হার্ট এটাক
বুঝিনি কখন কবে হার্ট এটাক হয়েছিলো অথচ বারবার একই রকমের উপসর্গ আমি উপভোগ করেছি বহুবার। এটা যে আমার জীবনে এতোবড় একটা সর্বনাশী এবং ভয়ংকর কিছু বাসা বেধেছে, সেটা আমি বুঝিনি। কিন্তু যখন বুঝেছি, আমি শুধু মুচকী হেসেছিলাম। ভয় তো পাইইনি বরং মনে হয়েছে-বাহ, এটা কি সেটাই যেটা মানুষ বারবার ভয়ংকর ভাষায় তার বর্ননা দেয়?
বড় মেয়ের শসগুড় বাড়ী বেড়াতে যাওয়ার ঠিক প্রাক্কালেই আমি গাড়িতে বসে এতোটাই অসস্থি বোধ করছিলাম যে, পুরু ভ্রমনটাই আমার সুখের ছিলো না। পথিমধ্যে কয়েক জায়গায় থেমে চা সিগারেট খেয়েছি। আর ঘন ঘন প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করে ইরেগুলার ওসারটিল নামে একটা প্রেসারের মেডিসিন খেয়েই চলেছি। কিন্তু ভিতরের যন্ত্রনা বা একটা জলন্তীভাব আমার কিছুতেই কাটছিলো না। সিরাজগঞ্জ গিয়ে প্রেসার মেপেও খুব একটা সুরাহা যে করতে পেরেছি সেরকমও হয় নাই। মেয়ে ডাক্তার, মেয়ের জামাই আবির ডাক্তার, তারাও যে খুব একটা অভিজ্ঞ মতামত দিতে পেরেছে তেমনটা নয়। ওখানে যাওয়ার পর একতার পর একটা সিগারেটও খেয়েছি। তিন দিন ছিলাম ওখানে, এই তিনদিন মোটেও আমি সুস্থ্য ছিলাম না কিন্তু কাউকে বলারও প্রয়োজন মনে করিনি। অতঃপর ব্যাপারটা এমনি এম্নিই যেন ঠিক হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু গত অক্টোবরে সকাল বেলায় হটাত করে আমার ঘুম ভেংগে যায় প্রচন্ড একটা অসস্থি অনুভবে। মনে হচ্ছিল-বুকের কোথায় যেন জ্বলছে কিন্তু কোন ব্যথা নাই। ভাবলাম, হয়ত অন্য কোনো কারন। টাইলসের মধ্যে পেট উপুর করে দিয়ে শুয়ে জ্বলা জ্বলা ভাবটায় একটু শিতল করার চেষতায় বুক উপুর করে শুয়ে ছিলাম, লাভ হয়নি। ঠান্ডা পানি দিয়ে বুক ভিজিয়েছি যাতে বাইরের ঠান্ডা পানিতে যদি একটা ভাল লাগে, সেটাও খুব একটা লাভ হয়নি। চা, কফি খেয়ে একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিলো, ওই সেদিন যেদিন সিরাজ গঞ্জ গেলাম, যেমন একটা অনুভুতি হয়েছিল, আজকের অনুভুতিটাও প্রায় সে রকমের। ভয় পাই নি কিন্তু ভালো লাগছিলো না। মাঝে মাঝেই প্রেসার মাপছি, কিন্তু প্রেসারের যে খুব একটা হেরফের তাও না। ওসারটিল খাচ্ছি বারবার। খেলে একটু ভালো লাগে, আবার একটু পরেই কেমন যেন আগের জায়গাতেই চলে আসি। এভাবে টাইম চলতে থাকে। সকালে নাস্তা করি, গোসল করি, আবারো সব কাজ নরম্যালই করতে থাকি। অফিসের জন্য বেরিয়ে যাই। তখন সকাল প্রায় ৯ টা।
অফিসে যাওয়ার রাস্তার একদিকে সেনানীবাস, আরেক দিকে আমার অফিসে যাওয়ার সরাসরি রাস্তা। আর সেই জায়গাটার নাম "র্যাংক্স"। ওখানে এসে মনে হলো-একটু ডাক্তার দেখাইয়াই যাই সিএমএইচ থেকে। যেই না আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম (লেঃ কর্নেল আমিন) সে আমাকে দেখেই বল্লো-স্যার আপনি কি অসুস্থ? কোনো দেরী না করে আমিন আমাকে সাথে সাথে নিয়ে গেল ইমার্জেন্সীতে। অতঃপর সিসিইউ এবং অতঃপর অপারেশন থিয়েটার। শোনা গেল যে, আমার হার্ট এটাক হচ্ছিলো। হার্ট এটাকের ট্রপিনিয়ন এর কাট অফ রেঞ্জ থাকার কথা ৪৭ আর সেখানে আমার ট্রপিনিয়ন ছিল ২২০০০। ডাক্তার আমাকে প্রশ্ন করেছিলো-আমার কি এর আগেও এটা অনুভুত হয়েছিলো? বুঝলাম-ওই যে সেদিন সিরাজগঞ্জ যাওয়ার সময় যে জলন্তীটা হয়েছিলো, সেটা আসলে ছিলো আরেকটা হার্ট এটাক।