Literatures
২৭/০৪/২০২৩-অসুস্থ্য সমাজ
বয়স হয়ে গেছে প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি। অনেক লম্বা সময়।
সেই শিশুকাল, কিশোর কিংবা যৌবনের সময়টা এখনো যেনো খুব পরিষ্কার মনে পড়ে। গ্রামের মেঠোপথ ধরে স্কুল মাঠ থেকে ঘর্মাক্ত শরীরে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা, কাধের উপর থরে থরে সাজানো বই নিয়ে স্কুলে যাওয়া, বৈশাখী মেলায় হরেক রকমের বাশি বাজিয়ে বাজিয়ে হই হুল্লুর করা, বৃষ্টির দিনে দুরন্ত কিছু বাল্যবন্ধুকে নিয়ে মাঠে ফুটবল খেলা, স্কুলে শিক্ষকদের পড়া না পাড়ার কারনে শাসিত হওয়া, আরো কত কি!! সবকিছু পরিষ্কার মনে আছে।
এই লম্বা সময়ে পরিবারের অনেকের সাথে, পাড়া পড়শী কিংবা জানা অজানা কত বন্ধুবান্ধবদের সাথে অনেকগুলি সময় কাটিয়েছি, কেউ কেউ এর মধ্যে জীবনের সব লেনদেন শেষ করে একে একে ওপারে চলে গেছে, আর সাথে নতুন জীবন নিয়ে আরো অনেক নতুন মুখ আমাদের সাথে যোগ হয়েছে। আমরা যারা আজো বেচে আছি, তারা সেই চলে যাওয়া মানুষগুলির সাথে আর নতুন মানুষদের যোগ হবার মধ্যে একটা সেতু বন্ধন করে আছি। আমরা সেই চলে যাওয়া মানুষগুলির কথা নতুনদের মাঝে আদান প্রদান করলেও তাদের সময়ের চিত্র আজকের দিনের মানুষগুলিকে শতভাগ বুঝানো হয়তো যায় না। কিন্তু আমাদের স্মৃতির পাতায় সেগুলি এখনো উজ্জ্বল হয়ে রয়ে গেছে। আমরাও একদিন তাদের মতো চলে যাবো, আর আজকের নতুন যোগ দেয়া মানুষগুলিও সেই একই সেতু বন্ধনের মতো কাজ করে আগত নতুন মুখগুলির সাথে একটা ব্রীজ তৈরী করবে। এভাবে ক্রমাগত একটা সাইকেল চলবে।
এরমধ্যে যুগ পালটে যাচ্ছে, এই যুগের মানুষগুলির সাথে সেই যুগের মানুষগুলির মধ্যে অনেক ফারাক হয়ে গেছে। সন্ধায় এখন আর আড্ডা বসে না, মাঠে আর বড়রা গোল হয়ে বসে তাস খেলে না, ছোট ছোট পোলাপানেরা এখন আর ডাংগুলি খেলে না, মেয়েরা এখন আর দলবেধে কলশী কাখে নিয়ে নদী থেকে ভিজা কাপড়ে জল তুলে আনে না, রাখালেরা এখন আর সেই ভাটিয়ালী গান গেয়ে গেয়ে বাড়ি ফেরে না। এখন সবাই সবাইকে নিয়ে একা একাই সময় কাটাতে পছন্দ করে। ফোনের ভিতরে চলে গেছে আজকের দিনের মানুষগুলির জীবন। যে জরুরী খবরটা মাসীকে দেয়ার জন্য, কিংবা জরুরী কাজের নিমিত্তে কাউকে হাট বাজার থেকে ডেকে আনার জন্য রোদ পেড়িয়ে মাইলের পর মেইল হেটে গিয়ে কাজটা করতে হতো, সেটা আর এখন দরকার পড়ে না। শুধু একটা মিসকল দিলেই কিংবা মেসেজ ঠুকে দিলেই সব যেনো হয়ে যাচ্ছে। এতো কিছু থাকতেও আমরা আজকে জেনারেশন থেকে জেনারসনে ডিসকানেক্টেড হয়ে যাচ্ছি। অথচ আরো বেশী কানেক্টেড থাকার কথা ছিলো।
সবাই ক্লান্ত এখন। সবাই অসুস্থ্য বোধ করে এখন। বড়রা ক্লান্ত, ছোটরা ক্লান্ত, মালিকেরা ক্লান্ত, শ্রমিকেরা ক্লান্ত, রোগীরা ক্লান্ত, ডাক্তাররা ক্লান্ত, ছাত্ররা ক্লান্ত, শিক্ষকরাও ক্লান্ত। ঘরে স্ত্রী ক্লান্ত, স্বামীও ক্লান্ত, কাজের বুয়া শুধু আজো ক্লান্ত নয়। হয়তো সেও কয়েকদিন পর ক্লান্ত হয়ে যাবে। পোষ্টম্যান বেকার, পোষ্টমাষ্টার বেকার, অথচ তাদের কারোরই সময় নাই হাতে। সবাই ব্যস্ত। ছেলেমেয়েরা ব্যস্ত, বাবা মায়েরাও ব্যস্ত, আত্তীয় স্বজনেরা ব্যস্ত, বন্ধুবান্ধবেরাও ব্যস্ত অথচ সারাদিন কিংবা বেশীরভাগ সময় তারা একই জায়গায় থাকে। ছাত্ররা প্রচুর পড়াশুনা করে কিন্তু বই পড়ে না। প্রচুর লেখালেখি করে কিন্তু বই আকারে প্রকাশ হয় না। সমাজ নিয়ে অনেক গবেষনা করে কিন্তু কোনো আবিষ্কার হাতে আসে না।
একটা অসুস্থ্য সমাজ গড়ে উঠছে প্রতিদিন। মায়া মহব্বতবিহীন, দায়িত্ববিহীন এবং একাকীত্ব জীবন সমৃদ্ধ একটা সমাজ গড়ে উঠছে দ্রুত। আর এই অসুস্থ্য সমাজের মধ্যে আমরাও নেতিয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত কম্প্রোমাইজ আর এডজাষ্টমেন্ট করতে করতে।
২৪/০২/২০০৩-স্ট্যালিন ঢাছা
আবখাজিয়ার রিটসা লেকের ধারের সেই “স্ট্যালিন ঢাছা”- একটি মর্মান্তিক ইতিহাস
আবখাজিয়ায় আমার নতুন পোষ্টিং বেশ মাস খানেক হলো। আসার পর অনেকবার যেতে চেয়েছিলাম “গোরি”তে যেখানে স্ট্যালিন জন্ম গ্রহন করেছে। এখন জায়গাটা আর আগের মতো নাই। এটা এখন মিউজিয়াম হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে। কিন্তু আরেকটা জায়গা দেখার খুব শখ হচ্ছিলো- স্ট্যালিন ঢাছা।
স্ট্যালিনের শিশু জীবন কেটেছে খুবই অনিরাপদ এবং গরীব এক পরিবারে। এই অনিরাপদ পরিবেশে তিন ভাই বোনের মধ্যে স্ট্যালিনই একমাত্র বেচেছিলো। তার পিতা ছিলো একজন জুতা মেরামতকারী কিন্তু প্রচন্ড মদ্যপানকারী বদরাগী মানুষ যে প্রতিদিন সে তার সন্তান স্ট্যালিনিকে কারনে অকারনে মারধোর করতেন। স্ট্যালিনের বয়স যখন ১০, তখন তার পিতা মারা যায়। তার মা ছিলো হাউজ ওয়াইফ। তার মা স্ট্যালিনের বুদ্ধিমত্তা দেখে তিনি তাকে এক সেমিনারীতে ভর্তি করে দেন এবং তিনি চেয়েছিলেন স্ট্যালিন প্রিস্ট হিসাবে বড় হোক।
স্ট্যালিন খুব মেধাবী ছাত্র ছিলো এবং প্রায় ৮ বছর পড়াশুনা করে স্ট্যালিন তার ভিন্ন মার্ক্সিজমের মতাদর্শের কারনে স্কুল তাকে বহিষ্কার করে দেয়। এরপর স্ট্যালিন একটি রেভুলুসনারী গ্রুপে তদানীন্তন জারের বিরুদ্ধে জয়েন করেন এবং রেভুলিউশনারী গ্রুপের হয়ে স্ট্যালিন নিজ হাতে তার মতের বাইরের লোকদেরকে একের পর এক হত্যা করতে শুরু করেন। এরপর বলসেভিক গ্রুপ। স্ট্যালিনের একচেটিয়া মনোভাব আর হত্যার মতো দুধর্ষ কাজের মাধ্যমে তিনি বলসেভিক গ্যাং এর খুব প্রতাপশালী নেতা হয়ে উঠেন। শুরু হয় ব্যাংক ডাকাতি, গ্রামে আগুন লাগানো, লোকদেরকে হত্যা করা ইত্যাদি।
যখন বলসেভিক ক্ষমতায় এলো, তখন বলসেভিক পার্টির নেতা লিউনার্দো তাকে বলসেভিক পার্টির অন্যতম একজন নেতার পদ দেন। কিন্তু লিউনার্দো পরবর্তিতে তার মৃত্যুর আগে এটা বুঝে গিয়েছিলেন যে, স্ট্যালিনকে আর বেশী ক্ষমতা দেয়া যাবে না কারন সে ডেস্ট্রাকটিভ এবং অত্যান্ত উগ্রপন্থির মানুষ এবং এতোটাই যে, তাকে সর্বনয় ক্ষমতায় তিনি তাকে দেখতে চাননি। কিন্তু তারপরেও সেটা হয়েছিলো।
রাশিয়ান রেভুলিউশনের সময় “স্ট্যালিন” এই নামটি নিজেই গ্রহন করেন যার অর্থ স্টিলম্যান বা ম্যান অফ স্টিল। তার আসল নাম ছিলো ভিসারিউনভিচ। স্ট্যালিন চেয়েছিলো আল্টিম্যাট টোটালেরিয়ান ডিকটেটর হিসাবে পরিচিত হতে এবং সেটা কমিউনিজমের মাধ্যমে। তার ধারনা ছিলো কমিউনিজমের মাধ্যে সে তার দেশের সমস্ত মানুষকে ডিসিপ্লিন্ড, শক্তিশালী , ওবিডিয়েন্ট এবং সভ্য মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা আর তার আদেশ অন্ধভাবে পালন করা। এই প্রোজেক্ট সফল করার জন্য স্ট্যালিনকে যা যা করা দরকার সেটাই সে একচ্ছত্রভাবে এগিয়ে গিয়েছিলো যেখানে পুরানো সব ভিন্ন মতাদর্শকে সমুলে খতম এবং তার মতাদর্শকে আরোপ করা। সে মনে করতো তার এই প্রোজেক্ট সফল করার জন্য যদি দেশের অর্ধেক মানুষকেও হত্যা করতে হয়, তাতেও তার করতে হবে এটাই ছিলো তার একমাত্র সপ্ন। স্ট্যালিন এই প্রোসেসকে সফল করার জন্য প্রায় দেড় বছর এক নাগাড়ে নীরবে এবং গোপনে একটা ‘গ্রেট পার্জ’ নামে সায়েন্টিফিক এবং মেটিকুলাস মেথড ব্যবহার করেছেন। ‘গ্রেট পার্জ” এর জন্য তার প্রয়োজন ছিলো এমন একজন লোক যিনি স্ট্যালিনের সমস্ত আদেশ অন্ধভাবে বিসশাস করবে, পালন করবে এবং তা পালন হয়েছে কিনা নিশ্চিত করবে। আর এর জন্য তিনি বেছে নেন নিকোলাই ইয়েজভ নামে একজন তিন ক্লাশ পর্যন্ত পড়ুয়া মানুষকে। যাকে পরবর্তিতে মানুষ চিনতো “ব্লাডি ডয়ার্ফ” নামে। এই নিকোলাই ইয়েজভ ছিলো স্ট্যালিনের সিক্রেট পুলিশের চীফ। সে নিজে সাত লক্ষ সত্তুর হাজার নীরীহ এবং ভিন্ন মতালম্বী মানুষকে স্ট্যালিনের “গ্রেট পার্জ” এর আওতায় গুলি করে হত্যা করা হয়।
জুলাই ১৯৩৭ থেকে নভেম্বর ১৯৩৮ এর মাঝখানে স্ট্যালিন প্রায় ৮ লক্ষ মানুষকে এভাবে হত্যা করেন। অর্থাৎ প্রতিদিন ১৫০০ মানুষ অথবা প্রতি ৫৭ সেকেন্ডে একজন। আর এভাবেই স্ট্যালিন নভেম্বর ১৯৩৮ এর শেষের দিকে মনে করেন তার আর কোনো কাল্পনিক বা দৃশ্যমান কোনো প্রতিদন্ধি থাকলো না এবং “এবসিউলুট পাওয়ার” এর অধিকারী হন স্ট্যালিন। আগেই বলেছিলাম, স্ট্যালিন ছিলো অত্যান্ত মেধাবী এবং হিসাবী। তিনি তার এই হত্যার কৃত কর্মের ভার কখনোই নিজের ঘাড়ে নিতে চান নাই। তার সেটাও পরিকল্পনায় ছিলো। এ ব্যাপারে একটু পরেই আমরা আলোচনা করবো।
স্ট্যালিনের ১ম স্ত্রী ছিলেন একাতেরিনা যিনি অসুস্থতার কারনেই যুবতী অবস্থায় মারা যান। তার ২য় স্ত্রী ছিলো নাদিয়া। ১৩ বছর স্ট্যালিনের সাথে সংসার করার পর ১৯৩২ সালে নাদিয়া নিজে আত্তহত্যা করেন। স্ট্যালিনের সাথে ১৩ বছর সংসার করার পর নাদিয়া একটা জিনিষ বুঝতে পেরেছিলেন যে, স্ট্যালিন একজন স্বাভাবিক মানুষ নন যা তিনি বিয়ের সময় ভেবেছিলেন। কারন নাদিয়া দেখতে পাচ্ছিলো যে, স্ট্যালিন নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য নিজের আপন মানুষদেরকেও তার হত্যা করতে কোনো দিধাবোধ নাই। এরই ধারাবাহিকতায় নাদিয়া দেখছিলেন, তার সমস্ত আত্তীয়স্বজন, তার স্বামীর বাড়ির আত্তীয় স্বজনেরা একে একে কোথায় যেনো গুম হয়ে যাচ্ছে আর কেউ ফিরে আসছে না। নাদিয়ার বোন এভগেনিয়ার স্বামীকে স্ট্যালিন বিষপানে, এভগেনিয়াকে এবং তার আরেক বোন মারিয়াকে স্ট্যালিন সাইবেরিয়ার “গুলা” তে ডিপোর্টেশনে পাঠান। “গুলা”র তাপমাত্রা শীতকালে যা থাকে মাইনাস ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো। শুধু তাইই নয়, স্ট্যালিন নাদিয়ার ছোট ভাই পাভেলকে ২ নভেম্বর ১৯৩৮ সালে বিষপানে হত্যা করেন। এভগেনিয়ার মেয়ে “কিরা”, তার বড় বোন আনাকেও স্ট্যালিন “গুলা”তে নির্বাসনে পাঠান। এভাবেই ‘আনা’র স্বামী স্ট্যানিস্লাভ, ১ম স্ত্রীর ভাই আলেক্সজান্ডারকেও স্ট্যালিন গুলি করে হত্যা করেন। নাদিয়া এসবের চাপ আর নিতে পারছিলেন না। ফলে সে স্বামীর আনুগত্য হারিয়ে ফেলে। নাদিয়া তার গর্ভের তিন বাচ্চা, ছেলে ইয়াকভ, মেয়ে ভ্যাসিলি আর এসভেটলানাক পিছনে রেখে আত্তহত্যা করেন। আত্তহত্যার পুর্বে নাদিয়া তার এক ভাইকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলো যে, সে কেনো আত্তহত্যা করতে যাচ্ছে। কারন নাদিয়ার পালানোর কোনো জায়গা ছিলো না। নাদিয়া পালিয়ে অন্য কোথাও গেলেও স্ট্যালিন তাকে যেভাবেই হোক খুজে বের করে আনতে সক্ষম। আত্তহত্যাই ছিলো তার মুক্তির একমাত্র পথ। স্ট্যালিনকে বাইরে থেকে মানুষ যা দেখে চোখের অন্তরালে স্ট্যালিন আরেক মানুষ যা মানুষ দেখে না। তাই, নাদিয়া নিজে নিজে তার পথ বেছে নেয়।
নাদিয়ার মৃত্যুর পর স্ট্যালিন আরো নিষ্ঠুর হয়ে উঠে কিন্তু স্ট্যালিন সবার থেকে একেবারে আলাদা হয়ে যান। সবসময় সবার থেকে আলাদা হয়ে একা বসবাস করার পরিকল্পনা করেন। স্ট্যালিন দক্ষন মস্কোর কয়েক কিলোমিটার দূরে এক বিশাল গহীন জংগলের ভিতর রাজ প্রাসাদ বানান যার নাম দেন “স্ট্যালিন ডাচা”। এই স্ট্যালিন ডাচা সুরক্ষার জন্য এক কোম্পানী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং ৩০০ এর অধীক সৈনিক মোতায়েন থাকতো। ‘শট্যালিন ডাচা’য় স্ট্যালিনের নিজের অনুমতি ছাড়া অন্য কারো প্রবেশের অনুমতি ছিলো না। তিনি শুধু একাই সেখানে থাকতেন। আর থাকতো তার গভর্নেস “ভ্যেলেন্টিনা”। ভেলেন্টিনাই স্ট্যালিনের সমস্ত কাজ করতো, খাওয়া দাওয়া, দেখভাল, কুরিয়ারের কাজ এমন কি তার সাথে রাতের সংগী হিসাবে। ভেলেন্টিনাকে স্ট্যালিন সবচেয়ে বেশী বিশ্বাস করতেন। ভ্যালেন্টিনাই শুধু ক্রেমলিন থেকে আসা কাগজপত্রগুলি গ্রহন করতেন এবং ভোর বেলায় তা স্ট্যালিনকে হস্তান্তর করতেন। স্ট্যালিন সারা রাত কাজ করতেন এবং তার ঘুমের সময় হতো সকাল ৭ টা থেকে সকাল ১০ পর্যন্ত।
সারারাত স্ট্যালিন একটা কাজ একেবারে নিজের হাতে করতেন কারো কোনো পরামর্শ ছাড়া। আর সেটা হচ্ছে তার কাল্পনিক এবং দৃশ্যমান শত্রুদেরকে ডেথ সেন্টেন্স দেয়ার অনুমতি। তিনি সারারাত বাছাই করতেন কাকে কখন মারা হবে অথবা সাইবেরিয়ায় বা গুলাতে ডিপোর্টেশনে পাঠানো হবে। কাজটা খুব সহজ ছিলো না। কিন্তু স্ট্যালিন এই কাজটা খুব মনোযোগের সাথে করতেন এবং নামের পাশে একের পর এক টিক দিতেন কার ভাগ্যে মৃত্যু আর কার ভাগ্যে ডিপোর্টেশন। স্ট্যালিন যখন কোনো মানুষকে মেরে ফেলার জন্য আদেশ দিতেন, তখন তার সাথে তার গোটা পরিবারকেও তিনি খতম করে দিতেন। ৬০ বছর বয়সে স্ট্যালিন সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হন যেখানে তার আর কোনো বিপক্ষের লোক ছিলো না। স্ট্যালিন মাঝে মাঝে ‘স্ট্যালিন ডাচা” থেকে বেরিয়ে এসে ক্রেমলিনেও অফিস করতেন যেখানে তার চার জন মহিলা সেক্রেটারী ছিলো। কিন্তু এই সেক্রেটারীদেরকেও স্ট্যালিন কখনো বিশ্বাস করতো না। শুধুমাত্র একজন সেক্রেটারী (একাতেরিনাও তার নাম) ছাড়া সবাই স্ট্যালিনের রোষানলে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু স্ট্যালিন তার এই মহা হত্যার জজ্ঞ নিজের ঘাড়ে যেহেতু নিতে চান নাই আর তার কাজ প্রায় শেষের পথে। তাই তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৮ তারিখে তার সর্বশেষ নিধন লিষ্ট অনুমোদন দেন।
আজ সেই ঐতিহাসিক ২৪ ফেব্রুয়ারী আবারো ফিরে এসছে ১৯৩৮ থেকে ২০০৩ এ। এদিন অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৮ তারিখে স্ট্যালিন তার “গ্রেট পার্জ” এ নিধন হত্যার সর্বশেষ লিষ্ট অনুমোদনে তার অন্যায় এমন এক লোকের উপর অর্পিত করেন, যার নাম “ব্লাডি ডয়ার্ফ” বা সিক্রেট পুলিশ চীফ নিকোলাই ইয়েজভ। এই নিকোলাই লুবিয়াংকা জেল খানায় সে নিজেই প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে গন হত্যা করেছেন।
স্ট্যালিন সকাল সাড়ে সাতটায় নিকোলাইকে তার ‘স্ট্যালিন ডাচ’য় ডেকে পাঠান। আজকের দিনে স্ট্যালিন সেই তাকেই সবার কাছে কালার করে প্রচার করে দিলেন যে, সব গন হত্যার পিছনে ছিলো এই চীফ এবংতিনি জাপানিজ, ব্রিটিস এবং আমেরিকান স্পাই হিসাবেও কাজ করছেন। তাকে মরতেই হবে। আর নিকোলাই জানতেন এর থেকে কোনো পরিত্রান নাই। তার ভাগ্য ইতিমধ্যে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। সে শুধু তার একমাত্র ১০ বছরের মেয়ের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলেন যার নাম নাতালিয়া। নাতালিয়াকে স্ট্যালিন শেষ পর্যন্ত মারেননি একশর্তে যে নাতালিয়া আর কখনো তার বাবার নামের “ইয়েজভ” উপাধিটি ব্যবহার করতে পারবেন না। নিকোলাই ইতিহাসের পাতায় একজন ক্রিমিনাল হয়েই বেচে রইলেন।
নোটঃ ১লা মার্চ ১৯৫৩ তারিখে স্ট্যালিন সারাদিন কারো সাথেই কোনো কথা বলেন নাই, কোথাও বেরও হন নাই। আর তাকে কেঊ ডাকবে, কিংবা তিনি কি করছেন এটা দেখার মতো কারো সাহসও নাই। অবশেষে যখন ক্রেমলিন কুরিয়ার তার অফিসে ঢোকলেন, তখন দেখা গেলো স্ট্যালিন হার্ট স্ট্রোক করে মেঝেতে পড়ে আছেন। তখন তার বয়স ৭৫।
স্ট্যালিন যেভাবে রাজ্য পরিচালনা করতেন তিনি ঠিক সেভাবেই মারা গেলেন। ২০ মিলিয়ন মানুষকে তিনি তার শাসনামলে হত্যা করেছিলেন। প্রায় ৩০ বছর এককভাবে রাজত্ত করেছেন স্ট্যালিন। স্ট্যালিন ৩০ বছর ইউএসএসআর পরিচালনা করেছেন যেখানে ১৫ টি ছিলো রিপাব্লিক। পৃথিবীর ৬ ভাগের এক ভাগ ছিলো এই ইউএসএস আর। সে সময়ে মোট ১১টি টাইম জোন ছিলো। Biggest Empire of all times.
১০/০১/২০২৩-আজ থেকে শত বছর পর আমার এই লেখা
আজ থেকে শত বছর পরে আমার এই লেখাটা যারা পড়বেন তাদের মধ্যে আজকের দিনের আর কেউ বেচে নেই। অথচ আজকের দিনের জীবিত মানুষগুলি কিংবা আমার আগের শতবছরের মানুষগুলি যে বিষয়গুলি নিয়ে একে অপরের সাথে পরস্পরে বিবাদ, মনোমালিন্য, যুদ্ধ, অভিমান, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি করেছি, সেগুলি আর আমরা কেহই মনে রাখতে পারবো না, আমরা একেবারেই ভুলে যাবো। পুরুটাই ভুলে যাবো। এসবের আর কোনো মাহাত্য আমাদের কাছে কোনো কিছুই আর অবশিষ্ঠ থাকবে না।
আমরা যদি আরো শতবছর আগে ফিরে যাই, ধরি সেটা ১৯২২ সাল। সেই দিনের পৃথিবী কেমন ছিলো আর সেই পৃথিবীর মানুষের মধ্যে কি নিয়ে ভয়, শংকা, মারামারি, হানাহানি নিয়ে তাদের মস্তিষ্কে কি ভাবনার খেলা চলছিলো, তাদের মুখের চাহনীতে কি চিত্র ফুটে উঠেছিলো সেই চিত্র কিন্তু আজকের দিনের কোনো মানুষের মাথায় বা মস্তিষ্কেও নাই। আর ইতিহাসের কল্পনায় থাকলেও সেই বাস্তবতার নিরিখে তার আসল চিত্রের ধারে কাছে আমরা তা আচ করতে পারি না।
জাষ্ট একবার ভাবুন তো! সেই অতীত দিনের কোনো এক পরিবারের সদস্যগন হয়তো তাদের পারিবারিক জমাজমি, কিংবা সম্পদের রেষারেষিতে যখন এক ভাই আরেক ভাইকে, কিংবা এক বোন আরেক ভাই বা বোনের বিরুদ্ধে চরম রেষারেষিতে একে অপরকে খুন, জখম বা আঘাত করেছে, কিংবা নিজের লোভের কারনে অন্যের কোনো সম্পত্তি দখল করার জন্য চরম আঘাত করেছে কিংবা এক অংশীদার আরেক অংশীদারকে সমুলে বিনাশ করতে মরিয়া ছিলেন, সেই সম্পদ কিংবা সেই অর্থ এখন কার কাছে? আর সেই বা কোথায়? পাহাড় পরিমান সম্পদ গড়া হয়েছিলো, ব্যাংক ভর্তি টাকা, সোনাদানা হয়তো জমা করা হয়েছিলো, সেই হিসাবের খাতা এখন আর কোনো গোপন নাই, না আছে তাকে যক্ষের মতো ধরে রাখার কোনো আকুতি বা পেরেসানি। কারন আমি সেই জগতেই নাই। আমাদের গড়ে যাওয়া সম্পদ যেখানে, তার থেকে আমরা এত দূর যে, তাকে কোনো অবস্থাতেই আর স্পর্শ পর্যন্ত করার কোনো অলৌকিক শক্তিও নাই। এটাই মানুষের জীবন। সে যাইই কিছু আকড়ে ধরুক না কেনো, সময়ের কোনো এক স্তরে গিয়ে সে আর কোনো কিছুই নিজের জন্য আজীবন আগলে রাখতে পারে না। যদি বলি-সেগুলি পরিবার পাবে, পরিবারের পরিবার বংশ পরম্পরায় পাবে, সেটাও সঠিক নয় কারন পরিবার গঠন হয় অন্য পরিবারের মানুষ নিয়েই যারা পিউর পরিবার বলতে কিছুই থাকে না। এটা অনেকের কাছে শুনতে অবাক বা যুক্তিহীন মনে হলেও এটাই ঠিক যে, আত্মকেন্দ্রিক এই পৃথিবীতে নিজের সন্তানও নিজের মতো না, নিজের পরিবারও নিজের মতো না। আমাদের নিজের চিন্তাভাবনা নিজের সন্তানের চিন্তাভাবনা, বা নিজের পরিবারের চিন্তাভাবনা কখনোই একই সমান্তরালে বহমান নয়। আর ঠিক তাই, এক পরিবার আরেক পরিবারের সাথে মিশ্রন হতে হতে প্রাচীন পরিবারটিও একদিন তার নিজের সত্ত্বা হারিয়ে খান বংশের মানুষেরা, সৈয়দ বংশ, সৈয়দ বংশ বঙ্গানুক্রমে মাদবর কিংবা চৌধুরী বংশে রুপান্তরীত হয়ে যায়। আমাদের আমিত্ব পর্যন্ত আর কেউ রাখতে পারেনা।
যাক যেটা বলছিলাম শত বছরের বিবর্তনের কথা।
ছোট একটা উদাহরন দেই। আজ থেকে সবেমাত্র ৩০/৪০ বছর আগের কথা যখন আমরা বা আমি ছোট ছিলাম, স্কুলে লেখাপড়া করতাম। তখনো স্কুলের ক্লাস ক্যাপ্টেন হবার জন্য কিংবা কলেজের ফুটবল টীমে নাম লিখার জন্য এক সহপাঠির সাথে আরেক সহপাঠির মধ্যে কতই না কোন্দল কিংবা বিরুপ সম্পর্কে পতিত হতাম, আজ প্রায় সেই ৩০/৪০ বছর পর সেই স্কুলের কেইবা মনে রেখেছে কে স্কুলের ক্যাপ্টেন ছিলো বা সেই দিনের সেই ফুটবল টীমের আমি একজন সদস্য ছিলাম? আজব ব্যাপার হচ্ছে-আমি যে সেই স্কুলের একজন দাপুটে এবং অতীব জনপ্রিয় ছাত্র ছিলাম, সেটাই বা কয়জন এখন আবিষ্কার করতে গিয়ে তাদের সময় অপচয় করছে কিংবা মনে রাখার চেষ্টা করছে? যদি সেটাই হয়, ভাবুন তো আজ থেকে শতবছর পর তাহলে আমার বা আমাদের অস্তিত্বটা কোথায়? কোথাও নাই। আর এই শতবছর পেরিয়ে যখন আরো শতবছর পেরিয়ে যাবে, তখন যেটা হবে সেটা হলো-আমি যে এই পৃথিবীতে ছিলাম, সেটাই বিলীন হয়ে যাবে। এখন আমরা যারা যাদেরকে এই পৃথিবীতে গর্ব করে মনে রাখি তারা হয়তো অতীব ব্যতিক্রম। তারা তাদের সময়ে সম্পদের কারনে নয়, কর্মের কারনে ‘সময়’টাকে আলাদা করে যুগে যুগে সেই কর্মের ফল ভোগ করতে পারে এমন কিছু কর্ম হয়তো পিছনে ফেলে গিয়েছেন বিধায় হয়তো শতবছর পরেও আমরা তাদের সেই কর্মফল ভোগকারীরা কিছুটা মনে রাখি। এটার হার অতীব এবং নিছক খুব বেশী না। আমরা সেই তাদের দলে পড়ি না।
হয়তো অনেকেই বলবেন, আজকের দিনের ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের আজকের দিনের সমস্ত মেমোরী সংরক্ষন করে রাখতে পারি যা যুগে যুগে আমাদের বংশ পরম্পরায় এর সংরক্ষন করে আমাদেরকে জীবিত রাখবেন। এটা কোনোভাবেই সত্য না। এ ব্যাপারে একটা আরো ছোট উদাহরন দেই- জগত বিখ্যাত সঙ্গীতরাজ মাইকেল জ্যাকসন যিনি ২০০৯ সালে মারা যান। খুব বেশীদিন নয়, এটা মাত্র ১৩ বছর আগের কথা। এই মাইকেল জ্যাকসন সারা দুনিয়ায় এমন কোনো জায়গা ছিলো না যে যুবসমাজ, কিংবা শিক্ষিত সমাজ তাকে না চিনতো। তার বিচরন ছিলো সর্বত্র। তার চলাফেরা, পোষাকাদি, তার অঙ্গভঙ্গিও তখনকার দিনের প্রতিটি যুবক যেনো মডেল হিসাবে নিয়ে নিজেরাও সে রকমের পোষাক, আচরন ভঙ্গীতে অনুসরন করতো। একবার ভাবুনতো, এ যুগের কতজন যুবক আজ সেই মাইকেল জ্যাকসনের নামটা পর্যন্ত জানে? তাহলে আজ থেকে শতবছর পরের চিত্রটা কি হবে? হতে পারে, এই মাইকেল জ্যাকসনের নামটা সারা সঙ্গীত শুধু নয়, আর কোথাও হয়তো প্রতিধ্বনিতে বেজে উঠবে না। অথচ এক সময় সেইই ছিলো ঐ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটা ইমেজ। আরো খুব কাছের একটা উদাহরন দেই।
প্রতিদিন আমরা অসংখ্য ছবি তুলছি, আমরা তা আমাদের ফেসবুক, সোস্যাল মীডিয়ায় তা প্রতিদিন পোষ্ট করছি। আমরাই গত পাচ বছরের আমাদের ছবিগুলিই পুনরায় রিভিউ করে দেখার সময় পাই না নতুন নতুন ইভেন্টের ছবির কারন। যা একবার তোলা হয়েছে, যা একবাএ দেখা হয়েছে, তার আর খুব একটা সংরক্ষন করে বারবার দেখার স্পৃহাই আমাদের নাই, তাহলে আমার এসব স্মৃতিময় ইভেন্টের সেই স্মৃতি অন্য আরেকজন রাখবে এটা ভাবা বোকামি। হতে পারে আমার বা আমাদের অন্তর্ধানে সাময়িকভাবে সেগুলি খুব কাছের কিছু লোক একবার দুইবার দেখে কিছু স্মৃতি রোমন্থন করবেন। আর ব্যাপারটা এখানেই শেষ।
আর এটাই জীবন। আমাদের এই ছোট আধুনিক জীবনে আমরা আসলে একে অপরের সাথে হয়তো কন্টাক্টে আছি, কিছু সেই কন্ট্যাক্ট মানে কিন্তু এটা নয় যে, আমরা একে অপরের সাথে কানেক্টেড। একই ঘরে বসবাস করে, কিংবা একই প্লাটফর্মে একসাথে থাকার নাম হয়তো কন্ট্যাক্ট, কিন্তু এর মানে কানেকশন নয়। আমরা ধীরে ধীরে একে অপরের থেকে কানেকশনবিহীন হয়ে পড়ছি। আর এমন একটা কানেকশনবিহীন সম্পর্কে কেনো আমরা একে অপরের সাথে বিদ্বেষ নিয়ে বেচে থাকছি?
এটাই যদি হয় আমাদের জীবনের চিত্র, তাহলে পরিশেষে চলুন আমরা আমাদের জীবনটাকে একটু অন্যরকম করে ভাবী। জীবনটাকে একেবারে সহজ করে ফেলি। কেউ এই পৃথিবী থেকে জীবন্ত ফিরে যেতে পারবো না। কেউ জীবন্ত ফিরে যেতে পারেও নাই, না আজীবনকাল এই প্রিথীবিতে থাকতে পেরেছে। আজকের দিনের যে গাড়িটা কিংবা অত্যাধুনিক ফোনটা আমরা ব্যবহার করছি সেটাও একদিন জাংক হিসাবেই শেষ হবে। কোনো কিছুই আর রিলেভেন্ট মনে হবে না। তাই যে সম্পদের জন্য আমরা আজ এতো হাহাকার করছি, একে অপরের উপর ক্ষিপ্ত হচ্ছি, এইসব কিছুই আসলে নিরর্থক, অকেজো। হ্যা, জীবনের চাহিদার অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমাদের দরকার নাই। আমাদের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রন করা আবশ্যিক, একে অপরের ভালোবাসার মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলি, কারো উপর কারো বিদ্বেষ না রাখি, কারো সম্পত্তির উপর কিংবা কারো হকের উপর আমরা কেউ লোভ না করি। না কারো উপর কোনো জুলুম করি, না কাউকে নিজের সার্থের কারনে কোনো ক্ষতি করি। যতক্ষন আমরা অন্যের সাথে নিজের সাথে তুলনা না করি, ততোক্ষন পর্যন্ত সম্ভবত আমরা নিজের লোভের কাছে পরাভূত হবো না।
আমাদের সবার গন্তব্য স্থান পরিশেষে একটাই-কবর। কেউ হয়তো আগে কেউ হয়তো পরে। হোক সে মসলমান, হোক সে অন্য কোনো ধর্মের। কোনো কিছুই সাথে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। শতবছর পরে এমনিতেও আমরা হারিয়েই যাবো। যখন নিজেরাই হারিয়ে যাবো, তাহলে আমাদের অসাধু উপায়ে হানাহানি, মারামারি কিংবা জোর করে ছিনিয়ে নেয়া গড়ে তোলা সাম্রাজ্যই বা রাখবো কার জন্যে আর কেনো? কিছুই থাকবে না, রাখতেও পারবো না।
শতবছর পরেও এই আকাশ নীলই থাকবে, পাহাড় সবুজই থাকবে, সাগর সেই শতবছর আগের মতোই কখনো কখনো উত্তালই হবে। শুধু আমাদের নামের সম্পদগুলি অন্য আরেক নতুন নামে লিপিবদ্ধ হবে, আমার শখের সব কিছু অন্য আরেকজন তার নিজের মতো করে ব্যবহার করবে। আমার বলতে কিছুই নাই। আজ যে ক্ষমতার মসনদে বসে আমি হাতের ইশারায় জুলুম উপভোগ করছি, সেই ক্ষমতার মসন্দে বসেই হয়তো অন্য কোনো এক সময়ে আমারই বংশধর কারো দ্বারা শাসিত হচ্ছে, কে জানে। এর পার্থিব অনেক নমুনা আমরা দেখেছি মীর জাফরের বংশে, হিটলারের পতনে, কিংবা মুসুলিনি বা অনেক রাজার জীবনে। আজ তারা সবাই এক কাতারে।
এটা যেনো সেই বাল্ব গুলির মতো-কেউ শত ওয়াটের বাল্ব, কেউ হাজার পাওয়ারের বাল্ব, কেউবা কয়েক হাজার ওয়াটের বাল্ব কিন্তু ফিউজ হয়ে যাওয়ার পরে সবাই সেই ডাষ্টবিনে একসাথে। সেখানে কে শত ওয়াটের আর কে হাজার পাওয়ারের তাতে কিছুই যায় আসে না। না তাদেরকে আর কেউ খুজে দেখে।
২৭ আগষ্ট ২০২২-নতুন আর পুরাতন প্রজন্ম
অনেকদিন পর আজ ডায়েরী লিখতে বসলাম।
প্রতিদিন আমাদের সবার জীবন খুব দ্রুত পালটে যাচ্ছে। কতটা দ্রুত সেটা আজ যারা ঠিক এই সময়ে বাস করছি, হয়তো তারা বলতে পারবেন। আমাদের সময়টাই মনে হচ্ছে সেই শেষ সময় যেখানে এখনো আমরা পুরানো বন্ধু বা চেনা লোকের সাথে দেখা হলে তিনি কেমন আছেন জিজ্ঞেস করি, একটু সময় ব্যয় করি, সুখ দুঃখের আলাপ করি। সমস্যার কথা বলে কিছু উপদেশ বিনিময়ও করি। আমরাই সম্ভবত সেই শেষ যুগের কিছু মানুষ যারা এখনো পরানো খবরের কাগজটা অন্তত কিছুদিন ঘরে রাখি, একই খবর হয়তো বারবার পড়ি। আমরা এখনো সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভয় পাই, পাশের বাড়ির সাথে সুসম্পর্ক রাখি। আমাদের প্রাভেসী বলতে কিছু ছিলো না। যা ছিলো সবই খোলামেলা। আমরা সেই শরৎচন্দ্রের লেখা উপন্যাস পড়ে কখনো কেদেছি, কখনো হেসে গড়াগড়ি করেছি, রবী ঠাকুরের ‘বলাই’ আমাদের মনে দাগ কেটে যায়, কিংবা ‘পোষ্টমাষ্টার’ গল্পের ছোট বালিকার কথায় বড্ড কষ্ট লেগেছে। ‘দেবদাস’ এখনো আমাদের অনেক প্রিয় একটা গল্প বারবার পড়েছি, বারবার। এখনো এই দলটি কোনো ইনভাইটেশন ছাড়া একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যায়, বেড়াতে গেলে হয়তো কম দামী হলেও হাতে কিছু নিয়ে যায়। এখনো তারা বড়দের পা ছুয়ে সালাম করে। রাতের বা সকালের নাস্তা এখনো এরা একসাথে করার অভ্যাস রাখে। ছেলেমেয়ে, বউ পরিজন একসাথে নাস্তা করুক বা রাতের খাবার খাক, এটাই চায় তারা। ঈদের ছুটিতে তারা এখনো গ্রামের ভালোবাসার টানে সেই কাদাচে গ্রাম, সোদামাখা পরিবেশে ছুটে যেতে সব প্রকার কষ্ট করতেও আনন্দ পায়। আমাদের এই দলটি সম্ভবত খুব বেশীদিন আর নাই এই পৃথিবীতে। হয়তো আগামী ২০ বছরের পর আর কেউ থাকে কিনা কে জানে। এই দলটির মানুষগুলি সকালে উঠে নামাজের জন্য মসজিদে যায়, ঘরে এসে উচ্চস্বরে কোরআন তেলওয়াত করে, হাতে একটা প্লাষ্টিক ব্যাগ নিয়ে নিজে নিজে বাজার করে, হেটে হেটে সেই বাজার বহন করে আনে। বিকালে হয়তো কিছু মানুষ একত্রে বসে মাঠে বা কোনো দোকানের সামনে বসে গালগল্প করে। কোথাও একসাথে খেতে গেলে কে কার আগে রেষ্টুরেন্টের বিল পরিশোধ করবে তার প্রতিযোগিতা চলে। একজন বলে সে দিবে, আরেকজন বিল না দিতে পেরে আবারো হয়তো আরেকটা আড্ডার অগ্রীম দাওয়াত দিয়ে রাখে। এদেরকে আর খুব বেশী দেখা যাবে না একযুগ পরে।
তখন যাদের আনাগোনা হবে তারা সবাই আত্তকেন্দ্রিক একদল। যারা একে অপরের পাশে বসেও হাতের মোবাইলে কুশলাদি বিনিময় করবে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও বেশীর ভাগ গ্রিটিংস হবে শুধুমাত্র মোবাইলের মেসেজে মেসেজে। কেউ কারো বাড়িতে যেতেও আনন্দ পাবে না, না কেউ তাদের বাড়িতে এলেও খুশী হবে। সন্তানদের সাথে তাদের দুরুত্ত বাড়তে বাড়তে এমন এক পর্যায়ে চলে আসবে যে, কে কখন কি করছে, কেউ তার জবাব্দিহি নেওয়ার মতো অবস্থায় থাকবে না, না থাকতে চাইবে। বাজার হবে মোবাইলে, আনন্দ হবে মোবাইলে মোবাইলে, বন্ধুত্ত গুলির মধ্যে বেশীর ভাগ বন্ধুই কারো চেনা জানা হবে না অতচ বন্ধু বলে ধরা হবে। বড়রা যেমন ছোটদেরকে স্নেহ করার কায়দা জানবে না, ছোটরাও বড়দেরকে সম্মান করার আদব জানবে না। ঘরে ঘরে সবাই একাই থাকবে একজন থেকে আরেকজন। ধর্মের চর্চা ধীরে ধীরে কমে আসবে, কমে আসবে পারিবারিক, আর সামাজিক বন্ধুত্তের গন্ডি। প্রতিবেশীদের মধ্যে কারো সাথেই আজকের দিনের সখ্যতা আর হয়তো থাকবেই না। মুখ চেনা হয়তো থাকবে কিন্তু হয়তো নামটাও জানা হবে না একে অপরের। সন্তানরা বড় হবে মায়ের আদরে নয়, কাজের বুয়াদের নিয়ন্ত্রনে। বৈবাহিক সম্পর্কে চলে আসবে শুধুমাত্র একটা কাগুজে বন্ধনের মধ্যে। স্বামী স্ত্রীর আজীবন কালের ভালোবাসার সম্বন্ধ বা দায়িত্ববোধ হবে শুধুমাত্র দেয়া নেয়ার মধ্যে। ফলে না স্ত্রী স্বামীকে বা স্বামী স্ত্রীকে তার নিজের জীবনের একটা অবিবেচ্ছদ্য অংশ হিসাবে গন্য করবে। সন্তানদের মধ্যে মা বাবার ডিভিশনে তারাও একেবারেই একা হয়ে যাবে। কেউ আসলে কারোরই না। অথচ তারা একই ঘরের ছাদের নীচে বসবাস করবে। ওদের কাছে গ্রাম বলতে একটা অপরিষ্কার পরিবেশ, গ্রামের মানুষগুলিকে মনে হবে অন্য কোনো জাতের মানুষ বলে। এই নতুন প্রজন্মের কাছে মানুষের চেয়ে কুকুর বিড়াল হবে তাদের নিত্য দিনের বন্ধু। সংসার ভেংগে যাওয়ার যে কষ্ট, বা লজ্জা, কিংবা দুঃখের এই প্রজন্মের কাছে এটা খুব মামুলী একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আজ যে তাদের বন্ধু, কাল হয়তো সে তাকে চিনেই না। আজ যে কারো পাতানো বোন, কাল হয়তো সে হয়ে যাবে তার প্রিয় গার্ল ফ্রেন্ড। এদের অনেক টাকা পয়সা লাগবে, হয়তো থাকবেও। কিন্তু একসাথে কোথাও আড্ডায় খেতে গেলে যার যার বিল সে সেই দিতে থাকবে। এতে কারো কোনো কষ্ট নাই। এটাই যেনো এই প্রজন্মের আড্ডার নিয়ম। জিজ্ঞেসও করবে না হয়তো বিল কে দিবে বা কেউ দিবে কিনা।
এখানে সবচেয়ে বিপদজনক পরিস্থিতি হচ্ছে যে, এই আমাদের প্রজন্ম যখন প্রায় শেষের পথে আর নতুন প্রজন্ম যখন উদিয়মানের পথে, এই ট্রানজিট সময়ে সবচেয়ে বেশী সাফার করবে আমাদের প্রজন্ম। কারন তারা তাদের সব কিছু শেষ করে যখন নতুন প্রজন্মকে তৈরী করছে, তখন আমাদের প্রজন্মের মানুষেরা আসলে আর্থিকভাবে নিঃস্ব। নতুন প্রজন্ম আমাদের প্রজন্মকে আর আমাদের সময়ের মতো করে দায় দায়িত্ব নিতে চায় না। অথচ এখনই পুরানো প্রজন্মের সবচেয়ে খারাপ সময় প্রবাহিত হচ্ছে। বড়রা মনে করছেন, আমাকে তো আমাদের সন্তানেরাই দেখভাল করবে, কিন্তু সন্তানেরা মনে করছেন এটা তাদের দায়িত্তের মধ্যেই পড়ে না। তাহলে শেষ ট্রানজিট সময়টা বড্ড বিপদজনক মনে হচ্ছে। এহেনো অবস্থায় আমাদের প্রজন্মের খুব সতর্ক থাকা দরকার। হতে পারে আমার এই কথায় অনেকেই বিরুপ মন্তব্য করবেন, হয়তো বলবেন, সন্তানদেরকে ধার্মীক জীবনজাপন না করায় কিংবা সঠিক পদ্ধতিতে মানুষ না করার কারনে আমরা এহেনো অবস্থায় পড়ছি। আমি এরসাথে একমত নই। আমরা আজকাল সন্তানদেরকে শুধুমাত্র পরিবার থেকে যথেষ্ঠ শিক্ষা দিলেই সব শিক্ষা তারা পায় না। স্কুলের নিয়ম পালটে গেছে, শিক্ষকের আচরন পালটে গেছে, ধার্মিক লোকদের অভ্যাসও পালটে গেছে, সমাজের নীতিনির্ধারন লোকের মানও কমে গেছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও আর সেই আগের আইনের মধ্যে নাই, বিচারের ন্যায্যতা কমে গেছে, রাজনীতির কারনে মানুষে মানুষে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লা মহল্লায় সম্পর্কের মধ্যে চীর ধরেছে। এখন শুধু পরিবারের শাসনের উপর কিংবা আইনের উপরেই সন্তানরা বড় হয়ে উঠছে না। নতুন প্রজন্ম আমাদের হাতের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুরানো প্রজন্মের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেই অনেকটা সার্থপরের মতো হতে হবে। নিজের জন্য যথেষ্ঠ সঞ্চয় মজুত রাখুন যাতে কেউ আপনাকে দেখভাল করুক বা না করুক, কেউ পছন্দ করুক বা না করুক, যাতে আপনি আপনার দেখভাল করতে পারেন। নতুন প্রজন্মের সন্তানেরা (বেশিরভাগ) পুরাতন প্রজন্মকে বোঝাই মনে করে। মা ভাগ হয়ে যায় সন্তানদের মধ্যে ভরন পোষনের জন্য। বাবা ভাগ হয়ে যায় একই ভাবে। ফলে মা–বাবা একে অপরের থেকেও ভাগ হয়ে যান শুধুমাত্র বেচে থাকার কারনে।
বৃদ্ধ বয়সে এসে কারো উপরে নির্ভরশিল না হতে চাইলে, নিজের জন্য যথেষ্ঠ পরিমান অর্থ সঞ্চয় করুন। প্রয়োজনে নিজের এসেট বিক্রি করে হলেও তা করুন। কারন, একটা সময়ে এসে আপনি সেটাও বিক্রি করতে পারবেন না। হয়তো সন্তানেরাই বাধা দেবে অথবা তাদের অংশ দাবী করবে। আর আপনি সারাজীবন কষ্ট করেও শেষ জীবনে এসে সেই অবহেলিতই থাকবেন। হয়তো কারো কারো জায়গা হবে বৃদ্ধাশ্রমে। আর সেই বৃদ্ধাশ্রমে বসে আরেক পরাজিত বুড়ো মানুষের সাথে সারা জীবনের কষতের কথা ভাগাভাগি করবেন, কিন্তু আপনি আসলেই আর ভালো নাই।
১৫/৫/২০১৯-২০ বছর আগের কিছু স্মৃতি…পর্ব-৩
আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের কিছু দূর্লভ মূহুর্ত যা এখন অনেক অংশে ইতিহাস। এই ছবিগুলির মধ্যে অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন (আল্লাহ তাদের বেহেস্তবাসী করুন), কেউ কেউ বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, যারা সেই সময় ছোট পুতুলের মতো পুতুল নিয়ে খেলা করেছে, তারা অনেকেই আজ সমাজে কেউ ডাক্তার, কেউ বড় বড় মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীতে কর্মরত, মেয়েদের মধ্যে অনেকেই মা হয়ে গেছে। ছেলেরাও আজ মাশ আল্লাহ খুব ভালো আছে। এইসব বাচ্চা গুলি, কিংবা বড়রা আমার অনেক কাছে মানুষ, এদের আগমন সব সময়ই আমাকে আনন্দিত করেছে। কিছুটা অবসর সময় ছিলো, তাই আগের দিনের কিছু ভিডিও আর স্থীর চিত্র নিয়ে বসেছিলাম। অতীত সামনে চলে আসে, নস্টালজিক হয়ে যাই। হয়ত কোনো একদিন, আমিও এই ভাবে ইতিহাস হয়ে যাবো, কিছুটা সময় কাছের মানুষেরা মনে রাখবে, এক সময় আমার জন্য এই পৃথিবী শেষ। গুটিকতক মনিষী ছাড়া বেশীর ভাগ মানুষেরাই অজানা ইতিহাসে মিশে গিয়ে বিলীন হয়ে যায়।
এটাই পৃথিবীর বাস্তব নিয়ম।
১৩/৫/২০২২- রকি কাহিনী
আমাদের বাসায় কুকুর পালন কেউ পছন্দ করে না। কিন্তু গত কয়েকমাস আগে হটাত করে কোথা থেকে এক লোকাল কুকুর আমাদের বাসার সামনে এসে হাজির। সারাদিন বাসার সামনেই থাকে, পারলে গ্যারেজের মধ্যে নিজে থেকেই যেনো সেলফ ডিক্লেয়ারড পাহারায় থাকছে। তাঁকে নরম্যাল খাবার দিলে ছুয়েও দেখে না। কয়েকদিন চেষ্টা করেছি, ভাত, রুটি, কিংবা এই জাতীয় জিনিষ খেতে দিতে কিন্তু তার এমন একটা ভাব যেনো, ধুর!! কি দিছো এগুলি?
তারপর মাংস দিয়ে লবন দিয়ে মেখে একটা পরিষ্কার পাত্রে সাথে এক বাটি পানি দিলে উনি ধীরে ধীরে খেতে আসেন। তাও আবার পুরুটা তিনি খান না। একটু পেট ভরে গেলেই বাকী খাবারটা তিনি রেখে অন্যখানে গিয়ে পেট টানটান করে শুয়ে পড়েন। অনেক গবেষনা করছি এটা কোথা থেকে এলো, আর উদ্দেশ্যটা কি? আগেই বা কই ছিলো? শুনলাম পাশেই নাকি কোনো এক বাসায় থাকতো, ওখান থেকে তিনি রাগ করে এই যে এসেছে, ওদিকে সে আর ভুলেও যায় না।
এই কুকুরের আচরনে ইদানিং দেখি আমার বউ ওনার জন্যই শুধু মাংশ পাক করে। নাম রেখেছে আবার 'রকি'। রকি বলে ডাক দিলেও আবার ফিরে তাকায়। আমার ডাক্তার মেয়ে আবার ওর জন্য মাঝে মাঝে খাবারও কিনে নিয়ে আসে। আর আমিও বাদ যাই নি। কয়েকদিন নিউ মার্কেটের "৬৫ টাকায় বিরিয়ানীর দোকান" থেকে বিরিয়ানিও কিনে এনেছিলাম। ফলে আমি যখন বাসায় গিয়া হাজির হই, ব্যাপারটা এখন এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে, গাড়ি থেকে নামলেই একেবারে পায়ের কাছে ঘুর ঘুর করে আর যেনো বলতে থাকে- 'আমার বিরিয়ানির প্যাকেট কই?'
তো গতকাল অনেক বৃষ্টি ছিলো। রকি সারাদিন গ্যারেজেই চার পা চার দিকে ছড়াইয়া নাক ডেকে মনে হয় ঘুমাচ্ছিলো। আমি বাসায় যাওয়ার পর, সে কোনো চোখ না খুলেই খালি লেজ নাড়ছিলো। ধমক দিলাম বটে কিন্তু তিনি এক চোখ খুলে দেখলো আমাকে আর লেজটা আরো একটু বেশী করে নাড়াইলো। ভাবখানা এই রকম, আরে বস, ডিস্টার্ব করো না।
গার্ডকে দিয়ে ওনার জন্য মুরগীর তরকারী আর এক প্লেট ভাত এনে খাওয়ানোর পর দেখি হটাত তার এই শারীরিক কসরত।
২৮/০৩/২০২২-ন্যাচারাল প্রতিশোধ
You are required to login to view this post or page.
26/03/22- দ্বিমুখী জীবন Full
You are required to login to view this post or page.
Protected: ২০/০৩/২০২২-সেটাই এটা যেটা ভেবেছিলাম
You are required to login to view this post or page.
Protected: ২২/০৩/২০২২-ভাবো, আরো ভাবো
You are required to login to view this post or page.
Protected: ২৬/০৩/২০২২- আরেকটা প্রশ্ন
You are required to login to view this post or page.
১৮/০২/২০২২- আমার বাগানের আলু
বাগান করিতে গিয়া একবার মিষ্টি আলুর কয়েকটা ডগা লাগাইয়াছিলাম। যত্ন করি নাই, পরিচর্যাও তেমন করা হয় নাই। ধীরে ধীরে কবে কখন চোখের আড়ালে মাটির নীচে তিনি এত বড় হইয়া উঠিয়াছে জানিতেও পারি নাই। বাগান আলু পাতায় ভরিয়া উঠিতেছে ভাবিয়া উহা সমুলে নির্মুল করিতে গিয়া এই আলুখানা চোখে পড়িলো। কখন কিভাবে যে এত অনাদরেও সবার অলক্ষ্যে সে এত বড় হইয়া উঠিয়াছে কেহই জানিতে পারে নাই। এখন তাহাদের বংশ সহ জীবন ধংসের মুখে। কেমন যেনো মনে হইতেছিলো। তখন মনে বড্ড কষ্ট হইতে লাগিলো এই ভাবিয়া যে, আহা এই ক্ষুদ্র বোবা উদ্ভিদ তৃনলতার মতো মেরুদন্ডহীন লতাটাকে বাগানে রাখিয়া দিলেও পারিতাম। কারন এরাও ফল দেয়, আর এই ফল মুল্যহীন নয়। বাগানে কেহই অনর্থক বা মুল্যহীন নয়।
চোখ বুজিয়া আমি যেনো আমাদের সমাজের বৃহত বাগানের চিত্রটি দেখিতে পাইলাম। অনেক কিছুই ফুটিয়া উঠিলো। এখানে সবাই কোনো না কোনো সময়ে নিজের আপন চেষ্টায়, গোপনে সবার অলক্ষ্যে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করে। সে যত অবহেলিতই হোক, কিংবা অনাদর। মালি কিংবা মালিক কারো কোনো পরিচর্যা ছাড়াও কোনো কোনো প্রজাতি এই ধরায় অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে রাখার আপ্রান যুদ্ধ করেই পতবর্তী প্রজন্মের জন্য ফল দেয়। কেউ ফেলনা নয়। এটা হয়তো ফিলোসোফির একটা দিক বা মুদ্রার।
কেউ কেউ আবার এই বড় মিষ্টি আলুটির চেহাড়া সুরুত আর সাইজ দেখিয়া ইহাও বলিতে পারেন, এই বেটা একটা আলুই শুধু এতো মোটা আর বড় হইলো কেনো? অন্যগুলি না কেনো? সেই ফিলোসোফি যদি বলি- হতে পারে যে, এই একটা আলুই বাগানের যাবতিয় সুখ আর খাদ্য একাই খাইয়া এতো বড় হইয়াছে যাহার ফলে অন্য আলুগুলির ভাগ্য রোহিংগাদের মতো। এই বড় আলুটি শুধু নিজের কথাই ভাবিয়াছে আর ভাবিয়াছে, এই পৃথিবীতে কে কাহার? আগে নিজে বড় হই, তারপর দেখা যাবে। কিন্তু যখন কোনো গোত্রের মধ্যে বিপদ আসিয়া হাজির হয়, তখন কে কত বড় আর কে কত ছোট তাহা ভাবিয়া বিপদ আসে না। তখন ছোটবড় সবাই একত্রে মরিতে হয়। অথবা যিনি সবচেয়ে বড় তাহাকেই আগে কতল করা হয়।
তাই গোত্রের সবাইকে নিয়া একত্রে বড় হওয়া একটা নিরাপত্তার ব্যাপার থাকে। নতুবা এই ছোট আলুগুলির থেকে বেশী নজর থাকে সবার বড় আলুর দিকে। ইহাকেই আমরা আজ প্রথম সিদ্ধ করিবো। বাকিগুলি হয়তো আবার কোনো না কোনো বন-জংগলে ফেলিয়া দেবো, কারন তাহাদের প্রতি আমাদের মতো মালি বা মালিকের খুব বেশী ইন্টারেস্ট নাই। ফলে, এই কারনে কোনো একদিন তাহারাই আবার বংশ বিস্তার করিয়া তাহাদের অস্থিত্ত বজায় রাখিবে।
আরেক দল আবার ভিন্ন একখানা মতবাদ লইয়া এই আলুর উপর কিছু দোষ চাপাইয়া নিজেরা পার পাইতে চেষ্টা করেন। কারো কারো ব্যক্তিগত দোষের কারন কেনো বা কি মনে করিয়া এই নীরিহ বোবা একটা আলুকে দোষারুপ করেন তাহা আমি আজো বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই। কিছু হইলেই মানুষ ‘আলুর দোষ’ বলিয়া চালাইয়া দেন। অথচ এই বোবা আলুটি সারাজীবন সবার অলক্ষ্যেই বসবাস করে। হইতে পারে, গোপনভাবে থাকার এই বইশিষ্ঠই মানুষের আলুর সাথে মিল থাকার সব দোষ এই নন্দ ঘোষের উপর পড়ে।
মোরাল অফ আলুঃ
একাই শুধু খাইয়া বড় হইয়েন না, বিপদ আছে তাহলে।
আলুর প্রতি এতো ঝুকে যাইয়েন না, তাহলেও বিপদ হইতে পারে।
আলুর যত্ন নিন। আলুকে ভালোবাসুন।
১৩/০১/২০২২-Meeting Fourth Generation
গল্পটা কাল্পনিক নয়। গল্পটা সত্যি। আর এখানে যাদের নামগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তারা তাদের নিজের নামেই রয়েছেন। অনেক অজানা কষ্ট আর বেদনা দিয়ে এই পৃথিবী এতোই ভরপুর যে, সবাই এক নাগাড়ে সবার কষ্টের কথা, বেদনার কথা, সাফল্য আর ব্যর্থতার কথা বলতে গেলে সারা পৃথিবীতে শুধু কান্নার রোলই পড়ে যাবে। তারপরেও মানুষ বেচে থাকে আশা নিয়ে, হতাশাকে দূর করে কিছু আনন্দ আর হাসি নিয়ে। এরই নাম জীবন। কেউ হেরে যায়, কেউ পড়ে যায়, কেউবা আবার পরতে পরতে দাঁড়িয়ে যায়। আজ থেকে অনেক জেনারেশন পর সেসব মানুষগুলি হয়তো জানবেই না, কি ছিলো তাদের সেই কষ্টে ভরা তাদের অতীতের পূর্বসুরীদের জীবন, কিংবা কিভাবে আজ তার এই পর্বে আসা। আজকে এই ঘটনার মানুষগুলিকে সেই চরাই উতরাই পার করে সেই সব পূর্বসুরীরা নতুন প্রজন্মের জন্য নব পরিস্থিতি তৈরী করে গেছে। আজকের গল্পের মানুষ গুলিকে এই পর্বে আসতে অন্তত চারটি জেনারেশন পার করতে হয়েছে। এর মধ্যে ১ম জেনারেশনের কেহই জীবিত নেই, ২য় জেনারেশনের অনেকেই গত হয়েছেন, কেউ কেউ এখনো জীবিত আছেন বটে কিন্তু বয়স অনেক হয়ে গেছে তাদের। ৩য় জেনারেশনের এখন পড়ন্ত বিকেলের মতোই। আর ৪র্থ জেনারেশন তারা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, আর সবেমাত্র তাদের মধ্যে একটা সমন্নয় হলো। এবার দেখার বিষয় পরের প্রজন্মের কাহিনী। হয়তো অন্য কেউ লিখবে তার পরের প্রজন্মের ইতিহাস, এমনো হতে পারে, থাক...।
হামিদা খাতুন আমার মা, বিল্লাল ভাই (বেলায়েত ভাই ) আমার সেই ভাই। বহুদিন একই গ্রামের কাছাকাছি ছিলাম, মাঝে মাঝে এক সাথে দুজনে সিগারেট টানতাম। অতীতের অনেক গল্প শুনতাম। কখনো সেই গল্পে ছিলো হাসি, কখনো ভেজা চোখ আবার কখনো নিগুড় কালো রাতের মতো অন্ধকারের ভীতি সঞ্চারী অনুভুতি। বিল্লাল ভাই মারা গিয়েছেন অনেক বছর আগে। তার সন্তানদের সাথে আমার যোগাযোগ ছিলো, এখনো আছে তবে খুব ঘন ঘন নয়। কারন তাদের অনেকেই দেশের বাইরে চলে গেছে। বিল্লাল ভাইয়ের স্ত্রী এখনো জীবিত আছেন। তিনিই বা কতটুকু গল্পগুলি জানেন তা আমার জানা নাই। তবে তিনিএখন সার্থক স্ত্রীর মতো সার্থক মাও। তার সন্তান সেলিম বর্তমানে নেভাদায় থাকে। আমার ছোট মেয়ে কনিকা আমেরিকায় যাওয়ার সুবাদে এই প্রথম সেলিমদের এবং তার সনাত্নদের সাথে প্রথম দেখা হলো। এরা ৪র্থ জেনারেশন। আমার ফার্ষ্ট নাতি ওরা। আমার মা আজ বেচে থাকলে আর আমার ভাই বিল্লাল ভাই বেচে থাকলে বড্ড খুশী হতেন। জীবন কত বিচিত্র। কোথাও না কোথাও গিয়ে এর রুট মিলিত হয়ই।
“কিছু কথা আছে যা বলতে চাই নাই কিন্তু বলা হয়ে যায়, কিছু কথা ছিলো, বলতে চেয়েছি, অথচ বলা যায় নাই, কিছু সপ্ন ছিলো যা দেখতেই চাই নাই কিন্তু দেখতে হয়েছে আবার কিছু এমন সপ্ন ছিলো সব সময় দেখতে চেয়েছি কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় নাই। এমন কিছু শখ ছিলো সারাজীবন লালন করেছি কিন্তু জীবনের শেষ তীরে এসেও সেটা ধরা দেয় নাই আবার এমন কিছু ভয় ছিলো যা একেবারেই কাম্য নয় অথচ তা আমি এড়িয়েই যেতে পারিনি। কী কারনে আবার এই কিছু কথা না বলতে চেয়েও বলতে হয়েছে, কিছু সপ্ন আমাকে দেখতেই হয়েছিলো অথচ সেটা আমার কাম্য ছিলো না, আবার কিছু স্বপনের ধারে কাছেও আমি যেতে পারিনি। এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। আমি এই আফসোসের ব্যাপারটা নিয়ে বহুবার গবেষনা করেছি। কিন্তু জীবনের কাছে রাখা সব উত্তর সবসময় তার প্রশ্নের ন্যায় বিচার করে না। বিশেষ করে প্রশ্নটা যখন এমন হয় যেটা মনকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খায়, আর হৃদয়কে ছুড়ি দিয়ে ফালা ফালা করে দেয়। ফলে কোনোই আমি সেইসব প্রশ্নের উত্তর পাই নি, না আমার কাছে, না যাদের কাছ থেকে উত্তর পাওয়া দরকার ছিলো তাদের কাছ থেকে। আর উত্তর না পেতে পেতে একসময় আমি কোনো উত্তরের আর আশাও করিনি। কিন্তু একটা ব্যাপার আমার কাছে শতভাগ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিলো যে, আমার এই অপারগতার কারন না আমি নিজে, না আমার সাথে যারা জড়িত ছিলো তারা। না এটা আমার দোষ, না ছিলো তাদের। আমি যদি আরো গভীরে গিয়ে এর আনুবীক্ষনিক পর্যালোচনা করি, তাহলে হয়তো আমার আরেকটা আফসোসের কথা প্রকাশ না করলেই নয় যে, আমার সেই অপারগতা কিংবা ঘাটতির কিছুটা হলেও কেউ না কেউ সহজেই হয়তো পুরন করতে পারতো, যা ‘সেই কেউ’রা হয়তো চেষ্টাই করে নাই।“
উপরের এই কথাগুলি আমার নয়, কথাগুলি একজন এমন মানুষের যাকে আমি আমার মতো করে চিনতে শুরু করেছিলাম আজ থেকে প্রায় ২৪ বছর আগে যখন আমার বয়স প্রায় ২২। কতটুকু আমি তাকে বুঝতে পেরেছিলাম, সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু কেনো জানি আমার খুব মায়া হতো, আর এই মায়ায় মাঝে মাঝে আমি নিজেকে তার ভূমিকায় প্রতিস্থাপিত করে দেখতাম কি হয় ভাবাবেগে অথবা মানসপটে। এই সময়টায় আমি খুব ভাবাগেবিত হয়ে যেতাম। ভাবাবেগিত হতাম এটা ভেবে যে, কি পরিমান চাপ কিংবা কষ্ট নিজের বুকের ভিতরে লুকিয়ে রাখা সম্ভব? তখন আরো বেশী মায়া হতো একজনের জন্য নয়, দুজন নিসংগ মানুষের জন্য যাদের উভয়ের বুকেই ছিলো সমান যন্ত্রনা আর ভাগ্যের আক্ষেপ। একজন যেনো পরাজিত, আর অন্যজন সেই পরাজয়ের কারন। এদের একজন আমার “মা” আর আরেকজন ‘বিল্লাল ভাই’ যাকে সবাই ডাঃ বেলায়েত নামেই চিনতো। আমি আজ সেই তাদের কথাই হয়তো বলবো।
আমার ‘মা’র সম্পর্কে আমি অনেকগুলি লেখা ইতিমধ্যে লিখলেও তার সবচেয়ে বড় দূর্বল বিষয়টি আমি কখনো আমার লেখায় আনিনি। আমি জানতাম এবং অনুভব করতাম আমার মায়ের সেই দূর্বলতা। আমার মায়ের এই দূর্বলতা তার নিজের সৃষ্টি যেমন নয়, আবার তিনি ইচ্ছে করলেও তার সেই অপারগতাকে তিনি অনায়াসেই দুহাত দিয়ে এক পাশে সরিয়ে দিতে পারতেন না। এই দূর্বলতা সমাজ সৃষ্টি করেছে, আর সেই সমাজ আজকের দিনের দুটি মানুষকে বিজন বিজন দূরে ঠেলে দিয়ে দুজনকেই অসুখী একটা বলয়ে জীবিত কবর দিয়েছিলো। আমার মায়ের সেই বড় দূর্বলতা ছিলো এই ‘বিল্লাল’ ভাই। পরবর্তিতে প্রায় তিন যুগ পরে যেদিন আমি আমার মায়ের সর্বশেষ ভিডিওটি করি, তখন অনেক প্রশ্নের উত্তর আমি জানতে পেরেছিলাম। কিন্তু সে প্রশ্নগুলির উত্তর আমাকে আরো ব্যথিত করে দিয়েছিলো। সেই প্রশ্নের উত্তর আমাকে প্রতিটিবার চোখ ভিজিয়ে দিয়েছিলো, আমার অন্তরের কোথায় যেনো ছট ফট করছিলো কোনো এক অয়াশান্ত অনুভুতিতে। আর যিনি উত্তর দিচ্ছিলেন, আমার মা, তার দ্রিষ্টি কখনো সেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে নির্লিপ্ত হয়ে ভাষাহীন কিছু শব্দ তেই শেষ হচ্ছিলো যার সাহিত্যিক নাম- আহা, কিংবা উহু। এসব বেদনার রাজত্তে যিনি ছিলেন, সে আর কেউ নয়, বিল্লাল ভাই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কে এই বিল্লাল ভাই? যদি এর উত্তর খুজতে চাই, তাহলে ফিরে যেতে হবে আজ থেকে বহু বছর আগে যখন আমারও জন্ম হয় নাই। ফলে আমি যা জেনেছি, শুনেছি, তা পুরুই হয় আমার মার কাছ থেকে, কিংবা আমার অগ্রজ ডঃ হাবীবুল্লাহর কাছে বা স্বয়ং বিল্লাল ভাইয়ের কাছ থেকে জানা কিছু তথ্য। কিন্তু আমার কাছে সব ব্যাপারটাই যেনো মনে হয়েছে, এটা ছিলো একটা ভাগ্য আর সময়ের খেলা।
কেনো ‘ভাগ্য’ আর ‘সময়’ বললাম তারও একটা ব্যাখ্যা আছে। অনেক সময় এমন দেখা যায় যে, “ভাগ্য” আর “সময়” দুটুই কারো জীবনে একসাথে আসে, কিন্তু “ভাগ্য” আর “সময়” ওরা কখনোই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ না। সঠিক ব্যবহারে ভাগ্য পালটাতে পারে বটে কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে ভাগ্যও পালটে যায়। কিন্তু এই ‘সঠিক’ ব্যবহার আবার সবাই সবসময় হয়তো পায়ই না যাতে সেই সঠিক ব্যবহারে তার ভাগ্য পাল্টাতে পারে। কেউ কেউ পারে, আবার কেউ কেউ পারে না। আবার কারো কার ব্যাপারে সুযোগটাই আসেনা। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ভাগ্যের হাতে মার খাওয়া কোনো ব্যক্তিত্ত সময়ের স্রোতে আবার বেশীদিন অসহায়ও থাকে না। একসময় না একসময় সে ঘুরে দাড়ায়ই যদি তার দৈবক্রম ভাগ্য আবার সেই ঈশ্বর কোনো এক যাদুর কাঠিতে হাল ঘুরিয়ে দেন। শুধু হাল ঘুরিয়ে দিলেই হয়তো তার সেই নির্যাতিত ভাগ্য দৈবক্রম ভাগ্য সঠিক নিশানায় পৌছায় না যদি তার চোখে না থাকে সপ্ন আর প্রবল একটা ইচ্ছাশক্তি। আজকের লেখার প্রধান চরিত্র এই ‘বিল্লাল’ ভাইয়ের ব্যাপারেও সেই দুটু শব্দ প্রায় একই সুরে খেটে যায়। ভাগ্য তাকে সুপ্রস্নন করে নাই, আবার করেছেও। ‘সময়’ তাকে একটা বলয় থেকে ছিটকে ফেলেছিলো বটে কিন্তু আবার সেই ‘সময়’টাই বদলে দিয়েছে তার সব জন্মগত বৈশিষ্ট।
বিল্লাল ভাইয়ের এই ইতিহাস নাতিদীর্ঘ নয়। এই ইতিহাস একটা পূর্ন জীবনের। আর সেই জীবনের বয়স কাল নেহায়েত কমও নয়, প্রায় ৫৫ বছর। এই ৫৫ বছরে পৃথিবী তার অক্ষে ৫৫ বার প্রদক্ষিন করে কত যে ঋতু আর কাল প্রশব করেছে তার কোনো হিসাব নাই। তাই বিল্লাল ভাইয়ের এই ইতিহাস বলার আগে সেই মানুষটির ইতিহাস বলা প্রয়োজন যার জন্য আরেক অধ্যা তৈরী হয়েছিলো বিল্লাল ভাইয়ের। আর তিনিই হচ্ছেন- আমার মা, আর জন্মধাত্রী বিল্লাল ভাইয়ের।
আমার মায়ের পুরু নাম ‘মোসাম্মাত হামিদা খাতুন’। নামটা আমি এভাবেই সবসময় লিখে এসেছি আমার ব্যক্তিগত তথ্যাবলীর মধ্যে। আমার মায়েরা ছিলেন দুই বোন এবং তার কোনো ভাই ছিলো না। আমার মায়ের আরেক বোনের নাম ছিলো ‘মোসাম্মাদ সামিদা খাতুন’। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, গ্রাম্য ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ারিশান সার্টিফিকেটে তাদের দুজনের নামই লিখা হয় যথাক্রমে ‘হামিরন নেছা’ এবং ‘ছামিরন নেছা’। যাই হোক, নাম বিভ্রাটের কারনে আজকাল হয়তো ব্যংকে একাউন্ট করতে জটিলতা থাকতে পারে, কিংবা ক্রেডিট কার্ডে ঝামেলা হতে পারে, কিন্তু এই নামের বিভ্রাটের কারনে আমাদের মুল চরিত্রের মানুষ গুলির জীবনের ইতিহাসে কোনো প্রকার ব্যত্যয় হয় নাই। আর আমার এই লেখাতেও এটা অনেক বড় সমস্যা নয়। আমার নানা অর্থাৎ আমার মায়ের বাবার নাম ছিলো ‘কেরামত আলি’। আজকাল এই নাম গুলি আর কেউ রাখে না। হয়তো ভাবে যে, নাম গুলি আধুনিক নয়। কিন্তু এই নামের মানুষ গুলি ছিলে ভালোবাসার আর ভরষার ভান্ডার। যাই হোক, যদি আরেকটু আগের জেনারেশনে যাই, তাহলে আমরা সেই ‘কেরামত আলি’র বাবার নাম পাবো ‘উম্মেদ আলী মুন্সী’। এই উম্মেদ আলীর বাবা জনাব হাজী আসাদুল্লাহ (পিতা-আহাদুল) এর শাখা প্রশাখা বিশ্লেষন করলে এমন এমন কিছু বর্তমান আত্মীয় সজনের নাম চলে আসবে যা না আমরা অনেকেই মানতে চাইবো, না আমরা তা গ্রহন করবো। তার কারন একটাই-সমাজের স্তরভিত্তিক কেউ এমন জায়গায় আর কেউ এমন স্তরে যা না মিশে বংশে, না মিশ খায় পরিবারে। কিন্তু বাস্তবতাটাই যে অনেক কঠিন এটা মানা আর না মানাতে কিছুই যায় আসে না। না মানার মধ্যে হয়তো থাকতে পারে একটা বড় অহংকার বা সম্পর্ক ছিন্নকারীদের মধ্যে সামিল, কিন্তু বাস্তবতা পালটায় না তাতে। যাই হোক, সেই ৫/৬ জেনারেশন আগে না হয় নাইবা গেলাম।
আমার মায়ের বয়স যখন সবেমাত্র বারো কি তেরো, তখন সমাজের রীতি অনুযায়ী আমার নানা কেরামত আলি বিবাহযোগ্য মেয়ের বোঝায় চাপ অনুভব করে তাকে বিয়ে দিয়ে দেন। আজ থেকে সেই প্রায় সত্তর বছর আগে যেটা হয়তো ছিলো সমাজের একটা রীতি, আজ তা বাল্যবিবাহের নামে সমাজ তাকে অপরাধের কারন বলে উল্লেখ করে। যেটাই হোক, সমাজের রীতি অনুযায়ী আমার মা, খালাদের বিয়ে ওই বারো তেরো বছর বয়সেই হয়েছিলো। আমার মায়ের সেই স্বামীর নাম ছিলো আব্দুল জলিল (সম্ভবত)। সম্ভবত বলছি এই কারনে যে, নামটা এই মুহূর্তে সঠিক লিখলাম কিনা সিউর হতে পারছি না। তবে সঠিক হবার সম্ভাবনা ৭৫%। ১২ বছরের একজন প্রায় নাবালিকা বিয়ের পর এখন অন্য বাড়ির বউ হয়ে গেলো। এই নববধূর পড়নের কাপড়টাই হয়তো তার থেকে প্রায় তিন গুন লম্বা, সবে মাত্র হায় প্যান্ট ত্যাগ করা বালিকাটি এখন নাকে নোলক, হাতে মেহেদী সমেত চূড়ি, কানে দূল, আর মাথায় লম্বা ঘোমটা দিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই পরিচিত সব মানুষ গুলি থেকে আলাদা হয়ে অন্য এক সংসারে একটা আলাদা পরিচয় নিয়ে বাপের বাড়ি ছেড়ে গেলো। তার শখের পুতুল, ছেড়া বই কিংবা সখীদের অনেক গোপন কিছু মজার স্মৃতি সব ছেড়ে কেদে কেদে নিজের সেই খেলার আংগিনা, কাথা বালিশ আর বাড়ির উঠোনের মায়া ত্যাগ করে অন্য কোথাও যেতেই হলো। এ যেনো পালের একটা পোষাপ্রানী যে কিনা এখনো তার মায়ের দুগ্ধপানও ছাড়ে নাই। এই বয়সের একজন অপরিপক্ক নাবালিকা কি সংসার করছে বা করেছে সেটা আমি আজো বুঝে উঠতে পারিনা কিন্তু বিধাতার সিস্টেমে আমার মা গর্ভবতী হলেন। আর সেই গর্ভধারনের পরে সঠিক সময়ে তিনি সুস্থ্য একটি পুত্র সন্তানও দান করেন তার শ্বশুরালয়ে। এই পুত্রটির নামই হচ্ছে- বিল্লাল হোসেন বা বেলায়েত হোসেন। সবকিছুই ঠিকঠাক মতোই চলছিলো। স্বামী, সংসার, পুত্রযত্ন সবকিছু। নবাগত পুত্র সন্তানের আদরের কোনো কমতি নাই, নব নাম ধারী হামিদা এখন শুধু হামিদাই নয়, সে এখন ‘মা’ও বটে। তার নতুন নাম ’মা’। চারিদিকেই একটা নন্দ যেনো বাতাসের প্রবাহের মতো সারাটা বাড়ি দোলায়িত হচ্ছে, কেউ পুতুল নিয়ে দেখতে আসে, কেউ দোয়া দিতে আসে, কেউবা আবার আসে এম্নিতেই। সব কিছুই ঠিক যেভাবে চলার কথা সেভাবেই চলছিলো। কেরামত আলী তার মেয়ের জন্য গর্বিত, পাড়ার লোকেরাও। কিন্তু বিধাতার পরিকল্পনা মানুষের পরিকল্পনার থেকে অনেক বেশী যেমন রহস্যময়ী, তেমনি অনেক কঠিনও। তিনি কাকে কি দিয়ে সুখবর দিবেন আর কাকে কি দিয়ে দুঃখের অতল গভীরে নিয়ে যাবেন, তার হিসাব কিংবা ছক আমাদের কারোরই বুঝার কথা নয়। আর সে অধিকার ঈশ্বর কাউকে দেন ও নাই। তিনি একাই খেলেন, একাই গড়েন, আবার একাই ভাঙ্গেন। কেনো গড়েন, কেনো ভাজ্ঞেন এর ব্যাখ্যা চাওয়ারও আমাদের কোনো উপায় নাই। ফলে দেখা যায়, একই খবর কারো কাছে যেমন শুভ হয় আবার কারো কাছে তেমনি অশুভও হয়। একই জায়গায় মিলিত হওয়া মানুষের রাস্তা যেমন তিনি আলাদা আলাদা করে দেন, তেমনি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় চলাচলকারী অনেক মানুষের রাস্তাও তিনি এক জায়গায় এনে মিলন ঘটান। একই পরিস্থিতিতে যেমন একজন জীবনকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যান, আবার সেই একই পরিস্থিতিতে তিনি আরেকজন জীবনকে অসহায় অবস্থার সাথে বোঝাপড়া করতে ব্যস্ত করে তোলেন। আমার মায়ের বেলাতেও ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি হাজির করলেন বিধাতা। আমার মায়ের স্বামী আব্দুল জলিলকে তিনি এই নশ্বর পৃথিবী থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। যে নাটাইটায় একটা গুড়ি নিজের আনন্দে নীল আকাশের হাওয়ায় ভেসে একবার এদিক, আরেকবার ওদিক দোল খাচ্ছিলো, হটাত নাটাইটা বিচ্ছিন্ন করে দিলো ফানুশের মতো উরে থাকা রংগিন ঘুড়িটা। ছন্দে ভরা কতগুলি জীবন এক সাথে যেনো ছন্দ পতনের ধাক্কায় চারিদিক বেশামাল হয়ে গেলো। আমার মা হামিদা ভয়ে আতংগকে আর বিষন্নতায় বোবা হয়ে গেলেন, হামিদার বাবা কেরামত আলী মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনায় মুর্ছা যেতে লাগলেন। আর হামিদার সদ্য জন্মানো পুত্র বিল্লাল কিছুই না বুঝে মায়ের দুধের জন্য বিকট চিতকারে বাড়ি, ঘরময় যেনো আলোড়িত করে দিলো। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমার মা হামিদা খাতুন বিধবার তকমা গলায় পড়ে হাহাকার ঘরে যেনো নির্বাক হয়ে গেলেন।
কোনো নারীর অধিকার তার স্বামীর বাড়িতে স্বামীর বর্তমানে যেমন থাকে, সেই নারীর সেই অধিকার স্বামীর অবর্তমানে আর তেমন থাকে না। হামিদার স্বামীর ইন্তেকালের কয়েকদিন পর বাড়ির অন্যান্য সবাই যখন হামিদার স্বামীর শোকের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে থাকে, ততোই যেনো হামিদার উপর অন্যান্যদের খোটার ভার বাড়তে থাকে। এই বয়সে স্বামীকে বুঝার আগেই যখন কেউ স্বামী হারা হয়, তার নিজের মনের অবস্থার কথা কেউ তো ভাবেই না, বরং সব দোষ যেনো সেই অপয়া হামিদারই। পৃথিবীর কেউ এই নাবালিকা বিধবার মনের ভিতরের কষ্ট কিংবা বেদনার অনুভুতি না বুঝলেও হামিদার বাবা কেরামত আলী ঠিক বুঝতে পারছিলেন কি চলছিলো হামিদার ভিতরে। তিনি কোনো কিছুই চিন্তা না করে দুই অবুঝ, এক হামিদা এবং তার পুত্রকে নিয়ে চলে এলেন নিজের বাড়িতে। হামিদা এখন আবার তার পিত্রালয়ে সেই চেনা পরিবেশে ফিরে এলো। আজকের এই চেনা পরিবেশ যেনো আর আগের সেই পরিবেশ নাই, তার খেলার অনেক সাথীরাই অন্যের বধু। এখন আর দলবেধে কাউকে নিয়ে সেই চেনা পরিচিত নদীতে হৈ হুল্লুর করে জল্কেলীর কোনো সুযোগ নাই। কোথায় যেনো বীনার তার গুলি ছিড়ে গেছে। আর সাথে তো আছেই পুত্র বিল্লাল, যার কাছে দাদা বাড়িই কি, আর নানা বাড়িই কি কোনো কিছুরই কোনো পার্থক্য নাই। শুধু মনের অজান্তে চোখের পানি ঝরছে হামিদার আর তার সাথে অসহায় বিধবা কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা কেরামত আলির। জখম যেনো কিছুতেই ক্ষরন বন্ধের নয়।
শরীরের কোনো কাটাছেড়া, কোনো বাহ্যিক জখম হয়তো চোখে দেখা যায়, ক্ষুধা হলে খাবারের অভাবে ক্ষুধায় হয়তো পেট গুরগুর করে, কিংবা জ্বর সর্দি, কাশি কিংবা মাথা ব্যথা হলে তার সিম্পটম অনায়াসেই বুঝা যায় কিন্তু অন্তরের জখম কি কখনো চোখে পড়ে? অন্তরে কি কখনো জখম হয় আদৌ? আর এই অন্তরটাই বা শরীরের কোন অংগ? এটা কি এমন কোনো জিনিষ যা মাংশ বা হাড় কিংবা এমন কিছু দিয়ে এর গঠন কাঠামো? অথচ এই জখম অনুভুত হয়, এই কষ্ট নিজেকে প্রতিটি ক্ষনে মনকে বিষন্ন করে দেয়। সেই অদেখা অন্তরে রক্তক্ষরন হয়। এই অন্তর্জালা, রক্তক্ষরন আর কষ্টে মাত্র ১৪/১৫ বছর বয়সের এই অবুঝ বালিকা আরেকটি সদ্যজাত নবাগতকে নিয়ে পৃথিবীর সব মানুষের চোখে যেনো একজন অপরাধি সেজে জীবিত অবস্থায় মৃত হয়ে রইলেন। স্বামীর ম্রিত্যু যেনো তারই অপরাধ। তার এই ঘটনার জন্য যেনো তিনিই দায়ী। একদিকে অবুঝ মন, অন্যদিকে সাথে আরেকটি অবুঝ সন্তান, সব মিলিয়ে চারিদিকে এক মহাশুন্যতা। মেয়ের এমন একটি দুঃসহ শুন্যতা নিজে পিতা হয়ে কেরামত আলী কি করবেন? দিন গড়ায়, রাত যায়, শুন্যতা আরো চেপে বসে হামিদার। তার যে বয়স, সে বয়সে তিনি হয়তো বিয়ের মাহাত্তটাই বুঝে উঠতে পারেন নাই, কিন্তু তাকে এখন বিধমার তকমাটাও বুঝতে হচ্ছে, বুঝতে হচ্ছে একজন অবুঝ সন্তানের মা হিসাবে তার অকাল পরিপক্ক দায়িত্ব।
যখন কোনো মানুষের দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে, তাহলে সে সবসময়ই চাইবে যে, সে অন্য কারো সাথে তার এই দুঃখটা, কষ্টটা শেয়ার করতে। কেউ তো থাকবে যে, ওর কথা শুনবে। বুঝুক না বুঝুক সেটা আলাদা ব্যাপার, কষ্ট লাগব করুক বা না করুক সেটাও আলাদা ব্যাপার। কিন্তু কারো সাথে তো তার এই কষ্টের ব্যাপারগুলি শেয়ার করা দরকার। আর হামিদার এই কষ্টের ভাগীদার কিংবা শ্রোতা হয়ে রইলো শুধু একজন-সেই নাবালক পুত্র ‘বিল্লাল’। চোখ ভিজে আসে তার, মন ভেংগে আসে যন্ত্রনায়, আর মনে হয়-কেনো? কেনো বিধাতা তাকেই এর অংশ করলেন? অন্য কেউ নয় কেনো? সেই অবুঝ পুত্র বিল্লালের কাছে ‘হামিদা’র হয়তো শুধুই একটা জিজ্ঞাসা। নাবালক বিল্লাল হয়তো এর কিছুই বুঝে না, কোনো এক ভিনদেশী ভাষায় হয়তো কিছুক্ষন অদ্ভুত শব্দ করলেও মায়ের সেই কান্নায় ভীত হয়ে নিজের অজান্তেই কেদে দেয় বিকট এক শব্দে যা হয়তো বিধাতার কাছেই তার মায়ের কষ্টের ফরিয়াদ। হয়তো মা ছেলের এই অসহায় কান্নায় বুকে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের জলে কাপা কাপা গলায় বলতে থাকেন- আমি তো আছি তোর পাশে। ভয় নাই। মা আছে। পৃথিবীর কেউ তোর পাশে থাকুক বা না থাকুক, আমি তো আছি। এভাবেই কাটতে থাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এবং এক সময় কয়েক বছর।
জীবন যেখানে যেমন। যে শিশুটি আজ জন্ম নিলো কেউ জানে না তার জন্য এই পৃথিবী কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিংবা এই প্রিথিবীকে সে কি দিয়ে যাবে। বিধাতা চাইলে যে কোনো কিছুই হতে পারে। হতে পারে আজকে এই শিশুটি হয়তো এই পৃথিবীকে কোনো একসময় কাপিয়েও যেমন দিতে পারে আবার এই পৃথিবী তাকেও নাড়িয়ে দিতে পারে। এই বিশ্বভ্রমান্ডে এমন অনেক শিশুই জন্ম নেয় যারা অনেকেই অনেক ভুমিকা রাখে আবার কেউ কেউ কিছুই রাখে না, না পৃথিবীও তাদেরকে মনে রাখে। এমন মানুষের সংখ্যাই হয়তো নেহায়েত যেমন কম না, তেমনি ভুমিকা রাখে এমন শিশুও কম না। যুগে যুগে তারপরেও অনেক শিশু গোপনে পৃথিবীতে আসে, প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর একদিন সবকিছু ফেলে সবার থেকে আলাদা হয়ে আবার কোথাও অদৃশ্য হয়ে যায়। মাঝখানের এই সময়টায় খুব গুটিকতক মানুষ হয়তো নিজের মতো করে কাউকে কাউকে মনে রাখে কিন্তু তাও একসময় মনের স্মৃতি থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। কিন্তু ‘বিল্লালের বেলাতে এটা ঘটে নাই। তিনি প্রকাশ্যে দিবালোকে এই সমাজে বৈধভাবে পদার্পন করেছিলেন, তার যোগ্য অভিভাবক ছিলো, তার পরিচয় ছিলো, আর ছিলো পাশে থাকা অনেক মানুষ যারা তাকে নিয়ে ভেবেছে, তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করেছে। কিন্তু বিধাতা তো আর মানুষের মত নন। তার পরিকল্পনা, তার ইচ্ছা, তার কার্যকারিতা সবকিছুই তার মত। বিল্লালের যখন মাত্র দুই থেকে হয়তো একটু বেশী, তখন হামিদাকে ছাড়তে হলো তারই ঔরসে জন্ম নেয়া তার পুত্র বিল্লালকে। সমাজ বড্ড বেরসিক, সমাজের আইনকানুনগুলিও একপেশে। এই আইন মানতে গিয়ে কে কাকে ছেড়ে যাবে, আর কার জীবন কোন আইনের পদাঘাতে পিষ্ঠ হবে সেটা যেনো সমাজের কোনো দায়বদ্ধতা নাই। আর এর সবচেয়ে বেশী আহত হয় সমাজের নারীরা। নারী বা মহিলাদেরকে এই সমাজে সেই প্রাচীনকালের মতো আজো দেবীর সমান তুলনা করে থাকে কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে আজো লাগাতার অন্যায়, নীপিড়ন, শোষন, অধিকারহীনতা আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এখনো অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। আর এই দানবের প্রথম নাম ‘সমাজ’ আর তার আইন কিংবা ‘মনোভাব’। যে সমাজ ১৩/১৪ বছরের বালিকাকে বিধাতার ইচ্ছায় তারই সংগীকে বিচ্ছেদের কারনে একজন অপয়া কিংবা এই দোষে দোষারুপ করা হয়, সেই সমাজ প্রকৃত কোনো ভরষার স্থান হতে পারে না। সে সমাজে প্রকাশ্যে কোনো মহিলাকে পুড়িয়ে মারা, নির্যাতন করা কিংবা ধর্ষন করা হলেও আজো কেউ হয়তো এগিয়েই আসে না। হামিদা হয়তো সে রকমের একটা অদৃশ্য আগুনে প্রতিদিন পুড়ে অংগার হচ্ছিলেন।
সমাজের এই মনোবৃত্তি আর যাতনায় এবং কন্যাদায়গ্রস্থ কেরামত আলি শেষ পর্যন্ত ১৫ বছরের বিধবা হামিদাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার আয়োজন শুরু করেন। হামিদার রুপের কোনো কমতি ছিলো না, আর সবে মাত্র সে কিশোরী। এক সন্তানের মা হলেও বুঝার কোনো উপায় নাই যে, তার অন্য কোথাও একবার বিয়ে হয়েছিলো। ফলে, খুব বেশীদিন অপেক্ষা করতে হয় নাই কেরামত আলিকে। পুরুষ শাসিত সমাজে সব আইন পুরুষেরাই তাদের নিজের সুবিধার কারনে বানায়। এখানে ১৫ বছরের কিশোরীর সাথে ৪০ বছরের বৃদ্ধার বিয়েও কোনো দৃষ্টিকটু নয়। কিংবা কোনো এক প্রতাপশালি ধনী ব্যক্তির পক্ষেও একের অধিক কুমারী কিংবা বিধবা কিশোরীকে বিয়ে করাও কোনো দৃষ্টিকটু নয়। আর সেই প্রতাপ শালী কোন ধনী ব্যক্তি যদি সধবা হন, তাহলে তো তার যেনো বিয়ে করা একটা বৈধ লাইসেন্সের মতোই। হামিদার জীবনে এমনই এক সুপুরুষ-হোসেন আলী মাদবর প্রবেশ করলেন। এই হোসেন আলী মাদবর কোনো কাল বিলম্ব না করে অনেক ঘটা করে বিধবা হামিদাকে বধু হিসাবে নিয়ে আসে তারই সংসারে যেখানে রয়েছে হামিদার থেকেও বয়সে বড় আরো তিনটি পুত্র সন্তান আর চারটি কন্যা সন্তান। কেউ কেউ হামিদার থেকে বয়সে এতো বড় যে, কারো কারো আবার বিয়ে হয়ে তাদের ও সন্তান জন্ম নিয়েছে। তবে একটা ভালো সংবাদ হামিদার জন্য ছিলো যে, তাকে সতীনের ঘর করতে হয় নাই। কারন হোসেন আলি মাদবর ছিলেন সধবা। হোসেন আলী মাদবরের আগের স্ত্রী গত হয়েছেন প্রায় বছর খানেক আগে।
হামিদার যখন প্রথম বার বিয়ে হয়েছিলো, তখন সে পিছনে ফেলে গিয়েছিলো তার খেলার সাথী, খেলার পুতুল আর শৈশবের স্মৃতি। কিন্তু এবার হামিদা ফেলে গেলো একজন অবুঝ পুত্র যে জীবনের কোনো কিছুই বুঝে না। হয়তো সে মা কি জিনিষ তাইই বুঝে না আর বিচ্ছেদ কি জিনিষ সেটা তো তার বুঝবারই কথা নয়। বিল্লাল রয়ে গেলো কেরামত আলীর তত্তাবধানে। বিল্লালের বয়স সবেমাত্র তিনও পূর্ন হয় নাই। এখন বিল্লাল পুরুই অনাথ, শুধু তার চারিপাশে রইলো কেরামত আলী, আর তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এই অনাথ ‘বিল্লাল’ নামক পুত্রের এখন কি হবে? সে তো আগেই তার পিতাকে হারিয়েছে, আর আজ হারালো তার মাকে, যদিও তার মা জীবিত। মায়ের নতুন সংসারে তার জায়গা নেই।
ওই যে বললাম, স্রিষ্টিকর্তা বড়ই রহস্যময়। হামিদার বাড়ির আলুকান্দার কাছেই ছিলো আরেক গ্রাম, তার নাম ঘোষকান্দা। সেখানেই স্রিষ্টিকর্তা আরেক ধনাঢ্য এক পরিবারকে রেখেছেন অতীব মানসিক কষ্টে। তাকে ঈশ্বর সম্পদের পাহাড় দিয়েছেন, তাকে সুসাস্থ্য দিয়েছেন, আর দিয়েছেন সমাজে প্রতিপত্তিদের মধ্যে সম্মান আর যোগ্যস্থান। কিন্তু তাকে ঈশ্বর যা দেন নাই সেটা হলো কোনো উত্তরাধীকারী। সন্তানহীনা অবস্থায় মানসিকভাবে এই দম্পতি এতোটাই কষ্টে ছিলেন যে, তাদের না আছে কোনো সন্তানসন্ততী, না আছে কোনো উত্তরসুরী। এই ধনাঢ্য পরিবারের হর্তাকর্তার নাম ‘ইদ্রিস আলী’। তিনি কিংবা তার স্ত্রী সন্তান জন্মদানে অক্ষম ছিলেন কিনা কেউ জানে না, কিন্তু ঈশ্বর হয়তো অন্য কোনো নেশায় তাদের এই ঘর পরিপূর্ন খালী রেখেছিলেন এমন একজন অসহায় মানবের জন্য যার বিপক্ষে দোষারুপ করার কোনো ওজরের কমতি ছিলো না। তাদের অন্তরে ঈশ্বর সব ভালোবাসা রচিত করেছিলেন ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য, লালিত করেছিলেন এক অদম্য স্পৃহা কিন্তু সেই ভালোবাসা আর স্পৃহা বারংবার শুন্য ঘরেই বাতাসের মধ্যে হারিয়ে যেত সকাল সন্ধ্যায় কিংবা অলস দুপুর কিংবা বর্ষার কোনো ঋতুতে। কষ্ট ছিলো, আখাংকা ছিলো কিন্তু সন্তান লাভ এমন নয় যে, বাজারে গেলেন, দোকান খুজলেন আর পছন্দমত একজন সন্তান কিনে এনে তাকে বড় করতে শুরু করলেন। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে এটা দেখা যায় যে, কারো কাছে কোনো মানুষ হয়তো খুবই অপাংতেয়, বোঝা, উপদ্রব, কেউ হয়তো তার দিকে এক নজর নাও তাকাতে পারে। হতে পারে সেই মানুষটা এক পরিবারের জন্য বোঝা, কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোথাও কেউ হয়তো ওই অপাংতেয় মানুষটির জন্যই অধীর চিত্তে অপেক্ষা করছে কখন তার আগমন ঘটবে। তাকে পাওয়াই যেনো সমস্ত সুখ আর শান্তির উৎস খুজে পাওয়া। ঈশ্বর এই দুটো ঘটনাই পাশাপাশি ঘটাচ্ছিলেন বিল্লালকে কেন্দ্র করে।
হামিদা চলে যাওয়ার পর হামিদা যেমন মনের ভিতরে সন্তান বিচ্ছেদে কাতর ছিলেন, তেমনি হামিদার বাবা কেরামত আলীও এই অবুঝ বালককে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি করা যায় সেই চিন্তায় কাতর ছিলেন। শেষ পর্যন্ত কেরামত আলী তার ভায়রা গনি মাদবরের সাথে পরামর্শ করে বিল্লালকে পালক দেয়ার কথা চিন্তা করলেন। আর এতেই যেনো ইদ্রিস আলীর পরিবারে নেমে আসে সেই কাংখিত শুভ সংবাদ যিনি তাকে দত্তক নিতে আগ্রহী। কালক্ষেপন না করে ইদ্রিস আলীর পরিবার যেনো সর্গ থেকে নেমে আসা এক ফুটফুটে পুত্রসন্তান লাভ করে ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করলেন আর নিয়ে গেলেন হামিদার বুকের সবচেয়ে আদরের ধন ‘বিল্লাল’কে। হামিদার দ্বিতীয় বিয়ের কারনে হামিদার পুত্র বিল্লালকে ইদ্রিস পরিবার যেনো অযাচিত এক ধনের সন্ধান পেলেন। নিজেদের বংশমর্যাদা আর পিতৃপরিচয়ে বিল্লালকে আগাগোড়া মুড়ে দিলেন ইদ্রিস আলী পরিবার। কোনো কিছুর কমতি রাখলেন না তারা তাদের এই হাতে পাওয়া সন্তানের জন্য। কিন্তু মা তো মা-ই। সমস্ত কাজের ফাকে, নিজের অবসর সময়ে বারবারই তো মনে পড়ে হামিদার সেই নাড়িছেড়া সন্তানের জন্য। কিন্তু কি ক্ষমতা আছে তার? না সে সমাজের বিপক্ষে কিছু করতে পারে, না সে সমাজের আইনকে থোরাই কেয়ার করতে পারে। হতাশাগ্রস্থ নেশাখোরের মত ক্ষনেক্ষনেই মা হামিদা নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়তেন বিল্লালের জন্য। কখনো একাই কাদেন, কখনো একাই ভাবেন, আবার কখনবো এইকথা মনে করে শান্তি পান যে, অন্তত তার নাড়িছেড়া ধন কারো জিম্মায় ভালো আছে যারা তার এখন পিতামাতা।
হামিদার নতুন সংসারে সময়ের রেষ ধরে আমাদের জন্ম হতে থাকে একের পর এক সন্তান। আগের স্ত্রীর ঔরসে জন্ম নেয়া পুত্র-কন্যাদের পাশাপাশি হামিদার ঔরসে ক্রমেক্রমে আরো পাচ কন্যা আর দুই পুত্রের আগমন হয়। কেরামত আলী হামিদার নতুন সংসারের যেমন খোজ রাখেন, তেমনি খোজ রাখেন ইদ্রিস আলির পরিবারে দত্তক নেয়া বিল্লালেরও। হামিদা যখন বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসে, তখন হামিদার সৌভাগ্য হয় তার ছেলে বিল্লালকে চোখে দেখার। মা ছেলের এই মিলন বড় সুখের বটে কিন্তু বেদনারও। ফিরে যাওয়ার দিন হামিদার চুমু খাওয়া বিল্লাল হয়তো কিছুই বুঝতে পারে না কি কারনে এই মহিলার চোখে জল আসে। বুঝতে পারে না কেনো বিল্লালের মা কিংবা তার বাবা ইদ্রিস আলী এই মহিলার কাছে এতো ঋণী। শুধু এটুকু বুঝতে পারে মহিলাটা এমন কেউ যাকে পেলে বিল্লালও খুশী হয়। হামিদা বিল্লালকে নিজের হাতে ভাত মেখে খাইয়ে দেয়, গোসল করিয়ে সুন্দর জামা পড়িয়ে দেয়, আর খুব মিষ্টি করে মাথার চুল আচড়ে দিয়ে কখনো কখনো তার বুকে মাথা রাখতে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। হয়তো এই আদরগুলি বিল্লালকে বারবার মহিলার প্রতি বিল্লালের আকর্ষন বাড়িয়ে দেয়। যেদিন হামিদা আবার তার সংসারে চলে যায়, বিল্লালেরও খুব মন খারাপ হয়। (চলবে)
৮/০১/২২- জাহাঙ্গীরের পেপার কাটিং
আমার কোর্ষমেট মেজর অবঃ প্রাপ্ত জাহাঙ্গীর এক সময় ইউএন এ জব করতো। হটাত করে সে কেমন যেনো রেডিক্যাল মুসলিমে পরিনত হয়ে গিয়েছিলো। ব্যাপারটা আমরা ওকে অনেক সময় ধরে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি যে, আসলে সে যেটা ভাবছে সেটা একটা মেন্টাল ডিস অর্ডার। এই কনভিন্স করার পিছিনে সবচেয়ে কাছে ব্যক্তি ছিলো আমার আরেক কোর্ষমেট মেজর ইকবাল (নিপু)। শেষ পর্যন্ত জাহাংগীর ওর ভুলট বুঝতে পেরেছে এবং এখন নেপালে থাকে, খুব সাদাসিদা জীবন।
জাহাঙ্গীর সেই সময়ে যে পাগলামিটা করেছিলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা নিউজ পেপার কাভারেজ হয়। সেটা এটাঃ
০৭/০১/২০২২-দ্বৈত জীবন-৩
You are required to login to view this post or page.
১৩/১২/২০২১-ইতিহাস থেকে যারা (ফেসবুক)
ইতিহাস থেকে যারা শিক্ষা নেয় না, তাদের পতন বারবার ইতিহাসের সেই একই ধারায় হয়। ঘসেটি বেগমের কারনে, কিংবা মীর জাফরের কারনে, অথবা সেই মায়মুনা কুটনীর কারনেই এই পৃথিবীর অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর জীবনমান অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গিয়েছিলো। তাদের লোভ, তাদের লালসার জিব্বা এতো বড় ছিলো যে, তারা সারাটা দুনিয়া হা করে গিলে ফেলতে চেয়েছিল কিন্তু তাদের পেট এতো বড় ছিলো না যে, গোটা বিশ্ব সেই পেটে ধারন করে। ফলে অধিক ভূজনের রসাতলে ন্যয্যভাবে হাতে আসা সব সম্পদ, ক্ষমতা আয়েস করার আগেই তাদের এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে অকালেই প্রান দিতে হয়েছে, অথবা মানুষের হৃদয় থেকে। আর যারা বেচে থাকে তারা ওইসব হায়েনাদের কারো কারো নামের আগে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্য যোগ করে দেয়, "নিমকহারামের দেউড়ি", কিংবা "কুটনা বুড়ী আস্তনা" অথবা "হারামখোরের আস্তানা"। আজো তারা এইসব নামেই পরিচিত। কখনো দেখবেন না যে, মীর বংশের কোন বাচ্চার নাম জাফর রাখা হয়েছে। যদিও জাফর বড্ড সুন্দর একটা নাম। কিন্তু মীরজাফর একটা কুলাংগারের নাম। ওর বংশধরেরা আজো তার নামে কলংকিত বোধ করে।
অথচ যুগে যুগে ভিন্ন রুপে এখনো মীরজাফরের থেকেও খারাপ মানুষ এই সমাজে আছে, ঘসেটি বেগমের থেকেও ষড়যন্ত্রকারিনী এখনো অনেক ঘরেই আছে, মায়মুনা কুটনীর মতো মোনাফেক এখনো আমাদের চারিধারে বিধ্যমান। ওদের চেনা কঠিন কারন এইসব মানুষেরা বর্নচোরার মতো আমাদের চারিদিকে একটা আবরন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ভাল মানুষের মতো। সুযোগ পেলেই ছোবল দেবে এবং দেয়, আর এদের এক ছোবলে ধংশ হয়ে যেতে পারে আমার আপনার বহুদিনের বন্ধন, বহুদিনের সম্পর্ক।
১৩/১২/২০২১-একই খবর কারো কাছে শুভ
একই খবর কারো কাছে শুভ আবার কারো কাছে অশুভ হতে পারে। একই জায়গায় মিলিত হওয়া মানুষের রাস্তা আলাদা আলাদা হতে পারে। একই পরিস্থিতিতে একজন জীবনে এগিয়ে চলে, আবার আরেকজন জীবনের অসহায় অবস্থার সাথে বোঝাপড়া করে। কেউ কেউ বিন্দু বিন্দু অর্থ সঞ্চয় করে নিজের সপ্ন পুরন করে, অন্যজন তার গড়া সপ্ন বিন্দু বিন্দু ভুলের কারনে নিরুপায় অবস্থায় জন্য তার সপ্ন ভাংতে শুরু করে।
কোনো অপরাধই রাতারাতি জন্ম নেয় না। যখন কোনো অপরাধ হয়, তখন আমরা শুধু তার উপরের রুপটাই দেখতে পাই। কিন্তু তার শিকড় অন্য কোথাও অনেক গভীরে হয়। আর শিকড়ের সন্ধ্যান হয় পুলিশ করে অথবা কোনো সচেতন মানুষ। পুলিশ যখন তদন্ত করে তখন প্রতিটি মানুষকে সে যেভাবে দেখে তা হল, সবাই মুখোশ পড়া ক্রিমিনাল। আর তাই সে যখন আসল জিনিষ বের করতে চায়, সে কাউকেই কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ। আর এ কারনেই হয়তো অনেকেই বলে- বাঘে ছুলে ১৮ ঘা আর পুলিশ ছুলে ৭০ ঘা!!
বিদ্বেষ হিংসা ভালোবাসা আর ঘৃণা এগুলি এমন কিছু আবেগ যা প্রতিটি মানুষের মাঝে পাওয়া যায়। সুযোগ সন্ধানী হওয়াও একটা আবেগ। সুযোগ সন্ধানী হওয়া কোনো খারাপ বিষয় নয়, কিন্তু তার জন্য কিছু সীমা থাকে, কিছু নীতি থাকে। কারো ক্ষতি করে, কারো অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে মানুষ কখনো সামনের দিকে এগুতে পারে না। বাবলা গাছ লাগিয়ে যদি কেউ ভাবে তাতে ফুল ফুটবে, সেটা কোনো পাগলামোর থেকে কম নয়। অবৈধ কোনো শুরু থেকে কোনো সম্পর্ক কখনো বৈধ হতে পারে না, না পারে সেখানে কোনো বৈধ কোনো ফলাফলের আশা। খারাপ পরিস্থিতি, খারাপ মানুষ আর খারাপ ফল এগুলি থেকে পার্থক্য করা শিখতে হবে যে কোনটা আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় আর কোন বিশয়টা ব্যক্তিগত বিষয় থেকে আইনের দরজায় নিয়ে যেতে পারে। যখন কোনো মানুষের পরিস্থিতি ঠিক এটাই হয়, তখন অন্যান্য দিনের মতো সকালটা আর তেমন থাকে না যেমন ছিলো আগের কোনো সকালের মতো, না তার সন্ধ্যাটাও আগের মত পরিচিত মনে হয়। পুলিশের প্রথম কাজ হয় ‘এক শান রিপ্লে তৈরী করা’। যেখানে তারা একে একে ক্রিমিনালের সম্ভাব্য সব ক্রিমিনাল পলিসি বিরুদ্ধে পুলিশের করনীয়। ফলে পুলিশ খুব সহজেই ক্রিমিনাল প্লানের একটু এগিয়েই থাকে।
নিজেদের মধ্যে যখন কেউ হিংসা হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে, তখন আসলে সেটাই হয় যা রক্তের সাথে রক্তের পাল্লা। ক্ষতি হয় শুধু নিজেদের রক্তের। তাহলে এই খেলায় কে জিতে? কেউ না।
মহিলাদেরকে আমরা দেবীর সমান তুলনা করে থাকি কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে লাগাতার অন্যায় আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এমন অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। প্রকাশ্যে কোনো মিহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয়, নির্যাতন করা হয়, ধর্ষন করা হয় অথচ কেউ এগিয়ে আসে না।
আমাদের এ গ্রামে কতজন পুরুষ আর কতজন মহিলা আছে কিংবা কতজন ছেলে আর কতজন মেয়ে আছে এটা কি কোনো প্রশাসন বলতে পারবে? যদি ছেলে আর মেয়ের এই অনুপাত জানা যায়, তাহলে আমাদেরকে নজর দেয়া উচিত সেই জায়গায় যেখানে কতটুকু উন্নতি করা দরকার।
২/১২/২০২১-পায়ের নীচে পাথরহীন
জীবনের কাছে রাখা সব উত্তর সবসময় তার প্রশ্নের ন্যায় বিচার করে না। বিশেষ করে প্রশ্নটা যখন এমন হয় যেটা মনকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খায়, আর হৃদয়কে ছুড়ি দিয়ে ফালা ফালা করে দেয়। কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর যখন কারো জীবনের নাশ হয়ে দাঁড়ায় তখন সেই উত্তরের শেষ পরিনতি সম্পর্কে উত্তারদাতার অনেক ভেবেচিন্তে দেয়া উচিত। আমার জীবনেও এমন একটা সময় এসেছিলো। আমার সব প্রশ্নের উত্তর হয়তোবা কারো জীবনের নাশ হবার সম্ভাবনাই ছিলো, ফলে উত্তরদাতা হিসাবে আমি কোনো উত্তরই দেওয়ার চেষ্টা করিনি। চুপ হয়ে থাকাই যেনো মনে হয়েছিলো-সর্বোত্তম উত্তর। আমি সেই “চুপ থাকা” উত্তরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে এমন পরিবেশটাই তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলাম যেনো “কিছুই না ব্যাপারটা”। কিন্তু “ব্যাপারটা” যতো না সত্য ছিলো তার থেকেও বেশী ছিলো “চাপ” আর এই “চাপ” তৈরী করার পিছনে যারা কাজ করেছিলো তারা আর কেহই নয়, আমার দ্বারা পালিত সেই সব মানুষগুলি যাদেরকে আমি ভেবেছিলাম, তারা আমার সব “ওয়েল উইশার্স”। কিন্তু আমার আরো কিছু মানুষ ছিলো যারা আমার জীবনের সাথে ওতোপ্রোতভাবে এমন করে জড়িয়েছিলো যারা আমার হাড় আর মাংশের মতো। আলাদা করা দুরুহ। সেই হাড় আর মাংশের মতো একত্রে মিলিত মানুষগুলি একটা সময়ে সেইসব তথাকথিত “ওয়েল উইশার্স”দের চক্রান্তে তাদের মস্তিষ্ক এমনভাবে বিগড়ে গিয়েছিলো যে, তাদের “সন্দেহ” টাই যেনো এক সময় তাদের অবচেতন মনে “বিশ্বাসে” পরিনত হয়। আর এই মিথ্যা “বিশ্বাসে” তাদের চারিপাশের শান্ত বাতাসগুলিও যেনো প্রচন্ড ঝড়ের চেহাড়া নিয়ে একটা কাল বৈশাখীতে রুপ নিয়েছিলো। কেউ বুঝতেই চাইতেছিলো না যে, এর শেষ পরিনতি বড়ই ভয়ংকর।
তবে আমি জানতাম সত্যিটা কি। কিন্তু ওইসব পরিস্থিতিতে আমার সব সত্য জানাটাই সঠিক এটা কাউকে যেমন বিসশাস করানো যায় নাই, তেমনি আমিও তাদেরকে বিশ্বাস করাতে চাইওনি। শুধু অপেক্ষা করেছিলাম-কখন ঝড় থামবে, কখন আকাশ পরিষ্কার হবে, আর দিবালোকের মতো সত্যটা বেরিয়ে আসবে। “সময়” পার হয়েছে, ধীরে ধীরে মেঘ কেটে গেছে, আমি আমার সাধ্যমতো সবকিছু আবার গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। গুছিয়েও ফেলেছি সেইসব ক্ষত বিক্ষত আচড়গুলি। কিন্তু আমি এই অযাচিত ঘটনায় একটা জিনিষ পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলাম যে, মনুষ্য জীবনে আসলে কেউ কারোই নয়। আমরা বাস করি শুধু আমাদের জন্য। একা থাকা যায় না, তাই সমাজ, একা থাকা যায় না, তাই পরিবার। একা অনেক অনিরাপদ, তাই সংসার। কিন্তু এই সমাজ, এই সংসার কিংবা এই পরিবার কোনো না কোন সময় ছাড়তেই হয়, আর সেটা একাই। এই মিথ্যে সমাজ, পরিবার আর সংসারের নামে আমরা যা করি তা নিছক একটা নাটক। জংগলে বাস করলে একদিন সেই জংগল ছাড়তেও কষ্ট হয়। এরমানে এই নয়, আমি জংগলকেই ভালোবাসি। কথায় বলে-ভালোবাসা পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর অনুভুতি, আর এটা যদি বেচে থাকে তাহলে হিংসা, বিদ্বেষ থেকে মানুষ হয়তো মুক্ত থাকতে পারে। কিন্তু আমরা যারা এই সমাজ নামে, পরিবার নামে, কিংবা সংসার নামে চিহ্নিত করে ভালোবাসার জাল বুনে থাকি সেটা আসলে কোনো ভালোবাসাই নয়। সেখানে থাকে প্রতিনিয়ত নিজের সার্থের সাথে অন্যের লড়াই। অন্যঅর্থে সেটা একটা পাগলামী, লালসা কিংবা একা বাচতে চাওয়ার অনিরাপদের একটা অধ্যায় মাত্র। অথচ আমরা প্রত্যেক মুহুর্তে আমাদের এই নিজের পরিবারকে নিরাপদে রাখার জন্য অনেক অপবাদ, অনেক ভয়ংকর বাধা আর মৃত্যুর মতো রিস্ককে বরন করে থাকি। এ সবই আসলে নিজের সার্থে।
যাই হোক যেটা বলছিলাম, আমার সেই ফেলে আসা অভিজ্ঞতার আলোকে আমি ধীরে ধীরে সে সব “ওয়েল উইশার্স” দেরকে নিজের বেষ্টনী থেকে দূরে রাখার প্রতিনিয়ত চেষ্টা করেছি। আমি একটা মুহুর্তেও সেই সব দিনের ক্ষত বিক্ষত হবার বেদনার কথা ভুলি নাই। যখনই সেই ব্যথার কথা মনে হয়েছে- আমি বারবার আরো শক্ত হয়েছি। আমি জানি কন এক সময় আবারো তাদের আমার প্রয়োজন হবে, আবারো তারা আমাকে আকড়ে ধরার চেষতা করবে, আবারো তারা তাদের মিথ্যা চোখের পানি ফেলে আমাকে আবেশিত করার চেষ্টা করবে। আমি ততোবার নিজেকে বারন করেছি-আর যেনো সেই একই ফাদে পা না বাড়াই। তাহলে সেটা হবে আমার জীবনের জন্য কালো আধ্যায়।
ওরাও হয়তো ভেবেছিলো- কোনো প্রয়োজন নাই আর আমাকে। আমি কোন দুঃখ পাইনি। শুধু ভেবেছি, খুব ভালো যে, তারাই গুটিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এই প্রিথিবীর সবচেয়ে বড় বিপত্তি এই যে, বড় বট বৃক্ষের প্রয়োজন কখনো কোনোদিন কোনো কালেই ফুরিয়ে যায় না। হোক সেটা হাজার বছরের পুরানো কোনো বৃক্ষ।
আজ সেই দিনটা এসেছে। অথচ আজ আমার সব দরজা এমন করে খিল দিয়ে আটকানো যে, না আমি খুলতে চাই, না খোলার প্রয়োজন মনে করি। পৃথিবীতে নিমক হারামের চেয়ে বড় পাপ অথবা বড় বিশ্বাসঘাতকরা আর নাই। যে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে কেউ আকাশ দেখে, সেই পাথকে যত্ন করে রাখতে হয়। যদি অযত্নে সেই পাথর কোথাও হারিয়ে যায় বা ব্যবহারের আর উপযোগি না হয়, তাহলে আকাশ যতো সুন্দরই হোক না কেনো, তাকে দেখার ভাগ্য আর হয় না। যদি কেউ আজিবন আকাসের জ্যোৎস্না, আকাসের তারা আর নীল আকাশের মধ্যে তারার মেলা দেখার ভাবনা থাকে, তাহলে সেই পাথকে অতোতাই যত্ন করা দরকার যতোটা মনে হবে তার মনের শখের দরকার। তা না হলে চোখের জলে বুক ভাসবে ঠিক কিন্তু কেউ তার নিজের পাথর দিয়ে তার আকাশ দেখা বন্ধ করে অন্যকে পাথর দিয়ে সাহাজ্য করে না। এতাই নিয়ম।
আজ তারা সেই পাথরটাকে হারিয়ে ফেলেছে বন্ধ দরজার অন্ধকার ঘরে। যেখানে না যায় দরজা খোলা, না যায় পাথরে পা রাখা। তোমাদের জন্য নতুন আরেক অধ্যায় শুরু। এবার এই দুনিয়াটাকে বড্ড অসহায় মনে হবে তোমাদের। তোমাদের প্রতিন মনে হবে- তোমরা কোথায় কি পরিমান ক্ষতি নিজেদের করেছো যার সমাধান কখনোই তোমাদের হাতে ছিলো না। তোমরা ভেবেছিলে- তোমাদের জন্য মায়ের চেয়ে মাসির দরদ সম্ভবত অনেক বেশী। কিন্তু এই দুনিয়ায় আজ পর্যন্ত মায়ের চেয়ে মাসির দরদ কখনোই বেশী ছিল বলে এটা কেউ যেমন প্রমান করতে পারে নাই, আর এতা সত্যও নয়। যদি সেটাই তোমরা মনে করে থাকো- তাহলে আজ তোমাদের সেই মাসির কাছেই তোমাদের সমস্ত কিছু আবদার, চাহিদা, কিংবা সাহাজ্য চাওয়া উচিত যাকে তোমরা বিনাবাক্যে মনে করেছো, লিডার অফ দি রিং। দেখো, সেই লিডার অফ দি রিং তোমাদের জন্য কোনো সাহাজ্য পাঠায় কিনা। আমার দরজা তোমাদের জন্য আর কখনোই খোলা হবে না। আমি শুধু দেখতে চাই, আসলেই তোমরা কাকে চেয়েছিলে? কার উপরে তোমাদের এতো নির্ভরশীলতা ছিলো আর কার গলায় পা রেখে শ্বাস রোধ করেছিলে। আমি তো সেদিনই মরে গেছি যেদিন তোমরা আমাকে আমার অজান্তে পিছন
৫/১১/২০২১-প্যারাডাইম শিফট
যখন সাভাবিক কোনো চিন্তাচেতনা কিংবা কার্যক্রম অন্য কোনো নতুন নিয়ম বা চিন্তা চেতনা দ্বারা সম্পন্ন হতে দেখা যায়, তখন এই প্রতিস্থাপিত নতুন পরিবর্তিত চিন্তা চেতনাকেই প্যারাডাইম শিফট বলা যেতে পারে। অন্যঅর্থে যদি বলি- এটা হচ্ছে একটা মডেল, তত্ত্ব, বা দ্রিষ্টিভঙ্গি, ধারনা, কিংবা দৃষ্টান্ত যা প্রকৃত তত্ত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি, কিংবা মডেল থেকে আলাদা। প্যারাডাইমটা আসলেই আসল জিনিষ না, এটা একটা মানষিক ভাবনার সাথে প্রকৃত সত্যের একটা শুধু ছবি। কোনো একটা জিনিষের ব্যাপারে আমরা যা ভাবছি, বা দেখছি এর সাথে সেই জিনিষটার যে রকম প্রকৃত বৈশিষ্ট , এই দুয়ের মাঝেই থাকে প্যারাডাইম তত্তটি। এই প্যারাডাইম দিয়ে মানুষ কোনো একটা ধারনা, চিন্তা চেতনা, কিংবা কোনো একটি জিনিষের ব্যাপারে একটা ধারনা পায়।
কিন্তু প্যারাডাইম শিফট অনেক বড় জটিল। প্যারাডাইম শিফটের মাধ্যমে কোনো একটা তত্ত্ব, চিন্তাচেতনা বা দ্রিষ্টিভঙ্গি পুরুটাই পালটে যায়। একটা উদাহরণ দেই- ধরুন আপনি একটা লোকের চেহাড়া দেখে ভাবলেন যে, সে একটা নিশ্চয় ভয়ংকর সন্ত্রাসী। আপনার মন তাকে সেভাবেই ট্রিট করছে, সেভাবেই আপনি তাকে ওই খারাপ মানুষদের মধ্যে লিষ্ট করে ফেলেছেন। অনেকপরে যখন জানলেন যে, লোকটা ছিলো খুবই ভদ্র, ভালো ও খুবই অমায়িক এবং পরোপকারী। তখন আপনি অনেক মনোকষ্টে ভোগবেন। আফসোস হবে। এই যে নতুন ভাবনা আপনাকে আগের চিন্তাচেতনা থেকে হটাত করে ১৮০ ডিগ্রী উলটে গিয়ে আরেক নতুন প্যারাডাইমে নিয়ে আসছে, এটাই হলো প্যারাডাইম শিফট।
থমাস কুন তার বিখ্যাত-“দি স্রাইাকচার অফ সায়েন্টিক রেভ্যুলেশন” বই এ প্রথম প্যারাডাইম শিফট শব্দটি চালু করেন। প্যারাডাইম যার যতো বেশি নিখুত, তার প্যারাডাইম শিফট ততো কম। আর যাদের এই প্যারাডাইম কোনো কিছুর ব্যাপারে প্রায় কাছাকাছি থাকে, তারা আসলেই জ্ঞানী এবং বাস্তববাদী। বর্তমান জগতে মানুষের প্যারাডাইম অনেক অনেক সত্যের থেকে বেশী দূরে বিধায়, আমাদের সমাজে গন্ডোগোল বাড়ছে।
রুস্তমের চিঠি
আমার ড্রাইভার ছিলো রুস্তম। একবার রুস্তম আমারে বল্লো যে, ওর কাছে যদি ৩ লাখ টাকা থাকে তাহলে ওর জীবন নাকি সে বদলিয়ে ফেলবে। খুব ভালো কথা। বললাম, ৩ লাখ টাকা যদি পাস, তাহলে কি করবি? রুস্তম বল্লো যে, সে ২টা পুরানো সিএনজি কিনবে। একটা নিজে চালাবে আরেকটা ভাড়ায় চালাবে। তাতে প্রতিদিন সে পাবে ১২০০ টাকা। তারমানে মাসে ৩৬ হাজার টাকা। ওর খরচ লাগে মাসে ১৬ হাজার টাকা। তারমানে মাসে সে ২০ হাজার সেভ হবে। বছরে সেভ হবে আড়াই লাখ টাকা। সেই আড়াই লাখ টাকা দিয়া সে আরেকটা পুরানো সিএনজি কিনবে। এভাবে ২/৩ বছর পর সে গাড়ি কিনবে। যদি গাড়ি কিনে, তাহলে ওর প্রতিদিন লাভ হবে ২ হাজার টাকা। এভাবে সে হিসাব করে দেখলো যে, ৫ বছর পর তার হাতে আসবে প্রায় ২০ লাখ টাকা, ৩ টা সিএনজি আর একটা গাড়ি। হিসাবটা একদম ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু শুধু একটা জায়গায় হিসাবটা শুরু করা যাচ্ছিলো না। প্রাথমিক ৩ লাখ টাকা সে পাবে কোথায়?
রুস্তম আমার অনেক দিনের ড্রাইভার। প্রায় ৭ বছর। এই বছর গুলিতে আমি এমনো হয়েছে যে, ব্যবসার জন্য কোটি কোটি টাকাও ওকে দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠিয়েছি। ফ্যাক্টরীর সেলারী আনার সময় কিংবা সাব কন্ট্রাক্ট ফ্যাক্টরীতে ইমারজেন্সী ভাবে টাকা অয়াঠানোর জন্য। কোনোদিন রুস্তমের মধ্যে কোনো গড়বড় দেখি নাই। কিন্তু একদিন-সে আমার ব্যাগ থেকে ৩ লাখ টাকা চুরি করে পালালো।
চুরি করার পর এক মাস পালিয়ে পালিয়ে থাকলো। অনেক খুজাখুজি করেছি, ওর গ্রামের বাড়ি, ওর বর্তমান শশুর বাড়ি, কিংবা ওর প্রাক্তন শশুড় বাড়িতেও। কিন্তু রুস্তমের কোনো হদিস পাওয়া যায় নাই। অগত্যা মনের রাগ মিটানোর জন্য ওর নামে একটা চুরির মামলাও করেছিলাম। কোথাও না পেয়ে আমি ওকে খোজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম এই কারনে যে, রুস্তম যদি ঐ ৩ লাখ টাকা কাজে লাগিয়ে কিছু করতে পারে, তাহলে করুক। ব্যাপারটা নিয়ে আমি আর কোনো আক্ষেপ বা রাগ রাখতে চাই নাই।
অতঃপর প্রায় ৫ মাস পরে একদিন আমি একটা বিশাল চিঠি পেলাম। ২২ পাতার চিঠি। চিঠিটা আমি পড়তে চাইনি কিন্তু চিঠিটার প্রথম লাইনেই যে কথাটা লিখা ছিলো, তার জন্যই আমি পুরু চিঠিটা পড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। আর সে লাইনটা ছিলো- “যেদিন আপনি চিঠিটা পাবেন, সেদিন হয়তো আমি আর বেচে নেই স্যার। কিন্তু একটা কথা বলে যাই, আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সাহস কম, তাই আর বাচতে পারলাম না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন”।
যেদিন আমি চিঠিটা পাই, তার প্রায় ৪ দিন আগে রুস্তম তারের কাটা গলায় ফাসি দিয়ে আত্তহত্যা করেছিলো। আমার প্রায়ই ওর কথা মনে পড়ে। আমি ভাবি যে, যদি রুস্তম সাহস করে আবার আমার কাছে আসতো, আমি ওকে আবার রাখতাম আমার ড্রাইভার হিসাবে। আমি ওরে ক্ষমা করে দিছি। আমিও ওকে ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার ভালোবাসা ওকে ঠেকাতে পারে নাই। এটা আমার ব্যর্থ তা নাকি ওর ভীরুতা আজো আমি বুঝতে পারি নাই। কিন্তু এটা ওরও ব্যর্থতা।
রুস্তম মাঝে মাঝে খুব ভালো কবিতা লিখতো। আর ড্রাইভিং করার সময় আমাকে মুখস্ত ওর লেখা কবিতা শুনাতো। আমি অবাক হতাম, রুস্তম খুব ভালো কবিতা লিখে। প্রথম প্রথম ভাবতাম, সম্ভবত রুস্তম কারো কবিতা চুরি করে, কিন্তু পরে বুঝেছি- রুস্তম আসলেই লিখে।
রুস্তমের লেখা ২২ পাতার চিঠির কিছু চুম্বক অংশ আমি তুলে ধরি।
জীবনে সেসব মানুষের সাথে কখনো লুকুচুরী, মিথ্যা, ছলচাতুড়ি, কিংবা কল্পকাহিনী বলে সাময়িকভাবে ভুল বুঝানো উচিত না যারা আমাদের সুখের জীবনের জন্য নিসসার্থভাবে তাদের অনেক মুল্যবান সময়, পরিশ্রম আর অর্থ দিয়া সাহাজ্যের হাত বাড়ায়। যদি পথ চলতে গিয়ে কিংবা তাহাদের নির্দেশনা মানতে গিয়ে কিংবা কোনো লোভে পড়ে নিজের অজান্তে ভুল করে ফেলে, হয়তো সেটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব কিন্তু যদি সেই ভুল হয় ইচ্ছাকৃত, তাহলে সেটা হবে পাপ, অপরাধ এবং ক্ষমার অযোগ্য। যারা আমাকে ভালোবেসে, স্নেহ করে অথবা আমাদের দরিদ্র মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের পাশে এমনভাবে দাঁড়ান যা হয়তো তাদের দাড়ানোর কোনোই প্রয়োজন ছিলো না, তবুও দাড়ান। তাহাদের সাথে এরূপ কোন ইচ্ছাকৃত অপরাধ আমাদের সারা জীবনের জন্য এমন মারাত্তক হুমকী হয়ে দারায় যা কোনো কিছুর বিনিময়েও আর আগের অবস্থায় ফিরে পাওয়া সম্ভব না। এই মারাত্তক ইচ্ছাকৃত ভুলের জন্য যদি কেউ ক্ষমাও করে দেন, তারপরেও বিশ্বাসের যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, তা দগদগে ঘায়ের থেকেও বেশী। তখন তাদের প্রতিনিয়ত মনে হবে, এই মানুষ উপকারের কথা বুঝে না অথবা সে নির্বোধ অথবা সে উপকারীর জন্য অনেক হুমকীস্বরূপ। এই বিবেচনায় কোনো হিতৈষী যদি আমাদের পাশ থেকে নিঃশব্দে সরে যায়, তাকে আর কোনো কিছুর শপথের মাধ্যমেও আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনা যায় না। তখন যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, নিজের উপর নিজের রাগ, অভিমান আর কৃতকর্মের জন্য অপরাধবোধ। এই সময় যা হয়, তা হচ্ছে, হতাশা ক্রমশ বাড়তে থাকে, আর এই হতাশা যখন বাড়ে, তাহার সাথে বাড়ে দুশ্চিন্তা। দুসচিন্তা থেকে জন্ম নেয় নিজের উপর নিজেকে ঘৃণা। আর একবার যখন নিজেকে নিজে ঘৃণা করতে কেউ শুরু করে, তখন তার আর বেচে থাকার কোনো লোভ থাকে না। চারিপাশের কোনো মানুষকেই আর ভালো লাগে না, নীল আকাশ ভালো লাগে না, রংগীন আলো ঝলমলের শহরকে তখন বড় অচেনা মনে হয়। মানুষ তখন আত্মহননের দিকে ঝুকে যায়। অথবা সে এমন পথ বেছে নেয়, যা সমাজের চোখে বড়ই অসুন্দর আর কুৎসিত। সব কুতসিত জীবনের কাহিনী প্রায় একই। কোনো না কোন সময়ে তাদের সুযোগ এসেছিলো কিন্তু তারা না বুঝবার কারনে সে সুন্দর জীবন হাতছাড়া করেছে। পাপ কাজ করে কেউ কখনো বড় হতে পারে নাই, আর হয়ও না। তাদের হয়তো টাকার পাহাড় থাকতে পারে কিন্তু তাদের জন্য সমাজ দুঃখবোধও করে না। তারা সারাজীবন সমাজের একটা কালো মানুষ হিসাবেই বেচে থাকে।
স্যার, আমি এই মুহুর্তে ঠিক সে রকম একটা কাল পার করছি। টাকাগুলি আমার কোনো কাজে লাগে নাই। মদ খেতে খেতে কখন বেহুস ছিলাম বুঝি নাই, যখন হুস হয়েছে, দেখলাম সবগুলি টাকা আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে। কে নিয়েছে, কখন নিয়েছে সেই জ্ঞানটুকুও আমার ছিলো না। আমি আপনার থেকে এখন অনেক দূরে। পরিচিতজন মানুষের আশেপাশেও আমি নাই। ড্রাইভিং চাকুরী করতে পারতাম, কিন্তু করতে সাহস করি নাই। কখন আবার আমি আপনার সামনে পড়ে যাই, তাই। প্রতিটা ক্ষন আমি পালিয়ে পালিয়ে থেকেছি। কখনো ক্ষুধা পেটে কোনো এক পরিত্যাক্ত বিল্ডিং এর মশাদের সাথে, কখনো কোনো গাজার আসরে, কখনো একেবারে একা কোনো এক নদীর ধারে সময় কাটিয়েছি। এমন কোনো একটা মুহুর্ত আমার যায়নি, যখন আপনার কথা আমার মনে পড়ে নাই। বারবার ভেবেছি- কি দরকার ছিলো এমনটা করার? যখন যা চেয়েছি, আপনার কাছ থেকে আমি পাইনি এমন ছিলো না। তারপরেও আমার এমনটা করার কোনো দরকার ছিলো না।
চিঠিটা পড়তে পড়তে আমারো খুব খারাপ লাগছিলো। অনেক বড় চিঠি। সব কিছু এখানে হয়তো লিখা সম্ভব নয়। ১৯ পাতার কিছু অংশে এসে আমি একদম নিসচুপ হয়ে গেলাম। রুস্তম লিখেছে-
স্যার, এ কয়দিন বারবার শুধু একটা কথাই আমার মনে হয়েছে। যখন আপনি গাড়িতে উঠতেন, প্রথমেই জিজ্ঞেস করতেন, আমি খেয়েছি কিনা। আজ অবধি কেউ আমাকে এ কথাটা কেউ কখনো জিজ্ঞেস করে নাই। আজ প্রায় ৩ দিনের উপরে পার হয়ে গেছে, আমি একটি দানাও খাই নাই। মুখ ভর্তি দাড়ি, গোসলের কনো জায়গা নাই, এলোমেলো মাথার চুল, নোংরা আমার জামা। আমার সাথে রাস্তার পাগলের মধ্যে কোনো তফাত নাই। যখন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিতাম, বলতেন- বাসায় গিয়ে রেষ্ট করো, সকালে নাস্তা খেয়ে চলে এসো। আজ আমাকে কেউ বলে না- সকালে চলে এসো। অথচ মনের ভিতরে অদম্য ইচ্ছা, যদি আবার আপনার কাছে চলে আসতে পারতাম? কোথাও আমার কেউ নাই। সম্ভবত আপ্নিই ছিলেন আমার সবচেয়ে কাছের একজন মানুষ যাকে আমি ভালোবাসতাম, আবদার করতাম, জিদ করতাম কিন্তু খুব পছন্দও করতাম। আপনার মেয়েরাও আমাকে খুব সম্মান করতো। কখনো ওরা আমাকে ড্রাইভার হিসাবে দেখে নাই। কি লক্ষী মেয়েগুলি। আংগকেল ছাড়া কখনো ডাকতো না। আজ কেনো জানি মনে হচ্ছে- ইশ, যদি আবার ফিরে আসতে পারতাম!! কিন্তু আমার মনের সাহস নাই, শরীরে বল নাই, আর আপনার সামনে দাড়াবার আমার কোনো জায়গাও নাই। এ কয়দিন মাথায় শুধু একটা জিনিষ ঘুরপাক খাচ্ছে- কি লাভ এ জীবন রেখে? কিন্তু মরার জন্যেও কিছু উপকরন লাগে। ফাসি দিতে হলে দড়ি লাগে, বিষ পান করে মরতে হলে বিষ কিনতে হয়, কিন্তু আমার কাছে বিষ কেনার ও পয়সা নাই। আর সাতার জানা মানুষ নদীতে ঝাপ দিলেও মরে না।
আমি রুস্তমের চিঠিটা পড়ছি, আর খুব ভয় পাচ্ছিলাম। রুস্তম তার চিঠির ২১ পাতায় লিখেছে-
জীবনকে ভালোবাসবার অনেক নাম আছে। কখনো এর নাম চেলেঞ্জ, কখনো এর নাম সততা আবার কখনো এর নাম বিশ্বাস। স্যার, সব হাসিই হাসি নয়। যেদিন আমি টাকাটা নিয়ে পালিয়েছিলাম, সেদিন আমি হেসেছিলাম আনন্দে। অথচ আজ আমি কাদতেছি কেনো আমি টাকাটা নিয়ে পালালাম। আসলে আমার এই কান্না কান্না নয়। এই কান্নার নাম হয়তো ভয়। আর সব ভয়ের চেহারা এক। যার নাম- আতঙ্ক। এই আতংকে মানুষ অসুস্থ হয়, মানুষের রুচী কমে যায়, এক সময় দেহ দেহ মন দুটুই ভেংগে যায়। দেহ ভাঙ্গার সাথে সাথে মানুষ মানসিকভাবে দূর্বল হয়, এক সময় পানির অভাবে যেমন কচি গাছের মরন হয়, তেমনি এই আতংকগ্রস্থ মানুষগুলিও মৃত্যু বরন করে। তাদের জন্য কেউ আর পিছনে তাকায় না। খুব কষ্ট আর ব্যথা নিয়ে স্যার আমি চলে যাচ্ছি। পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। এর গাছ পালা, আকাশ, নদী, পাহাড় সব সুন্দর। সবচেয়ে সুন্দর ছিলেন স্যার আপনি। আমি আপনাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোবাসবো। খুব বাচতে ইচ্ছে করছিলো স্যার কিন্তু যারা সাহসী নয়, তাদের বেচে থাকবার কোনো প্রয়োজন নাই এই পৃথিবীতে। আমি আসতে চেয়েছিলাম আবার আপনার কাছে কিন্তু সম্ভব হলো না। যদি কখনো পারেন- আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। যেদিন আপনি চিঠিটা পাবেন, সেদিন হয়তো আমি আর বেচে নেই স্যার। কিন্তু একটা কথা বলে যাই, আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু আমার সাহস কম, তাই আর বাচতে পারলাম না। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। যে তিন লাখ টাকায় আমার এতো হিসাব ছিলো, জীবন সুখের হবে, নিজের গাড়ি হবে, অনেক টাকা হবে, সেই তিন লাখ টাকাই আসলে আমার জীবন একেবারে পালটে দিলো। আপনার সাথে আমার জীবনটা তো ভালোই ছিলো। বিশ্বাস করেন স্যার, আজ ঠিক মৃত্যুর আগ মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আমি একটা জিনিষ শিখে গেলাম, জীবনে সব মানুষের সাথে ছল চাতুড়ি করতে হয় না, এই দুনিয়ায় টাকাই সব নয়। আপনার মতো এমন একটা মানুষের পাশে শুধু থাকলেই হতো। বট বৃক্ষের মতো ছিলেন।
------------------------------------------------------------------------------------
চোখ দিয়ে কখন যে পানি পড়ছিলো, বুঝি নাই। আমিও রুস্তমকে স্নেহ করতাম, ভালোবাসতাম। কিন্তু ওকি একবার সাহস করে আবার ফিরে আসতে পারতো না? আমি ওর শেষ ঠিকানাটা জানলে হয়তো নিজেই ডেকে নিতাম। ভুল তো মানুষ করেই। কিন্তু সেটা জীবন দিয়ে মাশুল দেয়ার মতো শাস্তিতে নয়।
(আমি রুস্তমের চিঠিটা ছিড়ে ফেলিনি। আজ আমার সব পরিত্যাক্ত কাগজপত্র ড্রয়ার থেকে পরিষ্কার করতে গিয়ে রুস্তমের সেই ২২ পাতার চিঠিটাও পেলাম। সেটা আজ আমি ছিড়ে ফেললাম।)
০৯/০৯/২০২১-১০০ বছর পর আগামীকাল
আজ থেকে ১০০ বছর পর ঠিক এই সময়ে যারা বেচে আছি আমরা, তাদের প্রায় শতভাগ মানুষ আর এই পৃথিবীতেই থাকবো না। হয়তো খুবই নগন্য কিছু সৌভাগ্যবান অথবা অন্য অর্থে দূর্ভাগ্যবানও বলা যেতে পারে, তারা বার্ধক্যের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্ষীনদৃষ্টি আর দূর্বল শরীর নিয়ে হয়তো এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন যা তিনি কখনো চান নাই। যার নাম ‘মৃত্যু’।
ক্যালেন্ডারের পাতা প্রতিদিন পালটে যাবে, তাঁর সাথে সাথে পালটে যাবে তারিখ, মাস, বছর এবং অতঃপর যুগ। কেউ এটাকে আমরা থামাতে পারি না, পারবোও না। আর কেউ পারেও নাই। হোক সে কোনো প্রতাপশালী সেনাপতি, হোক সে চৌকস কোনো রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক। শুধু তাই নয়, কোনো বিজ্ঞান কিংবা কোনো বিজ্ঞানিক, কোনো সর্বোচ্চ পদধারী ধার্মিক নেতা কিংবা দূধর্ষ সাহসী সন্ত্রাসী কেউ এই অমোঘ প্রাকৃতিক নিয়মটাকে উপেক্ষা করে অগোচরেও পরিবর্তন করার কোনো ক্ষমতা রাখে না।
আজ যারা পথে ঘাটে আমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে, তাদের কেউ হয়তো কোট টাই, কেউ হয়তো আধুনিক পোষাক আষাকে, কেউ আবার ফুটপাতে নোংরা চুলে আছেন, আমি তাদের অনেককেই হয়তো চিনিও না আবার হয়তো কাউকে কাউকে আমরা সর্বদাই দেখি, চিনি, এদের কেউও এই নিয়ম থেকে পরিত্রান পাবে না। মহাশ্মশানের সারিসারি পাথরে নাম লেখা কোনো এক নাম ফলকের মধ্যেই আমরা লুকিয়ে যাবো ঠিক সেইস্থানে যার কথা আমরা আজ ভাবতেও পারি না। সেখানে যেমন কোনো আধুনিক পোষাক বলতে কিছু থাকে না, আর না থাকে কোনো ধার্মিক ব্যক্তির আলখেল্লাটাও। অনেকের বেলায় হয়তো সেই নামফলকটাও থাকবে না। কোথায় আছেন তারা, কার জায়গায় আছেন তাঁরও কোনো হদিস হয়তো পাওয়া যাবে না। আজ যে শরীরটাকে প্রতিদিন নোংরা মনে করে দেশী বিদেশী সাবান শ্যাম্পু দিয়ে সুগন্ধী মাখছি, তখন এই শরীরের মধ্যে হাজারো পোকা মাকড়, কর্দমাক্ত মাটি, নোনা জল, অপরিষ্কার জলের সাথে ভেসে আসা দূর্গন্ধময় আবর্জনায় সারাটা শরীর ভেসে গেলেও তাকে আর সুগন্ধী কেনো, সরানোর মতোও আমাদের কোনো শক্তি থাকবে না। শরীরে মাংশ পচে গলে মিশে যাবে মাটির সাথে, হয়তো কোনো এক কুকুর কিংবা শিয়াল আমাদের শরীরের হাড্ডিটি নিয়ে দূরে কোথাও অবশিষ্ঠ মাংশটুকু খাওয়ার জন্য দৌড়ে চলে যাবে অন্যত্র। কার সেই কংকাল, কার সেই হাড্ডি, এই পৃথিবীর কোনো জীবন্ত মানুষের কাছে এর কোনো মুল্য নাই।
যে ঘরটায় আমি সারাদিনের ক্লান্তি শেষে অবসাদ শরীর নিয়ে মুলায়েম বিছানায় গা হেলিয়ে দিতাম, সেই ঘরটা হয়তো থাকবে অন্য কার দখলে। যে বাগানটায় আমি প্রায়ই পায়চারী করে করে আকাশ দেখতাম, গাছ গাছালীর মধ্যে উড়ে আসা ভ্রমর কিংবা পোকামাকড় দেখতাম, সেই বাগানের দখল হয়তো এখন কার দখলে কে জানে। বাগানের গাছ গাছালীর পরিচর্যার নামে যে পোকামাকড়গুলিকে আমি বিষ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করতাম, আমি আজ তাদের দখলে।
যে বাচ্চাদের মুখরীত কোলাহলে আমার ঘর ভরে থাকতো, যাদের আগমনে আমার মন পুলকিত হতো, আজ সেখানে অন্য কেউ মুখরীত হচ্ছে। কতই না সাবধানতায় আগলে রেখেছি সেই ঘর, সেই লন, কিংবা আমার যতো আয়েশী জিনিষ, আজ সেগুলি আমার কিছুই নয়। আমার সুন্দুরী স্ত্রী যখন তাঁর লাল শাড়িটা পরার পর কিংবা আমিই যখন নতুন কোনো একটা ড্রেস পড়ে বারবার আয়নার সামনে গিয়ে কতবার না দেখতে চেয়েছি-কেমন লাগে আমাকে, অথচ আজ সেই আমি বা আমার সেই সুন্দুরী স্ত্রী তাঁর চেহাড়া কেমন দেখায় কাফনের সেই ধবল পোষাকে সেটা দেখার কোনো পায়তারা নাই। সেই বৃহৎ আয়নাটার আর কোনো মুল্য নাই আমার কাছে। হয়তো সেখানে অন্য কেউ এখন তাঁর চেহাড়া দেখছে, হয়তো লাল শাড়ির পরিবর্তে নীল বা টাই কোট পড়া পোষাকের বদলে একটা ভেষ্ট পড়া ব্যাকব্রাস চুলের মহড়া দিচ্ছে। যে গাড়িটা প্রতিদিন আমাকে মাইলকে মাইল ঠান্ডা কিংবা শীততাপ হাওয়ায় বসিয়ে, মিষ্টি মিষ্টি গান শুনিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে গেছে, সেটা আর আমার কোনো প্রয়োজন নাই। না সে আমাকে আর খোজে।
কখন কোথায় কাকে কাকে নিয়ে অথবা আমার নায়নাতকুর আত্তীয় স্বজন স্ত্রী পোলাপান নিয়ে কবে কোথায় কি আনন্দে মেতেছিলাম, সেই ইতিহাস আর কেউ কখনো মনে রাখবে না। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কতটা পথ হেটেছিলাম, আর সেই হাটা পথে আমি কতটুকু ঘাম ঝরিয়ে চূড়ায় উঠে কি তৃপ্তি পেয়ে কি আনন্দে কতটুকু আত্তহারা হয়েছিলাম, সেই তথ্য না কেউ জানবে, না কেউ জানার কোনো আগ্রহ দেখাবে। কার সাথে কি নিয়ে আমার মনোমালিন্য হয়েছিলো, বা কে আমাকে কতটুকু ভালোবেসে কি অবদান দিয়েছিলো অথবা কার কোন আগ্রহে আমি কোথায় কি করেছিলাম, কার কারনে আমার অন্তরে জালা উঠেছিলো আর কার কারনে আমার দিন আর রাত একহয়ে গিয়েছিলো, সেই ইতিহাসের কোনো মুল্য আজ বেচে থাকা মানুষগুলির কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। না তাদের যাদের জন্য এসব ঘটনা ঘটেছে। নতুন প্রজন্ম নতুন পরিবেশ, নতুন সব কাহিনীতে ভরে থাকবে বর্তমান আর আমাদের সেই পুরাতন প্রজন্ম, কিংবা সেই তাদের পুরাতন পরিবেশের কোনো স্থান থাকবে না আজকের এই পরিবর্তীত বন্ধুমহল পরিবেশে। হয়তো কোনো এক ছোট বালিকা আমাদের কথা শুনে, অথবা ভালোবেসে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে আমার সেই সমাধিতে দাঁড়িয়ে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে দাঁড়িয়ে পুষ্প স্তবক দিয়ে চলে যাবে। হয়তো সবার বেলায় এটা নাও হতে পারে। কিংবা জন্ম জন্মান্তরের শেষে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শেষে আমি এমন করে বিলীন হয়ে যাবো যে, সেই অবুজ বালিকার পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো আর একটা বাশী ফুলও নিয়ে আমার সেই সমাধিতে দাঁড়াবে না। কারন আমি তাদের কোনো ইতিহাসের মধ্যেই নাই। চিরতরেই বিলীন।
আজ যে সেলফীটা কত যত্ন করে তোলা হয়েছে, হাসি মাখা মুখ, চুলের বাহার, পোষাকের পরিপাটিতা সব কিছু ধীরে ধীরে সেই শতবর্ষ পরে এমন করে মলিন হয়ে যাবে, হয়তো দেখা যাবে, সেই ছবি পরে আছে এমন এক কোনায় যেখানে থাকে পরিত্যাক্ত কোনো কাগজ বা ময়লার বাক্স। কোনো একদিন সেটা হয়তো অপ্রয়োজনীয় হয়েই বেরিয়ে যাবে আমার সেই শখের ঘরের দরজা পেরিয়ে।
যে অর্থের জন্য আমি প্রতিদিন সারাটা সময় শুধু পরিশ্রমই করে গেছি, সেই অর্থ আজ আমার কোনো কাজেই আসবে না। শতবছর পরে তো আমার অর্থে গড়া কোনো এক ইমারতের কোনো একটা ইটের মধ্যেও আমার কোনো নাম বা অস্তিত্ব থাকবে না। হোক সেটা আমার পরিশ্রমে গড়া কিংবা আমার নিজের। সেখানে হাত বদলে বদলে আমার অস্তিত্তের শেষ পেরেগটুকু মেরে সেখানে হয়তো কোনো এক লোকের নাম লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। যেটা আজ আমার নামে পরিচিত, শত বছর পর সেটা আমার আর নাই, না সেটা আমার নামেও অহংকার করে।
কি অদ্ভুত না?
শত বছরের হিসাবে যেমন আমি আর নাই, হাজার বছরের হিসাবে তো আমি কখনো ছিলামই না। তারপরেও আজ আমি অনেক ব্যস্ততায় দিন কাটাই আগামিকালের জন্য। অথচ আগামিকালটাই আমার না। এই পৃথিবী আমাকে কখনোই মনে রাখবে না। কারন সে আমাকে ভালোই বাসে নাই। অথচ আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম আমার জীবনের থেকেও বেশী। আর এটাই এই পৃথিবী। এই পৃথিবীর কোনো বর্ষাই আমার না, কোনো শরতই আমার না। এর গাছ পালা, এর নীলাকাশ, এর সুগভীর সমুদ্র কিংবা ঘনসবুজ পাহাড় কোনো কিছুই আমার না। আমার ঘরটাও।
শতবছর পরে, আমি এক অচেনা, নামহীন, অস্তিত্বহীন মানুষ যে আজকের দিনে বহু ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটিয়ে কিছুটা সময় এই নীল আকাশ, ঘন সবুজ পাহাড় অথবা পাখীদের কিচির মিচির শুনেছিলাম।
১৭/০৮/২০২১-রেহালাদের গল্প
রেহালার গল্প
সাহস ছাড়া মানুষ স্বাধীন হতে পারে না, আর স্বাধীনতা ছাড়া মানুষ জীবিত নয়।
একদমই ভাবী নাই যে আজকে আমার অফিসে এমন কেউ আসবে যাকে আমি একসময় চিনতাম কিন্তু গত ৪০ বছরের মধ্যে আর কখনোই দেখা হয় নাই। ওর নাম ‘রেহালা (এটা একটা ছদ্দনাম, আসল নামটা উল্লেখ করলাম না’)। আমি আর রেহালা একই ক্লাশে পড়তাম সেই প্রাইমারী স্কুলসহ হাইস্কুলে। এরপর আমি হাইস্কুল ছেড়ে অন্য কলেজে চলে আসলাম, আর ওরা গ্রামেই রয়ে গেলো। এতো সুকন্ঠী ছিলো এই রেহালা যে, আমরা ওর গান শুনতাম যেখানে সেখানে, দলবেধে। স্কুলের কোনো অনুষ্ঠানে কখনো কখনো রেহালার একক সঙ্গীত পর্যন্ত হতো। খালী কন্ঠেও যে গানের একটা মূর্ছনা আছে, সেটা রেহালার গান শুনলে বুঝা যেত। আর যদি রেহালার রূপের কথা বলি, সেটা আরেক বর্ননা। ওর গায়ের রঙ শ্যামলা, একদম ডায়মন্ডের মতো, চোখগুলি বড় বড়, ঠোটে সবসময় একটা হাসি লেগেই থাকতো। রেহালা হাসলে গালে একটা টোল পড়তো। সম্ভবত এই টোল পড়া গালের জন্যই রেহালার হাসিতে একটা আলাদা মাধুর্য ছিলো। বড্ড মিষ্টি ছিলো রেহালার হাসি। ছিমছাম শরীর, আমাদের সাথে গোল্লাছূট, দাড়িয়াবান্দা, মাঝে মাঝে কাবাডিও খেলতো রেহালা। রেহালাকে কাবাডি খেলায় কুকুপাত করলে ইচ্ছামতো মাথায় চুল ধরে ঝাকুনো মারতো। এক সাথে আমরা গ্রামে বড় হয়েছি, পাশাপাশি বাড়ি ছিলো আমাদের। নদীতে ঝাপ দিতাম এক সাথে, আর অন্যের গাছে উঠে পেয়ারা চুরির সময় রেহালা থাকতো লুক আউটম্যানের মতো। যেই না গাছের মালিকের আসার সময় হতো, রেহালা নিরুদ্দেশ, আর আমরা গাছের মধ্যে নিশ্চুপ। বড্ড মজার দিন ছিলো সে ছোটবেলাটা। সেই রেহালা আজ হটাত করেই আমার অফিসে এসে হাজির।
প্রথমে তো আমি রেহালাকে চিনতেই পারিনি। ওর শরীর অনেক মোটা হয়ে গেছে, রেহালা আগেই শ্যামলা ছিলো, আর এখন ওর চেহারা এতো কালো হয়ে গেছে যে, আগের আর সেই ডায়মন্ডের মতো চেহারাটা নাই। মাথায় চুলে পাক ধরেছে। কতই বা বয়স, তারপরেও মনে হচ্ছে বুড়ি হয়ে গেছে রেহালা। কিন্তু হাসলে ওর গালে এখনো টোল পড়ে। চোখ গুলি এখনো ডাগর ডাগর। কন্ঠে আর সেই সুর এখন নাই রেহালার। রেহালা আমার অফিসে একা আসে নাই। ওর সাথে ওর ছোট বোন এসেছে। ওর ছোট বোন কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বল্লো যে, বুজি (মানে আপা) কানে শুনে না। অনেক জোরে জোরে কথা বললে কিছুটা শুনতে পায়। যেহেতু কানে শুনে না, তাই, অন্যের কথাও বুজি ভালোমতো শুনতে না পাওয়ায় কি কথা বলছে কেউ বুঝতে পারে না। তাই সাহাজ্যকারী হিসাবে বুজি কোথাও গেলে আমিই সাথে যাই।
রেহালা আমার অফিসে বসেই কিছুক্ষন যেনো হাপিয়ে উঠেছিলো। রেহালার প্রথম কয়েক মিনিটের কথার অর্থ এমন ছিলো যে, এতোদিন পর রেহালা আমার সাথে দেখা হওয়ায় যেনো সেই ছোট বেলার রাজ্যের গল্পের পশরা নিয়ে হাজির হয়েছে। ওর বলার উচ্ছাস, মুখের অভিব্যক্তি আর অনর্গল কথার মধ্যেই আমি বুঝতে পারছিলাম রেহালা আজ অনেক অনেক খুসি যে, সে আমার সাথে দেখা হয়েছে। কখনো দুই হাত তুলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে, কখনো নিজের অজান্তেই কি যেনো দোয়া দরুদ পাঠ করছে আবার কোনো কারন ছাড়াই হেসে দিচ্ছে। ঝির ঝির বাতাসে তরু পল্লব কিংবা ক্ষেতের দন্ডায়মান ফসলরাজী যেমন হেলিয়া দুলিয়া এদের মনের সুখ প্রকাশ করে, নির্মল নীলাকাশ যেমন তার একখন্ড মেঘের ভেলাকে এদিক থেকে সেদিকে উড়াইয়া লইয়া যায়, রেহেলা তেমনি আমাকে এতো বছর পর পেয়ে যেনো তার সেই দশাই হলো। রেহালা মাথার বোরখাটা খুলে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিলো। রেহালার আগমনে আমার অফিসে কোনরূপ সমারোহ ছিলো না, কিন্তু আজিকার এই মুহুর্তে সমস্ত বিশ্ব ব্যাপারের সর্বাধিনায়িকা যেনো এই রেহালাই হয়ে দাড়াল। রেহালার এমন উচ্ছাসিত আচরনে আমার যেনো বিস্ময়ের কোনো শেষ ছিলো না।
এখানে আরো একটা ব্যাপার আমাকে রেহালা বিস্মিত করলো। রেহালা ছোটবেলায় আমাকে ‘তুই’ বলেই ডাকতো, কিন্তু আজকে খেয়াল করলাম, রেহালা আমাকে আর তুই; বলছে না, কাকা বলে ‘আপনি’ সম্মোধন করছে। গ্রামের সম্পর্কের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে রেহালার সাথে আমার কাকা ভাতিজারই সম্পর্ক। কিন্তু এই সম্পর্ক কিসের ভিত্তিতে সেটা আমার ছোট বেলায়ও জানা ছিলো না, আজ তো সেটা জানার কোনো ইচ্ছাও নাই। আমি রেহালার বাবাকে ‘ভাই’ বলেই ডাকতাম সেটা আমার মনে আছে। আমি রেহালাকে বললাম যে, সে যেনো আমাকে “তুই বা তুমি” করেই বলে।
আমি জানি রেহালার বাবা এবং অন্যান্য ভাই বোনেরা এখনো জীবিত আছে। আর তারা মাঝে মাঝেই আমার অফিসে কিছু না কিছু সাহাজ্য বা পরামর্শের জন্য আসে। কখনো তাদের সাথে আমার দেখা হয়, আবার কখনো কখনো দেখা হয়ও না। ফলে আমি রেহালাকে ওদের ব্যাপারে কোনো প্রশ্নও করতে চাইনি। একমাত্র রেহালার ব্যাপারেই আমার অনেক কিছু জানা ছিলো না। তাই প্রথমেই রেহালাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, রেহালা কেমন আছে। রেহালা কি শুনলো আর কি বুঝলো আমি জানি না কিন্তু রেহালা বলতে থাকে-
কাকা, তোমারে কতবার যে আমি দেখতে চাইছি মনে মনে, আর আফসোস করছি, ইশ যদি মরার আগে তোমার সাথে আমার একবার দেখা হতো। অনেকের কাছেই আমি তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছি, তুমি কই থাকো, কিংবা কোথায় গেলে তোমাকে পাওয়া যাবে ইত্যাদি কিন্তু কেউ আমাকে তোমার আসল ঠিকানাটা দিতে পারে নাই। শুধু এটুকু জানতাম যে, তুমি এই এলাকাতেই বড় ব্যবসা নাকি করো। একবার শুনেছিলাম, তুমি নাকি গ্রামে গেছো। আমি তখন গ্রামেই ছিলাম। কিন্তু আমি লজ্জায় তোমার সাথে দেখা করার সাহস করি নাই। সেটাও আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগের কথা। তখন সবেমাত্র আমি আমার জামাইয়েরে নিজের ইচ্ছায় তালাক দিছি। গ্রামে একজন মহিলার সংসার ভেংগেছে, তালাক হয়েছে এটা যে কত বড় কেলেংকারী, সেটা মেয়ে না হলে আসলে কেউ বুঝতে পারে না।
আমি রেহালাকে জিজ্ঞেস করলাম, স্বামীকে তালাক দিলি কেনো?
রেহালা সহজেই আমার প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছিলো। রেহেলা অনেকক্ষন মাথা নীচু করে কি যেনো ভাবলো। দেখলাম, রেহেলা কাদছে। তাঁর ফুপিয়ে কান্নার একটা শব্দ পেলাম। আমি রেহেলাকে কিছুই বললাম না। রেহেলাকে আমি সময় দিলাম, রেহেলা কাদছে। তারপর টেবিলে রাখা একটি গ্লাস থেকে কয়েক ঢোক পানি গিলে বলতে লাগলো-
কাকা, একটা কথা কি জানেন? বিয়ের সময় খুসি আর ভালোবাসায় এটা প্রমানিত হয় না যে, ভবিষ্যতে এই সুম্পর্কের মধ্যে তিক্ততা বা ঘৃণা আসবে না। মধুর ভালবাসা যেমন একদিন ঘৃণার বিষে রুপান্তরীত হতে পারে, আবার গভীর ঘৃণাও হয়তো সমস্ত বাধা কাটিয়ে পুনরায় চরম ভালোবাসায় পরিনত হতে পারে। কিন্তু কখনো যদি ভালোবাসার মধ্যে ঘৃণা ঢুকে পড়ে, তিক্ততার সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন যে এখন এই সম্পর্ককে শেষ করা উচিত। বুঝে শুনে বেরিয়ে আসা উচিত। যাতে তার আগে কোনো মারাত্তক অঘটন না ঘটে। কিন্তু আফসোস, প্রায়ই তিক্ত সম্পর্কগুলির ক্ষেত্রে আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনা। হোক সেটা সমাজের তথাকথিত লোক লজ্জার ভয়ে অথবা অভিভাবকের অতিরিক্ত চাপের কারনে। তখন এমন হয় যে, সেই দম্পতির যে একদিন ভালোবেসে যারা খুব কাছে এসেছিলো, তারা আজ সম্পর্কের তিক্ততায় একজন আরেকজনকে চাকু, বন্ধুক চালাতে পিছপা হয়না। তখন একজন আরেকজনের প্রান নিতেও দ্বিধাবোধ করেনা অথচ কোনো একদিন তারা তাদেরকে নিজেদের মানুষই ভাবতো। বিয়েটা হয়তো সত্যিই একটা কন্ট্রাক্ট। আর সেই কন্ট্রাক্টের মধ্যে নিহীত থাকে অনেক দায়িত্ব, অনেক কর্ম পরিধি।
রাহেলার এমন জীবনভিত্তিক কথায় আমিও খুব অবাক হলাম। রাহেলা কি সুন্দর করে তাঁর জীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা এক নিমিষে বলে গেলো। অনেক পড়াশুনা হয়তো রাহেল করে নাই কিন্তু ওর কথাবার্তা যেনো আমার অন্তরে তীরের মতো বিধে গেলো। আমি রাহেলার কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম।
রাহেলা বলতে থাকলো-
সেদিন সম্ভবত গুড়িগুড়ি বৃষ্টির দিন ছিলো। আমার স্বামী আমারে বল্লো, চলো, নারায়নগঞ্জ আমার এক বন্ধুর বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি। আমার স্বামী আমাকে ভালোবাসে কিনা তা আমি কখনো বুঝি নাই। বিয়ের পর থেকে যে শ্বশুর বাড়িতে ঢূকেছি, সারাক্ষন স্বামী, সংসার, ছেলে মেয়ে ননদ ননদীনির দায়িত্ব পালন করতে করতেই আমার দিন পার হতো। আর এসব দায়িত্ব পালনে কোথাও কোনো ত্রুটি হলেই আমার উপরে চলতো খড়গের মতো আচরন। আমার স্বামী নেশা করতো। বিয়ের আগে নেশা করতো কিনা জানি না, কিন্তু বিয়ের কদিন পরেই বুঝলাম, সে প্রায় রাতেই নেশা করে ঘরে ফিরে। কি তাঁর দুঃখ, কি তাঁর কষ্ট কখনো সেটা আমি বুঝতে পারি নাই। ফলে, সুযোগ আর কোনো ব্যত্যয় কিংবা তাঁর নেশার জগতে একটু ভাটা পড়লেই কারনে অকারনে আমাকে মারধোর করতো। সেই মারধোরের কারনেই আমি আমার কান হারাই। মার খেতে খেতে কানটা একদিন অকেজোই হয়ে গেলো। গরীব বাবা মা, পয়সাকড়ি নাই, যৌতুক যা দেয়ার সেটা দেয়ার পরেও জামাইয়ের মন ভরে নাই। দিনের পর দিন এই অতিরিক্ত যৌতুক আর টাকার জন্য আমাকে মার খেতে হয়েছে। ঘরে ভালোমতো বাজার হয় না, অথচ কেনো ভালোমতো রান্না হয় না সেটা যেনো আমার অপরাধ। সহ্য করে থেকেছি। মুখ বন্ধ করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিলো না। গরীব পিতামাতার সন্তানেরা নাকি “আগুনে পানি দিয়ে” সংসার করে। আমিও তাই করার চেষ্টা করেছি। যাই হোক, যখন আমার জামাই আমাকে বল্লো, চলো এক বন্ধুর বাসায় বেড়াইয়া আসি, ভাবলাম, হয়তো মনটা তাঁর পরিবর্তন হয়েছে। আমারো মনটা ভালো হয়ে গেলো। আনন্দিতই হয়েছিলাম। কারন যে কখনো আমাকে পাশের দোকানে নিয়ে একটা চকলেটও কিনে খাওয়ায় নাই। আজ তার এহেনো অনুরোধে বেশ পুলকিত বোধ করছিলাম। বললাম, চলেন যাই।
আমি আর আমার স্বামী বিকাল ৫টার পরে কাপড় চোপড় পড়ে নারায়নগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেলাম। আমাদের বাড়ি থেকে নারায়নগঞ্জ খুব বেশী দূরে না। ফলে সন্ধ্যার আগেই আমরা ওর বন্ধুর বাসায় চলে এলাম। রাতের খাবার খেয়ে হয়তো আমরা আবার আমাদের বাড়িতে ফিরে আসবো এটাই ছিলো আমার জানা। আমি আমার ছোট ছেলেকে সাথে নিতে চাইলাম। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে নিতে বারন করলেন। ভাবলাম, ভালোই হবে, আমরা নীরিবিলি দুজনে একসাথে রিক্সায় ঘুরতে পারবো। পাশাপাশি বসে গল্প করতে পারবো। সময়টা ভালোই কাটবে। আমরা যখন তাঁর বন্ধুর বাড়িতে পৌঁছলাম, তখন সন্ধ্যার একটু আগে। তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে দেখি, বন্ধুর স্ত্রী বাসায় নাই। শুনলাম ছোট বাচ্চাকে নিয়ে নাকি সন্ধ্যার পর আসবে, হয়তো কোথাও কাজে গেছে। চা খেলাম, সাথে কিছু ফলমুলাদি। খারাপ লাগছিলো না। সন্ধার পর হটাত করে আমার স্বামী বাজার থেকে কি জানি আনতে বাইরে যাওয়ার কথা বলে আমাকে একা রেখে চলে গেলেন। একটু ভয় ভয় করছিলো কিন্তু খারাপ কিছু মাথায় আসে নাই। সময় যাচ্ছে, আবারো সময় যাচ্ছে, ঘন্টা, তারপর আরো এক ঘন্টা, কিন্তু আমার স্বামীর ফিরে আসার কোনো লক্ষন দেখলাম না। এদিকে রাত বেশী হয়ে যাচ্ছে, আমি বারবার ওর বন্ধুকে আমার স্বামীর কথা বল্লেও দেখলাম সে খুব একটা কথা আমলে নিচ্ছে না। আমি আমার স্বামীর এই বন্ধুকে আগে থেকে চিনতামও না। রাত প্রায় ১১টার উপরে বেজে গেলো, আমার স্বামীর ফিরে আসার কোনো নামগন্ধও নাই। এবার আমার খুব ভয় করছিলো। জীবনে কোনোদিন শহরেও আসি নাই। আর এখন পুরু একটা অপরিচিত লোকের বাসায় আমি একা। বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চা রেখে এসছি। ওদের জন্য ভীষন দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো।
আমি চারিদিকে কান খারা করে সবকিছু খেয়াল করছিলাম। আমার খুব ভয় লাগছিলো। একটু পরে আমি খেয়াল করলাম, এই বাড়িতে কিছু অপরিচিত লোকের আনাগোনা যেনো বেড়ে গেছে। কেউ কেউ বাইরে ফিসফিস করে যেনো কি কি কথাও বলছে। কেউ কেউ আবার আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেও। বুঝতে পারলাম, তারা হয়তো আমাকে নিয়ে কোনো আলাপ করছে কিন্তু কি আলাপ করছে বুঝতে পারছিলাম না। তখন রাত প্রায় বারোটা বেজে যাচ্ছিলো।
এক সময় ৩০/৩৫ বছর বয়সের একজন পুরুষ আমার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো- কি নাম তোমার? আসো ওই ঘরে যাই। এই বলে পাশে একটা ঘরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো।
আমি জিজ্ঞেস করলাম- কে আপনি ভাই? আর আমি ওই ঘরেই বা কেনো যাবো? আমার স্বামী কই? সে এখনো আসছে না কেনো? আমার বাড়ি যাওয়া দরকার। আমার বাচ্চারা একা বাসায়। ওরা হয়তো আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমার কথা শুনে লোকটি পিছনে ফিরে এসে আমাকে সে যা বল্লো, সেটা শুনে তো আমার মাথা খারাপ। আমাকে নাকি আমার স্বামী এখানে দেহ ব্যবসার জন্য বিক্রি করে টাকা নিয়ে চলে গেছে। সে আর ফিরবে না। রাতটা এমনিতেই অন্ধকার ছিলো, লোকটার কথা শুনে এবার যেনো মহাঅন্ধকারের মধ্যে আমাকে আমি মৃত লাশের মতো শ্মশানের মধ্যে দেখতে পেলাম যেখানে আমাকে কিছু জীবন্ত শিয়াল কুকুর তাড়া করছে, অথচ আমার কোনো শক্তি নাই।
আমি চিৎকার করতে লাগলাম, আর বলতে লাগলাম, এটা কি করে সম্ভব? তোমরা আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনো। আমি ওরকম মেয়ে নই যে, তোমরা আমার সাথে এমন আচরন করতে পারো। আমি ভয়ে আরো গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে গেলে আমাকে কয়েকজন এসে এমনভাবে জাপটে ধরলো যে, না আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিলো, না আমি কোনোদিকে নড়াচড়া করতে পারছিলাম। কিন্তু আমার চোখ তো আর কোনো কিছুতে বাধা পড়েছিলো না। আমার বাচ্চাদের কথা মনে পড়লো, আমার ছোট ছেলেটা খুব মগা (বোকা), তার কথাই বেশী মনে পড়লো। তার মাত্র ৮ বছর বয়স। সে আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে চায় না। ওকে একা ফেলে এসেছি। ছেলেটা মগা হলেও কখনো আমার হাতছাড়া করতো না। ওর মুখটা ভেসে উঠতেই আমার দুচোখ ঝাপ্সা হয়ে আসছিলো। আহা রে বাপ, দেখে যা তোর মা কত অসহায় একটা পরিস্থিতিতে ছটফট করছে। তোর অমানুষ বাবা আমাকে কোথায় ফেলে গেলোরে বাবা।
রেহালা কিছুক্ষন চোখ বুজে থাকল, তার দুচোখের পাশ দিয়ে জলের একটা রেখা যেনো অবিরত জল পড়তেই থাকলো। একটু পর আবার রেহালা বলতে থাকল-
জানো কাকা, কোনো কোনো সময় কিছু কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাতে সাধারনের চোখে মনে হবে এটাই সব সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। শুধু ভরসার স্থান তৈরির জন্যই নাটক তৈরী করা হয়। আমার স্বামীও আমার সাথে ঠিক এমনই একটা ভরষার স্থান তৈরী করেছিলো। আর সেটা ছিলো নিছক একটা নাটক যা আমি কিছুতেই বুঝতে পারিনি। আমি কি এটাই চেয়েছিলাম? আজ দুপুরে যখন সে আমাকে বেড়াতে নিয়ে আসবে বলে জানালো, আমি তো আমার সমস্ত বিশ্বাস নিয়েই তাঁর সাথে অজানা এক বন্ধুর বাড়িতে রওয়ানা হয়েছিলাম। বিকালটা কত সুন্দর ছিলো। চারিদিকের গাছপালা, আশ পাশের দোকানী, মানুষগুলিকে দেখে তো আমার মন অনেক পুলকিতই ছিলো। তাহলে এই হটাত কি গজব আমার উপর আছড়ে পড়লো? আমি কি কখনো আমার স্বামীকে একটিবারের জন্যেও ভালোবাসিনি? কখনো কি আমি ওর বেদনায় কাতর হই নাই? কখনোই কি ও আমাকে স্নেহ কিংবা ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে নাই? আমি তো আমার জীবনের সবকিছু দিয়ে ওকে ভরষা করেই বাপ মায়ের বাড়ি ছেড়েছিলাম। তাহলে সে এমন নিষ্ঠুর কাজটি কেন আর কিভাবে করতে পারলো? আমি কি ওর বাচ্চার মা নই? আমাকে সে না ভালোবাসুক, ওর বাচ্চাগুলির জন্যেও কি সে আমাকে ছেড়ে দিতে পারতো না? মুখবাধা ঠোট দিয়ে সমস্ত বেদনাগুলি যেনো শুধু গোংগানীর মতোই মনে হচ্ছিলো আমার কাছে। অথচ এই গোংগানির মধ্যে কত যে অস্থিরতা, কত যে আক্ষেপ, কত যে ভালোবাসা আর কষ্ট লুকিয়ে ছিলো তা যেনো আমাকে ঝাপ্টে ধরে রাখা মানুষগুলির কানেই গেলো না।
আমার আল্লাহর কাছে আমি চোখ বন্ধ করে শুধু একটা কথাই প্রার্থনা করলাম, যদি আমি সতীনারী হয়ে থাকি, যদি আমি আমার এক ঈশ্বরকে কখনো কায়মনে ডেকে থাকি, যদি তিনিই হয়ে থাকেন আমার একমাত্র ত্রানকর্তা, যদি আমার প্রভুই হয়ে থাকে সমস্ত বিপদের উদ্ধারকারী, তাহলে আমি আমার সেই একচ্ছত্র প্রভুর কাছে দয়া ভিক্ষা করছি তিনি যেনো আমাকে তাঁর গায়েবী ক্ষমতা দিয়ে এই নরক থেকে বাচিয়ে দেন। হে ঈশ্বর, আমি তোমাকে কখনো দেখিনি, কিন্তু আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছি, তোমার দরবারে আমি প্রতিদিন মাথা নুইয়েছি, তুমি আমাকে বাচিয়ে দাও ঈশ্বর। লোকগুলি ইতিমধ্যে আমার চিৎকার চেচামেচিতে গন্ডোগোল হতে পারে ভেবে, কিংবা আশেপাশের লোকজন কিছু আচ করতে পারে জেনে আমাকে তাদের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত করে দিয়েছিলো। আমার চোখ বন্ধ ছিলো, আর আমি গোল হয়ে মাটিতে নিথর দেহে বসেছিলাম। আর আমার চোখ থেকে অনবরত অশ্রু ঝরছিলো।
তারপর কি হয়েছিলো আমি জানি না। কিন্তু ঐ ৩০/৩৫ বছর বয়সের যুবকটি আমাকে ডেকে বল্লো- এদিকে আসো আমার সাথে। কিন্তু কোনো কথা বলবে না। আমি যা বল্বো, সেটাই করবে। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি একটা পিশাচের পাল্লায় পড়েছো। সে জানতে চাইলো, আমার সাথে কোনো টাকা পয়সা আছে কিনা। আমি লোকটির চোখের দিকে তাকিয়েছিলাম, এটাও ভাবছিলাম, সে আমার সাথে এবার অন্য কোনো চাল চালছিলো কিনা। কাউকে বিশ্বাস করা কিন্তু ভুল নয়। তবে চোখ বন্ধ করে কাউকে বিশ্বাস করা একেবারেই ভুল। তাই আমাদের এটা জানা খুব দরকার যে, সামনের মানুষটাকে বিশ্বাস করবো নাকি করবো না।
তাঁর আচার ব্যবহারে আমার কাছে সে রকম মনে হলো না। মনে হলো আসলেই বুঝি তাঁর মাধ্যমে আমার ঈশ্বর আমাকে সাহাজ্য পাঠিয়েছেন। বললাম, আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই। সে আমার কানে কানে চুপিসারে শুধু একটা কথাই বল্লো- আসো, আমি তোমাকে এখান থেকে দ্রুত বের করে দেবো। আমি জানি তুমি খারাপ মেয়ে নও। আমিও তোমার কাছে কোনো শরীরের চাহিদায় আসি নাই। আমি এখানকার একজন এজেন্ট মাত্র। আমাকে আর এর বেশী কিছু জিজ্ঞেস করোনা। আর জিজ্ঞেস করলেও আমি সব কিছুই মিথ্যে বল্বো।
রাহেলা এবার একটু থামলো। সামনে রাখা গ্লাস থেকে সে আরো একবার এক ঢোক পানি পান করলো। রাহেলার চোখে মুখে যেনো এখনো সেই অতীতের ভয়টা স্পষ্ট ফুটে উঠছিলো। মাঝে মাঝে সে শিহরিত হয়ে উঠছিলো। বুঝতে পারছিলাম, রাহেলার সেই ভয়টা এখন আবার যেনো নতুন করে তাঁর সামনে জেগে উঠেছে। রাহেলা তাঁর বোরখার একটা আচল দিয়ে মুখটা মুছে নিলো। দেখলাম, রাহেলা একটু একটু ঘেমে গিয়েছে। আমি আমার রুমের এসিটা অন করে দিয়ে বললাম, তারপর?
কাকা, কিভাবে কি হয়ে গেলো আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। লোকটি আমাকে একশত টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বল্লো, শীঘ্রই এখান থেকে এই দরজা দিয়ে বের হয়ে যাও। আমি পাহারায় আছি। এই গোপন দরজাটা দিয়ে আমরা বিপদের সময় পালিয়ে যাই। এটাকে আমরা কোডে বলি- (রেহালা নামটা মনে করতে পারলো না।)
এতো অন্ধকার রাত, তারপর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি, অনিশ্চিত একটা পলায়নে আমি কোথায় যাচ্ছি সেটাও আমি জানি না। এটা কি গরম তেল থেকে লাফিয়ে উনুনে নাকি হাজার ফুট উঁচু পাহাড় থেকে বাচার তাগিদে নীচে পতন আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তারপরেও আমি সেই দরজা দিয়ে বের হয়েই পাগলের মতো ছুটছিলাম। কোথায় ছুটছিলাম, কোনদিকে ছুটছিলাম আমি নিজেও জানি না। অনেক রাত, রাস্তায় বেশী লোক ছিলো না। আধো আলয় ভরা শহরের রাস্তার কিছু লাইট পোষ্ট এমন করে রাস্তাকে আলকিত করেছিলো যেনো সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে কন এক ভুতুরে পল্লির মতো দেখাচ্ছে। এম্নিতেই মনে আকুন্ঠ ভয়, তারমধ্যে অজানা এক দুসচিন্তা, তার উপরে রাতের এতো ভয়ংকর রুপ। কিছু লোকজন এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা যাচ্ছিলো বটে কিন্তু যারাই ছিলো তারা আমার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিলো, হয়তো ওরা ভাবছিলো, এতো রাতে আমি দৌড়াচ্ছি কেনো, বা আমি কি পাগল কিনা, অথবা রাতের কোনো চোর কিনা ইত্যাদি। কে কি ভাবলো, আর কে কিভাবে আমার দিকে তাকালো সে ব্যাপারে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ ছিলো না। আমি শুধু দৌড়াচ্ছিলাম আর দৌড়াচ্ছিলাম। অবশেষে আমি একটা পানবিড়ির দোকানে এসে থামলাম। কয়েকটা উঠতি বয়সের ছেলে ওখানে চা খাচ্ছিলো।
আমি হাপাতে হাপাতে বললাম-
বাবারে আমি খুব বিপদে আছি। আমার স্বামী আমাকে বেড়ানোর নাম করে নিয়ে এসে আমাকে খারাপ জায়গায় বিক্রি করে দিতে এসছিলো। আমি পালিয়ে এসছি। আমার বাড়ি, নগরঘাট (নামটা ছদ্দনাম)। আমি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, এই জায়গাটা আমি চিনিও না, আর এখান থেকে আমি আমার গ্রামের বাড়ি কিভাবে যাবো, তাও আমার জানা নাই। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা হয়তো এখন আমার জন্য কান্নাকাটি করছে। তোমরা আমাকে একটু সাহাজ্য করো বাবারা। আমি ওদের এটাও বললাম, আমার কাছে একশত টাকা আছে। আমাকে সাহাজ্য করো তোমরা।
জানো কাকা, আসলে এই দুনিয়ায় নরপিশাচ যেমন আছে, তেমনি ভালো মানুষও আছে। সেদিন আমি বুঝেছিলাম, মানুষ কি আর নরপিশাচ কি। ছেলেগুলি আমার কথা শুনে খুব উত্তেজিত হয়ে গিয়ে বল্লো- কে সে, কই সে। চলেন আমরা ওকে এখন ধরবো। আমি বললাম, কিছুই দরকার নাই বাবারা। তোমরা শুধু আমাকে আমার বাচ্চাদের কাছে দিয়ে চলো। আমি তোমাদের মায়ের মতো, আমি আজিবন তোমাদের জন্য আমার সেই পরম ঈশ্বরের কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে দোয়া করবো। আমাকে তোমরা আমার সন্তানের কাছে নিয়ে চলো বাবারা। বলেই আমি দোকানের সামনে ভেজা মাতিতে বসে পড়েছিলাম। আমার পায়ে কন শক্তি ছিলো না, আমার সারা গা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিল, আমার দম প্রায় বন্দ হয়ে এসছিলো। তারপরেও আমার হৃৎপিণ্ড সচল ছিলো, আমার প্রানটা জীবিত ছিলো।
ছেলেগুলি আমাকে টেনে তুলে দোকানের ঝাপের ভিতর নিয়ে গেলো। সব সন্তানের চেহাড়া মনে হয় একই। বিশেষ করে মায়েরদের জন্য। ওরা আমাকে এক কাপ গরম চা দিল, মাথা মুছার জন্য কয়েকটা পুরান পেপার দিলো। আমি যেনো একটু স্থির হচ্ছিলাম। ছেলেগুলির মধ্যে দুইজনের দুইটা হুন্ডা (বাইক) ছিলো। চা খাওয়ার পর, ওরা একটা হুন্ডায় আমাকে আর আরেকটা হুন্ডায় ওরা তিনজন উঠে আমার বাসার অতি নিকটে ছেড়ে গেলো। যেখানে ওরা আমাকে ছেড়ে গেলো, সেই জায়গাটা আমি চিনতাম। সেখান থেকে আমি অনায়াসেই আমার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি যখন আমার বাড়িতে আসি, তখন রাত বাজে প্রায় আড়াইটা। সব বাচ্চারা ঘুমিয়ে গেছে শুধু আমার মগা ছেলেটা বারান্দায় বসে আছে। মশার কামড়ে সে জর্জরীত কিন্তু আমাকে না পেয়ে কখন আমি ফিরবো তারজন্যে একাই বাইরের বারান্দায় বসে আছে। বৃষ্টি হচ্ছিলো, ফোটা ফোটা বৃষ্টিতে ছেলেটার সারা শরীরই প্রায় ভেজা। আমি ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাদলাম। আমার ছেলেটা আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে লাগলো যে, আশেপাশের মানুষগুলি যারা ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো তারাও সজাগ পেয়ে ছুটে এলো। আমি শুধু কাদছি, কিন্তু কেনো কাদছি, কিসের কষ্টে কাদছি, সেটা আর কাউকেই বলতে পারি নাই। কান্নার আহাজারীতে সুর থাকে না, থাকে বেদনা আর কষ্ট যে কষ্টের কোনো নাম নাই, যে কষ্টের রুপ কাউকে দেখানো যায় না। আমি শুধু কেদেই যাচ্ছিলাম। কষ্টটা ছিলো আমার মনের অনেক গভীরে।
অনেকেই অনেক প্রশ্ন করছিলো, এতো রাতে আমি কোথা থেকে এলাম, কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তরও আমার দিতে ইচ্ছে করছিলো না। আমার স্বামী কই, কিংবা সেতো আমার সাথেই সন্ধ্যার দিকে বেরিয়েছিলো, তার হদিস অনেকেই জানতে চাইলেও আমার কোনো কিছুই বলার মতো অবকাশ তো ছিলোই না বলতেও ইচ্ছে করছিলো না। শুধু আমি আমার সেই এক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহকে আকাশের দিকে হাত তুলে বললাম- মহান তুমি, তুমি আছো সর্বদা সবার সাথে, দূর্বলের সাথে, অসহায়ের সাথে। আর তুমি সত্যিই সব পারো মাবুদ। কে বলে ঈশ্বর নাই? যে বলে ঈশ্বর নাই, সে বোকা, আর যিনি ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন সে জানে ঈশ্বর কোথায় কিভাবে তার হাত প্রসারিত করে। ঈশ্বর বসবাস করেন সর্বত্র। শ্মশানে, আকাশে, পাহাড়ে, জলে অন্তরীক্ষে, আর থাকেন মনের একেবারে অন্তস্থলে। কান্নায় আমার শুধু বুক ভেসে যাচ্ছিলো।
রাহেলার এমন একটা অতীত জীবনের ইতিহাস শুনে আমি হচকচিয়ে উঠেছিলাম। মহিলাদেরকে আমরা দেবীর সমান তুলনা করে থাকি। কখনো কখনো আমরা তাদেরকে মায়ের আসনে বসিয়ে পুজার বেদী রচনা করে থাকি। কিন্তু আফসোস যে, এটা শুধু মন্দির আর পুজার ঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। মহিলাদের সাথে লাগাতার অন্যায় আর অপরাধ ঘটে যাওয়া এটাই প্রমান করে যে, আমাদের সমাজে আমরা যে মহিলাদেরকে দেবী বলি তারা এমন অনেক দানব দ্বারা ঘিরে রয়েছে যারা তাদের জীবনকে নরক করে তুলেছে। প্রকাশ্যে কোনো মহিলাকে পুড়িয়ে মারা হয়, নির্যাতন করা হয়, ধর্ষন করা হয় অথচ কেউ এগিয়ে আসে না। এই সমাজে কেনো মানুষের রক্ত ততক্ষন পর্যন্ত গরম হয় না যতক্ষন না অবধি কোনো সমস্যা তাদের ঘরের ভিতরে চলে না আসে। হিন্দু শাস্ত্রে নাকি একটা কথা আছে-ইয়ত্রা নারায়স্ত পুজায়ান্তে রামাতে তাপ্তা দেবতা অর্থাৎ যেখানে নারির পুজো হয়, সেখানে দেবতা বসবাস করে। এটা আসলে শুধু কথার কথা সত্যিটা অন্যকিছু। কোথাও কখনো কোনো নারীর পুজা হয়নি। না হিন্দু শাস্ত্রে, না আমাদের ধর্মে, না অন্য কোথাও।
রেহালা আবারো বলা শুরু করল-
কাকা-সেই সারারাতে আমি একটুও ঘুমাতে পারি নাই ভয়ে। আমার শরীর ভেংগে গিয়েছিলো, অনেক জ্বর এসছিলো, মাথা ব্যথায় আমার মনে হচ্ছিলো মাথাটাই যেনো আমার সাথে নাই। আমার সেই মগা ছেলেটা সারারাত আমার মাথায় পানি ঢেলে আমার মাথা বুলিয়ে দিচ্ছিলো আর খালী একটা কথাই বলে যাচ্ছিলো-মা আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না। তোমাকে ছাড়া আমি ভয় পাই। যতোবার সে আমাকে এই কথাগুলি বলছে, ততোবারই যেনো আমার ভিতরে কে যেনো এক কঠিন হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে আর বলছে- এই স্বাধীনতার মুল্য কি যেখানে খাচায় বন্দি আমি? এই জীবনের কি অর্থ আছে যেখানে আমি কলা, মুলা আর পন্যের মতো অন্যের ইচ্ছায় বিক্রি হয়ে যাই? এই দাম্পত্য জীবনের কি মাহাত্য যেখানে প্রতিদিন আমাকে শুধু অন্যের মন জোগানর জন্য নিজেকে সপে দিতে হয় পিশাচের কাছে? আমার ভিতরে তখন যেনো রাগ, ঘেন্না আর প্রতিশোধের ইচ্ছাতা বেরিয়ে আসছিলো। আমি হিংস্র হয়ে উঠছিলাম।
রাহেলার এই কথাগুলির সাথে আমি একমত ছিলাম। সত্যি তো। গরীব হওয়া পাপ নয়, উচু সপ্ন দেখাও পাপ নয়, বড় হবার চেষ্টা করাও অপরাধ নয়, কিন্তু অন্য কারো জীবনকে এরুপ নষ্টের দিকে ঠেলে দিয়ে কিংবা অন্যের কোনো আত্মসম্ভরনকে বিকিয়ে দিয়ে কিংবা অন্যের জিনিষকে অন্যায়ভাবে নিজের সার্থের জন্য টাকা রোজগার করা চেষ্টা করা একটা অপরাধ। এই অপরাধের একটা খেসারত আছে। কেউ সাথে সাথে পায়, আর কেউ একটু দেরীতে। কিন্তু প্রাপ্যটা আসেই। লাইফটা কোনো ষ্টক মার্কেটের কোনো শেয়ার নয় যে প্রতিদিন এটার দাম উঠানামা করবে। এটা আসলে সেটা যা একবার উঠে গেলে আর পড়ে না, আবার পড়ে গেলে আর উঠে না।
রাহেলা বলতে থাকে তাঁর সেই রাতের বাকী কথাগুলি।
সকালে আমি উঠানে গেলাম, বসে রইলাম কখন আমার সেই নরপিশাচ স্বামী বাড়িতে আসে। সে হয়তো ইতিমধ্যে জেনে গেছে-আমি আর ঐ নারায়নগঞ্জে নাই। পালিয়েছি। কিছুই খেতে পারলাম না সারাদিন। আর খাওয়ার কিছু ছিলোও না। বমি বমি আসছিলো। দুপুরের দিকে একটু শুয়ে ছিলাম। কিন্তু ঘুমিয়ে ছিলাম না। সেই দুপুরের দিকে আমি ওর পায়ের আওয়াজের সাথে মুখের আওয়াজও শুনলাম। সে ঘরে ঢোকেই চোখ লাল লাল করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করলো আর আমাকে মেরেই ফেলবে এমন হুংকার দিতে থাকলো। বড় বড় বিস্ফোরণের আগে ছোট ছোট ফুলকীর দিকে নজর দিতে নেই। তাতে বড় বিস্ফোরণের জন্য ব্যাঘাত হয়। আমি একটা শব্দও করলাম না, কোনো উত্তরও করলাম না। কোনো এক শক্তিশালী ঝড়ের আগে যেমন আকাশ থম্থমে হয়ে যায়, গাছপালারা স্থির ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, একটা পাতাও নড়ে না, খালী মাঝে মাঝে গুরুম গুরুম কিছু শুষ্ক ঠাটা পরার মতো আওয়াজ ভেসে আসে কোনো এক দূরবর্তী আকাশ থেকে, ঠিক এমন একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো আমার ঘরে সাথে মনের ভিতরেও। আমি শুধু অপেক্ষা করছিলাম এমন একটা সুযোগের জন্য যাতে আমি আমার বাড়ির পুতাটা দিয়ে ওর মাথায় একটা আঘাত করতে পারি। ওর উপর আমার কোনো প্রকার ভালোবাসা নাই, শ্রদ্ধাবোধ নাই। আমি ওকে যেনো আর চিনি না। কোনো এক সময় যে আমি অর বুকে শুয়েছিলাম সেটাও আমার মনে পড়ল না। সে যে আমার সন্তানের বাবা সেটাও আমার কাছে কোনো অর্থ বহন করে নাই। বারবার মনে হয়েছিলো, এদের বেচে থাকার কোনো মানে হয়না। এরা সর্বদা মানুষের শান্তির জন্য হুমকী, সমাজের জন্য হুমকী। পুতাটা আমি রেডিই করেই রেখেছিলাম আগে।
আমার সেই সুযোগটা এক সময় এলো। আমি একটু সময়ও নষ্ট করিনি। একটা আঘাতই আমি ওর মাথায় করেছিলাম। ও অজ্ঞান হয়ে গেলো। একবার ভাবলাম, ওর গলাটা কেটে দেই, আবার ভাবলাম, না, ওকে এমনভাবে মারবো যাতে সারাজীবন আর সোজা হয়ে দাড়াতে না পারে। আমি ইচ্ছে মতো ওর হাটু আর কোমড়ে পুতা দিয়ে আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ওকে থেতলা করে দিয়েছিলাম। আমার কোনো দুঃখ হয় নাই।
আমি রাহেলাকে জিজ্ঞেস করলাম, ও কি মরে গিয়েছিলো?
না কাকা- এই পিচাশটাকে আমি প্রানে একেবারে মেরে ফেলতে চাইনি, আর ও মরেও নাই। কিন্তু ও বেচে গিয়েও আর বেচে থাকবে না এটা আমার বিশ্বাস। তার কয়েকদিন পর আমি ওকে তালাক দিয়ে ওখানেই ছেলেদের সাথে রয়ে গেলাম। কিন্তু বাপের বাড়ি ফিরি নাই। সে এখন পংগু। এটাই ওর বিচার। কিসের সমাজ, কিসের আদালত, কিসের হিউমেনিটি? আমার কোনো আফসোস নাই। একা জীবন অনেক ভালো এসব নরপিশাচের সাথে থাকার চেয়ে। ওকে এভাবে মারার কারনে কেউ আমাকে বাধা দেয় নাই। কারন সবাই জানতো ওর ব্যবহার, আর ওর চরিত্র। তার উপরে যখন সবাই জেনেই গিয়েছিলো গতকাল রাতে সে আমার সাথে কি করেছিলো, ফলে কেউ আমাকে একটু বাধাও দেয় নাই, কোনো থানা পুলিশও করে নাই। ওর নিজের ভাইবোনেরাও এগিয়ে আসে নাই। নরপিশাচেরাও অনেক সময় নরপিশাচের জন্য অনুভুতি প্রকাশ করে না। সে একটা নর পিশাচের থেকেও অধম। একটা কথা বলি কাকা- যে যেমন কর্ম করবে, সে তেমন ফল পাবে এটাই আসল কথা। যে বীজ তুমি আজ বুনবে, সেই বীজের ফল তোমাকেই খেতে হবে। আর সেটা যদি কোনো অপরাধের বীজ হয়, তাহলে তা ধীরে ধীরে যে গাছে রুপান্তরীত হয়, তার নাম “প্রতিশোধ”। আর প্রতিশোধের গাছের কোনো না হয় আকার, না হয় ছায়া। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়ে যায় তখন তার পরিনতি তো এটাই হয়। আর ওর সেটাই হয়েছে।
আমি স্বাধীন হয়ে গেলাম। আমার আর কোনো পিছুটান রইলো না। আমার পরিবার ভেংগে গেলো। যখন কোনো পরিবার ভাংগে, তার সাথে ভাংগে সবকিছু যা পরিবারকে বেধে রাখে, আর সেগুলি হচ্ছে বিশ্বাস, আদর, আবেগ, মায়া, ভালোবাসা এবং সবকিছু। একটা পরিবার তৈরী করতে অনেক বছর লেগে যায়, পরিবার আমাদের বেচে থাকার কারন হয়ে দাঁড়ায়, যখন ভাংতে শুরু করে পরিবার তখন সেই পরিবারকে আমরা সবচেয়ে বড় শত্রু বলে মনে করতে থাকি। যে পরিবারের আনন্দ আমাদের বাচার রশদ হয়ে উঠে, রাগ এবং প্রতারনার যন্ত্রনা সেই পরিবারকে আঘাত দিতেই বাধ্য করে তোলে। মানুষ যখন আপনজনকেই ঘৃণা করতে থাকে। আমার সেই স্বামীর বাড়ির প্রতিটি মানুষকে আর কখনো আপন মনে করতে পারিনি। শুধু আমার সন্তানদের ছাড়া।
অপমান আর অবসাদে অবনত হয়ে একদিন আমি আমার স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করে বাপের বাড়িতে এসে পড়ি। আমার বাবা মা বিয়ের আগে যে পরিমান কাছের ছিলো, স্বামীর বাড়ি থেকে চলে আসার পর তাদেরকে আর আমি ততোটা কাছে পেয়েছি বলে মনে হলো না। আমি তাদেরকেও এ ব্যাপারে খুব একটা দোষারুপ করি না। তারাও দরিদ্র, আমিও। আমরা হয়তো একই বৃন্তে ঝুলে ছিলাম। সময়ের স্রোত ধরে এক সময় বুঝতে পারলাম, আমাকে একাই চলতে হবে। এখন একাই থাকি, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, নামাজ পড়ি, কোরআন পড়ি, তসবিহ গুনি আর ভাবি, জীবন বড় রহস্যময়। হয়তো আমি আজ থাকতাম এমন এক জীবনে বন্ধী যেখানে মানুষ আর মানুষ থাকে না।
ঠিক ওই সময়ে কাকা আপনি গ্রামে গিয়েছিলেন শুনেছিলাম। একবার ভেবেছিলাম, আপনার সাথে একবার দেখা করি, আবার ভাবলাম, আপনি কি না কি ভাবেন কে জানে। লজ্জা এমন এক জিনিষ, যাকে না লুকানো যায়, না কাউকে বুঝানো যায়। ভিতরটা কেউ দেখে না যদিও সত্যিটা ভিতরেই থাকে। একটা কথা আছে না কাকা- আয়নায় চেহারা দেখা যায় কিন্তু কষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু আমি আমার ভিতরের এই কষ্টটা কাউকেই বুঝাতে পারিনি। না আমার বাবাকে, না আমার মাকে, না আমার আশেপাশের কাউকে। কিন্তু ভাগ্যের হাতে মার খাওয়া কোনো ব্যক্তিত্ত বেশীদিন অসহায় থাকে না। আমি যতটুকুই লেখাপড়া করেছিলাম, সেটা দিয়েই কিছু করার চেষ্টা করছিলাম, বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ানো। কিন্তু খুব একটা এগুতে পারিনি। পরে একটা সেলাই মেশিন নিয়ে মাঝে মাঝে বাচ্চাদের কিছু কাপড় বানিয়ে নিজের সন্তানের ভরন পোষনের চেষ্টা করেছি। প্রায় এক যুগ পার হয়ে গেছে। আমার মগা ছেলেটা এখনো বিয়ে করে নাই। ভারায় গাড়ী চালায়, যা রোজগার করে তা দিয়াই আমাদের সংসার কোন রকমে চলে যায়।
এতোক্ষন ধরে আমি রেহালার সবগুলি কথা খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। ওর কথার রেশ ধরে আমার সারা শরীর কখনো শিহরিত হয়ে উঠিছিলো, কখনো ভয়ে আবার কখনো রেহালার স্বামীর এহেনো পৈচাশিক কাজের উপর রাগে। সমুদ্রে ভাসমান কোনো নাবিকের কাছে দূরের কোনো তটভুমি যেমন একটা আকর্ষনের বিষয় হয়ে দাড়ায়, রেহালার জীবনে তেমন কোনো কিছুর উপর আকর্ষন আর বাকী আছে বলে আমার মনে হলো না। রেহালা আমার সম্মুক্ষে বসে আমার বিস্তর প্রকান্ড কাচের জানালা দিয়া দূরের নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে বটে কিন্তু ওই নীল শান্ত আকাশের মতো রেহালার অন্তরে তেমন হয়তো শান্তির নীরবতা বিরাজ করছে না। হয়তো ওর মাথা, বুক আর অন্তর একসাথে এমন এক ঘূর্নীঝড়ের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছিল যার আভাষ ওর চোখের নোনাজলেই বুঝা যাচ্ছে। আমি রেহালাকে আর কোন প্রশ্ন করলাম না। কিছুক্ষন পর রেহালা একটু শান্ত হলে আবার বলতে শুরু করলো-
কাকা-এখন অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমার সারা শরীর যেনো রোগের একটা আবাসভুমিতে তৈরী হয়েছে। ডায়াবেটিস, প্রেসার, কানের, চোখের, হার্টে কোনো রোগের যেনো কমতি নাই। মগা ছেলেটা যা কামায়, তাতে হয়তো আমাদের দুজনের খাবার জুটে যায় কিন্তু আমার এই বাড়তি রোগের খরচ, কিংবা পর্বনের কোনো ব্যয়ভার চলে না। রোগটাকে এখন আমার নিত্যসংগী মনে করে কখনো সেই ঈশ্বরের কাছে রোগ মুক্তির দোয়া করি, আর যদি অতিরিক্ত খারাপের দিকে যাই, তখন এই আমার বোনেরা, কিংবা পাড়াপ্রতিবেশীরা হয়তো কিছু দান করে, তাঁর থেকেই কিছু পথ্য কিনে খাই। আগুনের ফুলকী যেমন কীট পতঙ্গকে দূরের আকাশের নক্ষত্র রাজীর লোভ দেখিয়ে আকর্ষন করে, অতঃপর তারা মৃত্যুবরন করে, আমি এখন অদৃশ্য ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করি যেনো মরনের লোভ দেখিয়ে ঈশ্বর আমাকে দ্রুত এই জীবনের যবনীপাত করান। সেই ছোটবেলায় কত স্বপ্ন দেখেছি সংসার হবে, স্বপ্ন দেখেছি স্বামীর বুকে মাথা রেখে কত গান শুনাবো, বাচ্চাদের কলকাকলীতে আমার উঠোন ভরে উঠবে আরো কতকি? অথচ আজ শুধু এইটুকুই মনে হয়, জীবন বড্ড জটিল। এখন শুধু মৃত্যুর ক্ষন ছাড়া আমার যেনো কোনো কিছুর জন্যই আর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নাই। গভীর রাতে একা ঘুমহীন বিছানায় বসে মাঝে মাঝে জীবনের হিসাব মিলাতে চেষ্টা করি, আখাংকা আর কল্পনার রাজ্যে কত মায়াজাল তৈরী করিয়া কত মায়াপুরীর হিসাব করেছিলাম, কিন্তু আজ প্রায়ই মনে হয় যে, আমার জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত, জীবন যৌবন, সুখ দুঃখ, একাল সেকাল সবকিছুই মোমবাতির মতো পুড়িয়া শেষ প্রান্তে এসে হাজির হয়েছে। আমার এই ক্লান্তি, কষ্ট, গ্লানি কিংবা প্রানক্ষয়কর দাহ হয়তো আর বেশিদিন থাকবে না।
আমি রেহালার সাথে আর অনেক কথা বাড়াই না। আমি যাহা বুঝবার সব বুঝে গিয়েছিলাম। শুধু বারবার একটা কথাই ভাবতেছিলাম, আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমি আর রেহালা একসাথে একই স্কুলে পড়াশুনা করেছি। তখন রেহালা যে স্বপ্ন দেখেছিলো, তার ভবিষ্যৎ জীবনের, তার সংসার জীবনের, আজ এতো বছর পর এসে রেহালা দেখতে পেলো তার সেই সপ্নগুলি আসলে সব সপ্নই থেকে গেছে। খুব কষ্ট লাগতেছিলো আমার। আমাদের এই সমাজ, আমাদের নীতি নির্ধারকেরা আজো প্রতিটা মেয়েকে বোঝাই মনে করে। সবাই মনে করে-তাদের লেখাপড়ার দরকার নাই, তাদের প্রেমের কোনো মুল্য নাই, তাদের বাকস্বাধীনতা নাই, তাদের নিজস্ব কোনো পছন্দ অপছন্দও নাই। ওরা জন্মায় শুধু কাউকে নিজের অনিচ্ছায়ই হোক আর সেচ্ছাতেই হোক বিয়ে করা। আর সেই বিয়ে টিকার দায়িত্ব শুধু তাদের। ওরা জামাইয়ের মার খাবে, স্বামীরা ওদেরকে নিজের থালা-কলসীর মতো কিছুদিন ব্যবহার করে আবার অন্য কোথাও বিক্রি করে দিবে। অথবা কোনো দায়িত্ব না নিয়াই অন্য আরেকজনের সাথে ফষ্টিনষ্টি কিংবা ঘর করবে। আর মাঝখানের সময়টায় ওরা বছর বছর বাচ্চার জন্ম দিবে। এটাই যেনো ওদের একমাত্র কাজ। রেহালা আমার সামনে বসে আছে বটে কিন্তু ওর দৃষ্টি আমার জানালার বাইরে অনেক দূরের আকাশে। তার মনে কি চলতেছে আমি জানি না, তবে সেই দূরের আকাশে কোনো নতুন স্বপ্ন যে নাই, সেটা স্পষ্ট বুঝা যায়। সে তার এই জীবনের সুখ কিংবা আদর আর প্রত্যাশা করে না। শুধু সময় গুনছে কবে মৃত্যু তাকে লইয়া যাবে। আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই, আমরা আজীবন বাচতে চাই, কেউ এই দুনিয়া ছেড়ে মৃত্যুর মতো একটা অজানা জীবনে যেতে চায় না। অথচ রেহালার ভাষায়, সে প্রতিদিন নামাজ পড়ে সেই স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করে যেনো মৃত্যু এসে রেহালাকে নিয়ে যায়।
অনেকক্ষন আমার অফিসে একটা নীরবতা চলছিলো। রেহালার জীবনের কাহিনী বলবার পর যেন সে নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল প্রমান করে রেহালা আবারো বলিতে থাকে-
-কাকা, আজ অনেক কষ্টের কথা আপনাকে বলতে পেরে নিজেকে অনেক অনেক হালকা মনে হচ্ছে। আমি জানি না, কেনো আমাদের মতো মানুষের এই পৃথিবীতে জন্ম হয়। মা হিসাবে আমরা যেমন অসফল, স্ত্রী হিসাবেও তেমনি অসফল। এই সমাজ আমাদেরকে না কখনো মুল্যায়ন করে, না নিজের ঘরের পিতা মাতা আমাদেরকে বুকে আগলে ধরে রাখে। আমরা যেনো সমাজের সেই প্রানিগুলির মতো, যারা একবার জন্ম নিয়াছে বলে শুধু মৃত্যু না আসা অবধি দেহত্যাগ করে না আবার নিজেরাও নিজেকে শেষ করতে পারে না কারন আত্তহত্যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন। অথচ দিনের পর দিন, রাতের পর রাত অবহেলায় কচূরীপানার মতো আমরা এককুল হতে আরেককূলে শুধু ভেসেই যাই, না কেউ আমাদেরকে তুতুলে নেয়, না কেউ আশ্রয় দেয়। তারপরেও আমরা বেচে থাকি। এখন সত্যিই আর বাচতে ইচ্ছা করে না। আজ আপনার সাথে দেখা হলো-মনটা বড় ভালো লাগলো। মনেই হয় না এর মধ্যে ৪০ বছর পার করে দিয়েছি। মনে হচ্ছে, এই তো সেদিনের কথা। সেই শীতের দিনে জড়োসড়ো হয়ে গায়ের পথ ধরে হেটে বেড়াইতাম, স্কুলে গিয়া একসাথে কত মজা করতাম, বৃষ্টির দিনে ভিজতাম, আজ মনে হয়-আহা যদি আরো একবার আবার সেই পুরান দিনে ফিরে যেতে পারতাম। আহা যদি এই পিশাচের মতো কেউ আমার জীবনে না আসতো, আহা-যদি এমন কেউ আসতো যে আমার সেই গানগুলি শুনে শুনে পাশে বসে হাততালি দিতো। আসলে জীবন মনে হয় এমনই, আবার কেনো জানি মনে হয়, সব জীবন এমন নয়। তাহলে আমাদের জীবন এমন কেনো?
আমি কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। শুধু রেহালাকে বললাম, পৃথিবীটা এমন নয় যা দেখছিস। এই পৃথিবী অনেক অনেক সুন্দর। হয়তো ভুল সময় ভুল মানুষের পাশে গিয়ে ভুলভাবে দাঁড়িয়ে পড়েছিলি। আর সেই ভুল মানুষটাই তোকে ভুল পথের দিকে তোর নিজের অজান্তে নিয়ে গিয়েছিলো। ভুলে যা সব। বললাম, আজ থেকে বহু বছর আগের আমার গ্রামের একমাত্র মেয়ে খেলার সাথী তুই। তোকে দেখেও আমি অনেক খুশি হয়েছি রেহালা। আসিস যখন মন খারাপ হয়, যখন কোনো রাস্তা না দেখা যায়। আমি তোর কাকাই বলিস আর বন্ধুই বলিস, আসিস। রেহালা তার শাড়ির আচলটা টেনে চোখ দুটি মুছে বের হবার উপক্রম হলো। যাওয়ার সময় হটাতই রেহালা আমার পায়ে সালাম করার জন্য উদ্যত হলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, তুই আমার শুধু বন্ধু না রেহালা, তুই আমার বোনও। আমার কি হলো জানি না, আমার চোখটাও কেনো জানি ঝাপ্সা হয়ে গেলো।
রেহালা তার চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে গেলো। আমি শুধু ওর যাওয়াটা দেখলাম। আর ভাবিলাম,
প্রতিটা মেয়ে মানুষের উচিত নিজের পায়ের উপর দাঁড়ানো। যতোদিন তারা নিজেরা সাবলম্বি না হবে, তারা আজীবন ভুল সময়ে ভুল মানুষের কাছেই হস্তান্তর হতে থাকবে। হয়তো কতিপয় কিছু অধীক ভাগ্যবান মেয়েরা ছাড়া যাদের সংখ্যা অতীব নগন্য। দোয়া করি-রেহালারা ভালো থাকুক। আর দুঃখ হয় সেইসব বাবা মায়ের জন্য যারা নিজের মেয়ে সন্তানকে তাদের ছেলে সন্তানের মতো একই সাড়িতে ভাবেননা। অথচ দুটাই তাদের সন্তান। কে জানে, সেই বাবা মায়েরও কোনো একদিন এমন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হয় যখন এইসব মেয়েদের ছাড়া আর কোথাও যাওয়ার পথ খোলা হয়তো থাকবে না।
আমি রাহেলার জন্য একটা টাকা প্রতিমাসের জন্য বরাদ্ধ করলাম যাতে অন্তত রাহেলা তার ঔষধগুলি কিনে খেতে পারে। রাহেলার জন্য হয়তো এটা একটা অনেক বড় সাহাজ্য হবে। রাহেলা এখন প্রায় প্রতিমাসেই আমার একাউন্ট অফিসারের কাছ হতে সেই টাকাটা নিতে আসে। কখনো ওর সাথে আমার দেখা হয়, কখনো দেখা হয় না। তারপরেও আমি শান্তি পাই যে, রেহালারা এখনো বেচে আছে।
রেহালার স্বামী এখন পুরুই পংগু। কোনো রকমে ভিক্ষা করে জীবন চালায়। তার পাশে এখন আর কোনো রেহালারা নাই, না আছে তার কোনো মগা সন্তান।
১২/০৮/২০২১-মেধাপাচার নাকি মেধাবিদায়?
উচ্ছিষ্ট সময়ের রাজত্ব
আগষ্ট
১২
গতকাল আমার ছোট মেয়েকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম এয়ারপোর্টে। কভিডের কারনে এয়ারপোর্টে ঢোকা প্রায় নিষিদ্ধের মতো কিন্তু মেয়ে একা যাচ্ছে, অনেক দূর, ভয় পাচ্ছিলাম, ফলে যেভাবেই হোক পুরু পরিবারের জন্য প্রায় বেশ অনেকগুলি"পাস" জোগাড় করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি ওইসব বন্ধু আর সহযোগীদেরকে আন্তরীক ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে আর আমার পরিবারকে এয়ারপোর্টে প্রবেশের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন।
এয়ারপোর্টে যাওয়ার পর আমি যে জিনিষটা খুবই খেয়াল করলাম হলো, প্রায় ৮০% পেসেঞ্জারদের বয়স ১৬ থেকে ২২ এর মধ্যে। খুব কম লোক দেখেছি যারা একটু বয়স্ক। আমি কয়েকজন ইয়াং পেসেঞ্জারের সাথে খুব নিরিবিলি কথা বলেছি- তাদের প্রত্যেকেই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, কেউ চাকুরী নিয়ে, কেউ স্কলারশীপ নিয়ে কোনো ইউনিভার্সিটিতে, কেউ আবার ১০০% স্কলারশীপে, কেউ আবার নিজেদের খরচে। তাদের সবার ভাষ্যই যেনো একটা- ভয়ংকর দিন সামনে আমাদের জন্য। এ দেশে কোনো ভবিষ্যৎ নাই। এর থেকে যে কোনো ভিন্ন দেশে অন্তত কিছু একটা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। তাই আগেই চলে যাচ্ছি।
ব্যাপারটা আতংকের। দেশ কি তাহলে মেধাশুন্য হয়ে যাচ্ছে? কারা আমাদের ভবিষ্যৎ তাহলে? যারা এদেরকে পাবে, তারা কি লোড নিচ্ছে নাকি আমরা এদেরকে ছেড়ে দিয়ে লোডমুক্ত হচ্ছি? যারা ওদেরকে সুযোগ দিয়ে এই করোনাকালেও নিয়ে যাচ্ছে, তাদের কি মনে হয় এরা তাদের দেশের জন্য বাড়িতি লোড নিচ্ছে আর আমরা মনে করছি, যাক হাফ ছেড়ে বাচা গেলো!!
আজ টিভির একটা টক শোতে দেখলাম, ৯৬% ছেলেমেয়েরা দেশের ভিতর অনিশ্চয়তার কারনে দেশ ছাড়ছে। আসলেই একটা ভয়ানক ভাববার বিষয়।
১১/০৮/২০২১-রক্তক্ষরন
উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
আগষ্ট
১১
শরীরের কোনো কাটাছেড়া, কোনো বাহ্যিক জখম চোখে দেখা যায়, ক্ষুধা হলে খাবারের অভাবে পেট গুর গুর করে, কিংবা জ্বর সর্দি, কাশি কিংবা মাথা ব্যথা হলে তার সিম্পটম অনায়াসেই বুঝা যায় কিন্তু অন্তরের জখম কি কখনো চোখে পড়ে? অন্তরে কি কখনো জখম হয় আদৌ? আর এই অন্তরটাই বা শরীরের কোন অংগ? এটা কি এমন কোনো জিনিষ যা মাংশ বা হাড় কিংবা এমন কিছু দিয়ে এর গঠন কাঠামো?
সমস্তটা হৃদপিণ্ড তার স্টকে থাকা রক্ত যখন শরীরের সর্বত্র তার নিয়মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় সেটাকে বলে সুস্থ্যতা। কিন্তু সেই একই রক্ত যখন তার নিয়মের বাইরে গিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে সেটাকে হয়তো বলে দূর্ঘটনা। কিন্তু একই ধমনী, একই শিরায় যখন সেই একই রক্ত একই নিয়মে প্রবাহ হয়, তারপরেও মনে হয় কোথায় যেনো একটা ক্ষরন হচ্ছে, তাহলে এটাকে কি বলে? হয়তো সাহিত্যিকরা বলবেন- এটাকে বলে কষ্ট, এটা হয়তো বেদনা কিংবা হয়তো কেউ বলবেন এটা একটা খারাপ অনুভুতি। তাহলে এই রক্তক্ষরন হয় কোথায়? শিরায়? ধমনীতে? শরীরের কোনো অংগে? আর এই ক্ষরণ হলে কি হয়? আসলে রক্তক্ষরনটা হয় অনুভুতির ভিতরে, ওই সেই অন্তরে যার উপস্থিতি আজো কেউ খুজে পায়নি, বা হাত দিয়ে ধরে দেখেনি। একেবারে ভিতরে, অদৃশ্য। অথচ অনুভুতির এই ভিতরটা কেউ দেখে না। বাইরের চোখে যা দেখা যায়, সেটা ভিতরের অবস্থা না। সত্যটা সবসময় থাকে ভিতরে। আর এই সত্যকে মানুষের কোনো অংগ, না তার হাত, না তার পা, না তার শরীর প্রকাশ করে। এই অদেখা রক্তক্ষরনে হাত অবশ হয়ে যায় না, পা নিস্তব্ধ হয়ে উঠেনা বা কান বধির হয় না। শুধু চোখ সেটাকে লুকাতে পারে না বলে অনবরত সেই নোনা জল দিয়েই হয়তো বলতে থাকে, কোথাও কিছু জ্বলছে, কোথাও কিছু পুড়ছে, কোথাও কিছু ক্ষরন হচ্ছে। না ঠান্দা জল, না কোনো বেদনানাশক ঔষধ না কোনো থেরাপি এই ক্ষরনকে থামাতে পারে। কিন্তু যার চোখ নাই, তারও কি এই ক্ষরন হয়? হ্যা, হয়। তারও এই রক্তক্ষরন হয়। হয়তো তার ভাষা একটু ভিন্ন, স্থিরচিত্তে ক্রয়াগত নীরবতা। তাহলে এই রক্তক্ষরনের সময়কালটা কত? বা কখন এর জন্ম আর কখন তার ইতি? বলা বড্ড মুষ্কিল।
যখন কোনো মানুষ কিছুই না বলে সে তার পরিবার থেকে হটাত করে উধাও হয়ে যায়, তখন ব্যাপারটা অনেক দুসচিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়। এটা আরো বেশী করে দুশ্চিন্তায় ভোগায় যখন এটা জানা যায় যে, যে মানুষটি চলে গেছে সে সবদিক থেকে অশান্তিতেই ছিলো। এমন অবস্থায় এমনটাই বারবার মনে প্রশ্ন আসে, যে, জীবনের কাছে হেরে যাওয়া মানুষটি আবার মনের কষ্টে কোনো ভুল পদক্ষেপ না নিয়ে বসে। শুরু হয় রক্ত ক্ষরনের প্রক্রিয়া। এই ক্ষরণ অজানা আতংকের।
আবার যখন কোনো মানুষ সবার সামনে থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে চিরতরে ভিন্ন জগতে চলে যায়, তখন দুসচিন্তার প্রকারটা হয়তো অন্য রকমের কিন্তু তারপরেও রক্তক্ষরন হয়। আর সেই ক্ষরণ কখনো ভরষার অভাবের অনুভুতি কিংবা মাথার উপরে থাকা কোনো বট বৃক্ষের অথবা কখনো এটা হয় নিঃসঙ্গতার।
কিন্তু জেনে শুনে, প্রকাশ্যে সবার সামনে দিয়ে যখন বড় কোনো সাফল্যের উদ্দেশ্যে নিজের অতীব প্রিয়জন জীবন্ত চলে যায়, হাসিখুশির অন্তরালে তখন যেনো চলতে থাকে মেঘ-বৃষ্টির খেলা। চলতে থাকে দোদুল্যমান এক অনুভুতি। হাসিখুশি চোখের পাতায়ও তখন দেখা যায় সেই রক্তক্ষরনের এক বেদনাময় কষ্টের অনুভুতি। এই রক্তক্ষরনের প্রধান কারন হয়তো শুন্যতা। তখন যেদিকে তাকাবেন, দেখবেন, সব কিছু ঠিক আগের মতোই আছে, শুধু নাই সেখানে যে বিচরন করতো সেই মানুষটা। তার ঘরের দিকে তাকালে মনে হয়, ওই তো মানুষতা গতকাল ও ওখানে বসেছিল, ওই যে কাপড় টা বাতাসে ঝুলছে, সেটা এখনো সেখানেই ঝুলছে, অথচ সেই মানুষতা আজ ঠিক ওইখানে নাই। আছে অন্য কোথাও, চোখের দৃষ্টির অনেক বাইরে। আর এই দোদুল্যমান অনুভুতি নিয়েই আমি বিদায় জানাতে এসেছি আমার অতীব আদরের ছোট মেয়েকে আজ। বুঝতে পারছি, কোথায় যেনো পূরছে আমার অন্তর, কোথায় যেনো জ্বলছে আমার অনুভুতির সমস্ত স্নায়ুগুলি।
আমি যুদ্ধ দেখেছি, যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছি, আগুনে পূড়ে যাওয়া নগরী দেখেছি, ঘনকালো নির্জন রাতে কোনো পাহাড়ি রাস্তা ধরে একা একা হেটে পার হয়েছি। ভয় আমাকে কাবু করেনি। অথচ আজকে আমি এই শান্ত সুষ্ঠ পরিবেশে নির্মল আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে যখন আমার ছোট মেয়েকে সুদুর আমেরিকায় যাওয়ার প্রাক্কালে বিদায় জানাচ্ছি, তখন সারাক্ষন রক্তক্ষরনের পাশাপাশি একটা ভয়, একটা আতংক, একটা শুন্যতার অনুভুতিতে ভোগছি। কেনো জানি মনে হয়, আমার ভয় লাগছে। অথচ আমার শরীর সুস্থ্য, আমার ক্ষুধা নাই, তারপরেও কেনো জানি মনে হচ্ছে- কি যেনো আমি ভালো নাই।
আমার মেয়েটা চলে গেলো আজ। বায়না ধরেছিলো-আমেরিকা ছাড়া সে আর কোথাও পড়াশুনা করবে না। সন্তানরা যখন বায়না করে, জেদ ধরে, তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মা বাবা সেটাকে পুর্ন করার জন্য দায়িত্ত পালন করেন। আমিও সেই বায়নাটা হয়তো পুরন করছি আজ। কিন্তু সেই জিদ বা বায়না আদৌ ঠিক কিনা বা বায়নাটা আদৌ যুক্তিযুক্ত কিনা অনেক ক্ষেত্রে আমরা মা বাবা সেটা বিচার করি না। সন্তান কষ্টে থাকুক বা দুঃখ নিয়ে বড় হোক অথবা তার নির্দিষ্ট পথ থেকে হারিয়ে যাক, তাতে মা বাবা এক মুহুর্ত পর্যন্তও শান্তিতে থাকে না। মা বাবা সবসময় তার সন্তানদেরকে সবচেয়ে ভালোটাই দেয়ার স্বপ্ন দেখে। আসলে সন্তান যতো বড়ই হোক আর বৃদ্ধ, মা বাবার ভুমিকা থেকে আজ অবধি কোনো মা বাবা অবসর গ্রহন করেন নাই। কিন্তু তাদেরও কিছু আশা থাকে, স্বপ্ন থাকে এই সন্তানদের কাছে। আমরা বাবা মায়েরা সন্তানদের কাধে শুধু স্কুল ব্যাগ নয়, বরং মা বাবার অনেক আশা ইচ্ছাও ঝুলিয়ে দেই। হয়তো এটাও সেই রকমের একটা বায়না থেকে আমার দায়িত্ব পালনের পর্ব যেখানে একটা সফল, উজ্জ্বল আর সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য আমি অন্তরের রক্তক্ষরনের মতো বেদনাটাও ধারন করছি। আমি জানি, সব সাফল্যের একটা মুল্য থাকে যেটা কাছের মানুষকেই জোগাতে হয়। আর হয়তো এটা সেটাই।
তবে একটা কথা ঠিক যে, আজকের এই অদেখা কষ্টের রক্তক্ষরনের ইতি বা যবনিকা হয় তখন যখন যে মানুষটির জন্য রক্তক্ষরনের জন্ম, সে যখন জীবনের পাহাড় বেয়ে জয় করে সামনে দাঁড়ায়। তখন আজকের দিনের রক্তক্ষরনের সাথে মিশ্রিত হাসিটায় শুধু ভেসে থাকে হাসিটাই। যেমন পানি আর তেলের মিশ্রনে শুধু ভেসে থাকে পানির চেয়ে দামী সেই তেল। তখনো এই চোখ জলে ভিজে উঠে হয়তো কিন্তু তখন চোখ এটা জানান দেয় না, কোথায় যেনো কি পূরছে, কি যেনো জ্বলছে বরং প্রতিটি উচ্ছল হাসিতে ভরে উঠে আনন্দ ধারা।
আমি সেই প্রত্যাশা নিয়েই আজকের এই রক্তক্ষরনের অধ্যায় যাকে আমি যেই নামেই ডাকি না কেনো, বেদনা, শুন্যতা কিংবা আতংক তা শুধু নীরবে মেনে নিয়েই রক্ত ক্ষরনের সেই পোড়া যন্ত্রনাকে বরন করছি। তোমরা সব সময় ঈশ্বরকে মনে রেখো, নীতির পথে থেকে আর মানবতার থেকে বড় কোনো সম্পদ নাই এটা জেনে সর্বদা সেই মানবিক গুনেই যেনো থাকো, এই দোয়া রইলো।
শরতচন্দ্রের সেই বিখ্যাত উক্তিটাই আজ তোমাদেরকে বলি- ভালোবাসা শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলে দেয়। ‘যেতে নাহি দিবো’ মন বল্লেও বাধা দেয়ার কোনো শক্তি তখন থাকে না, না বাধা দিতে কোনো পথ আগলে রাখি, বরং মনের ভিতরের ‘যেতে নাহি দেবো জেনেও যাওয়ার সব পথ খুলে দেই সেই সাফল্যের জন্য, যা আমার চোখের মনির ভিতরে খেলা করে সারাক্ষন।
০৮/০৮/২০২১-সন্ধ্যা ৮ টা ৩২ মিনিট
উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
আগষ্ট
৮
খুব ভালো একটা খবর পেলাম আজ। আমার বন্ধু উইং কমান্ডার মাসুদকে বলেছিলাম, যেভাবেই হোক এয়ারপোর্টের জন্য আমাকে যেনো কয়েকটা ‘পাশ’ এর বন্দোবস্ত করে দেয়। কভিডের কারনে প্যাসেঞ্জার ছাড়া অন্য কোনো দর্শ্নার্থীকে এয়ারপোর্টের ভিতরে প্রবেশ করতেই দেয় না। কনিকার সাথে যাওয়ার জন্যে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ইউএস এম্বেসী সব ধরনের ভিসা (শুধু মাত্র স্টুডেন্ট ভিসা ছাড়া) বন্ধ রেখেছে, ফলে আমরা কনিকার সাথে যেতে পারছি না। এদিকে আবার কভিডের কারনে এয়ারপোর্টের ভিতরেও প্রবেশের সুযোগ নাই। যাক, শেষ পর্যন্ত আজকে আমার দোস্ত মাসুদ আমাকে ফোন করে জানালো যে, এভিয়েশনের সিকিউরিটি ডাইরেক্টর আরেক উইং কমান্ডার আজমকে বলা আছে সে আমাদের জন্য ‘পাশ’ এর ব্যবস্থা করবে। আজমের সাথে কথা বললাম, আজম খুব সমীহ করেই জানালো যে, আগামী ১০ তারিখের রাত ৯ টায় যেনো আমি ওকে ফোন দিয়ে একটা কন্ট্যাক্ট নাম্বার সংগ্রহ করি যে কিনা আমাদেরকে এয়ারপোর্টে প্রবেশের সুযোগ করে দেবে। এই মুহুর্তে এর থেকে আর ভালো খবর আমার কাছে কিছুই নাই। খুব ভালো লাগলো যে, কনিকাকে আমি আর আমার স্ত্রী (উম্মিকাসহ) এয়ারপোর্টে সি-অফ করতে পারবো, ওর লাগেজ পত্রগুলি ঠিকমতো বুকিং করে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারবো। মেয়েটা আমেরিকায় চলে যাচ্ছে ৫ বছরের জন্য, পড়াশুনার খাতিরে। ইউএমবিসি (ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টি) তে যাচ্ছে।
আমার মনে পড়ছে যে, আজ থেকে প্রায় ৩৮ বছর আগেও আমার ভর্তি হয়েছিলো কার্স্কভাইল ইউনিভার্সিটিতে যেখানে আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহ চেয়েছিলেন আমি আমেরিকায় গিয়ে পড়াশুনা করি। কিন্তু যে কোনো কারনে হোক, আমার আর যাওয়া হয় নাই, আমি চলে গিয়েছিলাম আর্মিতে। আমার যে আমেরিকায় যাওয়া হয় নাই এটা বল্বো না, আমি তারপরে ১৯৯৫/৯৬ সালে হাইতির জাতিসঙ্ঘ মিশন থেকে একমাসের জন্য আমেরিকায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারপরে পর পর দুবার ভিসা পেয়েছিলাম মোট ৬ বছরের জন্য কিন্তু আমাকে আমেরিকা টানে নাই। আগামী ১১ তারিখে আমার ছোট মেয়ে চলে যাচ্ছে সেই সুদুর আমেরিকায়। একটু খারাপ লাগছে কিন্তু সন্তানদের সাফল্যের জন্য তাদেরকে ঘর থেকে ছেড়েই দিতে হয়, এটাই নিয়ম।
কনিকা যাতে কোনো প্রকারের আর্থিক সমস্যায় না থাকে সেজন্য আমি অগ্রিম ওর এক বছরে সমস্ত খরচ (বাড়ি ভাড়া, খাওয়া দাওয়ার খরচ, ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি, হাত খরচ, যাতায়ত খরচ, ইন্স্যুরেন্স খরচ ইত্যাদি মিলিয়ে ৩৫ হাজার ডলার দিয়ে দিলাম যাতে আমিও আর এই এক বছর ওকে নিয়ে চিন্তা করতে না হয়। সাথে সিটি ব্যাংকের একটা এমেক্স কার্ড ও দিয়ে দিচ্ছি ২ হাজার ডলারের মতো যাতে খুবই জরুরী সময়ে সে এটা খরচ করতে পারে। আগামীকাল কনিকার কভিড-১৯ টেষ্ট করাতে হবে। ফ্লাইটে উঠার ৪৮ ঘন্টা আগে কভিড টেষ্ট করে ফ্লাইটে উঠতে হয়। পজিটিভ এলে ফ্লাই করতে পারবে না। দোয়া করছি, আল্লাহ যেনো সব কিছু সহী সালামতে এটাও ইনশাল্লাহ নেগেটিভ করে দেন।
বড় মেয়েকেও ইন্সিস্ট করছি সে যেনো কনিকার মতো দেশের বাইরে (পারলে একই ইউনিভার্সিটি, ইউএমবিসি) আমেরিকায় চলে যায়। কিন্তু কোথায় যেনো উম্মিকার একটা পিছুটান অনুভব করছি। তার শখ লন্ডনে যাওয়া। যদি তাও হয়, তাতেও আমি রাজী। ওরা ভালো থাকুক, সেটাই আমি চাই।
আমি জানি একটা সময় আসবে, আমি আসলেই একা হয়ে যাবো। এমন কি আমি মিটুলকেও ধরে রাখতে পারবো কিনা জানি না। কারন যখন দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকবে, আমার ধারনা, মিতুলও প্রায়ই দেশের বাইরে থাকবে তার মেয়েদের সাথে। যদি দুইটা আলাদা আলাদা দেশ হয়, তাতে ওর বাইরে থাকার সময়টা বেড়ে যাবে, আর যদি একই দেশে হয়, তাহলে এক ছুটিতেই দুই মেয়ের সাথে হয়তো সময়টা কাটাবে। আমি ব্যবসা করি, আমাকে দেশেই থাকতে হবে, আর আমি দেশে থাকতেই বেশী পছন্দ করি।
বাকীটা আল্লাহ জানেন।
স্পেসাল নোটঃ
যে মানুষগুলি ১১ আগষ্ট ২০২১ তারিখে এয়ারপোর্টের ভিতরে আমাদেরকে এন্টারটেইনমেন্ট করেছে তারা হচ্ছেন- সার্জেন্ট জুলহাস এবং সার্জেন্ট রাসেল। আমরা সবাই ঢুকতে পেরেছিলাম আর ওরাই আমার মেয়ের জন্য সব ব্যবস্থা করে দিলো একেবারে প্লেন পর্যন্ত। রাসেল আর জুলহাসকে ধন্যবাদ দেয়ার মতো আমার ভাষা নাই। তাদের জন্য আমার এই পেজে ওদেরকে মনে রাখার জন্য ওদের কয়েকটা ছবি রেখে দিলাম। বড্ড ভালো লাগলো ওদের আথিথেয়তা।
ওরা আমার এবং আমার পরিবারের জন্য অনেক সহায়তা করেছে। এয়ারপোর্টের গেট থেকে শুরু করে আমার মেয়ে কনিকাকে ইমিগ্রেশন করা এবং ওর সাথে প্লেন পর্যন্ত এগিয়ে দেয়ার পুরু কাজটাই করেছে। আমি আমার পরিবার এবং অন্যান্য সবাই অনেক কৃতজ্ঞ। দোয়া করি ওদের জন্যেও।
০৮/০৮/২০২১-What If I were not Born
উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
আগষ্ট
০৮
মানুষ হয়ে জন্ম গ্রহন করার থেকে এতো সম্মান নাকি ঈশ্বর তার পাপমুক্ত ফেরেস্তাদেরকেও দেন নাই। সৃষ্টির সেরা জীবদের মধ্যে এই মানুষই নাকি সেরা। এই মানুষের জন্যই ঈশ্বর আকাশ তৈরী করেছেন, সেই আকাশ থেকে তিনি জল-বৃষ্টি বর্ষন করেন, জমির নির্মল গাছ গাছালীকে তিনি সবুজ সতেজ করে রাখেন। তিনি এই মানুষের জন্যই পাহাড় সৃষ্টি করেছেন, দিন আর রাতের তফাত করেছেন, ভালোবাসার মতো সংগী তৈরী করেছেন, অতঃপর তিনি জীবিনের বিভিন্ন স্তরে স্তরে নানাবিধ উপলব্দির জন্য সন্তান, নাতি নাতকোরের মতো মিষ্টি মিষ্টি ফুলের সংসারও তৈরী করেছেন। কি অদ্ভুত ঈশ্বরের সব সাজানো এই পরিকল্পনা। নীল আকাসের দিকে তাকিয়ে কখনো সাদা ফেনার মতো ভেসে যাওয়া মেঘ, কখনো উত্তাল মেঘের অবিরাম বৃষ্টিবরন, হেমন্তে বা শরতের দিনে বাহারী ফুলের সমাহার, পাখীদের কিচির মিচির, শিল্পির গানের মূর্ছনা, সবকিছু যেনো বিমোহিত করার মতো একটা সময়। অথচ এসব কিছু কোনো না কোনো একদিন ছেড়ে আমাদের সবাইকে চলেই যেতে হয়।
আবার অন্যদিকে যদি দেখি, দেখা যায়, এই বাহারী জীবনের সব সুখ আর আস্বাদন ছাড়াও আমাদের এই জীবনে ছেকে বসে দুঃখ বেদনা, হতাশা আর কষ্ট। জীবনের গাড়ি আমাদের জীবন-যানবহনের চাকার উপর টানতে টানতে এক সময় অনেকেই আমরা হাপিয়ে উঠি। বেদনায় ভরে উঠে কষ্টে, দুঃখে ভেসে যায় চোখের জল অথবা রাগে, অভিমানে একে অপরের হয়ে উঠি চরম থেকে চরম শত্রুতায় যেনো ভালোবাসা কোনোকালেই ছিলো না, হোক সেটা বিবাহ বন্ধনের মতো কোনো রোমান্টিক সম্পর্কে, অথবা ব্যবসায়ীক কোনো অংশীদারিত্তে অথবা ক্ষমতার লড়াইয়ের কোনো যুদ্ধমাঠে।
অনেক সময় আমাদের মুখ দেখে এটা বুঝা যায় না কে সুখের বা কষ্টের কোন স্তরে আছি। ভিতরের সুখ কিংবা যন্ত্রনার উপলব্ধিকে আমরা একে অপরের সাথে ভাগাভাগি করলেও সঠিক স্তরটা কখনোই প্রকাশ করা যায় না। পাখীদের বেলায় কিংবা অন্য কোনো প্রানীদের বেলায় এটা কতটুকু, সেটা আমরা না কখনো ভেবে দেখেছি, না কখনো উপলব্ধি করেছি। ওরা দিনের শুরুতে আহারের খোজে বেরিয়ে যায়, পেট ভরে গেলে কোনো এক গাছের ডালে বা পাহাড়ের কোনো এক ছোট সুড়ঙ্গে রাত কাটিয়ে দেয়। তাদের অট্টালিকার দরকার পড়ে না, ওরা ওরা কেউ কারো শত্রুতা করে না, কোন পর্বনে বিশেষ কোনো কিছুর আয়োজনেরও দরকার মনে করেনা। কবে ছুটির দিন, কবে ঈদের দিন কিংবা করে কোন মহাযুদ্ধ লেগেছিলো সে খবরেও ওদের কিছুই যায় আসে না। ওদেরও সন্তান হয়, ওরাও দলবেধে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়, ওদের কোনো ভিসা বা ইমিগ্রেশনেরও দরকার পড়ে না। টেরিটোরিয়াল বাউন্ডারী ওদের জন্য কোনোদিন দরকার পড়ে নাই, আগামীতেও দরকার পড়বে না। ওরাও কষ্টে কিছুক্ষন হয়তো ঘেউ ঘেউ করে, কিংবা চিন্তিত হয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উড়ে চলে যায়, কিন্তু তাকে আকড়ে ধরে বসে থাকে না। ওদের সারাদিনের কর্মকান্ডের জন্য না কারো কাছে জবাব্দিহি করতে হয়, না কারো কাছে ধর্না দিতে হয়, এমনকি ওরা ঈশ্বরের কাছেও তাদের অপকর্মের কিংবা ভালোকর্মের কোনো জবাব্দিহিতা করতে হয় না। কোনো ট্যাক্স ফাইল নাই, কোনো ভ্যাট ফাইল নাই, না আছে কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স, না দরকার তাদের গাড়িঘোড়ার। তাহলে তো ওরাই আসলে শান্তিতে থাকে, মানুষের থেকে অধিক।
মানুষ ছাড়া অন্য সব প্রানীকুল প্রত্যেকেই নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখে কিন্তু মানুষ তার নিজের একক ক্ষমতার উপর কখনোই সে বিশ্বাস রাখে না বা থাকে না। তার দল লাগে, তার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড লাগে, তার আরো বিস্তর আয়োজন লাগে। এতো কিছুর উপরে তার আস্থা রাখতে গিয়ে মাঝে মাঝে সে নিজের উপরেও আস্থা হারিয়ে ফেলে। অথচ সে একা বাস করতে পারে না, না আবার সবাইকে নিয়েও বাস করতে চায়। অদ্ভুত এই মনুষ্যকূলের মধ্যে আমি জন্মে দেখেছি- এতো কিছুর বিনিময়ে অথচ কোনো কিছুই আমার না, এই শর্তে জন্ম নেয়াই যেনো একটা কষ্টের ব্যাপার। যদি কেউ এই পৃথিবীতেই না আসতো, তাহলে হয়তো বিধাতার কাছে এই ক্ষনিক সময়ে এতো কিছুর মাঝে পরিবেষ্ঠিত থেকে আবার চলে যাওয়া, কইফিয়ত দেয়া, ইত্যাদির দরকার হতো না, ক্ষমতার লড়াইয়ে হানাহানি, কারো বিয়োগে মন এতো উতালাও হতো না।
আজ থেকে বহু শতাব্দি আগে কিংবা অদুর অতীতে যারা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে, তারা আসলে আমাদেরই লোক ছিলো। তারা চলে গিয়েছে চিরতরে। কোথায় গেছেন, আর কি অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে আজো কেউ কোনো সম্যখ ধারনা কারো কাছেই নাই। অথচ যখন বেচে ছিলেন, প্রতিটি মুহুর্তে তারা ছিলেন সময়ের থেকেও অধিক ব্যস্ততায়। যখন তারা চলে যান, তারা আমাদের কাছে এমন কোনো ওয়াদাও করে যায়নি যে, তাদের ফেলে যাওয়া সব সম্পত্তির জন্য আবার ফিরে আসবেন, কিংবা এমনো নয় যে, তারা তা আর কখনো দাবী করবেন। এটা না হয় চিরতরে চলে যাওয়ার ব্যাপার হলো। কিন্তু এই জীবনে তো এমনো বিচ্ছেদ হয় যেখানে তারা আছেন কিন্তু আবার নাইও। জীবনের প্রয়োজনে ভউগুলিক বাউন্ডারীর অন্য প্রান্তে যখন কেউ অনেক দিনের জন্য চলে যান, আর তার ফিরে আসার ওয়াদা ভেংগে যায়, তখন আর তার উপরেও আস্থা রাখা যায়না। এমনি কষ্টে মানুষ ভোগের সমস্ত আয়োজনের উপরে থেকেও সেই আপনজনদের জন্য প্রতিনিয়ত হাহুতাশ করতে থাকেন। মনের কোথায় যেনো কি একটা সারাক্ষন খসখস করতেই থাকে। সেই যন্ত্রনায় তখন এমন মনে হয় যেনো- একটা দিনও ঠিকঠাক মতো কাটে না, এমন কি একটা রাতও না। তখন জেগে থাকে শুধু কিছু সদ্য জন্মানো কান্না। আর কান্নার আহাজারীতে সুর থাকে না, থাকে বেদনা আর কষ্ট। আর সেই কষ্টের কোনো নাম থাকে না, না থাকে তার কোনো বর্ননা বা রুপ। আর এই ভিতরের যন্ত্রনাটা কাউকেই দেখানো যায় না অথচ সত্যিটা থাকে এই ভিতরেই। আসলে পৃথিবীতে সম্পর্কের চেয়ে বড় কোনো সম্পত্তি নাই। এতো সুখের জীবনেও যখন এমন অনেক কষ্টের আর বেদনার নীল ছড়িয়েই থাকে, তাহলে কি দরকার জন্মের?
তারপরেও আমরা মানুষ হয়ে সৃষ্টির সেরা জীব হয়েই জন্ম নেই, নিয়েছি যেখানে অবারিত সবুজ ধানক্ষেতের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওয়ার দোলা আমাদের মুখে পরশ জোগায় আবার তেমনি কখনো বিচ্ছেদের মতো যন্ত্রনা, মৃত্যুর মতো বেদনা, আবার কখনো অনিশ্চিত যাত্রার মতো দুশ্চিন্তা নিয়েই আমাদেরকে বাচতে হয়। কেউ যখন চিরতরে জীবনের নিঃশ্বাসকে স্তব্ধ করে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেন, তারজন্য যতোটা না দুশ্চিন্তা আমাদেরকে গ্রাস করে, তার থেকে যখন কোনো প্রিয়জন হটাত করে সেই চেনা পরিচিত আবাসস্থল থেকে কাউকে কিছু না বলে হারিয়ে যান আর ফিরে না আসেন, তারজন্য আরো বেশী দুশ্চিন্তা আর অমঙ্গল চিন্তা মাথা ভনভন করতে থাকে। কিন্তু এরই মতো যখন কোনো প্রিয়জন জেনেশুনে জীবনের প্রয়োজনে অথবা বড় সাফল্যের আশায় একে অপরের থেকে এমন একটা বিচ্ছেদে আপোষ করেন যেখানে টেরিটোরিয়াল বাউন্ডারী আমাদেরকে প্রায় স্থায়ী বিচ্ছেদের স্তরে নিয়ে যায়, তখন আমাদের হাসির অন্তরালে যে বেদনা লুকিয়ে থাকে, তা তুষের অনলের মতো সারাক্ষন তাপদাহে অন্তরে প্রজ্জলিত হতেই থাকে। আশা আর সাফল্যের মতো জল হয়তো সাময়ীকভাবে তা নিবারন করে কিন্তু এই ছোট ক্ষনস্থায়ী জীবনে বারবার এটাই মনে হয়- কি দরকার ছিলো এসবের? তাকে কি আটকানো যেতো না? নাকি আটকানো হয় নাই? আসলে কোনো কিছুই দরকার ছিলো না যদি না আমার জন্মই না হতো এই মানুষ হিসাবে। তখন না দরকার হতো এই বিচ্ছেদের, না প্রয়োজন হতো এই দিনরাতের কষ্টের অথবা না দরকার পড়তো অন্তর জালার তাপদাহের অনুভবতার। তখন কেনো জানি বারেবারেই মনে হয়- What If I were not born?
করোনার প্রাদূর্ভাবে চেনা পরিচিত সব মানুষ যেনো ধীরে ধীরে চোখের সামনে থেকে একে একে যেনো বিনা নোটিশে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। এই সেদিন যার সাথে এক টেবিলে বসে হাসাহাসি, আড্ডা, কথা কাটাকাটি, অথবা দল বেধে গায়ের কোনো মেঠো পথে বাচ্চাদের মতো হাটাহাটি করেছি, তার কিছু মুহুর্তের পরই সংবাদ আসে, আর নেই। চলে গেছে। ব্যাংকের টাকা, বিশাল ব্যবসা, কিংবা গাড়ি বহরের সব যাত্রা কোনো কিছুই যেনো তার সামনে দাড়াতে পারছে না। অথচ তাকে না দেখা যায়, না ছোয়া যায়। কখন সে কার সাথে একান্তে বাস করা শুরু করে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আতংকে আছে মন, অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছে শরীর, ভাবনায় ভরে যাচ্ছে সারাটা মাথা। অথচ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে কুকুর, মনের আনন্দে উড়ে বেড়াচ্ছে পাখীরা, শুধু বন্দি হয়ে আছি আমি “মানুষ”। বারবার মনে হচ্ছে- কোথায় যেনো কি ঠিক নেই, কি যেনো কোথায় একটা গড়মিল হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না। কেনো এমনটা হচ্ছে বারবার?
আসলে কোন কবি যেনো একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন- মানুষ হয়ে জন্মই যেনো আমার আজীবনের পাপ। তাই আমারো মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে- What If I were not even born!!
০৫/০৮/২০২১-অদ্ভুত একটা স্বপ্ন
You are required to login to view this post or page.
২১/০৭/২০২১-ঈদুল আজহা
উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
২০২১
২১ জুলাই
- ইসমাইল ভাই, আমি কুরবানীতে
- ইসমাইল ভাই, আমি কুরবানীতে
- মাহবুব, ইসমাইল ভাই এবং অন্যান্যরা
- ইসমাইল ভাই, উম্মিকা, জহির, নাফিজ ইত্যাদি
- গরু প্রোসেসিং এর কাজ গাছের ঢাল
- মা বসে আছেন, মিটুল গোস্ত কাটছে
- মা কুরবানীর সময় পাশে বসে আছেন
- মা, মিটুল, উম্মি, অন্যান্য
আজ পালিত হলো ঈদুল আজহা।
এই দিনটা এলে সবচেয়ে আগে যার কথা আমার বেশী মনে পড়ে তিনি হচ্ছেন-আমার মা। মা বেচে থাকাকালীন আমি কখনো শহরে ঈদ করিনি কারন মাও ঈদের সময় গ্রাম ছাড়া ঈদ করতেন না। মা যেহেতু ঈদে গ্রামে থাকতেন, আমিও গ্রামেই ঈদ করতাম। আমি সব সময় ভাবতাম-একটা সময় আসবে, মাকে ছাড়াই আমার ঈদ করতে হবে জীবনে, তাই যে কতগুলি সুযোগ পাওয়া যায়, মায়ের সাথে ঈদ করাটা ছিলো আমার সুযোগের মতো। বাড়িতেই কুরবানী করতাম। ঈদের আগে আমি ইসমাইল ভাই অথবা রশীদ ভাইকে টাকা পাঠিয়ে দিতাম যাতে আগেই গরু কিনে রাখেন। ফাতেমার স্বামী সলিমুল্লাহ ওরফে দুদু ভাইকে আমি কখনোই কুরবানীর গরু কেনার দায়িত্তটা আমি দিতাম না কারন তার উপরে আমার টাকা পয়সা নিয়ে আস্থা ছিলো না। কেনো তার উপরে আস্থা ছিলো না, সে কাহিনী বিস্তর, আজ না হয় এখানে নাইবা বললাম। গরু কেনার ব্যাপারে আমার একটা পলিসি ছিলো যে, মেহেরুন্নেসা (অর্থাৎ আমার ইমিডিয়েট বড় বোন সব সময় গরু পালতো। আমি ইচ্ছে করেই রশীদ ভাইকে বলতাম যাতে ওর গরুটাই আমার জন্যে রেখে দেয়। আমি কখনোই সেটার দাম করতাম না। এই কারনে করতাম না, মেহের যে কয় টাকায় বিক্রি করলে খুশী হয় সেটাই হোক আমার আরেকটা সাহাজ্য। মেহের খুব ভালো একটা মেয়ে।
আজ সেই কুরবানীর দিনটা চলে গেলো। শুনেছিলাম, একটা গরু মোট সাত জনের নামে কুরবানী দেয়া যায়। ফলে আমি সব সময় এই সু্যোগে যে কাজটা করি, তা হলো- এক ভাগ দেই আমি আমার প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মাদ (সঃ) এর নামে, আর বাকী ৬ ভাগ দেই-আমার, মিটুল, আমার ২ মেয়ে, আমার বাবা আর আমার মায়ের নামে। এটাই আমার কুরবানী দেয়ার পলিসি। আজো তাইই করলাম। গরু জবাই, মাংশ কাটাকাটি আর বিলানোর কাজটা আমি নিজ হাতে করি। ৩ টা ভাগ করি, একটা ভাগ নীচেই বিলিয়ে দেই, বাকী ২ ভাগের এক ভাগ আমি রাখি আলাদা করে সমস্ত আত্তীয় সজন আর পাড়া পড়শীর জন্য, আর এক ভাগ থাকে আমার পরিবারের জন্য।
এই কুরবানী এলে আমার আরো একটা কথা প্রায়ই মনে পড়ে। সেই ১৯৭৬-৭৭ সালের কথা। আমাদের তখন কুরবানী দেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। আমি মাত্র ক্লাস সিক্স সেভেনে পড়ি, আমাদের বাড়িতে ৫ বোন আর মা আর আমি। আমার বড় ভাই তখন সবেমাত্র আমেরিকা গেছেন। আমাদের সব ভরন পোষনের দায়িত্ত আমার বড় ভাইই করেন। কিন্তু শেয়ারে কুরবানী দেয়া কিংবা আলাদা কুরবানী দেয়ার মতো ক্ষমতা আমাদের ছিলো না। ফলে এই কুরবানীর দিন আমার খুব অসস্থি হতো। অসস্থি হতো এই কারনে যে, আমরা না কারো কাছ থেকে মাংশ চেয়ে আনতে পারতাম, না আমাদের সামর্থ ছিলো কুরবানী দেয়ার। ফলে দিনের শেষে যখন সবাই যার যার বাড়িতে গরুর মাংশ পাকে ব্যস্ত, খাওয়ায় ব্যস্ত, আনন্দে ব্যস্ত, তখন হয়তো আমাদের বাড়িতে ঠিক তেমনটা নাও হতে পারে। আমি এই ঈদের দিনের দুপুরের পর আর কোথাও যেতাম না, কারন আমার কেম্ন জানি নিজের কাছে খুব ছোট মনে হতো। কুরবানী দেয়াটা ধর্মের দিক দিয়ে কি, আর কি না, সেটা আমার কাছে হয়তো অনেক বড় মাহাত্য ছিলো না, কিন্তু আমি যখন দেখতাম, আমার বন্ধুদের বাড়িতে সবাই কুরবানীর গরু নিয়ে কাটাকাটিতে ব্যস্ত, বিকালে মাংশ বিলানোতে ব্যস্ত, আমার তখন মনে হতো, আমিই ব্যস্ত না। গরীব হয়ে জন্ম নেয়াটা একটা অসস্থিকর ব্যাপার। তারপরেও অনেকেই আমাদের বাড়িতে কুরবানীর পর মাংশ পাঠাইতো। বিকালে বা সন্ধ্যায় দুদু ভাই, ইসমাইল ভাই, আমাদের খালাদের বাড়ি থেকে, কিংবা জলিল মামাদের বাড়ি থেকে অথবা পাশের কোনো বারি থেকে অনেকেই মাংশ পাঠাইতো যেটা আমার কাছে একটু খারাপ লাগলেও মা নিতেন। কুরবানী বলে কথা। সবাই মাংশ খাবে, আমাদের বাড়ির মানুষেরা একেবারেই কিছু খাবে না, মা হয়তো এটা ভেবেই মাংশ গুলি রাখতেন। দিনটা চলে যেতো, আমার অসস্থির ভাবটাও ধীরে ধীরে কেটে যেতো। আবার এক বছর পর হয়তো এই অসস্থিটা আসবে।
যেদিন আমার ক্ষমতা হলো কুরবানী দেয়ার, আমি সব সময় গ্রামেই কুরবানী দিয়েছি। আর সব সময়ই আমার সেই দিনগুলির কথা মনে করেছি। আমাদের দিন পাল্টেছে, আমাদের পজিসন পাল্টেছে। মা যখন জীবিত ছিলেন, এমনো হয়েছে মাঝে মাঝে আমি দুটু কুরবানীও করেছি একা।
আজ মা নাই, আমার গ্রামে যাওয়া হয় না। কুরবানী নিয়ে এখন আমার তেমন কোনো আগ্রহও নাই। তবে সবসময় ঢাকাতেই আমি কুরবানী দেই, একা। যদি আমি কখনো কুরবানী নাও দেই, কেউ আমাকে আন্ডার এস্টিমেট করবে না কারন সবাই জানে আমার একটা না, অনেকগুলি কুরবানী দেয়ার সক্ষমতাও আছে। হয়তো কোনো কারনে আমি ইচ্ছে করেই কুরবানী হয়তো দেই নাই। কেউ এটা ভাববে না যে, আমার টাকা নাই তাই কুরবানী দেই নাই। “সময়” এমন জিনিষ। সব কিছু পালটে দেয়।
৮/৭/২০২১-জীবনে হতাশ হওয়ার
উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
২০২১
৮ জুলাই
জীবনে হতাশ হওয়ার কোনো কারন নাই। একদিন নিজেকে নিজেই বলেছিলাম যে, ভগবান মানুষের জন্য প্রতিটি দিন একই রকম করে কাটাতে দেন না। আজ যে রবিবার আপনি হাসছেন, আগামী রবিবার আপনি নাও হাসতে পারেন, হয়তো সেদিন আপনি হাসিতে আপনার প্রতিটি মুহুর্ত ভরে থাকবে। এই সপ্তাহটা হয়তো আপনার জন্য ভয়ানক অস্থির যাচ্ছে, কে জানে আগামী সপ্তাহটা হয়তো হবে একেবারেই সুন্দর। তাই হতাশ হবার কোনো কারন নাই। প্রতিটি ঝড় কিংবা বিপদের মাঝেও কিছু না কিছু সুসংবাদ থাকে, কিছু না কিছু ভালো জিনিষ আসে। একটা মৃত ঘড়ির দিকে তাকান, দেখবেন নষ্ট ঘড়িটাও দিনে দুবার একদম সঠিক সময় প্রকাশ করে। অপরিষ্কার জল খাবারের অনুপোযোগী হলেও সেটা আগুন নেভানোর কাজে লাগে। বোবা কিংবা বোকা বন্ধুও আপনার অন্ধ জীবনে রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারে।
তারপরেও একটা সময় আসে যখন শুধু নিজের জন্যেই নিজেকে বাচতে হয়। অন্য কারো জন্যে নয়। আমরা সামাজিক কিংবা পারিবারিক জীবনের কথা বলি। ওটা একটা শুধু কন্সেপ্ট যেখানে মানুষ একা থাকতে পারে না বলে সে এই দলবদ্ধ জীবন বা পারিবারিক জীবনটাতে থাকতে চায়। কিন্তু একটা সময়ে সবাই এই জীবনেও হাপিয়ে উঠে। সন্তান, স্ত্রী কিংবা আশেপাশের সবাই যেনো তখন এক ঘেয়েমীতে ভরে যায়। তখন কেউ কারো আদর্শ কিংবা অভিজ্ঞতাকে আর কাজে লাগাতেও চায় না, বরং যেটা নিজেরা ভাবে সেতাই যেনো পরিশুদ্ধ, আর সেটাই করতে চায় সবাই। সন্তানেরা যখন বড় হয়ে যায়, তখন তাদেরকে তাদের মতো করেই ছেড়ে দেয়া উচিত। তাদের চিন্তা ধারা, তাদের পছন্দ কিংবা আশা নিরাশা সবন কিছু তাদের মতো। তাই, আমরা যারা বড়রা তাদের জন্যে দুশ্চিন্তা করি, এটা হয়তো আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে ভাবি যে, ওরা ভুল করছে বা যা করছে সেটা ঠিক নয়। আর এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আমাদের কিছু কন্সেপ্ট বা ধারনা বা উপদেশ ওদের উপর চালাতে চাই যা অহরহই ওরা মানতে চায় না। যখন এমন একটা কনফ্লিক্ট সামনে আসে, তখন আমাদের উচিত আর না এগোনো। সবাইকে যার যার পথে চলতে দিয়ে ঠিক ঐ জায়গাটায় দাড় করানো উচিত যাতে ওরা বুঝতে পারে, আমাদের উপদেশ ঠিক ছিলো কিংবা আমরাই ঠিক ছিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো ঐ সময় কোনো কিছুই আর পিছনে গিয়ে সঠিকটা করা যায় না বলে মনে কষ্ট লাগে বা খারাপ লাগে। কিন্তু ওটা ছাড়া তো আর কিছুই করার নাই। চেয়ে চেয়ে ধ্বংস দেখা ছাড়া যদিও কোনো উপায় নাই, তারপরেও সেটাই করতে দেয়া উচিত যাতে ওরা এটা বুঝতে পারে যে, বড়দের অভিজ্ঞতার দাম ছিলো, উপদেশ গ্রহন করা উচিত ছিলো। তাহলে হয়তো আজকের দিনের এই অধোপতন কিংবা ছেড়াবেড়া জীবনে পড়তে হতো না।
লাইফটায় অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছি আমি নিজেও। নিজের ঘরে যখন কেউ একাকিত্ত বোধ করে সেখানে সময় একেবারেই স্থবির। সেখানে যেটা চলে সেটা হচ্ছে- সময় মত খাওয়া, আর নিজেকে অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখা। এটা একটা সময়ে সবার জীবনেই আসে। আমি যদি বলি, এটা ইতিমধ্যে আমার জীবনেও শুরু হয়ে গেছে, ভুল বলা হবে না।
কেনো বললাম কথাটা। এর নিশ্চয় কোনো কারন তো আছে। আজকের যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আমার কাছে কাম্য নয়। না আমি আশা করেছি। আমার সন্তানদের জন্য আমার থেকে বেশী কেউ ভাবে এটা আমি কখনোই বিশ্বাস করতে চাই না। কিন্তু সেই সন্তানেরা যদি কখনো বলে, যে, আমরা তাদের জন্য অভিশাপ,আমরা পশুর চেয়েও খারাপ ব্এযবহার করি, কিংবা আমরা প্ৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা মা ইত্যাদি, এর থেকে বড় পরাজয় আর কিছু হতে পারে না। তবে আমি জানি, জীবনে এ রকমের অনুভুতি সবারই আসে। যখন এই অনুভুতি ভুল প্রমানিত হয়, তখন বেলা এতোটাই বেড়ে যায় যে, কারো কারো জীবনের রাত শেষ হয়ে আরো গভীর রাতে অন্য কোনো জগতে সে চলে যায়।
১৯/০৭/২০২১-ঈদুল আজহার ২দিন আগে
উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
২০২১
১৯ জুলাই
এই কয়েকমাসে এতো বেশী অভিজ্ঞতা হলো যা আমার জীবনের অনেক প্রাক্টিস আর বিশ্বাসকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যাদেরকে আমি মনে করি সবাই আমার মতো। অথবা আর যার সাথে আমরা যাইই করি না কেনো, অন্তত আমরা আমাদের সাথে সেই একই প্রাক্টিস গুলি কখনো করতে পারি না। কিন্তু আমার এই ধারনা সমুলে আঘাত খেয়েছে অনেক গুলি কারনে। তাহলে একা একা বলিঃ
(১) মান্নানের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়েঃ মান্নান যে আমার সাথে লুকুচুড়ি করে সেটা আমি জানি। অনেক সময় ভাবি যে, হয়তো সে একটু ভালো থাকতে চায়, তাই একটু আধটু লুকুচুরি করে। আমার অনেক ক্ষতি না হলেও অর্থের দিক দিয়ে একটু তো লাগেই। কিন্তু যেহেতু আমি সামলে নিতে পারি, তাই অনেক সময় কিছু বলি না বা বলতে চাইও না।
আমি যখনই কোনো জমি কিনেছি, মান্নান সেখানে জমির দামটা এমন করে বাড়িয়ে বলতো যাতে আমার টাকা দিয়েই মান্নান ও কিছু জমি সেখান থেকে কিনতে পারে। আমি সেটা বুঝি কিন্তু কিছু হয়তো বলি না। এভাবে মান্নান অনেক জমি শুধু হয়তো আমার টাকা দিয়েই কিনেছে আর সেটা আমার ক্রয় করা জমির সাথেই। কিন্তু এবার যেটা করেছে সেটা মারাত্তক।
মুজিবুর রহমান খান নামে এক ভদ্রলোক আমাদের পলাসপুরের জমিটা কিনতে আগ্রহী হলে আমিও বিক্রি করতে তৈরী ছিলাম। আমার জমির সাথে আমার পার্টনার মুর্তুজা ভাইয়ের জমি আছে। ফলে আমার জমি আর মুর্তুজা ভাইয়ের জমি সহ একটা রফাদফা হয়েছিলো। এর মধ্যে মান্নান আমাকে জানালো যে, মুজিবুর রহমান খান সাহেবের আরো জমি দরকার যা সেলিম নামে এক জন লোকের জমি আমাদের জমির পাশেই আছে কিন্তু ওর জমিতে যাওয়ার রাস্তা না থাকায় যদি আমাদের জমির সাথে টাই আপ করে খান সাহেবের কাছে বিক্রি করি তাতে আমাদের লাভ হবে। কারন সেলিকমে জমির মুল্য দিতে হবে খান সাহেবের দেয়া জমির দামের অর্ধেক প্রায়। সেলিমদের মোট জমি ছিলো ৩২০ শতাংশ।
এর মধ্যে মান্নান আমাকে জানালো যে, আমরা সেলিমদের জমি থেকে পানি ব্যতিত মোট ১৫১ শতাংশ জমি খান সাহেবকে দিতে পারবো। বাকী ১৬৯ শতাংশ জমি আসলে নদীর পানির মধ্যে যদিও জমিটা রেকর্ডের অন্তর্ভুক্ত। আমি যখন সেলিমদের জমিটা বিনা পরীক্ষায়, বিনা নীরিক্ষায় খান সাহেবকে রেজিষ্ট্রি করে দিলাম, পরে জমি মাপ্তে গিয়ে দেখি যে, মাত্র ৯৮ শতাংশ জমি আছে যা নদীর মধ্যে না। অনেক রাগারাগি আর চাপাচাপির মধ্যে আমি যখন সেলিমদের ধরলাম, শুনলাম আরেক বিরাট ইতিহাস। মান্নান, সেলিম এবং সেলিমের এক চাচাতো ভাই মিলে মোট ৩২০ শতাংশ জমিই কিনে নিয়েছে সেলিমদের আত্তীয় স্বজনের কাছ থেকে অই টাকায় যে টাকা হয় ১৫১ শতাংশের দাম। খান সাহেবকে ১৫১ শতাংশ জমি দেয়ার পর বাকী ১৬৯ শতাংশ জমি ধান্দা করে মান্নানের নামে আর সেলিমের নামে একা পাওয়া অফ এটর্নী নিয়েছে। এর মানে হলো, আমি কোনো লাভ করি নি , লাভ করছিলো মান্নান। যদি অদুর ভবিষ্যতে পানি শুকিয়ে চর জাগে, তাহলে মান্নান এই জমি গুলি চড়া দামে বিক্রি করতে পারবে। অথচ টাকাগুলি খান সাহেবের এবং আমার। খান সাহেব যখন নদীর মধ্যে কোনো জমি নিতে নারাজ হলেন, তখন আমার চর গল্গলিয়া মৌজা থেকে এই বাকী ৫৩ শতাংশ জমি পুরা করে দিতে হবে যার দাম প্রায় তিন কোটি টাকা। এটা কোনোভাবেই আমার সম্ভব হচ্ছিলো না। আমি কেনো এতো গুলি জমি খান সাহেবকে লিখে দেবো যার দাম তিন কোটি টাকার উপরে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিখেই দিতে হবে জেনে আমি পলাশপুরের আক্কাসকে ধরে মান্নান আর সেলিমের কাছ থেকে পরবর্তীতে ওই ১৬৯ শতাংশ জমি ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার নিজের নামে নিয়ে নিলাম। জানি আমার ক্ষতি পুরন হবে না যতোক্ষন পর্যন্ত ওই নদীর জমি শুকিয়ে আসল চেহারায় জমি ভেসে না উঠে। আমি মান্নানকে বারবার এই অ বিশ্বাসের কাজটা কেনো করেছে জিজ্ঞেস করলে তার একটাই উত্তর- ভুল হয়ে গেছে। এটা কোনোভাবেই ভুল হতে পারে না। আমি কখনো ভচাবি নাই যে, মান্নান ও আমাকে এভাবে এতো ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।
পলাশপুরে আমার আরো একতা জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া ছিলো। আর যেহেতু ওই লিজটা আনতে হয় কোনো দুস্ত মানুষের নামে, তাই আমি মান্নানের ভাই নাসিরের নামেই ১০০ শতাংশ জমি আমার টাকায় লিজ নিয়ে এসেছিলাম। মান্নান আমাকে না জানিয়ে হালিম নামে এক লোকের কাছে ২০ লাখ টাকায় জমিটা গোপনে টাকা নিয়ে নিলো। এটা একটা অসম্ভব ঘটনা বলে আমার কাছে মনে হয়েছিলো। কিন্তু মান্নান কাজটা করেছে আমাকে একটু ও জানতে দেয় নাই। যখ ওরে আমি প্রশ্ন করেছি- মান্নানের একটাই উত্তর যে, আমার নাতির অসুখ ছিলো, টাকার দরকার ছিলো, তাই আমি বিক্রি করে দিয়েছি। আমাকে জানানোর কোনো বাধ্য বাধকতা মনে করলো না।
খান ভাই আমাদের পলাশ পুরের জমিটা কিনার সময়ে মোট ৬৩১ শতাংশ জমির বায়না করেছিলো যার মধ্যে মান্নানের ছিলো ৫১ শতাংশ। আমি খান ভাইকে বারবার বলেছিলাম, কখনো আমাকে ছাড়া টাকা পয়সার লেন দেন করবেন না। কিন্তু ওই যে বললাম, সবাই লাভ চায়!! খান সাহেব মান্নানকে মাঝে মাঝে আমাকে না জানিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা হ্যান্ড ওভার করে। একদিন খান সাহেব আমাকে জানালো যে, মান্নান জমিটা কাগজে কলমে কোনো বায়নাও করছে না আবার টাকাও চায়। আমি যখন ব্যাপারটার ভিতরে প্রবেশ করলাম, দেখলাম, ওই খানে মান্নানের জমি আছে মাত্র ৪ শতাঙ্ঘস, আর ওর বোন আর ভাই মিলে আছে আরো ৫ শতাংশ, মোট ৯ শতাংশ। বাকী জায়গাটা আক্কাস নামে ওর এক আত্তিয়ের। কিন্তু আক্কাসকে মান্নান উক্ত ৩৫ লাখ টাকা থেকে কখনো ১ টাকাও দেয় নাই, না মান্নান ওনার কাছ থেকে কোনো পাওয়ার অফ এটর্নী কিংবা অগ্রিম কোনো বায়নাপত্র করেছে। আক্কাস সাহেব যখন জানলো যে, মান্নান ইতিমধ্যে ৩৫ লক্ষ টাকা নিয়ে ফেলেছে, সে তখন (৫১ মানাস ৯) ৪২ শতান্সগ জমির বায়না করে ফেল্লো উক্ত খান সাহেবের সাথে। অর্থাৎ মান্নান জানেই না যে, উক্ত জমি মান্নান আর কখনোই খান সাহেবের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। আমি যখন আজকে মান্নানকে বললাম, খান সাহেবকে ৫১ শতাংশ জমি লিখে দিচ্ছিস না কেনো? তার অনেক উচা গলায় বল্লো, সে আগামীকালই জমিটা লিখে দিতে পারে। যখন বললাম যে, আক্কাস জমিটা অন্য খানে বিক্রি করে দিয়েছে- তখন দেখলাম ওর মুখের ভাব অনেক রক্তিম। কিন্তু লজ্জায় পড়লো কিনা জানি না। ওর আসলে এগুলিতে কোনো খারাপ লাগে না মনে হয়। টাকাটাই ওর কাছে সবচেয়ে বড় মনে হয়। ভাগ্যিস আমি এই ৫১ শতাংশের ব্যাপারে কাহ্নের সাথে কোনো প্রকার কথা বলি নাই। তাহলে এই ৫১ শতাংশ নিয়েও খান আমাকে চাপ দিতো।
মান্নানের এখন টাকা প্রাপ্তির প্রায় সব গুলি রাস্তাই বন্ধ। কোটি কোটি টাকা আমি ওর হাত দিয়ে খরচ করিয়েছি। বারবার বলেছি, অন্য কোনো একটা সোর্স কর যাতে বিপদের সময় একটা ইন কাম আসে। কখনো ব্যাপারটা আমলে নেয় নাই। এবার মনে হয় খুব হারে হারে টের পাচ্ছে যে, ওর টাকার সব গুলি সোর্স প্রায় একেবারেই বন্ধ। দেখা যাক কি করে। আমার কাছে অনেক গুলি কারন দেখিয়ে কিছু টাকা খসানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু এবার আমি অনেক টাইট হয়ে গেছি। কোনো কিছুতেই কোনোভাবেই আর টাকা দেয়া যাবে না। মান্নানের পিঠ প্রায় দেয়ালের মধ্যে ঠেকে যাচ্ছে। তবে এখান থেকে কিছুটা উত্তোরন হয়তো হবে যদি ধলেশ্বরী গ্রীন ভিলেজ প্রোজেক্ট শুরু হয়। কারন ওখানে আমি ওকে ইন করিয়েছি। কিন্তু ওটার ইন কাম বড্ড স্লো।
এবার আসি আমার পার্টনার মুর্তুজা ভাইয়ের কাছ থেকে আম্নার তিক্ত অভিজ্ঞতার ব্যাপারটাঃ
(To be cont...)
৬/৭/২০২১-কিছু আফসোস
You are required to login to view this post or page.
২৮/৬/২০২১-সফুরা খালা
এই মানুষগুলি একসময় আর কারো সামনেই থাকবে না। এদের জীবনেও প্রেম এসেছিলো, এরাও কারো না কারো চোখে রানীর মতো ছিলো। বাল্যকালে সাথী সংগীদের নিয়ে এরাও নদীর ঘাটে গিয়ে জিলকেলী করতে করতে সারাটা পরিবেশ মুখরীত করে রাখতো। নীল আকাশের মধ্যে জ্যোৎস্না রাতের তারার মতো তারাও রাত জেগে হয়তো কোনো এক প্রেমিক বরের অপেক্ষায় মনের ভিতর সুখের আস্বাদন করেছেন। এরা বড় বড় সংসারের হাল ধরেছেন, সমাজে এরাও অনেক অবদান রেখেছে। এদের গর্ভে জন্ম নেয়া অনেক সুপুত্র কিংবা সুন্দুরী কন্যারা হয়তো আজো দেশে বিদেশে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আজ তারা এতো চুপচাপ জীবন যাপন করছেন যেখানে তিনি নিজে ছাড়া আর কেউ পাশে নাই। না তার রাজা আছে, না তিনি এখন রানী আছেন। সময় মানুষকে কত পরিবর্তন করে দেয়। এই সময়ের কাছে আজো কেউ স্বাধীনতা পায় নাই, না পেয়েছে কোনো ক্ষমতা সময়কে পরিবর্তন করার। আদি যুগ থেকে যতো মানুষ এই দুনিয়ায় এসেছে, সবাই কোনো না কোনো সময় নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এই পৃথিবীকে ত্যাগ করতে হয়েছে। আমরা যারা পিছনে পড়ে থাকি, তারা শুধু একটা মোহ, একটা স্মৃতি আর একটা কি যেনো নিয়ে শুধু অলীক ভাবনার জগতে অপেক্ষায় থাকি। একদিন আমিও এর থেকে পরিত্রান পাবো না। শুধু সময়টা পালটে যাবে এই রানীদের মতো।
কিন্তু আমার মনের ভিতরে এই সব রানীরা আজীবন রানীদের কিংবা রাজাদের মাতাই হয়ে থাকবেন। আমি এদেরই বংশের একটি ধারা। আরো বেচে থাকো তোমরা অনেক কাল খালা।
জীবন যেখানে যেমন। যে শিশুটি আজ জন্ম নিলো কেউ জানে না তার জন্য এই পৃথিবী কি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিংবা এই পৃথিবীকে সে কি দিয়ে যাবে। হতে পারে আজকে এই শিশুটি হয়তো এই পৃথিবীকে কোনো এক সময় নাড়িয়েও দিতে পারে বা এই পৃথিবী তাকেও নাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু এমন অনেক শিশুই এই পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয়, না তারা কোনো ভূমিকা রাখে, না পৃথিবী তাদেরকে মনে রাখে। এমন মানুষের সংখ্যাই বেশী। যুগে যুগে তারপরেও অনেক শিশু প্রকাশ্যে বা গোপনে পৃথিবীতে আসে যারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর একদিন সব কিছু ফেলে সবার থেকে আলাদা হয়ে আবার কোথাও অদৃশ্য হয়ে যায়। মাঝখানের এই সময়টায় খুব গুটিকতক মানুষ হয়তো নিজের মতো করে কাউকে কাউকে মনে রাখে কিন্তু তাও একসময় মনের স্মৃতি থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। আমার সফুরা খালা, সামিদা খালা কিংবা আমার শায়েস্তা বুজি, বা সাফিয়া বুজিরা সম্ভবত এই রকমের কিছু মানুষ যারা সেই বহু বছর আগে শিশু হয়ে জন্ম নিলেও কোনো লাভ হয় নি কারো। তারা আজীবন যেনো এই দুনিয়ার বুকে একটা বোঝা হয়েই ছিলো। অথচ তারা হাজারো মানুষের থেকে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।
প্রায় দু বছর আগে আমি আমার পরিবার নিয়ে আমাদের গ্রাম থেকে বেশ দূরে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। বেশীক্ষন দেরী করি নাই কারন পরিবেশটা ঐ রকমের ছিলো না। কোনো রকমে আনুষ্টানিকতা শেষ করে ভাবলাম, যেহেতু গ্রামের পথেই আছি, যাই আমাদের গ্রামের বাড়িটা ঘুরেই যাই। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো, আলো বেশ কমে গিয়েছিলো। অনেকেই আমাকে চিনে না যদিও আমি এই গ্রামেরই একজন পুরানো বাসিন্দা। কিন্তু সময়ের সাথে আমার অনুপস্থিতি আমাকে আজ এই গ্রামে একজন নবাগত অতিথির মতোই মনে হচ্ছিলো। যারা আমার সমবয়সী ছিলো, তারাও অনেক বুড়ো হয়ে গেছে, অনেকেই চিনতেও ভুল করছিলো, আমি তো ওদের কাউকেই এখন চিনি না। ওদের চেহারা সুরুতে এমন বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে যে, জোয়ানকালে আমি যাদেরকে দেখেছি, তারা এখন দাদা নানার পর্যায়ে। না চেনারই কথা। তারপরেও কাউকে কাউকে আমি চিনতে পারছিলাম। গ্রামের বাড়িটা খা খা করছে, কেউ থাকে না এখানে। আগে মা থাকতেন, এখন থাকে আমার এক ভাগ্নে যে সারাদিন গাজা খায়।
ভাবলাম, আমার এক খালা ছিলো। নাম সফুরা বেগম। উনি কি জীবিত আছেন নাকি আর জীবিত নাই সেই খবরটাও আমার জানা নাই। তাঁকে খুব দেখতে মন চাইলো। মিটুলকে বললাম, চলো একটা বাড়িতে যাই। যদি উনি বেচে থাকেন, তাহলে মায়ের অভাবটা কিছুটা হয়তো পুরন হবে। আর যদি জীবিত না থাকেন, অন্তত জানতে পারবো, কবে থেকে আর তিনি এই পৃথিবীতে নাই। আলুকান্দা তার বাড়ি। অনেক খোজাখুজির পর শেষ অবধি সফুরা খালার বাসায় যেতে পারলাম। তিনি অসুস্থ্য। জর। একটা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন। চার পাঁচ দিন নাকি তিনি কিছুই খাচ্ছেন না। অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমার মা যখন বেচে ছিলেন, তখন আমার এই খালা প্রায়ই আমার মায়ের সাথে দেখা করতেন, গল্প করতেন। আমাকে খুব আদরও করতেন। আসলে আমার মা, আমার সামিদা খালা আর এই সফুরা খালা এতোটাই ভালো আর নীরিহ মানুষ ছিলেন যে, তাদের ব্যাপারে আজ অবধি কেউ কোনো অভিযোগ করেছে সে ঘটনা ঘটে নাই। খালাকে ডাকা হলো। উনি ভালো মতো চোখে দেখেন না। এম্নিতেই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিলো, তারমধ্যে আবার আকাশ ছিলো খুব মেঘাচ্ছন্ন। বিদ্যুৎ ছিলো না। কোন রকমে খালাদের বাসায় যাওয়ার পর, আমি খালার বিছানায় গিয়ে বসলাম। খালাকে তার পুত্রবধুরা ডেকে তোলার চেষ্টা করলেন। আমাই যাওয়াতে সবাই অনেক খুশী হয়েছে। কি থেকে কি করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।
খালাকে যখন আমি বললাম, আমি মেজর আখতার এসছি। খালা এম্নিতেই কানে কম শুনে মনে হয়, তার মধ্যে আমার নাম শুনে যেনো একটা অদ্ভুত মিথ্যা কথা শুনলেন এমন হলো। বল্লো-
কে? হামিদার ছেলে?
বললাম, হ্যা খালা।
উনার জর ছিলো প্রায় ১০৩ ডিগ্রী। আমার কথা শুনে তিনি বিছানা থেকে উঠে বসলেন। খালা প্রায় গত চার পাঁচ দিন বিছানায় উঠে বসতে পারেন না। কিন্তু আজ যেনো কোন অলৌকিক শক্তিতে তিনি একাই বিছানায় উঠে বসে পড়লেন। আমি খালাকে জড়িয়ে ধরলাম, খালাও আমাকে এমন করে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলেন যেনো এইমাত্র বাইরের মেঘাচ্ছন্ন আকাশটা ঘনকালো ঝপ ঝপ বৃষ্টিতে ভিজিয়ে দিলো সারাটা উঠান।
কতটা আদর? কিভাবে আদর করলে ভালোবাসা হয় মায়েদের? আমার সেটা জানা ছিলো। আমার মাও ঠিক এভাবেই আমাকে আদর করতেন। আমার মুখে দুই হাত দিয়ে একদম চোখের কাছে আমার মুখটা নিয়ে পানভর্তি মুখে ভিজা ভিজা চোখে ফিক করে হেসে দিয়ে বলতেন, অনেক বড় হ বাবা। আমার দোয়া আর দোয়া রইলো। সফুরা খালার ভাষাও এক। কি অদ্ভুদ। আমি তাঁকে কতোক্ষন জড়িয়ে ধরেছিলাম, আমার জানা নাই। সারাটা শরীর হাড্ডি, মাংশ বলতে কিছুই নাই। গরীব ছেলেপেলেরা যতোটা পারে তাদের মায়ের যত্ন নেয় বটে কিন্তু অন্তরের ভালোবাসায় হয়তো অনেক ঘাটতি আছে। তারপরেও তিনি বেচে আছেন যেটুক পান সেটা নিয়েই।
আমার মায়ের বাবার নাম ছিলো কেরামত আলী। আমার মায়ের কোনো ভাই ছিলো না। মাত্র দুইবোন- হামিদা খাতুন আমার মা আর সামিদা খাতুন আমার আপন খালা। কিন্তু সফুরা খালার বাবার নাম ছিলো চেরাগ আলি। তারও কোনো ভাই অথবা কোনো বোন ছিলো না। তিনি একাই একমাত্র কন্যা সন্তান ছিলেন চেরাগ আলীর। এই চেরাগ আলি এবং কেরামত আলি (মানে আমার নানারা) ছিলেন চার ভাই। অন্যান্য আর দুই ভাই ছিলেন সাবেদ আলি এবং লষ্কর আলী। উম্মেদ আলী ছিলেন এই চার ভাইয়ের বাবা। অর্থাৎ আমার মা খালাদের নানা।
আজ তারা কেহই বেচে নাই। শুধুমাত্র আমার সফুরা খালাই বেচে আছেন কালের সাক্ষী হয়ে। খুব ভালোবাসি আমি তোমাদের।
২২/০৬/২০২১-দ্বিমুখী জীবন
You are required to login to view this post or page.
২১/০৬/২০২১- মৃত্যু
মৃত্যুকে মানুষ আধারের সাথে তুলনা করে থাকে। কিন্তু এই আধার কোনো কালো রাত কিংবা অমাবশ্যার নিশি বা দিনের আলোর অভাবে নয়। যা চোখে দেখা যায় না, যার ব্যাপারে আমাদের মন এবং মস্তিষ্ক কোনো ধারনা করতে পারে না, আমাদের কাছে সেটাই একটা আধারের মতো। এই আধার কিন্তু অন্ধকার নয়, এটা এমন একটা আধার যার কোনো রং নাই, যার কোনো বর্ননা আজো কেউ দিতে পারে নাই। মানুষের হাজারো শখ থাকে। বেচে থাকার শখ, সম্পদশালী হবার শখ, অনেক ক্ষমতাধর হবার শখ, কিন্তু আজো পর্যন্ত কেউ এটা শখ করে নাই যে, সে মরতে চায়। যারা আত্তহত্যা করে, তারা ইমোশনাল, তারা শখের বশে মরনকে বরন করে না। মৃত্যু কোনো ইচ্ছে নয় যে, পুরন হবে কি হবে না, মৃত্যু তো একটা সত্য, একটা লক্ষ্য যেখানে সবাইকে যে কোনো মুল্যেই পৌছাতে হবে। আর ওখানকার সমন, গাড়ি অথবা বাহক কখন আসবে, সেটা তো কেহই বলতে পারে না। এই মৃত্যু অনেক সম্পর্ক ছেদ করে আবার এই মৃত্যুই অনেক নতুন সম্পর্ক তৈরী করে। কখনো কখনো মৃত্যুটাই যেনো অনেক সমস্যার সমাধান নিয়ে আসে। যদিও যার বেলায় ঘটে সে সমস্যা ছিলো না।
মৃত্যুর কারনে এমনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যেখানে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় অথবা মেনে নিতে শিখতে হয়। হোক সেটা ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। যখন কোনো মানুষ কিছুই না বলে সে তার পরিবার থেকে হটাত করে উধাও হয়ে যায়, তখন ব্যাপারটা অনেক দুসচিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়। এটা আরো বেশী করে দুশ্চিন্তায় ভোগায় যখন এটা জানা যায় যে, যে মানুষটি চলে গেছে সে সব দিক থেকে অশান্তিতেই ছিলো।
কিন্তু কোনো মানুষ যখন কাউকে না বলে চিরতরে আমাদের জীবন থেকে চোখের সামনে মৃত্যুর থাবায় হারিয়ে যায়, আর আমরা তাকে চোখের জলে ভিজিয়ে বিদায় জ্ঞাপন করি, তখন হয়তো তার দ্বারা কোনো ভুল পদক্ষেপের দুশ্চিন্তা আমাদের গ্রাস করে না, কিন্তু তার চলে যাওয়ায় যারা বেচে থাকেন তাদের জীবনে আমুল পরিবর্তন নেমে আসে বলে মাঝে মাঝে মনে হয় রাস্তাটা অন্ধকার, জীবনটা ভয়ংকর এবং আমরা সর্বত্রই একা। তখন একটা দিনও যেনো আমাদের ঠিকঠাক কাটতে চায় না। এমন কি একটা রাতও না। এই সময়ে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়। মেনে নিতে শিখতে হয়। অন্যদিকে দিনের আলোতে এই পার্থিব জগতে বসে মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে কোনো ধারনাই করা সম্ভব হয় না আমাদের অথচ মৃত ব্যক্তির যাত্রার শুরু থেকে শেষ অবধি রাস্তাটা তার কাছে হয়তো আমাদের থেকেও ভয়ংকর আর বিভীষিকাময়আরো অন্ধকার। এটা যেনো তার কাছে ঠিক একটা অন্ধকার টানেল, যেখানে মাঝে মাঝে আলো আসে হয়তো কিন্তু সে আলোয় কোনো কাজ হয় কিনা জানা যায় নাই।
এমন অনেক মিথ্যে মৃত্যু আসে কারো কারো জীবনে যেখানে তারা এই পার্থিব জীবনের সাথে সাময়িক সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আরেক কোনো এক অচেনা জগতে বিচরন করতে থাকে। তখন তার আশেপাশে কি হচ্ছে, কারা কি করছে, কিছুই আর তার কাছে পৌছায় না অথচ তার দেহ, তার শরীর পুরুটাই রয়েছে এই পার্থিব জগতে। এই প্রকারের মৃত্যু থেকে ফিরে আসাকে হয়তো বলা যায় কোনো মতে বাচা, হয়তো বা বলা যেতে পারে জীবনের কাছে নিশ্চিত মৃত্যুর পরাজয়, অথবা বলা যেতে পারে যে, জীবনের বেচে থাকার সময়টা এখনো শেষ হয় নাই। যখন এমনটা হয় তখন আমরা কি বলতে পারি যে, সাক্ষাত ম্রতুকে আমরা দেখতে পেয়েছি? এমন অনেক প্রশ্ন থাকতেই পারে কিন্তু আসল মৃত্যু আর মিথ্যা মৃত্যুর মধ্যে নিশ্চয় এমন কোনো ব্যতিক্রম আছে যা প্রকারান্তে একটা মায়াজালের কিংবা মেঘলা আকাশের পিছনে আবছা নীল আকাসের মতো। কেউ কেউ হয়তো বলতে পারে, যদি অন্তরের দৃষ্টি খুলে যায় তখন জীবিত অবস্থায় মৃত্যুকে দেখা যায়। এটা অনেক বড় স্তরের একটা ধ্যান কিংবা আরাধনা। যারা এটাকে লালন করতে পারেন, তারা স্বাভাবিক মানুষ নন। জীবনটা কিভাবে বাচবে সেটা আমাদের হাতে, আমরা জীবনটাকে দেখতে পাই, কিন্তু এটা কিভাবে দেখবো যে, মৃত্যু কখন আর কিভাবে আসবে? সেটা আজ অবধি কেউ বলতে পারে নাই।
অফিসে যাওয়ার সময় যে মানুষটার উপর নির্ভর করে আমার সকাল হতো, রাতে ঘুমানোর আগে যে মানুষগুলির উপর ভরষা করে আমার ভালো ঘুম হতো। কারনে অকারনে যখন তখন আমাদের মেজাজ কখনো ক্ষিপ্ত কিংবা বিক্ষিপ্ত অথবা উদবেলিত হতো, যখন সে আর কাছে থাকে না, তখন অতীতের অনেক কথাই মনে পড়ে। অনেক মায়া লাগে। মনে হয়, সব কিছু থাকা সত্তেও যেনো কোনো কিছুই নাই। এই মায়া, এই ভরষা কিংবা এই বিক্ষিপ্ত চঞ্চলতার আর কোনো মুক্যই থাকে না সেই ব্যক্তির কাছে যে এই মাত্র সবার গোচরেই উধাও হয়ে গেলো চিরতরে। এই পরিবর্তনশীল সময়ে, অনেকেই হয়তো কথায় কথা বলে তারা ভালো আছেন, আমরা ভালো আছি কিন্তু তারা কিংবা আমরা জানিই না যে, আমাদের সময়টাই যে খারাপ যাচ্ছে। খুব মায়া হয় তখন। কিন্তু কেনো মায়া হয়, তার উত্তর আজো জানি না। যা হাতের মুঠোয় নাই, যা চিরতরে হারিয়ে যায়, অথচ একদিন হাতের কাছেই ছিলো, সেটার জন্য কেনো মায়া হয়, কেনো কষ্ট হয়, কেনো আবার ফিরে পেতে ইচ্ছে হয়, তার ব্যাখ্যা নাই আমাদের কাছে। এর কিছু ব্যাখ্যা হয়তো দাড় করানো যায় যে, হয়তো পুরানো অভ্যাসে বন্দি মন বারবার আবার সেই পুরানো খাচায়ই ফিরে আসতে চায়। অথবা এমনো হতে পারে যে, কেউ যখন আর কাছে থাকে না, তখন হয়তো এটা পরিষ্কার বুঝা যায় নিজের কতগুলি স্বকীয়তা, অভ্যাস আর পছন্দ কতো নিঃশব্দে সেই চলে যাওয়া মানুষটি নিয়ে অন্তর্ধান হয়ে গেলো, সাথে নিয়ে গেলো তার থেকে ধারে নিয়ে বেচে থাকার আমাদের অনেক পরনির্ভরশীলতার অভ্যাসগুলিও। আর সেটা যখন পরিষ্কার হয় তখন অভাবগুলির সংকট দেখা দেয়। আমরা বিচলিত হই, ভয় পাই, কষ্টে থাকি আর তখনই তার অভাবে আমরা তার উপর মায়ায় চোখ ভিজিয়ে দেই।
তবে আজীবন একটা সত্য বচন এই যে, জীবন মানেই যাত্রা, আর এই যাত্রার শেষ প্রান্তেই থাকে মৃত্যু। অর্থাৎ জীবনের অবসানেই মৃত্যুর যাত্রা শুরু। এই নতুন পর্বের যাত্রা কখন কার কোন সময় শুরু হবে, এটা কোনো বিজ্ঞান, কোনো ডাক্তার, কোনো ধর্ম পুস্তক কিংবা কোনো ধ্যান কখনোই বলতে পারে না।
১১/০৬/২০২১-কালো
Categories
কালোর মতো কোনো রং নেই। কিন্তু এমন কিছু কি আছে যা কালোকে সাদা করতে পারে? আসলে কোনো জিনিষ সাদা বা কালো হয় না। সবটাই আলোর খেলা। কিন্তু এই কালোই যখন কোনো মানুষের গায়ের রং হয় তখন এটা সবচেয়ে বিড়ম্বনার একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। কোনো কালো মানুষের গল্পের কাহিনী যদি কেউ শোনেন, দেখা যাবে গায়ের রং এর কালো মানুষের গল্পটা সবার থেকে আলাদা বিশেষ করে সেই ব্যক্তিটি হয় কোনো মেয়ে মানুষের গল্প। কালো মেয়েদের অনেক কথা তাদের মনেই রয়ে যায়। কাউকে তারা বলতেও পারে না। কে শুনবে তাদের কথা? মেয়েরা কালো হলে সেই ছোট বেলা থেকেই সমাজের সবার আকার- ইংগিতের ভাষায় তারা এটাই মনে করতে থাকে যে, কালো মুখ একটা অপয়ার ছায়া যেনো। আর এই অপবাদ থেকেই তাদের মনে এবং মস্তিষ্কে হীন মন্যতা বাসা বাধে। তাদের নিজের উপর নিজেদের কনফিডেন্স কমতে থাকে। অথচ এই কালো হয়ে জন্মানোর পিছনে তাদের না আছে কোনো হাত, না আছে তাঁকে পরিবর্তন করার কোনো ক্ষমতা। কালো রং, বা শ্যামলা রং যদি অভিশাপই হতো তাহলে “কৃষ্ণের” কালো রং কোনো অভিশাপ নয় কেনো? এই কালো ক্রিষনকে তো তার সমস্ত কালো রং নিয়েও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ তাঁকে সম্মান করে, ভালোবাসে, পুজা করে। কিন্তু দূর্ভাগ্যের ব্যাপার এটাই যে, কৃষ্ণ ছাড়া পৃথিবীর তাবদ মেয়ে মানুষকে এই কালো রং কে মানুষ তাদের ঘাটতি হিসাবেই দেখা হয়। ফলে নিজের কালো রং এর কারনে অনেক মানুষ ধীরে ধীরে সমাজের সবার কাছেই তাচ্ছিল্যের একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এমনো ধারনা করা হয় যে, ফর্সা মানে সুন্দর আর কালো মানে কুৎসিত। ছেলে সে যতোই কুৎসিত হোক না কেনো তার ও ফর্সা মেয়ে চাই, আর যদি কোনো মেয়ের গায়ের রং হয় কালো, তার তো এম্নিতেই হাজার সমস্যা, তার আবার কালো আর ধলা ছেলে পাওয়ার কোনো স্প্রিহাই তো নাই।
কালো পোষাক পড়লে আমরা নিজেকে সুন্দর মনে করি, কালো টিপকে আমরা শুভ বলে মানি। কথায় আছে কালো টিপ কুনজর থেকে বাচায়। মুখের উপর কালো তিলে আমাদেরকে সুন্দর দেখায়। কিন্তু কোনো মানুষের গায়ের রং যদি কালো হয় তাহলে তাঁকে আমরা কুৎসিত বলতে দ্বিতীয়বার ভাবি না। খুবই আসচর্জ চিন্তাধারা।
সউন্দর্জ আসলে কোনো রং নয়। অথচ এই সউন্দর্জ যেনো সব নির্ভর করে কালো ছাড়া অন্য আর সব রং এর উপরে। কেনো? এর উত্তর একটাই- আমরা কালো আর সুন্দর্জের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি না। যখন চোখ শরীর থেকে মনের ভিতরে যায়, তখন মানুষের মনের ভিতরের সউন্দর্য দেখা যায়। আমাদের এই ক্ষমতা সবার থাকে না কিভাবে আমাদের চোখ শরীর থেকে মনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। আমাদের নিজের এই গুনের অভাবেই আমরা কোনো কালো মেয়ের ভিতরের রুপ দেখতে পাই না আবার এটাও পাই না যে, কোনো ফর্সা মেয়ের মনের ভিতরে কতটা কুৎসিত চরিত্র রয়েছে। আর দেখতে পাই না বলেই কোনো কালো মেয়ে কারো জীবনে অন্ধকার মনে হয় আর কারো কাছে সে আলোর দুনিয়ার মতো একেবারে পরিষ্কার। আসলে গায়ের রং নয়, যার কর্মকান্ড কালো, সেইই কালো। কালো গায়ের রং কোনোভাবেই দুনিয়ায় অশুভ হতে পারে না।
এটা খুবই জরুরী যে, আমরা এই রং বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আসি, নিজের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসি যাতে প্রকৃতির তৈরী সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি মানুষ তাঁকে দেখতে যেমনি হোক না কেনো তাঁকে সম্মান করি।
টাইটানিক ট্র্যাজেডির শতবর্ষ
এম এ মোমেন
ঢাকা, শনিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১২, ১ বৈশাখ ১৪১৯, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩
“শতবর্ষ আগে মহাসমুদ্রের বিস্ময় টাইটানিক উদ্বোধনী যাত্রায় সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের পথে চতুর্থ দিন ১৪ এপ্রিল ১৯১২ রাত ১১টা ৪০ মিনিটে আটলান্টিকের ঘাতক আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষে বিপন্ন হয়ে পড়ে। অবিরাম এসওএস বার্তা যেতে থাকে টাইটানিক থেকে। দুই ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর রাত দুইটা ২০ মিনিটে (তখন ১৫ এপ্রিল) প্রযুক্তির উৎকর্ষ এবং অহংকার নিয়ে টাইটানিক আটলান্টিকে তলিয়ে যায়। টাইটানিকের এক হাজার ৫১৭ জন শীতার্ত যাত্রী ও ক্রু ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতার সমুদ্রজলে অসহায় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
হোয়াইট স্টার লাইনারের সঙ্গে বেলফাস্টের জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হারল্যান্ড এন্ড ওলফের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ১৮৬৭ সাল থেকে। এই প্রতিষ্ঠানেরই তৈরি তিনটি অলিম্পিক ক্লাস জাহাজ; হোয়াইট স্টারের চেয়ারম্যান ব্রুস ইজমে এবং মার্কিনি তহবিলদাতা জে পি মর্গানের ইচ্ছায় এবং উদার ব্যয়ে টাইটানিক হয়ে ওঠে সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে বিলাসবহুল জাহাজ। কেবল সমুদ্রের বিস্ময় নয়, এটাকে মনে করা হয় মর্ত্যের সুন্দরতম ভাসমান প্রাসাদ।
স্পেশাল লাক্সারি স্যুটসহ ‘এম্পায়ার স্টাইল’ প্রথম শ্রেণীর ধারণক্ষমতা ৭৩৯ জন যাত্রী, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৬৭৪ জন এবং তৃতীয় শ্রেণীর এক হাজার ২০ জন; জাহাজের ক্রু সদস্য ৯০০; সব মিলিয়ে ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে ধাবমান টাইটানিক তিন হাজার ৩৩৯ জনকে তাঁদের মালামালসহ পরিবহন করতে সক্ষম এবং ঘোষণা করা হয় আরএমএস টাইটানিক আনসিংকেবল—কখনো ডুববে না। ২ এপ্রিল ১৯১২ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ৩১ মে ১৯১১ সাল। দুপুর সোয়া ১২টায় যখন টাইটানিককে সমুদ্রে ভাসানো হয়, তা দেখতে জড়ো হয়েছিল এক লাখ দর্শক। নিউইয়র্কের পথে প্রথম যাত্রায় ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড জন স্মিথের নেতৃত্বে ৮৮৫ জন ক্রু জাহাজে আরোহণ করেন। যাত্রী ছিলেন এক হাজার ৩১৭ জন (প্রথম শ্রেণী ৩২৪, দ্বিতীয় শ্রেণী ২৮৪ এবং তৃতীয় শ্রেণী ৭০৯); ধারণক্ষমতার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে টাইটানিকের যাত্রা। ১০ এপ্রিল ১৯১২, দুপুরে সাউদাম্পটন থেকে শুরু হয় পশ্চিমমুখী শুভযাত্রা। শুরুতেই মাত্র চার ফুটের জন্য ‘এসএসসিটি অব নিউইয়র্ক’ জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে সমর্থ হয়। ৭৭ নটিক্যাল মাইল এগিয়ে শেরবুর্গ থেকে ২৭৪ জন যাত্রী তুলে নেয়। ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১১টায় আয়ারল্যান্ডের কর্ক পোতাশ্রয় থেকে জাহাজে ওঠেন ১১৩ জন তৃতীয় শ্রেণীর এবং সাতজন দ্বিতীয় শ্রেণীর যাত্রী। তারপর তিন দিন কেবল অবিরাম সাগরে চলা। ১৪ এপ্রিল রাতেই আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে এবং বিশ শতকের অন্যতম প্রধান সামুদ্রিক ট্র্যাজেডি।
তারপর আটলান্টিকের অতলে টাইটানিকের অবস্থান জানার চেষ্টা চলতে থাকে বছরের পর বছর। ১৯৮৫ সালে এর অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। আনসিংকেবল টাইটানিক এখন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ৬০০ ফুট নিচে আটলান্টিকের তলদেশে স্থির হয়ে আছে। দ্বিখণ্ডিত জাহাজটির দুটো টুকরো ১৯৭০ ফুট দূরে অবস্থান করছে। টাইটানিকের সম্মুখভাগ সমুদ্রতলে ৬০ ফুট মাটির গভীরে প্রোথিত। ১৪ জুলাই ১৯৮৬, ঘটনার ৭৪ বছর পর টাইটানিক পুনরাবিষ্কৃত হয়। টাইটানিক থেকে উদ্ধার পাওয়া বয়োকনিষ্ঠ যাত্রী মিলভিনা ডিনের বয়স তখন মাত্র নয় সপ্তাহ। ৩১ মে ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর টাইটানিক থেকে বেঁচে যাওয়া আর কেউ জীবিত রইলেন না।
টাইটান না টাইটানিকঃ মর্গান রবার্টসনের উপন্যাস ফিউটিলিটি—দ্য রেক অব দ্য টাইটান প্রকাশিত হয় ১৮৯৮ সালে। টাইটান মানুষের তৈরি সর্বশ্রেষ্ঠ ভাসমান জলযান; এটি সর্ববৃহৎ জাহাজও। বিলাসিতার মাপকাঠিতে প্রথম শ্রেণীর হোটেলের যত আয়োজন, তার কোনোটির কমতি নেই টাইটানের কেবিনে।টাইটানের নির্মাণে ব্যবহূত হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এই জাহাজে ১৯টি ওয়াটার-টাইট কম্পার্টমেন্ট। এ বিস্ময়কর জাহাজ কখনো ডোবার নয়। টাইটানের যাত্রী ও ক্রু ধারণক্ষমতা তিন হাজার; পুরোটাই যাত্রীবোঝাই ছিল।যেহেতু এ জাহাজ ডোবার নয়—লাইফবোটের প্রয়োজন নেই। তবু বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ২৪টি বোট টাইটানে রাখা ছিল।উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষে টাইটান ডুবে যায়। মৃত্যু হয় দুই হাজার ৯৮৭ জন যাত্রী ও ক্রুর।মর্গান রবার্টসনের কল্পলোকের টাইটান এবং বাস্তবের টাইটানিক ট্র্যাজেডির কিছু সাদৃশ্য বিস্মিত না করে পারে না।
আলফ্রেড রোর অমঙ্গল আশঙ্কা!
সাউদাম্পটন বন্দর ছেড়ে ফ্রান্সের শেরবুর্গ হয়ে টাইটানিক পৌঁছায় দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের কুইন্সটাউন বন্দরে। কিন্তু অতিকায় টাইটানিকের জন্য জাহাজঘাটটি ছোট এবং বন্দরের জলসীমার গভীরতাও কম। সুতরাং, সমুদ্রেই নোঙর ফেলল টাইটানিক। ছোট জাহাজে করে যাত্রীদের বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়, যাত্রীরা কিছুটা সময় ঘুরেফিরে কেনাকাটা করে, চা খেয়ে আবার ফিরে আসে টাইটানিকে। এদের একজন আলফ্রেড রো, অন্যদের সঙ্গে তিনি নেমেছিলেন। জাহাজে বসে স্ত্রীকে একটি চিঠি লিখে বন্দরের পোস্ট অফিসে দিয়ে জাহাজে ফিরে আসেন।
চিঠিতে টাইটানিকের বিস্ময় নিয়ে কোনো জাঁকালো বর্ণনা দেননি, বরং লিখেছেন, জাহাজটি বাড়াবাড়ি রকমের বড় এবং এতে বিপদের ঝুঁকি আছে। জাহাজ ছাড়ার পর পরই টাইটানিকের উত্তাল ঢেউয়ে অপেক্ষমাণ জাহাজ এসএস নিউইয়র্ক নোঙর ছিঁড়ে টাইটানিকের ওপর এসে পড়েছিল প্রায়, সংঘর্ষ হলে টাইটানিকের বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত, সে কথা লিখলেন রোর। টাইটানিক তাঁর পছন্দ হয়নি। তবে টাইটানিকের টার্কিশ বাথ তিনি বেশ উপভোগ করেছেন।
‘অন বোরড্ আরএনএস টাইটানিক’ শিরোনামের প্যাডে আলফ্রেড রো তাঁর স্ত্রী কনস্ট্যান্সকে চিঠিটি লিখেছিলেন ১১ এপ্রিল ১৯১২; টাইটানিকের প্রথম শ্রেণীর যাত্রী ছিলেন তিনি, বয়স ৫৯, ব্রিটিশ ব্যবসায়ী, বাড়ি ইংল্যান্ডের লিভারপুলে।
ধারণা করা হয়: টাইটানিক যখন ডুবে যাচ্ছিল, আলফ্রেড সাঁতরে আইসবার্গের এক খণ্ড বরফের ওপর উঠতে পেরেছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ তাঁর বরফশীতল জমাট দেহ উদ্ধার করে।২০০৭ সালে টাইটানিক ট্র্যাজেডির ৯৫তম বছরে আলফ্রেড রোর চিঠি এবং কনস্ট্যান্স রোর ডায়েরি নিলামে ওঠে।
অসংখ্য ‘যদি’ কান্নায় ভেসে আসে
যদি যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে শুরুতেই যাত্রা কয়েক ঘণ্টা পিছিয়ে যেত? যদি আকাশে নতুন চাঁদ না হয়ে পূর্ণিমা রাত হতো—আইসবার্গ তো খালি চোখেই দূর থেকে দেখা যেত।
যদি ৫০টা লাইফবোট থাকত?
টাইটানিক ইজ ইন ডেঞ্জার
বিপদ আঁচ করার পর রেডিও অপারেটর বিলম্ব করেননি। ‘এসওএস টাইটানিক ইজ ইন ডেঞ্জার হেল্প হেল্প এসওএস’—বারবার এই বার্তা পাঠাতে থাকেন। ততক্ষণে ওয়াল্টার লর্ডের বর্ণনা অনুযায়ী, টাইটানিকের বেতারকক্ষে বরফশীতল পানি ঢুকতে শুরু করে। যখন অপারেটরের কোমর পর্যন্ত পানির নিচে তখনো তিনি এসওএস পাঠিয়েই যাচ্ছেন। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২০ মিনিট দূরত্বে বিশাল জাহাজ কালিফোর্নিয়ান অবস্থান করছিল, কিন্তু রেডিও সিস্টেম বন্ধ করে ঘুমিয়ে ছিলেন ওই জাহাজের অপারেটর। বার্তা পেয়েছিল অনেক দূরের একটি জাহাজ, কার্পাথিয়া। কার্পাথিয়া সর্বোচ্চ গতিতে এগোতে থাকে টাইটানিকের দিকে। কিন্তু টাইটানিক যে অনেক দূরে!
টাইটানিকের শিশু
উদ্ধারকারী জাহাজ ম্যাকে বেনেটের সাহসী নাবিকেরা আটলান্টিকে তলিয়ে যাওয়া অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করেন। অনেককেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়। যাদের শনাক্ত করা যায়নি, তাদের একজন পশমি জ্যাকেট পরা একটি শিশু। কেউ এই শিশুর স্বজন এ দাবি নিয়ে এগিয়ে আসেনি। ফলে এই অশনাক্ত টাইটানিক শিশু হ্যালিফ্যাক্সে সমাহিত হয় ‘অচেনা শিশু’ হিসেবে। লেকহেড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওন্টারিও, নৃতাত্ত্বিক রায়ান পার এবং লেখক অ্যালান রাফম্যানের সম্মিলিত চেষ্টা জনগণের বাধার মুখে কবর খনন করে ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের একাংশ নিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। শিশুটির তিনটি দাঁত ছিল। কবরে একটি লকেটও পাওয়া যায়—লকেটে লেখা ‘আওয়ার বেবি—আমাদের শিশু’। অনুমান করা হয়, এই লকেটটি মৃতদেহ সমাহিত করার সময় শিশুটির সঙ্গে দেওয়া হয়। সম্ভাব্য অনেকের সঙ্গে মিলিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পর বের হয় এই শিশুটির নাম ইনো। তার বাবা, মা ও চার ভাইও একই সঙ্গে আটলান্টিকে সমাহিত। ১৩ মাস বয়সী এই মেয়েটি ছিল ফিনল্যান্ডের।
একটি বিস্ময়কর টাইটানিক গল্প
নারী ও শিশুদের জন্য লাইফবোট। এই আইন মেনে নিয়েছে সবাই। কিন্তু মানেনি এর মধ্যেও শ্রেণীবৈষম্য। টাইটানিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রায় সব শিশুকেই বাঁচানো হয়েছে, কিন্তু তৃতীয় শ্রেণীর ৭৬ জন শিশুর মধ্যে বেঁচেছে মাত্র ২৩ জন, ৬০ শতাংশ তলিয়ে গেছে আটলান্টিকের গভীরে। জেরোম বার্ক নামের বালকটির জন্ম কর্ক সিটির কাছাকাছি গ্লেনমায়ারে। তার দুই বোন আমেরিকায় চলে গেছে। জেরোমও যেতে চায়। ঠিক করেছে ১৯১২-এর বসন্তকালে যাবে। এদিকে আরেক বোন নোরার বন্ধুত্ব টাইটানিকের টিকিট অফিসের একজন চেকারের সঙ্গে। ছোট ভাইটির জন্য নিজেই বিস্ময়কর জাহাজ টাইটানিকের উদ্বোধনী যাত্রার টিকিট কিনে দেয়। জেরোম কুইন্সটাউন থেকে জাহাজে উঠবে। তার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে।বাড়ি থেকে কুইন্সটাউনের পথে বের হওয়ার আগে প্রতিবেশী মিসেস ম্যাক ও কোনেল এক বোতল পবিত্র জল নিয়ে এলেন। এর খানিকটা একটা ছোট বোতলে ভরে ছেলেকে দিলেন, ছেলে সঙ্গে নেবে। এক বছর আগে নোরা যখন লাউস সফরে যায়, তখন এই বোতলটি কিনেছিল। জাহাজ কর্ক উপকূলে কুইন্সটাউন বন্দর থেকে ছেড়ে দিল। তার পরের অংশ তো জানাই। ১৪ এপ্রিল রাতে আইসবার্গের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে টাইটানিক ডুবে যেতে থাকে। আড়াই ঘণ্টা পর জাহাজটি দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যায় আটলান্টিকের তলদেশে। তখন ১৫ এপ্রিল। আরও অনেকের মতো জেরোমের পরিবারের সদস্যরা আটলান্টিকের এপারে ওপারে দিন গুনতে থাকে—জেরোম নিশ্চয়ই বেঁচে আছে। তারপর ভিন্ন প্রত্যাশা—নিশ্চয়ই জেরোমের মৃতদেহটা পাওয়া যাবে। তারপর সব আশা ফুরিয়ে আসে—জেরোম চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে মহাসাগরের অজানা গহিনে। ১৯১৫-এর গ্রীষ্মে ডানকেটল সৈকতের কাছে কুকুর নিয়ে হাঁটার সময় একটি ভিন্ন ধরনের বোতল পান। বোতলের ছিপি খোলার পর ভেতরে একটি প্যাঁচানো কাগজে পেনসিলে লেখা:
১৩/৪/১৯১২,টাইটানিক থেকে সকলকে বিদায় গ্লেনমেয়ারের বার্কদের
কর্ক
ঔৎসুক্য ও গবেষণায় বেরিয়ে এল, বোতলটি সেই পবিত্র জলের, হাতের লেখা জেরোমের। তবে তারিখ লিখতে সম্ভবত সে ভুল করেছে, ১৪ এপ্রিলের বদলে লিখেছে ১৩ এপ্রিল। হয়তো ভালো করে ছিপি এঁটে নিজেই নিক্ষেপ করেছে আটলান্টিকে। তিন হাজার মাইল পরিভ্রমণ করে বোতল ফিরে এসেছে কর্ক বন্দর হয়ে জেরোমের জন্মস্থানে। ১৪ মাস পর বোতলটি মানুষের হাতে পড়েছে। জেরোমের কোনো সমাধি নেই। জেরোমের মা সন্তুষ্ট, অন্তত তার একটা কিছু তো পাওয়া গেছে।
ঘাতক আইসবার্গ
যে আইসবার্গের সঙ্গে সংঘর্ষে টাইটানিকের এই ভয়াবহ পরিণতি, তা কিন্তু অতিকায় নয়। জাহাজটির চেয়ে আকারে অনেক ছোট।যাত্রাপথে যে আইসবার্গ রয়েছে টাইটানিক এ ধরনের ছয়টি সতর্কবার্তা পায়। কিন্তু বেতার অপারেটর যাত্রীদের ব্যক্তিগত বার্তা পাঠানো নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে সতর্কবার্তা আমলে নেননি। যে আইসবার্গের সঙ্গে টাইটানিকের সংঘর্ষ হয় তা আর সব আইসবার্গের মতো সাদা বর্ণের ছিল না। রাতের আকাশে আইসবার্গের প্রতিবিম্বজনিত কালো ছায়ার কারণে এ ধরনের আইসবার্গকে ব্ল্যাকবার্গ বলা হয় এবং খুব কাছাকাছি স্থান থেকেও দেখা যায় না। টাইটানিকের বেলায় আইসবার্গ দেখা ও সংঘর্ষের মাঝখানে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার মতো সময় ছিল মাত্র ৩৭ সেকেন্ড।
টাইটানিক যেন ভাসমান রাজপ্রাসাদ
এমন বিশাল ও জৌলুশপূর্ণ জাহাজ পৃথিবীতে একটিই। টাইটানিককে যাঁরা মহাসাগরের বুকে একটি রাজপ্রাসাদ আখ্যা দিয়েছেন, তাঁরা সে সময়ের প্রেক্ষাপটে খুব বাড়িয়ে বলেননি।
৮৮২ ফুট ছয় ইঞ্চি দীর্ঘ জাহাজটি তিনটি ফুটবল মাঠেরl সমান। তলা থেকে চূড়া পর্যন্ত টাইটানিক ১৭৫ ফুট উঁচু। মোট নয়টি ডেক, কিংবা বলা যায় নয়তলা।
টাইটানিকের ইঞ্জিন প্রতিদিন ৮০০ টন কয়লা পোড়ায়। জাহাজটি সর্বোচ্চ ২৪ নটিক্যাল মাইল কিংবা ঘণ্টায় ২৭ মাইল বেগে ছুটতে পারে।
জাহাজের প্রতিটি কক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে, ১০ হাজার আবশ্যকীয় বাল্ব সংযোজন করা হয়েছে।
জাহাজে উষ্ণজলের একটি সুইমিংপুল, একটি জিমনেশিয়াম, দুটো পাঠাগার, এবং দুটো চুল কাটার সেলুন রয়েছে।যাত্রী ও ক্রুদের খাওয়াতে টাইটানিকের দরকার হতো ৭৫ হাজার পাউন্ড ওজনের মাংস, ১১ হাজার পাউন্ড মাছ এবং ৪০ হাজার ডিম।
জাহাজ পরিবহন করছে ৪০ মেট্রিক টন আলু, তিন হাজার ৫০০ পাউন্ড পেঁয়াজ, ৩৬ হাজার আপেল এবং এক হাজার পাউরুটি। যাত্রী ও ক্রুদের প্রতিদিনের খাওয়ার পানির পরিমাণ ১৪ হাজার গ্যালন।
তিন হাজার শ্রমিকের দুই বছরের শ্রমে নির্মিত হয়েছে টাইটানিক। নির্মাণকালে পাঁচজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
টাইটানিকের নির্মাণব্যয় হয়েছে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার।টাইটানিকের চার ফানেলের তিনটি ছিল ধোঁয়া নির্গমনের জন্য, আরেকটি ছিল অপ্রয়োজনীয়, যা কেবল ফ্যাশন হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে।
টাইটানিক-কাহিনি নিয়ে জেমস ক্যামেরন নির্মাণ করেছেন বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যসফল ছবি টাইটানিক।
সাত খ্যাতিমান, যাঁদের টাইটানিকে চড়া হয়নি
থিওডোর ড্রেইসার
ঔপন্যাসিক থিওডোর ড্রেইসার ইউরোপে ছুটি কাটিয়ে টাইটানিকে আমেরিকা ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু একজন ইংরেজ প্রকাশক সস্তায় অন্য আরেকটি জাহাজে যাওয়ার পরামর্শ দেন।থিওডোর ড্রেইসার ক্রুনল্যান্ড জাহাজে টাইটানিক দুর্ঘটনার খবর শোনেন।
বেতার আবিষ্কারক মার্কনি
রেডিও আবিষ্কারক এবং ১৯০৯ সালে নোবেল বিজয়ী মার্কনিকে টাইটানিকের ফ্রি টিকিট অফার করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি টাইটানিকের তিন দিন আগে লুসিতানিয়া নামের আরেকটি জাহাজে রওনা হন। কারণ, জাহাজে তাঁর লেখালেখির ব্যাপার ছিল এবং সে জন্য একজন পেশাদার স্টেনোগ্রাফারেরও প্রয়োজন হয়। আর এ জন্য লুসিতানিয়াতে ভ্রমণই তিনি বেছে নেন।
ধনকুবের মিলটন হার্শে
হার্শের মিল্ক চকলেট, সিরাপ ইত্যাদি প্রস্তুতকারক মিলটন হার্শে শীতকালটা ফ্রান্সে কাটিয়ে আমেরিকা ফেরার জন্য টিকিট কিনেছিলেন। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে তিনি ও তাঁর স্ত্রী জার্মান জাহাজ আমেরিকায় চড়ে আগেই রওনা হয়ে যান। এই আমেরিকাই টাইটানিকে বার্তা পাঠিয়েছিল যে পথে আইসবার্গ রয়েছে।
ধনকুবের জে পি মর্গান
ওয়াল স্ট্রিটের নেপোলিয়ন’ নামে খ্যাত, জেনারেল ইলেকট্রিক ও ইউএস স্টিলের প্রতিষ্ঠাতা জেপি মর্গান টাইটানিক জাহাজের সমুদ্রে ভাসানোর উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন। জাহাজে তাঁর জন্য একটি ব্যক্তিগত স্যুটের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু ফ্রান্সে সকালে শরীর ম্যাসাজ করা বাকি রেখে টাইটানিকের যাত্রী হতে আগ্রহী হননি।
আলফ্রেড ভ্যানডারবিল্ট। ৩৪ বছর বয়স্ক মাল্টিমিলিয়নিয়ার, খেলোয়াড় এবং ভ্যানডারবিল্ট শিপিং ও রেল বাণিজ্যে উত্তরাধিকারী বিশেষ কারণে শেষ মুহূর্তে বুকিং বাতিল করেন। কিন্তু ব্যাপারটা এত দেরিতে করেন যে যাত্রীতালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে মৃতের তালিকায় কোনো কোনো পত্রিকা তাঁর নামও ছেপে দেয়। তিন বছর পর লুসিতানিয়া জাহাজ ডুবে গেলে আলফ্রেড ভ্যানডারবিল্ট মৃত্যুবরণ করেন।
নোবেল বিজয়ী জন মট
টাইটানিক ডোবার অনেক বছর পর ১৯৪৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী জন মট উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন হোয়াইট স্টার লাইনের ফ্রি টিকিট, কিন্তু তিনি তা না নিয়ে ল্যাপল্যান্ড নামের অন্য একটি জাহাজে চেপেছিলেন।
হেনরি ক্লার্ক। পিটসবার্গের ইস্পাত ব্যবসায়ী। স্ত্রীর পায়ের গোড়ালি মচকে যাওয়ার কারণে টাইটানিকের যাত্রা বাতিল করেন।
আমেন-রার অভিশাপ ও টাইটানিক
ঢাকা, শনিবার, ১৪ এপ্রিল ২০১২,
১ বৈশাখ ১৪১৯, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩
১০ এপ্রিল ১৯১২ সাউদাম্পটন বন্দরে পৃথিবীর বিস্ময়কর জাহাজ টাইটানিক ছেড়ে দেওয়ার সিটি বাজাল। বিদায় জানাতে আসা আত্মীয়, শুভানুধ্যায়ী এবং উৎসুক দর্শনার্থীর আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে বন্দর গমগম করছে।
এই জাহাজটি ‘আনসিঙ্কেবল’—কখনো ডোবার নয়। দুদিন পেরিয়ে যাচ্ছে। টাইটানিক তখন আটলান্টিকে। সবই ঠিকঠাক। আনন্দ ও হুল্লোড়ের কমতি নেই। আটজনের একটি দল ঢুকল প্রথম শ্রেণীর ধূমপানকক্ষে। সিগারেট ফুঁকছেন আর জীবনের কী মানে, তা নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা জুড়ে দিয়েছেন। তাঁদেরই একজন উইলিয়াম টি স্টেড ইংরেজ সাংবাদিক ও সুপরিচিত অধ্যাত্মবাদী। ভৌতিক গল্পটা তিনিই বললেন। তাঁর এই গল্পের মিথের সঙ্গে টাইটানিকের ডুবে যাওয়া কেমন করে যেন এক হয়ে গেল।
স্টেড গল্পটা শুরু করেন ১২ এপ্রিল রাত ১২টার একটু আগে, গল্পটা শেষ হয় রাত ১২টার পরে। টাইটানিকডুবির সূত্রপাত হয় ১৪ এপ্রিল রাত ১২টার একটু আগে, জাহাজটি আটলান্টিকের গর্ভে তলিয়ে যায় রাত দুইটার দিকে। তখন ১৫ এপ্রিল ১৯১২। এই আটজনের দলের সাতজনই আটলান্টিকে তলিয়ে যান, উইলিয়াম স্টেডও। কেবল একজন ফ্রেড সিওয়ার্ড বেঁচে যান। সাক্ষ্য তাঁরই।
মমির অভিশাপ
যিশুর জন্মের ১৫০০ বছর আগে গ্রিক প্রিন্সেস আমেন-রা কথা জানা যায়। মৃত্যুর পর প্রিন্সেসকে সূক্ষ্ম কারুকাজ করা চমৎকার একটি কাঠের কফিনে ভরে নীল নদের তীরে একটি সুরক্ষিত প্রকোষ্ঠে রেখে দেওয়া হয়। ১৮৯০ দশকের শেষ দিকে খননকাজের সময় মমির এই চমৎকার কফিন কিংবা আধারটি পাওয়া গেলে চারজন ধনী ইংরেজকে তা কিনে নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। কফিনে রয়েছেন প্রিন্সেস আমেন-রা।বহু মূল্য দিয়ে তাঁদের একজন কিনে নিলেন। তিনি কয়েক হাজার পাউন্ড স্টার্লিং দিয়ে কেনা কফিনটি হোটেলে নিজ কক্ষে নিয়ে এলেন।কয়েক ঘণ্টা পর দেখা গেল তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে হেঁটে হেঁটে মরুভূমির দিকে যাচ্ছেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি আর কখনো ফিরে আসেননি।অবশিষ্ট তিনজনের একজন তাঁর মিসরীয় ভৃত্যের বন্দুক থেকে দুর্ঘটনাক্রমে আকস্মিকভাবে বেরিয়ে আসা গুলিতে জখম হলেন। জখমটা এতই গুরুতর ছিল তার গুলিবিদ্ধ হাতটি কেটে ফেলতে হলো।তৃতীয়জন দেশে ফেরার পর দেখলেন তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয় যে ব্যাংকে রেখেছিলেন, সেই ব্যাংকটি সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে গেছে।চতুর্থজনও টাকাপয়সা খোয়ালেন, অসুস্থ হয়ে পড়লেন, চাকরি হারালেন এবং বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁকে দেশলাই বিক্রি শুরু করতে হয়।এত কিছুর পরও পথের অনেক দৈব-দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রিন্সেস আমেন-রার কফিন লন্ডনে পৌঁছে এবং একজন ধনী ব্যবসায়ী তা কিনে নেন।এর পরপরই ব্যবসায়ীর পরিবারের তিনজন সদস্য সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হয়, আগুন লেগে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অগত্যা ব্যবসায়ী কফিনটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে দান করে দেন।ট্রাক থেকে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আঙিনায় যখন কফিন নামানো হচ্ছিল, ট্রাকটি উল্টোদিকে চলতে শুরু করে। একজন পথচারীকে বিপদাপন্ন করে তোলে। যে দুজন শ্রমিক এই কাসকেটটি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছিল, হঠাৎ পড়ে গিয়ে পা ভেঙে ফেলে। অন্যজন বাহ্যত সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হলেও দুদিন পর অজ্ঞাত কারণে মারা যায়।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ‘ইজিপশিয়ান রুম’-এ এটি স্থাপন করার পর একটার পর একটা বিপত্তি ঘটতে শুরু করল।
জাদুঘরের নৈশপ্রহরী কফিনের ভেতর হাতুড়ি পেটানোর এবং ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনতে লাগল। অন্যান্য প্রদর্শিত দ্রব্য রাতের বেলা কেউ ছুড়তে শুরু করল। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একজনের মৃত্যু হলো। অন্য প্রহরীরা চাকরি ছেড়ে দিতে চাইল। ক্লিনাররা প্রিন্সেসের কাছে যেতে অস্বীকৃতি জানাল।
শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এটাকে বেজমেন্টে রেখে আসে এই চিন্তা করে যে এখন থেকে আর কারও ক্ষতি করতে পারবে না। এক সপ্তাহের মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেল। বেজমেন্টে পাঠানোর কাজটা যিনি তত্ত্বাবধান করছিলেন তাঁকে তাঁর ডেস্কেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল আর বহনে সহায়তাকারীদের একজন ভয়ংকর অসুস্থ হয়ে পড়ল।
এত দিনে মমির এই ভয়াবহ আচরণের খবর সংবাদপত্রগুলো পেয়ে গেল। একজন ফটোগ্রাফার ব্রিটিশ মিউজিয়ামে এসে কাসকেটের ছবি তুললেন। ছবিটা যখন হয়ে এল তিনি অবাক হয়ে দেখলেন কফিনের ওপর আঁকা ছবিটা আসলে মানুষের বীভৎস মুখাবয়ব। তিনি বাড়ি ফিরে গেলেন। বেডরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং নিজের ওপর গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করলেন।কিছুদিন পর জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই মমি একজন ব্যক্তিগত সংগ্রহকারীর কাছে বেচে দেয়। সেখানেও একের পর এক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু ঘটতে থাকলে মমির ক্রেতা এটাকে চিলেকোঠায় আটকে রাখেন।পরে তিনি এটা বিক্রির চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্রিটেনের কোনো মিউজিয়াম এই মমি নিতে আগ্রহী নয়। মমি নাড়াচাড়ায় নিয়োজিত কুড়িজন মানুষের দুর্ভাগ্যের কথা—বিপন্নতা, দুর্যোগ এবং এমনকি মৃত্যুর খবর এখন সবারই জানা। শেষ পর্যন্ত গোঁয়াড় প্রকৃতির একজন আমেরিকান প্রত্নতত্ত্ববিদ এসব দুর্ভাগ্যের কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন এবং বেশ দাম দিয়ে এটাকে কিনে নিউইয়র্ক নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করলেন।
১৯১২-এর এপ্রিলে কফিনটা জাহাজে তোলা হলো, আমেরিকান মালিকও সঙ্গে আছেন। তিনি জানেন আমেরিকানরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন নয়। হোয়াইট স্টার লাইনের নতুন জাহাজ, এটাই জাহাজের উদ্বোধনী যাত্রা—সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক। বিলাসবহুল এই জাহাজের নাম টাইটানিক। আমেরিকান মালিক এবং জাহাজের দেড় হাজার যাত্রী ও টাইটানিক জাহাজটিসহ আমেন-রা সমাহিত হলেন আটলান্টিকের গভীর তলদেশে। কেউ কেউ বলেন উদ্ধারকারী জাহাজ কার্পাথিয়া যখন মানুষ উদ্ধার করছিল, তখনই জাহাজের ক্রুরা কফিনটা জাহাজে তুলে নেয়। আমেন-রা যথারীতি নিউইয়র্ক পৌঁছে। আমেরিকায় এই কফিন একটার পর একটা ট্র্যাজিক ঘটনা ঘটিয়ে চলে। একসময় সিদ্ধান্ত হয় কফিন আবার ইউরোপে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দেড় মাস তখনো পুরো হয়নি। ইউরোপের পথে এমপ্রেস অব আয়ারল্যান্ড জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। ১৯১২ সালের ২৯ মে ৮৪০ জন যাত্রী নিয়ে জাহাজটি ডুবে যায়।
মমিটি সে যাত্রায়ও রক্ষা পায়। এর মালিক ঠিক করলেন, তৃতীয় কোনো জাহাজে মমিটি মিসরে পাঠিয়ে দেবেন। সেই তৃতীয় জাহাজের নাম লুসিতানিয়া। জার্মান সাবমেরিনের আক্রমণে জাহাজটি ডুবে যায়। এরপর কী হলো আর জানা নেই। প্রিন্সেস আমেন-রা টাইটানিকে ছিলেন?
না, ছিলেন না। পুরোটাই কল্পকাহিনি। আর এ কাহিনি তৈরির কৃতিত্ব দুজনের—উইলিয়াম স্টেড এবং ডগলাস মারে।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রুম নম্বর ৬২-তে সংরক্ষিত এই মমি ১৮৮৯ সালে মিসেস ওয়ারউইক হান্ট তাঁর ভাই আর্থার এফ হুইলারের পক্ষে ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে উপহার দেন। ১৮৯০ সালের দিকে এই কাসকেট মিউজিয়ামের প্রথম ইজিপশিয়ান রুমে প্রদর্শিত হতো। স্টেড ও মারের অতিপ্রাকৃতিক কাহিনি সম্পূর্ণ বানোয়াট। ১৯৮৫ সালে টাইটানিক হিস্ট্রিক্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট চার্লস হ্যাম টাইটানিকে পরিবহন করা মালামালের তালিকা দেখার সুযোগ পান। তাতে মমি কিংবা কফিনের কোনো উল্লেখও দেখতে পাননি।
ISIS অথবা ISIL
আইএসআইএস অথবা আইএসআইএল (যাদের পুরু মিনিংটা হচ্ছে ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া, অথবা ইসলামিক ষ্টেট অফ ইরাক এন্ড দি লিভান্ট। এখানে জানা দরকার লিভান্টটা কি। লিভান্ট হচ্ছে তুরুস্কের দক্ষিন অঞ্চল থেকে শুরু করে মিশরসহ সিরিয়া, লেবানন, প্যালেস্টাইন, ইসরায়েল এবং জর্ডান সম্বলিত যে রিজিওনটা হয় সেটা।
এর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ
যেই নামেই এটাকে ডাকা হোক না কেন, এটা ব্যাসিকেলি আল কায়েদার অবশিষ্ট কিছু গ্রুপের একটা সমন্বিত বাহিনীর মিশ্রণ যারা সুন্নি জিহাদিস্ট দল নামে পরিচিত। আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমন করে, তখন আল কায়েদার বাহিনি ছিল এই পুরু দল। কিন্তু লিডারশীপ নিয়ে মারামারিতে সর্ব প্রথম আল কায়েদা পাকিস্তানে এর ভাঙ্গন শুরু হয় ২০০৩ সালে। যদি নাম ধরে ধরে বলা হয় কারা কারা এর অংশ হিসাবে কাজ করছে তাহলে প্রথম যাদের নাম আসবে তারা হলঃ আল কায়েদা (ইরাক), মুজাহিদিন সুরা কাউন্সিল, ইসলামিক ষ্টেট অফ ইরাক, জেইস আল তাইফা আল মান্সুরা, জায়েস আল ফাতিহিন, আল সাহাবা কাটবিয়ান আনসার আল তৌহিদ অয়াল সুন্নাহ, এবং ইরাকের কিছু সুন্নি উপজাতি। ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর 'আইএসআই'-এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করা হয় এবং আবু ওমর আল বাগদাদি গ্রুপটির নেতা বলে জানানো হয়। ২০১০ সালের ১৯ এপ্রিল আবু ওমর নিহত হলে আবুবকর আল বাগদাদি এই জঙ্গি গ্রুপটির নতুন প্রধান হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে গ্রুপটির বিস্তার শুরু হয়। 'নয়া বিন লাদেন' নামে খ্যাত বাগদাদিকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য মার্কিন সরকার দশ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। বাগদাদি ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইরাকের উম্মে কাসর শহরে একটি মার্কিন কারাগারে বন্দি ছিল। ২০০৩ সালের আগেও সে আলয়দার সদস্য ছিল বলে মনে করা হয়। বাগদাদির আরেক নাম ছিল আবু দায়া। ২০০৫ সালে তাকে হত্যা ও অপহরণসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
২০১১ সালে যখন সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয় তখন অনেক ইরাকি ফাইটারগন সিরিয়ায় গমন করে এবং তারা সিরিয়ান ও অন্যান্য বিদেশী ফাইটারগনের সাথে এক হয়ে কাজ করে। তাঁদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হিসাবে অবজেক্টিভ প্রচারনা করে যে শেষ খিলাফত রক্ষার জন্য শরিয়া বেজড ষ্টেট তৈরি করার জন্য তারা এই যুদ্ধ করছে এবং এটা শুরু হচ্ছে সিরিয়া এবং ইরাকে।
এটার জন্য কে বা কারা টাকা দিচ্ছে এটা বুঝার খুব দরকার। মজার বিষয় হচ্ছে এরা আমেরিকার বিরুদ্ধে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে, আবার টাকা দিচ্ছে সউদি আরব, ইরান, কুয়েত, কাতার এবং সিরিয়া। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যদিও বলা হয় যে, সিরিয়া সরকার মানে আসাদ সরকার পরোক্ষভাবে এদের সাহাজ্য করছে কিন্তু ওরা সিরিয়ার বিরুদ্ধেও কাজ করছে বলে মনে করা হয়। এর প্রমান হিসাবে আপাতত ধরা যায় যে, কয়েকদিন আগে মুসুল এবং ফালুজার কিছু শহর দখলের পর তারা সিরিয়ার কিছু ইসলামিক গ্রুপকে চ্যালেঞ্জ করেছে। মুসুল দখল করার সময় তারা ৪০০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমান টাকা লুট করে ওদের অর্থনৈতিক অবস্থান আরও শক্ত করে ফেলেছে। জানা যায় যে, এদের প্রতি মাসে প্রায় ৮ মিলিয়ন ডলার আয় হয় বিভিন্ন সোর্স থেকে।
সিরিয়ায় কট্টর ইসরাইল-বিরোধী আসাদ সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে পাশ্চাত্য, ইসরাইল এবং তাদের আঞ্চলিক সেবাদাস সরকারগুলোর মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীদের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু হলে 'আইএসআই'ও বিদ্রোহীদের পক্ষে যোগ দিয়ে এ যুদ্ধে অংশ নেয়। সিরিয়ায় ২০১১ সালে গঠিত আন নুসরা ফ্রন্টও 'আইএসআইএল'-এর একটি শাখা হিসেবে দেশটির সরকারি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকে। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আবু বকর আল বাগদাদি এক অডিও বার্তায় জানিয়ে দেয় যে 'জিবহাতুন নুসরা' বা 'আন নুসরা ফ্রন্ট' 'আইএসআই'-এর অর্থ ও সহায়তা নিয়েই গঠিত হয়েছে এবং এই দুই গ্রুপ একত্রিত হয়ে 'আইএসআইএল' নাম ধারণ করেছে।
'আইএসআইএল'-এর যোদ্ধারা গত দশই জুন ইরাকের নেইনাভা প্রদেশের প্রধান শহর মসুলের বেশিরভাগ এলাকা দখল করে নেয়। শহরটি জনসংখ্যার দিক থেকে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এ ছাড়াও তারা দখল করে ফাল্লুজা ও সাদ্দামের জন্মভূমির শহর তিকরিত। তিকরিত সালাহউদ্দিন প্রদেশের প্রধান শহর। ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকিসহ অনেক কর্মকর্তা বলেছেন, ইরাকের একদল সেনা কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ায় এক ষড়যন্ত্রমূলক সমঝোতার আওতায় এই প্রদেশের ৫০ হাজারেরও বেশি সরকারি সেনা কোনো ধরনের বাধা না দিয়েই সন্ত্রাসীদের কাছে শহরটির প্রধান সরকারি ভবন, অস্ত্রাগার, ব্যাংক ও কারাগারগুলোর নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়।
এতক্ষন যা বললাম তা হচ্ছে দৃশ্যমান কিছু তথ্য। এর মাঝে অনেক অদৃশ্যমান স্ট্রেটেজি রয়েছে যা সাধারন চোখ দিয়ে দেখলে পুরু ব্যাপারটা বোধগম্য হবে না। এটা নিতান্তই আমার মতামত।
আমার মতামতঃ
(১) কেউ কেউ বলে যে আসলে এমআই ৬, মোসাদ অথবা সিআইএ দ্বারা এই আইএসআইএস/এল প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত। এই সংস্থা গুলো উক্ত আইএসআইএস কে তাঁদের ফ্রন্ট অরগ্যেনাইজেসন হিসাবে ব্যবহার করে। এখানে একটু জেনে রাখা ভাল যে, "ফ্রন্ট অরগ্যানাইজেসন" একটা মিলিটারি টার্ম যার অর্থ হচ্ছে এই রকম,
" Front groups are intended to deceive the casual observer by carrying out actions without disclosing who instigated them. They include astroturf (fake 'grassroots' organisations) operated by legitimate companies as well as fronts operated by groups with more questionable legitimacy to provide plausible deniability to as criminal groups, governments or intelligence agencies."
(২) গালফ ওয়ার যারা শেষ হয়ে গিয়েছে বলে মনে করে তারা হয়ত আমার চেয়ে আরও অনেক বেশি ভবিষ্যৎ দেখতে পায় কিন্তু আমি সাধারন সেন্সে বলতে পারি যে, মিডল ইস্টকে যে কোনভাবেই আমেরিকা, ইউ কে বা অন্যান্য যারা এই এলাকার তেলসমৃদ্ধ দেশকে নিজেদের কন্ট্রোলে রাখতে চায় তারা কোন না কোনভাবে গালফওয়ার, বা প্যালেস্টাইন ওয়ার কিংবা সিরিয়া বা ইরান ক্রাইসিস লাগিয়েই রাখবে। এরা যে কোনভাবেই হোক একটা না একটা ছুতা বাহির করবেই। আর এই ছুতার আরেক নাম হচ্ছে আইএসআইএস বা আইএসআইএল। ইরাক থেকে আমেরিকা বা যুক্তরাজ্য বের হয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে তারা আরেকটি প্যারাসাইট তৈরি করেই বের হয়েছিল আর সেটাআই হচ্ছে এটা। ইরাককে এখন শিয়া এবং সুন্নি দুই অংশে ভাগ করে যে কোন একটার দিকে হেলে গিয়ে পুনরায় তাঁদের আধিপত্য বজায় রাখা হচ্ছে এর আসল লক্ষ।
ইরাকে নিউক্লিয়ার অস্র আছে এই প্রোপাগান্ডা ছরিয়ে যেমন গালফ ওয়ারটা হয়েছিল, এখন আইএসআইএস এর চাদরে ইরাককে আবার খন্ড বিখন্ড করা হবে। আর এ কারনেই আমরা দেখলাম যে, rapid march of the ISIS towards Baghdad and its swift takeover of Mosul and Tikrit, and Baiji oil refinery, Fallujah and Ramadi in the Anbar Province,
শুধু তাই নয়, seizure of border crossings into Syria and Jordan are presented by political analysts as a “civil war” fought along sectarian lines, Sunni Arabs versus Shiia Arabs.
এর সঙ্গে দৃশ্যমান ফলাফল অনুমান করা যায় যে, the ethnically different Iraqi Kurds who have enjoyed semi-independence under the US patronage and are now on the verge of declaring complete independence from Baghdad.
এর ফলে ভবিষ্যতে কি হবে তার একটা সরল রেখা টানা খুব সহজ। ইরাক ভেঙ্গে তিন টুকরা হবে। সুন্নি ইরাক, শিয়া ইরাক এবং সাধিন কুরদিস্থান। আর এর ফলে যেটা হবে তা হচ্ছে এই অঞ্চলে ইসরায়েল হবে একমাত্র শক্তিশালি দেশ যার কাছে আছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার। আর মিডল ইস্ট এ আছে তেল যা ইসরায়েলের সাহাজ্যে আমেরিকা বা ইউ কে এরা এই চমৎকার ভাগাভাগিতে আনন্দ উল্লাস করবে।
তবে প্রশ্ন আসতে পারে কেন আমেরিকা এই পলিসিটা গ্রহন করল। এটা বুঝবার জন্য তোমাকে একটু দূরে ইতিহাসটা চোখ খুলে তাকাতে হবে।
ওয়ার অন টেরর যখন শুরু হয়, তখন সারা পৃথিবীতে মানুষ কোন না কোনভাবে আমেরিকা বা ইউকে কে এক তরফা ব্লেম করছিল এবং তাঁদের দেশের নাগরিকগন বিশ্ববাসির কাছে অনেকটা ঘৃণা এবং অপদস্ত হচ্ছিল। এতে তাঁদের দেশের নাগরিকরাও তাঁদের দেশের হর্তাকর্তাদের সমালচনা শুরু করে দেয়। ওয়ার অন টেররের মুল উদ্দেশ্য ছিল কিন্তু শুধুমাত্র মুসলিমদেরকে দমানো বা ওদের শক্তি কমানো। তাই একই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য এবার তারা ভিন্ন পথ ধরেছে বলে আমার ধারনা। তারা এবার মুসলিম বনাম মুসলিম যুদ্ধটা শুরু করেছে যেখানে শিয়া ভার্সেস সুন্নি। এক্ষেত্রে ওয়ার অন টেরর কৌশলটা আর প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না। এতে শাপও মরল লাঠিও ভাঙল না। এটাকে আমরা "ওয়ার উইথইন ইসলাম"ও বলতে পারি। অংকের ফলাফলটা একই কিন্তু ফর্মুলাটা ভিন্ন। মাঝখান দিয়ে সারা বিশ্ব আমেরিকা বা ইউকে কে বা তার মিত্রদেরকে কোন প্রকার ব্লেম করার আর সুযুগ পাবে না।
(২) একটা জিনিস খেয়াল করে দেখ যে, ইরাকের আইএসআইএসের বিরুদ্ধে আমেরিকা এয়ার স্ট্রাইক করছে কিন্তু ঐ একই আমেরিকা সিরিয়াতে আইএসআইএস কে সাপোর্ট করছে টাকা দিয়ে, পয়সা দিয়ে তথ্য দিয়ে এবং অস্র দিয়ে। এটা কিন্তু একটা ডাবল গেম। জাস্ট একদম এক ফর্মুলা যখন আমেরিকা আল কায়েদাকে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে লাগিয়ে পরে আবার আল কায়দাকেই ধ্বংস করার আরেক নমুনা। আমি প্যালেস্টাইনের ইন্তিফাদা পত্রিকার কিছু মন্তব্য তুলে ধরছি যা আমার কাছে মনে হয়েছে একদম ঠিক। "... How do we really know what the US is doing in Iraq at the moment? How do we know that they really are carrying out strikes against ISIS? How do US forces know who is ISIS and who isn’t? Do ISIS members wear bright pink uniforms so that they stand out in a crowd and can thus be precision targeted by American fighter jets? For all we know, these air strikes could be targeting Iraqi army and police forces that are fighting against ISIS militants. Maybe the plan is to covertly help ISIS fragment and destabilize Iraq and exacerbate the country’s misery. Perhaps ISIS is being used as leverage against the unreliable puppets in Baghdad; one can picture Obama threatening al-Maliki that if he doesn’t follow Washington’s demands like a blind mule more ISIS fighters will be flooded into the country. This whole thing could also be an Orwellian bluff designed to deflect attention from Israel’s biennial ritual slaughter in Gaza. ISIS’s presence in Iraq is being used as an excuse to continue to bomb that beleaguered and thoroughly victimized nation. Obviously Washington doesn’t give a damn if the people of Iraq fall victim to ISIS; in fact Washington would love nothing more than a few more Iraqi corpses. Only a fool would believe that Washington cares about the well-being of Iraqis after extinguishing the lives of close to two million of them since the genocidal 2003 invasion and relegating millions more to lives of misery and despair. America wants to keep Iraq in a state of perpetual decay, unable to assert its own interests or do much of anything without Washington’s assistance.
(৩) এখানে আমার আরও একটি ব্যক্তিগত মতামত দিতে চাই এই আইএসআইএসের যে নেতা তার সম্পর্কে। যদি তিনি এম আই ৬, কিংবা সিআইএ অথবা মসাদ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়েই থাকেন, কেন এই ব্যাক্তিকে তারা প্রশিক্ষন দিলেন? এই প্রসঙ্গে আমার আরও একটি পুরান উদাহরন দেওয়ার আছে। আর তা হল, আল কায়েদার বিখ্যাত সেই নেতা যার নাম ছিল আদম গাদান যিনি আল কায়েদার একমাত্র মুখ্যপাত্র ছিলেন। তোমরা কি জান সে কে?
সে ছিল একজন আমেরিকান ইহুদী যার আসল নাম ছিল এডাম পার্লম্যান। ৯/১১ এর সময় তিনি রাতারাতি নাম বদল করে দাড়ি টুপি পড়ে একেবারে ইসলাম দরদি হয়ে যে কোন উপায়ে আল কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতা বনে গেলেন। এটা আমেরিকার একটা চাল ছিল। এই সেই ব্যাক্তি যিনি "ওয়ার এগেইন্সট আমেরিকা" উচ্চারন করেছিলেন। পরবর্তীতে "অরেঞ্জ" পত্রিকা (একটা আমেরিকার পত্রিকা) এর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে যে তিনি ছিলেন ইহুদিদের সবচেয়ে সমর্থক গোষ্ঠীর কোন এক নেতার নাতি। ঐ দাদা ছিলেন ইহুদীদের সমর্থিত সংস্থার বোর্ড অফ ডাইরেক্টর। এই তথ্য বের হওয়ার পর আদম সাহেবের আর কোন হদিস পাওয়া যায় নাই। একইভাবে আমরা কি করে জানব যে বর্তমান আইএসআইএস এর যে নেতা ডঃ আবু বকর আল বাগদাদিও ঐ রকম একজন নন? ডঃ আবু বকর আল বাগদাদির নাম কিন্তু আসলে সাইমন এলিওট। তার পিতা একজন ইহুদী। তোমাদের আরও কিছু তথ্য আমি দেই যা তোমরা আমাকে বিশ্বাস নাও করতে পার। আর তা হচ্ছে আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন, বা জাওয়াহারি, এরা সবাই মসাদের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত গুরু। বর্তমানে হামাস, সেটাও এই মসাদের তৈরি। এগুলো আলাপ করতে গেলে ইতিহাস লিখতে হবে। ইন্দোনেশিয়ার টপ মুসলিম ক্লারিক আবু বকর বশির যদিও মুসলিম পোশাকে সজ্জিত, কিন্তু তিনি মসাদ কর্তৃক পালিত এবং তাঁদের এজেন্ট হিসাবেই কাজ করে। তিনি একজন ক্রিপ্টো ইহুদী এবং ইয়ামেনি বংসধর যিনি বালি বম্বিং এ জরিত ছিলেন । তিনি Abu Bakar Bashir is the leader of the Indonesian Mujahedeen Council, and he is linked to Jemaah Islamiyah and the Mossad-run al Qaeda.।
এই একই প্রসঙ্গে ইন্তিফাদা লিখেছে যে, "...... ISIS’s true intention, many claim, is to incite sectarian divide in Israel’s neighbouring states, thereby advancing Tel Aviv’s Oded Yinon plan for the balkanizing and fracturing of its regional foes. Is it any coincidence that ISIS and its affiliates have targeted Libya, Iraq, Syria and Lebanon with the most furor, while leaving the corrupt, US-backed dictatorships in Egypt, Bahrain, Jordan, Qatar, Kuwait, Saudi Arabia, etc., alone. Not to mention ISIS’s complete lack of action against Israel or the US
(৪) তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কেউ কেউ মসাদের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে কিংবা ওদের ল্যাজ ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার পর নিজেরা আবার মতবাদ পরিবর্তন করে ফেলায় ওরাই আবার আমেরিকা বা ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। তার মধ্যে লাদেন একজন, ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনিজাদ একজন। যেমন বিট্রে করেছিল শ্রীলঙ্কার এলটিটিই র বেলুপেল্লাই প্রভাকরন ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে। ইন্ডিয়াই তাকে তৈরি করেছিল খোদ শ্রীলংকার বিরুদ্ধে কাজ করবার জন্য। কিন্তু পড়ে বেলুপেল্লাই প্রভাকরন আর নিজেকে ইন্ডিয়ার ছা পোষা হয়ে থাকতে চান নি এবং নিজে নিজে তার এক শক্ত বাহিনি গড়ে তোলায় ইন্ডিয়া নিজেও বেলুপেল্লাই প্রভাকরণকে মেরে ফেলার যত ষড়যন্ত্র আছে করেছিল এমনকি শ্রীলংকাকেও সাহায্য করেছিল।
(৫) আই এস আই এস কি ইসরায়েল কে থ্রেড করে?
পৃথিবীর বিখ্যাত এই টেররিস্ট দলকে ইসরায়েল এখনো নিষিদ্ধ ঘোষণাও করে নি এবং এর বিরুদ্ধে কোন কমেন্টও করে নি। শধু নরম ভয়েসে একবার মিডিয়াতে বলেছে যে, এরা যা করছে তা ন্যায়সঙ্গত নয়। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে আইএসাইএস ও কিন্তু ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে কিছুই বলছে না।
আমি যদি এখন অন্যান্য ভেটো পাওয়ার ধারি দেশ গুলোর দিকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখি, তাহলে দেখা যাবে যে, রাশিয়া বা চায়না এরা একটা দারুন কনফিউসনাল স্ট্যাট দেখিয়ে কি করা উচিৎ তা সরাসরি কিছু বলছে না আর বল্লেও সে বলার মধ্যে যেন কেমন একটা নির্লিপ্ত ভাব আছে। সিরিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি খাতির। আসাদ সরকারকে রাশিয়া সরাসরি সমর্থন করে। আবার আইএসাইএস সিরিয়াতে যুদ্ধ করছে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে। তাহলে তো রাশিয়ার উচিৎ আইএসাইএস কে রাশিয়া কন্ডেম করা। অন্য দিকে সিরিয়ায় যুদ্ধ কিংবা গণ্ডগোল লেগে থাকলে রাশিয়া ক্রমাগত সিরিয়াতে অস্ত্র বিক্রির একটা খনি থাকে। তো এমন একটা খনি রাশিয়াই বা কেন বর্জন করবে যেখানে রাশিয়াকে ইদানিং এক ঘরে করে দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বা আমেরিকা? এটা তো রাশিয়ার জন্য একটা অর্থকরী বাজার!! আবার এখনো ব্যাপারটা একদম ক্লিয়ার না আসলে আইএসাইএস কি আসলেই সিরিয়ার বিরুদ্ধে কিনা।
অন্য দিকে চায়নার ভিতরেও অনেক মুসলমান রয়েছে। তার নিজের শাসন ক্ষমতার মধ্যেও পুরুপুরি তারা গণতন্ত্র চর্চা করতে দেয় না ফলে চায়না কখনই চায় না আরেকটা অযাচিত সমস্যা নিয়ে নিজের দেশে একটা সমস্যা তৈরি হোক। তার মধ্যে ইদানিং আবার হং কোং নিয়ে তারা আরও বেশ নাজুক অবস্থায় পরে আছে। এ ছারাও চায়নাও চায় না যে, এই অঞ্চলে আইএসাইএস দ্বারা আরেকটি পাওয়ার গ্রুপ তৈরি হোক। এর মানে হচ্ছে চুপ থাক বাবা। চায়না ও কিন্তু রাশিয়ার মত সিরিয়ার সমর্থক। চায়না কিন্তু একটা কথা ইতিমধ্যে সরাসরি বলে দিয়েছে যে, তারা আইএস আই এস এর এন্টি কোয়ালিশন যুদ্ধে আমেরিকার সঙ্গে নাই তবে সর্বাত্মক মোড়াল সাপোর্ট দিতে প্রস্তুত। যেন ধরি মাছ না ছুই পানি। বিশ্ব রাজনিতি ভাই।
(৬) এখানে একটা ব্যাপার মনে রাখা দরকার যে, আইএসাইএস বাহিনিতে প্রুচুর পরিমানে আমেরিকান এবং বিদেশী যোদ্ধা আছে। এদেরকে আসলে প্ল্যান্ট করা হয়েছে বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে। যদি কোন কারনে এই সব লোক গুলোকে এক সময় নিজের দেশে ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে এরা হয়ত বা নিজেরাই নিজের দেশে একদিন টেররিস্ট হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে অনেক বুদ্ধিজীবী রা আমেরিকা এবং ইউ কে কে সতর্ক করে দিয়ে ও লাভ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
(৭) এখানে একটা বিশেষ ধর্মীয় সত্ত্বার রক্ষার একটা দিক কাজ করছে আর তা হল, আইএসাইএস হল সুন্নি সম্প্রদায়ের একটা দল যারা শেষ খেলাফতকে রক্ষার নামে জিহাদ করছে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আবার ও দিকে ইরান হচ্ছে শিয়া প্রধান দেশ। ইরান কিন্তু তার ধর্মীয় দিক থেকেই আইএসাইএস কে সমর্থন দেবার কোথা নয়। আর এ কারনে ইরান আইএসাইএস এর বিরুদ্ধে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে আমেরিকা যেহেতু ইরাক আইএসাইএস কে টার্গেট করে ওদের মারার চেষ্টা করছে বলে ভাব দেখাচ্ছে, এর মানে ওরা এটাও দেখাতে চাবে যে অতি শিগ্রই সিরিয়ার আইএসাইএস কেও টারগেত করবে। এতে চির শত্রু ইরানের সঙ্গেও আমেরিকার একটা অলিখিত বন্ধুত্ব হবে বলে একটা আভাস দেওয়ার সিগন্যাল মনে করা হচ্ছে। কিন্তু আসলেই কি তাই? খুব কমপ্লিকেটেড সিচুয়েসন এই আইএসাইএস।
ডলারের নোটের ব্যাখ্যা
আমিও আমেরিকার ডলারের এত ব্যাখ্যা জানতাম না, তুমি বলার পর আমি ইন্টারনেটে গিয়ে কিছু পরাশুনা করে দেখলাম ব্যাপারটা বেশ মজার। আমি যেটুকুন জেনেছি সেটা আমি বলছি। তবে আমি বাংলাদেশের টাকার ব্যাপারটাও জানার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু খুব একটা কিছু পাওয়া যায় নাই। তাই ডলার নোটের সম্পর্কেই বলছি যা একটা রিসার্চ করার মত ব্যাপার। ধৈর্য সহকারে পরতে হবে ভাই।
আমেরিকার ১ ডলার নোটের বিবরনটা এই রকমঃ
(১) ১৯৫৭ সালে প্রথম বের করা হয়।
(২) কটন এবং সিল্ক (এটা লাল এবং নিল সিল্কের ব্লেডেড)।
(৩) একটা স্পেশাল কালি ব্যবহার করা হয়েছে যা পানি বা কোন ক্যামিকেল দিয়ে ধুলে উঠে যায় না। প্রথমে যত ছবি বা ইমেজ আছে তার উপরে এই লেখাগুলো প্রিন্ট করা আছে এবং তারপর এগুলো পানি প্রুফ করে স্টার্চ করা।
(৪) ১ ডলারের সামনের অংশে ইউনাইটেড স্টেটস এর ট্রেজারি সিল দেয়া। এবং একটা পাল্লা আছে যা সুবিচার নির্দেশ করে। অনেকে এই পাল্লার ব্যাখ্যা করে যে এটা ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ব্যালেন্স অব কারেন্সি বুঝায় তা ঠিক না।
(৫) মাঝখানে কারপেন্টারস টি-স্কয়ার বুঝায় যে, এখানে ১৩ টি স্টার আছে এবং এই ১৩ টি স্টার দিয়ে আমেরিকার প্রথম ১৩টি কলোনিকে বুঝানো হয়েছে।
(৬) ডলারের পিছনের অংশগুলো জানার ব্যাপারঃ
(ক) দুইটা বৃত্ত আছে যা একত্রে করলে আমেরিকার সিল হবে।
(খ) একটা জিনিস এখানে মনে রাখা দরকার যে, আমেরিকা ১৭৭৬ সালে কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস হিসাবে আধিপত্যতা ছিল বলে তার শাসন প্রনালি ছিল কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস হিসাবে। ৪র্থ জুলাই ১৭৭৬ সালে এই কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস লুপ্ত হয়ার সময় আমেরিকার জাতীয় একটা সিল তৈরি করার প্লান করা হয়। তখন ফ্রাঙ্কলিন এর নেতৃতে আরও পাচজন ( তারা হচ্ছেন এডাম, থমসন জেফারসন, এবং আরও দুই জন) যারা এই সিল তৈরির কাজের কমিটি হিসাবে নির্বাচিত হন। আর এই সালটাই লেখা আছে ঠিক পিরামিডের নিচে রোমান অক্ষরে।
(গ) বাম দিকের বৃত্ত খেয়াল করলে দেখতে পাবা যে, একদিকে পিরামিড যেটার ফেস আলোকিত কিন্তু এর পশ্চিম পাশটা আলোকিত নয়। এর মানে হচ্ছে আমেরিকা Western Side নিয়ে অন্ধকারে আছে। পিরামিড দিয়ে ওরা বুঝাতে চেয়েছে যে, ঐ অঞ্চল এখনো ওদের আয়ত্তে আসে নাই। এদের কাজ এখনো ঐ অঞ্চলে শেষ হয় নাই। এই ব্যাখ্যাটা অফিসিয়াল ভাবে গ্রহনযোগ্য নয়। তবে কেউ কেউ মনে করে এটা হতে পারে। আরেকটা ব্যাখ্যা অনেকে করেন যে, পিরামিড হচ্ছে শক্তির প্রতিক এবং বহুদিন টিকে থাকার প্রতিক।
(ঘ) ক্যাপসটোনের ভিতরে যে চোখ দেখা যায় একে বলা হয় "অল সিইং আই"। এর ব্যাখ্যা আসলে অফিসিয়ায়ালি কেউ জানে না। তবে ধারনা করা হয় যে, ফ্রাঙ্কলিন সম্ভবত এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, ইসরায়েলের দামাল ছেলেমেয়েদের সব হিংস্রাত্তক কর্মকাণ্ডসহ দেবতা তার সমস্ত পৃথিবীর কর্মকান্ড দেখতে পান সর্বদা। ফ্রাংলিন ইহুদি ছিলেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন যে, এই পিরামিড এবং চোখ যীশুর প্রতিক।
(ঙ) পিরামিডের ঠিক নিচে লেখা আছে NOUVAS ORDO SECLURUM, এর মানে হচ্ছে নতুন যুগ শুরু হয়েছে।
(চ) সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে ইগলের ছবি এবং তার ব্যাখ্যা। ডান দিকের বৃত্তে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, একটা ইগলের ছবি আছে যাতে ইগলটি তার বাম দিকে ফেস করে আছে। একটু ভাল করে লক্ষ করে দেখ যে, ইগলের দুই পায়ে দুই ধরনের সিম্বল আছে। একটায় সবুজ অলিভ শাখার আটি আর একটায় ১৩ টি এরো। ডলার নোটের এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সিলের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই ইগলের ফেসের উপর। প্রেসিডেন্টের সিলে ইগলের ফেস এরো র দিকে আর সম্ভবত ডলারের ইগলের ফেস ওই অলিভ আটির উপর। এর মানে হচ্ছে এই যে, আমেরিকা একটি শান্তির দেশ এবং আমেরিকা তার প্রতিরক্ষার জন্য সে এরো অর্থাৎ শক্তি ব্যবহার করতে পারে। আগে ডলারের এবং প্রেসিডেন্টের সিল একই ছিল কিন্তু ১৯৪৫ সালে ট্রুম্যান (সে ১৯৪৫ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিল) এই ইগলের ফেস বদলিয়ে দেন। The official meaning is that the olive branch and the arrows "denote the power of peace & war."
এখানে আরও একটা জিনিস লক্ষণীয় যে, এই সিলটা কারো উপরে দাড় করান হয় নাই। মানে আনসাপোর্টেড। এর অর্থ এই যে, আমেরিকা এখন নিজে নিজে সয়ং সম্পূর্ণ।
(ছ) সিল্ডের পিছনে দেখা যায় যে, এটা রেড এবং সাদা স্ট্রিপ আছে যার উপরে একটা নিল বার আছে। এই সবগুলো কালার নেয়া হয়েছে আমেরিকার পতাকার রঙ থেকে। the red represents hardiness and valor, the white represents purity and innocence, and the blue, vigilance, perseverance, and justice.
(জ) ইগলের ঠিক উপরে ১৩ টি তারকা আছে যা ওই সময় আমেরিকার অধিনে মোট ১৩ টি কলোনি ছিল এবং এই স্টারগুলোর উপরে মেঘের একটা আভা আছে যাকে বলা হয় আরও কলোনি হয়ত ভবিষ্যতে যোগ হতে পারে। এটাও ঠিক ব্যাখ্যা নয় অফিসিয়ালি (মেঘের ব্যাপারটা)।
(ঝ) সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ডলার নোটে ১৩ এর সংখ্যার ব্যবহার। অনেকে ১৩কে আনলাকি বলে থাকে বটে কিন্তু এই ডলার নোটে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ১৩ সংখ্যার একটা জাল। যেমন, ১৩টি স্টার (কলোনি বুঝাতে), ১৩ জন সিগ্নেটরি (আমেরিকার স্বাধীনতার দলিলে ১৩ জন সাইন করেছিল), ১৩ টি কালারের ব্যবহার, ১৩ টি এরো, ফ্লাগের ১৩ টি স্ট্রিপ্স, পিরামিডের ১৩ টি সিঁড়ি অর্থাৎ 13 original colonies, 13 signers of the Declaration of Independence, 13 stripes on flag, 13 steps on the Pyramid, 13 letters in the Latin above, 13 letters in "E Pluribus Unum", 13 stars above the Eagle, 13 plumes of feathers on each span of the Eagle's wing, 13 bars on that shield, 13 leaves on the olive branch, 13 fruits, and if you look closely, 13 arrows. And for minorities: the 13th Amendment.
আফিম যুদ্ধ
১৮৩৯ থেকে ১৯৪২ সালে এই যুদ্ধটা হয়েছিল। যুক্তরাজ্য আর চিনের মধ্যে এই যুদ্ধটা হয়। প্রধান কারন ছিল আসলে ট্রেড ডেফিসিট। চাউনিজরা ব্যাঙ খেলে কি হবে, এদের মাথায় বুদ্ধি ছিল সব সময়। কি একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখতে পাবা যে, কোন এক বয়স্ক চায়নিজকে দেখলে মনে হবে না যে এরা বুড়া হয়ে গেছে। এর কারণটা কি কেউ জান? Its like anti-aging
যাক যেটা বলছিলাম। চায়নারা তখনকার দিনে অনেক সিল্ক, মসল্লা, চা, ইতায়দি পয়দা করত। আর এগুলোর প্রুচুর মার্কেট ছিল ইউরোপিয়ান মার্কেটে। কিন্তু অন্য দিকে ইউরপিয়ান্দের প্রডাক্ট চায়নায় চায়নিজরা একেবারেই ইম্পরট করত না। এর কারন চায়নিজরা নিজেরাই সব কিছুতে সেলফ সাফিসিয়েন্ট ছিল। আর চায়নিজ সরকার তাদের ট্রেড আইন দ্বারা বাইরে থেকে বিদেশী ইম্পরট বন্ধ করে রেখেছিল। শুধুমাত্র সিল্ভার আর সোনা চায়নিজরা আমদাই করতে পারত যা ইউরপিয়ান্দের কাছে ছিল অনেক। আর শুধুমাত্র এই সোনা আর সিল্ভারের মাধ্যমে ব্যবসা আদান প্রদান করতে গিয়ে ইউরোপে সোনা আর সিল্ভারের দ্রুত স্টক ফুরিয়ে আসছিল।
কিন্তু ইউরোপিয়ানরা বসে থাকে না। যেটা আজকে ওরা বুঝে, ইন্ডিয়ানরা বুঝে কাল আর বাঙালি বুঝে ৬ মাস পর। ইয়রপিয়ানরা দেখল, যে, চায়নিজরা প্রচুর আফিম খায়। আর আফিম ছিল ইউরোপে নিষিদ্ধ। ইউরোপিয়ানরা করল কি সিল্ভার আর সোনার পাশাপাশি এই আফিমকে আরেকটা ট্রেড আইটেম বানিয়ে প্রচুর পরিমান আফিম চায়নায় রপ্তানি করা শুরু করল। দিনে দিনে চায়নায় আফিমের বিস্তার এতটাই হয়ে উঠছিল যে, কোন সরকার ই এই আফিম খাওয়ানো বন্ধ করতে পারছিল না।
চায়নিজ সরকার প্রতিটি স্থানে চেক পয়েন্ট বসিয়ে দিল কোথা থেকে কিভাবে এই আফিম চায়নায় ঢুকছে তা বন্ধ করার জন্য। একবার কোন এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ির কাছ থেকে কাস্টম প্রায় ৩০ লক্ষ পাউন্ড আফিম জব্দ করল। ব্রিটিশ হচ্ছে হারামির জাতের গুরু। যদিও চায়নাকে আফিম প্রতিরোধ করার আইনকে চ্যালেঞ্জ করেনি কিন্তু এই জব্দ হওয়া আফিম তারা অবজেকসন দিল এবং পরবর্তীতে এইসুত্র ধরেই সামরিক আগ্রাসন চালিয়েছিল। এর ফলে ১৮৪২ সালে ট্রিটি অফ নাঙ্কিং হয় যা ছিল এক তরফা একটা বিচার। এর মাধ্যমে চায়নাকে চায়নার পাচটি পোর্ট খুলে দিতে হয়, এবং হংকং হাত ছাড়া করতে হয়। আর এটাকে বলে অয়ার অব আফিম (১ম আফিম যুদ্ধ)। ২য় আরেক্তা আফিম যুদ্ধ হয়েছিল ১৮৫৬-১৮৬০ সালে।
আর ওটা ও ছিল আরেক ধাপ বড় যেখানে হারামি ব্রিটিশ চায়নাকে বাদ্ধ করেছিল উক্ত ৫ টা পোর্টের বদলে চায়নার সব পোর্ট খুলে দিতে এবং আফিমকে অফিসিয়াল আইটেম হিসাবে ডিক্লেয়ার দিতে। তখন রাজা ছিল কিং ডাইনেস্টি। জাঁদরেল রাজা। ঐ যে বললাম চায়নারা ব্যাঙ খাইলেও ওদের মাথায় একদম খারাপ ব্রেইন নাই। তারা করল কি যারা যারা ব্রিটিশ দের সঙ্গে এই আফিমের ব্যবসাটা করে তাদের সবাইকে টার্গেট করে। আগের চুক্তির (ট্রিটি অফ নাংকিং) খুব একটা আদলে নিচ্ছে না দেখে ব্রিটিশরা "মোস্ট ফেবারড নেশন" নামে একটা বানিজ্যক টার্ম ব্যবহার করে যার মানে হচ্ছে বানিজ্যক সুবিধা দেয়া। এতে চায়নিজ আফিম আমদানিকারকগন ব্রিটিশদের কাছ থেকে আফিম টেক্স ছাড়া কিনতে পারে। আর তখন কিং ডাইনেস্টি চায়নিজ ব্যবসায়িদেরকেও ধরা শুরু করল যে যারা যারা ব্রিটিশ জাহাজে করে এই আফিম আনবে তারা আনঅফিসিয়ালি ধরা খাবে। ব্রিটিশরা আরও হারামি। তারা করল কি ঐ সব চায়নিজদেরকে এই সুবিধাও দিল যে অনেক চায়নিজ ব্যবসাই ব্রিটিশ জাহাজের মালিকান রেজিস্ট্রি পেয়ে যায়। যাতে চায়নিজ কিন্তু ব্রিটিশ জাহাজ আবার আফিম আনতে পারবে। রাজনিতি কি খারাপ, স্বার্থ ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না
তখন একটা ব্রিটিশ জাহাজ যার নাম ছিল "এরো"। এটা বেসিক্যালি ব্রিটিশ জাহাজ কিন্তু চায়নিজ ব্যবসায়ির নামে রেজিস্ট্রেসন করা। কিন্তু ১৮৫৬ সালে ঐ ব্রিটিশ জাহাজটি যদিও চায়নিজ এক ব্যবসায়ির নামে নতুন করে রেজিস্ট্রেসন করে দিয়েছিল আফিম ব্যবসাটা চালিয়ে নেবার জন্য কিন্তু ঐ বছর তখনো ব্রিটিশ ফ্ল্যাগটা ব্যবহার করছিল। আর যায় কই। কিং ডাইনেস্টি সুযোগটা হাতছারা করে নি। সিজ করে ফেলল ঐ "এরো" নামক জাহাজটি। অনেক তদবির তদবির করে জাহাজের ক্রুগুলোকে চায়নাদের কাছ থেকে ছারিয়ে নিয়ে গেলে ও চায়না কোনভাবেই ব্রিটিশদেরকে ক্ষমাও করেনি, ক্ষমাও চাননি। তখন যেহেতু হংকং ছিল ব্রিটিশদের আধিনে এবং হংকং এর শাসক ছিলেন ব্রিটিশ। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রির আদেশ ছারাই হংকং শাসক চায়নার ক্যন্টন আক্রমন করে বসে। বললাম না ব্রিটিশরা হচ্ছে হারামির জাত। এই অবৈধ আক্রমণকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রি পালমাস্টোন তার অফিসিয়াল সায় দিয়ে যুদ্ধটা বাধিয়েই দিলেন যা ২য় আফিম যুদ্ধ বা এরো যুদ্ধ ও বলা হয়। ।
হ্যালি ধুমকেতু
১৭০৫ সালে এডমন্ড হেলি নিউটনের "ল অব মোশন" এর ভিত্তিতে এই ধূমকেতুর আবির্ভাব নিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছিলেন যাতে বলা হয়েছিল যে, এতা ১৫৩১, ১৬০৭, ১৬৮২ এবং ১৭৫৮ সালে এতা দেখা যাবে। তার বক্তব্যের সত্যতা তার জীবদ্দশায় ১৫৩১ এবং ১৬৮২ ঠিক ছিল কিন্তু ১৬৮২ সাল ঠিক থাকবে কিনা এটা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, সত্যি যে ঐ ধুমকেতুটি তার মৃত্যুর পর ১৭৫৮ সালে দেখা গিয়েছিল এবং তার পর থেকেই তার সম্মানে এই ধুকেতুর নাম রাখা হত হ্যালি।
প্রতি ৭৬ বছর পর পর এই ধুকেতুটি আসে কিন্তু সময়ের হের ফেরে বা ধুমকেতুটির নিঃসরণের কারনে তার গতির কিছু হেরফের হয় বলে বলা হয় যে এটা ৭৬ থেকে ৮০ বছর এই দুই অংকের মদ্ধে থাকে। এটার দাইমেন সন হচ্ছে প্রায় ১৬ বায় ৮ বায় ৮ মাইল।
যদি কোন কারনে এই ধুমকেতুটি কখন পৃথিবীর সাথে হটাত আকর্ষিক ধাক্কা লেগে যায়, তাহলে এর বিপর্যয় হবে এক মারাত্মক। এতে পুরু পৃথিবী ধ্বংস অ হয়ে যেতে পারে কারন এর স্পীড এবং সাইজের জন্য। তাই মাঝে মাঝে বৈজ্ঞানিক গন একে "এটম বম্ব ফর নাগাসাকি" না বলে বলে থাকেন "এটম বম্ব ফর ওয়ার্ল্ড"। তাই হ্যালির ধূমকেতুর আবির্ভাবে খুব বেশি খুশি হবার কোন কারন নাই বরং এতা পৃথিবীর জন্য অত্যান্ত বিপদজনক। কিন্তু যেহেতু স্রষ্টা আছেন, তিনি এর গতিপথ নির্ধারণ করে দেন কখন এটা কার সুবিধা অ সুবিধা হবে সেটা। যেমন ধরুন, বলা হয় যে, হ্যালির ধূমকেতুর আগমনের কারনে ব্যাটল অফ হেস্টিংস হয়েছিল যেখানে ১০৬৬ সালে কিং হ্যারল্ড কে উতখাত করে উইলিয়াম হয়েছিলেন রাজা। ১৪৫৬ সালে তুরুস্কের সেনাবাহিনি বেল্গ্রেডে পরাজিত হয়েছিল ইত্যাদি।
হ্যালির ধুমকেতুটি আবার দেখা যাবে আবার ২০৬২ সালে। তখন শুধু বেচে থাকবে জুনিয়র
রিপ ভ্যান উইঙ্কেল
রিপ ভ্যান উইঙ্কেল নিউ ইয়র্ক শহরের কোন এক গ্রামে বাস করতেন। সে শহরের মানুষদের কাছে খুব প্রিয় একজন মানুষ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। বিসেস করে বাচ্চাদের কাছে। কারন সে বাচ্চাদেরকে গল্প বলতেন। কিন্তু তার স্ত্রি ছিল খুব জাঁদরেল। সারাক্ষন খালি কানাঘুষা করতেন আর কানের কাছে ভন ভন করত। একদিন তার স্ত্রীর এই ভন ভনানি থেকে রেহাই পাবার জন্য শিতের এক সকালে পাশের এক পাহারের কাছে পালিয়ে গেল আর সেখানে গিয়ে একদল অপরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল যারা ঐ এলাকার বাসিন্দা নন কিন্তু অদ্ভুত অলংকারে ভূষিত ছিলেন এবং তারা ৯-পিন নামক একটা খেলা খেলতেছিল।
মজার ব্যাপার ছিল যে, রিপ ওদের নাম জানতেন না কিন্তু ওরা রিপের নাম জানত। রিপ ওদের সঙ্গে মদ্য পান করেছিল এবং ঘুমিয়ে গিয়েছিল। যখন তার ঘুম ভাঙল, সে দেখল যে, তিনি তার চারিপাশে কিছুই চিনেন না। তার দাড়ি গোঁফ এতই বড় হয়ে গেছে যে পা সমান লম্বা প্রায়। ঘুমের আগের যে রাজা ছিলেন কিং জরজ-৩য়, সে আর নাই, বরন ওয়াশিংটন হয়ে গেছেন তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
গ্রামে ফিরে আসার পর রিপ কে কেউ আর চিনতে ছিল না, এবং আরও মজার ব্যাপার হল যে, ঐ খানে আরও একজন রিপ ভ্যান ওয়িঙ্কেল হয়ে গেছে যে তার ছেলে। সে এখন অনেক বড় একজন পোলা। অবশেষে গ্রামের একজন অতি বৃদ্ধা রিপকে চিনলেন এবং তার মেয়েকে বললেন যে, এতা তার বাবা। রিপ একনাগারে ২০ বছর ঘুমিয়ে ছিল বলে জানা জায়। রিপ তার পরেও অনেক দিন বেচে ছিল এবং আগের মত ই বেচে ছিল।
এই গল্পটা বেসিক্যালি একটা রুপক। এর মানে অনেকঃ
(১) রিপ একজন রুপক মানুষ সমাজের যারা সমাজের অনেক কিছু থেকে পালিয়ে গিয়ে কোথাও চুপ করে বাচতে চায়,
(২) রিপ একজন মানুষ যে সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে না থেকেও সমাজে বেচে আছে।
(৩) রিপ সেই এক জন রুপক মানুষ যে, সরকারের প্রাথমিক শাসনে কিছুই বুঝে না এবং প্রায় অনেক বছর পর বুঝতে পারে যে, তাদের মদ্ধে সএকার অনেক কিছু পরিবর্তন করে ফেলেছে আর এই সব পরিবর্তন সব বড় বড়।
মার্ক পোলো
দুইজন ভিয়েতনামি ধনী ব্যবসায়ী ভাই (একজন নিকোলো আরেক জন মেটিও) পূর্ব থেকে ইউরোপে ১২৬০ সালে ভ্রমনে বের হয়েছিল। তখন তো আর এখনকার মত প্ল্যেন ছিল না অহরহ যে ইচ্ছে করল আর অনলাইনে আরব এমিরাটস এ বুকিং দিয়ে দিল আর অমনি তারিখ মত উরে চলে গেল এক দেশ থেকে আরেক দেশে। তারা জাহাজে করেই ভ্রমনে বের হত এবং তারা সবাই তাই করতে হয়েছিল। ১২৬৫ এর দিকে তারা কেইফেং (চায়নার এক অঙ্গরাজ্য) পৌঁছাল। কেইফেংটা হচ্ছে বর্তমান হেনান প্রভিন্স এর পাশে) আগে এটা নর্থ সং ডাইনেস্টি নামে পরিচিত ছিল। তারও আগে এটাকে বলা হত ক্যাপিটাল অব কুবলাই খান (গ্রেট খান নামেও ডাকা হয় এটাকে)। আর গ্রেট খান ছিল তখনকার দিনে মঙ্গল সম্রাট। ১২৬৯ সালে এই দুই ভাই মঙ্গল সম্রাট খানের বেশ ব্যক্তিগত সম্পর্কের কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। সম্রাট খান তাদেরকে এতটাই বিশ্বাস করতেন যে, একবার এই দুই ভাইয়ের মাধ্যমে ইউরোপের পোপের কাছে মঙ্গলদেরকে মঙ্গলিয়ান থেকে কনভার্ট করার লক্ষে ১০০ মিশনারিজ পাঠাতে বলেছিলেন যদিও শেষমেশ পোপ ঐ অনুরোধ রাখেন নাই।
পরবর্তীতে নিকোলো যখন একা ইতালির ভেনিসে আসেন তখন সে জানতে পারে যে, তাঁর ১৫ বছরের একমাত্র পুত্র মার্ক পলোকে রেখে তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। বেচারা ধনী হলে কি হবে? তখন তো আর সাকিরের স্মার্ট ফনের মত সম্রাটের কোন ফোন ছিল না যে, বাটন টিপলেই রানি পাওয়া যাবে। সুতরাং তিনি ওখানে না আশা পর্যন্ত জানতেন না যে তাঁর স্ত্রী আর জীবিত নেই। কি আর করা, মরা বউয়ের জন্য তো আর নিজের সব কাজ ফেলে সারাদিন কান্নাকাটি করা যাবে না, আর সব কাজ ফেলে তাজমহল ও গড়া যাবে না। আর করেও লাভ নেই এই কারনে প্রেমের নিদর্শন বল আর নামের কারনেই বল তাজমহল বানানর জন্য যে পরিমান অর্থ আর লোকবলের দরকার আমাদের এই পোলো পরিবারের তা ছিল না যদিও তারা অনেক ধনী ছিলেন।
অতঃপর এই দুই ভাই আবারও মার্ক পোলোকে সঙ্গে করে পূর্বের সেই খানের কাছে ফিরে আসেন। এটা সম্ভবত ১২৭৫ সালে। সম্রাট খান মার্ক পোলোকে খুব পছন্দ করেছিল। আর এই ভাল লাগা থেকেই সম্রাট খান মার্ক পোলোকে রাজকীয় কাজকর্মে নিয়োজিত করেন। পরিবারতন্ত্র আর পছন্দতন্ত্র সবখানেই সবসময়ই ছিল। খামাখা আমরা আজকে বিএনপি অথবা আওয়ামি লিগকে দোষ দেই। আরে বাবা ওরা তো আগের রাজা মহারাজদের পথই অনুসরণ করেন!! যাক, খুব অল্প বয়সেই মার্ক পলো অনেক বড় বড় সরকারি পজিশনে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান, এবং কখন কখন রাষ্ট্রদূত হিসাবেও নিয়োগ পান। শুধু তাই নয়, মার্ক পলো ইয়াঞ্জু শহরের গভর্নর হিসাবেও নিয়োগ পান।
গ্রেট খানের মেয়ে অর্থাৎ প্রিন্সেস তিনি এই পোলো পরিবারের কাছে খুব সেইফ মনে করছিলেন বলে তিনি আস্তে আস্তে তাঁর কন্যাসহ মার্ক পোলো এবং তাঁর বাবা চাচাদের সঙ্গে দক্ষিন চায়না দিয়ে তাদেরকে ইউরোপ পার হয়ে যাবার জন্য একটা বড় জাহাজ দেন (যার নাম ছিল আরমাদা, আরমাদা হচ্ছে একটা যুদ্দ জাহাজ যা আর্মড এবং জাহাজ এর নামের মিশ্রন, আর তাই এর নাম হয় আরমাদা)। এই পার করে দেয়ার কারন হল পার্সিয়ান গালফে গ্রেট খানের আরেক আত্মীয় যার সঙ্গে তিনি তাঁর মেয়ের বিয়ে দেবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। আর ঐ মেয়ে অর্থাৎ প্রিসেসও ঐ রাজকুমারকে বিয়ে করার জন্য রাজী ছিলেন। ঐ জাহাজে প্রায় ৬০০ সৈন্য ছিল, প্রায় ১৪ থেকে ১৫ তা আরও ক্ষুদ্র নৌকা ছিল। এই আরমাদা ইন্দোনেশিয়া হয়ে শ্রীলংকা দিয়ে ভারত বর্ষ পার হয়ে হরমুজ প্রনালি দিয়ে পার্সিয়ান গালফে আসে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাজ কন্যার সঙ্গে আর ঐ রাজ পুত্রের বিয়ে হয় নাই কারন ইতিমধ্যে রাজপুত্র মারা যান। পরিশেষে ঐ রাজকন্যা তাঁরই আরেক ভাইকে বিয়ে করেন।
মার্ক পোলো পরবর্তীতে ভেনিসে এসে আর্মিতে যোগদান করেন জেনোয়া রিপাবলিককে রক্ষা করার জন্য। তখন ওখানে একটা যুদ্ধ হচ্ছিল। ইতালির এই শহরটা তখন তাদের নিজস্ব স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছিল। কিন্তু জেনোয়া স্বাধীনতা পায় এবং মার্ক পোলো বন্দি হন। তাঁর দুই বছরের জেল হয়। আর এই জেলখানায় বসেই তিনি তাঁর বিখাত বই The Travels of Marco Polo বইটি লিখেন। প্রকৃতপক্ষে অনেক বিখ্যাত বই জেলখানায় বসে লেখা হয়েছে। যেমন গ্লিমসেস অব ওয়ার্ল্ড হিস্টোরি (নেহেরু), দি ট্রাভেলস অব মার্ক পোলো (মার্ক পোলো), মেইন কেম্ফ (হিটলার), লি মর দি আরথার (Le Morte d'Arthur ) স্যার টমাস মেলরির লেখা, মিগুয়েল দি সারভেন্টেজ এর লেখা "ডন কুইকজট" (Don Quixote), দনেটিন আলফসের লেখা "জাস্টিন, ফিলসফি ইন দি বেডরুম" ইত্যাদি।
বকসি ভাই, তোমার জেল খাটার শখ আছে? না থাকলে তুমি বইও লিখতে পারবা না, মার্ক পোলোও হতে পারবা না। যাক, জেলে মেলে যাবার দরকার নাই।
তিনি তাঁর এই লেখাটা আরেক বন্দি রাস্টিচেলোর কাছে দিয়ে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে এই রাস্টেচেলোই ফ্রান্স ভাসায় এই বইটি প্রকাশ করে। বইটির অনেক চ্যাপ্টারের মধ্যে মানুষ খেকো লেজওয়ালা মানুষের অনেক বর্ণনা আছে, এশিয়ার অনেক ভৌগলিক বর্ণনা আছে। এশিয়ার মানুষেরা কিভাবে বিয়ে করে, সেক্স করে এবং কিভাবে মানুষ মানুষকে কবর দেয় তাঁর বিস্তারিত বর্ণনা আছে। তাঁর সঙ্গে আছে বিস্তারিত ধর্মীয় আচার ব্যবহারের বিশদ বর্ণনা। সে সেকেন্ড হ্যান্ড রেফারেন্স হিসাবে তাঁর সঙ্গে থাকা অনেক জাপানিজ এবং মাদাগাস্কার বন্দিদের তথ্য নিয়ে তিনি ঐ দেশ সমুহের কিছু তথ্য ও সংযজন করেছিলেন।
সক্রেটিসের এ্যাপোলজি
যে কয়েকটি সংলাপ ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে তার মধ্যে একটি হলো এ্যপোলজি (Apology)। আধুনিক ইংরেজীতে Apology অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। কিন্তু গ্রীক ভাষায় Apology-অর্থ ভিন্ন। সেখানে Apology-অর্থ defense। আদালতে বিচারের সময় আত্মপক্ষ সমর্থন করে সক্রেটিস যে ভাষণ দেন এ সংলাপ তারই বর্ণনা। Apology-কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ও সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে সক্রেটিস আত্মপক্ষ সমর্থন করছিলেন এবং এই পর্যায়ে মিলেটাসকে জেরা করেন ও ডেলফির মন্দিরে নিজের দৈববাণী পাওয়ার বিষয়টি সবিস্তারে বর্ণনা করেন। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে রায়, এবং তৃতীয় অংশে শাস্তি। বিচারকদের মধ্যে ছিলেন গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ এনিটাস, কবি মেলিটাস, বাগ্মী লাইকন।
সক্রেটিসের সংলাপ (উল্লেখযোগ্য অংশ)
“বলতে পারেন সক্রেটিস, যে কাজ করার জন্য অতঃপর আপনার অকাল মৃত্যু হতে যাচ্ছে, সেইসব কাজ করার জন্য আপনি কি লজ্জ্বিত নন? তাকে আমি ন্যায্যভাবে উত্তর দিবোঃ এখানেই আপনি ভুল করছেন, যে ব্যক্তি মানুষের মঙ্গল সাধনের জন্য মাঠে নেমেছে, তাকে নিহত হবার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতেই হয়, এই নিয়ে তিনি তেমন চিন্তিত নন, তিনি ভাবেন কেবল একটি বিষয় - যা করছেন তা ঠিক করছেন না ভুল করছেন, ভালো মানুষের কর্ম সম্পাদন করছেন না খারাপ মানুষের কর্ম সম্পাদন করছেন।“
“হে এথেন্সবাসীগণ, আমি আপনাদের শ্রদ্ধা করি, আমি আপনাদের ভালোওবাসি, কিন্তু আমি আপনাদের কথা শুনবো না, আমি শুনবো আমার ইশ্বরের কথা। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমার জীবন ও শক্তি রয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি দর্শন চর্চা ও শিক্ষাদান থেকে বিরত হবো না।“
“আপনাদের জানাতে চাই যে, যদি আপনারা আমার মত একজন মানুষকে হত্যা করেন, তাহলে আমার যে পরিমান ক্ষতি হবে, তার চেয়ে আপনাদের অধিক ক্ষতি হবে। কোন কিছুই আমার ক্ষতি করতে পারবে না, মিলেটাস নয়, এনিটাসও নয়। কারণ একজন ভালো মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতা ঈশ্বর দুষ্টলোককে দেননি। দুষ্টলোক শুধু নিজেদেরই ক্ষতি করতে পারে। আমি অস্বীকার করিনা যে, এনিটাস তার চেয়ে একজন ভালো মানুষকে হত্যা করতে পারে বা তাকে নির্বাসনে পাঠাতে পারে, বা রাষ্ট্রীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে; এবং সে কল্পনা করতে পারে যে, এরূপ করে সে তার যথেষ্ট ক্ষতি করেছে, অন্যেরাও সেরূপ মনে করতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে আমি তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করিনা। অন্যায়ভাবে একজনকে হত্যা করে সে নিজের যে পরিমান অকল্যাণ করবে তা নিহত ব্যক্তির অকল্যান থেকে অনেক বেশি।“
রায় এবং শাস্তি
বিচারের জুরি সক্রেটিসকে দোষী সাব্যস্ত করলো খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। ৫০০ জন বিচারকদের মধ্যে সক্রেটিসের বিরুদ্ধে জুরি ছিলেন ২৮০ জন, পক্ষে ছিলেন ২২০ জন। তারপর সেই সময়কার রীতি অনুযায়ী তাঁকে দ্বিতীয়বার বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ দেয়া হলো। এথেনীয় জুরিসপ্রুডেন্স (jurisprudence) রীতি অনুযায়ী অভিযোক্তারা একটি দন্ড প্রদান করে, এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি তার চাইতে কম শাস্তি প্রার্থনা করে বিতর্কে অবতীর্ন হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, অভিযুক্তকে যদি মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো, তাহলে এটাই প্রচলিত ছিলো যে, অভিযুক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডের স্থলে নির্বাসন প্রার্থনা করতো। অর্থাৎ প্রতিটি মামলায়ই দেয় দন্ডাজ্ঞার চাইতে কম শাস্তি প্রার্থনা করা হতো। মহাজ্ঞানী সক্রেটিসকে দ্বিতীয় বক্তৃতাটি দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো যেন তিনি তাঁকে প্রদত্ত মৃত্যুদন্ডের চাইতে কম শাস্তি প্রার্থনা করতে পারেন। কিন্তু মহাজ্ঞানী সক্রেটিস এই মর্মে বিতর্ক করেছিলেন যে, তিনি একটি মহান দায়িত্ব পালন করে এথেন্স রাষ্ট্রের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, যা হলো এথেন্সের স্বতন্ত্র নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা করা, সুতরাং যথাযথ শাস্তি হবে এই যে, তিনি যেন বাকী জীবন এই মহান দায়িত্ব পালন নির্বিঘ্নে করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাঁর জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা। এতে সিনেটররা ক্ষুদ্ধ হয়, ও তারা সক্রেটিসের মৃত্যুদন্ডাদেশই বহাল রাখে।
ব্যাটল অফ এমাগেদ্দন
পৃথিবীতে চূড়ান্ত একটা যুদ্ধ হবে যার নাম ব্যাটল অফ এমাগেদ্দন। তো প্রশ্ন হতে পারে যে এই যুদ্ধে কে কে খেলবে বা কারা কারা লড়বে? বলা হয় যে, রাশিয়া, ইরান এবং সিরিয়া একত্রে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়বে। একটা জিনিস খুব ভাল করে লক্ষ করে দেখবা যে, যেহেতু মধ্য প্রাচ্য এখন সাংঘাতিক হট বেড এর মত হয়ে আছে, এবং ইরান নিউক্লিয়ার পাওয়ারের অধিকারি হতে যাচ্ছে বলে আমেরিকা এবং ব্রিটিশ মনে করে, ফলে ইসরায়েল এই সুবাদে ব্যাটল অফ এমাগেদ্দন প্রায় সমাগত বলে প্রচার করে অনেক তুল কালাম কাণ্ডই ঘটাতে পারে বলে ইসরায়েল ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করে। এটা আমেরিকা, এবং ব্রিটিশদের পক্ষে ইসরায়েল কাজ করছে বলে তারা সর্বদাই মনে করে।
বাইবেলে এই এমাগেদ্দন শব্দটা হয়েছে আরমাগেদ্দন। আর এটা একবার ই বাইবেলে অনুসৃত হয়েছে। আর এইটা পাওয়া যায় শুধুমাত্র Revelation 16:12 to 20 এ
তো দেখা যাক ১৬/১২ থেকে ২০ পর্যন্ত তে কি লিখা আছে
(১২) ৬স্ট এঞ্জেল তার থেকে এমন একটি নিঃশ্বাস ফেলবে ইউফ্রেটিস নদিতে যাতে ইউফ্রেটিস নদীর সব পানি শুকিয়ে যাবে।
(১৩) তারপর তিনটি অশুভ ইঙ্গিত পাওয়া যাবে যার একটা হচ্ছে ড্রাগনের মুখ থেকে, পশুদের মুখ থেকে এবং মিথ্যা প্রফেটের মুখ থেকে ব্যাঙ বেরিয়ে আসবে।
(১৪) এই তিনটি অশুভ স্পিরিট ব্যাসিকেলি শয়তানের প্রতিনিধিত্ব করবে যারা অনেক যাদুর মত মিরাক্যাল দেখাবে এবং পূর্বের রাজার আবাসন পর্যন্ত পৌঁছাবে। এক সময় এই অশুভ স্পিরিট গুলো সারা বিশ্বকে ঘিরে ফেলবে। আর এতেই ঈশ্বরের সহিত একটা যুদ্ধ হবে ঈশ্বর বনাম শয়তান।
(১৫) এমন সময় তিনি আসবেন, চোরের মত আসবেন যেন কেউ দেখতে না পায়। (বাইবেলে ঠিক এই কথাটা ই বলা আছে (Behold, I come as a thief), তার সমস্ত কাপর চোপড় খুলে তিনি আসবেন, একদম উলঙ্গ, সবাই তার লজ্জার স্থান দেখতে পাবে, এটাই তার আগমনের পরিচয়।
(১৬) তিনি এসে সবাইকে ডেকে একত্রে করবেন হিব্রু ভাষায় ওই স্থানে যার নাম আরমাগেদ্দন।
(১৭) অতঃপর, ৭ম এঞ্জেল একটি নিঃশ্বাস ফেলবেন বাতাসে যার মাধ্যমে বেহেশত এবং রাজার দরবার থেকে প্রচারিত হবে যে, যা করবার তা করা হয়ে গেছে।
(১৮) ঠিক তার পরেই শুরু হবে বিজলীপাত, ভুমিধ্বস এবং ভুমিকম্প।
(১৯) অতঃপর শহরটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে খন্ডখন্ড হয়ে। তখন বেবিলন শহর থেকে ঈশ্বরকে এক কাপ মদ দেয়া হবে যেন তিনি শান্ত হন।
(২০) ওই সময় সমস্ত দ্বীপ গুলো হারিয়ে যাবে, পাহার গুলো কোথাও উধাও হয়ে যাবে, এরপর বেহেশত থেকে পাথর নিক্ষিপ্ত হবে ক্রমাগত মানুষদের উপর। জাজমেন্ট ডে শুরু।
মজার ব্যাপার হল যে, পৃথিবীতে আরমাগেদ্দন নামে কোন জায়গা নেই। গ্রিকরা এই শব্দটাকে একটা সিলেবি করেছে এই ভাবে, হিব্রুতে har megiddo মানে মাউন্টেইন অব মেজিদ্দু। আর এই মেজিদ্দু হচ্ছে প্যালেস্টাইনে। The Mount of Megiddo is located in the plain of Esdraelon or Jezreel, a valley fourteen by twenty miles in size located to the southwest of Nazareth. Here, it is thought by many, that the great final battle of Armageddon will be fought at the end of time.
বলা হয় যে, বুক অব রেভেলিসন এ যা যা লেখা আছে কেউ যদি এতার এক টি শব্দ ও বদলায় তাহলে সে হবে জাহান্নামী এবং সে তার সমস্ত পরিবার বর্গ নিয়ে এক সঙ্গে জাহান্নান্মে যাবে। সাংঘাতিক কথা।
ওয়ার এগেইন্সট টেরর হচ্ছে এই ব্যাটল অব আরমাগেদ্দনের আরেক রূপক। এটা মিডল ইস্ট কে ঘিরেই করতে হবে এবং এটা বাইবেলের নির্দেশ। এটাই মনে করে ইসরায়েল এবং খ্রিস্টিয়ানরা
কেন আমেরিকা ইসরায়েলকে
কেন আমেরিকা ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন করে, এই প্রশ্নটা আমি অনেককেই করতে দেখেছি। অনেকের অনেক রকম ধারনা আছে যার মধ্যে একটা হচ্ছে যে, সবাই মনে করে আমেরিকাতে ইহুদীদের প্রভাব বেশি এবং তারা যদি আমেরিকার ভোটের সময় বেকে বসে তাহলে কোন ব্যাক্তিই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট হতে পারবে না। অথবা ইহুদীরা ভোটের সময় হয়ত প্রচুর টাকাপয়সা দান করে যার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ক্যান্ডিডেটরা ইহুদীদেরকে হাতে রাখতে চায়। হয়ত এই কারনে আমেরিকা ইসরায়েলকে অন্ধভাবে সমর্থন করে, আসলে ব্যাপারটা একদমই এইরকম নয়।
ইহুদীরা টাকা পয়সা দানের ব্যাপারে অত্যন্ত কঞ্জুষ। এরা পারতপক্ষে কাউকে কোন দান করে না। এমনকি তাদের গরিব আত্মীয়সজনকেও না। আর আমেরিকার ভোটের সময় কোন ক্যান্ডিডেটকে অনেক টাকা পয়সা দিয়ে সাপোর্ট করার মত মানসিকতাও ওদের নেই। আর যদি বলি যে, ইহুদীরা আমেরিকায় অনেক সংখ্যাগরিস্ট তাও নয়। ইহুদীরা আসলে নিউইয়র্কভিত্তিক বেশি। আর শুধু নিউইয়র্ক দিয়ে পুরু আমেরিকায়, আর যাই হোক, প্রেসিডেন্ট হিসাবে জয়ি হওয়া সম্ভব নয়। আবার যদি বলি যে, ইসরায়েলকে সমর্থন করে অন্ধভাবে অনেক আমেরিকান তাও নয়, বরং ইসরায়েলকে সমর্থন করে না এমন লোকের সংখ্যাই বেশি। তাহলে প্রশ্নটা হচ্ছে, কেন আমেরিকা ইসরায়েলকে এত অন্ধভাবে সমর্থন করে? বা কারা করে?
উত্তরটা খুব সহজ নয় তবে বুঝবার বিষয় আছে। এটা অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়।
আমেরিকায় দুই ধরনের খ্রিস্টিয়ান বাস করে, এক হচ্ছে ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ান এবং দুই হচ্ছে ক্যাথলিক। ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানগন তাদের ধর্ম বিশ্বাসে অটুট থাকতে হলে ধর্মের জন্য তাদের ইনকামের ১০% টাকা দান করতেই হবে। এটা নিয়ম। আর এটা যদি না করা হয় তাহলে বাইবেলের তথ্য মতে ঐ ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানদেরকে ঈশ্বর দোজখের আগুনে পুরিয়ে মারবেন। ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানগন এই নিয়মটা ১০০% মেনে চলেন যদিও অনেকে চার্চে যান না। আর এখানেই হচ্ছে সেই ভোটের ট্রাম কার্ড।
আমেরিকায় ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ান এত বেশি যে, কোন ক্যান্ডিডেটই ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানদের ভোট ছাড়া জয় পাবার কোনই সম্ভাবনা নাই। ক্যাথলিক খ্রিস্টিয়ানরা সংখ্যায় অনেক কম এবং এরা খুব একটা বাইবেল পড়ে না যেমনটা পড়ে ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানরা। ছোট একটা উদাহরন দিয়ে আমি যদি বলি যে, ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানরা হচ্ছে আমাদের সুন্নিদের মত আর ক্যাথলিক খ্রিস্টিয়ান রা হচ্ছে আমাদের শিয়া মুসলমানদের মত। সুন্নি মুসলমানরা কোরআন বেশি পড়ে এবং কোর আনে যা লিখা আছে তা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করে কিন্তু শিয়ারা কোর আনের পাশাপাশি তাদের ধর্ম গুরুর কোথাও কোরআনের মত মেনে চলে যেমন হয্রত আলির অনুসারিরা। Fundamentalist Christians are all Protestants. The largest group is the Baptists. Whereas the Jews are divided in their support of Israel, the Fundamentalist Christians are united in their support of Israel. This explains why no political candidate can be elected in America who is opposed to Israel. Now, the key question is: Why do the Fundamentalist Christians support Israel?
ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানরা বিশ্বাস করে যে, বাইবেলে যা যা বলেছে তা সব সত্য এবং এটা মানা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। Their support for Israel comes directly from the Bible. Most importantly, it comes from the Book of Revelation, the last book of the Bible, chapters 16 to 21
বাইবেলের মতে জিশুর ২য় বার আগমনের জন্য কতগুলো ঘটনা ঘটবে। ১ম ঘটনা হতে হবে যে, ইহুদীরা জেরুজালেমে ফিরে আসতে হবে যা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। তারপর প পড় আরও অনেক অঘটন ঘটবে, যেমন চাদের রং লাল হয়ে যাবে, তারপর "ব্যাটল অব আমাজেদ্দন" হবে, তারপর শয়তান রা জেরুজালেমে যুদ্ধ ঘোষণা করবে (প্যালেস্টাইনকে ওরা শয়তান মনে করে)। বাইবেল বলে যে, এই যুদ্ধে জেরুজালেমের অনেক ক্ষতি সাধিত হবে এবং জেরুজালেমের উপাশনালয়ের কিছুটা ধ্বংস হবে। বাইবেল আরও বলে যে, এই ব্যাট ল অব আমাজেদ্দনে ইহুদীরা অনেক দুর্বল হয়ে পরবে এবং ঠিক ঐ সময়ে যীশু আসবেন। এই ব্যাটল অব আমাজেদ্দনে যীশু আসার পড় ইহুদীরা পুনরায় জয়ি হবে এবং সব ক্যাথলিক ক্রিস্টিয়ানরা ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ান হয়ে যাবে। এই সব কিছু সম্ভব হবে তখন ই যখন জেরুজালেম তাদের হাতে থাকবে। জেরুজালেম হাতে না থাকলে যীশু আসতে পারবেন না এবং ইহুদীরা সমুলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আর এই জেরুজালেম এক মাত্র উদ্ধার এবং রক্ষা করতে পারে শুধু মাত্র ইসরায়েল। আর ঠিক এই কারনে ইসরায়েলের সব চেষ্টা এবং একটিভিটিজ হোক সেটা শয়তান (প্যালেস্টাইন) মারা, হোক সেটা অন্য কোন এক্ট ইত্যাদি করাকে সব ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানরা সমর্থন করবেই। এটা ওদের জন্য ফরজ কাজ ধর্মের নামে। আরও একটা মজার কাহিনি হল যে, ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ানদের ধর্ম উপদেস্ঠা জেরি ফলওয়েল এর চিন্তা ধারা বাইবেলের এই সব ব্যাখ্যা কে আর ও জোরালো এবং সমর্থন যোগ্য করে দিয়েছে এই সব ফান্ডামেন্টালিস্ট খ্রিস্টিয়ান দের কে। কে সে এই জেরি? সেটা আরেক মজার গল্প। আমার কাছে এটা গল্পই বটে। পড়ে বলব যদি সময় এবং মুড থাকে।
ম্যাগনা কার্টা
ম্যাগনা কার্টা বেসিক্যালি একটা চুক্তিপত্র যার মাধ্যমে দেশের সমস্ত লোকজনের বেসিক রাইটসকে সমুন্নত রাখবে এবং অক্ষুন্ন রাখবে। আর এটা করা হয়েছিল রাজা জনের আমলে রুন্নিমেড এলাকায় জুনের ১২১৫ সালে। এই চুক্তিটা আসলে যুক্তরাজ্যের অধিবাসিদের জন্য এক ধরনের ব্যাক্তি স্বাধীনতার দলিল। যার প্রধান উদ্দেশ্য হল, King is not above the Law and its like a Bill of Rights for Mediaval England. প্রকৃত দৃশ্য ছিল যে, The King often lived above the law, violating both feudal and common law, and was heavily criticized for his foreign policy and actions within England. আর এই কারনেই যুক্ত রাজ্যের মানুষ গুলো ছিল রাজাদের উপর খুব বিরক্ত। বিশেষ করে ব্যারনরা। এটার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের অধিনে যে সব কলোনিগুলো ছিল প্রায় সব দেশেই অবশেষে এই দলিলটি একটি মহামান্নিত দলিল হিসাবে গৃহীত হয় এবং অনেক দেশের লিগ্যাল সিস্টেম এর উপরই বেজ করে তৈরি করা হয়।
গল্পটা এই রকমঃ
১২০৯ থেকে ১২১২ সাল পর্যন্ত তখনকার রাজা জন এর আমলে যুক্তরাজ্যের কিছু অধিবাসীগণ যাদেরকে ব্যারন (member of a specific rank of nobility, esp the lowest rank in the British Isles) নামে ডাকা হত সেই সব সিটিজেনের জন্য এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য এই দলিলটি রাজা জন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১২১৫ সালে অনেক ব্যারনরা এবং চার্চের লোকেরা রাজার এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কন্সপিরেসি শুরু করে। তারা রাজা জনকে সিংহাসন থেকে বিতারিত করতে চাইছিলেন না কারন রাজা জনের পরে অন্য কেউ যে রাজা হবেন সেই লোকটি ছিল না। কেন ছিল না, বা কে হতে পারত এটা আরেক গল্প। ঐ গল্পে গুম আছে, ডিপ্লোম্যাটিক রাজনীতি আছে, ধর্ম আছে, সে গল্পে এখন যাচ্ছি না। এই ম্যাগনা কার্টার প্রথম নাম ছিল 'The Unknown Charter of Liberties', later appeared as 'Articles of the Barons' and the Runnymede Charter.
মীরজাফর এর মত লোক সবসময় সবখানেই ছিল এবং এই রাজা জনও এমন একজন লোক ছিলেন। যেই না 'The Unknown Charter of Liberties', অথবা 'Articles of the Barons' ব্যারনরা পেল এবং ব্যারনরা সানন্দে আবার রাজা জনকে অভিসিক্ত করলেন, অভিষিক্ত হয়েই এই রাজা মশাই ঐ দলিল খানা বাতিল করে দেন। আবারো শুরু হল যুদ্ধ। শেষ অবধি এই রাজা মারা গেলেন ১২১৬ সালে এবং তাঁর পুত্রধন হেনরি-৩য় রাজার স্থলে অভিষিক্ত হলেন। কিন্তু পুত্রটি ছিল বাপের থেকে একটু চালাক। তিনি বাপের বাতিল করা আর্টিকেলটি পুনরায় বহাল করেন এবং তখনই এর সংস্কারকৃৎ নতুন নামটি হয় ম্যাগনা কার্টা ।
এখন তাহলে এই মুল্যবান দলিল দিয়ে কি হয় আসলে তা বুঝার ব্যাপার। যেহেতু এই দলিলটি অনেক দেশেই চলমান, ফলে অনেক দেশ একচুয়ালি একই কন্সটিটিউসন ব্যবহার করে বলে লিগ্যাল সিস্টেমগুলো প্রায় এক।
দ্বিতীয়তঃ এই দলিলের বলে "ব্যালেন্স অব পাওয়ার" যদি বলি অনেকটা "ব্যালেন্স" করে। কার কার মধ্যে ব্যালেন্স করে? দেশ থেকে দেশে এবং পাবলিক ও জনগনের মধ্যে।
তৃতীয়তঃ কোন রাজাই এখন আর প্রশ্নের উর্ধে নয়, সবার জন্য আইন সমান সে রাজাই হোক আর প্রজাই হোক। সে ক্ষমতায় থাকুক আর ক্ষমতায় নাই বা থাকুক। আসলে এটা হওয়া দরকার ছিল বাংলাদেশে। এটা থাকলে আর কেয়ার টেকার সরকারের দরকার পরত না।
৪র্থ হল যে, এই ম্যাগনা কার্টার মাধ্যমে চার্চকে একেবারে স্বাধীন করে দেয়া হয়েছে। চার্চ তাঁর নিজস্ব পলিসি বানাতে পারবে রাজার কোন ভুমিকা নেই। মোদ্দা কথা হচ্ছে এই উপরের আইন বা স্বাধীনতাগুলো ছাড়া বা সহকারে আমি যদি নিম্নআকারে লিখি তাহলেও ম্যাগনা কার্টা ভালভাবে বুঝা যাবে।
ক। Shifted the power from the monarchs to the people in Britain
খ। Required British royalty to obey the same laws as other English people.
গ। Limited the power of the people in the British government.
ঘ. Gave the power in the British government to members of Parlia
এখন অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের রুলস অব বিজনেজকেও অনেক সময় ম্যাগনা কার্টা বলে অভিহিত করে। অর্থাৎ মালিক এবং কর্মচারী একই আইনের অধিনে। সবার অধিকার সমান তাদের যোগ্যতার বলে। এবং সেই সংস্থায় ধর্ম বলে কোন কিছুই ফিক্সড করে দেয়া নাই। যে যার ধর্মকে পালন করতে পারবে। কোন বৈষম্য নাই। আর এটাই হচ্ছে ম্যাগনা কার্টা।
বাইবেলে রঙ
বাইবেলে সাদা, কালো, হলুদ এবং সম্ভবত মিক্সড এই কয়েকটি কালারের কথা বোলা আছে। অনেকদিন আগে আমি বাইবেলের প্রায় ৭টা ভার্সন পরেছিলাম। লুকের, মেথিউজ, আর্কের এবং অল্ড টেস্টামেন সহ নিউ টেস্টামেন্ট।
অল্ড এবং নিউ টেস্টামেন্ট টা অনেকে হয়ত বুঝবে কিনা আমি জানি না তবে এটা জানা ভাল। তো আমি পড়ে এটা সম্পর্কে একটু ধারনা দেব যদি কেউ জানতে চায়।
তো বলি এবার, কালারের কথাগুলো।
বাইবেলের কোন এক জায়গায় লিখা আছে যে, "ইয়াহি অনেক দূর থেকে তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিয়ে আসবে যে দেশের লোক হবে খুবই তড়িৎগতি সম্পুন্ন ইগলের মত, যাদের ভাষা তোমরা বুঝতে পারবে না এবং যারা হবে যুদ্ধ প্রিয় মানুষ। তারা বড়দের সম্মান করবে না, এবং ছোটদেরকেও এরা কোন ফেবার করবে না। তারা প্রুচুর মাংশভুজি হবে, তারা তোমাদের জন্য কোন শস্যক্ষেত খালি রাখবে না মদ তৈরির করার জন্য। এদেরকে বোলা হয়েছে হলুদ মানুষ। এখানে আরও একটা কথা বোলা দরকার যে, বাইবেল বলে যে, ঐ সময় জেসাস এসে তোমাদের সাহায্য করবেন এবং নতুন রাজ্য সৃষ্টি করবেন যার নাম হবে মিলেনিয়াম রাজ্য।
বাইবেলের আরেক ভার্সনে বোলা আছে যে, "তোমার যত পূর্বে যাবে তত হলুদ বিপদের মানুষের সঙ্গে তোমাদের দেখা হবে"। ইন ফ্যাক্ট এই মিথ তাঁর অর্থ অনেক রকমের। কেউ মনে করে এই মিথ টা এসেছে " দি কিংস ফ্রম দি ইস্ট" কনসেপ্ট থেকে। এর মানে এই যে, ইউফ্রেটিস নদির পূর্ব তীরের মানুষ গুলোর কথা বোলা হয়েছে। এর মানে চীন। কিন্তু অনেকে আরও দূর ব্যাখ্যা দিয়ে বলে যে চীনের পর এবং পূর্বেও হচ্ছে আমেরিকা।আবার অনেকে মনে করে যে, ইউফ্রেটিসের পূর্বে বাগদাদ বা তেহরানও আছে যারা ইসলামিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হচ্ছে দিনে দিনে।
এখানে বাইবেলের অন্যান কালারের ব্যাপারে আরও কিছু মজার মিথ প্রচলন আছে। যেমন, ঈশ্বর যখন প্রথম মানুষ তৈরি করেন, তখন তাঁর কালার খুবই কাল হয়ে গিয়েছিল। তখন তিনি আবার আরও একজন মানুষ তৈরি করেন, তখন সেটা হয়ে ছিল অনেক সাদা। তখন তিনি তৃতীয় বার চেস্টার পর যে মানুষটি তৈরি হল, সেতা না কাল না সাদা। ওটা প্রায় এসিয়ান টাইপের। এটা অনেকে জোক মনে করেন কারন এই কনসেপ্টটা সব ভার্সনে পাওয়া যায় না।
তবে অরিজিনাল বাইবেলে মাত্র ৪ বার হলুদ কালারটা ব্যবহার করা হয়েছে। ৩ বার ই ব্যবহার হয়েছে ধর্ম জাজকের দ্বারা রোগ নির্ণয় করার কারনে বা ব্যাপারে। আর ৪র্থ বার ব্যবহার করা হয়েছে ইয়েলো গোল্ড বুঝানোর জন্য।
কোন একটা ভার্সনে (আমার ঠিক মনে নাই এখন) বলা হয়েছে যে, Gold or Yellow: Symbolizes the Glory of God ; divine nature; holiness; eternal deity; the Godhead; Purification; majesty; righteousness; divine light; kingliness; trial by fire; mercy; power; His Deity; Glory. Yellow or Gold is also primary. It always speaks of trial and purging. "That trial of your faith, being much more precious than of gold that perishes, though it be tried with fire, might be found unto praise and honour and glory at the appearing of Jesus Christ"
বাইবেলের বিশেষ করে লেভিক্টাসে কালারের কিছু মিনিগ সরাসরি বোলা হয়েছিল। যেমন ধরঃ কাল মানে পাপ, মৃত্যু, খোঁড়া, দুঃখ কিন্তু এখানে চুল কে ওর মধ্যে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে।
নিল কালারকে বোলা হয়েছে যে, পবিত্র জায়গায় যা যা রাখা হবে তাঁর কালার হতে হবে নীল। এটা ধনী ব্যাক্তির জন্য ও ব্যবহার করার রিতি আছে। এটা হচ্ছে হেভেনলি কালার।
সবুজ কালারকে জীবনের কালার বোলা হয় অর্থাৎ যা সবুজ তাতেই প্রান আছে বোলা হয়।
The color red in the Bible means love, forgiveness, or even blood sacrifice. Red in the Bible meant the chosen people whose doors were paintef red were to be kept alive and the doors that were not painted were killed
এবার আসি অল্ড টেস্টামেন্ট এবং নিউ টেস্টামেন্ট কি
একদম সবচেয়ে বিশাল পার্থক্য হচ্ছে অল্ড টেস্টামেন্টে জিশুর আবির্ভাব আর নিউ টেস্টামেন্টে এটার অভাব। The Old Testament provides the history of a people; the New Testament focus is on a Person. The Old Testament shows the wrath of God against sin (with glimpses of His grace); the New Testament shows the grace of God toward sinners (with glimpses of His wrath). The Old Testament predicts a Messiah (see Isaiah 53), and the New Testament reveals who the Messiah is (John 4:25–26). The Old Testament records the giving of God’s Law, and the New Testament shows how Jesus the Messiah fulfilled that Law (Matthew 5:17; Hebrews 10:9). In the Old Testament, God’s dealings are mainly with His chosen people, the Jews; in the New Testament, God’s dealings are mainly with His church (Matthew 16:18). Physical blessings promised under the Old Covenant (Deuteronomy 29:9) give way to spiritual blessings under the New Covenant (Ephesians 1:3). The Old Testament saw paradise lost for Adam; the New Testament shows how paradise is regained through the second Adam (Christ). The Old Testament declares that man was separated from God through sin (Genesis 3), and the New Testament declares that man can be restored in his relationship to God (Romans 3—6). The Old Testament predicted the Messiah’s life. The Gospels record Jesus’ life, and the Epistles interpret His life and how we are to respond to all He has done. In summary, the Old Testament lays the foundation for the coming of the Messiah who would sacrifice Himself for the sins of the world (1 John 2:2). The New Testament records the ministry of Jesus Christ and then looks back on what He did and how we are to respond. Both testaments reveal the same holy, merciful, and righteous God who condemns sin but desires to save sinners through an atoning sacrifice.
হিটলার
১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল সকাল ৬:৩০ মিনিটে অস্ট্রিয়ার কোনো এক নাম না জানা ব্রাউনুন গ্রামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক এডলফ হিটলারের জন্ম হয়। তার বাবার নাম ছিলো এলুইস এবং মায়ের নাম ছিলো ক্লারা। বাবা মায়ের ৪র্থ সন্তান ছিলেন হিটলার। কিন্তু তার আগের তিনজনই তার জন্মের আগে মারা গিয়েছিলেন। হিটলারের পরে তার আরো দুইজন ভাইবোন ছিলো। তাদের নাম ছিলো এডমাউন্ড এবং পউলা। হিটলারের দাদামহ কে ছিলেন সেটা আজো ইতিহাস সঠিক তথ্য দিতে পারে নাই। তবে বলা হয় যে, হিটলারের বাবা এলুইস ছিলেন মারিয়া আন্না নামের কোনো এক মহিলার সন্তান এবং তারপাশের বাড়ির দুধ বিক্রেতা জোহান জর্জ হেইডলার ছিলেন এলুইসের বাবা। এলুইস যে একজন অবৈধ সন্তান এটা তখনকার দিনে ওই সমাজে খুব একটা অপ্রীতিকর ব্যাপার ছিলো না বলে এলুইস কখনোই তার পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেন নাই। কিন্তু তিনি তার মায়ের শেষ নামটাই সবসময় ব্যবহার করতেন। আর সেটা ছিলো সিক্লগ্রুবার। পরবর্তীতে অস্ট্রিয়ায় ১৮৭৬ সালে অফিশিয়াল জন্ম নিবন্ধনের সময় তিনি তার এক চাচার "হেইডলার" নামের সাথে ম্যাচ করে এলুইস হেইডলার নামকরনে অভিষিক্ত হন। তখন তার বয়স ছিলো ৩৯। কিন্তু সরকারী খাতায় "হেইডলার" নামটি ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয় "হিটলার" হিসাবে। আর পারিবারিক নামের জের ধরেই পরবর্তীতে এই মহানায়কের নামেও এডলফ হেইডলারের পরিবর্তে এডলফ হিটলার হিসাবেই আজ বিশ্ববাসি জানে।
১৮৯৫ সালে হিটলার তার ছয় বছর বয়সে ক্লাশ ওয়ানে ভর্তি হন গ্রামের কোনো এক স্কুলে। হিটলার সপ্ন দেখতেন তিনি একজন আর্টিস্ট হবেন। ফলে হিটলার ক্লাসিক্যাল কোনো এক স্কুলে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তার বাবা এলুইস চাইতেন যে, হিটলার সরকারী কোনো কর্মচারী হিসাবে ক্যারিয়ার গড়ে তুলক। ফলে তার বাবা হিটলারকে ক্লাসিক্যাল স্কুলের পরিবর্তে টেকনিক্যাল স্কুলে ভর্তি করে দিলেন। হিটলার তার বাবাকে খুব ভয় পেতেন। ১৯০৩ সালে হতাত করে হিটলারের বাবা ফুস্ফুসের ক্যান্সারে মারা যান। তার বাবার মৃত্যুর পর হিটলার পুরুপুরি স্বাধীনতা পেয়ে যান। কোনো দায়িত্ববোধ বলে কিছু ছিলো না তার। এমনকি নিজের জন্যেও না। ফলে বাউন্ডেলে জীবনের মত হিটলার অস্ট্রিয়ার আনাচে কানাচে বিভিন্ন মিউজিয়ামে, অপেরা পার্টির সঙ্গে এখানে সেখানে ঘুরে বাড়াতে লাগলেন। আর এভাবে হিটলার তার লেখাপড়ায় মোটামোটি একটা ইতিই টেনে ফেলছিলেন। এইভাবে করতে করতে, ১৯০৭ সালে হিটলার সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি ভিয়েনা একাডেমিতে ফাইন আর্টসে ভর্তি হবেন। কিন্তু তিনি খুব খারাপভাবে ভর্তি পরিক্ষায় ফেল করলেন এবং ভিয়েনা একাডেমিতে আর ভর্তি হতে পারলেন না। মনের দুঃখে তিনি পুনরায় ভিয়েনা থেকে তার নিজের বাড়ীতে মায়ের কাছে ফিরে এলেন। কিন্তু তখন তার মা আন্না ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ১৯০৭ সালের ডিসেম্বরে তার মা আন্না ক্যান্সারে মারা যান।
১৯০৮ সালে হিটলার পুনরায় ভিয়েনা একাডেমিতে আবারো ফাইন আর্টসে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেন, কিন্তু আগেরবারের চেয়ে ফলাফল এবার আরো খারাপ হওয়ায় ভিয়েনা একাডেমি তাঁকে পরবর্তী সব ভর্তি পরীক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেন। হতাশ হিটলারের আর কোনো কিছুই করার ছিলো না। মায়ের সঞ্চিত যা ছিল, তাই দিয়ে হিটলার রাস্তায় রাস্তায় এদিক সেদিক ঘুরে বাড়াতে লাগলেন। কখনো পার্কে, কখনো ষ্টেশনে, কখনো বা গাছের তলায়। আস্তে আস্তে মায়ের রাখা সঞ্চয়ও শেষ হতে থাকে। এইরকম একটা পরিস্থিতিতেও হিটলার রেগুলার কোনো একটা কাজের সন্ধান করেন নাই। শেষতক, হিটলার কাজ না খুজে মানুষের কাছে হাত পাতা শুরু করলেন, আক্ষরিক অর্থে যাকে বলে ভিক্ষা। এইভাবে আর যখন চলছিলো না, তখন হিটলার ১৯০৯ সালের ডিসেম্বরে "হোমলেস শেল্টার" এ আশ্রয় নেন।
১৯১৩ সালে অস্ট্রিয়ায় যখন বাধ্যতামুলক সেনাবাহিনীতে ভর্তির আদেশ করা হয়, তখন সেনাবাহিনীতে ভর্তি না হবার জন্য চালাকী করে হিটলার তার পিতৃভুমি জার্মানির মিউনিখে চলে আসেন। কিন্তু অস্ট্রিয়ান সরকার ১৯১৪ সালে তার এই চাতুরী ধরে ফেলেন। চতুর হিটলার তার চাতুরীর জন্য এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলভোগের সাজা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হিটলার অস্ট্রিয়ান কনসুলেটকে তার দারিদ্র্যের বর্ণনা দিয়ে অতি আবেগময় একখানা পত্র লিখেন। অস্ট্রিয়ান কনস্যুলেট হিটলারের পত্রের আবেগময় ভাষা এবং তার নিবেদন খুব পছন্দ করেন এবং তাঁকে শাস্তি না দিয়ে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেন সেনাবাহিনীতে ভর্তির জন্য। কিন্তু হিটলার ইচ্ছে করে সেনাবাহিনীর লিখিত পরিক্ষায় খুব খারাপভাবে ফেল করেন এবং তাঁকে আর অস্ট্রিয়ার সেনাবাহিনীতে কখনোই যোগ দিতে হয় নাই।
২৮ জুন ১৯১৪ সালে যখন এক সারবিয়ান আততায়ীর হাতে অস্ট্রিয়ার রাজা ফারদিন্যান্ড মারা যান, তখন জার্মানির চ্যান্সেলর কায়জার অইলহ্যাম অস্ট্রিয়াকে সারবিয়ান্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য চাপ দেন এবং অস্ট্রিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করে। পহেলা আগস্ট ১৯১৪ সালে যখন জার্মান যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন মিউনিখে সবার সাথে হিটলার নিজেও ওই আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
এই সময় রাশিয়া অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যসামন্ত মোতায়েন করেন, অন্যদিকে জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যসামন্ত মোতায়েন করেন। আবার আরেক দিকে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড জার্মানির বিরুদ্ধে তাদের সৈন্যসামন্ত মোতায়েন করে বসেন। তার মানে এই দাড়ালো যে, অস্ট্রিয়া ও জার্মানি একদিকে, অন্যদিকে সার্বিয়া, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড।
অস্ট্রিয়ার রাজা যখন সার্বিয়ার আততায়ীর হাতে খুন হন, তখন হিটলার এতোটাই দেশপ্রেমিক বনে যান যে, তিনি এইবার জার্মানির ভ্যাবারিয়ান রেজিমেন্টে স্ব ইচ্ছায় যোগ দেন। হিটলার সার্বিয়ানদেরকে এবং অন্যান্য বিদেশীদেরকেও জার্মানিতে সহ্য করতে পারছিলেন না। হিটলার সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে মোটেও একজন খাপ খাওয়ানোর মতো লোক ছিলেন না। ঢিলাঢালা, অলস এবং খুবই অপরিচ্ছন্ন সদস্য হিসাবে গন্য ছিলেন। কিন্তু তার একটা ভালো গুন ছিলো। সে বহুবার অল্পের জন্য মৃত্যু থেকে বেচে গেলেও তার সাহসী কাজে খুব উৎসাহ ছিলো এবং তিনি ওইসব কাজে নিজে থেকেই এগিয়ে আসতে চাইতেন। হিটলার কখনো খাবারের জন্য অভিযোগ করেন নাই, কিংবা ব্যারাকে থাকার অবস্থা ভালো নয় এইজন্য তার কোন অভিযোগ ছিলো না, কিংবা তিনি কখনো মেয়েঘটিত ব্যাপার নিয়ে নাক গলান নাই। আর হিটলার কখনো ছুটির জন্যও আবেদন করতেন না।
১৯১৬ সালের ৭ অক্টোবরে কোনো এক যুদ্ধে ( ব্যাটল অফ সুম্মি) তে হিটলার গুরুতর পায়ে আঘাত পান এবং জার্মানির এক হাসপাতালে ভর্তি হন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এটাই হিটলারের প্রথম অনুপস্থিতি। আরোগ্য লাভের পর হিটলারকে তখন হাল্কা কাজ দেওয়া হয় আর তিনি তখনো মিউনিখেই থাকেন। এদিক সেদিক ঘুরে বাড়ান, বার্লিনে এই প্রথম হিটলার ঘুরতে যান। ১৯১৮ সালের ১০ নভেম্বরে হিটলার খবর পান যে, জার্মানির পরাজয় হয়েছে। হিটলারের বয়স তখন ২৭। এই টকবগে তরুন হিটলার জার্মানির এই পরাজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তার বারবার মনে হচ্ছিলো যে, জার্মানির পরাজয় সামরিক বাহিনীর অক্ষমতার জন্য হয় নাই, বরং পরাজয়টা হয়েছে অযোগ্য রাজনীতিবিদদের কারনে, বিশেষ করে ইহুদীদের কারনে। হিটলারের মনে ইহুদীদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ক্ষোভ জন্ম নিতে থাকলো।
১৯১৯ সালের ২৮ জুন জার্মানির পরাজয়ের কারনে মিত্রপক্ষ "ভারসাই চুক্তি" নামে একটি চুক্তি করে যেখানে সম্পূর্ণ দায়ভার জার্মানির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং যুদ্ধে যার যা ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপুরন হিসাবে জার্মানিকে কি কি করতে হবে তা ওই চুক্তির মধ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়। এই চুক্তির বলে জার্মানিকে তাদের নিজস্ব কিছু ভূখণ্ডও পোল্যান্ড এবং ফ্রান্সকে দিয়ে দিতে হয়। শুধু তাই নয়, চুক্তি মোতাবেক বলা হয় যে, জার্মানি তার সেনাবাহিনী কোনো অবস্থাতেই একলাখের বেশী সৈন্য সামন্ত বাড়াতে পারবে না, তাদের কোনো মিলিটারী বিমান থাকতে পারবে না, এমনকি সাবমেরিন জাতীয় কোন নৌজানও রাখতে পারবে না। এটা ছিলো বিশ্ববাসীর সামনে জার্মানির একটা অপমানসুচক চুক্তি।
হিটলার তখনো জার্মানির গোয়েন্দা বাহিনীতে একজন "ইনফরমার" হিসাবে কাজ করছিলেন এবং তিনি মিউনিখেই থাকতেন। কিছুদিন পর হিটলারকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে "পলিটিক্যাল ইনডক্ট্রিনেসন" কোর্সে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। আর ওখানেই হিটলার তার জীবনের একটা মোড় ঘুড়িয়ে ফেলতে সক্ষম হন। সেখানে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজর কাড়েন। হিটলার তার নিজের লেখা "মেইন ক্যাম্প" এ লিখেছিলেন, "একদিন আমি ওই কোর্স করার সময় অনেক ছাত্রদের মিলিত সভায় ইহুদীদের ব্যাপারে আমার কিছু কথা বলার সুযোগ হয়েছিল যেখানে অধিকাংশ ছাত্ররা আমার মতের পক্ষেই সমর্থন দেয়। আর এর ফলশ্রুতিতেই আমাকে সেনাবাহিনি থেকে মিউনিখ রেজিমেন্টে .এডুকেসনাল অফিসার" হিসাবে প্রেসনে পাঠায়।"
১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে মিউনিখের "জার্মান ওয়ার্কার পার্টি"র কোনো এক ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে হিটলারকে তদন্ত করতে পাঠানো হয়। ওই সময় এই "জার্মান ওয়ার্কার পার্টি"টি ছিলো মুলত একটি ছোট নাম না জানা "আলাপচারিতা দলের" মত। খুব কমসংখ্যক লোক এরসঙ্গে জড়িত এবং এদের কোনো এজেন্ডা ছিলো না। হিটলার সূক্ষ্মভাবে ভাবলেন যে, এই ছোট দলটি দিয়েই একটা কিছু করা সম্ভব এবং একে সাংঘটনিকভাবে সাজাতে হবে। এদের প্রতিটি সদস্যই ইহুদীদের বিপক্ষে। হিটলার নিয়মিত এই "আপালচারিতা দল"টিকে একটা রাজনৈতিক দলের আদলে তৈরী করা শুরু করলেন। এই দলটির পক্ষে মাঝে মাঝে হিটলার বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করলেন যেনো এর পরিচিতি বাড়ে। এমনই এক সময়, ১৬ অক্টোবর ১৯১৯ সালে, হিটলার তার এই ক্ষুদ্র দলের সদস্যদের উদ্দ্যেশে এমন এক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিলেন যে, তার এই বক্তব্য, তার এই ইহুদী বিরোধী মনোভাব অনেক জার্মান নাগরিককে উক্ত দলে এসে হিটলারের ভাষণ শুনার জন্য প্রলুব্ধ করে। আর এই সুযোগ নিয়ে ১৯২০ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারীতে প্রায় ২০০০ হাজার জার্মান নাগরিকের সম্মুখে হিটলার ২৫টি দাবী সম্বলিত এক আশাবাদী এবং জ্বালাময়ী বক্তৃতা রাখেন। এই বক্তব্যে প্রধানত হিটলার ইহুদী বিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে "ভারসাই চুক্তি" বাতিল, ফ্রান্স এবং পোল্যান্ডকে দেওয়া ভুখন্ড ফেরত, প্রতি বছর মিলিওন মিলিওন ডলারের ক্ষতিপুরন বন্ধ, ইহুদীদের অনধিকার অধিকার, জার্মানিদের দুরাবস্থা ইত্যাদি তুলে ধরেন। হিটলার আরো বলেন যে, যুদ্ধের পরে যে সব ইহুদীগন জার্মানিতে বসবাস শুরু করেছে, তাদেরকে যতো দ্রুত সম্ভব বিতাড়িত করতে হবে।
হিটলারের এই অভিপ্রায়ে জার্মানির অধিকাংশ নাগরিক এমনভাবে সমর্থন দিলেন যে, হিটলার এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান নাই। তিনি অতিদ্রুত আগের "ওয়ার্কার পার্টি" নাম বদল করে একে "ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি" হিসাবে নাম পরিবর্তন করেন। যাকে আমরা পরবর্তীতে "নাজি" পার্টি হিসাবে জানি। এই পার্টির তিনি একটি লাল পতাকার মধ্যে সোয়াস্টিকাও লেপ্টে দেন পার্টির সিম্বল হিসাবে। অবশেষে হিটলার উক্ত পার্টির চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন ১৯২১ সালে, যদিও তিনি এক্সিকিউটিভ কমিটির মধ্যে ছিলেন ৭ম।
হিটলার ভ্যাবারিয়ান সরকারের কিছু রাজনীতিবিদদের সমন্নয়ে ১৯২৩ সালে ৮ নভেম্বরে মিউনিখে একটি আন্দোলনের সুচনা করেন যেখানে পরিকল্পনা ছিলো যে, তৎকালীন বার্লিন সরকারকে উতখাত করবেন হিটলার এবং তার মিত্র লুদেনদ্রফ। কারন বার্লিন সরকারে অধিকাংশই ছিলো ইহুদী এবং কমিউনিস্ট। কিন্তু তাদের ওই আন্দোলন সার্থক না হয়ে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বার্লিন সরকার হিটলার এবং লুদেনদ্রফকে পাচ বছর করে জেল দেন। কিন্তু জার্মানির বিচারক উভয় হিটলার এবং লুদেনদ্রফকে যুদ্ধের সময় জার্মানির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার জন্য ৫ বছরের স্থলে মাত্র ৮ মাস জেল খাটার ব্যবস্থা করেন। জেল থেকে বের হবার পর, হিটলার এইবার আন্দোলনের মাধ্যমে নয়, রাজনীতিকভাবে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করলেন এবং তিনি তার নব্যদলকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
তার "নাজি" পার্টি ধীরে ধীরে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করলেন এবং ১৯৩৩ সালের জানুয়ারিতে হিটলার তার পার্টি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেন। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ ১ম বিশ্বযুদ্ধের নামকরা পল ভন হিন্ডেনবার্গকে হিটলার হারাতে পারলেন না। কিন্তু পল ভন হিন্ডেনবার্গও এককভাবে সরকার গঠন করার মতো জয়ী হলেন না। ফলে কোয়ালিসন সরকারের মতবাদে হিটলার পল ভনের সহিত সরকারের সাথে আতাত করলেন যেখানে পল ভন হিন্ডেনবার্গ হলেন জার্মানির চ্যান্সেলর।
কিন্তু হিটলার বসে থাকার লোক নন। তিনি সময় অসময়, ন্যায়-অন্যায় ভাবে, যেভাবেই খুশী অধিস্টিন চ্যান্সেলরকে ভয় ভিতী, অসহযোগ অনেকভাবেই বিব্রত করতে লাগলেন যাতে তিনি বাধ্য হন হিটলারকে চ্যান্সেলর হিসাবে ডিক্লেয়ার করতে।
পরিশেষে ১৯৩৩ সালের ৩০ শে জানুয়ারিতে পল ভন হিন্ডেনবার্গ বাধ্য হয়ে হিটলারকে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসাবে মেনে নেন।
তার পরের কাহিনি তো মাত্র শুরু। হিটলার চ্যান্সেল হওয়ার দিন থেকেই তিনি তার "নাজি" দলের বিশাল প্রচার, তাদের দলের আখাংকা, তাদের করনীয় কাজসমুহ, জনসম্মুখে জাহির করতে থাকলেন। জেনারেল গোয়েব্যালস ছিলেন হিটলারের এইসব প্রচারনার মুল হোতা। আর পুরানো যারা পল ভনের সময়ে ক্ষমতায় ছিলেন তারা কিছুটা ভয়ে, কিছুটা আতংকে আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকেন। এইবার হিটলার তার বহুল আখাংকিত কাজ, "ইহুদী নিধন" শুরু করেন। আর তিনি এই কাজটি শুরু করেন ১৯৩৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে যেদিন তিনি ইহুদীদের কে জার্মানিতে "বয়কট" এর নির্দেশ দিলেন।
তারপরের কাহিনী আমরা অনেকেই জানি।
ফান্ডামেন্টালিজম
ফান্ডামেন্টালিজম শব্দটি একটি প্রোটেস্টেন টার্ম। এটি "দি ফান্ডামেন্টালসঃ এ টেস্টিমনি টু দি ট্রুথ" নামক ১৯০৯ সালের একটা পাব্লিকেসন থেকে নেওয়া। আর এই টাইটেলটি বিশেষভাবে ইভানজেলিক্যাল প্রোটেস্টাইন ক্রিশ্চিয়ানদের জন্যই প্রযোজ্য। ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালের দিকে যখন বিভিন্ন স্পিরিচুয়াল ধর্মজাযকগন তাদের যোগপোযোগী মনগড়া আধ্যাত্মিক বিশ্বাসসমুহকে বাইবেলের মধ্যে একে একে অন্তর্গত করছিলেন, শুধু তাই নয়, ওই সময়ে ডারউইনের থিউরি, এবং তখনকার আধুনিক বিব্লিক্যাল মতবাদ এবং তারসঙ্গে স্পিরিচুয়াল ধর্মযাজকদের আরোপিত এবং রচিত মতবাদে বাইবেলের নিজস্ব স্বকীয়তা অনেকটাই ম্লান হতে বসেছিলো। তখন ক্রিশ্চিয়ানদের এই অংশটি ওইসব বাইবেলের উপর থেকে সরে এসে একটি গোত্র কিংবা অন্য কথায় সাব-কালচার তৈরি করেন আর এদেরকেই তখন "ফান্ডামেন্টাল" নামে মুল্যায়ন করা হয়। তাদের মতে, বাইবেল একটি পবিত্র গ্রন্থ, ঈশ্বরের বানী, তারমধ্যে কোনো কিছুই যোজন বা বিয়োজন করার অবকাশ নাই এবং এটা ভুল থেকে মুক্ত।
খোদ আমেরিকার দুইভাই কার্টিস লি এবং মিল্টন স্টুয়ার্ড উভয়ে যৌথভাবে উক্ত ফান্ডামেন্টালিস্ট দলটিকে একত্রিভুত করেন। তাদের প্রথম এবং প্রাইমারী দায়িত্ব ছিলো পবিত্র বাইবেলের স্বকীয়তাকে বিকৃত হওয়া থেকে রক্ষা করা। অতঃপর ১৯৬০ সালে ভেটিকান-২ সম্মেলনে এই ক্রিশ্চিয়ানদেরকে স্থায়ীভাবে "ফান্ডামেন্টালিস্ট" হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই মূল শব্দটি অথবা অন্য কথায় যারা ফান্ডামেন্টালিস্ট, তাঁরা পাঁচটি ব্যসিক বিশ্বাসের উপর দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলো। সেগুলু হচ্ছেঃ (১) The Virgin Birth (2) The Physical Resurrection of Jesus (3) The Infallibility of the Scruptures (4) The Substitutional Atonement (5) The Physical Second Coming of Christ. ফান্ন্ডমেন্টালিস্টরা মনে করেন যে, ধর্মচ্যুত করা বা ধর্মচ্যুত হওয়া অন্যায় এবং তাদের ধর্মের বাইরে অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদ বিশ্বাস করাও অন্যায়। অন্য কথায় এরা গোঁড়া।
এখন ক্রিশ্চিয়ান ধর্মাবলম্বীদের না হয় আমরা ফান্ডামেন্টালিস্ট নামে অভিহিত করলাম, অন্যধর্মে তাহলে কি এই জাতীয় রক্ষণশীল ধার্মিক গোত্র নাই? তাহলে তাদেরকে কি বলা হয়? তারাও কি "ফান্ডামেন্ডালিস্ট"? যেমন, হিন্দুদের বেলায় বলা হয় "হিন্দুৎভা" বা "হিন্দুইজম"। কিন্তু "হিন্দুৎভা" মতবাদে Hindutva is understood as a way of life or a state of mind and is not to be equated with or understood as religious Hindu fundamentalism তাদের "হিন্দুৎভা"র নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষার জন্য পৃথক কোনো রক্ষণশীল গোত্র সৃষ্টি হয় নাই। তাদের বেলায় যা হচ্ছে তা নিতান্তই ধর্মপালনকে একটা রীতিনীতির মধ্যে সিমাবদ্ধ। যেমন, কেউ যদি হিন্দুত্ব ছেড়ে অন্য কোনো ধর্মকে আলিঙ্গন করতেও চান, তাতে তাদের ধর্মের মধ্যে কোনো বড় ধরনের আইনগত বাধা নাই। কিংবা হিন্দুধর্মের একক কোনো ঈশ্বরও নাই। একেক বিষয়ে তাঁরা একেক জনকে প্রধান ঈশ্বর মেনে থাকেন। অন্যদিকে The importance of Hindu fundamentalism lies in its very contemporary and nationalistic scope, compared to other, more regional expressions
ইহুদিদের বেলায় ধর্মের নামে এই রক্ষণশীল ফান্ডামেন্টালিজম এর সংজ্ঞা আবার ভিন্ন। ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে, তাদের ধর্মবচন "টানাক" বা ট্রেডিসনালি যাকে আমরা "ওল্ড টেস্টামেন্ট" বলি তার অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা বা শিক্ষাই হচ্ছে মুখ্যবিষয়। অল্প কিছু ইহুদি (যেমন কেরাইটেস গোত্র) যারা তাওরাদ ধর্মগ্রন্থের বানীসমুহ সরাসরি "টানাক" ধর্মবচনের মত অবিকল ব্যাখ্যায় বিশ্বাসী নয়। কেউ কেউ হয়ত ভাবেন যে, অর্থোডক্স বা হাছিডিক ইহুদিরা এক ধরনের ফান্ডামেন্টালিস্ট। তারপরেও তাঁরা ক্রিশ্চিয়ান ফান্ডামেন্টালিস্টদের মতো অতোটা গোঁড়া নয়। তাঁরা মনে করে, তাওরাতে মোট ৬১৩টি ভিন্ন পথের মাধ্যমে ঈশ্বরকে পাওয়া সম্ভব বলে পথ বাৎলে দিয়েছে। আবার যারা ইহুদি ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাসী নয় তাঁরাও অন্যপথে ঈশ্বরকে খুজে পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। ওদিকে বৌদ্ধধর্মের মধ্যে ধর্মের চেয়ে জাতিভিত্তিক বা গোত্র বা এলাকাভিত্তিক দলবদ্ধটাই বেশি চোখে পড়ে। তার অর্থ দাড়ায় তাদেরকে ধর্মের পরিপ্রেক্ষিতে ফান্ডামেন্টালিস্ট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা সঠিক কাজ হবে না। এইটুকু আলোচনা থেকে কিন্তু আমরা এই ধারনা পাই যে, শুধুমাত্র ধর্মের পবিত্র গ্রন্থের স্বকীয়তাকে বজায় রাখার জন্যই শুধু ক্রিশ্চিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি পৃথক রক্ষণশীল গোত্র তৈরি হয়েছিলো যারা ফান্ডামেন্টালিস্ট নামে পরিচিত এবং অন্য কোনো ধর্মে এই প্রবনতাটা ছিলো না।
এবার যদি ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজম সম্পর্কে বলি, তাহলে Fundamentalist Islam is simply the conservative wing of Islam, just as fundamentalist Christianity is the conservative wing of Christianity. এই দুইটি দলই কিছুটা ধার্মিক প্রকৃতির গোঁড়া। ক্রিশ্চিয়ানদের বেলায় যেমন উপরে উল্লেখিত পাঁচটি মূলস্তম্ভ অনুসরন করে, ইসলামের বেলায়ও এই রক্ষণশীল মুসলমানেরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করেন, হজরত মুহাম্মাদ (সঃ) কে নবী মানেন, তাঁকে অনুসরন করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য প্রতিনিয়ত মসজিদে যাতায়ত করেন, রোজা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি মূলস্তম্ভ হিসাবে অপরিহার্য হিসাবে পালন করেন। কোরআন এবং নবী যা যা করতে বলছেন, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলার রীতিই হচ্ছে মুসলমানদের জন্য সঠিক ধর্মপালন। এই মুসলমান সম্প্রদায়টি তাদের পবিত্রগ্রন্থ আল কোরআন বিকৃতি হওয়ার বা একে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, কিংবা যোজন- বিয়োজন, পরিবর্ধন করার কোনো প্রকার চেষ্টা যেমন কখনো কেউ করার চেষ্টা করেন নাই বা করার প্রয়োজনও মনে করেন না। ব্যসিক মূলমন্ত্র গুলি পালনই হচ্ছে মুসলমানদের জন্য সত্য ধর্মপালনকারী। কেউ স্ট্রিক্টলি পালন করেন আবার কেউ ঢিলেঢালাভাবে। কিন্তু মূলমন্ত্র এক। তাহলে কেউ শুদ্ধভাবে এবং স্ট্রিক্টলি প্রতিনিয়ত মূলস্তম্ভ সমুহের পালনকারী ধার্মিক হলেই কি তাদেরকে ফান্ডামেন্টালিস্ট নামে অভিহিত করা হবে? ব্যাপারটা আসলে কখনোই এই রকম নয়। সঠিকভাবে ইসলামের সব আদব কায়দা পালনকারী মুসলমান কখনো ফান্ডামেন্টালিস্ট নন এবং তিনি গোঁড়াও নন। তাঁরা অন্য কারো ধর্ম নিয়েও বাধা নিষেধ দেন না। কারন খোদ ইসলাম অন্য ধর্মের প্রতিনিধিকে যথারীতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, প্রকৃত মুসলমান পূর্ববর্তী সব প্রধান ধর্মগ্রন্থসমুহকে না মানলে বরং তিনি সহিহ মুসলমান হিসাবে গন্য হবেন না এটাই ইসলাম শিক্ষা দেয়। তারমানে তাওরাদ, জবুর, ইঞ্জিল, এবং কোরআন সব আল্লাহর পবিত্রগ্রন্থ যা পূর্ববর্তী নবীসমুহের উপর অবতীর্ণ হয়েছে এটা সয়ং কোরআন নিজে সাক্ষী দেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওইসব পবিত্র গ্রন্থ গুলি এখন আর অরিজিনাল ভাবে নাই। অনেকাংশেই পরিবর্ধন, পরিবর্তন হয়ে গেছে।
এখানে একটি সুক্ষ বিষয় মাথায় রাখা দরকার। বিশেষ করে মুসলমানদের বেলায়। প্রতিটি মুসলমান তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন এবং তৎসংলগ্ন পাঁচটি মূলমন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। এই মুলস্তম্ভের মধ্যে কোনো প্রকারের দ্বিধা নাই। তাহলে মুসলমানদের মধ্যেই এতো গোত্রের আবির্ভাব হল কেনো? আর এই গোত্রগুলিই বা কারা? যেহেতু পবিত্র কোরআন একটি বৈজ্ঞানিক এবং আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের জন্য পুরনাংগো জীবন ব্যবস্থা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। (তাহলে প্রশ্ন আস তে পারে যে, পূর্ববর্তী আল্লাহ প্রদত্ত গ্রন্থ গুলি কি কোর আনের মতো মানুষের জন্য পুরনাংগ জীবন ব্যবস্থা ছিলো না? হয়ত ছিলো কিন্তু তা আর আমাদের কাছে অরিজিনাল হিসাবে না থাকায় তার সত্যতা নিরুপন সম্ভব নয়)। ফলে ব্যক্তি জীবনে, সমাজ ব্যবস্থায় তথা রাষ্ট্রীয় বিধি ব্যবস্থায় সর্বত্র এই রিলিজিয়াস আইনসমুহকেই (যাকে আমরা শারিয়াহ আইন বলি) মেনে চলার বিধান বলা হয়েছে, সেকুল্যার আইনকে নয়। আর এই শারিয়াহ আইন সমুহগুলি হচ্ছে ওই সময়ের যা আমাদের নবীজির আমলে বা তাঁর আমলে পালিত হওয়া বিধিমালা অর্থাৎ সালাফি নামে আমরা যা বুঝি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাঁর মৃত্যুর পর এই সালাফি আইনসমুহই কিছু কিছু রি-ফরম হয়েছে যার কারনে বিভিন্ন গোত্রের বা দলের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাদের সবারই কিন্তু মূলমন্ত্র বা স্তম্ভসমুহ এক। অর্থাৎ এখানে সঠিক কিছু সালাফি আইনের ব্যাখ্যার কারনে বা পার্থক্যের কারনে ব্যক্তি, সমাজ ব্যবস্থা বা রাষ্ট্রীয় আইন কানুনের বিধি নিষেধের মধ্যে বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি হয়। যেমন, শিয়া, সুন্নি, কাদিয়ানী, ইত্যাদি। কিন্তু তাদের মূলস্তম্ভ ঠিক থাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই পরিবর্তনগুলি আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী শুধুমাত্র ইসলামপন্থীদের মধ্যেই সিমাবদ্ধ না, এই ট্রেন্ডস সব ধর্মের মধ্যেই ধীরে ধীরে অন্তরভুক্তি হতে শুরু করে এবং এখানে আরো মজার ব্যাপার হলো, এটা আবার আর শুধুমাত্র ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নাই। প্রতিনিয়তই বিবর্তনের মতো সর্বত্র একটা পরিবর্তন আসতে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্মের স্বকীয়তা রক্ষার নামেই নয়, ধর্মের বাইরে গিয়েও এই পরিবর্তনটা কেনো আসে, সেটা নিয়েও গবেষণা হয়।
অবশেষে, The American Academy of Arts and Sciences সাড়া পৃথিবী থেকে অধিকস্তর বিশিষ্ট স্কলারদের সমন্নয়ে একটা গবেষণামুলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সেই গবেষণামুলক পরিক্ষায় তাঁরা তথাকথিত ফান্ডামেন্টালিজম এবং ফান্ডামেন্টালিজমের বাইরে পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে যেসব তথ্য পেয়েছেন তাঁর সারমর্মে দেখা যায় যে, উক্ত ফান্ডামেন্টালিজম চিন্তাধারাটি শুধুমাত্র আর ধর্মের গোঁড়ামির উপর স্থায়ী হয়ে রয় নাই। তাদের মতে,
(১) তাঁরা আধুনিক কালচারকে পছন্দ করেন না। কারন তারা মনে করেন ধর্ম দ্বারা যা পালিত হওয়ার কথা, অথবা যে রীতিনীতিগুলি ধর্মগ্রন্থ থেকে চালিত হওয়ার কথা তা না হয়ে স্যাকুলার কিছু মনগড়া বৈষম্যমুলক আইনের মাধ্যমে চালিত হচ্ছে বিধায় ধর্মের সঠিক কাজটি পালিত হচ্ছে না এবং এইভাবে একদিন ধর্মটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই আশংকা করেন। তার উপর আধুনিক কালচারের সমাজ ব্যবস্থায় তাঁরা মনে করেন যে, একটা বৈষম্যমুলক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলন হচ্ছে যেখানে অধিকাংশ মধ্যবিত্ত, কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নবিত্ত সমাজের মানুষেরা তাদের ন্যায্য মুল্যায়ন, অধিকার, সুযোগ, সুবিধা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
(২) এই মধ্যবিত্ত, কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজের মানুষদের ন্যায্য মুল্যায়ন, অধিকার, সুযোগ, সুবিধা ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত হওয়ার চিন্তাধারায় রিলিজিয়াস আইডোলোজির পাশাপাশি তখন ব্যক্তিগত এবং কম্যুউনাল আইডেন্টিটিও কাজ করে। এই ব্যক্তিগত এবং কম্যুউনাল সত্ত্বা কাজ করার কারনে পলিটিক্যাল উচ্চাকাখাংকাও জড়িয়ে যায়। আর যখন এই পলিটিক্যাল উচ্চাকাখাংকা বেড়ে যায়, তখন দলভিত্তিক রাজনীতিকিকরনের কাজটি আরম্ভ হয়ে যায়, তখন শুরু হয় বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের অনুপ্রবেশ যেখানে কমন কিছুর মিল থাকতে হয়, যেমন প্রথমে ধর্ম, পরে একই ধর্ম পালনকারী জাতী বা দেশ ইত্যাদি। এইগুলি তখন হয়ে উঠে একটা পারস্পরিক যোগাসুত্রের মাধ্যম কিন্তু উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা বা প্রভাব খাটানোর একটা অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়া। আর যখন ক্ষমতা বা প্রভাব খাটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, তখন বিশ্বরাজনীতিতে একটা সক্রিয় ভুমিকা তৈরি হয় যেখানে প্রধান নিয়ামকের দায়িত্ব পালনে অনেক প্রভাবশালী দেশ, দল যুক্ত হয়ে যায়। তখন আর এটা রিলিজিয়াস ফান্ডামেন্টালিস্ট বা ফান্ডামেন্টালিজমের মধ্যে থাকে না। তখন এটা হয়ে যায় আন্তর্জাতিক একটা বহুমাত্রিক পরিকল্পনা। তখন ক্ষেত্রটা ভিন্ন। কিন্তু তাঁর এজেন্ডায় তখনো রিলিজিয়াস লেভাসটা থেকেই যায়। আর এই লেভাসের পিছনে যা থাকে তা হচ্ছে They are ‘reactive’, ‘they are dualist’, ‘they believe in Holy Book’, ‘they are selective’, and ‘they are millennialist’
বর্তমানে এই ফান্ডামেন্টালিস্ট শব্দটি বহুলঅংশে ব্যবহৃত হয় ধর্মের নামে আধিপত্য বিস্তারের নিমিত্তে গোঁড়া কিছু স্প্লিনটার গ্রুপকে বুঝানোর জন্যই। কখনো এটা ইসলামিক টেরোরিস্ট, কখনো রিলিজিয়াস টেরোরিস্ট, কখনো রিভাইভালিস্ট (যখন বৌদ্ধ, মুসলিম, কিংবা হিন্দু সম্প্রদায়ের বেলায়) ইত্যাদি। কিন্তু পিছনের উদ্দেশ্য একেবারেই আলাদা, আর সেটা নিতান্তই প্রভাব বিস্তার।
প্রাথমিকভাবে প্রভাবশালী গোষ্ঠীসমুহ যারা উক্ত লেভাসের নাম দিয়ে কিছু ফায়দা লুটে নিতে চেয়েছিলেন, হয়ত তা পেয়েছেনও কিন্তু ইতিমধ্যে এই লেভাসে মোড়া শক্তিশালী টুলসটি অর্থাৎ গোষ্ঠীটি ইতিমধ্যে প্রাপ্ত শিক্ষা আর প্রশিক্ষনের দ্বারা তারাই এখন নিজের নিয়ন্তা হিসাবে এমনভাবে আবির্ভূত হয়েছেন যে, অন্যের জন্য নয় শুধু নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্তা হিসাবে কাজ করছে। এখানে ধর্মটাই এখন আর মুখ্যবিষয় নয়, মুখ্যবিষয় হয়ে দাড়িয়েছে প্রভাব খাটানো এবং আধিপত্য বিস্তারের। এদেরকে আর নিয়ন্ত্রন করবার জন্য অন্য কোনো অপসন পূর্ববর্তী চালকদের হাতে নাই। তাঁরা এখন টেরর। যে নামেই আমরা একে এখন ডাকি না কেনো। ফলে এখন যেটা দাড়িয়েছে তা হচ্ছে, ওয়্যার এগেইনস্ট টেরর।
একটাই পথ এখন ......
ইংরেজদের ব্রেক্সিটের
আজ ইংরেজদের ব্রেক্সিটের গনভোটের রায়ের উপর ইত্তেফাকে দারুন একটা নিউজ পরে নিজের কাছে খুব পুলকিত মনে হলো যদিও আমার এই পুলকিত হওয়া মানে আনন্দিত নয়। ইত্তেফাকের নিউজটা ছিলো এই রকম, " ব্রিটিশ ভোটারদের আক্ষেপ!" খবরটার কিছু কথা এই রকম, ..."যেঁ সব ব্রিটিশ এই গনভোটে হ্যা ভোট দিয়েছেন, তারা কি মনে করছেন? তারা কি জেনে শুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন? ব্রিটিশরা যারা অনেকেই ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, তারা অনেকেই জানে না কেনো তারা ভোট দিয়েছেন। বরং গনভোটের হ্যা রায়ের বিপরিতে ভবিষ্যতের অর্থনীতিতে যেঁ ঝুকি সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে এখন সব ব্রিটিশ নাগরিকেরা শঙ্কিত"। এদিকে অন্য আরেকটি পত্রিকা এই একই খবর ভিন্ন ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেছে। করেছে এইভাবে, " ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার আশা এখনো জিইয়ে রেখেছে ব্রিটেনের জনগন। ঐতিহাসিক এই বিচ্ছেদ আটকাতে এখন দ্বিতীয়বার গন ভোট চাইছে।" ওদিকে পাশাপাশি আরেকটি খবর ছাপা হয়েছে, যেঁ, "ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার ব্যাপারে তুরস্কে গন ভোট হতে পারে।"
কি আশ্চর্য, একজন ছাড়ার জন্য ভোট দিচ্ছে, আরেকজন যোগ দেওয়ার জন্য ভোট দিচ্ছে। একজন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বুঝেছে যেঁ, তারা ভীষণ ভুল করেছে, এখন আবার ইইউতে থাকার জন্য অনুরধ করছে, আক্ষেপ করছে। এই পরিস্থিতে আমার তর্জমা হচ্ছে, কেউ না কেউ ঐ সব ব্রিটিশদেরকে কোনো না কোনো যুক্তি দেখিয়ে ইইউ ছেড়ে দেওয়াই হবে বেশি লাভ, এই যুক্তি দেখিয়েছিল বা এমন কিছু লোকের পাল্লায় তারা পরেছিল যেঁ, কেউই বুঝে নাই কি করা উচিত আর কি করা উচিত না। দুই পক্ষই ছিল নাদান এবং অপরিপক্ক। এখন যখন বিচ্ছেদের রায় হয়ে গেছে, তখন জিবিনের সব স্বপ্ন, সব আরাম, সব চাহিদার মধ্যে অনেক বেশি গরমিল মনে হচ্ছে বলে নিজেকে নিজেদের অনেক বেশি অপরাধী মনে করছেন। এবং আসলেই তারা অপরাধী। আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনেও আমি এমন কিছু লোকের সম্মুখীন হয়েছি, যারা এক ইঞ্চি দুরের লাভটাই দেখেন, কিন্তু দুরের লসের অংশটা চোখে দেখেন না, বুঝেও না। ফলে এক ইঞ্চি পরিশর লাভ নিয়ে যখন রায় দিয়ে উল্লসিত হয় বা জিতে গেছি বলে পুলকিত হয় আর নিশ্চিন্তে রাতে ঘুমিয়ে যায়। পরদিন ঘুম থেকে উঠে যখন দেখে তাদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে, সব আরাম ধুলিস্যাত হয়ে গেছে, ঐ দুরের অনেক ক্ষতির আভাস গুলু যখন একে একে উম্মচিত হতে থাকে এবং লসের পরিমান গুলু যখন একের পর এক জমা হতে থাকে, তখন তাদের আত্তা কাপে, ভয় লাগে, সব হিসাব নিকাশ ভুল হয়েছে বলে সারাক্ষন আক্ষেপ করে, তখন যারা এই ধরনের ভুল করতে চায় নাই, তাদের এক প্রকার পুলকিতই হয়। কারন এই ভাবনাটা তারা অনেক আগেই করেছিল কিন্তু বোকার দলেরা বুঝে নাই। তাই, আগে নিজের ভালোটা বুঝুন। তারপর অন্যের ঘেউ ঘেউ শুনুন। গন্তব্যপথে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি ঘেউ ঘেউ করা প্রানিদের প্রতি ঢিল মারতে থাকা মানে খুব দ্রুত গন্তব্যদিক হারিয়ে ফেলা। ঘেউ ঘেউ প্রানি থাকবে, তাদের ঘেউ ঘেউও থাকবে, মাঝে মাঝে বিরক্ত হবেন, মনে হবে উচিত শিক্ষা দেই। কিন্তু না, গন্তব্য স্থানে না পৌঁছানো অবধি ধৈর্য ধরা অত্যান্ত প্রয়োজন। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার মত লোকের অভাব নাই, কিন্তু ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে টেনে তোলার লোকের অনেক অভাব আছে। বিচ্যুতিতে সবচেয়ে ক্ষতি নিজের। তৈরি করা সাম্রাজ্যে রাজাগিরি করা যতোটা সহজ, নিজে সাম্রাজ্য তৈরি করা ততোটা সহজ নয়। আজ ব্রিটিশরা বুঝে, তাদের দিন এবং রাত দুটুই খারাপ। কোনো এক ব্রিটিশ পূর্ব পুরুষেরা ব্রিটিশকে উচ্চ শিখরে তুলে দিয়ে গিয়েছিল। ঐ সব ব্রিটিশ রা মুসলমানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে তাদের নিজের ফায়দা লুতার জন্য, অপেক্ষা করেছে বেশ কিছুটা সময় যেনো সব কিছু হাতের মধ্যে এসে যায়। এই অপেক্ষার সময়ে ব্রিটিশদের কে জারজ সন্তানের গালিও খেতে হয়েছে। তো কি হয়েছে? তার উদ্দেশ্য তো ছিল এই বিশ্বকে রোল করা। তারা তাই করেছিল। কিন্তু আজ এই যুগের বলদ কিছু আহাম্মক ব্রিটিশরা সেইদিনের পূর্ব পুরুসদের রচিত সাম্রাজ্য বোকার মত সিদ্ধান্ত দিয়ে তার সমাধি করলো। কারন এই যুগের ব্রিটিশরা সাম্রাজ্য গরে তোলে নাই। তাই ধ্বংস ও তাদের মনে আঘাত হানে না। এখন আঘাত হানে এই কস্টে যেঁ, তারা আর আগের মতো আরাম করতে পারবে না, আগের মতো চাকচিক্য পাবে না। এটা হচ্ছে পাপের ফল।
উত্তরসূরি নির্বাচন
জীবনের সব অধ্যায় এক রকম নয়। এটা আমার হয়ত বুঝতে দেরী হয়েছে কিন্তু এই সব তত্ত্বকথা মনিষীরা যুগে যুগে বলে গেছেন। মনিষীরা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক তত্ত্বকথাই বলে গেছেন বটে কিন্তু কেউ সে সব তত্ত্বকথা মানে না। হ্যা, মানে তখন যখন কারো জন্য সেসব পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং নিজেদের জন্য প্রযোজ্য হয়। সেই সুবাদেই বলছি যে, আমি আপনি ততোক্ষন সবার কাছে যত্নশীল যতোক্ষন আপনি নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারবেন কিন্তু পাওয়ার আশা না করবেন। আশা করলে আপনি হেরে যাবেন। এটা নিজের স্ত্রী থেকে শুরু করে সন্তান, পাড়াপ্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার বেলায় প্রযোজ্য। কেউ মানুক বা না মানুক, এটাই সত্য।
এর থেকে যে শিক্ষাগুলি নেওয়া দরকার তা হচ্ছে, যা কিছু করবেন জীবনে, নিজের জন্য করুন, নিজে সুখী সময় কাটানোর জন্য আয় করুন এবং তা দুইহাত ভরে খরচ করুন। আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার সন্তানগন কিভাবে চলবে কিংবা তারা কোথায় কিভাবে বাস করবে তা আপনার চিন্তা থাকতে পারে বটে কিন্তু তারজন্য অনেক কিছু আয় করে সঞ্চয় করে তাকে পঙ্গু করে রেখে যাওয়ার কোনো দরকার আমি মনে করি না। বরং তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দিন, তাতেই সে এই পৃথিবীর কোনো না কোনো স্থানে ঠাই করে নেবে। এই পৃথিবী পরিশ্রমী মানুষের জন্য সুখের আবাস্থল। অলসদের জন্য এখানে সব কিছুই নাগালের বাইরে। পূর্ববর্তি জেনারেশনের আহরিত সম্পত্তি উত্তরসূরিদের জন্য কিছুটা আরামদায়ক হলেও একটা সময় আসে, কোনো না কোনো উত্তরসুরীর মাধ্যমেই তা বিনাশ হয়। এই বিনাশটা হয়ত এক জেনারেশনের মধ্যে ঘটে না। কারো কারো বেলায় এক জেনারেশনেই শেষ হয়ে যায় আবার কারো কারো বেলায় এটা ক্ষয় হতে কয়েক জেনারেশন পার হয়। কিন্তু ক্ষয় হবেই। এর প্রধান কারন, যিনি সম্পদ করলেন, তার যে দরদ, আর যারা বিনা পরিশ্রমে পেলো তাদের যে দরদ তা কখনোই এক নয়।
আরেকটা কারনে নস্ট হয়। তারা হলেন যাদের বংশ ধরের মধ্যে ছেলে রি-প্রেজেন্টেটিভ নাই। ওইসব লোকের বেলায় তাদের কস্ট করা সম্পত্তি নিজের ছেলে সন্তানের পরিবর্তে চলে যায় অন্য বাড়ির আরেক ছেলের হাতে যিনি সম্পদের মালিকের নিছক মেয়ের স্বামী হবার কারনে। এরা দ্রুত সম্পদ হাত ছাড়া করে কারন তারা একদিকে এটাকে ফাও মনে করে, অন্যদিকে যতো দ্রুত সম্ভব সব সম্পত্তিকে নিজের নামে রুপান্তরিত করতে চান। এই মন্তব্য টা ঢালাও ভাবে করলে অনেক মেয়ের স্বামীরা হয়ত মনে আঘাত পেতে পারেন, কারন সবাই হয়ত এক নয়। তবে অভিজ্ঞতা আর পরীক্ষায় দেখা গেছে, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এই রকমটা হয়েছে। তারা স্ত্রী কপালে ধন পাওয়া মনে করেন। তাদের বেলায় বিনাশ হতে সময় লাগে অতি অল্প সময়। এই সব ছেলেদের কাছে কোনো সম্পদ এমন কি স্ত্রীও তাদের কাছে নিরাপদ নয়।
ফলে যেহেতু আপনি পরিশ্রম করছেন, সুখটা আপনিই করুন। যদি ভাবেন যে, আগে সঞ্চয় করে স্তূপ করি, বাড়ী গাড়ি করি, ব্যাংকে একটা মোটা টাকা সঞ্চয় হোক তাহলে আপনার হাতে একটু সময়ও নেই সকালের সূর্য দেখার অথবা রাতের জ্যোৎস্না দেখার। আপনার ভাগ্যে আছে শুধু বাদরের মতো এইস্থান থেকে অন্যস্থানে লাফিয়ে লাফিয়ে কোথায় ফল পাওয়া যায় তার সন্ধান করা, অথবা পালের বলদের মতো সারাজীবন হাল চাষের মতো চাষির হাল বেয়ে যাওয়া যাতে চাষিই শুধু লাভবান হয়, আর নিজে শুধু জাবর কাটবেন।
এ কথাগুলি কেনো বলছি?
আমার চোখে দেখা এই ছোট্ট জীবনে অনেক ঘটনা। কস্ট করে সম্পত্তি বা এসেট রেখে গেছেন, কিংবা ব্যবসা রেখে গেছেন, জাস্ট তার মরনের পর ওই সব সম্পত্তি কত তাড়াতাড়ি ভাগাভাগি করে নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেয়া যায়, তার জন্য তর সয় না। অথচ ওই সব উত্তরসুরীরা একটিবারও আপনার রুহের মাগফিরাত বা ধর্মীয় কোনো উৎসবের মাধ্যমে একটুও পয়সা খরচ করবে না। তারা ঐ খরচ টাকেও অপচয় মনে করে নিজের জন্ময অ্রআনন্দ করবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তারাও সেই একই ফাদে পা দিয়ে তাদের উত্তরসুরীদের জন্যই সঞ্চয় করে জমা করে যান এবং নিজেরা ভোগ করেন না।
অপ্রিয় সত্যের মুখুমুখি দাঁড়ানো সাহসের প্রয়োজন
কখনো যদি তোমরা দেখো যে, তোমার অপ্রিয় সত্য কথায় কেউ কোনো উত্তর করছে না, কিন্তু তোমার অগোচরে মুখ ভেটকাচ্ছে, তাহলে বুঝবে যে, তোমার আশপাশ চাটুকারে ভরে গেছে। তুমি বিপদের মধ্যে আছো। এ অবস্থায় তোমার যা করনীয়, তা হচ্ছে, তুমি একা চলার অভ্যাস করো। এই একা চলার মধ্যে যদি কাউকে রাখতে চাও সাথে, তাহলে এমন কিছু মানুষকে রাখো যারা প্রাইমারী স্কুলের দরিদ্র শিক্ষক। তারা নীতি থেকে বিচ্যুত হয় না আর হবেও না। তবে তাও নির্বাচন করার জন্য সময় নিও।
আর কোনো কিছুই যদি মনে হয় ঠিক নাই, তাহলে, নিজেই নিজের জন্য এমন কিছু করে যাও, যাতে তোমার অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ধাতব্য প্রতিষ্ঠান তোমার কাজগুলি তোমার ই আহরিত সম্পদের লভ্যাংশে করতে পারে। পরিচিত মানুষ গুলিই তোমার বিপদের কারন। সব সময় মনে রাখতে চেষ্টা করো যে, বেঈমান অপ্রিচিত লোক থেকে তৈরী হয় না, তারা সব পরিচিত মানুষের দল।
আমরা ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না, আমরা মানুষের ভিতরের চরিত্রকে সরাসরি আয়নার মতো করে দেখতে পাই না। এমন কি আমরা নিজেরাও নিজেদের অনেক সময় চিনতে পারি না। আর এই কারনেই প্রতিবার আমরা প্রেডিকসন অর্থাৎ একটা স্যামপ্লিং এর উপর ভিত্তি করে বারবার সিদ্ধান্ত নেই। শতভাগ সাফল্য আসবে এর কোনো গ্যারান্টি নেই। আজকে যে বস্তুটি আপনার হাতে আসায় আপনি মনে করছেন, এটাই ঠিক যেটা আপনি চেয়েছেন, বা এটাই আপনি খুজছেন, সেটা সঠিক নাও হতে পারে। আর যদি সঠিক না হয় তখন সংস্কার বা এজাস্টমেন্ট দরকার হয়ে পড়ে। কখনো কখনো এই এডজাস্টমেন্ট এতো বড় যে, পুরু পরিকল্পনাটাই বদলাতে হয়। আর যারা এই পরিকল্পনাটা পাল্টানোর হিম্মত রাখেন, বাস্তবতা মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার হিম্মত রাখেন, তাদের জন্যই সুন্দর ভবিস্যত। সমাজ তারাই তৈরী করে, সমাজ তাদেরকেই কন্ডারী বলে। এডাপ্টেসন এর মুল থিউরী আসলে তাই। ডাইনোসোর এডাপ্টেসন করতে পারে নাই বলেই সে আজ পৃথিবীতে ইতিহাস কিন্তু তেলাপোকা সর্বত্র সব কিছুতেই এডজাস্ট করতে পারে বলেই এরা বেচে থাকে ৪৬ কোটি বছর। সম্ভবত এই তেলাপোকাই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আয়ুধারী কোনো প্রানী। এরা ওদের বাল-বাচ্চা নিয়ে ওদের মতো করে বেচে থাকে। ভালোই থাকে।
আজকে আমি বা আপনাকে কেউ ভুল বুঝতেছি বলে যে অভিযোগ করে, এটা হয়ত ঠিক এই রকম নয়। হতে পারে এই রকম যে, এখন আমি বা আপনি ভুল বুঝতেছি না, সময়ের ব্যবধানে, স্যামপ্লিং ভুলের কারনে আগেরবার ভুল হয়েছিলো, কিন্তু অন্যান্য স্যামপ্লিং, চারিপাশের অবস্থা, বেশী ফ্যাক্টর সমন্নয়ে আমি বা আপনি বর্তমানটাই ঠিক বুঝতেছেন। ফলে যারা অভিযোগ করছে, তারা ব্যাপারটা মেনে নিচ্ছেন না। আবার এমনো হতে পারে যিনি আমাকে বা আপনাকে "ভুল বুঝতেছি" বলে অভিযোগ করছেন, তার এক্সপেকটেশন অনুযায়ী সেও আমাকে বা আপনাকে আগেরবার ঠিক বুঝেছেন কিন্তু এখন তার এক্সপেক্টেসনের সাথে ক্যাল্কুলেসনে তারতম্যের কারনে আমরা বা আপ্নারা বদলে গেছি বা বদলে গেছেন এই চিন্তায় আমরা ভুল বুঝতেছি বলেই তাদের ডিডাক্সন তৈরী হচ্ছে।
কিন্তু যেটাই হোক, কে ভুল আর কে ঠিক, এই তর্ক, এই যুক্তি, এই ব্যাখ্যা করার সময় মানুষের হাতে খুব বেশি থাকে না। একটা সাব জেক্ট নিয়ে এতো গবেষণা করতে থাকলে, বাকী সাবজেক্ট এর জন্য তো সময় ই দেওয়া যাবে না। জীবনে সময় বড় সীমিত। হয় এডজাস্টমেন্ট করে বেচে যাবেন, নয় খপ্পর থেকে বেড়িয়ে যাবেন। দ্বিধার কোনো কারন থাকলে সবার প্রতিভা যেমন ক্ষতি হবে, তেমনি ক্ষতি হবে বিকাশের।
ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তে ভুল হলে যখনই মনে হবে এখনই সময় সিদ্ধান্ত পাল্টে জীবন সুন্দর করার, তাহলে "এখনি" সেটা। শুধু একটা জিনিষ মনে রাখা দরকার, ঈশ্বর সব ভুলের মধ্যে বড় সাফল্যের ফলাফল নির্ধারণ করেন। তিনি কারো সাথে মস্করা করেন না। তাঁর উপর ভরসা রাখুন। জয় আপনার। এটা দু পক্ষের জন্যই উপদেশ কারন, যার যার গন্ডি থেকে তাঁর তাঁর জন্য ঈশ্বর তাদের সীমানা নির্ধারণ করেন। কেউ কারো সীমানা অতিক্রম করলেই এই বিপত্তি হবে। নদীর জলের মধ্যেও ঈশ্বর তাদের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মিঠা পানি এবং নোনা পানিও তাদের সীমা অতিক্রম করে একে অপরের সাথে মিশার অনুমতি ঈশ্বর দেন নাই।
শেষ বিদায়
আজকে সেই দিন যেদিন সবাই আমার কারনেই সবাই একত্রে মিলিত হয়েছে। মিলিত হয়েছে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে। কিন্তু এখন আমি সম্পূর্ণ স্থবির আর শান্ত। বাড়িঘর সব ভড়ে গেছে একের পর এক চেনা জানা এবং অচেনা অনেক লোকের ভীড়ে। উজ্জ্বল দিবালয়ে, অথবা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে অশান্ত হৃদয়ে কেহ কেহ লাল নীল জামা পড়ে মাথায় টুপি পড়ে, কেহ আবার হাতে তসবিহ নিয়ে মুখে দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে হাহুতাশ করছে, কেউ চোখের জলে বুক ভাসিয়ে জ্ঞান হারাচ্ছে, কেউ আবার মনে মনে যার যার মিশ্র অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। কেহ কেহ আমাকে কোথায় দাফন করবে, কে বা কারা সে দাফনের নিমিত্তে কোথায় আমার কবরখানা রচিত হবে এই ব্যস্ততায় এদিক সেদিক ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। কেউ আমাকে পেয়ে হারালো, আবার কেউ আমাকে না পেয়েই হারালো। কেউ কেউ আবার অধিকার নিয়ে মনে মনে ছক কষে অশান্ত রুপ ধরিয়া বিলাপ করবে, কেউ আবার অধিকার পুনরুদ্ধার হবে এই আশঙ্কায় প্রহর গুনবে। কারো জন্য আমার এই প্রস্থান হবে মর্মান্তিক আবার কারো জন্য হবে অতীব সুখের।
এদিনে সমস্ত সিডিউল মোতাবেক সব ঠিক থাকলেও আমার জন্য আর কেউ অপেক্ষা করবে না। প্রতিদিনের ব্যস্ততার ক্যালেন্ডারটি আর আগের মতো সরব হয়ে উঠবে না। ঘরির কাটায় কমবেশি হলেও তাতে কিছুই যাবে আসবে না আজ আমার, আজ আমার কোনো কিছুতেই তাড়াহুড়াও থাকবে না। সারাবিশ্ব যেইভাবে চলতেছিলো ঠিক আগের মতোই এ জগতের সব কিছুই চলবে। এক মুহূর্তের জন্যও দিনের সময়কাল পরিবর্তিত হবে না, না চাঁদ তার উদিত হবার বা ডুবে যাবার কোনো ব্যতিক্রমী নিদর্শন প্রকাশ করবে। না নদীর জোয়ার ভাটার কোনো দিক বা গতি পরিবর্তন হবে। না সুর্য এক সেকেন্ড পরে বা আগে উত্থিত হবে। পাখিরা সময় মতোই নিজের নীড় হতে খাদ্যানেসে বের হয়ে যাবে, রাখালগন তাদের গরূ বাছুর নিয়ে ভাটিয়ালী গান গাইতে গাইতে কোনো এক মেঠো পথে হারিয়ে যাবে। এমনটিই তো হয়ে এসছে বরাবর প্রতিটি মানুষের জীবন সায়াহ্নে।
যে সম্পদ আমি আমার সারাজীবন ধরে আহরন করেছি, যা প্রতিনিয়ত রক্ষা করবার জন্য চারিপাশে সতর্ক দ্রিস্টি দিয়া পাহাড়া দিয়াছি, তা ওইদিন অন্য কারো হাতে চলে যাবে। সেটা নিয়ে বা কে নিলো, কেনো নিলো এই নিয়ে আমার কোনো কিছুই করবার থাকবে না। আমাকে যারা কখনোই ভালোবাসে নাই, যারা আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্টে দেখার পায়তারা করত, তাদের উদ্ধত চাহনী কিংবা দ্রিস্টিভঙ্গি আমাকে আর কোনোভাবেই আজ আহত করবে না। না আমি তাদের প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপ করবো। যে তর্কে জিতবার জন্য আমি খন্ড খন্ড যুক্তি প্রকাশ করে আত্মতৃপ্ত হয়ে হাসিমুখে চারিদিকে বীরের মতো চলমান থাকতাম, সেই তর্ক এখন আর আমার কোনো কিছুই আনন্দ দান করবে না। আমার প্রতিদিনের জরুরি মেইল কিংবা টেক্সট ম্যাসেজের প্রতি আমার আর কোনো তাড়াহুড়া থাকবে না। যাদের বিরুদ্ধে আমার কতইনা রিগ্রেটে ছিলো, জিদ ছিলো, প্রতিশোধের আগুনে যা আমি বহুকাল নিদ্রাবিহিন রাত কাটিয়ে দিয়েছি, সেটার আর কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে না, না আমার মনের মধ্যে এইসবের কোন প্রভাব ফেলবে।
আমার শরীর খারাপ হয়ে যাবে, আমার ওজন বেড়ে যাবে এই ভেবে আমার রোজকার দিনের খাদ্যাভ্যাসে কোন পরিবর্তন কিংবা আমার সাদা চুলে কালো করবার বাসনা এসব কিছুর আর কোনো প্রয়োজন হবে না, না এসব আমাকে আর বিচলিত করবে। আমার ব্যবসা, আমার সম্মান, আমার প্রতিপত্তি যার জন্য আমি প্রতিনিয়ত ভাবিয়া ভাবিয়া, নিদ্রাবিহিন কষ্ট করেছি, কিংবা কিভাবে কি করলে আমার সব কলেবর বৃদ্ধি হবে ইত্যাদির জন্য প্রানপন চেষ্টায় লিপ্ত ছিলাম, সেই ব্যবসা, সম্মান কিংবা প্রতিপত্তি আজ হতে রহিত হয়ে তা অন্যের হাত ধরেই চলতে থাকবে। ছোট কিংবা বড় যতো বড়ই অনুশোচনা হোক না কেনো, ক্লান্তি কিংবা কষ্ট যাই হোক না কেন, তাহা আজ আর কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করবে না। না আমাকে আর রাত জাগাইয়া তা নিয়া ভাববার কোন অবকাশ দিবে। জীবনের রহস্যময়তা, কিংবা মৃত্যুর উদাসিনতা যা আমার মন বহুবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে, তা আজ এক নিমিষের মধ্যেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে। জীবন কি, মৃত্যু কি, জিবনের পরে মৃত্যুর কি গন্তব্য যা নিয়া আমি বহুবার তর্কে লিপ্ত হয়েছিলাম, যুক্তি খুজেছিলাম, আজ সব কিছুর সঠিক তথ্য আমার কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে। ঈশ্বর কি, ঈশ্বর আদৌ আছেন কিনা, ধর্ম কি, এ জগত কি, কিসের উপর এই বিশ্ব ভ্রমান্ড দাঁড়িয়ে আছে, কি তার রহস্য, কি তার পরিচালক, আমার জীবনের মুল কি উদ্দেশ্য ছিলো যার জন্য এই প্রিথিবীতে আসা, আজ সব কিছু আমার কাছে দিনের আলোর মতো ফকফকা হয়ে যাবে।
আমার অনেক অসমাপ্ত কাজ যা করবার জন্য আমি জল্পনাকল্পনা পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, তা আজ সব কিছুর ইতি টানিয়া আমাকে নিয়ে যাবে কোনো এক সুদুর অজানা একস্থানে যা আমি এর আগে একবারের জন্যও বিচরন করি নাই।
আজ এই শান্ত শরীরে আমার চারিপাশের সবাইকে যেনো অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করতেছে কিন্তু আমার শ্বাস রুদ্ধ হয়েছে, আমার কণ্ঠনালি রুদ্ধ হয়ে গেছে, আমার বাহু, আমার পা, আমার চোখ, আমার যাবতীয় ক্ষমতা আজ রহিত হয়ে একটি ছোট খাটিয়ায় আমি এমন করে পংগু বোবা হয়ে শুয়ে আছি যা অবশ্যই হবে বলে আমি একদা জানতাম কিন্তু ইহা যে আজই তা আমি কখনো মনে মনে কিংবা শারীরিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। অথচ আমার এই দিনের জন্য একবারের মতোও কি প্রস্তুতু নেয়া দরকার ছিল না? বা আমার কি কি করনীয় ছিলো সেই ব্যাপারে আমি কখনোই নিজেকে তৈরী করি নাই কেনো? যে সব সম্পত্তি, যশ, সম্পদ অথবা লোভ যাই বলি না কেনো, সেইসব কারনে আজকের দিনের কোনো প্রুস্তুতি আমার নেয়া হয় নাই, অথচ এইসব সম্পত্তি কিংবা সম্পদের বিনিময়েও আজ আমি এই পরিস্থিতি হইতে মুক্ত হতে পারছি না, পারবোও না।
যে ঘরটিতে একচ্ছত্র আমার অধিকার ছিলো, যার প্রতিটি কোনায় কোনায় আমার হাতের স্পর্শ, আমার পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছিলো, তার থেকে আজ আমাকে বিচ্ছিন্ন করা হবে। যে স্থানটিতে দাঁড়িয়ে আমি জুতা মাড়িয়ে, সিগারেট ফুকে পায়ে দলিয়া পিছনে ফেলে ফেলকনি খাটে বসে আরাম করে বসতাম, আজ সেই ফেলকনি খাট আমার জন্য নিষিদ্ধ হয়ে ওই জুতা মাড়ানো স্থানটিই আমার জন্য বরাদ্ধ হয়ে রয়েছে। আমি আমার নামটিও আজ হারিয়ে ফেলেছি। আমাকে আর কেহই আমার সেই প্রিয় নামটি ধরে, কিংবা আমার ছোট মেয়ের অতি আদরের ডাকটি ধরে আমাকে গলা জড়িয়ে সম্বোধন করবে না। আমি নিতান্তই একটি লাশের নামে পরিচিত হয়ে এই উজ্জ্বল নীলাকাশ সমৃদ্ধ প্রিথিবী হতে সবার আড়ালে চলে যাবো।
অফিসে যাবার প্রাক্কালে যে সুন্দরী বউটি বারবার জিজ্ঞাসা করত কখন আবার বাসায় ফিরবো, কিংবা আজ অফিস হতে ফিরতে দেরী হবে কিনা, অথবা বিদেশে যাত্রাকালে মেয়েদের এই আবদার, ওই আব্দারের লিস্ট সম্বলিত দাবীনামার মতো আজ আর কেহই আমাকে কিছুই জিজ্ঞেসা করবে না, কখন আবার বাসায় ফিরে আসবো, কিংবা কেহ আমার সাথে যাবার জন্যও বায়না ধরবে না। ইহা এমন এক যাত্রা যেথায় কেহই কাহারো সাথী হতে ইচ্ছুক নহে।
যারা আমাকে অনেক ভালোবেসেছে, আর যারা আমাকে ঘৃণা করেছে, তাদের উভয় পক্ষই আজ আমার এই শেষ যাত্রায় হয়ত শামিল হয়ে যার যার ভাবনায় লিপ্ত থাকবেন। পাড়া প্রতিবেশিরা অনেকেই বিলাপ করে, কেউ আবার ফিস ফিস করে কত অজানা তথ্য নিজ থেকে মনগড়া কাহিনী বলে আত্মতৃপ্তি পাবেন, যার প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আমার আর থাকবে না। অনেক মনগড়া কাহিনী সুর আর তাল হয়ে বাতাসের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে আবার অনেক বীর বাহাদুরের মতো অনেক কল্পকাহিনীও তার সাথে মুখে মুখে প্রচারিত হবে, হয়ত তার কোনোটাই আমার প্রাপ্য নয়। মজার ব্যাপার হলো যে, দিনের আলো অন্যান্য দিনের মতোই সঠিক নিয়মে তার সিডিউল চলতে থাকবে, পাখিরা সন্ধ্যায় যার যার নীড়ে ফিরে আসবে, পথিক তার নিজ গন্তব্যে সঠিক সময়েই ঘরে ফিরে যাবে, শুধু আমার বেলায় আর কোনো কিছুই আগের মতো চলবে না। এক সময় সবাই আমাকে কাধে করে, ঈশ্বরের নাম জপতে জপতে কোনো একস্থানে মাটির তলে পুতে এসে চা চক্রে লিপ্ত হবেন। এক সময় রাত ঘনিয়ে আসবে, চাঁদ উঠবে, হয়ত বৃষ্টিও হতে পারে। আমি বৃষ্টির পানিতে গলিয়া যাওয়া মাটির সাথে মিশিয়া একাকার হয়ে যাবো। তখন হয়ত কেউ টিভির সামনে বসে কোনো এক আনন্দঘন সিরিয়াল দেখতে দেখতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়বেন। আর আমি একা অন্ধকার একটি মাটির গর্তে সারা জীবিনের জন্য ঘুমিয়ে থাকবো। সময়ের আবর্তে এক সময় আমি যে ছিলাম এই পৃথিবীতে সেটা সবার মন এবং মস্তিস্ক থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। এটাই যদি হয় জীবন, তাহলে কিসের নেশায় আমি এতো মসগুল? সব কিছুই ভুল এই পৃথিবীর। একাই এসেছি, একা যাওয়ার জন্যই এসেছি। মাঝে যাদের সাথে আমার পরিচয় হয়েছে, তারাও একাই এবং তারা আমার মতোই একদিন ভুলের ইতিহাসে বিলীন হয়ে যাবেন।
আমি জানি আমি তোমাদেরকে আর কিছুই বলতে পারব না। যদি ইহাই হয়ে থাকে, তাহলে আজ আমার জীবনের শেষ বার্তাটুকু তোমাদের বলে যাই, আর ক্ষমা প্রার্থনা করি যে, যদি কারো মনে, অন্তরে, শরীরে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, স্বার্থের কারনে বা বিনা স্বার্থে আমার অগোচরে কোনদিন আঘাত করে থাকি, যদি আমার দ্বারা এমন কোনো কাজ হয়ে থাকে যা উচিত ছিলো না, যা অধিকার খর্ব হয়েছে বলে মনে হয়, কিংবা আমার দ্বারা জুলুম হয়েছে বলে মনে মনে অনেক অভিশাপ দিয়াছেন, আমাকে সবাই খাস হৃদয়ে অনুশোচনাপূর্বক ক্ষমা করে দিবেন। আমিও আপনাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। আমি আমার দায়িত্ত কতটুকু পালন করতে পেরেছি,, সেই বিশ্লেষণ আমার উত্তরসুরী, আমার পরিবার, আমার সমাজের উপর। আমার পরিবার, আমার সমাজ আমাকে কতটুকু দিয়াছিলো সেই বিশ্লেষণ আমার কাছে আর নাই তবে আমি আপনাদের সহিত ভালো একটা সময় কাটিয়ে গেলাম এটাই আমার জন্য অনেক ছিলো।
যুগে যুগে এই প্রিথিবীতে আমার মতো সব উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত, রাজা বাদশা, হুজুর কামেল কিংবা দস্যু সবাই খালি হাতেই কেউ ভালবাসায় সিক্ত হয়ে কেউ আবার করুনার জল নিয়েই এই অসীম নীলাকাশ, গভীর সমুদ্র কিংবা পাহারের ঘন শ্যামল সুন্দর ছবি বুকেই নিয়া একাই সব ছেড়ে চলে গেছেন। এই শ্যামল ভালোবাসা, সম্পদ, সম্মান, কিংবা যশের জন্য কোনো রাজা, সম্রাট কিংবা শাসক কখনোই আর ফিরে আসে নাই। আমিও আর তোমাদের এই সমাজে ফিরবো না। তবে জায়গাটা ছেড়ে যেতে আজ আমার বড্ড মায়া আর কষ্ট হচ্ছে। ভালো থেকো তোমরা।
এটা কি শুধুই কলম বন্ধু?
WAS IT ONLY A PEN FRIENDSHIP?
Mandy and Ali had been sitting face to face without any talk for a quite long time as if both of them are thinking something very deeply about themselves connecting together. They might be calculating something. What they are thinking? They may think so many things, days, or many moments, or so many stories...
Mindy broke the silence.
-How is your conjugal life passing Ali! It might be very enjoyable, romantic and very emotional! It has to be. Carla also used to tell me like that and she was very much greedy for it.
-What Carla used to tell more? Ali wanted to know very reluctantly, as if he knows everything what Carla used to think but it will be very interesting to know from someone other than Carla. Ali had been looking to Mindy with a far eye. He has gone back to somewhere beyond Mandy's visual distance.
-Whose picture is this, Habib?
-My younger brother. Very nice a boy.
-What does he do now?
-Just going to school like you go.
-Can I write to him?
- You may try, Habib replied back.
And I am writing you now Ali.
This was her first introduction in her first letter. Ali was recollecting his memories. He took a big breath. He was only class nine then. An unbounded life, listening none and doing whatever wishes. Whenever getting time, trying to play in the field. Replying to Carla's letter was not a big issue, Ali thought. He dropped it aside. But next day when Ali was standing in the House line, enjoying the beauty of the nature, got second letter. This time it seemed to be a very weightfull one. Might have been full of photographs. And it was.
Ali, after his lunch, opened the letter and found variety types of photographs. Carla wrote, she was counting the days when she would be getting his reply. Ali looked at the pictures for quite long time one after another. Ali was very considerated. But to tell you frankly no pictures could wave him. Ali was not impressed. She was not looking that pretty. May be his choice was more higher than what she was. Ali kept all the pictures under his mattress and tried to sleep. But Carla was some kind of special character who did not lay herself in the mass believed concept of society. Rather had been waiting to choose someone as a personal choice. She kept on writing to Ali till reply reached to her. She was not sure about anything. So why to be puzzled unnecessarily. Ali got the third letter. It was a very interesting one!
-Don't you get my letters Ali? She wrote. If you get, please write me even informing you won't write.
Ali, this time, became a little bit serious. Ali decided to write that he would be very busy and would not be able to write her.
When he was preparing to write like this. He got the next letter. Ali now could not track the number of the letters. She wrote a very interesting story.
She had a cousin named John. He was disturbing her a lot, telling that he loved her. But she did not like the proposal. Everyday she was been criticized by her schoolmates except Mindy. Carla did not hide anything from Mindy. Mindy used to know all about Carla and her stories. Others used to criticize because everybody used to go out with their girlfriends and boyfriends. But Carla did not go. She used to wait for the reply of her letters. Yesterday John had stolen her fifty-dollar from her bag. She felt bad but again got pleasure thinking it happened because she loved Ali.
Ali deeply was thinking about the matter. Should it be told through his bother, Habib that he was not thinking about Carla? Nothing he could decide nor could stand on his decision. He could not write that he would be busy and could not write to her.
Ali mailed a new letter expressing, he was very happy receiving her letter.
Ali thought let he continued for some time and one-day when opportunity would come he would just write it. It is not the right time to say No, then she would get very big hurt.
Carla's next letter surprised Ali more. Everyday and everyday Ali was getting letters. Some day he was getting more than one letter. America became local place for Ali. At least in the case of mail. She wrote -
She read his reply more than sixty times. She could tell the contents of the letter as it was without opening. She expressed her feelings very boldly that she knew reply would come. Her belief could not be wrong. She was created for only Ali and so on...
Ali felt more sympathy for Carla. What would he reply to her! Would he tell that he would not continue or he should respond? Both of the options were dangerous. Ali, thinking about Carla's determination, could not say No.
Ali replied,
He was also waiting for her letter. In addition to give her feelings, Ali wrote he was interested to know about her habits, liking disliking, boyfriends, etc.
It continued for long time. Ali was then in class twelve. Going out from the college very soon. Ali's all higher secondary examinations were over and their batch was given farewell from the college. Ali came back from the college campus to their village house directly. Everyone he met enroute gave him the message about his elder brother, Habib, who recently came back from America after six years. He was surprised that only Ali did not know anything about his elder brother's return from America. Habib was Ali's elder brother who was doing Ph.D. in USA. Carla's father was in the same university where Habib was doing this research works. With this connection Habib and Carla's family had easy go in each other's house. One day Carla came to Habib's apartment and
saw Ali's picture. That very day Carla asked Habib the first question-Whose picture was this?
Ali reached to his house in the afternoon. The day was about to set to the west. All his sisters and other relatives were giving a shining look and smiling face. Every body was happy on Habib's arrival. Today they have filled up their joy after Ali's arrival. It became then hundred percent presence of all family members. But Ali noticed some abnormalities amongst his relatives. It seemed everyone was hiding some interesting news from Ali. What was the story? Ali questioned himself. Ali could not find out the hidden story.
Ali met his brother at night when he returned home from outside. It was a very happy moment. Very less they could talk. They were extremely happy. There was no language between them. After a long time they could meet together. When Ali was in grade seven, Habib left the country. Ali now passed higher secondary examination. It was time for him to go for the university now. Quite a long time. Both of them had long talk. Habib narrated lot of story about America, its beauty and the cultures of the society. Sometimes Ali had been asking few questions. Sometimes he had been laughing like a small boy hearing his brother's experiences. They woke upto midnight. Before finally going back to sleep, Habib told Ali that he had left something very expensive at Dhaka Teachers' Students Center (TSC). Next day early in the morning Ali should see once how it was without anybody's supervision. Ali should take the key and check it before the sun rose.
Ali got up from the bed early in the morning and started for Dhaka, TSC. When Ali reached at Dhaka, there were none in the street. A very few birds and crows were found around. There was hardly anyone walking in the main street. It seemed everyone was still sleeping. A few old guys having heart problem and needed short walk, only these kinds of people were found mostly. And its numbers were also very few. There were some young boys found passing by who wanted to be a professional foot baller going for practice in the far field. One-day his dream might come true. Ali found some smart girls too walking with very ugly looking guys. May be she needed some money for herself. She gave a company to the man at night. The earth does not give always a good look at all the morning.
Ali entered inside TSC and turned left. He had something to check in room number six. Ali brought out the key handed over by his elder brother, Habib. He tried to open the door of number sixth room.
But what is this! The key could open the room but it seemed someone was inside it. How it was possible? The room was locked from outside and someone was inside! He might
be doing mistake. He again locked the door and checked for the next door, seven then five. But that key could open none of the doors. Ali this time opened the sixth number room and started pushing inside. Very politely but anxiously asked whether anyone was inside the room or not. A lady voice replied back.
-Please hold for a minute dear, I am coming.
Ali was waiting with quick heartbeats. He was hearing the sound of her footsteps inside and opening sound of the first door. The lady opened the last door too.
Ali was not only surprised but it deemed that he was falling on the ground. What was he seeing in front of him? Why Habib did not tell him anything about her! Was it preplanned to surprise him? He was guessing things quickly and story became very clear what everybody was hiding from him!
Carla was shouting with top of her voice.
-Oh Jesus! At last you have come! I was just waiting for you whole night!
Ali could not say anything. First reason Ali was not at all prepared to see Carla. And second reason, Ali was not fluent in English, as Carla was being American. Carla did not know Bengali. Ali kept standing for few moments. Carla again shouted and held Ali's hand. Pulling him inside the room.
Carla was putting on sleeping gown. Very transparent. Did Carla decided that deliberately? Ali set down in the chair. He was feeling very shy. With very poor English Ali informed Carla that he was not good at English. He only could catch slow speedy conversation. Carla understood him very closely. Carla smiled very nicely and looked at Ali.
- I am very sorry dear. I was extremely happy when I have seen you. Carla replied.
She pulled another chair and set in front of Ali. Keeping her two hands in her chicks, she just keep on looking at Ali.
-What a beautiful morning today, is not it Ali?
How are you, Carla? Ali inquired. Giving no reply to Carla's question.
Carla leaned against Ali thighs. Her beautiful white body was emanating beautiful light, her breasts were visible partially but it was not looking ugly.
-I don't know how I am now, but there is none who is more happier than me at this moment. Carla whispered.
Ali touched Carla. Carla was whipping and her eyes were full of tears.
Carla was not looking like those pictures he saw in the photographs. She was much better looking and beautiful. Carla was exactly like what Ali was thinking for. Ali kissed her head and hairs. Both of them became normal. The language of love is not either
Bengali or English. It is something beyond the sound. There was very little tension, anxiety and unknowingness amongst them.
-What you ate last night Carla? Asked Ali..
-Just nothing but mango. Habib stored some dry food for me and some seasonal fruits.
-What you like to have in breakfast? Ali asked.
-You would be coming early in the morning and Habib told you would be deciding what we should take in lunch and dinner. I think you have also not eaten anything in the morning! Carla inquired him and got up to bring some grapes.
Ali was looking at Carla. Ali seemed to be very happy to get Carla. He really loved Carla Dorain Wilson. They had lots of talk. They talked about love, exchanged lots of feeling for each other. Carla stayed here for next twenty-two days.
During this long stay, both of them had been visiting many places. People also became very surprised and inquisitive to see both of us together. One Bengali boy was roaming around with one white girl holding the hands together. Naturally it was a rare scenario.
There was a study excursion arranged from her school. It was scheduled for Australia. But Carla gave the option for Bangladesh. Habib was coming back to Bangladesh to meet his family and in the same time he would be looking for getting married. Carla wanted to join Habib to visit Bangladesh to meet Ali during her study excursion. Habib did not inform this message to Ali at all to make a big surprise for him, his younger brother. Ali was really surprised.
The first night's story was very romantic.
Whole day Ali was waiting for his brother, if he comes. But he did not turn up. It was evening. Ali was thinking time and again that there was only one bed in the room. All the items given in the room were for single man. If he goes back at night, how she will be staying here alone? Will she allow Ali to go back leaving her? If she does not allow, than where he will be sleeping? Moreover, Ali was not interested to leave the company of Carla.
Even though Ali informed Carla that he would be right back in the next morning.
Carla looked at him astonishingly and said-
-What are you talking? You will be going back tonight? No baby, we will stay here together. Don't you know that I had been waiting since long!
-But there is no bed for two men. Ali said.
-Nothing worries! We will be sharing it together. Otherwise we will be sharing our lives together for whole life! Carla was very determined. She hugged Ali warmly.
None could sleep that night. Carla could not sleep because the day-night system in Bangladesh was absolutely reverse than that of America. Night in Bangladesh is the day
for America. It was a problem for Carla. But Ali could not sleep because Carla was awaking. Whole night passed without sleep. But Ali was not feeling any tiredness at all too. They shared one pillow together, shared one bed cover together, and what else they shared? They shared their life, they made a basement of the building, two men dream. A single dream which was dreamt together.
-It was very nice night I had ever in my life. Ali thought.
Was it called wedding night? They did not had any sex, did not had any violation anytime. But every time Ali thinks now, seemed to him that it was a wedding night for him.
-Several times we hugged together, I felt her warm hearts, beautiful breasts. But never ever I felt it to be touched. It was very pious relation, sacred love. Ali was thinking.
Next early in the morning, they both entered into the wet room, washed their hands and mouths though it was not necessary. Carla was laughing and telling Ali,
-How beautiful people you are!
-Why? Ali asked.
-It can not be thought that an American adult boy stayed night with an adult American girl and there was no sex between them. I can feel very much safe in the hands of man
like you people. I did not do the mistake Ali! I always wanted someone who will love me and care me. Only physical sex should not be the basis of love. Love should be such so that even when I will be an old lady having hundred years' ages, still my husband will love me as he used to do from the beginning. Carla stated.
- Can I kiss you on your forehead Ali? Carla asked Ali through the mirror.
Ali extended his hand towards Carla and hugged her. Both of them were looking through the mirror. A beautiful pair submerging together.
Carla was very depressed for last few days. Everyday it passed everyday she used to tell- she does not want to go back to America. She would not feel comfortable in USA. Ali used to give her consolation only that one-day they would meet together forever. But Ali knew there could nothing be more attractive consolation than that of saying, please do not go and stay with me. Ali was also not feeling comfortable as the days had been passing very fast.
Night before her departure, both could not sleep for a single moment. All Ali's relatives intentionally did not disturbed them. Most probably they also had wanted Ali to make permanent friendship with Carla. Besides they had tremendous trust on him about his dealings with Carla. But Ali could not keep his trust to them.
-Why should I deprive my lady from her rights? Is religion the main bondage between two human being? I did not believe. Ali was questioning himself.
-We were lying together. Carla kept her head on my chest and kept mum. I hold her head and brought more close to my eyes. She was crying. Her eyes were shining with tears. The lights helped her tears to be more pathetic. I kissed Carla, my beloved lady. I don't want to leave you, I want you to stay here, I want to share my everything with you. No secret no religion no law is bigger than the love. He held her tightly.
Ali peeled off her gown. God created woman with special attention. Ali imagined. The creation was not simple. The art of the body of the woman is not geometric rather it is artistic. The eyes tells about love, the nose, the lips, the breast all that a woman has tell the music of immortal love. Ali touched her breast with his wild lips. Carla holds Ali's head with her two beautiful hands tempting his hairs.
Ali lied over Carla.
Carla was just breaking with my kisses, with my movements and my every touch. Her tip of the nipple was very hard. Her eyes were closed, mouth was shut but making the noise of the image of love. Her legs were moving apart from each other.
Did we talk anything then? I can not remember what was the subject we discussed. Was it love? Was it anything like science or literature? We had been crossing the ocean of love, may be interchanging the waves of new generation. I opened my two eyes. I saw my Carla's full nude body. How beautiful breast a lady can possess? Is it more beautiful than that of Carla? How beautiful a design of figure God can create? Was it more flawless? I do not have any idea. I have seen only Carla. Carla was the best.
After a long time, Carla got up and sat down nude. Ali marked himself, was he greedy for her sex anytime? Ali thought.
After that visit, Carla used to be more aggressive on expressing love. Ali understood it by her last letters. Ali also became more aggressive. In every moment they remember each other.
Carla was mentally preparing to leave America and settle down with Ali. She was doing some small job. She added all the salary and one day bought an air ticket for Bangladesh. She wrote one letter too to mail Ali informing about her plan. She kept all these in her table and forgot to hide from other members of the family. Her father saw these two things. He was terribly shocked and equally sad. He took away her passport including the air ticket. Father charged her for doing so. She was warned by her father not to think like that anymore. If she does so she will be sent to the hostel at her own cost.
Carla agreed to the last proposal. She left the house. Her mother was also not favoring her. She was driving the car. It was a very foggy and snowing day. Carla thought she
should immediately inform Ali what she did. She requested her brother, Roy, to mail the letter that she wrote before.
Roy went to the post box and Carla was waiting in the car on. All on a sudden, a big lorry hit the car from the back. Carla with her car went out of the road. Both of them had a fall of fifty feet with number of summersaults. Carla lost her senses, got number of injuries, she was almost dead. Roy and others took her in the hospital.
-Is Carla dying, doctor? Daisy, Carla's mother, asked doctor.
-We are not yet sure about her condition but it is critical no doubt. Doctor replied.
After few hours, Carla could say something but not readable. Out of all talks, she could only tell twice "Ali". The doctors were not also very much confident what was to be done. Neither they could find out the meaning of this word "Ali".
Carla's mother thinking nothing but ultimately made a phone call to Ali in Bangladesh.
- Ali, can you come to USA right now? Carla got accident and she is in comma. She wants to see you. She is only uttering your name. Please arrange to come as quickly as possible. I promise you, I will honor Carla, if she survive this time.
Ali could not say anything. Because Ali knows that he can not afford to go to USA right now because of lots of factors. Money was the acute problem for Ali now. Moreover his office will not permit him to go to USA for this reason. What a nation. One man is taking farewell forever but the law does not permit other to see her. Ali took breath deeply.
Carla died after nine days. In between this she did not wake for a single time. How can she talk? She was busy with me here. No body knew. I gave her my last minutes. She uttered number of times-
-I wanted an Indian husband. I got it but I could not enjoy it. If I could enjoy it I could tell you how beautiful these Indian husband! You will have full freedom of power in the family. You may have different views but husband will not deprive you from love. They will never say, go out of my house.
Ali, after eighteen days, received the letter written by Carla, mailed by Roy. In that she wrote,
She will be coming to me in the next summer. I should be prepared myself for receiving her in the airport. She will be putting on red skirt matching with blue magenta color headgear. She will have a very beautiful rose in her hand. She will mind if I do not kiss her in open mass. So what this is not in our Bengali tradition but I have to do it for her. I had visited numbers of time the airport. But I never found this combination with anyone. Ali loved Carla so much. Ali promised if anytime he meets Carla, he would hug Carla in mass and had a kiss in public. No matter who thinks what. There is lot of time the earth has rotated the full rotations. Every time summer came but Carla did not come.
Today Ali has come to USA for a visit. Since the year Carla died in 1981 and today, there is seventeen years gap. Everything might have changed. Ali could not differentiate. If Carla would remain beside him, he could ask Carla about it. Ali does not get any attraction in USA because Ali knows without Carla in USA it will have no meaning.
Ali made a phone call to Mindy. His brother Habib gave Ali the phone number of Mindy's house. Mindy was very happy.
Today, the X-MAS day we all family members always want to meet together. I considered Carla was my family member. You are that man to whom my one of the best friend used to love so much, should I not invite you in my house! Mindy stated to Ali.
Ali taking a long breath replied Mindy.
-Mindy.
-Continue. Mindy replied.
-How many days a man can wait? Ali questioned Mindy.
- As long as someone can pull on alone? Mindy replied, you did not do wrong by getting married someone. If I would be in your position I would do the similar action too.
-I might get marry someone but I did not forget Carla at all .My lady Arundhuty is just like Carla. What I wanted from Carla, I am now getting it from Arundhuty too. Everyday I remember Carla by loving Arundhuty. Ali answered back very nicely to Mindy.
Mindy was also sitting the same way Carla used to sit in the table.
Mindy stated, Carla and Arundhuty both of them are lucky. I had also same mentality like Carla. I also wanted an Indian husband. Look if I would had an Indian husband, he would not leave me like this! We might have temporary emotions but not permanent separation.
Ali felt Mindy very deeply. Mindy is alone. She wants love. But what he can do for her? Mindy does not know that everybody may be Indian but everybody is not Ali. There is a big difference between these two.
After one-month stay, when Ali was leaving USA, Mindy requested Ali to stay at her residence. Mindy directly ensured Ali, she knows the customs of Bangladesh. Ali kept her request and went to her house. Mindy dressed her with Shari and blouse, sat in front of the mirror.
She said,
-Can I give you a kiss on your forehead, Ali?
Ali told nothing.
Logan airport. A big gathering of people. Everybody was busy either for clearing his or her goods or saying good-byes to his or her beloved man. Ali was boarding the plane. It was early in very morning. Mindy came upto the last place from where we can see together. I took my seat and looking at Mindy. Mindy kept on looking till the plane took off in the sky. Ali left USA forever. Mindy was kept on looking in the sky till the plane became very blurred. Her eyes might be full of tears. Johan, her only son five years old, pulled her hand and might inquire,
-Mom, will uncle come back soon!
Mindy could not reply back to Johan. She just holds him in her lap and hugged very tightly. Mindy did not wan to cry but her eyes could not control the wave of the tears.
What Ali could do? Ali could do three things. What Ali did, he did the right thing. Or he could take her in Bangladesh along with him. Or Ali could stay back in USA with Mindy. But what would be for Carla and Arundhuty?
The plane was above fifty thousand feet in the sky. The sky was full of white cloud, there are many passengers trying to sleep and Ali was kept on looking towards white clouds outside. So many things Ali was passing by but many of them were not visible to him. Some were not correctly identified. Ali might be thinking about Carla, Arundhuty and Mindy together.
There are so many things happened in this earth. Many of them remain untold, hidden and unseen. Very few lucky or unlucky people might meet them en-route but hardly anyone cares them. Those who cares they don’t get it’s head or tail nor the start or end. Even some one runs agter the blind zone but God is always mysterious and keeps some mystery always hidden to open. Only God knows what is the mystery lied here. Ali saw the old passenger, a man of seventy years old, sitting beside him sleeping like a small baby.
বোদার গল্প
আলমাসের উপর দায়িত্ব পড়েছে বোদার
১৯৯১-৯২ সাল।
আলমাসের উপর দায়িত্ব পড়েছে বোদার। আলমাস সহজ সরল ছেলে। এখনো মুছ-দারি ভালমত গজায় নাই, তাঁর উপর ব্যাচলর। কোন কিছুই করার নাই, বোদার কাজ আলমাসের। আলমাস প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফৌজ সামন্ত, গাড়ি সব কিছু নিয়া আলমাস রেডি হচ্ছে বোদার কাজে।
গরম মৌসুম, চারিদিকে গরম হাওয়া। বোদায় নাকি বাতাস কম, যাও আছে তাও আবার যথেষ্ট পরিমান অক্সিজেন নাই, একবার যদি কেউ বোদার বাতাস নাকে নেয়, তাঁর নাক নাকি বাতাসের আর অন্য কোন গন্ধ বুঝে না।
আলমাস বোদাটা দেখল, এর একটা ম্যাপও একে ফেলল। জায়গায় জায়গায় গর্ত, কোন জায়গা দিয়ে কি করা যায়, সারারাত আলমাস ঐ বোদাকে নিয়াই থাকল। সব জায়গা দিয়ে সব কিছু নিয়া ঢোকা যাবে না বলে আলমাস বোদার কোথাও কোথাও টিপে টিপে, কখন বা পায়ে চাপ দিয়ে দিয়ে পরিক্ষা করে দেখে নিল বোদার কোন জায়গাটা শক্ত আর কোন জায়গাটা নরম। নরম জায়গায় সৈনিকদেরকে যেতে নিষেধ করে দিলেন আলমাস সাহেব। নরম জায়গায় কাজ করার আগে আলমাস সাহেবকে আগে থেকেই জানাতে হবে বলে আলমাস তাঁর সুবেদারকে বলে দিলেন।
আলমাসের ওসি হচ্ছেন মেজর ইকবাল সাহেব। নিতান্তই ভদ্রলোক। তিনি বিবাহিত। তাঁর একজন মেয়ে আছে। ওনি সব সময় মুচকি মুচকি হাসেন। কথা কম বলেন, কিন্তু আলমাসের সঙ্গে খুব খাতির। আলমাস ওসি সাহেবকে নতুন বোদা দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। ওসি সাহেব এর আগেও বোদা দেখেছেন কিন্তু বোদা দেখা আর বোদা সার্ভে করা এক জিনিষ নয়। তাই ওসি সাহেব নতুন উদ্যমে বোদা সার্ভের কাজ আলমাস কেমন করে করবে তাঁর পরিকল্পনা দেখার জন্য তিনিও বোদায় এলেন।
ওনি যখন বোদায় পা রাখলেন, তখন ভরদুপুর। বোদার বাতাস খুব গরম, খরখরা বোদার আশপাশ। জঙ্গল খুব একটা নাই, মনে হয় কে বা কারা যেন বোদাকে একেবারে ক্লিন শেভের মত পরিস্কার করে রেখেছে। মাঝে মাঝে দু একটা খালের মত আঁকাবাঁকা শুকনা কিছু দেখা যায় কিন্তু বহুদিন কেউ ওখানে পানি দেয় নাই বলে মরা জঙ্গলগুলু হলদে বা তামাটে রঙ ধারন করে আছে। ঐ হলদে বা তামাটে জায়গায় বসলে পাছার চামড়ায় চুলকানি লাগে।
ওসি সাহেব আলমাসকে নিয়ে বোদার চারিদিক দেখলেন। আলমাসের আকা বোদার ম্যাপে ওসি সাহেব তাঁর নিজের মত করে লাল ওএইচপি মার্কার দিয়ে আরও কিছু একেঝুকে দিলেন। বোদা নিমিষেই লাল হয়ে গেল। আর অনেক কাটাকুটিতে বোদার ওরিজিনাল চেহারা পালটে কি যেন হয়ে গেল।
যাক, সন্ধ্যে হয়ে গেল। আলমাস আর ওসি সাহেব বাংলোয় ফিরে এলেন। বোদার বাইরের বাতাস আর বোদার বাংলোর বাতাসে অনেক তফাত। বাংলোর ভিতরে বোদা অনেক ঠাণ্ডা, বেশ গোছালো, আবার বেশ পরিস্কার। অনেক নামি দামি লোকেরা এই বোদা দেখতে আসে। আলমাস আর তাঁর ওসি নামিদামি মানুসের মধ্যেও একজন, তাই বোদার এডিসি সাহেব এই দুইজনকে বোদার সবচেয়ে সুন্দর স্থানে জায়গা দিয়ে বললেন, “স্যার, বোদা দেখতে হলে এই জায়াগায় থাকেন। এখানে বোদার আসল মজা পাবেন। বোদার এখানকার পানি মিস্টি কারন পাশে চিনির কল আছে, বোদার বাতাস এখানে খুব সুইট কারন ডিসি সাহেব এইখানে বোদার এস্পেসাল সুগন্ধি গাছ লাগিয়েছেন। নাক পরিস্কার হয়ে যাবে বোদার গন্ধে। এখানে একটা ফল আছে যার নাম একেবারে ভিন্ন। নামটা হচ্ছে “কন্যাকুমারি”। আসলে বোদার পুরান নাম কিন্তু এই “কন্যা কুমারি”। তাঁর মানে হচ্ছে “কন্যাকুমারী” বোদার ফল। একবার বোদার ফল খেলে আপনার জিহবা বার বার বোদার ফল খেতে মন চাইবে। ইচ্ছে করলে আপনি কিছু বোদার ফল সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন, বন্ধুবান্ধব্দের দেবেন। তারাও বোদাকে মনে রাখবে। বোদা আমার বড় প্রিয় স্যার।” এই বলে এডিসি সাহেব আলমাস আর ওর ওসিকে বোদার খাস জায়গায় রাত কাটানোর জন্য রেখে গেলেন।
ওসি সাহেব আলমাসকে জিজ্ঞেস করলেন, আলমাস , বোদা তোমার কেমন লাগে? আলমাস সহজ সরল ভাবে উত্তর দেয়, স্যার বোদা আমার কাছে ভাল লাগে। ওসি সাহেব, মুচকি মুচকি হাসেন। ওসি সাহেব খুব মজার লোক। আবারও আলমাস কে জিজ্ঞেস করেন, বোদার কোন জায়গাটা তোমার খুব পছন্দ? আলমাস নিতান্তই সহজ সরল ছেলে, উত্তর আসে, স্যার বোদার সব জায়গায় পানি পাওয়া যায় না, যেখানে একটু ভিজা ভিজা থাকে ঐ জায়গায় আমার থাকতে ভাল লাগে, শরির ঠাণ্ডা হয়, মনভরে যায়। ওসি সাহেব, আবার মুচকি মুচকি হাসেন।
ওসি সাহেব কয়েকদিন বোদার আনন্দ শেষ করে তিনি ফিরে যান তাঁর নিজের কর্মস্থলে। আর এদিকে আলমাস প্রতিদিন বোদার প্রতিটি স্থানে পায়ে পায়ে চলে, কখন স্পিড বেশী থাকে আবার কখন একেবারে থিতিয়ে যায়। যেদিন আলমাস বোদার ফলটা বেশী খায়, সেদিন আলমাসের স্পিড ভাল থাকে। আলমাস দিনের পর দিন বোদায় থাকে। আলমাস বড় ভাল লোক। ও কখন বোদার ক্ষতি করে নাই। বোদা আলমাসকে আজিবন মনে রাখবে।
আলমাসের ঐতিহাসিক ভাষণ
যে কয়টি ভাষণ পৃথিবীতে বিখ্যাত হয়ে আছে, যেমন, আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিসবারগের স্পিচ, কিংবা মুজিবের ৭ই মার্চ এর ভাষণ কিংবা ঐ কালো লোকটির “আই হেভ এ ড্রিম” ইত্যাদি। আলমাসের এই ভাষণটাও বিখ্যাত হয়ে থাকতে পারত কিন্তু এটা মিডিয়ার পাল্লায় পড়ে নাই বিধায় জগতজুরে আলমাসের এই বিখ্যাত ভাষণটি আর বিখ্যাত হয়ে উঠে নাই। তবে আমার ধারনা, অন্তত টাচ ১৩ ফোরামে এই ভাষণটি বিখ্যাত হয়ে থাকবে। অনেকেই আলমাসের সেই বিখ্যাত ভাষণটি শুনে নাই কিন্তু আমি সরাসরি ঐ ভাষণ যখন ইতিহাস সৃষ্টি করছিল আমি সেখানে ছিলাম। আমি তোমাদের জন্য আলমাসের সে ভাষণটির অনুলিপি তোমাদের জ্ঞ্যাতারথে জানাব।
তারিখঃ
লিঙ্গপুর স্কুল
উপস্থিত সুধিজন, ভাই, বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীগন, আসসালামুয়ালাইকুম।
আপনারা জানেন যে, আমি প্রায় গত ছয় মাস যাবত আপনাদের বোদা নিয়া একাগ্র চিত্তে কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি কিভাবে আপনাদের বোদার উন্নতি করা যায়। আমার বলতে দ্বিধা নাই আজ যে, আমি যেদিন প্রথম আপনাদের বোদাকে দেখি, তা ছিল সত্যি এক নোংরা, অপরিস্কার এবং দুরগন্ধময় এক বোদা। আপনাদের এই বোদার কোন ডিসিপ্লিন ছিল না, না এর রুপে, না এর গুনে। তারপরেও আমি দমে যাইনি। আমি আমার এই টিমকে নিয়ে রাত দিন আপনাদের বোদাকে নিয়া কাজ করার চেষ্টা করেছি।
আজ আপনারা নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছেন, কি সুন্দর হয়েছে আপানাদের এই বোদার চেহারা। বোদার সব কিছু এখন পরিস্কার, কোথাও পানি জমে নাই, আর যেখানে পানি থাকার কথা সেখানেই পানি আছে, অহেতুক এর চারিধারে স্যাঁতস্যাঁত হয়ে থাকে না। বোদার এবড়ো থেবড়ো স্থানগুলো আমার সোনার ছেলেরা নিজের হাতে সেগুলো ঠিক করে দিয়েছে। বোদার যত ময়লা আবর্জনা ছিল, তা আমরা নিজ হাতে পরিস্কার করে দিয়েছি।
আমরা আজ চলে যাচ্ছি। এখন দাতিত্ত আপনাদের। আপনাদের বোদা আপনারা পরিস্কার রাখবেন। বোদার যে কোন জায়গায় থুথু ফেলবেন না। বোদার যত্ন নিবেন। ভবিষ্যতে এই বোদা থেকে অনেক সোনার ছেলেরা বের হবে, এদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার জন্যই বোদার যত্ন নেওয়া একান্ত কর্তব্য। বোদার যাকে তাকে বোদার ব্যাপারে মাথা ঘামাতে দেবেন না। বোদার ক্ষতি হয় এমন অনেক লোক আছে। যাকে তাকে বোদায় ঢোকাবেন না। বিশেষ করে রাতে বোদার ব্যাপারে আরও অধিক সতর্ক থাকবেন। প্রয়োজন হলে বোদার প্রবেশ পথে লাঠি রাখবেন যেন প্রয়োজনে লাঠি ব্যবহার করতে পারেন।
ভাইসব, আপনাদের বোদার কথা আমার মনে থাকবে। আজ আমি যে বোদা রেখে যাচ্ছি, আশা করি, আমার পরবর্তী বংশধররা যদি কখন এই বোদা দেখতে আসে, আমি যেন বলতে পারি, বোদা বড় সুন্দর।
মায়ের কাছে মেয়ের চিঠি
Dear Mom
Mama, in this strange world, I met multifarious categories and different types of people with different characteristics altogether. Many of the people seem to be similar and behave similarly. Their starts and endings look alike. Someone begins with charismatic start and ends with volatile situation; someone starts with confused situation and ends with futile consequences. That’s my experiences Mama in so far with such a little age to leave away in the past.
With my little experience, I don’t clearly understand a person instantly what he wants and what he runs ultimately for. But at times what my sixth sense tells me that many of the eyes speak distinct to its hunger ness and covetousness with lustful desire, many of those hearts don’t even speak anything but express many things in one look, and many souls are really so strong enough to be judged all over the time passed along with. Many factors get visible at times, the social amenities, social customs, human bondages, and others. Out of these what I understood one very distinct feature is the social amenities, which is only the clad of the these so called society but their dialects, customs and practices look alike to unholy ness, dirty, vile and despicable. But Mama, there happens so many things in our area that cannot be even defined with the existing definitions also. I will tell you such an unveiling situation today and I need your guidance in literal voice.
Mama, I met a person, still unidentified, recently here in my world. She came all on a sudden from an unknown world and disarrayed my gardens, my thinking, and my pattern of behaviors that I settled it down with all my concentrations. Now it seems, I am influenced, I am affected seriously, and confused too in the order of the day. She comes to me when I am alone, she appears to me when I am distressed, and she speaks to me with the same language the way I understand the ideas to be discussed. She exactly speaks the way you nourished me when I was a child, she looks very known person to me and it seems to me that I saw her somewhere sometimes. But Mama it frightens me also and it moved me from the point of impact. It always hunts me like a professional gun-man. Can you tell me Mama, what she wants from me, or who is she and what she looks from me? I don’t know it what is her demand and how to tackle her. This is the first instance that I am encountering a person like her. I am confused to look at her eyes, I am confused to look at her mortifications, and I am undone to her envious weal. She seems sometimes looking like a usual people around me, sometimes I find her some how different, a different person who has no agitations, has no demand but maximum time I feel I am judging her wrong. Her eyes do not speak vile, her eyes don’t show aggressiveness, and her eyes seem to be very cold indeed Mama. Can you tell me Mama, is there any place where people do not have any cohabitations, has no enamours? Is there anywhere humankind who do not exchange for his efforts? If there was none, then what this person wants to get from me? She might be the most venereal one whom people should worship her and have confident with devotion or she might be one of the most evil creatures that I never encountered before. But I don’t want to be surprised another time. If I would know things certainly what is in her, she could be one of the most ecstatically joyful event in your son’s life or I could make a decision to reject with violent forces and finish her forever. Your prayer for your son’s longevity would be successful but I am in a state of wearied, tired and exhausted stage Mama. I cannot take a chance at this time of my full moon night. The judgment I made against her in one moment proves to be a mistake in the next time and I again start afresh. But every time I am lost in the state of confusion.
Mama: she shows me the way of going alone in a serious turning points, she insists me to take an adventure along the road of the Caucasus mountain that I never travel, she wants me to experience a life with deity and humanity together. But how it can be possible Mama? How a person can be a God and a human in the same time? I cannot pull things alone anymore. My silence punishes me, my ignorance beats me up there, my affection takes me somewhere I can’t return it back again. What I should do Mama? It seems to me an ordeal test and I cannot be free from angularity anytime because it creates a dilemma between true and false, right and wrong all the time. Someone must not be hurt without any reason, someone should not be rejected without any good cause and someone should not be punished for another person’s prediction too.
Mama, she tells the story that you told me once, he delineates the path that I wanted to follow, she exactly tells me to do things what nobody told me before that I cherished in my life, she creates an environment that I wanted to preserve in my memory but every time I am afraid because I don’t know how she came to know all these ? I don’t know how to honor her nether I know how to leave her. My past haunts me to take revenge for all those souls that went without any reason, I want to go alone and take the adventure of taking the risk of either victory or defeat alone, none and none to share it. I know that none will be able to agree with such a condition of leaving this beautiful world so early in a n encounter. Mama, you know those entire stories and you apprised me such feelings of those events mama.
Mama, This strange lady dements me in the moment of my leisure time, she intoxicates me when I am alone and she enrages me when I am with your heart totally. She seems to be a wild wind that excited me when I had calm and quite nights, she overwhelmed me in a critical position to decide either to leave or to be with her as one of the member of a family. But is it too easy to get a family member like you and me? A family has a different definition and identity Mama! It is not that I agree and it goes. Hi my mama, I know vilification and animadversion is a sin in my religion but don’t you think we all do so many vilifications all the time against a person who in fact doesn’t deserve such? How a person like this, should be treated Mom? Mama, you never told me a subject, called decision at confusion, which people suffer from indecision and confusion in the same time and in the same area. This lady is confusion in my life. I don’t understand her, I don’t understand the consequences of the events and I don’t know the conclusion of this relationship Mama. He is not navigable and seems a new appearance and revelation in my life. No body showed me the path of the light, no body told me about the consequences of the life and no body told me about my strength and weaknesses that I posses. She told me once. I want to discover her Mama. But how? In what way? In which capacity?
I know, this particular person might disappear when I would come to know that she was the right woman to whom I needed, I know the time will not wait for me and the deity will go away from me when I will be needing her much. She seems to be an angle or a devil in both cases. Sometimes you need devil also in your life in different situation to be more experience and be stronger at the moment of the break-even-point. It seems, she loves me like a small boy at times with all apology, she loves me like an unbounded wild man whom she wants to sacrifice things on behalf of me and he respects me the way you taught me to respect a person. But I don’t know the result of such confidence on this unknown lady came from a different planet. Is she a human, a devil, a ghost, or a goddess! She is a total confusion at the moment Mama.
Right at this moment, the logical fallacy seems to be un-ruled in my mind, a holy bed of logic seems to be undetermined in my life, a holy thread slung over the shoulder may be unnoticed within me but I am not atheistical Mama, thus the heavenly dome seems to be under a throb greatly, the sudden bustle of the heart looks like stopping in the middle of it‘s palpitation and trepidations. I have no instruments to devise a plan to dismiss her unnecessarily, to in-contrive her illogically and finish her in stray. Mama, will you tell me the ways that saves me from this ignorance? You know your Babu and his mind in terms of spick and span. I need someone to guide me in the right directions and ways to follow, Mama. It has become a twisting, revered, and twirled circumstance in my world. I need your suggestions and advices. I am utterly harried into a motionless life. Let me not be a subject to the prey of the legacy of unsoundness, let me not be a subject to be referred as a culprit to be known by the people around me, and, Mama, let me not be the only person to be blamed who refused the deity that came alone the line of a humankind from the God as usual to your Babu’s life.
I tried to explain the strange lady within the religion also. The strange person seems to have no similar religion that I believe, but Mama, can you tell me what is called religion? A religion to her is a scuffle fight and has no effect on human bondage at all. But to me my religion is having a great influence over the total human life. The answers that I was looking for and rom a long time in my previous religion, I was unable to delve out, but here what I received is something untold and authentic. What your religion says about Beautification of woman body, Laws regarding menstruation, false menstruation, the laws But to me my religion is having a great influence over the total human life. The answers that I was looking for and from a long time in my previous religion, I was unable to delve out, but here what I received is something untold and authentic. What your religion says about Beautification of woman body, Laws regarding menstruation, false menstruation, the laws pertaining to woman’s dress and hejab, laws pertaining to marriage and divorce, and many laws pertaining to protect nobility and chastity of woman etc and many other questions I was looking for. Even the incident of birth of Jesus, what not!!!! Now the most important things came into the barrier of my decision: RELIGION. Sometimes I want to feel, a dead man has no religion. But we are not dead. Don’t you believe that one? Mama, the insolence of Glory and the divinity is alone defined by people but not the God. God is for every body. No matter how he practices it. If some one has profound love and conjurors to God, HE understands the mind of his creatures. He or she does not need to explain the modalities of her actions to Him. He is not a fool and HE commands the whole universe without any difficulties. HE commands my strange lady also. But at the end of all logics, still certain rituality has to be graved and performed in person. Those are not similar to us. My religion strictly prohibits me to go forward but allows with a condition to convert her too. It is not an impossibility but unwise unless it happens within own self. Then what would be the mixing factor into next generation Mama? So confusing at this moment mama. I am getting sick of the reality everyday…..
The strange lady calls me sometimes her family, sometimes as a glaring minion; sometimes she breaks to me like a small girl as if to her mother. Sometimes she hits me and hits very harder. I can return the hit but I can’t. Why I can’t? I have no relationship with her yet. Even though I keep silent. Because she cares me always. I noticed, my silence again makes her desperate. She seems to be a crazy person altogether. Mama, I always wanted to avoid such person but I am unable to avoid her. I am breaking every moment and everywhere. I am breaking faster than she breaks to me. But I am not putting them in public. When I find her in pensive, it pails me out, it strikes my heart. I cannot say to her. Neither I can accept her too. In which category I will carry her Mama. She is not my sister, she is not my mother, she is not my wife, nor she is my girl friend in truest sense of a girl friend. She is just a stranger, and I know I will miss her soon. I have nothing to present her except my memory, except my loneliness and sadness………….The stranger will remain as stranger to me whole life I think, Mama. Because we have so much of barrier in religion, culture, environments, social and attitudes. A candle-blaze is needed when we require them but a blaze into a hut is not accepted by any one. One blaze facilitates our life and another takes our life. I am the second category may be mama. I will burn it always but alone…..
প্রিয় মা,
যতোক্ষন এই পৃথিবীতে মানুষ সবার মাঝে থাকে, ততোক্ষন তারা মনে করে সবাই হয়তো তাদের পাশেই আছে। কিন্তু যখন কেউ কোনো সমস্যায় পড়ে, তখন যাদেরকে মানুষ কাছের মানুষ হিসাবে এতোদিন ভেবেছিলো, তাদের যখন কেউ পাশে থাকে না, তখন আসলেই প্রিথিকে বড় একাই মনে করে। এই ভাবনাটা যখন সত্যি প্রমানিত হয়, তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়, চেনা মানুষগুলির মুখ তখন এতোটাই অচেনা মনে হয়, নিজের কাছে তখন অসহায় ভাবা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তখন সবচেয়ে যাদের কথা বেশী মনে পড়ে তারা হচ্ছেন বাবা আর মা। কিন্তু তোমার সেই দুইজনের মধ্যেও তোমার একজন নাই, আর সেতা হচ্ছে বাবা। যার জীবনের একটি হাত সারা জীবনের জন্য ভাংগা, সে দুই হাতের কাজ এক হাত দিয়ে কখনোই সম্পন্ন করতে পারবে না, এতাই বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতার সাথে তাল মিলাতে গেলে এক হাতের শক্তি নিয়ে যেভাবে জীবনের পরিকল্পনা করা উচিত তার পলিসি একেবারেই ভিন্ন। কারো একটা হাত নাই, এই অযুহাতে এই সমাজ কাউকে আলাদা সুযোগ দেয় না। ফলে যতো মায়া আর যতো পরিচিত মুখই তাদের আশেপাশে থাকুক না কেনো, তারা সব সময় অসহায়ই ছিলো এবং থাকে।
এই অদ্ভুদ বিশ্বে আমি অনেক মানুষের সাক্ষাত পেয়েছি, কখনো অদ্ভুদ সুন্দরের কিন্তু নোংরা মনের, কখনো নোংরা চেহারার কিন্তু অদ্ভুদ সুন্দর মনের, আবার কখনো এমন কিছু লোকের যাদের আমি চিনবার আগেই অচেনা হয়ে গেছে। সব মানুষের চেহারা এক না হলেও তারা দেখতে কেমন যেনো একই রকমের। ঈশ্বর তাদের এমন করে বানিয়েছেন, যাদের প্রত্যেকেরই আছে দুটু করে কান, দুটু করে চোখ আর অন্য সব যা দৃশমান। কিন্তু একটা জায়গায় ঈশ্বর কোনো কিছুই দৃশ্যমান করে দেন নাই যা থাকে বুকের পাজরের ভিতর, সত্তার আড়ালে যার নাম অন্তর। আর এই অন্তরের এক অসাধারন ক্ষমতায় কেউ কেউ এমন কিছু চাকচিক্য আর বর্নচোরার মতো রুপক কিছু সুর নিয়ে খেলা করে যা কিনা শুনতে ভালো লাগে বটে, নেশাও ধরায় তবে ধীরে ধীরে প্রাননাশের কারনও হয়ে দাড়ায় যার নাম হয়তো ভালোলাগা বা ভালোবাসা। কেউ এই ভালোলাগা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার কথা বলে, আবার কেউ ভালোবাসার কথা বলে দূরে দাঁড়িয়ে ভালোলাগার কথা বলে। আমি মাঝে মাঝেই বিভ্রান্ত হয়ে এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে ছুটে যাই, কোনটার নাম ভালোলাগা আর কোনটার নাম ভালবাসা মা? আমি ভাসতে থাকি কখনো মেঘের ভেলায়, কখনো ঝরের তান্ডবে। আমার এই ছোট্ট জীবনের ছোট্ট বয়সে আমি মাঝে মাঝে বুঝতে পারিনা, কে কি চায়? কার কি অভাব? কোথায় তাদের দুঃখ আর কোথায় তাদের সুখ? তবে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঠিকই ইংগিত দেয়, কোথায় ঝোপ ঝাড়ের মতো হায়েনারা বসে আছে, আর কোথায় কোন কাপুরূশ তার নিজের বীরত্তকে প্রকাশ করার নব নব রুপে সজ্জিত হচ্ছে। সব কিছুই মাঝে মাঝে ভ্রম মনে হয়।
মা, আমার একজন অচেনা মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। আমি তার কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না, আমি তার চাহনীর ভাষা বুঝি না। আমি তার পৃথিবীকে চিনি না। কিন্তু হটাত করে আমার সাজানো বাগান যেনো সে অগোছালো করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি নিঃশ্বাসে, মাঝে মাঝে আমার প্রতিটি বিশ্বাসেও । আমি বুঝে উঠতে পারছি না, আমি কি হেটে এগিয়ে যাব, নাকি দৌড়ে পালিয়ে যাবো, কিন্তু আমার শরীর আর মন একই দিকে ছুটছে না এটাই শুধু আমি বুঝতে পারি। মন যদি এগোয়, শরীর পিছোয়, আবার শরিড় যখন এগোয়, মন পিছিয়ে যায়।
মা, সে আমার কাছে চুপি চুপি আসে, যখন আমি একা থাকি, চোখ বুঝলেই যেনো আমি তাকে দেখতে পাই কিন্তু যখনই চোখ খুলে তাকে স্পর্শ করতে যাই, সেই নীলিমার নীল আকাশের মতো হটাত আমার আকাশ মেঘলা হয়ে যায়। আমি তার ভাষা বুঝতে পারি না। কখনো কখনো মনে হয় আমার বুকে ব্যথা, আবার কখনো কখন মনে হয় সেই অচেনা মানুষটাই আমার বুকের ব্যথার কারন।
মাঝে মাঝে সে ঠিক আমার কথাগুলিই যেনো বলে যায়, আবার কখন কখন মনে হয় আমার সাথে তার যেনো কোথাও কোন মিল নাই। আমার কষ্টের সময়ে সে মাঝে মাঝে ঠিক আমার সামনে এসে হাজির হয়, মনে হয় যেনো সে আমার কথা শোনার জন্যই যেন বসে আছে। আমার দু চোখ বেয়ে যখন জল পড়ে, সে যেন আমার এই চোখের জল মুছতেই হাজির হয়। আবার কখনো কখনো এমন হয়, সে যেন আমাকে কিছুই বুঝে না। আমি যেনো তার কাছে এতই দূর্ভেদ্য যে, কোনো ভাষাই যেন বোধ গম্য নয়। মা, কে সে?
আমি জানি এখন আর আমি কিশোরী নই। আমি এটাও জানি যে, কিশোর বয়সে বা টিন এজের প্রেম হলো একটা মোহ অথবা একটা ইনফেচুয়েশন। অগ্নিকে সাক্ষী রেখে সাত পাকের মুল্য অনেক সময় এইসব টিন এজারদের কাছে কোনো মুল্য থাকে না যখন তারা বাল্য প্রেমের মোহ থেকে মুক্তি না পায়। তারা মনে করে শুধু সাত পাকেই বিয়া হয় না, আসল বিয়ে হয় মনে মনে। এই মোহের শেষ পরিনতি হয় চিতা। কিন্তু আগুনে পূরে যাওয়া লাশের সাথে সেই চিতায় প্রেম পুড়ে ছারখার হয় না। কোনো না কোনোভাবে সেই প্রেমের আগুনের রেশ তার ফেলে যাওয়া পরিবারকে প্রতিদিন দংশন করতেই থাকে। “লাভার বেঞ্চ” বা “লাভার পার্ক” বলতে আসলে কিছু নাই। যেটা বাস্তব সেটা হচ্ছে বেচে থাকা। মা, আমি সেই প্রেমের মতো কথা বলছি না। আমি এটাও জানি, সত্যিকারের ভালোবাসার অনেকগুলি রুপ হয়। আমি সেই রুপ গুলির সাথে পরিচিত নই কিন্তু মন যা বলে সেটা তো আমার অন্তরও বলে। আমি আমার হৃদয়ের কথা শোনার আগে আমার বিবেকের কথাও শোনার চেষ্টা করছি কিন্তু আমি আজ একা এতোটাই কনফিউজড যে, কোনটা রেখে কোনটা ফেলবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। কখনো এফেয়ার্সকে মনে হয় ভালোবাসা। কিন্তু এফেয়ার্সের একটা বীভৎস রুপও থাকে যা শেষ হয় শারীরিক মিলনে। ভালোবাসায় কি তাইই হয়? আমি জীবনকে একই রেলের উপর রাখতে চাই না যা জীবন আর মরনের উপর একই সাথে চলে। আমি মরনকে খুব ভয় পাই। আমি এমন কারো হাত ধরতে চাই মা, যার হাতের প্রতিটি ইশারা ভরষার। কারো হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া মানেই কিন্তু উন্নতির দিকে যাওয়া সেটা কিন্তু নয়। আগে আমি জানতে চাই, হাত ধরা মানুষটি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। সাফল্যের সপ্ন, জীবনের আশা আর পরিশ্রমের পথ যদি যাত্রার পথ একদিকে না হয়, তাহলে আর যাই হোক, সাফল্যকে হাতে পাওয়া যায় না। আমি আমার জীবনের সাফল্য চাই। যেখানে ভালোবাসায় পরিপূর্ন একটা বাগানের মতো আলোকিত হয়ে চারিদিকে সুবাসিত করবে।
আমি সেই ভালোবাসাটা চাই, যেখানে আই লাভ ইউ বললেই শুধু ভালোবাসা হয় না। জেনেছি আমি, ভালোবাসার বহির্প্রকাশ তার কাজে আর বাস্তবে। অনেকে হয়তো আই লাভ ইউ বললেই ভাবে ভালোবাসা হয়ে গেলো, কিন্তু সেটা কি অন্তরের না শরীরে তা যাচাই করার কোনো দরকার মনে করে না। ভালোবাসা হচ্ছে সেটা যা কাছে থাকলে এর প্রয়োজন অনুভব করা যায় না, মনে হয় আছেই তো। কিন্তু যখনই চোখের আড়ালে যায়, মন শুধু আনচান করে আর প্রতীক্ষায় থাকে, কখন কাছে আসবে। কেনো আমি বুঝতে পারছি না, এটাই কি সেটা মা?
মা, অনেক সময় ঠিকানা ভুল হয় কিন্তু ওই ঠিকানায় যারা থাকে তারা হয়তো ঠিক লোক। এই অতিথি কি আমার সেই সঠিক লোক মা?
যদি তুমি মনে করো
যদি তুমি কখনো মনে করো যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি নাই, তুমি ঠিক। আবার যদি কখনো মনে করো যে, আমি তোমাকে খুব ভালোবেসেছি, আমি বলবো আবার যে, তুমি এবারো ঠিক। যদি তুমি মনে করো যে, আমি স্বার্থপরের মতো তোমার কাছ থেকে এমন কিছু চেয়েছি যা তোমার কাছে অত্যান্ত মূল্যবান, কিংবা সেটা দেওয়া তোমার জন্য অনেক ভয়ংকর, আমি বলবো যে, তুমি ঠিক। যদি তুমি মনে করো, আমি তোমাকে ইগনোর করেছি, হ্যা আবারো তুমি ঠিক। তুমি যদি কখনো কনফিউজড হয়ে থাকো যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি কি বাসি না, সেটা তুমি বুঝতেই পারছো না, হ্যা, এবারো তুমি ঠিক।
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সব গুলিই ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে আসল সত্য কি? বা আসলে ঠিক কোনটা? আমি বলবো যে, উপরের সবগুলি ই ঠিক। কারন, সত্য ভালোবাসা এমনই যে, কখনো মনে হয় খুব ভালোবাসি,কখনো মনে হয় পুরু সম্পর্ক টাই ঘৃণার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। আবার কখনো কখনো খুব সন্দেহের মধ্যেই দিন কেটে যেতে থাকে।
ঈশ্বর প্রত্যেক কেই স্পেশাল করেই বানিয়েছেন। কারো কারো মধ্যে অথবা প্রতি জনের মধ্যেই ঈশ্বর আলাদা আলাদা গুনাবলী দিয়েই পাঠিয়েছেন। এই ঈশ্বর এমন এক শক্তি যাকেয়াপ্নি, আমি সবাই সব কিছুতেই দায়ী করতেপারি। আবার তার কাছেইখুব গোপনে কাদতেও পারি। আর আমি এই জন্যই ঈসশরকে খুব ভালোবাসি যে, সেয়ামাকে তাকে সব কিছুর জন্য দায়ী করলেও সে কিছুই বলে না। আমি তাকে ঘ্রিনা করলেও সে আমাকে শেষ করে দেয় না। আমি যেমন্তার সাথে যুদ্ধ করতেপারি, তেমনি আমি তার কাছে পুরুপুরি সারেন্ডার ও করতে পারি।
আমাদের জীবনে সবচেয়ে যে জিনিষটা ভালো বা খারাপ হয়ে আসতে পারে তা হচ্ছে, ঈশ্বরের করুনা। আমি ব্যাপারটা যদি এইভাবে বলি যে, তিনি জানেন আমাদের জন্য সবচেয়ে কোনটি সবচেয়ে মঙ্গল। ফলে আজকে কোন কাজটি আমার জন্য দৃশ্যমান খারাপ মনে হলেও হতে পারে কিন্তু বলা যায় না যে, হয়ত এই দৃশ্যমান খারাপটাই হয়ত ভবিষ্যতের কোন এক ভালোর জন্য। অথবা আজকের দিনের কোনো এক দৃশ্যমান মঙ্গল হতে পারে আগামিকালের কোনো এক ভয়ংকর বিপদের কারন। ফলে ঈশ্বরের করুনাটাই সবচেয়ে বড়। হতে পারে আজকে আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি, এটাই ভালো আমাদের জন্য। আমি তোমাকে আর তুমি আমাকে মুক্ত মনে মুক্তি দিয়ে রাখো, দেখো ঈশ্বর কোথায় আমাদের নিয়ে যায়। যদি মন ফিরে আসে, যদি প্রান কাদে, তাহলে আবারো আমরা এই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তই থাকি না কেনো, আবারো আমরা এক সাথে হবো। হয়ত তখন আর এইভুল বুঝাবুঝি গুলি হবেনা।
বদি ভাই-এখন তিনি ছবি
১৯৬৮ থেকে ২০১৮, মোট ৫০ বছর।
এই পঞ্চাশ বছরের আমাদের পারিবারিক ইতিহাসের মধ্যে যে ব্যক্তিটি আমাদের পরিবারের কেউ না হয়েও পরিবারে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা পালন করতে এক্যটু ও দ্নিবিধা করেন নাই, তিনি হচ্ছেন বদ্রুদ্দিন তালুকদার ওরফে বদি ভাই। আমার বয়স তখন মাত্র ১০ কি বারো যখন আমি প্রকৃত পক্ষে এই বদি ভাইকে জ্ঞ্যানের মাধ্যমে চিনি। কিন্তু তার আগে থেকেই এই বদি ভাই আমাদের পরিবারের সাথে যুক্ত ছিলেন।
আমার বাবা কবে কিভাবে কি কারনে মারা গেলেন তা আমার কোনো ধারনা নাই। আমার বয়স তখনহয়ত ২ কি আড়াই হয়ত হবে। আমার বাবা ছিলেন অনেক ধনি মানুস, মাদবর মানুস। সমাজে তার গ্রহনযোগ্যতা ছিল অনেক অনেক বেশি। কিন্তু তার শত্রুও ছিল অনেক। বিশেষ করে আমাদের পরিবারের ভিতরেই অনেক শত্রু ছিল। আর তারা হচ্যাছেন আমার সতালু ভাই বোনেরা। বিশেষ করে তাজির আলি নামে যে ভাইটি ছিলেন, সে ছিলো চারিত্রিকভাবে একজন খারাপ মানুষ। যাই হোক। বাবা মারা যাবার পর আমাদের যাবতিয় জমিজমার আধিপত্যতা এক সপ্তাহের মধ্যেই হাতছাড়া হয়ে যায়। ফলে ক্যাশ টাকা না থাকায় আমাদের পরিবার অনেক সমস্যার মধ্যে পরে। আমার বড় ভাই সবেমাত্র ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ইউনিভারসিটিতে ভরতি হয়েছেন। ঢাকায় থাকার কোনো জায়গা নাই, মাথার উপর কোনো অভিভাবক নাই এবং তার মধ্যে পাচ বোন এক ভাই এর বোঝা তার উপর। কিভাবে সংসার চালাবেন, কোথা থেকে টাকা আসবে কিংবা নিজেই কিভাবে চলবেন এই চিন্তাই আমার ভাইকে অতিস্ট করে তুল্লো। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর ভাবছেন কি করা যায়, কিভাবে করা যায়।
এই সময় কোনো এক কাকতালিয় ভাবে দেখা হলো এই বদি ভাইয়ের সাথে। তার জীবনটাও এই একই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কেটেছে অথবা কাটছে। ওনাকে আর পরিস্থিতিটা ব্যাখ্যা করে বেশি বুঝাতে হয় নাই। বদি ভাই চাকুরি করেন ওয়াব্দা অফিসে মাত্র সেক্সন অফিসার হিসাবে। অল্প আয়, বিয়ে করেন নাই। তিনিও একইভাবে তার ভাই বোন মাকে সাপোর্ট করছেন। থাকেন তিনি ১২৪ নং আগাসাদেক রোড। ছোট্ট একটা রুম, তাতে ইতিমধ্যে তিনজন গাদাগদি করে কোনো রকমে থাকেন আর এক বুয়া প্রতিদিন দুপুর আর রাতের জন্য যত সামান্য বেতনে তাদের ভাত তরকারি পাক করে দেন। বদি ভাই হাবিব ভাইকে ওই ১২৪ নং আগাসাদেক রোডে নিয়ে এলেন। সবাই বদি ভাইকে ভাই বলেন না, সম্মানের সহিত তাকে সবাই স্যার বলেন।
যারা এই রুমে থাকেন, তারাসবাই গ্রাজুয়েট এবং জীবন যুদ্ধে লিপ্ত। একে অপরের জন্য যত টুকু দরকার সাপোর্ট করেন। সবার রোজগার যেনো কম্বাইন্ড রোজগার। একসাথে থাকে সব টাকা, যার যখন যত টুকু দরকার সে ততো টুকুই নেন। কিন্তু হিসাব থাকে। আমার মনে আছে ওই একটা ছোট রুম থেকে বদি ভাইয়ের তত্তাবধানে প্রায় ১০/১২ জন গ্রাজুয়েট বের হয়েছেন যারা পরবর্তী সময়ে দেশের শিরশ স্থানে বসেছিলেন। কেউ ইউনিভারসিটির অধ্যাপক, ডিন, কেউ আরো বড়। দেশে এবং বিদেশে।
এভাবেই বদি ভাই হয়ে উঠেন এক কিংবদন্তি স্যার। সব প্রোটেনশিয়াল মেধাবি হেল্পলেস মানুসগুলিকে বুদ্ধি, যতসামান্য চাকুরির পয়সা দিয়েই এইসব মানুসগুলিকে সাহাজ্য করেছেন। বদি ভাই তার চাকুরি জিবনে ডেপুটি ডাইরেক্টর পর্যন্ত উঠেছিলেন। ওয়াব্দায় চাকুরি করলে দুই নম্বরি করলে ছোট কেরানিও কোটিপতি হয়ে যায় কিন্তু বদি ভাই তার জিবনে দুই নম্বরিতো করেনই নাই, তার দ্বারা দুই নম্বরি হবে এটাও তিনি করতে দেন নাই। ফলে একটা সময় এইসব চোর বাটপারদের আমলে চাকুরির পদবির সামনে এগুতে পারেন নাই। অবসর নিয়ে বাসাতেই ছিলেন।
গ্রাজুয়েট মানুষগুলি তাদের যোগ্যতা অনুসারে ধীরে ধীরে সবাই বেশ ভালো ভালো জায়গায় সেটেল হয়ে গেছেন। সবার সাথেই বদি ভাইয়ের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু কাজের চাপেই হোক আর ব্যস্ততার কারনেই হোক ধীরে ধীরে এইসব যোগাযোগও কমে আসে। কিন্তু আমার ভাইয়ের সাথে অন্য একটি কারনে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগটা ছিলই। আর সেটা হচ্ছে আমার মা। আমার ভাই যখন উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশ গেলেন, তখন আমার মাকে দেখভাল করার কোনো লোকই ছিলো না। আর এর ই মধ্যে আমারো ক্যাডেট কলেজের সুযোগ হ ওয়ায় আমার পক্ষেও মাকে কোন অবস্থায় ই কিছুই করার সুযোগ ছিলো না। আমার মাকে বদি ভাই খুব ই ভালো বাস্তেন। নিজের মায়ের মতো করেই দেখতেন। আমার মায়ের জন্য কোনো কাজ করতে বদি ভাইয়ের কখনো ক্লান্ত হন নাই।
আমি ধীরে ধীরে ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করে ফেললাম, আর্মিতে গেলাম, আমি মাক্যের দায়িত্ত নিলাম। এই সময় বদি ভাই একটু অবসর পেলেন। ফলে এই দীর্ঘ প্রায় দেড় যোগ বদি ভাইয়ের সাথে আমাদের প্রয়োজনেই আমরা তার কাছ থেকে আলাদা হতে পারি নাই। এমন নয় যে বদি ভাইয়ের এখানে কোন স্বার্থ কাজ করেছে। হ্যা, একটা স্বার্থ কাজ করেছে অবশ্য ই। আর সেটা হচ্ছে, বদি ভাই ও তার ভাইদের থেকে অনেক আলাদা ছিলেন। তার পাশে কেউ আসলে ছিলো না। ঊনি ভাবতেন, আমি বা হাবিব ভাই বা আমরা ই তার আপন জন এবং আপদে বিপদে আমরাই তার পাশে আছি। কথাটা ঠিক। কিন্তু পরবর্তীতে যত টুকু আমাদের পাশে থাকার দরকার ছিলো, আমরা আসলে ততো টুকু পাশে থাকতে পারি নাই। এর কারনও হচ্ছে আমাদের বুঝাপড়ার তফাত। হয়ত এটাই এই স্বার্থপর পৃথিবীর নিষ্ঠুর নিয়মের একটি।
বদি ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম মনোমালিন্য টা হয় আমার বিয়ে নিয়ে। এটা মানতে মানতে আমাদের মধ্যে একটা বিস্তর গ্যাপের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো। কখনো নরমাল, কখনো আধা নরমাল, আবার কখনো মনে হয়েছে সব ঠিকই আছে। আরেকটা কারন ছিলো যে, হাবীব ভাইয়ের প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল মানসিকতা। একবার এটা বলেন তো আরেকবার তার সিদ্ধান্ত বদলে অন্য আরেকটি বলা বা আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে যাওয়া। এইরুপ একটা পরিস্থিতিতে বদি ভাইও আর হাবীব ভাইয়ের ইপর নির্ভর করতে পারছিলেন না।
একটা সময় চলে এসেছিল যে, আমরা যে যার যার মতো করেই চলছিলাম। ব্যাপারটা এমন হয়ে গিয়েছিলো যে, সাভাবিক অন্য দশ জনের সাথে আমরা যেভাবে চলি, ঠিক সেভাবেই চলছিলাম। সম্পর্ক খারাপ নয় কিন্তু আমরা খুব ঘনিস্ট কেউ আমরা। হাবীব ভাই বদি ভাইকে সব সময় ই শ্রদ্ধা করতেন এবং শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধাই করতেন। কিন্তু বদি ভাইয়ের জন্য হাবীব ভাইয়ের আরো অনেক কিছুই করার ছিলো। সেটা হয়ত হয় নাই।
আজ বদি ভাইয়ের মৃত্যুতে একটা বড় অধ্যায় শেষ হলো। আমি তাকে মিস করবো সব সময়। যত কষ্টেই তিনি থাকতেন না কেনো, আমি যখন বদি ভাইয়ের কাছে যেতাম, আমি দেখতাম, তার মধ্যে একটা জীবনী শক্তি ফিরে আসতো। অনেক কথা বলতেন। অতীতের কথা, তার সাফল্যের কথা, তার দুঃখের কথা। আমিও শুনতাম। আজ আর তিনি নেই। তাকে আল্লাহ বেহেস্ত নসীব করুন।
হোড়লে বাড়ি
অষ্টাদশ পার হইলে আমরা বলি আশি বা আশি পার হইয়া যাইতেছে এমন কিছু। কিন্তু যিনি নব্বই পার হইয়া শতায়ুর দিকে প্রতি মুহূর্তে একএক করিয়া প্রহর কাটাইয়া তাহার বয়স বিধাতা ক্রমাগত বাড়াইয়া চলিয়াছেন, তাহাকে আমরা আর যাহাই বলিয়া সম্বোধন করি না কেন, তাহার সঙ্গে ভালবাসিয়া মনের মাধুরী লাগাইয়া ছুটির দিন পরিত্যাগ করিয়া ঘটা করিয়া কোন এক শীতের সকাল কিংবা চৈত্রের কোন এক নির্জন দুপুর বরাদ্ধ করিয়া মনে আলপনা মাখিয়া কেহ তাহার সহিত গল্প করিতে ছুটিয়া আসিবেন তাহা হয়ত খুব স্বাভাবিক নয়। অথচ কোন একটা সময় ছিল, যখন এই শতায়ুর কাছাকাছি বৃদ্ধারও একটা যৌবন ছিল, তাহাকে দেখিবার জন্য কোন না কোন এক পুরুষের হৃদয়ে বসন্তের হাওয়া লাগিয়াছিল, তাহাকে নিয়া হয়ত অনেকেই কতই না অপ্রকাশিত প্রেমের কবিতা লিখিয়া যাইত, সহপাঠীদের মধ্যে হয়ত কেউ কেউ আবার তাহাকে অতি আপনজন মনে করিয়া কিংবা মনে মনে শুধুই আমার নিজের সম্পত্তি মনে করিয়া গুনগুন করিয়া গানের কলি গাহিত কে বা জানে। আমি আজ এমনি একজন অতি বৃদ্ধার সামনে হটাত করিয়া বসিয়া আছি।
তাহার দেখিয়া বুঝা যায় অতি অল্পবয়সে তাহার গায়ের রঙ কাচা হলুদের মত ছিল, তাহার মুখের গড়ন, চোখের পাপড়ি, নাকের আকার দেখিয়া বুঝা যায় তাহার শৈশবকালে তাহার মাতাপিতা তাহাকে লোক চক্ষুর কুদৃষ্টির আড়াল হইতে বাচাইয়া রাখার জন্য কতই না প্রানান্ত চেষ্টা করিতেন হয়ত বা। এই শেষসময় আসিয়া প্রায় একশত বছরের আগের কোন এক রূপসীর মত দেখিতে ক্ষনসুন্দরের প্রতিক যুবার সহিত আমার দৈবাৎ দেখা হইয়া গেল। কিভাবে দেখা হইল সেটা আমি কিঞ্চিত খোলাসা করিয়া বলিতেও চাহি না। তবে ইহা নিতান্তই ঠিক যে, আমিও তাহাকে দেখিবার জন্য আমার মহামুল্যবান সময় নষ্ট করিয়া ছুটির দিন পরিত্যাগ করিয়া গাড়ি হাকাইয়া এতদূর অবধি আসি নাই। কোন এক সন্ধ্যা বেলা বউ বাচ্চা নিয়া অলস কিছু সময় কাটাইবার জন্য আমি আমার বন্ধু আলালের সঙ্গে তাহাদের গ্রামের একটি গৃহস্থালি বাড়ীতে বেড়াইতে আসিয়াছিলাম। আর ওইখানেই আমার সঙ্গে এই প্রউরার দেখা।
আমি যাহার সঙ্গে ঐ গ্রামের বাড়ীতে গিয়াছিলাম, ঐ আলাল, তিনি তাহারই মা। আলালও বয়স্ক মানুষদের মধ্যে একজন। তাহারও মুখের দাঁড়ি পাকিতে শুরু করিয়াছে, তিনিও কম হলে ষাট বছর ধরিয়া এই পৃথিবীর আলো বাতাস গ্রহন করিতেছেন। এখন তাহাকেও আর যুবক বলিয়া কেহই গননা করিবে না।
তখন সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। গ্রামের চারিদিকে ঘনকালো অন্ধকার। রাস্তায় আশেপাশে কয়েকটা বাতি জ্বলিতেছে বটে কিন্তু ঐ ক্ষীণকায় বাতির আলোতে এত সুবিশাল বৃক্ষরাজীর অন্ধকার আলোকিত করিতে পারে এমন সাধ্য তাহাদের নাই, ফলে বড় বড় কৃষ্ণকলি গাছগুলো আশেপাশের লতাগুল্মের অযাচিত ভালোবাসার জড়াজড়িতে আলো অন্ধকারের ন্যায় এক ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি করিয়া রাখিয়াছে। এই অঞ্চলে খুব একটা জোনাকি পোকা দেখা যায় না, তাই জোনাকির ঝি ঝি শব্দটা কানে আসে না বলিলেই চলে, তবে আশেপাশের ছেলেমেয়েদের কিছু কিছু কলকাকলি শোনা যায় না এমন নয়।
এই আলো অন্ধকার ভুতুরে আবৃত গায়ের মেঠো পথ পার হইয়া আমরা আলালের বাড়ীতে পৌঁছাইলাম। বাড়িটা বেশ সুন্দর। প্রশস্ত উঠান, সেই মান্দাতা আমলের ধাঁচে করা সিঁড়ি সম্বলিত একটা স্কুল ঘরের মত পাকা বিল্ডিং। বিল্ডিং ঘরখানা পার হইয়া আরও একখান ছোট উঠান, সেই উঠান পার হইলেই চোখে পড়ে ঘোর কালো অন্ধকার। এই ঘোর অন্ধকার উঠানের চারপাশে কয়েকটি গাছ ঠায় অন্ধকারকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া আকাশের তারাগুলিকে নিশানা করিয়া দাঁড়াইয়া আছে। হটাত করিয়া আলো হইতে আসিয়া যেন কালো অন্ধকার উঠানটিকে আরও কচকচে কালো রঙের মত সীমাহীন অন্ধকার বলিয়া মনে হইল, আর আমি ঠায় চোখে কিছু না দেখিতে পাইয়া দাঁড়াইয়া গেলাম। সামনে কিছুই দেখিতে পাইতেছিলাম না কিন্তু আমার বন্ধুটি অতি অনায়াশেই এই কালো অন্ধকার ভেদ করিয়া অতি সহজেই আরেকটি আধা পাকা বিল্ডিং এর দরজার সামনে আসিয়া হাজির হইয়া গেলেন। আমি কোন রকমে হামাগুড়ি দিবার মত ভঙ্গিতে পায়ে পায়ে টিপিয়া টিপিয়া এক কদম এক কদম করিয়া আগাইয়া আসিয়া তাহার কাছে পৌঁছলাম। বাড়ীর ভিতরে কেউ আছেন বলিয়া মনে হইল না। বারান্দায় একটি ছোট পাওয়ারের বাল্ব জ্বলিতেছে। গ্রিল দেওয়া একটি ঘর। ঘরটির কাছে আসিয়া আমার ঐ বন্ধু আলাল 'মা' বলিয়া দুইবার ডাকিলেন। চারিদিকে কোন সারাশব্দ নাই, বেশ গরম পড়িয়াছে, কোন বাতাসও বহিতেছে না। আমার বন্ধুটি আবারো শব্দ করিয়া 'মা' বলিয়া ডাকিলেন।
রাত্রির নিস্তব্দতা ভাঙ্গিয়া, ক্যাচ করিয়া লোহার একখান দরজার খিল খুলিলে যেই ধরনের শব্দ হয় তাহার মত শব্দ করিয়া কোন একজন তাহার দরজা খুলিলেন। দরজা খুলিতেই দেখিতে পাইলাম, অতি বয়স্ক একজন মহিলা তাহার শরিরের কাপড় গুছাইতে গুছাইতে শরিরের ভারসাম্য রক্ষা করার নিমিত্তে কাপিতে কাপিতে দরজার হেসবলটি খটাশ করিয়া খুলিয়া ফেলিলেন। খুলিয়াই বড় আদরের সহিত অস্ফুট স্বরে বলিলেন, ও তুই বাবা? এত রাতে কথা হইতে আইলি?
বুকটা ধক করিয়া উঠিল যেন। আমার মাও থক এমন করিয়াই আমাকে সম্বোধন করিত। অনেক দিন হইয়াছে আমার মা প্রয়াত হইয়াছেন। মাকে মাঝে মাঝেই মনে পড়ে। কিন্তু এই বয়সে আসিয়াও আমার মাকে আমি খুব কাছে থেকে মিস করি এই ভাবনা অনেকেই মানিয়া লইতে পারেন না। আমি মানিয়া লইয়াছি। কি মিষ্টি সেই সম্বোধন। মাকে নিয়া পৃথিবীতে এত বেশি গল্প রচিত হইয়াছে, এত গান, এত বায়স্কোপ, এত উপন্যাস রচিত হইয়াছে যে, তারপরেও মাকে নিয়া আরও হাজার হাজার কবিতা, হাজার হাজার উপন্যাশ রচনা করিবার অবকাশ রহিয়াছে। মায়ের কথার সুর আলাদা, তার চাহনি আলাদা, তাহার হাতের স্পর্শ আলাদা, তাহার শাসন আলাদা, তাহার আদরের ভাষা আলাদা। তাহার অনুপ্রেরনার শক্তি আলাদা, তাহার ভালোবাসার মহব্বত আলাদা। কোন কিছুই তাহার সহিত পারিয়া উঠিবে বলিয়া আমার মনে হয় না আর হইবেও না। আমার সামনে যিনি দাঁড়াইয়া আছেন, তিনি আলালের মা। আমারও মা।
আমাকে দেখিতে পাইয়াছে বলিয়া মনে হইল না। ঘরের বাতির আলো হইতে বাহির হইলে স্বাভাবিক কারনেই বাহিরের অন্ধকার আরও বেশি ঘুটঘুটে অন্ধকার হইয়া চোখে এমন ধাধার সৃষ্টি করে যে, বাহিরে কি আছে বা কাহারা আছে তাহা হটাত করিয়া চোখে না পড়ারই কথা। উম্মুক্ত দরজা ধরিয়া আমি আর আমার বন্ধু আলাল ঘরে ঢোকিলাম। বৃদ্ধা অনেক ধীরে ধীরে তাহার বিছানায় গিয়া উঠিয়া বসিলেন। আমরা তাহার পাশে অদুরে রক্ষিত দুইটা চেয়ার খরখর শব্দ করিয়া টানিয়া বসিলাম।
তাহার ঘরের মধ্যে অনেক আসবাবপত্র নাই তবে কমও নাই। একটা ড্রেসিং টেবিলের মত একটা টেবিল। তার কিয়ত অংশ জুরিয়া একটি ছোট আয়না। দেখিয়াই বুঝা যায় অনেক দিন এই আয়নায় কেউ দাঁড়াইয়া তাহার মুখখানা দেখিয়াছে কিনা সন্দেহ আছে। আয়নার ঠিক উপরে একখানা ছোট গামছা যার সারা শরীরব্যাপী অনেক ধুলা জমাইয়া ফ্যানের বাতাসে মনের আনন্দে একটু একটু ঘুরপাক খাইতেছে। বৃদ্ধার খাটখানা বেশ প্রশস্থ, তোষকের জাজিম, তাহার উপরে একখানা চাদর। মনে হইতেছে চাদরখানা বেশ কয়েকবার ব্যবহার করিবার কারনে কিছুটা দুমড়ে মোচরে আছে। খাটের পাশেই পরপর দুইখানা কাঠের আলমারি সটান হইয়া দাঁড়াইয়া আছে। উপরে একটি ফ্যান চক্রাকারে ঘুরিতেছে। খাটের একদম লাগোয়া ছোট একটি টেবিল রহিয়াছে। তাহার উপরে এবং নিচে কয়েকটি অতি পুরাতন টিনের অথবা ম্যালামাইনের বাসন, বাসনগুলির উপর কয়েকটি গ্লাস উপুড় করিয়া রাখা আছে। সম্ভবত এইসব বাসন আর গ্লাস বৃদ্ধার খাবারের জন্য ব্যবহৃত হয়। ঘরের আলমারি, খাট, টেবিল চেয়ার সবগুলিতেই ভ্রাম্যমাণ ধুলাবালিতে এক প্রকার দাগ পরিয়া আছে। কেহ তাহা পরিস্কার করিয়া দিবার নাই। আর পরিস্কার করিলেও দায়সারা ভাবে যে পরিস্কার করিয়াছে তাহা স্পষ্ট বুঝা যাইতেছে। দেয়ালের একপাশে একটি মশারি তাহার দুই কোনা লোহার দুইটি প্যারেকের মধ্যে গাঁথিত হইয়া নৌকার পালের মত ফ্যানের বাতাসে ক্রমাগত একবার এদিক একবার ওদিক হেলিতেছে।
বৃদ্ধার সঙ্গে আমার গল্প করিতে খুব ইচ্ছা হইতে লাগিল। কিন্তু তাহার কোমরে ব্যথা বলিয়া বারংবার উল্লেখ করিতেছেন বলিয়া আমারও এক প্রকার সংকোচ বোধ হইতে লাগিল। সংকোচবোধ হইতেছিল এই কারনে যে, আমরা কি এই অসময়ে আসিয়া বৃদ্ধার বিশ্রাম নষ্ট করিয়া দিলাম? আমি তারপরেও তাহাকে অতি আপনজনের মত প্রশ্ন করিলাম, কিছু খাইয়াছেন কি? আমরা আসিয়া কি আপনাকে বিরক্ত করিলাম কিনা ইত্যাদি।
তিনি অতি বিচক্ষন মহিলা বলিয়া আমার মনে হইল। তিনি বলিলেন, আমি এখনো বাচিয়া আছি বলিয়াই তো তোমরা আসিলা। কেউ আসিলে আমার খারাপ লাগে না। বরং কিছুটা সময় কিছু মানুষের সঙ্গে কাটিয়া যায় বলিয়া আমার সস্থি লাগে। এখন তো আর কাহারো সময় নাই আমাদের মত মানুষের সঙ্গে সময় কাটাইবার। আজকাল যুগের ছেলেমেয়েরা, তাহাদের পিতা মাতারা স্নতান সন্ততিরা কেহই আর আগের দিনের পিতামাতার মত নয়। অতি অল্পতেই তাহারা ক্ষিপ্ত হইয়া উঠে, বিরক্ত হইয়া উঠে, কোন কিছুতেই তাহারা সন্তুষ্ট নহেন। আদব কায়দার ধার ধারে না। সত্য মিথ্যার ধার ধারে না। লাভের হিসাবটা যেখানে বেশি, তাহাকেই তাহারা নীতি বলিয়া মানিয়া লইয়া আপাতত লাভের আশায় যাহা কিছু করিতে হয় তাহাই তাহারা করিতে ইতস্তত বোধ করে না।
-আমরা যখন ছোট ছিলাম, আমরা কতই না আমাদের দাদা দাদিদের সঙ্গে গল্প করিতাম। ভুতের গল্প, সেই রাজরানির গল্প, পড়া ফাকি দিয়া কখন দাদুর কোলে মাথা রাখিয়া নাম না জানা পরীদের গল্প শুনিতাম। এখনকার ছেলেমেয়েরা ভুত আছে বলিয়া বিশ্বাস করে না কিন্তু ভুতের গল্প শুন্তেও ভয় পায়। আমাদের সময় আমরা পাশের বাড়ীর বরই গাছের আধাপাকা বরই, পেয়ারা, কচি কচি আম চুরি করিয়া আনিয়া দাদুর পানের বাটিতে লুকাইয়া রাখিতাম, আর এখনকার নাতি নাতকুরেরা দাদা দাদির পানের বাটি হইতে সুপারি পর্যন্ত না বলিয়া লইয়া যায়। ইহাকে চুরি বলে কিনা আমি বলিতে পারিব না কিন্তু যখন দেখি আমার আচলে রাখা কয়েকটা ছোট বড় নোট যখন কোথায় হাওয়া হইয়া অদৃশ্য হইয়া যায় তাহা যখন আর বুঝিতে পারি না, তখন মনে হয় সময়টা পাল্টাইয়া গিয়াছে, অথচ কাহাকেও কিছু বলিবার আমার যোগার নাই।
বুড়ি আরও গল্প করিতে লাগিলেন, যেন মনে হইল তিনি আস্তে আস্তে তাহার শৈশবকালে ফিরিয়া যাইতেছেন।
-আমি যেদিন এই বাড়ীতে বউ হইয়া আসি, তখন আমার কতইবা বয়স। হয়ত আট কিংবা নয়। স্বামী কি জিনিস, শাশুড়ি কি জিনিস, কিংবা ভাসুর, কিংবা শ্বশুর, কাহাকে কেমন করিয়া সামলাইতে হইবে আমরা কিছুই জানিতাম না। বাবার বাড়ীতে যে ছোট মেয়েটি সকাল অবধি ঘুমাইত, সেই ছোট বালিকাটি হটাত করিয়া শ্বশুর বাড়ীতে আসিয়া এক রাতের মধ্যে মহিলা হইয়া জন্মিল। যেন তিনি আর ছোট বালিকাটি নন। তাহার অনেক দায়িত্ত। স্বামীর দায়িত্ত, পরিবারের ঘর ঘুছানো , উঠোন পরিস্কার করা, গোয়াল ঘরে গরুর খাবারের জন্য গাদা গাদা পানি দেওয়া, শাশুড়ির জন্য শীতের দিনে ওজুর গরম পানি করে বদনা দিয়ে রাখা, কত কি। ঐ ছোট বয়সে আমার শরিরের থেকে দায়িত্তের পরিমান অনেক ঢের বেশিই ছিল, তারপরেও বাবাকে খুশি রাখিবার জন্য, মাকে আনন্দে রাখিবার জন্য আমার এই ছোট হাতগুলি দিয়া যতটুকুন পারিতাম সংসারের গুরু লঘু সব দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকিতাম। পাছে আমার শশুর কোন কাজ ঠিক মত হয় নাই, কিংবা কোন কাজ করিতে ভুল হইয়া গেছে এই লজ্জায় পড়ি, সেই ভয়ে নিজে দুপুরের খাওয়া, দিনের নাওয়া কোনকিছুই সময় মত করিতে পারিতাম না। দিনশেষে যখন একটু বিশ্রাম করিবার সময় হইত, আমার অতিপ্রিয় এই খাটের পাশে আসিয়া বসিতাম, তখন তোমাদের জামাই বাবুর মন জয় করিবার জন্য আমাকে আবার নতুন বউয়ের মত মুখে হাসি ফুটাইয়া, চোখে প্রেমের চাহনি দিয়া চাঁদনী রাতের আকাশের মত আমাকে রাঙ্গা বউ সাজিতে হইত। এভাবেই আমার দিনকাল কাটিয়া একদিন দেখিলাম আমি মা হইয়াছি। একে একে আলাল, জালাল, শাহিদা, রোকেয়া, সখিনা, সবাই আমার ঘর আলোকিত করিয়া আমার সংসার ভরিয়া তুলিল।
সংসার বড় কঠিন এক কর্মক্ষেত্র। স্বামীর মন যোগাইয়া, শাশুড়ির সব কাজ শেষ করিয়া, শ্বশুরের ঘর ঘুছাইয়া, দিনের কাজ সব শেষ করিয়া ছেলেপুলেদের সব হিসাব নিকাশ, আবদার মিটাইয়া যখন আমি প্রায় এক রকম অভ্যস্থ হইয়া দিনের কর্ম ব্যস্ততায় সময় কাটাইতেছি, তখন আমার বয়স গুনিয়া দেখিলাম, আমি নিজেও এখন শাশুড়ি হইবার সময় হইয়াছে। কিন্তু যাহার শশুর হইবার কথা তিনি সবাইকে তাক লাগাইয়া, গ্রামের সব প্রিয় বন্ধু বান্ধব্দের রাখিয়া আমাকে শ্রাবনের অজশ্র বারিধারার মত চোখের জ্বলে ভাসাইয়া তিনি এই পৃথিবীর সমস্ত বন্ধন শেষ করিয়া আমাদের হইতে অনেক দূরে চলিয়া গেলেন। কি তার অভিমান, কি তার কষ্ট, কি তার চাহিদা কিছুই আর অবশিষ্ট না রাখিয়া সংসারের সমস্ত দায়ভার আমার কাঁধে তুলিয়া দিয়া স্বার্থপরের মত আমাকে একা রাখিয়া বহুদুর চলিয়া গেলেন। আজ অনেকদিন পর মনে হইল, আমি শুধু এই বাড়ীর বউ হইয়াই আসি নাই, আজ মন