১২/০৬/২০২১-রোস্তমের টাকা চুরি-২

আমরা যখন জীবিত অর্থাৎ যখন জীবন আছে আমাদের, তখন আমাদের কাছে জীবন এমনভাবে চলতে থাকে যেনো আমাদের জীবনের সাথে মৃত্যুর কোন সম্পর্কই নাই। কিন্তু যখন মৃত্যু একেবারেই কাছে চলে আসে, তখন এ রকম মনে হয় যেন জীবনের কোনো গুরুত্বই নাই। এক নিমিষে, চোখের পলকে সব শেষ হয়ে যায়। এই মৃত্যু না সময় দেখে আসে, না জায়গা দেখে। যে কোনো সময়ে যে কোনো স্থানে সে চলেই আসে। তখন আশেপাশের সবাইকেই চমকে তো দেয়ই উপরন্ত আশেপাশের সবাইকে নাড়িয়েও দেয়। আর এর রহস্যও কেউ জানতে পারেনা। কিন্তু যখন মৃত্যু নিজে আসে না, তাকে ডেকে আনা হয়, তখন তার সময়, জায়গা এবং কারন এই তিনটাই মানুষ ঠিক করে দেয়। আজ আমি এমনি একটা ট্র্যাজেডির কথা বলবো যা ঘটেছিল রস্তম নামে এক লোকের সাথে।
রুস্তম আমার ড্রাইভার ছিলো। প্রায় বছর পাচ বা তারও বেশী একনাগাড়ে রুস্তম আমার ব্যক্তিগত গাড়ী ড্রাইভিং করতো। তাহলে এখানে রোস্তমের একটা সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরি।
রুস্তম ড্রাইভার হিসাবে ততোটা অশিক্ষিত ছিলো না যা সচরাচর ড্রাইভারেরা হয়ে থাকে। পুরানো দিনের সাহিত্যিকদের উপন্যাস পড়ার অভ্যাস ছিলো তার। একটু আধটু ডায়েরীও নাকি লিখতো। ভাল পল্লীগীতি গাইতে পারতো রোস্তম। গলার সুরও ভালই ছিলো। মাঝে মাঝেই আমি ওকে গারি চালানর সময় রেডিও না শুনে ওর নিজের গলায় গান শুনতাম। বিবাহিত ছিলো বটে কিন্তু মাঝে মাঝে নেশা করার কারনে রোস্তমের প্রথম স্ত্রী তাকে একটা সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা রেখে লন্ডনে চলে যায়। রোস্তম কখনোই তার স্ত্রীর ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করতো না। সে খুব মিস করতো তার স্ত্রীকে। গাড়ী চালাতে চালাতে রোস্তম প্রায়ই সে তার স্ত্রীর কথা বলতো। বলতে বলতে কখনো সে খিলখিল করে হেসে উঠত, কখনো কখনো খুব উদাসিন হয়ে যেতো আবার কখনো কখনো চুপ থেকে চোখের জলও ফেলতো। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে একবার আমি রোস্তমকে দ্বিতীয় বিয়ের তাগিদ দিলে সে আমার কথা মেনে বিয়েও করেছিল। কিন্তু এবার স্ত্রীটাই খারাপ ছিল। বিয়েটা টিকে নাই। রুস্তম খুব বিশ্বস্ত ছিলো। চুরি চামারীর কোন অভ্যাস ছিলো না। তবে মাঝে মাঝেই রোস্তম দরকারে আমার কাছে এমনভাবে টাকা চাইতো যে, আমি কখনো ওকে না করতে পারিনি। দিতাম। রোস্তম ছিলো খুবই বিশ্বস্ত ছিলো। এমনি বিশ্বস্ত ছিলো যে, মাঝে মাঝে এমনো হতো, শুধু ওকে একা গাড়ি পাঠিয়েই আমাদের ফ্যাক্টরী থেকে অন্য ফ্যাক্টরীতে কোটি টাকাও পাঠিয়েছি। আর রুস্তম সেটা জানতো। কখনোই সে এদিক সেদিক করে নাই।
কিন্তু একদিন………
একদিন রুস্তম আমার অন্য আরেকটি ফ্যাক্টরির মাত্র তিন লাখ টাকার শ্রমিকদের সেলারি নিয়ে গাড়ী রেখে কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেলো। বিকেল থেকে রাত অবধি কোথাও খুজে না পেয়ে বুঝতে পেরেছিলাম, রুস্তম তিন লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে। ওর মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিলো। টাকাটা চুরি করে রুস্তম পালিয়েছে এই কষ্টে যতোটা না কষ্ট পেয়েছি, তার থেকে বেশী কষ্ট লেগেছে রুস্তমের কাছ থেকে এটা আমি কখনোই আশা করিনি। রুস্তমকে আমি সেলারীর বাইরেও যে কতটাকা দিতাম সেটা আমি কখনো হিসাব করিনি। ওকে আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করার সব খরচপাতিও দিয়েছি;লাম। রুস্তম গাড়ি চালালে আমি নিশ্চিন্তে মনে গাড়িতে ঘুমাতে পারতাম। কারন জানি, রুস্তম যেমন ভালো ড্রাইভার ছিলো তেমনি আমি ঘুমিয়ে পড়েছি দেখে আমার শরির যেনো ঝাকুনি না খায় এবং ঘুম ভেংগে না যায় সেটাও সে নজরে রাখতো।
রুস্তম আমাদের এলাকায় প্রায় ৩০ বছর যাবত বাস করতো। চুরির পরে রুস্তম সেই পুরাতন জায়গায় আর কখনো ফিরে আসেনি। আমি অনেক খুজতাম ওকে, আশেপাশের লোকজন এমনিতেই জেনে গিয়েছিল যে, রস্তম আমার কিছু টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। ফলে আমি জানতাম, কেউ ওকে কোথাও দেখলে খবরটা আমার কাছে আসবেই। কিন্তু সে রকমের কোন খবর আমি আর কখনো পাইনি।
অনেকদিন পর, প্রায় মাস চারেক হবে। হটাত করে পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে আমার কাছে একটা চিঠি আসে। বেশ বড় একটা চিঠি। প্রায় ২২ পাতার। চিঠিটি খুলেই আমি কে লিখেছে সেটা পরীক্ষা করার জন্য চিঠির শেষে কার নাম লেখা পড়তে গিয়েই আমি থমকে গিয়েছিলাম। রুস্তমের চিঠি। হটাত করে বুকটা আতকে উঠেছিলো। রুস্তমের চেহারাটা আমার চোখের সামনে পরিষ্কার ভেসে উঠলো। মুখ ভর্তি পান, কালো ঠোট, বেটে মানুষ, মাথায় হালকা চুল, মুখে হাসি। এটাই রুস্তম ছিলো। ওর পুরু চিঠিটা এখানে লিখলাম না কিন্তু ওর কিছু চুম্বকঅংশ এই রকম ছিলোঃ (বিশেষ দ্রষ্টব্য যে, রুস্তম বেশ গুছিয়ে সুন্দর করে কথা বলতে পারতো, আর যুক্তির কথাও বলতো)।
আমার প্রিয় স্যার,
........................ জীবনে সে সব মানুষের সাথে কখনো লুকুচুরী, মিথ্যা, ছলচাতুড়ি, কিংবা কল্পকাহিনী বলে সাময়িকভাবে ভুল বুঝানো উচিত না যারা আমাদের সুখের জীবনের জন্য নিঃস্বার্থভাবে তাদের অনেক মুল্যবান সময়, পরিশ্রম আর অর্থ দিয়া সাহাজ্যের হাত বাড়ায়। যদি পথ চলতে গিয়ে কিংবা তাদের নির্দেশনা মানতে গিয়ে কিংবা কোনো লোভে পড়ে নিজের অজান্তে ভুল করে ফেলে, হয়তো সেটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব কিন্তু যদি সেই ভুল হয় ইচ্ছাকৃত, তাহলে সেটা হবে পাপ, অপরাধ এবং ক্ষমার অযোগ্য। যারা আমাকে ভালোবেসে, স্নেহ করে অথবা আমাদের দরিদ্র মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের পাশে এমনভাবে দাঁড়ান যা হয়তো তাদের দাড়ানোর কোনোই প্রয়োজন ছিলো না, তবুও দাড়ান। তাদের সাথে আমাদের করা এরূপ কোন ইচ্ছাকৃত অপরাধ আমাদের সারা জীবনের জন্য এমন মারাত্তক হুমকী হয়ে দাড়ায় যা কোনো কিছুর বিনিময়েও আর আগের অবস্থায় ফিরে পাওয়া সম্ভব না। এই মারাত্তক ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি কেউ ক্ষমাও করে দেন, তারপরেও বিশ্বাসের যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা আজীবন দগদগে ঘায়ের থেকেও বেশী। তখন তাদের প্রতিনিয়ত মনে হবে, এই মানুষ উপকারের কথা বুঝে না অথবা সে নির্বোধ অথবা সে উপকারীর জন্য অনেক হুমকীস্বরূপ। এই বিবেচনায় কোনো হিতৈষী যদি আমাদের পাশ থেকে নিঃশব্দে সরে যায়, তাকে আর কোনো কিছুর শপথের মাধ্যমেও আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা যায় না। তখন যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, নিজের উপর নিজের রাগ, অভিমান আর কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধ। এই সময় হতাশা ক্রমশ বাড়তে থাকে, আর এই হতাশা যখন বাড়ে, তার সাথে বাড়ে দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তা থেকে জন্ম নেয় নিজের উপর ঘৃণা। আর একবার যখন নিজেকে কেউ ঘৃণা করতে শুরু করে, তখন তার আর বেচে থাকার কোনো লোভ থাকে না। চারিপাশের কোনো মানুষকেই আর ভালো লাগে না, নীল আকাশ ভালো লাগে না, রংগীন আলো ঝলমলের শহরকে তখন বড় অচেনা মনে হয়। মানুষ তখন আত্মহননের দিকে ঝুকে যায়। অথবা সে এমন পথ বেছে নেয়, যা সমাজের চোখে বড়ই অসুন্দর আর কুৎসিত। সব কুৎসিত জীবনের কাহিনী প্রায় একই। কোনো না কোনো সময়ে তাদের সুযোগ এসেছিলো কিন্তু তারা না বুঝবার কারনে সে সুন্দর জীবন হাতছাড়া করেছে। পাপ কাজ করে কেউ কখনো বড় হতে পারে নাই, আর হয়ও না। তাদের হয়তো টাকার পাহাড় থাকতে পারে কিন্তু তাদের তিরোধানে সমাজ দুঃখবোধও করে না। তারা সারাজীবন সমাজের একটা কালো মানুষ হিসাবেই বেচে থাকে।
আমার প্রিয় মেজর স্যার,
আমি এই মুহুর্তে ঠিক সে রকম একটা সময় পার করছি। আমি আপনার কাছ থেকে যে তিন লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছিলাম, টাকাগুলি আমার কোনো কাজেই লাগে নাই। মদ খেতে খেতে কখন বেহুস ছিলাম বুঝি নাই, যখন হুস হয়েছে, দেখলাম সবগুলি টাকা আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে। কে নিয়েছে, কখন নিয়েছে সেই জ্ঞানটুকুও আমার ছিলো না।
(রোস্তমের চিঠির ১৩ তম পাতার কিছু অংশ)............
জীবনকে ভালোবাসবার অনেক নাম আছে। কখনো এর নাম চেলেঞ্জ, কখনো এর নাম সততা আবার কখনো এর নাম বিশ্বাস। স্যার, সব হাসিই হাসি নয়। যেদিন আমি টাকাটা নিয়ে পালিয়েছিলাম, সেদিন আমি হেসেছিলাম আনন্দে। অথচ আজ আমি কাদতেছি কেনো আমি টাকাটা নিয়ে পালালাম। আসলে আমার এই কান্না কান্না নয়। এই কান্নার নাম হয়তো ভয়। আর সব ভয়ের চেহারা এক। যার নাম- আতঙ্ক। এই আতংকে মানুষ অসুস্থ হয়, মানুষের রুচী কমে যায়, একসময় দেহ মন দুটুই ভেংগে যায়। দেহ ভাঙ্গার সাথে সাথে মানুষ মানসিকভাবে দূর্বল হয়, এক সময় পানির অভাবে যেমন কচি গাছের মরন হয়, তেমনি এই আতংকগ্রস্থ মানুষগুলিও মৃত্যু বরন করে। তাদের জন্য কেউ আর পিছনে তাকায় না। খুব কষ্ট আর ব্যথা নিয়ে স্যার আমি চলে যাচ্ছি। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। এর গাছ পালা, আকাশ, নদী, পাহাড় সব সুন্দর। সবচেয়ে সুন্দর ছিলেন স্যার আপনি। আমি আপনাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসবো। খুব বাচতে ইচ্ছে করছিলো স্যার কিন্তু যারা সাহসী নয়, তাদের বেচে থাকবার কোনো প্রয়োজন নাই এই পৃথিবীতে। আমি আসতে চেয়েছিলাম আবার আপনার কাছে কিন্তু সম্ভব হলো না। যদি কখনো পারেন- আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। যেদিন আপনি চিঠিটা পাবেন, সেদিন হয়তো আমি আর বেচে নেই স্যার। কিন্তু একটা কথা বলে যাই, আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সাহস কম, তাই আর বাচতে পারলাম না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। যে তিন লাখ টাকায় আমার এতো হিসাব ছিলো, জীবন সুখের হবে, নিজের গাড়ি হবে, অনেক টাকা হবে, সেই তিন লাখ টাকাই আসলে আমার জীবন একেবারে পালটে দিলো। আপনার সাথে আমার জীবনটা তো ভালোই ছিলো। বিশ্বাস করেন স্যার, আজ ঠিক মৃত্যুর আগ মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আমি একটা জিনিষ শিখে গেলাম, জীবনে সব মানুষের সাথে ছল চাতুড়ি করতে হয় না, এই দুনিয়ায় টাকাই সব নয়। আপনার মতো এমন একটা মানুষের পাশে শুধু থাকলেই হতো। বট বৃক্ষের মতো ছিলেন।
৯১৬ তম পাতার কিছু অংশ...............)
আমি আপনার থেকে এখন অনেক দূরে। পরিচিতজন মানুষের আশেপাশেও আমি নাই। ড্রাইভিং চাকুরী করতে পারতাম, কিন্তু করতে সাহস করি নাই। কখন আবার আমি আপনার সামনে পড়ে যাই, তাই। প্রতিটা ক্ষন আমি পালিয়ে পালিয়ে থেকেছি। কখনো ক্ষুধা পেটে কোনো এক পরিত্যাক্ত বিল্ডিং এর মশাদের সাথে, কখনো কোনো গাজার আসরে, কখনো একেবারে একা কোনো এক নদীর ধারে সময় কাটিয়েছি। এমন কোনো একটা মুহুর্ত আমার যায়নি, যখন আপনার কথা আমার মনে পড়ে নাই। বারবার ভেবেছি- কি দরকার ছিলো এমনটা করার? যখন যা চেয়েছি, আপনার কাছ থেকে আমি পাইনি এমন ছিলো না। তারপরেও আমার এমনটা করার কোনো দরকার ছিলো না। খুব বেকুফ মনে হয়েছে আমাকে।
চিঠিটা পড়তে পড়তে আমারো খুব খারাপ লাগছিলো। রোস্তমের জন্য আমার খুব মায়া হচ্ছিলো। আমি আসলে রোস্তমকে খুব স্নেহই করতাম। যাই হোক, অনেক বড় চিঠি। সব কিছু এখানে হয়তো লিখা সম্ভব নয়। ১৯ পাতার কিছু অংশে এসে আমি একদম নিসচুপ হয়ে গেলাম। রুস্তম লিখেছে-
আমার স্যার, এ কয়দিন বারবার শুধু একটা কথাই আমার মনে হয়েছে। যখন আপনি গাড়িতে উঠতেন, প্রথমেই জিজ্ঞেস করতেন, আমি খেয়েছি কিনা। আজ অবধি কেউ আমাকে এ কথাটা কেউ কখনো জিজ্ঞেস করে নাই। আজ প্রায় ৩ দিনের উপরে পার হয়ে গেছে, আমি একটি দানাও খাই নাই। মুখ ভর্তি দাড়ি, গোসলের কোনো জায়গা নাই, এলোমেলো মাথার চুল, নোংরা আমার জামা। আমার সাথে রাস্তার পাগলের মধ্যে কোনো তফাত নাই। যখন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিতাম, বলতেন-বাসায় গিয়ে রেষ্ট করো, সকালে নাস্তা খেয়ে চলে এসো। আজ আমাকে কেউ বলে না-সকালে চলে এসো। অথচ মনের ভিতরে অদম্য ইচ্ছা, যদি আবার আপনার কাছে চলে আসতে পারতাম? কোথাও আমার কেউ নাই। সম্ভবত আপ্নিই ছিলেন আমার সবচেয়ে কাছের একজন মানুষ যাকে আমি ভালোবাসতাম, আবদার করতাম, জিদ করতাম কিন্তু খুব পছন্দও করতাম। আপনার মেয়েরাও আমাকে খুব সম্মান করতো। কখনো ওরা আমাকে ড্রাইভার হিসাবে দেখে নাই। কি লক্ষী মেয়েগুলি। আংকেল ছাড়া কখনো ডাকতো না। আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে- ইশ, যদি আবার ফিরে আসতে পারতাম!! কিন্তু আমার মনের সাহস নাই, শরীরে বল নাই, আর আপনার সামনে দাড়াবার আমার কোনো জায়গাও নাই। এ কয়দিন মাথায় শুধু একটা জিনিষ ঘুরপাক খাচ্ছে-কি লাভ এ জীবন রেখে? কিন্তু মরার জন্যেও কিছু উপকরন লাগে। ফাসি দিতে হলে দড়ি লাগে, বিষপান করে মরতে হলে বিষ কিনতে হয়, কিন্তু আমার কাছে বিষ কেনারও পয়সা নাই। আর সাতার জানা মানুষ নদীতে ঝাপ দিলেও মরে না। কিন্তু আমি জানি, আপনার সাথে আমার আর কখনো দেখা হবে না। আমার জিবনে সত্যি বলতে আপনি ছাড়া আর কেউ ছিলো না। আপনি গাড়িতে ঘুমালে আমি আয়নায় দেখতাম, কি অসম্ভব একটা রাগী মানুষ কত নিষ্পাপ বাচ্চার মতো ঘুমুচ্ছেন, খুব মায়া হতো আমার। আমার উপরে ভরষা করে আপনি ঘুমুচ্ছেন ভেবে আপনার ঘুম ভেংগে যাবে এই ভয়ে আমি গাড়ির স্পীডকে রিক্সার পিছনেও চালিয়ে নিতাম। আমি আপনাকে অনেক মায়া করি, ভালবাসি। আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিয়েন।
ইতি- আপনার স্নেহের অপরাধি রোস্তম।
চিঠিটা পাওয়ার পর আমি রোস্তমের ব্যাপারে তারই এক আত্তীয়ের কাছে (যিনি ভাড়া থাকেন আমার মহল্লায়) জানতে পেরেছি যে, রোস্তম পথের ধারে কাটা তারের বেড়া থেকে তার কেটে গলায় পেচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মৃত্যুর তারিখটা জেনে আরো খারাপ লেগেছিলো। রস্তম তার মৃত্যুর চারদিন আগে সে আমাকে এই চিঠিটা পোষ্ট করেছিল।
খবরটা শুনে মনের ভিতরে অসম্ভব ব্যথা অনুভুত হয়েছিলো। খুব করে ভাবলাম, ইশ যদি রোস্তম একবার সাহস করে আবার আমার সামনে আসতো, ইশ যদি রোস্তমকে আমি আবারো খুজে পেতাম, আমি আবার ওকে আমার ড্রাইভার হিসাবেই রাখতাম। রোস্তম আমার বাসা চিনতো, আমার অফিস চিনতো, সে আমাকেও চিনতো। অথচ মনের ভিতরের সাহসটাকে সে একত্রিত করে আমার সামনে আসার মনোবলটা ছিলো না। আমি আজো মাঝে মাঝে রোস্তমের কথা ভাবি। আর ভাবি, কতটা যন্ত্রনা নিয়ে রোস্তম কাটাতার পেছিয়ে আত্মহত্যা করেছে, আর কতোটা যন্ত্রনায় সে মারা গেছে। খুব ভাবি যে, কাটাতারে যখন রোস্তম মারা যাচ্ছিল, তখন কি সে আবারো বাচতে চেয়েছিল?
সম্ভবত, বাচতে চেয়েছিল কিন্তু তখন মৃত্যু তার এতোটাই কাছে ডেকে আনা হয়েছে যে, তার আর ফিরে যাবে কোন অবকাশ ছিলো না। রস্তমকে নিয়েই যমদূত এই দুনিয়া থেকে চলে গেছে।

০৩/১২/২০২২-কোকো, আমাদের প্রথম জার্মান শেফার্ড

কুকুর পালার শখ আমার কখনোই ছিলো না। বরং মানুষ কেনো কুকুর পালে, সে ব্যাপারে আমার অনেক নেগেটিভ মতবাদ ছিলো। অথচ এখন আমি নিজেই কুকুর পালা শুরু করেছি। কেনো এমনটা হলো, সে ব্যাপারটাই এখন বলছি।

সম্ভবত গত বছরের প্রথম দিকে হটাত করে কোথা থেকে একটা কুকুর আমাদের বাসায় এসে হাজির। কথা নাই বার্তা নাই, সে আর কোথাও যেতেও চায় না। সারাদিন আমাদের বাসার সামনেই বসে থাকে, গেটে বসে থাকে, কোথাও যায় না। মাঝে মাঝে আমি বা আমার পরিবার ওকে কিছু খাবার দেয়া শুরু করে। খুব যে খায় তাও না। যতটুকু লাগে ততটুকুই খায়, আর কিছু খাবার রেখেও দেয়, পরবর্তী সময়ে আবার সেটা ক্ষুধা লাগলে খায়। ব্যাপারটা খুব অবাক লাগছিলো।

সারারাত বিশেষ করে রাত ১১ টার পর আমরা যখন মেইন গেট লাগিয়ে দেই, তাকে আমরা জোর করেই গ্যারেজের ভিতর থেকে বের করে দেই, কিন্তু খুব সকালে আবার এসে হাজির হয়। এভাবে প্রায় ৬/৭ মাস পার হবার পর একদিন শুনি ওর নাম রাখা হয়েছে ‘রকি”। সম্ভবত এই নামটা দেয়া হয়েছে আমার বড় মেয়ের দ্বারা। এখন সবাই ওকে ‘রকি’ নামেই ডাকে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, কুকুরটাও মনে করে আমরা ওর মালিক, আমাদের কথা শুনে, ডাকটাও সে রেস্পন্স করে। এখন ওকে আমরা সবাই একটা মায়ার মধ্যে বেধে ফেলেছি। অফিস থেকে বাসায় আসার পরই দেখি, আমার গাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ায়, সকালে গেট খুললেই মাথা দিয়ে গেট ধাক্কা দিতে শুরু করে কখন সে গ্যারেজে ঢোকবে।

এর মধ্যে আমার ফ্যাক্টরীর ছাদে হটাত দেখি জার্মান শেফার্ডের পাচটি বাচ্চা। পিচ্চি পিচ্ছি, চোখ ফুটে নাই। জরীফ নামে এক লোক যে আমাএ ফ্যাক্টরী বিল্ডিং এর ভাড়া নেয়। দেখে ভালো লেগেছে। মনে হলো, একটা বাচ্চা পালা যায়। সেই থেকে জার্মান শেফার্ড পালার শখ হয়েছে।

গত ১২ অক্টোবর ২০২২ থেকে আমি এই জার্মান শেফার্ডের বাচ্চাটা আমি নিয়ে এসেছি। ওর সেদিন বয়স হয়েছে একেবারে তিন মাস। আমি যখন ওকে গাড়িতে করে নিয়ে আসি, দেখেছিলাম, ওর শরীরের হাড্ডিগুলি পর্যন্ত দেখা যায়। আমি জানি না কিভাবে কুকুর পালতে হয়। কিন্তু অন লাইনে গিয়ে বা ইউটিউবে গিয়ে এ ব্যাপারে বেশ কিছু ধারনা পাওয়া গেলো।

পরেরদিন ওর একটা নাম দেয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। আমার ছোট মেয়ে (যে আমেরিকায় থাকে) সে তো কুকুর পালবো এটা শুনেই আনন্দে আত্তহারা। বড় মেয়েও তাই। কিন্তু বউ একেবারে নারাজ। কিছুই যায় আসে না। কুকুরের জন্য ঘর বানিয়েছি ২টা। একটা গ্যারেজে আরেকটা ছাদে।

ওর নামটা দিলো আমার ছোট মেয়ে।

নাম কোকো।

এখন আমরা ওকে কোকো নামেই ডাকি। এই এক মাস হয় নাই, এর মধ্যে কোকোর ওজন বেড়েছে প্রায় ২ কেজি। প্রচুর খায়, মাশ আল্লাহ, খেলে, আমাদের ঘরে আসে। আমার কেয়ার টেকারের সাথে ওর বেশী শখ্যতা মনে হয়। কারন সারাদিন তো কোকো ওর সাথেই থাকে, খেলে, বেড়ায়।

আমাকে একটু ভয় পায় কারন মাঝখানে আমি ওকে কিছু কথা না শোনার কারনে লাঠি দিয়ে ভয় দেখিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, কোকো কাউকে ভয় পাক এটাও দরকার আছে।

কোকোকে সব গুলি ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে। ডি-ওয়ার্মিং করার জন্য একটা কৃমির ট্যাবলেট ও খাওয়ানো হয়েছে। আরেকটা খাওয়াতে হবে। আমি ওকে প্রতি শুক্রবারে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে খুব ভালো করে গোসল করাই।

কুকুর পালা থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। একটা বোবা প্রানীকে বশ মানানো, কথা শোনানো সহজ ব্যাপার না। তবে কুকুর অত্যান্ত প্রভুভক্ত প্রানী। দেখা যাক কোকোর বেলায় কি হয়। এটাই কোকো।

২৭ আগষ্ট ২০২২-নতুন আর পুরাতন প্রজন্ম

অনেকদিন পর আজ ডায়েরী লিখতে বসলাম।

প্রতিদিন আমাদের সবার জীবন খুব দ্রুত পালটে যাচ্ছে। কতটা দ্রুত সেটা আজ যারা ঠিক এই সময়ে বাস করছি, হয়তো তারা বলতে পারবেন। আমাদের সময়টাই মনে হচ্ছে সেই শেষ সময় যেখানে এখনো আমরা পুরানো বন্ধু বা চেনা লোকের সাথে দেখা হলে তিনি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করি, একটু সময় ব্যয় করি, সুখ দুঃখের আলাপ করি। সমস্যার কথা বলে কিছু উপদেশ বিনিময়ও করি। আমরাই সম্ভবত সেই শেষ যুগের কিছু মানুষ যারা এখনো পরানো খবরের কাগজটা অন্তত কিছুদিন ঘরে রাখি, একই খবর হয়তো বারবার পড়ি। আমরা এখনো সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভয় পাই, পাশের বাড়ির সাথে সুসম্পর্ক রাখি। আমাদের প্রাভেসী বলতে কিছু ছিলো না। যা ছিলো সবই খোলামেলা। আমরা সেই শরৎচন্দ্রের লেখা উপন্যাস পড়ে কখনো কেদেছি, কখনো হেসে গড়াগড়ি করেছি, রবী ঠাকুরের ‘বলাই’ আমাদের মনে দাগ কেটে যায়, কিংবা ‘পোষ্টমাষ্টার’ গল্পের ছোট বালিকার কথায় বড্ড কষ্ট লেগেছে। ‘দেবদাস’ এখনো আমাদের অনেক প্রিয় একটা গল্প বারবার পড়েছি, বারবার। এখনো এই দলটি কোনো ইনভাইটেশন ছাড়া একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যায়, বেড়াতে গেলে হয়তো কম দামী হলেও হাতে কিছু নিয়ে যায়। এখনো তারা বড়দের পা ছুয়ে সালাম করে। রাতের বা সকালের নাস্তা এখনো এরা একসাথে করার অভ্যাস রাখে। ছেলেমেয়ে, বউ পরিজন একসাথে নাস্তা করুক বা রাতের খাবার খাক, এটাই চায় তারা। ঈদের ছুটিতে তারা এখনো গ্রামের ভালোবাসার টানে সেই কাদাচে গ্রাম, সোদামাখা পরিবেশে ছুটে যেতে সব প্রকার কষ্ট করতেও আনন্দ পায়। আমাদের এই দলটি সম্ভবত খুব বেশীদিন আর নাই এই পৃথিবীতে। হয়তো আগামী ২০ বছরের পর আর কেউ থাকে কিনা কে জানে। এই দলটির মানুষগুলি সকালে উঠে নামাজের জন্য মসজিদে যায়, ঘরে এসে উচ্চস্বরে কোরআন তেলওয়াত করে, হাতে একটা প্লাষ্টিক ব্যাগ নিয়ে নিজে নিজে বাজার করে, হেটে হেটে সেই বাজার বহন করে আনে। বিকালে হয়তো কিছু মানুষ একত্রে বসে মাঠে বা কোনো দোকানের সামনে বসে গালগল্প করে। কোথাও একসাথে খেতে গেলে কে কার আগে রেষ্টুরেন্টের বিল পরিশোধ করবে তার প্রতিযোগিতা চলে। একজন বলে সে দিবে, আরেকজন বিল না দিতে পেরে আবারো হয়তো আরেকটা আড্ডার অগ্রীম দাওয়াত দিয়ে রাখে। এদেরকে আর খুব বেশী দেখা যাবে না একযুগ পরে।

তখন যাদের আনাগোনা হবে তারা সবাই আত্তকেন্দ্রিক একদল। যারা একে অপরের পাশে বসেও হাতের মোবাইলে কুশলাদি বিনিময় করবে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও বেশীর ভাগ গ্রিটিংস হবে শুধুমাত্র মোবাইলের মেসেজে মেসেজে। কেউ কারো বাড়িতে যেতেও আনন্দ পাবে না, না কেউ তাদের বাড়িতে এলেও খুশী হবে। সন্তানদের সাথে তাদের দুরুত্ত বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে চলে আসবে যে, কে কখন কি করছে, কেউ তার জবাব্দিহি নেওয়ার মতো অবস্থায় থাকবে না, না থাকতে চাইবে। বাজার হবে মোবাইলে, আনন্দ হবে মোবাইলে মোবাইলে, বন্ধুত্ত গুলির মধ্যে বেশীর ভাগ বন্ধুই কারো চেনা জানা হবে না অতচ বন্ধু বলে ধরা হবে। বড়রা যেমন ছোটদেরকে স্নেহ করার কায়দা জানবে না, ছোটরাও বড়দেরকে সম্মান করার আদব জানবে না। ঘরে ঘরে সবাই একাই থাকবে একজন থেকে আরেকজন। ধর্মের চর্চা ধীরে ধীরে কমে আসবে, কমে আসবে পারিবারিক, আর সামাজিক বন্ধুত্তের গন্ডি। প্রতিবেশীদের মধ্যে কারো সাথেই আজকের দিনের সখ্যতা আর হয়তো থাকবেই না। মুখ চেনা হয়তো থাকবে কিন্তু হয়তো নামটাও জানা হবে না একে অপরের। সন্তানরা বড় হবে মায়ের আদরে নয়, কাজের বুয়াদের নিয়ন্ত্রনে। বৈবাহিক সম্পর্কে চলে আসবে শুধুমাত্র একটা কাগুজে বন্ধনের মধ্যে। স্বামী স্ত্রীর আজীবন কালের ভালোবাসার সম্বন্ধ বা দায়িত্ববোধ হবে শুধুমাত্র দেয়া নেয়ার মধ্যে। ফলে না স্ত্রী স্বামীকে বা স্বামী স্ত্রীকে তার নিজের জীবনের একটা অবিবেচ্ছদ্য অংশ হিসাবে গন্য করবে। সন্তানদের মধ্যে মা বাবার ডিভিশনে তারাও একেবারেই একা হয়ে যাবে। কেউ আসলে কারোরই না। অথচ তারা একই ঘরের ছাদের নীচে বসবাস করবে। ওদের কাছে গ্রাম বলতে একটা অপরিষ্কার পরিবেশ, গ্রামের মানুষগুলিকে মনে হবে অন্য কোনো জাতের মানুষ বলে। এই নতুন প্রজন্মের কাছে মানুষের চেয়ে কুকুর বিড়াল হবে তাদের নিত্য দিনের বন্ধু। সংসার ভেংগে যাওয়ার যে কষ্ট, বা লজ্জা, কিংবা দুঃখের এই প্রজন্মের কাছে এটা খুব মামুলী একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আজ যে তাদের বন্ধু, কাল হয়তো সে তাকে চিনেই না। আজ যে কারো পাতানো বোন, কাল হয়তো সে হয়ে যাবে তার প্রিয় গার্ল ফ্রেন্ড। এদের অনেক টাকা পয়সা লাগবে, হয়তো থাকবেও। কিন্তু একসাথে কোথাও আড্ডায় খেতে গেলে যার যার বিল সে সেই দিতে থাকবে। এতে কারো কোনো কষ্ট নাই। এটাই যেনো এই প্রজন্মের আড্ডার নিয়ম। জিজ্ঞেসও করবে না হয়তো বিল কে দিবে বা কেউ দিবে কিনা।

এখানে সবচেয়ে বিপদজনক পরিস্থিতি হচ্ছে যে, এই আমাদের প্রজন্ম যখন প্রায় শেষের পথে আর নতুন প্রজন্ম যখন উদিয়মানের পথে, এই ট্রানজিট সময়ে সবচেয়ে বেশী সাফার করবে আমাদের প্রজন্ম। কারন তারা তাদের সব কিছু শেষ করে যখন নতুন প্রজন্মকে তৈরী করছে, তখন আমাদের প্রজন্মের মানুষেরা আসলে আর্থিকভাবে নিঃস্ব। নতুন প্রজন্ম আমাদের প্রজন্মকে আর আমাদের সময়ের মতো করে দায় দায়িত্ব নিতে চায় না। অথচ এখনই পুরানো প্রজন্মের সবচেয়ে খারাপ সময় প্রবাহিত হচ্ছে। বড়রা মনে করছেন, আমাকে তো আমাদের সন্তানেরাই দেখভাল করবে, কিন্তু সন্তানেরা মনে করছেন এটা তাদের দায়িত্তের মধ্যেই পড়ে না। তাহলে শেষ ট্রানজিট সময়টা বড্ড বিপদজনক মনে হচ্ছে। এহেনো অবস্থায় আমাদের প্রজন্মের খুব সতর্ক থাকা দরকার। হতে পারে আমার এই কথায় অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করবেন, হয়তো বলবেন, সন্তানদেরকে ধার্মীক জীবনজাপন না করায় কিংবা সঠিক পদ্ধতিতে মানুষ না করার কারনে আমরা এহেনো অবস্থায় পড়ছি। আমি এরসাথে একমত নই। আমরা আজকাল সন্তানদেরকে শুধুমাত্র পরিবার থেকে যথেষ্ঠ শিক্ষা দিলেই সব শিক্ষা তারা পায় না। স্কুলের নিয়ম পালটে গেছে, শিক্ষকের আচরন পালটে গেছে, ধার্মিক লোকদের অভ্যাসও পালটে গেছে, সমাজের নীতিনির্ধারন লোকের মানও কমে গেছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও আর সেই আগের আইনের মধ্যে নাই, বিচারের ন্যায্যতা কমে গেছে, রাজনীতির কারনে মানুষে মানুষে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লা মহল্লায় সম্পর্কের মধ্যে চীর ধরেছে। এখন শুধু পরিবারের শাসনের উপর কিংবা আইনের উপরেই সন্তানরা বড় হয়ে উঠছে না। নতুন প্রজন্ম আমাদের হাতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুরানো প্রজন্মের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেই অনেকটা সার্থপরের মতো হতে হবে। নিজের জন্য যথেষ্ঠ সঞ্চয় মজুত রাখুন যাতে কেউ আপনাকে দেখভাল করুক বা না করুক, কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, যাতে আপনি আপনার দেখভাল করতে পারেন। নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা (বেশিরভাগ) পুরাতন প্রজন্মকে বোঝাই মনে করে। মা ভাগ হয়ে যায় সন্তানদের মধ্যে ভরন পোষনের জন্য। বাবা ভাগ হয়ে যায় একই ভাবে। ফলে মা–বাবা একে অপরের থেকেও ভাগ হয়ে যান শুধুমাত্র বেচে থাকার কারনে।

বৃদ্ধ বয়সে এসে কারো উপরে নির্ভরশিল না হতে চাইলে, নিজের জন্য যথেষ্ঠ পরিমান অর্থ সঞ্চয় করুন। প্রয়োজনে নিজের এসেট বিক্রি করে হলেও তা করুন। কারন, একটা সময়ে এসে আপনি সেটাও বিক্রি করতে পারবেন না। হয়তো সন্তানেরাই বাধা দেবে অথবা তাদের অংশ দাবী করবে। আর আপনি সারাজীবন কষ্ট করেও শেষ জীবনে এসে সেই অবহেলিতই থাকবেন। হয়তো কারো কারো জায়গা হবে বৃদ্ধাশ্রমে। আর সেই বৃদ্ধাশ্রমে বসে আরেক পরাজিত বুড়ো মানুষের সাথে সারা জীবনের কষতের কথা ভাগাভাগি করবেন, কিন্তু আপনি আসলেই আর ভালো নাই।

৫/৮/২০২২-ডলার তার পজিশন হারাবে

বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলারের মান অনেক শক্ত। অর্থাৎ Strong US Dollar. এটার আসলে মানে কি?

আমরা যে কোনো কিছু Strong কেই পজিটিভভাবে নেই কারন সেটার একটা ক্ষমতা আছে। কিন্তু মনে রাখা উচিত যে, ফাইন্যান্স এবং অর্থনৈতিক ভাষায় এই শক্ত কারেন্সীর মুল্যায়ন কিন্তু অন্য রকম। এটা খুব সহজ নয়। কারন ডলারের স্ট্রং পজিশন মুলত ডাবল এজড একটা ছুড়ির মতো। আর এটার কোন পাশের ধার দিয়ে কাকে কিভাবে যে কাটবে সেটা প্রেডিক্ট করা খুব কঠিন।

যেমন ধরুন, এক ডলারের দাম বাংলাদেশে বর্তমানে আগের থেকে প্রায় ২৩/২৪ টাকা বেশী, ইয়েনের মুল্য কমেছে প্রায় ১০% এর উপর, ইন্ডিয়ার কারেন্সীর মুল্য কমেছে প্রায় ১৫%, পাকিস্থানের রুপীর দাম এমন কি ইউরোর দামও কমে গেছে ডলারের কাছে। এটার মুল কারন কি? (এখানে একটা ছোট কথা বলে রাখি- ডলার আন্তর্জাতিক মুদ্রা হওয়ায় ডলার একটা তাজা ইস্যু। যদি ডলারের সাথে সাথে আরো অনেকগুলি আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারে চলমান থাকতো তাহলে বিশ্ব বাজারে ডলার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কোনো দেশকেই কাবু করতে পারতো না।)

যেটা বলছিলাম, ডলার এতো স্ট্রং হবার কারন কি?

খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখবেন-মার্কিন অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের কারণে ডলার কিন্তু এতটা শক্তি অর্জন করছে না। ডলার স্ট্রং হচ্ছে উলটা দিকে থেকে মানে বিশ্বের বাকি অংশে হতাশাজনক অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার কারণে।

যারা ডলারের দেশ সেসব নাগরিকদের জন্য স্ট্রং ডলার একটা মারাত্তক সুখবর। কারন একই পরিমান ডলার খরচ করে এসব কাষ্টোমার বেশী লাভ পায়, বেশী পন্য কিনতে পারে। কিন্তু যারা আমদানির উপর নির্ভরশীল বা যে সব ব্যবসায়ীরা আমদানী করে কাচামাল কিংবা ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আনতে চায়, তাদের জন্য স্ট্রং ডলার মারাত্তক খারাপ খবর। তারা একই পরিমান পন্য আগের তুলনায় বেশী নিজস্ব কারেন্সী দিতে হয় অর্থাৎ বেশী কারেন্সী দিয়ে ডলার কিনতে হয়। অথবা একই পরিমান পন্য কিনতে গেলে বেশী পরিমান ডলার কিনতে হয়। এটা গেলো যারা ডলারের দেশ না তাদের জন্য খারাপ খবর।

স্ট্রং ডলার থাকার পরেও আমেরিকার জন্য বা ডলারের দেশের জন্য এটা খারাপ খবর কিভাবে যেখানে তাদের অনেক খুশী হবার কথা?

আমেরিকার জন্য স্ট্রং ডলার অন্যদের চেয়ে বহুলাংশে বেশী বিপদ, এই কারনে যে, এটি মার্কিন রপ্তানিকে বিদেশী তৈরি পণ্যের সাথে আরও ব্যয়বহুল করে তোলবে, যার ফলে অন্য দেশের চাহিদা কমিয়ে দেবে বা জোর করে কমিয়ে দিতে দেশ বাধ্য হবে। এটা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি যে, বহু দেশ অনেক ভোগবিলাস পন্য আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে যাতে নিজেদের কারেন্সীর অনুপাতে ডলারের মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচ না করতে হয়। ফলে যারা রপ্তানী করে সে সব দেশের রপ্তানী আয় কমে যায়। অর্থাৎ আমদানীকারকেরা ডলারের দাম বাড়ায় তারা আমদানীতে নিরুসাহিত করে। এর ফলে বিদেশী রাজস্ব স্ট্রীমসহ মার্কিন কোম্পানিগুলি সেই লাভের মূল্য হ্রাস দেখতে পায়। আমেরিকার জিডিপি কমে যায় বা যাচ্ছেও।

তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে-এটা কিভাবে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে?

সাধারণভাবে, এর অর্থ হল একটি শক্তিশালী ডলারের অধীনে মার্কিন ইক্যুইটিগুলির উচ্চ এক্সপোজারসহ একটি পোর্টফোলিও আন্তর্জাতিক ইক্যুইটিগুলির উচ্চ এক্সপোজারের চেয়ে ভাল করতে পারে বটে, তবে সেই মার্কিন ইকুইটিগুলি যেগুলি বিদেশে প্রচুর ব্যবসা করে সেগুলি হ্রাস পেতে পারে। উদাহরণ যদি দেই-প্রক্টর এবং গ্যাম্বল, একটি মার্কিন কর্পোরেশন, বিশ্বের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য কোম্পানি যার বার্ষিক বিদেশী বিক্রয় বিলিয়ন ডলারের সাথে এই মঙ্গলবার রিপোর্ট করেছে যে তাদের ত্রৈমাসিক আয় ৩১% শতাংশ কমেছে । এর একটাই কারন, স্ট্রং ডলার।

এটাকে বলে ট্রেডওয়ার। এই ট্রেডওয়ারে কারেন্সী ডিভালুয়েশনের কারনে অন্যান্য দেশের পন্যের মুল্য কমে যায়। যেমন জাপান, তাদের বর্তমান গাড়ির মুল্য আগের থেকে অনেকাংশে কমে গেছে শুধুমাত্র ডলারের স্ট্র হবার কারনে। এর ফলে জাপান এখন তাদের উতপাদিত গাড়ি সেসব দেশে পাঠাতে দ্বিধা করছে। তারা আপাতত পন্য রপ্তানীতে নিরুৎসাহিত করছে। ফলে যারা আমদানী নির্ভর দেশ, যেমন আমেরিকা, তাদের জনগন পন্য পাওয়া থেকে বিরত হয়। অথচ আমেরিকার কাছে স্ট্রং ডলার থাকার পরেও পন্য নাই।

এই ট্রেডওয়ারের কারনে বিভিন্ন দেশে স্টক এক্সচেঞ্জগুলিও উঠানামা করছে, ফলে ডলারের দেশের পন্যের স্টক এক্সচেঞ্জের ক্রয় বিক্রয়ও অনেকাংশে কমে গেছে। এর ফলে খোদ আমেরিকাতেও রিসেসন নামক একটা ধাক্কা লাগছে। কিন্তু ডলার স্ট্রং।

এই বর্তমান পরিস্থিতিতে আগামীতে যা দেখা যাবে সেটা হচ্ছে- ডলারের বিপরীতে অন্য কোনো কারেন্সী বা কারেন্সীসমুহ দাড় করানো। ডলারকে আর একক আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে গন্য না করা। হতে পারে সেটা ‘ব্রিক্স কারেন্সি’, হতে পারে নতুন কোনো কারেন্সী যা ইউরোর মতো সব দেশ ব্যবহার করবে। ইউরো যেমন এখন ২৯টি দেশের কমন মুদ্রা।

ডলারের জন্য এটাই সবচেয়ে মারাত্তক খারাপ খবর।

০৩/০৮/২০২২-তাইওয়ানে  পেলোসির ভিজিটে

তাইওয়ানে  পেলোসির ভিজিটে চীনের এতো হুমকী ধামকীর কোনো প্রকার বহির্প্রকাশ আদতে দেখা যায় নাই। অবাক শুধু সারা বিশ্বই হয়নি, পেলোসি এবং আমেরিকাও অবাক হয়েছে। এটা কি হলো?

তবে আমার কাছে দুটু জিনিষ একেবারেই ক্লিয়ার ছিলো-(ক) পেলোসি তাইওয়ানে যাবেই (২) চীন কিছুই করবে না যা তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া হয়। বিশেষ করে তাইওয়ানে আক্রমন বা পেলোসির বিমানে হামলা কিংবা পেলোসির উপরেই হামলা। এই প্রসঙ্গে আমি ফেসবুকেও ব্যাপারটা শেয়ার করেছিলাম। সেটাই আসলে হয়েছে। তাহলে ব্যাপারটার রহস্য কি হতে পারে?

তাইওয়ানিজরাও চায়নিজ। ভাষা এক, কালচার এক, হেরিডিটিও এক। ঠিক রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের জনগনের যে অবস্থা। মেইন স্ট্রিম মিডিয়া বা যারা সত্যটাকে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেন, তাদের কাছেই বেশীরভাগ শোনা যাবে যে, ইউক্রেনের অধিকাংশ জনগন রাশিয়াকে ঘৃণা করে, রাশিয়াকে তারা চায় না ইত্যাদি। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক ঐ রকমের না। সবদেশেই ভিন্ন মতালম্বীর লোক থাকে, তাদেরকে ইনিয়ে বিনিয়ে ইন্টারভিউ নিয়ে একটা কঠিন সত্যকে মিডিয়াগুলি লুকিয়ে ফেলে তাদের জন্য যারা এসব ব্যাপারে খুব একটা বেশী জানেন না। ফলে বিশ্বব্যাপি একটা আলাদা মনোভাব সৃষ্টি হয়। সোস্যাল মিডিয়ায় না জেনেই বিজ্ঞের মতো মতামত পড়তে থাকে। রাশিয়া প্রথম থেকেই ইউক্রেনের সাধারন জনগনের উপর কোনো আক্রমন করে নাই বা যদিও রাশিয়ার বেশ কিছু অপারেশনের কারনে ইউক্রেনের লোক আহত নিহত হয়েছে সেটা কোলেটারেল ড্যামেজ। ঠিক তেমনি, তাইওয়ানের মধ্যেও ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ আছে। কিন্তু বেশীরভাগ তাইওয়ানিজরা কিন্তু নিজেরদের সায়ত্তশাসিততা এবং গ্রেট চীনের অধীনেই ভালো আছে বলে মনে করে। এ কারনে চীন যদি তাইওয়ানের উপর আক্রমন করে বা করতো, তাতে চীনের রেপুটেশন অবশ্যই নষ্ট হতো এবং তাইওয়ানের জনগনের মধ্যে একটা ঘৃণার সৃষ্টি হতো। চীন তাইওয়ানিজদেরকে ব্রাদার মানুষ হিসাবে নিজেদের গোত্রীয়ই গন্য করে। চীন তাই সম্ভবত তাৎক্ষনিক আক্রমনে যেতে চায়নি।

তাছাড়া পেলোসিকে আক্রমন করা বা তার বিমানে হামলা করা মানেই হলো, সরাসরি আমেরিকাকে যুদ্ধে ডেকে আনা, হোক সেটা যারই ভুল বা এরোগ্যান্সি। যুদ্ধটা গতকালই লেগে যেতো। তখন না আমেরিকা, না চীনের কারো হাতে আর কোনো কন্ট্রোল থাকতো। আমেরিকা পেলোসির এই ভিজিটটাকে ইজ্জতের ছাওয়াল হিসাবে ভেবে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার, ৮টি US Air Force warplanes, including F-15s, Four US warships, including an aircraft carrier এগুলি দিয়ে পেলোসিকে তাইওয়ানে মাত্র ১৪ ঘন্টার জন্য ভিজিট করিয়েছে। মানে তারা চীন আক্রমন করুক চেয়েছে।  ফলে চীন আমেরিকার ফাদে পা দেয়নি। চীন এদিক দিয়ে অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ করেছে।

তাহলে পেলোসির ভিজিট তাইওয়ান কিংবা পশ্চিমাদের উপর কিংবা চীনের উপরেই কি প্রভাব হতে পারে? এটা একটা লং টার্ম, (হতে পারে অনেক মাস, হতে পারে অনেক বছর) ইফেক্টে যাচ্ছে। আমার ধারনা, চায়নীজদের রিস্পন্সটা পর্যায়ক্রমে আসতে থাকবে। আর সেটা কোনোভাবেই যুদ্ধের রুপ নেবে না। প্রথম ইফেক্টটা হবে-আমেরিকার সাথে চায়নার সম্পর্ক আজীবনের জন্য খারাপ থাকবে এবং প্রতিনিয়ত চায়না তাইওয়ানকে বিভিন্নভাবে চাপের মধ্যে রাখবে যেটা করছে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর।

এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার যে, জাতিসংঘের দ্বারা নির্ধারিত তাইওয়ানের এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন চীনের কন্ট্রোলে। চায়না যে কোনো সময়ে তাইওয়ানের সমস্ত বহির্গত এবং আভ্যন্তরীন বানিজ্যিক কার্যক্রম  বন্ধ করার ইখতিয়ার রাখে। শুধু তাইই না, তাইওয়ানের সমস্ত নদীপথের একচ্ছত্র কন্ট্রোল্ধারী চীন। যে কোনো সময়ে চীন তাইওয়ানের সমুদ্রপথ ব্লক করার ইখতিয়ার রাখে আর এটা জাতিসংঘের দ্বারাই নির্ধারিত। এর ফল স্বরূপ এই মুহুর্তে চীন বলেছে যে, তাইওয়ানের কোনো পন্য আমদানী করবে না, না সমুদ্রপথে অর্থাৎ এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন দিয়ে তাইওয়ান নির্দিষ্ট কিছু পন্য পরিবহন ছাড়া অন্যান্য পন্য পরিবহন করতেও পারবে না বলে নিষিদ্ধ করেছে। চীন তাইওয়ানের আকাশপথ এবং সম্যদ্র পথে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে।

পেলোসির ভিজিটকে উপলক্ষ করে চায়না এই প্যাসিফিক অঞ্চলে তার পুরু আগের চেহাড়া পালটে ফেলবে। আর সেটা সামরিক উপস্থিতির সাথে সল্প মেয়াদীতে চীন তাইওয়ানের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটকে দূর্বল করতে থাকবে। যেটা রাশিয়া করছে ইউক্রেনকে। চীন তাইওয়ানের সরকারের প্রতিটি ভুল পদক্ষেপকে মারাত্তক এগ্রেসিভভাবে কাজে লাগাবে। চীন তাইওয়ানের জনগনের উপর কিন্তু ক্ষিপ্ত নয়, ক্ষিপ্ত তাইওয়ানের প্রশাসকদের উপর যারা চীনের না বলা সত্তেও পেলোসির ভিজিটকে সমর্থন করেছে যেখানে হাজার হাজার তাইওয়ানিজরা এই ভিজিটের বিপক্ষে আন্দোলন করেছে। এর সাথে চীন তাইওয়ানের উপর সাইবার এটাকের মাধ্যমে তাদের প্রচুর পরিমানে ক্ষতি করার সম্ভাবনা আছে।

পেলোসির এই ভিজিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন প্রশাসনের রুপরেখা “গার্ডরেইল” আর বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনাই নাই।

৮০র দশকে পশ্চিমারা এই সোভিয়েট ইউনিয়নকে ভেংগেই ইউনিপোলার ক্ষমতাধারী হয়েছিলো। এবার রাশিয়া আর চীন একত্রিত হয়ে পশ্চিমাদেরকে একঘরে করার পায়তারা করে তার ইউনিপোলার ক্ষমতার অবসান যেমন ঘটাতে পারে, তেমনি ক্রমাগত অর্থনৈতিক রিসেসনের কারনে পশ্চিমার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যগুলিও নিজস্ব সাধীনতার জন্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ ভাঙ্গনের সুর। এটা হতে হয়তো কয়েক যুগ লেগে যেতে পারে কিন্তু সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।  যেমন এখন শুরু হয়েছে গ্রেট ব্রিটেনে আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডে। গ্রেট ব্রিটেনে ক্রমাগত জনগনের দূর্ভোগের কারনে আয়ারল্যান্ড , স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের ভিতর এই আন্দোলনের সুরে গতকাল ইউকে রাশিয়ার উপর এককভাবে বেশ অনেকগুলি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে, তার মধ্যে একটা শিপিংলাইন এলাউড এবং ইন্সুরেন্স বৈধতা, যাতে রাশিয়া তেল এবং অন্যান্য কমোডিটি ইউকে তে পাঠাতে পারে। খবরটার হেডিং এ রকমের- “London has re-allowed the provision of insurance for aircraft, sea vessels and their components to Russia-linked entities”

আমেরিকার Veteran Intelligence Professionals (এটা সিআইএ এর অবসর প্রাপ্তদের একটা সংঘটন) গত ৩০ জুলাই ২০২২ এ ওপেন একটা চিঠি লিখেছেন (লিংক চাইলে দিতে পারি) বাইডেন প্রশাসনকে যে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা বেজড পলিসিতে যতো না অন্য দেশকে ক্ষতি করছে তার থেকে বেশী ক্ষতি করছে পশ্চিমা এবং তাদের মিত্রদেরকে। ফলে ইতমধ্যে যে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে চীন, রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার সাথে যুদ্ধ মনোভাব দেখানো মানেই হচ্ছে বর্তমান নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে ফেলা। চীন-রাশিয়া এই সুযোগ অবশ্যই নিবে এবং পেলোসির এই ভিজিট অবশ্যই পশ্চিমাদের এবং তাদের মিত্রদেরকে ক্রমাগত ইউনিপোলার ক্ষমতা থেকে ছিটকে দেবে। তারা আরো বলেছেন যে, আমেরিকার USS Ronald Reagan carrier battle group যা বর্তমানে সাউথ চায়না সমুদের অবস্থান করছে, সেই অঞ্চল পশ্চিমাদের আওতায়ও নয়। বহুদূর। ফলে এই শিপগুলিতে যদি চীন আক্রমন করে এবং একটা শীপ বা ক্রু নিহত হয়, তখন নিউক্লিয়ার যুদ্ধ ছাড়া বিকল্প কোনো অপশনও নাই। আর সাউথ চায়না সমুদ্র চীনেরই আওতায় বেশী।

এর মানে হলো দুইপক্ষই নিউক্লিয়ার যুদ্ধ এড়াবে ঠিকই কিন্তু চায়নার রেঞ্জের কাছে ক্ষুদ্র ওয়েপনারী দিয়েও তারা ডিটারেন্ট ইফেক্ট করার সক্ষমতা রয়েছে যা পশ্চিমাদের নাই। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন কিনা জানি না, চীন লাইভ এমুনিশন দিয়ে উক্ত সাউথ চায়না সমুদ্রে অনুশীলন করার নামে আমেরিকার শীপসমুহকে উক্ত রেঞ্জের বাইরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। আর সেটা লিখিত ভাবেই।

এবার আরেকটা কথা বলি। ইউক্রেনকে পশ্চিমারা এখন অফিশিয়াল্ভাবেই ডি-প্রাইরাটাইজ ঘোষনা করেছে। তারমানে এবার ইউক্রেন প্রচন্ড সংকটের মুখে। আর ঠিক এই মুহুর্তে রাশিয়া ইউক্রেনকে সংবাদ দিয়েছে- রাশিয়ার টার্মে যদি ইউক্রেন যুদ্ধবন্ধে রাজী হয় তো ভালো, তা না হলে রাশিয়া তার মুল উদ্দেশ্য যেভাবেই হোক সমাপ্ত করবেই।

এখানে আরেকটা মজার ব্যাপার হলো- ইইউ কিংবা ন্যাটো পেলোসির ভিজিটে কোনো প্রকার মুখ খুলেনি, তারা কিন্তু একেবারে নীরব। অন্যদিকে ন্যাটো এই চায়না-আমেরিকার তাইওয়ান ইস্যুতে জড়ানোর কোনো প্রকার ইখতিয়ারই নাই।

হতে পারে এবার ন্যাটো তাইওয়ানকে ন্যাটোতে ফাষ্ট মুভিং প্রোসেসে ন্যাটো মেম্বার করতে চাইবে। কিন্তু সেটা হলে হবে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ।  

১৫/০৭/২০২২-যখন বয়স ছিলো ১২ কি ১৩

যখন বয়স ছিলো ১২ কি ১৩, তখন স্কুলে কিংবা বড়দের আড্ডায় প্রায়ই একটা ব্যাপারে আমাদের মতো ছোটরা ফেস করতাম-“ জীবনে কি হতে চাও? বা জীবনের লক্ষ্য কি অথবা what is your aim in life?” হয়তো তখন জানতামই না আসলে কি হলে ভালো হয়, কি হলে কি হয়। ফলে বড়দের শিখিয়ে দেয়া বা ইম্পোজ করে দেয়া বক্তব্যই হয়তো হয়ে যেতো আমাদের বক্তব্য। যেমন-ডাক্তার হবো মানুষের সেবা করবো, ইঞ্জিনিয়ার হবো দেশ গড়বো, কিংবা শিক্ষক হবো মহৎ কাজে ব্রত হবো বা সেনাকর্মকর্তা হবো দেশপ্রেমের জন্য ইত্যাদি। কেনো হতে চাই, কি কারনে হতে চাই, এসবের কোনো অন্তর্নিহিত তথ্য বা ভাবসম্প্রসারনের কোনো বালাই কিংবা মাহাত্য জানাও ছিলো না। যদি এই প্রশ্ন কোনো সমবয়সী বালিকাকে করা হতো, হয়তো তাঁর উত্তর একটু ব্যতিক্রম তো হতোই। পড়াশুনা করবে, বিয়ে হবে, ভালো স্বামী পাবে, তারপর সন্তান সন্ততী হবে, একসময় বুড়ো হবে, নায়নাতকোর হবে। জীবন আনন্দে কেটে যাবে। এই তো।

আজ ৪০ বছর পর আমি যখন পঞ্চাশোর্ধ এক মানুষ, এখন আর আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে না, আমার জীবনের লক্ষ্য কি। অথবা এটাও কেউ জিজ্ঞেস করে না, কি লক্ষ্য ছিলো, কি হতে পেরেছি আর এখন কোন দিকে যাচ্ছি। এখন সবাই যেটা দেখে, আমাদের গত ৫০ বছরের সাফল্যের ঝুড়ির ভিতরে বর্তমানে কি নিয়ে আমরা বেচে আছি। হোক সেটা বিত্ত, হোক সেটা পজিশন কিংবা হোক সেটা দারিদ্রতা। এই সর্বশেষ ম্যাট্রিক্সটাই হচ্ছে আমাদের জীবনের পাওয়া সাফল্য বা বিফলতা যদিও সেই ছোট বেলার “এইম ইন লাইফের” সাথে এর কোনো মিল নাই বা কিঞ্চিত থাকতেও পারে। স্কুল জীবনে কে কতটা ট্যালেন্ট ছিলো, কে কতটা স্মার্ট ছিলো, কিংবা কে কতটা ভালো রেজাল্ট নিয়ে স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটির গন্ডি পেরিয়েছে, সেটাই কারো জীবনের আসল সাফল্য না। সবচেয়ে পিছনের বেঞ্চে বসা কোনো এক অমনোযোগী ছাত্র হয়তো এখন এমন এক জায়গায় আছে যেখানে প্রথম সারির মনোযোগী কোনো এক ছাত্র তাঁর ধারে কাছেও না। এই ব্যাপারটা না হয় আরেকদিন লিখবো। এখন যে কারনে আমার লেখাটা, সেটা হচ্ছে-

যে যাইই কিছু করুক, সবার জীবনের একটাই সপ্ন। সবকিছু গুছিয়ে শেষ বয়সে এসে একটু শান্তিতে থাকা। এই যে শান্তি, এটা আসলে কোথায় বা এটা আসলে কি? (ধর্মীয় ব্যাপার এখানে টানতে চাই না, সেটা আরেক প্রকার শান্তি)। এই শান্তি হচ্ছে, আমার খাদ্য, বাসস্থান, সাস্থ্য, নীরাপত্তা আর সাধীনতা যেনো বজায় থাকে, একটু আরামে থাকতে পারি, কোনো টেনশন ছাড়া। কিন্তু আদৌতে কি সেই লক্ষ্যে আমরা পৌছাতে পারি সবাই? বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি- সেতার থেকে অনেক দূরে আমরা। প্রতিটি মানুষ আলাদা আলাদা সত্তা। কেউ কারোর জন্যই বেশীরভাগ সময়ে অপেক্ষা করে না, হোক সেটা নিজের সন্তান, নিজের আত্তীয় বা নিজের সংগী। অথচ, আজীবন সবার জন্য সবকিছু করতে করতে একটা মানুষ আসলেই নিঃস্ব হয়ে যায়, নিজের জন্য সে আসলেই আর কিছুই রাখে না। এটা সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে রাঘব বোয়ালদের বেলাতেও প্রযোজ্য। ফলে দেখা গেছে যে, শেষ বয়সে এসে যে সপ্নের জীবনের কথা ভেবে এ যাবতকাল শরীর, যৌবন, মেধা, সঞ্চয়, অকাতরে বিলিয়ে দেয়া হয়েছে, সেটাই কাল হয়ে যায় নিজের জন্য। অবহেলিত, নির্যাতিত এবং অনিরাপদ জীবন তখন তাঁর সংগী হয়ে যায়। পাশে যাদের থাকার কথা ছিলো, তারা বেশীরভাগ সময়েই আর পাশে থাকে না, আর নিজেরা তখন একেবারেই “একা” হয়ে যান। এই একা জীবনে নিজের নোংরা কাপড়টা ধোয়ার মানুষ থাকে না, খাবারটাও সঠিক সময়ে পরিবেশনের লোক থাকে না, পথ্য খাওয়ানোর কোনো মানুষ আর পাশে থাকে না, এমন কি নিজের যত্ন নিতে যে খরচ দরকার সেটাও আর হাতে থাকে না ইত্যাদি।

কে কিভাবে নিবে জানিনা, আমার মতে, সবার জীবনের সুরক্ষার জন্য সবসময় নিজের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা করে রাখা দরকার যখন সব প্রকারের পেইড সার্ভিসে নিজেকে মানুষ সুরক্ষা দিতে পারে। আর সেই পেইড সার্ভিসের জন্য প্রয়োজন একটা ব্যালেন্স সঞ্চয়। এই পেইড সার্ভিসে সঠিক সময়ে পথ্য, কাপড় চোপড় ধোয়ার মানুষ, রান্না বান্নার দক্ষ লোক, যত্নাদি করা লোক সবই থাকতে পারে। যদিও তারা আপন কেউ না।

তাহলে যা দাড়ায়, তা হলো-জীবনের লক্ষ্য সেটাই হওয়া উচিত, “ব্যালেন্স সঞ্চয়” করা যাতে নিজের সব লোক আশেপাশে না থাকলেও সর্বপ্রকার পেইড সার্ভিস নিজেই ব্যবস্থা করতে পারেন এবং জীবন থাকে নিরাপদ। যারা এটা করতে পেরেছেন, তাদেরকে অনেকেই সার্থপর ভাবতে পারেন কিন্তু তারাই সঠিক কাজটি করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। বৃদ্ধাশ্রম বলে আর কোনো অপশন আপনার জন্য প্রয়োজন পড়ে না।

নিজের জন্য করুন, নিজে বাচুন, তারপর অন্যের জন্য করুন। জীবন একটাই।

আজকে যাদের হাতে অনেক টাকাকড়ি নাই, কিন্তু হয়তো এসেট আছে। তাদের উচিত, আগে নিজের জন্য যথেষ্ঠ পরিমান ব্যালেন্স সঞ্চয় রেখে বাকীটা তাদের নিজের লোকদের জন্য রাখা। তাতে যেটা হবে, নিজে ভালোভাবে বাচতে পারবেন, কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না। একটা কথা তো ঠিক যে, নিজের অন্তর্ধানের পর এইসব এসেট, এইসব সম্পত্তির কোনো মুল্য আপনার জীবনে নেই। ঐসব তো করাই হয়েছে যাতে নিজে ভালো থাকা যায়, তাহলে দ্বিধা কেনো? কাজটা অনেক অনেক অনেক কঠিন।

একটা জিনিষ আমি সবসময়ই মনে করি যে, আমরা কোনো কিছুই আমাদের উত্তরসুড়িদের জন্য না রেখে গেলেও তারাই তাদের জীবন আলাদা করে গড়িয়ে নেবে, যেমন আমি আপনি গড়িয়ে নিয়েছি। তাদের ভবিষ্যতের চিন্তায় আজকে নিজেদের বর্তমানকে অবহেলা করে নিজেকে করুন জীবনে বসবাস বুদ্ধিমানের কাজ হয়তো নয়। তাতে সাহস কমে যায়, টেনশন বেড়ে যায়, আর এর কারনেই শরীর খারাপ হতে থাকে, আর শরীর খারাপ হতে থাকলেই আপনার সম্পত্তি বা এসেটের ভাগাভাগিতে উত্তরসুরীরা যতো দ্রুত সেটা নিজেদের করে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। আপনি আবারো আরেক দফায় একা হবেন। একমাত্র বয়ষ্ক ব্যক্তিরাই আরেক বয়ষ্ক ব্যক্তির ভালো বন্ধু হয়। জেনারেশন গ্যাপে নতুন পুরানো জেনারেশনের সাথে মিশে থাকা যায় বটে কিন্তু সেখানে প্রান থাকে না।

(বয়োবৃদ্ধ একজন অসহায় মানুষের গল্প শুনে এই লেখাটা, এটা কাউকে জ্ঞান কিংবা উপদেশ দেয়ার জন্য নয়। এই ফোরামে সম্ভবত এটাই আমার প্রথম লেখা, ভুল মার্জনীয় )

১২/০৭/২০২২-ওয়াকফ সম্পত্তি কি এবং কার

বেশ কয়েকদিন যাবত একটা বিষয় নিয়ে লিখবো বলে ভাবছিলাম। কারন এই বিষয়টার ব্যাপারে আমরা হয়তো অনেকেই জানি কিন্তু না জানার মতো। আমি এই বিষয়টা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসকের সাথে বিস্তারীত কথা বলার পরে, এবং এ বিষয়ে বিস্তারীত আইন কানুন সম্পর্কে জানতে পেরে আমি নিজেও এই ওয়াকফ ব্যাপারটা নিয়ে খুবই সন্তুষ্ঠ।

ওয়াকফ হচ্ছে নিজের মালিকানাধীন সম্পদকে আল্লাহর মালিকানায় নিবেদিত করা। এর মাধ্যমে সম্পদের মালিকানা ব্যক্তির কাছ থেকে বিলুপ্ত হয়। অর্থাৎ ওয়াকফকৃত বস্তু কারো মালিকানায় প্রবেশ করা থেকে বেরিয়ে যাবে, শুধু বস্তুর উপকার যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে তাদের জন্য নির্ধারিত হবে।

ওয়াকফ দুই ধরনের হয়ঃ
(ক) ওয়াকফ ই লিল্লাহ
(খ) ওয়াকফ আল আওলাদ

ওয়াকফ-ই-লিল্লাহ জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত সম্পত্তি। এই সম্পদ থেকে তিনি বা তার বংশধর কোনো মুনাফা ফিরে পেতে পারে না। অন্যদিকে কোনো সম্পত্তির মালিক তার সম্পত্তি নির্দিষ্ট অংশ ধর্মীয়, সৎকাজ বা জনহিতকর কাজের জন্য ব্যয় করার উদ্দেশে দলিলের মাধ্যমে উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তি দান করলে তাকে ওয়াকফ-আলাল-আওলাদ বলে।

যেভাবেই ওয়াকফ করা হোক, ওয়াকফ সম্পত্তির মালিক ওয়াকফ প্রশাসক।

যিনি ওয়াকফ করলেন (যাকে বলা হয় ওয়াকিফ) তাঁর জীবদ্দশাতেও তিনি আর সেই ওয়াকফ করা সম্পত্তির মালিকানা থাকেন না। তিনিও আর ইচ্ছে করলে সেই ওয়াকফ করা সম্পত্তি কখনোই ফেরত নিতে পারেন না। একবার যদি কার্যকরীভাবে ওয়াকফ সম্পাদিত হয় তাহলে তা প্রত্যাহার কিংবা বাতিল করা যায় না, যাবেও না। উক্ত সম্পত্তির মালিক তখন ওয়াকফ প্রশাসক।

ওয়াকফ আল আওলাদের ব্যাপারে শুধুমাত্র যাদের জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে, তারা ওয়াকিফের জীবদ্ধশায় এবং ওয়াকিফের মৃত্যুর পরেও ওয়াকফ দলিল মোতাবেক সম্পত্তিতে উপকার পেতে পারেন। আর সেটাও নিশ্চিত করেন এই ওয়াকফ প্রশাসক।

ওয়াকফ প্রশাসকের তত্তাবধানে এবং ওয়াকফ দলিলে উল্লেখিত ওয়াকিফের শর্ত অনুযায়ী ওয়াকফ প্রশাসন ‘মুতোয়াল্লী” নিয়োগ করেন যিনি ওয়াকফ সম্পত্তির তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনার জন্য নিযুক্ত। মুতাওয়ালি্ল কেবল সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওলাদ হলেও সম্পত্তির মালিক নন। তিনি শুধু ওয়াকফ দলিলে উল্লেখিত তার জন্য নির্ধারিত অংশের ভোগকারী।

ওয়াকফকৃত সম্পত্তি কারো নিকট বিক্রয়, কিংবা একে হেবা বা মিরাসের (ওয়ারিশি) বিষয়বস্তু করা যায় না। তবে ওয়াকফ প্রশাসন যদি ক্ষেত্র বিশেষে এরুপ কোনো পদক্ষেপ নিতে চান, তা শুধুমাত্র ওয়াকফ প্রশাসক আইনের মধ্যে তা করতে পারেন।

ওয়াকফ আল আওলাদের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি ব্যাপার জানা অবশ্যই প্রয়োজনঃ

১. ওয়াকফ দলিলে যে নিয়ম পদ্ধতি লেখা হয় তার কোনো প্রকার ব্যতিক্রম করা যাবে না।

২. দলিলে সৎ কাজের জন্য যে অংশ নির্দিষ্ট আছে সে অংশ ঐসব কাজে ব্যায় বা ব্যবহার করতে হবে।

৩. শরীকদের বা আওলাদদের জন্য "ওয়াকফ আল আওলাদ" দলিলে যেভাবে ভোগ দখলের নিয়ম উল্লেখ থাকবে শরীকগন/ আওলাদগন ঠিক সেভাবেই ভোগ দখলের অধিকারী হবে। কোনো আওলাদ কিংবা শরীক অন্য কোনো আওলাদ বা শরীকের ভোগ দখলে কোনো প্রকার বাধা দিতে পারবে না। তবে যদি কোনো আওলাদ তাঁর প্রাপ্য অংশের সুবিধা ভোগ করা থেকে অন্য কোনো আওলাদ বা শরীক দ্বারা প্রবঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করেন, তাহলে ভুক্তভোগী আওলাদ শুধুমাত্র ওয়াকফ প্রশাসনের কাছে তিনি তাঁর নালিশ পেশ করতে পারেন। এখানে উল্লেখ থাকে যে, যেহেতু ওয়াকফ করা সম্পত্তির মালিক ওয়াকফ প্রশাসন নিজে এর মালিক কোনো আওলাদ নহেন, ফলে ওয়াকফ প্রশাসনের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে ধরে নেয়া যায়।

৪. ওয়াকফ আল আওলাদের ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে ওয়াকিফের আওলাদ কিংবা আওলাদের আওলাদগন শুধুমাত্র তাদের জন্য নির্ধারিত অংশেই ভোগ করার ক্ষমতা রাখেন। অন্য আওলাদ কিংবা আওলাদের আওলাদগন কোনো অংশেই অন্য কোনো আওলাদ বা তাদের আওলাদগনের ভোগ দখলের কোনো সুযোগ নাই, কিংবা বাধা দেয়ারও কোনো সুযোগ নাই। যদি কোনো আওলাদ এরুপ কোনো কাজ করতে চান, তাহলে তিনি অন্যের সম্পত্তি দখলের পায়তারার মামলায় অপরাধী সাব্যস্থ্য হবেন। আর এখানে মামলা হবে দেশ (ওয়াকফ প্রশাসন) বনাম উক্ত অপরাধী।

৫. ওয়াকফ আল আওলাদ সম্পত্তিতে ওয়াকিফ কর্তৃক যদি কোনো জেনারেশন উল্লেখ করে সীমাবদ্ধ না করেন (যেমন ৩য় জেনারেশন অবধি কিংবা ৪র্থ জেনারেশন অবধি ওয়াকফ আল আওলাদ করা হলো ইত্যাদি), তাহলে আওলাদের বংশধরগন বংশ পরম্পায় ভোগ দখলের জন্য উপযুক্ত থাকবেন।

৬. সম্পত্তি দেখাশুনার জন্য যেভাবে মোতাওয়াল্লী নিয়োগের বিধান রাখা হয় সেভাবে মোতায়াল্লী নিয়োগ হবে। কোনো কারনে যদি দলিলে উল্লেখিত শর্ত মোতাবেক মোতোয়াল্লী না পাওয়া যায়, তাহলে ওয়াকফ প্রশাসন তাঁর ইখতিয়ারে মোতোয়াল্লী নিয়োগ করতে পারবেন।

৭. ওয়াক্ফ কমিশনারের অনুমতি সাপেক্ষে মোতাওয়ালী ওয়াকফ সম্পত্তির উন্নতির জন্য আংশিক হস্তান্তর করতে পারবেন। অনুমতি ছাড়া হস্তান্তর হলে গ্রহীতার অনুকূলে স্বত্ত সৃষ্টি হবে না।

৮ মোতোয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তির সচীবের ন্যায় বা অনেক সময় মেজিষ্ট্রেটের ন্যায় দায়িত্ব পালন করেন। ওয়াকফ প্রশাসনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি হচ্ছেন মোতোয়াল্লী। যে কোনো প্রকারের অভিযোগ, সমস্যা, পরামর্শ সরাসরি মোতোয়াল্লীর মাধ্যমে ওয়াকফ প্রশাসনের কাছে প্রেরন করতে হয়।

এখানে সবচেয়ে বড় ব্যাপারটা হচ্ছে-ওয়াকফ করা সম্পত্তিতে যে যাই কিছু করুক না কেনো, সেটা অবশ্যই ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতিতে করতে হবে, কারন ওয়াকফ করা সম্পত্তির মাটির উপরে এবং নীচে অবস্থিত প্রতিটি বস্তু, মাটি, গাছপালা, কিংবা অন্যান্য পদার্থ সব কিছু ওয়াকফ সম্পত্তির মালিক হিসাবে ওয়াকফ প্রশাসনের । উদাহরন দেই-

ধরুন, ওয়াকফ আল আওলাদ হিসাবে কেউ তাদের অংশে বসবাসের জন্য যদিও অনুমোদিত কিন্তু তারাও ঐ সম্পদের উপর যে কোনো কিছু করার আগে ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। যদি ওয়াকফ দলিলে আওলাদদের দ্বারা বিল্ডিং কিংবা ইমারত তৈরির অনুমতিও থাকে সেটাও ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতিসমেত করা আবশ্যক। অনুমতি ছাড়া যদি তারা ওখানে গাছ পালা বা বৃক্ষরাজীও লাগান, কিংবা অস্থায়ী কোনো দেয়ালও দেন, সেটা তারা দিতেই পারেন, কিন্তু সেটাও তখন ওয়াকফ প্রশাসনের সম্পত্তি বলে গন্য হবে। ফলে কেউ যদি সেই আরোপিত গাছ/বৃক্ষ কিংবা দেয়াল নিজেদের ইচ্ছায় কেটে ফেলতে বা ভাংতে চান, তাহলে ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামুলক। কারন ওয়াকফ করা সম্পত্তি ওয়াকফ প্রশাসনের। মালিক তারা। আওলাদগন কোনো অবস্থাতেই মালিক নন, তারা শুধু ভোগকারী। এখানে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার করা বাঞ্চনীয় যে, ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি ব্যাতিত ওয়াকফ সম্পত্তিতে কোনো কিছু করা অন্যের জমিতে বিনা অনুমতিতে করার শামিল।

ব্যাপারটা এমন যে, কেউ রাস্তার ধারে কয়েক শত গাছ লাগালো , গাছগুলি বড় হলো, কিন্তু সেই ব্যক্তি সেই গাছগুলি আর নিজের ইচ্ছায় কাটতে পারে না, তখন রাস্তার ধারে লাগানো গাছগুলি সরকারের মালিকানায় চলে আসে। এটা যেইই লাগাক।

 

০৯/০৭/২০২২-আপডেট (সাইফুল)

সাইফুলের বাসায় আমার যাওয়ার কথা ছিলো জুম্মা নামাজ পড়ে বাসা থেকে খাওয়া দাওয়া করে বিকেল ৪ টার মধ্যে। কিন্তু আমার স্ত্রীকে আমি নিয়ে যাবো (আমিই বলেছিলাম সে গেলে হয়তো ভাবীর পার্টটা জানার জন্য আমার সহায়ক হবে) বলে সেইই বল্লো যে, আমরা বিকেল ৫ টার পর রওয়ানা দিয়ে ওখানে গিয়ে মাগরেবের নামাজ পড়ে গল্প করতে পারবো। আর যেহেতু সাইফুলের বাসায় ডিনার করবো তাই সে মোতাবেক একটু দেরী করেই রওয়ানা হয়েছিলাম। মাগরেবের পর পরই আমরা সাইফুলের বাসায় গিয়ে হাজির হয়েছিলাম।

সাইফুল খুবই ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ। অনেক বছর পর ওর সাথে আমার আবার দেখা। সেই ক্যাডেট কলেজের পুরানো গল্প, আমি কিভাবে এক্ট্রোজেন হয়ে গেলাম সেই মজার মজার গল্প হলো। আমি আমার গল্প, আর সাইফুল সাইফুলের গল্পে সাথে ভাবীরা একেবারে দারুন একটা সন্ধ্যা কেটে গেলো আমাদের। কথার ফাক দিয়ে আমি আর সাইফুল আলাদা ওর নিজের রুমে বসে আরো কিছু ব্যক্তিগত কথা বললাম। সেখানে আসলে ওর চিকিতসা সংক্রান্ত বিশয়েই আলাপ হলো। যেহেতু সাইফুল এখনো সিগারেট খায় (যদিও খুব অল্প নিকোটিনযুক্ত) ফলে আমার কোনো অসুবিধা হয় নাই। আমাদের ব্যাচের প্রায় সবার খোজ খবর নিলো আমার কাছ থেকে। যতটুকু আমার কাছে ছিলো, সেটা ওর সাথে শেয়ার করেছি। মিজানের কথা, বাবলার কথা, কব্বর আলীর কথা, ফরিদ, ডন, বারী, লিংকন, সাগর, মাকসুদ, জুলু, ফিরোজ, সালু, জাহেদ, জাহিদ, এভাবে একে একে মুটামুটি ক্যাডেট নাম্বার ধরে ধরে সাইফুল সবার কথা জিজ্ঞেস করলো। মাহমুদের সাথে সাইফুলের প্রায়ই কথা হয় সেটাও জানালো। খুব ভালো একটা সময় কেটেছে। সাইফুল নিজেও সবাইকে মিস করছে বুঝতে পারলাম।

অনেক কথার মধ্যে আমার টার্গেট ছিলো সবসময় সাইফুলের সাস্থ্যগত ব্যাপারে গভীরভাবে জানা এবং সেটার ব্যাপারে ওর পরবর্তী পদক্ষেপগুলিকে পজিটিভভাবে উৎসাহ দেয়া। খুব ভালো লেগেছে যে, সাইফুল আগামী ঈদের পরে সে ইন্ডিয়া যেতে ইচ্ছুক (ইনশাল্লাহ)। আয়মানের স্কুলের সিডিউলটা জেনে হয়তো ঈদের পরে ইন্ডিয়ান এম্বেসী খুল্লেই সে ভিসার জন্য এপ্লাই করবে। আয়মানকে সাথে নিয়ে যাবে। আর যাবেন ভাবী। ক্লাস নাইনে পড়ুয়া আয়মান দারুন দায়িত্তশীলতার পরিচয় দিচ্ছে। দেবী শেঠির কাছে সাইফুল ইনশাল্লাহ অপারেশন করাবে। আর এরজন্য সে মানসিকভাবে রাজী হয়েছে এবং প্রস্তুত হচ্ছে (আলহামদুলিল্লাহ)।

সংগত কারনেই সাইফুল মাঝে একটু বেশ মানসিকভাবে আপ্সেট ছিলো। এটা আমি হলেও হয়তো আপ্সেট থাকতাম। তাই ওকে বললাম, বন্ধুদের মাঝে থাকলে মন ভালো থাকে, সময়টা ভালো কাটে, আর এই বয়সে এসে বন্ধুরাই আসলে পরিবার। একটু ফান, একটু সিরিয়াস টক, সব কিছুই ভালো। ওকে যত দ্রুত সম্ভব এমসিসি ১৫ তে এড হতে বলেছি, সে রাজী হয়েছে। আমাদের এমসিসি ১৫ এর এডমিন কে বা কারা আমি জানি না। প্লিজ এড সাইফুল। আমিও ট্রাই করবো ওকে এড করতে। আমি সাইফুলকে সোস্যাল মিডিয়াতেও থাকতে বলেছি, কারন ফেসবুকে ওর একটা বিশাল ফেনগ্রুপ ছিলো, তারাও আমাকে অনেকবার নক করেছে সাইফুলের ব্যাপারে। তাই ওকে ফেসবুকেও আবার সাভাবিক থাকতে বলেছি। সাইফুল আবার আগের ফর্মে ব্যাক করবে ইনশাল্লাহ। সাইফুল অনেক ঝরঝরা আছে এখন মাশআল্লাহ। সাইফুল খুবই ভালো আছে এখন।

ওর সাথে সময়টা কাটাতে আমার যেমন ভালো লেগেছে, সাইফুলেরও অনেক ভালো একটা সময় কেটেছে। সাইফুল নিজের থেকেই ওর বাসায় দাওয়াত দিয়েছে সবাইকে। যে যখন পারো, সময় করে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে পারো, অথবা ওকে ফোনও দিতে পারো। ওর কাছে অনেকের ফোন নাম্বার এখন নাই। তাই হোয়াটসআপে এড করলে সাইফুল আবার সবার নাম্বারগুলি পেয়ে যাবে। তবে করোনা ওর জন্য বিপদজনক।  ফোনে ফোনে টাচে থাকাই এই মুহুর্তে নিরাপদ বলে আমি মনে করি।

ভাবী আমাদের জন্য চমৎকার চমৎকার রান্না করেছিলেন। আমরা সবাই একসাথে খেয়ে অনেক গল্প করেছি। ভাবীও খুব খুশী হয়েছেন। আমাদের এমসিসি বন্ধুরা ওর জন্য যে সবসময় দোয়া করছে এবং ওর ব্যাপারে জানার জন্য খোজ খবর নিচ্ছে, সে ব্যাপারে জানিয়েছি। বেশ অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছিলাম। তাই আর আপডেট দিতে পারিনি।

সাইফুল, ভাবীর আর আয়মানের সাথে কয়েকটি ছবি দিলাম।

(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমার যাওয়া উপলক্ষ্যে নাকি সাইফুল একেবারে ক্লীন সেভ করেছিলো, তাই ওর খোচা খোচা দাড়ি নাই ছবিতে। চুলও নাকি কালো করতে চেয়েছিলো, আমি বললাম সাইফুলকে, চুল কালো না করলেও কিংবা ক্লীন সেভ না করলেও এমসিসির বন্ধুরা আজীবন ১২ আর ১৮ এর মধ্যেই আমাদের বয়স থাকবে, দারুন হাসাহাসি হয়েছিল ভাবীদের মধ্যে এটা নিয়ে, এটা একটা ফান নোট)

বন্ধুরা, তোমাদের সবার জন্য ঈদ মোবারক রইলো, সবাই ভালো থাকো ইনশাল্লাহ। Love you always.

০৭/০৭/২০২২-ইউরোপবসন্ত

আরব বসন্তের কথা মনে আছে? শুরু হয়েছিলো ২০১০ সালে।

আরব বিশ্বে সর্বপ্রথম গণবিক্ষোভের শুরু হয়েছিল মিশরে। গণবিক্ষোভ ছিল মিশরীয় জনগণের দীর্ঘকালের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। ১৭ দিন গণআন্দোলনের পর ১১ই ফেব্রুয়ারি হোসনি মোবারকের ৩০ বছরের শাসনের পতন হয়। এরপর তা লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ইরান, জর্ডান, মরক্কো, তিউনিসিয়ায় সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইরাক, কুয়েত, মৌরিতানিয়া, ওমান, সৌদি-আরব, সুদান, সিরিয়াতেও ছোট বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে। এসব বিদ্রোহে হরতাল, বিক্ষোভ প্রদর্শন, জনসভা প্রভৃতি কর্মসুচী নেয়া হয়।

আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়ে যাওয়া গণবিপ্লবের ঝড়কে পশ্চিমা সাংবাদিকরা আরব বসন্ত হিসাবে আখ্যায়িত করে। মিশরের আগেও আরব বসন্তের সূচনা হয় আসলে তিউনেশিয়ায়। স্বৈরাচারী শাসক বেন আলীর দুঃশাসনের ফলে সেই দেশে বেকারত্বের হার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। এর প্রতিবাদে এক যুবক প্রকাশ্য রাস্তায় নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহুতি দেয়। ফলাফলস্বরুপ, লোকজন বেন আলীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমে পড়ে। ফলে সূচনা হয় আরব বসন্ত। যদিও তিউনিসিয়ায় এটিকে জেসমিন বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করা হয়।

চরম রাজতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দুর্বল অর্থনীতি, বেকারত্ব, চরম দারিদ্র্য ও শিক্ষিত হতাশাগ্রস্থ যুবসমাজ, খরা ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ আন্দোলনের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়ছিল।

আরব বিশ্বের এই গনঅভ্যূত্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সরাসরি আঘাত হেনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়কের পতন ঘটাতে সাহয়ক ভূমিকা রেখেছিল। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, আরব বসন্তের ফলে মাত্র দুই বছরে লিবিয়া, সিরিয়া, মিশর, তিউনিসিয়া, বাহরাইন ও ইয়েমেনের গণ-আন্দোলনের ফলে মোট দেশজ উৎপাদনের ক্ষতি হয়েছে দুই হাজার ৫৬ কোটি ডলার।

এতো বছর পর, কেনো জানি আমার কাছে মনে হচ্ছে-এবার বসন্তটা হবে “ইউরোপশ্চিমা বসন্ত”। কেনো বলছি?

এই ইউরোপের দেশগুলিতে এখন পুরুদমে একনায়কতন্ত্রের চর্চা, মানবাধীকার লঙ্ঘন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, দুর্বল অর্থনীতি, বেকারত্ব, চরম দারিদ্র্য ও শিক্ষিত হতাশাগ্রস্থ যুবসমাজ, খরা, খাদ্য, তেল গ্যাস এমন কি শিশুদের খাবারের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে সারাটা ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশগুলিতে সরকার প্রধানদের অবস্থা মুটামুটি টালমাটাল।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অপসারন এই ইফেক্টের প্রথম কারন বলা যায়। বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অবস্থাও প্রায় বরিস জনসনের মতো হতে যাচ্ছে। একে একে তাঁর কোয়ালিশন পার্টি এবং কিছু সতন্ত্র এমপি ইতিমধ্যে সরকার থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে প্রধানমন্ত্রী পেটকভকে একঘরে করে ফেলছেন। বাকীটা হয়তো অচীরেই নজরে আসবে।

জার্মানীর অভ্যন্তরে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়াকে বিভিন্ন কমোডিটির উপর স্যাংকশন দেয়ার কারনে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধিসহ অনেক শিল্প কারখানা প্রায় বন্ধের উপক্রম। তাতে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে, আয় কমে যাচ্ছে, কিন্তু সরকার নাগরিকদের জন্য বিকল্প কিছু তৈরী করতে না পারায় জার্মানীর ভিতরে নাগরিকগন এতোটাই হতাশ যে তারা এখন রাস্তায় নেমে পড়েছেন।

স্পেনের মাদ্রিদে এখন প্রকাশ্যে আন্দোলন চলছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের তথা ন্যাটোর একচ্ছত্র সিদ্ধান্তকে স্পেন সরকার মানার কারনে। তারা ব্লক থেকে বের হয়ে যাবার জন্য আন্দোলনসহ ন্যাটোর বিলুপ্ত চান। ফ্রান্সের অবস্থাও প্রায় একই। যে নির্বাচনে ম্যাক্রো অনেক ভোটে এগিয়েছিলো, কিন্তু পার্লামেন্টারী পর্বে গিয়ে তাঁর ভরাডুবি হয়েছে। ইতালী, পোল্যান্ড, লাটভিয়া, ইত্যাদি দেশগুলিতে এখন নাগরিকেরা প্রায়ই আন্দোলনে শরীক হচ্ছেন অর্থনইতিক বিপর্য্যের কারনে।

আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচন করার মত কোনো পরিবেশ আর অবশিষ্ঠ নাই বলেই মনে হচ্ছে। তাঁর পাবলিক রেটিং নীচে নামতে নামতে এখন দাড়িইয়েছে মাত্র ২৭% তে যা আমেরিকায় এ যাবতকালের যে কোনো প্রেসিডেন্টের জন্য সর্বনিম্ন। আমেরিকার নিজস্ব কোনো প্রোডাক্ট তেমন দেশের মধ্যে নাই। আর যা আছে, তা খুবই সামান্য। আমেরিকা গাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই তারা কোনো না কোনো দেশের উপরে নির্ভরশীল। ফলে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞাসহ আরো প্রায় ৩০টি দেশের উপর এ যাবতকাল নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় আমেরিকা নিজেই এখন প্রায় একঘরে হয়ে যাচ্ছে। আরব দেশগুলির কারো সাথেই আমেরিকার ভালো সম্পর্ক নাই, আফ্রিকার দেশগুলির সাথেও না। এবার শুরু হয়েছে এশিয়া দেশগুলির সাথে দন্ধ। ফলে আমেরিকা সারা প্রিথিবীকে একঘরে করতে করতে এখন সে প্রায় নিজেই একপেশে হয়ে গেছে। প্রতিটি দেশে তাদের কারেন্সী বিশেষ করে ইউরো এবং ডলারের ইনফ্লেশন হচ্ছে। বলা হচ্ছে ইউরোপিয়ান দেশগুলি অচিরেই ১০% জিডিপি শ্লথ হবে। এসব কিছু মিলিয়ে উপসংহারটা যে খুব ভালোর দিকে এগুচ্ছে না, সেটা এখন প্রায় পরিষ্কার।

আগামী বছর এর পুরু দৃশ্যটা একেবারে চোখের সামনে ভেসে উঠবে যদি না এখনই সঠিক পদক্ষেপ না নেয়া হয়।

'চাঁদ উঠুক বা না উঠুক, আজ বসন্ত"।

০১/০৭/২০২২-স্ন্যাক আইল্যান্ড

এই ইউক্রেন যুদ্ধের আগে জীবনেও আমি এই দ্বীপের নাম শুনিনি। গত কয়েকদিন যাবত এই স্ন্যাক আইল্যান্ডের নাম খুব ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে। এই স্ন্যাক আইল্যান্ড আসলে কি? ঐ যে বলে না যে, চাপে পইরা কিছু জানা। আর আমার বেলাতেও এই জানাটা হইছে এই ইউক্রেন যুদ্ধে স্ন্যাক আইল্যান্ড নামক জায়গাটার ব্যাপারে জানা হলো।

ইউরোপের ডানুবি ডেল্টা নদীর নিকটে কৃষ্ণ সাগরের পাশে ইউক্রেনের অধীনে একটি দ্বীপ যাকে ইউক্রেনিয়ানরা “জিনি আইল্যান্ড” আর ইংরেজীতে একে “সার্পেন্ট বা স্ন্যাক আইল্যান্ড” নামে ডাকে। ১৮৪২ সালে রাশিয়া সেখানে একটি লাইট হাউজ তৈরী করেছিলো এবং সেটা রাশিয়ার অংশ হিসাবেই পরিগনিত হতো কিন্তু ১ম বা ২য় বিশ্ব যুদ্ধে এই লাইট হাউজ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেখানে পতনের বছর পর রোমানিয়া একটি কেরোসিন দ্বারা পরিচালিত লাইট হাউজ তৈরী করে সামুদ্রিক পরিবহনের দিক নির্দেশনার কারন হিসাবে।

 
২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় যে, মাত্র ৩০ থেকে ১০০ জনেরও কম জনবসতি এই আইল্যান্ডের একটি গ্রাম যার নাম বিলি, সেখানে বসবাস করত। এদের বেশীরভাগ মানুষ হচ্ছে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস, কিংবা ট্যাকনিক্যাল হ্যান্ডস যারা তাদের পরিবার নিয়ে ওখানে বাস করে। সুপেয় পানির কোনো সম্ভাবনা সেখানে নাই। এরা কিভাবে কি খায়, কোথা থেকে কিভাবে কি আনে এটা আমি জানি না। তবে জানা যায় যে, সব কিছুই হেলি সাপোর্টেড হয়।

এই আইল্যান্ডের আয়তন মাত্র ৬৯০ বাই ৬৮২ মিটার। অর্থাৎ 0.205 km2 খুবই ছোটো একটা ল্যান্ড।। যদিও এটা এখন ইউক্রেন ওদের টেরিটরি হিসাবে ভাবে কিন্তু এর ৮০% রোমানিয়ার অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত। মাত্র ২০% হচ্ছে ইউক্রেনের।

১৯৯৭ সালে ইউক্রেন তার পুরু অংশ রোমানিয়ার কাছে ছেড়ে দিয়েছিলো কিন্তু পরবর্তীতে রোমানিয়া সার্ভে করে দেখেছিলো যে, এই আইল্যান্ডে শুধুমাত্র সাগরের রক ছাড়া আর কিছুই নাই বিধায় সে এটাকে রক্ষনাবেক্ষনের অংশ থেকে পরিত্যাগ করে।

২০০৭ রোমানিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইউক্রেন সেখানে হেলিকপ্টার প্লাটফর্ম, নেভিগেশনাল সিস্টেম, সোলার এবং ডিজেল সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করে কিছু বেসামরিক স্থাপনা যেমন রিসার্চ সেন্টার, পোষ্ট অফিস, ব্যাংক (ওখানে ইউক্রেনের ‘আভাল ব্যাংকের’ একটি শাখা আছে), সেটেলাইট টেলিভিশন, প্রাথমিক চিকিতসার একটি কেন্দ্র, মোবাইল ফোনের টাওয়ার স্থাপন করে। যদিও রোমানিয়া তার সত্ত্ব ছাড়েনি বলে আখ্যা দেয়। তারমানে এটা এখনো ইউক্রেন আর রোমানিয়ার জন্য একটা ডিসপুটেড আইল্যান্ড।

ইউক্রেনের কোষ্টাল এরিয়া থেকে এই আইল্যান্ড ২২ মাইল এবং রোমানিয়ার কোষ্টাল এরিয়া থেকে এই আইল্যান্ড মাত্র ২৮ মাইল দূরে অবস্থিত। যদি শহরের দুরত্ত ধরি, তাহলে ইউক্রেনের ভিল্কোবি শহর থেকে এটা ৩১ মাইল আর রোমানিয়ার সিলুনা শহর থেকে এর দুরুত্ত মাত্র ২৯ মাইল।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে রাশিয়া এই আইল্যান্ড নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। যদিও রাশিয়ার এই আইল্যান্ডের কোনো প্রয়োজনই ছিলো না এবং এখনো প্রয়োজন নাই।

দখল নেয়ার সময় ইউক্রেনিয়ানরাও জানতো না কতজন আসলে ওখানে ছিলো। ফলে ইউক্রেন জানায় যে, মোট ১৩ জন এই স্ন্যাক আইল্যান্ডে ছিল যারা সবাই মারা গেছে রাশিয়ার দখলের সময়। তাই প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকী ওই ১৩ জনকেই দেশের সর্বাধিক মরনোত্তর পুরুষ্কারে ভূষিত করেন। পরবর্তীতে রাশিয়া এই স্ন্যাক আইল্যান্ড থেকে আরো ১৯ জন নাগরিককে আটক করে, সেই আটককৃত নাগরিকদেরকে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনের কাছে ছেড়ে দেয়।

এই স্ন্যাক আইল্যান্ড স্ট্রাটেজিক লোকেশন হিসাবে যতোটা না ইম্পর্ট্যান্ট, তার থেকে বেশী ইম্পর্ট্যান্ট হচ্ছে যে, ল্যান্ড লকড কান্ট্রি হিসাবে যদি ইউক্রেন লকড হয়ে যায়, তাহলে ওডেসা থেকে এই স্ন্যাক আইল্যান্ডের মাধ্যমেই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে ব্ল্যাক সি এরিয়া দিয়ে রোমানিয়া হয়ে ইউক্রেন তার পন্য পরিবহনে সক্ষম। এটা ইউক্রেনের ম্যারিটাইম টেরিটরিয়াল হিসাবে ইউক্রেনের কাছে বেশী জরুরী। রাশিয়ার কাছে নয়।

রাশিয়া গত ৩০ জুন ২০২২ তারিখে ‘গূড গেশ্চার’ হিসাবে স্ন্যাক আইল্যান্ড থেকে তার মিলিটারী প্রত্যাহার করেছে। রাশিয়া বলতে চাচ্ছে যে, ইউক্রেনের খাদ্য সামগ্রী দেশের বাইরে রপ্তানীর সুযোগ করে দেয়ার জন্যই তারা এই আইল্যান্ড পরিত্যাগ করেছে যাতে কেউ রাশিয়াকে এটা বলতে না পারে যে, ম্যারিউপোল কিংবা ইউক্রেনের অন্যান্য সমুদ্র বন্দর রাশিয়া দখল করার কারনে ইউক্রেন তাদের খাদ্য সামগ্রী বাইরে রপ্তানী করতে পারছে না। এবার তারা সেই সুযোগ করে দিয়ে প্রমান করাতে চায় যে, ইউক্রেন আসলেই তাদের খাদ্য সামগ্রী বাইরের দেশে রপ্তানী করতে ইচ্ছুক কিনা।

যদিও ইউক্রেন জানিয়েছে যে, ইউক্রেনের ক্রমাগত অবিরাম বোমার কারনে তারা স্ন্যাক আইল্যান্ড পরিত্যাগ করেছে।

০১/০৭/২০২২-রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী না

কেউ যদি বলে থাকেন যে, রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের দেয়া প্রায় দশ হাজার নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র একটি ফ্যাক্টর অর্থাৎ রাশিয়ার তেল এবং গ্যাসের কারনে ইফেক্টিভ হয় নাই, তাহলে সেটা হবে একটা ভুল ধারনা। হ্যা, এটা অনেকগুলি ফেক্টরের মধ্যে একটা ফ্যাক্টর তো অবশ্যই। তার আগে একটা কথা জেনে রাখা ভালো যে, নিষেধাজ্ঞার কারনে একটা দেশে কি কি ইফেক্ট হয় সেটা।

(ক) সাধারন মানুষের জীবনযাত্রার মান ক্রমশই সংকুচিত হয়ে আসে। মানুষজন সাফার করতে থাকে।
(খ) দ্রবুমল্য অস্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। মানুষের সেভিংস কমতে থাকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোনে জর্জরিত হয়ে যায়। দৈনিন্দিন আয় রোজগার কমে মানুষকে হতাশ করে ফেলে।
(গ) বিভিন্ন খাতে নেগেটিভ প্রভাব পড়তে থাকে। জীবন প্রায় থেমে যেতে থাকে। নতুন প্রজন্মের লেখাপড়া, ভবিষ্যত, পরিবারের জন্য হাউজিং খাত, ব্যবসা বানিজ্যে সাস্থখাতে বীমা সব জায়গায় প্রভাব পড়তে থাকে।
(ঘ) এহেনো অবস্থায় কর্মক্ষেত্রে ছাটাই শুরু হয়, বেতন কমে যায় মানুষ বেকার হয় ইত্যাদি।
(ঘ) এই রকম একটা দূর্বিসহ পরিস্থিতিতে দেশের নাগরিকগন তাদের নেতাদের উপর ত্যাক্ত বিরক্ত হয়, নেতাদের ক্রেডিট রেটিং কমে যায়, এবং এক সময় দেশের নাগরিকগন অসহিনষু হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে। নেতাদের পতন হয়।

তাহলে দেখি, এবার এই প্রভাবগুলি কিভাবে রাশিয়ার নাগরিকদের জীবনে কি ইফেক্ট হলো। আসলে এদের একটাও কঠিনভাবে ইফেক্ট করে নাই। বরং সেটা উলটোপথে বেগবান হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-কেনো?

রাশিয়ার উপর প্রথম নিষেধাজ্ঞা আসে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা ছিলো লিমিটেড ভার্ষন। এই লিমিটেড ভার্ষন নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার নাগরিকেরা তাদের কোনটা প্রাইওরিটি আর কোনটা লাক্সারি, কোনটা জরুরী আর কোনটা না হলেই নয় এই পার্থক্যটা বুঝে গিয়েছিলো। মানুষজন উক্ত নিষেধাজ্ঞায় জীবনপ্রনালী কিভাবে এডজাষ্ট করতে হবে সেটার একটা হোমওয়ার্ক করে ফেলেছিলো, অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলো। আসলে রাশিয়ার মানুষজন ১৯৯০ সাল থেকেই এই এডজাষ্টমেন্টটা শুরু করেছিলো যখন রাশিয়া ভেংগে গিয়ে ১৫ টা রাজ্যে পরিনত হয়। ফলে ২০১৪ তে এসে তারা পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় খুব একটা ভোগে নাই। ২০১৪ সালের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ানরা বুঝেই নাই।

এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার।

রাশিয়ানদের চরিত্রের একটা ভালো দিক হলো, তারা খুব তাড়াতাড়ি লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে কিভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো থাকা যায় সেটায় বেশ পারদর্শী। আর এই ক্যারেক্টার বৈশিষ্ট পেয়েছে তারা সোস্যালিজম সরকারের কারনে। বেশীরভাগ নাগরিকগন পুরানো সমাজতান্ত্রিক নিয়মে বেড়ে উঠায় নেতাদের উপর তাদের একটা অলিখিত আনুগত্যের মানসিকতায় বাস করতো। তারা এটাকে সাভাবিক নিয়ম হিসাবেই ধরে নিয়ে বড় হইয়েছে। তারা সবসময় সোস্যালিজমের কারনে আধুনিক ক্যাপিটালিজমের মতো বৈষয়িক ব্যাপারে ধার ধারে না। সারাদিনের খাবার নিশ্চিত থাকলে, দেশে খামাখা হাংগামা না থাকলে, ছেলেমেয়েরা ঠিকমত স্কুল কলেজে যেতে পারলে, অতঃপর রাতে সবাই মিলে নিজেদের তৈরী ভোদকায় মত্ত থাকতে পারলেই ওরা খুশী। ফলে ২০১৪ সালে নতুন নিষেধাজ্ঞায় তারা এটাই ভেবেছে যে, নেতারা আছে, তারাই ব্যাপারটা দেখবেন বরং তারা ন্যুনতম যা দরকার সেটা পাচ্ছে কিনা তাতেই তারা খুশী। যেহেতু রাশিয়া এখন পুরুপুরি সমাজতান্ত্রিক না আবার ক্যাপিটালিমেও না, এটা একটা মিক্সড ব্যবস্থা, ফলে আগে সরকার যেমন খাদ্য, বাসস্থান, চিকিতসা ইত্যাদি আনকন্ডিশনালী নিশ্চিত করতো, এখন যেহেতু সেটা নাই, ফলে সরকারী সহযোগিতায় আর পরিবারের প্রতিটি সদস্য দ্বারা তাদের নিজের মুল কাজের বাইরে কোনো না কোনো প্রোডাক্টিভ কাজের মাধ্যমে অর্থনইতিক প্রয়োজনটা নাগরিকেরা মিটিয়ে নেয়। সরকারও প্রায় সেই পুরানো ধাচে সমাজতান্ত্রিক নিয়মে সবাইকে সরকারী চাকুরী, ছোট খাটো ব্যাংক লোন, কমদামে দৈনিন্দিন জীবনের কমোডিটির সহজলভ্যতায় একটা ইকুলিব্র্যামে রাখে। কোনো অসস্থিকর পরিবেশে সরকার কাউকেই সরকারী জব থেকে ছাটাই করে না, বেতনও কমায় না, বরং খুব কম সুদে ব্যাংক থেকে লোনের মাধ্যমে সরকার তার নাগরিকদেরকে কোনো না কোনো খাতে আরো কিছু এক্সট্রা আয় করার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়। তাতে যেটা হয় যে,

(ক) কেউ সরকারকে দোষী করে না।

(খ) সরকারের উপর তাদের একচেটিয়া বিরক্ত ভাবটা আসে না।

(গ) সরকারকে পতনের মাধ্যমে নতুন রিজিম পরিবর্তনে আন্দোলন করে না।

এটাই হচ্ছে সেই ট্রাম কার্ডটা যে, ভিনদেশের নেতারা যা ভাবেন যে, নিষেধাজ্ঞায় ইন্টার্নালী দেশের নাগরিকগন তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন গড়ে উঠবে। নেতাদের পতন হবে, আর তাদের নিষেধাজ্ঞা ছুরির মতো কাজে দিবে। এটা রাশিয়ায় কখনোই সম্ভব না। রাশিয়ায় প্রায় ১ বছরের বেশী আমার থাকার কারনে আমি তাদের চরিত্রে এটা খুব ভালো করে দেখেছি। সাধারন নাগরিকেরা রাজনীতি নিয়ে আলাপই করে না। অনেক পরিবার তাদের বাসায় রান্নাও করে না। যাইই আছে, সবাই মিলে সন্ধ্যা ৬টার পর প্রায় প্রতিটি রেষ্টুরেন্টে, কফি শপে, বারে, রাস্তায় ছেলে মেয়ে ব্রিদ্ধরা মিলে এক মহাকোলাহলে নেচে গেয়ে সেই দিনটা পার করে। আগামীকাল কি হবে, সেটা দেখা যাবে আগামীকাল। এটাই রাশিয়া। তবে এটা ধীরে ধীরে চেঞ্জ হচ্ছে। কিন্তু এটা এখনো সেই সমাজতান্ত্রিকভাবেই ক্যাপিটালিজম মিক্সড হয়ে আছে।

যাক যেটা বলছিলাম।

এবারের পশ্চিমাদের প্রায় দশ হাজারের বেশী নিষেধাজ্ঞায় পশ্চিমারা প্রথমেই যেটা বলেছিলো যে, এইসব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ান নাগরিকদের উপরে নয়। কিছু কিছু রাশিয়ানরা বিশ্বাসও করেছিলো, আবার ভয়ও পেয়েছিলো। আশ্বাস পেয়েছিলো এই কারনে যে, পশ্চিমারা রাশিয়ান নাগরিকদের ভালো চায় এবং তারা তাদের পক্ষে। কিন্তু রাশিয়ানরা তাদের ভুলটা কিছুদিনের মধ্যেই ভেংগে গিয়েছিলো যে, পশ্চিমারা মিথ্যা কথা বলেছে। কারন, পশ্চিমারা ক্রমাগত দেশের বনিক শ্রেনীর উপরে, তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে, দেশের বিভিন্ন অলিগার্দের উপরে, স্পোর্টসম্যানদের উপরে, ছাত্রদের উপরে, এমনকি বিদেশে অবস্থানরত রাশিয়ানদেরকে কিংবা রাশিয়ান কালচারকে পুরুপুরি বয়কটের মাধ্যমে যেভাবে কোণঠাসা করে অপমানিত করছিলো তাতে রাশিয়ান নাগরিকেরা পশ্চিমা এবং ইউরোপের কথায় এবং কাজে মিল খুজে পাচ্ছিলো না। একদিকে তারা রাশিয়ানদের যেটা ভালো সেটাই করার চেষ্টা করছে বলে গলা ফাটাচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়ানদের সমস্ত মৌলিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এই কর্মটি রাশিয়ান নেতারা খুব ভালো করে তাদের জনগনের কাছে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, পশ্চিমারা বা ইউরোপিয়ানরা রাশিয়ানদের অতীত ধংশ করতে চায়, বর্তমানকে কঠিনতর করতে চায় এবং ভবিষ্যতকে অন্ধকারময় করতে চায় যার আরেক নাম ধংশ। যেহেতু রাশিয়ানরা সেটাই বাস্তবে দেখছিলো যেটা তাদের রাশিয়ান নেতারা বলছে, ফলে রাশিয়ানরা তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় জাতধর্ম, শ্রেনী বিভেদ ভুলে নিজেরা নিজেরা এক হয়ে যায়। তারা এটা পরিষ্কার বুঝে যায় যে, পশ্চিমারা তাদেরকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছে, এবং তারা এখন পশ্চিমাদের প্রতিটি কথা কুটকথা হিসাবে ভাবছে। তারা উপলব্ধি করতে পারছিলো যে, কিভাবে পশ্চিমারা তাদের কারেন্সীকে দূর্বল করার চেষ্টা করছে, কিভাবে সাধারন মানুষের জীবন যাত্রায় কঠিন করে দিচ্ছে, এবং তারা এটা বুঝতে একটুও বাকী ছিলো না যে, তাদেরকে জিম্মি করে এশিয়ান দেশ লিবিয়া, আফগানিস্থান, ইয়েমেন, ইরান কিংবা আফ্রিকান দেশগুলির ন্যায় তারাও শেষ হয়ে যাবে যদি তারা পশ্চিমাদের কথায় সায় দেয়। তাই এই অবস্থায় তারা একটা কথাই ভেবেছে, যে, সমুলে ধংশ থেকে বাচার জন্য তাদেরকে আরো সুসংঘটিত হয়ে, নেতাদের উপর আরো গভীর বিশ্বাসে অবিচল থাকতে হবে। ফলে রাশিয়ার ভিতরে যে কোনো প্রকার আন্দোলন সংঘটিত হবে না এটা রাশিয়ান নেতারা খুব ভালো করে নিশ্চিত হয়ে যায়। যে কোনো একনায়কত্ত ডিকটেররের সবচেয়ে বেশী ভয় থাকে নিজের দেশের জনগনকে মোকাবেলা করার। রাশিয়ায় এই আন্দোলন হবে না আর সেটা সম্ভব নয় এটা তারা বুঝে গিয়েছিলো। আর ঠিক এ কারনেই রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের লিডারশীপের ক্রেডিট রেটিং ৫২% থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে এখন সেটা দাড়িয়েছে প্রায় ৮৩%। অন্যদিকে জোটের নেতাদের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সহ সবার বর্তমান ক্রেডিট রেটিং অনেক নীচে চলে এসছে। এর কারন তাদের দেশের জনগনও এবার বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, নেতারা সুসংঘটিত নন, এবং সুচিন্তিত নন। যার ফলে রাশিয়ার উপরে প্রদেয় নিষেধাজ্ঞায় এবার এই সব নেতারাই ফাদে পড়ে গেছেন, তাদের জীবনযাত্রা এখন অসহনীয় হয়ে যাচ্ছে, নিজের দেশের ভিতরে তিনি নিজেই সমালোচিত হচ্ছেন। যেটা হবার কথা ছিলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের। এই অবস্থা থেকে তারাও বেরিয়ে যেতে পারছেন না।

যেহেতু আভ্যন্তরীন আন্দোলনের ভয় থেকে রাশিয়া মুক্ত, ফলে, রাশিয়ার নেতাদের এবারের মনোযোগ ছিলো, সাধারন নাগরিকেরা যেনো নিজ দেশে সাভাবিক জীবন যাপনে কোনো প্রকার অসুবিধায় না পড়ে সেটা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ অর্থনৈতিক ধ্বস থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে যাওয়া। আর এই হোমওয়ার্ক গুলি রাশিয়ার নেতাদের আগেই করা ছিলো, কখন কোন পলিসি তারা এপ্লাই করবে ইত্যাদি। রাশিয়া যেহেতু নিজে অনেকগুলি সেকটরে নিজেই সয়ংসম্পুর্ন, অন্যদিকে চীন, ইন্ডিয়া, আফ্রিকান দেশ, এবং মধ্যপ্রাচ্য সবাই কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ অপ্রকাশ্যে রাশিয়াকে সমর্থন দিচ্ছে, ফলে যে কোনো নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করা সহজ হয়ে গেছে তার জন্যে।
দাবা খেলায় প্রতিপক্ষ একটা ভুল চাল দিলে অন্য প্রতিপক্ষ দুটূ লাভ পায়। একটা লাভ হচ্ছে, ভুলের কারনে নিজের ক্ষতি যা প্রতিপক্ষের লাভ, আরেকটা হচ্ছে ভুলের মাশুলের ফল হিসাবে আরেকটা কঠিন পরিস্থিতি যা তার প্রতিপক্ষ চালতে যাচ্ছে। অর্থাৎ যে কোনো একটা ভুলে প্রতিপক্ষ দুইটা লাভ পায়। এখানেও তাইই হয়েছে।

সেটা কিভাবে?

রাশিয়াকে জি-৮ থেকে বাদ দেয়া, ইউএন হিউম্যান রাইটস থেকে বাদ দেয়া, আন্তর্জাতীক মহলে (যেমন স্পোর্টস, ভ্রমন, ব্যাংকিং) ব্যক্তি শ্রেনীকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া, সুইফট থেকে বাদ দেয়া, রিজার্ভ আটকে দেয়া, যুদ্ধটাকে প্রক্সিওয়ার হিসাবে আখ্যায়িত করা, এই যুদ্ধের মধ্যেও যে কারনে যুদ্ধ (ন্যাটোর এক্সপানসন) সেটা সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডকে যোগ করার পায়তারায় রাশিয়ার নেতাদের কথাকেই অন্যদের কাছে আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তোলায়,, কালিনগ্রাদকে ব্লকে ফেলানো, এবং অবুঝের মতো নিজের প্রয়োজনীয় কমোডিটি যেমন তেল, গ্যাস, খাদ্য, ফার্টিলাইজার, লোহা, ইউরনিয়াম, ইত্যাদির উপরে নিষেধাজ্ঞা দেয়া ইত্যাদি সব কিছু ভুল ছিলো। অন্যান্য দেশের উপরে অতীতে হয়তো এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এটা কতটুকু কার্যকিরী হবে এটার কোনো হোমওয়ার্ক করা হয়নি। রাশিয়া একটা সাভাবিক দেশ নয়। এটা নিজেই একটা ক্ষমতাশীল দেশ। একই প্রেস্ক্রিপসন যা অন্য দেশের উপর শতভাগ কাররযকরী হয়েছে বলে ফলাফল পাওয়া গেছে, এখানে সেটা কাজে লাগবে কিনা সেটা ভাবা দরকার ছিলো। ল্যান্ডলিজ, প্রক্সিওয়ার, নিষেধাজ্ঞা এসবই সেই পুরানো কৌশল। সেই একই কৌশল এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে নিউকসমৃদ্ধ একটা গ্রেট পাওয়ারের বিরুদ্ধে কাজ করবে কিনা এটা ভাবার দরকার ছিলো। এসব নিষেধাজ্ঞা কাজে লাগে নাই বরং নিজেরাই ফাদে পড়ে যাওয়ায় আবার সেটা আবার অবমুক্ত করতে দ্বিধায় পড়ে গেছে পশ্চিমা সহ ইউরোপিয়ানরা।

লাভ হয়েছে শুধু রাশিয়ার। জি-৭ এর বিকল্প হবে ব্রিক্স, চায়নার গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি, আফ্রিকার সাথে রাশিয়া-চায়না-ইন্ডিয়ার মার্জিং, মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমা থেকে সরে আসার প্রবনতা, ব্যাংকিং সেক্টরে নতুন কারেন্সীর আবির্ভাব, ট্রেড ফরমালিটিজে আমুল পরিবর্তন ইত্যাদি পৃথিবীকে এখন মনোপলি থেকে বের করে মাল্টি পোলার ওয়ার্ল্ডে নিয়ে যেতে বাধ্য।

অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে, ন্যাটো তো রাশিয়ার দোড়গোড়ায় এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ইত্যাদির মাধ্যমে ছিলোই, সেখানে ইউক্রেনকে টেনে পশ্চিমাদের প্রক্সীওয়ারের কোনো দরকারই ছিলো না। বরং রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ত করে পশ্চিমাদের আসল শত্রু যারা, চীন, তাদের বিরুদ্ধে একটা জোট করার দরকার ছিলো। এখন আবার ন্যাটোতে সুইডেন, ফিনল্যান্ডকে আমন্ত্রন জানিয়ে আসলে কোনো লাভ হলো কিনা জানিনা, অন্যদিকে সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়ায় তাদের কতটা লাভ হলো সেটাও এখন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত মনে হচ্ছে। ন্যাটোর জোটে থাকা মানেই হলো, যে যাইই কিছু করুক, সেখানে একটা বড় বাধা আছে। কিছু হইলেই সারা ইউরোপ দায়ী, ন্যাটো দায়ী। আবার ইউরোপের সবাই তো ইইউতে নাই। সেখানেও আরো ১৪ টা দেশ এই ব্লক থেকে মুক্ত। একটা সময় আসবে হয়তো যে, সেইসব মুক্ত ইউরোপিয়ান দেশসমুহ ইউরোপের বিরুদ্ধেই সংঘটিত করবে এই রাশিয়া, চীন, ইন্ডিয়া আফ্রিকানরা বা মধ্য প্রাচ্যরা একটা জোট হয়ে।
একটা কথা উজ্জ্বল দিবালোকের মতো সত্য যে, ন্যাটো কখনোই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবে না কারন যখনই অস্ত্র ধরবে, তখন রাশিয়া তার সেই কথাটা রাশিয়া প্রমান করেই ছাড়বে যে,

যদি রাশিয়াই এই পৃথিবীতে না থাকে, তাহলে এই পৃথিবী থাকার দরকারটা কি?

-------------------------------------------------------

(এখানে একটা কথা জানার জন্য লিখছি যে, আমিও রাশিয়ার এই আগ্রাসন ইউক্রেনের বিপক্ষে সাপোর্ট করি না, আবার ইউক্রেনেরও বড় গার্জিয়ান মাথার উপর আছে এইভেবে রাশিয়াকে হুমকীর মধ্যে ফেলানোর দরকার ছিলো না। সেটা আরেক চাপ্টার)

২৯/০৬/২০২২-ত্রিপক্ষীয় চুক্তিঃ

অবশেষে ফিন ল্যান্ড এবং সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগদানে ত্রি-পক্ষীয় চুক্তির শর্তে আগামী জুন শেষে তুরুষ্ক ভেটো প্রদান থেকে বিরত থাকবে বলে চুক্তি স্বাক্ষরিত।

(ক) সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের YPG/PYD কে টেরোরিষ্ট অর্গ্যানাইজেশন হিসাবে আখ্যায়িত করা হলো। ফলে এদের দ্বারা কিংবা এদের সিস্টার অর্গ্যানাইজেশন বা এদের দ্বারা প্রতিপালিত যে কোন সংস্থা, ব্যক্তি কিংবা এই জাতীয় যে কোনো ভার্চুয়াল কিংবা রিয়েল কার্যকলাপ অথবা এই সন্কেসথাকে যারা বা যে কোনো অর্গ্যানাইজেশন সাপোর্ট করবে কিংবা সহযোগীতা করবে তাদের সমস্ত কার্যিকলাপকে টেরোরিষ্ট এক্টিভিটি হিসাবে গন্য করে উভয় দেশ তা প্রতিহত, এবং নিসচিত করবে। এর জন্য উভয় দেশের ক্রিমিনাল কোডে যে সব এমেন্ডমেন্ট উভয় দেশ অতীতে এনেছিলো সেগুলি সংশোধন পূর্বক নতুন ক্রিমিনাল কোড অন্তর্ভুক্ত করে সাংবিধানিকভাবে ১ম জানুয়ারী ২০২২ থেকে কার্যকরী করে তা বাস্তবায়ন করবে।

(খ) এই গ্রুপের যে সব নেতা এবং ব্যক্তিবর্গকে তুরুষ্ক টেরোরিষ্ট হিসাবে পূর্বেই চিহ্নিত করেছিলো, তাদেরকে তুরুষ্কের হাতে তুলে দিতে হবে, সে ব্যাপারে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন রাজী হয়েছে।

(গ) তুরুষ্কের উপর সমস্ত আর্মস নিষেধাজ্ঞা অবমুক্ত। উপরন্ত তুরুষ্ক সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড থেকে সাভাবিক পদ্ধতিতে যে কোন ধরনের মিলিটারী অস্ত্র আমদানী করতে পারবে বলে নিসচিত প্রদান করা হইলো।

(ঘ) তুরুষ্কের বিরুদ্ধে কোনো প্রকারের হুমকী, মিলিটারী এক্টিভিটিজ কিংবা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন যে কোনো কার্যকলাপ থেকে উভয় দেশ সর্বদা বিরত থাকবে বলে অংগীকার।

যারা পুরু ট্রাইলেটারাল চুক্তিটা পড়তে চান, দেয়া হলো।

 

২৯/০৬/২০২২-হিটলারের শেষ আদেশের কপি

১৯৯৭-৯৮ সালে আমি যখন ষ্টাফ কলেজ করছিলাম, তখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের উপর আমার ইন্টারেষ্ট  আসে। ফলে আমি পুরু ২য় মহাযুদ্ধের সময় জার্মানদের পরিকল্পনা বা কিভাবে যুদ্ধটা পরিচালিত হয়েছে সেটা জানার জন্য প্রচুর বইপত্র এবং তার সাথে অনেক দালিলিক দস্তাবেজ জোগাড় করে পড়তে থাকি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী জরুরী বইটি ছিলো H R Trover Roper সংকলিত Hitler’s war Directives -1939-1945

হিটলার মোট ৫২টি ডাইরেক্টিভস ইস্যু করেছিলেন, আর কিছু ছিলো Führer Orders। হিটলারের সমস্ত ইন্সট্রাক শন এবং আদেশ অন্য সব কিছুর উর্ধে ছিলো, এর মানে  These instructions superseded laws of the German government as Hitler was considered to be above the law. ২য় মহাযুদ্ধের ১ম ডাইরেক্টভ ইস্যু হয়েছিলো ৩১ আগষ্ট ১৯৩৯ সালে। হিটলারের সর্বশেষ Führer Orders ছিলো Fuhrer Order-74, ১৫ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে যার হেডলাইন ছিলো ‘Order of the Day ‘। এখানে বলে রাখা ভালো যে, Führer Orders were issued later in the war. They tended to be less strategic and more specific in nature. হিটলার তার সেই ৭৪ নাম্বার ফুয়েরার আদেশে কি লিখেছিলেন সেটা এখানে পোষ্ট করলাম।

Fuhrer Order-74

Order of the Day 15 April 1945

Soldiers of the German Eastern front!

For the last time our deadly enemies the Jewish Bolsheviks have launched their massive forces to the attack. Their aim is to reduce Germany to ruins and to exterminate our people. Many of you soldiers in the East already know the fate which threatens, above all, German women, girls, and children. While the old men and children will be murdered, the women and girls will be reduced to barrack-room whores. The remainder will be marched off to Siberia.

We have foreseen this thrust, and since last January have done everything possible to construct a strong front. The enemy will be greeted by massive artillery fire. Gaps in our infantry have been made good by countless new units. Our front is being strengthened by emergency units, newly raised units, and by the Volkssturm. This time the Bolshevik will meet the ancient fate of Asia-he must and shall bleed to death before the capital of the German Reich. Whoever fails in his duty at this moment behaves as a traitor to our people. The regiment or division which abandons its position acts so disgracefully that it must be ashamed before the women and children who are withstanding the terror of bombing in our cities. Above all, be on your guard against the few treacherous officers and soldiers who, in order to preserve their pitiful lives, fight against us in Russian pay, perhaps even wearing German uniform. Anyone ordering you to retreat will, unless you know him well personally, be immediately arrested and, if necessary, killed on the spot, no matter what rank he may hold. If every soldier on the Eastern front does his duty in the days and weeks which lie ahead, the last assault of Asia will crumple, just as the invasion by our enemies in the West will finally fail, in spite of everything.

Berlin remains German, Vienna will be German again, and Europe will never be Russian.

Form yourselves into a sworn brotherhood, to defend, not the empty conception of a Fatherland, but your homes, your wives, your children, and, with them, our future. In these hours, the whole German people looks to you, my fighters in the East, and only hopes that, thanks to your resolution and fanaticism, thanks to your weapons, and under your leadership, the Bolshevik assault will be choked in a bath of blood. At this moment, when Fate has removed from the earth the greatest war criminal of all time [Editor's note: Hitler was referring to the recently deceased Franklin Roosevelt], the turning-point of this war will be decided.

[signed]
Adolf Hitler

বাংলায়

হে আমার জার্মানীর পশ্চিম ফ্রন্টের সৈনিকগন।

আমাদের মরনব্যাধি জুয়িস বলশেভিক শত্রুবাহিনী তাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আমাদেরকে আক্রমন করেছে। জার্মানীকে চিরতরে শেষ এবং জার্মানীর সমুদয় জনগোষ্ঠিকে সমুলে নিশ্চিহ্ন করে দেয়াই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। আমাদের পূর্ব জার্মান উপকূলে নিয়োজিত সামরিক বাহিনীর সৈনিকগন ইতিমধ্যে মন্দ ভাগ্যের ব্যাপারে অবগত হয়েই গেছেন। সবচেয়ে দুর্দশায় আছে এখন আমাদের মেয়েরা, নারীরা এবং বাচ্চারা। সত্যি বলতে কি, আমাদের বৃদ্ধ পুরুষ মানুষদেরকে এবং বাচ্চাদেরকে তারা নির্বিঘ্নে হত্যা করছে, মেরে ফেলা হচ্ছে বা হবে, আর যুবতী মহিলারা তাদের ব্যারাক হাউজে পতিতা হিসাবে নিগৃহীত হচ্ছে। আর বাকী যারা থাকবে, তারা সরাসরি সাইবেরিয়ায় বন্দি হিসাবে চালান দেয়া হবে।

আমরা এটা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম এবং সে মোতাবেক  গত জানুয়ারী থেকে যত প্রকারের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার দরকার তার কোনোটাই বাদ রাখিনি। কিন্তু শত্রুবাহিনী তাদের আর্টিলারী দিয়ে আমাদের সব শক্ত অবস্থান গুলিকে গুড়িয়ে দিয়ে হয়তো উল্লাস করছে বা করবে। আমরা সর্বাত্তক চেষ্টা করেছি আমাদের পদাতিক বাহিনীর মাঝে যে সব গ্যাপগুলি আছে, সেগুলিকে অগনিত নতুন ইউনিট দিয়ে সুরক্ষা করার চেষ্টা করার। আমাদের সম্মুখভাগের যুদ্ধ লাইনকে ইমারজেন্সী ইউনিট দিয়েও সুরক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ধারনা যদি সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক চলে, তাহলে এবারো আমাদের শত্রু বলসেভিক বাহিনী আমাদের রাজধানী জার্মান রিখে আসার আগে এশিয়ার ভাগ্যের মতো রক্তাক্ত ভাগ্যবরন করতে হবে। তবে, এই অবস্থায় যারাই তাদের দায়িত্ত পালনে অপারগ হবে বা পালনে অস্বীকার করবে তারা রাষ্ট্রোদ্রোহী হিসাবেই পরিচিত হবে। যেসব রেজিমেন্ট বা ডিভিশন লজ্জাজনকভাবে শত্রুকে প্রতিহত না করে তাদের স্থান ত্যাগ করবে, তারা যেনো একবার আমাদের জার্মান নারী, যুবতী এবং শিশুদের কথা মাথায় রাখে যারা ক্রমাগত বোম্ব এবং শত্রুর দ্বারা দূর্বিসহ আক্রমণে মারা যাচ্ছে। তারা যেনো এতা সব সময় মাথায় রাখে যে, তাদের এই লজ্জাজনক স্থান ত্যাগে তাদেরকে সেই সব নারী, যুবতী, আর বাচ্চাদের সামনে লজ্জিত করবে। আরেকটি কথা যে, আমাদের মধ্যেই অনেক বিশ্বাসঘাতক অফিসার এবং সৈনিক আছে যারা জার্মান ইউনিফর্ম পড়া অথচ আমাদের টাকায় শত্রুর সাথে হাত মিলিয়ে আমাদেরকেই আঘাত করছে তাদের থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষায় থাকতে হবে। যদি কোনো অফিসার বা যে কেউ তোমাদের যুদ্ধের স্থান ত্যাগ করতে বলে, তাহলে সে যেই পদবিরই হোক তাকে ইমিডিয়েটলী এরেষ্ট করতে হবে এবং প্রয়োজনে মেরে ফেলতে হবে। সে যে পদবীরই হোক না কেনো। যদি প্রতিটি সৈনিক পুর্বফ্রন্টে আমার এই আদেশ মোতাবেক দায়িত্ত পালন করে, তাহলে শত্রুর সর্বাত্তক অভিযান পরাজয় বরন করতে বাধ্য যেভাবে আমাদের পশ্চিমাফ্রন্টে তারা পরাজয় বরন করেছে।

বার্লিন জার্মানীর আছে আর সেটা জার্মানীরই থাকবে। ভিয়েনা আবারো জার্মানীর হবে এবং ইউরোপ কখনোই রাশিয়ার হবে না, না ইউরোপ রাশিয়ার কখনো বন্ধু হবে।

তোমাদের নিজ পিতৃভূমিকে রক্ষাই শুধু নয়, তোমাদের নিজ গৃহকে, নিজের পরিবারকে, নিজেদের সন্তানদেরকে এবং তাদের সাথে আমাদের ভবিষ্যতকে সুরক্ষা করার জন্য তোমরা নিজেরা নিজেরা ভাতৃত্ববোধ তৈরী করো। এই কঠিন সময়ে সমস্ত জার্মানবাসী তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

হে আমার যোদ্ধারা, তোমরা আমার আশা, ভরষা, তোমাদের অস্ত্রকে, তোমাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্তকে আমি শ্রদ্ধা জানাই যে, তোমাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মরনব্যাধি জুয়িস বলসেভিক শত্রুরা তাদের নিজের রক্তে ভেসে যাবে। ঠিক এ সময়ে যখন পৃথিবী থেকে ভাগ্য নামক চিন্তাধারা উঠে গেছে, তখন পৃথিবীর সেরা ওয়ার ক্রিমিনালদেরকে পরাজিত করেই আমরা ডিসাইসিভ ফলাফল নিয়ে আসবো।

হিটলার

নোটঃ এ সময়ে রুজভেল্ট এর মৃত্যুতে হিটলার কিছুটা উল্লসিত হলেও এই ১৫ এপ্রিলে আসলে হিটলার তার পরাজয় এক রকম বরন করেই নিয়েছিলো। হিটলারের এই শেষ ন্যারেটিভস আসলে তার এরোগ্যান্সির একটা বহির্প্রকাশ ছিলো। কারন ২ এপ্ল্রিলে হিটলার নিজেই স্বীকার করেছিলো যে, ন্যাশনাল সোস্যালিজমের পতন হয়েছে, এখন শুধু তার ফলোয়ারদের দায়িত্ত কিভাবে তারা এগুবে। সেদিন অর্থাৎ ২ এপ্রলি হিটলার নিজেই এক সমাবেশে বলেছিলো ‘ to go on fighting, even without hope, to the very end’ although ‘I personally would not endure to live in the Germany of transition which would succeed our conquered Third Reich’ অর্থাৎ শেষ অবধি যুদ্ধ চালিয়ে যাও যদি জিতার কোনো সম্ভাবনা নাও থাকে। আমি হয়তো জার্মানীর ৩য় রিখের এই জয়ের ঘটনার সময়ে জীবিত থাকবো না ।

বস্তুত হিটলারের এই আদেশের পর পরই রাশিয়া জার্মানীর চারিদিক ঘিরে ফেলে এবং হিটলার ২২ এপ্রিল তার অবস্থান থেকে রিজাইন দেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে হিটলার আত্মহত্যা করেন। অতঃপর, ২ মে ১০৪৫ তারিখে ইতালীর জার্মান আর্মি ইতালীর জেনারেল আলেক্সান্ডারের কাছে, উত্তর-পশ্চিমের ৪র্থ আর্মি জেনারেল মন্ট গোমারীর কাছে, এবং ৭ মে ১৯৪৫ সালে জেনারেল আইসেন হাওয়ারের অধীনে জার্মানির আত্তসমর্পনের দলিল স্বাক্ষরিত হয়।

২৭/০৬/২০২২-আমার কিছুতেই বুঝে আসে না

আমার একটা জিনিষ কিছুতেই বুঝে আসে না যে, নিষেধাজ্ঞা কি আসলেই  কোনো কাজ করে? হ্যা, করতো যদি সারা দুনিয়ার দেশগুলি একসাথে সেই সিদ্ধান্তে এক থাকে। সেটা যে কোনো ক্ষমতাশীল দেশের জন্যে অবশ্যই বিপদজনক। কিন্তু সারা দুনিয়া কি এক সাথে এই নিষেধাজ্ঞায় কাজ করছে? করছে না। তাহলে দেখি-কতগুলি দেশ এবং কত জনসংখ্যার মানুষ এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে?

সারা দুনিয়ায় দেশ আছে ১৯৫টি। ইউরোপেই আছে ৪৪ দেশ। ইউরোপের ৪৪টি দেশের মধ্যে ইইউ এর অধীনে আছে ২৭টি দেশ। বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মাধ্যমেই শুধু রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হচ্ছে, পুরু ইউরোপের মাধ্যমে কিন্তু নয়। এরমানে ইইউ, আমেরিকা, ইউকে আর কানাডা মিলে মাত্র ২৯টি দেশ নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। ২৭টি ইইউ দেশের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন। আর পুরু ইউরোপ জুড়ে জনসংখা ৭৫০ মিলিয়ন। অর্থাৎ ইউরোপেই প্রায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষ রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেয় নাই। ইউরোপের বাকী ১৭টি দেশ এবং ৩০০ মিলিয়ন লোক রাশিয়ার বিরুদ্ধে নয় ধরে নেয়া যায়। অন্যদিকে অর্থাৎ সারা দুনিয়ার আরো ১৯৫ টি দেশের মধ্যে ১৬৫টি দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয় নাই।

সারা দুনিয়ায় মানুষের সংখ্যা ৮ বিলিয়ন বা ৮০০০ মিলিয়ন। এই ৮ হাজার মিলিয়ন থেকে মাত্র ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্লাস আমেরিকা কানাডা আর ইউকে মিলে ৪৫০ মিলিয়ন মানুষের দেশসমুহ রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় বাকি ৭৫৫০ মিলিয়ন মানুষের দ্বারা রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা পায় নাই। অর্থাৎ মাত্র ৫%+ এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বাকী ৯৫% রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞায় রাখে নাই। এতো বিশাল জনগোষ্ঠীর মার্কেটিং, অপুরচুনিটি তো অবাধ!! তারমধ্যে রাশিয়া নিজেই কিছু কিছু জায়গায় খুব শক্ত অবস্থানে যেমন খাদ্য সামগ্রী, ইউরেনিয়াম, গোল্ড, ডায়মন্ড, তেল, গ্যাস, আয়রন, কয়লা, প্লাটিনাম, নাট্রোজেন ফার্টিলাইজার, কপার, কাঠ, ক্যামিকেল ফার্টিলাইজার (ফসফরাস, পটাশিয়াম) এ তারা সয়ং সম্পুর্ন এবং এক্সপর্ট করে।  রাশিয়ার এইসব পন্যের উপর সারা দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশ সমুহ কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল। সেই সব দেশ সমুহের মানুষেরা অযথা ইউক্রেনের উপর এতো আবেগিত হয়ে তাদের নিজের ক্ষতি করার মতো পাগল এখনো হয় নাই।  তারমানে, রাশিয়ার বাজার ৯৫% লোকের জন্য উম্মুক্ত।

এবার আসি, এই ইউরোপিয়ান দেশগুলির মধ্যে শক্তিধর দেশ হিসাবে কারা কারা। বলা হয় ফ্রান্স, জার্মানী এবং ইতালী হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মেরুদন্ড। এবার দেখি এদের মেরুদন্ডের শক্তিটা কত। ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ এর হ্যান্স এন্ড ম্যাট কোর্ডার হিসাব মতে মোট ৯টি দেশে নিউক্লিয়ার অস্ত্র আছে-পাকিস্তান (১৬৫), ভারত (১৬০), ইসরায়েল (৯০), ফ্রান্স (২৯০), আমেরিকা (৫৪২৮), ব্রিটেন (২২৫), রাশিয়া (৫৯৭৭), চায়না (৩৫০) এবং নর্থ কোরিয়া (২০)। ইরানের ব্যাপারটা এখনো পরিষ্কার নয়। রাশিয়া এবং আমেরিকা একত্রে মোট ৯০% নিউক্লিয়ার অস্ত্র আছে আর বাকী ১০% আছে বাকি ৭টি দেশে। এরমানে ফ্রান্সের আছে ২৯০টি নিউক, জার্মানীর নাই, ইতালীর নাই। এটা হচ্ছে প্রধান ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মেরুদন্ড।

একটা কথা সবার জানা থাকা দরকার যে, আমেরিকা, ব্রিটেন, এবং কানাডা কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অংশ নয় এবং তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যও না। কানাডা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে স্ট্রাটেজিক পার্টনার, ইউকে ইতিমধ্যে বেরিয়ে গেছে, আমেরিকা ইউরোপের অংশই না। হ্যা, তারা ন্যাটোর সদস্য। ন্যাটো আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এক কথা নয়। ফলে ইউরোপিয়ানের শক্তি শুধু জার্মান, ফ্রান্স আর ইতালী যাদের শুধুমাত্র ফ্রান্সের ২৯০ টি নিউক আছে। সম্বল এটাই।

অন্যদিকে যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের না হয়েও ন্যাটোর সদস্য আমেরিকা আর ইউকে, তাই ন্যাটোর সদস্য হিসাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের থেকে ন্যাটোর নিউক বেশী। তারমানে এটা ইউরোপের সম্পদ না। একটা ডায়ালগ প্রায়ই শুনে থাকবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বা ইউকে প্রেসিডেন্টের মুখে যে, আমরা ন্যাটোভুক্ত দেশের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করবো, এটা বলে না যে, আমরা ইউরোপের প্রতিটা দেশের  প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করবো।

আমেরিকার নিউক্লিয়ার অস্ত্র বেলজিয়াম, জার্মানী, ইতালি, তুরুষ্কের সাথে ন্যাটোর অংশ হিসাবে শেয়ার্ড করা। এরমানে হচ্ছে আমেরিকার বেশ কিছু নিউক্লিয়ার অস্ত্র এসব দেশে মোতায়েন করা আছে যেগুলির কন্ট্রোল আমেরিকার কাছে তবে ন্যাটো দেশ যাদের নিউক নাই তারা এগুলিতে ট্রেনিং নেয়। ব্যাপারটা বিকন্দ্রিকরনের মতো। রাশিয়া, চায়না, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান আর নর্থ কোরিয়া মিলে মোট নিউক আছে  ৬৬৭২। তারা সেগুলি পূর্ন কন্ট্রোলে রেখেছে, বিকন্দ্রীকরন করে নাই। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইউকে, ইসরায়েল মিলে নিউক আছে ৬০৩৩ টি। ইসরায়েল এই যুদ্ধে নিউক ইউজ করবে না কারন তার ভয় ইরান। ফলে ইসরায়েল বাদ গেলে ন্যাটোর কাছে মোট নিউক আছে ৫৯৪৩। যদি অনুপাত করি তাহলে দাঁড়ায়, (1) : (0.88)

শুধুমাত্র এই শীতকাল যদি রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠতে পারে, তাহলে মনোপলিজম এর মতো ইউনিপোলারিটির একচ্ছত্র রাজত্তের অবসান হবে, পেট্রো ডলারের রাজত্ব হারিয়ে যাবে, সারা দুনিয়ার হিসাব কিতাব অনেক বদলে যাবে।

এবার যেহেতু গোল্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা এসছে, এর প্রভাব সবচেয়ে ভাল পাবে অন্যান্য দেশ, আর নেগেটিভিটিতে থাকবে হেজিমুনিয়াল কারেন্সী ডলার এবং ইউরো। এটা নিয়ে আরেকদিন লিখবো।

১৭/০৬/২০২২-সেন্ট পিটসবার্গে পুটিনের ভাষন

সেন্ট পিটসবার্গে পুটিন তাঁর বিখ্যাত ভাষনটি দিয়েছেন। মোট ৭টি এরিয়া সে কাভার করেছে। আমি সেটাইই অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি। আসলে হুবহু অনুবাদ করা অনেক কঠিন। বিশেষ করে থিম ঠিক রাখা। আমার বন্ধু আসাদ এ ব্যাপারে অনেক পারদর্শী। যাই হোক, ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।  

The old world order is gone with the wind

নতুন ‘সেন্টার অফ পাওয়ার’ ইতিমধ্যে দুনিয়ায় প্রসব করেছে। ইউনিপোলার ওয়ার্ল্ড আর কখনোই ব্যাক করবে না। না ‘কলোনিয়াল’ ধারনার আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে। যেদিন নিজে নিজে “কোল্ড ওয়ার” এ আমেরিকা জিতে গেছে বলে নিজেকে ডিক্লেয়ার করলো, সেদিন থেকেই তারা তাদেরকে মনে করেছে, “ম্যাসেঞ্জার অফ গড”। তাদের সব চিন্তা চেতনা, তাদের সুবিধাভোগী ভাবনাই শুধু সঠিক এবং পবিত্র। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কোনো সুযোগ নাই অন্য কারো। পাশ্চাত্যের এই ধ্যান ধারনা সবাই না মানতে পারলেও ঠিক সেদিন থেকেই অন্যান্যের মধ্যে নিজেদের রাষ্ট্রীয় সিস্টেম, আর্থিক মডেল এবং সার্বোভোমত্তকে প্রোটেক্ট করার জন্য সুপ্ত নতুন সেন্টার অফ পাওয়ারের জন্ম হোক সেটা ভাবছিলেন। সেই ভাবনায় লুকিয়ে ছিলো সত্যিকারের একটা রেভুলেশন, জিওপলিটিক্সে টেক্টোনিক পরিবর্তন এবং বর্তমান টেকনোলজিক্যাল বিষয়ে সার্বিক গ্লোবাল অর্থনীতির পরিবর্তন ও তাঁর বিকাশ। অন্যান্য সবাই জানে যে, এটা একটা মৌলিক পরিবর্তন যাকে এতোদিন পশ্চিমারা অস্বীকার করেছে। আজকের যে নতুন সেন্টার অফ পাওয়ার তৈরী হতে যাচ্ছে, এটা আজ না হয় হয়, কাল হতোই। কেউ এতো লম্বা সময় ধরে এই টার্বুলেন্ট পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে চায় নাই। সবকিছু আবার নরম্যাল হোক এটাই সবাই চেয়েছে। আর সেটাই এখন হতে যাচ্ছে।

Anti-Russian sanctions backfired on the West

যখন আমেরিকা এবং তাঁর মিত্ররা ইউক্রেনের অপারেশনকে সামনে রেখে একসাথে রাশিয়াকে বাতিল বলে ঘোষনা দিলো, তাতে তারা মনে করেছিলো রাশিয়া দ্রুতগতিতে এর ঐতিহ্য হারাবে এবং নতজানু অর্থনীতিতে ভেংগে পড়বে। কিন্তু সেটা না হয়ে যেটা হয়েছে- বুমেরাং, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং মিত্রদের মধ্যে পারষ্পরিক হতাশা আর বিভেদ। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান মিত্রদের মধ্যে যারা একটা অদৃশ্য জালের মধ্যে আটকে গেছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং পশ্চিমারা তাদের পলিটিক্যাল সভরেন্টি সম্পুর্নভাবে আস্থা হারিয়েছে। ইউরোপিয়ান বুরুক্রেটিক্সগন অন্যের বাজনার সুরে, সেটা যে সুরই হোক, নৃত্য করতে গিয়ে তারা তাদের নিজেদের মানুষগুলির উপর এবং চালিকাশক্তি অর্থনীতির  চরম ক্ষতি এবং ভারসাম্য নষ্ট করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এহেনো অবাস্তব অবিবেচক সিদ্ধান্তে প্রতিবছর তাদের কম করে হলেও ৪০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সম্মুখিন হতে হবে। এটা একটা ক্লিন হিসাব।

‘Elite change’ awaits the West

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং আমেরিকা নেতাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মধ্যে যথেষ্ট পরিমান ফারাক রয়েছে। কারো কারো আর্থিক বা সামরিক দুর্বলতার কারনে কিংবা সামাজিক মানদন্ডের পার্থক্য থাকায় কেউ কেউ সিদ্ধান্ত পার্টিসিপেশনে কোন প্রকারের প্রাধান্যই পায় না। প্রাধান্য না পাওয়ার সেইসব দেশের নাগরিকেরাও নিজেদেরকে অন্য মিত্রদের কাছে হেয় অনুভুতিতে ভোগছেন। তারা তাদের ভ্যালু, অরিয়েন্টেশন, ঐতিহ্য যেনো এই ইউরোপিয়ান কোয়ালিশনে এসে হারাতে বসেছেন। এই যে অলিখিত কিন্তু প্রকাশ্য বাস্তবিক দুরুত্ত যা প্রতিটা মিত্রের মধ্যে বিদ্যমান, সেটা তলে তলে আগ্নেয়গিরির মতো ফুলে ফেপে উঠছিলো। এটা আরো প্রকট হয়েছে এই ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে আরো বেশী। তারা নিজেরাই এখন বুঝতে পারছিলো কে কার কোথায় অবস্থান কিংবা কে কাকে কতটুকু সুরক্ষিত দেখতে চায় এবং সেটা কিভাবে। এই প্রেক্ষাপট তারা নিজেরা নিজেদের অনুভুতি দিয়ে এবার বুঝার চেষ্টা করছে বলে সেখানে একটা রেডিক্যাল মুভমেন্ট, সোস্যাল এবং অর্থনীতির পরিবর্তন, এবং মোদ্দাকথা একটা ‘এলিট পরিবর্তনের আন্দোলনের আভাষ সামনে হাজির হচ্ছে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।  

Economic development is an expression of sovereignty

২১ শতকে দাঁড়িয়ে সার্বোভোমত্তকে একটা আংশিকখাত হিসাবে দেখার কোনো সুযোগ নাই। সার্ভোবোমত্তের যতগুলি উপাদান আছে, তার প্রতিটি উপাদানকে সমানভাবে জরুরী এবং প্রয়োজনীয় মনে করতে হবে। কারন প্রতিটি উপাদান একে অন্যের সাথে জড়িত। রাশিয়া আর্থিক উন্নতির উপাদানে পাচটি মৌলিক নীতি অনুসরন করবে-(ক) ওপেননেস (খ) ফ্রিডম (গ) সোস্যাল জাষ্টিস (ঘ) ইনফ্রাষ্ট্রাকচার (চ) টেকনোলোজিক্যাল সভরেন্টি। রাশিয়া কখনোই সেলফ আইসোলেশন এবং অটার্কীতে বিশ্বাস করে না এবং করবেও না। তাই রাশিয়া যে কোনো কারো সাথে যখন খুশী, বন্ধুত্বপুর্ন মর্যাদা রেখে একে অপরের সাথে বোঝাপড়ায় আন্তরিকতার সাথে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যা যা আছে তা আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, প্রাইভেট ব্যবসা বানিজ্যে রাশিয়া আপ্নাদেরকে সাহাজ্য করবে, সামাজিক বৈষম্য দূরিকরনে রাশিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে টেকনোলোজি পর্যন্ত আমরা একে অপরের সাথে শেয়ার করবো। একটা কথা আমি নিশ্চিত দিয়ে বলতে চাই যে, স্বাধীন দেশসমুহ ইকুয়াল পার্টনারশীপে কাজ করার কথা। সেখানে কে কোন দিকে দূর্বল আর কে কোন দিকে সবল সেটা কোনো বিবেচ্য বিষয় হওয়া কখনোই উচিত না। পুতিনের কথাটা ঠিক এ রকমের-

“Truly sovereign states are always committed to equal partnerships,” while “those who are weak and dependent, as a rule, are busy looking for enemies, planting xenophobia, or finally losing their originality, independence, blindly following the overlord,” he said.

 Reasons for the Ukraine conflict

গত ফেব্রুয়ারীতে ইউক্রেনে বিশেষ অপারেশনের একটাই কারন যে, পশ্চিমারা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিই মানতে অস্বীকার করছিলো বারবার এবং তাদের সাথে আর কোনোভাবেই কোনো প্রকারের সমঝোতা করার কোনো স্কোপই ছিলো না, আবার নতুন করে কোনো সন্ধি করার ব্যবস্থাও ছিলো না। কারন তারা এ ব্যাপারে আমাদের কোনো কথাই শুনতে নারাজ ছিলো।

ইউক্রেনে বিশেষ অপারেশন চালানোর ব্যাপারে আমার উপরে বলতে পারেন বাধ্য করেছিলো এবং এটার খুবই দরকার ছিলো। কারন, রাশিয়ার নিরাপত্তা এমনভাবে বিঘ্নিত হচ্ছিলো যে, আমরা শংকিত হয়ে পড়েছিলাম। আর এটার বাহ্যিক উদাহরন ছিলো দনবাসে রাশিয়ানপন্থি মানুষগুলিকে কিংবা রাশিয়ান ভাষাভাষি নাগরিকদেরকে গনহত্যা করা হচ্ছিলো। আর এর পিছনে মদদ ছিলো পশ্চিমাদের। যারা নব্যনাৎসি বাহিনী তৈরী করে সেই ২য় বিশ্ব যুদ্ধের তরিকায় নির্বিঘ্নে এবং খুবই অমানবিক কৌশলে গনহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিলো। পশ্চিমারা বছরের পর বছর অস্ত্র দিয়ে, ট্রেনিং দিয়ে, এবং সামরিক যতো প্রকারের উপদেষ্টাগত পরামর্শ দিয়ে এই ইউক্রেনকে বেছে নিয়েছিলো এই নিধনে। এই অবস্থায় ইউক্রেনের মানুষগুলির কি হবে, ইউক্রেনের অর্থনীতির কি ক্ষতি হবে, বা ইউক্রেনের সার্বিক কি হতে পারে সেটায় পশ্চিমারা একটুও মাথা ঘামায় নাই। তাদের শুধু লক্ষ্য ছিলো রাশিয়াকে কিভাবে বাতিল করা যায়। ফলে ইউক্রেনকে এক তরফা ভরষা দিয়ে রাশিয়ার দারপ্রান্তে পশ্চিমাদের  সামরীক শক্তি ন্যাটোকে রাশিয়ার নাকে ডগায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলো। আর এই কাজটা একদিনে ওরা করে নাই। ইউক্রেনিয়ানদের মনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা ঘ্রিনা এবং রাগের মতো মনোভাব তৈরীতে সক্ষম হয়েছিলো, বিশেষ করে শাসক গোষ্টির মধ্যে।  স্কুল কলেজ, গির্জা, কালচার, ধর্ম কিংবা আচার আচরনে সর্বক্ষেত্রে ইউক্রেনের নাগরিকদের মনে, মাথায় ধ্যানে কার্যকলাপে এতাই শিক্ষা দেয়া হচ্ছিলো যে, রাশিয়ানরা খারাপ যাকে রাশিফোবি বলা চলে। আমাদের কোনো উপায় ছিলো না। এবার রাশিয়া তাঁর এজেন্ডা মোতাবেক সবগুলি নির্মুল না করা পর্যন্ত আমাদের আনকন্ডিশনাল এই অভিযান চলতেই থাকবে, এটা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

Energy prices and inflation are self-inflicted

এনার্জি প্রাইস এবং ইনফ্লেশন যদি বলেন, পশ্চিমারা এর জন্য দায়ী করছে রাশিয়াকে।  তারা যেটা বলেছে- “Putin’s price hike is a “stupidity” and “designed for people who can’t read or write,”  পশ্চিমাদের এই অপবাদ কোনোভাবেই সত্য নয় এবং গ্রহনযোগ্য নয়। দাম বাড়া এবং ইনফ্লেশনের জন্য আমাদেরকে দায়ী করতে পারেন না, দায়ী আপ্নারা। দায়ী আপনাদের অবিচকের মতো অবাস্তব সিদ্ধান্তসমুহ।  কভিডের কারনে ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকা অগনিত ইউরো আর ডলার ছাপানোর কারনে যেমন এখন ইনফ্লেশন তৈরী হয়েছে, তেমনি অন্ধভাবে রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের বিকল্প তৈরীতে আরো এতো লম্বা সময় লাগবে যে, ইউরোপ এবং পশ্চিমাদের অর্থিনীতিতে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। সেই ইনফ্লেশন তারা কিভাবে মোকাবেলা করবেন সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

If there’s a famine, it won’t be Russia’s fault

পশ্চিমা দেশ এবং ইউরোপের নিষ্রধাজ্ঞার কারনে খাদ্যশস্য এবং সার এর সল্পতার কারনে যদি দূর্ভিক্ষ হয়, তাঁর জন্য তো দায়ী তারা। দুনিয়ার অনেক দরিদ্র দেশসমুহ কোনো অপরাধ না করেও তারা দূর্ভোগ বহন করবে। তারা এই জরুরী খাদ্যপন্য এবং পরবর্তী বছরের জন্য সার পন্য না পেলে তাদেরও অনেকদেশ ক্ষতির মুখে পড়বে। আর এর জন্য দায়ী শুধুমাত্র ইউরোপিয়ান বুরুক্রেটস এবং পশ্চিমা নেতাদের অবাস্তব সিদ্ধান্ত এবং নিষেধাজ্ঞা।

আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্য, এশিয়ার সর্বত্র রাশিয়া এই জরুরী পন্যসমুহ সরবরাহ করতে প্রস্তুত আছে। কিন্তু পশ্চিমাদের দেয়া ট্রান্সপর্ট ব্যবস্থায় নিষেধাজ্ঞার কারনে এই সরবরাহ অনেক অংশে বিঘ্নিত হচ্ছে। সেটা তো রাশিয়ার দোষ নয়। আমরা সবাইকে সব কিছু দিতে প্রস্তুত আছি।

পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ান নেতাদের অদুরদর্শীতার কারনে তারা নিজের সমস্যা যেমন সমাধান করতে অপারগ, তেমনি তাদেরকে যারা অন্ধ্যের মতো অনুসরন করে, তারাও এখন সমস্যায় নিমজ্জিত। আর এই পুরু অকৃতকার্যতার দোষ শুধুমাত্র রাশিয়ার উপরে বর্তায়ে তারা পার পেতে চাচ্ছেন। কিন্তু সময় বলে দিচ্ছে- বাস্তবটা কি। শুধু তাইই নয়, অপরিকল্পিত predatory colonial policy,”  র মাধ্যমে অগনিত

15/06/2022-দিলে দেন, না দিলে কইয়া দেন

ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত হওয়ার জন্য প্রানপন দিয়ে গত ১০ বছর যাবত চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাঁর এই চেষ্টার সাথে একাত্ম ঘোষনা করে প্রতিবার আমেরিকা, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য সর্বদা একটা মুলা ঝুলিয়েই রাখছে। সবশেষে যখন রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমন করেই বসলো-তখন যেনো সবাই উঠে পড়ে লেগে গেলো কত তাড়াতাড়ি ইউরোপ এবং ন্যাটোভুক্ত দেশগুলি ইউক্রেনকে তাদের সদস্য করা যায়। এই যুদ্ধেও সেরকমের আশা দিয়েই চলেছে আমেরিকা, ইউরোপ এবং অন্যান্য বাল্টিক কিছু দেশ। শক্তিশালী মোড়ল দেশদেরকে বিশ্বাস না করেও উপায় থাকে না। কিন্তু তাদের রাজনীতির ধারা এতো জটিল যে, কোন ‘হ্যা” আসলে “না’, আর কোন “না” আসলে যে “হ্যা” সেটা বুঝাই দায়।

এবার ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা গত শনিবার (১১ জুন ২২) সারপ্রাইজ ভিজিটে কিয়েভে গিয়ে দারুন আশার বানী শুনালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীকে। তিনি খুবই হাস্যজ্জোল মুখে এবং খুব অবাক হবার মতো একটা দারুন আনন্দের খবর নিয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীকে জানালেন-

-ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের ব্যাপারে সদস্যরা দিন-রাত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামী ২৩/২৪ জুনে এ ব্যাপারে চুড়ান্ত একটা ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। ইউক্রেনের ব্যাপারে ২৭ টি সদস্য দেশের কারো কোনো দ্বিমত না থাকলে ক্যান্ডিডেচার স্ট্যাটাস অনুমোদিত হবার কথা।  তবে রাশিয়ার যুদ্ধের সাথে কিংবা কেউ ইউক্রেনকে ভালোবাসে এই কারনে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়ার মতো কোনো কারন নাই। এখানে সদস্যদেশ হবার জন্য যা যা ক্রাইটেরিয়া লাগবে তার সবগুলিই পালন করতে হবে যা ইউক্রেনের বেশীর ভাগ যেমন “solid” political system, “robust and well-anchored institutions,” and “functioning administration on all level  ইত্যাদি আছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় ইউক্রেনের অসুবিধা আছে যা ইউক্রেনকে পুর্ন করতে হবে, যেমন- address the crackdown on opposition parties and media launched by Zelensky even before Moscow began the military operation, but which was intensified afterwards, addressing the minority group in a democratic way, reforming stronger military etc.

আমার প্রশ্নটা হচ্ছে- উরসুলা বলছে ইউক্রেনের “solid” political system  আছে আবার এটাও বলছেন যে, ফান্ডামেন্টাল ইস্যু যেমন বিরোধী রাজনীতি দলকে রাজনীতি করার স্বাধীনতা নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। মিডিয়ার ব্যাপারে তিনি বলছেন এটাও প্রায় সং গতিতেই আছে কিন্তু media launched by Zelensky even before Moscow began the military operation, but which was intensified afterwards ! উরসুলা বলছেন, ইউক্রেনে “robust and well-anchored institutions,” and “functioning administration on all level আছে তবে  মাইনোরিটি গ্রুপকে স্বাধীন এবং গনতন্ত্র মাফিক জীবন যাপনে সমর্থন দিয়ে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে ইউক্রেনের সামরিক শক্তি প্রায় সর্বশান্ত। এটাকে রিফর্মেশন না করে ন্যাটোতে যোগ দেয়া কষ্ট হবে।

উরসুলা জানেন যে, ইউক্রেন আসলে ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। তাহলে একটি দেশকে কেনো বারবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা তাঁকে ন্যাটোতে সদস্য করবেন বলে আশা দিচ্ছেন, যখন তারা জানে যে, এই সপ্ন বাস্তবায়িত হতে গেলে আরো এক যুগ পার হয়ে যাবে? ফ্রান্স বলেছে প্রায় এক যুগের বেশী লাগবে, অষ্ট্রিয়া বলেছে কম পক্ষে ৫ থেকে ৭ বছরের আগে এটা ভাবাই যায় না, এবং অন্যান্য দেশ সমুহ এখনো নিশ্চুপ আছে যারা তাদের মতামত এখনো ব্যক্তই করে নাই। এটা আসলে অন্যায়।

আরে ভাই, দিলে দেন, না দিলে আগেই কইয়া দেন। খামাখা মাইর খাওয়াইতাছেন কেন?

14/06/2020-এ যাবতকাল যতো যুদ্ধ হয়েছে,

এ যাবতকাল যতো যুদ্ধ হয়েছে, সম্ভবত অতি অল্প সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশী এইড পেয়েছে ইউক্রেন। বিভিন্ন সময়ে বরাদ্ধ কৃত এইড মিলিয়ে প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলার ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্যাকেজ ছিলো আমেরিকার দেয়া এক কালীন ৪০ বিলিয়ন।

কিন্তু অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে- এই এইড কিভাবে ইউক্রেন কোথায় খরচ করছে তাঁর হিসাব নিতে পারছে না আমেরিকা। না তাদের কোনো একাউন্টিবিলিটি আছে। আমেরিকায় ক্রমবর্ধমান ইনফ্লেশন, বেবী ফর্মুলা, তেলের দাম, খাবারে দাম, অন্যান্য সব আইটেমের দাম এতোটাই স্কাই রকেটিং এ যাচ্ছে যে, এর মধ্যে আমেরিকান নাগরিকেরাই তাদের প্রশাসনকে কোথায় এতো টাকা দেয়া হয়েছে তাঁর হিসাব দিতে বলেছেন। নাগরিকেরা এখন অধইর্য হয়ে গেছেন এই ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য। দেশের ভিতরে বাইডেন প্রশাসন চাপের মুখে থাকায় বাইডেন প্রশাসন এবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীকে আপাতত এই ৪০ বিলিয়ন ডলারের খরচের খাতের হিসাব দিতে বলেছেন। কিন্তু জেলেনেস্কী এই তথ্য আমেরিকার কাছে দিতে অস্বীকার করেছেন।

এখন এই পর্যায়ে তিনটা প্রশ্নের অবতারনা হয়ঃ

(ক)  হটাত করে কেনো বাইডেন প্রশাসন এখন এই টাকার খরচের খাত চেয়েছেন।

(খ)  জেলেনেস্কীই বা কেনো এই খরচের খাতের হিসাব দিতে চাচ্ছেন না।

(গ)  আসলেই এই টাকাগুলি গেলো কই?

নিউইয়র্ক টাইমসের সাবেক এক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছে যে, জেলেনেস্কী কেনো ইউক্রেন মিলিটারী অপারেশনাল পরিকল্পনা আমেরিকার সাথে শেয়ার করছে না? যদি ইউক্রেন তাদের এই মিলিটারী পরিকল্পনা আমেরিকার সাথে শেয়ার নাইবা করে, তাহলে কিভাবে কোথায় আমেরিকা ইউক্রেনকে কি দিয়ে টার্গেট বাতলে দিবে সেটাই তো সম্ভব না। 

এ ব্যাপারে তিনি মন্তব্য করেছেন যে, প্রাথমিকভাবে মিডিয়ার কারনেই হোক অথবা প্রশাসনের অত্যাধিক ততপরতার কারনেই হোক, ইউক্রেন যুদ্ধে প্রায় বেশীর ভাগ নাগরিকেরা এটাই চেয়েছিলো যে, আমেরিকা সবকিছু দিয়েও যেনো ইউক্রেনকে সাহাজ্য করে। রিপাবলিকানরাও সেটাই চেয়েছিলো।  কিন্তু বর্তমানে এই ভাবনায় তাদের ছেদ পড়েছে। ৪০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার সময় মাত্র একজন এমপি ভেটো দিয়েছিলো কিন্তু বর্তমানে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন অস্ত্র এবং আরো এইড পাঠানোর ব্যাপারে এবার প্রায় ৫৭ জন এমপি ভেটো দিয়েছে। তারা বিব্রিতি দিয়েছেন যে, আগে যে এইড পাঠানো হয়েছে তাঁর একটা খাতওয়ারী হিসাব ইউক্রেনকে দিতে হবে।

ইক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই এইডের খাতওয়ারী হিসাব দিতে অস্বীকার করেছেন। আসলে যুদ্ধের প্রথমদিন থেকে বাইডেন প্রশাসন যে ভাবটা দেখিয়েছিলো সেটা হচ্ছে-ইউক্রেন যুদ্ধটা যেনো আমেরিকার নিজের যুদ্ধ। ফলে জেলেনেস্কী মনে করছে, সে বাইডেন প্রশাসনের হয়েই ইউক্রেন যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁর আবার হিসাব দেয়ার কি আছে? সে তো আমেরিকার হয়েই কাজ করছে!! জেলেনেস্কীর মধ্যে আরো একটা চিন্তা কাজ করছে বলে ধারনা করা হচ্ছে যে, বাইডেন প্রশাসন খুব একটা শক্ত না। তারা তো ইউক্রেনকে শক্ত করে হিসাব দেয়ার কথাও বলছে না। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেলেও যেনো এটা আমেরিকারই হার। আর আমেরিকাক্র হার না মানতে চাইলে তাদের জেলেনেস্কীকে দরকার।  তাই তাঁকে সাহাজ্য করতেই হবে।

তারপরেও অন্ধকারে ঢিল মেরেছেন রিপাব লিকান এমপি মারজুরী টেলর গ্রীনি যে, সম্ভবত এই এইড প্যাকেজ মানি লন্ডারিং এর একটা অংশ। তাঁর ভাষায় যদি বলি সেটা এ রকম- The Georgia Republican said that federal lawmakers “fund non­profits, they fund NGOs, they fund grants, grants that go to people, and if you really look into it, a lot of times it’s their friends and families that operate these non­profits and NGOs, and it’s basically like money laundering schemes.” Greene, along with 56 House Republicans, has incessantly strived to block Biden’s efforts to lavish hard-earned American money on Ukraine. We do know that Ukraine has become a black hole of sorts. Ukraine is home to neo-Nazi groups, informal militias and non-State actors.

কয়দিন আগে several US intelligence experts বিবৃতি দিয়েছেন যে, “American military aid falling into the hands of non-state actors. Various US officials, policy, and defence analysts have raised concerns about the fact that some of these weapons may end up in the hands of militias that the US does not want to arm in the long run. So, American Dollars being exported to Ukraine could end up in hands of militias or get laundered for vested interests.

ইউক্রেন যুদ্ধটা যতো দীর্ঘায়িত হবে, তাতে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে যা এতোদিন হয়তো বড় বড় হোমড়া চোমড়ারা অতি গোপনে সুরক্ষিত রেখেছিলেন।

-https://tfiglobalnews.com/2022/06/11/ukraine-denies-to-furnish-any-information-about-the-usage-of-the-40-billion-sent-by-the-us/

13/06/2022-বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর গদি

বুলগেরিয়া ক্রমাগত আর্থিক ইনফ্লেশনের কারনে এবং এ অবস্থাতেও দেশের সার্থ সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিন্তা না করে ইউক্রেন যুদ্ধকে সাপোর্ট করতে গিয়ে বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সবচেয়ে গরীব দেশ বুলগেরিয়া এখন বিপদে। বুলগেরিয়ার প্রচুর বৈদেশিক ঋণ রয়েছে এবং অর্থনীতি এখন প্রায় বিপর্দস্থ অবস্থায় আছে। এরপরেও বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী পেটকভ ইউক্রেন যুদ্ধে মিলিটারী এইড দিতে রাজী হওয়ায় আর তারই সরকারের কোয়ালিশন পার্টের (Inspectia tehnica periodica (ITP) নেতা টিফানভ তাতে রাজী না হওয়ায় শেষমেস ITP র ডিপ্লোমেটিক চীফ টিউদোরা সহ মোট ১৩ জন এমপি সরকারী দল থেকে রিজাইন দিয়েছেন। এতে কার্যত পেটকভ তাঁর মেজরিটি হারিয়ে ফেলেছেন।

বুলগেরিয়ার আরেকটি কোয়ালিশন দল সুফিয়া অঞ্চলের ‘বুলগেরিয়ান সোস্যালিষ্ট পার্টি (BSP)ও একই হুমকী দিয়েছে যে, তারাও কোয়ালিশন সরকার থেকে তাদের সাপোর্ট উঠিয়ে নেবে।

This has increased the chances of Bulgaria being pushed into a state of ‘political instability’ again. এখানে উল্লেখ থাকে যে, গত ২০২১ সালে পরপর তিনবার নির্বাচন হয়েও কোনো দল নিরঙ্কুশ মেজরিটি পায় নাই বিধায় ৪টি দলই একত্রে মিলে বুলগেরিয়ার সরকার গঠিত হয়। তাঁর মধ্যে ITP এবং BSP দুইটি দল। অনেকদিন যাবত বুলগেরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দৈন্যদশা চলছিলো এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক ব্যর্থ হচ্ছিলো ফরেন ঋণ পরিশোধের। আর অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কারনেই বুলগেরিয়া রাশিয়া থেকে গ্যাস/তেল রুবলে কিনতে পারছিলো না। ফলে ইউক্রেনকে সাপোর্টকারী দেশ হিসাবে বুলগেরিয়াকে রাশিয়া ‘আনফ্রেন্ডলী দেশ” হিসাবে রাশিয়া বুলগেরিয়ায় তেল সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতে বুলগেরিয়ার নাগরিকদের অবস্থা আরো শোচনীয় পর্যায়ে পড়ে।

বেচারা ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হইয়েছিলেন। মাত্র ৬ মাস।

দেশের মানুষের সার্থ রক্ষা না করে অদৃশ্য বিগ বসদের হুকুম তামিল করলে পরিনতি এমনই হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আরো কতজনের কপালে যে কি আছে, সময় শুধু বলতে পারে।

(সুত্রঃ ইউরো নিউজ)

12/06/2022-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন “ফান পর্যায়ে”

ইউক্রেন যুদ্ধটা এখন "ফান পর্যায়ে" চলে গেছে বলে মনে হয়। উরসুলা জানে না সে কি বলছে এবং যা বলছে ২/৩ মাস পরেই সেটা আবার পালটে যাচ্ছে। বাইডেন কথা বলতে বলতে অন্য মনষ্ক হয়ে এক কথার মধ্যে আরেক কথা বলে ফেলে, আসল বিষয়বস্তু মাঝে মাঝে ভুলেই যায়।

এবার বাইডেন বলছে, US could buy cheap Russian Oil and supply to EU. অথচ তারাই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুদ্ধটা ইউক্রেনের, আমেরিকা বা ন্যটো কোনোভাবেই এই যুদ্ধে জড়াইতে চায় না, আবার অন্যদিকে এটাও বলছে যে, এই যুদ্ধে রাশিয়াকে হারানোর জন্য দুনিয়া এদিক সেদিক করতেও আমেরিকা প্রস্তুত।

লং রেঞ্জ HIMARS যার রেঞ্জ ৩০০ কিমি যা আঘাত হানতে পারে রাশিয়ার টেরিটোরিতে, আবার এটাও বলছে যে, রাশিয়ার টেরিটোরিতে যেনো কোনো আঘাত না আনা হয় এই ভরষায় HIMARS দিচ্ছে ইউক্রেনে।

অন্যদিকে এত অস্ত্র যাচ্ছে কই এই প্রশ্নও আমেরিকা করছে। কারন তারা কোনো প্রকারের হদিস পাচ্ছে না পাঠানো অস্ত্রের। অনলাইনে ব্ল্যাক মার্কেটে জেভেলিন, স্টিংকার কেনার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। ইউরোপে ইল্লিগেল আর্মস ভরে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের লিগ্যাল আর্মস দিয়ে। ইউক্রেনের প্রায় ২০ থেকে ২৫% অঞ্চল রাশিয়ার দখলে চলে৷ গেছে, এখনো জেলেনেস্কি ভাবছে - জিত তাদেরই হবে। হ্যা হবে হয়ত, কিন্তু অনেক অনেক যুগ কেটে যাবে তাতে। ইউরোপে ইউক্রেন রিফুজি যতটা আনন্দের সাথে আশ্রয় পেয়েছিল, এখন প্রতিটি পরিবার এবং দেশ এই ওভার বার্ডেন্ড রিফুজিকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করছে, খারাপ ব্যবহার করছে।

দেশে দেশে তেল গ্যাস খাবারের সল্পতা দেখা দিচ্ছে, তারপরেও নিজেদের ক্ষতি করে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আরো ক্ষতির মুখে পড়ছে। অথচ শুধুমাত্র রাশিয়াকে ধরাস্ত করার মনোভাবে ইউক্রেনসহ নিজেদের মানুষগুলিকে বিপদে ফেলছে।

আমেরিকা ইউরোপের কোনো দেশই না, রাশিয়া হচ্ছে ইউরোপের একটা পার্ট, অথচ সেই ইউরোপ রাশিয়াকে বাদ দিয়া আমেরিকার সাথে টাই আপ করে প্রকারান্তে ইউরোপ নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সব কিছু রাশিয়ার উপর নির্ভরশিল ( গম, সিরিয়াল, তেল গ্যাস, ইউরেনিয়াম, লোহা, ডায়মন্ড সব) হয়েও রাশিয়াকে চেপে ধরেছে। ইউক্রেনকে ন্যাটোতে মেম্বার তো করবেই না, ইউরোপিয়ান ব্লকেও আনতে চায় না ই ইউ। অথচ বিনা প্রয়োজনে ইউক্রেন সেই ন্যাটো বা ই ইউতে যাওয়ার জন্য এমন মনোভাবে থেকে রাশিয়াকে ক্ষেপিয়ে তুল্লো। এটার হয়তো প্রয়োজনো ছিল না।

জার্মানি আধুনিক আইরিশ-টি দিবে ইউক্রেনকে অথচ ওদের ইনভেন্টরিতে আইরিশ-ট ই নাই। পোল্যান্ড ইউক্রেনকে তার সব ট্যাংক দিয়ে দিলো জার্মানি পোল্যান্ডকে আধুনিক ট্যাংক দিবে এই আশায়। জার্মানি তার বদলে আরো পুরানো ট্যাংক দিতে চাইছে পোল্যান্ডকে।

এটা একটা ফান ছাড়া আর কিছুই না। ফানটা অনেক খারাপ একটা ফান।

12/06/2022-কাউন্টারিং নেগোশিয়েশন

যে কোনো যুদ্ধের সমাপ্তি হয় নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে। ১ম বা ২য় বিশ্ব যুদ্ধও কিন্তু শেষমেশ নেগোশিয়েশনের মাধ্যমেই শেষ হতে হয়েছিলো। কিন্তু সেই নেগোশিয়েশনে বসা পার্টিগুলি কে কিভাবে প্রভাবিত করবে তার নির্ধারন হয় পার্টিগুলির হাতে কি কি তুরুকের তাস আছে তার উপর। যার হাতে যতো বেশী বার্গেনিং কার্ড থাকবে, তাঁর ততো দাবী নেগোশিয়েশন টেবিলকে প্রভাবিত করবে, এটাই নিয়ম। যেমন-২য় মহাযুদ্ধে যখন হিটলার হেরে গেলেন, তখন তাঁর দেশ জার্মানীর হাতে আর কিছুই ছিলো না। কিন্তু মিত্রবাহিনীর কাছে ছিলো পুরু তুরুকের তাস। বিধায় মিত্রবাহিনী যা যা ডিমান্ড করেছে, তার শতভাগ ওই নেগোশিয়েসন টেবিলে জার্মানীকে মানতে এবং ছাড় দিতে হয়েছে। সেই চুক্তিকে বলা হয়, প্যারিস চুক্তি-১৯৪৭। একটু সারসংক্ষেপ যদি দেখি কি কি ছাড় দিতে হয়েছিলো জার্মানিকে?

-জার্মানীকে ১০% টেরিটোরিয়াল ল্যান্ড ছাড়তে হয়েছে।

-জার্মানীর বাইরে জার্মানীর যতো ওভারসিজ কলোনী ছিলো (যেমন Alsace and Lorraine to France, cede all of its overseas colonies in China, Pacific and Africa to the Allied nations) তার সবগুলি কলোনী ছেড়ে দিতে হয়েছে।

-১৬% কয়লার খনি, ৪৮% লোহার খনি এবং ১৩% জনবসতি ছাড়তে হয়েছে।

-বার্লিন যেটা সোভিয়েত টেরিটোরিতে ছিলো, সেটাকে ৪টি ভাগে ভাগ করতে হয়েছিলো। সোভিয়েট নিয়েছিলো পূর্ব পাশ, আর পশ্চিম পাশ ছাড়তে হয়েছে অন্যান্য মিত্র বাহিনীকে। একটা পার্ট আছে জার্মানীর কাছে এখন।

-ওডার এবং নিশি নদীর পূর্ব পাশের সমস্ত টেরিটোরি ছাড়তে হয়েছে পোল্যান্ডের কাছে।

-এই চুক্তি অনুসারে বেলজিয়ামকে, চেকোস্লাভাকিয়াকেও কিছু ল্যান্ড ছাড়তে হয়েছে।

-শর্ত অনুসারে জার্মানী আক্রমণাত্মক কোনো আর্মি গঠন করতে পারবে না, শুধুমাত্র ডিফেন্সিভ বাহিনী হিসাবে সীমিত আকারে নৌ, বিমান এবং সেনা বাহিনীর করতে পারবে। ফলে জার্মানী বিশ্বে বর্তমানে ৩০তম বৃহত্তর মিলিটারী ফোর্স হিসাবে পরিগনিত। তবে ন্যাটো ফোর্সে তাঁর অবস্থান ২য়।

-শর্ত অনুযায়ী জার্মানী কোনো প্রকার বায়োলজিক্যাল, ক্যামিক্যাল এবং নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরী করতে পারবে না। ফলে জার্মানীর কাছে কোনো প্রকার নিউক্লিয়ার অস্ত্র নাই, তবে ন্যাটোর বাহিনীর সদস্য হিসাবে যুক্তরাজ্যের নিউক্লিয়ার অস্ত্রের উপর তাদের ট্রেনিং করানো হয়।

-৪ লক্ষ হলোকাষ্ট সার্ভাইবারদেরকে জার্মানী প্রতি বছর ক্ষতিপুরন দেয়। তাতে দেখা যায় যে, জার্মানী প্রতিবছর প্রায় ৫৬৪ মিলিয়ন ডলার পে করে।

-চুক্তি করার সময়ে মিত্রবাহিনীকে জার্মান এককালীন ২৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি পুরন দিতে হয়েছিলো।

এবার বুঝেন, ২য় মহাযুদ্ধে জার্মানির মেরুদন্ড শুধু ভাংগাই হয় নাই, সোজা করে দাড়ানোর মত শক্তিও রাখে নাই। হিটলারের যদি তখন নিউক্লিয়ার শক্তি থাকতো, তাহলে নেগোশিয়েশন টেবিলেই জার্মানী বসতো না। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় (অথবা সুখের বিষয়) যে, হিটলারের কাছে তখন নিউক্লিয়ার অস্ত্র ছিলো না।

এবার আসি, রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধের কিছু অপশন।

সবচেয়ে বড় দূর্বলতা ইউক্রেনের যে, তারা না পরাশক্তি, না নিউক্লিয়ার ক্ষমতাধর, না ন্যাটোর মেম্বার, না ইউরোপিয়ান ব্লকের কেউ। এদেরকে কেউ পিছন থেকে উষ্কানী দিচ্ছে, আর সেই উষ্কানী ইউক্রেন ১০০% বিশ্বাস করে ভাবছে, তাঁকে কেউ না কেউ উদ্ধার করবেই। কিন্তু আজকে প্রায় ১১০ দিন পার হয়ে গেছে যেখানে কোনো পরাশক্তি, কোনো সাহাজ্যকারী আর্মি, কিংবা কোনো নিউকধারী দেশ কার্যত ইউক্রেনকে সরাসরি সাহাজ্য করতে আসে নাই, আর আসবেও না। একটা 'নো ফ্লাই যোন" পর্যন্ত করলো না। এদিকে আগ্রাসী রাশিয়া সেই সুযোগে ইউক্রেনের বেশ কিছু কিছু শহর নিজের করে শুধু নিচ্ছে না, সেখানে রাশিয়ার সমস্ত চরিত্র ইঞ্জেক্ট করে দিচ্ছে। পাসপোর্ট, কারেন্সী, ন্যাশনাল আইডি, সবকিছু পালটে দিয়ে রাশিয়ান কালচার প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছে। দিন যতো যাচ্ছে, পিপড়ার গতিতেই হোক, বা কচ্ছপের গতি, রাশিয়া ধীরে ধীরে ইউক্রেনের বেশ কিছু টেরিটোরি গিলেই ফেলছে। কেউ সেটাকে প্রতিহত করছে না বা ডাইরেক্ট কিছুই করছে না। অন্যদিকে, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি ধীরে ধীরে এতোটাই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে যে, একটা সময় সম্ভবত রাশিয়াকে আর কোনো বোম্ব বা মিজাইল মারতে হবে না, এম্নিতেই দখলে চলে যাবে। যে রাশিয়া নিজেই অন্য পরাশক্তিকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত, সে রাশিয়াকে কোন পরাশক্তি আক্রমন করবে? এটা কিন্তু ভাবতে হবে। তারমধ্যে চীন, ইন্ডিয়া, মধ্য প্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা রাশিয়ার পাশে। এমন কি ইজরায়েল নিজেও। ইউক্রেনের সপ্ন ভঙ্গ হতে হয়তো একটু বেশী সময় লাগছে।

বিভিন্ন দেশ যারা ইউক্রেনকে সাহাজ্য করতে আপাতত আভাষ দিয়েছিলো, তারা তাদের দেশেই এখন খাদ্য সংকট, তেল সংকট, গ্যাস, এবং অন্যান্য কমোডিটির ঘাটতিতে নিজের দেশের নাগরিকদের কাছে অপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা এখন এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে, সেইসব রাষ্ট্রনায়কেরা তাদের গদি টিকিয়ে রাখার জন্যই আর ইউক্রেনকে নিয়ে ভাবার সময় হয়তো হবে না। উপরন্ত, যেসব রিফুজি অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদেরকে নিয়েও সেইসব দেশগুলি এখন ক্রমাগত বিব্রতবোধ করছে তাদের দেশের নাগরিকদের কাছে। সেইসব রিফুজির জন্যেও তো দেশগুলির অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে। কার বোঝা কে নেয়?

রাশিয়া বারবার ইউক্রেনকে নেগোশিয়েশন টেবিলে বসাতে চাইলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী সেটায় কর্নপাত করছে না। রাশিয়ার তিনটা শর্ত বারবার উচ্চারিত করছে যে, ক্রিমিয়া, দনবাস, এবং ডোনেটস্ক কে (যা আগেই রাশিয়ার কন্ট্রোলে বা তাঁর নিয়ন্ত্রীত বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রীত ছিলো) এর স্বীকৃতি, ইউক্রেন যেনো কোনো অবস্থাতেই ইউরোপিয়ান ব্লকের অধীনে মিলিটারী জোট ন্যাটোতে যোগ না দেয় আর তাঁর আর্মি এমন একটা সীমিত পর্যায়ে থাকবে যাতে অফেন্সিভ বাহিনীতে পরিনত না হয়। রাশিয়া কোনোভাবেই রিজিম চেঞ্জ চায় না, তাঁর দরকারও নাই। এটা জেলেনেস্কীর মাথায় যেনো ঢোকছেই না। গো ধরে বসে আছে কোনো এক আলাদিনের চেরাগের আশায়। গত ১৫ বছরেও ইউক্রেন ন্যাটোর মেম্বার হতে পারে নাই, না ইউরোপিয়ান ব্লকের কোনো সদস্য। এই ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় তাদের কি এটা বুঝা উচিত না যে, ইউরোপ ইউক্রেনকে কিভাবে দেখে? ইউক্রেনকে ভালোবেসে অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলি বা পশ্চিমারা তাঁকে সাহাজ্য করছে বলে জেলেনেস্কীর যে ধারনা, সেটা আসলে ভুল। আসলে তারা চেয়েছিলো রাশিয়াকে সাইজ করতে। ইউক্রেন তো শুধু একটা ক্যাটালিষ্ট। আজকে রাশিয়া আগ্রাসীর ভুমিকায় না হয়ে যদি এটা হতো জার্মানী কিংবা ইউকে বা আমেরিকা, তাহলে সারা দুনিয়ার মানুষ হয়তো জানতোই না যে, ইউক্রেনে জার্মানি, বা ইউকে বা আমেরিকা এটাক করেছে। এই যুদ্ধে রাশিয়া নিজেও তাঁর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য লড়ছে, আবার ইউক্রেনও। অন্য যারা উষ্কানী দিচ্ছে, তারা স্রেফ মেলায় অংশ নিয়েছের মতো।

যুদ্ধ যতো লম্বা হবে, ধীরে ধীরে ইউক্রেন আরো অনেক টেরিটোরি হারাবে বলে আমার ধারনা। যেমন সে এখনই মারিউপোল, খেরশন, খারখিভ, সেভেরিদোনেটক্স, আজভ সাগরের পোর্ট অর্থাৎ প্রায় ২৫% টেরিটোরি ইতিমধ্যে রাশিয়া দখল করেছে বলে জানা যায়। এমতাবস্থায়, ইউক্রেনের উচিত ছিলো নিজের ভালোটা বুঝা এবং ইউক্রেনের উচিত হাতে কিছু থাকতে থাকতে রাশিয়ার সাথে নেগোশিয়েশন টেবিলে বসা। পশ্চিমাদের উষ্কানী বা আশ্বাসে বিলম্ব না করে একটা সমঝোতা চুক্তিতে যাওয়া এবং নিজের দেশের মানুষগুলিকে তথা যারা বাস্তহারা হয়ে গেছে, তাদেরকে ফিরিয়ে এনে আবারো নতুন ইউক্রেন হিসাবে তৈরী করা। রাশিয়ার সাথে তাঁর একটা বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক তৈরী করলে এবং সে পশ্চিমা ধ্যান ধারনা থেকে সরে এসে রাশিয়ার সাথে আতাত করলে হয়তো রাশিয়াই তাঁকে আবার পুনর্গঠনে সাহাজ্য করতেও পারে।

এখানে একটা কথা ক্লিয়ার করা উচিত যে, জার্মানীর কাছে কোনো প্রকার নিউক্লিয়ার উইপন নাই। আর সে এটা করতেও পারবে না। করলে ২য় মহাযুদ্ধের সময় এলাইড ফোর্সের সাথে ওদের চুক্তি ভঙ্গের জন্য অপরাধ হবে। তবে Under NATO nuclear weapons sharing, the United States has provided nuclear weapons for Belgium, Germany, Italy, the Netherlands, and Turkey to deploy and store. তারা শক্তিশালী মিলিটারী ফোর্সও বানাতে পারবে না। জার্মানী সামরিক শক্তির দিক দিয়ে বিশ্বে ৩০তম দেশ। এখানে NATO nuclear weapons sharing বলতে আসলে কি বুঝায়? এটা হলো-ন্যাটো দেশভুক্ত রাষ্ট্রগুলির ভুখন্ডে আমেরিকা ইয়াদের কিছু কিছু নিউক্লিয়ার উইপন স্টোর বা মজুত করে ডিপ্লয় করে রাখে। সেগুলিতে একচ্ছত্র কমান্ড থাকে পেরেন্ট দেশের অধীনে। যেসব দেশে এগুলি ডিপ্লয় করা থাকে, তারা শুধু এগুলির উপর ট্রেনিং করে থাকে যাতে পেরেন্ট দেশ আদেশ করলেই তারা সেগুলি মারতে পারবে। ফলে আমেরিকার নিউক্লিয়ার উইপন আসলে ভাগ হয়ে আছে Belgium, Germany, Italy, the Netherlands and Turkey তে।

11/-6/2022-ইকুইলিব্রিয়াম অফ পাওয়ার

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধটা নিয়ে কোনো আলাপ করতে চাইছিলাম না। কিন্তু যে কার্যকরনটা নিয়ে পুরু বিশ্ব এখন তালমাতাল, সেটা আর এই যুদ্ধের মধ্যে কোনো অবস্থাতেই সীমাবদ্ধ নাই। যেমন, ফুড সংকট, তেল সংকট এবং আরো অন্যান্য সংকট। এটা এমন নয় যে, শুধুমাত্র রাশিয়া আর ইউক্রেন একাই সারা দুনিয়ার খাবার সরবরাহ করে, অথবা শুধু রাশিয়াই সারা দুনিয়ায় তেল বা গ্যাস সরবরাহ করে। সবদেশই কিছু না কিছু ফুড গ্রেইন উৎপন্ন করে, এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র উৎপন্ন করে। তারা রপ্তানীও করে। উদাহরন দেইঃ

গম উৎপাদনে রাশিয়া ১৩%, আমেরিকা-১৩%, অস্ট্রেলিয়া ১৩%, কানাডা-১২%, ইউক্রেন-৮%, ফ্রান্স-৮%, আর্জেন্টিনা-৬%, জার্মানি, রুমানিয়া, ইন্ডিয়া, বুলগেরিয়া প্রত্যেকেই-৪% করে গম রপ্তানী করে। এ ছাড়া কাজাখিস্থান, পোল্যান্ড, লিথুনিয়া, হাংগেরীও গম উৎপাদন করে। এরা সবাই মিলে ৯৫% গম রপ্তানী করে থাকে সারা দুনিয়ায়। যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেন একত্রে ধরি তাহলে তারা উভয়ে মিলে ২১% রপ্তানি করে। এর মানে ৭৪% গমের রপ্তানী কিন্তু করে অন্যান্য দেশ। অথচ ইতিমধ্যে গম, ভুট্টা, যব ইত্যাদির একটা বিশাল শুন্যতা দেখা গিয়েছে। আর এই মুল উপাদান শস্যের কারনে অন্যান্য সব খাবারের উপর প্রভাব পড়েছে। এর কারন কি? এর একটাই কারন-এই যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে, এটা কেউ বলতে পারছে না। ফলে সবাই একটা এমন আতংকের মধ্যে আছে যে, কেউ এখন তাদের গোডাউন খালী করতে চায় না। সবাই যার যার খাদ্য সামগ্রী অন্যত্র রপ্তানী থেকে বিরত রয়েছে। আর একারনেই সংকট। অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্যের বেলাতেও তাই হয়েছে। এটা যুদ্ধ আতংকের বাই প্রোডাক্ট। আমেরিকা সম্ভবত এই ক্যালকুলেশনেই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা প্রনয়ন করেছিলো যে, মাত্র ১৩% শর্টফল কাভার করা সম্ভব, কিন্তু এর সাইড ইফেক্টটা কি হবে সেটা সম্ভবত হিসাবের মধ্যে ধরেনি।  

একইভাবে তেল উৎপাদনকারী দেশসমুহের মধ্যে যদি দেখি, তাহলে দেখবেন

আমেরিকা, রাশিয়া, সৌদি আরব, কানাডা, ইরাক, চায়না, আরব আমিরাত, ব্রাজিল, কুয়েত এবং ইরান মিলে মোট ৯৫% তেল উৎপাদন করে কিন্তু আমেরিকা ছাড়া অন্যান্য সবাই রপ্তানী করে। শুধু রাশিয়ার উৎপাদন বাদ দিলে মোট উতপাদনের পরিমান থেকে মাত্র ২৫% রপ্তানী হয়তো বাদ পড়বে এবং বাকী ৭০% অন্যান্য দেশ থেকে পুরন করা যেতো যদি তারা সবাই একটু একটু করে উৎপাদন বাড়িয়ে দিতো।, তাহলে রাশিয়ার তেল ছারাও চলতো। তারমানে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হতো। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী হচ্ছে না কেনো?  

এর কারন কিন্তু ফুড গ্রেইনের মতো আতংকের কারনে নয়। এটা হচ্ছে আমেরিকা বা ন্যাটো, বা ইউরোপের উপর অন্যান্য দেশের একটা প্রতিশোধমুলক ব্যবস্থার কারনে। আমেরিকা একচ্ছত্রভাবে যেটাই করুক, সেটাই ন্যায়, তাঁর কোনো অন্যায় নাই, এটা হয়তো আমেরিকা মনে করলেও, অন্যান্য দেশ সেটা মনে করে না। আবার সেটা অন্যান্য দেশ মেনে না নিলেও এতোদিন তাঁরা যে কোনো কারনেই হোক (হোক সেটা পলিটিক্যাল, হোক সেটা একাকীত্ব, হোক সেটা নিজেরা আইসোলেট হবার ভয়ে) সেটার ব্যাপারে সোচ্চার হওয়াও সম্ভব ছিলো না। ফলে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, চীন, সবাই ভিতরে ভিতরে একটা রাগ সুপ্ত অবস্থাতে লালন করছিলো। এই যুদ্ধে রাশিয়া বেকে বসায় এবার সেই অন্তর্দাহ কিংবা সুপ্তরাগ একসাথে সবাই আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চারিত হতে দেখা গেছে। একটা কথা আছে- শত্রুর শত্রুরা একে অপরের কিন্তু বন্ধু। আর ঠিক এটাই হয়েছে এবার। রাশিয়ার সাথে চীন, ইন্ডিয়া, সাথে মধ্যপ্রাচ্য, লাগোয়া আফ্রিকা সবাই একযোগে বন্ধু হয়ে গেছে আর তাদের কমন শত্রু যেনো ইউরোপ, আমেরিকা, অথবা ন্যাটো।

এই তথ্যগুলির প্রচুর অভাব ছিলো সম্ভবত আমেরিকার গোয়েন্দা বাহিনীর তথ্য ভান্ডারে। পুতিনকে তারা পড়তে পারেনি, পড়তে পারেনি চীনের মনোভাবকেও, কিংবা ইন্ডিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদেরকেও। আবার অন্যদিকে তলে তলে যে এই সব বিচ্চু বাহিনীগুলি এতোটা জোটে আবদ্ধ হয়ে যেতে পারে, এই প্রেডিকশনটা আমেরিকা-লিড জোট ভাবেই নাই। আর যখন তাদের বোধোদয় হয়েছে, তখন গরম গরম সাক্ষাতেও তাদেরকে আর দলে টানা যাচ্ছিলো না, যায়ও নাই। ফলে প্রতিটি নিষেধাজ্ঞা বুমেরাং হয়ে নিজেদের উপরেই ফিরে আসা শুরু করেছে।

আমার ব্যক্তিগত ধারনা যে, ন্যাটোকে নিয়ে তো শুধুমাত্র রাশিয়ার ভয়। চীন, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা তাদের তো ন্যাটোকে নিয়ে কখনো কোনো মাথা ব্যথাও ছিলো না, এখনো নাই। ন্যাটোর যতো এক্সপানশন, যতো প্রস্তুতি সবইতো এই রাশিয়াকে ঘিরেই। ন্যাটোকে জীবিত রাখাই হয়েছে রাশিয়াকে সাইজ করার জন্য। আর ন্যাটো তো একটা সুযোগই খুজছিলো কবে কিভাবে এই ন্যাটোকে দিয়ে রাশিয়াকে সাইজ করবে। এবার তো সেই সুযোগটা এসেছিলো যেটার জন্য তারা এতো যুগ ধরে অপেক্ষা করেছে। তাহলে ন্যাটো কি আসলেই তৈরী ছিলো রাশিয়াকে সাইজ করার এই মুক্ষোম সুযোগটা পেয়ে? ন্যাটোর নিজেরও কোনো প্রস্তুতি ছিলো না। অতি সন্নাসীতে যে গাজন নষ্ট হয়, এই প্রবাদটা ইংরেজীতে মনে কেউ পড়ে নাই। জানা থাকলে আগে তারা ন্যাটো কতটা ঐক্যবদ্ধ্য সেটা যাচাই করা দরকার ছিলো। অনেক হোমওয়ার্ক করার দরকার ছিলো। আমরা দেখেছি-প্রতিটি মেজর মেজর সিদ্ধান্ত পশ্চিমারা নিতে সময় নেয় নাই। প্রত্যেকটা সিদ্ধান্ত হয়েছে এক রাতের মধ্যে কিংবা এক দুপুরের মধ্যে, কখনো কখনো একই দিনেও অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। কিন্তু একটিবারও ভাবেন নাই, এসব মারাত্তক মারাত্তক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পরে কি কি ইফেক্ট হতে পারে। পুরু ব্যাপারটা ঘটেছে গুটিকতক মানুষের ব্রেইন চাইল্ড হিসাবে। ফলে একজন ‘ইয়েস’ বলেছে আর সবাই এর পুরুপুরি বিশ্লেষণ না করেই হুজুগের বশে ‘ইয়েস’ বলেছে আর যারা বলতে পারেনি, তারা হয়তো মৌন থেকেছে। বাধা দেয় নাই। এর ফলে নিষেধাজ্ঞার পর নিষেধাজ্ঞায় কোনো কাজ হচ্ছিলো না। দেখা গেছে ৭ম নিষেধাজ্ঞা দিয়েও কাজ হয় নাই।

সুইফট বন্ধ করলে কি হতে পারে, বিকল্প তৈরী হয়ে গেলে কি করা যাবে, পেট্রো ডলার আউট হয়ে গেলে কি হতে পারে, অন্য কারেন্সী ইন্টারন্যাশিনাল কারেন্সী হিসাবে গন্য হয়ে গেলে অতিরিক্ত ডলারগুলির কি হবে, বড় বড় কোম্পানীগুলি তাদের ব্যবসা বানিজ্য গুটিয়ে নিলে কি হতে পারে, যারা পুতিনকে কিংবা চীনকে বুঝিয়ে একটা দফারফা করতে পারে সেই লোকগুলিকে নিষেধাজ্ঞায় ফেলে দেয়ায় কি হতে পারে এগুলির কোনো হোমওয়ার্ক একেবারেই করা হয় নাই। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নিজেই নিজেরা কতটা কে কাকে ভরষা করে, এটাও যাচাই করার দরকার ছিলো এসব করার আগে। সেটাও করা হয় নাই। প্রতিটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান তাদের নিজেদের নাগরিকের কাছে দায়বদ্ধ, আমেরিকা বা ইউরোপের কাছে নয়। তারা ইচ্ছে করলেই তাদের নাগরিকদেরকে পথে নামিয়ে দিয়ে পশ্চিমাদের খুশী করার জন্য কিংবা তাদের তাবেদারী করে ক্ষমতায় থাকতে পারেনা। এটা বুঝা দরকার ছিলো। একদিকে ডেমোক্রেসির কথা বল্বো আবার অন্যদিকে দেশের নাগরিকের কথা মাথায় রাখবো না, এটা হতে পারে না।

আমি শুধু পশ্চিমাদেরকেও দোষ দেবো না। কারন তারা গত কয়েক যুগ এভাবেই ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা পেয়েছে। সফলতা পেয়েছে ইরানে, ইরাকে, আফগানিস্থানে, সিরিয়ায়, প্যালেষ্টাইনে, ইয়েমেনে, লিবিয়ায়, মেক্সিকো, সোমালিয়া, নিকারাগোয়া, কিউবা, ভিয়েতনাম, কংগো, কম্বোডিয়া, হাইতি, মিশর, এবং অন্যান্য আরো দেশ সহ আফ্রিকান দেশগুলিতে। ফলে যখন এভাবে তারা সফলতা পেয়েই গেছে, তাহলে একই ইন্সট্রুমেন্ট তারা ব্যবহার তো করবেই। কিন্তু এবারের দেশটা ছিলো রাশিয়া। ২য় বৃহত্তর মিলিটারী ফোর্স, নিউকের অধিকারী, ভেটো ক্ষমতার অধিকারী, নিজেরাই প্রায় সবদিক দিয়ে সাবলম্বী, আর তারমধ্যে এতো বেশী সময় ধরে অভিজ্ঞ একজন রাষ্ট্রপ্রধান পুতিন যার মেয়াদ আরো বাকী ১৪ বছর, যার ব্রেইনকে পড়ার জন্য ইন্টেলকে একটা আলাদা সেল খুলতে হয়েছে, তাঁকে অন্যান্য সবার কাতারে ফেলে এমন হুইমজিক্যাল গেম খেলা ঠিক হয় নাই।

এর মানে আমি এটা বলছি না যে, ইউক্রেনকে রাশিয়া আক্রমন করে ঠিক কাজটাই করেছে। সেও অন্যায় করেছে। কিন্তু পশ্চিমারা তো এই অন্যায়গুলিই করে এসছে এতোকাল। পুতিনের তো হোম ওয়ার্ক করা ছিলো। পুতিন তো এটাই বলেছে- হয় এখন, না হয় আর কখনোই না। ফলে এক কালা জাহাংগীর (কেউ খারাপ ভাবে নিয়েন না) আরেক কালা জাহাংগীরকে শায়েস্তা করার আগে কালা জাহাংগীরদের তো আরো অনেক বেশী হোমওয়ার্ক করার দরকার থাকে। যদু মধুওকে থাপ্পর দিয়ে পার পেলেও এক কালা জাহাংগীর আরেক কালা জাহাংগীরকে শায়েস্তা করার আগে কি শুধু থাপ্পর দিলেই কাজ হয়ে যাবে?

ফলে এই অকালিন এবং কিছু গুটিকতক মাথামোটা মানুষের বুদ্ধির কারনে যেটা আমি দেখতে পাচ্ছি, সেটা হচ্ছে-

(ক) ইউরোপের ইউরোর মতো এশিয়ায় আরেকটা কমন কারেন্সীর প্রবর্তন হবে।

(খ) পেট্রো ডলারের আধিপত্য শেষ হয়ে যাবে।

(গ) ট্রেড প্রবাহে ইউরোপ বা পশ্চিমারা পিছিয়ে যাবে।

(ঘ) ইউরোপ একটা নড়বড়ে জোটের সৃষ্টি হবে।

(চ) ন্যাটোর উপর সর্বজনীন আস্থা কমে যাবে।

(ছ) রাশিয়া, চীন, ইন্ডিয়া, তুরষ্ক, এবং অন্যান্য দেশ মিলে প্যাসিফিক নিয়ন্ত্রন করবে।

(জ) সুইফট সিস্টেমের আধিপত্য শেষ হবে।

(ঝ) রিজার্ভ শিফট হয়ে যাবে অন্যত্র এবং অন্য কারেন্সীতে।

(ট) ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশ গুলিতে ইনভেষ্টমেন্টে ভাতা পড়বে।

(ঠ) জাতিসংঘের পাশাপাশি আরেকটা লিগ অফ ন্যাশনের সৃষ্টি হবে।  

ইন্টারন্যাশনাল ইকুইলিব্রিয়াম অফ পাওয়ার বলতে যা বুঝায় তাঁর জন্ম হতে যাচ্ছে। ২০১১ জুন প্রকাশনায় ডিফেন্স জার্নালে ঠিক এ রকম একটা লেখা ছিলো আমার। Is Super Power Shifting? Why and Who is Next?

10/6/2022-শিয়ালটা কে?

ফ্রান্স, জার্মান এবং ব্রিটিশ এই তিন দেশের অফিসারদেরকে আপনি কখনো পাশাপাশি দাড়াতে দেখবেন না। যদি কখনো দাড়াতে দেখেনও তারপরেও দেখবেন এরা একে আরেকজনের সাথে ফ্রেন্ডলী কথা বলে না। জাতী সংঘ মিশনে দেখেছি- বাসার সল্পতা থাকা সত্তেও এরা আরেকজনের সাথে রুম শেয়ার করে না। হয়তো বিল্ডিং শেয়ার করে কিন্তু একই রুমে ওরা থাকে না। এর একটা কারন আছে। আর সেটা হল-এরা সবাই ২য় মহাযুদ্ধে একে অপরের শত্রু ছিলো। ফ্রান্সের সাথে ব্রিটিশদের চিরাচরিত শত্রুতা মনোভাব। অন্যদিকে জার্মান তো ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের বিরুদ্ধেই ছিলো ২য় মহাযুদ্ধে।

আমার এক খুব প্রিয় গুরুজন বলতেন-যখন শত্রুরা নিজেরা নিজেরা বন্ধু হয়ে যায়, এদের বন্ধুত্তের মধ্যে থাকে ধুর্ততা আর সার্থপরতা। সবার নিজ নিজ এজেন্ডা নিয়ে বন্ধুত্ত করে। তারা কখনো একজনকে আরেকজন বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করে না। যা দেখায় সেটা হচ্ছে আবরন।

"ন্যাটো"- এই দলের মধ্যে এরা সবাই আছে। আছে ব্রিটিশ, আছে জার্মান, আছে ফ্রান্স, আছে আমেরিকান। আবার আছে তুরুষ্ক। বিশ্বাসের ভিত্তিটা এখন কত শক্ত অনুমান করা কঠিন না। এখানে আরেকটা সমস্যা আছে। এই সম্মিলিত বাহিনীকে কে কাকে কমান্ড করবে? ব্রিটিশ জার্মানী দ্বারা কমান্ডেড হতে চায় না, জার্মান ব্রিটিশ দ্বারা, না ফ্রান্সের মিলিটারী অন্য বাহিনী দ্বারা অথচ এদের একটা কমান্ড স্ট্রাকচার আছে। সেই কমান্ড স্ট্রাকচার আজ পর্যন্ত টেষ্টেড হয় নাই কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। মিশন এরিয়ায় আমি দেখেছি-কোনো আমেরিকান ইউনিট অন্য কোনো দেশের কমান্ড স্ট্রাকচারের অধীনে কখনোই কাজ করে না। কোনো ব্রিটিশ ইউনিট একমাত্র আমেরিকান কমান্ডার ছাড়া অন্য কোনো দেশের কমান্ডারদের অধিনে কাজ করতে চায় না। হ্যা, ফোর্স কমান্ডার, বা সিএমও (চীফ মিলিটারী অবজারভার) এগুলি আলাদা বিষয়। সেখানেও তাদের একটা জয়েন্ট কমান্ড রাখে।

মজার ব্যাপার হলো, ন্যাটোর কোনো আলাদা মিলিটারী নাই। প্রতিটি দেশের মিলিটারীই ন্যাটোর মিলিটারী। এটা একটা বিএনসিসির মতো মিক্সড। কেউ খুবই প্রোফেশনাল, আবার কেউ অনেক কিছুই জানে না। বিশেষ করে মিলিটারি অস্ত্র হ্যান্ডলিং বা ট্যাক্টিক্সের দিক দিয়া।

তুরষ্ক ন্যাটোর মিলিটারীর মধ্যে একটা বিশাল অংশ। তুরষ্ক তাঁর নিজের মনোভাব ইতিমধ্যে প্রকাশ করে ফেলেছে সুইডেন আর ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে বাধা দিয়ে। তুরষ্ককে ইচ্ছে করলেই ন্যাটো থেকে বা ইউরোপিয়ান ব্লক থেকে আউট করা যাচ্ছে না। তুরষ্ককে আউট করলেই ন্যাট কিংবা আমেরিকা, বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন জিও পলিটিক্সে ধরা। আবার অন্য দিকে তুরষ্ককে আউট করলে সে যে রাশিয়া বা চায়নার সাথে এক হয়ে যাবে না কে জানে? মহা বিপদ। ফলে তুরষ্কের বাধার কারনে এতো ইচ্ছা থাকা সত্তেও ন্যাটো সুইডেন বা ফিন ল্যান্ডকে ঢোকাতে পারছে না।

হাংগেরী, ক্রোয়েশিয়া কে দেখুন। ছোট দেশ, খুব ক্ষমতাশীল না। তারপরেও ন্যাটর বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সব সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাইছে না। কারন তাদের নিজের দেশের ইন্টারেষ্ট আগে। আবার এদেরকে ছেড়ে দিলেও টুষ করে রাশিয়া খেয়ে ফেলবে, দলে নিয়ে যাবে। এখন যে যাকেই ছেড়ে দিবে, সেইই অন্য দলে ঢোকে যাবে। দেশীয় রাজনীতির মতো। একটা ছোট উদাহরণ দেই, সলোমন আইল্যান্ডকে আজ অবধি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফ খুব বেশী একটা সাহাজ্য করে নাই। কিন্তু যেই না চায়না সলোমনের সাথে ঝুকে গেছে, কথা নাই বার্তা নাই, ১৩০ মিলিয়ন ডলার সাহাজ্য এম্নিতেই গ্রান্ট করে দিলো ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক গতকাল। সলোমান আইল্যান্ড কিন্তু রিফিউজ করে নাই। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকই তো। এটা তো আর ওপেনলী আমেরিকা বা ব্রিটিশ না। নিতেই পারে, আবার চায়নাও এখন হিউজ টাকা ঢালছে সলোমনে। এখন সবাই সবার দল ভারী করার চেষ্টা করছে, হোক সেটা ছোট বা বড়।

জার্মানকে দেখুন। তারা কোনো অস্ত্র কিন্তু সরাসরি ইউক্রেনকে দিচ্ছে না। কখনোই না। তারা হয় দিচ্ছে পোল্যান্ডকে, অথবা অন্য ন্যাটোভুক্ত দেশকে। যাতে জার্মান ইউক্রেনে সামরিক অস্ত্র দিচ্ছে এই ব্লেইম তাঁকে না নিতে হয়।

পোল্যান্ডকে দেখুন, ইউক্রেনের পশ্চিমা অংশ এক সময় পোল্যান্ডের ছিলো যা ২য় মহাযুদ্ধে তাঁকে ছাড়তে হয়। একটু হলেও তো মনের ভিতরে একটু খস খস আছেই। পোল্যান্ড সেই পশ্চিমা অঞ্চলে ইউক্রেনের সাথে বর্ডার একত্রিত করতে চায়। জেলেনেস্কি একটু রাজী রাজী ভাব। উদ্দেশ্যটা একটু খটকার মতো। রাশিয়া ক্রিমিয়া খেয়েছে, মারিউপোল খাইলো, ডনবাস শেষ, এখন ইষ্টার্ন ব্লকে এগুচ্ছে, পশ্চিমা অংশ পোল্যান্ডের নজর।

এটা তো রুটির মতো ভাগ হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে।

বিড়াল তো দেখতে পাচ্ছি কিন্তু শিয়ালটা কে আসলে?

9/6/2022-ক্ষমতার ভারসাম্য

একটা সময় ছিলো যখন ‘সময়’ টাকে রাজত্ব করেছে বাইজেন্টাইন, রোম, প্যারিস, জার্মানী, তারপর ব্রিটিশ। এখন তারা আর সেই একচ্ছত্র ক্ষমতার শীর্ষেও নেই, রাজত্বও করার সুযোগ নাই। নব্বই দশক থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতার শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিটি শীর্ষ ক্ষমতাধর সম্রাজ্য কোনো না কোনো যুদ্ধের মাধ্যমেই তাদের পতন হয়েছে।

যারা আগের দিনে রাজত্ব করেছে, তারা যদিও একেবারে নিঃশেষ হয়ে যায়নি কিন্তু তাদের মধ্যে সেই মোড়লগিড়ি করার প্রবনতাটা বিদ্যমান আছে আর সেই প্রবনতা থেকেই বর্তমান বড় মোড়লের তালে তাল মিলিয়ে ক্ষমতার একটা মজার ভাগ তারাও শেয়ার করে যাচ্ছে। 

এবার এই ইউক্রেন যুদ্ধকে আমার কাছে মনে হয়েছে সেই রকম একটা যুদ্ধ যেখানে একচ্ছত্র ক্ষমতার পালাবদল হয়।  টার্নিং পয়েন্ট। আমি প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি- দ্রুত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে নিজেদের সার্থের দন্ধে বিভাজিত হয়ে যাচ্ছে, ভুল কিছু নিষেধাজ্ঞার কারনে সারা দুনিয়া থেকে পেট্রো ডলারের একচ্ছত্র প্রভাব শেষ হয়ে যাচ্ছে, সুইফট সিস্টেমের এর বিপক্ষে অনেকগুলি সমগোত্রীয় অন্য সিস্টেম কাজ করা শুরু হয়ে গেছে। ফলে একচ্ছত্র অর্থ নিয়ন্ত্রনের মুল কারবারীর বিশ্ব অর্থিনীতি থেকে ডলার বা ইউরো হারিয়ে যাবে ধীরে ধীরে। এর বিপক্ষে অন্য কারেন্সী প্রাধান্য পাবে।

যারা একটা সিস্টেমকে বিশ্বাস করে ব্যক্তি পর্যায়ে বা দেশীয় পর্যায়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান অর্থ যুক্ত্রষ্ট্রের মতো দেশের রিজার্ভ ব্যাংকে এতো পরিমান নিজেদের অর্থ রাখে, সেই অর্থ একটা মুখের কথায় যখন বাজেয়াপ্ত হয়ে যাওয়ার কালচার আমেরিকা শুরু করেছে, ফলে কোনো দেশ বা কোনো ব্যক্তি অন্তত আর ওই পথে পা ফেলবে বলে মনে হয় না। তাতে আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাংক ধীরে ধীরে খালী হয়ে যাবে। অন্যদিকে আমেরিকা যে পরিমান অর্থ চায়না বা অন্যান্য ধ্বনি দেশগুলি থেকে ঋণ নিয়েছে, তাঁর পরিমানও নেহায়েত কম নয়। অর্থাৎ ইকোনোমিক্যাল ব্যালেন্সও কিন্তু ইকুইলিব্রিয়ামের মধ্যে নাই।

এমন একটা অবস্থায় পুর্বের মোড়ল গুলি যেমন জার্মানী, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, তুরুষ্ক এবং তাদের সাথে ইউরোপিয়ান গোষ্ঠীরা খুব দ্রুত অন্যান্য দেশ যেমন  চায়না, রাশিয়া, মিডল ইষ্ট, এবং আমেরিকাকে পছন্দ করে না এমন দেশ সমুহ একজোট হয়ে যাচ্ছে। এতে যেটা হবে, খুব বেশীদিন হয়তো আমেরিকা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে। আজকাল মিডিয়ার যুগ, মিস-ইনফর্মেশন-ওয়ার খুব একটা সুফল আনে না। তথ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও ইনফর্মেশন সুপার হাই ওয়েতে সব তথ্য এক সাথে চলে আসে। ফলে আমেরিকাকে তাঁর হেজিমুনি ধরে রাখতে  এখন সুপার ইন্টেলেকচুয়াল এবং অনেক বেশী বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন নেতার প্রয়োজন।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলেই যে সে ভালো নেতা, সব বুদ্ধির অধিকারী, কিংবা চালাক কিংবা দুরদর্শী লিডার বা ইন্টেলেকচুয়াল এমনটা ভাবার দিন হয়তো শেষ।

9/6/2022-আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার দেশসমুহ

এ যাবত কাল আমেরিকা কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারি করা দেশসমুহঃ

কিউবা, নর্থ কোরিয়া, ইরান, ভেনিজুয়েলা, সিরিয়া, আফগানিস্থান, বেলারুশ, বলিভিয়া, কম্বোডিয়া, ক্রিমিয়া, ইরিত্রিয়া, লাওস, নিকারাগুয়া, প্যালেস্টাইন, ইয়ামেন, জিম্বাবুই, রাশিয়া

আর ব্যক্তি পর্যায়ে আমেরিকা যে দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে তাদের লিষ্টঃ

বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চায়না, কংগো, হংকং, ইরাক, লেবানন, লাইবেরিয়া, মালি, মায়ানমার, সোমালিয়া, সুদান, তুরুষ্ক

এভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে করতে একটা সময় আসবে, সবাই যার যার জায়গায় অন্যের সাথে ঠিকই ব্যবসা বানিজ্য, যাতায়ত, কালচারাল এক্সচেঞ্জ, স্পোর্টস এক্টিভিটিজ ইত্যাদি করা শুরু করেছে আর সেখানে নাই শুধু আমেরিকা। নিজের জালে আমেরিকা ফেসে যাচ্ছে। তার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকবে না। আমেরিকাকে বুঝতে হবে, পুরু পৃথিবী তার নিয়ন্ত্রনে নয়। আর সেটা সে নিয়ন্ত্রন করতে পারবেও না। তাই এই “নিষেধাজ্ঞা” নামক অস্ত্র আমেরিকাকে পরিত্যাগ করে ভিন্ন পথে আগাইতে হবে। না আগাইলে তার নিজেরই ক্ষতি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।

উদাহরনঃ আমেরিকার নতুন আফ্রিকান ট্রেড মিটিং সবাই বয়কট করলো আজ। এরমানে কেউ তাদের সাথে কোনো টাই-আপ করতে নারাজ।

নর্থ কোরিয়াকে আবারো নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাব আমেরিকা পেশ করার পর জাতিসংঘের স্থায়ী কমিটিতে চায়না এবং রাশিয়া শতভাগ ভেটো প্রদান করেছে। ফলে একচ্ছত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়া সম্ভব হয় নাই। তাই শুধুমাত্র আমেরিকার ট্রেজারী ব্রাঞ্চ উক্ত নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। নর্থ কোরিয়া তো গত ১৫ বছর যাবত নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই আছে, তার আবার নতুন কি নিষেধাজ্ঞা?

এগুলি আমেরিকার লিডারদেরকে ভালো করে মাথায় নেয়া উচিত। এ গুলি ভালো লক্ষন নয় আমেরিকার জন্য।

7/6/2022-NATO Conditions-Fin and Sweden

জেনস স্টল্টেনবার্গ বলেছেন যে, আগামী ২৮-৩০ জুন ২০২২ তারিখে ন্যাটোর সম্মিলিত মিটিং এ ফিনল্যান্ড এবং সুইডেন যতোক্ষন না তুরুষ্কের দাবী না পুরন করবে, ততোক্ষন তারা ন্যাটোর সদস্য পদের জন্য মনোনীত হবেন না। তিনি আরো বলেছেন “No country has suffered as much from terrorist attacks as Turkey," Stoltenberg said, adding that "Turkey is an important ally and when an ally has concerns it should be discussed and the problem resolved.” এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি নর্থ মেসিডোনিয়ার উদাহরন টেনে বলেন, গ্রীসের বিরোধিতার কারনে মেসিডোনিয়াকে ১০ বছর লেগেছিলো ন্যাটোর মেম্বার হতে।  তবে মাদ্রিদে এই দুইটি দেশ অতিথি হিসাবে থাকতে পারেন কিন্তু কোনো কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারন তুরষ্ক ন্যাটোর একটি অতীব ইম্পর্ট্যান্ট মেম্বার যাকে ন্যাটোর খুবই দরকার।

যদি এটাই হয়, তাহলে এই দুটি দেশের অবস্থা এখন কি হবে? একদিকে রাশিয়াকে ক্ষেপাইয়া দিলো, আগের অবস্থানে তো আর যেতেই পারবে না যদিও বারবার রাশিয়া একটা কথাই বলেছিলো যে, তাদের কোনো ভয় নাই যেমন ছিলো না বিগত বছরগুলিতেও। আবার না ন্যাটোর কোনো সিমপ্যাথি পাইলো।

ন্যাটো ষ্টুপিড নাকি দেশ দুটির নেতারা?

7/6/2022-আবার আলোচনায় নর্দান আয়ারল্যান্ড

পুরানো ঘা আবার নতুন ঘায়ে পরিনত হতে যাচ্ছে। আর সেই ঘায়ের রেসে এবার ইউরোপ না নিজেই আহত হয় কে জানে। প্রসংগ- নর্দান আয়ারল্যান্ড। 

নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রটোকলের অনেক প্রশ্নই অমীমাংসিত থেকে গেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্রেক্সিট চুক্তি সাক্ষরীত হলেও আয়ার ল্যান্ড কে নিয়ে ইউরোপ আর ব্রিটেনের মধ্যে অনেক দর কষাকষি চলছিলো। শেষ পর্যন্ত ব্রেক্সিট চুক্তির ১৬ নম্বর ধারা সংযোজন করে অবশেষে ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের চিরতরে বিচ্ছেদ হয়। এর মানে ব্রিটেন কোনোভাবেই আর ইউরোপিয় ইউনিয়নের সদস্য নয়।

আয়ারল্যান্ডকে নিয়ে এতো কি সমস্যা ছিলো? নভেম্বর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালে আমার একটা পূর্নাজ্ঞ লেখা ছিলো যা পর পর ২টা প্রকাশনায় কাভার পেজ হিসাবে ডিফেন্স জার্নাল প্রকাশ করেছিলো। সেখানে এই আয়ার ল্যান্ড এর স্ট্যাটাস নিয়ে বিস্তারীত বলা হয়েছিলো। তারপরেও সবার কিছু মেমোরী ফ্রেস করার জন্য বলছি যে,

আইরিশ প্রজাতন্ত্র দুটুভাগে বিভক্ত, একটা শুধু আয়ারল্যান্ড নামে পরিচিত, আরেকটা নর্দান আয়ারল্যান্ড নামে। এই আয়ারল্যান্ড দ্বীপের আয়ারল্যান্ড অংশটি ইইউর সদস্য আর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ। ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারনে নর্দান আয়ারল্যান্ডও যুক্তরাজ্যের সাথে ইউরোপিয়ান ব্লক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আইরিশ প্রজাতন্ত্র বা আয়ারল্যান্ডের দুটু অংশই ইউরোপিয়ান ব্লকের সাথে থাকতে চেয়েছিলো এবং তারা সেভাবেই গনভোটে রায় হয়েছিলো। ইউরোপের যে কোনো দেশ কোনো প্রকার শুল্ক ছাড়া, কাস্টম চেক ছাড়া, কোনো ভিসা ছাড়া এক ইউরোপিয়ান দেশ আরেক ইউরোপিয়ান দেশে যাতায়ত, মালামাল পরিবহন, প্রোটেকশন, মালের স্ট্যান্ডার্ড সব কিছু অবাদে চলে। কিন্তু যখনই নর্দান আয়ার ল্যান্ডে কিছু আসবে সেখানে আর সেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোনো কিছু বহাল থাকার কথা নয়। এখানে সব কিছু ভিন্ন একটা দেশের মতো আচরন করার কথা কিন্তু এই আয়ারল্যান্ড তো মুল আয়ারল্যান্ডের সাথেই থাকতে চায়!! ফলে একটা দেশকে কেচি দিয়ে দুই ভাগ করে ফেলার মতো অবস্থা দারায়। ইউরোপিয়ান ব্লকে থাকলে এটা আর সমস্যা হতো না। কিন্তু ইউরোপ আর ব্রিটেনের ডিভাইডিং লাইনে চলে এসছিলো নর্দান আয়ারল্যান্ড জাষ্ট একটা ব্রেক্সিটের কারনে। অনেকদিন এর স্ট্যাটাস নিয়ে ঝুলে ছিলো। অনেক প্রপোজাল, অনেক অপশন অনেক সমাধানের পথ খুজেও যখন সমঝোতা হয় নাই।  ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ব্রিটেনের একমাত্র স্থলসীমান্তে পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নামের বিশেষ ধারা রাখা হয়েছিল৷ ১৯৯৮ সালের আইরিশ শান্তি চুক্তির স্বার্থে ব্রিটেনের এই প্রদেশকে ইউরোপীয় অভিন্ন বাজারের মধ্যে রাখার চাপ মেনে নিতে কার্যত বাধ্য হয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার। ব্রিটেনের সংসদও ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত সেই প্রোটোকল অনুমোদন করে। যাকে ১৬ নাম্বার ধারা বলা হয়। এই ১৬ নম্বর ধারাটি এখানে বলছি না। প্রায় ৮টি বিশেষ প্রটোকল আছে এর মধ্যে। এই প্রটোকলে ইইউ থেকে ব্রিটেন চলে যাওয়ার পর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের বাণিজ্যনীতি কী হবে, তা বলা আছে।

তাহলে এখন আবার কি সমস্যা জাগরন হলো একে নিয়ে?

বাস্তবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে এক অদৃশ্য সীমানা স্পষ্ট হয়ে ওঠায় একতরফাভাবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে ব্রিটেন। অন্যদিকে ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে কোনোরকম মৌলিক রদবদল করতে প্রস্তুত নয়

সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্রিটেনের উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রদেশ৷ ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আইরিশ প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ব্রিটেনের একমাত্র স্থলসীমান্তে পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল নামের বিশেষ ধারা রাখা হয়েছিল৷ ১৯৯৮ সালের আইরিশ শান্তি চুক্তির স্বার্থে ব্রিটেনের এই প্রদেশকে ইউরোপীয় অভিন্ন বাজারের মধ্যে রাখার চাপ মেনে নিতে কার্যত বাধ্য হয় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সরকার৷ ব্রিটেনের সংসদও ব্রেক্সিট চুক্তির অন্তর্গত সেই প্রোটোকল অনুমোদন করে৷ কিন্তু বাস্তবে উত্তর আয়ারল্যান্ড ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে এক অদৃশ্য সীমানা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠায় একতরফাভাবে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রোটোকল বাতিল করার হুমকি দিচ্ছে ব্রিটেন। অন্যদিকে ইইউ ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে কোনোরকম মৌলিক রদবদল করতে প্রস্তুত নয়৷

DW এর প্রতিবেদনে বলা হয়ঃ ……….[ব্রিটেন ব্রেক্সিট চুক্তির ১৬ নম্বর ধারা কাজে লাগিয়ে এমন একতরফা পদক্ষেপ নিলে তার পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে ইইউ ব্রিটেন থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ডে পণ্যের সরবরাহ আরও সহজ করতে ইইউ একগুচ্ছ প্রস্তাব রাখবে বলে জানিয়েছে ইইউ কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারস সেফকোভিচ জানিয়েছেন, তিনি আগামী সপ্তাহেই সেই প্রস্তাবের খসড়া পেশ করবেন কোনো কারণে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য সম্ভব না হলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ইইউ ব্রিটেনের পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক চাপাতে পারেব্রিটেনের শিল্প-বাণিজ্য জগত এমন চরম পদক্ষেপ এড়াতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে নেবার আহ্বান জানিয়েছে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে বিঘ্ন নয়, ইইউৃর সঙ্গে সংঘাতের কারণে উত্তর আয়ারল্যান্ডের ভঙ্গুর শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে সে ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে মোটেই ব্রিটেনের পাশে দাঁড়াবেন না, সে বিষয়ে কোনো সংশয় নেই ইউরোপের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি ব্রিটেনের স্বার্থের কতটা ক্ষতি করবে, সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে]

গত নির্বাচনে ৯০ টি আসনের মধ্যে শিন ফেইন পেয়েছে ২৫টি আর ডিইউপি পেয়েছে ২৫। ৩য় পার্টি পেয়েছে ৯টি।  কেহই সরকার গঠনে সমর্থ নয়। ডি ইউ পি চুক্তি বাতিলের পক্ষে। ৩য় পার্টি  চুক্তি বাতিলের পক্ষে অর্থাৎ ইউনাটেড আয়ারল্যান্ড। এর মানে নর্দান আয়ার ল্যান্ডের বিচ্ছেদ হতে পারে মুল ব্রিটেন থেকে। দেশটা আরো ছোত হয়ে যাবে এটা সিউর। আর তা না হলে যুদ্ধ। আর যুদ্ধ হলে ইউরোপ তো আর ব্রিটেনকে ছেড়ে দিবে না। আয়ার ল্যান্ড যে ইউরোপের একটা দেশ, তাই।

দেখা যাক, বরিস ভাই কি করেন। আর উরসুলা কি করেন।

01/06/2022-Kissinger-peace in Ukraine

সাবেক ইউএস সেক্রেটারী অফ স্টেট হেনরী কিসিঞ্জারের দূরদর্শীতার প্রশংসা না করেই পারলাম না। ৯৮ বছরের এই ঝানু পলিটিশিয়ান বলেছেন-“আগামী দুই মাসের মধ্যে যদি শান্তি চুক্তির জন্য রাশিয়ার সাথে বসা না হয়, তাহলে রাশিয়া স্থায়ীভাবে ইউরোপ থেকে বেরিয়ে গিয়ে চায়নার সাথে স্থায়ীভাবে মিত্রতা করার সম্ভাবনা। রাশিয়া গত ৪০০ বছর যাবত যেখানে সে ইউরোপের সাথে আছে, তাকে কোনোভাবেই অবমুল্যায়ন করা যাবে না। নীতিগত এবং আদর্শগতভাবে ইউক্রেনের আগের অবস্থার সাথে যদি  ডিভাইডিং লাইনে না থাকা হয়, এরজন্য অনেক বড় মাশুল অপেক্ষা করছে। আমার মতে [কিসিঞ্জারের মতে], যদি ওই লাইনের বাইরে যুদ্ধকে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে সেটা শুধু ইউক্রেনের সাধীনতাকেই খর্ব করবে না, সেটা ন্যাটোর সাথে রাশিয়ার সরাসরি যুদ্ধকেই প্রলুব্ধ করবে যা হবে আত্তঘাতী। মিন্সক চুক্তি অনুযায়ী যা করার দরকার ছিলো তাঁকে কোনোভাবেই ইউক্রেনের বা ন্যাটোর ভাংগার প্রয়োজন ছিলো না। যখন রাশিয়া ৮ বছর আগে ইউক্রেনে আর্মড কনফ্লিক্ট করে, তখনি আমি ]কিসিঞ্জার] বলেছিলাম, ইউক্রেন নিরপেক্ষ থাকুক, এবং ইউরোপ আর রাশিয়ার মাঝে একটা সেতুবন্ধন তৈরী করুক। কিন্তু তারা সেটা না করে ইউরোপের দিকে ঝুকে গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে।“  

কিসিঞ্জার আরো বলেন, “ইউরোপিয়ানদের এটা মনে রাখা উচিত যে, গত ৪০০ বছর যাবত রাশিয়া ইউরোপের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং রাশিয়ার যতো না ইউরোপকে দরকার তার থেকে অনেক বেশী দরকার রাশিয়াকে ইউরোপের। ইউরোপের তাই এটা সর্বদা মাথায় রাখতে হবে যেনো রাশিয়া কোনোভাবেই ইউরোপ থেকে স্থায়ীভাবে বিদায় না নেয়। রাশিয়া যদি স্থায়ীভাবে চায়নার সাথে মিত্রতা করে ইউরোপকে বিদায় জানায়, সেক্ষেত্রে ইউরোপের অবস্থা গুরুতর ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কারন চায়না এবং রাশিয়া মিলিত শক্তি আমেরিকা এবং ইউরোপের চেয়ে অনেক বেশী এবং এটা সারা বিসশে একটা দূর্জয় নেমে আসবে। “

তিনি আরো বলেন, “ইউক্রেনের রাজনীতিদের এটা বুঝতে হবে যে, অস্ত্র চাওয়ার থেকে তাদের শান্তির প্রয়োজন তাদেরই বেশী। তাই যুদ্ধ বিরতির জন্য বা শান্তি চুক্তির জন্য ইউক্রেনকেই এগিয়ে আসতে হবে।“  

 

30/5/2022-রাশিয়া ৯০ সাল থেকেই প্যাসিভ

রাশিয়া ১৯৯০ সাল থেকেই একটা প্যাসিভ মোডে ছিলো কারন তার সক্ষমতা ভেংগে গিয়েছিলো সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পর। অন্যান্য সুপার পাওয়ারের মতো রাশিয়া তেমন কোনো ভুমিকা রাখতে না পারার কারনে তার ফরেন পলিশি ছিলো খুবই নমনীয়। আর এই সুযোগ গ্রহন করেছিলো আমেরিকা একচ্ছত্রভাবে। ইরাক, ইরান, নর্থ কোরিয়া, আফগানিস্থান, লিবিয়া, প্যালেষ্টাইন, ভেনিজুয়েলা, ফিলিপাইন, ইত্যাদি দেশসমুহে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা যায়। এ সময়ে দেশে দেশে রিজিম চেঞ্জের একটা থিউরী তৈরী হয়। যখনই কোনো দেশ এই পশ্চিমাদের বাইরে দাড়াতে চেয়েছে তখনই তাদের উপর নেমে এসছে খড়গ-আর সেটা প্রথমে নিষেধাজ্ঞা। মজার ব্যাপার হলো, প্রতিবারই এই নিষেধাজ্ঞা একটা মারাত্তক অস্ত্রের মতো কাজ করেছিলো এবং সফল হয়েছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ন্যাটো, জাতীসংঘ, সেন্ট্রাল রিজার্ভ ব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক, এমেনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল, আইসিজে, সমস্ত মিডিয়া ইত্যাদি যাইই কিছু বলি না কেনো, সব কিছুর নির্দেশদাতা যেনো একটি দেশ। আর তা হচ্ছে আমেরিকা। কোথাও কোন ট্রু জার্নালিজম নাই। ফলে যা কিছু ইচ্ছা করা যায় এমন একটা ধারনা আমেরিকার হয়েই গিয়েছিলো। সবাই তার কথা শুনতে বাধ্য, সবাই তার কথা মতো চলতে বাধ্য এবং যারাই তাদের কথামতো চলবে না, তাদেরকে একই অস্ত্রে বিদ্ধ করার ক্ষমতা তার আছে বলে আমেরিকার মনে ভয় একটু কমই ছিলো। কিন্তু রাশিয়ার বেলায়? সে তো আহত বাঘ। আহত বাঘ হয়তো প্রতিঘাত করার চেষ্টা করেনা ঠিকই কিন্তু ভিতরে তার প্রতিশোধের নেশায় থেকেই যায়। শুধু তার দরকার হয় কিছুটা সময়ের। রাশিয়া এখন ঠিক সেই জায়গাটায়।

সে হয়তো আরো পরে তার প্রতিক্রিয়া জানাতো, হয়তো সে আরো বড় প্রিপারেশনের পথে সে ছিলো। কিন্তু তাঁকে যখন কোনঠাসা করে তার ঘরের দরজায় ন্যাটো নোংগড় করতে চাইল, সে আর কাল বিলম্ব করে নাই। প্রিপারেশন তার চলমান ছিলোই। চীন, ভারত, পুর্ব এশিয়া, আফ্রিকান আর আরব দেশ মিলে তার একটা চলমান প্রিপারেশন প্রক্রিয়া ছিলোই। যা আমেরিকা বা ইউরোপিয়ানদের ছিলো না। ট্রাম যখন রাশিয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলো, সেটা এমনি এমনি করে নাই। ট্রাম্পের সাথে রাশিয়ার একটা গোপন বন্দধুত্ত ছিলো। সেই সুবাদে সে হয়তো কিছু গোপন ব্যাপার জেনেই গিয়েছিলো যা ট্রাম্প পরবর্তীতে আর গোপন রাখতে পারে নাই। আর সেটার খেসারত সে দিয়েছে নির্বাচনে পুনরায় না জিতে। সেখানেও রাশিয়ার হাত থাকতেই পারে যেমন হাত ছিলো প্রথবার ট্রাম্পের বিজয়ের উপর।

রাশিয়ার বিশেষ অভিযান (সে কিন্তু এটাকে যুদ্ধ বলে অভিহিত করে নাই, যেনো এটা একটা এক্সারসাইজ, একটা জাষ্ট অপারেশন) যখন ইউক্রেনে নেমে এলো, রাশিয়ার হোম ওয়ার্ক করা ছিলো, সব জায়গায় একতার পর একটা অপারেশনাল প্লেনের মতো সিরিয়াল করা অর্ডার এবং বিকল্প, বিকল্পের বিকল্প সাজানোই ছিলো। ২২ বছরের রাষ্ট্রপ্রধানের অভিজ্ঞতা সহ মোট ৪০ বছরের কেজিবি একজন মানুষ কে ছোট করে ভাবার কোনো কারন নাই। বর্তমান ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের লিডারস গন, ন্যাটোর কমান্দার গন কেজিবির এই প্রধানের কাছে অভিজ্ঞতায় অনেক পিছিয়ে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। আরেকটা মজার ব্যাপার হলো, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ গুলির আইন প্রনেতাদের মধ্যে মত ৫৫% হচ্ছেন শুধুমাত্র মহিলা যাদের পলিটিক্যাল অভিজ্ঞতা খুবই কম। কারো কারো বয়স ৪০ এর ও নীচে।  ফলে আমেরিকার জন্য এসব ইউরোপিয়ান দেশ সমুহে প্রভাব খাটানো খুব সহজ ছিলো। রাশিয়াকে ইউক্রেনের উপর আক্রমনের কারনে সেই একই আস্ত্র (নিষেধাজ্ঞা) দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হলো যা ছিলো মারাত্তক আত্তঘাতী। রাশিয়া গত ৩০ বছরের পশ্চিমাদের এই স্টাইল নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষন করে দেখেছে, কোথায় কোথায় রাশিয়াকে হিট করা হবে। রাশিয়া সেই প্রোবাবল হিটিং এরিয়া ভেবে তার বিকল্প তৈরী সে করেছিলো একমাত্র রিজার্ভ ব্যাংকের কাউন্তার মেজার ছাড়া।

ইউক্রেন অপারেশনে রাশিয়া অনেক গুলি নতুন মিলিটারী ট্যাকটিক্সের জন্ম দিয়েছে। প্রথমে কিয়েভের মাত্র ১৫ কিমি দূরে থেকেও সে কিয়েভ ধংশ করে নাই এবং দুখল করে নাই। এটাকে বলা যায় ‘সুনামী ট্যাক্টিক্স”। মানে প্রথমে বীচ শুকিয়ে দেয়া, সবাই আনন্দে বীচে নামবে, পরে বড় ঢেউ দিয়ে সব তলিয়ে দেয়া হবে। রাশিয়া কিয়েভে গিয়ে সবাইকে এটাই বুঝিয়েছিলো, আর এদিকে রাশিয়া ইউক্রেনের এয়ার ফিল্ডস, আর্মামেন্টস স্টোর, পিস কিপিং অপারেশন আস্থানা, যেখানে যেখানে ইউক্রেনের সামরীক সনজাম ছিলো বা তৈরী হতো সব কিছু ধংশ করছিলো। একটা দেশকে পংগু করে দেয়ার মতো।

খেয়াল করলে দেখবেন প্রাথমিক দিন গুলিতে যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতা ব্রিন্দ, পশ্চিমা নেতা রা কি করবেন, কি করা উচিত, কি করলে কি হবে সেগুলি নিয়ে রাত ভর ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো, আর ওদিকে রাশিয়ার পুতিন নির্বিকার কাজ করে যাচ্ছিলো। অদ্ভুদ পার্থক্য। এক স্টন্টেনবার্গ, আরেক উরসুলা, এবং জো বাইডেন সহ বরিস ছাড়া কোন নেতার উচ্চসর শুনা যাচ্ছে না। সবাই জি স্যার জি স্যার ভুমিকায়। ফলে বারবার ভুল সিদ্ধান্ত ভুল সিগন্যাল যাচ্ছিলো ইউক্রেনের কাছে। ইউক্রেন মরিয়া কিন্তু পাশে সবাই অথচ কেউ নাই যেনো মাঠের কিনারে সবাই চিৎকার চেচামেচি কিন্তু বল শট দেয়ার মতো ক্ষমতা নাই।

২৮/৫/২০২২-৩০ বছর পিছিয়ে আমেরিকা

প্রায় ৩০ বছর পিছিয়ে গেছে আমেরিকা এই অঞ্চলে এই ধরনের একটা ট্রেড ইনিশিয়াটিভ গ্রুপ তৈরিতে। যেখানে চায়না, ইন্ডিয়া, রাশিয়া আরো ৩০ বছর আগে শুরু করেছিলো। এই অঞ্চলে যে কয়টা সবচেয়ে পুরানো এবং বড় ট্রেড ইনিশিয়াটিভ আছে সেগুলি (১) RCEP (২) CPTPP (৩) Belt and Road । আর এর প্রতিটিতেই চায়না, রাশিয়া আর ইন্ডিয়া জড়িত। এদের প্রত্যেকের ইনিশিয়াটিভের উদ্দেশ্য একই।

অন্যদিকে এই ১৩ টা দেশের বর্তমান যারা নতুন করে জয়েন করছে, তারা হলোঃ আমেরিকা, অষ্ট্রলিয়া, ব্রুনেই, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন, সিংগাপুর, থাইল্যান্ড, এবং ভিয়েতনাম।

এখানে রাশিয়া আর চায়না নাই বটে কিন্তু তাদের গ্রেট এলায়েন্স ইন্ডিয়া আছে, ফিলিপাইন আছে, ইন্দোনেশিয়া আছে, আর আছে ভিয়েতনাম।

হিসাবটা খুব সহজ বলে মনে হবে না।

আমেরিকা বারবার এতো তাড়াহুড়া করছে এর অন্তর্নিহিত মানে বুঝার জন্য একটা কথাই যথেষ্ট। আর সেটা হলো রাশিয়ার উপর 'নিষেধাজ্ঞা' দিয়ে রাশিয়া এই অঞ্চলগুলিতে একচেটিয়া বাজার ধরে ফেলতেছে আর ডলার মুদ্রা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে সুইফট ব্যবস্থা সহকারে। তাছাড়া, অল্প দামে রাশিয়া থেকে কমোডিটি পাওয়ায় অন্যান্য দেশের কমোডিটির দাম আমেরিকার কমোডিটির দামের চেয়ে কম থাকবে। ফলে আমেরিকার সব কমোডিটি খুব অচীরেই বাজারে দামের কারনে পিছিয়ে যাবে। বাজার হারানোর সম্ভাবনা খুব বেশী।

নিষেধাজ্ঞাটা খুবই খারাপ ফলাফল এনে দিয়েছে সমস্ত ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশে। একদিকে রিফুজি ক্রাইসিস নিয়ে ভোগা শুরু হবে ইউরোপের দেশ গুলি, অন্যদিকে এনার্জি সংকটে পড়ছে ইতিমধ্যে, ইউরোপিয়ান দেশগুলির মধ্যে ঐক্যের ফাটল শুরু হয়ে গেছে। সাধারন নাগরিকগন এখন আর এসব চাইছে না।

ফলে আমেরিকার সেফ এক্সিট পেতে হলে, ন্যাটো নিয়ে এতো কিছু থেকে সরে আসতে হবে, রাশিয়ার সাথে (ইন্ডিয়া, চায়নাসহ) এদের সাথে একটা সৌহার্দ্যপূর্ন কম্প্রোমাইজে আসতেই হবে।

এই যুদ্ধটার আনবিক বোমাটা হচ্ছে আসলে ইকোনোমি। রাশিয়া তাই যুদ্ধটা অনেক বিলম্ব করবেই। যত বিলম্ব হবে, ততো ইউরোপ আতঙ্কিত এবং সাফার করতে থাকবে। নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে রাশিয়া। যদি সারা বিশ্ব রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিতো, তাহলে রাশিয়ার শক্তি কমাতে পারতো। শুধুমাত্র পশ্চিমা দেশ আর ইউরোপ নিয়েই তো সারা বিশ্ব নয়। এখানেই ভুলটা হয়েছে বড় বড় নেতাদের।

25/5/2022-অপিনিয়ন ইস ডিনায়েড

রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমন করার সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন যখন ন্যাটোতে যোগদানের একটা সুর তুল্লো, তখন ইংল্যান্ডের ইয়াং জেনারেশনের ব্রেক্সিট ভোটের মতো ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ইয়াং জেনারেশনও একই রকমভাবে ন্যাটোতে যোগ দিলে তাদের প্রোটেকশন বাড়বে এই ধারনায় একটা জোয়ারের মতো তাল দেয়া শুরু করেছিলো। ফলে আগের বছরগুলিতে ন্যাটোতে যোগদানের মতামতের ৪২% এর বিপরীতে হটাত করে স্যামপ্লিং এ ৭০% পজিটিভ মতামত চলে আসে। প্রাথমিকভাবে ন্যাটো এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যেভাবে ইউক্রেনের পাশে দারানোত অংগীকার ব্যক্ত করেছিলো, তাতে যে কোনো আপাতত একটা দূর্বল জাতী সেটা গ্রহন করবেই। এই মতামতের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন রেফারেন্ডাম লাগবে না এই ভিত্তিতে পার্লামেন্টে প্রায় এক তরফা ভোট পাশ হয়ে যায় ন্যাটোতে যোগদানের জন্য।

পরবর্তীতে ইউক্রেনের জন্য ন্যাটোর হাবভাব, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, কিংবা বিশ্ব মন্ডলে ইউক্রেন নাগরিকদের দেয়া সুযোগ সুবিধার উপর চুলচেড়া বিশ্লেষনের উপর দেশের স্ট্র্যাটেজিক বুদ্ধিদাতাদের লেখালেখি, মতামত এবং তারসাথে রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে সারা দুনিয়ায় যেভাবে নেতিবাচক প্রভাব ঘটছে, তার রেশ অনুভুতিতে এনে ধীরে ধীরে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের সাধারন নাগরিকদের ভাবনায় ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারটায় টনক নড়া শুরু করে। এর বাইরে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার এক তরফা আগ্রাসনের কারনে এবং ইউক্রেনের পাশে কাউকে না পাওয়ার কারনে এই দুই দেশের জনগনের মতামত হটাত করে ভাটা পড়তে শুরু করে। এখন সেই সার্ভে এসে দাড়িয়েছে প্রাতমিক ৪২% এরও নীচে। এর মধ্যে তুরুষ্ক এবং ক্রোয়েশিয়ার প্রবল আপত্তিতে ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে একটা অনিশ্চিত আশংকার স্রিষ্টি হয়। এছাড়া ন্যাটোতে যোগ দেয়ার সফল মেম্বার হওয়ার মাঝখানে প্রায় এক বছর সময়ে ‘না ন্যাটো’ না ‘নিরপেক্ষ’ এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার হুমকী একটা ভয়ংকর আতংকের মধ্যে পড়েছে দেশের নাগরিকগন। প্রায় ১৩০০ কিমি কমন বর্ডারের দেশ ফিনল্যান্ড সর্বদা রাশিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশের কাছে একটা যুদ্ধাংদেহী অবস্থায় থাকতে হবে, এইসব কারনে সবাই এখন ন্যাটোতে যোগ দেওয়াকে রিস্কী মনে করছেন। এমন অবস্থায় ফিনল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে এখন অধিকাংশ জনগন ন্যাটোতে যোগদানে আগ্রহী নয়। তবে তারা সারাদেশের জনগনের একটা চুড়ান্ত মতামতের জন্য রেফারেন্ডাম চাইছে। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাশীল লোকজন রেফারেন্ডাম দিতে নারাজ। এই টানাপোড়েনে দেশের ভিতরে একটা চলমান ক্ষোভের লক্ষন দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় ফিনল্যান্ডে বলা হচ্ছে- যারা ন্যাটোতে যোগদানের বিপক্ষে তারা রাশিয়ান পন্থী। আর এই অপবাদে প্রচুর সংখক নাগরিক পুলিশের হয়রানী, এমন কি জেল জুলুমের খপ্পরে পড়ছেন বলে ফিনিশ এক জার্নালিষ্ট সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, Opinion is denied

তবে একটা জিনিষ তো নিশ্চিত, শেষ পর্যন্ত সাধারন জনগনের চুড়ান্ত মতামতের জন্য রেফারেন্ডাম না নিলে শেষ অবধি প্রেসিডেন্ট সিউলি নিনিতসুকে এক সময় বিচারের কাঠগরায় দারাতে হতে পারে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, যদিও ফ্রান্স ইউক্রেনের ন্যাটো মেম্বারশীপ বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগদানের ব্যাপারে নেতিবাচক নয়, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন এবং ফ্রান্সের পররাষ্টমন্ত্রী ইউক্রেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ পাইতেই বলেছে এক যুগ পার হবে। এর মানে, ইউক্রেনকে সহজেই ইউরোপিয়ান ব্লকে বা ন্যাটোতে নেয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তাহলে কেনো আর কিসের কারনে এই যুদ্ধ?

সেই একই কাতারে কি এতো চমৎকার দুটি দেশ সুইডেন এবং ফিনল্যান্ড পড়তে যাচ্ছে?

19/5/2022-ফিলিপিনের নির্বাচিত বং

ফিলিপিনের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বং মার্কোস এবং তার আগের প্রেসিডেন্ট দূতেরের মধ্যে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাপান+ দক্ষিন কোরিয়ার ভিজিট উপলক্ষে ব্রিটিশ স্কলার এবং জিও পলিটিক্যাল এনালাইসিস্ট মার্টিন জ্যাক্স এর কিছু টুইটার মেসেজ শেয়ার করেছে। টুইটারে মার্টিন তার এনালাইসিসে বেশ কিছু এক্সক্লুসিভ তথ্য শেয়ার করেছে।

(ক) আমেরিকা এখনো অগোছালো। এশিয়ার ব্যাপারে বাইডেনের কোনো অর্থনইতিক পরিকল্পনা নাই।

আমেরিকা চায়না “বেল্ট এবং রোডের” চুক্তির ব্যাপারে কিছু উচ্চাকাখাংকা দেখালেও সেটা চায়নার কারনে আমেরিকা কোনোভাবেই সফল হবে না। কারন চায়না ইতিমধ্যে আমেরিকার চেয়ে শুধু অর্থনীতির ব্যাপারেই না, কোয়ালিশনের দিক দিয়ে এগিয়েই আছে।

(খ) পূর্ব এশিয়াতে আমেরিকা মিলিটারীর দিক দিয়ে খুবই একটা নাজুক অবস্থায় আছে। এখানে চায়না পুর্ব এশিয়াতে আমেরিকা থেকে অনেক গুন এগিয়ে আছে। প্রকৃতপক্ষে চায়না এসব স্ট্র্যাটেজিক পরিকল্পনাগুলি গত ১৯৯০ সাল থেকেই হাতে নিয়েছিলো যা আমেরিকা বুঝতেই পারে নাই। ফলে আমেরিকা এই পূর্ব এশিয়াতে তার কোনো মার্কেট বেজড সম্পর্ক গড়েই উঠে নাই। বলতে গেলে প্রায় বিচ্ছিন্ন।

(গ)  পুর্ব এশিয়াতে খুবই শক্ত সামর্থ তিনটা ট্রেডিং এগ্রিমেন্ট আছে। এরা হচ্ছে- (১) RCEP (২)  CPTPP (৩) Belt and Road এই তিনটার মধ্যে একটাতেও আমেরিকা নাই। কিন্তু চায়না তিনটার মধ্যেই আছে। আর এগুলি গত ২০ বছর আগে থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন তো আমেরিকার পক্ষে আর এসবে ঢোকার কোনো সম্ভাবনাই নাই।

(ঘ) পুর্ব এশিয়ার সাথে চায়নার সম্পর্কটা দুতেরের গত ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময়ই খুব জটিল ছিলো। দুতেরে নির্বাচিত হবার পর সে চায়নার সাথে আরো ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখবে বলে অংগীকার করেছিলো। নির্বাচিত হয়েওছিলো। এবারের নির্বাচনে মার্কোস পরিবারের সদস্য যাদেরকে প্রায় ২০ বছর আগে উতখাত করা হয়েছিলো, সেই মার্কোস পরিবারের সদস্যই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবার আরেকটি কারন যে, সেও দুতেরের থেকেও বেশী কাছে থাকবে চায়নার এটাই ছিলো তার নির্বাচনী মেনিফেস্টুর একটা অংশ। ফলে ফিলিপাইনকে আমেরিকা কাছে পাবার সম্ভাবনা কম। তার মানে পুর্ব এশিয়াতে আমেরিকার পদধুলী প্রায় স্তিমিত।

এই সব কিছবু মিলিয়ে এশিয়া এবং পুর্ব এশিয়াতে আমেরিকার বর্তমান কৌশল খুব একটা কাজে আসবে না হোক সেটা জাপানের মাধ্যমে বা দক্ষিন কোরিয়া। ফলে জো বাইডেনের ভিজিট কতটা আশা পুরুন করবে সেটা এখন বলা মুষ্কিল।

অনেক দেরী হয়ে গেছে ব্যাপারটা।

১৭/০৫/২০২২- কিছু তথ্য বেশ মজার।

ঠিক এই সময়ে কংগ্রেসে মোট ৩৭ জন ইহুদী আছেন। তারমধ্যে ৩৫ জন হচ্ছে রুলিং ডেমোক্রেটিক পার্টির এবং ২ জন বিরোধী রিপাবলিকান দলের। কট্টর ইহুদীরা সবসময় ডেমোক্রাটদেরকেই ভোট দেন আর এই ভোট ব্যাংকের অনুপাত সারা আমেরিকার জনগনের মধ্যে প্রায় ৩৫%। অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ ভোট ডেমোক্রাটদের জন্য প্রায় নিশ্চিত। আর এ কারনে অনেকেই বলে থাকেন যে, যখনই ডেমোক্রাটরা ক্ষমতায় আসবে, ধরে নিতে হবে দেশ ইহুদীদের দ্বারা চালিত হচ্ছে। ডেমোক্রাট দলের জন্য বেজ কন্সটিটিউয়েন্সীর নির্নায়ক হচ্ছে ইহুদীরা। আমেরিকার নির্বাচনের সময় ইহুদীদের প্রধান বৈশিষ্ঠ হচ্ছে, একদল ইহুদী ডেমোক্রাটদের পক্ষে প্রচন্ড পরিমানে জনমত তৈরী করেন, আর আরেকদল ইহুদী একই সময়ে বিরোধী দল রিপাবলিকানদের বিপক্ষে জনমত তৈরী করতে থাকেন। ফলে রিপাবলিকানরা কোন ঠাসা হয় বারবার। কোনো কারনে যদি ডেমোক্রাটরা জিততেও না পারে, তারপরেও কোনো না কোনোভাবে ইহুদী আওন প্রনেতারা যেনো জয়ী হয় সে চেষ্টায় থাকে এই ইহুদীরা। সুপ্রিম কোর্টের অবস্থা সার্ভে করলে দেখা যাবে যে, প্রায় ৭৫% আইনজীবি ইহুদী বা ইহুদীপন্থী। যারা সর্বদা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে পরামর্শ দেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইহুদীরা খুবই অপছন্দ করে। প্রায় ৭৩% নেগেটিভ প্রচারনা করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে।

গত নির্বাচনে ভোটারদের ভোট গননায় দেখা গেছে যে, বাইডের প্রাপ্ত ভোটের প্রায় ৬০% এর উপরে ইহুদীদের ভোট পড়েছিলো প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, জো বাইডেনের পূর্ব পুরুষেরা ছিলেন আইরিশ নাগরিক এবং ফ্রান্স নাগরিক।

বর্তমান স্পীকার ন্যান্সী পেলোসির অরিজিনালিটি হচ্ছে ইতালিয়ান। তার বাবা থমাস ডি আলেসান্দ্রো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রুজভেন্টের সময় এমপি ছিলেন এবং ইহুদী রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে থমাস ডি আলেসান্দ্রো প্রেসিডেন্ট রুজভেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তুমুল জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ছিলেন কট্টর ইহুদীপন্থী এবং ইহুদী রাষ্ট্র সৃষ্টির একজন প্রধান কর্নধার। ( লিংক পড়তে পারেন-

(https://www.speaker.gov/newsroom/jerusalem-post-pelosis-father-bucked-fdr-truman-aid-jews-israel)

 এবার আসি এন্টনি ব্লিংকেন এর ব্যাপারে। এন্টনী ব্লিংকেন আপাদমস্তক ইহুদী পরিবারের সদস্য। Blinken was born on April 16, 1962, in Yonkers, New York, to Jewish parents, Judith (Frehm) and Donald M. Blinken, who later served as U.S. Ambassador to Hungary.  His maternal grandparents were Hungarian Jews. Blinken's uncle, Alan Blinken, served as the U.S. ambassador to Belgium. His paternal grandfather, Maurice Henry Blinken, was an early backer of Israel who studied its economic viability, and his great-grandfather was Meir Blinken, a Yiddish writer.

(লিংক পড়তে পারেন- https://en.wikipedia.org/wiki/Antony_Blinken)

অংকটা বেশ মজার। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে এর কি কোনো ইফেক্ট আছে বলে মনে হয়?

18/5/2022-সুই-ফিনল্যান্ডের হেরীটেজ

গতকাল একটা খবরে খুবই আশ্চর্য হয়েছি যে, ফুন ল্যান্ড এবং সুইডেনদের একটা কমন রোগ আছে যা হেরিডিটি হিসাবে বংশগতভাবে ওরা পায়। আর সেটা হলো জেনেটিক ডিস অর্ডার। এর মাত্রা কমানোর উদ্দেশ্যে ওরা যেটা করে সেটা হলো- ওরা সুইডেন-সুইডেন, বা সুইডেন ফিনল্যান্ড, বা ফিনল্যান্ড-ফিনল্যান্ড কাপ্লিং থেকে বিরত থাকে। কারন উভয় বাবা মা যাদের জেনেটিক ডিস অর্ডার আছে, তাদের বাচ্চাদের ও সেই একই জেনেটিক ডিস অর্ডার  হ ওয়ার সম্ভাওবনা প্রায় শতভাগ। তাই ওরা সব সময়ই চায়, ফিন ল্যান্ড-রাশিয়ান, সুইডেন-রাশিয়ান কাপ্লিং করতে। এর ফলে যেটা হয়েছে, সেটা হলো, প্রায় প্রতিটি সুইডিস বা ফিনিশ পরিবারেই রাশিয়ান বংশভুত নাতি পুতি বিদ্যমান।

ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার এত বড় সিদ্ধান্তটা কোনো দেশই রেফারেন্ডামে আনতে ভয় পাচ্ছে, কারন মিডিয়া হয়তো অতি রঞ্জিত করে ন্যাটোতে যোগ দেবার জনগনের রায় দেখাচ্ছে ৮০% এর উপরে, অথচ বাস্তবে ৪০% এর ও নীচে সাধারন জনগনের সায় আছে বলে এক সুইডিস সাংবাদিক গতকাল TFI Global এর বরাত দিয়েছে।

ওরা ন্যাটোতে যোগ দিক বা না দিক সেটা তাদের ব্যাপার, কিন্তু যদি পরি সংখ্যান টা এমনই হয়, তাহলে তো দেখা যাচ্ছে নাতি পুতিদের মধ্যে এবার যুদ্ধ বা ঝগড়ার সূচনা শুরু হয়ে গেলো।

১৫/৫/২০১৯-২০ বছর আগের কিছু স্মৃতি…পর্ব-৩

আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের কিছু দূর্লভ মূহুর্ত যা এখন অনেক অংশে ইতিহাস। এই ছবিগুলির মধ্যে অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন (আল্লাহ তাদের বেহেস্তবাসী করুন), কেউ কেউ বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, যারা সেই সময় ছোট পুতুলের মতো পুতুল নিয়ে খেলা করেছে, তারা অনেকেই আজ সমাজে কেউ ডাক্তার, কেউ বড় বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীতে কর্মরত, মেয়েদের মধ্যে অনেকেই মা হয়ে গেছে। ছেলেরাও আজ মাশ আল্লাহ খুব ভালো আছে। এইসব বাচ্চা গুলি, কিংবা বড়রা আমার অনেক কাছে মানুষ, এদের আগমন সব সময়ই আমাকে আনন্দিত করেছে। কিছুটা অবসর সময় ছিলো, তাই আগের দিনের কিছু ভিডিও আর স্থীর চিত্র নিয়ে বসেছিলাম। অতীত সামনে চলে আসে, নস্টালজিক হয়ে যাই। হয়ত কোনো একদিন, আমিও এই ভাবে ইতিহাস হয়ে যাবো, কিছুটা সময় কাছের মানুষেরা মনে রাখবে, এক সময় আমার জন্য এই পৃথিবী শেষ। গুটিকতক মনিষী ছাড়া বেশীর ভাগ মানুষেরাই অজানা ইতিহাসে মিশে গিয়ে বিলীন হয়ে যায়।

এটাই পৃথিবীর বাস্তব নিয়ম।

                         

১৪/০৫/২০২২-প্যারাডিম শিফট-ডমিনো ইফেক্ট

আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আমি লিখতে চাচ্ছি- সেটার নাম প্যারাডাইম শিফট। এই প্যারাডাইম শিফটের সাথে ইউক্রেন, ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের একটা সম্পর্ক আমি দেখতে পাই। তাহলে সংক্ষিপ্তভাবে জানা দরকার, এই প্যারাডাইম শিফটটা কি।

যখন সাভাবিক কোনো চিন্তাচেতনা কিংবা কার্যক্রম অন্য কোনো নতুন নিয়ম বা চিন্তা চেতনা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে দেখা যায়, তখন এই প্রতিস্থাপিত নতুন পরিবর্তিত চিন্তা চেতনাকেই প্যারাডাইম শিফট বলা হয়। অন্যঅর্থে যদি বলি-এটা হচ্ছে একটা মডেল, তত্ত্ব, বা দ্রিষ্টিভঙ্গি, ধারনা, কিংবা দৃষ্টান্ত যা প্রকৃত তত্ত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি, কিংবা মডেল থেকে ১৮০ ডিগ্রী উলটা। প্যারাডাইমটা আসলেই আসল জিনিষ না, এটা একটা মানষিক ভাবনার সাথে প্রকৃত সত্যের একটা শুধু কাল্পনিক ছবি। কোনো একটা জিনিষের ব্যাপারে আমরা যা ভাবছি, বা দেখছি এর সাথে সেই জিনিষটার যে রকম প্রকৃত বৈশিষ্ট , এই দুয়ের মাঝেই থাকে প্যারাডাইম তত্তটি। এই প্যারাডাইম দিয়ে মানুষ কোনো একটা ধারনা, চিন্তা চেতনা, কিংবা কোনো একটি জিনিষের ব্যাপারে একটা ধারনা পায়। যার প্যারাডাইম শিফট যত কম, সে ততো অরিজিনাল জিনিষের কাল্পনিক রুপ দেখতে পায়।

একটা উদাহরণ দেই- ধরুন আপনি একটা লোকের চেহাড়া দেখে ভাবলেন যে, সে একটা নিশ্চয় ভয়ংকর সন্ত্রাসী। আপনার মন তাকে সেভাবেই ট্রিট করছে, সেভাবেই আপনি তাকে ওই খারাপ মানুষদের মধ্যে লিষ্ট করে ফেলেছেন। অনেকপরে যখন জানলেন যে, লোকটা ছিলো খুবই ভদ্র, ভালো ও খুবই অমায়িক এবং পরোপকারী। তখন আপনি অনেক মনোকষ্টে ভোগবেন। আফসোস হবে এই কারনে যে, আহ, সব কিছু না জেনে, না বুঝে কেনো আমি এমন একটা ভালো মানুষকে খুবই খারাপ ভেবেছি? এই যে নতুন ভাবনা আপনাকে আগের চিন্তাচেতনা থেকে হটাত করে ১৮০ ডিগ্রী উলটে গিয়ে আরেক নতুন ভাবনায় নিয়ে এলো, সেটাই প্যারাডাইম শিফট। থমাস কুন তার বিখ্যাত-“দি স্রাইাকচার অফ সায়েন্টিক রেভ্যুলেশন” বই এ প্রথম প্যারাডাইম শিফট শব্দটি চালু করেন। প্যারাডাইম যার যতো বেশি নিখুত, তার প্যারাডাইম শিফট ততো কম। আর যাদের এই প্যারাডাইম কোনো কিছুর ব্যাপারে প্রায় কাছাকাছি থাকে, তারা আসলেই জ্ঞানী এবং বাস্তববাদী। বর্তমান জগতে মানুষের প্যারাডাইম অনেক অনেক সত্যের থেকে বেশী দূরে বিধায়, আমাদের সমাজে ভুল সিদ্ধান্তে গন্ডোগোল বাড়ছে।

তাহলে এর সাথে ফিনল্যান্ড অথবা সুইডেনের বা ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগের সম্পর্ক কি?

কিছু খন্ড খন্ড ঘটনাকে খাতায় কষে বিশ্লেষন করলে দেখা যাবেঃ

(১)  ইউক্রেন CIS এর এসোসিয়েট মেম্বার। তারা প্রথম ইউরোপিয়ান দেশের সদস্য হবার জন্য অনুরোধ করে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বির মাসে। কিন্তু তাদের সেই অনুরোধ রক্ষা করা হয় নাই বিভিন্ন রাজনৈতিক বিবেচনায়, বিশেষ করে রাশিয়ার নাবোধক জবাবের কারনে।  শুধু তাইই নয়, এই আমেরিকাই ইউক্রেনে অবস্থিত নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডসহ পুরু নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করতে সাহাজ্য করেছিলো। তখন কিন্তু আমেরিকা বা পশ্চিমারা ইউক্রেনের প্রতি ততোটা ভালোবাসা প্রকাশ করে নাই। কারন তখন ইউক্রেনকে তাদের প্রয়োজন ছিলো না, প্রয়োজন ছিলো ওয়ার্শ জোট ভাংগার নিমিত্তে রাশিয়াকে খুশী করা। তাতে ইউক্রেনের পারমানিক ক্ষমতা বিলুপ্ত হলেও পশ্চিমাদের লোকসান নাই।

(২)        ইউক্রেন একটি সমৃদ্ধ শালী দেশ বিশেষ করে ভোজ্য তেল, খাদ্য কমোডিটি, স্টীল, সিরিয়াল, গম ভুট্টা, নিকেল, আয়রন ইত্যাদি। দিনে দিনে রাশিয়া তার ৯০ শতকের ধ্বস থেকে কাটিয়ে উঠে আবার আগের শক্তিতে ফিরে আসছে যা পশ্চিমাদের জন্য সুখকর নয়। তাই তাঁকে চেপে ধরার একটা এজেন্দা দরকার। ইউক্রেন একটা ভালো অপ্সন। কারন এটা রাশিয়ার একেবারেই গোড় দোরায়।

(৩)       আমি, আপনি হয়তো এতো গভীর স্তরে ভাবি না কিন্তু যারা আন্তর্জাতিক খেলোয়ার তারা ঠিকই খবর রাখে কোথায় কি হচ্ছে আর কেনো হচ্ছে। খেয়াল করে দেখলে দেখা যায়, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করলো,  প্রো-ওয়েশটার্ন প্রেসিডেন্ট প্রোসেংকুকে আউট করে দিলো, জর্জয়ায় রাশিয়ার আগ্রাসন কে ঠেকালো না, ওসেটিয়ায়র অবস্থাও একই। চেচনিয়াও তাই। আমেরিকা কিছুই বল্লো না, না ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। একটা অতি জনপ্রিয় কমেডিয়ান এর আবির্ভাব হলো। প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলো যার কনো প্রকার পলিটিক্যাল অভিজ্ঞতাও নাই। কিন্তু সাহস ছিল। হটাত করেই জেলেনেস্কীর আগমন ঘটে নাই সিন গুলিতে। প্রোসেংকুকে আউট করার সময়ই এই আঘাতটা আসার কথা ছিলো কিন্তু তখন ব্যাপারটা ঘটে নাই কারন গ্লোবাল রিসেশনে পসচিমারাও কোন্ঠাসা। ইউরোপ তো আরো কোন্ঠাসা। They take time.

(৪) ইউক্রেনকে ভালোবেসে পশ্চিমারা গদগদ হয়ে এতো সাপোর্ট করছে এটা ভাওব্লে ভুল হবে। নিজদের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন লোন মাথায় রেখে কোনো দেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অন্য কোথাও ইনভেষ্ট করতে যায় না। এর পিছনে লাভ অবশ্যই থাকা দরকার। আর সেটার নাম জিরো-সাম গেম। Zero-sum games occur whenever the aggregate gain between winners and losers totals zero. আরেকটু পরিষ্কার করে বলি- জিরো-সাম গেমের সংগা হচ্ছে-নেট জিরো। আমি ধনী কারন আপনি গরীব, আমি গরীব কারন আপনি ধনী। আমি জিতেছি কারন আপনি হেরেছেন, আমি হেরেছি কারন আপনি জিতেছেন, ব্যাপারটা ঠিক এই রকমের। এরমানে এই যে, কোনো একটা ১০০% ভান্ডার থেকে আমি যখন ৫০% নিয়ে নেবো, আপনি আর কখনোই ওই ভান্ডার থেকে ইচ্ছে করলেও ১০০% নিতে পারবেন না। আমি যদি ওই ভান্ডার থেকে পুরু ১০০% নিয়ে নিতে পারি, আপনি পুরু ১০০% ই লস করবেন। আর এই কন্সেপ্টের কারনে পশ্চিমারা কখনো গনতন্ত্রের নামে, কখনো মানবাধীরকার নামে, কখনো বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসাবে, কখনো কাউকে আগ্রাসীর বদনামে নিজেরা পাশে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু মুল লক্ষ্য থাকে সেই সাহাজ্যার্থীর টোটাল ধন সম্পদের উপর অথবা তাঁকে সাহাজ্য করার নামে নিজেদের চিহ্নিত শত্রুকে নিঃশেষ করে দেয়া। ফলে যদি দেখেন ইরাক, আফগানিস্থান, বা লিবিয়া, প্যালেষ্টাইন, ইত্যাদির ঘটনাগুলি, সেখানে নিরাপত্তার নামে, সুষ্ঠ গন্তন্ত্রের নামে কিংবা সাধীন জীবনের প্রতিশ্রুতির নামে তাদের জীবনমান, সোস্যাল ফেব্রিক্স, লিভিং স্ট্যান্ডার্ড সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। তাদের ধন সম্পদ লুট করা হয়েছে, এসেট বলতে সব কিছুই লুট করা হয়েছে। লাভ হয়েছে একজনের, সম পরিমান লস হয়েছে ওই দেশ গুলির। ওদের মেরুদন্ড ভেংগে দেয়া হয়েছে, কমান্ড ভেংগে দেয়া হয়েছে। ওখানে এখন কোনো কিছুই আর আগের মতো নাই। এটাই লাভ। আর ততটাই লসে হয়েছে সে সব দেশের যারা জিরো সাম গেমটা বুঝে নাই।

(৫) একবার খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে যে, যে পরিমান হাই লেবেলের রাষ্ট্র প্রধান, সিনেটর, ফার্ষ্ট লেডি, স্পিকার, মিনিষ্টার, সেক্রেটারি এত ঘন ঘন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাথে বিপদজনক এক্টিভ যুদ্ধক্ষেত্রে শশরীরে দেখা করেছেন, এর কারন কি? এর কারন একটাই, তাঁকে বারবার মনে করিয়ে দেয়া বা তাঁকে বলা যুদ্ধের জন্য শান্তিচুক্তি করা যাবে না। আমরা আছি তোমার পাশে। কোনো সমঝোতা করা যাবে না। তাই না কনো জাতিসংঘের কেউ, না কোনো ডিপ্লোমেট, না কোন পশ্চিমা নায়ক যুদ্ধ বন্ধের কোনো উদ্যোগ নিলেন। তারা যুদ্ধে কোনো সমঝোতা না করার পরামর্শ দিতেই এতো রিস্ক নিয়ে শশরীরে সেই যুদ্ধ ক্ষেত্রে এসেছেন।

(৬) বোকা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেই ফাদেই পা দিয়ে নিজের দেশের বেশ ক্ষতি করা শুরু করলেন। যত নিষেধাজ্ঞাই দিক, যত মিষ্টি কথাই বলুক, যত মহড়াই আশেপাশের দেশে কসরত করুক, কেউ কিন্তু ইউক্রেনের মাঠে নামলেন না। ৩০ টা দেশ, ৩০ টা আর্মি, ৩০ টা দেশের প্রধান সব মিলিয়ে তো একটা শক্তি অবশ্যই। যেখানে ন্যাটো তার আন্তর্জাতিক নিয়ম ভেংগে তার সদস্য সংগ্রহ করতে পারে, যেখানে কোনো আইন মানার ব্যাপারে তাদের কোনো পরোয়া নাই, এতো এতো মিউনিস্ক চুক্তি, এতো এতো শান্তি চুক্তি থাকা সত্তেও ন্যাটো বা ইউরোপিয়ানরা তাদের নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে,  অথচ ইউক্রেনের যুদ্ধকে কেউ সহজ করে দিলো না। কেউ মাঠে নামলো না। দুনিয়া এদিক সেদিক করে ফেলবে এমন কথাও বললেন তারা,  অস্ত্র দিলেন, টাকার পর টাকা দিলেন, আশ্বাস আর শান্তনার বানীর কোনো কমতি নাই। যে কোনো পরিস্থিতিতেই তারা ইউক্রেনের পাশে থাকবেই। কিন্তু একটা ‘নো ফ্লাই জোন করতে পারলেন না, না যুদ্ধ বিমান দিয়ে ইউক্রেনকে সাহাজ্য করা হলো। দিন তারিখ ফিক্সড করে দুনিয়ার সব রিকুয়েষ্ট অগ্রাহ্য করে আফগানিস্থান এটাক করা যায়, ইরাকে বোমার পর বোমা ফেলা যায় অথচ আধুনিক কিছু মিজাইল আর ভাড়াটিয়া এক্সপার্ট দিয়া ইউক্রেনকে সাপোর্ট দিয়ে রাশিয়ার ভিতরে কিংবা রাশিয়ার ইন্টারেষ্টেড স্থানে এটাক করা গেল না। যুদ্ধ যুদ্ধই। করতে পারতো। কিন্তু করা হয় নাই। জেলেনেস্কী বারবার আশাহত হয়েছে। তার ভাবনার সাথে সত্যিটা মিলছিলো না, এখনো মিলছে না। জেলেনেস্কীর জন্য- কি ভেবেছি আর কি হইলো?  এটাই প্যারাডাইম শিফট।

(৭)        আমি একটা লেখায় লিখেছিলাম যে, তেল গ্যাসের উপর ইউরোপিয়ানরা নিষেধাজ্ঞা দিলো বটে অথচ সেই নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইউক্রেন তো ইচ্ছে করলে ১ম দিন থেকে তাদের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গ্যাস বা তেলের পাইপ নিজেরাই বন্ধ করে দিতে পারতো। কিন্তু সেটা কিন্তু করে নাই। না ইউক্রেন করেছে, না ইউরোপিয়ানরা ইউক্রেনকে করতে বলেছে। ইউরোপিয়ানরা সেটা বন্ধ করতে বলে নাই কারন সেটা তাদের দরকার। নিষেধাজ্ঞা থাকবে কিন্তু তারা সেটা নিবেন। তাহলে নিষেধাজ্ঞা কিসের? প্রেসিডেন্ট কি এতো বোকা যে সে তার দেশের উপর দিয়ে যাওয়া পাইপ লাইন বন্ধ করতে পারতো না? তাঁকে আসলে সেটা করতে দেয়া হয় নাই। যুদ্ধের প্রায় ৫৬ দিন পর ইউক্রেন নিজের থেকে তাদের ডোনেস্ক এর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পাইপ লাইন বন্ধ করেছে। তাও আবার কাউকে না বলেই। অনেকটা জিদ্দে। কেউ কি মনে করেন তাতে ইউরোপিয়ানরা জেলেনেস্কীর উপরে খুব খুশী হয়েছে? একেবারেই নয়।

(৮) তাহলে জেলেনেস্কী এটা করলো কেনো? সে না প্রকাশ্যে বলতে পারছে অনেক গোপন কথা, না সে স্বাধীনভাবে নিতে পারছে নিজের সিদ্ধান্ত। ফলে সে একটা জিনিষ খুব ভালো করে বুঝে গেছে যে, যুদ্ধ যতোদিন বেশী চলবে, এই যুদ্ধে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নিজের দেশের জন্য তার কি করার ছিলো এটা যুদ্ধ শেষে তর্জমা হবেই। আর তখন বেরিয়ে আসবে কেনো সে বা তার কেবিনেট একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই, অন্তত সেই সব সাধারন নাগরিকদের জীবনের কথা চিন্তা করে যে, অনেক আগেই একটা আপোষের মাধ্যমে দেশটাকে পুরুপুরী ধংশের হাত থেকে বাচানো যেতো। তাই মাঝে মাঝে দেখা যায়, জেলেনেস্কী ইচ্ছামত জাতী সংঘকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে তাদের অপারগতার কথা বর্ননা করে গালাগালীও করছে। এটাই আসলে প্যারাডাইম শিফট। কিন্তু তার এই প্যারাডিম শিফট আসতে সময় লেগেছে প্রায় দুই মাসের বেশী যে, সে যা ভেবেছিলো, আসলে সেটা সত্যি ছিলো না।  

এখন যেটা সুইডেন আর ফিনল্যান্ড ভাবছে, যে, তারা ন্যাটোতে জয়েন করলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। তাদেরকে কেউ আঘাত করলে ন্যাটো ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সব অস্ত্রপাতী নিয়া সুইডেন আর ফিন ল্যান্ডের জন্য ঝাপাইয়া পড়বে ইত্যাদি কিন্তু যেদিন ওরা দেখবে যে, আইনের মার প্যাচে, আর্টিকেল ৫, আর আর্টিক্যাল ১০ এর দোহাই দিয়ে ন্যাটো বলবে, এই আর্টিক্যাল গুলির বাধ্যবাধকতায় তো তারা বাধা, কিভাবে এটম বোম্ব দিয়ে রাশিয়াকে ঘায়েল করবে? তার থেকে নাও ১০০ বিলিয়ন ডলার লোন, কিংবা এই নাও সফিশটিকেটেড রাশিয়ার এন্টি ট্যাংক মিজাইল, মারো রাশিয়াকে, আমরা পাশের দেশে আমাদের আধুনিক যত্রপাতি লইয়া কসরত করিতেছি যেনো রাশিয়া ভয় পায়, কিন্তু রাশিয়া যেহেতু অস্তিত্ব সংকটে আছে, ফলে Do or Die ফর্মুলায় এই দুইদেশকে ক্রমাগত অনেকভাবে বিরক্ত করতেই থাকবে। তখন এই দুইটা দেশের মনে হবে, নাহ নিউট্রাল থাকাই সবচেয়ে ভালো ছিলো। ন্যাটোতে যোগ দেয়া ঠিক হয় নাই। মাঝখান দিয়ে একটা ডেস্পারেট রাশিয়ার রোষানলে নিজের সাজানো দেশটার শুধু ক্ষতিই করলাম।  সময় মতো ঐ সব প্রতিশ্রুতদেওয়া দলগুলি একই কাজ করবে যেটা তারা করেছে ইউক্রেনের জন্য। এটাই হবে সুইডেন আর ফিন ল্যান্দের জন্য প্যারাডাইম শিফট।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বা ন্যাটোর এই আন্তরীক আহবানে অভিভুত হয়ে তাদের নিজস্ব চিন্তাধারা থেকে এতোটাই দূরে সরে গিয়েছে যে, মনে হয়েছে ওরাই ঠিক। আর এই ডমিনো ইফেক্টই সুইডেন আর ফিনল্যান্ড এখন ন্যাটোতে যোগদানের করে একটা বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।

রাশিয়া হয়তো এই মুহুর্তে সরাসরি তাদেরকে আক্রমন নাও করতে পারে কিন্তু পারষ্পরিক বাই লেটারাল সহযোগীতা, তেক গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই, কমোডিটি, পোর্ট ফ্যাসিলিটি, ইত্যাদি তো নষ্ট হবেই, ২৬০০ কিলোমিটার কমন বর্ডার কখনোই শান্ত থাকবে না। 

১৪/০৫/২০২২-ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে আগ্রহী

গতকাল ১২ মে তে প্রেসিডেন্ট সুওলি নিনিতসু ন্যাটোতে যোগ দেয়ার কথা অফিশিয়ালী জানিয়েছেন। তাতে রাশিয়া ফিনল্যান্ডের উপর খুবই নাখোস।  এই দুটু বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার নিজস্ব কিছু বিশ্লেষনঃ

যে কোনো সাধীন দেশ তার নিজের দেশের সার্থের কারনে যে কোনো আন্তর্জাতিক জোট করতেই পারেন। এটা সে দেশের ইখতিয়ার। সেই দিক দিয়ে আমি বল্বো, ফিনল্যান্ডের সিদ্ধান্ত শতভাগ সঠিক। সুইডেনের ব্যাপারেও তাই।

অন্যদিকে আসি, ন্যাটোতে কেনো যেতে হবে তাহলে? কারন ন্যাটো ইউরোপকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য প্রতিশ্রুতবদ্ধ। এটাই সবার জানা। কিন্তু ন্যাটো যখন গঠিত হয় সেটা আসলে শুধু ইউরোপকে সুরক্ষিত দেয়ার জন্য হয়েছে এটা বললে একটু ভুল হবে, এটা আসলে চিরাচরিত সর্বদা রাশিয়াকে যেভাবেই হোক সাইজ করার জন্য। আর এই সত্যটা রাশিয়া জানে। তারমানে এই দাঁড়ায় যে, ন্যাটো এবং রাশিয়া আজীবন একটা বৈরী সম্পর্কের নাম।

রাশিয়া ১৯৯০ সালের পর থেকে ধরা যায় একটা আত্তগোপনেই নিজের মধ্যে নিজেরা আছে। আশেপাশের কাউকে খুব একটা ডিস্টার্বড করছিলো না। তারপরেও বিভিন্ন পলিটিক্যাল কর্মকান্ডে যে নাই সেটা নয়, যেমন সিরিয়ার আসাদের সাথে তার একচ্ছত্র ফ্রেন্ডশীপে সিরিয়া বিধ্বস্ত, মায়ানমারের সইরাশাসকদের সাথে আতাত করে রোহিংগাদের বিতাড়ন এসব। ক্রিমিয়ার ব্যাপারটা আলাদা। এসব বিগপাওয়ারগুলি সবসময় একটা এজেন্ডা নিয়েই থাকে, আর তাতে বেশ অনেক জাতী, অনেক দেশ আজীবন ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই নিপিড়িত হতে থাকে। যেমন আমেরিকা করেছে ইরাক, প্যালেস্টাইন, ইরান, কিউবা, আফগানিস্তান, লিবিয়া এমন আরো অসংখ্য দেশে। এটাই ওদের কাজ। কেউ দুধে ধোয়া তুলসীপাতা নয়।

এখন ঝগড়াটা লেগেছে ইউক্রেনকে ঘিরে কিন্তু মারামারিটা করছে সেই রাশিয়া আর পশ্চিমা তথা ন্যাটোজোটই। মাঝখান দিয়ে অতি সাধারন মানুষগুলি বাস্তহারা হচ্ছে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখছে, বয়ষ্ক মানুষগুলির আয়ু সংক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একটা দেশ লন্ডভন্ড হয়ে চিরতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারোরই লাভ হচ্ছে না, লস হচ্ছে শুধু সেখানটায় যেখানে বোমা আর মিজাইল পড়ে ক্ষত হচ্ছে পুরু দেশ তাদের।

ফিনল্যান্ড এবার যেনো টার্গেট হতে যাচ্ছে রাশিয়ার। কিন্তু রাশিয়ার জন্য ব্যাপারটা অতো সহজ হবে না যতোটা সে ইউক্রেনে করতে পারছে। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আর্টিলারী ইকুইপমেন্ট (রাশিয়া ব্যতিত) আছে ফিনল্যান্ডের। খুবই শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আছে ফিনল্যান্ডের, ট্যাংকের দিক দিয়েও ফিনল্যান্ড অত্যান্ত শক্তিশালী এবং তাদের আছে অত্যাধুনিক Leo 2´s plus এন্টি ট্যাংক মিজাইলস যাদের মধ্যে আছে Swedish-U.K. NLAW, the U.S. made TOW, Israeli made SPIKE-missile  ইত্যাদি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অতি পরিকল্পনা মাফিক এবং মনোযোগের সহিত ফিনল্যান্ড তাদের ডিফেন্স সিস্টমকে এমনভাবে গড়ে তুলেছেন যে, প্রায় ৮ লক্ষ নাগরীক রিজার্ভ ফোর্সে আছে, দেশের প্রায় ৮০% স্থলভাগ ফরেস্ট অধ্যুষিত এলাকা এবং রাস্তাগুলি এমনভাবে বানানো যা সব ডিফেন্স ফোর্সের পরিকল্পনা মাফিক। ইউক্রেন যুদ্ধে ফিনল্যান্ড সুইডেনের মতো এ রকম প্রকাশ্যে কোনো কিছুই করে নাই অথচ করেছে। তুরষ্কের পরে ফিনল্যান্ডের আছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ল্যান্ডফোর্স। প্রকৃত কথা হচ্ছে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফিনল্যান্ড তাদের ডিফেন্স সিস্টমকে একেবারে পরিকল্পনা মাফিক সাজিয়ে গেছে। এ কথাটা প্রকৃত আভাষ পাওয়া যায়, তাদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট  সুওলি নিনিতসু গত ১২ মার্চ ২০২২ তারিখে রাশিয়ার আগ্রসন এবং ফিনল্যান্ডের অবস্থানের উপর রিপোর্টার আমানপোরের এক প্রশ্নের উত্তরে-আমানপোর প্রশ্ন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট সিওলি নিনিতসুকে, Are you scared? উত্তরে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, We are not scare but we are awake.

এখানে একটা কথা বলা দরকার যে, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আর রাশিয়ার পুতিনের সম্পর্কটা কি রকম। দুটুই খুব ডিপ্লোমেটিক চরিত্রের। খুব কম কথা বলে। ওদের একটা বাক্যে অনেক কিছু প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা থাকে।

Finland’s President Sauli Niinistö has known Putin for a decade and often acts as a de facto interpreter, explaining the Russian president's thinking to Western allies – and vice versa. Niinistö is among a handful of world leaders who continue to contact the Russian president, trying to put a stop to the war.

ফিনল্যান্ড এ যাবতকাল রাশিয়ার প্রতিবেশী হিসাবে ভালোই ছিলো এবং রাশিয়াও ফিনল্যান্ডকে নিয়ে কোনো দুসচিন্তায় ছিলো না। ইউক্রেন যুদ্ধ ফিনল্যান্ডকে ভাবিয়ে তুলেছে, অন্যদিকে ঘোলা পানিতে মাছ ধরার মতো একটা পরিস্থিকে কাজে লাগিয়ে ন্যাটো এবার ফি ল্যান্ডের কান ভারী করে তাদেরকেও ন্যাটোর সদস্য করতে উঠে পড়ে লেগেছে কারন ফিনল্যান্ড ও রাশিয়ার সাথে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার কমন বর্ডার নিয়ে আছে। আর ন্যাটোত চাচ্ছেই রাশিয়ার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাক যাতে রাশিয়া নড়াচড়া করতে না পারে।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সিওলি নিনিতসুর সাথে একবার পুতিনের আন্তরীকভাবে কথা হয়েছিলো (ওরা আসলে একসাথে অনেক বছর ধরে ঘোড়া দৌড় খেলতো, ওরা দুজনেই ভালো স্পোর্টসম্যান) এই ন্যাটো সংক্রান্ত ব্যাপারে। প্রেসিডেন্ট সিউলি নিনিতসু জিজ্ঞেস করেছিলো, যদি তারা ন্যাটোতে যোগ দেয়, তাহলে পুতিনের জবাব কি? পুতিন বলেছিলো যে, এখন আমরা ফিনল্যান্ডের প্রতিটি বর্ডার গার্ডকে বন্ধু মনে করি, কিন্তু তোমরা যদি ন্যাটোতে যোগ দাও, তাহলে তাদেরকে আর আমরা বন্ধুর চোখে দেখবো না।

এই বক্তব্যগুলি মারাত্তক। কারন, পুতিন খুব ডেস্পারেট চরিত্রের মানুষ। সে মনে করে ইউরোপ, পশ্চিমারা রাশিয়াকে অনেক অনেক ক্ষতি করেছে এবং এখনো তারা তার ক্ষতিই চায়। সে এটাও মনে করে যে, রাশিয়া যদি ক্ষতিগ্রস্থ হতে হতে নিঃশেষই হয়ে যায়, তাহলে অন্যদের আর বাচিয়ে রেখে লাভ কি? এটা একটা ভয়ংকর ধারনা। সুইসাইডাল মানুষের কাছে প্রিথিবীর কোনো কিছুই দামী নয়।

ফিনল্যান্ড হয়তো ভীতু নয়, কিন্তু রাশিয়া যেহেতু তার অস্তিত্ব সংকটে ভোগছে ফলে মরন কামড় দিতে তার কোনো ভয় নাই। আর এই কারনে ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের আরো সময় নেয়া উচিত ন্যাটোর আতিশয়তায় কিংবা উচ্ছসিত অভিনন্দনে এই মুহুর্তে পা না দেয়া বা ন্যাটোতে যোগ না দেয়া। তাতে রাশিয়ার কি হবে সেটা তো সে আগেই ভেবে নিয়েছে, অস্তিত্ব সংকট, ফলে যা হবে সেটা হলো রাশিয়া ফিনল্যান্ডকে আঘাত করবেই। ফলাফল কি হবে সেটা যাই হোক। এতে ন্যাটোর হয়তো কিছুই হবে না, মাঝখান দিয়ে সাজানো একটা দেশ যুদ্ধের কবলে পড়ে শান্তি নষ্ট হবে আর সাধারন মানুষ বিপাকে পড়বে। ন্যাটোর সদস্যপদ পাইতেও ফিনল্যান্ডের হয়তো আরো বছরের উপর লেগে যাবে যদি সবদেশ তাদের পার্লামেন্টে এটা পাশ করে। তানা হলে হয়তো আরো অধিক সময় পার হবে। সেই অবধি ন্যাটোর পক্ষে ফিনল্যান্ড এর জন্য কিছুই করার ইখতিয়ার নাই। ফিনল্যান্ডকে একাই ফেস করতে হবে রাশিয়াকে। ইউক্রেনও ভীতু ছিলো না, তারাও Awaken ছিলো, কিন্তু পরিশেষে কি দেখা গেলো? সারাটা দেশ এখন ধুলিস্যাত।

FINLAND IS ONE OF THE BEST COUNTRIES IN THE WORLD, WANTING ONLY PEACE, AND HAS AND NEVER WILL START ANY WAR.

১৩/৫/২০২২- রকি কাহিনী

আমাদের বাসায় কুকুর পালন কেউ পছন্দ করে না। কিন্তু গত কয়েকমাস আগে হটাত করে কোথা থেকে এক লোকাল কুকুর আমাদের বাসার সামনে এসে হাজির। সারাদিন বাসার সামনেই থাকে, পারলে গ্যারেজের মধ্যে নিজে থেকেই যেনো সেলফ ডিক্লেয়ারড পাহারায় থাকছে। তাঁকে নরম্যাল খাবার দিলে ছুয়েও দেখে না। কয়েকদিন চেষ্টা করেছি, ভাত, রুটি, কিংবা এই জাতীয় জিনিষ খেতে দিতে কিন্তু তার এমন একটা ভাব যেনো, ধুর!! কি দিছো এগুলি?

তারপর মাংস দিয়ে লবন দিয়ে মেখে একটা পরিষ্কার পাত্রে সাথে এক বাটি পানি দিলে উনি ধীরে ধীরে খেতে আসেন। তাও আবার পুরুটা তিনি খান না। একটু পেট ভরে গেলেই বাকী খাবারটা তিনি রেখে অন্যখানে গিয়ে পেট টানটান করে শুয়ে পড়েন। অনেক গবেষনা করছি এটা কোথা থেকে এলো, আর উদ্দেশ্যটা কি? আগেই বা কই ছিলো? শুনলাম পাশেই নাকি কোনো এক বাসায় থাকতো, ওখান থেকে তিনি রাগ করে এই যে এসেছে, ওদিকে সে আর ভুলেও যায় না।

এই কুকুরের আচরনে ইদানিং দেখি আমার বউ ওনার জন্যই শুধু মাংশ পাক করে। নাম রেখেছে আবার 'রকি'। রকি বলে ডাক দিলেও আবার ফিরে তাকায়। আমার ডাক্তার মেয়ে আবার ওর জন্য মাঝে মাঝে খাবারও কিনে নিয়ে আসে। আর আমিও বাদ যাই নি। কয়েকদিন নিউ মার্কেটের "৬৫ টাকায় বিরিয়ানীর দোকান" থেকে বিরিয়ানিও কিনে এনেছিলাম। ফলে আমি যখন বাসায় গিয়া হাজির হই, ব্যাপারটা এখন এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে, গাড়ি থেকে নামলেই একেবারে পায়ের কাছে ঘুর ঘুর করে আর যেনো বলতে থাকে- 'আমার বিরিয়ানির প্যাকেট কই?'

তো গতকাল অনেক বৃষ্টি ছিলো। রকি সারাদিন গ্যারেজেই চার পা চার দিকে ছড়াইয়া নাক ডেকে মনে হয় ঘুমাচ্ছিলো। আমি বাসায় যাওয়ার পর, সে কোনো চোখ না খুলেই খালি লেজ নাড়ছিলো। ধমক দিলাম বটে কিন্তু তিনি এক চোখ খুলে দেখলো আমাকে আর লেজটা আরো একটু বেশী করে নাড়াইলো। ভাবখানা এই রকম, আরে বস, ডিস্টার্ব করো না।

গার্ডকে দিয়ে ওনার জন্য মুরগীর তরকারী আর এক প্লেট ভাত এনে খাওয়ানোর পর দেখি হটাত তার এই শারীরিক কসরত।

13/5/2022-সম্ভাবনা

প্রতিনিয়ত কারেন্সীর মান কমে গেলে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকিং সেক্টরে সুদের হার বাড়ানো ছাড়া অনেক দেশের আর কোনো ইমিডিয়েট বিকল্প থাকে না। সেই প্রেক্ষাপট থেকে বলছি- হয়তো আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরেও এটা ঘটতে পারে।

অন্যদিকে গত কয়েকদিন আগে দেখলাম আমাদের দেশে গোল্ডের দাম কমেছে। গোল্ড যেহেতু কারেন্সীর ভ্যালু নির্নায়ক, ফলে ডলারের দাম বাড়ার সাথে গোল্ডের দাম কমার কোনো যুক্তি খুজে পাইনি। হতে পারে এটা ইনফ্লেশন থামানোর একটা সাময়িক কৌশল।

৩য় মহাযুদ্ধটা আসলে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। সেটা ইকোনোমিক্যাল ওয়ার। কোনো অস্ত্র ছাড়া দেশে দেশে এই গন্ডোগোল পাকাবে, আর এর সুযোগে একটা বিশাল পোলারাইজেশনের সৃষ্টি হবে।

ইউক্রেনের যুদ্ধটা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। একটা সুপার পাওয়ার গত ২২ বছর হোম ওয়ার্ক করে প্রস্তুতি নিয়েছে, সংগী বাছাই করে বলয় তৈরী করেছে, আরেক পক্ষ হুট করে কোনো হোম ওয়ার্ক না করে যখন যা ইচ্ছে সেটাই প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। একটা অসম পরিকল্পনা মনে হচ্ছে।

একজন খুব ক্যালকুলেশন করে হম্বি তম্বি না করে কাজ করেই যাছে যেনো একটা সিনেমার দৃশ্য থেকে আরেকটা দৃশ্য সাজানো। অন্যজন এক গাদা সভা পরিষদ নিয়ে তাল মাতাল অবস্থা। বেশি ধরতে গিয়ে সব যেনো হাত থেকে সরে যাচ্ছে।

একটা প্রবাদ পড়েছিলাম A bird in hand is more worthy than that of two in the bush.

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দিন।

12/05/2022-আমার এখন কেবলই মনে হচ্ছে যে,

(১) খুব দ্রুত রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের স্পেশাল অভিযান আপাতত স্থগিত করবে কারন রাশিয়ার উদ্দেশ্য যা ছিল তার প্রায় বেশিরভাগ সম্পন্ন। স্পেশাল অপারেশন বন্ধ করলে রাশিয়ার লাভ দুটু। এক. আমেরিকা বা অন্য দেশ ইউক্রেনে আর যুদ্ধাস্ত্র পাঠানোর ব্যবসাটা করতে পারবে না। দুই. ওদিকে সে ইউক্রেন ছেড়েও দেবে না। জাষ্ট পাহাড়াদারের মত অবস্থান। তার শক্তিও ক্ষয় হবে না।

(২) অন্যদিকে চীন তৈরী হচ্ছে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তাইওয়ানের স্ট্যাটাস এবং ইন্দোপ্যাসিফিক কন্ট্রোল নিয়ে। কথাবার্তা ঠিক মনে হচ্ছেনা।

(৩) দুইটা সুপার পাওয়ারের সাথে একই সংগে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় আমেরিকার।

(৪) আরব বসন্তের মতো এবার আবার পশ্চিমা বা ইউরোপিয়ান বসন্তের বাতাস বইতে শুরু না করে। কারন জার্মানি, ইউকে, আমেরিকায় ইনফ্লেশনে সাধারন জনগন ধীরে ধীরে ক্ষিপ হচ্ছে।

(৪) কাতারের সাথে জার্মানের তেল বিষয়ক কথাবার্তা বিফল হচ্ছে। বিকল্প তেল না পেয়ে জার্মানি বোকার মত রাশিয়ার তেল গ্যাস পুরুপুরি বর্জনের কথা আগাম বলে দিয়েছে যা আপাতত মনে হচ্ছে ভুল হয়েছে।

(৫) ইউক্রেন নিজের থেকে ইউক্রেনের ট্রাঞ্জিট দিয়ে তেল গ্যাস বন্ধ করায় জার্মানি, ইউক্রেন, স্লোভাকিয়া, পোল্যান্ডে এখন ওয়ান থার্ড সরবরাহ বন্ধ। ফলে ইউরোপের ইউনিটিতে একটা ফাটল দেখা যাচ্ছে।

(৫) গতকাল দেখলাম চীন খুব স্পষ্ট ভাষায় আমেরিকাকে হুশিয়ারী দিয়েছে এভাবেঃ আমেরিকা উইল বি হার্ট ইফ দে ইন্টারফেয়ার এবাউট তাইওয়ান স্ট্যাটাস এন্ড ইন্দোপ্যাসিফিক ইস্যু। কথাটা ছিলোঃ হার্ট। বিপদজনক ঠান্ডা কিন্তু কঠিন শব্দ।

(৬) চীন তার ডলার রিজার্ভের ব্যাপারে নিরাপদ রাখার সিস্টেম উদ্ভাবন করছে in case sanctioned. কথা হচ্ছে- চীন নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় নিচ্ছে কেনো? সামথিং রঙ।

(7) চীনের সরকারী সব অফিস আদালতে চাইনিজ মেইড কম্পিউটার রিপ্লেস করছে। চীনের ব্যাংকিং সেক্টর সুইফটকে বাইপাশ করে কিভাবে ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন চালু রাখা যায় সেটা ইতিমধ্যে চালু করেছে।

এই রকম অনেক হোমওয়ার্ক চীন করে যাচ্ছে, যার আলামত আসলেই বিপদজনক।

পচা শামুকে কার কার যে পা কাটে বা কাটবে, একমাত্র সময় বলতে পারে।

7/5/2022-ফেসবুকে মিটুলের লেখা ৭ ই মে

আজ ৭মে আমার ও আখতারের জীবনের একটি বিশেষ দিন।বিবাহ বার্ষিকী নয়। তার চেয়েও অনেক মূল্যবান একটি দিন। আমাদের লাভ ডে আজ।লিখতে চেয়েছিলাম না। কিন্তু না লিখে পারলাম না। কেননা আমি আজ সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি বন্ধুদের সাথে। মনে কিন্তু ঠিকই আছে!! এ কি ভোলার মত বিষয় আপনারাই বলেন!!

আমি অনেক ভালো আছি তাঁর সাথে, বর্ণনা করে বোঝাতে পারবো না।আমিও চেষ্টা করি আমার মানুষটিকে ভালো রাখবার। আসলে আমরা একে অপরকে রেসপেক্ট করি ও বোঝার চেষ্টা করি, যা মনের সুখের খোরাক জোগায় এবং খুবই দরকার। তবে আমার চেয়ে আখতারই বেশি মূল্যায়ন করে আমাকে। আমার আনন্দ গুলো যেমন অন্তর দিয়ে উপভোগ করে, তেমনি আমার মন খারাপ বা কষ্ট কোনটাই তাঁর যেন ভালো লাগে না।অনেক স্বাধীনভাবে জীবন যাপণ করছি। তাই বলে আমি কখনও অবিশ্বাসের কোন কিছু করেছি বলে মনে পড়ছে না।আমাকে সব রকম পরামর্শ দেয় সব সময়, সেটা আর্থিক বা বৈষয়িক যে কোন বিষয়ে। আমার সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গাটি আখতার।আলহামদুলিল্লাহ। আজ এই দূরে বসে সিলেটের লালা খালে তোলা বেশ কিছু ছবি আখতারের জন্য পোস্ট দিলাম।আজকের এই আনন্দগুলোও তাঁর জন্য পেয়েছি।বান্ধবীরা সিলেট যাচ্ছে বলতেই তিনি বলে বসলো-তুমিও যাও!!! অনেক বড় মনের মানুষ আখতার।মহান আল্লাহ ওকে সুস্থ শরীরে মান সম্মানের সাথে দীর্ঘজীবি করুন এবং জানমালের নিরাপত্তা দিন সে দোয়া করি। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন প্লিজ প্লিজ।

04/05/2022-লয়েড অষ্টিন এর বক্তব্য

মার্কিন ডিফেন্স মিনিষ্টার লয়েড অষ্টিন  এর বক্তব্যের বিপরীতে ছোট একটা বিস্লেষন

গত সপ্তাহে মার্কিন ডিফেন্স মিনিষ্টার লয়েড অষ্টিন কিয়েভে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীর সাথে দেখা করতে। বিশালদেহী মানুষ। তিনি সেখানে একটা কথা মনের অজান্তেই প্রেস ব্রিফিং এ হুট করে বলে ফেলেন। আর সেটা হলো- “Our focus in the meeting was to talk about those things that would enable us to win the current fight and also build for tomorrow.” Furthermore, Austin admitted for the first time that the US is a fighter in the war by using the first-person plural to describe both the US and Ukraine engaged in a “battle” against Russia. “We want to see Russia degraded to the point where it can’t do the types of things it did in invading Ukraine,” Austin continued.

এই বক্তব্যের মাধ্যমে অষ্টিন সরাসরি স্বীকার করে নিলেন যে, আমেরিকা ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি অংশ। কিন্তু লয়েড অষ্টিনের কথার সাথে জো বাইডেন প্রশাসনের উম্মুক্ত ডিক্লেরেশনের মিল নাই। জো বাইডেন প্রশাসন সবসময় যেটা বলে আসছে যে, ন্যাটো দেশের সাথে যে কোনো কনফ্রন্টেশন মানে ৩য় বিশ্ব যুদ্ধ। সেটা কিছুতেই আমেরিকা চায় না। কিন্তু লয়েডের বক্তব্যে সেটা নাই, লয়েড যেটা বলেছে সেটা আসলেই পর্দার ভিতরের কথা, আর তার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। এই মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বক্তব্যে আমেরিকার কি কি ক্ষতি হতে সেটা ভাবার ব্যাপার।

(১)        জো বাইডেন প্রশাসনে অনেকেই আছেন যারা চায় যে, আমেরিকা যুদ্ধে নামুক। কিন্তু ফেডারিয়ালিষ্ট সিনিয়ার এডিটর জন ডেনিয়েল ডেভিশসন বলেন যে, যদিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে ব্যাটল ফিল্ড হিসাবে ব্যবহার করে আমেরিকা যুদ্ধে যেতেই পারে কিন্তু আমেরিকার সাধারন জনগনের এই যুদ্ধে কোনো ম্যান্ডেট নাই বিধায় আমেরিকার যুদ্ধে যাওয়া ঠিক হবে না এবং এই যুদ্ধে আমেরিকা প্রক্সি ওয়ার হিসাবে অংশ গ্রহন করছে এটাও প্রকাশ করা যাবে না।

(২) যদি রাশিয়াকে প্রকাশ্যে আমেরিকা এইমর্মে ইংগিত দেয় যে, আসলেই তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আছে (যদিও রাশিয়া এটা জানে কিন্তু অফিশিয়লি নয়) তাহলে রাশিয়া আমেরিকার যে কোনো সৈনিক তথা জনগনকে রাশিয়ার শত্রু মনে করে টার্গেট করবেই।

(৩)       A second possibility is that if Putin sees his conventional military forces being suffocated, he will resort to further cyber attacks on Western infrastructure, chemical weapons, or his tactical, “battlefield” nuclear weapons arsenal. It’s a prospect that was unthinkable eight weeks ago but is now routinely discussed and this will put more Americans in danger.

লয়েড অষ্টিনের এই মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বক্তব্য ইতিমধ্যে রাশিয়ার মাথায় ঢোকে যাওয়া আমেরিকার প্রক্সী ওয়ারকে আরো বেশী বেগবান করে তুলতে পারে। To date, there has been no American bloodshed in the thick of the war in Ukraine. However, Russia may not hesitate to do so now.

তাই এই লেবেলের মানুষদের কথা বলার সময় শব্দচয়ন, ডিপ্লোমেসি, এবং কি বলা দরকার সেটা সর্বদা মাথায় রেখে বলা উচিত। তা না হলে যে কোনো সময়ে বড় ধরনের কিছু আশংকাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

06/05/2022-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভুমি

১৮ শতাব্দীর শেষের দিকে জন্ম আজকের ইউক্রেনের। ইতিহাসের শেষের অধ্যায়ে এসে ইউক্রেন পোল্যান্ড এর গন্ডি থেকে বেরিয়ে যায় এবং তখন ইউক্রেন অষ্ট্রিয়া-রাশিয়ার মাঝামাঝিতে বর্দার করে অবস্থান নেয়। রাশিয়ার কাছাকাছি অংশটি প্রধানত রাশিয়ান ভাষাতেই বেশী অভ্যস্থ যদিও তারা ইউক্রেনেরই নাগরীক।

(ছোট নোটঃ After the Union of Lublin in 1569 and the formation of the Polish–Lithuanian Commonwealth, Ukraine fell under the Polish administration, becoming part of the Crown of the Kingdom of Poland)

ইউক্রেনের প্রাগৈতিহাসিক কাহিনীতে না যেয়ে আমি ১৯৯১ সাল থেকে ইউক্রেনের বিষয়টি যদি বিশ্লেষন করি দেখা যাবে- বার্লিন পতনের ২ বছর পর ১৯৯১ সালে যখন ইউক্রেন স্বাধীনতা পেলো, ঠিক তখন থেকেই ইউক্রেনের ভিতরে রাজনৈতিক এবং কূটনইতিক ঝামেলার শুরু। প্রাথমিকভাবে এটা ছিলো ইউরোপ এবং রাশিয়ার জিওকালচার এর বিভক্তির কারনে। কিন্তু  ২০০৪ সালের অরেঞ্জ রেভুলিউশন দিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। অরেঞ্জ রেভুলিউশন হলো- a series of protests and political events that took place in Ukraine from late November 2004 to January 2005, in the immediate aftermath of the run-off vote of the 2004 Ukrainian presidential election, which was claimed to be marred by massive corruption, voter intimidation and electoral fraud.

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী Viktor Yushchenko এবং Viktor Yanukovych এর মধ্যে ভোট কারচুপির ঘটনায় এই অরেঞ্জ রেভুলিউশন। যদিও Viktor Yushchenko  জয়ী হন কিন্তু এটা দেশের জনগন মেনে না নেওয়ায় দেশের ভিতরেই উত্তপ্ত অবস্থা চলতে থাকে। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় এবং নিরপেক্ষ ভোট গননায় শেষমেষ ৫২% ভোটে জয় দেখিয়ে Viktor Yushchenko কেই প্রেসিডেন্ট হিসাবে আদেশ দেয়া হয় এবং অরেঞ্জ রেভুলিউশনের নিষ্পত্তি হয়।

এর মধ্যে অন্য অঞ্চলে একটা অঘটন ঘটে যায়। জর্জিয়া আগে থেকেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যোগ দেয়ার জন্যে উম্মুখ হয়েছিলো। এই সময়ে জর্জিয়ার মতাদর্শে যুক্ত হয় ক্রোয়েশিয়া এবং ইউক্রেন।  রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জর্জিয়া এবং ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দিতে না করেন ন্যাটোকে। ফলে ন্যাটো শুধুমাত্র ক্রোয়েশিয়াকে সদস্যপদ দিয়ে জর্জিয়া এবং ইউক্রেনকে বাদ দেয় ঠিকই কিন্তু ইউক্রেনের বেলায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন একটা “association agreement” করে যার লক্ষ্য বলা হয় Implementation of the association agreement could mean major changes in Ukraine that would bring it closer to EU standards. রাশিয়া ইউরোপিয়ানের এবং ন্যাটোর এই উদারতাও পছন্দ করে নাই। আবার অন্যদিকে রাশিয়ার কারনে জর্জিয়া ন্যাটোতে যুক্ত হতে না পারায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে জর্জিয়া আন্দোলন শুরু করলে ২০০৮ সালে রাশিয়া জর্জিয়া আক্রমন করে এবং Abkhazia and South Ossetia কে জর্জিয়া থেকে আলাদা সার্ভোমত্ত স্ট্যাটাস প্রদান করে।

 

যাই হোক যেটা বলছিলাম, প্রেসিডেন্ট Viktor Yushchenko  এর আমলটা তার ভালো কাটে নাই এবং তিনি জর্জিয়ার বিরুদ্ধে রাশিয়ার এই আক্রমনে জর্জিয়ার পক্ষ নেয় যার ফলে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার একটা শত্রুতামুলক সম্পর্ক তৈরী হয়। অবশেষে ২০১০ সালে তিনি ভোটে হেরে যান

এবং Viktor Yanukovych (যিনি ২০০৪ সালে হেরে গিয়েছিলেন, তিনি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু তার ক্ষমতায়নের সময়ে তিনিও বিরোধি দলের দাপটে দেশ পরিচালনায় ভালো করতে পারেন নাই ফলে সারা দেশ জুড়ে ‘মাইডান স্বাধীনতা চত্তরে” বিশাল গনঅভ্যুথানে ২০১০ সালে (ক্ষমতার ৪ বছর পর) ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হন। একেই মাইডান বেভুলিউশন নামে পরিচিত। মাইডান রেভুলিউশনের মাধ্যমে ইউক্রেনিয়ানরা চেয়েছিলো যে, “association agreement”  যা কিনা এক অর্থে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে একাত্ততা বা সদস্যপদ লাভে একটা দরজা খোলা রাখা সেটা ঘোষনা করা আর সাক্ষরিত হওয়া। Viktor Yanukovych  ছিল প্রো-রাশিয়ান। তিনি সেটা করতে অস্বীকার করেন। এই সময়ের বিরোধী পার্টির নেত্রী মহিলা Tymoshenko ছিলেন রাশিয়া বিরোধি কিন্তু ইউরোপিয়ান পক্ষীয় মতাদর্শের।  ক্রমাগত তার দাবী এবং আন্ডলন চলতে থাকলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইউনোকোভিচ ২০১১ সালে তাঁকে এরেষ্ট করেন এবং ৭ বছরের জেল দেন। এসব জটিল রাজনৈতিক টালমাতাল অবস্থায় শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট Viktor Yanukovych  রাশিয়ায় পালিয়ে যান এবং প্রোসেংকু নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহন করেন।

প্রেসিডেন্ট প্রোসেংকো ছিলেন প্রো-ওয়েষ্টার্ন। তিনি প্রেসিডেন্ট হবার পরে সর্বাত্তক চেষ্টা করেন যাতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে যোগ দেয়া যায়। এখানে বলা বাহুল্য যে, প্রেসিডেন্ট প্রোসেংকোকে ব্যবহার করে আমেরিকা এবং ইউরোপ বেশ কিছু কাজ করে ফেলেন। তদানিতন ওবামা প্রশাসন ২০১৪ সালে ওয়েষ্টার্ন লিড ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কার্যাদি দেখভালের জন্য তদানিন্তন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে প্রধান করে ওবামা প্রশাসন ইউক্রেনের দায়িত্ত দেন। এই কার্যাদির মধ্যে যেতা ছিলো তা হচ্ছে- ডনবাস, ডনেস্ককে এই দুই অঞ্চলকে রাশিয়ার মতাদর্শ থেকে উতখাত করা। কারন ইউক্রেন সর্বদা এদেরকে প্রো-রাশিয়ান ভাবতো, এখনো ভাবে। ফলে এদের উপর চলে সর্বাত্তক হামলা, আক্রমন, এবং সামরীক অভিযান। ওদেরকে এক প্রকার রাজাকারের মতো ট্রিট করা হতো এবং এই দুই অঞ্চলের মানুষ তথা রাশিয়ান স্পিকিং ইউক্রেনিয়ানদেরকে নির্দিধায় খুন, বাস্তুহারা এবং শারীরিক টর্চারে নিমজ্জিত করতে শুরু করে। শুরু হয় জটিল সমীকরন। উপায়ন্তর না দেখে রাশিয়া এই দুই অঞ্চলকে সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ২০১৪ সালে মালিয়েশিয়ান যাত্রীবাহী প্লেন ২৯৮ জন যাত্রীসহ ইউক্রেনে মিজাইল ফায়ারে নিপতিত হলে উক্ত দোষ রাশিয়ার উপর চাপিয়ে দেয় যদিও রাশিয়া সেটা প্রত্যাখ্যান করে। একদিকে রাশিয়ার সাপোর্টে ডনবাস, ডোনেস্ক অস্ত্র তুলে নেয় অন্যদিকে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট প্রোসেঙ্কোর নেত্রিত্তে ডনবাস এবং ডোনেস্ক এবং ক্রিমিয়ার মানুষগুলিকে সরকারী সামরীক বাহিনী, অস্ত্র এবং সৈনিক দিয়ে উতখাত করার সর্বাত্তক চেষ্টা করে। অবশেষে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে নেয়।

 

রাশিয়ার এহেনো তীব্র সামরিক অভিযানে প্রেসিডেন্ট প্রোসেঙ্কো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে মিনস্কে এক বৈঠকে মিলিত হন যেখানে ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট President Francois Hollande এবং German Chancellor Angela Merkel এর উপস্থিতি ছিলো। উক্ত বৈঠকে ১৩টি শর্ত সাপেক্ষে যুদ্ধ বিরতি কিংবা অবসানের ঘোষনা দেন উভয় পক্ষ। আর সেটাই হলো মিনস্ক চুক্তি। লক্ষ্য ছিলো- end the war, an immediate cease-fire and the withdrawal of all heavy weaponry in order to create a “security zone.”

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, উক্ত মিনস্ক চুক্তি ইউক্রেন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ না নিয়ে উলটা আমেরিকার দ্বারস্থ হয়। তখন তদানিতন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনে লিথ্যাল অস্ত্র সরবরাহ বিক্রির অনুমোদন দেয় যা ওবামা প্রশাসন করতে না করেছিলো। আর একাজে ট্রাম তার ডিফেন্স এডভাইজার কার্ট ভলগারকে দায়িত্ত দেন। ব্যাপারটা এখানেই শেষ ছিলো না। বরং আমেরিকা Ukraine Security Assistance Initiative এর নামে প্রচুর পরিমান সামরীক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষে আর্থিক সাহাজ্য দেয়ার জন্য কংগ্রেসে অনুমোদন পাশ করিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে রাশিয়া আমেরিকাকে এই অঞ্চলে একটা প্রক্সি ওয়ারের সামিল হওয়া হিসাবে গন্য করছিলো। Russia accuses the United States of encouraging the break in order to weaken Moscow, and a Kremlin spokesperson reissues a promise to defend “the interests of Russians and Russian-speakers.”

২০১৯ সালে ভ্লডিমির জেলেনেস্কী প্রায় ৭০% শতাংশ ভোটে প্রেসিডেন্ট প্রোসেংকোকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়। জেনেস্কীর পার্টি পার্লামেন্টেও মেজরিটি পায়। তার ইলেকশন মেনিফেষ্টু ছিলো-(ক) দূর্নীতি এবং দারিদ্রতা দূরীকরন (খ) পুর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধকে দমন করা।

জেনেস্কী প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন এবং এক টেলিফোন বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেলেনেস্কীকে এক প্রকার উষ্কানীই দিয়েছেন বলে জানা যায় যাতে ইউক্রেন অতি সত্তর রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং আমেরিকার নেত্রিত্তে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে তথা ন্যাটোতে যোগদানের পথ তরান্নিত করে।

(https://edition.cnn.com/2019/09/25/politics/donald-trump-ukraine-transcript-call/index.html)

যাই হোক, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিংবা অন্য কারো ফেক ভরসায় প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কী গত ২০২০ এর জুনে ইউক্রেন NATO Enhanced Opportunities Partner তে নাম লিখায়। যেখানে অষ্ট্রেলিয়া, জর্জিয়া, ফিনল্যান্ড, জর্দান, এবং সুইডেনও ন্যাটোর যুগ্ম মিশন এবং সামরীক মহড়ায় অংশ নিতে অংগীকার বদ্ধ হয়। একই বছর সেপ্টেম্বরে জেলেনেস্কী তার পার্লামেন্টে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার দৃঢ় অংগীকার হয়ে National Security Strategy অনুমোদন করে যার অর্থ ছিলো সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ইউক্রেন ন্যাটোতে এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ। উক্ত আইন পাশ করার পরে জেলেনেস্কী ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালে অনেকগুলি কাজ করে ফেলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-(ক) ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থী অলিগার্দের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন বিশেষ করে অইলিগার্গ ভিক্টোর মেদ্ভেদচুক যিনি ইউক্রেনের বৃহৎ প্রো-রাশিয়ান পলিটিক্যাল পার্টির চেয়ারম্যান (খ)  ইউক্রেনের সরকার মেদ্ভেদচুকের সমস্ত আর্থিক এসেট কব্জা করেন (খ) রাশিয়ার সমস্ত টিভি চ্যানেল ইউক্রেনে সম্প্রচার বন্ধ করেন (গ) জাতীয় স্লোগান- ইউক্রেন শুধু ইউক্রেনিয়ানদের জন্য, আর বাকী সব অবৈধ।

রাশিয়া ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলো যে, এখানে শুধু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কীই জড়িত নয়, তারসাথে আমেরিকা এবং ইউরোপ সামিল। তাই ভ্লাদিমির পুতিন ডিসেম্বর ২০২১ থেকে জানুয়ারী ২০২২ পর্যন্ত তার দখলে থাকা ক্রেমিয়ায় অজস্র সামরীক যন্ত্রাদি এবং সৈন্য মোতায়েন শুরু করে। তবে একই সাথে পুতিন আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে এইমর্মে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নিতে বলেন। সেখানে পুতিন Set of Security Gurantees নামে একটা কন্সেপ্ট পেপারও দাখিল করেন-This includes a draft treaty calling for tight restrictions on U.S. and NATO political and military activities, notably a ban on NATO expansion. The Biden administration delivers written responses in January; few details are made public, but it rejects Russia’s insistence that Ukraine never be accepted into NATO and proposes new parameters for security in the region.

রাশিয়ার এজেন্ডাকে ন্যাটো বা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কোনো প্রকার গুরুত্ত না দিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ এ  Germany announces the suspension of the Nord Stream 2 pipeline, while the United States, EU, and UK pledge additional financial sanctions against Russian entities. রাশিয়া ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালায়।

05/05/2022-কে জিতছে এই যুদ্ধে?

একটা যুদ্ধ হচ্ছে রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে যেনো এটা একটা ঘরোয়া ব্যাপারের মতো যদিও রাশিয়া তার পার্শবর্তী সাধীন দেশ ইউক্রেনকে আক্রমন কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা। তারপরেও এটা বাস্তবে ঘটেছে। এখন এই যুদ্ধের বা অপারেশনের বিশ্লেষনে যদি যাই আমরা কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর এখনো জানি না বলেই মনে হচ্ছে।

এই যুদ্ধে কার কি ইন্টারেষ্ট, যদি সেটা জানা যায়, তাহলে হয়তো ব্যাপারটা আচ করা সম্ভব। একটা জিনিষ খেয়াল করেছেন সবাই যে, আমরা যারা আমজনতা, যাদের পোট্রেইট মিডিয়া ছাড়া অন্য কোনো মিডিয়ায় এক্সেস নাই বা যেতে চাই না। আর সোস্যাল মিডিয়া হচ্ছে সবচেয়ে অনির্ভরশীল একটা প্রোপাগান্ডার মাধ্যম। পোট্রেইট মিডিয়াগুলিতে প্রতিনিয়ত এটা দেখছি যে, পশ্চিমা মিডিয়াগুলি

(ক) অনবরত ইউক্রেন জিতে যাচ্ছে, ইউক্রেন জিতবেই এ ধরনের খবর দিচ্ছে। এই খবরগুলির পিছনে কতটা গ্রাউন্ড তথ্য নিয়ে বিশ্লেষন করা তা কিছু কেউ জানাচ্ছে না।

(খ) কোনো পশ্চিমা দেশ বা ইইউ কিন্তু এই যুদ্ধটাকে থামানোর জন্য এগিয়ে আসছে না।

(গ) বরং যে যেখান থেকে পারে, সব ইইউ দেশগুলি একযোগে টাকা পয়সা, অস্ত্র, ট্রেনিং এমনকি বিশেষ টেকনোলজি এবং প্রোপাগান্ডা দিয়ে ইউক্রেনকে সাহাজ্য করছে এবং পিস টকে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেই না।

(ঘ) সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- পশ্চিমা পক্ষসহ ইইউ আগ্রাসী রাশিয়ার কোনো কথাই শুনতে নারাজ বিধায় তাদের মিডিয়া পুরু দুনিয়া থেকে ব্লক, তাদের সাথে কোনো সেমিনারে বসলে ওয়াকআউট ইত্যাদিও করছে। অর্থাৎ আমাদেরকে যা শুনতে হবে তা শুধু একপক্ষ থেকে। তাহলে দুই পক্ষ না শুনে আমরা যারা আমজনতা তারা কিভাবে বিচার করবো কে কতটুকু দোষী বা দায়ী?

কার কি ইন্টারেষ্ট

এবার একটু এদিকে নজর দেই। যুদ্ধটা হচ্ছে ইউক্রেনে যে কিনা ইইউর সদস্যও নয়, আবার ন্যাটোরও না। অথচ ইইউ এবং ন্যাটো পুরু ইউক্রেন যুদ্ধটাকে যেনো নিজের যুদ্ধ মনে করে এগিয়ে নিচ্ছে। অথচ ইউক্রেনকে গত ১৪ বছর যাবত ইইউ এর সদস্যপদ বা ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার আশা দিয়েও ইইউ বা ন্যাটো তাঁকে কোনো সদস্যপদ দিতে নারাজ ছিলো। তাহলে হটাত করে সবাই ইউক্রেনের জন্য এতো উঠে পড়ে লাগলো কেনো? কার কি ইন্টারেষ্ট এখানে? যে পরিমান ডলার, আর অস্ত্র ইউক্রেনে এ যাবত দেয়া হয়েছে, কার কাছে যাচ্ছে, কে ইউজ করছে, কিভাবে সেগুলির কন্ট্রাক্ট কিছুই কিন্তু ফলোআপ হচ্ছে না। অথচ এই পরিমান অর্থ যদি যুদ্ধের আগে এই ইউক্রেনকে দেয়া হতো, তাহলে ইউক্রেন ধনী দেশসমুহের মধ্যে একটা হয়ে যেতো।

ইউকে

ইউকে খুব অল্প কিছুদিন আগেই ইইউ এর সদস্যপদ থেকে নিজের ইচ্ছায় বেরিয়ে গেছে কারন তার পোষাচ্ছিলো না। যে বাজেট দিয়ে তাঁকে ইইউ তে থাকতে হয় আর কমন এজেন্ডায় থাকার কারনে অন্য ২৭টি দেশ থেকে যেভাবে ফ্রি মাইগ্রেশন হয় ইউকে তে, তাতে তাদের লাভের থেকে ক্ষতি অনেক বেশী হয়। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সবচেয়ে বেশী লাভ হয় আসলে অন্যান্য দরিদ্র ইইউ এর দেশগুলির যাদের মেম্বারশীপ ফিও কম, আবার সদস্য থাকায় তাদের জন্য বরাদ্ধ বোনাস অনেক বেশী। তাই ইউকে এর নাগরিকগন ব্রেক্সিট এর মাধ্যমে এই ইইউ থেকে চিরতরে বেরিয়ে গেছে। কিন্তু ন্যাটো যেহেতু একটা কোঅর্ডিনেটেড ডিফেন্স সিস্টেম, তাই ইউরোপ তার নিজস্ব ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে না তোলা পর্যন্ত ইউকে কে থাকতে হবে এমন শর্তেই ইইউ ইউকেকে সদস্যপদ খারিজ করার অনুমতি দিয়েছিলো। ফলে, ইউকে এর আধিপত্যতা ইইউ দেশসমুহে প্রায় নাই বললেই চলে একমাত্র ন্যাটো কান্ট্রির ডিফেন্স নিরাপত্তার একজন সদস্য ছাড়া। কয়েকশত বছর সারা দুনিয়া চষে বেড়ানো ইউকে, তার মোড়লগিড়ি কখনোই ছাড়তে চায় না, কিন্তু বাস্তবতা হলো যে, তার হাত ক্রমশই ইন্টারন্যাশনাল এরিয়াতে দূর্বল হওয়াতে সে আগের হাবভাব ধরে রাখা সম্ভবও হচ্ছিলো না। আর এজন্যই অন্তত ন্যাটোর ডিফেন্স বলয়ে থেকে এবং একটা গ্রেট পাওয়ারের মাহাত্যে এই যুদ্ধে আসলে সরগরম থাকতে চাচ্ছে ইউকে। তাছাড়া আমেরিকার বলয় থেকে ইউকে যেতে পারবে না বা যেতেও চায় না। কারন ইউরোপিয়ান ফেডারেল সেন্ট্রাল ব্যাংক এই ইউকের জন্য একটা মারাত্তক আর্থিক অস্ত্র যেটা না থাকলে ইউকে এর অনেক ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এটাকে ধরে রাখাও ননমেম্বার ইউকে এর বিশেষ চাল। ফলে, একটা এটা তার আর্থিক নিরাপত্তা যেমন নিশ্চিত করে তেমনি তার আধিপত্যতা বজায়ের একটা মই ছাড়া আর কিছুই না। অন্যদিকে ইউকে এই রাশিয়া বা ইউক্রেনের বেশীর ভাগ পন্যের উপর যেমন তেল, গ্যাস, অন্যান্য কমোডিটির উপর সে নির্ভরশীলও নয়। তাই, ইউক্রেন ধংশ হলেই কি আর বেচে গেলেই কি। অন্যদিকে পুরানো শত্রু রাশিয়া যদি এই যুদ্ধে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাতে ইউকে এর লাভ ছাড়া তো ক্ষতি নাই।

ইউএসএ

আমেরিকা কিন্তু ইইউ দেশের সদস্য নয়। কিন্তু সে ন্যাটোর সদস্য। দুটু দুই জিনিষ। আপনি যদি লয়েড অষ্টিনের সর্বশেষ বক্তব্যটা শুনেন, দেখবেন তিনি সেখানে বলেছেন, আমরা রাশিয়াকে অতোটাই দূর্বল দেখতে চাই যতোটা হলে রাশিয়া আর মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না। আর ঠিক এই বক্তব্যটাই হচ্ছে ইউএসএ এর ইন্টারেষ্ট ইউক্রেনে। ইউক্রেনকে ভালোবেসে আমেরিকা এতো টাকা পয়সা এতো অস্ত্র সাপ্লাই দিচ্ছে ভাবলে সেটা হবে ভুল। তারাও একটা প্রচন্ড ব্যবসায়ীক লাভের মুখ দেখছে অস্ত্র বিক্রি করে। আর যতোদিন এই যুদ্ধটা থাকবে, আর্মস বিক্রির ততোটাই বাজার থাকবে আমেরিকার। কারন রাশিয়ার সাথে বর্ডারিং দেশগুলি তাদের নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে খাবারের থেকে বেশী অস্ত্র কিনতে আগ্রহী হবে রাশিয়ার সাথে বর্ডারিং দেশগুলি, হোক সেটা ন্যাটোর অধীনে বা ইইউর অধীনে বা নন-ইইউভুক্ত দেশ। এখানে আরেকটা ব্যাপার খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করার বিষয় আছে-সেটা হলো, রাশিয়ার সাথে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে আমেরিকা তো রাশিয়ার সাথেই যুদ্ধ করছে, কিন্তু যুদ্ধটা নিজের দেশের মধ্যে নয় আবার রাশিয়াকে সরাসরি এটাক করতেও হলো না। পেন্টাগন স্বীকার করেছে যে, তারা জার্মানীতে ইউক্রেনের অনেক নাগরীককে মিলিটারী প্রশিক্ষন দিচ্ছে যাতে তারা ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে পারে। তারমানে যুদ্ধটা আরো বিলম্বা হোক। আর আমেরিকা রাশিয়ার তেল, গ্যাস কিংবা অন্যান্য কমোডিটির উপরেও ততোটা নির্ভরশীলও নয়। অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট একচ্ছত্র ২২ বছর ক্ষমতায় থাকাতে রিজিম পরিবর্তনেরও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, যা পশ্চিমাদের জন্য একটা অবশ্যই মাথাব্যথার কারন। আর এই যুদ্ধের মাধ্যমে যদি সেটা অর্জিত হয়, খারাপ কি? তাহলে এমন একটা যুদ্ধ আমেরিকা থামাতে যাবে কেনো? ইউক্রেন ঠিক সেই ট্রাপটাতে পা দিয়েছে আমেরিকার হয়ে যেই ট্র্যাপটা রাশিয়া দিয়েছিলো আফগানিস্থান যুদ্ধে। কিন্তু রাশিয়াও সেই যুদ্ধে টিকে নাই।

ইউক্রেন

এখানে একটা কথা না বললেই নয়। আমরা কি কেউ জানি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি ডনবাস, ম্যারিউপোল, ক্রিমিয়ায় কি হয়েছিলো? আমি ২য় মহাযুদ্ধের এ যাবতকাল যতো ওয়ারফুটেজ আছে, সম্ভবত তার ৬০% নিজে দেখার চেষ্টা করেছি এবং সেই ফুটেজগুলিতে আমি একটা জিনিষ ক্লিয়ারলি বুঝেছি যে, হিটলার কিভাবে ইহুদীজজ্ঞ শুরু করেছিলো এবং শেষ করতে চেয়েছিলো। সেই সব ইহুদীরা নিরাপদ ছিলো না আবার অন্যায়কারীও ছিলো না। হিটলারের মতাদর্শে তারা চলতে চায় নাই বিধায় তাদের ওই পরিনতি ভোগ করতে হয়েছিলো। সেই ফুটেজগুলি দেখার পরে যদি ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি ডনবাস, ম্যারিউপোল, কিংবা অন্যান্য সিটিতে স্পেশাল ফোর্স আজব ব্যাটালিয়ান কি করেছে পাশাপাশি দেখি, একই ছক, একই প্ল্যান, একই সিস্টেম। এমন কি এই আজব ব্যাটালিয়ান হিটলারের সময়ে ব্যবহৃত ইন্সিগ্নিয়াও ইউজ করতো। একদম ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে স্কুল কলেজগুলিতেই শিক্ষা দেয়া শুরু হয়েছিলো যাতে ছোট ছোট ইউক্রেনিয়ান বাচ্চারা মনেপ্রানে বিশ্বাস করে যে, রাশিয়া ইউক্রেনের শত্রু। Battle in Donbass, Donbass war at Airport, Fast Forwar to Fasicim, War in Europe-Drama in Ukrain, Trapped ইত্যাদি গ্রাউন্ড যিরো থেকে নেয়া ফুটেজগুলি দেখি, তাহলে হিটলারের ইহুদীনিধন আর ইউক্রেনের মধ্যে রাশিয়ান নাগরিকদের নিধনের মধ্যে কোনো তফাত পাবেন না। এই বিগত ৮ বছরের নিধনে কোনো ইউরোপিয়ান দেশ, বা পশ্চিমারা কোনো প্রকারের ভয়েস রেইজ করেন নাই। এমন কি আমরা যারা আমজনতা তারাও মিডিয়ায় এর একচুয়াল প্রতিফলন না হওয়াতে কিছুই জানি না। কিন্তু এরমধ্যে মিন্সক চুক্তি করে আপাতত একটা যুদ্ধবিরতি ঘোষনা করেছিলো ইউক্রেন। আমাদের অনেকের মনে এই প্রশ্নটা কেনো আসে না যে, মিন্সক চুক্তিটা কি এবং কেনো হয়েছিলো? ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি ওই যুদ্ধে প্রতিটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট (ভিক্টোর ইউনিকোভিচ, ওলেক্সান্দার টুরচিউনোভ, পেট্রো প্রোসেঙ্কো, এবং বর্তমান জেলেনেস্কী) সবার স্ট্রাটেজি ছিলো এক-"রাশিয়ান স্পিকিং নাগরীক বা রাশিয়ার প্রতি ইনক্লাইনেশন আছে এমন ইউক্রেনিয়ান নাগরিক কিংবা দাম্পত্য জীবনে মিক্সড রাশিয়ান নাগরিকদেরকে নিধন করে ফেলা"। ইউক্রেনের জাতীয় টেলিভিশনে দেয়া সেই সব প্রেসিডেন্ট গনের ভাষন শুনলে দেখবেন, কি ম্যাসেজ ছিলো। সেই ২০১০ থেকে ইউকে এবং ইউএসএ এবং তাদের মিত্ররা ক্রমাগত ইউক্রেনকে আর্থিক সাহাজ্য করে যাচ্ছিলো। আর এই কথাটা কিন্তু ডিফেন্স মিনিষ্টার লয়ে অষ্ওটিন স্বীকার করেছেন, তার সাথে স্বীকার করেছেন ডিফেন্স সেক্রেটারী লিজ ট্রুসও।

২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল অবধি ইউক্রেনে একটা সিভিলওয়ার এমনিতে চলছিলো। আর সেটা ইউক্রেনের মধ্যে রাশিয়া স্পিকিং এবং ইউক্রেনিয়ান নাগরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো শুধুমাত্র ডনবাস, লুটেন্সক, ক্রিমিয়া, মারাইউপোল, এবং আরো কিছু শহর যাকে বলা যায় ইথনিক ক্লিঞ্জিং অপারেশন হিসাবে। আর এবার শুরু হয়েছে গোটা দেশ জুড়ে। খুবই দূর্নীতি পরায়ন দেশ হচ্ছে এই ইউক্রেন।

 

 

চীন

চীন, ইন্ডিয়া, এশিয়ান দেশ, আফ্রিকান এইসব দেশগুলি কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে যায় নাই, আবার খুব ট্যাক্টফুলি ভোটদান থেকে বিরত থেকে এটাই প্রমান করেছে যে, অন্তত তারা পশ্চিমাদের সিদ্ধান্তের সাথে একমত নয়। এই চীন, ইন্ডিয়া, আফ্রিকা কিংবা অন্যান্য এশিয়ান দেশের কি ইন্টারেষ্ট সেটা বিস্তারীত না বল্লেও বুঝা যায় যে, রাশিয়াকে এদের প্রয়োজন বেশী ইউক্রেন থেকে।

ইইউ

যদি একটা জিনিষ লক্ষ্য করা যায় কারা কারা এই ইইউ তে আছেন। ইইউ এর সদস্যদেশুলি হচ্ছে- Austria, Belgium, Bulgaria, Croatia, Republic of Cyprus, Czech Republic, Denmark, Estonia, Finland, France, Germany, Greece, Hungary, Ireland, Italy, Latvia, Lithuania, Luxembourg, Malta, Netherlands, Poland, Portugal, Romania, Slovakia, Slovenia, Spain and Sweden. এই দেশগুলির বর্তমান আর্থিক বা সামরিক ক্ষমতা কি? যদি এই দেশগুলিকে তিনটা গ্রুপে ভাগ করি, তাহলে দেখা যাবে যে, খুবই দূর্বল আর্থিক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা দেশগুলি হচ্ছে-অষ্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, এস্টোনিয়া, হাংগেরী, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমাবার্গ, মালটা, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া। মানে প্রায় ৩০ টি দেশের মধ্যে ১৪টি দেশ। ৫০%। একটু শক্ত কিন্তু দূর্বলের থেকে একটু উপরে আছে বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ইতালী, পোল্যান্ড। ২৫%। আর যারা প্রথম সারিতে আছেন, তারা হচ্ছেন-ফ্রান্স, জার্মানী, গ্রীস, স্পেন। অর্থাৎ ২৫%। তার মানে সিদ্ধান্ত মেকিং এ সবসময়ই দেখবেন, ফ্রান্স, জার্মানী, আর কেউ নয়। অর্থাৎ ১০%। এমন একটা কাঠামোর মধ্যে ইইউ জড়িয়ে আছে যে, বিগ বস যেভাবে চাবেন, সেভাবেই ছোটরা থাকলে ভালো হবে মনে করে যে কোনো সিদ্ধান্তেই তারা ‘ইয়েস’ বলে চালিয়ে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। ইউক্রেন না ইইউর সদস্য, না ন্যাটোর সদস্য, অথচ ইইউর সদস্যরা এই ইউক্রেনের পাশে বিগ বসের কারনে দাঁড়িয়ে থাকায় যেটা হয়েছে, ইইউর নিজের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা। ক্ষতি ইউকের হয় নাই, ইউএসএ এর হয় নাই, হয়েছে ইইউ এর। যারা রাশিয়ার উপর সর্বোতভাবে নির্ভরশীল।

জার্মান

একটা জিনিষ খেয়াল করলে দেখা যায় যে, গ্রাউন্ড যিরোতে জার্মান সাংবাদিক প্রায় নাই বললেই চলে। কারন বর্তমান ভাইস চেন্সেলর ওলফ সুলজ তাদের সাংবাদিকদেরকে এভাবেই ব্রিফ করেছেন যেনো ইউক্রেন যুদ্ধের গ্রাউন্ড জিরো প্রতিবেদন মিডিয়াতে সম্প্রচার না হয়। একমাত্র ডিডব্লিউ কিছু নিউজ করে যেগুলিও প্রায় ৫০-৫০ বায়াসড যা না করলেই হলুদ সাংবাদিকতায় পড়ার সম্ভাবনা। Frank-Walter Steinmeier জার্মান প্রেসিডেন্ট, তাঁকে গত সপ্তাহে ইউক্রেন ভিজিট করতে বললে তিনি সেই ইনভাইটেশনকে পরিত্যাগ করেছেন। তিনি কিয়েভে আসবেন না। কারন ইতিমধ্যে জার্মানীতেও তাদের দল, নাগরীক এবং অন্যান্য সুধীজনের মধ্যে প্রচন্ড একটা দ্বিভাজন শুরু হয়েছে পক্ষে বিপক্ষে। কারন, সাধারন নাগরিকগন ইতিমধ্যে রাশিয়ার গ্যাস, তেল, কমোডিটির অভাবে একটা অশনি পরিস্থিতির আন্দাজ করতে পারছেন। একটা পলিটিক্যাল চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সবাই তো যুদ্ধংদেহী নয়।

কিছু কথাঃ

অজস্র অস্ত্র প্রবাহ একটা সময়ে বুমেরাং হতে পারে। আফগানিস্থানে যেসব অস্ত্র আমেরিকা ফেলে এসেছিলো বা সরবরাহ করেছিলো, ওইসব অস্ত্র শেষ পর্যন্ত আফগানিস্থানের মিলিশিয়ারা আমেরিকার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করতে শুরু করেছিলো। যার কারনে কোনো বিকল্প ছাড়াই আমেরিকাকে তড়িঘড়ি করে আফগানিস্থান ছেড়ে আসতে হয়েছিলো।

নিষেধাজ্ঞা পুরু ওয়েষ্ট এবং ইইউসহ সারা দুনিয়ায় একটা অস্থিরতা আনবে। যেমন ইইউ শেষ পর্যন্ত একটা ব্যাপার স্বীকার করেছে যে, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা কোনো কাজে আসে নাই।

রাশিয়ার রুবলকে দূর্বল করার জন্য যখন সুইফট থেকে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কেটে দেয়া হলো, তখন রাশিয়ার নিজের কারেন্সী ছাড়া কোনো প্রকারের ব্যবসা করা সম্ভব ছিলো না। ফলে রুবল যখন একমাত্র অপসন, আর রাশিয়ার কমোডিটি যখন অন্যের খুবই দরকার, তখন বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত অন্যানরা সুইফটের বাইরে গিয়ে রাশিয়ার শর্ত মেনে নিয়েই এখন রুবলে তাদের লেনদেন করতে বাধ্য হচ্ছ্যে। যেই রুবল যুদ্ধের আগে ছিলো ১ ডলার= ৭২ এখন সেই রুবল চলে এসছে ১ ডলার= ৬৭। অথচ নিষেধাজ্ঞার ঠিক পরপরই ১ ডলারের সমান ছিলো ১৩৯ রুবল। একই রুবল যুদ্ধের আগের থেকেও শক্ত অবস্থানে চলে এসছে। পুরু ইউরোপ জুড়ে এখন ডলারের চেয়ে বেশী প্রবাহ হচ্ছে রুবলের। এতে যেটা হবে, সেটা হচ্ছে পেট্রো ডলারের নির্ভরতা অনেক অনেক কমে যাবে। ফলে ডলার তার শক্তিশালী অবস্থা হারাবে, ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাদের আধিপত্যতা হারাবে, চীন, দুবাই, আরব দেশগুলি তাদের তেল হয় রাশিয়ান রুবল, বা চীনের আরএমবি, অথবা নিজস্ব কারেন্সীতে লেনদেন করা শুরু করবে।

 

তাহলে কারা জিতছে এই যুদ্ধে?

০২/০৫/২০২২-আজ রোজার শেষ দিন, কাল ঈদ

আজ এ বছরের রমজান মোবারক শেষ হয়ে যাবে। বয়স বাড়ছে, আর জীবনের উপর ভয়ও বাড়ছে, বাড়ছে দুসচিন্তা, কমছে শরীরের শক্তি, তার সাথে কমে যাচ্ছে নিজের উপর কনফিডেন্স। যেভাবেই হোক আর যখনই হোক, একটা সময় তো আসবেই যেদিন আমি আর থাকবো না। খুব মন খারাপ হয় যখন এটা ভাবি, অন্যের জন্য কতটা মন খারাপ হয় সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু নিজের উপরেই বেশী মন খারাপ হয় যে, ইশ, এতো সুন্দর একটা দুনিয়া ছেড়ে শেষ অবধি আমাকে চলেই যেতে হবে এমন একটা গন্তব্যে যার আমি কিছুই জানি না, দেখি নাই, এবং পুরুই খালী হাতে!! আর সবচেয়ে মন খারাপের দিকটা হচ্ছে- কোনো কিছুর বিনিময়েই আমি আর আমার এই পুরানো স্থানে একটি মুহুর্তের জন্য ও ফিরে আসতে পারবো না, কোনো কিছুই আর আমি কারো কাছে দাবীও করতে পারবো না, এমন কি আমার তৈরী করা অট্টালিকা, আমার রেখে যাওয়া ব্যাংক ব্যালেন্স, আমার নিজের সব কিছুর কিছুই না। যখন জীবিত ছিলাম, তখন এগুলির সত্তাধীকারী আমি ছিলাম, কিন্তু যে মুহুর্তে আমি চলে যাবো, এর কোন কিছুই আর আমারটাই আমার না। এমন একটা জীবন ঈশ্বর আমাকে কেন দিলেন? শুধু কি পরীক্ষার জন্যই? আমি তো তার এই পরীক্ষায় কোনোদিনই পাশ করতে পারবো না যদি তিনি সঠিক নিয়য়ে আমার দলিল পত্র দেখতে থাকে। যদি পুরুই হয় আমার পাশের নাম্বার তার অনুগ্রহের উপর, তাহলে তিনি আমাকে আরো লম্বা, আরো লম্বা, তার থেকেও লম্বা একটা জীবন দিলেন না কেনো?

কি জানি? হয়তো এই জীবনের পরে আরেক যে জীবন আমার ঈশ্বর বরাদ্ধ রেখেছেন, সেটা হয়তো আরেক অধ্যায় যা আমাদের কারোই জানা নাই। পরীক্ষার তো অনেক গুলি ধাপ থাকে। হয়তো এই জীবনের শেষ যেই মৃত্যু দিয়ে, হতে পারে সেখান থেকে আরো একটা ধাপ শুরু। কেউ তো আর এ যাবত সেই ধাপ থেকে ফিরে এসে বলে নাই, তার কার্যপ্রনালী কি, কি সেই ধাপের নমুনা।

যাই হোক, যেটা বলছিলাম, খুব সুস্থ্য ভাবে ৩০ টি রোজা করার শক্তি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। আমি প্রতিবছর নিজের বাসায় দুইটা হাফেজ কে দিয়ে কোরান খতম তারাবি করি। কিন্তু গত দুই বছর করোনার কারনে সেটা পালন করা যায় নাই। আমি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার স্ত্রী মিটুল তাতে বাধ সেধেছিলো ভয়ে। এবার আর কোনো কথা শুনতে চাইনি। হাফেজ ইসমাইল এবং হাফেজ মেহেদী নামে দুইটি বাচ্চা ছেলে আমাদের তারাবী লীড করেছিলো। ২০ রোজায় আমরা পুরু কোরান খতম করেছি (আলহামদুলিল্লাহ)

দোয়া কবুলের নমুনাঃ

আমার মাথায় আছে, আল্লাহ বলেছিলেন, আমি প্রতিদিন আমার রোজদার বান্দার ইফতারীর সমত যে কোনো ২ টি পজিটিভ ইচ্ছা বা দোয়া কবুল করতে প্রতিশ্রুত বদ্ধ। আমি এটা সব সময় মনে প্রানে বিশ্বাস করি এবং রোজার প্রথম দিন থেকেই আমি মোট ৬০ টি চাওয়া লিখে নেই। আমি জানি আমার জীবনে এই রকম ৬০ টি চাওয়া আসলে নাই। দেখা যায়, হয়তো ঘুরে ফিরে গোটা ১০ টি চাওয়াই থাকে। এ যাবত আমি আমার রবের কাছে কি কি চেয়েছিলাম, সেটা আর এখন বলছি না। তবে আমি স্পষ্ট দেখেছি, আমার প্রায় সব গুলি ইচ্ছা আল্লাহ পুরুন করেছেন। তিনি আমাকে চাকুরীর পর ব্যবসা করতে দিয়েছেন, কারো কাছেই আমার হাত পাততে হয় নাই, আমার সন্তানদেরকে তিনি সুস্থ্য রেখেছেন, মানুষের কাছে তিনি আমাকে সম্মানের সহিত রেখেছেন। অনেক কিছু করেছে আমার রব।  

গত বছর আমি খুব মনে প্রানে প্রায় প্রতিটি রোজায় আল্লাহর কাছে এই দোয়াটি করেছিলাম যেনো আমাকে তিনি ঋণ গ্রস্থ জীবন থেকে উদ্ধার করেন। কারন আমি আমার মা ইন্ডাস্ট্রিজে জন্য বেশ কিছু লোনে জর্জ্রীত হয়ে গিয়েছিলাম। এই বছরে রোজার আগেই আল্লাহ আমাকে সম্পুর্ন লোন থেকে মুক্ত করেছে। এবারই প্রথম আমি লোন মুক্ত জীবনে পা দিয়ে একটা বড় সঞ্চয়ের পথে আছি। আমার ছোট মেয়েকে আমি আগামী ২ বছরের অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছি আমেরিকায় পরার জন্য। বড় মেয়ের জন্যেও একটা সঞ্চয় আমি করতে পেরেছি। আমার নিজের জন্যেও করতে পেরেছি। এর থেকে আর কত সুখী রাখবেন আমার রব আমাকে? আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।

এবার রোজায় আমি শুধু আমার মৃত আত্তীয় স্বজনের জন্য, আমার মেয়েদের জন্য, আমার স্ত্রীদের জন্য, আর আমার ব্যবসার জন্য প্রতিদিন দোয়া করেছি। আর আমি মনে প্রানে চেয়েছি যে, আমি যেনো সম্পুর্ন হোম ওয়ার্ক করে তারপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারি। আমি আমার সেই হোম ওয়ার্কের মধ্যেই এখন আছি। আমি সেই হোম ওয়ার্কের সময়কাল ধরেছি আরো ৬ বছর। ৬৩ বছর আয়ুষ্কাল পর্যন্ত যেহেতু আমাদের নবী ৬৩ বছরের বেশী বেচে ছিলেন না, তাই আমিও ধরে নিয়েছি আমারো ৬৩ বছরের বেশী বেচে থাকার ইচ্ছা করা উচিত না।

গত ঈদে আমার ছোট মেয়ে আমাদের সাথে ছিলো, এবার সে আমাদের সাথে নাই। সে এখন আমেরিকায়। আগামিতে আবার কে কার সাথে থাকবে না, কে জানে? উম্মিকার একটা বিয়ে হওয়া দরকার। উম্মিকাকে নিয়ে একবার একটা মারাত্তক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, বিয়েটা টিকে নাই। তাই এবার আর আমি ওর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্তই দিবো না। এতে যখন ওর বিয়ে হয় হোক। এবার আমি প্রদিন উম্মিকার জন্য ওর বিয়ের জন্য, একটা ভালো পাত্রের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।

৩০/৪/২০২২ -রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার খেলা

রাশিয়ার তেল/গ্যাস এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা

আমি এর আগেও অনেকবার লিখেছিলাম যে, নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে দুইমুখু সাপের মতো, শাখের কারাতের মতো, যেতেও কাটে, আসতে কাটে। ফলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে যিনি নিষেধাজ্ঞা দিবেন, তাঁকে অনেক হিসাব কষে দেখতে হবে, তিনি আবার সেই নিষেধাজ্ঞার কারনেই প্রতিঘাতে না পড়েন। যেদিন ইউরোপ রাশিয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা দিতে থাকলো, তখনি বুঝেছিলাম, মারাত্তক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। ইংরেজীর সেই প্রোভার্ভ কাজে লাগে নাই এই ইমোশনাল নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সময় যে- Never bite the hand who feeds you.

নিষেধাজ্ঞার প্রভাবঃ

রাশিয়ার উপর প্রায় ৭ হাজারেরও বেশী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপ এবং পশ্চিমারা। অথচ এই রাশিয়ার উৎপাদিত ন্যাচারাল গ্যাস, ফসিল ওয়েল, নিকেল, এলুমিনিয়াম, গম, লোহা, ইস্পাত, ইউরেনিয়ামের উপর ইউরোপের সবগুলি দেশ প্রায় ৪০ থেকে ৭০% পর্যন্ত নির্ভরশীল। এমন একটা অবস্থায় বহুদূরের যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রর নেত্রিত্তে বা পরামর্শে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞায় তারা যতোটা না কাবু হবে তার থেকে  এই নিষেধাজ্ঞায়  ইউরোপ কাবু হবে ৪০-৭০% বেশী। কারন ইউরোপ ৪০-৭০% কমোডিটির উপর রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। এটাই হবার কথা ছিলো আর সেটাই হয়েছে। নিষেধাজ্ঞায় পশ্চিমাদের বুদ্ধিতে ইউরোপের মারাত্তক ভুলটা হয়েছে যখন রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংককে সুইফট সিস্টেম থেকে বের করে দিয়ে পুরু বিশ্ব ব্যাংকিং থেকে আউট করায়। ফলে কি ঘটেছিলো? ঘটছিলো যে, আগে রাশিয়ার পন্য কিনে তারা পেমেন্ট করেছে ইউরো বা ডলারে। রাশিয়া সুফট সিস্টেমে থাকায় রাশিয়া সহজেই সেই ইউরো বা ডলার কনভার্ট করে তাদের নিজস্ব কারেন্সীতে পরিবর্তন করতে পারতো অথবা ইউরো বা ডলারকে রিজার্ভ হিসাবে রাখতে পারতো। কিন্তু এখন সুফট সিস্টেম থেকে আউট হওয়ায় রাশিয়া এখন আর ইউরো বা ডলারের পেমেন্ট ক্যাশ করতে পারেনা। এরমানে, রাশিয়া তার পন্য ঠিকই দেবে কিন্তু মুল্য ঘরে পাবেনা যেহেতু সেটা সুইফট সিস্টেমের আওতায় ইউরো বা ডলারের কারনে আটকে যাচ্ছে। পশ্চিমারা চেয়েছিলো যাতে অর্থনীতির দিক দিয়ে রাশিয়াকে পঙ্গু করে দেয়া যায়। কিন্তু রাশিয়া তো আর লিবিয়া, ইরাক বা আফগানিস্থান নয়। এবার রাশিয়া ডিক্রি জারী করেছে-রাশিয়া তার নিজস্ব কারেন্সী ছাড়া কোনো প্রকারের কারেন্সীতে রাশিয়া তার পন্য বিনিময় করবে না। আর সেটা শুরু হবে গ্যাস পন্য দিয়ে। মজার ব্যাপার হলো, ইউরোপের সবকটি দেশ রাশিয়ার এই গ্যাসের উপরে কম বেশী কেউ কেউ ৪০% থেকে শুরু করে ৭০% পর্যন্ত নির্ভরশীল।

রুবলে ব্যবসাঃ

শুধুমাত্র হাঙ্গেরী ছাড়া প্রাথমিকভাবে কেহই রাশিয়ার এই নতুন নির্দেশ মেনে নিতে রাজী হয়নি। তারা ইউরো বা ডলারেই পেমেন্ট করবে বলে রাশিয়াকে ফের জানিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে-দোকানীর জিনিষ যদি দোকানীর আইনে কেউ না নিতে পারে, তাতে খদ্দেরেরই ক্ষতি। হয় দোকানীর নিয়মে পন্য নাও, না হয় যাও। আর ঠিক এটাই হয়েছে। প্রথমে রাশিয়া পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ার গ্যাসলাইন বন্ধ করে দিয়েছে। পোল্যান্ড খুব হিম্মতের সাথে জানিয়ে দিয়েছে-রাশিয়ার গ্যাস ছাড়াও তারা চলতে পারবে কারন তাদের রিজার্ভ আছে প্রায় ৭৫%। আমার মাথায় আসে না, এই রিজার্ভ কিন্তু ন্যাচারাল সোর্স থেকে রিজার্ভ নয়, এটা রাশিয়া থেকেই কেনা অতিরিক্ত গ্যাস। এটাতো একসময় শেষ হবেই? তখন পোল্যান্ড কি করবে? পোল্যান্ড বলছে-সে জার্মানীর থেকে গ্যাস নিবে। তাহলে জার্মানীর গ্যাস থাকতে হবে নিশ্চয়ই! অথচ জার্মানী নিজেই রাশিয়া এবং স্পেন থেকে গ্যাস কিনে। এদিকে জার্মানীও রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং ইউরো/ডলার ছাড়া তারাও রাশিয়াকে রুবলে পেমেন্ট করবে না বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে অনেকদিন ঘুমিয়ে থাকার পর স্পেন হটাত ঘুম থেকে জেগে বলে বসলো যে, জার্মানী যদি পোল্যান্ডকে গ্যাস সরবরাহ করে, তাহলে স্পেন জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। কেমন চক্কর!!

যাই হোক যেটা বলছিলাম-

রাশিয়ার কঠিন হুশিয়ারীতে পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ার গ্যাসলাইন বন্ধ করার কারনে বাকী ইউরোপিয়ানদের একটু টনক নড়েছে যে, গ্যাস তো লাগবেই, গ্যাস ছাড়া তো আর রুম হিটিং হবে না, কলকারখানা চলবে না, সব অচল হয়ে যাবে, ইন্ডাস্ট্রিজ বন্ধ হয়ে যাবে ইত্যাদি। কিন্তু উলটা মন্তব্য করতেও দ্বিধা করেনি ইউরোপ। তারা বলেছে-রাশিয়া গ্যাসের মাধ্যমে ইউরোপকে ব্ল্যাকমেইল করছে। আজব ব্যাপার হচ্ছে-একদিকে ইউরোপ রাশিয়ার সবকিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যে, কেউ যেনো রাশিয়া থেকে কিছুই না নেয়। একেবারে এক ঘরে করতে চেয়েছে। এখন আবার যখন রাশিয়া নিজেই সেই  সাপ্লাই ইউরোপে বন্ধ করে দিলো এবং ইউরোপের কথাতেই রাশিয়া একঘরে হয়ে থাকতে চাইলো যে, যেহেতু কেউ আমার পন্য নিবে না, তাই আমিও বন্ধই করে দিলাম, তখন আবার ইউরোপ বলছে, এটা কেমন কথা? আমরা নিষেধাজ্ঞা দিবো ঠিকই, কিন্তু তুমি আমাদেরকে তেল গ্যাস সব দিবা কিন্তু ফ্রিতে। কারন আমরা ইউরো/ডলারে দাম দেবো আর সেটা পশ্চিমারা তাদের ব্যাংক সিস্টেমে আটকে দিবে। আমাদের টাকা আমাদের কাছেই রয়ে গেলো, আবার পন্যও ফ্রিতে পাইলাম!!

আহাম্মকের মতো মনে হয়েছে আমার কাছে এই সিন্ডিকেটিজমটা। সত্তোর্ধ বয়সী প্রায় ২৪ বছর যাবত একাধারে রাষ্ট্রনায়কের কাছে এসব একেবারে হাস্যকর মনে হবার কথা না? তাই পুতিন স্যাম্পল হিসাবে আপাতত পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়ার গ্যাসলাইন বন্ধ করে দিলেন। ঠেলার নাম বাবাজি এটা সবাই জানে, ফলে এবার দেশের অবস্থা বেগতিক দেখে প্রথমে ইউরোপের ৪টি দেশ ইতিমধ্যে রাশিয়ার সাথে রুবলে পেমেন্টের জন্য একাউন্ট খুলতে রাজি হয়ে গেলো এবং তারা পেমেন্টও করে দিলো।  তাহলে বাকী দেশগুলি এখন কি করবে?

ইউরোপের জন্য কি অপশন খোলাঃ

ইউরোপের জন্য এখন দুটু অপশন খোলা-(ক) হয় রাশিয়ার শর্ত মেনে নিয়ে রুবলের মাধ্যমে গ্যাস নেওয়া অথবা (খ) রাশিয়ার গ্যাসের উপর বিকল্প তৈরী করে রাশিয়ার গ্যাস না নেয়া এবং নিষেধাজ্ঞা জারী রাখা।

জার্মানীর চ্যান্সেলর উলফ সোলজ রাশিয়ার এই নতুন নির্দেশনায় খুবই ক্ষিপ্ততার সাথে রাশিয়ার শর্ত নাকচ করে দিয়ে ২৯ মার্চ বলেছিলো যে, কোনো অবস্থাতেই তারা গ্যাস কন্ট্রাক্টের বাইরে অর্থাৎ হয় ইউরো না হয় ডলারে পেমেন্ট, অন্য কোনো কারেন্সিতে জার্মানী যাবে না। আজ প্রায় ৩০ দিন পর জার্মানীর একমাত্র গ্যাস ক্রেতাকোম্পানি UNIPER পুতিনের শর্ত মেনে নিয়ে রুবলের মাধ্যমেই এখন গ্যাস ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অষ্টিন কোম্পানি O&V, ইতালীর ANI এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশের গ্যাস সরবরাহ কোম্পানীগুলিও একইভাবে গ্যাজপ্রোম ব্যাংকে তাদের রুবলের একাউন্ট খুলছে।

নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা কিঃ

এখন প্রশ্ন হচ্ছে-রাশিয়ার উপর পশ্চিমা এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকা সত্তেও, সুইফট থেকে রাশিয়াকে আউট করে দিয়েও আবার সেই রাশিয়া থেকেই রাশিয়ার শর্তে গ্যাস কেনায় পশ্চিমাদের কিংবা ইউরোপের কি সম্মান বজায় থাকলো? নিষেধাজ্ঞা কি তাহলে কার্যকরী হলো?। এর ব্যাখ্যা তাহলে কি?

রাশিয়া থেকে গ্যাস কেনা আর রাশিয়া থেকে পুতিনের শর্তে গ্যাস কেনা এক নয়। যদি এসব কোম্পানীগুলি পশ্চিমা এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়া থেকে গ্যাস ক্রয় করে, তাহলে এসব কোম্পানীকে শাস্তির মুখে পড়ার কথা না?  কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে-ব্রাসেলস এখন পুরুই নিশ্চুপ। তাহলে ব্রাসেলসের এই চুপ থাকার কারন কি? এরও একটা ব্যাখ্যা আছে যা আমাদের মতো আমজনতা জানেই না। আর সেটা হচ্ছে-নিষেধাজ্ঞার শর্তের মধ্যে একটা ছোট ফাক রাখা হয়েছিলো। আর সেটা কি?

কিছুদিন আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সব সরবরাহকারীদের জন্য একটা গাইডবুক দিয়েছে। সেখানে তিনটা গাইডলাইন দেয়া হয়েছেঃ

(1)        Uphold EU sanction

(2)        Abide by Putin’s Decree

(3)        Secure Natural gas for Europe.

আসলে এই গাইডলাইনে উভয়পক্ষের জন্য Win-Win Situation রাখা হয়েছে। আর ঠিক এই গাইডলাইনের ২ নং শর্তের কারনেই ইউরোপের গ্যাস কোম্পানীগুলির বিরুদ্ধে ইউরোপ বা পশ্চিমারা কোনো শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে পারবে না বা পারতে চায় না। তারা সবাই সানন্দে এখন দুটু করে একাউন্ট খুলছে গাজপ্রোম ব্যাংকে। প্রথম একাউন্ট ইউরো বা ডলারে, অন্যটি রুবলে। একই ব্যাংকে, গাজপ্রোম ব্যাংক।

লেনদেনটা কিভাবে হবেঃ

তাহলে এই লেনদেনটা কিভাবে হবে? সেটাও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলে দিয়েছে। প্রথমে ক্রেতা তার পেমেন্ট ইউরো বা ডলারে জমা করবে গাজপ্রোম ডলার/ইউরো ব্যাংক একাউন্টে। গাজপ্রোম ব্যাংক অতঃপর সেই ইউরো বা ডলার রুবলে কনভার্ট করে তাদের পেমেন্ট নিয়ে নিবে। কিন্তু এখানে আরেকটা জটিল সমস্যা আছে যে, যেহেতু ইউরোপ এবং পশ্চিমারা রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংককে সুইফট থেকে বের করে দিয়েছে, ফলে গাজপ্রোম ব্যংক কিছুতেই গ্যাসের পেমেন্ট ইউরো বা ডলার থেকে রুবলে কনভার্ট করতে পারবে না। তাহলে উপায়?

ঠিক এখানেও ইউরোপিয়ানরা তাদের সরবরাহকারীদেরকে গাইডলাইন দিয়ে দিয়েছে এভাবে-

(এখানে একটা কথা না বললেই নয়। আমরা যারা ব্যবসা করি তারা এটা খুব ভাল করে জানি কিন্তু অন্যান্য ব্যক্তিরা যারা ব্যংকিং সেক্টরে এলসির (LC: Letter of Credit)  সাথে জড়িত নন, তাদের বুঝার জন্য বলছি যে, সাধারনত ইম্পোর্ট এক্সপোর্টে যখনই কোনো পেমেন্ট বেনিফিশিয়ারী ব্যাংক রিসিভড হয়, তখনই পেমেন্টের কাজ শেষ হয়ে যায় বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে যতোক্ষন না পর্যন্ত ইউরো বা ডলার রাশিয়ার রুবলে কনভার্ট না হচ্ছে ততক্ষন পর্যন্ত পেমেন্ট রিসিভড হয়ে বলে ধরে নেয়া যাবে না। আর এটার জন্য শুধুমাত্র ইন্টারকারেন্সী চেঞ্জ পালিত হবে। তার মানে কি? তারমানে গ্যাজপ্রোম ব্যংক তাদেরই গ্যাজ প্রোম ডলার/ইউরো একাউন্টে রুবল বিক্রি করবে এবং রুবলের দামের উপর ইউরো বা ডলার উঠানামা করবে। ইউরো বা ডলারের মানের উপর রুবলের মান উঠা নামা করবে না। খুবই বিপদজনক অবস্থায় আছে এখন ইউরো এবং ডলার। আগে ইউরো বা ডলারের মাপে রুবল উঠানামা করতো, এবার ডলার/ইউরো রুবলের মাপে উঠা নামা করবে।

তাহলে রুবল কি দূর্বল হতে যাচ্ছে নাকি সবলঃ

তাহলে আরেক প্রশ্ন জেগে উঠে- রুবলকে শক্তিশালী করা নাকি রুবলকে দূর্বল করলে ডলার বা ইউরোর লাভ? যদি পশ্চিমারা ১ ডলার সমান ২০০ রুবল করতে চায়, করুক, তাহলে যখন ইউরোপিয়ানরা রুবলে গ্যাসপেমেন্ট করবে তখন ডলার বা ইউরোর সমান পরিমান রুবল দিতে হলে ওদেরকে অনেক ডলার বা ইউরো খরচ করতে হবে। আর যদি ডলার/ইউরোর মান সমান সমানে থাকে তাহলে ইউরো/ডলার কম খরচ করতে হবে। আর ঠিক একারনেই এবার পশ্চিমা এবং ইউরোপিয়ানরা রুবলের মান শক্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু বিজ্ঞ পুটিন বলছে, তোমরা আমার রুবলের দাম আরো কমাইয়া দাও, আমার কোনো সমস্যা নাই।

ইউরোপ এর বন্ডেজের ভীত তাহলে কই যাবেঃ

ইউরোপের আসলে এখন কিছুই করার নাই। In fact, for Europe, its a choice between Air Conditiong and Peace. জার্মানী পরিষ্কারভাবে Air Conditioning বেছে নেয়ার চেষ্টা করেছিলো ইতালীর মতো। ইতালী তার জনগনকে এসি চালানোর ক্ষেত্রে একটা তাপমাত্রা নির্ধারন করে দিয়েছে। কিন্তু সেটা কয়দিন?

 মূল কথায় আসি। ইউরোপ এবং পশ্চিমাদের দ্বারা আরোপিত নিষেধাজ্ঞার মুল লক্ষ্য ছিলো রাশিয়াকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পংগু করে ফেলা। কিন্তু সেটা কি হয়েছে? সেটা কিন্তু হয় নাই। ইউরোপ নিজেই রাশিয়াকে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ মিলিয়ন ইউরো পে করে থাকে এই গ্যাসের জন্য। এরমানে ইউরোপ নিজেই পুতিনের ওয়ারমেশিনকে ফান্ডিং করছে। জার্মান কিংবা ইউরোপিয়ান কোম্পানী রাশিয়াকে মিলিয়ন মিলিয়ন ইউরো/ডলার দিচ্ছে, রাশিয়া সেই ইউরো/ডলার দিয়ে তার যুদ্ধের খরচ মিটিয়ে ইউক্রেনকে ধংশ করছে। আর ইউক্রেন আবার জার্মানী কিংবা ইউরোপীয়া ইউনিয়নের দেশগুলি থেকেই অস্ত্র সরবরাহ পাচ্ছে। তার মানে কি দাড়ালো?

Moral of the Story is: All the lectures and principles are farse and what matters in the end is only own interest.

  

২৯/৪/২০২২-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাচার 

অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানগন (বিশেষ করে ইইউ, ইউকে, ফ্রান্স, জার্মানী অথবা ইউএস ইত্যাদি) তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা হয়তো একটা টেনিউর অথবা সর্বোচ্চ দুইটা টেনিউর। অনেকের আবার ২য় টেনিউরে রাষ্ট্রপ্রধান হবেন কিনা সে চিন্তায় সারাক্ষন কি কি করা যায়, কিভাবে কি পলিশি করলে ভোট বেশী পাওয়া যাবে তার মহাচিন্তায় মহাপরিকল্পনা করতে থাকেন। গ্লোবাল রাজনীতির থেকে নিজের জন্য রাজনীতিই বেশী করেন। অথচ রাশিয়ার পুতিন গত ২২ বছর যাবত প্রেসিডেন্ট হিসাবে তো বহাল আছেনই, তার উপর আগামী আরো ১৪ বছর তার প্রেসিডেন্সীর নিশ্চয়তাও রয়েছে। তারমানে ৩৬ বছরের একনাগাড়ের প্রেসিডেন্ট মিঃ পুতিন সাহেব। এমন একটা ঝানু রাজনীতিবিদ কি একেবারে কোনো হোমওয়ার্ক ছাড়া একা সারা দুনিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নামবে, এটা কি বিশ্বাস করা যায়? যত যাইই হোক, পুতিন এই ইউক্রেন যুদ্ধে হারার জন্য নামে নি, আর যুসশটা কতদিন চালাবে এটার সম্পুর্ন কন্ট্রোল আসলে পুতিনের হাতেই। আরো কিছু মাহাত্য তো আছেই।

ইউক্রেন আক্রমনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করিনা। কিন্তু জুলুমের রাজত্তে যখন কেউ না কেউ অধিক শক্তিশালী রাজ্য দারা প্রতিনিয়ত শোষিত হয়, তখন শোষকদের উপর কেউ জুলুম করলে সেটা অনেকটা মনের অজান্তেই সমর্থন পাওয়া শুরু করে যদিও আক্ষরিক অর্থে তা সমর্থনযোগ্য নয়। রাশিয়াকে সাপোর্ট করার পিছনে বেশীরভাগ মানুষের মনের ভাবটা ঠিক এইরকম। যাই হোক, ইউক্রেন যুদ্ধের কিছু আভাষ আমি পূর্বেই লিখেছিলাম, এবার মনে হচ্ছে সেগুলির বেশ কিছু নিদর্শন বাস্তবে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। সেই পরিবর্তনগুলি কিঃ

ক।       ইউনিপোলার ওয়ার্ড অর্ডার পরিবর্তিত হচ্ছে। এখন হয়তো ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড চলছে বলে বলা যায়।  

খ।        ডলার কারেন্সীর একচ্ছত্র রাজত্ব খুব অচীরেই শেষ হতে যাচ্ছে। পেট্রোডলারের যে রাজনীতি সারা দুনিয়ায় একচ্ছত্র দাদাগিরি চালিয়ে একটা ভারসাম্যহীন      অর্থনীতির বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো, সেটার প্রায় বিলুপ্তির সূচনা শুরু হয়ে গেছে।

গ।        মানি সিস্টেমের যে “সুইফট ব্যবস্থাপনা” সারাটা দুনিয়ায় প্রতিটি দেশকে জালের মতো একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সবাইকে আটকে ফেলেছিলো, সেটা থেকেও দেশগুলি বিকল্প পথ পেয়ে যাচ্ছে।

ঘ।        পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনৈতিক বলয়ে যতটা আঘাত হানার কথা ভাবা হয়েছিলো, ততোটা কিন্তু আঘাত হানতে পারেনি। রুবল সেই ধাক্কাটা প্রায় কাটিয়ে উঠে যাচ্ছে। ফলে রুবল একটা শক্তিশালী কারেন্সী হিসাবে আবির্ভুত হতে যাচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল কি ?

ক।       আমেরিকার প্রাথমিক ইনিশিয়াটিভে ন্যাটো যতোটা তাদের মধ্যে হুজুগে পড়ে বন্ডেড হয়েছিলো, এখন সেই ন্যাটো সদস্যদের মধ্যেই বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। কারন প্রতিটি দেশের চাহিদা আলাদা আলাদা। একটি দেশের মুলনীতি, মুল চাহিদা, মুল কাঠামোর সাথে অন্য যে কোনো দেশের মুলনীতি, মুল চাহিদা বা মুল কাঠামোর মধ্যে তফাত থাকেই। আর সেই তফাতের কারনেই একেক দেশের ভূমিকা একেক পরিস্থিতিতে একেক রকম হবে। প্রাথমিক হুজুগের বলয় থেকে বেরিয়ে যখন বাস্তবতায় দেশগুলি চোখ খুল্লো, তখন দেখা গেলো, নিজের দেশের জনগনের জন্য প্রয়োজনীয় তেল, গ্যাস, খাবার, কিংবা মৌলিক চাহিদার যোগানের জন্য যা দরকার আর যেখানে এটা আছে সেটার উপরেই তারা পুর্বান্নে নিষধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। আর সেই নিষ্রধাজ্ঞা যেনো এখন বুমেরাং হয়ে নিজেদেরকে আঘাত করছে। এর ফলে যা হচ্ছে- ন্যাটোর মধ্যেই একে অপরের উপর আস্থা কমে যাচ্ছে। এরা এখন আর আগের মতো দল বেধে মিটিং, সেমিনার, কিংবা দ্বি পাক্ষীয়, তৃপাক্ষীয় ক্লোজডোর বৈঠক করছে না। ভাটা পড়েছে সব কিছুতেই। এই অনাস্থার অনুপাতটা আরো বাড়বে দিনে দিনে।

খ।        জেলেনেস্কী বারবার সারা দুনিয়াকে রাশিয়ার তেল, গ্যাস ইত্যাদি না নিতে অনুরোধ করছে, নিষেধাজ্ঞায় রাখতে বলছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, জেলেনেস্কির এতো আকুতি মিনতি করে এই নিষেধাজ্ঞা পালনে কাউকে এতো অনুরোধ করার দরকার ছিলো না যদি সে নিজেই ইউক্রেনের উপর দিয়ে রাশিয়ার পাইপলাইন গুলিকে অকেজো করে দিতো। পাইপলাইনই যদি সচল না থাকে, নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও কেউ রাশিয়া থেকে তেল/গ্যাস নিতে পারতো না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-জেলেনেস্কী তাহলে ইউক্রেনের উপর দিয়ে প্রবাহিত তেল/গ্যাস লাইন/পাইপ লাইন ধংশ করে দিলো না কেনো? এর কারন একটাই-যদি জেলেনেস্কী এই কাজটা করতো, তাহলে ইইউ নিজেই ইউক্রেনকে ধংশ করে দিতো। আর ২য় কারনটা হচ্ছে, জেলেনেস্কী নিজেও ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক লোকসানে পড়ত। তাই জেলেনেস্কী কোনোটাই করে নাই, এবং ইইউ নিজেও ইউক্রেনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রাশিয়ান পাইপ লাইনকে সবসময় সুরক্ষা দিয়ে সাপ্লাই সচল রেখেছে।

গ।         রাশিয়া কিন্তু তার অস্ত্র ভান্ডারের কিছুই আপাতত ব্যবহার করে নাই। বিশেষ করে আধুনিক যন্ত্রপাতী। যা করেছে সেটা নেহায়েতই একটা অবসলিট এবং পুরানো দিনের জাঙ্ক মেশিনারিজ দিয়ে। রাশিয়া এই ইউক্রেন যুদ্ধটা এখনই শেষ করতে চাইবে না। কারনঃ

(১)        রাশিয়া পেট্রোডলার কারেন্সী শেষ করে নিজেদের কারেন্সী বা চায়নিজ-রুবল-রুপি ইত্যাদির সমন্নয়ে একটা কারেন্সী প্রতিস্থাপিত না করা অবধি পুতিন ইউক্রেনের যুদ্ধটা চালিয়ে যাবে। আর এর মধ্যে দেয়া তার সেই সব পয়েন্ট তো আছেই যা সে উল্লেখ করেছে- নিউ নাৎসি, মিলিটারাইজেশন ইত্যাদি।

(২)        আগামী শীত হবে ইইউর জন্য একটা বিপর্যয়। কারন উক্ত শীতে রাশিয়ার তেল এবং গ্যাস, গম, যব, সিরিয়াল ইত্যাদির অভাবে ইইউর উপর একটা বিপর্যয় নেমে আসবে। তখন হয় ইইউ রুবলেই ট্রেড করবে, অথবা জনগন সাফার করবে। তাতে প্রতিটি দেশে বিক্ষোভ হবার সম্ভাবনা এবং তখন নেতারা নিজেদের গদি নিয়ে হুমকীর মধ্যে থাকবেন।

(৩)       এমতাবস্থায় সবাই ইউক্রেনকেই তাদের জীবন বিপর্য্যের কারন হিসাবে দায়ী করবে। ভুলে যাবে মানবতা, রিফুজিরাও সেই দেশ থেকে বিতাড়িত হবার সম্ভাবনা থাকবে। জেলেনেস্কী আত্তগোপনে চলে যাবেন, রাশিয়া তার নিজের পছন্দমত সরকার প্রতিস্থাপন করবেন। সেই সরকার এসে হয়তো রাশিয়াকে আবার আগের মতো সব কিছু করতে বলবেন যাতে ইইউর সাথে আবার সাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।   

কে কি ভুল করছে বলে মনে হয়ঃ

ক।       ওয়ার্শো ভেংগে যাবার পরে আসলে রাশিয়া কখনোই ইইউ অথবা আমেরিকার শত্রু ছিলো না। রাশিয়া অনেকটা ইউরোপের ধাচেই এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু আমেরিকা সর্বদা রাশিয়াকে তার চিরশত্রুই মনে করে। আসলে আমেরিকার শত্রু চিনতেও ভুল হয়েছে। তার শত্রু চীন, রাশিয়া নয়। তাই রাশিয়াকে ওর দলে নিয়ে চীনকে মোকাবেলা করা উচিত ছিলো আমেরিকার। ইউক্রেনকে দিয়ে অযথা রাশিয়ার গলায় পারা দেয়া আমেরিকার ঠিক হয় নাই। এতে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে চীন। আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আমেরিকা এবং ইইউ ।

খ।        রাশিয়া যখন ন্যাটোর সদস্যপদ চেয়েছিলো, ন্যাটোর উচিত ছিলো রাশিয়াকে সদস্যপদ দেয়া। যদি সেই সদস্যপদ দিতো, তাহলে আজকে ইউরোপ থাকতো সবচেয়ে নিরাপদে, চীন থাকতো সবচেয়ে চাপে। এশিয়াও থাকতো চাপের মধ্যে। রাশিয়াকে ইচ্ছে করেই আমেরিকা সদস্যপদ দিতে চায় নাই। এটা একটা মারাত্তক ভুল ছিলো।

গ।        ইউক্রেন যুদ্ধে জেলেনেস্কী আসলে ইউক্রেনের মংগল কামনা করে নাই। যখন যুদ্ধশেষে ইউক্রেনের চিন্তাবিদেরা এই যুদ্ধের আগাগোরা নিয়ে বিশ্লেষন করবেন, তখন দেখা আযবে যে, জেলেনেস্কী আসলে ছিলো রাজাকার প্রেসিডেন্ট। আজকে তাকে ;হিরো’ আখ্যায়িত করলেও সব বিবেচনা করে একটা সময় আসবে যখন ইউক্রেনের মানুষেরা ‘জেলেনেস্কী’ নামটা ‘মীর জাফর’ নামের মতো হয়তো ব্যবহার করবে।

18/03/2022-রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব  

যুদ্ধ কোনো কালেই কারো জন্য ভালো সংবাদ বয়ে আনে নাই। দুটু মোরগের মধ্যে ফাইটিং এ ও দুটু মোরগই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আর যখন দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তখন দেশের মানুষের সাথে অন্যান্য প্রতিবেশী যারা যুদ্ধেই নেই, তারাও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই তথ্যটা জানে না এমন নয়, তারপরেও যুদ্ধ হয়। এর একটাই কারন যে, সব প্রতিকুল আবহাওয়ায় ক্ষতির সাথে কিছু মানুষের ব্যবসা, আর সেই ব্যবসায় লাভ ও হয়। হতে পারে এই লাভটা অন্য এমন মানুষের যারা মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধটা চালিয়ে যাক এটাই দোয়া করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার সাথে একটা অসম যুদ্ধ। এটা হবারই কথা না। কিন্তু তারপরেও হয়েছে এবং হচ্ছে। তাহলে এখানে কে ফাদে পড়লো, কাকে কে ফাদে ফেল্লো, এটা জানা আরো বেশী দরকার যাতে যুগে যুগে এই ফাদ পাতা ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে-ইতিহাস থেকে কেউ কখনো শিক্ষা নেয় না।

ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে অনেক গুলি বিশ্লেষন বেরিয়ে আসছে ক্রমাগত। আজ আমি একটা নিয়ে আলাপ করার চেষ্টা করছি। যার নাম ‘নিষেধাজ্ঞা’।

রাশিয়ার উপর পুরু বিশ্ব প্রায় হাজার খানেকের বেশী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা নিয়েই আজকের আলাপ।

২৪ শে ফেব্রুয়ারী তে যখন ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন আক্রমন করে, পুতিন কি এসবের ব্যাপারে হোম ওয়ার্ক করে নাই? রনক্ষেত্র এক জিনিষ আর সারা দেশের অর্থনইতিক বিষয়টা আরেক জিনিষ। যদি পুতিন সেই রনক্ষেত্রের বাইরে দেশের অর্থনইতিক ব্যাপারটা নিয়ে হোম ওয়ার্ক না করে থাকেন, তাহলে আমি বল্বো এটা হয় আমাদের ভুল ধারনা, না হয় পুতিন বিচক্ষন নয়। কিন্তু ২২ বছর যাবত একটা রাষ্ট্রপ্রধান তাও আবার সুপার পাওয়ারের মতো দেশ রাশিয়ার, কেজিবির প্রধান, বয়ষ্ক ব্যক্তির পক্ষে এগুলি নিশ্চয় সে ভেবেছে। তাহলে এবার আসি, পুতিন এই অর্থনইতিক নিষেধাজ্ঞা কিভাবে মোকাবেলা করছে।

দেশের অর্থনীতিকে স্টাবল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

(ক)       রাশিয়াকে পশ্চিমারা সুইফট নামক  গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল সিস্টেম থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মার্কেটে লেন দেনে বিশাল অসুবিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ফলে রাশিয়া তাঁর নিজস্ব মীর নামক সিস্টেমের মাধ্যমে ইলেল্ট্রনিক ট্রান্সফার, বিদেশী ব্যংকের সাথে লেন দেন, মাষ্টার কার্দের বিকল্প মিরের মাধ্যমে লেন দেনের বিকল্প ব্যবস্থা করেছে। এটা হয়তো সারা বিশ্ব জুড়ে এখনই কাজ করতে সক্ষম হবে না কিন্তু প্রয়োজনীয় লেন দেনে কোনো অসুবিধা নাই। একটা সময় আসবে যখন এই পশ্চিমাদের একচ্ছত্র সুইফট এর বিকল্প হিসাবে একদিন মীর দাঁড়িয়ে গেলে, রাশিয়ার অর্থনইতিক নিষেধাজ্ঞা অচিরেই বেশ আবার পুনর্জীবন পেয়ে যাবে।

(খ)        পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা হচ্ছে রাশিয়ার রিজার্ভে যে ইউ এস ডলার এবং ইউরো ছিলো, সেতার উপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা। তাঁর মানে ডলার এবং ইউরো রাশিয়ার জন্য একেবারেই এখন নিরাপদ না। এর জন্যে রাশিয়া যা করেছে সেতা হলো- রাশিয়া এখন চায়নার মতো নিজস্ব কারেন্সীর মাধ্যমে বিদেশীদের সাথে ট্রেড করা শুরু করেছে। রাশিয়ার সাথে চায়নার মধ্যে রুবল-ইয়েন প্রথা চালু হয়েছে ইতিমধ্যে। ন্তুরষ্ক রুবলের মাধ্যমে রাশিয়ার সাথে ট্রেড লেন দেনে সম্মত হয়েছে। ভারতের সাথেও রুবল-রুপীর একটা সমঝোতা  হয়েছে তেল বিষয়ক লেন দেনে। এসব করার কারনে পুরু দুনিয়ায় যেখানে ডলার- ইউরোওই ছিলো একমাত্র ব্যবসায়ীক লেন দেনের কারেন্সী, সেটা ধীরে ধীরে কমে আসবে।

(গ)       আমদানী কারকদেরকে ডলারের বিপরীতে রুবলে পেমেন্ট প্রদানের নীতিমালায় রাশিয়া একটা প্যাকেজ ঘোষনা করেছে যে, বিদেশী সবার সাথে রাশিয়া ৮০% ডলার রেটে রুবলের পরিবর্তনে তাঁদের আমদানী দ্রব্যের দাম পরিশোধ করা। এতে যা হবে সেটা হলো- রুবল ধীরে ধীরে আন্ত্রজাতিক মুদায় পরিনত হবে এবং আমদানীকারকেরাও অনেক কিছু ২০% ছাড়ে মালামাল আমদানী করতে গেলে লাভবান হবে। তাঁর মানে এই যে, ডলারের বাজার একটা বিশাল এরিয়ায় অকেজো হয়ে যাবে।

(ঘ)        রাশিয়া ২০২২ সাল অবধি ইউরেসিয়া ইকোনোমিক ইউনিয়ন ভুক্ত দেশে সমস্ত পন্য রপানীতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আর্মেনিয়া, বেলারুশ, কাজাকিস্থান, কিরগিস্তান ইত্যাদি। এর মাধ্যমে রাশিয়া তাঁর নিজের দেশের লোকদের নিত্যদিনের পন্যকে নিরাপদ করে ফেললেন। বাইরের লোকদের জন্য এসব নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য এখন অসুবিধায় পড়বে। তাঁদের জন্য পন্যের দাম হবে আকাশ্চুম্বি। তাতে রাশিয়ার কিছুই যায় আসে না। কারন রাশিয়া আগে নিজের দেশের মানুষকে ভোগান্তি থেকে বাচাবে।

(চ)        রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে ২০% করেছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার রুবলের দরপতন হ ওয়াতেও সাধারন জনগন রুবলের দরপতনে কিছুটা হলেও ইনফ্লেশন থেকে মুক্তি পাবে। প্রাইস স্ট্যাবিলিটি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ এই পদিক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এখানে একটা ব্যাপার জানা দরকার যে, সুদের হার বাড়ালে কিভাবে প্রাইস স্ট্যাবিলিটি ঠিক থাকে। সেটা একটা বিশাল অংকের হিসাব, তাই বিস্তারীত আলাপ করা হলো না। তবে জেনে রাখা ভালো যে, সুদের হার বাড়িয়ে প্রাইস স্ট্যাবিলিটি একটা সাময়িক পদক্ষেপ মাত্র। রাশিয়া এখানেই থেমে থাকেনি। ক্রেডিট ইন্সটিটুশন গুলিকে রাশিয়ার সেন্ট্রাল ব্যাংক নতুন লোনে কোনো ইন্টারেস্ট নেবে না কিংবা কেউ যদি ডিফল্টার হয় রুবলের দরপতনে, তাদেরকে ডিফল্টার হিসাবে ধরা হবে না যতোক্ষন রুবল স্ট্যাবল না হয়। এর ফলে দেখা যাচ্ছে ২৪ ফেব্রুয়ারিতে যখন ১ ডলারের দাম ছিলো ১২০ রুবল, এখন সেটা ১০০ রুবলের নীচে চলে এসছে।

(ছ)        আন্তর্জাতিক লোনের ব্যাপারে রাশিয়ার দুটু পেমেন্ট সিডিউল ছিলো গত ১৫ মার্চে। কিন্তু ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক রাশিয়ার ডলার রিজার্ভ ব্লক করাতে সে ১১৭ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করতে পারছিলো না। যদি রাশিয়া এই পেমেন্ট দুটু রিপেমেন্ট করতে না পারতো, তাহলে রাশিয়া আন্তর্জাতিকভাবে ব্যনাগকিং সেক্টরে একটা ডিফল্ট করে ফেলতে পারতো। একবার কোনো কোম্পানী বা দেশ যখন কোনো একটা জায়গায় ফল্ট করে, তখন তাঁর সি আই বি ও লাল হয়ে যায়। আর সি আই বি লাল হলে অন্য কোনো ব্যাংক বা দেশ তাঁর সাথে আর লেন দেন করতে পারে না। কিন্তু রাশিয়া তাঁর রিজার্ভ ফান্ড যেটা ডলার বা ইউরোতে ছিলো, ইতিমধ্যে বাজার রেটে ১১৭ মিলিয়ন ডলারের সমান রুবলে পেমেন্ট রিলিজ করার জন্য অফিশিয়ালী আদেশ দিয়ে দিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে। এখন যদি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সেটা রুবল কারেন্সীতে পেমেন্ট না করে, তাহলে এটার দায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের, রাশিয়ার না।

(জ)       রাশিয়া বিনা মুল্যে তাঁর নাগরিকদেরকে অনেক সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার করেছে এবং দেয়া শুরু করেছে। তাঁর মধ্যে জরুরী বিষয়গুলি হচ্ছে- ছাত্রদের টিউশন ফি, পারিবারিক ভরন পোষনের খরচ, সিনিয়ার সিটিজেন্দেরকে অতিরিক্ত রুবল প্রদান, চাকুরীজীবিদের বেতন বৃদ্ধি, পেন শনের টাকা বৃদ্ধি, পাবলিক সেক্টরে আরো অনেক কিছুর ছাড়।

(ট)        স্মল এবং মিডিয়াম এন্টারপ্রিনিউরদেরকে রাশিয়া সরকার প্রনোদোনা প্যাকেজ দেয়া হচ্ছে যাতে তারা এই রুবল দরপতনে তাঁদের ব্যবসা আগের মতো করতে পারে। সাবসিডিয়ারী, ক্রেডিট ফেসিলিটি সহ সব ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়া ইতিমধ্যে ব্যবস্থা করেছে।

(ঠ)       নিষেধাজ্ঞার কারনে কোনো ব্যবসায়ী যেনো তাঁদের উতপাদিত দ্রব্য উতপন্নে কম না করে তাঁর জন্যে রাশিয়া সরকার যা যা লাগে তাঁর সব ব্যবস্থা করবে বলে আশহাশ দিয়েছে। আর সেসব পন্য আপাতত ডমেষ্টিক বাজারেই ব্যবহারের ঘোষনা দিয়ে কিন্তু বাইরে রপ্তানী করতে নিষেধ আরোপন করেছে। তাতে দেশের ভিতরে দ্রব্যমুল্য একটা নিয়ন্ত্রনে থাকবে এবং বহির্বিশহে অন্যরা সাফার করবে। এটাই রাশিয়ার পরিকল্পনা। এর মধ্যে রয়েছে চিনি, গ্যাসোলিন, মেটাল, গম, ডিজেল, এবং অন্যান্য রপ্তানীমুলক দ্রব্য।

(ডঃ)     বিদেশী কোম্পানীগুলি যারা রাশিয়াতে ব্যবসা বন্ধ করার জন্য বলেছে, রাশিয়া তাঁর ব্যবসায়ীদেরকে বলেছেন যে, তাঁর নিজের দেশের নাগরিকগন যেনো সেসব ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান নিজেরা চালায়। বিদেশীদের এই ব্যবসাগুলি চালাইতে যা অর্থের জোগান লাগবে, সেটা রাশিয়ান সরকার বহন করবে। এর সাথে রাশিয়ার সরকার এটাও বলেছে, যদি কোনো বিদেশী কোম্পানী রাশিয়ায় এখনো ব্যবসা করতে চায়, তাহলে তারাও একটা ছাড়ে করতে পারে কিন্তু যদি রাজী না হয়, তাহলে এসব কোম্পানীগুলি রাশিয়ার তরফ থেকে রাষ্ট্রীয়করন করে রাশিয়ানরাই চালাতে পারে। এদের মধ্যে রয়েছে- ম্যাডোন্যাল্ডস, ভক্স ওয়াগন, শেল, এপেল, মাইক্রোসফট, এইচ এন্ড এম, ইত্যাদি।

(ব)        চায়নার ইউনিপে রাশিয়ার সর্বত্র চালু করা যার মাধ্যমে মাষ্টার কার্ড, ভিসা কার্ডের ইফেক্ট কমে যায়। মীরের পাশাপাশি ইউনিপে দুটুই চালু থাকবে।

যে কোনো একটা নতুন সিস্টেম পুরুপুরী চালু হতে কিছুটা সময় লাগে। রাশিয়ার এসব বিকল্প যখন ধীরে ধীরে সফল হতে থাকবে, তখন বিশ্ব বাজারে যেটা হবে সেটা হলো- মাষ্টারকার্দের মতো কিংবা ভিসা কার্দের মতো সিস্টেম গুলি আর সার্বোজনীন থাকবে না। তারা বেশ বড় একটা বাজার হারাবে। এর সাথে রাশিয়ার মীর কিংবা চায়নার ইউনিপে নতুন করে একতা বিপ্লব দিবে।

বড় বড় কোম্পানীগুলি বিসশ বাজার থেকে অনেক গুটিয়ে আসবে, বাজার হারাবে। আমাদের দেশে এক সময় কে এফ সি, পিজা হাট একচ্ছত্র বাজার পেলেও এখন প্রচুর লোকাল পিজার বাজার ভর্তি যা অইসব বিদেশী দোকান গুলি থেকে অনেক সস্থা। হতে পারে মানের দিক দিয়ে হয়তো ততোটা নয়, কিন্তু তারপরেও অনেক সাধারন ক্লায়েন্ট লোকাল পিজা বাজারেরো ভীর কম না। এর মানে বেশ কিছু ক্লায়েন্ট হারানোর মতো।

রাশিয়ার র মেটারিয়াল অন্যান্য দেশে রপ্তানী না যাওয়াতে অইসব দেশের অনেক শিল্প মুখ থুবরে পড়ে যাবে। তেল, গ্যাসোলিন, গ্যাস, স্টীল, গম, বার্লি, চিনি, ইত্যাদির সল্পতার কারনে বিসশে একটা উর্ধগামী মুল্যের প্রভাব পড়বে। যা অন্যান্য দেশকেও বিপদেই ফেলবে। কিন্তু এর মধ্যে রাশিয়া ধীরে ধীরে সাবলম্বি হয়ে উঠবে।

এর অর্থ একটাই- অর্থনইতিক অবরোধে সবাই একইভাবে সাফার করবে, শুধু রাশিয়া একা নয়।

23/02/2022-২০০৩ সালের কিয়েভে

আমি ২০০৩ সালে ইউক্রেনের কিয়েভে বেড়াতে গিয়েছিলাম একবার। তখন আমি জর্জিয়ায় জাতিসঙ্ঘ মিশনে কর্মরত ছিলাম। ইউক্রেনের এক মেজরের বাসায় উরুগুয়ের এক পাইলটকে সাথে নিয়ে তাঁর বাসায় বেড়াতে গিয়ে কিয়েভ সম্পর্কে আমার ধারনা একেবারে পালটে গিয়েছিলো। মানুষগুলি খুবই শান্তপ্রিয় আর শহরটাও মানুষগুলির মতো একেবারে শান্ত। কোনো কোলাহল নাই, সবাই ব্যস্ত আর খুবই মিশুক। মাত্র সপ্তাহখানেক ছিলাম।

উরুগুয়ের ওই পাইলটের সাথে এখনো আমার যোগাযোগ থাকলেও ইউক্রেনের সেই মেজরের সাথে আমার যোগাযোগ নাই। গতকাল সেই ইউক্রেনের উপর রাশিয়া আক্রমন করেছে শুনে খুব কষ্ট লাগলো মনে। ক্রেমলিন দেখার খুব শখ ছিলো। আমি ক্রেমলিনেও ভিজিট করতে গিয়েছিলাম। যেহেতু মিলিটারী অবজারভার হিসাবে কর্মরত ছিলাম, ফলে আমার সাথে কর্মরত একজন রাশিয়ান আর্মি অফিসারের সহায়তায় আমরা ক্রেমলিনের কিছুটা অংশ আমি সেখানে ভিজিট করতে পেরেছিলাম। মনে মনে ভেবেছিলাম, কতই না শক্তিশালী এসব ক্রেমলিন। আজ যেনো এটাই মনে আসলো দ্বিতীয়বার।

বিশ্ব রাজনীতির অভ্যন্তরে অনেক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এজেন্ডা লুকিয়ে থাকে বিধায় আমরা যা নগ্ন চোখে দেখি সেটা আসলে সেটা না যেটা দেখি। তাঁর ভিতরে হয়তো লুকিয়ে থাকে আরো ‘গভীর কিছু’। কিন্তু এই ‘গভীর কিছুর’ দ্বারা সংঘটিত কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা পুরু বিশ্বকে অগোছালো করে ফেলে যদিও এই ‘গভীর কিছু সংঘটিত’ বিষয়ে অনেকেই জড়িত থাকেন না। ছোট বা বড় কোনো দেশই এর থেকে পরিত্রান পায় না। ছোয়া লাগেই। ইউক্রেনকে আক্রমন করে রাশিয়া কতটুকু উপকৃত হবে বা ইউক্রেন কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু আমাদের মতো দেশ যারা এর আশেপাশেও নাই তাঁদের কি কি হতে পারে?

আমাদের দেশ অনেকটাই আমদানী-রপ্তানী নির্ভর একটি দেশ। আর এই আমদানী-রপ্তানী বেশীরভাগ হয় ইউরোপের অনেকগুলি দেশের মধ্যে। ইউরোপে মোট ২৮ টি দেশ আলাদা আলাদা হলেও বাস্তবিক হচ্ছে এরা একটা গুচ্ছগ্রামের মতো। ফলে ইউরোপের একটি দেশের ভিসা পেলেই আমরা অনায়াসে অন্য দেশগুলি ভ্রমনের সুবিধা পাই। কারেন্সীও একটা ‘ইউরো’ যদিও সবার আলাদা আলাদা কারেন্সী আছে। ইউরোপের এই দেশ গুলি কোনো কোনো ন্যাচারাল সম্পদে বেশ উন্নত। ফলে একটা দেশে যদি এ রকম গোলমাল চলতে থাকে, সাভাবিকভাবেই অন্য এলাকায় এর প্রভাব পড়েই। প্রভাব পড়বে জ্বালানীর দামে, গ্যাসের দামে, বেড়ে যাবে আমদানী রপ্তানী খরচ যা প্রকারান্তে সাধারন মানুষের উপরেই বর্তাবে। প্রভাব পড়বে উগ্র পন্থীদের যারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে আশেপাশের দেশ সমুহে। প্রভাব পড়বে ‘মুক্ত ও গনতান্ত্রিক বিশ্ব কন্সেপ্টে’ যদিও ‘মুক্ত ও গনতান্ত্রিক বিশ্ব কন্সেপ্ট’ এখন আছে বলে মনে হয় না। প্রভাব পড়বে সাইবার সিস্টেমে, শেয়ার মার্কেটে, ভোগ্য পন্যে, ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রভাব পড়বে বন্দরগুলিতে। 

বাংলাদেশ যদিও এর অনেক দূরের একটি দেশ কিন্তু ইউরোপে রপ্তানী করা পোষাক শিল্প একটা ঝুকির মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আর যারা সরাসরি ইউক্রেনের সাথে আমদানী-রপ্তানীতে যুক্ত তাঁদের অবস্থা এখন খুবই আতংকের। আমাদের দেশ ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে অনেক ভোগ্যপন্য আমদানী করে যেমন মটর, সোয়াবিন, গম,  ইত্যাদি, সেটা আরো উর্ধ গতি হতে পারে দামে। এ ছাড়াও আমাদের রপ্তানীকারক মালামাল যেমন প্লাষ্টিক, চামড়া, চামড়া জুতা, হিমায়িত খাবার, পাট বা পাটের দ্রব্য এসব রপ্তানীতে ঘটবে প্রচুর ব্যাঘাত। এমন একটা পরিস্থিতিতে আসলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হবো তাতে কোনো সন্দেহ নাই।

অন্যদিকে বড় বড় পরাশক্তি যতোই পিউনেটিভ একশন নিবে বলে যত প্রতিশ্রুতিই দেন না কেনো, যা ক্ষতি হবার তাঁর বেশীরভাগ ক্ষতি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। জাতিসঙ্ঘ, ন্যাটো, কিংবা অন্যান্য অক্সিলারী ফোর্স গ্রাউন্ডে যেতে যেতে রাশিয়ার উদ্দেশ্য হাসিল হয়েই যাবে। তারমধ্যে ইউক্রেন ন্যাটোর কোনো সদসই না।

ভবিষ্যৎ কি হবে এই মুহুর্তে বলা খুব দূরুহ।

13/03/2022-যুদ্ধের ১৭ দিন পর ইউক্রেন

যুদ্ধের ১৭ দিন পর ইউক্রেন যুদ্ধে গোপনে গোপনে একটা কম্প্রোমাইজের কথা শুনা যাচ্ছে যে, জেলেনেস্কি রাশিয়ার তিনটা শর্তই মেনে যুদ্ধ বন্ধ হোক, সাভাবিক জীবন আবার ফিরে আসুক, তাতে সায় দিয়েছে। কিন্তু এই যুদ্ধ আমাদেরকে কি কি শিক্ষা রেখে গেলো?

যুদ্ধের প্রথম দিনে জেলেনেস্কি দৃঢ়কন্ঠে ঘোষনা দিয়েছিলো যে, ইউক্রেনের প্রতিটি ইঞ্চি তারা ডিফেন্ড করবে। কারন সে সেটাই বলেছিলো যেটা পশ্চিমারা ওকে বলতে বলেছিলো যে, We will defend every inch of land of our friendly allainaces. কিন্তু সেটা কেনো হলো না? যদি কিছুটা বিশ্লেষন করি দেখবো যে, জেলেনেস্কী চারটা ভুল করেছেঃ

(১) সে পশ্চিমা, ইউরোপ এবং ন্যাটোর সাপোর্টের উপর অতিরিক্ত ভরষা করেছিলো। জেলেনেস্কী জানতো যে, ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে সবদিক দিয়েই দূর্বল। কিন্তু জেনেস্কী পশ্চিমাদের, ইইউ এবং এলায়েন্সেরের ভরষাকে একটা ট্রাম কার্ড হিসাবে ভেবেছিলো। আর এটা তাঁর কোনো দোষ না। কারন ১লা সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে জেলেনেস্কী এক ভাষনে বলেছিলো যে, স্বয়ং বাইডেন জেলেনেস্কিকে বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোর মেম্বারশীপ পাবেই আর সেটা যেভাবেই হোক। শুধু তাই না, জেলেনেস্কি এটাও বলেছেন যে, এপ্রিল ২০২১ এ বাইডেন তাকে এই কথাও বলেছেন যে, ইউক্রেনকে কখনোই আমেরিকা একা ছেড়ে যাবে না যদি রাশিয়া বা অন্যকোন কেউ তাকে আঘাত করেও। জেলেনেস্কী ভেবেছিলো, রাশিয়ার এতো বড় আর্মি আনবিক বোমা ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রথমে ন্যাটো তথা অন্যান্য দেশের পারমানবিক হুমকীর মাধ্যমে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইইউ, তাকে তৎক্ষণাৎ সাহাজ্য করবে, তারপরের ঘটনা তো আছেই, আর্থিক সাহাজ্য, ইত্যাদি।

কিন্তু ঘটনাটা ঘটেছে উলটা। আমেরিকা সামনে আসলো না, ন্যাটোকেও ব্যবহার করলো না, নো ফ্লাই জোনও তৈরী করলো না, আবার বিমানও দিলো না। তারা তাকে এটাও বলেছিলো যে, আমেরিকা, ন্যাটো, ইইউ সবাই রাশিয়াকে এমনভাবে বয়কট করবে যাতে তাঁর তেল, গ্যাস, ফুড কমোডিটি ইত্যাদি আর কেউ না নেয়। রাশিয়াকে পংগু করে দেয়া হবে। কিন্তু সেটাও হলো না। আর হলেও সেতার ইফেক্ট অনেক অনেক পরে হয়তো। কথায় কথায় আমেরিকা রাশিয়ার তেল/গ্যাস বয়কট করলো ঠিকই, কারন না রাশিয়ার রপ্তানী আমেরিকাকে ইফেক্ট করে , না আমেরিকার আমদানী আমেরিকাকে সাফার করায়। তারা দুটুই তেল, গ্যাসের দেশ। অন্যদিকে বিট্রেন কিন্তু বয়কট করার পরেও তেল গ্যাস রীতিমত নিতেই থাকলো কারন সেটা তাঁদের নিত্যদিনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য। আবার অন্যদিকে ইইউ বাইডেনের এই অবরোধে রাজী হলো না। তারা আরো ৫ বছর সময় চাইলো। কারন প্রায় ৪০% তেল/গ্যাসের উপর পুরু ইউরোপ রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। তাঁদের জনগনের অসুবিধা তারা করতে পারবে না।

(২) জেলেনেস্কীর ২য় ভুল ছিলো-পশ্চিমাদের কাছে ইউক্রেনের গুরুত্তকে অনেক বেশী, এটাই সে মুল্যায়ন করেছিলো । জেলেনেস্কি ভেবেছিলো যে, ইউক্রেন হচ্ছে ইউরোপের একটা শিল্ড। জেলেনেস্কী ২২/০১/২০২২ তারিখে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে তাঁর এক ভাষনে বলেছিলো-গত ৮ বছর যাবত ইউক্রেন ইউরোপের শিল্ড হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ইউক্রেন গত ৮ বছর যাবত রাশিয়ার মতো এমন একটা বৃহৎ আর্মিকে ঠেক দিতে পারছে। শুধু তাইনা, গত ২১/০২/২০২২ তারিখে অনুরুপ ভাষনে জেলেনেস্কী এটাও বলেছিলো যে, ইউক্রেন ছাড়া ইউরোপের ডিফেন্স বলয় কোনদিন সুরক্ষিত নয় এবং ইউরোপ ইউক্রেনকে ছাড়া স্বয়ংসম্পুর্নও নয়। ফলে ইউক্রেনের টেরিটোরিয়াল সভরেন্টি যদি ইউরোপ না রক্ষা করে, তাহলে ইউরোপ নিজেই রাশিয়ার কাছে হুমকী। কিন্তু জেলেনেস্কি বুঝতেই পারে নাই যে, ইউক্রেন হচ্ছে এই ইউরোপের কাছে একটা এক্সপেন্ডেবল আইটেমের মতো। তারা তাকে ন্যাটোর সদস্যপদ আগেই দেয় নাই, এখন তো আরো অনেক বাধা। দিচ্ছে, দিবে, এই এপ্লিকেশন গ্রহন করা হয়েছে ইত্যাদি বলে ইউক্রেনকে আবার ছেড়েও দিচ্ছিলো না। আসলে ব্যাপারটা হলো যে, তারা তাকে শুধু পুতিনের বিরুদ্ধে একটা টুলস হিসাবে ব্যবহার করছিলো যেটা জেলেনেস্কি বুঝতেই পারে নাই। মজার ব্যাপার হলো, এই ইউজফুল টুলস এর একটা এক্সপায়ারী ডেট ছিলো। আর সেটা এই ২৪ ফেব্রুয়ারী যখন রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমন করে।

এই একই ঘটনা ঘটেছিলো ১৯৮০ এ আফগানিস্তানে যখন পশ্চিমারা মুজাহিদিনদেরকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফাইট করার জন্য অর্থ সাপোর্ট দিয়েছিলো। অথচ আফগানিস্তান কিন্তু পশ্চিমাদের কাছে স্ট্র্যাটেজিক্যালী ইম্পোর্ট্যান্ট ছিলো না। আসলে সেটা ছিলো জাষ্ট সোভিয়েটকে পশ্চিমাদের একটা ব্লাডি নোজ দেয়ার পরিকল্পনা। সেখানেও আফগানিস্থান রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের একটা টুলস ছিলো।

সেই একই কাজ কিন্তু আমেরিকা করেছে জর্জিয়ার সাথেও। জর্জিয়াকে পশ্চিমারা ন্যাটো মেম্বারশিপ দেয়ার কথা বলেছিলো ২০০১ সালে। পশ্চিমারা জর্জিয়াকে প্রচুর আর্মস দিয়েছিলো, অতঃপর জর্জিয়া যুদ্ধ করে জর্জিয়া রাশিয়ার সাথে। যখন যুদ্ধ শুরু হলো, পশ্চিমারা পুলআউট করলো। আবখাজিয়া নামে আরেকটা দেশের সৃষ্টি হয়েছিল ২০০৩ সালে। আবখাজিয়া রাশিয়ার খুবই অনুগত একটা দেশ যা জর্জিয়ার জন্য হুমকী।

এই ভুলটাই জেলেনেস্কি করলো যে, তাকে ন্যাটোর মেম্বারশিপ দেয়া হবে, ইইউর সদস্য করা হবে, আর ইউক্রেন ইইউর সবচেয়ে বড় ঢাল হিসাবে রাশিয়ার ফোরফ্রন্টে স্ট্র্যাটেজিক ইম্পোর্ট্যান্ট হিসাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, ভেবেছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে-ইউক্রেনের জন্য ন্যাটো একটা জাষ্ট কথার ঝুলি ছাড়া আর কিছুই ছিলো না।

(৩) জেলেনেস্কীর ৩য় ভুলটা ছিল-সে পুতিনের রিয়েল ইনটেনশনকে পড়তে পারে নাই। আর পড়লেও ভুল পড়েছে। এটা অবশ্য জেলেনেস্কীর দোষ না। যুদ্ধ লাগার আগেও কেউ বুঝতে পারে নাই যে, পুতিন আসলেই ইউক্রেন এটাক করবে। জেলেনেস্কী ভেবেছিলো, থ্রেট আগেও ৮ বছর যাবতই ছিলো, রাশিয়া বারংবার থ্রেট দিতেই থাকবে, কিন্তু গত ৮ বছরের মতো পশ্চিমাদের ভয়ে রাশিয়া সাভাবিকভাবেই অন্তত যুদ্ধনামক ভয়াবহতায় জড়াবে না। এমন কি ২৮ জানুয়ারী ২০২২ তারিখে জেলেনেস্কির এক ভাষনে বলেছিলো যে, মিডিয়ার ভাষ্যে যেনো মনে হয় আমরা অতি শীঘ্র রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রাশিয়া কখনোই যুদ্ধে জড়াবে না এটা নিশ্চিত। যুদ্ধ হবে এটা জেলেনেস্কীর মাথাতেও ছিলো না।

(৪) জেলেনেস্কির ৪র্থ ভুল টা ছিলো-জেলেনেস্কী সবসময় বিশ্বাস করতো যে, তাকে ন্যাটো, ইইউ, ইউকে, আমেরিকা, ফ্রান্স, কিংবা জার্মান সবাই সবকিছু দিয়ে একত্রে সাহাজ্য করবেই। সে বিশ্বাস হারায় নাই। ফলে সে পুতিনের কোনো কথায় রাজী না হয়ে শেষমেষ যুদ্ধেই থেকে গেলো। সে বুঝতেই পারে নাই যে, সবাই ‘অনলাইন’ যুদ্ধ করবে। আর সে মাঠে একা হয়ে যাবে।

যুদ্ধে একাই থেকে যাওয়ার কারনে হয়তো জেলেনেস্কী আপাতত হিরো হয়ে গেলো কিন্তু যখন যুদ্ধ থেমে যাবে, সবশর্ত মেনে ইউক্রেন আবার ফিরে আসবে, তখন ব্যাখ্যায় দেখা যাবে অনেকেই, জেলেনেস্কী কতটা ভুল করেছিলো। আর এই ভুল একদিন জেলেনেস্কীকে নামিয়ে আনবে ওদের দেশের ইতিহাসের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। আজকের দিনের ইউটিউব, ফেসবুক কমেন্টস একদিন ফেড হয়ে গিয়ে সেটাই সামনে আসবে যে, পুতিন প্রথমে যেটার দাবী করেছিলো সেটাই তো হলো, সারাবিশ্ব শুধু তাকিয়েই ছিলো, তাহলে ইউক্রেনের লিডারের এটা বুঝতে এতো দেরী করেছিলো কেনো? ইতিহাস তাঁর উত্তর দিবে। জনগন এতো কিছু বুঝে না, তারা বুঝে প্রতিদিনের আনন্দ, তাঁদের পরিবার আর সম্পর্ক। রাজ্য, রাজা, দেশ নিয়ে এতো কিছু তারা ভাবে না।

ইতিহাস এটাও বিচার করবে কিভাবে সারাবিশ্ব এই মানুষগুলিকে ধোকা দিয়েছে, যুদ্ধনামক এমন একটা ভয়াবহতায় ছেড়ে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে কথার ঝুলি ছেরেছে। বড্ড মায়া লাগে যখন দেখি, ছোট একটা বাচ্চা আহত মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে, সে হয়তো জানেই না চারিদিকে যুদ্ধ। কিন্তু একদিন সে এই ইতিহাস পড়বে আর নিজের বিবেচনায় বুঝতে শিখবে, কোথায় সিনিয়াররা ভুল করেছিলো, আর কি করা উচিত ছিলো। তখন তাঁর কাছে আজকের দিনের এইসব হিরোইক ইউটিউবের কোনো মুল্য থাকবে না।

যুদ্ধ কারো জন্যই ভাল নয়। রাশিয়ার পুতিন ও একদিন তাঁর দেশে একটা খারাপ মানুষের মধ্যে মুল্যায়িত হবে। কারন সারা বিশ্ব কর্তৃক অবরোধের কারনে ওরাও প্রতিদিন কষ্টে থাকবে।

কিয়েভ খুব কঠিন রাস্তায় এটা শিক্ষা পেলো যে, পশ্চিমাদের, ইউরোপের কিংবা অন্যান্য এলায়েন্সের মিথ্যা নির্ভরশীলতায় এবং মিথ্যা সাপোর্টের আশ্বস্ততায় অসম দেশের সাথে যুদ্ধ করতে যাওয়া একটা খারাপ আইডিয়া।

12/03/2022-রাশিয়ান-ইউক্রেন যুদ্ধ

এই কয়দিনের রাশিয়ান-ইউক্রেন যুদ্ধের উপর মানুষের বিভিন্ন কমেন্টস পরে যেটা আমার ধারনা সেটা হলো-

আসলে কেহই কিন্তু ইউক্রেনের মতো একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের উপর রাশিয়ার এটাক সাপোর্ট করে না। তারপরেও কেউ রাশিয়াকে আবার কেউ ইউক্রেনের পক্ষে মনতব্য লিখছেন। তাহলে ব্যাপারটা কোথায় তাঁদের এই কন্ট্রাডিকশন?

ব্যাপারটা কি এই যে, আমেরিকা, ইইউ, কিংবা ন্যাটো, বা জায়ান্ট সংবাদ মিডিয়াগুলির বিভিন্ন সময়ে পক্ষপাতিত্বমূলক ব্যবহারের কারনে মানুষেরা এখন ওই সব এলায়েন্সের উপর বিরক্ত এবং রাগ। অনেক দেশে ওরা অন্যায় করে, কিন্তু সেটা ওরা অন্যায় বলে স্বীকার করে না, সেটাকে একটা ভিন্ন নামে টেরোরিষ্ট এক্টিভিটি নামে ধংশজজ্ঞ চালায়, নির্বিঘ্নে মানুষ মারে, বাচ্চাদের মারে, সাথে দেশটাও ধংশ করে প্রায় দখলই করে থাকে। ওদেরকে অন্যায়টা বুঝানো যায়না, কারন ওরা শক্তিশালী, মোড়ল। আমরা আমজনতা, গরীব, শক্তিহীন এবং ওদের বিপক্ষে কথা বলার কোনো সাহস কিংবা সুযোগ নাই। এই আমজনতা কষ্ট পায়, দুঃখ পায়, ভাষাহীনভাবে নিজের ঠোট নিজেরাই কামড় দিয়ে চুপ করে থাকে। অসহায় এই আমজনতা। কিন্তু স্বৈরশাসক মোড়লেরা এবং জায়ান্ট সংবাদ মিডিয়াগুলি এসব আমজনতার পালস বুঝলেও স্বীকার করে না যে যেটা ওরা করছে সেটা অন্যায়। আফগানিস্থানে প্রথবার আমেরিকার এটাক যেমন আম জনতা না মানলেও কিছু বলতে পারে নাই, আবার সেই আফ গানিস্তানেই যখন আবার তারা সেই আগের তালেবানদেরকে ক্ষগমতায় বসিয়ে আরেকবার আম জনতাকে উদ্দেগের মধ্যে ফেলে কোনো প্রতিকার করে না, তখনো আম জনতা দুটু ঘটনাকেই আগ্রাসন এবং অন্যায় বলে জেনেছে। আম জনতা দেখেছে যে, ওরা নিজের সার্থেই সব কিছু করে। ওদেরকে কেউ কিছু বলতে পারেনা। এরফলে অন্য আরেক জুলুমবাজ যখন সেই একই জুলুম করতে থাকে, আর সেই জুলুমের প্রতিকারের জন্য সইসব মোড়লেরা, সংবাদ মিডিয়া তাঁদের রক্ষার জন্য একাধারে সাপোর্ট করতে থাকে, তখন রাশিয়ার মতো জুলুমবাজ মোড়লেরা কোনো না কোনো আবেগ থেকে একটা প্রচ্ছন্ন সাপোর্ট পায় এই আম জনতার কাছ থেকে। আর এই সাপোর্ট টা আর কিছুই না, আম জনতার রাগ আর বিরক্তের কারনে। আম জনতা তখন ভাবে- মরুক এরা এবার যারা আগেও মানুষের উপর জুলুম করেছে কিন্তু কিছু করার ছিলো না। এবার ওরা সাফার করুক। আর এই সাফার করুক কন্সেপ্টের মধ্যে ইউক্রেনের মতো, সিরিয়ার মতো, আফগানের মতো, রোহিংগারদের মতো আম জনতারা মরে, আর করুনার পাত্র হয়।

তাহলে যুদ্ধটা আম জনতার মধ্যে আসলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে নয়, বা রাশিয়ার পক্ষেও নয়, এটা একটা সেই সব মোড়ল আর সংবাদ মিড়িয়ার বিপক্ষে যারা সাদাকে সাদা বলে না, কালোকে কালো বলে না। তাঁদের এসব চিন্তাধারা যতোদিন পরিবর্তন না হবে, জুলুমবাজদের পক্ষে সবসময় কেউ না কেউ সাপোর্ট করতেই থাকবে। এর ফলে সাধারন আমজনতার কষ্ট হতেই থাকবে, হোক সেটা ইউক্রেন কিংবা অন্য কেউ।

আজকে যদি জুলুমবাজ পুতিন মরেও যায়, তারপরে কি পশ্চিমারা রাশিয়ার আমজনতার কথা ভেবে তাঁদের উপর দেয়া সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিবে বলে ভাবছেন? নিবে না। 

আমাদের দেশে একটা কথা আছে- পাটা পুতায় ঘষাঘশিতে মরিচের জান শেষ। আমরা, হোক সেটা ইউক্রেন, সিরিয়া, আফগানিস্থান, ইরাক, ইয়েমেন, কিংবা কাশ্মীর, সবাই হচ্ছি সে মরিচ। আর এক জুলুম্বাজ রাশিয়া আরেক জুলুমবাজ পশ্চিমা বা এলায়েন্স হচ্ছে পাটা পুতা।

6/3/2022- ইউক্রেন যুদ্ধ

যে যাইই বলুক, যুদ্ধ কারো জন্যই ভালো নয়। হোক সেটা ইউরোপে, আর হোক সেটা মধ্যপ্রাচ্যে। সবার, বিশেষ করে ওয়েষ্টার্ন এবং ইইউ, তাঁদেরও উচিত সাদাকে সাদা বলা, কালোকে কালো বলা যখন কোন আগ্রাসন হয় হিউম্যানের উপর। যদি সেটা না হয়, তাহলে এই দুনিয়ার মানুষের মধ্যে বিভেদ হতেই থাকবে। তারা সাদাকে সাদা না বলায়, কালোকে কালো না বলায়, এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হলো, এই অসহায় ইউক্রেনবাসীদের উপরে অনেকেই মায়া দেখাচ্ছে না অথচ তারা কোনো দোষও করে নাই। তারাও আমাদের মতো অতি সাধারন মানুষ। একবার ভাবুন তো, যখন আমার আপনার পরিবার এ রকমভাবে সাফার করে, তখন কি পরিমান রক্তক্ষরন হয়? হোক সে যে কোনো ধর্মের বা দেশের। এই কঠিন উপলব্ধিটা যতোদিন ক্ষমতা লোভি নেতারা না বুঝবে, ততোদিন সর্বত্র সর্বসাধারন মানুষ, হোক সে প্যালেষ্টাইন, সিরিয়া, ইরাকী, বা ইউক্রেন, কিংবা হোক সে ইহুদি কিংবা মুসলিম, তাঁদের জীবন কোনোভাবেই সুরক্ষিত না।

আজকে যারা রাশিয়ার আক্রমনকে একটা প্রতিশোধমূলক হিসাবে দেখে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন, তারাও কিন্তু যুদ্ধকে সায় দেননা কিন্তু তারপরেও তাঁদের মন্তব্য অনেক সময় এমন হয় যে, মরুক ওরা আর ওদের নেতারা যারা দূর্বলকে এতোদিন মেরেছে। এবার ওদের পালা যারা অসহায় মানুষকে এতোদিন নির্মমভাবে মেরেও কোনো আফসোস করতো না। এখন সেইসব নেতাসহ সাধারন জনগন যারা কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলে নাই,  তাঁদেরকে মরতে দেখে বা কষ্ট দেখে বাকীরা যেনো মনে একটা শান্তি অনুভব করেন। কিন্তু এটাই আসল সত্য নয়। কারন এই মানুষগুলিও জানে যে, সেই সব শিশুরা, অসহায় ব্যক্তিরা তো তাঁদের নেতাদেরকে সাদাকে সাদা আর কালকে কালো না বলার জন্য অনুপ্রানিত করে নাই। তাহলে এখন নেতাদের সাথে ওরা কেনো অন্যদের সিম্প্যাথি পাবে না? কিন্তু তারপরেও কিছু রাগ কিংবা গোস্যা থাকে যে, তারাও তো সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলে নেতাদের বিপক্ষে আন্দোলন করে নাই!! তারাও তখন চুপ ছিলো, নীরব ছিলো।

আমি ইউক্রেন, ইরাকী, সিরিয়া, প্যালেষ্টাইন, ইয়েমেন, সব সাধারন মানুষের জন্য কষ্ট অনুভব করি। হুশ হোক বিশ্ব নেতাদের, জ্ঞান ফিরে আসুক সব নেতাদের যারা অন্যায়কে অন্যায় আর আগ্রাসনকে আগ্রাসন, সাদাকে সাদা আর কালোকে লো বলে সবার জন্য একটা সমান প্লাটফর্ম তৈরী করবেন। তাহলেই এই যুদ্ধ, এই আগ্রাসন এবং এই ঘৃণা কিংবা বিদ্বেষ কমে শান্তির একটা বিশ্ব তৈরী হবে।

এই বিশ্বভ্রমান্ডে কাউকে ছাড়া কেউ বাচতে পারবে না। সমস্ত সম্পদ আল্লাহ সব জায়গায় এক তরফা দেন নাই। সবাই সবার উপর নির্ভরশিল। সবাইকেই সবার সরকার।

20/02/2022- গেট টুগেদার এমসিসি

গত ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে আমার আরেক বন্ধু প্রোফেসর শাহরিয়ার বহুদিন পরে ঢাকায় এসেছিলো কানাডা থেকে। কানাডাতেই সেটেল্ড সে। অনেকদিন দেখা হয় নাই ওর সাথে। তাই আমি আমার সব বন্ধুদেরকে শাহরিয়ারের আগমনে ওয়েষ্টিনে একটা দাওয়াত করেছিলাম। আমাদের মির্জাপুর ক্যাডেট ১৫ তম ব্যাচের ৫৩ জন ক্লাশমেটের মধ্যে ঢাকায় থাকে এমন ১৪ জন মিলিত হয়েছিলাম। জম্পেশ আড্ডা হয়েছিলো। উক্ত গেদারিং এ উপস্থিত ছিলাম- ফিরোজ মাহমুদ (মাইক্রোসফটের কান্ট্রি ডাইরেক্টর) , মেজর আখতারুজ্জামান (বিটিভির ইংরেজী খবর পাঠক), ব্রিগেডিয়ার জাহেদ (ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং), মেজর আসাদ (বিখ্যাত লেখক), ডাঃ মনজুর মাহমুদ (প্রোফেসর পিজি), আব্দুল্লাহ হেল কাফি (মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এন্ড মেরিন ক্যাপ্টেন), আরেক মনজুরুল আলম (স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যংক), রিজওয়ানুল আলম (বিখ্যাত সাংবাদিক এবং প্রোফেসর অন জার্নালিজম), মোর্শেদ এনাম (ইঞ্জিনিয়ার এবং বিখ্যাত লেখক, দাবারু আবুল মনসুরে সাহেবের বড় নাতী) এবং আমার আরেক বন্ধু ফয়সাল। দারুন উপভোগ করেছি সবার সান্নিধ্য।

এদিন আরেকটা ভীষন ভালো একটা ব্যাপার ঘটে গেলো। সেটা একটা অনুবাদ।

তাঁর আগে একটা কথা বলে নেই যে, কোনো বিখ্যাত লেখকের বই অনুবাদ করতে গেলে প্রথমে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো, অরিজিনাল লেখক কখন কোন শব্দ বা লাইন বা উক্তি দিয়ে কি বলতে চাইছেন সেটা লেখকের মতো করে বুঝতে শেখা এবং সে মোতাবেক হুবহু ভাষান্তর পাঠকের জন্য তা অনুবাদ করা। যদি এর মধ্যে কোনো ব্যত্যয় ঘটে তাহলে হয় অনুবাদকের নিজস্ব মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় অথবা অরিজিনাল লেখকের মুল বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়। শুধুমাত্র আক্ষরীক শব্দকে অন্য ভাষায় রুপান্তরীত করলেই অনুবাদক হওয়া যায় না। জনাব মাহমুদ (আমার মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের বন্ধু এবং খুব প্রিয় আমার একজন মানুষ) একটা কঠিন কাজ হাতে নিয়েছেন। ডঃ ইয়াসির কাদিরের ভিডিও বক্তব্য এবং তাঁর কিছু লিখিত সংস্করণের উপর ভিত্তি করে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) উপর তিন খন্ডের মধ্যে ১ম খন্ডটি সমাপ্ত করেছেন। বইটির নাম "মহানবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর জীবন ও সময়" আমি অনেক অনুবাদ পড়েছি, অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত বই এর বাঙলা কিংবা ইংরেজী অনুবাদ পড়েছি, মাহমুদের এই বইটি একটি অসাধারন অনুবাদ হয়েছে। আমি অন লাইনে ডঃ ইয়াসির কাদির বক্তব্য শুনেছি এবং শুনি। আমার বন্ধু মাহমুদের এই উক্ত অনুবাদটি একদম ডঃ ইয়াসির যা যেভাবে বলতে চেয়েছেন, মাহমুদ সেটা পুনহখানুপুঙ্খ ভাবেই তুলে ধরেছেন।

আমি প্রচূর বই পড়ি, বই পড়া আমার একটা নেশার মতো। আমি মাহমুদের এই বইটার প্রায় ৩০% পড়ে ফেলেছি। নেশার মতো পড়ে যাচ্ছি। অতীব সাবলীলভাবে মাহমুদ অনুবাদটি করেছে। পড়তে খুব ভালো লাগছে।

অনেক ধন্যবাদ তোদের সবাইকে।

আপ্নারা যারা আমাদের মহানবী হজ রত মুহাম্মাদ (সঃ) এর জীবনী এবং তাঁর সময়কালটা আক্ষরীক অর্থে বোধ গম্য ভাষায় জানতে চান, কিনতে পারেন। এটা Worth Buying Good Book.

ধন্যবাদ মাহমুদ তোকে আর ধন্যবাদ শাহরিয়ারকে যার কারনে একটা চমৎকার গুড গেদারিং হয়েছে। আর ধন্যবাদ আমার সব বন্ধুদের যারা সময়টাকে নিয়ে গিয়েছিলো প্রায় ৪৪ বছর আগে। আর মাহমুদের বইটা আমাদের নিয়ে গিয়েছিলো প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

আমি তোদের সবাইকে খুব ভালোবাসি।

১৯/০২/২০২২-স্বাস্থ্যসচীব একদিন অফিসে

হটাত করে ফোন করলেন আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্যসচীব লোকমান ভাই (Senior Secretary, at Ministry of Health & Family Welfare-MOHFW, Bangladesh)। অনেকবার দাওয়াত করার পরেও ভীষন ব্যস্ততার কারনে গত দুই বছরের মধ্যে আসতে পারেন নাই। সম্ভবত একবার এসেছিলেন ২০১৪ কিংবা ২০১৫ সালের মাঝামাঝি। আজ এই পথ দিয়েই যাচ্ছিলেন কোনো এক কাজে। সুযোগটা মিস করেন নাই। ভীশন খুশী হয়েছি লোকমান ভাইকে অফিসে পেয়ে। তখন একটা মিটিং করছিলাম, কিন্তু লোকমান ভাইকে সময় দেয়াটা আমার কাছে প্রাইয়োরিটি মনে হচ্ছিলো। একসাথে লাঞ্চ করলাম, প্রায় দুই ঘন্টার মতো বেশ ভালো একটা সময় কাটিয়েছি।

২০১৯ সালে করোনার আগে উনি যখন খুলনার ডিভিশনাল কমিশানার ছিলেন, তখন ওই এলাকার প্রায় সবগুলি ডিষ্ট্রিক্ট আমি ভিজিট করেছিলাম উনার এডমিন সাপোর্টে। ময়মনসিংহ এ যখন ডিসি ছিলেন, তখনো বেড়াতে গিয়েছিলাম পরিবারসহ। অসম্ভব একজন মিশুক মানুষ।

লোকমান ভাইয়ের সবচেয়ে চমৎকার গুনের মধ্যে একটি হচ্ছে- He is the son of his soil of Gournodi. একজন মানুষ যখন আল্লাহর রহমতে উত্তোরোত্তর ভালো পজিশনে উঠে, তখন অনেকেই (সবাই না) আর সেই নাড়ির টান অনুভব করেন না কিন্তু লোকমান ভাই একজন সম্পুর্ন আলাদা মানুষ। তিনি তাঁর গ্রামকে ভুলে যান নাই, তাঁর সেই চেনা-অচেনা গ্রামের মানুষগুলিকে ভুলে থাকেন না, বিপদে আপদের সার্বোক্ষনিক পাশে থাকেন, সরকার সেই এলাকার উন্নতি তাঁর গতিতে করলেও লোকমান ভাই, তাঁর নিজের চেষ্টায় সবাইকে অকাতরে ন্যায়ের মধ্যে থেকে সাহাজ্য করেন। শীতে শীতার্ত কাপড়, বেকার ছেলেদের কর্মসংস্থান, গরীব পরিবারের সন্তানদের পড়াশুনার সাহাজ্য, কোনটায় তাঁর হাত পড়ে নাই? অত্যান্ত সৎ এবং সজ্জন ব্যক্তি এই লোকমান ভাই। তাঁর প্রোফেশনাল এফিসিয়েন্সীর কথা না হয় নাইই বললাম, বর্তমান সময়ে দেশের এতো টীকার প্রোকিউরমেন্ট কিংবা অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের দিকে তাকালেই বুঝা যায়, তাঁর চমৎকার প্রোফেশনালিজম।

লোকমান ভাইয়ের সাথে উনার আরেক বন্ধু এসেছিলেন, তাঁর নাম জিন্নাত ভাই। খুব ভালো একটা সময় কাটালাম আমার অফিসে বহুদিন পর। ধন্যবাদ লোকমান ভাই।

১৮/০২/২০২২- আমার বাগানের আলু

বাগান করিতে গিয়া একবার মিষ্টি আলুর কয়েকটা ডগা লাগাইয়াছিলাম। যত্ন করি নাই, পরিচর্যাও তেমন করা হয় নাই। ধীরে ধীরে কবে কখন চোখের আড়ালে মাটির নীচে তিনি এত বড় হইয়া উঠিয়াছে জানিতেও পারি নাই। বাগান আলু পাতায় ভরিয়া উঠিতেছে ভাবিয়া উহা সমুলে নির্মুল করিতে গিয়া এই আলুখানা চোখে পড়িলো। কখন কিভাবে যে এত অনাদরেও সবার অলক্ষ্যে সে এত বড় হইয়া উঠিয়াছে কেহই জানিতে পারে নাই। এখন তাহাদের বংশ সহ জীবন ধংসের মুখে। কেমন যেনো মনে হইতেছিলো। তখন মনে বড্ড কষ্ট হইতে লাগিলো এই ভাবিয়া যে, আহা এই ক্ষুদ্র বোবা উদ্ভিদ তৃনলতার মতো মেরুদন্ডহীন লতাটাকে বাগানে রাখিয়া দিলেও পারিতাম। কারন এরাও ফল দেয়, আর এই ফল মুল্যহীন নয়। বাগানে কেহই অনর্থক বা মুল্যহীন নয়।

চোখ বুজিয়া আমি যেনো আমাদের সমাজের বৃহত বাগানের চিত্রটি দেখিতে পাইলাম। অনেক কিছুই ফুটিয়া উঠিলো। এখানে সবাই কোনো না কোনো সময়ে নিজের আপন চেষ্টায়, গোপনে সবার অলক্ষ্যে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। সে যত অবহেলিতই হোক, কিংবা অনাদর। মালি কিংবা মালিক কারো কোনো পরিচর্যা ছাড়াও কোনো কোনো প্রজাতি এই ধরায় অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখার আপ্রান যুদ্ধ করেই পতবর্তী প্রজন্মের জন্য ফল দেয়। কেউ ফেলনা নয়। এটা হয়তো ফিলোসোফির একটা দিক বা মুদ্রার।

কেউ কেউ আবার এই বড় মিষ্টি আলুটির চেহাড়া সুরুত আর সাইজ দেখিয়া ইহাও বলিতে পারেন, এই বেটা একটা আলুই শুধু এতো মোটা আর বড় হইলো কেনো? অন্যগুলি না কেনো? সেই ফিলোসোফি যদি বলি- হতে পারে যে, এই একটা আলুই বাগানের যাবতিয় সুখ আর খাদ্য একাই খাইয়া এতো বড় হইয়াছে যাহার ফলে অন্য আলুগুলির ভাগ্য রোহিংগাদের মতো। এই বড় আলুটি শুধু নিজের কথাই ভাবিয়াছে আর ভাবিয়াছে, এই পৃথিবীতে কে কাহার? আগে নিজে বড় হই, তারপর দেখা যাবে। কিন্তু যখন কোনো গোত্রের মধ্যে বিপদ আসিয়া হাজির হয়, তখন কে কত বড় আর কে কত ছোট তাহা ভাবিয়া বিপদ আসে না। তখন ছোটবড় সবাই একত্রে মরিতে হয়। অথবা যিনি সবচেয়ে বড় তাহাকেই আগে কতল করা হয়।

তাই গোত্রের সবাইকে নিয়া একত্রে বড় হওয়া একটা নিরাপত্তার ব্যাপার থাকে। নতুবা এই ছোট আলুগুলির থেকে বেশী নজর থাকে সবার বড় আলুর দিকে। ইহাকেই আমরা আজ প্রথম সিদ্ধ করিবো। বাকিগুলি হয়তো আবার কোনো না কোনো বন-জংগলে ফেলিয়া দেবো, কারন তাহাদের প্রতি আমাদের মতো মালি বা মালিকের খুব বেশী ইন্টারেস্ট নাই। ফলে, এই কারনে কোনো একদিন তাহারাই আবার বংশ বিস্তার করিয়া তাহাদের অস্থিত্ত বজায় রাখিবে।

আরেক দল আবার ভিন্ন একখানা মতবাদ লইয়া এই আলুর উপর কিছু দোষ চাপাইয়া নিজেরা পার পাইতে চেষ্টা করেন। কারো কারো ব্যক্তিগত দোষের কারন কেনো বা কি মনে করিয়া এই নীরিহ বোবা একটা আলুকে দোষারুপ করেন তাহা আমি আজো বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। কিছু হইলেই মানুষ ‘আলুর দোষ’ বলিয়া চালাইয়া দেন। অথচ এই বোবা আলুটি সারাজীবন সবার অলক্ষ্যেই বসবাস করে। হইতে পারে, গোপনভাবে থাকার এই বইশিষ্ঠই মানুষের আলুর সাথে মিল থাকার সব দোষ এই নন্দ ঘোষের উপর পড়ে।

মোরাল অফ আলুঃ

একাই শুধু খাইয়া বড় হইয়েন না, বিপদ আছে তাহলে।

আলুর প্রতি এতো ঝুকে যাইয়েন না, তাহলেও বিপদ হইতে পারে।

আলুর যত্ন নিন। আলুকে ভালোবাসুন।

১৩/০১/২০২২-Meeting Fourth Generation

গল্পটা কাল্পনিক নয়। গল্পটা সত্যি। আর এখানে যাদের নামগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তারা তাদের নিজের নামেই রয়েছেন। অনেক অজানা কষ্ট আর বেদনা দিয়ে এই পৃথিবী এতোই ভরপুর যে, সবাই এক নাগাড়ে সবার কষ্টের কথা, বেদনার কথা, সাফল্য আর ব্যর্থতার কথা বলতে গেলে সারা পৃথিবীতে শুধু কান্নার রোলই পড়ে যাবে। তারপরেও মানুষ বেচে থাকে আশা নিয়ে, হতাশাকে দূর করে কিছু আনন্দ আর হাসি নিয়ে। এরই নাম জীবন। কেউ হেরে যায়, কেউ পড়ে যায়, কেউবা আবার পরতে পরতে দাঁড়িয়ে যায়। আজ থেকে অনেক জেনারেশন পর সেসব মানুষগুলি হয়তো জানবেই না, কি ছিলো তাদের সেই কষ্টে ভরা তাদের অতীতের পূর্বসুরীদের জীবন, কিংবা কিভাবে আজ তার এই পর্বে আসা। আজকে এই ঘটনার মানুষগুলিকে সেই চরাই উতরাই পার করে সেই সব পূর্বসুরীরা নতুন প্রজন্মের জন্য নব পরিস্থিতি তৈরী করে গেছে। আজকের গল্পের মানুষ গুলিকে এই পর্বে আসতে অন্তত চারটি জেনারেশন পার করতে হয়েছে। এর মধ্যে ১ম জেনারেশনের কেহই জীবিত নেই, ২য় জেনারেশনের অনেকেই গত হয়েছেন, কেউ কেউ এখনো জীবিত আছেন বটে কিন্তু বয়স অনেক হয়ে গেছে তাদের। ৩য় জেনারেশনের এখন পড়ন্ত বিকেলের মতোই। আর ৪র্থ জেনারেশন তারা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, আর সবেমাত্র তাদের মধ্যে একটা সমন্নয় হলো। এবার দেখার বিষয় পরের প্রজন্মের কাহিনী। হয়তো অন্য কেউ লিখবে তার পরের প্রজন্মের ইতিহাস, এমনো হতে পারে, থাক...। 

হামিদা খাতুন আমার মা, বিল্লাল ভাই (বেলায়েত ভাই ) আমার সেই ভাই। বহুদিন একই গ্রামের কাছাকাছি ছিলাম, মাঝে মাঝে এক সাথে দুজনে সিগারেট টানতাম। অতীতের অনেক গল্প শুনতাম। কখনো সেই গল্পে ছিলো হাসি, কখনো ভেজা চোখ আবার কখনো নিগুড় কালো রাতের মতো অন্ধকারের ভীতি সঞ্চারী অনুভুতি। বিল্লাল ভাই মারা গিয়েছেন অনেক বছর আগে। তার সন্তানদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো, এখনো আছে তবে খুব ঘন ঘন নয়। কারন তাদের অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছে। বিল্লাল ভাইয়ের স্ত্রী এখনো জীবিত আছেন। তিনিই বা কতটুকু গল্পগুলি জানেন তা আমার জানা নাই। তবে তিনিএখন সার্থক স্ত্রীর মতো সার্থক মাও। তার সন্তান সেলিম বর্তমানে নেভাদায় থাকে। আমার ছোট মেয়ে কনিকা আমেরিকায় যাওয়ার সুবাদে এই প্রথম সেলিমদের এবং তার সনাত্নদের সাথে প্রথম দেখা হলো। এরা ৪র্থ জেনারেশন। আমার ফার্ষ্ট নাতি ওরা। আমার মা আজ বেচে থাকলে আর আমার ভাই বিল্লাল ভাই বেচে থাকলে বড্ড খুশী হতেন। জীবন কত বিচিত্র। কোথাও না কোথাও গিয়ে এর রুট মিলিত হয়ই। 

“কিছু কথা আছে যা বলতে চাই নাই কিন্তু বলা হয়ে যায়, কিছু কথা ছিলো, বলতে চেয়েছি, অথচ বলা যায় নাই, কিছু সপ্ন ছিলো যা দেখতেই চাই নাই কিন্তু দেখতে হয়েছে আবার কিছু এমন সপ্ন ছিলো সব সময় দেখতে চেয়েছি কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় নাই এমন কিছু শখ ছিলো সারাজীবন লালন করেছি কিন্তু জীবনের শেষ তীরে এসেও সেটা ধরা দেয় নাই আবার এমন কিছু ভয় ছিলো যা একেবারেই কাম্য নয় অথচ তা আমি এড়িয়েই যেতে পারিনি কী কারনে আবার এই কিছু কথা না বলতে চেয়েও বলতে হয়েছে, কিছু সপ্ন আমাকে দেখতেই হয়েছিলো অথচ সেটা আমার কাম্য ছিলো না, আবার কিছু স্বপনের ধারে কাছেও আমি যেতে পারিনিএটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস আমি এই আফসোসের ব্যাপারটা নিয়ে বহুবার গবেষনা করেছি কিন্তু জীবনের কাছে রাখা সব উত্তর সবসময় তার প্রশ্নের ন্যায় বিচার করে না। বিশেষ করে প্রশ্নটা যখন এমন হয় যেটা মনকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খায়, আর হৃদয়কে ছুড়ি দিয়ে ফালা ফালা করে দেয়। ফলে কোনোই আমি সেইসব প্রশ্নের উত্তর পাই নি, না আমার কাছে, না যাদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়া দরকার ছিলো তাদের কাছ থেকে। আর উত্তর না পেতে পেতে একসময় আমি কোনো উত্তরের আর আশাও করিনি। কিন্তু একটা ব্যাপার আমার কাছে শতভাগ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো যে, আমার এই অপারগতার কারন না আমি নিজে, না আমার সাথে যারা জড়িত ছিলো তারা না এটা আমার দোষ, না ছিলো তাদের আমি যদি আরো গভীরে গিয়ে এর আনুবীক্ষনিক পর্যালোচনা করি, তাহলে হয়তো আমার আরেকটা আফসোসের কথা প্রকাশ না করলেই নয় যে, আমার সেই অপারগতা কিংবা ঘাটতির কিছুটা হলেও কেউ না কেউ সহজেই হয়তো পুরন করতে পারতো, যা ‘সেই কেউ’রা হয়তো চেষ্টাই করে নাই

উপরের এই কথাগুলি আমার নয়, কথাগুলি একজন এমন মানুষের যাকে আমি আমার মতো করে চিনতে শুরু করেছিলাম আজ থেকে প্রায় ২৪ বছর আগে যখন আমার বয়স প্রায় ২২। কতটুকু আমি তাকে বুঝতে পেরেছিলাম, সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু কেনো জানি আমার খুব মায়া হতো, আর এই মায়ায় মাঝে মাঝে আমি নিজেকে তার ভূমিকায় প্রতিস্থাপিত করে দেখতাম কি হয় ভাবাবেগে অথবা মানসপটে। এই সময়টায় আমি খুব ভাবাগেবিত হয়ে যেতাম। ভাবাবেগিত হতাম এটা ভেবে যে, কি পরিমান চাপ কিংবা কষ্ট নিজের বুকের ভিতরে লুকিয়ে রাখা সম্ভব? তখন আরো বেশী মায়া হতো একজনের জন্য নয়, দুজন নিসংগ মানুষের জন্য যাদের উভয়ের বুকেই ছিলো সমান যন্ত্রনা আর ভাগ্যের আক্ষেপ। একজন যেনো পরাজিত, আর অন্যজন সেই পরাজয়ের কারন। এদের একজন আমার “মা” আর আরেকজন ‘বিল্লাল ভাই’ যাকে সবাই ডাঃ বেলায়েত নামেই চিনতো। আমি আজ সেই তাদের কথাই হয়তো বলবো।

আমার ‘মা’র সম্পর্কে আমি অনেকগুলি লেখা ইতিমধ্যে লিখলেও তার সবচেয়ে বড় দূর্বল বিষয়টি আমি কখনো আমার লেখায় আনিনি। আমি জানতাম এবং অনুভব করতাম আমার মায়ের সেই দূর্বলতা। আমার মায়ের এই দূর্বলতা তার নিজের সৃষ্টি যেমন নয়, আবার তিনি ইচ্ছে করলেও তার সেই অপারগতাকে তিনি অনায়াসেই দুহাত দিয়ে এক পাশে সরিয়ে দিতে পারতেন না। এই দূর্বলতা সমাজ সৃষ্টি করেছে, আর সেই সমাজ আজকের দিনের দুটি মানুষকে বিজন বিজন দূরে ঠেলে দিয়ে দুজনকেই অসুখী একটা বলয়ে জীবিত কবর দিয়েছিলো। আমার মায়ের সেই বড় দূর্বলতা ছিলো এই ‘বিল্লাল’ ভাই। পরবর্তিতে প্রায় তিন যুগ পরে যেদিন আমি আমার মায়ের সর্বশেষ ভিডিওটি করি, তখন অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু সে প্রশ্নগুলির উত্তর আমাকে আরো ব্যথিত করে দিয়েছিলো। সেই প্রশ্নের উত্তর আমাকে প্রতিটিবার চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিলো, আমার অন্তরের কোথায় যেনো ছট ফট করছিলো কোনো এক অয়াশান্ত অনুভুতিতে। আর যিনি উত্তর দিচ্ছিলেন, আমার মা, তার দ্রিষ্টি কখনো সেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে নির্লিপ্ত হয়ে ভাষাহীন কিছু শব্দ তেই শেষ হচ্ছিলো যার সাহিত্যিক নাম- আহা, কিংবা উহু। এসব বেদনার রাজত্তে যিনি ছিলেন, সে আর কেউ নয়, বিল্লাল ভাই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কে এই বিল্লাল ভাই? যদি এর উত্তর খুজতে চাই, তাহলে ফিরে যেতে হবে আজ থেকে বহু বছর আগে যখন আমারও জন্ম হয় নাই। ফলে আমি যা জেনেছি, শুনেছি, তা পুরুই হয় আমার মার কাছ থেকে, কিংবা আমার অগ্রজ ডঃ হাবীবুল্লাহর কাছে বা স্বয়ং বিল্লাল ভাইয়ের কাছ থেকে জানা কিছু তথ্য। কিন্তু আমার কাছে সব ব্যাপারটাই যেনো মনে হয়েছে,  এটা ছিলো একটা ভাগ্য আর সময়ের খেলা।

কেনো ‘ভাগ্য’ আর ‘সময়’ বললাম তারও একটা ব্যাখ্যা আছে। অনেক সময় এমন দেখা যায় যে, “ভাগ্য” আর “সময়” দুটুই কারো জীবনে একসাথে আসে, কিন্তু “ভাগ্য” আর “সময়” ওরা কখনোই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ না। সঠিক ব্যবহারে ভাগ্য পালটাতে পারে বটে কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে ভাগ্যও পালটে যায়। কিন্তু এই ‘সঠিক’ ব্যবহার আবার সবাই সবসময় হয়তো পায়ই না যাতে সেই সঠিক ব্যবহারে তার ভাগ্য পাল্টাতে পারে। কেউ কেউ পারে, আবার কেউ কেউ পারে না। আবার কারো কার ব্যাপারে সুযোগটাই আসেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ভাগ্যের হাতে মার খাওয়া কোনো ব্যক্তিত্ত সময়ের স্রোতে আবার বেশীদিন অসহায়ও থাকে না। একসময় না একসময় সে ঘুরে দাড়ায়ই যদি তার দৈবক্রম ভাগ্য আবার সেই ঈশ্বর কোনো এক যাদুর কাঠিতে হাল ঘুরিয়ে দেন। শুধু হাল ঘুরিয়ে দিলেই হয়তো তার সেই নির্যাতিত ভাগ্য দৈবক্রম ভাগ্য সঠিক নিশানায় পৌছায় না যদি তার চোখে না থাকে সপ্ন আর প্রবল একটা ইচ্ছাশক্তি। আজকের লেখার প্রধান চরিত্র এই ‘বিল্লাল’ ভাইয়ের ব্যাপারেও সেই দুটু শব্দ প্রায় একই সুরে খেটে যায়। ভাগ্য তাকে সুপ্রস্নন করে নাই, আবার করেছেও। ‘সময়’ তাকে একটা বলয় থেকে ছিটকে ফেলেছিলো বটে কিন্তু আবার সেই ‘সময়’টাই বদলে দিয়েছে তার সব জন্মগত বৈশিষ্ট।

বিল্লাল ভাইয়ের এই ইতিহাস নাতিদীর্ঘ নয়। এই ইতিহাস একটা পূর্ন জীবনের। আর সেই জীবনের বয়স কাল নেহায়েত কমও নয়, প্রায় ৫৫ বছর। এই ৫৫ বছরে পৃথিবী তার অক্ষে ৫৫ বার প্রদক্ষিন করে কত যে ঋতু আর কাল প্রশব করেছে তার কোনো হিসাব নাই। তাই বিল্লাল ভাইয়ের এই ইতিহাস বলার আগে সেই মানুষটির ইতিহাস বলা প্রয়োজন যার জন্য আরেক অধ্যা তৈরী হয়েছিলো বিল্লাল ভাইয়ের। আর তিনিই হচ্ছেন- আমার মা, আর জন্মধাত্রী বিল্লাল ভাইয়ের।

আমার মায়ের পুরু নাম ‘মোসাম্মাত হামিদা খাতুন’। নামটা আমি এভাবেই সবসময় লিখে এসেছি আমার ব্যক্তিগত তথ্যাবলীর মধ্যে। আমার মায়েরা ছিলেন দুই বোন এবং তার কোনো ভাই ছিলো না। আমার মায়ের আরেক বোনের নাম ছিলো ‘মোসাম্মাদ সামিদা খাতুন’। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, গ্রাম্য ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ারিশান সার্টিফিকেটে তাদের দুজনের নামই লিখা হয় যথাক্রমে ‘হামিরন নেছা’ এবং ‘ছামিরন নেছা’। যাই হোক, নাম বিভ্রাটের কারনে আজকাল হয়তো ব্যংকে একাউন্ট করতে জটিলতা থাকতে পারে, কিংবা ক্রেডিট কার্ডে ঝামেলা হতে পারে, কিন্তু এই নামের বিভ্রাটের কারনে আমাদের মুল চরিত্রের মানুষ গুলির জীবনের ইতিহাসে কোনো প্রকার ব্যত্যয় হয় নাই। আর আমার এই লেখাতেও এটা অনেক বড় সমস্যা নয়। আমার নানা অর্থাৎ আমার মায়ের বাবার নাম ছিলো ‘কেরামত আলি’। আজকাল এই নাম গুলি আর কেউ রাখে না। হয়তো ভাবে যে, নাম গুলি আধুনিক নয়। কিন্তু এই নামের মানুষ গুলি ছিলে ভালোবাসার আর ভরষার ভান্ডার। যাই হোক, যদি আরেকটু আগের জেনারেশনে যাই, তাহলে আমরা সেই ‘কেরামত আলি’র বাবার নাম পাবো ‘উম্মেদ আলী মুন্সী’। এই উম্মেদ আলীর বাবা জনাব হাজী আসাদুল্লাহ (পিতা-আহাদুল) এর শাখা প্রশাখা বিশ্লেষন করলে এমন এমন কিছু বর্তমান আত্মীয় সজনের নাম চলে আসবে যা না আমরা অনেকেই মানতে চাইবো, না আমরা তা গ্রহন করবো। তার কারন একটাই-সমাজের স্তরভিত্তিক কেউ এমন জায়গায় আর কেউ এমন স্তরে যা না মিশে বংশে, না মিশ খায় পরিবারে। কিন্তু বাস্তবতাটাই যে অনেক কঠিন এটা মানা আর না মানাতে কিছুই যায় আসে না। না মানার মধ্যে হয়তো থাকতে পারে একটা বড় অহংকার বা সম্পর্ক ছিন্নকারীদের মধ্যে সামিল, কিন্তু বাস্তবতা পালটায় না তাতে। যাই হোক, সেই ৫/৬ জেনারেশন আগে না হয় নাইবা গেলাম।

আমার মায়ের বয়স যখন সবেমাত্র বারো কি তেরো, তখন সমাজের রীতি অনুযায়ী আমার নানা কেরামত আলি বিবাহযোগ্য মেয়ের বোঝায় চাপ অনুভব করে তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। আজ থেকে সেই প্রায় সত্তর বছর আগে যেটা হয়তো ছিলো সমাজের একটা রীতি, আজ তা বাল্যবিবাহের নামে সমাজ তাকে অপরাধের কারন বলে উল্লেখ করে। যেটাই হোক, সমাজের রীতি অনুযায়ী আমার মা, খালাদের বিয়ে ওই বারো তেরো বছর বয়সেই হয়েছিলো। আমার মায়ের সেই স্বামীর নাম ছিলো আব্দুল জলিল (সম্ভবত)। সম্ভবত বলছি এই কারনে যে, নামটা এই মুহূর্তে সঠিক লিখলাম কিনা সিউর হতে পারছি না। তবে সঠিক হবার সম্ভাবনা ৭৫%। ১২ বছরের একজন প্রায় নাবালিকা বিয়ের পর এখন অন্য বাড়ির বউ হয়ে গেলো। এই নববধূর পড়নের কাপড়টাই হয়তো তার থেকে প্রায় তিন গুন লম্বা, সবে মাত্র হায় প্যান্ট ত্যাগ করা বালিকাটি এখন নাকে নোলক, হাতে মেহেদী সমেত চূড়ি, কানে দূল, আর মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই পরিচিত সব মানুষ গুলি থেকে আলাদা হয়ে অন্য এক সংসারে একটা আলাদা পরিচয় নিয়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে গেলো। তার শখের পুতুল, ছেড়া বই কিংবা সখীদের অনেক গোপন কিছু মজার স্মৃতি সব ছেড়ে কেদে কেদে নিজের সেই খেলার আংগিনা, কাথা বালিশ আর বাড়ির উঠোনের মায়া ত্যাগ করে অন্য কোথাও যেতেই হলো। এ যেনো পালের একটা পোষাপ্রানী যে কিনা এখনো তার মায়ের দুগ্ধপানও ছাড়ে নাই। এই বয়সের একজন অপরিপক্ক নাবালিকা কি সংসার করছে বা করেছে সেটা আমি আজো বুঝে উঠতে পারিনা কিন্তু বিধাতার সিস্টেমে আমার মা গর্ভবতী হলেন। আর সেই গর্ভধারনের পরে সঠিক সময়ে তিনি সুস্থ্য একটি পুত্র সন্তানও দান করেন তার শ্বশুরালয়ে। এই পুত্রটির নামই হচ্ছে- বিল্লাল হোসেন বা বেলায়েত হোসেন। সবকিছুই ঠিকঠাক মতোই চলছিলো। স্বামী, সংসার, পুত্রযত্ন সবকিছু। নবাগত পুত্র সন্তানের আদরের কোনো কমতি নাই, নব নাম ধারী হামিদা এখন শুধু হামিদাই নয়, সে এখন ‘মা’ও বটে। তার নতুন নাম ’মা’। চারিদিকেই একটা নন্দ যেনো বাতাসের প্রবাহের মতো সারাটা বাড়ি দোলায়িত হচ্ছে, কেউ পুতুল নিয়ে দেখতে আসে, কেউ দোয়া দিতে আসে, কেউবা আবার আসে এম্নিতেই। সব কিছুই ঠিক যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলছিলো। কেরামত আলী তার মেয়ের জন্য গর্বিত, পাড়ার লোকেরাও। কিন্তু বিধাতার পরিকল্পনা মানুষের পরিকল্পনার থেকে অনেক বেশী যেমন রহস্যময়ী, তেমনি অনেক কঠিনও। তিনি কাকে কি দিয়ে সুখবর দিবেন আর কাকে কি দিয়ে দুঃখের অতল গভীরে নিয়ে যাবেন, তার হিসাব কিংবা ছক আমাদের কারোরই বুঝার কথা নয়। আর সে অধিকার ঈশ্বর কাউকে দেন ও নাই। তিনি একাই খেলেন, একাই গড়েন, আবার একাই ভাঙ্গেন। কেনো গড়েন, কেনো ভাজ্ঞেন এর ব্যাখ্যা চাওয়ারও আমাদের কোনো উপায় নাই। ফলে দেখা যায়, একই খবর কারো কাছে যেমন শুভ হয় আবার কারো কাছে তেমনি অশুভও হয়। একই জায়গায় মিলিত হওয়া মানুষের রাস্তা যেমন তিনি আলাদা আলাদা করে দেন, তেমনি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় চলাচলকারী অনেক মানুষের রাস্তাও তিনি এক জায়গায় এনে মিলন ঘটান। একই পরিস্থিতিতে যেমন একজন জীবনকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যান, আবার সেই একই পরিস্থিতিতে তিনি আরেকজন জীবনকে অসহায় অবস্থার সাথে বোঝাপড়া করতে ব্যস্ত করে তোলেন। আমার মায়ের বেলাতেও ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি হাজির করলেন বিধাতা। আমার মায়ের স্বামী আব্দুল জলিলকে তিনি এই নশ্বর পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। যে নাটাইটায় একটা গুড়ি নিজের আনন্দে নীল আকাশের হাওয়ায় ভেসে একবার এদিক, আরেকবার ওদিক দোল খাচ্ছিলো, হটাত নাটাইটা বিচ্ছিন্ন করে দিলো ফানুশের মতো উরে থাকা রংগিন ঘুড়িটা। ছন্দে ভরা কতগুলি জীবন এক সাথে যেনো ছন্দ পতনের ধাক্কায় চারিদিক বেশামাল হয়ে গেলো। আমার মা হামিদা ভয়ে আতংগকে আর বিষন্নতায় বোবা হয়ে গেলেন, হামিদার বাবা কেরামত আলী মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনায় মুর্ছা যেতে লাগলেন। আর হামিদার সদ্য জন্মানো পুত্র বিল্লাল কিছুই না বুঝে মায়ের দুধের জন্য বিকট চিতকারে বাড়ি, ঘরময় যেনো আলোড়িত করে দিলো। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমার মা হামিদা খাতুন বিধবার তকমা গলায় পড়ে হাহাকার ঘরে যেনো নির্বাক হয়ে গেলেন।

কোনো নারীর অধিকার তার স্বামীর বাড়িতে স্বামীর বর্তমানে যেমন থাকে, সেই নারীর সেই অধিকার স্বামীর অবর্তমানে আর তেমন থাকে না। হামিদার স্বামীর ইন্তেকালের কয়েকদিন পর বাড়ির অন্যান্য সবাই যখন হামিদার স্বামীর শোকের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে থাকে, ততোই যেনো হামিদার উপর অন্যান্যদের খোটার ভার বাড়তে থাকে। এই বয়সে স্বামীকে বুঝার আগেই যখন কেউ স্বামী হারা হয়, তার নিজের মনের অবস্থার কথা কেউ তো ভাবেই না, বরং সব দোষ যেনো সেই অপয়া হামিদারই। পৃথিবীর কেউ এই নাবালিকা বিধবার মনের ভিতরের কষ্ট কিংবা বেদনার অনুভুতি না বুঝলেও হামিদার বাবা কেরামত আলী ঠিক বুঝতে পারছিলেন কি চলছিলো হামিদার ভিতরে। তিনি কোনো কিছুই চিন্তা না করে দুই অবুঝ, এক হামিদা এবং তার পুত্রকে নিয়ে চলে এলেন নিজের বাড়িতে। হামিদা এখন আবার তার পিত্রালয়ে সেই চেনা পরিবেশে ফিরে এলো। আজকের এই চেনা পরিবেশ যেনো আর আগের সেই পরিবেশ নাই, তার খেলার অনেক সাথীরাই অন্যের বধু। এখন আর দলবেধে কাউকে নিয়ে সেই চেনা পরিচিত নদীতে হৈ হুল্লুর করে জল্কেলীর কোনো সুযোগ নাই। কোথায় যেনো বীনার তার গুলি ছিড়ে গেছে। আর সাথে তো আছেই পুত্র বিল্লাল, যার কাছে দাদা বাড়িই কি, আর নানা বাড়িই কি কোনো কিছুরই কোনো পার্থক্য নাই। শুধু মনের অজান্তে চোখের পানি ঝরছে হামিদার আর তার সাথে অসহায় বিধবা কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা কেরামত আলির। জখম যেনো কিছুতেই ক্ষরন বন্ধের নয়।   

শরীরের কোনো কাটাছেড়া, কোনো বাহ্যিক জখম হয়তো চোখে দেখা যায়, ক্ষুধা হলে খাবারের অভাবে ক্ষুধায় হয়তো পেট গুরগুর করে, কিংবা জ্বর সর্দি, কাশি কিংবা মাথা ব্যথা হলে তার সিম্পটম অনায়াসেই বুঝা যায় কিন্তু অন্তরের জখম কি কখনো চোখে পড়ে? অন্তরে কি কখনো জখম হয় আদৌ? আর এই অন্তরটাই বা শরীরের কোন অংগ? এটা কি এমন কোনো জিনিষ যা মাংশ বা হাড় কিংবা এমন কিছু দিয়ে এর গঠন কাঠামো? অথচ এই জখম অনুভুত হয়, এই কষ্ট নিজেকে প্রতিটি ক্ষনে মনকে বিষন্ন করে দেয়। সেই অদেখা অন্তরে রক্তক্ষরন হয়। এই অন্তর্জালা, রক্তক্ষরন আর কষ্টে মাত্র ১৪/১৫ বছর বয়সের এই অবুঝ বালিকা আরেকটি সদ্যজাত নবাগতকে নিয়ে পৃথিবীর সব মানুষের চোখে যেনো একজন অপরাধি সেজে জীবিত অবস্থায় মৃত হয়ে রইলেন। স্বামীর ম্রিত্যু যেনো তারই অপরাধ। তার এই ঘটনার জন্য যেনো তিনিই দায়ী। একদিকে অবুঝ মন, অন্যদিকে সাথে আরেকটি অবুঝ সন্তান, সব মিলিয়ে চারিদিকে এক মহাশুন্যতা। মেয়ের এমন একটি দুঃসহ শুন্যতা নিজে পিতা হয়ে কেরামত আলী কি করবেন? দিন গড়ায়, রাত যায়, শুন্যতা আরো চেপে বসে হামিদার। তার যে বয়স, সে বয়সে তিনি হয়তো বিয়ের মাহাত্তটাই বুঝে উঠতে পারেন নাই, কিন্তু তাকে এখন বিধমার তকমাটাও বুঝতে হচ্ছে, বুঝতে হচ্ছে একজন অবুঝ সন্তানের মা হিসাবে তার অকাল পরিপক্ক দায়িত্ব।

যখন কোনো মানুষের দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে, তাহলে সে সবসময়ই চাইবে যে, সে অন্য কারো সাথে তার এই দুঃখটা, কষ্টটা শেয়ার করতে। কেউ তো থাকবে যে, ওর কথা শুনবে। বুঝুক না বুঝুক সেটা আলাদা ব্যাপার, কষ্ট লাগব করুক বা না করুক সেটাও আলাদা ব্যাপার। কিন্তু কারো সাথে তো তার এই কষ্টের ব্যাপারগুলি শেয়ার করা দরকার। আর হামিদার এই কষ্টের ভাগীদার কিংবা শ্রোতা হয়ে রইলো শুধু একজন-সেই নাবালক পুত্র ‘বিল্লাল’। চোখ ভিজে আসে তার, মন ভেংগে আসে যন্ত্রনায়, আর মনে হয়-কেনো? কেনো বিধাতা তাকেই এর অংশ করলেন? অন্য কেউ নয় কেনো? সেই অবুঝ পুত্র বিল্লালের কাছে ‘হামিদা’র হয়তো শুধুই একটা জিজ্ঞাসা। নাবালক বিল্লাল হয়তো এর কিছুই বুঝে না, কোনো এক ভিনদেশী ভাষায় হয়তো কিছুক্ষন অদ্ভুত শব্দ করলেও মায়ের সেই কান্নায় ভীত হয়ে নিজের অজান্তেই কেদে দেয় বিকট এক শব্দে যা হয়তো বিধাতার কাছেই তার মায়ের কষ্টের ফরিয়াদ। হয়তো মা ছেলের এই অসহায় কান্নায় বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের জলে কাপা কাপা গলায় বলতে থাকেন- আমি তো আছি তোর পাশে। ভয় নাই। মা আছে। পৃথিবীর কেউ তোর পাশে থাকুক বা না থাকুক, আমি তো আছি। এভাবেই কাটতে থাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এবং এক সময় কয়েক বছর।

জীবন যেখানে যেমন। যে শিশুটি আজ জন্ম নিলো কেউ জানে না তার জন্য এই পৃথিবী কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিংবা এই প্রিথিবীকে সে কি দিয়ে যাবে। বিধাতা চাইলে যে কোনো কিছুই হতে পারে। হতে পারে আজকে এই শিশুটি হয়তো এই পৃথিবীকে কোনো একসময় কাপিয়েও যেমন দিতে পারে আবার এই পৃথিবী তাকেও নাড়িয়ে দিতে পারে। এই বিশ্বভ্রমান্ডে এমন অনেক শিশুই জন্ম নেয় যারা অনেকেই অনেক ভুমিকা রাখে আবার কেউ কেউ কিছুই রাখে না, না পৃথিবীও তাদেরকে মনে রাখে। এমন মানুষের সংখ্যাই হয়তো নেহায়েত যেমন কম না, তেমনি ভুমিকা রাখে এমন শিশুও কম না। যুগে যুগে তারপরেও অনেক শিশু গোপনে পৃথিবীতে আসে, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর একদিন সবকিছু ফেলে সবার থেকে আলাদা হয়ে আবার কোথাও অদৃশ্য হয়ে যায়। মাঝখানের এই সময়টায় খুব গুটিকতক মানুষ হয়তো নিজের মতো করে কাউকে কাউকে মনে রাখে কিন্তু তাও একসময় মনের স্মৃতি থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। কিন্তু ‘বিল্লালের বেলাতে এটা ঘটে নাই। তিনি প্রকাশ্যে দিবালোকে এই সমাজে বৈধভাবে পদার্পন করেছিলেন, তার যোগ্য অভিভাবক ছিলো, তার পরিচয় ছিলো, আর ছিলো পাশে থাকা অনেক মানুষ যারা তাকে নিয়ে ভেবেছে, তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করেছে। কিন্তু বিধাতা তো আর মানুষের মত নন। তার পরিকল্পনা, তার ইচ্ছা, তার কার্যকারিতা সবকিছুই তার মত। বিল্লালের যখন মাত্র দুই থেকে হয়তো একটু বেশী, তখন হামিদাকে ছাড়তে হলো তারই ঔরসে জন্ম নেয়া তার পুত্র বিল্লালকে। সমাজ বড্ড বেরসিক, সমাজের আইনকানুনগুলিও একপেশে। এই আইন মানতে গিয়ে কে কাকে ছেড়ে যাবে, আর কার জীবন কোন আইনের পদাঘাতে পিষ্ঠ হবে সেটা যেনো সমাজের কোনো দায়বদ্ধতা নাই। আর এর সবচেয়ে বেশী আহত হয় সমাজের নারীরা। নারী বা মহিলাদেরকে এই সমাজে সেই প্রাচীনকালের মতো আজো দেবীর সমান তুলনা করে থাকে কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে আজো লাগাতার অন্যায়, নীপিড়ন, শোষন, অধিকারহীনতা আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এখনো অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। আর এই দানবের প্রথম নাম ‘সমাজ’ আর তার আইন কিংবা ‘মনোভাব’। যে সমাজ ১৩/১৪ বছরের বালিকাকে বিধাতার ইচ্ছায় তারই সংগীকে বিচ্ছেদের কারনে একজন অপয়া কিংবা এই দোষে দোষারুপ করা হয়, সেই সমাজ প্রকৃত কোনো ভরষার স্থান হতে পারে না। সে সমাজে প্রকাশ্যে কোনো মহিলাকে পুড়িয়ে মারা, নির্যাতন করা কিংবা ধর্ষন করা হলেও আজো কেউ হয়তো এগিয়েই আসে না। হামিদা হয়তো সে রকমের একটা অদৃশ্য আগুনে প্রতিদিন পুড়ে অংগার হচ্ছিলেন।

সমাজের এই মনোবৃত্তি আর যাতনায় এবং কন্যাদায়গ্রস্থ কেরামত আলি শেষ পর্যন্ত ১৫ বছরের বিধবা হামিদাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার আয়োজন শুরু করেন। হামিদার রুপের কোনো কমতি ছিলো না, আর সবে মাত্র সে কিশোরী। এক সন্তানের মা হলেও বুঝার কোনো উপায় নাই যে, তার অন্য কোথাও একবার বিয়ে হয়েছিলো। ফলে, খুব বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয় নাই কেরামত আলিকে। পুরুষ শাসিত সমাজে সব আইন পুরুষেরাই তাদের নিজের সুবিধার কারনে বানায়। এখানে ১৫ বছরের কিশোরীর সাথে ৪০ বছরের বৃদ্ধার বিয়েও কোনো দৃষ্টিকটু নয়। কিংবা কোনো এক প্রতাপশালি ধনী ব্যক্তির পক্ষেও একের অধিক কুমারী কিংবা বিধবা কিশোরীকে বিয়ে করাও কোনো দৃষ্টিকটু নয়। আর সেই প্রতাপ শালী কোন ধনী ব্যক্তি যদি সধবা হন, তাহলে তো তার যেনো বিয়ে করা একটা বৈধ লাইসেন্সের মতোই। হামিদার জীবনে এমনই এক সুপুরুষ-হোসেন আলী মাদবর প্রবেশ করলেন। এই হোসেন আলী মাদবর কোনো কাল বিলম্ব না করে অনেক ঘটা করে বিধবা হামিদাকে বধু হিসাবে নিয়ে আসে তারই সংসারে যেখানে রয়েছে হামিদার থেকেও বয়সে বড় আরো তিনটি পুত্র সন্তান আর চারটি কন্যা সন্তান। কেউ কেউ হামিদার থেকে বয়সে এতো বড় যে, কারো কারো আবার বিয়ে হয়ে তাদের ও সন্তান জন্ম নিয়েছে। তবে একটা ভালো সংবাদ হামিদার জন্য ছিলো যে, তাকে সতীনের ঘর করতে হয় নাই। কারন হোসেন আলি মাদবর ছিলেন সধবা। হোসেন আলী মাদবরের আগের স্ত্রী গত হয়েছেন প্রায় বছর খানেক আগে।

হামিদার যখন প্রথম বার বিয়ে হয়েছিলো, তখন সে পিছনে ফেলে গিয়েছিলো তার খেলার সাথী, খেলার পুতুল আর শৈশবের স্মৃতি। কিন্তু এবার হামিদা ফেলে গেলো একজন অবুঝ পুত্র যে জীবনের কোনো কিছুই বুঝে না। হয়তো সে মা কি জিনিষ তাইই বুঝে না আর বিচ্ছেদ কি জিনিষ সেটা তো তার বুঝবারই কথা নয়। বিল্লাল রয়ে গেলো কেরামত আলীর তত্তাবধানে। বিল্লালের বয়স সবেমাত্র তিনও পূর্ন হয় নাই।  এখন বিল্লাল পুরুই অনাথ, শুধু তার চারিপাশে রইলো কেরামত আলী, আর তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এই অনাথ ‘বিল্লাল’ নামক পুত্রের এখন কি হবে? সে তো আগেই তার পিতাকে হারিয়েছে, আর আজ হারালো তার মাকে, যদিও তার মা জীবিত। মায়ের নতুন সংসারে তার জায়গা নেই।

ওই যে বললাম, স্রিষ্টিকর্তা বড়ই রহস্যময়। হামিদার বাড়ির আলুকান্দার কাছেই ছিলো আরেক গ্রাম, তার নাম ঘোষকান্দা। সেখানেই স্রিষ্টিকর্তা আরেক ধনাঢ্য এক পরিবারকে রেখেছেন অতীব মানসিক কষ্টে। তাকে ঈশ্বর সম্পদের পাহাড় দিয়েছেন, তাকে সুসাস্থ্য দিয়েছেন, আর দিয়েছেন সমাজে প্রতিপত্তিদের মধ্যে সম্মান আর যোগ্যস্থান। কিন্তু তাকে ঈশ্বর যা দেন নাই সেটা হলো কোনো উত্তরাধীকারী। সন্তানহীনা অবস্থায় মানসিকভাবে এই দম্পতি এতোটাই কষ্টে ছিলেন যে, তাদের না আছে কোনো সন্তানসন্ততী, না আছে কোনো উত্তরসুরী। এই ধনাঢ্য পরিবারের হর্তাকর্তার নাম ‘ইদ্রিস আলী’। তিনি কিংবা তার স্ত্রী সন্তান জন্মদানে অক্ষম ছিলেন কিনা কেউ জানে না, কিন্তু ঈশ্বর হয়তো অন্য কোনো নেশায় তাদের এই ঘর পরিপূর্ন খালী রেখেছিলেন এমন একজন অসহায় মানবের জন্য যার বিপক্ষে দোষারুপ করার কোনো ওজরের কমতি ছিলো না। তাদের অন্তরে ঈশ্বর সব ভালোবাসা রচিত করেছিলেন ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য, লালিত করেছিলেন এক অদম্য স্পৃহা কিন্তু সেই ভালোবাসা আর স্পৃহা বারংবার শুন্য ঘরেই বাতাসের মধ্যে হারিয়ে যেত সকাল সন্ধ্যায় কিংবা অলস দুপুর কিংবা বর্ষার কোনো ঋতুতে। কষ্ট ছিলো, আখাংকা ছিলো কিন্তু সন্তান লাভ এমন নয় যে, বাজারে গেলেন, দোকান খুজলেন আর পছন্দমত একজন সন্তান কিনে এনে তাকে বড় করতে শুরু করলেন। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে এটা দেখা যায় যে, কারো কাছে কোনো মানুষ হয়তো খুবই অপাংতেয়, বোঝা, উপদ্রব, কেউ হয়তো তার দিকে এক নজর নাও তাকাতে পারে। হতে পারে সেই মানুষটা এক পরিবারের জন্য বোঝা, কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোথাও কেউ হয়তো ওই অপাংতেয় মানুষটির জন্যই অধীর চিত্তে অপেক্ষা করছে কখন তার আগমন ঘটবে। তাকে পাওয়াই যেনো সমস্ত সুখ আর শান্তির উৎস খুজে পাওয়া। ঈশ্বর এই দুটো ঘটনাই পাশাপাশি ঘটাচ্ছিলেন বিল্লালকে কেন্দ্র করে।

হামিদা চলে যাওয়ার পর হামিদা যেমন মনের ভিতরে সন্তান বিচ্ছেদে কাতর ছিলেন, তেমনি হামিদার বাবা কেরামত আলীও এই অবুঝ বালককে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি করা যায় সেই চিন্তায় কাতর ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কেরামত আলী তার ভায়রা গনি মাদবরের সাথে পরামর্শ করে বিল্লালকে পালক দেয়ার কথা চিন্তা করলেন। আর এতেই যেনো ইদ্রিস আলীর পরিবারে নেমে আসে সেই কাংখিত শুভ সংবাদ যিনি তাকে দত্তক নিতে আগ্রহী। কালক্ষেপন না করে ইদ্রিস আলীর পরিবার যেনো সর্গ থেকে নেমে আসা এক ফুটফুটে পুত্রসন্তান লাভ করে ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করলেন আর নিয়ে গেলেন হামিদার বুকের সবচেয়ে আদরের ধন ‘বিল্লাল’কে। হামিদার দ্বিতীয় বিয়ের কারনে হামিদার পুত্র বিল্লালকে ইদ্রিস পরিবার যেনো অযাচিত এক ধনের সন্ধান পেলেন। নিজেদের বংশমর্যাদা আর পিতৃপরিচয়ে বিল্লালকে আগাগোড়া মুড়ে দিলেন ইদ্রিস আলী পরিবার। কোনো কিছুর কমতি রাখলেন না তারা তাদের এই হাতে পাওয়া সন্তানের জন্য। কিন্তু মা তো মা-ই। সমস্ত কাজের ফাকে, নিজের অবসর সময়ে বারবারই তো মনে পড়ে হামিদার সেই নাড়িছেড়া সন্তানের জন্য। কিন্তু কি ক্ষমতা আছে তার? না সে সমাজের বিপক্ষে কিছু করতে পারে, না সে সমাজের আইনকে থোরাই কেয়ার করতে পারে। হতাশাগ্রস্থ নেশাখোরের মত ক্ষনেক্ষনেই মা হামিদা নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়তেন বিল্লালের জন্য। কখনো একাই কাদেন, কখনো একাই ভাবেন, আবার কখনবো এইকথা মনে করে শান্তি পান যে, অন্তত তার নাড়িছেড়া ধন কারো জিম্মায় ভালো আছে যারা তার এখন পিতামাতা।

হামিদার নতুন সংসারে সময়ের রেষ ধরে আমাদের জন্ম হতে থাকে একের পর এক সন্তান। আগের স্ত্রীর ঔরসে জন্ম নেয়া পুত্র-কন্যাদের পাশাপাশি হামিদার ঔরসে ক্রমেক্রমে আরো পাচ কন্যা আর দুই পুত্রের আগমন হয়। কেরামত আলী হামিদার নতুন সংসারের যেমন খোজ রাখেন, তেমনি খোজ রাখেন ইদ্রিস আলির পরিবারে দত্তক নেয়া বিল্লালেরও। হামিদা যখন বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে, তখন হামিদার সৌভাগ্য হয় তার ছেলে বিল্লালকে চোখে দেখার। মা ছেলের এই মিলন বড় সুখের বটে কিন্তু বেদনারও। ফিরে যাওয়ার দিন হামিদার চুমু খাওয়া বিল্লাল হয়তো কিছুই বুঝতে পারে না কি কারনে এই মহিলার চোখে জল আসে। বুঝতে পারে না কেনো বিল্লালের মা কিংবা তার বাবা ইদ্রিস আলী এই মহিলার কাছে এতো ঋণী। শুধু এটুকু বুঝতে পারে মহিলাটা এমন কেউ যাকে পেলে বিল্লালও খুশী হয়। হামিদা বিল্লালকে নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দেয়, গোসল করিয়ে সুন্দর জামা পড়িয়ে দেয়, আর খুব মিষ্টি করে মাথার চুল আচড়ে দিয়ে কখনো কখনো তার বুকে মাথা রাখতে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। হয়তো এই আদরগুলি বিল্লালকে বারবার মহিলার প্রতি বিল্লালের আকর্ষন বাড়িয়ে দেয়। যেদিন হামিদা আবার তার সংসারে চলে যায়, বিল্লালেরও খুব মন খারাপ হয়। (চলবে) 

৮/০১/২২- জাহাঙ্গীরের পেপার কাটিং

আমার কোর্ষমেট মেজর অবঃ প্রাপ্ত জাহাঙ্গীর এক সময় ইউএন এ জব করতো। হটাত করে সে কেমন যেনো রেডিক্যাল মুসলিমে পরিনত হয়ে গিয়েছিলো। ব্যাপারটা আমরা ওকে অনেক সময় ধরে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, আসলে সে যেটা ভাবছে সেটা একটা মেন্টাল ডিস অর্ডার। এই কনভিন্স করার পিছিনে সবচেয়ে কাছে ব্যক্তি ছিলো আমার আরেক কোর্ষমেট মেজর ইকবাল (নিপু)। শেষ পর্যন্ত জাহাংগীর ওর ভুলট বুঝতে পেরেছে এবং এখন নেপালে থাকে, খুব সাদাসিদা জীবন। 

জাহাঙ্গীর সেই সময়ে যে পাগলামিটা করেছিলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা নিউজ পেপার কাভারেজ হয়। সেটা এটাঃ 

১৩/১২/২০২১-ইতিহাস থেকে যারা (ফেসবুক)

ইতিহাস থেকে যারা শিক্ষা নেয় না, তাদের পতন বারবার ইতিহাসের সেই একই ধারায় হয়। ঘসেটি বেগমের কারনে, কিংবা মীর জাফরের কারনে, অথবা সেই মায়মুনা কুটনীর কারনেই এই পৃথিবীর অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর জীবনমান অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গিয়েছিলো। তাদের লোভ, তাদের লালসার জিব্বা এতো বড় ছিলো যে, তারা সারাটা দুনিয়া হা করে গিলে ফেলতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের পেট এতো বড় ছিলো না যে, গোটা বিশ্ব সেই পেটে ধারন করে। ফলে অধিক ভূজনের রসাতলে ন্যয্যভাবে হাতে আসা সব সম্পদ, ক্ষমতা আয়েস করার আগেই তাদের এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে অকালেই প্রান দিতে হয়েছে, অথবা মানুষের হৃদয় থেকে। আর যারা বেচে থাকে তারা ওইসব হায়েনাদের কারো কারো নামের আগে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য যোগ করে দেয়, "নিমকহারামের দেউড়ি", কিংবা "কুটনা বুড়ী আস্তনা" অথবা "হারামখোরের আস্তানা"। আজো তারা এইসব নামেই পরিচিত। কখনো দেখবেন না যে, মীর বংশের কোন বাচ্চার নাম জাফর রাখা হয়েছে। যদিও জাফর বড্ড সুন্দর একটা নাম। কিন্তু মীরজাফর একটা কুলাংগারের নাম। ওর বংশধরেরা আজো তার নামে কলংকিত বোধ করে।

অথচ যুগে যুগে ভিন্ন রুপে এখনো মীরজাফরের থেকেও খারাপ মানুষ এই সমাজে আছে, ঘসেটি বেগমের থেকেও ষড়যন্ত্রকারিনী এখনো অনেক ঘরেই আছে, মায়মুনা কুটনীর মতো মোনাফেক এখনো আমাদের চারিধারে বিধ্যমান। ওদের চেনা কঠিন কারন এইসব মানুষেরা বর্নচোরার মতো আমাদের চারিদিকে একটা আবরন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ভাল মানুষের মতো। সুযোগ পেলেই ছোবল দেবে এবং দেয়, আর এদের এক ছোবলে ধংশ হয়ে যেতে পারে আমার আপনার বহুদিনের বন্ধন, বহুদিনের সম্পর্ক।

১৩/১২/২০২১-একই খবর কারো কাছে শুভ

একই খবর কারো কাছে শুভ আবার কারো কাছে অশুভ হতে পারে। একই জায়গায় মিলিত হওয়া মানুষের রাস্তা আলাদা আলাদা হতে পারে। একই পরিস্থিতিতে একজন জীবনে এগিয়ে চলে, আবার আরেকজন জীবনের অসহায় অবস্থার সাথে বোঝাপড়া করে। কেউ কেউ বিন্দু বিন্দু অর্থ সঞ্চয় করে নিজের সপ্ন পুরন করে, অন্যজন তার গড়া সপ্ন বিন্দু বিন্দু ভুলের কারনে নিরুপায় অবস্থায় জন্য তার সপ্ন ভাংতে শুরু করে।  

কোনো অপরাধই রাতারাতি জন্ম নেয় না। যখন কোনো অপরাধ হয়, তখন আমরা শুধু তার উপরের রুপটাই দেখতে পাই। কিন্তু তার শিকড় অন্য কোথাও অনেক গভীরে হয়। আর শিকড়ের সন্ধ্যান হয় পুলিশ করে অথবা কোনো সচেতন মানুষ। পুলিশ যখন তদন্ত করে তখন প্রতিটি মানুষকে সে যেভাবে দেখে তা হল, সবাই মুখোশ পড়া ক্রিমিনাল। আর তাই সে যখন আসল জিনিষ বের করতে চায়, সে কাউকেই কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ। আর এ কারনেই হয়তো অনেকেই বলে- বাঘে ছুলে ১৮ ঘা আর পুলিশ ছুলে ৭০ ঘা!!

বিদ্বেষ হিংসা ভালোবাসা আর ঘৃণা এগুলি এমন কিছু আবেগ যা প্রতিটি মানুষের মাঝে পাওয়া যায়। সুযোগ সন্ধানী হওয়াও একটা আবেগ। সুযোগ সন্ধানী হওয়া কোনো খারাপ বিষয় নয়, কিন্তু তার জন্য কিছু সীমা থাকে, কিছু নীতি থাকে। কারো ক্ষতি করে, কারো অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে মানুষ কখনো সামনের দিকে এগুতে পারে না। বাবলা গাছ লাগিয়ে যদি কেউ ভাবে তাতে ফুল ফুটবে, সেটা কোনো পাগলামোর থেকে কম নয়। অবৈধ কোনো শুরু থেকে কোনো সম্পর্ক কখনো বৈধ হতে পারে না, না পারে সেখানে কোনো বৈধ কোনো ফলাফলের আশা। খারাপ পরিস্থিতি, খারাপ মানুষ আর খারাপ ফল এগুলি থেকে পার্থক্য করা শিখতে হবে যে কোনটা আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় আর কোন বিশয়টা ব্যক্তিগত বিষয় থেকে আইনের দরজায় নিয়ে যেতে পারে। যখন কোনো মানুষের পরিস্থিতি ঠিক এটাই হয়, তখন অন্যান্য দিনের মতো সকালটা আর তেমন থাকে না যেমন ছিলো আগের কোনো সকালের মতো, না তার সন্ধ্যাটাও আগের মত পরিচিত মনে হয়। পুলিশের প্রথম কাজ হয় ‘এক শান রিপ্লে তৈরী করা’। যেখানে তারা একে একে ক্রিমিনালের সম্ভাব্য সব ক্রিমিনাল পলিসি বিরুদ্ধে পুলিশের করনীয়। ফলে পুলিশ খুব সহজেই ক্রিমিনাল প্লানের একটু এগিয়েই থাকে।

নিজেদের মধ্যে যখন কেউ হিংসা হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন আসলে সেটাই হয় যা রক্তের সাথে রক্তের পাল্লা। ক্ষতি হয় শুধু নিজেদের রক্তের। তাহলে এই খেলায় কে জিতে? কেউ না।

মহিলাদেরকে আমরা দেবীর সমান তুলনা করে থাকি কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে লাগাতার অন্যায় আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এমন অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। প্রকাশ্যে কোনো মিহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয়, নির্যাতন করা হয়, ধর্ষন করা হয় অথচ কেউ এগিয়ে আসে না।

আমাদের এ গ্রামে কতজন পুরুষ আর কতজন মহিলা আছে কিংবা কতজন ছেলে আর কতজন মেয়ে আছে এটা কি কোনো প্রশাসন বলতে পারবে? যদি ছেলে আর মেয়ের এই অনুপাত জানা যায়, তাহলে আমাদেরকে নজর দেয়া উচিত সেই জায়গায় যেখানে কতটুকু উন্নতি করা দরকার।

২/১২/২০২১-পায়ের নীচে পাথরহীন

জীবনের কাছে রাখা সব উত্তর সবসময় তার প্রশ্নের ন্যায় বিচার করে না। বিশেষ করে প্রশ্নটা যখন এমন হয় যেটা মনকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খায়, আর হৃদয়কে ছুড়ি দিয়ে ফালা ফালা করে দেয়। কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর যখন কারো জীবনের নাশ হয়ে দাঁড়ায় তখন সেই উত্তরের শেষ পরিনতি সম্পর্কে উত্তারদাতার অনেক ভেবেচিন্তে দেয়া উচিত। আমার জীবনেও এমন একটা সময় এসেছিলো। আমার সব প্রশ্নের উত্তর হয়তোবা কারো জীবনের নাশ হবার সম্ভাবনাই ছিলো, ফলে উত্তরদাতা হিসাবে আমি কোনো উত্তরই দেওয়ার চেষ্টা করিনি। চুপ হয়ে থাকাই যেনো মনে হয়েছিলো-সর্বোত্তম উত্তর। আমি সেই “চুপ থাকা” উত্তরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে এমন পরিবেশটাই তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলাম যেনো “কিছুই না ব্যাপারটা”। কিন্তু “ব্যাপারটা” যতো না সত্য ছিলো তার থেকেও বেশী ছিলো “চাপ” আর এই “চাপ” তৈরী করার পিছনে যারা কাজ করেছিলো তারা আর কেহই নয়, আমার দ্বারা পালিত সেই সব মানুষগুলি যাদেরকে আমি ভেবেছিলাম, তারা আমার সব “ওয়েল উইশার্স”। কিন্তু আমার আরো কিছু মানুষ ছিলো যারা আমার জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে এমন করে জড়িয়েছিলো যারা আমার হাড় আর মাংশের মতো। আলাদা করা দুরুহ। সেই হাড় আর মাংশের মতো একত্রে মিলিত মানুষগুলি একটা সময়ে সেইসব তথাকথিত “ওয়েল উইশার্স”দের চক্রান্তে তাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে বিগড়ে গিয়েছিলো যে, তাদের “সন্দেহ” টাই যেনো এক সময় তাদের অবচেতন মনে “বিশ্বাসে” পরিনত হয়। আর এই মিথ্যা “বিশ্বাসে” তাদের চারিপাশের শান্ত বাতাসগুলিও যেনো প্রচন্ড ঝড়ের চেহাড়া নিয়ে একটা কাল বৈশাখীতে রুপ নিয়েছিলো। কেউ বুঝতেই চাইতেছিলো না যে, এর শেষ পরিনতি বড়ই ভয়ংকর।

তবে আমি জানতাম সত্যিটা কি। কিন্তু ওইসব পরিস্থিতিতে আমার সব সত্য জানাটাই সঠিক এটা কাউকে যেমন বিসশাস করানো যায় নাই, তেমনি আমিও তাদেরকে বিশ্বাস করাতে চাইওনি। শুধু অপেক্ষা করেছিলাম-কখন ঝড় থামবে, কখন আকাশ পরিষ্কার হবে, আর দিবালোকের মতো সত্যটা বেরিয়ে আসবে। “সময়” পার হয়েছে, ধীরে ধীরে মেঘ কেটে গেছে, আমি আমার সাধ্যমতো সবকিছু আবার গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। গুছিয়েও ফেলেছি সেইসব ক্ষত বিক্ষত আচড়গুলি। কিন্তু আমি এই অযাচিত ঘটনায় একটা জিনিষ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলাম যে, মনুষ্য জীবনে আসলে কেউ কারোই নয়। আমরা বাস করি শুধু আমাদের জন্য। একা থাকা যায় না, তাই সমাজ, একা থাকা যায় না, তাই পরিবার। একা অনেক অনিরাপদ, তাই সংসার। কিন্তু এই সমাজ, এই সংসার কিংবা এই পরিবার কোনো না কোন সময় ছাড়তেই হয়, আর সেটা একাই। এই মিথ্যে সমাজ, পরিবার আর সংসারের নামে আমরা যা করি তা নিছক একটা নাটক। জংগলে বাস করলে একদিন সেই জংগল ছাড়তেও কষ্ট হয়। এরমানে এই নয়, আমি জংগলকেই ভালোবাসি। কথায় বলে-ভালোবাসা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর অনুভুতি, আর এটা যদি বেচে থাকে তাহলে হিংসা, বিদ্বেষ থেকে মানুষ হয়তো মুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু আমরা যারা এই সমাজ নামে, পরিবার নামে, কিংবা সংসার নামে চিহ্নিত করে ভালোবাসার জাল বুনে থাকি সেটা আসলে কোনো ভালোবাসাই নয়। সেখানে থাকে প্রতিনিয়ত নিজের সার্থের সাথে অন্যের লড়াই। অন্যঅর্থে সেটা একটা পাগলামী, লালসা কিংবা একা বাচতে চাওয়ার অনিরাপদের একটা অধ্যায় মাত্র। অথচ আমরা প্রত্যেক মুহুর্তে আমাদের এই নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখার জন্য অনেক অপবাদ, অনেক ভয়ংকর বাধা আর মৃত্যুর মতো রিস্ককে বরন করে থাকি। এ সবই আসলে নিজের সার্থে।

যাই হোক যেটা বলছিলাম, আমার সেই ফেলে আসা অভিজ্ঞতার আলোকে আমি ধীরে ধীরে সে সব “ওয়েল উইশার্স” দেরকে নিজের বেষ্টনী থেকে দূরে রাখার প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছি। আমি একটা মুহুর্তেও সেই সব দিনের ক্ষত বিক্ষত হবার বেদনার কথা ভুলি নাই। যখনই সেই ব্যথার কথা মনে হয়েছে- আমি বারবার আরো শক্ত হয়েছি। আমি জানি কন এক সময় আবারো তাদের আমার প্রয়োজন হবে, আবারো তারা আমাকে আকড়ে ধরার চেষতা করবে, আবারো তারা তাদের মিথ্যা চোখের পানি ফেলে আমাকে আবেশিত করার চেষ্টা করবে। আমি ততোবার নিজেকে বারন করেছি-আর যেনো সেই একই ফাদে পা না বাড়াই। তাহলে সেটা হবে আমার জীবনের জন্য কালো আধ্যায়।

ওরাও হয়তো ভেবেছিলো- কোনো প্রয়োজন নাই আর আমাকে। আমি কোন দুঃখ পাইনি। শুধু ভেবেছি, খুব ভালো যে, তারাই গুটিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এই প্রিথিবীর সবচেয়ে বড় বিপত্তি এই যে, বড় বট বৃক্ষের প্রয়োজন কখনো কোনোদিন কোনো কালেই ফুরিয়ে যায় না। হোক সেটা হাজার বছরের পুরানো কোনো বৃক্ষ।

আজ সেই দিনটা এসেছে। অথচ আজ আমার সব দরজা এমন করে খিল দিয়ে আটকানো যে, না আমি খুলতে চাই, না খোলার প্রয়োজন মনে করি। পৃথিবীতে নিমক হারামের চেয়ে বড় পাপ অথবা বড় বিশ্বাসঘাতকরা আর নাই। যে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কেউ আকাশ দেখে, সেই পাথকে যত্ন করে রাখতে হয়। যদি অযত্নে সেই পাথর কোথাও হারিয়ে যায় বা ব্যবহারের আর উপযোগি না হয়, তাহলে আকাশ যতো সুন্দরই হোক না কেনো, তাকে দেখার ভাগ্য আর হয় না। যদি কেউ আজিবন আকাসের জ্যোৎস্না, আকাসের তারা আর নীল আকাশের মধ্যে তারার মেলা দেখার ভাবনা থাকে, তাহলে সেই পাথকে অতোতাই যত্ন করা দরকার যতোটা মনে হবে তার মনের শখের দরকার। তা না হলে চোখের জলে বুক ভাসবে ঠিক কিন্তু কেউ তার নিজের পাথর দিয়ে তার আকাশ দেখা বন্ধ করে অন্যকে পাথর দিয়ে সাহাজ্য করে না। এতাই নিয়ম।

আজ তারা সেই পাথরটাকে হারিয়ে ফেলেছে বন্ধ দরজার অন্ধকার ঘরে। যেখানে না যায় দরজা খোলা, না যায় পাথরে পা রাখা। তোমাদের জন্য নতুন আরেক অধ্যায় শুরু। এবার এই দুনিয়াটাকে বড্ড অসহায় মনে হবে তোমাদের। তোমাদের প্রতিন মনে হবে- তোমরা কোথায় কি পরিমান ক্ষতি নিজেদের করেছো যার সমাধান কখনোই তোমাদের হাতে ছিলো না। তোমরা ভেবেছিলে- তোমাদের জন্য মায়ের চেয়ে মাসির দরদ সম্ভবত অনেক বেশী। কিন্তু এই দুনিয়ায় আজ পর্যন্ত মায়ের চেয়ে মাসির দরদ কখনোই বেশী ছিল বলে এটা কেউ যেমন প্রমান করতে পারে নাই, আর এতা সত্যও নয়। যদি সেটাই তোমরা মনে করে থাকো- তাহলে আজ তোমাদের সেই মাসির কাছেই তোমাদের সমস্ত কিছু আবদার, চাহিদা, কিংবা সাহাজ্য চাওয়া উচিত যাকে তোমরা বিনাবাক্যে মনে করেছো, লিডার অফ দি রিং। দেখো, সেই লিডার অফ দি রিং তোমাদের জন্য কোনো সাহাজ্য পাঠায় কিনা। আমার দরজা তোমাদের জন্য আর কখনোই খোলা হবে না। আমি শুধু দেখতে চাই, আসলেই তোমরা কাকে চেয়েছিলে? কার উপরে তোমাদের এতো নির্ভরশীলতা ছিলো আর কার গলায় পা রেখে শ্বাস রোধ করেছিলে। আমি তো সেদিনই মরে গেছি যেদিন তোমরা আমাকে আমার অজান্তে পিছন

২২/১১/২০২১-এসআইবিএল-২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী

আমার ব্যবসার জন্মলগ্ন থেকেই একটি মাত্র ব্যাংকেই আমি সমস্ত ব্যবসায়ীক লেনদেন করে এসছি। আর সেটা হলো এসআইবিএল ব্যাংক। আমি অবশ্য এসআইবিএল এর প্রধান কার্যালয়ের সাথে ব্যবসায়ীক লেনদেন করলেও হাসনাবাদ সুপার মার্কেটের এসআইবিএল শাখার সাথে আমাদের ফ্যাক্টরীর সম্পর্ক হচ্ছে আত্মার সাথে আত্মার মতো। ডোর টু ডোর প্রতিষ্ঠান। আমার প্রায় প্রতিটি ষ্টাফ এই ব্যাংকের গ্রাহক। আজ এই ব্যাংকের ২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ছিলো। গতকালই আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ  ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম ভাই নিজে এসে আমাকে দাওয়াত করে গিয়েছিলেন যেনো আজকের দিনটায় অন্যান্য দিনের চেয়ে অফিসে একটু আগে এসে তাদের এই মহান দিনটির সাথে আমি শরীক হই। অনেক চমৎকার একটা বিশাল কেক কেটে এই মহান দিনটাকে এসআইবিএল ব্যাংক স্মরণ করেছে। আমি নিজেও গর্বিত এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করায়।

ধন্যবাদ নিজাম ভাই, ধন্যবাদ সব কলিগ ভাইদের।

৫/১১/২০২১-প্যারাডাইম শিফট

যখন সাভাবিক কোনো চিন্তাচেতনা কিংবা কার্যক্রম অন্য কোনো নতুন নিয়ম বা চিন্তা চেতনা দ্বারা সম্পন্ন হতে দেখা যায়, তখন এই প্রতিস্থাপিত নতুন পরিবর্তিত চিন্তা চেতনাকেই প্যারাডাইম শিফট বলা যেতে পারে। অন্যঅর্থে যদি বলি- এটা হচ্ছে একটা মডেল, তত্ত্ব, বা দ্রিষ্টিভঙ্গি, ধারনা, কিংবা দৃষ্টান্ত যা প্রকৃত তত্ত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি, কিংবা মডেল থেকে আলাদা। প্যারাডাইমটা আসলেই আসল জিনিষ না, এটা একটা মানষিক ভাবনার সাথে প্রকৃত সত্যের একটা শুধু ছবি। কোনো একটা জিনিষের ব্যাপারে আমরা যা ভাবছি, বা দেখছি এর সাথে সেই জিনিষটার যে রকম প্রকৃত বৈশিষ্ট , এই দুয়ের মাঝেই থাকে প্যারাডাইম তত্তটি। এই প্যারাডাইম দিয়ে মানুষ কোনো একটা ধারনা, চিন্তা চেতনা, কিংবা কোনো একটি জিনিষের ব্যাপারে একটা ধারনা পায়।

কিন্তু প্যারাডাইম শিফট অনেক বড় জটিল। প্যারাডাইম শিফটের মাধ্যমে কোনো একটা তত্ত্ব, চিন্তাচেতনা বা দ্রিষ্টিভঙ্গি পুরুটাই পালটে যায়। একটা উদাহরণ দেই- ধরুন আপনি একটা লোকের চেহাড়া দেখে ভাবলেন যে, সে একটা নিশ্চয় ভয়ংকর সন্ত্রাসী। আপনার মন তাকে সেভাবেই ট্রিট করছে, সেভাবেই আপনি তাকে ওই খারাপ মানুষদের মধ্যে লিষ্ট করে ফেলেছেন। অনেকপরে যখন জানলেন যে, লোকটা ছিলো খুবই ভদ্র, ভালো ও খুবই অমায়িক এবং পরোপকারী। তখন আপনি অনেক মনোকষ্টে ভোগবেন। আফসোস হবে। এই যে নতুন ভাবনা আপনাকে আগের চিন্তাচেতনা থেকে হটাত করে ১৮০ ডিগ্রী উলটে গিয়ে আরেক নতুন প্যারাডাইমে নিয়ে আসছে, এটাই হলো প্যারাডাইম শিফট।

থমাস কুন তার বিখ্যাত-“দি স্রাইাকচার অফ সায়েন্টিক রেভ্যুলেশন” বই এ প্রথম প্যারাডাইম শিফট শব্দটি চালু করেন। প্যারাডাইম যার যতো বেশি নিখুত, তার প্যারাডাইম শিফট ততো কম। আর যাদের এই প্যারাডাইম কোনো কিছুর ব্যাপারে প্রায় কাছাকাছি থাকে, তারা আসলেই জ্ঞানী এবং বাস্তববাদী। বর্তমান জগতে মানুষের প্যারাডাইম অনেক অনেক সত্যের থেকে বেশী দূরে বিধায়, আমাদের সমাজে গন্ডোগোল বাড়ছে।

১৯/১০/২০২১-হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া

আমি মর্মাহত, আমি আহত, আমি অসুস্থ্য। আমার কোনো ভাষা নাই কোনো মন্তব্য করার। শুধু মন খারাপ হচ্ছে, আর কষ্টে ভোগছি।  

গতকাল পেপারে দেখলাম, রংপুর পীরগঞ্জে হিন্দুদের একটি গ্রাম রাতের অন্ধকারে কে বা কারা পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাই না যে, কে বা কারা এটা করেছে। সাম্প্রদায়িক হামলা কখনোই হটাত করে সংঘটিত হয়না। এরও একটা মাষ্টারমাইন্ড থাকে, একটা মাষ্টার প্ল্যান থাকে যা দিনের পর দিন কারো না কারো ছত্রছায়ায় সঠিক দিন তারিখ ধার্য করেই তার বাস্তবায়ন করা হয়। আমরা কি এতোটাই পিশাচ হয়ে গেছি যে, একই গ্রামে, একই এলাকায় পাশাপাশি হিন্দু মুসলিম যুগের পর যুগ একত্রে বসবাস করার পরেও শুধুমাত্র ভিন্ন মতালম্বি ধর্মের কারনে আমার সেই চেনা বন্ধু, আমার সন্তানের সেই চেনা খেলার সাথী, কিংবা যে ঠাকুরমা আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে তার ঈশ্বরের কাছে আমার মংগলের জন্য দোয়া করেছেন, তাকে অতর্কিত হামলায় এক নিঃশ্বাসে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে পারি? একবারও অন্তরে দাগ কাটে না যে, এটা ধর্মের উপর নয়, এটা মানবতার উপর চরম আঘাত? এটা কিছু নীরিহ এবং অসহায় মানুষের উপর অত্যাচার?  

একবার ভাবুন তো, যে বাড়িগুলিতে আগুন দেয়া হয়েছে, সেখানেও আমার ছেলে-মেয়েদের মতো ছেলে-মেয়েরা রয়েছে, তাদের শখের অনেক কিছু সাজানো ছিলো, দিনের পর দিন সে তার জীবনকে সুন্দর করার জন্য কতই না সময় ব্যয় করেছে, তার স্বপ্ন বিছানো আছে সেখানে পড়তে পড়তে। ঐ বাড়িতে আমার বৃদ্ধ মায়ের মতো কিংবা আমার দাদার নানার মতো একজন মা কিংবা বাবা অথবা ঠাকুরমা রয়েছেন। কি দোষ করেছেন তারা? তারা শুধুমাত্র ভিন্ন ধর্মালম্বি বলেই কি অপরাধী? তাহলে প্যালেষ্টাইন পুড়ছে, সেটা দেখে আমাদের খারাপ লাগে কেনো? নিউজিল্যান্ডে বোমার আঘাতে মুসল্মান মরছে, সেটা দেখলে আমাদের খারাপ লাগে কেনো? তারাও তো একই অপরাধ করে যাচ্ছে। নীরিহ এবং অসহায় মুসলমানদের উপর অত্যাচার করছে। একবার ভাবুন তো, যদি ঐ বাড়িটা যারা আগুন দিয়েছে তাদের হতো, তাদের কেমন লাগতো? তার প্রিয় আদরের মেয়ে, বা ছেলে ভয়ে ধান ক্ষেতে সারারাত পালিয়ে দেখছে তাদের ঘর পুড়ছে, তাদের বই খাতা পুড়ছে, তাদের সবকিছু পুড়ে যাচ্ছে, আর তার সাথে সেও দেখছে যে বাড়িতে আগুন লাগার ধংসাত্তক পরিস্থিতি? একবারও কি তারা এসব ভেবেছে? কি নির্মম।

আমার ৫৫ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এদেশের হিন্দুরা রোজার দিনেও প্রকাশ্যে আমাদের রোজাকে সম্মান দেখিয়ে দিনের বেলায় কোনো খাবার খেতে চায় না। এদেশের হিন্দুরা অন্য দেশের হিন্দুদের মতো নয়। আমার অনেক অনেক হিন্দু বন্ধু আছে, খ্রিষ্টান বন্ধু আছে, আমার তো কখনো এটা মনে হয়নি যে, ওদের প্লেটে আমার খেতে খারাপ লাগে, না ওরা কখনো এটা ভেবেছে। আমার বাসার কোনো পারিবারিক দাওয়াতে তো কিছু মানুষ হলেও হিন্দুরা থাকেন যেমন আমি থাকি তাদের অনুষ্ঠানে। কখনো তো আমি এর কোনো ডিসক্রিমিনেশনে ভোগি নাই? আমার দূর যাত্রায় যখন কোনো হিন্দু বন্ধু বা ভাই সাথে থাকেন, আমি তো তাকেই দাড় করিয়ে কোথাও নামাজে রত হই কিংবা সেও কোনো এক মন্দিরে আমাকে পাশে দাড় করিয়ে একটু প্রনাম করে আসে। কখনো এটা আমার কাছে কোনো প্রশ্নের উদয় হয় নাই। সব ধর্মের মধ্যেই কেউ না কেউ উগ্র থাকে কিন্তু সেটা তো সামগ্রিক জনগোষ্ঠি দায়ী নয়।

আমার প্রানপ্রিয় সন্তান যখন কোথাও অসহায় অবস্থানে পড়ে যায়, আর সেই অপরিচিত স্থানে যখন সে তার পরিচিত কোনো হিন্দু মানুষের দেখা পায়, সে তো তার কাছেই ছুটে যাবে কোনো না কোনো সাহাজ্যের জন্য। সেখানে তো কোনো ধর্ম কাজ করে না? তাহলে আজ আমরা কি দেখছি? কারা তারা যারা আমারই সন্তানতুল্য বাচ্চাদের, ঠাকুরমার বয়সি মুরুব্বিদেরকে এবং তাদের আবাসস্থলে এভাবে আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দিলো। আর কি অপরাধে তাদের এই শাস্তি? কেউ যদি আমাকে আমার কোরআন ধরে শপথ করিয়েও এটা বিশ্বাস করাইতে চায় যে, শারদিয় পুজায় হিন্দুরা আমাদের পবিত্রগ্রন্থ কোরআনকে কোনো এক দেবীর পায়ের নীচে পদদলিল করেছে, আমি কস্মিঙ্কালেও এটা বিশ্বাস করতে চাই না। তারা এমন নয়। তারাও আমার পবিত্রগ্রন্থকে সম্মান করে। এসব একটা উগ্র মানুষের কাজ, আর সে কাজে অবশ্যই কেউ না কেউ মদদ দিয়েছিলো।

আমরা সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু নিয়ে কথা বলি। এটাও একটা ভেদাভেদের মতো। এদেশ যেমন আমার, এদেশ তাদেরও। তারা সংখ্যায় কম এটা কোনো অপরাধ নয়। এই অপবাদ মারাত্তক অন্যায়ের যোগান দেয়। আমি অসুস্থ্য হলে তাহলে কেনো হিন্দু- মুসলমান ভেদাভেদে ডাক্তার বিবেচনা করি না? আমি স্কুল কলেজে শিক্ষা নেয়ার সময় তো হিন্দূ শিক্ষক আর মুসলমান শিক্ষকের কোনো ভেদাভেদ করি না? আমি আকাশ পথে ভ্রমনের সময় কেনো হিন্দু মুসলিম পাইলটের বিবেচনা করি না? আমি ব্যবসা করার সময় হিন্দু মুসলিম কেনো বিবেচনা করি না? আমি যখন যুদ্ধে যাই, তখন আমার পাশের হিন্দু সৈনিকের ব্যাপারে কেনো অপবাদ দেই না? আমি যখন একই নদীতে গোসলে যাই, তখন সেই নদীতে হিন্দু মুসলিমের গোসলে কেনো কোনো প্রকার অসস্থি বোধ করি না? অথচ যেই না ধর্মের কথা উঠলো, তারা সনাতন কিংবা আমার ধর্মের না, তাই তারা আমার বিপক্ষের মানুষ। এটা কোনো সুস্থ্য মানুষের চিন্তাধারা?

আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আর সমবেদনা জানাই আমার সেসব ভাইদেরকে যাদের আমরা অনেক ক্ষতি করে ফেলেছি। তাদের এই অপুরনীয় ক্ষতি এবং ক্ষত আমরা কিছুতেই পুরন করতে পারবো না জানি, তবে আমার অনুরোধ যে, কেউ তাদের জন্য একটা তহবিল একাউন্ট খুলুন। সরকার যা পারবেন তাদেরকে সহায়তা করবেন জানি, এর সাথে আমরা যারা তাদের জন্য ক্ষত বিক্ষত হচ্ছি, আমরাও কিছুটা শরীক হতে চাই। কেউ এই উদ্যোগটা নিন আর সোস্যাল মিডিয়ায় জানান। আমরা অনেকেই আপনাদের পাশে আছি। উক্ত তহবিল দিয়ে আমরা আবার আপনাদের জীবনকে কিছুটা হলেও ক্ষত্মুক্ত করতে চাই। জানি পারবো না, তারপরেও একটা উদ্যোগ নিন কেউ।

পরিশেষে আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর একটি হাদিস উল্লেখ করতে চাই- “সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকায় সংখ্যালঘু অমুসলিমরা আমানতের মত। যারা তাদের কষ্ট দিবে, কেয়ামতের দিন আমি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে নালিশ করবো (আবু দাউদঃ ৩০৫২)।“  

০৯/০৯/২০২১-১০০ বছর পর আগামীকাল

আজ থেকে ১০০ বছর পর ঠিক এই সময়ে যারা বেচে আছি আমরা, তাদের প্রায় শতভাগ মানুষ আর এই পৃথিবীতেই থাকবো না। হয়তো খুবই নগন্য কিছু সৌভাগ্যবান অথবা অন্য অর্থে দূর্ভাগ্যবানও বলা যেতে পারে, তারা বার্ধক্যের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্ষীনদৃষ্টি আর দূর্বল শরীর নিয়ে হয়তো এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন যা তিনি কখনো চান নাই। যার নাম ‘মৃত্যু’।

ক্যালেন্ডারের পাতা প্রতিদিন পালটে যাবে, তাঁর সাথে সাথে পালটে যাবে তারিখ, মাস, বছর এবং অতঃপর যুগ। কেউ এটাকে আমরা থামাতে পারি না, পারবোও না। আর কেউ পারেও নাই। হোক সে কোনো প্রতাপশালী সেনাপতি, হোক সে চৌকস কোনো রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক। শুধু তাই নয়, কোনো বিজ্ঞান কিংবা কোনো বিজ্ঞানিক, কোনো সর্বোচ্চ পদধারী ধার্মিক নেতা কিংবা দূধর্ষ সাহসী সন্ত্রাসী কেউ এই অমোঘ প্রাকৃতিক নিয়মটাকে উপেক্ষা করে অগোচরেও পরিবর্তন করার কোনো ক্ষমতা রাখে না।

আজ যারা পথে ঘাটে আমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে, তাদের কেউ হয়তো কোট টাই, কেউ হয়তো আধুনিক পোষাক আষাকে, কেউ আবার ফুটপাতে নোংরা চুলে আছেন, আমি তাদের অনেককেই হয়তো চিনিও না আবার হয়তো কাউকে কাউকে আমরা সর্বদাই দেখি, চিনি, এদের কেউও এই নিয়ম থেকে পরিত্রান পাবে না। মহাশ্মশানের সারিসারি পাথরে নাম লেখা কোনো এক নাম ফলকের মধ্যেই আমরা লুকিয়ে যাবো ঠিক সেইস্থানে যার কথা আমরা আজ ভাবতেও পারি না। সেখানে যেমন কোনো আধুনিক পোষাক বলতে কিছু থাকে না, আর না থাকে কোনো ধার্মিক ব্যক্তির আলখেল্লাটাও। অনেকের বেলায় হয়তো সেই নামফলকটাও থাকবে না। কোথায় আছেন তারা, কার জায়গায় আছেন তাঁরও কোনো হদিস হয়তো পাওয়া যাবে না। আজ যে শরীরটাকে প্রতিদিন নোংরা মনে করে দেশী বিদেশী সাবান শ্যাম্পু দিয়ে সুগন্ধী মাখছি, তখন এই শরীরের মধ্যে হাজারো পোকা মাকড়, কর্দমাক্ত মাটি, নোনা জল, অপরিষ্কার জলের সাথে ভেসে আসা দূর্গন্ধময় আবর্জনায় সারাটা শরীর ভেসে গেলেও তাকে আর সুগন্ধী কেনো, সরানোর মতোও আমাদের কোনো শক্তি থাকবে না। শরীরে মাংশ পচে গলে মিশে যাবে মাটির সাথে, হয়তো কোনো এক কুকুর কিংবা শিয়াল আমাদের শরীরের হাড্ডিটি নিয়ে দূরে কোথাও অবশিষ্ঠ মাংশটুকু খাওয়ার জন্য দৌড়ে চলে যাবে অন্যত্র। কার সেই কংকাল, কার সেই হাড্ডি, এই পৃথিবীর কোনো জীবন্ত মানুষের কাছে এর কোনো মুল্য নাই।

যে ঘরটায় আমি সারাদিনের ক্লান্তি শেষে অবসাদ শরীর নিয়ে মুলায়েম বিছানায় গা হেলিয়ে দিতাম, সেই ঘরটা হয়তো থাকবে অন্য কার দখলে। যে বাগানটায় আমি প্রায়ই পায়চারী করে করে আকাশ দেখতাম, গাছ গাছালীর মধ্যে উড়ে আসা ভ্রমর কিংবা পোকামাকড় দেখতাম, সেই বাগানের দখল হয়তো এখন কার দখলে কে জানে। বাগানের গাছ গাছালীর পরিচর্যার নামে যে পোকামাকড়গুলিকে আমি বিষ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করতাম, আমি আজ তাদের দখলে।

যে বাচ্চাদের মুখরীত কোলাহলে আমার ঘর ভরে থাকতো, যাদের আগমনে আমার মন পুলকিত হতো, আজ সেখানে অন্য কেউ মুখরীত হচ্ছে। কতই না সাবধানতায় আগলে রেখেছি সেই ঘর, সেই লন, কিংবা আমার যতো আয়েশী জিনিষ, আজ সেগুলি আমার কিছুই নয়। আমার সুন্দুরী স্ত্রী যখন তাঁর লাল শাড়িটা পরার পর কিংবা আমিই যখন নতুন কোনো একটা ড্রেস পড়ে বারবার আয়নার সামনে গিয়ে কতবার না দেখতে চেয়েছি-কেমন লাগে আমাকে, অথচ আজ সেই আমি বা আমার সেই সুন্দুরী স্ত্রী তাঁর চেহাড়া কেমন দেখায় কাফনের সেই ধবল পোষাকে সেটা দেখার কোনো পায়তারা নাই। সেই বৃহৎ আয়নাটার আর কোনো মুল্য নাই আমার কাছে। হয়তো সেখানে অন্য কেউ এখন তাঁর চেহাড়া দেখছে, হয়তো লাল শাড়ির পরিবর্তে নীল বা টাই কোট পড়া পোষাকের বদলে একটা ভেষ্ট পড়া ব্যাকব্রাস চুলের মহড়া দিচ্ছে। যে গাড়িটা প্রতিদিন আমাকে মাইলকে মাইল ঠান্ডা কিংবা শীততাপ হাওয়ায় বসিয়ে, মিষ্টি মিষ্টি গান শুনিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে গেছে, সেটা আর আমার কোনো প্রয়োজন নাই। না সে আমাকে আর খোজে।

কখন কোথায় কাকে কাকে নিয়ে অথবা আমার নায়নাতকুর আত্তীয় স্বজন স্ত্রী পোলাপান নিয়ে কবে কোথায় কি আনন্দে মেতেছিলাম, সেই ইতিহাস আর কেউ কখনো মনে রাখবে না। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কতটা পথ হেটেছিলাম, আর সেই হাটা পথে আমি কতটুকু ঘাম ঝরিয়ে চূড়ায় উঠে কি তৃপ্তি পেয়ে কি আনন্দে কতটুকু আত্তহারা হয়েছিলাম, সেই তথ্য না কেউ জানবে, না কেউ জানার কোনো আগ্রহ দেখাবে। কার সাথে কি নিয়ে আমার মনোমালিন্য হয়েছিলো, বা কে আমাকে কতটুকু ভালোবেসে কি অবদান দিয়েছিলো অথবা কার কোন আগ্রহে আমি কোথায় কি করেছিলাম, কার কারনে আমার অন্তরে জালা উঠেছিলো আর কার কারনে আমার দিন আর রাত একহয়ে গিয়েছিলো, সেই ইতিহাসের কোনো মুল্য আজ বেচে থাকা মানুষগুলির কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। না তাদের যাদের জন্য এসব ঘটনা ঘটেছে। নতুন প্রজন্ম নতুন পরিবেশ, নতুন সব কাহিনীতে ভরে থাকবে বর্তমান আর আমাদের সেই পুরাতন প্রজন্ম, কিংবা সেই তাদের পুরাতন পরিবেশের কোনো স্থান থাকবে না আজকের এই পরিবর্তীত বন্ধুমহল পরিবেশে। হয়তো কোনো এক ছোট বালিকা আমাদের কথা শুনে, অথবা ভালোবেসে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে আমার সেই সমাধিতে দাঁড়িয়ে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে দাঁড়িয়ে পুষ্প স্তবক দিয়ে চলে যাবে। হয়তো সবার বেলায় এটা নাও হতে পারে। কিংবা জন্ম জন্মান্তরের শেষে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শেষে আমি এমন করে বিলীন হয়ে যাবো যে, সেই অবুজ বালিকার পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো আর একটা বাশী ফুলও নিয়ে আমার সেই সমাধিতে দাঁড়াবে না। কারন আমি তাদের কোনো ইতিহাসের মধ্যেই নাই। চিরতরেই বিলীন।

আজ যে সেলফীটা কত যত্ন করে তোলা হয়েছে, হাসি মাখা মুখ, চুলের বাহার, পোষাকের পরিপাটিতা সব কিছু ধীরে ধীরে সেই শতবর্ষ পরে এমন করে মলিন হয়ে যাবে, হয়তো দেখা যাবে, সেই ছবি পরে আছে এমন এক কোনায় যেখানে থাকে পরিত্যাক্ত কোনো কাগজ বা ময়লার বাক্স। কোনো একদিন সেটা হয়তো অপ্রয়োজনীয় হয়েই বেরিয়ে যাবে আমার সেই শখের ঘরের দরজা পেরিয়ে।

যে অর্থের জন্য আমি প্রতিদিন সারাটা সময় শুধু পরিশ্রমই করে গেছি, সেই অর্থ আজ আমার কোনো কাজেই আসবে না। শতবছর পরে তো আমার অর্থে গড়া কোনো এক ইমারতের কোনো একটা ইটের মধ্যেও আমার কোনো নাম বা অস্তিত্ব থাকবে না। হোক সেটা আমার পরিশ্রমে গড়া কিংবা আমার নিজের। সেখানে হাত বদলে বদলে আমার অস্তিত্তের শেষ পেরেগটুকু মেরে সেখানে হয়তো কোনো এক লোকের নাম লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। যেটা আজ আমার নামে পরিচিত, শত বছর পর সেটা আমার আর নাই, না সেটা আমার নামেও অহংকার করে।

কি অদ্ভুত না?

শত বছরের হিসাবে যেমন আমি আর নাই, হাজার বছরের হিসাবে তো আমি কখনো ছিলামই না। তারপরেও আজ আমি অনেক ব্যস্ততায় দিন কাটাই আগামিকালের জন্য। অথচ আগামিকালটাই আমার না। এই পৃথিবী আমাকে কখনোই মনে রাখবে না। কারন সে আমাকে ভালোই বাসে নাই। অথচ আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম আমার জীবনের থেকেও বেশী। আর এটাই এই পৃথিবী। এই পৃথিবীর কোনো বর্ষাই আমার না, কোনো শরতই আমার না। এর গাছ পালা, এর নীলাকাশ, এর সুগভীর সমুদ্র কিংবা ঘনসবুজ পাহাড় কোনো কিছুই আমার না। আমার ঘরটাও।

শতবছর পরে, আমি এক অচেনা, নামহীন, অস্তিত্বহীন মানুষ যে আজকের দিনে বহু ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটিয়ে কিছুটা সময় এই নীল আকাশ, ঘন সবুজ পাহাড় অথবা পাখীদের কিচির মিচির শুনেছিলাম।

১৭/০৮/২০২১-রেহালাদের গল্প

রেহালার গল্প

সাহস ছাড়া মানুষ স্বাধীন হতে পারে না, আর স্বাধীনতা ছাড়া মানুষ জীবিত নয়।

একদমই ভাবী নাই যে আজকে আমার অফিসে এমন কেউ আসবে যাকে আমি একসময় চিনতাম কিন্তু গত ৪০ বছরের মধ্যে আর কখনোই দেখা হয় নাই। ওর নাম ‘রেহালা (এটা একটা ছদ্দনাম, আসল নামটা উল্লেখ করলাম না’)। আমি আর রেহালা একই ক্লাশে পড়তাম সেই প্রাইমারী স্কুলসহ হাইস্কুলে। এরপর আমি হাইস্কুল ছেড়ে অন্য কলেজে চলে আসলাম, আর ওরা গ্রামেই রয়ে গেলো। এতো সুকন্ঠী ছিলো এই রেহালা যে, আমরা ওর গান শুনতাম যেখানে সেখানে, দলবেধে। স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানে কখনো কখনো রেহালার একক সঙ্গীত পর্যন্ত হতো। খালী কন্ঠেও যে গানের একটা মূর্ছনা আছে, সেটা রেহালার গান শুনলে বুঝা যেত। আর যদি রেহালার রূপের কথা বলি, সেটা আরেক বর্ননা। ওর গায়ের রঙ শ্যামলা, একদম ডায়মন্ডের মতো, চোখগুলি বড় বড়, ঠোটে সবসময় একটা হাসি লেগেই থাকতো। রেহালা হাসলে গালে একটা টোল পড়তো। সম্ভবত এই টোল পড়া গালের জন্যই রেহালার হাসিতে একটা আলাদা মাধুর্য ছিলো। বড্ড মিষ্টি ছিলো রেহালার হাসি। ছিমছাম শরীর, আমাদের সাথে গোল্লাছূট, দাড়িয়াবান্দা, মাঝে মাঝে কাবাডিও খেলতো রেহালা। রেহালাকে কাবাডি খেলায় কুকুপাত করলে ইচ্ছামতো মাথায় চুল ধরে ঝাকুনো মারতো। এক সাথে আমরা গ্রামে বড় হয়েছি, পাশাপাশি বাড়ি ছিলো আমাদের। নদীতে ঝাপ দিতাম এক সাথে, আর অন্যের গাছে উঠে পেয়ারা চুরির সময় রেহালা থাকতো লুক আউটম্যানের মতো। যেই না গাছের মালিকের আসার সময় হতো, রেহালা নিরুদ্দেশ, আর আমরা গাছের মধ্যে নিশ্চুপ। বড্ড মজার দিন ছিলো সে ছোটবেলাটা। সেই রেহালা আজ হটাত করেই আমার অফিসে এসে হাজির।

প্রথমে তো আমি রেহালাকে চিনতেই পারিনি। ওর শরীর অনেক মোটা হয়ে গেছে, রেহালা আগেই শ্যামলা ছিলো, আর এখন ওর চেহারা এতো কালো হয়ে গেছে যে, আগের আর সেই ডায়মন্ডের মতো চেহারাটা নাই। মাথায় চুলে পাক ধরেছে। কতই বা বয়স, তারপরেও মনে হচ্ছে বুড়ি হয়ে গেছে রেহালা। কিন্তু হাসলে ওর গালে এখনো টোল পড়ে। চোখ গুলি এখনো ডাগর ডাগর। কন্ঠে আর সেই সুর এখন নাই রেহালার। রেহালা আমার অফিসে একা আসে নাই। ওর সাথে ওর ছোট বোন এসেছে। ওর ছোট বোন কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বল্লো যে, বুজি (মানে আপা) কানে শুনে না। অনেক জোরে জোরে কথা বললে কিছুটা শুনতে পায়। যেহেতু কানে শুনে না, তাই, অন্যের কথাও বুজি ভালোমতো শুনতে না পাওয়ায় কি কথা বলছে কেউ বুঝতে পারে না। তাই সাহাজ্যকারী হিসাবে বুজি কোথাও গেলে আমিই সাথে যাই।

রেহালা আমার অফিসে বসেই কিছুক্ষন যেনো হাপিয়ে উঠেছিলো। রেহালার প্রথম কয়েক মিনিটের কথার অর্থ এমন ছিলো যে, এতোদিন পর রেহালা আমার সাথে দেখা হওয়ায় যেনো সেই ছোট বেলার রাজ্যের গল্পের পশরা নিয়ে হাজির হয়েছে। ওর বলার উচ্ছাস, মুখের অভিব্যক্তি আর অনর্গল কথার মধ্যেই আমি বুঝতে পারছিলাম রেহালা আজ অনেক অনেক খুসি যে, সে আমার সাথে দেখা হয়েছে। কখনো দুই হাত তুলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে, কখনো নিজের অজান্তেই কি যেনো দোয়া দরুদ পাঠ করছে আবার কোনো কারন ছাড়াই হেসে দিচ্ছে। ঝির ঝির বাতাসে তরু পল্লব কিংবা ক্ষেতের দন্ডায়মান ফসলরাজী যেমন হেলিয়া দুলিয়া এদের মনের সুখ প্রকাশ করে, নির্মল নীলাকাশ যেমন তার একখন্ড মেঘের ভেলাকে এদিক থেকে সেদিকে উড়াইয়া লইয়া যায়, রেহেলা তেমনি আমাকে এতো বছর পর পেয়ে যেনো তার সেই দশাই হলো।  রেহালা মাথার বোরখাটা খুলে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিলো। রেহালার আগমনে আমার অফিসে কোনরূপ সমারোহ ছিলো না, কিন্তু আজিকার এই মুহুর্তে সমস্ত বিশ্ব ব্যাপারের সর্বাধিনায়িকা যেনো এই রেহালাই হয়ে দাড়াল। রেহালার এমন উচ্ছাসিত আচরনে আমার যেনো বিস্ময়ের কোনো শেষ ছিলো না।

এখানে আরো একটা ব্যাপার আমাকে রেহালা বিস্মিত করলো। রেহালা ছোটবেলায় আমাকে ‘তুই’ বলেই ডাকতো, কিন্তু আজকে খেয়াল করলাম, রেহালা আমাকে আর তুই; বলছে না, কাকা বলে ‘আপনি’ সম্মোধন করছে। গ্রামের সম্পর্কের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে রেহালার সাথে আমার কাকা ভাতিজারই সম্পর্ক। কিন্তু এই সম্পর্ক কিসের ভিত্তিতে সেটা আমার ছোট বেলায়ও জানা ছিলো না, আজ তো সেটা জানার কোনো ইচ্ছাও নাই। আমি রেহালার বাবাকে ‘ভাই’ বলেই ডাকতাম সেটা আমার মনে আছে। আমি রেহালাকে বললাম যে, সে যেনো আমাকে “তুই বা তুমি” করেই বলে।

আমি জানি রেহালার বাবা এবং অন্যান্য ভাই বোনেরা এখনো জীবিত আছে। আর তারা মাঝে মাঝেই আমার অফিসে কিছু না কিছু সাহাজ্য বা পরামর্শের জন্য আসে। কখনো তাদের সাথে আমার দেখা হয়, আবার কখনো কখনো দেখা হয়ও না। ফলে আমি রেহালাকে ওদের ব্যাপারে কোনো প্রশ্নও করতে চাইনি। একমাত্র রেহালার ব্যাপারেই আমার অনেক কিছু জানা ছিলো না। তাই প্রথমেই রেহালাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, রেহালা কেমন আছে। রেহালা কি শুনলো আর কি বুঝলো আমি জানি না কিন্তু রেহালা বলতে থাকে-

কাকা, তোমারে কতবার যে আমি দেখতে চাইছি মনে মনে, আর আফসোস করছি, ইশ যদি মরার আগে তোমার সাথে আমার একবার দেখা হতো। অনেকের কাছেই আমি তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছি, তুমি কই থাকো, কিংবা কোথায় গেলে তোমাকে পাওয়া যাবে ইত্যাদি কিন্তু কেউ আমাকে তোমার আসল ঠিকানাটা দিতে পারে নাই। শুধু এটুকু জানতাম যে, তুমি এই এলাকাতেই বড় ব্যবসা নাকি করো। একবার শুনেছিলাম, তুমি নাকি গ্রামে গেছো। আমি তখন গ্রামেই ছিলাম। কিন্তু আমি লজ্জায় তোমার সাথে দেখা করার সাহস করি নাই। সেটাও আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগের কথা। তখন সবেমাত্র আমি আমার জামাইয়েরে নিজের ইচ্ছায় তালাক দিছি। গ্রামে একজন মহিলার সংসার ভেংগেছে, তালাক হয়েছে এটা যে কত বড় কেলেংকারী, সেটা মেয়ে না হলে আসলে কেউ বুঝতে পারে না। 

আমি রেহালাকে জিজ্ঞেস করলাম, স্বামীকে তালাক দিলি কেনো?

রেহালা সহজেই আমার প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছিলো। রেহেলা অনেকক্ষন মাথা নীচু করে কি যেনো ভাবলো। দেখলাম, রেহেলা কাদছে। তাঁর ফুপিয়ে কান্নার একটা শব্দ পেলাম। আমি রেহেলাকে কিছুই বললাম না। রেহেলাকে আমি সময় দিলাম, রেহেলা কাদছে। তারপর টেবিলে রাখা একটি গ্লাস থেকে কয়েক ঢোক পানি গিলে বলতে লাগলো-

কাকা, একটা কথা কি জানেন? বিয়ের সময় খুসি আর ভালোবাসায় এটা প্রমানিত হয় না যে, ভবিষ্যতে এই সুম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা বা ঘৃণা আসবে না। মধুর ভালবাসা যেমন একদিন ঘৃণার বিষে রুপান্তরীত হতে পারে, আবার গভীর ঘৃণাও হয়তো সমস্ত বাধা কাটিয়ে পুনরায় চরম ভালোবাসায় পরিনত হতে পারে। কিন্তু কখনো যদি ভালোবাসার মধ্যে ঘৃণা ঢুকে পড়ে, তিক্ততার সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন যে এখন এই সম্পর্ককে শেষ করা উচিত। বুঝে শুনে বেরিয়ে আসা উচিত। যাতে তার আগে কোনো মারাত্তক অঘটন না ঘটে। কিন্তু আফসোস, প্রায়ই তিক্ত সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনা। হোক সেটা সমাজের তথাকথিত লোক লজ্জার ভয়ে অথবা অভিভাবকের অতিরিক্ত চাপের কারনে। তখন এমন হয় যে, সেই দম্পতির যে একদিন ভালোবেসে যারা খুব কাছে এসেছিলো, তারা আজ সম্পর্কের তিক্ততায় একজন আরেকজনকে চাকু, বন্ধুক চালাতে পিছপা হয়না। তখন একজন আরেকজনের প্রান নিতেও দ্বিধাবোধ করেনা অথচ কোনো একদিন তারা তাদেরকে নিজেদের মানুষই ভাবতো। বিয়েটা হয়তো সত্যিই একটা কন্ট্রাক্ট। আর সেই কন্ট্রাক্টের মধ্যে নিহীত থাকে অনেক দায়িত্ব, অনেক কর্ম পরিধি। 

রাহেলার এমন জীবনভিত্তিক কথায় আমিও খুব অবাক হলাম। রাহেলা কি সুন্দর করে তাঁর জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা এক নিমিষে বলে গেলো। অনেক পড়াশুনা হয়তো রাহেল করে নাই কিন্তু ওর কথাবার্তা যেনো আমার অন্তরে তীরের মতো বিধে গেলো। আমি রাহেলার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম।

 রাহেলা বলতে থাকলো-

সেদিন সম্ভবত গুড়িগুড়ি বৃষ্টির দিন ছিলো। আমার স্বামী আমারে বল্লো, চলো, নারায়নগঞ্জ আমার এক বন্ধুর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি। আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসে কিনা তা আমি কখনো বুঝি নাই। বিয়ের পর থেকে যে শ্বশুর বাড়িতে ঢূকেছি, সারাক্ষন স্বামী, সংসার, ছেলে মেয়ে ননদ ননদীনির দায়িত্ব পালন করতে করতেই আমার দিন পার হতো। আর এসব দায়িত্ব পালনে কোথাও কোনো ত্রুটি হলেই আমার উপরে চলতো খড়গের মতো আচরন। আমার স্বামী নেশা করতো। বিয়ের আগে নেশা করতো কিনা জানি না, কিন্তু বিয়ের কদিন পরেই বুঝলাম, সে প্রায় রাতেই নেশা করে ঘরে ফিরে। কি তাঁর দুঃখ, কি তাঁর কষ্ট কখনো সেটা আমি বুঝতে পারি নাই। ফলে, সুযোগ আর কোনো ব্যত্যয় কিংবা তাঁর নেশার জগতে একটু ভাটা পড়লেই কারনে অকারনে আমাকে মারধোর করতো। সেই মারধোরের কারনেই আমি আমার কান হারাই। মার খেতে খেতে কানটা একদিন অকেজোই হয়ে গেলো। গরীব বাবা মা, পয়সাকড়ি নাই, যৌতুক যা দেয়ার সেটা দেয়ার পরেও জামাইয়ের মন ভরে নাই। দিনের পর দিন এই অতিরিক্ত যৌতুক আর টাকার জন্য আমাকে মার খেতে হয়েছে। ঘরে ভালোমতো বাজার হয় না, অথচ কেনো ভালোমতো রান্না হয় না সেটা যেনো আমার অপরাধ। সহ্য করে থেকেছি। মুখ বন্ধ করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না। গরীব পিতামাতার সন্তানেরা নাকি “আগুনে পানি দিয়ে” সংসার করে। আমিও তাই করার চেষ্টা করেছি। যাই হোক, যখন আমার জামাই আমাকে বল্লো, চলো এক বন্ধুর বাসায় বেড়াইয়া আসি, ভাবলাম, হয়তো মনটা তাঁর পরিবর্তন হয়েছে। আমারো মনটা ভালো হয়ে গেলো। আনন্দিতই হয়েছিলাম। কারন যে কখনো আমাকে পাশের দোকানে নিয়ে একটা চকলেটও কিনে খাওয়ায় নাই। আজ তার এহেনো অনুরোধে বেশ পুলকিত বোধ করছিলাম। বললাম, চলেন যাই।

আমি আর আমার স্বামী বিকাল ৫টার পরে কাপড় চোপড় পড়ে নারায়নগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেলাম। আমাদের বাড়ি থেকে নারায়নগঞ্জ খুব বেশী দূরে না। ফলে সন্ধ্যার আগেই আমরা ওর বন্ধুর বাসায় চলে এলাম। রাতের খাবার খেয়ে হয়তো আমরা আবার আমাদের বাড়িতে ফিরে আসবো এটাই ছিলো আমার জানা। আমি আমার ছোট ছেলেকে সাথে নিতে চাইলাম। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে নিতে বারন করলেন। ভাবলাম, ভালোই হবে, আমরা নীরিবিলি দুজনে একসাথে রিক্সায় ঘুরতে পারবো। পাশাপাশি বসে গল্প করতে পারবো। সময়টা ভালোই কাটবে। আমরা যখন তাঁর বন্ধুর বাড়িতে পৌঁছলাম, তখন সন্ধ্যার একটু আগে। তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখি, বন্ধুর স্ত্রী বাসায় নাই। শুনলাম ছোট বাচ্চাকে নিয়ে নাকি সন্ধ্যার পর আসবে, হয়তো কোথাও কাজে গেছে। চা খেলাম, সাথে কিছু ফলমুলাদি। খারাপ লাগছিলো না। সন্ধার পর হটাত করে আমার স্বামী বাজার থেকে কি জানি আনতে বাইরে যাওয়ার কথা বলে আমাকে একা রেখে চলে গেলেন। একটু ভয় ভয় করছিলো কিন্তু খারাপ কিছু মাথায় আসে নাই। সময় যাচ্ছে, আবারো সময় যাচ্ছে, ঘন্টা, তারপর আরো এক ঘন্টা, কিন্তু আমার স্বামীর ফিরে আসার কোনো লক্ষন দেখলাম না। এদিকে রাত বেশী হয়ে যাচ্ছে, আমি বারবার ওর বন্ধুকে আমার স্বামীর কথা বল্লেও দেখলাম সে খুব একটা কথা আমলে নিচ্ছে না। আমি আমার স্বামীর এই বন্ধুকে আগে থেকে চিনতামও না। রাত প্রায় ১১টার উপরে বেজে গেলো, আমার স্বামীর ফিরে আসার কোনো নামগন্ধও নাই। এবার আমার খুব ভয় করছিলো। জীবনে কোনোদিন শহরেও আসি নাই। আর এখন পুরু একটা অপরিচিত লোকের বাসায় আমি একা। বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চা রেখে এসছি। ওদের জন্য ভীষন দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো।

আমি চারিদিকে কান খারা করে সবকিছু খেয়াল করছিলাম। আমার খুব ভয় লাগছিলো। একটু পরে আমি খেয়াল করলাম, এই বাড়িতে কিছু অপরিচিত লোকের আনাগোনা যেনো বেড়ে গেছে। কেউ কেউ বাইরে ফিসফিস করে যেনো কি কি কথাও বলছে। কেউ কেউ আবার আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেও। বুঝতে পারলাম, তারা হয়তো আমাকে নিয়ে কোনো আলাপ করছে কিন্তু কি আলাপ করছে বুঝতে পারছিলাম না। তখন রাত প্রায় বারোটা বেজে যাচ্ছিলো।

এক সময় ৩০/৩৫ বছর বয়সের একজন পুরুষ আমার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো- কি নাম তোমার? আসো ওই ঘরে যাই। এই বলে পাশে একটা ঘরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম- কে আপনি ভাই? আর আমি ওই ঘরেই বা কেনো যাবো? আমার স্বামী কই? সে এখনো আসছে না কেনো? আমার বাড়ি যাওয়া দরকার। আমার বাচ্চারা একা বাসায়। ওরা হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

আমার কথা শুনে লোকটি পিছনে ফিরে এসে আমাকে সে যা বল্লো, সেটা শুনে তো আমার মাথা খারাপ। আমাকে নাকি আমার স্বামী এখানে দেহ ব্যবসার জন্য বিক্রি করে টাকা নিয়ে চলে গেছে। সে আর ফিরবে না। রাতটা এমনিতেই অন্ধকার ছিলো, লোকটার কথা শুনে এবার যেনো মহাঅন্ধকারের মধ্যে আমাকে আমি মৃত লাশের মতো শ্মশানের মধ্যে দেখতে পেলাম যেখানে আমাকে কিছু জীবন্ত শিয়াল কুকুর তাড়া করছে, অথচ আমার কোনো শক্তি নাই।

আমি চিৎকার করতে লাগলাম, আর বলতে লাগলাম, এটা কি করে সম্ভব? তোমরা আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনো। আমি ওরকম মেয়ে নই যে, তোমরা আমার সাথে এমন আচরন করতে পারো। আমি ভয়ে আরো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে গেলে আমাকে কয়েকজন এসে এমনভাবে জাপটে ধরলো যে, না আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিলো, না আমি কোনোদিকে নড়াচড়া করতে পারছিলাম। কিন্তু আমার চোখ তো আর কোনো কিছুতে বাধা পড়েছিলো না। আমার বাচ্চাদের কথা মনে পড়লো, আমার ছোট ছেলেটা খুব মগা (বোকা), তার কথাই বেশী মনে পড়লো। তার মাত্র ৮ বছর বয়স। সে আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে চায় না। ওকে একা ফেলে এসেছি। ছেলেটা মগা হলেও কখনো আমার হাতছাড়া করতো না। ওর মুখটা ভেসে উঠতেই আমার দুচোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছিলো। আহা রে বাপ, দেখে যা তোর মা কত অসহায় একটা পরিস্থিতিতে ছটফট করছে। তোর অমানুষ বাবা আমাকে কোথায় ফেলে গেলোরে বাবা।

রেহালা কিছুক্ষন চোখ বুজে থাকল, তার দুচোখের পাশ দিয়ে জলের একটা রেখা যেনো অবিরত জল পড়তেই থাকলো। একটু পর আবার রেহালা বলতে থাকল-

জানো কাকা, কোনো কোনো সময় কিছু কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই সব সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। শুধু ভরসার স্থান তৈরির জন্যই নাটক তৈরী করা হয়। আমার স্বামীও আমার সাথে ঠিক এমনই একটা ভরষার স্থান তৈরী করেছিলো। আর সেটা ছিলো নিছক একটা নাটক যা আমি কিছুতেই বুঝতে পারিনি। আমি কি এটাই চেয়েছিলাম? আজ দুপুরে যখন সে আমাকে বেড়াতে নিয়ে আসবে বলে জানালো, আমি তো আমার সমস্ত বিশ্বাস নিয়েই তাঁর সাথে অজানা এক বন্ধুর বাড়িতে রওয়ানা হয়েছিলাম। বিকালটা কত সুন্দর ছিলো। চারিদিকের গাছপালা, আশ পাশের দোকানী, মানুষগুলিকে দেখে তো আমার মন অনেক পুলকিতই ছিলো। তাহলে এই হটাত কি গজব আমার উপর আছড়ে পড়লো? আমি কি কখনো আমার স্বামীকে একটিবারের জন্যেও ভালোবাসিনি? কখনো কি আমি ওর বেদনায় কাতর হই নাই? কখনোই কি ও আমাকে স্নেহ কিংবা ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে নাই? আমি তো আমার জীবনের সবকিছু দিয়ে ওকে ভরষা করেই বাপ মায়ের বাড়ি ছেড়েছিলাম। তাহলে সে এমন নিষ্ঠুর কাজটি কেন আর কিভাবে করতে পারলো? আমি কি ওর বাচ্চার মা নই? আমাকে সে না ভালোবাসুক, ওর বাচ্চাগুলির জন্যেও কি সে আমাকে ছেড়ে দিতে পারতো না? মুখবাধা ঠোট দিয়ে সমস্ত বেদনাগুলি যেনো শুধু গোংগানীর মতোই মনে হচ্ছিলো আমার কাছে। অথচ এই গোংগানির মধ্যে কত যে অস্থিরতা, কত যে আক্ষেপ, কত যে ভালোবাসা আর কষ্ট লুকিয়ে ছিলো তা যেনো আমাকে ঝাপ্টে ধরে রাখা মানুষগুলির কানেই গেলো না।

আমার আল্লাহর কাছে আমি চোখ বন্ধ করে শুধু একটা কথাই প্রার্থনা করলাম, যদি আমি সতীনারী হয়ে থাকি, যদি আমি আমার এক ঈশ্বরকে কখনো কায়মনে ডেকে থাকি, যদি তিনিই হয়ে থাকেন আমার একমাত্র ত্রানকর্তা, যদি আমার প্রভুই হয়ে থাকে সমস্ত বিপদের উদ্ধারকারী, তাহলে আমি আমার সেই একচ্ছত্র প্রভুর কাছে দয়া ভিক্ষা করছি তিনি যেনো আমাকে তাঁর গায়েবী ক্ষমতা দিয়ে এই নরক থেকে বাচিয়ে দেন। হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে কখনো দেখিনি, কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছি, তোমার দরবারে আমি প্রতিদিন মাথা নুইয়েছি, তুমি আমাকে বাচিয়ে দাও ঈশ্বর। লোকগুলি ইতিমধ্যে আমার চিৎকার চেচামেচিতে গন্ডোগোল হতে পারে ভেবে, কিংবা আশেপাশের লোকজন কিছু আচ করতে পারে জেনে আমাকে তাদের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলো। আমার চোখ বন্ধ ছিলো, আর আমি গোল হয়ে মাটিতে নিথর দেহে বসেছিলাম। আর আমার চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছিলো।

তারপর কি হয়েছিলো আমি জানি না। কিন্তু ঐ ৩০/৩৫ বছর বয়সের যুবকটি আমাকে ডেকে বল্লো- এদিকে আসো আমার সাথে। কিন্তু কোনো কথা বলবে না। আমি যা বল্বো, সেটাই করবে। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি একটা পিশাচের পাল্লায় পড়েছো। সে জানতে চাইলো, আমার সাথে কোনো টাকা পয়সা আছে কিনা। আমি লোকটির চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম, এটাও ভাবছিলাম, সে আমার সাথে এবার অন্য কোনো চাল চালছিলো কিনা। কাউকে বিশ্বাস করা কিন্তু ভুল নয়। তবে চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করা একেবারেই ভুল। তাই আমাদের এটা জানা খুব দরকার যে, সামনের মানুষটাকে বিশ্বাস করবো নাকি করবো না।

তাঁর আচার ব্যবহারে আমার কাছে সে রকম মনে হলো না। মনে হলো আসলেই বুঝি তাঁর মাধ্যমে আমার ঈশ্বর আমাকে সাহাজ্য পাঠিয়েছেন। বললাম, আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই। সে আমার কানে কানে চুপিসারে শুধু একটা কথাই বল্লো- আসো, আমি তোমাকে এখান থেকে দ্রুত বের করে দেবো। আমি জানি তুমি খারাপ মেয়ে নও। আমিও তোমার কাছে কোনো শরীরের চাহিদায় আসি নাই। আমি এখানকার একজন এজেন্ট মাত্র। আমাকে আর এর বেশী কিছু জিজ্ঞেস করোনা। আর জিজ্ঞেস করলেও আমি সব কিছুই মিথ্যে বল্বো।

রাহেলা এবার একটু থামলো। সামনে রাখা গ্লাস থেকে সে আরো একবার এক ঢোক পানি পান করলো। রাহেলার চোখে মুখে যেনো এখনো সেই অতীতের ভয়টা স্পষ্ট ফুটে উঠছিলো। মাঝে মাঝে সে শিহরিত হয়ে উঠছিলো। বুঝতে পারছিলাম, রাহেলার সেই ভয়টা এখন আবার যেনো নতুন করে তাঁর সামনে জেগে উঠেছে। রাহেলা তাঁর বোরখার একটা আচল দিয়ে মুখটা মুছে নিলো। দেখলাম, রাহেলা একটু একটু ঘেমে গিয়েছে। আমি আমার রুমের এসিটা অন করে দিয়ে বললাম, তারপর?

কাকা, কিভাবে কি হয়ে গেলো আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। লোকটি আমাকে একশত টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বল্লো, শীঘ্রই এখান থেকে এই দরজা দিয়ে বের হয়ে যাও। আমি পাহারায় আছি। এই গোপন দরজাটা দিয়ে আমরা বিপদের সময় পালিয়ে যাই। এটাকে আমরা কোডে বলি- (রেহালা নামটা মনে করতে পারলো না।)

এতো অন্ধকার রাত, তারপর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, অনিশ্চিত একটা পলায়নে আমি কোথায় যাচ্ছি সেটাও আমি জানি না। এটা কি গরম তেল থেকে লাফিয়ে উনুনে নাকি হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে বাচার তাগিদে নীচে পতন আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তারপরেও আমি সেই দরজা দিয়ে বের হয়েই পাগলের মতো ছুটছিলাম। কোথায় ছুটছিলাম, কোনদিকে ছুটছিলাম আমি নিজেও জানি না। অনেক রাত, রাস্তায় বেশী লোক ছিলো না। আধো আলয় ভরা শহরের রাস্তার কিছু লাইট পোষ্ট এমন করে রাস্তাকে আলকিত করেছিলো যেনো সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে কন এক ভুতুরে পল্লির মতো দেখাচ্ছে। এম্নিতেই মনে আকুন্ঠ ভয়, তারমধ্যে অজানা এক দুসচিন্তা, তার উপরে রাতের এতো ভয়ংকর রুপ। কিছু লোকজন এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা যাচ্ছিলো বটে কিন্তু যারাই ছিলো তারা আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিলো, হয়তো ওরা ভাবছিলো, এতো রাতে আমি দৌড়াচ্ছি কেনো, বা আমি কি পাগল কিনা, অথবা রাতের কোনো চোর কিনা ইত্যাদি। কে কি ভাবলো, আর কে কিভাবে আমার দিকে তাকালো সে ব্যাপারে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। আমি শুধু দৌড়াচ্ছিলাম আর দৌড়াচ্ছিলাম।  অবশেষে আমি একটা পানবিড়ির দোকানে এসে থামলাম। কয়েকটা উঠতি বয়সের ছেলে ওখানে চা খাচ্ছিলো।

আমি হাপাতে হাপাতে বললাম-

বাবারে আমি খুব বিপদে আছি। আমার স্বামী আমাকে বেড়ানোর নাম করে নিয়ে এসে আমাকে খারাপ জায়গায় বিক্রি করে দিতে এসছিলো। আমি পালিয়ে এসছি। আমার বাড়ি, নগরঘাট (নামটা ছদ্দনাম)। আমি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, এই জায়গাটা আমি চিনিও না, আর এখান থেকে আমি আমার গ্রামের বাড়ি কিভাবে যাবো, তাও আমার জানা নাই। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা হয়তো এখন আমার জন্য কান্নাকাটি করছে। তোমরা আমাকে একটু সাহাজ্য করো বাবারা। আমি ওদের এটাও বললাম, আমার কাছে একশত টাকা আছে। আমাকে সাহাজ্য করো তোমরা।

জানো কাকা, আসলে এই দুনিয়ায় নরপিশাচ যেমন আছে, তেমনি ভালো মানুষও আছে। সেদিন আমি বুঝেছিলাম, মানুষ কি আর নরপিশাচ কি। ছেলেগুলি আমার কথা শুনে খুব উত্তেজিত হয়ে গিয়ে বল্লো- কে সে, কই সে। চলেন আমরা ওকে এখন ধরবো। আমি বললাম, কিছুই দরকার নাই বাবারা। তোমরা শুধু আমাকে আমার বাচ্চাদের কাছে দিয়ে চলো। আমি তোমাদের মায়ের মতো, আমি আজিবন তোমাদের জন্য আমার সেই পরম ঈশ্বরের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে দোয়া করবো। আমাকে তোমরা আমার সন্তানের কাছে নিয়ে চলো বাবারা। বলেই আমি দোকানের সামনে ভেজা মাতিতে বসে পড়েছিলাম। আমার পায়ে কন শক্তি ছিলো না, আমার সারা গা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিল, আমার দম প্রায় বন্দ হয়ে এসছিলো। তারপরেও আমার হৃৎপিণ্ড সচল ছিলো, আমার প্রানটা জীবিত ছিলো।  

ছেলেগুলি আমাকে টেনে তুলে দোকানের ঝাপের ভিতর নিয়ে গেলো। সব সন্তানের চেহাড়া মনে হয় একই। বিশেষ করে মায়েরদের জন্য। ওরা আমাকে এক কাপ গরম চা দিল, মাথা মুছার জন্য কয়েকটা পুরান পেপার দিলো। আমি যেনো একটু স্থির হচ্ছিলাম। ছেলেগুলির মধ্যে দুইজনের দুইটা হুন্ডা (বাইক) ছিলো। চা খাওয়ার পর, ওরা একটা হুন্ডায় আমাকে আর আরেকটা হুন্ডায় ওরা তিনজন উঠে আমার বাসার অতি নিকটে ছেড়ে গেলো। যেখানে ওরা আমাকে ছেড়ে গেলো, সেই জায়গাটা আমি চিনতাম। সেখান থেকে আমি অনায়াসেই আমার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি যখন আমার বাড়িতে আসি, তখন রাত বাজে প্রায় আড়াইটা। সব বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেছে শুধু আমার মগা ছেলেটা বারান্দায় বসে আছে। মশার কামড়ে সে জর্জরীত কিন্তু আমাকে না পেয়ে কখন আমি ফিরবো তারজন্যে একাই বাইরের বারান্দায় বসে আছে। বৃষ্টি হচ্ছিলো, ফোটা ফোটা বৃষ্টিতে ছেলেটার সারা শরীরই প্রায় ভেজা। আমি ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাদলাম। আমার ছেলেটা আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো যে, আশেপাশের মানুষগুলি যারা ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো তারাও সজাগ পেয়ে ছুটে এলো। আমি শুধু কাদছি, কিন্তু কেনো কাদছি, কিসের কষ্টে কাদছি, সেটা আর কাউকেই বলতে পারি নাই। কান্নার আহাজারীতে সুর থাকে না, থাকে বেদনা আর কষ্ট যে কষ্টের কোনো নাম নাই, যে কষ্টের রুপ কাউকে দেখানো যায় না। আমি শুধু কেদেই যাচ্ছিলাম। কষ্টটা ছিলো আমার মনের অনেক গভীরে।

অনেকেই অনেক প্রশ্ন করছিলো, এতো রাতে আমি কোথা থেকে এলাম, কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তরও আমার দিতে ইচ্ছে করছিলো না। আমার স্বামী কই, কিংবা সেতো আমার সাথেই সন্ধ্যার দিকে বেরিয়েছিলো, তার হদিস অনেকেই জানতে চাইলেও আমার কোনো কিছুই বলার মতো অবকাশ তো ছিলোই না বলতেও ইচ্ছে করছিলো না। শুধু আমি আমার সেই এক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহকে আকাশের দিকে হাত তুলে বললাম- মহান তুমি, তুমি আছো সর্বদা সবার সাথে, দূর্বলের সাথে, অসহায়ের সাথে। আর তুমি সত্যিই সব পারো মাবুদ। কে বলে ঈশ্বর নাই? যে বলে ঈশ্বর নাই, সে বোকা, আর যিনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন সে জানে ঈশ্বর কোথায় কিভাবে তার হাত প্রসারিত করে। ঈশ্বর বসবাস করেন সর্বত্র। শ্মশানে, আকাশে, পাহাড়ে, জলে অন্তরীক্ষে, আর থাকেন মনের একেবারে অন্তস্থলে। কান্নায় আমার শুধু বুক ভেসে যাচ্ছিলো।

রাহেলার এমন একটা অতীত জীবনের ইতিহাস শুনে আমি হচকচিয়ে উঠেছিলাম। মহিলাদেরকে আমরা দেবীর সমান তুলনা করে থাকি। কখনো কখনো আমরা তাদেরকে মায়ের আসনে বসিয়ে পুজার বেদী রচনা করে থাকি। কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে লাগাতার অন্যায় আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এমন অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। প্রকাশ্যে কোনো মহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয়, নির্যাতন করা হয়, ধর্ষন করা হয় অথচ কেউ এগিয়ে আসে না। এই সমাজে কেনো মানুষের রক্ত ততক্ষন পর্যন্ত গরম হয় না যতক্ষন না অবধি কোনো সমস্যা তাদের ঘরের ভিতরে চলে না আসে।  হিন্দু শাস্ত্রে নাকি একটা কথা আছে-ইয়ত্রা নারায়স্ত পুজায়ান্তে রামাতে তাপ্তা দেবতা অর্থাৎ  যেখানে নারির পুজো হয়, সেখানে দেবতা বসবাস করে। এটা আসলে শুধু কথার কথা সত্যিটা অন্যকিছু। কোথাও কখনো কোনো নারীর পুজা হয়নি। না হিন্দু শাস্ত্রে, না আমাদের ধর্মে, না অন্য কোথাও।

রেহালা আবারো বলা শুরু করল-

কাকা-সেই সারারাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারি নাই ভয়ে। আমার শরীর ভেংগে গিয়েছিলো, অনেক জ্বর এসছিলো, মাথা ব্যথায় আমার মনে হচ্ছিলো মাথাটাই যেনো আমার সাথে নাই। আমার সেই মগা ছেলেটা সারারাত আমার মাথায় পানি ঢেলে আমার মাথা বুলিয়ে দিচ্ছিলো আর খালী একটা কথাই বলে যাচ্ছিলো-মা আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না। তোমাকে ছাড়া আমি ভয় পাই। যতোবার সে আমাকে এই কথাগুলি বলছে, ততোবারই যেনো আমার ভিতরে কে যেনো এক কঠিন হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে আর বলছে- এই স্বাধীনতার মুল্য কি যেখানে খাচায় বন্দি আমি? এই জীবনের কি অর্থ আছে যেখানে আমি কলা, মুলা আর পন্যের মতো অন্যের ইচ্ছায় বিক্রি হয়ে যাই? এই দাম্পত্য জীবনের কি মাহাত্য যেখানে প্রতিদিন আমাকে শুধু অন্যের মন জোগানর জন্য নিজেকে সপে দিতে হয় পিশাচের কাছে? আমার ভিতরে তখন যেনো রাগ, ঘেন্না আর প্রতিশোধের ইচ্ছাতা বেরিয়ে আসছিলো। আমি হিংস্র হয়ে উঠছিলাম।  

রাহেলার এই কথাগুলির সাথে আমি একমত ছিলাম। সত্যি তো। গরীব হওয়া পাপ নয়, উচু সপ্ন দেখাও পাপ নয়, বড় হবার চেষ্টা করাও অপরাধ নয়, কিন্তু অন্য কারো জীবনকে এরুপ নষ্টের দিকে ঠেলে দিয়ে কিংবা অন্যের কোনো আত্মসম্ভরনকে বিকিয়ে দিয়ে কিংবা অন্যের জিনিষকে অন্যায়ভাবে নিজের সার্থের জন্য টাকা রোজগার করা চেষ্টা করা একটা অপরাধ। এই অপরাধের একটা খেসারত আছে। কেউ সাথে সাথে পায়, আর কেউ একটু দেরীতে। কিন্তু প্রাপ্যটা আসেই। লাইফটা কোনো ষ্টক মার্কেটের কোনো শেয়ার নয় যে প্রতিদিন এটার দাম উঠানামা করবে। এটা আসলে সেটা যা একবার উঠে গেলে আর পড়ে না, আবার পড়ে গেলে আর উঠে না।

রাহেলা বলতে থাকে তাঁর সেই রাতের বাকী কথাগুলি।

সকালে আমি উঠানে গেলাম, বসে রইলাম কখন আমার সেই নরপিশাচ স্বামী বাড়িতে আসে। সে হয়তো ইতিমধ্যে জেনে গেছে-আমি আর ঐ নারায়নগঞ্জে নাই। পালিয়েছি। কিছুই খেতে পারলাম না সারাদিন। আর খাওয়ার কিছু ছিলোও না। বমি বমি আসছিলো। দুপুরের দিকে একটু শুয়ে ছিলাম। কিন্তু ঘুমিয়ে ছিলাম না। সেই দুপুরের দিকে আমি ওর পায়ের আওয়াজের সাথে মুখের আওয়াজও শুনলাম। সে ঘরে ঢোকেই চোখ লাল লাল করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করলো আর আমাকে মেরেই ফেলবে এমন হুংকার দিতে থাকলো। বড় বড় বিস্ফোরণের আগে ছোট ছোট ফুলকীর দিকে নজর দিতে নেই। তাতে বড় বিস্ফোরণের জন্য ব্যাঘাত হয়। আমি একটা শব্দও করলাম না, কোনো উত্তরও করলাম না। কোনো এক শক্তিশালী ঝড়ের আগে যেমন আকাশ থম্থমে হয়ে যায়, গাছপালারা স্থির ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, একটা পাতাও নড়ে না, খালী মাঝে মাঝে গুরুম গুরুম কিছু শুষ্ক ঠাটা পরার মতো আওয়াজ ভেসে আসে কোনো এক দূরবর্তী আকাশ থেকে, ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো আমার ঘরে সাথে মনের ভিতরেও। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম এমন একটা সুযোগের জন্য যাতে আমি আমার বাড়ির পুতাটা দিয়ে ওর মাথায় একটা আঘাত করতে পারি। ওর উপর আমার কোনো প্রকার ভালোবাসা নাই, শ্রদ্ধাবোধ নাই। আমি ওকে যেনো আর চিনি না। কোনো এক সময় যে আমি অর বুকে শুয়েছিলাম সেটাও আমার মনে পড়ল না। সে যে আমার সন্তানের বাবা সেটাও আমার কাছে কোনো অর্থ বহন করে নাই। বারবার মনে হয়েছিলো, এদের বেচে থাকার কোনো মানে হয়না। এরা সর্বদা মানুষের শান্তির জন্য হুমকী, সমাজের জন্য হুমকী। পুতাটা আমি রেডিই করেই রেখেছিলাম আগে।

আমার সেই সুযোগটা এক সময় এলো। আমি একটু সময়ও নষ্ট করিনি। একটা আঘাতই আমি ওর মাথায় করেছিলাম। ও অজ্ঞান হয়ে গেলো। একবার ভাবলাম, ওর গলাটা কেটে দেই, আবার ভাবলাম, না, ওকে এমনভাবে মারবো যাতে সারাজীবন আর সোজা হয়ে দাড়াতে না পারে। আমি ইচ্ছে মতো ওর হাটু আর কোমড়ে পুতা দিয়ে আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ওকে থেতলা করে দিয়েছিলাম। আমার কোনো দুঃখ হয় নাই।

আমি রাহেলাকে জিজ্ঞেস করলাম, ও কি মরে গিয়েছিলো?

না কাকা- এই পিচাশটাকে আমি প্রানে একেবারে মেরে ফেলতে চাইনি, আর ও মরেও নাই। কিন্তু ও বেচে গিয়েও আর বেচে থাকবে না এটা আমার বিশ্বাস। তার কয়েকদিন পর আমি ওকে তালাক দিয়ে ওখানেই ছেলেদের সাথে রয়ে গেলাম। কিন্তু বাপের বাড়ি ফিরি নাই। সে এখন পংগু। এটাই ওর বিচার। কিসের সমাজ, কিসের আদালত, কিসের হিউমেনিটি? আমার কোনো আফসোস নাই। একা জীবন অনেক ভালো এসব নরপিশাচের সাথে থাকার চেয়ে। ওকে এভাবে মারার কারনে কেউ আমাকে বাধা দেয় নাই। কারন সবাই জানতো ওর ব্যবহার, আর ওর চরিত্র। তার উপরে যখন সবাই জেনেই গিয়েছিলো গতকাল রাতে সে আমার সাথে কি করেছিলো, ফলে কেউ আমাকে একটু বাধাও দেয় নাই, কোনো থানা পুলিশও করে নাই। ওর নিজের ভাইবোনেরাও এগিয়ে আসে নাই। নরপিশাচেরাও অনেক সময় নরপিশাচের জন্য অনুভুতি প্রকাশ করে না। সে একটা নর পিশাচের থেকেও অধম। একটা কথা বলি কাকা- যে যেমন কর্ম করবে, সে তেমন ফল পাবে এটাই আসল কথা। যে বীজ তুমি আজ বুনবে, সেই বীজের ফল তোমাকেই খেতে হবে। আর সেটা যদি কোনো অপরাধের বীজ হয়, তাহলে তা ধীরে ধীরে যে গাছে রুপান্তরীত হয়, তার নাম “প্রতিশোধ”। আর প্রতিশোধের গাছের কোনো না হয় আকার, না হয় ছায়া। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে যায় তখন তার পরিনতি তো এটাই হয়। আর ওর সেটাই হয়েছে।

আমি স্বাধীন হয়ে গেলাম। আমার আর কোনো পিছুটান রইলো না। আমার পরিবার ভেংগে গেলো। যখন কোনো পরিবার ভাংগে, তার সাথে ভাংগে সবকিছু যা পরিবারকে বেধে রাখে, আর সেগুলি হচ্ছে বিশ্বাস, আদর, আবেগ, মায়া, ভালোবাসা এবং সবকিছু। একটা পরিবার তৈরী করতে অনেক বছর লেগে যায়, পরিবার আমাদের বেচে থাকার কারন হয়ে দাঁড়ায়, যখন ভাংতে শুরু করে পরিবার তখন সেই পরিবারকে আমরা সবচেয়ে বড় শত্রু বলে মনে করতে থাকি। যে পরিবারের আনন্দ আমাদের বাচার রশদ হয়ে উঠে, রাগ এবং প্রতারনার যন্ত্রনা সেই পরিবারকে আঘাত দিতেই বাধ্য করে তোলে। মানুষ যখন আপনজনকেই ঘৃণা করতে থাকে। আমার সেই স্বামীর বাড়ির প্রতিটি মানুষকে আর কখনো আপন মনে করতে পারিনি। শুধু আমার সন্তানদের ছাড়া।

অপমান আর অবসাদে অবনত হয়ে একদিন আমি আমার স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করে বাপের বাড়িতে এসে পড়ি। আমার বাবা মা বিয়ের আগে যে পরিমান কাছের ছিলো, স্বামীর বাড়ি থেকে চলে আসার পর তাদেরকে আর আমি ততোটা কাছে পেয়েছি বলে মনে হলো না। আমি তাদেরকেও এ ব্যাপারে খুব একটা দোষারুপ করি না। তারাও দরিদ্র, আমিও। আমরা হয়তো একই বৃন্তে ঝুলে ছিলাম। সময়ের স্রোত ধরে এক সময় বুঝতে পারলাম, আমাকে একাই চলতে হবে। এখন একাই থাকি, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি, তসবিহ গুনি আর ভাবি, জীবন বড় রহস্যময়। হয়তো আমি আজ থাকতাম এমন এক জীবনে বন্ধী যেখানে মানুষ আর মানুষ থাকে না।

ঠিক ওই সময়ে কাকা আপনি গ্রামে গিয়েছিলেন শুনেছিলাম। একবার ভেবেছিলাম, আপনার সাথে একবার দেখা করি, আবার ভাবলাম, আপনি কি না কি ভাবেন কে জানে। লজ্জা এমন এক জিনিষ, যাকে না লুকানো যায়, না কাউকে বুঝানো যায়। ভিতরটা কেউ দেখে না যদিও সত্যিটা ভিতরেই থাকে। একটা কথা আছে না কাকা- আয়নায় চেহারা দেখা যায় কিন্তু কষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু আমি আমার ভিতরের এই কষ্টটা কাউকেই বুঝাতে পারিনি। না আমার বাবাকে, না আমার মাকে, না আমার আশেপাশের কাউকে। কিন্তু ভাগ্যের হাতে মার খাওয়া কোনো ব্যক্তিত্ত বেশীদিন অসহায় থাকে না। আমি যতটুকুই লেখাপড়া করেছিলাম, সেটা দিয়েই কিছু করার চেষ্টা করছিলাম, বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ানো। কিন্তু খুব একটা এগুতে পারিনি। পরে একটা সেলাই মেশিন নিয়ে মাঝে মাঝে বাচ্চাদের কিছু কাপড় বানিয়ে নিজের সন্তানের ভরন পোষনের চেষ্টা করেছি। প্রায় এক যুগ পার হয়ে গেছে। আমার মগা ছেলেটা এখনো বিয়ে করে নাই। ভারায় গাড়ী চালায়, যা রোজগার করে তা দিয়াই আমাদের সংসার কোন রকমে চলে যায়।

এতোক্ষন ধরে আমি রেহালার সবগুলি কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। ওর কথার রেশ ধরে আমার সারা শরীর কখনো শিহরিত হয়ে উঠিছিলো, কখনো ভয়ে আবার কখনো রেহালার স্বামীর এহেনো পৈচাশিক কাজের উপর রাগে। সমুদ্রে ভাসমান কোনো নাবিকের কাছে দূরের কোনো তটভুমি যেমন একটা আকর্ষনের বিষয় হয়ে দাড়ায়, রেহালার জীবনে তেমন কোনো কিছুর উপর আকর্ষন আর বাকী আছে বলে আমার মনে হলো না। রেহালা আমার সম্মুক্ষে বসে আমার বিস্তর প্রকান্ড কাচের জানালা দিয়া দূরের নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে বটে কিন্তু ওই নীল শান্ত আকাশের মতো রেহালার অন্তরে তেমন হয়তো শান্তির নীরবতা বিরাজ করছে না। হয়তো ওর মাথা, বুক আর অন্তর একসাথে এমন এক ঘূর্নীঝড়ের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছিল যার আভাষ ওর চোখের নোনাজলেই বুঝা যাচ্ছে। আমি রেহালাকে আর কোন প্রশ্ন করলাম না। কিছুক্ষন পর রেহালা একটু শান্ত হলে আবার বলতে শুরু করলো-

কাকা-এখন অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমার সারা শরীর যেনো রোগের একটা আবাসভুমিতে তৈরী হয়েছে। ডায়াবেটিস, প্রেসার, কানের, চোখের, হার্টে কোনো রোগের যেনো কমতি নাই। মগা ছেলেটা যা কামায়, তাতে হয়তো আমাদের দুজনের খাবার জুটে যায় কিন্তু আমার এই বাড়তি রোগের খরচ, কিংবা পর্বনের কোনো ব্যয়ভার চলে না। রোগটাকে এখন আমার নিত্যসংগী মনে করে কখনো সেই ঈশ্বরের কাছে রোগ মুক্তির দোয়া করি, আর যদি অতিরিক্ত খারাপের দিকে যাই, তখন এই আমার বোনেরা, কিংবা পাড়াপ্রতিবেশীরা হয়তো কিছু দান করে, তাঁর থেকেই কিছু পথ্য কিনে খাই। আগুনের ফুলকী যেমন কীট পতঙ্গকে দূরের আকাশের নক্ষত্র রাজীর লোভ দেখিয়ে আকর্ষন করে, অতঃপর তারা মৃত্যুবরন করে, আমি এখন অদৃশ্য ঈশ্ব