২৪-০৬-২০২০-কিভাবে থাকা সম্ভব একা?

Categories

দুটু মাত্র রুম। একটিতে আছে রান্না ঘর, আছে ফ্রিজ, আর একটা ছোট টেবিল যা ডাইনিং টেবিল বলা যায় তবে সেটা এখন আর ডাইনিং টেবিল হিসাবে ব্যবহৃত হয় বলে মনে হয় না। সেটা আসলে এখন পরিত্যক্ত হাড়ি পাতিল, গ্লাস কিংবা ভাতের গামলা রাখার কাজেই যেনো বেশী ব্যবহৃত হয়। আর এই রুমটায় আছে একটা রসুন পিয়াজ কিংবা মসল্লা জাতীয় জিনিষ রাখার একটা আলমারী। রুমটায় কোনো ফ্যান নাই, সাথে একটা বারান্দা আছে, অতীব ছোট, তবে ওখানে গিয়ে যে বসে বাইরের রুপ দেখার জন্য বসা যায়, এমন না। এটা নিতান্তই একটা দরজা খোলা রাখার জন্য হয়তো স্পেস হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।

আরেকটা রুম যেখানে আছে একটা ড্রেসিং টেবিল, আছে একটা পড়ার টেবিল, উল্টাদিকে আছে একটা ওয়ার্ড্রব, ওয়ার্ড্রবের উপরে আছে একটা ছোট টিভি। মেঝের মাঝখানে একটা কারুকার্য করা পাটের কার্পেটের মতো একটা জিনিষ, খাটটা সুন্দর, এই রুমটার সাথে আছে এটাচড বাথ। এটাই হলো অরুর রুম।

থাকার মধ্যে একমাত্র অরুই হচ্ছে বাসিন্দা। একাই থাকে অরু। বাইরের কারোর সাথে অরুর কোন সম্পর্ক নাই, অন্তত এটাই আমি জানি। মাসের বাজার এককালীন করে নিয়ে আসে অরু নিজেই। একা মানুষের জন্য খুব বেশী কিছু লাগে না। তার সারাদিনের কাজের মধ্যে যা আমি বুঝতে পারি সেটা হলো, সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়। তারপর রান্না ঘরে গিয়ে নিজের ইচ্ছে মতো যা খেতে চায়, সেটাই বানিয়ে কোনো রকমে খেয়ে নেয়। তারপর ঘরটা গুছায়, রান্নার জন্য কিছু আয়োজন করে। গোসল করে, কাপড় চোপড় ধুয়, তারপর কিছুক্ষন পড়াশুনা করে। আর কথা বলার জন্য একমাত্র আমার সাথেই বলে। তাও আবার আমি যদি অনলাইনে আসি, তাহলেই ব্যাপারটা ঘটে।

তার কিছু বান্ধবী আছে, তারাও মাঝে মাঝে অনলাইনে কথা বলে। এইটুকুই। সে কারো প্রতি হয়তো আসক্ত নয়, অর্থাৎ কোনো পুরুষের প্রতি বা অন্য কোনো ছেলের প্রতিও নয়। অন্তত এটাই আমি জানি। এই রকম একা একটা পরিবেশে দিনের পর দিন কি করে সম্ভব একজন মানুষের পক্ষে একটামাত্র ঘরে বসবাস করা?

আমি ওকে নিয়ে গবেষনা করি। আমার এতো বছরের অভিজ্ঞতায় এটা কিছুতেই মাথায় আসে না। মানুষ কি আসলেই এভাবে একা বাচতে পারে? অথচ আমি ওকে দেখি মন খারাপ করে না, হাসে, খায় দায়, ঘুমায়, ভালোই আছে। এর মধ্যে কি কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক রহস্য আছে? নাকি মানবীয় কোনো পরিকল্পনা? নাকি সময়ের সাথে নিজেকে কিছু সময়ের জন্য এডজাষ্টমেন্ট?

আমার এই ব্যাপারটা জানার খুব শখ। আমি এটাকে একটা এক্সপেরিমেন্টাল থিউরী হিসাবে এখন দেখছি যার উপাদান হচ্ছে সময়, তার সাথে নিশ্চিত ভবিষ্যতের একটা গ্যারান্টিসহ আরো কিছু। আমি দেখতে চাই, এর পিছনে আসলে কোন বস্তুটি আসলে কাজ করছে। এটা কি সময়কে কিছুকাল আটকে দেয়া যা হয়তো একটা কিছুর প্রাপ্তির শেষেই এর পরিসমাপ্তি? নাকি আসলেই এটা কোনো নতুন থিউরী যেখানে মানুষ কোটি লোকের ভীরেও একা যা আমি আগে কখনো দেখি নাই অথচ এটা ছিলো। নাকি নিছক একটা এডাপ্টেশন।

সময় বলে দেবে এর রহস্য। তখন পর্যন্ত এটা আমার কাছে নিছক একটা প্রশ্ন বটে। উত্তর আমার জানা নাই।