১০/০৫/২০২০-এই করোনায় যারা মাস গেলেই

Categories

(১) এই করোনায় যারা মাস গেলে মাইনে পাবেন বলে সিউর, তারা সত্যিকার ভাবেই ছুটি উপভোগ করছে, আর ফেসবুকে একটার পর একটা উপদেশ দিয়েই যাচ্ছেন, এই কইরেন না, ওই কইরেন তো ওখানে যাইয়েন না তো ওইখানে যাইয়েন ইত্যাদি। কিন্তু যারা বেতনের ব্যাপারটা সিউর না, তারা তো ডাল ভাতও পাচ্ছে না। উন্নত দেশগুলির চিত্র আলাদা। তারা ট্যাক্স দেয়, ফাকি দেয় না, ট্যাক্স পায় সরকার, বিভিন্ন খাত থেকে রাজস্ব পায়, ফলে তারা তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে জনগোষ্ঠিকে আপদকালীন সাহাজ্য করা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমাদের সরকার? তারা সবার কাছ থেকে তো ট্যাক্সও পায় না। এদেশের মাত্র ২০/২৫% লোক ট্যাক্স দেয়। আর সবাই ফাকিই দেয়। সরকারী কর্মকর্তাদের বেতনটাও করমুক্ত। অন্যদিকে, রাজস্ব আয়েও তো ভীষন রকমের ঘাটতি আছে দূর্নীতির কারনে। তাহলে সরকার বিপদকালীন সময়ে সাহাজ্যটা করবে কোথা থেকে? অর্থনীতিকে চালিয়ে নেওয়ার মতো যথেষ্ট মদদ নাই সরকারের কাছেও। ফলে যেখান থেকে সরকার যতটুকুই রাজস্ব আয় পাবে, সেগুলিকে তাকে খুলতেই হবে। প্রত্যক্ষ কর পুরোটা আদায় করতে পারে না বলে ভ্যাটের ওপর যেহেতু সরকার নির্ভরশীল, ঈদের আগে সম্ভবত সে কারণেই শপিংমল খোলার ঘোষণা। এছারা ওই ক্ষুদ্র মালিকদের জন্যেও একটা আপদকালীন কিছু অর্থ আসার আশা।

(২) এদেশ আসলে কিছু ফরেন রেমিট্যান্স আর কিছু রপ্তানীমুখী শিল্পের উপর নির্ভরশীল। ফলে এসব যদি কোনো কারনে হাতছাড়া হয় ভাবতে পারেন কি আছে সরকারের হাতে? মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির নিরিখে আমরা এখন বিশ্বের শীর্ষ কাতারে, অথচ রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে নিচের সারিতে। অর্থাৎ কর-ফাঁকির প্রবণতার দিক থেকে আমরা শীর্ষে। তাহলে সরকার করবেটা কি?

(৩) আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এদেশে মানুষজন বেসিক্যালি ক্ষুদ্রশিল্পের উপর লোকালী নির্ভরশীল। তাদের প্রনোদনা কি? তারা কিভাবে আবার আগের প্লাটফর্মে আসবে যদি একেবারেই সব স্তব্ধ হয়ে যায়? সরকার সামাল দিতে পারবে এতো বিশাল বুভুক্ষ জনগোষ্ঠীকে লালন করতে? সরকার যদিও বেশ কিছু সেক্টরে লোন প্রনোদনা ঘোষনা করেছেন, কিন্তু আরও কয়েক সপ্তাহের আগে প্রণোদনার টাকা হাতে আসবে বলে মনেও হচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসের বেশি এবং যেসব শর্ত ধরা হয়েছে, অনেকের জন্য এটা অর্থহীন। কে জানে, কীভাবে ওই সব শর্ত পূরণ করে কত দিনে বরাদ্দটা মিলবে? প্রণোদনার ধরনও খুবই অস্পষ্ট। তত দিনে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। তাদের অবস্থাটা কি? আমার আপনার বাসায় তো ডাল ভাতের জোগাড় আছে, কিন্তু ৮৬% লোকের তো সেটাও নাই? তাহলে কিভাবে তারা না খেয়ে ঘরে থাকতে বলি? আমি আপনি কি পারবো না খেয়ে দিনের পর দিন ঘরে পানি খেয়ে থাকতে?

(৪) করোনা ভাইরাস মহামারী আসলে একটা অর্থনীতি বিনাশী ঘটনা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অর্থনৈতিক সমস্যা—কিছুই এর সমতুল্য নয়। সমাজের ২৫ ভাগ লোক হঠাৎ স্থায়ীভাবে কঠিন বেকারত্বে পড়ে যাবেন, আর এটা সেরে উঠতে লাগবে কয়েক যুগ, হতে পারে আর আগের ফর্মে ফেরাই যাবে না। অর্থনীতি ধ্বংস হলে সমাজও থাকবে না, রাজনীতিও থাকবে না, গনতন্ত্র তো দূরের কথা। তছনছ করে দেবে পরিবার, সম্পর্ক, উদারতা, মানবিকতা কিংবা সজ্জনতা। একটা কথা আছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয় বাকি সব বিপর্যয়ের জননী।

(৫) প্রচুর মানুষের কাছ থেকে কি পরিমান রিকুয়েষ্ট যে পাই, তা বলার ভাষা নাই। আগে তো সামর্থবান ফকির দেখলে ভিক্ষে দিতাম না, কিন্তু এখন কোনো বয়স বা জেন্ডার দেখি না, যা আছে সেটাই দিতে চাই, হয়তো এই মানুষটা ১দিন না খেয়ে তারপর হাত পেতেছে।

এই লক ডাউন কন্সেপ্টে অনেক ভুল আছে। লক ডাউনটা কত দিনের? ২ মাস, ৩ মাস,৬ মাস কিংবা আরো বেশি? কিন্তু এই করোনা ভাইরাস থাকবে আরো কম্পক্ষে ৪/৫ বছর। বর্তমানে কারখানা খোলা, শপিংমল খোলা বা এই জাতীয় বিজনেজ সচল রাখা মানে লাভের জন্য নয়, এটা পুরু দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঠেক দেওয়া। যারা খালি ফেসবুকে বিজ্ঞের মতো মন্তব্য করেই যাচ্ছেন, তারাই বলুন তো, দেশে কত জনকে ব্যক্তিগতভাবে আপ্নি নিজে আর্থিক সাহাজ্য করেছেন? এবং কত টাকা? একটা পরিবারকে বাড়ি ভাড়া, বিল, খাওয়া এবং সব মিলিয়ে ঢাকা শহরে কম্পক্ষে ২০/২৫ হাজার টাকা লাগে। কয়জনকে পারবেন দিতে? খালি ৫ কেজি চাল আর ১ লিটার তেল দিয়ে কাউকে উপদেশ দিয়ে এটা বলা যাবে না যে, stay home. আসুন একটা জরীপ করি- কারা কারা এইসব মধ্যবিত্তদেরকে আগামি ৩/৪ মাস সাপোর্ট দিতে ইচ্ছুক। একজনকেও পাব না এ ব্যাপারে আমি শতভাগ সিউর। তাহলে এই শুকনা উপদেশে কার মন ভরবে? 

সহজ না উপলব্ধি করা। কিন্তু উপদেশ দেয়া খুব সহজ। তাই আগে অবস্থাটা আরো সামনের দিকে দ্রিষ্টি দিয়ে ভাবুন তারপর মন্তব্য বা উপদেশ যাইই করার করুন। সরকার এই মুহুর্তে আমার ধারনা একদম ঠিক সিদ্ধান্তগুলিই নিচ্ছেন।

এটার কোনো ডাউনফল পিক পয়েন্ট নাই। প্রতিটা নতুন সংক্রমন লকডাউনে থাকা ফ্রেসব্যক্তি পুর্ন উদ্যমে আবার নেক্সট স্টার্টিং পয়েন্ট হয়ে যায়। বরং কারেক্ট সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং (তাইওয়ানের মত, ৪৫৬ টোটাল আক্রান্ত, ডেথ মাত্র ৬, তাও আবার উহানের ঠিক পাশে থাকা দেশ) এবং হার্ড ইম্মিউন এর একমাত্র লং টার্ম সমাধান। অনেক উপসর্গহীন মানুষও করোনায় আক্রান্ত।