01/05/2022- Russia’s 3B strategy in Ukraine

যুদ্ধ জয়ের সবচেয়ে বড় ট্যাক্টিক্স হচ্ছে সেই কউশলটা যা আগে কোথাও ব্যবহার করা হয় নাই। সব দেশ সব সময় তাদের সামরিক সদস্যদেরকে একটা ধাচের মধ্যে সমর বিদ্যা চর্চা করান। কিন্তু কেউ যদি ততাহকথিত সমর জ্ঞান পালটে এমন কিছু অভিনব কায়দা গোপনে পরিচালনা করেন যার সম্পর্কে কারো কোনো ধারনা নাই, তখন অনেক অস্ত্র খরচ করেও শত্রুকে মোকাবেলা করা সম্ভব হয় না। পুতিনের সমর কৌশলের মধ্যে এমন কিছু নতুনত্ত আছে যা সচরাচর বই পুস্তকে লিখা নাই। একটু খোলাসা করে বলি;

কিয়েভের একদম কাছে গিয়ে সে আর কিয়েভ দখল করলো না। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে দখল করতে পারলো না। কিভের কাছাকাছি (মানে মাত্র ১০ কিমি দূরে) অবস্থান করলো প্রায় ৮ দিন। কিছুই করলো না। অবাক লাগার কথা। প্রায় ৬৬ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো, বুঝা যাচ্ছে না আসলে কে জিতে যাচ্ছে। রাশিয়ার আগ্রাসনকে আমি কিন্তু সাপোর্ট করছি না। এটা আগ্রাসনই বল্বো। অন্যায় তো অবশ্যই। কিন্তু যেহেতু সুপার পাওয়ারগুলি এখন নিজেরাই নিজেদের জন্য খেলছে, দেখি রাশিয়া কোন রহস্যময় সমর কৌশল অবলম্বন করছে।  

Cdr Benjamin “BJ” Armstrong, a US naval officer যাকে বলা হয় সমর চিন্তায় একজন পারদর্শী। তিনি মন্তব্য করেছেন, রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের সময় যে ট্যাক্টিক্স অবলম্বন করেছিলো যাকে Russia’s 3B strategy বলা হয়, সেই একই ট্যাক্টিক্স পুতিন ইউক্রেনেও অবলম্বন করেছে বলে মনে হয়। তাহলে এই Russia’s 3B strategyটা কি?

In Russia’s 3B strategy, the first B stands for ‘Blockade’,

the second for ‘Bombardment’ and

the third for ‘Boots’ on the ground.

US military experts suggest that Russia so far has successfully executed this strategy that has seriously hampered Ukraine’s fighting ability in the eastern part of the country.

এই স্ট্রাটেজি পালনে ক্রিমিয়া দখলের সময় রাশিয়া প্রথমে ইউক্রেনের Sevastopol port কে ব্লকেড এবং চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল। তারপর রাশিয়া ইউক্রেনের ডিফেন্স ফোর্সকে বোম্বার্ডমেন্টে ধংশ করে ফেল্লো। then it landed its boots in Crimea.

ঠিক একই কাজ ফেব্রুয়ারীর ২৪ তারিখ থেকে রাশিয়া শুরু করেছে।  রাশিয়া  ইউক্রেনের Sevastopol port কে লঞ্চিং প্যাড হিসাবে ব্যবহার করেছে, ক্রিমিয়া দখলের সময়ও সে এটা করেছিলো। অতঃপর সেখান থেকে ডেডলী মিসাইলস, মেরে ইউক্রেনের ডিফেন্স ফোর্সকে এটাক করেছে। অতঃপর রাশিয়া Kerch Strait প্রনালীকে ব্লক করে দিয়েছে। Kerch Strait হচ্ছে আজম সাগর এবং ব্ল্যাক সাগরকে সংযোগ করে। ফলে আজব সাগরের পুরু কন্ট্রোল রাশিয়া নিয়ে নেয়। And lastly, it landed its boots in Ukraine to usurp the vast swathes of the country. এর মাধ্যমে রাশিয়া ঠিক আগের মতোই তার 3B strategy পরিচালনা করলো।

Now, Russia is applying this strategy to the whole of Ukraine, by creating a blockade of the Ukrainian territories by hijacking the port cities of Mariupol, Berdyansk, Mykolayiv and Odesa.

এখন যেটা রাশিয়া করছে তা হলো-এই ব্লকেডের মাধ্যমে ইউক্রেনের ফোর্স এবং অর্থনীতি পুরুটাই বিপর্য্যের মুখে। রাশিয়ার এই ব্লকেডের জন্য ইউক্রেন তাদের অঢেল খাদ্য সামগ্রী এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকায় রপ্তানী করতে পারছে না। অথচ ইউক্রেনকে বলা হতো ইউরোপ/আমেরিকার খাদ্য ভান্ডারের একটি গুদাম।

একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ২০১৯-২০২০ সালে ইউক্রেন ছিলো প্রিথিবীর ২য় বৃহৎ রপ্তানীকারক দেশ। ২০২০-২১ সালে আগের বছরের থেকেও প্রায় ২৫% বেশী উতপাদন করেছিলো ইউক্রেন যেখানে প্রধান খাবারগুলি ছিলো বার্লি, কর্ন, সিরিয়াল, ভেজিটেবল ওয়েল। এখন সে সব খাদ্য সামগ্রির বহির্বিসশে ইউক্রেন রপ্তানী করতে পারছে না। অচিরেই সারা বিসশে খাদ্যের একটা সংকট তৈরী হতে পারে বলে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম জানিয়েছে।

Now, you may ask, what exactly are America and Ukraine doing to prevent Russia’s 3B strategy to come to fruition? Well, frankly speaking, the two nations seem to be falling prey to Russia’s carefully fabricated military warfare. Ukraine still has not devised any strategy to break Russia’s 3B trap, and that’s what has now unnerved US military experts in epic proportions.

১২/১০/২০০২-ট্র্যাবজন থেকে জর্জিয়া

Categories

ট্র্যাবজনে যখন পৌছলাম, তখন রাত প্রায় দশটা। ছোট একটা এয়ারপোর্ট। একেবারেই নিস্তব্ধ। গুটি কতক লোক যেনো পুরু এয়ারপোর্ট টাকে আগলে রেখেছে। দোকান পাট যাও আছে, খদ্দরের অভাবে সে গুলিও প্রায় বন্ধের মতো। এয়ারপোর্ট যতোই নিস্তব্ধ হোক, এর ভিতরের একটা  রুপ আছে। সুন্দর, পরিপাটি ফ্লোর, দোকান পাট বন্ধ থাকলেও এদের বাইরের সাইন বোর্ড আর বিজ্ঞাপন চোখে পড়ার মত। এখানে যে সব দোকান পাট খোলা, তারা যেনো নিরাপত্তার মতো ব্যাপারটা মাথায়ই নাই, কোনো চোর ডাকাতের ভয় নাই। এটা একটা  আরেক জগত।

এয়ারপোর্টের ভিতরেই টাকা ভাঙ্গানোর এক্সচেঞ্জ গুলি বসে আছে। সুদুর ঢাকা থেকে ডলার নিয়ে এসেছি কিছু। কোথাও কিছু খেতে গেলে বা কিনতে গেলেও লোকাল কারেন্সি লাগবে। তাই মেজর ইরশাদ বল্লো, স্যার, কিছু দলার চেঞ্জ করে নেই। খারাপ বলে নাই, ভাবলাম, শ পাছে ডলার ভাংগিয়ে নিয়ে যাই। আবার ভাবলাম, আগামী কালই তো চলে যাবো তুরস্ক ছেড়ে, এতো ডলার এক্সচেঞ্জ করা কি ঠিক হবে? যাই হোক, সিদ্ধান্ত নিলাম, তিনশত ডলার আপাতত এক্সচেঞ্জ করি। বাকিটা জর্জিয়া গেলে তো ওখানকার লোকাল কারেন্সি লাগবে।

এখানে একটা মজার ব্যাপার ঘটে গেলো যা আমার বা মেজর ইরশাদের অভিজ্ঞতার বাইরে। ডলার ভাঙ্গাতে গিয়ে হতবাক হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। এদের মুদ্রার নাম লীরা। আর এখানে এক ডলার দিয়ে প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার লিরা পাওয়া যায়। তার মানে আমি যদি এখন ৫০০ ডলার ভাঙ্গাই, তাহলে কত লীরা হবে বুঝতে পারছিলাম না। একি দেশ?  তারপরেও, নিলাম। এখন কত পাইলাম, আর কত পাওয়া উচিত ছিলো, আদৌ সব ঠিক মতো পাইলাম কিনা এই অবেলায় ক্ষুধার্থ পেটে আর মাথা কাজ করছিলো না। সারাদিনের প্রচন্ড জার্নীতে শরীর প্রায় অবশ। এখন তাড়াতাড়ি কোনো একতা হোতেলে গিয়ে উঠতে পারলেই যেনো বাচি। প্রায় এক ব্যাগ লীরা নিয়ে এয়ারপোর্ট ছেড়ে ট্র্যাবজন শহরের দিকে ছুটলাম। তখন রাত প্রায় ১১ টার কাছাকাছি। শহরও প্রায় নির্জন হয়ে এসছে।

একটা ভাড়া করা গাড়িতে আমি আর মেজর ইরশাদ ট্র্যাবজন শহরে চলে এলাম, পথে ঘাটে লোকজন নাই বললেই চলে। গাড়ির ড্রাইভার আমাদেরকে একতা সাধারন হোটেলের সামনে এনে কাকে যেনো উচ্চস্বরে ডাক দিলো। যেহেতু আমরা ওদের ভাষা বুঝি না কিন্তু আকার ইংগিতে এটা বুঝলাম যে, সম্ভবত হোটেলের কোনো এক কর্মচারীকে নতুন খদ্দর নিয়া এসেছি এটা জানান দিলো।

একটু পর মধ্য বয়সী একজন লোক এসে তাদের মধ্যে কি কি কথাবার্তা জানি হলো, আমাদেরকে একতা ক্যাল্কুলেটরের মাধ্যমে বুঝাইলো যে, হোটেল ভাড়া এক রুম প্রতি দিনের জন্য প্রায় ৫০ ডলারের সমান। কিছু করার ছিলো না। কারন রাত অনেক, শরীরের উপর অনেক ধকল, এদিকে আবার অন্য কোথাও গিয়ে রুম পাই কিনা, পাইলেও এর থেকে ভালো এবং সস্তায় হবে কিনা জানি না, তাই রাজী হয়ে গেলাম। ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে গিয়াও কারেন্সীর হিসাব নিয়া বড় বেসামাল। একেকতা নোত এক লক্ষ লীরার সমান। নোটের মধ্যে এতো বড় বড় সংখ্যা যে, পড়তে গেলে এক দুই তিন করে করে খালী শুন্যই গুনতে হয়।

আমি আর ইরশাদ মালামাল নামিয়ে হোটেলে উঠে গেলাম। শীত টা ঝাকালো না কিন্তু আবার কম ও না। ল্যাপ কম্বল সব বুঝে নিলাম। আমরা হাত মুখ ধুয়ে বাইরে খাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেলাম। পাশেই একতা ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে এমন একতা রেষ্টুরেন্ট আছে। আমরা বেশি ঘুরাঘুরি না করে পাশের রেষ্টুরেন্টেই খাওয়ার জন্য ঢোকে গেলাম।

রেষ্টুরেন্টের ভিতরে মাত্র দুজন মানুষ বসে আছে। একজন মহিলা আর আরেক জন পুরুষ। এ গুলি নিয়ে আমাদের কোনো মাথা ব্যথা নাই। কিন্তু পরে অনুভব করলাম, আমাদের যদিও তাদের নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নাই, কিন্তু তাদের মাথা ব্যথা ছিলো আমাদের নিয়ে। তাদের মধ্যে পুরুষ ব্যক্তিটি আমাদের টেবিলে এসে বসলেন। ভালো ইংরেজী বলতে পারেন। সালাম দিয়ে আমাকেরকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথা থেকে এসেছি।

এখানে একতা কথা বলে রাখা ভাল যে, মিশনে আসার আগে আমরা তুরস্ক নিয়েও একতা ফিডব্যাক নিয়ে এসছিলাম। এখানকার লোক গুলি নাকি অনেক ফ্রড, সুযোগ আর সময় পেলেই বিদেশি পর্যটকদের ঠকাইতে ছাড়ে না। আমাদের মাথায় এতা ছিলো। ফলে, খুব সহজেই কারো ট্র্যাপে পড়ে যাবো এতা ভাবি না। যাই হোক, লোকটার আমাদের টেবিলে বসার উদ্দেশ্য নিয়ে আমার এবং মেজর ইরশাদের দুজনের মধ্যেই একই রকম সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিলো। আমরা মোটামুটি একতা সাধারন খাবারের অর্ডার দিয়ে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি, আর এই ফাকে ভদ্রলোক আমাদের বিনোদনের জন্য এমন কিছু লাগবে কিনা জানালেন। প্রথমে ব্যাপারটা বুঝি নাই।

বললাম, সিগারেট দরকার। কোথায় পাই?

লোকটি হেসে দিয়ে বললেন, আরে সিগারেট পাওয়া যাবে, সাথে কোনো সাথী লাগবে কিনা, লাগলে বলেন।

বুঝলাম, এরা মেয়ে ঘটিত কোনো ব্যাপার নিয়ে আলাপ করছে।

বললাম, না ভাই, আমরা মুসলমান, এসব ব্যাপারে আমরা আলাপ করতে চাই না। তারপর আগাইয়া এলেন সেই ভদ্র মহিলা। ব্যাপারটা ভালো ঠেকছিলো না। আর হোটেলটার মধ্যে লোক জন একেবারেই নাই। একটু নার্ভাস লাগছিলো যে, এরা আবার কোনো সংঘবদ্ধ গ্যাং কিনা কে জানে। ঠি এই সময়ে তৃতীয় একজন খদ্দর এলেন খাবারের জন্য। মনে হলো তিনীও আমাদের মতো এখানে নতুন।

আমাদের সালাম দিয়ে বললেন, আনারা কি এখানে আজই এসেছেন? বললাম, জী, আমরা জাতী সংঘের লোক। জর্জিয়ায় যাচ্ছি কাল ভোরে। কি মনে হলো, আর কি জানি হলো, আগের দুইজন লোক (মহিলা আর পুরুষটী০ এই নতুন লোকটিকে দেখার পর চলে গেলো।

আমরা মোটামুটি খেয়ে হোটেলে চলে এলাম।

আগামীকাল খুব ভোরে আমাদের ফ্লাইট, তাই কোনো বাক্সই আর খুললাম না। বাথ রুম করে শুয়ে পড়বো, কিন্তু বাথ রুমে গিয়ে দেখি পানি নাই। অনেক দাকাডাকি করেও কাউকে পেলাম না। ফোন আছে রুমে, কাউকে ফোন করেও পাওয়া গেলো না। রিসেপ্সন একটা আছে, কিন্তু কোনো লোক নাই। এয়ারপোর্ট থেকে দুই বোতল পানি কিনেছিলাম, আপাতত সেই পানি দিয়াই সব কাজ সারা হল। মেজাজ খারাপ করার কোনো উপায় নাই। একদিকে ভাষা বুঝি না। অন্যদিকে কেউ নাই যার সাথে রাগ দেখাতে পারি। ফলে আমি আর মেজর ইরশাদ তুরুষ্কের সরকারকে কিছুক্ষন গালাগালি করেই মনের শান্তি লাভ করিয়া ল্যাপ গায়ে দিয়া ঘুমাইয়া পড়িলাম।  

১০/১০/২০০২- জর্জিয়ায় আগমন

Categories

গত ৪ অক্টোবর ২০০২ তারিখে আমি দ্বিতীয় বারের মতো জাতীসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষা বাহিনীর অধীনে  মিশনে এলাম। এবার মিশন এককালে রাশিয়ার অধীনে থাকা জর্জিয়ায়। ইউরেশিয়ার ককেশিয়ান রিজিয়নের মধ্যে ওয়েষ্টার্ন এশিয়া আর ইষ্টার্ন ইউরোপের মধ্যে অবস্থিত এই দেশটি। পশ্চিমে ব্ল্যাক সি, উত্তরে রাশিয়া আর দক্ষিনে আছে তুরস্ক আর আর্মেনিয়া। দক্ষিন পূর্বে আছে আজারবাইজান।

৪ অক্টোবর ২০০২ এ ঢাকা থেকে সুদুর জর্জিয়ায় কিভাবে কিভাবে এলাম, এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। রোজার দিন। আমি আর মেজর ইরশাদ (আমার জুনিয়ার, ১৭ লং কোর্ষের) আমরা একসাথে মিশনের উদ্দেশে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়েছিলাম দুপুরের দিকে। আমি কর্মরত আছি আর্মি হেডকোয়ার্টারে এমটি পরিদপ্তরে আর মেজর ইরশাদ কর্মরত ছিলো এএফডি তে (আর্ম ফোর্সেস ডিভিশন)। দুটুই পাশাপাশি অফিস।

গত কয়েকদিনে মিশন এলাকার ব্যাপারে ওখানে থাকা মেজর আখতার শহীদের সাথে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। মিশন এলাকায় সিএমও (চীফ মিলিটারী অবজারভার) হিসাবে আছেন আমাদের বাংলাদেশের জেনারেল আশফাক। স্যারের সাথেও অনেকবার মেইলে চিঠি আদান প্রদান হয়েছে। একটা আভাষ পাওয়া গেছে মিশন এলাকার ব্যাপারে। সে মোতাবেক মোটামুটি প্রিপারেশন নিয়ে বাক্স পেটরা গুছিয়ে নিয়েছি।

আমাদের ফ্লাইটটি ছিল ঢাকা থেকে ইস্তানবুল (তুরষ্ক) হয়ে, তুরষ্কেরই আরেকটি প্রদেশ ট্রাবজনে যাওয়া। সেই ট্রাবজনে আমাদের জন্য স্পেশাল ফ্লাইট থাকবে জাতীসংঘের। সেটা দিয়ে আমরা পরেরদিন জর্জিয়ার রাজধানী টিবলিসি শহরে পৌছব। টিবলিসি থেকে আরেকটি ফ্লাইটে আমরা পরের কয়েকদিন পর জর্জিয়ায় যাবো। এই পুরু ভ্রমনটা ঢাকা থেকে জর্জিয়ায় পৌঁছানোর সময় ছিলো মাত্র দুইদিন। অর্থাৎ ৬ তারিখের মধ্যেই আমাদেরকে আমাদের মিশন এরিয়াতে হাজির হইতে হবে।

আমরা যথারীতি রওয়ানা হয়ে গেলাম। পরিবারের সবার কাছ থেকে একটা আবেগঘন বিদায় হলো। আমার দুই মেয়ে ঊম্মিকা আর কনিকা। উম্মিকার বয়স সবেমাত্র ৮ বছর হয় নাই, আর কনিকার বয়স তো মাত্র ৩ ও হয় নাই। আমি জানি মিটুল দায়িত্তশীল মহিলা, সব সামাল দিতে পারবে। বাসা সেনানীবাসের ভিতরেই স্টাফ রোড ১৪৯/৪ নং বাসা। ফলে ওদের নিরাপত্তা নিয়া আমি চিন্তিত ছিলাম না। তারপরেও প্রায় এক বছরের জন্য যাচ্ছি, একটু তো মন খারাপ হবেই, তাইই হয়েছিলো আমার।

রোজা ছিলাম বলে প্লেনের ভিতরে কোনো কিছুই খেতে পারি নাই। প্লেন প্রায় ৫ ঘন্টা উরে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে নামলো। তুরুষ্কে এটাই আমার প্রথম পদার্পন। বিশাল একটা এয়ারপোর্ট। প্রুচুর লোকের আনাগোনা, কেউ ল্যান্ড করেছে, কেউ আবার ফিরে যাওয়ার জন্য লবিতে বসে আছে, ছোট বড় সব বয়সের মহিলা পুরুষের বিস্তর একতা ভদ্র মেলার মতো। কোনো কোনো সৌখিন মহিলারা ট্যাক্স ফ্রি পছন্দের সই কেনা কাটা করছে, কেউ আবার কেনার সামর্থ না থাকলেও দেখাদেখির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বার, মদের দোকান, সবই আছে। নেশাখোরদের জন্য এটা একতা ভালো ব্যবস্থা। প্রকাশ্যে নেশা করলেও কেউ কিছু বলবে না বিধায় পেটপুরে যতটুকু পানিয় খেলে কন্ট্রোলে থাকা যায় তাতেই বেশ আনন্দ সহকারে খেয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ আবার ফ্লাইট দেরীর কারনে অলস ভাবে কোন এক লোহার চেয়ারে হেলান দিয়ে, কেউ আবার দুই পা তুলে সঠান হয়ে লম্বা একখান ঘুম দিয়ে নিচ্ছে। যারা পেটুক স্বভাবের, তারাও কম যায় না, পেটে জায়গার অভবে যেনো সব কিছু খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও খাওয়া যাচ্ছে না ভেবে আফসোস করছে। কেউ কেউ আবার কম্পিউতার যন্ত্রের সাথে এমনভাবে লেপ্টে আছে, যেনো ইহাইয়া তাহার একমাত্র সাথী আর সংগী। যাই হোক সব কিছু মিলে কিছু কোলাহল, কিছু নীরবতা মিলে বেশ সুন্দর। বাংলাদেশের এয়ারপর্ট দেখলে এয়ারপোর্ট সম্পর্কে যা ধারনা হয়, এই এয়ারপোর্ট দেখলে নিজের দেশের দুরাবস্থার কথা মনে হয়। অথচ দুটুই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে আমাদের একটা কানেক্টিং ফ্লাইট ছিলো সরাসরি ট্রাব্জন এয়ারপোর্টের জন্য। আমি আর ইরশাদ দ্রুত সেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য এখান থেকে সেখানে, লাগেজ নেওয়া ইত্যাদি করতে করতেই আর ইফতারির কথা ভুলে গিয়েছিলাম। অথচ তখন রাত বাজে প্রায় নয়টা। এখানে একতা কথা জানিয়ে রাখা ভালো যে, আমরা সূর্যের অপোজিটে যাচ্ছিলাম বলে যদিও আমরা লোকাল টাইমে রাত নয়টা দেখছি কিন্তু বাংলাদেশ টাইমে আসলে ওটা ছিলো আরো বেশি। ফলে আমাদের রোজার সময়তা এতো বেশি বড় হয়ে গিয়েছিলো আর এতো ধকল যাচ্ছিলো যে, পেটের ক্ষুধায় মনে হচ্ছিলো আর পারছিলাম না। তারপরেও কাজের কারনে বিশেষ করে কানেক্টিং ফ্লাইটের কারনে আমাদের খাওয়া হয় নাই।

আমরা কানেক্টিং ফ্লাইটে উঠে গেলাম ট্রাবজনে যাবো। ছোট একটা তুর্কী বিমান। বেশ লোকজন আছে। একটা জিনিষ খুব খেয়াল করলাম যে, তুরষ্ক একটা মুসলমান দেশ, তার মধ্যে এখন রোজার মাস কিন্তু মেয়েদের কাপড় চোপরের স্টাইল একেবারেই ওয়েষ্টার্ন দেশের মতো। কিছুইতেই বুঝা যাচ্ছিলো না যে, এরা মুসল্মান কালচার ধারন করে।

কিছুক্ষন পর, আমাদের কানেক্টিং ফ্লাইট উড়ে চল্লো ট্রাবজনের উদ্দেশ্যে।

২৬/০৩/২০০২- মা আর নাই

জন্মঃ তারিখ জানা নাই

মৃত্যুঃ ১৮ মার্চ ২০০২, ১০ মোহররম, সোমবার

স্থান_ নতুন বাক্তার চর

সেনানীবাসের ৪৯/৪ ষ্টাফ রোডে আমার বাসা। আর্মি হেডকোয়ার্টারে মিলিটারী ট্রেনিং ডাইরেক্টরেটে আমি জেনারেল ষ্টাফ অফিসার-২ হিসাবে কর্মরত আছি। প্রচুর কাজ থাকলেও এখানে একটা ভালো বিষয় হচ্ছে, অফিস আওয়ারের পর খুব বেশী একটা অফ টাইমে অফিসে যেতে হয় না। সাধারনত বিকালের দিকে বেশ ফ্রি থাকি। এই ফাকে আমি নিবাইস ইন্সটিটিউটে এমবিএ এর সন্ধ্যাকালীন কোর্ষে ভর্তি হয়েছি। আমার সাথে আমার কোর্ষমেট মেজর সালাম, মেজর জাবের, মেজর মাসুদ ইকবালও ভর্তি হয়েছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রোফেসর আব্দুল মান্নান নিবাইশ এর মালিক এবং তিনি কয়েকদিন আগেই সবেমাত্র নিবাইশ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি হিসাবে চাউ করেছেন। তিনি আমাদের পেয়ে বেশ উৎফুল্ল মনে হয় কারন আমরা ইতিমধ্যে তার নিবাইস ইন্সটিটিউটে একটা সারা জাগাতে পেরেছি। সপ্তাহে দুইদিন ক্লাস হয়। শুক্রবার আর শনিবার। তাই শুক্রবারটা আমার খুব ব্যস্ত সময় যায় দুটু কারনে, এক, নিবাইশে ক্লাস আর ২য় টা হচ্ছে- আমি প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার মাকে দেখার জন্য গ্রামে যাই।

মাকে ঢাকায় রাখতে চাইলেও মা ঢাকায় থাকতে সাচ্ছন্ধবোধ করেন না। যতোদিন আমার কাছে থাকেন, ভালোই লাগে, কিন্তু যখনই গ্রামে চলে যান, আমি প্রতি সপ্তাহে মাকে দেখার জন্য গ্রামে যাই। নিজের গাড়ি নাই তাই, সকাল বেলা একটা সিএনজি সারাদিনের জন্য ভাড়া করি, সরাসরি গ্রামে যাই, মায়ের সাথে এক বেলা সময় কাটাই, তারপর দুপুরে মায়ের সাথে খাওয়া দাওয়া করে বিকালে ওই একই সিএনজি নিয়ে সরাসরি নিবাইসে ঢোকি ক্লাসের জন্য। রাত ১০টা অবধি ক্লাস চলে। মায়ের সাথে আমার সময়টা কাটাতে বেশ লাগে। গ্রামে যখন হাজির হই, মা জানে আজ আমি যাবো, কিভাবে জানে জানি না। মাকে কখনো আগাম জানিয়ে আমি গ্রামে যাই না। যখনই সময় পাই, চলে যাই। মা আমার আসার কথা ভেবে, দুপুরে বেশ ভালো তরকারী আগে থেকেই রান্না করে রাখেন। আমি আর মা একসাথে খেতে বসি, কিন্তু মা খান না, আমার খাওয়া দেখেন আর সারাক্ষন আমার শরীরে হাত বুলাতে থাকেন। মাঝে মাঝে মাকে আমি প্রশ্ন করি, আচ্ছা মা, আমি কি এখন ছোট যে, তুমি এভাবে সারাক্ষন আমার পিঠে, মাথায়, মুখে হাত বুলিয়ে আদর করো যেনো আমি একটা ছোট বাচ্চা। মা কিছুই বলেন না, হাত বুলাতেই থাকেন, আমার ভালোই লাগে।

এবার গ্রামে গিয়েছিলাম মাকে দেখতে গত ৮ মার্চ ২০০২ তারিখে। বেলা তখন প্রায় ১১ টা বাজে। মাকে দেখলেই আমার প্রান জুড়িয়ে যায়, মন ভালো হয়ে যায়। অনেক গল্প হয় মার সাথে। গ্রামে ঘটে যাওয়া গত সাতদিনের সব খবর আমি মার কাছ থেকে পাই। গল্প করতে করতে দুপুর হয়ে যায়। কখনো কখনো দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর, আমি আর মা এক সাথে গল্প করার জন্য বাইরের বাতাসে আমাদের পুর্ব পাশে রান্না ঘরের বাইরে মাদুর নিয়ে বসি। এবারও তাই হলো। দুপুরটা বেশ সুন্দর কিন্তু রোদের তেজ এতো বেশি যে, ভাবলাম, একটু বেলা পড়ে গেলেই রওয়ানা হবো, ক্লাশ আছে। এই সময়টা মার সাথে গল্প করি। অন্যান্য বারের মতো মা আজো আমাকে তার মুখ থেকে চিবানো পান দিয়ে বল্লো, আগামী সপ্তাহে আবার কবে আসবা? বললাম, আমার তো মা, শুক্রবার ছাড়া আসা হয় না, সারা সপ্তাহ কাজ থাকে। কিন্তু এই আগামী সপ্তাহে ১৫ মার্চ শুক্রবারে মনে হয় আসতে পারবো না। কারন বগুড়া সেনানীবাসে একটা কনফিডেনশিয়াল চিঠি নিয়ে আমাকেই যেতে হবে। কিন্তু ১৫ তারিখের পর ১৮ মার্চ তারিখে আশুরার জন্য সোমবার ছুটি আছে, সেদিন ইনশাল্লাহ চলে আসবো।

মা, আমার খালী পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে একটু নীচু স্বরে কি যেনো বললেন, ভালো বুঝা গেলো না কিন্তু এটা যেনো স্পষ্ট শুনতে পেলাম যে, মা বললেন, ওইদিন আমাকে পাও কিনা, কে জানে?

আমি মায়ের দিকে তাকালাম। বললাম, মা তুমি কি বল্লা?

মা বল্লো, না তেমন কিছু না, তবে গত কয়েকদিন যাবত আমি তোমার বাবাকে বারবার স্বপ্ন দেখছি। তোর বাবা আমাকে বারবার তার সাথে দেখা করতে বলছে। আমিও জানি কেমন করে বলে দিলাম, আমি আসতেছি।

খুব অবাক হলাম মায়ের এরকম বিশ্বাস আর কনফিডেন্স দেখে। বললাম, আপনি কি এগুলি বিশ্বাস করেন? হতে পারে কোনো কারনে আপনার মন খারাপ ছিলো, একাকিত্ত থেকে মানুষ অনেক সময় তার আপনজনকে খুব মিস করা থেকে হয়তো এ ধরনের স্বপ্নের উদ্ভব হয়, তাই হয়ত বাবাকে মনে পড়ছে তোমার। এগুলি বিশ্বাস করা ঠিক না মা। আপনার কিছুই হবে না ইনশাল্লাহ।

মা কিছুই বললেন না বললেন, আমি যখন তোর বাবাকে খুব একটা সপ্নে দেখিনা, কিন্তু যখন সত্যি এমন কিছু আমার জানা দরকার অথচ আমি জানি না, সে রকম কিছু সময়ে আমি তোর বাবাকে সপ্নে দেখি। এটা আমার জীবনে অনেকবার ঘটেছে। সেটা আসলে স্বপ্ন নয়, সেটা আসলেই বাস্তব, হয়তো ব্যাপারটা সপ্নে ঘটে। কিন্তু ব্যাপারটা বাস্তব। মন খটকা লাগলো। মা সাধারনত এ রকমের কথা প্রায়শই বলেন না। কিন্তু যখন বলেন, আমি দেখেছি ব্যাপারটা সত্য হয়। যেমন, আমি যখন খুব গোপনে সবার অগোচরে আর্মিতে পরীক্ষা দিয়ে প্রায় চলে আসবো, ঠিক সে সময় মা কোথা থেকে প্রশ্ন করে বললেন, তুমি কি আমাদেরকে ছেড়ে এমন কোথাও যাচ্ছো যা আমরা কেউ জানি না? আমি অবাক হয়েছিলাম। মা জানলো কিভাবে? আমি মাকে উলটা প্রশ্ন করেছিলাম, কি বলো মা? মা তখন ঠিক আজকের মতো এ রকম কনফিডেন্স নিয়েই বলেছিলো, তোর বাবা সপ্নে আমাকে এ রকমই একটা মেসেজ দিলো যে, "তোর ছোট ছেলে তো কোথাও চলে যাচ্ছে, ওকে ঠেকাও"। যাই হোক, আমি চলে এলাম ঢাকায়। কাউকে কিছুই বলি নাই ব্যাপারটা নিয়ে। আমি আসলে ব্যাপারটা সিরিয়াসলী নেইও নাই।

মাকে নিয়ে আমি সবসময় টেনসনেই থাকি। মা ঝড়কে ভয় পায়, মা রাতে একাকী থাকতে ভয় পায়, মা তার কষ্টের কথা কাউকে বলতে ভয় পায়। মার সাথে আমার টানটা একদম নাড়ির সাথে। দেশে বর্তমানে মোবাইল সবেমাত্র চালূ হয়েছে। গ্রামীন একটা মোবাইল অনেক দাম দিয়ে হলেও কিনেছি। এর প্রধান লক্ষ্য ছিলো যে, মায়ের সাথে আমার যোগাযোগ রাখা। আমাদের পাশের গ্রামে একজন মহিলা আছেন যার নাম্বারে কল দিলে তিনি তার মোবাইলটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে যায়, এবং আমি তখন মায়ের সাথে কথা বলতে পারি। যাই হোক, আমি আমার আগের পরিকল্পনা মাফিক, আমি আসলেই এবার শুক্রবারে ব্যস্ততার কারনে গ্রামে যেতে পারি নাই। তাই আগামী সোমবার আশুরার দিনে মাকে দেখতে যাবো এটাই ছিলো আমার পরিকল্পনা। কিন্তু সে দিনটা আর আমার জীবনেই আসে নাই যেখানে মাকে সত্যি সত্যিই জীবিত পাবো।

১৮ মার্চ ২০০২। আশুরা এবং সরকারী ছুটির দিন। সকাল ৯ টার দিকে গ্রামে যাবো মাকে দেখতে এটা ভেবেই গতকাল রাতে মোটামুটি প্রিপারেশন নিয়েছিলাম। বেলা যখন প্রায় সকাল ৮ টা। আমার পাশের বাসায় মেজর জামাল, এএসসি থাকেন। তিনি নক করলেন আমার বাসার দরজায়। ঘুমিয়ে ছিলাম, ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতে স্যার আমাকে জানালেন যে, আর্মি এক্সচেঞ্জ থেকে আমাকে কি একটা জরুরী মেসেজ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু আমার ফোনের ক্রেডেলটা সম্ভবত ডিস্প্লেস অবস্থায় আছে, তাই এক্সচেঞ্জ ঢোকতে পারছে না। বললাম, কি ব্যাপারে জরুরি মেসেজ স্যার? ওরা কি কিছু বলেছে আপমাকে? তিনি কিছুই বলতে পারলেন না। মনে খটকা লাগলো।

তাড়াতাড়ি ফোন করলাম আর্মি এক্সচেঞ্জে। আর্মি এক্সচেঞ্জ থেকে আমাকে জানালো যে, বাক্তার চর থেকে মোল্লা নামের এক ভদ্রলোক কি জানি একটা জরুরী মেসেজ দেওয়ার জন্য আমাকে আমার মোবাইল এবং ল্যান্ড লাইন ফোনে চেষ্টা করেছে কিন্তু পাচ্ছে না। আর্মির এক্সচেঞ্জে ফোন অপারেটরকে মোল্লা সাহেব একতা মোবাইল নাম্বার ও দিয়েছে। আমি আরো ঘাবড়ে গেলাম, মার কিছু হয় নাই তো? মোল্লা হচ্ছেন আমাদের ঘরের পাশে প্রতিবেশী। তাকে আমরা কাকা বলে সম্বোধন করি। আমাদের ঘরের সাথে উনার ঘর।

আমি আমার মোবাইল চেক করে দেখি যে, মোবাইল চার্জে দেওয়া ছিলো ঠিকই কিন্তু প্লাগটা অন করতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই সারারাত চার্জ না হয়ে বরং চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষন চার্জ দিয়ে আমি গ্রামে মোল্লা কাকাকে ফোন করলাম। ফোনে যেটা উনি বললেন, তাতে আমার আরো সন্দেহ তৈরী হলো। মোল্লা কাকা বললেন যে, আমার মা খুবই অসুস্থ। তার অবস্থা ভালো না। আমি মোল্লা কাকাকে বললাম, কাকা, ঠিক কথাটা বলতে হবে। মা কি অসুস্থ্য নাকি মা আর নাই? আমি শক্ত মানুষ, আমাকে সত্যটা বলতে হবে কারন যদি মা অসুস্থ্য হন, তাহলে আমার গ্রামে যাওয়ার প্রিপারেশন এক রকম, আর যদি মা আর জীবিত না থাকেন, তাহলে আমার প্রিপারেশন অন্য রকম। আমাকে সত্যিটা বলেন।

এবার মোল্লা কাকা বললেন যে, দাদী মারা গেছেন। তুমি আসো।

আমার সারা শরীর কেপে উঠলো। আমার সেদিনের মায়ের কথাগুলি একদম স্পষ্ট মনে পড়লো যখন মা আমাকে বলেছিলেন যে, মাকে আমি আর জীবিত দেখতে পাই কিনা সন্দেহ আছে। কারন, বাবা নাকি মাকে যেতে বলেছেন। তখন কথাটা একেবারেই আমলে নেই নাই, কিন্তু কথাটা কতটা সত্য ছিলো সেটা আজ যেনো আমার কাছে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে উঠলো। আমি দ্রুত মিটুলকে বললাম, মা আর নাই। আমরা দুজনেই হত বিহব্বল হয়ে গেলাম এই আচমকা শোকে। আমি মিটুলকে তাড়াতাড়ি রেডি হতে বললাম। গ্রামে যেতে হবে।

নিজের কোনো গাড়ি নাই। সেদিন আবার সোমবার। সেনাবাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী সোমবারে গাড়ির লে অফ অর্থাৎ জরুরী এডমিন কাজ ব্যতিত কিংবা ট্রেনিং সঙ্ক্রান্ত কোনো জরুরী বিষয় না হলে আর্মির কোনো গাড়িই সেনানীবাস থেকে বের করার বিধান নাই। মায়ের এ রকম অসময়ের মৃত্যুর কথায় আমার নিজের মাথাও ঠিকমতো কাজ করছিলো না। কোথা থেকে একটা গাড়ি পাওয়া যায় সেটা ভাবতে লাগলাম। হটাত মনে হলো যে, পাশেই মেজর খিজির স্যার (ইএমই) ওয়ার্কশপের ওসি। আমরা এক সাথে হাইতিতে মিশন করেছি। উনাকে বলে দেখি কোনো সাহাজ্য পাই কিনা। যেই আমি মেজর খিজির স্যারকে ব্যাপারটা খুলে বললাম, তিনি ওয়ার্কশপ থেকে একটা ভালো গাড়ি আমাকে দিয়ে বললেন, আগে যাও মাকে দেখার জন্য, পরে দেখা যাবে আইনে কি বলে। গাড়ির ব্যবস্থা হয়ে গেলে আমি দ্রুত গোসলে ঢোকি।

কদিন আগে আমি মায়ের একটা ডে লং ভিডিও করেছিলাম। সেখানে আমি মাকে অনেক প্রশ্ন করে করে মায়ের মনের ভিতরের কথা জানার চেষ্টা করেছিলাম। আমি মাকে তার ছোট বেলার কথা, মার সাথে বাবার প্রেমের কথা, মার বিয়ের পর তার শসুর বাড়ির কথা, বাবার মৃত্যুর পর মার মনের কথা, তারপর আমাদের কথা, তার কোন ছেলেমেয়ে তার কাছে কোন পর্যায়ে আছে তার অনেক খবর আমি জানার চেষ্টা করেছিলাম। সেদিন ভিডিও করার সময় আমি মাকে এই প্রশ্নটাও করেছিলাম, যে, মার শেষ ইচ্ছা কি। তার মৃত্যুর পর তিনি কোথায় সমাহিত হতে চান, ইত্যাদি। মায়ের এই তথ্যগুলি আমি এম্নিতেই জানতে চেয়েছিলাম। ভিডিও করার সময় মা কখনো হাসতে হাসতে বিগলিত হয়ে গেছেন আবার কখনো কখনো কষ্টের কথাগুলি বলার সময় তার দুই চোখ দিয়ে অবিরত জল পড়েছিলো। আমি মাকে না হাসায় না কাদায় কোনো বাধা দিয়েছিলাম। বলুক মা।

আজ মাকে কোথায় সমাহিত করতে হবে এই তথ্যটা আমার মাথায় যেনো আসছেই না। এদিকে গ্রাম থেকে বারবার ফোন আসছিলো মাকে কোথায় সমাহিত করা হবে সেটা জানার জন্য। কারন কবর করতে হবে। জায়গাটা না বললে কাজে কেউ হাত দিতে পারছে না। আমি ওয়াসরুমে মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতে ঢালতে বারবার মনে করার চেষ্টা করছিলাম মায়ের শেষ সমাহিত হবার ইচ্ছেটার কথা। কিন্তু আমার মাথা কিছুতেই আমাকে সাহাজ্য করছিলো না। গোসল শেষ করে আমি ফজরের কাজা নামাজটা পড়তে পড়তে হটাত মনে হলো, হ্যা, মনে পরেছে এবার। আল্লাহই আমাকে মায়ের শেষ ইচ্ছেটা স্মরণে আনতে সাহাজ্য করেছেন। মা বলেছিলেন যে, তিনি তার একমাত্র বোন আমার খালার কবরের পাশে যেনো সমাহিত করি। আমার খালা ছিলো একাধারে আমার মায়ের মার মতো, দিদির মতো, তার একটা বন্ধুর মতো। আমি নামাজ পড়েই মোল্লা কাকাকে ফোন করে বললাম, আমি দ্রুতই গ্রামে আসতেছি, আর মায়ের কবরট যেনো হয় আমার খালার কবরের পাশে। এটা মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিলো।

আমি রওয়ানা হয়ে গেলাম গ্রামের উদ্দেশ্যে। অন্য সবসময় যাই, মাকে জীবিত দেখার জন্য, আর আজ যাচ্ছি মাকে সমাহিত করার জন্য। মনটা বড় কষ্টে আছে। সারাক্ষন মার জন্য তাসবিহ পড়ছি, আর মার জন্য দোয়া করছি। একসময় ভাবলাম, আমি কি ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করবো নাকি মাকে সমাহিত করবো? ভাইয়াকে ফোন করলাম। পেলাম না। তার ফোন এনসারিং মেশিনে দেওয়া। ভাইয়া আমেরিকায় থাকেন। ভাবলাম, ভাইয়া আমাকে ফোনব্যাক করবেন নিশ্চয়ই। আমি যখন ভাইয়াকে ফোন করেছি, তখন আমেরিকায় রাত বেশী না, হয়তো ১০ টা বাজে। এই সময় ভাইয়ার কল ধরার কথা। ভাইয়া কল না ধরার কারনে আমি আমার জেঠস যিনি আমেরিকায় থাকেন, শেলি আপা, তাকে ফোন করে বললাম যে, আমার মায়ের মৃত্যুর খবরটা যে করেই হোক ভাইয়াকে জানান।

আমি গ্রামে গিয়ে পৌঁছলাম যখন তখন বেলা প্রায় ১১ টা সকাল। অনেক লোকের সমাগম। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ি থেকেই লোকজন এসেছে। মা শুয়ে আছেন একটা নামাজী পাটির মধ্যে কাত হয়ে। জিজ্ঞেস করলাম, কিভাবে মা মারা গেলেন। নুরুন্নাহার আমাকে যেটা বলল তার সার্মর্ম এ রকম যেঃ

মা ফজর নামাজের সময় নামাজে ছিলেন। নামাজের মধ্যেই মা মারা গেছেন। আর উঠেন নাই। নুরুন্নাহার মনে করেছিলো, যে, মা মনে হয় নামাজ পরার পর এম্নিতেই নামাজের পাটিতে শুয়ে আছেন। কিন্তু সকাল ৭টা অবধি যখন মা আর পাটি থেকে উঠছেন না, তখন নুরুন্নাহার মাকে জাগাতে গিয়ে দেখে যে, মার কোনো শ্বাস চলছে না। এরপরেই নুরুন্নাহার পাশের বাসার মোল্লা কাকাকে ব্যাপারটা জানায়।

আমি মায়ের শান্ত বডিটাকে কয়েকবার নাড়া দিয়ে মা বলে ডাকলাম, কানের কাছে গিয়েও ডাকলাম। মা কোনো উত্তর করলেন না। আমি মার হাতের পালস চেক করলাম, তখনো মনে হচ্ছে শরীরটা গরম, ঠান্ডা হয়ে যায় নাই। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো মা নাই। সন্দেহ হলো একবার যে, মা কি আসলেই নাই নাকি ক্লিনিক্যালী কোনো এক অবস্থায় আছেন? আমাদের বাড়িতে পাশেই একজন ডাক্তার ছিলেন। তাকে বললাম, ভালো করে একটু দেখবেন মার অবস্থাটা কি? ডাক্তার সাহেব আমাকে টেনে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে বললেন, আখতার ভাই, খালাম্মা আর বেচে নেই। আমি অনেকভাবেই চেক করে দেখেছি। আপনি ঠান্ডা হোন। এখন খালাম্মাকে সমাহিত করার যাবতীয় ব্যবস্থা নিন। জানি আপনার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এটাই বাস্তবতা যে, খালাম্মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।

আমার অন্যান্য বোনেরা, মায়ের নায়-নাতকোরগন অনেকেই বিলাপ করে কাদছেন। কিন্তু আমি কাদতে পারছি না। কেনো যেনো আমার কান্নাই পাচ্ছে না। আমি খুব সাভাবিকভাবেই মাকে সমাহিত করার জন্য গোসলের ব্যবস্থা করতে বললাম, কবরের জন্য লোক লাগিয়ে দিলাম। আমার বোন ফাতেমা আর আরেকজন মিলে মাকে গোসল করিয়ে দিল। গোসলের সময়ও আমি কয়েকবার তদন্ত করেছি মা কোন প্রকার নড়াচড়া করেন কিনা। আমার বারবার মনে হচ্ছিলো মা মারা যান নাই। এ রকম সুন্দর একটা নিষ্পাপ মুখ, শান্ত আর সাভাবিক চেহারা যাকে দেখলে মনে হবে তিনি ঘুমিয়ে আছেন। মার চেহাড়াটা আগের থেকে অনেক উজ্জ্বল। মার এই রকম সুন্দর চেহারা আমি কখনই দেখি নাই। গোসলের পর মাকে কাপড় পরানো হবে, আমি আবার মাকে জোরেই ডাক দিলাম। কিন্তু মা আমার ডাকে কোনো সারা দিলেন না। মাকে কাপড় পরানো হলো। সাদা দাফনের কাপড়। মাকে জানাজা পরানো হবে, অনেক লোক অপেক্ষায় আছেন। মাকে জানাজার স্থানে আনা হলো। আমি আবার ওই অবস্থাতেই মাকে ডাকলাম। যদি আবার মা নড়েচড়ে উঠে! এ সময় মোল্লা কাকা আমাকে ধরে বললেন, কাকু, তুমি অস্থির হইও না। দাদি আসলেই মারা গেছেন। তুমি খালি দোয়া করো। তোমাকে দাদি অনেক ভালবাসতো আর ভরষা করতো। তুমি এমন করলে উনি তো আরো কষ্ট পাবেন!!

জানাজা পরানো হয়ে গেল। আমি তখনো ভাইয়ার একটা ফোনকলের জন্য অপেক্ষা করছি, যদি ভাইয়া আমাকে ফোন করেন। ভাইয়াকে আবারো আমার মোবাইল থেকে ফোন করলাম, কিন্তু এবার ভাইয়ার ফোন আর এনসারিং মেশিনে ছিলো না। রিং হচ্ছিলো। কিন্তু যে কোনো কারনেই হোক, ভাইয়া ফোনটা ধরলেন না। আমি আবার শেলী আপাকে ফোন করলাম যদি এরই মধ্যে শেলী আপার সাথে ভাইয়ার কোনো কথা হয়ে থাকে আর ভাইয়া মার মৃত্যুর খবরটা জেনে থাকে সেটা জানার জন্য। শেলী আপা ফোন ধরলেন। আর আমাকে জানালেন যে, ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে। মার মৃত্যুর সংবাদ ভাইয়াকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ভাইয়া নাকি বলেছেন, উনি আসতে পারবেন না। খুব বিরক্ত হয়েছিলাম এমন একটা খবরে। ভাইয়ার উপর আমার শ্রদ্ধাবোধটা নিমিষেই শুন্যের কোঠায় চলে এলো। ভাবলাম, আজ যদি উনি শুনতেন যে, উনার শাসুড়ি মারা গেছেন, হয়তো ঠিকই চলে আসতেন।

কাউকে কিছু বললাম না। জানাজার পর মাকে কবরে সমাহিত করা হবে। আমি সবার উদ্দেশ্যে একটা এনাউন্সমেন্ট করলাম যে, আমার মা আজ চলে যাচ্ছেন, কিন্তু আমি রয়ে গেছি মার ছেলে। যদি কখনো আমার মা কাউকে জানা বা অজানা মনে কষ্ট দিয়ে থাকেন, তাহলে যেনো কেউ তার দাবী না রাখেন। মাকে মাফ করে দিবেন। আর যদি কেউ মার কাছ থেকে কোনো পাওনা থাকে, নির্ধিধায় আমাকে জানাবেন, আমি কোনো প্রকার ভেরিফাই করবো না, আমি মায়ের সব দেনা শোধ করে দেবো। আর যদি মা কারো কাছ থেকে কিছু পাবেন বলে জানেন, আজ আমি তার ছেলে হিসাবে সবকিছু মাফ করে দিলাম। শুধু আমার মার জন্য আপ্নারা খাস মনে দোয়া করবেন।

আমরা সবাই মাকে কাধে করে কবরের কাছে নিয়ে গেলাম। আমার এখনো মন মানছে না যে, মা নাই। মাকে যে আমি সত্যি সত্যিই গোরস্থানে সমাহিত করতে যাচ্ছি এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না। কবরে শোয়ানোর ঠিক আগমুহুর্তেও আমি মাকে জোরে আরেকবার ডাক দিলাম। কিন্তু মা তো আমার কথা নিশ্চয়ই শুনছেন কিন্তু কোনো সাড়া দিলেন না। খালার কবরের পাশেই মাকে সমাহিত করা হল।

বেলা তখন প্রায় ৩টা যখন সমস্ত আয়োজন শেষ হয়। মাকে কবর দেয়া হয়ে গেছে। আমি বাড়িতে সব বোনদেরকে নিয়া একসাথে বসলাম। সবার মন খারাপ। কেউ কেউ তখনো কাদছে। আমার চোখে এক ফোটা পানিও নাই। যেনো কিছুই হয় নাই। বিকাল হয়ে গেছে। আর্মির গাড়ি নিয়ে এসেছি, আমাকে আবার সন্ধ্যার আগেই ঢাকায় ফিরে যেতে হবে। গাড়িটা পার্ক করা আছে প্রায় ১ মাইল দূরে। আমাদের বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি আসে না তাই। আমার যাওয়ার সময় হয়ে এলো। আমি মিটুলকে বললাম, চলো, ঢাকায় যেতে হবে। আমি আগে আগে হাটছি, মিটুলও বাড়ি থেকে বের হচ্ছে। আমি হাটতে হাটতে প্রায় ৩০০ গজ যাওয়ার পর ভিতর থেকে এতো কষ্ট আর কান্না আসছিলো যে, আমি আর একটি পাও আগাইতে পারছিলাম না।

প্রতিবার যখন আমি গ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই, আমার মা বাড়ির পিছনে বসে থাকেন যতোক্ষন আমাকে দেখা যায়। আমি মাঝে মাঝে পিছন ফিরে তাকাই আর দেখি, মা বসে আছেন, হাত নাড়েন। আমিও হাত নাড়ি। মাকে ফেলে যেতে আমার সবসময় মনে কষ্ট হতো। কিন্তু আজকে আমার মনে বারবার এই ভাবনাটাই আসছে, আজ মা বাড়ির পিছনে বসে নাই, আমি পিছন ফিরে তাকাই, মা নাই। আমার গলা ফাটিয়ে কাদতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু আমার গলা দিয়ে একটু আওয়াজও বের হলো না। আমার চোখ জলে এতোটাই ভরে উঠছিলো যে, আমি এক হাত দূরের রাস্তাটাও দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমি বসে গেলাম বিস্তর খালী জমিনে। আমার শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছিলো। মা আমাকে আজ আর দেখছে না। আমাকে খালী জমিনের উপর বসে পড়তে দেখে আমার বাড়ি থেকে কয়েকজন দৌড়ে এলো। মিটুলও এলো। আমার চোখের পানিতে আমি কাউকেই দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমার শরিরে কোন শক্তি ছিলো না উঠে বসবার। বুঝলাম, এতোক্ষন যে কষ্টটা আমার বুকের ভিতর শক্ত হয়ে চেপেছিলো, এখন সবগুলি কষ্ট আমাকে চারিদিক থেকে এমন করে ঝাপটে ধরেছে যে, আমার চোখ, আমার কন্ঠ, আমার পা, আমার হাত, আমার মাথা, আমার কান কোনোটাই আর সাভাবিক অবস্থায় নাই। আমি কতোক্ষন চুপ করে বসেছিলাম, আমার মনে নাই।

শক্তি নাই ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কিন্তু আমাকে তো ফিরতেই হবে। মা নাই, কোথায় ফিরে যাবো? এখন এই শুন্যঘরে গিয়ে তো মাকে পাবো না, মায়ের চিবানো পান খাওয়ার আর আমার হলো না। মা বাবার সাথে দেখা করার জন্য চলে গেছেন। আজ হয়তো বাবা অনেক খুসী তার সেই প্রায় ৩০ বছর আগে একা ফেলে যাওয়া প্রেয়সীকে কাছে পেয়ে।

ঢাকায় ফিরতে ফিরতে আমার প্রায় রাত ৮টা বেজে গেলো। মেজর খিজির আমাকে ফোন করে শুধু বললেন যে, খালাম্মার জন্য দোয়া করো। তিনি জান্নাতবাসি হয়েছেন। তিনি আল্লাহ্‌র পাটিতে বসেই জান্নাতে চলে গেছেন, এর থেকে পুন্যের কি হতে পারে? খিজির স্যারকে আমি কখনো তার এই দয়ার ঋণ শোধ করতে পারবো না।

ঢাকায় এসে আমি আমার কম্পিউটারটা খুললাম। মার সেদিনকার ভিডিওটা অন করলাম, উফ, এই তো মা ঠিক আমার সামনেই। তিনি কখনো হাসছেন, কখনো কাদছেন, কখনো আমার দিকে তাকিয়েই আছেন। অনেক রাত অবধি আমি আমার মার ভিডিও টা কয়েকবার আগে পিছে টেনে আবার রিওয়াইন্ড করে করে দেখলাম। অনেক রাত, চারিদিকে শুনশান নীরবতা। কেবল আমার মনের ভিতরেই অত্যান্ত প্রবল আর্তনাদ আমার বন্ধ কবাটির ভিতরে ঘুরপাক খাইতে লাগলো। আমি স্তব্দ তপতীর মতো আমার চেয়ারে ঠেস দিয়া শুধু সেলোলয়েড ফ্রেমে বাধা জীবন্ত মাকে দেখতে লাগলাম বটে কিন্তু মা আমার এখন ঈশ্বরের একদম কাছে চলে গেছে। এখন তার আর ঝড়কে ভয় পাবার কোনো কারন নাই, একা থাকার ভয় নাই, পৃথিবীর কোনো মায়া, কোনো কষ্ট, বা কোনো সুখের প্রভাব নাই। 

সাতদিন পর আমার বড় ভাই আমাকে একটা মেইল করলেনঃ মেইলটা আমি হুবহু আজ এখানেই তুলে দিলাম।

To: Mohammad Akhtar Hossain <makhtar@dotbd.com>
From: "Mohamed Habibullah" <M.HABIBULLAH@neu.edu>
Subject:
MIME-Version: 1.0
Date: Mon, 25 Mar 2002 13:10:31 -0500
Message-ID: <OFF893F0BA.F371BA0B-ON85256B87.0063D6FA@neu.edu>
X-MIMETrack: Serialize by Router on HUB02/Server/NEU(Release 5.07a |May 14, 2001) at 03/25/2002
01:10:51 PM
Content-type: text/plain; charset=us-ascii
Status:
Monday USA time 1:00 P.M.

Dear Akhtar

I just recieved your e-mail. Also.Today, I received a call from Shelly Apa and came to know that Ma died (Inna lillahe wa inna ilaihe rajeoon). I will miss Ma from now on. May Allah keep her in peace in the grave. I know I could not come to see her off. PLease let me know where you buried her. Let me also know everything anout everybody including Badir Bhai, Laila, Fatema and Meherunnesa. Take care.

কি প্রয়োজন এই সব সন্তানের জন্য যাদের হাতে তার জন্মদাত্রী মায়ের মৃত্যুতেও শেষকৃত্য করার জন্য হাতে সময় থাকে না? সম্পর্কের থেকে বেশী যখন নিজের সম্পদের দাম বেড়ে যায়, নিজের জন্মদাত্রির শেষকৃত্য করার জন্য যখন কোনো সন্তানের সময় থাকে না, আল্লাহ বা ঈশ্বর কিংবা ভগবান এইসব কিছুর একটা রেকর্ড রাখেন যাতে কোনো এক সময় যখন তাদের শেষকৃত্য হবে, হয়তো তাদের বেলাতেও এটাই রিপিট হয়। তবে আমি দোয়া করি যেনো, আমার কোন বংশধর অথবা আত্তীয়ের বেলায় এ রকমের শুন্যতা না আসে।

প্রিয় আখতার,

এইমাত্র আমি তোর চিঠি পেলাম। আজকে আমি শেলী আপারও টেলিফোন কল পেয়েছি এবং জানতে পারলাম যে, মা মারা গেছেন (ইন্না নিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজেউন)। আমি মাকে এখন থেকে অনেক মিস করবো। দোয়া করি আল্লাহ মাকে জান্নাতবাসী করুন। আমি জানি, মার মৃত্যুতে আমি মাকে দেখতে আসতে পারবো না। আমাকে জানাস মাকে কোথায় করব দিলি। বদির ভাই, লায়লা, মেহের এবং ফাতেমাদের সম্পর্কেও আমাকে বিস্তারীত জানাইস। নিজের যত্ন নিস।

১২/১২/২০০০- প্রিয় মেজর নিজান স্যার,

প্রিয় নিজান স্যার,

আমার অন্তরস্থলের গভীর তলদেশ থেকে আপনার প্রতি আমার পরম শ্রদ্ধ্যা। আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আমার বর্তমান পোষ্টিং আদেশটি সাইন করার জন্য। আজকের এই পোষ্টিং আদেশটির চেয়ে আর কোনো ভালো খবর আমার আর নাই। এই পষ্টিং তা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য খুবই দরকার এবং প্রয়োজন ছিলো। এটা আমাকে এবং আমার পরিবারের জন্য অবশ্যই একতা অতীব সুখবর ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আবারো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং আমার আন্তরীক শুভেচ্ছা জানাই। ইনশাল্লাহ দেখা হবে ঢাকায় আর্মি হেড কোয়ার্টারে।

আল্লাহ আমাদের সবার হহায় হোন।

ইতি

মেজর আখতার

ছাত্র অফিসার

ওজি এস সি-এ ডি-২

আঋলারী সেন্টার এন্ড স্কুল, চট্টগ্রাম

12/12/2000-Dear Major Nizan Sir,

My heartiest respect to you. I must and must thank you from my side and on behalf of my family too for the posting order you signed. Nothing was better news than that of my posting order today. This is really going to help my family, I told you earlier sir. Again I express my sincere gratefulness to you. I will be meeting you soon at AHQ, Dhaka insshaallah.

May Allah help us all.

Maj Akhtar Hossain

OGSC (AD) –2

Arty Center and School

Halishahar

১২/১২/২০০০- প্রিয় কর্নেলস

আসসালামুয়ালাইকুম। আশা করি আপ্নারা সবাই ভালো আছেন, আর সেই সাথে রইলো আমার আসন্ন ঈদের শুভেচ্ছা। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সবাইকে আমার প্রান ঢালাশ্রদ্ধা এবং শুভেচ্ছা রইলো। আমি আমার গানারী কোর্ষ-এডি করার সময় আপনাদের উপস্থিতি আমি এখনো তাজা মনে অনুভব করি এবং সত্যি বলতে কি, আমি বগুড়ায় জেনারেল ষ্টাফ অফিসার-২ (অপারেশন) এর দায়িত্তে থাকা কালীন আপনাদের সাথে কাতানো সময় তা এখন খুব মিস করি। সেটা ছিলো একতা অদ্ভুদ চমৎকার সময় আমার জীবনে।

স্যার, আপ্নারা শুনে হয়তো খুব খুশী হবেন যে, আমি আমার অফিসার্স গানারী ষ্টাফ কোর্ষ-২ (এয়ার ডিফেন্স) খুব সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেছি। এবং আগামীকাল আমি ঈদের ছুটি শেষে পুনরায় আমার নতুন কর্মস্থল আর্মি হেড কোয়ার্টারস এর মিলিটারী ট্রেনিং ডিপার্ট মেন্টে জেনারেল ষ্টাফ অফিসার-২ (মিলিটারী ট্রেনিং) এ যোগদান করতে যাচ্ছি।  আমি আপনাদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ যে, প্রাথমিক ভাবে এই অফিসার গানারী কোর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষায় আপ্নারা আমাকে এক মাসের পূর্ন ছুটি দিয়ে যে সাহাজ্য করেছে, তা আসলেই ভুলার মতো নয়। এবং আপনাদের এই সাহাজ্য না পেলে আমার জন্য এতা সত্যি বাস্তবায়ন করা সমভব হতো না। আপ্নারা সবাই জানেন যে, একজন জেনারেল ষ্টাফ অফিসার -২ (অপারেশন) এর কতটুকু গুরু দায়িত্ত থাকে এবং কি পরিমান ওয়ার্ক লোড থাকে।

স্যার, আমি আশা করি, আর্মিতে সবার আগে আমার করা ইন্ট্রানেট ফেসিলিটি নিসচয়ই আপ্নারা উপভোগ করছেন। আমি জানি না, এই মুহুর্তে উক্ত ইন্ট্রানেট প্রোজেক্ট তা কেমন চলছে তবে আমি গর্বের সাথে বলতে পারি যে, যদি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া আমাকে এই কাজে সর্বাত্তক সাহাজ্য না করতেন, তাহলে এই প্রোজেক্ট কোনোভাবেই দাড় করানো সম্ভব হতো না। আজ হয়তো অনেকেই এর মাহাত্য বুঝবে না বা জানছে না, ফলে অনেকেই এর সুফল ভোগ করতে পারছে না স্রেফ এটা না বুঝার কারনে কিন্তু আজ অন্তত ডিভিশনের সবাই জানে ইন্টারনেট কি এবং ইন্ট্রানেট কি। একদিন হয়তো তারা এতার মাহাত্য এবং সুফল কি বুঝতে পারবে এবং তখন হয়তো আজকে আমার করা এই প্রোজেক্ট সবার কাছে একতা প্রশংসার দাবী রাখবে। তখন তারা হয়তো বুঝবে যে, ইনফর্মেশ হাই ওয়ে ছাড়া আসলে জীবন প্রায় অচল।

স্যার আমার জন্যে দোয়া করবেন। স্যার শুনে খুশী হবেন যে, আমার আরো একটি চমৎকার মেয়ে হয়েছে। ওর বয়স এখন দুই মাস। আপ্নারা ভালো থাকবেন। আমার আবারো শুভেচ্ছা এবং শ্রদ্ধ্যা রইলো।

মেজর আখতার

ছাত্র অফিসার

ও জি এস সি- (এ ডি-২)

হালি শহর, চট্টগ্রাম 

Dear Cols,

Assalamualaikum. I wish you a very good Eid Mubarok and happy New Year 2001. Our best regards and respect to you and your family. I often remembered you during my course ‘Officers’ Gunnery Staff Course (OGSC), Air Defense –2’. Sir I really had a very good time with you at Bogra while serving at the Div HQ.

Sir, you will be certainly happy to know that I have just completed my OGSC (AD) –2. Right day after tomorrow we all will be leaving the Artillery School. I will be joining at my new working place (AHQ, MT Dte as GSO-2) right after Eid vacation. Sir, I just wanted to say my deep thanks to you for all types of blessings that I received from you. I just can remember fresh that you gave me complete one-month leave for my preparation. Without that period, it would not be possible to qualify in the entrance test. And you are certainly aware of the load of GSO-2 (Ops). My family and I will remember your kindness.

Sir I hope you are enjoying the Internet facility at Bogra. I don’t know what is the condition of our Local Intranet System but I can proudly boast that if Brig. Gen. Ikbal Karim Bhuiyan and you would not be there, it would not be possible. May be as on today mass people are not yet habituated or dependent on the Information Technology (IT) system, that’s why the project could not get the required speed and cooperation from many users but at least our divisional officers’ came to know, there is something called Intranet and people can interact each other using this Information Super Highway.

Sir, pray for me and for my family. Sir I have been blessed with a beautiful daughter. She is my second daughter. She is two months old now.

My best regards to Madam and your family. Eid Mubarok.

                                                                        Maj Mohammad Akhtar Hossain, psc

Student Officer

OGSC- (AD) –2

Halishahar, Chittagong

December 2000

To:

Col Mollah

Col Azim

Col Hasan Shorawardi

২৫/০৪/২০০০- মৃত্যুর সপ্নদেখা

মঙ্গলবার, রাত ১০টা, হালিশহর-

গত ২২ তারিখে সম্ভবত দুপুর বেলা অথবা ২৩ তারিখ দুপুর বেলায় আমি আমার মৃত্যুকে স্বপ্নে দেখেছি। মাঝে মাঝেই আমি আমার মৃত্যুকে একদম সামনে থেকে সরাসরি স্বপ্নে দেখি। সবগুলি সপ্নের দিন তারিখ আমার মনে নাই কিন্তু প্রায় একই রকমের স্বপ্ন আমি প্রায়ই দেখি আর সেটা হচ্ছে আমার মৃত্যুর স্বপ্ন। 

স্বপ্নে দেখলাম, আমি লাশ হয়ে শুইয়ে আছি।আমার জানাজা হচ্ছে। জানাজার মধ্যে যারা হাজির তাদের আমি কাউকেই চিনি না কিন্তু তাদের জন্য আমি অসস্থি বোধ করছি না। আমার শুধু মনে হলো লিখনের আব্বার কথা যিনি এই কয়দিন আগে মারা গেছেন। লিখনের আব্বা আমার স্ত্রীর বড় ভাই। আমার মনে হলো, অনেকবার শুনেছিলাম যে, লাশ নাকি অনেক জোরে জোরে সবাইকে ডাকে কিন্তু কেউ তার সেই ডাক শুনতে পায় না। স্বপ্নে আমার তাই মনে হলো যে, আমি ডাকছি কিন্তু কেউ আমার কথা শুনতেই পাচ্ছে না। আমার বেশ ভয় লেগেছিলো। আমার কাছে মনে হয়েছে, হ্যা আমি মারা গিয়েছি সেটা সত্য। আমার মরতে খুব ভয় লাগে। 

আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তখন দুপুর। লাঞ্চ খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। সম্ভবত গতকালের সেমিনারের মানসিক চাপে অনেক ক্লান্ত ছিলাম, তাই খুব গভীর ঘুমে আবোল তাবোল স্বপ্ন দেখেছি। আমি অবশ্য আমার সপ্নগুলিকে কখনো আবোল তাবোল মনে করি না। এর কিছু ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেস্টা করি। 

একটা সময়তো আসবেই যখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব মৃত্যুই আমাকে দেখা দিবে এবং তখন আমি আর কাউকে কিছুই জানাতে পারবো না। কারন মৃত্যু যখন আমাকে আলিঙ্গন করবে তখন অন্য কারো সাথে আমার কথা বলা হয়ে যাবে নিষিদ্ধ কোনো এক নীতি। সেখানে আমি পরাজিত এক সৈনিক নই, সেখানে আমি ভিন দেশি কোন প্রিজনার। 

২২/০৩/২০০০-কিছুক্ষন বারান্দায়।

হালিশহর মেস, বুধবার, সময়-১৯২৫ ঘন্টা।

আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুল, হালিশহর। …

আমি দাড়িয়েছিলাম কিছুক্ষন বারান্দায়। সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো তখন। তিনতলা থেকে অনেকদূর পর্যন্ত শহরের আলো দেখা যাচ্ছিলো। বেশ দূর থেকে চট্টগ্রাম শহর থেকে ট্রেনের হুইশেলের আওয়াজ শুনা যাচ্ছিলো। আর্টিলারি মেস হালিশহর, প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার দুরে। তারপরেও এখান থেকেই যেনো বুঝতে পারছিলাম ট্রেন প্রায় ছাড়বে ছাড়বে। লোকজন নিশ্চয় খুব ব্যস্ত এখন, কেউ প্লাটফর্মে, কেউ কামড়ার ভিতরে। কেউ হয়ত তার প্রিয়জনকে বিদায় দিতে এসে চোখের জল মুছছে, আবার কেউ হয়ত এই শহর ছেড়ে যেতে পারলেই বাচি বলে চোখ বুজে আছে। দুনিয়া বড় আজব।

আমাদের আর্টিলারি সেন্টার এন্ড স্কুলের রাস্তা দিয়ে দুয়েকটি প্রাইভেট কার চলাফেরা করছে। আমি বারান্দায় একা, অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি, আর সিগারেট টানছি। মশারা আমাকে একা পেয়ে বেশ খাবলে খাবলে খাওয়ার চেষ্টা করছে। বিরক্ত হচ্ছি না। আমার মৃত্যুর কথা মনে পরলো।

এটাই মনে হলো যে, এখন যা চলছে, এইসব কিছুই তখনো চলবে। দিনের শেষে অন্ধকার হয়ে যাবে, লোকজন যার যার ঘরে ফিরে আসবে। নিত্য নৈমিত্তিকের মতো খাওয়া দাওয়া করবে, টিভি, সিনেমা সবই চলবে, গল্প করবে, হাসি তামাশা, কিংবা পাখিদের কিচির মিচির, সকালের সূর্য উঠা কিংবা এই একটু আগে যেভাবে সূর্য ডোবে গিয়ে এখন একটা ভুতুরে সন্ধ্যা নামিয়ে দিয়েছে এই রকম করে আবারো ভুতুরে এক সন্ধ্যা তখনো নামবে। এই যে আমি আজ যেখানে দাড়িয়েছিলাম ঠিক এই জায়গাটাতে হয়ত এমনি করেই আরো একজন দাঁড়িয়ে হয়তো আমার মতোই ভাববে। কেইবা জানে, এখন থেকে অতিতে কোনো একসময় আরো একজন কেউ এমন করে ভেবেছিলো কিনা। হয়তো বা কোনোটাই সত্য নয়।

আমার আরো অনেক কিছু ভাবনা, অনেক কিছু কথা মনে আসছিলো। এই আমার মা, আমার বোন, আমার ভাই, আমার বউ, আমার মেয়ে, আমাদের নসিরন, তার সাথে বদিভাই, শিমুল, মোস্তাক ইত্যাদির মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক আছে? কেউ কারো কাছে কোনো কিছুর জন্যই বাধ্য নয়। ছোট বড় সবার জন্য এক পলিসি, তারপরেও নিজেদের টানে, নিজেদের স্বার্থের কারনে একে অপরের কাছে চলে আসে। আবার কোন এক অস্থিরতার মধ্যেই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। আর এর মাঝেই মানুসজন নিজেদের কারনেই কিছু কিছু কমন নিয়ম কানুন মেনে চলে। সেগুলো নিতান্তই নিজেদের স্বার্থেই।

আজ থেকে হাজার বছর পূর্বের আমার পূর্ব পুরুসের নাম আমি যেমন জানি না, আমার প্রয়োজন নেই তাদের নাম জানার। তারা আমার জীবনে কোনো কাজে আসবেন না, আর এজন্যই আমি তাদের খোজ করি না, নাম জানি না, জানার প্রয়োজন বোধ করিনা। তাহলে আজ থেকে পরের হাজার বছর পরেও কেনো আমার বংশধরেরা আমাকে খোজে বের করবে? কোন যুক্তি আছে? নাই।

অংক একটাই। কবরের পাশে নিজের নাম খোদাই করা থাকলেও তাদের প্রয়োজনেই ওই নাম প্রতিস্থাপক হয়ে আরো নতুন নাম সেখানেই ঢোকবেই। আর একেই বলে রিপ্লেস্মেন্ট। অতএব কোথাও তোমার পদধ্বনি থাকবে বলে আশা করো না। এই  পৃথিবী বর্তমানের অধীশ্বর। আমার বলতে কিছু নাই। তোমার বলতেও কিছু নাই।

-হতাত কার হাতের স্পর্শে যেনো সম্বিত ফিরে পেলাম। ঘাড় নেড়ে দেখি, আমার দোস্ত মেজর আকবর। আমরা একসাথে গানারী স্টাফ কোর্স করতে এসেছি। আকবর ফৌজদার হাট ক্যাডেট কলেজের ছাত্র আর আমি মির্জাপুর ক্যাডে কলেজের। আকবরের সাথে আমার প্রথম দেখা হয় শহিদুল্লাহ হলের ক্যাম্পাসে।

১৫/০২/২০০০-১১ পদাতিক জি-২(অপ্স) বিদায়

মাঝিরা সেনানিবাস-

১১ পদাতিক ডিভিসন থেকে আমার ফেয়ারওয়েল হয়েছে কারন আমি অফিসারস গানারী স্টাফ কোর্স করতে যাবো হালিশহরে। আমি বেসিক্যালি ফিল্ডের অফিসার কিন্তু গানারী কোর্স করতে যাচ্ছি এডি শাখার। আমি কখনো এডিতে কাজ করি নাই কিন্তু আমার বেসিক কোর্সে এডি এবং ফিল্ড থাকায় আমি যে কোনো গানারী কোর্সের জন্য কোয়ালিফাইড। গানারী স্টাফ কোর্সটাও একটা সিলেক্টিভ পরীক্ষার মাধ্যমে করতে হয়। ভরসা ছিলো না যে পাশ করবো কিন্তু যেভাবেই হোক হয়ে গেছে। জিএসও-২ পদবীতে থেকে এইসব পরীক্ষায় পাশ করা সহজ নয়।

আমি প্রকৃতপক্ষে ১১ পদাতিক ডিভিসন থেকে একপ্রকার এস্কেপ করার জন্যই আমি এডি গানারী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। এমন একটা পদবী (জিএসও-২ অপারেসন) কেউ ইচ্ছা করে ছাড়তে চায় না। কিন্তু আমি বুঝতেছিলাম যে, জেনারেল আনোয়ার এর বিদায়ের পর ডিভিসনে অনেক হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তখনো কোন জিওসির আগমন ঘটে নাই। শুনছিলাম যে, জেনারেল ইমাম নাকি আসবেন। আমি জেনারেল ইমামের সাথে ৪৬ ব্রিগেডে কাজ করেছি একবার যখন ঊনি ৪৬ ব্রিগেডের কমান্ডার ছিলেন। শক্ত মানুষ। পুরুপুরি বিএনপি ঘেঁষা। সরাসরি রাজনৈতিকবিদ বলা চলে।

যাই হোক, পরীক্ষা দেওয়ার পর আমি সিউর ছিলাম না যে পরীক্ষায় পাশ করবো কিনা। এর মধ্যে বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে। জেনারেল ইমাম আসার আগে ১১ আর্টিলারি কমান্ডার ব্রি জেনারেল রফিক এক্টিং জি ও সি হিসাবে ১১ পদাতিক ডিভিসনের দায়িত্ত পালন করছেন। এই ভদ্র লোক কেনো জানি আমাকে একদম পছন্দ করেন না। কোনো কারন নাই, কথা নাই, বার্তা নাই, ঊনি আমাকে পছন্দ করেন না। এক্টিং জিওসি হবার পর ঊনি যেনো একটা সুযোগ পেয়ে গেলেন কিভাবে তিনি আমাকে একটু বেকায়দায় ফেলবেন। ব্যাপারটা আমার কাছে একদমই ভালো লাগছিলো না। আমি অনেক খুজেছি কারনটা কি হতে পারে?

পরে অবশ্য জেনেছি ব্যাপারটা। কোনো একটা অফিশিয়াল কমেন্টকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে আমাকে অপছন্দ করা শুরু করেছেন। যেটা ওনার ঠিক হয় নাই। যাই হোক, আমি আমার জায়গায় তিনি তার জায়গায়। এখানে আরো একটা মন্তব্য না করলে হয়ত ভুল হবে যে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতার আসার পর, মুজিব কিলিং এর জন্য অনেক ব্রিগেডিয়ারদেরকে এই আর্মি থেকে অকালীন অবসর দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে এই ১১ পদাতিক ডিভিসনের অধীনের অনেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জড়িত ছিলেন। আমাদের ১১ আর্টিলারি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিক সাহেবের নামেও একটা চিঠি এসেছিল মুজিব কিলিং এর ব্যাপারে। ভুলক্রমে চিঠিটি যদিও খুব টপ সিক্রেট ছিলো কিন্তু চিঠিটি চলে আসে আমাদের ডিভিসন হেডকোয়ার্টারে। আর আমার হেড ক্লার্ক কিচ্ছু না বুঝে চিঠিটি খুলে ফেলে যা একটা মারাত্মক অপরাধের মধ্যে পরে। আমি তখন ডিভিসন হেডকোয়ার্টারের বাইরে অনুশীলন এলাকায় ছিলাম। আমি যখন সন্ধায় অফিসে আসি, তখন দেখি এটা নিয়ে আমাদের ক্লার্ক লেবেলে বেশ কথা বার্তা হচ্ছে, যে, এখন কি করা যায়।

আমি চিঠিটি পড়েছিলাম এবং পরবর্তীতে ব্রিঃ জেনারেল রফিকের ব্রিগেড মেজর (বিএম) মেজর কায়সারকে ব্যাপারটা শেয়ার করে চিঠিটি পাঠিয়েছিলাম। ব্রিগেডিয়ার জেনারাল রফিক ভাবলেন যে, সম্ভবত আমি ইচ্ছে করে তার ব্যক্তিগত এমন একটা সেন্সেটিভ চিঠি পরার সাহস করেছি। ব্যাপারটা কোনো অবস্থাতেই সঠিক নয়। আর যেহেতু ওই চিঠিটা নিতান্তই ব্যক্তিগত ছিল না, এটা ডিভিসন হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিককে জানাতে বলা হয়েছে, সুতরাং এদিক দিয়ে আমাদের ডিভিসনের পক্ষ থেকে কোন ভুলও হয় নাই চিঠি খোলার কারনে। তবে এই ধরনের চিঠি সাধারনত স্টাফ লেবেলের অফিসারগন সরাসরি হ্যানডেল করেন বিধায় এটা হেড ক্লার্কদের কোনো অবস্থায়ই খোলার ইখতিয়ার নাই।

যাই হোক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিক আমাকে পছন্দ করুক আর নাইবা করুক, তাতে আমার কিছুই যায় আসেনা। আর তার সাথে আমি ইচ্ছে করলেও সরাসরি কাজ আমার সাধারনত হয় না। যদি আমাদের শাখার কোন কাজে তিনি আমার কাছে কৈফিয়ত চান, তাহলে হয়ত আমার সরাসরি দেখা বা কথা বলা হতে পারে। আর তা না হলে জিএসও-১ আছেন, কর্নেল স্টাফ আছেন ইত্যাদি।

আমি একটু এড়িয়েই চলছি এই ভদ্রলোককে। আমার ধারনা, তিনিও আমাকে বেশ এড়িয়ে চলছেন কিন্তু এটার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।

এখানে আরো একটা মজার ঘটনা বলি। সম্ভবত তিনি আমার বড় ভাইয়ের শুসুর বাড়ির আত্তিয় সজনের মধ্যে কেউ চেনা জানা। কারন একবার আমি আমার বড় ভাইয়ের শশুর বাড়ির কোনো একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখেছিলাম ঊনার আগমন। পরে জানলাম যে, তিনি আমার বড় ভাইয়ের শশুর বাড়ির আত্তিয়দের মধ্যে কেউ হন। আমার একদম ভালো লাগে নাই এটা জেনে। কিন্তু সব ভালো লাগা তো আর আমার উপর নিরভর করে না। বেশীদিন এই যন্ত্রনা আমাকে সহ্য করতে হয় নাই কারন বেশ তাড়াতাড়ি জেনারেল ইমাম জিওসি হিসাবে চলে এসেছিলেন। 

০১/০১/২০০০- মিলিনিয়াম ডে

৩৮, গোলারটেক, মীরপুর, ঢাকা-১২১৬

বদি ভাই, আমি আর হাবিব ভাই এক সাথে বসেছিলাম। একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে, ওনারা দুজনে যেনো একটি দল আর আমি যেনো তাদের প্রতিপক্ষ। সুতরাং কোনো উপায় নাই। ওনারা দুজনে মনে করেন যে, পৃথিবীর বেস্ট পসিবল সিদ্ধান্তগুলি ওনারা একা একাই নিতে পারেন , ফলে আর কারো মতামত, সাজেসন কোনো কিছুই তাদের কাছে খুব জরুরী নয়। সুতরাং আমি যদি এই মুহূর্তে তাদের থেকেও একটা উন্নত মানের সাজেসন দেই বা কন্সেপ্ট দেই, সেটা হবে একটা বেয়াদপি। আর সেটা তারা গ্রহন করবেনও না। তাহলে ব্যাপারটা একটু খুলে বলি। 

কয়েকদিন যাবত হাবিব ভাই বদি ভাইয়ের সাথে শলা পরামর্শ করে ঠিক করলেন যে, ফারুক, লিয়াকত এবংসাখাওয়াতকে উত্তরা আল হেরা ক্যাডেটে পড়াশুনা করাবেন। প্রচুর খরচ। এই তিনজনের জন্য প্রতি সেমিস্টারে প্রায় পঞ্চাশ ষাট হাজার টাকা খরচ হবে যা একটা উচ্চবিত্ত পরিবারের জন্যও অনেক খরচ। হাবিব ভাইয়ের বেশ কিছু টাকা আছে যার যাকাতের পরিমান নেয়াহেত কম না। ওই যাকাতের পয়সায় হাবিব ভাই মনে করছেন যে, তিনি এই তিনজনের জন্য বেশ ভালভাবেই খরচ চালাইতে পারবেন। বদি ভাই এর দায়িত্ত নিচ্ছেন। 

আমি হাবিব ভাই এবং বদি ভাইকে বললাম, এই তিনজনকে এতো টাকা একবারে খরচ না করে, যদি এমন হয় যে, মেহেরের ছেলে, ফাতিমার ছেলে, লায়লার ছেলেসহ ফারুক, লিয়াকত এবং সাখাওয়াত মীরপুরে গোলারটেকে একটা বাসা ভাড়া করে এই সিদ্দান্ত স্কুলেই পড়াশুনা করে, তাহলে তাদের মধ্যে একটা কম্পিটিসন তৈরী হবে, একই টাকায় সব বাচ্চারা পরাশুনা করতে পারবে, আবার আমি অথবা বদি ভাই সরাসরি ওদের পড়াশুনা মনিটর করতে পারবো। হাবিব ভাই মানলেন না। তিনি বললেন, ঊনি কেনো অন্যদের দায়িত্ত নেবেন? তাদেরতো বাবা মা আছে!! আমি বললাম, এটা দায়িত্ত নেয়া নয়, এটা একই টাকা অনেকের জন্য ভালভাবে ব্যয় করা। এবং বেশি ফল পাওয়া। বদি ভাই এবং হাবিব ভাই কথাগুলির যুক্তিএবং সাজেসন্টা নিলেন না। 

হাবিব ভাই যাকাতের টাকা আত্তিয়দের দান করে যদি মনে করে থাকেন যে, তিনি আত্তিয়দের সাহাজ্য করছেন, এটা ভুল। খুব তাড়াতাড়ি ফারুক এবং লিয়াকত বাহিনী বিপথে যাওয়া শুরু করবে বলে আমার ধারনা। শেষতক ওদের কোনো পড়াশুনা আদৌ হয় কিনা আমার সন্দেহ আছে। যদি কোনো কারনে এই ছেলেপেলে গুলির লেখাপড়া না হয়, আমি দোস দেবো এই বদি ভাই এবং হাবিব ভাইয়ের পরিকল্পনার কারনে। তবে আমি  স্পস্ট দেখতে পাচ্ছি, ওরা বিপথে চলে যাচ্ছে। আমি ভুল্গুলি যেন দেখতে পাচ্ছি। 

০১/০১/২০০০-মিলিনিয়াম নাইট

বাক্তার চর, কেরানীগঞ্জ

মিলিনিয়াম নাইট। আর কখনো আসবে না এমন একটা রাত। আবার হাজার বছর পরে এই মিলিনিয়াম রাত আসবে। 

আমরা গ্রামে এসেছি, সবাই আছেন। তাজির ভাইয়ের মেয়ে আমেনা আছে। আমার সব বোনেরাও আছে। এখানে একটা কথা না বললেই হচ্ছে না। আমার উত্তরসুরীর অনেকেই হয়ত জানবে না, এই তাজির আলি কারা, বিল্লাল ভাই  কারা ইত্যাদি। তাহলে আমি তাদেরকেও পরিচয় করিয়ে দেই। 

বিল্লাল ভাই, তাজির আলী এবং অন্যান্যরাঃ  

ঊনি হচ্ছেন আমার সতালু ভাই। অর্থাৎ আমার মায়ের প্রথম ছেলে। আমার মায়ের প্রথম যার সাথে বিয়ে হয়েছিলো, তিনি মারা যাওয়ার পর আমার বাবার সাথে আমার মায়ের পুনরায় বিয়ে হয়। ফলে বিল্লাল ভাই এর মা আর আমার মা একই মহিলা। বিল্লাল ভাইয়ের বাবা আমার বাবা নন। যখন আমার মায়ের প্রথম স্বামী মারা যান, তখন আমার মায়ের বয়স হয়েছিল মাত্র ১৩ বছর। ১৪ বছর বয়সেই আবার আমার বাবা আমার মাকে বিয়ে করেন। আমার বাবা আমার মায়ের থেকে একটু বয়সে বড় ছিলেন। আমার বাবারও তার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আমার মাকে বিয়ে করেন। আমার মা যখন আমার বাবার সংসারে আসেন, তখন তার সংসারে ইতমধ্যে আমার মায়ের থেকেও বয়সে বড় সন্তান আছে। আমার বাবার প্রথম ঘরে ইতিমধ্যে তিন ছেলে আছে যারা ইতিমধ্যে বিয়েও করে ফেলেছে কেউ কেউ। এই তিন ছেলের নাম হচ্ছে (১) নজর আলী (২) মোহশীন (৩) তাজির আলি। এর মধ্যে আবার কয়েক বোনও আছে। তাদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, প্রায় চারজন। এমন একটা সংসারে আমার মাকে আসতে হয়েছে বউ হয়ে। খুব কষ্টের দিন কেটেছে এই মাদবর বাড়ির নতুন বউটির।

বিল্লাল ভাইকে মায়ের বিয়ের প্রাক্কালে আমাদের পাশের গ্রামের এক নিঃসন্তান মহিলা খুব আদর করে দত্তক নেন। তারা খুব বিত্তবান মানুষ ছিলেন। বিল্লাল ভাইকে তারা খুব আদরের সাথে বড় করেছেন এবং পরবর্তীতে তারা তাদের সমস্ত সম্পত্তি এই বিল্লাল ভাইয়ের নামেই রেখে গেছেন। আমরাও বিল্লাল ভাইকে আমাদের নিজের ভাইয়ের মতোই দেখি, আমিতো কখনোই তাকে আমার নিজের ভাই ছাড়া অন্য কোনো কিছুই মনে করি না। বিল্লাল ভাইও খুব ভালো মানুষ। 

যাক যেই  মিলিনিয়ামের কথা বলছিলাম। আজ এই মিলিনিয়ামের রাতে আমরা সবাই এক হয়েছি আমাদের গ্রামে। রোজার রাত। ফাতেমা সারা রাত শুধু রান্নাই করে যাচ্ছিলো। প্রকৃতপক্ষে ফাতেমা মায়ের সাথেই থাকে। ফাতেমার ছেলেমেয়েরা আমাদের বাড়িতেই থাকে। ফলে আমরাও একটু সস্থিতে থাকি মায়ের যত্নের ব্যাপারে। ফাতেমা মায়ের অনেক যত্ন নেয়। 

হাবীব ভাই আমাকে ঘরের বাইরে নিয়ে একটা ব্যপারে কিছু উপদেশ কিংবা সাজেসনমুলক কথাবার্তা বলার চেস্টা করেছিলেন। সেটা খুলেই বলিঃ 

বদি ভাইয়ের সাথে আমার বনিবনা হচ্ছিলো না। কেনো বনিবনা হচ্ছে না, সেটা একটা দারুন ব্যাপার। ব্যাপারটা কিছুইনা আবার অনেক কিছু। সেটা হচ্ছে আমার বিয়ে নিয়ে। তাহলে সেটাও কিছু বলিঃ 

১৯৮৮ সালে ৩০ শে মে তে আমি মিতুলকে একা একা বিয়ে করি। প্রায় ১২ বছর আগে। কেনো একা একা বিয়ে করলাম, কেনো তাকে জানালাম না। কেনো ওই মিটুলকেই বিয়ে করলাম, তাকে তিনি পছন্দ করেন না, তারপরেও আমি তাকে বিয়ে করেছি, ইত্যাদি ইত্যাদি। কেনো তিনি মিতুলকে পছন্দ করেন না, তার ব্যাখ্যাও আমি জানি না। এইসব নিয়ে ঊনি চান হয় আমি মিতুলকে তালাক দিয়ে দেই, অথবা আমি আর মিতুল তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাই, ইত্যাদি। আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না কেন আমি ক্ষমা চাইবো তার কাছে? আমি তো অন্যায় কিছু করি নাই। বিয়ে করেছি। আমার সুখটাই কি ঊনি পছন্দ করেন না? তাহলে ঊনি তো আমাকে ভালই বাসেন না। আমি এমন একটা অযুক্তিক কারনে বদি ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চাওয়া কারন দেখি না। ফলে দিন গেছে মাস গেছে আমার আর বদি ভাইয়ের মধ্যে ডিস্টেন্স বেড়েই গেছে। এই ব্যাপারটা নিয়েই আজ হাবিব ভাই আমাকে প্রায় দুই ঘন্টা উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করলেন যেন ব্যাপারটা আমরা মিটিয়ে ফেলি। অথচ ব্যাপারটা মিটানোর জন্য আমি অনেক চেস্টা করেছি কিন্তু ঊনি এগিয়ে আসেন নাই। 

মিলিনিয়াম রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজ মিতুলের সাথে আদর হলো। মিলিনিয়াম আদর। আগামিকাল ভাইয়া চলে যাবে। সকাল হলেই সবাই যারযার জায়গায় বেরিয়ে পড়বে। শুভ আগমন মিলিনিয়াম শতাব্দি।

৩১/১২/১৯৯৯- অসুস্থ মায়ের পাশে

নতুন বাক্তার চর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-

গ্রামে এসেছি। ভাইয়া সাথে আছে। মিতুল ও সাথে আছে। মাসুদ কয়েকদিন আগে গ্রামে এসেছিলো বটে কিন্তু এবার আসে নাই। ঢাকায় রয়ে গেছে। বেশ শীত বটে। বিল্লাল ভাইও গ্রামে এসেছে মায়ের কাছে। মা খুব সুস্থ নন। 

রাত হয়ে গেছে। আমরা সবাই খাটের উপর বসে কথা বলছি। বোনেরা আছে, মা বারবার কাশি দিচ্ছেন। ঘরের ওপাশে মা কাথা গায়ে দিয়ে শুইয়ে  আছেন। আমি বারবার মায়ের কাছে যাচ্ছি যেন মায়ের কোন অসুবিধা হলে বুঝতে পারি। বিল্লাল ভাই নিজেও ডাক্তার। ফলে অন্তত একজন ডাক্তার সাথে আছে এটা আমার একটা ভরসা। 

রাত প্রায় ১১টা বাজে। মা খুব ঘনঘন কাশছেন। আমি মায়ের কাশিটা সহ্য করতে পারছিনা। বিল্লাল ভাই, আমার অন্যান্য বোনেরা সবাই মায়ের কাছে এসে বসলেন, কিন্তু হাবীব ভাই মায়ের কাছে এসে বসার আগ্রহ প্রকাশ করলেন না। আমি একটু রাগের সাথেই হাবীব ভাইকে বললাম, আপনি মায়ের কাছে যাচ্ছেন না কেনো? ঊনি মায়ের কাশিতে ওনার সমস্যা হতে পারে এই কারনে তিনি মায়ের ওখানে যেতে চান না। আমার এম্নিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলে রাগ উঠে যায়। আর মায়ের ব্যাপারে আমি কোনো কিছুই মানতে পারি না।  রাগ উঠতেছিলো। হাবিব ভাইয়ের প্রতি আমার সম্মানটুকু অনেক কমে গেলো। নিজের মায়ের উপর তার এই ভালবাসা আর শ্রদ্ধ্যা? আমার তো ধারনা যে, মা যদি মারাও যান, হাবিব ভাই আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসেন কিনা আমার সন্দেহ আছে। 

মা হাবিব ভাইয়ের কাছে একটা বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে মনে হল। মায়ের উপর হাবিব ভাইয়ের কোনো শ্রধ্যাবোধ নাই মনে হলো। ভাবলাম, ভাইয়া, আপনারও কিন্তু সন্তান আছে, কোনো একদিন দেখবেন, আজকে যে আচরনটা আপনি আপনার মায়ের প্রতি করে যাচ্ছেন, কোনো একদিন আপনার সন্তানেরা যখন এই আচরনটা করবে, তখন আজকের দিনের এই আচরনটা আপনার মনেও পড়বে না হয়ত কিন্তু এইটাই হলো আপনার ফেরত পাবার দান। 

আগামিকাল হাবিব ভাই পুনরায় আমেরিকায় চলে যাচ্ছেন। আর কোনদিন তার সাথে মায়ের কিংবা অন্যান্য কারো সাথে দেখা হয় কিনা আমরা কেউ জানি না। 

উম্মিকা মাসুদের সাথে অনেক এঞ্জয় করেছে। উম্মিকা, মাসুদ এরাই আমাদের প্রথম বংশধর যাদের জন্য আমরা একটা পরিবার পেয়েছি। মিতুল খুব ভালো মেনেজ করেছে পুরু পরিস্থিতিটা। বিল্লাল ভাইয়ের বউও এসেছে। 

০২/১২/১৯৯৯-হাবিব ভাই বগুড়া সেনানীবাস

মাঝিরা সেনানিবাস, বগুড়া- 

হাবিব ভাই দেশে এসেছেন। সাথে মাসুদ। ভাইয়ের বড় ছেলে। আমার খুব পছন্দের একটা  ছেলে। মাসুদের ভাষায় ঢাকা হচ্ছে একটা ধুলাবালির দেশ আর তার সাথে ধুয়ার একটা চিমনি। সারাক্ষন তার বমি বমি আসে এই অটোরিক্সার ধুয়ায় আর সারাদেশের ধুলাবালির আবহাওয়ায়। মাসুদ কয়েকদিন তার নানীদের বাসায় থাকলো কিন্তু তার কাছে একেবারেই ভালো লাগে নাই। এমনিতেই বাচ্চা ছেলে, তার মধ্যে ঢাকায় তার কোনো বন্ধু বান্ধব নাই। তার মধ্যে আবার কেউ তার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে হয় বলে অনেকেই এড়িয়েই চলে।

একটা কম্পিউটার দিয়ে দিয়েছি ওর জন্য। কিনতে হয় নাই। আমার দোস্ত আলমগীরের ভাই মাহবুব আমাদের ডিভিসনে কম্পিউটার সাপ্লাই দেয়, তাকে বলে দিয়েছিলাম যেন কয়েকদিনের জন্য একটা কম্পিউটার দিয়ে দেয় আমার ভাতিজা মাসুদের জন্য। মাহবুব তাই করেছে। হয়ত এই কম্পিউটারের জন্যই মাসুদ কয়েকদিন একা একা ওর নানীদের বাসায় থাকতে পেরেছে।

গতকাল মাসুদ এবং ভাইয়া সাথে মিটুল বগুড়া সেনানিবাসে এসেছে। আমি আর মিটুল একরুমে, ভাইয়া আর মাসুদকে অন্যরুমে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বেশ শীত পড়েছে বগুরায়। 

হাবিব ভাই সারাদিন বগুড়ার সেনানিবাস দেখলেন, ওনার অনেক বন্ধু বান্ধবের সাথেও দেখা করার সুযোগ হলো। কিন্তু সেনানিবাস হওয়াতে অনেকেই আসতে পারলেন না। জেনারেল আনোয়ারকে ভাইয়ার কথা বলাতে জেনারেল আনোয়ারও ভাইয়ার সাথে দেখা করার মনোবৃত্তি প্রকাশ করলেন। আমি ভাইয়াকে নিয়ে গেলাম জেনারেল আনোয়ারের অফিসে। আর্মি নিয়ে অনেক কথা হলো ভাইয়ার সাথে জেনারেল আনোয়ারের। 

এক সময় ভাইয়া জেনারেল আনোয়ারকে যেতা বললেন সেটা হলঃ 

২১ শতকের সেনাবাহিনী হবে আসলে ভুমিভিত্তিক নয়, এটা হবে সাইবারভিত্তিক। আমরা যদি বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আধুনিকভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সেনাবাহিনীর সাথে সক্ষমভাবে মোকাবেলা করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে এখনি এই সাইবার ভিত্তিক সেনাবাহিনির দিকে নজর দিতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির দিকে আরো বেশি নজর দিতে হবে। আর এর সাথে সাথে আরসেনালও বাড়াতে হবে। যদি সেনাবাহিনী চায়, তাহলে আমরা আমেরিকায় অনেকেই এই প্রযুক্তির সাথে জড়িত আছি, আমরা বিনে পারিশ্রমিকে এই  সুযোগ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দিতে পারি। 

জেনারেল আনোয়ার চীফের সাথে (লেঃ জেনারেল মুস্তাফিজ বর্তমানে বাংলাদেশের চীফ হিসাবে আছেন) কথা বলে ভাইয়ার এই সাজেসনে কি করা যায় জানাবেন বলে আশ্বাস দিলেন। 

বাংলাদেশ আর্মি। কিছুই বলা যায় না। সিদ্ধান্ত নিতে বড্ড ভুল করে। দিন কে দিন এই আর্মির অফিসারেরা মেধাহীন হয়ে যাচ্ছে আর পয়সার দিকে বেশী ঝুকে যাচ্ছে বলে কোয়ালিটি পূর্ণ অফিসার আর তৈরী হচ্ছেনা। দেখা যাক, শেষ তক কি সাজেসন বা সিদ্ধান্ত আসে এই সব জেনারেলদের কাছ থেকে। আমার ধারনা নেগেটিভ হবারই কথা। হয়ত বুঝতেই পারবে না কি নিয়ে কথা হচ্ছে।

৩০/১১/১৯৯৯-জি-২(অপ্স) আমার কর্তব্য

মাঝিরা সেনানিবাস, বগুড়া। ১১ পদাতিক ডিভিসন-

বেশ অনেকদিন যাবত একটা লিখা লিখবো লিখবো করে লিখা হচ্ছে না। আমি বেশ অনেকদিন হয়ে গেলো এই ১১ পদাতিক ডিভিসনে জিএসও -২ (অর্থাৎ জেনারেল স্টাফ অফিসার-২ অপারেসনের দায়িত্তে আছি)। আমার কাজ অনেক। এই ডিভিসনে যদি ক্ষমতার দিক দিয়ে বিবেচনা করা হয়, তাহলে জিওসি হচ্ছেন এক নম্বর, তারপর হচ্ছেন কর্নেল স্টাফ, তারপর জিএসও-১, তারপরেই আমি। কমান্ড লেবেলে ব্রিগেড কমান্ডার গন তো আছেনই কিন্তু তারপরেও আমার এই পদটা অনেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।

আমি যেদিন এই ডিভিসনে পোস্টিং হয়ে আসি, আমাকে অনেকেই গ্রহন করতে দ্বিধা বোধ করছিলেন কোনো কোনো ডিভিসনের স্টাফগন। এর পিছনে কারনটা আমি খুজতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু খুব সাফল্য পাই নাই। পেলাম একদিন কোনো এক খেলার অনুষ্ঠানে। ইয়াসিন স্যার (যিনি একিউ ব্রাঞ্চের ডিকিউ), তিনি বললেন, আমাদের জি ব্রাঞ্চের অফিসারগন বিশেষ করে আমার আগের জিএসও-২ (মেজর সাইফ, ১৪ লং কোর্সের)  সাথে একটা ডিস্ট্যান্স মেইটেইন করতো যা তাদের ভালো লাগতো না। তারা সবাই ধরে নিয়েছেন, আমি যেহেতু আর্টিলারি অফিসার, আমার হয়তো আরো বেশি নাক উচা হবে। আমি হয়ত কারো সাথেই মিশবো না।

আমার নীতীটা ভিন্ন। আমার চাকুরী করতে গিয়ে আমি কোথায় কি অবস্থায় আছি, বা থাকি সেটা ভিন্ন। আমার সাথে সব অফিসারদের হতে হবে একেবারে খাটি সম্পর্ক। যার যার জায়গায় সে সে তার অবস্থানে থাকে, সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নাই কিংবা তাদের সাথে আমার কোন বৈরিতা নাই। তাহলে কেনো আমার সাথে তাদের সম্পর্কটা খারাপ হবে?

আমি খুব সহজেই সবার কাছে খুব গ্রহনযোগ্যতা পেলাম। উপরের তালায় বসেন কর্নেল বশীর। কর্নেল এডমিন, একসময় আমার সিও ছিলেন সাভারে ১০ মিডিয়াম ইউনিটে।

আমার কর্নেল স্টাফ এখন কর্নেল আইকেবি, যার পুরু নাম ইকবাল করিম ভুইয়া। বেশ প্রোফেশনাল মানুষ। ভালো মানুষ। কিন্তু জিওসি জেনারেল আনোয়ারের সাথে ঊনি অনেক কিছুই মানিয়ে চলেন। জেনারেল আনোয়ারের পিছন ইতিহাস  বেশ ঘোলাটে। তিনি নাকি অনেকেরই ক্ষতি করেছেন হয় প্রোমোশনের দিক দিয়ে অথবা এসিআর খারাপ দিয়ে। ফলে কেউ তার সাথে এমন কিছু করে না যাতে জেনারেল আনোয়ার তার আগের ফর্মের মত কোনো কাজ করেন এবং অফিসারগন ক্ষতিগ্রস্থ হন।

জিওসির এডিসি ক্যাঃ তৌহিদ খুব অমায়িক ছেলে। আমার পাশের রুমেই থাকে। মেসে। আমার জিএসও -১ হিসাবে কাজ করছেন লেঃ কঃ হাসান সারোয়ারদি। খুব নরম শরম মানুষ। তিনি তার স্ত্রীকে রিতিমত সমিহ করেই চলেন। কেনো এতো সমিহ করেন সেটা আমার জানা নাই। তবে ভেজাল পছন্দ করেন না তিনি। আমার আশেপাশের অন্যান্য অফিসারগন যারা আছেন, সবাই বেশ ভালো। জিএস-২ (আই) মানে ইন্টিলেজেন্স হিসাবে কাজ করছেন নাইন লং কোর্সের জাহিদ স্যার। আমরা এক সাথে ওএমটি কোর্স করেছি ১৯৮৮ সালে। তিনি খুলনার ছেলে। বেশ বুদ্ধি রাখেন সব কিছুতেই। আমরা পাশপাশি রুমেই থাকি।

যেটা বলছিলাম।

আমি পন করেছি, আমার কাছে যে যেই জিনিসের জন্যই সাহাজ্য চাইবে, আমি যতোটুকু সম্ভব তাদেরকে সর্বাত্মক সাহাজ্য করবো। আমি চাই, এই ডিভিসনে সবাই ভাবুক যে, জিএসও-২ এর কাছে কোনো সাহাজ্য চাওয়া মানে সেটা পাওয়া যায়। যে কোনো অবস্থায় যে কোনো র‍্যাংকের অফিসার, যে কোনো ইউনিট সবসময় যেনো আমাকে তাদের সমস্যার কথা সাহস করে বলতে পারে আমি সেটাই চাই। এটা হবে আমার ইনভেস্টমেন্ট। দেখি না কোথায় কি দাঁড়ায়।

আমি ইদানিং এর সাফল্য দেখতে পাচ্ছি। আমার ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। কোনো অসুবিধা নাই। আমি মেসে একাই থাকি। আমি লোড নিতে পারবো।

৩০/১১/১৯৯৯- বদল চাই প্রশাসনের

 মঙ্গলবার, ৩ঃ৫৬ঃ৪৪ বিকাল, বগুড়া সেনানিবাস-

আমি নিজেকে প্রশংসা করছি না, এখন যেটা বলছি সেটা লিখে। এটা জাস্ট আমার মনে হয়েছে। মানুষগন যদি তাদের আবেগ এবং বহিরপ্রকাশ ভনিতা করে না দেখায় তাহলে আমার কথাই হয়তো সত্যি। দেশের বেশির ভাগ রাস্ট্র নায়কদের পতন হয় তার আশে পাশের উপদেস্টাদের ভুল জিনিস ভনিতা করে ঠিক জিনিস দেখানোর মধ্যে। রাস্ট্রনায়কগন যা দেখছেন তা সত্য দেখছেন না, যা ভাবছেন তা ভুল জিনিসের উপর বিশ্বাস রেখে ভাবছেন, এবং যা মুল্যায়ন করছেন তা নিতান্তই একটা ভুল জিনিসের উপর দাঁড়িয়ে মুল্যায়ন করছেন। এর কারন তিনি সবকিছুই দেখছেন ওইসব উপদেস্টাদের দেখানো তথ্যের উপর ভিত্তি করে। উপদেস্টাগন কতটুকু কি দেখাচ্ছেন, তা বুঝা যায় রাষ্ট্রনায়কের পতনের পর। কিন্তু তখন যা হবার তা হয়ে গেছে। 

আমি রাষ্ট্রপ্রধান নই। আমার কোন উপদেস্টা নাই। আর যারা উপদেস্টা হিসাবে কাজ করে, তাদের কোনো উপদেশ আমি খুব একটা গ্রহন করছি সেটা এমন নয়।  

গতকাল লিখেছিলাম যে, আমি আমার সাধ্যের বাইরে গিয়ে হলেও সবাইকে সব ধরনের সাহাজ্য সহযগীতা করবোই। ব্যাপারটা কাজে লাগছে/আমি বুঝতে পারছি, ডিভিসনের লোকজন আমার সঙ্গ পছন্দ করা শুরু করেছে। হতে পারে এটা যে, আমি ডিভিসনের অত্যান্ত ক্ষমতাধর একজন মেজর, হয়ত সবাই এইজন্য আমার সঙ্গটা পছন্দ করছে। কেনো করছে সঠিক কারন টা খুব শিঘ্রই বের করে ফেল্বো। তবে অনেক কারন আছে আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার। ওগুলো আমার ক্ষমতার বাইরে। যেমন, আমার চেহাড়া এমন নয় যে, রাজপুত্রের চেহাড়া, কিংবা এমন জিনিয়াস নই যে, সবাই আমাকে নিয়ে নাচবে। খাওয়া দাওয়াও তো এমন না যে, এই জন্য আমার সাথে সবাই থাকে বলে ওই ঊছিলায় তারাও খেতে পারে। 

আমি যদি কারো কাছ থেকে কিছু চাই, থাকলে না দিতে উছিলা দিতে মনে বাধবে। 

আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করছি যে, জেনারেল আনোয়ার কিছু কিছু অফিসারদের বেলায় পক্ষপাতিত্ব করছেন যা আমার কাছে ন্যায়সঙ্গত মনে হচ্ছে না। অনুপ কুমার চাকমা একজন খুব প্রোফেসনাল অফিসার কিন্তু ঊনি চাকমা। তাতে কি? তিনি ৩৯ সাপোর্ট ব্যাটালিয়ানের সিও হিসাবে আছেন। আগামি প্রোমসন বোর্ডে ঊনার নাম আছে কিন্তু আমার ধারনা জেনারেল আনোয়ার তাকে পছন্দ করছেন না এবং যে কোনভাবেই হোক তার মাধ্যমেই তাকে ভুল ধরিয়ে ধরিয়ে এমন কিছু করে ফেলা যেনো ঊনার প্রোমসন এসিয়ারে জেনারেল আনোয়ার প্রোমসনের জন্য রিকমেন্ড না করলেও জেনারেল আনোয়ারের কোনো দোস থাকে না। ব্যাপারটা অন্যায়। 

আমি স্যারকে খুব কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করছি। তাকে কেউ কেউ কান কথা দিচ্ছে। জেনারেল আনোয়ার খুব খারাপ মানুষ না। কিন্তু তাকে বা তার উপদেষ্টাগন তাকে ঠিক জিনিসটা দেখতে দিচ্ছে না। আমি নিজেও কিছু করতে পারছি না। তাই ভাবছি, আমি এইসব অফিসারদের জন্য এমন কিছু করে দেওয়া যাতে জেনারেল আনোয়ার তাদের ভুল কিছু ধরতে না পারেন। 

হতাত হতাত করে জেনারেল আনোয়ার এইসব ইউনিটে ভিজিটে চলে আসেন। সবসময় সিওদের পক্ষে ১০০% ঠিক রাখা সম্ভব নয়। সৈনিকের ছুটি নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে, ফলে ট্রেনিং এ লোক কম থাকতেই পারে। একটা  দুর্বল ড্রাইভার কোথাও গিয়ে একটা এক্সিডেন্ট করতেই পারে, তাতে সিও সাহেবের কিছু করার থাকে না। জেনারেল আনোয়ার কোন জিনিসটা  ধরবেন বলে মনোস্থির করে রেখেছেন, যা আমি আগে ভাগেই জানি, আমি চাইছি সেই গোপন তথ্যগুলি ওই সব অসহায় অফিসারদেরকে দিয়ে দেওয়া যাতে অন্তত জেনারেল আনোয়ার ভাবেন যে, এই সব অফিসারগন তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছেনএবং ভুল  করছেন না। 

হতাত দেখা গেলো জেনারেল আনোয়ার বললেন, জি-২, কাল অমুক ইউনিটে সকালে পিটি করার সময় আমি যাব, দেখবো, কারা কারা ইউনিটে সকালে বিশেষ করে সিও কিংবা টু আইসিরা পিটিতে যায় না। কি যন্ত্রনা। কি দরকার জেনারেলদের এই সব নিয়ে এতো চিন্তা করার? কন্সেপ্টটাই আমার ভালো লাগতো না। এটা একটা ধরাধরির বাতিক। এভাবে আসলে চলে না। 

আমি হয়ত রাতের বেলায় ওই ইউনিটের সিওকে বলে দিলাম, স্যার , আগামি কাল জিওসি আপ্নাদের ইউনিটে  সাডেন ভিজিটে যাবেন। কে বা কারা কারা পিটিতে অনুপস্থিত থাকে তা দেখার জন্য। একটু সাবধানে থাকতে হবে। দেখা গেলো, ১০০% অফিসার, সৈনিক হাজির। এটাও আই ক্যাচিং। জিওসি বুঝে যাচ্ছে, ইনফরমেশন লিক হয়ে যাচ্ছে। 

দেখা গেলো বাৎসরিক ফিটনেস ভিজিটে আমি অনেক পয়েন্ট গননার মধ্যেই আনি নাই। জিওসি তো আর সবসময় সবকিছু মনে রাখেন না। আবার এমন হয়েছে যে, কোনো কোনো ইউনিটের সিওগন তাদের বাৎসরিক ফিটনেস প্রোগ্রামটা বেশ কিছুদিন পিছিয়ে আরো একটু সময় নিয়ে করতে চান। যদি অফিশিয়ালি চিঠি পাঠাতে বলি, জেনারেল আনোয়ার, কিংবা জিএসও-১, বা কর্নেল স্টাফ হয়তো মানবেন না। আমি কোনো কিছুই না জানিয়ে সবার সিডিউলে একেবারে বদল করে দিয়ে ফাইনাল করে ফেলতাম যাতে সিওরা একটু সস্থিতে কাজ করতে পারে।

এই রকম অনেক কিছু আমি আমার তরফ থেকে সবার জন্য কাজ সহজকরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারপরেও অনেক ছোট খাটো উপদেস্টা আছে যাদের কারনে জিওসি অনেক কিছু জেনে যান আর সবার অসুবিধা হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ উপদেস্টা হচ্ছে এফআইইউ র অধিনায়ক। বর্তমানে এফআইইউ র অধিনায়ক হিসাবে আছে মেজর ফারুক। ছেলেটা খারাপ না কিন্তু আরো অনেক কিছু করতে পারতো সবার জন্য। 

ভাবছি, এবার জেনারেল আনোয়ারকে সরাসরি ম্যানেজ করা যায় কিনা। মানুষ তাকে বুঝালে হয়তো বুঝবে। এই সামনের তিন দিনের গ্রুপ ট্রেনিং এক্সারসাইজ আছে। সেটা হবে আমার টার্গেট। 

বদল করে দিতে চাই পুরু কন্সেপ্ট। সবাইকে নিয়ে থাকতে চাই এক সাথে। আমার সবাইকে প্রয়োজন।

২৬/১১/১৯৯৯- একা আমি

০১২০ ঘণ্টা, মাঝিরা সেনানিবাস

সবাই আমার বাইরেরটাই দেখে, কিন্তু আমি নিজে ভিতরে ভিতরে কতোটা  একা তা কেও জানে না। আমি আমার ভিতরে কতটা অসহায় এবং  কতটা  দুঃসহ জীবন কাটাই তা কেও জানে না। আমার  ছুটির দিনে আমি সুধু সিগারেট খাই আর টিভি দেখি। কখনো কখনো সারারাত কম্পিউটার এ কাজ করি, অহেতক কাজ।  তবু ভাল লাগে। কোন কিছুই করার নেই তাই। ঘুমও আসে না, সময়টা অনেক লম্বা মনে হয়। ছুটিরদিনে আমার খাওয়া দাওয়া এত  তাঁরতম্ম্য হয় যে মাঝে মাঝে নিজের ওপর খুব রাগ হয়। আলসেমি আমার বড় বোঝা । পেটের ভিতর  ক্ষুধার আগুন অথচ আলসেমি আমাকে ভর করে রেখেছে। আমি এখানে একা। আমি আমাকে গোছায়ে রাখতে পারি না অথচ গুছানো ঘর আমার খুব প্রিয় । মাঝে মাঝে আমি নিজেও আমার অগোছালো  ঘরটাকে   পসন্দ  করি না। তাই আমি নিজে নিজেই একবার গুছানুর চেষ্টা করি কিন্তু মাত্র ২দিন, আবার যেমন ছিলে।

২৬/১১/১৯৯৯-মিতুলের একক ভাবনা আমি

সুক্রবার, ১১১৫ ঘণ্টা, মাঝিরা সেনানিবাস

সব কিছুর ওপর এটা সত্য, মিতুল আমাকে ছাড়া আর কাওকে ভাবে না।  জিবনের শেষে যেমন  মৃত্যু সত্য, মিতুলের ভাবনার মধ্যে  সুধু আমি, এটাও তাঁরই মতো সত্য। আমি সুখি, মিতুলকে দেখে আমারও মনে হয় সে সুখি। তাঁরপরেও আমাদের দুজনের হয়ত অনেক পারসনাল ভাবনা থাকতে পারে এবং আছেও। এটা কোন পাপ নয়।

১৩/১১/১৯৯৯-আতাউরের ভিজিট

শনিবার, মাঝিরা সেনানিবাস, ১৫৫০ ঘণ্টা

আজ আতাউর (মুজিব কাকার ছোট ভাই) তাঁর বউ, শালি (নাজমুন্নাহার), এবং এক শ্যালক নিয়ে আমার এখানে আসলো। মজার পাব্লিক। সউদি আরবে থাকে।  সারখখন সুধু টাকা আর টাকা। তাঁর শ্বশুরের এই আছে, ওই আছে, সে এই পাবে, সে ওই পাবে। কি জ্বালা। কিন্তু একটা  মজার বেপার লক্ষ্য করলাম। বউ এর থেকে শালির ওপর নযর বেশি। ব্যাপারটা আরও ভাল করে লক্ষ্য করলাম। চোখে পরার মতো মাখামাখি। কিনতু ওর বউ কিছু বলে না  কেন? আমার কিছু ব্যাখ্যা আছে। তা হুল এমনঃ

 (১)   আতাউর এর বউ খুব সর্ট। সে দেখতে খুব সুন্দুরি ও নয়। আর একবার যখন বউ পোরানো হয়ে যায়, তখন নতুন একজন মাগনা পেলে খারাপ কি?

(২)  আতাউর এর বউ শিক্ষিত না খুব এতটা। কিন্তু ওর শালি আবার বেশ শিক্ষিত।

(৩) আতাউর এর বউ সম্ভবত ব্যাপারটা বুঝে কিন্তু কিছু না বলার  কারন সম্ভবত যে, সে জানে তাঁর মতো এক জন মেয়ে আরেক বার স্বামী পাওয়া অনেক কষ্টের।

(৪)   সে মেনে নিয়েছে।

বিবাহ জীবন এক বিচিত্র জীবন। কে যে কখন কাকে কিভাবে চায়,তাঁর কোন রুল নাই। কলহ আর রাগের শেষে যদি অনুরাগ না থাকে, তাহলে  দাম্পত্য জীবনের শেষ মুহূর্তটিও বিপদ জনকই থেকে যায়। 

২৩/০৯/১৯৯৯-জেনাঃ আনোয়ার-বিদায় পর

বৃহস্পতিবার , মাঝিরা ক্যানটনমেনট

গতকাল থেকেই একটা কেমন কেমন যেন শূন্য শূন্য অনুভব করছি। সব কিছুই আগের মতই আছে অথচ আগের মতো আজকে অফিসে আমার মন বসছে না। আগের মতো কোন কাজে গতি পাচ্ছি না। মনে হয় খুব টায়ার্ড লাগছে। বারবার এবং খনে খনে মনে হচ্ছে কি যেন মিসিং। কি যেন নাই। কি নাই? একটা প্রিয় মানুষকে হারালে যা মনে হয়, আমার যেন তাই মনে হচ্ছে। আমি কি জেনারেল আনোয়ার কে ভালোবাসি?  ওনি গতকাল ঢাকায় চলে গেছেন।  গতকাল রাতে আমি মেজর জেনারেল আনোয়ার এর বাসায় ফোন  করেছিলাম। সম্ভবত মেজর জেনারেল আনোয়ার এর ছেলে ঊপল ফোনটা ধরেছিল। আমি আসলে জানতে চেয়েছিলাম, মেজর জেনারেল আনোয়ার ঠিক মতো ঢাকাতে  পৌঁছায়েছে কিনা। উপল বলল যে জেনারেল আনোয়ার এখনো পৌঁছান নাই। আমি কেন ফোনটা করেছি, অথবা ফোনটা আদৌ করা ঠিক হয়েছে কিনা আমি জানি না, আমি জিএসও- ২ (অপস) হিসাবে জিএসও- ১ অথবা কর্নেল  স্টাফকেও ফোন করে জেনে নিতে পারতাম। কিন্তু আমি জানি, জিএসও- ১ (Lt Col Azim) অথবা কর্নেল  স্টাফ (Col Mollah Fazle Akbar) কেহই জিনিষটা পসন্দও করবেন না। আগের জিএসও- ১ ছিলেন Lt Col Hossain Shahid Shohrawardi and Col Staff was Col Iqbal karim bhuiyan. আমি আসলে কোন জিএসও- ১ অথবা কর্নেল  স্টাফ এর সাথে  অতটা ফরমাল ছিলাম না। তাঁরপরেও কেন যেন ওঁনাদেরকে ফোন করা হয় নাই। রাত ৯২০ মিনিটে কমান্ড ভইসে আমাকে জানাল যে জিওসি জেনারেল আনোয়ার তাঁর ঢাকার বাসায়  পৌঁছেছেন।  তৌহিদও (এ ডি সি) জেনারেল আনোয়ার এর  সঙে গেছে ঢাকায়।

শুনতে পাচ্ছি, ১১ আর্টিলারী কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার রফিক আপাতত দায়িত্ব পালন করবেন। 

২২/০৯/১৯৯৯-জেনাঃ আনোয়ার-বিদায়

বুধবার  , মাঝিরা ক্যানটনমেনট

আজ মেজর জেনারেল আনোয়ার এর ফেয়ারওয়েল হল। সব ব্রিগেড কমানডাররা, ব্রিগেড স্টাফ, ডিভিসনের স্টাফরা, সব সিওরা এবং কমানডেনটরা সবাই হাযির ছিলেন। এ এক হৃদ্যয় বিদারক  কাহিনি। একটিং জিওসি হিসাবে ব্রিগেডিয়ার রফিক কাজ চালাবেন। ১১ আটিলারি ব্রিগেড কমানডার। আমার সাথে তাঁর সম্পরকটা বড্ড খারাপ। কিন্তু আমি জানি না কি কারনে এই সম্পরকটা বড্ড খারাপ হয়েছে। ডিভিসনের স্টাফ হলে অনেক কিছু জানা যায়। কেও কারো গোপন কথা ফাঁস  করতে চায়না।যাই  হোক, ফেয়ারওয়েল এর সময় জেনারেল আনোয়ার এতই আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি কিছুই বলতে পারলেন না। প্রায় ১৫ মিনিট সুধু দারিয়ে থাকলেন। আমরাও চুপচাপ। কেও কেও আবার কৃত্তিম চোখের জলও ফেললেন। জিওসি র ফেয়ারওয়েল বলে কথা। জিওসি  সুধু এ কথাটা বললেন যে তিনি এই আর্মিতে তিনবার জন্ম গ্রহন করেছেন। প্রথমবার তাঁর কমিশনের সময়, ১৯৭১ সালে আরেকবার, এবং এখন একবার। এই ত্রিতিয়বার তিনি বুঝলেন, জন্মটা বড্ড কষ্টের । তাঁর ভাবতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে যে তিনি আর কখন ইউনিফরম  পরতে পারবেন না।  আচ্ছা, ইউনিফরম খোলে ফেলা কি খুব কষ্টের? এই মুহূর্তে হয়ত আমি ইউনিফর্ম খুলে ফেলার কি কষ্ট সেটা হয়ত আমার উপলব্ধিতেই আনতে পারবো না, কিন্তু যেদিন আমি নিজে এই কাজটি করবো হয়ত আজকের দিনের জেনারেল আনোয়ারের আবেগ তা আমার কাছে আরো বাস্তব এবং কঠিন হয়ে ধরা দেবে। 

১৯/০৯/১৯৯৯-জেনাঃ আনোয়ার

রবিবার, মাঝিরা ক্যানটনমেনট, ০২৪৮ a.m

তীর ভাঙগা ঢেউ আর তীরে  ভাঙগা ঢেউ কি একজিনিশ? নাহ, কখনই দুটুজিনিষ এক হতে পারে না।  একটি হচ্ছে প্রচণ্ড শক্তিশালী  গতিসমপন্ন জিবনের প্রতিক আর অন্যটি হচ্ছে একটি মরা ইতিহাস যার শুধু অতীত আছে কিন্ত বরতমান বা ভবিসশত নাই। এমনই একটা ইতিহাস যেন রচিত হল এই সপ্তাহে। ঘটনাটা মেজর জেনারেল আনোয়ার কে নিয়ে।  আমি তাঁর GSO-II (Operation) Staff হিসাবে কাজ করছি। আমার সেনাবাহিনির  জীবনে এটা একটা বড় এপ্য়েনমেনট এবং আটিলারি হিসাবে এটা কোরের জন্য অনেক বেশি সম্মানের। আমি নিজেও এই এপ্য়েনমেনট কে আমার এবং আমার কোরের একটা টারনিং পয়েন্ট হিসাবে মেনে নিয়েছি।  পদাতিক ডিভিশন এ যেখানে সব পদাতিকের আদিপত্ত, সেখানে এক জন আটিলারি হিসাবে খুব বেশি সুখের  হবার কথাও নয়। তাঁর পরেও আমি চ্যালেঞ্জেটা সাহসের সাথেই নিয়েছিলাম। যা হোক, এ ব্যাপারে পরে লেখা যাবে। এখন যা বলতে চেয়েছিলাম,  তাই বলি।

 মেজর জেনারেল আনোয়ার ১১ পদাতিক ডিভিসনের জিওসি। রাজা যাকে বলে আরকি। জিওসির অপারেশনাল কোড নামও কিন্তু “সম্রাট”।  সুতরাং বুঝতেই পারছেন জিওসি মানে আসলেই রাজা।  মেজর জেনারেল আনোয়ার এর গায়ের রং যদিও কালো কিন্তু চেহারার মধ্যে  একটা বনেদি ভাব আছে। এবং তিনি প্রকরিত পক্ষে একজন বনেদি ঘরের লোকও বটে। কিন্তু  তাকে নিয়ে অনেক রিওমার আছে ক্যানটনমেনট এর ভিতরে।    রিওমার আছে যে, কেহ কেহ মেজর জেনারেল আনোয়ার কে যমের মতো ভয় পায় আবার কেহ কেহ মেজর জেনারেল আনোয়ার কে  ঘ্রিনা করে। কেন করে এর  ব্যাখ্যা আমার  কাছে নাই।  তবে আমার কাছে  মেজর জেনারেল আনোয়ার আজ পর্যন্ত এমন কোন কিছুই করেন নাই যার জন্য আমি তাকে খারাপ কিছু বলতে পারব। আমি  তাকে পসন্দ করি। মেজর জেনারেল আনোয়ার সম্ভবত আর্মির চিপ হবার একটা স্বপ্ন দেখছেন।  তাঁর সে আশার একটা মৃত্যু হল আর কি। তাঁর   পোস্টিং হয়েছে  Ministry of Foreign Affairs এ। সম্ভবত বাইরে কোথাও Ambassador হিসাবে পাঠানো হবে। He may not come back to Uniform again, But what I thought is that he was needed for a better army. When he was CGS, he tried to implement a system in the training doctrine in Bangladesh Army, and when I worked with him as GSO-II (operation), I found his very meticulous in implementing training as soldiers’ requirements. That’s why I just want to say that for a better Army, he was a wave which was waiting to hit the target. কিন্তু কিছুই করার নাই, বালাদেশের রাজনিতি বড় কঠিন।  কে যে কখন কি হয়ে উঠে তাঁর হিসাব রাখা ভারী মস্কিল।

১২/০৯/১৯৯৯-পৃথিবী না দেখা একজনের গল্প

রবিবার, ১৮০০ ঘণ্টা, মাঝিরা ক্যানটনমেনট

গত সুক্রবার (১০.৯.১৯৯৯) আমি আর মিতুল বেশ ভোরে around 6 o’clock in the morning, strip দিয়ে মিতুল এর ইউরিন   পরীক্ষা করলাম। মিতুল conceived করেছে। আমরা দুজনেই  মানসিক ভাবে প্রস্তত to take the second baby. ফলে খবরটা আমাদের দুজনকেই খুশি করেছে। আমরা দুজন কে দুজন অনেকক্ষণ জরিয়ে রেখেছিলাম। আমরা বেশ কিছুদিন যাবত এটা আশা করছিলাম। আজ খুব ভাল লাগল। আমাদের দিনটা শুধো next calculation করেই কেটে গেল। আমরা কাল্কুলেসন করছিলাম কেমন করে মিতুল মীরপুর থেকে ঘিওর যাবে কলেজ করতে? কিংবা উম্মিকা কে ইসকুলে কেমন করে আনা নেওয়া করা হবে? একটা  সমস্যা হয়ে দাঁড়াল।

সব মিলে  আমরা decision নিলামঃ

 (১) মিতুলকে ওতি  তাড়াতাড়ি  মানিকগনজে shift করতে হবে। primary stage এ কোন অব্তাতেই long journey   করতে দেয়া যাবে না। মানিকগনজ থেকে ঘিওর যাওয়া better than that of from Mirpur.

(2)  মানিকগনজ না যাওয়া অবধি মিতুল should be at home. She must not go for a single day long journey for college at Ghior.  তাই ১৫ দিনের ছুটির জন্য দরখাশ্ত করল মিতুল কলেজ বরাবর। শনিবার দিন (১১।৯।১৯৯৯)   আমি একা কলেজে ওর দরখাস্তটা নিয়ে এলাম। 

 আমকে রাতে পুনরায় ঢাকা থেকে  বগুড়া যেতে হবে অথচ এখন ঢাকা থেকে ঘিওর এবং ঘিওর থেকে ঢাকা লম্বা  জারনিটাও খারাপ লাগছে না। বরং I was feeling all through happy because we are taking care for our next baby inshallah.

মিতুল ভাবছে এবার আমাদের ছেলে হবে। আমারও  তাই ধারনা। হয়ত এটা মনের ব্যাপার বা ভাবনা। এই ভাবনার মধ্যে কোন বৈজ্ঞানিক কারন নাই। তবে  যদি আর একটা মেয়েও হয়, আমার কোন খারাপ লাগবে না। আমার একটাই চাহিদা, ও যেন মিতুল এর মতো অথবা আর সুন্দর হয়। আমার মিতুল এর চেয়ে এতো সুন্দর এবং এতো পবিত্র আর কেহ নয় এবং আমি আজো কাওকে দেখিনি।

 “ হে আমার আদরের আগত মানব সন্তান, আমি  তোমাকে এ পৃথ্বীর আলোতে স্বাগত  জানাই। এ বড় সুন্দর পৃথিবী, তোমাকে এ পৃথিবী নেশাগ্রস্ত করে ফেলবে, আমরা আছি তোমার পাশে। তুমি এসো  তোমার মায়ের কোলে। পৃথ্বী কি তোমাকে ডাকছে না? এখানকার আকাশ বড় নীল, সাগর বড় বিশাল, এখানে সূর্য সবাইকে আলো দেয়, পাহাড় আছে, সবুজ গাছ আছে, সুন্দর সুন্দর ফুল আছে, তুমি কি লাল ফুল ভালবাস নাকি নীল? আমি নীল ভালবসি। নীল জানো কি  কিসের অর্থ? “

০২/০৯/১৯৯৯- পারিবারিক অন্তর্কলহ

বৃহস্পতিবার, ছুটির দিন, ১৩৫৭ ঘণ্টা, মাঝিরা 

আমাদের পরিবারটির মধ্যে অন্তরকলহ ব্যাপক বেশি। আমি আমার পরিবার বলতে আমি, আমার বোনেরা, আমার ভাইয়েরা কে বোঝাচ্ছি। আমার মা বড় নিরিহ মানুষ। সে কোন পক্ষেই নয়। সে সত্তেই খুব অসহায়। আমি আমাদের পরিবারের সদস্যদের এবং যাদের সংগে আমাদের সদস্যরা মেলামেশা করে, আমি তাদের সবাইকে খুব কাছে থেকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। আমি তাদের কারোর মধ্যে কোন difference দেখিনি। এই পরিবারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, প্রতিটি সদস্য প্রতিটি সদস্যকে ভালবাসে, কিন্ত বিশ্বাস করে না। আবার অন্যদিকে, এই ভালবাসার বহিরপ্রকাশ খুব কম। এরা যানেনা কেমন করে ভালবাসার কথা বলতে হয়। ফলে একজন আরেকজনকে খুব সহজেই ভুল বুঝে। আর ভুল বুঝাবুঝির থেকে Gap তৈরি হয়। আমাদের পরিবারেও এই gap অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। গ্যাপ তৈরি হয়েছে ভাইয়ের সংগে  বোনের, বোনের সংগে ভাইয়ের, ভাইয়ের সঙে ভাইয়ের। একজন আরেক জন তাদের এই ভুল বুঝার কারন বেখ্যা করতে পারেনা। তারা অবস্য জানে না কি কারনে তাদের  এই সমস্যা। ফলে শেষে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে হৈ চৈ আর রাগারাগি। সমাধান নাই।

এই পরিবারের সদস্যরা নিজের ভুল কখনই স্বীকার করে না, এবং তারা যা ভাবে ওটাই মনে করে যে সবচেয়ে ভাল সিদধান্ত। অন্য কারও সিদ্ধান্ত্ব গ্রহনযোগ্য নয়। এখানে আরো একটা মজার ব্যাপার হল, তারা নিজেরা জয় হবার জন্য  যা কিছু করার তাও করার অবকাশ রাখে। ফলে স্বার্থ বজায় রাখার কারনেই  একই ঘটনা এক এক জনের কাছ থেকে এক এক রকম শোনা যায়। এবং এর কোন শেষ নেই। “I am sorry, or I love you, or I miss you” এই জাতিয় কোন কথা এই ফামিলির লোকজন বলতে শিখেনি। তাই  বলে কি এই সব এই  ফামিলিতে  ঘটছে না?

 অবস্যই ঘটছে, কিন্তু বহির প্রকাশ ঘটছে না। এই গুলোর বহির প্রকাশ থাকাটা অত্যন্ত জররি। তবে  একটা জিনিশ আমি এখন জানি না, তা হল, এরা কি এদের নিজ নিজ ফামিলির সঙে এই বার্তা আদান প্রদান করে? হয়ত করে এবং সেটা আমার জানা নাই। যেমন, আমি চাই আমার  সন্তান বোজক যে আমি ওদের কে ভালবাসি। আমি ভুল করলে সরি বলতে চাই, মিস করলে বলতে চাই, আমি তোমাকে মিস করছি। এবং এভাবেই ওরা শিখুক যে একটা ফামিলি এভাবেই গড়ে  ওঠোক।  আমি এখনো বুঝিনা আমার ভাই আমাকে কতটা ভালবাসে, আমি এখনো বুঝিনা আমার বোন আমাকে  কতটা ভালবাসে, আমি এখনো বুঝিনা আমি আমার ভাইকে বা বোনকে কতটা ভালবাসি। মাঝে মাঝে আমি আসলে কিছুই বোঝতে পারি না। কি জানি একই অভিযোগ না জানি আমার সন্তানেরা করে কিনা কে জানে।

০১/০৯/১৯৯৯- নিঃসঙ্গতা

বুধবার, ১৯২৪ ঘণ্টা, বগুড়া ক্যানটনমেনট।

নিসঃসঙ্গতা আমার প্রতিদিনের একটা সংগি। চারিপাশে এতো মানুষজন, এতো সারি সারি অট্টালিকা, হাই স্পীডের গাড়ি ঘোড়া চলমান, সবাই কোনো না কোনো কিছু নিয়ে ব্যস্ত। কেউ তাদের পরিবার নিয়ে, কেউ নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে, কেউ আবার মহাকাশের অন্তর্নীহিত রহস্য ভেদ করা নিয়ে ব্যস্ত। আমার সব কিছুই আছে, অথচ দিনের বেশীরভাগ সময়ই আমি কেনো জানি একা। কাজের মধ্যে ডুবে থাকি, তারপরেও আমি একাই মনে হয়। দিনশেষে সন্ধ্যায় আমি একা, দিনের আলো ফুটবার সময়েও আমি একা, ভরদুপুর লোকারন্য পরিবেশেও আমি একা।

বাইরে যখন বৃষ্টি হয়, টিনের চালের রিমঝিম শব্দ হয়, কিংবা ঝড়ো হাওয়ায় যখন পাশের গাছ গাছালীগুলি একে একে একদিক থেকে আরেকদিকে দিকবিদিক জ্ঞান হারানোর মতো হেলে দুলে উঠে অথচ ওরা ওদের স্থান পরিবর্তন করে এই ঝড় হাওয়া থেকে মুক্তির পথ খুজে পায় না, তেমনি আমার কাছে মনে হয়, আমি সব কিছুর পরেও অন্য কোথাও যাওয়ার কোনো পথ দেখি না। আমি ও ওই গাছ গাছালী গুলির মতো কোথাও পালাতে পারি না।

গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, আমি জেগে থাকি একা। নিশিচরের মতো আমার চোখে ঘুম নাই, বাইরের অন্ধকার রাতের মতো আমি আমার জীবনের অনেক কিছু তখন আর চোখের সামনে দেখতে পাই না। আমার ভয় করে। কিসের ভয়, কাকে ভয় আমি সেটাও স্থির করতে পারিনা। একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ আমাকে চাপা হাতে রুদ্ধ করে কি জানি কানে কানে বলে যায়, আমি তার ভাষা বুঝি না।

আমার সংসার আছে, কেউ না কেউ আমার উপর ভরষা করে। আমি অনেকের ভরষার জায়গা বটে কিন্তু আমি শক্ত করে কোথাও দাড়াতে পারি না। সারাক্ষন মাথা যেনো ভন ভন করে। ক্ষুধা লাগে, খাবার আছে অথচ আমার পেট ভরে না।

আমি একা।

আমার এই একাকীত্ব অবশ্য আজকের একদিনেই তৈরী হয় নাই। দিনে দিনে আমি একটা বাস্তব খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছিলাম, এই বিশাল দুনিয়ার মধ্যে এতো সব মানুষ নিজের কাধের উপরে থাকতেও কেনো যেনো মনে হয় কেউ আমার হাতটা ধরে বলে না- আছি তো আমি। এতো ভয় কিসের?

তবে আমি আমার এই একাকীত্ব কে খুব উপভোগ করি মাঝে মাঝে। আমার এই জীবনে কেউ থাকুক বা না থাকুক, আমি তো আছি আমার জন্য। যখন রাত হয়, আমি আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজকে দেখি, যখন সকাল হয় আমি আবার আয়নায় গিয়ে দাড়াই, নিজেকে দেখি। অদ্ভুত লাগে আমাকে। আমার আশেপাশে যাদেরকে দেখি তারা আমার সাহস, আমার কনফিডেন্স, আমার জিদ, আমার নতুন নতুন ইগো দাঁড়িয়ে আছে। ওরা শুধু আমাকে কখনো সাহস দেয়, আমার কনফিডেন্স আমাকে অনেক দূর যেতে সাহাজ্য করে, আমার জিদ আমাকে একা থাকার প্রেরনা জোগায়, আর আমার ইগো? আমার ইগো আমাকে শুধু এটাই বলে, তুমি কারো থেকেই কম কিছু নও। এই দুনিয়ায় তোমার মতো আরো অনেক পুরুষ কিংবা মানুষ জন্মেছিলো যারা একাই সমুদ্র পার করেছে, তারা সমাজকে পরিবর্তন করেছে। তারা এক সময় তোমার থেকেও দূর্বল ছিলো।

কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, কেমন আছি? সদা হাস্যজ্জোল চোখে আমি তড়িত উত্তর দেই- খুব ভালো আছি। কিন্তু আমি কি আসলেই ভালো আছি? হয়তোবা আমি আসলেই ভালো আছি। আমার জগত আলাদা, আমার ভাবনা আলাদা, আমার কষ্ট আলাদা, আমার পছন্দ আলাদা, আমার সুখটাও সবার থেকে আলাদা। পৃথিবীর কেউ সুখী না। আমিও হয়তো সবার মতো সুখী না কিন্তু আমার একাকীত্ব আমাকে সুখী করেছে। সেই সুখটা আমি একাই ভোগ করি। আমি খেতে গেলে একাই খাই, ঘুমুতে গেলে একাই ঘুমাই, হাসলে একাই হাসি। কেউ হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু আমার অপেক্ষার রাত শেষ হয় না, আমার দিন শেষে মনে হয় আমি তো ভালোই আছি।

একটা সময় আসবে, আমি বুড়ো হয়ে যাবো, আমার মন পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমার আজকের দিনের অনেক শখ আহ্লাদ পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমি হয়তো তখন আর আজকের দিনের বৃষ্টি, আজকের দিনের নিশীথ রাত, কিংবা চাদনী চাঁদ কিছুই আর আকর্ষন করবে না।

আমি তখনো একাই থাকবো। হয়তো তখন আমার সন্তানেরা আশেপাশেই থাকবে, আমার পরিবার এক ছাদের নীচেই থাকবে কিন্তু সেই থাকা আর আজকের দিনের না থাক্র মধ্যে হয়তো কোনো পরিবর্তনই হবে না।

আমি নিঃসঙ্গ একটি মানুষ যার প্রতিটি দিন আর রাতের চরতিত্র এক। তার কষ্ট আর সুখের সংগা এক, তার হাসি আর চোখের জলের ধারা একই। কারন নিঃসঙ্গ মানুষেরা এই রকমেরই।

২৮/০৮/১৯৯৯-স্টাফ কলেজ থেকে বগুড়া

 

Almost এক বছরের ও বেশি সময় মিরপুর স্টাফ কলেজ এ ছিলাম। বগুড়া ক্যানটনমেন্টে পোষ্টটিং হয়েছে। ফ্যামিলিকে ঢাকায় রাখতে হবে। বদি ভাই অগ্যত কারনেই একটু positive মনে হয় কিন্তু মাঝে মধ্যে এমন এমন মন্তব্য করেন যা আমার কাছে দূরভেদ্য মনে হয় whether he is positive or negative. ঢাকায় কোথায় ফ্যামিলিকে রাখবো এটা নিয়ে অনেক ভাবলাম। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম যে মীরপুর লক্ষ্মীকঞ্জুতে বাসা ভাড়া নেব এবং নিলাম। ভাবলাম মেয়েটি ছোট, আসমাকে কলেজ করতে হয় সেই ঘিওর। বদি ভাই সাহাজ্যে আসতেও পারেন। কিন্তু লাভ হয় নাই। ওনি হজে গেলেন, বিসশের সবাইকে বলে গেলেন, আমার পাশের ফ্লাটে বলে গেলেন, অথচ আমাকে বলে গেলেন না। আমার মেয়েকে দেখলেও তিনি ডাক দেন না। আমি সালাম দিলেও ওনি সালামের উত্তর নেন না। মুখ ঘুরিয়ে নেন। এর কারনটা কি? ব্যাখ্যা করছি। লক্ষ্মীকঞ্জুর বাড়ির মালিক যিনি, তিনি অততান্ত অসৎ এবং ঘোষখোর। আবার লক্ষ্মীকঞ্জুর মালিকের বড় ভাই বদি ভাইয়ের খুব ভাল বন্ধু। বদি ভাই যে কোন কারনেই হোক, তিনি এই বাড়িটার কেয়ারটেকারের কাজটা করছেন। এই কেয়ারটেকারের কাজটা করার জন্য আমার ধারনা তিনি কোন টাকা পয়সা নেন না। তবু তিনি কাজটা করেন। আমি জিনিসটা সাপোর্ট করিনি। তাই তার এতো রাগ। তার ব্যাখ্যা হচ্ছে, লক্ষ্মীকঞ্জুর মালিকের আরেক ভাই যিনি তার বন্ধু, তিনি অসৎ নন। And by profession, he is a teacher and ex-principal. So, he cant leave him as friend even his brother partner is not honest.যদিও বদি ভাই কথাটা মুখে বলেন নি কিন্তু কাজকর্মে বুজাছছেন। আমার সঙ্গে বদি ভাইয়ের সম্পর্কটা একদম চরমে। আসমাকে উদ্দেস্য করে উনি একদিন বললেন, আসমা একটি ডাইউস, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, দাইউশ মানে কি? উনি বললেন, যে কোন হুযুরকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারব দাইউশ মানে কি। পরে জানতে পারলাম যে, দাইউশ মানে খারাপ মেয়ে।

১৫/০৭/১৯৯৯- উম্মিকার কাছে জিজ্ঞাসা

 

Dear Ummika,

(My Dream that got fulfilled.)

 In the year of flood-95, the story took place. The true victim was narrating his experiences in the national TV media.

The man was running towards the safe zone because the hurricane, with hot water and very high speed, was rushing towards them from Bay of Bengal. They could not reach to the safe zone. The waters caught them enroute. Thinking immediate sanctuary, he claimed up the big banian tree with his two small kids, Faria , the daughter and Parvez Zaman, the son. The man was holding his two kids very tightly so that none go missing. But  the current of the water was so high that his hands were unable to hold two kids together anymore or otherwise his life was in danger.  Now time has come to decide to surrender one minimum to survive marginally. The man could not decide any thing. What should he do? He can not surrender anyone!  At the moment of “no time left” things happened automatically. The man survived. His one kid is also alive. And the kid is Parvez Zaman, the son. Naturally the daughter was sacrificed. What he could do? He could do so many things but he could not do anything. I do not say any thing right now sitting in a comfortable situation what I will do then, but what the man did it might happen to me too. Luck only can decide their fate, my daughter or my son. Only God knows.

 What you would do Ummi?

০৬/১২/১৯৯৮-মা পরিবারের বন্ডেজ?

রবিবার, মাঝিরা সেনানীবাস, রাতঃ ১১টা ২৩ মিনিট

মাঝে মাঝে আমি একটা অদ্ভুদ ব্যাপার নিয়ে ভাবি। কিন্তু আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার মাঝে মাঝে বেশ ভাবতে ইচ্ছে করে। আমরা দুই ভাই, পাচ বোনের মধ্যে এখন চারজন বেচে আছেন। মাও বেচে আছেন। মা গ্রামে থাকেন, আমরা সবাই মাকে কেন্দ্র করেই প্রকৃতভাবে আসলে ঈদে, পর্বে কিংবা যে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে একত্রিত হই। আমি বগুড়ায় আছি, মিতুলকে ছাড়াও আমি যখন ছুটি নিতে চাই, তার মাঝেও মায়ের সাথে দেখা করার প্রবনতায় আমার ছুটি যেতে ইচ্ছে করে। হাবীব ভাই আমেরিকায় থাকেন, তার সাধারনত সবসময় বাংলাদেশে আসা হয় না। উনি আসতেও হয়তো চান না। হাবীব ভাইয়ার এই যে না আসার অনীহা, কোনো একদিন হয়তো উনাকে এর বড় মাশুল দিতে হতে পারে। এর কারন একটাই। আজ হাবীব ভাই যে সব কারনে তার অনীহা হচ্ছে, যেমন, বোনদের প্রতি উনার আস্থা নাই বললেই চলে, গ্রামের প্রতি উনার অনেক অনীহা কারন গ্রাম তার স্ট্যান্ডার্ড নয়। থাকা অসুবিধা, খাওয়া অসুবিধা, পায়খানা প্রস্রাবে অসুবিধা। পরিবেশ তার মনের অনুকুলে নয়। তার উপর তার সমসাময়ীক কোনো বন্ধুরাও নাই যে, উনি কোথাও আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারবেন। একদিক দিয়ে ভাবলে ব্যাপারটা মনে হয় ঠিকই আছে। আবার যদি সুদূরপ্রসারী ভাবনায় ভাবি, এই বিচ্ছিন্নতা কোন একদিন হাবীব ভাইকে হয়তোবা মাশুল দিতে হবে। কেনো বলছি, তার একটা ব্যাখ্যা আছে। মানুষ বড় হয়, তার সম্পদ হয়, একদিন সম্পদের চাহিদা আর থাকে না। তখন দরকার হয়, আসলে দরকার না, এটাই হবে যে, ইচ্ছে হবে সেই চেনা পরিচিত বাল্যকালের জায়গাগুলিতে ফিরে যাই, তারপর সেখানে সেই গ্রাম, সেই আদি নদী, মেঠো পথের ধারে হাটতে হাটতে সময় কাটানোর বাসনা হবে। সবাই ওই সময় একসাথে জীবিত নাও থাকতে পারে, কিন্তু এই সমসাময়ীক বন্ধুদের ডালপালারা অর্থাৎ তাদের বাচ্চা কাচ্চারাও এক সময় বন্ধুতে পরিনত হতে পারে। কিন্তু এটা সম্ভব তখনই যখন অবিচ্ছিন্ন একটা সম্পর্কের মধ্যে কেউ থাকে।

যাই হোক, আমি ঢাকার বাইরে থাকি বিধায় মায়ের উপর সন্তানের যে প্রাত্যাহিক দায়িত্ত, বাজার সদাই, দেখভাল ইত্যাদি করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আমাদের বদি ভাই অত্যান্ত আন্তরীকতার সাথেই মায়ের এই যত্নটা করেন। যদিও তিনি আমার আপন সহোদর ভাই নন। মাসে মাসে এককালীন বাজার করে দিয়ে আসেন, মায়ের খোজ খবর নেন। মাকে তিনি মা বলেই জানেন। এই রকম একজন নিঃসার্থবান মানুষ যুগে যুগে পাওয়া যায় না। বদি ভাইয়ের সাথে আমার বোনদের দেখা হয়, কথা হয়, যেদিন তিনি গ্রামে যান, সেদিন সবার সাথেই উনার দেখা সাক্ষাত হয়। এমন কি আমাদের গ্রামের অনেকের সাথেই উনার এখন ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। সবাই উনাকে স্যার বলেই সম্বোধন করেন।  

কিন্তু সবচেয়ে বড় ভয় হয় আমার যে, হাবীব ভাই দেশে না আসার কারনে যেমন তার সন্তানদের সাথে আমাদের অন্যান্য ভাই বোনদের সন্তানদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠছে না, তেমনি বদি ভাইও তার সন্তানদেরকে আমাদের এই সম্পুর্ন পারিবারিক সিস্টেমের সাথে বহুমুখী বন্ধনের চেষ্টা করছেন না। ফলে আমাদের বোনদের সন্তানেরা যেমন বদি ভাইয়ের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্ত গড়ে উঠছে না, তেমনি হাবীব ভাইয়ের সন্তানদের সাথেও একই অবস্থা। এই বন্ধনটা ছাড়া ছাড়া ভাবের। সতস্ফুর্ততা নাই। আমি যখন ঢাকায় যাই, বেশীর ভাগ সময়ই আমি খেয়াল করেছি যে, আমার সময় কাটে কিছু অংশ মানিকগঞ্জে, কিছু অংশ গ্রামে আর মাঝে মাঝে মীরপুর বদি ভাইয়ের বাসায়। আর সেটাও বেশ অল্প সময়ের জন্য।

হাবীব ভাইয়ের ছেলে মাসুদের সাথেও কারো কোনো সখ্যতা গড়ে উঠছে না। এমনকি আমার সাথেও না। তাতে যেটা হচ্ছে তা হলো, কোনো একদিন, আমরা হয়তো এভাবেই ছাড়া ছাড়া ভাবেই দুনিয়া ত্যাগ করবো। কে যে কখন দুনিয়া থেকে চলে যাবে, তখন পরিবারের অনেকেই হয়তো পাশে থাকবে না। এটা মর্মান্তিক।

আমার কাছে মনে হচ্ছে, মাকে কেন্দ্র করে এখনো কিছুটা বন্ডেজ আমাদের সবার মধ্যে আছে। কিন্তু এই বন্ডেজটা কি খুব শক্ত একটা বন্ডেজ? এই বন্ডেজের সবচেয়ে দূর্বল দিক হচ্ছে, যেদিন মা থাকবেন না, সেদিন এই সেনটার পয়েন্ট "মা" এর অভাবে বাকী সব বন্ডেজ নিমিষেই ভেংগে যেতে পারে। কিন্তু এটা তো কোনো পারিবারিক সম্পর্ক হতে পারে না?

কিন্তু আজ যদি আমরা এমন একটা বন্ডেজ তৈরী করতে পারতাম যেখানে "মা" সেন্টার পয়েন্ট নয়, তাহলে মা যেদিন থাকবেন না, সেদিনও এই পারিবারিক বন্ডেজটায় কোনো প্রকার হুমকীর সম্মুখীন হতো না। কিন্তু আমার ধারনা, আমরা সেটা করছি না। আর এর ফলাফল দূর্বিসহ। আমাদের পরবর্তী জেনারেশন একে অপরের কোনো খোজ রাখবে না, চিনবে না, হয়তো কখনো জানবেও না যে, অতীতে কোনো একসময় আমাদের মধ্যে এমন একটা সম্পর্ক বিরাজ করেছিলো। অথচ তখনই হয়তো এই বন্ডেজটার অনেক প্রয়োজন।

একটা সময় আসবে, হাবীব ভাইয়ের সবকিছু থাকা সত্তেও তিনি অনিরাপদ ফিল করবেন, পাশে কাউকে হয়তো পাবেন কিন্তু তারা তার পরিবারের কেউ না। আমিও হয়তো ভাববো, আহা যদি এই মুহুর্তে আমার পাশে কেউ থাকতো যাদের শরীরে আমার রক্ত বা যারা আমার একান্ত লোক। আমার পরিবারের বাচ্চারাও হয়তো একদিন প্রশ্ন করবে, আমাদের অতীতের জেনারেশন ছিলো না? তারা কোথায়?

আজ আমি একটা হাইপোথিসিস ডায়াগ্রাম তৈরী করে বুঝতে চেয়েছি, আসলে মা সেন্টারড বন্ডেজ কি আর মা ছাড়া বন্ডেজ কি। গা শিউরে উঠে।

১৮/০৯/১৯৯৮-আমি অসহায় একজন মানুষ

মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট,  Friday,

কেনো বললাম আমি অসহায় একজন মানুষ? আমরা বলি যখন কোনো মানুষের হাত তাহকে না, পা থাকে না, চোখে দেখে না, কিংবা কোনো না কোনো ভাবে সে নিজের কাজ কর্মের কাছে অসহায়। তাঁকে অন্য কারো সাহাজ্যে চলতে হয়। এদেরকে বলা হয় আসলে শরাঈরিক প্রতিবন্ধী। আমি সে রকমের কেউ নই। আমার হাত আছে, আমার পা আছে, আমার কোনো অসুবিধা নাই। আমি দৌড়াতে পারি, আমি গান গাইতে পারি, আমি হাসতে পারি, আমার দুচোখ ভরে খুশীতে কান্নায় অশ্রু আসে। তাহলে আমি কেনো নিজেকে অসহায় মনে করছি?

আসলে অসহায়ত্ব এমনি এক বেদনার নাম যা নিজের চোখের সামনে প্রিয়জনের সর্বনাশ হতে দেখেও যখন কেউ তাঁকে রক্ষা করতে পারে না, তার নাম। নদীর ওপারে যখন নিজের পোষা কোনো আদরের কুকুরটি কিংবা মানুষটি কারো হাতে নাজেহাল হয় আর তখন নিজে সাতার না জানার কারনে নৌকার অভাবেও তার কাছে পৌঁছানো না যায় আর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের আকুতি শুনতে হয়, তার নাম “অসহায়ত্ব”।

আমি যখন আমার চোখ বন্ধ করি, আমি পরিষ্কার দেখতে পাই , আমার বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার প্রিয় মানুষ গুলির পাশে কিংবা বিপদের পাশে কেউ নাই। এমন কি আমিও যদি কোনো বিপদে আর্তনাদ করি, আমার জন্য কেউ হয়তো দৌড়ে সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে কাছে আসবে না। কারন সে রকমের কোনো বন্ড, মায়া, মহব্বত কিংবা দায়িত্তশীল কোনো মানবের সাথে আমার যোগাযোগ হয় নাই। আমি যাদেরকে আমার চোখের সামনে দেখছি, যেমন বদি ভাই, কিংবা হাবীব ভাই, তারা কেমন যেনো সেলফ কেন্দ্রিক কিছু মানুষ। যে পরিস্থিতির ভয়ে আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েও পড়তে চাই নাই, যে ভয়ে বুয়েটে চান্স পেয়েও পড়তে চাই নাই, যে পরিস্থিতির ভয়ে আমি নিজেকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও এই সেনাবাহিনীতে এসেছিলাম, সেই রকমের ভরষার স্থান আজো আমি তৈরী করতে পারিনি মনে হচ্ছে। তাই যখন আমার অকাল মৃত্যুর কথা মনে পড়ে, যখন মনে পড়ে আমার কিছু প্রিয়জন আছে, যেমন তুমি (মিটুল) অথবা উম্মিকা এদের পাশে হটাত কোনো আকষ্মিক সাহাজ্য এসে হাজির হবে কারো কাছ থেকে এটা আমার মনে হয় নাই। তারা আছে, থাকবে আবার নাইও। আমার মা আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু তার সামর্থ নাই যেখানে নিজের জীবন দিয়েও কিছু করতে পারে। আমার বোনেরা তো আরো অসহায়। কাউকেই আমি কোনো প্রকারের দোষারুপ করতে পারি না। আসলে সম্ভবত আমরা সবাই অসহায়।

তবে কেনো জানি আমার শুধু একটা কথা প্রায়ই মনে হয়, কোনো একদিন, আবার বলছি, কোনো একদিন হয়তো আমার এই দুশ্চিন্তার অবসান হবে, আমি আর নিজেকে অসহায় মনে করবো না এবং আমার নিজের উপর নিজেরই কনফিডেন্স থাকবে একাই সব সামাল দেয়ার। কিন্তু কেনো মনে হয়, বা কিভাবে এটা হবে আমার জানা নাই। ইন্টিউশন থেকেই এটা মাঝে মাঝে আসে। হয়তো ঠিক তখন আমার প্রিয়জনগুলিও জানবে না আজকের দিনের এই সময়ে এই পরিস্থিতিতে আমার বুকের ভিতর কতটা রক্ত ক্ষরন হয়ে সেইখানে দাড়াতে পেরেছি।

১৪/০৯/১৯৯৮- পৃথিবী বড় সুন্দর

মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট, সময় রাত দুইটা সোমবার।

বড় বড় মনিষীরা তাদে বিখ্যাত বিখ্যাত লেখনীতে বারংবার একতা কথাই লিখে গেছে- পৃথিবী বড় সুন্দর।

আসলে এই সুন্দরটা আসলে কি? এটা কি রংগীন? এটা কি নীল? অথবা লাল? নাকি সবুজে ভরা কোনো আকাশ? অথবা নীলে ভরা কোনো পার্ক? কেউ কেউ তাহলে এতো সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে আত্মাহুতির পথ কেনো বেছে নেয়? তারা কি পৃথিবীর এই রুপময় সউন্দর্য দেখে না? অথবা তারা কি এটা জানে না যে, পৃথিবী সুন্দর!! আসলে পৃথিবী সুন্দর তখন যখন মনে অফুরন্ত ভালোবাসার কলি ফুটে, আনন্দের ধারা বয়ে যায় কিংবা মায়ার জালে এমনভাবে জড়িয়ে যায় যে, চলমান পিপ্রার সারি দেখলে তার রুপ মনকে নাড়া দেয়, কিংবা কোনো অবুজ শিশুর অবুঝ বায়নায় সারাদিন সারারাত কান্না কাটি করলেও মনে কেমন যেনো একটা মহব্বতের সুর বেজে উঠে। অজস্র মেঘে ঢাকা আকাশ, খরতাপ মাঠ কিংবা ঝড়ো হাওয়ার মতো তান্ডবেও যখন কোনো প্রকৃতি এলোমেলো হয়ে আছড়ে পড়ে পথের পাশে, সেই সব দৃশ্য ও মনকে পুলকিত কিংবা আন্দোলিত করে আর সেখানেই যেনো লুকিয়ে থাকে এই পৃথিবীর প্রতিটি সুন্দর। বেদনার রং হয়তো নীল কিন্তু এই নীলেও অনেক আহত বেদনার সুখ লুকায়িত থাকে যা সময়ের স্রোতে মনকে দোলায়।

মিটুল সে রকমের একতা প্রকৃতি আমার জীবনে। ওর জন্যে আমার যেমন ঝড়ো হাওয়ার মতো তছনছ হয়ে যেতে পারে সারাটা জীবন আবার ওর জন্যেই বয়ে যায় আমার সুখের বাতাসের মতো শিহরন। যদি ঝরে যায়, যদি হারিয়ে যায়, যদি আর খুজে না পাওয়া যায় তাহলে সেটা হবে আমার জগতের সবচেয়ে বড় মারাত্তক বিপর্যয় কিন্তু যদি রয়ে যায়, যদি আর কোথাও না হারিয়ে যায়, এই প্রথিবী হবে আমার সর্গরাজ্যের মধ্যে উত্তম। পারবে কি তুমি কোথাও গিয়ে লুকিয়ে থাকতে? অথবা হারিয়ে যেতে?

আমি তোমাকে সবচেয়ে সুন্দর পৃথিবীটা উপহার দিতে চাই। জানি না কিভাবে। যদি কিছুই দিতে না পারি, অন্তত আমি তোমাকে দেবো স্বাধীনতা আর দেবো ভালোবাসা।

০৮/০৯/১৯৯৮- Why I not greedy for

মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট,  অফিসারস মেস, বগুড়া 

Why I not greedy for anything around me? I basically do not find anything very precious to be so. But I always am greedy for one very precious piece i.e. Mitul. I never feel sorry for my marriage. What I did with Mitul (marrying without anybody’s consent) I will do the same thing everytime in every single life even none supports me anytime.

০৬/০৯/১৯৯৮-কি চেয়েছিলো তারা?

অফিসারস মেস, বগুড়া

What they wanted?

Did they want to have a very beautiful girl for me! Or they wanted to do some business with their family! Or they wanted to have complete freedom to others as they have freedom to their own hens, cows or goats. Whenever they want to slaughter them, they can do it without the consent of the slaughterer, whereas the slaughterer must have the rights to know about his death.Did they want like this? Then why could not they accept her! She is absolutely a beautiful lady. So this can’t be the reason not to like her. She qualifies the beautiful they way they wanted. Again if they wanted to do some business with her, why should I do it even they wanted to do it! I am not at all greedy for anything given by anyone! So even they had a plan to do so, they could not do it fore me. These people again love me sometimes very deeply. So here also she is not at fault.

 If these people thought the third option to have complete freedom, in that case they have done a great mistake. Because I will never allow anyone to supersede my presence. Neither I will curve her freedom. We want to make a dependent life to each other. Why not to share each other completely! So nothing could work.They did not become happy on our attitude, our behavior and our conduct. Everyone prayed for me, felt for me but none felt for her and afterward my daughter joins with her mother. No one wanted to take any interest and initiative on these two girls. Thereby whenever they used to get some kind of wrong clue where they can punish Mitul, they never used to loose it. They used to complain to me against her. I used to become very emotional and sometimes I used to abuse Mitul very wrongly. She never used to reply it back on the spot. She used to cry only seating beside me. This was the punishment they could achieve.

 Might be they wanted more punishment. But what kind of punishment they wanted? Did they want me to divorce Mitul? Oh God! This is the only thing that I can not do. I love her so much that I can sacrifice the whole world but her. She is the most precious thing to me in this world. Then Ummika. I will not forget ever Mitul. She will be in my heart, in my head, in my illusion always.

০৫/০৯/১৯৯৮- লনলীনেস

মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট, ০০০০ রাত. অফিসারস মেস, বগুড়া 

I feel very lonely here. How many days a man can stay alone? -Can it be for whole life? -May be or may not be. But I feel sometimes that I do not like the accompany of people even Mitul! I feel to be remaining absolutely free at my own. In that time I think about death, about love and about the GOD. Is there anything called GOD at all? Sometimes I think I don’t believe in GOD. But in the next moment I afraid of GOD if HE is there what will happen then! Mitul believes in GOD fully. She is a perfect human being and best lady amongst everyone. GOD says and orders people to believe HIM even there is no prove in hand. Mitul believes it hundred percents. She is that kind of lady whatever she asks from GOD she gets it without much waiting. She is also accepted by the GOD HIMSELF.

She is very nice. That is one of the great reasons why I loved her at the first instant

০৩/০৯/১৯৯৮- আমি এই প্রোফেশনটাকে

মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট, ০০৩৯ রাত.

অফিসারস মেস, বগুড়া 

I did not want to choose this profession! But nobody can be blamed for this reason that someone forced me to choose it as a profession. If I would have been so lucky to have the proper guardians like father, in that case I would have think otherwise. There were lots of people who were responsible by humanitarian ground or religion based relations. And it was all!

Why I not greedy for anything around me? I basically do not find anything very precious to be so. But I always am greedy for one very precious piece i.e. Mitul. I never feel sorry for my marriage. What I did with Mitul (marrying without anybody’s consent) I will do the same thing everytime in every single life even none supports me anytime.

২৬/০৮/১৯৯৮-কেনো এতো ভালোবাসি?

মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট। অফিসারস মেস, বগুড়া 

 Why did I love her so much? Was she very beautiful or very extra ordinary? What was the exceptional quality she had by which she could attract man like even me!  I have seen more pretty looking girl than that of her, I have found girl like a millionaires. Nothing attracted me but herself.

 -Why?

 She is not a daughter of a rich man! She neither was very much famous by any means. Even I loved her. Because I wanted a lady who is very smart looking but polite, I wanted someone who should wait for me even at the cost of her life the way I do. I wanted to have a nice hearted lady who will not have any hidden subject within herself. Mitul qualifies all the qualities. She is a very sweet looking girl, she is an extra ordinary mother, an outstanding lover of husband. She waits with full-hearted love and ocean of tear in eyes for me. She is the only place where I enjoy my full kingdom with full concentration. She loves me so much. I can not stay for a single moment without her. Staying together heart to heart.

Sometimes Mitul thinks I always do not trust her. But her this belief can never be corrected. I sometimes abuse her wrongly it is absolutely true. But never I remember about any incident. I never de-trust her. She is the perfect lady in my eyes. She never deprived me from my desire, my wrong behaviors. She used to absorb everything and never protested even she had all the reasons to do so. Instead she used to cry only. She used to cry more thinking that I am getting pain in my heart.  I can tolerate everything but I can not tolerate her tears. I again hug her and she hugs me more tightly. She cries and cries and I feel in my heart that her burning is going away. We trust each other very deeply.

Ummika is an asset for both of us. She is the centre nerve of our plan, happiness and dream. We sometimes feel very pensive in this regard. God is something very special. HE can do and undo anything we can guess. No one will understand what is a blessing getting a kid at his or her own unless someone becomes a parent. It is a matter of experience. No magazine, article or listening from someone will give the actual feeling of being a parent. It is something very special. We are the special group of people. Ummika will not also be able to understand this great affair with the parent. We did not understand. Those who understand, they are very lucky. They are very fortunate.  We want Ummika should be one of them who all are lucky. I always want my Ummika should be just like her mother. I have not seen another good lady like Mitul. Mitul is the perfect.

এই কথাটা আমার তো প্রায়ই মনে আসে, হয়ত অনেকেরই আসে, কেনো আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি? ওকি প্রিথিবীর সেরা সুন্দরী? তার কি এমন কিছু ব্যতিক্রম কোয়ালিটি ছিলো বা আছে যা অন্য কারো নাই? আমার এই ছোট্ট জীবনে তো অনেক মেয়েকে দেখেছি, ওর থেকেও আরো অনেক সুন্দুরী মেয়েকে আমি দেখেছি, দেখেছি পাহাড় সমান সম্পদের মালিকানা পরিবারের মেয়েদেরকেও। কিন্তু কই আমি তো ওইসব মেয়েদের প্রতি কখনো দুর্বল হই নাই? তাহলে আমি ওর ব্যাপারে এতো বেপরোয়া হয়ে ভালোবাস্লাম কেনো?

সে তো কোনোবড় লোকের মেয়েও নয় যে, আমি তার বাবার সম্পত্তির লোভে তাকে ভালোবেসেছি। না ও নিজে খুব বিখ্যাত কেউ। তারপরেও আমি ওকে অনেক ভালোবেসেছি। এর প্রথম কারন হতে পারে যে, আমি একজন দায়িত্তশীল মেয়েকে খুজছিলাম। আমি এমন কাউকে খুজছিলাম যার উপর আমি নির্ভর করতে পারি এবং যে আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারে। হয়ত মিতুল এই সব কিছুই কোয়ালিফাই করে।

(অসমাপ্ত......)

১৮/০৪/১৯৯৮- মিতুলকে

 

MY SWEETEST:

When I was coming back to Bogra after enjoying my last casual leave, I was thinking so many things standing on the platform of the ferry! And most interesting was that I was dreaming about a new baby and you. Every time I was thinking about my family (I always mean my family is yourself, Ummika, myself and mother) I always found your role was extremely significant. Nobody will understand how much sacrifice we made out of our determination and tenacity. All were possible because of you. I always care your demand. You really sacrificed lots of things for me, for us specially. No one can say that someone did something for us. That’s why our understanding became stronger, more meaningful and love becomes the every day’s power of inspiration and power of next day’s power.  How many people can boast about their personal life! How many people and couple can strongly declare that both of them (husband and wife) are equally happy in their conjugal life! Even someone tells, a very few percentage may be correct and maximum will be wrong in saying so. But I declare with challenge that we both of us are equally happy and equally satisfied in our life. It is not an only dialogue but the fact of our two men-life.  I have been told by lots of people that I look and act like a completely happy man, as I do not have any tension and anxiousness. This happened only because I am really a happy man because of you. 30th may, the most finest and glorious day for both of us. I will be always worshipping this day to almighty God. This is the day for which every body can not just take pride. Only few people like us can tell the story of old days to their grandsons and granddaughters. Don’t you think that this is a history!  There are someone who have tremendous set back on this date because they did not want it to be happened. This is one of the reasons why people does not want to come to attend our ceremony even you give them the invitation. But in the same time I enjoy their this pain too. Wish you all the best and my best regards to you. My love and affection will be with you always and always. Have good life and good mind. May Allah make you a very honored lady to everyone in respect to all aspects.

 

১৮/০৪/১৯৯৮- মিতুলকে

ঢাকা থেকে ছুটি কাটিয়ে বগুরা ফেরার পথে ফেরিতে উঠার প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়েওনেক কিছু ভাবছিলাম। এবং সবচেয়েমজার ব্যাপার হচ্ছে যে, আমি এইবার প্রথম আমার নতুন বাচ্চার কথা ভাবছিলাম এবং সাথে মিটুলের কথা। প্রতিটি মুহূর্তে মি আমার পরিবারের কথাই (আমার পরিবার বলতে আমি মিতুল, উম্মিকা, আমারমা আর আমাকেই মিন করি) ভাবছিলাম। যখনি আমি আমার পরিবারের প্রতি কারকারকি কন্ট্রিবুসন আছে সেটা ভাবি, তখন যা দেখি তা হচ্ছে, তোমার কন্ট্রিবুইসন সবচেয়ে বেশি বলেই আমি মনে করি। কেউ কখনো বুঝতেপারবে না আমরা কোথা থেকে কিভাবে কি ত্যাগ করছি আমাদের ভালোর জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। অনেক কিছু যা এই মুহূর্তে কঠিন, তা সম্ভভচ্ছেতোমার ত্যাগের কারনে, তোমার অধ্যাবসায়ের কারনে। এটা আম্র ধারনা।

আমি তোমার প্রয়োজনীয় আশা আখাংকার প্রতি খেয়াল রাখার চেষ্টা করি, চেষ্টা করিতোমার সব চাহিদা পুরন করার।  আমাদের জন্য কেউ কিছুই করে নাই। আমি চাইও না কেউ আমাদের জন্য কিছু করে আমাদেরকে বাধিত করুক। আমরা যা করছি, তা আমরাই করছি। আমরা যুগল চেস্টায় করছি। আর এই কারনেই আমি মনে করি আমাদের মধ্যে আন্দারস্ট্যান্ডিং ধীরে ধীরে আরো জোরালো হচ্ছে এবং আমরা আরো একিভুত পরিবার হচ্ছি। আমি তোমাকে নিয়ে যেমন খুশি, তেমনি আমি সুখিও বটে। কত জন কাপল আমার মতো বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তারা সুখি এবং একে অপরের জন্য খুসি? আমি তো বলতে পারছি।

এই সব কিছুর জন্ম হয়েছিল ৩০ মে এর কারনে। এই৩০ মে তারিখটি আমার জীবনে একটা বিশাল স্মরণীয় দিন এবং এই দিন টিকে আমি পুজা করার মতো ভালোবাসি। এই ৩০ তারিখটি তোমাকে নিয়েয়ামার সাথে যে সম্পর্ক টা হয়েছিলো সেতা করতে না দিতে অনেকেই চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এটাও আমরা সার্থক করে আমাদের মধ্যে আনতে পেরেছি। এটা আমদের ইতিহাস। এটা আমার আর তোমার ইতিহাস। আমাদের এই ইতিহাস আমাদের পরবর্তী বংশধরেরা কত টুকু বুঝবে বা বুঝতে পারবে সেতা আমি জানি না কিন্তু তাদের ইতিহাস এই ৩০ মে এর কারনেই হয়েছে সেটা তারা বুঝলেই হল।