায় কিন্তু বদি ভাই তার জিবনে দুই নম্বরিতো করেনই নাই, তার দ্বারা দুই নম্বরি হবে এটাও তিনি করতে দেন নাই। ফলে একটা সময় এইসব চোর বাটপারদের আমলে চাকুরির পদবির সামনে এগুতে পারেন নাই। অবসর নিয়ে বাসাতেই ছিলেন।

গ্রাজুয়েট মানুষগুলি তাদের যোগ্যতা অনুসারে ধীরে ধীরে সবাই বেশ ভালো ভালো জায়গায় সেটেল হয়ে গেছেন। সবার সাথেই বদি ভাইয়ের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু কাজের চাপেই হোক আর ব্যস্ততার কারনেই হোক ধীরে ধীরে এইসব যোগাযোগও কমে আসে। কিন্তু আমার ভাইয়ের সাথে অন্য একটি কারনে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগটা ছিলই। আর সেটা হচ্ছে আমার মা। আমার ভাই যখন উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ গেলেন, তখন আমার মাকে দেখভাল করার কোনো লোকই ছিলো না। আর এর ই মধ্যে আমারো ক্যাডেট কলেজের সুযোগ হ ওয়ায় আমার পক্ষেও মাকে কোন অবস্থায় ই কিছুই করার সুযোগ ছিলো না। আমার মাকে বদি ভাই খুব ই ভালো বাস্তেন। নিজের মায়ের মতো করেই দেখতেন। আমার মায়ের জন্য কোনো কাজ করতে বদি ভাইয়ের কখনো ক্লান্ত হন নাই। 

আমি ধীরে ধীরে ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করে ফেললাম, আর্মিতে গেলাম, আমি মাক্যের দায়িত্ত নিলাম। এই সময় বদি ভাই একটু অবসর পেলেন। ফলে এই দীর্ঘ প্রায় দেড় যোগ বদি ভাইয়ের সাথে আমাদের প্রয়োজনেই আমরা তার কাছ থেকে আলাদা হতে পারি নাই। এমন নয় যে বদি ভাইয়ের এখানে কোন স্বার্থ কাজ করেছে। হ্যা, একটা স্বার্থ কাজ করেছে অবশ্য ই। আর সেটা হচ্ছে, বদি ভাই ও তার ভাইদের থেকে অনেক আলাদা ছিলেন। তার পাশে কেউ আসলে ছিলো না। ঊনি ভাবতেন, আমি বা হাবিব ভাই বা আমরা ই তার আপন জন এবং আপদে বিপদে আমরাই তার পাশে আছি। কথাটা ঠিক। কিন্তু পরবর্তীতে যত টুকু আমাদের পাশে থাকার দরকার ছিলো, আমরা আসলে ততো টুকু পাশে থাকতে পারি নাই। এর কারনও হচ্ছে আমাদের বুঝাপড়ার তফাত। হয়ত এটাই এই স্বার্থপর পৃথিবীর নিষ্ঠুর নিয়মের একটি। 

বদি ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম মনোমালিন্য টা হয় আমার বিয়ে নিয়ে। এটা মানতে মানতে আমাদের মধ্যে একটা বিস্তর গ্যাপের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো। কখনো নরমাল, কখনো আধা নরমাল, আবার কখনো মনে হয়েছে সব ঠিকই আছে। আরেকটা কারন ছিলো যে, হাবীব ভাইয়ের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল মানসিকতা। একবার এটা বলেন তো আরেকবার তার সিদ্ধান্ত বদলে অন্য আরেকটি বলা বা আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়া। এইরুপ একটা পরিস্থিতিতে বদি ভাইও আর হাবীব ভাইয়ের ইপর নির্ভর করতে পারছিলেন না। 

একটা সময় চলে এসেছিল যে, আমরা যে যার যার মতো করেই চলছিলাম। ব্যাপারটা এমন হয়ে গিয়েছিলো যে, সাভাবিক অন্য দশ জনের সাথে আমরা যেভাবে চলি, ঠিক সেভাবেই চলছিলাম। সম্পর্ক খারাপ নয় কিন্তু আমরা খুব ঘনিস্ট কেউ আমরা। হাবীব ভাই বদি ভাইকে সব সময় ই শ্রদ্ধা করতেন এবং শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধাই করতেন। কিন্তু বদি ভাইয়ের জন্য হাবীব ভাইয়ের আরো অনেক কিছুই করার ছিলো। সেটা হয়ত হয় নাই। 

আজ বদি ভাইয়ের মৃত্যুতে একটা বড় অধ্যায় শেষ হলো। আমি তাকে মিস করবো সব সময়। যত কষ্টেই তিনি থাকতেন না কেনো, আমি যখন বদি ভাইয়ের কাছে যেতাম, আমি দেখতাম, তার মধ্যে একটা জীবনী শক্তি ফিরে আসতো। অনেক কথা বলতেন। অতীতের কথা, তার সাফল্যের কথা, তার দুঃখের কথা। আমিও শুনতাম। আজ আর তিনি নেই। তাকে আল্লাহ বেহেস্ত নসীব করুন। 

হোড়লে বাড়ি

অষ্টাদশ পার হইলে আমরা বলি আশি বা আশি পার হইয়া যাইতেছে এমন কিছু। কিন্তু যিনি নব্বই পার হইয়া শতায়ুর দিকে প্রতি মুহূর্তে একএক করিয়া প্রহর কাটাইয়া তাহার বয়স বিধাতা ক্রমাগত বাড়াইয়া চলিয়াছেন, তাহাকে আমরা আর যাহাই বলিয়া সম্বোধন করি না কেন, তাহার সঙ্গে ভালবাসিয়া মনের মাধুরী লাগাইয়া ছুটির দিন পরিত্যাগ করিয়া ঘটা করিয়া কোন এক শীতের সকাল কিংবা চৈত্রের কোন এক নির্জন দুপুর বরাদ্ধ করিয়া মনে আলপনা মাখিয়া কেহ তাহার সহিত গল্প করিতে ছুটিয়া আসিবেন তাহা হয়ত খুব স্বাভাবিক নয়। অথচ কোন একটা সময় ছিল, যখন এই শতায়ুর কাছাকাছি বৃদ্ধারও একটা যৌবন ছিল, তাহাকে দেখিবার জন্য কোন না কোন এক পুরুষের হৃদয়ে বসন্তের হাওয়া লাগিয়াছিল, তাহাকে নিয়া হয়ত অনেকেই কতই না অপ্রকাশিত প্রেমের কবিতা লিখিয়া যাইত, সহপাঠীদের মধ্যে হয়ত কেউ কেউ আবার তাহাকে অতি আপনজন মনে করিয়া কিংবা মনে মনে শুধুই আমার নিজের সম্পত্তি মনে করিয়া গুনগুন করিয়া গানের কলি গাহিত কে বা জানে। আমি আজ এমনি একজন অতি বৃদ্ধার সামনে হটাত করিয়া বসিয়া আছি। 

তাহার দেখিয়া বুঝা যায় অতি অল্পবয়সে তাহার গায়ের রঙ কাচা হলুদের মত ছিল, তাহার মুখের গড়ন, চোখের পাপড়ি, নাকের আকার দেখিয়া বুঝা যায় তাহার শৈশবকালে তাহার মাতাপিতা তাহাকে লোক চক্ষুর কুদৃষ্টির আড়াল হইতে বাচাইয়া রাখার জন্য কতই না প্রানান্ত চেষ্টা করিতেন হয়ত বা। এই শেষসময় আসিয়া প্রায় একশত বছরের আগের কোন এক রূপসীর মত দেখিতে ক্ষনসুন্দরের প্রতিক যুবার সহিত আমার দৈবাৎ দেখা হইয়া গেল। কিভাবে দেখা হইল সেটা আমি কিঞ্চিত খোলাসা করিয়া বলিতেও চাহি না। তবে ইহা নিতান্তই ঠিক যে, আমিও তাহাকে দেখিবার জন্য আমার মহামুল্যবান সময় নষ্ট করিয়া ছুটির দিন পরিত্যাগ করিয়া গাড়ি হাকাইয়া এতদূর অবধি আসি নাই।  কোন এক সন্ধ্যা বেলা বউ বাচ্চা নিয়া অলস কিছু সময় কাটাইবার জন্য আমি আমার বন্ধু আলালের সঙ্গে তাহাদের গ্রামের একটি গৃহস্থালি বাড়ীতে বেড়াইতে আসিয়াছিলাম। আর ওইখানেই আমার সঙ্গে এই প্রউরার দেখা।

আমি যাহার সঙ্গে ঐ গ্রামের বাড়ীতে গিয়াছিলাম, ঐ আলাল, তিনি তাহারই মা।  আলালও  বয়স্ক মানুষদের মধ্যে একজন। তাহারও মুখের দাঁড়ি পাকিতে শুরু করিয়াছে, তিনিও কম হলে ষাট বছর ধরিয়া এই পৃথিবীর আলো বাতাস গ্রহন করিতেছেন। এখন তাহাকেও আর যুবক বলিয়া কেহই গননা করিবে না।

তখন সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। গ্রামের চারিদিকে ঘনকালো অন্ধকার। রাস্তায় আশেপাশে কয়েকটা বাতি জ্বলিতেছে বটে কিন্তু ঐ ক্ষীণকায় বাতির আলোতে এত সুবিশাল বৃক্ষরাজীর অন্ধকার আলোকিত করিতে পারে এমন সাধ্য তাহাদের নাই, ফলে বড় বড় কৃষ্ণকলি গাছগুলো আশেপাশের লতাগুল্মের অযাচিত ভালোবাসার জড়াজড়িতে আলো অন্ধকারের ন্যায় এক ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি করিয়া রাখিয়াছে। এই অঞ্চলে খুব একটা জোনাকি পোকা দেখা যায় না, তাই জোনাকির ঝি ঝি শব্দটা কানে আসে না বলিলেই চলে, তবে আশেপাশের ছেলেমেয়েদের কিছু কিছু কলকাকলি শোনা যায় না এমন নয়।

এই আলো অন্ধকার ভুতুরে আবৃত গায়ের মেঠো পথ পার হইয়া আমরা আলালের বাড়ীতে পৌঁছাইলাম। বাড়িটা বেশ সুন্দর। প্রশস্ত উঠান, সেই মান্দাতা আমলের ধাঁচে করা সিঁড়ি সম্বলিত একটা স্কুল ঘরের মত পাকা বিল্ডিং। বিল্ডিং ঘরখানা পার হইয়া আরও একখান ছোট উঠান, সেই উঠান পার হইলেই চোখে পড়ে ঘোর কালো অন্ধকার। এই ঘোর অন্ধকার উঠানের চারপাশে কয়েকটি গাছ ঠায় অন্ধকারকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া আকাশের তারাগুলিকে নিশানা করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। হটাত করিয়া আলো হইতে আসিয়া যেন কালো অন্ধকার উঠানটিকে আরও কচকচে কালো রঙের মত সীমাহীন অন্ধকার বলিয়া মনে হইল, আর আমি ঠায় চোখে কিছু না দেখিতে পাইয়া দাঁড়াইয়া গেলাম। সামনে কিছুই দেখিতে পাইতেছিলাম না কিন্তু আমার বন্ধুটি অতি অনায়াশেই এই কালো অন্ধকার ভেদ করিয়া অতি সহজেই আরেকটি আধা পাকা বিল্ডিং এর দরজার সামনে আসিয়া হাজির হইয়া গেলেন। আমি কোন রকমে হামাগুড়ি দিবার মত ভঙ্গিতে পায়ে পায়ে টিপিয়া টিপিয়া এক কদম এক কদম করিয়া আগাইয়া আসিয়া তাহার কাছে পৌঁছলাম। বাড়ীর ভিতরে কেউ আছেন বলিয়া মনে হইল না। বারান্দায় একটি ছোট পাওয়ারের বাল্ব জ্বলিতেছে। গ্রিল দেওয়া একটি ঘর। ঘরটির কাছে আসিয়া আমার ঐ বন্ধু আলাল 'মা' বলিয়া দুইবার ডাকিলেন। চারিদিকে কোন সারাশব্দ নাই, বেশ গরম পড়িয়াছে, কোন বাতাসও বহিতেছে না। আমার বন্ধুটি আবারো শব্দ করিয়া 'মা' বলিয়া ডাকিলেন।

রাত্রির নিস্তব্দতা ভাঙ্গিয়া, ক্যাচ করিয়া লোহার একখান দরজার খিল খুলিলে যেই ধরনের শব্দ হয় তাহার মত শব্দ করিয়া কোন একজন তাহার দরজা খুলিলেন। দরজা খুলিতেই দেখিতে পাইলাম, অতি বয়স্ক একজন মহিলা তাহার শরিরের কাপড় গুছাইতে গুছাইতে শরিরের ভারসাম্য রক্ষা করার নিমিত্তে কাপিতে কাপিতে দরজার হেসবলটি খটাশ করিয়া খুলিয়া ফেলিলেন। খুলিয়াই বড় আদরের সহিত অস্ফুট স্বরে বলিলেন, ও তুই বাবা? এত রাতে কথা হইতে আইলি?

বুকটা ধক করিয়া উঠিল যেন। আমার মাও থক এমন করিয়াই আমাকে সম্বোধন করিত। অনেক দিন হইয়াছে আমার মা প্রয়াত হইয়াছেন। মাকে মাঝে মাঝেই মনে পড়ে। কিন্তু এই বয়সে আসিয়াও আমার মাকে আমি খুব কাছে থেকে মিস করি এই ভাবনা অনেকেই মানিয়া লইতে পারেন না। আমি মানিয়া লইয়াছি। কি মিষ্টি সেই সম্বোধন। মাকে নিয়া পৃথিবীতে এত বেশি গল্প রচিত হইয়াছে, এত গান, এত বায়স্কোপ, এত উপন্যাস রচিত হইয়াছে যে, তারপরেও মাকে নিয়া আরও হাজার হাজার কবিতা, হাজার হাজার উপন্যাশ রচনা করিবার অবকাশ রহিয়াছে। মায়ের কথার সুর আলাদা, তার চাহনি আলাদা, তাহার হাতের স্পর্শ আলাদা, তাহার শাসন আলাদা, তাহার আদরের ভাষা আলাদা। তাহার অনুপ্রেরনার শক্তি আলাদা, তাহার ভালোবাসার মহব্বত আলাদা। কোন কিছুই তাহার সহিত পারিয়া উঠিবে বলিয়া আমার মনে হয় না আর হইবেও না। আমার সামনে যিনি দাঁড়াইয়া আছেন, তিনি আলালের মা। আমারও মা।

আমাকে দেখিতে পাইয়াছে বলিয়া মনে হইল না। ঘরের বাতির আলো হইতে বাহির হইলে স্বাভাবিক কারনেই বাহিরের অন্ধকার আরও বেশি ঘুটঘুটে অন্ধকার হইয়া চোখে এমন ধাধার সৃষ্টি করে যে, বাহিরে কি আছে বা কাহারা আছে তাহা হটাত করিয়া চোখে না পড়ারই কথা। উম্মুক্ত দরজা ধরিয়া আমি আর আমার বন্ধু আলাল ঘরে ঢোকিলাম। বৃদ্ধা অনেক ধীরে ধীরে তাহার বিছানায় গিয়া উঠিয়া বসিলেন। আমরা তাহার পাশে অদুরে রক্ষিত দুইটা চেয়ার খরখর শব্দ করিয়া টানিয়া বসিলাম।

তাহার ঘরের মধ্যে অনেক আসবাবপত্র নাই তবে কমও নাই। একটা ড্রেসিং টেবিলের মত একটা টেবিল। তার কিয়ত অংশ জুরিয়া একটি ছোট আয়না। দেখিয়াই বুঝা যায় অনেক দিন এই আয়নায় কেউ দাঁড়াইয়া তাহার মুখখানা দেখিয়াছে কিনা সন্দেহ আছে। আয়নার ঠিক উপরে একখানা ছোট গামছা যার সারা শরীরব্যাপী অনেক ধুলা জমাইয়া ফ্যানের বাতাসে মনের আনন্দে একটু একটু ঘুরপাক খাইতেছে। বৃদ্ধার খাটখানা বেশ প্রশস্থ, তোষকের জাজিম, তাহার উপরে একখানা চাদর। মনে হইতেছে চাদরখানা বেশ কয়েকবার ব্যবহার করিবার কারনে কিছুটা দুমড়ে মোচরে আছে। খাটের পাশেই পরপর দুইখানা কাঠের আলমারি সটান হইয়া দাঁড়াইয়া আছে। উপরে একটি ফ্যান চক্রাকারে ঘুরিতেছে। খাটের একদম লাগোয়া ছোট একটি টেবিল রহিয়াছে। তাহার উপরে এবং নিচে কয়েকটি অতি পুরাতন টিনের অথবা ম্যালামাইনের বাসন, বাসনগুলির উপর কয়েকটি গ্লাস উপুড় করিয়া রাখা আছে। সম্ভবত এইসব বাসন আর গ্লাস বৃদ্ধার খাবারের জন্য ব্যবহৃত হয়। ঘরের আলমারি, খাট, টেবিল চেয়ার সবগুলিতেই ভ্রাম্যমাণ ধুলাবালিতে এক প্রকার দাগ পরিয়া আছে। কেহ তাহা পরিস্কার করিয়া দিবার নাই। আর পরিস্কার করিলেও দায়সারা ভাবে যে পরিস্কার করিয়াছে তাহা স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে। দেয়ালের একপাশে একটি মশারি তাহার দুই কোনা লোহার দুইটি প্যারেকের মধ্যে গাঁথিত হইয়া নৌকার পালের মত ফ্যানের বাতাসে ক্রমাগত একবার এদিক একবার ওদিক হেলিতেছে।

বৃদ্ধার সঙ্গে আমার গল্প করিতে খুব ইচ্ছা হইতে লাগিল। কিন্তু তাহার কোমরে ব্যথা বলিয়া বারংবার উল্লেখ করিতেছেন বলিয়া আমারও এক প্রকার সংকোচ বোধ হইতে লাগিল। সংকোচবোধ হইতেছিল এই কারনে যে, আমরা কি এই অসময়ে আসিয়া বৃদ্ধার বিশ্রাম নষ্ট করিয়া দিলাম? আমি তারপরেও তাহাকে অতি আপনজনের মত প্রশ্ন করিলাম, কিছু খাইয়াছেন কি? আমরা আসিয়া কি আপনাকে বিরক্ত করিলাম কিনা ইত্যাদি।

তিনি অতি বিচক্ষন মহিলা বলিয়া আমার মনে হইল। তিনি বলিলেন, আমি এখনো বাচিয়া আছি বলিয়াই তো তোমরা আসিলা। কেউ আসিলে আমার খারাপ লাগে না। বরং কিছুটা সময় কিছু মানুষের সঙ্গে কাটিয়া যায় বলিয়া আমার সস্থি লাগে। এখন তো আর কাহারো সময় নাই আমাদের মত মানুষের সঙ্গে সময় কাটাইবার। আজকাল যুগের ছেলেমেয়েরা, তাহাদের পিতা মাতারা স্নতান সন্ততিরা কেহই আর আগের দিনের পিতামাতার মত নয়। অতি অল্পতেই তাহারা ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে, বিরক্ত হইয়া উঠে, কোন কিছুতেই তাহারা সন্তুষ্ট নহেন। আদব কায়দার ধার ধারে না। সত্য মিথ্যার ধার ধারে না। লাভের হিসাবটা যেখানে বেশি, তাহাকেই তাহারা নীতি বলিয়া মানিয়া লইয়া আপাতত লাভের আশায় যাহা কিছু করিতে হয় তাহাই তাহারা করিতে ইতস্তত বোধ করে না।

-আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমরা কতই না আমাদের দাদা দাদিদের সঙ্গে গল্প করিতাম। ভুতের গল্প, সেই রাজরানির গল্প, পড়া ফাকি দিয়া কখন দাদুর কোলে মাথা রাখিয়া নাম না জানা পরীদের গল্প শুনিতাম। এখনকার ছেলেমেয়েরা ভুত আছে বলিয়া বিশ্বাস করে না কিন্তু ভুতের গল্প শুন্তেও ভয় পায়। আমাদের সময় আমরা পাশের বাড়ীর বরই গাছের আধাপাকা বরই, পেয়ারা, কচি কচি আম চুরি করিয়া আনিয়া দাদুর পানের বাটিতে লুকাইয়া রাখিতাম, আর এখনকার নাতি নাতকুরেরা দাদা দাদির পানের বাটি হইতে সুপারি পর্যন্ত না বলিয়া লইয়া যায়। ইহাকে চুরি বলে কিনা আমি বলিতে পারিব না কিন্তু যখন দেখি আমার আচলে রাখা কয়েকটা ছোট বড় নোট যখন কোথায় হাওয়া হইয়া অদৃশ্য হইয়া যায় তাহা যখন আর বুঝিতে পারি না, তখন মনে হয় সময়টা পাল্টাইয়া গিয়াছে, অথচ কাহাকেও কিছু বলিবার আমার যোগার নাই।

বুড়ি আরও গল্প করিতে লাগিলেন, যেন মনে হইল তিনি আস্তে আস্তে তাহার শৈশবকালে ফিরিয়া যাইতেছেন।

-আমি যেদিন এই বাড়ীতে বউ হইয়া আসি, তখন আমার কতইবা বয়স। হয়ত আট কিংবা নয়। স্বামী কি জিনিস, শাশুড়ি কি জিনিস, কিংবা ভাসুর, কিংবা শ্বশুর, কাহাকে কেমন করিয়া সামলাইতে হইবে আমরা কিছুই জানিতাম না। বাবার বাড়ীতে যে ছোট মেয়েটি সকাল অবধি ঘুমাইত, সেই ছোট বালিকাটি হটাত করিয়া শ্বশুর বাড়ীতে আসিয়া এক রাতের মধ্যে মহিলা হইয়া জন্মিল। যেন তিনি আর ছোট বালিকাটি নন। তাহার অনেক দায়িত্ত। স্বামীর দায়িত্ত, পরিবারের ঘর ঘুছানো , উঠোন পরিস্কার করা, গোয়াল ঘরে গরুর খাবারের জন্য গাদা গাদা পানি দেওয়া, শাশুড়ির জন্য শীতের দিনে ওজুর গরম পানি করে বদনা দিয়ে রাখা, কত কি। ঐ ছোট বয়সে আমার শরিরের থেকে দায়িত্তের পরিমান অনেক ঢের বেশিই ছিল, তারপরেও বাবাকে খুশি রাখিবার জন্য, মাকে আনন্দে রাখিবার জন্য আমার এই ছোট হাতগুলি দিয়া যতটুকুন পারিতাম সংসারের গুরু লঘু সব দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকিতাম। পাছে আমার শশুর কোন কাজ ঠিক মত হয় নাই, কিংবা কোন কাজ করিতে ভুল হইয়া গেছে এই লজ্জায় পড়ি, সেই ভয়ে নিজে দুপুরের খাওয়া, দিনের নাওয়া কোনকিছুই সময় মত করিতে পারিতাম না। দিনশেষে যখন একটু বিশ্রাম করিবার সময় হইত, আমার অতিপ্রিয় এই খাটের পাশে আসিয়া বসিতাম, তখন তোমাদের জামাই বাবুর মন জয় করিবার জন্য আমাকে আবার নতুন বউয়ের মত মুখে হাসি ফুটাইয়া, চোখে প্রেমের চাহনি দিয়া চাঁদনী রাতের আকাশের মত আমাকে রাঙ্গা বউ সাজিতে হইত। এভাবেই আমার দিনকাল কাটিয়া একদিন দেখিলাম আমি মা হইয়াছি। একে একে আলাল, জালাল, শাহিদা, রোকেয়া, সখিনা, সবাই আমার ঘর আলোকিত করিয়া আমার সংসার ভরিয়া তুলিল।

সংসার বড় কঠিন এক কর্মক্ষেত্র। স্বামীর মন যোগাইয়া, শাশুড়ির সব কাজ শেষ করিয়া, শ্বশুরের ঘর ঘুছাইয়া, দিনের কাজ সব শেষ করিয়া ছেলেপুলেদের সব হিসাব নিকাশ, আবদার মিটাইয়া যখন আমি প্রায় এক রকম অভ্যস্থ হইয়া দিনের কর্ম ব্যস্ততায় সময় কাটাইতেছি, তখন আমার বয়স গুনিয়া দেখিলাম, আমি নিজেও এখন শাশুড়ি হইবার সময় হইয়াছে। কিন্তু যাহার শশুর হইবার কথা তিনি সবাইকে তাক লাগাইয়া, গ্রামের সব প্রিয় বন্ধু বান্ধব্দের রাখিয়া আমাকে শ্রাবনের অজশ্র বারিধারার মত চোখের জ্বলে ভাসাইয়া তিনি এই পৃথিবীর সমস্ত বন্ধন শেষ করিয়া আমাদের হইতে অনেক দূরে চলিয়া গেলেন। কি তার অভিমান, কি তার কষ্ট, কি তার চাহিদা কিছুই আর অবশিষ্ট না রাখিয়া সংসারের সমস্ত দায়ভার আমার কাঁধে তুলিয়া দিয়া স্বার্থপরের মত আমাকে একা রাখিয়া বহুদুর চলিয়া গেলেন। আজ অনেকদিন পর মনে হইল, আমি শুধু এই বাড়ীর বউ হইয়াই আসি নাই, আজ মনে হইল, আমি আজ সংসারে মা আর তার উপর বাবার দায়িত্বও পালন করিতে এই সংসারে ঢুকিয়াছিলাম। শুধু তাই নয়, যে ননদিনীকে আমি আমার সই বলিয়া মনে করিতাম, আমি আজ তাহারও মা হইয়া বসিয়াছি। যে দেবরকে আমি আমার ছোট লক্ষি ভাই বলিয়া আদর করিয়া শাসন করিতাম, আজ আমি তাহার মা বলিয়া অনুভব হইতেছে। উহারা সবাই আমার অতিপ্রিয় সন্তানের মত আমাকে আরও নিবির করিয়া আঁকড়াইয়া ধরিল। আমার আর কোথাও যাওয়ার সম্ভাবনা রহিল না। না বাপের বাড়ি, না পৃথিবীর মায়া কাটাইয়া আমার স্বামীর দেশে। আমি বাড়ীর প্রতিটি অংশ, প্রতিটি গাছ, প্রতিটি প্রাণীর মা হইয়া গেলাম। চুলায় কখন আগুন ধরাইতে হইবে, কখন কাহাকে কোথায় পাঠাইতে হইবে, কখন ধান কাটার মৌসুম হইলে কোথা হইতে কতজন কামলা নিতে হইবে, মটরশুটি পাকিয়াছে কিনা, পাকিলে কখন কাটিতে হইবে, সব হিসাব আমাকেই রাখিতে হইত। বাড়ীর উঠোন কখন ঝারু দিতে হইবে, রাতে কাহাকে কখন কি ঔষধ খাওয়াইতে হইবে তার সবদিক আমাকে অতি সূক্ষ্মতার সহিত হিসাব করিয়া পালন করিতে হইতেছিল।

এই যে বাড়িটা দেখিতেছ? এখানে এত ঘর বাড়ি ছিল না। বড় একটা উঠান ছিল, পাশে হরেক রকমের গাছগাছালি ছিল। ঐ যে আমাদের দক্ষিন পাশটা আছে, সেখানে অতি মস্তবড় একখানা গাব গাছ ছিল। অতি গরমের সময় আমার স্বামী কড়া দুপুরে একখানা মাদুর বিছাইয়া হাতে একখানা তালপাতার পাখা লইয়া তাহার হরেক পদের ব্যবসার হিসাব লইয়া বসিত। আরও কত কি! তখন ক্যালকুলেটর ছিল না, বাঁশের কঞ্চিতে কালি মাখাইয়া দিস্তা কাগজের মোড়ায় একখানা খাতা লইয়া তাহার ব্যবসার লেনদেনের অনেক হিসাব কষিয়া লাভ ক্ষতির বিবরন লিখিয়া রাখিতেন। গাব গাছটার দিকে তাকাইলে আমার এখনো তাহার কথা মনে পড়ে। মনে হয়, এই বুঝি তিনি আসিয়া আমার কাছে পান আছে কিনা জিজ্ঞেসা করবেন। হয়তবা কোন এক পলকে আসিয়া বলিবেন, কই গো শুনছো, আমি একটু বাজার হইতে ঘুরিয়া আসি। কিছু আনিতে হইবে কি? আমি অপলক দৃষ্টিতে ঐ গাব গাছটির দিকে তাকাইয়া থাকি আর তাহার কথা মনে করি। গাছের কোথা বলিবার ভাষা নাই। থাকিলে হয়ত আমাকে প্রশ্ন করিত, কি গো তাহার কোথা মনে পরিতেছে? আমার ও তাহার কথা মনে পরিতেছে। মন তা খারাপ হইয়া যায়। সে আমাক্র কথা হয়ত ভাবে না, হয়ত বা ভাবেও।

আমি তাহার গল্পের বর্ণনা শুনিয়া বুঝিতে পারিলাম, তিনি এই ঘোর অন্ধকারের মধ্যেও তার ঐ সময়ের সব স্মৃতি দিনের আলোর মত ফকফকা হইয়া তাহার চোখে পরিতেছে আর তিনি ঐ দৃশ্য অনাবিল ভঙ্গিতে আজ এই ঘনকালো অন্ধকারের মধ্যে অকপটে বলিয়া যাইতেছেন। আমি যেন তাহার চোখের এই দিবাকালিন অতীত বর্তমানের বর্ণনা নিজের চোখে দেখিতে পাইতেছি।  তাহার গল্প শুনিতে আমার বড় ভাল লাগিতেছিল।

আমি বলিলাম, তারপর কি হইল?

তিনি আমার প্রশ্ন শুনিতে পাইলেন কিনা আমি বুঝিতে পারিলাম না, কিন্তু তিনি তাহার গল্পের কোন ছেদ না করিয়াই বলিতে লাগিলেন, এরই মধ্যে আমার এই আলালের বিয়া হইয়া গেল। আমাদের সংসারে কোন অভাব ছিল না কিন্তু আমার স্বামীর অন্তর্ধানের পর অনেক হিসাব কিতাবই আর আগের মত চলিতেছিল না। যাহাদের কাছে আমরা টাকা পয়সা পাইতাম, তাহারাও আর আগের মত বন্ধুসুলভ নাই, আবার যাহারা আমাদের কাছে টাকা পয়সা পাইত, তাহারও আমাদের দয়া করিয়া যে ছাড় দিবে তাহাও হইল না। ফলে একদিকে প্রাপ্য টাকা না পাইয়া হাত শুন্য হইয়া বসিয়া আছি, অন্যদিকে ঋণগ্রস্থ হইয়া আমাদের সংসারে একটু ভাটা পরিল বলিয়াই আমার মনে হইল। আলাল কোন রকমে একটা সরকারি চাকুরী সন্ধান করিয়া সংসারের হাল ধরিলবটে কিন্তু তাহাকে সোজা করিয়া দাড়া করাইয়া রাখা যেন কঠিন হইতে কঠিনতর হইয়া উঠিল। অনেক ঈদ পর্বন, অনেক মেলা, অনেক শখের আহ্লাদ আমাদের আর আগের মত করিয়া উৎযাপন করিতে পারি নাই। মনে হইয়াছে ছেলেমেয়েরা বড় হউক, একদিন আমার এই সব দুঃখের দিন শেষ হইবে। তখন নায় নাতকুর লইয়া আবার আমি আগের মত হই চই করিয়া বেড়াইব, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের লইয়া আনন্দে গ্রাম ঘুরিয়া বেড়াইব। কত কি? 

এই বলিয়া বুড়ি অনেক্ষন চুপ থাকিলেন। মনে হইল আজ এত বছর পর তাহার সমস্ত ইতিহাস, সমস্ত কাহিনী তাহার মনের অতি গোপন স্থান হইতে উকি দিয়া জনসম্মুখে প্রকাশ হইবার জন্য এক লম্বা লাইন ধরিয়া আছে। বৃদ্ধার গলা ধরিয়া আসিতেছিল, তাহার চোখের কোনা হয়ত ভিজিয়া আসিতেছিল, তিনি আর বেশিক্ষন আবেগ ধরিয়া রাখিতে পারিতেছেন না। আমার বন্ধু আলালের চোখেও একটু একটু অশ্রুর রেখা দেখা যাইতেছিল। রাতের এই ছোট পাওয়ারের আলোতে হয়ত আমি পুরু চোখ দেখিতে পাইতেছিলাম না তবে এইটুকু আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, আলালের আধাপাকা দাঁড়ি গড়াইয়া তাহার চিবুক ঘেঁষিয়া হয়ত কয়েক ফোঁটা জল পরিয়া থাকিবে। বৃদ্ধার গল্প থামিবার সঙ্গে সঙ্গে মনে হইল এখানে হটাত আলো থামিয়া গিয়াছে, এখানে ভাষা থমকে দাঁড়াইয়াছে, শুধু উপরে ফ্যান খানা নীরস যন্ত্রের মত চারিদিকে অসম্ভব দ্রুত গতিতে ঘোরপাক খাইতেছে।

আলালের বউ যখন আমাদের বাড়ীতে আসিল, আমার সেই ছোট বেলার বউ সাজিবার সবঘটনা মনে পরিতে লাগিল। লাল টুকটুকে শাড়ি, হাতে মেন্দি, মাথায় সব সময় বড় বড় ঘোমটা, আরও কত কি। আমি কোথায় কোথায় কি অসুবিধার মধ্যে পরিয়া কি কি কারনে মনে কষ্ট পাইতাম, কি করিয়া আমি আবার ঐ মনের কষ্ট দূর করিবার জন্য কি করিতাম, সব মনে পরিতে লাগিল। আলালের বউয়ের কার্যকলাপ দেখিয়া মাঝে মাঝে আমি খিল খিল করিয়া হাসিতাম, আবার মাঝে মাঝে খুব লক্ষির মত তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিতাম, আমরা মেয়ের জাত, সংসার আমাদের ধর্ম, ইহাকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া স্বামীর ভিটায় লাশ হইয়া বাহির হইতে পারিলেই আমাদের মেয়ে জীবন সার্থক। আর যদি ইহার কোথাও কোন ব্যত্যয় ঘটে, তখন আর কোন কাজেই আসিবে না। এইরূপ, এই যৌবন একদিন শেষ হইয়া যাইব। সংসার ছাড়া মেয়েদের আর কিছুই নাই। ইহাকে আপন করিয়া ধরিয়া রাখ।

আলালের বউকে পাইয়া আমি যেন আবার আমার সেই ছোট বেলার একজন সাথী পাইলাম এমন একজন মানুষ হইয়া গেলাম, আবার আমি তাহার শাশুড়ি এই কথাটাও ভুলিয়া গেলাম না। আলালের বউ যখন ভুল করিত, আমি তখন মনে মনে হাসিয়া ভাবিতাম, আহারে, আমিও কি তোমার মত এই ভুলগুলি করি নাই? করিয়াছি তো। কখনো কৃত্রিম রাগবর্ষণ করিয়া ভতরসনা করিতাম কিন্তু অধিক রাগ করিতাম না। ক্রমেক্রমে ও আমার একজন ভাল বন্ধু হইয়া উঠিল। সরকারী চাকুরী, আলালকে তাই কখনো অনেক দুরের শহরে থাকিতে হয়। আবার কখনো দুই একদিনের জন্য বাড়ীতে আসিতে হয়। নতুন বউ, আমি বুঝিতে পারিতাম তাহাদের মনের আকুতির কথা, তাদের মনের কথা। কিন্তু বাস্তব যখন ঘরের কাছে আসিয়া নিজের পেটের ক্ষুধার কথা স্মরণ করাইয়া দেয়, তখন প্রেমের কথা আর বেশি করিয়া মনে করিয়াও কোন লাভ হয় না। বিরহ তখন নিত্যদিনের সঙ্গি হিসাবে মানিয়াই নিতে হয়। এখনকার দিনের মত যুগ ছিল না তখন যে মন খারাপ হইয়াছে তো একখান মোবাইলে টিপ দিলেই মনের মানুষের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘণ্টা আলাপ করিয়া মনের কথা বলিয়া একটু সস্থি পাওয়া যাইবে। তখন পোস্ট অফিস ছিল, আবার হাতে লিখিয়া চিঠি পাঠাইতে গেলেও অনেক সময় লোক মারফত চিঠি পোস্ট করিবার লোক পাওয়া যাইত না, নিজে হাটিয়া গিয়াও চিঠিখানা পোস্ট করিবার উপায় ছিল না। তাই যোগাযোগটাও ছিল বেশ কঠিন আর যখন একবার দেখা হইত, তখন প্রেমের কথা বলিবার চেয়ে সংসারের সমস্যা সমাধানের জন্যই সময়টা কাটিয়া যাইত বেশি। যেদিন আলাল তাহার বউকে নিয়া তাহার কর্মস্থলে যাইত কিছুদিন থাকিবার জন্য, আমার বড্ড মন খারাপ হইত। একা একা বোধ হইত। মনে হইত কি যেন আমার সঙ্গে নাই, কে যেন আমার কাছ হইতে হারাইয়া গিয়াছে।

এইবার বৃদ্ধা নড়িয়া চড়িয়া বসিলেন। মাথা একটু উচু করিয়া আমাদের দিকে তাকাইয়া মুচকি হাসিয়া বলিলেন, একদিন আলাল মিষ্টি লইয়া বাড়ীতে আসিয়া আমার হাতে মিস্টির একটি প্যাকেট দিয়া বলিল, তোমার বৌমা অসুস্থ। আমি হচকচিয়ে উঠিলাম, একটু ভয়ও পাইলাম।  ওমা, কি রে কি হইয়াছে? লাজুক আমার আলাল কিছুই না বলিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গিয়া উঠানের গাব গাছটির তলায় গিয়া সবার কাছ হইতে যেন পালাইয়া বাচিল। আলালের বউ সঙ্গে আসিয়াছিল। কাছে তানিয়া বুকে লইয়া জিজ্ঞাস করিলাম, কি হইয়াছে তোমার? শিক্ষিত নেয়ে, অবুঝ নয়, মুচকি হাসিয়া যাহা ইঙ্গিত করিল, বুঝিলাম, আমি দাদি হইতে চলিয়াছি। আমার চোখ ছলছল করিয়া উঠিল। ঘরের প্রতিটি কাপ, গ্লাস, জানাল দরজা যেন খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। আমার উঠানের গাছগুলিও যেন বাতাসের দোলায় নাচিয়া বলিতে লাগিল, তুমি আরও এক ধাপ আগাইয়া জিবনের আরেক দায়িত্ব পালনে তৈরি হইয়া যাও। আমার বড় ভাল লাগিল।

সময় বড় নিষ্ঠুর, সে সবার সাথে চলিয়া বেড়ায় বটে কিন্তু কাহারো সঙ্গে সে সখ্যতা করে না। সে কাহারো জন্য অপেক্ষা করে না। তাহার তারা নাই কিন্তু তাহার দেরি করার সময়ও নাই। সে কাহারো হাত ধরিয়া সামনে আগাইয়া চলে না, সে তাহার নিজ গতিতে বহমান। তাহাকে তুমি বশ করিতে পারিবে না। সে কাহাকেও বশ করে না। তাহার সহিত কেহ চলতে চাহিলে সে তাহার সহিত যুগযুগ ধরিয়া একত্রে চলিতে পারে আবার কেহ যদি তাহার সহিত চলিতে না পারে, তাহাতে তাহার কোন বিপত্তি হয় হয় না। সে একাই আপন গতিতে চলিতে থাকে। আর এই বহমান সময়ের স্রোত ধরিয়া আলালের ঘরে সোমা আসিল, রুবেল আসিল, জালালের ঘরে তিন্নি, মিন্নি সবাই আসিল, আর ঘর হইতে আমার সব প্রিয় মেয়েরা অন্য পুরুষের স্ত্রী হইয়া চোখের জ্বলে নিজেরা ভাসিয়া আর আমাকেও কাদাইয়া যে যার যার সংসারে চলিয়া গেল।

এখন তাহারা যার যার সংসার লইয়া, নিজেদের পরিকল্পনা লইয়া, শহর বন্দর খুজিয়া খুজিয়া নিজেদের আশ্রয়স্থল লইয়া নিজ নিজ সংসার পাতিয়া বসিয়াছে। একটি ঘর হইতে দুইটি, দুইটি হইতে চারটি, ঘর বাড়িয়াছে। বাড়ি বাড়াইতে গিয়া অনেক গাছ গাছালির জীবন দিতে হইয়াছে। আগের গোহাল ঘর সরাইয়া আরও দূরে লইয়া যাইতে হইয়াছে, এক বাড়ীর সীমানা আলাদা করিবার জন্য আরেক বাড়ীর সীমানা প্রাচির তৈরি হইয়াছে। ভাইয়ে ভাইয়ে আলাদা আলাদা প্রাচির ঘেরা বাড়ি বানাইয়া একে অপরের হইতে অনেক কিছু গোপন রাখিয়া দূরত্ব বজায় রাখিয়া চলিতেছে। তাহারা আর আগের মত এক সঙ্গে নদীর ধারে গলাগলি করিয়া গোসল করিতে যায় না, ঐ গাব গাছের তলে বসিয়া গল্প করে না। আগে এক হাঁড়িতে ভাত পাক করিলে সবাই মিলিয়া কাড়াকাড়ি করিয়া খাইয়া ফেলিত, কখনো তরকারীর জোগান কম হইয়া যাইত, আবার কখন মেহমান আসিলে শেষে যিনি খাইতে বসিতেন তাহার ভাগে কমই জুটিত। তারপরেও আনন্দ ছিল অঢেল, হাসি ছিল অফুরন্ত। এক ঘরে জায়গা না হইলে ছেলেরা মেয়েরা ভাগাভাগি করিয়া শুইয়া পরিত। নিজেদের মধ্যে মারামারি, খুন্টুশি যে হইত না তাও নয়, কিন্তু তাহাও ছিল এক আনন্দের অফুরন্ত ভান্ডার। আজ সবার সংসার হইয়াছে, সবার হাঁড়িপাতিল আলাদা। কেহ মুরগীর তরকারি খাইয়া ঢেকোর তুলিতেছে, কেহ আবার নিছক শাকপাতা খাইয়া পেটের পীড়ায় ভুগিতেছে। একজনের সন্তান দেশ বিদেশ ঘুরিতেছে, আরেক জনের সন্তান মাঠে কঠিন রোদে পুড়িয়া, বৃষ্টিতে ভিজিয়া সারা বছরের ফসল ফলাইবার জন্য প্রানান্ত চেষ্টা করিতেছে। বউদের যেমন সময় নাই, তাহাদের সন্তানদেরও সময় নাই। আমরা যারা আজ অনেক বুড়া হইয়া গিয়ছি, আমরা যখন আর আগের মত আর চলিতে পারি না, আমাদের দেখার জন্য তাহাদের হাতে ওত সময় কই?

আজ যখন দেখি সারা উঠোন গাছের মরা পাতায় এখানে সেখানে ছরাইয়া ছিতাইয়া এলোপাথাড়ি পড়িয়া আছে, হাটিবার রাস্তাটাও অনেক ময়লায় ভরিয়া আছে। তখন মনে হয়, আমার সংসার আলাদা হইয়া গিয়াছে, যার যার জায়গায় তারা শুধু গাছের পাতা, ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করিয়াই খালাস। আমার শাশুড়ি বলিতেন, সকাল বেলায় পরিবারের সদস্যরা ঘরের বাহির হইবার আগেই যে একবার ঘর বাড়ি উঠোন ঝাউ দিতে হয়, তা না হলে অলক্ষুণেরা ভর করে, সেই ভয়ে আজও আমি সকাল হলেই একটা ঝারু লইয়া সবার আগে ঘুম হইতে উঠিয়া সমস্ত বাড়ীটি কল্যাণময় করিয়া তুলি। এটা আমারই তো সংসার, তাহারা হয়ত নিজেদের জায়গা সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করিয়া আপন মনে করিয়া সাজাইয়া লয়াছে, কিন্তু এক সময় তো তাহারা সবাই একই হাঁড়ির ভাত খাইয়াছে, একই ছাদের তলায় গাদাগাদি করিয়া ঘুমাইয়াছে। তাহারা সবাই তো আমারই রক্তের মধ্য হইতে তিলে তিলে আজ এত বড় হইয়াছে। তাহার আমাকে মানুক আর নাই বা মানুক, তাহারা আমাকে যত্ন করুক আর নাই বা করুক। এটা তো আমার স্বামীর ভিটা। আমার দ্বিতীয় জন্মের বাড়ি। আমি তো আর তাহাদের আলাদা করিয়া ভাবিতে পারি না। আজকাল আমাদের নায়নাতকুরেরা আর আগের মত বড়দের সঙ্গে সম্মানের সহিত কথা বলে না, একে অপরের সহিত আদবের সহিত মন খুলিয়া কথা বলে না। কাহাকে আমি কি বলিব? আজ এত বছর পর আমার মনে হইতেছে, আমি এখানে আজ শুধু আমার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করিয়া আছি। আমি অপেক্ষা করিয়া আছি কখন আমি আমার সেই প্রিয়তম স্বামীর সঙ্গে দেখা করিব। কখন আবার আমার সেই শাশুড়ি মা আমাকে জরিয়ায়া ধরিয়া বলিবে, হোরলে বাড়ি, আর পিরনে নারী। অর্থাৎ বাড়ি চিনিবে ঝারু দেওয়া দিয়া আর নারী চিনিবে তাহার পিরনের কাপড় দেখিয়া। তাই এখনো আমি এই বয়সে সবার মঙ্গলের কোথা ভাবিয়া সকালে সবার উঠার আগেই এক খানা ঝারু লইয়া আমার সব উঠোন পরিস্কার করিয়া লই, আর তাহাতেই আমার কোমর খানা প্রতিনিয়ত ব্যাথায় ভরিয়া উঠে। হয়ত আমাকে এই কাজ করিয়াই যাইতে হইবে আমার শেষ নিঃশ্বাস থাকা অবধি। এটা যে আমার বাড়ি, আমার স্বামীর বাড়ি। এখানে আমার শাশুড়ি শুইয়া আছেন, এখানে আমার শশুর ঘুমাইয়া আছেন। কি বলিব আমি যখন আমার সাথে তাহাদের দেখা হইবে? জানো তো একটা জিনিস, অনাদরে মানুষ বাচিলে তার একটা গুন আছে। আর তাহা হইল তাহাকে ব্যমোও ধরিতে আসে না। মরার সদর রাস্তা গুলি একেবারেই বন্ধ হইয়া যায়। সবার কাছেই তখন নিজেকে আপদ বলিয়াই মনে হয়। এই আমার আলাল তাহার সব টুকু শক্তি দিয়া আমাকে আগলাইয়া রাখিয়াছে বটে কিন্তু আর বাকি সব যে যাহার হিসাব লইয়া এত টাই ব্যস্ত হইয়া আছে যে তাহাদের ভবিষ্যৎ কি হইবে তাহারা আজ না বুঝিলেও হয়ত কোন একদিন আমার আজকের এই দিনের কষ্টটা হয়ত বুঝিবে। এই বলিয়া তিনি আলালের হাতটি ধরিয়া অনেক্কখন চুপ থাকিয়া বসিয়া রহিলেন।

অনেক রাত হইয়া গিয়াছে। বুড়ি আর কোন কথা বলিতে পারিতেছিলেন না। আমি তাহার আরও কাছে গিয়া বসিলাম। তাহার গায়ে হাত রাখিয়া তাহাকে জরাইয়ায়া ধরিবার আমার খুব ইচ্ছা হইল। মনে হইল তিনি ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদিতেছেন। কেহই তাহাকে বকা দেয় নাই, আমারাও তাহাকে এমন কোন কথা বলি নাই যাহাতে তাহার মন খারাপ হইতে পারে, কিন্তু জিবনের সব পাওয়া যখন নিরাশায় পতিত হয়, যখন এত কষ্টের পরিশ্রমে গড়া নিজের সংসার আর নিজের আয়ত্তে থাকে না, যখন সেই সব ছেলেমেয়েদের লইয়া কোন একদিন ভবিষ্যতের সুখের জন্য আজিকার সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়া এতগুলি বছর পার করিয়া জিবনের বেলাশেষে হিসাব নিকাশ করিয়া কোন কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না বলিয়া মনে হয়, তখন চোখের জল ছাড়া প্রতিবাদ করার আর কোন ভাষা থাকে না। নিজের সংসার কে আর নিজের বলিয়া মনে হয় না। তাহা অন্য কেহ দখল করিয়া লইয়াছে। আমি সেখানে শুধু একজন প্রাণী যার জীবন আছে কিন্তু জিবনের কোন মুল্য আছে বলিয়া মনে হয় না। কেউ কেউ এখনো আঁকড়াইয়া ধরে বটে কিন্তু সমস্ত সংসারটা আর আগের মত মনে হয় না।

আজ হইতে হয়ত আরও অনেক বছর পর আবার যখন আমার এই বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা হইবে, আদৌ দেখা হয় কিনা আমি জানি না, তখন হয়ত আমার এই আজকের রাতটির কথা বারবার মনে পরিবে যে এইখানে একশত বছর পুরানো কোন এক কাহিনী আমি শুনিয়াছিলাম, যার ইতিহাস লিখার কোন প্রয়োজন নাই, আর সে ইতিহাস সমাজের, দেশের কিংবা রাষ্ট্রের কোন কাজেও আসিবে না। হয়তবা আজ হইতে আরও একশত বছর পর আজকের এই কান্নাজরিত সুর কোন একদিন আজ যারা নিরবিকার হইয়া বসিয়া প্রাচির দেওয়া দেয়ালের মধ্যে নিসচুপ হইয়া বসিয়া আছেন, তাহারাও অনুভব করিবেন কিন্তু তাহাদের ইতিহাস শুনিবার জন্য, তাহাদের অশ্রুভেজা চোখের পাতা দেখিবার জন্য আর কেহই অবশিষ্ট থাকিবে না।

খুব ভারাক্রান্ত মন লইয়া আমি আমার বউ বাচ্চাদের নিয়া বাসায় ফিরিলাম। বিকালে একটা অলস সময় কাটাইতে গিয়াছিলাম কিন্তু সময়টা ভাল কাটিলেও মনের ভিতরে কোথায় যেন একটি বেদনার কিন্তু কষ্টের অনুভুতি আমাকে বার বার তারা করিয়া বেড়াইতেছিল। রাতে কোন কিছু আর খাওয়া হইল না। ক্ষনে ক্ষনেই আমার বারংবার মনে হইতেহিল 'হোরলে বাড়ি, আর পিরনে নারী'।

শারমিন কথা

মেয়েটির সাথে আমার পরিচয় প্রায় তিন বছর আগে। আর এই পরিচয়টা নিছক কোনো কাকতালীয়ভাবে নয়। নিছল প্রোফেশনাল প্রেক্ষাপট থেকেই তার সাথে আমার পরিচয়। ধীরে ধীরে সখ্যতা গড়ে উঠলেও প্রোফেশনাল বাউন্ডারি থেকে জীবনের সব কাহিনী সব সময় জানা হয়ে উঠে না। কিন্তু এই পরিচয়ের মধ্যে প্রোফেশনাল বাউন্ডারীর বাইরেও একটা আলাদা জগতের মধ্যে প্রবেশের পরিবেশ সৃষ্টি হয় যা নিছক ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক।

জীবনের সব কাহিনীর কিছু মোড় থাকে। এই মোড়ে মোড়ে আকাবাকা হয়ে কিছু অব্যক্ত কাহিনী থাকে যা থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। শারমিনের জীবনের ইতিহাসেও এই রকম বেশ কিছু বাক আছে। শারমিনের বিয়ে হয়েছে প্রায় অর্ধ যুগের উপর কিন্তু ঈশ্বর তাকে তিনি অনেক ভাগ্সেয আর আনন্ইদ থেকেই যেনো বিনা কারনে বঞ্চিত করে রেখেছন। কেনো এমন হয়? কেনো ঈশ্বর কাউকে থলে ভরা সম্পদ দেন, ঘর ভর্তি মানুষ দেন কিংবা দুহাত ভরে শান্তি দেন, আবার কারো কারো জন্য ঈশ্বর কিছুই দেন না। এর ব্যাখ্যা বড় জটিল। শারমিনের জীবন টাও যেনো সেই দলে যারা আজীবন শুধু বঞ্চিতই ছিলো। না জোগান দিলেন সি সাধের যেখানে কোনো হাটি হাটি পা পা করে ঘরময় ঘুরে বাড়াচ্ছে ক্ষুদ্র মানুষের পদধ্বনি, না ঝমকালো সম্পদের পাহাড়, অথবা সমাজের উচ্চবিত্তের কোনো অহংকার। ঈশ্বর কাকে কেনো এই সার্থকতা থেকে কি কারনে বঞ্চিত করেন, তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন। আপাত দৃষ্টিতে আমাদের কারো কারো সহানুভুতি থাকলেও একটা জিনিষ সঠিক যে, ঈশ্বর তার সৃষ্টির সাথে কখনো মশকরা করেন না। তিনি যার যার সামর্থের উপর, যোগ্যতার উপর তাকে পুরুস্কার করেন। যতোক্ষন না কেউ কোনো কিছুর জন্য মানসিক, এবং মানবিক দিক থেকে প্রস্তুত না হয়, অথবা তাকে প্রস্তুত না করেন, ততোক্ষন পর্যন্ত ঈশ্বর তাকে সেই কাঙ্ক্ষিত পুরুস্কার কে তিনি তার হাতে তুলে দেন না। ঈশ্বর সবচেয়ে ভালো বিচারক। যে যতটুকুর ভার বহন করতে পারে, যে জিনিষের ভার বহন করতে পারবে, ঈশ্বর তাকে সেই জিনিষের ভারই তাকে দেন। অপাত্রে তিনি কোনো কিছুই দান করেন না। হোক তাকে তিনি যতো সুন্দর করেই সৃষ্টি করেন না কেনো।

ঈশ্বর এই জাতীয় মনুষ্য বাহিনীকে যুগে যুগে একটা রেফারেন্স দেওয়ার লক্ষ্যে, তাদেরকে উদারন হিসাবে রাখার জন্য হয়তো মনুষ্য সমাজে নিছক একটা লোভনীয় মুর্তি হিসাবে জাগিয়ে রাখেন।

আইন্ডেন্টিটি (পর্ব-১)

২৪ বছর পর মনিকা জানতে পারলো যাকে সে বাবা বলে চিনত, যাকে সে আদরের ছোট ভাই বলে জানতো, যাকে সে বোন, চাচা, দাদা, জেঠা ফুফু ইত্যাদ বলে জানতো, তারা আসলে মনিকার কেউ না। বাবা বাবা না, দাদা দাদা না, ভাই ভাই না, বোন বোন না, জেঠা, চাচা, এরা ওর কেউ দাদা, ভাই বা বোন কেউ না। অথচ কাকের বাসায় কোকিলের ছানার মতো তার জন্ম হয়েছে, শৈশব কেটেছে, বাল্যকাল কেটেছে, আর এখন সে একজন পুর্ন বয়ষ্ক যুবতী। তাহলে এই ২৪ বছর ধরে যে মনিকা তিলে তিলে তার অন্তর, আত্মা আর মানসিকতা দিয়ে কিসের বালুর এক প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলো যা আজ হটাত করে সমুদ্রের এক জলোচ্ছাসে নিমিষের মধ্যে তছনছ করে মিলিয়ে গেলো?

সব মিথ্যা। এ যাবত মনিকা যা পেয়েছে, যা দেখেছে, যা শুনেছে, আজ সব তার কাছে মিথ্যা বলে সামনে এসে সত্য হাজির হয়েছে। মনিকা কাকে এই প্রশ্নের উত্তর জানাতে বলবে? মিথ্যে হলো সেই জাল যা একটা মানুষ তার নিজের অজান্তেই সে নিজের জন্য বিছায়। কিন্তু মনিকা তো নিজে কোনো মিথ্যার জাল বুনে নাই!! তাহলে তার ব্যাপারে এমনতা হলো কেনো? কথায় বলে, মিথ্যাও কখনো কখনো সত্যি হয়ে যায়। মনিকা আজকের এই মিথ্যাটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। কোন একটা মিথ্যাকে হাজার বার বললে নাকি মিথ্যাটা সত্য হয়ে যায়। কিন্তু মনিকা জানে, তার এই মিথ্যা বা সত্য যেটাই হোক হাজারবার কেনো আজীবন কাল ধরে আওড়ালেও আর সত্যিটা মিথ্যা আর মিথ্যাটা সত্যি হয়ে যাবে না। হয়তো মিথ্যাটা এ যাবত কাল পর্যন্ত যেভাবে চাপা পড়েছিলো, আজো হয়তো সেটা চাপা দিয়েই মিথ্যাটাকে সত্য বলে চাপিয়ে জীবন চালাতে হবে অথবা, সমস্ত জগত সংসার ছেড়ে আকাশের পানে চেয়ে কোনো এক নামহীন গন্তব্যে সারাজীবনের জন্য হারাইয়া যেতে হবে। কারন সত্যি আর মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা সব সময় সহজ হয় না।

মনিকা তার পড়ার টেবিলে জল ছাড়া মাছের মতো ছটফট করছে আর বসে  শুধু একা নীরবে এটাই ভাবছিলো তার ভবিষ্যত কি আর তার বেচে থাকার অর্থই কি। ভালোবাসায় যেমন অনেক শক্তি থাকে, তেমনি বদনামেরও একটা ভয় থাকে। সকাল থেকে এই সন্ধ্যা অবধি মনিকা তার সারা জীবনের গল্পটা আর এখন যেনো মিলাতে পারছিলো না। বারংবার মনে হচ্ছিলো, মনিকা, তার বাবা, তার মা, তার পরিবার যেনো একটা মুখোশ পড়েই এই সংসারে চলমান ছিলো। আজ সেই মুখোশ খসে পড়েছে বটে, কিন্তু মনিকা এটাও বারবার ভেবে কোনো কুল কিনারা পাচ্ছিলো না যে, মুখ আর এই মুখোশ তার আলাদা করা কতটা  বুদ্ধিমানের কাজ হলো

মনিকার প্রতিনিয়ত এটাই মনে হচ্ছিলো, এইতো গতকাল রাত পর্যন্ত তো সবই ঠিক ছিলো। অথচ আজ এতোদিনের একটা সম্পর্ক একটা মাত্র 'হ্যা' বলার মধ্যে সব তছনছ হয়ে গেলো? জীবন দাঁড়িয়ে গেলো কোনো এক মুল্যহীন ঘাটের ধারে যেখানে না আছে পারের কোনো খেয়া, না আছে ঘাটের কোনো মাঝি!

এই মর্মান্তিক ঘটনা হটাত করে কেমন করে মনিকার জীবনে ঘটে গেলো? এটাও একটা রহস্যের ব্যাপার ছিলো। জীবনের অনেক কাহিনী আছে যা রহস্যে ঘেরা থাকে। যখন কেউ এই রহস্য ঘেড়া চাদর সরাতে যান, তখন এমন এমন কিছু প্রশ্নের উদয় হতে পারে যা সাভাবিক জীবনের ভিত নড়ে যেতে পারে। এইসব রহস্য ঘেরা প্রশ্ন জানলেও অসুবিধা আবার না জানলেও জীবন সাভাবিক হয়ে উঠে না। এক্ষেত্রে কি জানা উচিত আর কি জানা একেবারেই উচিত না, সেটাই নির্ভর করে পরবর্তী সুখী জীবনের জন্য। মনিকার প্রায়ই মনে হচ্ছিলো যে, অন্য আর ভাই বোনদের সাথে ওর বাবা মার আচরন, ব্যবহার আদর আপ্যায়ন অনেক কিছুই গড়মিল। আর্থিক সচ্চলতার সাথে পরিবারের এই জন্মগত ব্যবহারগুলির মধ্যে কোনো তারতম্য থাকার কথা না। কারন তারা একই গোত্রের, একই পরিবারের। কিন্তু মনিকার মধ্যে এই প্রশ্ন বহুবার মনে উদয় হয়েছিলো, আসলেই এ রকম তারতম্য কেনো? সত্য বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। কোনো একদিন মনিকার মনে হচ্ছিলো, মনের দুক্ষে অনেক কাদবে সে মার সাথে বাবার সাথে। সে রকমেরই একটা পরিস্থিতি গতকাল সৃষ্টি হয়েছিল। কথায় কথায় মনের দুক্ষে আর রাগে যখন মনিকা তার মাকে এই অদ্ভুদ প্রশ্নটি করেই ফেল্লো, "মা, আমি কি তোমাদের আসলেই আসল মেয়ে? নাকি আমাকে তোমরা কোথাও থেকে কুড়াইয়া এনেছো?"

মনিকার এমন প্রশ্নে মানসিকভাবে দূর্বল মা, একেবারে ভেঙ্গে পড়েছিলেন, আর তার মনের অজান্তেই সব সত্যি কথা বলে দিলেন। মনিকা তার বাবার আসল মেয়ে নয়।

ঝড়টার আভাষ অনেক আগেই ছিলো, কিন্তু এবার শুরু হয়ে গিয়েছিলো। আজ এতো বছর পর তাহলে মনিকা কে? আচমকা এই সত্যের মুখুমুখি দাঁড়িয়ে ক্ষনিকের জন্য হলেও মনিকার জ্ঞান হারিয়েছিলো বটে কিন্তু অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। মেনে নিতে শিখতে হয়। আজ নিশ্চিত জানলো মনিকা যে, জীবনের যাত্রার শুরু থেকে শেষ অবধি মনিকার রাস্তাটা একটা অন্ধকারই ছিলো, ওর জীবনটা ছিলো একটা অন্ধকার টানেল, যেখানে মাঝে মাঝে আলো আসে বটে কিন্তু সে আলোয় কোনো কাজ হয় নাই।  আজ সত্যটা একদম নাকের ডগায় বসে মনিকাকে এমনভাবে চুরমার করে দিলো যে, টাইম টাকে মনে হলো সবচেয়ে বড় ভিলেন। মনিকা  সামনে যা দেখছিলো, তার থেকে অনেক বেশি ঘটনা লুকিয়ে ছিলো তার না দেখার পিছনে। মনিকা এখন এমন একটা বয়সের দ্বার প্রান্তে দাড়িয়েছিলো, যার নাম যৌবন। আর এই যৌবন হলো এমন এক প্রাকৃতিক উপাদান যার দ্বিতীয় নাম শক্তি কিন্তু বড় অসহায়।

কারো পরিবার যখন নিমিষের একটা তথ্যের সার্টিফিকেটে অপরিচিত হয়ে যায়, তখন সবচেয়ে কাছে যে আসে, সে হলো বন্ধুত্তের শক্তি। বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের একটা গুরুত্তপুর্ন অংশ। মনিকারও এমন একজন বন্ধু ছিলো, যার না ছিলো কোনো সামাজিক প্রতিপত্তির অভাব, না ছিলো কোনো যশের কমতি। এই গত কিছু বছর যাবত মনিকার সাথে এই প্রতিভাযশি বন্ধুত্বটা এমনভাবে তার জীবনে এসেছিল, মনিকার কখনো মনে হয়েছে সে তার মা, তার বাবা, আবার কখনো মনে হয়েছে সে তার প্রিয়তম। মনিকার কাছে তার এই বন্ধুটি যেনো কোনো এক শিল্প। প্রায়শই মনিকার কাছে এ প্রশ্ন কুরিকুরি অংকুরের মতো উদয় হতো, জীবন শিল্পকে নকল করে নাকি শিল্প জীবনকে নকল করে? ব্যাখার কোনো আর আজ প্রয়োজন পড়লো না। ভঙ্গুর চিত্তে, হতাশ মনিকা, কিছুক্ষন গলা ফাটিয়ে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে বাক্রুদ্ধ হয়ে বসে রইলো। মিথ্যে চোখের জল একটা সময় আর কাজে লাগে না।মনিকার কাছে আজকের দিনের চোখের জলকে পুরুই মিথ্যা মনে হতে লাগলো। যখন কোনো মানুষের দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে, সে সব সময়ই চাবে যে, সে অন্য কারো সাথে তার এই দুক্ষটা, কষ্টটা শেয়ার করতে। কেউ তো থাকবে যে, ওর কথা শুনবে। বুঝুক না বুঝুক সেটা আলাদা ব্যাপার, কষ্ট লাগব করুক বা না করুক সেটাও আলাদা ব্যাপার। কিন্তু কারো সাথে তো তার এই কষ্টের ব্যাপারগুলি শেয়ার করার দরকার। কেউ চলে যাবার পর হয়তো কিছু পরিবর্তন নজরে আসে।

অবশেষে মনিকার যার চেহারাটা প্রথম মনের মানস পটে ভেসে উঠেছিলো, সে আর কেউ নয়, আকাশ। যে আকাশকে একদিন মনিকা তার ঘরের সব দরজা বন্ধ করে দিয়ে পলায়ন করেছিলো, আজ যেনো মনে হলো, এই আকাশই যেনো তার সুরক্ষার ছাদ। ঘরের দরজা বন্ধ হবার সাথে সাথে সবসময় মনের দরজা যে বন্ধ হবে এমন কোনো কথা নাই। একটা ভরষা ছিল ক্ষীন। অবশেষে মনিকা আকাশকেই ফোন করে এটাই বলার চেষ্টা করলো যে, যে বিষয়টায় আশংকা ছিলো, ভয় ছিলো, দুশ্চিন্তা ছিলো সেটাই হয়ে গেলো আজ। মনিকা আজ এক নামবিহীন কোনো এক পরিচয়হীন বেওয়ারিশ মুন্ডুহীন জীবন্ত লাশ। এখন যদি তার কিছু অবশিষ্ঠ থেকে থাকে, তা হল একটা শরীর, কিছু মাংশ আর সমস্ত জীবনভর অনিশ্চয়তা।  মনিকার আর কোথাও যাবার দরজা নাই। মনিকার জীবন হাপিয়ে উঠেছে। কোথাও কেউ নাই। জীবন যেনো একটা নদী।

তারপরেও আবার বারবার মনিকার মনে হচ্ছে, আকাশ নদীটা কি তার জীবনের লক্ষ্য পার হবার জন্য সঠিক নদী? মনিকা বারবার একই প্রশ্ন নিজেকে করেছিলো, কিন্ত কোনো উত্তর আসছিলো না। কারন, আপনি একই নদীতে দুবার পা দিতে পারেন না, দেওয়া যায় না। কিন্তু মনিকার জীবন নদীতে এখন বান ডেকেছে। এই কয়টা মাস খালী জল জমতেই থেকেছে, জমতেই থেকেছে, আর এখন সে জল প্রায় মাথার উপর উঠে গেছে, এখন এই জলের বানেই হয়তো মনিকা ডোবে যাবে। মনিকা হাপিয়ে পড়েছিল। ভয় পেয়েছিলো। মনিকার বারবার এটাই মনে হচ্ছিলো, এখন দরকার তার একটা সেটেলমেন্ট। আকাশের উপর কিছু ঘৃণা জমেছিলো বটে, কিছু রাগ হয়েছিলো বটে কিন্তু আজ মনিকার মনে এটাই বারবার উদিত হচ্ছিলো, অনেক সময় ঠিকানা ভুল হয় কিন্তু ওই ঠিকানায় যারা থাকে তারা হয়তো ঠিক লোক। আকাশের ঠিকানাটা মনিকার জন্য এইমুহুর্ত শুধু নয়, আজীবনের জন্যই হয়ত ভুল, কিন্তু আকাশ ভুল ছিলো না। পরিত্যক্ত ঘুনে ধরা কিছু জরাজীর্ন অন্ধ ভালোবাসার থলিটা নিয়ে মনিকা বুকের পাজরে শক্ত করে ধরে আজকের পরিত্যক্ত নিজের পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে গেলো কোনো এক অজানা গন্তব্যের পথে যেখানে হয়তোবা আকাশ নীল রংগের চাদর বিছিয়ে কিছু মেঘমালা সাজিয়ে দিনের শেষে সুর্যের লাল আভায় তারই আরাধনায় ভজনে লিপ্ত। বারবার মনিকার মনে হয়েছে, এ লোকগুলি আমাকে একের পর এক ঠকিয়েছে। বারবার ঠকিয়েছে। এই ঘরে আমার সমস্ত অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমি এদের আর কেউ নই।

কিন্তু আকাসই বা কেনো মনিকার জন্য এভাবে জজ্ঞ করবেন? আবার বিশ্বাস হয়েও ছিলো। অন্ধ বিশ্বাস এমন এক চোরাবালী, যার না আছে একুল, না আছে ওকুল। সেখানে হয়তো কোনো জ্ঞানের আলো পৌছতে পারে, কিন্তু কোনো তর্ক বিহীন আশ্বাস ভর্তি থাকে। মনিকার এবার একটা কথা মনে হলো, বিশ্বাসভাজন হবার জন্য দরকার সেক্রেফাইস, দরকার একনিষ্টতা। আর দরকার নিজের সাথে নিজের সৎ হওয়া। আজ যেখানে মনিকা হারিয়ে গেলো, সেখান থেকেই মনিকাকে আবার নতুন জীবন নিয়ে বেচে উঠতে হবে এই জগত সংসারে। প্রথমবার যখন সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিলো আকাশের সাথে, তখন প্রয়োজন ছিলো সাময়িক। কিন্তু এবার মনিকার কাছে মনে হলো, সম্পর্কটা জীবনে বাচার সাথে এই সম্পর্কটা জরুরী। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে সম্পর্ক জুড়তে যাওয়া একটা ভয়ংকর অপরাধের জন্ম দেয়। প্রথমবার যেটা মনে হয়েছিল। কিন্তু এটা আজ আর কোনো ভয়ংকর মনে হলো না। আজ এটাই বারবার প্রমান হচ্ছে যে, সময় নতুন সম্পর্ক তৈরী করে। কষ্টের সময় যারা থাকে, তারাই তখন নিজের ফ্যামিলি হয়ে যায়। আকাশ আমার পরিবার।

সব কিছুরই প্রথমবার আছে। এটা যেমন ভালোবাসার ক্ষেত্রে তেমনি অপরাধের ক্ষেত্রেও। আমি প্রথমবার অপরাধ করেছিলাম আকাশকে ছেড়ে দিয়ে, কিন্তু এই প্রথমবার মনিকার মনে হলো, মনিকা আকাশকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। প্রথমবার মনিকা আকাশের সাথে ক্লোজ হয়েছিল একটা দন্ধমুলক সার্থ নিয়ে। কিন্তু আজ ক্লোজ হয়েছে জীবনকে ভালোবেসে। ক্লোজ হওয়া আর এফেয়ার্স থাকার মধ্যে যথেষ্ঠ পার্থক্য আছে। এবার মনিকা আকাশের এতো কাছে চলে আসে যেখানে এফেরার্স এর জন্ম। আর এই এফেয়ার্স কখনোও খোলাখুলি, কখনো বন্ধ দরজার ভিতরে।

আকাশ অন্য দশজন মানুষের থেকে আলাদা। কারো অতিতকে ঘেটে বর্তমানকে বিচার করাই হয়তো ঠিক কাজ নয়, এটা আকাশ নিজে যেমন মানে, সে অন্যের বেলাতেও বিশ্বাস করে। কিন্তু ভরষা হলো এমন একটা কথা যা বর্তমান আর অতীতের মধ্যে মেলবন্ধন করে, ভবিষ্যতের দিকে অনুমান করে। কোন ব্যক্তি কি করেছিলো, কি করতে চলেছে, এটা নির্ভর করে সে ভবিষ্যতে কি করতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে, যখন কারো সাথে সম্পর্ক হয়, ব্যবসায়িক বা নিজস্ব, অই ব্যক্তির সম্পুর্ন জীবন একটা দলিল হিসাবে সামনে আসে। তখন আমরাই বিচার করতে পারি যে, সম্পর্ক রাখা উচিত নাকি রাখা উচিত নয়। এটা কোনো চরিত্র বিশ্লেষনের ব্যাপার না, শুধু একটা সম্পর্ক জোড়ার লাভ এবং ক্ষতির প্রশ্ন। মনিকা কোনো কিছুই আর না ভেবে ফিরে এলো সেই পুরানো চৌকাঠের ভিতর যেখান থেকে একদিন আকাশকে না বলে ভোরের অন্ধকার পেরিয়ে সেই পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েছিলো, যেটা তার কোনোকালেই ছিলো না, আর আজ তো একেবারেই নাই।

(চলবে)

ভিন্ন প্রসঙ্গ–সবার জন্য 

একটা জিনিষ ইদানিং খুব বেশী করে অনুভুত হয় যে, জীবনের সব অধ্যায় এক রকম নয়।  এটা আমার হয়ত বুঝতে দেরী হয়েছে কিন্তু এই সব তত্ত্বকথা মনিষীরা যুগে যুগে বলে গেছেন। মনিষীরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক তত্ত্বকথাই বলে গেছেন বটে কিন্তু কেউ সে সব তত্ত্বকথা মানে না। হ্যা, মানে তখন যখন কারো জন্য সেসব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং নিজেদের জন্য প্রযোজ্য হয়। সেই সুবাদেই বলছি যে, আমি আপনি ততোক্ষন সবার কাছে যত্নশীল যতোক্ষন আপনি নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারবেন কিন্তু পাওয়ার আশা করবেন না। আশা করলে আপনি হেরে যাবেন। এটা নিজের স্ত্রী থেকে শুরু করে সন্তান, পাড়াপ্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার বেলায় প্রযোজ্য। কেউ মানুক বা না মানুক, এটাই সত্য।

এর থেকে যে শিক্ষাগুলি নেওয়া দরকার তা হচ্ছে,যা কিছু করবেন জীবনে, নিজের জন্য করুন, নিজে সুখী সময় কাটানোর জন্য আয় করুন এবং তা দুইহাত ভরে খরচ করুন। আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার সন্তানগন কিভাবে চলবে কিংবা তারা কোথায় কিভাবে বাস করবে তা আপনার চিন্তা থাকতে পারে বটে কিন্তু তারজন্য অনেক কিছু আয় করে সঞ্চয় করে তাকে পঙ্গু করে রেখে যাওয়ার কোনো দরকার আমি মনে করি না। বরং তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিন, তাতেই সে এই পৃথিবীর কোনো না কোনো স্থানে ঠাই করে নেবে। এই পৃথিবী পরিশ্রমী মানুষের জন্য সুখের আবাস্থল। অলসদের জন্য এখানে সব কিছুই নাগালের বাইরে।  পূর্ব বর্তি জেনারেশনের আহরিত সম্পত্তি উত্তরসূরিদের জন্য কিছুটা আরামদায়ক হলেও একটা সময় আসে, কোনো না কোনো উত্তরসুরীর মাধ্যমেই তা বিনাশ হয়। এই বিনাশ টা হয়ত এক জেনারেশনের মধ্যে ঘটে না। কারো কারো বেলায় এক জেনারেশনেই শেষ হয়ে যায় আবার কারো কারো বেলায় এটা ক্ষয় হতে কয়েক জেনারেশন পার হয়। কিন্তু ক্ষয় হবেই। এর প্রধান কারন, যিনি সম্পদ করলেন, তার যে দরদ, আর যারা বিনা পরিশ্রমে পেলো তাদের দরদ এক নয়। আরেক টা কারনে নস্ট হয়। তারা হলেন যাদের বংশ ধরের মধ্যে ছেলে রি-প্রেজেন্টেটিভ নাই। ওই সব লোকের বেলায় তাদের কস্ট করা সম্পত্তি নিজের ছেলে সন্তানের পরিবর্তে চলে যায় অন্য বাড়ির আরেক ছেলের হাতে যিন সম্পদের মালিকের নিছক মেয়ের স্বামী। এরা দ্রুত সম্পদ হাত ছাড়া করে কারন তারা একদিকে এতাকে ফাও মনে করে, অন্যদিকে যতো দ্রুত সম্ভব সব সম্পত্তিকে নিজের নামে রুপান্তরিত করতে চায়।

যেহেতু আপনি পরিশ্রম করছেন, সুখটা আপনিই করুন। যদি ভাবেন যে, আগে সঞ্চয় করে স্তূপ করি, বাড়ী গাড়ি করি, ব্যাংকে একটা মোটা টাকা সঞ্চয় হোক তাহলে আপনার হাতে একটু সময়ও নেই সকালের সূর্য দেখার অথবা রাতের জ্যোৎস্না দেখার। আপনার ভাগ্যে আছে শুধু বাদরের মতো এই স্থান থেকে অন্য স্থানে লাফিয়ে লাফিয়ে কোথায় ফল পাওয়া যায় তার সন্ধান করা, অথবা পালের বলদের মতো সারাজীবন হাল চাষের মতো চাষির হাল বেয়ে যাওয়া যাতে চাষিই শুধু লাভবান হয়, আর নিজে শুধু জাবর কাটবেন।

এ কথাগুলি কেনো বলছি?

আমার চোখে দেখা এই ছোট্ট জীবনে অনেক ঘটনা। কস্ট করে সম্পত্তি বা এসেট রেখে গেছেন, কিংবা ব্যবসা রেখে গেছেন, জাস্ট তার মরনের পর ওই সব সম্পত্তি কত তাড়াতাড়ি ভাগাভাগি করে নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেয়া যায়, তার জন্য তর সয় না। অথচ ওই সব উত্তরসুরীরা এক্টিবার ও তার রুহের মাগ ফিরাত বা ধর্মীয় কোনো উৎসবের একটু ও পয়সা খরচ করতে চায় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারাও সেই এক ই ফাদে পা দিয়ে তাদের উত্তরসুরীদের জন্য ই সঞ্চয় করে জমা করে যান এবং নিজেরা ভোগ করেন না।

   

অপ্রিয় সত্যের মুখুমুখি দাঁড়ানো সাহসের প্রয়োজন

কখনো যদি তোমরা দেখো যে, তোমার অপ্রিয় সত্য কথায় কেউ কোনো উত্তর করছে না, কিন্তু তোমার অগোচরে মুখ ভেটকাচ্ছে, তাহলে বুঝবে যে, তোমার আশপাশ চাটুকারে ভরে গেছে। তুমি বিপদের মধ্যে আছো।  এ অবস্থায় তোমার যা করনীয়, তা হচ্ছে, তুমি একা চলার অভ্যাস করো। এই একা চলার মধ্যে যদি কাউকে রাখতে চাও সাথে, তাহলে এমন কিছু মানুষকে রাখো যারা প্রাইমারী স্কুলের দরিদ্র শিক্ষক। তারা নীতি থেকে বিচ্যুত হয় না আর হবেও না। 

আগামিকালটা কত দিনের?

অনেকেই বলেন, ঈশ্বর বড় উদাসীন। আসলেই কি তিনি উদাসিন? না, তিনি উদাসিন নন। তিনি তার কাজ ঠিক সময় মত করেন, তার কোন কিছুই ঊলট পালট নয়, ঊনি আমগাছে জাম ফল দেন না, কিংবা কাঁঠাল গাছে আনারস ফলান না। বৈশাখ মাসে তিনি কনকনে শীত প্রচলন করেন না, আবার কড়া ভর চৈত্র মাসে তিনি শীতের প্রবাহ করান না। তারপরেও আমরা তাকে অনেক সময় কোন কিছুই বিবেচনা না করে বলে থাকি, ঈশ্বর বড় উদাসিন, ওনি উদাসীন শুধু তাঁর বিশ্বকে নিয়ে। কিন্তু কখনো আমরা নিজেকে প্রশ্ন করি না, আমরা কি উদাসিন? আর আমরা উদাসীন আমাদের অতিত নিয়ে। কেউ অতিত নিয়ে ভাবতে চাইনা, ভাবি শুধু আগামিকালের কথা। কিন্তু এই আগামিকালটা কত দিনের?

গত সপ্তাহে আমি একটি পার্টিতে গিয়েছিলাম বেরাতে। অনেক নামিদামি মানুষজন এসেছিল। কেউ সচিব, কেউ পুলিশের বড় কর্মকর্তা, কেউ আবার ব্যবসায়ী, আবার কেউ সাধারন মানুসদের মধ্যে অনেকে। তাহলে এখন আবার প্রশ্ন করে বসবে, সাধারন মানুষ আর ঐ ক্লাসিফাইড ব্যক্তিগুলোর মধ্যে পার্থক্য কি? ব্যবসায়ী কি সাধারন মানুসের মধ্যে পরে না? কিংবা পুলিশের বড়কর্তা, সচিব ইত্যাদি মানুষগুলো কি সাধারন মানুষ নয়? আমার কাছে এর উত্তর একদম সহজ এবং সরল। না, ওরা সাধারন মানুসের মধ্যে পরে না। তাঁদের সমাজ আলাদা, কথাবার্তা আলাদা, লাইফ স্টাইল আলাদা। সাধারন মানুসের জীবন আর তাঁদের জীবন এক কাতারে পরে না। একজন সাধারন মানুষ তাঁর অপকর্মের কথা ফাস হয়ে গেলে তাঁর আর জীবনের মুল্য থাকে না। সে কোন অন্যায় কাজ করে ফেললে প্রতিনিয়ত তাঁর ভিতরে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে থাকে, সে নিজে নিজে একা একা দহিত হতে থাকে, লোক লজ্জার ভয়ে কেমন যেন নিজের মধ্যে সুপ্ত হয়ে থাকে, আর তাতেই সে অসুস্থ হয়ে জীবননাস হতে পারে। কিন্তু ঐ ক্লাসিফাইড লোকগুলো খুব স্পস্টবাদি, তারা তাঁদের অনেক অপকর্ম প্রকাশ্যে একে অন্যের সঙ্গে খুব সহজেই শেয়ার করে। মাঝে মাঝে ঐ অপকর্মগুলো একটা গুনের বহিরপ্রকাশ হিসাবেও নিজেদের অহংকার হিসাবে ধরে নেয়। এই যেমন, একজন আইনজ্ঞ সাহেব সেদিন পার্টিতে খুব ফলাও করে বলছিলেন, তিনি প্রতিদিন প্রায় লক্ষ টাকার উপর আয় করেন। আমি তাকে খুব ভাল করে চিনি না। আমার একবন্ধু তাকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে বললেন, বন্ধু, ওনি হচ্ছেন ডিস্ট্রিক্ট জজ লুতফুল কবির। খুব মাই ডিয়ার লোক। অনেক পয়সার মালিক। ধান্মন্ডিতে দুটু বাড়ি আছে, সাভারে কয়েক একর জমি আছে, নিজের জন্য একটা গাড়ি, বউয়ের জন্য একখান গাড়ি। আশুলিয়ায় প্লট কিনেছেন দশটার উপরে। সব ক্যাশ টাকা দিয়ে। আল্লাহ তাকে তিনখান বাচ্চা দিয়েছেন। দুইজন তো খুব ভাল করছে পরাশুনায়। অনেক মানুষের উপকার করেন তিনি, সমাজে বেশ দান খয়রাত করেন, শুধু তাই নয়, তিনি আগামিতে এমপি ইলেকশনেও দাঁড়াবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝখানে ১/১১ তে খামাকা দুদক তাকে অনেক হয়রানি করেছিল। আয় বহির্ভূত নাকি অনেক আয়ের তিনি বৈধ না হওয়ায় প্রায় মাস খানেক এদিক সেদিক থাকতে হয়েছিল। আইনজীবী হয়েও আইনের পাল্লায় পরে গিয়েছিলেন। তবে ওটা বেশিদিন লুতফুল ভাই জিইয়ে রাখেন নাই। একেবারে মাল পানি ঢেলে বীজ উপড়ে ফেলেছেন। এখন একদম ক্লিন আমাদের এই লুতফুল ভাই।

শুনে আমার খুব ভাল লাগলো। পরিচয় হয়ে আমারও খুব ভাল লাগলো। তিনিও মনে হল আমার সঙ্গে পরিচিত হয়ে প্রীত হলেন। একসময় কফি খেতে খেতে বললাম, আইন ব্যবসা ছাড়া আর কোন ব্যবসা করেন নাকি লুতফল ভাই? তিনি অত্যন্ত মৃদু ভাষায় বললেন, না ভাই, এই একটার জন্য সময় দিতে গিয়েই হিমশিম খাচ্ছি, আবার অন্য ব্যবসা কেমন করে করি? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করল, তাহলে আপনি প্রতিদিন কি এমন করেন যে, প্রায় এক লাখ টাকার আয় হয়?

লুতফুল সাহেব ভাল মানুষ। ওনি কথা বলেন সরাসরি। কোন রাখঢাক নাই। বললেন, আমার কোর্টে আমি কাউকে জামিন দেই না। সে যেই মামলাই হোক। “বেলএব্যাল” কেস হলেও আমি জনা প্রতি বিশ হাজার আর হেভি টার্গেট হলে তো কথাই নাই। খাসা পাঁচ লাখ। মাসে সব মিলিয়ে গরপরতা ত্রিশ পয়ত্রিশ লাখ টাকা থাকে। ভাই, নিবই যখন, তখন আর রাখঢাক করে লাভ কি? মাঝে মাঝে কিছু মিথ্যা কেস কেউ কেউ নিয়া আসে। আমি বুঝতে পারি। ঐ কেসগুলোর জন্য পয়সা বেশী পাওয়া যায়। সবসময় ওগুলো পাওয়া যায় না, তবে একবার পেলে সোনারখনি হাতে পাওয়ার মত। ঝুলিয়ে রাখবেন, আবার পয়সা নিবেন। পয়সা দিবে না? কোন অসুবিধা নাই। অপোজিট পার্টিকে  হাত করে ফেলার একটা হুমকি দিয়ে রাখবেন। জানেন ভাই, মানুসের একটা দুর্বল পয়েন্ট আছে, তারা হুজুরদেরকে বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করে আর করে এই আইনজীবী লোকদেরকে। ডাক্তারকেও তারা এতটা বিশ্বাস করে না। আর এই দুর্বলতার সুযোগটাই আমরা অনেকে নেই। এটা তো আমার কাজ, তাই না ভাই? ঘুস তো আর খাই না, আমি মুজুরি নেই। কাজের মুজুরি। এতে তো আর দোষের কিছু নাই।

ঠিক কথা বলেছেন লুতফুল সাহেব। নেবেনই যখন, তখন আর রাখঢাক করে লাভ কি? আর ওনি তো কাজের মুজুরি নিচ্ছেন। আর সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের জায়গা তো একটাই, আদালত। আর এই আদালতেই তো তিনি কাজ করেন। অন্যায় যে করে আর সত্যের পথে যে আছে, তাঁদের মধ্যে বিবাদ হলে তো দু পক্ষেরই আইনজীবী লাগবে। লুতফুল সাহেব কেসটা না নিলে তো আরেকজন নিবেই। তাহলে ওনার নিতে অসুবিধা কই?

অনেক কথা হল লুতফুল ভাইয়ের সঙ্গে। আমার মনে হল, লুতফুল ভাই যে মানসিকতায় বেড়ে উঠছেন, আর যে উপলব্ধি থেকে সমাজে তিনি আজ অনেক বড় একজন বিত্তশালি হয়ে উঠছেন, তাঁর অনেক গলদ রয়ে গেছে। কিন্তু তাঁর চারিপাশের কোন বন্ধু, বা আত্মীয়সজন, কিংবা সহকর্মী কিংবা তাঁর খুব কাছে কোন লোক কেউ তাকে শুধরানোর পথ বলে দিচ্ছেন না। একটা সময় আসে, যখন পয়সা মানুসের জিবনে সৎ উপদেশের পথ রুদ্ধ করে দেয়। তখন শুধু চাটুকারদের দল কাছে ভিরে তাকে আরও গভির থেকে গভিরে নিয়ে যায় যেখান থেকে ফিরবার আর কোন পথ থাকে না। লুতফুল সাহেবের অবস্থা দেখে আমার তাই মনে হল।

পার্টি প্রায় শেষ। আরেক কাপ কফি খাচ্ছি আমরা সবাই মিলে। আমি লুতফুল ভাইকে কফি খেতে খেতে বললাম, লুতফুল ভাই, একটা প্রশ্ন করি?

ওনি মাই ডিয়ার লোক, বললেন, আরে ভাই, করেন না, করেন। যদি বলেন কি রঙের আন্ডারওয়ার পরে এসছি, সেটাও বলে দেব। খালি জিজ্ঞেস করে দেখেন না…… বড় মজার লোক।

বললাম, লুতফুল ভাই, আজ থেকে ৫০০ বছর আগের আপনার বংশের কারো নাম জানেন?

প্রশ্ন শুনে ওনি এমন করে হেসে উঠলেন যে তাঁর হাতে থাকা কফি কাপটা প্রায় আমার উপর পরতে যাচ্ছিল আর কি। হাসতে হাসতেই বললেন, কি করে সম্ভব আখতার ভাই যে ৫০০ বছর আগের বংশের কারো নাম মনে রাখা? আপনি কি বলতে পারবেন ৫০০ বছর আগের কারো নাম?

বললাম, আমার প্রশ্নটা শেষ হয় নাই লুতফুল ভাই। ওনি আমার কথার আওয়াজ শুনে গম্ভির হয়ে গিয়ে আবার প্রশ্ন শুনতে চাইলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, থাক, ৫০০ বছর দরকার নাই, ৪০০ বছর আগের কেউ? বা ৩০০ বছরের আগের কেউ, অথবা ২০০ বছর আগের কেউ? কারো কথা কি আপনার মনে আছে?

এবার তিনি হাসলেন না। বললেন, না আখতার ভাই, ঐ অতো বছর আগের ফ্যামিলির কারো নামই আমি জানি না। তবে আমার দাদার বাবার নাম আমার জানা আছে। ওনি প্রায় আজ থেকে ৬০ বছর আগে মারা গেছেন।

আমি কফিতে চুমু দিতে দিতে বললাম, তাঁর মানে প্রায় ৬০ বছর আগের ইতিহাস। কিছুটা এখনো জেগে আছে। আচ্ছা লুতফুল ভাই, আজ থেকে ২০০ বছর পরে তাহলে কেউ কি আপনার কথা মনে রাখবে? বা ৩০০ বছর পর? অথবা ৪০০ বছর পর? আজ আমি আপনে এবং সবাই যে এমন একটা চাঁদনী রাতে কি মজা করে কফি খাচ্ছি, কত সুন্দর টাই-স্যুট পরে এখানে সমাবেশ করছি, এই কি বিশাল সুন্দর বিল্ডিং করেছি, এসি গাড়িতে চরছি, এর কোন কথাই কেউ জানবে না বা মনে রাখবে না আজ থেকে ১০০ বছর পরে। লুতফুল সাহেব খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথাগুলো শুনছিলেন বটে কিন্তু ওনার যে মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমি বুঝতে পারছিলাম।

আমি বলতে থাকলাম, “অথচ জানেন লুতফুল ভাই, আপনার আমার মরার ৫০০ বছর পরেও আমাদের রেখে যাওয়া এই সাভারের জমি, ধানমণ্ডির বাড়ি, আশুলিয়ার প্লট এইসব নিয়ে আমাদের সব পর্যায়ের জেনারেশনরা একে একে দাবিদার হয়ে মারামারিও করতে পারে। কিন্তু কেউ ঐ সম্পত্তি বিক্রি করে বা তাঁর একটা আয় থেকে কখনও আমাদের আত্তার মাগফেরাত কামনা করে একবেলা মিলাদ পরাবে কিনা সন্দেহ আছে। আয় করে যাবেন আপনি, এর সব দায়দায়িত্ব (ন্যায় পথে অথবা অন্যায় পথে আয় যাই হোক না কেন) আপনার, অথচ, আপনার কোন কাজেই তা লাগবে না। তাহলে এই সম্পত্তির কি ভ্যালু আছে? কার জন্যে রেখে যাচ্ছেন এই দায় দায়িত্ব?

লুতফুল ভাই এতক্ষন চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলেন। মনে হল তিনি এখন কিছুটা অসস্থিবোধ করছেন। ওনার হাতে ধরা কফির কাপটায় যে কফিগুলো এতক্ষন গরম একটা সুগন্ধি ছরাচ্ছিল, এখন তা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে।

আমি আমার কথা চালিয়ে যেতে লাগলাম।

এই দেখেন লুতফুল ভাই, সামান্য এক কড়া শাসক নামে পরিচিত ১/১১ এর সরকার। তাঁর কাছেই আমরা আমাদের সম্পদের হিসাব সম্পূর্ণ তুলে ধরতে না পারার কারনে কতই না এদিক সেদিক পালিয়ে বেড়ানো। হয়ত ঘুষ পয়সা দিয়ে আপাতত ম্যানেজ করা গেছে। সামান্য এক কেয়ার টেকার সরকারের কাছেই আমরা আমাদের সত্যকারের হিসাবটা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। আর এই বিশাল জগতের যিনি মালিক, যার আওতার বাইরে যাওয়ার আমাদের কোন শক্তি নাই, যিনি কোন টাকা-পয়সা, ক্ষমতা বা এই জাতিয় কিছুই পরোয়া করেন না, তাঁর কাছ থেকে আমাদের এই অঢেল দুই নম্বরি সম্পত্তির হিসাব কিভাবে দেব? আর এই সম্পত্তির হিসাব শুধু আমাকে আপনাকেই দিতে হবে। এর জন্য আমার কোন উত্তরসুরি, আমার কোন প্রিয় মানুষ তাঁর উত্তরের জন্য বা জবাব্দিহিতার জন্য দায়ি নন। যদি তাইই হয়, তাহলে কি আমার আজকের এই বাহাদুরি করে করা সম্পদ আমার জন্য কোন সুখের বিষয়? আমি তো এগুলোর এক কানাকড়িও সঙ্গে নিতে পারব না!! প্লট পরে থাকবে আশুলিয়ায়, জমি পরে থাকবে সাভারে, ধান্মন্ডির বাসায় আমার লাশটা শুধু গ্যারেজের মধ্যে একদিন রেখেই পুতে দেওয়া হবে ঐ জঙ্গলটায় যেখানে আমি এখন ভুলেও পা রাখি না।

লুতফুল ভাই কোন কিছুই বললেন না। রাত অনেক হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরতে হবে। আমরা যার যার কাছে বলে কয়ে যার যার বাড়ি ফিরে এলাম। লুতফুল ভাই আমার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে আমার সাথে হাত মেলালেন। কোন কথা বললেন না। শুধু বললেন, আমার ছোট মেয়েটার জন্য দোয়া করবেন। ও ক্যান্সারে ভুগছে।

তাঁর এই ছোট মেয়ের ক্যান্সারের কথা তা আমি আগে জানতে পারিনি। আমার বন্ধুটিও বলে নাই। আর জানলেও হয়ত এটা নিয়ে আমি কোন কথা বলতাম না। কিন্তু, আমার কেন যেনো মনে হল লুতফুল ভাই যদি আজ সৎ মনে সৎ রোজগারে সৎ পথে ঈশ্বরকে ডেকে বলতে পারতেন, হে ঈশ্বর, আমি তো তোমার কোন আদেশ অমান্য করি না, আমি তো তোমার দেওয়া হালাল রিজিক খাই, আমি তো কোন অন্যায় পথে আমার রিজিক উপার্জন করি না, আমি তোমার সব আদেশ, নিষেধ যেভাবে পালন করতে বলেছ, সেভাবেই করছি, তাহলে তুমি আমার এই ছোট মেয়ের ক্যান্সার দিয়ে আমার মনকে এতটা উতলা করে দিলে কেন? কেন তুমি আমার নিস্পাপ এই ছোট আদরের মেয়েটিকে তুমি এমনভাবে কষ্ট দিচ্ছ যার ভার আমি বহন করতে পারছি না? তুমি তো সবচেয়ে বড় ইন্সাফ কর্তা, তুমি তো সবচেয়ে বেশী আছানদাতা, তাহলে তুমি আমাকে কেন এই রকম একটা কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছ?

কিন্তু আজ লুতফুল ভাই হয়ত সেই ঈশ্বরের কাছে কিছুই বলতে পারবেন না। কারন ঈশ্বর তাকে যা যা করতে বলেছেন, তাঁর অনেক ন্যায় কাজই লুতফুল সাহেব করেননি। ঈশ্বরের সাথে তর্ক করবার সাহস আজ লুতফুল সাহেব হারিয়েছেন। তারপরেও হয়ত আমি বলতে পারতাম, লুতফুল ভাই, হয়তোবা সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। আপনি ঈশ্বরের কাছে দেখা করুন। তাঁর দেখা পাওয়ার রাস্তা তিনি বাতলে দিয়েছেন অনেক আগেই। লুতফুল সাহেবের জন্য সময় এখনো হাতে আছে যদি তিনি তাঁর ঈশ্বরের কাছে আবার নতজানু হয়ে সব অবৈধ সম্পদ ত্যাগ করে পুনরায় ঈশ্বরকে সাহায্য করতে বলেন, হয়তা তাঁর ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করে দিয়ে সব শান্তির মত আরামদায়ক করে দেবেন। কতটা আরামদায়ক করবেন, সেটা নির্ভর করে এখন লুতফুল সাহেব কতটা আত্মসমর্পণ করেন ঈশ্বরের কাছে তাঁর উপর। ঈশ্বর খুবই দয়াশিল এবং ক্ষমাশিল। তিনি উদাসীন নন।

ভারত বর্ষের জনাব আগন্তক

আমি খুব খুশি হয়েছি যে, আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের কোন এক বাদশার পাশে আপনি এসে কিছুক্ষন দাড়িয়ে ছিলেন এবং আপনি আমাকে অনেক গুলো প্রশ্নও করে গেছেন। আমি জানি না কিভাবে আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর গুলো দেব কিন্তু আমার কিছু প্রশ্ন আপনার কাছে ছিল।

আমি কিভাবে দেশ চালিয়েছি সেটা আপনার খুব জানতে ইচ্ছে করছিল বলে আপনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন। জনাব, আমি কি আপনাকে উল্টো একটা প্রশ্ন করতে পারি? এখন আপনাদের সময়ে দেশ কিভাবে চলে সেটা কি আপনি জানেন? আমাদের সময় গনতন্ত্র বলতে কিছু ছিল না, সংবিধান বলতে কিছু ছিল না সেটা আমি মানি। বরং আমি যা বলতাম তাই ছিল সংবিধান। হয়ত এটা ছিল অটক্রাটিক একটা সময়। সেটা তো ঐ সময়ের নীতিই ছিল এটা। তাই বলে কি আমরা একটুও মানবাধিকারের কোন কাজ করি নাই? আমার সময়ে রাজত্ব ছিল বিশাল, মোবাইল ফোন ছিল না। বিশ্বাস ঘাতকের দল ছিল আরও বেশি শক্তিশালি। যে কোন সময় যে কোন রাজা দেশের যে কোন অংশ দখল করে নিয়ে নিতে পারত। আমরা তো তার প্রতিরক্ষা দিয়েছি। কই তার পরেও তো আমাদের সময় ব্যবসায়িরা আপনাদের সময়ের মত এত অসৎ ছিল না। এখন এক জন ব্যবসায়ী নিজেই রাজ্য চালাতে চান পর্দার আড়াল থেকে। আমাদের সময় ক্ষমতা ছিল আমার হাতে, আর এখন? আপনাদের সময় তো ক্ষমতা কার হাতে তাও তো জানেন না। 

আমি খুব খুশি হয়েছি যে, আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগের কোন এক বাদশার পাশে আপনি এসে কিছুক্ষন দাড়িয়ে ছিলেন এবং আপনি আমাকে অনেক গুলো প্রশ্নও করে গেছেন। আমি জানি না কিভাবে আমি আপনার সব প্রশ্নের উত্তর গুলো দেব কিন্তু আমার কিছু প্রশ্ন আপনার কাছে ছিল।

আমি কিভাবে দেশ চালিয়েছি সেটা আপনার খুব জানতে ইচ্ছে করছিল বলে আপনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন। জনাব, আমি কি আপনাকে উল্টো একটা প্রশ্ন করতে পারি? এখন আপনাদের সময়ে দেশ কিভাবে চলে সেটা কি আপনি জানেন? আমাদের সময় গনতন্ত্র বলতে কিছু ছিল না, সংবিধান বলতে কিছু ছিল না সেটা আমি মানি। বরং আমি যা বলতাম তাই ছিল সংবিধান। হয়ত এটা ছিল অটক্রাটিক একটা সময়। সেটা তো ঐ সময়ের নীতিই ছিল এটা। তাই বলে কি আমরা একটুও মানবাধিকারের কোন কাজ করি নাই? আমার সময়ে রাজত্ব ছিল বিশাল, মোবাইল ফোন ছিল না। বিশ্বাস ঘাতকের দল ছিল আরও বেশি শক্তিশালি। যে কোন সময় যে কোন রাজা দেশের যে কোন অংশ দখল করে নিয়ে নিতে পারত। আমরা তো তার প্রতিরক্ষা দিয়েছি। কই তার পরেও তো আমাদের সময় ব্যবসায়িরা আপনাদের সময়ের মত এত অসৎ ছিল না। এখন এক জন ব্যবসায়ী নিজেই রাজ্য চালাতে চান পর্দার আড়াল থেকে। আমাদের সময় ক্ষমতা ছিল আমার হাতে, আর এখন? আপনাদের সময় তো ক্ষমতা কার হাতে তাও তো জানেন না। 

আমার খালা

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১

তারিখ 

সামিদা খাতুন

স্বামীঃ আব্দুল গনি মাদবর

তিনি আমার একমাত্র আপন ফার্স্ট জেনারেশন খালা। আমার মায়ের একমাত্র আপন বোন যাকে আমার মা বোন মনে করেন নাই, করেছেন নিজের মায়ের মতো। আমার খালার সাথে কারো কোন বিবাদ হয়েছে এই রেকর্ড সারা গ্রামের মধ্যে নাই। তিনি অত্যান্ত প্রতাপ্সহালী গনি মাদবরের স্ত্রী। এখানে বলা দরকার যে, গনি মাদবরকে ভয় পায় না এমন কন লক আমাদের গ্রামের মধ্যে ছিলো না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনি সন্ত্রাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যান্ত ন্যা পরায়ন একজন মাদবর। খুব বুদ্ধিমান। অত্যান্ত অহংকারী এবং একটা ইগো নিয়ে চলতেন। 

আমার খালা শেষ বয়সে কুজো হয়ে হাটতেন। যখন ই শুনেছেন যে, আমি শহর থেকে গ্রামে গিয়েছি, তখনি তিনি কস্ট হলেও খুব সকালে আমাকে দেখার জন্য আমাদের বাড়িতে চলে আসতেন। আমার খালা ও কোন ছবি নাই কিন্তু কোন একদিন আমার ছোট ক্যামেরা দিয়ে একটি মাত্র ছবি তুলেছিলাম যা আমার কাছে একটা অমুল্য রতনের মতো মনে হয় এখন। 

আমার খালা যেদিন মারা যান, আমি এই খবরটা জানতেও পারি নাই। অনেকদিন পর যখন আমি গ্রামের বাড়িতে গেছি, খালার সম্পরকে জানতে চেয়েছি, শুনলাম যে, আমার খালা মারা গেছেন। আমার খুব আফসোস লেগেছিলো। 

আমার খালার ভাগ্য ভালো যে, ঊনি অনেক কস্টে পরার আগেই জান্নাতবাসী হয়েছেন। আমি মাঝে মাঝে খালাকে গোপনে কিছু টাকা দিতাম কিন্তু যেহেতু তিনি নিজে কোনো কিছু কিনতে পারতেন না, ফলে ঊনি টাকা দিয়েও তার মনের মতো কোন কিছু কিনে খেতে পারতেন না। এর আগেই তার অন্যান্য নাতি পুতেরা তার হাতের টাকাগুলি কোনো না কোনো ভাবে ছিনিয়ে নিতেন। বড্ড নিরীহ মানুষ বলে কারো উপর তার কমপ্লেইনও ছিলো না। খুব নামাজি মানুষ ছিলেন আমার খালা। তার কোন ছেলেরাই তাকে ঠিক মতো ভরন পোষণ করার দায়িত্ত নেন নাই। এক সময়ের প্রতাপ্সহালি মাদবরের স্ত্রী শেষ জীবনে কস্টের মধ্যেই জীবন তা অতিবাহিত করছিলেন কিন্তু আমাদের কিছু সাহাজ্য আর তার নিজের স্বামীর যেটুকু আয় ছিলো তার উপর নির্ভর করেই শেষ জীবন তা অতিবাহিত করেছেন। 

২ লেঃ মাসুদ ইকবালের বাড়ি রাজশাহী।

ওর বড় ভাই সম্ভবত ৩য় লং কোর্সে আর্মিতে ভর্তি হয়েছিল কিন্তু কোন এক মেয়ের পাল্লায় পড়ে শেষ পর্যন্ত কমিসন পান নাই। কিন্তু তিনিও পরবর্তীতে বে-সামরিক চাকুরিতে বেশ ভাল করেছেন। বউদি সম্ভবত ঐ বালিকাই যার জন্য তিনি তার আর্মি ক্যারিয়ারটা আর করতে পারেন নাই। ভীষণ মজার মানুষ তিনি। আর ২লেঃ মাসুদ পরবর্তীতে মেজর পর্যন্ত ক্যারিয়ার করতে পেরেছিলেন কিন্তু তার এক শারীরিক অসুস্থতার কারনে তিনি আর আর্মিতে বেশী দূর যেতে পারেন নি এবং আর্মি ক্যারিয়ার শেষ করে বে-সামরিক এক গার্মেন্টস এবং পড়ে নিজে এক্তা বাইং হাউজ দিয়ে ক্যারিয়ার গরতে চেয়েছিলেন। ওটা আরেক গল্প। এখানে তার বিস্তারিত আলাপের প্রয়োজন মনে করছি না। তবে এটুকু জানা যায় যে, তিনি মেহেরপুরের মিঃ জাহাঙ্গির নামে এক সনাম ধন্য এডভোকেট এর মেয়ে সুরাইয়া পারভিন ওরফে তানি কে বিয়ে করেছেন। ঐ ভদ্র মহিলা তানি আমার বিশেষ পরিচিত।

সাদ্দাম হোসেনের ছেলে উদয় এর সত্যি কাহিনী

কয়েকদিন আগে নেট জিও তে একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম ইরাকের উপর, প্রোগ্রাম টার নাম হল Escape to Freedom.  এটা মুলত সাদ্দামের ছেলে উদয় সাদ্দামের কার্যকলাপের উপর। লোমহর্ষক। সাদ্দামের পতনের পিছনে অনেক কারনের মধ্যে ওর পরিবারের অনেক ভুমিকা ছিল। সাধারন মানুষের যখন আর কোথাও কোন বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, এবং চারিদিকে সর্বত্র যখন অবিচার আর জুলুমের রাজত্ত কায়েম হয়ে যায়, তখন আল্লাহ যে কোন বিধর্মীর মুনাজাতও কবুল করেন যদি তা সত্য হয়, তখন তাঁর আবদার হয়ে উঠে সৃষ্টিকর্তা আর সৃষ্ট জিবের। ওখানে তখন আর ধর্ম কোন বড় ইস্যু হয়ে উঠে না। ধর্ম মানছি  কি মানছি না এটা নিতান্তই ব্যক্তি এবং সৃষ্টিকর্তার মাঝে ফয়সালা। কিন্তু যখন সমাজকে গননা করা হবে তাঁর মধ্যে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন কালচার, ভিন্ন মতবাদ সব বিচার্য। সাদ্দামের ছেলে উদয় সাদ্দামের কাহিনি ঐ রকম একটা সমাজ বিরুদ্ধ। আমি শেষ পর্যন্ত প্রগ্রামটা দেখেছি এবং আমি উদয় সাদ্দমের শেষ পরিনতিটাও দেখলাম, আমার মধ্যে মনে হয়েছে ভগবান, আল্লাহ, ঈশ্বর বা রাম যাই বল না কেন, কেউ আছে।

১৯৮৭ সালে যখন ইরাক ইরান যুদ্ধ হচ্ছিল, তখন ফ্রন্ট লাইনে যুদ্ধে থাকা এক সৈনিকের কাছে সরাসরি চিঠি আসে, তাঁর নাম লতিফ। তাকে সাদ্দামের প্রাসাদে যেতে হবে, কেন যেতে হবে, কি কারনে যেতে হবে কেউ জানে না। লতিফ কিংবা যুদ্ধে থাকা কমান্ডার কিংবা লতিফের পরিবার কেউ আচ করতে পারছিল না কেন হটাত করে এই নিরিহ সৈনিকের কাছে সাদ্দাম হোসেন সরাসরি অফিসিয়ায়ল চিঠি পাঠিয়ে তাকে সাদ্দমের প্রাসাদে আসতে বলা হয়েছে।

সৈনিক ভয়ে ভয়ে প্রাসাদে গেলেন, সৈনিক লতিফ এর আগে কখন সাদ্দামের প্রাসাদ এত কাছে থেকে দেখার সুযোগ পায় নাই, অথচ আজ সৈনিক লতিফ সরাসরি সাদ্দামের প্রাসাদে ঢুকে, সাদ্দামের সাথে একত্রে বসে কথা বলবেন যেখানে সাদ্দাম ছাড়া আর কেউ নাই। ভীষণ ভয়ে আছে সৈনিক লতিফ। তাঁরপরেও তো সাদ্দামের তলব। না গেলে আগেই মরন, গেলে হয়ত মরলেও কিছুদিন পড়ে মরতে হবে। কি এক অজানা ভয়, গা শির শির করছে, কত বড় প্রাসাদ!!!! কি রঙিন কি সুন্দর, লতিফের কাছে এটা কোন বাড়ি, বা প্রাসাদ বা অন্য কিছু মনে হয় নাই, মনে হয়েছে এটা একটা স্বপ্ন যা ও কোনদিন ভাবে নাই, বা ভাবার শক্তিও রাখে নাই। এটা সাদ্দামের প্রাসাদ। চারিদিকে সুনশান, নিরাপত্তার বাহিনি, যেন মশারাও শঙ্কিত। গাছের পাতা বিবর্ণ হলে যেন গাছেরও শাস্তি হতে পারে এই ভয়ে কোন পাতাও তাঁর রং পরিবর্তন করে না। সবাই সাদ্দামকে মানে। এই মানার মধ্যে কোন আইন আছে তা কেউ জানে না, শুধু সবাই জানে ওরা আর কিছুদিন এই পৃথ্বীর চাঁদটা দেখতে চায়, সূর্য কখন কোথায় থাকে সেই দৃশ্যটা আরও কিছুদিন দেখতে চায়। সাদ্দাম বিশাল এক অবর্ণনীয় সুন্দর একটা সোনালী রঙের টেবিলে বসে আছে। তাঁর অবধি পৌছাতে প্রায় ২০ থেকে ৩০ গজ মার্বেল খচিত ফ্লোর পারি দিতে হয়।

তিনি সাদ্দাম হোসেন, ঐ যে সাদ্দাম হোসেন বসে আছে। লতিফের মাথা ঠিক কাজ করছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না, বিমোহিত, শঙ্কিত, আশ্চর্য এক অনুভূতি। লতিফ কি তাকে সালাম করবে? নাকি স্যালুট করবে, নাকি পায়ে পড়ে যাবে? কি করবে সে এখন? কি করলে লতিফ ঠিক কাজটা করবে এটাই সে বুঝে উঠতে পারছে না। তাঁরপরও সে হেটে যাচ্ছে সাদ্দামের দিকে। এখন লতিফ আর তাঁর বুকের স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে না। হয়ত একটু পড়ে আর কখনই সে তাঁর বুকের স্পন্দন শুন্তেই পারবে না। কি অসহনিয় এক মুহূর্ত।

সাদ্দাম ঘার বাকিয়ে লতিফের দিকে তাকালেন। লতিফ আর হাটতে পারলেন না, কি কারনে থেমে গেল তা সে বুঝে উঠতে পারল না। এবার সাদ্দাম হাটছে লতিফের দিকে.........

লতিফ, হতভাগা লতিফ এখন ঠিক সাদ্দামের সামনে দাড়িয়ে। চমৎকার গোঁফ, সুঠাম দেহ, পলিশড করা ইউনিফর্ম, বিশাল ঘরের মধ্যে বাতাসও প্রবেশ করে না, ঠাণ্ডা একটা শিতল আবহাওয়া, হয়তো নিঃশব্দ এসির পারফিউমড বাতাস। এই বাতাস ইরাক-ইরান যুদ্ধের খোলা বাতাসের মত নয়। বারুদের কোন গন্ধ নাই, মুহুর্মুহু আর্টিলারি শেলের বিকট শব্দ এর ভিতরে ঢুকে না। সাদ্দাম শান্ত পরিবেশে কাজ করতে পছন্দ করেন, দেশে যত অশান্ত পরিবেশই বিরাজ করুক না কেন। দেশের ইন্টারেস্ট আর সাদ্দামের ইন্টারেস্ট এক হতে হবে এই বিশ্বাস সাদ্দাম করবে কেন? সাদ্দাম কি একাই দেশ প্রেমিক হবেন? কেন পুরু ইরাক হবে না? তাই, দেশের লোককে প্রকৃত দেশ প্রেমিক বানানর জন্য তিনি ইরানের সঙ্গে এক কারনবিহীন যুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন যেখানে অধিকাংশ ইরাকি যানে না কেন তারা ফ্রন্ট লাইনে ইরানের সঙ্গে যুদ্দ করছে। যাক, সেটা দেশের নাগরিকরা বিবেচনা করবে। এখন লতিফের সামনে আমাদের সাদ্দাম দাড়িয়ে আছেন, এটাই বাস্তবতা।

সাদ্দাম তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে তার বা হাত উচিয়ে লতিফের কাধে রাখলেন, সাদ্দামের চোখ লতিফের চোখে, লতিফ যেন সাদ্দামের নিঃশ্বাসের গন্ধও পাচ্ছিলেন।

"লতিফ, ঈশ্বর আমাকে দুটু ছেলে দিয়েছেন, আমি খুশি, আর তুমি এখন আমার তিন নম্বর ছেলে।" সাদ্দাম লতিফের কাধে হাত রেখে বললেন।

লতিফ বুঝে উঠতে পারছিল না কি তাঁর বলা উচিৎ। লতিফ কি খুশিতে হেসে দেবেন নাকি আত্মহারা হয়ে তাঁর নতুন বাবাকে জরিয়ে ধরবেন? লতিফ শুধু এক অজানা ভয়ে আরও সংকিত হয়ে কুচকে যেতে লাগলেন যেমন করে অনেক শক্তিশালি আগুনের কাছে একখন্ড প্লাস্টিক নিমিষেই গলে তাঁর অস্তিত্ব হারিয়ে শুধু এক তরল বর্জ্য পদার্থে পরিনত হয়।

'লতিফ, তুমি আজ থেকে আমার আরেক উদয়। উদয়ের প্রতিচ্ছবি। কারন তোমার সঙ্গে আমার উদয়ের চেহারা অদ্ভুত এক মিল রয়েছে। আজ থেকে তুমি উদয়ের বিকল্প হবে।' সাদ্দাম বললেন।

লতিফ জানত, সারা ইরাকের মানুষ ভগবানকে ভয় না পেলেও উদয়কে ভয় পায় না এমন লোক তাঁর জানা নাই। উদয় যখন যাকে খুশি খুন করতে দ্বিধা করেন না। মদ আর নারীর মধ্যে তিনি কোন ভেদাভেদ করেন না। তিনি টাকার লোভী নন, তিনি শুধু যখন যা খুশি করতে ইচ্ছে করেন তাই করেন। এতে রাজ্য গেল নাকি কারো প্রান গেল, সেটা দেখা তাঁর দায়িত্ত নয়। তাঁর ইচ্ছা আর অনিচ্ছাই প্রধান। লতিফ এখন উদয় হয়ে যাবেন। পৃথিবীর সব চেয়ে ঘৃণিত ব্যাক্তির প্রতিচ্ছবি। তাও আবার জীবন্ত।

মুনায়েম উদয়ের পিএস। তিনি সাদ্দামের ঘরে ঢুকে লতিফকে নিয়ে গেলেন। নিয়ে গেলেন উদয়ের নিজ ঘরে। এ আরেক রাজ্য? এখানে দেয়ালগুলো হরেক কালারের। কোনটা উৎকট লাল, কোনটা গাড় সবুজ, উপরে ঝারবাতিগুলো কেমন যেন। বাহিরে যাবার পথ মাটির নিচ দিয়ে, কেন যে সরাসরি উপর দিয়ে না, এটা লতিফ বুঝে কিন্তু লতিফ উদয় হয়ে গেলে তাঁর জন্য অনেক পথ খোলা হয়ে যাবে, ঐ গোপন রাস্তাগুলো তাঁর নিজের হয়ে যাবে। এটা কি ভাগ্যবানের  লক্ষন না অশুভ তা লতিফ মেলাতে পারছিল না। কোন জনমে ওর পিতা মাতা বা পিতামহরা এত পুন্য করেছিল যে রাজকিয় রক্ত না বহন করেও আজ লতিফ রাজার ছেলে হয়ে গেল? অংকটা মেলান বড় কঠিন হয়ে গেল লতিফের জন্য। তাঁর পরেও বাস্তবতা হচ্ছে এখন লতিফ স্বয়ং সাদ্দামের ছেলে উদয়ের ঘরে বসে আছে। তাঁর গায়ে সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রের খসখসা ইউনিফর্ম। লতিফ এত শিতল ঘরেও একটু একটু করে ঘামছেন।

"হা হা হা" বিকট এক কর্কশ হাশি, হাসিও এত কর্কশ হয় তা লতিফের জানা ছিল না। ঘার ঘুরিয়ে লতিফ দেখল, উদয় একহাতে এক শক্ত লোহার বার এবং অন্য হাতে চুরুট নিয়ে বুকের তিনটা বুতাম খোলে হেলেদুলে তাঁর নিজের রুমে ঢুকছেন আর লতিফকে দেখে খুব মজা করে এই কর্কশ হাসিটা দিচ্ছেন। লতিফ এই প্রথম সাদ্দামের এত প্রতাপশালি ছেলে উদয়কে এত কাছে থেকে দেখলেন। লতিফের বুকে যেটুকু সাহস এতক্ষন ছিল তা নিমিষেই করপুরের মত উবে গেল।

লতিফ দেখল তাঁর সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতাপশালি রাজার এক যুবরাজ 'উদয়' তাঁর সামনে উদিয়মান। লতিফ নিজেও এখন যুবরাজ কিন্তু আসল যুবরাজ নন, তাতে কি? তাঁর দাতগুলোও তো আসল যুবরাজের মত, তাঁর হাত পা, তাঁর চুল, তাঁর মুখের অববয়বও তো এই আসল যুবরাজের মতই  ঠিক ছবিতে যেমন দেখেছেন তাকে ঠিক তাই। খোচা খোচা দাড়ি, ঠোটের নিচে একটা কাটা দাগ, অবশ্য লতিফের ঠোটের নিচে এই দাগটা নাই, হয় তো অচিরেই এটা তাঁর ঠোটে লাগিয়ে দেয়া হবে। কি অদ্ভুত না? লতিফ কিছুই ভাবতে পারছে না।

আহহহহহ......

শক্ত একটা লোহার দন্ডে তাঁর কাধটা যেন অবশ হয়ে গেল আর সম্বিত ফিরে এল লতিফের, উদয় তাঁর হাতে থাকা লোহার রডটি দিয়ে লতিফের ঘারে একটা বাড়ি দিয়ে বল্ল, "আজ থেকে তুমি হবে আমার জীবন্ত শিল্ড। হিউম্যান শিল্ড। মুনায়েম, লতিফকে শিখিয়ে দাও আমি কিভাবে হাটি, কিভাবে চুরুট টানি, কিভাবে মানুষের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ি, কিভাবে গাড়ি চালাই, কিভাবে গাড়িতে বসি, সব শিখিয়ে দাও।"

লতিফ তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে এবার প্রথম কথা বলার চেষ্টা করল। "স্যার আমি তো অভিনেতা নই, আমি আপনি হতে পারব না। আমার পরিবার আছে, আমার মা আছে, আমার বোন আছে, আমার বাবা আছেন, আমাকে ছেড়ে দিন, আমি নিতান্তই একজন সাধারন মানুষ। আমি বাচতে চাই স্যার।"

মানুষ যখন অতল সমুদ্রে পড়ে হাবুডুবু খায়, তাঁর তখন হিতাহিত জ্ঞ্যান থাকে না। লতিফেরও ছিল না। কিন্তু তাঁরপরেও লতিফের যতটুকু জ্ঞ্যান অবশিষ্ট ছিল, হয়ত ঐ অবচেতন মনই লতিফকে এই দুঃসাহসী কথাগুলো উদয়ের কাছে বলতে পেরেছিল। কিন্তু উদয় তো আর যে সে যুবরাজ নয়। ৪০ বছর রাজত্ত করা এক রাজার ছেলে। যার জন্ম হয়েছে প্রাসাদে, যার প্রতিটি ক্ষন কেটেছে প্রাসাদের কৃত্তিম বাতাস আর চির ধরা ঠোটের মেকি হাসির পরিবেশে। সে কি করে বুঝবে পরিবার কি? সে কি করে বুঝবে ভাইয়ের কাছে একটা বোনের মর্যাদা কি? সে কি করে বুঝবে বাবার সাথে ছেলের কি কারনে ঝগড়াও হয় আবার কারনে অকারনে বাবা-পুত্র মিলে নিঃশব্দে কেদে বুকের জামা ভিজে যায়? উদয় শুধু জানে সুন্দর কিছু নারী মুখের পিছনে শুধু আছে নির্লজ্জ ধর্ষণ, আছে পরিত্যাক্ত ঘৃণার কিছু নোনা জল। আর আছে মদের নেশায় এক উন্মত্ত বর্বরতা। ওর কাছে ঐ নারীর চোখের ভাষার কোন দাম নাই, বোনের মমতার কোন মুল্য নাই, বাবা-মার আদর আর পরিবারের যে বন্ধন সেটা তাঁর জিবনে কোন ভগবানই রাখেন নাই।  হতভাগা যুবরাজ।

"নিয়ে যাও ওকে ওখানে যেখানে মানুষ তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে নত শিকার করে, নিয়ে যাও ওকে ঐখানে যেখানে কুকুর এবং মানুষের বসবাস একই দেয়ালের মধ্যে।" যুবরাজ উদয় মুমেনকে বলে দিলেন আর মনের সুখে আরও কয়েক প্যাগ মদ তাঁর উদরে ঢেলে দিলেন।

লতিফের স্থান হল ১ মিটার বাই ১ মিটার এক রুমে। পুরু দেয়ালটা উৎকট লালরঙ্গে রাঙা। চোখ ঝলসে আসে, মাথা ধরে যায়, কোন ভেন্টিলেটার নাই, বাতাস ঢুকবার কোন প্রবেশ পথ নাই। প্রতি ঘন্টায় শুধু ৫ মিনিটের জন্য ফ্রেশ বাতাস আসার ব্যাবস্থা করা হয়। লতিফ যুবরাজ না হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করায় এখন তাঁর মরার প্রস্তুতি চলছে। আর যদি এর মধ্যে লতিফ তাঁর শির নত না হয় তাহলে লতিফের বাবার প্রান যাবে, বোন ইজ্জত হারাবে, মাকে আর বাঁচানো যাবে না, লতিফ তো আর থাকবেই না। কে বলে ঈশ্বর আছে? লতিফ উচ্চস্বরে ঐ ১ বাই ১ মিটার রুমের মধ্যে গলা ফাটিয়েই তাঁর ঈশ্বরের কাছে বলতে থাকে, "কই তুমি হে ঈশ্বর? কে বলে তুমি আছ? কোথায় তুমি এখন তাহলে? আমার এ জনমের সব প্রার্থনা তাহলে কি সব মিথ্যা? তুমি কাকে ভয় পাও? তোমার কি চোখ নাই? আমার ঈশ্বর কি এতটাই অন্ধ যে সে ১ বাই ১ মিটারের রুম দেখতে পায় না? হে ঈশ্বর আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি তোমার সাহায্য চাই, তুমি আমাকে রক্ষা কর।" কিন্তু ঈশ্বর আসেন না। ঈশ্বর তাঁর কথার কোন উত্তর করেন না, শুধু লতিফের কথাগুলোই ঐ ছোট্ট ১ বাই ১ মিটার রুমের দেওয়ালে আঘাত খেয়ে প্রতিধ্বনিত হয়ে আবার ফেরত আসে। সঙ্গে ফেরত আসে উদয়ের পিএস মুনায়েম।

লতিফ শেষমেশ রাজী হল সে উদয় হবে। লতিফ রাজী হয়েছে। এই সুখবরে উদয় আরও কয়েক জোড়া সুন্দরি রমনি নিয়ে মদের আড্ডায় বসে গেল আর দেখতে থাকল লতিফ কিভাবে উদয় হয়, কিভাবে লতিফ উদয় হবার প্রশিক্ষন নেয় তা দেখার জন্য। 

উদয়ের হাটার ভঙ্গি, চুরুট খাওয়ার স্টাইল, কারো সঙ্গে কথা বলার স্টাইল, মানুষদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ার স্টাইল ঘার বাকিয়ে কাউকে দেখার কৌশল, গাড়ি চালানোর কৌশল, ইত্যাদি সবই ভিডিও করা আছে, তা লতিফ শিখে নিচ্ছে আর কোথাও ব্যাতয় হলে প্র্যাক্টিকেল দেখিয়ে দিচ্ছে জনাব স্বয়ং আসল যুবরাজ উদয়। এই প্রশিক্ষন যতটা সহজ মনে হয়েছিল অতটা সহজ হয়নি। আসলে ট্রেইনিং কখন সহজ নয়। এর মধ্যে শাস্তি আছে, আছে চরম লাঞ্ছনা, আছে নিপীড়ন, আছে ভয় মৃত্যুর। লতিফের বেলায়ও এর কোন ব্যাতিক্রম হয় নাই। তবে এর মধ্যে যে কাজগুলো লতিফকে অত্যান্ত পীড়া দিয়েছিল তা হচ্ছে লতিফকে উদয় হতে গিয়ে তাঁর ঠোট কাটতে হয়েছে, তাঁর দাতগুলো চাঁচতে হয়েছে, তাঁর কানের কাছে ড্রিল মেশিন দিয়ে একটা কালো কালো ফুটু করতে হয়েছে। লতিফের এই সুন্দর অবয়বের প্রতি কোন মোহ ছিল না শুধু তাঁর কষ্ট হচ্ছিল এই সুন্দর অবয়ব করতে গিয়ে লতিফের শারিরিক কষ্টটা।

নয় মাস পেরিয়ে গেছে ট্রেনিং এর। লতিফ অনেকটা উদয় হয়ে গেছে। কিন্তু এক জায়গা ছাড়া। উদয় লতিফকে এক সুন্দরি মেয়ে ধরিয়ে দিয়ে বল্ল, যাও, তুমি এখন উদয়, ওকে নিয়ে ঐ ঘরে যাও। কিন্তু লতিফ তো লতিফ , সেতো আর উদয়ের মত রক্তে পরিবর্তন হয়ে যায় নাই। লতিফ পারেনি নিরিহ এক নিস্পাপ মেয়েকে নিয়ে ফস্টিনস্টি করতে। আসল যুবরাজ অত্যান্ত রাগ লতিফের উপর। আর এইটা কিভাবে করতে হয় তাঁর ডেমো দেখাতে গিয়ে আসল যুবরাজ উদয় তৎক্ষণাৎ পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া দুই দিনের এক দম্পতির মেয়েটিকে সবার সামনে বলাৎকার করলেন, পাশে লতিফ, উদয়ের বডিগার্ড, তাঁর পিএস, এবং মহামুল্যবান রাজপ্রসাদ। সবাই এর সাক্ষী। সাধারন মানুষ তো আর উদয়ের সাথে পেরে উঠবে না আর বিচারের কথা বললে তো হবে না। উদয় নিজে যা করে সেটাই বিচার। কিন্তু সাধারন মানুষের কাছে আরও একটা পথ খোলা ছিল। তা হচ্ছে বিচারবিহীন আত্মহত্যা। আর সেটাই করে গেল ঐ সাধারন দম্পতির অসহায় মেয়েটি। এতে উদয়ের কি আসে যায় আর রাজপ্রাসাদেরই বা কি আসে যায়। এমন কত নারী এখানে গলা ফাটিয়েছে, কত নিরিহ প্রান এখান থেকে পালানর জন্য আত্মাহুতি দিয়েছে। রাজপ্রাসাদের ইটের কোন ভাষা নেই, ওরা নিরব সাক্ষী থাকে, কথা বলার জন্য দরকার একজন লেখকের। উদয়ের প্রাসাদে কোন লেখক প্রবেশ করে না।

১৯৮৮ সাল। ইরাক ইরান যুদ্দ শেষ হয়ে গেছে। ইরাকে বিশাল এক ফুটবল খেলার সমাপ্তি ঘোষণা আজ। সঙ্গে পুরুস্কার বিতরণী। আর আজই হবে লতিফের প্রথম টেস্ট। আজ লতিফকে যুবরাজ উদয় সেজে জনসম্মুখে ফুটবল খেলার সমাপ্তি ঘোষণা করতে হবে এবং নকল যুবরাজ আসল যুবরাজের হয়ে পুরুস্কার বিতরন করবে। যদি ভালোয় ভালোয় লতিফ পাশ করে যান, তো টিকে গেলেন আর যদি পাশ না করেন লতিফ তাঁর পুরু পরিবার নিয়ে সকাল আর সূর্যের মুখ দেখতে পারবেন না। ---------

অনুষ্ঠান শুরু হল, লতিফ রাজকিয় গাড়ি আর চৌকশ সিরিমনিয়াল প্যারেডের মধ্য দিয়ে উদয় সেজে ফুটবল সমাপ্তি অনুষ্ঠানে হাত নেড়ে, ঘার বাকিয়ে ডায়াসে আসলেন। মনে তাঁর অনেক দ্বিধা, অনেক চঞ্চলতা, সবচেয়ে শক্তিশাললি আসন অথচ সবচেয়ে দুর্বল মন নিয়ে লতিফ একে একে সবাইকে পুরুস্কার দিলেন, মনের আনন্দে নয় অধুম্পায়ি লতিফ ধুম্পায়ি উদয়ের চরিত্রে একের পর এক চুরুট টেনে যাচ্ছেন। অন্যদিকে লাইভ ক্যামেরায় আসল যুবরাজ পাশে কতক নবান্নের আউসের মত আধা পাকা কিছু লাজুক এবং ভীত সন্ত্রস্ত তরুনিকে নিয়ে অনেক দূরে এক প্রাসাদে বসে আসল যুবরাজ উদয় ভোগে লিপ্ত রয়েছেন আর লতিফের অভিনয় দেখছেন।

লতিফ পাশ করেছে।

দিন যায় মাস যায়। ১৯৯১ সাল। গালফ ওয়ার শুরু। সাদ্দাম হোসেন তাঁর ছেলে উদয়ের জীবননাসের আসংকা করছে ইরানিয়ান এবং আমেরিকান উভয়ের কাছ থেকেই। সিদ্দান্ত হল, আসল যুবরাজ উদয় সুইজারল্যান্ডে চলে যাবেন আর নকল যুবরাজ ইরান-ইরাক বর্ডারে গুলিতে মারা যাবে। এই সিদ্দান্তটা আসল যুবরাজ জানলেও নকল যুবরাজ জানলেন না।

আসল উদয় সুইজারল্যান্ডে যাবার আগে ও ওর মৃত্যু সংবাদ আন্তরজাতিক পত্রিকাগুলোতে দেখে তারপর সুইজারল্যান্ডে যেতে চান। তাই, প্রথমে নকল যুবরাজকে ইরান-ইরাক বর্ডারে  পাঠানো হল কিন্তু খবরটাও দেয়া হল যে উদয় দেশ ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে বর্ডার পারি দিয়ে। সন্ধায় খবর এল, উদয় গুলি খেয়েছে কিন্তু মরেন নাই।

হাসপাতালে নকল যুবরাজ তাঁর একটা আঙ্গুল হারান, কিন্তু নকল যুবরাজকে আঙ্গুল হারালে যে আবার আসল যুবরাজেরও একটা আঙ্গুল কেটে ফেলতে হবে তাই আসল যুবরাজ ডাক্তারদেরকে জানালেন, ঐ আঙ্গুল না লাগান গেলে ডাক্তারদের কল্লা যাবে।

এইভাবে ২০০৩ পর্যন্ত লতিফ আসল যুবরাজের মুখুস পড়ে অনেক অত্যাচার আর নিপিরনের মধ্য দিয়ে নিজ পরিবার ছেড়ে কোন এক প্রাসাদে নিতান্তই জাজাবরের মত নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে লাগলেন যেখানে তাঁর কোন কিছুরই অভাব ছিল না, শুধু অভাব ছিল জিবনের নিরাপত্তা আর ছিল নিসসঙ্গতা।

সবশেষে ২০০৩ সালের কোন এক সময় আসল যুবরাজ আর নকল যুবরাজ মুখুমুখি দাড়িয়ে যান। দুজনের হাতেই সেম পিস্তল, দুজনেই উদয়, দু জনেই প্রাসাদে, কিন্তু একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।

 চলল গুলি, দুজনেই আহত, নকল উদয় আসল উদয়ের গাড়ি, চুরুট আর পিস্তল নিয়ে কোন রকমে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে গিয়ে বর্ডার ক্রস করে পারি দিলেন তুরস্কে। আর আমাদের আসল যুবরাজ ইরানিয়ান/আমেরিকানদের হাতের পড়ে মারা যান।

পৃথিবী এক জঘন্য পিচাশকে হারাল। লতিফ এখন  ইউরপে তাঁর পরিবার নিয়ে ব্যবসা করছে। তিনি জীবিত আছেন,

           

জেবুন্নেসা চৌধুরী (আমার শাসুড়ী)

Categories

তিনি আমার শাশুড়ি। মোট আট মেয়ে আর তিন ছেলের সার্থক মা। অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ। আমার কাছে তিনি আমার আপন মায়ের মতোই ছিলেন। আমার মাকে আর আমার এই শাশুড়িকে আমি কনোদিনই পার্থক্য করি নাই। তিনি আমাকে প্রতি ঈদে ১০ টাকার সালামি দিতেন। কি যে ভালো লাগতো ঊনার কাছ থেকে এই ১০টাকা সালামি নিতে।

চলবে…

আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী

Categories

আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী

তিনি আমার শ্বশুর।

আমি আমার শ্বশুর কেও জীবিত অবস্থায় দেখি নাই। আমার স্ত্রী যখন অষ্টম ক্লাসে পড়ে, তখন তার বাবা মারা যান। আমি যখন আমার স্ত্রীকে বিয়ে করি, তখন আমার স্ত্রী সবে মাত্র ইন্তারমিডিয়েট পাশ করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির তোড়জোর করছেন। ফলে আমার বিয়ে হবার প্রায় ৪/৫ বছর আগে আমার শ্বশুর মারা যান। আমার শ্বশুরের প্রাথমিক তথ্য গুলি এ রকমেরঃ

নামঃ আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী

পিতাঃ সোনাম উদ্দিন চৌধুরী (সোনাম উদ্দিন চৌধুরীর পিতার নাম ছিল, ফাজেল আহম্মদ চৌধুরী)

স্ত্রীর নামঃ জেবুন্নেসা চৌধুরী

আমার শ্বশুরের ছিল আট কন্যা সন্তান এবং তিন পুত্র সন্তান।

আমার স্ত্রী ছিলো তাদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ।

তাদের ওয়ারিশ নামা যদি লিখি তাহলে দাঁড়ায় এ রকমেরঃ

২১/০৪/২০২১-রাত

Categories

সময়ের স্রোতে যখন দিনের আলো নিভে যায়, মানুষ দ্রুত নিস্তেজ হয়ে দ্রুত ঘরে ফেরার তাগিদ অনুভব করে, পাখীরা যখন আর কোথাও ঘুরতে চায় না, গাছেরা যখন নতুন খাবারের আস্বাদনে কার্বনের পরিবর্তে অক্সিজেনের জন্য উম্মুখ হয়ে থাকে, ঠিক সে সময়েই ধীরে ধীরে দিনের আলোকে নিভিয়ে রাতের প্রবেশ। যেমন ঈশ্বর বলেন, “আমি দিনকে সরিয়ে নেই, রাতকে আনার জন্যে”। তাহলে কি আছে এই রাতের অধীনে?

এই রাত সবাইকে পরিবর্তন করে দেয়। কেউ হতাশার রাজ্যে ভেসে যায়, কেউ সুখের রাজ্যে হামাগুড়ি দিয়ে নির্ঘুম জেগে থাকে, কেউ নিশাচর পাখীর মতো নিশাচরদের সাথে দিকবিদিক এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে, কেউ পররবর্তী দিনের আলোর অপেক্ষায় বসে থাকে, কেউ আবার পরম ঈসশরকে নিকটে পাওয়ার জন্য অঘোর ঝরে চোখ ভাসিয়ে প্রার্থনা করে। যে দিনের আলোকে সহ্য করতে পারে না বলে দিনে বের হয় নাই, সে রাতের অন্ধকারে মাথা উচু করে দুনিয়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আবার যারা দিনের আলোতে ভীতু হয়ে চুপসে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো, সে প্রানের স্পন্দনে সবার অলক্ষ্যে রাতের অন্ধকারকেই বেছে নিয়ে দিব্যি জীবন কাটিয়ে দেয়। অদ্ভুত একটা অধ্যায়।

এই রাতের সাথে মহাশ্মশানের কোথায় যেনো একটা মিল আছে। সবাই পাশাপাশি থেকেও সবাই একা। সবাই চুপ কিন্তু সবাই সরব। তাদের কারো কোনো কিছুর চাওয়া নাই, আবদার নাই, কারো কোনো অভিযোগ নাই, না আছে কোনো পার্থিব কোনো অহংকার বা লালসা। রাতের অন্ধকারে জোনাকীর আলোই যেন মহাপ্রদীপের মতো কাজ করে, আর অমাবশ্যা হলেও কোনো ক্ষতি নাই। অমবশ্যার রাতই হোক কিংবা অন্ধকার রাতই হোক, সব কিছুর এই রুপ আলাদা আলাদা। একে কি “কালো” বলা যায়? ব্ল্যাক কফি, ব্ল্যাক ফরেষ্ট কেক, ডার্ক চকোলেট, ঘন জংগল অন্ধকার রাত এদের প্রত্যেকের একটা নিজস্ব রুপ আছে। আর সেটা “কালো”। কালোর মতো কোনো রং নেই। কিন্তু কিছু কি আছে যা কালোকে সাদা করতে পারে? যদি অন্যভাবে দেখা যায় বা ভাবা যায়, দেখা যাবে যে, কোনো জিনিষ সাদা বা কালো হয় না। সবটাই আলোর খেলা। এই আলোটা সবাই দেখতে পায় না। তখনি সে শুধু দেখে অন্ধকার, দেখে অমাবশায়র রাত। সেই সুদূর জোজন দূরের কোনো নক্ষত্রের মীতমীটে আলো ও তখন আর চোখে পড়ে না।

১৭/০৪/২০২১-ধনী-গরীবের সৃষ্টি কেনো

Categories

সারা দুনিয়া রীতিমত কেপে উঠেছে গত প্রায় এক বছরের বেশী। অথচ যিনি কাপাচ্ছেন, তাঁকে কেউ আজো দেখেনি। প্রতিটা দেশ, মহাদেশ, গরীব কিংবা ধনী কেহই রেহাই পাচ্ছে না তার কবল থেকে। সে কোনো সম্পদ দখল করতে আসে নাই, না এসেছে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে উৎখাত করতে। তার কোনো মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি নাই, তার কোনো লাভ লস নাই, তার কোনো শ্রেনীভেদে কোনো টার্গেটও নাই। তার একটাই লক্ষ্য–যতো পারো লাশ সংগ্রহ করো। আর এই অচেনা, অজানা এবং অদৃশ্য শত্রুর নাম “কভিড-১৯” যাকে সবাই করোনা নামে চিনে।

এই করোনা ধনীর গদি নাড়িয়ে দিয়েছে, আর গরীবকে আরো গরীব করে দিয়েছে। সারা দুনিয়ার সরকারগন লক ডাউন কিংবা আইসোলেশন পদ্ধতি অবলম্বন করেও একে কিছুতেই ঠেকাতে পারছে না। আবার লক ডাউনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেও অর্থনীতির চাকা ক্রমশই এমন দূর্বল হতে চলছে যে, কলকারখানা এই মৃত্যু ঝুকির মধ্যেও খোলা রাখতে হচ্ছে। আর এই কলকারখানা খোলা নিয়ে এবং তার পাশাপাশি সাধারন কর্মী জীবনকে প্রতিহত করে মাঝে মাঝে লক ডাউনের কারনে বিভিন্ন পেশার মানুষ জন এমনভাবে সোস্যাল মিডিয়াতে মন্তব্য করছেন যার অর্থ এই রকম যে, ধনীরা ধনী হয়ে যেনো পাপ করেছে অথবা অপরাধ। এই মনতব্য কারীদের সাথে আমি প্রায়ই ভিন্ন মতের কারনে আমিও টার্গেট হচ্ছি অনেক সমালোচনার।

আমি একটা জিনিষ ক্লিয়ারলী বুঝতে পারছি কেনো স্বয়ং স্রিষ্টিকর্তা তার পুরু জগতে একটা ধনী গরীবের সমাজ সৃষ্টি করেছেন। যদি তিনি এই পার্থক্যটা সৃষ্টি না করতেন, তাহলে পুরু জগত কয়েক দিনের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতো, জীবন থেমে যেতো আর অরাজকতার সৃষ্টি হতো। একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বলি তাহলে-

ধরুন সবার কাছে সমপরিমান সম্পদ রয়েছে। সবচেয়ে বড় লোকের কাছে যদি ৫ কোটি টাকা থাকে, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে গরীব লোকের কাছেও তাহলে ৫ কোটি টাকাই রয়েছে। যদি এটাই হয় তাহলে কি কি দাঁড়াবে, আসুন সেটা দেখিঃ

ক।      যে কৃষক সারা বছরের জীবিকার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে মাঠে ধান কিংবা অন্যান্য ফসল ফলাতেন এবং নিজেরা একটু ভালো থাকার জন্য আরো কিছু বাড়তি রোজগারের জন্য কাজ করতেন, সেই কৃষক আর পরিশ্রম করবেন না। কারন তার কাছে অঢেল টাকা আছে।

খ।       যে পরিবহন কোম্পানী তার আরো টাকা আয় করার জন্য দিনরাত অনেক লেবার, গাড়ি এবং সরঞ্জাম নিয়ে প্রতিনিয়ত সাধারন পাবলিক নিয়ে ব্যবসা করতেন, লাভের আশায় আরো বেশী মুলধন খাটিয়ে একটার পর একটা পরিবহন তার ষ্টকে যোগ করতেন, তিনি আর এই কাজটি করবেন না। কারন তার কাছে অঢেল টাকা আছে।

গ।       হোটেল রেস্তোরায় যারা ব্যবসা করেন, তারাও আর ওই ব্যবসাটা করবেন না, কারন তার ব্যবসা করে লাভের কোনো দরকার নাই। তার কাছেও অঢেল টাকা আছে।

ঘ।       কোনো ইয়াং জেনারেশন কখনো কোনো চাকুরী করার মনোবৃত্তি থাকবে না, জবও খুজবে না, কারন তার কাছেও অঢেল টাকা আছে।

চ।        খুচরা বিক্রেতা যেমন সব্জীওয়ালা, ফুস্কাওয়ালা, মুড়িওয়ালা, আলু বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতাও আর ফেরি করে করে দ্বারে দ্বারে সেইসব সব্জী, মাছ কিংবা তরিতরকারী নিয়ে ফেরীও করবেনা। কারন তার কাছে অঢেল টাকা আছে।

চ।        মেডিসিন কোম্পানীগুলি মেডিসিন তৈরী এবং বিক্রি করে মুনাফার জন্য তারাও আর কোনো প্রকার গবেষনা কিংবা বড় বড় কোম্পানী তৈরী করবে না। কারন তাদের কাছেও অঢেল টাকা আছে।

জ।      গার্মেন্টস শিল্পরা যেমন কোনো কর্মচারী পাবেন না, তেমনি লাভের জন্য তারাও আর কোনো গার্মেন্টস তৈরী করবেন না, কারন তাদের কাছেও অঢেল টাকা আছে।

ট।        স্কুল কলেজ, ইউনিভার্সিটি কিছুই নাই, কারন যারা এসব করবেন, আর মুনাফা করবেন, তাদের হাতেও অঢেল টাকা আছে।

ফলে ব্যাপারটা কি দাড়াবে? দাঁড়াবে এই যে, বাজার নাই, ফসল নাই, উতপাদন নাই, হোটেল রেস্তোরা নাই, পরিবহন চলবে না, গার্মেন্টস কোম্পানী নাই, মেডিসিন কোম্পানী নাই, ব্যাংক নাই, জেলে নাই, স্কুল কলেজ নাই, কিছুই নাই। অথচ সবার কাছে আছে অঢেল টাকা আর টাকা। কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদার জন্য যা দরকার, সেগুলিও নাই। খাবার নাই, মেডিসিন নাই, কাপড় চোপড় নাই, থাকার জায়গা নাই, অথচ টাকার কোনো অভাবও নাই। তাহলে মানুষ কি বেচে থাকতে পারবে? কিভাবে বাচবে এই জনগোষ্টী? কৃষক মাঠে যায় না, ফসল ফলায় না, ফসল তুলে না, ফলে মানুষ না খেয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়বে। মানুষ যখন অসুস্থ হয়ে পড়বে, কোথাও কোনো হাসপাতাল নাই, ডাক্তার নাই, না আছে কোনো নার্স। স্কুল কলেজ না থাকায় কেউ পড়তেও যাবে না, আর পড়বেই বা কেনো? সবার হাতে তো অঢেল টাকা আছে। ফলে ডাক্তার, নার্স কিংবা হাসপাতাল ছাড়া অসুস্থ মানুষেরা কোথায় যাবে? নিসচিত মরন।

শিশুরা দুধের ক্ষুধায় মরবে, অন্যরা খাবার না থাকার কারনে মরবে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্যে পরিবহন না থাকায় কোথাও যেতে পারবে না। পুরু প্রিথিবী একটা সময় সম্পুর্ন স্থবির হয়ে একটা নির্জীব শ্মশানে পরিনত হবে।

এটাই কি আমরা সবাই চেয়েছিলাম?

না, আমরা এটা কখনো চাইনি। আর ঠিক তাই দুনিয়াকে সচল করার জন্য, চলমান রাখার জন্যে সমাজে একটা ধনী গরীবের ব্যবধান রাখতে হবে যেখানে কেউ জীবিকার জন্য লড়বে, আর কেউ মুনাফার জন্য টাকা ইনভেষ্ট করবে।

বিধাতার নিয়ম এতো সহজ নয়। এটা তারই একটা পলিসি যেখানে ব্যবধান থাকতে হবে, রাখতে হবে, আর সব কিছু চলমান রাখতে হবে। আর ধনী-গরীবের ব্যবধানটা এই সমস্যার একমাত্র উপায়।

১৫/০৪/২০২১- মিথ্যা

Categories

কথায় বলে- মিথ্যাও নাকি কখনো কখনো সত্যি হয়ে যায়। কোনো একটা মিথ্যাকে হাজার বার বললে নাকি মিথ্যাটা ফ্যাকাশে হতে হতে এক সময় মিথ্যাটাই সত্যি হয়ে যায়। পরিপূর্নি সত্যিতে পরিনত না হলেও আসল সত্যটা অনেকাংশেই ঢাকা পড়তে পড়তে মরচে ধরে যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ একটা মিথ্যা বারবার এতোবার বলে যে, মিথ্যেটাই সত্যি হয়ে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে এমন একটা মিথ্যে যা ব্যথা লুকুনোর জন্য বলা হচ্ছে।

ব্যাপারটা আসলে কখনোই এ রকম না। অনেক সময় সত্যি আর মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা সহজ হয় না বটে কিন্তু ভিত্তিহীন আর অকারন গুরুত্বহীন কথা প্রথমবার শুনেই বুঝে ফেলা সেটা একটা বিশেষ গুন। যা সতর্ক থেকে আর নিজের চেতনাকে বাচিয়ে রেখে অর্জন করা যেতে পারে।  কিন্তু যদি মিথ্যের বোঝা বুদ্ধিমত্তার উপর চেপে বসে তাহলে মানুষ ধীরে ধীরে চোরাবালির বাকে আটকে পড়ে। যেখানে আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

মিথ্যে যে বলে সে নিজের সাথেই সে ছলনা করে থাকে। সে ভাবে যেই মানুষটাকে সে ঠকাচ্ছে বা মিথ্যের জালে ফাসিয়ে দিচ্ছে, তারা হয়তো বোকা, কিংবস সহজ সরল যাদেরকে সহজেই বোকা বানানো যায়। কিন্তু মিথ্যাবাদী কখনোই ভাবতে চায় না যে, মিথ্যে হলো সেই জাল যা একটা মানুষ তার নিজের অজান্তেই সে নিজের জন্য বিছায়। যখন মানুস নিজের কিছু লুকায় তখনই তাকে সতর্ক হওয়া উচিত। কারন যখন সত্যির সীমানা পার হয়ে যায়, তখনই মিথ্যার জাল বিছানো হয়। যাকে ভাগ্য তাকে নির্দয় ভাবে ফাসিয়ে দেয়।

কোনো কোনো সময় কিছু কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই সব সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। শুধু ভরসার স্থান তৈরির জন্যই এই সমস্ত নাটক তৈরী করা হয়। আর এই সব ভরষার জায়গায় এমন এমন কিছু মিথ্যা চরিত্রও তৈরী হয় যারা আজীবন কাল হয় “মুখেস” না হয় “স্যার” হিসাবে পরিচিত হন। এরা অর্থাৎ নাম সর্বসশ অস্তিত্তহীন এই সব মেকি চরিত্রগুলি একটা ভরষার স্থান তৈরী করেন। সময়ের স্রোতে কিংবা তদন্তের খপ্পরে যখন এই মেকি মিথ্যা ভরষার স্থান উম্মোচিত হয়ে চোখের সামনে ভয়ংকর এবং আসল চেহাড়া টা বেরিয়ে আসে, তখন নিজের কাছে নিজকে বড় বোকা মনে হয়। আর এর প্রধান কারন এই যে, মিথ্যা ভরষায় ভর করে কেউ যখন নিজের ইচ্ছায় সেই জায়গায় চলে আসে যেখান থেকে আর কেউ ফিরে যেতে পারে না।

সত্যকে যেমন বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায় না, তেমনি মিথ্যাকেও বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। মিথ্যাকে লুকাতে বহু পরিশ্রমের দরকার। আর সেই পরিশ্রম কখনোই কাজে দেয় না। কারন সত্যের একটাই চেষ্টা থাকে-বাইরে এসে আলোয় দারানো, আর মিথ্যারও একটা চেষ্টা থাকে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ার। মিথ্যের রাত যতো লম্বাই হোক না কেনো, সত্যের সুর্জ ঠিক উঠবেই।

এখানে আরো একটা ব্যাপার বুঝা খুব দরকার যে, মিথ্যা, লুকুচুরি কিংবা বিভ্রান্ত করা এই গুটি কতক জিনিষের মধ্যে পার্থক্য আছে। লুকানো এক জিনিষ, আর বিভ্রান্ত করা আরেক জিনিষ। সত্যিটাকে যেমন লুকানো যায় না, তেমনি একে বেশীক্ষন বিভ্রান্তির মধ্যেও রাখা যায় না। কারন সত্যিটা কখনো কল্পনা হয় না, আবার কোনো কল্পনাকেও সত্যি বলা যায় না। সত্যি কখনো কারো এজেন্ডা হতে পারে না। সত্যি সেটাই যেটা বাস্তব।  আর ঠিক এ কারনেই ট্রাষ্টের উপর কোনো ইনভেষ্টিগেশন হয় না, ইনভেষ্টিগেশন হয় ডাউটের উপর।

সত্যিটা যখন কেউ জেনেই যায়, তখন মিথ্যার গল্পটা বলে তখন শুধু সময়ই নষ্ট হয় কিন্তু কোনো কাজে আসে না।

০৯/০৪/২০২১-তুমি ছাড়া আমি

সকালটা আমার খারাপ ছিলো না। প্রতিদিনের মতোই আমার সকাল হয় অন্যসব দিনের মতো একই রুটিনে-ভোরে নামাজ, তারপর কোরআন তেলওয়াত অতঃপর কিছু নাস্তা। নাস্তার পর আমি দীর্ঘ একটা সময় অপেক্ষা করি অতি আখাংকিত এবং জীবনের চেয়েও প্রিয় একটা  ফোন কলের জন্য। আর সেটা প্রতিদিনই আসে, কখনো আধা ঘন্টা পর কিংবা কখনো আধা ঘন্টা আগে। কোনো ঋতুতেই এর কোনো ব্যত্যয় হয় নাই। শীতের সকালে আমি যখন একা গরম লেপের ভিতরে জেগে থাকি তখনো আসে, আবার চৈত্রের দাব্দাহনেও আসে। বর্ষার ঘন বৃষ্টিতেও আমার এই প্রিয় ফোন কলটা আসেই। মাঝে মাঝে এমনো হয় আমার সেই কাংগখিত ফোনটা হয়ত দিবসের মধ্যভাগেও আসে, কখনো অতি ভোরেও আসে, তবে আসেই। কোনো উত্তাপ নেই, নাই কোনো তারাহুড়া আমার। আজো সেভাবেই আমি অপেক্ষায় ছিলাম। জানি ফোন আসবে। কারন এটা কোনো মানুষের সাথে আমার দৈব পরিচয় নয় যে আমার জন্য ভাবে না, কিংবা এমন নয় যে, স্রোতে ভাসা কোনো প্রানহীন মাছ যার না আছে এই জগতের প্রতি টান বা কোনো হিসাব-কিতাব। এই ফোন কলটা সব সময় ‘ওয়ান ওয়ে ফোন”।

সে আমার জীবনের সব কিছু। প্রকাশ্য জীবনে তাঁকে আমি চিনি না, কখনো দেখি নাই, এটাই তার সাথে আমার চুক্তি। যখন সে আসে, সে আসে অন্য কোনো নামে বা অন্য কোনো পরিচয়ে। তারপরেও সে আমার দেবতার মতো এক অসীম শক্তি আর বল। আমি জানি এই জীবনে আমি তাঁকে কখনো আমার মতো করে পাবো না, না সে আমাকে স্পর্শ করতে পারে প্রকাশ্য রীতিতে অথচ সেই আমার প্রথম মানুষ যার স্পর্শে আমি হয়ে উঠেছি এক সুখী রমণী। একজন অন্য মানুষ, অন্য জগতের সংসারী। আমার সংসারে সব আছে কিন্তু আমার সমস্ত রমনীকুলের ক্ষমতা থাকা সত্তেও আমি একা, আমি মা নই। সেই আমার সন্তান, আমিই তার মা, আমিই তার মায়া, আমিই তার সহধর্মিনী অথবা আমিই তার এক মাত্র সৈনিক যে কমান্দারের আদেশ অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করে প্রতিটি নিসশাসে এবং ভালোবাসায়। আমার এই সংসারে সুখ আছে, আনন্দ আছে, আমার জীবনের নিশ্চয়তা আছে, তার সাথে আছে অদম্য এক মায়া।

কিছু সম্পর্ক আছে দেবতা তৈরী করেন, কিছু সম্পর্ক আছে সমাজ তৈরী করে আর কিছু সম্পর্ক আছে আমরা মানুষেরা অন্তরে অন্তরে তৈরী করি যার না আছে প্রকাশ্য কোনো স্বীকৃতি, না আছে সামাজিক কোনো গ্রহণযোগ্যতা। তারপরেও এই সম্পর্কের চেয়ে বড় কোনো সম্পর্ক হয় না। আমি একাই ঘুমাই, একাই জাগি, একাই খেলি, একাই কথা বলি শুধু তার সাথে। পৃথিবীর সমস্ত মানুষ গুলি যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন আমি তার সাথে কথা বলি শত সহস্র দূর থেকে। তাঁকে আমি দেখতে পাই, কিন্তু ছুতে পারি না। তার সাথে আমি কথা বলি কিন্তু স্পর্শ করতে পারি না। তাঁকে আমি সারাক্ষন দেখতে পাই কিন্তু হাত দিয়ে তার হাত ধরে আমি অই রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যেতে পারি না। অথচ আমি সারাক্ষন তার সাথেই আছি।

আজ যেনো অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে আমার সেই ফোন কলটা আসার। মন একটু একটু অসহিষনু হচ্ছে, বুকের ভিতর কেমন যেনো ধরফড় করছে। বেলা পড়ে যাচ্ছে, খেতে ইচ্ছে করছে না, কখন গোসলের সময় পেরিয়ে গেছে মনেও নাই। রান্নাটা করা হয় নাই, বারবার ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি-এই বুঝি ফোনটা এলো।

-হ্যা, ফোনটা বেজে উঠেছে। দৌড়ে ফোনটা হাতে নিতেই দেখি আমার মা। হ্যালো বলছি, মাকে ডাকছি, মা কোনো কথা বলেন না। মায়ের গলা বড্ড ভেজা।

-সে নাই। কিছুক্ষন আগে সে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে। হু হু করে কাদতে কাদতে মা আমাকে এই সংবাদটাই জানালেন। এই প্রিথিবীতে এই এক মাত্র মানুষ যিনি জানেন আমার জীবনের সব কাহিনী আর আমার সুখের ভাণ্ডারের গোপন রহস্য।

আমি ধপ করে বসে গেলাম মাটিতে। কি হলো? আমার মনে হতে লাগলো আমার শরীর থেকে সমস্ত রক্ত বিন্ধু এক ফোটা এক ফোটা করে মাটিতে ঝরে পড়ছে, আমার নিসশাস এক টা একটা করে কমতে শুরু করেছে, ঘরটা যেনো চারিদিকে দুলছে, ফ্যানটা যেনো তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আবোল তাবোল শব্দ করছে, আমি বুঝতে পারছি আমার পায়ের নীচের সব কিছু ফস্কে যাচ্ছে, দ্রিষ্টি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, আমি জ্ঞান হারাইলাম।

কখন জ্ঞান ফিরেছে আমি জানি না, যখন চোখ খুলেছি, দেখেছি পাশে আমার মা বসে। (Cont....)

০৮/০৪/২০২১-তোমাকে ছাড়া আমি  

Categories

যেদিন প্রথম আমি তোমার সাথে জীবন বেঁধেছিলাম, সেদিন বুঝি নাই আমার কতটা নিয়ে গেলে তুমি। একাই এসেছিলাম যেমন কেউ পালিয়ে যায় তার সেই চেনা শিশুকাল, চেনা শৈশব, আর চেনা সব ভালোবাসার জগত ছেড়ে। আমার সেই নতুন জগতে তোমাকে জুড়েই আমার সময় পেরিয়ে গেছে দিনগুলি একটা একটা মুহুর্ত করে, পেরিয়ে গেছে মাস একটা একটা সপ্তাহ শেষে। এরপর বছর পেরিয়ে গেছে মাস শেষে, আর যুগ পেরিয়ে গেছে বছরান্তে। তোমাকে কেন্দ্র করেই আমার জীবনের অনেক অভ্যাস, অনেক শখ আমুল বদলে গেছে চিরতরে, আমি বুঝতেই পারিনি কখন কবে কোন ক্ষন থেকে আমার প্রিয় সবুজ রংটা থেকে তোমার প্রিয় নীল রংটা আমার প্রিয় হয়ে গেছে। এভাবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে আমার অনেক অভ্যাস যা কখনোই আমার ছিলো না, ছিলো শুধু তোমার নিজের। আমি দিনে ঘুমাতে পছন্দ করতাম, আমি ঝাল খেতে পছন্দ করতাম, আমি মিষ্টি একেবারেই খেতে চাইতাম না, অবিরত টেলিভিশনের সামনে আমার পছন্দের সিরিয়ালগুলি দেখতেই থাকতাম। অথচ সেই আমি কত বদলে গিয়েছিলাম তোমার সংসারে এসে। আমাকে আর সেই ঝাল আর নেশা ধরায় না, টিভির সেই সিরিয়ালগুলি আমাকে হয়তো খুব মিস করে, দিনের শখের ঘুমটা যে কবে বিদায় নিয়েছে তার দিনক্ষনও আমার আর আজ মনে না। কবে যে তোমার মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাসটা আমার ঝাল খাওয়ার নেশাকে অতিক্রম করে আমাকেও মিষ্টি খাওয়ার নেশায় বদল করে ফেলেছে, আমি নিজেও জানি না। শীতের সকালে কাকডাকা ভোরে গরম আমেজের বিছানা ছেড়ে সেই কখন থেকে যে আমি অধীর আগ্রহে সেই পিঠাটাই বানাতে শুরু করেছিলাম যেটা তুমি খেতে ভালোবাসতে। আর এভাবেই পার হয়ে গেছে আমার সবকটি ঋতু। আমার সব আগ্রহ আর অভ্যাস যেনো গড়ে উঠেছিলো তোমাকে ঘিরেই।

আজ এতো বছর পর, আজ কেনো সব উলট পালট হয়ে গেলো? সূর্য ঠিক সময়মত উঠে আজও তো সকাল হয়েছে। মনেও পড়েছিলো তুমি অফিসে যাবে। কিন্তু আজ আমার কেনো তাড়া নাই তোমার জন্য নাস্তা বানানোর? সকালের হকার তো সেই আগের মতো পত্রিকাটাও দিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো তো পত্রিকার ভাজটা পর্যন্ত খোলা হলো না! চকলেটের সিরিয়ালটা তো টেবিলের উপরেই আছে, অথচ আমি কেনো ব্যস্ত হই নাই গরম দুধে তোমার খাবারের জন্য সিরিয়ালতা বানানোর জন্য? অফিসে যাওয়ার আগে হাত মুখ ধুতে যাবার আগে কতবার শুনেছি তোমার ওই কন্ঠটা- ওই, রেডি হচ্ছি, নাস্তাটা বানাও, কিংবা বলতে ‘ড্রাইভারকে বলো ব্যাগটা নিয়ে যেতে’। খুব ধাক্কা দেয় বুকে। তুমি ছাড়া সকালটা কত আলাদা। রুমভর্তি তোমার সিগারেটের গন্ধটাও আজ নাই। রান্নাঘরের দিকে যেতেই তোমার ঘরটা চোখে পড়ে, ইশ, ওই খানে তুমি বসে থাকতে, পেপারটা পড়তে, সিগারেট টানতে, খালী পেটে কফি খেতে। কি অবাক। সেই সোফাটা আজো আছে, এস্ট্রেটা আগের জায়গাতেই আছে, শুধু তুমি ওখানে নাই। তুমি আজ নাই। আমি তোমাকে আজ ইচ্ছা করলেই সেই আগের মতো স্পর্শ করতে পারছি না।

অফিস শেষে সন্ধ্যায় বা রাতে ঘরে ঢোকে আমাকে না দেখতে পেলে সারাটা বাড়িতে তুমি আমাকে খুজতে। আর মেয়েদের জিজ্ঞেস করতে-আরে তোর মা কই? যেনো আমি হারিয়ে গেছি। রান্নাঘরে কাজে থাকলে তুমি রান্নাঘর পর্যন্ত চলে যেতে। বলতে-কি করো? হয়তো এটুকুই। অথচ আজ তুমিই হারিয়ে গেলে। আজ আর আমাকে কেউ বলে না-আরে কোথায় গেলা বা কি করো? রান্নাঘরে তোমার পছন্দের খুব ছোট স্টীলের পাতিলটা আজ আর কফির পানির জন্য গরম করার দরকার হয় না, ছোট কাপটাও আজ একেবারেই শুষ্ক। ওগুলি হাতে নিলেই খুব ভারী মনে হয়, মাটিতে বসে যাই, বুকের ভিতর কি যেনো কঠিন একটা চাপা ব্যথা অনুভব হয়।  ছুটির দিনটা এতো লম্বা মনে হয় আজ। ছুটির দিনে তোমার পান্তা ভাত আর ডিম ভাজীর কথা মনে হলেই চোখ ভিজে আসে। তোমার বাগান আজ তোমাকে খুব মিস করে। বাগানের প্রতিটা গাছ যেনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তোমার অপেক্ষায়। ওরা হয়তো কথা বলতে পারে না কিন্তু ওদের হেলে দুলে ভালোবাসার প্রকাশটা যেনো আজ আর নাই। কি অদ্ভুত নিরবতা চারিদিকে।

আমি জানতাম, জীবনের কোনো না কোনো সময় এমন একটা সময় আসবেই। একমাত্র সহমরন আর দূর্ভাগ্যক্রমে কোনো দূর্ঘটনা ছাড়া কেউ কেউ সেই ভাগ্যবান হয় যখন একসাথে পৃথিবী-বিচ্ছেদ হয়। কি অদ্ভুত একটা জীবন, তাই না? একা বেচে থাকা যেমন কষ্টের, আবার  তেমনি সাথী নিয়ে বেচে থাকার পর আবার একা হয়ে যাওয়া আরো অনেক বেদনাদায়ক। কেউ চলে যাবার পর বুঝা যায় সব কিছু আমার ছিলো না। এতোটা বছর ধরে একসাথে চলার মধ্যে কখনো একটু রাগ, একটু অভিমান, একটু গোস্যা আর বিস্তর জায়গা জুড়ে পরস্পরের নিঃশব্দে  ভালোবাসাটাই একসময় মায়ায় পরিনত হয়ে গিয়েছিলো আমাদের। তখন এই মায়াটাই ছিলো আমাদের পূর্ন ভালোবাসা। ভাবতেই পারি না, তোমার টয়লেট করে আসার পর যে গন্ধটা একদিন আমার কাছে দূর্গন্ধ মনে হতো, তোমার ঘামের গন্ধে ভরপুর যে গেঞ্জীটা একদিন নাকের কাছে নিলে একটা শুকনা বাজে গন্ধ বলে মনে হতো, একদিন সেই টয়লেটের গন্ধ, ঘামের দূর্গন্ধ আর দুর্গন্ধ তো মনে হয় নাই আমার, বরং বড্ড মায়ায় যেনো ঘামে ভিজা গন্ধতা আরো জড়িয়ে ধরতাম। খুব মায়া লাগতো, আহা, কত কষ্ট করো, ঘামে শরীর ভিজে যেতো, তার সেই সাক্ষী এই গন্ধওয়ালা গেঞ্জীটা। অনবরত মমতায় আমি সেটা ভালোবাসায় ধুয়ে দিতাম।

আমি জানি, আমার ঘুমের মধ্যে ডাকা নাকের শব্ধ যখন তোমার কাছে একদিন অসহ্য মনে হতো, বিরক্তিকর মনে হতো, চুলে আধাভেজা তেলের যে গন্ধ একদিন তোমার নাক বুঝে আসতো, সময়ের এতোটা পথ পেরিয়ে কোনো একদিন তুমিও সেই নাকডাকা, সেই তেলেভেজা চুলের সোদা গন্ধ তোমারও ভালোবাসার একটা অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছিলো। যেমন আমার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছিলো তোমার রাগ, তোমার অভিমান। আজ এইক্ষনে তোমার সেইসব রাগ অভিমান আমাকে কাদায়, আজ কেনো জানি মনে হয়, খুব মিস করছি সেই রাগ, অভিমান, আর মমতা। বড্ড একা লাগে এখন। সবাই চারিপাশেই আছে অথচ কি ভয়ংকর শুন্যতায় আমি দিন কাটাই যেনো আমি শক্তিহীন এক নির্জীব প্রানী। সবাই তোমাকে মিস করে, কাদে, কষ্ট পায়, কিন্তু আমি আমার কষ্টটা কাউকে বুঝাতে পারি না। চোখের জলের রঙ এক হলেও এই জলে ভেসে থাকা  কষ্ট, ব্যাথা, বেদনা আর হাহাকারের রঙ হয়তো সবার এক নয়। আমার কষ্টের রঙ হয়তো আরো নীল।

আজ তোমা বিনে এই একটা কথাই বারবার মনে জাগে- তুমি ছিলে আমার ভরষা, ছিলে আমার নিরাপত্তা, আমার পরামর্শদাতা, বিপদে আপদে তুমিই আমার ডাক্তার কিংবা নার্স। তুমিই ছিলে আমার সব। ব্যস্ততম রাস্তায় যখন আমি রাস্তা পার হতে গিয়ে আমার বুক কেপে উঠতো, তোমার হাত ধরলেই আমার সব কাপুনী বন্ধ হয়ে যেতো। তুমি আমার মায়ার সংসার। বুকের সব পাজরে পাজরে তুমি গেথে ছিলে আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে আর চোখের প্রতিটি বিন্দুজলে। নীল আকাশের গাংচিলের মতো তুমি খেলা করতে আমার  অন্তরের এমন এক কোটরে যেখান থেকে তোমাকে আলাদা করার কোনো ক্ষমতা আমার ছিলো না। অথচ দেখো, সেই তুমি কি অবলীলায় কোনো কিছু না বলেই আমাকে একা ফেলে কোথায় চলে গেলে।

সেই কোনো এক সময় জেনেছিলাম, মানুষ ভালবেসে নাকি খিলখিল করে হাসে, মেঘলা আকাশ দেখে নীল আকাশের কথা ভাবে, কবিতা লিখে। আজ এই একা জীবনে এসে বুঝলাম, ভালোবাসায় অনেক বেদনাও থাকে, থাকে চাপা কান্না আর বিরহের অসহায়ত্ত। শরীর খারাপ হলে এখন বড্ড তোমার কথা মনে পড়ে, মিষ্টির দোকানের পাশ দিয়ে গেলে তোমার কথা মনে পড়ে, সন্ধ্যা হলেই তোমার বাড়ি ফেরার কথা মনে পড়ে। ছুটির দিনে কেমন যেনো পুরু ঘরটাই ফাকা লাগে। অদ্ভুত না জীবন? স্মৃতিগুলি আরো ভয়ংকর মনে হয় এখন।

আমি জানি, এ জীবনে আর কেউ আমাকে তোমার মতো আদর, ভালোবাসা, অভিমান কিংবা মমতা দিয়ে না মন ভরাতে পারবে, না ভরষা দিতে পারবে, না পারবে সেই যাদুকরী কথায় আমার অভিমানগুলি কোনো এক তপ্ত ললাশীর মতো হাস্যোজ্জল করাতে। আসলে যেদিন প্রথম আমি তোমার কাছে এসেছিলাম, তখন আমি ছিলাম একজন উচ্ছল মায়াবতী সবেমাত্র পা রাখা এক কুমারী আর তুমি ছিলে কিশোর থেকে পা দিয়ে সবেমাত্র যৌবনে পা রাখা টকবকে এক যুবক। সেই বয়সটা পার করে অর্ধ শত বছর পার করেও আমি যেনো সেই ষোড়শী যুবতীর মতই আর তুমি সেই টকবগে যুবকের মতোই সময়টা কাটিয়েছি। যেনো দিনগুলি শুধু রাত আর দিনের মধ্যেই পার হয়ে, মনের দিক থেকে নয়। আমি তো সারাটা জীবন তোমার সাথেই থাকতে এসেছিলাম। আমি কল্পনার কোনো রাজকুমারী ছিলাম না, তেমনি তুমিও আমার কাছে কোনো কল্পনার পুরুষ ছিলে না। যতোক্ষন অবধি একটা কাল্পনিক নাম অন্য কারো সাথে যুক্ত হয়, ততোক্ষন সেটা হয়তো হাওয়াই থাকে। কিন্তু তুমি আমার জীবনে কোনো কাল্পনিক নাম ছিলে না। আমি তোমাকে স্পর্শ করেছি, ভালোবেসেছি, সবই ছিলো প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য আর জাগতিক। অথচ আজ তুমি আমার সামনে দিয়ে এতো জোরে দৌড়ে চলে গেলে, আমি আর তোমাকে নাগালই পেলাম না। মনে হচ্ছে আজ, তুমি আমার কল্পনার কোনো সুপুরুষ আর আমি কল্পনার কোনো রাজমুকারী। জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যা দেখে কখনো বুঝা যায় না বা মন বুঝতে চায় না কোনটা সত্যি আর কোনটা সত্যি নয়। আমাকে এই একা ফেলে চলে যাওয়ার ঘটনাটা আমার কাছে যদি মিথ্যা হতো, যদি এটা নিছক একটা সপ্ন হতো! কিন্তু এটাই সত্যি যে, ঘটনাটা সত্যি। তুমি নাই এই মিথ্যার পর্দাটা যখন আমি খুলে দেই, তখন তুমি আছো এটাই সত্যি হয়ে চারিদিকে প্রকাশিত হও আমার রক্ত নালির প্রতিটি ফোটায়, আমার নিশ্বাসের প্রতিটি শ্বাসে, আমার বিশ্বাসের প্রতিটি বিন্দুকনায়। তুমি আজ আসলেই আমার সামনে আর নাই। কিন্তু অন্তর, আত্তা আর মনে কোথাও তোমার অনুপস্থিতি আমি দেখি না। তুমি ছিলে, তুমি আছো আর সারা জীবন থাকবে আমার। তুমি মুক্তি পেলেও আমি মুক্তি পাইনি। হয়তো আমি জামিনের মতো একটা মুক্ত জীবন ভোগ করছি যেখানে প্রতিনিয়ত আমাকে তাড়া করে তোমার সেই আদর আর মমতা। এখন আমাকে শুধু কিছু অভ্যাস পাল্টাতে হবে যা তুমি আমাকে দিয়েছিলে।

আসলে এটার নামই জীবন যার উপলব্ধি শুরু হয় মৃত্যুর মতো কোনো এক অফেরতযোগ্য বিচ্ছেদের শুরুতে। আর শেষ হয় নিজের বিচ্ছেদের মুহুর্তে। আমি এখন বেচে আছি সেই মুহুর্তটির জন্য যার নাম ‘জীবন-বিচ্ছেদ’। আর সেটা শুধুই আমার জন্য বিচ্ছেদ।  

৪/৪/২০২১-রিভার সাইডের ইতিকথা

সনটা ছিলো ২০০৪। 

তখন মীরপুর সেনানীবাসে ৪ ফিন্ড আর্টিলারিতে সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে কর্মরত আছি।  আমার প্রমোশন হবার কথা মেজর থেকে লেফটেনেন্ট কর্নেল পদে। কিন্তু মামুলি একটা কারন দেখিয়ে তারা আমাকে প্রমোশন দিলো না। স্টাফ কলেজ করেছি, গানারী স্টাফ করেছি, ডিভ লেভেলে জিএসও -২ (অপারেসন) হিসাবে কাজ করেছি, আর্মি হেড কোয়ার্টারে ও জি এস ও-২ হিসাবে কাজ করেছি। প্রমোশনের জন্য কোনো প্রকার কমতি আমার নাই। কিন্তু তারপরেও আমাকে প্রমোশন না দিয়ে আমার জুনিয়র ১৪ লং কোর্সের মেজর মজিস, যে কিনা ক্যাটেগরি-সি , স্টাফ কলেজ ও করে নাই, গানারী স্টাফ ও করে নাই, সে আমার বদলে প্রমোশন পেয়ে ৪ ফিল্ডে পোস্টিং এসেছে। এটা শুধু মাত্র সে খালেদা জিয়ার সাথে কোনো না কোন ভাবে পরিচিত। শোনা যায় যে, মজিদের বাবা খালেদা জিয়ার বাসায় নাকি মালীর কাজ করতো। আর সে সুবাদেই এই নেপোটিজম। এর কোনো মানে হয়? সিদ্ধান্ত নিলাম, এপেন্ডিক্স-জে (ইচ্ছেকৃতভাবে অবসর নেওয়া) দিয়ে আর্মি থেকে চলে যাবো।  সাথে সাথে এটাও ভাব লাম যে, বাইরে গিয়ে কোনো চাকুরী ও করবো না। কিন্তু কি ব্যবসা করবো সেটা তো কখনো শিখি নাই। একচুয়ালি, আর্মির অফিসার গন, সারাজীবন তাদের ডেডিকেসন থাকে আর্মির যাবতীয় কাজে, সে আর কোনো বিকল্প কাজ শিখেও না। ফলে আমারো তাই হয়েছে। অনেক ভাবছিলাম, কি করা যায়। কিন্তু কোন কুল কিনারা পাচ্ছিলাম না।

ঠিক এই সময় একটা ঘটনা ঘটে গেলো। কোনো এক কাকতালীয় ভাবে একদিন আমার সাথে  নাজিমুদ্দিনের পরিচয় হয় মীরপুর সেনানীবাসে। আমিই তাকে মীরপুর সেনানিবাসে দাওয়াত করেছিলাম কারন সে আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো। আমি কখনোই নাজিমুদ্দিনকে সামনাসামনি দেখিও নাই, কথাও বলি নাই যদিও সে আমাদেরই এলাকার লোক। নাজিমুদ্দিন এলাকায় একজন খুব প্রতাপশালী খারাপ মানুষের মধ্যে একজন ছিলো। ধর্মের কোনো বালাই ছিলো না, সারাদিন মদের উপর থাক্তো, আর নারী ছিলো তার প্রিয় ভোগের মধ্যে একটি। সিনেমার জগত থেকে শুরু করে, সঙ্গীত রাজ্যের সব নারীদের এবং সাধারন মেয়েরা কেউ তার হাত থেকে রেহাই পায় নাই। তার টাকা ছিলো, ফলে টাকার জন্য ই সব ক্লাসের অর্থলোভী মেয়েগুলি তাকে দিনে আর রাতে সঙ্গ দিতো। সে বসুন্ধরার প্রোজেক্ট সমুহে মাটি সাপ্লাই দেওয়ার বৃহৎ একচ্ছত্র সাপ্লাইয়ার ছিলো। জমি দখল, অবৈধ ভাবে মাটি কাটা, অন্য মানুষের জমি কম দামে ক্রয় করে বসুন্ধরাকে দেওয়া, এই ছিলো তার কাজ। কিন্তু তার একটি জায়গায় সে কখনো ই বুদ্ধিমান ছিলো না। সে সব সময় পাওয়ার অফ এটর্নি বা আম মোক্তার নিয়ে জমি ক্রয় করত। সেই রকম ভাবে আমাদের গার্মেন্টস বিল্ডিংটা যে জমির উপর অবস্থিত, সেটা জনাব আব্দুল বারেক এবং তার পরিবারের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলো। হয়ত কিছু টাকা বাকী থাকতে পারে। কিন্তু সে জমিটা রেজিস্ট্রি করে নেয় নাই। পরিবর্তে সে বারেক সাহেব এবং তার পরিবারের কাছ থেকে পাওয়ার অফ এটর্নি নিয়ে এখানে দশ তালা ফাউন্ডেসন দিয়ে হাসনাবাদ সুপার মার্কেট নামে আপাতত তিন তালা বিল্ডিং (সাথে একটি বেসমেন্ট) তৈরী করে। 

প্রাথমিকভাবে সে নিজেই একটা গার্মেন্টস দিয়েছিল এবং এর নাম রেখেছিলো "রিভার সাইড সুয়েটারস লিমিটেড", বেশ সুন্দর নাম। নাজিমুদ্দিন সাহেব গার্মেন্টস চালানোর জন্য যে জ্ঞ্যান, যে বিদ্যা থাকা দরকার সেটা তার কিছুই ছিলো না। কিন্তু তার অনেক টাকা ছিলো। ফলে গার্মেন্টস এর জন্য তিনি যাদেরকে অংশীদারী দিয়েছেন, তারা সবাই ছিলো নিজেদের আখের গোছানোর ধান্দায়। ফলে ধীরে ধীরে অত্র গার্মেন্টস শুধু লোক্সানের দিকেই যাচ্ছিলো। এই লোক্সান এক সময় নাজিমুদ্দিনের কাছে খুব বিরক্তিকর মনে হচ্ছিলো বটে কিন্তু সে অন্য দিকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীটা রাখতেও চাচ্ছিলো। 

অনেক কথাবার্তার পর, নাজিমুদ্দিন আমাকে একটা অফার দিলো যে, যদি আমি চাই তাহলে আমি তার রিভার সাইড সুয়েতারস ফ্যাক্টরী টা চালাইতে পারি। তিনি আমাকে ৩০% শেয়ার দিবেন আর তিনি ৭০% শেয়ার নিজে রাখবেন। এদিকে আমি কোনো কিছুই বুঝি না কিভাবে কোথা থেকে গার্মেন্টস এর অর্ডার নিতে হয়, কিভাবে ব্যাংকিং করতে হয়, কোনো কিছুই না। কিন্তু সাহস ছিলো অনেক। পরের দিন আমি রিভার সাইড সুয়েতারস দেখতে গেলাম। প্রায় বন্ধ অবস্থায় আছে ফ্যাক্টরীটা। মাত্র ১৮ জন অপারেটর কাজ করছে। কারেন্ট লাইন বন্ধ কারন প্রায় ৪ মাসের অধিক কারেন্ট বিল বাকী আছে। গ্যাস লাইন ও বন্ধবিল পরিশোধ না করার কারনে। ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকা লোনা আছে। ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ না করার কারনে কোন এল সি করা যায় না, সি সি হাইপোর কোনো সুযোগ নাই। এর মানে ফ্যাক্টরীটা একেবারেই লোকসানের প্রোজেক্ট। ব্যাংক ম্যানেজার ছিলেন তখন মিস্তার তাহির সাহেব এবং সোস্যাল ইস লামী ব্যাংকের এম ডি ছিলেন তখন মিস্তার আসাদ সাহেব। ঊনারা দুজনেই একটা উপদেশ দিলেন যে, যদি আমি নিতে চাই, তাহলে ব্যাংক রি সিডিউলিং করতে হবে। ব্যাংক রিসিডিউলিং কি জিনিষ তাও আমি জানি না। যাই হোক, শেষ অবধি আমি রিস্ক নেওয়ার একটা প্ল্যান করলাম। 

ফ্যাক্টরীটা তখন চালাচ্ছিলো জনাব লুতফর রহমান নামে এক ভদ্রলোক। এরও স্বভাবের মধ্যে অনেক খারাপ কিছু ছিলো। সে রীতিমতো জুয়া এবং নারীঘটিত ব্যাপারে খুব আসক্ত ছিলো। সাবকন্ট্রাক্ট করে যে টাকা পেতো, সেটা শ্রমিকদের মুজুরী না দিয়ে জুয়ার আসরেই বসে হেরে আসতো। ফলে প্রতিনিয়ত শ্রমিকগন সবশেষে সেই আবারো নাজিমুদ্দিনের বাসার সামনে গিয়েই বেতনের জন্য আন্দোলন করা ছাড়া কখনো বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাক্নতো না। নাজিমুদ্দিন এতোটাই বিরক্ত ছিলো যে, কোনোভাবে এটা অন্য কারো হাতে দিতে পারলে সেও যেনো বেচে যায়।

ব্যাংক রিসিডিউলিং করার জন্য মোট ৪০ লাখ টাকার প্রয়োজন। আমার কাছে এতো টাকা ছিলোও না। ফলে আমি আমার পরিচিত কিছু সিনিয়র আর্মি অফিসারদের সাথেও কথা বললাম যারা খুব তাড়াতাড়ি আর্মির চাকুরী ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। কিন্তু সবাই লাভ চায়, আনসারটেনিটিতে কেউ ইনভেস্ট করতে চায় না। ফলে আমার পরিচিত আর্মি অফিসার গন ক্রমে ক্রমে পিছু হটে গেলেন।

কোন উপায়ন্তর না দেখে আমি আমার বড় ভাই হাবীবুল্লাহ যিনি আমেরিকায় থাকেন, তার কাছ থেকে তখন ৪০ লাখ টাকা ধার নিলাম এবং বাকী সব রি সিডিউলিং করে নিলাম। সাথে ৩০% শেয়ারের সমান টাকা আমি নাজিমুদ্দিন কেও দিয়ে দিলাম (কিছু জমি দিয়ে আর কিছু ক্যাশ দিয়ে)।

এতে আরেকটি সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিলো। আমি ছিলাম রিভার সাইড সুয়েতারস এর চেয়ারম্যান আর নাজিমুদ্দিন ৭০% নিয়ে থাক্লেন এম ডি হিসাবে। কিন্তু নাজিম ভাই অফিশিয়াল কোনো কাজেই ইনভল্ব হলেন না। তার দস্তখত লাগ্লেও তাকে কোথাও খুজেই পাওয়া যায় না। তাছাড়া রুগ্ন এই ফ্যাক্টরিতে অনেক প্রয়োজনেই টাকাও লাগতোকিন্তু নাজিমুদিইন ভাই তার কোন ভাগ ই নিতেন না। আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে সার্বক্ষণিক টাকা ধার করে করে চালাইতে শুরু করলাম বটে কিন্তু একটা সময় আমার পক্ষে আর চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না।

উপান্তর না দেখে একদিন আমি নাজিমুদ্দিন ভাইকে বললাম যে, হয় আমার ৩০% শেয়ার আবার তিনি নিয়ে আমার ইনভেস্টমেন্ট ফেরত দিক অথবা বাকী ৭০% শেয়ার একেবারে আমার নামে ট্রান্সফার করে দিক যেনো আমি আমার মতো করে চালাইতে পারি। তখনো ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকার মতো বাকী। কিস্তি দিতে পারছি না। এল সি করতে পারছি না। শুধু নিজের পকেট থেকেই টাকা খরচ হচ্ছে। নাজিম ভাই চালাক মানুষ। তিনি সব লোন আমার নামে ট্রান্সফার করে আর কিছু টাকা ক্যাশ নিয়ে পুরু ৭০% শেয়ার বিক্রি করতে রাজী হয়ে গেলেন। ফ্যাক্টরীর এসেট, লায়াবিলিটিজ হিসাব কিতাব করে শেষ পর্যন্ত আমি বাকী ৭০% শেয়ার নিয়ে আরেকবার রিস্ক নেওয়ার সাহস করলাম। আমার সাথে নতুন লোক মিস্তার মোহসীন (যিনি এক সময় এই ফ্যাক্টরীর ডি এম ডি হিসাবে কাজ করতেন) যোগ হলেন। তাকে আমি খুজে বের করেছি এই কারনে যে, তিনি গার্মেন্টস লাইনে বেশ পাকা, বায়ার দের সাথে তার পরিচয় আছে, ব্যাংকিং বুঝে। আমি তাকে বিনে পয়সায় ৩০% শেয়ার লিখে দিয়ে তাকে চেয়ারম্যান করলাম আর আমি এম ডি হয়ে গেলাম।

নতুন করে আবার ইনভেস্টমেন্ট এর পালা। আমি আমার আত্মীয় জনাব মুস্তাক আহ মেদ (আমার স্ত্রীর ছোট ভাই, যিনি আমেরিকায় থাকে) কে গার্মেন্টস এর শেয়ার চায় কিনা জানালে তিনি ২৫% শেয়ার নেওয়ার একটা ইন্টারেস্ট দেখান এবং তিনি প্রায় ৪৫ লাখ টাকা যোগান দেন। এইভাবে আমি আরো অনেক স্থান থেকে ফান্ড যোগার করে করে ফ্যাক্টরীটি চালানোর চেষ্টা করছিলাম। প্রচুর সময় দিচ্ছি, রাত ফ্যাক্টরীতেই কাটাই প্রায়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, ফ্যাক্টরিটা ঘুরে দারাচ্ছিলো না। এক সময় আমার মনে হলো, মোহ সীন সাহেব নিজেই ফ্যাক্টরীর উন্নতির জন্য মন দিয়ে খাটছেন না। তিনি যেহেতু নিজে কোনো টাকা ইনভেস্ট করে নাই, ফলে তার সিন্সিয়ারিটি আমার কাছে একটা প্রশ্নের উদ্রেক করলো। সেলারীর সময় তিনি ট্যাব লিকে চলে যান, খুব কম রেটে অর্ডার নেন, কস্টিং প্রাইসের চেয়েও কম রেট। ফলে আমি লোনে ডুবে যাচ্ছিলাম। কিছুতেই আর সামাল দিতে পারছিলাম না। 

অবশেষে ২০০৭ এর শেষে আমি ফাইনাল সিদ্ধান্ত নিলাম যে, যা লস হবার হয়ে গেছে, এবার আর লস দিতে চাই না। আমি ফ্যাক্টরী বিক্রি করে দেবো এবং ব্যাংকের টাকা শোধ করতে পারলেই হবে। কারন ব্যাংক লোন তো এখন আমার উপরেই একা। যদিও মোহসীন সাহেন ৩০% এর মালিক কিন্তু তার কোনো টাকা নাই এবং তিনি এই ব্যাপারে কোনো সংকিতও নন। আমি মোহসীন ভাইকে বললাম যে, আমি ফ্যাক্টরী বিক্রি করতে চাই। তিনি একজন গ্রাহক আনলেন, নাম মিস্টার মুরতুজা আর শ্রীলংকান এক ভদ্রলোক নাম প্রিয়ান্থা। ঊনারা এমন একটা প্রপোজাল দিলেন, আমি হিসেব করে দেখলাম যে, আমি লোন থেকে বেরিয়ে যেতে পারি।

মিস্টার মুরতুজা এবং মিস্টার প্রিয়ান্থা দুজনেই গার্মেন্টস লাইনে বেশ পাকা এবং তারা প্রফেসনাল। তারা নতুন করে ফ্যাক্টরীটা আবার তাদের মতো করে সাজিয়ে ব্যবসা করবেন এবং এটা সম্ভব।

মুর্তজা ভাই এবং মিস্টার প্রিয়ান্থা ধীরে ধীরে এলাকা সম্পর্কে জানতে জানতে একটা জিনিষ বুঝলেন যে, এই এলাকাটি সভ্য কোনো জায়গা নয় এবং এখানে ব্যবসা করতে গেলে লোকাল সাপোর্ট ছাড়া কোনোভাবেই ব্যবসা করা সম্ভব নয়। এই ফিডব্যাকটা তারা লোকাল এলাকা, বিভিন্ন বন্ধুবান্ধব, এবং স্টাফদের ছাড়াও ব্যাংক থেকে পেলেন যে, হয় মিস্টার নাজিমুদ্দিন অথবা মেজর আখতারকে সাথে না নিলে নিরাপদে এখানে ব্যবসা করা সম্ভব না। এই এলাকাটি আবার আমার নিজের। সবাই আমাকে চিনে। তারমধ্যে আমি একজন আর্মি অফিসার হওয়াতে সবাই আমাকে একটু ভয়েও থাকে।

হতাত করে একদিন মুরতুজা ভাই এবং প্রিয়ান্থা আমার মিরপুরের বাসায় রাত ১১ টায় এসে হাজির। তারা আমাকে এইমর্মে জানালেন যে, তারা ১০০% শেয়ার কিনবেন না। ৯০% শেয়ার কিনবেন এবং ১০% শেয়ার আমাকে রাখতেই হবে। আমি আমার সময়মতো ফ্যাক্টরীতে আসতে পারবো এবং আমি আমার এমডি পোস্টেই থাকবো। সম্মানি হিসাবে আমি তাদের সমান সম্মানিই পাবো। ব্যাপারটা আমি সবশেষে মেনেই গেলাম। অর্থাৎ আমি ১০%, মুরতুজা ভাই ৪৫% আর প্রিয়ান্থা ৪৫% শেয়ার নিয়ে আবার ফ্যাক্টরী রান করতে শুরু করলো। এবার এটা প্রান ফিরে পেলো।

২০১০ সালে প্রিয়ান্থা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৪১ বছর বয়সে মারা যান। ইতিমধ্যে মুরতুজা ভাই আমি কেমন লোক, কেমন চরিত্রের মানুষ, সেটা বুঝে গিয়েছিলেন। আমি আসলে মাত্র ১০% শেয়ার নিয়ে কোনো হস্তক্ষেপই করছিলাম না। কারন ঊনারা ৯০% এর মালিক, সেখানে আমার  মন্তব্য কিংবা আমার কোনো সাজেশন খুব একটা মুল্যায়ন করা হবে কি হবে না সেটা নিয়ে আমি একটু তো সন্দিহান ছিলামই। ফলে আমি জাস্ট নামেমাত্র এমডি হিসাবেই ছিলাম আর লোকাল কোনো সমস্যা হলে সেটা আমি সামাল দিতাম। কোথায় কোন বায়ারের অর্ডার, কিংবা কবে কোন শিপমেন্ট এগুলো নিয়ে আমি কখনো মাথা ঘামাইতাম না।

আমার যখন এই রকম এক্টা অবস্থা, আমি তখন নিজে নিজে কিছু করা যায় কিনা সেটাও ভাবছিলাম। ফলে ডেভেলপারের কাজেও একটা চেষ্টা করছিলাম, যার ফল হচ্ছে বাসাবোতে একটা প্রোজেক্ট। সেটার ইতিহাস অন্য রকম। এটা না হয় পরেই বলবো।

প্রিয়ান্থা মারা যাবার পর, মুরতুজা ভাই প্রিয়ান্থার ৪৫% শেয়ারের মধ্যে তিনি নিলেন ২০% আর আমি নিলাম ২৫%। এতে আমার শেয়ার দাড়ালো ৩৫% আর মুরতুজা ভাইয়ের শেয়ার দাড়ালো ৬৫%। ২৫% শেয়ার নেবার জন্য আমি মুরতুজা ভাইকে ৫৮ শতাংশ জমি লিখে দিতে হলো। এভাবেই বর্তমান পর্যন্ত চলছে। ফ্যাক্টরি ধীরে ধীরে বেশ উন্নত করতে লাগলো। কিন্তু আমার ভিতরে একটা আনসারটেনিটি সবসময় কাজ করতো যে, একটা সময় আসবে যে, মুরতুজা ভাই কোনো না কোনো সময় এর বিকল্প হিসাবে অন্যত্র বেরিয়ে যাবেনই। ফলে আমি নিজেও রিভার সাইড সুয়েটারস এর পাশাপাশি আরো কোনো ব্যবসা করা যায় কিনা আমি একটা বিকল্প খুজছিলাম। হয়ত তার ই একটা বিকল্প প্রোডাক্ট ব্যবসা হিসাবে মা ইন্ডাস্ট্রিজের  জন্ম। ওটাও আরেক ইতিহাস। এটাও পরে বলবো। 

গত ৮ জানুয়ারী মাসে সড়ক ও জনপথ আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীটির কিছু অংশ ভেঙ্গে দিয়ে যায় কারন আমাদের ফ্যাক্টরী বিল্ডিংটি বিল্ডিং এর মালিক জনাব নাজিমুদ্দিন সাহেব গায়ের জোরে সরকারী জায়গায় কিছুটা অংশ বাড়তি তৈরী করেছিলেন। বর্তমানে পদ্মা সেতু বানানোর কারনে সরকার তার নিজের জায়গা দখল করতে গিয়ে আমাদের বিল্ডিং ভেঙ্গে দিয়ে গেলো। তাতে আমাদের কোন সমস্যা ছিলো না। সমস্যাটা হয়েছে গার্মেন্টস বায়ারদের আসোসিয়েসন একরড আমাদের বিল্ডিংটা আন্সেফ করিয়ে দিলে আর কোনো বায়ার এখানে অর্ডার প্লেস করবেনা। তাতে আমাদের ব্যবসা লাটে উঠবে। আমরা এখানেই পথে নেমে যেতে হবে।

যেদিন সড়ক ও জনপথ আমাদের ফ্যাক্টরী বিল্ডিংটা ভেঙ্গে দিয়ে যায়, সেদিন ছিলো আমাদের জন্য একটা মারাত্মক বিপর্যয়। একদিকে উক্ত বিল্ডিং এবং জমির মালিকানা নিয়ে কয়েকটি দলের সাথে কোন্দল, মামলা, মারামারি এবং সন্ত্রাসী হুমকী ইত্যাদি, অন্যদিকে সড়ক ও জনপথের নিজস্ব জায়গাউদ্ধারের কারনে ভাঙ্গাভাঙ্গি, ফলে মাঝখানে আমরা যারা অনেক টাকা এই বিল্ডিং এ ব্যবসার কারনে ইনভেস্ট করে ফেলেছি সেটা একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। 

যেদিন থেকে জনাব নাজিমুদ্দিন মারা গেলো, তার পরের থেকেই একের পর এক বাহিনী এই জমি এবং বিল্ডিং দখল করে ফেলার জন্য পায়তারা করছে। জনাব বারেক আমাকে উকিল নোটিশ দিয়েছে যেনো তাকে ভাড়া দেওয়া হয়, আবার নাজিমুদ্দিনের তিন বউ সরাসরি ভাড়া চায়, অন্যদিকে জরীফ নামে আরেক লোক পুরু জমি এবং বিল্ডিং এর মালিকানা দাবী করছে। আমার এইখানে এডভান্স দেওয়া আছে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা। ফলে আমার এই অগ্রিমের টাকাকে ফেরত দেবে তার কোনো দায়ভার কেউ নিতে চাইছে না। তাহলে আমার এতোগুলি টাকার কি হবে? আমি কাউকেই আর ভাড়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নই। আজ প্রায় ৩৮ মাস হয়ে গেছে আমি কোনো ভাড়া দিচ্ছি না। 

জমি এবং বিল্ডিং নিয়ে নাজিমুদ্দিনের তিন বউ আরেক বাহিনী জনাব বারেক সাহেবের সাথে কখনোই সমঝোতায় পৌছতে পারছিলো না। মিস্টার বারেক, নাজিমুদ্দিনের পরিবার কিংবা বারেকের অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা ও আমাকে অফার করেছে যদি আমি কিছু টাকা দিয়ে উক্ত বিল্ডিং এবং জমি বারেক সাহেব্দের কাছ থেকে কিনে নেই কিংবা নাজিমুদ্দিনের পরিবার ও আমাকে এক ই ধরনের অফারকরেছিল।  কিন্তু আমি কোনো ভাবেই প্ররোচিত হইনাই। এর বদলে, আমি চেষ্টা করছিলাম যে, কোনোভাবে মিস্টার বারেক এবং নাজিমুদ্দিনের পরিবারের মধ্যেকোনো ভাবেই সমঝোতা করা যায় কিনা। কেউ ইসমঝোতার কাছাকাছি ছিলেন না। ফলে এটা এভাবেই স্ট্যাল্মেট অবস্থায় চলছিলো, আমিও কোন ভাড়া দিচ্ছিলাম না। কারন আমার অগ্রিম টাকা শোধ করতেই হবে। অনেক টাকা , প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা। 

প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেছে এইওবস্থার। হতাত করে শুনলাম যে, সাইফুল ইসলাম নামে চাদপুরের কোনো এক ৬৯ বছরের মানুষ গত ২০০৭ সালে নাজিমুদ্দিনের কাছ থেকে এই জমি এবং এই বিল্ডিং কিনে নিয়েছিলো। এটা একটা অবাস্তব ঘটনা। কারন আমি গত ২০০৬ থেকে এই ফ্যাক্টরিতে আছি। কখনো বারেক সাহেব কিংবা ওই সাইফুল ইসলাম কখনো এখানে আসে নাই। আর আমার সাথে সর্বশেষ ফ্যাক্টরী চুক্তি হয়েছিলো ২০০৯ সালে। তাহলে নাজিমুদ্দিন কিভাবে ২০০৭ সালে বিক্রি করে? আর আমি তো ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে ফ্যাক্টরীর ভাড়া দিয়ে আসছিলাম। তাহলে এতোদিন সাইফুল ইসলাম সাহেব কেনো  ভাড়া নিতে এলেন না? 

মামলা হয়েছে, বারেক সাহেব করেছে, আবার এদিকে সাইফুল ইসলাম সাহেবের দেওয়া পাওয়া অফ এটর্নি পেয়েছে সোহাগ গ্রুপের সাথে জড়িত মালিবাগের জাহাঙ্গীর হাসান মানিক। আর ঊনার প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছে এলাকার জরীফ নামে এক লোক। সে আমাদের প্রতিনিয়ত খুব ডিস্টার্ব করছিলো এই বলে যে, সে এবং জাহাঙ্গীর হাসান মানিক যেহেতু নতুন মালিক, ফলে তাকে ভাড়া দিতে হবে , তা না হলে এখানে খুবই অসুবিধা। আজকে পানির লাইন বন্ধ করে দেয় তো কাল কারেন্টের লাইন নিয়ে ঝামেলা করে। অথচ আমি জানি সত্যটা কি। কিচ্ছু করার নাই। আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই কে বা কারা মালিক এই বিল্ডিং বা জমির। আমার ইন্টারেস্ট হলো আমার ব্যবসা, আমার অগ্রিম টাকা এবং পিস্ফুল সমাধান। 

আমি এবং মুরতুজা ভাই মেন্টালি খুব ডিস্টারবড হচ্ছিলাম। কিছুতেই ভালো একটা সমাধান করতে পারছিলাম না। 

ঠিক এই সময় সড়ক ও জনপথের অফিসাররা পদ্মা সেতুর কারনে আমাদের ফ্যাক্টরীর প্রায় ১৫-২০ ফুট ভাঙ্গার জন্য বুল ডোজার নিয়ে হাজির। আমরা কেহই ফ্যাক্টরীতে ছিলাম না। আমি যখন এলাম, তখন ইতিমধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৭ ফুট ভেঙ্গে ফেলেছে। খুবই ভয়ংকর একটা অবস্থা। আমাদের ফ্যাক্টরীটা একরড সারটিফায়েড। এখন যদি কোনো কারনে একরড জানতে পারে যে, আমাদের ফ্যাক্টরীতে ভাঙ্গা পড়েছে, কোনোভাবেই আমরা একরডের সারটিফিকেট রিটেইন করতে পারবো না। আর যদি সারটিফিকেট রিটেইন করতে না পারি, তাহলে কোনো অবস্থায়ই  আমাদের বায়াররা আমাদের অর্ডার প্লেস করবে না। 

সড়ক ও জনপথের অফিসারদেরকে অনুরোধ করা হলে তারা মালিকপক্ষ ছাড়া কোন কথাই বলবেন না বলে ভাংতেই থাক্লেন। বারেক সাহেবকে ফোনে জানালে ঊনি এমন একটা ভাব করলেন যে, ভাংতে থাকুক। যেটুকু থাকে সেটুকু নিয়েই ঊনি পরবর্তীতে জড়িফের সাথে ফাইট করবেন। জরীফের সাথে কথা বলা হলো, সে মালিকের পক্ষে যেভাবেই হোক একটা প্রক্সি দিলো। বারেক সাহেব অনেক পরে যদিও স্পটে এলেন কিন্তু তিনি জরীফের ভয়েই হোক আর তার অনিহার কারনেই হোক কারো সাথেই আলাপ করলেন না, আবার সড়ক ও জনপথের ম্যাজিস্ট্রেট এর সাথেও কোনো কথা বললেন না। 

আমি বুঝতে পারলাম, এখন ব্যবসা করতে গেলে আমাকে জরীফের লোকজনকেই মালিক বলে মেনে নেওয়া উচিত। মামলার ফলাফল দিবে আদালত। যদি জরীফ গং মামলায় জিতে আসে তাতে আমার কোনো সমস্যা নাই, আবার বারেক জিতে আসে তাতেও আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি শেষ পর্যন্ত জরীফের দলের সাথে একটা চুক্তি করেই ফেললাম। অন্তত তারা আমার অগ্রিম টাকাটার একটা দায়িত্ত নিয়েছেন। যদিও পুরুটার নয়। আমার প্রায় ২৫/৩০ লাখ টাকার লস হবে। 

(চলবে)

০৪/০৪/২০২১- অনলাইন দুনিয়া

Categories

অনলাইন দুনিয়া এখন মানুষের জীবনে একটা অভিন্ন অংশ হয়ে গেছে। এই দুনিয়া কখনো কখনো একদম অপরিচিত দুজন মানুষকে খুব কাছে নিয়ে আসে, বন্ধু বানায়। যখন কোনো মানুষের দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে, একাকিত্ত বোধ করে, কিংবা খুব খুশীতে থাকে, সে অন্য কারো সাথে তার এই অনুভুতিগুলি শেয়ার করতেই চায়। কেউ তো থাকবে যে, ওর কথা শুনবে। বুঝুক না বুঝুক সেটা আলাদা ব্যাপার, কষ্ট লাগব করুক বা না করুক সেটাও আলাদা ব্যাপার। কিন্তু কারো সাথে তো তার এই কষ্টের ব্যাপারগুলি শেয়ার করার খুব দরকার মনে করে। তখন দরকার হয় এমন কেউ যারা খুব কাছের বন্ধু কিংবা তার থেকেও কাছের কেউ। এই বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের একটা গুরুত্তপুর্ন অংশ। আমরা আমাদের ভাল বা খারাপ সময়ের সময় আমরা এই বন্ধুগুলির মাঝেই থাকি। কিন্তু এই বন্ধুত্ব যদি এই অনলাইন দুনিয়ার কারনে কোনো ভুল মানুষের সাথে হয়ে যায়, তাহলে আমরা বিপদে মধ্যেও পড়তে পারি। কারন খারাপ সঙ্গের ফল খারাপই হয়। অনেকের জীবনের অনেক কাহিনী আছে যা রহস্যে ঘেরা থাকে। যখন কেউ এই রহস্য ঘেড়া চাদর সরাতে যান, তখন এমন এমন কিছু প্রশ্নের উদয় হতে পারে যা সাভাবিক জীবনের ভীত নড়ে যেতে পারে। এইসব রহস্য ঘেরা প্রশ্ন জানলেও অসুবিধা আবার না জানলেও জীবন সাভাবিক হয়ে উঠে না। এক্ষেত্রে কি জানা উচিত আর কি জানা একেবারেই উচিত না, সেটাই নির্ভর করে পরবর্তী সুখী জীবনের জন্য। তাই এই অনলাইন দুনিয়ার অপরিচিত মানুষগুলির কতটা কাছে যেতে হবে, কতটা তথ্য শেয়ার করতে হবে, কাকে কতটা জায়গা দিতে হবে এটা খুব জরুরী। কাউকে নিজের সম্পকে কতটা জানাতে হবে এই সিদ্ধান্ত হুজুগের বশে নয় ঠান্ডা মাথায় নেয়া উচিত। ইন্টারনেটে কোনো অচেনা মানুষের সাথে বন্দধুত্ত করতে হলে সবার আগে সবচেয়ে যেটা করা উচিত তা হলো নিজের সুরক্ষা। আর বিপদের আচ পাওয়ার সাথে সাথেই  নিজেকে বাচানোর জন্য তৈরী থাকা। ইন্টারনেটের আরেকটি নাম হলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, একে ওয়েব এই জন্য বলে, কারন এটা মানুষকে, কিছু ইনফর্মেশনকে একটা ওয়েবের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়। কিন্তু এই ওয়েবও একটা ফাদ হতে পারে। একটা জাল, একটা ট্র্যাপ।

এই অনলাইন দুনিয়ায় বেশীরভাগ বিশ্বাস আসে একটা অন্ধ বিশ্বাস থেকে। কোনো কিছু না জানা থেকে। আর এই অন্ধ বিশ্বাস এমন এক চোরাবালী, যার না আছে একুল, না আছে ওকুল। সেখানে না কোনো জ্ঞানের আলো পৌছতে পারে, না সেখানে তর্কের কোনো জায়গা আছে। এখানে অনেক মিথ্যা বারবার উচ্চারন হয়। ভরষার স্থান তৈরী করা হয়। মজার বিষয় হলো- একটা মিথ্যাকে যখন কেউ বারবার মিথ্যে বলা হয়, তাহলে সত্যিটা কিছুটা হলেও ফেকাশে হয়ে যায়। বাস্তব জীবনে আমরা যেমন সিরিয়াল কিলারের সন্ধান পাই, তেমনি এই অনলাইন দুনিয়ায় সিরিয়াল ঠকবাজও হয়। এরা নিজেদের নেশায় এতোটাই মশগুল হয়ে থাকে যে, ও শিকারের আওয়াজটা শুনতেই পায় না। সে কতটা ক্ষতি বা আঘাত করছে সামনের মানুষটাকে, সে সেটা দেখতেই পায় না। কিন্তু যে আঘাত পায় সে প্রত্যেকটা জিনিষ দেখতে পায় আর শুনতেও পায়। আর মনেও রাখে। ফলে এই অনলাইন দুনিয়ার সব কাহিনীর সামনে যা দেখা যায়, তার থেকে অনেক বেশি ঘটনা লুকিয়ে থাকে না দেখার পিছনে।

কারো অতিতকে ঘেটে বর্তমানকে বিচার করাই হয়তো ঠিক কাজ নয়, কিন্তু ভরষা হলো এমন একটা কথা যা বর্তমান আর অতীতের মধ্যে মেল বন্ধন করে, ভবিষ্যতের দিকে অনুমান করে। কোন ব্যক্তি কি করেছিলো, কি করতে চলেছে, এটা নির্ভর করে সে ভবিষ্যতে কি করতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে , যখন কারো সাথে কোনো সম্পর্ক হয়, হোক ব্যবসায়িক বা নিজস্ব, ঐ ব্যক্তির সম্পুর্ন জীবন একটা দলিল হিসাবে সামনে আসে। তখন বিচার বিশ্লেষন করে আমরা বিচার করতে পারি যে, সম্পর্ক রাখা উচিত নাকি রাখা উচিত নয়। এটা কোনো চরিত্র বিশ্লেষনের ব্যাপার না, শুধু একটা সম্পর্ক জোড়ার লাভ এবং ক্ষতির প্রশ্ন। ঠিক সেভাবে যেভাবে মানুষের অতীতের প্রশ্ন উঠে, তবে তাকে এই ব্যাপারটা বুঝতেই হবে আজকে সম্পন্ন হওয়া ভুল কাজ, আগামি দিন উম্মোচিত হবে সেটাই নিশ্চিত। অপরাধ কোনো ফল দেয় না, আর যদিও দেয়, সেই ফল একটা বিষাক্ত ফল।

তাই জীবিনকে তর্ক, জ্ঞান আর বিবেকের মাধ্যমেই চালানো উচিত, অন্ধ বিশ্বাসে না।

৪/৪/২০২১-ছোটভাবী মারা গেলেন

Categories

বিকেল ৩ টায় মিটুল আমাকে ফোন করে জানালো যে, ছোট ভাবী হটাত করে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন এবং এইমাত্র ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে। মাত্র ২ ঘন্টার ব্যবধানে আরেকটা খবর পেলাম যে, ছোট ভাবী ক্লিনিক্যালি ডেড। ঠিক সাড়ে ৫ টায় জানলাম, ছোট ভাবী আর নাই।

বড্ড আফসোস হচ্ছিলো ছোট ভাবীর জন্য। মানুষটা যতোটা না চালাক ছিলো, তার থেকে বেশী ছিলো সহজ এবং বোকা। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান ছিলো না যা তিনি প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে এমন কিছু হতে পারতেন যা একটা মহিলার জীবনের জন্য অপুরনীয় পাওয়া। তার সবচেয়ে বড় যে গুনটা আমি দেখেছি, তিনি যাকে পছন্দ করতেন, তার ব্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন নাই। সে একেবারে অনেক ঊর্ধে রাখেন তাঁকে।

ছোট ভাবীর সাথে আমার অনেক ভালো একটা সম্পর্ক ছিলো যা হয়তো এই পৃথিবীর অনেক মানুষের ছিলো অজানা। তিনি এখন আর এই দুনিয়ায় নাই, তাই তাঁকে আমি আমার অন্তর থেকে ভালোবেসে মন থেকে জান্নাতের সুপারিশ করে বিদায় দিলাম। যদি কখনো আমার কারনে আপনার কোনো বিচারের সুম্মুক্ষিন হতে হয়, আমি সেদিন কোনো প্রশ্ন ছাড়া এই সুপারিশ হয়তো করবো মহান আল্লাহর কাছে-তাকে মুক্তি দিন। একটা নিস্তব্ধ অপরাধ অথবা  যাইই বলি সেটা তো হয়েছেই।

কেরানীগঞ্জ মাইগ্রেশন-ষ্টাইল-৪

Categories

আমার বাবা যখন শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, আমাদেরকে যে কোনো ভাবেই হোক, যতো দ্রুত আদি নিবাস মুনশিগঞ্জ, সিরাজদিখানের কয়রাখোলা থেকে কেরানিগঞ্জে স্থান্তান্তর করতেই হবে। আমার খালুর সাথে আমার বাবা অতি গোপনে বিস্তারীত ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এই স্থানান্তরের সবচেয়ে কঠিন বিষয়টা হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষা এবং কাজটা করতে হবে কেউ বুঝে উঠার আগেই। যদি ১ম পক্ষের কেউ বিন্দুমাত্র আভাষ পায়, তাহলে তাজির আলী, কিংবা অন্যান্যরা কিছুতেই আমাদেরকে কেরানিগঞ্জে আস্তে দিবে না, বাধা দিবে এবং এটা একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির স্রিষ্টি করবে যা ভাবাই যায় না।

আমার খালু ছিলেন কেরানিগঞ্জের বাক্তার চর এলাকার অনেক প্রতাপশালি একজন ধনাঢ্য মাদবর। আমার খালু (গনি মাদবর) এবং আমার বাবা হোসেন আলী মাদবর দুজনে একটা ব্যাপারে একমত হলেন যে, যেদিন তাজির আলী কয়রাখোলার বাইরে থাকবে, হোক সেটা কোনো এক রাতের জন্য বা দুই রাত, সেই সময়ে পুরু বাড়িটা না ভেংগে কয়েক শত লোক নিয়ে এক রাতের মধ্যে বাড়িটা কেরানীগঞ্জে শিফট করা। এদিকে খালু তার নিজের একটা জমিতে আমাদের কয়রাখোলার বাড়ির অবিকল মাপে মাপে সব কিছু খুড়ে রাখবেন যাতে এক রাতের মধ্যেই পুরু বারিটা স্থাপন করা সম্ভব হয়। কিন্তু সমস্যা হলো কয়রাখোলা থেকে বাক্তার চরে আসার মাঝপথে একটা নদী আছে। সেই নদী এতো বড় আস্ত একটা বাড়ি কিভাবে পার করা সম্ভব? এটার ও একটা বিহীত হলো। পরিকল্পনা হলো যে, খালু ২/৩ শত কলা গাছ দিয়ে নদীর উপর ভেলা বানিয়ে রাখবেন যাতে ঘর সমেত লোকজন পার হতে পারে।

এবার শুধু অপেক্ষার পালা, কবে তাজির আলী অন্য কোথাও বেরাতে যায়। ব্যাপারটা বেশীদিন সময় নিলো না। সমস্ত লোকজন ঠিক করা ছিলো, ভেলার জন্য কলা গাছ ও রেডি করা ছিলো, শুধুমাত্র আদেশের অপেক্ষা। তাজির আলী তার শশুড় বাড়িতে তিন চারদিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার আওয়াজ শুনা গেলো। এদিকে বাবা এবং খালু সেই সময়তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন।

ঠিক যেদিন তাজির আলি তার শশুড় বাড়ি চলে গেলো, ওই দিন রাতেই একদিকে আমার বাবা তার দলবল নিয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি তুলে ফেলার ব্যবস্থা করলেন, খালূ নদীর উপর ভেলা সাজিয়ে ফেললেন, আর এদিকে আমার ভাই বাক্তার চরে পুরু বাড়িটা প্রতিস্থাপনের জন্যে দায়িত্তে থাকলেন।

মাত্র একটি রাত।

আর এই রাতের গহীন অন্ধকারেই আমার বাবা তার চার শতাধিক কর্মীবাহিনীকে নিয়ে, আমার খালু আরো দুই শতাধিক কর্মীবাহিনী নিয়ে আর অন্য দিকে আমার ভাই আরো প্রায় গোটা বিশেক পচিশেক লোক নিয়ে পুরু বাড়িটা ভোর হবার আগেই বাক্তার চরে সেট করে ফেললেন। গ্রামের মানুষ যখন ঘুম থেকে উঠলেন, তখন তারা একটা জিনিষ দেখলেন যে, কয়রাখোলায় আর বাড়ি নাই, অথচ বাক্তার চরে নতুন একটা বাড়ি দাঁড়িয়ে ছিলো। এটা কোনো আলাদিনের দৈত্যের কাহিনীকেও হার মানিয়েছে।

আমরা নতুন ঠিকানায় চলে এলাম। অন্যদিকে যখন তাজির আলীরা এই সংবাদ পেলো, তারা অনেক হৈচৈ লরেছে বটে কিন্তু ততোক্ষনে সব কিছু ওদের হাতের বাইরে চলে গেছে। এই নতুন ঠিকানায় এসে সবচেয়ে বড় কষ্টে ছিলেন আমার বাবা। তার সাম্রাজ্য ছেড়ে এখন তিনি নতুন এলাকায় কোনো কিছুই না। ভাগ্যের কি পরিহাস। গতকালের রাজা আজ অন্য কোথাও আরেকজনের প্রজা।

এখানে আমার (মেজর আখতার) একটা কমেন্ট করার খুব ইচ্ছে হলোঃ

শুধুমাত্র একটা বাড়ি তুলে আনাই কি মাইগ্রেশন? আর বাড়িতা তুলে না এনে কেনো আমার বাবা তার অর্থ খরচ করে বাক্তার চরে আরেকটা বাড়ি করলেন না? একটা নতুন বাড়ি করার পরেই তো তিনি আমাদের সবাইকে বাক্তার চরে মাইগ্রেট করাইতে পারতেন। এই জায়গাটায় আমার সাথে আমার বাবার বা খালুর বুদ্ধির সাথে এক হলো না। নিশ্চয়ই এর ভিতরে আরো কোনো মাহাত্য ছিলো যা এই মুহুর্তে আমার জানা নাই।

সাময়ীক তিরোধ্যান-ষ্টাইল-৩

Categories

আমার বাবা যদিও অত্র কয়রাখোলা এলাকার খুবই নামীদামী এবং প্রতাপ শালী একজন মাদবর ছিলেন কিন্তু তিনি তার ঘরের মধ্যে একটা বিষয় নিয়ে খুবই অসফল লোক ছিলেন। আর সেটা হলো তারই নিজের ১ম পক্ষের ছেলে মোঃ তাজির আলীকে নিয়ন্ত্রণ করা। তাজির আলী ছিলেন আমাদের স্টেপ ব্রাদারদের মধ্যে ২য় ভাই। প্রথম জনের নাম ছিলো নজর আলী, ২য় জনের নাম এই তাজির আলী এবং ৩য় ভাইয়ের নাম ছিলো মোহসীন আলী। তাজির আলী ভাইয়ের সবচেয়ে বেশী রাগ ছিলো আমার মায়ের উপর। কারন তিনি আমার মাকে কোনোভাবেই তার ২য় মা হিসাবে মেনেই নেন নাই। তার মধ্যে আমাদের এই পক্ষে আরো গোটা ৫ বোন আর ২ ভাই ইতিমধ্যে জন্ম গ্রহন করে ফেলেছি। আমার বাবার ছিলো অঢেল জমিজমা। আর বিশাল বাড়ি। তাজির আলী যখন বিয়ে করে, তখন থেকেই সে অতিমাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো। এর কারন হলো তাজির আলীর শশুড় বারীও ছিলো একটা খারাপ বংশের মানুষ। তারা মানুষের কাছে ডাকাতের সমপর্যায়ের শ্রেনী হিসাবেই গন্য হতো। এমতাবস্থায় শশুড় বাড়ির আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে তাজির আলী এতোটাই উছ্রিখল হয়ে উঠেছিলো যে, এক সময়ে সে এটাই ভেবে নিলো যে, ২য় পক্ষের আমাদের সবাইকেই সে হত্যা করবে। যদি দরকার হয়, সে তার বাবা অর্থাৎ আমার বাবাকেও হত্যা করে সমস্ত সম্পত্তি তাদের নামে লিখে নেয়া। আমরা তখন খুবই ছোট ছোট। শুধুমাত্র আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহ সবেমাত্র ইন্টার পাশ করছেন। হাবীব ভাইয়ের এই ইন্টার পাশ করাও যেনো তার অনেক হিংসা এবং রাগ। বাবা ব্যাপারটা কিছুতেই সামাল দিতে পারছিলেন না। আমার বাবা ছিলেন আসলেই খুব জ্ঞানী মানুষ। তিনি জানতেন, তাজির আলী যতোই হামকি ধামকি দিক, বাবার জিবদ্দশায় যে তাজির আলী কিছুই করতে পারবেন না সেটা তিনি নিসচিত। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর তাজির আলীর কিংবা আমাদের অন্যান্য স্টেপ ব্রাদারদের কার কি ভুমিকা হবে এটা নিয়ে তার অনেক শংকা ছিলো। তাই তিনি দেখতে চাইলেন, তার অনুপস্থিতিতে কার কি ভুমিকা হয়। এতা তার একটা টেষ্ট করা দরকার।

বিশয়টা নিয়ে বাবা আমার ভাই হাবীবুল্লাহ্র সাথে বিস্তারীত আলাপ করলেন। আমার ভাইয়ের সাথে আমার বাবার ছিলো খুবই বন্ধুত্তের সম্পর্ক। ফলে, তারা দুজন মিলে একটা বুদ্ধি করলেন। বুদ্ধিটা এরকমের যে, হতাত বাবা উধাও হয়ে যাবেন। তখনকার দিনে তো আর মোবাইল ছিলো না, আবার ল্যান্ড লাইনের ফোন ও ছিলো প্রায় দুষ্কর, তাই বাবা যদি হটাত করে কোথাও কিছুদিনের জন্য হারিয়ে যান, তাহলে সবাই ধরে নিবে যে, বাবা হয়তো কোথাও গিয়ে দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। এই সময়টায় কাদের কি কি ভুমিকা হয় সেটার আপডেট বাবা ভাইয়ার কাছ থেকে নিবেন। ব্যাপারটা জানবে শুধুমাত্র আমার ভাই আর বাবা। এমনকি আমার মাও জানবেন না। খুবই একটা গোপন বিষয়। আমার ভাই তখন সবেমাত্র ইন্তার পাশ করে জগন্নাথে ভর্তি হয়েছেন। বাবা ঢাকাতেই থাকবেন, কিন্তু কারো কাছেই প্রকাশ্যে আসবেন না। আমার ভাই মাঝে মাঝে গ্রামে গিয়ে ব্যাপারতা কে কিভাবে নিচ্ছে সেটা অব্জার্ভ করবেন এবং বাবাকে ফিডব্যাক দিবেন।

প্ল্যান মোতাবেক, বাবা একদিন সুদুর চট্টগ্রামে যাবেন বিধায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গ্রাম ছাড়লেন। কিন্তু আর তিনি ফিরে এলেন না। একদিন যায়, বাবা আসেন না, দুইদিন যায় বাবা আসেন না। এভাবে সবাই খুব দুসচিন্তা করতে লাগলো। বাবাকে খোজা শুরু হলো। কোথাও বাবাকে পাওয়া গেলো না। আসলে যিনি লোক চক্ষের আড়ালে পালিয়ে থাকতে চান, তাকে যেভাবেই খোজা হোক, তাকে তো প্রকাশ্যে পাওয়া যাবেই না। কিন্তু বাবা আছেন, সুস্থই আছেন। আর এ খবরটা জানেন শুধু আমার ভাই। তারা প্রতিদিন শ্যাম বাজার শরীর চর্চার ঘাটে দেখা করেন। ভাইয়া বাবাকে তার তরোধানের পর গ্রামের খবরাখবর দেন। বাবা সেই খবরের উপর ভিত্তি করে তিনি তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আটেন।

দিনের পর দিন দিন যখন বাবা আর গ্রামে ফিরে এলেন না, মা খুবই চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমার অন্যান্য ভাওবোনেরাও চিন্তা করতে লাগলেন। গ্রামের গনমান্য ব্যক্তিরাও কোনো কিছু আছ করতে না পেরে প্রায় মাস তিন চার পর ধরে নিলেন যে, বাবা হয়তো কোথাও দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। খবরতা এবার বেশ পাকাপোক্ত হয়ে গেলো। আর অরিজিনাল প্ল্যানের কার্যক্রমটা যেনো এখান থেকেই শুরু।

তাজির আলি ভাইয়ের দাপটের চোটে, তার সাথে আমার অন্যান্য স্টেপ ব্রাদার এবং বোনদের দাপট এতোটাই চরমে উঠলো যে, আমাদের ২য় পক্ষের সব ভাই বোনেরা এখন জীবন নিয়ে শংকিত। বাবা প্রতিদিন তার বাড়ির খবর পেতে থাকলেন এবং মনিটর করতে লাগলেন যেনো ব্যাপারটা কোনো অবস্থাতেই অনেক খারাপের দিকে না টার্ন নেয়।

তারপর......

তারপর একদিন বাবা সব বুঝে যাওয়ার পর ভাবলেন, ওনার যা বুঝার তিনি বুঝে গেছেন যে, তার মৃত্যুর পর আমাদের ২য় পক্ষের ভাইবোনদের কি অবস্থা হবে। তিনি হটাত করে গ্রামে এসে হাজির হলেন। সবাই তো অবাক। কোথায় ছিলো এতোদিন এই হোসেন আলী মাদবর? বাবা কাউকেই কিছু বললেন না, শুধু বললেন যে, সুদুর চট্টগ্রামে গিয়ে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন। যেহেতু কারো মাধ্যমেই খবর দেয়া সম্ভব হয় নাই, তাই আর বলা হয় নাই। কিন্তু তিনি মনে মনে জানেন কি হয়েছে আর এখন তাকে কি করতে হবে।

বাবা ভাবলেন, আমাদেরকে আর মুনশীগঞ্জে রাখাই যাবে না। আমাদেরকে মাইগ্রেট করে অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে যে কোনো সময়ে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যাবে। বাবা আমার খালু গনি মাদবরের সাথে ব্যাপারটা বিস্তারীত আলাপ করলেন। আমার খালু গনি মিয়া ছিলেন আরেক মাদবর এবং খুবই প্রতাপ শালী মানুষ। যার অঢেল সম্পত্তিও ছিলো কিন্তু সবই কেরানীগঞ্জ। বাবা ভাবলেন আমাদেরকে খালুর দেশেই নিয়ে আসবেন।

কিন্তু বিপত্তি হবে যখন আমার স্টেপ ব্রাদার এবং বোনেরা জানবে যে, বাবা আমাদেরকে মুনশীগঞ্জ থেকে কেরানিগঞ্জে নিয়ে আসবেন তখন। তাতে মারামারি কাটাকাটিও হতে পারে। এই ব্যাপারটা নিয়েও বাবা ভাইয়ার সাথে আর খালুর সাথে আরেকটা বিস্তারীত পরিকল্পনা করলেন কিভাবে সব মারামারি, কাটাকাটি হানাহানি পরিত্যাগ করে নির্বিঘ্নে মুনশী গঞ্জ থেকে একদিনের মধ্যে কেরানীগঞ্জে আনা যায়। কিন্তু এইটা ঠিক যে, আমাদেরকে খালুর দেশে কেরানীগঞ্জে আনতেই হবে আমাদের নিরাপত্তার জন্য।

বাবার মাদবরী স্টাইল-২

Categories

আগেই বলেছিলাম যে, আলী হোসেন সরকার আর আমার বাবা কন টেম পোরারী সময়ে প্রায় একই পর্যায়ের মাদবর ছিলেন। কেউ কাউকে হেয় না করলেও তারা কখনোই এক সাথে কাধে কাধ লাগিয়ে চলতেন না। কে সুপেরিয়র আর কে সুপেরিয়র নন এটা বুঝানো যাবে না আবার কেউ কারো থেকেও কম না এটাই আসলে তাদের মধ্যে ছিলো একতা অলিখিত দন্ধ। আলী হসেন সরকারের বাড়িতে কোনো বড় অনুষ্ঠান হলে হোসেন আলী মাদবরে যেমন দাওয়াত থাকতো তেমনি হোসেন আলী মাদবরের বাড়িতেও কোনো অনুষ্ঠান হলে আলী হোসেন সরকারের ও দাওয়াত থাকতো। কিন্তু তারা কখনোই একে অপরের দাওয়াতে আসতেন না। এটাও এক রকমের গ্রাম্য রাজনীতর একটা বড় ঢং বলা যায়।

তো একবার আমার বাবা আসলেই চেয়েছিলেন যে, আলী হোসেন সরকার যেনো আমাদের বাড়িতে কোনো একটা অনুষ্ঠানে দাওয়াতে আসেন। আমার বাবা জানতেন যে, তথাকথিত দাওয়াতে আলী হোসেন সরকার না আসারই কথা। তাই বাবা যা করলেন তাতে আলী হোসেন সরকারের না এসেও পারেন নাই। বাবা তার ইগো ঠিক রাখার জন্যেও তিনি নিজে আলী হোসেন সরকারের বাড়িতে গিয়ে তাকে দাওয়াত দিলেন না। যদিও তিনি সেটা করতে পারতেন। যাই হোক, বাবা, তার নিজের হাতের লাঠিটা এক পত্রবাহককে দিয়ে তার সাথে একটা চিরকুট লিখলেন-

জনাব আলী হোসেন সরকার, আমার সালাম নিবেন। আমার বাড়িতে আপনার দাওয়াত ছিলো। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করছি আপনি আজ আমার বাড়িতে দাওয়াতে আসবে। আমি আমার হাতের লাঠিটি পাঠালাম, সাথে এই পত্রটি। ধরে নিবেন, লাঠিটি আমি নিজে এবং পত্রটি আমার কথা। আপনি আসবেন।

আলী হোসেন সরকারও সেই লেবেলের বুদ্ধিমান লোক, তিনি বুঝলে এর মর্মার্থ। তিনি বাবার হাতের লাঠিটি পত্র বাহকের কাছ থেকে রেখে দিলেন, সাথে পত্রটিও। তিনি রীতিমত পরিপাটি সাজগোছ করলেন। তারপর ঠিক সময় মতো বাবার হাতের লাঠিটি সাথে নিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে র ওয়ানা হলেন। আলী হোসেন সরকার যখন প্রায় আমাদের বাড়ির ঘাটে, আমার বাবা হোসেন আলী মাদবর নিজে ঘাটের কাছে গিয়ে আলী হোসেন সরকারকে অভ্যর্থনা জানালেন আর আলী হোসেন সরকার ও তার সেই অভ্যর্থনায় কোলাকুলি করে একটা যুগান্তকারী ব্যাপার ঘটিয়ে দিলেন।

আসলে তাদের মধ্যে সব সময় বন্ধুত্বই ছিলো, কোনো রেষারেসি ছিলো না। তারা কারো সম্পদ হজম করতেন না, গ্রাম বাসী ও তাদেরকে যথেষ্ঠ সম্মান করতেন। তারা জানতেন এই সব মাদবরদের একটা ওজন আছে, তাদের কথার ভ্যালু আছে, তাদের নীতি আছে। হ্যা, একে অপরের সিদ্ধান্ত সব সময় মেনে নেবেন সেটা হয়তো ছিলো না কিন্তু গ্রাম একটা সঠিক নেত্রিত্তের মধ্যে ছিলো।

আজো তারা সবার মুখে মুখে আছেন। প্রায় ৫০ বছর পার হয়ে গেছে, তাদের কথা আজো গ্রাম বাসী মনে রেখেছেন। আমরা আজো তাদের হেরডিটি উপভোগ করি। যখন কেউ জানে যে, আমরা হোসেন আলী মাদবরের বংশধর, মানুষ এখনো অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করেন আর বলেন তাদের সেই পুরানো ঐতিহ্যের কথা। ভালো লাগে।

বাবার মাদবরী স্টাইল-১

Categories

সিরাজদিখানে যতোগুলি মাদবর আমার বাবার আমলে প্রতাপ শালী ছিলেন, তার মধ্যে আমি প্রায়ই যার নাম শুনেছি তার নাম আলী হোসেন সরকার। আমার বাবার নাম ছিলো হোসেন আলী মাদবর, আর ওই ব্যক্তির নাম ছিলো আলী হোসেন সরকার। তারা সরকার বাড়ির লোক। ভাইয়ার কাছ থেকে শুনেছিলাম যে, সরকার বাড়ির মানুষেরা কোনো না কোনোভাবে আমাদের বংশেরই আওতাধীন ছিলো। যাই হোক সেটা এখন আর বড় ব্যাপার নয়।

এই আলী হোসেন সরকার আর আমার বাবা হোসেন আলী মাদবরের মধ্যে গ্রাম্য পলিটিক্সের বেড়াজালে একটা অলিখিত আক্রোশ ছিলো। কিন্তু সেই আক্রশ তা এমন নয় যে, কোনো জমি জমা নিয়ে, বা পারিবারিক কোনো কোন্দল নিয়ে। এটা ছিলো নিতান্তই পাওয়ার পলিটিক্স। যেখানে হোসেন আলী মাদবর কোনো শালিসীতে থাকতেন, সেখানে আলী হোসেন সরকার থাকতেন না। আবার যেখানে আলী হোসেন সরকার থাকতেন সেখানে হোসেন আলী মাদবর থাকতেন না। প্রকৃত পক্ষে ওনারা ওনাদের কোনো সিদ্ধান্তে কেউ বাধা হয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রোশে সম্পর্কটাকে বিপদজনক করেন নাই।

এখানে মজার একটা ব্যাপার চলছিলো এই দুই পরিবারের মধ্যে। শুধুমাত্র আলী হোসেন সরকার আর হোসেন আলী মাদবরের মধ্যে যাইই থাকুক না কেনো, এই দুই পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা খুব মিলেমিশেই থাকতেন। একজনের ভাতের হাড়ির কিছু অংশ যে আরেক জনের বাড়িতে যেতো না এমন নয়। এরা আবার আসলেই একে অপরের বন্ধুও ছিলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে নয়। কি রকমের একটা সম্পর্ক সেটা একটা উদাহরণ না দিলে ব্যাপারটা ঠিক বুঝা যাবে না।

আমার ভাই হাবীবুল্লাহ যখন লেখাপড়া করছিলেন, তখন আমার অন্য পক্ষের ভাইয়েরা এটাকে কোনোভাবেই ভালো লক্ষন হিসাবে নেন নাই। বিশেষ করে তাজির আলী ভাই। তার সব সময় টার্গেট ছিলো যে কোনো মুহুর্তে হাবীব ভাইয়াকে ক্ষতি করা, বিপদে ফেলা কিংবা মেরে ফেলা। এটা আমার বাবা খুব ভালো করে জানতেন। একদিন, আমার বাবা আলী হোসেন সরকারকে ব্যাপারটা শেয়ার করলেন যে, তিনি হাবীব ভাইয়ার জীবন নিয়ে তাজির আলির থেকে শংকিত। কি করা যায় পরামর্শ দরকার।

কি অদ্ভুত!!

হোসেন আলী সরকার কোনো কিছুই চিন্তা না করে আমার বাবাকে বললেন, শোনো হোসেন আলী মাদবর, তোমার ছেলে আর আমার ছেলের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না এবং রাখীও না। আমার বাড়ি তোমার ছেলের জন্য ১০০% নিরাপদ। আগামীকাল থেকে তোমার ছেলেকে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দাও। এখানেই খাবে, এখানেই পড়বে, এখানেই ঘুমাবে। তোমার যখন দরকার তখন আসবা, ওর যখন যেখানে যাবে ওর সাথে আমার ছেলেরা থাকবে।

সেই থেকে আমার ভাই আলী হোসেন সরকারের বাড়িতে থেকেই  অনেক দিন পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। এরাই আসলে মাদবর, এরাই আসলে বুদ্ধিমান। এরা যখন কোথাও শালিসিতে যেতো সেদিন ওনারা কারো পক্ষের বাড়িতে পানিও খেতেন না, কারন কোনো পক্ষপাতিত্ত তারা করতেন না।

মন্তব্যঃ

আজকাল গ্রামের উঠতি মাদবরদের বয়স দেখলে মনে হয় ওদের এখনো মোছ দাড়িও গজায় নাই। কেউ আওয়ামীলীগের সভাপতি, কেউ ছাত্রনেতা, কেউ এটা কেউ সেটা। এরাই মাদবর। এরা না করে বড়দের সম্মান, না করে ছোটদের আদর। ওরা প্রতিনিয়ত ঘুষের টাকায় চলে, ঘুষের কারনে ওরা রায় বদলায়। এদেরকেও কেউ সম্মান করে না।

আমার বাবা।

Categories

আমি আমার বাবাকে কখনো দেখিনি এবং তার চেহাড়া কেমন ছিলো, খাটো নাকি লম্বা, যুবক না বৃদ্ধ, ফর্সা নাকি কালো কোনো কিছুই আমার জানা নাই। তবে আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহর কাছে আমি আমার বাবার অনেক গল্প শুনাতেন যার থেকে আমি বাবার একটা কাল্পনিক চরিত্র মনে গেথে গেছে। আমার দাদার নাম ছিলো হিসাবদি মাদবর। আমরা মাদবর বংশের লোক।

বাবার সম্পর্কে আমি অনেক চমৎকার চমৎকার গল্প শুনেছি ভাইয়ার কাছে। তবে তার প্রাথমিক তথ্যের মধ্যে জরুরী তথ্য হলো যে, আমার বাবার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আমার মাকে বিয়ে করেন। বাবার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ঘরে মোট তিন জন ছেলে সন্তান আর তিনজন কন্যা সন্তান ছিলো। এই মোট ছয় সন্তান থাকার পরে আমার বাবা আমার মাকে বিয়ে করেন। তখন আমার মায়ের বয়স ছিলো বেশ কম। আগের সব সন্তানেরাই আমার মায়ের থেকে বয়সে বড় ছিলো। কেউ কেউ আবার ইতিমধ্যে বিয়েও করে ফেলেছিলেন। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমার মা যেমন একটু অসুবিধায় ছিলেন, তেমনি আমার বাবাও বেশ অসুবিধায় ছিলেন।

কিভাবে আমার বাবা এই দুমুখী অসুবিধাগুলি তার জ্ঞানের দ্বারা সমাধান করেছিলেন, সেই গল্প গুলিও আমি হোসেন আলী মাদবরের পর্বসমুহে একে একে লিখবো।

০২/০৪/২০২১-কামুক সিরিয়াল কিলার

একটা ইংরেজী মুভি দেখছিলাম। মুভিটা ছিলো একটা কামুক সিরিয়াল কিলারের উপর। আমি এই জাতীয় মুভি খুব একটা দেখি না। কিন্তু ট্রেইল দেখে আকৃষ্ট হয়েছিলাম, পরে পুরু ছবিটাই দেখলাম। ছবিটা দেখে কিছু লিখতে ইচ্ছে করলো। তাঁরই উপর ভিত্তি করে আজকে আমার এই লেখাটা।

কামুক সিরিয়াল কিলারের লোকগুলি এক ধরনের পাগল, খানিকটা অবসেসড। এদেরকে কোনোভাবেই এবনরম্যাল ভাবা যায় না। এরা সমাজে সব খানে খুব স্বাভাবিক গতিতে এবং নীতিতে সবার সাথে বসবাস করে। ওদের দেখে পাশের কোনো ব্যক্তি কখনোই বুঝতে পারবে না, তার মনের ভিতরে কি চলছে আর তার পরবর্তী মুহুর্তে কি পরিকল্পনা। এরা সারাক্ষন ওদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্যই বাচে। এদের নির্দিষ্ট একটা প্যাটার্ন থাকে। খুব যত্ন করে এরা নিখুত কাজ করে। ওদের পরিকল্পনায় একটা ধরন হচ্ছে, এরা সব সময় চায় প্রোটেক্টেড সাইট, যেমন নিরাপদ কিলিং জোন, কিংবা সেক্সের সময় নিরাপদ থাকার নিমিত্তে কন্ডোম ব্যবহার। ওদের টার্গেটেও বিশেষ ধরনের প্যাটার্ন থাকে। ওরা একটা নির্দিষ্ট প্রোফাইলের টার্গেটকে বেছে নেয়। ওদের টার্গেট করারও একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট আছে। এইসব বৈশিষ্টগুলি কেউ খুব সুক্ষভাবে পর্যালোচনা না করলে তাদের এবনরমালিটিগুলি চোখেই পড়ে না। তাই সিরিয়াল কিলারদের ব্যাপারে ছোট একটা লিড থাকলেও তা গুরুত্তের সাথে বিবেচনা  করা উচিত।  

এই সিরিয়াল কিলাররা বা কামুক সিরিয়াল কিলাররা কিছু কিছু ড্রাগের ব্যাপারে খুব নলেজে রাখে। যেটা ওরা সব টার্গেটের উপর ইউজ করে। আর বারবার ওরা একই ড্রাগস ইউজ করে। খুব কদাচিত তারা তাদের এই ড্রাগস পরিবর্তন করে। আবার এই ড্রাগসটা পরিবর্তনের নিমিত্তে কিছু নীতিও ফলো করে, যেমন, যখন পরিচিত ড্রাগসটা আর তার কাছে থাকে না বা পাওয়া যায় না বা তার হাতে টার্গেটকে খতম করার সময় খুব কম থাকে, তখন ঐ একই কাজ করে এমন কিছু নতুন ড্রাগস সে ব্যবহার করে।  

সিরিয়াল কিলাররা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় চিন্তা করে। তাই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ওরা টার্গেটকে খতম করে দেয় বটে কিন্তু এটাও দেখা গেছে যে, সবসময় এরা সব টার্গেটকে মেরে ফেলে না। যদি সরিয়াল কিলার অতিরিক্ত কামুক হয়, তাহলে খুনটা হয় শুধু ওর বেচে যাওয়ার জন্য একটা পন্থা। কিন্তু এই কামুক সিরিয়াল কিলারের অব্জেক্টিভ থাকে শুধু সেক্স। এটা তো সার্বোজনীন যে, সেক্সের চাহিদা একটা বদ অভ্যাস, বিশেষ করে যখন অনঅনুমোদিত সেক্সের উৎস হয়। আর এটাই ওদের অবসেসন। এটা একটা লাগামহীন ঘোড়ার মত। কিন্তু এখানেই ওদের চাহিদাটা মিটে না। ইনভেষ্টিগেশনকে বিভ্রান্ত করার জন্যেও ওদের একটা প্যাটার্ন থাকে। ওরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা আশেপাশের লোকগুলিকেও বিভ্রান্ত করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এই সিরিয়াল কিলারকে কোথায় কোথায় খুজবে সেটা তারা আগে থেকেই জানে বা সেই মোতাবেক পরিকল্পনা করে রাখে।

এটা একটা নিশ্চিত যে, এরা নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় নিয়ে থাকে না। তারা নাম বদল করে, তারা পোষাক বদল করে, তারা পেশা বদল করে। এরা একটা স্প্লিট পারসোনালিটি। এরা সব সময় আইডেন্টিটি লুকিয়ে রাখে প্রতিটি টার্গেটের কাছে। ফলে কোনো একটা টার্গেট যদি বেচেও যায়, সেই টার্গেটের বর্ননা দিয়ে খুব সহজেই এই সব কামুক সিরিয়াল কিলারের পর্যন্ত সহজে পৌঁছানো যায় না।

ওরা যখন সেক্স করে, ওরা এই জন্য কন্ডোম পরে না যে, পুলিশ তার সিমেন ট্রেস করতে পারে। সে আসলে সচেতন থাকে যাতে কোনো ছোয়াচে রোগে সে না ভোগে। এরা পরিষ্কার থাকার একটা অবসেসন থাকে। এরা ততোটাই নিজের খেয়াল রাখে যতোটা ভিক্টিমের। ওরা ক্রাইম সিনে কোনো প্রমান রাখতে চায় না বরং কিছু প্রমান ইচ্ছে করে রেখে যায় যা সবাইকে বিভ্রান্ত করতে পারে।

সিরিয়াল কিলাররা পরিকল্পনাটা এমন নিখুতভাবে করার চেষ্টা করে যেখানে কোনদিন, কোন জায়গায়, বা কখন কাজটা করবে তার পুরু পরিকল্পনাটা মাথায় রাখে। এমন কি ওরা যে জায়গায় ঘটনাটা ঘটাবে, সে পুরু এলাকাটা ভালো করে স্টাডি করে। মজার ব্যাপার হলো, ওরা একই শহরে বা এলাকায় একটার বেশী টার্গেট চয়েজ করে না। বিভিন্ন শহর বা এলাকায় তারা এটা করে থাকে। ওদের প্রমান যা ভিক্টিমের পাশে রাখতে হবে এসব দ্রব্যাদি সংগ্রহের জন্য ওরা পরিকল্পনা করে চুরিও করে। ওরা যদি চুরিও করে, সেখানেও একটা প্যাটার্ন ইউজ করে। সে আলাদা আলাদা জায়গায় চুরি করে। ফলে তারা শুধু খুন করার জন্যই ট্রাভেল করে না। এরা চুরি করার জন্যেও ট্রাভেল করে। এরা অনেক দূর দূর পর্যন্ত যায় এই চুরির উদ্দেশ্যে। চুরি করার টার্গেটকেও এরা অনেক জেনে বুঝে বাছাই করে। যাদেরকে সে চুরি করবে তাদের সাথে ওরা ভাব করে, বন্ধুত্ব করে, তারপর চুরি করে। তারা এটা নিশ্চিত করে যে, ঐ সব লোকেরা যাদের কাছে কিছু চুরি করবে, ওইসব লোকগুলি ঐ এলাকায় যাচ্ছে না বা থাকে না যেখানে সে কাউকে খুন করবে বা ভিক্টিম চয়েজ করবে। এখানে আরো একটা মজার ব্যাপার হলো যে, এই সিরিয়াল কিলাররা সবসময় ভিক্টিমের সব কিছু চুরি করে না। তারা সেইসব জিনিষগুলিই ভিক্টমের কাছ থেকে চুরি করে যার দ্বারা সে ডিজিটালী ধরা পড়বে না। যেমন ফোন, ল্যাপটপ, কিংবা এই জাতীয় জিনিষ তারা সাথে করে নিয়ে যায় না। অর্থাৎ ট্রেস হতে পারে এমন সব জিনিষ সে সাথে করে নিয়ে যায় না।

তারা টার্গেট সিলেক্ট করার সময় এমনসব টার্গেট সিলেক্ট করে যাদের আসলে খুব বেশী দূর পর্যন্ত যাওয়ার সম্ভাবনা নাই কিংবা একাই থাকে বা ছিন্নমুল মানুষ অথবা পরিবার থেকে আলাদা থাকে। কামুক সিরিয়ালদের চরিত্রের একটা লক্ষনীয় ব্যাপার হলো, তাদের ব্যবহারে, আচার আচরনে এমন একটা প্রকাশ থাকে যেখানে মহিলারা ওর সাথে কম্ফোর্টেবল ফিল করায়। বা ফাসায়। তারপরেও হয়তো অনেক মহিলারা তাদের নিজস্ব চারিত্রিক কারনে অন্তত সেক্সুয়াল এফেয়ার্স থেকে দূরে থাকে। আবার কেউ কেউ সহজেই এসব সিরিয়াল কামুক দের কাছে সহজে ধরা দেয়। ঘটনার বিবরনে দেখা যায় যে, এই কামুক সিরিয়াল কিলাররা ওদের সেক্সুয়াল ডিজায়ারটা সরাসরি বলতে পারে না বা ইঙ্গিত না বুঝার কারনে হয়তো অনেক মহিলারা চট করে সপর্পন করে না। এই সব মহিলাদের জন্যই তারা বেশীরভাগ সময়ে ড্রাগস ইউজ করে, সেক্স করে তারপর মেরে ফেলে।

এদের সেক্সুয়াল নিড গুলি নরম্যাল নয়। এরা রেড লাইট এরিয়ায় যায় কারন রেড লাইট এরিয়ায় টাকার বিনিময়েই ওরা সেক্সটা পেয়ে যায়। ফলে ওদের ওখানে ওরা কাউকে খুন করার মানসিকতাই দেখায় না। এরা রোল প্লে করায়, এর মানে এমন হয় যে, এমন কিছু মহিলার প্রতি আসক্ত যাদের জন্য ওরা খুব ছটফট করে, কিন্তু হাতের নাগালের বাইরে। তাই ওরা ওইসব জায়গায় গিয়ে ওইসব আসক্তিওয়ালা মহিলার রোল প্লে করায় যেনো সেই সেক্স ওয়ার্কারই তার আসক্তির সেই মহিলা। এসব কামুক সিরিয়াল কিলাররা ঐসব রোল প্লে করা মহিলাদেরকে সেই আসক্তওয়ালা মহিলার নামেই মাঝে মাঝে সম্মোধন করে। ওদের ফ্যান্টাসিগুলি অবসেসড মাইন্ডে সেক্স ওয়ার্কারদের দিয়ে পুরন করায়।

এসব কামুক সিরিয়াল কিলাররা দেখতে অনেক ভয়ংকর হয় না। এরা মার্জিত, পরিশোধিত এবং ভদ্রভাবে চলাফেরা করে। যাতে মহিলারা দেখে ভয় পায় না বরং কাছে আসে। ধীরে ধীরে সে অনেকের মধ্যে হয়তো একটা দুইটা মহিলাকে টার্গেট করে। একই জায়গায় আবার এরা একটার বেশী মহিলাকে টার্গেট করে না।

কিছু মহিলাদেরকে ওরা মেরে ফেলে আর কিছু মহিলাদেরকে ওরা ছেড়ে দেয়। কেনো? গবেষনায় দেখা গেছে যে, তারা ঐসব মহিলাদেরকেই মেরে ফেলে যারা সিরিয়াল কিলারের কাছে সারেন্ডার করে না। হয়তো সেক্সের বদলে ওরা একটা সম্পর্ক চায়। কিন্তু এরা কোনো সম্পর্কে জড়াতেই চায় না। যদিও জড়ায়, খুব বেশীদিন একসাথে থাকে না।  ওরা কোনো ইমোশনাল রিলেশন চায়ই না। আর এর প্রধান কারন হলো, একবার শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেলে ঐ মহিলা আর তাদের কাছে কোনো গুরুত্তই রাখে না। সেটা তাদের কাছে একেবারেই বর্জ।

মাঝে মাঝে আবার এসব সিরিয়াল কিলাররা কোনো কোনো ভিক্টিমকে সেক্স না করেই মেরে ফেলে। এর ও একটা কারন আছে। এরা মহিলাদেরকে একটা জেতার বস্তু মনে করে। যদি একবার জিতে যায়, তাহলে আরো এগিয়ে যায়। আর ঠিক এ কারনেই তারা সেক্স ওয়ার্কারদেরকে খুন করে না। কারন টাকা দিয়েই তারা তাদেরকে পেয়ে যায়। কোনো চেলেঞ্জ থাকে না। কিন্তু যাদেরকে টাকা দিয়েও পায় না, এক সময় তারাই হয়ে উঠে এসব কামুক সিরিয়াল কিলারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু যেখানে আর সেক্স নয়, ঐ মহিলাদের উপর জিতবার নেশা।

এসব কামুক সিরিয়াল কিলারদেরকে যখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ট্রেক করে, আসলে তখন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এইসব সিরিয়াল কিলারদের এই উপরোক্ত ভাবনাগুলিকে ট্রেক করে ইনভেষ্টিগেশনে আগায়। অনেক কঠিন একতা কাজ। শেষ মেষ যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এদের কাউকে ধরতেও পারে, ওরা সব কিছু অকপটে স্বীকার করে। এদের মরবার বা শাস্তির ভয় অনেক কম।

এই পৃথিবীতে ঈশ্বর কত প্রকারের মানুষ যে সৃষ্টি করেছেন তার কোনো ইয়াত্তা নাই। আমরা মানুষ রুপী হায়েনাদের সাথেও বাস করি, আবার ঈশ্বরের ভয়ে প্রকম্পিত অনেক ভালো মানুষের পাশেও বাস করি। কার মনে কি পরিকল্পনা রয়েছে, তা আমাদের কখনোই জানা সম্ভব নয়। তাই, আমাদের উচিত, প্রতিটি মুহুর্তে কোন কিছুই উপেক্ষা না করা আর সেটা যতো ছোতই হোক বা তুচ্ছ। মানুষের থেকে ভয়ংকর কোনো প্রানি ঈশ্বর তৈরী করেন নাই।

হোসেন আলী মাদবর (ভুমিকা)

Categories

আমি আমার মাদবর বাড়ীর সব প্রকারের ঐতিজ্য নিয়ে সবসময় গর্ববোধ করি। একটা বাড়ি একটা সমাজ হতে পারে, মাদবর বাড়ি একটা তার প্রমান। কিন্তু ধীরে ধীরে এই মাদবর বাড়ীর তথ্য, অজানা ইতিহাস ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে কে বা কারা এই পরিবারের সদস্য বা তারা কে কোথায় আছে, এর ইতিহাস আজনেকেই জানে না বিধয় মাদবর বাড়ীর সেই পুরানো বংশ আভিজাত্যের ধারা মুছে যেতে চলেছে।হয়ত একসময় এই মাদবর বাড়ি সদস্যগনই জানবে না তারা কে বা কারা। বাংলাদেশ  আমেরিকা নয় যে, কোনো এক ওবামা, বা কোন এক ট্র্যাম্প পৃথিবীর কোনো একস্থান থেকে উদয় হয়ে আমেরিকার মতো বিশাল এক রাজকীয় পরিবেশে উড়ে এসে জুড়ে বসে একেবারে টপ পজিশন ধরে প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। সেটা আমেরিকায় হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সব পরিচয় জেনেও কাউকে যদি হেয় করতে মন চায়, তাহলে তার কোনো কিছুই জানার প্রয়োজন হয় না, সে শুধু তার ইচ্ছেটাই প্রকাশ করবে। কিন্তু যদি কেউ আপনার আমার বংশ পরিচয়, আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিয্য সব কিছু জানে, তাহলে যে যাই কিছু করুক বা বলুক, অন্তত এইটুকু নিশ্চিত বলা যায় যে, অহেতুক আপনাকে কেউ হয়রানী হয়ত করবে না। কোনো মৃত ব্যাক্তির কাছে পৃথিবীর কোনো কিছুই যায় আসে না, কিন্তু তারপরেও মানুষ ইতিহাস পড়ে আর ইতিহাস লিখে। একমাত্র ইতিহাসটাই সত্য। আর যতো আগামি, বর্তমান, কিংবা সব "যদি" কোনোটাই শতভাগ সত্য নয়। তাই নিজের ইতিহাস টুকু তো জানুন। মনে নাই? আলেক্স হ্যালির সেই রুটস কাহিনীটি? সেটাই ইতিহাস।

                                                               

আমাদের পরিবার “মাদবর” পরিবার হিসাবে পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই এই পদবীটা কেনো জানি নামের পাশে ব্যবহার করতে একটু দ্বিধা বোধ করছি। যেমন আমি নিজেও আমার নামের পাশে মাদবর পদবীটা উল্লেখ করি না। কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে, কেনো করছি না, আমার কাছে একটা যুক্তি তো অবশ্যই আছে। আর সেটা হচ্ছে-

আমি যখন গ্রামে থাকতাম, তখন দেখেছি যে, আমাদের গ্রামের অনেকেই অনেক প্রকারের মাদবর সেজে আছেন। কেউ বাচ্চু মাদবর, কেউ আজগর আলি মাদবর, কেউ আক্কাস আলি মাদবর ইত্যাদি। এই মাদবর গুলিকে দেখে আমার গা এক প্রকার রি রি করতো কারন তাদের না ছিলো কোনো ইথিক্স, না ছিলো কোনো গুনাগুন। অথচ শুনেছি, আমার বাবা যখন মাদবরি করতেন, তখন তিনি নাকি কারো বাড়িতে গিয়ে এক কাপ চাও খেতেন না। যদি কারো বিচারের বেলায় পক্ষপাতিত্ব হয়ে যায়, তাই! কিন্তু আমার বাবা, বা দাদা কি ধরনের মাদবর ছিলেন আর এখনকার মাদবরগন কি প্রকারের মাদবরি করছেন এই পার্থক্য টা আমার ঐ ছোট বয়সে যেমন বুঝবার ক্ষমতা ছিলো না, তাই আমার বংশের পদবীটা যে এতো মানসম্মানের, সেটা আমার আসলে বুঝার জ্ঞ্যানও ছিলো না। ফলে এই মাদবর উপাধিটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হইতো এবং কিছুটা নিম্নজাতীয় উপাধি বলিয়াও মনে হইতো, বিশেষ করিয়া শহুরে সমাজের কাছে। তাই আমি অনেকটা ইচ্ছে করেই আমার সমস্ত স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট সমুহের এই নামের পাশের মাদবর পদবীটা একেবারে রহিত করিয়া দিয়াছি।

আমার বড় ভাই জনাব ডঃ মহাম্মাদ হাবিবুল্লাহও কেনো যে এই পদবীটা নিলেন না সেটা আমার বোধ গম্য নয়।

যাক সে কথা।

এবার আসি আমাদের বংশের সংক্ষিপ্ত একটু ইতিহাস নিয়ে।

হিসাব্দি মাদবর ছিলেন আমার দাদা। এই দাদার থেকেই আমার ইতিহাস আমি শুরু করিবো। তিনি ছিলেন অনেক বিচক্ষন একজন ব্যক্তি। তার আমলে তিনি অনেক সম্পদ এবং বুদ্ধির মালিক ছিলেন। আমার দাদির নাম আমি জানি না। জানতে ইচ্ছে করে। হয়ত আমার বড় ভাই জানবেন।

১/৪/২০২১- সত্য মিথ্যা ষড়যন্ত্র আর প্রতারনা

Categories

কথায় বলে, মিথ্যাও কখনো কখনো সত্যি হয়ে যায়। কোন একটা মিথ্যাকে হাজার বার বললে নাকি মিথ্যাটা সত্য হয়ে যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ একটা মিথ্যা বারবার এতোবার বলে যে, মিথ্যেটাই সত্যি হয়ে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে এমন একটা মিথ্যে যা সত্য লুকুনোর জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু কথাটা কোনো কালেই সত্য নয়। যদিও সত্যি আর মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা সবসময় সহজ হয় না। মিথ্যা হচ্ছে এক প্রকার ছলনা, মিথ্যে যে বলে সে নিজের সাথেই ছলনা করে থাকে। মিথ্যে হলো সেই জাল যা একটা মানুষ তার নিজের অজান্তেই সে নিজের জন্য বিছায়। কিন্তু সে ভাবে যে, সে সামনের মানুষটাকে ঠকাচ্ছে, বা বোকা বানাচ্ছে। যখন মানুস নিজের কিছু লুকায় তখনই তার সতর্ক হওয়া উচিত। কারন যখন সত্যির সীমানা পার হয়ে যায়, তখনই মিথ্যার জাল বিছানো হয়। সত্যিটা কখনো কল্পনা হয় না। আর কোনো  কল্পনাকেও সত্যি বলা যায় না। সত্যি কখনো কারো এজেন্ডা হতে পারে না। সত্যি সেটাই যেটা বাস্তব। মেকী চোখের জল ফেলেও সত্য বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। একটা সময় আসে, মিথ্যে চোখের জল আর কাজে লাগে না। সে সময় যেটা হয় সেতা হচ্ছে, মিথ্যা প্রকাশের ব্যক্তিকে মানুষ গিরগিটির চরিত্রের মতো বিশ্লেষন করে, বিচার করে। গিরগিটির উপর কেউ দয়া দেখায় না। সত্য লুকিয়ে মিথ্যাকে স্থাপন করার চেষ্টায় কারো বিশ্বাসের খুন যখন হয়, তখন শারীরিক খুনের আর কোনো প্রয়োজন পড়ে না।

মিথ্যা একটা প্রতারনাও। আর এই প্রতারনা- এটা মানুষের প্রকৃতি। কিন্তু এটা একজন মানুষ একা করতে পারে না। এই প্রতারনার সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে, থাকে পূর্ব প্রস্তুতি, থাকে দলবদ্ধ একাত্ততা আর এক যোগে কার্যসম্পাদনের হিসাব নিকাশ। কোনো কোনো সময় এই প্রতারনার নিমিত্তে কিছু কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই সব সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। শুধু ভরসার স্থান তৈরির জন্যই নাটক তৈরী করা হয়। যখন এই কৃত্রিম ভরসার স্থান উম্মোচিত হয়ে চোখের সামনে বড্ড ভয়ংকর এবং আসল চেহাড়াটা বেরিয়ে আসে, তখন নিজের কাছে নিজকে বড় বোকা মনে হয়। কারন মিথ্যে ভরসায় ভর করে কেউ যখন নিজের ইচ্ছায় সেই জায়গায় চলে আসে যেখান থেকে আর কেউ ফিরে না, তখন, বাকী ইতিহাস শুধু নীরব ইতিহাসই হয়ে থাকে। কখনো তা বাইরে আসে না।

এসব পরিস্থিতি আমাদের জীবনে প্রায়ই ঘটে থাকে। আমরা সত্য আর মিথ্যাকে অনেক সময় আলাদা করতে পারি না। ভিত্তিহীন আর অকারন গুরুত্তহীন কথা শুনবার সময়ে যদি নিজের বিবেচনায় সেটা বুঝে ফেলা যায়, তাহলে বুঝতে হবে তারা একটা গুনের অধিকারী তাদেরকে সতর্ক করে দেয় আর নিজের চেতনাকে বাচিয়ে দেয়। কিন্তু যদি মিথ্যের বোঝা বুদ্ধিমত্তার উপর চেপে বসে তাহলে মানুষ ধীরে ধীরে চোরাবালির বাকে আটকে পড়ে। সেখান থেকে সময় মত আর বেরিয়ে আসতে পারে না। তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ঠিক এসময়েই ভোক্তভোগী মনে করে এটা তার জন্য ছিলো একটা ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র প্রতারনার চাইতেও ভয়াবহ আঘাত।

ষড়যন্ত্র যখন শুরু হয়, তখন এর ডান দিক, বাম দিক, সামনে পিছে সব জায়গা থেকেই কিছুটা নোংড়া গন্ধ আসতে থাকে। যারা এই দূর্গন্ধ সম্পর্কে একটু খেয়াল করেন তারা হয়তো ষড়যন্ত্রের আভাষটা বুঝতে পারেন। অনেক সময় এই গন্ধ কোনো বড় নাটকের ছোট অংশের আভাষ দেয়। অনেক সময় এই ষড়যন্ত্র হয় লোভের, ক্ষিদের, রাজনীতির অথবা অন্য কিছু। তখন দাবার গুটির মতো চেকমেটকেও চেকমেট করা হয়। এখানে তখন ইদুর বিড়ালের খেলাও বলা চলে। যদিও এই ইদূর বিডালের খেলায় অন্য রাঘব জানোয়ারগনও জড়িয়ে থাকে। ষড় যন্ত্রের এই অধ্যায়ে সবচেয়ে বেশী নজর থাকা উচিত নিজের নিরাপত্তার উপর। কারন, যখন কেউ প্রথমবার আঘাত করে, তখন সে অনেক পরে বুঝতে পারে যে, যাকে আঘাত করা হয়েছিলো, পালটা আঘাতটা সেও করবে। যন্ত্রনার বদলায় যন্ত্রনা, আঘাতের বদলায় আঘাত। এতদূর অবধি যদি কেউ না সতে চায়, তাহলে তাকে সবচেয়ে বেশী সতর্ক থাকতে হবে সেই সব জিনিশ থেকে যার নাম লুজ টক, কিংবা ভিত্তিহীন আড্ডার রাজত্ব। লুজ টক, গল্প সল্প, বা গুজব এসব চলতেই থাকবে, কিন্তু যে শুনে তাকে তার বুদ্ধি আর বিবেচনার মাধ্যমে সেই সব কথা এক কান দিয়ে শুনে অপর কান দিয়ে বের করে ফেলাই হচ্ছে সমাধান।

৩০/০৩/২০২১-মানুষের মন

Categories

মানুষের মন দূর অনন্ত ছরানো এক সুন্দর দুনিয়া। কিন্তু এই মন কখনো কখনো আমাদের ধনিত করে দেয়। আমাদের ভুল পথে চালিত করে, ভুলকে ঠিক আর ঠিক কে ভুল বলে দেখায়। এমন অবস্থায় আমাদের জ্ঞান আর বিবেক আমাদের সবচেয়ে কাছে সংগী। তাই আমাদের এটাই পরামর্শ যে, মনের কথা শুনুন কিন্তু মাথার রাস্তায় চলুন। তা না হলে খারাপ পরিস্থিতি অনির্বার্য।

কারন যে কোনো কারনেই হোক মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া একটা দূর্ঘটনা বাকী সবার জীবন পালটে যায়, সপ্ন তছনছ করে দেয়। কোনো বেপরোয়া ঘটনায় অন্য সবার জীবন বিধ্বস্ত হয়ে যায়। মানুষ চরম অসহায় হয়ে যায়। গতকাল যে সময়টায় আনন্দ ছিল, তারপরের দিন সেই সময়টায় মানুষ চোখের জলে ভাসতে থাকে। সেই জলে ভাসতে থাকা কঠিন সময়টা পার করতে করতে আরো অনেক কঠিন পথ সামনে এসে হাজির হয়। তখন শুধু মনে হয়, এখন কার সময়ে বেদনায় ভাসতে থাকা খারাপ পরিস্থিতিটা কেবল খারাপ পরিস্থিতির শুরু মাত্র।

যে বাড়িতে সবাই এক জনকে মেরে ফেলতে চায়, সে বাড়িতে কাউকেই কিছু বলে লাভ হয় না। কেউ তখন তার কথা শুনে না। কোনো আওয়াজ ও বাইরে যায় না। ঘুরে ঘুরে সেই আওয়াজ আবার নিজের কাছেই ফিরে আসে। একে প্রতিধ্বনি বলে না, একে বলে মৃত্যুর অগ্রিম বার্তা।

২৭/০৩/২০২১-সেনাপ্রধান আজিজের সাথে

Categories

 

যেদিন ষ্টাফ কলেজ করতে আসি সেই ১৯৯৭ সালে মীরপুরে, তখন আমরা প্রায় ৯০% অফিসারই মেজর পদবীর। সেনাবাহুনীর কিছু কিছু কোর্ষ আছে যেখানে জুনিয়ার আর সিনিয়ার মিলে কোর্ষ মেট হয়ে যায়। এই ষ্টাফ কলেজ সে রকমের একটা কোর্ষ। জেনারেল আজিজ আমাদের সাথে ২৩ ডি এস সি এস সি (ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড ষ্টাফ কোর্ষ) করেন। খুবই সাদামাতা ক্যালিভারের একজন অফিসার। এটা বল্বো না যে, গননায় নেয়া যাবে না, কারন যারাই ষ্টাফ কলেজ করতে আসেন, তারা অনেক মেধার পরীক্ষা দিয়েই আসেন। কিন্তু এই মেধাবী অফিসারদের মধ্যে যখন তুলনা করা হয়, তখন সাদামাটা বলা চলে। আমরা একই সিন্ডিকেটে ছিলাম।

কালেভদ্রে আমরা যে কোনো কারনেই আর আর্মিতে থাকতে পারি নাই। এতার প্রধান কারন বাংলাদেশের রাজনীতি। এই অপরাজনীতি দেশের অনেক তুখুর মেধাবী ছেলেদেরকে দেশের অনেক কাজে লাগায় নি, লাগাতে দেয়া হয়নি। যারা বেশী তোষামোদি করতে পেরেছে, তারা হয়তো রয়ে গেছেন, আবার যারা মেনে নিতে পারেন নাই, তারা অকালেই সেচ্ছায় চলে গেছেন, আবার অনেকে বের হয়ে কি করবেন এই ভেবের যাতনাটা সহ্য করেই দাতে দাত লাগিয়ে রয়ে যায়।

১৯/০৩/২০২১-প্রত্যেকের মাথায় অসংখ্য

Categories

প্রত্যেকের মাথায় অসংখ্য চিন্তাভাবনা ঘুরে। কেউ খুশী থাকে, কেউ অখুসী, কেউ হুসে থাকে, আবার কেউ বেহুসে, কেউ সন্তুষ্ট আবার কেউ অসন্তুষ্ট। কারো মুখ দেখে কার মাথায় কি চলছে তা কি কখনো জানা সম্ভব? কার মনে কি চলছে, কিংবা তার পরের মূহুর্তে সে কি করতে চলছে, এটা কি কেউ এতো সহজে বুঝতে পারে? কে কি ভাবছে, কি বুঝছে, তার প্রতিক্রিয়াই বা কি হবে, এটা কি আগে থেকে জানা সম্ভব? আমাদের সামনে নিসচুপ ভাবে ঘুরে ফেরা বা বসে থাকা সেই অতি সাধারন মানুষটার মাথায় কি চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, সে কি চাচ্ছে, তার মধ্যে কতটা ঘৃণা, কতোটা রাগ, কতটা আবেগ ইত্যাদি তার অনুমান কি কেউ করতে পারে? আসলেই পারে না। আজ পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাষের মতো মানুষের মনের পূর্বাভাষ কখনোই কেউ দিতে পারে না। সিসিটিভি অথবা সার্টিফাইড সিকিউরিটি এজেন্সীগুলি শুধু মানুষের কাজকর্মের উপর নজর রাখতে পারে কিন্তু মানুষের মনের উপর বা পটেশিয়াল অপরাধীর মনের পরিকল্পনার উপর কোনো কিছু রেকর্ড করতে পারে না। ফলে, অনেক অপরাধ খুব সাধারন ভাবে ঘটে যায়, আর খুব সাধারনভাবেই সবার অলক্ষ্যে অপরাধী বেরিয়েও যায়। কখনো কখনো সেই অপরাধী আবার অনুশোচনাকারীদের মধ্যেও এমনভাবে ঢোকে যায় যে, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিকারের দুক্ষে ভারাক্রান্ত মানুষটার ও জানতে পারে না, খুনী বা অপরাধী ঠিক তার থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে দাঁড়িয়ে। তবে যেটাই হোক না কেনো, অপরাধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। একটা রোগ, প্রত্যেক স্টেজে এটা একটা সিম টপ দেখায়, তেমনি একটা অপরাধ সং ঘটিত হবার আগেও সতর্কবার্তা শোনা যায়। এজন্য, প্রতিটি মুহুর্তে আমাদের চারপাশে কি ঘটছে, কিভাবে ঘটছে, কেনো ঘটছে এসব প্রশ্নের উত্তর সব সময় পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝতে না পারলেও মনের ভিতরে উকি মারা কোনো অযাচিত প্রশ্নকেও এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। তল্লাসীতে হয়তো নিজেরা অনেক কিছু খুজে পায় না কারন তল্লাসির সফর লম্বাই হয়। সেই লম্বা সফরের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হয়তো আমাদের নাই কিন্তু মানুষের মন যখন কিছু আচ করে, সেটাই হচ্ছে তল্লাশীর প্রথম ধাপ। কোনো আওয়াজকেই হেলাফেলা করবেন না। ব্ল্যাক মেইল, সাধুবাদ, অতিরিক্ত লয়ালটি, কিংবা হোচট খাওয়ার মতো কোনো ইংগিত, কোনো কিছুই ঝেড়ে ফেলে দেয়া উচিত নয়। সবচেয়ে জরুরী বিষয় মনে রাখা উচিত যে, ব্ল্যাক মেইলের মতো কোনো ইংগিত বা এর আওয়াজ পাওয়ার সাথে সাথেই যারা বড়, সিনিয়র, তাদের সাথে এসব ব্যাপারগুলি পরামর্শ করা উচিত। হোক সেটা কোনো কারনে অথবা নিজের দোষেই। তারপরেও বড় ধরনের বিপদ থেকে হয়তো নিজে এবং আশেপাশের সবাই বেচে যেতে পারেন।

এক তরফা ভালোবাসার মতো এক তরফা শত্রুতাও হয়। আর এই শত্রুতা থাকে খুব গোপনে। এখানে চুপিসারে শত্রুকে মেরে ফেলা হয়। প্রতিশোধের আগুন কয়েক প্রজন্ম জলতে থাকে। এই জলন্ত অগ্নিশিখা মানুষের বংশ পরম্পরায় কখনো ফুলের উপর দিয়ে আবার কখনো ছুড়ির উপর দিয়ে যায়। তাই, সাবধানতা, নিজের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা সর্বত্র এমন একটা হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে যেখানে অনেক বড় অঘটন থেকে মানুষ বেচে যায়। তারপরেও নিজের অজান্তে অপরাধ তো হয়েই থাকে। 

এসব অপরাধের পিছনে থাকে অতীতের কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা মানুষ প্রায়ই সিরিয়াসলী ভাবে না কিন্তু সেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা অনেক সময় খুব শক্ত ইংগিত দেয় যা হয়তো আমাদের সাধারন মস্তিষ্ক আমলেই নেয় না। আমাদের মস্তিষ্ক আর তাদের তৈরী হওয়া চিন্তাভাবনা একদিক দিয়ে আমাদের এভাবেই ভাগ্য লিখে দেয় যেখানে কেউ হুসে থাকে, আবার কেউ বেহুসে থেকে সারাজীবন কাতরাতে থাকে।

অপরাধী ভাবে যে, সময়ের সাথে সাথে অপরাধের ভার লঘু হয়ে আসে এবং হয়তো এক সময় সেটা একেবারেই হালকা থেকে হালকা হতে হতে আর এটা কোনো অপরাধের মধ্যেই থাকে না। কিন্তু মানুষ ভুলে যায় যে,  পারফেক্ট ক্রাইম বলতে কিছু নাই। পারফেক্ট ক্রাইম তখনি হয় যখন ক্রাইমের ব্যাপারে সঠিক তদন্ত না।

১৯/০৩/২০২১- তৃতীয় নয়ন

Categories

আমি একটা কাজ বহুদিন ধরে করছি। আমার জীবনের এমন একটা অধ্যায় যেটা কেউ জানে না। আর আমার বেচে থাকাকালীন কেউ জানবেও না। আর আমার মৃত্যুর পরেও কেউ জানবে না। এটা একটা রহস্য যা কেউ জানতো না, আর জানবেও না। এ রকমটাই আমি ভাবতাম কিন্তু এমনটা কি হবার ছিলো? কখনো কখনো যেটা আমরা শুনি, সেটা শুধু গল্পে হয়। বাস্তবে নয়। কখনো কখনো আমাদের চোখে যেটা দেখা যায় সেটা সবসময় সত্যি হয় না। এটাও হতে পারে সেটা সত্যি একটা প্রতিচ্ছবি।

আমি সব সময় সবার ভালো ভাবে থাকার চেষ্টা করতাম। ভালো কাজ করারও চেষ্টা করতাম। কিন্তু আমি সব সময়ই একা ছিলাম। তবে আমার একটা এফেয়ার্স ছিলো। আমি চাইলেই সেটা বাস্তবে রুপ দিতে পারতাম না। কারনও আগে থেকেই ছিলো বিবাহিত। কেউ যদি এখন আমাকে প্রশ্ন করে, কেনো আমি এটা বলছি? আমি কি সজ্ঞানে আছি? না, আমি সজ্ঞানে নাই, আমি নেশার মধ্যেও নাই কিন্তু আমি ওর জন্যই একা আর নেশাগ্রস্থ। আজ ও নাই। আমি পুরু ভেংগে পড়েছি। আমি কোনো সাফাই গাইছি না এখন। না কাউকে কোনো দোষারুপ করছি।

যেদিন আমি ওকে প্রথম দেখেছিলাম, আমি জানতাম, ওর উপরে আমার নজর ছিলো, কিন্তু আমি জানতাম না যে, কোনো একদিন সেও আমাকে তার নজরে রাখবে। একদিন বুঝলাম, আমার উপরে ওর নজর আছে, ছিলো, আর ও আমার উপর থেকে কখনো নজর সরায় নাই। ও আমাকে অনেকবারই বলেছিলো, ও আমার হাত ধরেছে, যদি আমি ছাড়াতে চাই, সেটা ছিলো আমার স্বাধীনতা। আমিও ওকে ছাড়তে চাই নাই কখনো। আসলে কিছু জিনিষ আমরা শুরু করি না, শুরুটা হয়েই যায়। এটাই সত্যি যে, আমরা কাউকে কেউ আটকাতে পারি নাই। আমরা দুজনেই দুজনের প্রয়োজনীয়তা পুরুন করছিলাম। কোনো সম্পর্কই ভাংগার আমাদের ইচ্ছে ছিলো না।

আমি তো আমাকে বুঝতেই পারি নাই কখনো। কে আমি, কি আমি, কার আমি, কোথাকার আমি কিছুই না। শুধু গায়ে গতরে বেড়ে উঠেছিলাম। এই পুরু পৃথিবীতে এমন কেউ নাই, যে বা যারা সবাই সবার ব্যাপারে পুরুটা জানে। আমরা নিজেরাই নিজের ব্যাপারে সবকিছু জানি না। আমি তো আমাকে সবেমাত্র চিনতে শুরু করেছিলাম যেদিন আমি প্রথম ওর কাছে আসি। তারপর থেকে আই আমার জীবনের গন্তব্য ঠিক করে ফেলেছিলাম। আমি কোথাও আর যাচ্ছি না। অনেকেই আমাকে এই প্রশ্নটা করেছে, কেনো আমি বিয়েটা করছি না। একজন অবিবাহিত মানুষ আমি, যুবতী, সুন্দুরীও। আর আমার মর্জিটা আমার কাছেই ছিলো। বিয়ে তো করতেই পারতাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কি করেছি, কি করছি, কি করছি না সেটাও তো আমি জানি না। আমি আমার এই সম্পর্কটা থেকে যা পাচ্ছিলাম, তার থেকে বেশী কিছু আমি নিজেও চাইতাম না। আমার জন্য সব কিছুই যথেষ্ঠই ছিলো। কোনো প্রকারের হতাশা, জটিলতা কিছুই ছিলো না আমার শুধু গোপনীয়তা ছাড়া। একে অন্যের অপরিচিতের মতো একটা অভিনয়।

ওর সাথে আমার বিবাহীতমালা কোনো সামাজিকভাবে হয়তো হয় নাই কিন্তু এটা যে সর্গীয় সেটা আমার মনে প্রানে বিশ্বাস তো সব সময়ই ছিলো। ওর সাথে আমার এই নিষ্পাপ এফেয়ার্স, অন্তত আমার তরফ থেকে নিষ্পাপ, একটা কঠোর বাস্তব। আমি ওর সাথে সংসার করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওর সংসার ভেংগে নয়। সংসার তো করছিলাম, তাহলে যে খেলনাটা একবার ভাংগে নি, সেটাকে আবার ভেংগে জোড়া লাগানোর কোনো প্রয়োজন আমি মনে করি নাই।

ও একা ছিলো। এতোটা বছর একসাথে থেকেও ও ওর পরিবারের কেউ হতে পারে নাই। সবাই ওকে ব্যবহার করতো কিন্তু ওর যে একটা ব্যক্তিগত জীবন ছিলো যেটার কেউ নাগালেই পেতো না বা নাগাল পাওয়ার চেষ্টাই করতো না। তা না হলে দিনের পর দিন যখন একটা মানুষ তার শারীরিক চাহিদার কথা ভুলে যায়, আর এটা যখন তার পরিবার মাথায় নেয় না, তাহলে তো বুঝতেই হবে এর মধ্যে বিস্তর একটা ফারাক রয়ে গেছে। ফলে ও নিজের একাকিত্তকে অন্য কোথাও সংগ দেয়ার চেষ্টা করেছে। ব্যাপারটা যেনো ঠিক এ রকমের যে, ডান হাতের কোনো খবর ছিলো না যে, বাম হাত কি করছে। একটা জীবনের দুটু আলাদা আলাদা অধ্যায়। এই দুটু জীবনের মধ্যে একটা জীবন যখন অতি দুক্ষকষ্টে ভরে উঠে, এটা কখনোই সম্ভব নয় যে, এর প্রভাব দিতীয় জীবনে পড়বে না। হয়তো ও অনেক ব্যালান্স করেছে বলে শেষ অবধি একটা জীবনের সাথে আরেকটি জীবনের প্রভাব পড়তে দেয় নাই, মাঝে সেইই বেশী পুড়েছে।

আর আমিও একাই ছিলাম। ও কারো সংগ চাইছিলো। আমারো ওকে দরকার ছিলো।  এই দরকারটা শুধু শরীরের নয়, দরকারটা আমার অস্তিত্তের। কোনো সম্পর্কই খেলনা নয়। তারপরেও আমরা খেলনার মতোই খেলি। আমাদের মধ্যে যা ছিলো, সেটা সব ঠিক ছিলো, শুধু আমরা সংসারটা পাতি নাই। আমি ওর ব্যক্তিগত কোনো ব্যাপারে কখনো কৈফিয়ত চাইতে চাই নাই, না চাইতে ভালো লাগতো। কিন্তু আমি আমার জায়গা থেকে সম্পুর্ন সঠিক ছিলাম, একাগ্রচিত্তেই আমি সব মেনে নিয়েছিলাম। আমি ওকে একজন ভালো বন্ধু, ভালো স্বামী আর ভালো গার্জিয়ান হিসাবেই সব সময় মেনে নিয়েছিলাম, সেটা আজো আমার মধ্যে বিদ্যমান। আমার মাথা আর মন দুটুই পরিষ্কার ছিলো।

মানুষ যখন ভালো কাজ করে, তখন তার নাম লিখতে হয়। চিৎকার করে বলতে হয়, আর গর্ব করে বলতে পারে এই কাজটা আমি করেছি। সাইন বোর্ড দেয়, পোষ্টার লাগায়। নাম জাহির করে। কিন্তু কোনো লজ্জাজনক কাজ যদি ভুল করেও হয়ে যায়, এটা লক্ষবার লুকিয়ে রাখে, চেপে যায়, তা না হলে এটা বারুদের মতো শির শির করে ততক্ষনাত চারিদিকে জলে উঠে। ও সাহসী ছিলো, কিন্তু নিজের মান সম্মান আর পরিবারের কথার বাইরেও আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে সে এমন কোনো কাজ করে নাই যাতে আমি শেষ হয়ে যাই, আমি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই, আমি কষ্টের মধ্যে পড়ি। ও আমার সব কিছু সবার কাছেই লুকিয়ে আমাকে শান্তিতে রাখার চেষ্টা করেছে। আমার এই সামাজিক লজ্জাষ্কর কাজটা লুকানোর জন্য তো কিছু মানুষ আমারো ছিলো যারা আমাকে বুঝতো, আমাকে ভালোবাসতো, আমাকে স্নেহ করতো আর আমাকে অন্তত সামাজিকভাবে কিছুটা হলেও শান্তি দেয়ার চেষ্টা করতো। আর সেটা ছিলো আমার পরিবারের কিছু লোক।

ও একটা অনেক ভালো লোক ছিলো, সে কখনো আমাকে ঠকায় নাই। আজ আমার সাথে ওর এই এফেয়ার্সের কারনে হয়তো অনেকেই এক কথায় বলেও উঠতে পারে যে, ওর মতো আর একটাও খারাপ মানুষ নাই। কিন্তু আমি লিখে দিতে পারি, আমি চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে সবার সামনে উচু গলায় বলতে পারি, ওর মতো ভালো মানুষ আর একটাও ছিলো না। আমি মানুষকে বুঝতে শিখেছিলাম ওর মাধ্যমেই। আমি কাউকে দেবী বা ডাইনী রুপেও ভাবি না। ও শুধু আমাকে সবার অলক্ষে সবার উপরে মাথা উচু করে দারাতে শিখিয়েছিলো। আজ ও নাই, কিন্তু আমি জানি যে, ও আমার হাত এখনো ধরেই রেখেছে। আপ্নারা হয়তো শুনেছে, জীবিত মানুষ একে অপরের ভরষা কিন্তু কখনো শুনেছেন যে, মৃত মানুষ তার থেকেও অনেক বেশী ভরষার? আমার বেলায় এতাই সত্যি।

আজ ও ওর সমস্ত একাকীত্ব, আর বেদনা ওর সাথেই নিয়ে গেছে। আমি শুধু ওর স্রিতিটা ধরে রেখেছি আর রাখবো আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। কারন, আমি ওর ছিলাম, আছি, থাকবো। আমার আমিত্ত আসলে ও নিজেই।

ও শুধু আমার বন্ধু ছিলো না, ও ছিলো আমার শিক্ষক, আমার স্বামী, ও ছিলো আমার বাবা, ও ছিলো আমার মা। আমি ছিলাম ওর স্ত্রী, মেয়ে অথবা বলতে পারেন একটা আদরের বিড়ালের মতো জ্যান্ত খেলনা।

১৮/০৩/২০২১- করাপশন বা দূর্নীতিঃ

Categories

দূর্নীতি কোনো একজনের কাজ নয়। দূর্নীতি আসলে একটি গোষ্টীর কাজ। আর নীচের লেবেলের মানুষগুলিই এর স্বীকার। অথচ এদের থেকে আবার আকাশ ছোয়ার আশা করা হয়। এরা যে টাকা পায়, তা অনেক ফিল্টার হয়ে নীচে নামে। আর দূর্নীতির মূল ঐ ছাকনীতেই থাকে। ছাকনীই যদি খারাপ হয়, দেশ থেকে কখনোই দূর্নীতি নির্মুল করা সম্ভব না। পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ সবাইকে সমান করে ভাগ করে দিলেও দেখা যাবে, দূর্নীতির কারনে হয়তো কারো না কারো কাছে আরেকজনের থেকে বেশী সম্পদ পাওয়া যাবে।

অনেকে হয়তো বলতে পারেন যে, করাপশন কোনো গুন্ডামী নয় যে কারো গলায় ছুড়ি ধরে, দূর্নীতি কোনো শত্রুর নাম নয় যাকে আমরা হারাতে পারি, করাপশন আমাদের কাছে একটা ভয়ংকর রোগ, যতোদিন মানুষ থাকবে ততোদিন করাপশন থাকবে। কিন্তু আমি এই থিউরীর সাথে একমত হতে পারি না। ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে, মানুষ কত ঔষধ বের করেছে, বড় বড় রোগকে হারিয়েছে, করাপশন যদি একটা রোগ হয়, তাহলে কোনো না কোনো রকমের চিকিৎসাও থাকবে। হ্যা, হয়তো কোনো এমুনিশন বা ইঞ্জেকশন তৈরী হবে না কিন্তু একটা সিস্টেম তো তৈরী হবে যে দূর্নীতি হতেই দেবে না।

আমরা যখন আমাদের সন্তানদের জন্য স্কুল খুজি, তখন একটা জিনিষ খুবই গুরুত্ত পায়, আর সেটা হলো সংস্কার, ভ্যালু। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে চাই সৎ শিক্ষা পাক, নীতির মধ্যে থাকুক, দূর্নীতির বাইরে থাকুক। কিন্তু বড় হবার পর এই সংস্কার, ভ্যালুজ, সততা, নীতিগুলি কি আর ব্যবহার করা হয়? ছাত্রজীবন শেষ করার পর যখন মানুষ কর্মিজীবনে প্রবেশ করে, তখন এই সংস্কারের অগ্নি পরীক্ষা হয়ে থাকে। সোজা রাস্তা বানানো আর সোজা রাস্তায় চলা দুটুর পার্থক্য আছে। যদি সততা নিজের কাছে মুল্যবান হয়, তাহলে এই দুইটার মধ্যে পার্থক্য নিজেই বুঝে যায়। সোজা রাস্তায় অনেক কাটা, ক্ষতবিক্ষত হতে হয়, অনেক রক্তপাত হয়।

একজন তরুন শিক্ষিত ছেলে বা মেয়ে অথবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় না শিক্ষিত হয়েও অনেক মানুষ ভালো সপ্ন দেখেন, সুস্থ্য সমাজের সপ্ন দেখেন, তারাও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটা ভালো পরিবেশ উপহার দিতে চান যাতে আজকের প্রজন্মের পরবর্তী সময়ে তাদের রেখে যাওয়া আদরের প্রজন্ম নিরাপদ থাকে, ভালো থাকে। কিন্তু এমন একটা প্রিথিবী যেখানে সর্বদাই তার নৈতিক মুল্যগুলুকে কেউ না কেউ পিষে ফেলে দিচ্ছে। আর তারা অনেক উচু ক্লাশের মানুষ। তারপরেও অনেক মানুষ সপ্ন দেখে। সপ্ন পুরন করা খুব সহজ নয়, না কখনো সহজ ছিলো। আর ভবিষ্যতেও সহজ হবে না। আসলে ভালো সপ্ন দেখাই তো কঠিন। অথচ এই সপ্নই আমাদেরকে জোড়া লাগিয়ে রাখে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে, আমরা এই সপ্ন নিয়েই বাচি। নিজের সপ্নকে কখনো ভাংতে নাই।

সুস্থ্য সমাজ গড়ে তোলতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুস্থ মানসিকতা, দূর্নীতিমুক্ত চিন্তা এবং চেতনা, সাথে এর কঠিন প্রয়োগ। আর এই প্রয়োগকারী হিসাবে প্রথম রাষ্ট্রীয় দায়িত্ত রাষ্ট্রের নেতার, দেশের কর্নধার, প্রশাসনের। আর এদের মৌলিক ইউনিট হচ্ছে সেসব মানুষগুলি যারা করাপশন করেন না, এবং করাপশনকারীকে তারা নিজেদের প্রানের বিনিময়ে হলেও পাকড়াও করেন। যারা করাপশন করে না, তাদের কাছে টাকা আর সম্পদের কোনো মুল্য থাকে না। তারা শুধু বেচে থাকতে চান মানুষের উপকার করার জন্য। কিন্তু তাদের জন্য প্রতিনিয়ত রয়েছে মৃত্যুফাদ আর হুমকি। যখন কোনো নেতা, বা কোনো বড় মানুষকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকী দেয়া হয়, তখন তাকে পুলিশের সুরক্ষা দেয়া হয়। ভালো রাষ্ট্র তা দেয়। 

কেনো?

কারন তারা দেশের সেবক। যে একনিষ্ঠ এবং সৎ মানুষটি দূর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ে, তাকে করাপ্টেড লোকেরা প্রানে মেরে ফেলার হুমকী সব সময়ই দিয়ে থাকে। তাই, এইসব ভালো মানুষগুলিকেও পুলিশের সুরক্ষা দেয়া উচিত। তারা দেশের সম্পদ। তাদের প্রান বাচানো দেশেরই উচিত। দেশের জন্য তারা অনেক মুল্যবান সম্পদ। যখন এইসব জ্ঞানী, গুনী, সৎ মানুষগুলির প্রান চলে যায় আর সমস্ত আনাচে কানাচের প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দায়সারা গোছের একটা তথাকথিত ইনভেষ্টিগেশনের নাটক সাজিয়ে গোলেমেলে একটা সমাধান দিয়ে দেয় এবং আসল সত্যকে অনুসন্ধানে বিরত রাখে, তখন এইটা বুঝতে আর কোনো অসুবিধা হয় না যে, রাষ্ট্রের অনেক উচু স্তরে এর জন্ম। তারাই কোনো না কোনোভাবে করাপশনের নিমিত্তে ঘটিত কেস ডিসমিস করে দেন নিজের মুখোশ আড়াল করার জন্য। কিন্তু আসলেই কি কেস ডিসমিস হয়ে গেলো বলে মনে হয় তখন? সর্বোচ্চ মহল যখন এই কথিত ইনভেষ্টিগেশনে খুসী হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন, তখন কারোই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ইনভেষ্টিগেশনে বানানো স্টোরি আসলে কি।  

আর এভাবেই দেশের সম্পত্তি লুট আর তার বিরোধিতা করা মানুষের খুন কোনোটাই এদেশে শেষ হয় না। পত্রিকা খুলুন, টিভিতে নিউজ দেখুন, বড় বড় হেড লাইনসে রোজ একটা নতুন স্ক্যাম। কিন্তু ভিতরের পাতায় রোজ একজন সাধারন মানুষের, দিন মুজুরের খুনের নিউজ অতিশয়ই কিঞ্চিত। সাধারন জনতা, আপনি, আমি আজ থার্ড ক্লাস রোডের জন্য টোল ট্যাক্স দিয়ে থাকি। ওইসব রাস্তায় সফর করতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে থাকি। এই রাস্তাগুলি হয়তো কখনোই ভালো হবে না। হয়তো কোনো স্ক্যামে অভিযুক্ত কোনো ঠিকাদারেরও আজীবন সাজা ভোগের কোনো নথি নাই, উদাহরনও নাই। হয়তো বিদেশী ব্যাংকে গচ্ছিত কালো টাকাও কখনো এদেশে ফেরত আসবে না, আসেও না। তাহলে উপায়? উপায় একটাই। আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।

করাপশন দূরারোগ্য ব্যাধি নয়। করাপশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রথম হাতিয়ার হিসাবে আমাদের উচিত, করাপশনের বিরুদ্ধে লড়াই করা নিহত বা মৃত বীর মানুষগুলির কাহিনী শুধু কাগজ আর ইন্টারনেটে সীমাবদ্ধ না রেখে বরং বাচ্চাদের টেক্সট বুকে জায়গা দেয়া, তাদের বুনিয়াদ তৈরী করা। আমাদের এটা দায়িত্ত যে, আমরা যেনো আগামী প্রজন্মকে করাপশন সম্পর্কে অবগত করি যেটা আমাদের মজবুত আর উন্নত দেশ বানাতে বাধা দেয়। দিতীয় ধাপের হাতিয়ার যদি বলি সেটা হচ্ছে-সমাজকে সর্বোচ্চ স্তর থেকে ভয় দূর করা, সুশাসন দেয়া। যদি সেটা না হয়, তাহলে করাপশন কোনোদিনই দূর তো হবেই না, ধীরে ধীরে এর প্রভাব এতোটাই বিস্তার হবে যার ফলে প্রতিটি মানুষ একে একে এর নেতিবাচক দিক পাবেন, হোক সেটা অনেক পয়সাওয়ালা বা দরিদ্র। বর্তমান পরিস্থিতি কোনোভাবেই এই ব্যাধি থেকে পরিত্রানের অবস্থানে নাই আমরা, না দেশ। ছোট একটা গল্প দিয়ে শেষ করি লেখাটা-

একজন রাজা ছিলো। খুবই শয়তান আর নিষ্টুর রাজা। সে নিজের সভাসদ আর প্রজাদের খুব ভয় দেখিয়ে রাখতো। একবার সেই রাজা তার নিজের দর্জিকে বল্লো, আমাকে এমন একটা পোষাক বানিয়ে দাও যেটা কারোর কাছে নেই। আর সাথে এটাও বল্লো, যদি আমি জানতে পারি, এ রকমের পোষাক অন্য কারো কাছে আছে, তাহলে তোমার গলা কেটে দেবো। দর্জি খুব ভয় পেয়ে গেলো, বাড়ি ফিরে দুসচিন্তার মধ্যে পড়লো কিভাবে একটা উপায় বের করা যায়। সকালে উঠে সে রাজার জন্য একটা স্যুট তৈরী করে ফেল্লো, “হাওয়ার স্যুট”। দর্জি ঐ ‘হাওয়ার স্যুট’ রাজার উলংগ শরীরে পড়িয়ে দেয়। রাজা খুব খুশী হলো। সভাসদরাও খুব বাহবা দিলো। ঐ ‘হাওয়ার স্যুট’ পড়ে উলংগ রাজা নিজের প্রজাদের মাঝে যায়, তাদের মতামত জানার জন্য। প্রজারাও সবাই খুব বাহবা দিলো। কারোর এটা বলার সাহস হলো না যে, রাজামশাই, আপনি নিজের তামাশা নিজেই বানাচ্ছেন। সারাদিন উলংগ রাজা তার নগরে ঘুরে বেড়ালো। তারপর একটা ভবঘুরে বাচ্চা এগিয়ে এলো। আর জোরে জোরে হেসে বল্লো, “রাজা তো উলঙ্গ!!”

আমরা এই গল্পের শেষটুকু এখনো জানি না। কিন্তু নিশ্চয় ঐ ভবঘুরে বাচ্চাটা বাচেনি হয়তো।

এখন প্রশ্ন এটাই, করাপশনের বিরুদ্ধে গিয়ে ঐ জ্ঞানী সৎ মানুষগুলি কতদিনই বাচে যদি এই উলংগ অত্যাচারী রাজার মতো হয়? কারন তারা উলংগ রাজাকে চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ওরা উলংগ। তাই তাদের মরাই জরুরী।

পরিশেষে আমি বলতে চাই, আমায় মনে রেখো না, বা আমার কাজকেও মনে রেখো না। শুধু এইটুকু আশা রাখি যে, শুধু বার্তাটা মনে রেখো।

১৮/০৩/২০২১ ফিডব্যাক ফর্ম

Categories

আজকাল যে কোনো সার্ভিস প্রোভাইডার, তা সে হোটেলই হোক, রেষ্টুরেন্টই হোক বা ট্রাভেল এজেন্সি কিংবা যে কোনো পন্য, তারা ফিডব্যাক চেয়ে থাকে। তারা জানতে চায় যে, তাদের কাষ্টোমার তাদের সার্ভিসে খুশী হয়েছে নাকি হয়নি। এই ফিডব্যাকের মাধ্যমে প্রত্যেকে তারা জানতে পারে আরো ভালো সার্ভিস দেয়ার জন্যে তারা কি করতে পারে। অনেক সময় কাষ্টোমারের এই ফিডব্যাক দেয়া ডেটাবেজ অন্য মার্কেটিং কাজেও ফিড ব্যাক দেয়া কাষ্টোমারের অজান্তে অন্য আরেকটি সার্ভিস প্রোভাইডারের সাথে কানেক্ট করে তারাও আমাদের ফোন, ই মেইল আইডি ব্যবহার করে অন লাইনে ফিড ব্যাক চাওয়া শুরু করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-ফিড ব্যাক সিস্টেমের মাধ্যমে কাউকে এমন ব্যক্তিগতভাবে তথ্য দেয়া কখনো কি কোনো বিপদের কারন হতে পারে?

কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য যেমন তাদের ফোন নাম্বার, ইমেইল আইডি, কিংবা ঠিকানা সবই খুব মুল্যবান তথ্য। কারন এই থথ্যগুলির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে মানুষের নিরাপ চলাচল আর নিরাপত্তা। কোনো কাষ্টোমার ফিডব্যাকের মাধ্যমে দেয়া তার কোনো তথ্য কোনো কোম্পানীকে দেয়া আর তার পরিবর্তে ওইসব কোম্পানী কাষ্টোমারের এই তথ্যসমুহ একে অপরের কাছে আদান প্রদান করা কি বেআইনী নয়? অথচ সব সার্ভিস প্রোভাইডার এটাই করে থাকে। যদিও ফিড ব্যাক ফর্মের মধ্যে ষ্পষ্ট করে এটা দাবী করা হয় যে, কাষ্টোমারের ব্যক্তিগত তথ্য তারা গোপনী এবং সুরক্ষিত রাখবে। অথচ বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা তারা রক্ষা করে না। ফলে যারা আমাদের ফোন নাম্বার কিংবা ইমেইল আইডী পাওয়ার কথা না, তারাই প্রতিদিন আমাদেরকে ফোন করে করে, মেইল করে করে হয়রান করতে থাকে। মাঝে মাঝে ভাবি, তারা আমার নাম্বার বা আইডি পেলো কিভাবে? ক্রেডিট কার্ড, বিভিন্ন পন্যের বাজার কিংবা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী কতই না বিরক্ত করতে থাকে আমাদের প্রতিদিন। আমরা হয়তো কোনো এক জায়গায় বিশ্বাস করে কোনো একটা ফিডব্যাক ফর্মে আমাদের ব্যক্তিগত নাম্বার, বা মেইল এড্ড্রেস দিয়ে থাকি বটে কিন্তু হাজার হাজার কোম্পানী থেকে প্রতিনিয়ত কল আসতেই থাকে যাদের সাথে আমাদের কোনো কালে কোনো যোগাযোগই ছিলো না। কোনো একটা প্রয়োজনীয় বিষয়ে ইনকুয়ারী করা কল, আমাদের জন্য নিয়ে আসে হাজারটা অপ্রয়োজনীয় কল। এম্নিতেই তো “ডু নট ডিস্টার্ব ফ্যাসিলিটি” আছে, তবু আমাদের শান্তি ভাংতে কল এসেই যায়। কেউ কেউ এটা বলতে পারেন যে, কঞ্জিউমারের কালচারে এসব তো চলতেই পারে, কিন্তু এই কালচারে সবাই বিশেষ করে সার্ভিস প্রোভাইড করেন যে সব ষ্টাফ, তারা তাদের ক্রেডিবিলিটি দেখাতে কিছু না কিছু ব্রেক থ্রো পেতেই চায়, তাই এই বিনা অনুমতিতে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে অন্যকে তারা টার্গেট করে নতুন বাজার তৈরী করতে চায়। ফলে ফিডব্যাক ফর্ম এমন একটা কালচার তৈরী করে ফেলেছে যে, কোম্পানীগুলি মিলে যেনো একটা কর্পোরেট বাজার আর আমরা তাদের পৃথক পৃথক গ্রাহক হয়ে দাড়িয়েছি। বাধা দেয়ার মতো কোনো সিস্টেম আমাদের হাতে অন্তত নাই হোক সেটা আমার দরকারী বা বিরক্তিকরের। আর এই সার্ভিস প্রোভাইডারের নাম করে কখনো কখনো কোনো না কোনো ব্যক্তি আমাদের জীবনে তার নিজের সার্থে বা প্রয়োজনে মারাত্তক একটা হুমকী হয়ে দাড়াতে পারে ব্ল্যাক মেইলিং এর মতো কোনো জালে ফাসিয়ে দিয়ে।

তাই, যতোটুকু পারা যায়, আমাদের উচিত আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য কোথাও লিক না করতে দেয়া। সেটা ফিড ব্যাক ফর্মই হোক কিংবা অন্য কিছু। পরিবারের নিরাপত্তার চেয়ে বড় আর কোনো নিরাপত্তা নাই। পরিবারের নিরাপত্তা মানেই সমষ্টিগতভাবে সার্বিক দেশের নিরাপত্তা।

১৭/০৩/২০২১- স্ত্রী-পর্ব ২

Categories

আগের বার একটা পোষ্টে বলেছিলাম যে, আমার মতো সব ভাগ্যবান স্বামীদের জন্য আমার কোনো উপদেশ নাই কিন্তু যাহারা আমার মতো এইরুপ সুপ্রশন্ন ভাগ্য লইয়া জীবন সুখে অতিবাহিত করিতে চাহেন কিন্তু এখনো সেই সোনার হরিন হাতে পাইতেছেন না বা হন্যে হইয়া খুজিতেছেন, তাহাদের জন্য আমার কিছু উপদেশ আছে বৈ কি।

যেমন ধরুন, আমি আমার স্ত্রীর কাছে আজ থেকে ২০ বছর আগে ১০ হাজার টাকা কোনো কারনে লোন নিয়েছিলেম। এই ২০ বছরে কতবার এটা শোধ করেছি সেটা আর মনে রাখার কোনোই দরকার নাই। তার পাওনা টাকা আপনি চাইবেন কেনো? তিনি কি আপনার পর মানুষ? আপন জনের বিশেষ করে স্ত্রীর কাছে পাওনা টাকা সব সময় অপরিশোধিতই থাকে। মাঝে মাঝে আবার ঐ টাকা থেকে আমার স্ত্রীও লোন হিসাবে এডভান্স নেয়, কিন্তু সেটা সব সময় অফেরতযোগ্য। যদি আপনি সুখী সমৃদ্ধ থাকতে চান, লোন নেয়াতা মনে রাখবেন, লোন পরিশোধ কইলেন সেটা মনে রাখার কোনোই দরকার নাই। আর যদি এইটা নিয়ে বারবার মনে করাইয়া দেন, তাহলে আপনার রাতের পরোটাতে একটু হলেও পোড়া গন্ধ পাইবেন। পোড়া পরাটা খাইতে গিয়া আবার কৈফিয়ত চাইয়েন না, কারন এটা চুলার দোষ মনে কইরা স্ত্রীর সহিত সহমর্মিতা প্রদর্সন করা ভালো স্বামীর গুনাবলীর মধ্যে একটা।

আর আপনি যদি মাসের সাংসারিক খরচের সব টেকা একবারে স্ত্রীর কাছে দিয়া নিজেরে সংসারের খরচের দায়িত্ত হইতে খালাস মনে করেন, আপনি নির্ঘাত ভাবিয়া নিতে পারেন, আপনার বিয়ের বয়স হয় নাই। সব সময় মানি ব্যাগে পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যাশ টাকা মজুত রাখিবেন। স্ত্রীর সংসারের খরচ সব সময় তার হাতে থাকে না। হিসাব যদি নিতে চান, তাহলে অন্তত দুই মাসের এডভান্স টাকা দিয়া আশেপাশে আরেকটা ব্যাচলর মেসে একটা সিট বুক করিয়া রাখিবেন। যদি কোনো কারনে ঘরের দরজা বন্ধ হইয়া যায়, তাহলে অন্তত ব্যাচেলর মেসে আপনার জায়গা না হইলেও হইতে পারে। অন্তত কাটাইতে পারিবেন। যদি এহেনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, আগে থেকেই বাসাটা স্ত্রীকে চিনাইয়া রাখিয়েন। তা না হইলে পুলিশ আবার স্ত্রীদের চোখের পানিতে সামীদেরকে ধরার জন্য একটু বেশী আগ্রহ থাকে।   

১৭/০৩/২০২১- স্ত্রী-পর্ব ১

Categories

আমার স্ত্রীর এই কথাটা বড়ই সত্য যে, তাহার মতো বউ আমার কপালে জুটিয়াছিলো বলিয়া এতোদিন সংসার টিকিয়া আছে। অন্য কোনো স্ত্রী হইলে আমার কপালে কত যে বিরম্বনা বাধিত তাহার কোনো ফর্দ থাকিতো না। আমি অনেক হিসাব করিয়া দেখিয়াছি, ঠিকই তো বলিয়াছে। তাহার কথা একেবারে ভগমানের অস্তিত্তের মতো সত্য। কারন, আমি কোটি কোটি টাকার ব্যবসায়ীক হিসাব অনায়াসে করিতে পারিলেও সংসারের চাল, ডালের হিসাব, কিংবা কোন শব্জিতে কতটুকু তেল ঢালিলে কি পরিমান সাধ হইবে, কিংবা ডিমটা কতোক্ষন গরম পানিতে সিদ্ধ করিলে উহার খোষা ছাড়াইতে আর বেগ পাইতে হইবে না, এইসব ব্যাপারে আমার থেকে নাদান মনে হয় আর একটাও এই দুনিয়ায় আল্লাহ সৃষ্টি করিয়াছেন কিনা আমার জানা নাই। আমি স্রিষ্টিকর্তার কাছে অতিশয় বিনয়ের সাথে কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করি যে, তাহার মতো একজন রুপবতী, গুনবতী এবং মাতৃসুলভ একজন স্ত্রী দান করিয়াছেন। হে ঈশ্বর, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

মাতৃসুলভ কেন বলিলাম?

এই বয়সে আসিয়া আমরা প্রায় ভাইবোনের মতোই যেনো হইয়া গিয়াছি। আবার তিনি যখন আমাকে কোনো কিছু আদেশ করেন কিংবা কোনো ব্যাপারে জ্ঞান দান করা শুরু করেন, তিনি সেই বিষয় সম্পর্কে এমন করিয়া আমাকে বুঝাইয়া দেন, যেনো তিনি মায়ের মতোই ৭ বছরের কোনো বালককে কিছু বুঝাইতেছেন অথবা ক্লাসে কোনো নির্বোধ ছাত্রকে কঠিন কোনো থিউরী পড়াইতেছেন। কাগজে আকিয়া, হাত নাড়াইয়া, তথ্যবহুল উদাহরনের মাধ্যমে তিনি আমাকে ব্যাপারটা যুতসই জ্ঞান দিয়া একেবারেই সহজ করিয়া আমার ঘিলুতে প্রবেশ করাইয়া দেন। তাহার পরেও যদি তাহার বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকিয়া যায় যে, আমার মতো একটা নির্বোধ মানুষ পুরু ব্যাপারটা বুঝিয়াছে কিনা কে জানে? তাই আবার ফোনে কিংবা ডিজিটাল মেসেজেও পুনরাবৃত্তি করেন। আমি সতর্ক মানুষ, তাই একবার বুঝিয়া থাকিলেও যেনো কিছুটা বুঝিবার বাকী ছিলো এই ভান করিয়া অতি মনোযোগের সহিত কানের কাছে ফোনটা ধরিয়া বোবা প্রানীর মতো পুলকিত ভাব দেখাইয়া, “এইবার ব্যাপারটা বুঝিয়াছি” বলিয়া উচ্ছাসিত আবেগ প্রকাশ করি। তিনি খুশী হন। আমিও মনে মনে হাসি যে, ব্যাপারটা বুঝিয়াছি।

আমার মতো সব ভাগ্যবান স্বামীদের জন্য আমার কোনো উপদেশ নাই কিন্তু যাহারা আমার মতো এইরুপ সুপ্রশন্ন ভাগ্য লইয়া জীবন সুখে অতিবাহিত করিতে চাহেন কিন্তু এখনো সেই সোনার হরিন হাতে পাইতেছেন না বা হন্যে হইয়া খুজিতেছেন, তাহাদের জন্য আমার কিছু উপদেশ আছে বৈ কি।

যেমন ধরুন, তিনি আপনার মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করতে চান। কোনো দ্বিধা করিতে পারিবেন না। হাসিমুখে দিয়ে দিন। আর তিনি আপনার মোবাইল ফোন ব্যবহার করিবেন না কেনো? অবশ্যই করিবেন। তাহার বন্ধু বান্ধবীদের সাথে অনেক জরুরী খোশগল্প করার জন্য তাহার মোবাইলের টাকা খরচ তিনি কেনো করিবেন? তিনি তো আপ্নাকেই ফোনে এতো উপদেশ, বুদ্ধি, পরামর্শ দিয়া থাকেন, তাহাতেই তো তাহার ফোনের ব্যলান্স অর্ধেক হইয়া যায়। আপনার নাদানত্তের কারনেই তাহাকে অনেক মোবাইল বিল ছাড় দিতে হয়। এখন তিনি তাহার বন্ধু বান্ধবীর সাথে এই অল্প কয়েক ঘন্টা কথা বলিয়া মনের ভাবটা পুরন করিবেন, তাহার জন্য তাহার মোবাইলের টাকা খরচ করিবেন কেনো? ইহা বড়ই অন্যায়। ফোনটা তাহার হাতে তুলিয়া দেন। রাগ করিবেন না। আপনার জরুরী ব্যবসায়ীক কথাবার্তার চেয়ে তাহার মন ভালো রাখাটা অতীব আবশ্যক।

যদি রাগ হইয়া থাকে আপনার, ভুলেও উহা তাহার সামনে প্রকাশ করিবেন না। তাহা হইলে যেটুক আরাম করিয়া নাক ডাকিয়া ঘুমাইতে পারিতেন, সেইটুকুও আর আপনার কপালে জুটিবে না। এমনো হইতে পারে, আপনার উপর অসন্তুষ্ঠ হইয়া মনের আবেগী কষ্টে তিনি তাহার ফেসবুক আইডিতে এমন কিছু মন্তব্য করিয়া ফেলিতে পারে, যাহার কারনে তাহার অন্যান্য ফেসবুক বন্ধু বান্ধব্দের অতিরিক্ত ভালোবাসায় আর উদারতার কমেন্টে আপনার জীবন যতোটুকু স্থিত হইয়াছিলো, ইহা আবার অস্থিতিশীল হইয়া আরব বসন্তের মতো আপনার সিংহাসন তো কাপিবেই, আপনার বুকের ভিতরের ছোত হৃদপিণ্ডটাও কাপিয়া উঠিতে পারে। কারন তাহাদের “কিরে কি হইলো আবার?”, “তোর মন খারাপ? আরে দুনিয়াটাই এই রকমেরই, কেউ বুঝতে চায় না রে বইন”, কিংবা এমনো কমেন্ট পাইতে পারেন, “উফ আপু, আপনার কষ্টে আমারো বুক ফাটিয়া যাইতেছে, সব পুরুষ মানুষ এক রকমের” অথবা আরো উচ্ছসিত হইয়া কোনো একসময় বাসে একত্রে যাতায়ত করিতে গিয়া কয়েক মিনিটের পরিচয়ী বান্ধবী এমন কমেন্টও করিতে পারেন যে, “আরে আপু, বেটারে ছেড়ে দিয়ে শিক্ষা দেন, দেখবেন, কত কাঠালে কত বিচি” ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই রাগ দমাইয়া রাখেন। তাহার পরেও যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করিতে না পারার কারনে রাগ করিয়াই থাকেন, তাহা হইলে অতিসত্তর রাগ কমিলে তাহাকে ভাই বোনের মতো আদর করিয়া ইহা বলুন, “আরে, মাথা ঠিক ছিলো না, দোষ তো তোমার না, দোষ ঐ পল্টু মিয়ার। সেইই তো আমার মাথাটা অফিসের সময় বিগড়াইয়া দিয়াছিলো, আর সেই কারনেই তো আমার রাগ হইয়াছিলো”। এই সময়ে কিছু কঠিন কথা শুনিবার জন্য মন প্রস্তুত রাখিবেন। যেমন ধরুন, “তোমার এই সংসারে আইস্যা আমার জীবন তেজ পাতা হইয়া গেলো, কি পাইলাম এই জীবনে হায় ভগবান?, কিংবা আমাত্রে সোজা পাইয়া যা খুশী কইরা গেলা, অন্য কেউ হইলে দেখতা কবে তোমারে ছাইরা যাইতো গা? ইত্যাদি ইত্যাদি। এই পর্যন্ত হইলে আপনি নিছক অতশয় ভাগ্যবান। আপনার চৌদ্দ গোষ্টির কেউ বাচিয়া থাকুক আর নাইবা থাকুক, তাহারা এই সময়ে জীবিত হইয়া আপনার মতো অকর্মন্য লোকের কারনে তাহারাও কিছু কঠিন মধুর কথা শুনিতেও পারেন। ভাগ্যিস, তাহারা এখন বধির এবং পরকালে থাকায় কোনো শক্তি খাটাইতে পারেন না, তাহা না হইলে, এই সময়ে আপনার স্ত্রীর কথায় আপনার কান ঝালাপালা না শুধু, সেইসব চৌদ্দ গোষ্ঠির এক থাপড়ে আপ্নিও বধির হইবার সম্ভাবনা থাকিতো।

(চলবে)

১২/০৩/২০২১-ওরা চলে যাবার পর

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

মার্চ 

১২ 

বাচ্চারা যখন ছোট থাকে, তখন ওদেরকে কখনো হাতছাড়া করবো এটা মাথাতেই আসে নাই, কারো আসেও না। তখন সময়টা এক রকমের। হোক সেটা ছেলে বা মেয়ে।

যখন ওরা মাত্র বেবি, ওরা যখন কথা বলাও শুরু করে নাই, কিন্তু ঝড়ের গতিতে হাত পা নাড়তো, খুব মজা লাগতো দেখে, ওটাই ছিলো বেবিদের ভাষা। তখন তো মনে হতো, আহা, কি মিষ্টি বাচ্চারা। কথা নাই অথচ হাত পা নেড়েই যেনো সব কথা বলে। এই ভাষাতেই ওরা জানান দিতো, ওদের হাসি, আহলাদ, কিংবা কষ্টের ইংগিত।

ওরা যখন হাটতে শিখলো, তখন তো ওরা যেনো আরো সাধিন। যেখানে খুসী হাটা ধরে, যেনো সারা প্রিথিবী ওদের জন্য। ওরা হয়তো জানেই না কোনটা ওদের জন্য বিপদ আর কোনটা ওদের জন্য ফ্রেন্ডলী। আর এই পার্থক্যটা আমরা পেরেন্টসরা বুঝি বলে সারাক্ষন আমরা আমাদের বাচ্চাদের আগলে রাখি, ধমক দেই, শাসন করি।

ওরা অনেক সময় আমাদের এই শাসনের ভাষা হয়তো বুঝতে পারে না বলে মনের আবেগে চোখের পানি ফেলে, রাগ করে না খেয়ে থাকে, অভিমান করে কথা বলা বন্ধ করে, ডাকলেও শুনে না, আরো কতকি?

টাইম মতো ওরা না ঘুমালে আমরা ওদেরকে হয়তো বকা দেই, গোসল ঠিক মতো করেছে কিনা, ঠিক সময়ে খাবারটা খেলো কিনা, সব বিষয়েই আমরা সর্বদা সজাগ থাকি। জোর করে করাই আর ওরা হৈচৈ করে। অনেক সময় পুরু বাড়িটা হই চই এর মধ্যে রাখে, সরগোল আর চেচামেচিতে বাড়িটায় যেনো একটা শব্দদূশনে পরিনত হয়, চারিদিকে ছেড়া কাগজ, ঘরে বইপত্র অগোছালো করে দিশেহারা করে রাখতো। ওরা মাঝে মাঝে কত আবদার করতো, অনেক আবদার নিছক শখে কিংবা অনেক আবদার না বুঝেই। আর সেটাই হয়তো ওদের সারা রাতের খুসী অথবা কষ্টের কারনে ঘুম নষ্ট হতো। যদি পেতো, সারাটা রাত না ঘুমে আবার যদি না পেতো তাতেও সারা রাত না ঘুমে কাটিয়ে দিতো অভিমান করে।

এই বাচ্চারাই যখন আর ধীরে ধীরে সমাজের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ঢোকে যায়, ঘর থেকে বেরিয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, আমরা এই ভাগ্যবান পিতামাতা অভাগার মতো একা হয়ে পড়ি। মন খারাপ হয়, স্মৃতি পাহাড়ের মতো স্তুপ হয়ে যায়। তখন, এই সব আদুরে বাচ্চাদের ফেলে যাওয়া খেলনা, পরিত্যক্ত হাতের লেখার খাতা, কিংবা তার ব্যবহৃত কোনো পোষাক দেখলেই আমাদের বুকে হটাত করে ধক করে উঠে ব্যথায়। তখন তাদের অতীতের পদচারনা আমাদের কানে ঝুমকোর মতো বাজে, ওদের অতীতের একগুয়েমী রাগ কিংবা আব্দারের কথা কিংবা অযথা রাগ অভিমানের স্মৃতির কথা মনে করে আমার চোখের কোন ভিজে উঠে। মনে হয় মাঝে মাঝে, আহা, ঘরটা একসময় কত ভর্তি ছিলো, আজ একেবারেই শুন্য। ঘরকে নোংরা করার জন্য কত বকা দিয়েছি, বাথরুমের সেন্ডেল পড়ে সারা ঘর ঘুরে বেড়ানোর জন্য কত বকা দিয়েছি। অযথা রাগ অভিমান করে খাবার না খাওয়ার জন্য রাগ করেছি, শাসন করেছি, অথচ আজ, আমার বাড়ির প্রতিটি ঘর শুন্য, একদম পরিপাটি যা সব সময় রাখতে চেয়েছিলাম ওরা যখন ছিলো। আজ আর কেউ বাথ রুমের সেন্ডেল পড়ে ঘুরে না, আজ আর কেউ আমার কাছে অনলাইনে শপিং করার জন্য একশত টাকা আবদার করে না, কিংবা হটাত করে পিজার অফার থাকলেও আর অফারের জন্য বায়না ধরে না। সব যেনো নীরব। আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম যখন ওরা সাথে ছিলো? আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম যেনো ঘরে সবাই শান্ত হয়ে থাকে? আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম যেনো ঘর নোংরা না করে সারাক্ষন পরিপাটি করে রাখুক? অথচ আজ ঠিক তেমনটাই তো আছে। কেউ ঘরে নাই, কেউ ঘর নোংরা করে না, কেউ হৈচৈ করে না। কিন্তু তারপরেও কেনো মনে শান্তি নাই? কেনো মনে হয়, ঘরটা নয়, অন্তরটা শুন্য? যেখানেই তাকাই সব ঠিক আছে, শুধু ঘরটাই খালী।

আজ কেনো জানি বারবার মনে হয়, ওরা আবার ফিরে আসুক, ওরা আবার আমার সাথে আবার ঝগড়া করুক, ওরা আবার আমার কাছে অহেতুক বায়না ধরুক, আমি আর কখনো ওদের বকা দেবো না, সব বায়না আমি মেনে নেবো। খুব মনে পড়ে আজ যে, যখন অফিস থেকে এসেই মেয়ের রুম খুলে বলতাম, কিরে মা, কি করিস? হয়তো তখন মেয়ে রুমেও নেই, হয়তো অন্যঘরে আছে বা রান্নাঘরে কিংবা বাথরুমে কিন্তু জানতাম বাসাতেই আছে। আজ যখন অফিস থেকে বাসায় এসে মেয়ের রুমে যাই, মুখ দিয়ে বলতে চাই, কি রে মা কোথায় তুই? কিন্তু ভিতর থেকে অন্তরের কষ্টে আর কথাটাই বের হয় না। জানি, মেয়েটা আর বাসায় নাই। ওর টেবিল, টেবিলের উপর সেই ঘড়িটা, ওর আলমারী, ওর চেয়ার, সবই তো আছে। কিন্তু মেয়েটাই নাই। প্রতিটা টেবিল, বই, খাতা, আল্মারী, সেই পুরানো ঘড়ি কিংবা বিছানার চাদরটায় হাত দিয়ে আমি অনুভব করি আমার সন্তানদের শরীরের সেই চেনা গন্ধ। খুব করে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে সব কিছু।

ভালোবাসি।

সব সময়।

সর্বদা।

চোখের পানির ফোয়ারা দিয়ে যে ভালোবাসা বেরিয়ে আসে, সেখানে রাগটাও হয়তো ছিলো আমার ভালোবাসার আরেক রুপ। হয়তো বকাটাও ছিলো আমার মায়ার আরেক রুপ। দম বন্ধ হয়ে আসে যেনো তোমাদের ছাড়া।

এখন প্রায়ই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে আবার বাবার কথা। হয়তো তারাও একদিন আমাকে খুব মিস করেছে, আমি বুঝি নাই। আর আজ আমি তাদেরকে মিস করি কিন্তু ওরা কেউ নেই এই মায়াবী পৃথিবীতে। আজ হয়তো আমিও আমার সন্তানদের মিস করছি। হয়তো কোন একদিন ওরাও আমাকে অনেক মিস করবে। সেদিন হয়তো পৃথিবীতে আরেকটা নতুন ক্যালেন্ডারের “সময়” চলছে।

“সময়” কারোই বন্ধু নয়, অথচ সে সবার সাথে আছে। কিন্তু সময়ের স্মৃতি মানুষকে সব সময় নষ্টালজিক করে রাখে। যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। আমার সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমাদের সাথে আছি আর থাকবো।

উতসর্গঃ

(কনিকার ইউএমবিসিতে (ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি) ভর্তির চুড়ান্তে আমার কিছুটা নষ্টালজিকতা)

০৮/০৩/২০২১-টাকা

Categories

টাকা যদি কাছে থাকে, তখন জীবনটা খুব সহজ হয়। মানুস নিজের সব সপ্ন পুরন করতে পারে। সেটা যেমন করেই হোক, সব সুখ আদায় করে নেয়। টাকা যদি কাছে থাকে তাহলে দুক্ষ অনেক পিছনে পড়ে থাকে। আর আমরা অনেক এগিয়ে যেতে পারি। তাই শুধু টাকা থাকা দরকার।  টাকা সবার চাই। যতো বেশী টাকা, তাকে পাওয়ার চাহিদাও ততো বেশী। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি যে, টাকা গাছে হয় না। কিন্তু অনেকেই এই সপ্ন দেখেন যে, যদি টাকা গাছে হতো!! আর সেই গাছটা নিজের হতো। টাকা আসে অনেক পথে, চুরি, লোপাট, ডাকাতি, ক্ষেত বা চাষবাস অথবা ভাগ্যবসে কোনো লটারী বা বিজনেস।

যে বিজনেজ আপনি বুঝবেন না, তাতে ইনভেষ্ট করবেন না। কিন্তু অপ্রিয় সত্য হলো যে, মানুষ প্রতিদিনই শিকার হয় একটি সপ্নের যে, টাকা গাছে ফলতে পারে। একজন বুদ্ধিমান ভালো মানুষও এই সপ্নের ছায়ায় অন্ধ, কালা, বোবা হয়ে যান। কোনো প্রশ্নই করতে পারেন না। আর ফ্রড নিজের চোখের সামনে হচ্ছে দেখেও তার ইংগিত শুনতে পান না। ফ্রড তার চালাকী খুব চালাকীর সাথেই করে। সে তার জাল অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়। তারপর তার পরিকল্পনা মানুষের কাছে এতো মিষ্টি করে বিক্রি করে যে, তারা জানতেই পারে না যে তাদের ফাসানো হচ্ছে। পায়ে পায়ে বেনিফিট। যখন কোনো মানুষ এটা বলে যে, সে এই স্কীমে এতো টাকা পেয়েছে, এতো বেনিফিট পেয়েছে, তখন অন্যরা ভাবে যে, এই স্কীমে নিশ্চয়ই কোনো সোনার খনি আছে। যদি সে পেয়ে থাকে তাহলে আমরাও পাবো। প্রতারকরা সেইসব মানুষের সুযোগ নিয়ে থাকে যারা তাদের মিথ্যা স্কীমকে সত্য বলে ধরে নেয়। প্রায়শই শিক্ষাদীক্ষা করা মানুষেরা এই ধরনের প্রতারনার শিকার হয়ে যান। কারন টাকার গাছ হবে, এই সপ্নটা সবাই দেখে। এই যে ‘যুবক’, ‘ইউনিপেটু’, কিংবা ডেস্টিনি ইত্যাদি এই ফ্রড কোম্পানীগুলির মূলনীতি সাধারনত একই রকম ছিলো। মুলনীতিটা যেনো এরুপ ছিলো- ইনভেষ্টরদের আসল টাকার প্রথম সুদের কিস্তি দিয়ে দাও, নতুন সদস্য আনার জন্য বোনাস দাও, আর তারপর ইনভেষ্টদের বিনিয়োগের বাকী টাকা লুট করে নাও। যেটা হয় যে, ২য় রাউন্ডের ইনভেষ্টদের ১ম জন অনেক টাকা কামিয়েছে, আর সেই লোভে পড়ে সেও অনেক টাকা ইনভেষ্ট করে। পুরু দেশ থেকে যখন কোটি কোটি টাকা কোম্পানীগুলির কাছে চলে আসে, তখন এই ফ্রড কোম্পানীগুলি এক রাতের মধ্যে সমস্ত টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ভুয়া কোম্পানী, জাল ঠিকানা, ফ্রড ফ্রন্ট অফিস, আর দেশের বাইরে থেকে অপারেশন হলো এইসব কোম্পানির আসল মুলমন্ত্র। ফিনান্সিয়াল করাপ্সন জব্দ করা খুবই কঠিন কাজ, আর সবচেয়ে বেশী কঠিন হয় ইনভেষ্টদের টাকা রিকভার করা।

সাধারন মানুষের কাছে টাকা আয় করা রাস্তা একটাই আছে, আর সেটা হলো সততার সাথে পরিশ্রমের রাস্তা।

০৮/০৩/২০২১-হীরা  

Categories

 হীরা একটি খুবই মুল্যবান জিনিষ। আর এর ব্যবসা! রহস্যে আবৃত চুপিসারে হয়ে চলা কোটি কোটি টাকার বিজনেস। এই হীরে এমন এক জিনিষের নাম যা সৌভাগ্য আর দূর্ভাগ্য দুটুই আনতে পারে। নিখুত নিরাপত্তা আর কঠিন শততাই এই হীরে ব্যবসার প্রধান স্তম্ভ। কে কখন বেইমানী করবে তার কোনো ভরষা নাই। এসব ব্যবসাতেই সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক অবিশ্বাসের কাজটা করে থাকে। অথচ এই ব্যবসাটা শুধুমাত্র বিশ্বাস আর কাজের পারদর্শিতার উপরই চলে। মজার ব্যাপার হলো, আনপলিসড হীরাও হীরা। তার ও একটা মুল্য আছে যা সোনার থেকেও দামী। আর যদি সেই হীরা পলিসড করা হয়, তাহলে সেটার চাহিদা হয় অনেকগুন বেশী। হীরে চিনতে মানুষের ভুল হতে পারে। কিন্তু খারাপ হীরে, অচল পয়সা, আর ধুর্তলোক একদিন না একদিন ওদের সত্যতা বেরিয়ে আসেই। আর ধরা পড়ে যায়। একটা সময় আসে, যখন এই নকল হীরা, অচল পয়সা কিংবা ধুর্তমানুষগুলি কানাগলিতেই হারিয়ে যায়। ওদের ব্যাপারে কেউ আর মনে রাখতে চায় না। এমনকি নিজেদের লোকেরাও না। যাই হোক, যাকে এই ব্যবসায় কাজ দেয়া হয় তার উপর কনফিডেন্স থাকাটা নির্ভর করে যিনি কাজটা নেন তার চরিত্র আর স্বভাবের উপর। আগে থেকে জানলে কেউ আর ঠকবাজী করতে পারে না, অথবা একবার যদি কোনো কারনে কারো উপরে এমন সন্দেহের উদ্রেক হয় যে, ন্যনুতম কোনো আচ পাওয়া যায় যেখানে বিশ্বাস নিয়ে খেলা হয়, তখন দ্বিতীয়বার আর ভরষা করা কখনোই সম্ভব না কারন এখানে বিশ্বাসের মুল্য এতো বেশী যা কল্পনা করা যায় না। দ্বিতীয়বার ঠকার মুল্য এতো বেশি যে, হয় এটা জীবনকে শেষ করে দেয়, নতুবা জীবনকে পরিশুদ্ধ করে তোলে। এ জন্য যতো ধরনের যাচাই বাছাই দরকার, কমিটমেন্ট করার আগেই সেটা করতে হয়। যদি সেই যাচাই বাছাইয়ের মধ্যে কোনো গাফিলতি থাকে তখন যেদিন কোনো ঘটনা নিজের সাথে হবে সেদিন আফসোস ছাড়া আর কোনো কিছুই অবশিষ্ঠ থাকে না। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হলো, এই ঠকবাজগুলি বোকা। এদের ব্যাপারে অনেকে অনেক বড় বড় সুযোগের সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা করলেও ওরা শুধু বর্তমানটা নিয়ে বাচে। আর ভবিষ্যত নিয়ে অলীক কল্পনা করে থাকে যে কল্পনা শুধুই মরিচিকা। কোনো কাজে আসে না সেটা। তাদের উন্নতি করার ইচ্ছা থাকে, করতেও পারতো, কিন্তু নিজেদের বোকামীর জন্য ওরা সেই উন্নতির রেল লাইনটায় এমন একটা দেয়াল তুলে যেখানে নিজেরাই ফেসে যায়।

মানুষের চরিত্র এই হীরের থেকেও অধিক মুল্যবান। যদি হীরে সম্পর্কেই আমাদের নীতি এমন হয়, তাহলে মানুষের চরিত্র, সততা আর একনিষ্ঠতার উপর কি নীতি হওয়া উচিত? অথচ আমরা প্রতিনিয়ত এই আমরা আমাদের মুল্যবোধ, চরিত্র, সততা এবং একনিষ্ঠতা নিয়ে মামুলী খেলা খেলতে থাকি। একজন মহিলার কাছে এই সততা যুগ যুগান্তরের, আর একজন পুরুষের কাছে এই সততা জীবনে সার্থকতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছোবার একমাত্র উপায়। যে যতো বেশী সফল, সে ততো বেশী মুল্যবান।

০২/০৩/২০২১-ব্লাকমেইল-রিভার্স ব্লাকমেইল

সায়েন্সেরই হোক আর কমার্শিয়াল সাব্জেক্টেই হোক, বিজ্ঞবান হোক আর যতো চালাকিই হোক, ব্ল্যাক মেইলের মতো কোনো বিষয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা কখনোই কারো উচিত না। কারন এই সব এক্সপেরিমেন্ট সব সময় বাজে ভাবেই ফেল করে। আর যখন ফেইল করে, তখন মানুষ পিছলা পথের মতো অনেক দূর পিছিয়ে যায়। একবার পিছলে গেলে আবার উঠে দাড়াতে পারবে, কেউ এটা সবসময় ভাবা উচিত নয়। হয়তো সেই একবার পিছলে যাওয়ার কারনেই সারাটা জীবন নষ্ট আর ধ্বংসই হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার হয়তো আর কোনো সুযোগ আসেই না।

বেশীরভাগ মানুষ এই সব এক্সপেরিমেন্ট কিংবা অন্য অর্থে যদি বলি, “প্রতিশোধ” কোনো না কোনো অতীতের ঘটনা থেকেই প্রভাবিত হয়। আসলে, পাষ্ট পাষ্টই হয়। অতীত অতীতেই হারিয়ে যায়। ভালো থাকার জন্য আমাদের সবার আজকের দিনের তথা আগামী দিনের কথাই ভাবা উচিত। অতীতকে ভোলা হয়তো কঠিন হতে পারে কিন্তু অসম্ভব না। কিন্তু কেউ যদি সেই অতীত কোনো অপরাধ আর দুক্ষবোধকে জাগিয়ে হিংসার রুপ দেয়, তাকে থামিয়ে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, তা না হলে সেই অতীত আজকের দিনের শান্তি আর ভবিষ্যত দিনের আশার মৃত্যু হতে পারে। কেউ যদি মনে করে যে, অতীতের কোনো ঘটনা কারো মাথায় বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে, ব্যক্তিত্তের উপর আঘাত হেনেছে, তাহলে এটা বিপদের আভাষ দেয়। অতীতের ভার অপশনাল,  বইতে গেলে এটা আসলে ভারী, কিন্তু যদি মন থেকে ঐ বোঝা সরিয়ে ফেলা যায়, তা তুলোর থেকেও হালকা, চট করে হারিয়ে যায়।

আমাদের আজকের দিন তথা ভবিষ্যতের সুখের কথা মাথায় রেখে সব সময় সতর্ক থেকে এমন কিছু করতে হবে যাতে এটা মনে না হয় বা না হয়ে যায় যে, এক জনের শিকল থেকে বেরিয়ে গিয়ে শান্তির আশায় আরেকজনের কাছে এটা উনুন মনে হয়। যদি এটা হয়ে যায়, তখন মনে হয় পুল থেকে বেরিয়ে গিয়ে খাদে পরার মতো অবস্থা।  ব্লাকমেইল কিংবা রিভার্স ব্ল্যাকমেইল সব কিছু থেকে দূরে থাকা খুব জরুরী। একটা জিনিষ বারবার মনে করতে থাকুন যে, হাজার হাজার সম্পর্ক ভেংগে যায়, তারপরেও আবার মানুষ নতুন সম্পর্ক করে। আর এই নতুন কোনো সম্পর্ক হয়তো আগামী দিন গুলিকে আসলেই সুন্দর করে তুলতে পারে। 

২৮/০২/২০২১-ত্রিভুজের চতুর্থ কোন

Categories

মানুষ তার জীবনকে সুন্দর আর শান্তিময় করার জন্যই সমাজ সৃষ্টি করেছিলো যা অন্য বেশীরভাগ বুদ্ধি সম্পন্ন প্রানীরা করে না। আর সেই সমাজ চালানোর জন্য কিছু নিয়ম ও তৈরী করা হয়। এই নিয়ম কানুন এইটা ভেবেই করা হয়েছিলো যে, মানুষ একে অপরের সাথে মিলে মিশে সুন্দরভাবে জীবন কাটাতে পারে। একে অপরের সুখ দুঃখের ব্যাপারে এগিয়ে আসে। তাই, সব সমাজই অনেক শর্ত আর নীতির শিকল দিয়ে মানুষের কল্যানের জন্য অনেক প্রকারের সম্পর্কের ভিত তৈরী করে থাকে। জাত, ধর্ম আর বর্নের স্তর গুলি ঠিক রেখেও কিছু কিছু সমাজ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে হরেক রকমের এই সম্পর্কের বেড়াজালের শর্ত জূড়ে দিয়েছিলো যাতে সামাজিক নিয়মের মধ্যে সবাই যার যার গন্ডির মধ্যে সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু কালের বিবর্তনে ধীরে ধীরে এই সম্পর্কগুলি কিছু কিছু প্রতাপশালী শাসক, ব্যক্তি আর ধর্মজাযকদের প্ররোচনায় তাদের আরাম আয়েশের জন্য, তাদের খায়েস মেটানোর জন্য তারা সুক্ষ থেকে সুক্ষতমভাবে আইন কানুনের কিছু বন্ধন শিথিল করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে গিয়ে প্রথাগুলি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, প্রথা থেকে যায় ঠিকই, রীতি রয়ে যায় ঠিকই কিন্তু যে মানুষগুলির জন্য সম্পর্কের এই ভীত তৈরী করা হয়েছিলো, তারাই বদলে যায়, আর সেই আইনী আর শর্তাবতাবলীর ফাক দিয়ে অনেক সম্পর্কের পরিবর্তিত আদলে মানুষের কল্যান তো দূরে থাকুক, তা কেড়ে নেয় মানুষের সুখ আর জীবনও।

একটা সময় আসে যখন শুধু প্রথার নামে অনেক অশ্লীল আর বেপরোয়া কাজের বৈধতা পায়। এর প্রেক্ষাপটে উদাহরণসরুপ দেখা যায় যেমন বিয়ের প্রথা। বিয়ে নামক প্রথা থেকে মানুষ সরে আসতে আসতে এটা এখন এমন হয়ে গেছে যে, বিয়ের বদলে সহঅবস্থান, সহঅবস্থান থেকে লিভিং টুগেদার, পার্ট টাইম স্টেইং টুগেদার এর মতো প্রথা হয়ে গেছে। এ সবই আসলে টাকা আর লোভের কারনেই হয়। কিন্তু মানুষ সবসময় ভুলে যায় যে, টাকা আর লোভ কোনো সম্পর্ককেরই শক্ত ভীত তৈরী করে না যতোক্ষন এটার মধ্যে সমঝোতা আর শ্রদ্ধাবোধ না থাকে। কিছু মানুষ সম্পর্ক তৈরী করার আগে সবসময় পরিকল্পনা করতে থাকে যে, ভবিষ্যতে তৈরী হওয়া সম্পর্ক থেকে কিভাবে ফায়দা লুটা যায়। এই যে লুকানো একতা লোভ বা বিশ্বাসঘাতকতা, এর আড়ালে যে এফেয়ার্সের জন্ম, কারো কাছে এটা ভালোবাসা আবার কারো কাছে এটা কামনা। আর কারো কাছে এটা একটা চুক্তি। সম্পর্কের দাম যখন টাকার মুল্যে বিচার করা হয়, সেটা একটা ইংগিত যে, এফেয়ার্সের এই গাড়িটা ব্ল্যাক মেইলের লাইনে চলে যাচ্ছে। ভালোবাসার নেশায় কেউ চাদতারা এনে দেয়ার প্রতিশ্রতি দিতে পারে বটে কিন্তু সেই ভালোবাসা বা এফেয়ার্স চাদতারা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা তা খতিয়ে দেখাটা সব পক্ষেরই উচিত। কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল আমরা অনেক সময় বুঝেও না বুঝার ভান করি। আবার অনেক সময় বুঝতে চাইলেও বুঝি না। কিন্তু ভুলটা ভুলই। সময়ের স্রোতে এই ভুলটা আমাদেরকে প্রমান করে দেয় যে, আমরা ভুল ছিলাম, এবং বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক আমরা ভুল কাজটাকেই পছন্দ করেছি এবং সেটাই করেছি সম্পর্কের নামের অযুহাতে। অনেক সময় আমরা প্রোফেশনাল আর পার্সোনাল দুটুর সীমাই লংঘন করে ফেলি যখন এই ভুলের মধ্যে থাকি। যখন আমরা এই ভুলটা বুঝতে পারি, তখন অনেক দেরী হয়ে যায় আর কিছু বাকী থাকে না। বাকী থাকে শুধু ভুলের জন্য মাশুলটা। কারন তখন একটা ক্রাইমের সৃষ্টি হয়ে গেছে। ক্রাইম জগতে প্রত্যেক জিনিষের সাথে অন্য জিনিষের লেনদেন থাকে। সত্যিটাকে কখনোই লুকিয়ে রাখা যায় না। সত্য জিনিষটা একটা গন্ধ্যের মতো, এটা বাতাসে বের হয়ই।

এর বাইরে আরো অনেক প্রকারের সম্পর্ক থাকে। কিছু সম্পর্ক ঈশ্বর তৈরী করেন যা রক্তের সম্পর্কের সাথে বাধা থাকে, কিছু সম্পর্ক এই যে একটু আগে বলেছি, সমাজ তৈরী করে যা সমাজের নিয়মের আইন কানুনের শিকলে বাধা থাকে, আর এমনো কিছু সম্পর্ক থাকে যা হৃদয়ের তরীতে সওয়ার হয়ে আকাংখার মাঝ নদীতে সাতার কাটতে থাকে। ঈশ্বর প্রদত্ত সম্পর্কের বেলায় আজো অনেক কিছু যেভাবে চলার কতাহ সেভাবে চলে হয়তো, কিন্তু সমাজ কর্ত্রিক অথবা এই দুই রীতির বাইরে যে সম্নপর্ক গোপনে বা আধা প্রকাশ্যে অথবা প্রকাশ্যেই হোক তৈরী হয় তাদের মধ্যে অনেক কিছুই ধীরে ধীরে খুব ধোঁয়াশা এবং জটিল আকার ধারন করে কারন এই সপর্কগুলি যেখানে খুশী টেনে নেয়া যায়। কখনো তা তীরেও পৌছতে পারে আবার কখনো তা ডুবেও যেতে পারে। তীরে পৌছা অথবা ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনার বেড়াজাল একটা সুপ্ত এঙ্গেল বা কোনের উপর নির্ভরশীল যার নামঃ ত্রিভুজের চতুর্থ কোন।

এই কোন বা এঙ্গেল যেমন দৃশ্যমান থাকে না কিন্তু হিসাবে আনতে হয়। তেমনি এর মান ত্রিভুজের সব কোনের সমষ্টির যোগফলের থেকেও অধিক অথবা শক্তির তৃতীয় সুত্রের মতোই ঋণাত্মকও হতে পারে। এই চতুর্থ কোনের প্রভাব ত্রিভুজের সমষ্টিগত মুল্যায়নে এমন একটা নতুন আদল তৈরী করে যেখানে কবর খুড়ে লাশ বের হয়ে আসা প্রবাদটি পালটে হয়ে যায় কবর খুড়ে লাশ নয়, লাশের ভিতরের কংকালকে বের করে আনা। যেখানে ঐ কংকালের প্রতিটি  হাড়ে লেখা থাকে তার ফেলে আসা অনেক না বলা কথা, বেদনা আর ইতিহাস। আর এই ইতিহাসের টেবিল অফ কন্টেন্টের প্রথম অধ্যায়েই থাকে রোমাঞ্চকর প্রেমের উপখ্যান। কিন্তু যে প্রেমকে যুগে যুগে মানুষ রক্ত, জল, গোলাপের ঘ্রান হিসাবে আখ্যায়িত করতো, সেই প্রেম আসলে শুরু থেকেই ছিলো একটা কলশির দুধের মতো। দুধকে যেমন বেশী করে আচে বসালে উতলে অর্ধেক হয়ে যায়, তেমনি আবার কম আচে বসালেও সেটা আরো গাঢ় হতে থাকে। এক সময় তা গাঢ় হতে হতে পুড়ে সব শেষ হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো, এই কাহিনীর শেষ অধ্যায়ে প্রথম জীবনের প্রেমের দুধ কাহিনী থেকে তখন সবাই একে একে বের হয়ে যাওয়ার আপ্রান চেষ্টা করলেও সবাই সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে পারে না। এর প্রধান কারন, যখন কোনো সম্পর্ক ভিতর থেকে ভেংগে যায় কিন্তু ছিড়ে যায় না, তখনি এই দুটু সম্পর্কের পরিভাষাও হয় দুই রকমের। আর এই পরিভাষার নাম; অপরাধের ভাষা।

অপরাধের ছায়া যখন কোনো সম্পর্কের উপর পতিত হয়, পৃথিবীর কোনো শক্তি আর তাকে জোড়া লাগাতে পারেনা।  মনের জ্বালা বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে রিভার্স ব্ল্যাক মেইলের মাত্রা। ঈশ্বর মানুষের মনের ভিতরের এই সুপ্ত কাহিনী জানেন, বুঝেন এবং তাকে একটা নির্দিষ্ট লিমিট পর্যন্ত যেতে দেন এই কারনে যদি মনুষত্ত্য কিংবা বাস্তবতার নিরীখে কোনো মানব তার এই রিভার্স ব্ল্যাক মেইল তথা মনের অপরাধের আকাঙ্ক্ষা মিটিয়ে নেয় তো সে হয়তো ডুবতে ডুবতে কিনারায় উঠে যায় কিন্তু যদি সেটা না হয় তার অবস্থা এমন হয় যেনো সে দুটু ফুটূ নৌকায় পা রাখার সামিল। ডোবা তখন গ্যারান্টেড। আজ পর্যন্ত এমন কোনো ডিগ্রী তৈরী হয় নাই যেখানে প্রেমের জ্বালাই বলি আর রিভার্স ব্ল্যাক মেইলই বলি, সেটা নিরুপিত করতে পারে। যখন এই রিভার্স ব্ল্যাক মেইল শুরু হয়, তখন ওখানে হয় অপরাধের পিএইচডি। যখন পিএইচডি শেষ হয়, তখন দেখা যায়, কখন কবে কিভাবে কবরের লাশের কংকাল কোনো এক গাছের সাথে লম্বা হয়ে ঝুলতে আছে। আর যখন কোনো কংকাল নিজে নিজে গাছের সাথে ঝুলতে থাকে, ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চের একটুও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এই গাছে কংকাল উঠার পিছনে কারো না কারো হাত তো আছে, তার সাথে আছে অনেক রাত জাগা পরিকল্পনাও।

একটা সম্পর্ক যখন গড়ে উঠে, তখন গানিতিক বিশ্লেষনে এর দুটু কম্পোনেন্টই আসলে কাজ করে, একটি হলো “সময়”  আরেক”চাহিদা”। সময় একটা যেমন আপেক্ষিক জিনিষ না হয়েও মানুষের অভিলাষের কাছে এটা আপেক্ষিক, তেমনি চাহিদা নিজেই আমৃতকাল পর্যন্ত একটা পরিবর্তনশীল ফ্যাক্টরই ছিলো। সময়ের নিরিখে কারো উপর যখন কারো লোভ তৈরী হয়, চাহিদার মান ততো বেড়ে যায়, আর এই চাহিদাই সেটা যা মানুষের মৌলিক স্বভাবকে আমূল পরিবর্তন করে ত্রিভুজের চতুর্থ কোনে নিয়ে হাজির করায়, যা কখনো দেখা যায় না।   

সম্পর্কের গ্রাফের এই স্তরে এসে, একটি শেষ হয়ে যাওয়া সম্পর্ক কিংবা পূর্ব থেকে ঈসশরের দেয়া আইন কানুনে বাধা কোনো সম্পর্ক আরেকটা তৃতীয় চরিত্রের ধারায় এমন কিছু রসায়ন তৈরী করে যা জীবনকে শেষ করেই তারপর শেষ হয়ে যায়।  সম্পর্ক যখন ফাপা হয়ে যায়, তখন তার মধ্যে অনেক দূষিত বাতাস ঢোকে যায়, আর দূষিত বাতাসে অক্সিজেনের অভাবে ভরে থাকে শুধু বিষাক্ত গ্যাস। যা শুধু মরনের কারন হয়। আবার এমনো হতে পারে, সম্পর্কটা প্রথম থেকেই ফাপা থাকে কিন্তু হয় কোনো পক্ষ বুঝে অথবা কোনো পক্ষই টের পায় না। তিলে তিলে এই ফাপা জায়গাটা আরো বড় হয়ে আরো বেশী দূষিত বাতাসের ঘনত্ত বেড়ে যায়। দূষিত বাতাসের ছোয়ায় আর সময়ের অবহেলায় এই সম্পর্ক তখন সিমেন্টের গাথুনীর বধলে আজীবন নরম মাটির মতো নরম ভীতে দাঁড়িয়ে থাকে। যখন কোনো সম্পর্ক নরম মাটি দিয়ে গাথা হয়, তখন এটা ভাংতে বেশী সময় লাগে না। ছোট ছোট ঢেউয়ে খুব তারাতাড়ি ধস নামে।

তখন যেটা হয়, যে, ঈশ্বর কর্ত্রিক প্রদত্ত সম্পর্ক, কিংবা সামাজিক রীতিতে বন্ধন কৃত সম্পর্ক অথবা গোপনে তৈরী ব্যক্তিগত সম্পর্ক বলতে আর কোনো কিছুই ফারাক থাকে না। মান ইজ্জত, অভিলাষ, পজিশন, কিংবা ভালোবাসা, আহলাদ, মায়া কিংবা বন্ধন সব টুটে একেবারে ছিন্ন হয়ে ছিটকে পড়ে ঐ সমুদ্রে যার গভীরতা মাপার কোনো যন্ত্র আজো মানুষ সৃষ্টি করতে পারে নাই।

এভাবেই চলমান থাকে আইনের কাজ, শাসনের অপব্যবহার আর মনুষত্ত্যের বিলোপ। একদিন এই অবলুপ্তির বিকাসেই মানুষ হারিয়ে ফেলবে তার আসল মনুষত্ত্যের নীতিকথা। প্রতিটি জীবই ধ্বংস হয়ে যাবে নিজেদের কারনে।  

২৪/০২/২০২১-মিটুলের পোষ্টিং অর্ডার

Categories

মুদ্রার এক পিঠে যদি থাকে আফসোস, হতাশা, মানসিক যন্ত্রনা আর না পাওয়ার বেদনা, ঠিক তেমনি সেই একই মুদ্রার আরেক পিঠে থাকে সাফল্য, পাওয়ার আনন্দ আর খুশীর জোয়ার। মুদ্রার এক পিঠের দিকে তাকাইলে যেমন বুক ধড়ফড় করিয়া হার্টবিট বাড়াইয়া দেয়, নীল আকাশকেও মনে হয় ধূসর মেঘাচ্ছন্ন, তেমনি মুদ্রার আরেক পিঠে তাকাইলে মনে হয় মেঘলা আকাশও ভারী মিষ্টি। আশার জগত যখন নিরাশার বেড়াজাল কাটাইয়া প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে আসিয়া এই কথা কানে কানে বলে-" আমি আসিয়াছি, যাহা আপনি অনেক দিন ধরিয়া খুজিতেছিলেন, এই সেই আমি"। এই কাঙ্ক্ষিত ঘটনা যখন নিজের চোখের সামনে দাড়াইয়া আলিঙ্গন করে, তখন ইহাকে তো অবশ্যই, যাহারা যাহারা এই কাঙ্ক্ষিত শুভসংবাদ কিংবা সাফল্যমন্ডিত করার পিছনে ভালোবাসায় শ্রম দিয়াছে, তাহাদেরকেও মনে হয় খুব করিয়া বলি- আমি আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ, সবাইকে আমার অন্তর হইতে হৃদয় নিঙড়ানো শ্রদ্ধ্যা আর ভালোবাসা।

এমনি একটা কাঙ্ক্ষিত সংবাদ- আমার বউ এর পোষ্টিং। আজ আমার বউ এর পোষ্টিং হইলো, সরকারী বাঙলা কলেজ, অর্থনীতি বিভাগ, অধ্যাপক হিসাবে। অজস্র শুভাকাঙ্ক্ষী আমার জন্য আর আমার বউ এর জন্য দোয়া করেছেন, কেউ আবার সাহাজ্যও করেছেন, কেউ মনে প্রানে চেয়েছেন, আমাদের ইচ্ছাগুলি পুর্ন হোক। সেটাই অসীম দয়াময় আল্লাহতালাহ এমন একটা শুভ সংবাদ দিয়ে আমাদের সবার মনকে শান্ত আর সুখী করিলেন। (আলহামদুলিল্লাহ)

(মিটুলের পোষ্টিং অর্ডার বাহির হইবার কারনে "অধ্যাপিকা মিটুল চৌধুরী ওরফে আমার বউ" কে উতসর্গ করা।)

১০/০২/২০২১- অসহায় সিনিয়র সিটিজেন

Categories

একজন অভিভাবক, কিংবা পিতামাতা তার জীবনের সমস্ত আনন্দ, আরাম, আয়েস, শখ আহলাদ বিসর্জন দিয়ে তার সন্তান মানুষ হোক এটাই মনে প্রানে চায় এবং সে মোতাবেক তার ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সব কিছুই করে। কিন্তু যখন এই সন্তান বড় হয়, যোগ্য হয়, সমাজের বড় পরিসরে উঠে আসে, গর্বে পিতামাতার বুক ফুলে উঠে ঠিকই কিন্তু সেই সন্তান অনেক সময়ই বাবা মার এই ত্যাগ, এই বিসর্জন সঠিকভাবে মুল্যায়ন করেন না। এটা সব সন্তানের বেলায় যদিও সত্য নয় তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আজকাল এটা যেনো প্রায় একটা রীতি হয়ে যাচ্ছে। এই রীতির আবর্তে পড়ে দেখা যায়, প্রায়শই সেই বৃদ্ধ বাবা মা সন্তানবিহীন একাই দূর্বিসহ জীবন যাপন করেন। তারা একাই থাকেন, কিংবা তাদের কারো কারো আশ্রয় হয়ে যায় সেই নতুন রীতির আবর্তে গড়া ব্রিদ্ধাশ্রম। যারা বৃদ্ধাশ্রমে যান, তারা হয়তো কারো পরোক্ষ যত্নে কিছুটা ভালো থাকেন, কিন্তু যারা সেই ভাগ্য নিয়েও আসেন নাই, তারা পরিপূর্ন একা জীবন যাপন করেন। কেউ তাদের অনেক সময় খোজখবরও নেন না। ফলে একাকীত্ব দূর করার লক্ষ্যে অনেক বয়ষ্ক মানুষেরা এমন কিছু মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেন যারা কষ্মিঙ্কালেও তাদের বংশের কেউ ছিলো না কিংবা তারা তাদের কেউই না। তারপরেও মরুভূমির মধ্যে শুষ্ক কোনো পাতাবিহীন গাছকেও একটা অবলম্বন মনে করে এই অসহায় মানুষগুলি জীবনের তাগিদে সেই অপরিচিত আপাত বন্ধুসুলভ মানুষগুলিকেই আপন ভাবতে থাকেন। একটা কথা ইদানিংকালের জন্য ঠিক যে, শহরের মধ্যে যতো দ্রুত মানুষ বাড়ছে, ততো দ্রুতই মানুষের মধ্যে মানুষের দূরত্ব বেড়ে চলছে। আমরা প্রায়শই জানতে পারি না যে, আমাদের পাশের বাড়িতে কি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সেইসব বয়ষ্ক মানুষেরা যারা একা থাকেন তারা অপরাধীদের কাছে সহজেই শিকার হয়ে যান। আর যদি সেই অপরাধী কাছের কোনো মানুষ হয়, কিংবা কাছের মানুষের মতো মনে হয়, তাহলে বিপদ আরো বেড়ে যায়। আমাদের একাকী বয়ষ্ক মানুশেরা হয়তো তাদের হতাশা আর একাকীত্বের কারনে তারা তাদের সুখ বেদনার কথা যে কোনো অচেনা মানুষের সাথে ভাগ করে নেয়, কাউকে আপন করে নেন, এটা তাদের দোষ নয়। কিন্তু এত অন্ধবিশ্বাস মাঝে মাঝে খুবই প্রানঘাতিও হয়। ফলে দেখা যায়, সিনিয়র সিটিজেনরাই সমাজে ইদানিং সবচেয়ে বেশী অপরাধের শিকার হচ্ছেন। সমাজের এই অবক্ষয় দ্রুত বেড়ে চলছে আমাদের দেশে।

আমরা যে কথাটা প্রায়ই ভুলে যাচ্ছি যে, যে মা বাবা আমাদের জীবন তৈরী করার জন্য তারা তাদের সারাজীবন উজার করে দিয়ে, সমস্ত আনন্দ, শখ বিলিয়ে দিয়ে জীবনের এই পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছেন। সন্তানরা যখন বায়না ধরেছে, জেদ করেছে, আরএইসব মা বাবা সেটাকে পুর্ন করার জন্য দায়িত্ত হিসাবে আপ্রান চেষ্টা করেছেন, তাদের জীবন দেখভাল করা কি আমাদের সন্তানদের কর্তব্য নয়? আমরা যেনো এটা না ভুলে যাই যে, জীবনের এই অধ্যায়ে একদিন না একদিন আমাদেরকেও দাড়াতে হবে।

০৪/০২/২০২১-আর একবার যদি

আমরা যখন ভুল করতে থাকি, আমরা যখন নিজেদের সার্থের উপর দাঁড়িয়ে কোনো একটা সিচুয়েশনের অবমুল্যায়ন করতে থাকি, আর সেই অবমুল্যায়নের পথ ধরে যখন একটা এমন সিদ্ধান্ত নেই যেখানে যাওয়ার পর মনে হয়, আহা, ব্যাপারটা ঠিক হয় নাই, ঠিক তখনই শুরু হয়, “যদি আর একবার” এর মতো অনুশোচনা। এই ” যদি আর একবার” অনুশোচনা এমন একতা অনুশোচনা যেখানে নিজের হাতে আর কিছুই থাকে না, তাহকে পুরুটাই ভাগ্যের উপর। এই “আহা, যদি আর একবার” সুযোগটা খুব কম ভাগ্যবানের কপালে ফিরে আসে। বেশীর ভাগ সময়েই এটা আর ফিরে আসে না। কিন্তু এর অনুশোচনা, এর বোকামীর ফল কিংবা এর ফলে সৃষ্ট মনোবেদনা আজীবন কাউকে গোপনে বা প্রকাশ্যে মেনে নিয়ে একটা হতাশার সৃষ্টি করেই থাকে। তখন এই হতাশা তাকে বারবার এটাই মনে করিয়ে দেয়, “আহা যদি এই রকম না করতাম তখন”, “আহা যদি আরেকটু চুপ থাকতাম”, “আহা, কি দরকার ছিলো ঐ সময় এমনটা করার” ইত্যাদি। এই অনুশোচনা তাদের বেশী হয় যারা একটা সুযোগ হারিয়েছেন, যারা কোনো না কোনো ভাবে এই সুযোগ আর ফিরে পাবে না বলে নিশ্চিত থাকেন। তখন নিজেকে পৃথিবীর সব বোকা আর অবুঝের মতো মনে হয়। এই অনুশোচনা আরো বেশী করে প্রতিনিয়ত মানুষকে বেদনায় ফেলে যখন দেখা যায় যে, ফেলে আসা সুযোগটিই আসলে দরকার ছিলো, কিংবা এটাই আসলে তার জীবনের মোড়টা ঘুরিয়ে দিতে পারতো কিন্তু ব্যাপারটা না বুঝার কারনে ঘরে কাছে এসেও ভাগ্য তাকে এমনভাবে বিতাড়িত করেছে যার জন্য দায়ী সে নিজেই।

তাহলে প্রশ্ন জাগে, কেনো আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়ি।

অনেক সময় কড়া কৈফিয়তকে মানুষ অপমান মনে করে। হোক সেটা কোনো চাকুরীর ক্ষেত্রে, কোনো কিছু কেনা কাতার ক্ষেত্রে, কোনো দায়িত্তিয়ের ক্ষেত্রে, কিংবা কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে। কিন্তু মানুষ প্রায়ই ভুলে যায় যে, সবাই যার যার হিসাবটা যখন নিজেরাই কড়ায় গন্ডায় সে নিজেই বুঝে নিতে চায়, কিন্তু অন্য কেউ যখন এই একই কাজটা নিজের উপরে করতে চায়, তখন সেটাকে নিজে বড় অপমান মনে করে, কিংবা অবিশ্বাস মনে করে। ভাবে, কেনো আমার কাছ থেকে এতো শক্ত করে কৈফিয়ত চাইতে হবে? কিংবা কেনো আমার উদাসিনতার কারনে এতো জবাব্দিহি করতে হবে? আমি তো তার অমুক, আমি তো তার তমুক, কিংবা আমি তো অনেক বড় আত্তিয় কিংবা আমি তো এটা সেটা ইত্যাদি। আমার তো এতো কৈফিয়ত দেওয়ার কথা না। আর এই অবাস্তব চিন্তা মানুষকে প্রায়ই একটা ভুল সংবাদ দেয় যে, তার এগুলি সহ্য করতে কেনো হবে? আর এই “কেনো সহ্য করতে হবে” এই ভুল ভাবনাটাই তাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে নিয়ে হাজির করে যার নাম “ইগো”। আর এই ইগো থেকেই তারা ভাবে যে, কি হবে এইসব মানুষের থেকে সরে গেলে? ফলে, তারা অনেক সময় এই “ইগো”র কারনে হয় তারাই ক্রমশ সেইসব মানুষের থেকে, যারা বন্ধু, যারা আত্তীয়সজন কিংবা কাছের মানুষগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অথবা তারাই তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। প্রাথমিকভাবে এটাই মনে হয় যে, ছেড়ে গেলে যেনো কিছুই যায় আসে না। এই যে ছেড়ে দেয়া বা ছেড়ে ফেলার পর কি হতে পারে, সেটা ঐ মুহুর্তে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উভয়েই না করে বিশ্লেষন, না করে এর বাস্তব প্রতিফলন। কিন্তু এর একটা প্রতিক্রিয়া সবসময় থাকে যা সময়ের আবর্তে উম্মোচিত হয়। যখন উম্মোচিত হয় তখন একটা জিনিষ স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। আর সেটা হলো, যিনি সুপেরিয়র, তার যতোটা না ক্ষতি হয়েছে, তার থেকে অনেক অনেক বেশী ক্ষতি হয়েছে যিনি ইনফেরিয়র। দেখা যায় যে, ছেড়ে আসার ফলে যা ক্ষতি যাকে ছেড়ে আসা হয়েছে তার থেকে বেশী নিজের, তখনই শুরু হয় এই আহাজারি, “আহা, যদি আবার” আরেকটা সুযোগ পাই, “আহা, যদি আবার আমাকে ডাকা হতো” আমি কোনো প্রশ্ন ছাড়া সেই আগের জায়গায় চলে আসতাম। তখন মনে হয়, যে কোনো শর্তেই আমি আবার সেই আগের জায়গাটা ফিরে পেতে চাই। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, কদাচিত সেই সুযোগটা কারো জীবনে ফিরে আসে। বিশেষ করে যিনি সুপেরিয়র, সে যদি আর সুযোগটা না দেয়, তাহলে ইনফেরিয়রের জন্য এটা আর কখনোই ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না।

অনেক সময় লোভ মানুষকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যায় যেখানে যতটুকু পাওয়ার জন্য আমরা যোগ্য, তার থেকে যখন আমরা বেশী পেতে চাই কিন্তু কোনো কারনে সেটা আমাদের জীবনে বা হাতে না আসে, তখন রাগ হয়, জিদ হয়, মনে হয় যেনো কেউ আমাদেরকে ইচ্ছে করে ঠকাচ্ছে। এই যে পরের ধনের উপর আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত লোভ, এটা মানুষকে এমন একটা জায়গায় উপনীত করে যে, মনে হয় ঐ মানুষগুলি আমার কেউ না। নিজের অভিমান, নিজের চাওয়ার মধ্যে পাওয়ার যে ব্যবধান, এই সুত্রটাই আমাদেরকে একে অপরের থেকে ছিটকে পড়তে সাহাজ্য করে। যখন কেউ ছিটকে যায়, তখন যিনি লোভ করেছিলেন, তিনি বুঝতে পারেন, তার এই অযাচিত লোভই তাকে এমন এক কুড়েঘরে নিক্ষেপ করেছে যেখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। তখন সে নিজেই তার মুল্যবোধ বুঝতে পারে আর ভাবে, “আহা যদি আর একবার” সুযোগটা পেতাম, তাহলে অন্তত আমার জীবনটা আরো সুন্দর হতো। চোখের সামনে যখন দেখা যায় যে, যে আয়েশী জীবনটা আমার হাতের পাশ থেকে ছুটে গেলো আর যেটা অন্য আরেক জন উপভোগ করলো, তখন সেই নতুন পরিস্থিতিতে নিজেকে বড্ড অসহায় আর বোকাই মনে হয়। কিন্তু তার মন জানে কোথায় সে ভুলটা করেছে। যখন সে একা থাকে, তখন সে ঠিক এটাই ভাবে, আবার যদি এ রকম একটা সুযোগ আসে, আমি আর একই ভুল করবো না। কিন্তু সেটা শুধুই ভাগ্যের উপরে নির্ভরশীল একটা ইচ্ছা। বাস্তব আর নাও হতে পারে।

অপরিপক্ক বয়সের কারনেও এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আজকে কোনো এক দৈবচক্রে কারো ভাগ্য এমনভাবে খুলে যেতে পারে যা তার জীবনে দ্বিতীয়বার না হবারই কথা। যেমন ধরুন, কোনো এক মধ্যবিত্ত অপরিপক্ক যুবকের ভাগ্যে এমন এক প্রতাপ্সহালী আর ধনাঢ্য পরিবার সম্পর্ক করে ফেলতে পারে। অকালে এতো বিত্ত আর ক্ষমতার সহচার্য্যে নিজের যোগ্যতাকে যুবক এমন কিছু ভাবা শুরু করতে পারে যার কারনে সেই ধনাঢ্য পরিবার বারবার বিব্রতকর পরিবেশে পড়ে এবং তার লোভের নেশার কারনে সমুলে ছেড়ে দিতে পারে। যখন কোনো একদিন যুবক বুঝতে পারবে কি হারালো সে, তখন তার কাছে বারবার মনে হবে, “কি বোকাটাই না ছিলাম, কি প্রয়োজন ছিলো আমার এই সুযোগ হাতছাড়া করার?” ইত্যাদি। কিন্তু এই অবস্থায় দ্বিতীয়বার আর কোনো সুযোগ আসার কোনোই সম্ভাবনা থাকে না কারন Once fortune comes with luck but when lost, same fortune would come after lots of vigorous testing, and may not even come again. তখন হতাশাটা আরো ব্যাপক। অনুশোচনাটাও শুধু নিজের জন্যেই।

০২/০২/২০২১-কনিকার বাল্টিমোরে ভর্তি

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

ফেব্রুয়ারী 

০২

ইন্টার পরীক্ষার ফলাফলের আগে থেকেই কনিকা আসলে এদেশে পড়বেনা বলে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো। কনিকার সমস্যা হচ্ছে, ও যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তার অধিকাংশ সিদ্ধান্ত আমি বদল করতে পারি না, মাঝে মাঝে বদল করতেও চাইনা আসলে। ইন্টার ফলাফল পাওয়ার পর দেখা গেলো কনিকা সবগুলি সাব্জেক্টেই এপ্লাস মানে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। এতে আরো সুবিধা হয়ে গেলো যে, ওর পরীক্ষার ফলাফলে যে কোনো ইউনিভার্সিটিতেই ভর্তি হবার সম্ভাবনা বেড়ে গেলো। এর মধ্যে অনেকগুলি ইউনিভার্সিটিতে এপ্লিকেশন করেছে। কোনো ইউনিভার্সিটিই ওকে রিজেক্ট করে নাই বরং কনিকা ফাইনান্সিয়াল এইডের কারনে সে নিজেই বেশ কিছু ইউনিভার্সিটির এক্সেপ্টেন্স রিজেক্ট করেছে।

প্রথমে কনিকা সবগুলি ইউনিভার্সিটি চয়েজ করেছিলো বোষ্টন বেজড। কারন আমার বড় ভাই বোষ্টনে থাকেন। একটা সময় আমার মনে হলো যে, আসলে আমার বড় ভাইয়ের উপরে নির্ভর করে কনিকাকে এতোদূরে পাঠানো ঠিক হবে কিনা। তিনিও বুড়ো হয়ে গেছেন, অনেক কিছুই তার পক্ষে এখন সামাল দেয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় তিনি অনেক কিছু ভুলেও যান। প্রায়শ ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি যে, আমার বড় ভাইয়ের উপর অনেক ব্যাপারে ভরষা করা যায় না। কোনো কিছুতেই আমার বড় ভাই না করেন  না বটে কিন্তু ঠিক শেষ মুহুর্তে এসে দেখা যাবে তিনি আর পারেন না অথবা তার অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয় বা করেন। বিশেষ করে যখন কোনো ফাইনান্সিয়াল কোনো ব্যাপার থাকে সেখানেই তার সব বিপত্তি। তাই ভাইয়ার উপরে আমার ভরষা আমার ছোট মেয়েকে পাঠানো উচিত হবেনা বলে আমার কাছে মনে হলো। দেখা গেলো যখন কনিকার কোনো প্রয়োজন হবে ঠিক তখন কনিকার জন্য সাহাজ্য আর আসছে না।

আমি মতামত চেঞ্জ করে কনিকাকে বললাম যে, তুমি শুধু বোষ্টনের জন্য এপ্লাই না করে আমাদের আরো আত্তীয়সজন যেখানে বেশী আছে, সেখানেও এপ্লাই করো। আমেরিকাতে বাল্টিমোরে থাকে লুসিরা, ছোটভাই, এবং আরো অনেকেই। ফলে আমি কনিকাকে বাল্টিমোরের জন্যেও এপ্লাই করতে বললাম। আজই উনিভারসিটি অফ ম্যারিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি (ইউএমবিসি) থেকে সরাসরি ওর ভর্তির ব্যাপারে চিঠি এসছে যে, ওরা কনিকাকে নিতে আগ্রহী এবং যত দ্রুত সম্ভব ওরা আই-২০ ফর্ম পাঠাতে চায়। শুনলাম, ওখানে লুসির ছেলেও আবেদন করেছে। লুসিরা খুব খুসি যে, কনিকা ওখানে পড়তে যাবে।

আপডেটঃ ১১ মার্চ ২০২১

আজ কনিকার আই-২০ ফর্ম এসছে ইউএমবিসি (ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড, বাল্টমোর কাউন্টি) থেকে। ইউএমবিসি বাল্টিমোরের সবচেয়ে ভালো একটা ইউনিভার্সিটির মধ্যে একটি। আর সবচেয়ে এক্সপেন্সিভও বটে। আমি খুশী যে, কনিকা নিজে নিজেই সবগুলি কাজ করেছে এবং খুবই স্মার্টলী ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করেছে। এবার ওর দূতাবাসে দাড়ানোর পালা। যদি ইনশাল্লাহ সব কিছু ঠিক থাকে, তাহলে আগামী জুলাই মাসে কনিকা আমেরিকায় চলে যাবে। এটা যেমন একদিকে আমার জন্য ভালো খবর, অন্যদিকে একটু কষ্টও লাগছে যে, মেয়েটা অনেক দূর চলে যাবে। ইচ্ছা করলেই আর ওর সাথে রাত জেগে জেগে আলাপ করা যাবে না। বাচ্চারা এভাবেই কাছ থেকে দূরে বেরিয়ে যায়। 

২৯/০১/২০২১- নাফিজের বিয়ে

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব

জানুয়ারী 

২৯ 

নাফিজ হচ্ছে আমার এক বোনের মেয়ের ছেলে। আমার বোনের নাম শায়েস্তা খাতুন। সেই শায়েস্তা খাতুনের মেয়ে শেফালী। নাফিজ শেফালীর ছেলে। নাফিজের বাবার নাম নেওয়াজ আলী মোল্লা। সে গত ০২/০৯/২০২০ তারিখে মারা গেছে। নাফিজ জাপানে থাকে, ওখানেই কোনো রকমে কাজ করে যতোটুকু পারে পরিবার এবং নিজের ভবিষ্যত গরার চেষ্টা করছে। নাফিজ যখন বিদেশ যায়, তখন আমিই ওকে স্পন্সর করেছিলাম। প্রায় ৩/৪ বছর পর নাফিজ দেশে এসছে। কিন্তু কবে দেশে এসছে, আর কোথায় কিভাবে বিয়ে করছে সেটা নিয়ে সে আমার সাথে কোনো পরামর্শ যেমন করে নাই, তেমনি ও যে ঢাকায় এসছে সেটাও আমাকে জানায় নাই। এগুলি নিয়ে আমার তেমন কোনো মাথা ব্যথাও নাই। আজকে শুনলাম যে, আজ নাফিজের বিয়ে। এটা শুনলাম আমি মিটুলের কাছ থেকেই। ব্যাপারটা নিয়ে আমি একেবারেই সময় কিংবা মাথা খাটানোর চিন্তাও করি নাই কারন যার যার লাইফ তার তার। কে কিভাবে তাদের লাইফ উপভোগ করলো সেটা নিতান্তই তাদের ব্যাপার। আমি সাধারনত এ ব্যাপারে কারো জীবনেই হস্তক্ষেপ করি না কিংবা করতে পছন্দও করি না।

আমি ২০১৭ সাল থেকেই শেফালী মেয়েটাকে আর পছন্দ করি না। এই না পছন্দ করার পিছনে অনেক কারন আছে। সেটা আর এখানে বলছি না। শেফালী আর নাফিজ আজকে মিটুলকে নাকি ফোন করে বলেছে যে, নাফিজের বিয়েতে যেতে হবে। আমি মিটুলকে বললাম, নাফিজ ঢাকায় কবে এসছে? মিটুল নিজেও বলতে পারলো না। আমি বললাম, আমি জানি, নাফিজ প্রায় ১ মাস আগে ঢাকায় এসছে। বাক্তার চর থেকে ঢাকায় যেতে সব সময় আমার অফিস পার হয়েই তারপর ঢাকায় যেতে হয়, নাফিজ যদি আমাকে ইম্পর্ট্যান্ট মনে করতো যে, আমি ওদের বড় কেউ গার্জিয়ান, তাহলে ঢাকায় আসার পরেই হয় আমাকে একটা ফোন করতে পারতো অথবা আমার অফিসে এসে দেখা করতে পারতো। এর মধ্যে আবার ওর কোথায় বিয়ে ঠিক হচ্ছ্যে, কার কি সমস্যা ইত্যাদি নিয়েও সে আমাকে নক করে নাই কিন্তু আমি জানি ওর বিয়ে নিয়ে ওর এক্স গার্ল ফ্রেন্ডদের মধ্যে বিশাল একটা ঝামেলা চলছে। আমি সব খবর পাই কিন্তু যেহেতু আমাকে কেউ কিছু বলছে না, ফলে আমি উপজাজক হয়ে এদের মধ্যে ঢোকতেও চাই না।

আমার করোনা পজিটিভ থাকায় আমি এমনিতেও নাফিজের বিয়েতে যেতাম না, হয়তো আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে পাঠিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি চাই না যে, আমি বা আমার পরিবারের কেউ ওর বিয়েতে যাক। আমি জানি আমি না গেলে কি পরিমান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে শেফালী এবং নাফিজকে। ওরা জানেই না যে, পায়ের তলার মাটি সরে গেলে নিজের শরীরের ওজনটাকেও ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এটা আমি ওদের বুঝিয়ে দিতে চেয়েছি এবার। শেফালীর বাবা ছিলো না, মা ছিলো না, শেফালির বোন নুরুন্নাহারের থেকে শুরু করে জমজ দুই ভাই লিয়াকত আর শওকাত এদেরকে সেই দুই মাস বয়স থেকে আমরাই লালন পালন করেছি। ওদের বাবার নাম ওরাও হয়তো ভালোভাবে বলতে পারবে না। গ্রামের মানুষ, আশেপাশের মানুষ ওদেরকে এই নামেই চিনে যে, ওরা মেজরের ভাইগ্না ভাগ্নি। আর এটাই ছিলো ওদের সবচেয়ে বড় শিল্ড। আর ওরাই কিনা আজকে আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করেছে।  আমার খারাপ লাগে নাই ততোটা কারন আমি বুঝে গেছি যে, ওরা আসলে নিমক হারামের জাত।

বিয়েতে গেলাম না। আমি না যাওয়াতে কি হলো সেটা আমি জানি। শেফালীকে হাজার প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে কেনো মামা এলো না। আমাদের গ্রামের মানুষ অনেকেই আমাকে দেখে নাই কিন্তু নাম শুনেছে। আবার অনেক পুরানো দিনের মানুষেরা আমার সান্নিধ্যে আসতে চেয়েও আমার অফিস পর্যন্ত আসার স্কোপ না থাকায় দেখাও করতে পারে না। আবার আমার পজিশনাল ফ্যাক্টরের কারনে অনেকে ভয়েই আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও দেখা করতে পারে না। এমন একটা পরিস্থিতিতে যখন কেউ শুনে যে, আমার কোনো আত্তীয়ের কোনো অনুষ্ঠান, তারা ভাবে যে, এবার নিশ্চয়ই মেজরের সাথে দেখা হবে। ফলে কেউ দাওয়াতে আসে আমার সাথে দেখা হবে বলে, কেউ আবার অপেক্ষা করে আমার সাথে দেখা হবে বলে। কিন্তু যখন আমার আর ওখানে যাওয়া হয় না, তখন কেনো যাই নাই, কি কারনে যাই নাই এই প্রশ্নে জর্জরিত হতে হয় তার যার বাড়িতে অনুষ্ঠান।

এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর যখন আমার সেই আত্তীয় দিতে পারে না, তখন এতোদিন যে নামের ক্ষমতায় সারা গ্রাম চষে বেড়িয়েছে, যে লোকটির ক্ষমতায় সারাটা গ্রামকে ভয়ের মধ্যে রেখেছে, অনেকেই শুধু এই নামটার জন্যই যখন তাদেরকে তোষামোদি করেছে, তারা তখন এই প্রশ্নটাই করে- কই এতোদিন যাদের জোরে এতো তাফালিং, তারা তো আপনাদের কোনো অনুষ্ঠানেই আসে না, তাহলে কিসের এতো বাহাদুরী?

ক্ষমতার রেশ ছুটে যাচ্ছে, অপমানে মুখ দেখানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই যে অসহায় একটা পরিস্থিতি, এটা কিন্তু আমি তৈরী করি নাই, করেছে ওরা নিজেরাই। ওদের আর কোনো মনোবল নাই আমার সামনে এসে কোনো দাবী নিয়ে জোর দিয়ে বলতে পারে, যে, আপনি অবশ্যই আসতে হবে আমাদের অনুষ্ঠানে। একদিকে আমাকে না নিতে পারার কষ্ট আর অন্যদিকে মানুষের কাছে হেয় হবার অপমান কোনোটাই কম না।

আজকে আমার বউ আমার কাছে এসে বল্লো, যে, সেফালি অনেক কান্নাকাটি করেছে যে, মামা যদি নাও আসতে পারে, অন্তত আপনি ১০ মিনিটের জন্য হলেও একবার গ্রামে নাফিজের বিয়েতে ঘুরে যান, অন্তত আমি মানুষকে বলতে পারবো যে, মামা অসুস্থ তাই মামী এসেছেন। তা না হলে আমার আর অপমানের শেষ নাই। আমি সবার কাছে যেমন ছোট হয়ে যাবো, তেমনি আমি পরিবেশ গতভাবেও অনেক দূর্বল হয়ে যাবো।

আমি শুধু মিটুলকে বললাম, যদি তুমি যেতে চাও, যাও, আমাকে কোনোভাবেই কনভিন্স করার চেষ্টা করো না যে, আমাকে নাফিজের বিয়েতে যেতে হবে। যে ছেলেটা একটা ফোন করেও আমাকে যেতে বলে নাই, তাদের আবার এতো অপমানের ভয় কিসের? তুমি যেতে চাও, যাও, দরকার হয় আমার যে কোনো গাড়ি নিয়েও তুমিযেতে পারো। 

আসলে আমি একটা পানিশমেন্ট দিতে চেয়েছি এই শেফালীকে। আসলে এটা পানিশ মেন্ট নয়, এটা একতা বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া যে, কোথায় কোন জিনিষের উপর কতটুকু কদর করা উচিত সেটা বুঝা। আর এখন তারা সেই শাস্তিতাই পাচ্ছে। আমার ধারনা, সেফালী আরো বড় শাস্তির অপেক্ষায় আছে। তাহলে সেই শাস্তিটা কি? ব্যাপারটা হয়তো এভাবে ঘটবে- 

আমি নাফিজকে চিনি। অত্যান্ত দূর্বল চিত্তের একজন মানুষ, ইমোশনাল একটি ছেলে। শক্ত করে কোনো কিছুর প্রতিবাদ করার সাহসও এই ছেলেটার মধ্যে আমি দেখি নাই। সবসময়ই একটা ভাবুক উপলব্ধির মধ্যে থাকে। আজ যে বাড়িতে নাফিজ বিয়ে করছে, সেফালীর ধারনা যে, তার থেকে একটু উচ্চবিত্তের বাড়িতে সম্পর্ক করলে হয়তো বা সমাজে তাদের একটা আলাদা প্রতাপ বাড়বে কিংবা কোনো এক সমস্যায় হয়তো ওরা হাত বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু কুইনিন জ্বর সারালেও কুইনিন সারাবে কে এটা ওদের মাথায় নাই। অর্থাৎ যেদিন এই পরিবারটা নিজেই সেফালীর জন্য একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে, তখন তাদেরকে প্রতিহত করার উপায় কি? লোহাকে লোহা দিয়ে পিটাতে হয়, কাঠ দিয়ে লোহাকে পিটিয়ে কোনো আকারে আনা যায় না। শুনেছি নাফিজের নবাগত স্ত্রী একজন ডাক্তার কিংবা নার্স বিষয়ক সাব্জেক্টে পরাশুনা করে।  ডাক্তার যে না এটা আমি সিউর কারন কোনো এমবিবিএস পড়ুয়া মেয়ে অন্তত নাফিজের মতো ছেলেকে বিয়ে করার রুচী বা পছন্দে আনতে পারে না। হয়তো নার্স হবে। সাধারনত যেটা হয় যে, গ্রাম্য এসব মেয়েগুলি একটু শিক্ষিত হলেই ভাবে যে, তারা অনেক ক্ষমতাশীল এবং ডিমান্ডেড। ফলে ওরা ওদের অনেক কিছুই চাহিদার বাইরে আব্দার বা দাবী করার প্রয়াশ পায়। আর এই কারনেই এই মেয়েটা একদিন ওর যা খুসী তাইই করার স্বাধীনতা রাখবে। ভাববে যে, সে তো নাফিজের থেকেও বেশী যোগ্য। তাই ওর যা দাবী সেটা তো নাফিজকে মানতেই হবে। নাফিজ তাকে তার অক্ষমতার কথা কিংবা দূর্দশার কথা কিংবা কোনো অন্যায় আব্দারের ব্যাপারে রাজী না হয়ে বাধা প্রদান করলে নাফিজের সব কথা সে নাও শুনতে পারে। আর যদি নাফিজ তাকে শাসন করতে যায়, তখন এই নবাগত স্ত্রী তার পরিবার মিলে নাফিজকেই শায়েস্তা করে ফেলবে। এমনো হতে পারে যে, অচিরেই নাফিজের স্ত্রী তার শাশুড়ির সাথে ধীরে ধীরে সম্পর্কটা অনেক দূরে নিয়ে যাবে, আর সেই দূরে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে শুধু সে নিজেই দূরে চলে যাবে না, সাথে নাফিজকেও দূরে নিয়ে যাবে। নাফিজের এতোটা মনোবল শক্ত নয় যে, নাফিজ বউকে ছেড়ে বা বউকে কড়া ভাষায় কথা শুনিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াবে। ফলে এমন একটা সময় আসবে যে, নাফিজের দেয়া মাসিক ভাতাটাও একদিন সেফালির জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। এই নাফিজের স্ত্রীই করাবে বন্ধ। এবার আসি সেফালীর আরেক ছেলের কথা। সেফালীর অপর ছেলে নাহিদকে দেখে আমার প্রতিবন্ধী মনে হয়। সারাদিন ঘর থেকে বের হয় না। কারো সাথেই সে কোনো কথাবার্তাও বলে না। শুধু রাতের বেলায় উঠোনে নাকি বের হয় আর রাতেই সে গোসল করে। এই এমন একটা ছেলের কাছ থেকেও সেফালির কিছু আশা করা উচিত না। নাহিদ একদিন নিজেকেই নিজে চালাতে পারবে না। যখন নাফিজের দেয়া ভাতা, বা টাকা সেফালীকে দেয়া কমে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে, সেদিন এই নাহিদ এমনো হতে পারে নিজের জীবন নিজেই নিয়ে নিবে। কারন সে বেশীরভাগ সময়ে এই পৃথিবীর মানুষের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে না। সমাজের মানুষ যেমন তাকে সচরাচর দেখে না, তেমনি সেও সমাজের সবাইকে ভালমতো চিনেও না। শুধু মুখ দেখে নাম বলতে পারাটাই চিনা নয়। যখন এই পরিস্থিতি আসবে, নিজেকে খুবই অসহায় মনে করবে নাহিদ আর ভাববে- ওর চলে যাওয়াই উচিত। আর থাকলো সেফালির মেয়ে। মেয়েরা যতোক্ষন পর্যন্ত নিজেরা নিজের পায়ে না দাড়ায়, ততোদিন সে না পারে নিজেকে সাহাজ্য করতে, না পারে তার আশেপাশের কাউকে সাহায্য করতে। ফলে ওর মেয়েরও একই অবস্থা হবার সম্ভাবনা আছে। হয়তো নিজের জীবন না নিলেও শুধুমাত্র বেচে থাকার তাগিদে কোনো এক ছেলেকে বিয়ে করে জীবনটা পার করে দেবে। সেখানে কিছুদিন হয়তো সেফালির ঠাই হবে কিন্তু স্থায়ী হবে না।

নাফিজের থেকে সেফালির দূরে চলে যাবার কারন হবে দুটু। (ক) নাফিজের স্ত্রীর সাথে সেফালির শাশুড়ি বনাম পুত্রবধুর সম্পর্কটা সেফালী নিজেই তৈরী করতে পারবে না বা পারার কথা নয়। সেফালীর যে চরিত্র সেটাই আমাকে এ কথা বলার কারন বলে মনে হয়েছে। আর এই শাসুড়ি বনাম পুত্রবধুর সম্পর্ক ভালো না হওয়ার কারনে সারাক্ষন নাফিজের স্ত্রী নাফিজের মার সম্পর্কে কটু কথা, কান কথা লাগাতেই থাকবে। আর সব শেষে গিয়ে নাফিজের স্ত্রী নাফিজকেই দায়ী করতে থাকবে সব কিছুর জন্য এবং একসময় নাফিজ তার মায়ের উপর এতোতাই বিরক্ত হবে যে, কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা সেটা যাচাই করার আর কোনো মানসিকতা নাফিজের থাকবে না। ফলে যেতা হবে তা হচ্ছে- নাফিজ তার স্ত্রীর পক্ষ নিয়াই কথা বলবে। যেহেতু নাফিজ তার স্ত্রীকে কঠিন ভাষায় মায়ের পক্ষে ওকালতি করতে পারবে না, অথবা উচ্চবিত্ত শশুড়ের মুখের সামনেও দাড়াতে পারবে না, ফলে সে তার মাকেই সে ত্যাগ করবে। সেটাই নাফিজের জন্য সহজ পথ। সেফালি একদিন সত্যিই একা হয়ে যাবে আর সে একাকিত্তে নিজের জীবন নিজেই চালাতে গিয়ে ওর মা আজ থেকে ৪৫ বছর আগে যেভাবে জীবনযাপন করেছে, সেফালিকেও ঠিক সেভাবেই জীবনযাপন করতে হতে পারে। অর্থাৎ পরের ক্ষেতে ধান কাটার পর মাঠ ঝারু দিয়ে পরিত্যক্ত ধান কুড়িয়ে ধান আনা, কিংবা অন্যের ক্ষেতে বদলীগিরি করে, কিংবা এই জাতিয় কাজ করেই ওকে নিজের জীবন নিজেকে চালাতে হবে। (খ) আর দ্বিতীয় কারনটি হলো- লিয়াকত। যতোদিন লিয়াকত নিজের পায়ে দাড়াতে না পারবে, সে ততোদিন সেফালির ঘাড়ের উপরে বসেই জীবন বাচাতে হবে। কিন্তু লিয়াকতের বয়স এখন প্রায় ৩৮। সে লেখাপড়াও করেছে। কিন্তু জীবনমুখী নয়। ওর মতো বয়সের একটা ছেলে কোনো না কোনোভাবে নিজের জীবনসহ একটা সংসার চালাতে পারা সক্ষম হওয়া উচিত ছিলো। অনেকভাবে আমিও চেষ্টা করেছি, হাবীব ভাইও চেষ্টা করেছেন, এমন কি আমি ওকে গাজীপুরে একটা কম্পিউটার ট্রেনিং ইন্সটিটুটের মধ্যে লাগিয়েও দিয়েছিলাম, কিন্তু কোথাও সে এডজাষ্ট করতে পারে নাই। শেষতক আবার সেই সেফালির ঘাড়েই গিয়ে পড়েছে। যতোদিন নাফিজ বিয়ে করে নাই, ততোদিন লিয়াকতের হয়তো ততোটা সমস্যায় পড়তে হয় নাই। কিন্তু নাফিজের বিয়ের পর নাফিজের বউ সেফালির বাসায় থাকতে হচ্ছে, আবার অন্যদিকে নাফিজ দেশে নাই। অথচ লিয়াকত একই বাড়িতে থাকে। এটা কোনোভাবেই হয়তো নাফিজের স্ত্রী আরামবোধ করবে না। এই যে নাফিজের স্ত্রীর ভাষায় সে “আরাম বোধ করছি না” এর মানে একটাই- লিয়াকতকে সেফালির বাড়ি থেকে হটাও। সেফালির বাড়ি থেকে যখন লিয়াকত চলে যেতে বাধ্য হবে, তখন হয়তো সেফালি কিছুটা হলেও তার ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে চাইবে। আর এক কথা বলা চাওয়ার মধ্যেই সেই “দূরে” চলে যাওয়ার ব্যাপারটা লুকায়িত। তবে চুড়ান্ত কথা একটাই- যে কোনোভাবেই হোক, সেফালিকে শেষতক একাই থাকতে হবে, নিজের জীবনের জীবিকা তাকে একাই জোগাড় করতে হবে। এটাই হয়তো শেষের অধ্যায়।

এই যে সেফালিকে নাফিজের স্ত্রি ধীরে ধীরে পছন্দ করছে না এটা বুঝার কিছু উপায় আছে। দেখা যাবে যে, মাসের পর মাস নাফিজের স্ত্রী সেফালির বাসায় আসবে না। কারন দেখাবে যে, সে লিয়াকতের কারনে বিব্রত। সে ফ্রি না লিয়াকতের উপস্থিতিতে ইত্যাদি। ফলে লম্বা সময়ের জন্য সেফালির সাথে বিচ্ছেদ। কিংবা যদি সেফালি অসুস্থ্য হয়ে যায়, তখনো নাফিজের স্ত্রী সেফালিকে দেখভাল করতে আসবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। হয়তো কারন দেখাবে- করোনা কিংবা তার নিজের অসুস্থতা। যদি এমন কিছু ঘটতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে, প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এটার ভাঙ্গন শুরু। 

অন্যদিকে, যদি নাফিজ আমাকে গার্জিয়ান হিসাবে সামনে রেখে ও ওর বিয়ের সমস্ত তদারকি করাতো, আর যাইই হক, নাফিজের শশুর বাড়ির মানুষের যে বাগাম্বর ভাবটা এখন আছে উচ্চবিত্তের ধারনায়, সেটা আর থাকতো না। কারন সে আমার তুলনায় কিছুই না। আমার মতো এমন একটা গার্জিয়ানের সামনে না নাফিজের স্ত্রী, না নাফিজের শশুড়বাড়ির কোনো লোক মাথা উচু করে কথা বলতে পারতো। সেফালিও তার গলা উভয়ের সামনে ঠিক আগের মতোই ধরে রাখতে পারতো। আমি একদিক থেকে একটা ব্যাপার নিয়ে শান্তিতে আছি যে, আমাকে আর এসব উটকো ঝামেলা আর পোহাতে হবে না।

এখানে আরেকটা কথা না বললেই নয়। কোনো একদিন নাফিজের শশুরবাড়ির লোকেরাও আমাকে হারিকেন জালিয়ে হন্যে হয়ে খুজবে যখন নাফিজের সাথে, নাফিজের স্ত্রী, কিংবা সেফালির সাথে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা তৈরী হবে। তখন তারা খুজবে কাকে ধরলে সমস্যা সমাধান হবে। আর সেই "কাকে ধরলে" খুজতে খুজতে ঠিক আমার আস্তানায় চলে আসবে এসব 'উচ্চবিত্তরা"। আমি আসলে সেদিনটার জন্য অপেক্ষা করছি। শাস্তিটা আমি তখন দেবো ঠিক এভাবে যে- Who are you people? Do I know you?

২৯/০১/২০২১- নূরজাহান আপা

Categories

নুর জাহান আপা আমার জেঠস ছিলেন। অর্থাৎ আমার স্ত্রীর আপন বোন। তিনি একজন শিক্ষিকা ছিলেন, মীরপুরের সিদ্ধান্ত স্কুলের শিক্ষিকা। আমি নুরজাহান আপাকে চিনি আমারও বিয়ের প্রায় অনেক বছর আগ থেকে কারন আমরা গোলারটেকেই থাকতাম পাশাপাশি। আমি যেহেতু সবার সাথে খুব একটা মিশতাম না তাই বিয়ের আগে ঊনাদের সাথেও আমার খুব বেশি ঊঠানামা ছিল না। জাস্ট  চিনতাম, ঊনারাও আমাকে চিনতেন। তার স্বামীর নাম জয়নাল চৌধুরী, তিনি প্ল্যানিং কমিশনে চাকুরী করতেন এক সময়। বর্তমানে অবসর নিয়েছেন। ভালো মানুষ একজন।

নুর জাহান আপা অনেকদিন যাবত লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। আপা নিজে খুব পহেজগার মহিলা ছিলেন। তার দুই মেয়ে, সোমা এবং সনি আর এক ছেলে, নাঈম আহমদ। দুইজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। আর ছেলে থাকে আমেরিকায়। সেও বিয়ে করেছে।

আপার শরীরটা আস্তে আস্তে খারাপ হবার সাথে সাথে তিনি প্রথমে ইন্ডিয়া যান চিকিতসা করাতে। ওখানকার ডাক্তাররা বলেছিলেন যে, তার লিভার ট্রান্সপ্লান্টেসন করাতে হবে, তানা হলে তাকে আর বেশিদিন বাচানো যাবে না। ব্যাপারটা প্রায় ঠিকই ছিলো। ইন্ডিয়া থেকে আসার পর আপা দ্রুত খারাপের দিকে যেতে শুরু করলেন। শেষে তার লিভার ট্রান্সপ্লান্টেসন করাবেন এই সিদ্ধান্তই নেওয়া হলো। কিন্তু জটিল ইন্ডিয়ান সিস্টেমের কারনে ইন্ডিয়া গিয়েও তার লিভার ট্রান্সপ্লান্টেসন করা সম্ভব হয় নাই। 

অতঃপর আপা আবারো আমেরিকায় তার নিজের ছেলের কাছে গিয়ে আমেরিকার উন্নত মানের চিকিতসার জন্য। কিন্তু আমেরিকায় যাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মারা যান। তার মৃত দেহ আমেরিকায় সতকার করা হয়। তার মানে নূরজাহান আপাকে আমরা দেশে কবর দিতে পারি নাই।

২৮/০১/২০২১-মিটুল চৌধুরী আসমা

মিটুল চৌধুরী আসমা তার নাম। তার মুল জন্মস্থান মানিকগঞ্জ। জন্ম ৩১সে ডিসেম্বর ১৯৬৮। মিটুলের বাবার নাম- আলাউদ্দিন চৌধুরী, মায়ের নাম- জেবুন্নেসা চৌধুরী। তারা আট বোন এবং তিনভাই। সে সবার ছোট ভাইবোনদের মধ্যে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্অথনীতিতে অনার্স পাশ করে মাস্টার্স করে পরবর্তীতে ১৪বিসিএস দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে জয়েন করেন। প্রথমে তিনি মাইমেন্সিং এর মোমেনুন্নেসা মহিলা কলেজে জয়েন করেন, অতঃপর ঘিউর সরকারী কলেজ, অতঃপর ঢাকা কমার্শিয়াল কলেজ থেকে রাজবাড়ি কলেজ , মাদারীপুর কলেজ ইত্যাদি হয়ে এনসিটিবি এবং তারপর সরকারী বাঙলা কলেজে চাকুরী করেছেন। তিনি বর্তমানে প্রোফেসর  এবং ডিপার্ট মেন্টাল হেড হিসাবে বাঙলা কলেজ, মীরপুরেই কর্মরত আছেন। 

দুই মেয়ের মা। বড় মেয়ে আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা বগুড়া (শহিদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজে) মেডিক্যাল থেকে এম বি বি এস পাশ করেছে। ছোট মেয়ে সাঞ্জিদা তাবাসসুম কনিকা এবার শহীদ আনোয়ারা গার্লস কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ইউ এম বি সি (ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি) তে ভর্তি হয়েছে, তার ক্লাশ আগামী আগষ্ট মাস ২০২১ থেকে শুরু হবে। মিটুলের স্বামী সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন। মেজর হবার পর স্বইচ্ছায় অবসর নেন এবং নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। তাদের দুটু এক্সপোর্ট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী (সুয়েটার্স ইউনিট) আছে, ওয়ান টাইমের একটা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি আছে, আন-নূর কন্সট্রাকশন নামে একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানী আছে। মানিকগঞ্জে আল-আব রার মেডিক্যাল ডায়গনোসিস সেন্টার নামে একটি মেডিক্যাল ইউনিটে পার্টনারশীপ ব্যবসা আছে।   

মিটুল চৌধুরী তার নিজস্ব বাড়ি মীরপুরে থাকেন। এ ছাড়া তাদের বাসাবোতেও কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে। এই গত এক বছরে মিটুল চৌধুরী তার আরো দুই বোনের সাথে জয়েন্ট পার্টনারশীপে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি মানিকগঞ্জে ৬ তালা একটি বিল্ডিং করেছে। আমি জানি সেটায় ওরা কেউ থাকবে না, তার পরেও বড় একটা ইনভেষ্টমেন্ট।

মিটুল চউধুরীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইতিহাসটা হচ্ছে তার বিয়ের ঘটনা। আর এই বিয়ের ঘটনাটা বিস্তারীত বর্ননা আছে Diary 2 March 2021 datewise.docx#৩০/০৫/১৯৮৮- বিবাহ

অধ্যায়ে।

(চলবে)  

২৮/০১/২০২১- উম্মিকা,আমার বড় মেয়ে

Categories

আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা আমার বড়মেয়ে। জন্ম তার ১৬ জানুয়ারী ১৯৯৪ সাল।

তার জন্মের আগে আমার বড় ইচ্ছে ছিলো যে, আমার যেনো একটা মেয়ে হয়। আমি কখনোই ছেলে হোক চাই নাই। আল্লাহ আমার মনের আশা পুরন করেছেন উম্মিকাকে আমার ঘরে দিয়ে। সে খুব ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু সে খুব সিম্পল। 

উম্মিকার জন্মের আগে (সম্ভবত ৪/৫ দিন আগে) আমি একটা সপ্ন দেখেছিলাম। তাহলে সপ্নটা বলিঃ

ঢাকা সেনানীবাসের মেস বি তে আমি একটা রুমে আছি। আমার পোষ্টিং ছিলো খাগড়াছড়িতে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে। মিটুল পোয়াতি অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। যে কোনো সময় আমার বাচ্চা হবে। আমি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছি শুধু আমার অনাগত বাচ্চার আগমনের জন্যই। নামাজ পড়ি, খাই দাই, আর সারাদিন হাসপাতালে মিটুলের সাথে সময় কাটাই।

একদিন রাতে (ডেলিভারির ৪/৫ দিন আগে) আমি সপ্নে দেখলাম যে, আমি আমাদের গ্রামের কোনো একটা দোকানে বসে আছি। ওখানে আরো অনেক লোকজন ও আছে। হতাত করে সবুজ একটা সুতী কাপড় পড়ে একজন মহিলা কোনো একটা ঘরের ভিতর থেকে বাইরে এসে আমাকে বল্লো, আমাকে আপনি কি চিনেন? আমি তাকিয়ে তাকে বললাম, জী না আমি আপনাকে কখনো দেখি নাই। উত্তরে মহিলাটি আমাকে বললেন, যে, তিনি হযরত আছিয়া বেগম অর্থাৎ মুসা (আঃ) এর মা। আমি তো অবাক। কি বলে এই মহিয়সী মহিলা?

আমি ততক্ষনাত উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে তো আপনার কাছে আমাদের নবীজির অনেক চিঠি থাকার কথা! মহিলা বললেন, হ্যা আছে তো।

এই কথা বলে তিনি আবার ঘরের ভিতরে চলে গেলেন চিঠিগুলি আনার জন্য। আমার ঘুম ভেংগে গেলো। আমি তখন সময়টা দেখলাম, রাত প্রায় শেষের পথে কিন্তু তখনো ফজরের আজান পড়ে নাই।

পরদিন ছিলো শুক্রবার। আমি জুম্মা নামাজ পড়ে ইমামের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বললাম। তিনি প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবনা কিনা। আমি বললাম, আমরা খুব শিঘ্রই বাচ্চার আশা করছি। তিনি বললেন, আপনার মেয়ে হবে এবং খুব ভালো একজন মেয়ে পাবেন আপনি।

তার ৪/৫ দিন পর আমি আসর নামাজের পর কোর আন শরীফ পড়ছিলাম। এমন সময় আমার মেস ওয়েটার তড়িঘড়ি করে আমার রুমে নক করে বল্লো যে, স্যার আপনাকে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেছে। আমি তখন যেখানে কোর আন আয়াত পড়ছিলাম, ঠিক সেখানেই মার্ক করে কোর আন বন্ধ কত্রে ছুটে গেলাম হাসপাতালে। মিটুলকে ওটিতে নেয়া হচ্ছে, সিজারিয়ান করতে হবে।

প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার মিষ্টি মেয়েটার জন্ম হলো এই পৃথিবীতে। কি নাম রাখবো সেটা আমি ঠিক করেছিলাম যে, আমি যেখানে কোর আন শরীফ টা পড়া বন্ধ করেছি, আর যে আয়াতে, আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঠিক সেই আয়াত থেকেই কোনো একটা শব্দ দিয়ে নাম রাখবো। অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে- আমি ওই সময়ে হজরত মুসা (আঃ) এর উপরেই আয়াতগুলি পড়ছিলাম। সেখানে আয়াতে লিখা ছিলো- ইয়া হাইলা আলা উম্মিকা মুসা। অর্থাৎ হে মুসা, আমি তোমার মাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলাম।

আমি ঠিক এই শব্দতটাই আমার মেয়ের নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেই যে, ওর নাম হবে উম্মিকা। অর্থাৎ মা।

আমার সেই উম্মিকার প্রথম শিক্ষা শুরু হয় মীরপুর স্টাফ কলেজের টর্চ কিন্ডার গার্ডেনে। অতঃপর মেথোডিস্ট ইংলিশ মিডিয়াম, তারপর শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ এবং সেখান থেকে হলিক্রস। হলিক্রস থেকে উম্মিকা এইচএসসি পাশ করে ডাক্তারী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে শহীদ জিয়া মেডিক্যালে আল্লাহর রহমতে ইন্টার্নী করে ২০২০ সালে ডাক্তারী পাশ করলো। এটা আমার একটা স্বপ্ন যে সে ডাক্তার হোক। আমার আরেকটা স্বপ্ন হচ্ছে, সে যেনো সেনাবাহিনীর ডাক্তার হয়। তাতে যে লাভটা হবে তা হচ্ছে, বাবার সেনাবাহিনীর জব ছিলো। রাজনীতির প্রতিহিংসায় সে ইচ্ছে করে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন, জেনারেল পর্যন্ত যেতে পারেন নাই। আমি চাই আমার মেয়ে সেটা হোক। আর ২য় কারন হচ্ছে, আজীবন কাল সে সেনাবাহিনীর সব বেনিফিট গুলি যেনো পায়। কিন্তু বাবাদের সব সপ্ন তো আর সার্থক হয় না। আমার মেয়ে চায় বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সে বেসামরীক লাইফেই থাকে।

২৮/০১/২০২১- কনিকা, আমার ছোট মেয়ে

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

জানুয়ারী 

২৮ 

সানজিদা তাবাসসুম কনিকা আমার ছোট মেয়ে। জন্ম ২০ সেপ্টেম্বর ২০০০।

ভাবলাম, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় আছি, সময়টা কাটছে না খুব একটা। সবার ব্যাপারে কিছু লিখতে থাকি।

কনিকার যেদিন জন্ম হয়, সেদিন আমি জানতাম না যে, আমার আরেকটি মেয়ে হচ্ছে। আমি জানতেও চাই নাই। এটার পিছনে বেশ একটা কারন ছিলো। আর সেটা হচ্ছে যে, আমার শখ ছিলো আমার প্রথম সন্তান মেয়ে হোক। আল্লাহ সেটা আমার বড় মেয়ে উম্মিকাকে দিয়ে সেই শখ পুরা করেছেন। তারপরের সন্তান আমার ছেলে চাই না মেয়ে চাই এটা নিয়ে আমার কোনো কৈফিয়ত কিংবা কোনো প্রকারের হাহুতাশ ছিলো না। শুধু চেয়েছিলাম যেনো আমার সন্তান সুস্থ্য হয়।

মেয়ে হয়েছে, এই খবরটা দেয়ার আগে ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার প্রথম সন্তান কি? আমি উত্তরে বললাম, যেটাই হোক, মেয়ে হলেও আমি কিছুতেই অখুসি নই। দুটুই আমার সন্তান। এবারো সিজারিয়ান বেবি। মিটুলের অনেক কষ্ট হয়েছে এবার। আমার মা ঢাকার বাসাতেই ছিলেন, আমার মেয়ে হয়েছে শুনে, আমার মায়ের খুব মন খারাপ। আমি হেসেই বাচি না। আমি প্রথমে ব্যাপারটা মজা মনে করে মাকে কিছুই বলি নাই। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখলাম, আমার মা আমার ছোট মের‍্যেকে একেবারেই পছন্দ করেন না। বারবার শুধু একটা কথাই বলে- ওই ত্যুই ছেলে হইতে পারলি না?

আমার মেয়ে তো কিছুই বুঝে না। সে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে আর দাদির লগ্না হচ্ছে। কনিকার যেদিন জন্ম হয়, সেদিন আমার বুকে একটা ধক করে উঠেছিলো। এতো অবিকল চেহারা হয়? একদম আমার মায়ের চেহারা। তার চোখ, মুখ, নাক , কান, মুখের আকৃতি সব কিছু আমার মায়ের চেহারা। আমি মনে মনে ভাবলাম, হে আল্লাহ, তুমি আবার এই ছোট মাকে আমার কোলে দিয়ে আমার বড় মাকে নিয়ে যেও না।

মাকে বললাম, মা , ছোট মেয়ে একেবারে তোমার অবিকল চেহারা পেয়েছে। তুমি যখন থাকবা না, এই মাইয়াটাই আমার কাছে তুমি হয়ে আজীবন বেচে থাকবা। অনেক দিন ছোট মেয়ের নাম রাখা হয় নাই। আমি মাকে দায়িত্ত দিয়েছি মা যেনো ছোত মেয়ের নাম রাখেন। যা খুশী সেতাই রাখুক। অবশেষে একদিন মা, ছোট মেয়ের নাম রাখলেন- কনিকা।

উম্মিকা ছোট অবস্থায় আমার সাথে থাকতে পারে নাই কারন আমি তখন বিভিন্ন সেনানীবাসে খালী পোষ্টিং আর মিশনের কাজে বিদেশ করে বেড়িয়েছি। কিন্তু কনিকার বেলায় বেশ লম্বা একতা সময় এক সাথে থাকার সুযোগ পেয়েছি।

তারপরেও বেশ অনেক গ্যাপ হয়েছে আমার ওদের সাথে থাকার। কনিকা বড় মেয়ের মতো সেও প্রথমে মেথোডিস্ট স্কুল মিডিয়ামে, তারপর মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরী এবং অতঃপর বিআইএস থেকে শহীদ আনোয়ারা গার্লস কলেজে পরাশুনা করে এস এস সি পাশ করেছে। সাংঘাতিক টেনসনবিহীন একটি মেয়ে। অল্পতেই খুব খুতখুতে কিন্তু খুব বুদ্ধিমতি। কনিকা উম্মিকার থেকেও একটু বেশি চালাক কিন্তু ধূর্ত নয়। আমার ইচ্ছে যে, কনিকা এডমিন ক্যাডারে চাকুরী করুক এবং সচীব হয়ে অবসর নিক। অথবা ব্যারিস্টার হোক। তাতে নিজের ব্যবসা নিজেই করতে পারবে, কারো সরনাপন্ন হতে হবে না। 

কিন্তু আমার ইচ্ছাটাই সব কিছু নয়। এই করোনা পেন্ডেমিকের সময় সরকার কর্তৃক অটোপাশের মাধ্যমে কনিকা ইন্টার পাশ করে ফেল্লো। কনিকার দেশে থাকার কোনো ইচ্ছা নাই। এই যে, সবাই আগামীতে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়বে, কোথায় ভর্তি হবে ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত আর কনিকা সারাদিন ইন্টারনেটে বিদেশের কোনো ইউনিভার্সিটিতে সে পড়বে সেটা খুজতে খুজতে ব্যস্ত। সে মনে প্রানে আর দেশে নাই। অনেক গুলি ইউনিভার্সিটিত থেকে কনিকা ইতিমধ্যে অফার লেটার পেয়েছে। আমি জানি আগামী বছরের মধ্যে কনিকা আর দেশে নাই। বাকী কি হয় কে জানে?

২৭/০১/২০২১-আমার+উম্মিকার করোনা

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

২৭ জানুয়ারী 

 

কোনো কিছুই কোনো কারন ছাড়া ঘটে না, এটাই সত্য। যে ঘটনাটা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছিলো কেনো গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেললাম বলে, আজ সেটা পরিষ্কার হলো। আমার করোনা টেষ্টে পজিটিভ এসেছে। আমার বড় মেয়েরও করোনা পজিটিভ। ছোট মেয়ের করোনা নেগেটিভ। উম্মিকার মার তো আগেই একবার করোবা ধরা পড়েছিলো, তাই আর করাইতে দেই নাই। এর মানে হলো, শুধু ছোট মেয়ে ছাড়া আমাদের বাসায় সবার করোনা ধরা পড়লো। আল্লাহ যা করেন নিশ্চয় মংগলের জন্যই করেন। করোনা ধরা পড়ায় একটা জিনিষ মনে হলো যে, আমাদের আর টিকা নেওয়ার দরকার পড়বে না হয়তো।

দেশে টিকা এসেছে, সবাই টিকা নিতে ভয়ও পাচ্ছে, আবার এই টিকা নিয়ে যে কত রাজনীতি হয় তাও দেখা যাবে। এদেশে প্রতিটি জিনিষ নিয়েই রাজনীতি হয়। টিকা নিয়েও লম্বা সময় ধরে রাজনীতি হবে, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। যারা একবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এসছেন, হয়তো তারা আর টিকার ব্যাপারে কোনো মাথা ঘামাবে না, তারপরেও হয়তো টিকাটা নেয়া দরকার হতে পারে যেহেতু এটা একটা ভ্যাকসিন।

বাসায় আছি কদিন যাবত। করোনা হবার কারনে আমার শরীরে কোনো প্রকার আলাদা কোনো সিম্পটম নাই। সুস্থই আছি। বড় মেয়ের ঠান্ডাটা একটু বেশি। আমি প্রতিদিন ছাদে রোদে প্রায় ঘন্টা ২/৩ পুড়ি। ভালোই লাগে। কিন্তু বড় মেয়ে বি সি এস পরীক্ষার প্রিপারেশনে রাত জেগে পরাশুনা করে বলে দিনের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ঘুমায়।

চারিদিকে বেশ ঠান্ডাও পড়েছে ইদানিং। এবারের ঠান্ডাটা একটু বেশী মাত্রায় পড়েছে বলে মনে হয়।

২৭/০১/২০২১-ভাবীর দাফন সম্পন্ন

আমি গত কয়েকদিন যাবত করোনায় ভুগছি। সাথে আমার বড় মেয়েও। কিভাবে ঘটনাটা হলো তা আমার এখনো জানা নাই। সে ব্যাপারটা পরে আসছি। বড় ভাবী (অর্থাৎ লিখনের মা) গতকাল ইন্তেকাল করেছেন। আজ তাকে মানিকগঞ্জ নিয়ে যাওয়া হয়েছে মানিকগঞ্জ গোরস্থানে দাফন করার জন্য। আমি যেতে চেয়েছিলাম কিনা জানিনা, যেহেতু করোনায় ভুগছি, তাই কেহ আমাকে যেতেও বলে নাই। আর আমি যাওয়ার কোনো কারনও দেখিনা।বড় ভাবীর মৃত্যুর ঘটনায় আমার বেশ কিছু অব্জারভেশন চোখে পড়েছেঃ

ক।      লিখন আমেরিকায় ভিসা জটিলতায় এমনভাবে আটকে আছে যে, লিখন ইচ্ছে করলে ওর মাকে দেখতে আসতে পারতো ঠিকই কিন্তু হয়তো আর আমেরিকায় ফিরে যেতে পারবে না। এই ভয়ে লিখন ওর মাকে আর দেখতেই এলো না। ওর মাকে দেখার চেয়ে হয়তো ওর আমেরিকায় থাকাটা জরুরী মনে হয়েছে বিধায় লিখন আর ওর মাকে শেষবারের মতো দেখতে আসে নাই। প্রথিবীটা অনেক ছোট, আর কে কখন কোথায় থাকবে এটার ফয়সালা আল্লাহর হাতে। আমেরিকাতেই থাকতে হবে আমি এটা বিশ্বাস করি না। এই বাংলাদেশেও অনেক বিখ্যাত মানুষেরা বাস করে এবং অনেক পয়সা ওয়ালারা বাস করে। আমেরিকা কোনো সর্গরাজ্য নয় যে ওখানেই সেটেল হতে হবে সব আত্তীয়সজন বাদ দিয়ে। এই যে, আজকে লিখন তার মাকে শেষবারের মতো ও দেখতে পারলো না, ওর মা লিখনের হাতের মাটিও পেলো না, এর কোনো মানে হয় না। আমি জানি না আমার মৃত্যুর সময় আমার বাচ্চারাও আমাকে দেখতে আস্তে পারবে কিনা কিংবা আমি ওদের হাতে মাটি পাবো কিনা, তবে আমি মনে করি এমন কোনো জটিল পরিস্থিতিতে যেনো আল্লাহ আমাকে বা আমার সন্তানকে না ফেলেন যে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় আমি আমার সন্তানদের কাছে না পাই।

খ।       বড় ভাবী যখন করোনায় আক্রান্ত, তখন দেশে তার সব ছেলেরা ছিলো। মারুফ ছিলো, তুহীন ছিলো, মুবীন ছিলো, ইমন ছিলো, সবাই ছিলো। একমাত্র মুবীন সারাক্ষন হাসপাতালে ওর মার জন্য ডিউটি করেছে। আর বাকী ছেলেরা খুব একটা দেখতেও যেত না আবার হাসপাতালেও ছিলো না। যেহেতু মায়ের করোনা, তাই সবাই দূরে দূরেই ছিলো। খুবই হতাশার কথা হচ্ছে, যখন বড় ভাবী মারা গেলেন, তখন মানিকগঞ্জে তার লাশের সাথে কে যাবে, বা কারা যাবে এটা নিয়েও একটা কনফিউশন ছিলো। ইমন, তুহীন কিংবা মারুফ তারা ওর মায়ের সাথে যাবে কি যাবে না তারা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না। লিখন দেশে থাকলে লিখন কি সিদ্ধান্ত নিতো সেটা আমি জানি না, তবে, খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা হতো বলে আমার জানা নাই। বড্ড খারাপ লাগলো কথাতা শুনে যে, যে মা আজীবন ছেলেদের জন্য জীবন দিয়ে দিলো, যে মা এতোটা বছর ওদেরকে বুকে পিঠে মানুষ করলো সেই মাকে করোনায় মারা যাওয়ার কারনে মানিকগঞ্জে গোরস্থানে একমপ্যানি করবে কি করবে না সেটাই এখন সবচেয়ে যেনো বড় প্রশ্ন। আসলেই পৃথিবীটা খুবই সার্থপর একটা জায়গা। এখানে মানুষ নিজেকে ছাড়া আর কারো কথাই সে ভাবে না।

গ।       লিজি আপা যখন বিল্ডিং বা বাড়ি বানানোর জন্য তার বাবার সম্পত্তির উপর সবার কাছে অনুমতি চাইলেন, তখন সব ভাইবোনেরা রাজী থাকলেও শুধুমাত্র লিখনদের পরিবার লিজি আপাকে তার বাবার সম্পত্তি থেকে উতখাত করার জন্য একেবারে উঠেপড়ে লেগেছিলো। লিখনের সাথে একজোট হয়েছিলো ওর স্ত্রী শিল্পীও, যদিও শিল্পি লিজি আপার আপন বোনের মেয়ে। লিজি আপার এই বাড়ি বানানো নিয়ে লিখন এবং তার পরিবার (বড় ভাবী সহ) এমন একটা সিচুয়েশ তৈরী করে ফেলেছিলো যে, তুহীন বলেছিলো- যদি লিজি ওখানে বাড়ি বানায়, তাহলে লিজিকে সে খুন করে ফেলবে, মারুফ বলেছিলো যে, লিজিকে সে লাথি লাথিতে ওখান থেকে বের করে দেবে, আর অন্যান্রা বলেছিলো, তারা কখনোই আর মানিকগঞ্জে যাবে না। ইত্যাদি। আমি আর মিটুল সব সময় চেয়েছি যে, লিজি আপা যেনো ওখানে বাড়িটা করে। এর জন্য আমি নেপথ্যে থেকে যতো প্রকার সাহাজ্য করার দরকার, আমি সেটাই করেছি। আজ ঠিক এই মুহুর্তে মানিকগঞ্জে লিজি আপার ৬ তালা বিল্ডিং সায় দাঁড়িয়ে। বড় ভাবীর মৃত্যু দিয়ে আল্লাহ এমন সময় ওদেরকে মানিকগঞ্জে নিয়ে গেলেন যখন ওরা সবাই দেখল লিজি আপার ৬ তালা বাড়ি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, আজ সেই লিজি আপার বাড়িতেই সবার আশ্রয়। কি অদ্ভুদ না? আল্লাহ জুলুমকারীকে এবং অহংকারীকে কিছুতেই পছন্দ করেন না। সমস্ত দম্ভ ভেংগে দিয়ে আজ আল্লাহ এইসব সদস্যদেরকে একেবারে সেই লিজি আপার বাড়িতেই উঠাইলো। কিছু কি শিখতে পারলো ওরা?

ঘ।       মজার ব্যাপার হলো, যেদিন লিজি আপা মানিকগঞ্জে বিল্ডিং এর কাজে হাত দিলেন, ঠিক সেই সময়ে লিখন আমেরিকায় গিয়েছিলো রুটিন ভিজিটে। কি এক অদৃশ্য শক্তিতে আল্লাহ লিখনকে ভিসা জটিলতায় এমনভাবে আটকে দিলো যে, লিখন আর বাংলাদেশেই আসতে পারলো না। লিখন বলেছিলো যে, সে যদি দেশে থাকে তাহলে লিজি আপা কিভাবে বাড়ি বানায় সেটা সে দেখে নেবে। লিজি আপার পিতার ভিটা, তার নিজের হকের জমি, লিখনের জমিও না, অথচ লিখনের এই রকম দাম্ভিকতা আল্লাহ নিশ্চয় পছন্দ করেন নাই। কোনো না কোনো অজুহাতে আল্লাহ ঠিক তার ম্যাকানিজমে একেবারে সুদুর আমেরিকায় এমন করে বন্দি করে দিলো যে, ওর বাংলাদেশের চাকুরীটাও আর নাই, আর আমেরিকায় ৭/১১ দোকান গুলিতে খুবই সস্তায় একটা জব করতে বাধ্য হলো। এই ঘটনাটা আর যে কেউ যেভাবেই দেখুক, আমি দেখি আল্লাহর ন্যায় বিচারের নমুনা।

ঙ।       এখানে একটা কথা না বললেই না। মারুফের ছেলের বয়স মাত্র ৩ বছর। বড় ভাবী তার নায় নাতকুরের জন্য ছিলেন ডেডিকেটেড। সারাক্ষন তাদেরকে খাওয়ানো, পরানো, বাইরে নিয়ে গুরিয়ে আনা, কোথাও বেড়িয়ে আনা ইত্যাদি কাজগুলি খুব আদরের সাথে করতেন। আর তার নাতি নাতকুরেরাও বড় ভাবীর প্রতি খুবই ভক্ত ছিলো। কিন্তু যেদিন বড় ভাবীর করোনা ধরা পড়লো, ঠিক সেদিন থেকে মারুফের ৩ বছরের ছেলে মশারী তাংগীয়ে যে এক ঘরে বসে গেলো, ভুলেও সে আর তার দাদীর কাছে আসে নাই। সে বারবার বলতো যে, সে করোনায় ভয় পায় এবং সে তার দাদীর কাছে আসতে চায় না। বড় ভাবীর মরার আগ পর্যন্ত এই অবুঝ বাচ্চাটাও আর ভাবীর কাছে আসে নাই। কি নির্মম তাই না?

যাই হোক, আমি এই কথাগুলি বলে কাউকে ছোট করতে কিংবা আল্লাহ ওদেরকে শাস্তি দিয়েছেন এটা ভাবি না। শুধু ভাবী যে, মানুষের উচিত বান্দার হক সব সময় ফিরিয়ে দেয়া। এ জগতে কেউ থাকে না, থাকবেও না। কিন্তু আজ যে কর্মগুলি আমরা রেখে গেলাম, সেটার ফলাফল সে পাবেই।

এইমাত্র মিটুল বড় ভাবীর দাফনের পর বাসায় এলো। বেশ কিছু জানতে ইচ্ছে করল। যেমন, লিখন আমেরিকায় আছে, ওর মা মারা গেলেন, লিখন কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, ছটফট করেছে কিনা, না আসার কারনে, কিংবা অনেক মন খারাপ করে ওর মার জন্য কান্নাকাটি করছে কিনা ইত্যাদি। মিটুল জানালো যে, যখন ভাবীকে দাফনের নিমিত্তে কবরে নামানো হবে, তখন অনেকেই ভাবীকে দেখার জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলো। কেউ কেউ আবার ভিডিও ও করেছিলো। ওই সময় নাকি ইমন এবং মুবীন লিখনকে ফোন করে জানিয়েছিলো লিখন ভাবীর ভিডিও দেখতে চায় কিনা, কিংবা কিছু বলতে চায় কিনা। লিখন নাকি উত্তর দিয়েছিলো যে, সে কনো কিছুই দেখতেও চায় না, না ওর ছেলেমেদেরকে দেখতে দিতে চায়। এই ব্যবহারের অর্থ শুধু জানে লিখন। যাই হোক, ইতিহাস এটাই।

আজ থেকে হাসমত আরা (ভাবীর নাম) নামে কোনো মহিলার আনাগোনা এই দুনিয়া থাকলো না। কয়েকদিন সবাই তাকে নিয়ে হয়তো গল্প করবে, হাহুতাশ করবে, কেউ কেউ হয়তো তার অভাব ফিল করবে, কেউ আবার তার কথা ভুলেই যাবে। সময় তাকে আরো বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এক সময় হাস মত আরা নামে কোনো মহিলা এই দুনিয়ায় ছিলো এটাই কেউ জানবে না। মানিকগঞ্জের বাড়িই বা কি, সন্তানই বা কি কোনো কিছুই আর নাই।  এটাই জীবন। জীবন সব সময় মৃত্যুর কাছেই পরাজয় বরন করেছে, আর করবেও। বড় ভাবী এখন ৩ হাত মাটির নীচে অন্ধকার কবরে একা এবং তার সাথে আর কেহই নাই। না তার সাধের বিছানা, না নায় নাতকোর, না আমেরিকার কোন সুসংবাদের কাহিনী।

আমি সব সময় মৃত মানুষের জন্য দোয়া করি।  ভাবীর জন্যেও আমি দোয়া করি। তার উপরে আমার কোনো রাগ নাই।

২৬/০১/২০২১- আমার করোনা +

গত ২৩/০১/২০২১ তারিখের সকাল ৮ টার সময় হটাত করে মনে হলো কোনো গন্ধই পাচ্ছি না। এর ২/৩ দিন আগে থেকে একটু একটু শরীর খারাপ ছিলো। দূর্বল লাগছিলো, ঘুম ঘুম ভাব ছিলো। একটু একটু ঠান্ডাও ছিলো। গন্ধ না থাকার কারনে ভাবলাম, করোনা কিনা। এর মধ্যে আবার জিহবায় একটা ছোট দাগ ছিলো যেটা আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কোনো ঘা। ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম, উনি বললেন ভিটামিন সি খান। হয়তো ভিটামিন সি এর অভাব। ব্যাপারটা আমলে নিয়েছিলাম বটে কিন্তু গত কয়েক মাস আমি যেভাবে ভিতামিন সি খেয়েছি, তাতে আমার মনে হয়েছিলো আমার ভিটামিন সি সারপ্লাস হবার কথা। তারপরেও আরো বেশী করে লেবু প্লাস ভিটামিন সি ট্যাবলেট খাইতে থাকলাম। কিন্তু ঘা টার কোন কমার লখন দেখি নাই। এর মধ্যে হটাত করে গন্ধ না পাওয়ার কাহিনী। একটু ভয় তো পাইলামই কিন্তু শরীরে অন্য কোনো উপসর্গ নাই। যেমন, কোনো কাশি নাই, গলা ব্যথা নাই, জর নাই, অক্সিমিটারে অক্সিজেন লেবেল ৯৯% দেখায়। গায়ে কোনো ব্যথাও নাই। তারপরেও সেফ এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল, আর ম্যাগ্নেশিয়াম ট্যাবলেট খাইলাম বেশ কয়েকদিন। অফিসেও গেলাম না। একই কাহিনী আমার বড় মেয়ের উম্মিকা। সেও কোনো গন্ধ পায় না কিন্তু রুচী আছে। অবশ্য ওর একটু ঠান্ডার ভাব আছে। সেটাও মারাত্তক না। তাই আমি , উম্মিকা আর কনিকার করোনার স্যাম্পল টেষ্টের জন্য প্রভা হেলথ কেয়ারকে বাসায় এনে স্যাম্পল দিলাম। এই তিন দিন যাবত ছাদে প্রায় ২/৩ ঘন্টা করে রোদ পোহালাম। রোদ পোহাইতে ভালোই লাগে।

একটু আগে ছাদ থেকে বাসায় এসে গোসল করলাম। আমি সাধারনত গোসলের পর পারফিউম দেই। হটাত খেয়াল করলাম, আমি পারফিউমের গন্ধটা পাচ্ছি। যেটা আগে একেবারেই পেতাম না। কি হলো?

কেদনোই বা গন্ধের সেন্সর আউট হয়ে গেলো আবার কেনোই বা গন্ধের সেন্সর আবার ফিরে এলো এটা আমার কাছে একটা গবেষনার ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। যাই হোক, অন্তত খারাপ কিইছু সম্ভবত হয় নাই। বাকীটা আল্লাহ ভরসা।

২৬/০১/২০২১-লিখনের মা মারা গেল

সারাদিন বাসাতেই ছিলাম। এ কদিন বাসাতেই ছিলাম আসলে কারন আমি কোনো কিছুতেই গন্ধ পাচ্ছিলাম না। দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। ফোনটা সাইলেন্ট করা ছিলো। ফলে অনেকেই ফোন করেছিলো বুঝতে পারি নি। এই মাত্র ১০ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠে কিছু নাস্তা করলাম। দেখলাম অনেকক্ষন যাবত মিটুল ওর ভাই বোনদের সাথে কথা বলছিলো। বিষয় ছিলো ‘বড় ভাবীর অসুস্থতা”। বড় ভাবী বেশ কয়েকদিন যাবত করোনার কারনে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। লাইফ সাপোর্টে ছিলো। হটাতই মিটুলের চিৎকার শুনলাম। বুঝলাম, ভালো খবর নাই।

কানতে কানতেই ড্রইং রুম থেকে আমার রুমে এসে বল্লো যে, “বড় ভাবী আর নাই”। ইন্না নিল্লাহে পড়ে বললাম, ভাবীর জন্য দোয়া করো, এ ছাড়া তো আর কারো কিছুই করার নাই।

মৃত মানুষের উপর কোনো রাগ রাখতে নাই। এই মুহুর্তে বড় ভাবীর উপরেও আমার কোনো রাগ নাই। তবে যতোদিন উনি জীবিত ছিলেন, তার উপর আমার একটা প্রচ্ছন্ন রাগ ছিলো। আর রাগটা নিতান্তই আমার কারনে নয়। মানুষ যখন জেনে শুনে ইনসাফ করে না, তার জন্য আমার রাগ হয়। বড় ভাবীর উপরেও আমার এই একটা কারনে বেশ রাগ ছিলো।

বড় ভাবীর ছেলে লিখন ভালো চাকুরী করে। কিন্তু তার চাকুরীর সমমর্যাদার মতো তার মধ্যে ইনসাফের অনুপাতটা একই রকম ছিলো না। লিজি আপা যিনি কিনা বাবার হক প্রাপ্য এবং লিজি আপাকে এই লিখন এবং তার পরিবার যে কোনো ভাবেই হোক, তার সেই বাবার হক থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে যতটুকু শক্তি প্রয়োগ করা যায়, সেটাই করার চেষ্টা করেছিলো। আমি এই অন্যায়টা যেনো না হয় তার ১০০% বিপরীতে দাড়িয়েছিলাম। শেষ অবধি লিজি আপারই জয় হয়েছিলো আল্লাহর রহমতে। কোনো একদিন আমি বড় ভাবীকে একটা কথা বলেছিলাম যে, যেদিন মারা যাবেন, সেদিন যেনো সবার হক সবাই পেয়েছে কিনা সেটা মন থেকে জেনে তারপর মারা যান। তানা হলে এর কৈফিয়ত দিতে দিতে আল্লাহর কাছে ঘেমে যাবেন। যদি লিখন কোনো অন্যায় করে থাকে, তাহলে মা হিসাবে লিখনকে বুঝানো দরকার যে, এটা অন্যায়। এটুকু বল্লেও আপনার পক্ষে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হয়, আপনি বেচে যাবেন।

আজ বড় ভাবীর সমস্ত ফাইল ক্লোজড। উনি মাত্র ১০ মিনিট আগে ইন্তেকাল করলেন। (রাত সাড়ে আটটায়)। লিখনকে কোনো প্রতিবাদ করেছিলেন কিনা জানি না। তারপরেও আমি তার জন্যে দোয়া করি তিনি যেনো জান্নাতবাসী হোন।

লিখন আমেরিকায় ভিসা জটিলতায় এমনভাবে আটকে আছে যে, না সে ঢাকায় আসতে পারতেছে, না ওখানেও ভালো কোনো জব করতে পারতেছে। ছেলেটার মধ্যে ভীষন রকমের খারাপ কিছু এটিচুড আছে যা ওর সাথে মানায় না। যাই হোক, যে যেভাবে চলে হয়তো ঈশ্বর তাকে তার পূর্ন প্রতিদান সেভাবেই দেন। কারো জন্য বদদোয়া আমি করি না। কিন্তু আমি সবার জন্য ইনসাফ করতে সর্বদা আগ্রহী।

আল্লাহ ভাবীকে জান্নাত বাসী করুন।

২৬/০১/২০২১-ভাবীর (লিখন) শেষ অনুষ্ঠান

গত ১/১২/২০১৯ তারিখে কোরবানীর পরপরই আমাদের বাসায় একটা পারিবারিক অনুষ্ঠান ছিলো। সেদিনই ছিলো বড় ভাবীর জন্য তার জীবনে আমাদের বাসায় শেষ অনুষ্ঠান। আর আজ ২৬/০১/২০২১ তারিখ। এই দুইটি তারিখের মধ্যে মোট দিন ছিলো ৪২২ দিন অর্থাৎ ১ বছর ১ মাস ২৫ দিন।

আমরা প্রায়ই বলি, আমাদের আয়ুষ্কাল নাম্বারড। কিন্তু কোন তারিখ থেকে এই নাম্বারটা কাউন্ট ডাউন হচ্ছে সেটা আমাদের কারোরই জানা নাই। সেদিন ১/১২/২০১৯ তারিখে বড় ভাবীকে আমরা খুব স্বাভাবিক একজন সুস্থ্য মানুষ হিসাবেই আনন্দে মেতেছিলেন দেখেছিলাম। উনি আসলেন, সভাবসুলভভাবেই সবার সাথে কথা বললেন, দেখা করলেন, খাওয়া দাওয়া করলেন, সবার সাথে ছবি তুল্লেন, একসময় সবার সাথে বাসায়ও চলে গেলেন।

উনি কেমন মানুষ ছিলেন সেটার বিবেচনার ভার আজকের দিনের প্রতিটি মানুষের কাছে ভিন্ন। কারো কাছে তিনি দেবীর মতো, কারো কাছে তিনি অতি প্রিয়জন, কারো কাছে আবার অপ্রিয় মানুষের মতো কিংবা কারো কাছে হয়তো কিছুই না। আমি তাকে সব সময়ই পছন্দ করতাম। কিন্তু একটা জিনিষ আমার কাছে সারা জীবন ঈসশরের কাছে রহস্যের মতো প্রশ্ন থেকেই ছিলো। আর সেটা হচ্ছে, কেনো ঈশ্বর কোনো অবলা মেয়ে মানুষকে তার সংগীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অনেকদিন বাচিয়ে রাখেন? এর উল্টাটা তো হতে পারতো বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে? এসব মহিলাদের অনেক কষ্ট থাকে একা একা বেচে থাকার। কেনো বলছি এ কথাটা?

এর কারন, যখন কোনো অবলা নারী তার সংগীর বা স্বামীর অনেক পরে তার জীবন অবসান ঘটান, তাদের অনেক বেদনা থাকে, অনেক চাওয়া থাকে কিন্তু তার সেই বেদনার অংশীদার তিনি কাউকে না দিতে পারেন, না বলতে পারেন। নিজের মনের মধ্যেই সব চেপে রাখেন। তার সংগী যখন আর বেচে থাকে না, তখন তার অনেক ইচ্ছা অনিচ্ছার মুল্যায়ন আর প্রাধান্য থাকে না। আমি এই তথ্য কথাটা বড় ভাবীর ব্যাপারে বলছি না। আমি আমার মাকেও দেখেছি। আমার বাবার অনুপস্থিতিতে আমার মাকেও কারো না কারো উপরে এমনভাবে নির্ভরশীল হতে হয়েছিলো যেখানে নিজের বাক স্বাধীনতা কিংবা ইচ্ছা অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারতেন না। তাই, একটা বিধবা মহিলার থেকে অসহায় আর কোনো মানুষ হয় না। এই অসহায়ত্ত খাবারের জন্য নয়, এই অসহায়ত্ত কোনো স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয় যে, তিনি তার ইচ্ছেমতো যেখানে সেখানে ঘুরে ফিরতে পারেন না এমন। এই অসহায়ত্ত অন্য রকমের। অনেক কিছুই আর নিজের থাকে না যা এক সময় ছিলো। সংগীর অবর্তমানে যেনো সব কিছু হারিয়ে যায়। চাপিয়ে রাখে নিঃশ্বাস, দমন করে রাখেন আশ্বাস, কিংবা অন্ধ হয়ে থাকেন তার নিজের বিশ্বাস থেকে অথবা কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধেও। কিন্তু সব কিছু তারা বুঝেন, জানেন, ভাবেন কিন্তু বলার শক্তি থাকে না।

যাক যা বলছিলাম, সেই ১/১২/২০১৯ থেকে ভাবী কি জানতেন যে, তার দিনগুলি ক্রমশ ফুরিয়ে যাচ্ছে? তিনি যদি জানতেন যে, আজ এই ১৬/১/২০২১ তারিখের পর আর এই পৃথিবীর কোনো কিছুই তার থাকবে না, তাহলে হয়তো তিনি গুনতেন একটি একটি করে দিন, ক্ষন সেকেন্ড আর মুহূর্ত যে, তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন শেষ দিনটার জন্য। ঈশ্বর এই দুটু তারিখ মানুষের বা প্রানীর জীবন থেকে এমনভাবে লুকিয়ে রেখেছেন যে, আজ অবধি কারোরই, হোক সে ক্ষমতাধর কোনো সম্রাট, কিংবা অতি জাদরেল বিচারপতি কিংবা সম্পদের অঢেল মালিক, জানার কোনো উপায় নাই। ভাবীও জানতেন না যে, গত ১/১২/২০১৯ তারিখে যে, ভাবীর আর মাত্র ৪২২ দিন ব্যালেন্স ছিলো।

হয়তো এমনি একটা মুহুর্ত আমার জীবনেও আসবে যার ইতিহাস এবং আমার জীবনের নাম্বারটা আজ থেকে কত ব্যালেন্স আছে বা ছিলো সেটা হয়তো কেউ লিখবেন।

(বড় ভাবীর জন্য জান্নাত কামনায় তাকে উতসর্গ করা এই লেখা)

  

২১/০১/২১-তারিখটা চোখে পড়তেই

Categories

তারিখটা চোখে পড়তেই খুব একটা খটকা লাগল। ২০২১ সাল।

যখন এই তারিখটা এমন হবে ২১২০ সাল, তখন প্রায় ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। আমার বয়সের আর কারোরই সম্ভবত এই দুনিয়ায় বেচে থাকার সম্ভাবনা একেবারেই নাই। আজকের দিনের এমডির চেয়ারটায় আর আমি বসে নাই, আজকের দিনে আমার ব্যবহৃত গাড়িটি হয়তো অন্য কেউ ব্যবহার করছে অথবা আর এটা কোনো রাস্তাতেই নাই, অনেক পুরানো বলে। আমার সাধের বাড়িটায় হয়তো অন্য কেউ তার মতো করে বাস করছে, কিংবা কোনো ভাড়াটিয়াও হতে পারে। যে যত্ন করে আমি আমার ছাদ বাগানটা প্রতিদিন যত্ন করি, পানি দেই, গাছগুলির পাতায় হাত বুলিয়ে দেই, সেখানে আর কোনো ছাদ বাগান আদৌ আর থাকবে কিনা কে জানে। ছাদের কোনায় যে পাখীটা বাসা বেধেছিলো, সেটা কবেই মরে গেছে, হয়তো অন্য কোনো পাখী এসে তার জায়গাটা দখল করেছে। অথবা সেখানে আর কোনো বাসাই নাই।

একশত বছর পর, সেই সময়ে চলমান আমার বংশধরেরা বেচে থাকবে, কিন্তু হয়তো আমি ওদের মধ্যে আর বেচে থাকবো না। যেমন বেচে নাই এখন আমার মধ্যে আমার সেই নাম না জানা পূর্বপুরুষেরাও। মাঝে মাঝে আমি তাদের কথা জানতে চাই, তাদের সবার নামও জানতে চাই, তাদের জীবনধারার ধরন জানতে চাই, নিশ্চয়ই তারাও অনেক ব্যস্ত ছিলো, নিশ্চয়ই তারাও প্রাত্যাহিক জীবনে অনেক গল্পগুজব করতো, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিত, হয়তো কখনো জীবনের সমস্যায় জর্জরীত হয়ে মানসিক কষ্টে কিংবা জীবনের কোনো সাফল্যে আনন্দিত হয়ে হয়তো অতিশয় খুশীতে কোনো এক বিকালে গোল করে কোনো অনুষ্ঠান করতো। আর এটাই তো হবার কথা। যেমন হচ্ছে ঠিক আমার এই সময়টায়। খুব জানতে ইচ্ছে করে, কেমন ছিলো আমার দাদীর দাদীমা? অনেক সুন্দুরী? কিংবা অনেক মায়াবী? অথবা কেমন সুপুরুষ ছিলেন আরো একশত বছর আগের আমার দাদার দাদারা? কে কোন মাছ খেতে পছন্দ করতো? বা কার সপ্নের বাসনা কেমন ছিলো? খুব জানতে ইচ্ছে করে, কি ছিলো তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা যা পূর্ন হয় নাই অথচ শখ ছিলো?

সেই একশত বছর আগে হয়তো অনেক জনপদ ছিলো যা কালের বিবর্তনে সব কোথায় যেনো হারিয়ে নতুন জনপদ তৈরী হয়েছে। হতে পারে যে জায়গাটায় আমার পূর্বসুরী কোনো এক দাদা তার প্রেয়সীর টানে হয়তো কোনো এক রাস্তার ধারে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছিলো, আজ সেই জনপদ কোথাও নাই, হয়তো তলিয়ে গেছে কোনো এক নদীর ভাংগনে, অথবা সেই জনপদ বিলুপ্ত হয়ে হয়তো তৈরী হয়েছে আজকের কোনো অসাধারন অট্টালিকা। আজ যদি সেই সব মানুষ গুলিকে আবার ফিরিয়ে আনা যেত, হয়তো বলে উঠতো, ‘ওই যে দেখছিস ওই বড় বিল্ডিংটা, ওখানে ছিলো এক প্রকান্ড খাল, ওখানে আমরা সাতার কাটতাম। ওই যে দেখছিস বড় রাস্তাটা, ওটা ছিলো তখনকার প্রতাপ্সহালী সগীর মিয়ার হারিয়ে যাওয়া কোনো এক প্রাসাদ। আরো কত কি’।

তাদের কারো কথাই আজ কেউ মনে রাখে নাই। মনে রাখার দরকারও মনে করে না। আসলে সময় কাউকেই আজীবন মনে রাখতে দিতে চায় না। কত শতক প্রজন্মকে যেমন টপকে আমরা আজ এই শতকে নিজেদের নিয়ে মশগুল আছি, তেমনি আরো অনেক শতক প্রজন্মও আমাদেরকে টপকে তাদের সময়ে তারা তাদেরকে নিয়ে মশগুল থাকবে এটাই তো হবার কথা। অথচ আজ কতই না ব্যস্ত আমি, আমরা। কতই না প্রতিযোগীতা আমাদের মধ্যে। সম্পদের পাহাড় গড়েও যেনো শান্তি নাই। তারপর?

তার আর পর নাই। আসলেই আর কোনো পর নাই।

২১২০ সালে আমরা এই পৃথিবীর কোনো কিছুই আর দেখার সৌভাগ্য হবে না। অথচ তখনো সূর্য যেভাবে উঠার কথা সেভাবেই উঠবে, সেদিকে ডোবার কথা সেদিকেই ডববে। শুধু আমরা আর কোনো সুর্যদোয় কিংবা সুর্যাস্ত দেখতে পাবো না। পর্যন জায়গা গুলি অন্য কেউ উপভোগ করবে, শীতকালের আমেজ, কিংবা নতুন মহামারীও তাই।

জীবনটা আসলে মানুষের কল্পনার থেকেও ছোট।

৯/১/২০২১- আন-নূরের ইতিহাস

Categories

অবাক করার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে এ কয়দিন। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না কি হচ্ছে আসলে। গত ৯ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে একটা ফোন কল এলো আমার এক পরিচিত নেভী অফিসার ফারুকের কাছ থেকে। ছেলেটাকে আমি চিনতাম প্রায় বছর দুয়েক আগে কোনো একটা ব্যবসায়ীক আলাপের মাধ্যমে। সে এসেছিলো আমার কাছে ম্যাগপাই নামে কোনো একটা কোম্পানীর জন্য পলাশপুরে আমার মা ইন্ডাস্ট্রিজের খালী স্পেসটা ভাড়া নেয়ার জন্য। সম্ভবত মোট দুদিন দেখা হয়েছিলো। এরপরে আর কখনোই দেখা হয় নাই। পরে শুনেছিলাম যে, ফারুক আর ওই ম্যাগপাই কোম্পানীতে নাই, সে তার শেয়ার বা মালিকানা ব্যাক করে নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।

এর মধ্যে ওর সাথে আর আমার কোনো কথাবার্তা হয় নাই, না দেখা হয়েছে। খুব একটা ভালো মতো ওকে চিনি বলেও মনে হয় না কিন্তু যেটা বুঝেছিলাম সেটা হলো যে, ছেলেটার মধ্যে একটা জিদ আছে। এর মধ্যে আমিও ওকে ভুলে গিয়েছিলাম, আর ফারুক নিজে থেকেও আর কখনো যোগাযোগ করে নাই। ফারুকের সাথে সেদিন আরেক ভদ্রলোক এসেছিলেন মিষ্টার কাম্রুজ্জামান, তার সাথে আমার এখনো যোগাযোগ আছে কারন ম্যাগপাই কোম্পানীটা এখন তিনিই চালাচ্ছেন আর সেটা আমার পরিত্যাক্ত মা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কমপ্লেক্সেই। অনেকবার আমি নিজে থেকেই ফারুকের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম, কিন্তু খুব বেশী একটা তথ্য কাম্রুজ্জামান সাহেব হয় দিতে চান নাই অথবা যে কোনো কারনেই হোক ফারুক সম্পর্কে তিনি খুব একটা আগ্রহ দেখান নাই।

যাই হোক, অবশেষে, অনেকদিন পর সেদিন ৯ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে হটাত করে ফারুক আমাকে ফোন করেছিলো। ওর ফোন নাম্বারটা আমার কাছে সেভ করা ছিলো, তাই বুঝতে অসুবিধা হয় নাই ফারুকের কল। সাধারনত, আমাকে যারা ফোন দেয়, হয় তারা কোন কাজ চায় অথবা কোনো ধরনের সাহাজ্য বা বুদ্ধিই চায়। অনেক সময় আমি ফোন ধরি, অনেক সময় ফোন ধরিও না। ঠিক একইভাবে সেদিন ৯ ডিসেম্বরে ফারুক যখন সকাল ১১ টার দিকেব আমাকে ফোন করলো, আমি প্রথমে ভাবলাম, হয়তো কোনো সাহাজ্যের জন্যই ফোন করেছে। দিনটায় খুব ব্যস্ত ছিলাম, ভাবলাম, ব্যস্ততা শেষ হলে ফোন ব্যাক করবো। তাই ততক্ষনাত আর ফোনটা ধরতে চাই নাই।

দুপুর পার হয়ে গেলো। আমি একটু ফ্রি হলাম। মোবাইলটা হাতে নিতেই ফারুকের মিস কলটা চোখে পড়লো। একবার ভাবলাম, ওকে একবার ফোন ব্যাক করি। এমনো তো হতে পারে যে, ওর কোনো বিপদ যেখানে হয়তো আমার সাহাজ্য আসলেই দরকার, আবার এমনো তো হতে পারে সে আমাকে এম্নিতেই কেমন আছি জানার জন্য ফোন করেছে কুশল বিনিময় করার জন্য। আবার এমন তো হতে পারে যে, এই ফোন কলটা আমার জন্যই জরুরী!

ফোন দিলাম, ফোনে শুধু ফারুক আমাকে বল্লো যে, স্যার আমার কিছু আত্তীয় আমার বাসায় এসেছে। বাচ্চা মানুষ, কিন্তু বিশাল একটা কাজ হাতে নিয়ে ফেলেছে চায়নীজদের কাছ থেকে, কন্সট্রাকশন রিলেটেড। জিজ্ঞাসা করতে করতে জানলাম যে, যে কোনোভাবেই হোক, ওরা চাইনীজ কোম্পানী “চাইনীজ কন্সট্রাকশন সেভেন্থ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশন কর্পোরেশন লিমিটেড” থেকে বড়সড় একটা ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে বালু আর ইট সাপ্লাইয়ের কাজে। কিন্তু ওদের টাকা নাই তাই কাজটা করতে পারছে না। ওয়ার্ক অর্ডারের ভ্যালু প্রায় হাজার কোটি টাকার উপরে।

ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লেগেছে আমার কাছে। আর অদ্ভুত লাগার অনেকগুলি কারনও আছে। বহুদিন যাবত আমি আর মূর্তজা ভাই এই কন্সট্রাকশন লাইনে কিভাবে ঢোকা যায় সেটার একটা হোমওয়ার্ক করছিলাম। মীর আখতার হোসেন গ্রুপের কর্নধার জনাব মীর নাসিরব আমার আত্তীয়। তার কোম্পানীর মাধ্যমে আমি আর মূর্তজা ভাই কয়েকবার কয়েকটা বড় কাজের সন্ধানেও বেরিয়েছিলাম কিন্তু খুব একটা কাজ হয় নাই। কিন্তু এটা বুঝতেছিলাম যে, সারা ওয়ার্ল্ডে এই কন্সট্রাকশন কাজই একমাত্র ব্যবসা যারা উচু কোনো স্তরে পৌঁছে যেতে পেরেছে। কিন্তু এর জন্য সর্বোচ্চ মহলের অনেক প্রকার আশীর্বাদ যেমন লাগে তেমনি লাগে স্পীড মানির ক্ষমতাও। আমাদের দুটুরই কিছু কিছু সুবিধা ছিলো বটে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কেনো জানি ব্যাপারটা ব্যাটে-বলে সংযোগ হচ্ছিলো না। অনেকবার আমরা আমরাই বেশ কিছু হোম ওয়ার্ক করেছিলাম কিন্তু ব্যাপারটা হোম ওয়ার্কের পর্যায়েই ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের বুরুক্রেটিক সিস্টেমের জন্য আমরা কিছুতেই বুঝতেছিলাম না কিভাবে বড় বড় কন্ট্রাক্ট গুলি ধরা যায়।

ফারুকের ফোনের বিষয়টা মুর্তজা ভাইকে বলার সাথে সাথে ব্যাপারটা বিদ্যুত গতিতে যেনো এগিয়ে যেতে থাকলো। আমার পরিকল্পনা ছিলো, ফারুকের কাছ থেকে ওর আত্তীয়ের কাজের বিষয়টা এর পরেরদিন আমরা দুজনে বসে জেনে নেবো কিন্তু মূর্তজা ভাই যেনো আমার থেকেও বেশী স্পীডি। মূর্তজা ভাইয়ের অনুরোধে আমরা সেদিন রাতেই ফারুক এবং ওর টিমের সাথে মিটিং করলাম মীরপুর ক্যান্টন মেন্টের সিএসডির অভ্যন্তরে। রাত তখন প্রায় ১০টা। । ফারুক নিজে এবং তার দুই আত্তীয় আরিফুজ্জামান রুবেল আর দুলাল মোল্লা নামের দুই জনকেই সেখানে নিয়ে এলো। আরিফ আর দুলালকে দেখে আমার খুব অদ্ভুত লেগেছিলো যে, ওদের বয়স নিতান্তই কম এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ওই রকমের না যার মাধ্যমে এমন সব কাজ হাতে আসবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ওরা সেই কাজটাই করতে পেরেছে যেটা আমরাও পারি নাই। আমি আর মূর্তজা ভাই ওদের কাছে থাকা চায়নীজদের ওয়ার্ক অর্ডারটা নেড়েচেড়ে দেখলাম, পড়লাম, সবই ঠিক মনে হচ্ছিলো। আবার পরক্ষনেই এটাও উড়িয়ে দিচ্ছিলাম না যে, এটা আবার কোনো ফাদ না হয়ে উঠে। ফারুকের উপর আমার কোনো নেগেটিভ ধারনা ছিলো না। ফলে আমি ফারুককে সরাসরি একটা প্রশ্ন করলাম, কেনো ফারুক এই কাজের সাহাজ্যের জন্য আমাকে সে ফোন করলো বা বেছে নিলো। সেতো ইচ্ছে করলে আরো কাউকে বেছে নিতে পারতো। এই কাজ গুলি করার জন্য হয়তো আরো অনেকেই রাজী হবে এবং হতো। ফারুক সেতা না করে, সে আমাকেই কেনো ফোন করলো?

ফারুক জানালো যে, ফারুক নিজেও কোনো কন্সট্রাকশনের কাজে জড়িত নয়। কিন্তু রুবেল এবং দুলাল তারা ওর শশুড় বাড়ির তরফ থেকে আত্তীয়। ওরাই মাঝে মাঝে জীবন ধারনের জন্য ছোট খাটো ঠিকাদারী, কখনো আবার কোনো সাইটে আবার কখনো কোনো বড় কোম্পানীর জন্য টুক টাক সাপ্লাইয়ের কাজ করে থাকে। এসব করতে গিয়ে যেভাবেই হোক, কিছু কিছু মানুষের সাথে ওদের উঠাবসা আছে। আর এই সুবাদে ওরাও চেষ্টা করেছে তারা নিজেরাই কোনো একটা কাজ বাগিয়ে নিতে পারে কিনা।

বাংলাদেশটা এমন এক দেশ যেখানে পয়সার মান সাদাই হোক আর কালোই হোক, বেশীরভাগ মানুষ আজকাল শুধু টাকার পিছনেই ঘুরে। যখন টাকার গন্ধ চারিদিকে মুর মুর করতে থাকে, তখন কে সচীব আর কে মন্ত্রী এর কোনো লেবেল থাকে না। তাদের সবার উদ্দেশ্য একটাই-টাকাটা ধরা। আর এই ধরাকে বলে কালো টাকার বেসাতী। আমরা আজ অবধি কালো টাকার ধারে কাছেও যেতে চাই নাই আর যেতে চাইও না। তাই হয়তো এই গোপন ব্যাপারটা আমাদের ক্ষমতায় ছিলো না। আর যেহেতু আমাদের যপগ্যতা থাকা সত্তেও আমরা কালো টাকার ধারে কাছে যাই না, ফলে এই দেশের বৃহৎ কোনো প্রোজেক্ট আমাদের হাতে আসেও না। যাইই হোক, আমি ফারুকের সাথে বিস্তারীত কথা বলে জানলাম যে, ফারুকের অন্যত্র যাওয়ার ক্ষমতা বা ইচ্ছা থাকলেও সে চেয়েছিলো এমন একজন মানুষ যারা মিথ্যার বেসাতী করেন না আবার ইন সাফের মুল মন্ত্র নিয়ে কাজ করেন। ফারুকের মনে হয়েছে, আমিই সেই ব্যক্তি যার কাছে পুরু ব্যাপারটা শেয়ার করা যায়। আমি একটা কথা প্রায়ই বলে থাকি-I feel safe in the hands of a pious and justified man. চোর ও কিন্তু চোরকে বিশ্বাস করে না, চোর ও কিন্তু চোরকে পছন্দ করে না। চোর নিজেও চায় একজন ভালো মানুষের সাথে কাজ করুক, সম্পর্ক করুক ইত্যাদি। ফারুক চোর নয়, রুবেল কিংবা দুলাল তারাও চোর নয়, কিন্তু আমাদের আশেপাশে এতো বেশী মুখোশ ধারী চোর রয়েছে যে, তাদের বাজ্যিক চেহাড়া দেখে বুঝবার কোনো উপায় নাই, তারা ইন সাফ করে কিনা। কিন্তু মুখে সারাক্ষন হাদিস কালামের কথা উচ্চারিত হতেই থাকে। কিন্তু এই হাদিস শুনে ভরষা করার কোনো সুযোগ নাই। ঠকবার সম্ভাবনাই বেশী। ফারুকের মনে হয়েছে, আমরা সেই ক্যাটেগরির মানুষ যারা ইন সাফ নিয়ে চলেন, কাউকে ঠকাবার কোনো মানসিকতা কখনোই নাই।

প্রাথমিকভাবে আমি আর মূর্তজা ভাই ওদের কাছ থেকে ইনিশিয়াল তথ্য জেনে বেরিয়ে এলাম। আর বললাম যে, যদি সব কিছু সথিক থাকে, তাহলে হয়তো আমরা ওদেরকে নিয়ে কাজ করবো। ওদের টাকা নাই, কিন্তু আমাদের যা আছে তা দিয়ে তাদের পাওয়া ওয়ার্ক অর্ডারের কাজ করা সম্ভব। হয়তো ৩/৪ কোটী টাকার দরকার। আর সেটা আমাদের আছে। কিন্তু কিভাবে করবো, কাজের ধারা কি হবে, কে কিভাবে পার্টনারশীপ করবে তার একটা বিস্তারীত প্রোফেশনাল গাইড লাইন থাকা দরকার।

ওই যে বলেছিলাম একটু আগে যে, বহু আগে থেকেই কন্সট্রা ক শন কাজের ব্যাপারে আমাদের একটা সুপ্ত বাসনা ছিলো, আর সে মোতাবেক একটা হোম ওয়ার্ক করাই ছিলো। এখন ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়, তাহলে সিদ্ধান্তটা নিতে খুব বেশী একটা সময় ক্ষেপন হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস ছিলো। বাসায় এসে আমি আর মুর্তজা ভাই ফোনে আলাপ করলাম যে, এর পরেরদিন অর্থাৎ ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে  ফারুক এবং তার টিমের সাথে আমাদের বিস্তারীত আলাপের দরকার। পরেরদিন আমাদের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী হাসনাবাদে একটা সম্মিলিত মিটিং এর দিন ধার্য্য করা হলো।

পরদিন ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে ফারুক, রুবেল আর আমি (মাঝে মাঝে মুর্তজা ভাই) এক সাথে বিস্তারীত আলাপ করে জানলাম যে, বড় বড় টেন্দার গুলির মধ্যে সরকারী অফিসের ছোট ছোট কর্ম কর্তাদের মাধ্যমে বড় বড় কর্মকর্তারা একটা সিশটেম করে রেখেছে এমনভাবে যে, বড় বড় নামীদামী কোম্পানিগুলিকে তারা এখন আর পারসেন্টেজে বিশ্বাস করতে পারছে না। প্রায়ই তারা তাদের ন্যয্য কালো টাকার ভাগে কম পড়ছে। আর যেহেতু ব্যাপারটা কালো টাকার খেলা, ফলে সেসব কর্মকর্তারা এমন একটা নতুন পলিসি উদ্ভাবন করেছেন যেখানে তাদের ভাগ নিশ্চিত হয় আবার কাজটাও হয়। এতে প্রোজেক্ট ভ্যালু বেড়ে যায়, তাতে কিছুই যায় আসে না। টাকা তো আসবে গৌরী সেনের পকেট থেকে, অসুবিধা কি? এই সিস্টেমে কেউ কাউকে ঠকায় না। আমাদের রুবেল আর আরিফ সে রকম একটা সিশ্তেমের খোজ জানে। এই সিস্টেমে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদুত থেকে শুরু করে দেশের প্রধান হোমরা চোমড়ারাও আছেন। যাক সে কথা এখানে আর না বলি।

রুবেল গত প্রায় ১ বছর যাবত এই সব সিস্টেমের সাথে চলাফেরা করে করে সেও কিছু কাজ হাতে নিতে পেরেছে। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় সমস্যা দাড়িয়েছে তারদের হাতে ওয়ার্কিং কোনো ক্যাপটাল নাই। ব্যাপারটা খুব মনোযোগ সহকারে বুঝলাম।

এবার আমাদের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত জুড়ে দিলাম যে, আমরা কাজ করতে পারবো যদিঃ

ক।      কোনো টাকার মধ্যে অর্থাৎ আমাদের পক্ষে আসা কোনো টাকায় কোনো কালো টাকা না আসে। যেমন কাজে ফাকি দিয়ে অযথা বিল না করা হয়। কিংবা দুই নম্বরী করে কোনো কাজ না করা হয়। আমরা আল্লাহকে ভয় পাই। টাকার অতো বেশী আমাদের দরকার নাই কিন্তু সৎ থাকতে চাই নিজের কাছে, নিজের দেশেরর কাছে আর হালাল টাকা কামাই করতে চাই।

খ।       যে সব কাজ ইতিমধ্যে রুবেল ইঞ্জিনিয়ারিং এর নামে বরাদ্ধ হয়ে গেছে, সে সব কাজ গুলি পুনরায় একটা নতুন কোম্পানী (যেটা আমরা সবাই মিলে ফর্ম করবো) তার নামে আনতে হবে। যদি কোনো কাজ রুবেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্স থেকে ট্রান্স ফার না করা যায়, তাহলে রুবেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্স ও আমাদের সবার মালিকানা থাকতে হবে যাতে সেটাও আমাদের পলিসিতে চলে।

গ।       আমরা সব ফাইন্যান্স করবো, এবং এই ফাইন্যান্স কোম্পানীকে আপাতত লোন হিসাবে প্রদান করা হবে যা কোম্পানী তার লভ্যাংশ থেকে আমাদেরকে পুনরায় পরিশোধ করে দেবেন।

ঘ।       কোম্পানীর একটা নাম ফিক্সড করা হলো। আমি সাথে সাথেই বললাম, এই নতুন কোম্পানীর নাম হ ওয়া উচিত আল্লাহর নামে। যেমন- আন নূর।

সবাই এক সাথে নামটা খুব পছন্দ করলেন। আমরা এই নামের বরকতেই ইনশাল্লাহ সৎ ভাবে সঠিক কাজ গুলি করতে পারবো। আন নূরের জন্ম হয়ে গেলো। এই নতুন কোম্পানীর মধ্যে আমরা নতুন এক ব্যবসায়ীক দরজায় দাঁড়িয়ে গেলাম যার-ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আমি নিজে, চেয়ারম্যান আমার প্রিয় মূর্তজা ভাই, ডাইরেক্টর হিসাবে ফারুক এবং রুবেল আর শেয়ার হোল্ডার হিসাবে থাকলো দুলাল মোল্লা।

জয়েন্ট স্টক থেকে এর নতুন জন্ম শুরু আলহামদুলিল্লাহ।

০১/০১/২০২১- ঠিক এই সময়টায়

Categories

০০:০০ রাত

ঠিক এই সময়টায় পৃথিবীর কোনো না কোনো জায়গায় হয়তো এমন কেউ আছে যে বিগত বছরের কোনো এক অশান্তির জের অন্তরে নিয়ে আজকের বছরের প্রথম প্রহরে পা রাখছে, কেউ বা আবার এই কনকনে শীতে আর সব দিনরাত্রির মতো এই রাতেও নির্জীব রাস্তায় একা কোনো এক গাছের নীচে আশ্রয় নিয়ে ক্ষুধা পেটে বসে আছে, কেউ হয়তো হাস্পাতালের বিছানায় শুয়ে জীবনের শেষ সময়টা কখন ফুরিয়ে যাবে সেই শংকায় নিঃশ্বাস নিচ্ছে, হয়তোবা কেউ তার অতি প্রিয়জনকে হারিয়ে বিগত বছরের শেষ সেকেন্ড পার করে আজকের নতুন বছরের প্রথম সেকেন্ডে ভেজা চোখে ঠায় নীর্জীব আপন মানুষটির পাশে বসে তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবছে। ঠিক এই মুহুর্তে হয়তো কোনো এক নাবিক মহা সমুদ্রের জলরাশীতে ঘোরপাক খেয়ে নিশানা হারিয়ে কোনো এক অচেনা গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে, কিংবা এমনো কেউ আছে হয়তো নতুন জীবনের প্রত্যাশায় যুগলবন্দী হচ্ছে। হয়তোবা কোথাও অঝর ধারায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে, আবার এমনো হতে পারে কোনো এক অজানা দেশে ঘর্মাক্ত গরমে মানুষেরা দিকবিদিক হয়ে কিছুটা পরশের আশায় কোনো এক ব্রিক্ষের নীচে গোল বেধে বসে আছে।

অথচ আমার এখানে অসীম দয়ালু স্রিষ্টিকর্তা আমাকে তোমাকে আর আমাদের সাথে থাকা পরিবারকে কতই না হাসিখুসীতে বছরের শেষ দিনের সাথে আগত বছরের প্রথম মুহুর্তে আনন্দের সাথে মিলন করাইলেন। কোনো কষ্ট নাই, কোনো দুসচিন্তা রাখেন নাই, কোনো আপদ কিংবা বিপদের মধ্যে রাখেন নাই। সুস্থতায় আর মনের পরম শান্তিতে সংযোগ করালেন আরো একটি বছরের সারিতে।

জানি, ঠিক এই মুহুর্তে আমি সবখানে নাই যাদের সাথে আমার থাকার দরকার। ঠিক এই মুহুর্তে আমি আছি কারো একান্তই কাছে, নিকটে। আবার কারো সাথে আছি আমি মনের মাঝে, কাউকে আমি চোখের সামনে রেখে দেখছি, আবার কাউকে আমি মনের চোখে দেখছি। শারীরিক উপস্থিতি যেমন সত্য, তেমনি মানসিক উপস্থিতিও সত্য। এই দুইয়ের মধ্যে তারাই উপলব্ধিটা করতে পারেন যারা এই সত্যতার মধ্যে বাস করেন। চোখ বুঝে যদি আপনি ওইসব মানুষের মুখ আপনার চোখের সামনে একেবারে স্পষ্ট হয়ে ভেসে উঠে, তারাও আপনাকে ঠিক আপনার মতো করেই আপনাকে দেখতে পান, আর এই দেখা-অদেখার নামই হলো সত্য ভালোবাসা। আর এখানেই অনুপস্থিতির পরাজয় হয়। এখানেই পরাজয় হয় মৃত্যুর মতো কোনো এক চরম সত্য। চোখের আড়াল হলেও তারা থাকেন সবার মাঝে। আজ এই প্রথম প্রহরে যারা আমার সুম্মুখে নাই অথচ মনের ভিতরে আছেন, যতদূরেই তারা থাকেন না কেনো, তারা আমার সাথেই আছেন। আমি তাদের সবাইকে নিয়াই এই তাবত মানুষকে জানাই শুভ নববর্ষ। ২০২১ বর্ষ হোক সবার জন্য উম্মুক্ত সেই আনন্দের, যে আনন্দে মানুষের চোখ ভিজে আসে ভালোবাসায় আর খুশীতে।

০১/০১/২০২১-মেয়েরা বগুড়ায়

Categories

আজ থেকে প্রায় ৫৪ বছর আগে, আমার বাবা বুঝতে চেয়েছিলেন, তার অবর্তমানে তার পরিবার কিভাবে থাকবে, কে কিভাবে আচরন করবে, কার চেহারা কি হবে ইত্যাদি। আর এ কারনে তিনি একবার ৬ মাসের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। আমার মাও জানতেন না আমার বাবা কোথায় আছে কেমন আছে। শুধু জানতেন আমার বড় ভাই। আর বাবা আমার বড় ভাইয়ের আশেপাশেই ঢাকায় গোপনে ছিলেন। আমার ভাই প্রতিনিয়ত বাবাকে গ্রামের, বাড়ির, এবং অন্যান্য সদস্যদের আচার ব্যবহার আপডেট দিতেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, বাবা হয়তো কোথাও মারা গিয়েছেন, অথবা আর কখনোই ফিরে আসবেন না। তাতে যেটা হয়েছে সেটা হলো, সবাই তার নিজ নিজ চেহারায় আবর্ভুত হয়েছিলো। ফলে ৬ মাস পর যখন বাবা ফিরে এলেন তার গোপন আস্তানা থেকে, তখন তিনি বুঝলেন, কে আমাদের আপন, কে আমাদের পক্ষের আর কে আমাদের বিপক্ষের। শুধু তাইই নয়, আমাদের পরিবারের মধ্যেও তিনি বিভিন্ন সদস্যদের চরিত্র সম্পর্কে একটা নিখুত ধারনা পেয়েছিলেন। অন্তর্ধানের পরে আমার বাবা আরো বেশী বাস্তববাদী হয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে আমাদের জন্য ছিলো যুগান্তকারী এবং পারফেক্ট।

এই ঘটনাটা এখানে বলার অন্য কোনো কারন নাই। নিছক একটা সমকালীন ভাবনার মতো। আমার ছোট মেয়ে মানসিকভাবে আসলে আর এদেশেই নাই। তার ভাবনা কবে কোথায় কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়বে, তাও আবার আমেরিকার কোনো এক ইউনিভার্সিটিতে। সারাক্ষন তার এই একই চিন্তা, আর এই চিন্তার রেশ ধরে সারাক্ষন তার সেই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য এখানে এপ্লিকেশন, ওখানে এপ্লিকেশন, স্যাট পরীক্ষা, আইএলটিএস ইত্যাদি। আমরা ধরেই নিয়েছি, যে, আগামী বছরের শেষের দিকে আমরা আমার ছোট মেয়েকে আর পাচ্ছি না। সে বিদেশের মাটিতে পড়াশুনা করবে। এটা যেনো এক প্রকার মেনেই নিয়েছি। আর কনিকা তো শতভাগ সেভাবেই ভাবছে। বাকীটা আল্লাহর রহমত।

বড় মেয়েও বিসিএস পরীক্ষায় যদি চান্স না হয়, তারও পরিকল্পনা প্রায় একই রকমের। সেও সেই সুদূর আমেরিকার উদ্দেশ্যেই হয়তো দেশ ছেড়ে চলে যাবে। এই যে, একটা ভ্যাকুয়াম, মানে দুই মেয়েই আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার একটা আভাষ, তখন আমাদের জীবন কি হবে, কেমন কাটবে, সেই ভাবনাটা যেনো আজ পেলাম। কারন আজকে দুই মেয়েই আমাদের ছেড়ে বগুড়ায় আছে। বাড়ি একেবারেই খালি। একদম ফাকা। এ যেনো সেই পরীক্ষাটা যখন ওরা কেউ আর আমাদের সাথে থাকবে না, তখন কেমন হবে আমাদের জীবনটা।

আজ বুঝলাম, কেমন হবে জীবনটা। সারাটা বাড়ি ফাকা। সবই আছে, চেয়ার টেবিল যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে। উম্মিকার ঘরের কোনো কিছুই এদিক সেদিক হয় নাই, কনিকার ঘরেরও। ডাইনিং টেবিলে সব কিছু আগের মতোই আছে, ড্রইং রুমটাও তাই। খাবার টেবিলে সবসময় যে মেয়েরা আমার সাথে খেতে বসে, সেটাও না। কিন্তু তখন হয়তো ওরা ওদের রুমেই থাকতো। কিন্তু আজকে মনে হলো, ওরা বাসায় কেহই নাই মানে আমার খাবার টেবিলের খাবারের সাধটাও ভিন্ন। ওদের ঘরের দিকে তাকালে মনে হয়, মানুষগুলি এখানে বসতো, এখানে কম্পিউটারে কাজ করতো, ওইখানে ওরা পায়ে পায়ে হাটতো। ওদের মা কারনে অকারনে কখনো ডাকাডাকি, কখনো না খাওয়ার কারনে রাগারাগি, কখনো আবার একসাথে বসে হাসাহাসি করতো। আজকে কিন্তু ওরা আছে কিন্তু কাছে নাই। এতো ফাকা লাগছে কেনো?

ওদের বগুড়ায় যাওয়ার মাধ্যমে আমি যেনো ওদের আমেরিকা যাওয়ার একটা প্রক্সি অনুভব করলাম। এটাই হবে যখন ওরা সত্যি একদিন আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে থাকবে। আজকে একটা কথা প্রায়ই মনে পড়লো-

তাহলে আমার এতো বড় ব্যবসা, এতো বড় বানিজ্য, আমার এতো বড় বড় প্রোজেক্ট নিয়ে কি হবে যদি ওরাই আর এখানে না থাকে? কে দেখভাল করবে আমার অনুপস্থিতিতে এই বিশাল সাম্রাজ্য? কোথায় যেনো একটা খটকা লাগলো। দরকার আছে কি এতোসবের?

অনেক ভাবনার বিষয়।

৩১/১২/২০২০-জাহাঙ্গীরের জন্য

জাহাঙ্গীর, আমি তোমার আর বকসী ভাইয়ের চ্যাট গুলো পরছিলাম। তোমার দৈন্যদশার কথা তুমি অকপটে স্বীকার করেছ। এটা স্বীকার করতে হয়ত সবাই পারে না। আর বাস্তব তাকে মেনে স্বীকার করাটা হচ্ছে একটা সাংঘাতিক গুনের পরিচয়। আমি জানি না তোমার আয়ের উৎস কি বা তুমি এখনো ইউএন এর ভাতা পাও কিনা। একটা সময় ছিল আমি তোমার ব্যাপারে অনেক বেশি জানতে ইন্টারেস্টেড ছিলাম যখন তুমি ইসলামিক আদল থেকে ক্রমাগত একটা ভুল দর্শনের দিকে ধাবিত হচ্ছিলে। তোমার তিন খন্ডে ধারন করা একটা ভিডিও সিডি আমার কাছে এখনো আছে। হয়ত খুজলে পাওয়া যাবে আমার স্টকে।

তোমার উপরে আমার কিছু রাগও ছিল এই জন্য যে, আমি তোমার ট্যালেন্টের ভক্ত ছিলাম এবং এই ট্যালেন্টের কিছু কাজ আমি বাস্তবে হোক সেটা আমি সত্যই চেয়েছিলাম। আমার অনেক ফোরামে আর্মি অফিসারদের কে নিয়ে কথা উঠলে অথবা ট্যালেন্ট কি জিনিস তাঁর সম্পর্কে কথা উঠলে অথবা আমি অফিসারদের যোগ্যতা নিয়ে কথা উঠলে আমি তোমার রেফারেন্স টানতাম। কিন্তু ঐ আশাটা সম্ভবত তুমি ঠিক জায়গা থেকে পালন করতে পার নাই। একটা ট্যালেন্ট মানুষের দ্বারা সমাজের অনেক কিছু পরিবর্তন সম্ভব। আমার ধারনা ছিল যে, তুমি ইচ্ছে করলেই সমাজের বা সংস্থার কিছু কিছু ইস্যু এড্রেস করতে পারতে তোমার ট্যালেন্টের দ্বারা। তুমি কত টুকু করেছ বা করতে পারতে তা তুমি ভাল জান কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে তুমি পুরু জিনিষটাই সাংঘাতিকভাবে মিস হ্যান্ডেল্ড করে ফেলেছিলা। এ ব্যাপারেও এখন আর তোমার উপর আমার কোন রাগ বা গোস্যা নেই। যেটা হয়েছে, সেটা তুমি দেরি করে হলেও বুঝেছ যে, কিছু কিছু জায়গায় তোমার ভুল ছিল। এই যে ভুল ছিল এবং তুমি বুঝতে পেরেছ, এটা ছিল তোমার ভাল দিক এবং তুমি তা সংশোধন করে ঠিক জায়গায় থাকতে পেরেছ। তুমি জাহাঙ্গীরই আছ, শুধু পালটেছে তোমার মতবাদটা। ভুল থেকে সঠিক পথে। এই জায়গা থেকে তোমার একটা বিশাল শিক্ষণীয় ব্যাপার ছিল। যা তুমি করতে পারতে কিন্তু সব কিছু তুমি হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রাখতে পারনি। কারন তোমার ধৈর্যটা ছিল সরু পথের আইলের মত। গ্রামের সরু পথের আইল দিয়ে কখনো হেটেছ? দেখবা, আইল্টা সোজা কিন্তু হাটতে গেলে পা এদিক ওদিক সরে যাচ্ছে এবং দেখবে তুমি মাঝে মাঝে আইল থেকে ক্ষেতে পরে যাচ্ছ। এটা আইলের দোষ না, এটা তোমার পা কে তুমি ঠিক কন্ট্রোল করতে না পাড়া কারনে।

আমি তোমার ইনিসিয়াল লাইফ স্টাইলটা দেখেছি। আমি তোমার ১ম স্ত্রিকে খুব ভাল করে চিনতাম। তোমাকে নিয়ে তাঁর স্বপ্ন কম ছিল না। আমি জানি না সে এখন বিয়ে টিয়ে করেছে কিনা। সেই প্রসঙ্গে আমি যাব না। আমার কাছে একটা বিষয় খুব অবাক লাগে, সমাজের প্রতিটি ইস্যু আসলে প্রতিটি পরিবারের ইস্যুর সমষ্টিমাত্র। তাঁরমানে এই যে, যে ব্যাক্তি পরিবারের ইস্যুটাকে সঠিক ভাবে এড্রেস করতে পারছে, সে অন্য পরিবারগুলর ইস্যুও এড্রেস করার ক্ষমতা রাখে। একটা পরিবারে দাম্পত্য কলহ হতে পারে, একটা পরিবারে উছশৃঙ্খল সন্তান থাকতে পারে, একটা পরিবারে আর্থিক সমস্যা থাকতে পারে, আর এইসব সমস্যাগুলো কিন্তু বিগার পারস্পেক্টিভে একটা সমাজ। আমি অনেক অভিজ্ঞতা সমপন্ন লোক নই কিন্তু আমার ক্ষুদ্র জ্ঞ্যানে বলে যে, এই সমস্যাগুলো দুই ধরনের লোক দুইভাবে সমাধান করে। (১) সমস্যা হয়েছে, তো এটাকে ছেটে ফেল। এটা হচ্ছে স্মার্ট মুভ কিন্তু এরোগ্যান্ট মুভ। আরেকটা হচ্ছে (২) সমস্যার একদম রুটে গিয়ে রুট থেকে টেনে নিয়ে এসে তাকে রেইলে নিয়ে আসা। সেটা হচ্ছে লংটার্ম সলিউসন। এই দুই নম্বর পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি লাগে ধৈর্য। আবার লাভটাও বেশি। কারনটা হল, কোন সাব্জেক্টই তাঁর স্থান পরিবর্তন করে না কিন্তু চরিত্র পাল্টায়। পরিবার পরিবার হিসাবেই টিকে যায়, শুধু মানুষগুলো তাঁর ব্যবহার পাল্টায় সামস্টিক ভাবে।

আমি অনেক সময় বাজারে একটা শার্ট পছন্দ করতে গিয়ে দেখেছি, দোকানদার এমন কিছু শার্ট আমাকে দেখাচ্ছে, যেটার কালার আর ডিজাইন আমার কাছে অত্যন্ত অপ্রিয়। মনে হয়ছে এগুলো কি কেউ কখনো কিনে? কিন্তু তারপরেই আবার মনে হয়েছে, হয়ত ঐ শার্ট টাই বা ঐ কালার টাই আরেক জোন কিনার জন্য হন্যে হয়ে খুজছে। এটা দেখবার বিষয় আর ভাব বার বিষয়। পৃথিবীতে ঈশ্বর সব মানুষকে কোন না কোন ভাল গুন দিয়ে তাকে ইউনিক করে পাঠিয়েছেন। আমরা তাদের ঐ ইউনিক গুনগুলো আবিস্কার করতে মাঝে মাঝে ব্যর্থ হই বলে কখন কখন জাস্ট যেটা পেতে চেয়েছি সেটা পেয়েও হারিয়ে ফেলছি। রবিন্দ্র নাথের গল্প গুচ্ছের কোন এক ছোট গল্পের মতন যে, বংশে নতুন অথিতির আগমনের জন্য সাড়া গ্রাম শুদ্ধ বড় কর্তা যেফতখানা করছেন, কিন্তু তারই এক বংশ ধর বড়কর্তার না জানার কারনে সে অবহেলিত হয়ে যেফতখানার খাঁবারের থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। 

আজকে তোমার আগের স্ত্রীর প্রতি তোমার হয়ত খুব একটা এট্রাক্সন নাও থাকতে পারে কিন্তু প্রায় অনেক বছরের একত্রে বাস করার ফলে যে মিশ্রিত একটা সময় তোমরা নিজেরা বুনেছিলে, সেটা কি আদৌ কখনো জিরো করে দেয়া সম্ভব? তোমার সন্তানদের কাছে কিন্তু তোমাদের এই ভাগাভাগির ইতিহাস কোনভাবেই সুখের নয়। তোমার বেলায় যদি এটা তোমার পূর্বপুরুষেরা বিশেষ করে তোমার শ্রদ্ধেয় বাবা এই একই কাজটা করতেন তোমার মাকে নিয়ে বা তোমাকে নিয়ে, তোমার বর্তমান জগতের সঙ্গে কি কখনো এটা সাংঘরসিক (অন্তত একটু হলেও কি প্রভাব ফেলত না) হত না? কখনো কি ঐ পারস্পেক্টিভ থেকে দেখেছ? আমাদের পরিবারে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ৪৫ বছর আগে। আমি যখন ছোট ছিলাম এবং এই ঘটনাটা জানতে পারলাম, সম্ভবত আমরাই প্রথম যারা এমন একটা সম্পর্ক কে অত্যন্ত সাভাবক ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে এমন একটা পরিবার সৃষ্টি করতে পেরেছিলাম যে, অবশেষে সে মেয়ে মানুষ বলে হয়ত ইমোশনাল অবস্থাটা তুমি দেখেছ তাঁর চোখের জল দিয়ে। কিন্তু আমিও হলফ করে বলতে পারি, তোমার চোখে জল না এলেও অন্তত ক্ষনিক সময়ের জন্য তোমার চিন্তায় কখন ব্যাঘাত হয়েছেই। আর তোমার ঐ ঘোরের সন্তানেরা এই ব্যাঘাত টাতে অভ্যস্থ হচ্ছে প্রতি নিয়ত। আর এই জায়গাটাই হচ্ছে আমার এত কথা বলার কারন। উপরে বলা (১) নং পদ্ধতিতে নতুন করে সব কিছুই শুরু করা যায় কিন্তু তাতে মানুষ শধু পিছিয়েই যায়। কারন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফিনিশিং পয়েন্টে আসতে হলে ঐ একই সময় বরাদ্ধ নিয়ে বারবার নতুন করে কোন কিছু শুরু করা বারবারই বকামি। এতে টিমের সবার ক্ষতি হয়।

তখন টিম লিডার হিসাবে নিজকে বড় অসহায় মনে হওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকে না। আর একবার যদি টিম লিডারের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়, তখন ঐ টিম টা কোথায় কিভাবে যে ডি-রেইল্ড হওয়া শুরু করে, তাঁর রক্ষক শুদু সয়ং সৃষ্টি কর্তা। কথাগুলো তোমাকে বললাম বলে কি তুমি মাইন্ড করলা? এটা আমার জন্য ও প্রযোজ্য জাহাঙ্গীর, যদি আমি টিম লিডার হয়ে থাকি। তুমি বুদ্ধিমান, তোমার কথাগুলো বুজবার কথা।

৩১/১২/২০২০-বন্ধু সাকুদাকে চিঠি

সাকুদা

সাকিরের চিঠিটি পরে বেশ মজা তো পেলামই তার সঙ্গে আমারও যেন আজ হইতে বহু বছর আগের কোন এক উচ্ছল এবং অফলদায়ক কর্মদীপ্ত সময়কার কথা মনে পরিতেছিল। সেই ১৯৮৩ সালের কথা সম্ভবত।

পরিবারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীতে পরিক্ষা দিয়া ১২ লং কোর্সে সিলেক্ট হইয়া ২৭ শে জুলাই ১৯৮৩ তে সবার সঙ্গে বিএমএ তে যোগ না দিয়া বর্ষার ঝমঝম বৃষ্টির অসাধারণ একটি দিনে সবুজে ঘেরা এবং অগোছালো গাছপালার সাড়ির মধ্যে গরে উঠা ঢাকা ইউনিভার্সিটির শহিদুল্লাহ হলের সেই টিচার্স কোয়ার্টারে অত্যন্ত মন খারাপ করে একা রবি ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ বইটা নিয়ে বৃষ্টি দেখছিলাম। কখনো কয়েক ফোটা এলোপাথাড়ি বৃষ্টির ছটা জানালা ভেদ করে আমার রবিঠাকুরের গল্পগুচ্ছ আবার কখনো আমার মুখের উপর আছড়ে পড়ছিল। আমার মন খারাপ কিনা কিংবা আমার ভিতরের কষ্টের শেষ অভিব্যাক্তি চোখের জলে বেরিয়ে যাইতেছিল কিনা তা নীরস বৃষ্টির ফোঁটার কারনে কারোরই বুঝবার অবকাশ হইতেছিল না। আজকের দিনের ডিজিটাল কোন যন্ত্রের কেরামতি থাকিলে হয়ত বুঝা যাইত যে, ঐ রোমান্টিক একটি বৃষ্টির দিনে কতটা অ-রমান্টিক পরিস্থিতি আমার ভিতরে খেলিয়া যাইতেছিল। আর আমার কষ্টের একটাই কারন ছিল যে, আমি সেনাবাহিনীতে আমার অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে ১২ লং কোর্সে যোগদান করিতে পারি নাই। কারন আমার পরিবার আমার জন্য স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় ইতিমধ্যে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করিবার জন্য কোন এক সনামধন্য ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ব্যবস্থা করিয়া ফেলিয়াছেন।

পরবর্তীতে পরিবারের উপর রাগ করিয়া আর কোন ভর্তি পরিক্ষা না দিয়াই আমি পরের কোর্স ১৩ বিএমএ তে যোগদানের গোপন কাগজখানা যোগাড় করিয়া ফেলিলাম। বলা যাইতে পারে সবার অজান্তে আমি যেন সেনাবাহিনীকে রেজিস্ট্রি মেরেজ করিয়া বসিলাম। কাউকেই আমার এই গোপন অভিসারের মত “সেনাবাহিনি-প্রেমের সাদির” কথা অথবা কাবিননামার মত “যোগদানের পত্রখানার” কথা কাউকেই বলিলাম না। শুধু দিন গুনিতেছিলাম কবে “শ্বশুর বাড়ীর মত” এক আস্তানা সেনাবাহিনির কোলে গিয়া নিশ্চিত হইব। কাউকেই কিছু বলছি না, ফুরফুরা মেজাজ আমার এখন, মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীর কিছু নজরে আসিলে মনে হইত এইটা আমার, কিংবা মাঝে মাঝে আবার এও মনে হইত আমি সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বিখ্যাত লোক কিংবা আকাশচুম্বী অনেক আষাঢ়ে গল্পের কাহিনির মত ইত্যাদি। কিন্তু সব কিছু চলছিল অতি গোপনীয়ভাবে। এই অভিসারের সময়ের মধ্যে আমি বেশ কিছু ব্যক্তির সঙ্গে (ব্যক্তি বলা ভুল হইবে কারন তখনও তারা ব্যক্তির পর্যায়ে পরে বলিয়া মনে হয় না, তারা সবাই ১৯ কি ২০ বছরের বালক)।  পরিচয় ঘটিল। আকবর (বর্তমানে মেজর জেনারেল আকবর), হুমায়ূন (মেজর জেনারেল), মুক্তার (ইঞ্জিনিয়ার) এবং আমাদের সাকুদা। কি কারনে বা কোন উপলক্ষে বা কার অন্বেষণে  তারা ঐ শহিদুল্লাহ হলের ভিতর দিয়া যাইতেছিল তা আজ হয়ত তাদের জিজ্ঞেস করিলেও তাহাদের মনে পরিবে কিনা আমার সন্দেহ আছে।

সাকুদার সঙ্গে আমার এই প্রথম পরিচয় কিন্তু ঘনিষ্ঠ পরিচয় বলা যাইবে না। তারপরের কাহিনী তো বিএমএর ভিতরের। ওটা যে শ্বশুরবারি নয় আদৌ, সেটা প্রথম দিনেই আমি বুঝিয়া ফেলিলাম। মনে হইল শত সতিনের সংসার, কেউ কাউকে ছাড়িয়া দিবার নহে। সে এক আরেক রাজপরিবারের মত বটে কিন্তু সেখানে গুটিকতক নারায়ণের বাস আর বাকি সবাই অ্যালেক্স হ্যালির কুন্টাকিন্তির মত।

সাকুদার সঙ্গে আমার অনেক জায়গায় অনেক পরিস্থিতিতে দেখা হইয়াছে, কখনো কোন এক সভায়, কখনো সেনাবাহিনীর কোর্স করার জন্য, কখনো বন্ধু ফোরামে, আবার কখনো হটাত অসময়ে।  আমি সাকুদা সম্পর্কে নতুন কিছু বলিতে চাই না কারন সাকির যা বলিয়াছে তা নিতান্তই বাড়াইয়া কিছু বলে নাই। বরং সাকুদা সম্পর্কে আরও অনেক কিছু বলার পরিধি আছে বৈকি। আমি আর সাকুদা একসঙ্গে একত্রে কখনো কোন গ্যারিসনে কাজ করিবার অবকাশ হয় নাই। তারপরেও আমি সাকুদার একজন ভক্ত। ভক্ত এই কারনে যে, সাকুদা যখন বালক ছিল তখন সে গ্রামে ছিল। আর সেটা এমন এক গ্রাম যা আমার গ্রামের মত মিষ্টি, বন্ধুসুলভ যেখানে বৃষ্টির দিনে ৮-১০ বছরের যুবক শিশুরাও  উলঙ্গ হয়ে বৃষ্টির জলে নাচিয়া বেড়ায়, পাশের বাড়ীর বিজয়া নিজের বোন না হইয়াও বোনের অধিকার হইতে কম যায় না, নিজের সহপাঠির সঙ্গে সারাদিন মারামারি করিয়াও পরের দিন তাহার সঙ্গে দেখা না হইলে মন খারাপ হইয়া যায়। সাকুদার জীবন বারিয়া উঠিয়াছে ঠিক এমন একটি গ্রামে। সাকুদার সঙ্গে এই খানে আমার অনেক মিল রহিয়াছে বৈ কি। সাকুদা যখন শৈশব পার করিয়া যুবক হইল, তখন সে রাষ্ট্রের অনেকের চেয়ে অনেক উপরে পদার্পণ করিল বটে কিন্তু সাকুদা হটাত করিয়া ভারসাম্যহীন হইয়া পরে নাই, কৌতূহল বারিয়াছে বটে কিন্তু সীমানা অতিক্রম করিয়া জলে ভাসিয়া যায় নাই। কিন্তু সাকুদা তাহার এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও পরিবর্তন হইতে পারিত। কিন্তু সাকুদা তার ঐ বালক বয়সের চরিত্রটুকুন ধরিয়া রাখিয়াছিল। রবি ঠাকুরের মত বলিলে বলিতে হয় যে, একেবারে পাকা আম্রের মধ্যেই যে পতঙ্গ জন্মলাভ করিয়াছে যাহাকে কোন কালে রস অন্বেষণ করিতে হয় নাই, অল্পে অল্পে রসাস্বাদ করিতে হয় নাই, তাহাকে একবার বসন্ত কালের বিকশিত পুস্পবনের মধ্যে ছাড়িয়া দেওয়া হউক দেখি- বিকচোন্নুখ গোলাপের আধখোলা মুখটির কাছে ঘুরিয়া ঘুরিয়া তাহার কি আগ্রহ।  সাকুদা যেন ঠিক এই জায়গায় একই ভাবে রহিয়াছে। এক যে ছিল রাজা, বলিয়া গল্প শুরু করিলে কোন দেশের রাজা আর কোন রাজা, সেটা সাকুদার জানার কোন কালেই আগ্রহ ছিল না এবং এখনও তাহার ঐ অনাবশ্যক খবরদারীতে আগ্রহ নাই। সাকুদা আগে যেমন ছিল, বয়সের তারতম্যে তাহার মধ্যে কোন ঘাটতি হইয়াছে বলিয়া আমার মনে হয় নাই। সেই হাসি, সেই অস্থিরতা, আবার সেই স্থিরতা কিংবা সে মায়াবিনী লক্ষি পেচার মত লক্ষ্মী বালকের চরিত্রে তার কোন পরিবর্তন হয় নাই। আর এটাই হচ্ছে সাকুদার সবচেয়ে বর একটা গুন যেখানে আমি তার চরম ভক্ত।

আজ সাকুদা সত্যি অর্থেই  অনেকের কাছে “দা”। তার মুখাবয়ব বয়সের ভারে আধাপাকা দাঁড়ি, চিন্তার ভারে মাথার চুল খালিপ্রায়, আর কর্ম পরিসরের কঠিন পরিশ্রমের পর তার এখন অবসরের সময়। তিনি গতকাল তার চিরাচরিত কর্মস্থল হইতে ছুটি পাইয়াছেন। হয়ত বা তাহার কিছুটা মন খারাপ হইয়া থাকিবে তার সেই চেনা পরিচিত টেবিলে আর কখনো আগের মত বসিতে পারিবেন না এই ভাবিয়া, কিংবা সকালে অফিসের ব্যস্ততা থাকিবে না এই ভাবিয়া। কিন্তু জগত সংসার এমনই এক পরিসর যেখানে বেকার মানুসেরা আরও অধিক ব্যস্ত, আর ব্যস্ত মানুসেরা আরও  বেশি অবসর কাটান। এ এক গোলক ধাঁধাঁর মত বৃত্ত।

আমি সাকুদাকে আমার অন্তর হইতে অভিনন্দন জানাই আমাদের এই গোলক ধাঁধাঁর মত বৃত্তে পুনরায় প্রবেশ করিবার জন্য। আবারো বলি, ১৯৮৩ সালে যেদিন রাগ করিয়া আমার নিজের পরিবারের সমস্ত সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করিয়া যেই সেনাবাহিনীতে আমার আশ্রয় করিয়া নিয়াছিলাম, আবার সেই আমি পুনরায় ২০০৪ সালে সেনাবাহিনীর উপর রাগ করিয়া আমি আমার পূর্বের জগতে ফিরিয়া আসিয়া দেখিয়াছি, যত তারাতারি নিজের ঘরে ফেরা যায় ততই মঙ্গল। এই জগত টা আমার, আমার পরিবারের এবং এই জগতটা আমার পূর্বসুরিদেরও ছিল। এই জগতে ভয়ের অনেক কিছু আছে কিন্তু সেই ভয়ংকর পরিবেশে যারা পাশে আছে তারা সবাই আমাদের কেউ বন্ধু, কেউ আত্মীয়, কেউ বা আবার কেউনা কিন্তু তারা অনেকেই আমাদের মঙ্গল কামনা করে। শুধু একটাই অনুরোধ, মগজ আর “দিল” এক সঙ্গে একই কাজে লাগাইতে হইবে, সাফল্য তাহলে নিজের।

আমরা তোমার পাশে আছি সাকুদা। পাশে আছি অনেক ভালবাসা নিয়া, পাশে আছি তোমাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য যখন তোমার মন খারাপ হইবে, পাশে আছি যখন তুমি মনে করিবে তোমার কাউকে প্রয়োজন।

ভাল থাকিও

মেজর আখতার (অবঃ)

তোমার বন্ধু 

২২/১১/২০২০-বুড়োবেলায় সেই ছোটবেলা

ছোট বেলায় মনে করতাম, আহা, স্কুল ছুটি হবে, ক্লাশ থাকবে না, টিচারদের কাছে আর জ্ঞ্যানগর্ব লেকচার শুনতে হবে না, ইচ্ছেমতো নদীতে গিয়ে বন্ধু বান্ধব্দের নিয়ে লাফঝাপ মারবো, সারাদিন মাঠে গিয়ে যখন তখন খেলাধুলা করবো। সন্ধ্যা হলে আর পড়ার টেবিলে বসতে হবে না, সকাল সকাল আর ঘুম থেকে উঠতে হবে না, আরো চার আনা, আট আনা দিয়ে চালতার আচার যতো খুশী কিনে খাবো। কত কি!!

মাঝারী বেলায় মনে করতাম, আহা, অফিস ছুটি হলে সারাদিন বাসায় বসে টিভি দেখবো, ঘুমাবো, সন্ধ্যায় আড্ডা দেবো। বন্ধু বান্ধদের নিয়ে রাতভর গল্প করবো। লম্বা লম্বা ঈদের ছুটিতে যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবো। কি মজা হবে। কোনো অফিস নাই, বসের আদেশ পালনের তাড়াহুড়া নাই। সকাল সকাল উঠে তাড়াহুড়া করে অফিসের জন্য রওয়ানা হতে হবে না। অনেক অনেক মজা করে সময়টা পার হবে। এই বয়সে এসেও মনে হয়, আহা এইবার ছুটিতে অনেক অনেক সময় পাওয়া যাবে। স্টাফদের ফোন আসবে না, সাপ্লাইয়াদের হিসাব কিতাব নিয়ে বসার দরকার হবে না। বাসায়, আত্মীয় স্বজনদেরকে সময় দিতে পারবো, বেশ জমজমাট একটা সময় পার হবে।

অথচ আজ এই ৫৫ বছর বয়সে আমার নিজের অফিস আছে, অফিসে দেরী করে গেলেও কেউ কৈফিয়ত চাবে না জানি, অফিসে না গেলেও কারো কাছে জবাব্দিহি করার নাই, যখন যেথায় খুশী যেতে চাইলেও কেউ আমাকে বাধা দেয়ার নাই। এই কয়দিন যাবত আমি ছুটিতেই আছি। কাজ নাই, অফিস নাই, তাড়াহুড়াও নাই। বড়দের চাপ নাই, শিক্ষকদের শাসন নাই, স্টাফদের ফোন কল নাই, সাপ্লাইয়াদের কোনো চাপ নাই, কিন্তু তারপরেও মনে হচ্ছে কি যেনো নাই। আচ্ছা, কি নাই? আমি তো ইচ্ছে করলে এখন পুরানো সেই বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে নদীতে যখন তখন ঝাপ দিতে পারি কারন শাসন করার কেউ নাই, ইচ্ছে করলেই সারাদিন টিভি দেখতে পারি, ইচ্ছে করলেই সারাদিন ঘুমাতেও পারি, ইচ্ছে করলেই হাড়ি হাড়ি চালতার আচার, কিংবা বন্ধু বান্ধব্দের নিয়ে রাত ভত আড্ডা, গল্প করতে পারি কিন্তু তারপরেও আমি তা করতে পারছি না বা করতে ইচ্ছে করছে না। কি অদ্ভুত না ব্যাপারটা!!

এখন মনে হয়, জীবনের কিছু কিছু সময় আছে, সেই সময়ের সঙ্গে আমাদের ছুটির একটা বড় রকমের যোগসুত্র আছে। আজ এই ৫৫ বছর বয়সে আমি আর আগের সেই ১২ বছরের বালকের ন্যায় উচ্ছাস নদীতে তরঙ্গলম্ফ দিতে পারি না, ইচ্ছেও করে না। অথবা সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবলের অভাবে নারার-খেরের বল বানিয়ে গুটিকতক অদম্য পোলাপানের মতো গ্রামের সেই স্কুলের মাঠে বৃষ্টি বাদলের মধ্যেও হৈচৈ করে, ভরদুপুরে দৌড়াদৌড়িও করতে পারি না। অথবা পাশের বাড়ির পেয়ারা গাছের আধাপাকা পেয়ারাগুলি আর এখন আমাকে লোভ দেখায় না। বয়সটা পেড়িয়ে গেছে। আর তাই বড় আফসোস লাগে, আহা যদি আবার সেই বাল্যকালের শিক্ষকদের শাসনটা ফিরে আসতো! আহা, যদি আবার সেই পুরানো বন্ধু বান্ধবরা আগের রুপে ফিরে আসতো! মাঝে মাঝে আজ খুব হাসি আসে সেই বাচ্চা বয়সের কথা মনে করে। কতই না রাগ করেছি সবচেয়ে ভালো বন্ধুর সাথে। কত যে ঝগড়া করেছি ওদের সাথে। কখনো কারনে, কখনো অকারনে। কখনো আমি দোষ করেই উলটা রাগ করেছি, আবার কখনো ওদের দোষের কারনেও রাগ করেছি। এক মিনিট সময় লাগেনি তাকে বলতে যে, আমি তাকে ঘৃণা করি কারন সে আমাকে তার লাল পেন্সিলটা একদিন ব্যবহার করতে দেয় নাই, অথবা নদীতে আমার আগে সে লাফ দিলো কেনো এই কারনে আমি তার সাথে জিদ ধরে কয়েকদিন হয়ত কথাই বলিনি ইত্যাদি। জিদ ধরেছি একে অপরের সঙ্গে, কখনো কখনো আড়ি হয়েছে, কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে, আরো কত কি? ইশ, কি মিষ্টি ছিলো দিনগুলি!!

আজ বড় নস্টালজিক মনে হয়, আহা, এমন একটা বয়স যদি আবারো ফিরে আসতো! আমার সেই বন্ধুরাতো আজো আছে, আশেপাশেই আছে। কিন্তু বাল্যকালের সেই উচ্ছ্বাস, সেই অদম্য দুস্টুমিপনা, সেই আবেগ আর নাই। বয়স একধাপ থেকে উঠে আরেক ধাপে, আরেক ধাপ থেকে আরো আরেক ধাপে চলে গেছে। আগের ধাপের স্মৃতি ধরে রেখেছে কিন্তু কার্যপ্রণালী বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কথা হয় দেশের পরিস্থিতি নিয়ে, জীবনের উৎকণ্ঠা নিয়ে, পরিবারের ভালমন্দ নিয়ে, দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের সংস্কৃতি নিয়ে। এখন আর বৈশাখী মেলায় মাটির ব্যাংক, বাঁশের বাঁশী, ভাজা বুট, চালতার আচার, নাগরদোলা, ফোটকা বেলুন, বাশের কঞ্চিতে বানানো বাশি ইত্যাদি নিয়ে কোনো আবেগ আসে না। অফুরন্ত সময় আছে, খেলার মাঠও সেখানেই আছে, নদীও আগের জায়গায়ই আছে, কিন্তু সেই ফেলে আসা বাল্যকালটা আর নাই। নদী দেখলে এখন মন চায় যদি ঝাপ দিতে পারতাম, কিন্তু দেওয়া হয় না। সবুজ ধানক্ষেত দেখলে ক্ষেতের আইল ধরে কচিকচি পায়ে দৌড় দিয়ে কোথাও হারিয়ে যেতে মন চায় কিন্তু হারিয়ে যাওয়া হয় না। মন মনের জায়গায়ই আছে কিন্তু মনের সঙ্গে শরীর আর শরীরের সঙ্গে মনের মধ্যে এখন বিস্তর ব্যবধান বনে গেছে। তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে “সময়” নামক এক বিশাল অদৃশ্য দেওয়াল। পাশে থাকা বাল্য বয়সের ছেলেমেয়েরা যখন তাদের ইচ্ছার কথাগুলি বলতে থাকে, আমি বুঝতে পারি ওরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে আর কি বলছে। বড্ড ভাল লাগে। মাঝে মাঝে ধমক দেই বটে, মাঝে মাঝে বারন করি, কখনো কখনো রাগও করি। আবার এও জানি, এটাই তো করার কথা ওদের। কিন্তু ওরাও একদিন এই সময়টা হারিয়ে ফেলবে। আজ ওদেরকে শাসন করি, একদিন আমাদেরকেও আমাদের অভিভাবকরা শাসন করতো। অভিভাবকদের ওই শাসনে কখনো মন খারাপ হয়েছে, অনেক আনন্দ মাটি করে ফেলেছি রাগে, দুঃখে মনের কষ্টে। জিদ ধরে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। সারাদিন না খেয়ে কষ্ট হচ্ছে দেখে হয়ত মাও খান নাই, বাবা ছেলের অহেতুক জিদে, মায়ের মনের কষ্টে তার সব শাসন ভুলে হয়ত আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন, আর আমি সেটাই আমার বীরত্বই বলি, আর আমার জয়ই বলি, গর্বে আরো ঘাড় বেকে বসে থাকতাম খাবো না বলে। একদম অবুঝের মতো। আজ ওইগুলু মনে পড়লে বড্ড মন খারাপ হয়। আজ ঐ শাসনগুলি খুব মিস করছি। চোখের পাতা ভিজে আসে। কোথায় হারিয়ে গেলো ওইসব?

যখন ছোট ছিলাম, সবচেয়ে অপছন্দের চিঠি ছিল আমার অভিভাবকদের। সেই একই কথা। কোনো চিঠি না খুলেই বলে দিতে পারতাম, বাবা কি লিখেছে বা মা কি বলতে চেয়েছে। একদিন খুব দুস্টুমি করে আমি আমার অভিভাবককে বলেছিলাম, আচ্ছা, কস্ট করে বারবার একই চিঠি লেখার দরকার কি? একটা চিঠি ফটোকপি করে রাখলেই তো হয়। কদিন পরপর শুধু ওটা পোস্ট করে দিবা! কারন কথা তো একই থাকে। কেমন আছো তুমি, ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবে, সন্ধ্যা হওয়ার আগে ঘরে ফিরে আসবে, বেশী রাত জাগবে না, বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে ভালোভাবে মিলেমিশে থাকবে, বড়দেরকে সম্মান করবে, আমাদের জন্য মন খারাপ করো না। এই তো? তাহলে আর বারবার লেখার দরকার কি? অথচ আজ এতো বছর পর মনে হচ্ছে, আমি ওই কথাগুলিই খুব মিস করছি। খুব করে মনে হয়, তোমরা আবারো আমাকে এই একই কথাগুলি লিখে পাঠাও না বাবা! আমি জানি, আজ আমার সন্তানেরাও ঠিক একই কথা বলবে। হয়ত কোনো একদিন আজকের এই দিনের মতো তারাও হয়ত আমার সেই একই কথা শুনার জন্য তাদের মন খারাপ করবে। সব বাবাদের কথা এক হয়, সব মায়েদের সন্তানের জন্য চিন্তা এক হয়। তোমরা যখন বাবা মা হবে, সেদিন হয়ত বুঝবে, আজ আমি কি বলতে চাচ্ছি।

যে বালকটি আজ থেকে ৫৫ বছর আগে উচ্ছল, চঞ্চল, দুরন্তপনা, অদম্য সময় কাটিয়েছিলো, ওই সময় যে তোমাদেরকে অনেক কঠিন দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে রাখতো, সময়-অসময় তোমাদের মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাঁড়াতো, আজ সেই একই বালক ৫৫ বছর পর শান্ত, ধীর এবং অভিভাবকরুপে রূপান্তরিত হয়ে শুধু একটা আবেগের কথাই বলতে চাই, ফিরে এসে দেখে যাও, সে আর আগের মতো দুস্টুমি করে না, হটাত বৃষ্টিতে তোমাদের অগোচরে ভিজে আর অসময়ে জ্বর বাধিয়ে ফেলে না, কিংবা তোমাদের না বলে হটাত করে কিছু দুষ্টু বন্ধুদের নিয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় না। তোমরা যে ছেলেকে সারাক্ষন ঘরের মধ্যে শান্ত হয়ে থাকতে বলতে। বলতে আর কতজল ফেলবি আমাদের চোখে? আর কত দুসচিন্তায় ফেলবি আমাদের? আজ এই বয়সে এসে আমি তোমাদের শুধু একটা কথাই বলতে পারি, এখন এসো আমার ঘরে, দেখে যাও, তার এখন অফুরন্ত সময় এবং সে এখন সত্যিই শান্ত একটি মিষ্টি ছেলে। এখন আর তোমাদেরকে আমি কোনো দুসচিন্তায় ফেলবো না। আজ আমার ছুটি। লম্বা ছুটি। আমি তোমাদের একজন লক্ষি ছেলে হয়েই ঘরে বসে আছি। কিন্তু তোমরা কই? তোমরা কি আমার কথা শুনতে পাও? আমি তোমাদের খুব ভালবাসি।

২০/১১/২০২০-ভালোবাসি না

Categories

ভালোবাসা কি? ভালবাসা কি কোনো দ্রব্য বা কোনো পদার্থ যা চোখে দেখা যায়, ছোয়া যায় বা স্পর্শ করা যায় বা মাপা যায়? এটা কি এমন যে, ষোল ছটাকে এক কেজি ভালোবাসা হয় অথবা এটা কি এমন যে, চার আনা এক গন্ডায় এক শতাংশ ভালোবাসা হয়? অথবা এটা কি এমন যে, পাখীরা জেগে উঠলে, তাদের কিচির মিচির শব্দে কোনো এক সকালে বা সন্ধ্যায় সন্ধ্যতারা আকাশে উদিত হলে ভালোবাসার জন্ম হয়? কোথাও কি কোনো মহা মনিষী লিখে গেছেন, কি কি ভাব ভংগিতে, কোন কোন সুরে বা কোন কোন আবেগে ভালোবাসা প্রকাশ পায়? ৫৫ বছর বয়স পার হয়ে গেলো আমার, কিন্তু কোনো বিদ্যালয়, কোনো কলেজ, কোনো ধর্মালয় আমাকে কেঊ এই ভালোবাসার বিক্রয়কেন্দ্র অথবা বিনিময় স্থলের নাম দিতে পারলো না। আমি ভালোবাসাকে আজো চোখে দেখি নাই। অনেক দেশ ঘুরেছি আমি। সম্রাট শাহজাহানের গড়া তাজমহল দেখেছি, প্রিন্স আর্চ বিশপ ডাইট্রিচের প্রিন্সেসের সালোমির জন্য গড়া মার্বেল প্যালেস দেখেছি, উইলিয়াম কেলী স্মিথের প্রথম ছেলে সন্তানের জন্য গড়া "ক্যালী কেসেল" দেখেছি। কিন্তু আমি ওখানেও কোনো ভালোবাসার শপিং মল অথবা ভালোবাসা কিনতে পাওয়া যায় এমন কোনো দোকান দেখি নি। যারা ভালোবাসা বুঝে, কিংবা ভালো বাসে, তারা কিছু না কিছু দিয়েই তাদের সেই অদেখা, অচেনা ভালোবাসার সৌধ নির্মান করে কিছু না কিছু স্মৃতি রেখেই প্রমান করে গেছেন যে, তারা ভালোবেসেছে।

এতো বড় বড় অট্টালিকা, তাজমহল, ক্যাসেল, গার্ডেন বানানোর আমার কোনো সামর্থ নাই। আচ্ছা, ভালোবাসা কোথায় খুচরা কিনতে পাওয়া যায়? কোনো সুপার শপে? বা কোনো বড় মলে? অথবা কোনো কারখানায়? আমি তো অনেক মল, অনেক সুপার সপ কিংবা অনেক কারখানায় খুজেছি এই ভালোবাসাকে। অথচ আজো আমি কারো জন্যেই এক ছটাক, এক শতাংশ কিংবা এক পাউন্ড ভালোবাসা কিনে আনতে পারি নাই!! কোথাও পাইও নাই!! তাহলে আমি কি কখনো কাউকে ভালোবাসি নাই? হয়তো তাই। আমি কাউকেই ভালোবাসি নাই হয়তো।

অথচ, আমি কি অবুঝ বারবার। আমি ওদেরকে না ভালোবেসে, বারবার শুধু ওদের জন্য দুশ্চিন্তায় দিন কাটাই। সারাক্ষন ভাবি, ওরা যেনো ভালো থাকে, ওরা যেনো আনন্দে থাকে। ওরা যেনো নিরাপদে থাকে। আর এটা ভেবেই আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু ওদের জন্য ঈশ্বরের কাছে ওদের সুস্বাস্থ্যের দোয়া করি। সমগ্র বিসশে যেন ওরা মাথা উচু করে নিজের সম্মানে দাড়াতে পারে তার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে রোজগার করি। আমার অবর্তমানে যেনো ওরা থাকে সাবলম্বি, তারজন্য আমার সারাটা দিন, সারাটা মাস আর সারাটা জীবন নিজের সকল আরাম, আয়েশ, আর সৌখিনতাকে ত্যাগ করে ওদের জন্য সঞ্চয় করি। নিজের অচল হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটা, কিংবা খষে যাওয়া জুতার সোউলটা বারবার সেলাই করে, ওদের শখের ইচ্ছাগুলি পুরনে সদা চেষ্টা করি। খাবারের টেবিলে বড় সুসাধু চিংড়ি মাছটি নিজের খেতে ইচ্ছে করলেও সেটা আমি ওদেরকে দিতে পছন্দ করি। দূর থেকে কয়েকদিন বিরহের সময়টা কাটানোর পর যখন সন্তানেরা ঘরে ফিরে, গিন্নী যখন অসুস্থ্যতা থেকে সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফিরে, আমি তখন আনন্দে ওদের বুকে জড়িয়ে ধরি আর বুক ভাসিয়ে দেই আমার অবাধ্য চোখের জলে। কোথাও ওদেরকে একা ছাড়তে ভয় পাই। সাতার না জানা আমার ছোট মেয়েটি বা অল্প সাতার জানা আমার বড় মেয়েটি যখন নদীর জলে নামতে চায়, তখন নিজের শরীরে জ্বর নিয়েও আমি ওদের সাথে পানিতে সঙ্গ দেই যেনো ওরা পানিতে ডুবে না যায়। নাইট কোচের কোনো গাড়িতে বসে আমি সারারাত না ঘুমিয়ে গাড়ি ঠিকমত নিরাপদে চলছে কিনা সেই পাহারায় ক্লান্ত শরীর নিয়েও সারাটা রাস্তা জেগেই থাকি। অথচ, ওদেরকে আমি ভালোবাসি কিনা সেটা সবাইকে দেখানোর জন্য আমি কোনো ইমারত তৈরী করতে পারিনা। কারন, আমার ভালোবাসা হয়তো ও রকমের সুউচ্চ ভবনের মতো নয়।

আচ্ছা, মানুষ ভালবেসে কি কখনো কাদে? অথবা মানুষ ভালোবেসে কি খিলখিল করে হাসে? এমন কি হয় যে, মানুষ ভালোবেসে কারো জন্যে মন খারাপ করে বসে থাকে? শুনেছি, ভালোবাসায় নাকি কান্না থাকে, হাসি থাকে, বেদনা থাকে, থাকে আরো অনেক কষ্ট, বিরহ, আবার থাকে আনন্দও। আমারো এ রকম হয়। যখন সে আমার কাছে থাকে না, যখন ওর শরীর খারাপ হয়, যখন ওর মন খারাপ হয়, যখন কোনো কিছুর জন্যে ওদের চোখে পানি আসে, আমারো মন খারাপ হয়, আমারো চোখেও পানি আসে। যখন আমার সন্তানেরা আমার থেকে দূরে থাকে, ওরা নিরাপদে আছে কিনা তারজন্যে আমার ভয় হয়। ওরা ঠিকমতো খেলো কিনা, ওরা ঠিকমতো ঘুমালো কিনা, ওরা ভাল আছে কিনা এই ভাবনায় আমি তখন ওদের জন্য ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাই, ভয় পাই, চোখ ভিজে আসে কান্নায়। আমি ওদের মিস করি। যখন ভাবি, ওরা একদিন আমার থেকে দূরে চলে যাবে, ওদের সংসার হবে, আমি একা হয়ে যাবো, আমারো অনিশ্চিত বিরহে চোখে জল আসে।

এটা কি ভালোবাসা?

যদি এটাই হয় ভালোবাসা, তাহলে আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, তাজমহল নির্মান না করেও, কোনো ক্যাসেল তৈরী না করেও, কোনো অট্টালিকা, কোনো ব্যবিলনের মতো শুন্যদ্যান নির্মান না করেও, সবটুকু মহব্বত দিয়ে, আদর দিয়ে আমি তোমাদেরকে আজীবন শর্তবিহীন ভালোবাসি। যখন আমি তোমাদের উপর রাগ করি, সেটাও আমার ভালোবাসা। যখন আমি অভিমান করি, সেটাও আমার ভালোবাসা, যখন আমি গোস্যা করি সেটাও আমার ভালোবাসা। কারন, আমার সব রাগ বা অভিমানের সব কিছুতেই মিশে আছে কোনো না কোনো দুসচিন্তা, কোনো না কোনো ভয় আর মিশে আছে শতভাগ সেই শর্তহীন ভালোবাসা। আমার প্রতি আমার সেই বাবা মার এই ভালোবাসাটা বুঝতে আমি ৫৫ বছর পার করে বুঝেছি, ছোটবেলার তাদের সেই শাসনেও ভালোবাসা ছিলো, শৈশবের কোনো এক সাধ অপুরনে আমার পিতামাতার অন্তরের ভিতরের কষ্টেও ভালোবাসা ছিলো, স্কুলের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট না করায় সেই রাগ অভিমানের মধ্যেও ভালোবাসাই ছিলো।

তারা আজ কেউ কোথাও নাই। অথচ, আমি আজ বুকভরা সেই ভালোবাসা নিয়ে বারবার ফিরে যেতে চাই সেই অজপাড়াগায়ে আমার সেই ভিটায় যেখানে কাদামাখা হাতে আমার মা একটা বেত নিয়ে দুরন্ত ছেলেটাকে নদী থেকে উঠে আসার মেকি রাগ মাখা চোখে অথচ সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো- আর বলতো—

"উঠে আয় বলছি? তা না হলে আয় একবার, এই বেতটা দিয়ে তোকে মারি"।

হয়তো তোমরাও একদিন......

বার বার ফিরে আসে যুগে যুগে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে।

কি অদ্ভুত ভালোবাসা, তাই না?

(পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য উতসর্গ করা লেখাটি যাদের আমি ভালোবাসি কোনো শর্তছাড়া)

১৮/১১/২০২০-ভালোবাসি না

Categories

ভালোবাসি না

ভালোবাসা কি?  ভালবাসা কি কোনো দ্রব্য বা কোনো পদার্থ যা চোখে দেখা যায়, ছোয়া যায় বা স্পর্শ করা যায় বা মাপা যায়? এটা কি এমন যে, ষোল ছটাকে এক কেজি ভালোবাসা হয় অথবা এটা কি এমন যে, চার আনা এক গন্ডায় এক শতাংশ ভালোবাসা হয়? অথবা এটা কি এমন যে, পাখীরা জেগে উঠলে, তাদের কিচির মিচির শব্দে কোনো এক সকালে বা সন্ধ্যায় সন্ধ্যতারা আকাশে উদিত হলে ভালোবাসার জন্ম হয়? কোথাও কি কোনো মহা মনিষী লিখেচ গেছেন, কি কি ভাব ভংগিতে, কোন কোন সুরে বা কোন কোন আবেগে ভালোবাসা প্রকাশ পায়? ৫৫ বছর বয়স পার হয়ে গেলো আমার, কিন্তু কোনো বিদ্যালয়, কোনো কলেজ, কোনো ধর্মালয় আমাকে কেঊ এই ভালোবাসার বিক্রয়কেন্দ্র অথবা বিনিময় শ্তলের নাম দিতে পারলো না। আমি ভালোবাসাকে আজো চোখে দেখি নাই। অনেক দেশ ঘুরেছি আমি। সম্রাট শাহজাহানের গড়া তাজমহল দেখেছি, প্রিন্স আর্চ বিশপ ডাইট্রিচের প্রিন্সেসের সালোমির জন্য গড়া মার্বেল প্যালেস দেখেছি, উইলিয়াম কেলী স্মিথের প্রথম ছেলে সন্তানের জন্য গড়া "ক্যালী কেসেল" দেখেছি। কিন্তু আমি ওখানেও কোনো ভালোবাসার শপিং মল অথবা ভালোবাসা কিনতে পাওয়া যায় এমন কোনো দোকান দেখি নি। যারা ভালোবাসা বুঝে, কিংবা ভালো বাসে, তারা কিছু না কিছু দিয়েই তাদের সেই অদেখা, অচেনা ভালোবাসার সৌধ নির্মান করে কিছু না কিছু স্মৃতি রেখেই প্রমান করে গেছেন যে, তারা ভালোবেসেছে।

এতো বড় বড় অট্টালিকা, তাজমহল, ক্যাসেল, গার্ডেন বানানোর আমার কোনো সামর্থ নাই। আচ্ছা, ভালোবাসা কোথায় খুচরা কিনতে পাওয়া যায়? কোনো সুপার শপে? বা কোনো বড় মলে? অথবা কোনো কারখানায়? আমি তো অনেক মল, অনেক সুপার সপ কিংবা অনেক কারখানায় খুজেছি এই ভালোবাসাকে। অথচ আজো আমি কারো জন্যেই এক ছটাক, এক শতাংশ কিংবা এক পাউন্ড ভালোবাসা কিনে আনতে পারি নাই!! কোথাও পাইও নাই!! তাহলে আমি কি কখনো কাউকে ভালোবাসি নাই? হয়তো তাই। আমি কাউকেই ভালোবাসি নাই হয়তো।

অথচ, আমি কি অবুঝ বারবার। আমি ওদেরকে না ভালোবেসে, বারবার শুধু ওদের জন্য দুশ্চিন্তায় দিন কাটাই। সারাক্ষন ভাবি, ওরা যেনো ভালো থাকে, ওরা যেনো আনন্দে থাকে। ওরা যেনো নিরাপদে থাকে। আর এটা ভেবেই আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু ওদের জন্য ঈশ্বরের কাছে ওদের সুস্বাস্থ্যের দোয়া করি। সমগ্র বিসশে যেন ওরা মাথা উচু করে নিজের সম্মানে দাড়াতে পারে তার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে রোজগার করি। আমার অবর্তমানে যেনো ওরা থাকে সাবলম্বি, তারজন্য আমার সারাটা দিন, সারাটা মাস আর সারাটা জীবন নিজের সকল আরাম, আয়েশ, আর সৌখিনতাকে ত্যাগ করে ওদের জন্য সঞ্চয় করি। নিজের অচল হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটা, কিংবা খষে যাওয়া জুতার সোউলটা বারবার সেলাই করে, ওদের শখের ইচ্ছাগুলি পুরনে সদা চেষ্টা করি। খাবারের টেবিলে বড় সুসাধু চিংড়ি মাছটি নিজের খেতে ইচ্ছে করলেও সেটা আমি ওদেরকে দিতে পছন্দ করি। দূর থেকে কয়েকদিন বিরহের সময়টা কাটানোর পর যখন সন্তানেরা ঘরে ফিরে, গিন্নী যখন অসুস্থ্যতা থেকে সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফিরে, আমি তখন আনন্দে ওদের বুকে জড়িয়ে ধরি আর বুক ভাসিয়ে দেই আমার অবাধ্য চোখের জলে। কোথাও ওদেরকে একা ছাড়তে ভয় পাই। সাতার না জানা আমার ছোট মেয়েটি বা অল্প সাতার জানা আমার বড় মেয়েটি যখন নদীর জলে নামতে চায়, তখন নিজের শরীরে জ্বর নিয়েও আমি ওদের সাথে পানিতে সঙ্গ দেই যেনো ওরা পানিতে ডুবে না যায়। নাইট কোচের কোনো গাড়িতে বসে আমি সারারাত না ঘুমিয়ে গাড়ি ঠিকমত নিরাপদে চলছে কিনা সেই পাহারায় ক্লান্ত শরীর নিয়েও সারাটা রাস্তা জেগেই থাকি। অথচ, ওদেরকে আমি ভালোবাসি কিনা সেটা সবাইকে দেখানোর জন্য আমি কোনো ইমারত তৈরী করতে পারিনা। কারন, আমার ভালোবাসা হয়তো ও রকমের সুউচ্চ ভবনের মতো নয়।   

আচ্ছা, মানুষ ভালবেসে কি কখনো কাদে? অথবা মানুষ ভালোবেসে কি খিলখিল করে হাসে? এমন কি হয় যে, মানুষ ভালোবেসে কারো জন্যে মন খারাপ করে বসে থাকে? শুনেছি, ভালোবাসায় নাকি কান্না থাকে, হাসি থাকে, বেদনা থাকে, থাকে আরো অনেক কষ্ট, বিরহ, আবার থাকে আনন্দও। আমারো এ রকম হয়। যখন সে আমার কাছে থাকে না, যখন ওর শরীর খারাপ হয়, যখন ওর মন খারাপ হয়, যখন কোনো কিছুর জন্যে ওদের চোখে পানি আসে, আমারো মন খারাপ হয়, আমারো চোখেও পানি আসে। যখন আমার সন্তানেরা আমার থেকে দূরে থাকে, ওরা নিরাপদে আছে কিনা তারজন্যে আমার ভয় হয়। ওরা ঠিকমতো খেলো কিনা, ওরা ঠিকমতো ঘুমালো কিনা, ওরা ভাল আছে কিনা এই ভাবনায় আমি তখন ওদের জন্য ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাই, ভয় পাই, চোখ ভিজে আসে কান্নায়। আমি ওদের মিস করি। যখন ভাবি, ওরা একদিন আমার থেকে দূরে চলে যাবে, ওদের সংসার হবে, আমি একা হয়ে যাবো, আমারো অনিশ্চিত বিরহে চোখে জল আসে।

এটা কি ভালোবাসা?

যদি এটাই হয় ভালোবাসা, তাহলে আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি, তাজমহল নির্মান না করেও, কোনো ক্যাসেল তৈরী না করেও, কোনো অট্টালিকা, কোনো ব্যবিলনের মতো শুন্যদ্যান নির্মান না করেও, সবটুকু মহব্বত দিয়ে, আদর দিয়ে আমি তোমাদেরকে আজীবন শর্তবিহীন ভালোবাসি। যখন আমি তোমাদের উপর রাগ করি, সেটাও আমার ভালোবাসা। যখন আমি অভিমান করি, সেটাও আমার ভালোবাসা, যখন আমি গোস্যা করি সেটাও আমার ভালোবাসা। কারন, আমার সব রাগ বা অভিমানের সব কিছুতেই মিশে আছে কোনো না কোনো দুসচিন্তা, কোনো না কোনো ভয় আর মিশে আছে শতভাগ সেই শর্তহীন ভালোবাসা। আমার প্রতি আমার সেই বাবা মার এই ভালোবাসাটা বুঝতে আমি ৫৫ বছর পার করে বুঝেছি, ছোটবেলার তাদের সেই শাসনেও ভালোবাসা ছিলো, শৈশবের কোনো এক সাধ অপুরনে আমার পিতামাতার অন্তরের ভিতরের কষ্টেও ভালোবাসা ছিলো, স্কুলের পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট না করায় সেই রাগ অভিমানের মধ্যেও ভালোবাসাই ছিলো।

তারা আজ কেউ কোথাও নাই। অথচ, আমি আজ বুকভরা সেই ভালোবাসা নিয়ে বারবার ফিরে যেতে চাই সেই অজপাড়াগায়ে আমার সেই ভিটায় যেখানে কাদামাখা হাতে আমার মা একটা বেত নিয়ে দুরন্ত ছেলেটাকে নদী থেকে উঠে আসার মেকি রাগ মাখা চোখে অথচ সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। আর বলতো-

-"উঠে আয় বলছি? তা না হলে আয় একবার, এই বেতটা দিয়ে তোকে মারি"।

হয়তো তোমরাও একদিন...... বার বার ফিরে আসে যুগে যুগে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে।

কি অদ্ভুত ভালোবাসা, তাই না?  

১৮/১১/২০২০-অডিট ঘর

Categories

আমি এখানে নতুন ভাড়াটিয়া অতিথি। আজই এসেছি। কারো সাথেই আমার এই এলাকার মানুষদের সাথে পরিচয় নাই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা ঘর পাওয়া গেল। কি যে অবস্থা চারিদিকে। অনেকদিন হয়ত কেউ এখানে আসে নাই। বাড়ির মালিকও মনে হয় অনেকদিন পর্যন্ত এই জায়গাটার কোনো খোজ নেন নাই। চারিদিকে ঘাস জঙ্গল হয়ে একাকার। বাড়ির কেয়ারটেকারেরও যেনো জায়গাটা পরিস্কার করে রাখার জন্য খুব একটা খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। চারিদিকে দুর্গন্ধ, আবর্জনা, মশা, মাছি, সাপ, তেলাপোকা কোনটা নাই। সবই আছে।

আমি আগে যে এলাকায় থাকতাম, আমি এখানে আসার আগে, সেই এলাকার মানুষজন সবাই মিলে কিছুটা হলেও এই এলাকার ঘরটা পরিস্কার করে দিয়েছিলো। তারাও অনেক কষ্ট করেছে। মায়া মহব্বত আর অনেকদিন থাকার কারনে সবাই আমাকে বিদায় জানাতে এসেছিলো। আকাশে বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব ছিলো, বৃষ্টি নামার আগেই তারা সবাই হাতাহাতি করে কোদাল, সাবল, খুন্তি দিয়ে যে যেভাবে পারে, ঘরটা পরিস্কার করে দিয়েছিলো। এতো হৈ চই হলো অথচ আশেপাশের কোনো ভাড়াটিয়ারা কেউ এলোই না। আশেপাশের ভাড়াটিয়াদের কারো কোন কৌতূহল আছে বলে মনে হচ্ছে না। সবাই যার যার ঘরে। কোন ছোট ছোট বাচ্চা কাচ্চাদেরও খুব একটা আনাগোনা নাই। বেশ নির্জন এলাকাটা।

আমি ঢোকে গেছি আমার ঘরে। মাটির ঘর অথচ মাটির দেয়াল ভেদ করে আমি যেনো আশেপাশের সবাইকে দেখতে পাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি আমার আগের এলাকার আকাশ, আকাশের তারা, গাছপালা আর সেই এলাকার মানুষজনদের যত্রতত্র চলাফেরা। তাদের সাথে আমার সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে।

একটু ঘাড় ঘুরাতেই দেখি, ও মা, একই! এখানে দেখি প্রায় সবার বাড়ির সামনে তাঁদের নাম লেখা!! আর এদের অনেকের সঙ্গেই তো আমার আগের এলাকায় মোটামুটি পরিচয় ছিল। ঐ যে, কাসেমের বাবার ঘর দেখা যাচ্ছে, তাঁর পরেই দেখি আমাদের মেয়রের বাসা। অনেকদিন দেখা হয় নাই কাসেমের বাবার সঙ্গে অথবা মেয়র জনাব আলমের সঙ্গে। আচ্ছা আলম সাহেবের সাথেতো সারাক্ষন সলিম উদ্দিন জোকের মতো লেগে থাকতো, সেই সলিম উদ্দিনকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো? আরে, আলম সাহেবের শরীরের উপর কে ওটা? ওতো আমাদের সেই কালা রতন? কালা রতনের তো ফাসি হয়েছিলো জোরা খুনের দায়ে? কালা রতনও এখানে?

ইশ, কি অন্ধকার, আর চারিদিকে কি মশা, পিপড়া আর কি সব পোকামাকড়। ঘরের বাতিগুলি যে কোথায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সুইচের জায়গাটা খুজতে গিয়ে কোথাও পাওয়া গেলো না। ঘরটার কোথাও কোনো সুইচ নাই, কোথাও কোনো বাতিও নাই? দরজাটা একেবারে বন্ধ। কোনো জানালাও নাই? কি ব্যাপার, আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছি না কেনো?

উফ, হটাত করে শরিরটা ভিজে যাচ্ছে কেনো? একি? ছাদ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে!! মনে পরেছে কিছুক্ষন আগে বৃষ্টির লক্ষন দেখেছিলাম। এখন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু ছাদের উপর থেকে ক্রমাগত পানি আমার ঘরে পড়ে ভরে যাচ্ছে। কি পোকা মাকর!! একদিকে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না আবার অন্যদিকে এইসব পোকা মাকড় এলো কোথা থেকে? ভীষন ভয় লাগছে এখন আমার।

উচ্চস্বরে নাসিমার মাকে ডাকতে থাকি। কোথায় গেলে গো তোমরা? আরে, কেউ শুনছো না কেনো? আলোটা জালাও!! কেউ কি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছো না? আরে, করিম, ওই সগীর, কই তোরা? আমার গলার ডাক উচ্চ থেকে আরো উচ্চস্বরে চারিদিকে কেপে কেপে উঠছে। আমার আকুতিতে পাশের এলাকার কুকুর গুলীও কি করুন সুরে কাদছে, অথচ আমার ঘরের কি কেউ শুনছে না? আমি আরো জোরে আমার বাড়ির গার্ড শাহিনুরকে ডাকি। গার্ড শাহিনুরও আজ আমার কোনো ডাক শুনতে পায় না? ওই শাহিনুর, আমি তো ভিজে চুপসে যাচ্ছি!! আমার বাকী কাপড় চোপড় কই? আমার সেই ইতালীর ছাতাটা কই? আমার জার্মানীর রেইন কোটটা কইরে শাহিনুর? তোরা সবাই কই?

হটাত বিকট এক শব্দে আমার যেন মাথা ঘুরে গেল। মনে হলো আকাশ ভেঙ্গে জ্যুতির্ময় অবয়বে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো চোখ ঝলসে যাওয়া শতকোটি আলোর চ্ছটার মতো চোখ নিয়ে বিকটকায় দেহধারী আমার এই বদ্ধঘরে প্রবেশ করলেন। আমি তাদের এর আগে কখনো দেখি নাই। আমি ভয়ে চিৎকার করতে গিয়েও আমার কন্ঠনালি থেকে এক ফোটা শব্দও যেনো বেরোলো না। আমি ঠায় শুয়েই রইলাম, সর্বশক্তি দিয়েও আমি উঠে বসতে পারলাম না। আগন্তক দুজন শুধু একটা কথাই বললেন, আপনি আজ থেকে এখানেই থাকবেন। এটাই আপনার চিরকালের ঘর। আমরা ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে এসেছি। আপনার ফাইলটা আমাদের কাছে আছে। আপ্নার যাবতীয় সব হিসাব কিতাব না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে এখানেই এই বদ্ধঘরে বাতিহীন, জানালাহীন, দরজাবিহীন, এই স্যাতস্যাতে ঘরের মধ্যেই থাকতে হবে। প্রাথমিক অডিট যদি সন্তোষজনক হয়, তাহলে আমাদের মালিকের আদেশে আপনাকে আপাতত অন্যত্র নিয়ে যাবো, নতুবা সব হিসাব এখানেই চুড়ান্ত করা হবে। আর ততোদিন আপনি এখানেই অনাহারে একা সময় কাটাবেন।

খুব ভয়ে ভয়ে অস্ফুট কন্ঠে আমি জিজ্ঞেস করলাম। ভাই, এ স্থানের নাম কি? আমার পরিবারের অন্যরা সবাই কোথায়? আমার পাজেরো গাড়িটা কই, আমার বারো তালা বাড়িটা কি এখান থেকে অনেকদূর? আমার আদরের মেয়ে নাসিমা কই? নাসিমার মা কোথায়? আমি এখানেই বা কেনো? ঘরটা বড় অন্ধকার, একটু আলো জ্বালিয়ে দিন না। কত যে মশা, মাকড়শা আর পোকা মাকড়, একটু এরোসোল দিন না।

কি যেনো ভাষায় আমাকে শুধু আগন্তক এটাই বলে গেলেন, এটা আপনার সাধের ড্রইংরুম কিংবা এসিওয়ালা অফিস ঘর নয়। না এটা কোনো আফগানিস্থা্ন, বা পাকিস্থান কিংবা কাজিকিস্থান কিংবা আমেরিকার কোনো বিলাশ বহুল রেস্তোরা। আর আপনি যেখানে শুয়ে আছেন, তার নাম অডিট ঘর। যদি আপনি প্রিপেইড কার্ডে বিদ্যুতের দাম আগেই দিয়ে থাকেন, যদি আপনি পেট্রোল অকটেন কিংবা গাড়ির জন্যে আগেই মুল্য পরিশোধ করে থাকেন, আপনার ফাইলটা চেক করে আমরা কিছুক্ষনের মধ্যেই সবকিছু, বাতি, গাড়ি, এসি কিংবা শোয়ার জন্যে খাট-পালঙ্গ সব কিছুর ব্যবস্থা করে দেবো। আর যদি আপনি যে এলাকায় আগে বসবাস করতেন, সেখান থেকে কিছুই ট্রান্সফার না করে থাকেন, তাহলে আমাদের পক্ষে আপনাকে কোনো কিছুই সরবরাহ করা সম্ভব নয়। এখানে কোনো কিছুই বিনিময় হয় না। এর নাম গোরস্থান। আর আপনার এই অডিট ঘরের আরেক নাম- "কবর"।

১৫/১১/২০২০- ছবি

Categories

ছবি দেখিলেই যেনো বুক ধক করিয়া উঠে। অতীতের ছবি তো আরো ধকের মাত্রা বাড়াইয়া দেয়। অতীতে যে ছবিটা ভালো হয় নাই বলিয়া ছিড়িয়া ফেলিয়াছিলাম, আজ সেই অস্পৃশ্য, ঝাপসা স্যাতস্যাতে ছবিটা দেখিলেও ভালো লাগে। একাগ্রচিত্তে ছবিগুলি দেখিলে বারবার শুধু ইহাই মনে হয়, দিন ফুরাইয়া যাইতেছে। সময়ের ক্রমাগত টিকটিক শব্দে আমার দিনও টিকটিক করিয়াই ফুরাইয়া যাইতেছে। ইহাকে কোন বাধনেই আর থামাইয়া রাখা সম্ভব নয়, আর কেউ পারিয়াছে বলিয়াও আজ পর্যন্ত কোনো দলিল নাই, এবং আগামিতেও কেহ পারিবে ইহার স্বপক্ষে কোনো বিজ্ঞান কিংবা দর্শন আবিষ্কৃত হয় নাই। সময়ের এই টিকটিক শব্দ আমি আমার বুকের প্রতিটি ধুকধুক আওয়াজের, ঘুমের ঘোরে, নিশিথে কিংবা যখন একা থাকি তখন শুনিতে পাই। যখন একা থাকি, তখন “সময়” যেনো আমার কানে কানে ফিসফিস করিয়া বলিয়া যায়,

"---পিছনে তাকাইয়া দেখিয়াছো কত বেলা পার করিয়া আসিয়াছো? তুমি তোমার জন্মের ক্ষন, দুরন্ত শৈশব, কৈশোর পার করিয়া আসিয়াছো, তোমার অনেক বেলা পার হইয়া গিয়াছে, এখন আর তোমার জন্য সকাল বলিয়া কোন কাল নাই। বিকালের রোদের আমেজ কি তুমি বুঝিতে পারিতেছো? যদি তুমি ইহা অনুধাবন করিতে না পারো, তাহা হইলে, আয়নার সামনে গিয়া দাঁড়াইয়া এক পলক তোমার চোখের নিচে তাকাইয়া দেখো, অথবা হাত পায়ের রক্ত প্রবাহের ধমনীগুলির দিকে তাকাইয়া দেখো। ইহারা অনেক সময় ধরিয়া অবিরাম কাজ করিতে করিতে প্রায় অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে। তোমাকে দেখিয়া কি রাস্তার ঐ অবুঝ বালক আর “ভাই” বলিয়া সম্বোধন করে? না করেনা। এখন তোমাকে অনেকেই “চাচা” বা আংকেল” বলিয়া ডাকিতে পছন্দ করে। আর কয়েকদিন অতিবাহিত হোক, দেখিবে, তুমি এই “চাচা” কিংবা “আংকেল” উপাধিটাও ধরিয়া রাখিতে পারিবেনা। তখন কেউ তোমাকে "দাদা" কিংবা "নানা" বলিয়া ডাকিতে আরম্ভ করিবে। তোমার এখন পা কাপিতেছে, হাত কাপিতেছে, চোখেও খুব ভালো করিয়া সব দেখিতে পাওনা। বৃহৎ অট্টালিকায় উঠিতে এখন তোমার সাহস আর আগের মতো কাজ করেনা, সমুদ্রে ঝাপ দেওয়ারও সাহস হয় না। তুমি আস্তে আস্তে নির্জীব পদার্থের ন্যায় হইয়া যাইতেছো। এখন একটু বর্ষার পানিতেই তোমার সর্দিকাশি বাধিয়া বসে, শীত আসিলেই মনে হয়, এই বুঝি রাজ্যের সব ঠাণ্ডা তোমার সারা শরীরের উপর দিয়া বহিয়া যাইতেছে।......

ছবি দেখিতে দেখিতে মনটাই খারাপ হইয়া যায়। মনে হয়, আমি কি সত্যি সত্যি একদিন এই নীল আকাশটা আর দেখিতে পারিবো না? এই ফুলগাছ, এই রাস্তার ধার, এই নদীর ঢেউ, এই শীতের হাড়কাঁপুনি ঝাঁকুনি, কিংবা বৃষ্টির শীতল জলেরচ্ছটা কোণো কিছুই কি আমি আর উপভোগ করিতে পারিবো না? সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর রাতে বাড়ি ফিরিবার আনন্দটা কি আর পাওয়া যাইবে না? অথবা পরিবারের সঙ্গে, বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে চুটিয়ে ঝগড়া কিংবা হৈচৈ করার অবকাশ কি আর কখনোই আমার হইবে না? মন বড় বিষণ্ণ হইয়া উঠে। মনে হয় এই জনমটা কেনো হাজার বছরের জন্য হইলো না? ভগবান বড় নিষ্ঠুর। কেহ হয়ত ভগবানকে বিশ্বাস করিয়া ইহাই মানিয়া নেন, আবার কেহ ভগবান আছে ইহাই বিশ্বাস করেন না। ভগবানকে অবিশ্বাস করিয়া যদি হাজার বছরের অধিক বাচিয়া থাকা যাইতো, তা না হইলে একটা যুক্তি থাকিত, কিন্তু ভগবান আছে বা নাই, এই বিশ্বাসের উপর পৃথিবীতে অধিককাল বাচিয়া থাকিবার কোনো উপায়ও নাই।

শৈশবের উচ্ছল চঞ্চলতা, যৌবনের অদম্য বন্যতা আর এখনকার বৈষয়িক ব্যস্ততার মাঝে কখনোই মনে হয় নাই যে, একদিন আমার এই সাম্রাজ্য, আমার এই আধিপত্যতা, কিংবা এই বাহাদুরী, অহংকার একদিন কোনো একটা ছোট বিন্দুর মধ্যে আটকাইয়া যাইবে যেখানে আমার শ্বাস নীরব, আমার মস্তিষ্ক নীরব, আমার হাত নীরব, আমার শরীর নিথর। আমার সবকিছুই নীরব। আমার চারিধারের কোনো কিছুরই পরিবর্তন হইবে না। তখনো ঠিক সময়েই সূর্য উঠিবে, পাখীরা ঠিক সময়েই কিচিরমিচির করিয়া ভোরের আলোকে জাগাইয়া তুলিবে, প্রাত্যাহিক কাজে সবাই যার যার কাজে ঠিক সময়েই ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া আবার ঠিক সময়েই ঘরে ফিরিয়া আসিবে। ঠিক সময়েই সবাই তাহাদের প্রতিদিনের সকালে নাস্তা, দুপুরের খাবার, কিংবা পরিবার পরিজন লইয়া বিকালে শরতের কোন একসন্ধ্যায় বাহির হইয়া পড়িবে, শুধু আমি ছাড়া।

আজ হইতে শতবছর আগেও কেউ না কেউ হয়ত এইভাবেই তাহারা আজকের দিনটার কথা ভাবিয়া ভাবিয়া তাহাদের ঐ সময়ের ব্যথার কথা, এই পৃথিবী ছাড়িয়া যাওয়ার আক্ষেপের কথা, এই পৃথিবী ছাড়িয়া না যাওয়ার আকুতির কথা বলিয়াছিলেন। তাহাদের কেউ হয়ত এই পৃথিবীতে অনেক প্রতাপশালী রাজা ছিলেন, কেউ হয়ত ক্ষমতাশিল সেনাপতি ছিলেন, কেউ হয়ত কোটিপতি ধনকুবের ছিলেন, কিন্তু কেহই এই প্রস্থানের রাহু গ্রাস হইতে মুক্তি পায় নাই। আমার কোন পূর্বসুরী যেমন পায় নাই, আমিও পাইবো না আর আমার পরের কোনো উত্তরসুরীও পাইবে না। আজ যতো সুখ নিয়াই এই পৃথিবীতে বিচরন করি না কেনো, যত অভিযোগ নিয়াই বাচিয়া থাকি না কেনো, কিংবা যত কষ্ট নিয়াই দিনযাপন করিনা কেনো, যখন কেউ থাকে না, তখন তাহার প্রতি মুহূর্তের হাসি, উচ্ছ্বাস, মহব্বত, গালি কিংবা মেজাজের প্রতিধ্বনি শুনিতে পাওয়া যায়। এই প্রতিধ্বনি কখনো কাউকে কাদাইবে, কখনো কাউকে একা একাই হাসাইবে, আবার কাউকে এমন এক জায়গায় নিয়া দাড় করাইবে যেখানে মনে হইবে, হয়ত আমার বাচিয়া থাকাটা তাহাদের জন্য খুব প্রয়োজন ছিলো। হয়ত সব রাগ, অভিমান, অভিযোগ সত্তেও মনে হইবে আমার চলিয়া যাওয়ার কারনে এই শুন্যস্থানটা কেহই পুরন করিবার মতো নয়। তখনো এই ছবিগুলিই নীরবে কথা বলিবে।

কিন্তু তাহার পরেও সবচেয়ে সত্য উপলব্ধি হইতেছে, একদিন, সবাই আমরা একে অপরের হইতে আলাদা হইয়া যাইবো। কেউ আগে আর কেউ পড়ে। আমরা সবাই একদিন একজন আরেকজনকে হারাইয়া ফেলিবো, মিস করিবো। দিন, মাস, বছর কাটিয়া যাইবে, হয়ত কাহারো সাথে আর কাহারো কোনো যোগাযোগ থাকিবে না। একদিন হয়ত আমাদের সন্তানেরা, নাতি নাতিনিরা আমাদের অতিতের সব ছবি দেখিয়া কেহ কেহ তাহাদেরই সাথী লোকদের প্রশ্ন করিবে, “কে এটা? কে ওটা?”, "উনি কে" বা "উনারা কারা"? তখন হয়ত অনেকেই চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু অশ্রুজলে অদৃশ্য কোনো এক মুচকি হাসি দিয়া বলিবে,

“এরা ছিলো ওইসব লোকজন যাদের সঙ্গে আমি আমার সবচেয়ে ভালো কিছু সময় কাটিয়েছি। আজ ওরা কেউ নাই।”

এরই নাম ছবি।

আমি কি কেবলই ছবি? তারা কি কেবলই ছবি যারা আজ থেকে শত বছর আগে এই পৃথিবীতে এসেছিলো এবং এখন যারা আর কোথাও নাই? কেউ কেউ তো আবার কোথাও ছবি হিসাবেও নাই? অথচ তারাও এক সময় আমার মতো এই পৃথিবীর আলো বাতাসে বড় হয়েছে, তাদের মধ্যেও প্রেম এসেছিলো, মহব্বত এসেছিলো। তারাও সংসার করেছে, জীবনের প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্যত্র সঞ্চালিত হয়েছে। তারাও নীল আকাশ দেখে, নদীর পানি দেখে, বসন্তের ফুল আর ফুলেল পরিবেশে কখনোকখনো কবিতাও লিখেছে। গুনগুন করে গান গেয়েছে। পাখির কোলাহলে তারাও কখনো কখনো আপ্লুত হয়েছে। তাদের সময়েও শীত বসন্ত, বর্ষা, সবই এসেছে। তারাও কারো না কারো সাথে হাত হাত ধরে জীবনের অনেক পথ পড়ি দিয়েছে। এদের অনেকেই হয়ত আজিকার আমাদের থেকেও অনেক নামি দামী মানুষের মতো ছিলেন। আরো কত কি? কিন্তু ওই সব গুনীজনেরা, মানুষগুলি আজ কোথাও নেই। কেউ হয়ত কারো কারো ড্রইং রুমে ছবি হয়ে আছে, কিন্তু তার দেহ পচতে পচতে মাটির সাথে মিশে দেহ বলে আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। যেই হাড়গুলি ছিলো, সেগুলিও এদিক সেদিক হতে হতে ওগুলো আর কোথাও খুজে পাওয়া যাবে না। যে কবরে একদিন তাদেরকে শুইয়ে হাজার হাজার লোক, আত্মীয়সজনেরা বিলাপ করেছিলো, সেইসব আত্তীয় সজনেরাও আজ কোথাও হয়ত নাই। ওই কবরেই হয়ত একে একে শুইয়ে আছেন তারাও। ওই কবরটাও কারো একচ্ছত্র নয়।

এই পরিসংখ্যানে আমিও তাহলে নিছক একটা ছবি এবং কোনো এক সময় এই ছবি থেকেও আর কোথাও নাই। আমার ইতিহাস এই পৃথিবীর কেউ মনে রাখবে না। আমার আজকের দিনের এই রাজত্ব, আমার সাম্রাজ্য, আমার রেখে যাওয়া সব সম্পদ আর সম্পত্তি হয়ত হাত বদলের মাধ্যমে আমার বংশ পরম্পরায় কারো হাতে সেটা পৌঁছে যাবে কিন্তু আমার নাম, আমার আজিকার দিনের পরিশ্রম, আমার আজিকার দিনের কোনো কিছুই তার কাছে পৌঁছে যাবে না। সে হয়ত জানবেই না, কার তৈরী করা সিংহাসনে বসে তিনি কার উপরে প্রতিনিধিত্ব করছেন। হয়ত তিনি জান্তেও চাইবেন না।

তাহলে কিসের জন্য? কার জন্য? 

আজ যারা তোমরা আমার এই মন্তব্যগুলি পড়ছো আর ভাবছ, তাহলে কি আমরা সবাই হাত গুটিয়ে কোনো কিছুই করবো না?  হ্যা, করবো। শুধু নিজের জন্য আর নিজের আরামের জন্য।

তোমাদেরও এক সময় আসবে, আমার মতোই চিন্তা  তোমাকে আচ্ছাদিত করবেই। কারন এটাই এই পৃথিবীর আসল রুপ আর বিবেদেচ্ছ্য মায়া। এই প্রিথিবী কাউকেই তার অপ্রয়োজনে মনে রাখে না।

১২/১১/২০২০-আনিস চৌধুরীকে মেইল

প্রিয় আনিস (নেভাল অফিসার)

যখন নিজের কেউ সারারাত বাড়ি ফিরে আসে না, তখন সেই কালো রাত জীবনের থেকেও লম্বা হয়। তখন হরেক রকমের ভয়, দুসচিন্তা, আর অনিয়ন্ত্রীত ভাবনা কিংবা সব অশুভ সম্ভাবনা নিজের মনকে আকড়ে ধরে। যার নিজের লোক সারারাত বাড়ি ফিরে না, তার শান্তিতে দম নেবারও কোনো অবকাশ থাকে না। প্রাত্যাহিক জীবনের রুটিন থেকে বিচ্যুত হয়ে ছিটকে পরা এই মানুষটার জন্য তখন প্রতিদিন সকাল থেকে তার পরেরদিন অবধি চারিদিকে একটা শুন্যতাই বিরাজ করে। আর এই শুন্যতা এমন কিছু আশংকার স্থান তৈরী করে যার নাম - অমিবশ্যার কষ্ট।  এই অমাবশ্যা কবে কাটবে, আদৌ কাটবে কিনা সেটা একটা আগামীকালের বিবেচনা। অনেক সময় মানুষ এই অমাবশ্যা কিভাবে কাটবে তারজন্য হয়তো জজ্ঞের আয়োজন করে, কিন্তু অমাবশ্যা কাটবে কিনা সেটা কোনোভাবেই এই জজ্ঞ নিসচয়তা দেয় না। অনেক সময় ছোট ব্যাপার অনেক বড় সড় ব্যাপার হয়ে দারায়। আর সেই ছোট থেকে বেড়ে উঠা বড় ব্যাপারটা সারাটা জীবনের জন্য ঝামেলার কারন হয়। একটা জিনিষ সর্বদা মনে রাখা দরকার যে, সবসময় গরম গরম পরোটাই যে খেতে মজা তা নয়, অনেক সময় এই গরম গরম পরোটার চেয়ে বাসী রুটির অনেক কদর বেড়ে যায়। কারন হাওয়া যখন কারো নামে গরম হয়, তখনই এটা হয়। আর আমরা এটাকে বলি শনির দশা। শনি এমন এক হাওয়ার নাম যে, এই হাওয়ার সাথে আরো অনেকের নামও গরম হয়। আর এই হাওয়া সবসময় চলমান। মুদি দোকানে এর উৎপত্তি, আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এর বিনাশ। এই শনির হাওয়ায় অনেকেই বলীর পাঠা হয়। আর কেউ যখন বলীর পাঠা হয়, সেই বলীর পাঠাকে সবাই বিষাক্ত খাবারই মনে করে। ফলে, যতো দামি পাঠাই হোক, বলীর পাঠার কোনো দাম হয়না। এটা তখন হয় একটা বর্জ্য। আর বর্জ্য কেউ নিজের কাছে রাখে না। সবাই এটাকে বিষাক্ত মনে করে ফেলেই দেয়।

একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, ক্ষমতাশীল রাজত্তে দেওয়ালের শুধু কানই থাকে না, চোখও থাকে। আবার এটাও ঠিক যে, রাজনীতিতে কোনো কিছুই সারা জীবনের জন্য হয় না। কোনো না কোনো সময় এর একটা শেষ আছে। ওই শেষের অধ্যায়টার জন্য অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। রাজনীতির সবচেয়ে বড় দূর্বল পয়েন্ট হচ্ছে- রাজনীতিতে ভরষা আর বিশ্বাস যেমন ছেলেখেলার মতো হয়, তেমনি এই একই রাজনীতিতে হুমকীও অনেকটা হাচির মতো হয়। কিন্তু এই হাচিস্বরূপ হুমকী যখন সবল হয়, তখন পুরু রাজনীতিটা একটা বেওয়ারিশ বোমের মতো আত্মপ্রকাশ করে। তখন কেউ জানে না, ওটা কখন কিভাবে কোথায় ফাটবে আর কে কে এর মধ্যে মারা যাবে, আহত হবে বা হবে নিখোজ। যদি রাজনীতির এই দূর্বল পয়েন্টটা কেউ ভালোভাবে পর্জবেক্ষন করতে সক্ষম হয়, তখন নিজ দলের রাজনীতি থেকেও মানুষকে সাবধান থাকতে হয়। কারন, বিপদজনক জল যখন মাথার উপর উঠে যায়, তখন যা দরকার, তা হচ্ছে বহির্শক্তির। যদি এই বহির্শক্তি সময়মতো না আসে, তখন যিনি ডুবে আছেন, তিনি তো ডুববেনই, তার সাথে আরো অনেকেই ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে আপনজন। আর এটাই হচ্ছে এখন তোমার বেলায়। তুমি কারো নিজের সার্থের জন্য তোমার নিজের শব্জীক্ষেত জ্বালিয়ে দিতে পারো না। আর যদি একটা ভুলের কারনে তোমার শব্জী বাগানে আগুন লাগে, সেটা তোমার একান্তই নিজের ক্ষতি। রাজনীতি করতে গেলে হয়তো কিছুটা আগুনের ফুল্কী গায়ে লাগতেই পারে, কিন্তু সেই ফুলকী নিভানোর জন্য যথেষ্ঠ উপকরন রাজনীতি থেকেই সাপ্লাই দিতে হয়। যদি সেই সাপ্লাই দল থেকে না আসে, তাহলে সেই ফুল্কী থেকে নির্ঘাত আগুন লাগার সম্ভাবনা অধিক। আগুন থেকেই আগ্নেয়গিরির উৎপত্তি এটা মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন। আগ্নেয়গিরির আগুন থেকে কোনো দমকল বাহিনী আজ পর্জন্ত কাউকে বাচাতে পেরেছে কিনা তার কোনো রেকর্ড নাই।

শোনো ভাই, রাজনীতিতে যদি মানবিকতা আর সচ্চতা থাকতো তাহলে কেহই এই রাজনীতি করতে আসতো না। রাজনীতিতে পূর্নিমা আর অমাবশ্যা যেমন একসাথে চলে আবার জোয়ারভাটাও একসাথে চলে। এই রাজনীতিতে আবার কোনো কোনো সময় কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই বাস্তব, এটাই সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। বড় বড় রাজনীতিবিদরা তাদের সার্থ হাছিল করার জন্যই কর্মী বাহিনীর জন্য শুধু ভরসার স্থান তৈরী করে আর নাটক বানায়। আর এই চরিত্রগুলির মধ্যে কেউ কেউ মূল আবার কেউ কেউ ইচ্ছে করেই সহযোগীর ভুমিকায় থাকতে পছন্দ করে। এটা সময়ের পরিস্থিতি বুঝেই তারা নিজ নিজ পছন্দের এই চরিত্রগুলি বেছে নেয়। অথচ যারা ডেডিকেটেড, তারা বুঝতেও পারে না সত্যিকারের পরিস্থিতিটা কি। এই মেকী ভরষার স্থান যখন উম্মোচিত হয়, যখন সামনে বড্ড ভয়ংকর এবং আসল চেহারাটা বেরিয়ে আসে কিংবা কেউ যখন আসল চেহারাটা দেখে বা বুঝে ফেলে, তখন ডেডিকেটেড কর্মীগুলি নিজেদেরকে নিজের কাছে বড় অসহায় মনে করে, নিজেকে বোকা মনে করে। কারন মিথ্যা ভরষায় ভর করে যখন কেউ সামনের দিকে নিজের ইচ্ছায় এগিয়ে আসে, তখন সেই জায়গা থেকে আর কারো ফিরে আসার পথ খোলা থাকে না।

শোনো ভাই, যখন কেউ কাউকে আঘাত করার জন্য চেষ্টা করে থাকে তখন সে এটা ভুলে যায় যে, সে আঘাতের ব্যথা চিরকাল থাকে। আর এই ব্যথা থেকে উৎপত্তি হয় রাগ। আর সেই ব্যথা, সেই রাগ আমদের একটা কথা বলে দেয় যে, সতর্ক থাকো। কেননা অনেক সময় সেই আঘাত বা রাগ নতুন রুপ নিয়ে তোমার আমার কাছেই ফিরে আসে। তুমি বা আমি হয়তো সে শব্দটা শুনতে পাই অথবা জেনে বুঝে এড়িয়েও যাই। আবার উলটো দিকে যদি বলি, এই রাগ উঠার মুহুর্তে আমাদের মনে যদি এই অনুভুতি জাগে যে, প্রতিশোধই হচ্ছে এর একমাত্র আসল চিকিৎসা, তাহলে আরো মারাত্তক ভুলের দিকেই ঢোকে যাই আমরা। আমাদের এই রাগ, অভিমান, প্রতিশোধ, ক্রমশই ধংশের পথকে এগিয়ে নিয়ে চলে। আমরা নিজেদের রাগ আর সেই রাগের বশে যে সব পদক্ষেপ নিতে পারি তার ফলাফলের বিশয়ে সতর্ক থাকা উচিত। কেননা ক্ষোভের বশে নেয়া পদক্ষেপের ফল কখনোই বদলনো যায় না। আর পিছনে পরে থাকে শুধুই উপলব্ধি। আরম্ভ হয় সেই “যদি”। "যদি" অমুকটা না করতাম,, "যদি" অমুকটা করতাম, "যদি" তার সাথে আমার দেখা না হতো, "যদি" অমুকের সাথে আমার আগে দেখা হতো, "যদি" ওই সময়ে আমি ওইটা না করতাম, "যদি" সময়টা পিছিয়ে নেয়া যেতো, "যদি" এটা না করে ওটা করতাম ইত্যাদি।

- তারপরেও একটা কথা থেকেই যায়- তাহলে কি ফেরার কোনো পথ নাই?

- আছে। তাহলে সেটা কি?  

ভিত্তিহীন আর অকারন গুরুত্তহীন কথা শুনবার সময়ে আমাদের সর্বদা নিজের বুদ্ধিমত্তা, নিজের অভিজ্ঞতা আর মেধাকে ধীরেসুস্থে নিকটস্থ ভালো কিছু মানুষের সাথে, কিংবা পরীক্ষিত ভরষা করা যায় এমন কিছু গুনীজনের পরামর্শে নিজের মৌলিক চেতনাকে বাচিয়ে জীবনে কাকে কতটা জায়গা দেবো সেটা ঠিক করে ফেলা। তাহলে জীবনে আর কোনো সমস্যাই থাকে না। আর কার সাথে কি কমিট্মেন্ট করা দরকার তার যদি কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে, তখন জীবনের স্রোত সবসময় একই থাকে বলে আপাতত মনে হয়। তখন পিছুটানের আর ভয় থাকে না। আর যখন পিছুটানের ভয় থাকে না, তার সামনে দ্রুতগতির শক্তিটাও ধীরগতি বলে মনে হয় না। যতোক্ষন যেটা নিজের কাছে ভালো লাগবে, ততোক্ষন সেটা সে চালিয়েই যায়, আর সেখানেই শুরু হয় জীবনের সবচেয়ে বেশী লাঞ্ছনা। কারন মিথ্যের বোঝা যদি বুদ্ধিমত্তার উপর চেপে বসে তাহলে মানুষ ধীরে ধীরে চোরাবালির বাকেই আটকে পড়ে। যেখানে আফসোস ছাড়া আর কিছুই থাকে না। আমরা একা নই, সাথে পরিবার আছে, সন্তান আছে, আমাদের বাবা মা অন্যান্য আত্মীয়স্বজন আছে। যদি সে সবকে আমি মানি, ভালবাসি, বিশ্বাস করি, তাহলে কোনো কিছুই আমি একা একা যা ইচ্ছা তাই করতে পারি না। হোক সেটা রাজনীতি কিংবা অন্য কিছু। তাই সব কিছু পরিহার করো। শুধু আকড়ে রাখো সেতা যেটায় তোমার নিজের লাভ, যেটায় তোমার পরিবারের লাভ।

এখানে আরো একটা পরামর্শ তোমার জন্য আমার দেয়া দরকার, যে, এয়ারপোর্টের লাউঞ্জই হোক আর ফাইভ স্টার হোটেলই হোক। এগুলি যতো সুন্দরই হোক সেটা আমার তোমার  নিজের ঘর নয়। তার উপর মায়া জড়াতে নেই। তাতে শুধু কষ্টই বাড়ে। নিজের হয় না। ঠিক সে রকম হলো রাজনীতির দলনেতা বা তার ভালোবাসা। সেটা আমার পরিবার নয়, না আমার বংশ। তার উপরেও আমার মায়া জড়াতে দেয়া উচিত না। তাই এয়ারপোর্ট কিংবা ফাইভ স্টার হোটেল থেকে চেক আউটের সময় যেমন মন খারাপ করা মানে নিজেকে বোকা মনে করা, তেমনি এই রাজনীতি বা দলনেতাদের উপর থেকে আস্থা ফিরিয়ে নেয়ার সময়েও মন খারাপ করা উচিত নয়। সব সময় আমি ভাবি যে, বেশীর ভাগ মানুষের দুটু মুখ থাকে। একটা মুখ যেটা সে সারা দুনিয়াকে দেখায়। আরেকটা আসল মুখ যেটা সে লুকাতে চায়। কিন্তু দেখো মজার ব্যাপার হলো, সত্যিটাকে কেউ লুকাতে পারেনা, কারন সত্যিটাকে লুকানো যায় না, সত্যি লুকিয়ে থাকে না। হয়তো সত্যিটা মিথ্যার চাপে কিছুদিন আত্তগোপন করে কিন্তু সত্যি একদিন বেরিয়ে আসেই। আর এটাই হলো সত্যির আসল চেহাড়া। রাজনীতিতেই সবচেয়ে বেশী হয় এটা। সবসময় মানুষের দুমুখো চেহারাটা অথবা আসল চেহারাটা অনেক সময়ই ধরা সম্ভব হয়ে উঠে না। বিশেষ করে তখন যখন সে খুব কাছের মানুষ হয়, হোক সেটা রাজনীতির দল বা নিজের গোত্র।। তাই এসব দলনেতা বা লিডারদের কাছ থেকে যতোটা দূরে থাকা যায়, ততোটাই ভালো। এটাও সঠিক নয় যে, সবাই দুমুখো। কিন্তু এটা সত্য যে, কখনো যদি একটু আভাষও পাওয়া যায় তাহলে তার থেকে সতর্ক হওয়াটা খুবই জরুরী। নিজের প্রান, মান বাচানোই বুদ্ধিমানের কাজ।

এখন যেমন তুমি নিজেই দেখছো, তুমি আসলেই একা। কাউকে দেখতে পাও চোখের দ্রিষ্টির সীমানায়? কাউকে না। কিন্তু যাদেরকে দেখতে পাও, তারা সবাই খুব অসহায়। এইসব প্রিয়জনেরা কোনো প্রিয় মানুষের আসার অপেক্ষায় যখন অধীর আগ্রহে বসে থাকে, দিন গুনতে থাকে, আর সে যখন ফিরে আসে না তখন পৃথিবীর যত দুসচিন্তা আর অমংগল চিন্তাগুলিই শুধু তাদের মাথায় চড়ে বসে। আর প্রতিটি দুশ্চিন্তার কোনোটাই তখন আর ফেলনা মনে হয় না। ভাষার আর কোনো প্রয়োজন পড়ে না কষ্টকে বহির্প্রকাশ করার। তখন ভিতর থেকে তাদের সবকিছু শুন্য মনে হয়। একটা জিনিষ খুব ভালো করে জেনে রাখো যে, শুন্য অন্তরে শক্তি কম, চেলেঞ্জ কম। এই সময়ে যেনো সময়টাই কাটতে চায় না। কষতের সময়টা বা দিনটা অনেক লম্বা মনে হয়। মনে হয়, যেনো কষ্টটা পিছু ছাড়ছেই না। তারপরেও সময় ভালো হোক আর না হোক, সময় কেটেই যায়। নতুন সময় সামনে আসে। সেটাও কেটে যায়, আবার আরেকটা সময় সামনে আসে। আর প্রতিটা সময় সবার জন্যই কিছু না কিছু রেখেই যায়। এই রেখে যাওয়া সময়ের সাক্ষি একদিন ইতিহাস হয়ে যায়, আবার কারো কারো সময়ের এই ইতিহাস এমন কিছু দিয়ে যায় যা সারা জগতময় চারিদিকে অনেক লম্বা সময় ধরে ভেসেই বেড়ায়। তাই, আজকের দিনের কষ্টের সময়টাকে মনের ভিতরে স্মরণ রেখে বাকী সব কিছু ভুলে যাও। আবার নতুন করে নতুন ভাবনায় সবাইকে নিয়ে জীবন শুরু করো। এই দুনিয়ায় আপনজন ছাড়া আসলেই আর কারো কেউ না।

তোমার জন্যে আমার একটা উপদেশ থাকলো, এই আমাদের অসমানভাগে ভাগ করা সমাজে প্রতিমুহুর্তে সবার অধিকার ক্ষুন্ন হলেও, এটা নিয়ে কারো কাছেই বিচার চাইবার কোনো পথ নাই। আমি বা তুমি একা এই অসমানভাগে বিভক্ত সমাজকে ভেংগে চুরে সমান করতে যেমন পারবো না, তেমনই সবার জন্য আমি বা তুমিও দায়বদ্ধ নই যেখানে সমাজটাই অসমান। এই অসমানভাগে ভাগ করার কারনে কেউ তো আছে যারা তাদের নিজেদের সার্থ হাসিল করে। ফলে যারা অসমান ভাগে সমাজকে ভাগ করে নিজেদের আরামকে হাসিল করে, তারাই আসলে জুলুমবাজ। এই জুলুমবাজ সব রাজনীতির একটা প্রধান অলিখিত সংবিধান, একটা অলিখিত আইন। তাহলে আমি বা তুমি কার বিরুদ্ধে লড়াই করছি? তোমার এই আন্দোলন বা অসহিস্নুতা ভুল, যদিও তুমিই ঠিক। কিন্তু অসাংবিধানিকভাবে এবং পরিকল্পিতভাবে রচিত এই অসমানভাগে ভাগ করা সমাজে সবাই জুলুমবাজই হতে চায়। হোক সেটা তোমার দলনেতা, হোক সেটা কোনো ভাই কিংবা তোমার প্রিয় কোনো কর্মী। সবাই লাভ চায়। তাহলে কিসের জোরে তুমি বা আমি এই অসমর্থিত অসমান ভাগে সমাজকে দোষারুপ করে তাকে ক্লিন করার চেষ্টা করছি? কার জন্যে? মাথা থেকে এই ভাবনা একেবারে ছুড়ে ফেলো। আগে নিজের জন্য করো।

পৃথিবীতে অনেক কিছু আছে যা খুব সুন্দর। যেমন মায়া, যেমন বন্ধুত্ত, যেমন আদর ইত্যাদি। এই জিনিষগুলি কখনো বদলায় না। আরো কিছু জিনিষ আছে যা বদলায় না যেমন, মানুষের অনুভুতি, রাগ হিংসা, প্রতিশোধের ইচ্ছা। মানুষ যতোই মডার্ন হোক না কেনো এই ফিলিংসগুলি কখনোই যাবে না। আমি পরের জিনিষ গুলিকে অনেক ভেবে চিনতে করি। আমার অনুভুতি প্রখর, রাগও প্রখর কিন্তু অনুভুতিকে কাজে লাগাই, রাগকে নয়। কিন্তু রাগকে আমি ছেড়ে দেই না। এই রাগও একটা সাফল্য আনে। যাদের রাগ নাই, তাদের অনুভুতিতে ধার নাই। কিন্তু বেশী ধারালো রাগ হলে নিজের হাত পা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই আমার রাগটাকে আমি একটা খাচায় বন্ধি করে রাখি যাতে আমার অগোচরে হাত লাগলেও হাত পা না কাটে। তুমিও তাই করবা। এখন তুমি যদি আমাকে প্রশ্ন করো- এটা তোমার ভাগ্যে আছে বা লেখা ছিলো। কথাটা আমি অন্তত মানি না। ভাগ্য খারাপের দোষ শুধু এক তরফা হয়, অথচ এই ভাগ্য বলতে আসলে কিছুই নাই। যদি এই ভাগ্য খারাপের ইতিহাস, কিংবা উৎপত্তি থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত অনুসন্ধান করা যায়, দেখা যাবে, আসলে ভাগ্য বলতে কিছুই নাই, যা আছে হয় সেটা কারো পরিকল্পনা অথবা কোনো পরিকল্পনাই নাই। এই পরিকল্পনার "আছে" আর "নাই" এর মধ্যে আসলে ভাগ্য খেলা করে। যখন আমরা এর পুরু ইতিহাস না জানি, তখনই আমরা সেই শুন্যস্থান পুরুন করি ভাগ্যকে দোষ দিয়ে। ভাগ্য একটা "যদি"র মতো। কষ্টি দেখে ভাগ্য মিলানো যেমন একটা মনগড়া শান্তনা, তেমনি কষ্টি না দেখে ভাগ্যকে দোষারুপ করাও একটা মনগড়া বিবেচনা বটে।

তাই তোমার জন্য আমার কিছু উপদেশ রইলো, তুমি সেটা পালন করবে কি করবে না সেটাও তোমার নিজস্ব জ্ঞান বা বিবেচনা।

  • কারো অতীত ইতিহাস যখন কালো অক্ষরে লেখা থাকে, তখন সেটা যতো চেষ্টা করাই হোক তাকে আর সাদা অক্ষর করা যায় না। হ্যা, হতে পারে তার পরের সব ইতিহাস সাদা অক্ষরের। যখন এর সব ইতিহাস সাদা অক্ষরেই লেখা হতে থাকে, তখন অতীতের সেই কালো অক্ষরের ইতিহাস একদিন বর্তমানের সব সাদা অক্ষরের ইতিহাসে একটা ম্লান রুপ নেয়। তখন সেটা হয় পরিবর্তন। এই পরিবর্তন সবাই পারে না। যারা পারে, তারাই হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিজেন্ড। কারন তখন কালো অক্ষরের ইতিহাসধারীর মৃত্যুবরন হয়ে নতুন রুপে আবিরভুত হয়। চেষ্টা করো সব কিছু পিছনে ফেলে দিয়ে আবার তোমার ইতিহাস নতুন করে লেখার। আর সেটা ফেসবুক বা সুধীমহলের কোনো বাহবা দিয়ে নয়, নিজের পায়ের নীচের মাটিকে পাথরের মতো শক্ত অবস্থানে নিয়ে। মানুষ তখন তোমাকে নিয়ে ফেসবুক করবে, তুমি সেই ফেসবুকের কমেন্ট পড়ে আনন্দ নিবে। তুমি কেনো অন্যের জন্য ফেসবুকিং করবে? তাই, ফেসবুকে লেখা একেবারে বন্ধ করো। যদি লিখতে চাও, গ্লোবাল ইস্যু নিয়ে লিখো, একটা পার্টিকুলার জ্ঞানের কথা লিখো। হাসি তামাশার জোক শেয়ার করো। আর যে গুলি বারবার লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু প্রকাশ করা ঝুকিপূর্ন, সেগুলি নিজের ডায়েরীতে লিখো। ইতিহাসে অনেক ব্যক্তিগত ডায়েরী সমাজে অনেক আন্দোলনের রুপ কথার সাক্ষী। হতে পারে কোনো একদিন তোমার লেখা একান্ত ব্যক্তিগত ডায়েরীই হয়তো সময়ের জন্য একটা গাইড হবে! কি দরকার এই মুহুর্তে এমন কিছু করা যা হজমের জন্য প্রজোজ্য নয়?

  • মানুষরুপী শয়তান আমাদের চারিদিকে বাস করে। এরা সবাই তোমাকে আমাকে ব্যবহার করে, তারা চায় তাদের ইচ্ছাগুলি আমার উপর দিয়ে বাস্তবায়িত হোক। এইসব মিডিয়া আর পলিটিশিয়ানরা কারো ঘাড়ে বন্দুক ঠেকিয়ে সেই একই বুলেটের খালি কার্তুজ চালায়, সেটা শব্দ ছাড়া আর কিছুই করে না। তোমাকে এটা বুঝতে হবে আর বুঝলেই তুমি এই পরিস্থিতির বাইরে বেরিয়ে আসতে পারবে।

  • যোগ্যতা আর সাহস মাথায় রেখে কথা বলতে হয়। তোমার সাহস আছে, কিন্তু এখনো সেই যোগ্যতায় আসো নাই যেখানে তুমি নিজেই একটা শক্তি। এই শক্তিটা বাড়াতে হবে। আর এরজন্য এখন যা নিয়ে ব্যস্ত আছো, সেখান থেকে পুরুপুরি বেরিয়ে আসো।

  • এরপর কোনো ভুল করার আগে ১০০ বার চিন্তা করবে। কারন সব ভুলের সম্পর্ক এই ১০০ এর সাথে জড়িত।

  • তুমি জানো না তোমার পরিবার কতটা অসহায় অবস্থায় আছে। কেনো তুমি তাদেরকে এই অসহায় অবস্থায় ফেলছো বারবার? আজ তোমার সন্তান ছোট, কাল তো তোমাকে সে এই প্রশ্নতাই করবে যে, কেনো আমাকে তোমার এইসব বোকামির জন্য আমার বন্ধু মহলে সমালচিত হৈ? কেনো কি আন্দোলন চালাচ্ছো যেখানে তোমার দলের মানুষগুলিই তোমার সাথে নাই যখন তুমি নিজে বিপদে পড়ো? সন্তানের সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া সব সময় সহজ হয় না। তারপরেও এমন কোনো কাজ আমাদের করা উচিত না যার উত্তর আমার দেয়ার প্রয়োজনই ছিলো না।

যাই হোক আনিস, ভুল না বুঝে তো হতেই পারে, কিন্তু ভুল যদি জেনেশুনে হয়, সেটাকে কি বলা যায়?

ভালো থেকো।

২১/১০/২০২০-উম্মি-কনি আমার অফিসে

সারাদিন ওরা আমার অফিসেই ছিলো। আজ ওদের জন্য একটা বিশেষ দিন। আমি দুই বোনকে মোট ২৬ শতাংশ জমি বায়না রেজিষ্ট্রি করে দিলাম। টাকার শর্ট ছিলো, তাই সাব কবলা করা হলো না। কিন্তু যে কন সময় ওদেরকে আমি দিয়ে দিতে পারবো, আর যদি আমার মরন ও হয়, ওরা মাত্র ১ লাখ টাকা জমা করে কোর্টের মাধ্যমে জমিটা নিজেদের নামে লিখে নিতে পারবে সে ব্যবস্থাটা করে রাখলাম। এর মধ্যে সোহেল এবং লিয়াকত অফিসে এলো। আমি ওদেরকেও একটা ল্যাব করে দিয়েছি, কিন্তু আমার ধারনা হচ্ছে সোহেল এবং লিয়াকত ল্যাবটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না। সোহেলের মধ্যে আগে যেটা দেখি নি, সেটা এখন আমার মনের মধ্যে একটু একটু করে সন্দেহের বীজ উকি দিচ্ছে, ওকে ব্যবসায়িক পার্টনার করাটা সম্ভবত ভালো সিদ্ধান্ত হয় নাই।

২০/১০/২০২০-উম্মিকার বাড়ি আসা  

Categories

অনেকদিন পর আমার বড় মেয়ে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাসায় আসবে কাল ইনশাল্লাহ। তারপর ওকে নিয়ে আমরা সবাই কক্সবাজার যাবো বেড়াতে। অনেকবার গিয়েছি কক্সবাজারে, কিন্তু এবার যেনো কেনো একটু বেশী ভাল লাগছে যেতে। আসলে কক্সবাজার জায়গাটার মধ্যে কোনো মজা নাই, মজা হলো পুরু পরিবার একেবারে নিজের মতো করে এক সাথে হৈ হুল্লুর করা। সময়টা একেবারে নিজেদের মতো করে কাটে। এটা আসলে একটা ব্রেকটাইম।

প্রথমে উম্মিকার যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না, মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমাদের সবার। বারবারই মনে হচ্ছিলো যে, উম্মিকা যেতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওর ইন্টার্নীর ঝামেলায় উম্মিকার সম্ভব হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত উম্মিকা ম্যানেজ করেছে ছুটিটা। আর এই ছুটিতেই উম্মিকা আগামীকাল বাড়ি আসছে। ওর বাড়িতে ও আসছে, এতে যেনো বাড়িটাই আনন্দিত হয়ে উঠছে। ওর মা আজ ওর জন্য স্পেশাল বাজার করে আনলো, কনিকাও প্রস্তুতি নিচ্ছে কাল ওর আপু আসবে, তাই কি স্পেশাল খাওয়া যায়, তার একতা লিষ্ট ও করে ফেলছে। আগামী পরশু আমি উম্মিকা আর কনিকাকে ১৩ শতাংশ করে চমৎকার জায়গায় দুজনকেই এক খন্ড জমি লিখে দেবো, সেটাও একতা আনন্দ হচ্ছে। জমিটার দাম নিছক কম নয় প্রায়, ৭৫ লাখ টাকা করে উভয়ের, মানে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি। তাই উম্মিকা আর কনিকাকে আমার ফ্যাক্টরীতে নিতে হবে আগামী পরশুদিন ইনশাল্লাহ।

প্রথমে উম্মিকার যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না, মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমাদের সবার। বারবারই মনে হচ্ছিলো যে, উম্মিকা যেতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওর ইন্টার্নীর ঝামেলায় উম্মিকার সম্ভব হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত উম্মিকা ম্যানেজ করেছে ছুটিটা। আর এই ছুটিতেই উম্মিকা আগামীকাল বাড়ি আসছে। ওর বাড়িতে ও আসছে, এতে যেনো বাড়িটাই আনন্দিত হয়ে উঠছে। ওর মা আজ ওর জন্য স্পেশাল বাজার করে আনলো, কনিকাও প্রস্তুতি নিচ্ছে কাল ওর আপু আসবে, তাই কি স্পেশাল খাওয়া যায়, তার একতা লিষ্ট ও করে ফেলছে। আগামী পরশু আমি উম্মিকা আর কনিকাকে ১৩ শতাংশ করে চমৎকার জায়গায় দুজনকেই এক খন্ড জমি লিখে দেবো, সেটাও একতা আনন্দ হচ্ছে। জমিটার দাম নিছক কম নয় প্রায়, ৭৫ লাখ টাকা করে উভয়ের, মানে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি। তাই উম্মিকা আর কনিকাকে আমার ফ্যাক্টরীতে নিতে হবে আগামী পরশুদিন ইনশাল্লাহ।

১৭/১০/২০২০-একদিন (One Day)

Categories

"একদিন", অদ্ভুত একটা সময়।

সব সময় আমরা ভাবি, "একদিন" আমার সবকিছু আমার মতো করে হবে, "একদিন" আমি সবকিছু নিজের মতো করে পাবো, "একদিন" আমি সবকিছু ছেড়ে নিজের মতো করে এই পৃথিবীকে দেখবো, দেখবো এর বিশালত্ব, এর সউন্দর্য, এর অপূর্ব রহস্যময়তা। কিন্তু আমি জানি না কবে সেই আমার "একদিন"। আমি জানিও না আমার সেই "একদিন" আসলে কবে সেইদিন। আমি কিভাবে জানবো, সেই "একদিন"টা কবে আসবে আমার জীবনে? ছোট এই সমাজে যেখানে আমরা দৈনিন্দিন সবাইকে নিয়ে বসবাস করি, আমরা সেখানে চাইলেই সবকিছু করতে পারি না।  শিশুকাল থেকে কৈশোর পার করা অবধি আমরা সবাই ওই "একদিন" এর অপেক্ষায়ই থাকি যেদিন আমার সব ইচ্ছা পূরন হবে, আমি মুক্ত পাখীর মতো এই বিশাল আকাশে হাওয়ায় উড়ে উড়ে মেঘ দেখবো, নীচের সবুজ গাছপালা দেখবো, সাগর দেখবো, পাহাড় দেখবো। কিন্তু ক্রমেই যতো একেকটা স্তর পার করে যখন আরেকটা স্তরে পা রাখি, ততোই সামনে চলে আসে কোনো না কোন দায়িত্ব, কোনো না কোনো নতুন আরেকটা চ্যালেঞ্জ। সেটাকে মোকাবেলা করতে করতেই জীবনের বেশ কয়েকটি স্তর, ধাপ পার হয়ে যায়। আমাদের কারোই সেই "একদিন" সময়টা যেনো আর আসে না। আজ আমরা নিজের সংসারের জন্য বাচি, কাল আমরা স্বামী বা স্ত্রীর জন্য বাচি, তারপর হয়তো সন্তানের জন্য বাচি, আর এভাবেই সামাজিক, পারিবারিক ইত্যাদির দায়বদ্ধতা আর জীবনের তাগিদে আমরা ক্রমশই জীবন নামক নদীতে শুধু ক্লান্ত হয়ে ভাসতেই থাকি। আর ভাবী, নিশ্চয় "একদিন" আমার সব চ্যালেঞ্জ, সব ক্লান্তি কিংবা সব ঝামেলা শেষ হবে, আর তারপর "একদিন" আমার আর কোনো ঝামেলা, সমস্যা কিংবা আমার সুখের নিমিত্তে কোনো বাধা থাকবে না। সেই "একদিন" নিশ্চয় আমি আমার মতো করে সারা দেশ ঘুরতে পারবো, পার্টিতে নাচতে পারবো, পাখীর মতো যেদিকে খুশী মনের আনন্দে উড়ে বেড়াতে পারবো। কিন্তু আমার সেই "একদিন" যেনো আর কখনোই আসে না। বারবার কোনো না কোনো বাধা এসেই দাঁড়ায়। আসলে এই "একদিন" কখনোই আমাদের জীবনে আসে না। কিন্তু যদি জীবনের সবসুত্র, সব মায়াজাল, সব জটিল সমীকরন ছিন্ন করে প্রকৃতির সাথে চলমান ধারাবাহিকতায় সার্থপরের মতো দেখি, তাহলে এটাই চোখে পড়বে যে, আসলে, "একদিন" হচ্ছে আজকের এইদিন, আজই। এই আজকের দিনটাই আসলে আমার সেই "একদিন"। আজকের দিনটার জন্যই আমি বাচি। আজকের দিনের পর হয়তো আমার জীবনে আরো একটিদিন নাও আসতে পারে। তাহলে সেই আগামীর একদিনের জন্য আমি কেনো আজকের দিনটাকে বিসর্জন দেই? হয়তো আরো "একদিন" আর কখনোই আমার জীবনেই আসবে না। আমার কাছে শুধু "একদিন"ই বাকী-আর সেটা আজ। যদি আমার সারাটা ক্যালেন্ডারেকে একটা একটা করে দিন ভাগ করে সিডিউল বানাই, দেখা যাবে, আজকের দিনটাই আমার বাস্তবতা। আর এই আজকের দিনটাই সেই "একদিন"। আর বাকী দিনগুলি আমার হাতেও নাই, আর যেগুলি চলে গেছে তাদের আমি কখনো ফিরিয়েও আনতে পারবো না। যেটা আছে আমার কাছে, সেটা আজ- আর এটাই সেই "একদিন"। তাই আমি শুধু আজকের দিনটার জন্যই বাচতে চাই। হাসতে চাই, খেলতে চাই, আকাশটা দেখতে চাই, বৃষ্টিতে ভিজতে চাই, পৃথিবীর সব গাছপালা, সব পাহাড় পর্বত, নীল আকাশ, সবকিছু দেখে প্রানভরে বাচতে চাই। আমি শুধু আমার জন্যই আজ বাচতে চাই। কালটা থাকুক আর সবার জন্য।

৩০/০৯/২০২০-জীপগাড়ি-হাইলাক্স সার্ফ

                 

আমাদের বাসায় দুটু গাড়ি আছে। একটা এলিওন, আরেকটা নোহা। মানুষ আমরা মোট চারজন। বড় মেয়ে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজে ইন্টার্নী করছে ফলে ঢাকার বাসায় আমি, আমার স্ত্রী এবং ছোট মেয়ে কনিকাই থাকি। দুটু গাড়িতে আমাদের খুব ভালোভাবেই চলে যায়। কিন্তু খুব শীঘ্রই আমার বড় মেয়ে যখন ইন্টার্নী করে ঢাকায় চলে আসবে, নির্ঘাত আমাকে আরো একটা গাড়ি কিনতেই হবে ওর জন্য। আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার তার হাইলাক্স সার্ফ গাড়িটা বিক্রি করে তিনি আরো একটা গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করেছেন। ব্যবসায়ীক পার্টনারের এই গাড়িটা আমরা ৭৩ লক্ষ টাকা দিয়ে ২০১০ সালে কিনেছিলাম আমাদের প্রয়াত আরেক বিদেশী পার্টনার প্রিয়ান্থার জন্য। প্রয়ান্থা মারা যাওয়ার পরে আমিই বলেছিলাম মুর্তজা ভাইকে যেনো উনিই এই গাড়িটা কিস্তিতে কিনে নেন। গাড়িটা সেকেন্ড হ্যান্ড ছিলো না। ফার্ষ্ট হ্যান্ড গাড়ি ছিলো।

গাড়িটা আমার কাছে খারাপ লাগে নাই। তাই রেখে দিলাম। এই রেখে দেওয়ার পিছনে দুটু কারন ছিলো। এক, আমাকে এখুনী কোনো টাকা পয়সা দিতে হবে না। দুই, কয়েকদিন পর আমাকে আরেকটা গাড়ি কিনতেই হবে। তাহলে এখন এটা রেখে দেয়াই ভালো। ড্রাইভার নিতে হবে না কারন মিটুল এলিওন গাড়িটা নিজেই ড্রাইভ করবে, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের জন্য নোহা গাড়িটা থাকবে আর আমার জন্য এই হাইলাক্স সার্ফ গাড়িটা রইলো। গ্যারেজের সল্পতা আছে। আমাদের বাসায় সর্বোচ্চ দুটু গাড়ি পার্ক করা যায়। তাই পাশের বাসার সাত্তার সাহেবের বাড়িতে একটা গ্যারেজ ভাড়া নিতে হলো। পাশাপাশি বাসা। কোনো অসুবিধা নাই।

আপডেটঃ (২১/০৬/২০২১) 

শেষ পর্যন্ত আমি মূর্তজা ভাইকে গাড়িরটার দাম এক কালীন পরিশোধ করে দিলাম। অংকটা বলছি না তবে যা দিয়েছি সেটার বিপরীতে মূর্তজা ভাই কোনো কথা বলেন নাই। গাড়িতা মধ্যে কোনো প্রকার সমস্যা নাই। মাত্র তিনটা ছোট ছোট সমস্যা যা যে কোনো গ্যারেজে নিলেই ঠিক করে দেয়ার কথা। মূর্তজা ভাই আসলে কখনোই নাভানা ছাড়া গাড়িটা অন্য কোনো গ্যারেজে দেখাতেন না এবং দেশীয় কোনো পার্টস ও ব্যবহার করতেন না যদি লাগতো। সরাসরি জাপান থেকে পার্টস আমদানী করতেন। ফলে গাড়িটা এতো বছর পরেও কোনো প্রকার খুত ছিলো না। ছোট সমস্যা গুলি ছিলো যে, একটা অয়াইপার ভাংগা, আরেকটা রিয়ার ভিউ মিরর ফাটা। আমি আমার পরিচিত গ্যারেজে গিয়ে এটা দেখাতেই তিনি অরিজিনাল সেম গাড়ির ওয়াইপার আর রিয়ার ভিউ মিরর এনে লাগিয়ে দিলেন। আরেকটা সমস্যা কয়েকদিন পর বুঝতে পারলাম যে, পিছনের ব্যাক ডালার ওজন প্রায় এক টন, কি আছে সেখানে আমি জানি না, ওটার যে সাপোর্টার, সেটা ধরে রাখতে পারছে না। ওটা প্রায় ১০ হাজার টাকায় অরিজিনাল পাওয়া গেলো। লাগিয়ে দেখলাম দারুন কাজ করছে।  আরো একটা জিনিষ চেঞ্জ করলাম, সেটা হলো টায়ার। পুরু ৪ টা টায়ারই এক সাথে পরিবর্তন করলাম। গাড়িটা ভীষন রকমের ভালো। 

২৯/৯/২০২০- মেন্টর হোন

Categories

একটা কথা তো ঠিক যে, যার কেউ নাই, তারও কেউ না কেউ আছে। যখন বাবা মা অভিভাবকরা বেচে থাকেন, তখন তো তারা আছেনই, কিন্তু যখন তারা আর কেউ বেচে থাকেন না, মনে হতে পারে, হয়তো আমাদের জীবনে আমাদের পাশে আর কেউ নাই। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে- এই বিশাল দুনিয়ায় যার কেউ নাই, তারও পাশে কেউ না কেউ থাকে, থেকেছে। হয়তো এটা আগে থেকে লিষ্টে তাদের নামে থাকে না কিন্তু প্রয়োজনে এসেই যায়। তাই আমি সবসময় নিজে এবং অন্য সবাইকে বলি, কখনো নিজেকে একা ভাববেন না, কখনো নিজেকে অসহায় ভাববেন না। আর কারো যদি সত্যি সত্যি নিজের আপনজনের লিষ্টে কারো নাম খুজে না পান, আর ভবিষ্যতে পেতে চান, তাহলে নিজের সন্তানদেরকে মানুষ করুন। তাদেরকে উপযুক্ত ব্যক্তিত্তে গড়ে তুলুন। তাদেরকে পড়াশুনা করে সুশিক্ষিত করুন। তাদেরকে শিক্ষা দিন যে, শর্টখাট রাস্তায় কোনোদিন বড় হওয়া যায় না। তাই তাদেরকে পরিশ্রমের মাধ্যমে বড় করে তুলুন। তাদের নিজের শক্তিতে প্রস্ফুটিত হোক সে ব্যবস্থাটা করুন অর্থাৎ পরিবেশটা দিন। নিজের ভিতরে একটা প্রচন্ড শক্তি সেই ঈশ্বর কিংবা ভগবান যাইই কিছু বলি না কেনো, আমাদের স্রিষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে একটা সুপ্ত শক্তি দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাদেরকে এই অদৃশ্য শক্তিটা বুঝাতে শিখুন। কেউ এর সন্ধান খুজে পায়, আর কী এর অস্তিত্তই খুজে পায় না। নেটওয়ার্কি নয়, কানেক্টিং পিপল, এই তথ্যে আপ্নিও বিশ্বাস করুন, তাদেরকেও বিশ্বাস করার শিক্ষা দিন।

আমাদের সমাজে মেন্টরের খুব অভাব আছে। মানুষ মেন্টর হতে চায় না, তারা মেন্টর খুজে, তাদের সাথে যুক্ত হতে চায়। তাই, আমি উপদেশ দেই, আপনি নিজে মেন্টর হোন। মানুষ আপনাকে খুজবে।

২৩/০৯/২০২০-সিনহা হত্যার আপডেট নাই

সিনহা হত্যা সবাই দেখেছে, সিনহার লাশ সবাই দেখেছে। সিনহা  বন্দুকের গুলিতে নিহত হয়েছে, এটা বাস্তব। এটা কোনো গাজার আসরে বসে কোনো মাতালের বয়ান নয়। এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসের বাইরে বা ভাবনার বাইরে নয় যে, সিনহাকে হত্যা করা হয় নাই। কারন এটা কোনো লেখকের কল্প কাহিনী নয়। কিন্তু... এরপর?

 

ক্ষমতা, ক্ষমতার পদাধীকার আর সেই ক্ষমতার প্রভাব এই সমাজে সেই কাজ করা যায় যা সাধারন মানুষ ভাবতেও পারে না, বুঝতেও পারে না। তাহলে  সাধারন মানুষ কি করতে পারে? "প্রশ্ন"- হ্যা, সাধারন মানুষ শুধু প্রশ্ন করতে পারে। আর যদি সেই প্রশ্নের উত্তরের জায়গায় তারা শুধু নীরবতাই পায়, তাহলে সাধারন মানুষ নীরব থেকে সেই নীরবতাকেই উত্তর মনে করে।

 

সিনহা হত্যা এখন এমন এক প্রশ্নের উদয় করেছে- আদৌ কি সিনহা নামের কোনো সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার ছিলো যে কিনা কোনো এক রাতে একদল আইন শ্রিংখলা বাহিনীর পুলিশের দ্বারা নির্মমভাবে নিহত হয়েছে? হয়তো ছিলো, হয়তোবা ছিলই না। এমনো হতে পারে- এটা কোন লেখকের মনগড়া  কল্পনাপ্রসুত লোমহর্ষক এডভেঞ্চার কাহিনীর কোনো একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা যা শুধু লেখকই জানেন।

১৬/০৯/২০২০-বন্ধু  বনাম  শত্রু

যারা সারাজীবন কারো নিরাপত্তার দায়িত্ত নিয়ে জীবন বাজী রাখে, এক সময় তারাই হয়ে উঠে জীবনের সবচেয়ে বড় ঝুকিপূর্ন মানুষ। তখন শত্রুর শত্রুতায় জীবন ঝুকিতে পরে না, ঝুকিতে পরে অতীব কাছের মানুষের শত্রুতায়। গোয়েন্দারা আসামি শনাক্ত করার জন্য অনেকগুলি পথ অনুসরন করে থাকেন। তার একটি হল প্রত্যেককেই সন্দেহের দ্রিষ্টিতে দেখা। সবচেয়ে বেশী তাকে করা হয় যাকে মনে হবে কম সন্দেহজনক। ইতিহাস আমাদেরকে বারবার শিখিয়ে গেছে যে, মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় যে শত্রু তাকে কখনো চেনা যায় না। সে থাকে সবচেয়ে কাছের বন্ধুর মত করে। আমাদের সবার ব্যক্তিগত জীবনও তাই। আপনি সবচেয়ে বেশী প্রতারিত হবেন আপনার কাছের মানুষদের কাছ থেকে। আপনার সবচেয়ে বেশী কষ্টের তালিকা করলে সেখানে শত্রু না, আপন মানুষের নাম বেশী দেখতে পাবেন। শত্রু কখনো বিশ্বাসঘাতক হয় না, বিশ্বাসঘাতকতা করে কেবল আপন মানুষেরাই। এরিস্টোটল বলেছিলেন, দূর্ভাগ্যবান তারাই যাদের প্রকৃত বন্ধু নাই। অপরদিকে সেই প্রকৃত বন্ধুই যখন শত্রু হয়ে উঠে, তখন সেই জীবন নিয়ে বেচে থাকা কষ্টকর, যন্ত্রনাদায়ক ও পীড়াদায়ক। এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুরও কারন হয়ে দাঁড়ায়। তাই শত্রুকে যদি একবার ভয় করো, তাহলে বন্ধুকে ভয় করো অন্তত দশবার। কারন বন্ধু যদি কখনো শত্রু হয়, তখন তার কবল হতে মুক্তি পাওয়া কিছুতেই সম্ভব হয় না।

১৩/০৯/২০২০-একাকী সোলজার

Categories

একটা হাংগেরীয়ান মুভি দেখছিলাম আজ। ছবিটার নাম "Dear Elza"। লম্বুস মিহালি নামের এক যুদ্ধা ইষ্টার্ন ফ্রন্ট থেকে যুদ্ধ কালীন সময়ে ১৫ দিনের ছুটি পায়। কিন্তু সে ভুল একটা লাইনে দাড়িয়েছিলো। ছুটির লাইন আর যুদ্ধে যাওয়ার লাইন। সে ভুল করে ছুটির লাইনে না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো যুদ্ধে যাওয়ার লাইনে। ফলে তাকে আবারো ইষ্টার্ন ফ্রন্টেই ছুটিতে না পাঠিয়ে ওয়ার ফ্রন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর সে রাশিয়ান বাহিনী দ্বারা ধরা পড়ে। আর রাশিয়ান বাহিনী তাকে সন্দেহজনক কোনো মাইন ফিল্ডে পা দিয়ে দিয়ে মাইন আছে কিনা সেটা যাচাইয়ের কাজে লাগানো হয়, যা ছিলো একটা মারাত্তক ব্যাপার। এই রাশিয়ান ক্যাপ্টিভিটির সময় তার কিছু বন্ধু সুলভ বন্ধুরা তার সাথে বিট্রে করে বটে কিন্তু তার কিছু শত্রুপক্ষ তাকে সাহাজ্যও করে। ছবিটার শেষে এসে লম্বুস এটাই শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করে যে, the effort of military morality and the ancient instinct of survival can not coexist. লম্বুস যুদ্ধে যেতে চায় নাই। তারপরেও তাকে যুদ্ধে যেতে হয়েছিলো। জীবনের ভুল লাইনে কেউ একবার দাঁড়িয়ে গেলে সেই ভুল পথ থেকে ফিরে আসতে হয়তো কারো কারো এক জীবনেও আর ফেরা হয় না। জীবন আসলে কাউকেই ক্ষমা করে না। সেটা ভুলই হোক আর ভুল নাই হোক। হোক সেটা নিজের ভুলে, বা অন্য কারো ভুলে।

ছবিটা দেখতে দেখতে আমারো আমার সৈনিক জীবনের বহুস্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠলো। ভেসে উঠলো আমার অতীত। আমিও এই আর্মিতে যেতে চাইনি। পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে, মেডিক্যালে, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সমস্ত সুযোগ এবং কোয়ালিফিকেশন থাকা সত্তেও আমাকে যেতে হয়েছিলো ঠিক যেটা আমি কখনো চাই নাই- সেই সেনাবাহিনী।

শ্ত্রু পরিবেষ্ঠিত বিপদসংকুল চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাক্সে শান্তিবাহিনির বিরুদ্ধে পেট্রোল করার সময় সবাই যখন জীবনের আতংক নিয়ে খুব সন্তর্পনে পেট্রোলিং করতো, সবাই যখন জীবন বড় অমুল্য ধন ভেবে বাচার জন্য সব ধরনের প্রতিকার নিতো, সবাই যখন জীবনকে বাচিয়ে রাখার জন্য আপ্রান চেষ্টা করতো, তখন আমি ছিলাম নির্বিকার। কেনো যেনো জীবনের জন্য আমার এতোটুকুও মায়া জমেনি। অবহেলায় গড়ে উঠা আমার এই মাংশপিন্ডের দেহটা যেনো আমারই ছিলোনা। আমার মা ছাড়া আমার এই দেহে কেউ আদর করে দিয়েছে এটা আমার মনেই পড়ে না। ফলে আমার এই দেহ, আমার এই মন ছিলো আমার মনের বাইরে। কখনো কখনো প্রোটেকশন ছাড়াই হাতে একটা এসএমজি নিয়ে একা একা পাহাড়ি পথে হেটে গিয়েছি। কখনো কখনো কোনো অস্ত্র ছাড়াই বিস্তর পথ একাই হেটে বেড়িয়েছি। জীবনের জন্য কখনো অসস্থিবোধ করিনি। জানি এটা সামরীক আইনের পরিপন্থি। তারপরেও মনে হয়েছে- জীবনের নিঃশ্বাস শেষ হবার পর কোনো আইনই তার জন্যে কোনো কিছু না। কিসের বিচার আর কিসের আইন ভাংগার শাস্তি। চরমটা তো পেয়েই গেলাম নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। জীবন যখন তার এসেট ভ্যালু নিয়ে ভাবে না, তখন তার হৃদয়ের দামই বা কি, আর তার নিশ্বাসের দামই বা কি, এটা আর কোনো মানদন্ডে মাপা যায় না।

কখনো একা একা পাহাড়ের জংলী ফুল দেখেছেন? দেখেছেন কখনো কেনো কোন পাখী কিসের কারনে কোন গাছে উড়ে বসে? কখনো উপলব্ধি করেছেন কয়েকদিন নির্ঘুম রাত কাটানোর পর মুখের খোচা খোচা দাড়ি কিভাবে আপনাকে পরিহাস করে? কখনো যুদ্ধ বিধস্ত এলাকায় কোনো এক ছোট বাচ্চার ভয়ের হৃদপিণ্ড দেখেছেন কতটা জোরে জোরে কাপে সে যখন দেখে ইউনিফর্ম পড়া অস্ত্র হাতে কোনো এক কম্বেট্যান্টকে বা সৈনিককে? কখনো কারো মৃত্যু কি নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি করতে দেখেছেন? কখনো কি এটা ভেবেছেন যে, আপনার একটা আঙ্গুলের ট্রিগারের চাপে কোনো এক জলজ্যান্ত যুবকের নিঃশ্বাস বের করে দিতে পারে? কখনো কি শুনেছেন ওই যুবকের শেষ কথা যে বাচতে চেয়েছিলো আমার মত, আপনার মত কোনো এক নিয়ন লাইটের শহরে? কখনোও কি সাধ নিয়েছেন অঝোর ধারায় বৃষ্টিতে জলন্ত নিবু নিবু ভেজা সিগারেটের গন্ধ? আমি এর প্রতিটা স্তর পার করেছি। আমি দেখেছি, কখন আমার জীবন অন্যের হাতে বন্দি হয় হয় ভাব, আমি দেখেছি সেই ঝর্নার মতো বৃষ্টির রাতে নিবু নিবু সিগারেটের গন্ধ। আমি দেখেছি সেই জলজ্যান্ত যুবকের লাশ, যার উপর বসে আমি সকালের চা খেয়েছি। আমি দেখেছি সে পথহারা ছোট বাচ্চার দিগন্তস্পর্শী চিৎকার আমার অস্ত্র সহ ইউনিফর্মের ভয়ার্ত কারনে। আমি তাকে শান্ত করতে যাইনি। আমি শুধু ভেবেছি, সে আমাকে মানুষ মনে করে নাই। আমি তার কাছে নিতান্তই একটা দানব। অথচ আমার পেট ভর্তি কষ্ট, মন ভর্তি মায়া আর অন্তর ভর্তি মহব্বত। কিন্তু এগুলি তো দেখা যায় না। দেখা যায়, আমার ঘুমহীন চোখের অগোছাল মুখাবয়ব, অশান্ত চেহাড়া আর কঠিন চোয়ালে হাতে ধরা একটা অস্ত্র।   

কত বিচিত্র সে জীবন। জোনাকির ভিড়ে, কালো অমাবশ্যার রাতে চকচক করা ফুটন্ত ছোট ছোট মরিচ বাতির মতো কোনো এক মিডনাইট, আকাশের মেঘের ফাকে ফাকে সেই দুরন্ত চাঁদ, যে কিনা একাই জেগে থাকে আকাশে। আমি সেই পথ দিয়ে বহুবার হেটে গিয়েছি একা। মরা মানুষের ভীড়ের আস্তানা সেই গোরস্থান দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় সালাম দিয়েছি স্তব্ধ কবরের নির্জীব মানুষগুলিকে। বসেছি কখনো কোনো কবরের উপর। হয়তো সে এই বাহ্যিক প্রিথিবীতে কোনো এক রাজকুমার ছিলো। আজ সে নাই। হয়তো কোনো এক শায়িত কবরের পাশে বসে সিগারেট ফুকতে ফুকতে ভেবেছি, এখানে ঠিক আমার পায়ের নীচে হয়তো লুকিয়ে আছে কোনো এক গ্রাম কাপানো সুন্দুরী। যার সারাটা দিন কাটতো তার রুপের বাহানায়। অথচ আজ সেও নাই। কখনো নিকষকালো জ্যোৎস্নায় গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ভেবেছি, কেউ কি এখনো জেগে আছে আমার মতো? হয়তো তখনো আমার মা জেগেই থাকতো তার সেই ছোট পলাতক ছেলেটির কথা ভেবে ভেবে। আমি তখন যোজন দূরে একা কোনো এক শত কিলোমিটার দূরে বৃষ্টির ফোটা মাথায় নিয়ে ভেজা হাতে হয়তো একটা জলন্ত সিগারেট নিয়ে ভাবতাম, আমি আমার মাকে মিস করি।

সেই ছোট বেলা থেকেই চিঠি আসতো না আমার কখনো। অনেকেরই চিঠি আসতো, কোনো এক জনাকীর্ন বাড়ির বউ কিংবা তার ছোট ভাই বোনেরা, কতই না রঙ বেরং এর খামে চিঠি লিখতো আমারই পাশে শুয়ে থাকা আমারই কমরেডদের কাছে। তারা চিঠি পড়তো, হাসতো, আবার কেউ কেউ অন্য মনস্ক হয়ে যেতো। তারাও চিঠি লিখতো। তাদের ভালোবাসার মানুষের কাছে। আমার কোনো চিঠি আসতো না। চিঠি না আসা মানেই কেউ আমাকে ভালোবাসে না, আমি কখনো এটা মনে করি নাই। মনে হতো, জীবনটাই তো একটা চিঠি। কেউ লিখে রাখে আর কেউ মনে মনে রাখে।

আমি ডায়েরী লিখতাম, কোনো এক "কল্পনা" আপুকে সেই "আনা'র ডায়েরীর মতো। জগত বড় বিচিত্র। হয়তো লম্বুসের চেয়েও আমার জীবন কম ছিলো না। সেই একাকী সোলজার। 

১২/০৯/২০২০-মিতুলের করোনা পজিটিভ

Categories

যে ভয়টা পেয়েছিলাম, সেটাই হয়েছে। আজ রাত ১০টায় প্রভা হেলথ সেন্টার যারা গতকাল মিতুলের করোনার টেষ্টের জন্য স্যাম্পল নিয়ে গিয়েছিলো, তারা মেইল করে জানালো যে, মিতুলের করোনা ভাইরাস "পজিটিভ"। মিটুল প্রায় সপ্তাহখানেক যাবত এতোটাই দূর্বল আর অসুস্থ্য হয়ে গিয়েছিলো যে, এটা করোনা ছাড়া আর কোনো কিছুই না। অন্যকোনো কিছুই তার বেঠিক নয় অথচ ওর না আছে শরিরে শক্তি, না খেতে পারছে, না একটু নড়াচরা করতে পারছে। যাইহোক, আশার কথা হচ্ছে যে, মিতুলের "করোনা" আসলে আরো আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো। যা আমরা কেনো, কোনো ডাক্তার কিংবা হাসপাতালও বুঝে নাই। বারংবার বলার পরেও তারা মিতুলের "করোনা" টেষ্ট করানোর প্রয়োজন নাই বলেই তাকে অন্যান্য মেডিকেশন প্রেস্ক্রাইব করেছে। এই করোনা প্যান্ডেমিক পরিস্থিতিতে আমাদের সিএমএইচ অন্তত মিতুলের করোনা টেষ্টটা করানোর জন্য উপদেশ দিতে পারতো। আমরা শুধুমাত্র "করোনা" টেষ্ট করার ব্যাপারেও কথা বলেছিলাম কিন্তু তারা এটাকে "করোনা"র কোনো সিম্পটম নাই বলে আর উৎসাহ দেন নাই। মিতুলের সিম্পটমগুলি খুব ক্রিটিক্যাল। ওর জর নাই, কাশি নাই, অন্যান্য কোনো বাহ্যিক সিম্পটম নাই, অথচ ওর খাবার খেতে অনিহা, ঘ্রান পায় না। আর মাঝে মাঝে "আম আম" পায়খানা হয়। আজ জানলাম, এটা "করোনার" আরেক ক্রিটিক্যাল চেহাড়া। করোনার রোগীর সব সময় জর হতে হবে সেটাও না, আবার কাশি থাকতে হবে সেটাও না, করোনার অনেক চেহাড়া।

যাই হোক, মিতুল সম্ভবত ইতিমধ্যে করোনার যে শক্তিশালী থাবা, সেটা অতিক্রম করে ফেলেছে। এখন ধীরে ধীরে খাওয়ার চেষ্টা করছে। কোথাও ভর্তি করলাম না। বাসায় ট্রিটমেন্ট হচ্ছে। যেহেতু করোনার কোনো ট্রিটমেন্ট নাই, ফলে আমরা চেষ্টা করছি ওকে সাভাবিক খাবার দিতে, গরম পানি আর লেবুর চা, শরবত, সাথে কফের জন্য সুডুকফ নামের একটি সিরাপ, ম্যাগনেশিয়াম টেবলেট, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এবং প্যারাসিটামল খাওয়াচ্ছি রুটিন করে। আর তার সাথে স্যুপ, ফল,জুস এবং কিছু শক্ত খাবার বিশেষ করে জাউ,বার্লি, সাগু এবং নরম খিচুড়ি। মিটুল নিজেও চেষ্টা করছে যাতে শরীরে কিছুটা শক্তির সঞ্চার হয় এমন খাবার জোর করেই খেতে।

আমার ছোট মেয়েও কদিন আগে যখন মিটুল অসুস্থ্য হয়ে যায়, তখন কনিকার একটু একটু কাশি ছিলো, জরও ছিলো। ব্যাপারটা খুব আমলে নেই নাই। দুদিন পর দেখলাম, কনিকা আবার সুস্থ্য। ভাবলাম, হয়তো সিজনাল জর বা এসি চালিয়ে ঘুমায় বলে ঠান্ডা লেগেছে। আমার নিজেরও মাঝে একটু খারাপ এগেছিলো, এটাও আমি খুব একটা আমলে নেই নাই। আজ মনে হচ্ছে, করোনা আমাদেরকেও সম্ভবত টাচ করেছিলো, কিন্তু কনিকা বা আমাকে করোনা কাবু করতে পারে নাই।

আমরা এখন সবাই আরো চেষ্টা করছি যাতে অন্তত প্যান্ডেমিক আমাদেরকে আঘাত করতে না পারে। বাকিটা আল্লাহর দয়া।

১১/০৯/২০২০-মিতুলের শরীরটা ইদানিং

পরিবারের সবচেয়ে কর্মঠ মানুষটি যদি কোনো কারনে তার সচলতা কমে যায়, তার শরীর খারাপ হয়ে নিজেই বিছানায় পড়ে যায়, তার নিজের খাবারটুকুও যখন আর বানানোর শক্তি থাকে না, তখন যেটা হয় তা অবর্ননীয়। পরিবারের সবার সুখ নষ্ট হয়, বিরক্ত লাগে, কোনো কিছু যেনো হাতের কাছে পাওয়া যায় না, প্রতিদিনকার রুটিনে একটা বাধাগ্রস্থ হয়। এটা একটা পানির মেইন পাইপের মতো। ফ্লো বাধাগ্রস্ত হতে হতে সবার জীবনের মধ্যে একটা স্থবিরতা, ক্লান্তি নেমে আসে। আমার পরিবারে মিটুলের অসুস্থতা ঠিক তেমন একটা ব্যাপার দাড়িয়েছে। গত ১০/১২ দিন যাবত মিটুল অসুস্থ্য। কিন্তু কি তার রোগ এটাই যেনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। না ডাক্তার না আমি। পর পর তিনটা ইন্সটিটিউসন বদলামাম। প্রথমে ইবনে সিনা, তারপর এপোলো, অতঃপর সিএমএইচ। সবার রিপোর্ট আর ডায়াগনস্টিকে প্রায় একই কনফার্মেশন। এনোরেক্সিয়া, পটাশিয়ামের অভাব, ইলেক্ট্রোলাইট-কে এর অভাব সাথে ম্যাগনেশিয়াম। সবগুলি মেডিসিন এপ্লাই করছি কিন্তু খুব একটা ইম্প্রোভ করছে বলে মনে হয় না। সারাদিন মিটুল শুয়েই থাকে। আমি ওর জন্য অফিসে যেতে পারছি না প্রায় তিনদিন। আমিও চেষ্টা করছি যাতে মিটুল তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায় কিন্তু ব্যাপারটা আমার ইচ্ছার গতির সাথে ওর সুস্থতার গতিতে মিলছে না।

আজ সন্ধ্যায় ডাঃ নিখিলের সাথে কথা বললাম। তিনি আমাদের রিভার সাইড সুয়েটার্স এর ডাক্তার। তিনিও আজ ৪ দিন যাবত পিজিতে করোনার কারনে ভর্তি। মিটুলের যখনই কোনো অসুখ হয়, নিখিলদা ওভার ফোনেই সব প্রেসক্রিপশন করে থাকেন, আর তাতেই আল্লাহর রহমতে মিটুল ভালো হয়ে যায়। কিন্তু এবারই প্রথম কেনো জানি কিছুতেই মিটুল দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে না।

একটু আগে প্রভা হেলথ কেয়ার-বনানীতে ফোন করে মিটুলের জন্য করোনার টেষ্ট করানোর জন্য হোম সার্ভিসে ফোন করলাম। ওরা আগামিকাল সকাল ১১টার দিকে বাসা থেকে স্যাম্পল নিয়ে যাবে। আমার ধারনা, মিটুলের করোনার হবার সম্ভাবনা আছে। যদিও খুব একটা সিম্পটম দিচ্ছে না। আজই প্রথম ওর জর হলো ১০১, কোনো সর্দি নাই, বুক ব্যথা নাই, কিন্তু সুষ্ক একটা কাশির ভাব আছে। আজকাল করোনাও চালাক হয়ে গেছে। বিভিন্ন মানুষের শরীরে সে বিভিন্ন রুপে আসে। হতে পারে মিটুলের ক্ষুধামন্দা আর একটু জরই হচ্ছে পিজিটিভ হবার লক্ষন। ঘ্রান পায় যদিও করোনার রোগীর ঘ্রান থাকে না। একটু একটু করে খেতে পারে যদিও কোনো টেষ্ট পায় না সে খাবারের মধ্যে। দেখা যাক, আল্লাহ ভরষা।

০২/০৯/২০২০-শেফালীর জামাইর ইন্তেকাল

প্রায় দু মাস হলো নেওয়াজ আলী কুয়েত থেকে একেবারে দেশে ফিরে এসেছে। প্রায় ৩২ বছর দেশের বাইরে ছিলো। নেওয়াজ আলি আমার ভাগ্নী শেফালির হাসবেন্ড। সংক্ষিপ্ত আকারে এই নেওয়াজ আলীর ইতিহাসতা না বললেই চলে না।

তখন ১৯৮৭ সাল। আমি সবেমাত্র সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদে চাকুরী করছি। মাঝে মাঝে গ্রামে যাই, আগের মতো না। এম্নিতেই গ্রামে এখন আর আগের মতো যাওয়া হয় না, আবার গেলেও আগের মতো বন্ধু বান্ধবরাও খুব একটা ধারে কাছে নাই বিধায় আড্ডাও জমে না। একদিন মা জানালেন যে, শেফালীর তো বিয়ে দেয়া দরকার। শেফালীর জন্য কুমড়া বারীর নেওয়াজ আলী বিয়ের কথা বলছে। ব্যাপারটা ভেবে দেখিস। কুমড়া বাড়ির নেওয়াজ আলীর বাবা জলিল মোল্লাকে আমি মামা বলে ডাকি। তারা কততা আমাদের কাছের বা রক্তের সে হিসাবটা আমি জানি না, আজো না। তবে জলিল মামার বাড়িতে আমাদের অনেকগুলি সম্পর্ক কেমন করে জানি পাচিয়ে গেছে। আমার তিন নাম্বার বোন লায়লার বিয়ে হয়েছে এই কুমড়া বাড়িতে ইসমাইল ভাইয়ের সাথে। আমার মুসল্মানীর সময় দোস্তি হয়েছে নেওয়াজ আলীর ছোট ভাই মোতালেব বা মূর্তুজ আলির সাথে, অন্যদিকে জলিল মোল্লাকে আমরা আবার ডাকি মামা বলে। এখন আবার বিয়ের সম্পর্ক করতে চায় নেওয়াজ আলী আমাদের ভাগ্নি শেফালীর সাথে। একেকটা সম্পর্ক একেকতার সাথে পরস্পর বিরোধি। যদি জলিল মামাকে মামা বলে কেন্দ্র ধরি, তাহলে লায়লার বিয়ের জন্য জলিল মামাকে বলতে হয় ভাই বা বিয়াই। আবার লায়লার বিয়ের সম্পর্ককে যদি কেন্দ্র ধরি, তাহলে জলিল মামাকে আর মামাই বলা যায় না। আবার জলিল মামার পোলা মোতালেবের সাথে আমার দোস্তি পাতার কারনে জলিল মামা হয়ে যায় আমার খালু বা আংকেল। এখন যদি শেফালিকে নেওয়াজ আলীর সাথে বিয়ে দেই, এতোদিন যেই নেওয়ায়জ আলিকে আমি ভাই বলতাম, তাকে এখন আমার বলতে হবে জামাই বাবু আর নেওয়াজ আলি আমাকে বলা শুরু করবে "মামু"। অন্যদিকে আরেকটা ঘটনা প্রায় ঘটেই যাচ্ছিলো, সেটা না হয় নাইবা বললাম। এতো সব প্যাচালো একটা সম্পর্কের মধ্যে আমাকে এবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে শেফালির বিয়ের ব্যাপারটা নেওয়াজ আলীর সাথে।

এবার আসি শেফালীর ব্যাপারে কিছু কথা। শেফালির মা শায়েস্তা খাতুনের প্রথম পক্ষের মেয়ে শেফালী। শেফালীর জন্মের পর শেফালীর বাবা তার দেশে যাওয়ার নাম করে সে আর ফিরে আসে নাই। কেনো ফিরে আসে নাই, আদৌ বেচে আছে কিনা, বা তার একেবারে নিরুদ্দেশ হবার কল্প কাহিনী আজো আমরা কেউ জানি না। শেফালী আমাদের বাড়িতেই বড় হতে লাগলো। শেফালীর মায়ের অন্য আরেক জায়গায় বিয়ে হয়ে গেলো। সেখানে লিয়াকত, শওকাত আর ফারুকের সাথে এক মেয়ে নুরুন্নাহার এর জন্ম হয়।  শেফালী আমাদের বাড়িতেই বাপ মা বিহিন আমার মায়ের কাছে বড় হতে লাগলো। এই ধরনের বাচ্চাদের বেলায় বিয়ে খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু আমরা মামারা যারা গ্রামের সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছি, তাদের বেলায় এটা অনেকতা উপকারই হয়। তারা এইসব বাচ্চাদের বেলায় মামাদেরকেই আসল গার্জিয়ান ভেবে সম্পর্ক করতে আগ্রহী হয়।

নেওয়াজ আলীর ব্যাপারটা ছিল ভিন্ন। খুবই সুন্দর একতা ছেলে। কিন্তু অশিক্ষিত। দেশে কাজের কিছু নাই। বেকার। বিদেশ যাওয়ার একতা হিরিক পড়েছে। কিন্তু নেওয়াজ আলীদের বা জলি মোল্লার সামর্থ নাই যে, ছেলেকে বিদেশ পাঠায়। তাই, বিয়ের মাধ্যমে যদি কনে পক্ষ থেকে কিছু ক্যাশ নেওয়া যায়, তাহলে বিদেশ যাওয়ার জন্য একটা আশার পথ খোলে। ফলে শেফালি চেহারায় অনেক কালো হলেও টাকার কাছে এটা কোনো বিশয়ই ছিলো না। তাদের দাবী- ২০ হাজার টাকা দিতে হবে ক্যাশ, নেওয়াজ দেশের বাইরে চলে যাবে বিয়ের পর। দেশের বাইরে যেতে মোট টাকা লাগবে ৩০ হাজার, বাকী ১০ হাজার জলিল মোল্লা জোগাড় করবে। শেফালীর ভুত-ভবিষ্যত অনেক কিছু চিন্তা করে শেষ নাগাদ আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, শেফালীকে আমরা নেওয়াজ আলীর সাথেই বিয়ে দেবো এবং হাজার বিশেক টাকা সহই দেবো। সেই থেকে শেফালির হাজবেন্ড নেওয়াজ আলি জুয়েতেই ছিলো, মাঝে মাঝে দেশে এসছে। এর মধ্যে শেফালির তিন সন্তানের মা, নাফিজ, নাহিদ আর একটা মেয়ে।

নেওয়াজ আলীর প্রায় ৩২ বছরের বিদেশ থাকা অবস্থায় ওর স্বাস্থ্যের অনেক ক্ষতি হবার পাশাপাশি যে, পরিবারের অনেক উন্নতি হয়েছে সেটাও না। অবশেসে নেওয়াজ আলি গত ২ মাস আগে চুরান্তভবে দেশে চলে আসে। এখন তার বয়স প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি। ওর বড় ছেলে নাফিজ জাপানে থাকে, ছোট ছেলে নাহিদ মাত্র মেট্রিক দেবে, মেয়ে আরো ছোট। দেশে আসার পর আমার সাথে নেওয়াজ আলীর দেখা হয় নাই। মানে নেওয়াজ আলীর সাথে আমার দেখা হয় নাই প্রায় কয়েক যুগ।

যাই হোক, দুদিন আগে জানতে পারলাম, ৭ বছর আগে নেওয়াজ আলীর যে বাইপাশ সার্জারী হয়েছিলো কুয়েতে, সেই বাইপাস সার্জারীতে আবার নাকি ব্লক। তাকে পুনরায় অপারেশন করাতে হবে। ৩২ বছর বিদেশ চাকুরী করার পরেও তাদের যে খুব একটা সঞ্চয় আছে সে রকমের কিছু না। হয়তো সব মিলে লাখ পাচেক টাকার একটা ক্যাশ ব্যালেন্স থাকলেও থাকতে পারে। গতকাল নেওয়াজ আলি বুকের ব্যথায় উঠানে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো, তড়িঘড়ি করে আজগর আলী হাসপাতালে আনা হয়। তারা নেওয়াজ আলীর ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলো যে, সে ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছে। রাখতে চায় নাই। অগত্যা আবার গ্রামে। আসলে মাথার উপর যখন কেউ থাকে না, আর যে মাথা হিসাবে থাকে, যখন তারই কোন বিপদ হয়, তখন সে থাকে সবচেয়ে অসহায় পজিশনে। নেওয়াজ আলীর অবস্থা অনেকটা এ রকমের। অসুস্থ্য শরীর নিয়ে একবার হাসপাতাল, আরেকবার গ্রামে, এই করতে করতেই সে আরো অসুস্থ্য

আজ সকালে আবারো নেওয়াজ আলিকে হাসপাতালে "বারডেম হাসপাতাল" নিয়ে আসা হয়েছে। হার্টের পেসেন্ট, কেনো যে বারডেমে আনা হয়েছে সেটাও আমি জানি না। আর কেনো জানি ব্যাপারটায় আমি জানতেও মন চায় নাই। আর জানতে না চাওয়ার পিছনেও একটা কারন ছিলো, যা এখন আর বলছি না। একটু আগে লিয়াকত (শেফালীর ভাই) ফোনে জানালো যে, সম্ভবত নেওয়াজ আলি বাচবে না। তার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। খরটা আমার কাছে অন্য দশটা খবরের মতোই মনে হয়েছিলো। তাড়াহুরা ছিলো না। আমার স্ত্রী মিটুলের শরীরটা অনেক খারাপ, তাকে নিয়ে ইবনে সিনায় গিয়েছিলাম, সেখান থেকে গিয়েছিলাম সি এম এইচে। ফেরার পথে আনুমানিক ২ তার দিকে লিয়াকত ফোনে জানাল যে, নেওয়াজ আলি আর নাই, মারা গেছে।

গ্রামে লাশ দাফনের জন্য যাওয়ার দরকার ছিলো, এটা একটা প্রোটকলের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আমারো কোমড়ে একটু ব্যথা ছিলো বলে যেতে চাই নাই। আর কোমড়ে ব্যথা না থাকলেও হয়তো যাওয়া হতো কিনা আমার সন্দেহ আছে। মন যেতে চায় নাই।

শেফালি সম্ভবত কাদছে, ওর ছেলেমেরা কাদছে, এই কান্নাটা শুরু হয়েছে। আমি দোয়া করি ওদের যেনো কাদতে না হয় কিন্তু আমি জানি কান্নার ভাষা। আমি তো সেই ছোটবেলা থেকেই বাবা ছাড়া দুর্দশা জীবন থেকেই আজ এখানে এসেছি। তবে একতা বিষয় স্পষ্ট যে, যাদের মাথার উপরের বৃষ্টি অন্যের ছাতায় নিবারন হয়, তাদের উচিত না ওই ছাতাওয়ালা মানুষতাকে কোনোভাবেই ছাটার নীচে থাকতেই হিট করা। তাতে যে ছাতার আবরনটা সরে যেতে পারে এটা যখন কেউ বুঝে না, তখন ছাতাটা যখন সরে যায়, তখন ওই ছাতার মাহাত্য টা হারে হারে টের পাওয়া যায়। আমি হয়তো ওদের জন্য ওই ছাতা ওয়ালাই ছিলাম।

২৩/৮/২০২০-বাস্তবতা গল্পের থেকেও ভয়ংকর

Categories

বাস্তবতা গল্পের থেকেও ভয়ংকর। এ যাবতকাল যতো আইন বহির্ভুত হত্যাকান্ড ঘটেছে, গল্প হয়তো একটা ছিলোই কিন্তু গল্পটা কেউ বিশ্বাস করলো কিনা সেটা যিনি গল্প বানালেন, না তিনি বিশ্বাস করেন, না যাকে বললেন, তিনিও বিশ্বাস করেন। গল্প লেখক নিজেও জানেন, গল্পটা কেউ বিশ্বাস করে না। তারপরেও সেই একই গল্প বলতেই থাকেন, এইভেবে যে, তাদের অপরাধের কোনো খবর কেউ জানে না। তারা ভুলে যান যে, আজ হয়তো কোনো ইনফর্মেশন হাতে নাই, কিন্তু কাল যে ইনফর্মেশন থাকবে না সেটা কি হয়? অপরাধকারী সবসময় ভুলে যায় যে, আইন অপরাধের গন্ধ পায়, আবার অপরাধীরও। কোনো অপরাধে কারো ইচ্ছা থাকুক আর নাই বা থাকুক, যখন সেই অপরাধের সাথে কেউ যুক্ত হয়, সেও অপরাধের সমান ভাগীদার। আইনের চোখে সেও সমান অপরাধী।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে, অপরাধীর পাপের ভার যখন অনেক বেশী হয়ে যায়, তখনই তার রেশ টেনে ধরার লক্ষ্যে পাপ সেই পাপীর জীবনকে অনেকগুলি ভাগে বিভক্ত করে ফেলে। আর এই বিভক্তি ভাগগুলি একটার সাথে আরেকটা এমন কিছু স্তরে নিয়ে যায় যেখানে অপরাধী নিজের অজান্তেই সীমাহীন জটিলতার পথ প্রশস্থ করে দেয়। তখন অপরাধীর পক্ষে অপরাধের সেগমেন্ট গুলিকে জোড়া লাগানো জটিল না শুধু সম্ভবও হয় না। ফলে এদের যে কোনো একটা ভাগ যখন সঠিক আইনের পাল্লায় পড়ে যায়, তখন প্রতিটি সেগমেন্টে করা অপরাধের সঠিক বিচারের মুখুমুখি হয়। এই সময়ে অপরাধী তাঁর গল্প অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দেবার জন্য নতুন কোনো গল্প বল্লেও কাজ হয় না। কারন অপরাধী যতো পা ই এগিয়ে থাকুক আইন তাঁর থেকেও দুই পা এগিয়েই থাকে। শেষ অবধি অপরাধী একটা শান্তনার দিকেই চেয়ে থাকে, কপালের লেখা বা ভাগ্য। কিন্তু আইন কপালের লেখা বা ভাগ্যকে মানেই না। অপরাধীর তখন একটু একটু করে বোধোদয় হতে থাকে যে, অপরাধের পরিনাম অপরাধী যা ভেবেছিলো সেটা তার ভাবনার থেকেও অনেক বেশী ভয়ংকর।

যখন কোনো কেসে বিখ্যাত লোক ফেসে যান, তখন সেই কেস খুব সহজেই নিজের থেকে মিডিয়া, কিংবা জনমন বা জনগন নজর কেড়ে নেয়। এ রকম কেসে শোনানো রায়ে মানুষ চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে থাকে। তখন এইসব রায় আর কেস পুরু দেশকে নাড়িয়ে দেয়। এইসব কেসে যেমন গ্লামার থাকে, হরর থাকে তেমনি থাকে আক্রোশ। তখন পাবলিকের কাছে রায় এমনভাবে চুলচেড়া বিস্লেষনে মনে হয়, এই কেসের রায় ন্যায় হয় নি বা হয়েছে। আদালত যেই রায়ই দিক না কেনো।

মেজর সিনহার কেসটা এখন সেই পর্যায়ের একটা স্তর পার করছে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে। এখানে শুধু কিছু আসামীর ব্যাপারেই সারা দেশ বিস্লেষন করছে না, তারা তদন্ত প্রোসেস, বিচার বিভাগের ন্যায় পরায়নতা , আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা এইসব কিছুর দিকেই সুনিপুন মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষন করছে। ফলে সব বিভাগের জন্য এটা একটা অগ্নি পরীক্ষা বটে। হয়তো এটা সর্বোচ্চ প্রশাসনের জন্যেও একটা অগ্নি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যদি আমরা হেরে যাই, হেরে যাবে সমগ্র দেশ।

আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ কখনোই হারে নাই, এবারো হারবে না।

২১/০৮/২০২০-মুহুর্ত-চেইন

Categories

চারিদিকে শুধু খারাপ সংবাদ পাই। একদিকে করোনা মহামারী, অন্যদিকে সারাদেশ বন্যায় কবলিত, আবার এরই মধ্যে মেজর সিনহার পুলিশের গুলিতে নিহত হবার ঘটনায় পুরু দেশ উত্তাল। ব্যবসা বানিজ্য অনেকটাই স্থবির না হলেও বেশ জটিল। আমাদের অবস্থাটা ততোটা খারাপ নয়। ফ্যাক্টরী চলছে আগের মতোই, অফিসে যাচ্ছি প্রতিদিন, মহামারী আর বন্যা এই মুহুর্তে কোনোটাই খুব বেশী প্রভাব ফেলে নাই আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে।

আজ শুক্রবার, অফিসে যাই নাই। বন্ধের দিন। একটু আগে মোস্তাক ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে জান্নাহ আমেরিকা থেকে হটাত ফোন করে জানালো যে, ওর হাজবেন্ড ওকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করছে এবং সে ওখানে একেবারেই নিরাপদ নয়। ওর হাজবেন্ড নাকি ওর মুখে তোয়ালে ঢুকিয়ে ওকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছিলো। ওর ফোন কেড়ে নিয়ে গিয়েছিলো। ওর ছোট মেয়ে এলিনা ভয়ে কান্নাকাটি করছিলো। ডিজিটাল যুগ, ফোন কেড়ে নিয়ে গেলেও রাকীব (জান্নাহর হাজবেন্ড) বুঝতে পারে নাই যে, ফোন ছাড়াও অন্যান্য ডিভাইস যেমন ল্যাপটপ বা এপ্স (হোয়াটস আপ, ভাইবার, ফেসবুক) ইত্যাদি দিয়েও সারা দুনিয়ায় কথা বলা যায়। ফলে অতিদ্রুত জান্নাহ আমাদের বাসায় ব্যাপারটা জানিয়ে দিলো ভাইবারে কল দিয়ে। আর আমরা জেনে গেলাম। ইনফর্মেশন এতো দ্রুত ট্রাভেল করে যে, আজকাল আর ডিস্ট্যান্স কোনো ব্যাপার নয়। আমরা সাথে সাথে প্রথমে জান্নাহর বাবা মোস্তাক ভাই, পরে তার ছেলে ফয়সালকে জানানোর পরেই লোকাল পুলিশ জান্নাহর বাসায় ১০ মিনিটের মধ্যে চলে এলো। রাকীবকে এরেস্ট করা হয়েছে। আমেরিকা- বাংলাদেশ, আবার বাংলাদেশ-আমেরিকা, একটা ঘটনা, প্রশান চলে এলো মাত্র ১০ মিনিটে। এটাই দুনিয়া। 

রাকীবের সাথে জান্নাহর বেশ কিছুদিন যাবত দাম্পত্য জীবন নিয়ে বনিবনা হচ্ছিলো না। আমি প্রথমে রাকীবকে সাপোর্ট করলেও পরবর্তীতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, সমস্যাটা জান্নাহর সাথে নয়, সমস্যাটা রাকীবের। রাকীব অত্যান্ত হিংস্র একজন মানুষ, কিন্তু কথা বলতে পারে বেশ গুছিয়ে। ছেলেটা ডক্টরেট করেছে বটে কিন্তু জীবনের অভিজ্ঞতায় কচি কচুর মতো। প্রায় এক বছর আলাদা থাকার পর জান্নাহই ফিরে গিয়েছিলো রাকীবের বাসায় কিন্তু রাকীব দিতীয় বারের মতো জান্নাহকে তার সংগীনি হিসাবে গ্রহন করতে পারে নাই। এটা রাকীবের ব্যর্থতা।

আসলে আজকে আমার ডায়েরীটা জান্নাহ বা রাকীবকে নিয়ে নয়। ঘটনাটা ঘটে গেলো কিছুক্ষন আগে, তাই হয়তো লিখলাম। আমার আজকের প্রেক্ষাপট ছিলো, আমাদের জীবনের পথ চলার কাহিনী নিয়ে। “সময়ের লম্বা পথ” ধরে যখন আমরা হাটি, এই পথের প্রতিটি মুহুর্তই আসলে একে অন্যের সাথে কোনো সামঞ্জ্যস্য থাকে না। একটা মুহুর্ত আরেকটা মুহুর্তের সাথে চেইনের মতো বাধা থাকে বটে কিন্তু প্রতিটি মুহুর্ত-চেইন তার আলাদা বৈশিষ্টে ভরপুর। কিন্তু একটা জায়গায় এরা সবার মিল। প্রতিটি মুহুর্ত-চেইন যেখান থেকে সৃষ্টি হয়, পুনরায় সেই বিন্দুতে ফিরে না আসা পর্যন্ত এরা কেহই একটা পূর্নাজ্ঞ বৃত্ত তৈরী করে না বা করতে পারে না। জীবনের বেলায়ও তাই। এই মুহুর্ত-চেইন গুলিতে কখনো কেউ বিউটি কুইন আবার কখনো সেইই হয়ে যায় কিচেন কুইন। কখনো মনে হয় অতি সুবাসিত গোলাপ, আবার পরক্ষনেই মনে হবে গোলাপ নয়, এটা গোলাপের বিষাক্ত কাটা। কখনো কখনো এই মুহুর্ত-চেইগুলিকে জোরা লাগাতে গিয়ে জোড়ার বদলে জট লেগে যায়। ফলে আসচর্য হবার থেকে এই মুহুর্ত-চেইনগুলিকে মনে হয় অসম্ভব জটিল যার একদিকে যেমন মনে হয় খাদ, অন্যদিকে মনে হয় পুরুটাই ফাদ।

যখন জীবন শুরু হয়, একটা অসহায় প্রানী হয়ে এমনভাবে জন্ম নেয় যে, তাকে কেউ না খাইয়ে দিলে খেতে পারে না, কেউ তাকে পরিষ্কার না করিয়ে দিলে সে পরিষ্কার হতে পারে না, কেউ তাকে লালন পালন না করলে তার বড় হয়ে উঠা সম্ভব হয় না। শুধু তাইই নয়, জীবনের যে সময়টায় মানুষ পরিপূর্নতা লাভ করে বলে ভাবে, আসলে সেটাও তার আসল পরিপুর্নতা নয়, প্রতিটা মুহুর্ত-চেইন পরিপুর্নতার জন্য দায়ী। এই পরিপুর্নতার মধ্যে যে সব উপাদান থাকে তা কখনো শিশুকাল, কখনো কিশোরকাল, কখনো যৌবনকাল, কখনো প্রোউরকাল, ইত্যাদি। প্রতিটা মুহুর্ত-চেইন যখন তার শেষ ক্রান্তিলগ্নে এসে সেই লগ্ন বা পর্ব পেরিয়ে যায়, তখন সে একটা উপাদান হারিয়ে ফেলে কিন্ত তার ইনভেন্টরীতে এসে জমা হয় আরেকটা উপাদান। শিশুকাল ঝরে গিয়ে কিশোরকাল, কিশোরকাল ঝরে গিয়ে যৌবনকাল আর যৌবনকাল ঝরে গিয়ে আসে তার পরেরকাল। কিন্তু এই বৃত্তটা চলমান থেকে যায় আর বৃদ্ধি হতে থাকে। আর সামনে এগিয়ে যায় হারিয়ে যাওয়া উপাদানের অভিজ্ঞতা আর আস্বাদন নিয়ে। একে একে যখন সবগুলি উপাদান বিলুপ্ত হতে থাকে, তখন ব্রিত্তের আর্ক আরো বড় হয়, এগিয়ে যায় সেইস্থানে যেখান থেকে বৃত্তের প্রথম উৎপত্তি। যখন বৃত্তটা প্রায় সম্পন্ন হতে শুরু করে তখন দেখা যাবে সেই ৯০ বছরের মানুষটি পুনরায় একই আচরন করে যখন তার বয়স ছিলো মাত্র শিশু। ৯০/১০০ বছরের কোনো মানুষ আর ছোট কোনো বাচ্চার মধ্যে খুব একটা তফাত চোখে পড়ে না, একটা বিষয় ছাড়া- আর সেটা হল “অভিজ্ঞতা"। ছোট বাচ্চার কাছে “অভিজ্ঞতা” ছিলো না কিন্তু শত বছরের বাচ্চা মানুষটির ঝুলিতে ভরপুর “অভিজ্ঞতা”। সেই শত বছরের মানুষটিও কারো সাহাজ্য ছাড়া খেতে পারে না, কারো সাহাজ্য ছাড়া পরিষ্কার হতে পারে না, কেউ তাকে লালন না করলে তার চলাও হয়ে উঠে না। যেদিন বৃত্তটা পুরু হয়ে যায়, সেদিন তিনি আর আমাদের মাঝে নাই। আর এটাই জীবন। বৃত্তটা এ রকম যে, কোনো মাইল ফলকের এপিঠ আর অপিঠ যার একদিকে “শুন্য” বা “শুরু” লেখা অন্য পিঠে “শেষ” লেখা। অথচ পয়েন্টটা একটাই।

অর্থাৎ পয়েন্ট “এ” এর একপিঠে যদি পয়েন্ট “বি” পর্যন্ত যেতে লেখা থাকে “এক্স” কিলোমিটার তাহলে “বি” থেকে “এ” পর্যন্ত আসতে পয়েন্ট “এ” এর অন্য পিঠে লেখা হবে “শুন্য” কিলোমিটার। এটা সেই স্টার্টিং পয়েন্ট যা বৃত্ত সম্পন্ন করার নিমিত্তে ফিনিসিং পয়েন্টও বটে। আর এই পুরু ব্রিত্ততাই আমাদের লাইফ। যারা এই বৃত্তের বাইরে ছিটকে পড়ে যান, তাদের বেলায় আমরা বলি দূর্ঘটনা।  

২১/৮/২০২০-রাগ বা অপরাধ

Categories

যদি রাগ বা অপরাধ করার মুহুর্তে মনে এই অনুভুতি জাগে যে, অন্য কারো ভুলের কারনে আমরা আমাদের জীবন নষ্ট করতে চলেছি, তাহলে হয়তো অনেক অপরাধ ঠেকানো সম্ভব। অভিমান, প্রতিশোধ, ক্রমশই ধংশের পথকে এগিয়ে নিয়ে চলে। ফলে আমরা নিজেদের রাগ আর সেই রাগের বশে যে সব অপরাধ বা পদক্ষেপ নিতে পারি তার ফলাফলের বিশয়ে সবসময় সতর্ক থাকা উচিত। অপরাধের ফল সব সময় দুই রঙ এর হয়। যখন মনে মনে অপরাধ করার চক্রান্ত করা হয়, তখন অনেক কঠিন পরিস্থিতি সহজ বলে মনে হয়। কিন্তু সেটা কেবলমাত্র দেখার ভুল। সেটা একটা ছলনা। অপরাধের আসল রুপ পরে সামনে আসে, যখন চক্রান্ত অসফল হয়, যখন অপরাধ সবার সামনে প্রকাশ হয়। ক্ষোভের বশে নেয়া পদক্ষেপের ফল কখনোই বদলনো যায় না। কিন্তু পিছনে পরে থাকে শুধুই উপলব্ধি। আবারো সেই “যদি”।

এই “যদি”তে তখন এটাই মনে হতে থাকে, আহা “যদি” সমস্যার সমাধানের জন্য মূল উপড়ে ফেলার বিকল্প হিসাবে ওই অপরাধটা না করতাম, “যদি” ওই আইন বিরোধী কাজটা না করতাম, “যদি” একটু ধইর্য ধরতাম, তাহলে হয়তো আমাদের বর্তমান ইতিহাসটা কালো অক্ষরে লেখা হতো না ইত্যাদি।

কারো ইতিহাস যখন কালো অক্ষরে লেখা হয়ে যায়, তখন সেটা যতো চেষ্টা করাই হোক তাকে আর সাদা অক্ষর করা যায় না। হ্যা, হতে পারে তারপরের সব ইতিহাস হয়তো আবারো সাদা অক্ষরে লেখা করা যেতে পারে। কিন্তু এই সাদা অক্ষরের ইতিহাস এতোটাই বেশী পরিমানে হতে হয়, যতোক্ষন না পর্যন্ত অতীতের কালো অক্ষরের পুরু অধ্যায় ম্লান হয়। তখন সেটা হতে হয় আমুল পরিবর্তন। এই পরিবর্তন সবাই পারে না। যারা পারে, তারাই হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লিজেন্ড। কারন তখন কালো অক্ষরের ইতিহাসধারীর মৃত্যু হয়ে নতুন রুপে আবিরভুত হয়।

১৭/৮/২০২০-বাস্তবাদী আমি

আমি খুবই বাস্তব বাদী একজন মানুষ, আর আমি অনেক সহজেই যে কোনো  কিছুতেই হার, বিশেষ করে সেসব ব্যাপারে যেগুলিতে হেরে গেলে শুধুমাত্র আর্থিক কিছু ক্ষতি হয়, মেনে খুব সহজে মনের জোরে একটা সাভাবিক লাইফ চালানোর খাপ খেয়ে নিতে পারি। আমি সব সময় মনে করি, যেটা হয়, তার মধ্যেও নিশ্চয় ভালো কিছু তো আছেই। সময় ভালো হোক আর না হোক, সময় কেটেই যায়। নতুন সময় সামনে আসে। সেটাও কেটে যায়, আবার আরেকটা সময় সামনে আসে। আর প্রতিটা সময় সবার জন্যই কিছু না কিছু রেখেই যায়। এই রেখে যাওয়া সময়ের সাক্ষি একদিন ইতিহাস হয়ে যায়, আবার কারো কারো সময়ের এই ইতিহাস এমন কিছু দিয়ে যায় যা সারা জগতময় চারিদিকে অনেক লম্বা সময় ধরে ভেসেই ভেড়ায়।

তোমাদের বেলায় আমার ধারনা একেবারেই সচ্ছ। কারন তোমাদেরকে আমিই তিলে তিলে বড় করছি। তোমাদের অনেক আইডিয়া আমার থেকে জন্ম নেয়। তোমাদের অনেক পছন্দ আমার থেকে উতপত্তি। তোমরা ইচ্ছে করলেই আমার এই বলয় থেকে ছুটে যেতে পারো বটে কিন্তু তোমরা বাকী জীবনের সবকিছু আমার তৈরী ডাইস দিয়েই লাইফ চালাবে বা চালাইতে হবে। বারবার মনে হবে, যদি বাবা এখন আমার পাশে থাকতো। যদি আকাশ আমার হাত ধরে বলতো, এটা না, ওটা করো। তুমি নির্ধিধায় সেটাই করবে বা করতে। কারন আমার উপর তোমাদের বিশ্বাস শতভাগ।

আমি তোমাদেরকে যতোটা ভালোবাসি, তার থেকে বেশি সম্ভবত মায়া করি। মায়া হচ্ছে একটা বাড়ির মতো। এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ যতো সুন্দরই হোক, অথবা ফাইভ স্টার হোটেল যতো ভালই হোক, সেটা আমার নিজের ঘর নয়। তার উপর মায়া জরাতে নেই। তাতে শুধু কষ্টই বাড়ে। নিজের হয় না। তাই চেক আউটের সময় অর্থাৎ ওখান থেকে বের হবার সময় মন খারাপ করা মানে নিজেকে বোকা মনে করা। কিন্তু নিজের ঘর, নিজের মানুষ যতো অসুন্দরি হোক কিংবা গরীব, সেটা আমার নিজের। তার থেকে চেক আউট করার সময় চোখের পানি পড়া মানেই মায়া।

তোমরা আমার লাউঞ্জ না, না কোনো ফাইভ স্টার হোটেল। তোমরা আমার নিজের ঘর। আমি এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ পছন্দ করি, ওখানে খেতে পছন্দ করি কিন্তু মায়ায় জরাই না। তোমাদেরকেও আমি ঠিক তাই মনে করি যে, তোমরা আমার একটা মায়া। তোমাদের থেকে চেকআউট করা আমার চোখে জল ছাড়া আর কিছুই না। আর আমি আমার চোখের জলকে ভয় পাই। যে চোখের জলকে ভয় পায়, সে এমন কোনো কাজ করে না যে, জল পড়বে। আমি জল চাই না। তোমরা আমার অনেক কাছের একটা বাড়ি। ইট পাথর দিয়ে দাড় করিয়ে দেয়া চারটা দেওয়াল মানেই কিন্তু বাড়ি নয়। সেটা শুধুমাত্র ঘর। আর সেই ঘরকে বাড়ি বানায় তাতে বসবাস করা হাসি খুশী পরিবার। এমন একটা পরিবার যারা একে অপরকে ভালোবাসে। ভরষা করে। আর এই বাড়ির প্রধান ফটক টা হচ্ছি আমি নিজে যেখান দিয়ে কোন অশুভ শক্তি যেমন প্রবেশ হতে দেই না আবার তেমনি বাড়িত শান্তি বিনষ্ট কারী কোনো উপাদানকেও আমি বাড়ির চারপাশে রাখার কোনো অনুমতি দেই না। 

আমি কারারক্ষীর মতো সর্বদা সজাক, আর এটা শুধু তোমাদের জন্য। 

১৫/০৮/২০২০-আকাশে আগুন লাগে না।

Categories

আকাশে আগুন লাগে না। কিন্তু আকাশে যখন আগুন লাগে, সেই আগুনে জ্বলে পড়ে ছাড়খাড় হয় মাটি আর শুকিয়ে যায় নদীর জল। আকাশের হয়তো কিছুই পূড়ে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে, লোভের আগুনে হাত সেকলে হোক সেটা আকাশে বা জমিনে, সেই আগুন হাতকেই পুড়িয়ে দিতে পারে এটা কোনো লোভী মানুষের প্রায়ই মনে থাকে না। লোভের চুলা যখন অপরাধের ফায়ার প্লেস হয়ে যায়, যে কোনো মুহুর্তে সেই ফায়ার প্লেস এক সময় লোভিসহ আশেপাশে যারাই তার সাথে থাকে সবাইকে জালিয়েই মারে। তখন কেউ আকাশের উপরেই থাকুক আর জমিনে। আকাশের মেঘ কিংবা বাতাস সেই আগুনকে নিভাতে পারে না। যখন এই আগুনটা লাগে, তখন জমিনে থাকা মানুষ গুলি দেখে আকাশে বিস্ফোরন হয়েছে। আর সেই বিস্ফোরন ধীরে ধীরে ছাই হয়ে এই জমিনেই পড়ে। তখন তার নাম হয়, অপবাদ।  এর থেকে মুক্তির একটাই পথ- এই আগুনকে আটকাতে হয়। যদি আটকানো না যায় তাহলে নেভাতেই হয়। আগুন নিয়ে খেলা উচিত না কখনোই। এতে পড়ে যাবার ভয় থাকে সারাক্ষন। আর সেটাই হয়েছে খেলার চিতা। তাহলেই সাফল্য আসবে। একটা জিনিষ প্রতিটা মুহুর্তে মনে রাখতে হবে যে, সাফল্যের প্রতিটি ধাপে কখনো আপনজন, কখনো অন্য কেউ হাত বাড়াতেই পারে কিন্তু কোন হাত কি কারনে বাড়ায় সেটা বুঝবার ক্ষমতা থাকা খুব জরুরী। কেউ মিথ্যার হাত বাড়ায়, আর তারা মিথ্যাকে লুকায় বহু পরিশ্রমের দ্বারা। আর সেই মিথ্যা পরিশ্রম কখনোই কাজে দেয় না। কারন সত্যের একটাই চেষ্টা থাকে- বাইরে এসে আলোয় দারানো। মিথ্যের রাত যতো লম্বাই হোক না কেনো, সত্যের সুর্জ ঠিক উঠবেই। আমি তোমাকে সব সময় এতাই বুঝাতে চাই যে, আমি মিথ্যা নই আর যারা তোমার পাশে আছে বা থাকার আশ্বাস দেয়, তারা সবাই মিথ্যা। কিছু আপন জন আছে, তারা হয়তো মিথ্যার আশ্বাস দেয় না, কিন্তু তারা কোনো আশ্বাসও দেয় না। হয়তো তারা কোনো ক্ষতিও করবে না। যেমন ওরা যারা ইতিমধ্যে তোমার আর আমার ব্যাপারটা জানে। সাফল্যের একটা মুল্য থাকে যেতা কাছের মানুষকেই জোগাতে হয়। সাফল্যের এ উন্নতি হচ্ছে শাখের করাত, একদিকে সে পৃথিবীর সমস্ত খুসী নিজের কাছে পেতে পারে, কিন্তু ততোক্ষন পর্যন্ত যতোক্ষন পর্যন্ত তার পা মাটিতে থাকবে এবং সেই সাথে সঠিক দিকে। সফলতা সাব্ধানতাকেও নিয়ে আসে, যে সেটা বুঝতে পারে না, সে ভুল জায়গায় গিয়ে ভুল রাস্তায় চলে যায়, যার নাম 'পতন'। অন্যদিকে রাগ কিংবা সন্দেহ একটা বিষাক্ত ফল, এটা মনজমিনে পোতা উচিতই না। এটা সবার আগে নিজের অস্তিত্বকেই শেষ করে দেয়। তারপর পথে যাইই পায় সেটাকে পায়ে ঠেলতে থাকে, ধ্বংস করতে থাকে। রাগ হচ্ছে একটা রাক্ষস, যে সররোনাশ করে। আর সন্দেহ হচ্ছে একটা শক্তি যা বিশ্বাস কে খুন করে। আর বিশ্বাসের খুন যখন হয়, তখন শারীরিক খুনের কোনো প্রয়োজন পড়ে না।

নিজদের মধ্যে বিশ্বাস আর ভরষা প্রত্যেকটি সম্পর্কের প্রয়োজন। এই বিশ্বাস আর আস্থা একটি ভিত্তি তৈরী করে যার উপর তাদের ভালোবাসা, তাদের বুঝাপরার ইমারত দাঁড়িয়ে থাকে। বিসশসাস ভাজন হবার জন্য দরকার সেক্রেফাইস, দরকার একনিষ্টতা। আর দরকার নিজের সাথে নিজের সৎ হওয়া। কিন্তু বিশ্বাস আর অন্ধ বিশ্বাস এক জিনিষ নয়। অন্ধ বিশ্বাস এমন এক চোরাবালী, যার না আছে একুল, না আছে ওকুল। সেখানে না কোনো জ্ঞানের আলো পৌছতে পারে না সেখানে তর্কের কোনো জায়গা আছে। মানুষের জীবনের বিজ্ঞান, তর্ক আর মনুষত্যের রাস্তাতেই চলে। জীবিনকে তর্ক, জ্ঞান আর বিবেকের মাধ্যমেই চালানো উচিত, অন্ধ বিশ্বাসে না। এই বিশ্বাস আর অন্ধ বিশ্বাসের মধ্যে আমাদের মাঝে অনেক প্রকারের মানুষের সাথে দেখা হয়, পরিচয় হয়। তার মধ্যে একজন হয় বন্ধু। বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের একটা গুরুত্তপুর্ন অংশ। আমরা আমাদের ভাল বা খারাপ সময়ের সময় আমরা এই বন্ধুগুলির মাঝেই থাকি। কিন্তু এই বন্দধুত্ত যদি কোনো ভুল মানুষের সাথে হয়ে যায়, তাহলে আমরা বিপদে মধ্যেও পড়তে পারি। কারন খারাপ সঙ্গের ফল খারাপই হয়। কেউ যখন কোনো খারাপ সংস্পর্শে চলে আসে, তখন তার শোধরানোটা এতো  কঠিন হয়ে যায় যে, যখন আসলটা উম্মোচিত হয় তখন দেখা যায় কত ভয়ংকর সেটা। তখন নিজের কাছে নিজকে বড় বোকা মনে হয়। কারন মিথ্যে ভরসায় ভর করে কেউ যখন নিজের ইচ্ছায় সেই জায়গায় চলে আসে যেখান থেকে আর কেউ ফিরে না, তখন, বাকী ইতিহাস শুধু নীরব ইতিহাসই হয়ে থাকে। কখনো তা বাইরে আসে না। মিথ্যে চোখের জল একটা সময় আর কাজে লাগে না।

মেয়েরা আজো আমাদের সমাজে বোঝা। যাকে অন্যের বাড়িতে পাঠানোর জন্য আমরা অনেক কিছু করতে পারি। একটা বাবা মা যখন সন্তানের জন্য কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ এটা বুঝতে না পারে, তাহলে সেই পরিবারে সেই সন্তান একটা অসুস্থ্য পরিবেশেই বড় হতে থাকে। আর অসুস্থ্য পরিবেশ শুধু সাস্থ্যইকেই ক্ষতি করে না, মনকেও। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের নিজের মনের আওয়াজ শোনা খুব জরুরী। তারা আসলে কি শুনতে পায় নিজের ভিতর থেকে? যদি সেই আওয়াজ মনের সাথে চিন্তার মিল না হয়, তাহলে সব সময়ই জন্ম হতে থাকবে একটা ভয়, একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যত।কারো ফিলিংস আর দায়িত্ববোধ দুটু যখন আলাদা আলাদা হয়, যদিও ব্যাপারটা আসলেই আলাদা, কিন্তু যখন এক মনে হবে, তখন সেতাই হচ্ছে কোনো মেয়ের জন্য সঠিক স্থান যেখানে সে পেতে পারে নিখাদ ভরষা।  তখনই আসে একটা সরল জীবন। সরল জীবন আর উন্নত জীবন সবচেয়ে সুখের।

মানুষ যখন সব দিক থেকে সমস্যার সুম্মুখিন হয়, তখন সে মসজিদ মন্দিরে যায়। সব ধর্মস্থানেই মানুষ বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা নিয়ে যায়, কোনো রকম ভয় বা সন্দেহ ছাড়াই। ধর্ম সেটা যাইই হোক না কেনো, ধর্মস্থান যেটাই হোক না কেনো, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস মানুষকে ঠিক সেখানে টেনে আনে। ধ্বনি বা গরীব প্রত্যেকের একটা কথাই মনে হয় যে তার সমস্ত সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র ঈশ্বর বা ভগবান করতে পারেন। তাদের যা কিছু চাই, ভগবান তা নিসচয় দেবেন। আর এই বিশ্বাস নিয়ে রোজ লক্ষ লক্ষ মানুষ, মন্দির, গির্জা আর মসজিদে যান, তাদের দুঃখ আর সমস্যা নিয়ে। প্রত্যেকেই তাদের ভগবানের কাছে কিছু না কিছু চান। কারো মনের শান্তি চাই, কারো টাকা পয়সা, কারো বা ভালোবাসা। আমি সব সময় চাই, তুমি ভালো থাকো, তুমি সুখী হও। আমি এই দোয়া সব সময় আমার ঈশ্বরের কাছেও করি, কারন তুমি সব কিছু ছেড়েই অতি ভরষা নিয়েই এই বয়সে সব ছেড়ে আমার কাছে এসেছো। আর আমিও এটাই বিশ্বাস করি যে, তুমি যা আমাকে দিয়েছো বা আমি যা দেখি তা নিখাদ। মানুষের জীবনে জীবনের অনেক কাহিনী থাকতে পারে যা রহস্যে ঘেরা থাকে। যখন কেউ এই রহস্য ঘেড়া চাদর সরাতে যান, তখন এমন এমন কিছু প্রশ্নের উদয় হতে পারে যা সাভাবিক জীবনের ভিত নড়ে যেতে পারে। কিন্তু আমি তোমার জীবনে কোন রহস্য ঘেরা অধ্যায় দেখতেও চাই না, রাখতেও চাই না। আর যদি কোনো রহস্য ঘেরা অধ্যায় থেকেও থাকে, আমি সেই অধ্যায় উম্মোচিত করতেও চাই না। আমার সে সময়টা আর নাই। কারন তোমার লাইফ নিয়ে আমি কোনোদিন রাজনীতি বা লীলাখেলা করতে চাই না। তোমার লাইফটা আমার কাছে অতোটাই ইম্পর্ট্যান্ট যতোটা ইম্পর্ট্যান্ট আমার পরিবারের সদস্যদের। আমি এখানে জোয়ার আর ভাটার কথা ভাবি না যে, আমি ভাটায় আর তুমি জোয়ারে, কিংবা আমি পূর্নিমায় আর তুমি অমাবশ্যায়। আমি তোমার জীবন থেকে চলে যাবার জন্যে আসি নাই। আর আমি এটাও ভাবি না যে, তুমি চলে যাবার জন্যই আবার নতুন করে ফিরে এসেছো। তুমি এটাতো ওই ২৪ দিনে অন্তত বুঝেছো যে, কেউ চলে যাবার পর কি পরিবর্তন নজরে আসে। আর এই পরিবর্তন সবার জন্য সব সময় সুখের না।

২৮/০৬/২০২০-আমি তাকে ভালোবাসি না

Categories

ভালোবাসা কি? কি করলে ভালোবাসা প্রকাশ পায়? ভালবাসা কি কোনো দ্রব্য বা কোনো পদার্থ যা চোখে দেখা যায়, ছোয়া যায় বা স্পর্শ করা যায়? আমি তো ভালোবাসাকে কখনো চোখে দেখি নাই। তাহলে আমি ওকে কিভাবে ভালোবাসি? আমি ওকে কখনো ভালবাসি নাই। আমি শুধু ওর জন্য কাদি, মন খারাপ হয় আর প্রতিটাক্ষনে আমি ওকে মিস করি। আচ্ছা, ভালোবাসা কোথায় কিনতে পাওয়া যায়? কোনো সুপার শপে? বা কোনো বড় মলে? অথবা কোনো কারখানায়? আমি তো অনেক মল, অনেক সুপার সপ কিংবা অনেক কারখানায় খুজেছি এই ভালোবাসাকে। কই আমি তো ওর জন্যে একবারের জন্যেও কোনো ভালোবাসা কিনে আনতে পারি নাই!! কোথাও পাইও নাই!! তাই আমি আজো ওকে কোনো ভালবাসা দিতে পারি নাই। তাহলে কিভাবে বলি যে, আমি ওকে ভালবাসি?

যখন ওর সাথে আমার কথা না হয়, আমার চোখ ভিজে যায় জলে। যখন ও আমাকে স্পর্শ করে, আমার মন গলে যায় আনন্দে। ওর কাছে যেদিন আমার যাওয়ার কথা থাকে, আমি অধীর আগ্রহে প্রতিটা মুহুর্ত অপেক্ষা করি, কখন যাবো ওর কাছে। আমার আর সময় কাটে না। আমি আয়নার সামনে দাড়াই, নিজে নিজেই কথা বলি। অথচ আমি কখনো ওর জন্য একটু ভালবাসাও কিনে আনতে পারলাম না।

আমি ওকে একটুও ভালবাসি না। আমার শুধু ভয় হয়, ও ভাল আছে তো? কোনো বিপদে যেনো না পড়ে, তাই আমি ওর জন্য সারাক্ষন ঈশ্বরকে ডাকি। ওর শরীর যেনো ভাল থাকে আমি এটার জন্য দোয়া করি। আমি ওকে অনেক ভালোবাসতে চাই। কিন্তু আমি তো জানি না কিভাবে ভালোবাসতে হয়। আমি শুধু জানি, ও যেনো আনন্দে থাকে আমাকে নিয়ে। ও যেনো সমস্ত সুখ পায় আমার এই অন্তর নিয়ে, আমার শরীর নিয়ে, আমার সবকিছু নিয়ে। কতোদিন ভেবেছি, আমি ওকে ভালবাসবো, কিন্তু কখনো আমি ওকে ভালবাসিনি বলেই বারবার মনে হয়। কিভাবে ভালোবাসবো? আমার তো সবসময় দুসচিন্তা হয়েছে, ও যেনো সুস্থ থাকে, সবল থাকে, কোনো অপয়া যেনো ওকে স্পর্শ না করে এই চিন্তায়। সব সময় শুধু এটাই ভেবেছি যে, আমার জীবনের সবকিছু দিয়েও যদি ওর মংগল হয়, ওর সুখ হয়, আমি সেটাই চাই। কখন ভালোবাসবো আমি তাহলে? আমি ওকে আজো ভালোবাসতে পারলাম না। কোথায় পাওয়া যাবে সেই ভালোবাসা যা দিয়ে আমি বলতে পারি, এই দেখো, আমি তোমাকে ভালবাসা দিলাম।

শারমিন একদিন বলেছিলো, ভালবাসা নাকি নেটে পাওয়া যায়। ভালোবাসা নাকি পথে হেটে যাওয়া কোনো এক নারীর বুকের মধ্যে পাওয়া যায়। শারমিন আমাকে ওর বুকের মধ্যে ভালোবাসা দেখিয়েছিলো। কিন্তু আমি তো ওই বুকে কোনো ভালোবাসা দেখি নাই? আমি শুধু শারমিনের বুকে উদাম দুটো স্তন দেখেছিলাম, সাদা ধব্ধবে। শারমিন বলেছিল, ভালবাসা নাকি নারীর কাপড়ের ভিতরে লুকিয়ে থাকে। বারিধারার ওই বিশাল অট্টালিকায় কালো অন্ধকার ঘরে নাকি এই ভালোবাসা উম্মুক্ত করে দেয়। নামহীন পরিচয়হীন মানুষেরা নাকি এই উম্মুক্ত ভালোবাসা দল্বেধে শকুনের মতো খুটে খুটে খায়। তারা নাকি অনেক ভালবাসা দেয়। কিভাবে দেয় ওরা ভালোবাসা? ফুলের গুচ্ছ দিয়ে? নাকি অঢেল টাকা আর পয়সা দিয়ে? অথবা বাড়ি আর গাড়ি দিয়ে? অথবা কোনো এক রাজপ্রাসাদের মতো কার্পেটওয়ালা ঘরের মধ্যে উলংগ করে সারাটা শরীর চুষে চুষে শকুনদের মতো খেয়ে খেয়ে?

কিন্তু আমি তো ওকে আজো কোনো ফুলের গুচ্ছ দিলাম না। আমি তো ওকে অঢেল টাকা বা পয়সাও দিলাম না। যা দেই তা নিতান্তই আদর করে ভবিষ্যতের একটা সাবলম্বিতার জন্য। আমি তো ওকে কোনো গাড়ি বা বাড়িও দিলাম না। তবে আমি ওকে কোনো রাজপ্রাসাদের অন্ধকার ঘরে বন্দি করে ওর শরীর চুষে চূশে শকুনদের মতো উম্মত্ত হই না। আমি শুধু ওকে নিতান্তই একটা ছোট আলোয়ে গভীর মমতায় বুকে জড়িয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে আমার কাধে ওর মাথা রেখে বুকে বুক মিলিয়ে ধরে রাখি। কোন কষ্ট যেনো না পায়, সে রকম আলতো করে আমি ওকে ছুয়ে দেই। ওর নীরিহ বদনে আমি আমার উষ্ণ ঠোটের দ্বারা চুমুতে চুমুতে ভরে দেই। ওর ঘাড়ে আলতো করে আদর দেই। আমি ওইসব শারমিনদের মতো ওকে কখনো ভালবাসা দিতে পারি নাই। আর এজন্য আমার বারবার মনে হয়, আমি আসলে ওকে ভালবাসি না। কারন, শারমিনদের ভালবাসার সাথে আমার কোনো মিল নাই। আমি ওকে জড়িয়ে ধরি, আমি ওর চোখে চোখ রেখে হতবাক হই, ওর নারী শরীর আমাকে আন্দোলিত করে, আমি ক্ষনেক্ষনে ওকে নতুন করে বারবার আবিষ্কার করি। আমি ওর যত্ন নেই তুলতুলে নাকের উপর চিমটি কেটে। ওর নাভিতে শুড়শুড়ি দেই, বুকে জড়িয়ে ধরি। ওর চোখের জল মুছে দেই। ওর হাসিতে আমিও হাসি। অথচ আমি ওকে আজো ভালবাসতেই পারলাম না। আমি ভালবাসাটাই বুঝতে পারি না। ভালোবাসি না হয়তো। কিন্তু ওর কান্নায় আমার বুকে ব্যথা করে। ওর শরীর খারাপ হলে আমি অস্থির হয়ে যাই। ওর খাবার না খেলে আমি অনেক বকা দেই। ও পরাশুনায় গাফিলতি করলে অনেক শাসন করি। কোথাও আমাকে না বলে গেলে রাগ করি। আমি ওকে কারো সাথে অশ্লীল কথা বলতে বারন করি। আমার সেটা ভাল লাগেনা। তাই বারবার মনে হয়, আমি আজো ওকে ভালোবাসতে পারি নাই। আমি আসলে হয়তো ওকে ভালোই বাসি না। আমি যা করি, তা হচ্ছে, আমি এক মুহুর্তও ওকে ভুলে থাকতে পারি না। সারাক্ষন ওর চেহারাটা আমার চোখে ভাসে। ওর সাথে আমার কথা না হলে, ওকে না দেখলে আমার দিনটাই ভাল যায় না। সকালে উঠেই আমার ওর কথা মনে পড়ে, ঘুমাতে যাওয়ার আগেও ওর কথাই আমার মনে পড়ে। অথচ আমি ওকে ভালই বাসি না। এটা কেমন ভালবাসা?

আমি ওকে ভালবাসতে চাই। কারন, আমি ওকে আজ ভালোবাসি নাই।

১১/০৬/২০২০-তিনটি শব্দ-বদলে যাওয়ার মন্ত্র

"I'll be there". এই মাত্র তিনটি ইংরেজী শব্দের অর্থ করলে দাঁড়ায়, "আমি সেখানে তোমার পাশে আছি, যেখানে তোমার দরকার"। মাত্র তিনটি শব্দ কিন্তু এই তিনটি শব্দ আমাদের জীবনকে এবং জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত যতো পারষ্পরিক জীবন্ত মনুষ্য-উপাদান আছে, হোক সেটা বন্ধু-বান্ধব, হোক সেটা নিজের আত্মীয়স্বজন কিংবা হোক যে কোনো ক্ষনিকের পরিচয়ের কেউ, সবার জীবনকে এমন একস্তরে উপনীত করতে পারে যার প্রভাব শুধু সুদূরপ্রসারী নয় বরং চৈত্রের খরতাপ রোদের মাঝে যেনো কোনো এক মরুদ্যানের মতো প্রশান্তিমূলক এক বিশ্বয়ীক আনন্দে পথচলা প্রশস্থ নিরাপদ ভরষামুলক রাস্তা। এই তিনটি শব্দে আমাদের সম্পর্ককে যেমন মজবুত করে, তেমনি এই শব্দগুলির এমন কিছু ক্ষমতা রয়েছে যা নতুন বন্ধুত্তে শক্ত ভিত দেয়, পুরানো সম্পর্ককে আরো নতুন আঙ্গিকে বাড়িয়ে তোলে, ভাংগা কোনো সম্পর্ককে আবার নতুন ভাবে গড়ে উঠতে সাহাজ্য করে। মনে মনে চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন তো যে, কোনো এক মধ্যরাত্রীতে যখন আপনার কোনো এক অকস্মাৎ জরুরী সময়ে আপনি এক বন্ধুকে ফোন করে বললেন, আপনার আদরের সন্তানটি খুবই অসুস্থ, তাকে এখনই হাসপাতালে নেয়া প্রয়োজন। কোনো যানবাহন নাই কিংবা ধরুন আপনার প্রানপ্রিয় মা গুরুতর অসুস্থ, কিন্তু আপনি এতোটাই নার্ভাস অথচ পাশে কেউ নাই অথবা ধরুন তো, আপনি কোনো এক অচেনা জায়গায় শতমাইল দূরে আপনার গাড়িখানা নষ্ট হয়ে গেছে এবং আপনি এক শংকাজনক পরিস্থিতিতে আছেন, জরুরী উদ্ধারের খুবই দরকার। ঠিক এই সময়ে কারো কাছ থেকে যদি শোনেন, "I'll be there" আপনি কি ভাবতে পারেন কতটা প্রশান্তি আর আপন মনে হবে কথাগুলি? মনে হবে, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম উপহারের থেকেও এই তিনটি শব্দ আরো উত্তম। অসময়ে অথবা কঠিন সময়ে যিনি এই তিনটি শব্দ শোনলেন, আর যিন এই তিনটি শব্দ সত্যিকার অর্থেই "তার পাশে থাকবেন" বুঝালেন, এর থেকে উত্তম আর কোনো উপহার হতে পারে না। এই দেয়া নেয়ার মধ্যে তখন যা ঘটে তা হচ্ছে নতুন করে আবারো বন্ধুত্ত, নতুন আঙ্গিকে আবারো পুরাতন সম্পর্ককে জোরদার, এবং তার সাথে শতভাগ নিখুত নির্ভেজাল ভালোবাসা। Being there is at the very core of civility.      

"I miss you". ইংরেজী এই তিনটি শব্দের অর্থ যদি করি, তাহলে দারায়, "আমি তোমাকে বা আপনাকে খুব মিস করছি"। সত্যি বলতে কি, এই তিনটি শব্দের আক্ষরীক এবং সততার বহির্প্রকাশে হয়তোবা অনেক দাম্পত্য জীবন তিক্ততার পরিবর্তে অথবা বিচ্ছেদের পরিবর্তে বেচে যেত পারে বা পারতো, হয়তো এই তিনটি শব্দের বহির্প্রকাশে হাজার হাজার দাম্পত্য জীবনের ভিত আরো অনেক সিমেন্টেড হতো বা হতে পারতো বা হয়ও। এ রকম ক্ষমতাবান "I miss you" একটি কথা,  আসলে তার পার্টনারকে, লাইফ পার্টনারকে এটাই উপলব্দিতে আনায় যে, আপনি তার কাছে কতটাই অপরিহার্য। আপনাকে সে মিস করছে, আপনাকে তার দেখতে ইচ্ছে করছে, তার মন আপনার জন্য খারাপ হয়ে আছে, সে আপনাকে ফিল করছে। ভাবুন তো একবার যে, আপনি যখন কাজের মধ্যে ডুবে আছেন, কিংবা অনেক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন, ঠিক তখন অপ্রত্যাশিত ভাবে আপনার পার্টনার বা স্ত্রী অথবা আপনার স্বামী শুধুমাত্র এই টুকু জানানোর জন্য কল করে বলছে, "I miss you", ভালোবাসার স্থায়ী আধারকার সেই হৃদয় তখন প্রকম্পিতে হয়ে সমস্ত শরীর, মন, দেহ যেনো প্রশান্তিতে ভরে উঠে। দেখবেন, আপনার চোখ, আপনার ঠোট, আপনার হাসি সব কিছু এক নিমিষেই ভরে উঠবে। মনে হবে, জীবনটা সত্যিই আনন্দের।    

"I respect You." যার অর্থ হয় আমি আপনাকে সম্মান করি। এই যে "সম্মান করি", এতে না তিনি অসম্মানীত হন, না যাকে বলা হলো তাকে প্রভু হিসাবে দলিল দেয়া হলো। সম্মান করি মানে হলো আমি তাকে সমানভাবেই আমার মতো করেই ভাবি। ধরুন আপনি আপনার ছোট সন্তানের সাথেই যদি কথা বলেন, সে যদি এডাল্ট একজন মানুষ হতো, তাহলে আপনি যদি এটাই প্রদর্শন করেন যে, আপনি তাকে সম্মান করেন, দেখবেন, শক্তিশালী বন্ধুত্তের পাশাপাশি আপ্নারা আরো বেশী কাছের মানুষ বনে গেছেন। অনেকে হয়ত এ কথাতাই এভাবে বলেন যে, মনে হয়, আপনি বা তুমিই ঠিক, বা আমি সম্ভবত ঠিক নই। দেখবেন, কোনো এক অমীমাংসিত কিংবা উত্তেজিত কোনো মূহুর্তে সম্পর্ক তিক্ততায় না গড়িয়ে অন্তত তাতক্ষনিক ইমোশনাল অসুস্থ পরিবেশকে একটা শান্ত সমঝোতার দরজায় পৌঁছে দিতে পারে।

Please forgive me আরেকটি মারাত্তক তিনটি শব্দ। অনেক ভাংগা সম্পর্ককে এই তিনটি শব্দ নিখুতভাবে জোরা লাগাতে যেমন পারে, তেমনি পারে ক্ষত বিক্ষত কোনো হৃদয়কে পুনরায় সুস্থ করে তোলতে। আমরা সবাই সব সময়ই কোনো না কোন জানা অজানায় ভুলের মধ্যে, ব্যর্থতার মধ্যে কিংবা অযাচিত সন্দেহের মধ্যে পড়তেই পারি। একটা মানুষ যখন ভুল করে, যখন নিজের কারনে, কিংবা অজানা কোনো কারনে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়, তার কখনোই নিজের এই দোষ স্বীকার করার মধ্যে লজ্জা পাওয়া উচিত নয়। আজ স্বীকার না করে বুদ্ধিমানের মতো আচরন না করে যদি কেউ  Please forgive me বলে দোষ স্বীকার করে নেবার মানসিকতা দেখান, নিঃসন্দেহে তিনি গতকালের বুদ্ধিমান হবার ভান করার চেয়ে আজকের বুদ্ধিমান হবার সাহসীকতা অনেক বেশী।

Count on me,  তেমনি আরো তিনটি জোরালো শব্দ যেখানে সবাই যখন হা ছেড়ে দিয়ে কোনো এক জটিল, অজানা কিংবা অনিশ্চিত বিষয় থেকে ওয়াক আউত করে বেরিয়ে যায়, অথচ Count on me বলা মানুষটি সেই হাল ছাড়া জটিল অনিশ্চিত বিষয়কে নিজের কাধে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সমাধানের প্রত্যয়ে। লয়ালটি হচ্ছে বন্ধুত্তের সবচেয়ে বড় উপাদান। যাদের বন্ধুত্তের বন্ধন যতো বেশী উচু, তারাই দাঁড়িয়ে থাকেন Count on me বলে। ভাবুন তো একবার, যখন কঠিন কোন এক বিপদে আপনি হাবুডুবু খাচ্ছেন, কোনোদিক থেকেই কন আশ্বাস বা সাহাজ্যের চিহ্ন পর্যন্ত নাই, ঠিক তখন যদি আপনার কন এক বন্ধু বলে Count on me, কি প্রসাহ্নতিতে ভরে উঠে মন এবং জীবন!!

এ রকমের অনেক ছোট ছোট তিনটি শব্দ যা আমরা সবাই জানি কিন্তু আমরা তার প্রকৃত ব্যবহার করি না। অথচ আমার পরিবার, আপনার পরিবার, কিংবা আমাদের চারিদিকের যারা আমরা একে অপরের দ্বারা পরিবেষ্টিত, তারা হয়তো মাত্র এই সব কতিপয় ছোট ছোট মাত্র তিনটি শব্দ যেমন Let me help, Try for it, Go for it, I love you, God Bless You, দ্বারা পুরু জীবনটাকেই বদলে দিতে পারি।

আমরা আমাদের সন্তানদের ভালোবাসি কিন্তু কখনো তাদেরকে কাছে এনে কিংবা কাছে গিয়ে বলি না, আমি তোমাকে ভালবাসি অথচ ভালবাসি। যখন কোনো বন্ধু কোনো এক কনফিউশনের দার প্রান্তে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হিম শিম খাচ্ছে, তখন নিজের অভিজ্ঞতার আলকে হয়তো নিজের ঘাড়ে দোষ চলে আসতে পারে বিধায় বলছি না, Go for it অথবা Try for it.  আমরা কাউকেই আমার মতো হউক সেতা জোর করাতে চাই না, কিন্তু আমি তো তাকে আইডিয়া দিতেই পারি, তাকে সাহস দিয়ে বলতেই পারি, জাষ্ট গো ফর ইট।

সম্পর্ক, একটা জটিল সমিকরন। এটা শুধু বিয়ের কবুলের মধ্যেই যেমন সীমাবদ্ধ নয়, তেমনি সন্তান জন্ম দিলেই শুধু বাবা মা হয়ে উঠে না। প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা সপ্ন থাকে, আমরা প্রত্যেককেই তাদের সপ্নকে, তাদের ইচ্ছাকে সম্মান যেমন দেয়া জরুরি, তেমনি জরুরী তার সপ্নকে সার্থক করার জন্যে সর্বাত্তক সাপোর্ট যদি সেটা হয় কল্যানের আর সম্মানের।

"চলুন, বদলে চাই"।

আমাদের জন্যই আমরা বদলে যাই।   

১০/০৬/২০২০-দুদু মিয়ার ইন্তেকাল

আমি অফিসে বসে ছিলাম। কাজের চাপ ছিলো বটে কিন্তু তারপরেও কাজের চাপ কমে এসেছিলো দুপুরের দিকে। ফ্যাক্টরীর সেলারী দিতে হবে, কাজ প্রায় সম্পন্ন। কফি পান করছিলাম। এমন সময় বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে মিটুল (আমার স্ত্রী) ফোন করলো। ফোন ধরলাম, তার কন্ঠ উৎকণ্ঠায় ভরপুর।

-শুনছো?

-কি শুনবো?

-আরে, ফাতেমা আপার জামাই দুদু ভাই মারা গেছেন।

-বললাম, কখন?

-এইমাত্র ওনার মেয়ে খালেদা জানালো যে, ওর বাবা মারা গেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

খারাপ লাগলো। কারন গতকালও আমি ওনার সাথে ফোনে কথা বলেছিলাম। বলেছিলো যে, ওনার শরীরটা বেশী ভালো নাই। অথচ আজকে ২৪ ঘন্টা পার হয় নাই, লোকটা আর এই প্রিথিবীতেই জীবন্ত নয়। এটাই জীবন। যার কোনো স্ট্যাবিলিটি নাই। কখন উনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সেতাও জানি না, আবার কেনো ভর্তি হয়েছিল সেতাও জানি না। দুদু ভাই হার্টের স্ট্রোকের কারনে মারা গেছেন বলে ডাক্তার জানিয়েছে।

দুদু ভাই আর ফাতেমার গল্পটা বলি।

১৯৭৬ সাল। আমি তখন গ্রামে। গ্রামের স্কুলেই লেখাপড়া করি। দেশের অবস্থা বেশ খারাপ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ, কোনো আইন শৃঙ্খলা নাই, তার মধ্যে কয়েকদিন আগে শেখ মুজিব, যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, তাকে সামরিক অভ্যুথানে খুন করা হয়েছে। গ্রামের অনেক লোক বেকার, যে যেভাবে পারে কোনো রকমে দিন চালাচ্ছে। আমরা ৫ বোন আর মা এবং আমি। আমাদের সংসার যার প্রধান মানুষ আমার বড় ভাই হাবীবুল্লাহ। তিনিও সাবলম্বি নন, স্টুডেন্ট থেকে সবেমাত্র ঢাকা ইউনিব্ররসিটিতে লেকচারার হিসাবে যোগ দিয়েছেন। কোনো রকমে আমাদের সংসার চলে। বাড়িতে এতোগুলি বোন আর আমি তো সবেমাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ি, এরকম একটা থমথমে দেশের পরিবেশে ভাইয়ার উপর লোড কম নয়। একদিকে নিরাপত্তা, আরেকদিকে জীবন ধারনের যুদ্ধ। হাবীব ভাই নিজেও তার ক্যারিয়ার গড়ার জন্য বিদেশে যাবেন বলে পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু বোনদের বিয়ে না দেয়া পর্যন্ত তার এই পরিকল্পনায় অনেক কঠিন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছিলো।

এই সময় দুদু ভাই প্রেমে পড়লেন আমার ৪র্থ বোন ফাতেমার সাথে। গ্রামে ওই সময় প্রেম করা একটা যেমন জঘন্য ব্যাপার বলে মনে করা হতো, তেমনি যারা প্রেম করছেন, তারাও অনেক অসুবিধায় থাকতেন। মনের তীব্র ইচ্ছা দেখা করার কিন্তু না আছে সুযোগ না আছে কোনো অনুমতি। ফলে চিরকুট, চিঠি ইত্যাদি দিয়ে যতোটুকু রোমাঞ্চ করা যায় সেটাই ছিল একমাত্র ভরষা। আমার ৩য় বোন লায়লার বিয়ে হয়ে গেছে, ১ম বোন সাফিয়ার বিয়ে ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। তার প্রথম স্বামী গত হয়েছেন। আমার মা, ফাতেমা আর দুদু মিয়ার প্রেমের এই গল্পটা ভাইয়ার কাছে একেবারেই গোপন করে রাখলেন। মায়েরও অনেক চিন্তা ছিলো তার মেয়েরদের জন্য ভালো পাত্রের ব্যাপারে।

দুদু ভাই তখন ফুটন্ত যুবক। দেখতে খুবই সুদর্শন আর স্মার্ট। বেকার ছেলে কিন্তু তার বাবার একটা মনোহরী দোকান ছিলো। তিনি হাপানীতে ভোগেন প্রায়ই। ফলে সবসময় বাজারের দিনে তিনি ঠিকমতো বাজারে গিয়ে পসরা বসাতে পারেন না। এই সুযোগে দুদু ভাই তার বাবার ব্যবসাটা দেখভাল করেন।

সময়টা ছিলো বর্ষাকাল। আমাদের গ্রামে বর্ষাকালে হাটে বাজারে যাওয়ার জন্য প্রতিটি গ্রাম থেকে নৌকা বা কোষা লাগতোই কারন বর্ষাকালে গ্রামের একদম কিনার পর্যন্ত পানিতে ভরপুর থাকতো। আমাদের নিজস্ব কোনো নৌকা বা কোষা নাই। ফলে যখনই কোনো নৌকা বা কোষা আমাদের বাড়ির পাশ দিয়া বাজারে যেতো, আমি ওইসব নৌকা বা কোষায় অনুরোধের ভিত্তিতে উঠে যেতাম। দুদু ভাইদের যেহেতু দোকানের অনেক মাল নিয়ে হাটে, বাজারে যেতে হয় পসরা সাজানোর জন্য, ফলে তাদের একটা নিজস্ব নৌকা ছিলো। ঘোষকান্দা থেকে বিবির বাজারে যেতে হলে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই যেতে হয়। ফলে দুদু ভাইদের নৌকা করেই আমি বেশীর ভাগ সময় হাটের দিন আমি হাটে যেতাম। আর দুদু ভাই যেহেতু ফাতেমার সাথে একটু ভাব আছে, তিনিও চাইতেন যেনো কোনো ছলেবলে তার নৌকা আমাদের ঘাটে ভিরুক। তাতে হয়তো কখনো কখনো ফাতেমার সাথে দুদু মিয়ার ক্ষনিকের জন্য হলেও চোখাচোখি হয়। এটাই প্রেম। এভাবে অনেকদিন চলে যায়।

মা একদিন হাবিব ভাইকে ব্যাপারটা খুলে বলেন। আমি ঠিক জানিনা কেনো বা কি কারনে হাবীব ভাই দুদু ভাইদের পরিবারটাকে পছন্দ করতেন না, সে রহস্য আজো আমার কাছে অজানা। হাবীব ভাই ফাতেমার সাথে দুদু মিয়ার বিয়েতে কিছুতেই রাজী ছিলেন না। কিন্তু মায়ের জোরাজোরিতে এবং ফাতেমার প্রবল ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত হাবীব ভাই এই বিয়েতে রাজী হলেন। আমার ধারনা, হাবীব ভাই আরেকটা কারনে তিনি রাজী হয়েছিলেন, আর সেটা হচ্ছে, যেহেতু হাবিব ভাই নিজেও ক্যারিয়ার গড়ার জন্য বিদেশে পাড়ি দিতে চান, এবং তার আগে সব বোনদের বিয়ের ব্যাপারটা নিসচিত করতে চান, ফলে যেমনই হোক, ফাতেমার একটা গতি হচ্ছে এটা ভেবেও দুদু মিয়ার সাথে বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে আর বেশী বাড়াবাড়ি করেন নাই। কিন্তু তিনি যে নিমরাজী এটা ভালভাবেই হাবিব ভাই প্রকাশ করতে পেরেছিলেন।

অন্যদিকে দুদু মিয়ার খুব একটা মনোযোগ ছিলো না কোনো কাজেই। না বাবার ব্যবসা, না অন্য কিছুতে। ফলে দুদু মিয়ার বাবাও এই মুহুর্তে সে বিয়ে করুক এটাও রাজী ছিলেন না। আরো একটা কারন ছিলো দুদু মিয়ার বাবার এই বিয়েতে রাজী না হবার। আর সেটা হচ্ছে যে, আমাদেরর গ্রামে সব সময়ই ছেলেরা যখন বিয়ে করে, তখন তারা নির্লজ্জের মতো কনে পক্ষ থেকে মোটা দাগে একটা যৌতুক দাবী করে এবং পায়ও। দুদুর বাবাও এ রকমের একটা পন আদায়ের লক্ষে ছিলেন কিন্তু হাবিব ভাইয়ের এক কথা, কোনো যৌতুক দিয়ে আমরা বোনের বিয়ে দেবো না। ফলে দুদু ভাইয়ের বাবারও এই বিয়েতে মতামত ছিলো না। অথচ শেষ পর্যন্ত বিয়েতা হয়েছিলো। দুদু মিয়ার এক্ষেত্রে আমি একটা ধন্যবাদ দেই যে, সে তার বাবার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়েও অনড় ছিলো যে, যৌতুক বা পন বুঝি না, আমি ফাতেমাকেই বিয়ে করবো। গ্রামে এ ধরনের বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্তের বড় অভাব। কিন্তু দুদুর মধ্যে এই সাহসটা ছিলো। ফলে ফাতেমার সাথে দুদুর বিয়ে হলো ঠিকই কিন্তু তার বাবা, বা মা, কিংবা অন্যান্য আত্তীয় সজনেরা এই বিয়েটায় তারা লস করেছে বলে ধরে নিয়েছে। আর এই লসের কারন ফাতেমা। এতে যা ঘটলো তা হচ্ছে, ফাতেমাকে শসুড়বাড়ির অনেক বিড়ম্বনার মুখুমুখি হতে হয়েছে। বিয়েটাকেই টিকিয়ে রাখা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো ফাতেমার। কিন্তু আমি আজ দুদু মিয়াকে অনেক ধন্যবাদ দেই যে, যদি দুদু মিয়া বলিষ্ঠ না হতো, তাহলে ফাতেমার পক্ষে ওই বাড়িতে টিকে থাকা সম্ভব হতো না। একটা সময় ছিলো যে, দুদু মিয়া শুধুমাত্র ফাতেমার কারনে তাকে তার পৈত্রিক বাড়ি থেকে উৎখাত হতে হয়েছিলো। আর তখন ফাতেমা আর দুদু মিয়া আমাদের গ্রামের বাড়িতেই থাকা শুরু করেছিলো। এই থাকা অবস্থায় ফাতেমার সব সন্তানদের জন্ম হয়।

দেশের ক্রমবর্তমান খারাপের কারনে দেশে কোনো কাজ নাই। এদিকে দুদুর বাবার ব্যবসাটাও আর তার হাতে নাই। আমাদের গ্রামে তখন দলে দলে লোকজন দেশের বাইরে যাবার হিরিক পড়েছে। কেউ সৌদি, কেউ কুয়েত, কেউ লিবিয়া, কেউ ইতালি আবার কেউ কেউ যেখানে পারে সেখানে। দুদু ভাইও সে লাইনে পড়ে গেলো। বেশ টাকার প্রয়োজন, অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। দুদু ভাই নিজের বাবাকে পটিয়ে, কিছু আমাদের থেকে আবার কিছু লোন নিয়ে শেষ অবধি সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন। পিছনে রেখে গেলো ফাতেমাকে, তার ছেলে ফরিদকে, মেয়ে সালেহা, খালেদা আর ছেলে কামাল এবং জামালকে।

কিন্তু যে লোক আরাম প্রিয়, ভারী কাজে অভ্যস্থ নয়, তার পক্ষে ওই সৌদি আরবের গরম বালুর জমিনে, গরু মহিষ চড়ানো কিছুতেই ভাল লাগার কথা নয়। তারমধ্যে এম্নিতেই সৌদি লোকজন ৩য় দেশের বিশেষ করে বাংলাদেশের শ্রমিকদেরকে মিসকিন হিসাবে ট্রিট করে। দুদু মিয়া স্বাধীনচেতা মানুষ, আরামপ্রিয় মানুষ, তার কত টাকা ক্ষতি হলো বা ক্ষতি হচ্ছে এসবের কোন বালাই ছিলো না। তিন মাস না যেতে যেতেই দুদু মিয়া পুনরায় বাংলাদেশে চলে এলেন। এই ঘটনায় দুদু মিয়ার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গেলো। যেটুকু ভরশা তার বাবা তার উপর করেছিল এবং কিছু লাভের আশায় যে কয়টা টাকা দিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছিলো, পুরুটাই গচ্চা যাওয়ায় দুদু মিয়ার বাবা এবার তাকে মুটামুটি ত্যাজ্য করার মতো অবস্থায় চলে গেলো। দুদু মিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হলো, আর দুদু মিয়া কোথাও কোনো জায়গা না পাওয়ায় আমাদের গ্রামের বাড়িতেই স্থায়িভাবে উঠে গেলো।

আমাদের বাড়িটা বড়ই ছিলো। আর যেহেতু মা থাকেন, ফলে আমরা আপাতত মাকে দেখভাল করার জন্য যে একজন লোকের দরকার ছিলো সেটা অন্তত পেলাম। ফাতেমাই মার দেখভাল করেন। মার খাওয়া দাওয়ার খরচ আমরাই দেই কিন্তু ফাতেমা আমাদের বাড়িতে থাকায় মার কখন কি লাগবে, সেটায় ফাতেমাই টেককেয়ার করে। কিন্তু সংসার চালানোর জন্য তো ফাতেমার একটা স্থায়ী সোর্স থাকা দরকার। কখনো আমরা কিছু সাহাজ্য করি, কখনোও দুদু মিয়াও কোথা থেকে কিভাবে টাকা আনে আমরা জানিও না। শুনলাম, দুদু মিয়া একটা আদম ব্যবসা খুলেছে। মানে লোকজনকে বিদেশ পাঠানো। তার সাথে আমাদের গ্রামের একজন লোক পার্টনার হিসাবে আছে। প্রথম প্রথম মনে হলো ব্যবসাটা ভালোই চলছে। কিছু কিছু লোকজনকে তো দেশের বাইরে পাঠাচ্ছে। আবার নতুন লোকের লাইন হচ্ছে, টাকা আসছে। কিন্তু সুখ তার বেশীদিন টিকে নাই। আদম ব্যবসা যারা করেছে, সব সময় এটায় কোনো না কোনো দুই নম্বরী কিছু ছিলোই। কেউ হয়তো সাফল্য পেয়ে তাদের মাধ্যমে বিদেশ চলে যেতে পারছে আবার কেউ মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও বিদেশ যেতে পারছিলো না অথচ টাকা পরিশোধ করা আছে। এ রকম করতে করতে প্রায় অনেক বছর কেটে গিয়েছিলো। পাওনাদাররা এসে ঝামেলা করে, থ্রেট দেয়, ফাতেমাকে পর্যন্ত শাসিয়ে যায়, মামলা করে, আবার কেমন করে যেনো এসব ঝামেলা থেকে দুদু মিয়া পারও পেয়ে যায়।

আমি তখন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন। এ রকমের বহু কেস আমার কাছেও এসেছে। কিন্তু সমাধা করতে গিয়ে দেখেছি, দোষটা এই আদম ব্যবসা কোম্পানীর, সাথে দুদু ভাইদের। আমার পক্ষে আনইথিক্যাল করা কিছু সম্ভব হয় নাই বটে কিন্তু আমি সেনাবাহিনীতে আছি এই নাম ভাংগিয়ে দুদু ভাই এবং তার পার্টনার অনেক ফায়দা তো অবশ্যই নিয়েছেন। আমি কখনো এসব নিয়ে না মাথা ঘামিয়েছি না কেউ এলে আমি তার পক্ষে বিপক্ষে কোনো একসানে গিয়েছি।

দুদু ভাইয়ের সন্তানেরা ততোদিনে বড় হয়ে গেছে। বড় ছেলে ফরিদ খুব হিসেবি। নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করছে কিন্তু খুটিতে জোর না থাকলে সব সন্তানের ভাগ্য অতোটা বেড়ে উঠে না যতোটা তার প্রাপ্য। কিন্তু আমি ফরিদের উপর অনেক সহানুভুতিশীল ছিলাম। আমারো ওই রকম ইনকাম নাই যে, যা লাগে সাপোর্ট করতে পারি। ফরিদের গল্পটা পড়ে লিখবো।

দুদু ভাই যতোটা কামাই করে নিজের পরিবারকে সাহাজ্য করতে চান, দেখা গেলো, তার থেকে বেশী ঝামেলায় পড়ে আরো বেশী ক্ষতিপুরন দিতে হচ্ছে। হাত খোলা লোক। যখন টাকা আসে, মনে হয় কতোক্ষনে টাকাটা খরচ করবে। কিন্তু যখন থাকে না, তখন গোল্ডলিফ বা বেনসন সিগারেটের পরিবর্তে স্টার সিগারেটও তিনি খেতে পারেন। লোকটার কথায় আশ্বাস পাওয়া যায় কিন্তু সেই আশ্বাস কতোটা নির্ভরযোগ্য, সেটা অনেকবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দেখা গেছে। ফলে, একটা সময়ে, তার সন্তানেরা, তার স্ত্রী ফাতেমা সাফ বলে দিয়েছিলো যে, তার কোনো রোজগারের দরকার নাই, শুধু ঝামেলার কোনো কাজে না গেলেই হলো। এভাবেই দুদু ভাই সংসার দেখে, ফরিদ বিদেশ থেকে টাকা পাঠায়, আরো এক ছেলে কামালও কুয়েতে থাকে, সেও পাঠায়। তারা ভালোই ছিলো। হজ্জ করেছে, গ্রামে তার একটা পজিশন তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলো শেষ বয়সে হলেও।

আসলে, মানুষ যখন একা একা অনেক বড় প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে নিজেকে বাচাতে হয়, তখন অনেক সময় কোনটা ন্যায় আর কোনটা অন্যায়, কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা উচিত না, এই বিচারে আর যাই চলুক জীবন চলে না। কেউ নিজের থেকে খারাপ কিংবা বদনাম কুড়াতে চায় না। বেশীরভাগ মানুষ পরিস্থিতির শিকার। দুদু ভাই খারাপ লোক ছিলেন না। তার অন্তর বড় ছিলো, তার প্রতিভা ছিল। কিন্তু গরীবের ঘরে সবসময় প্রতিভা আলোকিত হয় না। এটা সেই ফুটন্ত ফুলের মতো, পরাগায়ন না হবার কারনে অকালেই ফল হয়ে না উঠে ঝরে যাওয়ার কাহিনী। এটা কার দোষ? দুদু ভাইয়ের নাকি তার পরিবারের নাকি আমাদের এই ভারসাম্যহীন সমাজের?

অনেক লম্বা একটা সময় দুদু ভাই ছিলো আমাদের সাথে। অনেক রাগ করেছি, বকা দিয়েছি, মাঝে মাঝে আবার ভালোবাসায় আগলেও রেখেছি। আজ প্রায় ৭০ বছর বয়সে এসে দুদু ভাই সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। উনার লাশটা যখন আমার ফ্যাক্টরীর সামনে এসে থামলো, একটা লাশবাহী গাড়িতে কাপড়ে মোড়ানো ছিল দুদু ভাই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে লাশ গ্রামে নিয়ে যাবার সময় আমি তার ছেলে জামাল এবং ভাতিজা আরশাদকে বলেছিলাম যেনো ফ্যাক্টরীর সামনে থামায়। কিছু খরচাপাতি ব্যাপার আছে, যাওয়ার সময় ওদের হাতে তুলে দেবো। কারন এই মুহুর্তে এটা খুব দরকার।

দুদু ভাই অনেকবার আমার এই ফ্যাক্টরিতে এসেছিলেন। খাওয়া দাওয়া করেছে আমার সাথে, হেটে হেটে ঘুরে ঘুরে দেখেছে আমার ফ্যাক্টরি। গত মার্চ মাসেও একবার আমার এই ফ্যাক্টরীতে এসেছিলো খালেদাকে নিয়ে, মিজান (খালেদার জামাই) ছিলো, মিজানের আব্বা, মিজানের চাচা এবং জেঠারা ছিলো। খালেদা ছিলো, জামাল ছিল। একসাথে খেয়েছি। অথচ আজ, দুদু ভাইয়ের কোনো ক্ষমতা নাই লাশবাহী গাড়ি থেকে নেমে আমার সাথে একবার দেখা করেন, তার কোনো শক্তি নাই আরো একবার আমার ফ্যাক্টরীর নতুন মেশিনগুলি হেটে হেটে ঘুরে ঘুরে দেখার। তার এই দুনিয়ার সাথে সমস্ত নেটওয়ার্ক ছিন্ন করা হয়েছে। এই পৃথিবীতে তারজন্য আর কোনো অক্সিজেন বরাদ্ধ নাই, তার পায়ের শক্তি রহিত করা হয়েছে, তিনি আর এই বাজ্যিক পৃথিবীর কেউ নন। উনাকে আমরাও আর আটকিয়ে রাখার কোনো ক্ষমতা নাই, রাখাও যাবে না। লাশবাহী গাড়িটার সামনে গিয়ে দাড়ালাম, দুদু ভাই সাদা একটা কাপড়ের ভিতর একটা জড়ো পদার্থের মতো শুয়ে আছেন গাড়ির সিটের নীচে। যে লোকের জীবন্ত অবস্থায় সিট বরাদ্ধ ছিলো, আজ তার স্থান গাড়ির সিটের নীচে। এটাই জীবন। লাশবাহী গাড়ি চলে গেলো গ্রামের পথে।

তার বড় ছেলে ফরিদের সাথে কথা হল। ফরিদ জাপানে থাকে। বর্তমানে করোনার মহামারী চলছে সারা দুনিয়াব্যাপি। জাপানের সাথে এই মুহুর্তে আমাদের দেশের বিমান চলাচল সাময়ীকভাবে বন্ধ আছে। কিন্তু যদি কেহ আসতে চায়, তাহলে ইন্ডিয়া হয়ে হয়তো আসা যাবে। ফরিদ তার বাবাকে দেখতে ঢাকায় আসতে চাচ্ছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হল, এটা ঠিক হবে না। কারন কোনো কারনে যদি ফরিদ ঢাকায় চলে আসতেও পারে, বলা যায় না, করোনার মহামারীর কারনে বাংলাদেশ সরকার বিদেশ ফেরত যাত্রী হিসাবে ফরিদকে ১৫ দিনের কোয়ারেন্টাইন করে ফেললে ফরিদের পক্ষে আরো ১৫ দিন গ্রামেই আসা হবে না। আর যদি লাশকে এখন আবার ঢাকায় কোনো হাসপাতালে মর্গে রাখতেও যায়, দেখা যাবে কোনো হাসপাতাল সেটা নাও রাখতে পারে। আবার যদি লাশ রাখাও যায়, ফরিদকে কোনোভাবে এয়ারপর্ট থেকে কোয়ারেন্টাইন ছারাও গ্রামে আনা যায়, তাহলে ফরিদের জাপানে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারেও একটা করাকড়ি থাকতে পারে। আবার এই মুহুর্তে আগামী ৩ দিনের মধ্যে কোনো ফ্লাইটও নাই। সব মিলিয়ে আমি ফরিদকে ঢাকায় আসতে বারন করে দিলাম। ফরিদের না আসার সিদ্ধান্তটা যখন কনফার্ম করা হলো, আমি গ্রামের উদ্ধেশ্যে রওয়ানা হলাম দুদু ভাইকে কবর দেওয়ার জন্য। আমি যখন গ্রামে পৌঁছলাম, তখন রাত প্রায় পৌনে আটটা। গ্রামে ফাতেমাকে দেখলাম, ওর অন্যান্য সন্তানদের সাথে কথা বললাম। সবার মন খারাপ, কান্নাকাটি করছে। দুদু ভাইয়ের লাশ ঘিরে অনেক মানুষ উঠানে খাটিয়ার পাশে জড়ো হয়ে বসে আছে।

জন্ম আর মৃত্যুর মধ্যে একটা ভীষন মিল আছে। জন্মের সময়ে নতুন অতিথির চারিদিকে যেমন বাড়ির সবাই বসে হাসিমুখে বরন করে নেয়। এই নতুন অতিথির আগমনে যেমন সবাই বাড়িভর্তি মানুষের ভীড় লেগে যায়, ঠিক তেমনি মৃত্যুর সময়েও বাড়িভর্তি মানুষের ভীড় জমে যায়। কিন্তু এ সময়ে সবাই থাকে ভারাক্রান্ত আর শোক বিহব্বল।

আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন, রাত বেড়ে যাচ্ছে, কবর এখনো খোড়া শেষ হয় নাই। রাতে এশার নামাজের পর জানাজা হবে। এশার নামাজ হবে রাত নয়টায়। ফরিদের শ্বশুর মোল্লা কাকা বাকী সব সামলাচ্ছেন। গোসল, কাফন আর যাবতীয় সব। মাঝে মাঝেই কেউ কেউ উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করছে। কেউ কাদতেছে কাদতে হবে বলে। ফলে উচ্চস্বরেই সে তার সেই বিলাপ লোক সম্মুখে জাহির করার অভিনয়ে এটাই বুঝাতে চাইছে, দুদু মিয়ার শোকে সে এতোটাই বিহব্বল যে, তার বুক ফাটছে, তার অন্তর কাদছে ইত্যাদি। কিন্তু আমার চোখে এই মিথ্যা কান্নাটা ধরা পড়েছে। কিন্তু তারপরেও কাদুক। আবার কেউ নীরবে চোখের পানি ফেলছে, তার এই কান্না অন্তরের ভিতর থেকে। নিঃশব্দ কান্নার কষ্ট হাহাকার করে কান্নার থেকেও অধিক কষ্টের।

ফাতেমা কাদছে নিঃশব্দে, আমাকে দেখে একটু উচ্চস্বরে কান্নার উপক্রম হয়েছিলো, বুঝলাম আবেগ। হবেই তো। নিজের লাইফ পার্টনার চলে গেছে। খারাপ হোক ভালো হোক, একজন লোকতো ছিল যার সাথে অভিমান করা যায়, যার কাছে অভিযোগ করা যায়। আজ সে চলে গেছে। প্রায় ৪৪ বছরের পার্টনারশীপ লাইফে কত কথাই না লুকিয়ে আছে ফাতেমার জীবনে। এই সংসার গুছাইতে কতই না সময় ব্যয় করেছে ওরা।

বললাম ফাতেমাকে- আজ তুমি একা কিন্তু একা নও। আমরা তো আজীবনই ছিলাম, এখনো আছি। নিজের উপর যত্ন নিও, আর কখনো ভেবো না যে, তুমি একা হয়ে গেছো। ভাই আর বোনের সাথে তো নাড়ির সম্পর্ক। তুমি ভাল থাকবা, মনের জোর রাখো আর দোয়া করো এইমাত্র চলে যাওয়া মানুষটার জন্য যার সাথে তুমি নির্দিধায় অন্ধকারেও হাতে হাত ধরে রাস্তা পার হতে পেরেছিলা। আজ তোমার দোয়া তার জন্যে সবচেয়ে বেশী দরকার। মনটা আমারো খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো ফাতেমার চোখের জল দেখে। আজ অনেকদিন পর সেই কথাটা মনে পড়লো-

যদি কখনো তোমার কাদতে ইচ্ছে করে, আমাকে ডেকো,

আমি ওয়াদা করছি, আমি তোমাকে হাসাতে চেষ্টাও করবো না।

কিন্তু আমি তোমার সাথে কাদতে পারবো।

যদি কখনো তোমার কোথাও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, আমাকে ডেকো

আমি ওয়াদা করছি, আমি তোমাকে একটুও বাধা দেবো না

কিন্তু আমি তো তোমার সাথে হারিয়ে যেতে পারবো।

যদি কখনো তোমার কারো কথাই শুনতে ইচ্ছে না করে, আমাকে ডেকো

আমি ওয়াদা করছি, আমি তোমার সাথে কোনো কথা বল্বো না, নিসচুপ থাকবো।

কিন্তু কখনো যদি তুমি আমাকে ডেকেছো কিন্তু আমার কাছ থেকে কোন সাড়া পাও নাই,

তুমি এসো                            

হয়তো সেদিন সত্যিই তোমাকে আমার প্রয়োজন।

ফিরে এলাম। জানাজায় শরীক হতে পারি নাই। অনেক রাত হয়ে যাবে। আর সারাটা বাড়িতে এতো বড় করোনার মহামারী সত্তেও কারো মুখে মাস্ক নাই। খুব অসস্থি বোধ করছিলাম।

গাড়িতে উঠে বারবার দুদু ভাইয়ের কথাই মনে পড়ছিল। আজ থেকে আমি ইচ্ছে করলেও তার মোবাইল নাম্বারে ফোন করে কথা বলতে পারবো না। ইচ্ছে করলেও কোনো কারনে বকাও দিতে পারবো না। তিনি আজ সব কিছুর উর্ধে।  

আমরা তার কাছেই ফিরে যাবো যার কাছ থেকে এসেছিলাম। আজ থেকে ৫০ বছর কিংবা ১০০ বছর পর হয়তো কেউ জানবেও না, দুদু নামে কোনো একজন আজ তিরোধান হলো। এই তিরোধানের প্রাকটিস যুগে যুগে সব সময় হয়ে এসেছে, হবেও। আমরা সময়ের স্রোতে একে একে হারিয়ে যাবো। কারন আজ থেকে শত বর্ষ আগেও এখানে এমন দুদু, এমন আখতার, এমন ফাতেমারা এসেছিলো। আজ তারা কেহই নাই। তাদের কোনো ইতিসাহও কোথাও লিখা নাই। আর যেখানে লিখা আছে, তা ঈশ্বরের কাছে। সেখানে আমাদের কোনো পদচারনা নাই।

আল্লাহ আপনার জন্য জান্নাত বরাদ্ধ করুন।

৩১/০৫/২০২০-চৌধুরী বাড়ির অসমাপ্ত গল্প

ইহা কোনো কাল্পনিক গল্প নয়, শুধু চরিত্রের নামগুলি কাল্পনিক

চৌধুরী বাড়ির মেয়ে অনন্যা। আর অনন্যা আমার স্ত্রী। আমি যখন প্রথম ওকে দেখি, কতটুকু ভালো লাগিয়াছিল সেটা আমি আজ এই মুহুর্তে বলিতে পারিব না, কিন্তু আমার ভালো না লাগিলে বিবাহের দিন আমি এতদূর পাগলের মত পথ পারি দিয়া, বলা যায় সাত সমুদ্র তেরো নদী আর ঝড় জান্ডা পারি দিয়া অনন্যাকে একা একাই বিয়ে করিতে আসিতাম না। যাই হোক, যখন আমি অনন্যাদের সাথে পরিচিত হই, তখন খুব যতসামান্যই ওদের পরিবার সম্পর্কে জানিতাম। আর ওদের পরিবার সম্পর্কে আমার জানারো কোনো আগ্রহ তেমন ছিলো না। আমি শুধু অনন্যাকে চাহিয়াছিলাম, আর কিছুই না। ওদের জগত কি রকম, ওদের পরিবার কি রকম, ওদের আত্তিয় সজনের মধ্যে কার কি রকম সম্পর্ক, ভালো না খারাপ, তা আমার কাছে কোনো মুল বিষয় ছিলো না, আজো নাই। কিন্তু আজ অনন্যার সাথে আমার ৩২ বছর দাম্পত্য জীবন পার হইলো। এই ৩২ বছরে আমি না জানিতে চাহিলেও কোনো কিছুই আর জানার বাকী রয় নাই। ফলে আজ কেনো জানি মনে হইলো, আজকের এইদিনে অনন্যাদের পরিবারের কিছু ইতিহাস তুলে ধরি, যা হয়তো পরবর্তী কোনো জেনারেশনের জন্য জানিতে ভালোই লাগিবে হয়তো। আর যদি কেউ নাও জানিতে চান, তাহাতেও কিছুই যায় আসে না।

                          

এনাম উদ্দিন ছিলেন অনন্যার দাদা চিলেন। তার তিনপুত্র, সালাউদ্দিন চৌধুরী, আজিমুদ্দিন চৌধুরী এবং ডাঃ লতুব উদ্দিন চৌধুরী। সালাউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন সবার বড়, আজিমুদ্দিন সাহেব ২য়। লতুবউদ্দিন সাহেব ছিলেন তদানিন্তন ইষ্ট পাকিস্থানের খুব নামকড়া সরকারী ডাক্তার। এনাম উদ্দিনের সব সন্তানেরা মোটামুটি ভালোভাবেই যার যার সংসার নিয়া আনন্দের সাথেই একান্নবর্তী পরিবার হিসাবে বসবাস করিতেছিলেন। এনামুদ্দিন সাহেব ছিলেন অনেক রাগী একজন মানুষ, বুদ্ধিমান এবং বৈষয়িক। তাহার এই তিন ছেলেরাও রুপগঞ্জে, তাহাদের পৈত্রিক জন্মস্থানে বেশ সুপরিচিত মানুষ। দেশ স্বাধীনের কালে সবাই অনেক ভুমিকা রাখিয়াছেন। তাহারা প্রকৃতপক্ষেই ভালো মানুষ হিসাবে বেশ পরিচিত ছিলেন। কিন্তু এই ভালো মানুষগুলির শান্তি বেশীদিন টিকিলো না। আর ইহার প্রধান কারন এনাম উদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় ছেলে আজিম উদ্দিনের কয়েক বছর আগে বিবাহিত রমনীর কারনে।

গল্পটার পটভূমিকা যদি আরম্ভ করি, তাহা হইলে এইরুপ দাড়ায়ঃ

এনাম উদ্দিনের তিন ছেলেই বিবাহিত। তবে সালাউদ্দিন চৌধুরীর বিয়ে হয়েছে অনেক বছর আগে। সালাউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী জয়তুন্নেসা চৌধুরীকে অতি স্নেহ করিয়া এবং আট দশটা সুন্দুরী মেয়ের থকে বাছাই করিয়া এনাম উদ্দিন চৌধুরী সালাউদ্দিন চৌধুরীর ধুমধাম করে বিয়া করাইয়াছিলেন। এই সংসারের প্রানবন্ত যে সদস্যটি ছিলেন, জয়তুন্নেসা চৌধুরীকে বলা হইলে কোনো ভুল হইবে না। কোরবানীর গরুটা কেমন কেনা হইয়াছে, কিংবা হাটে গিয়া আজ কাহার জন্য কি কিনিলে কে কতটুকু খুশী হইবে, এমন এমন অনেক বিশয়ে জয়তুন্নেসা চৌধুরীর মতামত না লইলে যেনো কাজটা সঠিক হইয়াছে কিনা এনাম উদ্দিন চৌধুরীর যেনো মন ভরে না। জয়তুন্নেসা চৌধুরীর গর্ভের সন্তানগুলিও যেনো এনাম উদ্দিনের প্রিয়তমা মানুষগুলির মধ্যে অন্যতম।

আজিম উদ্দিনের বিয়াও এনাম উদ্দিন চৌধুরী নিজের ইচ্ছামতোই তাহার পছন্দসই মেয়ে খুজিয়া বাহির করিলেন। আজিম উদ্দিনের বিয়া হইয়া গেলো। ধরি আজিম উদ্দিন চৌধুরীর সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর নাম জাহুরুন্নেসা। অন্যদিকে অতি স্বনামধন্য ডাক্তার লতুব উদ্দিন চৌধুরীর বিয়াটা অবশ্য এনামউদ্দিনের ইচ্ছাতে হইলো না। লতুবউদ্দিন তাহার কর্মস্থলে তাহার অধীনেই কর্মরত এক নার্সকে বিয়া করিয়া স্ত্রী করিয়া বসিলেন। সেই গল্প আরেকদিন করিবো। আজ সালাউদ্দিন চৌধুরীর গল্প করিতে বসিয়াছি, তোমাদেরকে তাহার গল্পটাই বলি।

দিন যায়, রাত যায়, মাস যায় বছর যায়। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে এনাম উদ্দিনের পরিবারেও ঋতু পরিবর্তনের মতো কিছু কিছু পরিবর্তন আসিতে দেখা গেলো। এই বিশ্বভ্রমান্ডে কালের বিবর্তনে যেমন নেতা পরিবর্তন হইয়াছে, তেমনি পরিবর্তন হইয়াছে নেতাদের চিন্তাধারা, রুচী এবং তাহাদের পাশে উপবিষ্ট উপদেষ্টাদেরও। আর এই পরিবর্তনের মাঝে যা যা পরিবর্তিত হয় তাহা অনেকের চোখে হটাত করিয়া ধরা না পড়িলেও এনাম উদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের কিছু পরিবর্তন কারো চোখকেই এরাইয়া যাইতে পারে নাই। যে পরিবারে কখনো কেহ হটাত করিয়া তাহার মতামত ব্যক্ত করিবার সাহস করিতে পারিত না, কেহ তাহার পছন্দ অপছন্দ প্রকাশ করিবার ক্ষমতা দেখাইতে পারিত না, সেই পরিবারেই সবার অলক্ষে কোনো এক প্রবক্তা যেনো হটাত করিয়া মাথাচারা দিয়া উঠিয়াছিলো। ক্ষমতার পরিবর্তনের ধারা এই পৃথিবীতে সবসময়ই একটা মীরজাফরীর ছলচাতুরির মধ্য দিয়া হইয়াছে, হোক সেটা প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে, কিন্তু ইহাই সত্য যে, এইরুপই ঘটিয়া থাকে। যতোক্ষন ইহার প্রভাব কাহারো উপর সুর্যালোকের রশ্মির ন্যায় সরাসরি মাথায় পতিত না হয়, ততোক্ষন ব্যাপারটা কাহারো নজরে হয়তো পড়ে না, কিন্তু যখন নজরে পড়ে, তখন ইহার উতপত্তি কখন আর কোথা হইতে হইলো ইহার ইতিহাস খুজিতে গেলে দেখা যাইবে, ইহার বীজ বপন হইয়াছিলো অনেককাল আগে। হয়তো কারো নজরে ইহার ধীরে ধীরে বাড়িয়া উঠার গল্পটা চোখে পড়ে নাই। এই গল্পেরও সেইরুপ একটা ইতিহাস রচিত হইয়াছিলো যেদিন এনাম উদ্দিনের দ্বিতীয় পুত্রের বিবাহ হইয়াছিলো সেইদিন থেকে। জাহুরুন্নেসা যেদিন এনাম উদ্দিনের সংসারে পদার্পন করিয়াছিলো, জাহুরুন্নেসা তাহার চোখ কান খোলা রাখিয়া ইহা বুঝিতে একটুও কষ্ট হয় নাই যে, যদিও সালাউদ্দিন চৌধুরী আর আজিম উদ্দিন চৌধুরী দুই পিঠাপিঠি সহোদর ভাই, কিন্তু কোনো না কোনো কারনে তাহার শশুড়ের কাছে সালাউদ্দিন চৌধুরীর উপর তাহার শশুড়ের ভরষা কিংবা নির্ভরতা যেনো তাহার স্বামী আজিম উদ্দিনের থেকে ঢেড় বেশী। ইহার আরেকটি কারন হইলো যে, আজিম উদ্দিন সংসারের অনেক কিছুরই দায়ভাড় তাহার কাধে তুলিয়া নিতে রাজী ছিলেন না। আরাম আয়েশের জীবন থাকিতে কে বা কারা অযথা সংসারের গ্লানী টানিতে চায়? আজিম উদ্দিন ছিলেন ওই রকমের একজন ব্যক্তিত্ত। কিন্তু আজিম উদ্দিনের স্ত্রী মোটেই তেমন প্রকৃতির ছিলো না। তাহার উদ্দিপনা আর ছলচারুরিতা ছিলো সবার থেকে একটু আলাদা। সালাউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী যদি এনাম উদ্দিন চৌধুরীর সংসারের সব হালকাঠি নাড়িতে পারেন, তাহা হইলে জহুরুন্নেসার কি এমন গুনের অভাব ছিলো যে, তিনি তাহা করিতে পারিবেন না? মনে মনে এই সংকল্প করিয়াই তিনি তাহার গুন আর দক্ষতার পরিচয় দিয়া ধীরে ধীরে শসুড় এনাম উদ্দিনের মন কিভাবে আরো বেশী জয় করা যায়, তাহার দিকে নজর দিলেন। আর ইহার প্রভাব যেনো দ্রুত কোনো ভ্যাক্সিনের মতো তাহার কার্যকারিতা প্রদর্শন করিতে লাগিলো।

সকালে নাস্তা খাইবার আগে কখন এনাম উদ্দিনের চা পানের তৃষা পাইলো, আর জহুরুন্নেসা কখন তাহার জা এর আগে এনাম উদ্দিন সাহেবকে উক্ত চা বানাইয়া জেবুন্নেসার আগে তাহার সম্মুখে পৌঁছাইয়া দিবেন ইহার সময়কাল অতি নিখুতভাবে পরিকল্পনা করিয়া কর্মটি করিয়া জহুরুন্নেসা একটা একটা করে সম্মুখ পয়েন্টে আগাইয়া রহিলেন বলিয়া ভাবিলেন। এইরুপে দুপুরে খাইবার পূর্বে শসুড়ের গোসলের পানি, দুপুরে খাইবার পর তাহার পানের বাটি কিংবা কোথাও বাহির হইবার আয়োজনে তাহার পাঞ্জাবীখানা ভালো মতো ইস্ত্রি করিয়া পরিপাটি করিয়া রাখিয়া শসূর এনাম উদ্দিনের একের পর এক মর্মিতা আদায় করিয়া নিতে লাগিলেন। অন্যদিকে জহুরুন্নেসা আসায় আর শশুড়ের দিকে একটু অধিক খাতির যত্ন করাতে জেবুন্নেসাও যেন ইহাকে ভালো রুপ মনে করিয়াই জহুরুন্নেসাকে তাহার প্রাপ্য ধন্যবাদটুকু দিতে ভুলিলেন না। কিন্তু জয়তুন্নেসা ইহার গুড় রহস্য আর পরিনতি সম্পর্কে কিছুই অবহিত ছিলেন না। আগে যেমন খাইবার আগে শসুড় মহোদয় জেবুন্নেসাকে ছাড়া খাইতে বসিতেন না, কোথাও যাইতে হইলে যেনো তাহাকে না বলিয়া গেলে যেনো যাওয়াটাই সার্থক হইবে না ইত্যাদির একটা রেশ মনে মনে খসখস করিত, ইদানিং ইহাতে বেশ ভাটা পড়িয়াছে বলিয়া মনে হইলো। বরং উক্ত স্থানটি ক্রমশই জয়তুন্নেসা হারাইতে লাগিলো আর জহুরুন্নেসা যেনো ইহার উত্তরাধিকারী প্রাপ্ত হইতে লাগিলেন। এই ক্ষমতার পালাবদলে যাহা হইলো তাহা বড় নিদারুন। এখানে একটা কথা না বলিলেই চলে না যে, এনাম উদ্দিনের সবচেয়ে খারাপ গুনের মধ্যে একটি ছিল, তিনি কানকথা শুনিতেন। আর এই কানকথার সত্যতা অসত্যতা কোনো কিছুই যাচাই বাচাই না করিয়া কান ভারী হইয়া গেলে যাহা হয়, তিনি তাহাই করেন। জুহুরুন্নেসাও তাহার শশুড়ের এই বদগুন টির সদ্ব্যবহার করিয়া শশূরের কাছাকাছি যাইবার জন্য শশুড়ের কর্নে যাহা যাহা গর্ভপাত করিলে উত্তম ফল পাওয়া যাইবে, তাহা জহুরুন্নেসা প্রয়োগ করিতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করিলেন না। যাহা সত্য তাহাও ঢালিলেন, যাহা সত্যের কাছাকাছিও নহে, তাহাও ঢালিলেন। ইহাতে বসন্তের সুবাতাসের মতো জহুরুন্নেসার জন্য আশীর্বাদ হইয়া আসিলেও জয়তুন্নেসার জন্য চৈত্রের হাহাকার মম কু-বাতাশই চারিদিকে বহিয়া আনিয়া মাঠ, ঘাট আর সংসারের উত্তাপ ছরাইতে লাগিলো। একটা সময় আসিলো যখন এনাম উদ্দিন যেনো আর জয়তুন্নেসার ছায়া পর্যন্ত মারাইতে চাহিতেন না। জয়তুন্নেসা ক্রমশই এনাম উদ্দিন চৌধুরীর কাছে একটা বিষময় চরিত্রে আর জহুরুন্নেসা যেনো একটা অমৃত শরবতে পরিনত হইতে লাগিলেন। এই জহর আর অমৃতের খেলায় শেষ পরিনতি যেদিকে যাইতেছিলো তাহা বড় বিপদজনক। কারন এনাম উদ্দিন এখন আর না জয়তুন্নেসাকে সহ্য করিতে পারেন, না সালাউদ্দিন চৌধুরীকে সহ্য করিতে পারিতেছেন। ইহার রেশে সালাউদ্দিন চৌধুরীর সন্তান্দাদি যাহারা এনাম উদ্দিনের বুকের পরম ধন হইয়া কিছুদিন আগেও আছাড় খাইয়া আসিয়া বুকে পড়িত তাহারা এখন তাহাদের দাদার সামনে উপস্থিত হইলেও তিনি দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দেন। আর এই অবুঝ বাচ্চাগুলিও ধুরু ধুরু বুকে তাহাদের দাদার নিকট হইতে কয়েক পলক দূরে গিয়া ইহাই ভাবিতে থাকে, কি হইলো দাদার? আর কি কারনেই বা তাহাদের আর তিনি ভালবাসেন না? এই প্রশ্নের উত্তর তাহারা তাহাদের পিতামাতাকে শতবার জিজ্ঞাসা করিয়াও কোনো ভালো জবাব পান নাই। অন্যদিকে সালাউদ্দিনের সন্তানদের স্থলাভিষিক্ত হইয়া জহুরুন্নেসার সন্তানগন কচ্ছপ গতিতে নয়, বরং উড়ন্ত কোনো ধুমকেতুর ন্যায় সেই কোনো অজানা মহা বিশ্ব থেকে হাজার মাইল বেগে উল্কা পিন্ডের মতো ধপাস করিয়া এনাম উদিন চৌধুরীর বুকে আসন গ্রহন করিতে কোনো বেগ পাইতে হইতেছে না। আর এই মহা উতসবে যেনো জউরুন্নেসার সন্তান গন পেটুক কোনো ঈগল পাখীর মতো গরম গরম খরগোসের নরম নরম দেহভোজন করিতেছে, আবার কেহ কেহ এইমাত্র নামানো গামলা থেকে ময়রার মিষ্টি ভান্ডার হইতে মিষ্টি নামাইয়া রসগোল্লা ভক্ষন করিতেছে। কেউ আবার আপেল চিবাইয়া রসাসসাধন করিতেছেন।

ধীরে ধীরে পরিস্থিতি এমন হইয়া দাড়াইলো যে, এনাম উদ্দিন তাহার দুই ছেলে ব্যতিত যেনো বড় ছেলে সালাউদ্দিন চৌধুরীকে ছেলে বলিয়াই আর মানিয়া নিতে পারিতেছিলেন না। অথচ সালাউদ্দিন চৌধুরী কিংবা জয়তুন্নেসা চৌধুরী কিংবা তাহাদের সন্তানেরা ইহার পিছনে কোন মহাবিপর্যয় বা কোন মহামারী কাজ করিতেছে ইহার আভাষ পর্যন্ত বুঝিতে পারিলেন না। এতো কাছ হইতে যে জহুরুন্নেসা নামক একটি প্রলয়ংকারী ঘুর্নীঝড় এতো দ্রুত বেগে তাহাদের সবার অলক্ষে ধাবিত হইতেছিলো ইহার বিন্দুমাত্র আভাষ না সালাউদ্দিন চৌধুরী, না আজিম উদ্দিন কিংবা না এতো নামকরা চিকিৎসক লতুব উদ্দিন কেহই বুঝিতে পারিলেন। তাহাদের সবার সম্পর্কটা যেনো এখন অনেক দূরের কেউ। এনাম উদ্দিন চৌধুরী কারনে অকারনে, যেখানে সেখানে, যার তার কাছে যখন খুশী যেভাবে খুশী এক তরফা সালাউদ্দিন চৌধুরীকে সর্বত্র, সব বিষয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিলো করিয়া তেনোভাবে অপমান করিয়া যেমন মনের সাধ মিটাইয়া মজা পাইতেছিলেন, অন্যদিকে সালাউদ্দিন চৌধুরী এবং তাহার স্ত্রী পরিজন সন্তান সন্ততীরা শংকিত হইয়া ঘরকুনো ব্যাংগের মতো দিনানিপাত করিয়া এই ভরষায় সময় পার করিতেছিলেন, কখন এনাম উদ্দিন চৌধুরীর রাগ আর জিদ কমিয়া আসে। কিন্তু এনাম উদ্দিন চৌধুরীর রাগ বা জিদ কিংবা ঘৃণা কোনোটাই কমিবার লক্ষন নাই। মহাসমুদ্রের গহীন অঞ্চল হইতে উত্থাপিত ঘুর্নিঝড় সাত প্যাচে পেচাইয়া যখন ইহা মহাপ্রলয়ংকের রুপ ধারন করিয়া জলভুবন ছাড়িয়া স্থলে প্রবেশ করে, তখন তাহা নিজ আবাসস্থল হারানোর কারনে যেনো সমস্ত রাগ আর জিদ সাথে অভিমানের আক্রোশ লইয়া তাহার চলমান রাস্তায় যাহাই পরুক না কেনো কেউ যেমন ইহার প্রলয়কারী ধ্বংসযজ্ঞ হইতে রেহাই পায় না, তেমনি এনাম উদ্দিন চৌধুরীর মনের ভিতর হইতে উত্থিত রাগ আর জিদ যেনো ক্রমশই বাড়িতে বাড়িতে এমন এক চূরায় উত্তির্ন হইয়াছিলো যে, ইহার ফলশ্রুতিতে সালাউদ্দিন চৌধুরীর রান্না ঘর পর্যন্ত আলাদা হইয়া গেলো, শোবার ঘর আলাদা হইয়া গেলো, তাহার বাল বাচ্চাদের মুখরীয় পদচারনা সীমিত হইতে আরো সিমিত হইয়া শুধুমাত্র একটা ছোট ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ হইয়া গেলো। একসময় এমন হইয়া গেলো যে, এনাম উদ্দিন চৌধুরী তাহাদের সাথে কথা বলাও বন্ধ করিয়া দিলেন। যদিও এনাম উদ্দিন ঘরের মধ্যে কথা বলা বন্ধ করিলেন কিন্তু ঘরের বাহিরে তাহাদের সম্পর্কে বিস্তর কথা বলিতে লাগিলেন। সমাজের যাহারা সালাউদ্দিন চৌধুরীকে চিনিতেন, তাহারা ব্যথিত হইতে লাগিলেন, আর যাহারা এনাম উদ্দিনকে চিনিতেন, তাহারা এনাম উদ্দিনের এইরুপ আচরনে যার পর নাই বিব্রত বোধ করিয়া কেহ কেহ তাহার সহিত সম্পর্ক ছিন্ন না করিতেও দিধাবোধ করিলেন না। আর যাহাদের সহিত এনাম উদ্দিন চৌধুরীর সম্পর্ক বজায় রহিলো, তাহা নাম মাত্র চোখের ইশারা কিংবা কদাচিত দেখা হইলে 'কেমন আছেন,' বা 'কোথায় যাওয়া হইতেছে' ইত্যদির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হইয়া রহিলো। 

এনাম উদ্দিন বনাম সালাউদ্দিন চৌধুরীর বাপ-বেটার এইরুপ তিক্ত সম্পর্ক মধুর না হোক, অন্তত কোনো রকমের একটা সুসম্পর্ক বজায় থাকুক এই চিন্তায় সমাজের অনেক গনমান্য ব্যক্তি, এনাম উদ্দিন চৌধুরীর শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবান্ধব এবং তাহার অতি নিকটস্থ আত্মীয়স্বজনগন কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো গোপনে ডাকিয়া এনাম উদ্দিন চৌধুরীকে জ্ঞান দিতে চেষ্টা করিয়ায়াও খুব একটা সফল তো হইলেনই না বরং উলটা ফল হইলো। এনাম উদ্দিন এবার সালাউদ্দিন চৌধুরী এবং তাহার সব বাল-বাচ্চাদেরকে তাহার ঘরভিটা হইতে উচ্ছেদের হুকুম করিলেন।

চারিদিকে বর্ষাকাল, যখন তখন আকাশ ভর্তি মেঘের ভেলা ভাসিয়া বেড়ায়, কখনো কখনো অগ্রিম কোনো সংকেত না দিয়াই মেঘের ভারে আকাশ তাহার গর্ভ থেকে অবিরত বৃষ্টির জলে এই ধরাকে প্লাবিত করিয়া পরবর্তী ভেলার টানে গুড় গুড় করিতেই থাকে। এমন অবস্থায় সালাউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে অন্য কোথাও তাহার পরিবার লইয়া স্থানান্তর করা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি ইহা একটি মানবিক সিদ্ধান্তও হইতে পারে না। সালাউদ্দিন চৌধুরী এতোদিন তাহার বাবার এইরুপ উতপাত কিংবা কঠোর ভতর্সনা কিংবা সত্য মিথ্যার ইতিহাস লইয়া কোনো মাথা ঘামান নাই। ভাবিয়াছিলেন, পিতার বয়স হইয়াছে, মাঝে মাঝে ছোট অবুঝ বাচ্চাদের মতো হয়তো সীমার অতিরিক্ত রাগ করিতেছেন, কিংবা অযথা পাগলামি করিতেছেন, কোন একসময় আবার হয়তো ঠিক হইয়া তাহাকে এবং তাহার পরিবারকে আগের মতো বুকে টানিয়া লইবেন। কিন্তু ইদানিংকালের ঘরবাড়ি হইতে উচ্ছেদের যে আদেশ এনাম উদ্দিন সালাউদ্দিন চৌধুরীকে দিলেন, আর ইহার অগ্রগতির জন্য যেইরুপ চাপের লক্ষন দেখা গেল তাহাতে তিনি শংকিত হইয়া তাহার সহোদর দুইভাই আজিম উদ্দিন এবং ডাঃ লতুব উদ্দিনের সাথে শলা পরামর্শ করিলেন। তাহার দুই সহোদর ভাইয়েরাও তাহাদের পিতার এহেনো অমানিবিক কার্যকলাপে খুশি ছিলেন না। তাই, তাহারা এই ভাবনা হইতে সিদ্ধান্ত নিলেন, তাহারা তাহার পিতাকে বুঝাইবেন এবং তাহাদের বড় ভাই সালাউদ্দদিন চৌধুরীর উপর এইরুপ অহেতুক নির্যাতন বন্ধের অনুরোধ জানাইবেন।

সকল ভ্রাতারা মিলিয়া তাহাদের পিতাকে সবিনয় অনুরোধ করিলেও কোনো কাজ হইলো না। বরং অবস্থার আরো অবনতিই ঘটিলো। এনামউদ্দিন চৌধুরী তাহার দুই ছেলে আজিম উদ্দিন চৌধুরী আর ডাঃ লতুব উদ্দিন চৌধুরীর সম্মুক্ষেই এই বলিয়া আরো অধিক আইন শুনাইয়া দিলেন যে, আগামি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে যদি সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহার ভিটা ছাড়িয়া অন্যত্র চলিয়া যায়, তাহা হইলে তিনি আইনের দারস্থ হইবেন এবং আইনের সাহাজ্যেই তিনি তাহাকে ঘর মাটি হইতে বিতাড়িত করিবেন।

পিতার এহেনো সিদ্ধান্তে বাড়ির সবাই এমন মর্মাহত হইলেন যে, কাহারো মনে না আছে শান্তি , না আছে কোনো উচ্ছাস। জয়তুন্নেসা চৌধুরী সকল কিছু ভাবিয়াও কোনো কুল কিনারা পাইলো ন যে, কি কারনে বা কোন অপরাধে আজ তাহাদেরকে এইরুপ একটা অমানবিক শাস্তির মোকাবেলা করা হইতেছে। এমন কোনো ব্যবহার, এমন কোনো অনৈতিক আবদার কিংবা এমন কোনো আচরন কি তিনি বা তাহার স্বামী সালাউদ্দিন তাহাদের গোচড়ে বা অগোচড়ে করিয়াছেন যাহাতে তাহার পিতৃতুল্য শ্বশুর মনে আঘাত পাইয়াছেন বা কষ্ট পাইয়াছেন? অদূর অতীতের সমস্ত দিন কাল ক্ষন কিংবা কাল ক্ষনে ক্ষনে খুজিয়াও এমন কোনো কিছুই পাইলেন না যাহাতে তাহাদের উপর তাহার শ্বশুর মহাশয় এতটাই অমানবিক হইতে পারেন। বরং যেদিন হইতে তাহার শ্বশুর তাহাদের সহিত এই রুপ বিরুপ আচরন করিতে শুরু করিলেন, সেই সময় হইতে তাহারা আরো অধিক ভাল আচরন, কিংবা কি করিলে শশূরের মন মেজাজ ভালো থাকিবে সেই প্রচেষ্টাই করিতেছিলেন। এখানে একটা কথা না বলিলেই নয় যে, সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহার অন্যান্য ভ্রাতাদের হইতে অনেক বেশী তিনি তাহার পিতার প্রতি যত্নশীল। তাহার পিতার জর হইয়াছে? তো সালাউদ্দিন চৌধুরী রাত নাই দিন নাই, যেখান হইতে পারেন ডাক্তার আনিয়া আগে পিতার সেবা করিয়াছেন। পিতার প্রতি অন্য দুই ভ্রাতা যতোটা না সংবেদনশীল, যত্নশীল, তাহা হইতে অধিক গুন বেশী সংবেদনশীল এবং যত্নবান সালাউদ্দিন সাহেব। এই কয়েক মাস ধরিয়া এনাম উদ্দিন চৌধুরী যতভাবেই সালাউদ্দিন সাহেবকে মানুষের কাছে হেয় করিবার কিংবা তাহাকে ছোট করিবার নিমিত্তে যতোভাবেই অপমান করিবার চেষ্টা করিয়াছেন, সালাউদ্দিন সাহেব কখনোই ইহার প্রতিবাদ তো দূরের কথা, একবার ইহা লইয়া কাহারো সাথে আলাপ অ করেন নাই এবং কেউ যদি কোনো বিরুপ মন্তব্য করিবার প্রয়াস করিয়াছেন, ততক্ষনাত সালাউদ্দিন সাহেব উহার প্রতিবাদ করিয়া পিতাকে কেহ হেয় করিবে ইহা হইতে দেন নাই। আজো তিনি তাহার সেই সভাবের কনো ব্যতিক্রম করিলেন না। বরং অতিশয় বিনয়ের সহিত তিনি তাহার পিতার সামনে গিয়া দুই হাত জোর করিয়া ইহাই প্রার্থনা করিলেন যে, তাহার ছোট ছোত ছেলেমেয়রা পিতার এই বাড়িছারার আদেশে সংকিত হইয়া কেউ কেউ পীড়িত হইয়া গিয়াছে। সালাউদ্দিন সাহেব আরো মিনতি করিলেন যে, তাহারা তো তাহার পিতারই বংশধর, নায় নাতকুর। কোথায় যাইবে তাহারা এই বাড়ি ছাড়িয়া? এমতাবস্থায় যেনো পিতা তাহাকে কোনো ভুল ত্রুটি হইলে ক্ষমা করিয়া তাহার সমস্ত রাগ, গোস্যা, অভিমান ভুলিয়া গিয়া আবারো এই চির পরিচিত ভিতায় থাকিবার দয়া করেন।

কিন্তু এনাম সাহেবের রাগের কোনো সীমা ছিলো না। তিনি এতোটাই উত্তেজনা লইয়া রাগান্বিত স্বরে কম্পিত গলায় সালাউদ্দিন চৌধুরীকে এমনরুপে হুংকার দিলেন যে, চৌধুরী বাড়ির অজস্র ঘুমন্ত গাছপালা, পানির কুয়া আর টিনের চালেও ইহার মর্মরধ্বনি প্রতিধ্বনি হইয়া চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলো। যাহারা অন্য মনষ্ক ছিলেন, তাহারাও এই আওয়াজ শুনিতে পাইলেন। একটা প্রচন্ড তীব্র বেগ লইয়া অল্প সময়ের জন্য মনে হইলো একটা চৌধুরী বাড়ির সমস্ত ভিটায় ভুমিকম্প ঘটিয়া গেলো। যাহাদের আত্তায় পানি ছিলো তাহা শুকাইয়া গেলো, আর যাহারা আগেই শুষ্ক ছিলেন, তাহাদের অবস্থা যেনো মৃগী রোগীর মতো ছটফট করিতে লাগিলো। শুধুমাত্র বাড়ির কোনো একটি ঘরে জয়তুন্নেসা মনে মনে শান্তি লইয়া একখিলি পান চিবাইয়া ফুরুত করিয়া একমুখ পানের রস চৌধুরী বাড়ির মস্ত বড় উঠানে ফেলিয়া মৃদু আনন্দ পাইলেন যাহার খবর একমাত্র বিধাতা ছাড়া আর কাহারো গোচরে আসিলো না। এনাম সাহেবের তখনো রাগের পরিসীমা উর্ধমুখী এবং তিনি চিৎকার করিয়া বলিতে লাগিলেন- আজ হইতে সালাউদ্দিন চৌধুরী নামে আমার কনো সন্তান এই পৃথিবীতে ছিলো না, আর নাইও। আজ আমি তাহাকে ত্যাজ্য বলিয়া ঘোষনা করিলাম। আমি কালই ভোরে এই মর্মে আদালতে বয়ান দিবো যে, আমি আমার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি হইতে সালাউদ্দিন নামক কোনো কু-পুত্রকে বঞ্চিত করিয়া ইতিহাস করিয়া যাইবো।

সালাউদ্দিন চৌধুরী পিতার রাগ আরো বাড়িয়া যাইবে এই ভাবিয়া কোনো উত্তর না করিয়া নীরবে মাথা নীচু করিয়া পিতার সম্মুখ হইতে প্রস্থান করিলেন বটে কিন্তু এই কয়দিনের যতো অপমান, যতো অপবাদ তাহার পিতা তাহাকে দিয়াছে, আজ যেনো সব কিছুকে ছাড়িয়া এমন এক স্তরে গিয়া ঠেকিলো যে, সালাউদ্দিন চৌধুরীর সমস্ত বুক চিড়িয়া উচ্চস্বরে চিৎকার করিতে ইচ্ছা হইলো। কিন্তু তিনি তাহার কিছুই করিলেন না। শুধু চোখের দুইধারে কষ্টের একটা পাহাড় লইয়া অশ্রু ফেলিতে ফেলিতে নিজ ঘরে ফিরিয়া আসিলেন। মনে হইলো পৃথিবীর তাবত মানবকুল আজ সালাউদ্দিন সাহেবের দিকে কটাক্ষ দ্রিষ্টিতে তাকাইয়া অট্টহাসি হাসিতেছে। তাহার নিজ ঘরে আজ যেনো তিনি এক পরাভুত কোন ক্ষত বিক্ষত সৈনিক যাহার যুদ্ধ করিবার শেষ অস্ত্রটুকুও আজ কেউ যেনো কাড়িয়া লইয়াছে।

পরদিন সকাল বেলায় প্রত্যুষে ডাঃ লতুব উদ্দিন তাহার কর্মস্থলে ফিরিয়া যাইবার সময় বড় ভাই সালাউদ্দিনকে এইমর্মে একটি শলাপরামর্শ দিয়া গেলেন যে, যেহেতু তাহাদের পিতা কাহারো কোনো কথা বা উপদেশ শুনিতেছেন না, তুমি বরং কোনো এক উকিলের সাথে সমস্ত বিষয়াদি লইয়া আলাপ করো। হয়তো বা কোনো একটা সুরাহা হইতেও পারে। এই বলিয়া ভারাক্রান্ত মনে লতুব উদ্দিন চৌধুরীও বড় ভাইয়ের গলায় জড়াইয়া ধরিয়া একত্রে কিছুক্ষন অশ্রুপাত করিয়া একে অপরের হইতে বিদায় লইলেন।

শুনিয়াছি, এই পৃথিবীর আদি লগ্ন হইতেই সম্পদ আর নারী বিষয়ক ঘটনা লইয়া ভাইয়ে ভাইয়ে, বা আপন জনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়, কিন্তু চৌধুরী বাড়ির সন্তানদের মধ্যে কোনো সম্পদ লইয়া না ভাইয়ে ভাইয়ে, না বোনে বোনে এমন কোনো বিদ্বেষ সৃষ্টি হইয়াছে। কিন্তু তাহার পরেও কেনো, কি নিয়া এতো বিদ্বেষ সৃষ্টি হইলো ইহার কোনো গোড়াপত্তন বা ইতিহাস কাহারো জানা নাই। যে রোগের কোনো ঔষধ নাই, তাহার জন্য এক মাত্র ঈশ্বরই ভরষা। এখন সবাই যেনো সেই ঈসশরের কৃপার উপরই নির্ভর করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখিতে পাইলেন না।

সালাউদ্দিন চৌধুরীর একটা সুনাম অত্র অঞ্চলে সব সময়ই ছিলো। এলাকার জজ ব্যারিস্টার, উকিল মুক্তার সবাই একনামে সালাউদ্দিন চৌধুরীকে চিনিত। যে কোনো জনকল্যাণকর কাজে যেমন সালাউদ্দিন সাহেবকে সবাই কাছে পাইত, তেমনি তাহার দ্বারা কিংবা তাহার ব্যবহারে কেউ কখনো মনে কষ্ট পাইয়াছেন কিংবা ব্যথিত হইয়াছেন এমন কোনো ইতিহাসও কেহ বলিতে পারিবে না। ভাইয়ের এহেনো পরামর্শে সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহার অতি পরিচিত গঞ্জের এক ব্যারিস্টারের কাছে শলাপরামর্শ করিতে গিয়া সালাউদ্দিন চৌধুরী আরো একটা খবরে তাহার চিত্ত ভাংগিয়া পড়িলো। তিনি জানিতে পারিলেন যে, গত কয়েকদিন আগে তাহার পিতা এনাম উদ্দিন চৌধুরী কোর্টে আসিয়া একখানা ওয়াকফা দলিল করিয়াছেন। আর সেই ওয়াকফা দলিলে তাহার সমস্ত আওলাদদেরকে বংশ পরাম্পরায় মোতায়াল্লী নিযুক্ত করিলেও উক্ত ওয়াকফা দলিলে সালাউদ্দিন চৌধুরীকে চিরতরে বাদ দিয়া এমন কি সালাউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে-পুলে নায়নাতকুর এবং তাদের যে কোনো স্তরের প্রজন্মকেই এনাম চৌধুরীর বংশের বাহিরে রাখিয়া তিনি দলিল সম্পন্ন করিয়াছেন। ইহার নিগুড় অর্থ দাড়াইলো যে, পক্ষান্তরে এনাম চৌধুরী আক্ষরীক অর্থেই সালাউদ্দিন চৌধুরী এবং তাহার বংশধরদেরকে ত্যাজ্য বলিয়া ঘোষনা করিলেন। এনাম চৌধুরীর কোর্ট কাছারির সংবাদ এখানেই শেষ ছিলো না। তিনি কোর্টের কাছে এইমর্মে আরো একটি নোটিশ দিয়াছেন যে, আগামি একমাসের মধ্যে যেন সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহার ভিটাবাড়ি ত্যাগ করিয়া খালি করিয়া দেয়, অন্যথায় এনাম চৌধুরী আইনের আওতায় সালাউদ্দিন চৌধুরীর বিপক্ষে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করিতে পারিবেন।

এতো কিছু শোনার পরেও সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহার সেই পরিচিত ব্যারিষ্টার বন্ধুকে কি করা যাইতে পারে তাহার ব্যাপারে একটা বুদ্ধি চাহিলেন।  ব্যারিস্টার বন্ধু সালাউদ্দিন সাহেবকে শুধু এই মর্মে পরামর্শ দিলেন যে, এনাম চৌধুরী যাহা করিতেছেন, তাহা কোনোভাবেই ঠিক কাজ করিতেছেন না। কিন্তু যেহেতু আইনে ত্যাজ্য করিবার একটা বিধান রহিয়াছে, ফলে মানবিক দিক দিয়া সমস্ত আচরন গর্হিত হইলেও আইন তাহাকে বাধা দিতে পারেন না। তারপরেও ব্যারিস্টার বন্ধু আইনের কাছে আরো কিছু সময় চাহিয়া একটা প্রার্থনা করিবার অনুরোধ করিতেই পারেন। হইতে পারে এনাম চৌধুরীর এক মাসের আইনী নোটিশ কোর্ট মানবতার দিক চিন্তা করিয়া সময়টা বাড়াইয়া দিতে পারেন।

সালাউদ্দিন চৌধুরী মন ভারাক্রান্ত লইয়া সন্ধ্যার একটু আগে বাড়িতে ফিরিয়া আসিলেন। আকাশ বেশ মেঘাচ্ছন্ন, মাঝে মাঝে আকাসে বিদ্যুৎ চমকাইতেছে। বাতাস যেনো থানিয়া আছে। হয়তো বা অচিরেই ঘন কোনো বৃষ্টির দলা অবিশ্রান্ত মুষলধারে বহিবার নিমিত্তে আকাশ আরো কিছু রশদ জোগার করিতেছে। চৌধুরী বাড়ির গাছে গাছে এখনো কিছু পাখীর কিচির মিচির শোনা যাইতেছে। বাড়ির ছেলেমেয়েরা যার যার পরার টেবিলে পরা লইয়া বসিবার জন্য বাতি হারিকেন জালাইয়া পরার বইপত্র গুছাইতেছে। চারিদিকে একতা থম্থমে ভাব। সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহার ছোট ভাই আজিম উদ্দিনের কাছে বসিয়া নীরবে চুপ হইয়া আছে।

আজিম উদ্দিন নীরবতা ভাঙ্গিয়া সালাউদ্দিন চৌধুরীকে কি যেনো বলিতে গিয়াও আবার বলিতে পারিলেন না। শুধু আমতা আমতা করিয়া কি যেনো বিড়বির করিয়া একটা সিগারেট ধরাইয়া আবারো চুপ করিয়া গেলেন। পৃথিবীতে এমন অনেক রহস্য চারিদিকে চাদরের মতো এমন করিয়া সুপ্ত অবস্থায় থাকে যাহা হইতে কোনো অনিষ্ট হইতে পারে বলিয়া কখনোই কেহ ভাবিতে পারে না, অথচ সেই তাহার সাথেই আমাদের অনেকের বসবাস। উহা এমন এক দূর্ভেদ্য চাদর যাহার অন্তরালে অতি কাছেই অনিষ্ট লুকাইয়া থাকে বটে কিন্তু যাহার দ্বারা সেই অনিষ্ট হইবে তাহাকে কেহই ধরিতে পারে না। আর ইহার মধ্যে যখন এই তথ্য কোনোভাবে ফাস হইয়া কিছুটা আংশিক সত্য প্রকাশ পায়, যিনি জানেন আর যাহাকে যিনি জানিলেন তাহাদের মধ্যে যদি এমন এক বন্ধন তৈয়ারি হইয়া থাকে যাহা না ভাংগা যায়, না রাখা যায় আবার না অন্য কাহারো সাথে তাহা ভাগাভাগি করিয়া উহা বিনাশ করা যায়। বিনাশ করিতে গেলে হয় সম্পূর্ন ভীত নড়িয়া উঠে, আর যদি ভীত ঠিক রাখিয়া কোনোভাবে বিনাশের চেষ্টা করা হয় উহা আর আগের অবস্থায় ফিরিয়া আসে না। উহা নড়বড়ে সেই দাতের মতো যাহা এককালে শক্ত পাথর পর্যন্ত ভাঙ্গিয়া ফেলিতে সক্ষম হইলেও ইহা এখন একটু নারাচারায় এমন তীব্র ব্যথা অনুভুত হয় যে, জীবন আর মরনের মধ্যে ফারাক খুব সামান্য বলিয়া মনে হয়। আজিম উদ্দিন যেনো আজ সেই রকমের একটা তীব্র ব্যথা লইয়া শুধু বিরি ফুকিতে লাগিলেন। তিনি যে তাহার এই বিড়ি পান করিয়া কোনো এক অসীম দুসচিন্তায় মগ্ন, তাহা অন্য কেহ বুঝিতে না পারিলেও বিষণ্ণ আকাশের বুঝিতে কনই কষ্ট হইলো না। অঝোর ধারায় ব্রিষ্টি আসিয়া দুই ভাইকে যেনো অকস্মাৎ ভিজাইয়া দিয়া গেলো।

রাত অনেক হইয়াছে। সবাই যার যার ঘরে যার যার চিন্তায় মগ্ন হইয়া কেউ ঘুমাইয়া পড়িয়াছে, কেউ ঘুম না আসিবার ফলে বিছানার বালিশ লইয়া এপাশ ওপাশ করিতেছে। আবার কেউ অঝোর ধারার বৃষ্টির ফোটায় টিনের চালের রিমঝিম সুর উপভোগ করিতেছে। সালাউদ্দিন চৌধুরীর দুইচোখে যেনো আজকের কালো রজনী হইতে আর কোনো রজনী ইতিপুর্বে আসিয়াছিলো কিনা তাহার মনে পড়ে না। ঘরের বাহিরের জলের ধারার সাথে সালাউদ্দিন চৌধুরীর নয়নের ধারার মধ্যে আজ যেন কোনো পার্থক্য তিনি বুঝিতে পারিলেন না। বাহিরের বৃষ্টির জল উত্তপ্ত ভুমিকে শীতল করিতে পারিলেও সালাউদ্দিন চৌধুরীর নয়নের জল তাহার অন্তরকে শীতল করিতে পারিতেছে বলিয়া মনে হইলো না।

ঠিক এমনই এক মুহুর্তে, হটাত ঘরে জোরে জোরে করা নাড়ার শব্দে সালাউদ্দিন চৌধুরীর ধ্যান ভাঙ্গিয়া গেলো। তিনি জাগিয়াই ছিলেন। দরজা খুলিতেই তিনি তাহার বৃদ্ধ মাকে হাতে একখানা কুপি লইয়া দরজার ওপাড়ে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিলেন। কুপির আলোতে খুব ভালো করে স্পষ্ট বুঝিতে পারিলেন, তাহার মা সমস্ত কিছুর জন্য হয়তো একটু আগেও চোখের জলে বুক ভাসাইয়া আসিয়াছেন। কিন্তু বাংগালি মায়েদের যতোটা ভালোবাসার জোর অন্তরে আছে, সন্তানদের বিপদের সময় তাহাদের হাত ততোটাই শক্তিশালি নয় বিধায় তাহারা শুধু চোখের জলেই ঈশ্বরের কাছে এই বলিয়া শুধু প্রার্থনা করিয়া সন্তানের মংগল কামনা করেন যে, হে ঈশ্বর, তুমি আমার আদরের সন্তানদেরকে ভালো রাখো, আর ভালো রাখো তাদের জীবনধারাকে।। ইহা ছাড়া আর কিছুই করিবার থাকে না এই মমতাময়ি মায়েদের। মায়ের হাতের কুপিটা নিজের হাতে লইয়া সালাউদ্দিন সাহেব তাহার মাকে জড়াইয়া ধরিয়া রহিলেন আর বলিলেন, 'মা, তুমি আমাকে মাফ করিয়া দিও। আমি অতিসত্তরই এই বাড়ি ছাড়িয়া অন্যত্র চলিয়া যাইবো। তুমি বাবাকে দেখিয়া রাইখো। বাবা অনেক একাকী একজন মানুষ। তুমি ছাড়া হয়তো বাবার আর কেহই নাই। তবে যেখানেই থাকি না কেনো মা, যে কোনো প্রয়োজনে, তোমার বা আমার বাবার জন্য আমি আজিবন আমার জীবন উতসর্গ করিয়া যাইবো। আমি কখনো ভাবি নাই যে, আমার দ্বারা এমন কোনো কাজ হইবে যাহাতে আমার প্রানপ্রিয় পিতা বা ভাইয়েরা কোনো কষ্ট পাইবে। অথচ আমি আজ জানিতেই পারিলাম না, কি আমার দোষ বা কি আমার অপরাধ'। মা হু হু করিয়া কান্নায় ভাঙ্গিয়া পড়িলেন। সন্তানের কষ্টে মা আজ এতোটাই আপ্লুত যে, না তিনি তাহার স্বামীকে মানাইতে পারিতেছেন, না তিনি সন্তানকে ছাড়িয়া দিতে পারিতেছেন। মমতাময়ী মায়েদের সবচেয়ে বড় কষ্ট যখন একদিকে সন্তান আর অন্যদিকে থাকে তাহার নিজের স্বামী। ইহা যেনো সেই আদালতের দোয়া চয়েজ, তুমি কি ফাসিতে মরিতে চাও নাকি বিষ পানে? মরিতে তোমাকে হইবেই, হোক সিতা ফাসি অথবা বিষপান। কোনটা রেখে মা কোনটা ফেলবেন তিনি কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারেন না। উভয় পরিস্থিতি তাহার জন্য একই। সংকটাপন্ন। না তিনি মরিতে চাহেন, না তিনি বাচিয়া রহিলেন।

সালাউদ্দিনের মাতা বুক ভরা ব্যাথা নিয়া কেনো এতো রাতে ছেলে সালাউদ্দিনের ঘরে আসিলেন তাহাঁর কারনটা ব্যক্ত করিলেন যে, তিনি তাহার স্বামীর মনোভাব বুঝিতে পারিয়াছেন। আগামীকাল ভোর হইলেই তাহার স্বামী পুত্র সালাউদ্দিন এবং তাহার সব সন্তান সান্ততীদেরকেসহ একটি ফৌজদারি মামলা করিতে যাইবেন বলিয়া মনোস্থির করিয়াছেন। তাহাতে যাহা হইতে পারে যে, যদি কোনো কারনে আদালত মামলায় জামিন না মুঞ্জুর করেন তাহা হইলে এই ছোট ছোট নায়নাতকুরগুলির কি অবস্থা হইবে? সালাউদ্দিনের মা এই গহীন রাতে আরো একবার তাহার পিতার কাছে যে কোনোভাবেই হোক, পায়ে ধরিয়া, কান্না করিয়া আগামিকালের মামলা করা হইতে বিরত রাখিতে হইবে বলিয়া সালাউদ্দিনকে তাহার পিতার ঘরে যাওয়ার অনুরোধ করিলেন। কিন্তু সালাউদ্দিন জানিতেন, যদি তিনি পুনরায় তাহার পিতার সম্মুক্ষিন হনও, তাহা হইলে হতে আরো বিপরীত হইবার সম্ভাবনাই রহিয়াছে। ঈশ্বরের উপর ভরষা করিবার জন্য মাকে আরেক তরফা বুঝাইয়া সালাউদ্দিন তাহার মাকে পিতার ঘরে পাঠাইয়া দিলেন।

ঈশ্বর বোকা নন, বোবাও নন, কানাও নন, কালাও নন। তাহাঁর কাছে এই জগতের সব রহস্যা সর্বদা উম্মুচিত। গোপন কোনো কিছুই তাহাঁর কাছে নাই। তিনি অতি ক্ষুদ্র পিপিলিকার জন্য যেমন ন্যায় বিচার করেন, তেমনি বৃহৎ হস্তীসমুহের বেলায়ও কোনো পার্থক্য করেন না। জগতের কোন বৃক্ষরাজি পানির অভাবে শুষ হইয়া যাইতেছে, আর সেখানে কিভাবে তিনি জলপতন করাইয়া সেই শুষ্ক মর্মর পাতাকে আবার জীবন্ত করিয়া তুলিবেন, এই নৈপুণ্যতা ঈশ্বরের কাছে কোনো হেয়ালী বিশয় যেমন নয়, তেমনি কঠিন ব্যাপারও নয়। গহীন অরন্যে কোথায় কোন মেষশাবক তাহাঁর দল হইতে দলচ্যুত হইয়া পথা হারাইয়া ফেলিয়াছে, আর তাহাকে কি প্রকারে আবার পথ দেখাইয়া নিজের আস্তানায় ফিরাইয়া লইতে হইবে ইহার বৈজ্ঞানিক দিকদর্শন ওই মেষশাবকের কাছে না থাকিলেও ঈশ্বর কোনো না কোনোভাবে তাহাকে পথ দেখাইয়া ঠিক নিজের পরিচিত গন্তব্যে লইয়া যাইবেনই। ইহাই ঈশ্বর। তাবত জগতের অধিপতি। কারো উপরই তিনি জুলুম বা মশকরা করেন না। ঠিক এমনি একটা ঘটনা ঈশ্বর পরদিন সকাল বেলায় সবার অগোচরে ঘটাইয়া দিলেন।

অতি প্রত্যুষে এনাম উদ্দিন চৌধুরীর বুক ব্যথা হইতে উপসর্গটা আরম্ভ হইয়া কিছুক্ষনের মধ্যে প্রায় দম বন্ধ হইয়া যাইবার উপক্রম হইলো। তিনি তাহাঁর বিছানা ছাড়িয়া যেনো উঠিবার শক্তি হারাইয়া ফেলিয়াছেন। বাড়িশুদ্ধ মানুষের মধ্যে নানান রকমের গুঞ্জন আরম্ভ হইয়াছে। কেহ কেহ তাহাঁর শাস্তি শুরু হইয়াছে বলিয়া মনে মনে প্রীত হইতেছেন, কেহ কেহ আবার এনাম চৌধুরীর শেষ নিঃশ্বাস শেষ হইবার পূর্বেই সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা কিভাবে হইলে কাহার কত লাভ হইবে সেই হিসাব কষিতেছেন, কেউ আবার নির্লিপ্ত হইয়া দেখি কি হয়, কোন ঘাটের জল কোথায় গিয়া পড়ে এই ভাবিয়া দাত কেলাইতেছেন। হন্তদন্ত হইয়া কেউ আবার এনাম উদ্দিন চৌধুরীর ডাক্তার ছেলে লতুব উদ্দিন চৌধুরীকে কোনো একলোক মারফত কিভাবে খবরটা পৌঁছানো যায় সে ভাবনায় অস্থির হইয়া পায়চারী করিতেছেন। এনাম উদ্দিন চৌধুরী নিথর দেহে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় তাহাঁর বিছানায় যেনো একজন মৃত মানুষের মতো পড়িয়া আছেন। তাহাঁর আজ মোকদ্দমায় যাওয়ার কথা ছিলো। সেই অভিলাষ এনাম চৌধুরীর এখন মনে আছে কিনা বুঝা যাইতেছে না। তবে ইহা স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে যে, তিনি অমানসিক যন্ত্রনার মধ্যে আছেন।

সালাউদ্দিন চৌধুরী ভোরেই নামাজ পড়িয়া অডুরে নদীর ধারে সকালের মুক্ত বাতাসে একটু হাওয়া খাইতে গিয়াছিলেন। তাহাঁর মন মেজাজ সস্তির হইয়াছিলো সারারাত। ঘাটের কেউ তাহাকে সবেমাত্র একতা খবর দিলো যে, তাহাদের বাড়িতে কেউ নাকি খুবই গুরুতর অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছেন, আর সিটা সম্ভবত তাহাঁর বাবা। খবর পাইয়া দ্রুত সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহাদের বাড়ির আংগিনায় আসিয়া দেখিলেন, বেশ মানুষের উপস্থিতি। এম্ননিতেই বুকে বল ছিলো না, সারারাত প্রায় জাগিয়াই ছিলেন, তাই শরীরটাও খুব মজবুত নয়। বাড়িতে কাহার কি হইয়াছে জিজ্ঞাসা করিতেই জয়তুন্নেসা এনাম চৌধুরীর অসুস্থের কথা জানাইলেন। সালাউদ্দিন চৌধুরী সরাসরি তাহাঁর পিতার মাথার কাছে গিয়া দেখিতে পাইলেন, নিথর শরীর লইয়া তাহাঁর বাবা বিছানায় পড়িয়া আছেন। তিনি পিতার মুখখানা তাহাঁর হাতে ধরিয়া কয়েকবার 'বাবা, বাবা, বলিয়া ডাকিলেন বটে কিন্তু এনাম উদ্দিন চৌধুরী না সালাউদ্দিন চৌধুরীর ডাকে কোনো সাড়া দিলেন, না তিনি চোখ খুলিয়া জগতে এই মুহুর্তে কি ঘটিতেছে তাহা বুঝিবার জন্য নেত্র উম্মোচন করিলেন। বাবাকে বুকের কাছে জড়াইয়া ধরিয়া সালাউদ্দিন চৌধুরী যেনো অঝোর ধারায় কাদিতে লাগিলেন। পাশে সালাউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রি জয়তুন্নেসা তালপাতার একটা পাখা লইয়া ঘনঘন বাতাস আর সাথে ভিজা একখানা গামছা দিয়া শশুড়ের মুখখানি বারংবার মুছিয়া দিতে দিতে চোখের জল ফেলিতে লাগিলেন। জহুরুন্নেসা তাহাঁর প্রত্যাহিক কর্মের একটি, খাচার পালিত কবুতরগুলিকে মুঠিমুঠি খুদের চাল বিলি করিয়া খাওয়াইতে খাওয়াইতে যেনো মনে মনে কি ভাবিতে লাগিলেন। আজিম উদ্দিন বাবার পাশে আসিয়া বসিয়াছিলেন বটে কিন্তু তাহাঁর কোনো কর্ম নাই বিধায় অধিক্ষন এখানে আর বসিয়া থাকিতে পারিলেন না। তিনিও উঠোনের পাশে পানির কুয়ায় বসিয়া জহুরুন্নেসার কবুতরের সেবা দেখিতে লাগিলেন। অন্যদিকে সালাউদ্দিন চৌধুরী বাবার এইরুপ শারীরিক অসুস্থতায় গভীর আশংকা বোধ করিয়া তিনি দ্রুত গঞ্জের সদর হাসপাতালে লইয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করিলেন।

যখন সদর হাস্পাতালে পৌঁছিলেন, ডাক্তারবাবু দ্রুত এনাম উদ্দিন চৌধুরীর হাত পা চোখ মুখ, জিব্বা চেক করিয়া বুঝিলেন যে, তিনি হার্টের একটা কঠিন অস্বাভাবিক চক্করের মধ্যে পড়িয়া গিয়াছেন। এখানে তাহাঁর কোনো চিকিৎসা নাই। দেরী হইলে আরো সমস্যা হইতে পারে বলিয়া দ্রুত উন্নত কোথাও লইয়া না গেলে অচিরেই অবস্থার আরো অবনতি হইতে পারে বলিয়া জানাইয়া দিলেন। গঞ্জ হইতে শহরের দুরুত্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এতো দূর রাস্তা যাইতে যাইতে পথেই কোনো অঘটন ঘটিয়া যায় কিনা এই আশংকায় সালাউদ্দিন সাহেবও কি করিবেন বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছিলেন না। বাড়ির সব বউঝিরা নতুন কোনো আশংকায় সবাই চিন্তিত হইয়া কিংকর্তব্য বিমুখ হইয়া যেনো ভাষাহীন হইয়া সময় পার করিতেছিলেন। সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহাঁর সহোদর ভাই ডাঃ লতুব উদ্দিনের আগমনের অপেক্ষায় রহিলেন।

বিকালের দিকে এনাম উদ্দিন চৌধুরীর অবস্থার আরো অবনতি দেখা দিল এবং তাহাঁর জবান প্রায় বন্ধই হইয়া গেলো। রাত নাগাদ ডাঃ লতুব উদ্দিন হাসপাতালে আসিয়া বাবাকে দেখিয়া তাহাঁর বুঝিতে একটুও কষ্ট হইলো না যে, তিনি হার্ট এটাক করিয়াছিলেন এবং তিনি এখন প্রায় প্যারালাইসিসের দিকে যাইতেছেন।

এনাম উদ্দিন চৌধুরী সত্যি সত্যিই প্যারালাইসিস হয়ে গেলেন। তিনি আর আগের মতো তাহাঁর ডান হাত এবং ডান পা কিছুতেই নাড়াইতে পারেন না। তাহাঁর বাক রুদ্ধ হইয়া তিনি বোবা হইয়া গেলেন। ঘাড় কিংবা শরীর ও ভালোমতো নিয়ন্ত্রন করিতে পারেন না।

প্রায় একমাস কাল এইরুপে গঞ্জের সদর হাসপাতালে চিকিতসার পর এনাম উদ্দিন চৌধুরীকে ওই প্যারালিসিস অবস্থাতেই বাড়িতে নিয়া আসা হইলো। এখন এনাম উদ্দিন চৌধুরী আর নিজের থেকে কিছুই করিতে পারেন না। তাহাকে কেহ উঠাইয়া দিলে বিছানায় বসিতে পারেন, কেহ খাবার খাওয়াইয়া দিলে খাইতে পারেন, কেহ তাহাকে গোসল করাইয়া দিলে তিনি গোসল করিতে পারেন, পায়খানা প্রস্রাবটুকু শুধু এনাম উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী করাইয়া থাকেন। সবল এবং সচল একজন মানুষ যতটা সংসারের জন্য শক্তি, অবলা এবং অচল সেই একজন মানুষ যে কতটা নিজের জন্য নিজে অসহায় এবং পরিবারের জন্য কতটা বোঝা, তাহা এই এনাম উদ্দিন চৌধুরীকে না দেখিলে হয়তো চৌধুরীর বাড়ির কোনো সদস্যই বুঝিয়া উঠিতে পারিতো না।

অসুস্থ হইবার পর প্রথম প্রথম পরিবারের সবাই যার যার জায়গা হইতে এনাম উদ্দিন চৌধুরীর যত্ন্যাদির কোনো কমতি ছিলো না। কিন্তু অসুস্থতা যখন লম্বা সময়ের জন্য শরীরে ভর করে, আর কবে নাগাদ ইহার পরিসমাপ্তি হইবে বলিয়া কাহারো কোনো ধারনা থাকে না। তখন সেই যত্ন্যাদিতে ধীরে ধীরে ভাটা পড়বেই এবং এটাই ঘটিতে লাগিলো এনাম উদ্দিন চৌধুরীর বেলায়। তাহাঁর বিছানার পাশে এখন আর আগের মতো দল বাধিয়া লোকজন বসিয়া থাকে না, তাহাঁর প্রাত্যাহিক অনেক কার্যে আগের মতো আর সঠিক নিয়মাবলী স্থির রহিলো না। সকালের গোসলের সময় গড়াইয়া দুপুর হইয়া যায়, দুপুরের খাবার খাইতে খাইতে এখন বিকাল হইয়া যায়, রাতের সব আয়োজন এখন প্রায়ই বিরতিতে পড়িয়া যায়। কিন্তু সালাউদ্দিন চৌধুরী এবং তাহাঁর স্ত্রীর খাটাখাটনীর মধ্যে আগে যেমন ছিলো এখনো তেমনি রহিলো। সালাউদ্দিন চৌধুরী তাহাঁর অবর্তমানে বাবারদিকে যেনো সারাক্ষন কেউ না কেউ নজর রাখে তাহাঁর জন্য তিনি তাহাঁর স্ত্রী এবং ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে তাহাদের দাদার পাশে বসিয়াই পড়াশুনা কিংবা মেয়েরা পুতুল খেলা করুক এই নির্দেশ দিয়া দিলেন। জহুরুন্নেসা, আজিম উদ্দিন কিংবা তাহাদের সন্তানেরা আগেও যেমন দূরে দুরেই থাকিতো, এখনো সেইরুপ অবস্থানেই আছে। তবে এইখানে একটা জিনিষ খুব করিয়া চোখে পড়িলো যে, যেহেতু এনাম উদ্দিন চৌধুরী সালাউদ্দিন চৌধুরীকে তাহাঁর স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিতে ত্যাজ্য করিয়া আইনের মাধ্যমে উইল করিয়াছিলেন, এবং তাহাঁর দ্বিতীয় পুত্র আজিম উদ্দিনকেই এনাম উদ্দিন চৌধুরীর অক্ষমতায় মোতো ওয়াল্লি নিযুক্ত করিয়াছিলেন, ফলে আজিম উদ্দিনের স্ত্রী জহুরুন্নেসাই এখন একচ্ছত্র কর্ত্রী হিসাবে চৌধুরীর বাড়ির জমি জমা, এবং অন্যান্য স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির দেখভাল করেন। কখন কাহাকে কোন জমি বর্গা দিতে হইবে, কখন কোন বর্গাদার কত টাকা জমা রাখিল ইহার সমস্ত হিসাব এখন জহুরুন্নেসাই করিয়া থাকেন।

আজ প্রায় পনেরো বছর পার হইয়া গেলো এনাম উদ্দিন চৌধুরী প্যারালাইসিস অবস্থাতেই বিছানায় পড়িয়া আছেন। বয়স এবং রোগ দুইটাই বাড়িয়া চলিতেছে বিধায় এনাম উদ্দিন চৌধুরীর আর সুস্থ্য হইয়া উঠিবার কোনো লক্ষন দেখা দিতেছিলো না। সালাউদ্দিন চৌধুরীর মাতা গত হইয়াছেন প্রায় দুই বছর হইলো। সালাউদ্দিন চৌধুরীর ছোট ছোট বাচ্চারা এখন বেশ বড় হইয়া কয়েক মেয়ের বিয়া পর্যন্ত হইয়া গেছে, আর ছেলেরা অনেকেই পড়াশুনা শেষ করিয়া কেহ সরকারী আবার কেউ প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী লইয়া বিয়া সাদী করিয়া ভালই আছে। আজিম উদ্দিন, এবং লতুব উদ্দিনের মধ্যে বাবার পাওয়া সম্পত্তির অংশ সমান দুইভাগে ভাগাভাগি করিয়া লইয়া তাহাদের সীমানা গাড়িয়া দিয়াছেন। তাহাদের সংসার এখন সম্পুর্নই আলাদা। যে যার জায়গায় সংসার পাতিয়া বহাল তবিয়তে আছেন। শুধুমাত্র সালাউদ্দিন চৌধুরী কোন অংশ না পাইয়াও তিনি এবং তাহাঁর পরিবার এনাম উদ্দিন চৌধুরীর পুরানো সেই ঘরে থাকিয়া বাবার সেবা চালাইয়া যাইতেছেন। যদিও অনেকবার ডাঃ লতুব উদ্দিন তাহাঁর বাবার উইল খানাকে পরিবর্তন করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন যাহাতে তাহাঁর বড় ভাই সালাউদ্দিন চৌধুরীও অন্যান্যদের মতো পিতার সম্পত্তির ভাগীদার হইতে পারেন। কিন্তু যেহেতু এনাম উদ্দিন চৌধুরীর বাক রুদ্ধ হইয়াছিলো এবং তিনি কোনো কিছুই পরিবর্তনের পর্যায়ে ছিলেন না, বিধায় আজ থেকে পনেরো বছর আগে করা উইল খানীও পরিবর্তন করা সম্ভব হইতেছিলো না। আজিম উদ্দিন চৌধুরীর যদিও এই পরিবর্তনে কোন অভিযোগ ছিলো না কিন্তু জহুরুন্নেসা মনে মনে ইহা না হোক সেই ইচ্ছাই বারবার ইনিয়ে বিনিয়ে প্রকাশ করিবার বহু ইংগিত দিয়া থাকেন।  

ইদানিং এনাম উদ্দিন চৌধুরীর শরীর খুব ভাল যাইতেছে না। প্রায়ই তার চোখের কোনায় পানি ছলছল করিয়া পড়িতে দেখা যায় কিন্তু বাকরুদ্ধ এই দাপুটে মানুষটি কোনো কথা বলিতে পারেন না, কোনো কিছু লিখিয়াও বুঝাইতে পারেন না, তাহাঁর হাত আর পা যেনো সবসময় থর থর করিয়া কাপিতেই থাকে। যেদিন হইতে এনাম উদ্দিন প্যারালাইসিস হইয়া বাকরুদ্ধ হইয়াছেন, সেদিন হইতেই হয় সালাউদ্দিন চৌধুরী অথবা তাহাঁর স্ত্রী জয়তুন্নেসা চৌধুরী নিজ হাতে এনাম উদ্দিন চৌধুরীকে খাওয়াইয়া দিতেন, মুখ মুছাইয়া দিতেন। ইদানিং সালাউদ্দিন চৌধুরী লক্ষ্য করিলেন, তাহাঁর বাবার খাবারে বেশ অনিহা, জোর করিলেও বেশী খাইতে চাহেন না। বাবাকে দেখিলে তাহাঁর বড় মায়া হয়। এই বাবা যে তাহাকে কত কষ্ট দিয়াছে, অপমান করিয়াছে, ঘর ছাড়া করিতে চাহিয়াছিলো, তাহাঁর সন্তানদের কতই না অপমান করিয়া দুরদুর করিয়া তাড়াইয়া দিয়াছিলো, সেই কারনেও আজ সালাউদ্দিন চৌধুরীর কোনো অভিযোগ নাই। তিনি তো তাহাঁর বাবা। বাবার দিকে তাকাইয়া সালাউদ্দিন চৌধুরীর বড় মায়া হয়, কষ্ট লাগে। বাবাকে জড়াইয়া ধরেন সালাউদ্দিন সাহেব। অনেক্ষন জড়াইয়া ধরিয়া বারবার যেনো একই কথা বলিতে থাকেন, 'বাবা তুমি আমাকে মাফ করিয়া দিও। তোমার কোন সম্পত্তি, কোন ঘর, কোনো ভিটা আমার দরকার নাই। আমি তোমার হাত ধরিয়া প্রথম যখন হাটিতে শিখিয়াছি, সেইদিন থেকে আমি তোমাকে নিজের মনের অনেক গভীরে একমাত্র আরাধনার পুজনিয় ব্যক্তি বলিয়াই মানিয়াছি। আমি তোমার কাছে অনেক হয়তো অপরাধ করিয়াছি, কিন্তু কি অপরাধ করিয়াছি, কখন করিয়াছি, আমি জানি না, কিন্তু সেই অজানা অপরাধের কারনে তুমি আমাকে অন্তত তোমার সন্তানের মহব্বত হইতে বঞ্চিত করিও না। আমি তোমাকে সবসময় ভালবাসিয়াছিলাম, আজো অনেক ভালোবাসি'। চোখের জল টপটপ করিয়া হয়তো এনাম উদ্দিন চৌধুরীর টাক মাথায় পড়ে। এনাম সাহেব বুঝিতে পারেন। তিনি তাহাঁর একটি হাত বহু কষ্টে উপরে তুলিতে চাহেন, কিন্তু হাতের জোর যেনো সালাউদ্দিন চৌধুরীর মুখ পর্যন্ত উঠিয়া তাহাকে একটু স্পর্শ করিবে সেই শক্তি আর নাই। এনাম উদ্দিন চৌধুরীর চোখের জলও হয়ত তাহাঁর বালিশ ভিজিয়া যায়।

ইদানিং এনাম উদ্দিন চৌধুরী কি জানি বলিতে চাহেন, বিড়বিড় করেন। তাহাঁর সব কথা ভালোমত বুঝাও যায় না। তবে একটা জিনিষ ইদানিং দেখা গেল, তিনি তাহাঁর বাম হাত নারানোর চেষ্টা করেন, কিছু লিখার চেষ্টা করেন, কিন্তু সবকিছু লেখা বুঝাও যায় না। এম্নিতেই তিনি কখনো বাম হাতে লিখেন নাই, আর এবার কিছু লেখা বাম হাতে লিখিবার চেষ্টায় সব বুঝা না গেলেও ইহার কিছু অর্থ উদ্ধার করা যায়।

এইভাবেই আরো তিন বছর পার হইয়া যায়। এনাম চৌধুরী আগের থেকে অনেক সুস্থ। তিনি বিড় বিড় করিয়া কথা বলিলেও কিছু কিছু লেখা লিখে বুঝাইতে পারেন। ঈশ্বরের খেলা বড় রহস্যময়। কখন তিনি কাকে কি দিয়া শাস্তি দেন আর কি কারনে কোথায় কার জন্য কি বরাদ্ধ রাখেন কেহই বলিতে পারে না। কোনো এক বিকালে তিনি তাহাঁর সেই উকিল বন্ধুকে খবর দিতে বলিলেন যিনি আজ হইতে আঠারো বছর আগে এক তরফা একটা উইল করে তাহাঁর অতি আদরের সালাউদ্দিন চৌধুরীকে তাহাঁর সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিতে হইতে বঞ্চিত করিয়াছিলেন, যদিও আজ আর সালাউদ্দিন চৌধুরীর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নাই। তাহাঁর শুধু সবিনয় প্রার্থনা যেনো তাহাঁর বাবা সুস্থ হইয়া আবার তাহাকে বুকে জরাইয়া ধরিতে পারেন। সুস্থ বাবার কাছে তিনি আবারো সেই ছত সালাউদ্দিন সাজিয়া কায়মনে ক্ষমা চাহিতে পারেন।

বন্ধু উকিল আসিলেন। এনাম সাহেব তাহাঁর হাতের ইশারা ঘরের দরজা বন্ধ করিতে বলিলেন। উকিল বাবু সবাইকে ঘর হইতে বাহির করিয়া ঘরের দরজা বন্ধ করিয়া এনাম সাহেবের পাশে আসিয়া বসিলেন। এনাম সাহেব তাহাঁর তোষকের নীচ হইতে একখানা খাতা বাহির করিয়া উকিল বন্ধুর হাতে দিলেন, যেখানে প্রথমে খুব কাপা কাপা বাকা অক্ষরে, কোথাও কোথাও অষ্পষ্ট ভাবে হলেও তাহাঁর অর্থ যাহা দারায় তাহা ছিল এইরুপঃ 

'আমি আমার পূর্বের উইল পরিবর্তন করিয়া এই নতুন উইলটি করিতে চাই, তুমি আমার জীবদ্দশায় ইহা পরিবর্তন করিয়া অন্তত আমার এই বিগত বছরের কষ্টের প্রায়শ্চিত্ত করিতে চাই।'

উকিল বাবু, কাগজটি পড়িলেন,

আমি আমার পূর্বের ওয়াকফ দলিলে আমি অন্যের প্ররোচনায় পড়িয়া আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র সালাউদ্দিন ও তাহাঁর সন্তান সন্ততীদেরকে অতিশয় নির্দয় ভাবে আমার সমস্ত সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করিয়াছি। এক্ষনে আমার সমস্ত ভুল ভাংগিয়াছে। আমি একটি জিনিষ খুব ভালো করিয়া বুঝিয়াছি যে, আমি যখন অর্ধাংগ অবস্থায় মরনাপন্ন হইয়া বিছানায় পড়িয়াছিলাম, তখন হইতে অদ্যাবধি বুঝিয়াছি যে, আমার জ্যেষ্ঠপুত্র এবং তাহাঁর স্ত্রী সন্তানেরা নিসশার্থভাবে দিবা রাত্রী সেবাযত্ন করিয়া যেভাবে আমার প্রান রক্ষা করিয়াছে এবং এখনো করিতেছে তাহাঁর উদাহরণ বিরল। আমি তাহাদের মানবিকতায় অতিশয় মুগ্ধ হইয়াছি এবং তাহাদিগকে আমার স্বউপার্জিত সম্পত্তি হইতে বঞ্চিত করার জন্য হৃদয়ে অনেক আঘাত পাইয়াছি। আমি আমার এই শারীরিক অক্ষমতার সময় স্পষ্ট বুঝিয়াছি কে বা কাহারা আমাকে ভালোবাসিয়াছে আর কে বা কাহারা আমার সম্পদকে ভালবাসিয়াছে। আমার হয়তো আর বেশি সময় হাতে বাকী নাই। আমি কাউকেই আমার সম্পত্তি হইতে আর বঞ্চিত করিতে চাহি না। যদিও অনেকেই আমার প্রতি তাহাদের দায়িত্ত পালন করে নাই। তাই এক্ষনে পিতা হিসাবে আমি আর কাউকেই কোন কিছু হইতে বঞ্চিত করিবো না। আমার উক্ত দলিল পরিবর্তন করিয়া আমার বড় সন্তান সালাউদ্দিন এবং তাহাঁর সন্তান সন্ততিদের সবার জন্য যার যার হিস্যায় সবাইকে হকদার করিয়া দিলাম। আর এক্ষনে আমি আমার বড় সন্তান সালাউদ্দিনের কাছে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি যে, আমার দ্বারা যে অশান্তি আমি তাহাকে দিয়াছি, তাহাঁর জন্য পিতা হিসাবে পুত্রের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

  

উকিল বাবু কাগজখানি পড়িয়া এনাম সাহেবের হাত ধরিয়া শুধু একটা কথাই বলিলেন, আমাকে শুধু মাত্র একটি দিন সময় দিন। আপনার এহেনো সিদ্ধান্তে আপনার পরিবারের থেকেও বেশী খুশী আমি হইয়াছি যে, এতোদিন আমিও একতা মানসিক অশান্তিতে ভোগিয়াছিলাম যে, এমন একতা উইল কেনো আমার দ্বারা আজ হইতে বিগত আঠারো বছর আগে করিতে গিয়াছিলাম। আমি কায় মনে সর্বদা এই দোয়াটাই করিতাম, কখনো যদি আবারো এইদিন তা আসে যে, আমার দারাই আবার আপনার উক্ত দল্লটা পরিবর্তন হইয়া ন্যায় একতা দলিল হোক। আমি কালই ইহার ব্যবস্থা করিতেছি।

পরেরদিন উকিল বাবু সমস্ত দলিল পরিবর্তন করিয়া যখন ইহার সপ্তাহ খানেক পরে সরকারী স্ট্যাম্প লাগাইয়া কোর্ট কর্ত্রিক সত্যায়িত করিয়া আনিলেন, তখন সালাউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারে যেমন সুখের জল পড়িলো তেমনি জহুরুন্নেসার বুক ভাসিয়া গেলো তাহাঁর চোখের জলে। তাহারা কিছুতেই যেনো এই সিদ্ধান্ত মানিয়া লইতে পারিলেন না। তাহারা বারবার এই কথাই প্রচার করিতে লাগিলেন যে, সেবার নাম করিয়া সালাউদ্দিন চৌধুরী এবং তাহাঁর পরিবার এনাম উদ্দিন চৌধুরীর কাছ হইতে পুনরায় সব কিছু ভাগাভাগি করিয়া লইলেন, যেনো তাহা তাহাদের কোনো কালেই প্রাপ্য ছিলো না।  গোপনে গোপনে এই জহ্রুন্নেসা এবং তাহাঁর পরিবার সালাউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের আজীবিন বিপক্ষ হইয়াই রহিলেন

২৫/০৫/২০২০-করোনার শিক্ষা

Categories

প্রতিটি মহামারী, প্রতিটি দূর্যোগ প্রতিবার সমাজে একেকটা শিক্ষা নিয়ে আসে। কিছু দূর্যোগ শিক্ষা দেয় সমাজকে একত্রে বসবাস করার, কিছু শিখায় ধইর্য, আবার কিছু শিখায় ঈসশরকে যেনো ভুলে নাই তা। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাস আমাদেরকে যে শিক্ষা দিলো, তার থেকে আদৌ আমরা কিছু শিক্ষা নিলাম কিনা কে জানে। এই পৃথিবীর ভুখন্ড কে নিয়ন্ত্রন করলো, আর কে কাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলো, কোন ধর্মালয়কে কেনো কি কারনে খুলে দিলো, কতদিন পর খুলে দিলো, কার বিশ্বাস কোথায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠেকলো, এসব বিষয়ের বাইরেও আমি যেটা শিক্ষা পাইলাম তা হলো, আমরা সবাই একা এবং কেউ কারো জন্যই না।

একজন জীবিত মানুষের যে মুল্য, পরক্ষনেই সেই জীবিত মানুষটি যে এতো সস্তা এবং অবহেলিত, এটা আমার চোখে এবার খুব করে ধরা পড়লো। এই দুনিয়ার কোনো ধন সম্পদ, টাকা পয়সা কিংবা পজিশন কোনো কিছুই কারো কাছে মুল্য নাই। হোক সে দেশের প্রধান কর্মকর্তা, হোক সে সমাজের প্রধান কিংবা হোক সে বাড়ির কোনো হর্তাকর্তা। নিজের জীবনের যখন কারো হুমকী আসে, সে যতো ছোটই হোক বা বড়, তার নিজের হিসাব একেবারেই আলাদা। অন্য কোনো হোমরা চোমরা যেই হোক, যে যতো প্রতাপশালিই হোক, যে যতো সম্মানীয়ই হোক, যার যতো পয়সাই থাকুক, করোনা এই শিক্ষাটা চোখের মধ্যে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, আপনি আমার প্রিয় স্বামী ছিলেন তো কি হয়েছে? আপনার করোনা, তাই আমি আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাইতে পারবো না। আপনি দেশের প্রধান কর্তা তো কি হয়েছে? আপনার করোনা হয়েছে, তাই আপনার ধারে কাছেও আমি যাবো না। যদিও যাই, তাহলে আমি এমনভাবে যাবো যেন আপনার কোনো কিছুই আমার ধারে কাছেও স্পর্শ না করে। দূর থেকে এবং ইশারায় কথা হবে আপনার সাথে আমার। কিন্তু আপনি তো কথাও বলতে পারবেন না, কারন আপনার কন্ঠনালি রুদ্ধ। আপনি ধর্মজাজক, তো কি হয়েছে? আপনার করোনা হয়েছে, আপনার কাছে বসে আমি ধর্মের কোনো বানিও শুনতে ইচ্ছুক নই। আপনি করোনায় মরবেন, তো আমি কি করবো? আমি আপনার জন্য দূর থেকে চোখের জল ফেলবো কিন্তু কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরবো না। এমন কি আপনার জানাজার জন্য কোনো লোকও পাবেন না। আপনি সমাজে এইডস রোগীর থেকেও খারাপ। আপনি দিনরাত পরিশ্রম করে এতো অঢেল পয়সা সঞ্চয় করে গেলেন আপনার এতো আদুরে বাচ্চাদের জন্য, তো কি হয়েছে? আপনার করোনা, তাই, আপনাকে আর আমাদের দরকার নাই। যদি বলেন যে, সমস্ত সম্পত্তি আমার জন্য আপনি বিলিয়ে দেবেন, তারপরেও আমি আপনার সাথে একা ঘরে আপনার জন্যে সময় দেবো না।

বিশ্বাস হয় না? খালী একবার মুখ ফুটে মিথ্যা মিথ্যাই বলুন এবং করোনা রোগীর মতো অভিনয় করুন যে, আপনার করোনা হয়েছে, তারপরের ইতিহাসটা নিজের চোখেই দেখুন।

করোনা এটাই বুঝিয়ে গেলো, আমি আপনি সবাই একাই। হিসাবটা পরিষ্কার।

 

তুমি মাঝে মাঝে আমাকে প্রশ্ন করো না যে, আমি এতো বুঝি কেনো? এতার অনেক কারন এবং ইতিহাস আছে।

২০/০৫/২০২০-যে নদীর স্রোতধারা থেমে যায়

Categories

মাঝে মাঝে আমার সাফল্যের দিকে তাকালে আমার নিজের ভাল লাগলেও কেনো জানি এটাও মনে হয়, আমার এই সাফল্যের দরকার ছিলো না। আমার আজকের দিনের সাফল্য না হলে সবাই একটা গন্ডির মধ্যে থাকতো। জীবন নিয়ে ভাবতো। চিন্তা করতো। অভাব মানুষকে একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে একত্রে বসবাস করতে বাধ্য করে। ওর আচরন ইদানিং আমার কাছে অনেক উদ্দত্যপূর্ন মনে হয়। কোনো কিছুই বলা যায় না। আর্গুমেন্ট আর যুক্তির যেনো কোনো শেষ নাই। আমি আসলে ওর উপরে আমার কমান্ড এক প্রকার হারিয়েই ফেলেছি বলা চলে। আমার কোনো সুখের কথা, ভালো লাগার কথা, আমার কোনো সাফল্যের কথা, আমার কোনো কষ্টের কথা আজকাল ওর সাথে শেয়ার করা খুব মুষ্কিল। তার এসব শোনার কোনো যেমন সময় নাই, তেমনি ইচ্ছাও নাই বলে মনে হয়। কবে শেষ আমি আমার জীবনের একান্ত কিছু কথা ওর সাথে শেয়ার করতে পেরেছি , সেটা আর মনে পড়ে না। এর জন্য দায়ী আমি নিজেও। কিন্তু আমার কোনো অনুশোচনা নাই। ও নিজেও আসলে আমার অনেক কিছুই জানে না। এটা ওর ব্যর্থতা। ধীরে ধীরে মানুষ যখন কারো কম্পেনিয়ন থেকে সরে যেতে থাকে, তখন, অনেক কাছে থেকেও সে অনেক দূর। এই কাছে থাকার কোনো মানে হয় না যখন অন্তরে অন্তর লাগিয়ে কোনো কথা হয় না। তার থেকে বিস্তর দূরে থাকা এক প্রকার শান্তনাও ভাল।

তবে একটা অভিজ্ঞতা বলছি যে, মহিলাদের আর্থিক সাধীনতা যখন পরিপূর্ন হয়ে যায়, তখন তারা অনেক দেমাগী হয়ে উঠে। আর্থিক সাবলম্বিতা একটা নারী স্পেসিসকে অনেক বেশী ইমব্যালান্স করে দেয়। নারী স্পেসিসরা অতক্ষন পর্যন্ত ক্রিয়েটিভ, যতক্ষন পর্যন্ত তার কাছে নিয়ন্ত্রিত কমান্ড, ফান্ড, এবং রিসোর্স থাকে। যখনই এই জিনিষগুলি অঢেল আকারে হাতে চলে আসে, তখনই সে খেই হারিয়ে ফেলে বলে আমার ধারনা। ওর বেলায়ও আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে। একা থাকা যায়, আর সেই একা থাকার জন্য যা যা লাগে এটা যখন নিশ্চিত হয়ে যায়, দেখা যায় মহিলা স্পেসিসরা অনেক বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা সাধারনত একা থাকাকে ভয় পায় না। বরং কারো চাপ নাই এটা ভেবে এক প্রকার শান্তিতেই থাকে। ব্যাপারটা আমি মাঝে মাঝেই উপলব্দি করি। কিন্তু আমি আবার ভুলে যাই। যদিও ভুলে যাই, তারপরেও আমার মধ্যে একটা ট্রান্সফর্মেশন হচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে পরিবর্তীত হচ্ছি। হয়তো আরো সময় লাগবে।

আমার কিছু কিছু দায়িত্ত ছিলো। বিশেষ করে সংসারের জন্য। আমার এই দায়িত্ত প্রায় শেষের পথে। আমি ওকে সাবলম্বি করে দিয়েছি, মেয়েকে ডাক্তারী পড়িয়েছি। ছোট মেয়ে এখনো পাইপ লাইনে। তারপরেও হিসাব করলে দেখা যায়, সিংহভাগ দায়িত্ত প্রায় শেষ। এখন কে কিভাবে তাদের লাইফ সেট করবে বা করা উচিত বলে মনে করবে, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এইসব ব্যাপার নিয়ে বা তাদের লাইফকে নিয়ে আমার কোনোই দরকার নাই বেশী করে ভেবে ভেবে আমার মানসিকতায় আঘাত করা। তাদের কেউ মানষিকভাবে সুখি হতে পারলো না, তাতে আমি কি করতে পারি? কেউ তার পরবর্তী লাইফে সেট করতে পারল না, তাতে আমি কি করতে পারি? আমার কাজ রশদ জোগান দেয়া। আমি সেটা করেছি কিনা তার উপর আমার নিজের সেটিসফেকসন নির্ভর করবে। হ্যা, যদি তাদের সাফল্যও আমার চোখে পরে তাহলে আমার সেটিসফেকসন হবে ডাবল যে, আমার সমস্ত চেষ্টা সার্থক হয়েছে, আমার ভালো লাগবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়ার পরেও যদি তারা কেউ সুখী না হয়, তাহলে আমার কি করার আছে? যদি কিছু করারই না থাকে, তাহলে উত্তম হচ্ছে, নিজেকে তার মধ্যে চুবিয়ে রেখে নিজের ক্ষতি না করা।  

আমি সেটাই করছি এখন। আমি জানি, আমার জন্য এখন অনেকেরই আর আগের মত এতো মহব্বত থাকার কথা না। সময়ও নাই। সবাই সবাইকে নিয়েই ব্যস্ত। এখন লাইফ সবার জন্য আলাদা। এক ঘরে থেকেও সবাই আলাদা আলাদা। কারো জন্য কারো সময় নাই। তারমধ্যে আবার, সবাই খালি বলতে চায়, কেউ শুনতে চায় না। তাই আমিও আর বলি না। যতোক্ষন নিজের কাছে মাল আছে, ততোক্ষন তুমি রাজা। এটা হোক কোনো মহিলারা ক্ষেত্রে, বা হোক কোনো পুরুষের জন্যে। তাই নিজের আরামের জন্য, আনন্দের জন্য সব কিছু একেবারে বিলিয়ে দিয়ে নিজে দাতা হাতেম তাই হওয়া উচিত না। এটা নিজের বউই হোক, আর ছেলেমেয়েই হোক, বা অন্য যে কেউ।

আমি একটা জিনিশ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করছিলাম যে, তানির দাম্পত্য জীবনের ব্যার্থতার পর, ও নিজে তার পলিসি পালটেছে এইভেবে যে, যদি কখনো ওর জীবনেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে? তাই, আগে থেকেই এর সাবধানতার অংশ হিসাবে নিজে সাবলম্বি হই, তারপর যা হবার হবে। আর সম্ভবত এই ধারনার পরিপ্রেক্ষিতে যেখান থেকে অর্থ আসুক, সেটা আগে নিজের জন্য সেভ করে বাকী সব খরচ হতে হবে আমার কাছ থেকে যাতে তার নিজের সাবলম্বিতা নষ্ট না হয়। এই ধারনাটা আমার কেনো হয়েছে আমি জানি না, কিন্তু আমার ভিতরে যেনো এটাই মনে হচ্ছে ওর ব্যবহারবিধিতে। অনেক কিছুই যেন আগের মতো নাই। আমার কোনো দুঃখ নাই। আমি তো চেয়েইছিলাম, সর্বাবস্থায় ওরা ভালো থাকুক। এমন কি আমার জন্য না , ওদের জন্যই ওরা ভালো থাকুক।

কিন্তু আমি তো আমি। আমি সর্বদা এমন একটা ডিফেন্স লাইনে থাকতে চাই, যাতে অন্তত আমিও সর্বাবস্থায় কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আমি জানি আমার কিছু লোন রয়েছে সোনালি ব্যাংকে। এই টাকাটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। কারন যা লোন আছে তার থেকে অনেক বেশী আছে আমার এসেটস। তাই আমি ভাবছি, ধীরে ধীরে আমি আমার লাইফটাকেও এমনভাবে পরিবর্তন করবো যাতে কারো কাছেই আমার কোনো কিছুর জন্যই মুখাপেক্ষি হতে না হয়। এমনকি ওর কাছেও না। একসাথে থাকার মধ্যেও দূরে থাকার ব্যাপারটা আমি অভ্যস্থ হয়ে গেছি প্রায়। এটাও ও পেরেছে বলে আমার ধারনা। কিন্তু এটা আমার জন্য যতোটা না খারাপ, তার থেকে অনেক বেশি খারাপ ওর জন্যে।  

একটা কথা কখনোই আমি ভুলি না যে, যে নদীর স্রোতধারা থেমে যায়, তার জলের বিশুদ্ধতাও নষ্ট হয়। আমি কখনোই থেমে থাকতে চাই না। যেখান থেকেই হোক, যেভাবেই হোক, আমি আমার জীবনকে আনন্দেই ভরে রাখতে চাই। এটা যার বিনিময়েই হোক। আমার মাথা নত করার কোনো কারন আগেও ছিলো না, এখনো নাই।

১৬/০৫/২০২০-উচ্চাখাংখার চেয়ে যখন

উচ্চাখাংখার চেয়ে যখন কোনো মানুষ বা শহর ছোট হয়ে যায়, তখনই বেড়ে উঠে বড় বড় গ্যং। রেলওয়ের প্ল্যাটফর্মের ইদুররা কোনো আওয়াজে গর্তে ঢোকে যায় বটে কিন্তু গ্যাং স্টাররা সে রকম কোনো রেলওয়ের ইদুর না। তারা কারো হুমকিতেই ভয় পায় না। আন্ডার ওয়ার্ল্ডে সব গ্যাংরা একটা ফ্যামিলি গ্যাং এর মতো। মৃত্যুতেও ওরা ভাঙবে না, বরং ওদের প্রতিজ্ঞা আরো কঠিন হয়ে যায়। এই গ্যাং সদস্যারা একে অপরের উপর শতভাগ ট্রাষ্ট করে, তাই তারা ট্রাস্টের উপর ইনভেস্টিগেশন করে না। কিন্তু যখন কোনো সন্দেহ হয়, তারা সন্দেহের উপর ইনভেষ্টিগেশন করে। সব সাধু যেমন দেখতে একই রকম লাগে। তেমনি তাদেরকেও দেখতে একই রকম লাগে।

১৫/০৫/২০২০-অর্থনীতি বিপর্যয়ের জননী

যারা এখনো মনে করছেন যে, লক ডাউনটাই হচ্ছে সমাধান, সেটা সম্ভবত সঠিক নয়। এ বিশ্ব অচিরেই করোনা মুক্ত হবে না। কোথাও না কোথাও এর পরিব্যপ্তি থাকবেই। ফলে বছরের পর বছর লক ডাউন ভাবা যায় না। কোথাও না কোথাও হয় আক্রান্ত, আক্রান্তের পর সুস্থ্য, আবার আক্রান্ত, আবার কেউ ক্যারিয়ার, কেউ আবার উপসর্গ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত ইত্যাদি নিয়েই ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠিতে মানুষ বিচরন করবেই। আর একজন মানুষই যথেষ্ঠ পুনরায় এই মহামারীর জন্ম দেওয়ার।

যে দেশই বলুক তারা লক ডাউনের মাধ্যমে দেশ করোনা মুক্ত করে ফেলেছে, তারা এখন সেফ। এটাও ঠিক নয়। তারা কি বিশ্ব বানিজ্য, বিশ্ব গনমানুষের আন্তরদেশীয় আনাগোনা বন্ধ করতে পারবে? পারবে না, আর পারবে না বলেই তারাও মুক্ত হয়েও আবার মুক্ত নয়। কারন যতোই চেকিং করে মানুষদেরকে নিজ দেশে ঢোকানো হোক না কেনো, উপসর্গবিহীন বহু মানুষ করোনা নিয়েও ঘুরে বেরাবেন যা সহজেই ধরা যাবে না। বছরের পর বছর লক ডাউন কার্যকরী করে রাখা সম্ভব নয়। ফলে, আজ হোক কাল হোক, লক ডাউন সবাইকে তুলে দিতেই হবে। কোনো না কোনো দেশ কোনো না কোনো কিছুর জন্যে এক দেশের না হয় আরেক দেশের উপর অবশ্যই নির্ভরশীল। ফলে অর্থিনীতির চাহিদার জন্যই সব উম্মুক্ত করতেই হবে।

লক ডাউনে যা ক্ষতি হয়েছে সেটা হচ্ছে অর্থনীতি। ক্ষতি হয়েছে সঞ্চিত সম্পদের ব্যয় এবং তা প্রায় নিঃশেষ। অর্থনীতি বিপর্যয় হচ্ছে সমস্ত বিপর্যয়ের জননী। আমি প্রথম থেকেই লক ডাউনের ফর্মুলায় বিশ্বাস করতে চাইনি। আমাদের ইসলামীক ইতিহাসও লক ডাউন করার ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয় না। কিন্তু মহামারীতে আক্রান্ত জায়গা সমুহে অবাধ যাতায়তে নিষেধের আদেশ ছিলো। লক ডাউনে হার্ড ইম্মিউনিটি তৈরী হয় না। বরং সংক্রমন দীর্ঘায়িত হয় বছরের পর বছর। লক ডাউন একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।

করোনার পরে যেটা মহামারী হয়ে আসবে তা হচ্ছে দুর্ভিক্ষ। আর এই দুর্ভিক্ষের একমাত্র মেডিসিন, অর্থনীত সবলতা। অর্থনীতি সবল হলে ঘরে চাল আসবে, ডাল আসবে, সব আসবে, সাথে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মেটেরিয়ালও আসবে। আর এটাই বাস্তবতা। সচেতনতা এখানে বড় ব্যাপার। অসচেতন হলে ভালো রাস্তায়ও মানুষ দূর্ঘটনায় মারা যায়।

১০/০৫/২০২০-এই করোনায় যারা মাস গেলেই

Categories

(১) এই করোনায় যারা মাস গেলে মাইনে পাবেন বলে সিউর, তারা সত্যিকার ভাবেই ছুটি উপভোগ করছে, আর ফেসবুকে একটার পর একটা উপদেশ দিয়েই যাচ্ছেন, এই কইরেন না, ওই কইরেন তো ওখানে যাইয়েন না তো ওইখানে যাইয়েন ইত্যাদি। কিন্তু যারা বেতনের ব্যাপারটা সিউর না, তারা তো ডাল ভাতও পাচ্ছে না। উন্নত দেশগুলির চিত্র আলাদা। তারা ট্যাক্স দেয়, ফাকি দেয় না, ট্যাক্স পায় সরকার, বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব পায়, ফলে তারা তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে জনগোষ্ঠিকে আপদকালীন সাহাজ্য করা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমাদের সরকার? তারা সবার কাছ থেকে তো ট্যাক্সও পায় না। এদেশের মাত্র ২০/২৫% লোক ট্যাক্স দেয়। আর সবাই ফাকিই দেয়। সরকারী কর্মকর্তাদের বেতনটাও করমুক্ত। অন্যদিকে, রাজস্ব আয়েও তো ভীষন রকমের ঘাটতি আছে দূর্নীতির কারনে। তাহলে সরকার বিপদকালীন সময়ে সাহাজ্যটা করবে কোথা থেকে? অর্থনীতিকে চালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট মদদ নাই সরকারের কাছেও। ফলে যেখান থেকে সরকার যতটুকুই রাজস্ব আয় পাবে, সেগুলিকে তাকে খুলতেই হবে। প্রত্যক্ষ কর পুরোটা আদায় করতে পারে না বলে ভ্যাটের ওপর যেহেতু সরকার নির্ভরশীল, ঈদের আগে সম্ভবত সে কারণেই শপিংমল খোলার ঘোষণা। এছারা ওই ক্ষুদ্র মালিকদের জন্যেও একটা আপদকালীন কিছু অর্থ আসার আশা।

(২) এদেশ আসলে কিছু ফরেন রেমিট্যান্স আর কিছু রপ্তানীমুখী শিল্পের উপর নির্ভরশীল। ফলে এসব যদি কোনো কারনে হাতছাড়া হয় ভাবতে পারেন কি আছে সরকারের হাতে? মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির নিরিখে আমরা এখন বিশ্বের শীর্ষ কাতারে, অথচ রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে নিচের সারিতে। অর্থাৎ কর-ফাঁকির প্রবণতার দিক থেকে আমরা শীর্ষে। তাহলে সরকার করবেটা কি?

(৩) আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এদেশে মানুষজন বেসিক্যালি ক্ষুদ্রশিল্পের উপর লোকালী নির্ভরশীল। তাদের প্রনোদনা কি? তারা কিভাবে আবার আগের প্লাটফর্মে আসবে যদি একেবারেই সব স্তব্ধ হয়ে যায়? সরকার সামাল দিতে পারবে এতো বিশাল বুভুক্ষ জনগোষ্ঠীকে লালন করতে? সরকার যদিও বেশ কিছু সেক্টরে লোন প্রনোদনা ঘোষনা করেছেন, কিন্তু আরও কয়েক সপ্তাহের আগে প্রণোদনার টাকা হাতে আসবে বলে মনেও হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসের বেশি এবং যেসব শর্ত ধরা হয়েছে, অনেকের জন্য এটা অর্থহীন। কে জানে, কীভাবে ওই সব শর্ত পূরণ করে কত দিনে বরাদ্দটা মিলবে? প্রণোদনার ধরনও খুবই অস্পষ্ট। তত দিনে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। তাদের অবস্থাটা কি? আমার আপনার বাসায় তো ডাল ভাতের জোগাড় আছে, কিন্তু ৮৬% লোকের তো সেটাও নাই? তাহলে কিভাবে তারা না খেয়ে ঘরে থাকতে বলি? আমি আপনি কি পারবো না খেয়ে দিনের পর দিন ঘরে পানি খেয়ে থাকতে?

(৪) করোনা ভাইরাস মহামারী আসলে একটা অর্থনীতি বিনাশী ঘটনা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক সমস্যা—কিছুই এর সমতুল্য নয়। সমাজের ২৫ ভাগ লোক হঠাৎ স্থায়ীভাবে কঠিন বেকারত্বে পড়ে যাবেন, আর এটা সেরে উঠতে লাগবে কয়েক যুগ, হতে পারে আর আগের ফর্মে ফেরাই যাবে না। অর্থনীতি ধ্বংস হলে সমাজও থাকবে না, রাজনীতিও থাকবে না, গনতন্ত্র তো দূরের কথা। তছনছ করে দেবে পরিবার, সম্পর্ক, উদারতা, মানবিকতা কিংবা সজ্জনতা। একটা কথা আছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয় বাকি সব বিপর্যয়ের জননী।

(৫) প্রচুর মানুষের কাছ থেকে কি পরিমান রিকুয়েষ্ট যে পাই, তা বলার ভাষা নাই। আগে তো সামর্থবান ফকির দেখলে ভিক্ষে দিতাম না, কিন্তু এখন কোনো বয়স বা জেন্ডার দেখি না, যা আছে সেটাই দিতে চাই, হয়তো এই মানুষটা ১দিন না খেয়ে তারপর হাত পেতেছে।

এই লক ডাউন কন্সেপ্টে অনেক ভুল আছে। লক ডাউনটা কত দিনের? ২ মাস, ৩ মাস,৬ মাস কিংবা আরো বেশি? কিন্তু এই করোনা ভাইরাস থাকবে আরো কম্পক্ষে ৪/৫ বছর। বর্তমানে কারখানা খোলা, শপিংমল খোলা বা এই জাতীয় বিজনেজ সচল রাখা মানে লাভের জন্য নয়, এটা পুরু দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঠেক দেওয়া। যারা খালি ফেসবুকে বিজ্ঞের মতো মন্তব্য করেই যাচ্ছেন, তারাই বলুন তো, দেশে কত জনকে ব্যক্তিগতভাবে আপ্নি নিজে আর্থিক সাহাজ্য করেছেন? এবং কত টাকা? একটা পরিবারকে বাড়ি ভাড়া, বিল, খাওয়া এবং সব মিলিয়ে ঢাকা শহরে কম্পক্ষে ২০/২৫ হাজার টাকা লাগে। কয়জনকে পারবেন দিতে? খালি ৫ কেজি চাল আর ১ লিটার তেল দিয়ে কাউকে উপদেশ দিয়ে এটা বলা যাবে না যে, stay home. আসুন একটা জরীপ করি- কারা কারা এইসব মধ্যবিত্তদেরকে আগামি ৩/৪ মাস সাপোর্ট দিতে ইচ্ছুক। একজনকেও পাব না এ ব্যাপারে আমি শতভাগ সিউর। তাহলে এই শুকনা উপদেশে কার মন ভরবে? 

সহজ না উপলব্ধি করা। কিন্তু উপদেশ দেয়া খুব সহজ। তাই আগে অবস্থাটা আরো সামনের দিকে দ্রিষ্টি দিয়ে ভাবুন তারপর মন্তব্য বা উপদেশ যাইই করার করুন। সরকার এই মুহুর্তে আমার ধারনা একদম ঠিক সিদ্ধান্তগুলিই নিচ্ছেন।

এটার কোনো ডাউনফল পিক পয়েন্ট নাই। প্রতিটা নতুন সংক্রমন লকডাউনে থাকা ফ্রেসব্যক্তি পুর্ন উদ্যমে আবার নেক্সট স্টার্টিং পয়েন্ট হয়ে যায়। বরং কারেক্ট সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং (তাইওয়ানের মত, ৪৫৬ টোটাল আক্রান্ত, ডেথ মাত্র ৬, তাও আবার উহানের ঠিক পাশে থাকা দেশ) এবং হার্ড ইম্মিউন এর একমাত্র লং টার্ম সমাধান। অনেক উপসর্গহীন মানুষও করোনায় আক্রান্ত।

০৮/০৫/২০২০-দাস রায় দিতে পারেনা।

যখন আমার বান্দা ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করে, তখন আমি তাকে বন্ধু বলে জানি। যখন বন্ধু বলে জানি, তখন আমি তার কান হই যা দ্বারা সে শোনে, আমি তার চোখ হই যা দ্বারা সে দেখে, আমি তার হাত হই যা দ্বারা সে কিছু ধরে, আমি তার পদযুগল হই যা দ্বারা সে হাটে (হাদিসে কুদসি)।

ফলে, নৈকট্য লাভের উপায় অনুসব্ধান করো (সুরা মায়িদা ৫ঃ৩৫)। আল্লাহর ইবাদতে তুমি এমনভাবে মশগুল হও যেনো তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছো। আর যদি দেখতে না পাও, তবে মনে রেখো, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। যা আমি বলেছি, তা শরিয়ত, যা করেছি তা তরিকত, যা দেখেছি তা হাকিকত আর যা চিনেছি ও জেনেছি তা মারেফাত। (আল হাদিস)। পৃথিবীতে সফর করো ও দেখো অপরাধীদের কি পরিনাম হয়েছিলো (সুরা নমল-২৭ঃ৬৯) এবং দেখো, জানো এবং মানো আর লক্ষ্য করো পরিনতি-যারা করেছে আর যারা করেনি এবং (এক ধরনের হুমকী দিয়ে বলেছেনঃ) আমি কি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? (সুরা কিয়ামা-৭৫ঃ৩৬)

মন্তব্যঃ- সৃষ্টি তার, সার্বভৌমত্ব তার, তিনিই একমাত্র অধিপতি। আমরা তার দাস। যে দাস, সে রায় দিতে পারেন না। এখানে ন্যয্য কিংবা অন্যায্য কি সেটা বলার কোনো ইখতিয়ারও নাই। গায়ের জোর দিয়ে কিছুই বলা যাবে না কিংবা স্রিষ্টির সব রহস্য যেহেতু আমাদের জানা নাই, তাই আমাদের জ্ঞানের কোনো বিশ্লেষনও নাই। আমরা তো এটাও জানি না, কিয়ামতের পরে কি স্রিষ্টিকারী সব শেষ করে দিয়ে আবার চুপ করে থাকবেন নাকি পুনরায় আবার কোনো জগত তৈরী করে নতুন কোনো রহস্যা সৃষ্টি করবেন? সবই তো রহস্যা। জ্ঞানের স্তর অনেক। আমাদের যার যার জ্ঞানের পরিধিতে একই জিনিষ পরিমাপ করতে পারি না। জ্ঞান নিজেও একটা রহস্য।

০৮/০৫/২০২০-সবকিছুতেই পোষাকশ্রমিক

এই করোনা পরিস্থিতিতে মিডিয়ায়, টকশো তে গার্মেন্টসের উপর পরিবেশিত খবরগুলি দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে একটা সন্দেহ জাগছে যে, ভাবখানা যেনো এ রকম, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে তারা সরকারের বিধিনিষেধ থাকা সত্তেও সরকারের আদেশ উপেক্ষা করে ফ্যাক্টরীসমুহ খোলা রাখছেন। আর যেহেতু খোলা রাখছে, ফলে দূরদুরান্ত থেকে শ্রমিকগন কেউ চাকুরী রক্ষার কারনে, অথবা বেতন পাবেন না অনুপস্থিত থাকলে ইত্যাদি কারনে পায়ে হেটে হেটে সেই গ্রামগঞ্জ থেকে কারখানার উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হয়ে গেছেন। এই ব্যাপারটা কি এইরকমই যে রকম করে বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশ করছে?

ব্যাপারটা অবশ্যই এই রকম না। ২৬ মার্চ ২০২০ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারী উপলক্ষ্যে দেশের উদ্দেশ্যে ভাষনের সময় কলকারখানা বন্ধ রাখার কথা কিছুই বলেন নাই। তবে প্রচুর বৈদেশিক আদেশ পর পর বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে এবং আরো অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়ার আশংকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী তথা দেশের অর্থনীতিতেও একটা আতংকের সৃষ্টি হয়। আবার অন্যদিকে সরকার সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিলেন যে, জরুরী কোনো কাজ না থাকলে যেন কেহ ঘরের বাইরে না যান। বিকেএমই এ সরাসরি সমস্ত কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ জারী করে কিন্তু বিজিএমইএ সে রকম সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন নাই। এমতাবস্থায় ২৮ মার্চ তারিখে বিজিএমইএ এর অধীনে  কলকারখানাগুলি খোলা থাকবে কি থাকবে না, এটা নিয়ে মালিকপক্ষের মধ্যে বিস্তর সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরবর্তিতে ২৭ মার্চ ২০২০ তারিখেই সরকারের পক্ষ থেকে সরকারের কলকারখানা অধিদপ্তর থেকে সুস্পষ্ট একটি নির্দেশনা এলো। আর সেটি হচ্ছে, যে সমস্ত কলকারখানায় আন্তর্জাতিক এক্সপোর্ট অর্ডার আছে এবং যে সব কারখানায় করোনার প্রোটেকশনের নিমিত্তে পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি বানানো হয়, সে সমস্ত ফ্যাক্টরির মালিকগন প্রয়োজনীয় করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থার গ্রহনের নিমিত্তে (যেমন শ্রমিকদের প্রবেশের সময় ১০০% সেনিটাইজার/সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, মাস্ক পড়িয়ে, থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে বডি টেম্পেরেচার মেপে ইত্যাদি) ই্ছে করলে কারখানা খোলা রাখতে পারবেন।

কিন্তু যে কোনো ভাবেই হোক ২৯ মার্চ ২০২০ তারিখে বিজিএমই এ সভাপতি  ডঃ রুবানা হক পুনরায় মালিকদেরকে কারখানা সমুহ বন্ধ রাখার অনুরঢ করেন। বাধ্য হয়েই আমরা সেটা পালন করি। এর মধ্যে আরেকটি ঘটনা ঘটে গেলো। যারা দূর দুরান্ত থেকে ঢাকায় এসেছিলেন, তারা আবার ঢাকার বাইরে চলে গেলেন। এই যে আসা এবং যাওয়ার মধ্যে প্রচুর লোক সমাগম হ ওয়াতে টক শো এর বিজ্ঞ এবং আদার বেপারী জাহাজের খবর নেবার মতো বিশেষজ্ঞরা একটা পরিচিতি লাভের আশায় সবার সাথে তাল মিলিয়ে একবাক্যে প্রচার করা শুরু করলেন, যতো দোষ, সব যেনো নন্দ ঘোষের। অর্থাৎ গার্মেন্টস মালিকদের। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এবারো কোনো দিক নির্দেশনা এলো না যে, কল কারখানা বন্ধ রাখা হোক। বরং কল কারখানা চালুর রাখার ব্যাপারে এবারো কল কারখানা অধিদপ্তর খোলা রাখা যাবে এই মর্মে আবারো আদেশ জারী করেই রাখলেন।

অথচ অন্য দিকে সরকার কাউকেই ঘরের বাইরে আসতে দিতে নারাজ। ফলে ব্যাপারটা এমন দেখাচ্ছে মিডিয়াগুলি যেনো, সব দোষ গার্মেন্টস মালিকদের, আর তাই অপবাদ যেনো গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের। এটা কেনো?

কিছু লোক আছে সবসময় সবকিছুতেই পোশাকশ্রমিক নিয়ে বেশি মাতামাতি করেন। এদের উদ্দেশ্য কি ?

বাংলাদেশে আজ ৮ মে পর্যন্ত ১৩০০০ করোনা রোগি, এর মধ্যে পোশাক শ্রমিক ১৯৬ জন, পুলিশ ১৫০০ জন। পোষাক শ্রমিক ৪০ লক্ষ, তাদের মধ্যে করোনা রোগি ১৯৬ জন। পুলিশ ২ লক্ষ, তাদের মধ্যে করোনা রোগি ১৫০০ জন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি, তাদের মধ্যে করোনা রোগি ১৩০০০ জন। বাংলাদেশের মোট শ্রমিক সংখ্যা ৬ কোটি, এর মধ্যে পোশাকশ্রমিক ৪০ লক্ষ।

তাহলে সবকিছুতেই পোষাকশ্রমিক হেডলাইন করে মাতামাতি করেন কেন? এটা একটা চক্রান্ত। 

যারা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, তারা কি করোনাকে ভয় পান না? তাদের কি পরিবার পরিজন নাই? যে কোনো মুহুর্তে তিনি নিজে আক্রান্ত হয়ে তার পরিবারকেও তো আক্রান্ত করতে পারেন, তার কি সেই ভয় নাই? তিনি কি এতোটাই গরীব যে, তার ঘরে খাবার নাই বলে তিনি রোজগারের জন্য কারখানা খোলা রেখেছেন? তিনি কি ঘরের মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারেন না? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুব সহজ।

এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরাও করোনাকে ভয় পান, তারা নিজেরা আক্রান্ত হলে তার নিজের পরিবার পরিজনও বিপদের সুম্মুখিন সেটাও তারা জানেন। তিনি এতোটা গরীব নন যে, তাকে অন্তত কয়েক মাস ঘরে বন্দি হয়ে থাকলেও রোজগারের বাইরে যেতে হবে। তাহলে তারপরেও তারা কারখানা খোলা রাখছেন কেনো? এর প্রধান কারন, সরকার জানেন, যে, এই সেকটর খোলা রাখা জরুরী। আর জরুরী এই জন্য যে, দেশের জনগনকে সেবা দেওয়ার জন্য যে খরচ, যে ব্যয়, যে, অর্থ প্রয়োজন, তার একটা বড় উতস আসে এই সেকটর থেকে। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে যিনি বেশী ভেবেছেন তা হচ্ছে দেশের কর্নধার হিসাবে যিনি দেশ পরিচালনা করছেন তিনি, প্রধানমন্ত্রী। আমি কোনো দল করি না, আমি রাজনীতিও করি না। কিন্তু আমি একজন নিরপেক্ষভাবে কিছু মন্তব্য করে চাই।

সারাবিশ্ব এই মুহুর্তে প্রায় লক ডাউন। প্রতিটি নাগরীক প্রায় গৃহবন্দি। বিশ্ব বাজারের সবগুলি ষ্টোর, ওয়্যার হাউজ, বড় বড় শপিংমল সবকিছু বন্ধ থাকায় কোনো প্রকারের বেচাকেনা, বানিজ্য আদানপ্রদান একেবারেই নাই বললেই চলে। সারাবিশ্ব একেবারে স্থবির। এই অবস্থায়, ধনী দেশ গুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, নাগরীক ভাতা, ইত্যাদি দিয়ে কিন্তু তাদের জনগনকে মাসের পর মাস সাপর্ট দিতে বদ্ধপরকর। আর ওটা অই সব সরকারগুলি করতে পারেন কারন শান্তিকালীন সময়ে প্রতিটি নাগরীক তারা সরকারকে সঠিক ট্যাক্স দেন, তারা ব্ল্যাক মানি রাখেন না, কিংবা তারা দেশের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করেন। তাই সরকার আপদকালীন সময়ে ঠিক সাহায্য তা করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা কি তাদের মতো? আমাদের দেশের ৬০-৭০% মানুষই তো প্রায়  ট্যাক্স দেন না, হেলথ ইন্সুরেন্স করেন না, আবার দেশের সম্পদ যখন যেভাবে খুশী অপচয়, চুরি ডাকাতিতে এমন থাকেন যে, সরকার আপদকালীন সাহায্য করবে কি দুরের কথা প্রশাসনিক কর্মকান্ডই তো পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হয়।

এই অবস্থায় সরকারের পক্ষে কি কোনোভাবেই সম্ভব এই বিশাল জনগোষ্টিকে মাসের পর মাসে হাউজ কোয়ারেন্তাইনে রেখে ভরন পোষন করা? তার মধ্যে সরকার যেটুকু টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় লাভ করেন, রপ্তানী থেকে, রেমিট্যান্স থেকে সেগুলি যদি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তো দেশের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে উঠবে।  

০৭/০৫/২০২০- কিয়ামতের পরে কি?

Categories

গত কয়েকদিন যাবত বারবার মনের ভিতর একটা প্রশ্নই উঠে আসছে। আমি জানি না এটা কতটা প্রাসংগিক বা আমার করা আদৌ উচিত কিনা। তারপরেও মনের ভিতরে কেনো জানি উত্তরটা জানতে খুব ইচ্ছে করে। অনেক পরাশুনা করছি এটা নিয়ে।

ধরুন, আজ কিয়ামত হয়ে গেলো। সারা দুনিয়া ভেংগে তছনছ হয়ে গেলো, বিশ্ব ভ্রমান্ড, মহাজগত, আল্লাহর সমস্ত সৃষ্ট জগত যা দেখতে পাই আর যা দেখতে পাই না, সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে জাজমেন্ট ডে তে এসে গেলাম। কোথাও আর কিছুই নাই। এই আকাশ, মহাজগত, এই পাহাড় পর্বত, মানুষজন, সমস্ত প্রানী সকল, বৃক্ষরাজী, গ্রহনক্ষত্র, যা যেখানে ছিলো সব কিছু শেষ হয়ে গেলো। বাকি আছেন শুধুমাত্র স্রিষ্টিকারী নিজে। সবার যার যার বিচার বিশ্লেষন করে কেউ বেহেস্ত, কেউ দোজখ ইত্যাদি পেয়ে গেলেন। আজীবনকাল পর্যন্ত স্রিষ্টিকর্তার নির্দেশে যে যেখানে থাকার আদেশ হল, সেখানে পৌঁছে গেলেন এবং প্রায়শ্চিত্ত বা সুখভোগে লিপ্ত হলেন। তারপর কি?

তারপরে কি স্রিষ্টিকর্তা চুপচাপ তার আরশেই বসে থাকবেন? নাকি আবারো তিনি আরেকবার কিছু একটা করবেন যা এইরুপ পৃথিবী, গ্রহনক্ষত্র, মহাজাগতিক বিস্তার, নতুন করে সৃষ্টি করে আবারো তার নবী, রাসুল, ফেরেস্তা সকল কিংবা এইরুপে ভালো মন্দ মিশিয়ে মানুষ্রুপী কিছু প্রজাতী, কিংবা জীনরুপি কোনো এক গোষ্টী আবারো তৈরী করে নতুন কিছু করবেন?

এ ব্যাপারে আমি আজ পর্যন্ত কোনো কোরআন, কিংবা হাদিসে আলোকে কিছু পাইনি যা কিয়ামতের পরে নতুন কিছু সিষ্টিকর্তা করবেন কি করবেন না। কি তার পরিকল্পনা, কি তার খেলা, কিংবা কি তার রহস্য। সর্বত্র যা পাই তা হচ্ছে, সব কিছুই শেষ কিয়ামতের মাধ্যমে। কিন্তু তখনো তো সৃষ্টিকর্তা রয়ে যাবেন, তার তো কোনো ধংশ নাই, তাহলে তখন তিনি কি সৃষ্টি করবেন, কি আকারে আবার সেই নতুন জগত হবে? এটার কোনো তথ্য কোথাও সৃষ্টিকর্তা কোথাও উল্লেখ করেন নাই। 

অদ্ভুত না?

০১/০৫/২০২০-নববধুর বাসরও আতংকের

ফকফকা ভবিষ্যৎ দেখেন এমন সব মানুষের আবির্ভাবে ইদানিং ফেসবুকে অনেক বাইড়া গেছে। কেউ কেউ নিশ্চিত দিয়া কইতাছে, বাংলাদেশে নাকি আগামি ১৫ দিনের মধ্যে ৫ লাখ লোক করোনা ভাইরাসে মইরা যাইবো। আবার কেউ কেউ খালি মরার কথা না, সাথে রাস্তায় রাস্তায় নাকি লাশও স্তুপ হইয় পইড়া থাকবো, এমন কথা কইতাছে। অনেকে আবার এইটা বলেও আমাদের মতো আমজনতাকে সাবধান কইরা দিতাছে যে, সরকার বাহাদুর মার্কেট মুর্কেট যাহাই খুইল্লা দিক, যাইয়েন না, গেলে নাকি ওখানেই মরমু, আর যদি ওখানে না মরি, তাহলে নাকি ঘরের মধ্যে আসার পর বাল-বাচ্চা লইয়া একসাথে মইরা যামু। আবার অনেকে এইটাও কইতাছে, সাবধান, সরকার গার্মেন্টস খুইল্লা দিছে, সব করোনার উৎস নাকি ওই হালার গার্মেন্টসের শ্রমিকের গায়ে। এরা যেই পথ দিয়া হাটে, সেখানেই নাকি করোনার মহামারির সৃষ্টি হইয়া যায়, তয় পরিবহন সেক্টরের কোটি কোটি শ্রমিক, রিক্সাওয়ালা, কুলি কিংবা অন্য সেক্টরের হাজার হাজার শ্রমিক, কিংবা কন্সট্রাকশন সেক্টর, মৎস্য সেক্টরের অসংখ্য শ্রমিক, হাউড়ে ধান কাটার জন্য লক্ষ লক্ষ দিন মুজুর কিংবা কোটি কোটি বস্তিবাসী মানুষের ঢলে কোনো করোনা নাই, এটা সিউর, গার্মেন্টস ছাড়া অন্য কোন জনতার ঢলে করোনা নাই। খালি গার্মেন্টস শ্রমিক একসাথে না হইলেই রক্ষা। অবশ্য অন্যসব সেক্টরে কোনো শ্রমিকও নাই, তারা সব ডাইরেক্টর। যতো শ্রমিক দেখবেন রাস্তায়, সব গার্মেন্টেসের। এমন কি জানাজা মানাজায়ও যাগোরে দেখবেন, তারাও গার্মেন্টেসের। খালি ওইসময় টুপি পড়ছিলো। এই আর কি। এরজন্য কিছু মানুষের আবার দুশ্চিন্তায় একেবারে ঘুম আসতেছে না। আমজনতার পাশাপাশি সরকার বাহাদুরকেও রীতিমত ফ্রিতে দেশ-বিদেশ যেখানেই থাকুক না কেন, উপদেশ দিয়া যাইতেছে।

 মাগার একটা জিনিষ খুব ভালো কইরা খেয়াল করবার চেষ্টা করতাছি যে, হালার এই ফকফকা ভবিষ্যত দেখে এই গোষ্ঠিটা কারা? বা এদের পাওয়া যায় কোথায়?

এরা হইলো, হয় বিদেশে থাকে কোনো মাইয়া মানুষ বা মাইয়া মানুষের মতো কিছু পোলা মানুষ, যাদের খাওয়া দাওয়ার কোনো চিন্তা নাই, আজাইরা বইসা বইসা বাপের বা জামাইয়ের কামাই খাইতাছে, বাসার বাইরে না গেলেও চলে, কেউ কেউ আছে সরকারী বা প্রাইভেট চাকুরী করে, খাবারের চিন্তা নাই, টাকা আসবেই, এই শ্রেনীর কিছু সাদা মনের লোক, কেউ আবার আছে সরকারী চাকুরী করতো কিন্তু মাগার ভালো করতে পারে নাই, তাই চাকুরী থেকে হয় ভাগছে বা ইস্তফা দিয়া প্রাইভেট চাকুরিতে ঢোকছে, কিন্তু ওইখানেও মারা খাইতেছে, বেশী একটা ভালো করতে পারতেছেনা, কিন্তু মনে মনে ভাবে "আমি না জানি কি হনু রে" টাইপের, আবার কিছু আছে হতাশাগ্রস্ত বেকার শিক্ষিত ডিজিটাল যুবক যারা নিমিষেই একটা ইস্যুকে খবর বানাইয়া ফেলতে পারে, আবার কিছু আছে সব কিছুতেই বিশ্বাস করে এমন সহজ সরল আমার মতো নাদান আম-জনতা, আর কিছু আছে সমাজে আতংক সৃষ্টি করার কিছু ব্ল্যাক শীটস। আর এই গ্রুপটা সবচেয়ে বেশী রেফারেন্স দেয় কিছু রাজনীতিবাজ দেশী বিদেশী আমলা বা সংস্থার কিছু উঠকো মন্তব্য। ভাবখানা এই রকম, দেখছেন? আমি যাহা ভাবি, আমার মতো অইসব রাগোব বোয়ালেরাও আমার মতো ভাবে। আরে হালার পুত হমুন্দিরা, ওই শালারা তো করে রাজনীতি, তুই হালার ওদের রাজনীতি কি বুঝুস?

(যাক গে, ভাই আমার এই আদর কইরা ডাকা "হালার পুত", কিংবা হমুন্দির ভাই ইত্যাদি ডাকে মাইন্ড খাইয়েন না। হালার পুরান ঢাকার মানুষ তো আমরা, কথায় কথায় হালার ভাই, হমুন্দির পুত কিংবা এই জাতীয় মুখরোচক কিছু কথা প্রায়ই কইয়া থাকি। এটা আমরা আদর কইরাই কই। গালি না।)

আসেন এবার করোনার ভবিষ্যৎবানী গুলি কিছু দেখি।

অনেক বড় বড় হোমড়া চোমড়া বিদেশী সংস্থা আজ থেকে প্রায় দুই মাস আগে কইছিলো, বাংলাদেশ নাকি ২০ লাখ লোক করোনায় আক্রান্ত হইবো, আর ৫ লাখের বেশি লোক মারা যাইবো। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ অসচেতন, তাই সংখ্যাটা আরো বাড়বো। বিদেশীরা ইস্পেশাল উড়োজাহাজ ভারা কইরা নিজেগো দেশে চইলা গেলো। কারন কয়দিন পর রাস্তায় লাশের গন্ধে নাকি অসুস্থ হইয়া যাইবো। আবার নিজেরাও মইরা যাইতে পারে।

আমিও ডরাইছিলাম। হালায় কয় কি? আমার মতো অনেকেরই মাথায় হাত। পরিবার আর বউ ঝির মুখ দেহি আর ভাবি, ওগো লক্ষি, কি শুনতাছি গো!! আমি অথবা তুমি যে কেউ যখন তখন মইরা যাইতে পারি। আবার দুইজনেই আগে পিছে মইরা যাইতে পারি। কেম্নে কি গো? তুমি মইরা গেলে আমার কি হইবো, আর আমি মইরা গেলে আবার তুমি আমার বাল বাচ্চা গো ফালাইয়া অন্যখানে বিয়া করবা নাতো? কি যে, অবস্থা।

মহব্বত বাইরা গেলো, ঘরে থেকে আর বাইর হৈ না। সরকারও না করছে বাইর হইবার। বউ এর সব কাজে অতি মহব্বতের সহিত সাহাজ্য করি। ঘর মুইছা দেই, তরকারী কুইট্টা দেই, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। খাই-দাই-ঘুমাই, আর ফেসবুক করি। কিন্তু হালার ডর আর যায় না। ডরে ডরে প্রতিদিন ভাবি, এই বুঝি মিডিয়া কইবো, আজ গাবতলীর বাস স্ট্যান্ডের পাশে পাচ হাজার লাশ পাওয়া গেছে, হয়তো কাল হুনুম, ওই মতিঝিল এলাকায় আরো ২ হাজার লাশের স্তুপ পাওয়া গেছে, আর গত রাইতে করোনায় মরা এই সব মানুষের লাশ। দুই মাস পার হইয়া গেলো। কিন্তু হালার মাত্র মরার খবর আইলো দেড় শ? আর আক্রান্ত হইলো মাত্র সাত আট হাজার?

এবার আমার ওইসব ভাইজানেরা আবার মন্তব্য করলেন, সরকার বাহাদুর সঠিক তথ্য লুকাইতেছে। আক্রান্ত আরো লক্ষগুন বেশী। টেষ্ট করতাছে না, তাই ধরা পড়তাছে না। বুঝলাম যে, করোনা টেষ্ট না করার কারনে কয়জন আক্রান্ত হইছে এইডা না হয় সরকার বাহাদুর গোপন করতাছে কিন্তু হালার মরার খবর তো আর আটকাইয়া রাখতে পারার কথা না যেখানে প্রতিটা মানুষের হাতে একটা কইরা মোবাইল ক্যামেরা আর সবাই সাংবাদিক। আমি তো হালার সারা ফেসবুকের মরার খবর যোগ কইরাও ৫০০ অতিক্রম করাইতে পারলাম না। তাইলে ওই হালার বিদেশি সংস্থাগুলি কি ছিড়ার কথা কইলো? আর ফকফকা ভবিষ্যৎ দেখা আমাগো ওই ফেসবুক এস্ট্রোলোজারগুলি কি কয় এখন? নাকি আরো কিছু টাইম বাড়াইয়া লইবেন যে, আরো ২ মাস যাক? কোনটা? এদিকে কিন্তু ঘরের মজুত খাবার শেষ, আবার অনেকের চাকুরী আছে কি নাই এইটা নিয়াও দন্দে আছে। তবে এখনো বাপের বা জামাইয়ের বা সরকারের তহবিল থেকে যাদের খাবারের ব্যবস্থা আছে, তারা হালার বিজ্ঞের মতো মন্তব্য করা ছাড়ে নাই।

আমি অংকে কাচা, সাইন্সেও হালায় মাথা বেশী ভালো না। তয় যেটা বুঝতাছি, সেটা হইলো গিয়া, এমনো তো হইতে পারে যে, ঘরে ঘরে এখন অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হইয়া আছে। কিন্তু তারা এমন কইরা শান্তিতে বাস করতাছে যে, কোনো উপসর্গ প্রকাশ করতাছে না। কে জানে যে, যারা বিজ্ঞের মতো ভবিষ্যৎ বানী করতাছে, তাদের মধ্যেই হয়তো সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হইয়া বইসা আছে, জানেই না। আবার এমনো হইতে পারে, সারাদিন টো টো কইরা বাইরে ঘুরতাছে, তার কোনো করোনাই নাই, কিন্তু ফার্মের মুরগীর মতো ঘরে মাসের পর মাস বন্দি হইয়া উপসর্গবিহীন করোনা লইয়া বইসা আছে। কেম্নে বুঝবেন? পরীক্ষা তো করান নাই। আবার ডরের ঠেলায় করাইবেনও না।

শোনেন ফেসবুক এস্ট্রোলজারগন, এই পৃথিবীতে করোনাই একমাত্র নতুন কোনো মহামারী প্রথম আগমন করে নাই। এর আগেও এর থেকেও অনেক বড় বড় মহামারী এসেছিলো। আর ওইসব মহামারীর তান্ডব কিন্তু এখনো প্রিথিবী থেকে শেষ হইয়া যায় নাই। কিন্তু সেগুলি নিয়া আমরা ডরাই না কেন?

উদাহরন দেই, ডায়েরিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যালেরিয়া, টিউবারকিউলুসিস, রুবিওলা, ইবোলা, স্মল পক্স, প্লেগ এই সবই মহামারীর মতো কইরাই এই দুনিয়ায় কোনো না কোনো সময় তান্ডব চালাইছিলো। আর এগুলি কোনো না কনোভাবে ছোয়াছেই। একটা পরিসংখ্যান বলে যে, খালি ২০১২ সালেই নিউমোনিয়ায় মারা গেছে এক কোটি দশ লক্ষ লোক, আর প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ১ থেকে ২ মিলিয়ন লোক (মানে সোয়া এক কোটি থেকে দুই কোটি), টিবি রোগেই মারা যায় প্রায় দেড় কোটি লোক, ইবোলা, ইনফেকসাস ডায়েরিয়া বা ম্যালেরিয়া এইডস ইত্যাদি রোগেও কম নয় সংখ্যাটা। আর করোনায় এই সংখ্যার কাছে কিছুই না। তাহলে ওইসব ছোয়াছে রোগ নিয়ে আমরা একেবারে ঘরের মধ্যে রুদ্ধ হইয়া বইসা রই না ক্যান? কারন, আমাদের শরীর, মন, এবং সচেতনতা এই সব রোগের ব্যাপারে এখন এক্টিভ। নতুন কইরা ডরের কিছু নাই। এইসব রোগের ব্যাপারে আমাদের বাসর হইয়া গেছে। আমরা এখন তারে চিনি। আর জানি কিভাবে সামলাইতে হয়।

কিন্তু এইসব রোগে এতো সংখা মরার খবর জেনেও নিউ ফেসবুক এস্ট্রোলজাররা সবাইকে আবার নতুন কইরা সতর্ক করতাছে না ক্যান?

ব্যাপারটা খুব সোজা। সবাই সবার থেকে এক ডিগ্রী চ্যাম্পিয়ান হইতে চায়। কে কার আগে কতো তাড়াতাড়ি নতুন নতুন সংবাদ প্রচার কইরা ক্রেডিট লইবো। সত্যই হোক আর মিথ্যাই হোক, কিছুই যায় আসে না, সংবাদটাতো নতুন। আরে হমুন্দির ভাই, এইটাই তো সবচেয়ে বড় সাইবার হাতিয়ার মানুষকে আতংকিত করার আর এই হাতিয়ারটাই তো বড়বড় রাগোব বোয়ালরা ব্যবহার করেছে। একেকটা উঠতি জাতীয় শিল্পকে ধংশ করার মোক্ষম অস্ত্র তো এগুলাই।

কোনো একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী যখন নতুন কোনো উঠতি ব্যবসায়ীকে আজীবনের জন্য শেষ করে দিতে চায়, তখন সেই প্রতিষ্টিত ব্যবসায়ী একই প্রোডাক্ট কমমুল্যে এমন কি খরচের থেকে কম মুল্যে নিজের হোগা মাইরা হইলেও বাজারে ছাইরা দেয়। কম্পিটিশনে টিকতে না পাইরা ওই উঠতি ব্যবসায়ী নাকে খত দিয়া ব্যবসা থেকে চিরতরে আউট। এটাই তো চায় ওইসব প্রতিষ্ঠিত জাতীগুলি। আর আমরা না বুঝেই বাইল্লা মাছের মতো অনেক্ষন বর্শীর দিকে তাকাইয়া থেকেও বুঝতে পারি না যে, এটা একটা ফাদ। এক সময় গিল্লা ফালাই আর মরি।

শোনেন ভাইজানেরা, আল্লাহ মানুষের শরীরের মধ্যেই একটা কইরা ল্যাব এইড বা এপেলো হস্পিটালের মতো মেডিক্যাল স্টোর দিয়া দিছে যার নাম "ইম্মিউন সিস্টেম"। নতুন ভাইরাস করোনা। এটার সম্পর্কে আমাদের শরীর আগে থেকে সতর্ক না। তাই শরীরের ইম্মিউন সিস্টেমের ইনভেন্টরীতে এই রোগের ইম্মিউন সিষ্টেম তৈরী করা ছিলো না। কিন্তু গত দুই মাসে আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষের শরীরে এই এন্টি বডি তৈরী সম্ভবত হইয়া গেছে। যদি টেষ্ট করা হয়, হয়তো দেখা যাবে ঘরে ঘরে বহুত মানুষের করোনার ভাইরাস আছে, বা আক্রান্ত কিন্তু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে না, বা মরতাছে না কারন আল্লাহর দেয়া এই ইম্মিউন সিষ্টেম ইতিমধ্যে করোনার বিপরীতে ডিফেন্স সিষ্টেম তৈরী করে ফেলেছে। ফলে লোকজন মারা যাচ্ছে কম। আবার সুস্থই আছেন তারা।

ডরাইয়েন না। আর মানুষকে ডর দেহাইয়েন না। ডর মানুষের মানসিক শক্তিকে দূর্বল করে দেয়। সচেতন হইলেই হবে। রোগের থেকে আমাদের শরীরের ইম্মিউন সিষ্টেম অনেক বেশী শক্তিশালী। কাজে যান, রোজগার করেন, যতো টুকু সম্ভব ভালো ভালো খাবার খান, ইম্মিউন সিষ্টেমকে আরো শক্তিশালী করুন। আজাইরা ঘরের মধ্যে বইসা থেকে ইম্মিউন সিষ্টেমকে অকেজো কইরা দিয়েন না। আর অযথা গুজব টাইপের তথ্য শেয়ার কইরা পন্ডিত সাইজেন না।

একটা কথা বলি, যতোক্ষন না পর্যন্ত জানতে পারতাছেন যে, আপনার ঘরের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয় নাই, ততোক্ষন তো মনের আনন্দে একে অন্যের সাথে মনের সুখে হাসি তামাশা করতাছেন, কিন্তু যেই মুহুর্তে জানলেন যে, ওইরে ভাই, আমাদের ঘরেই তো দাদীটা বা দাদাটা কিংবা বোনটা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হইয়াই আছে, তাহলে কি সব শেষ? কেনো? তার তো করোনা হইয়াই ছিলো, তাও তো ভালই ছিলো, তার ইম্মিউন সিষ্টেম হয়তো অনেক স্ট্রং থাকায় দ্রুত এন্টি বডি তৈরী করে করোনাকে পরাস্ত করে তাকে সুস্থই রেখেছে, কোনো উপসর্গই সে দেখায় নাই। অথচ এই আক্রান্ত হইবার তথ্য জানার পর অর্ধেক মরা হইয়া গেলেন? এইটা কোনো কথা?

ভয়ের কিছু নাই ভাই। এই করোনা থেকেও অনেক অনেক বেশি মানুষ মরে যায় নরম্যাল নিউমোনিয়া, ডেংগু কিংবা হার্ট/লিভার ডিজিসে। এটা মহামারি কারন একসাথে সবখানে হয়েছে বলে। ভরষা রাখেন নিজের উপর, আল্লাহর উপর। আর একটু সচেতন থাকুন। এটা অনেক বড় রোগ নয়। এর মর্টালিটি হার আসলেই কম। আশেপাশের মানুষ, মিডিয়া, সব দেশে এক সাথে হওয়ায় আর অতিরিক্ত এটেশন দেওয়ার কারনেই আমরা বেশি ভয় পাচ্ছি। অনেকেই হয়ত জানেই না যে, নিজের ঘরের অনেক সদস্যরা ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এন্টিবডি তইরী করে সুস্থই আছেন।

জানি, নতুন সব কিছুই আতংকের ব্যাপার। নববধুর কাছেও তো শুনি বাসরঘর নাকি আতংকের। তাই বলে কি...।। থাক কইলাম না। আমি আশাবাদি মানুষ।

৩০/০৪/২০২০-গাছতলায় বইসা সংসার হয়না

আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষের একটা প্রবনতা আছে (বদ না ভাল সেটা বলতে চাই না), আর সেটা হল, কোনো একটা ব্যাপারে কেউ যদি মিডিয়াতে, বা টকশোতে ঝড় তুলতে পারে, তাহলে এর বাইরে আশেপাশে আরো বড় বড় কোনো ইস্যু যাইই হোক না কেনো, যেটার উপর ঝড় উঠলো, তো সেটা নিয়ে এমন তুলকালাম বাধাবে যে, পৃথিবীতে বুঝি ওটা ছাড়া আর কোনো ইস্যু নাই। হোক সেটা রাজনীতি, হোক সেটা কোনো চুরি, বা কোনো রোমাঞ্চকর ব্যাপার। আর মজার ব্যাপার হলো, ওটা যে কি, এটার আগামাথা না জেনে, না বুঝে, এর ইমপ্লিকেশন কি, বা তাতপর্য কি কিছুই বুঝুক বা না বুঝুক, জ্ঞানীদের মতো বিজ্ঞ বিজ্ঞ মন্তব্য না করে ছাড়বে না। ভাবখানা এই রকমের যে, সবাই সিপিডি জাতীয় উন্নততর কোনো গবেষনা প্রতিষ্ঠানের এক মহারাজ্যে তাকে কন্সাল্টেন্ট হিসাবে যখন তখন বসাইয়া দেয়া যায়। পাওয়ার ব্যাংক আর সেন্ট্রাল ব্যাংক যে এক না, এটাই হয়তো অনেকে বুঝে না। খালি ব্যাংক হলেই বুঝি টাকার সাথে জড়িত বলে ভাবে।

আজকে আমার প্রসংগটা গার্মেন্টস নিয়ে। গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে বহুত মানুষ জানেই না এর পুরু প্রোসেসটা কি, কিভাবে এর সফলতা বা ব্যার্থতা আসে। যার ফলে দেখা যায়, এই সেক্টরে বুঝি হাজার হাজার কোটি টাকা খালি বাতাসে উইড়া বেড়ায়, এই চিন্তা করে বহুত উঠতি নাদান পাবলিক বাপের বাড়িঘর বেইচ্যা, বউ এর গহনা গাট্টি বন্ধক দিয়া, বন্ধু বান্ধবদেরকে মোটা লাভের লোভ দেখাইয়া টাকা পয়সা লোনে জোগাড় কইরা ব্যবসা শুরু করে। যেহেতু এর আগামাথা কিছুই বুঝে না, অল্পদিনেই মাইর মুইর খাইয়া নাস্তানাবুদ, আর ফলস্বরূপ দেনার ভারে মাথা নুয়াইয়া মোবাইল ফোন বন্ধ কইরা চোরের মতো এদিক সেদিক হয় ঘুইরা বেড়ায় নতুবা কোনো না কোনো ফন্দিফিকির কইরা কোনো রকমে বউ ঝি ফালাইয়া বিদেশ পাড়ি মাইরা হয় ক্যাব চালায় না হয় ৭/১১ এ কাজ শুরু করে। আর দোষ পড়ে হয় শ্রমিকের, না হয় বায়ারের, না হয় সরকারের ইত্যাদি। নিজে যে একটা চুদুর বুদুর টাইপের জ্ঞানি, সেটা স্বীকার করে না। একজনে কোটি টাকা লোন কইরা একখানা বাড়ি করলো মানেই কিন্তু সে ফাইনালি বাড়ির মালিক বইন্যা যায় না। যে বাড়ি বানাইছে লোন নিয়া, সে বুঝে মাসিক কিস্তি দিতে না পারলে তার হার্টবিট কত রেটে চলে, কয়েক মাসের মাসিক কিস্তি যদি বকেয়া পইড়া যায়, তাহলে ওই বাড়িওয়ালার রাতের ঘুম হবে হয় রাজপথে না হয় কবরে। কিন্তু আশেপাশের লোক কিন্তু দেখতাছে, বেটা তো সাততালার একখানা বাড়ির মালিক। মজার ব্যাপার হইল আরেকটা, জোগালি বা রাজমিস্ত্রী যে এতো কষ্ট কইরা বাড়ি একখান বাড়িওয়ালার পক্ষে বানাইয়া দিলো, কেউ কিন্তু কয় না, জোগালির বা রাজমিস্ত্রির ঘামের রক্তে বেটা বাড়ি বানাইছে, এখন জোগালি বা রাজমিস্ত্রিরেও আজিবন বেতন দেয়া হোক। কিন্তু গার্মেন্টসের বেলায় কিন্তু এই কথা জোর গলায় কইতাছে, শ্রমিকদের রক্তে নাকি মালিকরা বড় লোক হইতাছে। আরে ভাই, দেন না একটা ফ্যাক্টরী। আপ্নিও বড়লোক হইয়া যান!! খামাখা চাকুরীর জন্য আবার ওই গার্মেন্টেই আহেন কেন?

বাংলাদেশে যতোগুলি গার্মেন্টস আছে আমি সবাইকে এক কাতারে ফেলছি না। কিন্তু যেসব গার্মেন্টসগুলি কমপ্লায়েন্স করা (অনেকে তো আবার কমপ্লায়েন্স কি সেইটাই বুঝেন না), সেডেক্স, বিএসসিআই, ইউএল, আইএসও, একর্ড, এলায়েন্স ইত্যাদি সোস্যাল কমপ্লায়েন্সগুলিতে কোয়ালিফায়েড, তাদের কথা বলছি। এইসব ফ্যাক্টরীগুলি এইসব কমপ্লায়েন্স করতেই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এবং এসব বাংলাদেশের কোনো অথরিটি দেয় না। দেয় আন্তর্জাতীক সংস্থাগুলি। আর ওখানে ঘুষের কোনো কারবার চলে না। সব শর্তাবলী পালন করেই এইসব সার্টিফিকেট পাইতে হয়। এরা টাইমমতো বেতন দেয়, টাইমমতো বোনাস দেয়, সময়মতো ওয়ার্কিং টাইম মেইন্টেইন করে, মাতৃত্ব ছুটি, বাৎসরিক ছুটি, মেডিক্যাল লিভ, ক্যাসুয়াল লিভ, হেলথ এন্ড হাইজিন, পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলি সব মেনে ব্যবসা করে। কারন কমপ্লায়েন্সওয়ালা ফ্যাক্টরীগুলি এসব বিষয়ে প্রতিনিয়ত ব্রান্ড বায়ারদের কাছে জবাব্দিহি করতে হয়। কিন্তু এর বাইরেও হাজার হাজার গার্মেন্টস আছে, যারা না এইসব কমপ্লায়েন্সের ধার ধারে, না কোনো স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন করে। ওইসব ফ্যাক্টরিগুলি না দেয় টাইম মতো বেতন, না দেয় শ্রমিকদেরকে তাদের সঠিক পাওনাগুলি। আর এইসব ফ্যাক্টরির জন্য যারা অরিজিনালি ভালো ফ্যাক্টরী তাদের বদনাম হয়। ওই যে একটা কথা আছে না, মাছ খায় সব পাখী, নাম পড়ে মাছরাংগার। ব্যাপারটা প্রায় এই রকম যে, গুটিকতক অসৎ সদস্যের কারনে পুরা সেক্টর বা ডিপার্টমেন্টের (হোক সেটা যে কোনো ডিপার্টমেন্ট, ডাক্তার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষক, বা সরকারী কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ী ইত্যাদি) বদনামের ভাগীদার হতে হয়। একটা উদাহরন দেই, এই যে, ঢাকার বাইরে থেকে যারা এখন ঢাকার উদ্দেশ্যে লকডাউনের মধ্যে পুনরায় ঢাকামুখী হচ্ছেন, তারা কি সবাই গার্মেন্টস শ্রমিক? আসলেই না। এদের মধ্যে আছে অন্যান্য সেক্টরের মানুষজনও যেমন পরিবহন সেক্টর, কন্সট্রাকশন সেক্টর, চা বাগান, মৎস্য সেক্টর, সাধারন শ্রমজীবি, আর আছে লম্বা ছুটি পাওয়ার কারনে বহুত সরকারী-বেসরকারী লোকজন। কিন্তু দেখবেন, ফেসবুক সয়লাব হয়ে যাবে নতুন পুরানো পোষ্ট মিলাইয়া যে, এই যে গেলো সব। গার্মেন্টস শ্রমিকেরা এইবার সারা দেশের করোনা, ধরোনা, বা সরোনা টাইপের যতো রোগ আছে সববুঝি চারিদিকে ছরাইলো। আরে ভাই, এর মানে কি এই যে, গার্মেন্টসের সব শ্রমিকেরা করোনা লইয়া ঘুরে? পরিসংখ্যানে কয়টা ধরা পরছে যে, একশত লোকের মধ্যে ৯০ টাই গার্মেন্টস শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত?

সরকার অযথা ঘুরাঘুরি করতে না করতেছেন, তারপরেও কে কার কথা শুনছেন? ঘরে আর ভালো লাগে না, ঘরে ঘরকন্নার কাজ করতে করতে অস্থির, তাই খুশির ঠেলায় একটু খামাখাই বাইরে যাই। আর এদিকে সারাক্ষন রাস্তায় যারা নিজের জীবন বিপন্ন কইরা আর্মি, পুলিশ র্যাটব এবং অন্যান্য সেচ্ছাসেবীরা হিমশিম খাচ্ছেন, তাদেরকে মিথ্যা একখান অজুহাত দিয়া ফাকি দিয়া কখনো আজাইরা বিড়ি ফুকার জন্য বাজারে, মাঠেঘাটে, অলিতে গলিতে আড্ডা মারতেছে, তাদের কোনো দোষ নাই করোনা ভাইরাস ছড়ানোর বেলায়। তারা মনে হয় স্থায়ী প্রতিষেধক লইয়া জন্ম গ্রহন করিয়াছে, তাই তারা বুক ফুলাইয়া ঘুরিতে পারে, তাতে কোনো প্রশ্ন নাই।

আরেকখান কথা না বললেই না। দুনিয়ার বিখ্যাত বিখ্যাত অনেক কোম্পানি যেমন, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, পোষাক শিল্পের নাম করা এইচ এন্ড এম, জারা, তেল কোম্পানী, আরো অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলি এই করোনার প্রভাবে দেউলিয়া হইয়া ব্যবসা পর্যন্ত বন্ধ করে দিচ্ছে, তারাও তো হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করছিলো, কিন্তু এরপরেও বন্ধ হচ্ছে কেনো? যারা ব্যবসা করেন (আজাইরা ব্যবসা না, অরিজিনাল ব্যবসা) তারা বুঝতেছে কি চলছে তাদের একাউন্ট ডিভিশনগুলিতে। এটা কোনো ফুস্কার দোকান না। কিংবা মালাইকারীর দোকান না যে, মনে হইলো ২০০ টাকার মুলধন লইয়া ব্যবসায়ী হইয়া গেলাম, আর সমস্যা হইছে তো, ঘরে গিয়া আরামছে স্টার জলসা দেখা শুরু করলাম।

মজার ব্যাপার হইলো আরেকটা। সরকারের বহুত অর্থপূর্ন সিদ্ধান্তগুলিকে কিছু কিছু নব বুদ্ধিজীবিরা এমনভাবে সমালোচনা কিংবা ফেসবুকে উপদেশ দেয়া শুরু করছেন যেনো তারাই সরকারের চেয়ে ভালো বুঝে বিশ্ব অর্থনীতি, কিংবা দেশের অর্থনইতিক অবস্থা। আরে ভাই, যে গিন্নি সংসার চালায়, সে বুঝে কয় বেলার খাবার ঘরে আছে আর কয়দিন কিভাবে চলবে। আর বিকল্প কোথা থেকে কি না আসলে সামনে তার সংসার চালানো কি বিপদ। যিনি সরকার চালান, তিনি জানেন তার মাথায় কি পরিমান বোঝা লইয়া তারা ঘুমাইতে যান। কাল যখন করোনা থাকবে না, আর আপনি যখন গাড়িখানায় নিজের বউ বাচ্চা লইয়া অনেকদিন পর একটা লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য আগে তেল ভরার জন্য পেট্রোল পাম্পে যাইবেন, গিয়া দেখবেন, অকটেন, ডিজেল নাই, আবার শুরু করবেন সরকারের চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধারের। পরশু যখন দেখবেন ফারনেস ওয়েলের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ আর বিদ্যুৎ দিতে পারবে না, তখন আবার খুশীর ঠেলায় সরকারের আটাইশ গোষ্টি শুদ্ধা উদ্দার করবেন। বিদেশে আদরের বাচ্চাটারে পরাইতে পাঠাবেন, ডলার লাগবে, কিডনী খারাপ হইয়া গেছে, বাইরে না গেলেই নয়, পগারপার হইয়া যাইবেন, বাড়ি ঘর বেইচ্যা হইলেও বাচতে চাইবেন, তাই ডলার লাগবে, নিত্যদ্রব্য কিনতে গেলেও তো বিদেশী কারেন্সীই লাগবে। কেডা দিবো এই কারেন্সী? ফরেন রেমিট্যন্স তো এখন প্রায় শুন্যের কোটায় কিন্তু সরকারকে তো এইসব কিছুই ডলার দিয়া কিনতে হয়। তাহলে এই ডলারগুলি কি আমাদের কেউ যৌতুক দিবেন সরকারকে? সরকার খুব ভালো করেই জানেন, তার কি করা উচিত। এতো বিশেষজ্ঞ সবার না হইলেই ভালো। WHO কইলো ৫ লাখ লোক নাকি মরবো আমাদের দেশে ২ মাসের মধ্যে, আরে ভাই, ওইটাও একটা রাজনৈতিক কেরামতি। দেশের ৫ লাখ লোক মইরা যাইব আর সরকার আকাশের তারা গুববো নাকি? তার চিন্তা নাই? অবশ্যই আছে। আর তারা সেটাই করছে, যা করনীয়।

যাইই হোক, এসব ব্যাপার বেশী কথা বলতে চাই না। এই করোনা অবস্থাতে যারা ভালো ফ্যাক্টরি, তারা নিজের ঘরের সদস্যদের থেকেও তাদের শ্রমিকদের ব্যাপারে অনেক বেশী খেয়াল রাখেন এবং রাখছেন। যেসব ফ্যাক্টরীগুলি সাবস্ট্যান্ডার্ড, তারা আরো ৫০ বছরেও ওই সাব-স্ট্যান্ডার্ডই থেকে যাবে। আর এর কারন হইলো এই যে, যারা অতি লোভে ব্যবসা করতে আসেন, তাদের ব্যবসা শুরু করার আগেই ক্যালকুলেটরে লাভের অংক কষতে থাকেন। তারা তো ব্যবসায়ীই না। তাদের জন্য ভালো ফ্যাক্টরীগুলির বদনাম হবে কেনো? এই তলাবিহিন রাষ্ট্রটার এখন শক্ত তলা হয়েছে শুধুমাত্র ভালো ব্যবসায়িদের সমন্নয়ে সরকারের বুদ্ধিদীপ্ত নির্দেশনার কারনেই। তাই, আমাদের উচিত না কালো বা হলদে সাংবাদিকতার খপ্পরে পইরা দেশের সতেরোটা বাজাই আর সোনার ডিম দেয়া মুরগীটারে জবাই করি। এটাও ঠিক যে, সোনার ডিম পাড়া মুরগীরে কেউ সোনার মুকুট পড়ায় না। এটা আমরা জানি। মুকুট পড়াইয়েন না, অন্তত মুরগীটারে বাচতে দেন, আপ্নারই লাভ হবে।

আরেকটা মজার কথা বলি। যারা সত্যিকারের গার্মেন্টস শ্রমিক, তারাও এই সেক্টরের জন্য বহুত টেনসনে আছেন। তারাও দুই হাত তুইল্লা আল্লাহর কাছে তাদের নিজেদের ফ্যাক্টরির জন্য আর মালিক যেনো বাচতে পারে তার জন্য নামাজ কিংবা পুজা যে যার ধর্ম মোতাবেক দোয়া করতেছে। আর যাদের আপ্নারা রাস্তায় দেখেন, তারা আসলে কোনো শ্রমিকই না। তারা হচ্ছে শীতের পাখীর মতো হটাত কইরা কিছু অসৎ মানুষের পাল্লায় পইরা ৫০/৬০ টাকার কমিশনে ঘন্টা খানেকের জন্য রাস্তায় একটা উত্তাপ ছরাইয়া দেয়া। কিছু টায়ার পুরাইয়া একটা অরাজকতার স্রিষ্টি করা। এটাই ওদের কাজ। অথচ আসল শ্রমিকেরা এর বিরোধিতাও করতে পারে না কারন তারা সত্যিই নীরিহ। ঝগড়া ফ্যাসাদে জরাইতে চায় না। কিন্তু মনে মনে ঠিকই বলে, হালার দে না আমারে এক মাসের খাবারের টাকা? তখন কিন্তু আবার তাদের পাশে নাই। তারাও নাই, মিডিয়াও নাই, আবার যারা বুদ্ধিজীবির মতো মন্তব্য করেন, তারাও নাই। এটাও হতে পারে যে, ওইসব পোলাপান ওইসব সাব স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাক্টরী গুলিরই শ্রমিক। ভালো এবং দক্ষ শ্রমিকেরা সাব স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাক্তরীতে কাজও করতে যায় না। যারা অদক্ষ, তারাই ওখানে গিয়া ভীড় জমায়।

যাই হোক, আসুন আমরা দেশের এই ক্রান্তিকালে যেটা ভালো সেটাই করি। তবে, হ্যা, যেহেতু করোনা ভাইরাসটি একটি ছোয়াছে রোগের মতো, তাই সবাইকেই সচেতন হইতে হবে। এটা গার্মেন্টস শ্রমিকই হোক, মালিকই হোক আর যে শ্রেনীর লোকই হোক। এটা একটা সমন্বিত সামাজিক দায়িত্ত। কারোরুই কম দায়িত্ত নয়। জীবন চলতে হবে, জীবনের জন্য জীবিকাও চালাইতে হবে। বছরের পর বছর এই ভাইরাস নাও শেষ হইতে পারে। তাই বলে কি এতো লম্বা সময় শুধু ঘরে বসে থেকে সবকিছু কারো পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব? তাই, আমাদেরকে বিশ্ব বানিজ্যের সাথেও তাল মিলাইতে হবে। তানা হলে সারা দুনিয়া থেকে আরেকবার এতো দূর পিছাইয়া যামু, যে, ম্যারাথন দৌড় দিয়াও লাভ হইবো না। কারন ভেনিজুয়েলা, রাশিয়া, রোমও একসময় সারা দুনিয়া মাদবরি কইরা গেছে, কিন্তু সময় আর রিসোর্সকে সঠিকভাবে কাজে লাগাইতে পারে নাই বইল্লা, তাদেরকে টপকাইয়া তৃতীয় দেশগুলি ফরফর কইরা আগাইয়া গেছে। গাছ তলায় বইসা প্রেম করা যাইতে পারে কিন্তু গাছ তলায় বইসা সংসার চলে না।

(কাউকে উদ্দেশ্য কইরা এই লেখা না, কেউ আবার মাইন্ড খাইয়েন না, নিরপেক্ষভাবে পইড়েন, হয়তো কিছুটা হলেও সম্বিত ফিররা আইতে পারে, আজাইরা কমেন্টের দরকার নাই। বুদ্ধিজিবি চাই না, বিবেকবান চাই)

২৯/০৪/২০২০-মাননীয় ইচপিকার

ফেসবুকে কিছু কিছু লোকের কিছু কিছু সাবজেক্টে কমেন্টস আর যুক্তি শুনলে মনে হয়, দুনিয়ার কোনো সাব্জেক্টেই তেনাদের জ্ঞানের কোনো কমতি নাই। রোগতত্তের উপরই হোক, অর্থনীতির উপরই হোক, গ্লোবাল রাজনীতির উপরই হোক, মনে হয়, ওরে বাবা, না জানি কত বড় জ্ঞানি। কিন্তু যদি জিজ্ঞাস করেন, বলেন তো বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কি? অথবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কোনটা অথবা বিজয় দিবস কোনোটা, দেখবেন, বলতে না পাইরা বলদের মতো দাত কেলাইয়া হাসবে। আবার হাসিটাও এমুন, যেনো নুরানী মার্কা।

আবার কিছু লোক আছে যারা জীবনে কিছুই হইতে পারে নাই, কিন্তু অন্যে কেনো সফল হইলো, তারজন্য মনে তার এক প্রকার ভীষন জ্বালা। অধিক মরিচ খাইয়া হাগু করতে গেলে যেমন জ্বলে, ঠিক এই রকম তাগো কইলজার ভিতরে সারাক্ষন জ্বলতেই থাকে। ঠান্ডা পেপ্সি কিংবা লাবাং খাইলেও কোনো কাজ হয় না। জ্বলা আর কমে না। তাই যতো পারো সুযোগ পাইলেই এই সফল লোকগুলির বিরুদ্ধে যতোপদের চিলিকবাজী মন্তব্য আছে, করতে কোন দিধা নাই। পরের পাছা, মরিচ দিতে অসুবিধা নাই। বড়ই মজা। এদের কিন্তু জীবনে বড় হইবার খায়েস কখনো যায় না। খালি সপ্ন দেখে, আর ভাবে, হালার শর্ট খাট রাস্তাটা কি? খালি সটখাট মারবার চায়, খুইজ্জা পায় না। এরা আবার মাঝে মাঝে ফেয়ার এন্ড লাভলীও মাখে। এরা কথায় বড় ধান্দাবাজ। এরা যখন কথা কয় তখন আমজনতা (আমজনতা কারা, ব্যাখ্যাটা করতাছি একটু পরে) তন্ময় হইয়া শুনতেই থাকে। আর ভাবে, আরে, ভাই, এতো দেখি মহাজ্ঞানী, এরেই তো খুজতাছি। এতোদিন কোথায় ছিলেন, বনলতা সেন টাইপের আকুতি। আমজনতা তার কথা শোনার পর আবার মোবাইল নম্বরটাও চাইয়া লয়, যদি কখনো আবার কাজে লাগে। কিন্তু মজার ব্যাপার হইলো গিয়া, এরা কারো কাজেই লাগে না, নিজেরও না। এরাই অন্যের বড় বড় বানী টাইম মতো মুখস্থ ছাইরা দেয়, অন্যের ছোট খাটো লিমিটেশন্স মস্ত বড় কইরা ঢেকুর তোলে, এরা সারাক্ষন মাইনষের পোন্দের মধ্যে মরিচের গুড়া মাখতেই থাকে।

আবার কিছু পাবলিক আছে, খায় মালিকেরটা, কাম করে পরের অধীনে, কিন্তু সুযোগ পাইলে ওই মালিকের পাছায় বাশ দিতে একটুও কার্পন্য করে না। ভাবখানা এই রকম যে, হালায় মালিক হইলো কেন? আমি তো হের থেকে আরো সুন্দর ইংরাজী কই, আমি তো ব্যাকব্রাশ চুল আচড়াই, আমার চেহারা তো হের থেকে আরো সুন্দর, হালায় আমি ক্যান মালিক না। মারো পোদে বাশ। যেই না আবার সমস্যায় পরে, পুনরায় তেল দিতে দিতে আর জুতার তলা ক্ষয় করতে করতে আবার এইসব মালিকের পা ই ওরা চাটতে পছন্দ করে, যদি একটা ইঙ্ক্রিমেন্ট পাওয়া যায় তার আশায়।

আবার কিছু পাবলিক আছে, তার তথাকথিত বুদ্ধিমান বন্ধু কোনো একটা পোষ্টে একটা মন্তব্য করছে, তার কাছে মনে হইলো, ওর বন্ধু তো মনে হয় বুইজ্জাই মন্তব্য করছে। আর কোনো চান্স নেয় না, এক্কেবারে তার সাথে ঢোল পিটাইয়া লাইক দেয় আর কয়, আমিও সহমত। আরে হালার ভাই, সহমত দিবি না সহমরনে যাবি, যা, কিন্তু বুইজ্জা তো ক? এখানেই শেষ না, পারলে আরো কিছু যোগ এমনভাবে করে যেনো আদার বেপারী জাহাজের খবর তো নেয়ইে, পাশাপাশি টাইটানিকের নেয়। কারন ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবি অকর্মন্যা বন্ধুর লগে সহমত না হইলে তো আমার প্যাদা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্যাদা যদি নাও খায়, বোদাই হিসাবে গন্য হইবার সমুহ সম্ভাবনা তো থাকেই। তাই সহমত হইলে আর কোনো রিস্ক থাকে না। এর মধ্যে আবার এমন কিছু আবাল টাইপের বন্ধুও আছে, যারা আবার ইচ্ছা কইরাই সহমত হয় না। ওরা আরো এক ধাঁচ উপরে। তিনি আবার সহমত না প্রকাশ কইরা, এমন এক মন্তব্য ইংরেজী বাংলায় লিখেন যেনো পইড়া মনে হয়, হায় রে ইংরাজী। যদি ব্রিটিশরা এই ইংরাজি পড়তো, তাহলে, ভারতবর্ষে ওই যে, ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন হইছিলো, সেটার আর কোনোই প্রয়োজন হইতো না। ব্রিটিশ সরকার এম্নিতেই মাফ চাইয়া কইতো, ভাই আমাদের ইংরেজী ভাষাকে আর পোদ মাইরেন না, আমরা ভারতবর্ষ ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইবো।

আবার এমন কিছু লোক আছে, প্রিন্ট বা ছাপানো কিছু দেখলেই মনে করে, আবে হালার, এইতো পাইছি অরিজিনাল খবর। তাহলে তো ব্যাপারটা সত্যি। যায় কই। লাগলো এর পিছনে যুক্তি মারা। এটা গুজব না, সজব, না মিথ্যা নাকি একটা চক্রের কাম, সেটা কোনো ব্যাপার না। ছাপার অক্ষরে লেখা আছে না? সত্য না হইয়া যায় কই? এইসব পাবলিক আর্বি ভাষায় কোনো পর্ন পত্রিকা দেখলেও সেটা পবিত্র মনে করিয়া বুকে জরাইয়া চুমা খাইবে। কারন এই পাবলিকগুলি কোনটা যে কি কিছুই বুঝে না। হে ঈসশর, তুমি এদের হেদায়েত করো।

আবার কিছু লোক আছে, অতি সাধারন। যাহা দেখে তাহাই বিশ্বাস করে। এদের বলা হয় আমজনতা। ওই যে আগে বললাম। বেশীর ভাগ আমজনতা না বুইজ্জাই ফেসবুকের খবর, ভিডিও, পোষ্ট পড়ে আর রিয়েকশন দেয়। রাত জাইজ্ঞা জাইজ্ঞা ফেসবুক করে। এরা কখনো আবেগে কান্দে আর টিস্যু দিয়া চোখ মুছে । কখনো কখনো খিলখিল কইরা হাসে। আবার কখনো কখনো এমনি এমনি চুপ কইরা বইয়া থাকে আর কি জানি ভাবে। মাঝে মাঝে আবার দুই হাত তুলে ঈশ্বরের কাছে মুনাজাতও করে। এরা নীতিবান। কিন্তু এরা কোনো ফ্যাক্টর না। কিন্তু এরাই সবচেয়ে বেশী গুজবটা ছরায়।

কারন উপরের যা যা দেখলেন, এই আমজনতা সবগুলিই শেয়ার করে।

২০/০৪/২০২০-রাজনীতি-মিডিয়া, বন্ধুসুলভ শত্রু

রাজনীতি আর মিডিয়া, এরা একে অপরের খুব কাছাকাছি বন্ধুসুলভ শত্রু। যখন প্রয়োজন হয় তখন মিডিয়া আর পলিটিশিয়ান একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়। ফলে পুর্নসত্য অনেক সময় বেরিয়ে আসে না। বেরিয়ে আসে মিক্সড এবং অর্ধসত্য। অর্ধেক সত্যি কোনো কাজে আসে না। আর এই অর্ধসত্য যখন কেউ খুজে বের করার চেষ্টা চালায়, তখন তাদের ব্যাপারে ফিডব্যাক ফর্মের মতো অনেক প্রতিবেদন চারিদিক থেকে জড়ো হতে থাকে। এই অর্ধসত্য আর অর্ধমিথ্যা ফিডব্যাক ফর্মের ভারে যেখানেই যা কিছু বলা হোক না কেনো, মনে হয় তখন যে, ক্ষমতাশীল রাজত্তে দেওয়ালের শুধু কানই থাকে না, অবিবেচক চোখও থাকে। তখন নীরবতা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না। অথচ, এই নীরবতা সমাজে অনেক বড় ভয়ংকর অপরাধের জন্ম দেয়। এই অপরাধ থেকে মৃত্যু হয় বিশ্বাসের। বিশ্বাসের খুন যখন হয়, তখন শারীরিক খুনের আর কোনো প্রয়োজন পড়ে না। জিবন্ত লাশের মতো এই পরিস্থিতিতে বসদের শুনতে হয় অনেক অধিনস্থদের কষ্টের কথা। কিন্তু একটা কথা তো ঠিক যে, সাধারনত বসেরা কোনো স্টাফের কথা শুনতে পারে, কিন্তু তার কষ্টতো বসেরা মাথায় নিয়ে ঘুরতে পারে না। বসেরা শুধু এই কষ্টটা আবারো সেই মিডিয়া আর রাজনীতির কর্নধাদের কাছেই প্রতিস্থাপিত করা ছাড়া আর কোনো উপায়ও দেখেন না। আবারো সেই চক্রকার গোলকধাধা। বসেরা কি জানে না যে, রাজনীতিতে যদি মানবিকতা আর সচ্চতা থাকতো তাহলে কেহই এই রাজনীতি করতে আসতো না!! গুটিকতক রাজনীতিবিদেরা হয়তো এই চক্রাকার গন্ডির ভাইরে থাকে যাদের জন্য এখনো দেশ তথা জাতী ক্রিতজ্ঞ।

১৮/০৪/২০২০-Every Action has an Equal

Categories

লুকানো এক জিনিষ আর বিভ্রান্ত করা আরেক জিনিষ। আমার কাছে মনে হচ্ছে, সব সময়ই গার্মেন্টস সেকটর নিয়ে বিভিন্ন স্তরে সর্বদা শুধু সত্যকে লুকিয়েই রাখা হয় না, বিভিন্ন মনগড়া তথ্য দিয়ে একে বিভ্রান্তও করা হয়। কিছু কিছু জিনিষ সামনে আসতে অনেক সময় লাগে আবার কিছু জিনিষ সামনে আসতেই দাবিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু মজার আর সত্য ব্যাপার হলো, কিভাবে কখন জল মাথার উপর উঠে যায়, কেউ জানে না। আর জল যখন মাথার উপর উঠে যায়, তখন যা প্রয়োজন তা হচ্ছে বাইরের থেকে আচমকা সাহাজ্য। আর যদি সেই বাইরের থেকে আচমকা সাহাজ্য না আসে তখন যিনি ডুবে আছেন, তার সাথে আরো অনেকেই জ্লে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আরএমজি সেক্টর এখন সেই অতল জলের ঠিক বিপদ সীমার‍ লাইন বরাবর চলছে। এর প্রতিফলন আমরা দেখবো জানালা দিয়ে নয়, সরাসরি সদর দরজা দিয়ে। দুর্ভিক্ষের বীজ ইতিমধ্যে বুনা হয়ে গেছে, এখন বাকী শুধু মৃত্যুর ফাদে আটকে পরার সময় গুনা। কেনো বললাম জানেন?

বললাম এ কারনে যে, যেভাবে সাইন্স প্রমানের উপর ভিত্তি করে এগিয়ে যায়, ঠিক সেভাবেই অর্থিনীতির সুচকের মাপকাঠির তথ্য প্রমানের উপর ভিত্তি করেই বিশ্ববানিজ্য এগিয়ে বা পিছিয়ে যায়। আর এই প্রমান কি করে পাওয়া যায়? পাওয়া যায় যখন সেটা নির্দিষ্ট পথে খোজা হয়। আর এইপথ কোথা থেকে খোজা হয়? অতীতের সুত্র বা ডাটা অথবা আগামি দিনের সুচক ধরে। যেটাকে বলা হয় ইম্পেরিক্যাল ডাটা। আর তদন্ত গবেষনা ডিপার্টমেন্টে একে বলে কেস হিষ্ট্রি।

কোথায় যেনো একটা ভুল থিউরী কাজ করছে, যা সবাই আন্দাজ করতে পারলেও দেখতে পাচ্ছে না। যে কোনো আলোড়ন প্রথমে মৃদুকম্পন দিয়েই শুরু হয়। একটা সময় আসবে, হয়তোবা সময়টা খুব কাছেই চলে আসছে যখন এই মৃদুকম্পন একটা বড় আলোড়ন হয়ে দেখা দেবে, তখন কেউ আতংকিত থাকবে, আবার কেউ আফসোস করবে। কিছু জিনিষ সময়েই ঠিক করতে হয়, তা না হলে পড়ে অনেক বেশী মুল্য দিতে হয়।

মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ৫ বিলিয়ন উধাও হয়ে যাচ্ছে আমাদের সুচক থেকে। অর্থাৎ বছর শেষে ২০ বিলিয়ন। কারো কলশীতেই যখন পানি থাকবে না, কারাকারি করেও কেউ পানি পাবে না। পানি থাকলেই তো তখন তা পাবার সুযোগ থাকে, কলসীটা যারই হোক। এটা সায়েন্স, কোনো স্লোগান না।

১৮/০৪/২০২০-ঝং

Categories

এই যে ছবিটা দেখছেন? এটা গার্মেন্টস শিল্পের  একটি নীডল আর প্রেসারফুট এর ছবি। ইতিমধ্যে ঝং ধরেছে। এই নীডল আর প্রেসারফুটে যতো ঝং ধরবে, দেশের অর্থনীতিতেও ততোই ঝং ধরা শুরু হবে। এই রকম হাজার হাজার শিল্প কারখানা ঝং ধরার কারনে পৃথিবীর বহু জাতী অর্থনইতিক ধংশের মুখে পতিত হয়েছে আবার যারা এর সুরক্ষা করেছে, তারাই উপরে চলে এসছে। গুটিকতক মানুষকে দিয়ে যেমন একটা বাহিনীকে বিচার করা যায় না, আবার গুটিকতক খারাপ শিল্পপতিকে কাউন্ট করেও পুরু শিল্পকেও বিচার করা যায় না। 

১৪/০৪/২০২০- ডাচ ডিজিজ।

Categories

আজ থেকে ৭ বছর পূর্বের কথা! তখন ভেনিজুয়েলার জিডিপি ছিল ৫.৬৩%। জনসংখ্যার মাত্র ২০% দারিদ্র সীমার নিচে। সৌদি আরবের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেল মজুদ দেশটির! চীন তখন দেশটির খুব কাছের বন্ধু। শক্তিশালী অর্থনীতি! এত তেলের মজুদ! আমেরিকাও ওকে ঘাটাতে চাইতো না!

এখন ২০১৯ সাল। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে দেশটির অর্থনীতি ভেঙে গোরস্থান হয়ে গেছে। কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা যুদ্ধ ছাড়াই দেশটি এখন বিশাল অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। যার পরবর্তী ধাপটির নাম দূর্ভিক্ষ! মূদ্রাস্ফীতি ৮০,০০০% অতিক্রম করেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০১৯ শেষে তা ১০০,০০০% অতিক্রম করবে।

এই সংকটের প্রধান কারণ বলা হচ্ছে দুটি-

১. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থের হিসাবে প্রতিনিয়ত গরমিল।

২. ডাচ ডিজিজ।

ডাচ ডিজিজ রোগটা যেকোনো দেশের জন্য বেশ ভয়ঙ্কর। এই রোগের লক্ষণ ৩টি-

১. দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০% আসবে কোনো একটা নির্দিষ্ট সেক্টর থেকে।

২. জিডিপি বাড়তে থাকবে খুবই দ্রুত। মানুষ তার জীবনযাত্রার মান বাড়াবে। শ্রমিক তার বেতন বাড়াবে আরো সুখে থাকার আশায়। তাদের জীবনযাত্রার সাথে তাল মেলাতে আমদানি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠতে থাকবে।

৩. সমাজের ক্ষুদ্র একটা অংশ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে আর সিংহভাগ মানুষের সম্পদ, উপার্জন কমতে থাকবে।

এই সুখের সংসার ততদিনই টিকে থাকবে, যতদিন একটি নির্দিষ্ট সেক্টর দেশকে ৮০% আর্থিক সাপোর্ট দিতে থাকবে।

ভেনিজুয়েলার ৮০%-ই আসতো তাদের তেল রপ্তানি থেকে। ২০১৪ সালে আরব বসন্তের ঝাকুনিতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমার সাথে সাথেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাদের এত দিনের শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি!

বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ রেট এখন ৮% এর উপরে (সরকারি হিসেব)। রপ্তানি আয়ের ৮১%-ই আসে গার্মেন্টস থেকে। আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিও অন্য যেকোনো দেশের চাইতে বেশি!

এদেশেও ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। ব্যাংকের টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। বিনিয়োগও হচ্ছে বাইরের দেশে। আবার ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির তালিকাতেও ১ নম্বরে বাংলাদেশ! সবচেয়ে বেশি আয় বৈষম্যের দেশের তালিকাতেও বাংলাদেশ উপরের দিকে!

অর্থাৎ আমরা অলরেডি ডাচ ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে গেছি! এখন দরকার সামান্য একটা ধাক্কা, তাতেই...

এই ধাক্কাটা নানাভাবেই আসতে পারে।

কতদিন চলবে এমন সুদিন? আমাদের এই সেক্টরের ভবিষ্যত কী সুরক্ষিত?

অবশ্যই না। এই সেক্টরটা বেদুইনদের মত একদেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে বেড়ায় এর বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ২টি বিষয়ের উপর-

১) Low making cost

২) Low shipment cost

চীন আফ্রিকার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলাকে দখল করে নিচ্ছে। এ বছরেও ৫০ বিলিয়ন ডলার লোন দিয়েছে শুধু আফ্রিকার দেশগুলোর অবকাঠামো ঠিক করার জন্য। সেসব কাজের ঠিকাদারি করছে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোই। বেশ জোরেশোরেই চলছে নির্মাণ যজ্ঞ। বড় বড় ব্রীজ, বিরাট সব পাওয়ার প্লান্টের কাজ চলছে। টাকা দিচ্ছে চায়না, কাজ করছে চায়না, শুধু লোনটুকু ফিরিয়ে দেবে আফ্রিকা! বাজি ধরেই বলা যায়, আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে চীন বিশ্বে নতুন ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে।

চীন জানে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো তাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবে না, যেমনটা পারেনি শ্রীলঙ্কা। লোনের দায়ে হাম্বানটোটা বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে লঙ্কানরা। আফ্রিকার সমুদ্র বন্দর এবং সস্তা শ্রমের দিকেই নজর চীনের।

এইসব সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলো পুরোপুরিভাবে তৈরি করার পরপরই চীন যা করবে তা আমাদের জন্য ভয়ংকর দুঃসংবাদই বয়ে আনবে।

শিল্প বিপ্লবের প্রথম ধাপে ঘটে বস্ত্রশিল্প বিপ্লব। সুতরাং আবারো গার্মেন্টস সেক্টর চলে যাবে চীনের বলয়ে। ইতিমধ্যে ইথিওপিয়ার মত দেশও আমেরিকার কাছ থেকে বড়সড় অর্ডার নিচ্ছে। ওদের মজুরিও আমাদের চেয়ে কম। আফ্রিকা থেকে আমেরিকা-ইউরোপ বেশ কাছাকাছি। সুতরাং কমে যাবে শিপিং কস্ট। ওদের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়লে এবং এই খাতটা একটু ম্যাচিউরড হলেই ইউরোপ আমেরিকার বায়াররা বাংলাদেশের মতো দূরবর্তী দেশে আসবে না- একথা বলাই বাহুল্য।

এভাবে যদি এই সেক্টরটা ধসে পড়ে তাহলে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা কী? ভিয়েতনাম ইতিমধ্যে হেভি ইন্ডাস্ট্রিতে কনভার্ট হয়ে গেছে। ইন্ডিয়া তথ্য প্রযুক্তিতে খুবই স্ট্রং জায়গায় চলে গেছে। ওরা ব্যাকআপ তৈরি করেছে। আমরা কী করেছি?

এখন প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, আয় বাড়ছে বলে কি সবসময় বাড়বে? একসময় এটা স্থির এবং মাইনাস হবেই। ভেনিজুয়েলা ২০১২-তে বেশ সুখে ছিল। এখন? দেশের মানুষগুলো কোনোরকম যুদ্ধ বিদ্রোহ ছাড়াই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে, উদ্বাস্তু হয়ে অন্য দেশে ঢুকে মার খাচ্ছে।

ভেনিজুয়েলা মধ্যপ্রাচ্যের আরব বসন্তের পরোক্ষ শিকার। কোন দেশের কোন ঢেউ এসে এখানে আঘাত হানবে কে জানে! যাতে এখনই আমাদের সাবধানতা প্রয়োজন এবং কেবলমাত্র একটি খাতের নির্ভরতা এড়ানো উচিত আমাদের অন্যান্য খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

আমার মন্তব্যঃ

লোকাল সেক্টর দিয়ে আভ্যন্তরীন চাহিদা হয়তো কিছুটা ঠেকানো সম্ভব কিন্তু ফরেন কারেন্সী দেশে প্রবাহ না করতে পারলে না অনেক কিছুই করা সম্ভব হবে না। বাহিরে লেখাপরার ব্যয়, সাস্থ খাতে বাহিরের চিকিতসা বনাম মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টস আমদানী, পেট্রোলিয়াম কোনো আইটেম অথবা এমন সব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ যা অন্য দেশ থেকে আমাদের আমদানী করতে হবে লোকাল সেক্টরকে জীবিত রাখতে, সেই সব মালামালের জন্য আমদানীতে ফরেন কারেন্সী না থাকলে আমাদের পক্ষে কোনো কিছুতেই দারানো সম্ভব না। রেমিট্যান্স প্রায় শুন্যের কোটায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, পাট শিল্প এখন আর সোনার ডিম নয়, চিংড়ি খাত ভংগুর, এখন বাকী আছে শুধু গার্মেন্টস সেক্টর। সেটাও এই করোনা এবার ভালোভাবেই আক্রান্ত করেছে।

যদি একে হাতছারা করি, তারপর কি? অনেক বিজ্ঞজনেরা অনেক কিছু না জেনেই অনেক মন্তব্য করেন বটে, কিন্তু যেদিন নিজের প্লেটে আর আগের মতো বিরিয়ানী আর পিজ্জা উঠবে না, তখন মনে হবে- সোনার ডিম পাড়া মুরগীটা গেলো কই?

 (লেখাটা আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের এক মালিক নজরুল ভাই এর হোয়াটস আপ গ্রুপ থেকে নেয়া)

১৪/০৪/২০২০- চৌরাস্তার বিড়ম্বনা 

Categories

দিন হোক আর রাত হোক, প্রাকৃতিক দূর্যোগ থাকুক আর নাইবা থাকুক, কোনো এক "লক্ষ্য"কে সফল করার জন্য যখন কেউ যাত্রা করে, আর যাত্রার পথে যখন সে কোন এক চৌরাস্তার মধ্যে এসে দাড়ায়, তখন লক্ষ্যের দিকে যেতে সে কোন রাস্তা বেছে নিবে সেটা নির্ভর করে রাস্তাটা সে চিনে কিনা বা তার ধারনা আছে কিনা। যদি জানা থাকে, তাহলে মুল লক্ষ্যে যেতে কোন অসুবিধা নাই, কিন্তু যদি সঠিক নিশানা জানা না থাকে, তাহলে তার ভুল রাস্তা বেছে নেবার কারনে তার মুল লক্ষ্য তো দূরের কথা ভুল রাস্তায় গিয়ে আরো কতই না বিড়ম্বনায় পরতে হয়, সেটা সে ঐ চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে কল্পনাও করতে পারে না। যে যাত্রার উদ্দেশ্য ছিলো মুল লক্ষ্যে পৌঁছানো, তখন আর তার সেই মুল জায়গায় পৌঁছানো হয়ত হয়ে উঠেই না, বরং এর পর থেকেই শুরু হয় প্রতিটি পদক্ষেপ ভুলে ভরা বিড়ম্বনা।  আর সেখানে পৌছতেই যদি না পারা যায়, তাহলে সেই সব যাত্রার কোন মুল্য নাই। তাই চৌরাস্তায় এসে কোনটা নিজের মুল গন্তব্যের রাস্তা তা জানা খুবই প্রয়োজন। নিজের এই চৌরাস্তার সঠিক দিক না জানার কারনে চলার পথে অনেকের কাছেই হয়তো আপনি সঠিক নিশানার দিক জানতে চাইতেই পারেন, কিন্তু সবাই যে আপনাকে সঠিক নিশানা দিতে পারবেন এটাও সঠিক না। হতে পারে কিছু আনাড়ি অপরিপক্ক আর অনভিজ্ঞ জ্ঞানহীন মানুষ সর্বজান্তার মতো মনে মনে আন্দাজ করে আর বুদ্ধিদীপ্ত কালো মুখোশ নিয়ে জ্ঞান গম্ভীর বিবেচনায় আপনাকে একটা ভুল রাস্তার দিকে প্রবেশ করিয়ে দিল। তার তো কোনো ক্ষতি হলো না, কিন্তু তাকে আপনি বিশ্বাস করে আপনি যে ক্ষতির মুখে পতিত হলেন, সেটার মাশুল অনেক বড়। আপনি না জানার কারনে ইচ্ছেমতো আন্দাজ করে যদি ভুল রাস্তায়ও যেতেন আর যতোটা ক্ষতিগ্রস্থ হতেন, এসব বিবেকহীন মানুষের কারনে আপনি একই রকম ক্ষতিগ্রস্থ হবেন সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নাই। তাই, কোন পথটা সঠিক আর কোন পথটা সঠিক নয়, এটা জানা অতীব জরুরী মুল লক্ষে পৌঁছানোর জন্য। এখানে আরো একটা বিষয় মাথায় রাখা দরকার যে, আপনার গন্তব্যস্থানের দিক সঠিকভাবে দেখিয়ে দেয়ার জন্য যে সবসময় বয়স্ক আর বুদ্ধিজিবী মানুষেরই দরকার তা কিন্তু নয়, হতে পারে একটা আনাড়ি বাচ্চাও আপনাকে সঠিক দিকটা দেখিয়ে দিতে পারে যা কোনো বয়স্ক ব্যক্তি যার ঐ রাস্তা গুলির সঠিক গন্তব্য দিক সম্পর্কে কোনো ধারানা নাই। তাই কোনো ক্রান্তিলগ্নে দিক নির্দেশনার জন্য এক তরফা বিবেচনা না নিয়ে বিভিন্ন শ্রেনীর মতামত নিন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন আপনি নিজে। যেহেতু আপনি চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন, এবং আপনি জানেন না কোনটা আপনার রাস্তা, সেহেতু কারো উপর না কারো উপর আপনাকে নির্ভর করতেই হবে। তাই ভালো উপদেষ্টার সংগী হোন। বিপদে টাকার সাহাজ্যের চেয়ে একজন বুদ্ধিদাতার ভুমিকা অনেক বেশী গুরুত্ত পূর্ন।  

কথাগুলি কেনো বললাম, সেটা এবার বলি। করোনা ভাইরাসের কারনে সারা বিশ্ব এবার এক সাথে যুদ্ধ করছে। এই যুদ্ধটা এমন যেখানে মানবিকতা দেখাতে চাইলেও অনেকের পক্ষে তা দেখানো সম্ভব না। প্রতিটা ব্যক্তি পর্যায় থেকে আরম্ভ করে রাজ্য পর্যন্ত সবাই যার যার তার তার, এই চিন্তায় মশগুল। শুধুমাত্র সুস্থভাবে বেচে থাকাই যেনো একটা বাহাদুরি। খেয়ে দেয়ে সুস্থ হয়ে বেচে থাকলেই কেবল আপনি আগামীকালের সকালটা উপভোগ করতে পারবেন। তাই এ মুহুর্তে ব্যক্তি পর্যায়ের একক সিদ্ধান্তের চেয়ে রাজ্য পর্যায়ে সামিগ্রিক বুদ্ধিদীপ্ত সঠিক সিদ্ধান্ত অনেক বেশী কার্যকর উত্তোরনের জন্য।

আমরা এখন চৌরাস্তার বিড়ম্বনায় দাঁড়িয়ে। কোন রাস্তায় হাটলে আমি এবং আমার রাজ্য সঠিক গন্তব্যে গিয়ে পৌছতে পারবো এটা এখন সবচেয়ে বেশী দরকার। কেনো জানি মনে হচ্ছে- ঠিক রাস্তায় হাটছি না। একটা ভুল রাস্তায় প্রবেশ করে ফেলছি।

১৩/০৪/২০২০-করোনা এবং গার্মেন্টস শিল্প

যে যাইই কিছু বলুক আমাদের এই গার্মেন্টস শিল্পকে ব্যাংগাত্তক করে, কেউ একে রক্তচোষা মালিক পক্ষ বলেন, কেউ কেউ মনে করে এই শিল্পের মালিকগন মাসে মাসে কোটি কোটি টাকা আয় করেন আর ঘুরে বেরায়। যারা এইসব কথা বলেন, তারা এর সেকটরে ১% জ্ঞান রাখেন না বলেই আমার ধারনা। যে দেশে ৮৬% ফরেন কারেন্সী আয় করেন যে সেক্টর, যে সেক্টর আমাদের অন্যান্য খাতের জরুরী জিনিষ ক্রয়ের নিমিত্তে ফরেন কারেন্সি সরবরাহ করে, যে সেক্টর দেশের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশী কারেন্সীর ব্যবস্থা করে, যে সেক্টর আপনি যে গাড়িটা চালান তার এবং সেটার পেট্রোল অকটেন কেনার ডলার আনে, সেই সেক্টরকে অনেকেই মুল্যায়ন করে বলে মনে হয় না। বর্তমান প্রতিযোগী গ্লোবাল মার্কেটিং এ যে এই সেকটর দাঁড়িয়ে আছে, সেটা তাদের নিজেদের পরিশ্রমের ফল।

এদেশে গার্মেন্টস ছাড়াও আরো অনেক সেক্টর আছে যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন। সে সব কর্মচারির দায়দায়িত্ত অই সব সেক্টরের মালিকগন কেনো নিচ্ছেন না, সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসে না। আবাসন খাত, কন্সট্রাকশন খাত, কৃষি খাত, চামড়া খাত, আরো অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের কথা তো কেউ বলেন না যে, তারা কেনো এই সব শ্রমিকদের দায় দায়িত্ত নেয় না?

একদম ক্ষুদ্র একটা উদাহরণ দেই, যারা এতো বড় গলায় বাহাদুরী করে কথা বলেন, তাদের বাসার যে ৩/৪ জন ছুটা বুয়া কাজ করে, সেই সব ছুটা বুয়ার আগামী তিন মাসের বেতন ভাতা যদি আজকে দিতে বলা হয় কোনো কাজ না করিয়ে, অথবা বলা হয় যে, কেউ ঐ সব ছুতা বুয়ার যে টাকাতা দিতে হবে তা সরকার বা অন্য কোনো লোক ধার দেবেন কিন্তু টাকাতা পাবে সরাসরি বুয়ারা কিন্তু লোনটা হবে গৃহকর্তার নামে, তখন তারা এক নিঃশ্বাসে বলবেন, আরে, কাজ করে নাই তাহলে আমি তিন মাসের বেতন ভাতা সেটা কিনা প্রায় হাজার বিশেক টাকা আমি দেবো কেনো? কিন্তু অন্যের বেলায় ঠিকই মন্তব্য করবেন, যাদের ঘামে আজ এই সেক্টরের মালিকরা কোটিপতি, তারা এই ভার নিবে না কেনো? কই, আপ্নারা যারা এতো লম্বা লম্বা কথা বলেন, তারা উদ্যোক্তা হন না কেনো? পরের গোলামি না করে দিন না একটা গার্মেন্টস কারখানা? আপ্নারাও কোটি পতি হয়ে যান!! খালি ফেয়ার এন্ড লাভলী মেখে ফেসবুক কাপালেই ইন্টেলেকচুয়াল হওয়া যায় না।

আমার এই মন্তব্য সবার বেলায় প্রযোজ্য না, কিছু কিছু লোক আছে যারা গোলামি করতে পছন্দ করে কিন্তু যার গোলাম  তাকে সে ঘৃণা করে। তার ঘৃণার একটা কারন হচ্ছে- সে কেনো পারবেনা, আর অন্য কেনো পারলো। আর যেহেতু সে নিজে পারলো না, তাই, যখনই পারো, মারো গুতা। আবারো ছোট আরেকটা উদাহরণ দেই? আমাদের প্রানপ্রিয় সেনাবাহিনীর নামেও কিন্তু কেউ কেউ কথা বলার সময় কম কয় না? কিন্তু বিপদের বেলায় এই বাহিনি ছাড়া চলে না। সার অব্যবস্থাপনা? আর্মি। বন্যা? আর্মি। মহামারী? আর্মি। যেই বিপদ শেষ, আর্মি আবার কেডা। ঠিক এইরকম, যখন ডলার লাগবে, গার্মেন্টস শিল্প, যখন রিজার্ভ বাড়াতে হবে, এই শিল্প,। চাকুরী নাই? তো গার্মেন্টস তো আছে। আবার এই শিল্পকে কিভাবে চেপে ধরা যায়, কথার ফুলঝুরি আর মাটিতে পড়ে না। অনেক শিক্ষিত মানুষের মুখেও এই রকমের কথা শুনি যিনি গার্মেন্টস এর টার্মনোলজিই জানে না। এলসি কি, ইউপাস কি, শোর টু শোর কি, ব্যাক টু ব্যাক কি, কমপ্লায়েন্স কি, ইডিএফ কি, ইউডি কি, এফ ও বি কি, থার্দ পার্টি কি, কিছুই না। কিন্তু কথা যখন বলে, মনে হয় পায়ের নীচে রাজপ্রাসাদ।

অথচ গার্মেন্টস শিল্প একটা প্রতিনিয়ত চেলেঞ্জের মুখে কাজ করছে। কখনো বিদেশীদের দাবীর মুখে একর্ড, এলায়েন্স আরো কত যে বাহানা। কই ওইসব বায়াররাও তো এতোদিন মানবতা, সোস্যাল রাইটস নিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে, ১৮ বছরের নীচে শ্রমিক নেয়া যাবে না, একর্ড কোয়ালিফাই না হলে অর্ডার দেওয়া যাবে না, ইত্যাদি। তারাও তো এখন তাদের আওড়ানো বুলির ধারে কাছেও নাই। তারা তো তৈরী পোষাকগুলিও নিতে অস্বীকার করছে!! আর এবার? এই করোনা ভাইরাসের প্রভাবে খুব বেশী দেরী নাই যে, এটা আমরা পসিবল কম্পিটিটরদের কছে মার্কেট হারাতে বসেছি। এখন খালি সময়ের ব্যাপার।

একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরছিঃ গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের গার্মেন্টস এর যারা প্রতিযোগী দেশ, তাদের করোনা পরিস্থিতিটা একবার দেখুন। তাহলে বুঝা যাবে, আমাদের থেকে এই অর্ডার ঐসব দেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা যুক্তিসংগত।

দেশ/ আক্রান্ত সংখ্যা/ মৃত্যুর সংখা/ টেস্ট এর সংখ্যা /পারসেন্টেজ হার

** বাংলাদেশ- ৮৬০/৩৯/১১২২৩ / ৭.৭%

ক। কম্বোডিয়া- ১২২/০ / ৫৭৬৮/ ২.১%

খ। ভিয়েতনাম- ২৬৫/০ /১২১৮২১/ ০.২২%

গ। শ্রিলংকা- ২১৭/৭ /৪৫২৫/ ৪.৮%

ঘ। ইথিউপিয়া-৭৪/৩/ ৫৪১০/ ১.৩৫%

চ। তাইওয়ান- ৩৯৩/ ৬ /৪৭২১৫/ ০.৮৩%

ছ। মায়ানমার ৪১/৪

জ। ইন্ডিয়া- ৯৬৩৫/৩৩১/১৮১১১১ / ৫.৩১%

এর মধ্যে আরো একটা খবর দিয়ে রাখি-

শিল্প বিপ্লবের প্রথম ধাপে ঘটে বস্ত্রশিল্প বিপ্লব। সুতরাং এই বিপ্লবে গার্মেন্টস সেক্টর চলে যাবে চীনের বলয়ে। চীন আফ্রিকার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলাকে দখল করে নিচ্ছে। এ বছরেও ৫০ বিলিয়ন ডলার লোন দিয়েছে শুধু আফ্রিকার দেশগুলোর অবকাঠামো ঠিক করার জন্য। সেসব কাজের ঠিকাদারি করছে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোই। বেশ জোরেশোরেই চলছে নির্মাণ যজ্ঞ। বড় বড় ব্রীজ, বিরাট সব পাওয়ার প্লান্টের কাজ চলছে। টাকা দিচ্ছে চায়না, কাজ করছে চায়না, শুধু লোনটুকু ফিরিয়ে দেবে আফ্রিকা! বাজি ধরেই বলা যায়, আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে চীন বিশ্বে নতুন ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। চীন জানে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো তাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবে না, যেমনটা পারেনি শ্রীলঙ্কা। লোনের দায়ে হাম্বানটোটা বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে লঙ্কানরা। আফ্রিকার সমুদ্র বন্দর এবং সস্তা শ্রমের দিকেই নজর চীনের। এইসব সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলো পুরোপুরিভাবে তৈরি করার পরপরই চীন যা করবে তা আমাদের জন্য ভয়ংকর দুঃসংবাদই বয়ে আনবে।

ইতিমধ্যে ইথিওপিয়ার মত দেশও আমেরিকার কাছ থেকে বড়সড় অর্ডার নিচ্ছে। ওদের মজুরিও আমাদের চেয়ে কম। আফ্রিকা থেকে আমেরিকা-ইউরোপ বেশ কাছাকাছি। সুতরাং কমে যাবে শিপিং কস্ট, কমে যাবে লেবার কস্ট। ওদের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়লে এবং এই খাতটা একটু ম্যাচিউরড হলেই ইউরোপ আমেরিকার বায়াররা বাংলাদেশের মতো দূরবর্তী দেশে আসবে না- একথা বলাই বাহুল্য।

রেমিট্যান্স প্রায় শুন্যের কোটায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, পাট শিল্প এখন আর সোনার ডিম নয়, চিংড়িখাত ভংগুর, এখন বাকী আছে শুধু গার্মেন্টস সেক্টর। সেটাও এই করোনা এবার ভালোভাবেই আক্রান্ত করেছে।

যদি একে হাতছারা করি, তারপর কি? অনেক বিজ্ঞজনেরা অনেক কিছু না জেনেই অনেক মন্তব্য করেন বটে, কিন্তু যেদিন নিজের প্লেটে আর আগের মতো বিরিয়ানী আর পিজ্জা উঠবে না, তখন মনে হবে- সোনার ডিম পাড়া মুরগীটা গেলো কই?

০২/০৪/২০২০-লোভ একটা লালসার নাম

Categories

লোভ একটা লালসার নাম, লালসা একটা হিংসার নাম। আর এই হিংসা থেকে ভেংগে যায় বন্ধুত্ব, ভেঙ্গে যায় টোটাল সিস্টেম, সৃষ্টি হয় শত্রুতা।  শত্রুতা যখন একবার সুপ্ত বীজের মতো রোদ, মাটি আর পানি পেয়ে বসে তখন এই শত্রুতা এক ভয়ংকর বিষবৃক্ষ হয়ে সমাজে চারিদিকে কুকর্মই ফল হিসাবে একের পর এক সর্বোনাশ প্রশব করতে থাকে। আর প্রতিটি কুকর্ম মিথ্যর মুখোশ আর অপরাধের খোলস পড়েই আমাদের চারিপাশে ক্রমাগত চক্রাকারে সংঘটিত হতে থাকে। অথচ যারা এই মিথ্যা আর অপরাধের সাথে গোচরে বা অগোচরে জড়িত তারা জানে না যে, মিথ্যার রঙ যতোই সুন্দর হোক, সত্য তার আসল চেহারা নিয়েই বেরিয়ে আসে, সত্য বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। কেউ যখন গল্প বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে, হয় সে সত্য বলছে, না হয় পুরু বানিয়ে সত্যের মতো মিথাকে সত্য বানানোর রুপ দিচ্ছে। এই প্রাকটিস সর্বত্র স্তরেই হয়, ব্যক্তি জীবনে, ঘড়য়া পারিবারিক বা সমাজ তথা রাজ্যের প্রশাসনিক দপ্তরেও।  এতোসব কিছু জেনেও মানুষ, বেশীরভাগ ক্ষেত্রে একটা মিথ্যা বারবার এতোবার বলে যে, মিথ্যেটাই যেনো সত্যি হয়ে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে এমন একটা মিথ্যে যা লালসার জন্যে করা হচ্ছে। আর যাকে বলা হচ্ছে সেও হয়তো গভীরে না গিয়ে মিথ্যাতাকেই সত্য বলে মেনে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে একটা ব্যার্থতার পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এটা অপরাধ। আর অপরাধ কখনো খালি হাতেও আসে না আবার কখনো খালি হাতে যায়ও না।

জীবনের অনেক কাহিনী আছে যা রহস্যেঘেরা থাকে। যখন কেউ এই রহস্যঘেরা চাদর উম্মোচন করতে যান, তখন এমন কিছু প্রশ্নের উদয় হয়, যা স্বাভাবিক জীবনের ভীত নড়ে দেয়। এসব রহস্যঘেরা প্রশ্নের উত্তর জানলেও যেমন অসুবিধা আবার নীরব থাকলেও অসুবিধা। কারন নীরবতা অনেক বড় বড় ভয়ংকর অপরাধের জন্ম দেয়। এই সময় যা ঘটে যেতে পারে তা হচ্ছে বিদ্ধেষের আগ্নেয়গিরির উত্থান। আর এই আগ্নেয়গিরির লাভা যখন যখন নিজের ভিতরে ফুসে উঠে, তখন লাভাকে হয় নিজে সামাল দিতে হয়, আর তা না হলে অন্যের ঘাড়ে তুলে দিতে হয়। অন্যের ঘাড়ে তুলে দিতে না পারলে শেষ অবধি সে এমন একটা ভুল জায়গায় গিয়ে ভুল রাস্তায় উদ্গীরন হয় যার নাম 'পতন'।

এই 'পতন' যখন নিজের মন আর বিবেক মেনে নিতে পারে না, তখন সমাজের প্রতিটি স্তরেই কোনো কারন ছাড়াই প্রিম্যাচিউরড বেবি হিসাবে জন্ম দেয় এক অনিয়ন্ত্রিত রোগের, যার না, 'রাগ'। রাগ একটা বিষাক্ত ফল, এটা মনজমিনে পোতা উচিতই না। এটা সবার আগে নিজের অস্তিত্বকেই শেষ করে দেয়। তারপর পথে যাইই পায় সেটাকে পায়ে ঠেলতে ঠেলতে ধ্বংস করতে থাকে। রাগ হচ্ছে একটা রাক্ষস, যে সর্বোনাস করে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি অনেকটা সেই রোগের জন্ম দিচ্ছে সময়ের প্রতিটি মুহুর্তে।

সময় হচ্ছে সবচেয়ে বড় ভিলেন। যখন কোনো মানুষের দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে, সে সব সময়ই চায় যে, সে অন্য কারো সাথে তার এই দুক্ষটা, কষ্টটা শেয়ার করতে। কেউ তো থাকবে যে, ওর কথা শুনবে। বুঝুক না বুঝুক সেটা আলাদা ব্যাপার, কষ্ট লাগব করুক বা না করুক সেটাও আলাদা ব্যাপার। কিন্তু সময়ের সুযোগ নিয়ে যখন কেউ এর অপব্যবহার করে, কিংবা শুনেও কিছু না করার প্রত্যয়ে অবিচল থাকে, তখন এই 'সময়'টাই একসময় ভিলেন হয়ে এমনভাবে তার চোখের সামনে আবির্ভুত হয় যে, সবকিছু তখন নাটকই মনে হবে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে 'নাটক' আর 'বাস্তবতা' কখনোই একে অপরের সম্পুরক নয়। তখন "সময়" কিছু নাটক এমনভাবে হাজির হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই কি সব সত্যি অথবা এটাই কি সব মিথ্যা? নিজের উপর নিজের তখন এতোটুকুই অভিসম্পাত দিতে ইচ্ছে করবে, মনে হবে, এই পৃথিবীতে বেচে থেকে কি লাভ? যখন বেচে থাকার মতো লোভ আর কারো থাকে না, তখন সে হয়ে উঠে সবচেয়ে বড় হিংস্র প্রানিদের মধ্যে একজন।

তাই সময়ের ডায়াল কাটায় যে ঘটনা ঘটে যায়, তাকে আবেগের উচ্ছাসে বা লোভের লালসায় কিঙ্গা মিথ্যার জাল দিয়ে বুনানো উচিত না। কারন, হাওয়া যখন কারো নামে গরম হয়, তখন আমরা অনেকেই বলি, শনির দশা চলছে। কিন্তু শনি এমন এক হাওয়ার নাম যে, এই হাওয়ায় অনেকের নামও গরম হয়ে উঠতে পারে। কে কতগুলু চায়ের কাপের সাথে জড়িত তার উপর নির্ভর করে কতটুকু গরম হাওয়া কার কাপে ঝড় তুলবে।

৩১/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-৩

যাই হোক, আমি আমার সংসার ছাড়ার সাথে সাথেই বুঝলাম, আমার সবকিছু মিথ্যা হয়ে গেছে। আমি আমার অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলেছি। অভিমান ছিলো কানায় কানায় ঠিকই কিন্তু এখন আমার অভিমানটা আলো আধারের ছায়ার মতো কষ্ট আর বিষন্নতায় পরিনত হলো। গতকাল সকালে যে একাকীত্ততা নিজের দম বন্ধ করে ফেলেছিলো বলে মনে হয়েছিলো, আজ মনে হল, আমার শ্বাস আর চলছেই না। কারন তুমিই ছিলে আমার অক্সিজেন, আমার শ্বাস। চারিদিকে শত হাজার মানুষের পরিচিত মুখগুলি যেন আমাকে ব্যাঙ্গ করে এটাই বলছিল, 'কি হারাইয়াছো জীবনে? আলো? নাকি কান্ডারী? কি ফেলিয়া আসিয়াছো, কোথায় ফেলিয়াছো?'

বড় একা মনে হচ্ছিলো আমার।

কোথাও আমার কোন শান্তি ছিল না। অথচ শান্তির জন্য বারবার আমি একই ভুল করছিলাম। আবারো আমি সেই অজানা কুচক্রিকেই শান্তনার আধার মনে করে তারসাথে বারবার যোগাযোগ করছিলাম। আর এই কুচক্রি ষড়যন্ত্রকারিনী আমার পিছ তখনো ছাড়ে নাই। আমাকে সর্পবিষ দিয়ে যতোক্ষন না ধংশ করা হচ্ছে, তার যেন নিস্তার নাই। আমার এই কষ্টের কথা, আমার এই দিনদূর্দশার কথা আমি এই গুরুসম সর্পিনী ছাড়া আর কাউকে তো শেয়ার করতেও পারছিলাম না। অথচ তখনো আমি বুঝতে পারি নাই, কি বিষে আমাকে ধংশন করছে। এর নাম, কুচক্রির লালসার বিশ, এর নাম ষড়যন্ত্রকারিনির হিংসার বিশ। আমি সেই লালসার বিষে জর্জড়িত হিংসার ঝড়। অথচ তার সাথে আমার না ছিলো কোনো কালে পরিচয়, না ছিলো তার সাথে আমার কোনো কিছু নিয়ে হিসাবের গড়মিল।

কতবার কেদেছি তার কাছে আমার এই অসহাত্তের চিত্র বর্ননা করে, কতবার কেদেছি এই বলে যে, কোনোভাবে আবার আমি আমার সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে পুনরায় ফিরে যেতে পারি কিনা তোমার কাছে। কিন্তু আমার কুচক্রিকারিনীর এক ফোটা মনও গলে নাই। বারবার আমাকে সে এমন কিছু তথ্য আমার কানে চোখে ঢেলে দিতেছিল যা ছিলো তোমার কষ্টের মুহুর্তের কিছু অভিযোগ। কিন্তু তোমার কষ্টের আবদারগুলি কখনো আমাকে জানিয়ে এই কথাটা বলে নাই যে, আমার বিরহে তুমিও কাতর। আমার বিচ্ছেদে তুমিও শোকাবহুল একজন মৃতলাশ। এটা কখনো সে আমাকে জানতে দেয় নাই, তুমি আকুতি করছো, মিনতি করছো, আমি যেন আবার ফিরে আসি। বরং আমার প্রতি তোমার ঘেন্নার অভিব্যক্তিগুলিই বারবার জানিয়ে এটাই প্রমান করার চেষ্টা করেছে, তোমার জীবনে আমি কিছুই না, আমার সব প্রয়োজন তোমার কাছে ফুরিয়ে গেছে।

আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার পৃথিবী থেমে গিয়েছিল। বারবার আমার মনে হয়েছে, আমি কি তোমাকে কখনই ভালবাসি নাই? আমি কি কখনো তোমার মনের ভিতরে এতটুকু স্থানও দখল করি নাই? যদি সেটাই হয়, তাহলে ওইদিন প্রত্যুষ্যে কেনো তুমি বলেছিলে, 'আমি আছি, ভয় পেয়ো না?'।

দিন যায়, রাত আসে আবার দিন আসে। সময় ঠিকই পেরিয়ে যায় সবার কিন্তু আমার সময় একেবারে স্থবির হয়ে দিন আর রাত এক হয়ে গেছে যেখানে না আছে নাওয়া, না আছে খাওয়া, না আছে কোনো সুখ। অবিরত অশ্রুপাতই যেনো আমার এই নয়নের একমাত্র কাজ।  গভীর রাত। কোনো ঘুম নাই আমার চোখে। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমার বুকের পাজরগুলি যেনো ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে একটা দলা পাকিয়ে আছে। যেখানেই হাত দেই, সেখানেই যেনো একটা চাপা ব্যথা অনুভব করি। আশেপাশের মানুষগুলি আমার কিছু তো একটা হয়েছেই এটা বুঝতে পারছে কিন্তু আমি যতোটা পারছি যেনো কিছুই হয় নাই এমন একটা অভিব্যক্তি মুখে প্রদর্শন করে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু তোমাকে আমি এক মুহুর্তের জন্যেও ভুলি নাই।

বারবার আমি এই কুচক্রিকারিনীর শরনাপন্ন হয়েছি, কোনো মেসেজ, কোনো আকুতি, কোনো মিনতি, কোনো সুখের খবর তোমার কাছ থেকে তার মাধ্যমে আমার জন্য এসেছে কিনা। আমি জানতাম, তুমি এই কুচক্রিকারিনীর সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছো। আমার কারনেই হয়তো রাখছো। ফলে এই সর্পসম ষড়যন্ত্রকারীনীই ছিলো আমার একমাত্র ভরষা যার থেকে কিছু হলেও আমি তোমার ব্যাপারে জানতে পারি। কিন্তু এই কুচক্রিকারিনী বারবার যা সত্য নয় সেটাই সত্য বলে আমাকে জানিয়েছে আর প্রকৃত সত্যটাকে সগোপনে লুকিয়ে আমার আর তোমার মাঝে বিস্তর একটা মরুভুমির অঞ্চল তৈরী করে ফেলেছে।

তুমি হয়তো জানো না, এর মাঝে কত কিছু ঘটে যাচ্ছিল। একদিকে আমার ফিরে যাবার প্রবল ইচ্ছা, অন্যদিকে তোমার না ফিরে আসার প্রবল অপমাননা আমাকে এক রকম দিশেহারা করে ফেলেছিলো। এরই মধ্যে আমার এই কুচক্রিচারিনী আমাকে আরেক পরিকল্পনায় সামিল করে দিলো। যেহেতু আমি তার কোনো পরিকল্পনাই প্রথম থেকে বুঝতে পারি নাই, ফলে ফিরে যাবার প্রবল মানসিকতায় আমি তার প্রতিটি পরিকল্পনাকে আমার জন্য মংগলময় এটা ভেবেই নির্বোধের মতো সায় দিয়ে যেতে থাকলাম। কিন্তু তুমি তো আর নির্বোধ ছিলে না। আমার বেলায় কুচক্রিকারিনী সফল হলেও তোমার বেলায় সে নুন্যতম হারেও সফল হতে পারে নাই। আমাকে নিয়ে তার দ্বিতীয় পর্বের পরিকল্পনা ছিল, কোনো না কোনোভাবে কুচক্রিকারিনী আমাকে তার আবাসস্থলের কাছেই রক্ষিতা সরুপ রেখে দেয়া। কিন্তু শর্ত ছিলো একটা ব্যবসার। আর সেই ব্যবসার মুলধন জোগাবে তুমি যদি তুমি তখনো আমাকে চাও। কি অদ্ভুত আমার ভাগ্য যে, এতোদিন যখন কোনোভাবেই আমি তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না, হটাত করে একদিন তুমি আমাকে আমার এই ভার্চুয়াল লাইনে মেসেজ দিয়ে কত কথাই না বললে। চোখের জল আর ধরে রাখতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি আর আগের মতো তোমাকে ভরষাও করতে পারছিলাম না কারন তুমি ইতিমধ্যে আমাকে আমার অভিযোগের এমন সব প্রমানাদি উপস্থাপন করতেছিলে যা আমি আমার রাগ, অভিমান থেকে তোমার নামে যা সত্য নয় সেটাও বলেছি, আবার যা সত্য সেটাও বলেছি। আমি বুঝতে পারছিলাম না, তুমি এসব মিথ্যা অভিযোগ আর মিথ্যা কল্ কাহিনীর মতো নালিশ শুনে তুমিই বা কতটুকু আর আমার ছিলে।

তুমি আমাকে আবারো ফিরে আসার কথা জানালে আমি একদিকে উড়ে চলে আসার জন্য মানসিকভাবে যেমন প্রস্তুত ছিলাম আবার অন্যদিকে মনে একটা ভয় ছিলো, আবারো দ্বিতীয়বারের মতো এমন কোন মারাত্মক ভুল করছি নাতো যেখানে আবার আমি চিরতরে তোমার রাগের শিকার হই? আমাকে আমার এই বন্ধুস অথচ কুচক্রিকারিনী শিখিয়ে দিয়েছিলো, নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে, আবার প্রত্যাখ্যাত হবার ভয়ে আমি যেনো তোমার কাছ থেকে পুর্বেই এমন কিছু শর্ত আরোপ করি যাতে তুমি যদি আমার সাথে পুনরায় প্রতারনা করেই ফেলো, আমি যেনো পথের মধ্যে আবার পড়ে না থাকি। আর সেটা হল, দশ লক্ষ টাকার একটা ব্যবসা। যার পরিচালনায় থাকবে আমার জ্ঞান দানকারী কুচক্রিকারিনি আর আমি থাকবো তার পাশে। তোমার যখন খুশি আসবে আমার কাছে কিন্তু দেহে দেহে আনন্দ হবে আমার কুচক্রিকারিনীর সাথে। আমাকে আমার জ্ঞান দানকারী কুচক্রীর প্রয়োজন এজন্য যে, সে একা নয়, তার স্বামী আছে। তার দরকার একজন উছিলার মতো মানুষ যেখানে সে নীরবে গোপনে অভিসার করে আবার নিরাপদ্র নিজ গৃহে ফিরে আসতে পারে। আর এক্ষেত্রে আমিই ছিলাম সেই নাটকের সবচেয়ে ভাল স্টেজ। এটাই ছিল তার পরিকল্পনা। আর অন্তরমুখী পরিকল্পনা ছিলো এই কুচক্রীর যে, দশ লাখ টাকা পাওয়ার পর দেখা যাবে আমরা দুইজন মিলে তোমাকে কতটুকু রাস্তায় নামাতে পারি।

তোমাকে রাস্তায় নামানোর এই মহাপরিকল্পনায় আরো অনেক জঘন্য জঘন্য মাষ্টার প্ল্যান ছিলো যা আমি কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম না। আর এখানে বলতেও পারছি না। তবে কোন একদিন যদি আবার দেখা হয়, বিনোদনের জন্যে হলেও আমি তোমাকে বল্বো আর মুচকি মুচকি হাসবো। আমি জানি, তুমিও হাসবে। কারন যে মানুষটি এই কুচক্রিকারিনীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে সাহাজ্য করছে, ভবিষ্যতেও করবে বলে আশা দিয়ে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কিভাবে সে এরুপ পরিকল্পনা করতে পারে এটা আমার মাথাতেই আসছিলো না। কিন্তু তুমি তোমার অবস্থান কিভাবে সামাল দিবে সেটা তোমার ব্যাপার বলে আমি আসলেই গভীরভাবে এ ব্যাপারটা নিয়ে কখনো ভাবি নাই। কিন্তু একটা জিনিষ আমি অনেক পড়ে বুঝেছিলাম যে, তুমি বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক, এই কুচক্রীর অবস্থানটা ঠিক ধরতে পেরেছিলে। তুমি ধরতে পেরেছিলে, কে কিভাবে কোন খেলাটা খেলে যাচ্ছে, কিন্তু তোমার কাছে দরকার ছিলো অকাট্য প্রমানের।

যাই হোক, সম্ভবত সেটাই ছিল আমার আর তোমার মধ্যে সর্বশেষ কথাবার্তা যেখানে আমি বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক এই প্রথম তোমার কাছ থেকে দশ লাখ টাকার একটা ব্যবসা চেয়েছিলাম আমার ফিরে আসার শর্তসরুপ। কারন এভাবেই আমার কুচক্রিকারিনি আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিল। তুমি সমস্ত কিছু বিচার বিবেচনা করে, আমার ভালো মন্দ বিচার করে, আমাকে যুক্তির সাথে এমন করে বুঝিয়ে দিলে যে, তুমি যদি আমাকে ব্যবসার জন্য দশ লাখ টাকা দিতেও চাও, সেটা হবে একটা ভুল পরিকল্পনা। না হবে ব্যবসা, না হবে জীবন গড়া, না হবে সমাজে সুস্থভাবে বেচে থাকা, আর না থাকবে এই মুলধন অবশিষ্ট। আসলে তুমিই ঠিক ছিলে, আমি ছিলাম একটা ভুলের মধ্যে, একটা অভিশপ্ত মানুষের দ্বারা পরিচালিত। কারন সেদিন তুমি আমাকে যেসব তথ্য আর উপাত্ত দিয়েছিলে, তা আমি শত চেষ্টা করেও আমার আপাত শুভাকাংখী কুচক্রির কাছ থেকে জানতে পারি নাই যদিও সেটা আমার জানার অধিকার ছিলো। বারবার সে আমাকে সব কিছু লুকিয়ে গিয়েছিলো যা সে পাচ্ছিল আর অন্যদিকে আমাকে দিয়ে আরো কিছু বেশি পাওয়া যায় কিনা তার চেষ্টা সে সর্বাত্তকভাবে পরিকল্পনায় লিপ্ত ছিলো। আমি তার কোনো কিছুই বুঝতে পারি নাই। তুমি আমাকে ব্যবসা দিতে রাজি হলে না। ব্যবসার পরিকল্পনা ভেস্তে গেলো, সম্ভবত আমিও এই প্রথমবার মনে হলো, তুমি কাজটা ঠিকই করেছো আমাকে ব্যবসাটা না দিয়ে। কারন ব্যবসার কোনো কিছুই আমি বুঝি না। তাও আবার অন্যের ঘাড়ে নির্ভর করে তোমার দেয়া আমার টাকার উপর অন্যের হাতে ব্যবসা।

দিন যায়, সপ্তাহ যায়, হটাত একদিন আমার নতুন সম্পর্কের কথা আসে। ছেলে সুদুর বিদেশের মাটিতে সেটেল্ড। আমার প্রত্যাশার বাইরে এমন একটি সম্পর্ক। ছেলেটি অনেক উচ্চমানের পজিশনে থাকা স্বশিক্ষিত এবং ভদ্র সমাজে উপস্থাপন করার মতো একটি প্রপোজাল বটে। আমার বাবা, আমার মা অতিশয় যেনো খুশি। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না, কিভাবে এই সমন্ধটা একেবারে ঘরের কাছে নিজের চৌকাঠ পার হয়ে আমার অবধি নাগাল পেলো। আর কিভাবেই বা আমার পরিবার এই খরচ সংকুলান করবে যেখানে এক লাখ টাকা একত্রে বের করতেই আমার পরিবার হিমশিম খায়।

বুঝলাম, এবারেও আমার সেই তুমি। রাগ হয়েছিলো অনেক বটে যে, আর ফিরে যাওয়া হল না আমার। কিন্তু এবার ফিরে যাচ্ছি আরেক নতুন জীবনে। চোখের অন্তরালে চলে গেলেও তুমি থাকবে আমার চোখের মনিতে। এই তো আর বেশী দিন নাই। আমার যাওয়ার সময় হয়েই এলো। মিস করবো না কারন সারাক্ষন তুমি আমার আত্তার মধ্যেই আছো।

অনেক কিছুই আর আগের মতো নাই। কিন্তু বারবার মনে পড়ে সেই দিনগুলির কথা। খুব মনে পড়ে তোমাকে। মনে পড়ে অলস দুপুরে শুয়ে শুয়ে তোমাকে ভার্চুয়াল মিডিয়ায় দেখা। মনে পড়ে বিড়ালের বাচ্চার মতো ঘুর ঘুর করে তোমার পিছন পিছন চলা। আমি জানি, আমি এখনো আছি তোমার সেই বিশাল প্রশস্থ বুকের কোনো এক গভীরে। আমি এটাও জানি, তুমি আজিবন থাকবে যেমন আমি আছি। হয়তো আমাদের শুধু জায়গাটা পরিবর্তন হয়েছে বটে কিন্তু এখন আমি আর সেই কুচক্রীর থাবানলের মধ্যে নাই যে চেয়েছিল তোমার ধংশ। আর এখন সে নিজেই ধংশ হয়েছে চিরতরে। হায়েনারা সব সময় অন্যের শিকারকেই খায়, নিজেরা কোনো শিকার করে না। এরা হায়েনা। তবে মানুষরুপী হায়েনারা আবার খাবারের তালিকায় যেমন মানুষ রাখে, তেমনি রাখে অন্যের সঞ্চয়পত্র, অন্যের গাড়ি, অন্যের টাকায় জন্মদিন পালন, অন্যের টাকায় গহনা বানানোর লোভ, অন্যের ফার্নিচার বিক্রির টাকায় লোভ, ছলেবলে কৌশলে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে ব্যবসা নেয়া কিংবা দশ বিশ ত্রিশ লাখ টাকার চাহিদা, আবার কখনো কখন আধুনিক কালের ডিজিটাল ব্যবসার মালিকানা থেকে শুরু করে পশু ছাগল ভেরার খামারেও এদের লোভ কম নয়। কিন্তু যতটুকু জানি, শেষ অবধি এদের ভাগ্যে কিছুই জোটে না, না স্বামী সুখ, না সংসারের সুখ, না মা হবার সুখ না সমাজে বাহাদুরী করার সুখ। এরা যুগে যুগে ঠকবেই কিন্তু কখনো বুঝবে না যে, এরা ঠকাতে গিয়েই ঠকে। এরা জীবনেও সুখি হয় না।

তবে এখনো হায়েনাটা মাঝে মাঝে কাছে ঘেষার চেষ্টা করে। আমি এবার তার সব বানানোর কথার অর্থ বুঝি। আমি এটাও বুঝি কোনটা সে সত্য বলছে আর কোনটা  মিথ্যা। যে কথাটি সে বলছে, আসলে সেটাই মিথ্যা। আর যেটা বলছে না, সেতাই সত্য কিন্তু গোপন করছে। কিন্তু আমি এবার সাবধান।    

৩০/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-২

যেদিন আমি চলে আসবো বলে মনোস্থির করেছিলাম, সেদিন শ্রাবনের রাত্রি ছিলো না। কিন্তু আমার দুই চোখে ছিলো থমথমে মেঘের আভা। আমি আকাশ দেখি নাই সেই রাতে কিন্তু বুঝেছিলাম, হয়তো আকাশে একটি তারাও নাই। প্রখর ইলেক্ট্রিক লাইটে আমার মনে হচ্ছিলো আমার শরীর-মন একটি অন্ধকার ঘরের মধ্যে বন্ধী। আমার চারিপাশে কোথাও কেউ নাই। শরীরের তাপমাত্রা জরের সমান কিন্তু জর ছিলো কিনা বুঝি নাই। আমি মৃত মানুষের মতো একপাশ হয়ে সারাটা রাত কাটিয়ে দিলাম। সকাল হলেই আমি চলে যাবো আমার এই চেনা পরিচিত ঘর থেকে। এই ঘরের প্রতিটি কনা, প্রতিটি আচর আমার চেনা। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে, আগামিকাল থেকে আমি আর এই ঘরটিতে কখনো ফিরে আসবো না। ভাবতেই আমার হৃদস্পন্দন যেনো থেমে গেলো, চোখ মুদে গেলো। মনে হলো, আমার দুটি নয়ন সমস্ত রুদ্ধ প্রীতি তোমার প্রতি সিঞ্চন করে বারবার অশ্রুপাত করছে।

কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, জানি না। ভোর হতে না হতেই ঘরের বাইরে কে যেনো টোকা দিলো। এতো সকালে আজ পর্যন্ত কেউ আমার এই একা ঘরে টোকা দেয় নাই। শরীরটা বড্ড ভারী মনে হচ্ছিলো। প্রচন্ড এক আলস্য নিয়া দরজা খুলতে পৃথিবীর সমস্ত অবাক করার বিষয়ের মতো আমাকে তুমি হতবাক করে দিয়েছিলে। প্রকাশ্য দিবালোকে তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে। কোনো আগামবার্তা নাই, কোনো কথা নাই, কিছুই না। তুমি এতো সকালে এসে আমার ঘরের দরজায় হাজির।

এমনিতেই শরীরে বল ছিলো না, তারমধ্যে অকস্মাৎ তুমি। আমার সারাটা শরীর কেপে কেপে উঠেছিলো, কিছুটা ভয়ে, কিছুটা কষ্টে আর এতোটাই বেদনায় যে, আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরলে, আমি তোমার বুকে একদম মিশে গেলাম, আমার সেই চেনা পরিচিত প্রশস্থ ভালোবাসার বুক। আমি হারিয়ে ফেলবো হয়তো আর কিছুক্ষন পর। তুমি আমাকে কতো আদরের সাথে জড়িয়ে ধরে কতই না আদর করলে। আমার বুকভরা অভিমান, আমার চোখভরা অশ্রু আর দুর্বল শরীরের কাপুনিতে তুমি কিছুই বুঝতে পারলে না, আমি হারিয়ে যাচ্ছি। শুধু, বললে, 'আমি আছি তো, ভয় পেও না'। হ্যা, তুমিই ঠিক, তুমি আছো, আমার সারাটা জীবনেই তুমি আছো, অন্তর জুড়ে আছ, মন জুড়ে আছো, আমার ভাবনায় আছো, আমার রক্তের প্রতিটা শিরায় আছো। দেহের সাথে মিশে থাকার নামই শুধু ভালোবাসা নয়, হাতে হাত ধরে একসাথে রাস্তা পার হওয়াই এক সাথে নয়, আমার প্রতিটি কল্পনায় তুমি ছায়ার মতো আছো। যেখানে তাকাই, আমি সব জায়গায় তোমাকে দেখতে পাই। হ্যা, তুমি আছো, ছিলে আর থাকবেও। তুমি ছিলে আমার বাবার ভুমিকায়, ছিলে আমার ভাইয়ের ভুমিকায়, ছিলে আমার মায়ের ভুমিকায়, তুমি ছিলে আমার প্রেমিক আর নির্ভরতার সবচেয়ে কাছের মানুষটি। আজো তাইই আছো।

তুমি শেষবারের মতো আমাকে বুকে নিয়া, কপালে, মুখে, নাকে, চোখে, সব জায়গায় আদর দিয়ে কিছুক্ষন পর অবশেষে চলে গেলে। আমি যতদূর দেখা যায়, জানালা দিয়ে এই প্রথম তোমার যাওয়াটা দেখলাম। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলাম না। আর হয়তো কখনো তোমার সাথে আমার দেখা হবে না। তুমি এই সত্যটা না জেনেই সমস্ত ভরষা আর ভালোবাস নিয়েই অন্য দিনের মতো চলে গেলে। তুমি জানলেই না , কি রয়ে গেলো আর কি নিয়ে গেলে আর আমিই বা কি করে এটা করলাম। সারাটা দিন আমি কেদেছিলাম। সেদিন আর আমার যাওয়া হলো না।

কিন্তু বুকভরা অভিমান নিয়ে আমি পরদিন কাউকে কিছু না বলে অতিভোরে আমার চেনা পরিচিত ঘরটি ছেড়ে শেষ পর্যন্ত বেরই হয়ে গেলাম। এ খবরটি জানলো শুধু আমার সেই কুচক্রীকারিনী বন্ধুটি আর জানেন আমার ঈশ্বর। কিসের নেশায় যে আমি এতোটা দিকহারা হয়ে গিয়েছিলাম, আজো আমি মনে মনে ভাবি। আমার কেনো একবারের জন্যেও মনে হয় নাই যে, এই কালো মুখোশধারী সর্পহরিনীর সাথে আমার বিস্তর একটা ফারাক ছিল। তার স্বামী ছিল্‌ তার সংসার ছিল। সে তো এসেছিল অভিসার করতে, সে তো এসেছিল গোপন মিশনে। তার তো হারাবার কিছু ছিল না। যদি তার মিশন সার্থক না হয়, সে তো ফিরেই যাবে তার সেই চেনাগৃহে যেখানে অপেক্ষা না করে থাকলেও সামাজিকভাবে দাঁড়িয়ে আছে নিষ্পাপ অথবা আরেক অভিচারী ব্যভিচারক পুরুষ। তাদের মধ্যে ভালোবাসা থাকুক আর নাই বা থাকুক, সেটা কোন মাপকাঠি নয়। তাদের মাপকাঠি সামাজিক একটা বন্ধনে তারা আবদ্ধ। আর এই সামাজিক বন্ধনের কারনেই আমার কুচক্রীকারিনি আজ এই গোপন অভিসারে এসেও ফিরে যেতে পারে নিজ গৃহে। কিন্তু আমি তো ব্যভিচারী ছিলাম না!! আমি তো আমার জায়গাতেই ছিলাম! এই কুচক্রীকারিনী এসেছিলো সদাই করতে, যৌবনের সদাই, ভালোবাসার অভিনয়ের সদাই। আমি কেনো তার কুপরামর্শে আমার সংসার ছাড়লাম? কখনো কি তোমার এ কথাটা মনে হয় নাই যে, যে মহিলা-প্রজাতী তার নিজের স্বামীর অগোচরে নিজের দেহের সদাই করতে কোনো এক অপরিচিতের বাসায় নির্বিঘ্নে পর পুরুষের সাথে নির্ভয়ে আসতে পারে, তার কাছে আবার ভালবাসার মুল্য কি? তোমার কি কখনো মনে হয় নাই, যে, এটাই হয়তো তার প্রথম সদাই নয়? কি করে তুমি ভাবলে যে, সে এই সদাই করতে এসেছে শুধুমাত্র ভালোবাসার কারনে? সে না বুঝে ভালোবাসা, না বুঝে ভালোবাসার কষ্ট। সে শুধু বুঝে তার এই অমুল্য মেয়েলী সম্পদ শুধু লালসার কারনে ভোগ বিলাসের একটা যন্ত্র বিশেষ প্ন্য বটে। আর কিছু না। বেশ্যাদের জীবনের প্রয়োজনে হয়ত বেশ্যাগিরি করতে হয়, এটা অনেকেই করলেও মনে মনে ঘৃণা করে। তারপরেও জীবনের এটা ধরেই নেয়া যেতে পারে যে, সেটা যতোটা না পাপ, তার থেকে বেশি জীবনের প্রয়োজনে বেচে থাকার একটা পথ। কিন্তু এই কুচক্রিকারিনী তো জানতো যে, তাকে দেহ দান করতে হবে, তাকে সব কিছু উজার করে দিতে হবে, কিন্তু তার তো জিবিকার জন্য এইকাজ করার কোনো প্রয়োজন ছিলো না। এর মানে একটাই, সে প্রফেশনাল। আমি এই প্রফেশনাল কুচক্রির কাছে প্রতিনিয়ত হেরে গিয়েছিলাম কিন্তু নষ্ট হয়ে যাইনি।

৩০/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-১

আজ আমার যাওয়ার দিন প্রায় হয়ে গেলো। আমি চলে যাচ্ছি চিরতরে অন্যখানে। সামনে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে আর কি আছে আমি জানিনা। আগে যেমন সন্ধ্যা হলেই অস্থির চিত্তে সন্ধ্যাতারা দেখতাম, পূর্নিমা এলে খোলা হাওয়ায় বসে পুর্ব দিগন্তে বিশাল চাকতির মতো চাদকে দেখতাম, শীতের সকালে শরীরে কাথা মুড়ি দিয়া অগোছালো সপ্নে বিভোর থাকতাম কিংবা বর্ষার রিমঝিম ব্রিষ্টিতে গুনগুন করে একা একাই গান গাইতাম। আজ হতে আর কয়েকদিনের মধ্যে এসব আর আমার হয়ে থাকবে কিনা আমি জানি না। হয়তো ব্যস্ত হয়ে যাবো সংসারের বৈষয়িক কাজে, স্বামীর সেবা শুস্রশায় আর নিজের কিছু একান্ত বেদনাবোধ নিয়ে। তাই আজ এই যাওয়ার সময় আমার বারবার একটা মুখ আমার মানসপটে ভেসে আসছে। আর মনের অজান্তেই দুমড়ে মুচড়ে আসছে একটা কষ্টের অভিজ্ঞতা। বড় কষ্ট হচ্ছে আজ আমার এই ভেবে যে, তোমাকে আমি কষ্ট দিয়েছি। তুমি হয়তো জানলেই না কি কষ্ট আমি নিয়ে আমিও চলে গেলাম, আর আমিও হয়তো শতভাগ জানতে পারলাম না, কি কষ্ট আমি তোমাকে দিয়ে গেলাম। অপমান আর অবসাদে অবনত হয়ে আজ যাওয়ার সময় আমি তোমাকে আমার কিছু অব্যক্ত কথা এই ভাসমান মন্ডলে, ভার্চুয়াল জগতে রেখে গেলাম। যদি কখনো তোমার গোচরে আসে, যদি কখনো আমার কথা ভেবে তোমার চোখ ভিজে আসে, যদি কখনো আমার জন্য আর এতটুকু ভালোবাসা, মহব্বত আর স্নেহ জেগে থাকে, তাহলে শুধু এটুকু অনুরোধ করবো, তুমি আমাকে ভুলে যেও না। আমি ছোট ছিলাম, আমার অভিমান ছিলো, তাই অধিকার নিয়েই না বুঝে সীমার বাইরে গিয়ে এতোটাই পাগলামী করেছিলাম যা আজ কষ্টে আর অভিমানে ভরে আছে সারাটা অন্তর। কিন্তু এর পিছনে না ছিলো আমার বড় ধরনের কোনো ফাকি, না ছিলো তোমার বড় ধরনের কোনো কুট কৌশলতা। বাস্তবিক পক্ষে আমাদের এই অভিমানকে কেউ তার লালসা দিয়ে পুজি করেছিল, যা আমিও বুঝি নাই, তুমিও না।

চারটি বছর আমি তোমার সাথে ছিলাম। আমি এই চারটি বছরের প্রতিটি মূহুর্তের সময়টুকু বিচার বিশ্লেষন করে দেখেছি, জলের সাথে মাছের যে সম্পর্ক, আমার সাথে তোমার ছিলো সে রকমের একটা সম্পর্ক। আমার প্রতিটি শ্বাস, প্রতিটি নিঃশ্বাস বলে দেয়, আমি ছিলাম তোমার প্রতিটি চিন্তায়, এমন কি অবচেতন মনেও। আমার কোনো কিছুর অভাব ছিলো না, তুমি কোনো কিছুর অভাব রাখোনি। কোনটা সম্পদ আর কোনটা সম্পত্তি, কোনটা আমার আর কোনটা তোমার এই তর্কে আমার কখনোই যাবার যেমন দরকার ছিলো না, তেমনি ছিলো না এসব ব্যাপারে আমার কোন আলাদা হিসাব। তুমি ছিলে আমার ব্যাপারে সদাচিন্তিত, কি করলে আমার ভালো হবে, কি না করলে আমার ক্ষতি হবে। আমার ব্যাপারে আমাকে আর আলাদা করে কখনো ভাবার প্রয়োজন ছিলো না আর থাকলেও আমি এসব নিয়া চিন্তা করলেও কোনো লাভ হতনা। আমি ছিলাম গভীর সুখের ছায়াতলে তোমার সুগভীর সহিষ্ণুতার আবরনে। ফলে, কোনোদিন শোনোনি আমি তোমার কাছে কখনো সম্পদ চেয়েছি, কিংবা আমি তোমার সম্পদের পাগল ছিলাম। আমাকে তুমি আদর দিয়েছো, ভালোবাসা দিয়েছো, আর যখন যা লাগে চাওয়ার আগেই তুমি তা দিয়েছো। আমি সুখি এবং খুসি ছিলাম। আমার কোনো কিছুতেই লোভ ছিলো না।

তুমি ছিলে আমার জীবনের রুপকার, আমি জানি, তোমার অন্তরের ভাষা। কিন্তু আমি সেদিন তোমার মুখের ভাষার যে রূপ দেখেছিলাম, তা আমার কখনো দেখা হয় নাই। তোমার রাগ, তোমার চাহনী আর তোমার অভিব্যক্তি আমাকে উদ্বেল করে দিয়েছিল। এই নতুন রূপ আমার আগে কখনো দেখা হয় নাই। তুমি বারবার আমাকে সম্পদ, সঞ্চয়পত্র, সোনার গহনা, ব্যবসা, চাকুরী ইত্যাদির কথা এমনভাবে প্রশ্ন করতেছিলে, যা না ছিলো আমার মনে, না ছিলো আমার মস্তিষ্কে। আমি সঞ্চয়পত্র কি, এর লাভ কি, এর দ্বারা কি করা যায়, আমার কিছুই জানা ছিলো না। তুমিই আমাকে প্রথম সঞ্চয়পত্রের ধারনা দিয়েছো। অথচ কোনো একদিন, আমারই হয়ে আমারই মোবাইল থেকে আমারই জন্যে আমি নাকি তোমাকে আমার অধিক নিরাপত্তার জন্য তোমার কাছে সঞ্চয়পত্র কেনার বায়না করেছি। তুমি একবার ভাবোতো, আমি কি এতোটাই মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিলাম যে, গুটিকতক নোটের জন্য আমি আমার সারা জীবনের নিরাপত্তা আর ভালোবাসার মানুষটিকে চিরতরে হারাবো? এটা ছিলো একটা মানুষের নিম্ন মানসিকতার সর্বোচ্চ উদাহরন যেখানে ষড়যন্ত্রকারীর দুষ্টু বুদ্ধির একটামাত্র বিষের ফল। তোমার এই ষড়যন্ত্রকারিনীর নাম তুমি হয়তো এখন জানো। সে ভালোবাসার অভিনয় করে ঘরে ঢোকেছিল, কিন্তু সে না নিজেকে ভালোবেসেছিলো, না আমার এই সম্পর্ককে। আর না সে তোমাকে ভালোবেসেছিলো। ধরে নাও, আমি তার নাম দিলাম 'কুচক্রকারিনী' অথবা 'ষড়যন্ত্রকারিনী'।

হ্যা, আজ একটা জিনিষ আমি বুঝতে পারছি যে, এই বিশাল সময়ের ব্যবধানে সবার যেমন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিমান জমতে পারে, আবার কখনো কখনো সেই অভিমান সময়ের স্রোতে রাগেও পর্যবসিত হতে পারে। আমি বুঝতে পারিনি, এই ছোট হৃদয়ে আমার কখন যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অভিমানগুলি বিচ্ছিন্ন রাগে পরিনত হয়েছিল, কিন্তু সেটা ছিলো নিতান্তই একটা সাময়িক। কিন্তু আমি বুঝিতেই পারিনি যে, 'সমুদ্রের পানিতে নামিয়া তীরের বনরাজীমালাকে যেমন রমনীয় চিত্রবত মনে হয়, সমুদ্র থেকে তীরে উঠিয়া তা আর আগের মতো মনে হয় না' ঠিক তেমনি, আমিও সেই ষড়যন্ত্রকারিণিকে কাছে পেয়ে ভেন্টিলেশনের একটা পথ খুজে পেয়েছি মনে করে যখন আমি আমার সমস্ত রাগ অভিমান ঐ পথ দিয়ে নিষ্কৃতি করলাম, তখন বুঝলাম, রাগের মাথায় আমি যা বলেছিলাম, আমার সেই অভিমান আমার সামনে অভিনয়কারী সেই ষড়যন্ত্রকারীনির কারনে এখন আমার বিপদ হয়েছে। আমি ঘর ছেড়েছি, আমি তোমাকে ছেড়েছি। এই ষড়যন্ত্রকারিনী আমাকে ঘর থেকে পথে নামিয়ে একেবারে খাদের প্রান্তে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমার যখন হুশ ফিরেছে, আমি যখন আবার ফিরতে চেয়েছি, তখন আর আমার ফিরে যাওয়ার উপায় ছিলো না। আমি ঘরহারা হয়ে রাস্তার দুইধার ধার দিয়া আমার সেই অগোছালো অপরিচ্ছন্ন পুরানো বাসভুমেই আবার ফিরে আসা ছাড়া কোনো পথ খোলা ছিলো না। যখন আমি আমার সেই অতি পরিচিত কিন্তু আবার অতি অপরিচিত আবাসভুমে ফিরে এলাম, তখন বুঝলাম, ষড়যন্ত্রকারিনী তার সার্থ সিদ্ধির যা যা করার তা তাই করে সার্থক হয়ে গেলো, আমি শুধু কোনো এক অচেনা খাদের মধ্যে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি।

আমি একা একা ধলেশ্বরী নদীর ধারে বসে সুর্যাস্তের সর্নছায়া দেখতে দেখতে, কখন যে আমার চোখ ভিজে আসতো, আমি বুঝতে পারতাম না। জনশুন্য ধলেশরীর তীরে দিগন্ত প্রসারিত ধুধু বালুকাময় তীর আমাকে ভয়ংকর পথের দিকে ইশারা দিতো। নিস্তব্দতা যখন নিবিড় হয়, তখন কেবল একটা সীমাহীন দিশাহীন শুভ্রতা এবং শুন্যতা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। আমার বেলায় যেনো এটা একেবারে বাস্তব হয়ে চোখের সামনে ধরা দিলো।

আজ একটা কথা বলি, এই প্রিথিবীতে যারা আপন হয়ে ঘরে ঢোকে, তারা সবসময় আপন হয়েই বের হয় না। কখনো কখনো তারা আপন হবার ভান করে কিন্তু হায়েনা হয়ে ঢোকে। তাদের সুপ্ত বাসনাই থাকে অন্যের ক্ষতি করা। আমার বেলায় এই "আপন" ভেবে যাকে বুকে নিয়েছিলাম, সেই আসলে ছিলো আমার মরনের খলনায়ক। কারন, আমার জানা ছিলো না যে, আমি যাকে আপন মনে করে আমার মনের যে কিছু ক্ষোভ ছিলো তাকে বলার পর সেই ক্ষোভ যে আবার আমাকেই দংশন করবে। আমি ছোট ছিলাম, আমার মনের কথাগুলি বলার কোন লোক ছিলো না, তাই, অতীব আপন মনে করে আমি এই সেই কুচক্রী ষড়যন্ত্রকারিনিকে এমনভাবে শেয়ার করেছিলাম যাতে আমার মন কিছুটা হালকা হয়। আর এই সেই কুচক্রীকারিনী তোমার কাছে আমার মনের কষ্টগুলি এমনভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে উপস্থাপন করেছিলো যা তোমাকে আমার থেকে আর আমাকে তোমার থেকে যোজন দূরে এক ঝরের গতিতে ছিটকিয়ে ফেলেছিলো। ঈশ্বর বড় সহায় যে, তোমার অন্তর আর দশটি মানুষের মতো ছিলো না। তাই, অন্তত আমি আজ মাটিবিহীন নই। কোথাও না কোথাও আমাকে তিনি ঠাই করে দিচ্ছেন। আর তার রুপকার আবারো ছিলে সেই তুমি।  

আমার জীবনের সব কাহিনী তুমি জানতে। হয়তো সেই অবহেলার কাহিনী, সেই অনাদরের কাহিনী জেনেই তুমি আমাকে আরো বেশী করে আদর করতে, আমি তোমার আদর বুঝতাম। তারপরেও আমি তোমাকে কিছু কিছু জায়গায় হয়তো ভয় পেতাম। আর এটা কোনো অমুলক ভয় ছিলো না। তোমার মতো পাহাড় সমান ব্যক্তিত্তের কাছে আমি ছিলাম অতি নগন্য। আমার এই ছোট জীবনে কখনো তুমি কেনো, তোমার থেকে অর্ধেক ব্যক্তিত্ত সম্পন্ন লোকেরও কোনোদিন দেখা হয় নাই। একদিকে তোমার পজিশন, তোমার প্রতিপত্তি, তোমার ক্ষমতা আবার অন্যদিকে আমি তোমার সেই ছোট পুতুলের মতো একটা বিড়ালসম, ভয় তো হবেই। অনেক কিছুই হয়ত ভয়ে আমি তোমাকে খোলামেলা করে বলার সাহস পাই নাই। কিন্তু আমার কখনো তোমার উপর ঘেন্না হয় নাই, তবে অভিমান হয়েছে অনেক। এই অভিমানটাকেই আমার আপাত আপন কুচক্রী মানুষটি আমাকে সমুদ্রের তলদেশে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলো।

কুচক্রি মানুষ যখন কাউকে আকড়ে ধরে, তাকে সর্বোপ্রথম আক্রমন করে তার অন্তরে, তার হৃদয়ে, তার যুক্তিক ব্যবহারে তখন অনেক কিছুই অবাস্তব মনে হলেও যুক্তির মতো মনে হয়। এই কুচক্রীর কথায় আমি যেনো বারবার নিজেকে বোকাই মনে করেছিলাম। তার এই কথার যুক্তি ধরে আমারো এক সময় মনে হয়েছিল, আসলেই আমি কি পেয়েছি এ যাবত? সব কিছুই তো বিলিয়ে দিয়েছিলাম অকাতরে। তাহলে দেয়ার সাথে পাওয়ার কেমন যেনো একটা অসামঞ্জস্যই মনে হচ্ছিলো। শয়তান যখন ভর করে, তখন নীতি পালিয়ে যায়, আর দিধা ভর করে। হয়তো আমারো তাইই হয়েছিলো। শয়তান আমাকে অতি কাছ থেকে বারবার প্রলোভন দেখিয়ে আমার সমস্ত মনকে বিষিয়ে দিয়েছিলো। তখন আমাকে ভর করে এই কুচক্রিকারিনী একের পর এক তার হীনসার্থ চরিতার্থ করার জন্য কতই না পরিকল্পনা আটছিলো। লাখ লাখ টাকার সপ্নে সে ছিলো বিভোর। আর তার সাথে ছিলো একটা অভিনয়। একদিকে সে আমাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছিল আর আমাকে গুটির চালের মতো ব্যবহার করছিলো, অন্যদিকে সে তোমাকে একটা মিথ্যা ফেস প্রদর্শন করে এমনভাবে জালটা বিছিয়েছিলো যে, না তুমি ওকে বুঝতে পারছিলে, না আমি। অথচ আমাদের দুইজনের ভিতরে চলছিলো তখন মহাপ্রলয়ের মতো ঝড় আর কষ্ট। এই কুচক্রিকারিনী আমাকে একের পর এক তার বানানো পরিকল্পনা দিয়েই যাচ্ছে, আর সেই পরিকল্পনার অগ্রীম তথ্য তোমাকে দিয়ে সে আমাকে তোমার কাছে অমানুষের মতো চেহাড়াটা দেখিয়ে তোমার কাছে ভাল মনিষী সাজবার চেষ্টা করছে। অথচ সেই ছিলো পুরু পরিকল্পনার মাষ্টারমাইন্ড। অগ্রীম পরিকল্পনা একদিকে আভাষ, অন্যদিকে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখে তোমার এতাই মনে হ ওয়ার কথা, যে, কু চক্রী তোমাকে ভালো উপদেশ, বা তথ্য দুটুই দিচ্ছে। এহেনো পরিস্থিতিতে তার উপর তোমার ভরষা হবারই কথা। আর এর প্রধান উদ্দেশ্যই ছিলো তার, আমি চিরতরে তোমার কাছ থেকে বহিষ্কৃত হই আর সে আমার স্থানটা চিরতরে দখল করে বাকি জীবনটা আরাম আয়েশে কাটায়। ফলে সেই সঞ্চয়পত্র, সেই ২০ লাখ টাকা, সেই গাড়ির কাহিনি, সেই দোকান কেনার কাহিনী, সেই ফার্নিচার বিক্রির কাহিনী, আমার নতুন জব, খালা বুয়াদের কাছ থেকে আমার নিথ্যা আয়, আমার গোপন মিথ্যা প্রেমের উপখ্যান, ওর জন্মদিনের উপহার দেবার দাবী ইত্যাদি সবই ছিলো একটা জাল। একটা বড় পরিকল্পনার অংশ।

আমার ব্যাপারে তুমি নতুন কিছু তথ্য যা তোমাকে আমার জানানোর দরকার ছিলো বই কি কিন্তু আমার মনে হয় নাই যে, এইসব ছোট খাটো তথ্য যা আসলেই কোন কাজের তথ্য নয়, সেগুলি জানানোর দরকার। ফলে আমার এই ছোট খাটো তথ্য কুচক্রিকারিনী এমনভাবে তোমার কাছে উপস্থাপন করেছিলো যে, আমি আর তোমার বাধ্যগত ভালোবাসার মানুষটি যেনো আর নই। সব কিছু দেবার পরেও যখন তুমি জানতে পারলে যে, আমি তোমার অনুমতি ব্যতিত শুধুমাত্র টাকার লোভে অন্যত্র চাকুরী করি, কিংবা তোমা ব্যতিত আমার আরো অনেক ভালবাসার মানুষ আমার সদর দরজায় ভীড় করে, অথবা তোমার অজানা সত্তেও আমি আমার কাজের মেয়ের কাছ থেকে তার থাকা খাওয়ার খরচ হিসাবে বাড়তি পয়সা নেই যা তুমি বারন করেছিলে, এসব জানার পরে কার না মাথা খারাপ হবে? তোমারও তাই হয়েছিলো বলে সেদিন আমি তোমার রাগের যে চেহারাটা দেখেছিলাম, তা আজো আমি ভুলি নাই। তোমার রাগ হবার শতভাগ যুক্তি ছিলো, যেটা আজ আমি বুঝি। কিন্তু বিশ্বাস করো, এসবই ছিলো মিথ্যা একটা বানোয়াট কাহিনী। আমি কখনো টাকার জন্য কোথাও চাকুরী করি নাই, আমার জন্য বরাদ্ধ কাজের বুয়া থেকেও আমি তার খাওয়া থাকার ভাড়া হিসাবে কোনো টাকা পয়সা গ্রহন করি নাই, কিংবা আমার সতীত্তের দোহাই দিয়েই আজ আমি জোর গলায় বলতে পারি, তুমি ছাড়া আমার জীবনে আর কোনো দ্বিতীয় পুরুষের কখনো আগমন ছিলো না, আর হয়ও নাই। এ সবই ছিলো ঐ কুচক্রিকারিনীর বানানো সব বানোয়াট গল্পের একটা কল্পকাহিনী। সবচেয়ে বড় যে বানোয়াট কাহিনী তুমি জেনেছো, যে, আমি আমার সময়ে আমার যা করার কথা তা না করে সারাদিন উলটাপালটা কাজেই যেনো মনোনিবেশ করে থাকি। তুমি পুরুষ মানুষ, তোমার এহেন তথ্যে আমার উপর আস্থা হারানোই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি না পারছিলাম তোমাকে কিছু বুঝাতে, না পারছিলাম, আমাকে সামাল দিতে। জীবনের প্রতি আমার একটা সময় বিতৃষ্ণা চলে এসেছিলো। মনে হয়েছিলো, আমার আর একদন্ডও তোমার ভালবাসার কাছে কোন স্থান নাই। মানুষ যখন আস্থাহিনতায় ভোগে, তখন তার কোনো হিতাহীত জ্ঞান থাকে না। তখন দরকার হয় একজন মানুষের সাপোর্ট। অথচ আমার ভাগ্যটা এমন যে, কুচক্রিকারিনী কালনাগিনীকেই আমি আমার আস্থা দিয়ে বসেছিলাম। সেই কালনাগিনীকেই আমার মনে হয়েছিলো আমার আস্থার জায়গাটা। একদিকে তুমি আমার উপর প্রবল রেগেছিলে, অন্যদিকে তুমি আমার কোনো কথাই শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলে না। তাহলে আমার বিকল্প কি ছিলো? বিকল্প ছিলো একটা- কোথাও হারিয়ে যাওয়া চিরতরে। আর আমি এই কুচক্রীর উপদেশেই একদিন কিছুই না বলে সত্যি সত্যি হারিয়ে গেলাম। আমাকে বাসা বদলের পরিকল্পনা, যোগযোগের নিমিত্তে ফোন নাম্বার পরিবর্তন করার পরিকল্পনা এবং তোমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাষ্টারপ্ল্যান তো ছিলো এই কুচক্রীরই। আমি তোমার উপর রাগে অভিমানে জিদ ধরেছিলাম, আর সেই রাগ আর অভিমানকে পুজি করে এই মানুষরুপি শয়তান তোমার মন আরো বিষিয়ে তুলেছিলো। আর তুমিও আমার সেই সব সট পড়ে পড়ে যখন মন খারাপ করছিলে, আর তার প্রেক্ষাপটে খারাপ খারাপ মেসেজ করে তুমিও এই কুচক্রীকেই আপন মনে করে হয়তো কিছু রাগের কথা বলছিলে। আর এই শয়তান পুনরায় আমাকে তোমার প্রতিটি মেসেজের সট পাঠিয়ে আমারো মন আরো অস্থির করে তুলেছিলো। আমি তো তোমাকে চিনি। তোমার সারাটা শরীর জুড়ে থাকে কলিজা, সেই মানুষটির রাগ আমার উপর ভালোবাসার তুলনায় কিছুই না। আমি জানি তোমার অন্তর আর ভিতর। হয়তো শত ভালবাসার কথার ফাকে কোনো এক কষ্টের মাঝে বেরিয়ে আসা দু একটা রাগের কথা আসতেই পারে। আর সেই রাগের অবস্থানটাই এই কুচক্রী শয়তান আমাকে এবং তোমাকে বাস্তব দেখিয়ে ভালোবাসার মর্মস্পর্সী কথাগুলি গোপন করে আমাদের দুজনের মনকেই বিষিয়ে তুলেছিলো। কিন্তু তোমার মনের অস্থিরতার কান্নার মেসেজগুলি অথবা আমার মনের কষ্টের কথাগুলির মেসেজ আমাদের কাউকেই সে প্রদান করে নাই। আমার শরীর খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছিলো, অন্যদিকে আমার বিরহে তোমার শরীরও হয়তো আরো অবনতির দিকেই যাচ্ছিল। আর এটাই হবার কথা। আমি যদি জানতাম, তোমার শরীর এতোই খারাপ হয়ে গেছে, তুমি প্রায় মরেই যাচ্ছো, আমি কি পারতাম তোমার কাছে ছুটে না যেতে? আমিও এতো কষ্টে ছিলাম যে, শুধু আত্তহত্যাটাই করি নাই।

৩/০৩/২০২০-মাধুরী-আকাশের ভালোবাসা

সম্পর্ক বিচার করলে মাধুরীর সাথে আকাশের ভালোবাসা কিংবা প্রেমের কাহিনী রচিত হতে পারে না। তাদের মধ্যে না আছে ধর্মের সাথে মিল, না আছে বয়সের কোনো মিল অথবা না আছে সামাজিকভাবে কোনো আত্মীয়তার কাছাকাছি বন্ধন। কিন্তু প্রকৃতি অনেক সময় এমন কিছু কাজ করিয়া বসে যাহার মাঝে না আছে কোনো বইজ্ঞানিক সুত্রতা, না আছে ফিলোসোফির কোনো ফর্মুলা। মানব আর মানবীর চরিত্র ধরিয়াই একেকতা সম্পর্ক গোপনে, কিংবা অজান্তে এমন কিছুর মধ্যে আটকে যায়, যাহা কোনো না মানে আইন, না মানে সুত্র বা ফর্মুলা। মাধুরী আর আকাশ সমস্ত কিছু নিয়ম ভাঙ্গিয়া একে অপরের এতো কাছাকাছি চলিয়া আসিয়াছিলো যে, তাহারা আর দুইটি প্রানির একটি আত্তায় রুপান্তরীত হইয়া পড়িল।

আকাশে প্রচন্ড বৃষ্টি, দমকা হাওয়ায় চারিদিকে আকাশের মেঘমালা অস্থির হইয়া দিক বিদিক ভাবে হন্যে হইয়া যে যেখানে খুশী উড়িয়া যাইতেছে, পথে ঘাটে মানুষেরা ভয়ে সন্তস্ত্র হইয়া যাহারা ঘরের বাহির হইয়া ছিলো তাহার ঘরে কিংবা নিরাপদ আশ্রয়ে যাইবার পায়তারা করিতেছে, আর যাহারা ঘরে বসিয়া বাহিরে যাইবার পায়তারা করিতেছিলো তাহারা নুরুপায় হইয়া নিজের মনে অশান্ত চিত্তে কখন আকাশ স্থির হইবে তাহার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। গাড়ি ঘোরা নিরাপদ স্থানে পার্ক খুজিতেছে, এর মাঝেই চঞ্চল আকাশ ক্ষনে ক্ষনে বিদ্যুৎ চমকাইয়া পৃথিবীর সকল প্রানি কুল এবং জন্তু জানোয়ারদেরকে চোখ রাংগাইয়া আরো তান্ডব চলিতে পারে বলিয়া সংকেত দিয়াই যাইতেছে। অথচ ইহারই মধ্যে আমাদের এই দুই প্রানি মাধুরী আর আকাশের মধ্যে আকাশ সমস্ত বিপদ সংকুল সংকেত অমান্য করিয়া দূর্যোগ পূর্ন রাস্তায় একে অপরের সাথে দেখা করিবার অস্থির নেশায় বাহির হইয়া গেলো।

কোথাও কোনো যান বাহনের লেশ দেখা যাইতেছে না। যখনই কোনো যান বাহন হতাত করিয়া আসিয়া পরে, ততক্ষনাত হুড়মুড় করিয়া একের অধিক যাত্রী 'ইহা আমাকে পাইতেই হইবে" এই সংকল্পে উহার চারিদিকে জড়ো হইয়া দাম হাকাইতে থাকে। দূর্যোগ পূর্ন সময়ে এইসব যানবাহনের চালক গন, সুযোগ বুঝিয়া মধ্য প্রাচ্যের তেলের মতো তাহাদের ভারা এমন করিয়া বারাইতেই থাকে যেনো, উহা একটি দায়মন্দের খনি। তাহারা যেনো হীরার মুকুট লইয়া কোনো এক ভগবানের মুখ দর্সন করিয়া পথে বাহির হইয়াছেন। আর ভাবিতে থাকেন, যেভাবেই হোক, আজ তাহার কটিপতি হইয়া যাইবেন। কিন্তু সাধারন মানুষ গনের পকেটের অবস্থার কথাও তো ভাবিতে হইবে!! ফলে যাহারা এতোক্ষন এই উচ্চ মুল্যের যানবাহনের চারিধারে জড়ো হইয়াছিলেন, তাহারা তাহাদের পকেটের দুর্দশার কথা ভাবিয়া আরো একটি যানবাহনের আশায় অপেক্ষা করিতে থাকেন। এই সুযোগতাই আমাদের আকাশ বাবু কাজে লাগাইয়া বিনা বাক্যে চালকের কথায় উঠিয়া গেলেন। তাহার যেনো তর সইতেছিলো না। আকাশ যতোই বিপদ সংকেত দিক, তাহাতে তাহার কিছুই যায় আসে বলিয়া মনে হইতেছে না। তাহার গন্তব্য মাধুরীর আস্তানায়।

গাড়িতে উঠতে না উঠতেই চারিদিকে যেনো আকাশ ভাংগা জল কলসি ভর্তি করিয়া যেমন গংগায় পানি ধালিবার মতো জল পড়িতে লাগিলো। বাতাস ছিলো, পথ ঘাট ছিলো প্রায় মানুষ শুন্য। হুড় হুড় করিয়া চালক আকাশকে লইয়া ছুটিতে লাগিলো। সবে মাত্র সকাল হইয়াছে কিন্তু আকাশ দেখিয়া কিছুতেই বুঝিবার উপায় নাই, ইহা কি সন্ধ্যা নাকি সকাল। চারিদিকে কালো করিয়া আসিতেছে।

প্রায় ঘন্তা খানেক পর আকাশ তাহার গন্তব্যে আসিয়া পায়ে পায়ে সিড়ি পারাইয়া ঘরের অতি কাছে দাড়াইয়া একটি মাত্র টোকা দিতেই যেনো যিনি ঘরে কাতর হইয়া অপেক্ষা করিতেছিলেন, সাথে সাথে কপাট দরজা খুলিয়া দিয়া আকাশকে বরন করিয়া লইলেন। তিনি, মাধুরী। দারাইয়াই ছিল ঘরের কপাটে মাথা লাগাইয়া।

আকাশ ঘরে ঢোকিলো। তাহার মাথায় ব্রিষ্টির পানিতে ভেজা চুল, জামার অনেকাংশেই ছোপ ছোপ পানির হালকা ভেজা বস্ত্র। পরনের জুতা পাটি আর শুশক তো নাইই। কোনো দিকে ভ্রুক্ষেপ না করিয়াই আকাশ মাধুরীকে জরাইয়া ধরিলো। যেনো কোন এক মহা সমুদ্র পার হইয়া যুদ্ধা আকাশ মাধুরীকে গহীন জংগল হইতে উদ্ধার করা গিয়াছে। বুকের পাজরে তাহারা এমন করিয়া আবদ্ধ হইয়া রইলেন যেনো তাহারা কতদিন একে অপরের জন্য উদাসীন হইয়া বিরহ জীবন পালন করিতেছিলেন।

গেড়য়া রংগের শাড়ি, হাতে সোনার চুড়ি, পায়ে আলতা আর নাকে নাকফুল সাথে কানের দুল পড়িয়া মাধুরী বউ সাজিয়া বসিয়া ছিলেন। বাহিরের এই রুপ প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিরম্বনার মধ্যে এই দুই প্রানীর মনের সুখের সাথে কোনো মিল খুজিয়া পাওয়া যাইতেছে না। তাহারা একে অপরের সাথে বুকে বুক মিলাইয়া অধিক ক্ষন শুধু অন্তরের ধুকধুকানী শান্ত করিতেই ব্যস্ত।

আকাশ মাধুরীকে বুক থেকে সরাইয়া তাহার দুই হাত দিয়া মাধুরীর মুখাবয়ব এমন করিয়া ধরিলেন, যেনো একটি ভরা দুধের বাটি তাহার হাতে, যে কোন সময় একটু অসতর্ক ভাবে নাড়িলেই দুধ সব মাটিতে পড়িয়া যাইবার সম্ভাবনা। এমনি করিয়াই আকাশ সব সময় মাধুরীকে অপলক চোখে দেখিতে থাকে, আজো তাহার কোনো ব্যতিক্রম হইলো না। মাধুরী তাহার চোখ বন্ধ করিয়া শান্ত বিরালের মতো নির্বিকার দারাইয়াই থাকে আর আকাশের চোখের বেষ্টনীতে আবেশিত হইয়া জড় পদার্থের মতো ভালবাসার সাধ গ্রহন করে।

আকাশ মাধুরীর চোখে, নাকে, মুখে, গ্রিবায় অবিরত চুম্বন আর আলিংগনে আবদ্ধ করিয়া একে একে মাধুরীর শহরনে ব্যতিব্যস্ত করিয়া ন্তোলে।

সময় যেনো স্তম্বিত সমুদ্রের মতো একেবারে থামিয়া গেছে মাধুরী কটে। শুন্যতায় ভরা মাধুরী কটে এখন যেনো পরিপুর্ন ভালোবাসায় ঘরের চারিদিক চিক চিক করিতেছে। সামনের আয়নায় আকাশ মাধুরীকে দেখে আর ভাবে, আহা, বিধাতা কতই না মনোযোগ দিয়া তাহার মাধুরীকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তাহার রুপ আর যৌবনের মধ্যে বিধাতা এমন একটি সরল্রেখা টানিয়া দিয়াছেন যে, একতাকে বাদ দিয়া আরেকতা অসম্পুর্ন।

আকাশ মাধুরীর দুই হাত ধরিয়া দুই দিকে প্রসারিত করিয়া বুকের মাঝ খানে মুখ লুকাইয়া তাহার যৌবনের উচ্ছৃঙ্খল স্তনের ভাজে নাক ঘশিতে ঘষিতে মাধুরীকে মেয়েলী অনুভুতিতে নাড়িয়া দিলেন। আকাশের হার মাধুরীর বুকের উপর, তাহার মুখ মাধুরীর ঘাড়ের ভাজে আর মুখের জিব্বার সব টুকু অংশ মাধুরীর কানের পাতায় লেহনে লেহনে মাধুরীর শরীর অবশ করিয়া তুলিলো।

গেড়োয়া রঙের যে শাড়িটি এতোক্ষন মাধুরীর রুপ আবৃত করিয়া রাখিয়াছিল, আকাশের তপ্ত হাতের তান্ডবে উহা আর মাধুরী গোপন রুপ লুকাইয়া রাখিবার কোনো উপায় না পাইয়া নিজেই মাধুরীর শরীর হইতে মাটিতে লুতাইয়া পরিলো। মাধুরীর প্রতিটি চামড়ার ভাজ অদ্ভুত। কোথাও কোন দাগ নাই, কোথাও কোন খুত নাই। যেখানেই হাত দিক, উহার মধ্যেই যেনো প্রান লুকাইয়া আছে। আকাশ মাধুরীর দুধের কালো বোতায় বিজ্ঞানিক কিছু আবিশকার না করিতে পারিলেও ঊহাতে যে যৌবনের অনেক রস রহিয়াছে তাহা আবিশকার করিতে একটু ও সময় ক্ষেপন করলো না। চুমুতে চুমুতে মাধুরীর সারা শরীর বাহিরের প্রক্রিতির মতো অস্থির করিয়া তুলিলো।

আকাশ মাধুরীর কপাল থেকে শুরু করিয়া নাক, ঠোট, গ্রিবা, আর তাহার সরল রেখা ধরিয়া স্তনের বোতা আর নাভীর নীচ দিয়া মাধুরীর ত্রিভজাক্রিতির কেশ সমৃদ্ধ যৌবনের সবচেয়ে কোমল অমৃত কে বারবার নিজের সবটুকু অনুভুতি দিয়া লেহন করিতে লাগিলেন। যেনো কোন এক দুষ্প্রাপ্য খনিতে ঢোকিয়া আকাশ এমন কিছু খুজিতেছে কিন্তু তাহার আরো হয়তো মগভীরে যাওয়ার পায়তারা করার অস্থির চেষতা। মাধুরীর চোখ বন্ধ করিয়া দুই পা ফাক করিয়া মাধুরী নিজেও আকাশকে সর্বাত্তক সাহায্য করিতে ব্যস্ত যাহাতে আকাশ মাধুরীর যতো গোপন কিছু আছে, তাহা খুজিয়া বাইহির করুক মাধুরী তাহাই চায়। ইহাই আকাশের মাধুরীর শরীর আবিষ্কারের প্রথম নয়। ইহার আগেও বহুবার আকাশ মাধুরীর এই রুপের নেশায়, মায়ার বাধনে জরাইয়া কতই না জল্কেলীর মতো খেলা করিয়াছে। প্রতিবারই মনে হইয়াছে, আজই প্রথম।

মাধুরীর শরীর যেনো একতি খেলনা, জীবন্ত খেলার পুতুল। আকাশ উহাকে কখন হাতে লইয়া, কখনো পাজরে নিয়া, কখনো দুই পায়ের মাঝখানে রাখিয়া, আবার কখন চারপায়ী বেড়ালের মতো নিজের বুকের নীচে রাখিয়া এমনভাবে সংগম করেন যেনো দেখিয়া মনে হইবে আকাস্ক যেন কোন এক চারুকলার শিল্প তৈরী করিতেছে আর মাধুরী সব ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া চুড়িয়া আবার নতুন মাধুরী হইতেছে।

মাধুরিও কখনো কখনো বজ্র মুষ্টি করিয়া আকাশের সব কলা কৌশল আয়ত্তে আনিয়া নিজেও আম্র কাননের কলির মতো নিমিষেই ফুটিয়া ফুটিয়া আকাশের চারিদিকে এমন করিয়া বিচরন ক্ষেত্র তৈরী করিতেছে যেনো তাহার রুপের কোনো শেষ নাই, তাহার আক্রিতির কোনো সিমা নাই, তাহার স্ত্রী অংগ কাপিয়া কাপিয়া সব কিছু উজার করিয়া বইশখের ঝরের মতো অকালেই সব ছাড়িয়া দিতেছে। কখনো তাহার যোনিপথ ভিজিয়া একাকার, কখনো তাহার বুকের দুধ ফুলিয়া ফাপিয়া উঠিতেছে, কখনো ঘন ঘন নিঃশ্বাসে সদ্য উপড়ে উঠা কেচোর মতো আকাবাকা হইয়া যাইতেছে।

রমনী মন্থন, যোনী মন্থন, পুরুষাঙ্গ মন্তনের মতো নেশা আর কিছু নাই। তান্দব ঝরের গতির থেকে এর তীব্রতা আরো বেশী। সমস্ত শরীর তার দেহের সাথে মিশিয়া একাকার হইয়া একে একে সংগমের সাধ গ্রহন বড়ই নেশা। মাধুরী আর আকাশ আজ সেই নেশায় মগ্ন।

অবশেষে, ঘর্মাক্ত শড়ির দিয়া দুইটি মানুষ নিস্তব্ধ হইয়া একে অপরের উপর এমনভাবে শাত্নত হইয়া রইল যেনো তাহারা বুঝিতে পারে নাই, এই একটি ঘন্তায় বাহিরের প্রিথিবীতে কি কি ঘটিয়া গিয়াছে।

মাধুরী, আকাশ তোমাকে সব কিছুর বিনিময়ে স্নেহ করে, আদর করে, ভালবাসে। কে তোমাকে কিভাবে এই প্রিথিবীতে আনিয়াছিলো সেই প্রশ্নে কোন কৈফিয়ত নাই, নাই কোনো জিজ্ঞাসা। আকাশ শুধু এইতুকুই জানিতে চাহিয়াছিল, মাধুরী আকাশের। এই আকাশে কোনো ধর্ম নাই, কোনো বর্ন নাই, কনো জাত নাই, নাই কোন প্রকারের অভিযোগ কিংবা হতাশা। যদি কোনোদিন এই মাধুরী অন্য কোথাও হারিয়ে যায়, কিংবা আর মাধুরীকে কথাও খুজিয়া পাওয়া না যায়, তখন আকাশ এই রকমের দূর্যোগ মোকাবেলা করিয়াও মাধুরীকে খজুইয়া বাহির করিবে, কারন মাধুরীর জন্ম শুধু আকাশের জন্যই। মাধুরীর পরিচয় শুধু আকাশ। যাহারা তোমাকে এই আকাসের ধরনিতলে বর করিয়াছে, তাহারা শুধু এই টুকুর ধন্যবাদ প্রাপ্য যে, তাহারা এতোদিন আকাশের মাধুরীকে নিঃশ্বাস টুকু নিতে সাহায্য করিয়াছে। আকাশ তাকাহে জীবন দান করিয়া আবার নিজের করিয়াই গড়িয়া তুলিয়াছে। আর বাকি জীবনের সব টুকু আদর আর ভালবাসা দিয়া মাধুরীকে এই সমাজে এমন এক স্তরে তুলিয়া লইবে যেখানে মাধুরীর কাছে গগন বড্ড নীচু।

তুমি ভালো থাক মাধুরী।

২৮/০৩/২০২০- করোনা ভাইরাস-১

Categories

রবী ঠাকুর তার "প্রায়শ্চিত্ত" নামের এক ছোট গল্পে একটা কথা লিখেছিলেন, "স্বর্গ ও মর্তের মাঝখানে একটা অনির্দেশ্য অরাজক স্থান আছে যেখানে ত্রিশঙ্কু রাজা ভাসিয়া বেড়াইতেছেন, যেখানে আকাশ কুসুমের অজস্র আবাদ হইয়া থাকে। সেই বায়ুদূর্গবেষ্টিত মহাদেশের নাম 'হইলে-হইতে পারিত'। যাহারা মহৎ কার্য করিয়া অমরতা লাভ করিয়াছেন তাহারা ধন্য হইয়াছেন, যাহারা সামান্য ক্ষমতা লইয়া সাধারন মানবের মধ্যে সাধারনভাবে সংসারের প্রাত্যাহিক কর্তব্যসাধনে সহায়তা করিতেছেন তাহারাও ধন্য; কিন্তু যাহারা অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হটাত দুয়ের মাঝখানে পড়িয়াছেন তাহাদের আর কোনো উপায় নাই। তাহারা একটা-কিছু হইতে পারিতেন কিন্তু সেই কারনেই তাহাদের পক্ষে কিছু-একটা হওয়া সর্বাপেক্ষা অসম্ভব।

এই কথাগুলির সাথে বর্তমান বিশ্ব মহামারী করোনা পরিস্থিতির একটা মিল রহিয়াছে। অনির্দেশ্য অরাজক স্থানের ত্রিশঙ্কু রাজা আমাদেরকে সেই সর্গ আর মর্তের মাঝে এমন করিয়া ফেলিয়া দিয়াছেন যেখানে কিছু মহৎ মানুষ অন্যের সেবা দান করিয়া অমরতা লাভ করিতেছেন, আবার কিছু নিতান্তই সাধারন মানব তাহাদের সংসারের দায়িত্ত পালন করিয়াও ধন্য হইতেছেন। কিন্তু আমরা যারা না মহৎ মানুষের দলে, না পুরুপুরি সাধারন মানবের দলে, তাহারা অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে এই দুইয়ের মাঝে পড়িয়া হাজার খানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টিকে লইয়া এমনরুপে হিমসিম খাইতেছি, যে, না এই বিশাল জনগোষ্টি আমাদেরকে দোষারুপ করিতে পারিতেছে, না আবার ক্ষমাও করিতে পারিতেছে, না আমরা কোনো দৈব ক্ষমতায় তাহাদেরকে এইরুপ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারিতেছি যে, কোনো অসুবিধা নাই, আমরা আছি তোমাদের সাথে। তোমরা আকাশের পানে চাহিয়া, আর আমাদের কথার উপর ভিত্তি করিয়া যাহা নির্দেশ হইতেছে তাহাই করিয়া যাও, কোনো ভয় নাই। সর্বদাই একটা শংকা কাজ করিতেছে মনের ভিতর, মাথার ভিতর আর এই দুই শঙ্কা প্রতিনিয়ত কাবু করিয়া ফেলিতেছে জীবনীশক্তি থেকে শুরু করিয়া আয়ুষ্কালও। চারিদিকে আজ সারা বিশ্ব ব্যাপিয়া করোনা প্রতিটা ব্যক্তি, প্রতিটা সংসার আর গোটা সমাজ জীবনকে এমন করিয়া চাপিয়া ধরিয়া ত্রাসের সৃষ্টি করিয়াছে যে, নীরব শোকের ছায়াতলে সুগভীর সহিষ্ণুতা আর ধরিয়া রাখা যাইতেছে না।

ঢাকা শহরের রাস্তার একটা রুপ আছে। যত্রতত্র যানবাহনের ছড়াছড়ি, যেখানে সেখানে জটলা, হকারদের একচ্ছত্র দৌরাত্ত, পদভ্রজকদের যেনোতেনো হাটাহাটি, ফেরীওয়ার চিৎকার চেচামেচি, জনসমাগম, মিছিল, মিটিং, আরো যে কতকিছু দিয়া ভরপুর থাকে এই শহরের প্রতিটি অলগলি, আনাচে কানাচে। কোথাও দিনেরবেলায়ও অলস লাইটম্যানদের মনভোলার কারনে প্রখর সুর্যালোকেও রাস্তার স্ট্রীট লাইটগুলি আলো দিতে থাকে, উলটা পালটা গাড়ির হর্ন, স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের অবাধ চলাচল ইত্যাদি মিলাইয়া ঢাকার রাস্তাঘাট শুধু সচল নয়, যেনো মহাসচল হইয়া ব্যস্ততায় ভরপুর হইয়া থাকে। অথচ, আজ দুইদিন পর ফ্যাক্টরীর অফিসে আসিবার নিমিত্তে সকাল সাতটার সময় ঘর ছাড়িয়া আমি যেনো আমার সেই চিরাচরিত চেনা ঢাকা শহরকে নিজেই চিনিতে পারিতেছিলাম না। ঢাকার রাস্তার এই নতুন রুপ আমার চোখে আগে কখনো পড়ে নাই। ঈদের ছুটি সমুহের ইহার একটা নমুনা জানিতাম, কিন্তু আজ সেই ঈদের ছুটির সময়ের রাস্তার চেহারাও মলিন হইয়া নতুন এক রুপে আবির্ভুত হইয়াছে।

কোথাও কোনো হকার নাই, ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো পদচারনা নাই, মিটিং মিছিল যেনো উধাও হইয়া কোথায় যেনো স্থবির হইয়া ঝিমাইতেছে, ফেরী ওয়ালাদের সেই চেনা ডাক নাই, কোনো যানবাহনের হর্নও শোনা যাইতেছে না। মাঝে মাঝে বিকট সংকাপূর্ন সুর দিয়া কিছু এম্বুলেন্স অথবা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ফাকা রাস্তা পাইয়া  উর্ধগতিতে পাশ কাটিয়া কোথাও হারাইয়া যাইতেছে, আর তারসাথে কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জলপাই কালারের সেনাবাহিনীর গাড়ি অথবা নীল রংগের পুলিশের গাড়ি এদিক সেদিক টহল দিতেছে, অথচ দেশে কোনো যুদ্ধ নাই, কারফিউ নাই, না আছে কোনো জরুরী অবস্থা।  মাত্র ২২ মিনিটে অনায়াসেই আমি আমার অফিসে চলিয়া আসিলাম। 

বর্তমান পরিস্থিতে যেখানে প্রতিটি পরিবার তাহাদের আপনজনের সুরক্ষায় চিন্তিত, নিজেদের জানমালের সুরক্ষায় চিন্তিত, আর এই সুরক্ষার তাগিদে সবাই ঘরের মধ্যে বন্দি হইয়া আছেন। কেহই মহামারীর আক্রান্ত হইবার ভয়ে ঘর হইতে এক কদম ও বাহির হইতে নারাজ, সেখানে আমরা যারা ঐ অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হাজারখানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টির দায়িত্তপ্রাপ্ত হইয়াছি, তাহারা নিজের সুরক্ষার পাশাপাশি, নিজের পরিবারের সুরক্ষা ছাড়াও এই বিশাল জনগোষ্টীর সুরক্ষায়ও চিন্তিত। আমি খুব গর্ববোধ করিতেছি যে, এই কঠিন দূর্যোগের দিনেও যেখানে প্রতিটি সাধারন মানুষ তাহাদের রুটি রোজগার লইয়া মহাচিন্তায় শংকিত, সেখানে অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হাজারখানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টির দায়িত্তপ্রাপ্ত হইয়া সমস্ত দুসচিন্তা, সমস্ত দায়ভার নিজের কাধে লইয়া কিছুটা হইলেও তাহাদের রুটি রোজগারের ব্যবস্থা করিতে পারিতেছি, তাহাদের এই দুঃসময়ে পাশে দাড়াইয়া একটু হইলেও আশার আলো দেখাইতে পারিতেছি, তাহাতেই আমি সুখী এবং খুশী। মহা সংকট ময় এই দিনে যখন সবার ঘরে সুরক্ষায় থাকিবার কথা, আমি এবং আমার মতো অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হাজারখানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টির দায়িত্ত প্রাপ্ত  মালিকগন এই সব শ্রমিক দের জন্য নিজের সন্তানের মতো, নিজের পরিবারের মতো নিজেদের ক্যাপাসিটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়া কারখানার ভিতরে সুরক্ষার ব্যবস্থা করিবার আপ্রান চেষ্টা করিয়া যাইতেছি। এতোগুলি মানবের জন্য যখন আমাদের প্রান নিয়োজিত, ঈশ্বর নিশ্চয় আমাদেরকে এবং আমার মতো সেইসব অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হাজারখানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টির দায়িত্ত প্রাপ্ত  মালিকগনকে হেফাজত করিবেন।

ফলে রবী ঠাকুরের সেই কথাগুলি -"যাহারা অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হটাত দুয়ের মাঝখানে পড়িয়াছেন তাহাদের আর কোনো উপায় নাই। তাহারা একটা-কিছু হইতে পারিতেন কিন্তু সেই কারনেই তাহাদের পক্ষে কিছু-একটা হওয়া সর্বাপেক্ষা অসম্ভব" - বলিয়া মনে  হইলো না। আমরা হয়তো একটা কিছু হইতে পারিয়াছি। বাকিতা মহান ঈশ্বর জানেন।

২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-২

Categories

করোনা ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে চীনের উহান শহরে। তারা জানতো এই ভাইরাসের তীব্রত এবং ক্ষতিকারক দিকগুলি। ফলে, কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটাকে বিশ্বসমাজে ধামাচাপা দেওয়ার নিমিত্তে উহানকে আইসোলেট করে তারা নিজস্ব সোর্স এবং দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে নামে বেনামে এর প্রতিষেধক ক্রয় করে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু একটা সময়ে সেটা আর চাপা দেওয়ার সম্ভব না হওয়ায় ভাইরাসটির ব্যাপারে তারা প্রকাশ করতে যেমন বাধ্য হয়, তেমনি তাদের গাফিলতির কারনে ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসটি বিভিন্ন দেশে সংক্রমনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা যেমন চীনের করা ঠিক হয় নাই তেমনি এই করোনার তীব্রতা নিয়েও বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান এবং জনগনও প্রাথমিকভাবে বেশী গুরুত্ত না দেওয়ায় ব্যাপারটা এখন বৈশ্বিক মহামারিতে পরিনত হয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে আবার নতুনভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েও পড়ছে। সারাবিশ্ব এখন ঘরবন্দি। কিন্তু ঘরবন্দিই এর সমাধান নয়। এর প্রধান কারন ১৪/১৫ দিন ঘরে বন্দি হয়ে হয়তো যারা আক্রান্ত হন নাই বা হয়েছেন তাদের উপসর্গটা বুঝা যাবে কিন্তু যিনি ১৪ তম দিনে আক্রান্ত হবেন, তাকে তো আবারো ১৪/১৫ দিন বন্দি থাকতে হবে। তাহলে এভাবে কি চলতেই থাকবে কোয়ারেইন্টাইন? কিন্তু কতদিন? কত মাস বা কত বছর? একজন আক্রান্ত ব্যক্তিই পারে আরো নতুন মানুষকে আক্রান্ত করতে, ফলে ঘরবন্দি এর সমাধান নয়। এর সমাধান হতে হবে প্রতিটি মানুষ করোনা আক্রান্ত কিনা তার টেষ্ট করা। এটা সহজ কাজ নয়। জার্মানি, ইতালী, চীন, আমেরিকা, স্পেন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করছে। যেখানে আমরা সম্ভবত এ পর্যন্ত আইইডিসিআর এর মাধ্যমে ১০৬৮ জনকে টেস্ট করতে পেরেছি। তাতে যদি চলতি মার্চ মাস পুরোটা ধরা হয়। তাহলে ২৮ দিনে,এ পর্যন্ত গড়ে ২৪ ঘন্টায় ৩৮ জনকে টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু করোনাতঙ্কে বিদেশ থেকে এসেছেন প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী। সেই হিসাব দেখা যায় ২৪ ঘন্টায় ৪২ জনকে টেস্ট করলে ১০ লাখ মানুষকে পরীক্ষা করতে লাগবে ২৩,৪০৯ দিন অর্থাৎ ৬৫ বছর। এই কাজ করতে যদি এই এত বছর লেগে যায়, তাহলে কি সারা দেশ এত বছরই ঘরবন্দি হয়ে থাকবেন? এটা কিছুতেই সম্ভব না।

এরজন্য সত্যিকার অর্থে যা করনীয় তা হচ্ছে, সত্যি তথ্য জানা। সরকার, এবং ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতিটি মানুষ একযোগে সত্য পরিবেশন করা এবং তার বিরুদ্ধে কার্যকরী ভুমিকা নেওয়া। আমাদের দেশে করোনা নাই, (যদিও টেষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষিত নয় বক্তব্যটা) বা আর নতুন কোনো করোনা হয় নাই, এইসব কথা বলে আমরা আপাতত ক্রেডিট নিতে পারি কিন্তু লং রানে যা ঘটবে যে,

(১) সারা বিশ্ব যখন করোনা মুক্ত হয়ে যাবে, তখনো আমাদের দেশে পরীক্ষা না করার কারনে হয়তো বা কিছু কিছু মানুষের করোনার উপসর্গ ধরা দিতে পারে যা অন্যদেশ এইসব গুটিকতক মানুষের জন্য আমাদের বহির্গমন যাত্রা অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দিতে পারে। একটা কথা আমার মনে হয় যে, এখন থেকে সমস্ত এয়ারপোর্টে করোনার বিপরীতে স্বস্ব দেশের এয়ারপোর্ট করোনা আছে কিনা এই টেষ্ট করিয়েই কোনো যাত্রীকে তাদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দিবে হয়ত। আর এটা যদি হয় নতুন কোনো শর্ত আরোপ, তাহলে, আমাদের দেশের যাত্রীদের মধ্যে যদি এই ধরনের কোনো সিম্পটম কোথাও পাওয়া যায়, সাথে সাথে এই তথ্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে আর তখন যেটা হবে, সেটা হলো এই যে, লোক, যাত্রী, এমন কি মালামাল স্থানান্তরেও বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্ব কোয়ারেন্টাইন করে ফেলতে পারে।

(২) আরেকটা মারাত্মক ব্যাপার ঘটে যেতে পারে যে, সঠিক করোনা আক্রান্ত তথ্যের অভাবে প্রকৃতপক্ষে করোনায় মৃত্যুবরনকারীর করোনা হয় নাই এইটা বিশ্বাস করে তার কবর, তার গোসল, জানাজা ইত্যাদি পালনের কারনে দেশে নতুন নতুন করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে শেষ অবধি না একটা মহামারীর রুপ নিয়ে নিতে পারে। তখন দেখা যাবে, বিশ্ব যেখানে প্রায় করোনা মুক্ত, আমরা সেখানে মহামারীতে আক্রান্ত।

(৩) এই অবস্থায় ঠিক যা যা ঘটছে, তা তা সব মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব না ছড়িয়ে সঠিক তথ্যটা আমাদের সবাইকে জানানো দরকার এবং যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত এলাকায় বা পরিবার বা যারা কোনো না কোন একটা উপসর্গে (হাচি, কাশি, জর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির যে কোনো একটা) মারা যাচ্ছেন, তাদের এবং তাদের সাথে মেলামেশা করেছেন এমন ব্যক্তি বর্গ/এলাকায় জরুরি টেষ্ট করিয়ে নিশ্চিত করা তিনি করোনায় মৃত্যুবরন করেছেন কি করেন নাই। এটাই এখন সমাধান। এ ব্যাপারে ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত একটা তথ্য (আমি এর সত্যতা জানি না) শেয়ার করছি যে,

বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, টেস্ট না করার কারণে সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না যে দেশে আসলে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা কত। এদিকে জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া একটি আন্তঃসংস্থা নথি মোতাবেক, করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রশমন ও অবদমনে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে “৫ লাখ থেকে ২০ লাখ” মানুষের মৃত্যু হতে পারে। “জাতীয় প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা” (সিপিআরপি ভি১) শীর্ষক এই নথিতে এই সংখ্যাকে “ভয়াবহ” বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের এই নথিটি দেওয়া হয় বলে খবর প্রকাশ করেছে সুইডেন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নেত্র নিউজ। ২৬ মার্চের এই নথিতে বলা হয়, “বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যধিক হওয়ায়, বৈশ্বিকভাবে প্রযোজ্য মডেলিং পদ্ধতি ও পরামিতি অনুমান অনুযায়ী, কভিড-১৯ রোগের প্রভাবের পূর্বাভাস হলো, মহামারী চক্রে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটবে। অন্যান্য দেশে ব্যবহৃত মডেলিংয়ের বিপরীতে চিন্তা করলে এই সংখ্যা ও মাত্রা খুব আশ্চর্য্যজনক কিছু নয়। কিন্তু এই সংখ্যা অত্যন্ত ভয়াবহ। এই সংখ্যাকে বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো উচিৎ।”

ধীরগতির টেস্টের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকেও যেতে পারে। তখন শুধু লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।

২৮/০৩/২০২০- করোনা ভাইরাস-৩

Categories

আগামি ৪ এপ্রিল সরকার ঘোষিত লক-ডাউন সিস্টেমে সেলফ কোয়ারেইন্টাইন শেষ হবে। গত দুই তিন দিন যাবত মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি, নতুন কোনো করোনার রোগী শনাক্ত হয় নাই বরং যারা শনাক্ত হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশ রোগী ভাল হয়ে গেছেন। খবর যদি সত্যি হয়, আলহামদুলিল্লাহ।

কিন্তু কোনো কারনে যদি আমাদের এই তথ্যের মধ্যে গাফিলতি থাকে, তাহলে সাধারন মানুষ উক্ত তথ্যকে সত্যি মনে করে যখন নির্বিগ্নে ঘরের বাইরে চলে আসবে, ঢল নামবে, তখনই হবে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। সুতরাং যারা পারেন, যাদের সামর্থ আছে, তারা নিজেরা আরো ১৫ দিনের অঘোষিত সেলফ কোয়ারেইন্টাইনে থাকুন, ব্যাপারটা বুঝুন এবং পরিষ্কার হোক পরিস্থিতি, তারপর বের হোন।

আর যদি নিতান্তই বের হতে হয়, মনে মনে বিশ্বাস করুন যে, করোনার প্রভাব এখনো আপনার আশেপাশেই আছে, এখন যেভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছেন, বাইরে গেলেও ঠিক একইভাবে আরো অন্তত ১৫/২০ দিন সব কিছুর ব্যাপারে অধিক সতর্ক থাকুন। বাকীটা পরিবেশই আপনাকে বলে দেবে পরিসংখ্যানটা কি।

২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-৪

Categories

৯/৪/২০২০
আজকে মিডিয়ায় একটা খবর দেখে আমি একেবারেই অবাক হই নাই। আর সেটা হলো, আগামিতে বিশ্বে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে চলে আসবে এই করোনা ভাইরাসের ব্যবসায়ীক মন্দার প্রভাবে। বিশ্বে প্রায় ১৩% বানিজ্যিক মন্দা বিরাজ করবে।

যে দেশে দরিদ্র সীমার নীচেই বসবাস করে প্রায় ২০-৩০% মানুষ, সেখানে যদি ঐ হারে দেশে দারিদ্রের হার আরো বেড়ে যায়, তখন দেশ করোনা ভাইরাস মহামারী থেকে মুক্ত হয়ে যুক্ত হবে আরেক মহামারীতে যার নাম দূর্ভিক্ষ। আমাদের দেশের লোকাল জিডিপি এমন নয় যে, অনায়াসেই সমগ্র দেশকে মাসের পর মাস সরকার তার নিজ তহবিল থেকে এই ২য় মহামারী সামাল দিতে পারবে। যেহেতু সমগ্র বিশ্ব এখন মন্দায় কাবু, সেক্ষেত্রে বহির্দানও যে খুব একটা আশা করা যায় তেমনও হবে না। প্রতিটি দেশ তাদের নিজ নিজ অবস্থা সামাল দেয়ার জন্য নিজেদের তহবিল থেকে অন্যত্র সাহাজ্যের নিমিত্তে তহবিল ছাড় দেবার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় সবক্ষেত্রে এখুনী বড় ছোট সেক্টরে হোমওয়ার্ক করা খুবই জরুরী। সেই হোমওয়ার্ক গুলি কি কি হতে পারে?

১। উন্নত দেশগুলির করোনা ভাইরাসের অবস্থা ধীরে ধীরে ক্রমশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এর প্রধান কারন, উক্ত দেশগুলি আমাদের দেশের বেশ আগেই সংক্রামিত হয়েছে বিধায় তারা আমাদের আগেই প্রতিকুল অবস্থাটা পেরিয়ে উঠতে পারবে। এই সময় হটাত করেই দেখা যাবে, পুনরায় বিশ্ব বানিজ্য বিশেষ করে পোষাক শিল্পে, কৃষিখাতে, কিংবা রপ্তানীমুলক খাতগুলিতে অন্যান্য দেশ বানিজ্য শুরু করবে। ঐ সময় যদি আমাদের দেশের করোনার অবস্থার কোনো উন্নত না হয়, তাহলে অন্যান্য দেশ যারা তুলনা মুলকভাবে করোনা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তারা সব রপ্তানীমুলক কার্যাদেশগুলি ছিনিয়ে নেবে। একবার যদি এই সুযোগগুলি দেশ থেকে হাতছারা হয়, ২য় বার পুনরায় তা বহাল রাখা বা ফিরিয়ে আনা হবে অনেক কঠিন। সেক্ষেত্রে হোমওয়ার্কের আওয়তায় পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে, যারা যারা করোনার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রোটেক্সন নিয়েই রপ্তানীমুলক কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন বলে আশস্থ করতে পারবেন, হয়তোবা সরকার নিরুপায় হয়েই সেসব কারখানা চালিয়ে রাখার আদেশ দিতে হতে পারে। এটা করতে হবে কারন অর্থনীতির যোগান না হলে, কোনো অবস্থাতেই কোনো সরকার, সমাজ বা পরিবার কিছুতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য এই প্রতিকুল অবস্থা সামাল দিতে পারবেন না। এই মুহুর্তে হয়তো অনেক মিডিয়া, অনেক বুদ্ধিজীবিরা রপ্তানীমুলক শিল্পগুলির বিরুদ্ধে অনেক মজাদার কথা বলে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু তখন অনেক নিরুপায় হয়েই আবার এইসব মিডিয়াই কিংবা বুদ্ধিজীবিরা একটু শিথিল পরিবেশেই রপ্তানি কাজ কেনো চালিয়ে যাচ্ছেন না, করা যেতে পারত ইত্যাদি বলে বলে হয়তো মুখে ফেনা তুলে ফেলবেন। কৃষক যদি খাদ্যে দেশকে সাবলম্বি করে দিতে পারেন, আর এই রপতানীমুখী শিলপ গুলি যদি বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিতে পারেন, তাহলেই গাড়িতার তেল পুড়িয়ে খাবারটা খেয়ে অন্তত কেউ বুদ্ধিজীবির মতো টক শোতে আসতে পারতেও পারেন। সরকারের তহবিল মোটা করতে সবার যেমন সঠিভাবে ট্যাক্স প্রদান, সবার দায়িত্তশীল ভুমিকা পালন করা দরকার সেখানে এই দেশে সবে মাত্র ৪০% নাগরীক সরাসরি সরকারকে সাহাজ্য করেন, যার থেকেই সরকার এই সব ডেভেলপমেন্ট কাজ, বিশেষ তহবিল গঠন করেন। তাই সরকার জানেন তিনি কিভাবে কোন পরিস্থিতিতে আছেন। সবার ইন্টেলেকচুয়াল কথা শুনলে তো দেশ চালানো যাবে না। সব দায়িত্তই সরকারের নয় এটা সবারই বুঝা উচিত। আপদকালীন সময়ে হয়তো সরকার তার সর্বস দিয়ে ক্রিটিক্যাল সময়টা পার করে দিতে পারেন কিন্তু মাসের পর মাস এটা কোনো সরকারের পক্ষেই পারা সম্ভব না, আর আশা করাও কোনো দায়িত্তশীল নাগরিকের কাম্য নয়। হাওয়া যখন গরম হয়, তখন আমরা বলি শনির দশা চলছে। আর শনি এমন এক হাওয়ার নাম যে, যেখানেই যাই হোক বলির পাঠা হয় সরকার। সরকারের সাথে সাথে বলির পাঠা হয় সেই সব অরগ্যানাইজেশন গুলিও যাদেরকে চোখে দেখা যায় তারা। ফলে কেনো সরকার ওটা করলেন না, কেনো সরকার ঊটা করতে গেলেন, কিংবা কেনো ঐ অরগ্যানাইজেশন গুলি এতা করছে না ইত্যাদি। সমালোচনার আর শেষ নাই। কিন্তু কেউ যেনো দায়িত্তশীল নয়, সব দোষ এই সরকার বাহিনীর।

তাই এই মুহুর্তে আমার ধারনা, রপ্তানীমুলক প্রতিষ্ঠানগুলিতে যারা কাজ করেন, তাদের শতভাগ করোনা টেষ্ট করে এটা নিশ্চিত করা যে, তারা এই মহামারীতে আক্রান্ত হন নাই এবং যখনই বাইরের দেশগুলি করোনা শেষে পুনরায় রপ্তানীর জন্য আগ্রহী হবেন, তখন যেনো আমাদের রপ্তানীমুলক শিল্পগুলি কোনো রিস্ক ছাড়া দ্রুত উতপাদনে গিয়ে শতভাগ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে পারেন তার ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে, এই সব শ্রমিক কর্মচারিদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে না রেখে কারখানা কোয়ারেন্টাইনে রেখেই রপ্তানীমুলক কাজে উতসাহিত করা। এটা এখনি করতে হবে সেটা বলছি না। সময়টা হবে যখন উন্নত দেশগুলি পুনরায় বানিজ্যিক কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেবেন তখন। মিডিয়া অনেক সময় সরকারের অনেক ঘটনমুলক কাজকে যেমন উতসাহী করেন আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকটা না বুঝেই নিরুতসাহীও করে ফেলে। অনেকেই বলতে শুনি যে, পলিটিক্সে মিডিয়া একটা হুমকীর মতো। ফলে কখনো কখনো রাজনীতি মিডিয়ার কাছে একটা বেওয়ারিশ বোমের মতো হয়। কেউ জানে না উটা কখন কিভাবে কোথায় ফাটবে আর কে কে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এজন্য আমাদের দরকার, যারা প্রকৃতভাবেই অর্থনীতি বুঝেন, বিশ্ব রাজনীতি বুঝেন, তাদেরকে টকশোতে প্রকৃত অবস্থাটা মিডিয়ায় বাস্তবভাবে তুলে ধরা। কান্ডজ্ঞানহীন কিছু মানুষ যখন জ্ঞানবিহিন কোনো বিষয়ে কথা বলেন, তখন যারা সরল আমজনতা, তারা বিভ্রান্ত হন। আমজনতাকে বিভ্রান্ত করা দেশের জন্য একটা অশুভ কাজ।

২। কৃষি খাতকে আরো দেশীয়ভাবে সাবলম্বি করে তোলা যাতে খাদ্য নিরাপত্তায় আমাদের দেশের কৃষক এবং ভুমিগুলি অন্তত খাদ্য ঘাটতি পুরনে সক্ষম হয়। কারন একটা সময় আসবে, যখন টাকা খাওয়া যাবে না, বা ডলার খাওয়া যাবে না, দরকার খাদ্য শস্য। আর আমাদের জমি, ভুমিই হতে পারে সাময়িকভাবে তার একমাত্র অবলম্বন।

৩। ডেভেলপমেন্ট খতে এই মুহুর্তে বিশেষ নজর না দিয়ে ঐ সব ফান্ডগুলি শুধুমাত্র সাস্থখাত, ভর্তুকি এবং অন্যান্য কাচামালের উপর বিশেষ ছাড় দেয়া। যাতে করোনার উন্নতির পাশাপাশি সমস্ত শিল্প, সমস্ত উদপাদনশীল কারখানাগুলি দ্রুততম সময়ে বৈদেশীক মুদ্রা ঘরে আনতে পারে। যতো বেশী বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে ঢোকবে, তত দ্রুত দেশের অর্থনীতর চাকা সল্প সময়ে চালু হবে। কর্ম সংস্থান বাড়বে। দূর্ভিক্ষ কমবে। (চলবে)

(লেখাটি কোনো পক্ষকেই সমালচনা করার জন্য নয়, এতা একটা ঘটনমুলক চিন্তা থেকেই ব্যক্তিগত মতামত। আপ্নারাও আপনাদের ঘটন মুলক মতামত দিতে পারেন।)

Isa Ruhul Karim Isa Food security is the base, we must put maximum efforts on agricultural at this moment.

Mohd Akhtar Hossain খাদ্য সয়ং সম্পর্নতায় যেটা হবে তা হচ্ছে, দেশের মানুষ ক্রিটিক্যাল সময়টা অন্তত না খেয়ে সাফার করবে না। আবার আমদানিও করতে হবে না। আসলে আমদানী করার কোনো স্কোপও থাকবে না কারন সব দেশই একই পলিসি এডোপ্ট করবে, কোনো খাদ্য শস্য হয়তো তেমন ভাবে রপ্তানীও করবে না। আগে নিজের দেশের চাহিদা মেটানোর পর যদি সারপ্লাস থাকে তাহলেই হয়তো চড়া দামে অন্য দেশ তা রপ্তানি করবে, আবার সেক্ষেত্রেও তোমার বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে। ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, কিংবা অনেক কাচামাল আছে যা আমাদের রপ্তানীর জন্য কিংবা ডেইলি লাইফে চলার জন্যেও তা আমদানী করতে হবে। তাহলে সেই সব কমোডিটিজ আনতে বৈদেশিক মুদ্রা পাবো কই? সেই জন্যএই আমাদের পোষাক শিল্পকে এবং এই জাতীয় শিল্প যারা বৈদেশিক মুদ্রা সহজেই আনতে পারে তাদেরকে দাড় করাইতে হবে দ্রুত।

Mosharraf Hossain লিখেছেন ভালো ।তবে এ মূহুর্তে আপনার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে কঠিন হবে ।বি জি এম ই ও বিকে এমই এর নেতৃবৃন্দ কে আরও চৌকষ হতে হবে ।তাদের সাথে সদস্যদের সমন্বয়ের অভাব আছে মনে হয়। হতাশ হওয়ার কিছু নেই,যেখানে ধ্বংস সেখানে সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হয়।

Mohd Akhtar Hossain আমি এই মুহুর্তের কথা বলছি না আসলে। আমি বলছি যে, এটা হোমওয়ার্ক দরকার যখন অন্যান্য দেশগুলি করোনার ইফেক্ট থেকে বেরিয়ে এসেই বিপুল পরিমানে সব ব্যাপারে ঘাটতি পুরনে সর্বাত্তক কাজে লেগে যাবে, তখন । তখন আমাদের কি কি করা উচিত যদিও আমরা তখনো কিছুটা করোনায় কবলিত থাকবো হয়তো। এই মুহুর্তে কেহই কিছু করতে পারবে না বলেই সব দেশের সরকার আপদ কালীন ঠেক দিচ্ছেন। আমিও সেটাই বলছি, যখন স্রিষ্টির সুযোগটা আসবে, তখন আমরা সেই সুযোগটা নিতে পারবো কিনা। নাকি অন্য কেউ সেটা নিয়ে নেবে স্যার।

Mozaharul Islam Shawon গতকাল শুনেছি গার্মেন্টস মালিকের কাছ থেকে যে বেশিরভাগ অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। আবার মাত্র ১ সপ্তাহ সময় দিয়েছে এক্টা বড় অর্ডারের সিপমেন্ট এর জন্য। দেখলাম তারা প্রানান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন অন্তত যেটুকু কাজ বাকি আছে,সেই সেক্টরকে চালিয়ে সিপমেন্ট সময়মত করার। এই অংশে বাধা দেবার কিছু নাই। তবে মহামারির প্রয়োজনিয় পরীক্ষা করার সক্ষমতা যেন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ নিতে পারেন,সেই সুযোগ থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে?

Mohd Akhtar Hossain শাওন ভাই, বেসিক্যালি এ যাবত পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের উপর অর্ডার বাতিল হলেও গার্মেন্টস সেক্টর প্রায় ৫০/৬০ বিলিয়ন অর্ডারের কাজ করে বাংলাদেশ। বায়াররাও তাদের এই মৌলিক চাহিদা পুরন করতে হবে। ফলে অনেক আদেশ বাতিল হয় নাই, পুশ ব্যাক করেছে, বা হোল্ড করেছে। কিন্তু অনেক বায়ার আবার এই সর্তও দিয়েছে যে, পেমেন্ট করতে চায় আরো ৬ মাস পড়ে। তাতেও বাংলাদেশের রাজী হওয়া উচিত যদি বায়ার শুধু সিএমটা দেয়। কোনো কারনে যদি এই বিপুল পরিমান অর্ডার আসলেই শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়, তাহলে যে যাইই কিছু বলুক, দেশের অর্থনীতিকে চাংগা করার মতো আর কোনো সেক্টর নাই যেখানে এই পরিমান ফরেন কারেন্সী আনা। রেমিটেন্স এই মুহুর্তে বা আরো কয়েক মাস প্রায় শুন্যের কোটায় থাকবে। সেক্ষেত্রে বিকল্প কি? বিকল্প একটাই, একে সচল করা। একটা কথা ঠিক শাওন ভাই, আপনি হয়তো এই শিল্পের সাথে জড়িত কিছু মানুষের সাথে আলাপ আলোচনা আছে বলে এই মন্তব্যতা করতে পেরেছেন যে, " অন্তত যেটুকু কাজ বাকি আছে, সেক্টরকে এলাউ করা যে সিপমেন্ট গুলি বাকী আছে তা সময়মত করার। এই অংশে বাধা দেবার কিছু নাই। তবে মহামারির প্রয়োজনিয় পরীক্ষা করার সক্ষমতা যেন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ নিতে পারেন,সেই সুযোগ থাকা উচিত।"। কিন্তু এমনো কিছু গুনিজন আছেন যারা না জানে আদার ব্যাপারীর কাজ না জানে জাহাজের খবর কিন্তু মন্তব্য করে যেন উনীই একমাত্র কান্ডারী। যেনো এই করিলে সেই হইবে, ঐ না করিলে উহা হইবে না। হাসি মাঝে মাঝে।

Mozaharul Islam Shawon Mohd Akhtar Hossain

জি বৃহত স্বার্থে জরুরী বটে। তবে নিজ দায়িত্বে হলেও কর্মিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা জরুরী। সেজন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার সকল ব্যবস্থা নেবার ক্ষমতা গার্মেন্টস মালিকদের দেয়া উচিত এবং সেখানে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রন রাখা উচিত। বিমানবন্দরের সনদ পাওয়ার মত যেন না হয়।1

Mohd Akhtar Hossain Mozaharul Islam Shawon একটা মালিক শুধু দেশের কমপ্লায়েন্স সিস্টেমেই দায়বদ্ধ না। সে ইন্তারন্যাশনাল লেবার আইন, কমপ্লায়েন্স, সেফটি এন্ড ওয়ার্কি এনভায়রনমেন্ট পরিপুর্ন করলেই ব্রান্ড বায়ারের কাজ করতে পারে। ফলে যে সব প্রোটেকসন নিয়ে গার্মেন্টস মালিকগন কাজ করেন, সেটা অনেকেই জানে না। রানা প্লাজার পর সব কিছু আমুল পরিবর্তন যে হয়েছে এটা অনেকের পেটেও নাই, মাথায় তো নাইই। বাসায় যতোতা না করোনার ব্যাপারে মানুষ যত্ন নেয়, তার থেকে অনেক বেশি গুনে মালিকপক্ষ করোনার ব্যাপারে যত্নশীল। আর এতার মনিটরিং রেকর্ড করে বিজিএমইএ, এবং ব্রান্ড বায়ার সবাইকে রিপোর্ট পাঠাতে হয় যেমন থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হয়েছে কিনা, প্রতিটা সিড়ি থেকে শুরু করে টেবিল পর্যন্ত সেনিটাইজ করা হয়েছে কিনা, ফ্লোর সেনিটাইজ করা হয়েছে কিনা, সোস্যাল ডিস্ট্যান্সে বসাচ্ছে কিনা, মাস্ক পড়ছে কিনা, হ্যান্ড সেনিটাইজ দিয়ে প্রতিবার বের হওয়্যার সময় বা বাহির থেকে আসার পর হাত ধোয়া হচ্ছে কিনা, এই সব কিছুই মালিকগন নিজের সার্থেই করে থাকেন। কারন এখানে একটা লোক আক্রান্ত মানে উরা ফ্যাক্টরি আন্ডার লক দাউন। নিজেরা সহ। তো কে চায় নিজের ক্ষতি করতে? মালিকগন নিজের পরিবারের থেকেও বেশি যত্নশীল তাদের ফ্যাক্টরির ওয়ার্কারদের ব্যাপারে। এটা কেউ বিশ্বাস করুক আর নাইবা করুক। কারন আমি নিজে করি।

Mozaharul Islam Shawon Mohd Akhtar Hossain
গুড। এর সাথে তাদের আবাসস্থলের দিকেও নজর দিতে হবে এবং সুরক্ষায় আনতে হবে। সেখানেও আপনাদের তদারকিতে নিতে হবে। আমি কি খুব বেশি বিরক্ত করছি?1

Mohd Akhtar Hossain Mozaharul Islam Shawon না, আপনি ঠিকই করছেন। এটা বিরক্ত না শাওন ভাই, এতা বাস্তবতা যেতা আপনি বলছেন। আমাদের ওয়ার্কাররাও কিন্তু এখন অনেক সচেতন। তারা নিজেরাও ফ্যাক্টর থেকে হ্যান্ড সেনিটাইজার নিয়ে বাসায় যায়, মাস্ক নিয়ে যায়, আমরাই দেই। আবার সেতা ঠিক্মতো ওয়াস হচ্ছে কিনা সেতাও আমরা পরীক্ষা করি। আর তাদেরকে তো মোটিভেশন করেই যাচ্ছি।

২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-৫

Categories

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এমন এক মহামারী চলছে যে, তৃতীয় কোনো বিশ্বযুদ্ধ হলেও কোনো না কোনো পক্ষ বিপক্ষ থাকতো, আর এই দুই পক্ষ-বিপক্ষকে সামাল দেয়ার জন্য হয়তো তৃতীয় কোনো সমঝোতাকারীও থাকতো। কিন্তু এখানে পক্ষ যেনো একটাইঃ দৃশ্যমান মানবজাতী বনাম অদেখা অমাবশ্যারমতো করোনার মহামারী। সারাবিশ্ব আজ স্থবির। থেমে গেছে সব। সবাই আজ এক কাতারে, কেউ আজ আর কারো জাত, ধর্ম কিংবা গোত্র নিয়ে কথা বলে না। এই অমাবশ্যায় সব কিছুই উলট পালট হয়ে যাচ্ছে, সব কিছুর হিসাব পালটে যাচ্ছে। এই অমাবশ্যা কবে কাটবে সেটাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। অনেকেই হয়ত অমাবশ্যা কাটার জন্য জজ্ঞের আয়োজন করছেন, উপাসনা করছেন, কিন্তু অমাবশ্যা কাটবে কিনা সেটা কোনভাবেই জজ্ঞ নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। কারন, এই মহামারী বর্তমান মানবজীবনের অস্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক করতেই যেনো এর আবির্ভাব। অর্থাৎ বিধাতার শুদ্ধি অভিযান চলছে। সবাই যেন দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন, কোনটা সঠিক সিদ্ধান্ত আর কোনোটা সঠিক নয় এটাও সঠিকভাবে নিতে পারছেন না, না দেশের সর্বোচ্চ মহল, না তাদের আমলাতন্ত্র না সাধারন জনগন। সবাই দিশেহারা। সারাটা বিশ্ব যেনো একটা মর্গ। মর্গে যেমন ঠাণ্ডা থাকে তেমনি থাকে নিস্তব্দতা। বিশ্ব এখন ঠান্ডা আর নিস্তব্ধ।

১৬/০১/২০২০- জীবন একটাই।

Categories

জীবন একটাই, এ জীবনে সাহসীরাই জয়ী হয়, আর দুর্বলেরা খড়কুটা ধরে কোনো রকমে বেচে থাকে। যে জীবনে চ্যালেঞ্জ নাই, সেটা এডভেঞ্চারাস নয়। যে জীবনে প্রত্যাশা নাই, সে জীবন একটা বোরিং লাইফ। অলিম্পিকের একজন দৌড়বিদ চুড়ান্ত সাফল্য পেতে একই দৌড় হাজারবার দিতে হয়। সব প্রতিযোগীরাই অলিম্পিকের একটা দৌড়ে সাফল্য পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর একই দৌড় দিতে থাকে। সাফল্য আসবে কিনা সেটা বিচারের দিন সাবস্থ্য হয় সেদিন যেদিন সব দৌড়বিদরা একসাথে প্রতিযোগীতায় নামে। সেদিন বুঝা যায়, কে কতটা সাফল্যের জন্য দৌড়েছিলো। মজার ব্যাপার হলো, সাফল্যের একটা ফেস ভেল্যু আছে। দৌড়ে হয়তো একজন দৌড়বিদ সাফল্য পায়, কিন্তু তারসাথে সাফল্য পায় তিনিও যিনি এই ক্রিড়াবিদকে গাইড দিয়ে, অভিজ্ঞতা দিয়ে, মেধা দিয়ে সাফল্য পেতে সাহাজ্য করেছেন। আর তার সাথে বড়সড়ে সাফল্য পায় দেশ তথা বিশ্ব। এই সাফল্যমন্ডিত জীবন তখন হয়ে উঠে একটা লিজেন্ড। আর লিজেন্ডরা জগতে বারবার উচ্চারিত হয়। জীবনে সাফল্য আসে শুধুমাত্র নিজের গুনে। কেউ যদি সাফল্য না পান, সে অনেকের ঘাড়ে তার এই ব্যর্থতা চাপিয়ে দিতে পারেন বটে কিন্তু ব্যর্থ মানুষকে কেউ মনে রাখে না। ইতিহাসে কিছু নামীদামী ব্যর্থ মানুষের নাম কেউ মনে রাখলেও সেটাও নিতান্ততই সাফল্য মন্ডিত ওই লিজেন্ড যার বিপরীতে কারো ব্যর্থতা এসেছিলো, তাই তাকে পাশাপাশি হয়তো মনে রাখে। এটা ওই ব্যর্থ লোকের কারনে নয়, আবারো সেই লিজেন্ডের কারনেই হয়তো ব্যর্থ মানুষটি বেচে থাকে ইতিহাসের পাতায়। নিজকে ভালোবাসো, নিজকে বিশ্বাস করো। সাফল্য তোমার। যারা নিজের উপর ভরসা করে নাই, তাদের প্রতিভা থাকা সত্তেও নিজেকে প্রস্ফুটিত করতে পারে নাই।

১২/০১/২০২০- নির্মান ব্যবসা পীরগঞ্জ ভ্রমন

কোম্পানী ফর্ম করার যাবতীয় কাজ খুব দ্রুত গতিতে চলতে থাকলো। আর নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হলো যে, আন নূর কন্সট্রাকশন লিমিটেড পুরুপুরী অফিশিয়ালভাবে কাজ করার আগ পর্যন্ত আমরা রুবেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক্সকে সাংঘটনীক পরিবর্তনে পীরগঞ্জে পাওয়া চায়নীজদের কাজ তদারকি এবং যাবতীয় সাপ্লাই দেয়া। এই উপলক্ষ্যে আমি আর মূর্তজা ভাই পরিকল্পনা করলাম যে, দিনে দিনে রংপুর-পীরগঞ্জ গিয়ে পুরু ব্যাপারটা একবার দেখা দরকার। তাই ভাবলাম যে, বিমানে সৈয়দপুর বিমান বন্দর নেমে সেখান থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে আমরা রংপুর যাবো, কাজ দেখবো, আবার লাষ্ট ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরে আসবো। সাথে ১৫ লক্ষ টাকাও নিয়ে গেলাম।

০১/০১/২০২০-বিয়ে নামক পরীক্ষায়

Categories

বিয়ে নামক পরীক্ষায় সবাই এক রকম প্রশ্ন পত্র পায় না। কারো প্রশ্ন নীল আকাশের মতো চোখ জুড়ানো, আবার কারো প্রশ্ন ককেশিয়াস পাহাড়ের দূর্গম পিচ্ছিল ঢালুর মতো অমসৃণ। আর সেইপত্রের সমস্ত উত্তরও এক রকম হয় না। কেউ সহজেই সব কিছু উৎরে যায়, আবার অনেকেই পিচ্ছিল পথে শুরুতেই নিখোজ হয়ে যায়।

অনেক বিবাহিত জীবনের নম্বর সময়ের সাথে সাথে বেড়ে লেটার মার্কে উঠতে পারে, আবার অনেক ক্ষেত্রে পাশ মার্ক থেকে কমতে কমতে ফেল মার্কেও নেমে আসতে পারে। তারপরেও নিজের চেষ্টায়, নিজের বিবেক দিয়ে, চারিপাশ বুঝে কেউ যদি আন্তরীক হয়, এই ফেল নম্বর নিয়ে কখনো কখনো তা বেড়ে আবার সঠিক জায়গায় উঠে যেতে পারে যদি না এই সম্পর্কের মাঝে অন্য কিছু যুক্ত হয়, অথবা এমন কিছু যুক্ত হয় যা তিক্ততায় রুপান্তরীত হয়।

যদি সম্পর্কের মাঝে অন্য কিছু যোগ হয়ে যায়, যা হওয়া উচিত না, যার তার ফলে লেটার মার্ক পাওয়া একটা সম্পর্ক শীতের পারদের মতো দ্রুত নামতে নামতে ফেল মার্কের নীচে চলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেই ভালবাসার পারদে এমন কিছু ভেজাল ঢোকেছে যা খালি চোখে দেখা যায় না, বা বর্নচোরার মতো তাকে পারদের মতো একই মনে হয়। এই ক্ষেত্রে এই ভালোবাসার ব্যারোমিতার দিয়ে কোনো পক্ষেরই ভালোবাসার তাপমাত্রা বুঝা সম্ভব হয় না। প্রতিবারই মনে হবে রিডিং ভুল। ব্যারোমিতার পালতানো যায় কিন্তু আমি বুয়ারোমিটার না পালটে আমাদের সেই ব্যারোমিতার সঠিক কাজ করে এমন কেনো করতে পারি না? এর একটাই কারন, আমরা বর্নচোরা ভেজালতাকে সনাক্ত করতে অক্ষম। ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর একটা সার্বোজনীন সমাধান যুগে যুগে মিনিষিরা দিয়ে গেছেন বটে কিন্তু সেটা আমরা না মনে রাখি, না অনুসরন করি। যার ফল সরূপ আমরা অধিক মনো কষ্ট নিয়েই একে অপরকে দুইটি পথের শেষ প্রান্তে এসে চোখের জলেই বিদায় দেই, অথচ ভিতরে ভিতরে যন্ত্রনার আর শেষ থাকে না। তাহলে সেই সমাধানটা কি?

আমার কাছে বারবার মনে হয়েছে যে, মানুষের জীবনের এই রকম একটা দুদুল্যমান পরিস্থিতিতে দুইটা মানুষের মধ্যে কোনো না কোনো কারনে সহনশীলতা, মানবিকতা অথবা এই জাতীয় মানবিক আইটেম গুলিতে নম্বর ধীরে ধীরে কমে শুন্যতায় নামতে থাকে। এই শুন্যতায় যেনো কারো স্কোর না নেমে আসে, তার জন্য সবচেয়ে বড় যা দরকার তা হচ্ছে, কোনো শর্ত ছাড়া একে অপরের বিশ্বাসভাজন থাকা, দরকার সেক্রেফাইস বা ত্যাগ, দরকার একনিষ্টতা আর দরকার নিজের সাথে নিজের সৎ থাকা। কেউ যদি মনে করে যে, একটা মিথ্যাকে বারবার মিথ্যে বললে সেটা সত্যি হয়ে যায়, সেটা ভুল, হয়তো ব্যাপারটা এরকম যে, একটা মিথ্যা বারবার বলাতে সত্যিটা কিছুটা ফেকাশে হয়ে যায়। কিন্তু এক সময় মিথ্যাটা প্রকাশ্যে আসেই। কখনো যদি কোন ভুল হয়েও যায় যা নিছক অনিচ্ছহায়, তখন তার হাতে থাকে একটাই অস্ত্র। আর সেটা হচ্ছে, নিসশার্তভাবে ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমা চাওয়া কোনো দোষের না। ক্ষমা যিনি চান তিনিও সম্মানীত, আর যিনি ক্ষমা করেন তিনিও। আর এই ক্ষমা চাওতা যতো দ্রুত হয়, ততো মংগলজনক। ততো ক্ষতির সম্ভাবনা কম। অনেক ক্ষেত্রে এই ক্ষমা চাওয়ার মতো সুযোগটাও আসে না। কিন্তু যদি আসে, তা কর্তব্যবোধ বা রিস্পেক্তের সাথে পুনরায় তা শোধন করা সম্ভব। কোনো একটা পজিটিভ ফিগার থেকেই আরো পজিটিভ ফিগার বাড়ে, শুন্য থেকে কিছুই বাড়ে না। শুন্যতায় নেমে যাওয়ার আগেই এই প্রক্রিয়াতা বুঝা দরকার। বুঝা দরকার তাদের, যারা এর ভুক্তভুগী। পরিস্থিতি শুন্যের কোটায় নেমে গেলে এবং উন্নত না হলে এই ক্ষমা কোনো কার্জকরী ভুমিকা রাখে না। একটা কথা খুব ভালো করে মনে রাখা দরকার যে, ঘরের দরজা বন্ধ হবার সাথে সাথে সব সময় মনের দরজা যে বন্ধ হবে এমন কোনো কথা নাই। কিন্তু মনের দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন ঘরের দরজা এম্নিতেই বন্ধ হয়ে যায়। আর এই পরিস্থিতির জন্য যার জন্য্যে বন্ধ হয়, সেইই দায়ী। কারো ফিলোসফির এয়ারপ্ল্যান যতোক্ষন না পর্যন্ত ভূমিতে ল্যান্ড করে বাস্তবে ফিরে না আসে, ততোক্ষন সেই ফিলোসোফি কারো কাজে আসে না।

দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিন গুলির কথা মনে করে দেখলে বুঝা যায়, সবাই সব স্তরের প্রত্যেকেই একটা পজিটিভ দিক থেকেই এগিয়ে এসেছিলো বলেই সম্পর্কটা স্থাপিত হয়েছে। যদি কখনো বিস্লেষন করেন, দেখবেন, দাম্পত্য জীবনের ইতি শুধু স্বামী স্ত্রীর কারনেই হয়েছে এমন নয়, এর মধ্যে আরো অনেক অনেক বহুমাত্রিক মন্তব্য, বিস্লেষন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি বর্গের কারনেই বেশীর ভাগ দাম্পত্য জীবনের সফলতা আসে নাই। এই ক্ষেত্রে যারা দাম্পত্য জীবনের মধ্যে বন্দি হয়েছেন, তাদের উচিত, সমস্ত জ্ঞানি, গুনীজন কে এক পাশে রেখে, নিজেদের ভিতরের আত্তার কথা শুনা। নিজের হৃদয়ের কথা শুনা।

চোখ বন্ধ করুন, নিজের উপর ভরষা রাখুন, সৃষ্টি কর্তাকে স্মরণ করুন, দেখুন বন্ধ চোখে কে আপনার সামনে আসে বারবার। যদি হয়ে থাকে সে, যাকে আপনি দূরে সরিয়ে রেখেছেন সেই ভেজাল কিছু বর্ন চোরা পারদের কারনে, আপনি ঠিক ভেজাল টা ধরতে পেরেছেন। পালিয়ে যান সবার কাছ থেকে। কারন, আপনি সব ভেজাল পরিবেশ দারা এখন পরিবেষ্ঠিত। একমাত্র আপনার একা বেরিয়ে যাওয়াই হচ্ছে পরিশুদ্ধ হইবার একমাত্র পথ।

আবার নতুন করে ভালোবাসুন, নতুন করে পৃথিবীর সব কিছু শুরু করুন সেই তাকে নিয়ে যার হাত ধরে একদিন আপনি সবার সামনে শপথ করেছিলেন, আমরা এক সাথে বৃদ্ধ হবো।

জীবন অনেক সুন্দর। আর একতাই জীবন। মনে রাখবেন, অতীতের কোনো ভবিষ্যত নাই। ভবিষ্যত হয় শুধু আজকের জন্য।

৩১/১২/২০১৯-অরু-৫

Categories

আজ অরুর বিয়ে।

মান অভিমানের সাথে পরাস্ত অরু আজ রংগীন সাযে সাজিবে। বর আসিবে, গান বাজিবে, ছোট ছোট বালক বালিকারা নৃত্য করিবে। সবাই আনন্দে উদ্বেলিত হইবে। অথচ আজ অরুর মধ্যে কোনো প্রকারের আনন্দ নাই, না আছে কোনো অশ্রুজল। সব জল যেনো এই কয়দিনে শুকাইয়া মরুভুমি হইয়া গেছে। যেদিকেই অরু তাকায়, সেদিকে সে তাহাকে দেখিতে পায় কিন্তু কোথাও সে নাই। মরিচিকার মতো অরু যেনো শুনতে পায় তাহার ডাক, আবার পরক্ষনে চাহিয়া দেখে, তাহা তাহার ডাক নয়, হয়ত পাশের বাড়ির কোনো এক বয়ো বৃদ্ধ অরুকে আদরের সহিত কাছে ডাকিতেছে। অরুর কিছুতেই বিশ্বাস হইতেছে না, আজ হইতে তাহার নতুন কিছু শুরু হইবে। এই দেহ, এই মন, এই প্রান আর তাহার থাকিবে না। থাকিবে না তাহার জন্যেও যাহাকে অরু একদিন শপথ করিয়া বলিয়াছিল, পৃথিবীর সমস্ত বাধাকে অতিক্রম করিয়া আজ অরু যেখানে দাড়াইয়ায় আছে, তাহা হইতে অরুকে কখনো পৃথক করা যাইবে না। সেদিনের সেই শপথের কথা আজো অরুর মনে পড়ে, চাদের আলোকে সাক্ষি রাখিয়া অরু নীলের দিকে তাকাইয়া অরু বলিয়াছিলো, আমি আছি , আমি নাই, আর এই আমির মধ্যে শুধু তুমি ছাড়া আর কেউ নাই। কোথায় গেলো এতো শপথ? কোথায় গেলো এতো সব আয়োজনের?

রাত হইয়া গিয়াছে। বর পক্ষ আসিয়াছে বলিয়া চারিদিকে শোরগোল শুনা যাইতেছে। কেউ কেউ গেট রক্ষার তাগিদে আর উপঢোকন পাইবার লক্ষে ছোট ছোট ছেলেমেরা কেউ কঞ্চি, কেউ বা ররেক রকমের রং এর বাহার, আবার কেউ কেউ টাকা গুছানোর রুমাল বাহির করিয়া একাগ্রচিত্তে অপেক্ষা করিতেছে।

বর আসিলেন, যথারীতি বিবাহ শেষ হইয়া গেলো। অরু না দেখিল তাহার নব বরকে, না বর দেখিলো নব বধুকে। অরুর কোন কিছুতেই আর কিছু বলিবার ছিলো না। অরু শুধু আরেকবার চাহিয়াছিল অরুর সমস্ত অভিমানের কথাগুলি তাহাকে আরেকবার বলিয়া সবার কাছ হইতে চিরতরে বিদায় নেওয়া। কিন্তু ইহার কিছুই আর অবশিষ্ট নাই।

অরু চলিয়া যাইতেছে বরের সাথে। পাল্কিতে করে। রাত গভীর হইয়া আসিতেছে। পালকির বাহকদের হুম, হুম শব্দে অরুর কান্নার শব্ধ শুনা যাইতেছে না বটে কিন্তু এক ছোট পাল্কির ভিতরে বসিয়া অরু আরো কিছুক্ষ ভাবিতে লাগিল, আজ তাহার সাথের বন্ধুটি যেনো কোথায় হারাইয়া গেলো। যাওয়ার সময় একটু দেখাও হইলো না। জীবনের বাকী দিন আর কখনো তাহার সহিত দেখা হইবে কিনা তাহারও কোন সম্ভাবনা নাই। হয়তো কোন একদিন এই দুনিয়া ছেড়েই এভাবে চলিয়া যাইতে হইবে। নিশিত অন্ধকারের এই রজনীতে পাল্কিতে বসিয়া অরু শুধু একটা কথাই বুঝিল, জীবনের হিসাব বড় কঠিন।

অরু বরের বাড়ি চলিয়া আসিয়াছে। বাসর ঘরের এতো আলো দেখিয়া অরুর আরো মন খারাপ হইয়া উঠিল। কথা ছিলো, এই রকমের একটি আলো ঝলমলে ঘরে তাহার সহিত অরু সারারাত গল্প করিয়া কাটাইয়া দিবে। কত কথা জমা হইয়া ছিলো। সে বলিয়া ছিলো, এই বাসর রাতে সে সহস্র আরব্য রজনীর গল্প দিয়া তাহাদের বাসর শুরু করিবে। আজ আর সেই আরব্য রজনীর গল্প বলিবার মানুষটি চিরতরে হারাইয়া গিয়াছে। কোথায় গিয়াছে, কেনো গেলো, তার হিসাব আর করিবার কোনো প্রয়োজন নাই।

দরজা খোলার শব্দ হইলো। অরুরু নতুন বর। কিছুই না বলিয়া অরুর নতুন বর ঘরের সমস্ত আলো এক ঝটিকায় নিভাইয়া দিয়া তিনি অরুকে পিছন হইতে জরাইয়া ধরিয়া কানের কাছে আসিয়া বলিল, "অরু, আরব্য রজনীর গল্প দিয়া শুরু করি আজকের এই বাসরের গল্প?"

অরু অজ্ঞান হইবার উপক্রম, তাহার কানকে বিশ্বাস করিতে পারিতেছিলো না। মানে রাগে অভিমানে দুক্ষে কষ্টে, ভালবাসায়, অরু তাহার দুই হাত বরের দিকে ঝাপ্তাইয়া ধরিয়া হুহু করিয়া অবিরাম শ্রাবনের ধারার মতো কাদিয়া তাহার সেই পুরানো বন্ধুর গলা ধরিয়া শুধু কাদিতেই লাগিলো।

অরুর এই কান্না এখন আনন্দের আর ভালবাসার। এতোক্ষন যে চাপা কষ্টটা অরুর বুকে জগদ্দল পাথরের মতো বসিয়া ছিল, এখন অরুর কাছে মনে হইলো, পৃথিবী বড় সুন্দর। বড় বাচতে ইচ্ছে হয় আজীবন।

আমি তোকে ভালোবাসি।  

৩১/১২/২০১৯-অরু-৪

Categories

বুক ভরা অভিমান লইয়া অরু কাউকে কিছু না বলিয়া গত কাল অতিভোরে বাহির হইয়া গিয়াছিলো বটে। কিন্তু এখনো দিন অতিবাহিত হয় নাই, কেবল সন্ধ্যা নামিয়াছে, তাহাতেই অরুর মনে হইতে লাগিল, তাহার যেনো সব কিছু মিথ্যা হইয়া গিয়াছে। যখন অরু ঘর হইতে বাহির হইয়াছিল, তখনো জানালার বাহিরে কাঠালি গাছটার মাথার উপর ভোরের একখন্ড আভা উকি দিয়াছিল, অভিমান ছিল কানায় কানায় পূর্ন কিন্তু এখন দিনের শেষে আকাশের আলো আধারের ছায়ায় অরুর যেন অভিমানটা একটা কষ্টে পরিনত হইয়াছিল। অরুর মনে কোনো সন্ধির বিন্দুমাত্র আভাষ ছিলো। কিন্তু তাহার বুকের ভিতরে অভিমানের স্তুপ শতগুনে বাড়িয়া একটা পাহাড়ের রুপ নিয়াছিল। বড় কষ্ট, আর যন্ত্রনার এক মিছিলে অরুরু দুই গাল বাহিয়া কেবলি অশ্রু আর অশ্রুধার বহিয়া চলতেছিল। যতোই ক্ষন পার হইতেছিলো, অরু বুঝিতে পারিতেছিল, শামুকের সঙ্গে খোলসের  যেমন সম্বন্ধ, অরুর সাথে যেনো ফেলে আসা সেই মানুষটির সম্বন্ধ। অরু যেনো দেহমনে তাহার সহিত আষ্টে পিষ্টে এটে গিয়াছিল। আজ তাহার থেকে অরু বন্ধন ছিন্ন করিয়া কি এক মুক্তির জন্য যেনো উদ্দেশ্যবিহীন কোনো এক গন্তব্যে বাহির হইয়া আসিয়াছিল। কিন্তু অরু কি আসলেই কোনো মুক্তি পাইয়াছে?

অরু বারবার নিজেকে এই প্রশ্নই করিতে লাগিলো। বড্ড একা, বড় অসহায় মনে হইতে লাগিলো চারিপাশ। বিপাশা খালের পাশে একা অরু বসিয়া শুধু তাহার জীবনের এতোগুলি সময়ের হিসাব কষিয়া কিছুই মিলাইতে পারিতেছিলো না। অরুর বারবার সেই সব দিনের কথা একে একে মনে পড়িতে লাগিলো যখন তাহার জন্য পথের পানে চাহিয়া থাকিতেও ভালো লাগিত তাহার অপেক্ষায়, কিংবা তাহার সহিত এক সাথে বসিয়া ইতিহাসের গল্প শুনা, অথবা তাহার বাহুতে বসিয়া কোনো এক অনাগত আবরারের সপ্নের কথা। অরু বাকরুদ্ধ। 

অরুর প্রতি নিয়ত মনে হইতে লাগিল, আমি কি তাহার জন্য কিছুই করি নাই? আমি কি তাহাকে কনো কালেই ভালবাসি নাই? আমি কি কখনোই তাহার মনের ভিতরে ছিলাম না? যদি তাহাই হয় নাই, তাহলে এতোদিন কি ছিলো? অরু আর কিছুই ভাবিতে পারে না। সমস্ত আকাশের সন্ধাকালীন লাল মেঘ মেলাকে অরুর বড় বিষণ্ণ বোধ হইতে লাগিল।

দিন চলিয়া গেলো। রাত নামিবার সাথে সাথেই যেনো অরুর আরো মন খারাপ হইতে লাগিলো। চিৎকার করিয়া কাদিতে মন চাইলো অরুর। কিন্তু অরু যাহার ঘরে এখন বসিয়া আছে, তাহাদের কথা ভাবিয়া আর নিজের অকস্মাৎ অন্তর ধানের খবর লজ্জায় লুকাইবার নিমিত্তে অরুর আর আর্তনাদ করিয়া কাদা হইল না। অরুর বুকের হাহাকার, অরুর চোখের জলের ধারা বারবার অরুকে জীবনের কি মুল্য এই হিসাবের নিকটবর্তী নিয়া আসিয়াছিলো। কিন্তু জীবন শেষ করিয়া দেওয়া কি এতোই সহজ?

অরুর আরো মন খারাপ হইতেছিলো এই ভাবিয়া, যাহাকে সে ছাড়িয়া আসিয়াছে, তাহার এখন মনের অবস্থা কি? তিনিও কি অরুর জন্য এমন করিয়া হাহাকার করিতেছে? তাহার ও অরুর জন্য মন কাদিতেছে? যদি কাদিয়াই থাকিবে, তাহলে আজ সকালে অরুকে কেনো আগলাইয়া ধরিয়া রাখিলো না? যেমন করিয়াই রাখিয়াছিলে, তেমন করিয়াই তো ছিলাম। দুঃখ যে আছে আমার, এ কথা তাহার কি কখনই মনে আসে নাই? মরনের কথা বার বার মনে আসিতেছিল। কিন্তু মরনের কথা মনে হইলেও কোনো এক বাধনের কারনে মরনকেও ভয় হইতেছিল। আমার জন্য না, অরু ভাবিলো, আমার মরন কি তাহাকে জীবিত রাখিতে পারিবে? হয়ত সে আমার থেকেও বেশি অশ্রু পাত করিতেছে।

রাত গভীর। অরুর চোখে ঘুমহীন রাত। সবাই ঘুমিয়ে আছে, কিন্তু অরুর চোখে কোনো ঘুমের ছাপ মাত্র নাই। বুকের পাজর গুলি যেনো কুকড়ে গিয়ে আরো ছোত হয়ে গেছে। পেটে ক্ষুধা নাই, মনে শান্তি নাই। অরুর বারবার মনে হইতেছিল, অনাদর আর আদরের কথা। অরু তো তার সর্ব কিছু দিয়া তাহাকে আদর করিয়াছিলো। কিন্তু তাহার প্রতি এতো অনাদর হইলো কেন? অনাদর জিনিষ তাই একটা ছাইয়ের মতো। সে ছাই হয়তো আগুনকে ভিতরে ভিতরে  জমিয়ে রাখে কিন্তু বাইরে থেকে তার তাপটাকে বুঝতে দেয় না। তাহার কাছে অরুর যেনো সম্মান কমিয়া গিয়াছিলো। আত্ত সম্মান যখন কমে যায়, তখন অনাদরকে তো অন্যয্য বলে মনে হয় না। এক সময়ে তাহার আদরে আমার যে জীবন গড়িয়া উঠিয়াছিল আজ যেনো ঠিক সেইভাবেই অনাদরে আমার দুঃখের ব্যথাতা শতগুনে বাড়িয়া উঠিয়াছিল।

সব কিছুর পরেও অরুর বারবার মনে হইতেছিল, আমি কেনো তাহাকে ভুলিতে পারিতেছি না? সেও কি আমার মতো আমা বিহনে এইরুপ সকাল, সন্ধ্যা রাত ঘুমহীন ভাবে কাতাইতেছে। একবার ভাবিলাম, যাই ফিরে যাই। গিয়ে আবার জাপটে ধরে বলি, এই যে, আমি, অরু। তোমার অরু, আবার ফিরিয়া আসিয়াছি। আমি পারি নাই তোমাকে ছাড়িয়া একটি রাত অতিবাহিত করিতে। আমি পারি নাই তোমাকে একটি মুহুর্তে ভুলিয়া থাকিতে। আমি ফিরিয়া আসিয়াছি। আমি প্রতিটি মুহুর্ত বুঝিয়াছি, আমার সারাটা বিশ্ব জুড়িয়া চারিদিকে তুমি। আমি যেদিকে তাকাই, সেদিকেই শুধু তোমাকে পাই, হাত বারাই অথচ তুমি নাই। আমি জীবন্ত লাশ হইয়া চারিদিকে যেন পালাইতে নয়, তোমাকেই খুজিতেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো। আমি ফিরিয়া আসিয়াছি।

পরক্ষনেই, সম্বিত ফিরিয়া আসিলে অরু দেখিলো তাহার কপোল গরাইয়া শুধু অশ্রু দিয়াই তাহার কামিজ ভিজিয়া গেছে, তাহার চোখ ফুলিয়া গেছে। অরুর মনে কোনো শান্তি নাই। অথচ কাইকে অরু কিছু বলিতেও পারিতেছে না, কি হইলো, কেন হইলো, আর এখন কি হইবে।

অরুর কত কিছুই না আজ এই একা বসিয়া মনে পড়িতেছে। এই অরু ছিলো তাহার রাতের সাথি, তাহার একাকিত্তের বন্ধু, এই অরুই ছিল তাহার মনের সব কল্পনার রঙ মাখানো বাতিঘর। অথচ আজ অরু কত দূরে বসিয়া একা। কোনো কিছুরই হিসাব মিলাইতে পারিতেছে না অরু। কোথায় গেলো সেই নেশা, কোথায় গেলো সেই গল্প বলার মানুশটা? তাহার চোখের পাতার কথা মনে পড়ে, তাহার হাত ধরার ভালবাসার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে আপলোক চোখে তাকিয়ে অরুর মুখ দেখিয়া অবাক হইবার সেই ভালোবাসার চিহ্ন।

বেদখল জমির মতো আজ অরু তাহার কাছে বেদখল হইয়া পড়িয়াছে। অরুর জীবনের যেনো আর কোনো মুল্য নাই অথচ একদিন ছিলো, অরু ছাড়া তাহার দিন শুরু হইত না, অরু ছাড়া তাহার রাত নামিতো না।

অরুর মনে হইতে লাগিলো, কতদিন যে তাহার সহিত কথা হয় না? কতকাল যেনো অরু তাহাকে দেখিতে পায় নাই? অরুর অন্তর আর কলিজার দুই পাশ ছিড়িয়া ফুলিয়া একাকার হইয়া যাইতেছিলো। 

এদিকে অরুর বিয়ের তোড়জোড় চলিতেছে চারিদিকে। অরুর এখন কি করা উচিত? ফিরিয়া যাইবে সেই তাহার কাছে? নাকি সমস্ত অভিমান আর কষ্ট লইয়াই অরু তাহার জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায় শুরু করিবে। অরু জানে না, কাল তাহার জন্য কি অপেক্ষা করিতেছে। অরু এইটাও জানে না, তাহাকে নিয়া বিধাতা কি খেলা খেলিতেছেন। অরু শুধু ওই নীল আকাশের দিকে তাকাইয়া বহু দূর দেখিতে পাইল একটা অস্পষ্ট আলো জালাইয়া কত সহস্র যাত্রী লইয়া আকাশ পথে একটা উড়ন্ত জাহাজ হারাইয়া যাইতেছে। একটু পর তাহার আর কোনো হদিস থাকিবে না।

২৯/১২/২০১৯ -অরু ডায়েরি-৩

Categories

অরু ভর্তি হয়ে গেলো ইউনিভার্সিটিতে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, নতুন নতুন সব বন্ধু। গ্রাম থেকে আসা একটি মেয়ে শহরের কতই না ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেমেয়েদের সাথে এখন এক সারিতে উঠা বসা করতে হয়। কিন্তু অরুর কি আছে সেই সামর্থ ওই সব পরিবারের বাচ্চাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলার? আমি ব্যাপারতা বুঝি। আমি বুঝি কিভাবে কোন স্তরের কোন বাচ্চারা কিভাবে চলে। আমি অরুকে ঠিক আমার সন্তানের মতো করেই চালানোর চেষ্টা করছি। অরু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খাপ খেয়ে গেলো সবার সাথে। ওর চলন বলন, ওর কথা বার্তা, ওর বেশ ভুষা সব কিছু উচ্চ বিত্ত সমাজের বাচ্চাদের মতোই আমি ব্যালেন্স করছিলাম। ওকে দেখে কোনো বুঝার উপায় নাই যে, ওর বাবা বা মা কেহ ওকে এক বিন্দু পরিমান সাহাজ্য করছে না। ও ভুলেই গেলো ওর আসল বাবা মাকে। এক সময় অরু আমাকে বাবা বলে ডাকতে শুরু করে দিলো।

আমি যাই, আমি দেখা করি, আমিই ওর সব কিছু দেখভাল করি। অরু তার ছোট একটা আলাদা বাসায় তার পড়ার টেবিল, সাজানো ঘর, বিছানা পত্র, ছোত একতা রান্না ঘর আর কাজের এক মায়াবতী সীমাকে নিয়ে ভালই সাজিয়েছে তার আপন গন্ডি, যেখানে আছে তার শুধু বাবা, আর বাবা।

দিন যায়, মাস যায়, বছর পেরিয়ে কয়েক বছর পার হয়ে যায়। অরু এক ইয়ার থেকে আরেক ইয়ারে, আরেক ইয়ার থেকে আরেক ইয়ারে পাশ দেয়। আমার বড্ড ভালো লাগে।

একদিন-

অল্প পরিচিত কোন এক অসচ্চল পরিবারের তার এক বান্ধবী, লুনা, তার নিজের প্রয়োজনেই আশ্রয় নেয় অরুর সাজানো এই ছোট সংসারে। উদ্দেশ্য আর কিছুই না, কয়েকদিনের আবাস। অরুর চালচলন, বেশভুষা, সাজানো সংসার আর চাকচিক্যে লুনার যেনো মন উদাস হয়ে যায়। লুনা তার জীবনের সাথে অরুর জিবনের এতো বড় ফারাক দেখে সারাক্ষনই তার মন উসদাসীন হয়ে থাকে। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার আর বিকালের আরাম আয়েসের সাথে যেনো এই লুনা কিছুতেই মিলাতে পারে না কি নাই ওদের আর কি আছে লুনাদের। ভিতরে ভিতরে লুনার শুরু হয় এক অজানা ক্ষভ আর জিদ। এই জিদ যেন কোন এক এদেখা ঈশ্বরের উপর, এই জিদ যেনো কোন এক সমাজের উপর, সাথে বাড়ে জিদ আমার সেই ছোট জননী অরুর উপর। লুনার সাথে কনো কিছুইই বুঝার আগে লুনা তার জীবনের চরম এক প্রিশোধের আগুনে জ্বলে উঠে। অরুর মতো একজন অসচ্চল গ্রামের চটপটে তরুনী যদি তার তথাকথিত বাবার আদরে এতো কিছু আয়েশী জীবন পায়, তাহলে লুনা কেনো তার জিবনে একই রুপে তা পাবে না, এতাই যেনো হয়ে উথে লুনার এক চরম হিংস্র মানসিকতা। লুনার এই হিংস্র মানসিকতার কিছুই না বুঝে কোনো এক বিকালে অরু হাত ধরে বেরিয়ে যায় বিকালের কোনো এক রাজপথে। হয়ত অরু তাকে নতুন শহর দেখাবে, হয়ত অরু তাকে শহরের সুন্দর বাতিঘর আর আলর রাস্তা দেখাতেই নিয়ে যায়।

রাত পেরিয়ে যায়, রাত গভীর হয়ে যায়, অরু আর ফিরে আসে না। কোথায় অরু?

২৮/১২/২০১৯ -অরু ডায়েরী-২

Categories

ছাত্রী হিসাবে অরু কি রকম ছিলো, ভালো না খারাপ নাকি অন্য রকম, তা আমার কিছুই জানা নাই কিন্তু আমার আশ্বাস আর ভরসায় অরু যেনো সীমাহীন কোনো এক নক্ষত্রের আলোর দিশারার কিনার দেখেছিলো। হয়তো সে নিজের যতটুকু যোগ্যতা ছিলো তার থেকেও আরো বেশী পরিশ্রম করেই এই কঠিনতম ভর্তি পরীক্ষার বৈতরণী পার হয়ে সত্যি সত্যি সরকারী ইউনিভার্সিটির কাঙ্ক্ষিত অর্থনীতি বিষয়েই ভর্তি হয়ে গেলো। এর মাঝে কয়েকমাস যে কেটে গিয়েছিলো আমার নিজেরও মনে নাই। মনে পড়লো সেদিন যেদিন আবার একদিন এই যুদ্ধের বিজয়ীর ফলাফল নিয়ে অরু আমার অফিসে এসে হাজির হলো। 

ভীষন খুশী হয়েছিলাম। কতটা খুশী হয়েছি তা বলতে পারবো না কিন্তু আমার মনে হয়েছিলো, ছোট একটা বীজ থেকে যে বটবৃক্ষের জন্ম, আমি যেনো আজ সেই ছোট বীজটাই হাতে ধরে আছি। আমি এম্নিতেই শিক্ষানুরাগী, তার মধ্যে এমন একটা বীজ আমার হাতে এসে পড়েছে যাকে আমি ইচ্ছেমতো বিকশিত হবার সুযোগ করে দিতে পারি। এখন শুধু হয়তো আমার কিছুটা পানি, কিছুটা সার আর কিছুটা মালীর কাজ করতে হবে, এটাই আমার কাছে বারবার মনে হয়েছিল। ভালোবাসা আর মমতায় আমি অরুকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।

যে ভালোবাসা আর মমতায় আমি ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, আমার এই মমতা আর ভালোবাসার ছোয়ায় আমি ওর বুকের ভিতরের কোনো এক মৃগী রোগীর মতো কাপুনী আর ধকধক আওয়াজের ধনি শুনেছিলাম। ওকে আমার সেই ছোট্ট মেয়েটার মতোই মনে হলো, ও যেনো আমার আরেক মেয়ে যাকে আমি জন্ম দেই নি ঠিক, কিন্তু যেনো কত জনমের চেনা। এতো মমতা আর স্নেহে কি হয়েছিলো আমি জানি না, কিন্তু ওকে আদর করে আমার অফিসের চেয়ারে বসানোর পরেই বুঝলাম অরূ কাদছে, তার মাথা নীচু, আমি শুধু ওর কপাল আর কিছু চোখের জলের ছায়া দেখতে পাচ্ছিলাম। দেখেছিলাম আমি ওর কপোলের ধার বেয়ে বেয়ে অবিরাম চোখের জল। ভাবলাম, হয়তো অতি আনন্দে মানুষ যেমন কাদে, অরুও হয়তো সে রকম এক পরিস্থির ভিতর দিয়েই যাচ্ছে। জল তো আর কারো আদেশের অপেক্ষা করে না। চোখের জলের উপর কারো কোনো আদেশ চলে না। চোখ তার জল দিয়ে খুসী আর আনন্দের অথবা বেদনার রঙ প্রয়াকশ করে। যার চোখ জলে ভর্তী হয়তো সেই জানে এই জলের উৎস কি আনন্দের না বেদনার। একটু পরেই আমার সেই চোখের জলের উৎস ধরা পরলো। ভুল ভাংলো। ভুলটা ভাংলো অরুর কাছে ওর জীবনের অনেক কাহিনী শুনে।

অরু যখন একটু সম্বিত ফিরে পেলো, গালে ঝরে পরা অশ্রু মুছে দিয়ে অরু প্রথম যে কথাটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বল্লো, তা হচ্ছে, "আজ অবধি কেউ আমাকে এই রকম করে স্নেহ আর মমতা দিয়ে বুকে টেনে নেয় নাই। কেউ আমাকে কখনো বলে নাই, মা, আমি তোকে ভালোবাসি। ভালোবাসা কি জিনিষ, আদর কি জিনিষ, স্নেহ কি জিনিষ তা আমি কখনো বুঝি নাই। কখন বড় হয়ে গেছি, কিভাবে বড় হয়ে গেছি, কেউ কোনো খবর রাখে নাই। অগোছালো জীবনের মতো, একতা আগাছার মতো লিকলিকে বড় হয়ে গেছি। সবাই শুধু একটা কথাই ভেবেছে, কবে আমাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। কার সাথে দেবে, কাউকে আমার ভালো লাগলো কিনা, আমার বিয়ের বয়স হলো কিনা এটা কোনো গুরুত্তপূর্ন কারো কাছেই মনে হয় নাই। মেয়ে হয়ে জন্মেছি, এটাই যেনো আমার বড় অপরাধ। পর্ব যায়, বছর যায়, কিন্তু কোন পর্ব কেনো আসে, কেনো যায়, তা আমাদের মতো গ্রামের অসচ্চল পরিবেশে আমাদের সাধ আহলাদের কোনো মুল্য যেমন নাই, তেমনি আমাদের কথা কারো শোনার মতো কোনো অবকাশও নাই। কতবার গ্রাম ছেড়েছি, কতবার ঘর ছেড়েছি সেই দূর্বিসহ বিয়ের আসর থেকে, তা আমার মনে নাই। কতবার শুধু খালী পায়ে পাগলের মতো বন্দি বাড়ি থেকে দৌড়ে গেছি সেই কাঙ্ক্ষিত আমার পরীক্ষার হলে, আমার এখনো মনে আছে। বাড়ির কোন গপন কক্ষে কতক্ষন পালিয়ে বেচেছিলাম ওই সব বিবেক হীন মানুষ গুলির ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বাচার জন্য, তার কোনো ইয়াত্তা নাই। আমার এই পিঠে খোজ করলে হয়ত আজো কোনো না কোন ক্ষতের দাগ হয়তো খুজে পাওয়া যাবে আমার অবিবেচক অভিভাবকের সিদ্ধন্তের বাইরে দারাবার জন্য। সবাই তাই আমাকে গ্রামের একজন অবাধ্য মেয়ে, ঘরের সবাই আমাকে অবাধ্য সন্তানই বলে ধারনা করে। কিন্তু আজ অবধি কেউ আমার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো না, আমার মনে কি, আমার অন্তরে কি, আমার চাহিদা কি আর আমার সপ্নই কি। অনেক খুজেছি আমি আপনাকে আবারো। দৌড়ে ছুটে চলে এসেছি আমি আপনার অফিসের এই ঘরের দরজায়, কিন্তু আপনার কাছে পৌঁছে যাবার মতো না ছিলো আমার কোনো ক্ষমতা, না ছিলো আমার কোন অবকাশ। আমার পাশে দারাবার কেউ নাই। নিজের উপর বারবার রাগ, জিদ আর গোস্যা হয়েছিলো আমার। কিন্তু আমি হাল ছাড়ি নি। আমি একাই চেষ্টা করেছিলাম এটা ভেবে যে, আজ হোক কাল হোক কোনো একদিন আপনাকে কাছে পাবো আমার এই জীবন যুদ্ধে। আজ আমার সেই দিন। আমার চোখ তো জল ঝরাবেই।  

কতটা অবহেলায় আর অনাদরে অরু গ্রামে এতোটুকু বয়স পার করে ফেলেছে তার গভীর মর্মার্থটা যেনো নিমিষেই আমার চোখে ধরা পড়লো। কারন সেটা তো আমারই গ্রাম। আমার জীবনের কাহিনী তো এমনই ছিলো আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে যখন আমি দেখেছি সব হায়েনাদের ভীড়, দেখেছিলাম একটা পরিবার কিভাবে তিলে তিলে নিশপেসিত হয় কোনো ভুল করা ছাড়াই।

একটা ছেলে সন্তান মানুষ করার চেয়ে একটা মেয়ে সন্তান মানুষ করা অনেক বেশী কঠিন। একটা মেয়ে যখন বাল্যকালে পা রাখে, তাকে শিখাতে হয় কোন টা করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না, তাকে শিখাতে হয় কে কে তার বন্ধু হতে পারে আর কে কে নয়। তাকে শিখাতে হয় সমাজের সবাই তার দিকে যেভাবেই তাকাক, সেই চাহনীর ভাষা কি। তাকে অন্ধকারে পথ চলতে শুধু হারিকেনের আলো হলেই হবে না, তার সাথে থাকতে হবে আলোর সাথে পাশে কেউ।  

(চলবে)

-----------------------------------------------------------------------------------------------

অরু চলে গেলো। আমি বুঝলাম, আমি হয়তো অরুকে আর কখনো ফিরে পাবো না। বড় আশ্চর্যই মনে হলো। অরু চলে যাবার ঘটনাট যেনো আমার দইনিন্দিন ঘটনার মত মনে হলো না। মনের মধ্যে কেমন যেনো একটা শুষ্ক অসাড়তার সঞ্চার হলো। মনে হলো, পৃথিবী তে ভালোবাসা আর মায়া একটা মিথ্যা এবং শুন্য জিনিষ। হেমন্তের সমস্ত অতীত, গ্রীষ্মের সমস্ত চিহ্ন, কিংবা শীতের সমস্ত সজীব ভালোবাসা আজ আমার কেবল মনে হতে লাগ্লো, অতায়ন্ত নীরস এবং কঠিন। মনে হলো, যে ভালোবাসা আর মায়াকে এতোখানি বলে মনে হত, যে আদর যে মোহ এতখানি গাড় মনে হতো,  যার তিলমাত্র বিচ্ছেদকে মনেও আসে নাই, কিংবা যার অবসান জন্মান্তরেও মল্পনা করা যায় নাই, সেই ভালোবাসা এই? সেই মমতা এই? কোন সার্থের কারনে কিংবা কোন আঘাতের কারনে এমন একটি অসীম ভালোবাসা নিমিষেই চূর্ন হয়ে এক মুষ্টি ধুলি হয়ে বাতাসের সাথে মিশে গেলো?

অরু একটু আগেও বলেছিলো, পৃথিবীর কোনো কিছুই তাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না, অথচ এখনো সেই দিনটাই শেষ হয় নাই, পাপিয়ারা এখনো ডালে বসিয়া গান করছে, দক্ষিনের বাতাস এখনো গাছে ঢাল পালাকে এদিক সেদিক দোলা দিতেছে, একটু পরেই হয়তো জ্যোৎস্না সুখ শ্রান্ত সুপ্ত সুন্দুরীর মতো বাতায়ন বর্তী পালঙ্গের এক প্রান্তে নিলীন হয়ে পড়ে থাকবে। সমস্তই মিথ্যা। ভালোবাসা আমার অপেক্ষাও মিথ্যাবাদি, মিথ্যাচারী।    

২৭/১২/২০১৯-অরু ডায়েরী-১

Categories

যেদিন সেই প্রথম অরু আমার অফিসে এসেছিলো, তখন অরু সবেমাত্র ইন্টার পাশ করেছে। সনটা ছিলো ২০১৬। আমি অরুকে সম্ভবত একবার দেখেছিলাম আমাদের গ্রামে। আমার ভালো করে মনেও নাই ওর চেহাড়া। কিন্তু যেদিন ও আমার অফিসে এলো, দেখলাম বেশ চটপট করে কথা বলে, গুছিয়ে কথা বলে। বুঝা যায় না যে, অরু গ্রামের এমন একটা অসচ্ছল পরিবেশ থেকে এসেছে। দূর থেকে ছবিতে গ্রাম যত ভাল লাগুক, আর যতো সবুজ শ্যামলাই মনে হোক, এই সুবুজ শ্যামলা বড় ছোট হরেক রকম ফল মুলাদির ফাক ফোকর দিয়েও অনেক সুন্দর সুন্দর জংলী ফুল অনেক অবহেলায় কখন যে বেড়ে উঠে তার যেমন কেউ হিসাব রাখে না, ঠিক তেমনি অরূকে দেখেও আমার মনে হইলো, এমনি একটি শিশির ভেজা অজানা ফুল বাতাসে হেলে দুলে বেচে আছে। সেই ফুলটি এখন আমার সামনেই যেনো কোনো এক শহরের ড্রয়িং রুমের মধ্যে সাজানো একটি গন্ধবিহিন ফুল। অথচ তার গন্ধ আছে মিষ্টি, চেখে দেখার মানুষ নাই।

অফিসে সারাক্ষনই কাজ থাকে, নিবিড় ভাবে এককালীন একটা অখন্ড সময় দিতে পারছিলাম না। অরু কালো একটা বোরকা পড়ে আপাদ মস্তক ঢেকেই সে আমার অফিসে এসেছিল। লম্বা একটি মেয়ে, ছিমছাম দেহ, গ্রামের বালিকাদের মতো একেবারে ওই রকম না। খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছিলো, তাই অরুকে নিয়ে আমার টেবিলে একসাথে দুপুরের খাওয়াটা সেরে নিলাম। প্রকৃত পক্ষে এই খাবারের সময়টাতেই আমি অরুকে বেশ একটা সময় দিতে পারলাম। অরু আমার ছোটবেলার বন্ধুর মেয়ে।

জিজ্ঞেস করলাম, কি কারনে সে আমার কাছে এসেছে। খুব আমতা আমতা করে আমার দিকে ভয়ে ভয়ে চোখ নিয়ে অরু বল্লো, কাকা, আপনার কি আমার কথা কিছু মনে আছে?

বললাম, খুব একতা বেশি মনে পড়ে না। কিন্তু এমন কিছু কি আছে যে মনে করার মতো?

অরু বল্লো, আজ থেকে প্রায় ৪ বছর আগে আমার বাবা আপনার কাছে এসেছিলো আমার বিয়ের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে। আপনি বাবাকে আমার বিয়ে দিতে না করেছিলেন। আবার আমারো বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। আমি সবে মাত্র ক্লাশ নাইনে উঠেছি। আমার পরার খুব শখ ছিলো। বাবা আপনাকে অনেক সম্মান করেন আর সমীহ করেন। আপনার কথাটা বাবা রেখেছিলো। কিন্তু মাঝে মাঝেই যে আবার এই ভুতটা নড়েচরে উঠতো না তা নয় কিন্তু আমি বারবার আমার বিয়েটা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। আমি এবার ইন্টার পাশ করেছি, ইউনিভার্সিটিতে পরার খুব শখ।

কথাগুলি শুনে আমার খুব ভালো লাগলো যে, গ্রামের একটি মেয়ে তার পরাশুনাটা চালানোর জন্য কত আপ্রান চেষতা করছে। আমি অরুকে বললাম, অরু তুমি যতো পড়তে চাও, পড়ো, দরকার হয় আমি তোমাকে সাহাজ্য করবো।

খুব খুশী হলো অরু।

কিন্তু আমি অরুকে এই সাহাজ্যের জন্য একটা শর্ত আরোপ করে দিলাম। আর সেই শর্তটা ছিলো, তাকে যে করেই হোক অর্থনীতির মতো একতা বিষয় নিয়ে পড়তে হবে।

(চলবে)

২৬/১২/২০১৯- লিসা ফিরে গেছে

Categories

আজ থেকে সেই কয়েক বছর আগের কথাই বারবার আমার মনে পড়ছে। যা বুঝতেও পারি নাই, আমাকে বুঝতেও দেয় নাই। আমি বহুবার ভেবে দেখার চেষ্টা করেছিলাম, কেনো শেষ পর্যন্ত ওর সাথে সম্পর্কটা রইলোই না। খুব জোরালো কোনো যুক্তি খুজে পাই নাই বটে কিন্তু একটা ব্যাপার পরিষ্কার হচ্ছিলো। আর সেটা হচ্ছে নির্ভরতা। একজন বিদেশী, যা ছিল তার, তা হয়ত অনেক না, আবার আশেপাশের যারাই ওকে একটু ভরষা দিতে পারতো, তারাও তার গোত্রের মত কেউ না। একটা শুন্যতা, একটা শংকা, একটা ঘেন্না বোধ কাজ করেছিল ওর চাহিদার আর পাওয়ার মধ্যে। মানুষ তার নিজস্ব পথে তার হিসাব নিকাষ করে। হয়তবা সে চেক এন্ড ব্যালেন্স করে একটা হিসাবের খতিয়্যান বের করেছিল যে, জিবনে ভালভাবে বেচে থাকার জন্য শুধু ধর্ম, সংসার আর বর্তমান নিয়ে চলে না। নীতি আর পলিসি দিয়েও চলে না। তার জন্য দরকার একটা নিশ্চিত ভবিস্যতের গ্যারান্টি। এটা যেই দিক তাতে কিছু যায় আসেনা। এটা আমার জানা ছিলো না। কিন্তু কথা তো সত্য।

ক্ষুধা পেটে ভালো মানুষের সাথে ভালোবেসে রাস্তায় রাস্তায় বহুদুর যাওয়া যায় না। আবার নিজের যোগ্যতার চেয়ে শুধুমাত্র সংসার বা বন্ধনের নামে একজন অযোগ্য ব্যক্তির হাত ধরেও অনেক দূর যাওয়া যায় না। কারন সেখানে থাকে যোগ্যতা আর অযোগ্যতার প্রকান্ড এক বিভেদের দেয়াল যা যেমন যোগ্য ব্যক্তিও টপকাইতে পারেনা আবার  অযোগ্য ব্যক্তিও ব্যালেন্স করতে পারে না। কিন্তু ভরপেটে আরামদায়ক এসি গাড়িতে হাই স্পীডে প্রকৃতির দৃশ্য দেখতে দেখতে কোনো এক অসম অসুন্দর বিত্তবানের সাথেও জীবন আনন্দময় হয়ে উঠে। সেটা হোক না যে কোন বিনিময়ের মাধ্যম। যা একজন এম্নিতেই ছিনিয়ে নেবে বিনা পয়সায়, তাই যদি কেউ ছিনিয়ে নয় আপোষেই নিয়ে এক আয়েসীর জীবন দেয়, তো ক্ষতি কি? ঈশ্বরের সাথে বুঝাপরা ভিন্ন। ওগুলি আজকাল আর কেউ আমলে নেয় না। আর আমলে নেবার জন্য কেউ বসেও নাই। যদি তাইই হতো, তাহলে পৃথিবীতে এতো সুন্দর সুন্দর রমনীরা দেহবৃত্তি করতো না। এতো এতো শিক্ষিত জনপদ এইসব সুন্দুরী মেয়েদের তাদের জীবন সাথী পাবার জন্য অনেক বেগ পেতে হয় না, কিন্তু তারপরেও তারা সুন্দর নর বা ভালো নরকে নয়, তারা চায় সুন্দর জীবনের প্রতিশ্রুতি।

লিসা ফিরে গেছে সম্ভবত তার সেই ভাবনা থেকেই। সে ফিরে গেছে তার সেই পুরানো জায়গায় যেখানে ওর জন্য প্রস্তুত রয়েছে অফুরন্ত আয়েশের উৎস, রয়েছে নিরাপত্তার গ্যারান্টি, আর তার সাথে আছে নিজ দেশের মাটির সাথে বন্ধন। জীবন একটাই। তাকে আনন্দময় করে কাটানোর অধিকার সবার আছে।

ঘৃণা কার নাই? সংসার জিবনে কি ঘ্রিন্না নাই? দম্পতিদের জীবনে কি ঘৃণা নাই? আছে। তারপরেও সবাই যার যার মতো করে ঘৃণাটুকু বাদ দিয়েই যেটা দরকার সেটা নিয়েই আনন্দে বাচে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই মানুষ তার গতিপথ বদলাতে পারে। আর এই গতিপথ বদলানোর জন্য যে ক্ষমতা দরকার, আগে সেটাই খুব দরকার যার নাম- যোগ্যতা আর অর্থের প্ল্যাটফর্ম। লিসাকে কোনোভাবেই এখন আর দোষ দেইনা। কি দিতে পারতাম? পারতাম কি তাকে ওই সেন্ট লুইসের একটা সুইটে নিয়ে গিয়ে জাপানিজ এক্সপার্টদের সাথে বসিয়ে এক কাপ চা খাওয়াতে? কিংবা পারতাম কি লিসাকে ওই দুবাইয়ের বুরুজ রেস্টুরেন্টে একদিনের জন্য বেড়াতে নিতে যার ব্যয় ৫ বছরের এক্ত্রিত সঞ্চয় এর সমান? লিসা ঠিক বুঝেছিলো যে, স্বামী, সংসার, আর নিঘাত একটা দৃশ্যমান ভালোবাসায় আর যাই হোক, জীবনের সব চাওয়া পাওয়ার সাধ মিটে না। হিসাব তার পরিস্কার। আর সেই হিসাবে লিসা তার দিক থেকে ঠিক কাজটাই করেছে। আগে ভুল হয়েছিল, বা সরি হয়েছি এইটুকুর ওজন অনেক। যে সময় মত এর আবেদন করতে পারে, সেইই আবার জিতে যায় পরাজিত জীবনের কাছে। তখন আবার নতুন করে জীবনের খাতা শুরু হয় সেই পুরানো ধাচেই আর তখন আবার সপ্নের সব অট্টালিকা থেকে দেখতে পাওয়া যায় ওই দূরের আকাশের রাতের ঝিকিমিকি তারা গুলি, যেখানে মাঝখানে ঝরের মতো হারিয়ে যাওয়া কিছু সময়ের মুল্য আর চোখেই পড়ে না।

লিসা ফিরে গেছে এটাই বাস্তবতা।

২৩/১২/২০১৯-অপেক্ষার প্রহর লম্বা

কিছু কিছু অপেক্ষার প্রহর অনেক লম্বা। এই প্রহরগুলি কাটতে চায় না। মন উতালা করে, মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। আবার এই মনই নিজেকে শান্তনা দেয়। অদ্ভুত না এই "মন" বিষয়ক ব্য্যাপারটা?? কখনো কখনো হাজার বছর এক সাথে থেকেও কেউ কেউ আপন হয় না। আবার কেউ কেউ ক্ষনিকের মধ্যেই কেনো যেনো মনে হয়, আরে এই তো সে, কই ছিলো? কিন্তু এটাও হয়তো সত্য নয়। আবার সত্যও হতে পারে। মানুষের বাচার জন্য চাই একজন সুরক্ষাকারী বটবৃক্ষ। আর দরকার সেই বটবৃক্ষের তলায় হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকার মতো কেউ একজন।

অনেক সাধ আমাদের জীবনে, কিন্তু সাধ্য না থাকায় মাঝে মাঝে মনে হয়, এমন কি কেউ নাই যে আমাকে একটা পথ বাতলে দেয় যে, এখানে এইটা করো, তবেই না পাবে তুমি তোমার মনের ইচ্ছা পুরনের চাবিটা!! শুধু খেয়ে পড়ে বেচে থাকার নামই জীবন না। এর বাইরেও কিছু থাকে। নতুন নতুন জায়গায় অনুসন্ধান করে জীবন শুধু পিছিয়্যেই পড়ে, সামনে যেনো আগাইতেই চায় না। জীবনে সম্ভবত স্থিতি আসা খুব জরুরী। হোক সেটা কোনো এক মান্দাতার আমলের আদলেই। তাই হয়তো পরান জায়গাতেই আসল সুখের সন্ধান রয়েই যায় যা প্রথম চোখে পড়ে নাই। সব সময় পরিস্কার আকাশই মানুষকে উদ্বেলিত করে না, কোনো কোনো সময় মেঘলা আকাশও মানুষকে উদ্বেলিত করে। কিন্তু আমি সবসময়ই ঝড়ো আকাশকে ভয় পাই। ভয় পাই এই কারনে যে, থাক......

০৬/১২/২০১৯-সেদিনের কথা মনে পড়ে

সেদিনের কথা আজো আমার মনে পড়ে। কোনোদিন তোমাকে আমি দেখিনি। কোনোদিন চিনিও নাই। অদ্ভুদ পরিপাটি হয়ে তুমি নিকোলাসের সাথে আমার অফিসে এসেছিলে। কোনো কারন ছিলো না আমার তোমার উপরে চোখ রেখে পৃথিবী থেকে লক্ষ মাইল দূরের কোনো এক চাঁদকে দেখার। নিকোলাস ছিলো নিতান্তই একটা সাধারন লোক। তারপরেও আমি নিকোলাসকে সাদরে গ্রহন করেছিলাম। আর তার কারনটা ছিলে শুধু তুমি। কি এক মোহ নিয়ে যেনো আমার চারিদিক একটা মন্ত্রের মতো তুমি যাদুবন্দি করে রেখেছিলে, আমি বুঝতেও পারিনি। তুমি আমাকে চাঁদ দেখিয়েছিলে। আমি চাদের কলংক বুঝি নাই, চাদের অসমান পাথরও দেখি নাই, চাদে যে বাতাসও নাই, সেটাও বুঝি নাই। তারপরেও আমি এই শুকনা মাটি আর বাতাসবিহীন মৃত্যুসম পরিবেশকে উপেক্ষা করেই বন্ধু ভেবে সাদরে গ্রহন করেছিলাম আমার ভবিষ্যৎ পরাজয়কে। আমি শুধু দেখেছিলাম চাদের মতো আলো আর ভারসাম্যহীন চাদের বুড়ির চাহনী। কি যে মাদকতা আর নেশা ছিলো আমি বুঝি নাই, আমাকে নামিয়ে দিলে আমার আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন থেকে। আমি বিভোর হয়েছিলাম।

ঠিক তার পরেই আমার মোহটা কেটে গিয়েছিলো কারন তুমি আর আমার আকাশে উদিত হও নাই। ডুবে যাওয়া চাদকে কেউ দেখতে চায় না। আমিও ভুলতে বসেছিলাম সেদিন দেখা এক চাদের রুপ আর তার আলো। অতঃপর আবার তুমি উদিত হলে আরো একদিন। এবার নিকোলাস নয়, তার স্ত্রী অর্থাৎ তোমার মা জেসিকা এলো তোমাকে নিয়ে। উদ্দেশ্য তো ছিলোই। তোমার উদ্দেশ্য ছিলো জীবনকে গড়ার আর আমার উদ্দেশ্য ছিলো তোমাকে আবিষ্কার করার। একে একে সব কিছু খুব কাছ থেকে ঘটে যেতে থাকলো অনেক ঘটনা।

কতগুলি বছর? অনেকগুলি। প্রতিটি প্রহর আমার কেটেছে এই চাদের বুড়ির নেশায়, আমার সমস্ত জীবনীশক্তি দিয়ে আমি বাচাতে চেয়েছিলাম এই চাদের বুড়িটাকে। কারন চাদের বুড়িটাই ছিলো আমার সমস্ত নেশার এক জগত। কোনো কিছুই আমি লুকাই নাই এই চাদের বুড়িটাকে বাচাবার জন্য। অথচ আমি জানতেও পারি নাই, এই চাদের বুড়িটা আমাকে নিজের চড়কাটায় কখনো বসার জন্য একটু স্থানও রাখে নাই। আমি ক্লান্ত ছিলাম না, আমি আমার সমস্ত আত্তা দিয়ে এই চাদের বুড়িটাকে কতটা আগলে রেখেছিলাম, আমার সাধের বুড়িটিও জানে নাই। একদিন এই চাদের বুড়িটি কোনো কিছুই না বলে সবার অগোচরে চলে গেলো? সে হারিয়ে যায় নাই, কিন্তু আমার কাছে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলো। অথচ একটিবারও জানা হলো না আমার কি অপরাধ ছিলো। সে চলেই গেলে। দেশটাকে আর ভালো লাগছিলো না। এর গাছ পালা, এর বিরাট বিরাট অট্টালিকা, আর মুখরীত জনপদ আমার কাছে দম বন্ধ হয়ে আমাকে প্রতি নিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। তারপরেও একটা ক্ষীন আশা ছিলো, হয়তো কোনো না কোনো মোহে তুমি ফিরে আসবেই। তারপরেও রয়ে গেলাম আরো অনেকগুলি মাস।

হটাত একদিন-

দেখা হলো ইউসিকারোস্কি ট্রেন ষ্টেশনের এক প্লাটফর্মের অপেক্ষাগারে। বিধ্বস্ত তোমার সেই কোমল মুখাবয়ব, এলোমেলো উস্কুখুস্কু চুল। আমিই প্রথম তোমাকে দেখেছিলাম। খুব জানতে মন চেয়েছিল, তুমি কেমন আছো? কিন্তু আমার ট্রেন চলে আসায় আর তোমাকে ছোয়া হয়নি আমার। ছুয়ে বলা হয়্য নাই, আমি সেই আগের মানুষটাই আছি। ফিরে এসো আমার এই শুন্য বুকে। এটা এখনো শুন্য্যই আছে। আমি জানি, তুমি ভালো নাই, আমি জানি, তুমি আসলেই ভালো নাই। তারপরেও যদি কখনো দুচোখ জলে ভরে এসে একবার বলো, আমাকে তুমি ওই পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাও, ওই কল্পনার মানুষটার সাথে, আমি তাও করে দিতাম আর পিছনে না ফিরে নিজেকে শান্তনা দেবো এই ভেবে যে, অন্তত তুমি তো ভালো আছো!! এটাই আমার সবচেয়ে আনন্দের। আমিও আর তোমাকে খুজি নাই কিন্তু বারবার মনে হয়েছে, আমি কি তোমার জন্য কখনোই কিছু করি নাই?

মনে কষ্টটা ছিলই। কখনো কমে নাই। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। নিজের সাথে নিজের যুদ্ধে আমি আর পেরে উঠতে পারছিলাম না। তাই, একদিন সব ছেড়ে সেই নাড়ির টানে আবার পাড়ি দিলাম অসহায় নিজের পলিমাটির দেশে যেখানে আমার জন্য কোনো লিসা আর অপেক্ষায় নাই।

অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম সেই চকচকে এয়্যারপোর্টের লবিতে। এই বুঝি তুমি এলে। আমার ভালোবাসার টানেই হয়ত তুমি আসবে। এমনটাই আমার কল্পনায় ছিলো। অথচ তুমি এলে না। আর তুমি আসবেই বা কেনো? তুমি তো জানোই না যে, আজ তোমার এই অপরিকল্পিত সপ্ন পুরুষটি চিরতরে চলে যাচ্ছে। আমার ফ্লাইট প্রায় বিলম্ব হয়েই যাচ্ছিলো, ফিরে আসতে মন চায় নাই। কিন্তু আসতেই হয়েছে একরাশ না বলা কথা পিছনে ফেলে। যখন আমি শেষ পদদলিটা উঠিয়ে নিয়ে সেই বাহনের পিঠে চড়ে বসলাম, আমার মনে হয়্যেছিলো, গোটা ১৮ টি বছর এই শহরে থাকার পরেও শহরটা আমার হলো না। এই দেশটা আমার হলো না। চোখে এতো জল এতোদিন কোথায় ছিলো? প্লেনের ভিতরে উঠলাম। পাশে ৫ বছরের একটি বাচ্চা বসেছিলো তার মায়ের পাশে। অনেক কান্নাকাটি করছিলো। হয়তো তার কষ্টটা অন্য রকমের। ভাবলাম, আহা, যদি আমিও ওর মত এইরকম করে বুকফাটা কান্নায় কিছুক্ষন কাদতে পারতাম। বাচ্চাটার কান্নায় শব্দ ছিলো, চোখে জলও ছিলো। অথচ আমার চোখের জল ছিলো সাগরের থেকেও উত্তাল নিঃশব্দে।

আমি সহ্য করতে শিখছি, আমি অভ্য্যস্থ হতে শিখছি। এখনো সম্বিত ফিরে নাই, মোহটা আছে। কিন্তু ভালোবাসাটা এখনো কাচা। এই কাচা ক্ষতে বারবার মনে হয় হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার মতো ভালোবাসারও কি ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়? যদি যায় তাহলে আমি আবারো একবার না দেখে, না বুঝে ভালোবাসতে চাই। তার আগে চাই আমার পায়ের তলার মাটি। আর সেই মাটি এবার আমি তৈরী করবো আমার দেশের দুব্বা ঘাসের উপর দিয়ে। অন্য কারো গোলামি করে আমি বেশীদিন বাচতেও চাই না। আমি চাই এমন একটা প্লাটফর্ম যা আমার নিজের হবে, যেখানে আমি হবো আমার স্বাধীনতার ধারক। আমি জানি আমার সময় লাগবে এই যুদ্ধে। কিন্তু আমি পারবো। আমি এটাও জানি, আমার এই যুদ্ধে পাশে কেউ নাই। তারপরেও আমি আমার জন্যই বাচবো। আমার এখন একটাই সংকল্প- নিজের পায়ে আবার ঘুরে দাড়াও আর যদি পারো কাউকে তোমার পাশে নাও। কিন্তু সেই পাশের মানুষের উপর হাত রেখে যুদ্ধের ক্ষমতা বাডানোর কোনো সংকল্প নয়। যদি সেও আমার মতো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বুক উচু করে সামনে এসে বলে, আমিও পারবো, তাহলেই হবে বিশ্বাসের আরেক স্তম্ভ। আর এবারের এই ভালোবাসার মানুষটি হবে আগুনে পোড়া সোনার মতো। কথার ফুলঝুরি নয়, দেখার তৃপ্তিতে নয়, এবার ভালোবাসাটা হবে সত্য কাহিনীর উপর নির্মিত সেই জাপানিজ ছবিটার মতো- She Never Saw Him but loved Till Death. তোমাকে আমি ভালোবাসতে চাই এই এমন একটা কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। দেখা নাই, সুম্মুখ কোনো কথা নাই, তবু হৃদয়ে ভালোবাসো জেগে থাকে কিনা। যদি এই রকমের অদৃশ্য বোবার মতো নিঃশব্দে আর গোপনে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে না দেখেই মনের বিশ্বাসে ভালোবাসো। অন্তরের চোখ দিয়ে যদি ভালোবাসো, যদি বিশ্বাসের চোখ দিয়ে ভালবাসো, তাহলে ভালবাসো ঠিক সেভাবেই , আমাকে না জেনে, না দেখে, না কথা বলে। হয়তো এটাই হবে দুজনের জন্যই পরীক্ষার প্রথম ভাগ। কতকাল অপেক্ষা করতে পারবে এই না দেখা মানুষের জন্য? কতদিন শক্তি নিয়ে সমস্ত সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে উচ্চকন্ঠে বলতে পারবে-----আমি তাকে ভালোবাসি কিন্তু তাকে আমি চিনি না। সে আমাকে ভালোবাসে, সেও আমাকে দেখে নাই????? সেই জাপানিজ ছবির নায়িকার মতো কখনো কি বলতে পারবে-天国で会いましょう

(Tengoku de aimasho). যার মানে হলো, See youin heaven তোমার সাথে আমার দেখা হবে হেভেনে (বেহেশতে)।

যদি পারো, তাহলে মন তৈরী করো, প্ল্যাটফর্ম তৈরী করার জন্য হাত বাড়িয়ে দাও, দুজনে হাটি এক সাথে।  গন্তব্য হয়তো এক।

২৭/১১/২০১৯-সব মানুষের সাথে লুকুচুরী নয়

জীবনে সেই সব মানুষের সাথে কখনো লুকুচুরী, মিথ্যা কথা, ছলচাতুড়ি, কিংবা কল্পকাহিনী বলিয়া সাময়িকভাবে ভুল বুঝানো উচিত না যাহারা তোমার সুখের জীবনের জন্য নিসসার্থভাবে তাহাদের অনেক মুল্যবান সময়, পরিশ্রম আর অর্থ দিয়া সাহাজ্যের হাত বাড়ায়। যদি পথ চলিতে গিয়ে কিংবা তাহাদের নির্দেশনা মানিতে গিয়া নিজের অজান্তে ভুল করো, হয়তো সেইটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব কিন্তু যদি সেই ভুল হয় ইচ্ছাকৃত, তাহা হইলে সেইটা হইবে পাপ, অপরাধ এবং ক্ষমার অযোগ্য। তাহারা তোমাকে ভালোবাসিয়া, স্নেহ করিয়া অথবা তোমার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করিয়া তোমার পাশে এমনভাবে দাঁড়াইয়াছেন যাহা হয়তো তাহার দাড়ানোর কোনোই প্রয়োজন ছিলো না, তবুও দাড়াইয়াছেন। তাহাদের সাথে এইরূপ কোন ইচ্ছাকৃত অপরাধ তোমার সারা জীবনের জন্য এমন মারাত্তক হুমকী হইয়া দাঁড়াইবে যাহা কোনো কিছুর বিনিময়েও আর আগের অবস্থায় ফিরিয়া পাওয়া যাইবে না। এই মারাত্তক ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি কেউ ক্ষমাও করিয়া দেয়, তাহার পরেও যে ক্ষত সৃষ্টি হইয়া যায় তাহা দগদগে ঘায়ের থেকেও বেশী। তখন প্রতিনিয়ত মনে হইবে, এই মানুষ উপকারের কথা বুঝে না অথবা সে নির্বোধ অথবা সে উপকারীর জন্য অনেক হুমকীস্বরূপ। এই বিবেচনায় কোনো হিতৈষী যদি তোমার পাশ হইতে নিঃশব্দে সরিয়া যায়, তাহাকে আর কোনো কিছুর শপথের মাধ্যমেও ফিরিয়া আনা যায় না। তখন যাহা দাঁড়ায় তাহা হইতেছে, নিজের উপর নিজের রাগ, অভিমান আর কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধ। কিন্তু তাহা দিয়াও আর জলের স্রোতকে পিছনে ফিরাইয়া আনা যায় না। এই সময় যাহা হয়, তাহা হইতেছে, হতাশা ক্রমশ বাড়িতেই থাকে, আর এই হতাশা যখন বাড়ে, তাহার সাথে বাড়ে দুশ্চিন্তা। দুসচিন্তা থেকে জন্ম নেয় নিজের উপর নিজেকে ঘৃণা। আর একবার যখন নিজেকে নিজে ঘৃণা করিতে শুরু করে কেহ, তখন তাহার বাচিয়া থাকিবার আর কোনো লোভ থাকে না। চারিপাশের মানুষকে আর ভালো লাগে না, নীল আকাশ ভালো লাগে না, রংগীন আলো ঝলমলের শহরকে তখন বড় অচেনা মনে হয়। মানুষ তখন আত্মহননের দিকে ঝুকিয়া যায়। অথবা সে এমন পথ বাছিয়া নেয় যাহা সমাজের চোখে বড়ই অসুন্দর আর কুৎসিত। সব কুতসিত জীবনের কাহিনী প্রায় একই। কোনো না কোন সময়ে তাহাদের সুযোগ আসিয়াছিলো যাহা তাহারা না বুঝিবার কারনে হাতছাড়া হইয়াছে। কেউ কখনো এইরুপে বড় হইতে পারে নাই, আর হয়ও না। তাহাদের জন্য সমাজ দুঃখবোধও করে না। তাহারা সারাজীবন সমাজের একটা কালো মানুষ হিসাবেই বাচিয়া থাকে। কেউ সমাজে দাগী হিসাবে বাচে আবার কেউ সনাক্ত না হইয়াই আড়ালে আবডালে বাচে। তাহারা সংখ্যায় নেহায়েত কম না অবশ্য সমাজে।

আমার মাঝে মাঝে এইসব মানুষগুলির জন্য খুব দুঃখ হয়, কেনো এই সুন্দর প্রিথিবীতে তাহারা জন্ম নেয়? কি প্রয়োজন ছিলো এইভাবে এই নির্মল পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়ার যখন সে নিজেই এই পৃথিবীর কোনো ভালো উপাদান সে হজম করিতে পারেনা? ইহাদের আয়ুষ্কাল অবশ্য বেশীদিন থাকেও না। তাহারা সমাজে আগাছার মতো বাড়িয়া উঠে, আবার কোনো এক ক্ষুরধার মালীর আঘাতে তাহারা বিকশিত হইবার আগেই শিকরচ্যুত হয়। তবে অতীত বর্তমান অভিজ্ঞতায় একটা বিশেষ লক্ষনে ইহাদেরকে শনাক্ত করা সহজ যাহা শুধুমাত্র অভিজ্ঞতাশীল ব্যক্তিবর্গরাই অতীব দ্রুত তাহাদের সনাক্ত করিতে পারেন। কোনো বই পুস্তকে ইহাদের ব্যাপারে সঠিক লক্ষন কোথাও লিপিবদ্ধ না থাকিলেও কিছু কিছু উপসর্গ প্রায় একই। যেমন, এই সব মানুষেরা সহজেই অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষনে পারদর্শী হয়, তাহাদের কথা বার্তা অনেক গুছাল হয়, তাহারা বিপরীত মানুষটির মনোভাব অতিব সহজেই নিজের ভিতরে আয়ত্তে নিয়া আসিয়া ঠিক তিনি যাহা চাহেন, সেইভাবেই উপস্থাপন করিতে সক্ষম হন। এই মানুষগুলির আরেকটি উপসর্গ হইলো যে, তাহারা অল্প তথ্যেই আগে পিছে আরো সামান্য কিছু কাল্পনিক তথ্য যোগ করিয়া একতা সম্পুর্নবিশ্বাস যোগ্য কাহিনী বানাইয়া ফেলিতে পারেন। তাহারা যাহা বলিতেছে বা উপস্থাপন করিতেছে, তাহা তাহারা নিজেরাও বিশ্বাস করে না যদিও এই সব কল্প কাহিনীর মধ্যেও অনেক জ্ঞান লুকায়িত থাকে। উক্ত জ্ঞান তাহাদের কর্ন কুহরে প্রবেশ করে না। ইহাদের সহিত মুনাফেকের একতা বিশেষ মিল দেখা যায়। ইহাদের লোভ আছে কিন্তু প্রকাশ করিতে চাহে না অথচ সেই লোভের লাভ পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত পরিকল্পনা করিতেই থাকে। তাহারা কারো বন্ধু নহেন কিন্তু বন্ধু হইয়াছেন, এইরুপ ভাব সর্বদা করেন। তাহাদের মধ্যে ধর্মের কিছু বাহ্যিক উপকরন সর্বদা ব্যবহার করেন যাহাতে তাহাদেরকে অতি সহজেই মুনাফেক ভাবা না হয়। অথচ তাহারা ধর্ম কখনোই পালন করেন না। তাহাদের কাছে কনো মতামত চাহিলে যেই মতামতে আপনি খুশী হইবেন, তাহারা সেই মতামতটাই দিতে থাকিবেন যাহাতে আপনি আরো কিছু তথ্য তাহার কাছে আপনার অজান্তে বাহির করিয়া দেন।   

কথাগুলির অর্থ যদি তুমি না বুঝিয়া থাকো, বারবার পড়ো, বারবার। একসময় যখন চোখের জলে বুক ভাসিয়া যাইবে, তখন বুঝিবে তুমি হয়তো বুঝো নাই তবে তোমার অন্তর বুঝিয়াছে কিন্তু তোমার অন্তর তাহা প্রকাশ করিতে পারিতেছে না। যদি সেইটাই হয়, তখন তুমি একটা জিনিষ বুঝিবে যে, তুমি বাইরে এক, আর ভিতরে আরেক মানুষ। সেক্ষেত্রে আমার উপদেশ, অন্তরের মতো হও। বাইরে তোমাকে যা দেখা যায় সেটা তুমি নও, সেটা তোমার প্রেতাত্মা। আর প্রেতাত্মারা কখনোই মানুষের সমাজে স্বীকৃত নহে।

আমি তোমাকে সেই রকমের আদর আর ভালোবাসা দিয়ে পরিবর্তন করিতে চাহিয়াছিলাম। আমি দেখাইতে চাহিয়াছিলাম যে, যাহারা তোমাকে অবহেলা করিয়া সমাজের এক পাশে ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়াছিলো, আসলে তুমি তাহা নও। আমার থেকে বেশী আর কেউ তোমাকে ভালোবাসিয়াছে কিনা আমার তাহা জানা নাই, আমার থেকে বেশী উদবিগ্ন ছিলো কেউ, সেটা আমার জানা নাই। কিন্তু আজ আমি একটা জিনিষ বুঝিয়াছি, তুমি আমার বিশ্বাস, আমার সততা আর আমার সরলতা নিয়ে এমন কিছু মানুষের জন্য নিজের সত্তাকে বিসর্জন দিয়াছো যাহা তোমার জন্য হুমকিস্বরূপ। এতোবড় অনিরাপদ পরিস্থিতি সামনে রাখিয়া, এতো বড় আশংকার পৃথিবী জানিয়াও যখন কেহ নিজের আশংকার কথা ভাবে না, তাহাদের জন্য অন্ধকার প্রিথিবীটাই প্রযোজ্য।

জীবনকে ভালোবাসিবার আরেক নাম চেলেঞ্জ। জীবনকে ভালোবাসিবার আরেক নাম সততা। জীবনকে ভালোবাসিবার আরেক নাম বিশ্বাস। সব হাসিই হাসি নয়, আবার সব কান্নাই কান্না নয়। মানুষ অধিক আনন্দেও কাদে। আবার মানুষ অধীক দুঃখেও কাদে না। তবে মানুষ সব ভয়েই কাতর হয়। আর সব ভয়ের চেহারা এক। যার নাম- আতঙ্ক। এই আতংকে মানুষ অসুস্থ হয়, মানুষের রুচী কমিয়া যায়, এক সময় দেহ ভাঙ্গিয়া আসে। দেহ ভাঙ্গার সাথে সাথে মানুষ মানসিকভাবে দূর্বল হয়, এক সময় পানির অভাবে যেমন কচি গাছের মরন হয়, তেমনি এই আতংকগ্রস্থ মানুষগুলিও মৃত্যু বরন করে। তাহাদের জন্য কেউ আর পিছনে তাকায় না।

৮/৯/২০১৯-সারপ্রাইজটা অনেক বেশী

সারপ্রাইজটা অনেক বেশী হয়ে গেলো।কি সেই সারপ্রাইজ, আর  কিভাবে হলো সেটাই বলছি।

সকাল বেলায় নাস্তা করার সময় মেয়ে আর বউ দুজনেই বল্লো, হ্যাপি বার্থ ডে।

মনে পড়লো, ও আজ আমার বার্থডে।

আমি কখনো আমার নিজের বার্থ ডে ঘটা করে পালন করি নাই। আর করার মতো পরিবেশও আসলে ছিলো না। এই মেয়েরা শখ করে, ফলে কখনো কখনো মেয়েদের চাপে পড়েই ইদানিং জন্ম দিনটা পালন হয়। কখনো ঘরোয়া ভাবে, কখনো একেবারেই নিজেরা, আবার কখনো কখনো সবাই মিলে। ফলে আমার জন্মদিন নিয়া আমি খুব একটা উচ্ছসিত থাকি না। সম্রাট আকবরের কিংবা নেপোলিয়ানের জন্ম তারিখ পরীক্ষার খাতায় ভুল করলে সেটা শুধু নম্বরের উপর দিয়েই যাবে, ঘরে শান্তি নষ্ট হবার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু আমি ভুলেও আমার মেয়েদের বা বউ এর জন্মদিন ভুলি না। বুদ্ধিমান স্বামীরা এইটা ভুল করার কথা না। করলেই অনেক কথা শুনার একটা রাস্তা তৈরী হয়ে যায়, অশান্তি আসার সম্ভাবনা থাকে। ওনাদের জন্মদিন পালন না করুন, অন্তত সকালে উঠে সবার আগে বলা চাই, বউ হলে হ্যাপি বার্থ ডে জানু,, আর মেয়েদের বেলায় "হ্যাপি বার্থ ডে মা" ইত্যাদি।

যাক, যা বলছিলাম।

ঘুম থেকে উঠেই আমি সাধারনত মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি রাতে কেউ ফোন দিলো কিনা, বা কেউ ফোনে না পেয়ে ম্যাসেজ দিলো কিনা। এটাও তাঁর কোনো ব্যত্যয় হলো না। আমার রোজকার অভ্যাস। আজকে মোবাইল হাতে নিতেই দেখি অনেকগুলি ম্যাসেজ। কিছু রোটারীর বড় বড় হোমড়া চোমড়াদের অত্যান্ত চমৎকার মেসেজ। কিছু আছে ব্যাংকের তরফ থেকে। আবার কিছু আছে সার্ভিস সেন্টার গুলি থেকে। প্রায় সব গুলিই কমার্শিয়াল। খুব একটা পুলকিত হবার মতো না এইসব মেসেজে। তারপরেও খারাপ লাগে না। গালি তো আর দেয় নাই। শুভেচ্ছা দিছে।

দেখলাম, প্রথম মেসেজটাই আমার বড় মেয়ের। রাত ১২০১ মিনিটে পাঠিয়েছে। আমাকে জন্মদিনের উইশ করে চমৎকার একটা ম্যাসেজ। "Happy Birth day, my Super Hero, Dad. You are the best example of a father and all the moments I have lived with you is unforgottenable. With each passing year, I wish your happiness become double. I wonder if you know how much I love you. I  may not tell you enough but I do love you from my heart to infinity and beyond. Happy birthday Abbu. এতো চমৎকার করে বলা, সেটা যেনো হৃদয় ছুয়ে যায়। মুচকি হেসে দিলাম। সকালতাই যেনো কেমন মিষ্টি মনে হলো।

এতো বছর পরে এসে এখন আমার যদিও আর সেই ছোট বেলার মতো জন্মদিন, কিংবা এই জাতীয় কোনো কিছু আর উচ্ছাসিত করে না। তারপরেও মেয়েদের এই রকম অন্তরস্পর্শী মেসেজ মনকে বড় উতালা করে তোলে। পরিবার তখন মনে হয় আমার সবচেয়ে আনন্দের একটি জায়গা। তখন দিনটাকে আর নিছক অন্যান্য দিনের মতো মনে হয় না। যদিও অনেক সময় মনে হয়, ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েরা এগুলা নিয়ে বেশ মজা পায়, সেলিব্রেট করে, একটা ফানডে করে, কিন্তু এটা সব সময় সত্য যে, আমাদের সারা বছরের ব্যস্ত দিন গুলির ফাক ফোকর দিয়ে এইসব ছোট খাট বিষয় নিয়ে পরিবারে একটা গেট টুগেদার তো হয়। একদিক দিয়ে খারাপ না। অনেকেই আবার ধর্মের দোহাই দিয়ে এইসব করা নাজায়েজ বলে কথাও বলেন। আমি ধর্মের বিষয়টা এখানে কোনোভাবেই আলোকপাত করতে চাই না। এতা যার যার ব্যাপার।

যাক যেটা বলছিলাম, আমার জন্মবার্ষিকির কথা।

বউ এর হ্যাপি বার্থ ডে বলার উপলক্ষে বউকে বললাম, আরে, এখন কি আর সেই চমক আছে যে, জন্মদিন নিয়ে মাতামাতি করার? তাঁর মধ্যে বড় মেয়ে বগুড়ায়, ছোট মেয়ের সামনে পরীক্ষা। তোমার আবার কলেজ থাকে। সব মিলিয়ে সবাই তো ব্যস্তই থাকি। কি দরকার খামাখা আবার একটা ঝামেলা করার।

তারপরেও বউ বল্লো, আরে, চলে এসো একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে। রাতে বাইরে আমরা আমরাই কোথাও ঘুরতে যাবো, খেয়ে রাতে বাসায় ফিরবো। সময়টা হয়তো ভালই যাবে। একটা ব্যতিক্রম দিন যাবে। ভাবলাম, ঠিক আছে, এই উপলক্ষে না হয় একটু যাওয়া যেতেই পারে।

অফিসে এলাম, সকাল তখন প্রায় দশটা। আমি এসে স্টাফদের বললাম, কার কি কাজ আছে আমার সাথে, একটু গুছিয়ে নিয়ে আসো, আমি হয়ত আর্লি লাঞ্চ করে বের হয়ে যাবো। সবাই মুটামুটি দ্রুত গতিতেই আমার সাথে জড়িত যার যার কাজ গুছিয়ে নিয়ে এলো। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে সেরে ফেল্লো সব কাজ। আমি নামাজ পড়ে, আর্লি লাঞ্চ করতে বসে গেলাম। এরই মধ্যে আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার (আসলে ব্যবসায়ীক পার্টনার বললে ভুল হবে, আমরা আসলে দুজনেই দুজনকে ফ্যামিলি হিসাবেই দেখি) মূর্তজা ভাই ফোন দিলেন। ব্যবসায়ীক কাজেই ফোন দিলেন। কথা শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম, উনি আজকে অফিসে আসবে কিনা। জানলাম, আসতে উনার দেরী হচ্ছে, একটা অফিশিয়াল কাজেই আটকা পড়েছেন। ফলে, আমি যে আর্লি বের হয়ে যাচ্ছি সেটা ওনাকে জানাতে গিয়ে কোন ফাকে যে বলে ফেলেছি যে, আজ আমার জন্মদিনের উপলক্ষে বাসায় বউ পোলাপান আগে যেতে বলেছে। মুর্তজা ভাই, হাসলেন। আমিও হাসলাম। কিছু ফান ও করলাম এই জন্মদিনের অনেক কথা নিয়ে (সেগুলি এখানে বলছি না)।

যাক, আমি প্রায় দুটোর দিকে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলাম। রাস্তার যে অবস্থা, ট্রাফিক জ্যাম ক্রস করে করে বাসায় পৌছাতে পৌছাতে প্রায় ৪টা বেজে গেলো। এতো আগে সাধারনত আমি অফিস থেকে কখনো বাসায় আসি না। ফলে সন্ধ্যা হতে এখনো অনেক বাকী। আর আমরা তো প্ল্যান করেছি সন্ধার পরে বাইরে যাবো। এই অল্প সময়টুকুন কি করা যায় আমাকে আর ভাবতে হলো না। ছাদে আমার বাগান আছে, আমি নিজেই এর দেখাশুনা করি। ফলে ছাদে যেতে চাইলাম। বউ বল্লো, আরে, আজকে আর ছাদে যাওয়া লাগবে না। একটু রেষ্ট নাও। সন্ধ্যায় ঘুরতে গেলে ফ্রেস লাগবে।

কথাটা মন্দ লাগলো না। শুয়ে শুয়ে ক্রাইম পেট্রোল দেখতে দেখতে এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম। মাগরিবের আজান পড়ছে, ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বিছানা থেকে উঠে মনে হলো, আজ বহুদিন পর দিনে ঘুমিয়েছি। আশেপাশে কিছু পাখীর কিচির মিচির হচ্ছিলো। শব্দটা ভালই লাগছে। এদিকে দরজাতা বউ ডেংগুর ভয়ে সন্ধ্যার আগেই বন্ধ অরে রেখেছে। ডেংগু বড় খারাপ জিনিষ। আমরা অনেকেই সচেতন নই বিধায় মশারা আমাদের থেকে একটু চালাক। সন্ধ্যা হলেই কাম্রাইয়া কিছু রক্ত খেয়ে নেয় আর ডেংগুর জীবানু উপহার দিয়ে তারপরের ইতিহাস নাইবা বললাম। ভালো ঘুম হয়েছে, তবে ঘুমের রেওয়াজটা এখনো আছে বলেই মনে হচ্ছে। ভালই লাগলো ঘুমটা। নামাজ পড়ে বউকে বললাম, কোথায় যাবা প্ল্যান করেছো?

খুবই স্বাভাবিক স্বরে বউ জানালো, এখনো তো ঠিক করা হয় নাই কোথায় যাবো। তবে, চলো, খুজে বের করা যাবে। বের হলেই দেখা যাবে কোথায় যাওয়া যায়। আমি তাকে একটু সাজগোছ করতে দেখলাম। তাঁর এই সাজগোছে কিন্তু আমার কাছে একটা জিনিষ বারবার খুব অস্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো। আর সেটা হচ্ছে, বাইরে যাচ্ছি আমি, আমার ছোট মেয়ে আর আমার বউ। একেবারেই একটা ঘরোয়া ব্যাপার। কিন্তু তারা হটাত করে এতো সাজগোছ করছে কেনো?

বউকে জিজ্ঞেস করায় সে বল্লো, আরে তোমার জন্মদিনের একটা ছোটখাটো জিনিষ মনে করি নাকি আমরা? একটু ছবি টবি তুলবো, একটা রেষ্টুরেন্টে যাবো, সেজেগুজে যেতেই ভালো লাগছে। ওদিকে, আমার ছোট কন্যাকে কোথাও নিতে গেলে তাকে সাজবার জন্য কতবার যে তাগাদা দিতে হয়, তাঁর কোনো ইয়াত্তা নাই। কিন্তু আজ দেখলাম, বাহ, নিজেই ড্রেস পছন্দ করছে, সময় নিয়ে ড্রেস পড়ছে। ব্যাপারটা খুব নিঃশব্দে হচ্ছে। আমার কাছে একটু খটকা লাগছে বটে কিন্তু একেবারেই আবার অস্বাভাবিকও মনে হচ্ছে না। হতে পারে, আজ ওদের মন খুব ফুরফুরা।

যাই জিজ্ঞেস করি, তাতেই তারা হাসে। আমার রুমে গেলাম। আমার রুম মানে আমি যেখানে কম্পিউটার নিয়ে কাজ করি সে রুমে। একটু কফি খেলাম। ভাবতেছিলাম, ওরা কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছে? ওদের কি আমাকে কিছু সারপ্রাইজ দেওয়ার প্ল্যান করছে? ওরা কি কোনো গিফট বা এই জাতীয় কিছু আগে থেকেই কিনে রেখেছে যা রেষ্টুরেন্টে গেলে হয়ত বের করবে? ইত্যাদি। আমি হেটে হুটে ঘর ময় নীরবে একটু চেক ও করলাম, চোখে এই জাতীয় কোনো কিছু পড়ে কিনা। পেলাম না। ফলে ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়েই ফেলে দিলাম কারন কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। মেয়ে মানুষেরা তো সময় অসময় সব সময়ই সাজ গোছ করতে পছন্দ করে। হয়ত এতা তারই একটা অংশ।  

তো, ওরা প্রায় রেডি হয়ে যাচ্ছে দেখে আমিও রেডি হবার জন্য আমাদের মেইন ঘরে গেলাম। ভাবলাম, আমরাই তো। একটা টি সার্ট অথবা গেঞ্জি পড়ি, সাথে সেন্ডেল সু পড়ি, আরাম লাগবে। হটাত করে আমার বউ বল্লো, আরে নাহ, শার্ট প্যান্ট পড়ো। আমরা যেহেতু সবাই একটু সাজ গোছ করছি, তুমি আবার গেঞ্জী, স্যান্ডেল সু পড়লে কেমন দেখায়। বললাম, আরে, এতে কি অসুবিধা। আর আমরা কোথায় যাচ্ছি আসলে খেতে?

বউ এর উত্তর, চলো যাই, একটা কোথাও গেলেই হবে। যাক, বউ যখন সেজেগুজে শাড়িটাড়ি পড়ছে, মেয়েও যখন তাঁর পছন্দের মতো করে সেজেছে, তাহলে আমি আবার গেঞ্জীগুঞ্জী পড়ে লাভ কি? আমিও না হয় শার্ট প্যান্টই পড়ি।

কিন্তু মনের ভিতরে একটা খটকা লেগেই থাকলো। আমার এক সময় মনে হলো, ওরা কি কোনো বড় সড় গিফট কিনেছে নাকি? কিংবা এমন কিছু যা আমি দেখছি না কিন্তু ওরা লুকাচ্ছে? আমি একটা টেকনিক খাটালাম।

আমি আমার মেয়ের রুমে গিয়ে বললাম, কিরে মা, আজকের জন্মদিনে আমার জন্য কোনো গিফট কিনলি না? মেয়ে হেসে দিয়ে বল্লো, না আব্বু, সময় পাই নাই। তাছাড়া আপু বগুড়া থেকে আসুক, তারপরে দুই বোনে গিয়ে তোমার জন্য গিফট কিনবো বলে আমরা ভেবেছি। তাই আর কেনা হয় নাই।  এই বলে ছোট মেয়েও একটু মুচকি হাসলো। আমার সন্দেহের খটকাটা দূর হচ্ছিলো না। কিছু তো একটা চলছিলো যা আমি আবিস্কার করতে পারছিলাম না। কি হতে পারে? কত কিছু ভাবলাম, কত ভাবে ভাবলাম, ব্যাপারটা আমার মাথায়ই আসছে না, কি হতে পারে?

সবাই বের হলাম। আমি একটু আগেই বের হলাম। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে, তোর ম্যাডাম কিছু প্যাকেট দিছে নাকি? ড্রাইভার সহজ ভাবে বল্লো, না তো স্যার। কিছু দেওয়ার কথা নাকি? কই ম্যাডাম তো কিছু বল্লো না।

আমরা সবাই গাড়িতে বসে পড়লাম। গাড়ির ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো, স্যার কোথায় যাবো। আমি কিছু বলার আগেই আমার বউ বলে উঠলো, চলো, রেডিসনের আশেপাশে ভাল রেষ্টুরেন্ট আছে, ওখানেই চলো। আমি বললাম, আরে, বড় মেয়ে আসুক, তখন না  হয় ওকে নিয়েই একবারে যাওয়া যাইতো। বড় মেয়ে শুনলে ভাববে, দেখো, আমি ঢাকায় নাই, আব্বু আম্মু, আর কনিকা সবাই আব্বুর জন্মদিনে রেডিসনে পার্টি করছে। ওর হয়ত একটু মন খারাপ হতে পারে। কি দরকার। থাক না আজকে না হয় এই করিমুল্লা বা রহিমুল্লার কোনো নরম্যাল একটা রেষ্টুরেন্টে যাই, এম্নিতেই কিছু খাওয়া দাওয়া করে চলে আসি।

আমার বউ নাছোড়বান্দা। আমার বউকে আজকে মনে হচ্ছে, বেশ সার্থপর। বড় মেয়ের জন্যও তাঁর আজকে যেনো আফসোস নাই। বল্লো, আসুক মেয়ে, তারপর ওকে নিয়ে আরেকদিন যাবো। সব তো আর শেষ হয়ে গেলো না।  

গাড়ি যাচ্ছে, হটাত দেখি আমার বউ গুগল ম্যাপ ব্যবহার করছে। আমি দেখলাম, একটু সন্দেহ হলো কেনো সে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করছে? কিন্তু আবার মনে হলো, হয়ত কোনো ভালো রেষ্টুরেন্টের খোজ মনে মনে নিয়ে রেখেছে যেটা সে  ভালোমত চিনে না। তাই গুগল ম্যাপ ব্যবহার করছে। আমরা যাচ্ছি, যাচ্ছি, যেতে যেতে রেডিসন পার হয়ে গেলাম। সামনে কূর্মিটোলা গল্ফ ক্লাব। ভালো সাজিয়েছে মনে হচ্ছে। অনেক গাড়ি পার্ক করা। হয়তোবা কারো বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে, অথবা বড় কোনো পার্টি। শহরের ঝলমল আলতে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবটা যেনো তাঁর নিজের আলতে আরো চকচক করছে। লাল নীলা, সবুজ আলো, অনেক প্রকারের স্টাইলে জ্বলছে আলগুলি। ভালই লাগছে। পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে হর্ন বাজিয়ে আবার ব্যস্ত শহরের গাড়ি ঘোরা ছুটে চলছে। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরাও সামনে এগুচ্ছি।

বললাম, চলো, কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে ঢোকি।

আমার বউ আজগুবি একটা কথা বল্লোযে, এখানে তো আমাদের আর্মির জায়গা। অনেকবারই এসেছি। চলো দেখি, আরো সামনে যাই, কি কি ভালো রেষ্টুরেন্ট আছে। সেখানেই যাই। বললাম, সামনে তো আছে রিগেন্সি, ম্যাপল লীফ, আরো অনেক কিছু। আসলে তোমরা কি প্ল্যান করেছো কোথায় যাবা?

বউ বল্লো, চলো না যাই। তুমি আর এখন ব্যস্ত না।

ঠিক আছে, দেখা যাক কোথায় নিয়ে যায় বউ।

গাড়ি আরো সামনে চলে যাচ্ছে। চলে এসেছি প্রায় রিগেন্সির কাছাকাছি। বললাম, চলো তাহলে রিগেন্সিতেই যাই। তাতেও আমার বউ খুব একটা সায় দিলো বলে মনে হলো না। বল্লো, আরে নাহ, এটাও খুব একটা ভালো মানের না। মনে হয় ১ বা ২ স্টারের মানের। এর থেকে আরো ভালোটায় যাই।

বললাম, তাহলে চলো, ম্যাপললীফে যাই। ওটায় আমি এর আগেও এসেছি। খারাপ না। এবার মনে হলো বউ রাজী। কিন্তু গাড়ি থামানোর কোনো প্রস্তাবনা তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেলো না। ফলে গাড়ী ম্যাপললিফের জায়গা পার হয়ে চলে গেলো আরো দূরে। সামনে এবার লা মেরিডিয়ান।

আমার বউ বল্লো, চলো, এখানে তো তোমাদের নওরোজ ভাই চাকুরী করেন। এখানেই যাই।

বললাম, তাহলে চলো। দেখি, দোস্তরে পাই কিনা। পাইলে তো মন্দ হয় না। একটু আডদাও দেওয়া যাবে। যদিও আমি এখানে আরো কয়েকবার এসেছি। বললাম, তো তুমি তো আগে এখানে আসো নাই। খারাপ হবে না।

গাড়ি ঢোকে গেলো লা মেরিডিয়ানে। পার্ক করলাম। ড্রাইভারকে কিছু টাকা দিয়ে বললাম, যে, তুমি খেয়ে নিও কিছু। আমাদের আসতে আসতে একটু দেরী হবে।

আমার বউ আমার সামনে দিয়ে হেটে ঢোকে গেলো লা মেরিডিয়ানে। কঠিন চেক আপ। মনে হচ্ছে কোনো এয়ারপোর্টে ঢোকছি। হাত ব্যাগ, মোবাইল, পকেট, সব চেক টেক করে তারপর ঢোকতে দিলো। আমার বউ আর মেয়ের হ্যান্ড ব্যাগ টাও চেক করাতে হলো। চেকিং এর পর্ব শেষ। আমরা লবিং এ ঢোকে গেলাম।

আমি বললাম, চলো কয়েকটা ছবি তুলে দেই তোমাদের। মেয়ে আর বউ এক সাথি বলে উঠলো, আরে, চলো আগে খাওয়া দাওয়া করে নেই। পরে ছবি তোলার অনেক সময় পাওয়া যাবে। এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে। অবাক হলাম। আমার বউ ছবি তোলায় পাগল থাকে। হটাত তাঁর কি এমন তাড়া যে, ছবি তোলতেও এখন তাঁর ব্যস্ততা? সে কোনোদিকেই ভ্রুক্ষেপ না করে আমার সামনে দিয়ে এমনভাবে হেটে যাচ্ছিলো যেন সে এখানে প্রায়ই আসে, জায়গাটা তাঁর বেশ পরিচিত। একটু অবাক হচ্ছিলাম। আমি বললাম, তুমি কি চিনো কোথায় যেতে হবে?

সাথে সাথে উত্তর, হ্যা, ১৫ তালা।

একটু অবাক হচ্ছিলাম। কিন্তু যেহেতু কোনো কারন নাই তাই ব্যাপারটা আমিও বুঝতেছিলাম না আসলে কি হচ্ছে। আবার এটাও ভাবছিলাম, হয়তো ওর আগে থেকেই ইন্টারনেটে ঘেটেঘুটে জেনে নিয়েছে কোথায় কি আছে। হতেই পারে। আজকালকার যুগ। সবাই স্মার্ট। ইন্টারনেটে কোথায় লবি, কোথায় লিফট, কোথায় রেষ্টুরেন্ট, কয় তালায় রেষ্টুরেন্ট, আজকাল এক ক্লিকেই সব পাওয়া যায়।

লিফটে উঠে গেলাম ১৫ তালায়। ১৫ তালায় রেষ্টুরেন্টে ঢোকলাম। ঢোকেই দেখি-

ওরে বাবা, মুর্তুজা ভাই। একেবারে জাস্ট অবাক আমি। আমি থমকে গেলাম। ভাবলাম, হয়তো কোনো বায়ার নিয়ে এসছে, আমাকে বলার জন্য ভুলে গেছে। বললাম, কোনো বায়ার এসছে নাকি ভাই? আপনি এখানে যে?

হেসে দিয়ে বললেন, আজকে আপনার জন্মদিন না!! আমরাও এলাম আপনার জন্মদিনে। ভাবী, আনিকা, জিওন সবাই এসেছে। আমি তো রীতিমত অবাক। তাইতো বলি, আমি যাহাই বলি না কেনো, আমার বউ তাহলে এই সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এতো গোপনীয়তা!! ছোট মেয়েও!! আমাকে সাহ্ররট গেঞ্জি না পরতে দেওয়া, গুগল ম্যাপ চালু করা, গলফ ক্লাবকে একঘেয়ে জায়গা বলা, রিগেন্সির মত ভালো মানে একটা রেস্টুরেন্ট কে ১ স্টারে নামিয়ে দেওয়া, ওদের সাজগোছ করা, সব কিছু এখন আমার কাছে লা মেরিডিয়ানের চকচকে আলোর কাছে পরিস্কার।

ভাবলাম, কে বলে, মেয়েরা পেটে কথা রাখতে পারে না? যে এটা বলেছে, সে ভুল বলেছে। 

মুর্তুজা ভাই আমাকে নিয়ে গেলেন, একটা টেবিলে। ওমা, ওখানে গিয়ে দেখি আরো চমক!!

ভাবী, আনিকা, আর জিওন হাতে চমৎকার অনেকগুলি সাদা গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাকে দেওয়ার জন্য। কি অদ্ভুদ ভালবাসা। নিজেকে বড্ড সুখী এবং ভাগ্যবান মানুষের মধ্যে একজন মনে হলো। এরা সবাই আমার পরিবার। সবার হাসিখুশী মুখ, আর চাহনী দেখেই মনটা ভরে গেলো।

সত্যিই সারপ্রাইজড হয়েছি। খুবই সারপ্রাইজড। শুধু ফুল নিয়েই মুর্তুজা ভাই আসেন নাই। সাথে "কাপল ওয়াচ" মানে একটা পুরুষের ঘড়ি আর সাথে একই ডিজাইনের আরেকটা মহিলার ঘড়ি। আমাদের জন্য কিনেছেন একজোড়া আর ভাই ভাবীর জন্য ও কিনেছে এক জোড়া। অনেক দাম, ব্র্যান্ডের ঘড়ি। আমার তো চক্ষু চড়কগাছ। এতোক্ষনে বুঝলাম সেই বিকাল থেকে কি একটা গোপন জিনিষ আমার কাছে আমার বউ, আমার ছোট মেয়ে আর সবাই লুকিয়েছিল। আরো অবাক করার বিষয় হচ্ছে- আমার বড় মেয়ে নাকি জানতো জিনিষটা। সেই দুপুর থেকেই জানতো। আমি ওর সাথেও দুপুরে অনেক্ষন কথা বলেছি। কিন্তু ও নিজেও আমাকে কিছুই বলে নাই।

অজানা জিনিষের হটাত করে যখন চোখের সামনে সারপ্রাইজ হয়ে ধরা দেয়, আর সেটা যদি হয় একটা ভাল কিছু, মনের আনন্দের সাথে চোখের পাতাও সেই আনন্দে জলে ভিজে চিকচিক করে। বড্ড ভালো লাগলো সবার এ রকম একটা লুকোচুরি খেলা।

অত্যান্ত ঘরোয়া পরিবেশে আমার পরিবার আর মুর্তজা ভাইয়ের পরিবার অনেক্ষন সময় কাটালাম। ব্যবসার কোনো কথাবার্তা হলো না। পুরুটাই পরিবার নিয়ে, বাচ্চাদের নিয়ে, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে, তাদের পছন্দ অপছন্দের জিনিষ নিয়ে। আমরা ওদের বলার চেষ্টা করেছি, আমরা এই বিশাল দুনিয়ায় এতো মানুষের ভীড়েও কখন কোথায় কিভাবে একা অনুভব করি। আর সেই একাকীত্তের একমাত্র ভরষার স্থানগুলি কোথায়। এটাই হচ্ছে পরিবার। কোনো কোনো অতীতের অনেক সময় কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু বর্তমানের জন্য এমন কিছু ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করে, যা আজকের দিনের কোনো এক সুখদুক্ষের এমন ঘরোয়া পরিবেশেই তাঁর জন্ম হয়। এটা যেনো সেই রকম একটা ঘরোয়া পরিবেশ।

অনেক ধন্যবাদ মুর্তজা ভাইকে, অনেক ধন্যবাদ ভাবী, আনিকা এবং জিওনকে। ধন্যাবাদ আমার ছোট মেয়েকে। আর ধন্যবাদ আমার বউকে। ধন্যবাদ আমার বড় মেয়েকে যে আমাকে সব জেনেও কিছুই জানায় নাই অথচ এতো সুন্দর একটা মেসেজ রেখেছিলো সকালেই। ধন্যবাদ সবাইকে। এতো চমৎকার একটা পরিবেশ দেওয়ার জন্য।

মাঝে মাঝে অনেক কষ্টের পরিবেশে বাচতে বাচতে যখন হাপিয়ে উঠি, যখন ঞ্জেকে একা একা মনে হয়, তখন এই সব ছোট ছোট ঘরোয়া ভালবাসা আবারো মনে করিয়ে দেয়, আমরা পরিবারকে ভালোবাসি, আমরা পরিবারের জন্য বাচি। আর এই পরিবারতাই হচ্ছে আমাদের সব সুখের মুল উৎস।

১৪/০৮/২০১৯-বাসায় সবার দাওয়াত

Categories

ঈদ-উল আযহার পরের দিন আজ। অনেকদিন সবাইকে নিয়ে বিশেষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া হয় না। তাই ঈদের কদিন আগে মিটুলকে বললাম, সবাইকে দাওয়াত দাও যেনো ঈদেরপরের দিন সবাই আমাদের বাসায় আসে, একটা গেট টুগেদার করা যাক। উম্মিকাও আছে বাসায়। ওর যারা যারা বন্ধু বান্ধব আছে, ওদেরও আসতে বলো। কনিকার বন্ধু বান্ধব কয়েকদিন আগে দাওয়াত খেয়ে গেছে, তাই এতো শর্ট তাইমে আবার ওর বন্ধু বান্ধবদের দাওয়াতের দরকার নাই। মিটুল গ্রামের অনেককেই দাওয়াত করেছে আর ওদের ভাইওবোনদের তো আছেই। ওরাও আমার বাসায় আসার জন্য ব্যাকুল থাকে। ধরে নিয়েছিলাম প্রায় শখানেক হবে উপস্থিতি।

তাইই হলো, প্রায় শ খানেকের মতোই লোকজন এসে হাজির হলো।

ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো। ফলে আমার ছাদতায় ভাল করে আয়োজন করা যাচ্ছিলো না। তাই গ্যারেজই ভরষা। কাবাবের স্টল করা হলো মুবিনের নেতৃত্তে। মুরগীর আর গরুর কাবাব। মিটুলের রান্নার জুরি নাই, সবাই ওর খিচুরী, পোলাও এবং অন্যান্য আইটেম খুব মজা করে রান্না করে।

উম্মিকার ৬/৭ জন বন্ধু বান্ধব এসেছিলো। আমি ফাউন্ডেশনের এম ডি রানা, ওর বউ, সবাই এসেছিলো। খুব ভালো একটা সময় কেটে গেলো। এর সাথে নেভীর কমান্ডার মামুনও এসেছিলো দীপু আর ওর পরিবার নিয়ে। যদিও একটু একটু করে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো, তবুও সবাই একে একে বাগান দেখতে গেলো। বাগানে একটা ছাতা আছে, লাইটিং করানো। ছবি তোলার জন্য একটা মুক্ষম জায়গা।

১৩/০৮/২০১৯- ঈদের পরের দিন

Categories

কোরবানীর ঈদের পরদিন। আমার বাড়িতে ছোত বড় সবাই এক সাথে যেমন ঈদের দিন আসতে পছন্দ করে, তেমনি কাউকে দাওয়াত দিলে পারতপক্ষে কেউ মিস করতে চায় না এটা আমার সৌভাগ্য। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি সেই সকাল থেকেই। মিতুল (আমার স্ত্রী) তাদের ভাইর বোন সবাইকে দাওয়াতের পাশাপাশি আমাদের গ্রামের ভাই বোনদের কিছু ছেলেমেয়েরদেও আজকের দিনের দাওয়াতে হাজির হতে অনুরোধ করেছিলো। গুড়ু গুড়ি বৃষ্টির কারনে গ্রাম থেকে অনেকেই আসতে পারে নাই।

জাহাংগীর নগর ইউনিভার্সিটির মিতুলের বান্ধবী দীপু এবং ওর হাজবেন্ড কমোডর মামুন সহ ওদের পরিবারের সবাইকেও দাওয়াত করেছিলো মিতুল। দাওয়াত করেছিলো উম্মিকার কিছু বন্ধু বান্ধব্দের। আমিন ফাউন্ডেশন এর পরিবারদেরকেও মিতুল দাওয়াত করেছিলো, সবাই এসেছে। বেশ গমগম একটা পরিবেশ।

মুবীন দুপুর থেকেই কাবাব বানানোর সমস্ত আয়োজন করে রেখেছিলো। ইমন আবার রাতে কি আতশবাজী পুরানোর জন্য এক গাদা আতশবাজীও তার স্টকে রেখেছিলো। বৃষ্টি হওয়াতে ছাদে কাবাব বানানোর পরিকল্পনাতা ভেস্তে গেলো কিন্তু নীচে গ্যারেজ বনে গেলো রীতিমত একটা কাবাব ফ্যাক্টরির রান্নাঘর। চারিদিকে কাবাবের মনোরম গন্ধ, লোকজনের সমাবেশ, মন্দ লাগছিলো না।

অনেক লোক যখন এক জায়গায় সমাবেশ করে, এম্নিতেই জায়গাটা শোরগোলের মতো কিচির মিচিরে ভর্তি থাকে। তার মধ্যে আবার চৌধুরী বাড়ির মানুষ, তাদের গলার আওয়াজ সব সময়ই চ ওড়া। তারা আস্তে কথা বলতে পারে না। হয় তারা কানে কম শুনে বলে উচ্চস্বরে কথা বলে অথবা কে কার কথা শুনবে, সেটা সুপারসেড করার কারনে একে অন্যের থেকে চরা ভয়েসে কথা না বলে কোনো উপায়ও নাই। ফলে সেই দুপুর থেকে আমাদের বাসায় একটা অবিরত হট্টগোলের মধ্যে ছিলো। শব্দ দূষনে নিঃসন্দেহে আজকে আমার বাসা রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবার কথা।

ঈদের দিন সাধারনত আমি ছোট বড় সবাইকে সালামী দেই। এতা আমার খুব ভালো লাগে। সালামী তা লোভনীয় করার জন্য আমি আগে থেকে ব্যাংক থেকে নতুন নতুন নোট নিয়ে রাখি। আর সালামীর পরিমানতাও আমি বাড়িয়ে দেই যাতে সবাই বিশেষ করে ছোটরা এই সালামির লোভেই সবাই আমার বাসায় সকাল সকাল চলে আসে। ছোটরা যখন বায়না ধরে, বড়রা তখন আসতে বাধ্য হয়। ফলে আমি খুব গোপনে এই সালামীর টোপ তা সব সময় দিয়ে রাখি।

সবাই লাইন ধরে দাঁড়ায়, একে একে সালাম করে। সালাম করাতা বা পাওয়া তা আম্র মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে, এই যে সালামীটা পাওয়ার জন্য বাচ্চারা অধীর আগ্রহে বসে থাকে। সবাইকে আমি সম পরিমান সালামি দেই। বড়দের বেলায় অবশ্য বেশী থাকে।

বেশ রাত পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলে, আর অবিরত খাবারের, জুসের, আর মিষ্টির ব্যবস্থা থাকে। কখনো ফুস্কা, কখনো হালিম, কখনো অন্যান্য আইটেম তো আছেই। বয়স ভিত্তিক পোলাপান এক এক রুমে আড্ডা দেয়, কেউ কেউ আবার একই রুমে বসে নিজেরা নিজেরা সোস্যাল মিডিয়ায় এত ব্যস্ত থাকে যে, কাছে আছে তবুও যেনো সোস্যাল মিডিয়ায়র মাধ্যমেই হাই হ্যালো করতে পছন্দ করে।

দিনটা আমার বেশ ভালো কাটে এইসব কিচির মিচির করা বাচ্চা আর তাদের বড়দের নিয়ে। বয়স হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি একটা সময় আসবে, তখন হয়তো এটার ভাটা পড়বে। হয়তো অনুষ্ঠান তা হবে, আমার অনুপস্থিতিতে। হয়তো ওরা আমার এই সালামিটাই তখন সবচেয়ে বেশী মিস করবে। কিন্তু পৃথিবীর তাবত নিয়ম মেনেই যুগে যুগে এই রীতি চলতেই থাকবে সেই কফি হাউজের আড্ডাটার মতো।

৮/৮/২০১৯-হিজড়া

Categories

আমার ফ্যাক্টরীতে প্রতি বছরই ১০/১২ জন করে হিজড়া আসে কিছু চাদা নেওয়ার জন্য। এই হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকগুলিকে সবাই এক রকম এড়িয়ে চলে। এড়িয়ে চলার অনেক কারন ও আছে। ওরা চাদার জন্য এলেও সবার সাথে বেশ খারাপ ব্যবহার করে, বিশেষ করে চাদা না পেলে।

প্রথম বছর যখন ওরা আমার ফ্যাক্টরীতে চাদার জন্য আসে, সেদিন আমি গেটে নামার পর দেখলাম, আমার এইচ আর ডিপার্ট্মেন্ট হেড, আমার চীফ সিকিউরিটি, এবং ম্যানেজার হিমশিম খাচ্ছে ওদেরকে সামাল দিতে। আমাকে দেখেই আমার স্টাফরা যেনো আরো হচকচিয়ে গেলো। তড়িঘড়ি করে হিজড়াদেরকে বল্লো, যে, বড় সাহেব এসেছেন, তোমরা এখন যাও। পরে এসো। হিজরারা তো আরো মওকা পেয়ে গেলো। এবার বড় সাহেবকেই তারা তাদের সমস্যার কথা বলবে বলে একজোট হয়ে গেলো।

আমার ফ্যাক্টরিতে প্রতি বছর ১০/১৫ জন করে হিজড়া আসে। প্রথ (২০০৭) সালে যখন প্রথম ওরা সাহায্যের জন্য আসে, আমার HR Dept Head, Security Dept Head এবং অন্যান্যরা অন্য সব পাবলিকের মতোই একটু তাচ্ছিল্যভাবে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছিল। ঠিক ঐ সময়ে আমি মাত্র অফিস ঢোকবো। ওরাও ওদের স্বভাব গত ভাবে রি এক্ট করে যাচ্ছিল। আমি ওদের বললাম, কি হয়েছে? ওরা সাহায্য চায়। আমি বুঝতে পারলাম দুই পক্ষই এগ্রেসিভ। কিচ্ছু না বলে আমি এডমিন কে বললাম, ওদেরকে আন্তরীকতার সাথে ভিজিটিং রুমে বসাও, চা পানি দাও, আমি কথা বলবো। সেভাবেই এডমিন কাজটা করলো। আমি ওদের সাথে বসলাম, একসাথে চা খেলাম, ওদের লাইফ স্টাইল শুনলাম। খুব কষ্ট লাগলো। ওদের ও অনেক কষ্ট আছে, বেদনা আছে। ওরা কারো কাছ থেকেই ভালো ব্যবহার পায় না। তাই ওরাও এগ্রেসিভ থাকে। অনেক কথা হলো। আমি ওদেরকে ওরা যা চেয়েছিল তার থেকেও বেশী সাহায্য করেছিলাম। আজ অবধি ওরা প্রতি বছর আসে, যত্ন করে সালাম দেয়, আমাদের ষ্টাফ রাও ওদেরকে ভালোভাবে সম্মানের সহিত আপ্যায়ন করে, সাহায্য করে কিন্তু আমার সাথে দেখা না করে কখনো যায় না। যদি অফিসে না থাকি, সেদিন কোনো সাহায্যও নিতে চায় না, ওরা বলে এমডি স্যার যেদিন আসবে সেদিন নেবো আর দোয়া নিয়ে যাবো। ওদের সাথে সম্মানের সাথে ব্যবহার করা উচিত। ওরা হিজড়া, সেটা ওদের অপরাধ নয়। ওরা একদম স্বাভাবিক সমাজের একজন মানুষ। ওরা যখন না আসে, আমিই বরং খবর নেই এডমিনকে দিয়ে, ওরা আসে নাই কেনো। একটা জিনিষ ওরা জানে যে, আমার ফ্যাক্টরিতে এলে ওরা ভাল ব্যবহার পায় এবং ওরাও খুব ভালো ব্যবহার করে। ওরা দল বেধে চলে নিরাপত্তার খাতিরে। ওরাও আমাদের মতো কারো না কারো বাবা মার সন্তান।

৩০/০৭/২০১৯-কনিকা

মেয়েটা জন্মের দিনই আমার বুক কাপিয়ে দিয়েছিল। অবিকল আমার মায়ের চেহারা নিয়ে সে এই পৃথিবীতে পদার্পন করেছিল। আমি ভয় পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, সে আমার মায়ের রিপ্লেসমেন্ট কিনা ভেবে। আজ আমার মা বেচে নেই কিন্তু কনিকা আছে। কনিকার মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ায় আমার মা কনিকাকে একদম পছন্দ করে নাই। কিন্তু এতা তো আর আমার কনিকার দোষ নয়। আর আমিও কোনোদিন কেনো আমার বর মেয়ে হবার পর আবারো একটা মেয়েই হল, ছেলে কেনো হলো না, এ প্রশ্নতা আমার মাথায় কখনোই আসে নাই, এখনো না। ওরা দুজনেই আমার সন্তান আর আমার ভালো লাগার মানুষ।

কনিকা ছোত বেলায় যেমন বেশী অভিমানী ছিলো, আজ এতো বর হয়ে গেছে, তার সেই ভাবতা এখনো কমে নাই। বকা দিলে কান্না করে, বিশেষ করে আমি বকা দিলে তো ওর চোখের পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। ওর মা যখন সারাক্ষন এই পরা, ঐ রুম গোছানো, অই তাইম মতো না খাওয়া, ঐ ঠিক মতো গোসল না করা, তাইম মতো পড়তে না বসা ইত্যাদির কারনে বকতেই থাকে, এতা ওর কান দিয়ে আদৌ ঢোকে কিনা আমার মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে। নির্বিকারই তো থাকে। যেই আমি একটু বকা দিয়েছি- গেলো এদিনের মতো দিন বরবাদ। কেনো এমনতা হয় জানি না তবে আমি ওক