১৭/১/২০২৪-কনিকা আবার আমেরিকায় ব্যাক করে

গত বছরের (২০২৩) ২৫ ডিসেম্বর কনিকা আমেরিকা থেকে দেশে এসেছিলো উম্মিকার বিয়ে উপলক্ষে। আজ ওর আবার আমেরিকায় যাওয়ার দিন। সন্ধ্যা পৌনে আটটায় এমির‍্যাটসে ফ্লাইট। সময়টা ভালই কেটেছিলো এই কয়দিন। উম্মিকা এতোদিন বাসায় থাকতো, বিয়ের পর স্বামীর বাসায় থাকছে। পাশেঈ ওদের ভাড়া বাসা। মাত্র কয়েক মিনিটের রাস্তা। এতোদিন কনিকা ছিল, আজ চলে যাচ্ছে। থাকছি শুধু আমি আর আমার স্ত্রী মিটুল চৌধুরী।

জীবনের স্থায়িত্ব খুব কম এবং এর ধইর্ঘ আমাদের চাহিদার তুলনায় এতোটাই ছোট যে, আমরা ইচ্ছে করলেই আমাদের সব সপ্ন পুরন করতে পারিনা। সামর্থ থাকাটা বড় ব্যাপার না, সময়টা বড় ব্যাপার। এই সময়টা যেহেতু

৬/০১/২০২২-কনিকা এবং হাবীব ভাই

গত ১১ আগষ্ট ২০২১ তারিখে আমার ছোট মেয়ে কনিকা ইউ এম বি সি তে হায়ার এজুকেশনের জন্য আমেরিকায় গিয়েছে। আজ প্রায় ৫ মাসেরও বেশী পার হয়ে গেছে। একটা ব্যাপার আমি খুব করে ভাবি যে, শেষ মুহুর্তে কনিকার স্টেট সিলেকশনে আমি একটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছিলাম। প্রথমে আমি আমার বড় ভাই যেখানে থাকেন, বোষ্টন, সেখানকার সব গুলি ইউনিভার্সিটিতে কনিকাকে এপ্লাই করতে উপদেশ দিয়েছিলাম এই ভেবে যে, ওখানে আমার বড় ভাই থাকেন এবং তিনি নর্থ ইষ্টার্ন ইউনিভার্সিটির খুবই নামকরা টিচার এবং প্রফেসর। আমার ভাবনা ছিলো যে, ওখানে যেহেতু আমার বড় ভাই আছেন, ভাবী আছেন, সেক্ষেত্রে কনিকার কোনো সমস্যা হলে বা প্রয়োজনে সর্বদা কনিকা ওর চাচাকে পাবে। হতাত একদিন মিটুল, আমার স্ত্রী, বল্লো, আচ্ছা যদি এমন হয় যে, হাবীব ভাই এসব করতে না পারলো কিংবা কনিকা একটা উটকো ঝামেলায় পরিনত হয় ভাইয়ার কাছে, তখন তো একটা বিপদ হবে। ব্যাপারটা আমি মোটেই সহজ ভাবে নেই নাই বরং ব্যাপারটা নিয়ে আমি সিরিয়াসলি ভেবেছি। এর একটা কারন ছিলো। কারনটা হলো, হাবীব ভাই কোনো কিছুর মধ্যেই বেশীদিন স্থির থাকতে পারেন না। যখন কোনো বিষয় নিয়া উনি একবার মাতেন, সেটা প্রথম কয়েকদিন খুব ব্যস্ত থাকেন এবং এক সময় সেটায় তিনি আর ইন্টারেষ্ট পান না এবং সেটা অচিরেই পরিত্যাগ করেন। এতে কার কি হলো আর কি হলো না তাতে তার কিছুই যায় আসে না। ভরষা করার মতো লোক না তিনি।

আমি ততক্ষনাত কনিকাকে বললাম, বাল্টিমোর এরিয়ায় ইউনিভার্সিটি সিলেক্ট করো কারন ওখানে মিটুলের প্রায় শতাধিক মানুষ বাস করে। কেউ না কেউ কোনো না কোনো উপায়ে কনিকাকে কোনো কিছুর জন্যে সাহাজ্য করতেই পারবে। এটা যে কি একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আজ সেটা ভাবতেই ভালো লাগে।

এই পাচ মাসে হাবীব ভাই কনিকাকে একটা ফোন পর্যন্ত করেন নাই। যে লোক কনিকা কেমন আছে, কি করছে, কোনো অসুবিধা আছে কিনা এটা নিয়ে একবারো ভাবেন নাই বা ভাবার সময় পান নাই, সে কি করে আমার মেয়ে কনিকার দেখভাল করবেন বা করতেন? কনিকার গাড়ি কেনার সময় ছোট ভাই যে সাহাজ্যটা করেছেন, এটা হাবীব ভাই কোনোদিন করতেন কিনা আমি জানি না, যদিও আমিই টাকা দিতাম, তারপরেও করতেন কিনা আমার জানা নাই। আল্লাহ সব কিছুর নিয়ন্তা এবং মালিক।

অন্যদিকে, আমার আরেক ভাই, বেলায়েত হোসেন, যিনি আজ থেকে অনেক বছর আগে পরলোক গমন করেছেন, তার ছেলে সেলিম এবং সেলিমের মা বাই দি বাই জেনেছে যে, কনিকা আমেরিকায় গেছে। এটা শুনে অস্থির হয়ে গেছে কখন কনিকাকে তাদের বাসায় নিয়ে যাবে। আমিও কনিকাকে ওদের বাসায়, নেভাদা, তে যেতে বলেছি। কনিকা ১০ দিনের ছুটি কাটাবে সেলিমদের বাসায়। এখন কনিকা সেলিমদের বাসাতেই আছে।

হাবীব ভাই আজ পর্যন্ত যত গুলি মানুষের জন্য ট্রাই করেছেন, সব গুলি ট্রাই ছিলো ‘ফেক’। মানুষদেরকে লোভ দেখিয়েছেন, আশা দিয়েছেন, পরে আশাহত করেছেন। যাদেরকে তিনি আশা দেন, তারা এটাকে অমুল্য অফার হিসাবে নিলেও হাবীব ভাই জানেন ঠিক কোন সময়টায় তাকে ছেড়ে দিতে হবে। আর এটাই হয়েছে খালেদা, লিজা, লাকী, লিয়াকত, সালমা, এবং আরো কিছু মানুষের ভাগ্যে। উনি এমনটা কেনো করেন? আমি বহুবার এর উত্তর খোজার চেষ্টা করেছি। বার বার মনে হয়েছে আমার কাছে যে, এটা একটা নেশা। প্রথম প্রথম নেশাটা খুবই মাত্রাতিরিক্ত হয়, পরে ধীরে ধীরে সেই নেশা কেটে গেলে জাষ্ট পরিসমাপ্তি।

০৭/০৮/২০২১-কনিকার মাত্র ৩দিন বাকী

উচ্ছিষ্ট সময়ের রাজত্ব 

আগষ্ট 

৭ 

প্রায় সবগুলি কাজ শেষ। ভিসা আগেই হয়ে গিয়েছিলো, টিকেটও কেনা আছে, টিউশন ফি গতকাল পাঠিয়ে দেয়া হয়ে গেছে। ভ্যাক্সিনেশন যা যা নেয়া দরকার ছিলো, সবই সম্পন্ন করা হয়েছে। ব্যাগপত্র, মালামাল সব কিছুই প্যাকড হয়ে গেছে, আগামী এক বছরের আর্থিক জোগানও শেষ, এখন বাকী শুধু করোনা টেষ্ট আর ফ্লাইটে উঠা। আগামী ১০ তারিখের দিবাগত রাত অর্থাৎ ১১ আগষ্ট এর ভোর বেলায় কনিকার ফ্লাইট। মাত্র তিনদিন বাকী। কনিকার চলে যাওয়ার শুন্যতাটা এখন মাঝে মাঝে অনুভব করছি, উম্মিকা রীতিমত প্রায় প্রতিদিনই কান্নাকাটি করছে কনিকা চলে যাবে বলে। কনিকা এখনো খুব একটা মন খারাপ করছেনা তবে বুঝা যায় সে একটা দুদোল্যমান অনুভুতিতে ভোগছে। কারন একদিকে কনিকা আমেরিকা যাওয়ার ব্যাপারে বেশ খুসী, অন্যদিকে বাড়ি ছাড়ার কষ্ট। মিটুলের অবস্থাটাও প্রায় ওই একই রকমের। আর আমার? আমার শুধু একটাই ভয়, ওরা যেনো ভালো থাকে যেখানেই থাকুক। মন তো খারাপ হচ্ছেই। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমি মেনে নিয়েছি বাস্তবতা।

 বাড়িটায় সারাক্ষন কনিকাই মাতিয়ে রাখতো, বাসায় যতো কথাবার্তা, যতো হইচই কনিকাই করতো। এই পরিবেশটা মিস করবো আমরা। অফিস থেকে আমি বাসায় আসার পর প্রথমেই আমি ঢোকি সাধারনত কনিকার রুমে আর তার সাথে উম্মিকার রুমে। ইদানিং উম্মিকা ডেল্টা মেডিক্যালে জব করে বলে, প্রায়ই আমি খবর নেই মেয়েটা লাঞ্চে খাবার খেয়েছে কিনা বা রাত সাড়ে আটটা বাজলেই মনে করিয়ে দেই, উম্মিকাকে আনতে গাড়ি গেছে কিনা।

আমি জানি, কনিকা যেদিন আমেরিকার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হবে ইনশাল্লাহ, সেদিন আমার ভিতরে কি কি ঘটবে কিন্তু মনকে শক্ত করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। যতোক্ষন না কনিকা তার ডেস্টিনেশনে গিয়ে পৌছায় ততোক্ষন আমি জানি ওর ফ্লাইট মনিটর করতে থাকবো। যখন আল্লাহর রহমতে কনিকা আমেরিকায় ওর ডেস্টিনেশনে পৌঁছাবে, হয়তো তখন একটু ভালো লাগবে যে, ওখানেও অনেক আত্তীয় স্বজনেরা আছেন যারা কনিকাকেও অনেক ভালোবাসে, তারা দেখভাল করবে।

কনিকা অনেক খুতখুতে। কিন্তু গোছালো। ওর কোনো কিছুই অগোছালো থাকে না। কোন একটা জিনিষ এদিক সেদিক হলেই ওর সেটা ভালো লাগে না। মেজাজ খারাপ করে। ফলে ভয় পাচ্ছি, নতুন পরিবেশে কতটা দ্রুত কনিকা এডজাষ্ট করতে পারে। ওখানে কনিকাকে সব কিছুই নিজের হাতে করতে হবে। পারবে কিনা জানি না। তবে প্রথম প্রথম কনিকা হোমসিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। এটা কাটিয়ে উঠতে পারলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

আমি কনিকা যেনো আমেরিকায় অন্তত টাকা পয়সা নিয়ে কোনোরুপ সমস্যায় না পরে, সেইটা শতভাগ নিশ্চিত করেছি (আলহামদুলিল্লাহ)। আসলে আমি ইদানিং আমার জীবনের মুল পলিসিটাই বদল করে ফেলেছি। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। যাতে আমি না থাকলেও আমার সন্তানেরা কোথাও কোন সমস্যায় না পড়ে, বাকীটা আল্লাহ ভালো জানেন। আমার জমি জমা, টাকা পয়সার এসেটের থেকে বড় এসেট আমার মেয়েরা। এদের জন্য পয়সা খরচে আমার কোনো কার্পন্য নাই। যতোটুকু আমার সক্ষমতা আছে, আমি ওদেরকে ততোটাই দিতে চাই।

গতকাল রাতে প্রথম দেখলাম, উম্মিকা কনিকা দুজনেই বেশ ইমোশনাল ছিলো। ব্যাপারটা ঘটছে কারন সময়টা খুব কাছাকাছি কনিকার চলে যাওয়ার। ফলে উম্মিকাও অনেকটা খুব বেশী মন খারাপ করে আছে। চৈতী এসছে কনিকার যাওয়ার কারনে। ওরা সবাই খুব কাছাকাছি ছিলো সব সময়। ওদের বয়সের তারতম্য থাকলেও কনিকাই ছিলো যেনো ওদের সবার মধ্যে নেতা। ওর আবদার কেউই ফেলতো না।

বিমানবন্দর ঢোকার জন্য পাশ এর অবস্থা এখন খুব কড়াকড়ি। কোথাও থেকে কোনো পাশ পাচ্ছি না। ব্যাপারটা একটু হতাশার। অনেককেই বলেছি কিন্তু সব জায়গা থেকেই নেগেটিভ ফলাফল আসায় একটু আরো ভয়ে আছি। আমার দোস্ত উইং কমান্ডার মাসুদকে বলেছি যে, সিভিল এভিয়েশন আসোশিয়েসন অফ বাংলাদেশ থেকে অন্তত কয়েকটা পাশ জোগাড় করতে। ওই সংস্থার চেয়ারম্যান হচ্ছে এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। সে আমাদের থেকে এক কোর্ষ সিনিয়ার কিন্তু আমার সাথে কখনো পরিচয় হয় নাই। যেহেতু মাসুদ এয়ার ফোর্সের, তাই একটা ভরষা মাসুদ দিয়েছে যে, সে পাশ জোগাড় করতে পারবে। কিন্তু ব্যাপারটা আমি এখনো সিউর হতে পারছি না আসলেই মাসুদ পাশ জোগাড় করতে পারবে কিনা।

কনিকা হয়তো ওর বাড়ি ছাড়ার অনুভুতিটা ঠিক এই মুহুর্তে ততোটা উপলব্ধি করতে পারছে না। কিন্তু যেদিন কনিকা স্টেপ আউট করবে, আমি জানি, ওর সবচেয়ে বেশী মন খারাপ থাকবে। যদি এমন হয় যে, পাশ একটাও পাওয়া গেলো না, তাহলে কনিকাকে একাই সব সামাল দিতে হবে। লাগেজ বুকিং, বোর্ডিং পাশ সংগ্রহ, চেক ইন, ইত্যাদি।  আর যদি একটা পাশও পাই তাহলে শুধুমাত্র আমি ভাবছি মিটুলকে দিয়ে দেবো যাতে মিটুল সবকিছু ম্যানেজ করে মেয়েকে যতোদূর পারে উঠিয়ে দিতে। তা না হলে প্রশ্নের আর ইঙ্কোয়ারীর প্রশ্নে জর্জরীত হতেই থাকবো। আর যদি দুটু পাই, তাহলে সাথে উম্মিকাকে দিয়ে দেবো। আর যদি বেশী ভাগ্যবান হই, আমিও পাই, তাহলে তো আল্লাহর রহমত, আমরা অকে সবাই এক সাথে বিমানে তুলে দিতে পারবো। কনিকা কাতার এয়ার ওয়েজে যাচ্ছে ইনশাল্লাহ।

আজ শুক্রবার। ভেবেছিলাম, বাইরে কোথাও যাবো। কিন্তু কনিকাকে এই মুহুর্তে বাইরে বের করতে চাই না। চারিদিকে করোনার প্রভাব খুব বেশী। কনিকার করোনা টেষ্ট করাতে হবে ফ্লাইটে উঠার ৪৮ ঘন্টা আগে। তাই খুব একটা বের করতে চাই না কনিকাকে। তাই সবাই চিন্তা করছি- আমাদের ছাদের উপরে ঘরোয়া একটা পার্টি করবো যেখানে শুধুমাত্র আমরাই থাকবো। জাষ্ট একটা আউটিং এর মতো আর কি।

একটা সময় আসবে যেদিন আজকের এই অনুভুতিটা হয়তো আমি আগামী ৪ বছর পর যখন পড়বো, তখন আমার অনুভুতি হয়তো হবে পুরুই ভিন্ন। সফলতার গল্পে আমি হয়তো অনেক গল্প করবো এই কনিকাকে নিয়ে। আমি সব সময় উম্মিকাকেও বলে যাচ্ছি, সেও চলে যাক আমেরিকায়। তাহলে দুইবোন এক সাথে থাকলে আমিও কিছুটা ভরষা পাই। কিন্তু উম্মিকার যাওয়ার ব্যাপারটা খুব ধীর। সে মনে হয় বাইরে মাইগ্রেশন করতে চায় না।

দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় আমাদেরকে নিয়ে যায়। নিশ্চয় আল্লাহ আমাদেরকে ভালোবাসেন।

৯/৭/২০২১-কনিকার আগাম জন্মদিন এবং পার্টি

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

৯ জুলাই 

পড়াশুনার জন্য কনিকার বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি ধীরে ধীরে প্রায় সমাপ্তির দিকে। ভিসা হয়ে গেছে, টিকেট হয়ে গেছে, ইউএমবিসি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির ব্যাপারে সব ফরমালিটিজ শেষ হয়ে ভর্তিও হয়ে গেছে, ওর জন্য এক বছরের আগাম টিউশন এর নিমিত্তে ১৪ হাজার ডলারের মধ্যে ১৩ হাজার ডলার ফিও আমি ছোট ভাই (মোস্তাক আহমেদ) এর কাছে রেখে দিয়েছি, ভ্যাকসিনেশনের সবকটা টীকাও প্রায় নেয়া শেষ। যাওয়ার সময় যে কতগুলি ডলার ওর হাতে দিয়ে দেবো সেটারও প্রায় ব্যবস্থা করে রেখেছি। এখন শুধু আগামী ১০ তারিখের দিবাগত রাত মানে ১১ অগাষ্ট ২০২১ তারিখে ভোর ৪টায় ওর কাতার এয়ার ওয়েজে উঠা বাকী ইনশাল্লাহ। একাই যাবে কারন এই করোনাকালীন সময়ে আমরা কেহই ভিসা পাচ্ছি না বিশেষ করে ভিজিটিং ভিসা। আবার ব্যবসায়ীক ভিসার জন্য যিনি আমাকে আমেরিকা থেকে ইনভাইটেশন পাঠাবেন, তাদের পক্ষেও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না বিধায় আমি ব্যবসায়ীক ভিসার জন্যেও এপ্লাই করতে পারছি না। ফলে কনিকাকে একাই যেতে হবে আমেরিকায়। একটু অসস্থিতে আছি বটে কিন্তু কনিকার উপর আমার ভরষা আছে যে, কনিকা একাই যেতে পারবে ইনশাল্লাহ। 

কনিকার জন্মদিন আসলে এই সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখে হবার কথা। কিন্তু কনিকা তখন দেশেই থাকবে না। গতবার ওর জন্মদিনটা ভালোমতো কভিডের কারনে পালন করতে পারিনি। এটা নিয়ে ওর কোনো কষ্ট ও ছিলো না। কিন্তু এবার যেনো ওর মন খারাপ হচ্ছিলো যে, ইচ্ছে করলেও সে তার জন্মদিনটা ঢাকায় পালন ক্রতে পারবে না বলে। কনিকার আফসোস থাকবে যে, ওর এ বছরের জন্মদিনটা সে আমেরিকায় থাকায় সবার সাথে পালন করা সম্ভব না। মন খারাপ করবে, তাই আমরা ওর আগাম জন্মদিন এবং ওর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে সবাইকে একবার দাওয়াত করে খাওয়ানোর জন্য যে অনুষ্ঠানটা করার প্ল্যান করেছিলাম, সেটা এক সাথেই করলাম আজ। প্রায় ৫০/৫৫ জন্য গেষ্ট এসেছিলো, আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার মুর্তজা ভাই এবং তার স্ত্রীও এসেছিলেন। সময়টা ভালোই কেটেছে।

চৈতীর কয়েকদিন আগে বিয়ে হয়েছিলো। তার জামাই সজীব, ননদ (সুচী), দেবর (সানিদ)ও এসেছিলো। মান্নাদেরকে আমি সব সময়ই আমাদের যে কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেই। এবারো তার ব্যতিক্রম হয় নাই। মান্নার জামাই বাবু খুব ভালো একটা ছেলে। আগে সিটি ব্যাংক এনএ তে চাকুরী করতো, কাল শুনলাম, হাবীব ব্যাংকে নতুন চাকুরী নিয়েছে। অত্যান্ত ম্যাচিউরড একটা ছেলে। ওর বিয়েটা আমিই দিয়েছিলাম মান্নার সাথে। ওর বিয়ে নিয়ে চমৎকার একটা উপাখ্যান তৈরী হয়েছিলো, সেটা আরেকদিন লিখবো।

সাজ্জাদ সোমা ওর বাচ্চারা আর সনি এবং তার জামাই সহ বাচ্চারা সব সময়ই আমাদের বাসায় আসতে পছন্দ করে, ওরাও বাদ যায় নাই। কনিকার জন্য ভালো একটা সময় কেটেছে আমাদের সবার। এমন ঘটা করে হয়তো আগামী ৫ বছর আর ওর জন্মদিন পালন করা হয়তো সম্ভব হবে কিনা জানি না।

কভিড-১৯ এর প্রভাব হটাত করে দেশে মহামারীর লক্ষন দেখা দিচ্ছে বলে সরকার কঠিন লক ডাউন দিয়েছে। যদিও আমাদের গার্মেন্টস শিল্পের জন্য এটা বাধ্যতামূলক নয়, তারপরেও আমি ইচ্ছে করেই এই কয়দিন ফ্যাক্টরীতে যাচ্ছি না। বাসায় বসে ডায়েরী লিখি আর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ব্যাপারে অনেক পড়াশুনা করছি। সাথে ইউটিউব থেকে সেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ভিডিও ফুটেজগুলিও দেখার চেষ্টা করে ঐ সময়টাকে বুঝবার চেষ্টা করছি। আনা ফ্রাংক এর ডায়েরীর উপর একটা মুভি হয়েছে, সেটাও দেখলাম। আইখম্যানের উপর প্রায় শতাধিক ট্রায়াল হয়েছে, সেগুলিও দেখলাম। খুব কঠিন সময় ছিলো দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়টা।

যাই হোক যেটা বলছিলাম, কনিকার পর্ব। কনিকা তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রায় লাখখানেক টাকার ক্যাশ গিফট পেয়েছে। আমি চাই নাই কেউ ওকে গিফট করুক কারন এসব গিফট আসলে কনিকার জন্য এখন আর খুব একটা প্রযোজ্য নয়, সে এগুলি বিদেশ নিতেও পারবে না আর আমরাও এগুলি আগামী সময়ে সংরক্ষন করতে পারবো না। তাই গেষ্ট যারা এসেছিলো, তারা সবাই কনিকাকে ক্যাশ টাকাই গিফট করেছে। আর এ কারনেই ওর গিফট এর টাকা এতো বেশী উঠেছিলো।

কনিকা খুব ফুরফুরা মেজাজে আছে। কারন ও যা যা চেয়েছে যেমন দেশের বাইরে ভালো একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার, সেটা সে একাই ম্যানেজ করেছে, কোনো কিছুতেই কোনো বাধার সৃষ্টি হয়নি, ওর জন্মদিনটাও ঘটা করে পালন করা হলো, আর আফসোস থাকবে না,  আবার বিদেশ যাওয়া উপলক্টাষে সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হলো, ওর নিজের ও ভালো লেগেছে,  সব কিছু আল্লাহর রহমত, বাকীটা ভালোয় ভালোয় সব হলেই আলহামদুলিল্লাহ।

১১/০৮/২০২১-কনিকার যাওয়ার সময় উপদেশ

নতুন জায়গায় নতুন দেশের নতুন নিয়মে তুমি সম্পুর্ন আলাদা পরিবেশে একটা নতুন জীবন ধারায় নতুন ক্যারিয়ার তৈরী করার জন্য দেশ ছেড়ে সুদূর আমেরিকায় যাচ্ছো। তুমি এদেশের কোন চাপ, কোনো বিরহ নিয়ে ওখানে বাস করবে না, না কোনো কারনে মন খারাপ করবে। একদম ফ্রেস মাইন্ডে যাবে আর ফ্রেস করে শুরু করবে সব। মন দিয়ে নিজের সপ্ন পুরু করার চেষ্টা করবে কিন্তু সব সময় শরীরের দিকে যত্ন নিতে হবে। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে পারি কিন্তু লড়াইটা তোমার, তোমাকেই লড়তে হবে। এটা বিজনেস নয়, এটা তোমার লাইফ। গল্পটা তোমার, সপ্নটা তোমার। এই আজ থেকে তুমি একটা জার্নি শুরু করলে যার একমাত্র যাত্রী তুমি নিজে। জীবনের মজাটা হচ্ছে- কিছু কিছু জিনিষ এমন হয় যেটা অবিশ্বাস্য লাগে কিন্তু তুমি বুঝতে পার- হ্যা এটা হয়েছে। তখন নিজের থেকেই বিশ্বাস হয়ে যায়। 

নতুন কাজ, নতুন পরিবেশ, কিন্তু নিজেকে বদলে ফেলো না। কেউ চলে যাবার পর হয়তো কিছু পরিবর্তন নজরে আসে। তুমি চলে যাবার পর হয়তো আমাদের এখানে অনেক কিছুই পালটে যাবে। পালটে যাবে কোনো এক সন্ধ্যায় পিজা খাওয়ার কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত, পালটে যাবে কোনো এক ছুটির দিনে দল্বেধে বাইরে গিয়ে খেতে যাওয়ার আসর কিংবা পালটে যেতে পারে আমাদের অনেক দইনিন্দিন কিছু কর্ম কান্ড ও। আমাদের এই পরিবর্তন কোনো নতুন কিছু হয়তো নয়, এটা একটা এডজাষ্টমেন্ট, যা তোমার অনুপস্থিতিতে আমাদের আনন্দের সাথে বেচে থাকার নিমিত্তে। কিন্তু তোমার বদলে যাওয়া অন্য রকম। তুমি বদলাবে সেটা যাতে তোমার ভালোটা হয়।

 আমি তোমাকে কোনো কিছুতেই কখনো আটকাই নাই, না কখনো আটকাবো। কিন্তু তুমি আমার নিজের মেয়ে, আমার বহু আদরের সন্তান। যদি এমন কখনো হয় যে, আমি তোমাদের কারনে দুশ্চিন্তায় থাকি, তখন হয়তো সমস্ত আবেগ, মায়া আর ভালোবাসা উপেক্ষা করেই হয়তো আমি তোমাকে আটকাবো। সেটা যেনো আমাকে করতে না হয়। প্রাইওরিটি ঠিক করতে হবে জীবনে। সব সময় আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবে। জীবনে ব্যস্ততা থাকবে কিন্তু এতোটা না যাতে ফ্যামিলি ডিপ্রাইভড হয়। তুমি যদি ভালো ফলাফল করতে না পারো, এর মানে এই নয় যে, আমার ভালোবাসা তোমার উপর কমে যাবে। তুমি যদি তোমার ডিজায়ার্ড রেজাল্ট না করতে পারো শত চেষ্টা করার পরেও, আমি তোমাকে কখনোই দোষারুপ করবো না। বরং আমি তোমাকে সারাক্ষন সাহস দেবো, সহযোগীতা করবো কিভাবে তুমি সবার থেকে ভালো ফলাফল করতে পারো। আর ওটাই তোমার বাবা।

একটা জিনিষ সারাজীবন মনে রাখবা যে, সোস্যাল মিডিয়া একটা মেনিপুলেটেড মিডিয়া। এর বেজ মোটেই সত্য নয়। বরং এটা সাজানো সত্যি। কোনো জিনিষ সাদা বা কালো হয় না। সবটাই আলোর খেলা। এই সোস্যাল মিডিয়ায় সেটাই তারা জানাতে চায় যেটা তারা তোমাকে জানাতে চায় কিন্তু তোমার উচিত সেটা জানা যেটা আসল সত্যি। কারন অনেক বড় অপরাধের শিকর অনেক গভীরে থাকে। এই সোস্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিত্তরা সবাই মেনিপুলেটেড চরিত্র। এরা ডিটেইল্ড মিথ্যা কাহিনী খুব নিখুতভবে বানায়। তাই কোনো কিছুর ফেস ভ্যালুতে না গিয়ে ডাবল ভেরিফিকেশন জরুরী। জীবনের নিরাপত্তার জন্য নিজের চারিদিকে সবসময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে। এই কথাটা খুব জরুরী মনে রাখা যে, প্রকৃতির ইশারার প্রতি সর্বদা সেনসিটিভ থাকা। যেদিন সুনামী হয়, তার আগের দিন জংগলের সমস্ত প্রানিকুল সবাই জাত নির্বিশেসে উচু জায়গায় স্থান নিয়েছিলো, কারন তারা প্রকৃতির সেন্সটা বুঝতে পেরেছিলো। যা মানুষ বুঝতে পারে নাই। ফলে সুনামীতে বন্য প্রানীদের মধ্যে যতো না ক্ষতি হয়েছিলো তার থেকে শতগুন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলো মানুষ। ঠিক এই কারনেই  সব সময় মনে রাখা দরকার যে, অপরাধের সুনামী একটা নয়, অনেক সংকেত দেয়, হওয়ার আগে এবং অপরাধ হওয়ার সময়। শুধু সেটা ধরতে হয়।

মানুষের শরীরে একটা জিনিষ থাকে যা পোষ্টমর্টেম করেও পাওয়া যায় না। কিন্তু কোনো সাফল্যে সব থেকে জরুরী হয় সেই জিনিষটার। সেটা “কনফিডেন্স”। এই কনফিডেন্স মানুষকে তৈরী যেমন করতে পারে, তেমনি ভেংগেও দিতে পারে। যখন এটা ভেংগে যায় বা হারিয়ে যায়, তারপরে আর কিছু কাজ করে না। তখন যেটা হয়, তুমি ঠিক করছো নাকি ভুল করছো কিছুই বুঝতে পারবে না। আর যখন কনফিডেন্স চলে যায় বা হারিয়ে যায়, সেই জায়গাটা দখল করে নেয় “কমপ্লেক্স”। এই কমপ্লেক্স যখন গেথে বসে যায় কারো জীবনে, তখন সিম্পল একটা ছবি তুলতেও খারাপ লাগে। কারন কে আপনাকে নিয়ে মজা করবে, কে লেগ পুলিং করবে এই সব ভেবে।

জিবনে এমন কোনো অধ্যায় তোমার থাকা উচিত নয় যা তুমি আর অন্য কেউ শুধু জানো অথচ আমরা জানি না। আমাদের মান, সম্মান, পজিশন, সমাজে মাথা উচু করে বেচে থাকার জন্য শুধু আমাদের গুনাবলীইই যথেষ্ঠ নয়, সেখানে তোমরাও আমাদের সেই জীবনের সাথে জড়িত। ফলে, যেটাই হোক সবকিছুতেই আমাদের কথা মাথায় রাখবে। বাবা মায়ের থেকে বড় ভরষা আর কিছু নাই। আমরা যদি আগে থেকেই জানতে পারতাম আমাদের কর্মফলে কি ফলাফল হয়, তবে কতই না ভালো হতো। কিন্তু সেটা আমাদের স্রিষ্টিকর্তা সুযোগ দেন নাই। তাই সতর্ক থাকাটা খুব দরকার। সতর্ক হওয়া মানে এই নয় যে আমরা শুধু মাত্র পরিনতির বিষয় ভাববো, সতর্ক থাকার অর্থ হলো সঠিক সময়ে নেয়া সেই পদক্ষেপ যা আগামী সমস্যাগুলিকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। বিশেষত এটা জানা সত্তেও যে আমাদের আগামী কর্মফল খারাপ।

মনে রাখবা এক বন্ধুই আরেক বন্ধুর ক্ষতি করে। তাতে তোমাকে সাহাজ্য করতে আমাদের অনেক অসুবিধা হবে। তুমি শুধু ফোকাস করবে তোমার ক্যারিয়ারে আর সপ্ন পুরনে। তোমাদেরকে নিয়ে আমার সারাটা জীবন অন্য রকমের একটা সপ্ন আছে। আরেকটা কথা মনে রাখবে- ভালোবাসায় অনেক শক্তি থাকে। যদি হতাতই মনের অনিয়ন্ত্রনের কারনে কাউকে ভালোই লেগে যায়, সেখানে নিজের সাথে নিজের বুঝাপড়া করো। সব ভালোবাসার রুপ এক নয়। কেউ ভালোবাসে তোমার শরীরকে, কেউ ভালোবাসে তোমার দূর্বলতাকে, কেউ ভালোবাসে তোমার মেধাকে, আবার কেউ ভালোবাসে তোমার তথা তোমার পরিবারের সম্পদ কিংবা তোমার অস্তিত্বকে। কে তোমাকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসলো, এই দৃষ্টিকোণ টা খুব ভালো করে বুঝা তোমার দায়িত্ব। কেউ যদি তোমাকে আসল রুপে ভালোবাসে, কখনো সে তোমাকে জোর করবে না কারন সে জানে যদি তুমি তার হও, তুমি যেভাবেই হোক সেটা বুজতে পারবে আর তুমি তার কাছে বিলম্ব হলেও ফিরে যাবে অথবা সে দেরী করে হলেও তোমার কাছেই ফিরে আসবে। যদি সে ফিরে আসে বা তুমি ফিরে যাও, তাহলে বুঝবে এটা সত্যি ছিলো। নতুবা কিছুই সত্য ছিলো না। যা ছিলো সেটা হলো একটা মোহ। মোহ আর ভালোবাসা এক নয়। একটা বাস্তব আর আরেকটা মিথ্যা। এই মিথ্যা ভালোবাসায় পতিত হয় হয়তো মনে অনেক কষ্ট জমা হতে পারে। কিছু জিনিষ যা প্রতিনিয়ত মনকে কষ্ট দেয়, মানসিক শান্তি নষ্ট করে, সে সব কাহিনী চিরতরে ভুলে যাওয়াই ভালো। তাতে অন্তর মানসিক কষ্টটা আর থাকে না। এটা অনেক জরুরী একটা ব্যাপার। সব কিছুরই প্রথমবার আছে। এটা যেমন ভালোবাসার ক্ষেত্রে তেমনি অপরাধের ক্ষেত্রেও। যৌবন হলো অসহায় এবং শক্তির দ্বিতীয় নাম। অপরাধের ক্ষেত্রে বিচার হয় কিন্তু যৌবনের ভালোবাসার প্রতারনায় নিজের অসহায়ত্তের বিচার নিজেকে করতে হয়। তখন নিজের বিরুদ্ধে রায় দেয়া সহজ হয় না। তাই আমি সব সময় একটা কথা বলি- টাইম হচ্ছে মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ভিলেন। তার কাছে পরাজিত হওয়া যাবে না। আবার এই টাইমই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বন্ধু। তুমি এই টাইমকে কিভাবে ব্যবহার করবে সেটা তোমার বিবেচনা। একবার মনে কালো দাগ পড়ে গেলে তা আজীবন নিজেকে কষ্ট দেয়। ব্ল্যাক কফি, ব্ল্যাক ফরেষ্ট কেক, ডার্ক চকোলেট, ঘন জংগল অন্ধকার রাত, সবই কালো কিন্তু সে কালো কোনো কষ্টের নয়। কিছু কালো জীবনের অভিশাপ। কালোর মতো কোনো রং নেই। কিন্তু কিছু কি আছে যা কালোকে সাদা করতে পারে? বিশেষ করে সেই কালো যা জীবনের ধারাবাহিকতায় অভিশাপের মতো রুপ নিয়েছে? তাই, আমি প্রতি নিয়ত তোমাকে নিজের হাতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছেড়ে দিতে ভয় করলেও তোমার উপর আমার আলাদা একটা ভরষা আছে- তুমি পারবে ঠিক সে রকম করে চলতে যা আমি তোমার জন্য করতে চেয়েছিলাম। এই ভরষায় আমি তোমাকে অনেক দূরে পাঠাতেও দ্বিধা করছি না।

আমার আশা, তোমার মায়ের সপ্ন আর আমাদের পরিবারের সব সম্মান তোমার হাতে দিয়ে এটাই বলতে চাই- আমরা তোমাদের পরিচয়ে সমাজে আরেকবার সম্মানীত হতে চাই। বাকীটা আল্লাহ মালিক জানেন।

০২/০২/২০২১-কনিকার বাল্টিমোরে ভর্তি

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

ফেব্রুয়ারী 

০২

ইন্টার পরীক্ষার ফলাফলের আগে থেকেই কনিকা আসলে এদেশে পড়বেনা বলে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলো। কনিকার সমস্যা হচ্ছে, ও যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তার অধিকাংশ সিদ্ধান্ত আমি বদল করতে পারি না, মাঝে মাঝে বদল করতেও চাইনা আসলে। ইন্টার ফলাফল পাওয়ার পর দেখা গেলো কনিকা সবগুলি সাব্জেক্টেই এপ্লাস মানে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। এতে আরো সুবিধা হয়ে গেলো যে, ওর পরীক্ষার ফলাফলে যে কোনো ইউনিভার্সিটিতেই ভর্তি হবার সম্ভাবনা বেড়ে গেলো। এর মধ্যে অনেকগুলি ইউনিভার্সিটিতে এপ্লিকেশন করেছে। কোনো ইউনিভার্সিটিই ওকে রিজেক্ট করে নাই বরং কনিকা ফাইনান্সিয়াল এইডের কারনে সে নিজেই বেশ কিছু ইউনিভার্সিটির এক্সেপ্টেন্স রিজেক্ট করেছে।

প্রথমে কনিকা সবগুলি ইউনিভার্সিটি চয়েজ করেছিলো বোষ্টন বেজড। কারন আমার বড় ভাই বোষ্টনে থাকেন। একটা সময় আমার মনে হলো যে, আসলে আমার বড় ভাইয়ের উপরে নির্ভর করে কনিকাকে এতোদূরে পাঠানো ঠিক হবে কিনা। তিনিও বুড়ো হয়ে গেছেন, অনেক কিছুই তার পক্ষে এখন সামাল দেয়া সম্ভব হয় না। অনেক সময় তিনি অনেক কিছু ভুলেও যান। প্রায়শ ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি যে, আমার বড় ভাইয়ের উপর অনেক ব্যাপারে ভরষা করা যায় না। কোনো কিছুতেই আমার বড় ভাই না করেন  না বটে কিন্তু ঠিক শেষ মুহুর্তে এসে দেখা যাবে তিনি আর পারেন না অথবা তার অনেক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয় বা করেন। বিশেষ করে যখন কোনো ফাইনান্সিয়াল কোনো ব্যাপার থাকে সেখানেই তার সব বিপত্তি। তাই ভাইয়ার উপরে আমার ভরষা আমার ছোট মেয়েকে পাঠানো উচিত হবেনা বলে আমার কাছে মনে হলো। দেখা গেলো যখন কনিকার কোনো প্রয়োজন হবে ঠিক তখন কনিকার জন্য সাহাজ্য আর আসছে না।

আমি মতামত চেঞ্জ করে কনিকাকে বললাম যে, তুমি শুধু বোষ্টনের জন্য এপ্লাই না করে আমাদের আরো আত্তীয়সজন যেখানে বেশী আছে, সেখানেও এপ্লাই করো। আমেরিকাতে বাল্টিমোরে থাকে লুসিরা, ছোটভাই, এবং আরো অনেকেই। ফলে আমি কনিকাকে বাল্টিমোরের জন্যেও এপ্লাই করতে বললাম। আজই উনিভারসিটি অফ ম্যারিল্যান্ড, বাল্টিমোর কাউন্টি (ইউএমবিসি) থেকে সরাসরি ওর ভর্তির ব্যাপারে চিঠি এসছে যে, ওরা কনিকাকে নিতে আগ্রহী এবং যত দ্রুত সম্ভব ওরা আই-২০ ফর্ম পাঠাতে চায়। শুনলাম, ওখানে লুসির ছেলেও আবেদন করেছে। লুসিরা খুব খুসি যে, কনিকা ওখানে পড়তে যাবে।

আপডেটঃ ১১ মার্চ ২০২১

আজ কনিকার আই-২০ ফর্ম এসছে ইউএমবিসি (ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড, বাল্টমোর কাউন্টি) থেকে। ইউএমবিসি বাল্টিমোরের সবচেয়ে ভালো একটা ইউনিভার্সিটির মধ্যে একটি। আর সবচেয়ে এক্সপেন্সিভও বটে। আমি খুশী যে, কনিকা নিজে নিজেই সবগুলি কাজ করেছে এবং খুবই স্মার্টলী ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করেছে। এবার ওর দূতাবাসে দাড়ানোর পালা। যদি ইনশাল্লাহ সব কিছু ঠিক থাকে, তাহলে আগামী জুলাই মাসে কনিকা আমেরিকায় চলে যাবে। এটা যেমন একদিকে আমার জন্য ভালো খবর, অন্যদিকে একটু কষ্টও লাগছে যে, মেয়েটা অনেক দূর চলে যাবে। ইচ্ছা করলেই আর ওর সাথে রাত জেগে জেগে আলাপ করা যাবে না। বাচ্চারা এভাবেই কাছ থেকে দূরে বেরিয়ে যায়। 

২৮/০১/২০২১- কনিকা, আমার ছোট মেয়ে

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

জানুয়ারী 

২৮ 

সানজিদা তাবাসসুম কনিকা আমার ছোট মেয়ে। জন্ম ২০ সেপ্টেম্বর ২০০০।

ভাবলাম, করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় আছি, সময়টা কাটছে না খুব একটা। সবার ব্যাপারে কিছু লিখতে থাকি।

কনিকার যেদিন জন্ম হয়, সেদিন আমি জানতাম না যে, আমার আরেকটি মেয়ে হচ্ছে। আমি জানতেও চাই নাই। এটার পিছনে বেশ একটা কারন ছিলো। আর সেটা হচ্ছে যে, আমার শখ ছিলো আমার প্রথম সন্তান মেয়ে হোক। আল্লাহ সেটা আমার বড় মেয়ে উম্মিকাকে দিয়ে সেই শখ পুরা করেছেন। তারপরের সন্তান আমার ছেলে চাই না মেয়ে চাই এটা নিয়ে আমার কোনো কৈফিয়ত কিংবা কোনো প্রকারের হাহুতাশ ছিলো না। শুধু চেয়েছিলাম যেনো আমার সন্তান সুস্থ্য হয়।

মেয়ে হয়েছে, এই খবরটা দেয়ার আগে ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, আমার প্রথম সন্তান কি? আমি উত্তরে বললাম, যেটাই হোক, মেয়ে হলেও আমি কিছুতেই অখুসি নই। দুটুই আমার সন্তান। এবারো সিজারিয়ান বেবি। মিটুলের অনেক কষ্ট হয়েছে এবার। আমার মা ঢাকার বাসাতেই ছিলেন, আমার মেয়ে হয়েছে শুনে, আমার মায়ের খুব মন খারাপ। আমি হেসেই বাচি না। আমি প্রথমে ব্যাপারটা মজা মনে করে মাকে কিছুই বলি নাই। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখলাম, আমার মা আমার ছোট মের‍্যেকে একেবারেই পছন্দ করেন না। বারবার শুধু একটা কথাই বলে- ওই ত্যুই ছেলে হইতে পারলি না?

আমার মেয়ে তো কিছুই বুঝে না। সে ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে আর দাদির লগ্না হচ্ছে। কনিকার যেদিন জন্ম হয়, সেদিন আমার বুকে একটা ধক করে উঠেছিলো। এতো অবিকল চেহারা হয়? একদম আমার মায়ের চেহারা। তার চোখ, মুখ, নাক , কান, মুখের আকৃতি সব কিছু আমার মায়ের চেহারা। আমি মনে মনে ভাবলাম, হে আল্লাহ, তুমি আবার এই ছোট মাকে আমার কোলে দিয়ে আমার বড় মাকে নিয়ে যেও না।

মাকে বললাম, মা , ছোট মেয়ে একেবারে তোমার অবিকল চেহারা পেয়েছে। তুমি যখন থাকবা না, এই মাইয়াটাই আমার কাছে তুমি হয়ে আজীবন বেচে থাকবা। অনেক দিন ছোট মেয়ের নাম রাখা হয় নাই। আমি মাকে দায়িত্ত দিয়েছি মা যেনো ছোত মেয়ের নাম রাখেন। যা খুশী সেতাই রাখুক। অবশেষে একদিন মা, ছোট মেয়ের নাম রাখলেন- কনিকা।

উম্মিকা ছোট অবস্থায় আমার সাথে থাকতে পারে নাই কারন আমি তখন বিভিন্ন সেনানীবাসে খালী পোষ্টিং আর মিশনের কাজে বিদেশ করে বেড়িয়েছি। কিন্তু কনিকার বেলায় বেশ লম্বা একতা সময় এক সাথে থাকার সুযোগ পেয়েছি।

তারপরেও বেশ অনেক গ্যাপ হয়েছে আমার ওদের সাথে থাকার। কনিকা বড় মেয়ের মতো সেও প্রথমে মেথোডিস্ট স্কুল মিডিয়ামে, তারপর মোহাম্মাদপুর প্রিপারেটরী এবং অতঃপর বিআইএস থেকে শহীদ আনোয়ারা গার্লস কলেজে পরাশুনা করে এস এস সি পাশ করেছে। সাংঘাতিক টেনসনবিহীন একটি মেয়ে। অল্পতেই খুব খুতখুতে কিন্তু খুব বুদ্ধিমতি। কনিকা উম্মিকার থেকেও একটু বেশি চালাক কিন্তু ধূর্ত নয়। আমার ইচ্ছে যে, কনিকা এডমিন ক্যাডারে চাকুরী করুক এবং সচীব হয়ে অবসর নিক। অথবা ব্যারিস্টার হোক। তাতে নিজের ব্যবসা নিজেই করতে পারবে, কারো সরনাপন্ন হতে হবে না। 

কিন্তু আমার ইচ্ছাটাই সব কিছু নয়। এই করোনা পেন্ডেমিকের সময় সরকার কর্তৃক অটোপাশের মাধ্যমে কনিকা ইন্টার পাশ করে ফেল্লো। কনিকার দেশে থাকার কোনো ইচ্ছা নাই। এই যে, সবাই আগামীতে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়বে, কোথায় ভর্তি হবে ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত আর কনিকা সারাদিন ইন্টারনেটে বিদেশের কোনো ইউনিভার্সিটিতে সে পড়বে সেটা খুজতে খুজতে ব্যস্ত। সে মনে প্রানে আর দেশে নাই। অনেক গুলি ইউনিভার্সিটিত থেকে কনিকা ইতিমধ্যে অফার লেটার পেয়েছে। আমি জানি আগামী বছরের মধ্যে কনিকা আর দেশে নাই। বাকী কি হয় কে জানে?

৩০/০৭/২০১৯-কনিকা

মেয়েটা জন্মের দিনই আমার বুক কাপিয়ে দিয়েছিল। অবিকল আমার মায়ের চেহারা নিয়ে সে এই পৃথিবীতে পদার্পন করেছিল। আমি ভয় পেয়েছিলাম এই ভেবে যে, সে আমার মায়ের রিপ্লেসমেন্ট কিনা ভেবে। আজ আমার মা বেচে নেই কিন্তু কনিকা আছে। কনিকার মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়ায় আমার মা কনিকাকে একদম পছন্দ করে নাই। কিন্তু এতা তো আর আমার কনিকার দোষ নয়। আর আমিও কোনোদিন কেনো আমার বর মেয়ে হবার পর আবারো একটা মেয়েই হল, ছেলে কেনো হলো না, এ প্রশ্নতা আমার মাথায় কখনোই আসে নাই, এখনো না। ওরা দুজনেই আমার সন্তান আর আমার ভালো লাগার মানুষ।

কনিকা ছোত বেলায় যেমন বেশী অভিমানী ছিলো, আজ এতো বর হয়ে গেছে, তার সেই ভাবতা এখনো কমে নাই। বকা দিলে কান্না করে, বিশেষ করে আমি বকা দিলে তো ওর চোখের পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। ওর মা যখন সারাক্ষন এই পরা, ঐ রুম গোছানো, অই তাইম মতো না খাওয়া, ঐ ঠিক মতো গোসল না করা, তাইম মতো পড়তে না বসা ইত্যাদির কারনে বকতেই থাকে, এতা ওর কান দিয়ে আদৌ ঢোকে কিনা আমার মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে। নির্বিকারই তো থাকে। যেই আমি একটু বকা দিয়েছি- গেলো এদিনের মতো দিন বরবাদ। কেনো এমনতা হয় জানি না তবে আমি ওকে বকতেও পারি না।

মাঝে মাঝে কনিকা আমার কাছে চিঠি লিখে। চিথির বেশীর ভাগ মুল উপাদান, অর্থ নৈতিক আলাপ আলোচনা। এই যেমন, বড় আপিকে সে কিছু হোম ওয়ার্ক করে দিয়েছে, তার সাথে সেই হোম ওয়ার্কের মুজুরী হিসাবে একটা ডিল হয়েছে, তাই তাকা দিবে কে? বাবা। একজনের হোম ওয়ার্ক, আরেক জন করে দিবে, আর আরেক জন সেই তাকার মুজুরী দেবে, ফলে কত বার্গেনিং হবে এটা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। কারন বাবা টাকা দিবে। সেই তাকা আবার কাজের পর পরই তাদের হাতে যেতে হবে, আর হাতে যাবার পরই সেতা আবার তার মায়ের কাছে জমা হবে। ওর মা অদের ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা করে দেবে। অর্থ নীতির এই চক্রটা বেশ মজার।

আবার কোনো কোন সময় কনিকার কিছু কাজ তার বড় আপি করে দেবে, ফলে চক্রতা একই। শুধু মালিক পক্ষের মুজুরী পাওনা হবে বড় মেয়ে, তাকা দেবেন বাবা, কাজ হাসিল করবেন কনিকা। এই দুয়ের আবার একটা ভারসাম্য করে যার যার পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ কে কত টাকার কাজ করিয়ে নিলো, আর কে কত পাবেন তার একটা কঠিন হিসাবের ডেবিত ক্রেডিট আমার কাছে লেখা ঐ চিঠিতে বিস্তারীত থাকে। তবে মজার বায়াপার হলো সেন্ট্রাল ব্যাংকের মানি ব্যাক থেকে সব তাকাই পরিশোধ যোগ্য।

আবার কিছু কিছু চিঠিতে এমন থাকে যে, অন লাইন অর্ডার করা হয়ে গেছে, আইটেমটা চলেই আসবে দু একদিনের মধ্যে, আমার সাথে কথা বলার হয়তো কোনো অবকাশ হচ্ছে না, তার কোচিং আর আমার অফিসের তাইমিং এর কারনে। কিন্তু ডেবিট নোটের মতো আমার ওয়ালেটে কনিকার একটা চিঠি পাওয়া যাবে তাতে কবে কত টাকা ডেবিট করে দিতে হবে তার বিস্তারীত বর্ননা থাকে।

এটা অবশ্য আমার বড় মেয়ে করে না। সে আবার তার মায়ের সাহাজ্য নেয়। ওর মা আমাকে ফোন করে, তখন আমার ওয়ালেটের উপর চাপ পড়ে। আমার দুই মেয়ের এই ব্যাংকিং হিসাব কে যে ওদের শেখালো আমার জানা নাই, তবে তাতে ব্যাপারতা অনেক সহজ ভাবেই এল সি এর মতো ট্রাঞ্জেক্সন হয়।

কিছু কিছু চিঠি আবার অভিযোগ পত্রের মতো। আর সেই অভিযোগ হয় তার মায়ের নামে না হয় তার আপির নামে। যেমন, তার উপর পরার চাপ পড়ে যাচ্ছে, তার বিনোদনের সময়টা কেড়ে নেয়া হচ্ছে, তার আই পড ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাতে তার মন ভালো নাই। সে আর এই বাড়িতাকে বসবাসের যোগ্য মনে করিতেছে না। এতার একটা সমাধান হোক।

এই রকমের হাজার হাজার না হলেও মাসে দু একটা অভিযোগ পত্র তো পাইই।

১৯/০৭/২০১৯-কনিকার বন্ধুদের দাওয়াত

ছোট মেয়ে কনিকা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ে। মিটুলের বানানো টিফিন কনিকার কাছ থেকে ভাগ করে খেতে খেতে একদিন সব বন্ধু বান্ধবরা কনিকাকে ধরেই বসলো, আন্তির রান্না করা খাবার খাবো। আসলে বাচ্চারা আজকাল ফাষ্ট ফুড, পোলাও বিরিয়ানি ইত্যাদি খেতে এতো পছন্দ করে যে, কোনো না কোনো অজুহাত তো আছেই এই সব খাবারের আয়োজনের। কখনো কনিকার বাসায়, কখনো মনিকার বাসায়, কখনো আলভীর বাসায়, লাগাতার তাদের এই খাওয়া চলতেই থাকে। তবে ব্যাপারটা কিন্তু মজার আমাদের বড়দের জন্য। অন্তত আমাদের বাচ্চারা আনন্দের সাথেই সময়তা কাটায়।

আজ কনিকার প্রায় ১৬/১৭ জন কলেজ বান্ধবীরা আমাদের বাসায় খেতে আসবে। মিতুল রান্না করায় খুবই এক্সপার্ট। আর বাচ্চাদের খাওয়াতে সে খুব পছন্দ করে। কনিকার বান্ধবীরা বাসায় খেতে আসবে এই প্রোগ্রামের কারনে তার গত কয়েকদিন এই বাজার সেই বাজার, বাচ্চারা কি খেতে পছন্দ করে, আর কি করলে আরো মজা করবে, সেতার জন্য প্রায় দুই তিনদিন যাবত মহা ব্যস্ত।

কনিকা মাঝে মাঝে বাজার দেখে, সাথে সাথে ফেসবুকে একটা পোষ্ট ও মেরে দেয়। একটা খুবই ঘরোয়া দাওয়াত যে কততা ম্যাগনিচুড বারাতে পারে, এটা আজকালের পোলাপানেরা খুব ভালো করেই জানে। আজ সেই মেঘা অনুষ্ঠানের আয়োজন। সকাল থেকেই কনিকা, উম্মিকা ঘর গোছাচ্ছে, পর্দার কাপড় গুছাচ্ছে, বাড়ি ঘর কাজের বুয়ার দ্বারা এক রকম দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি চলছে। চেয়ার টেবিলের কভার পরিবর্তন, তাদের বিছানার চাদর পরিবর্তন, দেখলেই মনে হচ্ছে একটা যজ্ঞ। খারাপ না।

০৭/০৫/২০১৮-কনিকার এসএসসি রেজাল্ট

গতকাল আমার ছোট মেয়ের এসএসসি এর পরীক্ষার রেজাল্ট বাহির হইয়াছে। তো গত পরশুরাতে ওর মা খুব টেনশানে ছিলো কি ফলাফল করে মেয়ে সেটা ভাবিয়া ভাবিয়া। কিছু কিছু মানুষের টেনশন তাহার চেহারার মধ্যে একদম ফুটিয়া উঠে। তাহার মুখের অবয়ব দেখিয়া বুঝা যায় যে, শরীরের হরমুন ঠিক মতো কাজ করিতেছে না বলিয়া মুখে একটা ছাপ পড়ে। খাবার দাবারে অনীহা আসে, কথাবার্তায় খিটখিটে মেজাজ ফুটিয়া উঠে। ফোনে অধিক অধিক কথা বলে, কেউ কেউ আবার ফোন থেকেই বিরত থাকে। এইসব আর কি। আমার বউ সুন্দরী বলিয়া তাহার চোখ মুখ দেখিয়া বুঝিবার উপায় নাই সে টায়ার্ড কিনা কিন্তু সে যে টেনশনে আছে ইহা বুঝা যায়।

জিজ্ঞাসা করিলাম, খুব টেনশনে আছো নাকি? উত্তরে যা শুনিবার তাই শুনিলাম, “তোমার আবার টেনশন আছে নাকি? তোমার মতোই তো মেয়েগুলি হয়েছে। না আছে কোনো টেনশন, না আছে কোন আগ্রহ। ঐ যে বাপের মতন সব। এমতাবস্থায় আমার কি আর কিছু বলিবার আছে? এক কথাতেই তো শেষ- বাপের মতো সব অভ্যাস হইয়াছে মেয়েদের।

ঈশ্বর এইদিক দিয়া বউগুলোকে একদম নিস্পাপ করিয়া রাখিয়াছেন, সব বাচ্চাদের দোষ তো বাপের দোষ। আরে বাবা, বাচ্চাগুলিতো তার মায়েদের মতোও হইতে পারিতো, নাহ? যাক, সংসারে সুখ চাই, ঝগড়া চাই না। তারমধ্যে এখন তাহার টেনশনের মাত্রা মনে হইতেছে একটু বেশি। হাতে তসবিহ, মুখে বিড় বিড় করিয়া কোন এক দোয়া হয়তো সে পড়িতেছে। জিজ্ঞেস করিতে ভয় পাই কোন দোয়াটা পড়িতেছে। ব্যাঘাত ঘটিলে ভেজাল আছে। শান্ত থাকাই ভালো। কে খামাখা নীরব পুকুরে খামাখা ঢিল ছুড়িয়া সাপের লেজে আঘাত করে!! পরে দেখা যাইবে, শক্ত পরোটা খাইতে হইবে। এই মুহূর্তে দাত ব্যথা আছে। আমি দাতকে বেশী কস্ট দিতে চাই না। পড়ুক সে যে দোয়া পড়িলে টেনশন কমে সেটাই পড়ুক। কোনো কথা না বলে বললাম, হ্যা মেয়েগুলার আর কাজ পাইলো না। সব বাপের গুনগুলি পাইয়া বাপের সর্বনাশ করলো আর কি।

এই কথা বলিয়াও যে আমি তাহাকে খুব একটা খুশী করিতে পারিলাম সেটাও ওর মুখ দেখিয়া বুঝা গেলো না। মনে হইলো এই বুঝি নীরব আকাশ হটাত করিয়া কোন মেঘবৃষ্টি ছাড়াই গর্জন করিয়া উঠিবে। ভাগ্যিস ঈশ্বর প্রসন্ন হইয়া এই যাত্রায় আমাকে কোনো রকমে বাচাইয়া দিলেন। খুব বেশি ঝড় উঠিলো না। শুধু ঘাড় ঘুরাইয়া এমন একটা ভাব করিয়া গিন্নি অন্যরুমে পরোতা বানানোর জন্য চলিয়া গেলো তাতে বুঝিলাম, আমার শেষ কথাটিকে তিনি ব্যাঙ্গ ভাবিয়া একটু হুম করিয়াই ছাড়িয়া দিলেন। ঈশ্বর বড় রসিক। সাংসারিক জীবনে কিছু কিছু ছোট ছোট তর্ক-বিতর্ক এমন করিয়া লাগাইয়া রাখেন তাতে না ঝড় শুরু হয়, না অশান্তি। একটু ঘূর্ণিপাক খাইয়াই আবার পরিবেশ ঠান্ডা করিয়া দেন। যাই হোক, আমি গর্বিত যে, বাচ্চারা আমার জিদ, আমার সভাব পেয়েছে। আলসেমীটাও পেয়েছে ঠিক আমার মতোই।

তো মেয়েকে জিজ্ঞেস করিলাম, মা, তোমারো কি ফলাফলের জন্য টেনশন হচ্ছে? মেয়ের উত্তর- বাবা, আমার তো কিছুই মনে হচ্ছে না। আর টেনসন করে এখন কি আর কিছু করতে পারবো? বললাম, তাতো ঠিকই কিন্তু পরীক্ষার আগেও তুমি টেনশনে ছিলা না, এমন কি পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও তো আমি বুঝি নাই যে, তুমি একজন পরীক্ষার্থী। মেয়ে মুচকি হাসি দিয়া বলিলো, চলো, ক্রাইম পেট্রোল দেখি। ও জানে আমি ক্রাইম পেট্রোল দেখিতে খুব পছন্দ করি। এই হলো আজকের দিনের যেনারেসন। এই সময়ের জেনারেশন কতটা ইন্টেলেকচুয়াল যাহারা তাহাদের হ্যান্ডেল করেনা, তাহাদের কোনো আইডিয়া নাই। তাহাদের কাছে কোনো পরামর্শ চাইলে তাহার আপনাকে দুই যুগ আগের কোনো এক পুরানো পরামর্শ দিয়া আপনাকে এমন এক ফন্দি দিয়া বিপদের মধ্যে ফেলিবে, যে, তখন না  আপনি সমস্যা হইতে বাহির হইতে পারিবেন, না বুঝিতে পারিবেন আরো কোনো বিপদ ঘনাইয়া আসিলো কিনা। তাই যদি পরামর্শ নিতে হয়, আমার কাছ হইতে নিবেন। এই জাতীয় পরামর্শ আমি বিনা পয়সায় দিয়া থাকি। কাজ হইলে জানাইয়া দিবেন, কাজ না হইলে দিতিয়বার আর আসিবেন না।

যাক, ফলাফল দিলো। আমার বউই আমাকে প্রথম খবরটা দিলো যে, মেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। ফোনে তার কথার সুরেই বুঝিতে পারিলাম, সে এক প্রশান্তিতে আছে। এই সকালেও যিনি আবহাওয়ার ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের মতো রুপ ধারন করিয়াছিলেন, কোনো রুপ তান্ডব ছাড়াই মনে হইলো, হ্যা, আকাশ বড় পরিস্কার। সমস্ত ঝড় আর কালোমেঘ সব কোথায় কোন অঞ্চলে উড়িয়া চলিয়া গিয়াছে বুঝিতেই পারিলাম না। আমার বউ বড় খুশী। বলিলাম, খুব খুশী মনে হইতেছে তোমায়? এবার তার আরো চমকপ্রদ উত্তরে আমি ফোনের এপ্রান্তে বসিয়া হাসি। “তোমার তো কোনো সাধ আহ্লাদই নাই, মেয়ে এতো ভালো ফলাফল করিলো , কই তুমি মেয়েটাকে একটা ধন্যবাদ দিবা, তা না করিয়া ফোনে বকর বকর করিতেছো। আরে বাবা, আমি আবার কখন ফোনে বকর বকর করিলাম? মাত্রতো ফোন শুরু হইল!! বুঝলাম, এবার আর বাপের মতো হইয়াছে মেয়েগুলি এইটা অন্তত শুনিতে হইবে না। তাহার প্রশান্ত হাসিতেই আমার মন ভালো হইয়া গেলো। হাতের পাশে বেনসন সিগারেটের প্যাকেট হইতে একটা আস্ত সিগারেট লইয়া তার মাথায় আগুন ধরাইয়া নাসিকা ভর্তি ধোয়া ছাড়িয়া বউকে বলিলাম, দাও , মেয়েকে দাও। একটু কথা বলি।

মেয়ে মোট নম্বর পেয়েছে ১৩০০ মধ্যে ১১৭৪। কম না কিন্তু? প্রায় গড় নম্বর ৯০.৩১%। এই নম্বরে আমাদের সময় বোর্ডে স্ট্যান্ড করতো ছাত্র-ছাত্রীরা। তখন বোর্ডে স্ট্যান্ড করা ছাত্রদেরকে পাড়ার লোকজন নিজেরাই মিষ্টি নিয়ে এসে গালে হাত বুলিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে যেতো। যারা পরবর্তী বছরের ছাত্রদের অভিভাবক, তারা হয়তো একটু বলেও যেতো, আমার বাচ্চাটাকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবো, একটু গাইড লাইন দিয়ে দিও কেমন করে ভালো ফলাফল করতে হয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।

আজ আর এইসব নাই। আজকাল অভিভাবকগন খবর নেয়, কোথায় কোচিং করিয়েছেন, কোন স্যার কোচিং এ ভালো। কোচিং হয়ে গেছে এখন একটা লাভজনক ব্যবসা।

চলুন একটা কোচিং এর স্কুল দিয়া দুইটাই লাভ করি। নাম এবং অর্থ। কে বলিলো যে, এই দেশে ব্যবসা নাই? কোচিং এর থেকে ভালো ব্যবসা তাও আবার বিনা পুজিতে, আর একটাও নাই।

০১/০২/২০১৮-কনিকার এসএসসি শুরু

আমার ছোট মেয়ে, সানজিদা তাবাসসুম কনিকা। দেখতে দেখতেই বড় হয়ে গেলো মাশাল্লাহ। আজ ওর এসএসসি পরিক্ষার ১ম দিন। পরিক্ষার ব্যাপারে ওর কখনোই কোনো টেনশন ছিল না। কিন্ত গতকাল রাতেই দেখলাম যে, সে একটু টেনশনে আছে।

বললাম, কাল থেকে তোমার পরিক্ষা শুরু। ও হাসতে হাসতে বল্লো, ২২ তারিখে তো সেস। এই হল তার ফিলিংস।