২৮/০১/২০২১- উম্মিকা,আমার বড় মেয়ে

Categories

আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা আমার বড়মেয়ে। জন্ম তার ১৬ জানুয়ারী ১৯৯৪ সাল।

তার জন্মের আগে আমার বড় ইচ্ছে ছিলো যে, আমার যেনো একটা মেয়ে হয়। আমি কখনোই ছেলে হোক চাই নাই। আল্লাহ আমার মনের আশা পুরন করেছেন উম্মিকাকে আমার ঘরে দিয়ে। সে খুব ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু সে খুব সিম্পল। 

উম্মিকার জন্মের আগে (সম্ভবত ৪/৫ দিন আগে) আমি একটা সপ্ন দেখেছিলাম। তাহলে সপ্নটা বলিঃ

ঢাকা সেনানীবাসের মেস বি তে আমি একটা রুমে আছি। আমার পোষ্টিং ছিলো খাগড়াছড়িতে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে। মিটুল পোয়াতি অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। যে কোনো সময় আমার বাচ্চা হবে। আমি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছি শুধু আমার অনাগত বাচ্চার আগমনের জন্যই। নামাজ পড়ি, খাই দাই, আর সারাদিন হাসপাতালে মিটুলের সাথে সময় কাটাই।

একদিন রাতে (ডেলিভারির ৪/৫ দিন আগে) আমি সপ্নে দেখলাম যে, আমি আমাদের গ্রামের কোনো একটা দোকানে বসে আছি। ওখানে আরো অনেক লোকজন ও আছে। হতাত করে সবুজ একটা সুতী কাপড় পড়ে একজন মহিলা কোনো একটা ঘরের ভিতর থেকে বাইরে এসে আমাকে বল্লো, আমাকে আপনি কি চিনেন? আমি তাকিয়ে তাকে বললাম, জী না আমি আপনাকে কখনো দেখি নাই। উত্তরে মহিলাটি আমাকে বললেন, যে, তিনি হযরত আছিয়া বেগম অর্থাৎ মুসা (আঃ) এর মা। আমি তো অবাক। কি বলে এই মহিয়সী মহিলা?

আমি ততক্ষনাত উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে তো আপনার কাছে আমাদের নবীজির অনেক চিঠি থাকার কথা! মহিলা বললেন, হ্যা আছে তো।

এই কথা বলে তিনি আবার ঘরের ভিতরে চলে গেলেন চিঠিগুলি আনার জন্য। আমার ঘুম ভেংগে গেলো। আমি তখন সময়টা দেখলাম, রাত প্রায় শেষের পথে কিন্তু তখনো ফজরের আজান পড়ে নাই।

পরদিন ছিলো শুক্রবার। আমি জুম্মা নামাজ পড়ে ইমামের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বললাম। তিনি প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবনা কিনা। আমি বললাম, আমরা খুব শিঘ্রই বাচ্চার আশা করছি। তিনি বললেন, আপনার মেয়ে হবে এবং খুব ভালো একজন মেয়ে পাবেন আপনি।

তার ৪/৫ দিন পর আমি আসর নামাজের পর কোর আন শরীফ পড়ছিলাম। এমন সময় আমার মেস ওয়েটার তড়িঘড়ি করে আমার রুমে নক করে বল্লো যে, স্যার আপনাকে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেছে। আমি তখন যেখানে কোর আন আয়াত পড়ছিলাম, ঠিক সেখানেই মার্ক করে কোর আন বন্ধ কত্রে ছুটে গেলাম হাসপাতালে। মিটুলকে ওটিতে নেয়া হচ্ছে, সিজারিয়ান করতে হবে।

প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার মিষ্টি মেয়েটার জন্ম হলো এই পৃথিবীতে। কি নাম রাখবো সেটা আমি ঠিক করেছিলাম যে, আমি যেখানে কোর আন শরীফ টা পড়া বন্ধ করেছি, আর যে আয়াতে, আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঠিক সেই আয়াত থেকেই কোনো একটা শব্দ দিয়ে নাম রাখবো। অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে- আমি ওই সময়ে হজরত মুসা (আঃ) এর উপরেই আয়াতগুলি পড়ছিলাম। সেখানে আয়াতে লিখা ছিলো- ইয়া হাইলা আলা উম্মিকা মুসা। অর্থাৎ হে মুসা, আমি তোমার মাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলাম।

আমি ঠিক এই শব্দতটাই আমার মেয়ের নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেই যে, ওর নাম হবে উম্মিকা। অর্থাৎ মা।

আমার সেই উম্মিকার প্রথম শিক্ষা শুরু হয় মীরপুর স্টাফ কলেজের টর্চ কিন্ডার গার্ডেনে। অতঃপর মেথোডিস্ট ইংলিশ মিডিয়াম, তারপর শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ এবং সেখান থেকে হলিক্রস। হলিক্রস থেকে উম্মিকা এইচএসসি পাশ করে ডাক্তারী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে শহীদ জিয়া মেডিক্যালে আল্লাহর রহমতে ইন্টার্নী করে ২০২০ সালে ডাক্তারী পাশ করলো। এটা আমার একটা স্বপ্ন যে সে ডাক্তার হোক। আমার আরেকটা স্বপ্ন হচ্ছে, সে যেনো সেনাবাহিনীর ডাক্তার হয়। তাতে যে লাভটা হবে তা হচ্ছে, বাবার সেনাবাহিনীর জব ছিলো। রাজনীতির প্রতিহিংসায় সে ইচ্ছে করে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন, জেনারেল পর্যন্ত যেতে পারেন নাই। আমি চাই আমার মেয়ে সেটা হোক। আর ২য় কারন হচ্ছে, আজীবন কাল সে সেনাবাহিনীর সব বেনিফিট গুলি যেনো পায়। কিন্তু বাবাদের সব সপ্ন তো আর সার্থক হয় না। আমার মেয়ে চায় বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সে বেসামরীক লাইফেই থাকে।

২৭/০১/২০২১-আমার+উম্মিকার করোনা

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

২০২১ 

২৭ জানুয়ারী 

 

কোনো কিছুই কোনো কারন ছাড়া ঘটে না, এটাই সত্য। যে ঘটনাটা আমার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছিলো কেনো গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেললাম বলে, আজ সেটা পরিষ্কার হলো। আমার করোনা টেষ্টে পজিটিভ এসেছে। আমার বড় মেয়েরও করোনা পজিটিভ। ছোট মেয়ের করোনা নেগেটিভ। উম্মিকার মার তো আগেই একবার করোবা ধরা পড়েছিলো, তাই আর করাইতে দেই নাই। এর মানে হলো, শুধু ছোট মেয়ে ছাড়া আমাদের বাসায় সবার করোনা ধরা পড়লো। আল্লাহ যা করেন নিশ্চয় মংগলের জন্যই করেন। করোনা ধরা পড়ায় একটা জিনিষ মনে হলো যে, আমাদের আর টিকা নেওয়ার দরকার পড়বে না হয়তো।

দেশে টিকা এসেছে, সবাই টিকা নিতে ভয়ও পাচ্ছে, আবার এই টিকা নিয়ে যে কত রাজনীতি হয় তাও দেখা যাবে। এদেশে প্রতিটি জিনিষ নিয়েই রাজনীতি হয়। টিকা নিয়েও লম্বা সময় ধরে রাজনীতি হবে, এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। যারা একবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ফিরে এসছেন, হয়তো তারা আর টিকার ব্যাপারে কোনো মাথা ঘামাবে না, তারপরেও হয়তো টিকাটা নেয়া দরকার হতে পারে যেহেতু এটা একটা ভ্যাকসিন।

বাসায় আছি কদিন যাবত। করোনা হবার কারনে আমার শরীরে কোনো প্রকার আলাদা কোনো সিম্পটম নাই। সুস্থই আছি। বড় মেয়ের ঠান্ডাটা একটু বেশি। আমি প্রতিদিন ছাদে রোদে প্রায় ঘন্টা ২/৩ পুড়ি। ভালোই লাগে। কিন্তু বড় মেয়ে বি সি এস পরীক্ষার প্রিপারেশনে রাত জেগে পরাশুনা করে বলে দিনের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ঘুমায়।

চারিদিকে বেশ ঠান্ডাও পড়েছে ইদানিং। এবারের ঠান্ডাটা একটু বেশী মাত্রায় পড়েছে বলে মনে হয়।

২১/১০/২০২০-উম্মি-কনি আমার অফিসে

সারাদিন ওরা আমার অফিসেই ছিলো। আজ ওদের জন্য একটা বিশেষ দিন। আমি দুই বোনকে মোট ২৬ শতাংশ জমি বায়না রেজিষ্ট্রি করে দিলাম। টাকার শর্ট ছিলো, তাই সাব কবলা করা হলো না। কিন্তু যে কন সময় ওদেরকে আমি দিয়ে দিতে পারবো, আর যদি আমার মরন ও হয়, ওরা মাত্র ১ লাখ টাকা জমা করে কোর্টের মাধ্যমে জমিটা নিজেদের নামে লিখে নিতে পারবে সে ব্যবস্থাটা করে রাখলাম। এর মধ্যে সোহেল এবং লিয়াকত অফিসে এলো। আমি ওদেরকেও একটা ল্যাব করে দিয়েছি, কিন্তু আমার ধারনা হচ্ছে সোহেল এবং লিয়াকত ল্যাবটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না। সোহেলের মধ্যে আগে যেটা দেখি নি, সেটা এখন আমার মনের মধ্যে একটু একটু করে সন্দেহের বীজ উকি দিচ্ছে, ওকে ব্যবসায়িক পার্টনার করাটা সম্ভবত ভালো সিদ্ধান্ত হয় নাই।

২০/১০/২০২০-উম্মিকার বাড়ি আসা  

Categories

অনেকদিন পর আমার বড় মেয়ে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাসায় আসবে কাল ইনশাল্লাহ। তারপর ওকে নিয়ে আমরা সবাই কক্সবাজার যাবো বেড়াতে। অনেকবার গিয়েছি কক্সবাজারে, কিন্তু এবার যেনো কেনো একটু বেশী ভাল লাগছে যেতে। আসলে কক্সবাজার জায়গাটার মধ্যে কোনো মজা নাই, মজা হলো পুরু পরিবার একেবারে নিজের মতো করে এক সাথে হৈ হুল্লুর করা। সময়টা একেবারে নিজেদের মতো করে কাটে। এটা আসলে একটা ব্রেকটাইম।

প্রথমে উম্মিকার যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না, মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমাদের সবার। বারবারই মনে হচ্ছিলো যে, উম্মিকা যেতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওর ইন্টার্নীর ঝামেলায় উম্মিকার সম্ভব হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত উম্মিকা ম্যানেজ করেছে ছুটিটা। আর এই ছুটিতেই উম্মিকা আগামীকাল বাড়ি আসছে। ওর বাড়িতে ও আসছে, এতে যেনো বাড়িটাই আনন্দিত হয়ে উঠছে। ওর মা আজ ওর জন্য স্পেশাল বাজার করে আনলো, কনিকাও প্রস্তুতি নিচ্ছে কাল ওর আপু আসবে, তাই কি স্পেশাল খাওয়া যায়, তার একতা লিষ্ট ও করে ফেলছে। আগামী পরশু আমি উম্মিকা আর কনিকাকে ১৩ শতাংশ করে চমৎকার জায়গায় দুজনকেই এক খন্ড জমি লিখে দেবো, সেটাও একতা আনন্দ হচ্ছে। জমিটার দাম নিছক কম নয় প্রায়, ৭৫ লাখ টাকা করে উভয়ের, মানে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি। তাই উম্মিকা আর কনিকাকে আমার ফ্যাক্টরীতে নিতে হবে আগামী পরশুদিন ইনশাল্লাহ।

প্রথমে উম্মিকার যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না, মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমাদের সবার। বারবারই মনে হচ্ছিলো যে, উম্মিকা যেতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওর ইন্টার্নীর ঝামেলায় উম্মিকার সম্ভব হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত উম্মিকা ম্যানেজ করেছে ছুটিটা। আর এই ছুটিতেই উম্মিকা আগামীকাল বাড়ি আসছে। ওর বাড়িতে ও আসছে, এতে যেনো বাড়িটাই আনন্দিত হয়ে উঠছে। ওর মা আজ ওর জন্য স্পেশাল বাজার করে আনলো, কনিকাও প্রস্তুতি নিচ্ছে কাল ওর আপু আসবে, তাই কি স্পেশাল খাওয়া যায়, তার একতা লিষ্ট ও করে ফেলছে। আগামী পরশু আমি উম্মিকা আর কনিকাকে ১৩ শতাংশ করে চমৎকার জায়গায় দুজনকেই এক খন্ড জমি লিখে দেবো, সেটাও একতা আনন্দ হচ্ছে। জমিটার দাম নিছক কম নয় প্রায়, ৭৫ লাখ টাকা করে উভয়ের, মানে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি। তাই উম্মিকা আর কনিকাকে আমার ফ্যাক্টরীতে নিতে হবে আগামী পরশুদিন ইনশাল্লাহ।

১৪/০৮/২০১৯-বাসায় সবার দাওয়াত

Categories

ঈদ-উল আযহার পরের দিন আজ। অনেকদিন সবাইকে নিয়ে বিশেষ করে পরিবার পরিজন নিয়ে একসাথে খাওয়া দাওয়া হয় না। তাই ঈদের কদিন আগে মিটুলকে বললাম, সবাইকে দাওয়াত দাও যেনো ঈদেরপরের দিন সবাই আমাদের বাসায় আসে, একটা গেট টুগেদার করা যাক। উম্মিকাও আছে বাসায়। ওর যারা যারা বন্ধু বান্ধব আছে, ওদেরও আসতে বলো। কনিকার বন্ধু বান্ধব কয়েকদিন আগে দাওয়াত খেয়ে গেছে, তাই এতো শর্ট তাইমে আবার ওর বন্ধু বান্ধবদের দাওয়াতের দরকার নাই। মিটুল গ্রামের অনেককেই দাওয়াত করেছে আর ওদের ভাইওবোনদের তো আছেই। ওরাও আমার বাসায় আসার জন্য ব্যাকুল থাকে। ধরে নিয়েছিলাম প্রায় শখানেক হবে উপস্থিতি।

তাইই হলো, প্রায় শ খানেকের মতোই লোকজন এসে হাজির হলো।

ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো। ফলে আমার ছাদতায় ভাল করে আয়োজন করা যাচ্ছিলো না। তাই গ্যারেজই ভরষা। কাবাবের স্টল করা হলো মুবিনের নেতৃত্তে। মুরগীর আর গরুর কাবাব। মিটুলের রান্নার জুরি নাই, সবাই ওর খিচুরী, পোলাও এবং অন্যান্য আইটেম খুব মজা করে রান্না করে।

উম্মিকার ৬/৭ জন বন্ধু বান্ধব এসেছিলো। আমি ফাউন্ডেশনের এম ডি রানা, ওর বউ, সবাই এসেছিলো। খুব ভালো একটা সময় কেটে গেলো। এর সাথে নেভীর কমান্ডার মামুনও এসেছিলো দীপু আর ওর পরিবার নিয়ে। যদিও একটু একটু করে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো, তবুও সবাই একে একে বাগান দেখতে গেলো। বাগানে একটা ছাতা আছে, লাইটিং করানো। ছবি তোলার জন্য একটা মুক্ষম জায়গা।

১৭/০৩/২০১৯-উম্মিকার ডাক্তার হওয়ার পারিবারিক অভিষেক

উম্মিকার ডাক্তার হওয়ার পারিবারিক অভিষেক অনুস্টানের পর্বটি একটা আনন্দঘন দিনে পরিনত হয়েছিলো। চৌধুরী বাড়ির লোক সংখ্যা এমনিতেই এতো যে, ডাক দিলেই হাতের কাছে গোটা ১০ জন পাওয়া যায়। তারমধ্যে আবার দাওয়াত, তাও আবার আমার বাসায়। এ যেনো মহা যজ্ঞ।  সবাই নিজের বাড়ির মতো করে আনন্দ করে। সারা বাড়িতে গটা কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে যায়। ছোটরা হৈচৈ, বড়রা চিল্লাচিল্লী, মাঝারী গুলা তাস, কিংবা সেলফী, আর বুড়ারা গাল গল্পে।

উম্মিকার ডাক্তারী পরীক্ষার ফলাফলের পর পরই একটা অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বিভিন্ন ঝামেলায় করা হচ্ছিলো না। উম্মিকার আম্মু আবার এসব বিষয়ে পিছিয়ে থাকার লোক না। সব বাড়ি থেকেই লোকজন এসেছিলো। উম্মিকা আঞ্জুমানদেরকে আসতে বলেছিলো। আঞ্জুমানরা এক সময় আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো, এখন সে ৪ সন্তানের মা। খুব ভালো একতা মেয়ে। মান্নারা, বাসাবো থেকে বুটী আপারা, মূটামুটি সবাই এসেছিলো। খুব সুন্দর একটা গেট টুগেদার হলো আজ।

বিকালে সবাই ছাদে গেলো, সন্ধ্যার পর আবার আরেকতা ভুড়িভোজ হলো। সব মিলিয়ে এক কথায় উপভোগ্য একটা দিন ছিলো। প্রায় ৫ বছর আগে যখন উম্মিকা ডাক্তারী পড়তে যায়, আমি কখনো ভাবি নাই যে, উম্মিকা একা একা সেই আরেকটা দূরের শহরে থাকতে পারবে। মেস লাইফ, কঠিন লাইফ। কিন্তু তারপরেও উম্মিকা এক চাঞ্চসেই আল্লাহর রহমতে ডাক্তারী পরীক্ষায় পাশ করে ফেলেছে, এটা ওর জন্যে একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে এবং মানষিক যন্ত্রনায় ওকে পরীক্ষা গুলি দিতে হয়েছে। উম্মিকা বরাবরই ভালো ছাত্রী ছিলো, ফাকীবাজ ছিলো না, ফলে সব গুলি টার্মেই উম্মিকা ভালো করায় একটা ডিস্টিঙ্কট নিয়ে পাশ করেছে। আমি সব সময় চেয়েছিলাম উম্মিকা ডাক্তার হোক, আজ সেটা উম্মিকা পুরন করেছে, মাশ আল্লাহ।

শেষ পর্বটি ইমনের আতশবাজী পোড়ানো ছিল এলাকায় একটি উৎসব মূখর পর্ব। আশেপাশের সব বাড়িগুলি থেকে অনেক মানুষ ইমনের এই আতশবাজী দেখার জন্য বাসার বাইরে দাড়িয়েছিলো। আমাদের সাথে সাথে পাড়াপ্রতিবেশীও ব্যাপারটা আনন্দ করেছে। ধন্যবাদ ইমন

১২/০৩/২০১৯-উম্মিকার ডাক্তারী ফলাফল

গত ১২ মার্চ ২০১৯ তারিখে আমার বড় মেয়ের মেডিক্যাল ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো। খুব টেনশনে ছিলো মেয়ে পাশ করে কিনা। প্রায়ই তার মেজাজ মর্জি খারাপ থাকতো এই টেনশনের কারনে। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়েছে সে এই পড়ার সময়। তার পরেও সে তার লক্ষ্য স্থির রেখেছে যেনো এক চান্সেই পড়াটা শেষ হয়। আল্লাহর অসীম রহমত যে, সে এক চান্সেই মেডিক্যাল পরীক্ষাটা পাশ করে এখন সে পূর্ন ডাক্তার হয়ে গেলো। আল্লাহর কাছে শুকরীয়ার শেষ নাই।

সেদিন আমি বাসায়ই ছিলাম। বেলা প্রায় একটার ও বেশী। বউ কলেজে ছিলো। আমরা বাসায় একত্রে খাবো বলে অপেক্ষা করছি। আমি কম্পিউটারে কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। দুই মেয়েও বাসায়। বড় মেয়ে উম্মিকা ড্রয়িং রুমে কিছু একটা করছিলো। হটাত করে “আব্বু” বলে বড় মেয়ে চিৎকার। আমি চমকে গেলাম, কি হলো মেয়ের। তাড়াতাড়ি কম্পিউটারের কাজ ফেলে ড্রয়িং রুমে যাচ্ছিলাম, দেখি মেয়েই এগিয়ে এসছে হাতে তার মোবাইল নিয়ে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলছে, “আব্বু, আমাদী মেডিক্যালের ফলাফল দিয়েছে। আমি পাশ করেছি আব্বু”।

আমি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় চুমু খেতে খেতে বললাম, “কাদছিস কেনো তাহলে?” মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে থর থর করে কাপছে আর আরো কাদছে। অনেক আদর করে বললাম, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরীয়া যে, তুমি পাশ করে গেছো।

অনেক্ষন লাগলো আমার বড় মেয়ের স্থির হতে। ঠিক এমন সময় আমার বউ বাসায় ঢোকলো। আমার তখন মাথায় একটা দুস্টু বুদ্ধি এলো, ওর মাকে ভড়কে দেবার। বললাম, “দেখো, মেয়ের পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে, মেয়ে কান্নাকাটি করছে। মেয়েকে থামাও”। লক্ষ্য করলাম, আমার বউ এর মুখাবয়ব হটাত করে পরিবর্তন এবং টেনশনের ছায়া। হাতের ব্যাগটা কোনো রকমে টেবিলের উপর রেখেই মেয়েকে শান্তনা দেবার জন্য জড়িয়ে ধরলো আর বল্লো, কি রেজাল্ট মা? আমি হেসে দিয়ে বললাম, মেয়ে তো পাশ করেছে। যেই না বলেছি যে, পাশ করেছে, আর অমনি মা মেয়ের দুজনেই এখন কান্নার রোল। এতক্ষন তো ছিলো একজনের কান্না, এখন দেখি দুইজন। ঠেলা শামলাও এবার। বেশ মজা পাইলাম মা মেয়ের এই রকম একটা আবেগপুর্ন মুহূর্তের জন্য। সবই আল্লাহর ইচ্ছা এবং দয়া। আজ থেকে আমার বড় মেয়ের একটা ভালো আইডেন্টিটি হলো, “ডাক্তার” উম্মিকা।

ধন্যবাদ মা তোমাকে। আমি তোমার উজ্জল জীবনের জন্য দোয়া করি সবসময়। 

২৪/০২/২০১৬-আমার প্রিয় মা জননীর দল,

 আমার প্রিয় মা জননীর দল,

আমি জানিনা যখন তোমরা আমার এই পত্রখানা পড়িবে তখন তোমাদের কত বয়স হইবে কিংবা আদৌ তোমরা এই পত্রখানা পরিতে পারিবে কিনা কিংবা পড়িলেও কখনো এর মর্মার্থ তোমরা বুঝিতে পারিবে কিনা। আর বুঝিতে পারিলেও কিভাবে এর অর্থ বুঝিবে তাও আমি জানি না। তবুও আজ মনে হইল তোমাদের উদ্দেশে আমার কিছু কথা বলা দরকার যাহা আমার মা আমাকে প্রায় দুই যোগ আগে বলিয়াছিলেন। আমি আমার  "উচ্ছিষ্ট সময়ের ডায়েরি" নামক ব্যক্তিগত ডায়েরিতে এই মুহূর্ত গুলি লিখিয়াছিলাম। তাহা আমি আজ তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করিতে চাই।

"............আজ হইতে প্রায় দুইযুগ আগে আমি যখন আমার মাকে আমার প্রথম ভালবাসার মেয়ের কথা জানাইয়াছিলাম, তখন তিনি মুচকি হাসিয়া আমাকে বলিয়াছিলেন, কে কাহাকে কত বেশি ভালবাসে তাহা কি তুমি ভাবিয়াছ? তুমি কি তাহাকে বিবাহ করিতে চাও? নাকি শুধু মনের আবেগে তোমার একাকীত্বকে দূর করিবার আখাংকায় তাহার সঙ্গে কিছুটা সময় কাটাইতে চাও? মজার ব্যাপার হইল, আমার মা মেয়েটি কতখানি সুন্দর, তাহার বাবার কি পরিমান সম্পদ বা সম্পত্তি আছে, তাহারা কয় ভাইবোন কিংবা তাহার পারিবারিক আর কোন তথ্য উপাত্ত কিছুই জানিবার জন্য আমাকে প্রশ্ন করিলেন না। শুধু বলিলেন, ব্যাপারে আমি কাল তোমার সঙ্গে আবার কথা বলিব এবং তোমার মনোভাব জানিব

আমার মায়ের সঙ্গে আমার খুব ভাব ছিল এবং আমি তাহার সঙ্গে সব কথাই অকপটে বলিতে পারিতাম। মা কথাগুলি খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলিয়া আমাকে আমার মত করিয়া ভাবিবার সময় দিলেন আমার মা।  আমার মা শিক্ষিত নন। তিনি হয়ত তাহার জীবনে প্রাইমারী স্কুল পার করিয়াছেন কিনা তাহাও আমার জানা নাই। কারন তাহার বিয়ে হইয়াছিল যখন তাহার মাত্র ১০ বছর বয়স। নিতান্তই একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে।  কিন্তু তিনি অসম্ভব বুদ্ধিমতী এবং প্রাক্টিক্যাল একজন মা। আমার বড় প্রিয় মানুষ তিনি

 

পরেরদিন আমি আর আমার মা আমাদের বাড়ির আঙিনায় বসিয়া আছি। বিকালের রোদ অনেকটাই কমিয়া গিয়াছে। সন্ধ্যা হইতে আরও কিছু বাকি। আমাদের বাড়ির বড় বরই গাছের মাথায় অনেক পাখির বাসা আছে। পাখিদের কিচির মিচির শব্দ হইতেছে অহরহ। কিচির মিচির করিয়া পাখিদল যে কি কথা কাহাকে বলিতেছে তাহা বুঝিবার ভাষা বা ক্ষমতা আমাদের কাহারো নাই। এইদিক সেইদিক উরাউরি করিতেছে আর যার যার বাসায় তাদের স্থান করিয়া নিতেছে।  দূরে গাছ গাছালিগুলি আস্তে আস্তে সন্ধ্যার ক্ষিন আলোতে ধুসর থেকে আরও কালো বর্ণের রঙ ধারন করিতেছে, বাড়ির গৃহস্থালিরা তাহাদের নিজ নিজ গরু ছাগল ভেড়া লইয়া গ্রামের ভিতর প্রবেশ করিতেছে। কেউ কেউ আবার মনের আনন্দে সেই আব্দুল আলিমের ভাটিয়ালী কিছু গানের সুরে গানও গাইতেছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মাঠ হইতে খেলা ছারিয়া কেউ জোড়ায় জোড়ায় আবার কেউ দল বাধিয়া বাড়ির অভিমুখে হারাইয়া যাইতেছে। কিছু বয়স্ক মানুষ মাথায় কিছু মাল সামানা লইয়া হয়ত বা শহর কিংবা কাছের বাজার হইতে সদাই করিয়া তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়া যাইতেছে। দিনের শেষলগ্নে গ্রামের কিছু উঠতি বয়সের বধুরা অদুরে আমাদের ধলেশ্বরী নদী হইতে কাঁখে জল তুলিয়া কলসি ভরতি পানি লইয়া, ভিজা কাপড়ে হেলিয়া দুলিয়া মুচকি মুচকি হাসিতে আবার কখনো কখনো উচ্চস্বর আওয়াজে নিজেদের ঘরে আগমন করিতেছে। অদুরে কোন এক সদ্য প্রসব করা গাভি তাহার অবুঝ বাছুরটির সন্ধান না পাইয়া অবিরত হাম্বা হাম্বা করিতেছে। এমন একটি পরিবেশে আমি আর আমার মা মুখুমুখি বসিয়া আছি। বেশ সময় কাটিতেছে আমার। 

 

মা সর্বদা পান খান, মায়ের পানের বাটি যেন তাহার দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মত একটি অংশ। যেখানে যাইবেন, সেখানেই তিনি তার এই অতিব প্রয়োজনীয় সম্পদটি সঙ্গে রাখিবেন। পানের বাটিটি ব্যতিত যেন মায়ের কোন কিছুই আর এত মুল্যবান সম্পদ আমাদের ঘরের মধ্যে নাই। পানের বাটিতে মা তাহার ছোট পিতলের ডান্ডা দিয়া পান পিষিতেছেন, যেন অনেক যত্নের সহিত তিনি একটি খাদ্য রিসিপি বানাইতেছেন। পানের বাটির সঙ্গে পিতলের ডান্ডাটি ঠক ঠক আওয়াজে এক রকম টুং টাং শব্দ হইতেছে। এই রকম একটি পরিবেশে মা আমার দিকে না চাহিয়াই প্রশ্ন করিলেন, "কে আগে ভালবাসার কথা বলিয়াছিল? তুমি না সে?" মা আমাকে নিতান্ত সহজ সুরে যেন কিছুই হয় নাই এমন ভাব করিয়া প্রশ্নটি করিলেন। আমি বলিলাম, "কে আগে ভালবাসার কথা বলল, এতে কি আসে যায় মা? আমরা দুজন দুজনকেই তো ভালবাসি? সে আমাকে ভালবাসে আর আমিও তাকে ভালবাসি"। মা বলিলেন, আমার উপর ভরসা রাখ। আমি তোমাদের দুইজনকেই ভালবাসি যদিও আমি তাহাকে দেখি নাই কিন্তু তুমি তাহাকে ভালবাস। আর তুমি তাহাকে ভালবাস বলিয়াই আমি তাহাকেও ভালবাসি। কিন্তু তুমি তো আমার প্রশ্নের উত্তর এরাইয়া যাইতেছ বলিয়া আমার মনে হইল।"

আমি বললাম, "না মা। আমি তোমার কোন প্রশ্নের উত্তর এরাইয়া যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি না। তবে আমি প্রথম তার কাছ থেকে পত্র পাইয়াছিলাম সেইটা বলিতে আমার কোন দ্বিধা নাই। আমি পত্র পাইয়া বুঝিয়াছিলাম, যে, আমি ওকে ভালবাসি কিন্তু আমি বলিতে পারি নাই। সে বলিতে পারিয়াছিল। তাহার মানে এই নয় যে, আমি তাহাকে কম ভালবাসি  বা আমি তাহাকে ভালবাসি নাই।"

মা আমার মাথায় হাত বুলাইয়া, আমার পিঠে তাহার একটি হাত চালাইয়া আমার নাকের ডগায় আলতো করিয়া টীপ দিয়া বলিলেন, "তুমি তোমার জায়গায় ঠিক আছ তো? যদি ঠিক থাক, আমি চাই তুমি তাহাকে শাদি কর। তুমি সুখী হইবে"। 

 

আমি অবাক বিস্ময়ে আমার মায়ের দিকে তাকাইলাম, সন্ধ্যার অল্প অল্প আলোতে আমি তাহার চোখে মুখে যেন এক প্রশান্তির ছায়া দেখিতে পাইলাম, তিনি একদিকে তাহার ঘাড় বাকা করিয়া পানের বাটি হইতে পান লইয়া কিছু পিষিত পান নিজের মুখে পুড়িয়া আর বাকি কিছু পান আমার গালে পুড়িয়া দিয়া বলিলেন, "নে পান খা, ভাল লাগিবে। মায়ের দোয়ায় সন্তান সুখী হয়, তুইও জীবনে সুখী হইবি।" 

আমি পান মুখে লইয়া অবাক দৃষ্টিতে মাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, "মা, তুমি কিভাবে আমার পছন্দের মেয়েকে না দেখিয়া, তাহার পরিবারের কারো কোন তথ্য না শুনিয়া, তাহার পরিবারের কোন ইতিহাস না জানিয়া এই সন্ধ্যায় এক নিমিষে জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্ত দিয়া আমাকে সুখী হইবে বলিয়া আশীর্বাদ করিলে?"

মা পানের পিক ফালাইতে ফালাইতে আমার মাথায় হাত রাখিয়া বলিলেন, " ভালোবাসার স্থায়িত্ব তাহার উপর নির্ভর করেনা, যাহাকে সে ভালবাসে, নির্ভর করে তাহাকে যে ভালবাসে তাহার উপর। সে তোমাকে ভালবাসিয়াছে প্রথম, তোমাকে ছাড়িয়া যাওয়ার কোন কারন না থাকিলে সে তোমাকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া থাকিবে এইটাই হওয়ার কথা। তুমি যাহাকে ভালবাস তাহাকে নয়, তোমাকে যে ভালবাসে তাহাকে তুমি তোমার জীবন সঙ্গিনী কর। তাহা হইলেই তুমি সুখী হইবে। আর ইহাই হইতেছে দাম্পত্য জীবনের সত্যিকারের রূপরেখা।'

আমি আমার মায়ের এত বড় দর্শন শুনিয়া খুব অবাক হইয়াছি। কি অদ্ভুত দর্শন।

মা বলিতে থাকিলেন, কাউকে কখনো তুমি তোমাকে ভালবাসার জন্য জোর করিবে না, বরং তোমাকে কেউ ত্যাগ করুক সেই ব্যাপারে কাউকে জোর করিতে পার। যখন জোর করিয়াও তাহাকে তুমি ত্যাগ করাইতে পারিবে না, নিশ্চিত থাকিবে যে, সে তোমাকে সত্যি ভালবাসে। তাহাকে তুমি তখন আরও বেশি করিয়া আঁকড়াইয়া ধরিবে কারন সে তোমাকে ভালবাসে। যে তোমাকে সত্যিকার ভাবে ভালবাসে, শত কারন থাকা সত্তেও সে তোমাকে কোনদিন ছাড়িয়া যাইবে না। বরং সে একটিমাত্র কারন খুজিবে যে কারনের দ্বারা সে তোমাকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া থাকিতে পারে, ত্যাগ করিবার জন্য নয়। আর ইহাই হইতেছে প্রকৃত ভালবাসার দুর্বলতা। তুমি তাহার সঙ্গে জীবনে সুখী হইবে।

আজ এত বছর পর আমি উপলব্দি করিতে পারিতেছি যে, আজ হইতে প্রায় দুই যুগ আগে আমার সেই অশিক্ষিত মা যে দর্শন শুনাইয়াছিলেন, তাহা কতখানি সত্য এবং খাটি। আজ আমি আমার জীবনে এক অদ্ভুত সুখ আর আনন্দ লইয়া প্রতিটি দিন অতিবাহিত করি। কারন আমার সঙ্গে আছে সেই মানুষটি যে আমাকে ভালবাসিয়াছিল এবং আমিও তাহাকে ভালবাসিয়াছিলাম। কিন্তু সে আমাকে প্রথম ভালবাসার কথাটি বলিয়াছিল।

মা আরও একটি আস্ত পান তাহার অতি প্রিয় পানের বাটিতে সুপারি আর মশলা দিয়া পিষিতে লাগিলেন। আমার দিকে না তাকাইয়াই তিনি বলিতে থাকিলেন, তুমি নিশ্চয় জানো, একটা ব্রিজ বানাইবার জন্য যা যা লাগে আর একটা দেওয়াল বানাইবার জন্য যা যা লাগে তা একই উপকরন। কিন্তু একটি ব্রিজ দুইটি প্রান্তকে সংযোগ করে আর একটি দেওয়াল দুইটা প্রান্তকে পৃথক করিয়া দেয়। তোমাদের এই যুগলমিলন হইতে হইবে একটি ব্রিজের সমতুল্য। দেওয়াল নয়। এখন তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হইবে তুমি কোনটা চাও এবং কিভাবে চাও আর কখন চাও। দাম্পত্য জীবনে এমন কিছু সময় আসিবে যখন তোমার কাছে মনে হইবে, সবাই ভুল আর তুমি ঠিক। হয়ত বা তুমিই ঠিক আবার তুমি ঠিক নাও হতে পার। তোমারও ভুল হইতে পারে। মা পানের বাটিতে তাহার পিতলের ডান্ডা দিয়া পান পিষানো একটু সময়ের জন্য থামাইয়া আমার দিকে তাকাইয়া বলিলেন, একটা হাদিসের কথা বলি, 'যে ভুল করে সে মানুষ, আর যে ভুল করিয়া তাহার উপর স্থির থাকে সে শয়তান, আর যে ভুল করিয়া আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে মুমিন। ফলে অন্যের কোন কথা শুনিবামাত্রই তাহার উপর উত্তেজিত হইয়া কোন কিছু করিতে যাইও না। কারন, তাহার কথার সত্যতা যাচাই করা তোমার কাজ। তোমার জানা উচিৎ সে তোমাকে ঠিক কথাটিই বলিয়াছে কিনা। সে তোমাকে প্ররোচিতও করিতে পারে। কোন কিছুই বিচার বিবেচনা না করিয়া কোন মন্তব্য করা হইতে সবসময় বিরত থাকিবে। মনে রাখিবা, একবার একটা কথা কিংবা মন্তব্য বলিয়া ফেলিলে উহা আর ফেরত নেওয়ার কোন অবকাশ নাই। তখন শুধু হয় নিজেকে অপরাধী হিসাবে ক্ষমা চাইতে হইবে আর অন্যজন তোমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখিবে। নিজের উপর বিশ্বাস রাখ। নিজের শক্তিকে বিশ্বাস কর। নিজের মানুষদের উপর বিশ্বাস রাখ। বিশ্বাস কর যে, তুমি পার এবং তুমি যা পার তা অনেকেই পারে না। আর অনেকেই যা পারে তুমিও তা পার।

আমার মায়ের কথাগুলি আমার কাছে এক অসামান্য দর্শনের মত মনে হইতেছিল। এত কথা মা কোথা হইতে জানিল, বা কে তাহাকে এইসব দর্শনের কথা বলিল আমি আজও ভাবিয়া কুল পাই না।

অনেক্ষন হইল সন্ধ্যা হইয়া গিয়াছে। কিন্তু পশ্চিমের আকাশে এখনো লাল আভা দেখা যাইতেছে। খোলা উঠানে বসিয়া আছি বলিয়া চারিদিকের অনেক মশারাও তাহাদের উপস্থিতির কথা জানাইয়া দিতাছে। আমার মা তাহার দ্বিতীয় পানটি মুখে লইয়া কিছুক্ষন চাবাইয়া লইলেন। এবং তাহার চর্ব্য পান হইতে একটু পান বাহির করিয়া আমার মুখে গুজিয়া দিলেন। আমার মায়ের চাবানো পান আমার বড় প্রিয়।   

মা আজ অনেক কথা বলিতেছেন যা আমার কাছে এক নতুন অধ্যায়।

মা বলিতে থাকিলেন, শোন বাবা, জীবনে বড় হইতে হইলে জীবনের সব কয়টি কুরুক্ষেত্রকে তোমার মুখুমুখি হইতে হইবে। তুমি তো অনেক বড় বড় মানুষের জিবনি পড়িয়াছ, তাহাদের দর্শন তথ্য পড়িয়াছ।  আজ তাহলে তোমাকে একটা গল্প বলি। একদিন এক ঈদের দিনে আমার বাবা আমাকে একটা নতুন ফ্রক কিনিয়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন। কিন্তু তিনি তা আমাকে আর দিতে পারেন নাই। হয়ত তাকা পয়সা ছিল না। তাই। আমার খুব মন খারাপ হইয়াছিল। সারাদিন আমার মন আর ভাল হইতেছিলনা। আমার মন খারাপ হইয়াছে দেখিয়া আমার বাবারও মন খারাপ হইয়াছিল। হয়ত তাহারও আমার মত ভিতরে ভিতরে একটা কষ্ট হইতেছিল তাহার এত আদরের মেয়ের মন খারাপ বলিয়া। কি জানি কি হইল আমি জানি না, আমার বাবার এক বন্ধু বিকাল বেলায় আমাদের বাসায় বেড়াইতে আসিলেন। হয়ত বাবাই নিমন্তন্ন করিয়াছিলেন। তিনি আমার বাবার খুব কাছের মানুষের মধ্যে একজন। হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি আমাকে অনেক আদর করিলেন, কেন আমার মন খারাপ তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া তিনি মুচকি হাসিয়া এক বিখ্যাত লেখকের উদ্দ্রিতি দিয়া আমাকে বলিলেন, "আমরা অনেক সময় একজোড়া জুতা না পাওয়ার বেদনায় চোখের পানি ফেলি কিন্তু কখনো কি একবার ভেবে দেখেছ যে, অনেকের তো পা ই নেই?" বলিয়া তিনি আমাকে জড়াইয়া ধরিয়া খুব আদর করিয়া দিলেন। বলিলেন, কালই তিনি আমার জন্য নতুন একটি ফ্রক কিনিয়া দিবেন। তিনি এমন করিয়া আমাকে এই কথাটি বলিলেন, যে, আমি যেন ঐ পা বিহিন মানুষটির চেহারা দেখিতে পাইলাম।  তাই তো, কথাটা আমার খুব মনে ধরিয়াছিল। আমার আর মন খারাপ হয় নাই। আমি আর নতুন ফ্রকের জন্য কখনো মন খারাপ করি নাই। আমি বুঝিতে পারিলাম আমার নিজের অবস্থানটা নিয়ে সন্তুষ্ট না হইলে পৃথিবীর কোন কিছুই আমাকে সন্তুষ্ট করিতে পারিবে না। আমি আমার বাবাকে জরাইয়া ধরিয়া অনেক কাদিয়াছিলাম। দুঃখে নয়, এতক্ষন যে বেদনাটা আমাকে খুব কষ্ট দিতেছিল, সেইটা যে বাবার বাবার বুকের ভিতরে গিয়া বাবাকেও কষ্ট দিতেছিল এই মনে করিয়া আমার চোখ আরও আবেগপ্রবন হইয়া উঠিতেছিল। আমার ছোট্ট বালিকা হৃদয়ের এই অফুরন্ত নিস্পাপ সাবলিল ভালবাসার চোখের জলে আমি আমার বাবাকেও কাদিতে দেখিয়াছিলাম। তাহার কান্নাও কোন কষ্ট হইতে নয়। নিছক ভালবাসার। এইটার নামই পরিবার। এইটার নামই হচ্ছে ভালোবাসা। নিজকে লইয়া সন্তুষ্ট থাক। ইহাতে সুখের পরিমান বাড়িবে। সবসময় একটা উপদেশ মনে রাখিবা যে, নিশ্চয় তোমার সৃষ্টিকর্তা তোমাকে কোন উদ্দেশ্যবিহিন এই পৃথিবীতে প্রেরন করেন নাই। তার উদ্দেশ্য আমাদের স্বপ্নের চেয়ে অনেক উত্তম এবং তাহার রহমত আমার হতাশার থেকেও অনেক বেশি। ঈশ্বরকে বিশ্বাস কর। তিনি তোমাকে কোন কিছুই না থেকে অনেক কিছু পাইয়ে দেবেন, যা আমার তোমার চিন্তা জগতেরও বাইরে। আর কাউকেই অবহেলা কর না। তোমার অবহেলা করার একটাই অর্থ দাঁড়াইবে, আর সেটা হচ্ছে তুমি তাহাকে তোমাকে ছাড়া চলিতে পারার অভ্যস্থ করিয়া তুলিতেছ। সবাই তোমার মতবাদ পছন্দ নাও করিতে পারে, সবাই তোমার মত করিয়া ভাবিতে নাও পারে। তুমি যে শার্টটা পছন্দ কর, সেই শার্টটা অন্য একজনের পছন্দ নাও হইতে পারে। এই পৃথিবীতে কিছু কিছু লোক তোমার জীবনে আসিবে আশীর্বাদ হইয়া, আবার কিছু লোক আসিবে শিক্ষণীয় হইয়া। আর এইটাই জীবন। তুমি আমাকে কিছুক্ষন আগে একটা প্রশ্ন করিয়াছিলে না যে, আমি তোমার পছন্দের মেয়েটির কোন কিছুই না জানিয়া, তাহার পরিবারের কি আছে আর কি নাই এই সব কিছুই না জানিয়া কিভাবে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত দিলাম? জীবনে শুধু টাকা পয়সা দিয়াই সব কিছুর মাপকাঠি হয় না। টাকা পয়সা সব কিছু কিনিতে পারে না। টাকায় তুমি আচরন কিনিতে পারিবে না, টাকায় তুমি সম্মান কিনিতে পারিবে না, টাকা দিয়া তুমি চরিত্র কিনিতে পারিবে না, টাকা দিয়া তুমি বিশ্বাস, ধৈর্য, শ্রদ্ধা, বিনয় এইগুল কিছুই কিনিতে পারিবা না। টাকা দিয়া তুমি ভালবাসাও কিনিতে পারিবা না। আর এইসব গুণাবলীগুলো তো আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের সবচেয়ে জরুরী বিষয়। যে ভালবাসিতে জানে, তাহার টাকার দরকার হয় না। আধামুঠো অন্ন খাইয়াই তাহার মন ভাল থাকে, তাহার দেহ ঠিক থাকে, তাহার আত্মা তৃপ্ত থাকে। ইহার পরেও আরও কথা থাকে। তোমার এই তৃপ্ত জীবনে তোমার পথে অনেক ঘেউ ঘেউ করা কুকুরের মত মানুষজনও পাবে। জীবনে যদি বড় হইতে চাও, এই সব চরিত্র হইতে সাবধান থাকিতে হইবে। কারন সব কুকুরকে তোমার মনোযোগ দেওয়ার সময় তোমার নাই। এরা শুধু তোমার মনোযোগই নষ্ট করিবে না, তোমার বড় হওয়ার পথে এরা সবচেয়ে বড় বাধা হইয়া দাঁড়াইয়া থাকিবে। ইহাদের মধ্যে অনেকেই এই সমাজের কেউ কর্ণধার বলিয়া মনে হইবে, কাউকে আবার সমাজের বিবেচক বলিয়া মান্য করিবে, কেউ আবার প্রথম সারির লোক বলিয়াও গর্ব করিয়া এইদিক সেইদিক প্রচারনা করিয়া বেড়াইবে। উহারা কেউই তোমার শুভাকাঙ্ঘি নহে। শুভাকাঙ্ক্ষী শুধু তোমার একান্ত পরিবার যাহারা তোমার ব্যথায় ব্যথিত হয়, তোমার আনন্দে আনন্দিত হয়, আর তুমি যখন দিশেহারা হইয়া সঠিক সিদ্ধান্ত লইতে অপারগ হওঁ, তখনো তাহারা তোমাকে ছাড়িয়া চলিয়া যায় না।

তোমাদের জন্য রইল আমার অফুরন্ত ভালোবাসা আর দোয়া।

২৩/০২/২০১৬- বগুড়ার পথে

Categories

বগুড়া যাওয়ার পথে

দুরন্ত গতিতে কখনো আমাদের গাড়ি ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত বেগে চলছে, আবার কখনো কখনো অধিক গাড়ির জটিলতায় একেবারে থেমেই যাচ্ছে। থেমে গেলেও খারাপ লাগছে না। কারন আমি রাস্তার দুই ধারে গ্রামের কি এক অপূর্ব সবুজের রাজত্ব, অনেক দূরে গ্রামের কিনারা দিয়ে বয়ে যাওয়া চিকন চিকন খালের ধারে হরেক রঙের গরু ছাগল, ভেড়া, কচি কচি ঘাস খাওয়ায় মগ্ন, ঐ খালের নোংরা জলে কিছু দুর্দান্ত বালক বালিকা কেউ কাপড় পরে আবার কেউ একেবারে দিগম্বর হয়ে খালের কিনারা থেকে লাফ দিয়ে তাদের বীরত্ব দেখানোর তাগিদে কে কত টুকু দূরে লাফিয়ে পরতে পারে তার প্রাণপণ চেষ্টা করছে ইত্যাদি দৃশ্য আমার মনে এক আনন্দের জয়ার দিচ্ছে। আমি দেখছি, ঐ সব ছোট ছোট বালক বালিকাদের মধ্যে মাঝে মাঝে মধ্য বয়সী কোন অভিভাবক সন্তানের অনিষ্ট না হয় এমন লাফের পায়তারা থেকে উচ্চস্বরে ধমকও দিচ্ছেন। কিন্তু কে কার কথাই বা শুনে। এদের যে বয়স, তাতে দুরন্তপনাই হচ্ছে মূললক্ষ। আমি অনেকক্ষন ধরেই এই অভাবিত দৃশ্য গুলো দেখছি আর আমার সেই শৈশবকালের একই প্রকৃতির দুরন্তপনাগুলো মনে করছি। আহ কি সুন্দর ছিল সেই সব দিনগুলো।

আমার সঙ্গে আমার মেয়েরা আছে। ওরা আধুনিককালের প্রজন্ম। এরা এই সব দৃশ্যের আনন্দের মুহূর্তগুলো বুঝে না। ওরা গাছের সবুজের নিচের আলো বাতাসের খবর রাখে না। ওরা চৈত্রের দুপুরে হেটে হেটে স্কুল থেকে এসে পান্তা ভাতের স্বাদ বুঝে না। ওরা কালবৈশাখী ঝড়ের দিনে আধাপাকা আম কুড়ানোর মজাটা বুঝে না। কিংবা শিলা বৃষ্টির মধ্যে অযথা ছোটখাট বরফের মত শিলা কুড়ানোর মজাটা বুঝে না। ওরা সারাক্ষন ট্যাব আর মোবাইল ফোন নিয়ে রক মিউজিক নিয়ে ব্যস্ত কিংবা কম্পিউটারে গ্রাফিক্সের মাধ্যমে গ্রামের কিছু কিছু অতি সুন্দর পোট্রেট দেখেই মুগ্ধ। কিন্তু সত্যিকারের গ্রামের গা থেকে সোঁদা মাটির যে গন্ধ, পচা বাঁশ পাতার যে একটা টক টক ঘ্রান, কিংবা সন্ধ্যায় শিয়ালের যে ডাক, তারা ওগুলোর কোন স্বাদ বুঝে না। গ্রামের রাস্তা ধরে ক্ষেতের আইল ভেঙ্গে হাটার যে এক অদ্ভুদ রোমান্স, আধাকালো সন্ধ্যায় ভয় ভয় হৃদয়ে শ্মশানের পাশ দিয়ে যাওয়ার যে অনুভূতি তার কোন কিছুই এদের ইন্দ্রিয় বুঝে না। ওরা সুকান্তকে চিনে না, ওরা রবিন্দ্রনাথকে চিনে না, ওরা নজরুলের প্রেমের কবিতা পরেনা। ওরা অনেক কিছুই জানে না। ওরা টাইটানিক দেখে অভিভুত হয় কিন্তু ওরা জ্যাকের ঐ ঐতিহাসিক কথাগুলো বুঝে না যখন সে বলে, “পার্টি? পার্টি যদি মজা করতে হয় তাহলে আস আমার সঙ্গে আমাদের তৃতীয় শ্রেণীর কামরায়, দেখ কিভাবে পার্টির স্বাদ গ্রহন করতে হয়।” রোজ বুঝেছিল কিন্তু আজকের দিনের “রোজেরা” এটা বুঝে না, বুঝতেও চায় না।

যাই হোক, আমরা চলছি আর আমি দেখছি দুই প্রজন্মের মধ্যে কত ফারাক হয়ে যাচ্ছে এই পৃথিবী। আমার কাছে এখনো ঢেঁকি ছাটা চাল খেতে মন উতলা হয়ে উঠে, আমার এখনো বরই গাছের নিছে এবড়ো থেবড়োভাবে পরে থাকা আধাপাকা বরই একদম একটু লবন দিয়ে আবার লবন পাওয়া না গেলে খালি খালিই খেতে মন চায়, আমার কাছে কয়েক টুকরা ধনিয়া পাতা হাত দিয়ে মুচড়ে কাচা মরিচ দিয়ে এক প্লেট পান্তা ভাতের আনন্দ এখনো পেতে ইচ্ছে করে। কি সব দিনগুলো আমি হারিয়ে ফেলেছি, ভাবতেই আমার মন যেন একেবারে ব্যথায় মুচড় দিয়ে উঠে। আমি কি বলি আমার সন্তানেরা বুঝে না, আমার সন্তানেরা কি বলে আমার বুঝতে ভাল লাগে না। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা এখন আর আজকের দিনের ছেলেমেয়েদের কাছে কোন কাব্যই মনে হয় না। রক্তকরবি দেখে ওদের মনে হয় কি সব আবোল তাবোল লেখা লিখে রবিন্দ্রনাথ এত বিখ্যাত হয়ে গেলেন? নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ যেন এক কাল্পনিক কথা, এর কোন রোমান্স আজকের দিনের প্রজন্মের কাছে কোন স্বপ্নই মনে হয় না। ম্যাক্সিম গোরকির “মা” উপন্যাশটি পরার জন্য আমি কতবার পরিক্ষার পড়ায় ছেদ দিয়েছি তার কোন ইয়ত্যা নেই, অথচ আজ যখন আমি আমি আমার প্রজন্মের কাছে এই সব উপন্যাশের কথা বলতে চাই, তারা ম্যক্সিম গরকিকে তাই জানে না।

গান বাজছে আধুনিক। কি সব কথাবার্তা, কোন ভাব গম্ভীরতা নাই, সুর আছে ড্রাম পিটানোর মত, বুকে লাগে এর প্রতিটি আছাড়। কিন্তু হৃদয় ছুয়ে যায় না। (…চলবে) 

২৩/০২/২০১৬- বগুড়ার পথে (২)

Categories

বগুড়া যাওয়ার পথে (২য় পর্ব) 

বগুড়া শহরে এই আমার প্রথম আসা নয়। কর্মস্থল হিসাবে আমি এই অঞ্চলে প্রায় পাঁচ বছর কাটিয়েছি। গ্রামের অধিকাংশ অলি গলি, আনাচে কানাচে ঘুরেছি, কখনো দায়িত্ব পালনের জন্য রাত অবধি জেগে থেকেছি। কখনো আবার নিছক মনের তাগিদে ঘুরে প্রকৃতির সৌন্দর্য আহরণের জন্য দিকবিদিক ঘুরেছি। কখনো আমি গভির রাতে, কখনো রাতের শেষ প্রহর জেগে থেকে শুক্ল পক্ষের চাঁদ দেখেছি। কখনো আমি দেখেছি অমাবশ্যায় আকাশ তার কি রূপে পৃথিবীর কাছে প্রেম নিবেদন করে। কখনো আবার ঘোর বৃষ্টির রাতে যখন সব মানুসেরা তাদের নিজ নিজ আস্তানায় ফিরে গভির ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, যখন পাখীরাও আর কিচির মিচির করে না, আমি তখনও চাঁদহীন মেঘলা আকাশের মুসলধারে বৃষ্টির চ্ছটায় বারান্দায় বসে দেখেছি গাছগুলো কিভাবে বৃষ্টির জলে একা একা খেলা করে, কিভাবে হেলেদুলে একে অপরের আরও কাছে চলে আসে। কোন কথা নাই, নিঃশব্দে নিরবে অবিরত বৃষ্টি এই ঘুমন্ত ধরাকে কিভাবে স্নিগ্ধ চুম্বনে আলিঙ্গন করে। আকাশ মাটি আর বৃষ্টির এই প্রেমের লীলা এক অদ্ভুত রহস্য ঈশ্বরের। শরৎচন্দ্রের সেই বিখ্যাত শ্রীকান্ত উপন্যাসের কিছু অভিব্যাক্তি আমার মনে পরে। ……”অন্ধকারেরও রূপ আছে” । আসলেই আছে। মানুষ দিনের আলোয় যা দেখে না, অন্ধকারে সে টা উপলব্ধি করে, মানুষ দিনের আলোয় যা বিশ্বাস করে না, অন্ধকারের ঘোর নিশানায় সে সেটা বিশ্বাস করে। এখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। গাড়ির আলোতে আমি সামনের রাস্তা দেখছি কিন্তু পাশে ফেলে যাওয়া অনেক কিছুই এখন আর আমার নজরে পরছে না অথচ এই ফেলে যাওয়া রাস্তার ধারেও কতই না সৌন্দর্য পরে আছে। মাঝে মাঝে লাইট পোস্টের কিছু আলোতে কিছু কিছু লোকালয়ের বস্তি চোখে পরে। ওখানেও অনেক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনের অনেক কাহিনি লুকিয়ে আছে যার ইতি বৃত্ত আমাদের অনেকেরই জানা নাই।

অনেক দূর চলে এসছি আমরা। বগুড়া শহর আর বেশি দূরে নাই। গাড়ির তেল ফুরিয়ে গেছে প্রায়, তেল নিতে একটি তেল পাম্পে ঢোকতেই হচ্ছে। ইচ্ছা না থাকা সত্তেও গাড়ি থামাতে হল। আমি নেমেই একটা সিগারেট ধরালাম। একটি ৬-৭ বছরের বাচ্চা সহ একজন মহিলা আমার কাছে এসে বল্ল, স্যার আমার এই ছেলেটার একটা চোখ অন্ধ, আর একটা হাত অবশ। দিন না আমাকে কিছু। বড় মায়া হল। মা তার অন্ধ এবং পঙ্গু ছেলের জন্য কোথায় না ঘুরছে? আমার মায়ের কথা মনে পড়ল।  মনে হল কতকাল আমার মা আমাকে আর আদর করে না, কতকাল আমার মা আমাকে আর খোকা বলে ডাকে না। আমাকে আর শাসনও করে না। অথচ আমি জানি আমার মা আমার কাছে আছেন, আমাকে দেখছেন। আজ আমি বাবা, আমার মেয়েরা আস্তে আস্তে তাদের আরেক জীবনে প্রবেশ করছে। হয়তবা আমিও আর ওদেরকে আর আগের মত শাসন করতে পারবনা, আমি আর আগের মত বুকে জরিয়ে ধরে বলতে পারব না, মা তোমার কি মন খারাপ? হয়ত বা তার সত্যি মন খারাপ, হয়তবা সেও কোথাও বসে কোন এক অমাবস্যার রাতে বৃষ্টির ঘন চ্ছটায় আমাদের কথা মনে করছে, অথচ আমি তার পাশে নাই। তাই মাঝে মাঝে অদেরকে মিস করব বলে আজ এই দিনে অনেক অগোছালো আব্দার আমি মেনেই নিচ্ছি।

যাই হোক, ছেলেটার জন্য প্রচন্ড মায়া হল। মায়ের জন্য আমার বুকটা কোথায় যেন একটু ব্যাথা অনুভব করলাম। বললাম, এটা কি তোমার একমাত্র সন্তান? মা সময় অপচয় না করে বিনা দ্বিধায় উত্তর দিল, “হ্যা গো স্যার, হামাক একটাই পোলা, হামাক বড় আদরের পোলা গো স্যার।” একটা মা, জাস্ট একজন মা। তার পরিচয়, মা। মাকে নিয়ে অনেক কবিতা পড়েছি, মাকে নিয়ে অনেক ইতিহাস রচিত হয়েছে। মাকে নিয়ে ধর্মগ্রন্থেও অনেক বানি রয়েছে। আমি নিজেও মাকে নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছি যদিও আমি কবি নই। আমার কবিতা কোথাও ছাপা হোক সেটাও আমি চাইনি। তারপরেও মনের আবেগে আমি মাকে নিয়ে অনেক কবিতাও লিখেছি। আজ মনে হচ্ছে মাকে খুব মিস করছি। কোন এক সময় মাকে মিস করে একটা কবিতাও লিখেছিলাম…

আমি এক দস্যুরানীর প্রেমিক
কি এক অদ্ভুদ তার চাহনি, কখন মায়াবতী
কখন বা কঠোর স্পাত কঠিন ভিতি
কি অবাক এক জীবনীযোগে
অতন্দ্র ঘোর অন্ধকারে আমার পানে চাহিয়া সে আলেয়ারে খোঁজে

আবার কখনো টকটকে রৌদ্র স্নানে
কোন এক অজানা ভয়ে কম্পিত হয় শিহরনে
কখনো ভালবাসায় আমাকে ছুরে দেয় অসীম আকাশের দিকে
আবার যদি হারিয়ে যাই এই ভয়ে ঢেকে রাখে তার শারির আচলে

কি অদ্ভুদ সে।
কখনো গাল ভরে চুমু
আবার কখনো ইশা খার মত করা শাসনের ঝুমু
সকাল সন্ধ্যা দিন রাত আমার কোন স্বাধীনতা নাই
আবার আমার কোন কাজে তার কোন বাধাও নাই

মাঝে মাঝে আমার বড় রাগ হয়
আর সে খিলখিলিয়ে হাসে,
আমি যখন হাসি, সে তখন অপরূপ দৃষ্টিতে অশ্রু নয়নে ভাসে
আর বলে, আমি নাকি পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর।
অথচ আমার একটা চোখ নাই, আমি দেখতেও ফর্সা নই।
একদিন অনেক রাতে সেই অমাবশ্যার অন্ধকারে চুপি চুপি আমি তারে প্রশ্ন করেছিলাম

কে গো তুমি আসলে?
সিক্ত নয়নে আমার কাধে হাত রেখে বলেছিল
“তুমি যখন এই পৃথিবীতে প্রথম আস
তখন আমার নতুন পরিচয় হয়েছিল
আমার নতুন নাম হয়েছিল, “মা”

(…… হয়ত চলবে)

১৮/২/২০১৬-আমার বড় মেয়ের সঙ্গে

গত দুইদিন যাবত আমি আমার বড় মেয়ের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটানোর চেষ্টা করছি। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে। এখনো ছেলেমেয়ের মধ্যে কোন রাত যাপনের সুযোগ আমরা দেই নাই যদিও এটা আমাদের ধর্মের রীতির মধ্যে পরে না কিন্তু আমি খুব বিস্ময়ের সহিত লক্ষ করছি আমাদের এই দুইজন সন্তানও কোন প্রকারের দাবি তুলে নাই তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি বলে। ওরা নিষ্পাপ মানুষগুলোর মধ্যে একজন।

কিন্তু আমি একটা জিনিস লক্ষ করছি আমার মধ্যে যে, আমার বুকের ভিতর কোথায় যেন একটা ফাকা ফাঁকা ঠেকছে। অথচ কোন কিছুই আমি হারাই নাই। বরং আমি আরও একজন নতুন মানুষ পেয়েছি, আমি আরও একজন সুসন্তান পেয়েছি, অন্যভাবে বলতে হয় যে, আমার যে একজন ছেলে সন্তানের অভাব ছিল আজ মনে হয় যেন আমি একজন ছেলে সন্তান পেয়েছি। কখনো কোনদিন কোনভাবেই আমার অগোচরেও আমার মনে আমার একজন ছেলে সন্তান দরকার এই ভাবনাটা আসে নাই। আজ আমার মেয়ের জামাইকে পেয়ে মনে হল, আমি যেন আজ নতুন করে বাবা হয়েছি। একজন ছেলের বাবা। যে অভিজ্ঞতাটা আমার কখনো ছিল না। কিন্তু তারপরেও প্রতিনিয়ত আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে। কি সেই পরিবর্তনটা? কাজের ফাকে কারনটা খুজতে চেষ্টা করেছি, অবসরে খুজতে চেষ্টা করেছি, একাএকা ভেবে দেখার চেষ্টা করেছি, চোখ বুঝে ভাবার চেষ্টা করেছি, চোখ খুলে দিনের আলোয় বুঝার চেস্তা করেছি, আমার কোথাও কোন কোন হারায় নাই। অথচ ব্যাপারটা ঘটছে আমার মাথার ভিতর, আর ব্যাথাটা পাচ্ছি অন্তরের ভিতর। এরই মধ্যে আমার মেয়ের বিয়ের কারনে আমার যেন নতুন করে একটা আনন্দ হচ্ছে আমার সর্বত্র। তাহলে কি হয়েছে আমার? ইন্ডাস্ট্রি চলছে আগের মত, ব্যবসা চলছে ঠিক আগের মত, আমি অফিসে যাচ্ছি ঠিক সময়মত, আমার কোন কাজেই আমার কোন হেরফের হচ্ছে না। তারপরেও একটা অনুভূতি কাজ করছে। সেই অনুভুতিটা আজ যেন আমার কাছে কিছুটা স্পষ্ট হল। সম্ভবত এই কারনে যে, একদিন কোন এক শরতের সন্ধ্যায় কিংবা বর্ষার এক ঘনমেঘের দিনে আমার এই মেয়ে আমাকে অঝোর অশ্রু জলে ভাসিয়ে আমারই চোখের সামনে পরিবারের অতিতের সমস্ত আদর আপ্যায়ন ভালোবাসা রাগ গোস্যা, অভিমান, ঝগড়া সব ছেড়ে তার দুই নয়ন ভাসিয়ে আমার হাত ছেড়ে আজকের এই নতুন ছেলের হাত ধরে অন্য কোথাও বাসা বাঁধবে। আমার সব অধিকার থাকা সত্তেও, আমার সব ভালোবাসা ঠিক আগের জায়গায় রেখেই আমার মেয়ে তার আরেক নতুন পৃথিবী তৈরি করবে অন্য এক স্থানে। এই ভাবনা আসতেই যেন আমার চোখের পাতা ভিজে আসে কখনো আনন্দে আবার কখনো মিস করার এক কষ্টে।  আমার বুকে একটা সুখের অনুভুতির সঙ্গে আবার একটা অন্য রকম কষ্টের অনুভূতিও অনুভব হয়।  এটা আসলে কষ্ট নয়, এটাও একটা সুখের কষ্ট। ঐ যে ঐ রকম একটা অনুভুতির মত "তোমার মা তার জীবনে তোমাকে কাদতে দেখে একবারই হেসেছিল, যেদিন তোমার জন্ম হয়েছিল।" কি দারুন কথা না!!

আজ আমার মনে হচ্ছে আমিও হয়ত তোমার চলে যাওয়ার সময় তোমার কান্না দেখে আমি অশ্রুজলে হেসে হেসে আমার অন্তরের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে বলব, তুমি সব সময় ভাল থাকবে আমার এই নবাগত ছেলের হাত ধরে। তাকে তুমি শক্ত করে ধরে রেখ মা, আমিও ওর হাত ধরে রেখেছি যেন ও কোথাও হারিয়ে না যায়। আমার কাছে তো আলো আছে মা। আমি তোমাদের জন্য এক বাসযোগ্য পৃথিবীর আবাসস্থল গড়ে দিয়ে যাব, এই আমার প্রতিজ্ঞা ঈশ্বরের কাছে।

১৪/২/২০১৬-বিশ্ব ভালবাসা দিবস-বিয়ে 

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

ফেব্রুয়ারী 

১৪ 

আজ তোমার জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল যা একজন মেয়ের জীবনের বাকি সব পরিচয় সম্পন্ন করার লক্ষে সামাজিক এক প্রত্যায়ন পত্র আর ধর্মীয় রীতিতে মহান আল্লাহতালার আদেশ পালনের মহাজ্ঞা। আর এই প্রত্যায়ন পত্রের মাধ্যমে তুমি আজ সাধারন এক বাবার মেয়ে থেকে অন্য এক পুরুষের স্ত্রী হয়েছ, একটি পরিবারের বউ হয়েছ, কারো ভাবী, কারো ননদিনী এবং আরও অনেক নতুন সম্পর্কের সৃষ্টি করেছ। সময়ের পরিবর্তনে আল্লাহর ইচ্ছায় একদিন তুমি মা হবে, তারপর ক্রমান্বয়ে শাশুড়ি থেকে দাদী এবং তারপরে হয়ত বড়মা ইত্যাদি। আর এইসব সার্থক জীবনের জন্য যা প্রয়োজন তারমাত্র একটি সিঁড়ি তুমি আজ পার করলে। বাকি অধ্যায়গুলো পাওয়ার জন্য তোমাকে আরও অনেক কঠিন কঠিন দিন, সময় এবং ক্ষন পার করে এক অনবদ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন জীবন পার করতে হবে এবং তা পার করতে পারলেই কেবল সার্থক মা, সার্থক শাশুড়ি, সার্থক দাদী কিংবা সার্থক বড়মা হওয়ার যোগ্যতা তুমি অর্জন করতে পারবে। আর তার সঙ্গে তুমি পাবে সামাজিক এক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান এবং হয়ে উঠবে সবার কাছে এক দৃষ্টান্তমুলক ব্যক্তিত্ব।  

এখন যে প্রশ্নটা আসে, এই অনবদ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন জীবন বলতে কি বুঝায়? অনবদ্য জীবন মানেই সমস্যাবিহিন জীবন নয়। বরঞ্চ সমস্যা নিরসনকল্পে কিভাবে কখন কোথায় কেমন করে তা সমাধান করা যায় তার হিসাব। এই জীবনে অনেক সমস্যা আসবে, আর এই সমস্যা সমাধান করার জন্য অনেক চেনা-অচেনা মানুষের ভীর তোমার আশেপাশে দেখতে পাবে। কাউকে মনে হবে তোমার অতি পরিচিত এক বন্ধু, কেউ আসবে তোমার জীবনে এমন বেশ ধরে যে মনে হবে তোমার দুঃখে সে অতি দুঃখিত, কেউ আবার এমন করে তার অনুভুতি তোমার কাছে মেলে ধরবে যেন ঠিক এটাই তুমি চাচ্ছ। এই দলটি প্রথমে তোমাকে ভালবাসার কথা শুনাবে, ভাললাগার কথা বলবে, কাজ না হলে নিজেদের চোখের জলে তোমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করবে, এমনও হতে পারে তারা তাদের অসহায়ত্তের কথা বলে তোমার কোমল হৃদয়ে জায়গা করার চেষ্টা করবে, আর কিছুতেই কিছু না হলে তখন তোমার মন কিভাবে পিশিয়ে উঠবে সে চেষ্টা করবে। এই দলটি কখনো বালকসুলভ ভদ্র আচরনে আবার কখনো সে অত্যাচারির রুপে তোমাকে দেখা দেবে, এবং তোমাকে বিপথে নিয়ে যাবে। সাবধান থেক এদের থেকে। মনে প্রানে বিশ্বাস রেখ যে, এরা আসলে কেউ তোমার প্রকৃত বন্ধু নয়। একজনও না। আর এটাই এই অদ্ভুত এই পৃথিবীর আচরন। যখনই তুমি এদের সাথে তোমার জীবনের ব্যক্তিগত সমস্যাবলী শেয়ার করেছ, ঠিক তখনি তুমি সমস্যার আরও জটিল গহব্বরে আটকে যাবে। তোমার সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে তোমার সমস্যা আরও গভির থেকে গভিরে নিয়ে যাবে এবং এক সময় তোমার জীবনটা এরা কুপরামর্শ দিয়ে এতটাই অতিষ্ঠ করে তোলবে যে, আজ যারা তোমার সত্যিকারের বন্ধু, যারা তোমার জিবনটা সুন্দর হয়ে উঠুক বলে প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, তাদেরকে তোমার কাউকেই আর বন্ধু মনে হবে না। যেদিন তোমার কাছে এই সব শুভাকাঙ্ক্ষী লোকজনকে আর তোমার আপনজন বলে মনে হবে না, সেদিন তোমাকে মনে রাখতে হবে যে চাটুকারের দল তোমাকে ঘিরে ফেলেছে এবং তোমার জীবনের সব সাধ-আহ্লাদ ধ্বংসের পথে। তোমার আর ঐসব পর্ব, সার্থক মা, সার্থক শাশুড়ি কিংবা সার্থক দাদী হওয়ার পথে এক বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। ঐসব বিপথগামী মানুষরূপী শয়তান গুলো এইটাই চেয়েছে। এর মানে এই যে, তোমাকে প্রতিনিয়ত ঐসব চাটুকার, ঐসব হায়েনা, ঐসব বন্ধুতুল্য অপরিচ্ছন্ন মানুষরূপি খারাপ মানুষগুলোর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। দূরে থাকতে হবে তোমার নিজের ভাল থাকার জন্য, দূরে থাকতে হবে সামাজিক সম্মান আর পরিচ্ছন্ন জীবনের জন্য। আর ঐসব হায়েনাদের কাছ থেকে দূরে থাকার একটাই পথ, আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজের মানুষদের উপর বিশ্বাস রেখে নিজেকে সঠিক পথে এবং নিজের আত্মবিশ্বাসকে বিশ্বাস করে। তোমার যা আছে, তাতেই তোমাকে সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে হবে। তোমার থেকেও অনেক মানুষের অনেক কিছু নাই, কারো হাত নাই, কারো পা নাই, কারো বাবা মা নাই, কারো থাকার ঘর নাই, কারো আবার কিছুই নাই। তোমার তো অন্তত আমরা আছি, তোমার স্বামী আছে, তোমার খুব ভাল শশুর শাশুড়ি আছে, তোমার উকিল বাবা আছে, তোমার জা, ননদিনী, ভাসুর সবাই আছে। তোমার সুন্দর ঘর আছে, তোমার কি নাই? আল্লাহ তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসে বলেই আজ তোমাকে এই রকম একজন সুন্দর মানুষের হাত ধরতে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে যাকে তুমি নিজে ভালবেসেছ এবং তুমি তাকেই পেয়েছ। তোমার জন্য এই মানুষগুলো প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের কাছে দোয়া করে, তোমার ভাল চায়। তাদের ভালবাসার মুল্য শুধু একটাই, তোমরা সুখে থাক, তোমরা ভাল থাক। আর কিছুই চায় না এই স্বার্থহীন মানুষগুলো। নিজের স্বামীর কাছে তুমি কতটুকু গ্রহনযোগ্য তা নির্ভর করবে তুমি নিজের কাছে কতটুকুন সৎ এবং তুমি কতটুকুন নিজেকে ভালবাস তার উপর।  

মনে রেখ ভয়, ঘৃণা এবং লোভ কখনো মরে না। এটাকে প্রথম থেকে দূরে রাখতে হবে। আর এর প্রধান উপায় হচ্ছে যখনই কোন ভয়ের উদ্রেক হবে, যখনই কোন ঘৃণার কারন সামনে এসে দারাবে, যখনই কোন লোভের বশবর্তী হবে, ঠিক যার কারনে এইসব ভয়, ঘৃণা এবং লোভের উদ্রেক হবে তা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং তার সঠিক ব্যাখ্যা ঠিক লোকের কাছ থেকে সরাসরি জেনে মন পরিস্কার করে নিতে হবে। তাতেই তুমি জয়ি হবে। আর যদি তা না কর, নিশ্চিত জেনো তোমার পরাজয় নিশ্চিত। আর এটাই চেয়েছে ঐসব বন্ধুসুলভ তোমার হায়েনার দল। তুমি যদি জয়ি হওঁ, তবেই তুমি পাবে নিরবিচ্ছিন্ন জীবনের স্বাদ আর তারপরেই পাবে তুমি জীবনের ঐ সব পর্যায়ের সব কিছু। অর্থাৎ সার্থক একজন মা, সার্থক একজন স্ত্রী, সার্থক একজন শাশুড়ি কিংবা দাদির পরিচয়।  

আজ তোমাকে একটি সত্য কথা বলি। তোমার মা আমার জীবনে এক আশীর্বাদ। এটা তুমি নিজেও জানো। এর মানে এই নয় যে তোমার মা একমাত্র সবচেয়ে গুণী ব্যক্তি, তোমার মা একমাত্র সুন্দরী মহিলা। তার মধ্যেও অনেক গুনাবলির অভাব রয়েছে, তার মধ্যেও অনেক দোষ রয়েছে, তার সঙ্গে আমারও অনেক সময় কারনে অকারনে এবং খুব তুচ্ছ জিনিস নিয়েও মনের অমিল হয়। অন্য দিকে আমিও একমাত্র আদর্শবান ব্যক্তি নই, আমারও ১০০% গুনের সমাহার নাই, আমার অনেক ব্যবহারেও তোমার মায়ের রাগ হয়। কিন্তু তারপরের অধ্যায় হচ্ছে যে, আমরা অনেক কিছু কম্প্রোমাইজ করি, আমরা স্বাভাবিক জীবন জাপনের জন্য আমরা উভয়ে কোথায় কোন কারনে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে, কি কারনে আমাদের মনের ভিতরে কষ্ট হচ্ছে তা মিলেমিশে কথা বলে নিজের মন পরিস্কার করি বলেই আজ তোমরা আমাদেরকে এই পর্যায়ে দেখতে পাচ্ছ। আমরা সুখী পরিবাবের অংশ। আমি ও চাই তোমরা সুখী হওঁ এবং সার্থক জীবন পার কর।  

নিজেদের শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া দুইজনের মাঝে তৃতীয় পক্ষ যে আসবে সে আর কেউ না, সে হচ্ছে শয়তান। আর শয়তান কখনোই আমার তোমার বন্ধু নয়। সে শুধু ধোঁকা দেয় সে কখনো আসে বন্ধু হিসাবে, কখনো আসে ঠিক তোমার মন যা চায় সে কথাগুলো নিয়ে, সে আসে এক চতুর বুদ্ধি নিয়ে, যা তোমার আর তোমার পরিবারের শুধু ধ্বংসই চয়, মঙ্গল নয়। তোমার আজকের এই পবিত্র দিনটি মঙ্গলময় হোক, তোমার দাম্পত্য জীবন সুখের হোক এটাই আমার সব সময়ের জন্য প্রার্থনা। আমরা তোমাকে ভালবাসি।

চাঁদ সূর্যের প্রতিস্থাপক নয়, শিশির বৃষ্টির প্রতিস্থাপক নয়, পুকুরের ঘোলা জল নদী বা সাগরের প্রিতিস্থাপক নয় তোমার স্বামী তোমার কাছে সূর্য, তোমার পরিবার তোমার কাছে সাগর, আর তোমার প্রতি তোমার পরিবারের অফুরন্ত ভালবাসা হচ্ছে তোমার উপর ভালবাসার বৃষ্টি।এদের কোন প্রতিস্থাপিক হওঁয় না। শয়তানের দলমাঝে মাঝে তোমাকে চাদের কথা বলে, শিশিরের কাব্য দিয়ে অথবা কর্দমাক্ত পুকুরের ঘোলা জল দিয়েই বিপথগামী করে দিতে পারে। আমি তোমাদের জন্য ঐসব হায়েনাদের কাছে থেকে আমার ইসসর তোমাদের রক্ষা করুক সেটাই দোয়া করি।

 You were not an accidental baby in my life, you are my wanted girl from the Almighty and I prayed for you for almost 5 long years before you were born and then I was blessed with you from HIM. I always wanted a girl, you are that girl in my life. I love you all the time and with all my breath. May Almighty Allah listen to my prayer for your happiness and prosperity in your life.

১৯/০২/২০১৬- বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট

অনেক অনেক দিন পর বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে এলাম। প্রায় ১২ বছর পর। অনেক পরিবর্তন হয়েছে এর চেহারা। শুধু বগুড়া ক্যান্ট এর চেহারা কেন, পুরু বগুড়া শহরের চেহারাই পরিবর্তন হয়েছে অনেক। কোন কিছুরই প্রতিদিনের পরিবর্তন চোখে পরে না কিন্তু কেউ হটাত করে দেখলে পুরু পরিবর্তনটা এক নিমিষেই বলা যায়। আমার কাছে তাই পুরু পরিবর্তনটাই ধরা পরল।

বগুড়া শহরে আসার আমার একটি মাত্র কারন ছিল- আমার মেয়েকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজে রেখে যাওয়া। সদ্য বিবাহিতা আমার মেয়ে তার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর, ভাসুরের বউ, এবং আমাদের পরিবার সবাই একসঙ্গে এসেছি। অত্যান্ত চমৎকার একটা সময় কাটাচ্ছি সবার সঙ্গে। গতকাল গিয়েছিলাম আমার মেয়ের মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে। চারিদিকে সব ডাক্তার, কেউ  এক বছরের অভিজ্ঞতার ডাক্তার, কেউ দুই বছরের, কেউ বা বা আবার এক প্রফের অভিজ্ঞ ডাক্তার, কেউ আবার দুই হয় নাই তবে প্রায় দুই প্রফের সমান অভিজ্ঞ ডাক্তার। আমার মেয়ের ব্যাচের সবাই এখন প্রায় পৌনে দুই প্রফের অভিজ্ঞ সব ডাক্তার। আমি আমার মেয়ের মেসে এসেছি পুরু পরিবার নিয়ে। আমার মেয়ের বিয়ের মিষ্টি নিয়ে।

ছেলেদের মেসের পরিবেশ আমার জানা আছে কারন প্রায় দেড় যুগের বেশি আমি মেস লাইফ কাটিয়েছি। কখনো কোন মেস মেম্বার মেসের খাবার খেয়ে খুশি হয়েছে কিংবা মেসের খাবারের উপর মন খারাপ করে নাই, এই ইতিহাস মোঘল আমল থেকে খুজলেও কোন বরাত পাওয়া যাবে না। মেসের আমার মেয়ের বান্ধবিদেরও সেই একই অবস্থা। তাদেরও মেসের খাবারের উপর অনেক অভিযোগ আছে, আছে কতই না কষ্টের মনোভাব। সব কিছুই ভাল এখানে শুধু মেসের খাবার নিয়ে যত কষ্ট। তারপরেও আমি জানি একদিন ওরা এই মেস লাইফটা মিস করবে। আর আজকের দিনের এই মেসের খাবারের কষ্টের বিষয়টিই ভবিষ্যতের মজার কাহিনি গুলর মধ্যে একটা হয়ে উঠবে। কারন আমার এই জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি যে, ঐ মেস লাইফটা খুব মিস করছি।

পিচ্চি পিচ্চি আমার সব মেয়েরা সবাই ডাক্তারি পরছে, দেখেই শান্তি লাগে। এক গুচ্ছ ডাক্তার চারিদিকে। হৈ চৈ কিচির মিচির আনন্দের উল্লাস এই সব উঠতি ডাক্তারদের কণ্ঠে। বড় ভাল লাগে এদের বাচ্চামি, এদের চালচলন। একদিন ওরাই দেশের সব স্বনামধন্য ডাক্তারদের সাড়িতে দারিয়ে থাকবে, কারো হাত দিয়ে অনেক মানুষের জীবনের পাল পরিবর্তন হয়ে যাবে, অনেক মানুষের ভরসার স্থান হবে এরা। এতগুলো ডাক্তারদের পেয়ে আমারও খুব ভাল লাগছিল। এদের মাথায় এখন সব এনাটমি, ইত্যাদি সব কঠিন কঠিন সাব্জেক্ট মাথায় ঢোকে যাচ্ছে। খাটের নিচে রাখা ট্রাঙ্ক ভরতি সব বই এর লেখা খাটের নিচ থেকে উবে গিয়ে একেবারে মাথার ব্রেনে চলে যাচ্ছে, বইগুল আবার কদিন পর খাটের নিচেই জমা হয়ে যাচ্ছে।

তোমরা সবাই খুব ভাল। ভাল থেক তোমরা। জীবনে তোমরা সবাই সফল হবে।

১৫/০৭/১৯৯৯- উম্মিকার কাছে জিজ্ঞাসা

 

Dear Ummika,

(My Dream that got fulfilled.)

 In the year of flood-95, the story took place. The true victim was narrating his experiences in the national TV media.

The man was running towards the safe zone because the hurricane, with hot water and very high speed, was rushing towards them from Bay of Bengal. They could not reach to the safe zone. The waters caught them enroute. Thinking immediate sanctuary, he claimed up the big banian tree with his two small kids, Faria , the daughter and Parvez Zaman, the son. The man was holding his two kids very tightly so that none go missing. But  the current of the water was so high that his hands were unable to hold two kids together anymore or otherwise his life was in danger.  Now time has come to decide to surrender one minimum to survive marginally. The man could not decide any thing. What should he do? He can not surrender anyone!  At the moment of “no time left” things happened automatically. The man survived. His one kid is also alive. And the kid is Parvez Zaman, the son. Naturally the daughter was sacrificed. What he could do? He could do so many things but he could not do anything. I do not say any thing right now sitting in a comfortable situation what I will do then, but what the man did it might happen to me too. Luck only can decide their fate, my daughter or my son. Only God knows.

 What you would do Ummi?