Skip to content

Major Mohammad Akhtar Hossain (Retd)

Managing Director, River Side Sweaters Limited

  • Home
  • About Us
  • My Diary Page
    • উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব
    • Current Affairs
    • Literatures
    • Pandu Lipi
    • Hand Written SGS Diary
    • 2nd Diary
    • অন্য দুনিয়া
  • Defense Journal and Others
    • Brexit-Part-1
    • Brexit-Part-2
    • Fundamentalism in Muslim World-Causes
    • Egypt Revolution-Its Effect on M East
    • Generation Gap
    • Hitler-From Unknown to a Dictator
    • Is Super Power Shifting? Who is Next?
    • Osama Bin Laden-Death and Aftermath
    • Political Instability & Eco Dev
    • A Community with Uncertain Tomorrow
    • PhD Thesis-Rise of Islamic…
    • Relationship Between IF and TG
  • Family
    • Akhtar Pics and VDOs
      • Major Akhtar (Single)
      • United States of Ameria (USA)
      • Peoples Republic of China
      • Haiti Tours
      • Republic of Georgia Tour
      • Turkey, Dominican, St. Pittsburg and Russia Tour
      • Kingdom of Saudi Arabia (KSA)
      • India Tour
      • Malaysia Tours
    • Home Tours
      • Chittagong and Nilgiri Tour
      • Khulna Div Tours
      • Sylhet Division Tours
      • Thanchi Tour
      • Coxes Bazar Tour
    • Mitul Pic and VDOs
      • Mitul Bhutan Tour
      • Mitul Chowdhury (Single)
      • Mitul NAEM Training
      • Mirpur Govt Bangla College
    • Ummika
      • Ummika Pic and VDOs
    • Konika
      • Pic and VDOs
    • Family At A Glance
      • Mother Album (Single)
      • Mother in Law (Single)
      • Sister-Laila Khatun
      • Habib Bhai at Village
      • Safura Khala Album (Single)
      • Loving People Left
      • Touch-13
      • Village House
  • Army Documents
    • Protected Dox
    • CORO
    • Army Course Reports and Certificates
    • Course Results
    • Pension
    • ACRs
    • UN Missions Info
  • Contact Us
  • Privacy Policy
  • Menu

Protected Dox

Protected Dox

Protected: Personal Weapon-Bareta Pistol

You are required to login to view this post or page.

Protected: Back up File of Loan Status 20 Apr 2022

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২০/০৩/২০২২-সেটাই এটা যেটা ভেবেছিলাম

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২২/০৩/২০২২-ভাবো, আরো ভাবো

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২২/০৩/২০২২-কি লাগবে?

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ২৬/০৩/২০২২- আরেকটা প্রশ্ন

You are required to login to view this post or page.

Protected: 21/03/2022-রাত ১টা

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ২৬/১১/২০২১-মুর্তজা ভাইয়ের নীতি ও আদর্শ (পর্ব-২)

You are required to login to view this post or page.

Protected: Back Up Diary and Google Drive 15 Sept 21

You are required to login to view this post or page.

Protected: ১/০৮/২০২১-Konika Student Files papers

You are required to login to view this post or page.

Protected: ৯/৭/২০২১-ইভা ব্রাউন হিটলার বনাম তুমি

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ৭/৭/২০২১-সরল রেখার হিসাব-পার্ট-২

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: 6 Juli 2021 My Diary Backup

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২১/০৫/২০২১-অফিশিয়াল সারেন্ডার

You are required to login to view this post or page.

Protected: Azizul Hasan Rana (Haque Garden)-কেনো বিয়েটা ভেঙ্গে দিলাম

You are required to login to view this post or page.

Protected: ০৩/০৪/২০২১-কি এটা?

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ০৯/০২/২০৪৫ “ও” আর “তুই”

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ০১/০২/২০২১-ওর সাথে কথা

You are required to login to view this post or page.

Protected: ০২/০১/২০২১-আরেকটু পরীক্ষা করা দরকার

You are required to login to view this post or page.

Protected: ৩০/০৯/২০২০- জয়ী নাকি পরাজয়ী হ্যাপি?

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২৯/৯/২০২০- আর ফিরে পাবে না সে জীবন

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২৪/৯/২০২০- রাজনীতি এবং হ্যাপির নিরুদ্দেশ

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ২১/০৯/২০২০-হ্যাপি কাহিনী

You are required to login to view this post or page.

Protected: ১৩/০৯/২০২০ অরুর বাসায় সারাদিন আমি

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ১০/০৯/২০২০-বুকের বাম পাশে ব্যথা

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ২৫/০৭/২০২০- একটি জিজ্ঞাসা

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ১৮/০৭/২০২০- অদ্ভদ  শিল্প কর্মের দক্ষতা

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২৯/০৬/২০২০-অভিসারিকা

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২৭/০৬/২০২০-সম্ভব অন্য কোথাও যাওয়া?

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২২/০৬/২০২০- আমার অরুলতা বাগান

You are required to login to view this post or page.

Protected: ০৫/০৬/২০২০-জ্যোৎস্না কানন

You are required to login to view this post or page.

Protected: 27/05/2020-তুমি পরিপুর্ন সুখী?

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২৪/০৪/২০২০-এটা কি পরকীয়া?

You are required to login to view this post or page.

Protected: ০৬/০৩/২০২০- সম্পর্কটার পরিনাম

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২৭/০২/২০২০-চেকমেটকেও চেকমেট করা

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ০৭/০১/২০২০-শারমিন

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ৪/১/২০২০-অরুর বাসর রাত

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ৪/১/২০২০-অরু শুয়ে আছে।

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ২৫/১২/২০১৯-ঘষেটি শারমীন

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ৯/১২/২০১৯-৪ তারিখ ছিলো

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ২২/০৭/২০১৭-অদ্ভুদ এক সম্পর্ক

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ০৫/০৭/২০১৭-তোমার আকাশ আমার আকাশ

You are required to login to view this post or page.

Protected: ১০/০৫/২০১৬- নিষিদ্ধ কথা

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২৭/০৪/২০১৬-সারাদিন বাগানে ছিলাম

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২০/০৪/২০১৬- দিন যাচ্ছে আর মনের আকুতি

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২৬/০৩/২০১৬-আজ স্বাধীনতা দিবস

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২২/০২/২০১৬- হ্যাপি

You are required to login to view this post or page.

Protected: ১০/০২/২০১৬- অস্বাভাবিক সম্পর্ক

You are required to login to view this post or page.

Protected: ১০/০২/২০১৬-নিষিদ্ধ ভালোবাসা

You are required to login to view this post or page.

Protected: ০৯/০২/২০১৬- নতুন ভালোবাসা

You are required to login to view this post or page.

Protected: ২১/০২/২০১৬-স্বপ্নের এক সিঁড়ি

You are required to login to view this post or page.

Protected: ১১/০৪/২০১২- সন্দেহ

You are required to login to view this post or page.

Protected: ০২/০৪/২০০০-কিসের নেশায় আমার কাছে

This content is password protected. To view it please enter your password below:

Protected: ০২/০২/২০০০- নিদ্রিত নিস্তব্ধ অপরাধ

You are required to login to view this post or page.

এই ডায়েরীর প্রতিটি কাহিনী এবং চরিত্র বাস্তব। কোনো কাহিনী বা চরিত্র কল্পনা নয়। শুধুমাত্র কিছু কিছু চরিত্রের নাম কাল্পনিকভাবে নামকরন করা হয়েছে কিন্তু কাহিনীর মূল বিষয়গুলি কোনো না কোনো সময় বাস্তবে ঘটেছে। মনগড়া কোনো কাহিনী এখানে স্থান পায় নাই। চরিত্রগুলি ছিলো এবং সমাজের মধ্যেই বিরাজমান। এদের প্রত্যেকের সাথে আমার কোথাও না কোথাও দেখা হয়েছে অথবা তাদের সাথে আমি জড়িত ছিলাম। যেসব লেখা Literature হিসাবে এসছে, সেসব কাহিনীগুলিও বাস্তব। হয়তো গোপনীয়তা কিংবা কোনো কিছুর বাধ্যবাধকতার কারনে আমি গল্পের আকারে একটা কাল্পনিক নামে তাদেরকে উপস্থাপন করেছি। অনেক লেখা সময়ের অভাবে খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে লিখা হয়েছে এবং বিস্তারীতভাবে তা ব্যাখ্যা করা হয় নাই। এটাকে হয়তো সিনোপসিস বা ড্রাফট তথ্য হিসাবে বলা যেতে পারে। সময় এবং সুযোগ হলে সেগুলি আরো বিস্তারীত আকারে লিপিবদ্ধ করা হবে।-লেখক

এখন আর সেই দিন নেই যে দূরে বসেও মা তার সন্তানের গলার স্বর শুনে বলে দিতে পারেন সে ক্ষুধার্ত। কোনো স্ত্রী যদি হেসেও দরজা খোলেন তার স্বামী স্ত্রীর এই হাসির অন্তরালেও ভিতরে লুকিয়ে থাকা কষ্ট বুঝে যান। এখন আর সেটা হয় না।
এখন ভাবনার জায়গা, আবেগের জায়গা সবকিছু বস্তুবাদ দখল করে নিয়েছে। আমরা একে অপরের সাথে একই জায়গায়, একই ছাদের তলে থাকি বটে কিন্তু বেচে থাকি একা। এই অবস্থা সবাইকে একে অপরের থেকে এত দূরে ঠেলে দেয় যে, সবাই একটা একাকীত্বের জগতে প্রবেশ করে যা হয়ত কেউ আন্দাজও করতে পারে না। ফলে শুরু হয় হতাশা আর মানসিক যন্ত্রনা। অনেকের ক্ষেত্রে এও মানসিক যন্ত্রনা এতোই অপরাধ প্রবন হয়ে উঠে যে, সে তখন বয়স, কাল, সমাজকে তোয়াক্কা করেই হয়ে উঠে অপরাধী। বাড়ে প্রবনতা।
বস্তবাদ শুধু মানুষকে হতাশার মধ্যে একাকিত্তেই ফেলে যায় না, এটা বড় শহরে বড় বড় মানুষের দুনিয়াকেও ছোট করে নিয়ে আসে যেখনে নিজের হাতের উপর, নিজের মাথার উপর কারো হাত থাকা সত্তেও তার হাত খালিই থেকে যায়, ভর
ষার স্থান শুন্যই রয়ে যায়। ফলে শুরু হয় হতাশা আর মনোকষ্টের প্রবনতা। চোখের সামনে আমরা যা দেখি, কিংবা আমাদেরকে যা দেখানো হয়, বাস্তবে হয়তো তার সাথে অনেকাংশেই মিল নাই। এই দেখা আর না দেখার মাঝে যে আবেগী আর বস্তুবাদী জীবন, সে দ্বৈত জীবনটাই আসলে আমরা।

সত্যি কথা বলতে কি, আমরা এখন সবাই কোনো না কোনোভাবে বস্তুবাদের নিয়ন্ত্রনে বাস করি। কিন্তু যারা এই বস্তুবাদ জীবনে নতুন করে প্রবেশ করছি, তাদের বেলায় বিষয়টি অনেক কঠিন। তারা না পারেন বস্তুবাদী হতে, না পারেন সেই আগের আবেগী জীবন থেকে বের হতে। এমনি এক ক্রান্তিলগ্নে কোথাও না কোথাও কেউ বিচারের সম্মুখীন হন, হোক সেটা নিজের কাছে, হোক সেটা সমাজের কাছে কিংবা আদালত। সেই বিচার হয়তো শেষ হয় কিন্তু সেটা ন্যায় পায় কিনা কিংবা সেই রায় কেউ নাড়াচাড়া করে কিনা সেটার আর বিচার হয় না।  আজকের গল্পটি তাদের সেই জবানবন্দীর অনুলিপি মাত্র।

আমি জানি, আজ তোমাদের সবার মন খারাপ। এতোদিন আমি ছিলাম তোমাদের মাঝে, আজ সবাইকে ছেড়ে চলে গেলাম। এটা এমন নয় যে, অফিসের কাজে বাসা থেকে চলে গেছি, আবার ফিরে আসবো। আজ আর ফিরে আসবো না। তবে এই দিনটার জন্য আমি অনেক অনেক আগে থেকেই ধীরে ধীরে তৈরী হয়েছিলাম। কারন আমি জানি, আমি একদিন না একদিন চলে যাবোই। তারপরেও আমার তো খারাপ লাগছেই যে, আমি তোমাদেরকে একা ছেড়ে চলে গেলাম। তোমাদেরকে ছেড়ে চলে এলেও আমার দোয়া তোমাদের উপর সব সময়ই থাকবে যেমন সব সময় ছিলো।

আমি জানি, আজকে আমার চলে যাওয়ার সময় অনেকেই এসছিলো, যেমন এসেছিলো একদিন যেদিন আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে কেউ এসেছিলো মান রক্ষার্থে, কেউ এসেছিলো আমাকে শেষ দেখার ছলে, কেউ এসেছিলো সামাজিকতা রক্ষা করতে, কেউ এসেছিলো আমাকে ভালোবেসে, কেউ এসেছিলো নিতান্তুই আসতে হবে তাই আসা। আবার এমনো কেউ আছে, যারা আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আসতে পারেনি হয়তো। হয়তোবা তাদেরও আসার অনেক দরকার ছিলো। যে কোনো বাধ্যবাদকতায় হয়তো তারা আসতে চেয়েও আসতে পারেনি, হয়তো তাদের অন্তরে শেষ দেখার এই অপূর্নতায় তোমাদের মতোই তাদের অনতের ব্যথা অনুভুত হচ্ছে। আমার মা যেদিন আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, সেদিন আমি কাদতে চেয়েও কাদতে পারিনি। কাদতে পারিনি এই ভয়ে যে, আমার কান্নায় না আবার আমার প্রিয় মানুষেরা আরো ভয় পেয়ে যায়, দিসেহারা হয়ে উঠে, তাই। হ্যা, কেদেছিলাম, রাতে যখন একা বাসায় শুতে গিয়েছিলাম। অঝোর ধারায় আমার দুচোখ ভরে গিয়েছিলো। মনে হয়েছিলো, মাথার উপর থেকে একটা ছাদ উড়ে গেলো। এখন এক ফোটা দুফোটা বৃষ্টিও যদি এই ধরায় পতিত হয়, সেটা আর কোনো বাধা না পেয়ে সরাসরি আমাদের মাথা ভিজিয়েই দিবে। যেটাই হোক, এই অনেক লোকজনের আজকের আগমনে আমি তোমাদের শুধু একটা কথাই বলতে চাই যে, আজকের দিনটাই হয়তো তুমি এদেরকে সমবেত অবস্থায় একসাথে সর্বশেষ দেখতে পেলে বটে, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- আগামীকাল থেকে ধীরে ধীরে এরা কোনো এক জগতে হারিয়ে যাবে। তুমি ইচ্ছে করলেও এদেরকে আর একসাথে দেখতে পাবে না। এটাই নিয়ম। এমন না যে, তারা আর ইচ্ছে করেই আসবে না। তারাও তাদের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাবে, আর সেই ব্যস্ততায় হয়তো তারাও আর সময় অসময়ে ইচ্ছে করলেই আসতে পারবে না।

সবাই এখন খুব ঠান্ডা মাথায় মনোযোগ সহকারে আমার না বলা কথাগুলি শোনো। আমি হয়তো এখন আর তোমাদের সাথে উচ্চস্বরে শব্দ করে কোনো কথা বলতে পারবো না। আর আমি তোমাদের সামনেও এখন নাই। আমার ঠিকানা এখন এমন একস্থানে যেখানে আমি তোমাদেরকে আমন্ত্রন জানাতেও পারবো না, চাইও না। আর তোমরাও সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নও।  কিন্তু আমি কি বলতে চেয়েছিলাম বা বলা উচিত, সেটাই তোমাদের জন্য লিখে গেলাম। হয়তো এটাই হবে আমার দেয়া সর্বশেষ তোমাদের জন্য উপদেশ বা সতর্কবার্তা। অনুসরন করার চেষ্টা করো, ইনশাল্লাহ কাজে লাগবে এবং তোমরা সফলকাম হবে ইনশাল্লাহ।

নিজের উপর ভরষা রাখো-অন্যের উপর নয়ঃ

আজ তুমি যাদের মুখ থেকে অনেক আশার বানী শুনে নিজের মনোকষ্টকে ভাবছো বিপদে তো তারা আছেনই, ভয়ের কোনো কারন হয়তো নাই।  এটা সম্পুর্ন না হলেও অনেকাংশেই সঠিক ধারনা নয়। কেউ কখনো কারো পাশে থাকেনা, থাকেনি। খুব গুটিকতক মানুষ আজীবন পাশে না থেকেও আবার পাশে থাকে। আর তারা হচ্ছেন সেইসব ব্যক্তি যারা তোমাদেরকে কোনো শর্তছাড়া ভালোবেসেছিলো। আমি এটা জানি। আর ঠিক সে কারনেই, আমি আমার জীবদ্দশায় আমার সাধ্যমতো তোমাদের জন্য এমন কিছু করে গিয়েছি যাতে কখনো তোমাদের কারো কাছে কোনো কিছুর জন্যেই হাত পাততে না হয়।

কাউকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করে নিজের ক্ষতি করো না 

আজ তোমরা ঠিক যেখানে আছো, সেটা স্বাভাবিক একটা জায়গা নয়। সমাজের বেশ উচু স্থানের একটা জায়গা। এখানে সবাই থাকে না বা আসতে পারেনা। এই স্থানগুলি বা তোমাদের মতো পজিশনধারী স্থানগুলিতে থাকা মানুষেরা অকারনে অন্যের চোখের বালি হয়ে দাঁড়ায়। কিছু করার সামর্থ না থাকায় হয়তো তারা কখনো কোনো আঘাত করার সাহস পায়নি। আর এটার কারন- এতোদিন মাথার উপর ঢাল ছিলো, এখন সে ঢালটা সড়ে গেছে। আঘাত আসতে পারে, আঘাত আসবে। কিন্তু সে আঘাত সহ্য করার মতো মানসিকতা থাকতে হবে যে, যারা এতোদিন যুদ্ধটা করতে পারেনি, কিংবা যারা তোমাদেরকে কখনোই আপন মনে করেনি কিন্তু আপন ভাব দেখিয়েছে, সেই তাদের ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে। সর্বনাশের প্রথম স্তর শুরু হয় আপনজনের কাছ থেকে। এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র আত্তীয়রাই আত্তীয়দের সাথে হিংসা আর বেঈমানি করেছে। তাই, নিজের রহস্য নিজেদের কাছে রাখো। হয়তো লুজ কথায় অনেক বেশী ক্ষতিতে পড়তে পারো। যা না বললেই নয়, ঠিক সেখানেই থাকার চেষ্টা করো। অনেক শয়তান আশেপাশে থাকে। নিজেদের আত্তীয়ের বাইরে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেনীর মানুষকে বেশী বেশী ভয় পাবে। তারা অতীত মনে রাখে কিন্তু ভবিষ্যত দেখে না। 

একত্রিত থাকো

যে যাইই কিছু বলুক, ভালো পরামর্শ কিংবা ভালো বন্ধুত্ব, কোনোটাই যা চোখে দেখা যায় সেটা হয়তো সঠিক নয়। নিজের আপন রক্ত বিশেষ করে বোন আর বোন, মা আর বোন, কিংবা ভাই, এরাই তোমার শেষকালের একমাত্র ভরষা। তোমাদের ভাই নেই, এর অর্থ এই পৃথিবীতে তোমাদের সত্যিই কোনো ভাই নেই, সেটা বিধাতা তোমাদের দেন নাই। হোক সে যতোই তোমাদের পাতানো ভাই। তারা তোমাদের ভাই নয়। বোনেরা বোনেরা মিলে থাকো। কোনো কারনে মতের অমত হলে তা মিটিয়ে নাও। সেটাই উত্তম। একে অপরের শিল্ড হও। 

 এক স্রিষ্টিকর্তাকে সবসময় মনে জাগ্রত রাখো

আজ হোক কাল হোক, তোমাদের সবাইকে চলে যেতেই হবে, আমার মতো, তোমাদের পূর্ব পুরুষদের মতো। আর তখন তুমি আজকের আমার মতোই একাই যাবে। তাই নিজের আখেরের দিকে সর্বোক্ষন মনোযোগী হও। এটা শুধু তুমি নিয়ে যাবে। আর সব কিছুই এখানে থেকে যাবে। 

দারিদ্রতা একটা অভিশাপ

চারিদিকে তাকিয়ে দেখো? তোমাদের জন্য আমি নিরাপদ ঘর তৈরী করে গেছি, তোমাদের জন্য আমি খাদ্য, বস্ত্র এসবের মুল চাহিদার জন্য যা লাগে সেটার ব্যবস্থা করে গিয়েছি। দৈনন্দিন কাজের জন্য যা যা খরচ লাগে সেই ব্যবস্থাটাও আমি করে গিয়েছি। আমি হয়তো অনেক অনেক ধনী নই কিন্তু একটা পরিবারকে সচ্ছল এবং সম্মানের সহিত এই সমাজে বাস করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন আমি সেটা করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে তোমাদের অতিরিক্ত ভাবনার বা টেনশনের কোন প্রয়োজন নাই যদি সীমিত আখাংকার মধ্যে নিজেদেরকে পরিচালিত করো। আমার তৈরী করা ব্যবস্থায় আমার জীবদ্দশায় তোমরা যেভাবে জীবন চালিয়েছো, এখনো ঠিক সেভাবেই তোমরা তোমাদের জীবনকে চালাতে পারবে বলে আমার ধারনা ইনশাল্লাহ যদি হিসেবি হও। নিজের মনের আনন্দকে নিয়ন্ত্রীত না করার কারনে দারিদ্রতাকে অভিনন্দন জানিয়ো না। তাতে অনেক কষ্টের মধ্যে পড়ে যাবে, যা থেকে আর উদ্ধার পেতে পারো কিনা কেউ জানে না। দারিদ্রতাকে আমি ভয় পাইতাম। 

কাউকে আঘাত করার দরকার নাই

অন্য কাউকে আঘাত দেওয়া কখনোই নিজের যন্ত্রনার ঔষধ হতে পারেনা। এ রকমটা করলে ব্যথা আরো বেড়ে যায়। আর ক্ষত আরো গভীর হয়ে যায়। প্রতিবেশীর সাথে সবসময় সবচেয়ে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে তোলতে চেষ্টা করবে। তারাই একমাত্র তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষ যারা তোমার সব ঘটনায় সবার আগে খোজ রাখবে, এগিয়ে আসবে। নিজের ভিতরে কখনো মানসিক কষ্ট বেশীদিন চাপিয়ে রাখবে না। তাকে বেশী গুরুত্বও দেবে না। এই মানসিক কষ্ট একটা ব্যাধি। একবার চেপে বসলে সেটা আরো ভিতরে চেপে ধরে। জীবন বিষিয়ে দেয়। খারাপ ঘটনা আর স্মৃতি যা অতীতে ঘটেছে সেটাকে সামনে নিয়ে এসে বোঝা বাড়ানোর কোনো দরকার নাই। এই ধারনা থেকে সবসময় এড়িয়ে চলবে যে, যে ব্যথা দেয় তাকে ব্যথা দিতে পারলে তোমার ব্যথা কমে যাবে। এটা ভুল। যখন কেউ তোমাকে দুঃখ দেয়, কষ্ট দেয়, তাহলে সেই ব্যক্তির উপর তোমাদের প্রতিক্রিয়া খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিনতে দেয়া উচিত। ইমোশনকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। 

এবার আসি আমার অবর্তমানে তোমাদের কি কি করনীয়ঃ

আমার উচ্ছিষ্ট সময়ের ডায়েরীর ২১/৪/২০২২-আজ সেই দিনটা (আপডেটেড ২৮ জুলাই ২০২২) পাতাটি বারবার পড়। সেখানে সব কিছু বিস্তারিত বলে গিয়েছি। লেখাটা পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড। পাস ওয়ার্ড এর লিষ্ট আমি তোমাদের জন্য আলাদা করে আমার গুগল ড্রাইভে লিখে রেখেছি। খুজে নিও। 

আমি জানি আমি ভালো থাকবো ইন্দশাল্লাহ। আমার সাথে সেই বেহেস্তে আমার মা বাবা, আমার পূর্বসুরীদের সাথে নিশ্চয় দেখা হবে। আমি জানি, আমি জানামতে কখনো কোনো অন্যায় করিনি, কারো হক জোর জবরদস্তীতে নিয়োজিত ছিলাম না। আমার প্রতিটি রোজগার ছিলো আল্লাহ প্রদত্ত এবং আমি সর্বদা আল্লাহকে মনে রেখে, রাসুলকে সামনে রেখেই আমি আমার জীবন অতিবাহিত করেছি। বাকীটা আমার আল্লাহ জানেন। তোমরা আমাদের জন্য দোয়া করবে। এখন তোমাদের দোয়া আমাদের অনেক প্রয়োজন। 

মায়ের সাথে আমরা ক’জন

মাকে দেখলে সব সময় একটা কথা মনে হতো, একদিন আমার মা আমাকে ছেড়ে চলেই যাবেন। এই ব্যাপারতা আমাকে সর্বদা খুব পীড়িত করতো। ফলে আমি কখনো মায়ের সাথে উচ্চস্বরে কথাও বলতাম না যাতে মা কনো কারনে কষ্ট পান। আমার মা আম্র উপরে সবচেয়ে বেশী ডিপেন্দেন্ট ছিলো সব কিছুতে। মা সব সময় আমার সাথেই বেশী কথা বলতেন, আর আমিও মাকে সেই সুযোগটা করে দিতাম যাতে মা নির্ভয়ে, নিঃসঙ্কোচে সব কথা আমাকে বলতে পারেন। আমাদের ভাই বোনদের মধ্যে এক মাত্র আমিই মাকে "আপনি" বলে সম্বোধন করতাম, আর বাকিরা মাকে "তুই" বলে সম্বোধন করতো। অবশ্য মায়ের জীবনের শেষের দিকে এসে আমার দেখাদেখী আমার ভাই কিংবা কিছু বোনেরাও মাকে আপনি বলা শুরু করেছিলো। 

আমার মায়ের ভিতরে সব সময় একটা আর্থিক কষ্টের কারন ছিল যা আমি বুঝতাম। আমি চেষতা করেছি আমার ক্যাপাসিটির মধ্যে মাকে সব সময় সাহাজ্য করতে। কিন্তু আমার লিমিটেশন ছিলো। হয়তো আমার আরো করার ইচ্ছে থাকলেও আমার পক্ষে করা হয় নাই। কিন্তু মাকে আমি একটা কথা প্রায়ই বলতাম যে, "মা, আমার কেনো জানি মনে হয়, একটা সময়ে আমার হাতে এতো পয়সা থাকবে, কিন্তু তখন হয়তো আমি তোমাকে নাগাল পাবো না"। আর ঠিক সেই দিন টাই এখন চলছে। স্বামী হারা কোনো মহিলার অবলম্বন তাঁর ছেলেরা বা মেয়েরা ঠিকই কিন্তু নিজের স্বামী যতোটা অবলম্বন, কখনোই সেটা তাঁর ছেলেমেয়েরা পূর্ন করতে পারে না। মায়েরা সব সময় তাদের পুর্ন চাহিদার কথা তাঁর ছেলেমেয়েদের কাছে বলেন না। আর এর কারন একতাই, কে কিভাবে এটাকে নিবে কে জানে, এই ভাবনায়। 

আমি মাকে প্রচুর সময় দেয়ার চেষ্টা করতাম। আমার বড় ভাই এ ব্যাপারটায় ছিলেন অনেকটা উদাসীন। যাই হোক, আমার বড় ভাইয়ের ছেলে আমেরিকান। নাম মাসুদ হাসান। ভীষন সুন্দর একটা ছেলে। আমার মায়ের জিবদ্দসায় মাসুদ একবাওই দেশে এসেছিল। অবশ্য এর পরেও আরো একবার এসেছিলো বটে কিন্তু তখন আর মাসুদ মাকে পায় নাই। প্রথমবার যখন মাসুদ দেশে এসে গ্রামে গিয়েছিলো, তখন আমি আমার ছোট একটা কম দামী ক্যামেরাতেই মাকে বন্ধি করেছিলাম মাসুদের সাথে, আমার বোনদের সাথে। মাসুদের জীবনে এসবের কোনো মুল্য নাই জানি, কিন্তু মাসুদের মুল গোরা ঠিক এখানেই। আমার বড় ভাই এই মুল গোড়ার শিক্ষাতা তিনি তাঁর সন্তানদেরকে দিতে পারেন নাই বলে মাসুদ এ দেশের কালচার থেকে ছুটে গিয়ে পুরুপুরি পাশ্চাত্য ভাবধারায় ববর্তিত হয়ে গিয়েছে যেখানে ড্যাডি আবার বাবার মধ্যে পার্থক্য যে অনেক সেটাই হয়েছে। 

মাসুদের সাথে আমার মা, উম্মিকার কিছু ছবি। গ্রামে এবং বগুড়া সেনানীবাসে তোলা। 

আমার মা মাসুদকে ভীষন ভালোবাসতেন। কিন্তু আমার ভাবী অর্থাৎ মাসুদের মা কখনোই আমার মায়ের পুত্রবধু হয়ে উঠতে পারেন নাই। হয়তো এর খেসারত তারা এখন দিচ্ছেন। তিনিও একজন ভালো শাশুড়ি মা হয়ে উঠতে পারেন নাই মাসুদের স্ত্রীর কাছে। সময় কখনোই মানুষকে শিক্ষা দিতে কার্পন্য করে না। তাঁর নিয়মে সে সর্বদাই এক নীতিতে চলমান।  মাসুদ নিজেও একজন ডাক্তার, আমার বড় মেয়ে সেও এখন একজন ডাক্তার। 

 

মাসুদ, উম্মিকা আর আমার মায়ের সাথে কিছু ছবি

২০২১ সালে ভারত ভ্রমনের কিছু ছবি।

             

যদিও ব্যবসায়ীক কাজে এবার ১১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ইন্ডিয়ায় ছিলাম, তারপরেও মানষিক প্রশান্তির জন্য কোনো প্রকার ল্যাপ টপ সাথে নেই নাই। চেয়েছিলাম, একেবারে পুর্ন বিশ্রাম। মর্তুজা ভাই সাথে ছিলেন। তিনি অবশ্য একটা আই পড সাথে নিয়েছেন, সেটার দরকার ছিলো। বেশীরবাগ সময়ই আমরা ব্যবসার বাইরে কাটিয়েছি। একটু ঘুরে ফিত্রে দেখার চেষ্টা করেছি, রি ল্যাক্স মুডেই ছিলাম। কোনো কিছুতেই কোনো তাড়াহুড়া ছিলো না। 

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার্ক এবং প্রিন্সেপ ঘাটঃ 

১৫ বছর এক নাগারে (১৯০৬ থেকে ১৯২১) রানী ভিক্টোরিয়ার স্মরণে লর্ড কার্জন এই  হুগলী নদীর ধারে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল গড়ে তুলেছিলেন। আসলে এই মেমোরিয়াল তৈরী শুরু হয় রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর প্রায় ৬ বছর পর থেকে। ১৮৪০ সালে ভিক্টোরিয়া প্রিন্স এলবার্টকে বিয়ে করেন। কিন্তু প্রিন্স এলবার্ট টাইফয়েড জরে ১৮৬১ সালে মারা যাওয়ার পর রানী আর কাউকেই বিয়ে করেন নি।  পরবর্তীতে রানী ভিক্টোরিয়া মারা যান ১৯০১ সালে সেরেব্রাল হেমোরেজে। তার মৃত্যুর পর রাজা ৭ম এডওয়ার্ড (তার ডাকনাম ছিলো বার্টি) ক্ষমতা গ্রহন করেন। মোট ২৫টি গ্যালারী আছে এর মধ্যে। তার মধ্যে ‘রয়েল গ্যালারী’, জাতীয় নেতাদের গ্যালারী, সেন্টারল হল, আর্মস এন্ড আর্মারী হল ইত্যাদি। সব গুলি গ্যালারীতে সবার প্রবেশের সুযোগ নাই। তবে নীচ তালায় পুরু মিউজিয়াম ভর্তি সুভাস চন্দ্রের তার লাইফ টাইমের বিভিন্ন তথ্য, চিত্র এবং ছবি দিয়ে ভরা। তারপরেও এখানে বেশ কিছু দূর্লভ ছবি এবং মুল্যবান ভাষ্কর্য আছে যা ইতিহাসের পাতায় বেশ নামিদামী হয়ে আছে। যেমন, ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তারা যে মার্চেন্ট শীপে ভারত বর্ষে এসেছিলেন, তার একটা অরিজিনাল রেপ্লিকা আছে। রানী ভিক্টোরিয়া তার ১০ বছর বয়সে তার চাচা ৪র্থ রাজা উইলিয়াম থেকে পেয়েছিলেন সেটা আছে। টিপু সুলতানের গিল্ডেড ডেগার, কর্ন ওয়ালিসের মুর্তি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজ হাতে লেখা মেনুস্ক্রিপ্ট, পলাশীর যুদ্ধে যে ক্যনন বল ব্যবহৃত হয়েছিল তার একটা নিদর্শন আছে, লর্ড কার্জনের একটা মুর্তি আছে।

 

     

প্রিন্সেপ ঘাট দেখতে গিয়ে বেশ মজা হয়েছিলো। এতো পুরানো পুরানো নিদর্শন এই কলিকাতার আনাচে কানাচে বিদ্যমান যে, এক সময় যে ব্রিটিশরা এখানে একচ্ছত্র রাজত্ত করেছিলো তার নমুনা পাওয়া যায়। আমার ধারনা, ব্রিটিশরা যতো না আনন্দ পেয়েছে অন্যান্য উপনেবেশিক ক্ষমতায় তার থেকে অনেকবেশী আরাম এবং আনন্দ করেছে এই ভারত উপমহাদেশে। প্রতিটি কোনায় কোনায় এদের হাতের স্পর্শ পাওয়া যায় এতো বছর পরেও এই প্রন্সেপ ঘাটটাও তার একটা। 

জাকারিয়া মসজিদ 

কলিকাতার টীপু সুলতান রোডে সবচেয়ে বড় মসজিদ জাকারিয়া মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে এর চমৎকার কিছু আর্কিটেকচারাল ভিউ নজরে পড়েছিলো। তার কিছু ছবিঃ 

     

 

 

ছাদের বাগান

  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান । মাল্টা ধরা শুরু হয়েছে।
  • আমার ছাদ বাগান। পুদিনার বাহার
  • আমার ছাদ বাগান। লেবুর ফলন।
  • আমার ছাদ বাগান।
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • আমার ছাদ বাগান
  • ছাদের ফসল
  • ছাদের ফসল
  • ছাদের ফসল
  • ছাদের ফসল
  • ছাদের ফসল
  • ছাদের ফসল জাম্বুরা
  • ছাদের ফসল জাম্বুরা
  • ছাদের ফসল জাম্বুরা
  • ছাদের ফসল জাম্বুরা
  • ছাদের ফসল জাম্বুরা
  • ছাদের ফসল জাম্বুরা
  • ছাদের ফসল
  • ছাদের ফসল
  • ঝাউগাছ
  • ছাদের ফসল আম
  • ছাদের ফসল লাউ শাক
  • মেহেদি গাছ
  • ছাদের ফসল কুমড়া
  • ছাদের ফসল কুমড়া
  • ছাদের ফসল আম বন্টন চলছে
  • ছাদের ফসল আম বন্টন চলছে
  • ছাদের ফসল আম বন্টন চলছে
  • আমাদের বাসার জন্য বন্টনের আম
  • আমার বাগানের মালী

বাগানের ভিডিও-২২

https://goldeninn-bd.com/wp-content/uploads/2022/08/My-Garden_Aug-2022a.mp4

আমার ছাদ বাগান

বাগান বড় অদ্ভুত। চারিদিকে প্রানের ছড়াছড়ি। কেউ কোনো কথা বলে না কিন্তু তাদের নীরব একটা ভাষা আছে। খুব কাছ থেকে দেখলে আর শুনলে এদের সব ভাষা পরিষ্কার বুঝা যায়। মুক, বধির কোনো মানব সন্তান যেমন তার শান্তি-অশান্তির কথা ব্যক্ত করলে মায়ের বুঝার কোনোই অসুবিধা হয় না, তেমনি বাগানের যিনি প্রকৃত পরিচর্যাকারী তার ও এই বধির এবং মুক ভাষাহীন উদ্ভিদের শান্তি-অশান্তির ব্যাপারগুলি বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না। ভালো পরিচর্যায় এসব গাছগুলি সব সময় ফল দেয়, সময় কাটানোর জন্য সংগ দেয় আর দেয় প্রচুর পরিমানে অক্সিজেন। অক্সিজেন যখন দেয় কিংবা সংগ, তার ছবি থাকে দেহে, আত্তায় আর অন্তরে। শুধু ফলটা দেখা যায়। আমাদের বাসার ছাদের মধ্যে আমার এই ছোট একটা বাগান। তাদের নিত্য সহচর চড়ুই, শালিক আর কাকের জন্য কোনো বীজই চারায় রুপান্তর করা সহজ হয় না। সারাদিন টবগুলির পাশেই বসে থাকে কখন একটা অংকুর ফুটবে আর অমনি টুপ করে খেয়ে ফেলবে। নেট দিয়েছি যাতে আর এই দুস্টুমীটা করতে না পারে। আমি এদেরকে কোনো বকা দেই না। ওরাও ব্যাপারটা বুঝে গেছে। আমি দেখেছি, বাগানে আমি এলেই যেনো এদের ভীড় বেড়ে যায়। ভালোই লাগে। বাগানে সময় কাটানো মানে কিছু জীবন্ত প্রজাতীর সাথে থাকা। Trees are so friendly and someone can spend time as much as he wants. আমার খুব শখের এই বাগান আমাকে সত্যিই সংগ দেয়।

My Family is Vaccinated

  • Akhtar Covid+ve
  • Ummika Covid +ve
  • Akhtar Vaccination Certificate
  • Mitul Vaccination Certificate
  • Konika Covid -ve
  • VACCINATION
  • Covid Cert with Name of the Company Final
  • Covid Certificate Small
  • Covid Test by SQ before going to India-2021 Nov
  • Covid Test in India before Flight Back to Dac
  • Covid Test in India before Flight Back to Dac

My Family is Vaccinated

আমার স্ত্রী মিটুল চৌধুরীর করোনা যখন সনাক্ত হয়, ততোদিনে মিটুল করোনা থেকে প্রায় আরোগ্য হয়েই যাচ্ছিলো। যখন ওর করোনা টেষ্ট করালাম ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে প্রভা হেলথ কেয়ার থেকে, ১২ তারিখে রিপোর্ট পেলাম, মিটুলের করোনা পজিটিভ যা শুরু হয়েছিল প্রায় ১৩ দিন আগে। আমরা সবাই ওর সাথেই সারাক্ষন ছিলাম এটা না জেনে যে, ওর করোনা হয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, মিটুলের করোনা থেকে আমাদের কারোরই করোনা হয় নাই। মিটুলের একদিন করোনা শেষ হয়ে গেলো। পরবর্তীতে ২৭ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে আমার আর উম্মিকার করোনা পজিটিভ হলো। আমার করোনা আসলে চিটাগাং ভিজিটের পরে মনে হয় হয়েছিলো। আমি নিজেই বুঝতেছিলাম যে, আমার গাড়িতে যিনি বসেছিলেন তিনি বার বার কাশাকাশি করছিলেন। ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেই ভালো লাগছিলো না। কিন্তু উপায়ও ছিলো না। আমি কোনো উপসর্গে ভুগি নাই। কোনো কাশি ছিলো না, মাথা ব্যথা ছিলো না, জর ছিলো না, শুধু গন্ধ পাচ্ছিলাম না। এই গন্ধ পাচ্ছিলাম না কেনো তার সন্দেহে করোনা টেষ্ট করাই আর করোনার সাক্ষাত পাই। আমার থেকেই মনে হয় উম্মিকার করোনাটা হয়েছিলো। উম্মিকার করোনা কয়েকদিনেই নেগেটিভ হয়ে গেলো বটে কিন্তু আমার প্রায় ২১/২২ দিন লাগলো করোনা নেগেটিভ হতে। আবার এর মধ্যে কনিকারও করোনা পজিটিভ হয়ে গেলো। কনিকার পজিটিভ মনে হয় এটাও আমার থেকেই পেয়েছে। অথবা উম্মিকার থেকে পেয়েছিলো। কিন্তু কনিকার করোনা পজিটিভ মাত্র ৭ দিনেই নেগেটিভ। যেহেতু ৪০ বছরের উর্ধে না হলে টীকা নেয়া যায় না, ফলে আমি আর মিটুল পর পর দুটূ টীকাই দিয়ে ফেললাম। একটা মার্চে আরেকটা এপ্রিলের শেষের দিকে। আমাদের পরিবার ইনশাল্লাহ করোনামুক্ত এবং আমরা দুজনে ভ্যাক্সিনেটেড। মেয়েদের জন্য টীকা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কনিকা বিদেশ চলে যাচ্ছে আগষ্টের ১০ তারিখে, তাই দুটু টীকা কভার করা সম্ভব না বিধায় বাল্টিমোরে গিয়ে ওকে টিকা নিতে হবে। উম্মিকা ডেলটা মেডিক্যাল হাসপাতাল এন্ড কলেজে চাকুরী নিয়েছে বিধায় ডাক্তারী কোটায় ওর ভ্যাক্সিনেশন হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। এখন বাকী আল্লাহ ভালো জানেন। 

১৪/০৭/২০২২

আমরা দুজনেই বোষ্টার ডোজ নিয়েছি। কনিকাও আমেরিকায় গিয়ে সব গুলি ডোজ নিয়েছে। আমার বড় মেয়ে উম্মিকাও সব গুলি ডোজ নিতে পেরেছে। ওরা অবশ্য বোষ্টার ডোজের জন্য এখনো কোয়ালিফাই করেনি।

 

আমার গ্রামের বাড়ী

খুব কাছেই আমার গ্রাম। ফ্যাক্টরী থেকে মাত্র ১৫/২০ মিনিটের ড্রাইভ। ইচ্ছে করলেই আমি প্রতিদিন যেতে পারি, ইচ্ছে করলেই আমি সারাদিনও কাটাতে পারি সেখানে। একটা সময় ছিলো কোনো ছুটির দিন ছিলো আমার নেশার মতো, সময় পেলেই চলে আসতাম। তখন আমার গাড়ী ছিলো না, রাস্তাঘাটও তেমন ভালো ছিলো না। তারপরেও চলে আসতাম। অথচ এখন রাস্তাঘাট খুব সুন্দর, নিজের গাড়িও আছে। আর আমি প্রতিদিন ২ ঘন্টা জ্যাম পেড়িয়েও সেই গ্রামের অতি সন্নিকটে হাসনাবাদ ইকুরিয়াতে আমি অফিস করি। কিন্তু এখন আর তেমন মন টানে না সেখানে যাওয়ার। সবকিছুই আগের মতোই আছে, গ্রামটা আছে, আত্মীয়স্বজন আছে, বাড়িটাও আছে, কিন্তু সেখানে একটা জিনিষ নেই যা আমাকে নেশার মতো আগে টেনে নিয়ে যেতো-আর সেটা হলো আমার মা। এই মা-ই ছিলো আমার নেশা, এই মা-ই ছিলো আমার গ্রাম, আমার বন্ডেজ। এখন গ্রামটাকে আর আমার গ্রাম বলে মনে হয় না। অনেকেই প্রশ্ন করে- গ্রামে কেনো যাই না? 

আসলে এখন গ্রামে আমার জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। যেটা আছে সেটা শুধু কিছু পুরানো স্মৃতি। এইতো গত কয়েকদিন আগে আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে আমি আর আমার স্ত্রী হুট করেই গ্রামে গিয়েছিলাম। আগে তো আমি গ্রামে এলে পরে মা অতিব্যস্ত হয়ে যেতেন ছেলেকে কি খাওয়াবেন, কি করবেন, কত কি?। এখন কোনো ব্যস্ততা নাই। কেউ অপেক্ষাও করে থাকে না। এভাবেই হয়তো একদিন গ্রামটা আমার স্মৃতি থেকেও অনেক দূরে সরে যাবে। আর এর জন্য দায়ী আসলে কেউ নয়। দায়ী শুধু 'সময়'। আর সময় কারো ইমোশনাল মোমেন্টকে ধার ধারে না। 'সময়ের' কোনো বন্ধু নাই, সময়ের কোনো শত্রুও নাই। সে সবার সাথে থাকে, আবার কারো সাথেই সে থাকে না। মহা বিশ্ব এই সময়কে কখনো তাঁর নিজের করে ধরে রাখতে পারেনি, একদিন এই 'সময়'টাই হয়তো হবে এই সমস্ত ধংশের কেন্দ্রবিন্দু। 

 

আমার গ্রামের বাড়ির ভিডিও

https://goldeninn-bd.com/wp-content/uploads/2022/04/My-Home-at-Village.mp4

গ্রাম-২০১৮

গ্রামে খুব কম যাওয়া হয়, কিন্তু যেতে বারে বারেই মন চায়। মেয়েরা গ্রামে গেলেও খুশী হয়। কিন্তু সবচেয়ে আক্ষেপের বিষয়টা হচ্ছে- গ্রামে মা যখন ছিলো তখন খুব ঘন ঘন যাওয়া হলেও মায়ের ইন্তেকালের পর কালেভদ্রে যাওয়া হয়। বোনেরা আছে ঠিকই কিন্তু সময় কাটতে চায় না। সেই আগের পরিবেশটা আর নাই। ২০১৮ সালের কুরবানীর ঈদে গ্রামেই কুরবানী দিয়েছিলাম এজন্য যে, এই উপলক্ষে গ্রামেও যাওয়া হলো আবার অনেকের সাথে দেখাও হলো। সে দিনের কিছু ছবি। 

গ্রামের অনেক পরিচিত মানুষেরা আর এখন নাই। আজীবনের জন্য স্থান ত্যাগ করে বেহেস্তবাসী হয়েছেন। অথচ আমি নিজে সাক্ষী সেসব মানুষেরা এই গ্রামটাকে নিজের মতো করে গড়ে তোলতে চেয়েও সেটা পারেন নাই। কারন তারা আজিবন জীবনের সাথে শুধু যুদ্ধই করে গেছেন। আজকের এই প্রজন্ম হয়তো জানেই না গ্রামের সেইসব ইতিকথা, না তাদের জানার কোনো আগ্রহ আছে। সময়ের বিবর্তন বলে একটা কথা আছে। আমি সেই বিবর্তন দেখতে পাই গ্রামের প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি মানুষের চলাফেরায়। আমিও সেই বিবর্তনের মধ্যে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে গেছি হয়তো। 

  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • In front of Belayet Bhai's House
  • With Billal Bhabi
  • With Billal Bhabi
  • With Bilkis, Billal Bhai Daughter
  • With Bilkis, Billal Bhai Daughter
  • With Bilkis, Billal Bhai Daughter
  • In front of My Village House
  • In front of My Village House
  • In front of My Village House
  • In front of My Village House
  • In front of My Village House

এপোলেটস

আমার সামরীক জীবনের কিছু স্মৃতি মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। ভালো লাগে। Military life is a man's life. অনেক গুলি বছর এই সেনাবাহিনীতে আমি কাজ করেছিলাম। অনেক গুলি বছর। এই সুবাদে দেশ বিদেশে গিয়েছি, শান্তিরক্ষা বাহিনীতে কাজ করেছি, অনেক বড় বড় বিসশ নেতাদের কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়েছে। অভিজ্ঞতা বেড়েছে অনেক। অকালেই সেনাবাহিনী থেকে চলে আসার আমার কোনো পরিকল্পনাই ছিলো না কিন্তু রাজ্যের অনেক অনিয়মের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারার কারনে শেষ মেষ আর্মিকেই আমার ছাড়তে হয়েছে। তখন হয়তো বুঝতে পারিনি কততা ঠিক আর বেঠিক ছিলো সিদ্ধান্ত, কিন্তু এখন মনে হয় যে, সিদ্ধান্ত ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তটাই যেনো ঈশ্বর আমাকে নিতে সাহাজ্য করেছিলেন। 

আমেরিকায় কনিকার বাসা

আমার ছোট মেয়ে যখন দেশে ছিলো, তখনো দেখেছি অনেক গোছাল আর পয়পরিষ্কার থাকতো। ক্রিয়েটিভ চিন্তা ধারনা বেশ বেশী। পরীক্ষা নিয়ে তার কোনো মাথায় কখনো দুশ্চিন্তা ছিলো এটা আমার চোখে পড়ে নাই। দেখা গেলো, কাল তার পরীক্ষা কিন্তু আজ সে অন্য কাজে ব্যস্ত। যাই হোক, সে এখন দূরে থাকে, সুদূর আমেরিকায়। ভয় পেয়েছিলাম প্রথম প্রথম, কিন্তু সে ভয়টা আর এখন নাই ইনশাল্লাহ। গুছিয়ে উঠেছে। গত মাসে সে তার নতুন বাসায় উঠেছে। তার সাথে আরো একটা বিদেশী মেয়েও আছে। শুনলাম, সেও নাকি ওর মতো বেশ গুছানো। শুনে ভালো লেগেছে। তারা নতুন বাসায় উঠে যার যার মতো করে তাদের রুম সাজিয়েছে। মেয়ে সেই সাজানো রুমের ছবি পাঠিয়েছে। দেখে ভালই লেগেছে। 

যেতে চেয়েছিলাম মেয়ের কাছে। কিন্তু প্রথমে কভিডের কারনে সব কিছুতেই রেস্ট্রিকশন ছিলো, ভিসায় খুবই কড়াকড়ি করায় যাওয়া হচ্ছিলো না। আর এখন শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তারপরেও ভিসার জন্য এপ্লাই করেছি, দেখি কবে নাগাদ যাওয়া যায়। আমেরিকায় সেই ১৯৯৫ সালে গিয়েছিলাম, সেখানে আমার মন টিকে নাই। ফলে অনেকবার অনেক বছর মেয়াদিতে ভিসা পেয়েও আর যাওয়া হয় নাই। আমার কাছে আমেরিকা কোনো সপ্নের দেশ কখনোই মনে হয় নাই। কিন্তু এখন মন যেতে চায় কারন মেয়ে ওখানে থাকে। 

দেখা যাক আবার কবে যাওয়া হয়। 

Konika’s House in USA

ছোট মেয়ের ছোট রুম কিন্তু সে অনেক যত্ন করে সুন্দর ডেকোরেশন করে রাখে। অন্তত আমার মতো অগোছালো হয় নাই। আমি যে অগোছালো এই তথ্য আমার জানা থাকলেও সেটা আমার স্ত্রীর থেকে বেশী কেউ আর জানে না। তারপরেও চলে যাচ্ছে জীবন। আমার মেয়ের আমেরিকায় তার বাল্টিমোরে ছোট বাসার একটা ছোট ভিডিও। 

https://goldeninn-bd.com/wp-content/uploads/2022/06/My-Video.mp4

ছুটি রিজোর্টে কনিকা-২০১৬

https://goldeninn-bd.com/wp-content/uploads/2022/07/Konika-Horse-Riding-2016.mp4

Chuti Resort in Gazipur-2016

২০১৬ সাল। কোনো এক শীতের সময় আমরা গাজীপুরের একটা রিজোর্টে গিয়েছিলাম সবাই মিলে। ছুটি রিজোর্ট। রাত কাটিয়ে তাঁর একদিন পর মোট ২/৩ দিন থেকে অতঃপর ঢাকায় ফেরা। সময়টা ভালো কেটেছিলো কিনা জানি না কিন্তু সেদিন আমি একটা বিশয় খুব ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছিলাম যে, নীচু জাতের সাথে সম্পর্ক করা অনেক ঢেড় ভালো কোনো লোভী পরিবারের সাথে সম্পর্কের চেয়ে। যাই হোক, সকালে আমার ছোট মেয়ে হর্স রাইডিং করছিলো। আজ আমার সেই ছোট মেয়ে সুদূর আমেরিকায় পড়াশুনা করছে। এভাবেই আমরা একে অপরের চোখের আড়ালে চলে যাই ধীরে ধীরে। সাথে বড় মেয়ে ছিলো, আমরা ছিলাম, আরেকটা পরিবার ছিলো। কিন্তু সেই পরিবারের সাথে আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছিলো একটা সম্পর্কের মধ্যে নিয়ে আসা। অভিজ্ঞতা হয়েছে, আর আরেকটা অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, লোভী মানুষের দ্বারা কিছুই হয় না। 

 

ছুটি রিজোর্টে কনিকা

বগুড়া সেনানীবাস

বড় মেয়েকে দেখতে এসেছিলাম শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজে। আমার সর্বদা একটা সপ্ন ছিলো আমার মেয়েরা ডাক্তার হোক। আমি নিজেও সেই ১৯৮৪ সালে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে চান্স পেয়েও পড়ার সুযোগ পাই নাই, আর সেটা নিতান্ততই শুধুমাত্র আর্থিক কারনে। ইউনিভার্সিটিগুলির প্রায় সব গুলিতেও চান্স পেয়েছিলাম, সেটাও পারিনি কারন আর্থিক সামর্থ যেমন ছিলো না, তাও অনিশ্চিত একটা জার্নি নিতে চাইনি। শেষে একটাই পথ বেছে নিয়েছিলাম- সেনাবাহিনী। আমার একেবারেই চয়েজ ছিলো না। কিন্তু অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয় জীবনে যা কখনোই নিতে চাই নাই। বড় মেয়েকে ডাক্তারী পড়তে বলেছিলাম। সে সেই সপ্নটা পরুন করেছে আমার। ছোট মেয়ের কথা বলতে পারি না। বড় মেয়ে উম্মিকা শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজে মাত্র শেষ করে এখন ইন্টার্নী করছে। ইন্টার্ন ডক্টর হিসাবে দিন রাত পরিশ্রম। কিছুতেই বাসায় আসার সময় পাচ্ছে না। মন খারাপ করছিল। আমিও মেয়েকে খুব মিস করতেছিলাম। সন্তানের থেকে বড় কাছের কেউ নাই। এটা বুঝতে হলে বাবা মা হতে হয়। যতোদিন কেউ বাবা মা হবে না, তাকে অন্য কোনো ডায়ালগ, অন্য কোনো ফিলোসোফি দিয়েও বুঝানো যাবে না, সন্তান বাবা মায়ের কাছে কি। সব সন্তানেরা এই কথাটা বুঝতে পারে যখন তাদের বাবা মা আর বেচে থাকে না আর তারা তখন বাবা মা হয়। আমার নিজের ও ভালো লাগছিলো না। আমরা সবাই তাই ওর কাছেই চলে এলাম। ওর হোষ্টেলে হয়তো আমার থাকা সম্ভব না। মেয়েদের হোষ্টেল। কনিকা আর ওর মা হয়তো থাকতে পারতো। তাই পাশেই আমাদের বগুড়া সেনানীবাসের অফিসার মেসে একটা রুমে উঠলাম। সাথে আমাদের গাড়ি আছে বিধায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। অন্য অর্থে আমি সেনানিবাসেই থাকি যখন বগুড়ায় আসি। আমরা সবাই ক্যান্টন্মেন্টে থাকি, মেসে খাই, আর দিনের বেলায় আমরা উম্মিকার সাথে দেখা করি। উম্মিকাও আমাদের সাথে রাতে মেসেই থাকছে এ কয়দিন। এমনি একদিন সকাল বেলায়.... মেসের সামনে...আমরা। 

Bogra cantonment

 

Bogra Cantonment-11 Infantry Division

আমি এই সেনানীবাসে পর পর দুটু টেনিউর কাটিয়েছিলাম। প্রথম বার ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল নাগাদ। তখন ২৯ ডিভ লোকেতিং এ আমার পোষ্টিং ছিলো। উত্তর বঙ্গের ম্যাপ আপগ্রেড করার জন্য আমি, আমার আরেক কোর্ষ মেট মেজর আলমাস পুরু নর্থ বেংগলের সার্ভের কাজে লিপ্ত ছিলাম। সেই সুবাদে প্রতিটি ডিষ্ট্রিক্ট আমার চেনা, রাস্তাঘাট আমার চেনা। অনেক স্মৃতি অনেক কষ্ট, অনেক রাত জাগানিয়া পরিশ্রম লুকিয়ে আছে এই সময়টাতে। আমনুরা, নাচোল, পোর্ষা, মেহেরপুর, ঈশ্বরদী, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, ফরিদপুর, ঠাকুরগা, জয়পুরহাট, পাচবিবি, হিলি, কোথায় যাই নাই এই সময়ে!! পুরু কাজটি হয়েছে ১১ আর্টিলারি ব্রিগেডের অধীনে। জাহাংগীরাবাদ সেনানিবাসের কমান্দারের তত্ত্বাবধানে। 

দ্বিতীয়বার যখন আমার পষ্টিং হয়, তখন আমার পোষ্টিং হয়েছিলো স্বয়ং ডিভিশনাল হেড কোয়ার্তারে জেনারেল ষতাফ অফিসার-২ (অপারেশন) হিসাবে। খুবই গুরুত্ব পূর্ন একটি নিয়োগ। বলা যায় ডিভিশনাল হেড কোয়ার্তারের যতো অপারেশন, যতো ট্রেনিং, যতো অপারেশনাল একাউন্ট আছে সব কিছু নিয়ন্ত্রনের চেয়ার। এ সময়ে জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ছিলেন মেজর জেনারেল আনোয়ার। 

ফলে বগুড়া সেনানীবাস আমার অত্যান্ত প্রিয় একটি সেনানিবাস। এর প্রতিটি মাঠে, প্রতিটি ইউনিটে, প্রতিটি ইভেন্টে, ফায়ারিং রেঞ্জ থেকে শুরু করে এর ডেকোরেশনাল সব কিছু, সুইমিং পোল, রেষ্টুরেন্ত, ডিভিশনাল গেট, সব কিছুতে আমার হাত ছিলো। জেনারেল আনোয়ার ছিলেন একজন বিচক্ষন অফিসার। তাঁর আমলেই এই ক্যান্টন মেন্টের আমুল পরিবর্তন শুরু হয়। 

আজ থেকে শত বছর পর-১

আজ থেকে শত বছর পরে আমার এই লেখাটা যারা পড়বেন তাদের মধ্যে আজকের দিনের আর কেউ বেচে নেই। অথচ আজকের দিনের জীবিত মানুষগুলি কিংবা আমার আগের শতবছরের মানুষগুলি যে বিষয়গুলি নিয়ে একে অপরের সাথে পরস্পরে বিবাদ, মনোমালিন্য, যুদ্ধ, অভিমান, মারামারি, কাটাকাটি, হানাহানি করেছিল, সেগুলি আর আমরা কেহই মনে রাখতে পারবো না, আমরা একেবারেই ভুলে যাবো। পুরুটাই ভুলে যাবো। কারন এসবের আর কোনো মাহাত্য আমাদের কাছে নাই। 

আমরা যদি আরো শতবছর আগে ফিরে যাই, ধরি সেটা ১৯২২ সাল। সেই দিনের পৃথিবী কেমন ছিলো আর সেই পৃথিবীর মানুষের মধ্যে কি নিয়ে ভয়, শংকা, মারামারি, হানাহানি নিয়ে তাদের মস্তিষ্কে কি ভাবনার খেলা চলছিলো, তাদের মুখের চাহনীতে কি চিত্র ফুটে উঠেছিলো সেই চিত্র কিন্তু আজকের দিনের কোনো মানুষের মাথায় বা মস্তিষ্কেও নাই। আর ইতিহাসের কল্পনায় থাকলেও সেই বাস্তবতার নিরিখে তার আসল চিত্রের ধারে কাছে আজকের দিনের আমরা তা আচ করতেও পারি না।   

জাষ্ট একবার ভাবুন তো! সেই অতীত দিনের কোনো এক পরিবারের সদস্যগন হয়তো তাদের পারিবারিক জমাজমি, কিংবা সম্পদের রেষারেষিতে যখন এক ভাই আরেক ভাইকে, কিংবা এক বোন আরেক ভাই বা বোনের বিরুদ্ধে চরম রেষারেষিতে একে অপরকে খুন, জখম বা আঘাত করেছে, কিংবা নিজের লোভের কারনে অন্যের কোনো সম্পত্তি দখল করার জন্য চরম আঘাত করেছে কিংবা এক অংশীদার আরেক অংশীদারকে সমুলে বিনাশ করতে মরিয়া ছিলেন, সেই সম্পদ কিংবা সেই অর্থ এখন কার কাছে? আর সেই বা কোথায়? পাহাড় পরিমান সম্পদ গড়া হয়েছিলো, ব্যাংক ভর্তি টাকা, সোনাদানা হয়তো জমা করা হয়েছিলো, সেই হিসাবের খাতা এখন আর কোনো গোপন নাই, না আছে তাকে যক্ষের মতো ধরে রাখার কোনো আকুতি বা পেরেসানি। কারন আমি সেই জগতেই নাই। আমাদের গড়ে যাওয়া সম্পদ যেখানে, তার থেকে আমরা এত দূর যে, তাকে কোনো অবস্থাতেই আর স্পর্শ পর্যন্ত করার কোনো অলৌকিক শক্তিও নাই। এটাই মানুষের জীবন। সে যাইই কিছু আকড়ে ধরুক না কেনো, সময়ের কোনো এক স্তরে গিয়ে সে আর কোনো কিছুই নিজের জন্য আজীবন আগলে রাখতে পারে না। যদি বলি-সেগুলি পরিবার পাবে, পরিবারের পরিবার বংশ পরম্পরায় পাবে, সেটাও সঠিক নয় কারন পরিবার গঠন হয় অন্য পরিবারের মানুষ নিয়েই যারা পিউর পরিবার বলতে কিছুই থাকে না। এটা অনেকের কাছে শুনতে অবাক বা যুক্তিহীন মনে হলেও এটাই ঠিক যে, আত্মকেন্দ্রিক এই পৃথিবীতে নিজের সন্তানও নিজের মতো না, নিজের পরিবারও নিজের মতো না। আমাদের নিজের চিন্তাভাবনা নিজের সন্তানের চিন্তাভাবনা, বা নিজের পরিবারের চিন্তাভাবনা কখনোই একই সমান্তরালে বহমান নয়। আর ঠিক তাই, এক পরিবার আরেক পরিবারের সাথে মিশ্রন হতে হতে প্রাচীন পরিবারটিও একদিন তার নিজের সত্ত্বা হারিয়ে খান বংশের মানুষেরা, সৈয়দ বংশ, সৈয়দ বংশ বঙ্গানুক্রমে মাদবর কিংবা চৌধুরী বংশে রুপান্তরীত হয়ে যায়। আমাদের আমিত্ব পর্যন্ত আর কেউ রাখতে পারেনা।   

যাক যেটা বলছিলাম শত বছরের বিবর্তনের কথা।

ছোট একটা উদাহরন দেই। আজ থেকে সবেমাত্র ৩০/৪০ বছর আগের কথা যখন আমরা বা আমি ছোট ছিলাম, স্কুলে লেখাপড়া করতাম। তখনো স্কুলের ক্লাস ক্যাপ্টেন হবার জন্য কিংবা কলেজের ফুটবল টীমে নাম লিখার জন্য এক সহপাঠির সাথে আরেক সহপাঠির মধ্যে কতই না কোন্দল কিংবা বিরুপ সম্পর্কে পতিত হতাম, আজ প্রায় সেই ৩০/৪০ বছর পর সেই স্কুলের কেইবা মনে রেখেছে কে স্কুলের ক্যাপ্টেন ছিলো বা সেই দিনের সেই ফুটবল টীমের আমি একজন সদস্য ছিলাম? আজব ব্যাপার হচ্ছে-আমি যে সেই স্কুলের একজন দাপুটে এবং অতীব জনপ্রিয় ছাত্র ছিলাম, সেটাই বা কয়জন এখন আবিষ্কার করতে গিয়ে তাদের সময় অপচয় করছে কিংবা মনে রাখার চেষ্টা করছে? যদি সেটাই হয়, ভাবুন তো আজ থেকে শতবছর পর তাহলে আমার বা আমাদের অস্তিত্বটা কোথায়? কোথাও নাই। আর এই শতবছর পেরিয়ে যখন আরো শতবছর পেরিয়ে যাবে, তখন যেটা হবে সেটা হলো-আমি যে এই পৃথিবীতে ছিলাম, সেটাই বিলীন হয়ে যাবে। এখন আমরা যারা যাদেরকে এই পৃথিবীতে গর্ব করে মনে রাখি তারা হয়তো অতীব ব্যতিক্রম। তারা তাদের সময়ে সম্পদের কারনে নয়, কর্মের কারনে ‘সময়’টাকে আলাদা করে যুগে যুগে সেই কর্মের ফল ভোগ করতে পারে এমন কিছু কর্ম হয়তো পিছনে ফেলে গিয়েছেন বিধায় হয়তো শতবছর পরেও আমরা তাদের সেই কর্মফল ভোগকারীরা কিছুটা মনে রাখি। এটার হার অতীব এবং নিছক খুব বেশী না। আমরা সেই তাদের দলে পড়ি না। 

হয়তো অনেকেই বলবেন, আজকের দিনের ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের আজকের দিনের সমস্ত মেমোরী সংরক্ষন করে রাখতে পারি যা যুগে যুগে আমাদের বংশ পরম্পরায় এর সংরক্ষন করে আমাদেরকে জীবিত রাখবেন। এটা কোনোভাবেই সত্য না। এ ব্যাপারে একটা আরো ছোট উদাহরন দেই- জগত বিখ্যাত সঙ্গীতরাজ মাইকেল জ্যাকসন যিনি ২০০৯ সালে মারা যান। খুব বেশীদিন নয়, এটা মাত্র ১৩ বছর আগের কথা। এই মাইকেল জ্যাকসন সারা দুনিয়ায় এমন কোনো জায়গা ছিলো না যে যুবসমাজ, কিংবা শিক্ষিত সমাজ তাকে না চিনতো। তার বিচরন ছিলো সর্বত্র। তার চলাফেরা, পোষাকাদি, তার অঙ্গভঙ্গিও তখনকার দিনের প্রতিটি যুবক যেনো মডেল হিসাবে নিয়ে নিজেরাও সে রকমের পোষাক, আচরন ভঙ্গীতে অনুসরন করতো। একবার ভাবুনতো, এ যুগের কতজন যুবক আজ সেই মাইকেল জ্যাকসনের নামটা পর্যন্ত জানে? তাহলে আজ থেকে শতবছর পরের চিত্রটা কি হবে? হতে পারে, এই মাইকেল জ্যাকসনের নামটা সারা সঙ্গীত শুধু নয়, আর কোথাও হয়তো প্রতিধ্বনিতে বেজে উঠবে না। অথচ এক সময় সেইই ছিলো ঐ সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটা ইমেজ। আরো খুব কাছের একটা উদাহরন দেই।

প্রতিদিন আমরা অসংখ্য ছবি তুলছি, আমরা তা আমাদের ফেসবুক, সোস্যাল মীডিয়ায় তা প্রতিদিন পোষ্ট করছি। আমরাই গত পাচ বছরের আমাদের ছবিগুলিই পুনরায় রিভিউ করে দেখার সময় পাই না নতুন নতুন ইভেন্টের ছবির কারন। যা একবার তোলা হয়েছে, যা একবাএ দেখা হয়েছে, তার আর খুব একটা সংরক্ষন করে বারবার দেখার স্পৃহাই আমাদের নাই, তাহলে আমার এসব স্মৃতিময় ইভেন্টের সেই স্মৃতি অন্য আরেকজন রাখবে এটা ভাবা বোকামি। হতে পারে আমার বা আমাদের অন্তর্ধানে সাময়িকভাবে সেগুলি খুব কাছের কিছু লোক একবার দুইবার দেখে কিছু স্মৃতি রোমন্থন করবেন। আর ব্যাপারটা এখানেই শেষ।

আর এটাই জীবন। আমাদের এই ছোট আধুনিক জীবনে আমরা আসলে একে অপরের সাথে হয়তো কন্টাক্টে আছি, কিছু সেই কন্ট্যাক্ট মানে কিন্তু এটা নয় যে, আমরা একে অপরের সাথে কানেক্টেড। একই ঘরে বসবাস করে, কিংবা একই প্লাটফর্মে একসাথে থাকার নাম হয়তো কন্ট্যাক্ট, কিন্তু এর মানে কানেকশন নয়।  আমরা ধীরে ধীরে একে অপরের থেকে কানেকশনবিহীন হয়ে পড়ছি। আর এমন একটা কানেকশনবিহীন সম্পর্কে কেনো আমরা একে অপরের সাথে বিদ্বেষ নিয়ে বেচে থাকছি?

এটাই যদি হয় আমাদের জীবনের চিত্র, তাহলে পরিশেষে চলুন আমরা আমাদের জীবনটাকে একটু অন্যরকম করে ভাবী। জীবনটাকে একেবারে সহজ করে ফেলি। কেউ এই পৃথিবী থেকে জীবন্ত ফিরে যেতে পারবো না। কেউ জীবন্ত ফিরে যেতে পারেও নাই, না আজীবনকাল এই প্রিথীবিতে থাকতে পেরেছে। আজকের দিনের যে গাড়িটা কিংবা অত্যাধুনিক ফোনটা আমরা ব্যবহার করছি সেটাও একদিন জাংক হিসাবেই শেষ হবে। কোনো কিছুই আর রিলেভেন্ট মনে হবে না। তাই যে সম্পদের জন্য আমরা আজ এতো হাহাকার করছি, একে অপরের উপর ক্ষিপ্ত হচ্ছি, এইসব কিছুই আসলে নিরর্থক, অকেজো। হ্যা, জীবনের চাহিদার অতিরিক্ত কোনো কিছুই আমাদের দরকার নাই। আমাদের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রন করা আবশ্যিক, একে অপরের ভালোবাসার মাত্রাকে আরো বাড়িয়ে তুলি, কারো উপর কারো বিদ্বেষ না রাখি, কারো সম্পত্তির উপর কিংবা কারো হকের উপর আমরা কেউ লোভ না করি। না কারো উপর কোনো জুলুম করি, না কাউকে নিজের সার্থের কারনে কোনো ক্ষতি করি। যতক্ষন আমরা অন্যের সাথে নিজের সাথে তুলনা না করি, ততোক্ষন পর্যন্ত সম্ভবত আমরা নিজের লোভের কাছে পরাভূত হবো না।

আমাদের সবার গন্তব্য স্থান পরিশেষে একটাই-কবর। কেউ হয়তো আগে কেউ হয়তো পরে। হোক সে মসলমান, হোক সে অন্য কোনো ধর্মের। কোনো কিছুই সাথে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। শতবছর পরে এমনিতেও আমরা হারিয়েই যাবো। যখন নিজেরাই হারিয়ে যাবো, তাহলে আমাদের অসাধু উপায়ে হানাহানি, মারামারি কিংবা জোর করে ছিনিয়ে নেয়া গড়ে তোলা সাম্রাজ্যই বা রাখবো কার জন্যে আর কেনো? কিছুই থাকবে না, রাখতেও পারবো না।

শতবছর পরেও এই আকাশ নীলই থাকবে, পাহাড় সবুজই থাকবে, সাগর সেই শতবছর আগের মতোই কখনো কখনো উত্তালই হবে। শুধু আমাদের নামের সম্পদগুলি অন্য আরেক নতুন নামে লিপিবদ্ধ হবে, আমার শখের সব কিছু অন্য আরেকজন তার নিজের মতো করে ব্যবহার করবে। আমার বলতে কিছুই নাই। আজ যে ক্ষমতার মসনদে বসে আমি হাতের ইশারায় জুলুম উপভোগ করছি, সেই ক্ষমতার মসন্দে বসেই হয়তো অন্য কোনো এক সময়ে আমারই বংশধর কারো দ্বারা শাসিত হচ্ছে, কে জানে। এর পার্থিব অনেক নমুনা আমরা দেখেছি মীর জাফরের বংশে, হিটলারের পতনে, কিংবা মুসুলিনি বা অনেক রাজার জীবনে। আজ তারা সবাই এক কাতারে।

এটা যেনো সেই বাল্ব গুলির মতো-কেউ শত ওয়াটের বাল্ব, কেউ হাজার পাওয়ারের বাল্ব, কেউবা কয়েক হাজার ওয়াটের বাল্ব কিন্তু ফিউজ হয়ে যাওয়ার পরে সবাই সেই ডাষ্টবিনে একসাথে। সেখানে কে শ ওয়াটের আর কে হাজার পাওয়ারের তাতে কিছুই যায় আসে না। না তাদেরকে আর কেউ খুজে দেখে।  

আজ থেকে ১০০ বছর পর-২

আজ থেকে ১০০ বছর পর ঠিক এই সময়ে দেখতে পাবো আমাদের যুগের বেশীরভাগ অথবা প্রায় শতভাগ মানুষ আর এই পৃথিবীতেই নাই। হয়তো খুবই নগন্য কিছু সৌভাগ্যবান অথবা অন্যঅর্থে দূর্ভাগ্যবানও বলা যেতে পারে, তারা বার্ধক্যের বোঝা মাথায় নিয়ে ক্ষীনদৃষ্টি আর দূর্বল শরীরে এমন কিছুর জন্য অপেক্ষা করছে যা কখনোই তারা চায় নাই। যার নাম ‘মৃত্যু’।

এই শতবর্ষে ক্যালেন্ডারের পাতা প্রতিদিন পালটে গেছে, তাঁর সাথে সাথে পালটে গেছে তারিখ, মাস, বছর এবং অতঃপর যুগ। কেউ এটাকে আমরা থামাতে পারি নাই, পারবোও না, আর কেউ (হোক সে কোনো প্রতাপশালী সেনাপতি, হোক সে চৌকস কোনো রাজনীতিবিদ বা রাষ্ট্রনায়ক, কোনো বিজ্ঞান কিংবা কোনো বিজ্ঞানি, কোনো সর্বোচ্চ পদধারী ধার্মিক নেতা কিংবা দূধর্ষ সন্ত্রাসী) এই অমোঘ প্রাকৃতিক নিয়মটাকে উপেক্ষা করে অগোচরেও পরিবর্তন করতে পারে নাই, আর করার কোনো ক্ষমতাও রাখে না। এটাই প্রকৃতি আর তার নিয়ম।

আজ এই মুহুর্তে যারা পথেঘাটে পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে, তাদের বেশীর ভাগ মানুষকেই আমি চিনি না। এদের কেউ হয়তো কোটটাই পড়া, কেউ হয়তো ফুটপাতে নোংরা চুলে বসা, আবার কেউ হয়তো আমার মতোই স্থবির। সময়ের পথ ধরে আমার আগের পূর্ব পুরুষের কিংবা আমার প্রয়াত বন্ধুবান্ধবদের পথ ধরে এদেরই কেউ কেউ মহাশ্মশানের সারিসারি পাথরে নাম লেখা কোনো এক নাম ফলকের মধ্যেই এক সময় লুকিয়ে যাবে ঠিক সেইস্থানে যার কথা আমরা আজ ভাবতেও পারি না। সেখানে যেমন কোনো আধুনিক পোষাক বলতে কিছু থাকে না, আর না থাকে কোনো ধার্মিক ব্যক্তির আলখেল্লাটাও। অনেকের বেলায় হয়তো সেই নামফলকটাও থাকবে না। কোথায় আছেন তারা, কার জায়গায় আছেন তাঁরও কোনো হদিস হয়তো পাওয়া যাবে না। আজ যে শরীরটাকে প্রতিদিন নোংরা মনে করে দেশী বিদেশী সাবান শ্যাম্পু দিয়ে সুগন্ধী মাখছি, তখন এই শরীরের মধ্যে হাজারো পোকা মাকড়, কর্দমাক্ত মাটি, নোনা জল, অপরিষ্কার জলের সাথে ভেসে আসা দূর্গন্ধময় আবর্জনায় সারাটা শরীর ভেসে গেলেও তাকে আর সুগন্ধী কেনো, উম্মুক্ত হাত দিয়ে সরানোর মতোও আমাদের কোনো শক্তি থাকবে না। শরীরে মাংশ পচেগলে মিশে যাবে মাটির সাথে, হয়তো কোনো এক কুকুর কিংবা শিয়াল আমাদের শরীরের অবশিষ্ঠ হাড্ডিটি নিয়ে দূরে কোথাও পচে যাওয়া মাংশটুকু খাওয়ার জন্য দৌড়ে অদৃশ্য হয়ে যাবে। কার সেই কংকাল, কার সেই হাড্ডি, এই পৃথিবীর কোনো জীবন্ত মানুষের কাছে এর কোনো মুল্য নাই।

যে ঘরটায় আমি সারাদিনের ক্লান্তি শেষে অবসাদ শরীর নিয়ে মুলায়েম বিছানায় গা হেলিয়ে দিতাম, সেই ঘরটা হয়তো থাকবে অন্য কারো দখলে। কে তারা, কি তার পরিচয়, সেটাও হয়তো আমার জানা হবেনা। যে বাগানটায় আমি প্রায়ই পায়চারী করে করে আকাশ দেখতাম, গাছগাছালীর মধ্যে উড়ে আসা ভ্রমর কিংবা পোকামাকড় দেখতাম, সেই বাগানের দখল এখন কার দখলে কে জানে। বাগানের গাছগাছালীর পরিচর্যার নামে যে পোকামাকড়গুলিকে আমি বিষ দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করতাম, আমি আজ তাদেরই দখলে। যে বাচ্চাদের মুখরীত কোলাহলে আমার ঘর ভরে থাকতো, যাদের আগমনে আমার মন পুলকিত হতো, আজ সেখানে অন্য কেউ মুখরীত হচ্ছে। কতই না সাবধানতায় আগলে রেখেছিলাম আমার সেইঘর, সেই লন, কিংবা আমার যতো আয়েশী জিনিষ, আজ সেগুলি আমার কিছুই নয়। আমার সুন্দুরী স্ত্রী যখন তাঁর লাল শাড়িটা পড়ার পর কিংবা আমিই যখন নতুন কোনো একটা ড্রেস পড়ে বারবার আয়নার সামনে গিয়ে কতবার দেখতে চেয়েছি-কেমন লাগে আমাকে, অথচ আজ সেই আমি বা আমার সেই সুন্দুরী স্ত্রী তাঁর চেহাড়া কেমন দেখায় কাফনের সেই ধবল পোষাকে সেটা দেখার কোনো পায়তারাও নাই। সেই বৃহৎ আয়নাটার আর কোনো মুল্য নাই আমার কাছে। হয়তো সেখানে অন্য কেউ এখন তাঁর চেহাড়া দেখছে, হয়তো লাল শাড়ির পরিবর্তে নীল বা টাইকোট পড়া কোনো এক পুরুষ একটা ভেষ্ট পড়া ব্যাকব্রাস চুলের মহড়া দিচ্ছে। যে গাড়িটা প্রতিদিন আমাকে মাইলকে মাইল ঠান্ডা কিংবা শীততাপ হাওয়ায় বসিয়ে, মিষ্টি মিষ্টি গান শুনিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে গেছে, সেটা আর আমার কোনো প্রয়োজন নাই। না সে আমাকে আর খোজে।

কখন কোথায় কাকে কাকে নিয়ে অথবা আমার নায়নাতকুর আত্তীয়স্বজন স্ত্রী পোলাপান নিয়ে কবে কোথায় কি আনন্দে মেতেছিলাম, সেই ইতিহাস আর কেউ কখনো মনে রাখবে না। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কতটা পথ হেটেছিলাম, আর সেই হাটাপথে আমি কতটুকু ঘাম ঝরিয়ে চূড়ায় উঠে কি তৃপ্তি পেয়ে কি আনন্দে কতটুকু আত্তহারা হয়েছিলাম, সেই তথ্য না কেউ জানবে, না কেউ জানার কোনো আগ্রহ দেখাবে। কার সাথে কি নিয়ে আমার মনোমালিন্য হয়েছিলো, বা কে আমাকে কতটুকু ভালোবেসে কি অবদান রেখেছিলো অথবা কার কোন আগ্রহে আমি কোথায় কি করেছিলাম, কার কারনে আমার অন্তরে জালা উঠেছিলো আর কার কারনে আমার দিন আর রাত একহয়ে গিয়েছিলো, সেই ইতিহাসের কোনো মুল্য আজ বেচে থাকা মানুষগুলির কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। না তাদের কাছেও যাদের জন্য এসব অন্তর্জালা ঘটেছে। নতুন প্রজন্ম নতুন পরিবেশ, নতুন সব কাহিনীতে ভরে থাকবে বর্তমান আর আগামীর প্রজন্ম। সেই পুরাতন পরিবেশের কোনো স্থান থাকবে না আজকের এই পরিবর্তীত বন্ধুমহল পরিবেশে। হয়তো কোনো এক ছোট বালিকা আমাদের কথা শুনে, অথবা ভালোবেসে একগুচ্ছ ফুল নিয়ে আমাদের সেই সমাধিতে দাঁড়িয়ে একটু অন্যমনষ্ক হয়ে পুষ্পস্তবক দিতেও পারে কিন্তু সেটা নিছক একটা মুহুর্তের ইমোশনাল কারনে। সবার বেলায় এটা আবার নাও হতে পারে। কিংবা জন্ম জন্মান্তরের শেষে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শেষে আমি এমন করে বিলীন হয়ে যাবো যে, সেই অবুজ বালিকার পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো আর একটা বাশী ফুলও নিয়ে আমার সেই সমাধিতে দাঁড়াবে না। কারন আমি তাদের কোনো ইতিহাসের মধ্যেই নাই। চিরতরেই বিলীন।

আজ যে সেলফীটা অনেক যত্ন করে তোলা হয়েছে, হাসিমাখা মুখ, চুলের বাহার, পোষাকের পরিপাটিতা, সব কিছু ধীরে ধীরে সেই শতবর্ষ পরে এমন করে মলিন হয়ে যাবে, হয়তো দেখা যাবে, সেই ছবি পরে আছে এমন এক কোনায় যেখানে থাকে পরিত্যাক্ত কোনো কাগজ বা ময়লার বাক্স। কোনো একদিন সেটা হয়তো অপ্রয়োজনীয় হয়েই বেরিয়ে যাবে আমার সেই শখের ঘরের দরজা পেরিয়ে। আমার প্রতিদিনের নেশা সেই সোস্যাল মিডিয়া, হোয়াটসাপ, ইত্যাদি সব কিছু এক নিঃশ্বাসে বন্ধ হয়ে যাবে সারাদিনের আপডেট আর কাহিনি। যে অর্থের জন্য আমি প্রতিদিন সারাটা সময় শুধু পরিশ্রমই করে গেছি, সেই অর্থ আজ আমার কোনো কাজেই আসবে না। শতবছর পরে তো আমার অর্থে গড়া কোনো এক ইমারতের কোনো একটা ইটের মধ্যেও আমার কোনো নাম বা অস্তিত্ব থাকবে না। হোক সেটা আমার পরিশ্রমে গড়া কিংবা আমার নিজের। সেখানে হাত বদলে বদলে আমার অস্তিত্তের শেষ পেরেগটুকু মেরে সেখানে হয়তো কোনো এক লোকের নাম লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। যেটা আজ আমার নামে পরিচিত, শত বছর পর সেটা আমার আর নাই, না সেটা আমার নামেও অহংকার করে।

কি অদ্ভুত না?

শত বছরের হিসাবে যেমন আমি আর নাই, হাজার বছরের হিসাবে তো আমি কখনোই নাই। তারপরেও আজ আমি অনেক ব্যস্ততায় দিন কাটাই আগামিকালের জন্য, প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অন্যের ধন প্রকাশ্যে অথবা গোপনে চুরি করে বিত্তবান হবার পার্থিব জগতে সুখী হবার নিমিত্তে আগামীকালের শান্তির জন্য মগ্ন। অথচ আগামিকালটাই আমার না। এই পৃথিবী আমাকে কখনোই মনে রাখবে না। কারন সে আমাকে ভালোই বাসে নাই। অথচ আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম আমার জীবনের থেকেও বেশী। আর এটাই এই পৃথিবী। আমার থেকেও অনেক নামীদামী রাজা, মহারথী সময়ের পথ ধরে বিশ্বকে দাপিয়ে গেছেন, তাদেরকেও এই প্রিথিবী মনে রাখে নাই। আসলে এই পৃথিবীর কোনো বর্ষাই আমার না, কোনো শরতই আমার না। এর গাছপালা, এর নীলাকাশ, এর সুগভীর সমুদ্র কিংবা ঘনসবুজ পাহাড় কোনো কিছুই আমার না। আমার ঘরটাও।

শতবছর পরে, আমি এক অচেনা, নামহীন, অস্তিত্বহীন মানুষ যে আজকের দিনে বহু ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটিয়ে কিছুটা সময় এই নীল আকাশ, ঘন সবুজ পাহাড় অথবা পাখীদের কিচির মিচির শুনেছিলাম। অথচ এই সময়ে এসে কোনো এক সন্ধ্যায় খুব জানতে ইচ্ছে করে- আজ থেকে শত বছর আগে কি ঠিক এখানে কেউ বসেছিলো যেখানে আমি বসে আছি? খুব জানতে ইচ্ছে করে-কে সেই ভাগ্যবান যুবক আজ থেকে ঠিক শতবর্ষ পরে এখানে বসে চা কিংবা কফি পান করছে? হয়তো দেখা হবে সবার সাথে কোনো এক নাম না জানা ময়দানে।

তাহলে আরেকটা অনেক বড় প্রশ্ন মনে জেগেই রইলো- আমার স্রিষ্টিকর্তা আমাকে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তাহলে এই বিশ্ব ভ্রমান্ডে পাঠিয়েছিল? What was the purpose of my life to be created by my Lord?

পৃথিবীটা শুধু মানুষের জন্য না।

মানুষ সম্ভবত তার বিলুপ্তির সীমায় পদার্পন করেছে ইতিমধ্যে। ভয়ংকর কথা বলে মনে হলেও এটা প্রাকৃতিক নিয়মের একটা চলমান অংশ। এর আগেও এই বিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে, আর সেটা একাবার নয়, পরপর পাচবার।

বিজ্ঞানীরা বলেন আমাদের এই পৃথিবীর বয়স প্রায় সাড়ে চার বিলিয়নের মতো। এই সাড়ে চার বিলিয়ন বছরে পৃথিবীর প্রায় ৭৫% প্রানী সমুহের বিলুপ্ত হয়েছে বেশ কয়েকবার যাকে বলা হয় “মাস এক্সিঙ্কশন”। মাস এক্সিঙ্কশন তাকেই বলে যখন কোনো স্থান থেকে ৭৫% প্রজাতী (গাছপালা, জীবজন্তু, কিংবা অদৃশ্য কোনো প্রানীসকলসহ অনেক অনুজীব) মাস এক্সিঙ্কশন হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে। যার মধ্যে রয়েছে ডাইনোসর এবং আরো অনেক প্রানী।

এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে, ন্যাচারাল প্রক্রিয়ায় সমস্ত জীবজন্তু, গাছপালা, জীবানু, অনুজীব সবাই একটা জীবন মরনের মধ্যে থাকে। কিছু বিলুপ্ত হয়, আবার কিছু নতুন জন্ম হয়। এভাবেই ন্যাচারাল ব্যালেন্স হয়। কিন্তু গত ৪০/৫০ বছর যাবত এই বিলুপ্তির ঘাটতি যেমন ম্যামাল, ব্যাক্টেরিয়া, প্ল্যান্টস, অনুজীব ইত্যাদি ন্যাচারাল প্রক্রিয়ায় হচ্ছে না, হচ্ছে আর্টিফিশিয়ালভাবে, আর সেটা হচ্ছে প্রায় দশ হাজার গুন গতিতে।

তাহলে এর কারন কি? এর একটাই কারন। মানুষ।

মানুষ মনে করে এই পৃথিবী শুধু মানুষের জন্য, অন্য কারো জন্যে নয়। কিন্তু এটা শতভাগ ভুল। পৃথিবীর মাটির গভীরে যে ব্যাক্টেরিয়া আছে তার থেকে শুরু করে আকাশে যারা ভেসে বেড়ায়, সমুদ্রের তলদেশে যেসব নাম না জানা প্রানীকুল অনুজীব ইত্যাদি আছে, সবার জন্য এই পৃথিবী। কিন্তু মানুষ সেটা ভাবে না। ফলে এই মুহুর্তে মানুষ একা পৃথিবীর ৭০% ল্যান্ড এবং ব্যবহারযোগ্য পানী ব্যবহার করছে। বাকী ৩০% ল্যান্ড আর ৩০% ফ্রেস পানি বাকী যতো গাছপালা, উদ্ভিদ, অন্যান্য প্রানীসকলসহ ব্যাক্টেরিয়া, জীবানু, নাম না জানা প্রানীদের জন্য রয়েছে যা নিতান্ততই অপ্রতুল।

আর এই ঘটনাটা ঘটতে শুরু করেছে ১৯৭০ সালের পর থেকে। ১৯৭০ সাল কেনো বলছি? কারন

১৯৭০ সালের এক হিসাবে দেখা গেছে যে, আমাদের পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিলো প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন। ফলে এই সাড়ে তিন বিলিয়ন মানুষের জন্য যে বসবাস যোগ্য ল্যান্ড এবং ফ্রেস পানি দরকার ছিলো তা ১৯৭০ সালেই তার কোটা পরিপুর্ন হয়ে যায়। ফলে ১৯৭০ সালের পর যে হারে মানুষের সংখ্যা বেড়েছে তাতে ইউজেবল ল্যান্ড এবং ফ্রেস পানির দখলও মানুষের বেড়েছে, বেড়েছে আর্বানাইজেশন, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেন ইত্যাদি। অর্থাৎ অন্যান্য প্রানী, জীববজন্তু, গাছপালা এদের জন্য পর্যাপ্ত ল্যান্ড বা ফ্রেস পানির ভাগ কমে যাচ্ছে এবং গেছে। এই পপুলেশন বোম্ব এখন ধীরে ধীরে আরো বেড়েই চলছে বিধায় মানুষ ছাড়া অন্যান্য জীবকুলের একটা বিলুপ্তি চোখে ধরা পড়ছে। উদাহরন দেই- 

আগে মানুষ ন্যাচারাল পরিবেশ ভোগ করতো, তাদের বাড়ির পাশে গাছপালা থাকতো, সেই গাছপালায় অনেক পাখীর বাসা থাকতো, বাড়ির পাশে ঝোপ জংগলে হয়তো পিপড়া, সাপ, কিংবা মাটির নীচে অনেক কেচো, শামুক, জীবানু ব্যাক্টেরিয়া, আরো ইত্যাদির থাকার ব্যাপারটা চোখে পড়ত যা এখন কংক্রিটের কারনে, মানুষের আর্বানাইজেশনের কারনে, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারনে ধীরে ধীরে এসব জীবজন্তুর আর থাকার কোনো জায়গা রইলো না। বাড়ির পাশে হয়তো ১০০ গজ দূরে যে সাপটা বাস করতো তার আর কোথাও থাকার জায়গা নাই, বংশবৃদ্ধির কোনো উপায় নাই, পাখীরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে যেতে এক সময় তারাও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, অনেক প্রজাতীকে এখন আর চোখেও দেখা যায় না। অনেক জলজ মাছের এখন শুধু নাম পাওয়া যায়, বাস্তবে তারা প্রায় উধাও হয়ে গেছে।

১৯৭০ সালে যেখানে মানুষ ছিলো সাড়ে তিন বিলিয়ন, এখন সেটা দাড়িয়েছে আট বিলিয়নে। অর্থাৎ প্রায় তিনগুন। হাজার হাজার বছরে যতোটা না এই বৃদ্ধির হার বেড়েছিলো, সেটা এই ১৯৭০ এর পর থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক গুন বেশী, প্রায় দশ হাজার গুনের থেকেও বেশী। এর ফলে যেমন বনের অনেক প্রকারের ভাল্লুক, সমুদ্রের স্যালমন ফিস, কিংবা ছোট ছোট প্রজাতী, বনের বহু প্রজাতীর গাছপালা এখন আর চোখে পড়ে না। তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র একটা অঞ্চলের কথা বলি-ল্যাটিন আমেরিকার এমাজন ফরেষ্ট যাকে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়, সেখানে এখন ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের কারনে হাজার হাজার বনাঞ্চল, নদীপথ সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাহলে এই অঞ্চলের প্রজাতিগুলি গেলো কই? জলজ প্রানীগুলি গেলো কই? সেটা এখন আর ফুসফুস হিসাবে কাজ করছে না।

সমদ্রের কথা যদি বলি-দেখবেন পৃথিবীর ডাম্পিং এরিয়া এখন সমুদ্র। এই ডাম্পিং এর কারনে সেখানকার জলজ প্রানীদেরকে আমরা প্রায় গলা টীপে মেরে ফেলছি, তাদের বাসস্থানকে এতোটাই অসহনীয় করে ফেলছি যে, তাদের নিজেরা যেমন বেচে থাকতে পারছে না, নতুন প্রজন্মও আর জন্ম নিচ্ছে না। আগে যেখানে এক লক্ষ জলজ প্রানী নতুন প্রজন্ম এর জন্ম দিতো সেখানে হয়তো এখন দশ হাজার জলজ প্রানীর বসবাস এবং তাদের দ্বারা জন্মদানের প্রজন্মও কমে যাচ্ছে সেই একই হারে। আর এই নতুন প্রজন্মও আবার খুব দ্রুত পরিবেশ বিপর্য্যের কারনে আরেক প্রজন্ম দেয়ার আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এবং এক সময় সবাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

অথচ পৃথিবীটা ওদেরও। শুধু মানুষের জন্য এই পৃথিবীটা না। এই পৃথিবী অনুজীব থেকে শুরু করে সমস্ত জীব জন্তু, গাছ পালা, সবার। খুব বেশী সময় দূরে নয় যেখানে আমরা সবাই আমাদের কারনেই বিলুপ্ত হবো যাকে আমরা মাস এক্সিঙ্কশন বলছি।

হাতে সময় বড্ড কম

এই তো গত ২৯ জুন ২০২৩ তারিখে কুরবানীর ঈদ চলে গেলো। ছুটির দিনে আমি বাসাতেই থাকি, কোথাও ঘুরতে যাওয়া ভালো লাগে না। বাসায় আমার স্ত্রী তার নিজের পছন্দের মতো কাজ করে, শপিং করে, বাইরে যায়, আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত করে, বেশ ভালোই তার সময় কাটে। আমারও সময় কাটে আমার মতো করে। ছোট মেয়ে আমেরিকায় থাকে, সেও ভালো আছে, বড় মেয়ে ডাক্তারী করে, সে ভালো নাই। বড় মেয়ে তার নিজের কারনেই ভালো নাই। তার মধ্যে বাস্তব জ্ঞান অনেক কম, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে সারাক্ষন, আমাদের ভালো সাজেশনের থেকে সে তার পচা কিছু বন্ধু বান্ধবদের কথা বেশী শুনে বিধায় একটা সেটব্যাক থেকে বের হতে না হতেই আরেকটা তার থেকেও খারাপ সিচুয়েশনে পা দিয়েছে যা আমাদের সাথে কোনোভাবেই যায় না। মানে সে একটা বিবাহিত ছেলের সাথে পরকীয়া করছে এবং শেষ পর্যন্ত সেই বিবাহীত স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করেছে শুধুমাত্র ছেলেটা বড় মেয়ের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে। ছেলেটা লোভী, মাছের পোনার ব্যবসা করে, তাও আবার সিজনাল। লেখাপড়া না জানা পরিবার, ছেলেটা শুধু প্রাইভেট মেডিক্যাল থেকে পাশ করা ডাক্তার। আমাদের পছন্দ না এবং আমাদের সাফ উত্তর-আমরা এখানে নেই। কিন্তু বড় মেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। হয়তো চেষ্টাও করছে না। আমাদের সাথে কথা বলা প্রায় বন্ধ।

আমি আমার জীবনের অনেক হিসাব কিতাব করছি প্রতিদিন। প্রায় ৬০ বছর বয়স তো হয়েই যাচ্ছে। এর বয়সের অনেক চেনা পরিজন না ফেরার দেশে চলে গেছে, কেউ যাচ্ছে এবং কেউ কেউ অপেক্ষায় আছে কবে তার শেষদিন চলে আসবে। কেউ উদাসীন ভাবে এখনো মনে করছে, অনেক বছর হয়তো বাকী আছে জীবনের, কেউ কেউ আবার এগুলি ভাবার প্রয়োজন ও মনে করে না কারন এর উপরে কারো হাত নাই। আবার কেউ কেউ এমনো ভাবছে, কিছুই তো করা হলো না নিজের জন্য, পরিবারের জন্য কিংবা বাচ্চা কাচ্চাদের জন্য, তাহলে এখন কি করা?

এসবই নিয়ে সমাজে মানুষের জীবন। কেউ পেয়ে হতাশ, কেউ না পেয়ে হতাশ, কেউ আবার পেতে পেতে আরো না পাওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্টায় আরো বেশী হতাশ। কেউ যেনো সুখী নয়। কোনো মানুষ আজ পর্যন্ত শতভাগ সুখী কিংবা খুশী নিয়ে মৃত্যু বরন করে নাই। কেউ তাদের চাহিদা পুরন হয়েছে এটা মনে করে আর কোনো কিছুই প্রয়োজন নাই এটা ভেবে তাদের প্রতিদিনের আফসোস থেকে বিরত হয় নাই। আর এই ট্রেন্ড আদিকাল থেকে শুরু হয়েছে, কিয়ামতের শেষদিন অবধি এই আফসোস মানুষের থেকেই যাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, দেখা যাবে সেও তার সম্পদের উপর খুশী নয়, সে আরো চায়। হিসাব করে যদি দেখা যায় যে, তার জীবদ্ধসায় সে যা কামিয়েছে, সেই সব প্রতিদিন খরচ করলেও তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সম্পদে বা টাকা পয়সার কমতি হবে না, তারপরেও তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুসচিন্তাগ্রস্থ। সম্ভবত এটাই মানুষের বেসিক ইন্সটিংক্ট। কেউ সুখী না।

কতদিন বাচবো আমরা?

খুব বেশী হলে ৮০ কিংবা ১০০ বছর? কারো কারো ৬০ (যা আমার প্রায় সমাগত), কারো কারো ৭০, কিংবা ৭৫ অথবা বেশীজোর ৮০। যদি মিনিট সেকেন্ডের হিসাব করি, প্রতিটা সেকেন্ড পার হওয়া মানে প্রতিটি সেকেন্ড জীবন থেকে শেষ হয়ে যাওয়া। নতুন করে এক সেকেন্ড যোগ করার কোনো যন্ত্র, বা সিস্টেম তৈরী হয় নাই। এটা ফিক্সড। আর প্রতিটি সেকেন্ড পার হয়ে যাওয়া মানে আমরা সবাই জীবনের ফিনিশিং লাইনের কাছাকাছি অগ্রসর হওয়া অথবা মৃত্যুর স্টার্টিং লাইনে পদার্পন করা। একটা সময় আসবে যখন সব সেকেন্ড শেষ হয়ে যাবে এবং আমরা আমাদের এই জীবনের যাত্রাপথ শেষ করে দেবো। কতটুকু আহরন করেছিলাম, কতটুকু রেখে গেলাম, কে আমার সেই আহরীত সম্পদ কিভাবে ভোগ করবে, কতজন প্রিয় মানুষ আমাদের জীবনে ছিলো কিংবা কতজনকে আমরা ঘেন্না করেছি, কে আমার শত্রু ছিলো, কে আমার মিত্র ছিলো, বা কাকে আমি প্রাধান্য দিয়েছি আর কাকে ঠকিয়েছি, এর সব কিছুর হিসাব সেদিন জমে থাকা সেকেন্ডের মান শুন্য হলে আর কোনো কিছুই আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।  

হাজার বছর বাচতে পারলে না হয় হাতে থাকা সেকেন্ডকে অপচয় করার বদান্যতা থাকতো। সেটা তো আর নাই। তাহলে এতো অল্প সংখ্যক সেকেন্ডের ঝুড়ি নিয়ে মন খারাপ, মনে কষ্ট, কিংবা পচা ব্যাপার স্যাপের গুলিতে সময় নষ্ট করার কোনো সময় কি আসলেই আমাদের আছে? আর ঠিক এই কারনে আমি মাঝে মাঝে যেটা ভাবি-

সময় দিন সেসব ব্যাপারগুলিতে যেখানে আপনি সুখী থাকেন। সময় ব্যয় করুন সেসব কাজে যেখানে আপনার মন প্রফুল্ল থাকে। জানি একা চলতে পারা যায় না, তাই পরিবার, বন্ধু বান্ধবের জন্ম। যদি মনে হয় এগুলি আপনাকে উতফুল্ল রাখে, সেখানে সময় দিন। সবাই আপনাকে হয়তো বরন করে নেবে না, তাহলে সেগুলি ভুলে যান। প্রয়োজন নাই সেসব যেসব আপনাকে হতাশ করে। জীবন একটাই। অন্যের সুখী হাস্যমুখ দেখে আপনি এটা ভাববেন না যে, সে হয়তো অনেক খুসিতে আছে। তাদের মতো করে চল্বার আপনার কোনো প্রয়োজন নাই।

কেউ যদি আপনার পাশে না থাকে কিংবা যারা পাশে থাকার কথা তারা যদি আপনার কষ্টের কারন হয়ে থাকে, ভুলে যান তাদের। যেহেতু আপনার খাওয়া, থাকার কিংবা চিকিৎসার অর্থের অভাব নাই, ফলে দিনভরে আকাশ দেখুন, বৈ পড়ুন, টিভি দেখুন, ভোর বেলা সকালে শিশির ভেজা রাস্তায় ফসলের ক্ষেত দেখুন, বিকালে আকাশ দেখুন, মেঘলা বৃষ্টির বাতাস উপভোগ করুন, নদীর ঘাটে বসে নোউকার পাল তোলা মাঝির ভাটিয়ালী গান শুনুন, রাখালের কন্ঠ শুনুন, ভরা পুর্নিমাতে কিংবা পুর্ন অমাবশ্যায় তীব্র জোয়ারে ফুলে উঠা সাগরকে দেখুন, বেরিয়ে যান কোথাও একা কিংবা কাজের কোনো মানুষকে নিয়ে। যদি সাথী সেটা যেইই হোক, হোক স্ত্রী বা পরিবারের কেউ, সে যদি আপনার এই কন্সেপ্টে বিশ্বাস করে, তাকে নিয়ে বেরিয়ে যান। অবুঝ পশু, কুকুর, বিড়ালের সাথে সময় কাটান, যদি পারেন, অবুঝ শিশুর সাথে অনেক অনেক সময় কাটান। তাদের নিষ্পাপ মুখের হাসি আপনাকে উতফুল্ল করবে।

আর এসবের মাঝে কখনোই আপনার স্রষ্টাকে ভুলে যাবেন না। কারন সবশেষে আপনাকে তার কাছেই যেতে হবে। আপনি আস্তিক বা নাস্তিক যাইই হন না কেনো, সবশেষে কেউ না কেউ তো আপনার সমস্ত কাজের জবাব্দিহিতা করবে। যদি কোনো স্রষ্টা না থেকে থাকে, তাহলে তো বেচেই গেলেন, জীবন শেষ তো কোনো কৈফিয়ত নাই, কিন্তু যদি থেকে থাকে? আর সেই “যদি” ই আপনাকে আপনার এই জীবনের সব কৃতকর্মের জবাব্দিহিতায় আকড়ে ধরবে। তাই অপশন খোলা রাখুন, স্রষ্টাকে আপনার প্রাত্যাহিক সময়ে রাখুন। মন ভালো থাকবে, প্রশান্তিতে থাকবে।

আজ থেকে ১০০ বছর আগের যেমন কাউকে আপনি চিনেন না, নামও জানেন না, তাদের ব্যাপারে যেমন আপনার কোনো জানার আগ্রহও নাই, তেমনি আজ থেকে শতবছর পরে আপনার ব্যাপারেও কেউ জানার আগ্রহ প্রকাশ করবে না, আপনার নামও জানবে না। তাই সেই শত কিংবা সহস্র বছর পরে যদি সত্যিই কিছু আবার এই পৃথিবী থেকে পেতে চান, তাহলে দুহাতে দান করুন।

পৃথিবী সত্যিই সুন্দর যদি আপনি মনে করেন এটা সুন্দর। সমাজের কে কি ভাবলো, সন্তানদের মধ্যে কে আপনাকে কতটুকু মুল্যায়ন করলো, সেটা নিয়ে ভাবার কোনো সুযোগ নাই। পৃথিবীর শুরু থেকেই সমস্ত বাবা মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য আপ্রান সব কিছু করে গেলেও সেইসব সন্তানেরা খুব অল্প সংখ্যক সন্তানেরাই তাদের বাবা মায়ের প্রতি ন্যায় বিচার করেছে।

তাই, নিজে আনন্দ করুন, নিজে পৃথিবীর সব কিছু আপনার সাধ্যের মধ্যে ভোগ করুন। হাতে খুব একটা সেকেন্ড জমা নাই।

পতেংগা-২০২৩

কথায় আছে, Defense Life is a man’s life and once a soldier is always a soldier. অন্য কারো বেলায় এটা কতটুকু সত্য সেটা আমার জানা নাই, কিন্তু এই অকাট্য বাক্যটা আমার বেলায় শতভাগ প্রযোজ্য। ২০০৪ সালে ভলান্টারিলি আর্মি থেকে অবসর নেয়ার পর থেকে আমি আজো মনে মনে শতভাগ যে ফৌজ সেটা আমি মনেপ্রানে উপলব্ধি করি। কোথাও কাউকে ইউনিফর্ম পড়া দেখলে আজো আমি যেচে কথা বলি, ভালো লাগে। কেউ আমার এই আর্মি বা ডিফেন্স বাহিনীর ব্যাপারে কথা বললে এখনো আমার গায়ে লাগে। কেউ ভালো বললে আমি আজো এর কৃতিত্তের অংশটুকু যেনো নিজের, সেটা উপলব্ধি করি।
প্রায় ৩০ বছর পর আমি আবারো আমাদের সেই ডিফেন্স ফোর্সের অধীন নৌবাহিনীর বিভিন্ন স্থানসমুহে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর এর পিছনে যার সবচেয়ে বেশী অবদান- সেটা হলো আমারই ছোট ভাই সমতুল্য রিয়ার এডমিরাল মামুন যে বর্তমানে ComChit (অর্থাৎ কমান্ডার চিটাগাং) হিসাবে দায়িত্বরত। মামুন সদ্য চট্টগ্রামে পোষ্টিং গিয়েছে, সম্ভবত মামুন ওখানে না থাকলে এবারো আমার যাওয়া হতো না। মামুনের আথিথেয়তার কোনো বর্ননা চলে না। ওর নিজের বাসায় আমার থাকার জায়গা করে দেয়া, অফিসার মেসে ভিআইপি রুমে আমাদের সবার জন্য ব্যবস্থা করা, সারাক্ষন গাড়ির ব্যবস্থা, বিভিন্ন নৌ জাহাজে আমাদেরকে অভিনন্দন দেয়া সব কিছু ছিল অত্যান্ত সাবলিল এবং চমৎকার। খুবই অল্প একটা সময়ের জন্য ছিলাম, মাত্র এক রাত দুই দিন কিন্তু তারপরেও মনে হয়েছে অনেকদিন বেড়ালাম। একটা পরিপূর্ন ভ্রমন বলা যায়। কাপ্তাইয়ে লেঃ কমান্ডার মোয়াজ্জেম ঘাটিতে চমৎকার একটা সময় কাটিয়েছি।

পতেংগা-২০২৩

পতেংগা-২০২৩

 

লেঃ কমান্ডার ইফতেকার এবং তার টিমকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বিএনএস বংগবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান এর লেঃ কমান্ডার রাসেল, লেঃ কমান্ডার সাহেদ, মামুনের এডিসি লেঃ ফকরুল সহ সবাইকে আমার আন্তরিক ভালোবাসা দেয়া ছাড়া আসলে আমার হাতে কিছু ছিলো না। আমার পরিবার এবং আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি গত ৩০ বছর পর আবারো এমন একটা পরিবেশে কিছুক্ষন সময় কাটানোর জন্য। আমরা যারা ডেফিন্সে কাজ করি, করতাম, এবং করেছেন, তাদের অবদান অসামান্য যদিও এর মুল্যায়ন সবসময় আমাদের সাধারন জনগন হয়তো অতোটা জানেনও না, করেনও না। তাতে আসলেই আমাদের কিছু যায় আসে না, আমরা দেশের জন্য কাজ করি। আমাদের পরিবার বর্গ যে কি পরিমান তাদের পারিবারিক জীবনকে উতসর্গ করেন আমাদের এই জীবনকে সার্থক আর দেশের জন্য কাজ করার জন্য, তা শুধু তারাই জানেন যারা এইসব অফিসার, জোয়ান আর কর্মের সাথে জড়িত। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তাদেরকে পরিবারের বাইরেই দেশের জন্য সময় ব্যয় করতে গিয়ে নিজের জন্য বা পরিবারকে দেয়ার জন্য অবশিষ্ঠ কোনো সময়ই হাতে থাকে না। তারপরেও এই সব অফিসাররা হাসিমুখে সব সময় অন্যের সাথে সময় দেন।
পরিশেষে, আবারো আমি রিয়ার এডমিরাল মামুন এবং তার সকল টিমকে আমার প্রানঢালা ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাই।
বেচে থাকুক আমার ডিফেন্স ফোর্স সম্মানের সহিত, মাথা উঁচু করে সর্বত্র দেশে এবং বিদেশে, সব সময় ভালোবাসি।

আমার জার্মান শেফার্ড-কোকো

কোকো-আমার জার্মান শেফার্ড

অনেক শখ করে একটা জার্মান শেফার্ড এনেছিলাম। ওর বয়স যখন ৩ মাস, তখন থেকে কোকো আমার বাসায়। বাচ্চা বয়সে যা খেতে দিয়েছি, সেটাই খেয়েছে, বিশেষ করে নরম ভাত আর মুরগীর মাংশ। সাথে পেট ফুডস থাকতো, একটু দই দিলে মনে হতো অমৃত খাচ্ছে। নাক ডুবিয়ে খেতো। মিটুলের কারনে বাসায় কোকোর প্রবেশ নিষেধ, তাই ওকে আমার মতো করে কোনো ট্রেনিংই  দিতে পারিনি। কেয়ারটেকার শাহনুরের কাছেই সারাক্ষন থাকে, ফলে আমার থেকে শাহনুরের প্রতিই ওর আনুগত্য বেশী। কিন্তু যখনই অফিসে যাই কিংবা অফিস থেকে আসি, উচ্ছল ঢেউয়ের মতো আমার গাড়ির আশেপাশে ঘুরঘুর করতে করতে অপেক্ষা করে কখন আমি গাড়ি থেকে বের হবো। যেই না গাড়ি থেকে বের হয়েছি, মনে হয় ছোট বাচ্চার মতো আমার কোলে, পিঠে আছড়ে পড়ে। কি শার্ট পড়েছি, কি জামা পড়েছি সেটা তো ওর কাছে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়, ওরা কাপড় নোংরা করে বটে কিন্তু আনুগত্যের চরম শিখরে ওদের ভালোবাসা। যারা কুকুর পালে না, তারা হয়তো বুঝবেই না কুকুরের আনুগত্য কি জিনিষ। কোকোকে খাওয়ানোর জন্য আমার কোনো বাজেট নাই। 

মাঝে মাঝে কোকো এখন সব খাবার খেতে চায় না, মাংশ দিলেও খেতে চায় না, মুরগী কিংবা গরুর গোস্ত যেনো তার এখন আর ভালো লাগে না। নরম ভাত, কিংবা পেট ফুডস। একেবারেই খেতে চায় না। আবার সব খাবার খায়ও না। ফলে আমার চিন্তা হয় প্রানীটাকে কোনো কষ্ট দিছি কিনা। ওরা কথা বলতে পারেনা, কিন্তু ক্ষুধার সময় অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে যেনো কি বলতে চায়। ওর এই না খাওয়ার কারনে ইদানিং কোকো একটু কাহিল হয়ে গেছে। তাই ওর অসুবিধার কথা চিন্তা করে আমার বন্ধু মহলে, ফেসবুকে একটা সংবাদ দিয়েছি যে, কোকোকে যারা নিজের হাতে আদর করে সময় দিয়ে ভালোভাবে রাখতে পারবে, আমি তাদেরকে দত্তক দিয়ে দেবো। আমি কিংবা মিটুল যখন আমাদের ঘরে ক্যাচিগেট খুলি আর যদি কোকো গ্যারেজে ছাড়া থাকে, দুই লাফে গ্যারেজ থেকে আমাদের ঘরের দরজার সামনে এসে হাজির। কিংবা কাউকে আমি বা মিটুল নাম ধরে জোরে ডাকতে গেলে কোকো আমাদের কণ্ঠস্বর চিনে, যদি ছাড়া থাকে এসে যাবে, আর যদি ওর ঘরে বন্দি থাকে, উচ্চস্বরে ডাকাডাকি শুরু করবে। আমি জানি যদি কোকোকে দিয়েই দিতে হয়, কোকো হয়তো অন্য মালিকের অধীনে গিয়ে আমাদের মিস করবে। হয়তো খুজবে আমাকে সেই হাচির মতো এটাই কুকুরভক্তি। আমি নিশ্চিত দিয়ে বলতে পারি, একদিন কোকো নিজেও আমাকে মিস করবে। আমি তো মিস করবোই। এখন যে স্ত্রী কোকোকে রাখতে দিলো না, এক সময় হয়তো সেইই কোকোর মতো একটা জারমান শেফার্ড থাকলে হয়তো ভালো হতো এর অভাব সে বুঝবে। কোকো ভালো থাকুক আমি চাই, কিন্তু সে কতটা ভালো থাকবে সেটা আমি জানি না। কোকো আমার বাগান মিস করবে, কোকো তার ঘর মিস করবে, কোকো তার পরিচিত পরিবেশ মিস করবে। কোকো শাহ্নুরকে মিস করবে।

কোকো হয়তো জানেই না যে, তাকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি। একটা সন্তান ছেড়ে দেয়ার মতো একটা কষ্ট।   

আমার জার্মান শেফার্ড-কোকো

https://goldeninn-bd.com/wp-content/uploads/2023/06/WhatsApp-Video-2023-06-27-at-01.07.31.mp4

২২/০৭/২০২৩ 

কোকো খাওয়া দাওয়া শুরু করেছে আবার। কিন্তু এবার তার খাওয়ার ম্যান্যু খুব পরিবর্তন। শুধু মুরগী আর গরুর মাংশ ছাড়া তিনি কিছুই খান না। সকাল বিকাল দুইটা ডিম। তারপরেও আমি আর ওকে ছাড়তে চাই না। কেমন একটা মায়া ধরে গেছে, অফিস থেকে গেলে কোকো মনে করে-যাক এবার তার নিজের মানুষটা চলে এসছে। ঘরের সামনে গিয়ে বসে থাকবে, শুয়ে থাকবে। কি অসম্ভব মায়াবী চাহনী। ভগবান বোবা প্রানীর চোখে এতো মায়াবী ভাষা কিভাবে দিলো? 

বড্ড ভালো লাগে আমার কোকোকে। কোকো রয়ে গেলো আবার। ছেড়ে দেয়ার চিন্তা থেকে বেচে গেলাম। 

 

কোকো একটি প্রেমের নাম

মাহাত্মা গান্ধী পীস এওয়ার্ড-২০২৩

মাহাত্মা গান্ধী পীস এওয়ার্ড-২০২৩

হটাত আমার অফিসে একটা রেজিষ্টার্ড চিঠি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে। সাধারনত কোনো চিঠি আমার HR Division Head রিসিভ করে। কিন্তু এই কুরিয়ার সার্ভিসের লোক কোনো অবস্থাতেই আমাকে ছাড়া উক্ত চিঠিটা আমার HR Division Head এর কাছে দিতে নারাজ। আর সেটা আমাকেই রিসিভ করতে হবে বলে জানালো। অতঃপর চিঠিটা নিজেই রিসিভ করলাম। চিঠিটি এসেছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কালচারাল কাউন্সিল থেকে। বলা যায় আমার জন্য এটা অপ্রত্যাশিত একটা চিঠি যার বিষয়বস্তু হচ্ছে-“মাহাত্মা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল পীস এওয়ার্ড-২০২৩”। সাংগঠনিক দক্ষতা ও মানবসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিসরূপ উক্ত “মাহাত্মা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল পীস এওয়ার্ড-২০২৩” এ সংগঠনটি আমাকে মনোনীত করেছে। অনুষ্ঠানটি ৯ জুন ২০২৩ তারিখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ কলিকাতা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি রথীন্দ্র মঞ্চে “ভারত-বাংলাদেশ রবীন্দ্র-নজরুল বঙ্গ উৎসবে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে এবং  চুড়ান্ত মনোনীত ব্যক্তিদের অথবা সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারলে তাদের প্রতিনিধিকে তারা উক্ত পুরুষ্কারটি প্রদান করবেন। অনুষ্ঠানটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মাননীয় মন্ত্রী, বিধায়ক, এমএলএ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত শিল্পীবৃন্দ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, শিল্প সাহিত্য অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন।

সংবাদটি আমাকে যারপর নাই বিস্মিত করে এবং আমি নিজে  যাচাই বাচাই করার জন্য ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের অফিসে যোগাযোগ করি। জানতে পারলাম যে, এর আগেও বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গকে তারা এ পুরুষ্কারে ভূষিত করেছেন। শিক্ষা, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, শান্তি, সমাজ এবং মানবসেবা ইত্যাদি আরো অনেকগুলি সেক্টরে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কালচারাল কাউন্সিল থেকে এসব পুরুষ্কার দেয়া হয়। সাংগঠনিক দক্ষতা ও মানবসেবায় এবার তারা আমাকে নির্বাচন করেছেন। আমি তাদের বিস্তারিত সার্ভের পদ্ধতিটা জেনে খুবই অবাক হয়েছিলাম কিভাবে তারা এসব ব্যক্তিবর্গকে নির্বাচন করে। আমি উক্ত ৯ জুন ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানে ব্যস্ততার কারনে উপস্থিত থাকতে পারিনি। ফলে বাংলাদেশ লোকাল অফিসের সম্পাদক শাহ আলম চুন্নু সাহেব আমার পুরুষ্কারটি গ্রহন করেন এবং গতকাল সেটা সার্টিফিকেট সহকারে পুরুষ্কারটি আমার অফিসে হস্তান্তর করেন। আমাকে এহেনো সম্মানে ভূষিত করার জন্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কালচারাল কাউন্সিলের কার্য নির্বাহী পরিষদ, নির্বাহী পরিষদের সভাপতি শুভদীপ চক্রবর্তী (ভারত), ভারত-বাংলাদেশ রবীন্দ্র-নজরুল পরিষদের আহবাহক মোঃ আর কে রিপন, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কালচারাল কাউন্সিলের সম্পাদক (বাংলাদেশ) শাহ আলম চুন্নু ভাইকে আমার ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাই। সম্মাননা পুরুষ্কারটি হাতে পাওয়ার পর আমার সংস্থার কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ আমাকে অভিনন্দন জানায়। 

Copy Rights Rule for My Articles on BDJ

Regarding the Copy Rights of the "Defense Journal" Articles, anyone can copy, attach and use the information for any further research use, personal use or share with someone without my permission. But, wherever, it would be used, please give a reference of the Publications. Other than those under "Defense Journal" publications, I am keeping the full Rights against any use of my other writes up. Please, refrain from using them without written permission from me. Thanks 

Site is ONLY Dedicated to KUMA Members

This site is entirely dedicated for KUMA Generation family members from the past till the time to come. There are some Articles for which general visitors have restrictions. If anyone wishes to go through those, I, personally will verify the person to qualify to read and comment on it. Those Articles are Password protected and are not accessible to all. Thereby, I will request you to put forward request basing on your personal involvement and relationship. Otherwise, your request may be turned off. Thanks for your good understanding and cooperation.

Copy Rights Rule for Our Family Photos and Galleries

Regarding Photo and Pictures, it is strictly prohibited to copy, download and use any personal pictures (either single or group) from this site without prior permission of the Admin. No one is allowed to use any of the Photo/picture of the individual/group anywhere. Clandestine download/save of such photo will be treated as violation of Copy Rights Rule and is subjected to breach of Law. 

Search for More in other Menu below

Yearwise Blogs

  • Category Wise My Diary
  • 1983-1987
  • 1988-1992
  • 1993-1997
  • 1998-2002
  • 2003-2007
  • 2008-2012
  • 2013-2017
  • 2018-2022
  • 2023-2027

Menu-4

  • Rooftop Garden
  • Covid-19
  • Tours & Travels
  • UN Missions Info
  • Business History
  • RSSL Details
  • Touch-13
  • Chowdhury Bari
  • Hossain Ali Madbor
  • Alauddin Chowdhury
  • Let’s Laugh

More Categories

ব্যক্তিত্ব

 

 

এরা প্রত্যেকেই আমার জীবনে অনেকটা অংশ জুড়ে ছিলেন। কেউ আমার মাথার ছাদ ছিলেন, কেঊ আমার পাশে অসময়ে এসে দাড়িয়েছিলেন, কেউ আমার সাফল্যের জন্য তাদের জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আবার কেউ কেউ তাদের নিজেদের ফিল্ডে সাফল্য এনে আমাকে সম্মানীত করেছেন যাদের জন্য আমি সপ্ন দেখেছি। এদের মধ্যে অনেকেই আজ বিগত হয়েছেন বটে কিন্তু বংশ পরম্পরায় এরা থাকবেন, এবং শতাব্দীর অন্য কালেও এদের মূল্যায়ন ম্লান হয়ে যাওয়ার মতো নয়। হয়তো তখন আমি আর এই পৃথিবীতে থাকবো না। কিন্তু ভালোবাসা আজীবন এবং আমরন। উনারা যুদ্ধ দেখেছেন আবার জীবনের তরে যুদ্ধ করেই বেচে ছিলেন। তাদের প্রেমের মাহাত্য ছিলো এমন যা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য মজবুত কিছু প্লাটফর্ম তৈরীতেই মগ্ন ছিলেন। তারা শুধু ধন্য নন, তারা পুজনীয় বটে। 

আবার আমার জীবনে এমন কিছু মানুষও এসেছিলো যারা আমার সমস্ত গর্ব, সমস্ত সম্মান, আমার সামাজিক পজিশন কিংবা গর্ব করার মতো আমার কর্মকে ধুলিস্যাত করার জন্যেও কিছু মানুষ এসেছিলো যারা হয়তো এই ছবি গুলির মধ্যে নাই। তাদেরকে আমি এক সময় বুকের পাজরের ভিতরে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তারা সেই আদর আর ভালোবাসার যোগ্য ছিলো না বলে তারা আমার জীবন, আমার সমস্ত কিছু থেকে মুছে গেছেন। মুছে গেছেন বললেই আসলে তা মুছে দিতে পারিনি। সব কিছু মুছা যায় না। কষ্টের যে দাগ সেটা মেডিক্যাল কোনো সার্জারী দিয়ে যেমন অদৃশ্য করা যায় না, তেমনি সামাজিক যে লজ্জা সেটাও কোনো কাপড় দিয়ে নিবারন করা সম্ভব নয়। কিন্তু সময়ের পালা বদলে তারা এমনিতেই স্মৃতির অনেক নীচে নেমে যায় যা আর কেউ খুজে পায় না। 

আবার আমার জীবনে এমন কেউ এসেছে যাদের জন্য আমি আমার সারাটা জীবন বাজি রেখে তাদের জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করার কিংবা নিরাপদ করার যাবতীয় চেষ্টা করেছি, তারা হয়তো সবার অগোচরেই রয়ে যাবেন, কারন এই সমাজ এমন যে, কোনটা মানুষের কষ্টের পাতা আর কোনটা মানুষের জীবন শক্তি সেটাও অনেক সময় নির্ধারন করতে অপারগ হয়। আর এই অপারগতার কারনে যুগে যুগে কিছু মানুষ ইতিহাসের বাইরেই থেকে যায়। 

সব কিছু মিলিয়েই আমরা মানুষ। কেউ হেসে যায়, কেউ চুপ থেকে জীবন পার করে দেয়, কেউবা আবার দুচোখ জলে ভরে বিধাতার কাছে শুধু সেইটুকুই চায় যা তাঁর শান্তির কারন। ওদেরকে অনেকেই চিনে না। গাছ যখন যত্নে বড় হয়, তাঁর চেহাড়া যে সব সময় যে গাছের যত্ন নেয়া হয় না, তাঁর থেকে অনেক বেশী সুন্দর হবে সেটা সত্য নয়। আর যদি সেটাই হতো, তাহলে যত্নবিহীন গাছের কোনো অস্তিত্বই থাকতো না। কিন্তু আমি আপনি যদি আমাদের চারপাশে দেখি, একটা জিনিষ খুব চোখে পড়বে যে, বেশীর ভাগ গাছ পালাই আমরা রোপন করিনি, কিন্তু তারাও শহরের বুকে অনেক বড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। 

এদের সবাই আমাকে অভিজ্ঞতা, শিক্ষা আর পরিস্থিতি বুঝতে শিখিয়েছে। আমি জানা অজানা, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সবার কাছে ঋণী। ছোট এ জীবনে কারো কোনো ভুমিকাই অল্প ছিলো না। 

মিটুলের ভাইস প্রিন্সিপ্যালের পোষ্টিং

আমার গিন্নী মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ, অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে কর্মরত ছিলেন। গিন্নীরা চাকুরী করলে স্বামীদের কি হাল হয় সেইটা যাহারা আমার মতো চাকুরীজীবি গিন্নীর স্বামী তাহারা বুঝিতে পারিবেন। মাঝে মাঝেই ব্যাচলর মনে হয় কারন ছুটির দিনের দুপুরের খাবারের সময়েও গিন্নীর কর্মস্থলের জরুরী কাজ নিয়া তিনি মহাব্যস্ত থাকেন। একাই তখন খাইতে হয়। আলসেমী করিয়া সকালে একটু ঘুম হইতে দেরী করিয়া উঠিলে দেখিবেন, গিন্নী নাই, অফিসে চলিয়া গিয়াছেন। আবার অফিস হইতে একটু আগে আসিলেও দেখি গিন্নী তখনো কলেজের কাজেই ব্যস্ত। উপায় নাই। দেশের কল্যান বলিয়া কথা। স্বামীর কল্যানের জন্য তো আর দেশের অমঙ্গল করা যাইবেনা।

এরমধ্যে গিন্নী আবার বিভাগীয় প্রধানের কাজের বাহিরে পরপর দুইবার বিপুল ভোটে জয়ী হইয়া শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ছিলেন। কলিগরাও বেরশিক। স্বামীর কথা একবারো ভাবেন না। এতো ভোট দিইয়া তাহাকে জয়ী করাইবেন তো স্বামীর কি হাল হয় সেইটা কি একবারো ভাবিবেন না? যাইহোক, পরপর দুইবারই তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদন্ধি হইতে ৪০% ভোটে আগাইয়া জয়ী হন। তো বুঝতেই পারেন, বেচারা স্বামীর কি অবস্থা। আমিও ভাবিয়া লই যে, জগতসংসারে স্বামীদের ছাড়াও এইসব কালজয়ী গিন্নীদের আরো অনেক জরুরী কাজ আছে। সুতরাং হে স্বামীগণ, হয় নীরবে শুইয়ে শুইয়ে টিভি দেখেন, না হয় কৃষকের মতো বাগানে কাজ করেন,  না হয় যদি জার্মান শেফার্ড থাকে তাহাকে লইয়া একটু ব্যস্ত থাকন। অভিযোগ কইরা কোনো ফায়দা নাই। নারীরা এখন অনেক প্রতাপ্সহালী। বহু দেশের রাষ্ট্র প্রধান এখন মহিলা।

আমার গিন্নী এইবার আবার কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পদে পদোন্নতি পাইয়াছেন। এতো চাপা কষ্টের মধ্যে মনটা ভরিয়া গেলো। সুখের খবর তো অবশ্যই। তবে ইহাতে যে আমার আরো কিছু সময় ছাড় দিতে হইবে সেইটা তাই আর ধর্তব্যের মধ্যে লইতেছি না। আগে রাতের পরোটা খাইতাম ধরেন ৯টায়, এখন না হয় খাইবো ১০ টায়, এইতো। জীবনে ১ ঘন্টা আর কি আসে যায়। বিয়ের আগে তো এই রকম ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু তাহার চেহাড়া মোবারক দেখিবার জন্য রাস্তায়, ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে অযথাই সময় নষ্ট করিয়াছি। তাঁহার তুলনায় এই এক ঘন্টা লস তো কোন ব্যালেন্স শীটেই পড়ে না। অবশ্য সম্পর্কটা এখন মাঝে মাঝে ভাই বোনের মতই হইয়া গিয়াছে বলিয়া মনে হয়। স্বামী হিসাবে রাগ না কইরা ভাই হিসাবেই না হয় ক্ষমা কইরা দিলাম। কি বলেন?

যাকগে, যাহা বলছিলাম, গিন্নী বাঙলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল হিসাবে নিয়োগ পাইয়াছেন। খবরটা অনেক গর্বের যেমন, তেমনি আনন্দেরও। তাই সেই সুবাদে বাঙলা কলেজের বেশ কিছু গুনীজন, শিক্ষক এবং কলিগদের লইয়া গত শুক্রবার একটা ট্রিট দিলেন আমার গিন্নী। (কানে কানে বলিয়া রাখি-বিলটা আবার আমার কার্ডেই গেছে)। আমরাও তাঁহার এই সাফল্যের জন্য অতি আনন্দের সাথে তাঁহাকে একটা সংবর্ধনা দেই। তারই কিছু বিশেষ মুহুর্তের ছবি।

ভালো থেকো আমার গিন্নী, তোমার সাফল্যে আমি সব সময় গর্বিত। তুমি নিশ্চয় আরো উন্নতি করবে এটাই আমার দোয়া।

Created By Major Mohammad Akhtar Hossain, PhD, MSc, MDS, MBA, psc, G+, Artillery (Retd)
A SiteOrigin Theme