বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালে আমি খুব একটা লিখি না কারন সময় পাইনা। তাছাড়া সবধরনের লেখাও এই পত্রিকাটা ছাপাতে পারে না, দেশের আইন কানুনের মধ্যে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকায় জাতীয় সমসাময়িক বিষয় নিয়েও লেখা অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই বেশীরভাগ লেখা গ্লোবাল পার্সপেক্টিভ থেকে লিখা যা জাতীয় সমসাময়িক লেখার মতো সমস্যা নাই। আরব বসন্ত যখন শুরু হয় তখন সারাটা দুনিয়া প্রায় এক প্রকারের অস্থিরতায় ভুগছিলো সমস্ত দেশের রাজনীতি। প্রতিটি দেশ তাদের আভ্যন্তরীন জাতীয় নীতি, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, প্রতিরোধ ব্যবস্থা সব কিছুই ধীরে ধীরে পরিবর্তন করতে দেখা গেছে সব দেশে। এতে জনগনের বাক স্বাধীনতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। কোনো না কোনো আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার নিমিত্তে অনেক আইন, নিয়ম নীতি চালু করেছে। আর এসব কারনেও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় অনেক অসুবিধা আছে। ফলে কেউ ইচ্ছে করলেও সব কিছু লিখে ব্যক্ত করতে পারেন না।
রোহিংগা ইস্যু নিয়ে যে লিখাটা লিখেছি সেটাও গ্লোবাল ইস্যু মনে করেই লিখা। ডিফেন্স জার্নালকে ধন্যবাদ যে, তারা শুধুমাত্র এই একটি লেখা দিয়েই একটা পাক্ষিক ছাপিয়েছেন। ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক লেঃ (অবঃ) আবু রুশদ আমার আর্মির জীবনে কোর্ষমেট ছিলো। অসম্ভব মেধাবী একজন অফিসার। আমি প্রোফেশনাল লেখক নই। কাজের ফাকে যখনই সময় পাই, তখন লিখতে মন চায়। পড়াশুনার পাশাপাশি আমি গ্লোবাল এবং জাতীয় সমসাময়িক ইস্যুগুলি নিয়ে অনেক গভীরে ভাবি। আর সেই ভাবনা থেকেই লেখাগুলি। সবগুলি লেখা মৌলিক, তবে যাদের কোনো লেখা রেফারেন্স হিসাবে আনা হয়েছে, তাদের সবগুলি বরাত আমি উল্লেখ করেছি। আমার আর্টিক্যালগুলি কেউ যদি কপি কিংবা শিক্ষার জন্য কোথাও ব্যবহার করতে চান, করতে পারেন তবে সেখানে আমার লেখার রেফারেন্স দেয়া বাধ্যতামুলক। কপি রাইট রাখিনি কিন্তু রেফারেন্স আবশ্যক যদি কেউ ব্যবহার করতে চান। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, যদি আমার লেখাগুলি কেউ ব্যবসায়িক কাজে কপি করতে চান বা ব্যবহার করতে চান, আর সেটায় যদি বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে ডিফেন্স জার্নালের মতামতই চুড়ান্ত।
যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আজকের ইয়াং জেনারেশন অনেক পালটে যাচ্ছে। তাদের মতামত, আচার ব্যবহার, রীতি নীতি আগের দিনের মানুষের চেয়ে অনেক বেশী পরিবর্তনশীল মনে হয়েছে আমার কাছে। আজ থেকে ২০ বছর কিংবা তার ও বেশী সময় পূর্বে আমাদের সমাজে বড়রা আর তাদের বড়দের মধ্যে যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাজ করতো, যে ভয় ভীতি কিংবা আদব কায়দার প্রচলন ছিলো, সেটা আজকের দিনের ইয়াং জেনারেশনের মধ্যে প্রায় দেখাই যায় না। তাই এই জেনারেশন গ্যাপ আমাদের সমাজকে প্রায় ভয়ংকর একটা পরিস্থিতিতে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ঘরেই যেনো মতের অমিল, আদর্শের অমিল, ভাবনার ফারাক দেখা যায়। এই পরিস্থিতি দিনে দিনে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে বিধায় আমি জেনারেশন গ্যাপের উপর একতা লিখা লিখেছি। এটাই সমাধান নয়। আরো অনেক গভীরে যাওয়া দরকার এবং সেটা এখুনী।
ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে পুরু দুনিয়া একটা মিস কন্সেপশনে আছে। এর প্রধান কারন ভিন্ন ধর্মের মানুষগুলি জানেন না আসল ইসলাম কি, এর নীতি কি, এর ধরন কি। ফলে ইসলামিক দেশ গুলির সাথে অ ইস্লামিক দেশ গুলির মধ্যে দিনে দিনে একটা মূল্যায়ন গত ফারাক তৈরী হচ্ছে। প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ ইসলামিক আদর্শে লালিত হচ্ছেন। এতো বিশাল সংখ্যার মানুষের সাথে অন্যান্যের মধ্যে প্রতিনিয়ত ভুল আন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে থাকলে এক সময় সারাটা দুনিয়া মুসল মান ভার্সেস অন্য ধর্মালম্বির মধ্যে একটা অলিখিত যুদ্ধ বাধবে যা এই পৃথিবীর জন্য মারাত্তক সংবাদ। আমি ইসলামি ফান্ডামেন্টালিজমের উপর কয়েকটি লিখা লিখেছি যা অতীব জরুরী। এমনকি আমার ডক্টড়াল থিসিস টাও এই ভাব ধারায় লিখা। কতটা তুলে ধরতে পেরেছি আর কতোটা সময়োপোযোগি তা সময়ই বলে দেবে।
অপ্রকাশিত প্রবন্ধসমুহ
কিছু কিছু লেখা আছে আমার যা কখনো কোনো পত্রিকায় ছাপাতে দেই নাই, কিংবা চাপানোর চেষ্টা করি নাই কিন্তু হয়তো ফেসবুকে অথবা অন্যত্র কোথাও পোষ্ট করেছি। অনেকেই পড়েছেন, আবার অনেকেই তার বিরুপ মন্তব্য করেছেন। কারো কোনো পছন্দের মনতব্য কিংবা বিরুপ মন্তব্যে বাস্তবতা পরিবর্তন হয়ে যায় না। বাস্তব সেটাই যেটা আমাদের চারিদিকে ঘটছে এবং তার উপর আমাদের অনেকেরই হাত নাই। দুনিয়া কাপানো কভিড-১৯, কিংবা ইউক্রেন যুদ্ধ এসবই এই শতাব্দীর হাড় কাপানো, অন্তর কাপানো সব ঘটনা। এসব সমসাময়িক চিন্তাধারা থেকেও আমি অনেক লেখা লিখেছিলাম, সেখানে কখনো কখনো কারো কারো বিষয়ে হয়তো ভবিষ্যত বানীও করেছি। তার কতটা বাস্তব হয়েছে আর কতটা হয় নাই তার প্রতিফলন হয়তো আমরা দেখে যেতে পারবো না, হয়তো এটা দেখতে পাবে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম। সেসব অপ্রকাশিত কিছু লেখাও এখানে লিপিবদ্ধ হলো।
করোনা/কভিড-১৯
এই দুনিয়ায় যুগে যুগে ঈশ্বর যে কোনো কারনেই হোক, তিনি তার বান্দাদেরকে পরীক্ষা বা শাস্তি বিধানের জন্যেই হয়তো বড় বড় মহামারী, দূর্যোগ মানসভ্যতায় প্রেরন করে থাকেন। যারা তাঁকে বিশ্বাস করে, তারা হয়তো এটাকে একটা গজব বলে হালকা করে নিজেদেরকে পরিশোধিত করার চেষ্টা করেন, আর যারা তাঁকে বিশ্বাস করেন না তারা যে কোন উপায়ে একটা খাড়া যুক্তি দাড় করিয়ে এর সমুলে রোধ করার চেষ্টায় থাকে। এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী এবার আমি নিজে। সারা দুনিয়ার গবেষক, বৈজ্ঞানিক একসাথে এই মহামারী করোনার বিরুদ্ধে তার আসু সমুহ টীকা আবিষ্কারে উঠে পড়ে লেগেছিল। অন্যান্য সময়ের থেকে এবারই সম্ভবত প্রথম বইজ্ঞানিকগন এতো অল্প সময়ে করোনার টীকা আবিষ্কার করে এর বিরুদ্ধে একটা প্রতিকার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ডোজের পর ডোজ দিয়ে সমস্ত মানব সভ্যতাকে বাচিয়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা করেও এখন অবধি এর শতভাগ ফলাফল আনতে পারেনি। আবার অন্যদিকে যারা ঈশ্বরের প্রতি আকুন্ঠ বিশ্বাস নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলো, তারা কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিয়েও দিব্যি সুস্থ আছেন। এর ব্যাখ্যা আমার কাছে নাই। কিন্তু একটা বিষয় শতভাগ সঠিক যে, এই করোনা সবাইকে একটা বড় ধরনের ধাক্কা দিয়ে গেছে, হোক সেটা ব্যবসায়, হোক সেটা ব্যক্তিগত জীবন প্রনালী, কিংবা হোক সেটা সরকার পরিচালনায়।
অনেক দেশ তাদের সমস্ত মানুষকে ঘর বন্ধী করে রোগ যাতে না ছড়ায় সেই ব্যবস্থায় এতো কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছিলো যে, সঞ্চিত সমস্ত অর্থ ভান্ডার দিনের পর দিন ব্যয় করে এক সময় প্রায় দেউলিয়ায় পর্যবসিত হয়ে যাচ্ছিলো। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ শ্রীলংকা, নেপাল, লেবানন ইত্যাদি। অবশ্য এদেশ গুলির মধ্যে আভ্যন্তরীন কোন্দল এবং দূর্নীতিও ছিলো।
বাংলাদেশের সরকার একটা জায়গায় সঠিক ছিলো যে, সে অর্থকড়ি সেক্টর যেমন গার্মেন্টস শিল্পকে তারা কখনোই বাধাগ্রস্থ হতে দেয় নাই। আমিও এর শতভাগ সমর্থন করেছিলাম। আর এই সমর্থনে আমি যেটা দেখেছি সেটা হলো, আমজনতার অনেক ইন্টেলেকচুয়াল ব্যক্তিরা সরকারের এই পদক্ষেপকে অতিরিক্ত মাত্রায় সমালোচনা করেছেন। সরকারকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গালমন্দ এবং জনকল্যানকর সরকার নয় এরুপ মন্তব্যও করতে দেখা গেছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে সেটাই সঠিক প্রমানিত হয়েছে যা আমি ভেবেছিলাম এবং সরকার করেছে। এটা কোনো ভবিষ্যত বানী ছিলো না যে, সরকার ঠিক কাজটিই করেছে বলে। আসল ব্যাপার হলো যে, গাছ তলায় বসে প্রেম হতে পারে কিন্তু সংসার আসলেই চলার জন্য দরকার প্রতিনিয়ত অর্থের ফ্লো।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ
গত ২৪ শে মার্চ ২০২২ তারিখে পরাশক্তি রাশিয়া তার পার্শবর্তী দেশ ইউক্রেনকে হামলা করে। আমি সচেতন নাগরীক হিসাবে রাশিয়ার এই আগ্রাসনকে যদিও সমর্থন করি না, তারপরেও আমি রাশিয়াকে সর্বদা সমর্থন করেছিলাম। এর কারন ইউক্রেনের বিপক্ষে ছিলাম তা নয়। এর প্রধান কারন- আমাদের অন্যান্য পরাশক্তিগুলি সাদাকে সাদা কিংবা কালোকে কালো বলছে না। তাদের বিশ্ব নীতি এতোটাই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড যে, যখন আরব দুনিয়ার দূর্বল দেশ প্যালেস্টাইন, ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়াকে কেউ আক্রমন করে বা নিজেরাই আক্রান্ত করে তখন হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ মরে যায়, তখন তাদের হিউম্যানিটেরিয়ান বক্তব্যগুলি এক রকম। যেনো ওদের মেরে ফেলাই ঠিক। অথচ সাদা চামড়ার দেশ ইউক্রেন যখন আক্রান্ত হয়, তখন তাদের ট্রেজারী খুলে যায়, আর্মস সাপ্লাই বেড়ে যায়, রিফুজি আশ্রয়ের ব্যাপারে তারদের কোনো নীতির বালাই নাই। ঠিক এই জায়গাটাই আমার বক্তব্য। প্যালেশটাইন ৭০ বছরেও সাফার করে একটা পরাশক্তির কাছে কোনো সিম্প্যাথি পায় না, লিবিয়ায় কোনো কারন ছাড়াই একতা দেশ আক্রান্ত হয়ে পুরুপুরি ধংশ হয়ে গেলো কোনো কৈফিয়ত নাই। অথচ ইউক্রেন আক্রান্ত হবার ৪ দিনের মধ্যে সমস্ত ইউরোপ, ন্যাটো, ইউ কে, ইউ এস এ, ফ্রান্স, জাররামানী এক যোগে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লেগে গেলো।
এই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ অবধি ইউনিপোলার সিস্টেম থেকে পৃথিবী বেরিয়ে আসবে বলে আমার ধারনা, পেট্রোডলার বিলুপ্ত হবার পথে এবং আমার মনে হয় এই দুনিয়ায় পাওয়ার পলিটিক্সের একটা বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।