Covid-19
২৬/০৪/২০২১-কভিড-১৯, ২য় ডোজ
উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
২০২১
২৬ এপ্রিল
কভিড-১৯ মহামারী যদিও এই বিসশে প্রথম পদার্পন করে ডিসেম্বর ২০১৯ এ কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রথম সনাক্ত হয় ৮ মার্চ ২০২০। পৃথিবীর তাবদ মানুষ যেখানে এই কভিড-১৯ কে নিয়ে জল্পনা, কল্পনা আর হিমশিম খেতে খেতে শ্মশানে চলে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশের পলিসি মেকাররা যেনো বড়ই উদাসীন। মুজিববর্ষ পালনে কোনো দিধা নেই, হাসপাতালের যতটুকু বেশী প্রয়োজনীয়তা তার থেকে সবার যেনো এর উছিলায় টাকা কামানোর ধান্দাই বেশী। এটা আগেও যেমন লক্ষ্য করা গেছে, এই মহামারিতে যেনো আরো কাড়াকাড়ি আর লুটের ব্যবসায় পরিনত হয়েছে। সারাটা দুনিয়া যেখানে মৃত্যুর সাথে কিভাবে জয় হওয়া যায় সেই ভাবনায় মগ্ন আর সেখানে আমার দেশ কিভাবে রাজনীতিতে আরো শক্ত গিট বাধা যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত।
রাস্তায় পুলিশের দৌরাত্ব, অফিসে কর্মচারীদের থাবা, বাজারে ব্যবসায়ীদের মরন কামড়, কোথাও এই কভিডের জন্য কারো কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আমরাও সেই তালের সাথে ড্রাম পিটিয়ে একাত্ততা ঘোষনা করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। আমি হয়তো জুলুম করছি না কিন্তু জুলুমের শিকার তো হচ্ছিই। এই এতো শত কষ্টের মাঝেও আজ আমি আর আমার স্ত্রী মিটুল চৌধুরী কভিডের জন্য ২য় ডোজের টিকাটা গ্রহন করতে সক্ষম হয়েছি। অফিসে চলে গিয়েছিলাম। মাত্র অফিসের কাজে মনোযোগ দিয়েছি, এমন সময় মিটুল আমাকে ফোন দিয়ে জানালো যে, তার মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা এসছে আজ সকালে যে, আজই আমাদেরকে টিকার ২য় ডোজ নিতে বলা হয়েছে। বাচতে কে না চায়?তাই অফিসের সব কাজ ফেলে আমি আবার রওয়ানা হয়ে গেলাম বাসার উদ্দেশ্যে। টীকা নিতে হবে। আমি সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার, তাই সিএমএইচ আমার জন্য ফ্রি এবং নির্ধারিত। সকাল ১২ টার দিকে আমাদের টীকা নেয়া শেষ হলো। আমার কোনো পার্শ প্রতিক্রিয়া আগেরবারও হয় নাই, এবারো হলো না। কিন্তু মিটুলের উভয়বারেই পার্শ প্রতিক্রিয়ায় ভুগছে।
কভিড মহামারী সব কিছুকে পালটে দিয়েছে। পালটে দিয়েছে পরিবারের ব্যবস্থা, ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা, আর পরিবর্তন করে দিয়েছে পুরু দুনিয়াকে যেখানে মানুষ শুধু একটা জিনিষ নিয়েই ভাবে- ধর্ম নিয়ে বারাবারি, কিংবা জাত অথবা ঈশ্বর, কোনোটাই স্থায়ী নয়। তাই যার যার চিন্তায় সে সে মশগুল।কভিড আমাদের দেশে এখনো অনেক হারে ছড়ায়নি বলে মানুষ ব্যাপারটা নিয়ে এখনো অনেক উদাসিন। কিন্তু কভিডের সংক্রমন গানিতিক হারে না হয়ে এটা জ্যামিতিক হারে বাড়বে কোনো একদিন। এক থেকে দুই, দুই থেকে চার, চার থেকে আট, আর আট থেকে ষোল এভাবেই বাড়তে বাড়তে কভিড সবার ঘরে ঘরে গিয়ে হাজির হবে একদিন। এর মধ্যে যখন সারা দুনিয়া উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে, আমরা তখন আষ্টেপিষ্টে ধরা খাবো। ব্যবসা বন্ধ হবে, আন্তর্জাতিক মহলে ব্ল্যাক লিষ্টেড হবে, পন্য কেউ কিনতে চাবে না। আমরা একঘরে হয়ে যাবো। আর এর জন্য দায়ী সব সময় সাধারন নাগরিককেই দেয়া যাবে না। একবার ভাবুন তো-যে দেশের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চুরী হয়, যেখানে দূর্নীতি চরম আকারে ধারন করেছে, যেখানে উন্নয়নের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যক্তি পর্যায়ের মানুষের পকেটে চলে যাচ্ছে সেখানে সরকার যদি আমাদের এই ষোল কোটি মানুষকে এক মাসের জন্য শুধু খাবার আর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সমুহ নিশ্চিত করতে পারতো, ভিয়েত্নাম বা ভুটানের মতো দেহের অবস্থা আমরাও ভোগ করতে পারতাম অর্থাৎ কভিড ফ্রি দেশ। এই ষোল কোটি মানুষের এক মাসের জন্য শুধু ২০০ কোটি টাকার বাজেটই যথেষ্ট ছিলো। সরকার যে চেষ্টা করে নাই তা নয় কিন্তু তার অধিনে যতো কাউন্সেলর, কমিশনার কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তি বর্গরা রয়েছেন, সাধারন জনগনের নামে দেয়া এসব প্রনোদনা গেছে সব তাদের পকেটে। ফলে মানুষ করোনায় বেচে থাকার চেয়ে অথবা করোনায় মরে যাওয়ার চেয়ে না খেয়ে মরতে চায় নি, তাই তাদের গন্তব্য সব সময় ছিলো ঘরের বাইরের মুখী। আর এই বাহির মুখী মানুষের ঢল যতোদিন ঠেকানো না যায়, এদেশের করোনা পরিস্থিতি কোনোদিনই উন্নতি হবে না। একটা সময় আসবে যখন প্রতিটি ঘরে ঘরে, গ্রামে গঞ্জে, শহরে, বাড়িতে বাড়িতে করোনার উপস্থিতি থাকবে। পরিচিত মানুষের মৃত্যুয় সংবাদে ফেসবুক ভরে উঠবে, কান্নার আহাজারি শোনা যাবে চারিদিক থেকে।
এর থেকে আপাতত বাচার প্রথম শর্ত হচ্ছে সাস্থ্য সচেতনতা আর টীকা। সেই টীকার কর্মসূচীর আওতায় আজ আমরা দুজনেই টীকার প্রোগ্রাম শেষ করলাম। এখন বাকী শুধু সচেতনতা। যেটা শুধুই আমাদের হাতে।
২৫/০৫/২০২০-করোনার শিক্ষা
Categories
প্রতিটি মহামারী, প্রতিটি দূর্যোগ প্রতিবার সমাজে একেকটা শিক্ষা নিয়ে আসে। কিছু দূর্যোগ শিক্ষা দেয় সমাজকে একত্রে বসবাস করার, কিছু শিখায় ধইর্য, আবার কিছু শিখায় ঈসশরকে যেনো ভুলে নাই তা। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাস আমাদেরকে যে শিক্ষা দিলো, তার থেকে আদৌ আমরা কিছু শিক্ষা নিলাম কিনা কে জানে। এই পৃথিবীর ভুখন্ড কে নিয়ন্ত্রন করলো, আর কে কাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলো, কোন ধর্মালয়কে কেনো কি কারনে খুলে দিলো, কতদিন পর খুলে দিলো, কার বিশ্বাস কোথায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠেকলো, এসব বিষয়ের বাইরেও আমি যেটা শিক্ষা পাইলাম তা হলো, আমরা সবাই একা এবং কেউ কারো জন্যই না।
একজন জীবিত মানুষের যে মুল্য, পরক্ষনেই সেই জীবিত মানুষটি যে এতো সস্তা এবং অবহেলিত, এটা আমার চোখে এবার খুব করে ধরা পড়লো। এই দুনিয়ার কোনো ধন সম্পদ, টাকা পয়সা কিংবা পজিশন কোনো কিছুই কারো কাছে মুল্য নাই। হোক সে দেশের প্রধান কর্মকর্তা, হোক সে সমাজের প্রধান কিংবা হোক সে বাড়ির কোনো হর্তাকর্তা। নিজের জীবনের যখন কারো হুমকী আসে, সে যতো ছোটই হোক বা বড়, তার নিজের হিসাব একেবারেই আলাদা। অন্য কোনো হোমরা চোমরা যেই হোক, যে যতো প্রতাপশালিই হোক, যে যতো সম্মানীয়ই হোক, যার যতো পয়সাই থাকুক, করোনা এই শিক্ষাটা চোখের মধ্যে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো, আপনি আমার প্রিয় স্বামী ছিলেন তো কি হয়েছে? আপনার করোনা, তাই আমি আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাইতে পারবো না। আপনি দেশের প্রধান কর্তা তো কি হয়েছে? আপনার করোনা হয়েছে, তাই আপনার ধারে কাছেও আমি যাবো না। যদিও যাই, তাহলে আমি এমনভাবে যাবো যেন আপনার কোনো কিছুই আমার ধারে কাছেও স্পর্শ না করে। দূর থেকে এবং ইশারায় কথা হবে আপনার সাথে আমার। কিন্তু আপনি তো কথাও বলতে পারবেন না, কারন আপনার কন্ঠনালি রুদ্ধ। আপনি ধর্মজাজক, তো কি হয়েছে? আপনার করোনা হয়েছে, আপনার কাছে বসে আমি ধর্মের কোনো বানিও শুনতে ইচ্ছুক নই। আপনি করোনায় মরবেন, তো আমি কি করবো? আমি আপনার জন্য দূর থেকে চোখের জল ফেলবো কিন্তু কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরবো না। এমন কি আপনার জানাজার জন্য কোনো লোকও পাবেন না। আপনি সমাজে এইডস রোগীর থেকেও খারাপ। আপনি দিনরাত পরিশ্রম করে এতো অঢেল পয়সা সঞ্চয় করে গেলেন আপনার এতো আদুরে বাচ্চাদের জন্য, তো কি হয়েছে? আপনার করোনা, তাই, আপনাকে আর আমাদের দরকার নাই। যদি বলেন যে, সমস্ত সম্পত্তি আমার জন্য আপনি বিলিয়ে দেবেন, তারপরেও আমি আপনার সাথে একা ঘরে আপনার জন্যে সময় দেবো না।
বিশ্বাস হয় না? খালী একবার মুখ ফুটে মিথ্যা মিথ্যাই বলুন এবং করোনা রোগীর মতো অভিনয় করুন যে, আপনার করোনা হয়েছে, তারপরের ইতিহাসটা নিজের চোখেই দেখুন।
করোনা এটাই বুঝিয়ে গেলো, আমি আপনি সবাই একাই। হিসাবটা পরিষ্কার।
তুমি মাঝে মাঝে আমাকে প্রশ্ন করো না যে, আমি এতো বুঝি কেনো? এতার অনেক কারন এবং ইতিহাস আছে।
২০/০৫/২০২০-যে নদীর স্রোতধারা থেমে যায়
Categories
মাঝে মাঝে আমার সাফল্যের দিকে তাকালে আমার নিজের ভাল লাগলেও কেনো জানি এটাও মনে হয়, আমার এই সাফল্যের দরকার ছিলো না। আমার আজকের দিনের সাফল্য না হলে সবাই একটা গন্ডির মধ্যে থাকতো। জীবন নিয়ে ভাবতো। চিন্তা করতো। অভাব মানুষকে একটা নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে একত্রে বসবাস করতে বাধ্য করে। ওর আচরন ইদানিং আমার কাছে অনেক উদ্দত্যপূর্ন মনে হয়। কোনো কিছুই বলা যায় না। আর্গুমেন্ট আর যুক্তির যেনো কোনো শেষ নাই। আমি আসলে ওর উপরে আমার কমান্ড এক প্রকার হারিয়েই ফেলেছি বলা চলে। আমার কোনো সুখের কথা, ভালো লাগার কথা, আমার কোনো সাফল্যের কথা, আমার কোনো কষ্টের কথা আজকাল ওর সাথে শেয়ার করা খুব মুষ্কিল। তার এসব শোনার কোনো যেমন সময় নাই, তেমনি ইচ্ছাও নাই বলে মনে হয়। কবে শেষ আমি আমার জীবনের একান্ত কিছু কথা ওর সাথে শেয়ার করতে পেরেছি , সেটা আর মনে পড়ে না। এর জন্য দায়ী আমি নিজেও। কিন্তু আমার কোনো অনুশোচনা নাই। ও নিজেও আসলে আমার অনেক কিছুই জানে না। এটা ওর ব্যর্থতা। ধীরে ধীরে মানুষ যখন কারো কম্পেনিয়ন থেকে সরে যেতে থাকে, তখন, অনেক কাছে থেকেও সে অনেক দূর। এই কাছে থাকার কোনো মানে হয় না যখন অন্তরে অন্তর লাগিয়ে কোনো কথা হয় না। তার থেকে বিস্তর দূরে থাকা এক প্রকার শান্তনাও ভাল।
তবে একটা অভিজ্ঞতা বলছি যে, মহিলাদের আর্থিক সাধীনতা যখন পরিপূর্ন হয়ে যায়, তখন তারা অনেক দেমাগী হয়ে উঠে। আর্থিক সাবলম্বিতা একটা নারী স্পেসিসকে অনেক বেশী ইমব্যালান্স করে দেয়। নারী স্পেসিসরা অতক্ষন পর্যন্ত ক্রিয়েটিভ, যতক্ষন পর্যন্ত তার কাছে নিয়ন্ত্রিত কমান্ড, ফান্ড, এবং রিসোর্স থাকে। যখনই এই জিনিষগুলি অঢেল আকারে হাতে চলে আসে, তখনই সে খেই হারিয়ে ফেলে বলে আমার ধারনা। ওর বেলায়ও আমার কাছে তাই মনে হচ্ছে। একা থাকা যায়, আর সেই একা থাকার জন্য যা যা লাগে এটা যখন নিশ্চিত হয়ে যায়, দেখা যায় মহিলা স্পেসিসরা অনেক বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা সাধারনত একা থাকাকে ভয় পায় না। বরং কারো চাপ নাই এটা ভেবে এক প্রকার শান্তিতেই থাকে। ব্যাপারটা আমি মাঝে মাঝেই উপলব্দি করি। কিন্তু আমি আবার ভুলে যাই। যদিও ভুলে যাই, তারপরেও আমার মধ্যে একটা ট্রান্সফর্মেশন হচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে পরিবর্তীত হচ্ছি। হয়তো আরো সময় লাগবে।
আমার কিছু কিছু দায়িত্ত ছিলো। বিশেষ করে সংসারের জন্য। আমার এই দায়িত্ত প্রায় শেষের পথে। আমি ওকে সাবলম্বি করে দিয়েছি, মেয়েকে ডাক্তারী পড়িয়েছি। ছোট মেয়ে এখনো পাইপ লাইনে। তারপরেও হিসাব করলে দেখা যায়, সিংহভাগ দায়িত্ত প্রায় শেষ। এখন কে কিভাবে তাদের লাইফ সেট করবে বা করা উচিত বলে মনে করবে, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এইসব ব্যাপার নিয়ে বা তাদের লাইফকে নিয়ে আমার কোনোই দরকার নাই বেশী করে ভেবে ভেবে আমার মানসিকতায় আঘাত করা। তাদের কেউ মানষিকভাবে সুখি হতে পারলো না, তাতে আমি কি করতে পারি? কেউ তার পরবর্তী লাইফে সেট করতে পারল না, তাতে আমি কি করতে পারি? আমার কাজ রশদ জোগান দেয়া। আমি সেটা করেছি কিনা তার উপর আমার নিজের সেটিসফেকসন নির্ভর করবে। হ্যা, যদি তাদের সাফল্যও আমার চোখে পরে তাহলে আমার সেটিসফেকসন হবে ডাবল যে, আমার সমস্ত চেষ্টা সার্থক হয়েছে, আমার ভালো লাগবে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেয়ার পরেও যদি তারা কেউ সুখী না হয়, তাহলে আমার কি করার আছে? যদি কিছু করারই না থাকে, তাহলে উত্তম হচ্ছে, নিজেকে তার মধ্যে চুবিয়ে রেখে নিজের ক্ষতি না করা।
আমি সেটাই করছি এখন। আমি জানি, আমার জন্য এখন অনেকেরই আর আগের মত এতো মহব্বত থাকার কথা না। সময়ও নাই। সবাই সবাইকে নিয়েই ব্যস্ত। এখন লাইফ সবার জন্য আলাদা। এক ঘরে থেকেও সবাই আলাদা আলাদা। কারো জন্য কারো সময় নাই। তারমধ্যে আবার, সবাই খালি বলতে চায়, কেউ শুনতে চায় না। তাই আমিও আর বলি না। যতোক্ষন নিজের কাছে মাল আছে, ততোক্ষন তুমি রাজা। এটা হোক কোনো মহিলারা ক্ষেত্রে, বা হোক কোনো পুরুষের জন্যে। তাই নিজের আরামের জন্য, আনন্দের জন্য সব কিছু একেবারে বিলিয়ে দিয়ে নিজে দাতা হাতেম তাই হওয়া উচিত না। এটা নিজের বউই হোক, আর ছেলেমেয়েই হোক, বা অন্য যে কেউ।
আমি একটা জিনিশ খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করছিলাম যে, তানির দাম্পত্য জীবনের ব্যার্থতার পর, ও নিজে তার পলিসি পালটেছে এইভেবে যে, যদি কখনো ওর জীবনেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে? তাই, আগে থেকেই এর সাবধানতার অংশ হিসাবে নিজে সাবলম্বি হই, তারপর যা হবার হবে। আর সম্ভবত এই ধারনার পরিপ্রেক্ষিতে যেখান থেকে অর্থ আসুক, সেটা আগে নিজের জন্য সেভ করে বাকী সব খরচ হতে হবে আমার কাছ থেকে যাতে তার নিজের সাবলম্বিতা নষ্ট না হয়। এই ধারনাটা আমার কেনো হয়েছে আমি জানি না, কিন্তু আমার ভিতরে যেনো এটাই মনে হচ্ছে ওর ব্যবহারবিধিতে। অনেক কিছুই যেন আগের মতো নাই। আমার কোনো দুঃখ নাই। আমি তো চেয়েইছিলাম, সর্বাবস্থায় ওরা ভালো থাকুক। এমন কি আমার জন্য না , ওদের জন্যই ওরা ভালো থাকুক।
কিন্তু আমি তো আমি। আমি সর্বদা এমন একটা ডিফেন্স লাইনে থাকতে চাই, যাতে অন্তত আমিও সর্বাবস্থায় কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আমি জানি আমার কিছু লোন রয়েছে সোনালি ব্যাংকে। এই টাকাটা নিয়ে আমি চিন্তিত না। কারন যা লোন আছে তার থেকে অনেক বেশী আছে আমার এসেটস। তাই আমি ভাবছি, ধীরে ধীরে আমি আমার লাইফটাকেও এমনভাবে পরিবর্তন করবো যাতে কারো কাছেই আমার কোনো কিছুর জন্যই মুখাপেক্ষি হতে না হয়। এমনকি ওর কাছেও না। একসাথে থাকার মধ্যেও দূরে থাকার ব্যাপারটা আমি অভ্যস্থ হয়ে গেছি প্রায়। এটাও ও পেরেছে বলে আমার ধারনা। কিন্তু এটা আমার জন্য যতোটা না খারাপ, তার থেকে অনেক বেশি খারাপ ওর জন্যে।
একটা কথা কখনোই আমি ভুলি না যে, যে নদীর স্রোতধারা থেমে যায়, তার জলের বিশুদ্ধতাও নষ্ট হয়। আমি কখনোই থেমে থাকতে চাই না। যেখান থেকেই হোক, যেভাবেই হোক, আমি আমার জীবনকে আনন্দেই ভরে রাখতে চাই। এটা যার বিনিময়েই হোক। আমার মাথা নত করার কোনো কারন আগেও ছিলো না, এখনো নাই।
১৫/০৫/২০২০-অর্থনীতি বিপর্যয়ের জননী
যারা এখনো মনে করছেন যে, লক ডাউনটাই হচ্ছে সমাধান, সেটা সম্ভবত সঠিক নয়। এ বিশ্ব অচিরেই করোনা মুক্ত হবে না। কোথাও না কোথাও এর পরিব্যপ্তি থাকবেই। ফলে বছরের পর বছর লক ডাউন ভাবা যায় না। কোথাও না কোথাও হয় আক্রান্ত, আক্রান্তের পর সুস্থ্য, আবার আক্রান্ত, আবার কেউ ক্যারিয়ার, কেউ আবার উপসর্গ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত ইত্যাদি নিয়েই ভবিষ্যৎ জনগোষ্ঠিতে মানুষ বিচরন করবেই। আর একজন মানুষই যথেষ্ঠ পুনরায় এই মহামারীর জন্ম দেওয়ার।
যে দেশই বলুক তারা লক ডাউনের মাধ্যমে দেশ করোনা মুক্ত করে ফেলেছে, তারা এখন সেফ। এটাও ঠিক নয়। তারা কি বিশ্ব বানিজ্য, বিশ্ব গনমানুষের আন্তরদেশীয় আনাগোনা বন্ধ করতে পারবে? পারবে না, আর পারবে না বলেই তারাও মুক্ত হয়েও আবার মুক্ত নয়। কারন যতোই চেকিং করে মানুষদেরকে নিজ দেশে ঢোকানো হোক না কেনো, উপসর্গবিহীন বহু মানুষ করোনা নিয়েও ঘুরে বেরাবেন যা সহজেই ধরা যাবে না। বছরের পর বছর লক ডাউন কার্যকরী করে রাখা সম্ভব নয়। ফলে, আজ হোক কাল হোক, লক ডাউন সবাইকে তুলে দিতেই হবে। কোনো না কোনো দেশ কোনো না কোনো কিছুর জন্যে এক দেশের না হয় আরেক দেশের উপর অবশ্যই নির্ভরশীল। ফলে অর্থিনীতির চাহিদার জন্যই সব উম্মুক্ত করতেই হবে।
লক ডাউনে যা ক্ষতি হয়েছে সেটা হচ্ছে অর্থনীতি। ক্ষতি হয়েছে সঞ্চিত সম্পদের ব্যয় এবং তা প্রায় নিঃশেষ। অর্থনীতি বিপর্যয় হচ্ছে সমস্ত বিপর্যয়ের জননী। আমি প্রথম থেকেই লক ডাউনের ফর্মুলায় বিশ্বাস করতে চাইনি। আমাদের ইসলামীক ইতিহাসও লক ডাউন করার ব্যাপারে কোনো তথ্য দেয় না। কিন্তু মহামারীতে আক্রান্ত জায়গা সমুহে অবাধ যাতায়তে নিষেধের আদেশ ছিলো। লক ডাউনে হার্ড ইম্মিউনিটি তৈরী হয় না। বরং সংক্রমন দীর্ঘায়িত হয় বছরের পর বছর। লক ডাউন একটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়।
করোনার পরে যেটা মহামারী হয়ে আসবে তা হচ্ছে দুর্ভিক্ষ। আর এই দুর্ভিক্ষের একমাত্র মেডিসিন, অর্থনীত সবলতা। অর্থনীতি সবল হলে ঘরে চাল আসবে, ডাল আসবে, সব আসবে, সাথে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় মেটেরিয়ালও আসবে। আর এটাই বাস্তবতা। সচেতনতা এখানে বড় ব্যাপার। অসচেতন হলে ভালো রাস্তায়ও মানুষ দূর্ঘটনায় মারা যায়।
১০/০৫/২০২০-এই করোনায় যারা মাস গেলেই
Categories
(১) এই করোনায় যারা মাস গেলে মাইনে পাবেন বলে সিউর, তারা সত্যিকার ভাবেই ছুটি উপভোগ করছে, আর ফেসবুকে একটার পর একটা উপদেশ দিয়েই যাচ্ছেন, এই কইরেন না, ওই কইরেন তো ওখানে যাইয়েন না তো ওইখানে যাইয়েন ইত্যাদি। কিন্তু যারা বেতনের ব্যাপারটা সিউর না, তারা তো ডাল ভাতও পাচ্ছে না। উন্নত দেশগুলির চিত্র আলাদা। তারা ট্যাক্স দেয়, ফাকি দেয় না, ট্যাক্স পায় সরকার, বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব পায়, ফলে তারা তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে জনগোষ্ঠিকে আপদকালীন সাহাজ্য করা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমাদের সরকার? তারা সবার কাছ থেকে তো ট্যাক্সও পায় না। এদেশের মাত্র ২০/২৫% লোক ট্যাক্স দেয়। আর সবাই ফাকিই দেয়। সরকারী কর্মকর্তাদের বেতনটাও করমুক্ত। অন্যদিকে, রাজস্ব আয়েও তো ভীষন রকমের ঘাটতি আছে দূর্নীতির কারনে। তাহলে সরকার বিপদকালীন সময়ে সাহাজ্যটা করবে কোথা থেকে? অর্থনীতিকে চালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট মদদ নাই সরকারের কাছেও। ফলে যেখান থেকে সরকার যতটুকুই রাজস্ব আয় পাবে, সেগুলিকে তাকে খুলতেই হবে। প্রত্যক্ষ কর পুরোটা আদায় করতে পারে না বলে ভ্যাটের ওপর যেহেতু সরকার নির্ভরশীল, ঈদের আগে সম্ভবত সে কারণেই শপিংমল খোলার ঘোষণা। এছারা ওই ক্ষুদ্র মালিকদের জন্যেও একটা আপদকালীন কিছু অর্থ আসার আশা।
(২) এদেশ আসলে কিছু ফরেন রেমিট্যান্স আর কিছু রপ্তানীমুখী শিল্পের উপর নির্ভরশীল। ফলে এসব যদি কোনো কারনে হাতছাড়া হয় ভাবতে পারেন কি আছে সরকারের হাতে? মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির নিরিখে আমরা এখন বিশ্বের শীর্ষ কাতারে, অথচ রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে নিচের সারিতে। অর্থাৎ কর-ফাঁকির প্রবণতার দিক থেকে আমরা শীর্ষে। তাহলে সরকার করবেটা কি?
(৩) আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এদেশে মানুষজন বেসিক্যালি ক্ষুদ্রশিল্পের উপর লোকালী নির্ভরশীল। তাদের প্রনোদনা কি? তারা কিভাবে আবার আগের প্লাটফর্মে আসবে যদি একেবারেই সব স্তব্ধ হয়ে যায়? সরকার সামাল দিতে পারবে এতো বিশাল বুভুক্ষ জনগোষ্ঠীকে লালন করতে? সরকার যদিও বেশ কিছু সেক্টরে লোন প্রনোদনা ঘোষনা করেছেন, কিন্তু আরও কয়েক সপ্তাহের আগে প্রণোদনার টাকা হাতে আসবে বলে মনেও হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসের বেশি এবং যেসব শর্ত ধরা হয়েছে, অনেকের জন্য এটা অর্থহীন। কে জানে, কীভাবে ওই সব শর্ত পূরণ করে কত দিনে বরাদ্দটা মিলবে? প্রণোদনার ধরনও খুবই অস্পষ্ট। তত দিনে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। তাদের অবস্থাটা কি? আমার আপনার বাসায় তো ডাল ভাতের জোগাড় আছে, কিন্তু ৮৬% লোকের তো সেটাও নাই? তাহলে কিভাবে তারা না খেয়ে ঘরে থাকতে বলি? আমি আপনি কি পারবো না খেয়ে দিনের পর দিন ঘরে পানি খেয়ে থাকতে?
(৪) করোনা ভাইরাস মহামারী আসলে একটা অর্থনীতি বিনাশী ঘটনা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক সমস্যা—কিছুই এর সমতুল্য নয়। সমাজের ২৫ ভাগ লোক হঠাৎ স্থায়ীভাবে কঠিন বেকারত্বে পড়ে যাবেন, আর এটা সেরে উঠতে লাগবে কয়েক যুগ, হতে পারে আর আগের ফর্মে ফেরাই যাবে না। অর্থনীতি ধ্বংস হলে সমাজও থাকবে না, রাজনীতিও থাকবে না, গনতন্ত্র তো দূরের কথা। তছনছ করে দেবে পরিবার, সম্পর্ক, উদারতা, মানবিকতা কিংবা সজ্জনতা। একটা কথা আছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয় বাকি সব বিপর্যয়ের জননী।
(৫) প্রচুর মানুষের কাছ থেকে কি পরিমান রিকুয়েষ্ট যে পাই, তা বলার ভাষা নাই। আগে তো সামর্থবান ফকির দেখলে ভিক্ষে দিতাম না, কিন্তু এখন কোনো বয়স বা জেন্ডার দেখি না, যা আছে সেটাই দিতে চাই, হয়তো এই মানুষটা ১দিন না খেয়ে তারপর হাত পেতেছে।
এই লক ডাউন কন্সেপ্টে অনেক ভুল আছে। লক ডাউনটা কত দিনের? ২ মাস, ৩ মাস,৬ মাস কিংবা আরো বেশি? কিন্তু এই করোনা ভাইরাস থাকবে আরো কম্পক্ষে ৪/৫ বছর। বর্তমানে কারখানা খোলা, শপিংমল খোলা বা এই জাতীয় বিজনেজ সচল রাখা মানে লাভের জন্য নয়, এটা পুরু দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঠেক দেওয়া। যারা খালি ফেসবুকে বিজ্ঞের মতো মন্তব্য করেই যাচ্ছেন, তারাই বলুন তো, দেশে কত জনকে ব্যক্তিগতভাবে আপ্নি নিজে আর্থিক সাহাজ্য করেছেন? এবং কত টাকা? একটা পরিবারকে বাড়ি ভাড়া, বিল, খাওয়া এবং সব মিলিয়ে ঢাকা শহরে কম্পক্ষে ২০/২৫ হাজার টাকা লাগে। কয়জনকে পারবেন দিতে? খালি ৫ কেজি চাল আর ১ লিটার তেল দিয়ে কাউকে উপদেশ দিয়ে এটা বলা যাবে না যে, stay home. আসুন একটা জরীপ করি- কারা কারা এইসব মধ্যবিত্তদেরকে আগামি ৩/৪ মাস সাপোর্ট দিতে ইচ্ছুক। একজনকেও পাব না এ ব্যাপারে আমি শতভাগ সিউর। তাহলে এই শুকনা উপদেশে কার মন ভরবে?
সহজ না উপলব্ধি করা। কিন্তু উপদেশ দেয়া খুব সহজ। তাই আগে অবস্থাটা আরো সামনের দিকে দ্রিষ্টি দিয়ে ভাবুন তারপর মন্তব্য বা উপদেশ যাইই করার করুন। সরকার এই মুহুর্তে আমার ধারনা একদম ঠিক সিদ্ধান্তগুলিই নিচ্ছেন।
এটার কোনো ডাউনফল পিক পয়েন্ট নাই। প্রতিটা নতুন সংক্রমন লকডাউনে থাকা ফ্রেসব্যক্তি পুর্ন উদ্যমে আবার নেক্সট স্টার্টিং পয়েন্ট হয়ে যায়। বরং কারেক্ট সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং (তাইওয়ানের মত, ৪৫৬ টোটাল আক্রান্ত, ডেথ মাত্র ৬, তাও আবার উহানের ঠিক পাশে থাকা দেশ) এবং হার্ড ইম্মিউন এর একমাত্র লং টার্ম সমাধান। অনেক উপসর্গহীন মানুষও করোনায় আক্রান্ত।
০৮/০৫/২০২০-দাস রায় দিতে পারেনা।
যখন আমার বান্দা ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করে, তখন আমি তাকে বন্ধু বলে জানি। যখন বন্ধু বলে জানি, তখন আমি তার কান হই যা দ্বারা সে শোনে, আমি তার চোখ হই যা দ্বারা সে দেখে, আমি তার হাত হই যা দ্বারা সে কিছু ধরে, আমি তার পদযুগল হই যা দ্বারা সে হাটে (হাদিসে কুদসি)।
ফলে, নৈকট্য লাভের উপায় অনুসব্ধান করো (সুরা মায়িদা ৫ঃ৩৫)। আল্লাহর ইবাদতে তুমি এমনভাবে মশগুল হও যেনো তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছো। আর যদি দেখতে না পাও, তবে মনে রেখো, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। যা আমি বলেছি, তা শরিয়ত, যা করেছি তা তরিকত, যা দেখেছি তা হাকিকত আর যা চিনেছি ও জেনেছি তা মারেফাত। (আল হাদিস)। পৃথিবীতে সফর করো ও দেখো অপরাধীদের কি পরিনাম হয়েছিলো (সুরা নমল-২৭ঃ৬৯) এবং দেখো, জানো এবং মানো আর লক্ষ্য করো পরিনতি-যারা করেছে আর যারা করেনি এবং (এক ধরনের হুমকী দিয়ে বলেছেনঃ) আমি কি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? (সুরা কিয়ামা-৭৫ঃ৩৬)
মন্তব্যঃ- সৃষ্টি তার, সার্বভৌমত্ব তার, তিনিই একমাত্র অধিপতি। আমরা তার দাস। যে দাস, সে রায় দিতে পারেন না। এখানে ন্যয্য কিংবা অন্যায্য কি সেটা বলার কোনো ইখতিয়ারও নাই। গায়ের জোর দিয়ে কিছুই বলা যাবে না কিংবা স্রিষ্টির সব রহস্য যেহেতু আমাদের জানা নাই, তাই আমাদের জ্ঞানের কোনো বিশ্লেষনও নাই। আমরা তো এটাও জানি না, কিয়ামতের পরে কি স্রিষ্টিকারী সব শেষ করে দিয়ে আবার চুপ করে থাকবেন নাকি পুনরায় আবার কোনো জগত তৈরী করে নতুন কোনো রহস্যা সৃষ্টি করবেন? সবই তো রহস্যা। জ্ঞানের স্তর অনেক। আমাদের যার যার জ্ঞানের পরিধিতে একই জিনিষ পরিমাপ করতে পারি না। জ্ঞান নিজেও একটা রহস্য।
০৮/০৫/২০২০-সবকিছুতেই পোষাকশ্রমিক
এই করোনা পরিস্থিতিতে মিডিয়ায়, টকশো তে গার্মেন্টসের উপর পরিবেশিত খবরগুলি দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে একটা সন্দেহ জাগছে যে, ভাবখানা যেনো এ রকম, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে তারা সরকারের বিধিনিষেধ থাকা সত্তেও সরকারের আদেশ উপেক্ষা করে ফ্যাক্টরীসমুহ খোলা রাখছেন। আর যেহেতু খোলা রাখছে, ফলে দূরদুরান্ত থেকে শ্রমিকগন কেউ চাকুরী রক্ষার কারনে, অথবা বেতন পাবেন না অনুপস্থিত থাকলে ইত্যাদি কারনে পায়ে হেটে হেটে সেই গ্রামগঞ্জ থেকে কারখানার উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হয়ে গেছেন। এই ব্যাপারটা কি এইরকমই যে রকম করে বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশ করছে?
ব্যাপারটা অবশ্যই এই রকম না। ২৬ মার্চ ২০২০ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারী উপলক্ষ্যে দেশের উদ্দেশ্যে ভাষনের সময় কলকারখানা বন্ধ রাখার কথা কিছুই বলেন নাই। তবে প্রচুর বৈদেশিক আদেশ পর পর বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে এবং আরো অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়ার আশংকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী তথা দেশের অর্থনীতিতেও একটা আতংকের সৃষ্টি হয়। আবার অন্যদিকে সরকার সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিলেন যে, জরুরী কোনো কাজ না থাকলে যেন কেহ ঘরের বাইরে না যান। বিকেএমই এ সরাসরি সমস্ত কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার আদেশ জারী করে কিন্তু বিজিএমইএ সে রকম সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন নাই। এমতাবস্থায় ২৮ মার্চ তারিখে বিজিএমইএ এর অধীনে কলকারখানাগুলি খোলা থাকবে কি থাকবে না, এটা নিয়ে মালিকপক্ষের মধ্যে বিস্তর সন্দেহের সৃষ্টি হয়। পরবর্তিতে ২৭ মার্চ ২০২০ তারিখেই সরকারের পক্ষ থেকে সরকারের কলকারখানা অধিদপ্তর থেকে সুস্পষ্ট একটি নির্দেশনা এলো। আর সেটি হচ্ছে, যে সমস্ত কলকারখানায় আন্তর্জাতিক এক্সপোর্ট অর্ডার আছে এবং যে সব কারখানায় করোনার প্রোটেকশনের নিমিত্তে পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি বানানো হয়, সে সমস্ত ফ্যাক্টরির মালিকগন প্রয়োজনীয় করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থার গ্রহনের নিমিত্তে (যেমন শ্রমিকদের প্রবেশের সময় ১০০% সেনিটাইজার/সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে, মাস্ক পড়িয়ে, থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে বডি টেম্পেরেচার মেপে ইত্যাদি) ই্ছে করলে কারখানা খোলা রাখতে পারবেন।
কিন্তু যে কোনো ভাবেই হোক ২৯ মার্চ ২০২০ তারিখে বিজিএমই এ সভাপতি ডঃ রুবানা হক পুনরায় মালিকদেরকে কারখানা সমুহ বন্ধ রাখার অনুরঢ করেন। বাধ্য হয়েই আমরা সেটা পালন করি। এর মধ্যে আরেকটি ঘটনা ঘটে গেলো। যারা দূর দুরান্ত থেকে ঢাকায় এসেছিলেন, তারা আবার ঢাকার বাইরে চলে গেলেন। এই যে আসা এবং যাওয়ার মধ্যে প্রচুর লোক সমাগম হ ওয়াতে টক শো এর বিজ্ঞ এবং আদার বেপারী জাহাজের খবর নেবার মতো বিশেষজ্ঞরা একটা পরিচিতি লাভের আশায় সবার সাথে তাল মিলিয়ে একবাক্যে প্রচার করা শুরু করলেন, যতো দোষ, সব যেনো নন্দ ঘোষের। অর্থাৎ গার্মেন্টস মালিকদের। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এবারো কোনো দিক নির্দেশনা এলো না যে, কল কারখানা বন্ধ রাখা হোক। বরং কল কারখানা চালুর রাখার ব্যাপারে এবারো কল কারখানা অধিদপ্তর খোলা রাখা যাবে এই মর্মে আবারো আদেশ জারী করেই রাখলেন।
অথচ অন্য দিকে সরকার কাউকেই ঘরের বাইরে আসতে দিতে নারাজ। ফলে ব্যাপারটা এমন দেখাচ্ছে মিডিয়াগুলি যেনো, সব দোষ গার্মেন্টস মালিকদের, আর তাই অপবাদ যেনো গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের। এটা কেনো?
কিছু লোক আছে সবসময় সবকিছুতেই পোশাকশ্রমিক নিয়ে বেশি মাতামাতি করেন। এদের উদ্দেশ্য কি ?
বাংলাদেশে আজ ৮ মে পর্যন্ত ১৩০০০ করোনা রোগি, এর মধ্যে পোশাক শ্রমিক ১৯৬ জন, পুলিশ ১৫০০ জন। পোষাক শ্রমিক ৪০ লক্ষ, তাদের মধ্যে করোনা রোগি ১৯৬ জন। পুলিশ ২ লক্ষ, তাদের মধ্যে করোনা রোগি ১৫০০ জন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি, তাদের মধ্যে করোনা রোগি ১৩০০০ জন। বাংলাদেশের মোট শ্রমিক সংখ্যা ৬ কোটি, এর মধ্যে পোশাকশ্রমিক ৪০ লক্ষ।
তাহলে সবকিছুতেই পোষাকশ্রমিক হেডলাইন করে মাতামাতি করেন কেন? এটা একটা চক্রান্ত।
যারা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, তারা কি করোনাকে ভয় পান না? তাদের কি পরিবার পরিজন নাই? যে কোনো মুহুর্তে তিনি নিজে আক্রান্ত হয়ে তার পরিবারকেও তো আক্রান্ত করতে পারেন, তার কি সেই ভয় নাই? তিনি কি এতোটাই গরীব যে, তার ঘরে খাবার নাই বলে তিনি রোজগারের জন্য কারখানা খোলা রেখেছেন? তিনি কি ঘরের মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারেন না? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুব সহজ।
এই গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরাও করোনাকে ভয় পান, তারা নিজেরা আক্রান্ত হলে তার নিজের পরিবার পরিজনও বিপদের সুম্মুখিন সেটাও তারা জানেন। তিনি এতোটা গরীব নন যে, তাকে অন্তত কয়েক মাস ঘরে বন্দি হয়ে থাকলেও রোজগারের বাইরে যেতে হবে। তাহলে তারপরেও তারা কারখানা খোলা রাখছেন কেনো? এর প্রধান কারন, সরকার জানেন, যে, এই সেকটর খোলা রাখা জরুরী। আর জরুরী এই জন্য যে, দেশের জনগনকে সেবা দেওয়ার জন্য যে খরচ, যে ব্যয়, যে, অর্থ প্রয়োজন, তার একটা বড় উতস আসে এই সেকটর থেকে। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে যিনি বেশী ভেবেছেন তা হচ্ছে দেশের কর্নধার হিসাবে যিনি দেশ পরিচালনা করছেন তিনি, প্রধানমন্ত্রী। আমি কোনো দল করি না, আমি রাজনীতিও করি না। কিন্তু আমি একজন নিরপেক্ষভাবে কিছু মন্তব্য করে চাই।
সারাবিশ্ব এই মুহুর্তে প্রায় লক ডাউন। প্রতিটি নাগরীক প্রায় গৃহবন্দি। বিশ্ব বাজারের সবগুলি ষ্টোর, ওয়্যার হাউজ, বড় বড় শপিংমল সবকিছু বন্ধ থাকায় কোনো প্রকারের বেচাকেনা, বানিজ্য আদানপ্রদান একেবারেই নাই বললেই চলে। সারাবিশ্ব একেবারে স্থবির। এই অবস্থায়, ধনী দেশ গুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, নাগরীক ভাতা, ইত্যাদি দিয়ে কিন্তু তাদের জনগনকে মাসের পর মাস সাপর্ট দিতে বদ্ধপরকর। আর ওটা অই সব সরকারগুলি করতে পারেন কারন শান্তিকালীন সময়ে প্রতিটি নাগরীক তারা সরকারকে সঠিক ট্যাক্স দেন, তারা ব্ল্যাক মানি রাখেন না, কিংবা তারা দেশের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করেন। তাই সরকার আপদকালীন সময়ে ঠিক সাহায্য তা করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা কি তাদের মতো? আমাদের দেশের ৬০-৭০% মানুষই তো প্রায় ট্যাক্স দেন না, হেলথ ইন্সুরেন্স করেন না, আবার দেশের সম্পদ যখন যেভাবে খুশী অপচয়, চুরি ডাকাতিতে এমন থাকেন যে, সরকার আপদকালীন সাহায্য করবে কি দুরের কথা প্রশাসনিক কর্মকান্ডই তো পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হয়।
এই অবস্থায় সরকারের পক্ষে কি কোনোভাবেই সম্ভব এই বিশাল জনগোষ্টিকে মাসের পর মাসে হাউজ কোয়ারেন্তাইনে রেখে ভরন পোষন করা? তার মধ্যে সরকার যেটুকু টাকা বৈদেশিক মুদ্রায় লাভ করেন, রপ্তানী থেকে, রেমিট্যান্স থেকে সেগুলি যদি একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তো দেশের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে উঠবে।
৩০/০৪/২০২০-গাছতলায় বইসা সংসার হয়না
আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষের একটা প্রবনতা আছে (বদ না ভাল সেটা বলতে চাই না), আর সেটা হল, কোনো একটা ব্যাপারে কেউ যদি মিডিয়াতে, বা টকশোতে ঝড় তুলতে পারে, তাহলে এর বাইরে আশেপাশে আরো বড় বড় কোনো ইস্যু যাইই হোক না কেনো, যেটার উপর ঝড় উঠলো, তো সেটা নিয়ে এমন তুলকালাম বাধাবে যে, পৃথিবীতে বুঝি ওটা ছাড়া আর কোনো ইস্যু নাই। হোক সেটা রাজনীতি, হোক সেটা কোনো চুরি, বা কোনো রোমাঞ্চকর ব্যাপার। আর মজার ব্যাপার হলো, ওটা যে কি, এটার আগামাথা না জেনে, না বুঝে, এর ইমপ্লিকেশন কি, বা তাতপর্য কি কিছুই বুঝুক বা না বুঝুক, জ্ঞানীদের মতো বিজ্ঞ বিজ্ঞ মন্তব্য না করে ছাড়বে না। ভাবখানা এই রকমের যে, সবাই সিপিডি জাতীয় উন্নততর কোনো গবেষনা প্রতিষ্ঠানের এক মহারাজ্যে তাকে কন্সাল্টেন্ট হিসাবে যখন তখন বসাইয়া দেয়া যায়। পাওয়ার ব্যাংক আর সেন্ট্রাল ব্যাংক যে এক না, এটাই হয়তো অনেকে বুঝে না। খালি ব্যাংক হলেই বুঝি টাকার সাথে জড়িত বলে ভাবে।
আজকে আমার প্রসংগটা গার্মেন্টস নিয়ে। গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে বহুত মানুষ জানেই না এর পুরু প্রোসেসটা কি, কিভাবে এর সফলতা বা ব্যার্থতা আসে। যার ফলে দেখা যায়, এই সেক্টরে বুঝি হাজার হাজার কোটি টাকা খালি বাতাসে উইড়া বেড়ায়, এই চিন্তা করে বহুত উঠতি নাদান পাবলিক বাপের বাড়িঘর বেইচ্যা, বউ এর গহনা গাট্টি বন্ধক দিয়া, বন্ধু বান্ধবদেরকে মোটা লাভের লোভ দেখাইয়া টাকা পয়সা লোনে জোগাড় কইরা ব্যবসা শুরু করে। যেহেতু এর আগামাথা কিছুই বুঝে না, অল্পদিনেই মাইর মুইর খাইয়া নাস্তানাবুদ, আর ফলস্বরূপ দেনার ভারে মাথা নুয়াইয়া মোবাইল ফোন বন্ধ কইরা চোরের মতো এদিক সেদিক হয় ঘুইরা বেড়ায় নতুবা কোনো না কোনো ফন্দিফিকির কইরা কোনো রকমে বউ ঝি ফালাইয়া বিদেশ পাড়ি মাইরা হয় ক্যাব চালায় না হয় ৭/১১ এ কাজ শুরু করে। আর দোষ পড়ে হয় শ্রমিকের, না হয় বায়ারের, না হয় সরকারের ইত্যাদি। নিজে যে একটা চুদুর বুদুর টাইপের জ্ঞানি, সেটা স্বীকার করে না। একজনে কোটি টাকা লোন কইরা একখানা বাড়ি করলো মানেই কিন্তু সে ফাইনালি বাড়ির মালিক বইন্যা যায় না। যে বাড়ি বানাইছে লোন নিয়া, সে বুঝে মাসিক কিস্তি দিতে না পারলে তার হার্টবিট কত রেটে চলে, কয়েক মাসের মাসিক কিস্তি যদি বকেয়া পইড়া যায়, তাহলে ওই বাড়িওয়ালার রাতের ঘুম হবে হয় রাজপথে না হয় কবরে। কিন্তু আশেপাশের লোক কিন্তু দেখতাছে, বেটা তো সাততালার একখানা বাড়ির মালিক। মজার ব্যাপার হইল আরেকটা, জোগালি বা রাজমিস্ত্রী যে এতো কষ্ট কইরা বাড়ি একখান বাড়িওয়ালার পক্ষে বানাইয়া দিলো, কেউ কিন্তু কয় না, জোগালির বা রাজমিস্ত্রির ঘামের রক্তে বেটা বাড়ি বানাইছে, এখন জোগালি বা রাজমিস্ত্রিরেও আজিবন বেতন দেয়া হোক। কিন্তু গার্মেন্টসের বেলায় কিন্তু এই কথা জোর গলায় কইতাছে, শ্রমিকদের রক্তে নাকি মালিকরা বড় লোক হইতাছে। আরে ভাই, দেন না একটা ফ্যাক্টরী। আপ্নিও বড়লোক হইয়া যান!! খামাখা চাকুরীর জন্য আবার ওই গার্মেন্টেই আহেন কেন?
বাংলাদেশে যতোগুলি গার্মেন্টস আছে আমি সবাইকে এক কাতারে ফেলছি না। কিন্তু যেসব গার্মেন্টসগুলি কমপ্লায়েন্স করা (অনেকে তো আবার কমপ্লায়েন্স কি সেইটাই বুঝেন না), সেডেক্স, বিএসসিআই, ইউএল, আইএসও, একর্ড, এলায়েন্স ইত্যাদি সোস্যাল কমপ্লায়েন্সগুলিতে কোয়ালিফায়েড, তাদের কথা বলছি। এইসব ফ্যাক্টরীগুলি এইসব কমপ্লায়েন্স করতেই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এবং এসব বাংলাদেশের কোনো অথরিটি দেয় না। দেয় আন্তর্জাতীক সংস্থাগুলি। আর ওখানে ঘুষের কোনো কারবার চলে না। সব শর্তাবলী পালন করেই এইসব সার্টিফিকেট পাইতে হয়। এরা টাইমমতো বেতন দেয়, টাইমমতো বোনাস দেয়, সময়মতো ওয়ার্কিং টাইম মেইন্টেইন করে, মাতৃত্ব ছুটি, বাৎসরিক ছুটি, মেডিক্যাল লিভ, ক্যাসুয়াল লিভ, হেলথ এন্ড হাইজিন, পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলি সব মেনে ব্যবসা করে। কারন কমপ্লায়েন্সওয়ালা ফ্যাক্টরীগুলি এসব বিষয়ে প্রতিনিয়ত ব্রান্ড বায়ারদের কাছে জবাব্দিহি করতে হয়। কিন্তু এর বাইরেও হাজার হাজার গার্মেন্টস আছে, যারা না এইসব কমপ্লায়েন্সের ধার ধারে, না কোনো স্ট্যান্ডার্ড মেইন্টেইন করে। ওইসব ফ্যাক্টরিগুলি না দেয় টাইম মতো বেতন, না দেয় শ্রমিকদেরকে তাদের সঠিক পাওনাগুলি। আর এইসব ফ্যাক্টরির জন্য যারা অরিজিনালি ভালো ফ্যাক্টরী তাদের বদনাম হয়। ওই যে একটা কথা আছে না, মাছ খায় সব পাখী, নাম পড়ে মাছরাংগার। ব্যাপারটা প্রায় এই রকম যে, গুটিকতক অসৎ সদস্যের কারনে পুরা সেক্টর বা ডিপার্টমেন্টের (হোক সেটা যে কোনো ডিপার্টমেন্ট, ডাক্তার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, শিক্ষক, বা সরকারী কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ী ইত্যাদি) বদনামের ভাগীদার হতে হয়। একটা উদাহরন দেই, এই যে, ঢাকার বাইরে থেকে যারা এখন ঢাকার উদ্দেশ্যে লকডাউনের মধ্যে পুনরায় ঢাকামুখী হচ্ছেন, তারা কি সবাই গার্মেন্টস শ্রমিক? আসলেই না। এদের মধ্যে আছে অন্যান্য সেক্টরের মানুষজনও যেমন পরিবহন সেক্টর, কন্সট্রাকশন সেক্টর, চা বাগান, মৎস্য সেক্টর, সাধারন শ্রমজীবি, আর আছে লম্বা ছুটি পাওয়ার কারনে বহুত সরকারী-বেসরকারী লোকজন। কিন্তু দেখবেন, ফেসবুক সয়লাব হয়ে যাবে নতুন পুরানো পোষ্ট মিলাইয়া যে, এই যে গেলো সব। গার্মেন্টস শ্রমিকেরা এইবার সারা দেশের করোনা, ধরোনা, বা সরোনা টাইপের যতো রোগ আছে সববুঝি চারিদিকে ছরাইলো। আরে ভাই, এর মানে কি এই যে, গার্মেন্টসের সব শ্রমিকেরা করোনা লইয়া ঘুরে? পরিসংখ্যানে কয়টা ধরা পরছে যে, একশত লোকের মধ্যে ৯০ টাই গার্মেন্টস শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত?
সরকার অযথা ঘুরাঘুরি করতে না করতেছেন, তারপরেও কে কার কথা শুনছেন? ঘরে আর ভালো লাগে না, ঘরে ঘরকন্নার কাজ করতে করতে অস্থির, তাই খুশির ঠেলায় একটু খামাখাই বাইরে যাই। আর এদিকে সারাক্ষন রাস্তায় যারা নিজের জীবন বিপন্ন কইরা আর্মি, পুলিশ র্যাটব এবং অন্যান্য সেচ্ছাসেবীরা হিমশিম খাচ্ছেন, তাদেরকে মিথ্যা একখান অজুহাত দিয়া ফাকি দিয়া কখনো আজাইরা বিড়ি ফুকার জন্য বাজারে, মাঠেঘাটে, অলিতে গলিতে আড্ডা মারতেছে, তাদের কোনো দোষ নাই করোনা ভাইরাস ছড়ানোর বেলায়। তারা মনে হয় স্থায়ী প্রতিষেধক লইয়া জন্ম গ্রহন করিয়াছে, তাই তারা বুক ফুলাইয়া ঘুরিতে পারে, তাতে কোনো প্রশ্ন নাই।
আরেকখান কথা না বললেই না। দুনিয়ার বিখ্যাত বিখ্যাত অনেক কোম্পানি যেমন, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, পোষাক শিল্পের নাম করা এইচ এন্ড এম, জারা, তেল কোম্পানী, আরো অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলি এই করোনার প্রভাবে দেউলিয়া হইয়া ব্যবসা পর্যন্ত বন্ধ করে দিচ্ছে, তারাও তো হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করছিলো, কিন্তু এরপরেও বন্ধ হচ্ছে কেনো? যারা ব্যবসা করেন (আজাইরা ব্যবসা না, অরিজিনাল ব্যবসা) তারা বুঝতেছে কি চলছে তাদের একাউন্ট ডিভিশনগুলিতে। এটা কোনো ফুস্কার দোকান না। কিংবা মালাইকারীর দোকান না যে, মনে হইলো ২০০ টাকার মুলধন লইয়া ব্যবসায়ী হইয়া গেলাম, আর সমস্যা হইছে তো, ঘরে গিয়া আরামছে স্টার জলসা দেখা শুরু করলাম।
মজার ব্যাপার হইলো আরেকটা। সরকারের বহুত অর্থপূর্ন সিদ্ধান্তগুলিকে কিছু কিছু নব বুদ্ধিজীবিরা এমনভাবে সমালোচনা কিংবা ফেসবুকে উপদেশ দেয়া শুরু করছেন যেনো তারাই সরকারের চেয়ে ভালো বুঝে বিশ্ব অর্থনীতি, কিংবা দেশের অর্থনইতিক অবস্থা। আরে ভাই, যে গিন্নি সংসার চালায়, সে বুঝে কয় বেলার খাবার ঘরে আছে আর কয়দিন কিভাবে চলবে। আর বিকল্প কোথা থেকে কি না আসলে সামনে তার সংসার চালানো কি বিপদ। যিনি সরকার চালান, তিনি জানেন তার মাথায় কি পরিমান বোঝা লইয়া তারা ঘুমাইতে যান। কাল যখন করোনা থাকবে না, আর আপনি যখন গাড়িখানায় নিজের বউ বাচ্চা লইয়া অনেকদিন পর একটা লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য আগে তেল ভরার জন্য পেট্রোল পাম্পে যাইবেন, গিয়া দেখবেন, অকটেন, ডিজেল নাই, আবার শুরু করবেন সরকারের চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধারের। পরশু যখন দেখবেন ফারনেস ওয়েলের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ আর বিদ্যুৎ দিতে পারবে না, তখন আবার খুশীর ঠেলায় সরকারের আটাইশ গোষ্টি শুদ্ধা উদ্দার করবেন। বিদেশে আদরের বাচ্চাটারে পরাইতে পাঠাবেন, ডলার লাগবে, কিডনী খারাপ হইয়া গেছে, বাইরে না গেলেই নয়, পগারপার হইয়া যাইবেন, বাড়ি ঘর বেইচ্যা হইলেও বাচতে চাইবেন, তাই ডলার লাগবে, নিত্যদ্রব্য কিনতে গেলেও তো বিদেশী কারেন্সীই লাগবে। কেডা দিবো এই কারেন্সী? ফরেন রেমিট্যন্স তো এখন প্রায় শুন্যের কোটায় কিন্তু সরকারকে তো এইসব কিছুই ডলার দিয়া কিনতে হয়। তাহলে এই ডলারগুলি কি আমাদের কেউ যৌতুক দিবেন সরকারকে? সরকার খুব ভালো করেই জানেন, তার কি করা উচিত। এতো বিশেষজ্ঞ সবার না হইলেই ভালো। WHO কইলো ৫ লাখ লোক নাকি মরবো আমাদের দেশে ২ মাসের মধ্যে, আরে ভাই, ওইটাও একটা রাজনৈতিক কেরামতি। দেশের ৫ লাখ লোক মইরা যাইব আর সরকার আকাশের তারা গুববো নাকি? তার চিন্তা নাই? অবশ্যই আছে। আর তারা সেটাই করছে, যা করনীয়।
যাইই হোক, এসব ব্যাপার বেশী কথা বলতে চাই না। এই করোনা অবস্থাতে যারা ভালো ফ্যাক্টরি, তারা নিজের ঘরের সদস্যদের থেকেও তাদের শ্রমিকদের ব্যাপারে অনেক বেশী খেয়াল রাখেন এবং রাখছেন। যেসব ফ্যাক্টরীগুলি সাবস্ট্যান্ডার্ড, তারা আরো ৫০ বছরেও ওই সাব-স্ট্যান্ডার্ডই থেকে যাবে। আর এর কারন হইলো এই যে, যারা অতি লোভে ব্যবসা করতে আসেন, তাদের ব্যবসা শুরু করার আগেই ক্যালকুলেটরে লাভের অংক কষতে থাকেন। তারা তো ব্যবসায়ীই না। তাদের জন্য ভালো ফ্যাক্টরীগুলির বদনাম হবে কেনো? এই তলাবিহিন রাষ্ট্রটার এখন শক্ত তলা হয়েছে শুধুমাত্র ভালো ব্যবসায়িদের সমন্নয়ে সরকারের বুদ্ধিদীপ্ত নির্দেশনার কারনেই। তাই, আমাদের উচিত না কালো বা হলদে সাংবাদিকতার খপ্পরে পইরা দেশের সতেরোটা বাজাই আর সোনার ডিম দেয়া মুরগীটারে জবাই করি। এটাও ঠিক যে, সোনার ডিম পাড়া মুরগীরে কেউ সোনার মুকুট পড়ায় না। এটা আমরা জানি। মুকুট পড়াইয়েন না, অন্তত মুরগীটারে বাচতে দেন, আপ্নারই লাভ হবে।
আরেকটা মজার কথা বলি। যারা সত্যিকারের গার্মেন্টস শ্রমিক, তারাও এই সেক্টরের জন্য বহুত টেনসনে আছেন। তারাও দুই হাত তুইল্লা আল্লাহর কাছে তাদের নিজেদের ফ্যাক্টরির জন্য আর মালিক যেনো বাচতে পারে তার জন্য নামাজ কিংবা পুজা যে যার ধর্ম মোতাবেক দোয়া করতেছে। আর যাদের আপ্নারা রাস্তায় দেখেন, তারা আসলে কোনো শ্রমিকই না। তারা হচ্ছে শীতের পাখীর মতো হটাত কইরা কিছু অসৎ মানুষের পাল্লায় পইরা ৫০/৬০ টাকার কমিশনে ঘন্টা খানেকের জন্য রাস্তায় একটা উত্তাপ ছরাইয়া দেয়া। কিছু টায়ার পুরাইয়া একটা অরাজকতার স্রিষ্টি করা। এটাই ওদের কাজ। অথচ আসল শ্রমিকেরা এর বিরোধিতাও করতে পারে না কারন তারা সত্যিই নীরিহ। ঝগড়া ফ্যাসাদে জরাইতে চায় না। কিন্তু মনে মনে ঠিকই বলে, হালার দে না আমারে এক মাসের খাবারের টাকা? তখন কিন্তু আবার তাদের পাশে নাই। তারাও নাই, মিডিয়াও নাই, আবার যারা বুদ্ধিজীবির মতো মন্তব্য করেন, তারাও নাই। এটাও হতে পারে যে, ওইসব পোলাপান ওইসব সাব স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাক্টরী গুলিরই শ্রমিক। ভালো এবং দক্ষ শ্রমিকেরা সাব স্ট্যান্ডার্ড ফ্যাক্তরীতে কাজও করতে যায় না। যারা অদক্ষ, তারাই ওখানে গিয়া ভীড় জমায়।
যাই হোক, আসুন আমরা দেশের এই ক্রান্তিকালে যেটা ভালো সেটাই করি। তবে, হ্যা, যেহেতু করোনা ভাইরাসটি একটি ছোয়াছে রোগের মতো, তাই সবাইকেই সচেতন হইতে হবে। এটা গার্মেন্টস শ্রমিকই হোক, মালিকই হোক আর যে শ্রেনীর লোকই হোক। এটা একটা সমন্বিত সামাজিক দায়িত্ত। কারোরুই কম দায়িত্ত নয়। জীবন চলতে হবে, জীবনের জন্য জীবিকাও চালাইতে হবে। বছরের পর বছর এই ভাইরাস নাও শেষ হইতে পারে। তাই বলে কি এতো লম্বা সময় শুধু ঘরে বসে থেকে সবকিছু কারো পক্ষে সরবরাহ করা সম্ভব? তাই, আমাদেরকে বিশ্ব বানিজ্যের সাথেও তাল মিলাইতে হবে। তানা হলে সারা দুনিয়া থেকে আরেকবার এতো দূর পিছাইয়া যামু, যে, ম্যারাথন দৌড় দিয়াও লাভ হইবো না। কারন ভেনিজুয়েলা, রাশিয়া, রোমও একসময় সারা দুনিয়া মাদবরি কইরা গেছে, কিন্তু সময় আর রিসোর্সকে সঠিকভাবে কাজে লাগাইতে পারে নাই বইল্লা, তাদেরকে টপকাইয়া তৃতীয় দেশগুলি ফরফর কইরা আগাইয়া গেছে। গাছ তলায় বইসা প্রেম করা যাইতে পারে কিন্তু গাছ তলায় বইসা সংসার চলে না।
(কাউকে উদ্দেশ্য কইরা এই লেখা না, কেউ আবার মাইন্ড খাইয়েন না, নিরপেক্ষভাবে পইড়েন, হয়তো কিছুটা হলেও সম্বিত ফিররা আইতে পারে, আজাইরা কমেন্টের দরকার নাই। বুদ্ধিজিবি চাই না, বিবেকবান চাই)
২৯/০৪/২০২০-মাননীয় ইচপিকার
ফেসবুকে কিছু কিছু লোকের কিছু কিছু সাবজেক্টে কমেন্টস আর যুক্তি শুনলে মনে হয়, দুনিয়ার কোনো সাব্জেক্টেই তেনাদের জ্ঞানের কোনো কমতি নাই। রোগতত্তের উপরই হোক, অর্থনীতির উপরই হোক, গ্লোবাল রাজনীতির উপরই হোক, মনে হয়, ওরে বাবা, না জানি কত বড় জ্ঞানি। কিন্তু যদি জিজ্ঞাস করেন, বলেন তো বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কি? অথবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কোনটা অথবা বিজয় দিবস কোনোটা, দেখবেন, বলতে না পাইরা বলদের মতো দাত কেলাইয়া হাসবে। আবার হাসিটাও এমুন, যেনো নুরানী মার্কা।
আবার কিছু লোক আছে যারা জীবনে কিছুই হইতে পারে নাই, কিন্তু অন্যে কেনো সফল হইলো, তারজন্য মনে তার এক প্রকার ভীষন জ্বালা। অধিক মরিচ খাইয়া হাগু করতে গেলে যেমন জ্বলে, ঠিক এই রকম তাগো কইলজার ভিতরে সারাক্ষন জ্বলতেই থাকে। ঠান্ডা পেপ্সি কিংবা লাবাং খাইলেও কোনো কাজ হয় না। জ্বলা আর কমে না। তাই যতো পারো সুযোগ পাইলেই এই সফল লোকগুলির বিরুদ্ধে যতোপদের চিলিকবাজী মন্তব্য আছে, করতে কোন দিধা নাই। পরের পাছা, মরিচ দিতে অসুবিধা নাই। বড়ই মজা। এদের কিন্তু জীবনে বড় হইবার খায়েস কখনো যায় না। খালি সপ্ন দেখে, আর ভাবে, হালার শর্ট খাট রাস্তাটা কি? খালি সটখাট মারবার চায়, খুইজ্জা পায় না। এরা আবার মাঝে মাঝে ফেয়ার এন্ড লাভলীও মাখে। এরা কথায় বড় ধান্দাবাজ। এরা যখন কথা কয় তখন আমজনতা (আমজনতা কারা, ব্যাখ্যাটা করতাছি একটু পরে) তন্ময় হইয়া শুনতেই থাকে। আর ভাবে, আরে, ভাই, এতো দেখি মহাজ্ঞানী, এরেই তো খুজতাছি। এতোদিন কোথায় ছিলেন, বনলতা সেন টাইপের আকুতি। আমজনতা তার কথা শোনার পর আবার মোবাইল নম্বরটাও চাইয়া লয়, যদি কখনো আবার কাজে লাগে। কিন্তু মজার ব্যাপার হইলো গিয়া, এরা কারো কাজেই লাগে না, নিজেরও না। এরাই অন্যের বড় বড় বানী টাইম মতো মুখস্থ ছাইরা দেয়, অন্যের ছোট খাটো লিমিটেশন্স মস্ত বড় কইরা ঢেকুর তোলে, এরা সারাক্ষন মাইনষের পোন্দের মধ্যে মরিচের গুড়া মাখতেই থাকে।
আবার কিছু পাবলিক আছে, খায় মালিকেরটা, কাম করে পরের অধীনে, কিন্তু সুযোগ পাইলে ওই মালিকের পাছায় বাশ দিতে একটুও কার্পন্য করে না। ভাবখানা এই রকম যে, হালায় মালিক হইলো কেন? আমি তো হের থেকে আরো সুন্দর ইংরাজী কই, আমি তো ব্যাকব্রাশ চুল আচড়াই, আমার চেহারা তো হের থেকে আরো সুন্দর, হালায় আমি ক্যান মালিক না। মারো পোদে বাশ। যেই না আবার সমস্যায় পরে, পুনরায় তেল দিতে দিতে আর জুতার তলা ক্ষয় করতে করতে আবার এইসব মালিকের পা ই ওরা চাটতে পছন্দ করে, যদি একটা ইঙ্ক্রিমেন্ট পাওয়া যায় তার আশায়।
আবার কিছু পাবলিক আছে, তার তথাকথিত বুদ্ধিমান বন্ধু কোনো একটা পোষ্টে একটা মন্তব্য করছে, তার কাছে মনে হইলো, ওর বন্ধু তো মনে হয় বুইজ্জাই মন্তব্য করছে। আর কোনো চান্স নেয় না, এক্কেবারে তার সাথে ঢোল পিটাইয়া লাইক দেয় আর কয়, আমিও সহমত। আরে হালার ভাই, সহমত দিবি না সহমরনে যাবি, যা, কিন্তু বুইজ্জা তো ক? এখানেই শেষ না, পারলে আরো কিছু যোগ এমনভাবে করে যেনো আদার বেপারী জাহাজের খবর তো নেয়ইে, পাশাপাশি টাইটানিকের নেয়। কারন ওই তথাকথিত বুদ্ধিজীবি অকর্মন্যা বন্ধুর লগে সহমত না হইলে তো আমার প্যাদা খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। প্যাদা যদি নাও খায়, বোদাই হিসাবে গন্য হইবার সমুহ সম্ভাবনা তো থাকেই। তাই সহমত হইলে আর কোনো রিস্ক থাকে না। এর মধ্যে আবার এমন কিছু আবাল টাইপের বন্ধুও আছে, যারা আবার ইচ্ছা কইরাই সহমত হয় না। ওরা আরো এক ধাঁচ উপরে। তিনি আবার সহমত না প্রকাশ কইরা, এমন এক মন্তব্য ইংরেজী বাংলায় লিখেন যেনো পইড়া মনে হয়, হায় রে ইংরাজী। যদি ব্রিটিশরা এই ইংরাজি পড়তো, তাহলে, ভারতবর্ষে ওই যে, ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন হইছিলো, সেটার আর কোনোই প্রয়োজন হইতো না। ব্রিটিশ সরকার এম্নিতেই মাফ চাইয়া কইতো, ভাই আমাদের ইংরেজী ভাষাকে আর পোদ মাইরেন না, আমরা ভারতবর্ষ ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইবো।
আবার এমন কিছু লোক আছে, প্রিন্ট বা ছাপানো কিছু দেখলেই মনে করে, আবে হালার, এইতো পাইছি অরিজিনাল খবর। তাহলে তো ব্যাপারটা সত্যি। যায় কই। লাগলো এর পিছনে যুক্তি মারা। এটা গুজব না, সজব, না মিথ্যা নাকি একটা চক্রের কাম, সেটা কোনো ব্যাপার না। ছাপার অক্ষরে লেখা আছে না? সত্য না হইয়া যায় কই? এইসব পাবলিক আর্বি ভাষায় কোনো পর্ন পত্রিকা দেখলেও সেটা পবিত্র মনে করিয়া বুকে জরাইয়া চুমা খাইবে। কারন এই পাবলিকগুলি কোনটা যে কি কিছুই বুঝে না। হে ঈসশর, তুমি এদের হেদায়েত করো।
আবার কিছু লোক আছে, অতি সাধারন। যাহা দেখে তাহাই বিশ্বাস করে। এদের বলা হয় আমজনতা। ওই যে আগে বললাম। বেশীর ভাগ আমজনতা না বুইজ্জাই ফেসবুকের খবর, ভিডিও, পোষ্ট পড়ে আর রিয়েকশন দেয়। রাত জাইজ্ঞা জাইজ্ঞা ফেসবুক করে। এরা কখনো আবেগে কান্দে আর টিস্যু দিয়া চোখ মুছে । কখনো কখনো খিলখিল কইরা হাসে। আবার কখনো কখনো এমনি এমনি চুপ কইরা বইয়া থাকে আর কি জানি ভাবে। মাঝে মাঝে আবার দুই হাত তুলে ঈশ্বরের কাছে মুনাজাতও করে। এরা নীতিবান। কিন্তু এরা কোনো ফ্যাক্টর না। কিন্তু এরাই সবচেয়ে বেশী গুজবটা ছরায়।
কারন উপরের যা যা দেখলেন, এই আমজনতা সবগুলিই শেয়ার করে।
১৮/০৪/২০২০-ঝং
Categories
এই যে ছবিটা দেখছেন? এটা গার্মেন্টস শিল্পের একটি নীডল আর প্রেসারফুট এর ছবি। ইতিমধ্যে ঝং ধরেছে। এই নীডল আর প্রেসারফুটে যতো ঝং ধরবে, দেশের অর্থনীতিতেও ততোই ঝং ধরা শুরু হবে। এই রকম হাজার হাজার শিল্প কারখানা ঝং ধরার কারনে পৃথিবীর বহু জাতী অর্থনইতিক ধংশের মুখে পতিত হয়েছে আবার যারা এর সুরক্ষা করেছে, তারাই উপরে চলে এসছে। গুটিকতক মানুষকে দিয়ে যেমন একটা বাহিনীকে বিচার করা যায় না, আবার গুটিকতক খারাপ শিল্পপতিকে কাউন্ট করেও পুরু শিল্পকেও বিচার করা যায় না।
১৪/০৪/২০২০- ডাচ ডিজিজ।
Categories
আজ থেকে ৭ বছর পূর্বের কথা! তখন ভেনিজুয়েলার জিডিপি ছিল ৫.৬৩%। জনসংখ্যার মাত্র ২০% দারিদ্র সীমার নিচে। সৌদি আরবের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তেল মজুদ দেশটির! চীন তখন দেশটির খুব কাছের বন্ধু। শক্তিশালী অর্থনীতি! এত তেলের মজুদ! আমেরিকাও ওকে ঘাটাতে চাইতো না!
এখন ২০১৯ সাল। মাত্র ৭ বছরের ব্যবধানে দেশটির অর্থনীতি ভেঙে গোরস্থান হয়ে গেছে। কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা যুদ্ধ ছাড়াই দেশটি এখন বিশাল অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। যার পরবর্তী ধাপটির নাম দূর্ভিক্ষ! মূদ্রাস্ফীতি ৮০,০০০% অতিক্রম করেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০১৯ শেষে তা ১০০,০০০% অতিক্রম করবে।
এই সংকটের প্রধান কারণ বলা হচ্ছে দুটি-
১. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থের হিসাবে প্রতিনিয়ত গরমিল।
২. ডাচ ডিজিজ।
ডাচ ডিজিজ রোগটা যেকোনো দেশের জন্য বেশ ভয়ঙ্কর। এই রোগের লক্ষণ ৩টি-
১. দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০% আসবে কোনো একটা নির্দিষ্ট সেক্টর থেকে।
২. জিডিপি বাড়তে থাকবে খুবই দ্রুত। মানুষ তার জীবনযাত্রার মান বাড়াবে। শ্রমিক তার বেতন বাড়াবে আরো সুখে থাকার আশায়। তাদের জীবনযাত্রার সাথে তাল মেলাতে আমদানি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠতে থাকবে।
৩. সমাজের ক্ষুদ্র একটা অংশ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে আর সিংহভাগ মানুষের সম্পদ, উপার্জন কমতে থাকবে।
এই সুখের সংসার ততদিনই টিকে থাকবে, যতদিন একটি নির্দিষ্ট সেক্টর দেশকে ৮০% আর্থিক সাপোর্ট দিতে থাকবে।
ভেনিজুয়েলার ৮০%-ই আসতো তাদের তেল রপ্তানি থেকে। ২০১৪ সালে আরব বসন্তের ঝাকুনিতে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমার সাথে সাথেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাদের এত দিনের শক্তিশালী অর্থনীতির ভিত্তি!
বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ রেট এখন ৮% এর উপরে (সরকারি হিসেব)। রপ্তানি আয়ের ৮১%-ই আসে গার্মেন্টস থেকে। আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিও অন্য যেকোনো দেশের চাইতে বেশি!
এদেশেও ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। ব্যাংকের টাকা পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বিদেশে। বিনিয়োগও হচ্ছে বাইরের দেশে। আবার ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির তালিকাতেও ১ নম্বরে বাংলাদেশ! সবচেয়ে বেশি আয় বৈষম্যের দেশের তালিকাতেও বাংলাদেশ উপরের দিকে!
অর্থাৎ আমরা অলরেডি ডাচ ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে গেছি! এখন দরকার সামান্য একটা ধাক্কা, তাতেই...
এই ধাক্কাটা নানাভাবেই আসতে পারে।
কতদিন চলবে এমন সুদিন? আমাদের এই সেক্টরের ভবিষ্যত কী সুরক্ষিত?
অবশ্যই না। এই সেক্টরটা বেদুইনদের মত একদেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরে বেড়ায় এর বেঁচে থাকা নির্ভর করছে ২টি বিষয়ের উপর-
১) Low making cost
২) Low shipment cost
চীন আফ্রিকার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলাকে দখল করে নিচ্ছে। এ বছরেও ৫০ বিলিয়ন ডলার লোন দিয়েছে শুধু আফ্রিকার দেশগুলোর অবকাঠামো ঠিক করার জন্য। সেসব কাজের ঠিকাদারি করছে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোই। বেশ জোরেশোরেই চলছে নির্মাণ যজ্ঞ। বড় বড় ব্রীজ, বিরাট সব পাওয়ার প্লান্টের কাজ চলছে। টাকা দিচ্ছে চায়না, কাজ করছে চায়না, শুধু লোনটুকু ফিরিয়ে দেবে আফ্রিকা! বাজি ধরেই বলা যায়, আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে চীন বিশ্বে নতুন ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে।
চীন জানে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো তাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবে না, যেমনটা পারেনি শ্রীলঙ্কা। লোনের দায়ে হাম্বানটোটা বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে লঙ্কানরা। আফ্রিকার সমুদ্র বন্দর এবং সস্তা শ্রমের দিকেই নজর চীনের।
এইসব সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলো পুরোপুরিভাবে তৈরি করার পরপরই চীন যা করবে তা আমাদের জন্য ভয়ংকর দুঃসংবাদই বয়ে আনবে।
শিল্প বিপ্লবের প্রথম ধাপে ঘটে বস্ত্রশিল্প বিপ্লব। সুতরাং আবারো গার্মেন্টস সেক্টর চলে যাবে চীনের বলয়ে। ইতিমধ্যে ইথিওপিয়ার মত দেশও আমেরিকার কাছ থেকে বড়সড় অর্ডার নিচ্ছে। ওদের মজুরিও আমাদের চেয়ে কম। আফ্রিকা থেকে আমেরিকা-ইউরোপ বেশ কাছাকাছি। সুতরাং কমে যাবে শিপিং কস্ট। ওদের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়লে এবং এই খাতটা একটু ম্যাচিউরড হলেই ইউরোপ আমেরিকার বায়াররা বাংলাদেশের মতো দূরবর্তী দেশে আসবে না- একথা বলাই বাহুল্য।
এভাবে যদি এই সেক্টরটা ধসে পড়ে তাহলে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা কী? ভিয়েতনাম ইতিমধ্যে হেভি ইন্ডাস্ট্রিতে কনভার্ট হয়ে গেছে। ইন্ডিয়া তথ্য প্রযুক্তিতে খুবই স্ট্রং জায়গায় চলে গেছে। ওরা ব্যাকআপ তৈরি করেছে। আমরা কী করেছি?
এখন প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, আয় বাড়ছে বলে কি সবসময় বাড়বে? একসময় এটা স্থির এবং মাইনাস হবেই। ভেনিজুয়েলা ২০১২-তে বেশ সুখে ছিল। এখন? দেশের মানুষগুলো কোনোরকম যুদ্ধ বিদ্রোহ ছাড়াই দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে, উদ্বাস্তু হয়ে অন্য দেশে ঢুকে মার খাচ্ছে।
ভেনিজুয়েলা মধ্যপ্রাচ্যের আরব বসন্তের পরোক্ষ শিকার। কোন দেশের কোন ঢেউ এসে এখানে আঘাত হানবে কে জানে! যাতে এখনই আমাদের সাবধানতা প্রয়োজন এবং কেবলমাত্র একটি খাতের নির্ভরতা এড়ানো উচিত আমাদের অন্যান্য খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
আমার মন্তব্যঃ
লোকাল সেক্টর দিয়ে আভ্যন্তরীন চাহিদা হয়তো কিছুটা ঠেকানো সম্ভব কিন্তু ফরেন কারেন্সী দেশে প্রবাহ না করতে পারলে না অনেক কিছুই করা সম্ভব হবে না। বাহিরে লেখাপরার ব্যয়, সাস্থ খাতে বাহিরের চিকিতসা বনাম মেডিক্যাল ইকুইপমেন্টস আমদানী, পেট্রোলিয়াম কোনো আইটেম অথবা এমন সব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ যা অন্য দেশ থেকে আমাদের আমদানী করতে হবে লোকাল সেক্টরকে জীবিত রাখতে, সেই সব মালামালের জন্য আমদানীতে ফরেন কারেন্সী না থাকলে আমাদের পক্ষে কোনো কিছুতেই দারানো সম্ভব না। রেমিট্যান্স প্রায় শুন্যের কোটায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, পাট শিল্প এখন আর সোনার ডিম নয়, চিংড়ি খাত ভংগুর, এখন বাকী আছে শুধু গার্মেন্টস সেক্টর। সেটাও এই করোনা এবার ভালোভাবেই আক্রান্ত করেছে।
যদি একে হাতছারা করি, তারপর কি? অনেক বিজ্ঞজনেরা অনেক কিছু না জেনেই অনেক মন্তব্য করেন বটে, কিন্তু যেদিন নিজের প্লেটে আর আগের মতো বিরিয়ানী আর পিজ্জা উঠবে না, তখন মনে হবে- সোনার ডিম পাড়া মুরগীটা গেলো কই?
(লেখাটা আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের এক মালিক নজরুল ভাই এর হোয়াটস আপ গ্রুপ থেকে নেয়া)
১৩/০৪/২০২০-করোনা এবং গার্মেন্টস শিল্প
যে যাইই কিছু বলুক আমাদের এই গার্মেন্টস শিল্পকে ব্যাংগাত্তক করে, কেউ একে রক্তচোষা মালিক পক্ষ বলেন, কেউ কেউ মনে করে এই শিল্পের মালিকগন মাসে মাসে কোটি কোটি টাকা আয় করেন আর ঘুরে বেরায়। যারা এইসব কথা বলেন, তারা এর সেকটরে ১% জ্ঞান রাখেন না বলেই আমার ধারনা। যে দেশে ৮৬% ফরেন কারেন্সী আয় করেন যে সেক্টর, যে সেক্টর আমাদের অন্যান্য খাতের জরুরী জিনিষ ক্রয়ের নিমিত্তে ফরেন কারেন্সি সরবরাহ করে, যে সেক্টর দেশের উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশী কারেন্সীর ব্যবস্থা করে, যে সেক্টর আপনি যে গাড়িটা চালান তার এবং সেটার পেট্রোল অকটেন কেনার ডলার আনে, সেই সেক্টরকে অনেকেই মুল্যায়ন করে বলে মনে হয় না। বর্তমান প্রতিযোগী গ্লোবাল মার্কেটিং এ যে এই সেকটর দাঁড়িয়ে আছে, সেটা তাদের নিজেদের পরিশ্রমের ফল।
এদেশে গার্মেন্টস ছাড়াও আরো অনেক সেক্টর আছে যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করেন। সে সব কর্মচারির দায়দায়িত্ত অই সব সেক্টরের মালিকগন কেনো নিচ্ছেন না, সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন আসে না। আবাসন খাত, কন্সট্রাকশন খাত, কৃষি খাত, চামড়া খাত, আরো অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের কথা তো কেউ বলেন না যে, তারা কেনো এই সব শ্রমিকদের দায় দায়িত্ত নেয় না?
একদম ক্ষুদ্র একটা উদাহরণ দেই, যারা এতো বড় গলায় বাহাদুরী করে কথা বলেন, তাদের বাসার যে ৩/৪ জন ছুটা বুয়া কাজ করে, সেই সব ছুটা বুয়ার আগামী তিন মাসের বেতন ভাতা যদি আজকে দিতে বলা হয় কোনো কাজ না করিয়ে, অথবা বলা হয় যে, কেউ ঐ সব ছুতা বুয়ার যে টাকাতা দিতে হবে তা সরকার বা অন্য কোনো লোক ধার দেবেন কিন্তু টাকাতা পাবে সরাসরি বুয়ারা কিন্তু লোনটা হবে গৃহকর্তার নামে, তখন তারা এক নিঃশ্বাসে বলবেন, আরে, কাজ করে নাই তাহলে আমি তিন মাসের বেতন ভাতা সেটা কিনা প্রায় হাজার বিশেক টাকা আমি দেবো কেনো? কিন্তু অন্যের বেলায় ঠিকই মন্তব্য করবেন, যাদের ঘামে আজ এই সেক্টরের মালিকরা কোটিপতি, তারা এই ভার নিবে না কেনো? কই, আপ্নারা যারা এতো লম্বা লম্বা কথা বলেন, তারা উদ্যোক্তা হন না কেনো? পরের গোলামি না করে দিন না একটা গার্মেন্টস কারখানা? আপ্নারাও কোটি পতি হয়ে যান!! খালি ফেয়ার এন্ড লাভলী মেখে ফেসবুক কাপালেই ইন্টেলেকচুয়াল হওয়া যায় না।
আমার এই মন্তব্য সবার বেলায় প্রযোজ্য না, কিছু কিছু লোক আছে যারা গোলামি করতে পছন্দ করে কিন্তু যার গোলাম তাকে সে ঘৃণা করে। তার ঘৃণার একটা কারন হচ্ছে- সে কেনো পারবেনা, আর অন্য কেনো পারলো। আর যেহেতু সে নিজে পারলো না, তাই, যখনই পারো, মারো গুতা। আবারো ছোট আরেকটা উদাহরণ দেই? আমাদের প্রানপ্রিয় সেনাবাহিনীর নামেও কিন্তু কেউ কেউ কথা বলার সময় কম কয় না? কিন্তু বিপদের বেলায় এই বাহিনি ছাড়া চলে না। সার অব্যবস্থাপনা? আর্মি। বন্যা? আর্মি। মহামারী? আর্মি। যেই বিপদ শেষ, আর্মি আবার কেডা। ঠিক এইরকম, যখন ডলার লাগবে, গার্মেন্টস শিল্প, যখন রিজার্ভ বাড়াতে হবে, এই শিল্প,। চাকুরী নাই? তো গার্মেন্টস তো আছে। আবার এই শিল্পকে কিভাবে চেপে ধরা যায়, কথার ফুলঝুরি আর মাটিতে পড়ে না। অনেক শিক্ষিত মানুষের মুখেও এই রকমের কথা শুনি যিনি গার্মেন্টস এর টার্মনোলজিই জানে না। এলসি কি, ইউপাস কি, শোর টু শোর কি, ব্যাক টু ব্যাক কি, কমপ্লায়েন্স কি, ইডিএফ কি, ইউডি কি, এফ ও বি কি, থার্দ পার্টি কি, কিছুই না। কিন্তু কথা যখন বলে, মনে হয় পায়ের নীচে রাজপ্রাসাদ।
অথচ গার্মেন্টস শিল্প একটা প্রতিনিয়ত চেলেঞ্জের মুখে কাজ করছে। কখনো বিদেশীদের দাবীর মুখে একর্ড, এলায়েন্স আরো কত যে বাহানা। কই ওইসব বায়াররাও তো এতোদিন মানবতা, সোস্যাল রাইটস নিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে, ১৮ বছরের নীচে শ্রমিক নেয়া যাবে না, একর্ড কোয়ালিফাই না হলে অর্ডার দেওয়া যাবে না, ইত্যাদি। তারাও তো এখন তাদের আওড়ানো বুলির ধারে কাছেও নাই। তারা তো তৈরী পোষাকগুলিও নিতে অস্বীকার করছে!! আর এবার? এই করোনা ভাইরাসের প্রভাবে খুব বেশী দেরী নাই যে, এটা আমরা পসিবল কম্পিটিটরদের কছে মার্কেট হারাতে বসেছি। এখন খালি সময়ের ব্যাপার।
একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরছিঃ গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের গার্মেন্টস এর যারা প্রতিযোগী দেশ, তাদের করোনা পরিস্থিতিটা একবার দেখুন। তাহলে বুঝা যাবে, আমাদের থেকে এই অর্ডার ঐসব দেশে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা যুক্তিসংগত।
দেশ/ আক্রান্ত সংখ্যা/ মৃত্যুর সংখা/ টেস্ট এর সংখ্যা /পারসেন্টেজ হার
** বাংলাদেশ- ৮৬০/৩৯/১১২২৩ / ৭.৭%
ক। কম্বোডিয়া- ১২২/০ / ৫৭৬৮/ ২.১%
খ। ভিয়েতনাম- ২৬৫/০ /১২১৮২১/ ০.২২%
গ। শ্রিলংকা- ২১৭/৭ /৪৫২৫/ ৪.৮%
ঘ। ইথিউপিয়া-৭৪/৩/ ৫৪১০/ ১.৩৫%
চ। তাইওয়ান- ৩৯৩/ ৬ /৪৭২১৫/ ০.৮৩%
ছ। মায়ানমার ৪১/৪
জ। ইন্ডিয়া- ৯৬৩৫/৩৩১/১৮১১১১ / ৫.৩১%
এর মধ্যে আরো একটা খবর দিয়ে রাখি-
শিল্প বিপ্লবের প্রথম ধাপে ঘটে বস্ত্রশিল্প বিপ্লব। সুতরাং এই বিপ্লবে গার্মেন্টস সেক্টর চলে যাবে চীনের বলয়ে। চীন আফ্রিকার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলাকে দখল করে নিচ্ছে। এ বছরেও ৫০ বিলিয়ন ডলার লোন দিয়েছে শুধু আফ্রিকার দেশগুলোর অবকাঠামো ঠিক করার জন্য। সেসব কাজের ঠিকাদারি করছে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোই। বেশ জোরেশোরেই চলছে নির্মাণ যজ্ঞ। বড় বড় ব্রীজ, বিরাট সব পাওয়ার প্লান্টের কাজ চলছে। টাকা দিচ্ছে চায়না, কাজ করছে চায়না, শুধু লোনটুকু ফিরিয়ে দেবে আফ্রিকা! বাজি ধরেই বলা যায়, আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে চীন বিশ্বে নতুন ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। চীন জানে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো তাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবে না, যেমনটা পারেনি শ্রীলঙ্কা। লোনের দায়ে হাম্বানটোটা বন্দরকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে লঙ্কানরা। আফ্রিকার সমুদ্র বন্দর এবং সস্তা শ্রমের দিকেই নজর চীনের। এইসব সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলো পুরোপুরিভাবে তৈরি করার পরপরই চীন যা করবে তা আমাদের জন্য ভয়ংকর দুঃসংবাদই বয়ে আনবে।
ইতিমধ্যে ইথিওপিয়ার মত দেশও আমেরিকার কাছ থেকে বড়সড় অর্ডার নিচ্ছে। ওদের মজুরিও আমাদের চেয়ে কম। আফ্রিকা থেকে আমেরিকা-ইউরোপ বেশ কাছাকাছি। সুতরাং কমে যাবে শিপিং কস্ট, কমে যাবে লেবার কস্ট। ওদের শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়লে এবং এই খাতটা একটু ম্যাচিউরড হলেই ইউরোপ আমেরিকার বায়াররা বাংলাদেশের মতো দূরবর্তী দেশে আসবে না- একথা বলাই বাহুল্য।
রেমিট্যান্স প্রায় শুন্যের কোটায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, পাট শিল্প এখন আর সোনার ডিম নয়, চিংড়িখাত ভংগুর, এখন বাকী আছে শুধু গার্মেন্টস সেক্টর। সেটাও এই করোনা এবার ভালোভাবেই আক্রান্ত করেছে।
যদি একে হাতছারা করি, তারপর কি? অনেক বিজ্ঞজনেরা অনেক কিছু না জেনেই অনেক মন্তব্য করেন বটে, কিন্তু যেদিন নিজের প্লেটে আর আগের মতো বিরিয়ানী আর পিজ্জা উঠবে না, তখন মনে হবে- সোনার ডিম পাড়া মুরগীটা গেলো কই?
২৮/০৩/২০২০- করোনা ভাইরাস-১
Categories
রবী ঠাকুর তার "প্রায়শ্চিত্ত" নামের এক ছোট গল্পে একটা কথা লিখেছিলেন, "স্বর্গ ও মর্তের মাঝখানে একটা অনির্দেশ্য অরাজক স্থান আছে যেখানে ত্রিশঙ্কু রাজা ভাসিয়া বেড়াইতেছেন, যেখানে আকাশ কুসুমের অজস্র আবাদ হইয়া থাকে। সেই বায়ুদূর্গবেষ্টিত মহাদেশের নাম 'হইলে-হইতে পারিত'। যাহারা মহৎ কার্য করিয়া অমরতা লাভ করিয়াছেন তাহারা ধন্য হইয়াছেন, যাহারা সামান্য ক্ষমতা লইয়া সাধারন মানবের মধ্যে সাধারনভাবে সংসারের প্রাত্যাহিক কর্তব্যসাধনে সহায়তা করিতেছেন তাহারাও ধন্য; কিন্তু যাহারা অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হটাত দুয়ের মাঝখানে পড়িয়াছেন তাহাদের আর কোনো উপায় নাই। তাহারা একটা-কিছু হইতে পারিতেন কিন্তু সেই কারনেই তাহাদের পক্ষে কিছু-একটা হওয়া সর্বাপেক্ষা অসম্ভব।
এই কথাগুলির সাথে বর্তমান বিশ্ব মহামারী করোনা পরিস্থিতির একটা মিল রহিয়াছে। অনির্দেশ্য অরাজক স্থানের ত্রিশঙ্কু রাজা আমাদেরকে সেই সর্গ আর মর্তের মাঝে এমন করিয়া ফেলিয়া দিয়াছেন যেখানে কিছু মহৎ মানুষ অন্যের সেবা দান করিয়া অমরতা লাভ করিতেছেন, আবার কিছু নিতান্তই সাধারন মানব তাহাদের সংসারের দায়িত্ত পালন করিয়াও ধন্য হইতেছেন। কিন্তু আমরা যারা না মহৎ মানুষের দলে, না পুরুপুরি সাধারন মানবের দলে, তাহারা অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে এই দুইয়ের মাঝে পড়িয়া হাজার খানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টিকে লইয়া এমনরুপে হিমসিম খাইতেছি, যে, না এই বিশাল জনগোষ্টি আমাদেরকে দোষারুপ করিতে পারিতেছে, না আবার ক্ষমাও করিতে পারিতেছে, না আমরা কোনো দৈব ক্ষমতায় তাহাদেরকে এইরুপ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারিতেছি যে, কোনো অসুবিধা নাই, আমরা আছি তোমাদের সাথে। তোমরা আকাশের পানে চাহিয়া, আর আমাদের কথার উপর ভিত্তি করিয়া যাহা নির্দেশ হইতেছে তাহাই করিয়া যাও, কোনো ভয় নাই। সর্বদাই একটা শংকা কাজ করিতেছে মনের ভিতর, মাথার ভিতর আর এই দুই শঙ্কা প্রতিনিয়ত কাবু করিয়া ফেলিতেছে জীবনীশক্তি থেকে শুরু করিয়া আয়ুষ্কালও। চারিদিকে আজ সারা বিশ্ব ব্যাপিয়া করোনা প্রতিটা ব্যক্তি, প্রতিটা সংসার আর গোটা সমাজ জীবনকে এমন করিয়া চাপিয়া ধরিয়া ত্রাসের সৃষ্টি করিয়াছে যে, নীরব শোকের ছায়াতলে সুগভীর সহিষ্ণুতা আর ধরিয়া রাখা যাইতেছে না।
ঢাকা শহরের রাস্তার একটা রুপ আছে। যত্রতত্র যানবাহনের ছড়াছড়ি, যেখানে সেখানে জটলা, হকারদের একচ্ছত্র দৌরাত্ত, পদভ্রজকদের যেনোতেনো হাটাহাটি, ফেরীওয়ার চিৎকার চেচামেচি, জনসমাগম, মিছিল, মিটিং, আরো যে কতকিছু দিয়া ভরপুর থাকে এই শহরের প্রতিটি অলগলি, আনাচে কানাচে। কোথাও দিনেরবেলায়ও অলস লাইটম্যানদের মনভোলার কারনে প্রখর সুর্যালোকেও রাস্তার স্ট্রীট লাইটগুলি আলো দিতে থাকে, উলটা পালটা গাড়ির হর্ন, স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের অবাধ চলাচল ইত্যাদি মিলাইয়া ঢাকার রাস্তাঘাট শুধু সচল নয়, যেনো মহাসচল হইয়া ব্যস্ততায় ভরপুর হইয়া থাকে। অথচ, আজ দুইদিন পর ফ্যাক্টরীর অফিসে আসিবার নিমিত্তে সকাল সাতটার সময় ঘর ছাড়িয়া আমি যেনো আমার সেই চিরাচরিত চেনা ঢাকা শহরকে নিজেই চিনিতে পারিতেছিলাম না। ঢাকার রাস্তার এই নতুন রুপ আমার চোখে আগে কখনো পড়ে নাই। ঈদের ছুটি সমুহের ইহার একটা নমুনা জানিতাম, কিন্তু আজ সেই ঈদের ছুটির সময়ের রাস্তার চেহারাও মলিন হইয়া নতুন এক রুপে আবির্ভুত হইয়াছে।
কোথাও কোনো হকার নাই, ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো পদচারনা নাই, মিটিং মিছিল যেনো উধাও হইয়া কোথায় যেনো স্থবির হইয়া ঝিমাইতেছে, ফেরী ওয়ালাদের সেই চেনা ডাক নাই, কোনো যানবাহনের হর্নও শোনা যাইতেছে না। মাঝে মাঝে বিকট সংকাপূর্ন সুর দিয়া কিছু এম্বুলেন্স অথবা ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ফাকা রাস্তা পাইয়া উর্ধগতিতে পাশ কাটিয়া কোথাও হারাইয়া যাইতেছে, আর তারসাথে কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জলপাই কালারের সেনাবাহিনীর গাড়ি অথবা নীল রংগের পুলিশের গাড়ি এদিক সেদিক টহল দিতেছে, অথচ দেশে কোনো যুদ্ধ নাই, কারফিউ নাই, না আছে কোনো জরুরী অবস্থা। মাত্র ২২ মিনিটে অনায়াসেই আমি আমার অফিসে চলিয়া আসিলাম।
বর্তমান পরিস্থিতে যেখানে প্রতিটি পরিবার তাহাদের আপনজনের সুরক্ষায় চিন্তিত, নিজেদের জানমালের সুরক্ষায় চিন্তিত, আর এই সুরক্ষার তাগিদে সবাই ঘরের মধ্যে বন্দি হইয়া আছেন। কেহই মহামারীর আক্রান্ত হইবার ভয়ে ঘর হইতে এক কদম ও বাহির হইতে নারাজ, সেখানে আমরা যারা ঐ অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হাজারখানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টির দায়িত্তপ্রাপ্ত হইয়াছি, তাহারা নিজের সুরক্ষার পাশাপাশি, নিজের পরিবারের সুরক্ষা ছাড়াও এই বিশাল জনগোষ্টীর সুরক্ষায়ও চিন্তিত। আমি খুব গর্ববোধ করিতেছি যে, এই কঠিন দূর্যোগের দিনেও যেখানে প্রতিটি সাধারন মানুষ তাহাদের রুটি রোজগার লইয়া মহাচিন্তায় শংকিত, সেখানে অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হাজারখানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টির দায়িত্তপ্রাপ্ত হইয়া সমস্ত দুসচিন্তা, সমস্ত দায়ভার নিজের কাধে লইয়া কিছুটা হইলেও তাহাদের রুটি রোজগারের ব্যবস্থা করিতে পারিতেছি, তাহাদের এই দুঃসময়ে পাশে দাড়াইয়া একটু হইলেও আশার আলো দেখাইতে পারিতেছি, তাহাতেই আমি সুখী এবং খুশী। মহা সংকট ময় এই দিনে যখন সবার ঘরে সুরক্ষায় থাকিবার কথা, আমি এবং আমার মতো অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হাজারখানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টির দায়িত্ত প্রাপ্ত মালিকগন এই সব শ্রমিক দের জন্য নিজের সন্তানের মতো, নিজের পরিবারের মতো নিজেদের ক্যাপাসিটির সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়া কারখানার ভিতরে সুরক্ষার ব্যবস্থা করিবার আপ্রান চেষ্টা করিয়া যাইতেছি। এতোগুলি মানবের জন্য যখন আমাদের প্রান নিয়োজিত, ঈশ্বর নিশ্চয় আমাদেরকে এবং আমার মতো সেইসব অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হাজারখানেক গার্মেন্টস জনগোষ্টির দায়িত্ত প্রাপ্ত মালিকগনকে হেফাজত করিবেন।
ফলে রবী ঠাকুরের সেই কথাগুলি -"যাহারা অদৃষ্টের ভ্রমক্রমে হটাত দুয়ের মাঝখানে পড়িয়াছেন তাহাদের আর কোনো উপায় নাই। তাহারা একটা-কিছু হইতে পারিতেন কিন্তু সেই কারনেই তাহাদের পক্ষে কিছু-একটা হওয়া সর্বাপেক্ষা অসম্ভব" - বলিয়া মনে হইলো না। আমরা হয়তো একটা কিছু হইতে পারিয়াছি। বাকিতা মহান ঈশ্বর জানেন।
২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-২
Categories
করোনা ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে চীনের উহান শহরে। তারা জানতো এই ভাইরাসের তীব্রত এবং ক্ষতিকারক দিকগুলি। ফলে, কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটাকে বিশ্বসমাজে ধামাচাপা দেওয়ার নিমিত্তে উহানকে আইসোলেট করে তারা নিজস্ব সোর্স এবং দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে নামে বেনামে এর প্রতিষেধক ক্রয় করে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু একটা সময়ে সেটা আর চাপা দেওয়ার সম্ভব না হওয়ায় ভাইরাসটির ব্যাপারে তারা প্রকাশ করতে যেমন বাধ্য হয়, তেমনি তাদের গাফিলতির কারনে ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসটি বিভিন্ন দেশে সংক্রমনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা যেমন চীনের করা ঠিক হয় নাই তেমনি এই করোনার তীব্রতা নিয়েও বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান এবং জনগনও প্রাথমিকভাবে বেশী গুরুত্ত না দেওয়ায় ব্যাপারটা এখন বৈশ্বিক মহামারিতে পরিনত হয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে আবার নতুনভাবে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েও পড়ছে। সারাবিশ্ব এখন ঘরবন্দি। কিন্তু ঘরবন্দিই এর সমাধান নয়। এর প্রধান কারন ১৪/১৫ দিন ঘরে বন্দি হয়ে হয়তো যারা আক্রান্ত হন নাই বা হয়েছেন তাদের উপসর্গটা বুঝা যাবে কিন্তু যিনি ১৪ তম দিনে আক্রান্ত হবেন, তাকে তো আবারো ১৪/১৫ দিন বন্দি থাকতে হবে। তাহলে এভাবে কি চলতেই থাকবে কোয়ারেইন্টাইন? কিন্তু কতদিন? কত মাস বা কত বছর? একজন আক্রান্ত ব্যক্তিই পারে আরো নতুন মানুষকে আক্রান্ত করতে, ফলে ঘরবন্দি এর সমাধান নয়। এর সমাধান হতে হবে প্রতিটি মানুষ করোনা আক্রান্ত কিনা তার টেষ্ট করা। এটা সহজ কাজ নয়। জার্মানি, ইতালী, চীন, আমেরিকা, স্পেন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করছে। যেখানে আমরা সম্ভবত এ পর্যন্ত আইইডিসিআর এর মাধ্যমে ১০৬৮ জনকে টেস্ট করতে পেরেছি। তাতে যদি চলতি মার্চ মাস পুরোটা ধরা হয়। তাহলে ২৮ দিনে,এ পর্যন্ত গড়ে ২৪ ঘন্টায় ৩৮ জনকে টেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু করোনাতঙ্কে বিদেশ থেকে এসেছেন প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী। সেই হিসাব দেখা যায় ২৪ ঘন্টায় ৪২ জনকে টেস্ট করলে ১০ লাখ মানুষকে পরীক্ষা করতে লাগবে ২৩,৪০৯ দিন অর্থাৎ ৬৫ বছর। এই কাজ করতে যদি এই এত বছর লেগে যায়, তাহলে কি সারা দেশ এত বছরই ঘরবন্দি হয়ে থাকবেন? এটা কিছুতেই সম্ভব না।
এরজন্য সত্যিকার অর্থে যা করনীয় তা হচ্ছে, সত্যি তথ্য জানা। সরকার, এবং ব্যক্তি পর্যায়ে প্রতিটি মানুষ একযোগে সত্য পরিবেশন করা এবং তার বিরুদ্ধে কার্যকরী ভুমিকা নেওয়া। আমাদের দেশে করোনা নাই, (যদিও টেষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষিত নয় বক্তব্যটা) বা আর নতুন কোনো করোনা হয় নাই, এইসব কথা বলে আমরা আপাতত ক্রেডিট নিতে পারি কিন্তু লং রানে যা ঘটবে যে,
(১) সারা বিশ্ব যখন করোনা মুক্ত হয়ে যাবে, তখনো আমাদের দেশে পরীক্ষা না করার কারনে হয়তো বা কিছু কিছু মানুষের করোনার উপসর্গ ধরা দিতে পারে যা অন্যদেশ এইসব গুটিকতক মানুষের জন্য আমাদের বহির্গমন যাত্রা অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করে দিতে পারে। একটা কথা আমার মনে হয় যে, এখন থেকে সমস্ত এয়ারপোর্টে করোনার বিপরীতে স্বস্ব দেশের এয়ারপোর্ট করোনা আছে কিনা এই টেষ্ট করিয়েই কোনো যাত্রীকে তাদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দিবে হয়ত। আর এটা যদি হয় নতুন কোনো শর্ত আরোপ, তাহলে, আমাদের দেশের যাত্রীদের মধ্যে যদি এই ধরনের কোনো সিম্পটম কোথাও পাওয়া যায়, সাথে সাথে এই তথ্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে আর তখন যেটা হবে, সেটা হলো এই যে, লোক, যাত্রী, এমন কি মালামাল স্থানান্তরেও বাংলাদেশকে সমগ্র বিশ্ব কোয়ারেন্টাইন করে ফেলতে পারে।
(২) আরেকটা মারাত্মক ব্যাপার ঘটে যেতে পারে যে, সঠিক করোনা আক্রান্ত তথ্যের অভাবে প্রকৃতপক্ষে করোনায় মৃত্যুবরনকারীর করোনা হয় নাই এইটা বিশ্বাস করে তার কবর, তার গোসল, জানাজা ইত্যাদি পালনের কারনে দেশে নতুন নতুন করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে শেষ অবধি না একটা মহামারীর রুপ নিয়ে নিতে পারে। তখন দেখা যাবে, বিশ্ব যেখানে প্রায় করোনা মুক্ত, আমরা সেখানে মহামারীতে আক্রান্ত।
(৩) এই অবস্থায় ঠিক যা যা ঘটছে, তা তা সব মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব না ছড়িয়ে সঠিক তথ্যটা আমাদের সবাইকে জানানো দরকার এবং যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত এলাকায় বা পরিবার বা যারা কোনো না কোন একটা উপসর্গে (হাচি, কাশি, জর, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদির যে কোনো একটা) মারা যাচ্ছেন, তাদের এবং তাদের সাথে মেলামেশা করেছেন এমন ব্যক্তি বর্গ/এলাকায় জরুরি টেষ্ট করিয়ে নিশ্চিত করা তিনি করোনায় মৃত্যুবরন করেছেন কি করেন নাই। এটাই এখন সমাধান। এ ব্যাপারে ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত একটা তথ্য (আমি এর সত্যতা জানি না) শেয়ার করছি যে,
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, টেস্ট না করার কারণে সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না যে দেশে আসলে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা কত। এদিকে জাতিসংঘের ফাঁস হওয়া একটি আন্তঃসংস্থা নথি মোতাবেক, করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রশমন ও অবদমনে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে “৫ লাখ থেকে ২০ লাখ” মানুষের মৃত্যু হতে পারে। “জাতীয় প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা” (সিপিআরপি ভি১) শীর্ষক এই নথিতে এই সংখ্যাকে “ভয়াবহ” বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ঢাকায় বিদেশী কূটনীতিকদের এই নথিটি দেওয়া হয় বলে খবর প্রকাশ করেছে সুইডেন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম নেত্র নিউজ। ২৬ মার্চের এই নথিতে বলা হয়, “বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যধিক হওয়ায়, বৈশ্বিকভাবে প্রযোজ্য মডেলিং পদ্ধতি ও পরামিতি অনুমান অনুযায়ী, কভিড-১৯ রোগের প্রভাবের পূর্বাভাস হলো, মহামারী চক্রে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ মানুষের জীবনহানি ঘটবে। অন্যান্য দেশে ব্যবহৃত মডেলিংয়ের বিপরীতে চিন্তা করলে এই সংখ্যা ও মাত্রা খুব আশ্চর্য্যজনক কিছু নয়। কিন্তু এই সংখ্যা অত্যন্ত ভয়াবহ। এই সংখ্যাকে বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো উচিৎ।”
ধীরগতির টেস্টের কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকেও যেতে পারে। তখন শুধু লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না।
২৮/০৩/২০২০- করোনা ভাইরাস-৩
Categories
আগামি ৪ এপ্রিল সরকার ঘোষিত লক-ডাউন সিস্টেমে সেলফ কোয়ারেইন্টাইন শেষ হবে। গত দুই তিন দিন যাবত মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি, নতুন কোনো করোনার রোগী শনাক্ত হয় নাই বরং যারা শনাক্ত হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশ রোগী ভাল হয়ে গেছেন। খবর যদি সত্যি হয়, আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু কোনো কারনে যদি আমাদের এই তথ্যের মধ্যে গাফিলতি থাকে, তাহলে সাধারন মানুষ উক্ত তথ্যকে সত্যি মনে করে যখন নির্বিগ্নে ঘরের বাইরে চলে আসবে, ঢল নামবে, তখনই হবে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। সুতরাং যারা পারেন, যাদের সামর্থ আছে, তারা নিজেরা আরো ১৫ দিনের অঘোষিত সেলফ কোয়ারেইন্টাইনে থাকুন, ব্যাপারটা বুঝুন এবং পরিষ্কার হোক পরিস্থিতি, তারপর বের হোন।
আর যদি নিতান্তই বের হতে হয়, মনে মনে বিশ্বাস করুন যে, করোনার প্রভাব এখনো আপনার আশেপাশেই আছে, এখন যেভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করছেন, বাইরে গেলেও ঠিক একইভাবে আরো অন্তত ১৫/২০ দিন সব কিছুর ব্যাপারে অধিক সতর্ক থাকুন। বাকীটা পরিবেশই আপনাকে বলে দেবে পরিসংখ্যানটা কি।
২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-৪
Categories
৯/৪/২০২০
আজকে মিডিয়ায় একটা খবর দেখে আমি একেবারেই অবাক হই নাই। আর সেটা হলো, আগামিতে বিশ্বে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নীচে চলে আসবে এই করোনা ভাইরাসের ব্যবসায়ীক মন্দার প্রভাবে। বিশ্বে প্রায় ১৩% বানিজ্যিক মন্দা বিরাজ করবে।
যে দেশে দরিদ্র সীমার নীচেই বসবাস করে প্রায় ২০-৩০% মানুষ, সেখানে যদি ঐ হারে দেশে দারিদ্রের হার আরো বেড়ে যায়, তখন দেশ করোনা ভাইরাস মহামারী থেকে মুক্ত হয়ে যুক্ত হবে আরেক মহামারীতে যার নাম দূর্ভিক্ষ। আমাদের দেশের লোকাল জিডিপি এমন নয় যে, অনায়াসেই সমগ্র দেশকে মাসের পর মাস সরকার তার নিজ তহবিল থেকে এই ২য় মহামারী সামাল দিতে পারবে। যেহেতু সমগ্র বিশ্ব এখন মন্দায় কাবু, সেক্ষেত্রে বহির্দানও যে খুব একটা আশা করা যায় তেমনও হবে না। প্রতিটি দেশ তাদের নিজ নিজ অবস্থা সামাল দেয়ার জন্য নিজেদের তহবিল থেকে অন্যত্র সাহাজ্যের নিমিত্তে তহবিল ছাড় দেবার সম্ভাবনা খুবই কম। এমতাবস্থায় সবক্ষেত্রে এখুনী বড় ছোট সেক্টরে হোমওয়ার্ক করা খুবই জরুরী। সেই হোমওয়ার্ক গুলি কি কি হতে পারে?
১। উন্নত দেশগুলির করোনা ভাইরাসের অবস্থা ধীরে ধীরে ক্রমশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এর প্রধান কারন, উক্ত দেশগুলি আমাদের দেশের বেশ আগেই সংক্রামিত হয়েছে বিধায় তারা আমাদের আগেই প্রতিকুল অবস্থাটা পেরিয়ে উঠতে পারবে। এই সময় হটাত করেই দেখা যাবে, পুনরায় বিশ্ব বানিজ্য বিশেষ করে পোষাক শিল্পে, কৃষিখাতে, কিংবা রপ্তানীমুলক খাতগুলিতে অন্যান্য দেশ বানিজ্য শুরু করবে। ঐ সময় যদি আমাদের দেশের করোনার অবস্থার কোনো উন্নত না হয়, তাহলে অন্যান্য দেশ যারা তুলনা মুলকভাবে করোনা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তারা সব রপ্তানীমুলক কার্যাদেশগুলি ছিনিয়ে নেবে। একবার যদি এই সুযোগগুলি দেশ থেকে হাতছারা হয়, ২য় বার পুনরায় তা বহাল রাখা বা ফিরিয়ে আনা হবে অনেক কঠিন। সেক্ষেত্রে হোমওয়ার্কের আওয়তায় পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে, যারা যারা করোনার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রোটেক্সন নিয়েই রপ্তানীমুলক কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন বলে আশস্থ করতে পারবেন, হয়তোবা সরকার নিরুপায় হয়েই সেসব কারখানা চালিয়ে রাখার আদেশ দিতে হতে পারে। এটা করতে হবে কারন অর্থনীতির যোগান না হলে, কোনো অবস্থাতেই কোনো সরকার, সমাজ বা পরিবার কিছুতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য এই প্রতিকুল অবস্থা সামাল দিতে পারবেন না। এই মুহুর্তে হয়তো অনেক মিডিয়া, অনেক বুদ্ধিজীবিরা রপ্তানীমুলক শিল্পগুলির বিরুদ্ধে অনেক মজাদার কথা বলে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু তখন অনেক নিরুপায় হয়েই আবার এইসব মিডিয়াই কিংবা বুদ্ধিজীবিরা একটু শিথিল পরিবেশেই রপ্তানি কাজ কেনো চালিয়ে যাচ্ছেন না, করা যেতে পারত ইত্যাদি বলে বলে হয়তো মুখে ফেনা তুলে ফেলবেন। কৃষক যদি খাদ্যে দেশকে সাবলম্বি করে দিতে পারেন, আর এই রপতানীমুখী শিলপ গুলি যদি বৈদেশিক মুদ্রা এনে দিতে পারেন, তাহলেই গাড়িতার তেল পুড়িয়ে খাবারটা খেয়ে অন্তত কেউ বুদ্ধিজীবির মতো টক শোতে আসতে পারতেও পারেন। সরকারের তহবিল মোটা করতে সবার যেমন সঠিভাবে ট্যাক্স প্রদান, সবার দায়িত্তশীল ভুমিকা পালন করা দরকার সেখানে এই দেশে সবে মাত্র ৪০% নাগরীক সরাসরি সরকারকে সাহাজ্য করেন, যার থেকেই সরকার এই সব ডেভেলপমেন্ট কাজ, বিশেষ তহবিল গঠন করেন। তাই সরকার জানেন তিনি কিভাবে কোন পরিস্থিতিতে আছেন। সবার ইন্টেলেকচুয়াল কথা শুনলে তো দেশ চালানো যাবে না। সব দায়িত্তই সরকারের নয় এটা সবারই বুঝা উচিত। আপদকালীন সময়ে হয়তো সরকার তার সর্বস দিয়ে ক্রিটিক্যাল সময়টা পার করে দিতে পারেন কিন্তু মাসের পর মাস এটা কোনো সরকারের পক্ষেই পারা সম্ভব না, আর আশা করাও কোনো দায়িত্তশীল নাগরিকের কাম্য নয়। হাওয়া যখন গরম হয়, তখন আমরা বলি শনির দশা চলছে। আর শনি এমন এক হাওয়ার নাম যে, যেখানেই যাই হোক বলির পাঠা হয় সরকার। সরকারের সাথে সাথে বলির পাঠা হয় সেই সব অরগ্যানাইজেশন গুলিও যাদেরকে চোখে দেখা যায় তারা। ফলে কেনো সরকার ওটা করলেন না, কেনো সরকার ঊটা করতে গেলেন, কিংবা কেনো ঐ অরগ্যানাইজেশন গুলি এতা করছে না ইত্যাদি। সমালোচনার আর শেষ নাই। কিন্তু কেউ যেনো দায়িত্তশীল নয়, সব দোষ এই সরকার বাহিনীর।
তাই এই মুহুর্তে আমার ধারনা, রপ্তানীমুলক প্রতিষ্ঠানগুলিতে যারা কাজ করেন, তাদের শতভাগ করোনা টেষ্ট করে এটা নিশ্চিত করা যে, তারা এই মহামারীতে আক্রান্ত হন নাই এবং যখনই বাইরের দেশগুলি করোনা শেষে পুনরায় রপ্তানীর জন্য আগ্রহী হবেন, তখন যেনো আমাদের রপ্তানীমুলক শিল্পগুলি কোনো রিস্ক ছাড়া দ্রুত উতপাদনে গিয়ে শতভাগ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনতে পারেন তার ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে, এই সব শ্রমিক কর্মচারিদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে না রেখে কারখানা কোয়ারেন্টাইনে রেখেই রপ্তানীমুলক কাজে উতসাহিত করা। এটা এখনি করতে হবে সেটা বলছি না। সময়টা হবে যখন উন্নত দেশগুলি পুনরায় বানিজ্যিক কার্যক্রম চালু করার সিদ্ধান্ত নেবেন তখন। মিডিয়া অনেক সময় সরকারের অনেক ঘটনমুলক কাজকে যেমন উতসাহী করেন আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকটা না বুঝেই নিরুতসাহীও করে ফেলে। অনেকেই বলতে শুনি যে, পলিটিক্সে মিডিয়া একটা হুমকীর মতো। ফলে কখনো কখনো রাজনীতি মিডিয়ার কাছে একটা বেওয়ারিশ বোমের মতো হয়। কেউ জানে না উটা কখন কিভাবে কোথায় ফাটবে আর কে কে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এজন্য আমাদের দরকার, যারা প্রকৃতভাবেই অর্থনীতি বুঝেন, বিশ্ব রাজনীতি বুঝেন, তাদেরকে টকশোতে প্রকৃত অবস্থাটা মিডিয়ায় বাস্তবভাবে তুলে ধরা। কান্ডজ্ঞানহীন কিছু মানুষ যখন জ্ঞানবিহিন কোনো বিষয়ে কথা বলেন, তখন যারা সরল আমজনতা, তারা বিভ্রান্ত হন। আমজনতাকে বিভ্রান্ত করা দেশের জন্য একটা অশুভ কাজ।
২। কৃষি খাতকে আরো দেশীয়ভাবে সাবলম্বি করে তোলা যাতে খাদ্য নিরাপত্তায় আমাদের দেশের কৃষক এবং ভুমিগুলি অন্তত খাদ্য ঘাটতি পুরনে সক্ষম হয়। কারন একটা সময় আসবে, যখন টাকা খাওয়া যাবে না, বা ডলার খাওয়া যাবে না, দরকার খাদ্য শস্য। আর আমাদের জমি, ভুমিই হতে পারে সাময়িকভাবে তার একমাত্র অবলম্বন।
৩। ডেভেলপমেন্ট খতে এই মুহুর্তে বিশেষ নজর না দিয়ে ঐ সব ফান্ডগুলি শুধুমাত্র সাস্থখাত, ভর্তুকি এবং অন্যান্য কাচামালের উপর বিশেষ ছাড় দেয়া। যাতে করোনার উন্নতির পাশাপাশি সমস্ত শিল্প, সমস্ত উদপাদনশীল কারখানাগুলি দ্রুততম সময়ে বৈদেশীক মুদ্রা ঘরে আনতে পারে। যতো বেশী বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে ঢোকবে, তত দ্রুত দেশের অর্থনীতর চাকা সল্প সময়ে চালু হবে। কর্ম সংস্থান বাড়বে। দূর্ভিক্ষ কমবে। (চলবে)
(লেখাটি কোনো পক্ষকেই সমালচনা করার জন্য নয়, এতা একটা ঘটনমুলক চিন্তা থেকেই ব্যক্তিগত মতামত। আপ্নারাও আপনাদের ঘটন মুলক মতামত দিতে পারেন।)
Isa Ruhul Karim Isa Food security is the base, we must put maximum efforts on agricultural at this moment.
Mohd Akhtar Hossain খাদ্য সয়ং সম্পর্নতায় যেটা হবে তা হচ্ছে, দেশের মানুষ ক্রিটিক্যাল সময়টা অন্তত না খেয়ে সাফার করবে না। আবার আমদানিও করতে হবে না। আসলে আমদানী করার কোনো স্কোপও থাকবে না কারন সব দেশই একই পলিসি এডোপ্ট করবে, কোনো খাদ্য শস্য হয়তো তেমন ভাবে রপ্তানীও করবে না। আগে নিজের দেশের চাহিদা মেটানোর পর যদি সারপ্লাস থাকে তাহলেই হয়তো চড়া দামে অন্য দেশ তা রপ্তানি করবে, আবার সেক্ষেত্রেও তোমার বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে। ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, কিংবা অনেক কাচামাল আছে যা আমাদের রপ্তানীর জন্য কিংবা ডেইলি লাইফে চলার জন্যেও তা আমদানী করতে হবে। তাহলে সেই সব কমোডিটিজ আনতে বৈদেশিক মুদ্রা পাবো কই? সেই জন্যএই আমাদের পোষাক শিল্পকে এবং এই জাতীয় শিল্প যারা বৈদেশিক মুদ্রা সহজেই আনতে পারে তাদেরকে দাড় করাইতে হবে দ্রুত।
Mosharraf Hossain লিখেছেন ভালো ।তবে এ মূহুর্তে আপনার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সরকারের পক্ষে কঠিন হবে ।বি জি এম ই ও বিকে এমই এর নেতৃবৃন্দ কে আরও চৌকষ হতে হবে ।তাদের সাথে সদস্যদের সমন্বয়ের অভাব আছে মনে হয়। হতাশ হওয়ার কিছু নেই,যেখানে ধ্বংস সেখানে সৃষ্টির সুযোগ সৃষ্টি হয়।
Mohd Akhtar Hossain আমি এই মুহুর্তের কথা বলছি না আসলে। আমি বলছি যে, এটা হোমওয়ার্ক দরকার যখন অন্যান্য দেশগুলি করোনার ইফেক্ট থেকে বেরিয়ে এসেই বিপুল পরিমানে সব ব্যাপারে ঘাটতি পুরনে সর্বাত্তক কাজে লেগে যাবে, তখন । তখন আমাদের কি কি করা উচিত যদিও আমরা তখনো কিছুটা করোনায় কবলিত থাকবো হয়তো। এই মুহুর্তে কেহই কিছু করতে পারবে না বলেই সব দেশের সরকার আপদ কালীন ঠেক দিচ্ছেন। আমিও সেটাই বলছি, যখন স্রিষ্টির সুযোগটা আসবে, তখন আমরা সেই সুযোগটা নিতে পারবো কিনা। নাকি অন্য কেউ সেটা নিয়ে নেবে স্যার।
Mozaharul Islam Shawon গতকাল শুনেছি গার্মেন্টস মালিকের কাছ থেকে যে বেশিরভাগ অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। আবার মাত্র ১ সপ্তাহ সময় দিয়েছে এক্টা বড় অর্ডারের সিপমেন্ট এর জন্য। দেখলাম তারা প্রানান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন অন্তত যেটুকু কাজ বাকি আছে,সেই সেক্টরকে চালিয়ে সিপমেন্ট সময়মত করার। এই অংশে বাধা দেবার কিছু নাই। তবে মহামারির প্রয়োজনিয় পরীক্ষা করার সক্ষমতা যেন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ নিতে পারেন,সেই সুযোগ থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে?
Mohd Akhtar Hossain শাওন ভাই, বেসিক্যালি এ যাবত পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের উপর অর্ডার বাতিল হলেও গার্মেন্টস সেক্টর প্রায় ৫০/৬০ বিলিয়ন অর্ডারের কাজ করে বাংলাদেশ। বায়াররাও তাদের এই মৌলিক চাহিদা পুরন করতে হবে। ফলে অনেক আদেশ বাতিল হয় নাই, পুশ ব্যাক করেছে, বা হোল্ড করেছে। কিন্তু অনেক বায়ার আবার এই সর্তও দিয়েছে যে, পেমেন্ট করতে চায় আরো ৬ মাস পড়ে। তাতেও বাংলাদেশের রাজী হওয়া উচিত যদি বায়ার শুধু সিএমটা দেয়। কোনো কারনে যদি এই বিপুল পরিমান অর্ডার আসলেই শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়, তাহলে যে যাইই কিছু বলুক, দেশের অর্থনীতিকে চাংগা করার মতো আর কোনো সেক্টর নাই যেখানে এই পরিমান ফরেন কারেন্সী আনা। রেমিটেন্স এই মুহুর্তে বা আরো কয়েক মাস প্রায় শুন্যের কোটায় থাকবে। সেক্ষেত্রে বিকল্প কি? বিকল্প একটাই, একে সচল করা। একটা কথা ঠিক শাওন ভাই, আপনি হয়তো এই শিল্পের সাথে জড়িত কিছু মানুষের সাথে আলাপ আলোচনা আছে বলে এই মন্তব্যতা করতে পেরেছেন যে, " অন্তত যেটুকু কাজ বাকি আছে, সেক্টরকে এলাউ করা যে সিপমেন্ট গুলি বাকী আছে তা সময়মত করার। এই অংশে বাধা দেবার কিছু নাই। তবে মহামারির প্রয়োজনিয় পরীক্ষা করার সক্ষমতা যেন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ নিতে পারেন,সেই সুযোগ থাকা উচিত।"। কিন্তু এমনো কিছু গুনিজন আছেন যারা না জানে আদার ব্যাপারীর কাজ না জানে জাহাজের খবর কিন্তু মন্তব্য করে যেন উনীই একমাত্র কান্ডারী। যেনো এই করিলে সেই হইবে, ঐ না করিলে উহা হইবে না। হাসি মাঝে মাঝে।
Mozaharul Islam Shawon Mohd Akhtar Hossain
জি বৃহত স্বার্থে জরুরী বটে। তবে নিজ দায়িত্বে হলেও কর্মিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা জরুরী। সেজন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার সকল ব্যবস্থা নেবার ক্ষমতা গার্মেন্টস মালিকদের দেয়া উচিত এবং সেখানে সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রন রাখা উচিত। বিমানবন্দরের সনদ পাওয়ার মত যেন না হয়।1
Mohd Akhtar Hossain Mozaharul Islam Shawon একটা মালিক শুধু দেশের কমপ্লায়েন্স সিস্টেমেই দায়বদ্ধ না। সে ইন্তারন্যাশনাল লেবার আইন, কমপ্লায়েন্স, সেফটি এন্ড ওয়ার্কি এনভায়রনমেন্ট পরিপুর্ন করলেই ব্রান্ড বায়ারের কাজ করতে পারে। ফলে যে সব প্রোটেকসন নিয়ে গার্মেন্টস মালিকগন কাজ করেন, সেটা অনেকেই জানে না। রানা প্লাজার পর সব কিছু আমুল পরিবর্তন যে হয়েছে এটা অনেকের পেটেও নাই, মাথায় তো নাইই। বাসায় যতোতা না করোনার ব্যাপারে মানুষ যত্ন নেয়, তার থেকে অনেক বেশি গুনে মালিকপক্ষ করোনার ব্যাপারে যত্নশীল। আর এতার মনিটরিং রেকর্ড করে বিজিএমইএ, এবং ব্রান্ড বায়ার সবাইকে রিপোর্ট পাঠাতে হয় যেমন থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হয়েছে কিনা, প্রতিটা সিড়ি থেকে শুরু করে টেবিল পর্যন্ত সেনিটাইজ করা হয়েছে কিনা, ফ্লোর সেনিটাইজ করা হয়েছে কিনা, সোস্যাল ডিস্ট্যান্সে বসাচ্ছে কিনা, মাস্ক পড়ছে কিনা, হ্যান্ড সেনিটাইজ দিয়ে প্রতিবার বের হওয়্যার সময় বা বাহির থেকে আসার পর হাত ধোয়া হচ্ছে কিনা, এই সব কিছুই মালিকগন নিজের সার্থেই করে থাকেন। কারন এখানে একটা লোক আক্রান্ত মানে উরা ফ্যাক্টরি আন্ডার লক দাউন। নিজেরা সহ। তো কে চায় নিজের ক্ষতি করতে? মালিকগন নিজের পরিবারের থেকেও বেশি যত্নশীল তাদের ফ্যাক্টরির ওয়ার্কারদের ব্যাপারে। এটা কেউ বিশ্বাস করুক আর নাইবা করুক। কারন আমি নিজে করি।
Mozaharul Islam Shawon Mohd Akhtar Hossain
গুড। এর সাথে তাদের আবাসস্থলের দিকেও নজর দিতে হবে এবং সুরক্ষায় আনতে হবে। সেখানেও আপনাদের তদারকিতে নিতে হবে। আমি কি খুব বেশি বিরক্ত করছি?1
Mohd Akhtar Hossain Mozaharul Islam Shawon না, আপনি ঠিকই করছেন। এটা বিরক্ত না শাওন ভাই, এতা বাস্তবতা যেতা আপনি বলছেন। আমাদের ওয়ার্কাররাও কিন্তু এখন অনেক সচেতন। তারা নিজেরাও ফ্যাক্টর থেকে হ্যান্ড সেনিটাইজার নিয়ে বাসায় যায়, মাস্ক নিয়ে যায়, আমরাই দেই। আবার সেতা ঠিক্মতো ওয়াস হচ্ছে কিনা সেতাও আমরা পরীক্ষা করি। আর তাদেরকে তো মোটিভেশন করেই যাচ্ছি।
২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-৫
Categories
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে এমন এক মহামারী চলছে যে, তৃতীয় কোনো বিশ্বযুদ্ধ হলেও কোনো না কোনো পক্ষ বিপক্ষ থাকতো, আর এই দুই পক্ষ-বিপক্ষকে সামাল দেয়ার জন্য হয়তো তৃতীয় কোনো সমঝোতাকারীও থাকতো। কিন্তু এখানে পক্ষ যেনো একটাইঃ দৃশ্যমান মানবজাতী বনাম অদেখা অমাবশ্যারমতো করোনার মহামারী। সারাবিশ্ব আজ স্থবির। থেমে গেছে সব। সবাই আজ এক কাতারে, কেউ আজ আর কারো জাত, ধর্ম কিংবা গোত্র নিয়ে কথা বলে না। এই অমাবশ্যায় সব কিছুই উলট পালট হয়ে যাচ্ছে, সব কিছুর হিসাব পালটে যাচ্ছে। এই অমাবশ্যা কবে কাটবে সেটাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। অনেকেই হয়ত অমাবশ্যা কাটার জন্য জজ্ঞের আয়োজন করছেন, উপাসনা করছেন, কিন্তু অমাবশ্যা কাটবে কিনা সেটা কোনভাবেই জজ্ঞ নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। কারন, এই মহামারী বর্তমান মানবজীবনের অস্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক করতেই যেনো এর আবির্ভাব। অর্থাৎ বিধাতার শুদ্ধি অভিযান চলছে। সবাই যেন দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন, কোনটা সঠিক সিদ্ধান্ত আর কোনোটা সঠিক নয় এটাও সঠিকভাবে নিতে পারছেন না, না দেশের সর্বোচ্চ মহল, না তাদের আমলাতন্ত্র না সাধারন জনগন। সবাই দিশেহারা। সারাটা বিশ্ব যেনো একটা মর্গ। মর্গে যেমন ঠাণ্ডা থাকে তেমনি থাকে নিস্তব্দতা। বিশ্ব এখন ঠান্ডা আর নিস্তব্ধ।