১/১/২০২৪-উম্মিকার বিয়ে

৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে গায়ে হলুদের পর আজ পহেলা জানুয়ারী ২০২৪ তারিখে মিরপুর জনাব আলমগীর সাহেবের অধীনে উম্মিকার এবং আবিরের বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো। কাবিন করা হলো ২০ লক্ষ টাকার যার মধ্যে উশুল দেখান হয়েছে ৩ লাখ এবং বাকিটা উশুল দেখানো হয় নাই। উকিল বাবা হিসাবে আমাআদের পক্ষে নাম লিখা হলো মুবীন আহমদকে এবং আবিরদের পক্ষে হলো এমদাদুল (আবিরের মামা)।

বিবাহোত্তর একতা ছোট খাটো অনুষ্ঠান করা হলো মিরপুর ২ নাম্বার বুফে কিংস রেষতুরেন্টে। গোটা ৫৬ জন লোকের সমাগম হয়। অত্যান্ত সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

৩০/১২/২০২৩-উম্মিকার গায়ে হলুদ

কোনো এক সময় এটাই চাওয়া ছিলো যেনো পরিবার থাকে সুখে এবং শান্তিতে। সবার মনের ইচ্ছাগুলি যেনো পুর্ন হয় ঠিক যে যেভাবে চেয়েছিল। জীবন বড় ছোট, এর মধ্যেই অনেক কঠিন দিন আসে, দুঃখের সময় মানুষ সেই সময়টাও পার করে কিন্তু সব কিছুর পরেও হয়তো আজ বা কাল মানুষের সব ইচ্ছা পুরন না হলেও মনের শান্তির জন্য যে ইচ্ছাগুলি পূর্ন হওয়া খুব দরকার সেগুলির কিছুটা হলেও পুর্নতা পায়। তারপর, একদিন মানুষ কিছু অপূর্নতা, কিছু পূর্নতা নিয়ে এই মায়াবী পৃথিবী ত্যাগ করে। যখন মানুষ এই মায়াবি পৃথিবী ত্যাগ করে, তখন তাঁর সাথে এই পৃথিবর আর কোন হিসাব কিতাব থাকে না। তাঁর উপর আর কারো কোনো দায়িত্ব থাকে না। হয়তো অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু তাতে তাঁর কিছুই যায় আসে না।

আমার বড় মেয়ের গায়ে হলুদ আমার মনের ইচ্ছার মধ্যে একটি ছিলো এবং অতঃপর একজন দায়িত্তশীল মেয়ের বর হিসাবে ডাঃ আবিরের সাথে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হলো আজ ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে। অনুষ্ঠানটি করেছিলাম আর্মি অফিসার্স ক্লাবে। প্রায় চার শতাধিক অতিথির আগমন, নাচ গান, সব কিছুই ছিলো।  সবাই খাওয়া দাওয়া করে অনুষ্ঠনটি বেশ উপভোগ করেছে।

১৪/১০/২০২৩-কেনো আবির-উম্মিকার বিয়েতে রাজী হইলাম

আমি যেদিন জানলাম যে, উম্মিকা একটা ছেলের সাথে এফেয়ার্সে জড়িয়েছে, আমি একেবারেই ব্যাপারটা নেগেটিভলী নেই নাই। কারন উম্মিকার বয়স হয়ে যাচ্ছে (প্রায় ৩০) আর যেখান থেকেই যতো ভালো ছেলে বা পরিবার থেকে উম্মিকার জন্য বিয়ের প্রোপোজাল আসুক না কেনো, উম্মিকা কোনোটাতেই সায় দিচ্ছিলো না। প্রথমবার আমি উম্মিকাকে মুটামুটি জোর করেই রানার সাথে বিয়েটা দিয়েছিলাম, যদিও সেই জোরের মধ্যে উম্মিকারও অনেক ভুল ছিলো। কিন্তু আলটিম্যাটলি যেটা হয়েছে, উম্মিকার তো জীবনে একটা দাগ লেগেই গিয়েছিলো। ভুল যারই হোক, সেটার আচ আমাদের পরিবার, উম্মিকার জীবনেও লেগেছে। তাই এবার আমি নিজ থেকে উম্মিকাকে বিয়ের জন্য কোনো জোর করতে চাইনি। পক্ষান্তরে আমি এটাও চেয়েছিলাম যেনো উম্মিকা ভালো থাকে, যার সাথেই তাঁর বিয়ে হোক। সেটা আমাদের চয়েজেই হোক বা উম্মিকার নিজের। তাতে আমার কোনো অসম্মতি ছিলো না।

উম্মিকা আবিরকে ভালোবাসে, আবিরও উম্মিকাকে ভালোবাসেই বলে উম্মিকা জানিয়েছে। ছেলেটি ডাক্তার। আমার খারাপ লাগার কথা ছিলো না। উম্মিকার জীবনে যেমন একটা স্কার আছে, ছেলেটার জীবনেও তেমনি একই প্রকার একটা স্কার আছে। অর্থাৎ ওদের প্রথম বিবাহ টিকে নাই। স্কার নিয়ে ভাবিনি, এগুলি আমার কাছে খুব বেশী নাড়া দেয়নি। তাই আমি ঘটনাটা জেনে তেমন নেগেটিভলি নেই নাই।

কিন্তু বাধ অথবা খটকা লেগেছে এক জায়গায়। আবিরের কিছু তথ্যে মারাত্মক ভুল ধরা পড়ায়। যেমন, প্রথম যেদিন উম্মিকার আম্মু অর্থাৎ আমার স্ত্রী আবিরকে রাতে ফোন করলো সেদিন। আমি পাশেই ডিনার করছিলাম, আমি শুধু ওদের কথাবার্তা শুনছিলাম, কোনো উত্তর বা প্রতিউত্তর আমি দেই নাই। আমি আসলে একজন ভালো লিসেনার। আগে শুনি, তারপর ভাবি, তারপর উত্তর দেই। আবিরের সাথে উম্মিকার আম্মুর কথোপথোনে যেটা বের হয়ে এসছিলো আর আবিরের দৃষ্টিতে উম্মিকার রিভিউ হলো-

  • উম্মিকা খুব অলস।
  • ওর ডিউটির জ্ঞান কম। আবিরই মাঝে মাঝে ওর বিভিন্ন হসপিটালে ডিউটি শেয়ার করে দিতে সাহাজ্য করে। মাঝে মাঝে যদি আলসেমীর কারনে ডিউটিতে যেতে না চায়, সেটাও আবির কোনো না কোনো ভাবে ম্যানেজ করে নেয় বা দেয়।
  • বড় লোকের মেয়ে বলে টেনশন কম, খায় দায়, ঘুমায় আর মোটা হচ্ছে।
  • উম্মিকা কোনো কিছুই দ্রুত বোল্ড সিদ্ধান্ত নিতে পারে না এবং কনফিউজড। ইত্যাদি ইত্যাদি

আবির মিথ্যা কথা বলে নাই। উম্মিকা প্রায় ওই রকমই। কিন্তু মায়ের কাছে মেয়ের এসব দোষ ত্রুটি বলাতে উম্মিকার মা ব্যাপারটাকে খুব একটা পজিটিভলী নেয় নাই, নেবার কথাও না। অতঃপর উম্মিকার মার পরবর্তী কথোপথোনে বেশ বিপরীত ভাষা লক্ষ্য করলাম। উম্মিকার আম্মু সরাসরি আবিরকে জিজ্ঞেস করলোঃ

  • “তুমি কি উম্মিকাকে ভালোবাসো? উত্তরে আবির পজিটিভলীই বল্লো যে, হ্যা আবির উম্মিকাকে ভালোবাসে।
  • উম্মিকার মা আবিরকে আবার জিজ্ঞেস করলো, তোমার আগের বউ (ওর আগের বউ এর নাম ছিলো ইতি) এর সাথে কবে ডিভোর্স হয়েছে? উত্তরে আবির জানালো যে, প্রায় বছর তিনেক আগে ওদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
  • এবার উম্মিকার আম্মু সরাসরি আবিরকে প্রশ্ন রাখলো-তুমি কি উম্মিকাকে বিয়ে করতে চাও? আবির এখানে পুরুই অকৃতকার্য হলো। ভয়েই হোক, পরিস্থিতির কারনেই হোক, আবির উম্মিকার মাকে বল্লো-সে এই ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে নাই। অর্থাৎ উম্মিকাকে আবির ভালোবাসে ঠিকই কিন্তু এটা বিয়ের লগন পর্যন্ত যাবে কিনা সেটা সে জানে না।

ফলাফল-আবিরের সাথে কথা বলার পর পুরু ব্যাপারটা উম্মিকার আম্মুর কাছে প্রায় নেগেটিভ হয়ে গেলো। আবিরকে সরাসরি উম্মিকার আম্মু জানিয়ে দিলো-সে যেনো আর কোনো অবস্থাতেই উম্মিকার সাথে যোগাযোগ না করে। উম্মিকাকেও বলা হলো উম্মিকা যেনো আবিরের সাথে আর কোনো যোগাযোগ না করে। ব্যাপারটা এখানেই উম্মিকার আম্মুর কাছে একটা সম্পর্কের নিহত হবার পরিনতি পেলো।

আমি তখনো ব্যাপারটা নিয়ে নেগেটিভ পর্যায়ে যাইনি। তবে আমিও উম্মিকার আম্মুর কথায় অনেকটা নেগেটিভ না হলেও খুব একটা পজিটিভ রইলাম না। একটু ভাটা পড়লো। কিন্তু পুরুপুরি নেগেটিভ হলাম না। তবে একটা খটকা থেকে গেলো একটা কারনে, আর সেটা হলো, আবিরের বাবার প্রোফেশন, আবিরদের পারিবারিক অবস্থান কিংবা ছেলের সামাজিক অবস্থানটা কোথায় সেটা সরাসরি জানা হলো না।

পরবর্তীতে জানা গেলো যে, আবিরের বাবা মুলত মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত। একটা লোক মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় আমি ধরেই নিয়েছিলাম যে, তাদের পরিবার হচ্ছে জেলে পরিবার, আর তাদের সাথে আমাদের খাপ খায় না।

মিটুল যেহেতু পুরুপুরী নেগেটিভ হয়ে গিয়েছিলো, ফলে, মিটুল আমাকে বল্লো, তুমি আবিরের বাবাকে একবার ফোন দিয়ে তাদের সাথে আমাদের খাপ খাবে না এবং আবির যেনো আর উম্মিকার ব্যাপারে কোনো ইন্টারেস্ট না দেখায় সেটা বলে দাও। আমি মুলত আবিরের বাবাকে কোনো ফোন করতে চাইছিলাম না। কিন্তু মিটুলের অবিরত চাপে একদিন সত্যিই আমি আবিরের বাবাকে ফোন করলাম। ফোনে কি আলাপ হলো সেটা রেকর্ড করা আছে, তাই রেকর্ডটা থেকে লিখছিঃ

আমিঃ হ্যালো, আপনি কি রাকিবের বাবা বলছেন?

আনিছঃ হ্যালো, জী,

আমিঃ আমি মেজর আখতার বলতেছিলাম। ডাক্তার আনিকার আব্বু।

আনিছঃ কোথা থেকে?

আমিঃ ঢাকা থেকে। আমার মেয়ে হচ্ছে ডাক্তার আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা। সম্ভবত আপনি নামটা জানেন। রাইট?

আনিছঃ হ্যা, বলেন, বলেন।

আমিঃ আপনি কি করেন এমনি?

আনিছঃ আমি (গলা খেকারী দিয়ে), আমি ব্যবসা করি মাছের। ১-/১২ টা পুকুর আছে, হ্যাচারী আছে। ওগুলা করি আর মাছের যে রেনু আছে সেগুলি উতপন্ন করি। এগুলি সিজনাল ব্যবসা।

আমিঃ আচ্ছা। রাকিব কি আপনাকে আমাদের সম্পর্কে বা আমার সম্পর্কে কিছু বলছে আপ্নাদেরকে?

আনিছঃ বলছে অবশ্য আমাকে। হালকা পাতলা বলছে। বলছে, একদিন আপনার পরিবারের সাথে রাকিবের কথা হইয়েছিলো। এখন ঘটনা হলো কি ...

আমিঃ আমি যেটা প্রশ্ন করি সেটা বলেন। রাকিব আমার বা আমাদের সম্পর্কে কি বলছে?

আনিছঃ আসলে আপনাদের সম্পর্কে রাকিব কিছু বলে নাই, তবে ওই যে আপনার ওয়াইফের সম্পর্কে বল্লো যে, আনিকার মায়ের সাথে কথা হয়েছে আমার। বললাম, কি ধরনের কথা হইছে?

আমিঃ আচ্ছা, আমি আমার সম্পর্কে বলি।

আনিছঃ বলেন।

আমিঃ আমি কুমা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর। আমার একটা প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি আছে, একটা হাউজিং আছে, যদিও প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিটা এই মুহুর্তে সচল না আর হাউজিং টা চলমান, কয়েকটা গার্মেন্টস আছে। আমার মেয়েটা একটা স্টুপিড। মানে আমাএ মেয়েটা বলদ। ও নিজের পজিশন এবং স্ট্যাটাস বুঝে না। ওর জন্ম থেকে গাড়ি ছাড়া পায়ে হাটে নাই। মানুষ আমরা তিনজন, গাড়ি আছে চারটা। আমার কথা হচ্ছে, এগুলি বলে আমি কাউকে আন্ডারমাইন্ড করি না বা করতে চাই না। যার যার সামর্থ অনুযায়ী সে তাঁর তাঁর সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। আমি আপনার ছেলেকেও দোষ দেবো না কারন আমার মেয়েরই দোষ। কেনো তাঁর সাথে এফেয়ার্স করতে গেলো এবং তাঁর সাথে সম্পর্ক করতে গেলো। কারন সব কিছুরই কিন্তু একটা লেবেল আছে।

আনিছঃ অবশ্যই, অবশ্তই।

আমিঃ হ্যা সব কিছুর। যখন সে এই লেবেল ক্রস করে, তখন সে আর সাধারন মানুষ থাকে না। সে হয় বোকা, না হয় পাগল না হয় এবনরম্যাল। আর কেউ যদি এই সবের জন্য সপ্নও দেখে সেও মুর্খ। আমি অত্যান্ত ধইর্যিশীল মানুষ।

আনিছঃ কথাগুলি আপনি খুব গুরুত্ব পুর্ন বলছে। মানে অনেক দামী কথা বলছেন, তা বলার মতন না কিন্তু আমি তো ...যদি মনে করেন ...

আমিঃ আপনার ছেলেকে বলবেন, সে যেনো সরে যায়। আমি ওর ক্ষতি করতে পারবো কিন্তু আমি ওটা করবো না। আমি ওকে দেখিও নাই, চিনিও না। সেও আমারই সন্তানের মতো। তবে বাংলাদেশে, এই পৃথিবীতে যাদের শক্তি আছে, যাদের ক্ষমতা আছে, টাকা পয়সা আছে, তারা অনেক কিছু করে। কিন্তু বিচার হয় না। তারা অনেক সময়েই ধীর গতির বিচারের ফাক দিয়ে বড় বড় অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। এগুলি খারাপ। এগুলিতে আমি বিশ্বাস করিনা। আমি এগুলি করতে ইচ্ছুক না। কিন্তু যখন কারো গায়ে হাত লেগে যায়, আচড় লেগে যায়, যখন কারো অস্তিত্তের মধ্যে টোকা পরে, যখন সম্মানের উপর কেউ আঘাত করে, ইজ্জতের উপর হামলা করে, তখন তাকে কিকব্যাক করতে হয়। এটা আমি হয়তো করে ফেলবো। রাকিবকে বলবেন, ও যেনো কোনো অবস্থাতেই ভুলে হোক কিংবা আমার মেয়ের প্ররোচনায় হোক সে যেনো আর আমার মেয়ের সাথে যোগাযোগ না করে। আমার মেয়েও যদি যোগাযোগ করে, তাহলে রাকিব যেনো আমার মেয়েকে স্টুপিডভাবে জবাব দেয় যে, তোমার বাপ আমাদের মেলামেশা চায় না। তোমার বাপ না করছে এবং তোমরা আমাদের সমকক্ষ না।  তুমি আমাকে আর বিরক্ত করো না। আমি এখনো বলি, সবার একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে, আমরা এই স্ট্যান্ডার্ডের নীচে নামতে পারবো না। আমি যদি এখন...আচ্ছা আপনার নামটা কি ভাইয়া?

আনিছঃ আমার নাম, আনিছুর রহমান।

আমিঃ আনিছুর রহমান ভাই, আপনি একবার চিন্তা করেন তো আমি যদি আপনার বাসার আজকে কিংবা কালকে বেড়াতে আসি, আপনাকে কিন্তু আমি আন্ডার মাইন্ড করছি না, আপনি অনেক কিছু করছেন, অনেক কিছু। একটা মানুষ তাঁর জীবনের সমস্ত চেষ্টা দিয়ে যতটুকু পারে ততটুকুই আগায়। আপ্নিও তাই করেছেন। কিন্তু সেই চেষতার মধ্যে যদি এমন একটা বস্তু মিক্সড করে ফেলেন যেখানে আপনার পক্ষে সামাল দেয়াই সম্ভব না এটা বোকামী। আজকে যদি আমার কিছু বন্ধু বান্ধব নিয়ে আসি, সেই স্ট্যাটাস কি আপনি দিতে পারবেন? আমি আপনাকে আন্ডার মাইন্ড করছি না আনিছ ভাই, কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি এই সপ্নটা এবং ধারনাটা ভুল আপনার ছেলের।

আনিছঃ আসলে আমাদের আগের ছেলের বউ......

আমিঃ আপনাদের ছেলের বউ কি করেছে, কি করা উচিত ছিলো, কি না করলে কি হতো সেগুলি এন্টায়ারলি আপনাদের নিজেদের ব্যাপার। সেগুলি আমার জানার কোনো আগ্রহ নাই। আমি আপনাকে ফোন দিতে চাইনি, এটা সত্যি কথা। আমি আপনাকে চিনি না, প্রয়োজন ও ছিলো না। আমি কেনো আপনাকে ফোন দেবো? কোনো প্রয়োজন নাই তো। আপনার সাথে আমার জমি নিয়ে কোনো বিরোধ নাই, আপনার সাথে আমার কন ব্যবসা নিয়ে বিরোধ নাই, তাহলে কেনো আপনাকে আমার ফোন দেয়ার দরকার?

প্রতি বছরে আমার পাঁচ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। সেখানে এই স্টাটাসের মধ্যে কেউ যখন আঘাত করবে, সেই আঘাতের প্রতিঘাত কিন্তু অনেক বেশী কড়া। সহ্য করার মতো কিন্তু হবে না। আমি আপনাকে খুব শ্রদ্ধা করি, আমি দেখিনি আপনাকে, আমার বয়স ৫৮, আমি জানি না আপনার বয়স কত

আনিছঃ আমার বয়স ৫২

আমিঃ এ জন্যই বলি, আপ্নিও এডাল্ট। আপনি বুঝেন। আপ্নিও কারো বাবা

আনিছঃ শোনেন, আপনি যেহেতু কথা গুলি বললেন......সবারই ... সবারই একটা মান...।

আমিঃ না, আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না। আমি আপনার স্ট্যাটাস নিয়ে কোনো কোয়েশ্চেন করবো না। আমার স্ট্যাটাস নিয়ে অবশ্যই কোয়েসচেন করবো।

আনিছঃ অবশ্যই, অবশ্যই, আমিও আপনার কথাই বলতেছি...যার যার স্টাটাসে তাঁর তাঁর থাকতে হবে...।।

আমিঃ এক্সাটলী আমিও সেটাই বলার চেষ্টা করছি আপনাকে। এর বাইরে না।

আনিছঃ আমার কথা কি, ছেলেমেয়ে তো ভুলবনা করে। এই ভুলবনা করার পরেই তো বাবা মার কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। এমন কষ্ট হয় যা মাইনা নেয়া যায় না। আমার ছেলে ভুল করতেছে, আপনার মেয়েও ভুল করতেছে, এমন ভুলবনা তো মাইন্যা নেয়া যায় না।

আমিঃ না, সম্ভব না।

আনিছঃ কারন আমিও তো অনেক কষ্ট করে আমার একটাই ছেলে প্রাইভেট মেডিক্যালে অনেক টাকা দিয়াই পড়াইছি। কষ্ট তো আমারো লাগে। আমারো তো একটা আশা ছিলো। আমার ছেলেটা তো আমারেও কষ্ট দিচ্ছে।

আমিঃ আপনার ছেলের উচিত ছিলো যে, যেই বাবা, যেই মা নিজেরা না খাইয়া, না আনন্দ কইরা ছেলেকে মানুষ করছে, তাদের জন্য কিছু করা। কিন্তু সে সেটা করে নাই। সে তো নিমকহারাম। আমি আমার স্ট্যাটাসের জন্য, সামর্থের জন্য গর্ব ও করি না, অহংকার ও করি না। আমি মানুষের উপকার করার মানসিকতা আছে, পারলে করি, না পারলে তাঁর কোনো ক্ষতি করি না। আপনি আপনার জায়গায় ভালো আছেন, আমি আমার জায়গায় ভালো আছি। আর কিছু না। তাই আমি আপনাকে ষ্পষ্ট ভাবে বলে দিলাম যে, আপনি রাকিবকে বলে দেবেন যে, রাকিব, উম্মিকার আব্বু ফোন দিয়েছিলো এবং বলেছে যে, তাদের পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ না করতে। আমি রাকিবকে ফোন দেবো না। আমার দরকার ও নাই। এর পরে যোগাযোগ ওর জন্য মংগল বয়ে আনবে না। রাকিব আমার বাচ্চার মতোই। ওর ক্ষতি আমি চাই না। ধন্যবাদ আনিছ ভাই। ভালো থাকবেন।

ব্যাপারটা এখানেই আমি আসলে শেষ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়েছে, উম্মিকা ছেলের সাথে যোগাযোগ নিজের থেকেই রাখছে এবং রাখবে। কিন্তু আমার আরেকটা ধারনা ছিলো যে, সম্ভবত এবার ছেলেটাই সরে যাবে। অথবা আমার মতো সাহসী হলে সরাসরি আমার সাথে দেখা করে কথা বলবে।

বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। এরপর উম্মিকার আম্মু আমাকে জানালো যে, রাকিবের বাবা ওকে ফোন করছে বারবার এবং তাঁর ছেলের বউ এর ব্যাপারে অনেক কথা বলতে চায় বা বলছে। এর মধ্যে জানা গেলো, রাকিবের সাথে রাকিরের স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি আসলে ৩ বছর আগে হয়নি, হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে। তো, এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম, উম্মিকার সাথে রাকিব এফেয়ার্সে জড়িয়েছে যখন রাকিবের বউ বর্তমান ছিলো। তাহলে তো বলাই যায় যে, এটা একটা এক্সট্রা ম্যারিটাল এফেয়ার্স। এমনিতেই আমরা রাজী হচ্ছি না, এরমধ্যে আবার এসব গোলমালে ইনফর্মেশন। পরিবারটাকে খুব একটা ভালো মনে হচ্ছিলো না।

আমাদের পরিবার সচ্ছল, ব্যবসা বানিজ্য যা আছে, বিষয় সম্পত্তি যা আছে, এগুলি আসলে তো আমাদের মেয়েরাই পাওয়ার কথা। যেহেতু ছেলে নাই, ফলে মেয়ের মাধ্যমে মেয়েদের জামাইরাই ভোগ করবে। এটা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি কখনোই ছিলো না। কিন্তু আজকালের ছেলেরা নিজেরা কিছু করতে চায় না, তারা আরাম চায়, ভোগ বিলাস চায় কিন্তু সেটা হতে হবে শশুড়ের টাকায়। এই লোভ থেকেই রানা এসেছিলো, রানার পরিবার এসেছিলো। আরেকবার আমি আরেকটা রানা চাই না। আমি চেয়েছি এমন একটা ছেলে যে কিনা আমার মেয়েকে চায়, যে কিনা নিজের চেষতায় বড় হবে, কর্মশীল হবে, দায়িত্ববান হবে। যার উপরে আমিও ভরষা করতে পারি। এ ব্যাপারটা আমি রাকিবের মধ্যেও দেখতে পাচ্ছিলাম না, না ওদের পরিবারের মধ্যে। আমার বারবারই মনে হয়েছে-এখানে একটা লোভের কারন কাজ করছে। আর যদি এটা হয়, সেক্ষেত্রে আমি কখনোই কারো সাথে কোনো সম্পর্ক করবো না। আমার কাছে কেউ কিছু যৌতুক চাইলে বা লোভ করলে আমার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আমি এগুলি ঘোর বিরুধী। যদি আমি নিজেই দেখি যে, আমার মেয়ের কিছু প্রয়োজন, সেটা তো আমি নিজেই দেবো, চাইতে হবে কেনো? রাকিবদেরকেও আমার সেরকম মনে হয়েছে।

কিন্তু আমরা যতোই নেগেটিভ হচ্ছি, উম্মিকা ততোই জিদ ধরছে যে, সে আবিরকেই বিয়ে করবে। আমি যখন কোনো উপায় দেখছিলাম না, তখন আমি উম্মিকাকেই বললাম যে, উম্মিকা আবিরকে বিয়ে করুক, তাতে আমার কোনো অসুবিধা নাই কিন্তু সেটা হতে হবে আমাদেরকে ছাড়া। অর্থাৎ আমরা উম্মিকার স্বামী বা তাঁর পরবর্তী বংশধরদের ব্যাপারে কোনো দায়ী তো নাইই, আমি আমার যতো ব্যবসা কিংবা এসেট আছে সব কিছু থেকে আমার জীবদ্দশায় ক্যাশ করে শুধুমাত্র কনিকা আর আমার জন্য ব্যবহার করবো। এটা এক ধরনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তই নেয়া হচ্ছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। উম্মিকাকে ঠেকানো যাচ্ছে না যেহেতু, ফলে তাঁর ইচ্ছায় সে যা কিছু করতে চায় করতে পারে। আমি উম্মিকার সাথে প্রায় কথা বলাই বন্ধ করে দিলাম।

উম্মিকা বাসায় খায় দায়, বাসায় থাকে, আমার সাথে ওর কোনো কথাবার্তাই হয় না। উম্মিকা নিজেও বাসায় খুব একটা যে কম্ফোরট্যাবল তা কিন্তু না। মাঝে মাঝে উম্মিকা নিজের থেকেই উপজাজক হয়ে কথা বলতে এলেও আমি হু হা করে উত্তর দেই। ধরা যায়, উম্মিকার সাথে আমার বিস্তর একটা গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে।

আমার এতোসব কঠিন ব্যবহারেও উম্মিকা তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে নারাজ। উম্মিকা আবিরের (রাকিব) সাথে যোগাযোগ রেখেই চলছে এবং চলমান। উম্মিকা অনেকবার আমার সাথে সহজেই মিশতে চেয়েছে কিন্তু আমার পক্ষ থেকে কোনো প্রকার রিস্পন্স না পাওয়ায় উম্মিকা প্রায় একঘরেই হয়ে যাচ্ছে নিজের বাসায়। উম্মিকার আম্মু অনেকবার উম্মিকাকে বুঝানো চেষ্টা করলে খুব একটা লাভ হচ্ছিলো না। এভাবেই বেশ কয়েক মাস কেটে গেলো। আমি ধরেই নিয়েছি-উম্মিকা আর আমাদের মাঝে নেই। সে হয়তো আবিরকে (রাকিবকে) বিয়ে করবে, আর আমরা ওকে হারাচ্ছি, অর্থাৎ উম্মিকাও আমাদেরকে হারাচ্ছে।

আমি আরেকটা জিনিষ খুব ভালো করে বুঝে গেলাম যে, আমার অবর্তমানে আসলে আমার সম্পত্তি বিশেষ করে জায়গা জমিরাত, কিংবা অন্যান্য ব্যবসা কেউ চালাতে পারবে না। আমার মেয়ের জামাইরা এগুলি খুব অল্প সময়েই হয় বিক্রি করে দেবে, নতুবা ধংশ করবে। ফলে আমি এবার আরেকটা সিদ্ধান্তে অটল হয়ে গেলাম জে, আমার জীবদ্দশায় আমি আমার সব জমি জেরাত বিক্রি করে টাকায় ক্যাশ করে ফেলবো। শুধু রিভার সাইড গার্মেন্টস টা রাখবো। আমি হিসাব করে দেখলাম, আমার বৃদ্ধ বয়সে আসলে আমার দরকার টাকা যেখানে আমি প্রয়োজনে ৫/৬ টা কাজের লোক রেখে জীবনের সব শারীরিক কাজ গুলি সেরে নিতে পারবো। জমি জিরাত রেখে কোনো লাভ নাই। এর ফলে আমি ইতিমধ্যে চান্দের চরের জমিগুলি (যেখানে হাউজিং করার পরিকল্পনা করেছিলাম) বিক্রির খদ্দেরের সাথে পাকা করে ফেললাম। পলাশপুরের জমিগুলিও বিক্রি করা শুরু করলাম। আমি ধরে নিলাম, এই মুহুর্তে আমার শুধুমাত্র রিস্পন্সিবিলিটি হচ্ছে কনিকা আর আমার স্ত্রী। উম্মিকা আমার লিষ্ট থেকে বাদ হয়ে গেলো। আমি রাকিবের সাথে সম্পর্ক রাখার কারনে আমি উম্মিকার উপরে খুবই অসন্তুষ্ট এবং রাগ।

আমার আচরনে এবং ব্যবহারে আমার স্ত্রী মিটুল ও অনেকটা মন খারাপ করে থাকে। বুঝা যায়, সে প্রতিদিনই উম্মিকাকে মুটভেট করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমার সাথে কোনো প্রকার তথ্য শেয়ার করে না। এর মধ্যে আবিরের (রাকিবের) বাবা সম্ভবত আবারো মিটুলকে ফোন দিয়েছে যাতে অন্তত মিটুল তাঁর কথাগুলি শোনে। মিটুল কিছুতেই তাদের ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে নারাজ, আবার অন্যদিকে উম্মিকাও তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে নারাজ।

তো এর মধ্যে রাকিবের বাবা আবার আমাকে ফোন দিলো। কিন্তু আমি প্রথমে ফোনটা ধরতে পারিনি, নামাজে ছিলাম। তাই নামাজ শেষে আমিই তাকে ফোন করলাম। ফোনের বিবরনটাও এখানে লিখিঃ

আমিঃ ভাই, আপনি কি আমাকে ফোন করেছিলেন?

আনিছঃ জী ভাই, আমি আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম। ভাই, সেদিন তো আপনি ফোন দিছিলেন কিন্তু আমি তো কোনো কথাই বলতে পারলাম না। যে কথা বললেন সেদিন, অন্যের কথা শুনে তো আর সব কিছু বিচার করা যায় না। আমার জায়গাতে তো আমি কষ্টেতে আছি, আমার ছেলে নিয়া, আমার ছেলের বউ নিয়া।

আমিঃ আপনার পয়েন্ট টা কি?

আনিছঃ আমার ছেলের বউ কি বল্লো আর কি না বল্লো......

আমিঃ না আমি তো আপনাকে সেদিন খারাপ কিছু বলিনি। আজকে আপনার পয়েন্ট টা কি? কি নিয়ে আপনি আমার সাথে আলাপ করতে চাচ্ছেন?

আনিছঃ না, এই যে আমার ছেলের প্রতি আপ্নারা যে বলতেছেন যে, আমার ছেলের দোষ, আমার...

আমিঃ আমি তো আপনার ছেলের কোনো দোষ দেই নাই। আমি তো বলছি যে, এটা আমার মেয়েরই দোষ। সে ভুল করেছে। এ জন্য আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, আপনার ছেলেকে আমার মেয়ের থেকে বিরত থাকতে বলেন। কাহিনী শেষ। আবার কি বলতে চাচ্ছেন এখন আমাকে?

আনিছঃ আমি বলতে চাচ্ছি জে, ওই মেয়েটা যা যা বলছে...

আমিঃ কোন মেয়েটা?

আনিছঃ ওই যে আমার ছেলের বউ।

আমিঃ শোনের আনিস সাহেব, আপনার ছেলের বউ এর সাথে আমার কোনো কথা হয় নাই।

আনিছঃ আপনার সাথে হয় নাই, কিন্তু আপনার ওয়াইফের সাথে কথা হইছে, অনেক কিছু বলছে। তারপর আপনার ওয়াইফ আমাকে ফোন দিয়ে অনেক কথাই বল্লো। অনেক কথাই। বল্লো, আপনার ছেলের বউ থাকতে আপনার ছেলে আমার মেয়ের সাথে আবার সম্পর্ক গড়ছে......এতো বড় সাহস কোথায় পায়?

আমিঃ কি মনে হয় আপনার? আমার বউ কি কোনো কিছু ভুল বলছে? আপনার ছেলের একটা বউ থাকতে সে আবার আমার মেয়ের সাথে পরকীয়া করতেছে, এটা কি ঠিক হইছে?

আনিছঃ তা ঠিক আছে......

আমিঃ মানে? কি ঠিক আছে? কি ঠিক আছে? এটার মানে কি এটা যে, একটা বউ থাকবে, আরেকটা মেয়ের সাথে সে পরকীয়া করবে, এটা ঠিক আছে?

আনিছঃ না না সেটা ঠিক নাই। আমি তো বলতে চাচ্ছি যে, আমার ছেলেও ভুল করছে, আপনার মেয়েও ভুল করছে। আপনার মেয়েও জানে আমার ছেলের বউ বিদ্যমান।

আমিঃ না, উম্মিকা সেটা জানে না। আমাকে উম্মিকা সেটাই বলেছে যেটা সে জানে।

আনিছঃ না, জানে আপনার মেয়ে অবশ্যই জানে।

আমিঃ তাহলে এখন আপনি আমাকে কি বলতে চাচ্ছেন? আপনি কি বলতে চাচ্ছেন যে, এখন আপনার ছেলেকে দিয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করাইয়া দেই?

আনিছঃ না, সে রকম না।

আমিঃ তাহলে কেনো ফোন করেছেন আমাকে? বলেন না? কি চান আমার কাছ থেকে? আমি রাগ হচ্ছি এখন। কি চান আমার কাছ থেকে?

আনিছঃ আমি চাচ্ছি, আমার ছেলেকে যে হুমকি ধামকী দিচ্ছে আপনার ওয়াইফ। আমাকে বলে যে, আপনার ছেলে এই করেছে, সেই করেছে ......

আমিঃ শোনেন আনিছ সাহেব, আমি এবং আমার ওয়াইফ শুধু একটা কথা আপনার এবং আপনার ছেলেকে পরিষ্কার করে জানিয়েছি জে, আপনার ছেলে যেনো উম্মিকার সাথে কোনো যোগাযোগ না করে এবং আমার মেয়েও যদি আপনার ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে চায়, সে যেনো আর না করে। তা না হলে...

আনিছঃ আমি আমার ছেলেকে আপনাদের কথাগুলি বলে দিয়েছি।

আমিঃ জী, সেটাই বলবেন। আমি কারো কোনো ক্ষতি করতে চাই না। কিন্তু যখন এটা আমার গায়ে আসবে, ডেফিনিটলী আমি একশান নেবো, কোনো সন্দেহ নাই। আপনার ছেলের এটা একটা অবাস্তব চিন্তাভাবনা।

আনিছঃ আমিও এটাই বলেছি আমার ছেলেকে।

আমিঃ আনিছ ভাই, আমাকে শুধু একটা কথা বলেন, হাউ মাচ ইউ হেভ ব্যাংক ব্যালেন্স? টেল মি? কতটুকু ব্যাংক ব্যালেন্স আছে আপনার?

আনিছঃ কার আমার?

আমিঃ আপনাদের।

আনিছঃ আমাদের আর কত আর ব্যাংক ব্যালেন্স আছে?

আমিঃ শোনেন। নাম্বার টু, একটা ছেলে কিভাবে সব জেনেশুনে আমাদের মতো একটা অসম পরিবারের সাথে একটা সম্পর্কে জড়াইতে চায় যেটা একটা অবাস্তব? কেউ যদি তাকে প্রলোভন ও দেয়, তাঁর খুব কেয়ারফুল হ ওয়া উচিত ছিলো। এটা শুধু এবসার্ড না, এটা ইম্পসিবল পার্ট। কি করে সম্ভব হয়? আপনি কি আপনার বর্তমান স্ট্যাটাস নিয়ে আমার সামনে চেয়ারে বসতে পারবেন? আপনি আমার বাড়িতে এসে আমার সামনে বসতে পারবেন? ঠিক আছে আনিছ ভাই, আমি আপনার সাথে এ ব্যাপারে অনেক কথা বলতে চাই না। ঠিক আছে, আই ডোন্ট মিক্স আপ উইথ পিপল হু ইস নট ইকুয়াল টু মি!! আই এম গুড টু গুড পিপল বুত আই এম অলসো ব্যাড ফর ব্যাড পিপল। জাষ্ট রিমেম্বার ইট। থ্যাংক ইউ।

এরপরে আমি আর তাঁর সাথে কোনো কথা বলি নাই। বলার দরকারও মনে করি নাই। অতঃপর ঠিক পরেরদিন রাকিব (আবির) আমাকে একটা হোয়াটস আপ ম্যাসেজ করে। এই ম্যাসেজটা আমাকে আরো ক্ষিপ্ত এবং রাকিবের ব্যাপারে আরো নেগেটিভ করে তোলে। ম্যাসেজটা ছিলো এ রকমঃ

১১/৬/২০২৩

Sorry apnake WhatsApp e  txt korar jonno. Amar Baba ke call diye onek kotha bolechen. Apni to educated person tahole kono Kichur judge korte hoile dui pokkher kotha sune proper information jene then right or wrong judge korte hoy aita to janen. Apni Jodi kichu bolte chan tahole age proper information gula right place theke niye then judge korben asha kori.  Power status esob er gorom  na dekhiye sob kichur sothik information niye then kotha bolle valo hoy. Ak hate tali baje na. Amake Amar Baba ke na jene bhuje mon gora dosh diye kotha bolben aita kono educated person er porichoy na. Age Amar name akta bad report ber kore then amake wrong judge korben.jodi kono akta single bad report ber Korte paren amar name jekono sasti diben Ami Mene nibo .

আমি বাসায় এসে উম্মিকাকে এবং উম্মিকার মাকেও ব্যাপারটা পড়ে শোনাই। আর বলি- আমার সাথে ওর বাপের কি কথা হইছে সেটা আমাকে সে চার্জ করেছে। আমাকে দেখলো না, কথা হইলো না, কত স্টুপিড যে, সে আমাকে এমন একটা ম্যাসেজ লিখে যেখানে আমার শিক্ষা, আমার পজিশন, আমার স্ট্যাটাস নিয়ে প্রশ্ন করে? এ তো রানার থেকেও খারাপ। রানা তো বিয়ে করার পর কিছুটা হলেও অধিকার পেয়ে আমাদেরকে উলটা পালটা ম্যাসেজ দিয়ে খুবই নোংরা কথা লিখতো। আর এই বেটা তো কোনো সম্পর্কই হয় নাই, তাতেই এখন এই অবস্থা। আর যদি সম্পর্ক হয়, তাহলে কোন লেবেলে যাবে? আমিও উম্মিকাকে আরো কঠিন করে শাসালাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো বলে মনে হলো না। আমি বারবার উম্মিকাকে এই ছেলে থেকে সরে আসতে বললাম। কিন্তু উম্মিকার আচরনে এই ছেলে থেকে সরে আসার কোনো লক্ষন দেখা গেলো না।

যাই হোক, রাকিবের ম্যাসেজের উত্তর আসলে আমি দিতে চাইনি। কিন্তু আমার মনে হলো, আমি তো ওর সাহে কোনো কথা বলি নি, অন্তত আমার মাইন্ড টা সে বুঝুক তাই একটা ম্যাসেজ দিলাম। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ১৬/৬/২০২৩ তারিখে ওকে ম্যাসেজের উত্তর করেছিলামঃ

I wonder receiving such kinds of message again from your side where I clearly and explicitly told you that we are not interested about you even you are having 100% honesty, 100% best quality or even the BEST reputation at your end. I along with my family am not at all interested to know or search any kinds of information about you and your family on what was right and what was not. That belongs to yours and no way affects us anyway. What my daughter did was a childish move.  I wish, you would not dare enough again to communicate me with any kinds of such message in future as we have no connections in any way. Even, I would not expect you to reply me on this message. Hope you respect yourself and that's very important for a person's character. I don't block people as it entails bad gradings.  An advise to you as an elder, be attentive with your carrier, build it on your own, you will be better rest of your life. Thanks. (Major (Retd) Akhtar Hossain, PhD, MSc, MBA, MDS, psc, G+,

উম্মিকা কিছুতেই রাকিবের কাছ থেকে সরে আসছিলো না। তারপর মনে হয় উম্মিকাই রাকিবকে আবার সরি আকারে একটা ম্যাসেজ দিতে বলেছে আমাকে। এটা আমার ধারনা। সেই ম্যাসেজটা ছিলোঃ

Assalamu  Owalaikum Baba.

Kmn achen apni ?Kalke apnar office theke asar por khub druto duty te chole jaoay  apnake r call dite pareni .Kalke night duty theke onek patient er pressure chilo .ajkeo saradin onek pressure giyeche. Tobe nana kajer besto tar majhe onek bar apnar kotha mone hoyeche . Call diye hoyto onek kichuei bolte parbo na tay sms kore bolte iccha korlo . Apnar sathe dekha hoar purbe moner moddhe hajar ta voy r dridha donde last koekdin onek beshi mental stress e chilam . Thik vabe ghum khaoa daoa kono kichuei korte pare ni ato ta beshi stress e chilam. Tobe apnar sathe  kalke jetuku time kotha hoyeche . Apnar proti ta kotha apnar protita motivation family nijer jibon niye notun vabe amake bachte sikhate asha jagiyeche. Amar jibone er sotti porom souvaggo ami apnar moto akjon manusher mentorship e notun vabe nijeke niye beche thakar sopno khuje peyechi . Amar kache mone hoyeche Anika jemon amar jibone thik joto ta blessing hoye eseche ,thik Apnar moto akjon baba jar proper guideline pele sotti Jibone onek dur egiye jaoa somvob. Amar kache mone hoyeche apnar moto akjon baba paoa sotti amar moto akta cheler jonno onek vagger bepar . Allah r kache shudu aituku chay samner din gulote apnader doa niye jeno agami te valo kichu kore dekhate pari. apnader kache nijeke akjon Apnader joggo sontan hisebe proman korte pari . Apnar sathe kotha bolar por amar onek beshi valo legeche . Hoyto apnake samna samni bolar sahos ta hoyni  Tay sms kore apnake janalam Baba.

ম্যাসেজ পড়ে তো আমি আরো হতাশ। সে আমাকে সরাসরি “বাবা” বলে সম্বোধন করে লম্বা একটা আকুতির ম্যাসেজ পাঠালো। আমি আর এই ম্যাসেজের উত্তর দেইনি। কারন, উত্তরে আরো উত্তর, তাঁর উত্তরে আবারো উত্তর। তাই আমিই উত্তর দেয়া বন্ধ করলাম।

উম্মিকা বুঝে গিয়েছিলো, আমি ওর একক সিদ্ধান্তেও রাজী নই। যদি সে বিয়ে করতেই চায় রাকিবকে, সেটা ওর ব্যাপার। তবে আমি উম্মিকাকে এই মর্মে একটা সতর্ক বানী শোনালাম যে, যদি আমার সিদ্ধান্তের বাইরে উম্মিকা রাকিবকে বিয়ে করে তাহলে সে আমার কোনো সম্পত্তি পাবে না, তাঁর ছেলেমেয়ে কিংবা পরবর্তী বংশ ধরেরাও আমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে পারবে না। তবে আমার মেয়ে হিসাবে শুধুমাত্র উম্মিকার আসা যাওয়ার অনুমতি থাকবে, অন্য কারো নয়। আমি এর মধ্যে একটা ড্রাফট ও করে ফেলেছিলামঃ

আমি নিম্নবর্নীত স্থাবর-অস্থাবর জমিজমা, সম্পত্তি এবং অন্যান্য বিষয় সম্পত্তি সত্তবান ও মালিকানা বিদ্যমান দখলদার আছি। আমার দুই মেয়ে এক স্ত্রী বিদ্যমান। আমার এখন শারিরীক অবস্থা খুব ভালো না বিধায় আমি আমার নিম্নবর্নীত বিষয়াদি আমার ছোট মেয়েকে (সানজিদা তাবাসসুম কনিকা) একচ্ছত্র মালিকানা করিয়া এই উইল করিলাম। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ থাকে যে, আমার বড় মেয়ে আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা তার নিজের ব্যক্তিগত সার্থের কারনে, তার পছন্দমত একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে পরকীয়া করার কারনে, আমাদের কোনো সৎ পরামর্শ না শোনার কারনে এবং উপর্যপরী তার একক সিদ্ধান্তে অটল থাকার কারনে আমি এইমর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর বিষয়-সম্পত্তি তার কিংবা তার পছন্দ করা পুরুষের কিংবা তার পরবর্তী বংশধর, আওলাদ (উভয় ছেলে এবং মেয়ে আওলাদ) এর হাতে নিরাপদ নয়। আমার বড় মেয়ে এমন কিছু খারাপ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করে, এবং প্রায়ই সেই বন্ধুত্ব পরকীয়ায় রুপ নেয় যা আমাদের পরিবারের সাথে খাপ খায় না। তার মধ্যে পরিবারের ইজ্জত, মান সম্মান, কিংবা ঐতিহ্যের প্রতি কোনো প্রকার সম্মান নাই। ফলে দেখা যায় যে, আমার বড় মেয়ের এহেনো নীচ কাজের জন্য অনেক আজেবাজে লোভী পুরুষেরা তার সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে আমাদের এই সাজানো সংসার, আমাদের কষ্টার্জিত সম্পদের উপর লুলোপ দৃষ্টি দিয়ে আমার বড় মেয়েকে যে কোনোভাবে পটিয়ে তারা তাদের সার্থ হাসিল করতে চায়। অনেকবার আমার বড় মেয়েকে এ ব্যাপারে সাবধান করার পরেও সে বারবার একইরুপ ব্যবহার, আচরন প্রদর্শন করছে। সে নিজে একজন ডাক্তার কিন্তু তার মধ্যে এখনো পরিবার, পরিবারের মান সম্মান কিংবা আমাদের মান সম্মানের প্রতি কোনোরুপ তোয়াক্কা করেনা। আমার এই সম্পত্তি অনেক কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত বিধায় শুধুমাত্র আমার বড় মেয়ের খামখেয়ালীপনা, পরকীয়া এবং খারাপ মানুষের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করিয়া আমার ওয়ারিশ হওয়ার কারনে সে কিংবা তার পরকীয়া পুরুষ কিংবা তাদের ঔরসজাত সন্তানেরা, বংশধরেরা কিংবা তার ভবিষ্যৎ আওলাদ্গন আমার কোনো সম্পত্তির মালিক হইতে পারিবে না। আমি আমার এই উইলের মাধ্যমে এইমর্মে বিধান দিতেছি যে,

(ক)      আমি সজ্ঞানে, নিজের ইচ্ছায় এবং অন্যের কোনো প্রোরোচনা ব্যতিত আমি আমার বড় মেয়ে, তার স্বামী, তার বংশধর, তার আওলাদ (ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়) এবং তার পরবর্তী যে কোনো বংশধর আমার সরবপ্রকার বিষয়াদি, স্থাবর-অস্থাবর, ব্যবসায়িক, ক্যাশ, জমিজমা, বাড়িঘর, কিংবা যে কোনো সামাজিক পজিশন থেকে বাতিল বলিয়া বিধান করিতেছি। অর্থাৎ আমার বড় মেয়ে আমার কোনো কিছুই প্রাপ্য হইবে না।

(খ)       আমার সাথে আমার বড় মেয়ের পিতৃত্ব, ওয়ারিশান কিংবা দেশের বা ধর্মের প্রচলিত যে কোনো আইনের ধারার বিনিময়ে সুযোগ নিয়ে আমার নিম্নবর্নীত জমি জমা, ঘর বাড়ি, বিষয়াদি, ব্যবসা বানিজ্যের কিংবা আমার পেনশনের অথবা যে কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে কোনো প্রকার ভাগ বা অংশীদার হবার কোনো সুযোগ নাই এবং রাখিলাম না। 

(গ)       এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে, আমার ছোট মেয়ে আমার সমস্ত জমিজমা, ঘরবাড়ী, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রাপ্য সম্পদের একচ্ছত্র মালিকানা হইবে।

(ঘ)       কোনো কারনে যদি আমার ছোট মেয়ে তার বড় বোনের উপর সদয় হইয়া আমার অনুপস্থিতিতে আমার বিষয়াদি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, কিংবা ব্যবসায়িক অংশ থেকে কোনো কিছু প্রদান করিতে চায়, সেটা আমার ছোট মেয়ে করতে পারবে না বলে আমি বিধান করিতেছি। এমনকি, আমার ছোট মেয়ে আমার কোনো সম্পত্তি কিংবা বাড়িঘর যে কোনো বিষয়াদি বিক্রি করিয়া সেই অর্থ তাহার (ছোট মেয়ের নামে) গচ্ছিত রাখিয়া উক্ত টাকা হইতে কোনো প্রকার অর্থ আমার ছোট মেয়ে আমার বড় মেয়েকে প্রদান করিতে পারিবে না। অর্থাৎ আমার যে কোনো সম্পত্তি হইতে পরোক্ষা বা প্রত্যক্ষভাবে আমার বড় মেয়ে কোনো কিছুই পাইবে না বলিয়া আমি বিধান করিতেছি। কোনো কারনে যদি আমার ছোট মেয়ে দয়া পরবশ হইয়া আমার সম্পত্তি, বাড়িঘর, জমি জমা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমার বড় মেয়েকে হস্তান্তর, দান, কিংবা সাহাজ্য করতে চায়, তাহলে আইনগতভাবে আমার ছোট মেয়েকে দোষী সাব্যস্থ্য করিয়া আমার এই বিধানের মাধ্যমে আইনের আওতায় এনে তাকেও শাস্তি প্রদান করিতে আমি ফার্স্ট ক্লাস মেজিষ্ট্রেট, এবং প্রশাশনকে ক্ষমতা প্রদান করিলাম।

(ঙ)      এই দলিলে উল্লেখা করা আমার জমাজমি, বাড়িঘর এবং স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি আমার ছোট মেয়ে, তার বংশধর, এবং পরবর্তী আওলাদেরা (উভয় ছেলে এবং মেয়ে) আজীবন ভোগ, বিক্রি কিংবা হেবা (আমার বড় মেয়েকে ব্যতিত), কট, মর্টগেজ করতে পারবে। তবে এখানে উল্লেখ থাকে যে, যে কোনো বিক্রি অবশ্যই ফার্স্ট ক্লাস মেজিষ্ট্রেটের অধীনে করতে হবে এবং কোন কারনে উক্ত জমিজমা, স্থাবর অস্থাবর বিক্রি কিংবা কট, মর্টগেজ করা হলো তার প্রকৃততথ্য এবং হিসাব দেয়ার পরেই শুধুমাত্র তা আমার ছোট মেয়ে, তার বংশধরেরা, আওলাদেরা তা করতে পারবে। কোনো অবস্থাতেই কোনো অংশ বা টাকা বা হেবা, দান কিংবা এই জাতীয় কোনো কর্ম আমার বড় মেয়ের জন্য বরাদ্ধ হইবে না এইমর্মে প্রশাসনকে হিসাব দিয়ে তারপর করতে পারবে বলে আমি বিধান করছি।

(চ)       এখানে উল্লেখ থাকে যে, আমি নিম্নবর্নীত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আমার জীবদ্দশায় যতটুকু সম্ভব বিক্রি করে অর্জিত টাকা আমি ক্যাশ ওয়াকফ করে যাওয়ার নিয়ত করিয়াছি। কোনো কারনে যদি আমার এই সপ্ন সফল হইবার আগেই আমার মৃত্যু হয়, সে কারনে আমার এই উইল করা। এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে, আমার জীবদ্দশায় যতটুকু আমি বিক্রি করে শেষ করতে পারি, সেই টুকু আমার উইল থেকে বাদ যাবে এবং বাকী সম্পত্তিতে আমার পূর্বের সব শর্তাবলী নিবন্ধিত থাকবে।

(ছ)       এখানে আরো উল্লেখ থাকে যে, আমার বড় মেয়ে যদি তার ভুল বুঝে তা সংশোধন করে তার এসব খারাপ রুচীসম্মত কর্ম কান্ড থেকে বিরত থাকিয়া পুনরায় আমাদের পরিবারের মান সম্মান বজায় থাকে এমন কাজের বহির্প্রকাশ এবং তার চর্চা আমাকে দেখাইতে পারে, তাহলে আমি আমার জিবদ্ধশায় হয়তো পুনরায় এই উইল পরিবর্তন করতে পারি। কিন্তু আমার বড় মেয়ের এসব চারিত্রিক বৈশিষ্টের কোনো কিছুই পরিবর্তন না হয় এবং আমি তার উপর সন্তুষ্ট না হইয়া মৃত্যু বরন করি, তাহলে আমার এই উইলে যা যা শর্ত আমার বড় মেয়ে, তার ঔরসজাত সন্তান সন্তানাদি, আওলাদ (ছেলে বা মেয়ে) এর উপরে বয়ান করা হয়েছে, তা বলবত থাকবে।

এমন একটা পরিস্থিতিতে উম্মিকা আর রাকিব নিজেরাই এগিয়ে যাচ্ছিলো নিজেরা নিজেরা বিয়ে করে সংসার করার জন্য।

একদিন রাতে উম্মিকার মা, আমাকে খুব শান্ত গলায় কিছু কথা বলার চেষ্টা করলো। তাঁর কথার সারমর্ম এরুপ যে,

উম্মিকা আর রাকিব ডেল্টা মেডিক্যালের পাশেই বাসা ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছে। কিছু ফার্নিচার কিনেছে, আরো কিছু কিনবে। ওরা এই বছরের শেষের দিকে সম্ভবত নিজেরা নিজেরাই বিয়ে করবে। তাই বলছিলাম কি যে, একটা কাজ করো না, মেয়ে তো আমাদেরই, শেষ অবধি যদি ওরা বিয়েই করে ফেলে, তাহলে তো আমাদের কিছু করার থাকবে না। রাগারাগি হবে, মেয়ে বাসায় আসবে না্‌ আমরাও ওদেরকে মিস করবো। কেমন হয়ে যাচ্ছে ব্যাপারটা। তুমি একটু ভেবে দেখো না, হতেও তো পারে যে, ওরা আসলেই খারাপ না, ছেলেটা আসলেই লোভী না, বা আমরা যেমন ভাবছি হয়তো ওরা তেমন না।

কিছু বললাম না। কিন্তু কয়েকদিন সময় নিয়ে নিজে নিজেই ভাবলাম। কি করা যায়। আসলেই তো, উম্মিকা আর রাকিব যদি শেষ পর্যন্ত একা একাই বিয়ে করে, তাহলে আমাদের কি করার আছে? মেয়ে বড় হয়েছে, সিদ্ধান্ত নেবার যোগ্যতা হয়েছে। ভালো হোক আর খারাপ, শেষ পর্যন্ত যদি ওরা একা একাই বিয়ে করে, তাহলে আমাদের তো আসলেই কিছু করা যাবে না।

অতঃপর আমি উম্মিকার মাকে বললাম, উম্মিকাকে বলো, আমি রাকিবের বাবা মায়ের সাথে আমার অফিসে কথা বল্বো। সাথে আরো একটা সিডিউল দিয়ে দিলাম যে, ২৭ সেপ্টেম্বর আমি রাকিবের বাবা মায়ের সাথে একা অফিসে কথা বল্বো, ২৮ সেপ্টেম্বর উম্মিকা আর রাকিবের সাথে আমার অফিসে আমি একা কথা বল্বো, আর ২৯ সেপ্টেম্বর আমি মিটুল, উম্মিকা, রাকিব আর রাকিবের বাবা মাকে নিয়ে অফিসে কথা বল্বো। আমি এটাও বললাম যে, আমি রাকিবের মেডিক্যাল কলেজে ওর প্রাক্তন বন্ধুদের সাথে, ইতির পরিবারের সাথে, রাকিবের বর্তমান কর্মস্থলের কিছু বন্ধুদের সাথে কথা বল্বো।

এটা অবশ্যই একটা ব্রেকিং নিউজ সবার জন্য যে, আমি কথা বলতে রাজী হয়েছি। রাকিবের বাবা মা কিছুটা খুশী হলেও তারা খুব টেনশনে পড়ে গেলেন একটা অজানা ভয়ে, আমারকে ফেস করার ভয়ে। রাকিবও। কিন্তু রাকিবের বাবা মা বা রাকিব এটা ধরে নিলো যে, অন্তত তাদের কথাগুলি তো আমাকে ফেস টু ফেস বলতে পারবে। আমি সে মোতাবেক একটা হোমওয়ার্ক করি। কিছু পয়েন্ট নোট করি কি নিয়ে কোন পক্ষের সাথে আমি আলাপ করবো। পয়েন্টগুলি ছিলো এমনঃ

রাকিবের বাবা মা এর সাথে মিটিং  (২৭/০৯/২০২৩)

(১)        রাকিবের আগের বিয়ের ইতিহাস শোনা। কিভাবে বিয়েটা হয়েছিলো?

(ক)       কার কার সাথে রাকিব আর ইতিকে নিয়ে দেন দরবার করা হয়েছিলো?

(খ)        ইতির সাথে বিয়েটা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো কিনা?

(গ)       ইতির বাবার ঠিকানা কি? ইতি কোথায় কাজ করে বা করতো?

(২)        উম্মিকার বিয়ের ঘটনা বলা

(ক)       কমিটমেন্ট উম্মিকাই করেছিলো, আমাকে কমিটমেন্ট করাইতে বাধ্য করেছিলো। আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে আসা আমার চরিত্র নয়।

(৩)       উম্মিকার আগের শশুড়বাড়ির চেহাড়া এবং বিয়ের পরের চেহাড়ার একটা তুলনামুলক চিত্র দেয়া

(ক)       উম্মিকাকে ছোটখাটো গিফট করা, খাবার পাঠিয়ে দেয়া, মাঝে মাঝে ফোন করে তাকে ওদের কাছে টেনে নেয়া। এ সবই ছিলো বড় লোভের একটা ছোট অংশ।

(খ)        বিয়ের পরে এগুলির কোনো কিছুই আমি দেখিনি। 

(গ)       আমাদের বাড়িতে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকা কিংবা ওদের বাসার সামনেই আমাদের কর্তৃক একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে ওদের রাখা। এটা আমি মানতে পারিনি।

(৪)        রানার চরিত্র নিয়ে কথা বলাঃ 

(ক)       ভয়ানক লোভী ছিলোঃ শেয়ার চাওয়া, একাউন্ট হ্যান্ডিলিং এ সুযোগ দেয়া, গাড়ী চাওয়া, তাঁর টিউশন ফি চাও, বিজ্ঞাপনে টাকা চাওয়া, এসি, ল্যাপটপ, মোবাইল, ড্রেস, জুতা কিংবা ঘড়ি, ওদের বাড়িঘর রিনোভেশনে আমার খরচ দেয়া।

(খ)        উম্মিকার প্রতি দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা, কখনোই বগুড়ার না যাওয়া, বা ঢাকায় এলেও উম্মিকার সাথে যোগাযোগ না করা।

(গ)       কনিকার প্রতি হিংসা করা

(ঘ)        ফ্যাক্টরিতে সময় মতো না আসা। আসতে বললেই তাঁর মেজাজ চড়ে যাওয়া কিন্তু বেতনের বেলায় শতভাগ চেয়ে নেয়া।

(চ)        ওর মার কথামতো চলা এবং মা সব সময় ছেলেকে কুবুদ্ধি দিতো।

(ছ)        আমের ঘটনা।

(জ)       ষ্টাফদের সাথেই এমনভাবে মেলামেশা করা যে, ষ্টাফরাই চুরি করে আর সে সেটা সায় দেয়।

(ঝ)       উম্মিকাকে আমি যে টাকা দিতাম, সেটা দিয়েও রানা অনেক সময় ওর দাবীগুলি মেটাতো।

(ট)        কংকাল বিক্রি এবং টিভি কেনা।

(ঠ)        রানার ব্যবহার ছিলো পাশবিক। মেজাজ, আচরন কিংবা ভদ্রতা অস্বাভাবিক ছিলো। একেবারেই ম্যাচিউরড ছিলো না।

(৫)       আমার নিজের ভূমিকাঃ

(ক)       আমি নিজে ওদের ব্যাপারে কোনো খোজ খবর নেইনি। আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে, তারা আমাকে এই খোজখবর নেয়া থেকে খুব টেকনিক্যালি বিরত রেখেছিলোঃ যেমন, তারা কাউকে জানাতেই দিতে ইচ্ছুক ছিলো না যে, রানা বিয়ে করেছে।

তারা আমাকে ওদের অন্যান্য আত্মীয়সজনের সাথে দেখা করার জন্য কোনো প্রকার সাহাজ্যই করেনি। এক তরফা আমাকে ব্রেইনওয়াস করেছিলো।            

(খ)        আমি চেয়েছিলাম, একটা পরিবার। সেটা গরীব হোক আর অসচ্ছল তাতে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু আমি লোভী পরিবার চাইনি। তারা লোভী ছিলো। তারা চেয়েছিলো শুধু আমাকে আর আমার স্ত্রীকে। আমার সম্পদ, আমার স্ট্যাটাস, আমার ক্ষমতা ইত্যাদির ব্যবহার। কিন্তু ওরা না চেয়েছিলো আমার মেয়েকে, না ছোট মেয়েকে, না দায়িত্ব নিতে।

(গ)       জাহিদের পোষ্টিং (করাপশনের কারনে, ট্রাষ্ট ব্যংকের ঘটনা, জেনারেল মতির সাহাজ্য)

(ঘ)        ওদের জমি জমা নিয়ে বিরোধ মিটানো, অন্যান্য সহযোগীতা করা ইত্যাদি করেছি।

(৫)       বিয়ের পরে আমার মেয়েকে নিয়ে তাদের পরিকল্পনা কি?

(ক)       কোথায় থাকবে, কিভাবে থাকবে?

(খ)        আমাকে কি করতে হবে? কি চাওয়া আমার কাছে?        

(৬)       আমার চাওয়াঃ

(ক)       নিরাপদ সংসার

(খ)        নিরাপদ প্রোফেশন।

(গ)       কাবিনের মাধ্যমে একটা বাইন্ডিংস।

(ঘ)        যদিও সঠিক না, তবুও একটা চুক্তি।

২৭ সেপ্টেম্বর আমি আমার গাড়ি (জীপ) ওর বাবা মার জন্য রেখে এলাম, আমি আমার নুয়া গাড়ি নিয়ে অফিসে এলাম। এর একটা প্রধান কারন হলো- ওরা আমার নিমন্ত্রনে আমার অফিসে আসতেছে। আমার উচিত তাদেরকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা।

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে যেদিন রাকিবের বাবা মা আমার অফিসে আসলেন, সেদিন আমার পরিকল্পনা ছিলো যেনো আমি কোনো অবস্থাতেই তাদেরকে অসম্মান না করি, রাগারাগি না করি। তারা আমার গেষ্ট। আমি বিয়েতে রাজী কিনা বা অরাজী সেটা পরের ব্যাপার, কিন্তু কাউকে ডেকে এনে তাও আমার অফিসে, তাকে অসম্মান করার অভ্যাস আমার কখনো ছিলো না, এখনো নাই। কিন্তু যেদিন রাকিবের বাবা মা আমার অফিসে ঢোকেন, তারা এতোটাই ভয়ে জড়োসড়ো ছিলেন যে, এটা আমার জন্যই খারাপ লাগছিলো। আমি খুব হাসিমুখে তাদেরকে আমার অফিসে বসালাম। বারবার গ্রাম এবং রাকিবের কাছ থেকে ওর বাবার মোবাইলে ফোন আসতেছিলো। সবাই একটা আতংকের মধ্যেই ছিলো।  কিন্তু আমার অফিসে বসার ২ মিনিটের মধ্যে তারা এতোই শান্ত হয়ে গেলেন যে, যা ভেবেছেন আমাকে নিয়ে আমি সেটা না। রাকিবের মা ই প্রথম কথা বল্লো

ভাই, আমি গত চারদিন যাবত একেবারেই ঘুমাতে পারিনি কোনো একটা অজানা ভয়ে, চাপে। কখনো ঢাকায় আসিনি, গ্রামের মানুষ আমরা, আপনি ডেকেছেন, তাও আবার আপনার অফিসে, আমরা সবাই খুব ভয়ে ছিলাম। গ্রামে আর ফিরতে পারি কিনা সেটাও একটা ভয় ছিলো। কিন্তু এখন তো দেখছি- আপনি খারাপ মানুষ না। ভয়ংকর না। আমি তাদেরকে আরো সহজ করার জন্য খুব হাসি তামাশা করলাম। জুস খেলেন, চা খেলেন। ফলটল দেয়া ছিলো সবই খেলেন। অতঃপর আমি বলা শুরু করলাম আমার এজেন্ডা মোতাবেক আলোচনা।

আমি প্রথমে তাদের কথাগুলি শোনার চেষ্টা করলাম। তাদের ছেলের বউ এর সাথে কিভাবে বিয়ে হয়েছিলো, কেনো বিয়েটা ভেংগে গেলো, বিয়েটা রাখা যেত কিনা, সব। এখানে একটা নতুন বিষয় জানলাম যে, রাকিবের মা দুইজন। এটা নিয়েও কিছু হাসি তামাশা হলো। কিন্তু ব্যাপারটা আমি নেগেটিভলী নেই নাই। গ্রামে বড় ভাই বিয়ের অল্প সময়ের পর মারা গেলে অনেক সময় শশুড় বাড়ির লোকেরা মানবিক কারনেই তাঁর ছোট ছেলেকে দিয়ে বিধবা বড় ভাইয়ের বউকে আবার বিয়ে করিয়ে সেই বাড়িতেই রাখে। কিন্তু এখানে রাকিবের বাবার বউ থাকা সত্তেও রাকিবের দাদা রাকিবের বাবাকে তাঁর বড় ভাইয়ের বউকে বিয়ে করেছে। এটা হতেই পারে। রাকিবের মা নিতান্তই একজন সহজ সরল গ্রামের গৃহিণী, কোনো নালিশ নাই, কোনো অভিযোগ নাই। ভালোই আছে। শুধু মা হিসাবে ছেলের প্রতি সারাক্ষনই একটা টেনশন নিয়ে ঘুমায়। সব আলোচনা মিলে আমার কাছে ওদের খারাপ লাগেনি। আর খারাপ লাগলেও যেহেতু উম্মিকা রাকিবের সাথে ঘর সংসার করবেই, ফলে আমি এক প্রকার মেনেই নিয়েছিলাম ব্যাপারটা।

পরেরদিন আমি রাকিব আর উম্মিকাকে আমার অফিসে ডাকলাম। বাবার সামনে মেয়ের ইন্টারভিউ অনেক কঠিন। উম্মিকা নিজেও জানে তাঁর বাবা কতটা স্ট্রিট ফরোয়ার্ড এবং কঠিন। উম্মিকার সাথে রাকিব ও জানে এর মধ্যে যে, আমি একটু কঠিন মানুষ। দুজনেই ভয়ে ছিলো।

রাকিব এবং উম্মিকা সাথে আলোচনা করার আগে, আমি সেই একই টেকনিক রাকিবের বেলায় ব্যবহার করেছিলাম। যতোই হোক, কম বয়সী ছেলে। অন্তত আমাদের মতো মানুষদেরকে ফেস করা সহজ না। কিন্তু আমি রাকিবকে সহজ করে নিলাম। ওর ভয় বা টেনশন ভাংগার জন্য জা করতে হয় করলাম। রাকিব প্রায় আধা ঘন্টার পরে অনেকটা স্বাভাবিক হলো বলে মনে হলো।

এবার আমি ওদের সাথে প্রোফেশনাল ভাবে আলাপ করা শুরু করলাম। রাকিবকেই কথা বলতে দিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম কিভাবে রাকিবের সাথে ইতির পরিচয়, প্রেম, বিয়ে এবং বিয়ে পরবর্তী সমস্যা। প্রায় একই রকমের তথ্য পেলাম জা গতকাল রাকিবের বাবা মা আমাকে বলেছিলো। খুব একটা হেরফের হয়নি।

অতঃপর আমি রাকিবকে বললাম, কখনো যদি কারো গায়ে দাগ লাগে সেটা যেমন কোনো মেডিক্যাল সার্জারী দিয়ে মুছা যায় না, তেমনি যখন কেউ সামাজিকভাবে অসম্মানীত হয়, এই লজ্জাও কোনো কাপড় দিয়ে ঢাকা যায় না। আমাদের দুই পরিবারেই এই দাগ এবং লজ্জার ঘটনা ঘটেছে। তাহলে আমি কি গ্যারান্টি পাবো যে, এই একই দাগ এবং লজ্জা আবারো দ্বিতীয়বার ঘটবে না? আমি শুধু সেই গ্যারান্টি চাই। আর এই গ্যারান্টি দিতে পারবা শুধু তোমরা দুইজন। দুইজনেই জানালো যে, তারা তো এই মুহুর্তে সে রকম গ্যারান্টি দেয়ার স্কোপ নাই কিন্তু আগামীতে তারা এটা প্রমান করবে যে, ওরা আমাদেরকে আর দাগ এবং লজ্জায় ফেলবে না।

আমি বললাম, আমি ওদের এই কথা আপাতত বিশ্বাস করলেও আগামী পাঁচ বছর অব্জার্ভ করবো। যদি আগামী ৫ বছরে কোনো সমস্যা না পাই, ধরে নেবো, ওরা ওদের কথা রেখেছে। আর এর জন্য যদি আমার কোনো সাহাজ্য লাগে, আমি দিতে তৈরী। কিন্তু লোভী মানুষদেরকে আমি ঘেন্না করি।

আমি রানার ব্যাপারে সব কিছু খোলা মেলা আলাপ করলাম, রাকিবকে উম্মিকা শুধু ওর সাথে ঘটা ঘটনার কিছু অংশ হয়তো বলেছে কিন্তু আমি রাকিবকে আদোপান্ত বলার পর রাকিব নিজেও বুঝেছে, আমাদের কি ভূমিকা ছিলো আর রানাদের কি অপরাধ ছিলো।

রাকিব তাঁর ১ম ম্যাসেজ নিয়ে অনেকবার দুঃখ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। আমি আসলে ওগুলি আর মনে রাখিনি।

পরবর্তী ২৯ সেপ্টেম্বরে আমরা আবার ৬ জন একত্রে বসেছিলাম। এখানে আমরা ৪ জন ছিলাম যেনো একটা গ্রুপ আর রাকিব উম্মিকা ছিলো আরেকটা গ্রুপ। অনেক বাধ্য বাদকতা ছিলো আমাদের কিছু শর্তের মধ্যে। যেমনঃ

আমি রাকিবকে এবং উম্মিকাকে বললাম, যেহেতু দুজনেই ক্লিনিক্যাল সাইডে উন্নতি করতে চায় এবং ধরে রাখতে চায়, তাতে উম্মিকার সাথে রাকিবের একটা দন্ধ তৈরী হবে। একটা মেয়েকে প্রোফেশনের বাইরে তাঁর সংসার, বাচ্চা কাচ্চা, স্বামী সব কিছু মেইন্টেইন করতে হয়। সেক্ষেত্রে উম্মিকার জন্য ক্লিনিক্যাল সাইডে থাকা বোকামী। অন্যদিকে রাকিব যদি ক্লিনিক্যাল সাইডেই থাকতে চায়, তাহলে উম্মিকাই বলবে, উম্মিকা দোষ করলো কি? এমন এক পরিস্থিতিতে প্রোফেশনাল ক্লেশ হওয়া কোনো ব্যাপার না। আবারো অশান্তি।

রাকিবই এর সমাধান দিলো যে, ক্লিনিক্যাল সাইডে থাকলে ভালো কিন্তু নাম করতে অনেক কাঠ খড় পোহাতে হয়। সময় অনেক বেশী লাগে। তাঁর থেকে যদি টাকা পয়সা কামাই আর পরিশ্রমের অনুপাত ধরা যায় দেখা যাবে ক্লিনিক্যালের থেকে অন্যান্য মেডিক্যালের সাইডে যাওয়া খারাপ না। ফলে, রাকিব এবং উম্মিকা দুজনেই নীতিগতভাবে আমাদেরকে জানালো, তারা ক্লিনিক্যাল সাইডে থাকবে না। তারা মেডিক্যালেরই অন্যান্য সেক্টরে তাদের ক্যারিয়ার পার্সু করবে। প্রয়োজনে তারা কানাডায় মাইগ্রেট করতেও অসুবিধা নাই।

বিস্তারীত আলাপ আলোচনায় সব পক্ষই এই বিয়েতে আমরা রাজী এটাই বেরিয়ে এলো। সন্ধ্যায় সবাই আমরা হাসিমুখে একসাথে ফ্যাক্টরী থেকে বেরিয়ে গেলাম।

এবার আসি, আমার কিছু ব্যক্তিগত মন্তব্যেঃ

(১)       আমার এজেন্ডায় আরো যেখানে যেখানে গিয়ে রাকিবদের পরিবার সম্পর্কে খোজ খবর নেয়ার কথা ছিলো, সেই সিডিউল বাদ দিলাম। কারন, আমি যদি খোজ খবর নিতে গিয়ে ওদের পরিবার সম্পর্কে ৯৯% নেগেটিভ কথাবার্তাও শুনি, তাতেও আমি রাকিব আর উম্মিকাকে এই বিয়ে থেকে বিরত রাখতে পারবো না। তাই, খোজ নেয়া আর না নেয়ার মধ্যে আমি কোনো তফাত দেখতে পেলাম না।

(২)       উম্মিকার ১ম বিয়েটা আমরা অনেকটা জোর করেই উম্মিকাকে রাজী করিয়েছিলাম রানার সাথে। উম্মিকা সে কারনে মাঝে মাঝেই আমাদের দোষারুপ করে। কিন্তু এইবার উম্মিকার নিজের চয়েজে রাকিবকে বিয়ের সিধান্ত নিয়েছে। ভালো মন্দ, সব উম্মিকার দায় দায়িত্তো। লাইফ উম্মিকার, ভালো থাকার ব্যাপারটা উম্মিকার। তাই, আমি উম্মিকাকে এবার জোর করে বিয়েতে না রাজী করার কোনো কারন দেখি না।

(৩)      আমরা প্রথম থেকে রাকিবদের উপরে জে মানসিক চাপের সৃষ্টি করেছি, বা যেভাবে জে কথাগুলি ওপেনলী বলেছি, তাতে অন্তত রাকিব এবং তাঁর পরিবার একটা জিনিষ খুব ভালো করে উপলব্ধি করেছে যে, আমাদের দ্বারা ওদের উপকার হবে যদি লোভ না করে, কিন্তু যদি লোভী হয়ে উলটা পালটা কিছু আশা করে সেটা আমি বা আমরা কিছুতেই পছন্দ করবো না। তাছাড়া, আমাদের এমন টাইট ব্যবহারে ওরাও অনেকটা সোজা হয়ে চলার কথা। রানার মায়ের মতো বা রানার বোনের বা ভাইয়ের মতো সার্থপরতার কোনো কাজ না করার কথা।

(৪)       উম্মিকার আগের স্বামী রানা ছিলো একটা স্টুডেন্ট বা বেকার। তাছাড়া ম্যাচিউরিটি ছিলো না। কিন্তু রাকিবের বেলায় তাঁর একটা আইডেন্টিটি আছে, ডাক্তার। যা বুঝেছি, দায়িত্তের সাথে কাজ করে এবং পরিবারকে সাপোর্ট করার জন্য আরো বেশী পরিশ্রম করে। রানাকে কোথাও পরিচয় করিয়ে দেবার মতো রানা কোনো যোগ্যতা অর্জনেও সক্ষম হয়নি।

(৫)      রাকিবের দুটূ বোন, যাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রাকিবের আর কোনো ভাইও নাই। ফলে পরিবারটাকে আমার জটিল মনে হয় নাই। এ ছাড়া রাকিবের বাবার একটা ব্যবসা আছে যেটা রানার বাবার ছিলো না।

(৬)      রাকিবঅদের ঢাকায় কোনো থাকার জায়গা নাই, ফলে রাকিবের বাবা মা অনেকটাই আমাদের উপর নির্ভর করছে রাকিবের নিরাপত্তা, রাকিবের গার্জিয়ানশীপ ইত্যাদি। কিন্তু রানার ব্যাপারে রানার মা চেয়েছিলো ওরা আমাদেরকে কন্ট্রোল করুক। আর সেইটার টুলস হলো উম্মিকা। এখানে এই ব্যাপারটা আমি দেখি নাই।

(৭)       সবচেয়ে বড় পয়েন্ট হচ্ছে- যদি উম্মিকা আর রাকিব শেষ পর্যন্ত তারা একা একাই বিয়ে করে ফেলে, তাহলে আমি তো আমার মেয়েকেই হারিয়ে ফেলছি। হতে পারে ইনশাল্লাহ ওরা ভালই থাকবে বা থাকছে, তখন কিন্তু আমিই আবার ওদেরকে কাছে টেনে নিতে বাধ্য হবো। কারন আমি ওটাই চেয়েছিলাম যে, উম্মিকারা ভালো থাকুক। যদি পরে গিয়ে ওদের সুখী দাম্পত্যর ফলাফলে আমি কাছেই টেনে নেই, সেটা বিয়ের আগে নয় কেনো? তাতে লাভ অনেক গুলিঃ

(ক)      আমার সিদ্ধান্তেই বিয়েটা হলো।

(খ)       উম্মিকার আম্মুর খুব শখ ছিলো উম্মিকার বিয়েতে সে অনেক ধুমধাম করবে, সেটাও হলো।

(গ)       আমার একটু সাহাজ্যে যদি রাকিবদের পরিবারেও একটু উপকার হয়, তাতে আমিও খুশী রইলাম।

(ঘ)       যদি দেখি, রাকিবের বাবার ব্যবসাটা একটা লাভ জনক ব্যবসা, আর আমার সাহাজ্যে যদি তাঁর ব্যবসাটা আরো ভালো করে, প্রয়োজনে আমিও তাঁর সাথে ব্যবসায় শরীক হতে পারবো। রাকিবের বাবাই চালাবে কিন্তু আমার কিছু ফাইন্যান্সের কারনে আমারো একটা নতুন সেক্টর ওপেন হলো।

তাই, আগামী ৩ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে সেনাকুঞ্জে উম্মিকার অনুষ্ঠানের দিন ধার্য করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ এ ওর গায়ে হলুদ। এর মাঝে আমার ছোট মেয়ে কনিকা ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ইনশাল্লাহ ঢাকায় ল্যান্ডিং।

রানার Character

১।       বিয়েটার উদ্যোগ আসলে কে নিয়েছিলো আগে এবং এর কারনটা কি ছিলো। রানা বলছে, ওর মা ওকে  বিয়ে করতে বলেছে তাই করেছে।  ওর ইচ্ছে ছিলো না।এখানে একটা বিরাট প্রশ্ন জাগে আমাদের মনেঃ আর তা হলো, রানা তখনো বিবি এ শেষ করে নাই, এম বি এ তো অনেক পরের ব্যাপার। তাঁর কোনো চাকুরীও ছিলো না। সে নিজে স্বাবলম্বী নয়। আমরা এনগেজমেন্ট করতে চেয়েছিলাম, উম্মিকাও সরাসরি বিয়েতে রাজী হচ্ছিলো না। আমরা সবাই জোর করেছি। আমরা ছেলের তখনকার ব্যবহারটা শুধু নজরে নিয়েছি, তাঁর পারিবারিক কোন কিছুই আমরা আমলে নেই নাই কারন উম্মিকার শসুরবাড়ির কোনো কিছুর উপরেই আমাদের লক্ষ্য ছিলো না।  লক্ষ্য ছিলো ভালো পরিবার এবং মার্জিত পরিবার কিনা।

২।   উম্মিকা রানার মাকে কি কি জিনিষ জানাতো রানার ব্যাপারে প্রতিনিয়ত। সেটা পরিস্কার করে জানা উচিত।

৪।  কেনো উম্মিকা বারবার রানার কাছ থেকে সরে যাচ্ছিলো? এমন কি বিয়ের আগেও ও বিয়ে করতে নারাজ ছিলো। এটা নিছক অন্য কোনো ছেলের প্রতি আশক্তি এটা নয়। তখন উম্মিকা আমাদেরকে কোনো কিছুই পরিস্কার করে বলে নাই। ও তখনো বলেছিলো যে, ঠিক আছে, রানার সাথেই বিয়ে হবে কিন্তু সময় নাও। ওকে দেখা দরকার। আসলে ও কি দেখতে চেয়েছিলো সেটা এখন কিন্তু আমরাও বুঝতেছি।

৫। রানা ওকে আদৌ কি ভালোবাসে কিনা। সেটা কোন লেভেলের ভালোবাসা, জানা দরকার। রানা কখনোই উম্মিকাকে ভালোবাসে নাই। রানা ভালো বেসেছে উম্মিকার বদৌলতে জীবন বদলানোর। সুবিধা ছিলো না। কিন্তু সেটা যেভাবে ও করতে চেয়েছে সেভাবে আমি কেনো কেউ মানবে না।

৬।  রানা স্ত্রী কি জিনিষ, বুঝতে পারে কিনা।

৭।  উম্মিকার ফ্রিডম যেমন ওর বন্ধবীদের সাথে, ক্লাসের বন্ধুদের সাথে, আত্মীয় স্বজনদের সাথেও  যোগাযোগ না রাখার মানসিক চাপ প্রয়োগ। এতো নীচু মেন্তালিটি নিয়ে বড় হচ্ছে কেনো ছেলেটা?

৮। অকথ্য ভাষায় সারাক্ষন গালিগালাজ, চরিত্রের উপর দোসারুপ, আলাদা বাসায় থাকলে নাকি আমার মেয়ে তাঁর বাসাকে খদ্দের দিয়া হোটেল বানিয়ে ফেলবে, বাবা মায়ের বিরুদ্ধে সারাক্ষন কথা, এবং তাদের উপর  তাঁর অত্যন্ত বাজে ধারনা পোষণ করা।

৯।  রানাকে দিয়ে আমরা চাকরের মতো যখন তখন কাজ করাই, ইত্যাদি। কি কাজ করিয়েছি রানাকে দিয়ে  যাতে ও মনে করছে আমরা ওকে চাকরের মতো কাজ করাচ্ছি?

১০। আইফোন, এসি, টিভি, গাড়ী, ফার্নিচার ইত্যাদির ব্যাপারে নিজ থেকে  স্ত্রীর মাধ্যমে কথা বলা। আমরা কি  কম দিতাম? চেয়ে নিতে হবে কেনো?

১১। স্ত্রীর গোপন কিছু ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি।

১২। যাচ্ছে তাই ব্যবহার, বিয়ের প্রোগ্রামে হাজির না হবার হুমকি,তারিখ ফিক্স করা নিয়ে মিথ্যা কথা বলা সাথে মাকেও  মিথ্যাবাদি বানানোর চেস্টা।

১৩। খাবার ফেরত দেওয়ার মতো বেয়াদবি। একবার যখন খাবারের মতো জিনিষ আপনাদের বাড়ি থেকে ফেরত   আসতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা আর কখনো আমাদেরকে ছোট করার জন্য কিছু পাঠাতে সাহস করি না। ঈদের পোশাক, কোর বানীর মাংশ, কিংবা গতবারের মতো খাসি কিনে দেওয়া ও যে ফেরত আসবে না,   সেটা আমি কিভাবে সিউর হই?

১৪। ফেসবুকের প্রোফাইল বদল করে ও কি মিন করেছে? আর ওইসব ছবি মেয়েদের সাথে এমন করে তোলা যেনো নিজের অত্যন্ত ঘনিস্ট পোজের কেউ। আমার মেয়ে যদি এমন কোনো ছেলের সাথে এই ধরনের পোজ দিতো, তাহলে তো রক্ষাই ছিলো না।

১৫। সোমা নাকি বলেছে যে, আমরা কেউ দাওয়াত দিলেও সে আসবে না। ইত্যাদি।

১৬। বগুড়া থেকে ঢাকায় উম্মি প্রায় ১৫ দিন থেকেছে। উম্মি ওকে বারবার ফোন করেছে কোথাও ওরা  নিড়িবিলিতে দেখা করার জন্য। রানা বারবার উম্মির সাথে আর কখনোই দেখা করবে না বলে শেষ পর্যন্ত   আর সে দেখাই করে নাই। তাহলে আমার মেয়েই বা ওর জন্য অপেক্ষা করবে কেনো? আজ যদি আমার  মেয়ে বলে যে, উম্মি আর রানাকে ভালোবাসে না, আমি তো তাকে জোর করে এই কথা বলতে পারবো না  যে, কেনো ভালোবাসবে না যে তোমার জন্য পাগল হয়ে অপেক্ষা করছে? রানা কি উম্মির জন্য পাগল হয়ে   আছে? কখনোই না।

১৭।  রানা একদিন আপনাদের সবার সামনে বলেছিলো যে, উম্মি যেহেতু রানাকে একটু অপছন্দ করে, সেক্ষেত্রে   উম্মি যদি এক পা আগায়, রানা আগাবে দুই পা। এই দুই পা আগানোর লক্ষন? প্রায় ১৫ দিন ঢাকায় উম্মি  অবস্থান করছে, উম্মি বারবার ওকে বাসায় না হোক, অন্য কোথাও দেখা করার তাগিদ দিচ্ছে, আর রানা  বারবার একটা কথাই বলে যাচ্ছিলো, আমি জানি না তুমি ঢাকার জন্য টিকেট কেটেছো আর তোমার বাবা  মা জানে। আমি কখনো তোমার সাথে দেখা করবো না। কি দায়িত্বটা পালন করেছে রানা স্বামী হিসাবে? ও  কেনো জানে না যে, উম্মি কখন কোথায় আসবে? খালি বিয়ে মানে কি এই যে, একটা মেয়ের বস হয়ে  যাওয়া? আর কোনো দায়িত্ব নাই? উম্মি আমাকে তার পরেও বলেছে যে, একটু ধৈর্য ধরো, আমি বগুড়ায়  যাই, দেখি রানা আমার প্রতি ওর টান আছে কিনা। কই, উম্মিকাকে মিস করে তো মনেরটানে রানা একবার  ও বগুড়ায় গিয়েও দেখা করে নাই? দেখাতো দুরের কথা, ফোন পর্যন্ত করে নাই।

১৮। আমি সবসময় উম্মিকাকে দোসারুপ করেছি কারন উম্মিকা আমাকে কখনো রানার ব্যবহার, রানার মেন্টালিটির কথা, রানার মেন্টাল প্রেসারের কথা আমাকে বলে নাই। এমন কি রানার মা বা রানার বোনের  নির্লিপ্ত তা নিয়ে কখনো আমাকে বলে নাই। রানা যে ওর সাথে এই রকম চরম  খারাপ ব্যবহার দিনের পর দিন করছে, সে সহ্যই করে যাচ্ছিলো। রানাকে সে ছোট করতে চায় নাই বলেই বারবার পুরু ব্যাপারটা চেপে যাচ্ছিলো। যেদিন সে আমাকে ধীরে ধীরে সব কথা বলা শুরু করলো, আমি বুঝতে   পারলাম, রানার মা কেনো বার বার উম্মিকাকে শান্ত হতে বলছে আর আমার মেয়ে নীরবে সব সহ্য করে থাকছে। এমন কি আমি যে ওকে কত টর্চার করছি তাতেও সে মুখ খুলছিলো না। আসলে রানা কখনোই উম্মিকাকে ভালোবাসে নাই। আপ্নারাও না।

১৯। মাইনাস বলতে কি বুঝায়? আমরা কি আপনাদের সাথে প্লাস হওয়ার জন্য এতো উদগ্রীব ছিলাম? আর  আমরা কি কারনে ওর কাছে পয়জনাস? কি গাড়ি দেই নাই বলে? শেয়ার লিখে দেই নাই বলে? অফিসে টাইম মতো আসার জন্য চাপ দিচ্ছি বলে? ঘুম থেকে উঠে যখন খুশী অফিসে আসবে, এই সুযোগ দেই নাই  বলে? পয়জনাস কথাটার মানে কি? আমরা আপনাদের পরিবারের কোন ইস্যুতে নাক গলিয়েছি? কোন ব্যাপারে কি ক্ষতি সাধন করেছি যে, আপনার ছেলের মনে হলো যে, আমরা আপনাদের পরিবারের জন্য বিষাক্ত? রানার ফেসবুকের সাথে আমার, উম্মিকার, আমার কলিগদের এবং অন্যান্য সবাই মোটামুটি ট্যাগ করা। ওর এই সব মন্তব্যে আমাকে এবং উম্মিকার মাকে অনেকেই ফোন করে জানতে চেয়েছে, কোনো অসুবিধা কিনা রানার সাথে আমাদের। আমাদেরকে সবাই চিনে। আমাদের মাধ্যমে এখন আমাদের পুরু সমাজ রানাকে চিনে। ওর এইসব মন্তব্যে কি রানা বা তাঁর পরিবারের সম্মান বাড়ছে নাকি ওদের  আসল চেহারাটা ফুটে উঠছে?

২১। আমার কাছে আরো একটা তথ্য জানার ইচ্ছে হয় যে, রানা কি শারীরিক ভাবে অক্ষম কিনা। আমাকে রানা এবং উম্মি দুজনেই বলেছে যে, ওরা বিয়ের ৬ মাস পরে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। একই ঘরে থাকা একটা যুবতী মেয়ের সাথে ৬ মাস লাগবে শারীরিক সম্পর্ক করতে এটা ভাবা যায় না। তাছাড়া যখনি উম্মি ঢাকায়  আসতো, আমি রানাকে দেখি নাই পাগলের মতো বউয়ের কাছে ছুটে আসতে। দেখা গেছে, যেদিন উম্মি এসেছে, তাঁরও একদিন বা দুইদিন পর রানা হয়ত উম্মির সাথে দেখা করতে আসতো। আমার মনে হয়, হয় ও এখনো যথেষ্ট অপরিপক্ক অথবা শারীরিক ভাবে ও এখনো পুরুস হয়ে উঠে নাই।

২২। আরেকটা কথা আমার প্রায়ই মনে হয় যে, ওর যে অস্থির মেজাজ, ও যে কোনো সময়ে রাগের বশে  উম্মিকাকে এমন কিছু করে ফেলতে পারে, যাতে ওর প্রাননাশও হতে পারে। ও অনেকটাই ইম্ব্যল্যান্স। যখন সে ঠাণ্ডা থাকে, ও এক রকম, আর যখন ও অস্থির থাকে, ওর কোনো হুশ থাকে না। যেমন ছিলো না ওর বাপের বেলায় মা ফ্যাক্টরীতে। যেটা ও করেছে, তা নজিরবিহীন একটা অপরাধ। মায়ের সামনে বাবাকে কেউ  ওই রকম করে অপমান করতে পারে না যদি মা ও তাঁর স্বামীকে সম্মান করতেন। এটা আপনাদের  পরিবারের সম্মান জড়িত ছিলো। সাথে হয়ত আমারো ছিলো কিন্তু আমাদের থেকে আপনাদের সম্মান অনেক বেশি ক্ষুন্ন হয়েছে। স্বীকার করুন আর নাই বা করুন।

অফিশিয়াল সমস্যাঃ

১।    টাইম মতো অফিসে না আসা। বেশির ভাগ সময় আইপিডিসিতে যেতে হবে, হক ব্রাদার্স এ যেতে হবে,  রুমানিয়ায় যেতে হবে এই ছুতায় সকাল ১১ পর্যন্ত খালি ঘুমেই থাক্তো রানা। আর যখন আইপিডিসিতে যেতো, তার কোনো ফিডব্যাক আজ পর্যন্ত সে আমাকে দেয় নাই যাতে আমি বুঝতে পারি সে আইপিডিসিতে গিয়ে কি কাজ করে। আর আইপিডিসিতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই যদি প্রতিনিয়ত সে  বিলগুলি, ডিসবারজমেন্টগুলি এবং তাঁর পরিপ্রেক্ষিতে কত দিনের জন্য কত ইন্টারেস্ট হয় তা যদি অফিসে বসেই আপডেট করে। এতা আমি করতাম আগে, আমারতো কখনোই যেতে হয় নাই।

২।   বেশীর ভাগ সময়ে কাজগুলি সঠিকভাবে তদারকি না করা এবং সেটা আবার কাউকে করতে না দেওয়া। যেমন, গেটপাশ গুলি, স্টোরে মালামাল আনা এবং ইস্যু, কোন মাল কখন কিভাবে খরচ হচ্ছে, আদৌ কেনা হচ্ছে কিনা, বা কিনলেও বেশি দিয়ে কেনা হচ্ছে কিনা, তাঁর কোনো তদারকি নাই। যেমন, রুমানিয়ার ৪৮ নাম্বার বিলটা আজো পর্যন্ত রুমানিয়ার পাঠানোই হয় নাই অথচ ৪৯, ৫০ ইত্যাদি বিলগুলি সব চলে গেছে। ৪৮ নং বিলে আমাদের প্রায় দুই লাখ টাকার মাল আমরা ডেলিভারী দিয়েছি। তাহলে এই  টাকাটা কি আমাদের পাওয়া উচিত না?

৩।   অভার অল ফ্যাক্টরীর কোনো কাজে সামিল না হওয়া। মার্কেটিং করে রউফ, প্রোডাকশন ফলো আপ করে রউফ, কোন মাল কখন ডেলিভারি যাবে, সেটার প্ল্যান করে রউফ, এমন কি সর্বশেষ ফ্যাক্টরীতে কি  পরিমান আদেশ আছে, বা দরকার, বা পেন্ডিং কি আছে, তাঁর কোনো খোজ খবর তাঁর কাছে নাই। তাহলে কি কন্ট্রোল করবে ফ্যাক্টরী? আর ওদিকে ঘন্টার পর ঘন্টা ওই পিয়নের সাথে, গার্ডের সাথে রঙ্গ আলাপ। কোন মানে হয় এগুলোর? তাতে বরং আন্দার কমান্ডরা লাই পেয়ে বসে।

৪।   বারবার বলার পরেও মাসিক প্রতিবেদন, বিল সাবমিটের প্রতিবেদন, আমাদের লিমিটের অবস্থা, কোন চেক   কখন পাশ হচ্ছে কিংবা কোন চেক আদৌ পাশ কেনো হচ্ছে না, এই সবকিছুর মধ্যে একটা বিরাট সমন্নয়হীনতা। কখনো কখনো এমন হয়েছে যে, আমাদের চেক পাশ হবার কথা আজ, আইপিডিসি হয়ত  ভুলে গেছে, তারা আরো কয়েকদিন পর সেই চেক ডিপজিট করে তারপর টাকা নিয়েছে। আইপিডিসির তো সমস্যা নাই। তারা তো ইন্টারেস্ট কাটছেই। লস তো আমাদের। তাহলে এই গুলিতো ওর দেখার কথা।

৫।   মা ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টরশীপ উম্মিকার থেকে তাঁর নিজের নামে ট্র্যান্সফার করার আগ্রহ কেন? এর আগে  আমাকে রানাই বলেছিলো যে, রউফ সাহেব ডাইরেক্টর বিধায় আর সে ইডি বিধায় রউফ ওর সিনিয়র পদে আছে এবং রউফ সাহেবকে সে ধরতে পারে না। এটা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছিলো ঠিক, তাতে আমি ওকে ডাইরেক্টরশীপ দিয়ে বেতন ১৫ হাজার থেকে এক লাফে ৫০ হাজার করে দিলাম। তাহলে  কি ওর দায়িত্ত বাড়লো না কমল? ডাইরেক্টর হয়ে তো দেখি আরো ডাট বেড়ে গেলো আর কাজের প্রতি  আগ্রহ কমে গেলো। কেনো?

৬।   রউফ সাহেবকে বলেছে (এবং আমাকেও সে মেইল দিয়েছে যে) রানার নামে মা ইন্ডাস্ট্রিজের সব একাউন্ট ট্র্যান্সফার করে দিলে ও নিজেই চালাতে পারবে এবং প্রতি মাসে মাসে সে লোন কম করে হলেও লাখখানেক করে লোন পরিশোধ করতে পারবে। কোন অধিকারে এই ধরনের আগ্রহ? আমি করতাম যদি দেখতাম  যে, সে এটাকে নিজের মতো করে ধরে রাখতে পারবে। আপনার কি মনে হয়, রানা ধরে রাখতে পারতো? যে কিনা জানেই না কি পরিমান আদেশ আছে, কখন কি আদেশ পাওয়া উচিত, কখন কি মাল বানানো উচিত, কিভাবে কাকে কন্ট্রোল করলে কি দাঁড়াবে, তাঁর তো কোনো কন্ট্রোল নাই। না কেউ ওকে কোনো সমস্যার কথা শেয়ার করে। তাহলে কি কন্ট্রোল করবে? কাকে কন্ট্রোল করবে?  

৭।   গাড়ি ইস্যু। গাড়ি কেনার জন্য এতো চাপ আমি কখনো ফিল করি নাই। আমি বারবার ওকে বুঝানোর চেস্টা করেছি যে, আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি জানি কখন কি করতে হবে। আমি ওকে গাড়ি দিতে পারি নাই বিধায় প্রতি মাসে শুধুমাত্র কনভেন্সই দেওয়া হয় ওকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অফিসে আসা যাওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত কোনো অফিস কোনো স্টাফকে কনভেন্স দেয় এটার কোনো নজির নাই। তারপরেও আমি গাড়ি ভাড়া দিতাম। তাহলে গাড়ি লাগবে কেনো? আর এমন তো নয় যে, ছোটবেলা থেকেই সবসময় নিজেদের প্রাইভেট গাড়িতে করেই সে যাতায়ত করতো। অভ্যাস তো ছিলো পাবলিক ট্রান্সপোর্টে আসা যাওয়া করার। তাহলে হতাত করে এমন কি হলো যে, আমাদের কাভারড গাড়িতে চড়তে ওর লজ্জা লাগে, কিংবা এমন কি হলো যে, গাড়ি ছাড়া সে ঘর থেকেই বের হতে পারে না? ও বলেছে, ওর চুল নস্ট হয়ে যাবে, তাই গাড়ি লাগবে। অবাক না হয়ে তো আর পারি নাই।

৮।    ইউএফএল এর চেক পেন্ডিং প্রায় ৯৬০০০০/০০, হক লিমিটেডের ৪টি বিল ওরা দেখাচ্ছে পরিশোধ   করেছে কিন্তু আমরা কিংবা আইপিডিসি একজনও পাই নাই এমন বিলের এমাউন্ট ৯৭৯৯০০/০০, আরেকটা বিল যার এমাউন্ট ৭৩০০০/০০। এতে মোট প্রায় ২২০০০০০/০০ টাকার ঘাটতি হয়েছে   আমাদের। যা আইপিডিসি আমাদের নামে এই সব বিলগুলি ওভারডিউ দেখিয়ে ১০% এর জায়গায় ১৩% করে ইন্টারেস্ট কেটেছে। শুধু তাই নয়, এলপিসি হিসাবে আরো ১% বেশি কর্তন শুরু করেছে। অথচ   আমাদের টাকা ছিলো ওদের কাছেই।

৯।   ওভার ওজন প্রতিমাসে কত কেজি যাচ্ছে তাঁর একটা হিসাব নিয়ে অপারেটরদেরকে প্রতিনিয়ত ব্রিফ করা যেনো ওভার অজন লিমিটের মধ্যে রাখা যায়। কিন্তু মাসের পর মাস, এই সব কাজগুলি করা হচ্ছিলো না।

১০। পেটি ক্যাশ দেখে রানা। কিন্তু আমি না বলা পর্যন্ত রানা কোনো পেটি ক্যাশ চেক করে না। ফলে আমি যখন প্রায় দেড়মাস মা ইন্ডসাট্রিজে যেতে পারি নাই, তখন প্রায় দেড়মাসের অধিক কোনো পেটিক্যাশ এক  দিনের জন্যও চেক করা হয় নাই। তাতে অনেক বিল যেমন মিসইউজ হয়েছে, তেমনি পেটির কোনো হিসাবও রাখা যায় নাই।

১১।       আমি প্রতিদিনের প্রোডাকশন মিলিয়ে কত লস হচ্ছে আর কত লাভ হচ্ছে এমন একটা এক্সেল শীট প্রোগ্রাম বানিয়ে দিয়েছিলাম। তাতে শুধু প্রতিদিনের র মেটেরিয়ালস খরচ, তাঁর দাম, আর প্রতিদিনের ইন করালেই ব্রেক ইভেন পয়েন্টে আছি নাকি লসে আছি নাকি লাভে আছি তাঁর একটা  হিসাব বের হয়ে আসে। কখনো এই হিসাবটা আমি রানার কাছ থেকে পাই নাই।

১২।     দানার ব্যাপারে আমি বলেছিলাম যে, একটা দোকান থেকে দানা না কিনে, কয়েকটা দোকানের সাথে  লিয়াজো করার জন্য যাতে এক দোকানের সাথে সমস্যা হলে বা বাকি আনলে অন্য দোকানে আমাদের এক্সেস থাকে। আজ পর্যন্ত আমি রানাকে দানার ব্যাপারে ওই এক দোকান ছাড়া দ্বিতীয় কোনো দোকানের  সাথে লিয়াজো করাইতে পারি নাই।

১৩।     কোনো কিছু বললেই ব্যবসা আর সম্পর্ক এক করে ফেলে। জামাই হিসাবে তাকে কিছু বলা যাবে না, কোনো কিছু ধরা যাবে না, আবার কাজ দিলে কাজও করবে না। তাহলে ব্যবসাটা চলবে কিভাবে?

১৪।     প্রথম থেকেই রউফকে সে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা। রউফকে দিয়েই আমি আবার নতুন করে একটা প্ল্যান শুরু করেছি, রানাকে দিয়ে তো টেস্ট করতে হলে আমাকে বুঝতে হবে ও নিজে নিজে সামাল দিতে পারবে  কিনা। আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ও একা একা পারবে কিনা। ও আমাকে বলেছে, ও পারবে না। তাহলে, ও কেনো রউফকে প্রতিদ্ধন্দি মনে করে? আমি তো কোটি কোটি টাকার একটা রিস্ক শুধু ওর  খামখেয়ালীর উপর নিতে পারি না।

১৫।     অফিশিয়াল কোনো কিছু হলেই ব্যাপারটা পরিবারের মধ্যে গোল পাকিয়ে একটা জটিল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। মেয়েকে দিয়ে সামাল দেওয়া, আমার বউকে দিয়ে সামাল দেওয়া, আর পরিবারের মধ্যে একটা ঝামেলার সৃষ্টি করা। এটা একটা মজার ব্যপার হয়ে দাড়িয়েছিলো তাঁর কাছে।

১৬।      রিভার সাইড নাকি ওকে সমীহ করে না বা দাম দেয় না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, রিভার সাইডের স্টাফরা ওকে কিভাবে ব্যবহার দেখালে ও মনে করবে যে, রিভার সাইড ওকে দাম দিচ্ছে। মুর্তজা ভাই ওকে ডেকে ডেকে আদর করে এইটা খাওয়ায়, ওইটা খাওয়ায়, কথা বলে ইত্যাদি। তাহলে কিভাবে ও বলে যে,  রিভার সাইড ওকে দাম দেয় না?

১৬।     উকিল বাপ হিসাবে মুর্তজা ভাইকে নিয়েও অনেক মন্তব্য করা হয়েছে বলে শুনেছি। সব খালি সবাই   আপনাদেরকে সমীহ করলে সে ভালো আর আপনাদের কারো কোন দায়িত্ব থাকবে না, এটা তো হতে পারে  না। কয়দিন মুর্তজা ভাইকে আপনার ছেলে ফোন করেছে? কয়দিন মুর্তজা ভাইয়ের ছেলেমেয়ের খোজ নিয়েছে ওরা কে কেমন আছে? ও নিজেই তো মিশতে জানে না। অনেক সময় এমন হয়েছে যে, আমি না  বলা পর্যন্ত রানা মুর্তজা ভাইয়ের সাথে রানা দেখা করার সৌজন্য বোধটাও নাই যখন সে ফ্যাক্টরীতে যেতো। চলে আসার সময় হ্যালো বলারও দরকার মনে করে না। এটা কি কোনো কালচার? এমনো হয়েছে যে,  আমি ওকে গেটে গিয়ে ডেকে এনেছি যেনো যাওয়ার সময় মুর্তজা ভাইকে হ্যালো বলে যায়। এটা কি ধরনের সভ্যতা?  

১৭।    মা ফ্যাক্টরীতে যে কান্ডটা রানা, জাহিদ কিংবা আপ্নারা যা করেছেন, তাতে কি রানার কিংবা আপনাদের পরিবারের মানসম্মানটুকু খুব বেড়েছে নাকি কমেছে? রানার আব্বাকে আশ্রয় দেওয়া তো আমার অন্যায়  কিছু হয় নাই, যেখানে ঊনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরাচ্ছে। আমি কি ওনাকে ডেকে এনেছিলাম? আমি তো বারবার ঊনি আমার এখানে আছে এই মেসেজটা দয়ার চেস্টা করেছি কিন্তু ঊনার আপত্তির কারনেই   কিন্তু আমি মেসেজটা দিতে পারি নাই। দিলে কি হতো? সে হয়তো আমার এখান থেকে চলে যেতো। তাহলে কি খুব ভালো হতো?

১৮।     ফ্যাক্টরীতে আমি ওকে খেতে বললাম, অনুরোধের দাম দিলো না। পরে আবার নিজেই সবার খাওয়ার পরে জনিকে দিয়ে খাবার চেয়ে খাইলো কারন তখন আপনি তাকে খেতে বলেছেন, তাই খাইলো। নিজের কোনো বিবেচনা নাই নাকি?

১৯।       জাহিদ বলেছিলো যে, সে রানা এবং উম্মিকার দায়িত্ত নিয়েছে ওদেরকে আবার ঠিক করার জন্য। উম্মির  রেজাল্ট বের হলো, ভালো করলো, কই কেউ তো আপ্নারা ওকে এঙ্কারেজও করলেন না!! এমন কি  ফেসবুকে রানাও তো উম্মিকাকে একটা অভিনন্দন জানাইলো না? এগুলো হচ্ছে হিংসার বহিরপ্রকাশ। নিজের বউকে নিজেদের মনে না করা। জাহিদের সাথে তো উম্মিকার কোনো ঝগড়া হয় নাই। ঈদে উম্মি কোথায় আছে, সেটাও কি জাহিদ বড় ভাই হিসাবে জানার চেস্টা করেছে? আমার মেয়ের এডুকেসন কোয়ালিফিকেসন রানার থেকে কোনো অংশেই কম নয়। বরং বেশি।এই রকম বিবিএ বা এমবিএ পাশ ছেলেরা ভুরিভুরি অফিসের চাকুরীর জন্য ঘুরে বেরাচ্ছে। আমি তো ওকে একটা প্ল্যাটফর্ম দেওয়ার চেস্টা  করেছিলাম। ডাইরেক্টরশীপ পাইতে  সারা জীবন পার হয়ে যায়, তারপরেও কেউ আদৌ পায় কিনা  সন্দেহ   আছে।

২০।     উম্মিকাকে তো আপ্নারা কেউ ফ্যামিলি মনে করেন না। রানা তো আরো করে না। তাহলে কেনো কি কারনে মেয়েটা আপনাদের কে আপন ভাব্বে?

২১।     জাহিদ বলেছে যে, নাভা জন্ম নেবার দেড় বছর পর্যন্ত নাকি সে নাভার মুখ দেখতেও যায় নাই। এটা কি খুব ভালো ক্রেডিট? মেয়েটা কার? কেউ যদি মনে করে যে, আমরা শুধু উম্মিকার সাথে রানার বিয়ে দিয়েই খুশী, আমাদের আর কিছুই দরকার নাই, তাহলে, সে বিয়ে আমাদের দরকার নাই। আমরা সমাজ নিয়ে চলি এবং সমাজে আমার মেয়ের একটা পজিসন আছে।

২২।     শশুরবাড়ি হিসাবে একটা স্ত্রীর কি কিছুই পাওনা নাই? ছুটিতে যাওয়ার সময় আপনার ছেলে ওকে নিতে  আসবে না, যাওয়ার সময় সে তাকে বগুড়ায় যাওয়ার জন্য সিঅফ করবে না। আপ্নারাও তাঁর জন্য কোনো  খোজখবর রাখবেন না, জিজ্ঞেসও করবেন না তাঁর কিছু লাগবে কিনা। আমি যদিও আপনাদেরকে কিছু  করতে দিতাম না, তারপরেও কিন্তু মহব্বত বুঝা যায়। আরেকটা কথা, কি কারনে আমার মেয়ে ওর জন্য টান অনুভব করবে? সে তো জানে, ওর জন্য স্পেসালি কেউ বাসের শেষ প্রান্তে কেউ অপেক্ষা করে নাই!!

২৩।     এমনসব কথাবার্তা যা শুনলেও চমক লাগেঃ

ক)     আমরা নাকি আপনাদের টাকায় সংসার চালাই। কারন রানার মা কিছু টাকা সুদে মা তে খাটিয়েছিলো, সেটার মাধ্যমেই আমরা সংসার চালাই।

 (খ)      আমার বউয়ের নাকি আচলই নাই।

 (গ)      আমাদের যা আছে, সবই নাকি মিথ্যা।

(ঘ)      বারবার উম্মিকাকে ডিভোর্স দিচ্ছো না কেনো, এই বলে বারবার তাকে ওই পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাতে সে ডিভোর্সটা দিতেই বাধ্য হয়।

(ঙ)     আমার মেয়ের জন্য না তার শাশুড়ি, না তার স্বামী, না তার শশুড় অথবা তার বোন, কিংবা রানার  ভাই কেউ তাকে কখনোই পছন্দ করে নাই, এবং এখনো করে না এই কথাগুলি দিয়ে রানা কি মিন করতে চেয়েছে? তাহলে কি পছন্দ করে আপ্নারা একচুয়ালি আমাদের বাড়িতে মেয়েকে  বিয়ে করাইতে এনেছিলেন? আমার তো প্রশ্ন থাক্তেই পারে তাহলে। আর এই যে পছন্দ করে না,  এটার প্রমান তো আমরা স্বচক্ষেই দেখতে পেয়েছি। আমার মেয়ে এই কথাগুলি কখনোই বলে নাই।   কিন্তু সবকিছু বলেছে তার শাশুড়িকে। 

ওর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছেঃ

(১)      বেয়াদব।

(২)      অলস

(৩)     লোভী

(৪)      মিথ্যা কথা বলা

(৫)      ইনফেরিওর কমপ্লেক্সে ভোগা।

(৬)     খুব দুর্বল নেট ওয়ার্ক মেইন্টেইন করা।

(৭)     নিয়মানুবর্তিতা বলতে কিছুই নাই।

(৮)     কাজে ফাকি দেওয়া।

(৯)      নিজের সক্ষমতার বাইরে ডাট নেওয়া।

(১০)    ইমম্যাচিউরড এবং বাস্তব লাইফের সাথে এখনো পরিচিত না হওয়া বা পরিচিত হবার চেষ্টা না করা।

(১১)    কথায় কথায় বড়দের ব্যাপারে তুলনা বা মন্তব্য করা।

হেডামগিড়ি দেখাইবা তো আগে হেডাম নিজে তৈরী করো। তারপর হেডামগিরি দেখাও। আমরাও দেখতে চাই, হেডামগিরি করার যোগ্যতা কতটুকু।  

যেদিন প্রথম আমি জানলাম যে, উম্মিকা একটা ছেলেকে ভালোবাসে, আমি অবাক হই নাই। অথবা এমন নয় যে, আমি কোনো বাধা দিতে চেয়েছি। আমি সব সময় চেয়েছিলাম যে, আমার অনুপস্থিতিতে আমার এই ব্যবসা, আমার পরিবারের জন্য একজন দায়িত্তশীল মানুষ।

Azizul Hasan Rana (Haque Garden)-কেনো বিয়েটা ভেঙ্গে দিলাম

যে বিষয়টায় যার যতো বেশী আশংকা, ভয়, দুশ্চিন্তা, মাঝে মাঝে সেটাই সত্যি হইয়া সেই আশংকা, ভয়, আতংক আর দুশ্চিন্তা বাস্তবরূপ নিয়া অমাবশ্যা হইয়া সামনে হাজির হয়। কখনো কখনো মানবসংকুল তাহাদের অমাবস্যার কথা চিন্তা করিয়া ইহাকে কাটাইবার জন্য হয়তো জজ্ঞের আয়োজন করিয়া থাকেন, কিন্তু জজ্ঞের দ্বারা সেই অমাবশ্যা কাটিবে কিনা, তাহা যিনি জজ্ঞ করিতেছেন, আর যাহাকে দিয়া জজ্ঞ করাইতেছেন কিংবা যাহার জন্য জজ্ঞ করা হইতেছে, কেহই কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেন না। ফলে জজ্ঞক্রিয়া উপেক্ষা করিয়াও কোনো কোনো সময় ছোট ছোট ব্যাপারই বড় বড় রূপ ধারন করিয়া বড় রূপ এবং অতঃপর বড় ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি করিয়া থাকে। তখন ছোট ব্যাপারগুলিও আর কোনোভাবেই ছোট করিয়া দেখিবার অবকাশ থাকে না। আবর্জনা যেহেতু সবসময় সাদা কাপড়েই বেশি নজরে পড়ে, ফলে ছোট একটা আবর্জনাও অতি মসৃণ ধবধবে সাদা কাপড়ে এমন কটু দৃষ্টির সৃষ্টি করে যে, হয় সম্পুর্ন কাপড়টাকেই ব্যবহারের অযোগ্য মনে করিয়া ফেলিয়া দিতে হয়, নতুবা এই আবর্জনা লইয়াই সমাজের সর্বস্তরে চলাচল করিতে হয়। কিন্তু আজকে যাহার কাহিনী এই গল্পে উত্থাপন করা হইয়াছে, তিনি সমাজে এমন এক স্তরের মানুষ, তিনি আবর্জনা লইয়া চলিবার মানুষ নহেন। ফলে, যতো মুল্যবানই হোক, তাহাকে কাপড়খানাই ফেলিয়া দিতে হইলো।

ইহা আমার পরিবারের কাহিনী।

আমি অতি সাধারন জীবন যাপন করিতে অভ্যস্থ। সুস্থ্য এবং ন্যায়ভিত্তিক জীবনেই আমি আমার জীবন এবং আমার পরিবারকে গড়িয়া তুলিয়াছি। সময়ের এই বিশাল সাগরে আমি আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষন, প্রতিটি মুহূর্ত তিলে তিলে সঠিক ব্যবহার করিয়া শুন্য হইতে আজ আমি এক বিশাল সাম্রাজ্য তৈরী করিয়া আমার দুই মেয়ে আর এক সুদর্শনা শিক্ষিত স্ত্রীকে নিয়া খুব ভালোভাবেই সমাজে মাথা উচু করিয়া দাঁড়াইয়াছি। ব্যবসায় যেমন আমি আমার ক্যাপাসিটি মোতাবেক উন্নতি করিয়াছি, তেমনি আমার ব্যক্তিগত জীবনেও মানসম্মানের কোনো কমতি ছিলো না এবং নাইও। এইসব সুখী জীবনের মধ্যেও আমার মনে একটা সুক্ষ আশংকা আর ভয় কাজ করিতো। আমি সবসময় ভাবিতাম আমি একা এবং আমাকে সাহাজ্য করিবার মতো কোনো পুরুষ আমার বংশে নাই বিধায় আমার অনুপস্থিতিতে কে বা কাহারা আমার এই বিশাল সাম্রাজ্য সামাল দিবে বা কাহার উপর আমি এই গুরুদায়িত্ত দিয়া যাইবো, ইত্যাদি ইত্যাদি লইয়া বেশ চিন্তিত থাকি। আমার স্ত্রী যথেষ্ট্য পারদর্শী হইলেও আজকের দিনের এই পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষের আধিপত্যতাই কাজ করে বেশী বলিয়া আমি এমন কাউকে আমার পরিবারের দায়িত্ত দিতে খুজিতেছিলাম যিনি নিজেও উপকৃত হইবেন আবার আমার পরিবারের তথা আমার এই বিশাল সাম্রাজ্যের দায়িত্বও নিতে পারিবেন। অনেকবার আমি এই প্রচেষ্টা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সফল করিবার নিমিত্তে ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কের, ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের মানুষদের উপর আরোপ করিয়াছিলাম, কিন্তু আমি বারংবার আমার এই চেষ্টায় বিফল হইয়া পরিশেষে ভাবিলাম, মেয়েদের কিংবা তাহাদের স্বামীদের দ্বারাই এইবার আমার এই গুরুদায়িত্ত পালনে সচেষ্ঠ হইবো।

আমি যদিও বয়ষ্ক মানুষ কিন্তু সময়ের তালে আধুনিকতার যে ছোয়া আজ পৃথিবীর চারিদিকে বইছে, তাহা হইতে আমি কখনোই পিছাইয়া ছিলাম না। পুরাতন ট্র্যাডিশন আমি ঝাড়িয়া মুছিয়া ফেলিয়া দেই নাই, আবার নতুন যাহা ঘটিতেছে সেটাও আমার কাছে গ্রহনযোগ্য বলিয়া আমি তাঁর নির্যাস নিতে অপারগ নই। ফলে পুরানো দিনের বয়োবৃদ্ধ মানুষের ধ্যান ধারনাকে যেমন আমি সম্মান করি, তেমনি আধুনিক কালের নতুন নতুন কলা কৌশলের সাথেও অনায়াসেই খাপ খাওয়াইয়া চলিতে পারি। ইহার ফলে যাহা হইয়াছে তাহা হইলো পুরানো দিনের মানুষেরাও আমার খুব ভালো বন্ধু আবার নতুন যুগের আধুনিক মন মানষিকতায় গড়ে উঠা যুবকেরাও অনায়াশেই আমার বন্ধু বনিয়া যায়। আমি পুরানো দিনের মানুষ হইলেও আমার মেয়েরা আধুনিক কালের মানসিকতা নিয়া যেহেতু বড় হইয়াছে, ফলে আমার সাথে  আমার মেয়েদের মধ্যে বিস্তর কোনো গ্যাপ ছিলো বলিয়া মনে হইতেছিলো না। তবে একটি জায়গায় আমি চরমরূপে ছিলাম। তাহা হইলো নিজের আত্তসম্মান আর ন্যায় পরায়নতার ব্যাপারে। ইহার কোনো কিছুর এদিক সেদিক হইলেই আমার নিজের নীতি হইতে এক পাও নড়িতে আমি ইচ্ছুক নই। একটা ছোট উদাহরন দিয়া এই কঠিন রুপটার বর্ননা না করিলেই নয়।

আমি আজ যেখানে দাড়াইয়া আছি, এটা সম্পুন্নই নিজের প্রচেষ্ঠায়।  কাহারো কোনো কৃপা গ্রহন করিতে ইচ্ছুক ছিলাম না, এবং কাহারো কোনো কৃপা গ্রহনও করি নাই। ফলে কেহ তাহার কৃপায় বড় হইয়াছি, কিংবা কাহারো কাছ হইতে নির্লজ্জের মতো কিছু চাহিয়া বড় হই, ইহা কোনোভাবেই মানিতে পারি নাই এবং করিও নাই। তবে আমি নিজে খুশী হইয়া আমার নিজ উদ্যোগে যে কাউকে যাহা খুশী আমি তাহা দিতে কার্পন্য করিনা। কিন্তু কেহ আমার কাছ হইতে অযাচিতভাবে কিছু চাহিয়া তাহার মনোবাঞ্চনা হাসিল করিবেন তাহা আমি কখনো মানিয়া লইতে পারিনা। ব্যাপারটাকে আমি তখন লোভ আর লালসার মধ্যে বিবেচনা করিয়া থাকি।

আমার বড় মেয়ে, উম্মিকা, ডাক্তারী বিষয়ে পড়াশুনা করিতেছে। সবেমাত্র বগুড়া মেডিক্যাল (অর্থাৎ শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল) কলেজে ভর্তি হইয়াছে। একদিন আমার স্ত্রী আমাকে জানাইলো যে, উম্মিকা কোনো এক ছেলেকে পছন্দ করে যাহার বাড়ি আমাদেরই কেরানিগঞ্জ থানায়।

মেয়ে বড় হইতেছে, এদিকে আবার তাহার পড়াশুনার লাইন কোনোভাবেই ব্যবসায়িক নয়। অন্তত আমার ব্যবসা বুঝিয়া নিতে পারিবে এই রকম সেক্টরে সে পড়াশুনা করিতেছে না বিধায় আমি ধরিয়া নিয়াছিলাম যে, আমার বড় মেয়ে আমার প্লাস্টিক ইউনিট এবং গার্মেন্টস কিংবা অন্যান্য জে সকল ব্যবসা বানিজ্য আমার আছে সেসবে সে কখনোই হাল ধরিতে পারিবে না। অন্যদিকে আমার ছোট মেয়ে এখনো ভবিষ্যতে কি করিবে তাহাও আমার কাছে বোধগম্য নয়। ফলে আমি চাহিতেছিলাম যে, যদি আমার মেয়ের স্বামীরা আমার ব্যবসা এবং আমার পরিবারের উপ-অধিনয়কের অর্থাৎ সেকেন্ড ইন কমান্ড এর মতো হাল ধরে, তাহাতে তাহদেরও লাভ হইবে আবার আমিও আমার পরিকল্পনায় সার্থক হইবো।

জিজ্ঞেস করিলাম, ছেলে কি করে?  আমার স্ত্রী আমাকে যাহা জানাইলো তাহা ঠিক এইরূপঃ

ছেলের বাবা একজন অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা। বর্তমানে বয়স্ক হইয়াছে বিধায় কোনো কাজকর্ম করেন না। ছেলের মা গৃহিণী, তাদের একজন মেয়ে, ইতিমধ্যে বিবাহ হইয়া গিয়াছে। মেয়ের স্বামী একটা প্রাইভেট টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানীতে ভালো পোষ্টে বিদেশে কাজ করে। আর এক ছেলে আছে যিনি আর্মির অধীনে ট্রাস্ট ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার হিসাবে কাজ করে। সে বড় ভাই এবং বিবাহিত, তাহার একটি মেয়ে আছে, যাহার নাম নোভা।

মেয়েরা যখন তাহাদের পছন্দের ছেলের কথা বলে, তখন আমার কোনো দ্বিমত থাকেনা। আমার নীতি হইলো যে, কোথাও না কোথাও একটা ভালো ছেলে, ভালো পরিবারের কাছে আমার মেয়েকে তো বিবাহ দিতেই হইবে। সেই পরিবারে কি পরিমান সম্পদ আছে, বা কত টাকা ক্যাশ আছে, বা তাহাদের কত কি আছে তাহা আমার কাছে বিবেচ্য নয়। আমার কাছে বিবেচ্য ছিলো, ভালো পরিবার, সৎ পরিবার। কারন, আমার যাহা আছে, সবশেষে গিয়ে তো আমার মেয়েরাই পাইবে। আর আমার মেয়েরা পাওয়া মানে তো আমার মেয়েদের স্বামীরাই এর সংরক্ষনের দায়িত্তে থাকিবে। ফলে ছেলেদের কি পরিমান কি আছে তাহা আমার কাছে কোনো ব্যাপার নহে।

আমি ছেলেটার বাড়ির সবার সাথে দেখা করার নিমিত্তে এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির নিমিত্তে কয়েকবার নিজখরচে কখনো হোটেল রেডিসনে, কখনো বসুন্ধরা সীটির ভিআইপি রেস্টুরেন্টে, কিংবা কখনো অন্য কোনো ভালো ভেন্যুতে খাওয়া দাওয়া করিয়া কিছু সময় কাটাইতে থাকি, গল্প করিতে থাকি আর এই ফাকে তাহাদের পরিবারটিকে বুঝিবার চেষ্টা করিতে থাকি। যতটুকু বুঝিতে পারিতেছিলাম, তাহা হইলো এই যে, ছেলেটার পরিবার খুব সাদাসিদে, একেবারেই মধ্যবিত্তের কাছাকাছি। তাহারা সবাই একটা ফ্ল্যাটে একত্রে বসবাস করে। ফ্ল্যাটটি তাহাদের নিজেদের, হক গার্ডন কমপ্লেক্সে। যেহেতু তাহাদের আর্থিক সচ্ছলতার উপর আমার কোন আখাংকা ছিলো না, আর আমি চাহিয়াছিলাম একটা সাদাসিদে পরিবার, ভালো পরিবার, আমার কাছে ছেলেটার মা, বাবা, আর ভাইকেও খুব সাধারন গোছেরই মনে হইয়াছে। ফলে তাহাদের সহিত আমার আত্মীয়তা করিতে খুব একটা নেগেটিভ কিছু মনে হয় নাই। আমি পরোক্ষভাবে মানিয়াই নিলাম যে আমার কোনো আপত্তি নাই এই পরিবারের সাথে সম্পর্ক গড়িবার ক্ষেত্রে।

আমার এই সবুজ সংকেতে আমার মেয়ে আর ছেলেটা যখনই সময় পায়, ঘুরাঘুরি করে, তাহাদের বাসায় আসা যাওয়া করে, তাহারাও আমাদের সাথে বেশ ভালো একটা সম্পর্ক রাখিবার চেষ্টা করিতেছিলো। এখানে একটা কথা বলিয়া রাখা ভালো যে, আমি ব্যবসার নিমিত্তে এতোটাই ব্যস্ত থাকি যে, আমার মেয়ের মধ্যে আর ছেলেটার মধ্যে কখন কেমন সম্পর্ক উত্থান পতন হইতেছিলো তাহা জানিবার জন্য আমি আমার মেয়েকেও জিজ্ঞাসা করিতাম না। কারন ভালোবাসার মানুষদের মধ্যে কখনো কখনো দিনকাল এদিক সেদিক হইতেই পারে। ইহা নিয়া আমার খুব একটা ভাবনার বিষয় ছিলো না।

আমি সবসময় ভাবিতাম যে, যেহেতু ছেলেটার পরিবার ততোটা সচ্ছল নহে, ফলে আমারও কিছু দায়িত্ত থাকে তাহাদেরকে ভালো রাখিবার। আর যেহেতু মানষিকভাবে আমি প্রস্তুত আছি যে, এখানেই আমার মেয়ে বিয়ে করিবে, ফলে আজ হোক, কাল হোক আমাকে তো তাহাদেরকেও দেখভাল করিতে হইবে। তাহারাও তো আমারই পরিবারের অংশ। ছেলেটার নাম আজিজুল হাসান রানা।

দিন যায়, মাস যায়, আমি ভাবিলাম, যেহেতু রানা বিবিএ তে পরাশুনা করিতেছে, আমি যদি ওকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পার্টটাইম একটা কাজে লাগাইয়া দেই, তাহা হইলে সে হয়তো ধীরে ধীরে আমি কিভাবে ব্যবসা করি, ব্যবসা করিতে কি কি জ্ঞানের দরকার, কিংবা আমার যতো ব্যবসায়ীক লিংকগুলি আছে, তাহাদের সহিত রানাকে পরিচয় করাইয়া দেই, তাহা হইলে একদিন সে আমার অনুপস্থিতিতেই আমার এই সকল ব্যবসার হাল ধরিতে পারিবে। ইহা লইয়া আমাই আমার স্ত্রীর সাথে এবং মেয়ের সাথেও বিস্তর কথা বলি। সবাই মুটামুটি একটা জায়গায় সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম যে, আমি যদি রানাকে আপাতত আমার প্লাষ্টিক ইন্ডাস্ট্রিতে পার্টটাইম জবে ঢোকিয়ে দেই তাহা হইলে দুইটা লাভ হয়। একটা হচ্ছে, রানার কিছু উঠতি ইনকাম হয় যাহাতে সে নিজেকে অথবা তাহার পরিবারকে আপাতত ছাত্র অবস্থায় কিছুটা আর্থিক সাপোর্ট দিতে পারে, অন্যটি হচ্ছে রানার নিজেরও একটা ব্যবসায়ীক জ্ঞান বাড়বে, অভিজ্ঞতা হবে। সেই মোতাবেক আমি রানাকে মা ইন্ডসাট্রিজ লিমিটেডে আপাতত এক্সিকুইটিভ ডাইরেক্টর হিসাবে ১৫০০০ টাকার বেতনে (যখন ক্লাস থাকিবে না, তখনই আসিতে পারিবে এই শর্তে, কিন্তু লেখাপড়া ক্ষতি করে নয়) কাজে লাগাইয়া দিলাম।  রানাদের নিজস্ব গাড়ি নাই বিধায় রানা পাবলিক ট্রান্সপোর্টেই ফ্যাক্টরীতে আসা যাওয়া করিতো কিন্তু যাওয়ার সময় আমি ওকে আমার গাড়িতে করিয়া বাসায় পৌঁছাইয়া দিতাম। আর গাড়িতে ভ্রমন করিবার সময়টায় আমি ওকে ব্যবসায়ীক অনেক জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করিতাম। যতোদূর মনে পড়ে, রানা নিজেও খুব মনোযোগের সাথে আমার এইসব উপদেশ খুব ভালোভাবে নিতেছিলো বলিয়া মনে হইতো।

কিন্তু আমি এতোটাই বোকা ছিলাম যে, আমি একটা জিনিষ বুঝিতে পারি নাই যে, কোনো কোনো সময় কিছু কিছু নাটক এমনভাবে বানানো হয় যাহাতে সাধারনের চোখে মনে হইবে ইহাই সব সত্যি কিন্তু এর পিছনের মুল উদ্দেশ্য অনেক গভীরে। এইসব নাটকে শুধু ভরষার স্থান তৈরীর জন্যই নাটক তৈরী করা হয়। এক্ষেত্রে ওর মা, ও নিজে, আর ওর ভাই ঠিক ওই রকম একটা চরিত্রে উদয় হইয়াছিলো। সত্যটা আমার চোখে ধরা পড়ে নাই। যেহেতু সত্যটা আমার চোখে পড়ে নাই, ফলে আমি প্রতিনিয়ত একটা মিথ্যাকেই বারবার সত্য হিসাবে দেখিতেছিলাম। আমার নজর ছিলো, কিভাবে আমি ওদের পুরু পরিবারটাকে সাহাজ্য করা যায়, কিভাবে রানাকে আমার মতো করে গড়ে তোলা যায়, কিভাবে আমি ওকে এমনভাবে তৈরী করি যাহাতে একসময় আমার সমস্ত ক্ষমতা, সমস্ত রাজ্য ওকে দেওয়া যায় এবং আমার এই তিলেতিলে গড়ে উঠা সাম্রাজ্য যাহাতে বিনষ্ট না হইয়া অতলে হারাইয়া যায় তাহার জন্য রানাকে তৈরী করা। আর ওদের উদ্দেশ্য ছিলো আমার ব্যবসা আর টাকা। কিন্তু যে কেউ তো আর এমনি এমনিই কাহারো কাছ থেকে সম্পদ বা ব্যবসা কিংবা টাকা পয়সার লোভ করিলেই পাওয়া যাইবে না। তাহার জন্য দরকার একটা টুলস। তাহারা চাহিয়াছিলো আমার কাছ হইতে টাকা পয়সা বানানোর মুল যন্ত্রটা, আমার ব্যবসা আর সম্পত্তি। রানা অতোক্ষন পর্যন্ত যতোক্ষন বিয়ের কাজটা সম্পন্ন হয় নাই ততোক্ষন একজন সাধারন বালক হিসাবেই সমাজে ছিলো। যেই রানা আমার সাথে আমার পরিবারের মধ্যে ঢোকিয়া গেলো, সে হইয়া গেলো অন্য কিছু। আমি যখন তাহাকে আমার প্লাষ্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের কিছু দায়িত্ত দিলাম, তাহাতেই সে দেখা শুরু করিয়া দিলো আকাশের তারার ভিতরের চন্দ্রাভিযান। আমি এইসব ষড়যন্ত্র কিছুই বুঝিতে পারি নাই।  অনেক পরে আমি বুঝিয়াছিলাম যে, এইসব আইডিয়া বা নাটকের মুল রচয়িতা আসলে রানা নহে, বরং ইহার মাষ্টার মাইন্ড লেখক রানার মা আর রানার বোন। কিভাবে আমি ইহা বুঝিয়াছিলাম, সেটা পরে বিশদ বর্ননা করিতেছি।

যাহাই হোক, আমার মেয়ে রানার সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশিয়া একটা জিনিষ হয়তো বুঝিয়াছিলো যে, রানা কিংবা তাহার পরিবার না উম্মিকার সাথে ম্যাচ করে, না আমাদের মানসিকতার সাথে ম্যাচ করে। আমার মনে হয়, ধীরে ধীরে আমার মেয়েও হাপিয়ে উঠিতেছিলো রানার কিছু কিছু ব্যবহার নিয়া। কিন্তু সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার হইলো যে, আমাকে আমার মেয়ে কখনোই রানার ভিতরের চরিত্রটি নিয়ে খোলামেলাভাবে আলাপ করে নাই। না আমার সাথে, না আমার স্ত্রীর সাথে। আর যেহেতু রানার পরিবার ইহা খুব ভালো করিয়াই জানিতো আমাদের পরিবার কি রকম, আর আমাদের মানসিকতা কি, ফলে তাহারাও আমাদেরকে হারাইতে চায় নাই। তাহারা সবসময় চাহিয়াছিলো যে, যে কোনো মুল্যেই হোক, তাহারা যেনো এই রকম একটা সোনার মুকুটের পরিবার হাতছাড়া না হয়। এই কারনে, যতোদিন ফাইনাল কিছু না হইতেছিলো অর্থাৎ বিয়া, ততোদিন রানার মা এমন একটা চক্র তৈরী করিয়াছিলো যাহাতে না আমার বোকা মেয়েটা আমাদেরকে কিছু বলার সুযোগ পায়, না আমি রানার চরিত্রের মধ্যে দুরভিসন্ধির কোনো খুত ধরিতে পারি। তাহারা আসলে আমাদের উপর এবং আমার পরিবারের উপর উম্মিকার সাথে বিয়ের মাধ্যমে একটা স্টিং অপারেশনের পরিকল্পনা করিয়াছিলো। আর সব স্টিং অপারেশনের একটাই উদ্দেশ্য থাকে। আর সেটা হইতেছে-ব্ল্যাক মেইল। তাহারা তাহাদের নাটকের সব চরিত্রের ডায়ালগ যেভাবে দরকার সেইভাবেই সাজাইবার মনঃস্থ হয়তো করিয়াছিলেন কিন্তু আমার চরিত্রের ডায়ালগ তো আমি ছাড়া আর কেউ লিখে দিতে পারিবে না। ফলে আমি ধীরে ধীরে কিছু একটার আভাষ পাইতে লাগিলাম যাহা এই ছেলেটির ব্যাপারে আমি আগে যাহা ভাবিয়াছি, এখন আর সেই রকম ভাবে তাহাকে খুজিয়া পাইতেছিলাম না।  যেই সব গুনাবলীগুলি আমি পুরুষ মানুষের চরিত্রে দেখিলে ঘৃণা বোধ করি, আমি সেই সব গুনাবলী রানার মধ্যে বর্তমান দেখিতে পাইতেছিলাম। যেমন, কোনো কারন ছাড়া টাকা চাওয়া, কোনো কারন ছাড়া অহেতুক কাজে ফাকি দেওয়া, কিংবা কাজ না করিয়া কোনো বড় দায়িত্ত পাওয়া, আবার বড় দায়িত্ত পাইলেও তাহাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করিয়া কাজে ফাকি দেওয়া ইত্যাদি।

অন্যদিকে সম্ভবত আমার মেয়েও রানার উপর বেশ কিছু অযথা মাতাব্বরীর উপর বিরক্ত হইতেছিলো। এই বয়সের মেয়েরা যাহা চায় তাহা হইতেছে স্বাধীনতা, একটু রোমাঞ্চ, একটু বিলাসিতা। কিন্তু রানার মধ্যে এই সব কিছুরই চরম অভাব ছিলো। ইহার একটা কারন ছিলো বৈকি। রানা ছোট হইতে বড় হইয়াছে তাহার মায়ের আচল ধরিয়া। তাহার মা তাহাকে ঐ রান্না ঘরের চার দেওয়ালের বাইরে কি থাকে, কি ঘটে, কিংবা বাস্তব কি, তাহার কোনো কিছুই শিক্ষা দেয় নাই, দিতেও চায় নাই। ফলে রানা তাহার মা যাহাই বলিবে সে তাহাই সঠিক বলিয়া এক বাক্যে মানিয়া লইবে। উহা অন্যায় না ন্যায় নাকি বাস্তব নাকি অবাস্তব তাহা যাচাই করিবার তাহার কোনো অভ্যাস যেমন ছিলো না, তেমনি সে উহা লইয়া দ্বিতীয়বার মাথাও ঘামাইতো না। ভালোবাসা কি, রোমাঞ্চ কি, স্বাধীনতা কি কিংবা বন্ধুবান্ধব কি ইহার কোনো জ্ঞান তাহার মধ্যে ছিলো না। বয়সের তুলনায় সে এতোটাই অপরিপক্ক ছিলো যাহা আমি কিংবা আমার পরিবার বুঝিতে পারি নাই। যে বয়সে মানুষের যতোটুকু জ্ঞান হইবার দরকার, তাহা হইতে রানা অনেক পিছাইয়া ছিলো। এইসবের কারনে আমার মেয়ে ধীরে ধীরে মনে হয় রানার সঙ্গ হইতে বাহির হইবার জন্য চেষ্টা করিতেছিলো। কিন্তু আমার মেয়েও ছোট বলিয়া আমরা তাহাকেও পরিপক্ক মনে করিতাম না। ভাবতাম, সে হয়তো ইমোশনাল বা আবেগী।

একদিন রানার পরিবার আমাদেরকে আমার মেয়ের আর রানার সম্পর্ক কিভাবে কি করা যায়, এইটা নিয়া কথা বলিবার জন্য তাহাদের হক গার্ডেনে দাওয়াত করিলেন। যেহেতু আমি রানাকে ধীরে ধীরে চিনিতে শুরু করিয়াছিলাম, আবার এইটাও মনে হইতেছিলো যে, এখন ছোট বয়স, হয়তো আমার সাথে আমার গাইড পাইলে ধীরে ধীরে ঠিক হইয়া যাইবে। ব্যাপারটাকে আমি এইভাবেই নিয়াছিলাম। আমরা নীতিগতভাবে সম্পর্কটা মেনে নিলাম, তবে যেহেতু ওরা দুইজনেই এখনো পড়াশুনারত, ফলে পড়াশুনা শেষ না হওয়া অবধি আমরা ওদেরকে কোনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না করার জন্যই একমত হইলাম।

কিন্তু আমার মেয়ে ধীরে ধীরে সম্ভবত রানার আভ্যন্তরীন চরিত্র, তাহার মানসিকতা, তাহার দায়িত্ববোধ বিবেচনা করিয়া তাহার উপর বিরক্ত হইতে লাগিলো। যেহেতু এখনো কোনো কিছুই করা হয় নাই, না এঙ্গেজমেন্ট, না আকত, ফলে আমার মেয়ে যেমন স্বাধীন ছিলো, তেমনি এখানে কোনো সম্পর্ক না হইলেও কিছুই যায় আসে না এটা ভাবিয়াই আমার মেয়ে ধীরে ধীরে রানার কাছ হইতে দূরে সরিয়া যাইবার উপক্রম হইতেছিলো। শুধু তাহাই না, সে তাহার বন্ধু মহলেও এইটা নিয়া বিস্তর আলাপ চারিতায় অভিজ্ঞতা নিতেছিলো। আমার মেয়ের এই পরিবর্তনটাও আমার চোখে পড়িয়াছিলো। যুগ খারাপ, সমাজ ব্যবস্থা এখন আগের থেকে অনেক দ্রুত পরিবর্তনশীল। তাই কে কিভাবে কোন আংগিকে কোন পরিকল্পনা করিয়া আমার এই সুখী এবং স্ট্যাবল পরিবারে আমাদের মেয়েদের বদৌলতে ঢোকিয়া পড়িবে এই আশংকায় আমিও আমার মেয়ের ধ্যান ধারনায় পজিটিভ হইতে পারিতেছিলাম না যেহেতু আপাতদৃষ্টিতে রানার পরিবারকে আমার অনেক ভালো পরিবার বলিয়া মনে হইতেছিলো। কোনো পরিবারই ১০০% পারফেক্ট নয়। তাই কিছু ভুলত্রুটি সহই আমি রানার পরিবারকে মানিয়া লইয়াছিলাম। রানা এবং রানার মা আমার মেয়ের এই দ্রুত পরিবর্তনে তাহারা আমার মেয়েকে হাতছাড়া হইয়া যাইবে এইরুপ একটা আশংকা করিতেছিলো। ফলে সবকিছু শেষ হইয়া যাইবার পূর্বেই হটাত করিয়া একদিন রানার মা, রানার বাবা, আর রানা আমাদের বাসায় মিষ্টিসমেত আসিয়া হাজির। তাহাদের কাছ হইতে আমাদেরকে এইরুপ একটা প্রোপজাল দিয়া বসিলেন যে, বাচ্চারা লেখাপড়া করুক, তাহাতে কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু কিছু একটা করিয়া রাখা ভালো। অর্থাৎ আকত জাতীয় কিছু একটা।

আমার মেয়ে ইতিমধ্যে নিজের সাথে বুঝাপড়া করিয়া সে একটা জায়গায় উপনীত হইতে পারিয়াছিলো যে, রানা আমাদের পরিবারের জন্য যোগ্য পাত্র নয়, আর আমার মেয়েরও এখন আর তাহাকে ভালো লাগে না। সে বাকিয়া বসিল। আমরা তখনো রানার চরিত্র সম্পর্কে অতোটা বুঝিয়া উঠিতে পারি নাই যতোটা আমার মেয়ে বুঝিতে পারিয়াছিলো। কিন্তু যখনই কোনো প্রশ্ন করি কি কারনে রানাকে তাহার আর ভালো লাগে না, কিংবা কি কারনে সে আর রানাদের পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করিতে চাহে না, সে প্রশ্নের উত্তর আমার মেয়ে আমাদেরকে ঘুছাইয়া বলিতেও পারে না। ফলে আমাদের মধ্যে বিস্তর একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিংই রহিয়া গেলো। আমরা আমার মেয়েকে অনেক জোর জবরদস্তি করিয়াই বিবাহে রাজি করাইলাম। এইরুপ জোর জবরদস্তি করা হয়তো আমার অন্তত ঠিক হয় নাই। আমি কোনো অবস্থাতেই আমার মেয়েকে আমি জোর জবর দস্তি করিতাম না যদি সে আমাকে সঠিক কারন গুলি বলিতে পারিতো। যাই হোক, আমি রানাকে আর রানার পরিবারকে সত্যি অনেক ভালোবাসিয়াছিলাম বলে ভাবিয়াছিলাম, তাহাদের যাহা নাই, তাহা আমার আছে, আর আমার যাহা নাই, তাহা আমি উম্মিকার সাথে রানার বিবাহ দিলে সেই অভাবটা আমার পুরুন হইবে।  

সোনার ডিম পাড়া মুরগীকে কেউ সোনার মুকুট পড়ায় না। এটা হয়তো ওরা বুঝে নাই। ওরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সপ্ন দেখছিলো, কিন্তু আমি জেগেছিলাম। আমি সারাক্ষন ওদের এই সপ্নটা ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়ায় ছিলাম। ওরা আমাকে সিড়ি হিসাবে হিসাবে দেখেছিলো বটে পাশাপাশি আগুন নিয়েও খেলছিলো। ওরা আকাশে উড়তে চেয়েছিলো, ওরা হয়তো ভেবেছিলো, আকাশে আগুন লাগে না। কিন্তু আকাশে যখন আগুন লাগে, সেই আগুনে জ্বলে পড়ে ছাড়খাড় হয় মাটি আর শুকিয়ে যায় নদীর জল। আকাশের হয়তো কিছুই পূড়ে না। যখন কোনো পরিস্থিতি নিজের কন্ট্রোলে না থাকে, আর সেই পরিস্থিতি যখন কেউ অন্যের হাতে তুলে দেয়, তখন যেটা হয় তা হচ্ছে নিজের সর্বোনাশ।

রানার পরিবার আমাদের এই রকমের একটা পরিস্থির মধ্যে ঠেলে দিয়েছিলো যা আমার হাতের নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিলো।  

২৮/০১/২০২১- উম্মিকা,আমার বড় মেয়ে

Categories

আনিকা তাবাসসুম উম্মিকা আমার বড়মেয়ে। জন্ম তার ১৬ জানুয়ারী ১৯৯৪ সাল।

তার জন্মের আগে আমার বড় ইচ্ছে ছিলো যে, আমার যেনো একটা মেয়ে হয়। আমি কখনোই ছেলে হোক চাই নাই। আল্লাহ আমার মনের আশা পুরন করেছেন উম্মিকাকে আমার ঘরে দিয়ে। সে খুব ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু সে খুব সিম্পল। 

উম্মিকার জন্মের আগে (সম্ভবত ৪/৫ দিন আগে) আমি একটা সপ্ন দেখেছিলাম। তাহলে সপ্নটা বলিঃ

ঢাকা সেনানীবাসের মেস বি তে আমি একটা রুমে আছি। আমার পোষ্টিং ছিলো খাগড়াছড়িতে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের অধীনে। মিটুল পোয়াতি অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। যে কোনো সময় আমার বাচ্চা হবে। আমি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছি শুধু আমার অনাগত বাচ্চার আগমনের জন্যই। নামাজ পড়ি, খাই দাই, আর সারাদিন হাসপাতালে মিটুলের সাথে সময় কাটাই।

একদিন রাতে (ডেলিভারির ৪/৫ দিন আগে) আমি সপ্নে দেখলাম যে, আমি আমাদের গ্রামের কোনো একটা দোকানে বসে আছি। ওখানে আরো অনেক লোকজন ও আছে। হতাত করে সবুজ একটা সুতী কাপড় পড়ে একজন মহিলা কোনো একটা ঘরের ভিতর থেকে বাইরে এসে আমাকে বল্লো, আমাকে আপনি কি চিনেন? আমি তাকিয়ে তাকে বললাম, জী না আমি আপনাকে কখনো দেখি নাই। উত্তরে মহিলাটি আমাকে বললেন, যে, তিনি হযরত আছিয়া বেগম অর্থাৎ মুসা (আঃ) এর মা। আমি তো অবাক। কি বলে এই মহিয়সী মহিলা?

আমি ততক্ষনাত উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, তাহলে তো আপনার কাছে আমাদের নবীজির অনেক চিঠি থাকার কথা! মহিলা বললেন, হ্যা আছে তো।

এই কথা বলে তিনি আবার ঘরের ভিতরে চলে গেলেন চিঠিগুলি আনার জন্য। আমার ঘুম ভেংগে গেলো। আমি তখন সময়টা দেখলাম, রাত প্রায় শেষের পথে কিন্তু তখনো ফজরের আজান পড়ে নাই।

পরদিন ছিলো শুক্রবার। আমি জুম্মা নামাজ পড়ে ইমামের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে কথা বললাম। তিনি প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবনা কিনা। আমি বললাম, আমরা খুব শিঘ্রই বাচ্চার আশা করছি। তিনি বললেন, আপনার মেয়ে হবে এবং খুব ভালো একজন মেয়ে পাবেন আপনি।

তার ৪/৫ দিন পর আমি আসর নামাজের পর কোর আন শরীফ পড়ছিলাম। এমন সময় আমার মেস ওয়েটার তড়িঘড়ি করে আমার রুমে নক করে বল্লো যে, স্যার আপনাকে দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেছে। আমি তখন যেখানে কোর আন আয়াত পড়ছিলাম, ঠিক সেখানেই মার্ক করে কোর আন বন্ধ কত্রে ছুটে গেলাম হাসপাতালে। মিটুলকে ওটিতে নেয়া হচ্ছে, সিজারিয়ান করতে হবে।

প্রায় ঘন্টা খানেক পরে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার মিষ্টি মেয়েটার জন্ম হলো এই পৃথিবীতে। কি নাম রাখবো সেটা আমি ঠিক করেছিলাম যে, আমি যেখানে কোর আন শরীফ টা পড়া বন্ধ করেছি, আর যে আয়াতে, আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঠিক সেই আয়াত থেকেই কোনো একটা শব্দ দিয়ে নাম রাখবো। অবাক করার ব্যাপার হচ্ছে- আমি ওই সময়ে হজরত মুসা (আঃ) এর উপরেই আয়াতগুলি পড়ছিলাম। সেখানে আয়াতে লিখা ছিলো- ইয়া হাইলা আলা উম্মিকা মুসা। অর্থাৎ হে মুসা, আমি তোমার মাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিলাম।

আমি ঠিক এই শব্দতটাই আমার মেয়ের নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেই যে, ওর নাম হবে উম্মিকা। অর্থাৎ মা।

আমার সেই উম্মিকার প্রথম শিক্ষা শুরু হয় মীরপুর স্টাফ কলেজের টর্চ কিন্ডার গার্ডেনে। অতঃপর মেথোডিস্ট ইংলিশ মিডিয়াম, তারপর শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজ এবং সেখান থেকে হলিক্রস। হলিক্রস থেকে উম্মিকা এইচএসসি পাশ করে ডাক্তারী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে শহীদ জিয়া মেডিক্যালে আল্লাহর রহমতে ইন্টার্নী করে ২০২০ সালে ডাক্তারী পাশ করলো। এটা আমার একটা স্বপ্ন যে সে ডাক্তার হোক। আমার আরেকটা স্বপ্ন হচ্ছে, সে যেনো সেনাবাহিনীর ডাক্তার হয়। তাতে যে লাভটা হবে তা হচ্ছে, বাবার সেনাবাহিনীর জব ছিলো। রাজনীতির প্রতিহিংসায় সে ইচ্ছে করে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়েছিলেন, জেনারেল পর্যন্ত যেতে পারেন নাই। আমি চাই আমার মেয়ে সেটা হোক। আর ২য় কারন হচ্ছে, আজীবন কাল সে সেনাবাহিনীর সব বেনিফিট গুলি যেনো পায়। কিন্তু বাবাদের সব সপ্ন তো আর সার্থক হয় না। আমার মেয়ে চায় বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সে বেসামরীক লাইফেই থাকে।

২০/১০/২০২০-উম্মিকার বাড়ি আসা  

Categories

অনেকদিন পর আমার বড় মেয়ে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাসায় আসবে কাল ইনশাল্লাহ। তারপর ওকে নিয়ে আমরা সবাই কক্সবাজার যাবো বেড়াতে। অনেকবার গিয়েছি কক্সবাজারে, কিন্তু এবার যেনো কেনো একটু বেশী ভাল লাগছে যেতে। আসলে কক্সবাজার জায়গাটার মধ্যে কোনো মজা নাই, মজা হলো পুরু পরিবার একেবারে নিজের মতো করে এক সাথে হৈ হুল্লুর করা। সময়টা একেবারে নিজেদের মতো করে কাটে। এটা আসলে একটা ব্রেকটাইম।

প্রথমে উম্মিকার যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না, মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমাদের সবার। বারবারই মনে হচ্ছিলো যে, উম্মিকা যেতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওর ইন্টার্নীর ঝামেলায় উম্মিকার সম্ভব হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত উম্মিকা ম্যানেজ করেছে ছুটিটা। আর এই ছুটিতেই উম্মিকা আগামীকাল বাড়ি আসছে। ওর বাড়িতে ও আসছে, এতে যেনো বাড়িটাই আনন্দিত হয়ে উঠছে। ওর মা আজ ওর জন্য স্পেশাল বাজার করে আনলো, কনিকাও প্রস্তুতি নিচ্ছে কাল ওর আপু আসবে, তাই কি স্পেশাল খাওয়া যায়, তার একতা লিষ্ট ও করে ফেলছে। আগামী পরশু আমি উম্মিকা আর কনিকাকে ১৩ শতাংশ করে চমৎকার জায়গায় দুজনকেই এক খন্ড জমি লিখে দেবো, সেটাও একতা আনন্দ হচ্ছে। জমিটার দাম নিছক কম নয় প্রায়, ৭৫ লাখ টাকা করে উভয়ের, মানে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি। তাই উম্মিকা আর কনিকাকে আমার ফ্যাক্টরীতে নিতে হবে আগামী পরশুদিন ইনশাল্লাহ।

প্রথমে উম্মিকার যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না, মনটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো আমাদের সবার। বারবারই মনে হচ্ছিলো যে, উম্মিকা যেতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু ওর ইন্টার্নীর ঝামেলায় উম্মিকার সম্ভব হচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত উম্মিকা ম্যানেজ করেছে ছুটিটা। আর এই ছুটিতেই উম্মিকা আগামীকাল বাড়ি আসছে। ওর বাড়িতে ও আসছে, এতে যেনো বাড়িটাই আনন্দিত হয়ে উঠছে। ওর মা আজ ওর জন্য স্পেশাল বাজার করে আনলো, কনিকাও প্রস্তুতি নিচ্ছে কাল ওর আপু আসবে, তাই কি স্পেশাল খাওয়া যায়, তার একতা লিষ্ট ও করে ফেলছে। আগামী পরশু আমি উম্মিকা আর কনিকাকে ১৩ শতাংশ করে চমৎকার জায়গায় দুজনকেই এক খন্ড জমি লিখে দেবো, সেটাও একতা আনন্দ হচ্ছে। জমিটার দাম নিছক কম নয় প্রায়, ৭৫ লাখ টাকা করে উভয়ের, মানে প্রায় দেড় কোটি টাকার জমি। তাই উম্মিকা আর কনিকাকে আমার ফ্যাক্টরীতে নিতে হবে আগামী পরশুদিন ইনশাল্লাহ।

১৭/০৩/২০১৯-উম্মিকার ডাক্তার হওয়ার পারিবারিক অভিষেক

উম্মিকার ডাক্তার হওয়ার পারিবারিক অভিষেক অনুস্টানের পর্বটি একটা আনন্দঘন দিনে পরিনত হয়েছিলো। চৌধুরী বাড়ির লোক সংখ্যা এমনিতেই এতো যে, ডাক দিলেই হাতের কাছে গোটা ১০ জন পাওয়া যায়। তারমধ্যে আবার দাওয়াত, তাও আবার আমার বাসায়। এ যেনো মহা যজ্ঞ।  সবাই নিজের বাড়ির মতো করে আনন্দ করে। সারা বাড়িতে গটা কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে যায়। ছোটরা হৈচৈ, বড়রা চিল্লাচিল্লী, মাঝারী গুলা তাস, কিংবা সেলফী, আর বুড়ারা গাল গল্পে।

উম্মিকার ডাক্তারী পরীক্ষার ফলাফলের পর পরই একটা অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু বিভিন্ন ঝামেলায় করা হচ্ছিলো না। উম্মিকার আম্মু আবার এসব বিষয়ে পিছিয়ে থাকার লোক না। সব বাড়ি থেকেই লোকজন এসেছিলো। উম্মিকা আঞ্জুমানদেরকে আসতে বলেছিলো। আঞ্জুমানরা এক সময় আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো, এখন সে ৪ সন্তানের মা। খুব ভালো একতা মেয়ে। মান্নারা, বাসাবো থেকে বুটী আপারা, মূটামুটি সবাই এসেছিলো। খুব সুন্দর একটা গেট টুগেদার হলো আজ।

বিকালে সবাই ছাদে গেলো, সন্ধ্যার পর আবার আরেকতা ভুড়িভোজ হলো। সব মিলিয়ে এক কথায় উপভোগ্য একটা দিন ছিলো। প্রায় ৫ বছর আগে যখন উম্মিকা ডাক্তারী পড়তে যায়, আমি কখনো ভাবি নাই যে, উম্মিকা একা একা সেই আরেকটা দূরের শহরে থাকতে পারবে। মেস লাইফ, কঠিন লাইফ। কিন্তু তারপরেও উম্মিকা এক চাঞ্চসেই আল্লাহর রহমতে ডাক্তারী পরীক্ষায় পাশ করে ফেলেছে, এটা ওর জন্যে একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে এবং মানষিক যন্ত্রনায় ওকে পরীক্ষা গুলি দিতে হয়েছে। উম্মিকা বরাবরই ভালো ছাত্রী ছিলো, ফাকীবাজ ছিলো না, ফলে সব গুলি টার্মেই উম্মিকা ভালো করায় একটা ডিস্টিঙ্কট নিয়ে পাশ করেছে। আমি সব সময় চেয়েছিলাম উম্মিকা ডাক্তার হোক, আজ সেটা উম্মিকা পুরন করেছে, মাশ আল্লাহ।

শেষ পর্বটি ইমনের আতশবাজী পোড়ানো ছিল এলাকায় একটি উৎসব মূখর পর্ব। আশেপাশের সব বাড়িগুলি থেকে অনেক মানুষ ইমনের এই আতশবাজী দেখার জন্য বাসার বাইরে দাড়িয়েছিলো। আমাদের সাথে সাথে পাড়াপ্রতিবেশীও ব্যাপারটা আনন্দ করেছে। ধন্যবাদ ইমন

১২/০৩/২০১৯-উম্মিকার ডাক্তারী ফলাফল

গত ১২ মার্চ ২০১৯ তারিখে আমার বড় মেয়ের মেডিক্যাল ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো। খুব টেনশনে ছিলো মেয়ে পাশ করে কিনা। প্রায়ই তার মেজাজ মর্জি খারাপ থাকতো এই টেনশনের কারনে। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়েছে সে এই পড়ার সময়। তার পরেও সে তার লক্ষ্য স্থির রেখেছে যেনো এক চান্সেই পড়াটা শেষ হয়। আল্লাহর অসীম রহমত যে, সে এক চান্সেই মেডিক্যাল পরীক্ষাটা পাশ করে এখন সে পূর্ন ডাক্তার হয়ে গেলো। আল্লাহর কাছে শুকরীয়ার শেষ নাই।

সেদিন আমি বাসায়ই ছিলাম। বেলা প্রায় একটার ও বেশী। বউ কলেজে ছিলো। আমরা বাসায় একত্রে খাবো বলে অপেক্ষা করছি। আমি কম্পিউটারে কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। দুই মেয়েও বাসায়। বড় মেয়ে উম্মিকা ড্রয়িং রুমে কিছু একটা করছিলো। হটাত করে “আব্বু” বলে বড় মেয়ে চিৎকার। আমি চমকে গেলাম, কি হলো মেয়ের। তাড়াতাড়ি কম্পিউটারের কাজ ফেলে ড্রয়িং রুমে যাচ্ছিলাম, দেখি মেয়েই এগিয়ে এসছে হাতে তার মোবাইল নিয়ে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে বলছে, “আব্বু, আমাদী মেডিক্যালের ফলাফল দিয়েছে। আমি পাশ করেছি আব্বু”।

আমি মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় চুমু খেতে খেতে বললাম, “কাদছিস কেনো তাহলে?” মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে থর থর করে কাপছে আর আরো কাদছে। অনেক আদর করে বললাম, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরীয়া যে, তুমি পাশ করে গেছো।

অনেক্ষন লাগলো আমার বড় মেয়ের স্থির হতে। ঠিক এমন সময় আমার বউ বাসায় ঢোকলো। আমার তখন মাথায় একটা দুস্টু বুদ্ধি এলো, ওর মাকে ভড়কে দেবার। বললাম, “দেখো, মেয়ের পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে, মেয়ে কান্নাকাটি করছে। মেয়েকে থামাও”। লক্ষ্য করলাম, আমার বউ এর মুখাবয়ব হটাত করে পরিবর্তন এবং টেনশনের ছায়া। হাতের ব্যাগটা কোনো রকমে টেবিলের উপর রেখেই মেয়েকে শান্তনা দেবার জন্য জড়িয়ে ধরলো আর বল্লো, কি রেজাল্ট মা? আমি হেসে দিয়ে বললাম, মেয়ে তো পাশ করেছে। যেই না বলেছি যে, পাশ করেছে, আর অমনি মা মেয়ের দুজনেই এখন কান্নার রোল। এতক্ষন তো ছিলো একজনের কান্না, এখন দেখি দুইজন। ঠেলা শামলাও এবার। বেশ মজা পাইলাম মা মেয়ের এই রকম একটা আবেগপুর্ন মুহূর্তের জন্য। সবই আল্লাহর ইচ্ছা এবং দয়া। আজ থেকে আমার বড় মেয়ের একটা ভালো আইডেন্টিটি হলো, “ডাক্তার” উম্মিকা।

ধন্যবাদ মা তোমাকে। আমি তোমার উজ্জল জীবনের জন্য দোয়া করি সবসময়। 

১৮/২/২০১৬-আমার বড় মেয়ের সঙ্গে

গত দুইদিন যাবত আমি আমার বড় মেয়ের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটানোর চেষ্টা করছি। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে। এখনো ছেলেমেয়ের মধ্যে কোন রাত যাপনের সুযোগ আমরা দেই নাই যদিও এটা আমাদের ধর্মের রীতির মধ্যে পরে না কিন্তু আমি খুব বিস্ময়ের সহিত লক্ষ করছি আমাদের এই দুইজন সন্তানও কোন প্রকারের দাবি তুলে নাই তাদের এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করছি বলে। ওরা নিষ্পাপ মানুষগুলোর মধ্যে একজন।

কিন্তু আমি একটা জিনিস লক্ষ করছি আমার মধ্যে যে, আমার বুকের ভিতর কোথায় যেন একটা ফাকা ফাঁকা ঠেকছে। অথচ কোন কিছুই আমি হারাই নাই। বরং আমি আরও একজন নতুন মানুষ পেয়েছি, আমি আরও একজন সুসন্তান পেয়েছি, অন্যভাবে বলতে হয় যে, আমার যে একজন ছেলে সন্তানের অভাব ছিল আজ মনে হয় যেন আমি একজন ছেলে সন্তান পেয়েছি। কখনো কোনদিন কোনভাবেই আমার অগোচরেও আমার মনে আমার একজন ছেলে সন্তান দরকার এই ভাবনাটা আসে নাই। আজ আমার মেয়ের জামাইকে পেয়ে মনে হল, আমি যেন আজ নতুন করে বাবা হয়েছি। একজন ছেলের বাবা। যে অভিজ্ঞতাটা আমার কখনো ছিল না। কিন্তু তারপরেও প্রতিনিয়ত আমার কাছে মনে হচ্ছে আমার মধ্যে একটা পরিবর্তন এসেছে। কি সেই পরিবর্তনটা? কাজের ফাকে কারনটা খুজতে চেষ্টা করেছি, অবসরে খুজতে চেষ্টা করেছি, একাএকা ভেবে দেখার চেষ্টা করেছি, চোখ বুঝে ভাবার চেষ্টা করেছি, চোখ খুলে দিনের আলোয় বুঝার চেস্তা করেছি, আমার কোথাও কোন কোন হারায় নাই। অথচ ব্যাপারটা ঘটছে আমার মাথার ভিতর, আর ব্যাথাটা পাচ্ছি অন্তরের ভিতর। এরই মধ্যে আমার মেয়ের বিয়ের কারনে আমার যেন নতুন করে একটা আনন্দ হচ্ছে আমার সর্বত্র। তাহলে কি হয়েছে আমার? ইন্ডাস্ট্রি চলছে আগের মত, ব্যবসা চলছে ঠিক আগের মত, আমি অফিসে যাচ্ছি ঠিক সময়মত, আমার কোন কাজেই আমার কোন হেরফের হচ্ছে না। তারপরেও একটা অনুভূতি কাজ করছে। সেই অনুভুতিটা আজ যেন আমার কাছে কিছুটা স্পষ্ট হল। সম্ভবত এই কারনে যে, একদিন কোন এক শরতের সন্ধ্যায় কিংবা বর্ষার এক ঘনমেঘের দিনে আমার এই মেয়ে আমাকে অঝোর অশ্রু জলে ভাসিয়ে আমারই চোখের সামনে পরিবারের অতিতের সমস্ত আদর আপ্যায়ন ভালোবাসা রাগ গোস্যা, অভিমান, ঝগড়া সব ছেড়ে তার দুই নয়ন ভাসিয়ে আমার হাত ছেড়ে আজকের এই নতুন ছেলের হাত ধরে অন্য কোথাও বাসা বাঁধবে। আমার সব অধিকার থাকা সত্তেও, আমার সব ভালোবাসা ঠিক আগের জায়গায় রেখেই আমার মেয়ে তার আরেক নতুন পৃথিবী তৈরি করবে অন্য এক স্থানে। এই ভাবনা আসতেই যেন আমার চোখের পাতা ভিজে আসে কখনো আনন্দে আবার কখনো মিস করার এক কষ্টে।  আমার বুকে একটা সুখের অনুভুতির সঙ্গে আবার একটা অন্য রকম কষ্টের অনুভূতিও অনুভব হয়।  এটা আসলে কষ্ট নয়, এটাও একটা সুখের কষ্ট। ঐ যে ঐ রকম একটা অনুভুতির মত "তোমার মা তার জীবনে তোমাকে কাদতে দেখে একবারই হেসেছিল, যেদিন তোমার জন্ম হয়েছিল।" কি দারুন কথা না!!

আজ আমার মনে হচ্ছে আমিও হয়ত তোমার চলে যাওয়ার সময় তোমার কান্না দেখে আমি অশ্রুজলে হেসে হেসে আমার অন্তরের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে বলব, তুমি সব সময় ভাল থাকবে আমার এই নবাগত ছেলের হাত ধরে। তাকে তুমি শক্ত করে ধরে রেখ মা, আমিও ওর হাত ধরে রেখেছি যেন ও কোথাও হারিয়ে না যায়। আমার কাছে তো আলো আছে মা। আমি তোমাদের জন্য এক বাসযোগ্য পৃথিবীর আবাসস্থল গড়ে দিয়ে যাব, এই আমার প্রতিজ্ঞা ঈশ্বরের কাছে।

১৪/২/২০১৬-বিশ্ব ভালবাসা দিবস-বিয়ে 

উচ্ছিষ্ঠ সময়ের রাজত্ব 

ফেব্রুয়ারী 

১৪ 

আজ তোমার জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল যা একজন মেয়ের জীবনের বাকি সব পরিচয় সম্পন্ন করার লক্ষে সামাজিক এক প্রত্যায়ন পত্র আর ধর্মীয় রীতিতে মহান আল্লাহতালার আদেশ পালনের মহাজ্ঞা। আর এই প্রত্যায়ন পত্রের মাধ্যমে তুমি আজ সাধারন এক বাবার মেয়ে থেকে অন্য এক পুরুষের স্ত্রী হয়েছ, একটি পরিবারের বউ হয়েছ, কারো ভাবী, কারো ননদিনী এবং আরও অনেক নতুন সম্পর্কের সৃষ্টি করেছ। সময়ের পরিবর্তনে আল্লাহর ইচ্ছায় একদিন তুমি মা হবে, তারপর ক্রমান্বয়ে শাশুড়ি থেকে দাদী এবং তারপরে হয়ত বড়মা ইত্যাদি। আর এইসব সার্থক জীবনের জন্য যা প্রয়োজন তারমাত্র একটি সিঁড়ি তুমি আজ পার করলে। বাকি অধ্যায়গুলো পাওয়ার জন্য তোমাকে আরও অনেক কঠিন কঠিন দিন, সময় এবং ক্ষন পার করে এক অনবদ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন জীবন পার করতে হবে এবং তা পার করতে পারলেই কেবল সার্থক মা, সার্থক শাশুড়ি, সার্থক দাদী কিংবা সার্থক বড়মা হওয়ার যোগ্যতা তুমি অর্জন করতে পারবে। আর তার সঙ্গে তুমি পাবে সামাজিক এক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান এবং হয়ে উঠবে সবার কাছে এক দৃষ্টান্তমুলক ব্যক্তিত্ব।  

এখন যে প্রশ্নটা আসে, এই অনবদ্য এবং নিরবিচ্ছিন্ন জীবন বলতে কি বুঝায়? অনবদ্য জীবন মানেই সমস্যাবিহিন জীবন নয়। বরঞ্চ সমস্যা নিরসনকল্পে কিভাবে কখন কোথায় কেমন করে তা সমাধান করা যায় তার হিসাব। এই জীবনে অনেক সমস্যা আসবে, আর এই সমস্যা সমাধান করার জন্য অনেক চেনা-অচেনা মানুষের ভীর তোমার আশেপাশে দেখতে পাবে। কাউকে মনে হবে তোমার অতি পরিচিত এক বন্ধু, কেউ আসবে তোমার জীবনে এমন বেশ ধরে যে মনে হবে তোমার দুঃখে সে অতি দুঃখিত, কেউ আবার এমন করে তার অনুভুতি তোমার কাছে মেলে ধরবে যেন ঠিক এটাই তুমি চাচ্ছ। এই দলটি প্রথমে তোমাকে ভালবাসার কথা শুনাবে, ভাললাগার কথা বলবে, কাজ না হলে নিজেদের চোখের জলে তোমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করবে, এমনও হতে পারে তারা তাদের অসহায়ত্তের কথা বলে তোমার কোমল হৃদয়ে জায়গা করার চেষ্টা করবে, আর কিছুতেই কিছু না হলে তখন তোমার মন কিভাবে পিশিয়ে উঠবে সে চেষ্টা করবে। এই দলটি কখনো বালকসুলভ ভদ্র আচরনে আবার কখনো সে অত্যাচারির রুপে তোমাকে দেখা দেবে, এবং তোমাকে বিপথে নিয়ে যাবে। সাবধান থেক এদের থেকে। মনে প্রানে বিশ্বাস রেখ যে, এরা আসলে কেউ তোমার প্রকৃত বন্ধু নয়। একজনও না। আর এটাই এই অদ্ভুত এই পৃথিবীর আচরন। যখনই তুমি এদের সাথে তোমার জীবনের ব্যক্তিগত সমস্যাবলী শেয়ার করেছ, ঠিক তখনি তুমি সমস্যার আরও জটিল গহব্বরে আটকে যাবে। তোমার সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে তোমার সমস্যা আরও গভির থেকে গভিরে নিয়ে যাবে এবং এক সময় তোমার জীবনটা এরা কুপরামর্শ দিয়ে এতটাই অতিষ্ঠ করে তোলবে যে, আজ যারা তোমার সত্যিকারের বন্ধু, যারা তোমার জিবনটা সুন্দর হয়ে উঠুক বলে প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, তাদেরকে তোমার কাউকেই আর বন্ধু মনে হবে না। যেদিন তোমার কাছে এই সব শুভাকাঙ্ক্ষী লোকজনকে আর তোমার আপনজন বলে মনে হবে না, সেদিন তোমাকে মনে রাখতে হবে যে চাটুকারের দল তোমাকে ঘিরে ফেলেছে এবং তোমার জীবনের সব সাধ-আহ্লাদ ধ্বংসের পথে। তোমার আর ঐসব পর্ব, সার্থক মা, সার্থক শাশুড়ি কিংবা সার্থক দাদী হওয়ার পথে এক বিরাট অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। ঐসব বিপথগামী মানুষরূপী শয়তান গুলো এইটাই চেয়েছে। এর মানে এই যে, তোমাকে প্রতিনিয়ত ঐসব চাটুকার, ঐসব হায়েনা, ঐসব বন্ধুতুল্য অপরিচ্ছন্ন মানুষরূপি খারাপ মানুষগুলোর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। দূরে থাকতে হবে তোমার নিজের ভাল থাকার জন্য, দূরে থাকতে হবে সামাজিক সম্মান আর পরিচ্ছন্ন জীবনের জন্য। আর ঐসব হায়েনাদের কাছ থেকে দূরে থাকার একটাই পথ, আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজের মানুষদের উপর বিশ্বাস রেখে নিজেকে সঠিক পথে এবং নিজের আত্মবিশ্বাসকে বিশ্বাস করে। তোমার যা আছে, তাতেই তোমাকে সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে হবে। তোমার থেকেও অনেক মানুষের অনেক কিছু নাই, কারো হাত নাই, কারো পা নাই, কারো বাবা মা নাই, কারো থাকার ঘর নাই, কারো আবার কিছুই নাই। তোমার তো অন্তত আমরা আছি, তোমার স্বামী আছে, তোমার খুব ভাল শশুর শাশুড়ি আছে, তোমার উকিল বাবা আছে, তোমার জা, ননদিনী, ভাসুর সবাই আছে। তোমার সুন্দর ঘর আছে, তোমার কি নাই? আল্লাহ তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসে বলেই আজ তোমাকে এই রকম একজন সুন্দর মানুষের হাত ধরতে দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে যাকে তুমি নিজে ভালবেসেছ এবং তুমি তাকেই পেয়েছ। তোমার জন্য এই মানুষগুলো প্রতিনিয়ত ঈশ্বরের কাছে দোয়া করে, তোমার ভাল চায়। তাদের ভালবাসার মুল্য শুধু একটাই, তোমরা সুখে থাক, তোমরা ভাল থাক। আর কিছুই চায় না এই স্বার্থহীন মানুষগুলো। নিজের স্বামীর কাছে তুমি কতটুকু গ্রহনযোগ্য তা নির্ভর করবে তুমি নিজের কাছে কতটুকুন সৎ এবং তুমি কতটুকুন নিজেকে ভালবাস তার উপর।  

মনে রেখ ভয়, ঘৃণা এবং লোভ কখনো মরে না। এটাকে প্রথম থেকে দূরে রাখতে হবে। আর এর প্রধান উপায় হচ্ছে যখনই কোন ভয়ের উদ্রেক হবে, যখনই কোন ঘৃণার কারন সামনে এসে দারাবে, যখনই কোন লোভের বশবর্তী হবে, ঠিক যার কারনে এইসব ভয়, ঘৃণা এবং লোভের উদ্রেক হবে তা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং তার সঠিক ব্যাখ্যা ঠিক লোকের কাছ থেকে সরাসরি জেনে মন পরিস্কার করে নিতে হবে। তাতেই তুমি জয়ি হবে। আর যদি তা না কর, নিশ্চিত জেনো তোমার পরাজয় নিশ্চিত। আর এটাই চেয়েছে ঐসব বন্ধুসুলভ তোমার হায়েনার দল। তুমি যদি জয়ি হওঁ, তবেই তুমি পাবে নিরবিচ্ছিন্ন জীবনের স্বাদ আর তারপরেই পাবে তুমি জীবনের ঐ সব পর্যায়ের সব কিছু। অর্থাৎ সার্থক একজন মা, সার্থক একজন স্ত্রী, সার্থক একজন শাশুড়ি কিংবা দাদির পরিচয়।  

আজ তোমাকে একটি সত্য কথা বলি। তোমার মা আমার জীবনে এক আশীর্বাদ। এটা তুমি নিজেও জানো। এর মানে এই নয় যে তোমার মা একমাত্র সবচেয়ে গুণী ব্যক্তি, তোমার মা একমাত্র সুন্দরী মহিলা। তার মধ্যেও অনেক গুনাবলির অভাব রয়েছে, তার মধ্যেও অনেক দোষ রয়েছে, তার সঙ্গে আমারও অনেক সময় কারনে অকারনে এবং খুব তুচ্ছ জিনিস নিয়েও মনের অমিল হয়। অন্য দিকে আমিও একমাত্র আদর্শবান ব্যক্তি নই, আমারও ১০০% গুনের সমাহার নাই, আমার অনেক ব্যবহারেও তোমার মায়ের রাগ হয়। কিন্তু তারপরের অধ্যায় হচ্ছে যে, আমরা অনেক কিছু কম্প্রোমাইজ করি, আমরা স্বাভাবিক জীবন জাপনের জন্য আমরা উভয়ে কোথায় কোন কারনে আমাদের অসুবিধা হচ্ছে, কি কারনে আমাদের মনের ভিতরে কষ্ট হচ্ছে তা মিলেমিশে কথা বলে নিজের মন পরিস্কার করি বলেই আজ তোমরা আমাদেরকে এই পর্যায়ে দেখতে পাচ্ছ। আমরা সুখী পরিবাবের অংশ। আমি ও চাই তোমরা সুখী হওঁ এবং সার্থক জীবন পার কর।  

নিজেদের শুভাকাঙ্ক্ষী ছাড়া দুইজনের মাঝে তৃতীয় পক্ষ যে আসবে সে আর কেউ না, সে হচ্ছে শয়তান। আর শয়তান কখনোই আমার তোমার বন্ধু নয়। সে শুধু ধোঁকা দেয় সে কখনো আসে বন্ধু হিসাবে, কখনো আসে ঠিক তোমার মন যা চায় সে কথাগুলো নিয়ে, সে আসে এক চতুর বুদ্ধি নিয়ে, যা তোমার আর তোমার পরিবারের শুধু ধ্বংসই চয়, মঙ্গল নয়। তোমার আজকের এই পবিত্র দিনটি মঙ্গলময় হোক, তোমার দাম্পত্য জীবন সুখের হোক এটাই আমার সব সময়ের জন্য প্রার্থনা। আমরা তোমাকে ভালবাসি।

চাঁদ সূর্যের প্রতিস্থাপক নয়, শিশির বৃষ্টির প্রতিস্থাপক নয়, পুকুরের ঘোলা জল নদী বা সাগরের প্রিতিস্থাপক নয় তোমার স্বামী তোমার কাছে সূর্য, তোমার পরিবার তোমার কাছে সাগর, আর তোমার প্রতি তোমার পরিবারের অফুরন্ত ভালবাসা হচ্ছে তোমার উপর ভালবাসার বৃষ্টি।এদের কোন প্রতিস্থাপিক হওঁয় না। শয়তানের দলমাঝে মাঝে তোমাকে চাদের কথা বলে, শিশিরের কাব্য দিয়ে অথবা কর্দমাক্ত পুকুরের ঘোলা জল দিয়েই বিপথগামী করে দিতে পারে। আমি তোমাদের জন্য ঐসব হায়েনাদের কাছে থেকে আমার ইসসর তোমাদের রক্ষা করুক সেটাই দোয়া করি।

 You were not an accidental baby in my life, you are my wanted girl from the Almighty and I prayed for you for almost 5 long years before you were born and then I was blessed with you from HIM. I always wanted a girl, you are that girl in my life. I love you all the time and with all my breath. May Almighty Allah listen to my prayer for your happiness and prosperity in your life.

১৫/০৭/১৯৯৯- উম্মিকার কাছে জিজ্ঞাসা

 

Dear Ummika,

(My Dream that got fulfilled.)

 In the year of flood-95, the story took place. The true victim was narrating his experiences in the national TV media.

The man was running towards the safe zone because the hurricane, with hot water and very high speed, was rushing towards them from Bay of Bengal. They could not reach to the safe zone. The waters caught them enroute. Thinking immediate sanctuary, he claimed up the big banian tree with his two small kids, Faria , the daughter and Parvez Zaman, the son. The man was holding his two kids very tightly so that none go missing. But  the current of the water was so high that his hands were unable to hold two kids together anymore or otherwise his life was in danger.  Now time has come to decide to surrender one minimum to survive marginally. The man could not decide any thing. What should he do? He can not surrender anyone!  At the moment of “no time left” things happened automatically. The man survived. His one kid is also alive. And the kid is Parvez Zaman, the son. Naturally the daughter was sacrificed. What he could do? He could do so many things but he could not do anything. I do not say any thing right now sitting in a comfortable situation what I will do then, but what the man did it might happen to me too. Luck only can decide their fate, my daughter or my son. Only God knows.

 What you would do Ummi?