আমি যখন এই স্কুলে পড়তাম, তখন সালটা ছিল ১৯৭৬। টিনের স্কুল, চারিদিকে মুলির বেড়া, আর এই মুলির বেড়ার বেশিরভাগ ছিল নীচ দিয়ে ভাঙ্গা। মুরগী, কুকুর, বিড়াল এমন কি চোরেরাও মুলির বেড়ার নীচ দিয়ে স্কুলের ক্লাশের ভিতরে ঢোকে যেতো। পরদিন আমরা যখন ক্লাশে আসতাম, এসে মুরগী ইয়াড়াইতাম, কুকুরকে তাড়াইতাম, বেঞ্চ আর চেয়ার গুলি ধুলোয় এমন হয়ে থাকতো যে, এগুলিকে মুছে পরিষ্কার করতেই সময় লাগত আধা ঘন্টা। ক্লাস রুমের দরজাগুলি এমন ছিল যে, কেউ জোরে ধাক্কা দিলেই খুলে যেতো, তালা লাগাওনর কনো ব্যবস্থাই ছিলো না। বৃষ্টির দিনে মাঠে বৃষ্টির পানি পরার আগে যেন ক্লাশ রুমে পড়তো আগে। এতোই ফুটাফাটা ছিলো টিনের চালগুলি। ছাত্ররা বা ছাত্রীরা আসতো তাদের নিজের উদ্যোগে, স্যারেরা আমাদের পরাতেন ঠিকই কিন্তু মাঝে মাঝে আমরা আমাদের নিচের ক্লাসের ছাত্রদেরকে ক্লাস নিতাম। কারন সব ক্লাসে টিচার ছিলো না। আমি তো রেগুলার ক্লাস নিতাম। একটু একতু গর্বও হত যে, আমি না ছাত্র আবার না টিচার অথচ আমি কিন্তু ছাত্র।
এই স্কুলটা তখন ক্লাশ এইট বা অষ্টম পর্যন্তই ছিল অর্থাৎ হাইস্কুল। খুব যে ভাল স্কুল ছিলো সেটাও নয় কিন্তু এই এলাকায় এটাই ছিলো একমাত্র হাইস্কুল। আলাউদ্দিন ভাই আসতেন, আমাদেরকে খুব আদর করতেন। অসম্ভব অমায়িক মানুষ ছিলেন তিনি। এই স্কুল থেকেই আমরা ২ জন (আমি এবং ডাঃ শফিক ভাই, আলুকান্দার) ক্যাডেট কলেজে গিয়েছিলাম। এর পরে আরো অনেক মেধাবি ছাত্ররা দেশের বিভিন্ন সেক্তরে খুব ভাল ভাল জায়গায় কাজ করছেন এবং করেছেন। স্কুলটা ছিল তখন এলাকার প্রানকেন্দ্র। প্রায়ই বিকালে ফুটবলের প্রতিযোগীতা হত, গ্রামবাসিরা মাঠের চারিদিকে বসে যেনো ওয়ার্ল্ডকাপ খেলা হচ্ছে এমন একটা পরিবেশ হতো, মাঝে মাঝেই নাটক বা কালচারাল অনুষ্ঠান হত। ছেলেরাই মেয়ে সেজে নায়িকা হতো। কি যে একটা রমরমা সময় ছিল।
আজ এতো বছর প্পতে স্কুলটার চেহাড়া দেখলে মনে হয় কি সুন্দর। এতো বড় মাঠ, চার তলা করে অনেক গুলি বিল্ডিং। অনেক ছাত্র আর টিচার গন। রম রম করে পরিবেশ কিন্তু সবচেয়ে দুঃখ আর কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে-এই স্কুল এন্ড কলেজ থেকে পাশের হার মাত্র ১০%। তাও আবার খুব লো গ্রেদিং দিয়ে পাশ। এটা কনো কথা?
মাষ্টারদের কাছে কেউ কৈফিয়ত চায় না গার্জিয়ানরা, গার্জিয়ানরা কেউ সপ্ন দেখে না তাদের সন্তানদের নিয়ে, কনো ছাত্র জানে না তার ভবিষ্যত কি। সে কি হতে চায়। কেউ তাদের মাথায় সপ্ন বুনন করে না। অথচ সব উপাদান আছে এই স্কুল এন্ড কলেজে। যারাই এই স্কুল এন্ড কলেজের জন্য দায়িত্বশীল ছিলেন, তারাই এতাকে নিয়ে হয় রাজনিতি করেছেন, অথবা এর থেকে ফায়দা লুটেছেন অথবা লাভ করেছেন। কেউ ছাত্রদের ভাল হক, ছাত্ররা নামকরা কেউ হক, এ অঞ্চলতাকে ছাত্ররা সমৃদ্ধ করুক কেউ চেষ্ঠা করেনি। চেয়ারম্যান, মেম্বার, উপজেলা প্রশাসক এমন কি এম পি ও এর পিছনে কখনো কনো সময় দিয়ে এটাকে কিভাবে ভাল একতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা যায় তার জন্য চেষ্টা করেনি।
এখনো এখানকার যুবকেরা জানে না যে, অতি শীগ্রই ওরা এমন কিছু মানুষের অধীনে চলে যাবে যারা বেই এলাকার কেউ নন। …।।