৩০/০৯/২০২০-মাইন্ড গেম

একটা ফাদ পাতা হয়েছিলো। প্রথমে প্রেমের অভিনয়, তারপর তাকে অপহরন, তারপর তাকে শেষ করে দেয়া। কিন্তু ঘুনাক্ষরে অপরাধী টের পায় নাই এর শেষ পরিনতি কি। ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে সম্পর্ক জুড়তে যাওয়া একটা ভয়ংকর অপরাধের জন্ম দেয়। আর এখানে সেটাই এই অপরাধী ঘটিয়েছিলো। সোজা অপহরন। অন্যদিকে, যখন কোনো মানুষ কিছুই না বলে সে তার পরিবার থেকে হটাত করে উধাও হয়ে যায়, তখন ব্যাপারটা অনেক দুসচিন্তার কারন হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারের সবার ঘুম নষ্ট হয়ে বিভ্রান্তের মতো দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে চৌহদ্দির বাইরে গিয়েও সর্বাত্তক চেষ্টা চলে হারিয়ে যাওয়া মানুষটাকে আবার ফিরিয়ে আনা। আর এই ভয়ংকর খোজাখুজির মধ্যে অনেক গোপন তাস প্রকাশ্যে আসে, প্রকাশ্যে আসে গোপন সন্ধি, গোপন লেনদেন, গোপন শর্তাবলি। তবে কিছু তাস সবাই জানলেও বেশীরভাগ তাসই অজানা অন্য সবার কাছে থেকে। এই অজানা তাসের মধ্যে কারো বডি ল্যাঙ্গুয়েজে কিছু তাস আন্দাজ করা হয়,  কারো নির্বোধ রাজনীতির কারনে আরো কিছু তাস গোপনে বেরিয়ে আসে আবার কারো আইনের নির্ভিক প্রশাসনিক দক্ষতায় শেষ অবধি অপরাধীর মতো তুরুকের তাসটি একেবারেই হাতে চলে আসে। তবে মজার ব্যাপার হলো, সময়ের পথ চলায় কিন্তু সত্য বেশীদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। ধীরে ধীরে এর মুখোশ উম্মোচিত হয়ই। অনেকেই রাজনীতি করেন নিজের যোগ্যতায়, কেউ রাজনীতি করে বাপদাদার পৈত্রিক উত্তরাধীকার সুত্রে। কিন্তু জ্ঞান তো আর উত্তরাধীকার সুত্রে পাওয়া যায় না। এটা অর্জন করতে হয়। পৈত্রিকসুত্রে পাওয়া রাজনীতির পদাধিকারী হয়তো জানেনই না যে, রাজনিতিতে পূর্নিমা আর অমাবশ্যা একসাথে চলে। জোয়ারভাটা এক সাথে চলে, কিন্তু সেটা কখন কিভাবে, কোথায় তার জ্ঞান থাকা দরকার।

আমরা অসহায় ছিলাম, আমাদের না ছিলো পাওয়ার-পলিটিক্সের ক্ষমতা, না ছিলো কারিকারি অর্থ। কিন্তু আমাদের ছিলো অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসা আর ছিলো দায়িত্তবোধ। কিছু কিছু দায়িত্তশীল মানুষের আশ্বাস, ভরষা আমাদেরকে ক্রমাগত একটা অন্ধকারের দিকেই ঠেলে দিচ্ছিলো, আমরা হারিয়ে যাওয়া আমাদের পরিবারের মানুষটির অজানা ব্যথায় ব্যথিত হচ্ছিলাম বটে কিন্তু সব ঠিক হয়ে যাবে, সব ঠিক করে দেয়া হবে এরুপ ভরষায় আমাদের আতংক দিনে দিনে এতোটাই বেড়ে উঠছিলো যে, আমাদের প্রতিটি পরিবারের জীবন্ত সদস্যরা যেনো মৃত মানুষের মতো বেচেছিলো। বুঝতেছিলাম যে, ঠিকঠাক হওয়া আর ঠিকঠাক দেখানোর মধ্যে কত পার্থক্য, এটা যেনো সত্য আর মিথ্যার মতো। এই দুয়ে চোখ আর মন এক সাথে চলছিলো না। অবশেষে বুঝলাম, বহুদূর অবধি খুজেও যখন কোনো সুত্র পাওয়া না যায় তখন কাছে দেখতে হয়। বুঝেছিলাম যে, সেটা কাছেই চোখের আড়ালে লুকিয়েছিলো। আর সেটা হলো স্থানীয় রাজনিতিকদের মাথায়। প্রশাসনিক দপ্তরের পজিটিভ মনোভাবে হারানো মানুষটাকে পাওয়া গেলো বটে কিন্তু অপরাধী ধরাছোয়ার বাইরেই রয়ে গেলো।

সবাই আমাদেরকে নিয়ে মাইন্ড গেম খেলছিলো। রাজনীতিকসহ। মাইন্ড খেলা বিপদজনক নয় তবে যার জন্য খেলা হয় সে যদি জেনে যায় যে, তাকে নিয়ে কেউ মাইন্ড গেম খেলছে, তাহলে মাইন্ড গেম উলটা ফল দেয়। এটা তখন হয় বুমেরাং কেননা যার উপর মাইন্ড গেম খেলা হচ্ছে সে যখন বুঝেই যায় যে তার উপর মাইন্ড গেম এপ্লাই করা হচ্ছে, তখন সে জেনেশুনে ঐসব উপাত্তগুলিই দেয় যা আসলে মাইন্ড গেমারকে বিভ্রান্ত করতে পারে। আর তাকে বিভ্রান্ত করার জন্যই এসব উপাত্তগুলি দেয়া হয়। জেনেশুনেই দেয়া হয়। তখন যিনি ছিলেন গেমার, তিনি হয়ে যান সাবজেক্ট, আর যিনি ছিলেন সাব্জেক্ট, তিনি হয়ে যান গেমার। আর তখন আসল মাইন্ড গেমার নিজেই তখন আরেকজনের মাইন্ড গেমের বিষয়বস্তু হয়ে উঠে। এটা বুঝতে একটু সময় লেগেছিলো আমাদের। মনের কষ্টে, বেদনায় আর হতাশায় যেখানে যেখানে ধর্না দিয়েছি, কোথাও যখন এর প্রতিকার হচ্ছিলো না, শেষ প্রতিকার ছিলো অর্থ। অর্থ যে কত বড় শক্তি, সেটা এবার বুঝলাম। মৃত মানুষও এই অর্থের জন্য হাত বাড়ায়। এদেশের ভাগ্য বড় খারাপ যে, দেশমাতা বেশীরভাগ রাজনীতিবিদদেরকে যেনো অপরাধী সন্তান হিসাবেই জন্ম দিয়েছে। সবাই নয়, তবে অধিকাংশ। দেশমাতা নিজেও এর বলীর শিকার। আমাদেরকে এবার তারা সেটাই করতে বললেন যেটা আমরা চেয়েছিলাম, কিন্তু ব্যাপারটা গোপন থাকার শর্তে। এই অতি ধূর্ত মানুষটি দুটু গেম খেলছিলেন দুই দিকে। একটা লুকানো, আরেকটা বিভ্রান্ত। লুকানো গেমে আমরা আর বিভ্রান্তের গেমে তার অনুসারীরা।

অতএব, অপরাধী এলো, তিনি এলেন না। কারন তিনি আসবেন না এটাই ছিলো বিভ্রান্তের মুল লক্ষ্য। শেষতক, যুবরাজ অপরাধী এলেন, ধরা পড়লেন, লালঘরে চলে গেলেন। আর পরদিন সবাইকে আবারো বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে আমাদেরকে এক তরফা শাসিয়ে দিলেন। এটাই রাজনীতি। রাজনীতিতে অনেক সময় অনেক বড় জিনিষ ছোট ভাবেও বলা যায়। এই রাজনীতির খেলায় প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাহিনী বলে কিন্তু সত্যটা থাকে অন্য কিছু। সময় হলো সবচেয়ে বড় ভিলেন। আর এই ভিলেনের সবচেয়ে বড় বন্ধু তারা যারা বারবার মাইন্ড গেম খেলেন এবং খেলান।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।