ছোট কিছু কথা আর অভিব্যক্তিঃ
আমার কোন ইচ্ছাই ছিল না এই ডায়েরী বা কিছু তথ্য তোমাদেরকে লিখবার জন্য। কোন দরকার ছিল কিনা সেই ভাবনাটা আমারো ভাববার সময় অবশ্য এখন নয়। উহা তোমরা ভেবে দেখবা আগামী দিনে। সময়ের বিবর্তনে হয়তোবা এই লেখাগুলি হয়তো তার জায়গা দখল করে নিবে এই ভেবে যে, তার কতটা দরকার ছিল, আর কতটা দরকার ছিল না। তবুও আমার মনে হল, মাঝে মাঝে বেশ কিছু অবসর সময় পাই, কিছুতো একটা করি। তাই উপন্যাস না লিখে, গ্লোবাল ইস্যু সম্পর্কে না লিখে কিংবা ধর্মীয় কোন বই না লিখে নিজের পরিবারের সাথে আপাতত যে সময়টা কাটাচ্ছি, সেই সব কথাগুলিই না হয় লিখি। কোনো কিছুই হবে না জানি, এসব অনেকটা আবর্জনার কতো তথ্য, কারো কোনো উপকার আসবে না, না কেউ এগুলি পড়ে পড়ে কোনো গবেষনা করবে। তারপরেও লিখছি। লিখছি এমন কিছু বিষয়ের উপর যা আমাকে প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দিয়েছে, যা আমার কাছে প্রায়ই মনে হতো-আহা যদি এমন কিছু কেহ আমার জন্য লিখিয়া যাইত, অথবা এমন কিছু যাহা আমি প্রায়শই জানিতে চাহিয়াছিলাম কিন্তু কোথাও উহার কোন অস্তিত্ত পাই নাই। তাহলে “উহ” কি এমন জিনিস যাহা আমার মধ্যে প্রায়শই মনে আসিত, খুজতাম কিন্তু কোথাও তাহা আমি পেয়েছি বলে মনে হয় নাই। আমি মাঝে মাঝেই ভাবতাম, আমার পূর্বে যারা আমার বংশে এসেছিলেন, তাদের অনেকেই হয় বা ছিলেন জমিদার, কেউ বা ছিলেন অনেক উচ্চ স্তরের ব্যক্তিকর্তা, হয়তা আবার কেউ এমনও থাকতে পারেন যাদের জীবন লইয়া এখন অনেক বড় বড় লোমহর্ষক কাব্য লিখা যেতো অথবা এমন কেউ থাকতে পারেন যাদের অতিষ্ঠে মানুস প্রতিনিয়ত কায়মনে তাদের মৃত্যু কামনাই করতেন, আবার এমনও হতে পারে যে, কারো কারো জীবননাশের কারনে কোন এক সমাজ ব্যবস্থা হয় ভাঙ্গিয়াই পড়েছিলো, কে জানে এই সব কথা বা কাহিনি?
মাঝে মাঝে আমার খুব জানিতে ইচ্ছে করিত, এইসব তাহার কেউ কি আমাদের কথা কখনও এমন করে ভাবিয়াছিলেন যে, কোন একদিন হয়তবা কেউ তাহাদের স্মরণ করিয়া তাহাদের ব্যাপারে আরও অধিক জানিবার জন্য আকুপাকু করিবেন? হয়ত কেহ কেহ করিয়াছিলেন, কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারনে তাহারা তাহাদের কোন কথাই আমাদের জন্য রাখিয়া যাইতে পারেন নাই, হয়তোবা আবার চেষ্টাও করেন নাই। বহুদিন আগে আমি একখানা ছায়াছবি দেখিয়াছিলাম, কালো মানুষের কাহিনী। সম্ভবত ছবিটির নাম ছিল “রুটস”। আলেক্স হেলির বানানো। তিনি অনেক বছর গবেষণা করিয়া করিয়া যতদুর সম্ভব তাহার পূর্বপুরুসের ইতিহাস লইয়া তাহার অই অনবদ্য কঠিন জিবনের কাহিনী পৃথিবীর মানুষের কাছে তুলিয়া ধরিয়াছিলেন। কিন্তু আমার আলেক্স হেলির মত অত ধৈর্য নাই যে আমি বছরের পর বছর আমার পূর্ব পুরুসের নাম গবেষণা করিয়া করিয়া এক একটা অধ্যায় লিখিব। সে সাধ্যও আমার নাই। কিন্তু আমি একটা কাজ করিতে পারি অনায়াসে। আর তাহা হইল, আজ হইতে হাজার বছর পরে যদি কেউ আমার কথা জানিতে চায়, আমার সম্পর্কে ভাবিতে চায়, কিংবা আজ এই বিংশ শতাব্দিতে বসে আমি কি ভাবিতেছি, কি ভাবিতেছি না, কিংবা আমি আজ থেকে আরও শত বছর পর, অন্তত এই ভাবনাগুলি তো আমি আমার ঐসব পরবর্তী বংশধরদের জন্য লিখিয়া যাইতেই পারি। তাহাতেই বা কম কিসের? তাই ভাবছি, আমি সারাদিন কি করি, কি ভাবি, কেমন করিয়া ভাবি, আমার কি ইচ্ছা আমার বংসধরদের লইয়া, যদি আমি এক টুকরো কাগজের মধ্যে লিখিয়া রাখি, হয়ত বা কোন একদিন আমারই কোন উদাসীন এক বংশধর এই লেখাটা পড়িয়া জানিতে পারিবে , তাঁহারও আগে কেউ একদিন কি করেছিল।
আমি আমার বাবাকে দেখি নাই। আমি যখন মাত্র দুই কি আড়াই বছরের, তখন তিনি জান্নাতবাসি হয়েছেন। ফলে ঊনার কোনো ছবি, কিংবা কোনো স্মৃতি আমার কাছে নাই। শুনতাম, তিনি ছিলেন অত্যান্ত নামীদামী মানুষ। মাদবর মানুস। অনেক সম্পত্তি ছিলো তার। ওই সময় যে কয়জন মানুষ ধনীদের কাতারে ছিলেন, তার মধ্যে আমার বাবা একজন। আমি যখন মাত্র ক্লাস ফাইভে বা সিক্সে পড়ি, তখন আমাদের বাড়িতে কোনো একবাক্সে আমার বাবার হাতের লিখা কিছু পত্র দেখিয়াছিলাম। খুব সুন্দর হাতের লেখা ছিলো। আমি তখন ছোট ছিলাম, বুঝি নাই এইসব স্মৃতিগুলি রক্ষনাবেক্ষন করা উচিত কিনা। আমি বা আমরা কেহই ওইসব হাতের লিখা চিঠিপত্র গুলিও সংরক্ষন করি নাই। আজ আমার কাছে মনে হচ্ছে ওই গুলি অনেক দামি বস্তু ছিলো। খুব আফসোস হয় এখন আমার সেই লেখাগুলির জন্য, বাবার লেখা চিঠি।
আমাদের গ্রামের বাড়ি দুই জায়গায়। একটা মুন্সিগঞ্জের কয়রাখোলায়, আরেকটা হচ্ছে কেরানিগঞ্জের বাক্তার চর।
ওই মুন্সিগঞ্জের বাড়িতে থাকতো আমাদের আগের মায়ের সন্তানেরা আর আমরা থাকতাম কেরানিগঞ্জের বাক্তার চর। যদিও আমার বাবার আমলে আমরা সবাই একই বাড়িতে থাকতাম সেই মুন্সীগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু একসময় আমরা কেরানিগঞ্জ মাইগ্রেট করতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমার বাবা কোনো একসময় তার জীবদ্দশায় ভেবেছিলেন যে, আমরা কোনোভাবেই তার আগের সন্তানদের কাছে নিরাপদ নই এবং আমাদের জীবননাশ হবার সম্ভাবনা আছে। ফলে আমার বাবা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসাবে তিনি আমাদেরকে মাইগ্রেট করে মুন্সিগঞ্জ থেকে কেরানীগঞ্জ আমার আপন খালুদের এলাকায় রিহেবিলেট করার পরিকল্পনা করেন। আমার বাবার পরিকল্পনা একদম ঠিক ছিল বিধায় তিনি মারা যাবার আগে আমাদেরকে এই কেরানিগঞ্জের এলাকায় স্থানান্তর করে গিয়েছিলেন।
আচ্ছা, আমার বাবার আর কি কি প্ল্যান ছিলো যা তিনি শেষ করে যেতে পারেন নাই? অথবা তার কি কি শখ ছিল যা আমাদের পরবরতী জেনারেশনের উচিত তার বাস্তবায়ন করা? কিছুই জানি না। আর এখানেই আমার দুঃখ। এখানে একটা গল্প (বাস্তব) না লিখলেই নয়। এটা আমার বড় ভাইয়ের কাছ থেকে শোনা। আমার বাবা কিভাবে বুঝলেন যে, আসলেই তিনি যা ভাবছেন সেটা সঠিক কিনা।
তার এই সিদ্ধান্ত কতটা ঠিক তা যাচাইয়ের জন্য একদিন ঠিক করলেন, তিনি কিছুদিনের জন্য হারিয়ে যাবেন। তার এই প্ল্যানটা শুধুমাত্র জানালেন আমার বড় ভাইকে। আমার বড় ভাই তখন জগন্নাথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন। বাবা সবার অজান্তে হটাত করে নিখোজ হয়ে গেলেন, তিনি আর বাড়ি ফিরলেন না। একদিন যায়, দুইদিন যায়, তিনদিন যায়। একমাস, দুইমাস, এইভাবে প্রায় ছয়মাস। সবাই ধরে নিলেন, বাবা হয়তো কোথাও দুর্ঘটনায় মারা গেছেন যার হদিস কেউ জানে না। তখন তো আর মোবাইল ফোন ছিলো না যে কন্ট্যাক্ট করা যাবে। অঘোষিত মৃত বাবা কিন্তু প্রতিদিন আমার বড় ভাইয়ের সাথে সদর ঘাটের নবকুমার শরীর চর্চা কেন্দ্রের ঘাটে দেখা করতেন আর প্রতিদিনের ফিডব্যাক নিতেন কি হচ্ছে গ্রামে তার অনুপস্থিতিতে। ধীরে ধীরে বাবার আইডিয়াটাই যেনো সঠিক প্রমান হচ্ছিলো। আমাদের স্টেপ ব্রাদাররা, বোনেরা, স্বৈরাচারের মতো আমাদের উপর ব্যবহার করা শুরু করছিলো, জমিজমার সব ফসল একে একে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিলো, আমাদেরকে প্রাননাশের হুমকী দিচ্ছিলো। এমন কি আমাদের এই পক্ষের সদস্যদেরকে অত্যাচার আর নীপিড়নে মেরেই ফেলার চেষ্টা করছিলো। সবাই ধরেই নিয়েছিলো যে, হোসেন মাদবর মারা গেছে এবং তার থেকে আর ভয়ের কোনো কারন নাই। হোসেন মাদবর যেহেতু মারা গেছে, ফলে উনি তো আর ফিরে আসবেন না, আমার অই পক্ষের ভাই বোনদের অত্যাচারের বিচারও উনি আর করতে আসবেন না। এভাবেই অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে। অত্যাচার যখন তুঙ্গে, তখন একদিন হটাত করে বাবা সশরীরে এসে হাজির। সবাই অবাক, কোথায় ছিলো এই হোসেন মাদবর? তিনি সত্যিটা লুকিয়ে শুধু বললেন, চট্টগ্রামে তার চোখের অপারেসন হয়েছিলো বলে কাউকে কোনো খবর দিতে পারেন নাই। আর শরীর ভালো না অবধি ডাক্তাররা তাকে ছাড়েনও নাই। তিনি বুঝে গেলেন, তার কি করা উচিত এবং তার সিদ্ধান্ত যে সঠিক সেটা তিনি পরীক্ষা করেই নিলেন।
অতঃপর বাবা আমার খালুর সাথে অতি গোপনে পরামর্শ করলেন, কিভাবে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে এবং দ্রুত সেই মুন্সিগঞ্জ থেকে খালুর এলাকায় আমাদেরকে মাইগ্রেট করবেন। আমার খালু ছিলেন তার এলাকায় একজন অত্যান্ত প্রতাপ্সহালী মানুষ। মাঘে মহিসে একসাথে জল খাওয়ার মতো। বাবা তার দিক থেকে প্রায় ৪০০ লোকের আয়োজন করলেন, আর খালু তার এলাকায় এই রকমেরই প্রায় ৪০০/৫০০ লোকের আয়োজন করলেন। মাঝে নদী থাকায় আরো কয়েক শত কলাগাছের ভেলা বানিয়ে নদীর উপর দিয়ে মুটামুটি একটা রাস্তা করে ফেললেন। মুন্সিগঞ্জের আমাদের বাড়িটা না ভেঙ্গে বাবা আস্ত বাড়িটাকে ঐ লোকজন দিয়ে মাথায় করে এইপাড়ে নদী পাড় করে দিলেন। আর খালু এইপারে তার লোক দিয়ে সেই আস্ত বাড়িটা এক রাতের মধ্যে বসিয়ে দিলেন। বাবা কাজটি এমন এক দিনে করলেন যেদিন আমাদের ঐ পক্ষের সদস্যরা কোনো এক অনুষ্ঠানের জন্য গ্রামের বাইরে কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন। ব্যাপারটা আলাদিনের চেরাগের গল্পের মতো ঘটে গেলো। আমরা মাইগ্রেট করে মুন্সিগঞ্জ থেকে কেরানিগঞ্জে চলে এলাম চিরতরে। সব কিছু রয়ে গেলো ঐ মুন্সিগঞ্জে। নিজেদের স্মৃতি, গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, ক্ষেত খামার সবকিছু।
আমি এখানে শুধু আমার বাবার প্রসঙ্গটাই তুলেছি কারন আমার কোনোভাবেই জানা সম্ভব হয় নাই আমার বাবার আগের জেনারেশনের কি অবস্থা ছিলো বা কে কি করতেন। আমার জানার কোনো ত্রুটি ছিলো না কিন্তু কেহই তাদের ব্যাপারে আমাকে কোনো তথ্য বিস্তারিত ভাবে দিতে পারেন নাই। যাই হোক, এবার তোমাদের পালা। তোমরা অন্তত একটা বেজ হিসাবে আমার লেখা এই ডায়েরী বা এই ওয়েবসাইট পেয়েছো যেখানে আমাদের ফ্যামিলির কিছু তথ্য রেডিমেট পেয়েছো। যদি তোমাদের মধ্যে কেউ আমার মতো ইচ্ছুক হও, তাহলে আমার এই তথ্যাবলী সামনে রেখে আমাদের ফ্যামিলী ওয়েব সাইটটি সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারো।
আর এটাই হবে আমার কাম্য।
আমার এই ডায়েরীর শুরুর কাল ১৯৮৩ সাল। ফলে ১৯৮৩ সালের মানসিকতা থেকেই আমার পথচলা। কখনো কখনো এই সময়ে আগের ঘটনার বিবরন আসতেই পারে কিন্তু লিপিবদ্ধ হবার সময়কাল ১৯৮৩ থেকে শুরু।
========================== xxxxxxxxxxxxxxxxxxxx===================
১৯৮৩-১৯৮৭ সাল
যে বিষয় নিয়ে মানুষ যতো আশংকা করে, যা নিয়ে মানুষ বেশী দুশ্চিন্তা করে, হয়তো সেটা সবসময় ঘটবে না জেনেও যদি ঘটে যায় এই ভাবনায় মানুষ কখনো কখনো বাস্তব জীবনের অনেক হিসাব নিকাশে এমন কিছুর পরিবর্তন আনে যে, হয়তো এই পরিবর্তন আর কাজেই লাগে না। কারন হয়তো সেটা আর ঘটেই না, তখন আগের দুশ্চিন্তায় মগ্নমন এটাই বলতে থাকে যে, রিস্ক তো নিতেই পারতাম, তাহলে আর হয়তো এই পরিবর্তীত পরিকল্পনাটা আর কাজে লাগানো দরকার হতো না। কিন্তু এই “যদি” বড় অদ্ভুদ একটা যুক্তি। এই “যদি” যদি আবার রিস্ক হয়ে যায়, তখন আবার নিজেকে এমনি বোকা মনে হয় যে, সম্ভাব্য কারন জানার পরেও কেনো আমি আমার পরিবর্তীত পরিকল্পনা কাজে লাগালাম না? তাই বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, সবসময় ব্যাকআপ সাপোর্ট রেখে উভয় পরিকল্পনা থেকেই সম্ভাব্য এডভান্টেজ আর ডিজএডভান্টেজগুলি খতিয়ে নিয়ে সবচেয়ে ভালো অপসনটা বেছে নেয়া। কখনো কখনো কিছু ছাড় দিতে হয় বটে কিন্তু সমুলে পতন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সাফল্য নাও আসতে পারে কিন্তু তখন অন্তত নিজেকে এই বলে শান্তনা দেয়া যায় যে, চেষ্টা তো করেছি।
আমার জীবনে এই রকমই বেশ কিছু দুশ্চিন্তা, কিছু অনিশ্চয়তা আর কিছু হতাশা কাজ করছিলো এই ১৯৮৩ এর শেষের দিক থেকে তার পরবর্তী সময়টায়। সেই ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল অবধি ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারনে আমি একটা ছকের মধ্যে ছিলাম। পড়াশুনা চলছে, ডেইলী কাজকর্ম চলছে, একটা গ্রুপের সাথে, একটা ভালো আস্তানায় ছিলাম। ছুটি হলে গ্রামে আসবো কিছুদিনের জন্য, আবার ছুটি শেষে গ্রাম থে আবারো একটা স্থিতিশীল আস্তানায় ফিরে যাবো, এটাই ছিলো একটা নিরাপদ ভাবনা। কই যাবো, কই থাকবো এটা নিয়ে এই সময়টায় আমাকে কখনো ভাবনায় ফেলে নি।
কিন্তু ১৯৮৩ সালের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা হয়ে যাবার পর আমার আর সেই ক্যাডেট কলেজের আস্তানাটা, সেই গন্ডীটা ছিলো না। একটা ভ্রাম্যমান অবস্থায় পড়েছি বলেই মনে হলো। যেখানেই থাকি না কেনো সেটা যেনো আমার জন্য স্থায়ী কিছু নয়। গ্রামেই থাকি, অথবা বদি ভাইয়ের বাসায়ই থাকি বা অন্য কোথাও, কোনোটাই আমার জন্য স্থায়ী নয়। তখন নিজের পায়ে দাড়াবার বা পরবর্তী নতুন ধাচের আরেকটা সিস্টেমে ঢোকার সময় হয়ে গিয়েছিলো। হয় আমাকে উচ্চতর শিক্ষা নেবার জন্য কোনো ইউনিভার্সিটি, বা কোনো মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি, অথবা এসব কিছুই যথাযোগ্য না হলে আমাকে নিজের পায়ে দাড়াবার জন্য কোন একটা চাকুরী, হোক সেটা সরকারী অথবা বেসরকারী, ঢোকতেই হতো। পরিবারের প্রধান যখন নিজের বাবা বা মা না হন, তাহলে সেই পরিবারের সন্তানদের হয় তার বড় ভাই কিংবা বোনদের উপরই নির্ভর করতে হয়। কিন্তু বাবা আর মা এর ভুমিকা যতটা সন্তানের জন্য গ্যারান্টেড, সেই সদসদের জন্য তার বড় ভাই কিংবা বড়বোনগন ততোটা নির্ভরযোগ্য যে হবেন, তার কোনো গ্যারান্টি নাই। আর যদি সে রকম কিছু হয় তাতে সেই বড় ভাই কিংবা বোনদেরকে দায়ী করাও যাবে না। এই দুদুল্যমান পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী সদস্যের উচিত যতোটা নিজে সাবলম্বি হওয়া যায় তার চেষ্টা করা এবং দ্রুত। আমি সে রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যেই ছিলাম বলে একটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। “যদি” যা ভাবছি সেটা না হয়? “যদি” যেটা ভাবছি সেটাই হয় তো, ভালো, কিন্তু “যদি” না হয়? তাহলে মাঝপথে আমার একুলও নাগালের বাইরে, আবার ওই কুলেও যাওয়ার রশদ বন্ধ। মাঝপথে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া কোনো গত্যান্তর থাকবে না।
এমন একটা পরিস্থিতিতে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি, বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে, বুয়েটে এবং সেনাবাহিনির কমিশন পদে চাকুরী পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে সবগুলিতেই সাফল্য পাই। আর এই সাফল্য যেনো আমাকে আরো বিচলিত করে ফেলেছিলো। কোন লাইনে আমার যাওয়া উচিত সেটা নিয়ে খুবই একটা কনফিউশনে ছিলাম। কারন শুধুমাত্র আর্মির লাইন ছাড়া বাকী সব গুলিতে আমাকে পরবর্তী ধাপগুলির জন্য কারো না কারো অর্থনৈতিক নির্ভরতার উপর দাঁড়িয়ে ছিলো যার কোনো গ্যারান্টেড শর্ত ছিলো না। এখানে একটা কথা না বললেই নয় যে, জীবনের সবগুলি সেক্টরে চান্স পাওয়াও একটা বিরম্বনা, সিদ্ধান্ত নিতে খুবই অসুবিধা হয়। এরমধ্যে আরেকটা সমস্যা হলো, আমার কোনো আইডিয়া নাই কোথায় কি পরিমান ফাইনান্সশিয়াল সাপোর্টের দরকার বা কোথায় প্রফেশনালী ঢোকলে পরে কি কি লাভ ভবিষ্যতে। ইউনিভার্টিতে পড়তে কি পরিমান খরচ লাগে কিংবা মেডিক্যাল কলেজে পড়তে কি পরিমান ফাইনানশিয়াল সাপোর্টের দরকার অথবা বুয়েটে পড়তে গেলে কি খরচ, এমনকি ইউনিভার্সিটিতে পড়লেই যে আমি চাকুরী পাবো কিনা, ডাক্তারী পড়তে গিয়ে যদি ভাল ফলাফল না হয়, অথবা বুয়েটে পড়লেই যে আমার ভালো চাকুরী হবে এসব বিষয়গুলিও আমার জানা ছিলো না। চারিদিকে শুধু শুনি ডাক্তারী পড়ো, বা বুয়েটে পড়ো, লাইফ সেট হয়ে যাবে ইত্যাদি। ঠিক এই সময়ে আমার বড় ভাই যিনি আমেরিকায় থাকেন এবং যিনি আমাদের একমাত্র টাকার যোগানদাতা, তিনি বাংলাদেশে এলেন বিবাহ করার জন্য। বিবাহ উপলক্ষ্যে আমার বড় ভাইয়ের দেশের আসায় একটা ব্যাপার আরো বেশী জটিল হয়ে উঠেছিলো। আর সেটা হল, আমার ভবিষ্যতের ফাইনানশিয়াল সাপোর্ট। ডান বাম অনেক কিছু চিন্তায় বা দুশ্চিন্তায় শেষ অবধি, আমি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি নিজের পায়েই দাড়াতে হবে, আর সেটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দাড়াতে হবে, আর সেটা একমাত্র সম্ভব আর্মির কমিশনে যাওয়া। সেটাই করলাম। ফলে মেডিক্যাল, বুয়েট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি সব কিছু বাদ দিয়ে একমাত্র আর্মীই হচ্ছে সেই অপশন যেখানে দ্রুত সাবলম্বি হবার পথ। আমি সেতাই করলাম। বিদায় জানালাম আমার ডাক্তার হবার সপ্নকে, বিদায় জানাতে হলো বুয়েট থেকে পাশ করে ইঞ্জিনিয়ার হবার সপ্নকে, বিসর্জন দিলাম ইউনিভার্সিটিতে পড়ার ইচ্ছাকে।
আর এই ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল অবধি আমার জীবনে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। জীবনের কঠিন সামরীক প্রশিক্ষন থেকে শুরু করে নতুন চাকুরী, প্রেম, সবই ঘটে যায়। কঠিন সামরীক ট্রেনিং এর সময় বারবার মনে হয়েছে, জীবনে মনে হয় একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর্মিতে এসে। আবার মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, ঠিক কাজটাই করেছি, যদি ওটা না করতাম, তাহলে বাচতাম কিভাবে?। এই দোলাচলে আমার অনেকটা সময় ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অনেক আলসেমি ছিলো। এই সময়ের মধ্যে আমি কখনো আশাবাদী, কখনো হতাশায় লিপ্ত ছিলাম। চাকুরীটাকে কখনো মনে হয়েছে, এটা আমার জন্য নয়, আবার কখনো মনে হয়েছে, এ ছাড়াতো আমার কোনো উপায়ও ছিলো না, তাই এটাকেই ধরে রাখতে হবে। মনে হয়েছে, আমার এই ঘোর অমাবশ্যা চিন্তাধারার একদিন সমাপ্তি হবে, মন শান্ত হবে, হয়তো আর কোনো দুশ্চিন্তা আমাকে গ্রাস করবে না। কিন্তু অমাবশ্যার রাত বড় লম্বা। কখন যে এটার শেষ হয় বলা বড় কঠিন। এই ঘোর অমাবশ্যার রাতের প্রতিটি ক্ষন মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে, খারাপ সময় ধীর গতির কাটায় চলে। যেনো চলতেই চায় না। একেকটা দিন মনে হয় একেকটা আলোক-বর্ষ।
আমি আমার এই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ সময়ের জন্য কাউকে দোষারুপ করি না। জীবনের বলয় যখন কঠিন স্তরে থাকে, তার ভাত সহজ নয়। কিন্তু যার কাছে আমার ফরিয়াদ করার ছিলো, সে স্বয়ং স্রিষ্টিকর্তা। তাই আমার এই সময়ের লিখা গুলির মধ্যে আমি প্রায়ই সেই স্রিষ্টিকর্তার কাছে কখনো নালিশ করেছি, কখনো ফরিয়াদ করেছি, কখনো তাকেই আবার দোষারুপ করেছি। আমি জানি, স্বয়ং তিনি ছাড়া আমার পাশে আর কেউ ছিলো না। আমি একটা জিনিষ স্পষ্ট আকারে বুঝেছিলাম, সৃষ্টিকর্তার মতো বড় গার্জিয়ান মানুষের আর কেউ নেই। যতোক্ষন এই সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করা যায়, যতোটা বেশী নির্ভর করা যায়, মন ততো শান্তিতে থাকে, আশা ততো বেশী সাফল্য লাভ করে।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সাল
এই সময়টায় আমি যেনো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলাম নিজের উপর। কোথাও যেনো কেউ ছিলো না আমার। বাইরে থেকে বুঝবার কোনো উপায় ছিলো না আমাকে কিন্তু ভিতরে ভিতরে কুকড়ে যাচ্ছিলাম কোনো এক অনিশ্চয়তায়। পাশে কোনো নির্ভরশীল মানুষ নাই, কাউকে আকড়ে ধরার সুযোগ নাই অথচ দরকার। মিটুলের সাথে আমার বুঝাপরার কোনো কমতি নাই, তারপরেও মিটুলের সাথেই যতো রাগ, গোস্যা, প্রেম কিংবা অভিমান, অথচ আমি জানি মিটুল নিজেও ঠিক আমার মতো একটা ভয়ানক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। শেষ অবধি একটা বিষয় আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, আমিই সব, বাবা, মা, ভাই বোন সব আমিই। সিদ্ধান্ত সব আমার। মাত্র ২১-২২ বছর বয়সেই সমস্ত প্রতিকুলতা জেনেও আমি মিটুলকে বিয়ে করে ফেললাম। কঠিন আর্মির নিয়ম জেনেও। কতটা চাপ? অতোটাই যতোটা হলে একজন কর্মজীবি মানুষ তার কর্ম হারাতে পারে, ততোটাই চাপ যতোটা কেউ বুঝে যে, এই নিয়ম ভাঙ্গার ফলে জেল জরিমানা পর্যন্ত হতে পারে। তারপরেও সব চাপ আমাকে নিতে হয়েছে। কারন কেউ আমাকে ছাড় দিতে নারাজ ছিলো। মিটুলের পরিবার তাদের নিজের সার্থের কথা ভেবেছে, মিটুলকেও অনেকটা বোঝাই মনে করেছে, ফলে মিটুলকে আমার এই অসময়ে বিয়ে করলে কি কি অঘটন হতে পারে এগুলি জেনেও আমাকে কনো ছার তারা দেন নাই। ফলে বিয়ে করার মাধ্যমে আমার উপর আরেকজনের চাপ বেড়ে গেলো। আমাদের বাংলাদেশের পরিবেশ এমনই যে, সেই মান্দাতার আমলের নিয়ম, রীতি মোতাবেক যাকে বিয়ে করতে বলা হবে পরিবার থেকে, তাকেই বিয়ে করতে হবে। আর তা না হলে প্রতিটি ছেলে বা মেয়ে হয়ে যায় ইতর কিংবা পরিবারের শত্রু। আমি এটা কিছুতেই মানতে পারিনি। আমার নিজের চয়েজ, আমার নিজের ইচ্ছার একটা দাম আছে, আর সেটা আমি দেই। ফলে আমার ইচ্ছায় মিটুলকে পরিবারের অমতের বাইরে বিয়ে করায় মিটুলের উপর কেউই খুশী ছিলো না। কিন্তু আমি ছিলাম অটল। মা ছিলো আমার সব কিছুর বাইরে। এ সময় মায়ের কাছে সময় পেলেই ছুটে যেতাম। কিন্তু আমার বড় ভাই ছিলেন মায়ের প্রতি বড্ড উদাসীন।
অন্যদিকে কিন্তু আমার অর্থনৈতিক প্রসারের কোনো উন্নতি ছিলো না। মাত্র ৮৫০ টাকা মাসে বেতনের একটা চাকুরী। এখানে কোনো “উপরি” নাই, কোনো অন্য আয়ের উৎস নাই। আর থাকলেও সেটা আমি কখনোই গ্রহন করতাম না। আমার প্রচন্ড ইগো কাজ করছিল। আমি কোনো অবস্থাতেই মিটুলের পরার খরচ তার পরিবার বহন করুক সেটা আমি চাইনি। মাত্র ৮৫০ টাকার বেতনের মধ্যে মিটুলের জন্যই আমার বরাদ্ধ রাখতে হয় ৬০০ টাকা। ভাবা যায় কি করুন দশা!! তারপরেও আমি হাল ছাড়িনি, না মিটুল হাল ছেড়েছে। এভাবেই চলতে লাগল কয়েকটা বছর। এর মধ্যে আমাদের রাষ্টপতি হোসেন মোহাম্মাদ এরশাদ একটা খুব ভালো কাজ করলেন। বেতন বেড়ে গেলো ১৬৫০ টাকায়। অনেকটাই যেনো সস্থি। কিন্তু সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক নয়। কস্টেই দিন কাল যাচ্ছিলো। তারপরেও জীবন চলে যাচ্ছিলো। এমন কোনো মাস ছিলো না যেখানে আমার ব্যাংকে ওডি হচ্ছিলো না। ওডি মানে ওভার ড্রাফট। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসি, মিটুলের সাথে থাকা হয়, মতিঝিলেই বেশির ভাগ থাকি কারন মতিঝিলে ওর মেঝো ভাইয়ের একটা সরকারী কোয়ার্টার আছে। মেঝো ভাবী সব সময় আমাদের এই থাকাটাকে খুব একটা যে পছন্দ করে সেটা বল্বো না কিন্তু আমাদেরও কিছু করারা নাই, কামড় খেয়েই আসতে হয় মেঝো ভাইয়ের বাসায়। আমার তো আর অন্য কোথাও বাসা নাই। বদি ভাই আমার বিয়ে মেনে নেন নাই, হাবীব ভাইও বদি ভাইয়ের মতই আমার বিয়ের ব্যাপারে নারাজ। ফলে প্রায় তাদের সাথে আমার কথাবার্তা বন্ধের মতো। এমতাবস্থায় তো আর তাদের বাসায় গিয়ে মিটুলকে নিয়ে উঠা যায় না। তাই মেঝো ভাইয়ের বাসাটাই একমাত্র সম্বল, ভাবী রাগ করুক আর নাইবা করুক।
১৯৮৮ সালের দেশব্যাপী বন্যার কবলে আমাকে সেই গফরগাও, ত্রিশালে বন্যার ডিউটি করতে হল। কত যে অভিজ্ঞতা হয় গ্রাম গঞ্জ ঘুরলে। গফরগাও এর সার্কিট হাউজে থাকি, আলতাফ গোলন্দাজের এলাকা কিন্তু এম পি হলে জাতীয় পার্টির এনামুল হক জজ মিয়া। শুনেছি, সে রওশান এরসাদের বোনের মেয়ের হাজবেন্দ, এবং রিটায়ার্ড নেভীর সৈনিক পর্যায়ের লোক। ফলে আমাদের মতো ক্যাপ্টেন্দেরকে সব সময় সমিহ করে চলে যদিও তার মর্যাদা একজন মেজর জেনারেলের চেয়ে বড়। গফরগাও থেকে মাঝে মাঝে ঢাকায় আসি। আমি সবচেয়ে ভালো কাজগুলি করার চেষ্টা করেছি এই বন্যা ডিউটির সময়। ন্যায্য কাজগুলি, এবং মানুষের জন্য যেটা উপকার হয় সেই কাজগুলি আমার ক্লান্তিবিহীন অবস্থায় করে গেছি। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসুচীতে প্রচুর রাস্তাঘাট করেছি, টি আর এর বরাদ্ধ দিয়ে যত গুলি স্কুল কলেজ আছে সব গুলিকে মেরামত, আপডেট করার চেস্টা করেছি। এলাকার মানুষ আমাকে ভগবানের মতো দেখে। বয়স আমার মাত্র ২২ কি ২৩। বা ২৪। বন্যার পরে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে এলাম। সি ও বা টু আই স্যার জালায় আর ভাল লাগছিলো না। জেনারেল নুরুদ্দিন জিও সি থাকায় গ্যারিসনে একটু ঠান্ডা ভাব আছে কিন্তু কর্নেল মনসুর কমান্ডার হওয়াতে আর্টিলারী ব্রিগেডের বিচারবিহীন অনেক কিছুই ঘটছিলো।
এ সময় রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে উঠেছিলো। জাতিয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং দেশের রাষ্টপতি জেনারেল হোসেন মোহাম্মাদ এরশাদের বিরুদ্ধে আওয়ামীলিগ, বি এন পি, এবং অন্যান্য বাম ডান পন্থি দলগুলি এক নাগাড়ে হরতাল, মারামারি কাটাকাটি শুরু করে দিল। উত্তাল দেশ। আর্থিক সচ্চলতাও খুব একটা নাই। তাই আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ানোর জন্য আমাকে এমন একটা সুইসাইডাল সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো যার নাম- চট্রগ্রাম হিল ট্র্যাক্স। এই হিলট্র্যাক্সে এলে বা চাকুরী করলে প্রতিমাসে ৬০০ টাকা হিল এলাউন্স পাওয়া যায়, এ ছাড়া যেহেতু সৈনিকদের সাথে থাকতে হয়, ফলে মাসের খাওয়ার খরচটা বেচে যায়। বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই, মার্কেট করারও কোনো সুযোগ নাই। তাই পুরু সেলারী প্লাস হিল এলাউন্স এবং মাসের খাওয়ার খরচ গুলি পুরুটাই বেচে যায়। তাতে দেখা যায় যে, সেলারী যদি ৮৫০ টাকা হয়, এর সাথে যোগ হয় আরো ৬০০ টাকা এবং ব্যাট্ম্যান খরচ ২৫০ টাকা এসব মিলে খুব খারাপ না। হিল সম্পর্কে অনেক গল্প, অনেক কাহিনী শুনেছি, শুনেছি এর লোমহর্ষক কথিত বা বাস্তব অনেক অপারেশনের কথা যেখানে মিলিত ছিলো জীবন আর মৃত্যুর মতো অধ্যায়। সবজেনেও আমি জীবিনের একটা তাগিদে সেচ্ছায় আমি এই হিলে আসার পরিকল্পনা করেছিলাম। যদি বেচে থাকি, তাহলে জীবন বেচে গেলো, আর যদি ফিরে না আসি, তাহলেও জীবন বেচে যাবে। কিন্তু এখানে এসে আমি জীবনের কয়েকটি দিক দেখলাম যেখানে যারা ভয় দেখায় আর যারা ভয় পায় তারা উভয়েই ভীত। কেউ বাচার জন্য লড়ে আবার কেউ লড়াই করে বাচে। এখানে শাসক যেমন শোষিত তেমনি শোষিত ও শাসক। অদ্ভুদ সব অভিজ্ঞতা। মিথ্যা আর সত্যতার কোনো যাচাই বাছাই নাই এখানে। যেমন থাকে না বাঘ হরিনের বেলায়। হিল থেকে ফিরে এসেছিলাম অক্ষত অবস্থায়।
এই সময়কালটা কখনোই আমার মতো করে ছিলো না, পুরুপুরি ভাগ্যের হাতেই খেলছিলো আমার জীবন। বগুড়ায় চাকুরী করছি, ক্যাপ্টেন মানুষ, কতই বা বড় অফিসার। কিন্তু এই সময়ে আমার জীবনে দুটু সস্থিকর পরিস্থিতির তৈরী হয়। এক-এতোদিন যে বিষয়টা সবার চোখে আড়াল করে পালিয়ে পালিয়ে বেরিয়েছি, সেটা বৈধ হয়ে গেলো, অর্থাৎ আর্মিতে বিয়ের বয়স ২৬ হলে যেহেতু বিয়ের অনুমতি আছে, ফলে আমি ১৯৮৮ সালে অবৈধ বয়সে বিয়ে করে যে টেনশনে ছিলাম, সেটা ১৯৯২ সালে এসে বৈধ হয়ে গেলো। নিস্তার এবং শান্তি। মিটুলকে নিয়ে এলাম বগুরায়। ভালো একটা সময় কাটচছিল। মানসিক টেনশন ছিলো না। মিটুলেরও মাষ্টার্স শেষ হয়ে গিয়েছিলো। এবার সে বি সি এস দিতে আগ্রহী। আমি মিটুলকে কখনোই সাবলম্বি হতে বাধা দেই নাই। ফলে আমি মিটুলের পরীক্ষার প্রিপারেশনের জন্য মানিক গঞ্জ পাঠিয়ে দিলাম। আমি জানি মিটুল পরীক্ষায় চান্স পাবে। এটুকু ভরষা আমার ছিলো। মিটুল ১৪তম স্পেশাল শিক্ষা ক্যাডারের বি সি এস এ চান্স পেয়ে সরকারী মুমিনুন্নেসা কলেজে পোষ্টিং হলো। আর এদিকে আমার পোষ্টিং হয়ে গেলো আবারো হিল ট্র্যাক্সে ইউনিটের সাথে। এখানে একটা কথা বলা হয় নাই যে, আমি বগুড়া থেকে সরাসরি ৭ ফিল্ড রেজিমেন্টে চলে গিয়েছিলাম।
১৯৯৩-১৯৯৭
১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ সাল অবধি আমি হিলের সেই বরাদম, আর মাটিরাংগায়, সাথে আলুটিলায় গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম। যদিও আমি মিটুলকে নিয়ে গিয়েছিলাম মাটিরাংগায়। এর পিছনেও আমার অনেক বেদনার ইতিহাস লুকানো ছিলো। আমরা চেয়েছিলাম একজন বাচ্চা নিতে। পরপর দুবার আমরা আমাদের বাচ্চার উপর দিয়ে খড়গ চালিয়েছিলাম আর্মি থেকে আমাদে বিয়ের ব্যাপারটা আরাল করতে। তাই, যেভাবেই হোক এবার একতা বাচ্চা চাই। আল্লাহর শেষ রহমতে আমার বড় মেয়ের সুসংবাদ পেলাম। কিন্তু ভাগ্যের এতো কঠিন পরিহাস যে, এবারে আমার স্ত্রীর প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছিল। বাচ্চাটাকে রাখাই যেনো অসম্ভব হয়ে উঠেছিলো। শেষ পর্যন্ত চট্রগ্রাম সি এম এইচে মিটুলকে স্থানান্তরীত করে প্রায় ২২ দিন ভর্তি রেখে কর্নেল লাবিবের আন্ডারে আমার বাচ্চাটা বেচে গেলো।
সময়টা গরাতে গড়াতে, খারাপ গোধুলীগুলি পার হতে হতে আমার আবার পোস্টিং হয়ে গেলো ঢাকায় মিরপুরে পুরু ইউনিট সহকারে, ৭ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি। স্তাফ কলেজ দেয়ার মনস্থির করি। ইউনিটের সিও হলেন আমার আগের উপঅধিনায়ক রেজ্জাকুল হায়দার। ভালো মানুষ, নামাজি মানুষ। কাজ কর্ম করছি, স্তাফ কলেজে পরীক্ষা দিয়েই দিলাম। ঠিক ১৯৯৫ সালের পরে এই সময়টায় যেনো ভগবান আমার ভাগ্যটাকে একটু ঘুরিয়ে দিলেন। জাতীসংঘে হাইতিতে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত হলো ১৯৯৬ সালে। আমার কোনো মামা চাচা ছিলো না এই আর্মিতে। যা করেছি নিজের যোগ্যতায়। বাইরে থেকে আমি বরাবর একটা স্মার্ট লুকেই ছিলাম আর এটার প্রথম কারন ছিলো আমার চৌকষতা। ষ্টাফ কলেজের জন্য পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে আমি অনেকেরই নজরে পরেছিলাম। আমি জানতাম, আমি চান্স পাবো। এর সাথে সাথে আরো অনেকেই ব্যাপারটা জানতেন বিধায় আমার ভাগ্য কিছুটা হলেও এক্সপোজড হয়েছিলো সিনিয়ারদের কাছে। এই সময়টায় আমার কোনোভাবেই মিশনে যাওয়ার কথা ছিলো না। কিন্তু যে করেই হোক সুযোগটা এসেছিল। আমি চলে গেলাম সুদূর হাইতিতে। এবার যদি কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক সংকট ঘুচে আমার। অনেক বড় বড় নামীদামী শাশকদের সাথে দেখা হলো হাইতিতে। আমেরিকায় যাওয়ারও একটা সুযোগ হলো। স্বপ্নের আমেরিকা যার জন্য একবার হাতছানিতে পড়েছিলাম ১৯৮৩ সালে।
আমি গেলাম আমেরিকায়, যা সেই ১৯৮৩ সালে যাওয়ার জন্য অদম্য ইচ্ছায় বিকশিত হয়েছিলাম। ভাইয়ার সাথে, ভাবীর সাথে, বাচ্চাদের সাথে, তাদের স্কুলের টিচারদের সাথে বেশ ভালোভাবে পরিচিত হলাম। কিন্তু আমেরিকাকে আমার সপ্নের দেশ মনে হলো না। টানলো না আমাকে কেনো জানি। আমেরিকায় বেড়াতে গিয়ে মাসখানেক ছিলাম বটে কিন্তু ছুটি শেষে পুনরায় হাইতিতে কাজের জন্য ফিরে এলাম। কেটে গেলো প্রায় ১টি বছর। হাইতিতে থাকতেই আমি ষ্টাফ কলেজে চান্স পেয়েছিলাম তবুও বাংলাদেশ সরকার আমাকে ফেরত আনেনি। মিশনটা সম্পুর্ন করতে পেরেছিলাম।
১৯৯৮- ২০০২
১৯৯৭ সালে হাইতি থেকে ফিরে এসেই ১৯৯৮ সালে ষ্টাফ কলেজ করলাম। ষ্টাফ কলেজে চান্স পাওয়া যে কোনো আর্মি অফিসারের একটা যেমন চ্যালেঞ্জের ব্যাপার আবার তেমনি একটা সম্মানের ব্যাপারও বটে। আমরাই প্রথম যাদেরকে এডুকেশন ট্যুরে দেশের বাইরে পাঠানোর সরকারী পরিকল্পনা হয় আর সে সুবাদে আমি পাশের দেশ ইন্ডিয়াকেই চয়েজ করেছিলাম। শ্রীলংকা, ভুটান আর মালয়েশিয়ায় যাওয়ারও স্কোপ ছিলো কিন্তু আমি চেয়েছিলাম যে দেশটা প্রতিনিয়তই আমাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে তার ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি তৈরী করে, সেই সব পরামর্শকদের সাথে কিছু বিনিময় করা। ইন্ডিয়া গিয়ে প্রুচুর ঐতিহাসিক জায়গা দেখেছি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আর জানতে পেরেছিলাম তাদের অনেক স্ট্রাটেজিক কিছু কল্পনা।
দেশে এসে ষ্টাফ কলেজ করলাম। খুব মনোযোগ ছিলো না আমার। তারপরেও স্বাভাবিক নিয়মে অনেকের নজরে ছিলাম। ষ্টাফ কলেজ থেকে সরাসরি পোষ্টিং হলো বগুড়ায় ১১ পদাতিক ডিভিশনে জিএসও -২ (অপারেশন) পদে। আর্মির ক্যারিয়ারে মেজর পদবীতে এটা একটা অনেক বড় মাপের পদায়ন। বগুড়া ডিভিশনে তখন চলছে জেনারেল আনোয়ারের আমল। এ সময়ে মিটুল ঢাকাতেই ছিলো। বগুড়ায় আবাসিকের খুব অভাব, তাই বাসা পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় মিটুলকে ঢাকাতেই রেখে দিলাম। এরমানে আমি আবারো ব্যাচলর লাইফ। খাই দাই, ঘুমাই আর ২৪ ঘন্টাই কাজ করি। এটা ছাড়াও আমি আরেকটা কারনে মিটুলকে ঢাকা থেকে আনতে চাইনি। আর সেটা হলো-মিটুল বিসিএস দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে চাকুরী পেয়েছে। কারোরই সায় ছিলো না মিটুলের চাকুরী করা নিয়ে। কিন্তু আমি নারী স্বাধীনতা এবং সাবলম্বিতা পছন্দ করি। তার থেকে সবচেয়ে বড় কন্সেপ্ট কাজ করেছে আমার যে, যদি আমার কিছু হয়ে যায়, তাহলে মিটুলের পাশে দাড়ানোর কেউ নাই। তাই যদি মিটুল একটা ভালো চাকুরী করে, অন্তত আমি এইটুকু ভেবে শান্তি পাবো যে, আমার অবর্তমানে মিটুল এই সমাজে খরকুটার মতো ভেসে যাবে না। মিটুলের চাকুরীর সুবাদেই আমি মিটুলকে আমার সাথে বগুড়ায় নিতে পারিনি। কষ্ট হয়েছে, অসম্ভব ধইর্য্যচুত্যি হয়েছে, চাকুরীটার প্রতি তখনো মায়া আনতে পারছিলাম না। তারপরেও কোনো রকমে মনকে বুঝিয়ে জীবনের জন্য রয়েই গিয়েছিলাম। একা জীবনের মতো কঠিন নিঃসঙ্গতা আর নাই। এই সময়েই আমার বড় ভাই আমেরিকা থেকে দেশে এসেছিলেন তার বড় ছেলে মাসুদকে নিয়ে। কিছুটা সময় কাটিয়েছি বগুড়ায় তাদের সাথে। একটা ব্যাপার আমি তখনো লক্ষ্য করেছিলাম যে, মিটুলকে আমার পরিবারের বিশেষ করে বদি ভাই আর হাবীব ভাই মেনে নেন নাই। কিন্তু হাবীব ভাই কিছুটা হলেও লিবারেল ছিলো।
বগুড়ায় আমার জিও সি ছিলেন জেনারেল আনোয়ার, জি এস ও-১ ছিলেন লেঃ কর্নেল হাসান সোহ্রাওয়ার্দি এবং কর্নেল স্টাফ ছিলেন ইকবাল করিম ভুইয়া। সময়তা খুব এঞ্জয় করছিলাম বটে কিন্তু কিছু কিছু কাজে আমি খুব বিরক্ত হচ্ছিলাম। ক্যারিয়ার গরার জন্য নয়, বগুড়া ক্যান্ট থেকে পালানোর জন্য গানারী পরীক্ষা দিলাম, যদিও এতা ফিল্ড গানারী ছিলো না, ছিলো এডি গানাএঈ। আমি কখনো এডি আর্টিলারীতে চাকুরী করিনাই, তারপরেও এডি গানারি করাতে পেয়ে গেলাম জি+। বগুড়া থেকে গানারী ষ্টাফ পরীক্ষা দিয়ে চলে এসেছিলাম হালিশহর আর্টিলারী সেন্টারে। সময়টায় এবারে খুব মনোযোগ দিতে পারি নাই। সাটল জার্নিতেই বেশীরভাগ সময় কেটেছে আমার মিটুল আর উম্মিকাকে দেখার জন্য। হালিশহর থেকে কোর্ষ শেষ করে এবারেও আমার ভালো একটা পোষ্টিং হলো আর্মি হেড কোয়ার্টারে জিএসও-২ (ট্রেনিং), এমটি ডারেক্টরে। আগে কাজ করেছি ডিভিশন লেবেলে, এবার আর্মি হেড কোয়ার্টারে। বেশ ভালো একটা পোস্টিং। ঢাকায় পোস্টিং হওয়াতে আমার একতা লাভ হয়েছিলো যে, আমি চাকুরীর পাশাপাশি কমপিউটার, এম বি এ ইত্যাদি ক্লাস গুলিতে জয়েন করতে পারছিলাম। আর প্রতি সপ্তাহে আমার মাকে দেখতে গ্রামে যেতে পারছিলাম। আবাসন খাতে বাসার বরাদ্ধ এখানে আরো প্রকট থাকায় অনেক পড়ে এসে আমি বাসা পাই। মাকে নিয়ে আসি। আমার ২য় মেয়ে কনিকার জন্ম হয় এই সময়ে অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে। যদিও আমরা কনিকার জন্ম ইয়ার এক বছর পিছিয়ে দিয়ে সরকারী ভাবে করেছিলাম ১৯৯৫ কিন্তু কনিকার আসল জন্ম ইয়ার ১৯৯৪ সাল। আমার মা কনিকাকে পছন্দ করতেন না খুব একটা কারন মা চেয়েছিলো আমার জন্য একটা ছেলে সন্তান। অথচ কনিকা ছিলো আমার মায়ের একেবারে ডুপ্লিকেট আর মায়ের খুব ভক্ত।
ঢাকায় থাকার পাশাপাশি আমার মা সেই গ্রামেই পড়েছিলেন, আমার ভাই যদিও আর্থিক অসচ্ছলতায় ছিলেন না কিন্তু তিনি আমার মায়ের মনের খুশীকে কখনোই প্রাধান্য দিতেন না বলে মায়ের সেই আগাএর বরাদ্ধ কখনোই বৃদ্ধি হয় নাই। আমি চেষ্টা করেছি সব সময় মাকে খুশী করতে, মাকে কষ্ট না দিতে। আমিও মাকে সব কিছু সাপর্ট করতাম। মায়ের মুখে অনেকটাই হাসিখুশী থাকত এ সময়ে কিন্তু তার কয়েকতা মেয়ে যেমন লায়লা, ফাতেমা আর মেহের সাংসারিক অসচ্চলতার কারনে তিনি তার বরাদ্ধ থেকে অনেকটাই তাদের জন্য চুপিসারে ব্যয় করে ফেলতেন। আমার মা ছিলো আমার সবচেয়ে প্রিয় একজন মানুষ। মায়ের অনেক চাপা কষ্ট ছিলো কিন্তু আমার সেই কষ্ট লাগবের সামর্থ ছিলো না যা ছিলো আমার ভাইয়ের। এই বছরের প্যাকেজেই আমি মাকে হারালাম।
আমার ২য় বারের মতো নাম এলো জাতীসংঘ মিশনে। আগের বার পাশ্চাত্য দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো এবার ইউরোপ। রিপাবলিক অফ জর্জিয়া। এক সময় রাশিয়ার একটি ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ ছিলো। সময়টা কেটেছে আমার ভাবনারও বেশী আনন্দে আর শিক্ষায়। ২য় মহাযুদ্ধের এক চরম সাক্ষী দেশ, যেখানে স্ট্যালিন জন্ম নিয়েছিলো। আর্মি হেডকোয়ার্টার চাকুরী করা কালেই আমার দ্বিতীয়বারের জন্য মিশনে সংযুক্তি হলো। মিটুলকে ঢাকা সেনানীবাসেই রেখে চলে গেলাম জর্জিয়াতে। মিটুলের সাথে থাকলো উম্মিকা আর কনিকা। মা তো আর বেচেই নেই।
জর্জিয়াতে নতুন অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। জর্জিয়াতে গিয়ে একটা জিনিষ বুঝেছিলাম যে, ইউরোপ আর ওয়েষ্ট প্রায় বিপরীত মেরুর আচরনের। ওয়েষ্টের থেকে ইউরোপ অনেক শান্তির এবং ভাল মনে হয়েছে। এ সময়ে অনেকগুলি দেশেও যাওয়া হয়েছে-তুরষ্ক, আজারবাইজান, বাকু, রাশিয়া, ইত্যাদি। অনেকগুলি ভালো মানুশের সাথে আমার পারিবারিকভাবেও সখ্যতা তৈরী হয়েছিল, তারমধ্যে দেদুনা বুকিয়া, সোরেনা গামছাখুরদিয়া এরা অন্যতম। খুব ভালো মেয়ে এরা। আমার উপর ওদের অনেক যত্ন ছিলো।
২০০৩-২০০৭
ফিরে এলাম ২০০৩ সালে। প্রোমোশন হবার কথা ছিলো কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায়। তারা মনে করলেন, আমরা সবাই আওয়ামীলীগ করি কারন মেজর ওয়াকার (আমার কোর্ষমেট) যিনি আওয়ামীলীগের পরিবারের সদস্য থাকায় বিএনপি ধরেই নিলো ১৩ লং কোর্ষ সবাই বুঝি আওয়ামীলীগ করে। বেশীর ভাগ ১৩ লং কোর্ষের (প্রায় ৯৯%) কারোরই কোনো প্রোমোশন হলো না। এমনিতেই চাকুরীটার প্রতি কখনো মায়া জন্মাতে পারি নাই, তারমধ্যে আবার নেপোটিজম। ভালো লাগলো না। পোষ্টিং হলো খোলাহাটি। রিমুট সেনানীবাস। পরিবার নিতে পারলাম না। আবারো নিঃসঙ্গতা। অতীব কষ্টের মধ্যে একটা ভালো সংবাদ ছিলো যে, প্রায় ১ বছর খোলাহাটিতে কাজ করার পর ইউনিট মীরপুরে স্থায়ীভাবে আসায় আমি এডভান্স পার্টি নিয়ে ঢাকায় চলে এলাম। প্রোমোশনের ব্যাপারটা আর মাথায় নিলাম না। এবার সত্যিকারের জন্যই চেষ্টা করতে লাগলাম কিভাবে আর্মি থেকে বেরিয়ে গিয়ে সেকেন্ড ক্যারিয়ার করা যায়। আর্মি থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রাইভেট কোনো চাকুরী করার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিলো না। তাই বিকল্প খুজতে গিয়ে দেখা হলো নাজিমুদ্দিনের সাথে। নাজিমুদ্দিন আমাদের ইকুরিয়া এলাকার মুটামুটি একটা দাগী মানুষ কিন্তু অনেক পয়সাওয়ালা। তার অনেক ব্যবসার মধ্যে একটা একটা সুয়েটার ফ্যাক্টরী ছিলো যা তিনি চালাতে পারছেন না। প্রোপোজাল এলো যদি আমি চালাতে চাই, আমার জন্য অপশন আছে। ব্যাপারটা লুফে নিলাম। কখনো গার্মেন্টস করিনি, জানিও না কিভাবে ব্যবসা করে হয়। তারপরেও সাহস করে ফেললাম। এই ফ্যাক্টরীতে আগে কাজ করেছে এমন লোক খুজতে গিয়ে মোহসীন এর সাথে আলাপ এবং শেষে ব্যবসায়ীক বন্ধন। ফ্যাক্টরী নেয়ার আগে আমি আরেকটা কাজ করেছিলাম। আর সেটা হল-যদি আর্মি থেকে আমি অকালীন বের হয়ে যাই, আমাকে থাকার জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় চাই। এই চিন্তা থেকে আমি ২০০৪ সালেই মীরপুরে আমার পৌনে তিন কাঠার জমির উপরে একটা বাড়ি বানানোর কাজে হাত দেই। হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন থেকে ১৫ লক্ষ টাকা, আমার কমুটেশন থেকে ১০ লক্ষ টাকা আর পেনশনের টাকার সহিত মিশনের প্রাপ্ত টাকা দিয়ে বাড়িটা প্রায় শেষ করেই ফেললাম। মিটুলের মালয়েশিয়া ট্রেনিং থেকেও কিছু টাকা বেচে ছিলো বিধায় সেটাও আমার বাড়ীর কাজে লেগেছিলো। সেকেন্ড যুদ্ধ এবার শুরু আর সেটা গার্মেন্টস ব্যবসা।
সুয়েটার ফ্যাক্টরী নিলাম বটে কিন্তু যার উপর ভরষা করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেই মোহসীন সাহেবই আমার ব্যবসায়িক কাল হয়ে দাড়ালো। ক্রমাগত লস আর লসের মধ্যে ডুবে যাচ্ছিলাম। অনেকের কাছে লোন নিয়ে জর্জরিত হয়ে পড়ছিলাম। এটা যেনো কড়ই থেকে উনুনে পড়ার মতো অবস্থা। মোহসীনকে নিয়ে আমার ব্যবসায়িক পদচলা কোনোভাবেই ভালো চলছিলো না। মোহসীন সৎ মানুষ নয়। কোনো ইনভেষ্টমেন্ট ছাড়া লোকটাকে আমি ৩০% শেয়ার দিয়েও আমি তাকে ব্যবসাটায় মনোযোগী করাইতে পারছিলাম না। আবারো আরেক দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। প্রায় দেড় বছর বা ২ বছর লসের উপর দিয়ে চলতে চলতে এক সময় ভাবলাম-গার্মেন্টস ব্যবসা আর করবো না। যেভাবেই আছে সেটা বিক্রি করে কোনো রকমে বাচতে চাই এবার। একদিকে আর্মির চাকুরীটা ছেড়ে এসেছি, আবার কোথাও চাকুড়ির চেষ্টাও করিনি, এবার গার্মেন্টস ব্যবসাটায় লস খেয়ে ফ্যাক্টরী ছেড়ে দিতে গিয়ে আমি প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম যে, এরপর কি? কিভাবে চলবে লাইফ? কিভাবে চলবে সংসার? যখন ফ্যাক্টরী বিক্রি করে দেয়ার চুড়ান্ত পরিকল্পনা হল, ফ্যাক্টরী কিনতে এলেন মূর্তজা ভাই আর প্রিয়ান্থা। ছেড়ে দিচ্ছি, মন ভালো নাই, কিন্তু আল্লাহ যাকে সাহাজ্য করেন, তার আর কারো সাহাজ্য লাগে না। প্রিয়ান্থা আর মুর্তজা ভাই ১০% শেয়ার নিয়ে হলেও আমাকে থাকতে প্রচন্ডভাবে অনুরোধ করলেন । কারন সেখানে ফ্যাক্টররি ভালভাবে চালাইতে হলে লোকাল কাউকে প্রয়োজন, আর আমি ছিলাম সেই লোকাল একজন মানুষ যাকে লোকাল মানুষেরা বিশেষ করে ইকুরিয়ার মানুষেরা আমাকে অনেক সমিহই করে। তাদের সাথে নতুন করে ব্যবসায়িক জার্নী শুরু। তারা যদিও ১০০% শেয়ার নেবার ক্ষমতা ছিলো কিন্তু লোকাল ডিস্টার্বের কারনে জাষ্ট যেনো দয়া করে আমাকে কিছুটা শেয়ার দিয়ে ব্যবসায় রাখলেন। শতভাগ শেয়ার থেকে এক ধাপে ১০% শেয়ার নিয়ে কোনো রকমে ফ্যাক্তরতে মালিকানা নিয়ে আমার আসলে ভাল লাগছিলো না।তারপরেও থেকে গিয়েছিলাম এই ভরষায় যে, ১০% মালিক হলেও আমাদের সব ডাইরেক্টরদের বেতন ছিলো সমান অর্থাৎ ৭৫০০০ টাকা। আমি এই বেতনটার প্রেমে পড়েছিলাম কারন আমার অন্তত সংসার চালাইতে অসুবিধা হবে না। অন্য আবার কোথায় চাকুরী খুজবো? তার থেকে এটাই ভালো। কিন্তু পরিস্থিতীটা আমার জন্য নাজুকই ছিলো।
২০০৮-২০১২
এই একটা নাজুক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমি কখনো ডেভেলোপারের, কখনো প্লাষ্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবসায়ও জড়িত হয়ে পড়েছিলাম। কোনোটাই সাফল্য আনতে পারছিলো না। এক বছর যেতে না যেতেই প্রিয়ান্থা পরলোক গমন করলে প্রিয়ান্থার শেয়ারটা আমি আর মুর্তজা ভাই ভাগাভাগি করে নিলাম। আমার টাকা ছিলো না বিধায় প্রিয়ান্থার ৪৫% শেয়ারের আমি নিলাম ২৫% আর মুর্তজা ভাই নিলেন ২০%। এতে মুর্তজা ভাইয়ের শেয়ার দাড়াল ৬৫% আর আমার দাড়ালো ৩৫%। এবার আরো নজর দিয়ে কিছুটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। আল্লাহ আমার উপরে সবসময়ই সহায় ছিলেন। আসলে যার কেউ নাই, তার একমাত্র সহায় আল্লাহ। আমার পরিবার আমার কোনো পরিস্থিতি আচ করতে পারে নাই, আমি আচ করতে দেইও নাই। কারন এতে ওরা আমাকে না সাহাজ্য করতে পারবে, উলটা দুশ্চিন্তায় থাকবে যেটা আমি চাই নাই। মুর্তজা ভাইকে নিয়ে আমরা ফ্যাক্টরীর আরো উন্নতির জন্য অনেক পদক্ষেপে কখনো রাশিয়া, কখনো চীন আবার কখনো অন্যত্র খোজ করতে করতে ডায়েরীটাই আর লেখা হয়ে উঠে নাই।
২০১৩-২০১৭
২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল অবধি যে অর্থনৈতিক একটা চাপের মধ্যে আর দুশ্চিন্তায় ছিলাম, সেটা এই প্যাকেজ বছরে এসে অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছি বলে মনে হলো। ২০০৬ সালে মিটুলকে নিয়ে হজ্জ করেছিলাম, এই প্যাকেজ বছরে আবার ওকে নিয়ে ওমরা করার সুযোগ হলো। সাথে মুর্তজা ভাইয়ের পরিবার ছিলেন। মেয়েরা বড হয়ে উঠছে, তাদেরকে আগের থেকে একটু সময় বেশী দেয়ার চেষ্টা করছি। দেশে ঘুরাঘুরির বাইরেও দেশের বাইরে বেড়াতে গেলাম সবাইকে নিয়ে। আর সেটা মালয়েশিয়া। মিটুল আগেই একবার ট্রেনিং এর জন্য মালয়েশিয়া গিয়েছিলো, এবার ২য় বার ওর অনেক বেশী ভালো লেগেছে ঘুরতে। এই বছর প্যাকেজে যেমন হাবীব ভাই এর ছেলে মাসুদ যেমন তার স্ত্রী রিমুনাকে নিয়ে দেশে বেড়াতে এলো, তেমনি আমার বড় মেয়েকেও তার পছন্দের একজন ছেলের সাথে বিয়ের কথা পাকাপাকি করতে হলো। প্রেম ভালোবাসা একটা অবুঝের মতো। কখনো বুক ভরা আনন্দ আবার কখনো চোখ ভরা জলে ভরা থাকে। যখন মেয়েরা প্রেমে পড়ে তখন চালাক মেয়েরা হয়তো সব বিবেচনা করলেও সব মেয়েরা এক নয়। তেমনি আমার বড় মেয়েও চালাক নয়। সহজ সরল একটা মেয়ে। অনেকটাই বেশী ইমোশনাল। উম্মিকা ডাক্তারী পরীক্ষায় ১ম বার উত্তীর্ন হতে পারলো না, কিন্তু ২য় বার মাশ আল্লাহ সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ফরিদপুরে চান্স পেলো। অতঃপর অনেক চেষ্টা তদবির করে ফরিদপুর থেকে বগুড়া শিহিদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজে মাইগ্রেট করাতে পারলাম। এই সময়ে এসে একটা বড় ধরনের ডিজাষ্টার করে ফেললাম যা বুঝি নাই নিজেও।
মানুষের জীবনে অনেক “যদি” দিয়ে ভরপুর থাকে। “যদি” এমনটা হতো, “যদি” অমনটা না হতো, “যদি” এই কাজটা এমন করে না করে অমন করে করতাম, “যদি” তার সাথে আমার দেখা না হতো, “যদি” অন্য কারো সাথে দেখা হতো, কিংবা “যদি” ঐ সময়ে এটা না করে ওটা করতাম, তাহলে কত কিছুই না পরিবরতন হতে পারতো। এই “যদি” আমার এই প্যাকেজ বছরে এতোটা চঞ্চল আর অস্থির করে দিয়েছিলো যে, অনেকগুলি ভুল কিংবা বেঠিক সিদ্ধান্ত চরমভাবে ডান বাম চিন্তা না করে একাই নিয়ে ফেলেছিলাম, তার মধ্যে উম্মিকার শেষ সময়ে বিয়েতে নারাজ থাকা অবস্থাতেও আমার জোর করা। কিছুতেই কোনো কাজ নিজের একার সিদ্ধান্তে সবসময় করা উচিত নয়, এটা কোনো বাহাদূরির ব্যাপার না। উম্মিকার বিয়েটা আমাকে একটা চরম শিক্ষা দিয়ে গেছে। উম্মিকা ডাক্তারী পরীক্ষায় চান্স পেয়ে বগুড়া মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছে আর আমি ওকে নিদেন একটা বেকার ছেলের কাছে যে কিনা লোভের বশবতী হয়ে, আমাদের সম্পদ আর প্রাচূর্য দেখে আমাদের সাথে বিয়ে নামক একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারলো। ছেলেটার না ছিলো বয়সের পরিপক্কতা, না ছিলো জ্ঞানের কোনো আস্তর। আর তারসাথে যোগ দিয়েছিলো ওর মা যে কিনা নিজের ছেলেকে খুব ভালো করে জেনেও আমাদের মতো বাস্তববাদী পরিবারের সাথে অনেকটা জোর করেই আমাদের সম্মোহিত করে ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেলতে পারলো। যখন আমাদের ভুল হয়েছে বুঝতে পেরেছি, তখন অনেক বেলা গড়িয়ে গিয়েছিলো।
এই সময়ে আমার জীবনেও এমন কিছু ঘটে গিয়েছিলো যা অভাবনীয় তবে অবাস্তব নয়। মানুষ যখন একা হয়ে যায়, কষ্টে থাকে, সে যখন বুঝতে পারে তার সময় কাটানোর সংগী দরকার, তখন হাত উচু করে মগডালের অই নাম না জানা ফলের দিকেই ঝুকে পড়ে। প্রচুর লেখালেখি করতে ভালো লাগছিলো কারন ২০১৬ই প্রথম যখন আমি সবেমাত্র ফেসবুকিং করা শুরু করি। আর এই ফেসবুকে এতো অচেনা মানুষ আছে যাদেরকে আমরা চিনি না বটে কিন্তু আমাদের তারিফ করার জন্য যেনো উত পেতে বসেই থাকে। আমার এই সময়ে এমন কিছু মানুষের সাথে পরিচয় ঘটে যাদেরকে আমার না হলেও চলতো কিন্তু সবসময় আইন করে সম্পর্ক তৈরী হয় না। কিছু কিছু সম্পর্ক এমনভাবে তৈরী হয়ে থাকে যা শুধুমাত্র সংযোগের অপেক্ষায় থাকে। সংযোগ হওয়া মাত্র এমন একটা যোগাযোগ শুরু হয় যেনো বহু জনমের আগের কোনো বন্ডেজ। বিরক্ত হচ্ছিলাম প্রতিনিয়ত কিছু কিছু ঘটনায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রনের বাইরে ছিলো সব।
“সময়” সবকিছু পালটে দেয়। পালটে দেয় পরিস্থিতি, পালটে দেয় মানসিকতা, পালটে দেয় ব্যবহার, অভ্যাস। এমনকি পালটে দেয় মানুষের পছন্দ, অপছন্দ, এমনকি পালটে দেয় সম্পর্ক পর্যন্ত। আজ আপনার যে মানসিকতা, “সময়ের” ব্যবধানে আপনার মানসিকতা পুরুটাই পালটে যেতে পারে। “সময়ের” ব্যবধানে বন্ধু পর্যন্ত পালটে যায়। কখনো কখনো বন্ধু পালটে শত্রু হয়ে যায়, আবার “সময়ের” প্রেক্ষাপটে বাব্যধানে শত্রু একদিন মিত্র হয়ে যায়। আজ যাকে আপনি আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষ বলে মনে করছেন, হয়ত “সময়ের” ব্যবধানে কাল সে আপনার অনেক দুরের বলে মনে হবে। কিংবা আজ যাকে আপনি সবচেয়ে দুরের কাউকে মনে করছেন, “সময়ের” ব্যবধানে হয়ত সেইই আবার সবচেয়ে কাছে মানুষদের মধ্যে একজন বনে যেতে পারে। আর এটাই বাস্তবতা। তাই আজকের “সময়”টাই শেষ কথা নয়। “সময়’ এমন এক অপ্রতিরোধ্য জিনিষ যে, সে ভালোবাসাকে ঘৃণার স্তরে নিয়ে আসতে পারে, আবার ঘৃণার স্তর থেকে ভালোবাসায় পরিবর্তন করাতে পারে। “সময়” কচি খোকাকে পুরুষে পরিনত করে, ছোট্ট ফুটফুটে একটি মেয়েকে জটিল সংসারের হাল ধরতে শিখায়। “সময়” মানুষের সব কিছু পালটে দিয়ে এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ে দাড়া করাতে পারে যেখান থেকে বের হয়ে আসার মতো কোন পথও খোলা না রাখতে পারে। আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আপনি অন্যের পরিস্থিতি উপভোগ করছেন, হয়ত আগামিকাল ঠিক সেখানে দাড়িয়েই অন্য একজন আপনার পরিস্থিতি উপভোগ করবে। “সময়” কখন কার সঙ্গে থাকে, কেউ জানে না। কিছু কিছু বাস্তব চরিত্রকে কল্পনার রাজ্যে নিয়ে নিজের মতো করে গল্প সাজিয়ে জীবন্ত করার একটা প্রয়াশ ঘটেছে এই সময়ে। আসলে কোনো গল্পই গল্প নয়, হয়তো সেই গল্পের নায়ক কিংবা খলনায়ক অথবা নায়িকার চরিত্রে যারা অভিনয় করছে, সেই সব চরিত্র বাস্তবে হয়তো কোথাও না কোথাও আছে। তারা হয়তো আমাদের আশেপাশেই থাকে কিন্তু আমরা তাদের চিনি না। ওরা নাম সর্বস্ব চরিত্রের এক অচেনা মানুষ। এমনি কিছু চরিত্র এসেছে এখানে। কখনো সন্ধ্যা নামে, কখনো মাধুরী নামে কিংবা আকাশ অথবা অপূর্ব। সবাই জীবন্ত কোনো সত্তাই বটে।
এখানে একটা জিনিষ খুব ভালোভাবে বুঝা দরকার, যখন কারো দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যায়, তখন তার কাছে অনেক কিছু আর স্বাভাবিক মনে হবে না। লাল কাচের ভিতরে রাখা সাদা গোলাপকে সে লাল রঙের গোলাপই মনে করবে। আর ঠিক এই স্যময়ে অনেকের কাছে এটাই মনে হয় যে, ভুল করে ভুল রাস্তা বেছে নেওয়ার ব্যক্তিকে ভুল থেকে শোধরানো যায় কিন্তু কেউ যদি ইচ্ছে করে ভুল রাস্তার সন্ধান খুজে নেয়, তাকে সরানো কঠিন। এটা একটা আপেক্ষিক থিউরী। যাক, লেখাগুলি পড়লে হয়তো সময়টাকে বুঝা সহজ হবে।
২০১৮-২০২২
এই পাঁচ বছরের প্যাকেজে সম্ভবত আমার জীবনে সবদিক থেকেই চরম মোড় নেয়া শুরু করেছিলো। অনেক মারাত্তক ঘটনা ঘটে গিয়েছিলো উম্মিকার লাইফে। বাজে একতা পরিবারের সাথে উম্মিকাকে নিয়ে সম্পর্ক করেছিলাম যারা কনো অবস্থাতেই আমাদের সাথে যায় না। অবশেষে উম্মিকার সাথে তার স্বামীর বিবাহিক বিচ্ছেদ নিতে বাধ্য করলাম কারন চাপটা আর নিতে পারছিলাম না। ৫৫ বছরের একটা মানুষের জীবনে এই সময় এসে অনেক হিসাব নিকাশের ব্যাপার যেনো চোখের সামনে এসে এটাই বলে গেলো, সময় দ্রুত ফুড়িয়ে যাচ্ছে, হয়তো খুব বেশী সময় ধরে আর এখানে থাকার অবকাশ নাই। আজীবন যখন আমরা শুধু বলেই এসছি, “একদিন” আমি আনন্দ করবো, সেই “একদিন” আমি আমার মতো করে দিন কাটাবো। এই “একদিন” “একদিন” করেই যেনো পেড়িয়ে যাচ্ছে সবগুলি দিন। “একদিন”টা যেনো নাগালেই আসছে না। মেয়েরা বড় হয়ে গেছে, ওদের নিয়ে আর আগের মত ছেলেমিপনা ভাবনা চলে না। এখন ভাবনা ওদের নিয়ে পুরুপুরি বৈষয়িক। বড় মেয়ে উম্মিকা ডাক্তারী পাশ করে ফেলেছে, বিয়েও হয়েছিলো কিন্তু ২০১৯ সালে আর সেটা টিকিয়ে রাখার মতো পরিবেশ ছিলো না। শুরু হলো মারাত্তক আরেকটা বিপর্জয়-কভিড। চারিদিকে মৃত্যুর ছরাছড়ি। ভয়ংকর অবস্থা সব দেশের। অফিস আদালত, স্কুল কলেজ, বর্ডার, সব কিছু বন্ধ। গার্মেন্টস চলছে আমার ভাল, এই কভিডেও আমার ব্যবসা ভালো চলছে কারন আমার বায়ারগুলি সব অন লাইন স্টোরের সুবিধা ছিল।
উম্মিকা ডেলতা মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালে চাকুরী পেয়েছে, মেয়েতা ব্যস্ত থাকছে কিন্তু তার মন সব সময়ই খারাপ থাকে। খুব সাভাবিক। ছোট মেয়ে দেশের বাইরে পড়াশুনার জন্য ইতিমধ্যে ভর্তি হয়ে গেছে। আমার ব্যবসা অন্য সব সময়ের থেকে এখন অনেক সাবলম্বি। কিছু ব্যবসায় ব্যর্থতায় পরিনত হয়েছে আবার নতুন কিছু ব্যবসা যোগও হয়েছে। ডেবিট আর ক্রেডিট ব্যালেন্স হিসাব করলে পজিটিভ দিকেই আছি হয়তো। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অন্য সব বছরের মতো আর দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে না। তারপরেও দুশ্চিন্তা থেকেই যায়। এই দুশ্চিন্তার একটা দিক হলো, এরাও আমাদের মতো বড় হয়। এদেরও শিশুকাল, যৌবনকাল থাকে। আমাদের সাথে সাথে ওরাও বেড়ে উঠে। এরা অলক্ষ্যে থাকে, আবার অলক্ষ্যেই বেড়ে উঠে।
মজার ব্যাপার হলো-দুনিয়ার ক্যালেন্ডার সব বছরে এক থাকলেও তার ইভেন্টসমুহ কখনোই একে অপরের সাথে মিলে না। সপ্তাহের সাত দিনের নাম সপ্তাহান্তে আবারো এক থাকলেও কোনো রবিবার কিংবা কোনো সোমবার কখনোই একে অপরের মতো নয়। অনেক অঘটন, অনেক সুখবর, অনেক মৃত্যু সংবাদে ভরপুর ছিলো এই প্যাকেজের প্রতিটি ক্ষন। উম্মিকার জীবনে একটা মারাত্তক দাগ পড়ে গেছে আমার একটা ভুল সিদ্ধান্তে। মেয়েটি সহজ সরল, আমার মতো। তাই কিছু হায়েনার মতো লোভী পরিবার আমাকে আর আমার পরিবারকে কোথা থেকে সন্নাসীর মতো রুপ ধরে হায়েনার মতো আচরন করে গেছে। ভুল ছিলো, কিন্তু শোধরে নিয়েছি। আর এই সংশোধন আমাকে আমার বড় মেয়ের কাছেও মাঝে মাঝে অপরাধী করে তোলে।
অনেক আপনজনেরা যারা আমাদের মাঝে ছিলো, কোনো অগ্রীম সংবাদ ছাড়াই তারা অনেকেই ওপারে চলে গেছেন। বদি ভাই, নূরজাহান আপা, নাসির দুলাভাই, ছোট ভাবী, বড় ভাবী, দুদু ভাই, সেফালীর স্বামী এ রকম অনেক আপনজন আমাদের থেকে চিরতরে চলে গেছেন। অথচ ওরাও ভাবে নাই ওদেরকে এতো তারাতাড়ি সব চুকিয়ে চলে যেতে হবে।
এই সব মানুষের কথা বারবার মনে হলে, খালী মৃত্যুভয় কাজ করে। কেনো জানি মনে হয়, খুব বেশী সময় যেনো আমারো নাই। তাই, আমি হোমওয়ার্ক করে ধীরে ধীরে সব গুটিয়ে একটা জায়গায় আনতে চাচ্ছি যাতে আমার অবর্তমানে আমার পরিবার কোনো অবস্থাতেই অসচ্ছল অবস্থায় না থাকে। জীবনের অনেক হিসাব পালটে ফেলার চেষ্টা করছি। সবকিছু আমার নয়, আর আমার সবকাজ শেষ করতে পারবো এটারো কোনো গ্যারান্টি আমার কাছে নাই। হাজার একর জমি চাষের উপযোগী করতে গিয়ে কোনো বীজই যখন আর লাগানো শেষ হয় না, তার থেকে সীমিত কিছু জমিতে ফসল লাগিয়ে তার থেকে উতপাদিত ফসলের আনন্দই যেনো এখন মুল চিন্তা হয়ে দাড়িয়েছে আমার। মায়ের কথা মনে পড়ে, বাবার কথা মনে পড়ে। ওনারাও একদিন এমন করেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন কিন্তু আমাদেরকে নিয়েও তাদের দুশ্চিন্তার কোনো শেষ ছিলো না।
পুরু দুনিয়া এই সময়ে একটা ধাক্কা খেলো করোনার মতো মহামারীর কবলে। অনেক শুনেছি মহামারী সম্পর্কে, শুনেছি কিভাবে প্রিথিবী আমুল পরিবর্তন হয় কোনো এক মহামারীর কবলে। এই কভিড-১৯ যেনো পৃথিবীর মানুষকে একটা চরম শিক্ষা দিয়ে গেলো-“ কেউ কারো নয়। যার যার জীবন তার তার। হোক সেটা সম্রাট কিংবা পথের ফকির”। এই মহামারী সবচেয়ে বেশী চিন্তিত করেছে আমাকে এইজন্য যে, আমার অনেক হোমওয়ার্ক বাকী। যে কাজগুলি অসম্ভব জরুরী, আমি এখন সেইসব কাজ গুলি নিয়েই যেনো ব্যস্ত। নতুন ব্যবসা আমাকে এখন আর টানে না, ক্ষমতা আমাকে আর আপ্লুত করে না। নিজেকে বড্ড একা মনে হয়। এই একাকীত্ত আসলে সবার। নিজের ঘরেও আমাকে আজকাল একাই মনে হয়।
অন্তরে অনেক দয়া, মায়া, ভালোবাসা, পার্থিব জীবনের প্রতি লোভ আর অনেককাল বেচে থাকার প্রবল ইচ্ছা যেনো আমাকে আলোড়িত করে আজকাল কিন্তু আমি জানি এই প্রিথিবী কারো জন্যই না। এরপরেও এসেছে অনেকে আমার জীবনে। কেউ আবেগ নিয়ে, কেউ প্রেম নিয়ে, কেউ যাতনা নিয়ে, কেউ দুশ্চিন্তা নিয়ে। এমন কিছু মানুষও এসেছে যাদের জন্য আমার অনেক দায়িত্ত আছে কিন্তু প্রকাশ করবার ক্ষমতা বা পরিবেশ নাই। হয়তো ওরাই সবচেয়ে বেশী মিস করবে যখন আমি আর এখানে থাকবো না।
তারপরেই আমি ওয়াদা করে যাচ্ছি- যতটুকু সময় আমি পাই, আমি তোমাদের সবার জন্য আমার ক্ষমতাবলে এই পৃথিবী তোমাদের জন্য বাসযোগ্য করে যাবো। এই পৃথিবীটা আসলেই অনেক সুন্দর। এর আকাশ সুন্দর, এর বাতাসের শিহরন সুন্দর, এর ঝড়ো হাওয়া সুন্দর, চৈত্রের খড়তাপ সুন্দর, তৃষ্ণার সময়ে জল সুন্দর, গাছের ছায়া সুন্দর, একা থাকাও অনেক সুন্দর। অথচ আমি জানি, আমি চলে যাবো এই সব ছেড়ে। আমি লক্ষ্য করেছি- এও সময়টায় আমার সব লেখাতে যেনো একটা প্রবল বেচে থাকার আকুতি, ভালো বাসার আকুতি কাজ করছে। সম্ভবত- এরই নাম জীবন সায়াহ্ন।
এই সময়ে অনেক গুলি কাল্পনিক চরিত্র আমার লেখায় এসেছে। তার মধ্যে একটা নাম-অরু। অরু নামের কোন চরিত্র বাস্তবে নাই। কিন্তু তার রুপক চরিত্র সর্বদা সমাজের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। এই অরুদের ইতিহাস খুজতে গেলে অনেক লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে আসে। কখনো দেখা যাবে যে, তার জীবন নিয়ে অনেক মানুষ খেলা করেছে, কখনো এদেরকে কেউ তাদের বিশ্বাসের দূর্বলতাকে পুজি করে অতিমাত্রায় ঠকিয়ে অন্য কোথাও সটকে পড়েছে, আবার কখনো কেউ এদেরকে পথ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে পরম যত্নে আদর করে সমাজের ঠিক রেল লাইনটায় উঠিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। কখনো কখনো এমন হয়েছে যে, অসংখ্য অরুরা তাদের আসল জন্মের কাহিনীই জানে না, কে তারা, কোথা থেকে এসছে, কেমন করে কার কাছে বড় হয়েছে। যৌবন, কৈশোর, কিংবা বৃদ্ধকাল কেনো কার কাছে কিভাবে কাটালো তার কোনো কারনই হয়তো তাদের জানা নাই, এমনকি কেনোইবা তার কাছেই কাটাইলো, এর অনেক ব্যাখ্যা অজান্তেই থেকে যায়। যখন মাঝে মাঝে হটাত কেউ সত্যিটা জানে, তখন তার পায়ের তলার মাটিকে একটা অভিশাপ মনে হয়। মনে হয়, নিজের সমস্ত সত্তা আর সফলতা কিংবা ব্যর্থতার মাঝে কোনো ফারাক নাই। নিজের কাছে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। রাগ হয়। কিন্তু কার উপর রাগ? কিসের ভিত্তিতে রাগ? কোনো উত্তর পাওয়া খুব দুষ্কর। এই জগতে ঈশ্বর একটা রহস্যজনক জালে কত প্রকারের খেলা যে খেলে তার সঠিক ব্যাখ্যা আর কারন কোনো মানুষের জানা নাই। এরই মধ্যে অজস্র ফুলের সমাহারের বাগানে এরা একটা আগাছা হয়ে জন্মালেও তাদের একটা নিজস্ব রুপ আছে, নিজস্ব পরিব্যপ্তি আছে। আগাছা ফুলের সমাহার যখন কেউ ভালোবাসে, তখন সে আর আগাছায় থাকে না, ফুলের মধ্যে নতুন এক প্রজাতীর নাম নিয়ে সুন্দর বাগানে ঠাই করে নেয়। তার তখন নতুন একটা নাম হয়। এইসব অরু নামক ফুলেরও একটা পরিচয় থাকে, কখনো এর নাম হয় মাধুরী, কখনো মেঘলা আকাশের মতো উড়ন্ত কালো জল, আবার কখনো রোজেটা নামের কোনো বিদেশী ফুল। এইসব ফুলেরা কখনো কখনো আমাদের সমাজে অতি আখাংকিত ফুলসমুহ থেকেও অধিক মুল্যাবন হয়ে উঠে। তখন গোলাপ, কিংবা জুই, অথবা রজনী গন্ধ্যারাও এদের ধারে কাছে থাকে না। এরা কখনো অভিশাপ হয়ে আসে না, কিন্তু এদের জীবনের মাত্রায় যা দেখা যায়, তার বেশীর ভাগই থাকে অবহেলায় ভরা কানায় কানায় জল। আমি এই রকম একজন অরুর কিছু ব্যক্তিগত উপলব্দি বুঝার চেষ্টা করেছিলাম কোনো এক নামহীন অরুর কাছ থেকে। এই নোটখাতা তেমনি কোনো এক অরুর মনের গোপন উপলব্ধি।তাহলে এখন প্রশ্ন জাগে, অরু নামের কেউ কি আসলে আছে? হ্যা, আছে, তবে ইহা তাহাঁর ছদ্ধনামের এক নামকরন। অরুরা অন্য নামেই বেশী বেচে থাকে। এই অরু আমাকেও অনেক উদ্বেলিত করিয়াছিলো সময়ে কোনো এক অধ্যায়ে।
এই সময়ে আমার মন আর মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। যতোটা না আমি আগের মতো উচ্ছল, বৈষয়িক আর ব্যবসায়িক ছিলাম, ইদানিং বারবার মনে হচ্ছে, কোনো কিছুই আমার নয়। আমি এখানে আর নাই। কোথায় যেনো আমার সত্তা, আমার ধ্যান, আমার চিন্তা শক্তি বিচ্চুরীত হয়ে যাচ্ছে। যতোক্ষন এই পৃথিবীতে মানুষ একা থাকে, ততোক্ষন তারা মনে করে সবাই হয়তো তাদের পাশেই আছে। কিন্তু যখন কেউ কোনো সমস্যায় পড়ে, তখন যাদেরকে মানুষ কাছের মানুষ হিসাবে এতোদিন ভেবেছিলো, তাদের যখন কেউ পাশে থাকে না, তখন আসলেই প্রিথিকে বড় একাই মনে হয়। এই ভাবনাটা যখন সত্যি প্রমানিত হয়, তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়, চেনা মানুষগুলির মুখ তখন এতোটাই অচেনা মনে হয়, নিজের কাছে তখন অসহায় ভাবা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তখন সবচেয়ে যাদের কথা বেশী মনে পড়ে তারা হচ্ছেন বাবা আর মা। কিন্তু আমার সেই দুইজনের মধ্যেও তারা একজনও নাই। যার জীবনের একটি হাত সারা জীবনের জন্য ভাংগা, সে দুই হাতের কাজ এক হাত দিয়ে কখনোই সম্পন্ন করতে পারবে না, এতাই বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতার সাথে তাল মিলাতে গেলে এক হাতের শক্তি নিয়ে যেভাবে জীবনের পরিকল্পনা করা উচিত তার পলিসি একেবারেই ভিন্ন। কারো একটা হাত নাই, এই অযুহাতে এই সমাজ কাউকে আলাদা সুযোগ দেয় না। ফলে যতো মায়া আর যতো পরিচিত মুখই তাদের আশেপাশে থাকুক না কেনো, তারা সব সময় অসহায়ই ছিলো এবং থাকে।
এই অদ্ভুদ বিশ্বে আমি অনেক মানুষের সাক্ষাত পেয়েছি, কখনো অদ্ভুদ সুন্দরের কিন্তু নোংরা মনের, কখনো নোংরা চেহারার কিন্তু অদ্ভুদ সুন্দর মনের, আবার কখনো এমন কিছু লোকের যাদের আমি চিনবার আগেই অচেনা হয়ে গেছে। সব মানুষের চেহারা এক না হলেও তারা দেখতে কেমন যেনো একই রকমের। ঈশ্বর তাদের এমন করে বানিয়েছেন, যাদের প্রত্যেকেরই আছে দুটু করে কান, দুটু করে চোখ আর অন্য সব যা দৃশমান। কিন্তু একটা জায়গায় ঈশ্বর কোনো কিছুই দৃশ্যমান করে দেন নাই যা থাকে বুকের পাজরের ভিতর, সত্তার আড়ালে যার নাম অন্তর। আর এই অন্তরের এক অসাধারন ক্ষমতায় কেউ কেউ এমন কিছু চাকচিক্য আর বর্নচোরার মতো রুপক কিছু সুর নিয়ে খেলা করে যা কিনা শুনতে ভালো লাগে বটে, নেশাও ধরায় তবে ধীরে ধীরে প্রাননাশের কারনও হয়ে দাড়ায় যার নাম হয়তো ভালোলাগা বা ভালোবাসা। কেউ এই ভালোলাগা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে ভালোবাসার কথা বলে, আবার কেউ ভালোবাসার কথা বলে দূরে দাঁড়িয়ে ভালোলাগার কথা বলে। আমি মাঝে মাঝেই বিভ্রান্ত হয়ে এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে ছুটে যাই, কোনটার নাম ভালোলাগা আর কোনটার নাম ভালবাসা ? আমি ভাসতে থাকি কখনো মেঘের ভেলায়, কখনো ঝরের তান্ডবে। আমার এই ৫৫ বছরের জীবনে আমি মাঝে মাঝে বুঝতে পারিনা, কে কি চায়? কার কি অভাব? কোথায় তাদের দুঃখ আর কোথায় তাদের সুখ? তবে আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঠিকই ইংগিত দেয়, কোথায় ঝোপ ঝাড়ের মতো হায়েনারা বসে আছে, আর কোথায় কোন কাপুরূশ তার নিজের বীরত্তকে প্রকাশ করার নব নব রুপে সজ্জিত হচ্ছে। সব কিছুই মাঝে মাঝে ভ্রম মনে হয়।
আমি ইদানিং অনেক কিছুই আর আগের মতো করে জানি না, বুঝি না, আমি এ পৃথিবীর মানুষের অনেক চাহনীর ভাষাও বুঝি না। কিছু অদৃশ্য কিছু যেনো হটাত করে আমার সাজানো বাগান অগোছালো করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিটি নিঃশ্বাসে, মাঝে মাঝে আমার প্রতিটি বিশ্বাসেও । আমি বুঝে উঠতে পারছি না, আমি কি হেটে এগিয়ে যাব, নাকি দৌড়ে পালিয়ে যাবো, কিন্তু আমার শরীর আর মন একই দিকে ছুটছে না এটাই শুধু আমি বুঝতে পারি। মন যদি এগোয়, শরীর পিছোয়, আবার শরিড় যখন এগোয়, মন পিছিয়ে যায়। সেই সব নীলিমার নীল আকাশের মতো হটাত আমার আকাশ মাঝেই মাঝেই যেনো মেঘলা হয়ে যায়। কখনো কখনো মনে হয় আমার বুকে ব্যথা, আবার কখনো কখন মনে হয় সেই অচেনা মানুষটাই আমার বুকের ব্যথার কারন।
আমার দ্বৈত সত্তার যেনো উদ্ভব হয় কখনো কখনো। এই দ্বৈত সত্তার একটি যেনো মাঝে মাঝে ঠিক আমার কথাগুলিই বলে যায়, আবার কখন কখন মনে হয় আমার সাথে তার যেনো কোথাও কোন মিল নাই। আমার কষ্টের সময়ে সে মাঝে মাঝে ঠিক আমার সামনে এসে হাজির হয়, মনে হয় যেনো সে আমার কথা শোনার জন্যই যেন বসে আছে। আমার দু চোখ বেয়ে যখন জল পড়ে, সে যেন আমার এই চোখের জল মুছতেই হাজির হয়। আবার কখনো কখনো এমন হয়, সে যেন আমাকে কিছুই বুঝে না। আমি যেনো তার কাছে এতই দূর্ভেদ্য যে, কোনো ভাষাই যেন বোধ গম্য নয়। অনেক প্রশ্ন জাগে মনে- কে সে?
ট্যুর
একটা সময় ছিলো যখন প্রায়ই মনে হতো, বিদেশ যাবো, ঘুরবো, মজা করবো। প্লেন দিয়ে বিদেশ যেতে কতই না মজা। যেদিন প্রথম বিদেশ যাই, সেদিনকার অভিজ্ঞতাই আলাদা। দিন যেতে থাকে, আর প্রায়ই বিদেশ যাওয়ার মাত্রা বাড়তে থাকে আমার। এমন কি বিদেশে গিয়ে মাসের পর মাসও থাকা হচ্ছে, কিন্তু একটা সময় এলো যখন বিদেশ যাবো এটা ভাবলেই আর ভালো লাগে না। প্লেন জার্নীও আর আগের মতো টানে না। বড় বিরক্ত মনে হয়। ইন্ডিয়া ঘুরেছি, তূর্কী গিয়েছি, রাশিয়ায় থেকেছি, আমেরিকায় বেড়িয়েছি এবং থেকেছি, হাইতিতে প্রায় এক বছরের বেশী বসবাস করেছি। তার পাশে ডমিনিকানেও ঘুরেছি। মালয়েশিয়ায় পরিবারসহ ঘুরেছি, সৌদি আরবে একাধিকবার গিয়েছি, চায়না কতবার গিয়েছি এখন আর মনে রাখতেও ইচ্ছে করে না। জর্জিয়া, আবখাজিয়া কত জায়গায়ই ঘুরলাম। পিটার্সবার্গ ঘুরে কত ইতিহাস এর সাক্ষী দেখেছি, কিন্তু নিজের দেশের মতো দেশ আর কোথাও নাই।
১৯৯৫ সালে আমি জাতীসংঘ মিশনে হাইতিতে যাই। প্রায় এক বছরের বেশী ওখানে থাকার সুবাদে পাশের দেশ আমেরিকায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো। মাসাধিক কাল আমেরিকায় থেকে দেখেছি পাশ্চাত্য লাইফের কি যৌলুস। দিতীয়বার জাতীসংঘের অধীনেই আবার মিশনে গিয়েছিলাম জর্জিয়াতে। জর্জিয়া এক সময় বৃহত্তর রাশিয়ার অধিনে ছিলো যেখানে স্ট্যালিন, কিংবা গর্ভাচেভের মতো বিখ্যাত লোকেরা জন্মেছিলেন। জর্জিয়ায় থাকা কালীন ডিউটি করতে হয়েছে পাশের দেশ আবখাজিয়াতেও। যুদ্ধ বিরতি চলছিলো সেখানে। কোনো দেশকেই আমার খারাপ লাগে নাই। দুটূ দেশই কোনো এক বৃহত্তর শক্তি (রাশিয়া) কারনে বিভক্ত ছিলো। আমি জানি কোনো এক সময়ে রাশিয়াকে এই অঞ্চল ছাড়তেই হবে। ঠিক এই সময়ে অনেকবার পাশের দেশ তুরষ্কে গিয়েছি আনলিমিটেড টাইম। মুসলমান দেশ বটে কিন্তু বেশীরভাগ মানুষকে দেখলে বুঝা যাবে না তারা কতটা মুসল মান আর কতটা মুসল মান নয়। আতাতুর্কের দেশ তুরষ্ক এক সময় কি কারনে পাশ্চাত্য রুচিতে পেয়ে বসেছে তা আমার জানা নাই কিন্তু একটা সময় হয়তো আসবে তারা আবারো মুসল মানের ঐতিহ্যে হয়তো ফিরে আস্তেই হবে। যাই হোক, এই দুটু প্রান্তেই বসবাস করে আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম পাশ্চাত্য থেকে ইউরোপের মান অনেক বেশী শক্তিশালী। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো আরেকটা মহাদেশ “চীন” দেখার। ক্রমাগত অনেক ব্যবসার কারনে আমাকে চীন যেতে হয়েছে বারংবার। আমি দেখেছি ব্যাঙ খাওয়া এই মানুষগুলি খুব সাধারন হলেও এদের শাসকেরা কোনোভাবেই গ্লোবাল রাজনীতিতে ফেলনা কেউ নয়। আসলে এরাই দুনিয়ার অর্থনীতিকে একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রন করে। পাশের দেশ “ইন্ডিয়া” আমাকে কখনো টানে নাই কিন্তু অফিশিয়াল কাজে এবং পরবর্তীতে ব্যবসায়ীক অনেক কাজেও আমাকে ইন্ডিয়া যেতে হয়েছে অনেকবার। আমি এই উপমহাদেশ নামক ইন্ডিয়ায় যা দেখেছি তা এক কথায় বলা যায় যে, অন্ধ বিশ্বাসে কিছু মানুষ এখনো সভ্য জগতে বসবাস করে যেখানে বিধাতা হচ্ছেন কিছু কাঠের পুতুল কিংবা মাটির ঠেলা। যেখানে একটি অবুঝ গরু ও দেবতার স্থান পায় সেখানে মানুশের মতো অনেক প্রানীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় সেখানে। বসবাসের জন্য অনেকটাই বিপদ সংকুল একটা জায়গা কিন্তু বেড়ানোর জন্য অতীব চমৎকার। মালয়েশিয়া গিয়েছি শুধুমাত্র বেড়ানোর জন্য। মাহাথিরের দেশ এই মহানায়ক কতটা এগিয়ে নিয়ে গেছে না দেখলে বুঝা যায় না। দেশের জন্য আসলে লিডারের দরকার সবচেয়ে বেশী।
সঙ্গত কারনেই আমি আমার পরিবার নিয়ে কয়েকবার পবিত্র কাবা ঘরের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। মন বড় শান্ত থাকে এই পবিত্র ভুমিতে। কিন্তু এই দেশের শাশকেরা অনেকেই আজকাল আর মুসল মানদের আইকনের মধ্যে নাই। পাশ্চাত্য প্রভাব ওখানে এতোটাই বেশী ছাপ পড়ে গেছে যে, আমার ধারনা, কোনো একদিন স্বয়ং বিধাতা এর নিয়ন্ত্রন নিতে বাধ্য হবেন কারন তার স্বয়ং বন্ধু ঐ পবিত্র ভুমিতে শায়িত। ডমিনিকান দেশটি হাইতির পাশাপাশি হলেও একটা জিনিষ খুব চোখে পড়ার মতো ছিলো যে, হাইতিতে মানুষ গুলি ছিলো কালো আর অগোছাল কিন্তু ডমিনিকানে গিয়ে দেখেছি সেখানে মানুষ গুলি সাদা আর গাছের নীচেও শান্তিতে ঘুমায়। সেই হিসপানিওয়ালার দেশ। এখনো মানুষ ওখানে ইতিহাস পড়ে। চারিদিকে বন আর জংগল কিন্তু ভিতরে অদ্ভুত পরিষ্কার মানুষ গুলির মতো। সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়ার আরেকটি দেশ হলেও এখানকার পরিবেশ আর আলোকিত সউন্দর্য চোখে পরার মতো। ব্যবসায়িক কাজেই গিয়েছিলাম সেখানে। আলেক্সের কথা আমার মনে থাকবে আজীবন।
পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে জাত, দেশ, ধর্ম কিংবা বর্ন যাই হোক না কেনো তাদের মধ্যে কমন অনেক কিছু আছে। সবার কাছে তার পরিবার সত্য, সবার কাছে ধর্মের কোনো না কোনো একটা বিশ্বাস আছেই, সবাই কাউকে না কাউকে ভালোবাসে। দুঃখে কিংবা বেদনায় সবাই চোখের জল ফেলে, খুশীতে সবাই একই রকম করে হাসে, সবার পেটে ক্ষুধা লাগে, সবাই কোনো না কোনো সময় ঘুমায়। এই এতো কিছু কমন থাকার পরেও মানুষ সবাই আলাদা আলাদা। আমি যেখানেই ভ্রমন করেছি, খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখেছি, মানুষ আসলে দয়ালু, তারা হিংস্র নয়। যদি কেউ হিংস্র হয়, সেটা পরিস্থিতি, পরিবেশ আর ঘটনা তাঁকে ঐ পথে ঠেলে দেয় অথবা অতিরিক্ত সার্থের কারনে মানুষ তার আসল চরিত্র পালটে এমন একটা চরিত্র বেছে নেয় যা সবার চোখে হয় অতি মানবিক বা পৈশাচিক। কেহই অতি মানবিক বা পৈশাচিক হয়ে জন্ম নেয় না। মানুষের মধ্যে প্রকৃতি গত ভাবেই সে প্রেমিক। তাই দেখা যায় আজারবাইজানের কোনো এক মহিলার প্রেমে ঘুরপাক খাচ্ছে নাইজেরিয়ার কোনো এক প্রেমিক অথবা নাম করা কোনো গুন্ডাও হয়তো অন্য কোনো রমনীর চিন্তায় মগ্ন। ভ্রমনে আমার এটাই ছিলো সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নাল
বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালে আমি খুব একটা লিখি না কারন সময় পাইনা। তাছারা সবধরনের লেখাও এই পত্রিকাটা ছাপাতে পারে না, দেশের আইন কানুনের মধ্যে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকার জাতীয় সমসাময়িক বিষয় নিয়েও লেখা অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই বেশীরভাগ লেখা গ্লোবাল পার্সপেক্টিভ থেকে লিখা যা জাতীয় সমসাময়িক লেখার মতো সমস্যা নাই। রোহিংগা ইস্যু নিয়ে যে লিখাটা লিখেছি সেটাও গ্লোবাল ইস্যু মনে করেই লিখা। ডিফেন্স জার্নালকে ধন্যবাদ যে, তারা শুধু মাত্র এই একটি লেখা দিয়েই একটা পাক্ষিক ছাপিয়েছেন। ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক লেঃ (অবঃ) আবু রুশদ আমার আর্মির জীবনে কোর্ষমেট ছিলো। অসম্ভব মেধাবী একজন অফিসার। আমি প্রোফেশনাল লেখক নই। কাজের ফাকে যখনই সময় পাই, তখন লিখতে মন চায়। পড়াশুনার পাশাপাশি আমি গ্লোবাল এবং জাতীয় সমসাময়িক ইস্যু গুলি নিয়ে অনেক গভীরে ভাবি। আর সেই ভাবনা থেকেই লেখা গুলি। সব গুলি লেখা মৌলিক, তবে যাদের কোনো লেখা রেফারেন্স হিসাবে আনা হয়েছে, তাদের সবগুলি বরাত আমি উল্লেখ করেছি। আমার আর্টিক্যাল গুলি কেউ যদি কপি কিংবা শিক্ষার জন্য কোথাও ব্যবহার করতে চান, করতে পারেন তবে সেখানে আমার লেখার রেফারেন্স দেয়া বাধ্যতামুলক। কপি রাইট রাখিনি কিন্তু রেফারেন্স আবশ্যক যদি কেউ ব্যবহার করতে চান। এখানে আরো উল্লেঝ্য যে, যদি আমার লেখাগুলি কেউ ব্যবসায়িক কাজে কপি করতে চান বা ব্যবহার করতে চান, আর সেটায় যদি বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের কোনো আপত্তি থাকে, তাহলে ডিফেন্স জার্নালের মতামতই চুড়ান্ত।
প্রোটেক্টেড (অন্য দুনিয়া)
রহস্য।
এমন একটা নাম, যে নিজেই সবার কাছে এক রহস্য। এই পৃথিবীর প্রতিটি প্রানীর নিজস্ব একটা রহস্য থাকে। সে সেই রহস্য বুকে নিয়েই আজীবন প্রকাশ্য দিবালোকে সবার সাথে উম্মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায় যেনো আমরা যা দেখছি সেটাই সব, কিন্তু তার ভিতরে, অন্তরে, মনে বা মগজে হয়তো কিছু না কিছু রহস্যঘেরা জাল রয়েই যায়। এই রহস্যের কোনো কুল কিনারা নাই, না আছে সরল অভিব্যক্তি। এই রহস্য কখনো সত্যতায়, কখনো মিথ্যায় আবার কখনো দুঃখের ভারাক্রান্ত পিপায় কানায় কানায় ভরে থাকে। এটা খুব সহজ নয়, আছে কিনা বাস্তবে তাও সঠিক বুঝা যায় না কিন্তু নাই এটা বলা যাবে না। কোনো ভিক্ষুক আজীবন ভিক্ষে করে খেলেও দেখা যাবে সে আসলে কখনোই ভিক্ষুক ছিলো না, তার কাছে যা ছিলো তা দিয়ে হয়তো আর পাঁচ দশটা মধ্য ক্লাসের পরিবারকে আজীবন লালন করা যায়, অথচ রহস্য হচ্ছে সেই ভিক্ষুক সারাদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে জরাজীর্ন কাপড় পড়ে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করাই ওর নেশা। এই রহস্য বুঝা মুষ্কিল। আবার দেখা যায়, সদাহাস্য যে মানুষটি আমার আর আপনার সামনে কখনো মন খারাপ করতে দেখা যায় না, হয়তো যখন সে নিতান্তই একা থাকে, অথবা গভীর রাতে যখন তার ঘুম ভাংগে, তখন হয়তো কোনো এক একাকীত্তের বেদনায় তার দুই চোখ জলে ভরে থাকে অথচ দিনের আলোয় তার ঠোটে সব সময়ই থাকে একটা মনকারা হাসি। কি সেই গোপন রহস্য? অরু, শারমিন, মাধুরীর পরিচয়টা আমি ইতিমধ্যে দিয়েছি। কিন্তু এরা কি আসলেই কেউ ছিলো? সবার জীবনেই এমন কেউ থাকে যারা কোথাও না কোথাও অরু, বা শারমিন, মাধুরী, বা ঘষেটি বেগম অথবা মনিকা, বা পারু হয়ে বাচে। এরা মেরুদন্ডসম্পন্ন শক্তিহীন প্রানীর মতো ঠিকই কিন্তু যদি প্রয়োজনিয় পুষ্ঠির জোগান দেয়া যায়, মায়াবী ব্যবহাত্রে মমতায় গড়ে তোলা যায়, তারা লিকলিক করে বড় সুফলা গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে কিন্তু বেশীর ভাগ সময়েই এরা থেকে যায় অপ্রকাশ্যে। রাস্তাঘাটে চলার সময়ে আমি এদের দিকে তাকাই, ভাবি আর আমার কল্পনায় ওরা জীবিত হয়ে উঠে এই ডায়েরীতে। অথচ আমি এদের কাউকেই চিনি না। তবে বড্ড মায়া হয় এদের জন্য। আমিও তো হতে পারতাম ওদের মতো কেঊ?
এইসব ছিন্নমূল মানুষ গুলির জীবনের গল্প আলাদা। এদের কান্নায় ভরে থাকে ভালোবাসা, এদের ভালোবাসায় ভরে থাকে বেদনার মতো অনেক কাহিনী। এটা তো ঠিক যে, কান্নার আহাজারীতে সুর থাকে না, থাকে বেদনা আর কষ্ট যে কষ্টের কোনো নাম নাই, যে কষ্টের রুপ কাউকে দেখানো যায় না। এরা এমনই কিছু মানুষ “অন্য দুনিয়া”য় একাই থাকে। আমাদের মানুষের সবচেয়ে বড় অক্ষমতা হচ্ছে-আমরা ভিতরেরটা দেখি কম, কিন্তু সত্যিটা সব সময় মানুষের ভিতরেই থাকে। এইসব ছিন্নমূল মানুষেরও শৈশব কাল ছিলো, যৌবন ছিলো, হয়তো সেইসব শৈশব কিংবা যৌবন আমাদের অনেকের থেকেই আলাদা। সময়ের সাথে সাথে যে কোনো ডকুমেন্ট পালটে দেয়া যায়, যে কোন ডকুমেন্ট নকল করা যায় হুবহু আসলের মতো কিন্তু কেউ কি কখনো তার অতীতের সেই শৈশব, যৌবন পালটে দিতে পেরেছে? কিন্তু এইসব ছিন্নমুল মানুষগুলির সেটাও পালটে যায়, তাদের মুখাবয়বও পালটে যায়। বাচার জন্য পালটে ফেলতে হয় তাদের সব। তাই এসব “অন্য দুনিয়ার” মানুষগুলির বাহ্যিক চেহারা আমরা দেখতে পাই বটে কিন্তু এদের ভিতরের কষ্টটা আমরা না দেখতে পাই, না বুঝতে পারি। বাচার তাগিদে এরা নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়েও কাজ করে। তারা তাদের জীবনের পাহাড় অতিক্রম করার জন্য আপ্রান চেষ্টায় সারাটি জীবন একাই যুদ্ধ করতে করতে এক সময় হয় অকুল সাগরে ভেসে যায় অথবা হয়তো কোনো কিনারে এসে থেমে যায়। তারপরেও মানবিক গুনাবলীর অংশ হিসাবে এরাও প্রেম করে, এরাও ভালো একটা জীবন পাওয়ার আশায় ঘর বাধার সপ্ন দেখে। কিন্তু বেশীরভাগ সময়েই যখন প্রেম নামক এই দুধটুকু পুড়ে শেষ হয়ে যায়, তখন মনে হয় ঘোড়া এসেছিলো, ঘোড়া জলও খেয়েছিলো, কিন্তু কেউ কোনোদিন ঐ ঘোড়াকে বাস্তবে দেখে না।
এ জগতে সবচেয়ে বড় রহস্য বিধাতা নিজে, আর সেই রহস্যময়ী বিধাতা মানুষের জন্য আরো কিছু রহস্য তৈরী করে জাল বুনে রাখেন। তারমধ্যে অন্যতম “সময়”, “সম্পর্ক”, “মন”, “অন্তর”, “মায়া”, “ভালোবাসা”, আর “চোখের জলের” সাথে “ঠোটের হাসি”। রাগ, গোস্যা, ঘেন্না কিংবা হানাহানি কোনো রহস্য নয়। কেনো নয়? এই রহস্যের কোনো ব্যাখ্যা নাই।
অন্য দুনিয়ার সব কিছু আলাদা। এখানে সম্পর্ক আলাদা, এখানে মানুষের সাথে মানুষের চাহিদা আলাদা। এখানে কেউ কারো না বন্ধু, না শত্রু। এদের মধ্যে একটা অলিখিত বন্ডেজ থাকে। এরা বাস্তব, এই দুনিয়ায় যা ঘটে সব কিছুই বাস্তব এবং সব কিছু অনুভুতিতে থাকে কিন্তু জগতটা যেনো বাস্তব না। এখানের কল্পনা সত্য, আচরন সত্য, অথচ ব্যাপারটা বাস্তব না। আবার অন্যদিকে এদের সবাই জীবিত, যার যার নাম আছে কিন্তু এরা কোনো কিছুই করে না বলে মনে হয়। এদের বাস্তবতায় দুটু প্রক্রিয়া বিদ্যত্মান। এক মুখুশ আরেক মুখ। কখনো মুখ দেখা যায় এদের, আবার কখনো মুখুস দেখা যায়। এই মুখ আর মুখুশ দুটুই এক, আবার দুটুই ভিন্ন। অবাক না?
আমার এই কলামে যেসব কাহিনী উল্লেখ করা আছে, এগুলিও সে রকমের একটা কিছু। কোনো কিছুই কাল্পনিক নয়। তবে চরিত্রগুলির সম্মান রক্ষার নামে হয়তো সঠিক নামগুলির জায়গায় অন্য আরেকটা নাম ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে, কেউ যদি মনে করেন যে, কারো জীবনের সাথে বা পরিবারের সাথে আমার এই সাহিত্য মিলে যায়, সেটা হতে পারে কিন্তু আমি তাদের কোনো অভিযোগ আমলে নেবো না কারন এই দুনিয়ায় একই চরিত্র, একই ঘটনার বারবার ফিরে আসে অনেকেরই জীবনে। আমার এই পর্বের লেখার মধ্যে কারো কারো নাম সঠিকভাবেই উল্লেখ করা যেমন হয়েছে, তেমনি কারো কারো ব্যাপারে একেবারেই ছদ্দনাম ব্যবহার করে হয়তো ঘটনাটা লিখা হয়েছে। এমতাবস্থায় আমি আমার লেখায় যদি কারো সম্পর্কে এমন কিছু লিখে থাকি যা হয়তো সঠিক নয়, সেটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মন্তব্য, এর জন্যে কাউকে দায়ী করা যাবে না, এমনকি আমিও তার কোনো দায়ভার নেবো না কারন এটা গল্পই। আর এর মাধ্যমে আমি যদি কাউকে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি, তাহলে আমি করজোড়ে ক্ষমাপ্রার্থী।
এইপর্বে এমনি কিছু নাম এসেছে যেমন “নীল”, “অরু”, “শারমিন”, “মনিকা”, “সন্ধ্যা”, “রুনা” “হ্যাপি” “পারু” কিংবা “জ্যোৎস্না” ইত্যাদি যারা ছিলো এই পৃথিবীতে কিন্তু একটা ভিন্ন নামে। তাদের সাথেও আমার কোনো না কোনো সময়ে দেখা হয়েছে, উপলব্ধি করেছি তাদের আচার ব্যবহার। আমার ও অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে এইসব চরিত্রের বিভিন্ন গুন বা বদগুন কিংবা তাদের অভ্যাসের কাছ থেকে। উদাহরন সরুপ যদি বলি-নীল একজন কাল্পনিক মানুষের নাম, যিনি কোনো এক সময় তার প্রিয় একজন মানুষকে হটাত করেই তার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেন। তিনি সমাজের প্রতিটি গলিতে, হাটে বাজারে, সোস্যাল ভার্চুয়াল জগতে সর্বত্র খুজতে থাকেন। এই বিশাল জগতে, একটা মানুষকে খুজে পাওয়া যতোটা সহজ, খুজে না পাওয়াটা ততোটাই কঠিন। তার অত্যান্ত পরিচিত কোনো এক কাছের মানুষ, যার নাম শারমিন। তাকে তিনি সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছিলেন তার অসহায় পরিবার আর জীবনের জন্য। কিন্তু নীলের নাম জস, খ্যাতি, পজিসন শারমিনকে এতোটাই সার্থপর করে তোলে যে, শারমিন জ্ঞাতসারে নীলের বন্ধু সেজে যতোটা তার ক্ষতি করা যায় সেটাই ছিলো শারমিনের লক্ষ্য। ফলে শারমিন তার ব্যক্তিগত ফায়দা লুটার জন্য একের পর এক গোপন চাল চালতে থাকে। নীলের হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে খুজে পাইয়ে দেওয়ার পরিবর্তে শারমিন এমন কিছু চাল চালতে থাকে যাতে নীলের ভালবাসার মানুষটা নীলকে আরো ঘেন্না করতে শুরু করে। যদিও নীলের ভালোবাসার মানুষটা নীলকে শারমিনের কুটচালের জন্য রাগে অভিমানে ঘেন্না করতে শুরু করে, কিন্তু তার মনের ভিতরের ভালোবাসাটা জেগেই থাকে। অতঃপর, একদিন নীল, বুঝতে পারে, শারমিনই তাদের সমস্ত অনিষ্ঠার কারন এবং ক্ষতির একমাত্র চালবাহক। যখন নীল শারমিনের এই চাল বুঝতে পারে, তখন শুরু হয় নীলের আরেক খেলা যা শারমিনের সমস্ত সাজানো পরিকল্পনা আর সুখ অচিরেই সমাপ্ত হয়ে যায়।
কিংবা যদি অরুর প্রসংগে আসি, সেখানেও এ রকমের একটা সাসপেন্স ছিলো। অরু নামের কোন চরিত্র বাস্তবে নাই। কিন্তু তার রুপক চরিত্র সর্বদা সমাজের চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। এই অরুদের ইতিহাস খুজতে গেলে অনেক লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে আসে। কখনো তার জীবন নিয়ে অনেক মানুষ খেলা করেছে, কখনো এদেরকে কেউ তাদের বিশ্বাসের দূর্বলতাকে পুজি করে অতিমাত্রায় ঠকিয়ে অন্য কোথাও সটকে পড়েছে, আবার কখনো কেউ এদেরকে পথ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে পরম যত্নে আদর করে সমাজের ঠিক রেল লাইনটায় উঠিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। কখনো কখনো এমন হয়েছে যে, অসংখ্য অরুরা তাদের আসল জন্মের কাহিনীই জানে না, কে তারা, কোথা থেকে এসছে, কেমন করে কার কাছে বড় হয়েছে। যৌবন, কৈশোর, কিংবা বৃদ্ধকাল কেনো, কার কাছে, কিভাবে কাটালো, আর তার কাছেই কেনো কাটালো, এর অনেক ব্যাখ্যা অজান্তেই থেকে যায়। যখন মাঝে মাঝে হটাত কেউ সত্যিটা জানে, তখন তার পায়ের তলার মাটিকে একটা অভিশাপ মনে হয়। মনে হয়, নিজের সমস্ত সত্তা আর সফলতা কিংবা ব্যর্থতার মাঝে কোনো ফারাক নাই। নিজের কাছে নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। রাগ হয়। কিন্তু কার উপর রাগ? কিসের ভিত্তিতে রাগ? কোনো উত্তর পাওয়া খুব দুষ্কর। এই জগতে ঈশ্বর একটা রহস্যজনক জালে কত প্রকারের খেলা যে খেলে তার সঠিক ব্যাখ্যা আর কারন কোনো মানুষের জানা নাই। এরই মধ্যে অজস্র ফুলের সমাহারের বাগানে এরা একটা আগাছা হয়ে জন্মালেও তাদের একটা নিজস্ব রুপ আছে, নিজস্ব পরিব্যপ্তি আছে। আগাছা ফুলের সমাহার যখন কেউ ভালোবাসে, তখন সে আর আগাছায় থাকে না, ফুলের মধ্যে নতুন এক প্রজাতীর নাম নিয়ে সুন্দর বাগানে ঠাই করে নেয়। তার তখন নতুন একটা নাম হয়। এইসব অরু নামক ফুলেরও একটা পরিচয় থাকে, কখনো এর নাম হয় মাধুরী, কখনো মেঘলা আকাশের মতো উড়ন্ত কালো জল, আবার কখনো রোজেটা নামের কোনো বিদেশী ফুল। এইসব ফুলেরা কখনো কখনো আমাদের সমাজে অতি আখাংকিত ফুলসমুহ থেকেও অধিক মুল্যাবনা হয়ে উঠে। তখন গোলাপ, কিংবা জুই, অথবা রজনী গন্ধ্যারাও এদের ধারে কাছে থাকে না। এরা কখনো অভিশাপ হয়ে আসে না, কিন্তু এদের জীবনের মাত্রায় যা দেখা যায়, তার বেশীর ভাগই থাকে অবহেলায় ভরা কানায় কানায় জল। আমি এই রকম একজন অরুর কিছু ব্যক্তিগত উপলব্দি বুঝার চেষ্টা করেছিলাম কোনো এক নামহীন অরুর কাছ থেকে। তাহলে এখন প্রশ্ন জাগে, অরু নামের কেউ কি আসলে আছে? হ্যা, আছে, তবে এই অরু তার ছদ্ধনামের এক নামকরন। অরুরা অন্য নামেই বেশী বেচে থাকে।
বয়স হয়ে গেছে প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি। অনেক লম্বা সময়।
সেই শিশুকাল, কিশোর কিংবা যৌবনের সময়টা এখনো যেনো খুব পরিষ্কার মনে পড়ে। গ্রামের মেঠোপথ ধরে স্কুল মাঠ থেকে ঘর্মাক্ত শরীরে সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা, কাধের উপর থরে থরে সাজানো বই নিয়ে স্কুলে যাওয়া, বৈশাখী মেলায় হরেক রকমের বাশি বাজিয়ে বাজিয়ে হই হুল্লুর করা, বৃষ্টির দিনে দুরন্ত কিছু বাল্যবন্ধুকে নিয়ে মাঠে ফুটবল খেলা, স্কুলে শিক্ষকদের পড়া না পাড়ার কারনে শাসিত হওয়া, আরো কত কি!! সবকিছু পরিষ্কার মনে আছে।
এই লম্বা সময়ে পরিবারের অনেকের সাথে, পাড়া পড়শী কিংবা জানা অজানা কত বন্ধুবান্ধবদের সাথে অনেকগুলি সময় কাটিয়েছি, কেউ কেউ এর মধ্যে জীবনের সব লেনদেন শেষ করে একে একে ওপারে চলে গেছে, আর সাথে নতুন জীবন নিয়ে আরো অনেক নতুন মুখ আমাদের সাথে যোগ হয়েছে। আমরা যারা আজো বেচে আছি, তারা সেই চলে যাওয়া মানুষগুলির সাথে আর নতুন মানুষদের যোগ হবার মধ্যে একটা সেতু বন্ধন করে আছি। আমরা সেই চলে যাওয়া মানুষগুলির কথা নতুনদের মাঝে আদান প্রদান করলেও তাদের সময়ের চিত্র আজকের দিনের মানুষগুলিকে শতভাগ বুঝানো হয়তো যায় না। কিন্তু আমাদের স্মৃতির পাতায় সেগুলি এখনো উজ্জ্বল হয়ে রয়ে গেছে। আমরাও একদিন তাদের মতো চলে যাবো, আর আজকের নতুন যোগ দেয়া মানুষগুলিও সেই একই সেতু বন্ধনের মতো কাজ করে আগত নতুন মুখগুলির সাথে একটা ব্রীজ তৈরী করবে। এভাবে ক্রমাগত একটা সাইকেল চলবে।
এরমধ্যে যুগ পালটে যাচ্ছে, এই যুগের মানুষগুলির সাথে সেই যুগের মানুষগুলির মধ্যে অনেক ফারাক হয়ে গেছে। সন্ধায় এখন আর আড্ডা বসে না, মাঠে আর বড়রা গোল হয়ে বসে তাস খেলে না, ছোট ছোট পোলাপানেরা এখন আর ডাংগুলি খেলে না, মেয়েরা এখন আর দলবেধে কলশী কাখে নিয়ে নদী থেকে ভিজা কাপড়ে জল তুলে আনে না, রাখালেরা এখন আর সেই ভাটিয়ালী গান গেয়ে গেয়ে বাড়ি ফেরে না। এখন সবাই সবাইকে নিয়ে একা একাই সময় কাটাতে পছন্দ করে। ফোনের ভিতরে চলে গেছে আজকের দিনের মানুষগুলির জীবন। যে জরুরী খবরটা মাসীকে দেয়ার জন্য, কিংবা জরুরী কাজের নিমিত্তে কাউকে হাট বাজার থেকে ডেকে আনার জন্য রোদ পেড়িয়ে মাইলের পর মেইল হেটে গিয়ে কাজটা করতে হতো, সেটা আর এখন দরকার পড়ে না। শুধু একটা মিসকল দিলেই কিংবা মেসেজ ঠুকে দিলেই সব যেনো হয়ে যাচ্ছে। এতো কিছু থাকতেও আমরা আজকে জেনারেশন থেকে জেনারসনে ডিসকানেক্টেড হয়ে যাচ্ছি। অথচ আরো বেশী কানেক্টেড থাকার কথা ছিলো।
সবাই ক্লান্ত এখন। সবাই অসুস্থ্য বোধ করে এখন। বড়রা ক্লান্ত, ছোটরা ক্লান্ত, মালিকেরা ক্লান্ত, শ্রমিকেরা ক্লান্ত, রোগীরা ক্লান্ত, ডাক্তাররা ক্লান্ত, ছাত্ররা ক্লান্ত, শিক্ষকরাও ক্লান্ত। ঘরে স্ত্রী ক্লান্ত, স্বামীও ক্লান্ত, কাজের বুয়া শুধু আজো ক্লান্ত নয়। হয়তো সেও কয়েকদিন পর ক্লান্ত হয়ে যাবে। পোষ্টম্যান বেকার, পোষ্টমাষ্টার বেকার, অথচ তাদের কারোরই সময় নাই হাতে। সবাই ব্যস্ত। ছেলেমেয়েরা ব্যস্ত, বাবা মায়েরাও ব্যস্ত, আত্তীয় স্বজনেরা ব্যস্ত, বন্ধুবান্ধবেরাও ব্যস্ত অথচ সারাদিন কিংবা বেশীরভাগ সময় তারা একই জায়গায় থাকে। ছাত্ররা প্রচুর পড়াশুনা করে কিন্তু বই পড়ে না। প্রচুর লেখালেখি করে কিন্তু বই আকারে প্রকাশ হয় না। সমাজ নিয়ে অনেক গবেষনা করে কিন্তু কোনো আবিষ্কার হাতে আসে না।
একটা অসুস্থ্য সমাজ গড়ে উঠছে প্রতিদিন। মায়া মহব্বতবিহীন, দায়িত্ববিহীন এবং একাকীত্ব জীবন সমৃদ্ধ একটা সমাজ গড়ে উঠছে দ্রুত। আর এই অসুস্থ্য সমাজের মধ্যে আমরাও নেতিয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত কম্প্রোমাইজ আর এডজাষ্টমেন্ট করতে করতে।
সাহিত্য
মানুষ আর অন্য প্রানীর মধ্যে অনেক পার্থক্যের মধ্যে একটা বিশেষ পার্থক্য হচ্ছে এই যে, মানুষ তার উপলব্ধি, অভিব্যক্তি, কিংবা অনুভুতি অন্যজনের সাথে শেয়ার করার বাইরেও সে কারো সাথে তা শেয়ার না করেও গোপনে, নিজের সাথে নিজেই একা একা শেয়ার করতে পারে এবং তাতে তার অনেক কিছুই লাঘব হয়। এই নিজের সাথে নিজে কিছু উপলব্ধি একান্তে বলা যায় লেখার মাধ্যমে, কিংবা পরিচয় গোপন করে ছদ্দনামে অথচ সত্য ঘটনা হিসাবে গল্প আকারে, সাহিত্য আকারে। কোনো সাহিত্যই একেবারে নিছক মিথ্যা প্লটের উপর রচিত হয়না। তার কিছু না কিছু সত্যতার রেশ থেকেই এসব সাহিত্য, রচনা ইত্যাদির জন্ম। আমরা সবাই গল্প করতে ভালোবাসি, অনেক গল্প হয়তো বানানো, কিন্তু এমন অনেক গল্প আছে যা বানানো নয় অথচ সত্য বলেও চালানো যায় না। সেসব কাহিনীর মাঝে থাকে কষ্ট, বেদনা, কিংবা দুঃখ। কিছু কষ্ট আছে কাউকে বলা যায়, আবার কাউকে এসব বেদনা এতোটাই ভারাক্রান্ত করে তোলে যে, এর না আছে কোনো সমাধান না আছে কোনো কিনারা। হয়তো এ রকম সমাধানবিহীনভাবেই কিছু কিছু জীবন এই দুনিয়া থেকে সবার অগোচরে বিদায় নেয়।
আমি এই “Literature” পর্বে কিছু গল্প কিংবা নিজের আভ্যন্তরীন অনুভুতি লিখেছি যা নিতান্তই ঘুমের ঘোরে সপ্নে দেখেছি। যেমন “খাসী কুকুর হয়ে যাওয়া’র ব্যাপারটা কিংবা টয়লেটের পানিকে বিশুদ্ধ করে পরিবেশন করার ব্যাপারটা। এ রকমের অনেক সতর্কবার্তা আমি বড় বড় কোনো কাজে সিদ্ধান্ত নেবার আগে দেখেছে স্বপ্নের মধ্যে। সম্ভবত মহান আল্লাহ তালাহ আমাকে এমনভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন যাতে আমি ঐ সব সিদ্ধান্ত গুলি না নেই, নেইও নাই। কারন আমি মাঝে মাঝে এমন কিছু স্বপ্ন দেখি যার ব্যাখ্যা জানতে ইচ্ছে করে। অনেক স্বপ্ন আমি বহু বছর আগে হয়তো একবার দেখেছিলাম বলে মনে পড়ে, সেই স্বপ্ন দেখার বহু বছর পর আমি তার প্রতিফলন পেয়েছি। তাতে আমার কাছে এটাই মনে হয় যে, স্বপ্ন জিনিষটা নিছক কোনো কল্পনা নয়। এটা হয়তো কোনো অগ্রিম মেসেজ। আর এই মেসেজ বুঝবার জন্য হয় লাগে জ্ঞান, না হয় অপেক্ষা করতে হয় ঘটনা ঘটার জন্য। ইদানিং আমি বেশ কিছু স্বপ্ন দেখছি যা আমাকে ভাবিয়ে তোলে। আমি এর মিনিং খুজতে চেষ্টা করি কিন্তু আমি স্বপ্ন বিশারদ নই, না আমি কোনো বুজুর্গ ব্যক্তির কাছে এর অর্থ জানতে চাই। অথচ আমি আমার এই সব সপ্নের ব্যাখ্যা জানি না। যে কোনো স্বপ্ন মানুষের চারিপাশের অবস্থার অনূকুল বা প্রতিকুল বা তার চরিত্রের প্রতিফলনের সাথে সম্ভবত ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। যারা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করেন, যারা আল্লাহ্র কিতাবকে বিশ্বাস করেন, তাহলে কিছু কিছু স্বপ্নকেও অগ্রিম বার্তা হিসাবে বিশ্বাস করা সম্ভবত দোষের কিছু না। এর কারন, আল্লাহ সয়ং তার কিতাবে হজরত ইউসুফ (আঃ) কে সপ্নের ব্যাখ্যা বুঝতে সাহাজ্য করেছিলেন। এটা আল্লাহ্র পবিত্র কিতাবেই বর্নীত আছে। আবার এটাও বলা আছে যে, সপ্নের উপর যেনো আমরা ভর করে আল্লাহ্র সাথে শিরক না করি। আমি এই স্বপ্ন আর শিরকের ব্যবধানটা বুঝি। স্বপ্ন দেখে আমি ভয় পাই না, কিন্তু কেনো দেখলাম, এর আগে পিছে কি কি ফ্যাক্টর থাকতে পারে, আমি এটা নিয়ে ভাবি। সবসময় আমার মনে থাকে না কি দেখলাম, কখন দেখলাম, রাতের বা দিনের কোন ভাগে দেখলাম। তাই, ভাবলাম, যাইই মনে থাকে, সেটা আমি আমার এই ডায়েরির পাতায় লিখে রাখলে কেমন হয়? তাই মাঝে মাঝে কখনো ডাইরেক্ট সপ্ন হিসাবে আবার কখনো কখনো সেই সপ্নকে একটা কাহিনীর প্লট হিসাবে হয়তো আমি গল্প লিখছি।
কিছু কিছু লেখা শখের বশে লিখেছিলাম। কোনোটা সত্য কাহিনীর উপর ভিত্তি করে আবার কোনোটা নিছক কল্পনার জগত থেকে। এর বেশীরভাগ লেখাই আমার ফেসবুক টাইম লাইনে আমি পোষ্ট করেছিলাম। কোনোটা নিতান্তই প্রাইভেট আবার কোনোতা পাবলিক হিসাবে। এক সময় ভেবেছিলাম, যদি কখনো বই আকারে বের করি, তখন ডায়েরীর এতো লেখার ভীড়ের মধ্যে এসব গল্প আকারের লেখাগুলি হয়তো আর খুজেই পাবো না। তাই আমার এই ব্যক্তিগত ওয়েব সাইটে “পান্ডূলিপি” আকারে সংরক্ষন করা মাত্র। যদি কখনো সময় হয়, হয়তো বই আকারে বের করবো যদি তখনো লেখাগুলি সেই সময়ের উপযোগী হয়, নতুবা এই কাচা হাতের আর অপরিপক্ক কল্পনার জগতের লেখাগুলি হয়তো এই ওয়েব সাইটের পাতাতেই লুকিয়ে থাকবে।
মানুষের কিছু কিছু সময় থাকে যখন সে কারো সাথেই আর কিছু বলতে চায় না। শুধু লিখে আর ভাবে। এটাই যেনো তার জগত। হয়তো আমারো এমন একটা জগত আছে যেখানে আমিই শ্রোতা আর আমিই বক্তা। খারাপ কি? নিজের সাথে নিজের কথা বলার মধ্যে ভালো একটা রেষারেষি হয়। কে জিতে সেটা কোনো ব্যাপার না। কারন দুদিকেই আমি। একা একা দাবা খেলার মতো।
আলাউদ্দিন চৌধুরী
আলাউদ্দিন চৌধুরী আমার শশুড়।
আমি তাঁকেও দেখিনি কারন তিনি আমার বিয়ের প্রায় ৫ বছর আগেই ইন্তেকাল করেছিলেন। আমার শশুড়ের আব্বার নাম ছিলো সোনাম উদ্দিন চৌধুরী। অত্যান্ত একরোখা মানুষ ছিলেন তিনি। তার মোট তিন পুত্র আর এক মেয়ে ছিলো। তিন পুত্রের নাম জনাব আলাউদ্দিন চৌধুরী, ডাঃ কুতুব উদ্দিন চৌধুরী এবং নিজাম উদ্দিন চৌধুরী।
আমার শশুড়ের তিন ছেলে আর আটজন মেয়ে ছিলো। তারা হচ্ছে জনাব নূর আহমদ চৌধুরী, সিদ্দিক আহমদ চৌধুরী, এবং মুস্তাক আহমদ চৌধুরী। মেয়েরা হচ্ছেন- মিসেস জায়েদা খাতুন, নূর জাহান, শেলিনা, সামসুন্নাহার, মিটুল চৌধুরী, আলাউদ্দিন চৌধুরীর বংশের উপরে আমার এই ডায়েরীতে একটা রুপক গল্প আকারে লেখনী আছে যার নাম দিয়েছি- চৌধুরী বাড়ীর অসমাপ্ত গল্প”। গল্পটার শেষ আমি জানি না কিন্তু একটা ব্যাপার আমি বাস্তবে লক্ষ্য করেছিলাম যে, সোনাম উদ্দিনের মতো আরেকজন তার বংশধর এই যুগেও তৈরী হয়েই ছিলো, যার নাম হাসান আহমদ লিখন। অনেক গুনাবলী (বিশেষ করে আগ্রাসন নীতি এবং অন্যের হক নষ্টের নমুনা) তার মধ্যেও আমি দেখেছি।
আমি এই “আলাউদ্দিন চৌধুরীর” অংশে চেষ্টা করেছি যতোটুকু বস্তুনিষ্ঠ ইনফর্মেশন দেয়া যায়, সেটা দেয়ার। মূল্যায়ন সব পাঠকের উপর। কাউকে ছোট করার কোনো অভিলাষ আমার কোনো কালেই ছিলো না, আর এ রকম করার কোনো কারনও আমার নাই। আমি শুধু সময়ের সাথে সাথে কি ঘটেছে সেগুলু লিখে রাখার চেষ্টা করেছি।
আমার শাশুড়ি মিসেস জেবুন্নেসা চৌধুরী ছিলেন আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ। তিনি শেষ বয়সে এসে প্যারালাইসিস ছিলেন। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতেন। আমার বাসাতেই তিনি থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। তার শেষ সময়টুকু আমার সাথেই আমার বাসায় কাটিয়েছেন। তিনি আমার বাসা থেকেই বেহেস্তবাসী হয়েছিলেন।
বাবা
হোসেন আলী মাদবর আমার বাবা।
আমি আমার বাবাকে কখনো দেখিনি এবং তার চেহারা কেমন ছিলো, খাটো নাকি লম্বা, যুবক না বৃদ্ধ, ফর্সা নাকি কালো কোনো কিছুই আমার জানা নাই। তবে আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহ আমার বাবার অনেক গল্প শুনাতেন যার থেকে আমি বাবার একটা কাল্পনিক চরিত্র মনে গেথে নিয়েছি। আমার দাদার নাম ছিলো হিসাবদি মাদবর। আমরা মাদবর বংশের লোক। বাবার সম্পর্কে আমি অনেক চমৎকার চমৎকার গল্প শুনেছি ভাইয়ার কাছে। তবে তার প্রাথমিক তথ্যের মধ্যে জরুরী তথ্য হলো যে, আমার বাবার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি আমার মাকে বিয়ে করেন। বাবার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ঘরে মোট তিনজন ছেলে সন্তান আর পাচজন কন্যা সন্তান ছিলো। এই মোট আট সন্তান থাকার পরে আমার বাবা আমার মাকে বিয়ে করেন। তখন আমার মায়ের বয়স ছিলো বেশ কম। আগের সব সন্তানেরাই আমার মায়ের থেকে বয়সে বড় ছিলো। কেউ কেউ আবার ইতিমধ্যে বিয়েও করে ফেলেছিলেন। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমার মা যেমন একটু অসুবিধায় ছিলেন, তেমনি আমার বাবাও বেশ অসুবিধায় ছিলেন। কিভাবে আমার বাবা এই দুমুখী অসুবিধাগুলি তার জ্ঞানের দ্বারা সমাধান করেছিলেন, সেই গল্পগুলি সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন আমার বড় ভাই ডঃ হাবীবুল্লাহ। যাই আমি লিখছি আমার বাবার সম্পর্কে, সবই আমার ভাইয়ের কাছ থেকেই শোনা। আমার এই পর্বে যাদেরকে আমি আমার পরিবারের সদস্যগন্য করে স্থান দিয়েছি তারা সবাই আমার বংশের লোক নন কিন্তু বংশ ছারাও যে, খুব কাছের কিছু সদস্যে পরিনত হতে পারেন আমি সেই সব মানুষগুলিকেই আমার পরিবারের সদস্য হিসাবে স্থান দিয়ে তাদের ব্যাপারে যা জেনেছি, বুঝেছি লিখার চেষ্টা করেছি। তারমধ্যে আছেন আমার খালুর বংশ। আমার বোনদের পরিবার এবং কিছু অন্যরা। বদি ভাইকেও আমি আমার বংশের একজন মনে করেছি। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই আমাদের বংশের সাথে যুক্ত নন কিন্তু তিনি আমাদের জীবনে একজন আশীর্বাদ পুরুষ হিসাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন।
গনি মাদবর, আমার খালু।
আমার জীবনে দেখা এই এক মাত্র ব্যক্তি যাকে আমি আমার মায়ের বংশের কোনো মুরুব্বীকে চোখে দেখেছি। গনি মাদবরের সবচেয়ে বড় গুন ছিলো তিনি অনেক বড় মাপের একজন মানুষ ছিলেন, আর বদগুন ছিলো যে, উনি খুব রাগী মানুষ ছিলেন। তার ভয়ে আমাদের প্রায় চারপাশের অনেক মানুষ, ব্যক্তিবর্গ এবং পরিবার টঠস্থ থাকতো। তার ছিলো অঢেল সম্পত্তি। আশপাশের যতোগুলি মাদবর ছিলেন আমাদের গ্রামে, গনি মাদবর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তার বাড়ীর নাম ছিলো, “বড় বাড়ী”। গনি মাদবরের ছিলো চার ছেলে। আরব আলী, মালেক, মোহাম্মাদ আলী আর সালাম মিয়া। আরব আলী ভাইয়ের দুই ছেলে, মুনীর হোসেন আর আরেকজনের নাম এই মুহুর্তে মনে আসছে না। মালেক মিয়ারও অনেক সন্তান, তার মধ্যে আছে শাহজালাল এবং কন্যা আছে গুটি কতক। মোহাম্মাদ আলী ভাই একমাত্র শিক্ষিত কিন্তু গনি মাদবর যদিও মাদবর ছিলেন তিনি তার এই ছেলেকে কোনোদিন চাকুরী করার অনুমতি দেন নাই। তার ইগো ছিলো যে, গনি মাদবরের ছেলেরা না সরকার, না কোনো কোম্পানীর গোলামী করুক। সালাম মিয়া এক সময় মেন্টালী খুবই অসুস্থ হয়ে যায় এবং বিয়ে করার কয়েক দিন পর মারা যায়। গনি মাদবর যেহেতু খুব রাগী মানুষ ছিলেন, ফলে কারো কথাই তিনি শুনতেন না। ক্রমেই বিভিন্ন মাদবরদের সাথে তার একটা দুরুত্তের স্রিষ্টি হয়। বিশেষ করে দৌলত মেম্বার নামে আরেক প্রতাপশালী মাদবরের সাথে তার বিশাল দন্ধ শুরু হয়। এই দৌলত মেম্বার আবার আমার খালুর আত্তীয়। কারন খালুর এক ভাই যার নাম আজিজ মিয়া, তার স্ত্রী হলো দউৌলত মেম্বারের আপন বোন। দৌলত মেম্বার যতোটা না শিক্ষিত ছিলো তার থেকে বেশী ছিলো চালাক। ফলে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে যান আমার এই খালু। কোনো কিছুতেই তিনি কারো কাছে মাথা অবনত করার মানুষ নন, ফলে তার সম্পত্তি একে একে বিক্রি করে পালটা দৌলত মেম্বারের সাথে আদালতে লড়তে থাকেন। একটা সময় আসে যখন আমার খালুর আর কোনো সম্পত্তিই অবশিষ্ঠ রইলো না। যে বাড়িতে খাবারের কোনো কমতি ছিলো না, সেই বাড়িতে শুরু হয় হাহাকার। ছেলেরা একে একে ভিন্ন হয়ে যায়, খালা আর খালু একেবারেই জর্জরীত অবস্থায় উপনীত হন। আমার খালাকে আমার ভাই কিছুটা সাহাজ্য করতেন, খালুকেও। শেষ বয়সে এসে খালু একেবারেই নিস্তব্ধ হয়ে শুধু ঘরেই থাকতেন। খালা মারা যান। খালু আরো অনেক বছর বেচে ছিলেন। কিন্তু কখনো অর্ধহারে, কখনো না খেয়ে, খুবই খারাপ একটা অবস্থায় খালু মারা যান। আমার এই খালুর কারনেই আমরা সেই ১৯৭০ সালে মুনশিগঞ্জ থেকে আমাদের স্টেপ ব্রাদারদের অতিষ্ঠে শেষ পর্যন্ত খালুর দেশ কেরানীগঞ্জে চলে আসি। খালু ছিলো আমাদের জন্য একটা ঢাল। আমরা এখন গ্রামের যে বাড়িটা আমাদের মনে করি, এটা আসলে খালুর কাছ থেকেই কেনা। আমার বাবা খালুর খুব কাছের মানুষ ছিলেন। দুজনেই মাদবর ছিলেন।
2023-2027
- ১৬/০৩/২০২৫-মাল্টার জন্য টাকা জমা দেয়া
- ১৪/০২/২০২৫-জলিল মামা মারা গেলেন
- ১৭/০১/২০২৫-থাইল্যান্ড ভ্রমন
- ৩০/১১/২০২৪-বিপুল সংখ্যক আধুনিক জেন-জি
- ১৩/১১/২০২৪-হার্ট এটাক
- ২৬/০৯/২০২৪-বিপ্লব
- ৯/৯/২০২৪-বিএমএ এর কিছু ছবি
- ৮/৯/২০২৪-আজ নাকি আমার জন্মদিন
- ৮/৯/২০২৪-শেষ পর্যন্ত ৬০ এর ঘরে পা দিয়েই দিলাম।
- ০১/০৯/২০২৪-যুদ্ধ একটা হবেই, সেটা যেভাবেই হোক
- ২৯/০৮/২০২৪-আওয়ামিলীগের পরবর্তী রাজনীতি কবে
- ২৭/৮/২০২৪-ক্ষমতার উল্টোপিঠের চিত্র ক্ষমতাশীলরা
- ১৮/৮/২০২৪-গৃহযুদ্ধ
- ১৮/৮/২০২৪ – ইলেকশন ক্রাইটেরিয়া
- ১৮/৮/২০২৪-শেখ হাসিনার কি হতে পারে
- 30/7/2024-সরকার ইতিমধ্যে অনেক গুলি
- ১৬/৮/২০২৪-সমস্যার পাহাড়-বাংলাদেশ
- ১২/৮/২০২৪- আমি এখন রীতিমত ভয় পাচ্ছি
- ০২/০৮/২০২৪-বর্তমান প্রজন্মকে না বুঝবার প্রশাসন
- ৩১/০৭/২০২৪-এখন দরকার সেনাবাহিনীর সরকার
- ২০/৭/২০২৪-কোটা আন্দোলন এবং দেশের অবস্থা
- ১৭/০৭/২০২৪-বাংলাদেশের দুর্নিতি
- ০২/০৭/২০২৪-নিজের বল বাহুবল (নিখিল এম পি)
- ২৩/৫/২০২৪-স্ত্রী রম্যরচনা
- ১৭/৫/২০২৪-চীন-রাশিয়ার একত্রিভুত পদক্ষেপ
- ১১/০৫/২০২৪-রিভার সাইডের এক্সটেনশনের জন্য ম্যাসেজ
- ৩০/০৪/২০২৪-এই পৃথিবীতে সুস্থ্য, স্বাধীন, আরাম
- ২৭/৪/২০২৪-ওমরা শেষে আবার ঘরে ফেরা (আলহামদুলিল্লাহ)
- ৬/৩/২০২৪-পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব কিছু সুন্দর।
- ২৯/২/২০২৪-রাশিয়া ইউরোপের
- ২৯/২/২০২৪-নতুন ইউরোপ
- ২৪/২/২০২৪-১৯৯০ থেকে ৯৮ সাল অবধি আমেরিকা
- ২৩/২/২০২৪-সপরিবারে ওমরা করার পরিকল্পনা
- ২০/২/২০২৪-আজ আমার মৃত্যু বার্ষিকী
- ১/২/২০২৪- রিভার সাইডের বার্ষিক বনভোজন
- ২/২/২০২৪- মৃত্যুর সাথে জীবনের কন্ট্রাক্ট
- ২৯/০১/২০২৪-করিডোরস অফ পাওয়ার
- ১৯/১/২০২৪-প্রিথিবীটা অদ্ভুত সুন্দর
- ১৮/১/২০২৪-আমি গুছিয়ে নিচ্ছি সব
- ১৭/১/২০২৪-কনিকা আবার আমেরিকায় ব্যাক করে
- ৮/১/২০২৪-উম্মিকার বিয়ে এবং আমার বিশ্লেষণ
- ৩/১/২০২৪-সেনাকুঞ্জে ওয়েডিং রিসেপশন
- ১/১/২০২৪-উম্মিকার বিয়ে
- ৩০/১২/২০২৩-উম্মিকার গায়ে হলুদ
- ২৩/১১/২০২৩-বদলে গিয়েছি কি?
- ২১/১১/২০২৩-ক্যাবিনেট সচীব মাহবুব ভাইয়ের সাথে
- ২২/১১/২০২৩-মানুষের জীবন মৃত্যু
- ২১/১১/২০২৩-সশস্ত্র বাহিনী দিবস
- ০৫/১১/২০২৩-আমার প্রিম্যাচিউরড রিটায়ারমেন্ট
- ৫/১১/২০২৩-মাঝে মাঝেই দেখবেন কেনো যেন মনে হয়
- ০৪/১১/২০২৩-অবসেসন বা অন্য অর্থে কোনো কিছুর
- ০৪/১১/২০২৩-সময় সব সময় সবার কাছেই দামী।
- ০১/১১/২০২৩-প্যালেস্টাইনের মুক্তিকামী সংগ্রামের ইতিহাস
- ৩১/১০/২০২৩-মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য জীবন উতসর্গ
- 26/10/2023-Tbilisi and Daduna’s family
- ১৪/১০/২০২৩-কেনো আবির-উম্মিকার বিয়েতে রাজী হইলাম
- ১২/১০/২০২৩-লেঃ কর্নেল মজিদের ইন্তেকাল
- ০৮/১০/২০২৩-কোন দিকে যাচ্ছে অর্থনীতি
- ৩০/০৯/২০২৩- বন্ধুর বাহুবলে শত্রুকে আক্রমণ
- ২৬/০৯/২০২৩-দলকানা আর দেশপ্রেম
- ২১/০৯/২০২৩-আমেরিকার ন্যাশনাল ডেট বা ঋণ
- ১১/০৯/২০২৩-২৫ জন সামরীক কর্মকর্তা বিএনপিতে যোগ
- ৯/৯/২০২৩-সাদাচুল কালোকরন
- ৯/৯/২০২৩-আমার জন্মদিন
- Bangla College Mitul Farewell
- ০৭/০৯/২০২৩-নিষেধাজ্ঞা-পূর্নিমার চাঁদ যেনো ঝলসানো রুটি
- ৬/৯/২০২৩-মনুষত্য যেখানে অমানবিক (ফারুক কাহিনী)
- ২৪/০৮/২০২৩-প্রিগোজিন সংবাদ-১
- ২১/০৮/২০২৩-মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ উধাও
- ২০/০৮/২০২৩-প্রেডিকশন-২
- ১৯/০৮/২০২৩-আগের কিছু প্রেডিকশনের বাস্তবতা
- ১৬/৮/২০২৩-বিশ্ব রাজনীতিতে একটা অসম সমঝোতা
- ১৬/০৮/২০২৩-কিছু প্রেডিকশন (নিজার)
- ১৬/০৮/২০২৩-আমার গিন্নির সংক্ষিপ্ত কথা
- ১৫/০৮/২০২৩-ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে ফাটল
- ১২/০৮/২০২৩-মিটুলের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল পোষ্টিং
- ১০/০৮/২০২৩-লোকাল এম পি মহোদয়ের বাসায়
- ৯/৮/২০২৩-মাহাত্মা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল পীস এওয়ার্ড-২০২৩
- ০৪/০৮/২০২৩-মানুষ একাই ছিলো, একাই থাকবে
- ০৪/০৮/২০২৩-মানুষ একাই ছিলো, একাই থাকবে
- কোকো কাহিনী
- ২৪/০৭/২০২৩-পৃথিবীটা শুধু মানুষের না
- ২৬/০৭/২০২৩-ফেসবুক একটা বিনোদনের জায়গা
- ২৫/০৭/২০২৩-২য় বিশ্বযুদ্ধ আসলে শুরু হয়েছিলো ১ম
- ১৯/০৭/২০২৩-রাশিয়া কেনো ন্যাটোতে জয়েন করছে না?
- ১২/০৭/২০২৩-লিথুনিয়ার ন্যাটোর সম্মেলনে ইউক্রেন একা হয়ে গেলো
- ১১/০৭/২০২৩-যুদ্ধটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এটা শুধু বলতে পারবে “সময়”।
- ১০/০৭/২০২৩- রুপীতে বানিজ্য
- ০২/০৭/২০২৩-ব্যবসা পরবর্তী অবসর গ্রহনের পরিকল্পনা
- ০৬/০৭/২০২৩-সাকাশভিলি এবং জেলেনেস্কী
- ০৩/০৭/২০২৩-মাধুরীর চিঠি-২
- ০১/০৭/২০২৩-হাতে খুব সেকেন্ড জমা নাই
- ২৭/০৬/২০২৩-প্রিগোজিন ক্যু নাকি ছদ্ধবেশ
- ২১/০৬/২০২৩- কোকোকে ছেড়ে দিতে হবে
- ২১/০৫/২০২৩-পরিবার থেকে নিজে বড়
- ২৮/০৪/২০২৩-Dollar Decline vs. Dollar Collapse
- ২৭/০৪/২০২৩-ফরেন রিজার্ভ এবং ডি-ডলারাইজেনের মানে কি?
- ২৭/০৪/২০২৩-অসুস্থ্য সমাজ
- ২৬/০৪/২০২৩-ইউরোপ অথবা রাশিয়া কি আবার একত্রে মিলিত হতে পারে?
- ২৪/০৪/২০২৩-ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের সর্বশেষ ইমপ্যাক্ট কি কি হতে পারে
- ২৩/০৪/২০২৩-ইউক্রেন এক্সিট প্ল্যান
- ২৩/০৪/২০২৩-দুই ফ্রন্টে আমেরিকার যুদ্ধ কি সঠিক?
- ০৫/০৪/২০২৩-পেট্রো ডলার- A Game Changer
- ২৪/০২/২০০৩-স্ট্যালিন ঢাছা
- ০২/০৩/২০২৩-স্বাধীনতার নতুন ব্যাকরন
- ২৩/০২/২০২৩-আমেরিকার ভিসা প্রাপ্তি
- ২৪/০২/২০২৩-রুলস বেজড অর্ডার
- ২১/০২/২০২৩-পচা সামুকে পা কাটে
- ২০/০২/২০২৩-পতেঙ্গা ভ্রমন
- ১০/০১/২০২৩-আজ থেকে শত বছর পর আমার এই লেখা
2018-2022
- ১২/০৬/২০২১-রোস্তমের টাকা চুরি-২
- ০৩/১২/২০২২-কোকো, আমাদের প্রথম জার্মান শেফার্ড
- ২৭ আগষ্ট ২০২২-নতুন আর পুরাতন প্রজন্ম
- ৫/৮/২০২২-ডলার তার পজিশন হারাবে
- ০৩/০৮/২০২২-তাইওয়ানে পেলোসির ভিজিটে
- ১৫/০৭/২০২২-যখন বয়স ছিলো ১২ কি ১৩
- ১২/০৭/২০২২-ওয়াকফ সম্পত্তি কি এবং কার
- ০৯/০৭/২০২২-আপডেট (সাইফুল)
- ০৭/০৭/২০২২-ইউরোপবসন্ত
- ০১/০৭/২০২২-স্ন্যাক আইল্যান্ড
- ০১/০৭/২০২২-রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকরী না
- ২৯/০৬/২০২২-ত্রিপক্ষীয় চুক্তিঃ
- ২৯/০৬/২০২২-হিটলারের শেষ আদেশের কপি
- ২৭/০৬/২০২২-আমার কিছুতেই বুঝে আসে না
- ১৭/০৬/২০২২-সেন্ট পিটসবার্গে পুটিনের ভাষন
- 15/06/2022-দিলে দেন, না দিলে কইয়া দেন
- 14/06/2020-এ যাবতকাল যতো যুদ্ধ হয়েছে,
- 13/06/2022-বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রীর গদি
- 12/06/2022-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন “ফান পর্যায়ে”
- 12/06/2022-কাউন্টারিং নেগোশিয়েশন
- 11/-6/2022-ইকুইলিব্রিয়াম অফ পাওয়ার
- 10/6/2022-শিয়ালটা কে?
- 9/6/2022-ক্ষমতার ভারসাম্য
- 9/6/2022-আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার দেশসমুহ
- 7/6/2022-NATO Conditions-Fin and Sweden
- 7/6/2022-আবার আলোচনায় নর্দান আয়ারল্যান্ড
- 01/06/2022-Kissinger-peace in Ukraine
- 30/5/2022-রাশিয়া ৯০ সাল থেকেই প্যাসিভ
- ২৮/৫/২০২২-৩০ বছর পিছিয়ে আমেরিকা
- 25/5/2022-অপিনিয়ন ইস ডিনায়েড
- 19/5/2022-ফিলিপিনের নির্বাচিত বং
- ১৭/০৫/২০২২- কিছু তথ্য বেশ মজার।
- 18/5/2022-সুই-ফিনল্যান্ডের হেরীটেজ
- ১৫/৫/২০১৯-২০ বছর আগের কিছু স্মৃতি…পর্ব-৩
- ১৪/০৫/২০২২-প্যারাডিম শিফট-ডমিনো ইফেক্ট
- ১৪/০৫/২০২২-ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে আগ্রহী
- ১৩/৫/২০২২- রকি কাহিনী
- 13/5/2022-সম্ভাবনা
- 12/05/2022-আমার এখন কেবলই মনে হচ্ছে যে,
- 7/5/2022-ফেসবুকে মিটুলের লেখা ৭ ই মে
- 04/05/2022-লয়েড অষ্টিন এর বক্তব্য
- 06/05/2022-ইউক্রেন যুদ্ধের পটভুমি
- 05/05/2022-কে জিতছে এই যুদ্ধে?
- 01/05/2022- Russia’s 3B strategy in Ukraine
- ০২/০৫/২০২২-আজ রোজার শেষ দিন, কাল ঈদ
- ৩০/৪/২০২২ -রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার খেলা
- ২৯/৪/২০২২-ইউক্রেন যুদ্ধ সমাচার
- 31/04/2020-রহস্য।
- Army Pension Book
- আর্মির কোর্ষ রিপোর্ট এবং স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট
- ACR
- Service Records
- Profile of Major Akhtar
- ২৮/০৩/২০২২-ন্যাচারাল প্রতিশোধ
- 18/03/2022-রাশিয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব
- 23/02/2022-২০০৩ সালের কিয়েভে
- 13/03/2022-যুদ্ধের ১৭ দিন পর ইউক্রেন
- 12/03/2022-রাশিয়ান-ইউক্রেন যুদ্ধ
- 6/3/2022- ইউক্রেন যুদ্ধ
- 20/02/2022- গেট টুগেদার এমসিসি
- ১৯/০২/২০২২-স্বাস্থ্যসচীব একদিন অফিসে
- ১৮/০২/২০২২- আমার বাগানের আলু
- ১৩/০১/২০২২-Meeting Fourth Generation
- ৮/০১/২২- জাহাঙ্গীরের পেপার কাটিং
- ৬/০১/২০২২-কনিকা এবং হাবীব ভাই
- ১৩/১২/২০২১-ইতিহাস থেকে যারা (ফেসবুক)
- ১৩/১২/২০২১-একই খবর কারো কাছে শুভ
- ২/১২/২০২১-পায়ের নীচে পাথরহীন
- ২২/১১/২০২১-এসআইবিএল-২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী
- ৫/১১/২০২১-প্যারাডাইম শিফট
- ১৯/১০/২০২১-হিন্দুদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া
- রুস্তমের চিঠি
- ০৯/০৯/২০২১-১০০ বছর পর আগামীকাল
- ১৭/০৮/২০২১-রেহালাদের গল্প
- ১২/০৮/২০২১-মেধাপাচার নাকি মেধাবিদায়?
- ১১/০৮/২০২১-রক্তক্ষরন
- ০৮/০৮/২০২১-সন্ধ্যা ৮ টা ৩২ মিনিট
- ০৮/০৮/২০২১-What If I were not Born
- ০৭/০৮/২০২১-কনিকার মাত্র ৩দিন বাকী
- ০৫/০৮/২০২১-অদ্ভুত একটা স্বপ্ন
- ২১/০৭/২০২১-ঈদুল আজহা
- ৮/৭/২০২১-জীবনে হতাশ হওয়ার
- ১৯/০৭/২০২১-ঈদুল আজহার ২দিন আগে
- ২০/০৭/২০২১***-ভরষা
- ৯/৭/২০২১-কনিকার আগাম জন্মদিন এবং পার্টি
- ৬/৭/২০২১-কিছু আফসোস
- ২৯/০৬/২০২১-আমার গ্রাম (১৯৭৭ সাল)
- ০২/০৭/২০২১-বজলু আমার বাল্যবন্ধু
- ২৮/৬/২০২১-সফুরা খালা
- ২১/০৬/২০২১- মৃত্যু
- Mubin Story in MAA Industries Ltd
- ১২/০৬/২০২১-রোস্তমের টাকা চুরি-১
- ১১/০৬/২০২১-কালো
- ১১/০৮/২০২১-কনিকার যাওয়ার সময় উপদেশ
- ২২/৬/২০২১-তোমাকে
- ২৬/০৪/২০২১-কভিড-১৯, ২য় ডোজ
- রানার Character
- টাইটানিক ট্র্যাজেডির শতবর্ষ
- ISIS অথবা ISIL
- ডলারের নোটের ব্যাখ্যা
- আফিম যুদ্ধ
- হ্যালি ধুমকেতু
- রিপ ভ্যান উইঙ্কেল
- মার্ক পোলো
- সক্রেটিসের এ্যাপোলজি
- ব্যাটল অফ এমাগেদ্দন
- কেন আমেরিকা ইসরায়েলকে
- ম্যাগনা কার্টা
- বাইবেলে রঙ
- হিটলার
- ফান্ডামেন্টালিজম
- ইংরেজদের ব্রেক্সিটের
- উত্তরসূরি নির্বাচন
- শেষ বিদায়
- এটা কি শুধুই কলম বন্ধু?
- বোদার গল্প
- মায়ের কাছে মেয়ের চিঠি
- যদি তুমি মনে করো
- বদি ভাই-এখন তিনি ছবি
- হোড়লে বাড়ি
- শারমিন কথা
- আইন্ডেন্টিটি (পর্ব-১)
- ভিন্ন প্রসঙ্গ–সবার জন্য
- আগামিকালটা কত দিনের?
- ভারত বর্ষের জনাব আগন্তক
- আমার খালা
- ২ লেঃ মাসুদ ইকবালের বাড়ি রাজশাহী।
- সাদ্দাম হোসেনের ছেলে উদয় এর সত্যি কাহিনী
- জেবুন্নেসা চৌধুরী (আমার শাসুড়ী)
- আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী
- ২১/০৪/২০২১-রাত
- ১৭/০৪/২০২১-ধনী-গরীবের সৃষ্টি কেনো
- ১৫/০৪/২০২১- মিথ্যা
- ০৯/০৪/২০২১-তুমি ছাড়া আমি
- ০৮/০৪/২০২১-তোমাকে ছাড়া আমি
- ৪/৪/২০২১-রিভার সাইডের ইতিকথা
- ০৪/০৪/২০২১- অনলাইন দুনিয়া
- ৪/৪/২০২১-ছোটভাবী মারা গেলেন
- কেরানীগঞ্জ মাইগ্রেশন-ষ্টাইল-৪
- সাময়ীক তিরোধ্যান-ষ্টাইল-৩
- বাবার মাদবরী স্টাইল-২
- বাবার মাদবরী স্টাইল-১
- আমার বাবা।
- ০২/০৪/২০২১-কামুক সিরিয়াল কিলার
- হোসেন আলী মাদবর (ভুমিকা)
- ১/৪/২০২১- সত্য মিথ্যা ষড়যন্ত্র আর প্রতারনা
- ৩০/০৩/২০২১-মানুষের মন
- ২৭/০৩/২০২১-সেনাপ্রধান আজিজের সাথে
- ১৯/০৩/২০২১-প্রত্যেকের মাথায় অসংখ্য
- ১৮/০৩/২০২১- করাপশন বা দূর্নীতিঃ
- ১৮/০৩/২০২১ ফিডব্যাক ফর্ম
- ১৭/০৩/২০২১- স্ত্রী-পর্ব ২
- ১৭/০৩/২০২১- স্ত্রী-পর্ব ১
- ১২/০৩/২০২১-ওরা চলে যাবার পর
- ০৮/০৩/২০২১-টাকা
- ০৮/০৩/২০২১-হীরা
- ০২/০৩/২০২১-ব্লাকমেইল-রিভার্স ব্লাকমেইল
- ২৮/০২/২০২১-ত্রিভুজের চতুর্থ কোন
- ২৪/০২/২০২১-মিটুলের পোষ্টিং অর্ডার
- ১০/০২/২০২১- অসহায় সিনিয়র সিটিজেন
- ০৪/০২/২০২১-আর একবার যদি
- ০২/০২/২০২১-কনিকার বাল্টিমোরে ভর্তি
- ২৯/০১/২০২১- নাফিজের বিয়ে
- ২৯/০১/২০২১- নূরজাহান আপা
- ২৮/০১/২০২১-মিটুল চৌধুরী আসমা
- ২৮/০১/২০২১- উম্মিকা,আমার বড় মেয়ে
- ২৮/০১/২০২১- কনিকা, আমার ছোট মেয়ে
- ২৭/০১/২০২১-আমার+উম্মিকার করোনা
- ২৭/০১/২০২১-ভাবীর দাফন সম্পন্ন
- ২৬/০১/২০২১- আমার করোনা +
- ২৬/০১/২০২১-লিখনের মা মারা গেল
- ২৬/০১/২০২১-ভাবীর (লিখন) শেষ অনুষ্ঠান
- ২১/০১/২১-তারিখটা চোখে পড়তেই
- ৯/১/২০২১- আন-নূরের ইতিহাস
- ০১/০১/২০২১- ঠিক এই সময়টায়
- ০১/০১/২০২১-মেয়েরা বগুড়ায়
- ৩১/১২/২০২০-জাহাঙ্গীরের জন্য
- ৩১/১২/২০২০-বন্ধু সাকুদাকে চিঠি
- ২২/১১/২০২০-বুড়োবেলায় সেই ছোটবেলা
- ১৮/১১/২০২০-ভালোবাসি না
- ১৮/১১/২০২০-অডিট ঘর
- ১৫/১১/২০২০- ছবি
- ১২/১১/২০২০-আনিস চৌধুরীকে মেইল
- ২৮/১০/২০২০-বেঞ্চমার্ক, মাপদন্ড
- ২১/১০/২০২০-উম্মি-কনি আমার অফিসে
- ২০/১০/২০২০-উম্মিকার বাড়ি আসা
- ১৭/১০/২০২০-একদিন (One Day)
- ৩০/০৯/২০২০-মাইন্ড গেম
- ৩০/০৯/২০২০-জীপগাড়ি-হাইলাক্স সার্ফ
- ২৯/৯/২০২০- মেন্টর হোন
- ২৩/০৯/২০২০-সিনহা হত্যার আপডেট নাই
- ১৬/০৯/২০২০-বন্ধু বনাম শত্রু
- ১২/০৯/২০২০-মিতুলের করোনা পজিটিভ
- ১১/০৯/২০২০-মিতুলের শরীরটা ইদানিং
- ০২/০৯/২০২০-শেফালীর জামাইর ইন্তেকাল
- ২৩/৮/২০২০-বাস্তবতা গল্পের থেকেও ভয়ংকর
- ২১/০৮/২০২০-মুহুর্ত-চেইন
- ২১/৮/২০২০-রাগ বা অপরাধ
- ১৭/৮/২০২০-বাস্তবাদী আমি
- ১৫/০৮/২০২০-আকাশে আগুন লাগে না।
- ২৮/০৬/২০২০- আমি ফিরে এসেছি আবার
- ২৮/০৬/২০২০-আমি তাকে ভালোবাসি না
- ২৪-০৬-২০২০-কিভাবে থাকা সম্ভব একা?
- ১১/০৬/২০২০-তিনটি শব্দ-বদলে যাওয়ার মন্ত্র
- ১০/০৬/২০২০-দুদু মিয়ার ইন্তেকাল
- ৩১/০৫/২০২০-চৌধুরী বাড়ির অসমাপ্ত গল্প
- ২৫/০৫/২০২০-করোনার শিক্ষা
- ২০/০৫/২০২০-যে নদীর স্রোতধারা থেমে যায়
- ১৬/০৫/২০২০-উচ্চাখাংখার চেয়ে যখন
- ১৫/০৫/২০২০-অর্থনীতি বিপর্যয়ের জননী
- ১০/০৫/২০২০-এই করোনায় যারা মাস গেলেই
- ০৮/০৫/২০২০-দাস রায় দিতে পারেনা।
- ০৮/০৫/২০২০-সবকিছুতেই পোষাকশ্রমিক
- ০৭/০৫/২০২০- কিয়ামতের পরে কি?
- ০১/০৫/২০২০-নববধুর বাসরও আতংকের
- ৩০/০৪/২০২০-গাছতলায় বইসা সংসার হয়না
- ২৯/০৪/২০২০-মাননীয় ইচপিকার
- ২০/০৪/২০২০-রাজনীতি-মিডিয়া, বন্ধুসুলভ শত্রু
- ১৮/০৪/২০২০-Every Action has an Equal
- ১৮/০৪/২০২০-ঝং
- ১৪/০৪/২০২০- ডাচ ডিজিজ।
- ১৪/০৪/২০২০- চৌরাস্তার বিড়ম্বনা
- ১৩/০৪/২০২০-করোনা এবং গার্মেন্টস শিল্প
- ০২/০৪/২০২০-লোভ একটা লালসার নাম
- ৩১/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-৩
- ৩০/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-২
- ৩০/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-১
- ৩/০৩/২০২০-মাধুরী-আকাশের ভালোবাসা
- ২৮/০৩/২০২০- করোনা ভাইরাস-১
- ২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-২
- ২৮/০৩/২০২০- করোনা ভাইরাস-৩
- ২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-৪
- ২৮/০৩/২০২০-করোনা ভাইরাস-৫
- ১৬/০১/২০২০- জীবন একটাই।
- ১২/০১/২০২০- নির্মান ব্যবসা পীরগঞ্জ ভ্রমন
- ০১/০১/২০২০-বিয়ে নামক পরীক্ষায়
- ২৬/১২/২০১৯- লিসা ফিরে গেছে
- ২৩/১২/২০১৯-অপেক্ষার প্রহর লম্বা
- ৮/৯/২০১৯-সারপ্রাইজটা অনেক বেশী
- ১৪/০৮/২০১৯-বাসায় সবার দাওয়াত
- ১৩/০৮/২০১৯- ঈদের পরের দিন
- ৮/৮/২০১৯-হিজড়া
- ৩০/০৭/২০১৯-কনিকা
- ১৯/০৭/২০১৯-কনিকার বন্ধুদের দাওয়াত
- ২/৬/২০১৯ –কবুতর প্রেম
- ২৮/০৫/২০১৯-জে: ওয়াকার ফোর্ট্রেস হাসপাতাল
- ২৫/৫/২০১৯-হৃষীকেশ এবং হরিদ্বার ভ্রমন
- ২২/০৫/২০১৯-Cottage, Yes Please এ
- ২৪/৫/২০১৯-এসকে সারিনের সাথে বৈঠক
- ১৯/০৫/২০১৯-আইএলবিএস হাসপাতালে গমন
- ২৮/০৪/২০১৯-নতুন ওয়ালেট
- ১৭/০৩/২০১৯-উম্মিকার ডাক্তার হওয়ার পারিবারিক অভিষেক
- ১২/০৩/২০১৯-উম্মিকার ডাক্তারী ফলাফল
- ১০/০২/২০১৯, টাচ-১৩: আমাদের স্বপ্ন
- ৩১/১/২০১৯-প্রকৃতি তাঁর নিজস্ব চরিত্র
- ৩০/১২/২০১৮-একাদশ জাতীয় নির্বাচন
- ১৯/০৬/২০১৮-ক্যাডেট কলেজের কাহিনী
- ১৭/০৬/২০১৮-ব্রাক এর সিডিএম
- ১৪/০৫/২০১৮- মা
- ০৭/০৫/২০১৮-কনিকার এসএসসি রেজাল্ট
- ০৯/০৪/২০১৮- থানচি ভ্রমন
- ০৮/০৪/২০১৮-পরিবার নিয়ে কক্সবাজার…
- ২২/০৩/২০১৮-যেদিন আমি বুড়ো হয়ে যাবো…
- ১৩/০২/২০১৮-কনিকার জন্মের আগে লিখা
- ০১/০২/২০১৮-কনিকার এসএসসি শুরু
- ২৮/০১/২০১৮-খারাপ সময়
- ২৭/০১/২০১৮-বদি ভাই অসুস্থ্য
- ২৮/০১/২০১৮-মন খারাপ
- ০২/০১/২০১৮-জীবনের হিসাবটাই পালটে গেছে।
- ০৫/০৮/২০১৮-একটা সময় আসে
- ০১/০১/২০১৮-আজ বহুদিন পর মনে হইলো
2013-2017
- ২০/০৯/২০১৭ -অগ্নিশর্মা বাবু
- ১০/০৯/২০১৭-পাপ্পু স্যারের মা
- ০৯/০৯/২০১৭-একটা সময়, ভাবতাম
- ২৮/০৮/২০১৭-ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না
- ১০/০৮/২০১৭-সন্তান চেনা
- ০৫/০৮/২০১৭-একটা সময় যখন মানুষ একা
- ৩/৮/২০১৭-সন্তান
- ২৮/০৮/২০১৭-শিশুর একটা গ্রাম লাগে
- ১৩/০৭/২০১৭-কোয়েলহোর shout in anger?
- ২৭/০৬/২০১৭-বিংশ শতাব্দির চেহাড়া
- ১১/০৫/২০১৭-অনেকদিন পর লিখতে বসেছি
- ২০/০৩/২০১৭-একা থাকা
- ১৭/০৩/২০১৭-জীবন একটাই
- ২০/০২/২০১৭-ছবি
- ১৮/০২/২০১৭-তৃতীয় নদীর তীর
- ১৩/০২/২০১৭-যদি
- ১৩/০২/২০১৭- ফাল্গুন মাসের মাহাত্য
- ১৯/০২/২০১৭-রিলেশনশীপ রুলস
- ০৪/১২/২০১৬-ইমোশনাল ম্যানেজমেন্ট
- ০২/১২/২০১৬-সময়
- ০১/১২/২০১৬-ধৈর্য
- ০৮/০৯/২০১৬- শুভ জন্মদিন তোমায়
- ১৯/০৮/২০১৬- পৃথিবীকে বদলে দাও
- ১৮/০৮/২০১৬- এইচ এস সি পরীক্ষার ফলাফল
- ১৮/০৮/২০১৬ আইনিস্টানিক আই কিউ
- ১৪/০৮/২০১৬- ৯/১১ এর ফল রাইস ভুইয়া
- ১৪/০৮/২০১৬- সেই ছোটবেলা
- ১৩/০৮/২০১৬- কুরবানীর গরু
- ১২/০৮/২০১৬-কেনো জেনারেশ গ্যাপ হচ্ছে?
- ১০/০৮/২০১৬-জেনারেশন গ্যাপ
- ০৭/০৬/২০১৬ -আমার লাল পিকান্ত
- ০৫/০৬/২০১৬- বেলাশেষে
- ০৪/০৬/২০১৬-ভিক্ষুকের পাল্লায় আরেক দিন
- ০৪/০৬/২০১৬- ভিক্ষুকের পাল্লায়
- ০৩/০৬/২০১৬-আকাশের চিঠি
- ০২/০৬/২০১৬ – মাধুরীর চিঠি
- ০১/০৬/২০১৬-গল্পটা যদি এমন হতো?
- ৩১/০৫/২০১৬-যেদিন আকাশের মেঘমালা
- ৩১/০৫/২০১৬- সন্ধার গল্প
- ৩০/০৫/২০১৬-সপ্তাহের সাত দিন
- ৩০/০৫/২০১৬-অপেক্ষার অনেক নাম
- ২৯/০৫/২০১৬-এই নীলাকাশ ভেদ করে যেমন
- ২৮/০৫/২০১৬- আমরা ভালোবাসার কথা বলি
- ২৮/০৫/২০১৬-আশ্বিন মাসের ভোরবেলায়
- ২৭/০৫/২০১৬- বিশ্ব রাজনিতিক এর সাথে
- ২৬/০৫/২০১৬-নাম না জানা মানুষ
- ২৫/০৫/২০১৬- জেগে থাকার অনেক নাম
- ২৪/০৫/২০১৬-আকাশে বৃষ্টি একটু বাতাস
- ২৪/০৫/২০১৬-ইচ্ছাবিহীন ভুল
- ২৩/০৫/২০১৬- মুল্যায়ন
- ১৫/০৫/২০১৬-রবিঠাকুর তার সমাপ্তি গল্পে
- ১৪/০৫/২০১৬-বহুবছর আগে যখন
- ৬/৫/২০১৬-রুনার গল্প
- ২১/০৪/২০১৬-নবাবের কবরে একদিন
- ১৫/০৪/২০১৬- পহেলা বৈশাখের উপলব্ধি
- ১৪/০৪/২০১৬-পহেলা বৈশাখ
- ১২/০৪/২০১৬–সাফল্য এবং তার পথ নির্দেশনা
- ০৭/০৪/২০১৬ ফাঁসি
- ২৪/০২/২০১৬-আমার প্রিয় মা জননীর দল,
- ২৩/০২/২০১৬- বগুড়ার পথে
- ২৩/০২/২০১৬- বগুড়ার পথে (২)
- ১৮/২/২০১৬-আমার বড় মেয়ের সঙ্গে
- ১৪/২/২০১৬-বিশ্ব ভালবাসা দিবস-বিয়ে
- ১৯/০২/২০১৬- বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট
- ০৫/০২/২০১৬-জেলফেরত মান্নানকে চিঠি
- ২৯/১২/২০১৫- মালয়েশিয়া ভ্রমন
- ৯/০৪/২০১৫- ওমরা
- ১২/১১/২০১৪- লুতফর আমার বন্ধু
- ১১ মে ২০১৪-হাসনাবাদ, ইকুরিয়া, ঢাকা
- ০৩/০৯/২০১৩-মাসুদ রিমুনাকে চিঠি
- ১০/০৫/২০১৩-এ জার্নী বাই কার
- ১৩/০৪/২০১৩- প্রধান মন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি
- ১৬/০২/২০১৩- রাজপুত্রের “প্রজন্ম চত্বর”
2003-2007
- ২৬/০৫/২০০৭-মোহসীন এবং রিভারসাইড
- ১০/০৮/২০০৬-ভারতে ব্যবসায়ীক ভ্রমন
- ০৩/০৩/২০০৬- মানবতা ও নিষ্ঠুরতা
- ০১/০৮/২০০৫-৩য় বার সুপারসিডেড
- ০৫/০৭/২০০৫-ইকবালের সাথে আলোচনা
- ০৮/০৪/২০০৫-বাড়ির কাজ চলছে পুরুদমে।
- ০৬/০১/২০০৫-জেনাঃ শফিক ইন্টারভিউ
- ২২/১২/২০০৪-জাবেরের সাথে বৈঠক
- ২০/১২/২০০৪- রিভার সাইড সুয়েটার্স ভিজিট
- ১৮/১২/২০০৪-নাজিমুদ্দিনের সাথে বৈঠক
- ১৫/১১/২০০৪-গোল্ডেন ইন-কাজ শুরু
- ১১/১১/২০০৪-কর্নেল আব্দুল মজিদ সিও
- ১০/০৯/২০০৪-২য় বার সুপারসিডেড
- ০৫/০৭/২০০৪-৪ ফিল্ড এডভান্স পার্টি
- ১৯/০৫/২০০৪- মোহসীনের সাথে বৈঠক
- ১৮/০৩/২০০৪-মিটুল, মালয়েশিয়া ট্রেনিং
- ১৫/১১/২০০৩-খোলাহাটিতে আবার
- ১৫/১০/২০০৩-১ম বার সুপারসিডেড
- ০৮/১০/২০০৩- জর্জিয়া ত্যাগ
- ০২/০৮/২০০৩- জর্জিয়ার টিবলিসিতে ভ্রমন
- 2003- শামসুল বারীকে
- ২৮/০১/২০০৩- জর্জিয়া থেকে সচি ভ্রমন
1998-2002
- ১২/১০/২০০২-ট্র্যাবজন থেকে জর্জিয়া
- ১০/১০/২০০২- জর্জিয়ায় আগমন
- ২৬/০৩/২০০২- মা আর নাই
- ১২/১২/২০০০- প্রিয় মেজর নিজান স্যার,
- ১২/১২/২০০০- প্রিয় কর্নেলস
- ২৫/০৪/২০০০- মৃত্যুর সপ্নদেখা
- ২২/০৩/২০০০-কিছুক্ষন বারান্দায়।
- ১৫/০২/২০০০-১১ পদাতিক জি-২(অপ্স) বিদায়
- ০১/০১/২০০০- মিলিনিয়াম ডে
- ০১/০১/২০০০-মিলিনিয়াম নাইট
- ৩১/১২/১৯৯৯- অসুস্থ মায়ের পাশে
- ০২/১২/১৯৯৯-হাবিব ভাই বগুড়া সেনানীবাস
- ৩০/১১/১৯৯৯-জি-২(অপ্স) আমার কর্তব্য
- ৩০/১১/১৯৯৯- বদল চাই প্রশাসনের
- ২৬/১১/১৯৯৯- একা আমি
- ২৬/১১/১৯৯৯-মিতুলের একক ভাবনা আমি
- ১৩/১১/১৯৯৯-আতাউরের ভিজিট
- ২৩/০৯/১৯৯৯-জেনাঃ আনোয়ার-বিদায় পর
- ২২/০৯/১৯৯৯-জেনাঃ আনোয়ার-বিদায়
- ১৯/০৯/১৯৯৯-জেনাঃ আনোয়ার
- ১২/০৯/১৯৯৯-পৃথিবী না দেখা একজনের গল্প
- ০২/০৯/১৯৯৯- পারিবারিক অন্তর্কলহ
- ০১/০৯/১৯৯৯- নিঃসঙ্গতা
- ২৮/০৮/১৯৯৯-স্টাফ কলেজ থেকে বগুড়া
- ১৫/০৭/১৯৯৯- উম্মিকার কাছে জিজ্ঞাসা
- ০৬/১২/১৯৯৮-মা পরিবারের বন্ডেজ?
- ১৮/০৯/১৯৯৮-আমি অসহায় একজন মানুষ
- ১৪/০৯/১৯৯৮- পৃথিবী বড় সুন্দর
- ০৮/০৯/১৯৯৮- Why I not greedy for
- ০৬/০৯/১৯৯৮-কি চেয়েছিলো তারা?
- ০৫/০৯/১৯৯৮- লনলীনেস
- ০৩/০৯/১৯৯৮- আমি এই প্রোফেশনটাকে
- ২৬/০৮/১৯৯৮-কেনো এতো ভালোবাসি?
- ১৮/০৪/১৯৯৮- মিতুলকে
1993-1997
- ২৯/১১/১৯৯৭-ষ্টাফ কলেজ থেকে ভারত ভ্রমন
- ২৬/১১/১৯৯৭- কুতুব মিনার ভিজিট
- ২৬/১১/১৯৯৭- সম্রাট আকবর প্যালেস।
- ২৬/১১/১৯৯৭- তাজমহল ভিজিট
- ০৬/০৩/১৯৯৬-ডমিনিকান ভ্রমন
- ১৮/১২/১৯৯৫- হাইতির প্রেসিডেন্সিয়াল ভোট
- ০৫/১২/১৯৯৫-নর্থইষ্টার্ন এবং এমআইটি ভিজিট
- ০২/১২/১৯৯৫- অস্ত্র ক্রয়
- ৩০/১১/১৯৯৫-পিস্তল কেনার প্রস্তুতি
- ২৯/১১/১৯৯৫-আমেরিকায় সেল
- ২৫/১১/১৯৯৫-বোষ্টনে বাঙ্গালির দাওয়াত
- ২০/১১/১৯৯৫- বোষ্টন
- ১৬/১১/১৯৯৫-আমেরিকা গমন- উইজার্ড ৯৫
- ১৫/১০/১৯৯৫-আলগোরের ভিজিট
- ১৪/১০/১৯৯৫-ভুট্রুস ঘালির হাইতি পরিদর্শন
- ১০/১০/১৯৯৫- হাইতিতে মায়ের ডাক
- ০৫/১০/১৯৯৩- মাকে মনে পড়ে
- ৩০/০৯/১৯৯৫- হাইতির এয়ারপোর্টে প্ল্যান ক্রাশ
- ১৯/০৯/১৯৯৫-অরুনিমার গল্প
- ১৬/০৯/১৯৯৫, হাইতি- শনিবার
- ০৭/০৯/১৯৯৫-পোর্ট অ প্রিন্স এয়ারপোর্টে
- ০৩/০৯/১৯৯৫- ২য় দিন হাইতি
- ০২/০৯/১৯৯৫- হাইতি গমন
1988-1992
- ৩০/১০/১৯৯১-খাসি কুকুর হয়ে গেলো
- ২৩/১০/১৯৯১-কেনো সেচ্ছায় হিলে আসা
- ১৮/১০/১৯৯১-নিউলংকার ক্যাম্প-পর্ব ৪
- ১২/১০/১৯৯১-নিউলংকার ক্যাম্প-পর্ব-৩
- ০৮/১০/১৯৯১-নিউলংকার ক্যাম্প-পর্ব ২
- ০৫/১০/১৯৯১-নিউলংকার ক্যাম্প-পর্ব-১
- ২৪/০৯/১৯৯১-বরকল ১ম পেট্রোল
- ২৩/০৯/১৯৯১- বরকল আগমন
- ২২/০৯/১৯৯১-রাংগামাটিতে গমন
- ২১/০৯/১৯৯১-২১ রাইফেল ব্যাটালিয়ান
- ২০/০১/১৯৯০-আগমন-২৯ ডিভ লোকেটিং
- ০২/০৭/১৯৮৮-বিয়ের রিং
- ৩০/০৫/১৯৮৮-বিবাহ
- ৩০/০৪/১৯৮৮-খুলনায় ওএমটি কোর্স
1983-1987
- ০২/১১/১৯৮৭-এপেন্ডিক্স যে ২
- ৩০/১০/১৯৮৭-এপেন্ডিক্স যে
- ২৮/১০/১৯৮৭-উপধিন্যকের বাসায় যাওয়া
- ২০/১০/১৯৮৭-কোর্ট অফ ইঙ্কোয়ারী
- ১৭/১০/১৯৮৭-রাত ১১ টা
- ১৬/১০/১৯৮৭-আমেরিকায় ফোন
- ১২/১০/১৯৮৭-ইউনিটেই একঘরে
- ০৯/১০/১৯৮৭-মিতুলদের আগমন সেনানিবাসে
- ০২/১০/১৯৮৭-মিতুলের সাথে ডেইলী দেখা
- ৩০/০৯/১৯৮৭ -রিক্রুট আত্তহত্যা
- ২৬/০৮/১৯৮৭-রিক্রুটমেন্ট গ্রামে
- ২১/০৮/১৯৮৭-রিক্রুটমেন্টের জন্য গ্রামে আসা
- ২০/০৮/১৯৮৭-সোলজার রিক্রুটমেন্ট
- ১১/০৮/১৯৮৭-ক্লার্ক এডজুটেন্ট
- ০৩/০৬/১৯৮৭-নিতুন নিয়ম, রিক্সা বন্ধ
- ০৯/০৬/১৯৮৭-৪ মর্টার থেকে ৬ ফিল্ডে
- ০৫/০৪/১৯৮৭-এডজুট্যান্ট নিয়োগ
- ০২/০১/১৯৮৭-কোর্স শেষে যশোর ফেরত
- ২৮/১১/১৯৮৬-অনিরাপদ আমি
- ২৩/১১/১৯৮৬-ঢাকায় গমন
- ২৬/১১/১৯৮৬-মিতুলকে চিঠি
- ০১/১১/১৯৮৬-প্রভু
- ৩১/১০/১৯৮৬-কোনো এক বিকেল
- ৩০/১০/১৯৮৬-বদি ভাইয়ার ৫০০ টাকা
- ২৯/১০/১৯৮৬-হালকা হওয়া
- ২৭/১০/১৯৮৬-মিটুলের প্রথম চিঠি
- ২২/১০/১৯৮৬-হতাশা
- ১২/১০/১৯৮৬-হিন্দুদের পুজায় একদিন
- ০৯/১০/১৯৮৬-কার্লার চিঠি
- ০৫/১০/১৯৮৬-বদি ভাইয়ের বউ
- ২৪/০৯/১৯৮৬-একজন পরিত্যাক্ত মুক্তিযোদ্ধা
- ১৯/০৯/১৯৮৬-ভগবানের প্রতি
- ১৮/০৯/১৯৮৬-৭ই মে এর সেই মেয়েটা
- ১২/০৯/১৯৮৬-সপ্তাহ অন্তে ছুটি
- ৯/৯/১৯৮৬-লুনার চিঠি
- ৪/৯/১৯৮৬-ছবি
- ২৩/০৮/১৯৮৬-সৃষ্টিকর্তার হৃদয় সৃষ্টি-২
- ২৩/০৮/১৯৮৬-সৃষ্টিকর্তার হৃদয় সৃষ্টি
- ০৭/০৬/১৯৮৬-টাকা পয়সার টানাটানি
- ০২/০৬/১৯৮৬-বেসিক কোর্সের চেহারা
- ১৩/০৫/১৯৮৬ “বড় বাড়ীর বউ”
- ৩০/০৪/১৯৮৬-বেসিক কোর্স-যশোর ত্যাগ
- ০১/০৪/১৯৮৬-বেসিক কোর্সের প্রি-কোর্স শুরু
- ১০/০৩/১৯৮৬-যশোর সেনানীবাসে প্রথম আগমন
- ০৪/০৩/১৯৮৬-যশোর সেনানিবাস
- ০২/০৩/১৯৮৬-১ম শীত অনুশীলন সমাপ্তি
- ০৫/০২/১৯৮৬-নাইটগার্ড চেকিং এর বিরম্বনা
- ০২/০২/১৯৮৬-রুপদিয়ার বুড়িমা
- ০৭/০১/১৯৮৬ রুপদিয়া অনুশীলন ক্যাম্প
- ০১/০১/১৯৮৬ রুপদিয়া অনুশীলন, যশোর
- ৩১/১২/১৯৮৫ রুপদিয়া অনুশীলন ক্যাম্প
- ১৯/১২/১৯৮৫-১৩ লং পাসিং আউট
- ০৫/০৯/১৯৮৩-হাবীব ভাইয়ের বিয়ে
Arundhuti
- ১৬/০৩/২০২৫-মাল্টার জন্য টাকা জমা দেয়া
- ০৩/০৭/২০২৩-মাধুরীর চিঠি-২
- 31/04/2020-রহস্য।
- ০৮/০৮/২০২১-সন্ধ্যা ৮ টা ৩২ মিনিট
- ৬/৭/২০২১-কিছু আফসোস
- ২২/৬/২০২১-তোমাকে
- যদি তুমি মনে করো
- শারমিন কথা
- আইন্ডেন্টিটি (পর্ব-১)
- ০৯/০৪/২০২১-তুমি ছাড়া আমি
- ২৮/০২/২০২১-ত্রিভুজের চতুর্থ কোন
- ২১/০১/২১-তারিখটা চোখে পড়তেই
- ৩০/০৯/২০২০-মাইন্ড গেম
- ২৮/০৬/২০২০- আমি ফিরে এসেছি আবার
- ২৪-০৬-২০২০-কিভাবে থাকা সম্ভব একা?
- ৩১/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-৩
- ৩০/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-২
- ৩০/০৩/২০২০-যেদিন চলে আসবো-১
- ৩/০৩/২০২০-মাধুরী-আকাশের ভালোবাসা
- ২৬/১২/২০১৯- লিসা ফিরে গেছে
- ২৩/১২/২০১৯-অপেক্ষার প্রহর লম্বা
- ০৩/০৬/২০১৬-আকাশের চিঠি
- ০২/০৬/২০১৬ – মাধুরীর চিঠি
- ০১/০৬/২০১৬-গল্পটা যদি এমন হতো?
- ৩১/০৫/২০১৬-যেদিন আকাশের মেঘমালা
- ৩০/০৫/২০১৬-সপ্তাহের সাত দিন
- ৩০/০৫/২০১৬-অপেক্ষার অনেক নাম
- ২৯/০৫/২০১৬-এই নীলাকাশ ভেদ করে যেমন
- ২৮/০৫/২০১৬- আমরা ভালোবাসার কথা বলি
- ২৮/০৫/২০১৬-আশ্বিন মাসের ভোরবেলায়
- ২৬/০৫/২০১৬-নাম না জানা মানুষ
- ২৫/০৫/২০১৬- জেগে থাকার অনেক নাম
- ২৪/০৫/২০১৬-আকাশে বৃষ্টি একটু বাতাস
- ১৫/০৫/২০১৬-রবিঠাকুর তার সমাপ্তি গল্পে
- ১৪/০৫/২০১৬-বহুবছর আগে যখন
- ২২/০৩/২০০০-কিছুক্ষন বারান্দায়।