১৯/০৭/২০২১-ঈদুল আজহার ২দিন আগে

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

১৯ জুলাই 

এই কয়েকমাসে এতো বেশী অভিজ্ঞতা হলো যা আমার জীবনের অনেক প্রাক্টিস আর বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যাদেরকে আমি মনে করি সবাই আমার মতো। অথবা আর যার সাথে আমরা যাইই করি না কেনো, অন্তত আমরা আমাদের সাথে সেই একই প্রাক্টিস গুলি কখনো করতে পারি না। কিন্তু আমার এই ধারনা সমুলে আঘাত খেয়েছে অনেক গুলি কারনে। তাহলে একা একা বলিঃ

(১) মান্নানের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়েঃ মান্নান যে আমার সাথে লুকুচুড়ি করে সেটা আমি জানি। অনেক সময় ভাবি যে, হয়তো সে একটু ভালো থাকতে চায়, তাই একটু আধটু লুকুচুরি করে। আমার অনেক ক্ষতি না হলেও অর্থের দিক দিয়ে একটু তো লাগেই। কিন্তু যেহেতু আমি সামলে নিতে পারি, তাই অনেক সময় কিছু বলি না বা বলতে চাইও না।

আমি যখনই কোনো জমি কিনেছি, মান্নান সেখানে জমির দামটা এমন করে বাড়িয়ে বলতো যাতে আমার টাকা দিয়েই মান্নান ও কিছু জমি সেখান থেকে কিনতে পারে। আমি সেটা বুঝি কিন্তু কিছু হয়তো বলি না। এভাবে মান্নান অনেক জমি শুধু হয়তো আমার টাকা দিয়েই কিনেছে আর সেটা আমার ক্রয় করা জমির সাথেই। কিন্তু এবার যেটা করেছে সেটা মারাত্তক।

মুজিবুর রহমান খান নামে এক ভদ্রলোক আমাদের পলাসপুরের জমিটা কিনতে আগ্রহী হলে আমিও বিক্রি করতে তৈরী ছিলাম। আমার জমির সাথে আমার পার্টনার মুর্তুজা ভাইয়ের জমি আছে। ফলে আমার জমি আর মুর্তুজা ভাইয়ের জমি সহ একটা রফাদফা হয়েছিলো। এর মধ্যে মান্নান আমাকে জানালো যে, মুজিবুর রহমান খান সাহেবের আরো জমি দরকার যা সেলিম নামে এক জন লোকের জমি আমাদের জমির পাশেই আছে কিন্তু ওর জমিতে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় যদি আমাদের জমির সাথে টাই আপ করে খান সাহেবের কাছে বিক্রি করি তাতে আমাদের লাভ হবে। কারন সেলিকমে জমির মুল্য দিতে হবে খান সাহেবের দেয়া জমির দামের অর্ধেক প্রায়। সেলিমদের মোট জমি ছিলো ৩২০ শতাংশ।

এর মধ্যে মান্নান আমাকে জানালো যে, আমরা সেলিমদের জমি থেকে পানি ব্যতিত মোট ১৫১ শতাংশ জমি খান সাহেবকে দিতে পারবো। বাকী ১৬৯ শতাংশ জমি আসলে নদীর পানির মধ্যে যদিও জমিটা রেকর্ডের অন্তর্ভুক্ত। আমি যখন সেলিমদের জমিটা বিনা পরীক্ষায়, বিনা নীরিক্ষায় খান সাহেবকে রেজিষ্ট্রি করে দিলাম, পরে জমি মাপ্তে গিয়ে দেখি যে, মাত্র ৯৮ শতাংশ জমি আছে যা নদীর মধ্যে না। অনেক রাগারাগি আর চাপাচাপির মধ্যে আমি যখন সেলিমদের ধরলাম, শুনলাম আরেক বিরাট ইতিহাস। মান্নান, সেলিম এবং সেলিমের এক চাচাতো ভাই মিলে মোট ৩২০ শতাংশ জমিই কিনে নিয়েছে সেলিমদের আত্তীয় স্বজনের কাছ থেকে অই টাকায় যে টাকা হয় ১৫১ শতাংশের দাম। খান সাহেবকে ১৫১ শতাংশ জমি দেয়ার পর বাকী ১৬৯ শতাংশ জমি ধান্দা করে মান্নানের নামে আর সেলিমের নামে একা পাওয়া অফ এটর্নী নিয়েছে। এর মানে হলো, আমি কোনো লাভ করি নি , লাভ করছিলো মান্নান। যদি অদুর ভবিষ্যতে পানি শুকিয়ে চর জাগে, তাহলে মান্নান এই জমি গুলি চড়া দামে বিক্রি করতে পারবে। অথচ টাকাগুলি খান সাহেবের এবং আমার। খান সাহেব যখন নদীর মধ্যে কোনো জমি নিতে নারাজ হলেন, তখন আমার চর গল্গলিয়া মৌজা থেকে এই বাকী ৫৩ শতাংশ জমি পুরা করে দিতে হবে যার দাম প্রায় তিন কোটি টাকা। এটা কোনোভাবেই আমার সম্ভব হচ্ছিলো না। আমি কেনো এতো গুলি জমি খান সাহেবকে লিখে দেবো যার দাম তিন কোটি টাকার উপরে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিখেই দিতে হবে জেনে আমি পলাশপুরের আক্কাসকে ধরে মান্নান আর সেলিমের কাছ থেকে পরবর্তীতে ওই ১৬৯ শতাংশ জমি ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার নিজের নামে নিয়ে নিলাম। জানি আমার ক্ষতি পুরন হবে না যতোক্ষন পর্যন্ত ওই নদীর জমি শুকিয়ে আসল চেহারায় জমি ভেসে না উঠে। আমি মান্নানকে বারবার এই অ বিশ্বাসের কাজটা কেনো করেছে জিজ্ঞেস করলে তার একটাই উত্তর- ভুল হয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই ভুল হতে পারে না। আমি কখনো ভচাবি নাই যে, মান্নান ও আমাকে এভাবে এতো ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।

পলাশপুরে আমার আরো একতা জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া ছিলো। আর যেহেতু ওই লিজটা আনতে হয় কোনো দুস্ত মানুষের নামে, তাই আমি মান্নানের ভাই নাসিরের নামেই ১০০ শতাংশ জমি আমার টাকায় লিজ নিয়ে এসেছিলাম। মান্নান আমাকে না জানিয়ে হালিম নামে এক লোকের কাছে ২০ লাখ টাকায় জমিটা গোপনে টাকা নিয়ে নিলো। এটা একটা অসম্ভব ঘটনা বলে আমার কাছে মনে হয়েছিলো। কিন্তু মান্নান কাজটা করেছে আমাকে একটু ও জানতে দেয় নাই। যখ ওরে আমি প্রশ্ন করেছি- মান্নানের একটাই উত্তর যে, আমার নাতির অসুখ ছিলো, টাকার দরকার ছিলো, তাই আমি বিক্রি করে দিয়েছি। আমাকে জানানোর কোনো বাধ্য বাধকতা মনে করলো না।

খান ভাই আমাদের পলাশ পুরের জমিটা কিনার সময়ে মোট ৬৩১ শতাংশ জমির বায়না করেছিলো যার মধ্যে মান্নানের ছিলো ৫১ শতাংশ। আমি খান ভাইকে বারবার বলেছিলাম, কখনো আমাকে ছাড়া টাকা পয়সার লেন দেন করবেন না। কিন্তু ওই যে বললাম, সবাই লাভ চায়!! খান সাহেব মান্নানকে মাঝে মাঝে আমাকে না জানিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা হ্যান্ড ওভার করে। একদিন খান সাহেব আমাকে জানালো যে, মান্নান জমিটা কাগজে কলমে কোনো বায়নাও করছে না আবার টাকাও চায়। আমি যখন ব্যাপারটার ভিতরে প্রবেশ করলাম, দেখলাম, ওই খানে মান্নানের জমি আছে মাত্র ৪ শতাঙ্ঘস, আর ওর বোন আর ভাই মিলে আছে আরো ৫ শতাংশ, মোট ৯ শতাংশ। বাকী জায়গাটা আক্কাস নামে ওর এক আত্তিয়ের। কিন্তু আক্কাসকে মান্নান উক্ত ৩৫ লাখ টাকা থেকে কখনো ১ টাকাও দেয় নাই, না মান্নান ওনার কাছ থেকে কোনো পাওয়ার অফ এটর্নী কিংবা অগ্রিম কোনো বায়নাপত্র করেছে। আক্কাস সাহেব যখন জানলো যে, মান্নান ইতিমধ্যে ৩৫ লক্ষ টাকা নিয়ে ফেলেছে, সে তখন (৫১ মানাস ৯) ৪২ শতান্সগ জমির বায়না করে ফেল্লো উক্ত খান সাহেবের সাথে। অর্থাৎ মান্নান জানেই না যে, উক্ত জমি মান্নান আর কখনোই খান সাহেবের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। আমি যখন আজকে মান্নানকে বললাম, খান সাহেবকে ৫১ শতাংশ জমি লিখে দিচ্ছিস না কেনো? তার অনেক উচা গলায় বল্লো, সে আগামীকালই জমিটা লিখে দিতে পারে। যখন বললাম যে, আক্কাস জমিটা অন্য খানে বিক্রি করে দিয়েছে- তখন দেখলাম ওর মুখের ভাব অনেক রক্তিম। কিন্তু লজ্জায় পড়লো কিনা জানি না। ওর আসলে এগুলিতে কোনো খারাপ লাগে না মনে হয়। টাকাটাই ওর কাছে সবচেয়ে বড় মনে হয়। ভাগ্যিস আমি এই ৫১ শতাংশের ব্যাপারে কাহ্নের সাথে কোনো প্রকার কথা বলি নাই। তাহলে এই ৫১ শতাংশ নিয়েও খান আমাকে চাপ দিতো।

মান্নানের এখন টাকা প্রাপ্তির প্রায় সব গুলি রাস্তাই বন্ধ। কোটি কোটি টাকা আমি ওর হাত দিয়ে খরচ করিয়েছি। বারবার বলেছি, অন্য কোনো একটা সোর্স কর যাতে বিপদের সময় একটা ইন কাম আসে। কখনো ব্যাপারটা আমলে নেয় নাই। এবার মনে হয় খুব হারে হারে টের পাচ্ছে যে, ওর টাকার সব গুলি সোর্স প্রায় একেবারেই বন্ধ। দেখা যাক কি করে। আমার কাছে অনেক গুলি কারন দেখিয়ে কিছু টাকা খসানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু এবার আমি অনেক টাইট হয়ে গেছি। কোনো কিছুতেই কোনোভাবেই আর টাকা দেয়া যাবে না। মান্নানের পিঠ প্রায় দেয়ালের মধ্যে ঠেকে যাচ্ছে। তবে এখান থেকে কিছুটা উত্তোরন হয়তো হবে যদি ধলেশ্বরী গ্রীন ভিলেজ প্রোজেক্ট শুরু হয়। কারন ওখানে আমি ওকে ইন করিয়েছি। কিন্তু ওটার ইন কাম বড্ড স্লো।

এবার আসি আমার পার্টনার মুর্তুজা ভাইয়ের কাছ থেকে আম্নার তিক্ত অভিজ্ঞতার ব্যাপারটাঃ

(To be cont...)

আমার খালা

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১

তারিখ 

সামিদা খাতুন

স্বামীঃ আব্দুল গনি মাদবর

তিনি আমার একমাত্র আপন ফার্স্ট জেনারেশন খালা। আমার মায়ের একমাত্র আপন বোন যাকে আমার মা বোন মনে করেন নাই, করেছেন নিজের মায়ের মতো। আমার খালার সাথে কারো কোন বিবাদ হয়েছে এই রেকর্ড সারা গ্রামের মধ্যে নাই। তিনি অত্যান্ত প্রতাপ্সহালী গনি মাদবরের স্ত্রী। এখানে বলা দরকার যে, গনি মাদবরকে ভয় পায় না এমন কন লক আমাদের গ্রামের মধ্যে ছিলো না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনি সন্ত্রাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যান্ত ন্যা পরায়ন একজন মাদবর। খুব বুদ্ধিমান। অত্যান্ত অহংকারী এবং একটা ইগো নিয়ে চলতেন। 

আমার খালা শেষ বয়সে কুজো হয়ে হাটতেন। যখন ই শুনেছেন যে, আমি শহর থেকে গ্রামে গিয়েছি, তখনি তিনি কস্ট হলেও খুব সকালে আমাকে দেখার জন্য আমাদের বাড়িতে চলে আসতেন। আমার খালা ও কোন ছবি নাই কিন্তু কোন একদিন আমার ছোট ক্যামেরা দিয়ে একটি মাত্র ছবি তুলেছিলাম যা আমার কাছে একটা অমুল্য রতনের মতো মনে হয় এখন। 

আমার খালা যেদিন মারা যান, আমি এই খবরটা জানতেও পারি নাই। অনেকদিন পর যখন আমি গ্রামের বাড়িতে গেছি, খালার সম্পরকে জানতে চেয়েছি, শুনলাম যে, আমার খালা মারা গেছেন। আমার খুব আফসোস লেগেছিলো। 

আমার খালার ভাগ্য ভালো যে, ঊনি অনেক কস্টে পরার আগেই জান্নাতবাসী হয়েছেন। আমি মাঝে মাঝে খালাকে গোপনে কিছু টাকা দিতাম কিন্তু যেহেতু তিনি নিজে কোনো কিছু কিনতে পারতেন না, ফলে ঊনি টাকা দিয়েও তার মনের মতো কোন কিছু কিনে খেতে পারতেন না। এর আগেই তার অন্যান্য নাতি পুতেরা তার হাতের টাকাগুলি কোনো না কোনো ভাবে ছিনিয়ে নিতেন। বড্ড নিরীহ মানুষ বলে কারো উপর তার কমপ্লেইনও ছিলো না। খুব নামাজি মানুষ ছিলেন আমার খালা। তার কোন ছেলেরাই তাকে ঠিক মতো ভরন পোষণ করার দায়িত্ত নেন নাই। এক সময়ের প্রতাপ্সহালি মাদবরের স্ত্রী শেষ জীবনে কস্টের মধ্যেই জীবন তা অতিবাহিত করছিলেন কিন্তু আমাদের কিছু সাহাজ্য আর তার নিজের স্বামীর যেটুকু আয় ছিলো তার উপর নির্ভর করেই শেষ জীবন তা অতিবাহিত করেছেন। 

কেরানীগঞ্জ মাইগ্রেশন-ষ্টাইল-৪

Categories

আমার বাবা যখন শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, আমাদেরকে যে কোনো ভাবেই হোক, যতো দ্রুত আদি নিবাস মুনশিগঞ্জ, সিরাজদিখানের কয়রাখোলা থেকে কেরানিগঞ্জে স্থান্তান্তর করতেই হবে। আমার খালুর সাথে আমার বাবা অতি গোপনে বিস্তারীত ব্যাপারটা নিয়ে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এই স্থানান্তরের সবচেয়ে কঠিন বিষয়টা হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষা এবং কাজটা করতে হবে কেউ বুঝে উঠার আগেই। যদি ১ম পক্ষের কেউ বিন্দুমাত্র আভাষ পায়, তাহলে তাজির আলী, কিংবা অন্যান্যরা কিছুতেই আমাদেরকে কেরানিগঞ্জে আস্তে দিবে না, বাধা দিবে এবং এটা একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির স্রিষ্টি করবে যা ভাবাই যায় না।

আমার খালু ছিলেন কেরানিগঞ্জের বাক্তার চর এলাকার অনেক প্রতাপশালি একজন ধনাঢ্য মাদবর। আমার খালু (গনি মাদবর) এবং আমার বাবা হোসেন আলী মাদবর দুজনে একটা ব্যাপারে একমত হলেন যে, যেদিন তাজির আলী কয়রাখোলার বাইরে থাকবে, হোক সেটা কোনো এক রাতের জন্য বা দুই রাত, সেই সময়ে পুরু বাড়িটা না ভেংগে কয়েক শত লোক নিয়ে এক রাতের মধ্যে বাড়িটা কেরানীগঞ্জে শিফট করা। এদিকে খালু তার নিজের একটা জমিতে আমাদের কয়রাখোলার বাড়ির অবিকল মাপে মাপে সব কিছু খুড়ে রাখবেন যাতে এক রাতের মধ্যেই পুরু বারিটা স্থাপন করা সম্ভব হয়। কিন্তু সমস্যা হলো কয়রাখোলা থেকে বাক্তার চরে আসার মাঝপথে একটা নদী আছে। সেই নদী এতো বড় আস্ত একটা বাড়ি কিভাবে পার করা সম্ভব? এটার ও একটা বিহীত হলো। পরিকল্পনা হলো যে, খালু ২/৩ শত কলা গাছ দিয়ে নদীর উপর ভেলা বানিয়ে রাখবেন যাতে ঘর সমেত লোকজন পার হতে পারে।

এবার শুধু অপেক্ষার পালা, কবে তাজির আলী অন্য কোথাও বেরাতে যায়। ব্যাপারটা বেশীদিন সময় নিলো না। সমস্ত লোকজন ঠিক করা ছিলো, ভেলার জন্য কলা গাছ ও রেডি করা ছিলো, শুধুমাত্র আদেশের অপেক্ষা। তাজির আলী তার শশুড় বাড়িতে তিন চারদিনের জন্য বেড়াতে যাওয়ার আওয়াজ শুনা গেলো। এদিকে বাবা এবং খালু সেই সময়তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলেন।

ঠিক যেদিন তাজির আলি তার শশুড় বাড়ি চলে গেলো, ওই দিন রাতেই একদিকে আমার বাবা তার দলবল নিয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি তুলে ফেলার ব্যবস্থা করলেন, খালূ নদীর উপর ভেলা সাজিয়ে ফেললেন, আর এদিকে আমার ভাই বাক্তার চরে পুরু বাড়িটা প্রতিস্থাপনের জন্যে দায়িত্তে থাকলেন।

মাত্র একটি রাত।

আর এই রাতের গহীন অন্ধকারেই আমার বাবা তার চার শতাধিক কর্মীবাহিনীকে নিয়ে, আমার খালু আরো দুই শতাধিক কর্মীবাহিনী নিয়ে আর অন্য দিকে আমার ভাই আরো প্রায় গোটা বিশেক পচিশেক লোক নিয়ে পুরু বাড়িটা ভোর হবার আগেই বাক্তার চরে সেট করে ফেললেন। গ্রামের মানুষ যখন ঘুম থেকে উঠলেন, তখন তারা একটা জিনিষ দেখলেন যে, কয়রাখোলায় আর বাড়ি নাই, অথচ বাক্তার চরে নতুন একটা বাড়ি দাঁড়িয়ে ছিলো। এটা কোনো আলাদিনের দৈত্যের কাহিনীকেও হার মানিয়েছে।

আমরা নতুন ঠিকানায় চলে এলাম। অন্যদিকে যখন তাজির আলীরা এই সংবাদ পেলো, তারা অনেক হৈচৈ লরেছে বটে কিন্তু ততোক্ষনে সব কিছু ওদের হাতের বাইরে চলে গেছে। এই নতুন ঠিকানায় এসে সবচেয়ে বড় কষ্টে ছিলেন আমার বাবা। তার সাম্রাজ্য ছেড়ে এখন তিনি নতুন এলাকায় কোনো কিছুই না। ভাগ্যের কি পরিহাস। গতকালের রাজা আজ অন্য কোথাও আরেকজনের প্রজা।

এখানে আমার (মেজর আখতার) একটা কমেন্ট করার খুব ইচ্ছে হলোঃ

শুধুমাত্র একটা বাড়ি তুলে আনাই কি মাইগ্রেশন? আর বাড়িতা তুলে না এনে কেনো আমার বাবা তার অর্থ খরচ করে বাক্তার চরে আরেকটা বাড়ি করলেন না? একটা নতুন বাড়ি করার পরেই তো তিনি আমাদের সবাইকে বাক্তার চরে মাইগ্রেট করাইতে পারতেন। এই জায়গাটায় আমার সাথে আমার বাবার বা খালুর বুদ্ধির সাথে এক হলো না। নিশ্চয়ই এর ভিতরে আরো কোনো মাহাত্য ছিলো যা এই মুহুর্তে আমার জানা নাই।

সাময়ীক তিরোধ্যান-ষ্টাইল-৩

Categories

আমার বাবা যদিও অত্র কয়রাখোলা এলাকার খুবই নামীদামী এবং প্রতাপ শালী একজন মাদবর ছিলেন কিন্তু তিনি তার ঘরের মধ্যে একটা বিষয় নিয়ে খুবই অসফল লোক ছিলেন। আর সেটা হলো তারই নিজের ১ম পক্ষের ছেলে মোঃ তাজির আলীকে নিয়ন্ত্রণ করা। তাজির আলী ছিলেন আমাদের স্টেপ ব্রাদারদের মধ্যে ২য় ভাই। প্রথম জনের নাম ছিলো নজর আলী, ২য় জনের নাম এই তাজির আলী এবং ৩য় ভাইয়ের নাম ছিলো মোহসীন আলী। তাজির আলী ভাইয়ের সবচেয়ে বেশী রাগ ছিলো আমার মায়ের উপর। কারন তিনি আমার মাকে কোনোভাবেই তার ২য় মা হিসাবে মেনেই নেন নাই। তার মধ্যে আমাদের এই পক্ষে আরো গোটা ৫ বোন আর ২ ভাই ইতিমধ্যে জন্ম গ্রহন করে ফেলেছি। আমার বাবার ছিলো অঢেল জমিজমা। আর বিশাল বাড়ি। তাজির আলী যখন বিয়ে করে, তখন থেকেই সে অতিমাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো। এর কারন হলো তাজির আলীর শশুড় বারীও ছিলো একটা খারাপ বংশের মানুষ। তারা মানুষের কাছে ডাকাতের সমপর্যায়ের শ্রেনী হিসাবেই গন্য হতো। এমতাবস্থায় শশুড় বাড়ির আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে তাজির আলী এতোটাই উছ্রিখল হয়ে উঠেছিলো যে, এক সময়ে সে এটাই ভেবে নিলো যে, ২য় পক্ষের আমাদের সবাইকেই সে হত্যা করবে। যদি দরকার হয়, সে তার বাবা অর্থাৎ আমার বাবাকেও হত্যা করে সমস্ত সম্পত্তি তাদের নামে লিখে নেয়া। আমরা তখন খুবই ছোট ছোট। শুধুমাত্র আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহ সবেমাত্র ইন্টার পাশ করছেন। হাবীব ভাইয়ের এই ইন্টার পাশ করাও যেনো তার অনেক হিংসা এবং রাগ। বাবা ব্যাপারটা কিছুতেই সামাল দিতে পারছিলেন না। আমার বাবা ছিলেন আসলেই খুব জ্ঞানী মানুষ। তিনি জানতেন, তাজির আলী যতোই হামকি ধামকি দিক, বাবার জিবদ্দশায় যে তাজির আলী কিছুই করতে পারবেন না সেটা তিনি নিসচিত। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর তাজির আলীর কিংবা আমাদের অন্যান্য স্টেপ ব্রাদারদের কার কি ভুমিকা হবে এটা নিয়ে তার অনেক শংকা ছিলো। তাই তিনি দেখতে চাইলেন, তার অনুপস্থিতিতে কার কি ভুমিকা হয়। এতা তার একটা টেষ্ট করা দরকার।

বিশয়টা নিয়ে বাবা আমার ভাই হাবীবুল্লাহ্র সাথে বিস্তারীত আলাপ করলেন। আমার ভাইয়ের সাথে আমার বাবার ছিলো খুবই বন্ধুত্তের সম্পর্ক। ফলে, তারা দুজন মিলে একটা বুদ্ধি করলেন। বুদ্ধিটা এরকমের যে, হতাত বাবা উধাও হয়ে যাবেন। তখনকার দিনে তো আর মোবাইল ছিলো না, আবার ল্যান্ড লাইনের ফোন ও ছিলো প্রায় দুষ্কর, তাই বাবা যদি হটাত করে কোথাও কিছুদিনের জন্য হারিয়ে যান, তাহলে সবাই ধরে নিবে যে, বাবা হয়তো কোথাও গিয়ে দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। এই সময়টায় কাদের কি কি ভুমিকা হয় সেটার আপডেট বাবা ভাইয়ার কাছ থেকে নিবেন। ব্যাপারটা জানবে শুধুমাত্র আমার ভাই আর বাবা। এমনকি আমার মাও জানবেন না। খুবই একটা গোপন বিষয়। আমার ভাই তখন সবেমাত্র ইন্তার পাশ করে জগন্নাথে ভর্তি হয়েছেন। বাবা ঢাকাতেই থাকবেন, কিন্তু কারো কাছেই প্রকাশ্যে আসবেন না। আমার ভাই মাঝে মাঝে গ্রামে গিয়ে ব্যাপারতা কে কিভাবে নিচ্ছে সেটা অব্জার্ভ করবেন এবং বাবাকে ফিডব্যাক দিবেন।

প্ল্যান মোতাবেক, বাবা একদিন সুদুর চট্টগ্রামে যাবেন বিধায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গ্রাম ছাড়লেন। কিন্তু আর তিনি ফিরে এলেন না। একদিন যায়, বাবা আসেন না, দুইদিন যায় বাবা আসেন না। এভাবে সবাই খুব দুসচিন্তা করতে লাগলো। বাবাকে খোজা শুরু হলো। কোথাও বাবাকে পাওয়া গেলো না। আসলে যিনি লোক চক্ষের আড়ালে পালিয়ে থাকতে চান, তাকে যেভাবেই খোজা হোক, তাকে তো প্রকাশ্যে পাওয়া যাবেই না। কিন্তু বাবা আছেন, সুস্থই আছেন। আর এ খবরটা জানেন শুধু আমার ভাই। তারা প্রতিদিন শ্যাম বাজার শরীর চর্চার ঘাটে দেখা করেন। ভাইয়া বাবাকে তার তরোধানের পর গ্রামের খবরাখবর দেন। বাবা সেই খবরের উপর ভিত্তি করে তিনি তার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা আটেন।

দিনের পর দিন দিন যখন বাবা আর গ্রামে ফিরে এলেন না, মা খুবই চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমার অন্যান্য ভাওবোনেরাও চিন্তা করতে লাগলেন। গ্রামের গনমান্য ব্যক্তিরাও কোনো কিছু আছ করতে না পেরে প্রায় মাস তিন চার পর ধরে নিলেন যে, বাবা হয়তো কোথাও দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। খবরতা এবার বেশ পাকাপোক্ত হয়ে গেলো। আর অরিজিনাল প্ল্যানের কার্যক্রমটা যেনো এখান থেকেই শুরু।

তাজির আলি ভাইয়ের দাপটের চোটে, তার সাথে আমার অন্যান্য স্টেপ ব্রাদার এবং বোনদের দাপট এতোটাই চরমে উঠলো যে, আমাদের ২য় পক্ষের সব ভাই বোনেরা এখন জীবন নিয়ে শংকিত। বাবা প্রতিদিন তার বাড়ির খবর পেতে থাকলেন এবং মনিটর করতে লাগলেন যেনো ব্যাপারটা কোনো অবস্থাতেই অনেক খারাপের দিকে না টার্ন নেয়।

তারপর......

তারপর একদিন বাবা সব বুঝে যাওয়ার পর ভাবলেন, ওনার যা বুঝার তিনি বুঝে গেছেন যে, তার মৃত্যুর পর আমাদের ২য় পক্ষের ভাইবোনদের কি অবস্থা হবে। তিনি হটাত করে গ্রামে এসে হাজির হলেন। সবাই তো অবাক। কোথায় ছিলো এতোদিন এই হোসেন আলী মাদবর? বাবা কাউকেই কিছু বললেন না, শুধু বললেন যে, সুদুর চট্টগ্রামে গিয়ে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছিলেন। যেহেতু কারো মাধ্যমেই খবর দেয়া সম্ভব হয় নাই, তাই আর বলা হয় নাই। কিন্তু তিনি মনে মনে জানেন কি হয়েছে আর এখন তাকে কি করতে হবে।

বাবা ভাবলেন, আমাদেরকে আর মুনশীগঞ্জে রাখাই যাবে না। আমাদেরকে মাইগ্রেট করে অন্যত্র নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে যে কোনো সময়ে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যাবে। বাবা আমার খালু গনি মাদবরের সাথে ব্যাপারটা বিস্তারীত আলাপ করলেন। আমার খালু গনি মিয়া ছিলেন আরেক মাদবর এবং খুবই প্রতাপ শালী মানুষ। যার অঢেল সম্পত্তিও ছিলো কিন্তু সবই কেরানীগঞ্জ। বাবা ভাবলেন আমাদেরকে খালুর দেশেই নিয়ে আসবেন।

কিন্তু বিপত্তি হবে যখন আমার স্টেপ ব্রাদার এবং বোনেরা জানবে যে, বাবা আমাদেরকে মুনশীগঞ্জ থেকে কেরানিগঞ্জে নিয়ে আসবেন তখন। তাতে মারামারি কাটাকাটিও হতে পারে। এই ব্যাপারটা নিয়েও বাবা ভাইয়ার সাথে আর খালুর সাথে আরেকটা বিস্তারীত পরিকল্পনা করলেন কিভাবে সব মারামারি, কাটাকাটি হানাহানি পরিত্যাগ করে নির্বিঘ্নে মুনশী গঞ্জ থেকে একদিনের মধ্যে কেরানীগঞ্জে আনা যায়। কিন্তু এইটা ঠিক যে, আমাদেরকে খালুর দেশে কেরানীগঞ্জে আনতেই হবে আমাদের নিরাপত্তার জন্য।

বাবার মাদবরী স্টাইল-২

Categories

আগেই বলেছিলাম যে, আলী হোসেন সরকার আর আমার বাবা কন টেম পোরারী সময়ে প্রায় একই পর্যায়ের মাদবর ছিলেন। কেউ কাউকে হেয় না করলেও তারা কখনোই এক সাথে কাধে কাধ লাগিয়ে চলতেন না। কে সুপেরিয়র আর কে সুপেরিয়র নন এটা বুঝানো যাবে না আবার কেউ কারো থেকেও কম না এটাই আসলে তাদের মধ্যে ছিলো একতা অলিখিত দন্ধ। আলী হসেন সরকারের বাড়িতে কোনো বড় অনুষ্ঠান হলে হোসেন আলী মাদবরে যেমন দাওয়াত থাকতো তেমনি হোসেন আলী মাদবরের বাড়িতেও কোনো অনুষ্ঠান হলে আলী হোসেন সরকারের ও দাওয়াত থাকতো। কিন্তু তারা কখনোই একে অপরের দাওয়াতে আসতেন না। এটাও এক রকমের গ্রাম্য রাজনীতর একটা বড় ঢং বলা যায়।

তো একবার আমার বাবা আসলেই চেয়েছিলেন যে, আলী হোসেন সরকার যেনো আমাদের বাড়িতে কোনো একটা অনুষ্ঠানে দাওয়াতে আসেন। আমার বাবা জানতেন যে, তথাকথিত দাওয়াতে আলী হোসেন সরকার না আসারই কথা। তাই বাবা যা করলেন তাতে আলী হোসেন সরকারের না এসেও পারেন নাই। বাবা তার ইগো ঠিক রাখার জন্যেও তিনি নিজে আলী হোসেন সরকারের বাড়িতে গিয়ে তাকে দাওয়াত দিলেন না। যদিও তিনি সেটা করতে পারতেন। যাই হোক, বাবা, তার নিজের হাতের লাঠিটা এক পত্রবাহককে দিয়ে তার সাথে একটা চিরকুট লিখলেন-

জনাব আলী হোসেন সরকার, আমার সালাম নিবেন। আমার বাড়িতে আপনার দাওয়াত ছিলো। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করছি আপনি আজ আমার বাড়িতে দাওয়াতে আসবে। আমি আমার হাতের লাঠিটি পাঠালাম, সাথে এই পত্রটি। ধরে নিবেন, লাঠিটি আমি নিজে এবং পত্রটি আমার কথা। আপনি আসবেন।

আলী হোসেন সরকারও সেই লেবেলের বুদ্ধিমান লোক, তিনি বুঝলে এর মর্মার্থ। তিনি বাবার হাতের লাঠিটি পত্র বাহকের কাছ থেকে রেখে দিলেন, সাথে পত্রটিও। তিনি রীতিমত পরিপাটি সাজগোছ করলেন। তারপর ঠিক সময় মতো বাবার হাতের লাঠিটি সাথে নিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে র ওয়ানা হলেন। আলী হোসেন সরকার যখন প্রায় আমাদের বাড়ির ঘাটে, আমার বাবা হোসেন আলী মাদবর নিজে ঘাটের কাছে গিয়ে আলী হোসেন সরকারকে অভ্যর্থনা জানালেন আর আলী হোসেন সরকার ও তার সেই অভ্যর্থনায় কোলাকুলি করে একটা যুগান্তকারী ব্যাপার ঘটিয়ে দিলেন।

আসলে তাদের মধ্যে সব সময় বন্ধুত্বই ছিলো, কোনো রেষারেসি ছিলো না। তারা কারো সম্পদ হজম করতেন না, গ্রাম বাসী ও তাদেরকে যথেষ্ঠ সম্মান করতেন। তারা জানতেন এই সব মাদবরদের একটা ওজন আছে, তাদের কথার ভ্যালু আছে, তাদের নীতি আছে। হ্যা, একে অপরের সিদ্ধান্ত সব সময় মেনে নেবেন সেটা হয়তো ছিলো না কিন্তু গ্রাম একটা সঠিক নেত্রিত্তের মধ্যে ছিলো।

আজো তারা সবার মুখে মুখে আছেন। প্রায় ৫০ বছর পার হয়ে গেছে, তাদের কথা আজো গ্রাম বাসী মনে রেখেছেন। আমরা আজো তাদের হেরডিটি উপভোগ করি। যখন কেউ জানে যে, আমরা হোসেন আলী মাদবরের বংশধর, মানুষ এখনো অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করেন আর বলেন তাদের সেই পুরানো ঐতিহ্যের কথা। ভালো লাগে।

বাবার মাদবরী স্টাইল-১

Categories

সিরাজদিখানে যতোগুলি মাদবর আমার বাবার আমলে প্রতাপ শালী ছিলেন, তার মধ্যে আমি প্রায়ই যার নাম শুনেছি তার নাম আলী হোসেন সরকার। আমার বাবার নাম ছিলো হোসেন আলী মাদবর, আর ওই ব্যক্তির নাম ছিলো আলী হোসেন সরকার। তারা সরকার বাড়ির লোক। ভাইয়ার কাছ থেকে শুনেছিলাম যে, সরকার বাড়ির মানুষেরা কোনো না কোনোভাবে আমাদের বংশেরই আওতাধীন ছিলো। যাই হোক সেটা এখন আর বড় ব্যাপার নয়।

এই আলী হোসেন সরকার আর আমার বাবা হোসেন আলী মাদবরের মধ্যে গ্রাম্য পলিটিক্সের বেড়াজালে একটা অলিখিত আক্রোশ ছিলো। কিন্তু সেই আক্রশ তা এমন নয় যে, কোনো জমি জমা নিয়ে, বা পারিবারিক কোনো কোন্দল নিয়ে। এটা ছিলো নিতান্তই পাওয়ার পলিটিক্স। যেখানে হোসেন আলী মাদবর কোনো শালিসীতে থাকতেন, সেখানে আলী হোসেন সরকার থাকতেন না। আবার যেখানে আলী হোসেন সরকার থাকতেন সেখানে হোসেন আলী মাদবর থাকতেন না। প্রকৃত পক্ষে ওনারা ওনাদের কোনো সিদ্ধান্তে কেউ বাধা হয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রোশে সম্পর্কটাকে বিপদজনক করেন নাই।

এখানে মজার একটা ব্যাপার চলছিলো এই দুই পরিবারের মধ্যে। শুধুমাত্র আলী হোসেন সরকার আর হোসেন আলী মাদবরের মধ্যে যাইই থাকুক না কেনো, এই দুই পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা খুব মিলেমিশেই থাকতেন। একজনের ভাতের হাড়ির কিছু অংশ যে আরেক জনের বাড়িতে যেতো না এমন নয়। এরা আবার আসলেই একে অপরের বন্ধুও ছিলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে নয়। কি রকমের একটা সম্পর্ক সেটা একটা উদাহরণ না দিলে ব্যাপারটা ঠিক বুঝা যাবে না।

আমার ভাই হাবীবুল্লাহ যখন লেখাপড়া করছিলেন, তখন আমার অন্য পক্ষের ভাইয়েরা এটাকে কোনোভাবেই ভালো লক্ষন হিসাবে নেন নাই। বিশেষ করে তাজির আলী ভাই। তার সব সময় টার্গেট ছিলো যে কোনো মুহুর্তে হাবীব ভাইয়াকে ক্ষতি করা, বিপদে ফেলা কিংবা মেরে ফেলা। এটা আমার বাবা খুব ভালো করে জানতেন। একদিন, আমার বাবা আলী হোসেন সরকারকে ব্যাপারটা শেয়ার করলেন যে, তিনি হাবীব ভাইয়ার জীবন নিয়ে তাজির আলির থেকে শংকিত। কি করা যায় পরামর্শ দরকার।

কি অদ্ভুত!!

হোসেন আলী সরকার কোনো কিছুই চিন্তা না করে আমার বাবাকে বললেন, শোনো হোসেন আলী মাদবর, তোমার ছেলে আর আমার ছেলের মধ্যে আমি কোনো পার্থক্য দেখি না এবং রাখীও না। আমার বাড়ি তোমার ছেলের জন্য ১০০% নিরাপদ। আগামীকাল থেকে তোমার ছেলেকে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দাও। এখানেই খাবে, এখানেই পড়বে, এখানেই ঘুমাবে। তোমার যখন দরকার তখন আসবা, ওর যখন যেখানে যাবে ওর সাথে আমার ছেলেরা থাকবে।

সেই থেকে আমার ভাই আলী হোসেন সরকারের বাড়িতে থেকেই  অনেক দিন পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। এরাই আসলে মাদবর, এরাই আসলে বুদ্ধিমান। এরা যখন কোথাও শালিসিতে যেতো সেদিন ওনারা কারো পক্ষের বাড়িতে পানিও খেতেন না, কারন কোনো পক্ষপাতিত্ত তারা করতেন না।

মন্তব্যঃ

আজকাল গ্রামের উঠতি মাদবরদের বয়স দেখলে মনে হয় ওদের এখনো মোছ দাড়িও গজায় নাই। কেউ আওয়ামীলীগের সভাপতি, কেউ ছাত্রনেতা, কেউ এটা কেউ সেটা। এরাই মাদবর। এরা না করে বড়দের সম্মান, না করে ছোটদের আদর। ওরা প্রতিনিয়ত ঘুষের টাকায় চলে, ঘুষের কারনে ওরা রায় বদলায়। এদেরকেও কেউ সম্মান করে না।

আমার বাবা।

Categories

আমি আমার বাবাকে কখনো দেখিনি এবং তার চেহাড়া কেমন ছিলো, খাটো নাকি লম্বা, যুবক না বৃদ্ধ, ফর্সা নাকি কালো কোনো কিছুই আমার জানা নাই। তবে আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহর কাছে আমি আমার বাবার অনেক গল্প শুনাতেন যার থেকে আমি বাবার একটা কাল্পনিক চরিত্র মনে গেথে গেছে। আমার দাদার নাম ছিলো হিসাবদি মাদবর। আমরা মাদবর বংশের লোক।

বাবার সম্পর্কে আমি অনেক চমৎকার চমৎকার গল্প শুনেছি ভাইয়ার কাছে। তবে তার প্রাথমিক তথ্যের মধ্যে জরুরী তথ্য হলো যে, আমার বাবার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আমার মাকে বিয়ে করেন। বাবার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ঘরে মোট তিন জন ছেলে সন্তান আর তিনজন কন্যা সন্তান ছিলো। এই মোট ছয় সন্তান থাকার পরে আমার বাবা আমার মাকে বিয়ে করেন। তখন আমার মায়ের বয়স ছিলো বেশ কম। আগের সব সন্তানেরাই আমার মায়ের থেকে বয়সে বড় ছিলো। কেউ কেউ আবার ইতিমধ্যে বিয়েও করে ফেলেছিলেন। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমার মা যেমন একটু অসুবিধায় ছিলেন, তেমনি আমার বাবাও বেশ অসুবিধায় ছিলেন।

কিভাবে আমার বাবা এই দুমুখী অসুবিধাগুলি তার জ্ঞানের দ্বারা সমাধান করেছিলেন, সেই গল্প গুলিও আমি হোসেন আলী মাদবরের পর্বসমুহে একে একে লিখবো।

হোসেন আলী মাদবর (ভুমিকা)

Categories

আমি আমার মাদবর বাড়ীর সব প্রকারের ঐতিজ্য নিয়ে সবসময় গর্ববোধ করি। একটা বাড়ি একটা সমাজ হতে পারে, মাদবর বাড়ি একটা তার প্রমান। কিন্তু ধীরে ধীরে এই মাদবর বাড়ীর তথ্য, অজানা ইতিহাস ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে কে বা কারা এই পরিবারের সদস্য বা তারা কে কোথায় আছে, এর ইতিহাস আজনেকেই জানে না বিধয় মাদবর বাড়ীর সেই পুরানো বংশ আভিজাত্যের ধারা মুছে যেতে চলেছে।হয়ত একসময় এই মাদবর বাড়ি সদস্যগনই জানবে না তারা কে বা কারা। বাংলাদেশ  আমেরিকা নয় যে, কোনো এক ওবামা, বা কোন এক ট্র্যাম্প পৃথিবীর কোনো একস্থান থেকে উদয় হয়ে আমেরিকার মতো বিশাল এক রাজকীয় পরিবেশে উড়ে এসে জুড়ে বসে একেবারে টপ পজিশন ধরে প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন। সেটা আমেরিকায় হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সব পরিচয় জেনেও কাউকে যদি হেয় করতে মন চায়, তাহলে তার কোনো কিছুই জানার প্রয়োজন হয় না, সে শুধু তার ইচ্ছেটাই প্রকাশ করবে। কিন্তু যদি কেউ আপনার আমার বংশ পরিচয়, আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিয্য সব কিছু জানে, তাহলে যে যাই কিছু করুক বা বলুক, অন্তত এইটুকু নিশ্চিত বলা যায় যে, অহেতুক আপনাকে কেউ হয়রানী হয়ত করবে না। কোনো মৃত ব্যাক্তির কাছে পৃথিবীর কোনো কিছুই যায় আসে না, কিন্তু তারপরেও মানুষ ইতিহাস পড়ে আর ইতিহাস লিখে। একমাত্র ইতিহাসটাই সত্য। আর যতো আগামি, বর্তমান, কিংবা সব "যদি" কোনোটাই শতভাগ সত্য নয়। তাই নিজের ইতিহাস টুকু তো জানুন। মনে নাই? আলেক্স হ্যালির সেই রুটস কাহিনীটি? সেটাই ইতিহাস।

                                                               

আমাদের পরিবার “মাদবর” পরিবার হিসাবে পরিচিত। কিন্তু আমরা অনেকেই এই পদবীটা কেনো জানি নামের পাশে ব্যবহার করতে একটু দ্বিধা বোধ করছি। যেমন আমি নিজেও আমার নামের পাশে মাদবর পদবীটা উল্লেখ করি না। কেউ যদি প্রশ্ন করেন যে, কেনো করছি না, আমার কাছে একটা যুক্তি তো অবশ্যই আছে। আর সেটা হচ্ছে-

আমি যখন গ্রামে থাকতাম, তখন দেখেছি যে, আমাদের গ্রামের অনেকেই অনেক প্রকারের মাদবর সেজে আছেন। কেউ বাচ্চু মাদবর, কেউ আজগর আলি মাদবর, কেউ আক্কাস আলি মাদবর ইত্যাদি। এই মাদবর গুলিকে দেখে আমার গা এক প্রকার রি রি করতো কারন তাদের না ছিলো কোনো ইথিক্স, না ছিলো কোনো গুনাগুন। অথচ শুনেছি, আমার বাবা যখন মাদবরি করতেন, তখন তিনি নাকি কারো বাড়িতে গিয়ে এক কাপ চাও খেতেন না। যদি কারো বিচারের বেলায় পক্ষপাতিত্ব হয়ে যায়, তাই! কিন্তু আমার বাবা, বা দাদা কি ধরনের মাদবর ছিলেন আর এখনকার মাদবরগন কি প্রকারের মাদবরি করছেন এই পার্থক্য টা আমার ঐ ছোট বয়সে যেমন বুঝবার ক্ষমতা ছিলো না, তাই আমার বংশের পদবীটা যে এতো মানসম্মানের, সেটা আমার আসলে বুঝার জ্ঞ্যানও ছিলো না। ফলে এই মাদবর উপাধিটা আমার কাছে হাস্যকর মনে হইতো এবং কিছুটা নিম্নজাতীয় উপাধি বলিয়াও মনে হইতো, বিশেষ করিয়া শহুরে সমাজের কাছে। তাই আমি অনেকটা ইচ্ছে করেই আমার সমস্ত স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট সমুহের এই নামের পাশের মাদবর পদবীটা একেবারে রহিত করিয়া দিয়াছি।

আমার বড় ভাই জনাব ডঃ মহাম্মাদ হাবিবুল্লাহও কেনো যে এই পদবীটা নিলেন না সেটা আমার বোধ গম্য নয়।

যাক সে কথা।

এবার আসি আমাদের বংশের সংক্ষিপ্ত একটু ইতিহাস নিয়ে।

হিসাব্দি মাদবর ছিলেন আমার দাদা। এই দাদার থেকেই আমার ইতিহাস আমি শুরু করিবো। তিনি ছিলেন অনেক বিচক্ষন একজন ব্যক্তি। তার আমলে তিনি অনেক সম্পদ এবং বুদ্ধির মালিক ছিলেন। আমার দাদির নাম আমি জানি না। জানতে ইচ্ছে করে। হয়ত আমার বড় ভাই জানবেন।

১২/০৩/২০২১-ওরা চলে যাবার পর

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

মার্চ 

১২ 

বাচ্চারা যখন ছোট থাকে, তখন ওদেরকে কখনো হাতছাড়া করবো এটা মাথাতেই আসে নাই, কারো আসেও না। তখন সময়টা এক রকমের। হোক সেটা ছেলে বা মেয়ে।

যখন ওরা মাত্র বেবি, ওরা যখন কথা বলাও শুরু করে নাই, কিন্তু ঝড়ের গতিতে হাত পা নাড়তো, খুব মজা লাগতো দেখে, ওটাই ছিলো বেবিদের ভাষা। তখন তো মনে হতো, আহা, কি মিষ্টি বাচ্চারা। কথা নাই অথচ হাত পা নেড়েই যেনো সব কথা বলে। এই ভাষাতেই ওরা জানান দিতো, ওদের হাসি, আহলাদ, কিংবা কষ্টের ইংগিত।

ওরা যখন হাটতে শিখলো, তখন তো ওরা যেনো আরো সাধিন। যেখানে খুসী হাটা ধরে, যেনো সারা প্রিথিবী ওদের জন্য। ওরা হয়তো জানেই না কোনটা ওদের জন্য বিপদ আর কোনটা ওদের জন্য ফ্রেন্ডলী। আর এই পার্থক্যটা আমরা পেরেন্টসরা বুঝি বলে সারাক্ষন আমরা আমাদের বাচ্চাদের আগলে রাখি, ধমক দেই, শাসন করি।

ওরা অনেক সময় আমাদের এই শাসনের ভাষা হয়তো বুঝতে পারে না বলে মনের আবেগে চোখের পানি ফেলে, রাগ করে না খেয়ে থাকে, অভিমান করে কথা বলা বন্ধ করে, ডাকলেও শুনে না, আরো কতকি?

টাইম মতো ওরা না ঘুমালে আমরা ওদেরকে হয়তো বকা দেই, গোসল ঠিক মতো করেছে কিনা, ঠিক সময়ে খাবারটা খেলো কিনা, সব বিষয়েই আমরা সর্বদা সজাগ থাকি। জোর করে করাই আর ওরা হৈচৈ করে। অনেক সময় পুরু বাড়িটা হই চই এর মধ্যে রাখে, সরগোল আর চেচামেচিতে বাড়িটায় যেনো একটা শব্দদূশনে পরিনত হয়, চারিদিকে ছেড়া কাগজ, ঘরে বইপত্র অগোছালো করে দিশেহারা করে রাখতো। ওরা মাঝে মাঝে কত আবদার করতো, অনেক আবদার নিছক শখে কিংবা অনেক আবদার না বুঝেই। আর সেটাই হয়তো ওদের সারা রাতের খুসী অথবা কষ্টের কারনে ঘুম নষ্ট হতো। যদি পেতো, সারাটা রাত না ঘুমে আবার যদি না পেতো তাতেও সারা রাত না ঘুমে কাটিয়ে দিতো অভিমান করে।

এই বাচ্চারাই যখন আর ধীরে ধীরে সমাজের বিভিন্ন কর্মকান্ডে ঢোকে যায়, ঘর থেকে বেরিয়ে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, আমরা এই ভাগ্যবান পিতামাতা অভাগার মতো একা হয়ে পড়ি। মন খারাপ হয়, স্মৃতি পাহাড়ের মতো স্তুপ হয়ে যায়। তখন, এই সব আদুরে বাচ্চাদের ফেলে যাওয়া খেলনা, পরিত্যক্ত হাতের লেখার খাতা, কিংবা তার ব্যবহৃত কোনো পোষাক দেখলেই আমাদের বুকে হটাত করে ধক করে উঠে ব্যথায়। তখন তাদের অতীতের পদচারনা আমাদের কানে ঝুমকোর মতো বাজে, ওদের অতীতের একগুয়েমী রাগ কিংবা আব্দারের কথা কিংবা অযথা রাগ অভিমানের স্মৃতির কথা মনে করে আমার চোখের কোন ভিজে উঠে। মনে হয় মাঝে মাঝে, আহা, ঘরটা একসময় কত ভর্তি ছিলো, আজ একেবারেই শুন্য। ঘরকে নোংরা করার জন্য কত বকা দিয়েছি, বাথরুমের সেন্ডেল পড়ে সারা ঘর ঘুরে বেড়ানোর জন্য কত বকা দিয়েছি। অযথা রাগ অভিমান করে খাবার না খাওয়ার জন্য রাগ করেছি, শাসন করেছি, অথচ আজ, আমার বাড়ির প্রতিটি ঘর শুন্য, একদম পরিপাটি যা সব সময় রাখতে চেয়েছিলাম ওরা যখন ছিলো। আজ আর কেউ বাথ রুমের সেন্ডেল পড়ে ঘুরে না, আজ আর কেউ আমার কাছে অনলাইনে শপিং করার জন্য একশত টাকা আবদার করে না, কিংবা হটাত করে পিজার অফার থাকলেও আর অফারের জন্য বায়না ধরে না। সব যেনো নীরব। আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম যখন ওরা সাথে ছিলো? আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম যেনো ঘরে সবাই শান্ত হয়ে থাকে? আমরা তো এটাই চেয়েছিলাম যেনো ঘর নোংরা না করে সারাক্ষন পরিপাটি করে রাখুক? অথচ আজ ঠিক তেমনটাই তো আছে। কেউ ঘরে নাই, কেউ ঘর নোংরা করে না, কেউ হৈচৈ করে না। কিন্তু তারপরেও কেনো মনে শান্তি নাই? কেনো মনে হয়, ঘরটা নয়, অন্তরটা শুন্য? যেখানেই তাকাই সব ঠিক আছে, শুধু ঘরটাই খালী।

আজ কেনো জানি বারবার মনে হয়, ওরা আবার ফিরে আসুক, ওরা আবার আমার সাথে আবার ঝগড়া করুক, ওরা আবার আমার কাছে অহেতুক বায়না ধরুক, আমি আর কখনো ওদের বকা দেবো না, সব বায়না আমি মেনে নেবো। খুব মনে পড়ে আজ যে, যখন অফিস থেকে এসেই মেয়ের রুম খুলে বলতাম, কিরে মা, কি করিস? হয়তো তখন মেয়ে রুমেও নেই, হয়তো অন্যঘরে আছে বা রান্নাঘরে কিংবা বাথরুমে কিন্তু জানতাম বাসাতেই আছে। আজ যখন অফিস থেকে বাসায় এসে মেয়ের রুমে যাই, মুখ দিয়ে বলতে চাই, কি রে মা কোথায় তুই? কিন্তু ভিতর থেকে অন্তরের কষ্টে আর কথাটাই বের হয় না। জানি, মেয়েটা আর বাসায় নাই। ওর টেবিল, টেবিলের উপর সেই ঘড়িটা, ওর আলমারী, ওর চেয়ার, সবই তো আছে। কিন্তু মেয়েটাই নাই। প্রতিটা টেবিল, বই, খাতা, আল্মারী, সেই পুরানো ঘড়ি কিংবা বিছানার চাদরটায় হাত দিয়ে আমি অনুভব করি আমার সন্তানদের শরীরের সেই চেনা গন্ধ। খুব করে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে সব কিছু।

ভালোবাসি।

সব সময়।

সর্বদা।

চোখের পানির ফোয়ারা দিয়ে যে ভালোবাসা বেরিয়ে আসে, সেখানে রাগটাও হয়তো ছিলো আমার ভালোবাসার আরেক রুপ। হয়তো বকাটাও ছিলো আমার মায়ার আরেক রুপ। দম বন্ধ হয়ে আসে যেনো তোমাদের ছাড়া।

এখন প্রায়ই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে আবার বাবার কথা। হয়তো তারাও একদিন আমাকে খুব মিস করেছে, আমি বুঝি নাই। আর আজ আমি তাদেরকে মিস করি কিন্তু ওরা কেউ নেই এই মায়াবী পৃথিবীতে। আজ হয়তো আমিও আমার সন্তানদের মিস করছি। হয়তো কোন একদিন ওরাও আমাকে অনেক মিস করবে। সেদিন হয়তো পৃথিবীতে আরেকটা নতুন ক্যালেন্ডারের “সময়” চলছে।

“সময়” কারোই বন্ধু নয়, অথচ সে সবার সাথে আছে। কিন্তু সময়ের স্মৃতি মানুষকে সব সময় নষ্টালজিক করে রাখে। যেখানেই থাকো, ভালো থেকো। আমার সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে আমি তোমাদের সাথে আছি আর থাকবো।

উতসর্গঃ

(কনিকার ইউএমবিসিতে (ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি) ভর্তির চুড়ান্তে আমার কিছুটা নষ্টালজিকতা)

২৪/০২/২০২১-মিটুলের পোষ্টিং অর্ডার

Categories

মুদ্রার এক পিঠে যদি থাকে আফসোস, হতাশা, মানসিক যন্ত্রনা আর না পাওয়ার বেদনা, ঠিক তেমনি সেই একই মুদ্রার আরেক পিঠে থাকে সাফল্য, পাওয়ার আনন্দ আর খুশীর জোয়ার। মুদ্রার এক পিঠের দিকে তাকাইলে যেমন বুক ধড়ফড় করিয়া হার্টবিট বাড়াইয়া দেয়, নীল আকাশকেও মনে হয় ধূসর মেঘাচ্ছন্ন, তেমনি মুদ্রার আরেক পিঠে তাকাইলে মনে হয় মেঘলা আকাশও ভারী মিষ্টি। আশার জগত যখন নিরাশার বেড়াজাল কাটাইয়া প্রাপ্তির দ্বারপ্রান্তে আসিয়া এই কথা কানে কানে বলে-" আমি আসিয়াছি, যাহা আপনি অনেক দিন ধরিয়া খুজিতেছিলেন, এই সেই আমি"। এই কাঙ্ক্ষিত ঘটনা যখন নিজের চোখের সামনে দাড়াইয়া আলিঙ্গন করে, তখন ইহাকে তো অবশ্যই, যাহারা যাহারা এই কাঙ্ক্ষিত শুভসংবাদ কিংবা সাফল্যমন্ডিত করার পিছনে ভালোবাসায় শ্রম দিয়াছে, তাহাদেরকেও মনে হয় খুব করিয়া বলি- আমি আপনাদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ, সবাইকে আমার অন্তর হইতে হৃদয় নিঙড়ানো শ্রদ্ধ্যা আর ভালোবাসা।

এমনি একটা কাঙ্ক্ষিত সংবাদ- আমার বউ এর পোষ্টিং। আজ আমার বউ এর পোষ্টিং হইলো, সরকারী বাঙলা কলেজ, অর্থনীতি বিভাগ, অধ্যাপক হিসাবে। অজস্র শুভাকাঙ্ক্ষী আমার জন্য আর আমার বউ এর জন্য দোয়া করেছেন, কেউ আবার সাহাজ্যও করেছেন, কেউ মনে প্রানে চেয়েছেন, আমাদের ইচ্ছাগুলি পুর্ন হোক। সেটাই অসীম দয়াময় আল্লাহতালাহ এমন একটা শুভ সংবাদ দিয়ে আমাদের সবার মনকে শান্ত আর সুখী করিলেন। (আলহামদুলিল্লাহ)

(মিটুলের পোষ্টিং অর্ডার বাহির হইবার কারনে "অধ্যাপিকা মিটুল চৌধুরী ওরফে আমার বউ" কে উতসর্গ করা।)

০২/০২/২০২১-কনিকার বাল্টিমোরে ভর্তি

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

ফেব্রুয়ারী 

০২

ইন্টার পরীক্ষার ফলাফলের আগে থেকেই কনিকা আসলে এদেশে পড়বেনা বলে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো। কনিকার সমস্যা হচ্ছে, ও যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তার অধিকাংশ সিদ্ধান্ত আমি বদল করতে পারি না, মাঝে মাঝে বদল করতেও চাইনা আসলে। ইন্টার ফলাফল পাওয়ার পর দেখা গেলো কনিকা সবগুলি সাব্জেক্টেই এপ্লাস মানে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। এতে আরো সুবিধা হয়ে গেলো যে, ওর পরীক্ষার ফলাফলে যে কোনো ইউনিভার্সিটিতেই ভর্তি হবার সম্ভাবনা বেড়ে গেলো। এর মধ্যে অনেকগুলি ইউনিভার্সিটিতে এপ্লিকেশন করেছে। কোনো ইউনিভার্সিটিই ওকে রিজেক্ট করে নাই বরং কনিকা ফাইনান্সিয়াল এইডের কারনে সে নিজেই বেশ কিছু ইউনিভার্সিটির এক্সেপ্টেন্স রিজেক্ট করেছে।

প্রথমে কনিকা সবগুলি ইউনিভার্সিটি চয়েজ করেছিলো বোষ্টন বেজড। কারন আমার বড় ভাই বোষ্টনে থাকেন। একটা সময় আমার মনে হলো যে, আসলে আমার বড় ভাইয়ের উপরে নির্ভর করে কনিকাকে এতোদূরে পাঠানো ঠিক হবে কিনা। তিনিও বুড়ো হয়ে গেছেন, অনেক কিছুই তার পক্ষে এখন সামাল দেয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় তিনি অনেক কিছু ভুলেও যান। প্রায়শ ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি যে, আমার বড় ভাইয়ের উপর অনেক ব্যাপারে ভরষা করা যায় না। কোনো কিছুতেই আমার বড় ভাই না করেন  না বটে কিন্তু ঠিক শেষ মুহুর্তে এসে দেখা যাবে তিনি আর পারেন না অথবা তার অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয় বা করেন। বিশেষ করে যখন কোনো ফাইনান্সিয়াল কোনো ব্যাপার থাকে সেখানেই তার সব বিপত্তি। তাই ভাইয়ার উপরে আমার ভরষা আমার ছোট মেয়েকে পাঠানো উচিত হবেনা বলে আমার কাছে মনে হলো। দেখা গেলো যখন কনিকার কোনো প্রয়োজন হবে ঠিক তখন কনিকার জন্য সাহাজ্য আর আসছে না।

আমি মতামত চেঞ্জ করে কনিকাকে বললাম যে, তুমি শুধু বোষ্টনের জন্য এপ্লাই না করে আমাদের আরো আত্তীয়সজন যেখানে বেশী আছে, সেখানেও এপ্লাই করো। আমেরিকাতে বাল্টিমোরে থাকে লুসিরা, ছোটভাই, এবং আরো অনেকেই। ফলে আমি কনিকাকে বাল্টিমোরের জন্যেও এপ্লাই করতে বললাম। আজই উনিভারসিটি অফ ম্যারিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি (ইউএমবিসি) থেকে সরাসরি ওর ভর্তির ব্যাপারে চিঠি এসছে যে, ওরা কনিকাকে নিতে আগ্রহী এবং যত দ্রুত সম্ভব ওরা আই-২০ ফর্ম পাঠাতে চায়। শুনলাম, ওখানে লুসির ছেলেও আবেদন করেছে। লুসিরা খুব খুসি যে, কনিকা ওখানে পড়তে যাবে।

আপডেটঃ ১১ মার্চ ২০২১

আজ কনিকার আই-২০ ফর্ম এসছে ইউএমবিসি (ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড, বাল্টমোর কাউন্টি) থেকে। ইউএমবিসি বাল্টিমোরের সবচেয়ে ভালো একটা ইউনিভার্সিটির মধ্যে একটি। আর সবচেয়ে এক্সপেন্সিভও বটে। আমি খুশী যে, কনিকা নিজে নিজেই সবগুলি কাজ করেছে এবং খুবই স্মার্টলী ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করেছে। এবার ওর দূতাবাসে দাড়ানোর পালা। যদি ইনশাল্লাহ সব কিছু ঠিক থাকে, তাহলে আগামী জুলাই মাসে কনিকা আমেরিকায় চলে যাবে। এটা যেমন একদিকে আমার জন্য ভালো খবর, অন্যদিকে একটু কষ্টও লাগছে যে, মেয়েটা অনেক দূর চলে যাবে। ইচ্ছা করলেই আর ওর সাথে রাত জেগে জেগে আলাপ করা যাবে না। বাচ্চারা এভাবেই কাছ থেকে দূরে বেরিয়ে যায়। 

২৯/০১/২০২১- নাফিজের বিয়ে

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব

জানুয়ারী 

২৯ 

নাফিজ হচ্ছে আমার এক বোনের মেয়ের ছেলে। আমার বোনের নাম শায়েস্তা খাতুন। সেই শায়েস্তা খাতুনের মেয়ে শেফালী। নাফিজ শেফালীর ছেলে। নাফিজের বাবার নাম নেওয়াজ আলী মোল্লা। সে গত ০২/০৯/২০২০ তারিখে মারা গেছে। নাফিজ জাপানে থাকে, ওখানেই কোনো রকমে কাজ করে যতোটুকু পারে পরিবার এবং নিজের ভবিষ্যত গরার চেষ্টা করছে। নাফিজ যখন বিদেশ যায়, তখন আমিই ওকে স্পন্সর করেছিলাম। প্রায় ৩/৪ বছর পর নাফিজ দেশে এসছে। কিন্তু কবে দেশে এসছে, আর কোথায় কিভাবে বিয়ে করছে সেটা নিয়ে সে আমার সাথে কোনো পরামর্শ যেমন করে নাই, তেমনি ও যে ঢাকায় এসছে সেটাও আমাকে জানায় নাই। এগুলি নিয়ে আমার তেমন কোনো মাথা ব্যথাও নাই। আজকে শুনলাম যে, আজ নাফিজের বিয়ে। এটা শুনলাম আমি মিটুলের কাছ থেকেই। ব্যাপারটা নিয়ে আমি একেবারেই সময় কিংবা মাথা খাটানোর চিন্তাও করি নাই কারন যার যার লাইফ তার তার। কে কিভাবে তাদের লাইফ উপভোগ করলো সেটা নিতান্তই তাদের ব্যাপার। আমি সাধারনত এ ব্যাপারে কারো জীবনেই হস্তক্ষেপ করি না কিংবা করতে পছন্দও করি না।

আমি ২০১৭ সাল থেকেই শেফালী মেয়েটাকে আর পছন্দ করি না। এই না পছন্দ করার পিছনে অনেক কারন আছে। সেটা আর এখানে বলছি না। শেফালী আর নাফিজ আজকে মিটুলকে নাকি ফোন করে বলেছে যে, নাফিজের বিয়েতে যেতে হবে। আমি মিটুলকে বললাম, নাফিজ ঢাকায় কবে এসছে? মিটুল নিজেও বলতে পারলো না। আমি বললাম, আমি জানি, নাফিজ প্রায় ১ মাস আগে ঢাকায় এসছে। বাক্তার চর থেকে ঢাকায় যেতে সব সময় আমার অফিস পার হয়েই তারপর ঢাকায় যেতে হয়, নাফিজ যদি আমাকে ইম্পর্ট্যান্ট মনে করতো যে, আমি ওদের বড় কেউ গার্জিয়ান, তাহলে ঢাকায় আসার পরেই হয় আমাকে একটা ফোন করতে পারতো অথবা আমার অফিসে এসে দেখা করতে পারতো। এর মধ্যে আবার ওর কোথায় বিয়ে ঠিক হচ্ছ্যে, কার কি সমস্যা ইত্যাদি নিয়েও সে আমাকে নক করে নাই কিন্তু আমি জানি ওর বিয়ে নিয়ে ওর এক্স গার্ল ফ্রেন্ডদের মধ্যে বিশাল একটা ঝামেলা চলছে। আমি সব খবর পাই কিন্তু যেহেতু আমাকে কেউ কিছু বলছে না, ফলে আমি উপজাজক হয়ে এদের মধ্যে ঢোকতেও চাই না।

আমার করোনা পজিটিভ থাকায় আমি এমনিতেও নাফিজের বিয়েতে যেতাম না, হয়তো আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে পাঠিয়ে দিতাম। কিন্তু আমি চাই না যে, আমি বা আমার পরিবারের কেউ ওর বিয়েতে যাক। আমি জানি আমি না গেলে কি পরিমান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে শেফালী এবং নাফিজকে। ওরা জানেই না যে, পায়ের তলার মাটি সরে গেলে নিজের শরীরের ওজনটাকেও ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এটা আমি ওদের বুঝিয়ে দিতে চেয়েছি এবার। শেফালীর বাবা ছিলো না, মা ছিলো না, শেফালির বোন নুরুন্নাহারের থেকে শুরু করে জমজ দুই ভাই লিয়াকত আর শওকাত এদেরকে সেই দুই মাস বয়স থেকে আমরাই লালন পালন করেছি। ওদের বাবার নাম ওরাও হয়তো ভালোভাবে বলতে পারবে না। গ্রামের মানুষ, আশেপাশের মানুষ ওদেরকে এই নামেই চিনে যে, ওরা মেজরের ভাইগ্না ভাগ্নি। আর এটাই ছিলো ওদের সবচেয়ে বড় শিল্ড। আর ওরাই কিনা আজকে আমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করেছে।  আমার খারাপ লাগে নাই ততোটা কারন আমি বুঝে গেছি যে, ওরা আসলে নিমক হারামের জাত।

বিয়েতে গেলাম না। আমি না যাওয়াতে কি হলো সেটা আমি জানি। শেফালীকে হাজার প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে কেনো মামা এলো না। আমাদের গ্রামের মানুষ অনেকেই আমাকে দেখে নাই কিন্তু নাম শুনেছে। আবার অনেক পুরানো দিনের মানুষেরা আমার সান্নিধ্যে আসতে চেয়েও আমার অফিস পর্যন্ত আসার স্কোপ না থাকায় দেখাও করতে পারে না। আবার আমার পজিশনাল ফ্যাক্টরের কারনে অনেকে ভয়েই আমার সাথে দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও দেখা করতে পারে না। এমন একটা পরিস্থিতিতে যখন কেউ শুনে যে, আমার কোনো আত্তীয়ের কোনো অনুষ্ঠান, তারা ভাবে যে, এবার নিশ্চয়ই মেজরের সাথে দেখা হবে। ফলে কেউ দাওয়াতে আসে আমার সাথে দেখা হবে বলে, কেউ আবার অপেক্ষা করে আমার সাথে দেখা হবে বলে। কিন্তু যখন আমার আর ওখানে যাওয়া হয় না, তখন কেনো যাই নাই, কি কারনে যাই নাই এই প্রশ্নে জর্জরিত হতে হয় তার যার বাড়িতে অনুষ্ঠান।

এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর যখন আমার সেই আত্তীয় দিতে পারে না, তখন এতোদিন যে নামের ক্ষমতায় সারা গ্রাম চষে বেড়িয়েছে, যে লোকটির ক্ষমতায় সারাটা গ্রামকে ভয়ের মধ্যে রেখেছে, অনেকেই শুধু এই নামটার জন্যই যখন তাদেরকে তোষামোদি করেছে, তারা তখন এই প্রশ্নটাই করে- কই এতোদিন যাদের জোরে এতো তাফালিং, তারা তো আপনাদের কোনো অনুষ্ঠানেই আসে না, তাহলে কিসের এতো বাহাদুরী?

ক্ষমতার রেশ ছুটে যাচ্ছে, অপমানে মুখ দেখানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই যে অসহায় একটা পরিস্থিতি, এটা কিন্তু আমি তৈরী করি নাই, করেছে ওরা নিজেরাই। ওদের আর কোনো মনোবল নাই আমার সামনে এসে কোনো দাবী নিয়ে জোর দিয়ে বলতে পারে, যে, আপনি অবশ্যই আসতে হবে আমাদের অনুষ্ঠানে। একদিকে আমাকে না নিতে পারার কষ্ট আর অন্যদিকে মানুষের কাছে হেয় হবার অপমান কোনোটাই কম না।

আজকে আমার বউ আমার কাছে এসে বল্লো, যে, সেফালি অনেক কান্নাকাটি করেছে যে, মামা যদি নাও আসতে পারে, অন্তত আপনি ১০ মিনিটের জন্য হলেও একবার গ্রামে নাফিজের বিয়েতে ঘুরে যান, অন্তত আমি মানুষকে বলতে পারবো যে, মামা অসুস্থ তাই মামী এসেছেন। তা না হলে আমার আর অপমানের শেষ নাই। আমি সবার কাছে যেমন ছোট হয়ে যাবো, তেমনি আমি পরিবেশ গতভাবেও অনেক দূর্বল হয়ে যাবো।

আমি শুধু মিটুলকে বললাম, যদি তুমি যেতে চাও, যাও, আমাকে কোনোভাবেই কনভিন্স করার চেষ্টা করো না যে, আমাকে নাফিজের বিয়েতে যেতে হবে। যে ছেলেটা একটা ফোন করেও আমাকে যেতে বলে নাই, তাদের আবার এতো অপমানের ভয় কিসের? তুমি যেতে চাও, যাও, দরকার হয় আমার যে কোনো গাড়ি নিয়েও তুমিযেতে পারো। 

আসলে আমি একটা পানিশমেন্ট দিতে চেয়েছি এই শেফালীকে। আসলে এটা পানিশ মেন্ট নয়, এটা একতা বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া যে, কোথায় কোন জিনিষের উপর কতটুকু কদর করা উচিত সেটা বুঝা। আর এখন তারা সেই শাস্তিতাই পাচ্ছে। আমার ধারনা, সেফালী আরো বড় শাস্তির অপেক্ষায় আছে। তাহলে সেই শাস্তিটা কি? ব্যাপারটা হয়তো এভাবে ঘটবে- 

আমি নাফিজকে চিনি। অত্যান্ত দূর্বল চিত্তের একজন মানুষ, ইমোশনাল একটি ছেলে। শক্ত করে কোনো কিছুর প্রতিবাদ করার সাহসও এই ছেলেটার মধ্যে আমি দেখি নাই। সবসময়ই একটা ভাবুক উপলব্ধির মধ্যে থাকে। আজ যে বাড়িতে নাফিজ বিয়ে করছে, সেফালীর ধারনা যে, তার থেকে একটু উচ্চবিত্তের বাড়িতে সম্পর্ক করলে হয়তো বা সমাজে তাদের একটা আলাদা প্রতাপ বাড়বে কিংবা কোনো এক সমস্যায় হয়তো ওরা হাত বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু কুইনিন জ্বর সারালেও কুইনিন সারাবে কে এটা ওদের মাথায় নাই। অর্থাৎ যেদিন এই পরিবারটা নিজেই সেফালীর জন্য একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে, তখন তাদেরকে প্রতিহত করার উপায় কি? লোহাকে লোহা দিয়ে পিটাতে হয়, কাঠ দিয়ে লোহাকে পিটিয়ে কোনো আকারে আনা যায় না। শুনেছি নাফিজের নবাগত স্ত্রী একজন ডাক্তার কিংবা নার্স বিষয়ক সাব্জেক্টে পরাশুনা করে।  ডাক্তার যে না এটা আমি সিউর কারন কোনো এমবিবিএস পড়ুয়া মেয়ে অন্তত নাফিজের মতো ছেলেকে বিয়ে করার রুচী বা পছন্দে আনতে পারে না। হয়তো নার্স হবে। সাধারনত যেটা হয় যে, গ্রাম্য এসব মেয়েগুলি একটু শিক্ষিত হলেই ভাবে যে, তারা অনেক ক্ষমতাশীল এবং ডিমান্ডেড। ফলে ওরা ওদের অনেক কিছুই চাহিদার বাইরে আব্দার বা দাবী করার প্রয়াশ পায়। আর এই কারনেই এই মেয়েটা একদিন ওর যা খুসী তাইই করার স্বাধীনতা রাখবে। ভাববে যে, সে তো নাফিজের থেকেও বেশী যোগ্য। তাই ওর যা দাবী সেটা তো নাফিজকে মানতেই হবে। নাফিজ তাকে তার অক্ষমতার কথা কিংবা দূর্দশার কথা কিংবা কোনো অন্যায় আব্দারের ব্যাপারে রাজী না হয়ে বাধা প্রদান করলে নাফিজের সব কথা সে নাও শুনতে পারে। আর যদি নাফিজ তাকে শাসন করতে যায়, তখন এই নবাগত স্ত্রী তার পরিবার মিলে নাফিজকেই শায়েস্তা করে ফেলবে। এমনো হতে পারে যে, অচিরেই নাফিজের স্ত্রী তার শাশুড়ির সাথে ধীরে ধীরে সম্পর্কটা অনেক দূরে নিয়ে যাবে, আর সেই দূরে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে শুধু সে নিজেই দূরে চলে যাবে না, সাথে নাফিজকেও দূরে নিয়ে যাবে। নাফিজের এতোটা মনোবল শক্ত নয় যে, নাফিজ বউকে ছেড়ে বা বউকে কড়া ভাষায় কথা শুনিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াবে। ফলে এমন একটা সময় আসবে যে, নাফিজের দেয়া মাসিক ভাতাটাও একদিন সেফালির জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। এই নাফিজের স্ত্রীই করাবে বন্ধ। এবার আসি সেফালীর আরেক ছেলের কথা। সেফালীর অপর ছেলে নাহিদকে দেখে আমার প্রতিবন্ধী মনে হয়। সারাদিন ঘর থেকে বের হয় না। কারো সাথেই সে কোনো কথাবার্তাও বলে না। শুধু রাতের বেলায় উঠোনে নাকি বের হয় আর রাতেই সে গোসল করে। এই এমন একটা ছেলের কাছ থেকেও সেফালির কিছু আশা করা উচিত না। নাহিদ একদিন নিজেকেই নিজে চালাতে পারবে না। যখন নাফিজের দেয়া ভাতা, বা টাকা সেফালীকে দেয়া কমে যাবে বা বন্ধ হয়ে যাবে, সেদিন এই নাহিদ এমনো হতে পারে নিজের জীবন নিজেই নিয়ে নিবে। কারন সে বেশীরভাগ সময়ে এই পৃথিবীর মানুষের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে না। সমাজের মানুষ যেমন তাকে সচরাচর দেখে না, তেমনি সেও সমাজের সবাইকে ভালমতো চিনেও না। শুধু মুখ দেখে নাম বলতে পারাটাই চিনা নয়। যখন এই পরিস্থিতি আসবে, নিজেকে খুবই অসহায় মনে করবে নাহিদ আর ভাববে- ওর চলে যাওয়াই উচিত। আর থাকলো সেফালির মেয়ে। মেয়েরা যতোক্ষন পর্যন্ত নিজেরা নিজের পায়ে না দাড়ায়, ততোদিন সে না পারে নিজেকে সাহাজ্য করতে, না পারে তার আশেপাশের কাউকে সাহায্য করতে। ফলে ওর মেয়েরও একই অবস্থা হবার সম্ভাবনা আছে। হয়তো নিজের জীবন না নিলেও শুধুমাত্র বেচে থাকার তাগিদে কোনো এক ছেলেকে বিয়ে করে জীবনটা পার করে দেবে। সেখানে কিছুদিন হয়তো সেফালির ঠাই হবে কিন্তু স্থায়ী হবে না।

নাফিজের থেকে সেফালির দূরে চলে যাবার কারন হবে দুটু। (ক) নাফিজের স্ত্রীর সাথে সেফালির শাশুড়ি বনাম পুত্রবধুর সম্পর্কটা সেফালী নিজেই তৈরী করতে পারবে না বা পারার কথা নয়। সেফালীর যে চরিত্র সেটাই আমাকে এ কথা বলার কারন বলে মনে হয়েছে। আর এই শাসুড়ি বনাম পুত্রবধুর সম্পর্ক ভালো না হওয়ার কারনে সারাক্ষন নাফিজের স্ত্রী নাফিজের মার সম্পর্কে কটু কথা, কান কথা লাগাতেই থাকবে। আর সব শেষে গিয়ে নাফিজের স্ত্রী নাফিজকেই দায়ী করতে থাকবে সব কিছুর জন্য এবং একসময় নাফিজ তার মায়ের উপর এতোতাই বিরক্ত হবে যে, কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা সেটা যাচাই করার আর কোনো মানসিকতা নাফিজের থাকবে না। ফলে যেতা হবে তা হচ্ছে- নাফিজ তার স্ত্রীর পক্ষ নিয়াই কথা বলবে। যেহেতু নাফিজ তার স্ত্রীকে কঠিন ভাষায় মায়ের পক্ষে ওকালতি করতে পারবে না, অথবা উচ্চবিত্ত শশুড়ের মুখের সামনেও দাড়াতে পারবে না, ফলে সে তার মাকেই সে ত্যাগ করবে। সেটাই নাফিজের জন্য সহজ পথ। সেফালি একদিন সত্যিই একা হয়ে যাবে আর সে একাকিত্তে নিজের জীবন নিজেই চালাতে গিয়ে ওর মা আজ থেকে ৪৫ বছর আগে যেভাবে জীবনযাপন করেছে, সেফালিকেও ঠিক সেভাবেই জীবনযাপন করতে হতে পারে। অর্থাৎ পরের ক্ষেতে ধান কাটার পর মাঠ ঝারু দিয়ে পরিত্যক্ত ধান কুড়িয়ে ধান আনা, কিংবা অন্যের ক্ষেতে বদলীগিরি করে, কিংবা এই জাতিয় কাজ করেই ওকে নিজের জীবন নিজেকে চালাতে হবে। (খ) আর দ্বিতীয় কারনটি হলো- লিয়াকত। যতোদিন লিয়াকত নিজের পায়ে দাড়াতে না পারবে, সে ততোদিন সেফালির ঘাড়ের উপরে বসেই জীবন বাচাতে হবে। কিন্তু লিয়াকতের বয়স এখন প্রায় ৩৮। সে লেখাপড়াও করেছে। কিন্তু জীবনমুখী নয়। ওর মতো বয়সের একটা ছেলে কোনো না কোনোভাবে নিজের জীবনসহ একটা সংসার চালাতে পারা সক্ষম হওয়া উচিত ছিলো। অনেকভাবে আমিও চেষ্টা করেছি, হাবীব ভাইও চেষ্টা করেছেন, এমন কি আমি ওকে গাজীপুরে একটা কম্পিউটার ট্রেনিং ইন্সটিটুটের মধ্যে লাগিয়েও দিয়েছিলাম, কিন্তু কোথাও সে এডজাষ্ট করতে পারে নাই। শেষতক আবার সেই সেফালির ঘাড়েই গিয়ে পড়েছে। যতোদিন নাফিজ বিয়ে করে নাই, ততোদিন লিয়াকতের হয়তো ততোটা সমস্যায় পড়তে হয় নাই। কিন্তু নাফিজের বিয়ের পর নাফিজের বউ সেফালির বাসায় থাকতে হচ্ছে, আবার অন্যদিকে নাফিজ দেশে নাই। অথচ লিয়াকত একই বাড়িতে থাকে। এটা কোনোভাবেই হয়তো নাফিজের স্ত্রী আরামবোধ করবে না। এই যে নাফিজের স্ত্রীর ভাষায় সে “আরাম বোধ করছি না” এর মানে একটাই- লিয়াকতকে সেফালির বাড়ি থেকে হটাও। সেফালির বাড়ি থেকে যখন লিয়াকত চলে যেতে বাধ্য হবে, তখন হয়তো সেফালি কিছুটা হলেও তার ভাইয়ের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে চাইবে। আর এক কথা বলা চাওয়ার মধ্যেই সেই “দূরে” চলে যাওয়ার ব্যাপারটা লুকায়িত। তবে চুড়ান্ত কথা একটাই- যে কোনোভাবেই হোক, সেফালিকে শেষতক একাই থাকতে হবে, নিজের জীবনের জীবিকা তাকে একাই জোগাড় করতে হবে। এটাই হয়তো শেষের অধ্যায়।

এই যে সেফালিকে নাফিজের স্ত্রি ধীরে ধীরে পছন্দ করছে না এটা বুঝার কিছু উপায় আছে। দেখা যাবে যে, মাসের পর মাস নাফিজের স্ত্রী সেফালির বাসায় আসবে না। কারন দেখাবে যে, সে লিয়াকতের কারনে বিব্রত। সে ফ্রি না লিয়াকতের উপস্থিতিতে ইত্যাদি। ফলে লম্বা সময়ের জন্য সেফালির সাথে বিচ্ছেদ। কিংবা যদি সেফালি অসুস্থ্য হয়ে যায়, তখনো নাফিজের স্ত্রী সেফালিকে দেখভাল করতে আসবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। হয়তো কারন দেখাবে- করোনা কিংবা তার নিজের অসুস্থতা। যদি এমন কিছু ঘটতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে, প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এটার ভাঙ্গন শুরু। 

অন্যদিকে, যদি নাফিজ আমাকে গার্জিয়ান হিসাবে সামনে রেখে ও ওর বিয়ের সমস্ত তদারকি করাতো, আর যাইই হক, নাফিজের শশুর বাড়ির মানুষের যে বাগাম্বর ভাবটা এখন আছে উচ্চবিত্তের ধারনায়, সেটা আর থাকতো না। কারন সে আমার তুলনায় কিছুই না। আমার মতো এমন একটা গার্জিয়ানের সামনে না নাফিজের স্ত্রী, না নাফিজের শশুড়বাড়ির কোনো লোক মাথা উচু করে কথা বলতে পারতো। সেফালিও তার গলা উভয়ের সামনে ঠিক আগের মতোই ধরে রাখতে পারতো। আমি একদিক থেকে একটা ব্যাপার নিয়ে শান্তিতে আছি যে, আমাকে আর এসব উটকো ঝামেলা আর পোহাতে হবে না।

এখানে আরেকটা কথা না বললেই নয়। কোনো একদিন নাফিজের শশুরবাড়ির লোকেরাও আমাকে হারিকেন জালিয়ে হন্যে হয়ে খুজবে যখন নাফিজের সাথে, নাফিজের স্ত্রী, কিংবা সেফালির সাথে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা তৈরী হবে। তখন তারা খুজবে কাকে ধরলে সমস্যা সমাধান হবে। আর সেই "কাকে ধরলে" খুজতে খুজতে ঠিক আমার আস্তানায় চলে আসবে এসব 'উচ্চবিত্তরা"। আমি আসলে সেদিনটার জন্য অপেক্ষা করছি। শাস্তিটা আমি তখন দেবো ঠিক এভাবে যে- Who are you people? Do I know you?

২৮/০১/২০২১-মিটুল চৌধুরী আসমা

মিটুল চৌধুরী আসমা তার নাম। তার মুল জন্মস্থান মানিকগঞ্জ। জন্ম ৩১সে ডিসেম্বর ১৯৬৮। মিটুলের বাবার নাম- আলাউদ্দিন চৌধুরী, মায়ের নাম- জেবুন্নেসা চৌধুরী। তারা আট বোন এবং তিনভাই। সে সবার ছোট ভাইবোনদের মধ্যে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্অথনীতিতে অনার্স পাশ করে মাস্টার্স করে পরবর্তীতে ১৪বিসিএস দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে জয়েন করেন। প্রথমে তিনি মাইমেন্সিং এর মোমেনুন্নেসা মহিলা কলেজে জয়েন করেন, অতঃপর ঘিউর সরকারী কলেজ, অতঃপর ঢাকা কমার্শিয়াল কলেজ থেকে রাজবাড়ি কলেজ , মাদারীপুর কলেজ ইত্যাদি হয়ে এনসিটিবি এবং তারপর সরকারী বাঙলা কলেজে চাকুরী করেছেন। তিনি বর্তমানে প্রোফেসর  এবং ডিপার্ট মেন্টাল হেড হিসাবে বাঙলা কলেজ, মীরপুরেই কর্মরত আছেন। 

দুই মেয়ের মা। বড় মেয়ে আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা বগুড়া (শহিদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজে) মেডিক্যাল থেকে এম বি বি এস পাশ করেছে। ছোট মেয়ে সাঞ্জিদা তাবাসসুম কনিকা এবার শহীদ আনোয়ারা গার্লস কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ইউ এম বি সি (ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি) তে ভর্তি হয়েছে, তার ক্লাশ আগামী আগষ্ট মাস ২০২১ থেকে শুরু হবে। মিটুলের স্বামী সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন। মেজর হবার পর স্বইচ্ছায় অবসর নেন এবং নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। তাদের দুটু এক্সপোর্ট গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী (সুয়েটার্স ইউনিট) আছে, ওয়ান টাইমের একটা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি আছে, আন-নূর কন্সট্রাকশন নামে একটি কন্সট্রাকশন কোম্পানী আছে। মানিকগঞ্জে আল-আব রার মেডিক্যাল ডায়গনোসিস সেন্টার নামে একটি মেডিক্যাল ইউনিটে পার্টনারশীপ ব্যবসা আছে।   

মিটুল চৌধুরী তার নিজস্ব বাড়ি মীরপুরে থাকেন। এ ছাড়া তাদের বাসাবোতেও কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে। এই গত এক বছরে মিটুল চৌধুরী তার আরো দুই বোনের সাথে জয়েন্ট পার্টনারশীপে তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি মানিকগঞ্জে ৬ তালা একটি বিল্ডিং করেছে। আমি জানি সেটায় ওরা কেউ থাকবে না, তার পরেও বড় একটা ইনভেষ্টমেন্ট।

মিটুল চউধুরীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইতিহাসটা হচ্ছে তার বিয়ের ঘটনা। আর এই বিয়ের ঘটনাটা বিস্তারীত বর্ননা আছে Diary 2 March 2021 datewise.docx#৩০/০৫/১৯৮৮- বিবাহ

অধ্যায়ে।

(চলবে)  

২৮/০১/২০২১- উম্মিকা,আমার বড় মেয়ে

Categories

আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা আমার বড়মেয়ে। জন্ম তার ১৬ জানুয়ারী ১৯৯৪ সাল।

তার জন্মের আগে আমার বড় ইচ্ছে ছিলো যে, আমার যেনো একটা মেয়ে হয়। আমি কখনোই ছেলে হোক চাই নাই। আল্লাহ আমার মনের আশা পুরন করেছেন উম্মিকাকে আমার ঘরে দিয়ে। সে খুব ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু সে খুব সিম্পল। 

উম্মিকার জন্মের আগে (সম্ভবত ৪/৫ দিন আগে) আমি একটা সপ্ন দেখেছিলাম। তাহলে সপ্নটা বলিঃ

ঢাকা সেনানীবাসের মেস বি তে আমি একটা রুমে আছি। আমার পোষ্টিং ছিলো খাগড়াছড়িতে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে। মিটুল পোয়াতি অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। যে কোনো সময় আমার বাচ্চা হবে। আমি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছি শুধু আমার অনাগত বাচ্চার আগমনের জন্যই। নামাজ পড়ি, খাই দাই, আর সারাদিন হাসপাতালে মিটুলের সাথে সময় কাটাই।

একদিন রাতে (ডেলিভারির ৪/৫ দিন আগে) আমি সপ্নে দেখলাম যে, আমি আমাদের গ্রামের কোনো একটা দোকানে বসে আছি। ওখানে আরো অনেক লোকজন ও আছে। হতাত করে সবুজ একটা সুতী কাপড় পড়ে একজন মহিলা কোনো একটা ঘরের ভিতর থেকে বাইরে এসে আমাকে বল্লো, আমাকে আপনি কি চিনেন? আমি তাকিয়ে তাকে বললাম, জী না আমি আপনাকে কখনো দেখি নাই। উত্তরে মহিলাটি আমাকে বললেন, যে, তিনি হযরত আছিয়া বেগম অর্থাৎ মুসা (আঃ) এর মা। আমি তো অবাক। কি বলে এই মহিয়সী মহিলা?

আমি ততক্ষনাত উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে তো আপনার কাছে আমাদের নবীজির অনেক চিঠি থাকার কথা! মহিলা বললেন, হ্যা আছে তো।

এই কথা বলে তিনি আবার ঘরের ভিতরে চলে গেলেন চিঠিগুলি আনার জন্য। আমার ঘুম ভেংগে গেলো। আমি তখন সময়টা দেখলাম, রাত প্রায় শেষের পথে কিন্তু তখনো ফজরের আজান পড়ে নাই।

পরদিন ছিলো শুক্রবার। আমি জুম্মা নামাজ পড়ে ইমামের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বললাম। তিনি প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবনা কিনা। আমি বললাম, আমরা খুব শিঘ্রই বাচ্চার আশা করছি। তিনি বললেন, আপনার মেয়ে হবে এবং খুব ভালো একজন মেয়ে পাবেন আপনি।

তার ৪/৫ দিন পর আমি আসর নামাজের পর কোর আন শরীফ পড়ছিলাম। এমন সময় আমার মেস ওয়েটার তড়িঘড়ি করে আমার রুমে নক করে বল্লো যে, স্যার আপনাকে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেছে। আমি তখন যেখানে কোর আন আয়াত পড়ছিলাম, ঠিক সেখানেই মার্ক করে কোর আন বন্ধ কত্রে ছুটে গেলাম হাসপাতালে। মিটুলকে ওটিতে নেয়া হচ্ছে, সিজারিয়ান করতে হবে।

প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার মিষ্টি মেয়েটার জন্ম হলো এই পৃথিবীতে। কি নাম রাখবো সেটা আমি ঠিক করেছিলাম যে, আমি যেখানে কোর আন শরীফ টা পড়া বন্ধ করেছি, আর যে আয়াতে, আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঠিক সেই আয়াত থেকেই কোনো একটা শব্দ দিয়ে নাম রাখবো। অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে- আমি ওই সময়ে হজরত মুসা (আঃ) এর উপরেই আয়াতগুলি পড়ছিলাম। সেখানে আয়াতে লিখা ছিলো- ইয়া হাইলা আলা উম্মিকা মুসা। অর্থাৎ হে মুসা, আমি তোমার মাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলাম।

আমি ঠিক এই শব্দতটাই আমার মেয়ের নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেই যে, ওর নাম হবে উম্মিকা। অর্থাৎ মা।

আমার সেই উম্মিকার প্রথম শিক্ষা শুরু হয় মীরপুর স্টাফ কলেজের টর্চ কিন্ডার গার্ডেনে। অতঃপর মেথোডিস্ট ইংলিশ মিডিয়াম, তারপর শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ এবং সেখান থেকে হলিক্রস। হলিক্রস থেকে উম্মিকা এইচএসসি পাশ করে ডাক্তারী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে শহীদ জিয়া মেডিক্যালে আল্লাহর রহমতে ইন্টার্নী করে ২০২০ সালে ডাক্তারী পাশ করলো। এটা আমার একটা স্বপ্ন যে সে ডাক্তার হোক। আমার আরেকটা স্বপ্ন হচ্ছে, সে যেনো সেনাবাহিনীর ডাক্তার হয়। তাতে যে লাভটা হবে তা হচ্ছে, বাবার সেনাবাহিনীর জব ছিলো। রাজনীতির প্রতিহিংসায় সে ইচ্ছে করে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন, জেনারেল পর্যন্ত যেতে পারেন নাই। আমি চাই আমার মেয়ে সেটা হোক। আর ২য় কারন হচ্ছে, আজীবন কাল সে সেনাবাহিনীর সব বেনিফিট গুলি যেনো পায়। কিন্তু বাবাদের সব সপ্ন তো আর সার্থক হয় না। আমার মেয়ে চায় বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সে বেসামরীক লাইফেই থাকে।

২৮/০১/২০২১- কনিকা, আমার ছোট মেয়ে

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

জানুয়ারী 

২৮ 

সানজিদা তাবাসসুম কনিকা আমার ছোট মেয়ে। জন্ম ২০ সেপ্টেম্বর ২০০০।

ভাবলাম, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় আছি, সময়টা কাটছে না খুব একটা। সবার ব্যাপারে কিছু লিখতে থাকি।

কনিকার যেদিন জন্ম হয়, সেদিন আমি জানতাম না যে, আমার আরেকটি মেয়ে হচ্ছে। আমি জানতেও চাই নাই। এটার পিছনে বেশ একটা কারন ছিলো। আর সেটা হচ্ছে যে, আমার শখ ছিলো আমার প্রথম সন্তান মেয়ে হোক। আল্লাহ সেটা আমার বড় মেয়ে উম্মিকাকে দিয়ে সেই শখ পুরা করেছেন। তারপরের সন্তান আমার ছেলে চাই না মেয়ে চাই এটা নিয়ে আমার কোনো কৈফিয়ত কিংবা কোনো প্রকারের হাহুতাশ ছিলো না। শুধু চেয়েছিলাম যেনো আমার সন্তান সুস্থ্য হয়।

মেয়ে হয়েছে, এই খবরটা দেয়ার আগে ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার প্রথম সন্তান কি? আমি উত্তরে বললাম, যেটাই হোক, মেয়ে হলেও আমি কিছুতেই অখুসি নই। দুটুই আমার সন্তান। এবারো সিজারিয়ান বেবি। মিটুলের অনেক কষ্ট হয়েছে এবার। আমার মা ঢাকার বাসাতেই ছিলেন, আমার মেয়ে হয়েছে শুনে, আমার মায়ের খুব মন খারাপ। আমি হেসেই বাচি না। আমি প্রথমে ব্যাপারটা মজা মনে করে মাকে কিছুই বলি নাই। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখলাম, আমার মা আমার ছোট মের‍্যেকে একেবারেই পছন্দ করেন না। বারবার শুধু একটা কথাই বলে- ওই ত্যুই ছেলে হইতে পারলি না?

আমার মেয়ে তো কিছুই বুঝে না। সে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে আর দাদির লগ্না হচ্ছে। কনিকার যেদিন জন্ম হয়, সেদিন আমার বুকে একটা ধক করে উঠেছিলো। এতো অবিকল চেহারা হয়? একদম আমার মায়ের চেহারা। তার চোখ, মুখ, নাক , কান, মুখের আকৃতি সব কিছু আমার মায়ের চেহারা। আমি মনে মনে ভাবলাম, হে আল্লাহ, তুমি আবার এই ছোট মাকে আমার কোলে দিয়ে আমার বড় মাকে নিয়ে যেও না।

মাকে বললাম, মা , ছোট মেয়ে একেবারে তোমার অবিকল চেহারা পেয়েছে। তুমি যখন থাকবা না, এই মাইয়াটাই আমার কাছে তুমি হয়ে আজীবন বেচে থাকবা। অনেক দিন ছোট মেয়ের নাম রাখা হয় নাই। আমি মাকে দায়িত্ত দিয়েছি মা যেনো ছোত মেয়ের নাম রাখেন। যা খুশী সেতাই রাখুক। অবশেষে একদিন মা, ছোট মেয়ের নাম রাখলেন- কনিকা।

উম্মিকা ছোট অবস্থায় আমার সাথে থাকতে পারে নাই কারন আমি তখন বিভিন্ন সেনানীবাসে খালী পোষ্টিং আর মিশনের কাজে বিদেশ করে বেড়িয়েছি। কিন্তু কনিকার বেলায় বেশ লম্বা একতা সময় এক সাথে থাকার সুযোগ পেয়েছি।

তারপরেও বেশ অনেক গ্যাপ হয়েছে আমার ওদের সাথে থাকার। কনিকা বড় মেয়ের মতো সেও প্রথমে মেথোডিস্ট স্কুল মিডিয়ামে, তারপর মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরী এবং অতঃপর বিআইএস থেকে শহীদ আনোয়ারা গার্লস কলেজে পরাশুনা করে এস এস সি পাশ করেছে। সাংঘাতিক টেনসনবিহীন একটি মেয়ে। অল্পতেই খুব খুতখুতে কিন্তু খুব বুদ্ধিমতি। কনিকা উম্মিকার থেকেও একটু বেশি চালাক কিন্তু ধূর্ত নয়। আমার ইচ্ছে যে, কনিকা এডমিন ক্যাডারে চাকুরী করুক এবং সচীব হয়ে অবসর নিক। অথবা ব্যারিস্টার হোক। তাতে নিজের ব্যবসা নিজেই করতে পারবে, কারো সরনাপন্ন হতে হবে না। 

কিন্তু আমার ইচ্ছাটাই সব কিছু নয়। এই করোনা পেন্ডেমিকের সময় সরকার কর্তৃক অটোপাশের মাধ্যমে কনিকা ইন্টার পাশ করে ফেল্লো। কনিকার দেশে থাকার কোনো ইচ্ছা নাই। এই যে, সবাই আগামীতে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়বে, কোথায় ভর্তি হবে ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত আর কনিকা সারাদিন ইন্টারনেটে বিদেশের কোনো ইউনিভার্সিটিতে সে পড়বে সেটা খুজতে খুজতে ব্যস্ত। সে মনে প্রানে আর দেশে নাই। অনেক গুলি ইউনিভার্সিটিত থেকে কনিকা ইতিমধ্যে অফার লেটার পেয়েছে। আমি জানি আগামী বছরের মধ্যে কনিকা আর দেশে নাই। বাকী কি হয় কে জানে?

২৭/০১/২০২১-আমার+উম্মিকার করোনা

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

২৭ জানুয়ারী 

 

কোনো কিছুই কোনো কারন ছাড়া ঘটে না, এটাই সত্য। যে ঘটনাটা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছিলো কেনো গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেললাম বলে, আজ সেটা পরিষ্কার হলো। আমার করোনা টেষ্টে পজিটিভ এসেছে। আমার বড় মেয়েরও করোনা পজিটিভ। ছোট মেয়ের করোনা নেগেটিভ। উম্মিকার মার তো আগেই একবার করোবা ধরা পড়েছিলো, তাই আর করাইতে দেই নাই। এর মানে হলো, শুধু ছোট মেয়ে ছাড়া আমাদের বাসায় সবার করোনা ধরা পড়লো। আল্লাহ যা করেন নিশ্চয় মংগলের জন্যই করেন। করোনা ধরা পড়ায় একটা জিনিষ মনে হলো যে, আমাদের আর টিকা নেওয়ার দরকার পড়বে না হয়তো।

দেশে টিকা এসেছে, সবাই টিকা নিতে ভয়ও পাচ্ছে, আবার এই টিকা নিয়ে যে কত রাজনীতি হয় তাও দেখা যাবে। এদেশে প্রতিটি জিনিষ নিয়েই রাজনীতি হয়। টিকা নিয়েও লম্বা সময় ধরে রাজনীতি হবে, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। যারা একবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এসছেন, হয়তো তারা আর টিকার ব্যাপারে কোনো মাথা ঘামাবে না, তারপরেও হয়তো টিকাটা নেয়া দরকার হতে পারে যেহেতু এটা একটা ভ্যাকসিন।

বাসায় আছি কদিন যাবত। করোনা হবার কারনে আমার শরীরে কোনো প্রকার আলাদা কোনো সিম্পটম নাই। সুস্থই আছি। বড় মেয়ের ঠান্ডাটা একটু বেশি। আমি প্রতিদিন ছাদে রোদে প্রায় ঘন্টা ২/৩ পুড়ি। ভালোই লাগে। কিন্তু বড় মেয়ে বি সি এস পরীক্ষার প্রিপারেশনে রাত জেগে পরাশুনা করে বলে দিনের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ঘুমায়।

চারিদিকে বেশ ঠান্ডাও পড়েছে ইদানিং। এবারের ঠান্ডাটা একটু বেশী মাত্রায় পড়েছে বলে মনে হয়।

২৬/০১/২০২১- আমার করোনা +

গত ২৩/০১/২০২১ তারিখের সকাল ৮ টার সময় হটাত করে মনে হলো কোনো গন্ধই পাচ্ছি না। এর ২/৩ দিন আগে থেকে একটু একটু শরীর খারাপ ছিলো। দূর্বল লাগছিলো, ঘুম ঘুম ভাব ছিলো। একটু একটু ঠান্ডাও ছিলো। গন্ধ না থাকার কারনে ভাবলাম, করোনা কিনা। এর মধ্যে আবার জিহবায় একটা ছোট দাগ ছিলো যেটা আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কোনো ঘা। ডাক্তারকে দেখিয়েছিলাম, উনি বললেন ভিটামিন সি খান। হয়তো ভিটামিন সি এর অভাব। ব্যাপারটা আমলে নিয়েছিলাম বটে কিন্তু গত কয়েক মাস আমি যেভাবে ভিতামিন সি খেয়েছি, তাতে আমার মনে হয়েছিলো আমার ভিটামিন সি সারপ্লাস হবার কথা। তারপরেও আরো বেশী করে লেবু প্লাস ভিটামিন সি ট্যাবলেট খাইতে থাকলাম। কিন্তু ঘা টার কোন কমার লখন দেখি নাই। এর মধ্যে হটাত করে গন্ধ না পাওয়ার কাহিনী। একটু ভয় তো পাইলামই কিন্তু শরীরে অন্য কোনো উপসর্গ নাই। যেমন, কোনো কাশি নাই, গলা ব্যথা নাই, জর নাই, অক্সিমিটারে অক্সিজেন লেবেল ৯৯% দেখায়। গায়ে কোনো ব্যথাও নাই। তারপরেও সেফ এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট, প্যারাসিটামল, আর ম্যাগ্নেশিয়াম ট্যাবলেট খাইলাম বেশ কয়েকদিন। অফিসেও গেলাম না। একই কাহিনী আমার বড় মেয়ের উম্মিকা। সেও কোনো গন্ধ পায় না কিন্তু রুচী আছে। অবশ্য ওর একটু ঠান্ডার ভাব আছে। সেটাও মারাত্তক না। তাই আমি , উম্মিকা আর কনিকার করোনার স্যাম্পল টেষ্টের জন্য প্রভা হেলথ কেয়ারকে বাসায় এনে স্যাম্পল দিলাম। এই তিন দিন যাবত ছাদে প্রায় ২/৩ ঘন্টা করে রোদ পোহালাম। রোদ পোহাইতে ভালোই লাগে।

একটু আগে ছাদ থেকে বাসায় এসে গোসল করলাম। আমি সাধারনত গোসলের পর পারফিউম দেই। হটাত খেয়াল করলাম, আমি পারফিউমের গন্ধটা পাচ্ছি। যেটা আগে একেবারেই পেতাম না। কি হলো?

কেদনোই বা গন্ধের সেন্সর আউট হয়ে গেলো আবার কেনোই বা গন্ধের সেন্সর আবার ফিরে এলো এটা আমার কাছে একটা গবেষনার ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। যাই হোক, অন্তত খারাপ কিইছু সম্ভবত হয় নাই। বাকীটা আল্লাহ ভরসা।

০১/০১/২০২১-মেয়েরা বগুড়ায়

Categories

আজ থেকে প্রায় ৫৪ বছর আগে, আমার বাবা বুঝতে চেয়েছিলেন, তার অবর্তমানে তার পরিবার কিভাবে থাকবে, কে কিভাবে আচরন করবে, কার চেহারা কি হবে ইত্যাদি। আর এ কারনে তিনি একবার ৬ মাসের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন। আমার মাও জানতেন না আমার বাবা কোথায় আছে কেমন আছে। শুধু জানতেন আমার বড় ভাই। আর বাবা আমার বড় ভাইয়ের আশেপাশেই ঢাকায় গোপনে ছিলেন। আমার ভাই প্রতিনিয়ত বাবাকে গ্রামের, বাড়ির, এবং অন্যান্য সদস্যদের আচার ব্যবহার আপডেট দিতেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, বাবা হয়তো কোথাও মারা গিয়েছেন, অথবা আর কখনোই ফিরে আসবেন না। তাতে যেটা হয়েছে সেটা হলো, সবাই তার নিজ নিজ চেহারায় আবর্ভুত হয়েছিলো। ফলে ৬ মাস পর যখন বাবা ফিরে এলেন তার গোপন আস্তানা থেকে, তখন তিনি বুঝলেন, কে আমাদের আপন, কে আমাদের পক্ষের আর কে আমাদের বিপক্ষের। শুধু তাইই নয়, আমাদের পরিবারের মধ্যেও তিনি বিভিন্ন সদস্যদের চরিত্র সম্পর্কে একটা নিখুত ধারনা পেয়েছিলেন। অন্তর্ধানের পরে আমার বাবা আরো বেশী বাস্তববাদী হয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে আমাদের জন্য ছিলো যুগান্তকারী এবং পারফেক্ট।

এই ঘটনাটা এখানে বলার অন্য কোনো কারন নাই। নিছক একটা সমকালীন ভাবনার মতো। আমার ছোট মেয়ে মানসিকভাবে আসলে আর এদেশেই নাই। তার ভাবনা কবে কোথায় কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়বে, তাও আবার আমেরিকার কোনো এক ইউনিভার্সিটিতে। সারাক্ষন তার এই একই চিন্তা, আর এই চিন্তার রেশ ধরে সারাক্ষন তার সেই উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য এখানে এপ্লিকেশন, ওখানে এপ্লিকেশন, স্যাট পরীক্ষা, আইএলটিএস ইত্যাদি। আমরা ধরেই নিয়েছি, যে, আগামী বছরের শেষের দিকে আমরা আমার ছোট মেয়েকে আর পাচ্ছি না। সে বিদেশের মাটিতে পড়াশুনা করবে। এটা যেনো এক প্রকার মেনেই নিয়েছি। আর কনিকা তো শতভাগ সেভাবেই ভাবছে। বাকীটা আল্লাহর রহমত।

বড় মেয়েও বিসিএস পরীক্ষায় যদি চান্স না হয়, তারও পরিকল্পনা প্রায় একই রকমের। সেও সেই সুদূর আমেরিকার উদ্দেশ্যেই হয়তো দেশ ছেড়ে চলে যাবে। এই যে, একটা ভ্যাকুয়াম, মানে দুই মেয়েই আমাদের ছেড়ে চলে যাওয়ার একটা আভাষ, তখন আমাদের জীবন কি হবে, কেমন কাটবে, সেই ভাবনাটা যেনো আজ পেলাম। কারন আজকে দুই মেয়েই আমাদের ছেড়ে বগুড়ায় আছে। বাড়ি একেবারেই খালি। একদম ফাকা। এ যেনো সেই পরীক্ষাটা যখন ওরা কেউ আর আমাদের সাথে থাকবে না, তখন কেমন হবে আমাদের জীবনটা।

আজ বুঝলাম, কেমন হবে জীবনটা। সারাটা বাড়ি ফাকা। সবই আছে, চেয়ার টেবিল যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে। উম্মিকার ঘরের কোনো কিছুই এদিক সেদিক হয় নাই, কনিকার ঘরেরও। ডাইনিং টেবিলে সব কিছু আগের মতোই আছে, ড্রইং রুমটাও তাই। খাবার টেবিলে সবসময় যে মেয়েরা আমার সাথে খেতে বসে, সেটাও না। কিন্তু তখন হয়তো ওরা ওদের রুমেই থাকতো। কিন্তু আজকে মনে হলো, ওরা বাসায় কেহই নাই মানে আমার খাবার টেবিলের খাবারের সাধটাও ভিন্ন। ওদের ঘরের দিকে তাকালে মনে হয়, মানুষগুলি এখানে বসতো, এখানে কম্পিউটারে কাজ করতো, ওইখানে ওরা পায়ে পায়ে হাটতো। ওদের মা কারনে অকারনে কখনো ডাকাডাকি, কখনো না খাওয়ার কারনে রাগারাগি, কখনো আবার একসাথে বসে হাসাহাসি করতো। আজকে কিন্তু ওরা আছে কিন্তু কাছে নাই। এতো ফাকা লাগছে কেনো?

ওদের বগুড়ায় যাওয়ার মাধ্যমে আমি যেনো ওদের আমেরিকা যাওয়ার একটা প্রক্সি অনুভব করলাম। এটাই হবে যখন ওরা সত্যি একদিন আমাদের ছেড়ে অনেক দূরে থাকবে। আজকে একটা কথা প্রায়ই মনে পড়লো-

তাহলে আমার এতো বড় ব্যবসা, এতো বড় বানিজ্য, আমার এতো বড় বড় প্রোজেক্ট নিয়ে কি হবে যদি ওরাই আর এখানে না থাকে? কে দেখভাল করবে আমার অনুপস্থিতিতে এই বিশাল সাম্রাজ্য? কোথায় যেনো একটা খটকা লাগলো। দরকার আছে কি এতোসবের?

অনেক ভাবনার বিষয়।

১৪/০৫/২০১৮- মা

Categories

মাকে নিয়ে অনেক লেখা হয়, মাকে নিয়ে হাজার হাজার কাহিনী এবং ইতিহাস রচিত হয়। পৃথিবীর সারা বুকে বিভিন্ন ভাষায় কতভাবে যে রচিত হয়েছে এই মায়ের উপর কাহিনী বা সত্য ভাষণ, তার কোনো ইয়াত্তা নাই। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিটি ফিলিংস বা অনুভুতি একেকটা মোউলিক রচনাই বটে।

পৃথিবীর সব ভাষায় সব বাচ্চারা প্রথম যে শব্দটি শিখে তা হচ্ছে “মা” বা এর প্রতিস্থাপক কোনো শব্দ। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব ভাষায় এই “মা” শব্দটি প্রায় কাছাকাছি তার উচ্চারন। কোথাও মা, কোথাও মাম্মি, কোথাও আম্মু, কোথাও মাম এই রকমের। গত পরশু ছিলো “মা” দিবস। এতা একটা রুপক দিন। “মা” দিবসের কোনো দিন হয় না তার পরেও বছরেরেক্টি দিন “মা” এর জন্য উৎসর্গ করা একটি দিন। প্রানীকুলের মধ্যে সব “মা”ই এক রকমের। সেটা কোনো সিং হীর ই হোক, অথবা কোনো হরিনের কিংবা মানুষের। কোনো তফাত দেখা যায় না। কিভাবে ঈশ্বর এই মাতৃত্ব বোধ কে ঈশ্বর প্রতিটি মায়ের বুকে ছাপ মারিয়া একেবারে খাটি মা বানাইয়া দিয়াছেন তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কারো কাছে নাই।

তিনি আমার মা। মাত্র ১১-১২ বছর বয়সে বিয়ে হয় কিন্তু দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই এক ছেলের মা হয়ে বিধবা হন। খুব বড় লোকের মেয়ে নন বটে কিন্তু মাঝারী পরিবারের বনেদি ঘরের মহিলা। যেই সময়ের কথা বলছি, তখন ১৫ বছর অতিক্রম করলেই গ্রামের মধ্যে আই বুড়ি হয়ে আছে মেয়ে এই রকম একটা অপবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তার মধ্যে যদি আবার নিয়তির কারনে কেউ এতো অল্প বয়সেই বিধবা হন, তার তো জীবনটাই যেনো কি রকম দুর্বিষহ হয়ে উঠে তা জানে শুধু যে সাফার করে সে আর জানে সেই পরিবার যেই পরিবারে এটা ঘটছে। 

আমার মা শিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু মানুষ হিসাবে ছিলেন অত্যন্ত ভাল মানুষ। দেখতেও ছিলেন সুন্দরী। আমার মায়ের পরিবারের কাউকেই আমার মনে নাই। বরং বলতে পারেন, আমি কাউকেই দেখি নাই। আমার জন্মের আগেই সব চলে গেছেন না ফেরার দেশে। আমি না দেখেছি আমার দাদি, দাদা, নানা, বা নানি, কিংবা কোনো মামা, মামিকে। কি আজব, না? আসলেই আজব। এমন্তা কি কখনো হয়? কিন্তু হয়েছে। 

আমার মা কে আমি দেখেছি যে, তিনি তার বড় বোন যার নাম সামিদা খাতুন, তাকে তিনি কতটা ভালোবাস্তেন। আর ওই খালাও আমার মাকে তার নিজের মেয়ের মতোই দেখতেন। 

এতো ধৈর্য, এতো বুদ্ধিমতি আর এতো নিরহংকার মানুষ ছিলেন তিনি, যার কোন তুলনা হয় না। আমার মায়ের সারাটি জীবন কেটেছে কস্টের মধ্যে।যখন তিনি একটু সুখের মুখ দেখবেন বলে আশা করেছিলেন, তার আগেই তিনি ২০০২ সালে জান্নাত বাসি হয়েছেন। 

আমার মায়ের জীবনের গল্পটা তাহলে বলিঃ 

আমার বয়স যখন মাত্র দেড় কি দুই তখন আমার বাবা মারা যান। আমি আমার বাবাকে দেখি নাই, এমন কি আমাদের কারো কাছেই আমার বাবার কোনো ছবিও নাই। আমার মা যখন আমার বাবাকে বিয়ে করেন, তখন তার প্রথম পক্ষের ছেলে বিল্লাল হোসেন (ওরফে ডাঃ বেলায়েত হোসেন) কে আমাদেরই গ্রামের পাশের এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছে পালক দিয়ে দেন। আমার মা আমার বাবার এমন একটা সংসারে পদার্পণ করেন যেখানে আমার বাবার আগের পক্ষেরই সন্তান ছিলো গোটা আট জন। তাদের সবার বয়স আমার মায়ের থেকে অধিক। এই সন্তানেরা আমার মাকে কোনদিনই আপন করে ভাবতে পারেন নাই। 

আমার বাবা ছিলেন মাদবর যিনি সারাক্ষনই গ্রামের মাদবরি আর তার জমি জমা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। (চলবে) 

০১/০১/২০১৮-আজ বহুদিন পর মনে হইলো

Categories

পহেলা জানুয়ারি ২০১৮, সোমবার, এমডি অফিস।

আজ বহুদিন পর মনে হইলো যে, আমি যাদের জন্য ভোর সকাল হইতে কস্ট করিয়া শারীরিক পরিশ্রম করিয়া প্রায় সারাদিন খাটিয়া রাতের অর্ধেক সময় পার করিয়া যখন বাসায় ফিরিয়া  আসি, তখন আসলে আমি কি করিলাম আর কি করা উচিত ছিল এই হিসাবটাই মিলাতে পারিনা। তখন মনে হয় – কি লাভ করিতেছি?

আসলে আমি নিজে কোনো কিছুই লাভ করিতেছি না। গত বছর হইতে এই বছরের প্রান্তিক হিসাব করিয়া আমি দেখিয়াছি, আমার ব্যবসায় উন্নতি হইয়াছে বটে কিন্তু আমার সাস্থ্য খারাপ হইয়াছে। যে অনুপাতে আমার ব্যবসা উন্নতি হইয়াছে তার অধিক অনুপাতে আমার শরীর খারাপ হইয়াছে। আমার চারিদিকে আমার অনেক পরিচিত বন্ধু বান্ধব, আমার আত্মীয়সজন কিংবা আমার পরিচিত মানুষ অনেকেই না ফেরার দেশে চলিয়া গিয়াছে। কাহারো কাহারো বয়স আমার থেকেও কম কিন্তু তাহারা চলিয়া গিয়াছেন সবাইকে ছেরে। তাহারা জীবীত অবস্থায় কতই না হায় হুতাশ, কিংবা টেনসন করিয়া রাতের ঘুম হারাম করিয়াছিলেন, তাহারা আজ কাহারো জন্যই হা হুতাশ করিতেছেন না। এমন কি অধীক গুরুতর সমস্যায় জর্জরিত থাকা অবস্থায়ও তাহারা এখন আর কোনো কর্ণপাত করিতেছেন না। তাহা হইলে কিসের মায়া আর কিসের জন্য কি?

আমার জীবদ্দশায় আমি দেখিয়া গেলাম, অধিকাংশ লোকেরা এমন কি আমার মেয়ের স্বামীরাও আমাকে ভালোবাসে আমার সম্পত্তিকে, তারা আমাকে না যতোটা ভালবাসিয়াছে, তাহার থেকে অধিক নজর আমার সম্পত্তির উপর। এটা শুধু মেয়েদের স্বামীর নজরই নয়, আমি লক্ষ করেছি, এটা আমার মেয়েদের শাশুড়িদেরও নজর এই সম্পত্তির উপর। লোভ জিনিসটা মারাত্তক খারাপ। ইহাতে সম্পর্ক নস্ট হয়, আপদ বাড়ে আর আপনজনার লিস্ট থেকে ক্রমে ক্রমে বহি স্কার হয়।

নতুন বছর শুরু হইয়াছে আজ। গত ২০১৭ বছরটি ছিলো আমার জীবনের নতুন কিছু অধ্যায়। সেই অধ্যায়ে যোগ হয়েছিলো নতুন কিছু মানুষের। আমার ক্যাল্কুলেসন সাধারনত ভুল হয় না। আর যদি ভুল হয়ও তা এমনভাবে নয় যে, আমাকে ধুলিস্যাত করে নাস্তানাবুদ করে ফেলে। কিন্তু এবার কিছু হায়েনাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল আর আমি তাদেরকে মানুষ ভেবেছিলাম। আমার জিবনের যতো বিশ্বাস, যতো কনফিডেন্স, যতো সাবলম্বি জোর একেবারে হতাত করে ছদ্দবেশি কিছু মানুষ এমনভাবে অভিনয় করে কাছে এসেছিলো যে, আমার সকল ইন্দ্রিয় অবশ হইয়া তাহাদেরকে নিতান্তই আপন মনে করিয়া বুকের এতো কাছে আশ্রয় দিয়াছিলাম যে, এক সময় মাকড়শার পরবর্তী জেনারেসনের মতো আমার হৃদপিণ্ড খাইয়া পরিশেষে বাহির হইল।

শুভ সংবাদ এইটাই যে, অবশেষে আমি বুঝিতে পারিয়াছিলাম তাহারা আমার সাথে লম্বা রাস্তা পাড়ি দেওয়া জন্য যোগ্য নহে। আর এই অযোগ্য হায়েনা টাইপের মানুস রুপী প্রানিগুলিকে নিজের বলয় থেকে অবমুক্ত করিতে পারিয়াছি, ইহাই আমার সুখ।  একটা সময় আসিবে যখন এই প্রানিগুলি তাদের নিজের বুক কিলাইয়া কিলাইয়া বিলাপ করিবে আর বলিবে কে আছো আমাকে উদ্ধার করো, আমি বড় ভুল করিয়াছি। তাহাদের কেউ কেউ কাদিবে উচ্চস্বরে আর কেউ কাদিবে গোপনে। কিন্তু কাদিবে। কাদিবে এই কারনে যে, ভাগ্যের কারনে যুগে যুগে ভগবান আমার মতো মানুষকে কারো কারো ভাগ্যে জোটায়, এটা আমার মন্তব্য নহে, ইহা তাহাদের মন্তব্য যাহারা আমার সান্নিধ্যে আসিয়াছে। হয়ত এই আপন করে নেওয়ার মানুষ গুলি বুঝতেই পারলো না, কি তাহার হারাইলো আর কি তাহারা পাইলো না।

মা কুল্পা মা কুল্পা, এটা কোনো এক দেশের বুলি যার অর্থ আমি ভুল করেছি আমি ভুল করেছি। এইটা তারা বলে আর বুক কিলায়।

০৮/০৯/২০১৬- শুভ জন্মদিন তোমায়

Categories

 

সকাল বেলায় অনেকগুলি এসএমএস দেখে নিজেই খুব মনে মনে হাসছিলাম। কোন এক পল্লিগ্রামে আজ থেকে প্রায় ৫১ বছর আগে আমি আমার এক গ্রাম্য মায়ের কোল জুড়ে নাকি মানিকসোনা হয়ে জন্ম নিয়ে সবার মনে হাসি ফুটিয়েছিলাম। আমি কত জোরে কেদেছিলাম, আর কে কত জোরে হেসেছিল, সেটা আমার কস্মিনকালেও মনে নাই, কিন্তু যারা তখন অনেক অনেক খুশীতে খুশিতে আটখানা হয়ে পুরু গ্রাম, সারা বাড়ি মাতিয়ে তুলেছিলেন, তাদের অনুভুতি আজ এতো বছর পরে এসে আমার বুঝতে একটুও বাকি নাই। ওই যে বিখ্যাত মানুষ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম সাহেব বলেছিলেন, “যেদিন তোমার জন্ম হয়েছিল, সেইদিনই নাকি তোমার মা তোমার কান্নায় শুধু হেসেছিলেন”। মায়েরা সন্তানের কান্নায় কখনো হাসেন না, কিন্তু সন্তানের জন্মেরদিন সন্তানের কান্নায় নাকি মায়েরা আনন্দে হাসেন। কি অদ্ভুদ কথা। তাদেরকে আমি আমার অন্তর থেকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাই। দোয়া করি যেনো তারা স্বর্গীয় হন। 

তাদের অনেকেই আজ এই মিস্টি পৃথিবীতে নাই, কিন্তু আমার সেইদিনের জন্ম নেওয়াক্ষনটিকে আমার উত্তর সুরীরা, আশে পাশের বন্ধুবান্ধবরা, আমার অনুজ, আমার সন্তান, বা সন্তান তুল্য মিস্টি মিস্টি দুষ্টু পোলাপান গুলু বড় মজা করে পালনের নিমিত্তে কেউ গোচরে, কেউ অগোচরে, কেউ এসএমএস দিয়ে, কেউ কেক নিয়ে বসে থেকে আমার অখ্যাত এইজন্মদিনটাকে এমন করে সাজিয়ে দিল যে, বড় আনন্দ হল। আনন্দ করার জন্য কোনো উপলক্ষ লাগে না, আনন্দ পাওয়ার জন্য অনেক পয়সাও খরচ করতে হয়না। কিন্তু একটা নিছক উপলক্ষ থাকলে মানুষগুলুকে কাছে পেতে সুবিধা হয়। আজ সেটাই হল।

আমি যখন বাসায় ফিরেছিলাম, তখন জন্ম তারিখটা পার হয়ে পরের দিনের তারিখ চলে এসেছিলো। কাজের চাপ ছিলো অনেক। জন্মদিন পালনের চেয়ে বাস্তব কাজের চাপে সারাদিন আর মনেই ছিলো না ব্যাপারটা। অত্যন্ত ক্লান্ত শরিরে, ঘুম ঘুম চোখে যখন রাত সারে বারোটায় বাসায় পৌঁছলাম, দরজা খুলতেই হতাত করে একগুচ্ছ মিস্টি কচিকণ্ঠে সুর বেজে উঠলো, “হ্যাপি বার্থ ডে বাবা”। আমার মেয়েরা আর মেয়ের জামাই। সারপ্রাইজ দেওয়ার চোখের মধ্যে চিক চিক করা একটা ভাব থাকে। আমি সেটাই দেখলাম এই পিচ্চিগুলির মধ্যে। মানুষ যখন একটা ধাপ পার হয়ে অন্য ধাপে বিচরন করে, তখন সেই ছোট বেলায় ঘুড্ডি, লজেন্স, চকলেট, কিংবা ফেলে দেওয়া কোনো নিছক পাথর খন্ড অথবা নিজের জন্ম দিন যা এক সময় নিজের কাছে সম্পদ মনে হত, নিজের কাছে একটা বিশাল আবেগের অনুষ্ঠান মনে হত, সেটা আর মাথায়ও থাকে না। কিন্তু সেই এক ই অনুভুতির যখন পুনরাবৃত্তি ফিরে আসে আমাদের উত্তরসুরী প্রজন্ম থেকে, তা দেখে মনে হয়, আমিও তোমাদের মতো একদিন এই রকম উচ্ছল, আবেগতাড়িত বয়স তা পার করে এসেছি। ভাবতে বড্ড ভালো লাগে। ওরা আজ তাই করলো। 

আর রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমার বউ, মিটমিট করা চোখে, মোনালিসার হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে বল্লো, “হ্যাপি  বার্থডে মনি।” কিছুই না কিন্তু। কিন্তু মনে হলো, বাহ, কি আনন্দ, কি প্রশান্তি।

ক্লান্ত শরীর, চোখ ভর্তি ঘুম, রাত অনেক, পেটে ভীষণ ক্ষুধা, কিন্তু তারপরও মনে হলো, মন ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। এটাই আসলে “পরিবার”। “পরিবার” মানুষের জীবনে বড় একটা আশ্রয়স্থল এবং শান্তির প্রয়াশ।

এই ক্লান্ত শরীরেও ওদের আনন্দটাকে ধরে রাখতে চাইলাম। কেক কাটলাম, কেক পাঠিয়েছেন আমার মেয়ের শাশুড়ি। ব্যাপারটা দেখলে কিচ্ছু মনে হবে না, আবার ভাবলে অনেক কিছু। কোনো বড় কিছু আয়োজন নাই, অনেক মানুষের ভিড়ও নাই, মাত্র দুইমেয়ে, মেয়ের জামাই আর আমার বউ। তাতেই মনে হলো, একটা আয়োজন।

পরেরদিন শুক্রবার। জন্মদিন পেরিয়ে একদিন চলে গেছে। মনে হলো, আরো কিছু মানুষ তো আছে, যাদেরকে নিয়ে এই ছোট আনন্দটা বড় করা যায়। সোমা এসেছে শুনলাম, রাজুও এসেছে। মেয়েটা দেশের বাইরে থাকে। ও আমার মেয়ের ননদিনী আর ননদিনীর স্বামী। আমার পরিবারের একটা অংশ এবং আমার ভাল লাগার মানুষগুলুর মধ্যে একজন। খুব শীঘ্রই ওরা আবার বাইরে চলে যাবে। সুতরাং ওদের সঙ্গে ঘরোয়া পরিবেশে দেখা হওয়ার সুযোগ কম। ভাবলাম, হয়ে যাক না একটা ছোট খাটো গেট টুগেদার। সেই গেট টুগেদারের অংশই হচ্ছে আজকের এই ছবিগুলুর ইতিহাস। এটা আমার জন্মদিনের পার্টি কিনা আমি জানি না, কিন্তু এটা একটা ফ্যামিলি গেট টুগেদার বললেই আমি অভিহিত করতে চাই। দিনটা বেশ কেটেছে।

ধন্যবাদ তোমাদের সবাইকে, আর ধন্যবাদ ওই দুইজন মানুষকে, (আমার বিয়াই আর বিয়াইন) যারা সবসময় আমাকে খুশীতে অনেক আনন্দিত হন। সবাইকে আমার প্রাণঢালা ভালোবাসা। অনেক অনেক ভাল রাখুক আমার এই অনবদ্য, ছোট পরিবারের সব সদস্য গুলিকে। আমি তোমাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। 

০৫/০২/২০১৬-জেলফেরত মান্নানকে চিঠি

আমি তোমার উপর রাগ এখনো করি নাই।

কিন্তু আমার জানা ছিল না যে, আমাকে কোন এক সময় তোমার সঙ্গে এইভাবে হিসাব করে বুঝিয়ে দিতে হবে যে আমি তোমার জন্য কি করেছি আর আমি কি করি নাই। একটা জিনিস সর্বদা মনে রাখবা যে, ব্রান্ড নামের একটা মুল্য আছে। আমি তোমার জীবনে একটা ব্রান্ড নাম। এটা তোমার বুঝার ক্ষমতা আছে কিনা আমি জানি না। তবে বুঝাটা উচিৎ। মান্নান আমার জীবনে কোন ব্রান্ড নাম নয়। এটা নিশ্চয় তুমি বুঝতে পারবা। আমার জীবনে হাবিবুল্লাহ কিংবা হোসেন মাদবর একটা ব্রান্ড নাম।

আমি খুব অবাক হয়েছি যে, ইদানিং জেল থেকে ফেরত আসার পর তোমার মধ্যে অনেক অবাস্তব চিন্তার উদ্ভব হয়েছে যা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয় নাই। এর অনেকগুলো কারন থাকতে পারে, কিন্তু আমার ধারনা ঐ সমস্ত প্রধান কারনের মধ্যে একটা কারন হতে পারে তোমার মেয়ে মাহিদা (সম্ভবত)। তুমি কতটা ভাল বাবা বা কতটা ভাল স্বামী সেটা তুমি ভাল বলতে পারবে, আমি সেটা নিয়ে কখনো তোমাকে সাজেসনও দেব না।  কিন্তু তোমার মেয়ে মাহিদা তোমার জন্য কতটা ভাল মেয়ে সেটা আমি জানি কারন মাহিদা আমাকে তোমার ব্যাপারে কি কি বলেছে সেটা আমি তোমাকে কখনোই বলতে চাই নাই। কারন তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে। তোমার সম্পরকে তোমার মেয়ের ধারনা খুব যে ভাল তা আমি বলব না, বরং তার ধারনা যে সম্পূর্ণ ভুল সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। কিন্তু মাহিমা অত্যন্ত একটা ভাল মেয়ে এবং এই কারনেই সব কিছুর পরেও আমি চেয়েছিলাম মাহিমার একটা ভাল ঘরে বিয়ে হোক এবং তোমাদের বলয় থেকে ও বের হয়ে যাক। আর তার জন্যই আমি মাহিমার বিয়েতে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে আমি ওর জীবনটাকে উপহার দিতে চেয়েছিলাম এবং দিয়েছিও। আমি এর আগেও মাহিমার ১ম বিয়েতে গিয়েছিলাম এবং এবার তো আমার যাওয়ার অনেক প্রয়োজন ছিল অবশ্যই। কিন্তু তুমি আমার কিংবা আমার পরিবারের যাওয়ার পথ এমন করে বন্ধ করে দিলে যে আমার সঙ্গে আর যে সব গনমান্য ব্যাক্তিবর্গ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল আমার না যাওয়ার কারনে সম্ভবত তারাও আর যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে নাই। আমি অবশ্য কাউকে কিছু বলিও নাই। হয়ত কেউ গেছে হয়ত অনেকেই যায় নাই। আমি আর সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই নাই।

মান্নান, একটা কথা মনে রাখা খুব দরকার যে, পরিবারের বা বংশের লোকদের থেকে আপন কেউ কখনো হয় না। হ্যা, হয়ত পরিবারের মধ্যে অন্তরকলহ থাকে কিন্তু সেটা আবার সমঝোতাও হয়ে যায়। আমি একটা জিনিস লক্ষ করেছি যে, তুমি জেলে থাকার সময় থেকে যে কোন কারনেই হোক (সেটা তোমার অনুপস্থিতির কারনেই হোক আর তাদের সাহসের কারনেই হোক) আমাদের সমস্ত বংশের লোকজন সরাসরি আমার এবং হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে এবং তার মধ্যে অনেকেই সান্নিধ্যেও আসতে পেরেছে। এতে আমি দেখেছি যে, আমাদের বংশের অনেকেই তোমার উপর ঠিক যথোপযুক্ত সন্তুষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গটা এখন টানছি না, এটা তোমার বা আমাদের নিতান্তই ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যাপার ধরে নিতে পার।

মান্নান, আমি অসৎ নই এটা তুমিও জান। "আমি অসৎ এবং আল্লাহ আমাকে কখনো সাহায্য করবে না আর তোমার কারনেই আজ আমি এতদুর পর্যন্ত আসতে পেরেছি ইত্যাদি ইত্যাদি" তোমার এই কথাটা আমার কোনভাবেই ভাল লাগে নাই। আর আমি কারো উপর নির্ভর করে এই পর্যন্ত আসি নাই। এটা আল্লাহ আমাকে করেছেন। এটা নিয়ে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই না। আমার সমাজ আলাদা, তোমার সমাজ আলাদা, আমার জগত আলাদা তোমার জগত আলাদা। কে কাকে কিভাবে মুল্যায়ন করবে সেটা যার যার জগতের ব্যাপার। তোমার এসএমএস এর এই ভাবনাটা ভুল। আমি তোমাকে এই ভুল ভাবনা থেকে সরাতেও চাই না, সেটা তোমার হিসাব কিংবা তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আর তোমার কাছে এটা সত্য বলে মনে হয়েছে বলেই হয়ত তুমি বলতে পেরেছ। এটা নিয়ে আমি তোমাকে আর কৈফিয়তও দিতে চাই না। সৎ এবং অসৎ ব্যাপারটা নিতান্তই নিজস্ব ব্যাপার।  

আমি জানি আমার কি প্ল্যান ছিল তোমাকে নিয়ে আর আমি আমার পুরু প্ল্যানটা আমি তোমাকে বিস্তারিত বলেছিলামও। আমি এটাও বলেছিলাম যে, অচিরেই কোন একটা ছোটখাট ব্যবসা শুরু করতে যেখানে আমি তোমাকে সাহায্য করব আমার সাধ্যমত। আবার এটাও বলেছিলাম যে, যতদিন তোমার কোন গতি না হচ্ছে, আমি মা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে তোমাকে দেব যাতে তোমার সংসার চলে।

একটা জিনিস মনে রাখবা মান্নান, কোন কালেই আমার জমির উপর লোভ ছিল না এবং এখনো নাই। তুমি যদি মনে কর যে, কিছু জমিজমা পেয়েই আমি অনেক কিছু হয়ে গেছি সেটা একদম ভুল ধারনা। তুমি কি বলতে পার, আজ পর্যন্ত কোন জমিটা আমার ব্যক্তি জীবনে কাজে লেগেছে? বলতে পার কোন জমিটার উপর ভরসা করে আমি ব্যবসা করছি? একটাও না। আর ভবিষ্যতে ওগুলো কোন কাজে আসবে কিনা তাও আমার জানা নাই। বরঞ্চ আমি তোমাকে একটা কথা বলেছিলাম যে, একদিন যে মাদবর বাড়ি ম্লান হয়ে গেছে সেই মাদবর বারিটা আমি আবার অমলদের জমির উপর স্থাপন করে তোমাকেই ওখানে স্থাপন করে দিয়ে যাব। আমার যেহেতু কোন ছেলে নাই, আমি সবসময় মনে করেছি তোমরাই আমার ছেলে আর তোমরাই আমার সব ব্যবসা বানিজ্যের তদারকি করবে। কিন্তু ওটা হয়ত হয় নাই আর হবে কিনা ভবিষ্যতে আমার জানা নাই। যাই হোক, তুমি যদি মনে করে থাক যে, আমি শুধুমাত্র কিছু জমি জমার কারনে তোমাকে আমি আমার কাছে টেনে নিয়েছি, সেটা মারাত্মক ভুল ধারনা। আর এই ভুল ধারনাটা তোমার কাছেই থাকুক। আমি তোমার ভুল ধারনাটা ভাঙ্গাতে চাইও না। তোমার যদি এখনো মনে হয় তুমি আমাকে জমি জমা দিয়ে অনেক সাহায্য করে ফেলেছ, তাহলে বিক্রি করে দাও এবং আমার টাকাগুলো প্লিজ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা কর, আমি বরং তোমাকে অনুরোধই করছি। I want to get out of everything in future.

তোমার ধারনা আমি তোমাকে অবিশ্বাস করা শুরু করেছি কিনা। এই ধারনাটা তোমার কেন এসেছে আমি জানি না। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে মাহিমার বিয়ের টাকা নেওয়ার আগে ফ্যাক্টরি কর্তৃক মানি ভাউচারে তোমাকে সাইন করতে বলেছে বলে তোমার এই ধারনাটা হয়েছে। আমি অবাক হয়েছি এই জন্য যে, এতদিন যখন তোমাকে আমি টাকা দিয়েছি (সেটা যে কারনেই হোক না কেন), আমি তোমার পক্ষে সাইন করেছি কিন্তু আমাদের সর্বশেষ ফ্যাক্টরি পলিসি মোতাবেক, আমাদের অবর্তমানে যিনি টাকা নিচ্ছেন এখন থেকে উক্ত ব্যক্তিই ফ্যাক্টরি মানি রিসিপ্টে সাইন করে টাকা নিতে হবে, আর এই কারনেই তোমাকে সাইন করতে বলেছে। তাছাড়া তখন আবার অডিট চলতেছিল বলে কোন অবস্থায়ই মানি রিসিপ্ট সাইন করা ছাড়া ফ্যাক্টরি টাকা দিতেও পারতো না। আমার অবাকই লেগেছে যে, মুর্তজা সাহেব যদি টাকা নেওয়ার সময় সাইন করতে পারে, আমি যদি টাকা নেওয়ার সময় সাইন করতে পারি, তুমি মুরতুজা ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় যদি সাইন করতে পার, তাহলে তুমি কেন টাকা নেওয়ার সময় সাইন করতে পারবে না? আর সাইন করতে গিয়েই যদি তুমি মনে কর যে, আমি তোমাকে অবিশ্বাস করছি, তাহলে ত আমার কোন কথা থাকে না।

তুমি DBBL ব্যাংক থেকে ৬০ লক্ষ টাকা লোণ নিয়ে ফ্যাক্টরি করতে চেয়েছ। আমি সত্যি সত্যি খুশি হয়েছি যে তুমি একটা ফ্যাক্টরি করতে চেয়েছ এবং নিজের উদ্যোগে তুমি নিজের ফাইন্যন্স দিয়ে ফ্যাক্টরি করতে চেয়েছ, এটা খুবই ভাল পদক্ষেপ। তবে সতর্ক থাকতে হবে যাতে ব্যাংকের লোণ প্রতি মাসে পে করতে পার। আর পদ্মা ব্রিজের বালুর সরবরাহ পাচ্ছ যেনে আমি আরও খুশি হয়েছি যে অন্তত একটা ভাল কাজের অফার পেয়েছ। আমি তোমার জন্য দোয়া করি তুমি নিজের উদ্যগে ভাল থাক। এবং মানুস তোমাকে তোমার নিজের নামে চিনুক। তোমার এসএমএস টাই ঠিক যে একটা পাখি তার নিজের ডানার শক্তিতে বেচে থাকার নামই স্বাধীনতা, গাছের ঢালের উপর নয়। আর তুমি আরও লিখেছ যে, এখন থেকে তুমি আর মেজরের সঙ্গে নাই। আমি কিছু মাইন্ড করি নাই তাতে। এটা নিতান্তই তোমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত এবং অভিলাষ।

আমি জানি তুমি তোমার কথার বরখেলাপ কর না। আর এই জন্যই আমি কখনো তোমাকে নিয়ে কখনো অবিশ্বাস করার কোন কারনও দেখি নাই। তোমার হয়ত মনে হতে পারে যে আমি এমসিসির জমি নিয়ে চিন্তিত কিনা কিংবা হাবিব ভাইয়ের ৪৭ শতাংশ জমি নিয়ে চিন্তিত কিনা ইত্যাদি। হ্যা, আমি এমসিসির ৩৫ শতাংশ জমি নিয়ে চিন্তিত এই কারনে যে, এই ইজিএম এ যদি কোন কারনে পুরু বোর্ড পরিবরতন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে একটা নতুন করে ঝামেলা হতেই পারে কিন্তু যারা পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়েছে সবাই যেহেতু আমার বন্ধু, সেক্ষেত্রে হয়ত অনেক অসুবিধা হবে না। আর তুমি তোমার দায়িত্ব সম্পর্কে যথেস্ট পরিমানে ওয়াকিবহাল। সেটা আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলার অবকাশ রাখে না। তবে আমি বুঝতে পারি নাই যে, ঐদিন তোমার আন্টির সামনে তুমি এমন একটা ব্যবহার করবে। শেষ পর্যন্ত আমি তোমার আন্টির কাছে অপদস্থই হয়েছি এই কারনে যে, সে হাস্পাতাল থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে কাজটা করতে এসেছিল, আর যখন কাজটাই হল না, সে আমাকে চার্জ করতেই পারে। এটা নিয়েও আমি তোমাকে আর বিব্রত করব না। তুমি সৎ, তুমি মানুষের বিচার কর, সমাজ তোমাকে অনেক আদর্শবান ব্যক্তি হিসাবে দেখে, তুমি ন্যায্য বিচার কর বলেই তুমি আমাকে এগুলি জানিয়ে এসছো এবং আমিও তাই জানি। কিন্তু তুমি ঐদিন কতটা ন্যায্য করেছ, কিংবা কতটা বিচারিক হিসাবে কাজটি করেছ তা তোমার কাছেই থাকুক। 

যাই হোক মান্নান, আমি যে কাজটা কখনো করতে চাই নাই, কখনোই চাই নাই,  তুমি আমাকে সেই কাজটাই করতে বাধ্য করেছ। আর সেটা হচ্ছে তোমার রাখা হিসাব অনুযায়িই আমি একটা ক্যাল্কুলেসন করেছি। আমি তোমার ব্যাপারে অনেক হিসাব অনেক সময় লিখে রাখি না কিন্তু আমার ফ্যাক্টরি রাখত, আর তার উপরে বেজ করেই একটা হিসাব আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি। সব হিসাবের বিপক্ষে বিস্তারিত এক্সকেল শিট আছে, রেজিস্ট্রি খাতা আছে, তুমি যদি চাও, আমি সেগুল ফটকপি করে দিতে পারব। এর মানে এই নয় যে, আমি তোমার কাছে কোন টাকা পয়সা চাচ্ছি পাওনা হিসাবে। এটা শুধু তোমার জানার জন্য দেওয়া। এই হিসাব দিয়ে আমি তোমার কাছ থেকে কোন কিছুই প্রত্যাশা করছি না। কোন টাকা পয়সাও দাবি করছি না। শুধু তোমাকে জানানোর জন্য এই হিসাব পাঠানো। তুমি মাইন্ড করতে পার কিন্তু যেহেতু তুমি বিচার সাল্লিশি কর, তোমার মধ্যে অন্তত একটা বিচারিক ক্ষমতা আছে বলে আমার ধারনা এবং তোমার মাইন্ড করার কথা নয়।  অন্তত সত্যি  জিনিসটা তোমার জানা থাকল। তোমাকে কিছু দিতে হবে না আমাকে, এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত থাক। আর আমি আমার এই চিঠির উপর কোন মন্তব্য ও আশা করি না। যদি ক্যালকুলেসনে ভুল থাকে শুধু ওটা আমি তোমাকে নিয়ে বসতে পারি, তাছাড়া আমার অন্য কোন মন্তব্যে আমি কোন মন্তব্য আশা করি না। 

 আর একটা ব্যাপার আমার কাছে অবাক লাগছে যে, তুমি আমার এই দুঃসময়েও শুধু নিজের ব্যাপারটাই দেখছ, তোমার কি একটা ফ্রেন্ড ও নাই, একটা কলিগ ও নাই, কিংবা একজন আত্তিয়ও নাই যে তোমাকে কিছু আর্থিক সাহায্য দিয়েও সাহায্য করতে পারে? এই অবস্থাটা ভাল নয়। সব মানুষের বিপদের সময় কেউ না কেউ এগিয়ে আসার জন্য কিছু ফ্রেন্ড, কলিগ, আত্মীয়সজন তৈরি করে রাখতে হয় যারা বিপদের সময় কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে। আমার কাছে মনে হচ্ছে তোমার এই সার্কেলটা তুমি তৈরি করতে পারন নাই। যাই হোক।  

ভাল থেক। চিঠিটা লম্বা করলাম না। দরকার হলে পরে আবার লিখব। রিভার সাইডের লসের ব্যাপারটা নিয়ে আমরা অনেক চিন্তিত এবং এটা নিয়ে আমরা অনেক অসুবিধায় আছি সন্দেহ নাই। তারপরেও আল্লাহ আছেন। ধন্যবাদ। নিচে একটা সামারি করে দিলাম হিসাব নিকাশের। তুমি তোমার অবসর সময়ে দেখে নিও। আমি জানি তুমি বিচার কাজ কর এবং নিরপেক্ষ কাজ কর। নিজের বিরুদ্ধে কোন ইনফরমেশন গেলেও যে তা মেনে নেয় তাকে বলা হয় নিরপেক্ষতা। এটা তোমাকে আমার শিখানোর দরকার মনে করি না। তুমি আমার থেকেও বুদ্ধিমান, সেটা তুমি নিজেই বলেছ। এবং আমারও তাই ধারনা যে, তুমি আমার থেকে বেশি বুদ্ধিমান।

আখতার

  

মা ইন্ডাস্ট্রিজে প্রতিদিনের কালেকশন আকারে টাকা জমা হয়েছে মোট (Collection) 48231540
মা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে মান্নান পেটি ক্যাশ আকারে নিয়েছে (Loan to Mannan) 10004618
মান্নান মা ইন্ডাস্ট্রিজকে ফেরত দিয়েছে (Loan Refunded by Mannan) 5328531
মান্নানের কাছে মা ইন্ডাস্ট্রিজ পাবে 4676087
মেজর আখতার কর্তৃক মান্নানকে রিভার সাইড/ব্যাংক থেকে জমি এবং ব্যক্তিগত খরচের জন্য প্রদান করা হয় 2039919
হাবিব ভাইয়ের ২৪৪ এবং ৫৮ শতাংশ, তানির ২৬ শতাংশ, শওকতের ১ বিঘা জমির মোট মুল্য সমন্নয় পূর্বক মান্নান অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে 438900
১৭/১/২০০৮ থেকে ১৮/১২/২০১২ পর্যন্ত (৬/২/২০০৯ ৯/৬/২০১২ তারিখের হিসাব ছাড়া) মান্নানকে মেজর আখতার বিভিন্ন সময়ে অমলদের জমি, ইদ্রিসের জমি, বেলা বুয়ার জমি, এবং অন্যান্য বাবদ ক্যাশ প্রদান করেন  4241500
নভেম্বর ২০১৫ জেলে যাওয়ার সময় থেকে জানুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত (মাহিমার বিয়ে, মান্নানের স্ত্রীদের জমি রেজিস্ট্রেসন সহ) ইত্যাদি বাবদমেজর আখতার মান্নানের জন্য খরচ করেন 2024000
নোট-১ এখানে উল্লেখ থাকে যে, ফ্যাক্টরির সর্বশেষ বিদ্যুৎ বিল মোট ১৫ লক্ষ টাকা (বিদ্যুৎ লাইন কাটার পর চেকের মাধ্যমে ১১ লক্ষ টাকা এবং জানুয়ারি ২০১৩ মাসের বিদ্যুৎ বিল ৪৪১০০০ টাকা), ফ্যাক্টরির বকেয়া বেতন ২ লক্ষ টাকা, আবু বকরের দানার বকেয়া বাবদ ৩ লক্ষ টাকা (যা এখনো প্রি মাসে দিচ্ছি), ফ্যাক্টরিতে রক্ষিত সর্বশেষ ফিনিসড মালের দাম সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা (মান্নানের হিসাব অনুযায়ি), মার্কেটে বাকি ৫ লক্ষ টাকা (মান্নানের হিসাব অনুযায়ি), ক্রাশ মাল এর দাম ২ লক্ষ টাকা (মান্নানের হিসাব অনুযায়ি), কাইউমের লোহা লক্কর বিক্রির প্রায় ১ লক্ষ টাকা,  আল্লার দান দোকানে বাকি ৩০ হাজার টাকা, ফজল সাহেবের বাকি প্রায় ৪৫ হাজার টাকা, সর্ব সাকুল্যে সোয়া ৩৬ লক্ষ টাকা হয়। 3625000
বর্তমানে মেজর আখতার মান্নানের কাছে পাবে 17045406
নোট-২: মান্নান যদি বর্তমানে আমিরদের জমি ২০৪ শতাংশ, বেলা বুয়ার জমি ২৯ শতাংশ, মান্নানের নিজস্ব জমি ৫৪ শতাংশ, এবং ইদ্রিসদের জমি ৬৬ শতাংশ যা মেজরের নামে কেনা হয়েছে, অমলদের ৪০০ শতাংশ মোট প্রায় ৭০০ শতাংশ জমির মুল্য বাবদ হিসাব করে উক্ত পাওনা সমন্নয় করেও তাতে প্রতি বিঘার জমির মুল্য দাড়ায় 803569.14
এখানে উল্লেখ থাকে যে, এক্সেল শিটে কখন কোন জমির জন্য কত টাকা দেওয়া হয়েছে তা বিশদ ভাবে বিবরন দেওয়া আছে।
অন্যান্য হিসাব
মেসার্স রাবেতা থেকে ২৯ কিস্তিতে মান্নান মোট অগ্রিম এবং মালের সমন্নয় পূর্বক টাকা নিয়েছে (রাবেতার কাছ থেকে অগ্রিম ১০ লক্ষ টাকা নেওয়ার কোন হিসাব মা ইন্ডাস্ট্রিজের রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ নাই) 305900
মা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে ৭ কিস্তিতে মান্নান নতুন পিকআপ এর ইন্সটলমেন্ট দিয়েছে 360000
মা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে মাহিদার জন্য ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজের জন্য খরচ করা হয়েছে 347000
দুলালের বিদেশ যাওয়ার জন্য মা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে 463000
মা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে আলি ভাইকে টাকা দেওয়া হয়েছে 60000
মা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে কন্সট্রাকসন কাজের জন্য ফজল ভাইকে টাকা দেওয়া হয়েছে 76100

০৩/০৯/২০১৩-মাসুদ রিমুনাকে চিঠি

০৩/০৯/২০১৩- মাসুদ এবং রিমুনাকে লিখা চিঠি

 

Dear Masud and Rimona

It was indeed a great time for me and my family to have you within us even for a short time. We thank Almighty that we had the blessings to have kid like you in our family who gave us peace in mind with your good gestures and attitudes. Definitely it was a nice and remarkable tour that you presented us. In fact, after all this hassle and many disturbances in your present tour in Bangladesh, I will like to address it as a big lessons both for you and us. Let this mail be read by your great mom and Dad whom I always wanted as part of my souls and in deed they are.

Masud, this mail is very important to let you know about yourself from me and as well as from my family though I didn’t talk to other members while writing this mail on behalf of them. But I know if they read my mail, they will never accuse me about what I posses inside me. Before I write you anything, let me write something about my own experiences in my life.

I told you that after I married your aunty, literally I broke up with whole of my family and it was the most crucial event in my life because in one side I was loving them and in another side I was unable to let your aunty go away from my life. It was a state of anxiety both in mental and physical. I didn’t know if I am taking the right decision. I wasn't sure if I was in the right path. Constantly I was monitoring myself both from a perspective of Major Akhtar and from the perspective of non-Major Akhtar.

I clearly understood that many people love me for many reasons, and not only for beauty or anything. Some loved me fearing God, someone loved me as I was a good person, someone loved me because I help them, and some one loved me because I was a loveable person. All these loves were no meaning to me except the love I always wanted from your Dad and from my family. Still I had the prayer for them to God that I get back the love from them. It took almost 25 years time to understand that they truly loved me even they never expressed it open. I have no confusion now about their loves and sympathy. But within these time frame, I learnt something. , my life had changed; I learnt growing experience for me. It posed as opportunity for learning and growing coz I learned to do things by myself. I learned to have fun by myself. I discovered things I like doing and ways I could be of help to others. And I had been able to distinguish my priorities. The most wonderful thing that happened was that I learned how to be a whole person. I was able to find meaning in life. I learned my lessons well and I believed that when we've learned our lessons well, we moved on to higher or more advanced stages of development. Those events lead me to where I am now. But I was never a complete man without a family where there is a brother for whom I am here, there are sisters for whom I grew well, there is a village from where I stood up. After all this, I felt truly alone. Even many are beside me but still I was alone. A surge of fear gripped me. I was scared to be alone because I was used always to of having them around me all the way, in dreams, in thoughts, in imagination and what not. I didn't know how I would be able to cope life without them. I didn't know what life would be without them especially my mother and your dad and his family where you were also a part, Yusuf is also a part.  I felt like something had been torn from me, like I was no longer whole because I always found my other half when I was with my family. I was hurting so bad. But I had faced the reality knowing that I will, possibly, never again share a joke with them, ask a question only that they can answer, talk to then, be with them or even make loving smile with them. I had faced those things in order to survive and cope life even if it was utterly heart-wrenching.

Through that event, I realized that life is unstable. That life is unsure because I never thought I would be able to survive and cope. I never thought I would be able to overcome that crisis. I never thought that it would lead me to where I am now. It made me aware that I am not in control of all the situations in life. It made me realized that I am capable of being hurt. I was able to understand that life does not totally consist of happiness and unhappiness. Life is unfair as they say because I realized that the more I try to be happy, the more it eludes me. I realized that life is really uncertain; we’ll never know what will happen next. It leads me to a realization to the confrontation of fundamental problem of human existence in a way that I had been able to survive the crisis in the event of my life. I had been able to surpass the critical points because I was determined, strong-willed and had strong faith in God to re-direct my life. I had been able to confront the need of power to defend my life's purposes because I was able to change my life. It brought new meaning to my life. I realized that there was more meaning to it than just a mere experience of hurt and pain.

You know Masud?  The ultimate measure of a man is not where he stands in moments of comfort and convenience, but where he stands at times of challenge and controversy. It's easy to say sorry for what we have done. It's also easy to forgive and forget, but one thing will never be easy, is to trust again after the disappointment. I learnt that happiness comes to those who give love freely and who don't demand that others love them first. It’s like the sun that is just generous which shine without asking first whether people deserve their warmth or not. I got it from your dad and Mom. They are like Sun and give people lights the way they gave you everything you and me needed even we didn’t know their hearts and their pains but they did their parts.

The definition of love is so varieties and so much big in horizon that many things can be derived from single word “LOVE”. Great love can make a weak man strong. True love can make a brave man fall to his knees. But if I like to define its opposite side, it has tremendous set back also. Failure in Great Love can make strong man weak and brave man as apathy in life. No one is important to him then. In such dismissal courses I learnt Masud that LIFE in this world is the hardest course we could ever take and we need someone or bunches of people who loves us unconditionally without any returns. Its hard to judge them always but they are there. Its our responsibility to find them in right time. And most sad part is that to judge and find them is not easy when we are emotional or outraged. But it is always there. Frankly speaking Masud, it could only be taken once. No review, no masteral, no doctorate. We don't have any other DEAN or GOD to find them but heart and soul. And once we have graduated from this school, we are done and gone. Only eternity can tell our rating: PASSED or FAILED. So I will advice you to judge them correctly and also advice you to live each day as if it's your baccalaureate service, because in this course we'll never know the exact date of our closing ceremony. There were hundreds of YESTERDAYS that passed and more TOMORROWS still to come but there's only one TODAY to enjoy. I always live for TODAY Masud and I will advice you to live for only TODAY with whom you are always missing out. You must figure it out whom we miss constantly and truly. I always miss your dad though he is the only person with whom I can be an arrogant and also submissive. I am thankful to Almighty to have your Dad and Mom in my life.

You know Masud? Any relationship apart from what God had planned for us is like the beautiful horizon. It may appear that the sea and the sky meet at some point but we know they are not. You think you are meant for each other only to find out that you are not and you will never be. It is nothing but a mere appearance of an illusion--beautiful yet deceiving... That’s how now I take this relationship Masud. Its like if you paint a good painting, others will enjoy looking at it, but you in painting it, will have learned how to paint. I am just painting everything in my imagination and I have all the choices how I wanna see them and paint. Everything is a trial where a trial can be a success or a failure both. But remember Masud, trials are not reasons to give up or live with, but a challenge to improvement or rejects. Life at times are like a mountain. You know Masud? Mountains aren't easy to climb, but the view from the top is usually the best. I am not mountain or you but within our altitudes of attitudes, we both are like a mountain. A mountain never climbs another mountain, they stay side by side and never meet unless someone bridges them in between. May be your Dad is that bridge where we are both connected. I always consider and ponder to see as a fresh beginning for everthing. Why go on thinking about what had happened, or about what we did yesterday? Life is a river, flowing constantly onward. No drop of it will ever pass the same bridge twice. Now is your chance to do things in new ways, better than ever before. I am doing my best. We always look at our scars as ugly marks. But sometimes, let's try to consider it as a nice thing, as a symbol that something painful in the past had been healed. Do you understand what I meant all through Masud? To be more clear about what I want to mean is that always remember that two things we define our successful life, the way we manage when we have nothing and the way we behave when we have everything. I appreciate your dad when he managed everything well when he had nothing but its your or my turn to manage things well when we have everything ready-made.

Let me cut a joke at the end to flare a smile in your lips, eyes and motions.

There were two friends from Philippines and China. But the Philippines man never speaks Chinese and the Chinese man never speaks English or tagalong. But they were very good friends indeed. With their body language, they could express many feelings. At one time, the Chinese friend got sick and the Phil man went to see him. When the Phil man saw the Chinese friend, he found his condition was really bad with oxygen tube in his nose, many needles in his body and with life support. The Phil friend sat beside the Chinese friend when the Chinese friend was in hospital with such a disastrous condition of health. Suddenly the Chinese friend told him, “ “Li kay wang ki guan” and died. The Phil friend didn’t understand what the Chinese friend meant. So the Phil friend tried to find out actually what his best friend Chinese man wanted to mean. After many years, the Phil friend found another Chinese man and wanted to know what his BEST friend told him before he died. The new Chinese man translated that his friend told him, “Please you are seating on my oxygen tube and I cant breath, Remove yourself from the tube.”

So let we understand our minds and body languages of the family where we all are the BEST friends of everyone. I miss you Masud and I felt truly sad when you left Bangladesh. I am not your biological father but I know you are just like my son masud. My family thinks you are my next kin and you have lots of responsibilities to perform in absence of me and your dad. You are our boy no matter who loves you more but we love you more than anything and without any conditions Masud.

Keep always link and make two steps forward towards the bed where you had lots of memories you left that you will never remember because you were so small to remember those times.

Akhtar

প্রিয় মাসুদ এবং রিমুনা

এটা আমার জন্য খুব ই ভালো সময় ছিল যখন থেকে তোমরা অল্প সময়ের জন্য হলেও বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছিলে এবং আমাদের সাথে সময় কাটিয়েছো। মহান আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ যে তিনি তোমাদের মতো বাচ্চাদেরকে আমাদের পরিবারে ব্লেসিং হিসাবে দিয়েছেন। তোমার এই অল্প সময়ের সান্নিধ্য টা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের ছিলো। তবে, এই অল্প সময়ের ভ্রমনের উপর ভিত্তি করেই আজকে ...

(চলবে)

১৮/০৩/২০০৪-মিটুল, মালয়েশিয়া ট্রেনিং

আজ আমি ঢাকায় এলাম একটা বিশেষ কাজে। কাজটা হলো আমার স্ত্রী আগামী কয়েকদিন পরে বিদেশ চলে যাবে ট্রেনিং করতে। তাকে সব কিছু ঠিক ঠাক করতে হলে আমাকে অনেকগুলি এক্সট্রা ব্যবস্থা করা দরকার।

এম্নিতেই আমি থাকি খোলাহাটি, ঢাকা থেকে অনেক দূর। এর মধ্যে আমার স্ত্রী মিটুলের আবার বৈদেশিক একটা ট্রেনিং এর নাম এসছে মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়ায় সে ট্রেনিং এ যাবে কিনা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো। আমি এক কথায় বলে দিয়েছি যে, তাঁর মালয়েসিয়ায় ট্রেনিং এ যাওয়া উচিত। মিটুলের সেই ১৯৮৮ সাল থেকে যা যা ক্যারিয়ারে দরকার সাহাজ্য করা তাতে আমার কখনোও কোনো কার্পন্য ছিলো না। আর এর প্রধান কারন হলো, মিটুলকে সাবলম্বি করে তোলা। আমি জানি, আমার আসলে সাহাজ্য করার মতো আশেপাশে কোনো হোমরা চোমড়া নাই। না আছে আমার বাবার দিক থেকে কোনো সাহাজ্য, না আছে আমার শ্বশুর বাড়ির দিক থেকে কোনো সাহাজ্য। ফলে যদি আমাকে কেউ সরাসরি সাহাজ্য করার কেউ থাকে সেতা হচ্ছে আমার স্ত্রী মিটুল। আর সেইই যদি ওই অবস্থায় না থাকে বা নিজের পায়ে দাড়াতে না পারে, তাহলে আমাকে বা আমার পরিবারকে অথবা আমার অনুপস্থিতিতেই বা মিটুল কিভাবে সাহাজ্য করবে? এই চিন্তা ধারা থেকেই আসলে আমি সব সময় চেয়েছি মিটুল গড়ে উঠুক।

মিটুলের মালয়েশিয়ার কোর্স টা শুরু হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে। প্রায় ছয় মাসের মতো একটা কোর্স। সমস্যা দাঁড়াবে যে, আমিও ঢাকায় আমার বাচ্চাদের কাছে নাই আবার এবার মিটুল ও থাকবে না। উম্মিকার বয়স মাত্র আট বছর আর কনিকার বয়স মাত্র তিন। এই দুইজনের জন্য দেখভাল করার কোনো লোক ও নাই। বাজার করার লোক, রান্না বান্নার লোক, যদি মেয়েরা অসুস্থ হয়, তাদেরকে হাসপাতালে নেওয়ারও কোনো লোক নাই। তারপরেও আমি মিটুলকে মালয়েশিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্তে আওটল থাকলাম। সব কিছু নির্ভর করে আল্লাহর উপর। বাড়িওয়ালা মেজর (অবঃ) ফেরদৌস স্যার ভালো মানুষ। অন্তত দরকারী প্রয়োজনে তাঁর ডাইরেক্ট সাহাজ্য পাওয়া যাবে এটা একটা ভরষার স্থান ছিলো।

নসিরন নামে আমার বাসায় যে কাজের মেয়েটি আছে, সে অত্যান্ত ভালো একজন মেয়ে। তাঁর কোনো আত্তীয় স্বজন নাই, আমরাই তাঁর বাবা, আমরাই তাঁর মা, আমরাই তাঁর সব। আর নসিরন নিজেও এটা জানে আর এতাও জানে আমাদের বাসা ছাড়া ওর আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। সে আমার মেয়েদের কাছেও অনেক প্রিয় একজন নসি আপু। সমস্ত কাজ কর্ম নসি করতে পারে। কিন্তু কথা বলে খুবই কম। সে নিজে অসত নয় এবং তাঁর চাহিদাও অনেক বেশী নয়। আমি যেভাবে মিটুলের অনুপস্থিতিতে ব্যাপারটা সামলাবো বলে ভাবছি সেতা হলো যে, আমি প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় এসে নিত্য নৈমিত্তিক শুকনা বাজার গুলি করে দিয়ে যাবো। আর ডেইলী বাজার যদি লাগে, পাশেই দোকান পাট আছে, তাদের কে বলে দিলে ওরাই বাসায় পৌঁছে দেবে। দোকানদারদের সাথে আমার সম্পর্কটা আমি এমনভাবে তৈরী করেছিলাম যাতে আমার বাসা থেকে একটা চিরকুট দিলেও দোকানদারগন মালামাল বাসায় কাউকে দিয়ে পৌঁছে দেন। যদি বাকীতেও হয়, তাতেও যেনো সবাই মালামাল দিয়ে দেন এবং আমি ঢাকায় এসে সমস্ত টাকা পয়সা দিয়ে দেবো।

মিটুলের খুব মন খারাপ। কারন সে অনেকদিন থাকবে না, একটা মানসিক টেনসনে আছে বাচ্চাদের জন্য। এই টেনসনটা হয়তো থাকতো না যদি আমাদের বাসায় এমন কেউ থাকতো মুরুব্বি টাইপের যারা অন্তত বাচ্চাদেরকে আগলে রাখতে পারবে। আমার মন খারাপ নয়, আমি অনেক টেনসনেও নাই কারন আমি এভাবেই জীবনে বড় হয়েছি। যাদের জীবনে অনিশ্চয়তা সব সময়ই থাকে, তারা অনিশ্চয়তাকে জীবনের স্বাভাবিক দোসর হিসাবেই ধরে নিয়ে জীবন চালাতে থাকে। আমিও ঠিক সে রকমের একজন মানুষ।

১২/০৯/১৯৯৯-পৃথিবী না দেখা একজনের গল্প

রবিবার, ১৮০০ ঘণ্টা, মাঝিরা ক্যানটনমেনট

গত সুক্রবার (১০.৯.১৯৯৯) আমি আর মিতুল বেশ ভোরে around 6 o’clock in the morning, strip দিয়ে মিতুল এর ইউরিন   পরীক্ষা করলাম। মিতুল conceived করেছে। আমরা দুজনেই  মানসিক ভাবে প্রস্তত to take the second baby. ফলে খবরটা আমাদের দুজনকেই খুশি করেছে। আমরা দুজন কে দুজন অনেকক্ষণ জরিয়ে রেখেছিলাম। আমরা বেশ কিছুদিন যাবত এটা আশা করছিলাম। আজ খুব ভাল লাগল। আমাদের দিনটা শুধো next calculation করেই কেটে গেল। আমরা কাল্কুলেসন করছিলাম কেমন করে মিতুল মীরপুর থেকে ঘিওর যাবে কলেজ করতে? কিংবা উম্মিকা কে ইসকুলে কেমন করে আনা নেওয়া করা হবে? একটা  সমস্যা হয়ে দাঁড়াল।

সব মিলে  আমরা decision নিলামঃ

 (১) মিতুলকে ওতি  তাড়াতাড়ি  মানিকগনজে shift করতে হবে। primary stage এ কোন অব্তাতেই long journey   করতে দেয়া যাবে না। মানিকগনজ থেকে ঘিওর যাওয়া better than that of from Mirpur.

(2)  মানিকগনজ না যাওয়া অবধি মিতুল should be at home. She must not go for a single day long journey for college at Ghior.  তাই ১৫ দিনের ছুটির জন্য দরখাশ্ত করল মিতুল কলেজ বরাবর। শনিবার দিন (১১।৯।১৯৯৯)   আমি একা কলেজে ওর দরখাস্তটা নিয়ে এলাম। 

 আমকে রাতে পুনরায় ঢাকা থেকে  বগুড়া যেতে হবে অথচ এখন ঢাকা থেকে ঘিওর এবং ঘিওর থেকে ঢাকা লম্বা  জারনিটাও খারাপ লাগছে না। বরং I was feeling all through happy because we are taking care for our next baby inshallah.

মিতুল ভাবছে এবার আমাদের ছেলে হবে। আমারও  তাই ধারনা। হয়ত এটা মনের ব্যাপার বা ভাবনা। এই ভাবনার মধ্যে কোন বৈজ্ঞানিক কারন নাই। তবে  যদি আর একটা মেয়েও হয়, আমার কোন খারাপ লাগবে না। আমার একটাই চাহিদা, ও যেন মিতুল এর মতো অথবা আর সুন্দর হয়। আমার মিতুল এর চেয়ে এতো সুন্দর এবং এতো পবিত্র আর কেহ নয় এবং আমি আজো কাওকে দেখিনি।

 “ হে আমার আদরের আগত মানব সন্তান, আমি  তোমাকে এ পৃথ্বীর আলোতে স্বাগত  জানাই। এ বড় সুন্দর পৃথিবী, তোমাকে এ পৃথিবী নেশাগ্রস্ত করে ফেলবে, আমরা আছি তোমার পাশে। তুমি এসো  তোমার মায়ের কোলে। পৃথ্বী কি তোমাকে ডাকছে না? এখানকার আকাশ বড় নীল, সাগর বড় বিশাল, এখানে সূর্য সবাইকে আলো দেয়, পাহাড় আছে, সবুজ গাছ আছে, সুন্দর সুন্দর ফুল আছে, তুমি কি লাল ফুল ভালবাস নাকি নীল? আমি নীল ভালবসি। নীল জানো কি  কিসের অর্থ? “

০২/০৯/১৯৯৯- পারিবারিক অন্তর্কলহ

বৃহস্পতিবার, ছুটির দিন, ১৩৫৭ ঘণ্টা, মাঝিরা 

আমাদের পরিবারটির মধ্যে অন্তরকলহ ব্যাপক বেশি। আমি আমার পরিবার বলতে আমি, আমার বোনেরা, আমার ভাইয়েরা কে বোঝাচ্ছি। আমার মা বড় নিরিহ মানুষ। সে কোন পক্ষেই নয়। সে সত্তেই খুব অসহায়। আমি আমাদের পরিবারের সদস্যদের এবং যাদের সংগে আমাদের সদস্যরা মেলামেশা করে, আমি তাদের সবাইকে খুব কাছে থেকে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। আমি তাদের কারোর মধ্যে কোন difference দেখিনি। এই পরিবারের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, প্রতিটি সদস্য প্রতিটি সদস্যকে ভালবাসে, কিন্ত বিশ্বাস করে না। আবার অন্যদিকে, এই ভালবাসার বহিরপ্রকাশ খুব কম। এরা যানেনা কেমন করে ভালবাসার কথা বলতে হয়। ফলে একজন আরেকজনকে খুব সহজেই ভুল বুঝে। আর ভুল বুঝাবুঝির থেকে Gap তৈরি হয়। আমাদের পরিবারেও এই gap অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। গ্যাপ তৈরি হয়েছে ভাইয়ের সংগে  বোনের, বোনের সংগে ভাইয়ের, ভাইয়ের সঙে ভাইয়ের। একজন আরেক জন তাদের এই ভুল বুঝার কারন বেখ্যা করতে পারেনা। তারা অবস্য জানে না কি কারনে তাদের  এই সমস্যা। ফলে শেষে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে হৈ চৈ আর রাগারাগি। সমাধান নাই।

এই পরিবারের সদস্যরা নিজের ভুল কখনই স্বীকার করে না, এবং তারা যা ভাবে ওটাই মনে করে যে সবচেয়ে ভাল সিদধান্ত। অন্য কারও সিদ্ধান্ত্ব গ্রহনযোগ্য নয়। এখানে আরো একটা মজার ব্যাপার হল, তারা নিজেরা জয় হবার জন্য  যা কিছু করার তাও করার অবকাশ রাখে। ফলে স্বার্থ বজায় রাখার কারনেই  একই ঘটনা এক এক জনের কাছ থেকে এক এক রকম শোনা যায়। এবং এর কোন শেষ নেই। “I am sorry, or I love you, or I miss you” এই জাতিয় কোন কথা এই ফামিলির লোকজন বলতে শিখেনি। তাই  বলে কি এই সব এই  ফামিলিতে  ঘটছে না?

 অবস্যই ঘটছে, কিন্তু বহির প্রকাশ ঘটছে না। এই গুলোর বহির প্রকাশ থাকাটা অত্যন্ত জররি। তবে  একটা জিনিশ আমি এখন জানি না, তা হল, এরা কি এদের নিজ নিজ ফামিলির সঙে এই বার্তা আদান প্রদান করে? হয়ত করে এবং সেটা আমার জানা নাই। যেমন, আমি চাই আমার  সন্তান বোজক যে আমি ওদের কে ভালবাসি। আমি ভুল করলে সরি বলতে চাই, মিস করলে বলতে চাই, আমি তোমাকে মিস করছি। এবং এভাবেই ওরা শিখুক যে একটা ফামিলি এভাবেই গড়ে  ওঠোক।  আমি এখনো বুঝিনা আমার ভাই আমাকে কতটা ভালবাসে, আমি এখনো বুঝিনা আমার বোন আমাকে  কতটা ভালবাসে, আমি এখনো বুঝিনা আমি আমার ভাইকে বা বোনকে কতটা ভালবাসি। মাঝে মাঝে আমি আসলে কিছুই বোঝতে পারি না। কি জানি একই অভিযোগ না জানি আমার সন্তানেরা করে কিনা কে জানে।

০৬/১২/১৯৯৮-মা পরিবারের বন্ডেজ?

রবিবার, মাঝিরা সেনানীবাস, রাতঃ ১১টা ২৩ মিনিট

মাঝে মাঝে আমি একটা অদ্ভুদ ব্যাপার নিয়ে ভাবি। কিন্তু আমি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না। কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার মাঝে মাঝে বেশ ভাবতে ইচ্ছে করে। আমরা দুই ভাই, পাচ বোনের মধ্যে এখন চারজন বেচে আছেন। মাও বেচে আছেন। মা গ্রামে থাকেন, আমরা সবাই মাকে কেন্দ্র করেই প্রকৃতভাবে আসলে ঈদে, পর্বে কিংবা যে কোনো পারিবারিক অনুষ্ঠানে একত্রিত হই। আমি বগুড়ায় আছি, মিতুলকে ছাড়াও আমি যখন ছুটি নিতে চাই, তার মাঝেও মায়ের সাথে দেখা করার প্রবনতায় আমার ছুটি যেতে ইচ্ছে করে। হাবীব ভাই আমেরিকায় থাকেন, তার সাধারনত সবসময় বাংলাদেশে আসা হয় না। উনি আসতেও হয়তো চান না। হাবীব ভাইয়ার এই যে না আসার অনীহা, কোনো একদিন হয়তো উনাকে এর বড় মাশুল দিতে হতে পারে। এর কারন একটাই। আজ হাবীব ভাই যে সব কারনে তার অনীহা হচ্ছে, যেমন, বোনদের প্রতি উনার আস্থা নাই বললেই চলে, গ্রামের প্রতি উনার অনেক অনীহা কারন গ্রাম তার স্ট্যান্ডার্ড নয়। থাকা অসুবিধা, খাওয়া অসুবিধা, পায়খানা প্রস্রাবে অসুবিধা। পরিবেশ তার মনের অনুকুলে নয়। তার উপর তার সমসাময়ীক কোনো বন্ধুরাও নাই যে, উনি কোথাও আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারবেন। একদিক দিয়ে ভাবলে ব্যাপারটা মনে হয় ঠিকই আছে। আবার যদি সুদূরপ্রসারী ভাবনায় ভাবি, এই বিচ্ছিন্নতা কোন একদিন হাবীব ভাইকে হয়তোবা মাশুল দিতে হবে। কেনো বলছি, তার একটা ব্যাখ্যা আছে। মানুষ বড় হয়, তার সম্পদ হয়, একদিন সম্পদের চাহিদা আর থাকে না। তখন দরকার হয়, আসলে দরকার না, এটাই হবে যে, ইচ্ছে হবে সেই চেনা পরিচিত বাল্যকালের জায়গাগুলিতে ফিরে যাই, তারপর সেখানে সেই গ্রাম, সেই আদি নদী, মেঠো পথের ধারে হাটতে হাটতে সময় কাটানোর বাসনা হবে। সবাই ওই সময় একসাথে জীবিত নাও থাকতে পারে, কিন্তু এই সমসাময়ীক বন্ধুদের ডালপালারা অর্থাৎ তাদের বাচ্চা কাচ্চারাও এক সময় বন্ধুতে পরিনত হতে পারে। কিন্তু এটা সম্ভব তখনই যখন অবিচ্ছিন্ন একটা সম্পর্কের মধ্যে কেউ থাকে।

যাই হোক, আমি ঢাকার বাইরে থাকি বিধায় মায়ের উপর সন্তানের যে প্রাত্যাহিক দায়িত্ত, বাজার সদাই, দেখভাল ইত্যাদি করা সম্ভব হয় না। কিন্তু আমাদের বদি ভাই অত্যান্ত আন্তরীকতার সাথেই মায়ের এই যত্নটা করেন। যদিও তিনি আমার আপন সহোদর ভাই নন। মাসে মাসে এককালীন বাজার করে দিয়ে আসেন, মায়ের খোজ খবর নেন। মাকে তিনি মা বলেই জানেন। এই রকম একজন নিঃসার্থবান মানুষ যুগে যুগে পাওয়া যায় না। বদি ভাইয়ের সাথে আমার বোনদের দেখা হয়, কথা হয়, যেদিন তিনি গ্রামে যান, সেদিন সবার সাথেই উনার দেখা সাক্ষাত হয়। এমন কি আমাদের গ্রামের অনেকের সাথেই উনার এখন ব্যক্তিগত পরিচয় আছে। সবাই উনাকে স্যার বলেই সম্বোধন করেন।  

কিন্তু সবচেয়ে বড় ভয় হয় আমার যে, হাবীব ভাই দেশে না আসার কারনে যেমন তার সন্তানদের সাথে আমাদের অন্যান্য ভাই বোনদের সন্তানদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠছে না, তেমনি বদি ভাইও তার সন্তানদেরকে আমাদের এই সম্পুর্ন পারিবারিক সিস্টেমের সাথে বহুমুখী বন্ধনের চেষ্টা করছেন না। ফলে আমাদের বোনদের সন্তানেরা যেমন বদি ভাইয়ের সন্তানদের সাথে বন্ধুত্ত গড়ে উঠছে না, তেমনি হাবীব ভাইয়ের সন্তানদের সাথেও একই অবস্থা। এই বন্ধনটা ছাড়া ছাড়া ভাবের। সতস্ফুর্ততা নাই। আমি যখন ঢাকায় যাই, বেশীর ভাগ সময়ই আমি খেয়াল করেছি যে, আমার সময় কাটে কিছু অংশ মানিকগঞ্জে, কিছু অংশ গ্রামে আর মাঝে মাঝে মীরপুর বদি ভাইয়ের বাসায়। আর সেটাও বেশ অল্প সময়ের জন্য।

হাবীব ভাইয়ের ছেলে মাসুদের সাথেও কারো কোনো সখ্যতা গড়ে উঠছে না। এমনকি আমার সাথেও না। তাতে যেটা হচ্ছে তা হলো, কোনো একদিন, আমরা হয়তো এভাবেই ছাড়া ছাড়া ভাবেই দুনিয়া ত্যাগ করবো। কে যে কখন দুনিয়া থেকে চলে যাবে, তখন পরিবারের অনেকেই হয়তো পাশে থাকবে না। এটা মর্মান্তিক।

আমার কাছে মনে হচ্ছে, মাকে কেন্দ্র করে এখনো কিছুটা বন্ডেজ আমাদের সবার মধ্যে আছে। কিন্তু এই বন্ডেজটা কি খুব শক্ত একটা বন্ডেজ? এই বন্ডেজের সবচেয়ে দূর্বল দিক হচ্ছে, যেদিন মা থাকবেন না, সেদিন এই সেনটার পয়েন্ট "মা" এর অভাবে বাকী সব বন্ডেজ নিমিষেই ভেংগে যেতে পারে। কিন্তু এটা তো কোনো পারিবারিক সম্পর্ক হতে পারে না?

কিন্তু আজ যদি আমরা এমন একটা বন্ডেজ তৈরী করতে পারতাম যেখানে "মা" সেন্টার পয়েন্ট নয়, তাহলে মা যেদিন থাকবেন না, সেদিনও এই পারিবারিক বন্ডেজটায় কোনো প্রকার হুমকীর সম্মুখীন হতো না। কিন্তু আমার ধারনা, আমরা সেটা করছি না। আর এর ফলাফল দূর্বিসহ। আমাদের পরবর্তী জেনারেশন একে অপরের কোনো খোজ রাখবে না, চিনবে না, হয়তো কখনো জানবেও না যে, অতীতে কোনো একসময় আমাদের মধ্যে এমন একটা সম্পর্ক বিরাজ করেছিলো। অথচ তখনই হয়তো এই বন্ডেজটার অনেক প্রয়োজন।

একটা সময় আসবে, হাবীব ভাইয়ের সবকিছু থাকা সত্তেও তিনি অনিরাপদ ফিল করবেন, পাশে কাউকে হয়তো পাবেন কিন্তু তারা তার পরিবারের কেউ না। আমিও হয়তো ভাববো, আহা যদি এই মুহুর্তে আমার পাশে কেউ থাকতো যাদের শরীরে আমার রক্ত বা যারা আমার একান্ত লোক। আমার পরিবারের বাচ্চারাও হয়তো একদিন প্রশ্ন করবে, আমাদের অতীতের জেনারেশন ছিলো না? তারা কোথায়?

আজ আমি একটা হাইপোথিসিস ডায়াগ্রাম তৈরী করে বুঝতে চেয়েছি, আসলে মা সেন্টারড বন্ডেজ কি আর মা ছাড়া বন্ডেজ কি। গা শিউরে উঠে।

২৫/১১/১৯৯৫-বোষ্টনে বাঙ্গালির দাওয়াত

Categories

সন্ধার সময় ভাইয়া আজকে আমাকে নিয়ে একটি বাঙ্গালী পরিবারে বেরাতে নিয়ে গেলেন। ভাইটির নাম বশীর। তিনি পাকিস্থানী। কিন্তু আপা আমাদের ঢাকার তেজকুনী পাড়ার মেয়ে। বহু বছর আগে তারা দেশ ছেড়েছে। আগে থেকেই সম্ভবত তারা জানতেন যে, আমি আসবো। ফলে আমার সুবাদে এবং ভাইয়ার সুবাদে আরো অনেক বাঙ্গালী পরিবারের কেউ কেউ এসেছেন। আমি কাউকে চিনি না বলে খুব একটা সখ্যতা গড়ে তুওলতে পারছি না। কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই আমাকে একটি প্রশ্ন বারবার করছিলেন যে, আমার ভাই আমেরিকার এতো বড় একতা ইউনিভার্সিটিতে প্রোফেসর কিন্তু আমি আর্মীতে গেলাম কেনো? আর্মী একতা ভালো প্রোফেশন না। তারা মনে করেন, Why should someone to choose a profession to kill someone to survive himself? Its risky and not a good profession.

আমি হেসে হেসেই বলছিলাম, কাউকে না কাউকে তো দেশের আর্মীতে যেতে হবে, সেতা না হয় আমরা কজন গেলামই।

পার্টিতে হাতে বানানো মিষ্টি খেলাম, পোলাও করেছিলো, সবাই খুব আনন্দের সাথে ত্রিপ্তি করে খেয়ে বল্লো, যাক, ছোট ভাইয়ের সুবাদে আজ নাকি তারা বাঙ্গালি খাবার খেলো।

২০/১১/১৯৯৫- বোষ্টন

Categories

এই কয়দিন ভাইয়ার বাসায় আছি। শীতের প্রকোপ কমছে না। বাইরে গেলেই তুষারপাত। গতকাল সবাই মিলে একটি ছবি দেখলাম। দি রেইন ম্যান। একটা অটিষ্টিক বাচ্চার কাহিনী। ইউসুফের সাথে প্রচন্ড মিল রয়েছে। সকালের দিকে আমি মাসুদের স্ক্লে গিয়েছিলাম। সুন্দর একটা স্কুল। কো-এডুকেশন অবশ্য। স্কুলে গিয়ে বুঝলাম মাসুদ খুব জনিপ্রিয়। ওর ক্লাশ টিচারের নাম মিস ম্যাপল। মাসুদ আমাকে ওর ক্লাশ টিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর ঊনি আমাকে বললেন যে, আমার পক্ষে সম্ভব কিনা হাইতির উপর একটা ছোট খাটো প্রেজেন্টেশন দেওয়া। আমি আসলে একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। তারপরেও বললাম, যদি ম্যাপ থাকে তাহলে আমি হয়ত চেষ্টা করতে পারি।

যেই বলেছি যে, আমি ৩০/৪০ মিনিটের একটা ক্লাশ নেবো, অমনি সব ছাত্ররা তাদের টেবিল চেয়ার রুমের একদিকে টানাটানি করে সরিয়ে দিলো, একটা হল ঘর হয়ে গেলো। এই চেয়ার টানাটানির সময় আমি আর মাসুদ মিলে ওদের কম্পিউটার থেকে হাইতির একটা ম্যাপ বের করে ফেললাম। আর আমি একটা ছোট নোট লিখে ফেললাম কি কি বল্বো আর কি কি বল্বো না।

বাচ্চারা খুব হাসি খুশীতে সবাই বসে পড়লো। আমারো খুব ভালো লাগছিলো এই সব পটেনশিয়াল বাচ্চাদেরকে কিছু একটা বলতে।

তাদের হাইতি সম্পর্কে যতোতা না উতসাহ, তাঁর থেকে বেশি উতসাহ দেখলাম আর্মীর জীবন নিয়ে। কি হয়, কিভাবে থাকি, কিভাবে অস্ত্র চালাই, সব অস্ত্র চালাইতে পারি কিনা। একটা গুলি করলে কতজন মরে, আমি শত্রুদেরকে কিভাবে ঘায়েল করি। আকাশ থেকে লাফ দিয়ে পড়তে পারি কিনা। যদি পারি, আর যদি আর না বাচি তাহলে কিভাবে কি আরো কতো যে কি?

হাইতিতে আমি কতজনকে এরেষ্ট করেছি, ওরা আমাদেরকে মারে কিনা, ওদের কি অস্ত্র আছে, সরকার সবাইকে একসাথে ধরে মেরে ফেলে না কেনো ইত্যাদি। ৪০ মিনিটের ক্লাস হয়ে গেলো প্রায় দেড় ঘন্টার। মিস ম্যাপেল শেষে এসে বললেন, মাসুদ এবং আমাকে অনেক ধন্যবাদ ওদেরকে সুন্দর কিছু বলার জন্য এবং আমি টাইম দেওয়ার জন্য।

ওদের স্কুল দেখে একটা জিনিষ বুঝলাম, স্কুলের প্রতিটি দেওয়ালে দেওয়ালে হরেক রকমের ইনফর্মেশন, ম্যাপ, বিভিন্ন সংবাদ এবং বিশেষ ব্যক্তিদের ছবি সহ তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনী। মাসু মাত্র ক্লাস এইটে পড়ে। ওদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক বাস্তব ধর্মী। বিভিন্ন ধর্মের ছেলেমেয়েরা আহে। কয়েকজন মুসলমান ছাত্রো এবং ছাত্রীকে দেখলাম। ছাত্রীরা ছোট ছোট হেজাব পড়ে আছে। আমাকে দেখে সালামও দিয়েছে।

সুন্দর একতা সময় কাটলো আজ কে মাসুদের স্কুলে।

০৫/০৯/১৯৮৩-হাবীব ভাইয়ের বিয়ে

ডঃ মোহামেদ হাবীবুল্লাহ আমার বড় ভাই। ওনাকে আমার বড় ভাই বললে ওনার উপর সঠিক মুল্যায়ন হবে না। উনি একাধারে আমার বড় ভাই, পিতার সমতুল্য এবং আমার সকল কিছুর গার্জিয়ান। শুধু আমার নয়, আমাদের পুরু পরিবারের সবার গার্জিয়ান। আমি আমার সমগ্র ধ্যান ধারনা আরোপ করেও কখনো আমার বাবা কেমন ছিলেন, তার কোনো অবয়ব আমি আমার কল্পনায় আনতেও পারি নাই। কারন আমি আমার বাবাকে কখনোই দেখি নাই। আমার বয়স যখন সম্ভবত দুই কিংবা আড়াই, তখন তিনি মারা যান। ফলে ওই বয়সের একটা বাচ্চার কাছে কোনো মুরুব্বী মানুষের চেহারা কেমন ছিলো, কে আমার কি হতো এসব তো মাথায় যেমন থাকার কথা না, তেমনি আমার মাথায়ও নাই। যাই হোক, সে প্রসংগ এখন না টানি।

আমি সবেমাত্র ইন্টার পাশ করে গ্রামে এসেছি। পড়তাম ক্যাডেট কলেজে। সেই ১৯৭৭ সালের ১৯ শে জুন থেকে ১৯৮৩ সাল নাগাদ এক নাগাড়ে ক্যাডেট কলেজে পরাশুনা করে ইন্টার পাশ দিয়ে সবেমাত্র গ্রামে এসেছি। হাবীব ভাই থাকেন আমেরিকা। তিনিও ১৯৭৮ সালে আমেরিকায় গিয়েছিলেন পড়াশুনা করতে, অতপর পরাশুনা শেষে তিনি সেখানেই থেকে গেলেন। প্রায় ৬ বছর পার হয়ে গেছে ভাইয়ার আমেরিকার জীবন। তিনিও দেশে এসেছেন। এই লম্বা সময়ে হাবীব ভাই আর কখনো দেশে আসেন নাই। এবার দেশে এসেছেন প্রধানত বিয়ের উপলক্ষে। হাবীব ভাইয়ের অবর্তমানে আরো একজন মানুষ আছেন যিনি একাধারে হাবীব ভাইয়ের মতোই আমাদের গার্জিয়ান আবার হাবীব ভাইয়ের ও একাধারে  উপদেষতা কাম বন্ধু কাম ভাই কাম গার্জিয়ান বলা চলে। উনার নাম বদ্রুদ্দিন তালুকদার। এই দুজন মানুষকে আমাদের বাড়ির প্রতিটি সদস্য শুধু ভয়ই পায় না, বরং তাদের সামনে কোনো প্রকারের ব্যক্তি স্বাধীনতা আমাদের কারোরই চ্ছিলো না। তারা যদি কোন এক সোমবার কে বলেন আজ রবিবার, তাহলে সেটা রবিবারই।

আমার পাচ বোন, আর আমরা দুই ভাই। এর মধ্যে আমাদের সবার বড় বোন যার নাম সাফিয়া খাতুন, সে ১৯৭৯ সালেই সন্তানহীন অবস্থায় মারা গিয়েছেন। ফলে এখন বর্তমানে দেশে আছি আমরা চার বোন আর আমি, এবার হাবীব ভাই দেশে আসাতে সবাই এক সাথেই গ্রামে রয়েছি। বোনদের সবারই বিয়ে হয়ে গেছে। যে যার যার যোগ্যতায় যেমনই হোক সংসার পেয়েছে এবং বাংলাদেশের আরো হাজার হাজার পরিবার যেমন থাকে তারাও অভাব কিংবা প্রাচূর্য নিয়া ভালই আছে। বোনদের সবারই বাচ্চা কাচ্চা আছে। আমাদের ভগ্নিপতিরাও এই দুই জন মানুষকে (হাবীব ভাই এবং বদি ভাই) আমাদের মতোই যেমন মুরুব্বি মানেন তেমনি তাদের ও কোনো সাহস নাই যে, মুক্ত বাক স্বাধীনতার। অনেকতা সমীহ করেই সবাই চলেন। আর এতার আরেকটা কারন ছিলো যে, তারা দুজনে শিক্ষিত এবং সময়ে অসময়ে অনেক কাজেই লাগে, হোক সেতা কনো অর্থক্রী সাহাজ্য কিংবা অন্য কোনো বিশয়ে।

আমি ক্যাডেট কলেজে পরার কারনেই হোক আর আমার চরিত্রের বইশিষথের কারনেই হোক, আমি ছোট বেলা থেকেই একটু এক রোখা ছিলাম। যতোটা মুক্ত বাক থাকার দরকার কনো কোনো ক্ষেত্রে আমি তার থেকেও হয়তো বেশী সোচ্চার ছিলাম। হয়তো এটা ইমোশনাল কারনেই হোক আর যুক্তির ধারেই হোক। আমি অন্যান্য বোনদের মতো কিংবা তাদের পতীদের মতো অতোটা নীরব ছিলাম না।

হাবীব ভাইয়ের বিয়ে কোথায় হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে, কে সেই মেয়ে যাকে তিনি বিয়ে করবেন তাদের কোথায় বাড়ি কি তাদের স্ট্যাটাস কিংবা কিভাবে কি হচ্ছে এ ব্যাপারে আমরা পরিবারের কোনো সদস্যই কনো কিছু জানতাম না। আর জানলেও এতা কোনো পরিবর্তন কিংবা পরিবর্ধন কিংবা আমাদের কনো মতামতের কোনো দাম বা মুল্যায়নের কোনো বালাই ছিলো না। এখানে হয়তো বদি ভাইয়ের একটা মতামত থাকলেও থাকতে পারে সেতা আমরা কেউ জানিও না। শুধু জানলাম, হাবীব ভাই বিয়ে করবেন, তারিখ ঠিক হয়েছে ৭ আগষ্ট ১৯৮৩।

ঢাকায় আমাদের কোনো বাড়ি নাই। বদি ভাইয়ের একটা স্থায়ী ঠিকানা আছে মীরপুর (৩৮ গোলারটেক) কিন্তু সেতাও একতা টিনের ঘর। মাত্র দুটু রুম, সেতাও আবার মাঝখানে একতা পার্টিশান দিয়ে কোনো রকমে থাকা। নতুন বউ নিয়ে উঠার মতো পরিবেশ নয়।

হাবীব ভাই এবার যখন দেশে এলেন, তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটির টি এস সি ৫ নাম্বার রুমটা আগে থেকেই সম্ভবত বুক করে এসেছিলেন। ফলে হাবীব ভাই বদি ভাইয়ের বাসায় থাকার পরিবর্তে টি এস সি র ৫ নাম্বার রুমেই থাকাটা বেশ সাচ্ছন্ধ বোধ করছিলেন। আমি প্রায় প্রতিদিন টি এস সি তে যাই, ভাইয়ার সাথে দেখা করি। অনেকের সাথেই আমার পরিচয় হয়। তারা অনেক অনেক উচু স্তরের লোক। প্রায় সবাই ইউনিভার্সিটির গনমান্য ব্যক্তিবর্গ। একদিন হাবীব ভাই আমাকে নিয়ে ইব্রাহীম মেমোরিয়াল হাসপাতালে গেলেন। সেখানে ডাঃ মাহবুব সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ইব্রাহীম মেমোরিয়ালের প্রতিষ্ঠাতা সম্ভবত নীলিমা ইব্রাহীম এর সাথেও পরিচয় করিয়ে দিলেন। শুনলাম যে, ভাইয়ার বিয়ের মূটামূটি যা যা ব্যবস্থা করছেন, এই সেই মাহবুব সাহেব এবং নীলিমা ইব্রাহীম।

আমরা হাবীব ভাইয়ের ভবিতব্য বা হবু স্ত্রীকে বিয়ের আগে দেখি নাই, আর এতা যে আমাদের দেখার দরকার আছে সেটার কোনো প্রয়োজন ও ছিলো না। কারন আমাদের দেখায় পছন্দ অপছন্দের কোনো কিছুই নাই। আমরা আছি, আমরা এভাবেই আছি।

গত ৭ আগষ্টে হাবীব ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। এই বিয়েতার ব্যাপারে যদিও আমার অতো নাক গলানো বা আমার কোনো মতামত, কোনো ভুমিকার কোন কিছুই যায় আসে না, এমন কি আমার মায়ের ও কোনো মতামতের কোনো বিশয় ছিলো না,। শুধু তাই নয়, আমাদের বোনদের পতীদের সাথেও কোনো শলা পরমর্শ করা কোনো বিশয় ছিলো না। ফলে আমরা নতুন ভাবীর পরিবারের কাছে কিভাবে উত্থাপিত হয়েছি, আদৌ কোনো আত্তীয় ভাবে উত্থাপিত হয়েছি কিনা সেটাও আমাদের বোধগম্য ছিলো না। তারা আমাদের কোন এংগেল থেকে কি রকম আত্তিয়তার সুত্রে বিবেচনা করেছে সেতাও আমাদের কোনো ধারনা ছিলো না। তবে ধীরে ধীরে আমার কাছে একতা জিনিষ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিলো যে, বদি ভাই কোনো না কোনো কারনে হাবীব ভাইয়ের এই বিয়ের উপলক্ষে খুশি ছিলেন না। কেনো ছিলেন না, সেতা যদিও আমার পক্ষে কিছুতেই গোয়েন্দাগিরি করে বের করা সম্ভব ছিলো না কিন্তু বদি ভাই যেহেতু অখুশি ছিলেন, ফলে কিছু কিছু মনের কষ্টের কথা তিনি আমার সাথে এ সময়ে শেয়ার করতেন।

যেদিন হাবীব ভাইয়ের বিয়ের অনুশ্তহান হলো ঢাকার প্রেস ক্লাবে, সেদিন বিয়ের ঠিক পরেই ভাইয়া নতুন বউ নিয়ে বাসর করলেন আজীম পুর কলোনীতে ভাইয়ের আরেক বন্ধু আনোয়ার ভাইয়ের বাসায়। সে বাসাটা আমার আগের থেকেই পরিচিত ছিলো কারন আমি যখন প্রথম ঢাকায় আসি এবং ওয়েস্ট এন্ড হাই স্কুলে ভর্তি হই, তখন এই বাসায় আমি বেশ কিছুদিন থেকেছিলাম। সেখানে জুয়েনা আপা ছিল (আনোয়ার ভাইয়ের ছোত বোন), নিউটন ছিলো (নিউটন আমার সাথে ওয়েস্ট এড হাই স্কুলেই পড়তো), শরীফ নামে আরেকটা ভাই ছিলো নিউটনের। আমাদের সাথেই পড়তো তবে ওয়েস্ট এন্ড স্কুলে না, অন্য স্কুলে। আনোয়ার ভাই হাবীব ভাইয়ের খুব ভালো বন্ধু ছিলো, আর উনি কাজ করতেন ওয়াপদায়, বদি ভাইও ওয়াপদায় কাজ করতেন।

প্রেস ক্লাব থেকে যখন সরাসরি নতুন বউ নিয়ে হাবীব ভাই আনোয়ার ভাইদের বাসায় উটজলেন, তারপর আমি আর বদি ভাই স রাতে চলে আসি টি এস স্যার সেই ৫ নাম্বার রুমে রাত থাকার জন্য, যেহেতু তখন রুমটা খালি ছিলো। সেই রাতে বদি ভাই আমাকে বেশ কিছু জিনিষ শেয়ার করলেন।

তিনি আমাকে বললেন, আখতার, আমার কাছে মনে হয়, এই বিয়েটা ঠিক হয় নাই। আর আমার ও একেবারে শতভাগ মতামত ছিলো না। কিন্তু হাবীব আমার মতের কোনো মুল্যায়ন ই করলো না। কষ্ট লাগছে।

এ ব্যাপারে যেহেতু আমার কোনো জ্ঞান ছিলো না কি খারাপ আর কি ভালো হয়েছে , ফলে আমার আসলে কোনো গুরু গম্ভীর মতামত ও ছিলো না। কিছুক্ষন পর আমি এম্নিতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। পরেরদিন একটা জিনিষ খেয়াল করলাম যে, বদি ভাই পুনরায় আজিম্পুর হাবীব ভাইয়ের সাথে দেখা করার জন্য যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা প্রকাশ করলেন না। তিনি সরাসরি আমাকে নিয়ে চলে এলেন মীরপুর তার নিজের বাসায়।

এদিকে মা এবং আমার অন্যান্য বোনেরা সেদিনের রাততায় মীরপুরে কাটিয়ে পরদিন সবাই গ্রামে ফিরে ফিরে গিয়েছিলো।

ভাইয়ার শসুর চাকুরী করতেন বুয়েটে। তিনি ছিলেন বুয়েটের প্রোফেসর জনাব আলী আশরাফ। নামকরা লোক। সবাই উনাকে চিনে। তিনি থাকতেন বুয়েট কলোনীতে। কয়েকদন পর ভাইয়া আনোয়ার ভাইয়ের বাসা থেকে সিফট করে উঠে গেলেন বুয়েট কলোনীতে শসুরালয়ে। ভাইয়ার শ্যালক আছে দুজন (একজনের নাম বাবু, আরেক জনের নাম ফার্মি)। ফার্মি আমার জুনিয়র। উনার শ্যালিকা আছেন লুনা আপা। ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্রী। আমি প্রায় প্রতিদিন অই ভাইয়ার শ্বশুর বাড়িতে যেতাম হয় সকাল অথবা বিকালে। এই যাওয়া আসার মধ্যে আমি কন আত্তিয়তার ভালো বন্ধন কখনো দেখি নাই। আমি যে ভাবীর একতা দেবর, এই ভাবতা আমার মধ্যে কখনো তৈরী হয় নাই। মনে হয়েছে যে, আমি ভাইয়ার কাছে যেমন সর্বদা মাথা নীচু করে ছত হয়ে থাকতে হয়, ভয়ে কাচুমাচু হয়ে থাকতে হয়, ভাবীর কাছে আমি ব্যাপারতা এই রকমেরই একটা আচরন দেখতে পাই। শুধু সেতাই নয়, ওই বাড়ির অন্যান্য লোকগুলির মধ্যেও আমরা যেনো একতা সাব স্ট্যান্দার্ড তাইপের কেউ সেতা তাদের চোখে র দিকে তাকালে বুঝা যেতো। ওদের বাড়ির চাকর বাকরেরাও আমাদেরকে মনে হয় সে রকম ভাবেই কাউন্ট করতো। যখন যেতাম, যেনো বহিরাগত কেউ দেখা করতে এসেছে এমন একটা ভাব। হয়তো ড্রইং রুমে বসে আছি তো আছিই। কেউ এক গ্লাস পানি কিংবা চা দিয়ে যে আপ্যায়ন করবে তার কোনো বালাই নাই। নিজের কাছে অসস্থি বোধ করতাম কিন্তু উপায় নাই, মাওতেই হবে। আমরা হাবীব ভাইয়ের উপর নির্ভরশীল। এতা ওরা জানে। আর হাবীব ভাই আমাদের থেকে বেশী এখন ওদের। ওদের দরকার ছিলো হাবীব ভাইকে, আমাদেরকে নয়। ফলে আমাদেরকে আপ্যায়ন করলেই কি, আর না করলেই কি। বুঝতাম ব্যাপারতা। কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। হাবীব ভাইও যেনো অই পরিবারে বিয়ে করে একতা জাতে উঠে গিয়েছিলো এমন একটা ভাব তার মধ্যেও ছিলো। ফলে, আমরা ওখানে গেলে হাবীব ভাই নিজেও খুব একতা সস্থি বোধ করতেন না। বরং আমাদের পরিবারের কেউ না গেলেই উনি খুশী। এমনি একতা ফিলিংস আমার মধ্যে মনে হয়েছিলো। যাই হোক, হাবীব ভাইয়ার বিয়ের কয়েকদিন পরে ভাইয়াও আবার নতুন বউ ঢাকায় রেখে আমেরিকায় চলে গেলেন। শুনলাম, ভাইয়া আমেরিকায় গিয়েই দুই এক মাসের মধ্যে ভাইয়া ভাবীকে আমেরিকায় নিয়ে যাবেন।

হাবীব ভাই আমেরিকায় চলে যাবার পর ভাবী একদম একা হয়ে গেলেন। ভাইয়া অনেকবার চেষ্টা করেও ভাবীকে নিতে পারছিলেন না। এর মধ্যে দু দুবার আমেরিকার দুতাবাস থেকে ভাবীর ভিসা রিজেক্ট হয়েছে, আরেকবার রিজেক্ট হলে উনার আমেরিকায় যাওয়াই অনিসচিত হয়ে যাবে। আমি ভাবিকে সময় দেই। ভাবী যেখানে যেতে চান, রিক্সায় করে নিয়ে যাই। ফকির দরবেশ, ওঝা যতো কিছু আছে, আমেরিকার ভিসা পাওয়ার জন্য যেখানে যেখানে যাওয়া লাগে, মানত করা লাগে ভাবী রেগুলার করে যাচ্ছেন, আর আমি ওনাকে সংগ দিচ্ছি।

এরই মধ্যে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা, মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার সবগুলি দিয়ে দিলাম। এখানে আরো একতা কথা বলে রাখা দরকার যে, আমি ক্যাডেট কলেজের ছাত্র বিধায় আমি ইন্টার পাশের পর পরই হাবীব ভাইয়ার ঠিক বিয়ের আগে আর্মিতে কমিশন পদে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পরেও যেতে পারি নাই কারন হাবীব ভাই চান নাই যে, আমি আর্মিতে যাই। আমি ১২ লং কোর্ষের সাথে আর্মিতে কমিশন পরীক্ষায় টিকে গেলেঈ ২৭ জুলাই ১৯৮৩ সালে আমার বি এম এ তে যাইয়ার তারিখ ছিলো। কিন্তু হাবীব ভাই আমাকে কিছুতেই আর্মিতে যায়ার অনুমতি দেন নাই। ফলে আমি ১২লং কোর্ষের সাথে আর বি এম এ তে জ্যেন করতে পারি নাই।  

এদিকে যখন ভাবীর ভিসা একের পর এক রিজেক্ট হচ্ছিলো, তখন উপায়ন্তর না দেখে হাবীব ভাই আবারো নভেম্বরের প্ররথম সপ্তাহে ঢাকায় চলে আসেন। এবার তিনি ভাবীকে সাথে করে নিয়ে যাবেন এই পরিকল্পনায় ঢাকায় আসেন। হাবীব ভাই কাউকেই আগাম কোনো খবর দিয়ে এবার ঢাকায় আসেন নাই। ফলে হাবীব ভাই ঢাকায় আসার পর আমি প্রথম ভাবীর কাছে জানতে পারলাম ভাইয়া ঢাকায় এসেছেন। আমি খবরটা বদি ভাইকে মীরপুরে গিয়ে দিয়ে এলাম।

সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো, এই যে বিয়ের পর থেকে এবার হাবীব ভাইয়ের ঢাকায় আসার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত হাবীব ভাইয়ের বউ এক বারের জন্যেও কোনোদিন বদি ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ ও করেন নাই, ওখানে ওনার বাসায় যাওয়ার জন্যে কখনো আমাকেও বলে নাই। এর ফলে এম্নিতেই বদি ভাইয়ার একটু রাগ কিংবা গোস্যা ছিলো তাদের উপর, ভাবীর এরুপ আচরনে বদি ভাই আরো মর্মাহত হলেন। তার উপর আবার হাবিব ভাই কোনো আগাম খবর না দিয়ে যখন ঢাকায় এলেন, তখন ব্যাপারতা প্রকাশ্যেই একটা বিরোধের সৃষ্টি হলো।

আমার ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রায় সব গুলির আউট হয়ে গিয়েছিলো, আমি বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেলাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফিজিক্স ডিপার্ট্মেন্টে চান্স পেলাম, কিন্তু বুয়েটে আমার কাংগখিত ফলাফল এলো না। যেদিন হাবীব ভাই ঢাকায় এলেন, আমার ফলাফলে উনি মারাত্তক রেগে গেলেন যখন আমি তার শ্বশুর বাড়িতে গেলাম। অনেকতা খুব রাগারাগি তো করলেনই এবং কিছুটা অপমানিত ও করলেন। মেডিক্যাল উনি পছন্দ করেন না, ফলে মেডিক্যালে পাশ করে কনো লাভ হলো না। ইউনিভার্সিটিতে ইউনিট আমাকে পরাতে চান না, কিন্তু আমেরিকায় নিয়ে যেতে চান, তাই ক্লার্কভাইল ইউনিভার্সিটিতে ভরতির আয়োজন করা যাবে বলে জানালেন।

আমি খুবই অপম্নিত বোধ করলাম, কারন আমি কিন্তু তখন ছোট একটা শিশু নই। আমার এই অপদস্তের ব্যাপারটায় যেনো বাবু ভাই, ফার্মি, লুনা আপা, মজাই পেলেন সেতাই আমার কাছে মনে হলো। আমি দুপুরে কিছু না খেয়েই চলে এসেছিলাম। অনেকটাআ রাগ করেই।

দিন যায়, সপ্তাহ যায়, প্রায় ১৯ দিন পার হয়। ভাইয়া না গেলো মার সাথে গ্রামে দেখা করতে, না গেল বদি ভাইয়ের বাসায় দেখা করতে। এক নাগাড়ে ১৯ দিন তিনি ভাবিদের বুয়েট কলোনীতে থাকলেন। এদিকে মা অপেক্ষা করছেন কবে তার বড় ছেলে গ্রামে যাবে, আর তিনি দেখবেন। মার রাগ হয়েছিলো কিনা আমি জানি না তবে মা কষ্ট পেয়েছিলেন এটা আমি জানি। মা তো মাই।

আমি তখন অস্থায়িভাবে ঢাকা শহীদুল্লাহ হলের দাইনিং কোয়ার্তারে আগে যেখানে হাবীব ভাই থাকতেন, সেখানে মাসুদ নামে আমার এক আত্তীয় থাকতো, তার রুমেই থাকি আর মাঝে মাঝে হাবীব ভাইয়ার শসুর বাড়ি অইখান থেকেই যাই। ২০ তম দিনে মা আর আমার বোনের প্তীরা বেশ কিছু ফল মুল, নারিকেল নিয়ে ঢাকায় এলেন হাবীব ভাইকে দেখার জন্য। কারন মায়ের আর দেরী করা সম্ভব হচ্ছিলো না। তারা গ্রাম থেকে প্রথমে আমার ওইখানে শহীদুল্লাহ হ্লে এলেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করলেন। বিকাল ৫ তার দিকে মাকে নিয়ে আমার দুলাভাইয়েরা হাবীব ভাইয়ের শ্বশুর বাসায় বুয়েট কলোনীতে গেলেন। কোনো কারনে আমার তাদের সাথে যাওয়া সম্ভব হয় নাই। ফলে আমার বোনের হাসবেন্ডরা মাকে নিয়ে হাবীব ভাইকে দেখতে গেলেন।